মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ঈসা (আ) ও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মধ্যবর্তী যুগের কয়েকটি ঘটনা
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/81
(ক) কাবা নির্মাণঃ
কেউ কেউ বলেন, সর্বপ্রথম যিনি কা’বা ঘর নির্মাণ করেন, তিনি হলেন আদম (আ)। আবদুল্লাহ ইবন আমর বর্ণিত এ সম্পর্কে একটি মারফু হাদীসও আছে। তবে এর সনদে ইবনুল হায়’আ নামক একজন দুর্বল রাবী রয়েছেন। বিশুদ্ধতর অভিমত হলে, সর্বপ্রথম যিনি কাবা ঘর নির্মাণ করেছেন, তিনি হলেন ইবরাহীম (আ)। ইতিপূর্বে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সিমাক ইবন হারব আলী ইবন আবু তালিব থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। আলী (রা) বলেন, অতঃপর কাবাঘর ধ্বংস হয়ে গেলে আমালিকা বংশীয়রা তা নির্মাণ করে। তারপর আবারও ধ্বংস হলে জুরহুম বংশীয়রা তা নির্মাণ করে। পুনরায় ধ্বংস হলে এবার কুরাইশরা তা নির্মাণ করে। কুরাইশের কাবাঘর পুনঃনির্মাণের আলোচনা পরে আসছে। তা ঘটেছিল নবী করীম (সা)-এর নবুওত লাভের পাঁচ বছর, মতান্তরে পনের বছর আগে। যুহরী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তখন যৌবনে উপনীত। যথাস্থানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।
(খ) কাব ইবন লুওয়াইঃ
আবু নু’আয়ম..... আবু সালামা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, কা’ব ইবন লুওয়াই প্রতি শুক্রবার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে সমবেত করে ভাষণ দিতেন। কুরাইশরা সে দিনটিকে বলতো আরূবা’। বক্তৃতায় তিনি বলতেন, হে লোক সকল! তোমরা শ্রবণ কর, শিক্ষা লাভ কর ও অনুধাবন কর! অন্ধকার রাত, আলোকোজ্জ্বল দিন বিছানা স্বরূপ পৃথিবী ছাদ আকাশ স্বরূপ, কীলকস্বরূপ পাহাড়রাজি আর পথ নির্দেশক তারকারাজি আগের পরের নির্বিশেষে সকল সকল, নারী ও পুরুষ সর্বপ্রথম স্বীকারোক্তি ( بلي )-এর প্রতি ইঙ্গিতকারী বিষয় এবং রূহ। তোমরা রক্তের আত্মীয়তা বজায় রেখে চল। বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষা কর। অর্থ-সম্পদকে ফলপ্রদ বানাও। মৃত্যুবরণকারী কাউকে কি তোমরা ফিরে আসতে কিংবা মৃত ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত হবে দেখেছ? আসল বাড়ী তোমাদের সম্মুখে। তোমরা যা বলছ, ব্যাপার তার বিপরীত। তোমাদের মর্যাদাকে তোমরা উৎকর্ষিত করে তোল এবং এর উপর দৃঢ় থাক। অচিরেই আসছে এক মহা সংবাদ। মহান এক নবী আত্মপ্রকাশ করছেন বলে। অতঃপর তিনি আবৃত্তি করেনঃ
نهار وليل كل يوم بحادث - سواء علينا ليلها ونهارها
يؤوبان بالأحداث حتي تؤبا- وبالنعم الضيافي عليناستورها
على غفلة يأتي النبي محمد – فيخبر أخبار اصدوق خبيرها
– রাত ও দিন প্রত্যহ নিত্য-নতুন ঘটনা নিয়ে আসছে। সেই রাত ও দিন সবই আমাদের জন্য সমান। বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা নিয়ে রাত-দিন ফিরে আসে। প্রভূত প্রাচুর্য নিয়ে আমাদের উপর তার আবরণ ঢেলে দেয়। নবী মুহাম্মদ এসে পড়বেন, তোমরা টেরও পাবে না। এসে তিনি বহু সংবাদ প্রদান করবেন, সংবাদদাতা হবেন মহা সত্যবাদী।
অতঃপর তিনি বলতেনঃ সেদিন পর্যন্ত যদি আমি বেঁচে থাকতাম,তাহলে অবশ্যই আমি উটের উপর দাঁড়িয়ে থাকার ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতাম এবং বাছুরের ন্যায় দৌড়াতাম। তারপর বললেনঃ
—হায়, যেদিন সমাজের মানুষ সত্যকে পদানত করতে চাইবে, সেদিন যদি আমি তার দাওয়াতের সামনে উপস্থিত থাকতে পারতাম!
বর্ণনাকারী বলেন, কা’ব ইবন লুওয়াই এর মৃত্যু এবং রাসূল (সা)-এর নবুওত লাভের মাঝে ব্যবধান ছিল পাঁচশত ষাট বছর।
(গ) যমযম কূপ পুনঃখননঃ
জুরহুম গোত্র যমযম কূপ বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে আবদুল মুত্তালিবের সময়কাল পর্যন্ত তার কোন চিহ্ন বিদ্যমান ছিল না। মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বর্ণনা করেন যে, একদা আব্দুল মুত্তালিব হিজরে তথা হাতীমে ঘুমিয়ে ছিলেন। এসম্পর্কে তিনি বলেন যে, হিজরে ঘুমন্ত অবস্থায় আমি স্বপ্নে দেখলাম। এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘তুমি ‘তায়্যেবা’ খনন কর।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তায়্যেবা কী?’ কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়েই সে চলে গেল। পরদিন রাতে আমি যখন বিছানায় গেলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম, লোকটি এসে পুনরায় আমাকে বলল, ‘বাররা’ খনন কর! আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বাররা কী?’ লোকটি আমাকে জবাব না দিয়েই চলে গেল। তৃতীয় রাতে আবারো স্বপ্নে দেখলাম যে, কে যেন আমাকে বলছে, ‘মাযনুনা’ খনন কর। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মাযনুনা কী?’ পরের রাতে আবারো এসে সে বলল, ‘যমযম খনন কর।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘যমযম কী?’ সে বলল, ‘যা কখনো শুকাবে না, মহান হাজীগণ যার পানি পান করবেন। গোবর ও রক্তের মধ্যখানে যার অবস্থান, সাদা পা বিশিষ্ট কাকের নিকটে, পিঁপড়ার বসতির কাছে।’
আব্দুল মুত্তালিব বলেন, পরিচয় ও জায়গার নির্দেশনা পেয়ে আমি কোদাল নিয়ে সেখানে গেলাম। পুত্র হারিছ ইবন আব্দুল মুত্তালিবও সঙ্গে ছিল। সে সময় পর্যন্ত তাঁর অন্য কোন পুত্র ছিল না। খনন কার্য শুরু হয়ে এক সময়ে তা শেষ হলো। আব্দুল মুত্তালিব পানি দেখতে পেয়ে উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবর বলে উঠলেন। তাকবীর ধ্বনি শুনে কুরাইশরা বুঝল যে, আব্দুল মুত্তালিব এর উদ্দেশ্যে হাসিল হয়ে গেছে। ফলে তারা তাঁর নিকট গিয়ে বলল, ‘হে আব্দুল মুত্তালিব! আপনি যে কূপের সন্ধান পেয়েছেন, তা আমাদের পিতা ইসমাঈলের কূপ এবং নিঃসন্দেহে তাতে আমাদের অধিকার আছে। অতএব আমাদেরকে তার ভাগ দিতে হবে।’ আব্দুল মুত্তালিব বললেন, ‘না, তা হবে না। এ কূপ শুধু আমাকেই দেওয়া হয়েছে, এতে তোমাদের কোন অংশ নেই।’ কুরাইশরা বলল, ‘আমরা এর দাবি ছাড়ব না। প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে লড়াই করে হলেও আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে ছাড়ব।’ আব্দুল মুত্তালিব বললেন, ‘ঠিক আছে, তা-ই যদি করো, তা হলে একজন লোক ঠিক কর, আমরা তার উপর এর বিচারের ভার অর্পণ করব।’ কুরাইশরা বলল, ‘বনূ সা’দ ইবন হুয়াইমের গণক ঠাকুরণীর কাছে চলুন।’ আব্দুল মুত্তালিব বললেন, ‘ঠিক আছে।’ এই গণক ঠাকুরণীর আবাসস্থল ছিল সিরিয়ার দিকে।
আব্দুল মুত্তালিব রওয়ানা হলেন। সঙ্গে তাঁর বনূ উমাইয়া এবং কুরাইশের প্রত্যেক গোত্রের একজন করে একদল লোক। তখনকার দিনে তা ছিল এক বিরান মরু প্রান্তর। এক সময়ে আব্দুল মুত্তালিব ও তার সঙ্গীদের পানি শেষ হয়ে গেল। তারা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লেন। এমন কি প্রাণ হারাবার উপক্রম হল। ফলে আব্দুল মুত্তালিবের সঙ্গীরা অন্যদের নিকট পানি চাইল। কিন্তু তারা পানি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলল, ‘আমরা নিজেরাও তোমাদের মত এ মরু প্রান্তরে বিপন্ন হওয়ার আশংকা করছি।’ অগত্যা আব্দুল মুত্তালিব সঙ্গীদেরকে বললেন, ‘গায়ে কিছুটা শক্তি-সামর্থ্য থাকতেই তোমরা নিজেদের জন্য গর্ত খনন করে রাখ, যাতে কেউ মারা গেলে সঙ্গীরা তাকে সেই গর্তে পুঁতে রাখতে পারে। এভাবে সর্বশেষ একজন হয়ত সমাধি থেকে বঞ্চিত হবে। তা হয় হোক। গোটা কাফেলা বিনা দাফনে থাকা অপেক্ষা একজন থাকাই ভালো।’ সঙ্গীরা বলল, ‘আপনার এই আদেশ অতি উত্তম। আমরা তা-ই করব।’ প্রত্যেকেই নিজের জন্য গর্ত খনন করল এবং বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করতে লাগল।
অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব সাথীদের বললেন, ‘আমরা এভাবে নিজেদেরকে মৃত্যুর হাতে সোপর্দ করে বসে রইলাম। চেষ্টা করলে হয়ত আল্লাহ কোন প্রকারে পানির ব্যবস্থা করেও দিবেন। বসে না থেকে তোমরা সামনে অগ্রসর হয়ে দেখ।’ তারা রওয়ানা হলো। আব্দুল মুত্তালিবের উট উঠে দাঁড়াতেই তার পায়ের নীচ থেকে সুমিষ্ট পানির ফোয়ারা বইতে শুরু করল। আব্দুল মুত্তালিব তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠলেন। সংগীরাও তাকবীর দিয়ে উঠল। আব্দুল মুত্তালিব বাহন থেকে নেমে পানি পান করলেন। সংগীরাও পানি পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করল এবং আপন আপন মশক ভরে নিল। অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশের গোত্রসমূহের প্রতিনিধিদেরকে আহ্বান করলেন। এতক্ষণ তারা তাকিয়ে এসব অবস্থা দেছিল। আব্দুল মুত্তালিব বললেন, “এসো এসো এই যে পানি! আল্লাহ আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন।” তারাও সেই পানি পান করল এবং পরিতৃপ্ত হলো। অতঃপর বলল, ‘আল্লাহ আপনাকে আমাদের উপর বিজয়ী করেছেন। শপথ আল্লাহর, যমযমের ব্যাপারে আমরা আপনার সঙ্গে আর কখনো বিবাদ করব না। এই মরু অঞ্চলে যিনি আপনাকে এ পানি দান করলেন, তিনিই আপনাকে যমযম দান করেছেন। অতএব নিরাপদে আপনি আপনার কূপের নিকট ফিরে যান।’ আব্দুল মুত্তালিব ফিরে গেলেন। প্রতিপক্ষও তার সঙ্গে ফিরে গেল। যমযম সম্পর্কিত বিবাদের মীমাংসা এভাবেই হয়ে গেল। গণক ঠাকুরণীর কাছে আর যাওয়ার প্রয়োজন হলো না। তারা তাঁর হাতেই যমযমের অধিকার ছেড়ে দিল।
ইবন ইসহাক বলেন, এই হলো আলী ইবন আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণিত যমযম সম্পর্কিত বর্ণনা। অন্য এক সূত্রে আমি শুনেছি যে, আব্দুল মুত্তালিব বর্ণনা করেছেন, স্বপ্নে যখন তাঁকে যমযম খনন করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন এ-ও বলা হয়েছিল— এরপর তুমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানির জন্য দোয়া করবে। আল্লাহর ঘরের হাজীরা তা পান করবে। এই কূপ যতদিন টিকে থাকবে, তা থেকে কোন ভয়ের কারণ থাকবে না’।
বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশের নিকট গিয়ে বললেন, ‘তোমরা জেনে রাখ, আমি যমযম খননের জন্যে আদিষ্ট হয়েছি।’ তারা জিজ্ঞাসা করল, ‘যমযম কোথায় তা কি আপনাকে বলে দেওয়া হয়েছে?’ আব্দুল মুত্তালিব বললেন, ‘না জানানো হয়নি।’ লোকেরা বলল, ‘তা হলে এ স্বপ্নটি যে বিছানায় শুয়ে দেখেছিলেন, আজও সে বিছানায় ঘুমাবেন। এই স্বপ্ন যদি সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তা হলে আল্লাহ বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়ে দিবেন। আর যদি তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তাহলে সে আর আসবে না।’ আব্দুল মুত্তালিব ফিরে গেলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। এবারও স্বপ্ন দেখলেন, কে যেন বলছে, ‘যমযম খনন কর, যদি তুমি তা কর তা হলে লজ্জিত হবে না। তা তোমার মহান পিতার উত্তরাধিকার; কখনো তা’ শুকাবে না। হাজীগণকে তুমি তা থেকে পান করাবে। মানতকারীরা সেখানে প্রাচুর্যের জন্য মানত করবে। তা পৈত্রিক সম্পত্তি হবে এবং মজবুত বন্ধন হবে। তার স্থান তুমি জান আর তা রক্ত ও গোবরের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে।’
ইবন ইসহাক বলেন, আব্দুল মুত্তালিবকে যখন স্বপ্নে এ সব কথা বলা হলো, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কূপটির অবস্থান কোথায়?’ বলা হলো, ‘পিঁপড়ের ঢিবির নিকট। আগামীকাল ওখানে কাক ঠোকরাবে।’
উক্ত বিবরণ দু’টির কোনটি যথার্থ, তা আল্লাহ্ই ভাল জানেন। আব্দুল মুত্তালিব পরের দিন পুত্র হারিছকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। সে সময়ে হারিছ ছাড়া তাঁর আর কোন পুত্র ছিল না। উমুবীর বর্ণনা মতে, তার গোলাম পিঁপড়ের ঢিবিতে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, আসাফ ও নায়লা মূর্তিদ্বয়ের মধ্যখানে কাক ঠোকরাচ্ছে। এই দুই মূর্তির নিকট কুরাইশরা পশু বলি দিত। আব্দুল মুত্তালিব কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। দেখে কুরাইশের লোকেরা ছুটে এসে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমরা তোমাকে এই জায়গার মাটি খুঁড়তে দেব না। আমাদের দুই দেবতার মধ্যকার এই স্থানে আমরা পশু বলি দেই।’ শুনে আব্দুল মুত্তালিব পুত্র হারিছকে বললেন, ‘আমি কূপ খনন করা পর্যন্ত তুমি আমার হেফাজতের ব্যবস্থা কর। আল্লাহর কসম, আমি যে কাজের আদেশ পেয়েছি, তা আমি বাস্তবায়ন করবই।’ আব্দুল মুত্তালিবের দৃঢ়তা দেখে কুরাইশের লোকেরা তাঁকে আর খনন কাজে বাধা দিল না।
আব্দুল মুত্তালিব খনন কার্য চালাতে থাকলেন। অল্প একটু খনন করার পরই পানি বেরিয়ে এলো। আব্দুল মুত্তালিব তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠলেন এবং পরিষ্কার বুঝতে পারলেন যে, তিনি যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা সত্য।
বেশ কিছুটা খনন করার পর আব্দুল মুত্তালিব তাতে স্বর্ণের দু’টি হরিণ মূর্তি পান। জুরহুম গোত্র এখানে তা পুঁতে রেখেছিল। সেখানে তিনি কয়েকটি তলোয়ার এবং কিছু বর্ম পেলেন। দেখে কুরাইশরা বলল, “আব্দুল মুত্তালিব! এতে তোমার সঙ্গে আমাদের ভাগ আছে।” আব্দুল মুত্তালিব বললেন, “না, তা হবে না। তবে একটি সুরাহায় আসতে পার। এসো লটারীর মাধ্যমে আমরা এর মীমাংসা করি।” কুরাইশরা বলল, ‘তা কিভাবে হবে বলুন।’ আব্দুল মুত্তালিব বললেন, ‘কাবার নামে দুটি তীর নাও। আমার নামে নাও দু’টি এবং তোমাদের নামে দুটি। যার তীর যে জিনিসটির উপর গিয়ে পড়বে সে তার মালিক হবে। আর যার তীর লক্ষ্যচ্যুত হবে, সে কিছুই পাবে না।’ কুরাইশরা বলল, ‘আপনার প্রস্তাবটি ন্যায়সঙ্গত।’
আব্দুল মুত্তালিব কাবার নামে দুটি হলুদ তীর নিলেন। নিজের জন্য নিলেন দু’টি কালো তীর এবং কুরাইশদের জন্য নিলেন দু’টি সাদা তীর। কুরাইশের বড় দেবতা তার নিকটবর্তী তীর নিক্ষেপকারীর নিকট তীরগুলি অর্পণ করে। হোবল- যে কারণে আবু সুফিয়ান ওহুদ যুদ্ধের দিন বলেছিল হোবলের জয় হোক– আব্দুল মুত্তালিব আল্লাহর নিকট দোয়া করতে লাগলেনঃ
اللهم أنت الملك المحمود - ربي أنت المبدئ المعيد
وممسك الراسية الجلمود من عندك الطارف والتليد
إن شئت ألهمت لما تريد - لموضع الحلية والحديد
فبين اليوم لما تريد - إني نذرت العاهد المعهود
اجعله ربي لي فلا أعود
— হে আল্লাহ! আপনি প্রশংসিত রাজাধিরাজ। আপনি আমার প্রতিপালক আপনিই সৃষ্টির সূচনাকারী এবং পুনঃসৃষ্টিকারী। আপনি পাথুরে পাহাড়কে সুদৃঢ় করে রেখেছেন। আপনার নিকট থেকে আসে অর্থ ও পশু সম্পদ। আপনি চাইলে আমার মনে ইলহাম করবেন কা’বার ঐ স্থানটি যেখানে ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ)-এর স্বর্ণালঙ্কার ও অস্ত্রশস্ত্র প্রোথিত রয়েছে। আজ আপনি আমাকে অবহিত করেন আপনার ইচ্ছা যদি আপনার মর্জি হয়। আমি শপথ করেছি। আপনি আমাকে তা দিয়ে দিন। আমি আর কিছু চাইবো না।
এবার তীর নিক্ষেপ শুরু হলো। হলুদ তীর দু’টি গিয়ে হরিণ মূর্তির উপর পতিত হলো। যা’ ছিল কা’বার জন্য। কালো দু’টি গিয়ে পড়ল তরবারী ও বর্মগুলোর উপর। এগুলো পেলেন আব্দুল মুত্তালিব। কুরাইশদের সাদা তীর দু’টো লক্ষ্যচ্যুত হলো। আব্দুল মুত্তালিব তরবারী এবং হরিণ মূর্তি দু’টি কাবার দরজায় স্থাপন করে রাখেন। লোকের ধারণা তা-ই ছিল কা’বার গায়ে প্রথম সোনার অলংকার। তারপর আব্দুল মুত্তালিব যমযম কূপে হাজীদের পানি পানের ব্যবস্থা করেন।
ইবন ইসহাক প্রমুখ বলেন, আব্দুল মুত্তালিবের আমলে যমযম উদঘাটিত হওয়ার আগে মক্কায় আরো অনেকগুলো কূপ ছিল। ইবন ইসহাক সেগুলোর সংখ্যা এবং নামধামও উল্লেখ করেছেন। সবশেষে বলেন, কিন্তু যমযম অন্যসব কূপের উপর প্রাধান্য লাভ করে এবং মানুষ অন্যান্য কূপ ছেড়ে যমযমের প্রতি ছুটে আসে। কারণ যমযম মসজিদুল হারামে অবস্থিত। আর এর পানি সব কূপ অপেক্ষা উত্তম। সর্বোপরি, যমযম ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর কূপ। আবদে মানাফের গোত্র এই কূপ নিয়ে কুরাইশের অন্যান্য গোত্র এবং সমস্ত আরবের উপর গর্ব করত।
হযরত আবুযর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণ বিষয়ক মুসলিম শরীফের এক হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) যমযম সম্পর্কে বলেছেনঃ
انها لطعام طعم وشفاء سقم
“এই যমযম তার পানকারীর জন্য খাদ্য স্বরূপ এবং তা রোগের নিরাময়ও বটে।”
ইমাম আহমদ হযরত জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রা)-এর বরাতে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ
ماء زمزم لما شرب منه
“যমযমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয় তা পূরণ হয়।”
ইবন মাজাহর বর্ণনায় এর পাঠ হচ্ছেঃ
ماء زمزم لما شرب له
হাকিম (র) ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন যে, তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বলেছেন, তুমি যখন যমযমের পানি পান করবে, তখন কিবলার দিকে মুখ করবে, বিসমিল্লাহ বলবে, তিন নিঃশ্বাসে পান করবে এবং পরিতৃপ্তি সহকারে পান করবে। যখন পান করা শেষ করবে, তখন ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “আমাদের ও মুনাফিকদের মাঝে পার্থক্য হলো, ওরা যমযমের পানি তৃপ্তি সহকারে পান করে না।”
আব্দুল মুত্তালিব থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! এই যমযমের পানি আমি গোসলকারীর জন্য হালাল মনে করি না। যমযমের পানি পানকারীর জন্য বৈধ।” কেউ কেউ এ উক্তিটি আব্বাস (রা)-এর বলে মত প্রকাশ করলে ও বিশুদ্ধ মতে এটি আবদুল মুত্তালিবেরই উক্তি। কেননা তিনিই এটি পুনঃ খনন করেছিলেন।
উমাবী তাঁর মাগাযীতে বর্ণনা করেছেন যে, আবু উবায়দ ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ ও আব্দুর রহমান ইবন হারমালাহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আব্দুর রহমান ইবন হারমালা বলেন, আমি সাঈদ ইবন মুসায়্যাবকে বলতে শুনেছি যে, আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিম যখন যমযম খনন করলেন তখন বলেছিলেন, “এই কূপ গোসলকারীর জন্য হালাল নয়, এটি কেবল পানকারীর জন্যই বৈধ।” তিনি যমযম কূপে দু’টি হাউজ তৈরি করে দিয়েছিলেন। একটি পান করার জন্য অপরটি ওজু করার জন্য। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘একে আমি গোসলের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেব না।’ তার উদ্দেশ্যে ছিল মসজিদকে পবিত্র রাখা।
আবু উবায়দ অন্য এক সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আসিম ইবন আবুন্নাজুদ আব্বাস (রা)-কে বলতে শুনেছেন, আমি একে গোসলকারীর জন্য হালাল করব না। এটি পানকারীর জন্য বৈধ। আব্দুর রহমান ইবন মাহ্দী সুফিয়ান ও আব্দুর রহমান ইব্ন আলকামা সূত্রেও ইবন আব্বাস (রা) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
মূলত যমযমের পানি দ্বারা গোসল করা নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু আব্দুল মুত্তালিব ও আব্বাস (রা) এ কাজ থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এমনটি বলেছিলেন বলে মনে হয়।
উল্লেখ্য যে, আব্দুল মুত্তালিব যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত তিনিই যমযমের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই দায়িত্ব পুত্র আবু তালিবের উপর ন্যাস্ত হয়।
আবু তালিব অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে তিনি তার ভাই আব্বাস-এর নিকট থেকে দশ হাজার মুদ্রা ঋণ নিয়ে হাজীদের জন্য যমযমের কাজে ব্যয় করেন। কথা ছিল, পরের বছর সে ঋণ শোধ করে দেবেন। কিন্তু একবছর চলে যাওয়ার পরও আবু তালিবের স্বচ্ছলতা ফিরে আসল না। তাই তিনি আব্বাসকে বললেন, তুমি আমাকে চৌদ্দ হাজার মুদ্রা ঋণ দাও। আগামী বছর আমি তোমার সব পাওনা পরিশোধ করে দেব। জবাবে আব্বাস (রা) বললেন, এই শর্তে দিতে পারি যে, যদি আপনি যথাসময়ে ঋণ শোধ করতে না পারেন, তাহলে যমযমের কর্তৃত্ব আমার হাতে চলে আসবে। আবু তালিব শর্তটি মেনে নেন। এক বছর চলে যাওয়ার পরও আবু তালিব ঋণ পরিশোধ করার কোন ব্যবস্থা করতে পারলেন না। ফলে শর্ত অনুযায়ী যমযমের দায়িত্বভার আব্বাসকে দিয়ে দেন। আব্বাসের পরে যমযমের দায়িত্ব আব্বাসের পুত্র আব্দুল্লাহর হাতে আসে। আব্দুল্লাহর পরে আসে আলী ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাসের হাতে। তার পর আসে দাউদ ইবন আলীর হাতে। অতঃপর সুলায়মান ইব্ন আলীর হাতে। অতঃপর ঈসা ইবন আলীর হাতে। অতঃপর মনসুর যমযমের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তাঁর আযাদকৃত গোলাম আবু রাযীনকে দেখা-শোনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। উমুবী এরূপ বর্ণনা করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/81
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।