hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৩৫
আবে-হায়াতের সন্ধানে যুল-কারনায়ন
ইবন আসাকির ওকী (র) এর সূত্রে ..... যায়নুল আবেদীন থেকে এক দীর্ঘ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ঘটনার সারমর্ম এই যে, যুল-কারনায়নের সাথে একজন ফেরেশতা থাকতেন। তাঁর নাম ছিল রানাকীল। একদিন যুল-কারনায়ন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, পৃথিবীতে একটি ঝর্ণা আছে নাকি, যার নাম আইনুল হায়াত বা সঞ্জীবনী ঝর্ণা? ফেরেশতা ঝর্ণাটির অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন। যুল-কারনায়ন তার সন্ধানে যাত্রা শুরু করলেন। হযরত খিযির (আ)-কে তিনি অগ্রবর্তী দলে রাখলেন। যেতে যেতে এক অন্ধকার উপত্যকায় গিয়ে ঝর্ণার সন্ধান পেলেন। খিযির ঝর্ণার কাছে গিয়ে সেখান থেকে পানি পান করলেন। কিন্তু যুল-কারনায়ন ঝর্ণার কাছে যেতে পারলেন না। তিনি সেখানে অবস্থিত একটি প্রাসাদে এক ফেরেশতার সাথে মিলিত হলেন। ফেরেশতা যুল-কারনায়নকে একটি পাথর দান করলেন। পরে তিনি সেনাবাহিনীর নিকট ফিরে এলে আলিমগণ পাথরটি সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি পাথটিকে ওজন করার জন্য এক পাল্লায় রাখলেন এবং অপর পাল্লায় অনুরূপ এক হাজার পাথর রাখলেন। কিন্তু ঐ পাথরটির পাল্লা ভারী হল। তখন হয়রত খিযির (আ)-ও পাথরটির রহস্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি তার বিপরীত পাল্লায় একটি পাথর উঠিয়ে তার উপর এক মুষ্টি মাটি ছেড়ে দিলেন। এবার পাল্লাটি ভারী হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, এটা ঠিক বনী আদমের উপমা যারা কবরের মাটি ছাড়া কোন কিছুতেই তৃপ্ত হয় না। এ দৃশ্য দেখে আলিমগণ ভক্তিভরে তাঁর প্রতি নত হলেন।

এরপর আল্লাহ ঐ এলাকার অধিবসীদের ব্যাপারে ফয়সালা দেনঃ “আমি বললাম হে যুল-কারনায়ন! তুমি এদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা এদের ব্যাপার সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার। সে বলল, যে কেউ সীমালংঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দিব, অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন হবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।” সুতরাং তার উপর দুনিয়ার শাস্তি ও আখিরাতের শাস্তি উভয়টিই কার্যকর হবে। দুনিয়ার শাস্তির কথা আগে বলা হয়েছে। কেননা, কাফিরদের জন্যে এটা সাবধান ও সতর্কতাস্বরূপ। “তবে যে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তার জন্যে প্রতিদানস্বরূপ আছে কল্যাণ এবং তার প্রতি ব্যবহারে আমি নম্র কথা বলব।" এখানে অধিক মূল্যবান প্রতিদানের কথা প্রথমে বলা হয়েছে অর্থাৎ-আখিরাতের পুরস্কার, তারপরে বলা হয়েছে তাদের প্রতি তার অনুগ্রহের কথা, এই অনুগ্রহ হলো ন্যায়-নীতি, জ্ঞান ও ঈমান “আবার সে এক পথ ধরল।” অর্থাৎ তিনি পশ্চিম থেকে প্রত্যাবর্তন দিকে যাওয়ার পথ ধরলেন। কথিত আছে, পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব প্রান্তে ফিরে আসতে তাঁর বার বছর অতিবাহিত হয়। “চলতে চলতে যখন সে সূর্যোদয়স্থলে পৌছল, তখন সে দেখল তা’ এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদিত হচ্ছে, যাদের জন্য সূর্যতাপ থেকে কোন অন্তরাল আমি সৃষ্টি করি নি।” অর্থাৎ তাদের কোন ঘর-বাড়ি ছিল না এবং সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার কোন উপায় ছিল না। তবে অনেক আলিম বলেছেন যে, তারা মাটিতে কবরের ন্যায় এক প্রকার সুড়ংগে প্রচণ্ড তাপের সময় আশ্রয় নিত। “প্রকৃত ঘটনা এটাই তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি"। অথাৎ যুল-কারনায়নের সকল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি অবহিত। আমি তাকে হেফাজত করেছিলাম এবং পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত সুদীর্ঘ যাত্রা পথে আমার প্রহরা তার উপর কার্যকর ছিল।

উবায়দ ইবন উমায়র ও তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ প্রমুখ আলিমগণ বলেছেন যে, যুল-কারনায়ন পদব্রজে হজ্ব পালন করেন। হযরত ইবরাহীম খলীল (আ) যুল-কারনায়নের আগমনের সংবাদ পেয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। উভয়ে একত্রে মিলিত হলে ইবরাহীম খলীল (আ) তাঁর জন্যে দোয়া করেন এবং কতিপয় উপদেশ দেন। কথিত আছে, হযরত খলীল একটি ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে যান এবং যুল-কারনায়নকে তাতে আরোহণ করতে বলেন। কিন্তু যুল-কারনায়ন অস্বীকার করে বলেন, যে শহরে আল্লাহর খলীল বিদ্যমান আছেন সেই শহরে আমি বাহনে আরোহণ করে প্রবেশ করব না। তখন আল্লাহ মেঘমালাকে তাঁর অনুগত করে দেন এবং ইবরাহীম এ সুখবর তাকে জানিয়ে দেন। তিনি যেখানে যাওয়ার ইচ্ছে করতেন মেঘমালা তাকে সেখানে নিয়ে যেত। আল্লাহর বাণীঃ আবার সে এক পথ চলতে চলতে সে যখন দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তীস্থলে পৌঁছল, তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল যারা তার কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না।” এ সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এরা হল তুর্কী জাতি ইয়াজুজ ও মাজুজের জ্ঞাতি ভাই।

এ সম্প্রদায়ের লোকজন যুল-কারনায়নের নিকট অভিযোগ করে যে, ইয়াজুজ ও মাজুজ গোত্রদ্বয় তাদের উপর অত্যাচার চালায়, লুটতরাজ ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের দ্বারা শহরকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। তারা যুল-কারনায়নকে কর দিতে আগ্রহ প্রকাশ করল, যাতে তিনি তাদের ও ইয়াজুজ-মাজুজের মাঝে একটি প্রাচীর তৈরী করে দেন। যাতে করে তারা আর এদিকে উঠে আসতে না পারে। যুল-কারনায়ন তাদের থেকে কর নিতে অস্বীকার করেন এবং তাকে আল্লাহ যে সম্পদ ও ক্ষমতা দিয়েছেন তাতেই সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বললেন “আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তা-ই উৎকৃষ্ট।" তিনি তাদেরকে শ্রমিক ও উপকরণ সরবরাহ করতে বললেন এবং উক্ত দুই পর্বতের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান ভরাট করে বাঁধ নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। আর এ দু’পর্বতের মধ্যবর্তী স্থান ছাড়া ইয়াজুজ-মাজুজের আসার অন্য কোন পথ ছিল না। তাদের এক দিকে ছিল গভীর সমুদ্র অন্য দিকে সুউচ্চ পর্বতমালা। অতঃপর তিনি লোহা ও গলিত তামা, মতান্তরে সীসা দ্বারা উক্ত বাঁধ নির্মাণ করেন। কিন্তু প্রথমোক্ত মতই সঠিক। সে মতে এ বাঁধ নির্মাণে তিনি ইটের পরিবর্তে লোহা এবং সুরকির পরিবর্তে তামা ব্যবহার করেন। আল্লাহ বলেন “এরপর তারা তা অতিক্রম করতে পারল না। অর্থাৎ সিড়ি কিংবা অন্য কিছুর সাহায্যে বাঁধ পার হয়ে আসতে পারল না। “এবং ভেদ করতেও পারল না” অর্থাৎ কুঠার বা শাবল দ্বারা ছিদ্র করতে পারল না। সহজের মুকাবিলায় সহজ ও কঠিনের মুকাবিলায় কঠিন নীতি অবলম্বন করা হল। “সে বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ।” অর্থাৎ এ বাঁধ নির্মাণের ক্ষমতা আল্লাহ-ই দান করেছেন। এটা তারই অনুগ্রহ ও দয়া। কেননা, এর দ্বারা উক্ত সীমালংঘনকারী জাতির অত্যাচার থেকে তাদের প্রতিবেশী লোকদেরকে রক্ষা করতে পেরেছেন। “যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে” অর্থাৎ শেষ যামানায় মানব জাতির উপর তাদের বের হয়ে আসার নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে। “তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন।” অর্থাৎ মাটির সাথে মিশিয়ে দিবেন। কেননা, তাদের বের হয়ে আসার জন্যে এ রকম হওয়া আবশ্যক। এ কারণে আল্লাহ বলেন “এবং আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।”

