hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৬০
মদীনা অধিবাসীদের সাথে তুব্বা সম্রাট আবু কুরাবের ঘটনা
বায়তুল্লাহ শরীফের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রয়াস এবং পরবর্তীতে সম্মানার্থে বায়তুল্লাহ শরীফে গিলাফ ছড়ান প্রসঙ্গে

ইবন ইসহাক বললেন, রবীআ ইবন নাসরের মৃত্যুর পর সমগ্র ইয়ামান হাসসান ইবন তুব্বান আসআদ আবু কুরাবের করতলগত হয়। তুব্বান আসআদ ছিলেন সর্বশেষ তুব্বা। ইনি ছিলেন কালকীরের ইবন যায়দ, যায়দ ছিলেন সর্বপ্রথম তুব্বা তিনি ছিলেন আমর যিল আযআর ইবন আবরাহা যিল মানার ইবন রাইশ ইবন আদী ইবন সায়ফী ইবন সাবা আল আসগর ইবন কা’ব কাহফুয যুলাম ইবন জায়দ ইবন আহল ইবন আমর ইবন কুস্ ইবন মু’আবিয়া ইবন জাসম ইবন আবদে শামস ইবন ওয়াইল ইবন গাওছ ইবন কুতান ইব্‌ন আরিব ইব্‌ন যুহায়র ইবন আনাস ইবন হামাইসি ইবন আরবাহাজ। এই আরবাহাজ হচ্ছেন হিমইয়ার ইবন সাবা আল আকবার ইবন ইয়ারুব ইবন ইয়াশজুয ইবন কাহতান। ইবন ইসহাক বলেন, এই তুব্বাল আসআদ আবু কুরাব সেই ব্যক্তি যে মদীনায় এসেছিলেন এবং দু’জন ইহুদী ধর্মযাজককে তার সাথে ইয়ামানে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের সংস্কার সাধন ও তাতে সর্বপ্রথম গিলাফ চড়িয়েছিলেন তার শাসন কাল ছিল রবীআ ইবন নাসরের শাসনকালের পূর্বে। পূর্ব দেশীয় রাজ্যগুলো জয় করে তিনি মদীনা হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করছিলেন। অভিযানের শুরুতেও তিনি মদীনা হয়ে গিয়েছিলেন। মদীনার অধিবাসীদেরকে তিনি উচ্ছেদ করেননি। তাঁর এক পুত্রকে তিনি তাদের শাসকরূপে রেখে গিয়েছিলেন। গুপ্তঘাতকের হাতে তার ওই পুত্র সেখানে নিহত হন। এ কারণে তিনি মদীনা ধ্বংস, তার অধিবাসীদেরকে উচ্ছেদ এবং উদ্যানরাজি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্য মদীনায় ফিরে আসল। তাদের নেতৃত্বে ছিল নাজ্জার বংশীয় আমর ইবন তাশহা। তিনি বানু আমর ইবন মাবযূলেরও একজন মাবযূলের নাম আমির ইবন মালিক ইবন নাজ্জার। নাজ্জারের নাম তায়মুল্লাহ ইব্‌ন ছালাবা ইবন আমর ইব্‌ন খাযরাজ ইবন হারিছা ইবন ছা’লাবা ইবন আমির।

ইবন হিশাম বলেন, আমর ইবন তালহা। আমর ইবন মুআবিয়া ইবন আমর ইবন আমির ইবন মালিক ইবন নাজ্জার। তালহা তার মায়ের নাম। তালহা ছিলেন আমির ইবন যুরায়ক খায়রাজি-এর কন্যা।

ইবন ইসহাক বলেন বানু ‘আদী ইবন নাজ্জার গোত্রের আলমার নামে জনৈক ব্যক্তি তুব্বার দলের এক ব্যক্তির উপর আক্রমণ করে বসে। লোকটি আহমারের খেজুর গাছ থেকে খেজুর কাটছিল। কাঁচির আঘাতে আহমর তাকে হত্যা করেন এবং বলেন খেজুর সে পাবে যে তার যত্ন করে। এ ঘটনায় তুব্বা তাদের প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। ফলে উভয়পক্ষে যুদ্ধ শুরু হয়। আনসারগণের ধারণা তাদের পূর্বপুরুষরা দিনে তুব্বা পক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন আর রাতে তাদের মেহমানদারী করতেন। তাদের আচরণে তুব্বা খুব খুশী হন এবং বলেন হায়! আমাদের সম্প্রদায় তো অলস। আনসারদের সূত্রে ইবন ইসহাক বর্ণনা করেন যে, তুব্বা ক্ষেপে ছিলেন ইহুদী জাতির বিরুদ্ধে। কারণ তারা আনসারদের হয়ে তার বিরুদ্ধে লড়েছিল।

সুহায়লী বলেন, কথিত আছে যে, তুব্বা এসেছিলেন ইহুদীদের বিরুদ্ধে আনসারদেরকে সাহায্য করতে। আনসারগণ ছিলেন তাঁর চাচার বংশধর। ইহুদীগণ শর্ত সাপেক্ষে মদীনায় বসবাসের অনুমতি পেয়েছিল। পরে তারা শর্তগুলো পূরণ করেনি। বরং আনসারদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করেছিল। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইবন ইসহাক বলেন, তুব্বা যখন যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন তখন বনু কুরায়যা গোত্রের দু’জন ইহুদী ধর্মযাজক তাঁর নিকট আসেন। তারা জেনেছিলেন যে, তুব্বা মদীনা ধ্বংস ও মদীনাবাসীদের মূলোৎপাটনের জন্যে এসেছেন। তারা তাকে বললেন, ‘রাজন! আপনি এরূপ করবেন না। এরপরও যদি আপনি আপনার পরিকল্পনা কার্যকর করতে চান তবে আপনি তাতে ব্যর্থ হলে এবং আপনার উপর আল্লাহর গযব নাযিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘কেন এরূপ হবে?’ তারা বললেন, ‘কারণ, এই মদীনা হল আখেরী যামানায় এই কুরায়শীয় হারাম শরীফ থেকে আবির্ভূত নবীর হিজরত স্থল। এটি হবে তাঁর বাসস্থান ও অবস্থান স্থল।’ এতে তুব্বা যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, এই দু’জন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। তাদের কথা তার খুব ভাল লেগেছে। ফলে, তিনি মদীনাবাসীদের ধর্মে হস্তক্ষেপ না করেই মদীনা ত্যাগ করেন।

ইবন ইসহাক বলেন, তুব্বার সম্প্রদায় মূর্তিপূজারী ছিল। তারা দেব-দেবীর পূজা করত। তুব্বা মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন। এটা ছিল ইয়ামানের পথে। উসফান ও আমাজের মধ্যবর্তী স্থানে আসার পর হুযায়ল (ইবন মুদারিকা ইবন ইলিয়াছ ইবন মুযার ইবন নেয়ার ইবন মা’দ ইবন আদনান) গোত্রের একদল লোক তার নিকট এল। তারা বলল, ‘হে রাজন! আমরা কি আপনাকে একটি গৃহের সন্ধান দিব, যেটি পুরাতন হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আপনার পূর্ববর্তী রাজা বাদশাহ্ ঐ গৃহ সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল ছিলেন না। সেখানে রয়েছে মনি-মানিক্য, স্বর্ণ-রৌপ্য ও মহামূল্য ইয়াকুত পাথর।’ তিন বললেন, ‘হ্যাঁ ঠিক আছে।’ তারা বলল, ‘সেটি মক্কায় অবস্থিত একটি গৃহ। তার ভক্তবৃন্দ সেখানে ইবাদত করে এবং সেখানে প্রার্থনা করে।’ হুযায়ল গোত্রীয়গণ এর দ্বারা তুব্বার ধ্বংসের চক্রান্ত করেছিল। কারণ তারা জানত যে, কোন রাজা এ গৃহে ধ্বংস করা কিংবা এটির নিকট ঔদ্ধত্য দেখালে তার ধ্বংস অনিবার্য, তারা যা বলেছিল তা করার সংকল্প করে তুব্বা এ ব্যাপারে পরামর্শের জন্য পূর্বোক্ত যাজকদ্বয়ের নিকট লোক পাঠালেন। তারা বললেন, ‘এ লোকেরা আপনার নিজের ও আপনার সৈন্য-সামন্তের ধ্বংসই চেয়েছে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে এই পবিত্র গৃহ ব্যতীত অন্য কোন গৃহকে নিজের জন্যে নির্দিষ্ট রেখেছেন বলে আমাদের জানা নেই। তারা আপনাকে যা করতে বলেছে, আপনি যদি তা করেন তবে আপনিও ধ্বংস হবেন, আপনার সাথে যারা আছে তারাও।’ তিনি বললেন, ‘আমি গৃহের নিকট পৌঁছলে আপনারা আমাকে কী করতে পরামর্শ দিচ্ছেন?’ তারা বলল, ‘আপনি তা-ই করবেন যা ওখানকার লোকজন করে। ঐ গৃহের তাওয়াফ করবেন, সেটির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে মাথা মুণ্ডন করবেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত সেটির প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করতে থাকবেন।’ তিনি বললেন, ‘আপনারা তা করতে বাধা কোথায়?’ তারা বলল, ‘সেটি হল আমাদের পিতা ইবরাহীমের (আ) গৃহ। এ গৃহ সেরূপই যা আমরা আপনার নিকট বর্ণনা করেছি, কিন্তু ওখানকার লোকজন ঐ গৃহের আশে-পাশে প্রতিমা স্থাপন করে এবং খুনাখুনি ও রক্তারক্তি করে আমাদের মাঝে এবং ঐ গৃহের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে রেখেছে। তারা শিরকবাদী, তারা অপবিত্র।’ তুব্বা তাদের উপদেশ উপলব্ধি করলেন এবং তাদের কথায় সত্যতা অনুধাবন করলেন। হুযায়ল গোত্রের কিছু লোক তাঁর নিকটে এলে তিনি তাদের হাত-পা কেটে দিলেন। তারপর তিনি মক্কায় আসলেন। বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করলেন, সেখানে পশু কুরবানী দিলেন, মাথা মুণ্ডন করলেন এবং মক্কায় ছয়দিন অবস্থান করলেন।

কথিত আছে যে, এই সময়ে তিনি সেখানে পশু জবাই দিতেন এবং সেখানকার লোকজনকে আপ্যায়িত করতেন এবং তাদেরকে মধু পান করাতেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি কাবা শরীফে গিলাফ চড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে তিনি কাবা শরীফে মোটা কাপড়ের গিলাফ চড়িয়ে দিলেন। তারপর তিনি স্বপ্নে দেখলেন, যেন তিনি তার চেয়ে ভাল গিলাফ চড়ান, তখন তিনি মু‘আফিরী বস্ত্রে গিলাফ চড়ালেন। আবার স্বপ্ন দেখলেন, যেন তার চাইতেও ভাল গিলাফ চড়ান। তখন তিনি মালা এবং নক্সাদার ইয়ামানী বন্ত্রের গিলাফ চড়িয়ে দিলেন। ঐতিহাসিকদের ধারণা যে, তুব্বাই সর্বপ্রথম কাবা শরীফে গিলাফ চড়িয়ে ছিলেন। তিনি জুরহুম গোত্রকে কাবা শরীফের তত্ত্বাবধান করা, সেটি পবিত্র রাখা, রক্ত, মৃত প্রাণী এবং ঋতুস্রাবের বস্ত্রাদি থেকে পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিলেন। তিনি কাবা শরীফের একটি দরজা তৈরী করে তাতে তালা-চাবির ব্যবস্থা করলেন। তুব্বার এ সকল খেদমত ও কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে সুবাই’আ বিনত আহাব তাঁর পুত্র খালিদ ইবন আবদ মানাফ ইব্‌ন কবি ইবন কা’ব ইবন সা’দ ইবন তায়ম ইবন মুররা ইবন কা’ব ইবন লুআয় ইবন গালিব)-কে উপদেশ দিয়ে এবং মক্কায় কোন প্রকারের সীমালংঘন ও বিদ্রোহ না করার নির্দেশ দিয়ে বলেছিল।

ابني لا تظلم بمكة لا الصغير ولا الكبير .

—হে বৎস! মক্কাতে ছোট-বড় কোন জুলুম বা পাপাচার করবে না।

واحفظ محامها بني ولا يغرنك الغرور .

—হে বৎস! এর মর্যাদা রক্ষা করো এবং এ ব্যাপারে কোন ধোঁকায় পড়োনা যেন।

ابنى من يظلم بمكة يلق أطراف الشرور .

—হে বৎস, মক্কায় যে জন জুলুম করে, অকল্যাণ আর দুর্ভোগ তার জন্যে অবধারিত।

ابنى يضرب وجهه ويلج ب خديه السعير .

—হে বৎস! মুখে আর গালে জানান্নামের আগুন আঘাত করবে।

ابني قد جربتها فوجدت ظالمها يبور

—হে বৎস! আমার অভিজ্ঞতা যে, এখানে জুলুমকারী সুনিশ্চিতভাবেই ধ্বংস হয়।

الله أمنها وما بنيت بعرصتها قصور .

—আল্লাহ তা’আলাই তার এবং তার প্রাঙ্গণস্থ দালান-কোঠার হেফাজতকারী।

والله امن طيرها والعصم كامن في ثبير .

—আল্লাহই এর পাখীগুলো এবং শ্বেত হরিণকে ছাবীর পর্বতে নিরাপদে রাখেন।

ولقد غزاها تبع فكسا بنيلها الحبير

—তুব্বা যুদ্ধ করতে আসল এবং কা’বা গৃহে গিলাফ চড়াল।

واذل ربي ملكه فيها فأوفي بالنذور .

—আল্লাহ তাআলা তাকে থামিয়ে দেন তিনি তার মানত পুরো করেন।

يمشي اليها حافيا بفنائها ألفا بعير .

—তিনি নগ্ন পায়ে তার দিকে হেঁটে আসেন। এবং তার প্রাঙ্গণে হাজারো উট কুরবানী করেন।

ويظل يطعم أهلها - لحم المهاري والجزور .

—ছোট বড় উটের গোশতের দ্বারা তিনি মক্কবাসীদের আপ্যায়িত করেন।

يسقيهم العسل الصفى والر حيض من الشعير .

—তিনি তাদেরকে খাটি মধু পান করান এবং ভাল রুটি আহার করান।

والفيل أهلك جيشه يرمون فيها بالصخور

—তাতে হাতী বাহিনী ধ্বংস হয়, তাদের প্রতি পাথর বর্ষিত হয়।

والملك في أقص البلاد وفي الاعاجم والخزور .

—তাঁর (আল্লাহর) কর্তৃত্ব সর্বস্থানে, আরবে আর অনারবে।

فاسمع اذا حدثك وافهم كيف عاقبة الأمور .

—যখন কিছু বলা হয়, তখন তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং ভালভাবে বুঝে নিবে যে, শেষ পরিণতি কেমন হয়।

ইবন ইসহাক বলেন অতঃপর তুব্বা তার সৈন্য-সামন্ত ও ইহুদী ধর্ম যাজকদ্বয়কে সাথে নিয়ে স্বদেশ ইয়ামানের দিকে যাত্রা করলেন। সেখানে পৌঁছে তার সম্প্রদায়কে তিনি তার নবদীক্ষিত ধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানালেন। ইয়ামানে অবস্থিত বিশেষ অগ্নিকুণ্ডের মাধ্যমে ফয়সালা না হওয়া ব্যতীত তারা নতুন ধর্ম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।

ইবন ইসহাক বলেন, আবু মালিক ইবন ছা’লাবা ইবন আবী মালিক কুরাযী আমার নিকট বর্ণনা করে বলেছেন যে, আমি ইবরাহীম ইবন মুহাম্মদ ইবন তালহা ইবন উবাইদুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালে তুব্বা যখন ইয়ামানের কাছাকাছি পৌঁছলেন এবং ইয়ামানে প্রবেশ করতে যাবেন তখন হিমইয়ারী গোত্রের লোকজন তাকে বাধা দিল এবং বলল, ‘আপনি এদেশে প্রবেশ করবেন না, আপনি আমাদের ধর্ম ত্যাগ করেছেন।’ তিনি তাদেরকে তার নবদীক্ষিত ধর্মের দাওয়াত দিয়ে বললেন, ‘এটি তোমাদের ধর্ম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ধর্ম।’ তারা বলল, ‘আমরা অগ্নিকুণ্ডের মাধ্যমে ফয়সালা করব।’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তাই হোক।’

ইয়ামানবাসীদের ধারণা যে, তাদের একটি অগ্নিকুণ্ড রয়েছে। বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোতে এই অগ্নিকুণ্ড তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। অত্যাচারীকে টেনে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলে আর অত্যাচারিতের কোন ক্ষতি করে না। লোকজন তাদের দেব-দেবী এবং ধর্মমত অনুযায়ী সুপারিশযোগ্য বস্তুগুলো নিয়ে বের হল। আর ধর্মযাজক দু’জন গলায় কিতাব ঝুলিয়ে রওয়ানা হলেন। সেখান থেকে আগুন বের হচ্ছিল সেখানে গিয়ে সবাই বলল, আগুন বেরিয়ে এলে ইয়ামানবাসীদের দিকে যখন এগিয়ে আসতে লাগল, তখন তারা অন্যদিকে ভয়ে সরে যেতে লাগল, উপস্থিত লোকজন তাদেরকে ধমক দেয়ায় এবং স্থির থাকতে নির্দেশ দেয়ায় তারা স্থির থাকল। অবশেষে আগুন এসে তাদেরকে ঢেকে ফেলল এবং তাদের দেব-দেবী এবং এতগুলো বহনকারী হিমইয়ারী লোকজন সবাইকে গ্রাস করে ফেলল। ধর্মযাজক দু’জন গলায় কিতাবসহ স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসলেন। তাদের কপালে ঘাম দেখা দিয়েছিল। আগুন তাদের কোন ক্ষতি করলো না, তখন হিমইয়ারী দৃঢ়ভাবে যাজকদ্বয়ের ধর্ম গ্রহণ করল। তখন থেকে ইয়ামানে ইহুদী ধর্মের সূচনা হয়।

ইবন ইসহাক বলেন, জনৈক শাস্ত্রবিশারদ আমাকে বলেছেন যে, যাজকদ্বয় এবং হিমইয়ারীগণ আগুনকে তার উৎসস্থলে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে আগুনের পেছনে-পেছনে ছুটলেন। তারা বলেছিলেন যে, যে পক্ষ আগুনকে ফিরিয়ে দিতে পারবে সে পক্ষই সত্যপন্থী। হিমইয়ারের লোকজন তাদের প্রতিমাসমূহ নিয়ে আগুনের নিকট এগিয়ে গেল তাদেরকে গ্রাস করার জন্য। আগুন তাদের নিকট এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যেতে চাইল। আগুনকে ফিরিয়ে দিতে পারল না। অতঃপর যাজকদ্বয় আগুনের নিকটবর্তী হলেন। তারা অবিরাম তাওরাত পাঠ করছিলেন আর আগুন ক্রমে ক্রমে তাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আগুন যেখান থেকে উঠে এসেছিল তারা তাকে সেখানেই ফিরিয়ে দিলেন। তখন হিমইয়ারীগণ তাদের ধর্মে আস্থাশীল হল। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইবন ইসহাক বলেন, রাছাম নামে তাদের একটি উপাসনালয় ছিল। তারা সেটিকে ভক্তি করত। সেখানে পশু কোরবানী করতো ঐ গৃহের মধ্যে কথাবার্তা বলত। তখন তারা মুশরিক ছিল। যাজকদ্বয় তুব্বাকে বললেন, ‘শয়তান এটি দ্বারা তাদেরকে বিপথে পরিচালিত করছে। আমাদেরকে অনুমতি দিন আমরা একটু দেখি।’ তুব্বা বললেন, ‘আপনারা যা ইচ্ছা করুন।’ ইয়ামানীদের ধারণা, তারা ঐ গৃহ থেকে একটি কালো কুকুর বের করে আনে এবং সেটি জবাই করে দেয়। তারপর উক্ত ঘর ভেঙ্গে ফেলে। আমার জানা মতে, ঐ গৃহের পাশে বলিদানের রক্ত চিহ্ন তখনও তার স্মৃতি বহন করছে।

নবী করীম (সা) থেকে বর্ণিতঃ

لا تسبو تبعا فانه قد كان اسلم

তোমরা তুব্বাকে গালি দিও না, কারণ তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ তাফসীরগ্রন্থে এ হাদীসটির ব্যাখ্যায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, সুহায়লী বলেছেন, বর্ণনাকারী মামার হাম্মাম ইব্‌ন মুনাব্বিহ থেকে এবং তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ

لا تسبوا أسعد العميري فانه أول من كسي الكعبة

—তোমরা আসআদ হিমইয়ারীকে গালি দিও না। কারণ, তিনি সর্বপ্রথম কাবা শরীফে গিলাফ চড়ান।

সুহায়লী বলেন, যাজকদ্বয় যখন তুব্বাকে রাসূলুল্লাহ (সা) সম্পর্কে অবহিত করলেন, তখন তিনি কবিতার ছন্দে বলেনঃ

شهدت على أحمد أنه رسول من الله باری السم

—সাক্ষ্য দিচ্ছি আমি আসআদ—সৃষ্টিকর্তার রাসূল আহমদ (সা)

فلومد عمري الى عمره - گنت وزيرا له وابن عم

—ততদিন যদি বেঁচে থাকতাম, তাঁর উজীর ও সাথী হতাম।

وجاهدت بالسيف أعداءه وفرجت عن صدره گل هم

—তরবারী দিয়ে শায়েস্তা করতাম, যতই হতো শত্রু তার দূর করতাম দুঃখ যত জন্ম নিত বক্ষে তার।

বর্ণনাকারী বলেন, বংশানুক্রমে এ কবিতা আনসারদের মধ্যে সুরক্ষিত ছিল। তারা যত্ন সহকারে এটি সংরক্ষণ করতেন। সর্বশেষ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা)-এর নিকট এটি সংরক্ষিত ছিল।

সুহায়লী বলেন, ইবন আবিদ দুনিয়া তাঁর কিতাবুল কুবুরে উল্লেখ করেছেন যে, সানা’আ অঞ্চলে একটি কবর খননের পর তাতে দু’জন মহিলার লাশ পাওয়া যায়। তাদের সাথে ছিল একখণ্ড রৌপ্যলিপি। তাতে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত ছিল এ হল তুব্বার দুই কন্যা লামীস ও হিব্বার কবর। তারা সাক্ষ্য দিত যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি একক তার কোন শরীক নেই, এ বিশ্বাস সহকারে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকগণ এ বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

অতঃপর রাজত্ব এল তুব্বান আসআদের পুত্র হাসানের হাতে। তিনি ছিলেন ইয়ামামা-ই যুরাকা-এর ভাই। জাও নগরীর প্রবেশ পথে ইয়ামামাকে শূলিতে চড়ানো হয়েছিল। সেদিন থেকে শহরটির নাম পড়ে যায় আল-ইয়ামামা।

ইবন ইসহাক বলেন, আবু কুরাব তুব্বান আসআদের পুত্র হাসসান সিংহাসনে বসে ইয়ামানের অধিবাসীদেরকে নিয়ে আরব ও অনারব ভূমি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ইরাক পৌঁছে হিমইয়ার ও ইয়ামানের কতক গোত্র তার সাথে যেতে অসম্মতি জানায়। তারা স্বদেশে নিজেদের পরিবারের নিকট ফিরে যেতে চাইল। আমর নামে তার এক ভাইয়ের নিকট তারা নিজেদের ইচ্ছা জানাল। সে কাফেলার সাথে ছিল। তারা আমরকে বলল, আপনি আপনার ভাই হাসসানকে হত্যা করুন তাহলে আমরা আপনাকে রাজা বানাব। আপনি আমাদেরকে নিয়ে স্বদেশে ফিরে যাবেন। সে তাদের আহবানে সাড়া দিল। যূ-রুআইন জনৈক হিমইয়ারী ছাড়া তারা সবাই এ ষড়যন্ত্রে একমত হল। সে যূ-রুআইন আমরকে অপকর্মে বাধা দিয়েছিল সে তা শোনেনি। তখন সে আমরের উদ্দেশ্যে একটি চিরকুট লিখল। তাতে নিম্নোক্ত পংক্তি দুটো লিখিত ছিল।

الا من يشتري سهرا بنوم - سعيد من يبيت قرير عين .

—নিদ্রা দিয়ে বিনিদ্রা কিনে কোনজন; ভাগ্যবান সেইজন- প্রশান্ত রজনী যে করে যাপন।

فأما حمير غدرت وخانت -فمعذرة الاله لذي رعين .

—করেছে হিমইয়ারী গোত্র বিশ্বাসভঙ্গ ও গাদ্দারী

প্রকাশ করে যূ-রুআঈন তার ব্যক্তিগত বেজারী।

তারপর চিরকুটটি সে আমরের নিকট জমা রাখল। আপন ভাই হাসানকে হত্যা করে অমর দেশে ফেরার পর থেকে তার আর ঘুম হয় না। রাতের পর রাত সে বিনিদ্র রজনী যাপন করতে থাকে। ডাক্তার, কবিরাজ, জ্যোতিষী-গণক এবং রেখাবিশেষজ্ঞদের নিকট সে এর কারণ জানতে চাইল। তাকে বলা হল যে, ‘আল্লাহর কসম, কেউ যদি তার ভাই কিংবা কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তবে তার ঘুম হারাম হয়ে যায় এবং অনিদ্রা তার নিত্য সাথী হয়। যারা আমরকে ভ্রাতৃ হত্যায় ইন্ধন যুগিয়েছিল, এবার সে একে একে তাদেরকে হত্যা করতে শুরু করলো। যূ-রুআইনের পালা আসলে সে বলল, ‘আপনার কাছে আমার একটি মুক্তিসনদ আছে।’ আমর বলল, ‘সেটি কি?’ যু-রুআইবন বলল, ‘আপনাকে আমি যে চিরকুটটি দিয়েছিলাম তা।’ সে চিরকুটটি বের করল। খুলে দেখল তাতে উক্ত পংক্তি লিখিত রয়েছে। তখন সে যূ-রুআইনকে মুক্তি দিল এবং আমর উপলব্ধি করতে পারল যে, যূ-রুআইন তাকে যথার্থ উপদেশ দিয়েছিল। অবশেষে আমরের মৃত্যু হয় এবং হিমইয়ারীদের মধ্যে অনৈক্য, বিশৃংখলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন