মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অর্থাৎ, (১) শপথ বুরুজ বিশিষ্ট আকাশের (২) এবং প্রতিশ্রুত দিবসের (3) শপথ দ্রষ্টা ও দৃষ্টের (৪) ধ্বংস হয়েছিল কুণ্ডের অধিপতিরা (৫) ইন্ধনপূর্ণ যে কুণ্ডে ছিল আগুন (৬) যখন তারা সেটির পাশে উপবিষ্ট ছিল (৭) এবং তারা মুমিনদের সাথে যা করছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল (৮) ওরা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এ কারণে যে, তারা বিশ্বাস করত পরাক্রমশালী ও প্রশংসাই আল্লাহে (৯) আকাশ রাজি ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব যার, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে দ্রষ্টা। (১০) যারা ঈমানদার নর-নারীকে বিপদাপন্ন করেছে এবং পরে তাওবা করেনি তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি, আছে দহন যন্ত্রণা। (৮৫ বুরুজঃ ১-১০)
এ সূরার তফসীর প্রসঙ্গে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে আমরা ব্যাপক ও বিস্তারিত আলোচনা করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। মুহাম্মদ ইবন ইসহাক মনে করেন যে, কুণ্ড অধিপতিরা হযরত ঈসা (আ)-এর নবুওত প্রাপ্তির পরবর্তী যুগের লোক। পক্ষান্তরে অন্যান্যরা মনে করেন যে, এটি তার পূর্বের যুগের ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীতে একাধিকবার ঘটেছে। স্বৈরাচারী কাফির রাজা বাদশাহরা বারে বারে ঈমানদার মানুষদের ওপর এ প্রকার নির্যাতন চালিয়েছে। তবে কুরআন মজীদে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে একটি মারফু হাদীছ এবং ইবন ইসহাক বর্ণিত একটি বর্ণনা রয়েছে। এ দুটো পরস্পর বিরোধী। পাঠকের জ্ঞাতার্থে আমি উভয় বর্ণনাই উল্লেখ করছি। ইমাম আহমদ সুহায়ব (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমাদের পূর্বের যুগে এক রাজা ছিল। তার ছিল এক যাদুকর। যাদুকর বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর রাজাকে বলল, ‘আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি আর আমার মৃত্যুও ঘনিয়ে এসেছে। এখন আমাকে একটি বালক যোগাড় করে দিন, তাকে আমি যাদু শিখাব।’ রাজা একটি বালক যোগাড় করে দিলেন। যাদুকর ওকে যাদু শিখাচ্ছিল। রাজার রাজপ্রাসাদ ও যাদুকরের আখড়ার মধ্যখানে ছিল জনৈক ধর্মযাজকের আস্তানা। বালকটি একদিন ধর্মযাজকের আস্তানায় আসে এবং তার কথা শোনে। তার কথা বালকটির পছন্দ হয়। এ দিকে বালকটি যাদুকরের নিকট গেলে যাদুকর তাকে প্রহার করতো এবং বলতো, ‘বিলম্ব করেছিস কেন? কিসে তোকে আটকে রাখে?’ নিজের বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন তাকে প্রহার করতো এবং বলতো, ‘দেরী করেছিস কেন?’ এ বিষয়টি সে যাজককে জানায়। যাজক তাকে পরামর্শ দেয় যে, ‘যাদুকর তোমাকে মারতে গেলে তুমি বলবে আমার ঘরের লোকজন আমাকে আটকে রেখেছিল। আর ঘরের লোকজন মারতে গেলে বলবে যাদুকর আমাকে আটকে রেখেছিল।’ একদিন যাওয়ার পথে সে পথের ওপর একটি বিশালাকৃতির ভয়ানক জন্তু দেখতে পায়। যেটি লোকজনের পথ আটকে রেখেছিল। পথিকগণ পথ অতিক্রম করতে পারছিল না। বালকটি মনে মনে বলে, আল্লাহ তা’আলার নিকট যাদুকরের কাজ বেশি প্রিয়, নাকি ধর্মযাজকের কাজ বেশি প্রিয়, তা আমি আজ পরীক্ষা করব। সে একটি পাথর তুলে নিয়ে এ বলে জন্তুটির দিকে ছুঁড়ে মারল, ‘হে আল্লাহ! যাজকের কর্ম যদি আপনার বেশি প্রিয় ও পছন্দনীয় হয় তবে এ পাথর দ্বারা জন্তুটিকে বধ করে দিন, যাতে লোকজন পথ অতিক্রম করতে পারে।’ তার পাথরের আঘাতে জন্তুটি নিহত হয়। যাজকের নিকট গিয়ে সে তা জানায়। যাজক বললেন, ‘প্রিয় বৎস! আল্লাহর নিকট তুমি আমার চেয়ে অধিক প্রিয়। তুমি অবশ্যই বিপদে পড়বে, পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। বিপদে পড়লে কাউকে আমার সন্ধান দিবে না।’
তারপর বালকটি জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করত, কুষ্ঠরোগ নিরাময় করত। তার হাতে আল্লাহ রোগীদেরকে সুস্থ করে দিতেন। রাজার এক পরিষদ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বালকের কথা তার কানে যায় তিনি প্রচুর হাদিয়া নিয়ে বালকের নিকট এসে বলেন, ‘তুমি যদি আমাকে সুস্থ করে দিতে পার তবে এসব হাদিয়া তুমি পাবে।’ বালক বলল, ‘আমি তো কাউকে সুস্থ করতে পারি না। একমাত্র আল্লাহই সুস্থ করেন। আপনি যদি তার প্রতি ঈমান আনেন এবং আমি তাঁর নিকট দোয়া করি তাহলে তিনি আপনাকে সুস্থ করে দিবেন।’ তিনি ঈমান আনলেন এবং বালকটি দোয়া করল। আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিলেন।
তারপর উক্ত সভাষদ রাজার নিকট আসলেন এবং ইতিপূর্বে যেভাবে বসতেন সেভাবে বসলেন। রাজা বললেন, ‘তোমাকে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিল কে?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আমার প্রতিপালক।’ রাজা বলল, ‘আমি?’ তিনি বললেন, ‘না। আমার ও আপনার প্রতিপালক আল্লাহ।’ রাজা বলল, ‘আমি ছাড়া তোমার কি অন্য কোন প্রতিপালক আছে?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার এবং আপনার প্রতিপালক আল্লাহ।’ তখন রাজা তাকে বিরামহীনভাবে নির্যাতন করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত তিনি বালকটির সন্ধান নিয়ে নিলেন। তখন বালকটিকে রাজ দরবারে নিয়ে আসা হলো। রাজা বলল, ‘বৎস! যাদু বিদ্যায় তুমি এত পারদর্শিতা অর্জন করেছ যে, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে পর্যন্ত নিরাময় করতে পার এবং সকল রোগের চিকিৎসা করতে পার।’ বালকটি বলল, ‘আমি তো নিরাময় করি না। নিরাময় করেন আল্লাহ তা’আলা।’ রাজা বলল, ‘আমি?’ সে বলল, ‘না।’ রাজা বলল, ‘আমি ছাড়া তোমার কি অন্য কোন প্রতিপালক আছে?’ জবাবে বালকটি বলল, ‘আমার এবং আপনার প্রতিপালক আল্লাহ।’
তখন রাজা তার উপর বিরামহীন নির্যাতন চালাতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সে যাজকের নাম প্রকাশ করে দিল। যাজককে রাজ দরবারে ডাকা হল। রাজা তাকে বলল, ‘তোমার ধর্ম ত্যাগ কর।’ তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর মাথার মধ্যভাগে করাত চালিয়ে তাকে দু’ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হয়। অন্ধ ব্যক্তিকে রাজা বলল, ‘ঐ ধর্ম ত্যাগ কর।’ তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানালেন। তার মাথায় করাত রেখে তাকে দু’ভাগে ভাগ করে দেয়া হল। রাজা তখন বালককে বলল, ‘ঐ ধর্ম ত্যাগ কর।’ সে তাতে অস্বীকৃতি জানাল। অতঃপর একদল নয়া লোক দিয়ে তাকে পাহাড়ের ওপর পাঠানো হয়। রাজা তাদেরকে নির্দেশ দিল যে, তোমরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দেখবে, সে তার ধর্ম ত্যাগ করে কিনা! যদি সে ধর্ম ত্যাগ করে তো ভাল। নতুবা ধাক্কা মেরে তাকে ওখান থেকে ফেলে দিবে।
তারা বালকটিকে নিয়ে যায়। যখন তারা পাহাড়ের ওপর উঠল, তখন বালকটি বলল, ‘হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছা মুতাবিক তাদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন!’ এ সময় হঠাৎ সবাইকে নিয়ে পর্বত কেঁপে উঠে। সবাই পাথর চাপা পড়ে মারা যায়। বালকটি পথ খুঁজে খুঁজে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে এবং রাজার নিকট উপস্থিত হয়। আর রাজা তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার সাথে যারা ছিল তাদের খবর কি?’ বালকটি উত্তর দিল, ‘তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছেন।’ তখন রাজা তাকে তার লোকজন দিয়ে একটি নৌকায় করে সমুদ্রে পাঠিয়ে দিল। রাজা বলল, ‘তোমরা যখন গভীর সমুদ্রে গিয়ে পৌঁছবে তখন যদি সে তার ধর্ম ত্যাগ করে তবে ভাল কথা। অন্যথায় তাকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারবে।’ লোকজন তাকে সমুদ্রে নিয়ে গেল। বালকটি বলল, ‘হে আল্লাহ! আপনার যেভাবে ইচ্ছা আমাকে ওদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন।’ তখন তারা সবাই সমুদ্রে ডুবে মারা গেল। বেঁচে গেল বালকটি। সে ফিরে এসে রাজার নিকট উপস্থিত হল। তখন রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার সাথী লোকজনের সংবাদ কি?’ বালকটি উত্তরে জানাল, ‘আল্লাহ তা’আলা আমার সাহায্যে ওদের ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন।’
বালক রাজাকে আরো বলল যে, ‘আমি যে পরামর্শ দিব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে আপনি আমাকে হত্যা করতে পারবেন না। আমার পরামর্শ মানলেই কেবল আমাকে হত্যা করতে পারবেন।’ তখন রাজা জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার পরামর্শটি কি?’ সে বলল, ‘সকলকে একটি মাঠে সমবেত করবেন। তারপর আমাকে খেজুর গাছের কাণ্ডে শূলে চড়াবেন। এরপর আমার ঝুড়ি থেকে একটি তীর নিয়ে এই ‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গোলাম-এই বালকের প্রভু আল্লাহর নামে নিক্ষেপ করছি’ বলে তীরটি আমার দিকে নিক্ষেপ করবেন।’ রাজা তখন তাই করল। তীর গিয়ে বালকের ললাটের উপর পড়ল, সে নিজের ক্ষত স্থানে হাত রাখল এবং শহীদ হয়ে গেল। এসব দেখে উপস্থিত লোকজন চীৎকার করে বলে উঠল, ‘আমরা বালকটির প্রতিচালকের প্রতি ঈমান আনলাম। আমরা বালকটির প্রতিচালকের প্রতি ঈমান আনলাম।’ রাজাকে বলা হল, আপনি যা আশঙ্কা করেছিলেন তাইতো হল। আল্লাহ আপনার প্রতি সেই বিপদই তো নাযিল করলেন। লোকজন সকলেই তো ঈমান এনে ফেলেছে। রাজার নির্দেশে প্রত্যেক গলির মুখে গর্ত খনন করা হল। তাতে আগুন জ্বালানো হল। রাজা বলল, যে ব্যক্তি ঐ ধর্ম ত্যাগ করবে তাকে রেহাই দিবে। আর যারা তাতে স্বীকৃতি জানাবে তাদেরকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে।
লোকজন ওখান দিয়ে যাচ্ছিল আর অগ্নিকুণ্ডে পতিত হচ্ছিল। জনৈকা মহিলা তার নিকট উপস্থিত হল। এক দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ সেখানে মহিলাটি আগুনে পতিত হতে ইতস্ততঃ করছিল। তার শিশুটি বলে উঠল, ‘মা! তুমি ধৈর্যধারণ কর, কারণ, তুমি সত্যের ওপর রয়েছ।’ এটি ইমাম আহমদের বর্ণনা। ইমাম মুসলিম ও নাসাঈ প্রমুখ সহীহ্ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। এগুলো আমি আমার তাফসীর গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক এ ঘটনাটি অন্যভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নাজরানের অধিবাসিগণ ছিল মুশরিক। তারা দেব-দেবীর পূজা করত। নাজরানের পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে (নাজরান নগর হল নাজরান অঞ্চলের কেন্দ্রীয় শহর) এক যাদুকর বসবাস করত। নাজরানের বালকদের সে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। ইবনে মুনাব্বিহ্ বলেন, ফাইমূন নামক জনৈক ব্যক্তি সেখানে এসে একটি তাঁবু স্থাপন করে। তাঁর তাঁবুটি ছিল নাজরান ও যাদুকরের গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে। নাজরানের লোকেরা তাদের ছেলেদেরকে ঐ যাদুকরের নিকট নিয়মিত পাঠাত। সে তাদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। অন্যান্য বালকের সাথে তামুর তাঁর পুত্র আবদুল্লাহকে যাদুকরের নিকট প্রেরণ করে। যাওয়ার পথে আবদুল্লাহ ঐ তাঁবুওয়ালা লোকটিকে দেখত। তার নামায ও ইবাদত আবদুল্লাহর ভাল লাগত। সে তাঁবু ওয়ালার নিকট বসতে এবং তার কথাবার্তা শুনতে লাগলো শেষ পর্যন্ত সে মুসলমান হয়ে গেল। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করে সে তার ইবাদত করতে লাগল। তাঁবু ওয়ালার নিকট থেকে ইসলামের বিধি-বিধান জেনে নিত। অবশেষে ইসলামের বিধি বিধান-সম্পর্কে যখন সে গভীর জ্ঞান অর্জন করে তখন সে তাঁবুওয়ালার নিকট ইসমে আজম শিখতে চায়। তাঁবুওয়ালা ইসমে আজম জানতেন বটে, কিন্তু আবদুল্লাহর নিকট তা গোপন রাখতেন। তিনি বললেন, ‘ভাতিজা! তুমি ইসমে আজম সহ্য করতে পারবে না। তোমার দুর্বলতা সম্পর্কে আমি শংকিত।’ তামুরের ধারণা ছিল যে অন্যান্য বালকের ন্যায় তার পুত্রটিও নিয়মিত যাদুকরের আস্তানায় যাতায়াত করছে!
আবদুল্লাহ যখন বুঝতে পারল যে, ইসমে আজম শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে তার গুরু কার্পণ্য করছেন এবং তার দুর্বলতার আশংকা করছেন তখন সে কয়েকটি তীর সংগ্রহ করে। এরপর তার জানা আল্লাহর প্রত্যেকটি নাম ঐ তীরগুলোতে লিখে। প্রত্যেকটিতে একটি করে নাম লিখা শেষ করে সে এক স্থানে আগুন জ্বালায়। এরপর একটি একটি করে তীর আগুনে নিক্ষেপ করতে থাকে। ক্রমে আমি লেখা তীরটি আগুনে ফেলার সাথে সাথে তীরটি লাফিয়ে উঠে এবং আগুন থেকে বেরিয়ে আসে। আগুনে তীরটির সামান্যতমও ক্ষতি হয়নি। ঐ তীরটি নিয়ে আবদুলাহ তার গুরুর নিকট উপস্থিত হয় এবং বলে যে, সে ইসমে আজম জেনে ফেলেছে, যা তার গুরু গোপন রেখেছিলেন। গুরু বললেন, ‘বল তো কোনটি ইসমে আজম?’ সে বলল, ‘তা এরূপ এরূপ।’ গুরু বললেন, ‘তুমি কেমন করে জানলে?’ বালক সকল ঘটনা খুলে বলে। গুরু বললেন, ‘ভাতিজা! তুমি ঠিকই ইসমে আজম জেনে নিয়েছ। তবে নিজেকে সংযত রাখবে। অবশ্য তুমি তা পারবে বলে আমার মনে হয় না।’
এরপর থেকে আবদুল্লাহ নাজরানে প্রবেশ করলে এবং কোন দুঃস্থ ও বিপদগ্রস্ত লোক দেখলে বলত, ‘হে আল্লাহর বান্দা, তুমি আল্লাহর একত্ববাদ মেনে নাও এবং আমার দীনে প্রবেশ কর। আমি তোমার জন্যে আল্লাহর নিকট দোয়া করব। আল্লাহ তোমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।’ সংশ্লিষ্ট লোক ঈমান আনলে সে দোয়া করত এবং আল্লাহ ঐ বিপদগ্রস্ত লোককে বিপদমুক্ত করতেন। এভাবে তার বিষয়টি নাজরানের রাজার কানে পৌঁছে। রাজা তাকে তলব করে এবং তাকে অভিযুক্ত করে বলে যে, ‘তুমি আমার প্রজাদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করেছ। আমার দীন ও আমার পূর্ব পুরুষের দীনের বিরুদ্ধাচরণ করেছ। আমি ওর প্রতিশোধ নেব।’
আবদুল্লাহ বলল, ‘আপনি তা পারবেন না।’ রাজা পাইক পেয়াদা সহকারে তাকে পাঠাল। সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ থেকে ওকে নিচে নিক্ষেপ করা হল। কিন্তু তার কোনই ক্ষতি হল না। তাকে প্রেরণ করা হল নাজরানের সমুদ্রে, সেখানে যা-ই নিক্ষেপ করা হয় তাই ধ্বংস হয়। বালককে ঐ সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়। সে সমুদ্র থেকে নির্বিবাদে উঠে আসে। আবদুল্লাহ যখন সকল ক্ষেত্রে জয়ী হল তখন সে রাজাকে বলল, ‘আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহতে ঈমান না আনবেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার না করবেন, ততক্ষণ আমাকে হত্যা করতে পারবেন না।
আপনি যদি ঈমান আনেন তবে আমার ওপর কর্তৃত্ব পাবেন এবং আমাকে হত্যা করতে পারবেন।’ অগত্যা রাজা আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার করল এবং আবদুল্লাহ ইবন তামুরের ন্যায় কলেমা পাঠ করল। তারপর তার লাঠি দ্বারা আবদুল্লাহকে আঘাত করে রক্ত প্রবাহিত করে দিল। অবশেষে আবদুল্লাহ মারা গেল। রাজারও সেখানে মৃত্যু হল। এবার সকলে আল্লাহর দীন গ্রহণ করলেন।
আবদুল্লাহ মূলতঃ হযরত ঈসা (সা)-এর ইনজীলের অনুসারী ছিলেন। এরপর খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীগণের যে পরিণতি হয়েছিল, তাদের পরিণতিও তাই হয়েছিল। নাজরান অঞ্চলে খৃষ্ট ধর্মের প্রসারের এটাই ছিল মূল কারণ। ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবন তামুর সম্পর্কে মুহাম্মদ ইবন কাব ও কতক নাজরান অধিবাসীর বর্ণনা এরূপই। প্রকৃত ঘটনা যে কোনটি, তা আল্লাহই ভাল জানেন। বর্ণনাকারী আরও বলেন, অতঃপর বাদশাহ য়ু-নুওয়াস তার সৈন্য সামন্তসহ এ খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। সে তাদেরকে ইয়াহুদী ধর্ম গ্রহণ অথবা মৃত্যু এ দু’টোর যে কোন একটি বেছে নিতে বলে। তারা মৃত্যুকেই বছে নেয়। আক্রমণকারীরা বহু গর্ত খনন করে এবং তাতে আগুন জ্বালিয়ে অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে। অতঃপর ওদেরকে তরবারীর আঘাতে খণ্ড বিখণ্ড করে হাতপা কেটে ফেলে এবং অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারে। প্রায় বিশ হাজার খ্রীষ্টানকে তারা এভাবে হত্যা করে।
য়ুনুওয়াস ও তাঁর সৈন্যদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা’আলা তার রাসূলের নিকট এ আয়াত নাযিল করেন।
“ধ্বংস হয়েছিল কুণ্ড আধিপতিরা। ইন্ধনপূর্ণ যে কুণ্ডে ছিল অগ্নি।’ এতে বুঝা যায় যে, এই ঘটনা আর সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ঘটনা এক নয়।
কেউ কেউ বলেন যে, অগ্নিকুণ্ড বিষয়ক ঘটনা পৃথিবীতে একাধিক বার ঘটেছে। যেমন ইবন আবী হাতিম আবদুর রহমান ইবন জুবায়ের থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ইয়ামানে অগ্নিকুণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল তুব্বা রাজার আমলে। কনষ্টান্টিনোপালে ঘটেছিল রাজা কনষ্টান্টনাইনের আমলে যখন সে খৃষ্টানদেরকে হযরত ঈসা (আ)-এর কিবলা ও তার প্রচারিত একত্ববাদ থেকে ফিরিয়ে নেয়। সে তখন একটি অগ্নিকুণ্ড প্রজ্বলিত করেছিল। যে সকল খৃষ্টান হযরত ঈসা (আ)-এর দীন ও তাঁর একত্ববাদে অবিচল ছিল, সে তাদেরকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মেরেছিল।
ইরাকের ব্যাবিলন শহরে এ ঘটনা ঘটেছিল? সম্রাট বুখত নসর (Nebuchad Negar)-এর শাসনামলে তিনি একটি মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। লোকজনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ওই মূর্তিকে সিজদা করতে। লোকজন সিজদা করেছিল। কিন্তু দানিয়াল (আ) ও তাঁর দুইজন সাথী আযরিয়া ও মাসাইল সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানান। সম্রাট তাদের জন্যে একটি উনুন তৈরি করে। তাতে কাঠ ও আগুন জ্বালিয়ে সেই অগ্নিকুণ্ডে তাদের দুজনকে নিক্ষেপ করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য অগ্নিকুণ্ডকে শীতল ও শান্তিময় করে দেন এবং তাদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করেন এবং অত্যাচারীদেরকে ঐ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন। তারা ছিল সংখ্যায় ৯ জন। আগুন তাদেরকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল। আসবাত বর্ণনা করেন যেঃ
( قُتِلَ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡأُخۡدُودِ )
[Surah Al-Buruj 4]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সুদ্দী বলেছেন, অগ্নিকুন্ড ছিল তিনটি। একটি সিরিয়ায়, একটি ইরাকে এবং অপরটি ইয়ামানে। এটি ইবন আবী হাতিমের বর্ণনা। সূরা বুরুজের তাফসীরে আমি অগ্নিকুণ্ড অধিপতিদের ঘটনাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/42
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।