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “ইয়াজুজ-মাজুজকে যখন ছেড়ে দেয়া হবে তখন তারা ভূ-পৃষ্ঠের উঁচু স্থান দিয়ে দ্রুত অগ্রসর হতে থাকবে।” “আল্লাহর সত্য প্রতিশ্রুতি নিকটবর্তী।” এজন্যে এখানেও আল্লাহ বলেছেন, “সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দিব এ অবস্থায় যে, একদল আর এক দলের উপর তরংগের মত পতিত হবে।” ‘সেদিন’ বলতে বিশুদ্ধ মতে বাঁধ ভেংগে দেয়ার দিনকে বুঝান হয়েছে। “এবং শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সকলকেই একত্রিত করব।” (১৮ কাহফঃ ৯৯)। ইয়াজুজ ও মাজুজের বের হওয়া সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীস সমূহ আমরা তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছি। এই গ্রন্থের ‘ফিতান ও মালাহিম’ অধ্যায়ে আমরা সেগুলো উল্লেখ করব।

আবু দাউদ আত্-তায়ালিসী (র) সুফিয়ান ছাওরী (রা)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সর্বপ্রথম যিনি মুসাফাহার প্রবর্তন করল তিনি হলেন, যুল-কারনায়নঃ কাব আল-আহবার থেকে বর্ণিত। তিনি মুআবিয়া (রা)-কে বলেছেনঃ যুল-কারনায়নের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে তিনি তাঁর মাকে ওসিয়ত করেন যে, আমার মৃত্যু হয়ে গেলে আপনি ভোজের ব্যবস্থা করবেন এবং নগরীতে সমস্ত মহিলাদেরকে ডাকবেন। তারা আসলে তাদের সম্মুখে খানা রেখে সন্তান হারা মহিলারা ব্যতীত অন্যদেরকে আহার করতে বলবেন। যে সব মহিলা সন্তান হারিয়েছে তারা যেন উক্ত খাদ্য ভক্ষণ না করে। ওসিয়ত অনুযায়ী মা সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করে উক্তরূপে আহার গ্রহণের আহ্বান জানালেন। কিন্তু একজন মহিলাও খাবার স্পর্শ করল না। যুল-কারনায়নের মা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার তোমরা সকলেই কি সন্তান হারা?’ তারা বলল, ‘আল্লাহর কসম, আমরা প্রত্যেকেই সন্তান হারিয়েছি।’ তখন এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে তিনি মনে সান্তুনা লাভ করলেন। ইসহাক ইবন বিশর আবদুল্লাহ ইবন যিনাদের মাধ্যমে জনৈক আহলি কিতাব থেকে বর্ণনা করেন যে, যুল-কারনায়নের ওসিয়ত ও তার মায়ের উপদেশ একটি সুদীর্ঘ মূল্যবান উপদেশ। বহু-জ্ঞানপূর্ণ ও কল্যাণকর কথা তাতে আছে। যুল-কারনায়ন যখন ইন্তিকাল করেন, তখন তার বয়স হয়েছিল তিন হাজার বছর। এ বর্ণনাটি ‘গরীব’ পর্যায়ের।

ইবন আসাকির (র) অন্য এক সূত্রে বলেছেন, যুল-কারনায়ন ছত্রিশ বছর জীবিত ছিলেন। কারও মতে তিনি বত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন। হযরত দাউদ (আ)-এর সাতশ’ চল্লিশ বছর পর এবং আদম (আ)-এর পাঁচ হাজার একশ’ একাশি বছর পর তিনি দুনিয়ায় আগমন করেন এবং ষোল বছর রাজত্ব করেন। ইবন আসাকিরের এ বক্তব্য দ্বিতীয় ইসকান্দারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, প্রথম ইসকান্দারের ক্ষেত্রে নয়। তিনি দুই ইসকান্দারের মধ্যে প্রথম জন ও দ্বিতীয় জনের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। প্রকৃত পক্ষে ইসকান্দার দুইজন। আমরা বিভিন্ন বিজ্ঞজনের উদ্ধৃতি দিয়ে এ আলোচনার শুরুতে সে বিষয়ে উল্লেখ করে এসেছি। যারা দুই ইসকান্দরকে একজন ভেবেছেন তাদের মধ্যে সীরাত লেখক আবদুল মালিক ইবন হিশাম অন্যতম। হাফিজ আবুল কাসিম সুহায়লী এর জোর প্রতিবাদ করেছেন ও কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং উভয় ইসকান্দারের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য নির্ণয় করে দেখিয়েছেন। সুহায়লী বলেছেন, সম্ভবত প্রাচীন যুগের কতিপয় রাজা-বাদশাহ প্রথম ইসকান্দরের সাথে তুলনা করে দ্বিতীয় ইসকান্দরকেও যুল-কারনায়ন নামে আখ্যায়িত করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন