hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৮৬
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের বিবরণ
আমরা পূর্বে উল্লেখ করে এসেছি যে, আবদুল মুত্তালিব পুত্র আবদুল্লাহকে যবেহ করার মান্নত করে পরে আল্লাহর ইচ্ছায় তার পরিবর্তে একশত উট যবেহ করেন। কারণ, মহান আল্লাহর তা’আলা নির্ধারণ মোতাবেক আব্দুল্লাহর ঔরসে সমগ্র আদম সন্তানের সরদার সর্বশেষ রাসূল ও উম্মী নবীর আর্বিভাব পূর্বেই নির্ধারিত করে রেখেছিলেন। এরপর আবদুল মুত্তালিব তাঁকে কুরাইশের এক সম্ভান্ত পরিবারে বুদ্ধিমতী বিচক্ষণ কন্যা আমিনা বিনতে ওহব (ইবন আবদে মানাফ ইবন যাহরা)-এর সঙ্গে বিবাহ দেন। তাঁদের মিলনের পর রাসূলুল্লাহ (সা) আমিনার গর্ভে আসেন। বলাবাহুল্য, ওরাকা ইবন নওফলের বোন উম্মে কিতাল রাকীকা বিনতে নওফল আমিনার সঙ্গে মিলনের পূর্বে আব্দুল্লাহর ললাটে নূর দেখতে পেয়েছিলেন। ফলে তিনি উক্ত নূরের ছোঁয়া লাভ করতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন। কারণ তিনি তার ভাই-এর নিকট শুনতে পেয়েছিলেন যে, মুহাম্মদ নামক একজন নবী আবির্ভূত হবেন এবং সে সময়টি আসন্ন। তাই তিনি আবদুল্লাহর সাথে মিলনের জন্য, মতান্তরে বিবাহের জন্য নিজেকে পেশ করেন। বিবাহের প্রস্তাবের কথাই সমধিক প্রসিদ্ধ। কিন্তু আবদুল্লাহ সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে সেই নূর আমিনার মধ্যে স্থানান্তরিত হলে ওরাকা ইবন নওফলের বোনের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করার জন্য আবদুল্লাহ অনেকটা বিব্রত বোধ করেন। এবার তিনি নিজে অনুরূপ প্রস্তাব দিলে মহিলাটি বলে এখন আর তোমাকে দিয়ে আমার কোন প্রয়োজন নেই। তখন সে সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আক্ষেপ করে এবং অত্যন্ত উঁচুমানের কয়েকটি পংক্তি আবৃত্তি করে।

উল্লেখ যে, এভাবে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কারণেই ঘটেছিল, আব্দুল্লাহর জন্য নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَیۡثُ یَجۡعَلُ رِسَالَتَهُ )

[Surah Al-An'am 124]

“রাসূল কাকে বানাবেন, আল্লাহ নিজেই তা ভালো জানেন।”

ইতিপূর্বে এ মর্মে একটি হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে, অবৈধ মিলনে নয় বৈবাহিক বন্ধন থেকেই তিনি জন্মলাভ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় তার পিতা আবদুল্লাহ ইন্তিকাল করেন। এটাই প্রসিদ্ধ অভিমত। মুহাম্মদ ইবন সা’দ বর্ণনা করেন যে, আইয়ূব বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আবদুল মুত্তালিব কুরায়শ-এর এক বণিক কাফেলার সঙ্গে সিরিয়ার গাজা অঞ্চলে যান। বাণিজ্য শেষে ফেরার পথে মদীনা পৌঁছলে আবদুল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তিনি তাঁর মাতুলগোষ্ঠী বনী আদী ইবন নাজ্জার-এর কাছে থেকে যান এবং তাদের নিকট অসুস্থ অবস্থায় এক মাস অবস্থান করেন। সঙ্গীরা মক্কা পৌঁছলে আবদুল মুত্তালিব পুত্রের কথা জানতে চাইলে তারা বলে, তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় তাঁর মাতুলালয়ে রেখে এসেছি। খবর শুনে আবদুল মুত্তালিব তাঁর বড় ছেলে হারিছকে প্রেরণ করেন। হারিছ মদীনায় গিয়ে দেখেন, আবদুল্লাহর ইন্তিকাল হয়েছে এবং দারুন্নাবিগায় তাকে দাফন করা হয়েছে। তখন তিনি ফিরে এসে পিতাকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন। সংবাদ শুনে পিতা আবদুল মুত্তালিব ও আবদুল্লাহর ভাই-বোনেরা শোকাহত হয়ে পড়েন। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন মায়ের গর্ভে। মৃত্যুকালে আবদুল্লাহর বয়স ছিল পঁচিশ বছর।

ওয়াকিদী বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ব্যাপারে এটিই সর্বাপেক্ষা সঠিক অভিমত। তিনি বর্ণনা করেন যে, আবদুল মুত্তালিব আব্দুল্লাহকে খেজুর আনবার জন্য মদীনা প্রেরণ করেছিলেন। সেখানে তিনি ইন্তিকাল করেন।

মুহাম্মদ ইবন সা’দ বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বয়স যখন আটাশ মাস, তখন তাঁর পিতা আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়। কারও কারও মতে, তখন তাঁর বয়স ছিল সাত মাস। তবে মুহাম্মদ ইবন সা’দ-এর নিজের অভিমত হলো, আবদুল্লাহর মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (সা) মাতৃগর্ভে ছিলেন। যুবায়র ইবন বাক্কার-এর বর্ণনা মতে পিতার মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (সা) ছিলেন দুই মাসের শিশু। মায়ের মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল বার বছর আর যখন তাঁর দাদার মৃত্যু হয়, তখন তিনি আট বছরের কিশোর। মৃত্যুকালে দাদা আবদুল মুত্তালিব চাচা আবু তালিবের হাতে তাঁর লালন-পালনের ভার অর্পণ করে যান। ওয়াকিদী ও তাঁর লিপিকার (ইবন সা’দ) মতে পিতার মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ (সা) মায়ের গর্ভে ছিলেন। এটিই এতীমত্বের ঊর্ধ্বতন স্তর। এমর্মে হাদীছ পূর্বেই উদ্ধৃত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আমি গর্ভে থাকাবস্থায় আমার মা স্বপ্নে দেখেন যে, যেন তার মধ্য থেকে একটি নূর বের হয়ে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদসমূহ আলোকিত করে ফেলেছে।” মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, আমিনা বিনতে ওহব নিজে বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তার গর্ভে থাকাকালে স্বপ্নে কে যেন তাকে বলে যায়, তুমি এই উম্মতের সরদারকে গর্ভে ধারণ করেছ। তিনি ভূমিষ্ঠ হলে তুমি বলবে, এঁকে আমি সকল হিংসুকের অনিষ্ট ও যাবতীয় বিপদাপদ থেকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করছি। কারণ প্রশংসাৰ্হ আল্লাহর নিকট তিনি মর্যাদাবান। তাঁর সঙ্গে এমন একটি নূর বের হবে, যা সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ সমূহকে আলোকিত করে ফেলবে। ভূমিষ্ঠ হলে তুমি তার নাম রাখবে মুহাম্মদ, তাওরাতে তাঁর নাম আহমদ। আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা তার প্রশংসা করে। ইনজীলেও তাঁর নাম আহমদ। আর কুরআনে তার নাম মুহাম্মদ।

আমিনার স্বপ্ন সম্পর্কিত এই দু’টি হাদীস প্রমাণ করে যে, তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন যেন তার মধ্য হতে এমন একটি নূর বের হয়েছিল, যাতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়ে যায়। অতঃপর নবী করীম (সা)-এর জন্মের পর তিনি এই স্বপ্নের বাস্তবরূপ প্রত্যক্ষ করেন।

মুহাম্মদ ইবন সা’দ (র) ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমিনা বিনতে ওহব বলেছেন- মুহাম্মদ আমার গর্ভে থাকাবস্থায় প্রসব পর্যন্ত তার জন্য আমি বিন্দুমাত্র কষ্ট অনুভব করিনি। প্রসবের সময় তার সঙ্গে একটি নৃর বের হয়, যা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব আলোকিত করে তোলে। আমার গর্ভ থেকে বের হওয়াকালে তিনি উভয় হাতে মাটিতে ভর দেন। অতঃপর হাতে এক মুঠো মাটি নিয়ে আসমানের দিকে উঁচু করেন। কারো কারো মতে রাসূলুল্লাহ (সা) দুই হাঁটুতে ভর করে হামাগুড়িরত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হন। আর তাঁর সঙ্গে এমন একটি আলো নির্গত হয় যে, তার আলোতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ ও হাট-বাজার সব আলোকিত হয়ে যায়। আমিনা বলেন, সেই আলোতে বসরার উটের ঘাড়সমূহ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। তখন শিশু নবীর মাথা আসমানের দিকে উত্থিত ছিল। বায়হাকী উছমান ইবন আবুল আস থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমার মা আমাকে বলেন যে, আমিনা বিনতে ওহব শিশু নবীকে প্রসবের সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সে রাতে আমিনার ঘরে আমি নূর ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনি। আমি দেখতে পেলাম, আকাশের তারকাগুলো যেন এসে আমার গায়ের ওপর পড়ছে।

কাজী ইয়ায আবদুর রহমান ইবন আওফ এর মা শিফা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) দুই হাতে ভর করে ভূমিষ্ঠ হয়ে কেঁদে ওঠেন। তখন আমি শুনতে পেলাম, কেউ একজন বলে উঠলেনঃ “আল্লাহ আপনাকে রহম করুন”। আর তার সঙ্গে এমন এক আলো উদ্ভাসিত হয় যে, তাতে রোমের রাজপ্রাসাদসমূহ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আমিনা তার দাসী মারফত আবদুল মুত্তালিবের নিকট খবর পাঠান। স্বামী আবদুল্লাহ তো আমিনার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ই মারা গিয়েছিলেন। কথিত আছে যে, আবদুল্লাহ যখন মৃত্যুবরণ করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তখন আটাশ মাসের শিশু। তবে কোনটা সঠিক, তা আল্লাহই ভালো জানেন।

দাসী গিয়ে আবদুল মুত্তালিবকে বলে যে, ‘দেখে আসুন, আপনার একটি নাতি হয়েছে।’ আবদুল মুত্তালিব আমিনার নিকট আসলে আমিনা সব ঘটনা খুলে বলেন। এই সন্তানের ব্যাপারে তিনি স্বপ্নে কি দেখেছিলেন এবং তার কি নাম রাখতে আদিষ্ট হয়েছেন, তাও তিনি ব্যক্ত করেন। সব শুনে আবদুল মুত্তালিব রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নিয়ে কা’বার অভ্যন্তরে ‘হোবল’ এর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর জন্য দোয়া করেন এবং মহান আল্লাহর সমীপে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেনঃ

الحمد لله الذي أعطاني - هذا الغلام الطيب الأردان

قد ساد في المهد على الغلمان- أعيذهبالبيت ذي الأركان

حتى يكون بلغة الفتيان - حتى أرآه بالغ البنيان

أعيذهمن كل ذي شنان - من حاسد مضطرب العنان

ذى همة ليس له عينان - حتى أراه رافع اللسان

أنت الذي سميت في القر ان - في كتب ثابتة المثاني

أحمد مكتوب على اللسان

– সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাকে পবিত্র আস্তিন এর অধিকারী এই শিশুটি দান করেছেন। আমার বাসনা, দোলনায় বসেই এই শিশু আর সব শিশুর ওপর কর্তৃত্ব করবে। রুকন বিশিষ্ট ঘরের নিকট আমি এর জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এই শিশুকে আমি যুবকদের আদর্শরূপে পরিণত বয়সে দেখতে চাই। সকল অনিষ্ট ও হিংসুকের বিদ্বেষ থেকে এর জন্য আমি আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি উদ্ধত ফণাবিশিষ্ট চক্ষুবিহীন সর্প থেকে। তুমিই (হে আমার প্রিয় নাতি!) কুরআনে-মহান গ্রন্থসমূহে আহমদ নামে আখ্যায়িত এবং লোকজনের রসনায় তোমার নামটি লিপিবদ্ধ রয়েছে।

বায়হাকী বর্ণনা করেন, ইবন আব্বাস (রা) তাঁর পিতা আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) খতনাকৃত ও নাড়ি কর্তিত জন্মগ্রহণ করেন দেখে তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব মুগ্ধ হয়ে যান এবং বলেন, উত্তরকালে আমার এই সন্তানটি যশস্বী হবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। এর বিশুদ্ধতা সন্দেহমুক্ত নয়। অনুরূপ একটি বর্ণনা আবু নুয়ায়মেরও রয়েছে। কেউ কেউ একে বিশুদ্ধ এমন কি মুতাওয়াতির পর্যায়ের পর্যন্ত বলেছেন। কিন্তু তাও সন্দেহমুক্ত নয়। ইবন আসাকির বর্ণনা করেন যে, আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “আল্লাহর নিকট আমার মর্যাদার একটি হলো এই যে, আমি খতনাকৃত অবস্থায় জন্মলাভ করেছি এবং আমার লজ্জা স্থান কেউ দেখতে পায়নি।”

হাফিজ ইবন আসাকির আবু বাকরাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, জিবরীল (আ) যখন নবী করীম (সা)-এর বক্ষ বিদারণ (সীনা চাক) করেন, তখন তিনি তার খতনাও করেন। এটা নিতান্ত ‘গরীব’ পর্যায়ের। অন্য এক সূত্রে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সা)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব তার খাতনা করেন এবং সেই উপলক্ষে কুরাইশদেরকে দাওয়াত দিয়ে আপ্যায়িত করেন।

বায়হাকী আবুল হাকাম তানুখী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, কুরাইশদের সমাজে নিয়ম ছিল যে, কোন সন্তান জন্ম হলে তারা নবজাতককে পরবর্তী ভোর পর্যন্ত কতিপয় কুরাইশ মহিলাদের নিকট দিয়ে রাখত। শিশুটিকে তারা পাথর নির্মিত ডেগ দিয়ে ঢেকে রাখতো। রাসূলুল্লাহ (সা) ভূমিষ্ঠ হলে নিয়ম অনুযায়ী আবদুল মুত্তালিব তাঁকেও সেই মহিলাদের হাতে অর্পণ করেন। মহিলারা তাকেও ডেগ দিয়ে ঢেকে রাখে। ভোর হলে এসে তারা দেখতে পায় যে, ডেগ ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে আছে আর শিশু মুহাম্মদ দু’চোখ খুলে বিস্ফারিত নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। মহিলারা দৌড়ে আবদুল মুত্তালিবের নিকট এসে বলে, ‘কি আশ্চর্য, এরূপ নবজাতক তো আমরা কখনও দেখিনি। ভোরে এসে আমরা দেখতে পেলাম যে, ডেগ ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে আছে আর সে চোখ দুটো খুলে বিস্ফারিত নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে!’ শুনে আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘তাকে তোমরা হেফাজত কর, আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এই শিশু যশস্বী হবে কিংবা বললেন, সে প্রচুর কল্যাণের অধিকারী হবে।’ সপ্তম দিনে আবদুল মুত্তালিব তার আকীকা করেন এবং কুরাইশদেরকে দাওয়াত করেন। আহার শেষে মেহমানরা বলল, ‘আবদুল মুত্তালিব! যে সন্তানের উপলক্ষে আজকের এই নিমন্ত্রণের আয়োজন, তার নাম কি রাখলে?’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘আমি তার নাম মুহাম্মদ রেখেছি।’ শুনে তারা বলল, ‘পরিবারের অন্যদের নামের সঙ্গে মিল রেখে নাম রাখলেন না যে!’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘আমার ইচ্ছা, আসমানে স্বয়ং আল্লাহ আর যমীনে তাঁর সৃষ্টিকূল তার প্রশংসা করবেন।’ ভাষাবিদগণ বলেন, মুহাম্মদ কেবল তাকেই বলা হয়ে থাকে, যিনি যাবতীয় মহৎ গুণের ধারক। যেমনঃ কবি বলেনঃ

اليك ابيت اللعن أعلمت ناقتي - إلى الماجد القرم الكريم المحمد

– দূর হয়ে যাও, তুমি অভিশাপকে অস্বীকার করেছ। আমি আমার উষ্ট্রীকে সর্বগুণে প্রশংসিত, সম্মানিত, আদরে লালিত মর্যাদাবান মুহম্মদের উদ্দেশ্যে পরিচালিত করেছি।

কোন কোন আলিম বলেন, আল্লাহ ইলহাম করেছিলেন যে, তোমরা এর নাম রাখ মুহাম্মদ। কারণ, এই শিশুর মধ্যে যাবতীয় মহৎগুণ বিদ্যমান। যাতে নামে ও কাজে মিল হয় এবং যাতে নাম ও নামকরণ আকারে ও তাৎপর্যে সাযুজ্যপূর্ণ হয়। যেমন নবীজি (সা)-এর চাচা আবু তালিব বলেনঃ

وشق له من اسمه ليجله - فذو العرش محمود وهذا محمد

— মর্যাদা দানের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাঁর জন্য নিজের নাম থেকে নাম বের করে এনেছেন। আরশের অধিপতি আল্লাহর নাম মাহমুদ আর ইনি মুহাম্মদ।

কারও কারও মতে এই পংক্তিটি হাসসান ইবনে সাবিত-এর রচিত।

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নামসমূহ এবং তাঁর শামায়িল তথা অবয়বের বর্ণনা, পূত-পবিত্র, নবুওতের প্রমাণাদি ও মর্যাদার বিবরণ সীরাত অধ্যায়ের শেষে উল্লেখ করব, ইবনশাআল্লাহ।

বায়হাকী আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি একদিন বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নবুওতের একটি আলামত আমাকে আপনার দীন কবুল করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। দোলনায় থাকতে আমি আপনাকে দেখেছি যে, আপনি চাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং নিজের আঙ্গুল দিয়ে চাঁদের প্রতি ইংগিত করছেন। আপনি যেদিকে ইশারা করতেন চাঁদ সেদিকেই ঝুঁকে পড়তো।’ জবাবে নবী করীম (সা) বললেন, “আমি তখন চাঁদের সঙ্গে কথা বলতাম এবং চাঁদ আমার সঙ্গে কথা বলতো এবং আমার কান্না ভুলিয়ে দিত। আর আমি আরশের নিচে চাঁদের সিজদা করা কালে তার পতনের শব্দ শুনতে পেতাম।” রাবী বলেন, এ বর্ণনার রাবী একজন মাত্র আর তিনি অজ্ঞাত পরিচয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন