মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
হযরত দাউদ (আ)-এর বিবরণ
তাঁর ফযীলত, কর্মকাণ্ড, নবুওতের দলীল-প্রমাণ ও ঘটনাপঞ্জি
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/9
নবী হযরত দাউদ (আ)-এর বংশতালিকা নিম্নরূপঃ দাউদ ইবন ঈশা ইবন আবীদ ( عويد ) ইবন আবির ( عابر ) ইবন সালমুন ইবন নাহশূন ইবন আবীনাযিব ( عويناذب ) ইবন ইরাম ইবন হাসীরূন ইবন ফারিয ইবন য়াহূযা ইবন ইয়াকূব ইবন ইসহাক ইবন ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)। হযরত দাউদ (আ) ছিলেন আল্লাহর বান্দা তাঁর নবী এবং বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকায় তাঁর খলীফা। মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক কতিপয় আলিমের সূত্রে ওহাব ইবন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণনা করেছেনঃ হযরত দাউদ (আ) ছিলেন বেঁটে, তার চক্ষুদ্বয় ছিল নীলাভ। তিনি ছিলেন স্বল্প কেশ বিশিষ্ট এবং পূত-পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত দাউদ (আ) জালূত বাদশাহকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে হত্যা করেন। ইবন আসাকিরের বর্ণনা মতে, এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল মারাজূস সাফার নিকট এলাকার সন্নিকটে উম্মে হাকিমের প্রাসাদের কাছে। এর ফলে বনী ইসরাঈলের লোকজন দাউদ (আ)-এর প্রতি আকৃষ্ট এবং তাঁকে ভালবাসতে থাকে এবং তাঁকে শাসকরূপে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে থাকে। ফলে তালূত যে ভূমিকা গ্রহণ করেন, একটু আগেই তা উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্যের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব হযরত দাউদ (আ)-এর উপর ন্যস্ত হয়। এভাবে আল্লাহ তাআলা দাউদ (আ)-এর ক্ষেত্রে বাদশাহী ও নবুওত তথা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ একত্রিত করে দেন। ইতিপূর্বে বাদশাহী থাকত বনী-ইসরাঈলের এক শাখার হাতে আর নবুওত থাকত অন্য আর এক শাখার মধ্যে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এখন উভয়টিই হযরত দাউদ (আ)-এর মধ্যে একত্রিত করে দিলেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
“দাউদ জালুতকে সংহার করল; আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও হিকমত দান করলেন; এবং যা তিনি ইচ্ছে করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ যাদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ্ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল। (২ বাকারাঃ ২৫১)।
অর্থাৎ যদি শাসনকর্তা রূপে বাদশাহ নিযুক্তির ব্যবস্থা না থাকত তাহলে সমাজের শক্তিশালী লোকেরা দুর্বল লোকদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিত। এ জন্যে কোন কোন বর্ণনায় রছেছে ( السلطان ظل الله فى ارضه ) অর্থাৎ আল্লাহর যমীনে শাসনকর্তা তার ছায়া স্বরূপ। আমীরুল মু'মিনীন হযরত উছমান ইবন আফফান (রা) বলেছেনঃ
ان الله ليزع بالسلطان مالا يزع بالقران
অথাৎ আল্লাহ শাসনকর্তা দ্বারা এমন অনেক কিছু দমন করেন, যা কুরআন দ্বারা করেন না। ইবন জারীর তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখে করেন, বাদশাহ জালুত রণক্ষেত্রে সৈন্য-ব্যুহ থেকে বেরিয়ে এসে মল্লযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্যে তালুতকে আহ্বান জানায়। কিন্তু তালূত নিজে অংশগ্রহণ না করে জালূতের মুকাবিলা করার জন্য আপন সৈন্যদের প্রতি আহ্বান জানায়। দাউদ (আ) সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে জালূতকে হত্যা করেন। ওহাব ইবন মুনাব্বিহ বলেন, ফলে লোকজন দাউদের প্রতি ঝুঁকে পড়ে এমনকি শেষ পর্যন্ত তালুতের কথা কেউ মুখেই আনতো না। তারা তালূতকে পরিত্যাগ করে দাউদের নেতৃত্ব বরণ করে নেয়। কেউ কেউ বলেছেন, নেতৃত্বের এ পরিবর্তন শামুয়েল নবীর আমলে হয়েছিল। কারও কারও মতে জালূতের সাথে যুদ্ধের ঘটনার পূর্বেই শামুয়েল (আ) হযরত দাউদকে শাসক নিযুক্ত করেন। ইবন জারীর অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মত বর্ণনা করে লিখেছেন যে, জালূত বাদশাহ নিহত হওয়ার পরেই হযরত দাউদ (আ)-এর হাতে নেতৃত্ব আসে। ইব্ন আসাকির সাঈদ ইবন আবদুল আযীয সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত দাউদ (আ) কাসরে উম্পেয হাকীমের নিকট জালূতকে হত্যা করেছিলেন। ঐ স্থানে যে নদীটি অবস্থিত তার উল্লেখ স্বয়ং কুরআনের আয়াতেই বিদ্যমান আছে। দাউদ (আ) প্রসংগে কুরআনের অন্যত্র আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ, আমি নিশ্চয় দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং আদেশ করেছিলাম, ‘হে পর্বতমালা! তোমরা দাউদের সংগে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং বিহংগকুলকেও, তার জন্যে নমনীয় করেছিলাম লোহা, যাতে তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করতে পার এবং তোমারা সৎকর্ম কর। তোমরা যা কিছু কর আমি তার সম্যক দ্রষ্টা। (৩৪ সাবাঃ ১০-১১)। আল্লাহ অন্যত্র বলেনঃ
অর্থাৎ, আমি পর্বত ও বিহংগকুলের জন্যে নিয়ম করে দিয়েছিলাম যেন তারা দাউদের সংগে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; এ সবের কর্তা আমিই ছিলাম। আমি তাকে তোমাদের জন্যে বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে; সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না? (২১ঃ আম্বিয়াঃ ৭৯-৮০)।
যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্যে আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-কে লোহা দ্বারা বর্ম তৈরি করতে সাহায্য করেন এবং তাকে তা তৈরি করার নিয়ম-পদ্ধতিও শিক্ষা দেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন— এবং বুনন কাজে পরিমাণ রক্ষা কর —অথাৎ বুননটা এত সূক্ষ্ম হবে না যাতে ফাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, আর এতটা মোটাও হবে না যাতে ভেঙ্গে যেতে পারে। মুজাহিদ, কাতাদা, হাকাম ও ইকরীমা এ তাফসীরই করেছেন।
হাসান বসরী, কাতাদা ও আমাশ বলেছেন, আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-এর জন্যে লোহাকে এমনভাবে নরম করে দিয়েছেন যে, তিনি হাত দ্বারা যেমন ইচ্ছা পেঁচাতে ও ভাঁজ করতে পারতেন; এ জন্যে তাঁর আগুন বা হাতুড়ির প্রয়োজন হত না। কাতাদা বলেন, হযরত দাউদ (আ)-এই প্রথম মানুষ, যিনি মাপজোক মত আংটা ব্যবহার করে লৌহ বর্ম নির্মাণ করেন। এর আগে লোহার পাত দ্বারা বর্মের কাজ চালান হত। ইবন শাওযাব বলেন, তিনি প্রতি দিন একটি করে বর্ম তৈরি করতেন এবং ছয় হাজার দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করতেন। হাদীসে এসেছে, মানুষের পবিত্রতম খাবার হল যা সে নিজে উপার্জন করে। ( ان اطيب ما اكل الرجل من كسبه ) আর আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আ) নিজের হাতে উপার্জিত খাদ্য দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ, এবং স্মরণ কর, আমার শক্তিশালী বান্দা দাউদের কথা; সে ছিল অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী। আমি নিয়োজিত করেছিলাম পর্বতমালাকে যেন এরা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, এবং সমবেত বিহংগকুলকেও; সকলেই ছিল তার অনুগত। আমি তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফয়সালাকারী বাগ্নিতা (৩৮ সাদঃ ১৭-২০)।
ইবন আব্বাস (রা) ও মুজাহিদ (র) বলেন, আয়াতে উল্লেখিত ( الايد ) অর্থ ইবাদত করার শক্তি। অর্থাৎ তিনি ছিলেন ইবাদত ও অন্যান্য সৎকাজে অত্যন্ত শক্তিশালী। কাতাদা (র) বলেন, তাঁকে আল্লাহ ইবাদত করতে দিয়েছিলেন শক্তি এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে দিয়েছিলেন গভীর জ্ঞান। কাতাদা (র) আরও বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, দাউদ (আ) রাতের বেলা দাঁড়িয়ে ইবাদত করতেন এবং বছরের অর্ধেক সময় রোযা রাখতেন। বুখারী ও মুসলিমে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট ঐরূপ নামায সবচেয়ে প্রিয় যেরূপ নামায হযরত দাউদ পড়তেন এবং আল্লাহর নিকট ঐরূপ রোযা সবচেয়ে পছন্দনীয় যেরূপ রোযা হযরত দাউদ (আ) রাখতেন। তিনি রাতের প্রথম অর্ধেক ঘুমাতেন, তারপরে এক তৃতীয়াংশ নামাযে কাটাতেন এবং শেষে এক ষষ্ঠাংশ পুনরায় ঘুমিয়ে কাটাতেন। তিনি এক দিন রোযা রাখতেন এবং একদিন রোযা থাকতেন না। আর শত্রুর মুকাবিলা হলে কখনও ভয়ে পালাতেন না। তাই আয়াতে বলা হয়েছেঃ “আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করছিলাম যেন তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হত। সবাই ছিল তার অনুগত।” সূরা সাবায় যেমন বলা হয়েছেঃ
অর্থাৎ, হে পর্বতমালা! তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং বিহংগকুলকেও। অর্থাৎ তার সাথে তাসবীহ পাঠ কর। ইবন আব্বাস, মুজাহিদ প্রমুখ এ আয়াতের তাফসীর এভাবেই করেছেন। অর্থাৎ তারা দিনের সূচনা লগ্নে ও শেষ ভাগে তাসবীহ পাঠ করত। হযরত দাউদ (আ)-কে আল্লাহ এমন দরাজ কণ্ঠ ও সূর মাধুর্য দান করেছিলেন, যা পৃথিবীর অন্য কাউকে দান করেননি। তিনি যখন তাঁর প্রতি অবতীর্ণ যাবুর কিতাব সুর দিয়ে পাঠ করতেন তখন আকাশে উড্ডীয়মান বিহংগকুল সুরের মূর্ছনায় থমকে দাঁড়াত এবং দাউদের সুরের সাথে সুর মিলিয়ে আবৃত্তি করত ও তার সাথে তাসবীহ পাঠ করত। এভাবেই তিনি সকাল-সন্ধ্যায় যখন তাসবীহ পাঠ করতেন তখন পাহাড়পর্বতও তার সাথে তাসবীহ পাঠে শরীক হত। আওযাঈ বলেছেন, হযরত দাউদ (আ)-কে এমন সুমধুর কণ্ঠস্বর দান করা হয়েছিল যেমনটি আর কাউকে দান করা হয়নি। তিনি যখন আল্লাহর কিতাব পাঠ করতেন তখন আকাশের পাখী ও বনের পশু তার চার পাশে জড়ো হয়ে যেত। এমনকি প্রচণ্ড ক্ষুধায় ও তীব্র পিপাসায় তারা সে স্থানে মারা যেত কিন্তু নড়াচড়া করত না। শুধু এরাই নয়,নদীর পানির প্রবাহ পর্যন্ত থেমে যেত। ওহাব ইবন মুনাব্বিহ বলেছেন, দাউদ (আ)-এর কণ্ঠস্বর যে-ই শুনত লাফিয়ে উঠত এবং কণ্ঠের তালে তালে নাচতে শুরু করত। তিনি যাবূর এমন অভূতপূর্ব কণ্ঠে পাঠ করতেন যা কোন দিন কেউ শুনেনি। সে সুর শুনে জিন, ইনসান, পক্ষী ও জীব-জন্তু আপন-আপন স্থানে দাঁড়িয়ে যেত। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে তাদের কেউ কেউ মারাও যেত।
আবু আওয়ানা বিভিন্ন সূত্রে .... মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত দাউদ (আ) যাবূর পড়া আরম্ভ করলে কিশোরী মেয়েদের কুমারীত্ব ছিন্ন হয়ে যেত। তবে এ বর্ণনাটি সমর্থনযোগ্য নয়। আবদুল রাযযাক ইবন জুরায়জ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি গানের সুরে কিরাআত পড়া যাবে কি না-এ সম্পর্কে আতা (রা)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন, এতে দোষ কি? অতঃপর তিনি বললেন, আমি শুনেছি, উবায়দ ইবন উমর বলেছেন, হযরত দাউদ (আ) বাজনা বাজাতেন ও তার তালে তালে কিরাআত পড়তেন। এতে সুরের মধ্যে লহর সৃষ্টি হত। ফলে সুরের মূর্ছনায় তিনিও কাঁদতেন এবং শ্রোতাদেরকেও কাঁদাতেন। ইমাম আহমদ আবদুর রাযযাকের সূত্রে..... আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদা আবু মূসা আশআরীর কিরাআত পড়া শুনে বলেছিলেনঃ আবু মূসাকে আলে দাউদের সুর লহরী দান করা হয়েছে।
বুখারী ও মুসলিমের শর্তে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য এই সূত্রে এ হাদীস বুখারী মুসলিমে নেই। অন্যত্র ইমাম আহমদ হাসানের সূত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করছেন, রাসূল (সা) বলেছেনঃ আবু মূসাকে দাঊদের বাদ্য প্রদান করা হযেছে। এ হাদীছটি মুসলিমের শর্তে বর্ণিত। আবু উছমান তিরমিযী (র) বলেন, বাদ্য ও বাঁশরী শুনেছি, কিন্তু আবূ মূসা আশআরীর কণ্ঠের চেয়ে তা অধিক শ্রুতি মধুর নয়। এ রকম মধুর সুর হওয়া সত্ত্বেও দাউদ (আ) অতি দ্রুত যাবূর পাঠ করতেন। এ সম্পর্কে ইমাম আহমদ ... আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমরা দাউদ অপেক্ষা ধীরে কিরাআত পড়। কেননা তিনি বাহনের উপর জিন লাগাবার আদেশ করে কুরআন (যাবূর) পড়তেন এবং জিন লাগান শেষ হবার আগেই তার যাবুর পড়া শেষ হয়ে যেত। আর তিনি স্বহস্তে উপার্জন করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইমাম বুখারীও ... আবদুর রাযযাক সূত্রে এ হাদীস প্রায় অনুরূপ শব্দে বর্ণনা করেছেন। এরপর বুখারী (র) বলেছেন, এ হাদীস মূসা ইবন উকবা ...... আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবন আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে দাউদ (আ) -এর আলোচনায় বিভিন্ন সূত্রে এ হাদীছখানা বর্ণনা করছেন।
হাদীসে উল্লেখিত কুরআন অর্থ এখানে যাবুর যা হযরত দাউদ (আ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। এর বর্ণনাগুলো ছিল সংরক্ষিত। কেননা তিনি ছিলেন একজন বাদশাহ। তার ছিল বহু অনুসারী। তাই বাহনের উপর জিন লাগাতে যতটুকু সময় লাগে সে সময় পর্যন্ত তিনি যাবূর পাঠ করতেন। ভক্তিসহ নিবিষ্ট চিত্তে ও সুর প্রয়োগে পড়া সত্ত্বেও তার তিলাওয়াত ছিল অতান্ত দ্রুত। আল্লাহর বাণীঃ
( وَءَاتَیۡنَا دَاوُۥدَ زَبُور ࣰا)
[Surah Al-Isra’ 55]
অর্থাৎ, আমি দাউদকে যাবুর প্রদান করেছি। (১৭ ইসরাঃ ৫৫) এ আয়াতের তাফসীরে আমার তাফসীর গ্রন্থে ইমাম আহমদ ও অন্যান্যদের বর্ণিত হাদীস উদ্ধৃত করেছি যে, এ প্রসিদ্ধ আসমানী কিতাবখানা রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়। গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে যে, এতে বিভিন্ন উপদেশ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উক্তি রয়েছে। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ, আমি তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফয়সালাকারী বাগ্মিতা (৩৮ সাদঃ ১৭) অর্থাৎ - তাঁকে আমি দিয়েছিলাম বিশাল রাজত্ব ও কার্যকর শাসন কৌশল। ইবন জারীর ও ইবন আবী হাতিম হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এক গাভী সংক্রান্ত বিচারে দু’ব্যক্তি দাউদ (আ)-এর শরণাপন্ন হয়। এদের একজন অপর জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে, সে তার গাভী জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বিবাদী অভিযোগ অস্বীকার করল। হযরত দাউদ (আ) তাদের ফয়সালা রাত পর্যন্ত স্থগিত রাখলেন। আল্লাহ ঐ রাতে ওহীর মাধ্যমে নবীকে নির্দেশ দিলেন যে, বাদীকে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। সকাল হলে নবী বাদীকে ডেকে আল্লাহর নির্দেশ জানিয়ে দেন এবং বলেন, আমি অবশ্যই তোমার উপর মৃতুদন্ড কার্যকর করব। এখন বল, তোমার দাবীর মূলে আসল ঘটনা কি? বাদী বলল, হে আল্লাহর নবী! আমি কসম করে বলছি, আমার দাবী যথার্থ। তবে এ ঘটনার পূর্বে আমি বিবাদীর পিতাকে হত্যা করেছিলাম। তখন হযরত দাউদ (আ) তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং সাথে সাথে তা কার্যকর হয়। এ ঘটনার পরে বনী ইসরাঈলের মধ্যে দাউদ (আ)-এর মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর প্রতি তাদের আনুগত্য বৃদ্ধি পায়।
ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, এ কথাটাই ( وَشَدَدۡنَا مُلۡكَهُۥ ) বাক্যাংশে ব্যক্ত করা হয়েছে। ( وَءَاتَیۡنَـٰهُ ٱلۡحِكۡمَةَ ) আয়াতে উক্ত حكيمة অর্থ নবুওয়াত, ( وَفَصۡلَ ٱلۡخِطَابِ )-কাজী শুরায়হ, শা’বী, কাতাদাহ, আবু আবদুর রহমান প্রমুখের মতে ফাসলাল খিতাব অর্থ সাক্ষী ও শপথ অর্থাৎ বিচার কার্যের মূলনীতি হিসেবে বাদীর জন্যে সাক্ষী প্রমাণ আর বিবাদীর জন্যে শপথ গ্রহণ। ( البينة على المدعي واليمين على من أنكر ) তাদের মতে আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-কে এই মূলনীতি দান করেছিলেন। মুজাহিদ ও সুদ্দীর মতে, ফাসলাল খিতাব অর্থ বিচার কাজের প্রজ্ঞা ও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। মুজাহিদ বলেন, বাক্য প্রয়োগ ও সিদ্ধান্ত দানে স্পষ্টবাদিতা। ইবন জারীরও এই ব্যাখ্যাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আবূ মূসা বলেছেন, ফাসলাল খিতাব হচ্ছে (হামদ ও সালাতের পরে) ( امابعد ) বলা অর্থাৎ হযরত দাউদ-ই প্রথমে ( امابعد ) শব্দ ব্যবহার করেন, তার সাথে এ ব্যাখ্যার কোন বিরোধ নেই। ওহাব ইবন মুনাব্বিহ লিখেছেন, বনী ইসরাঈল জাতির মধ্যে পাপাচার ও মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে হযরত দাউদ (আ)-কে একটি ফয়সালাকারী শিকল দেওয়া হয়। এই শিকলটি আসমান থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসের পার্শ্বে রক্ষিত সাখরা' পাথর খণ্ড পর্যন্ত ঝুলন্ত ছিল।
শিকলটি ছিল স্বর্ণের। ফয়সালা এভাবে হত যে, বিবদমান দু’ব্যক্তির মধে যে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত সেই ঐ শিকলটি নাগাল পেতো! আর অপরজন তা পেতো না। দীর্ঘদিন যাবত এভাবে চলতে থাকে। অবশেষে এক ঘটনা ঘটে। এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির নিকট একটা মুক্তা গচ্ছিত রাখে। যখন সে তার মুক্তাটি ফিরিয়ে আনতে যায় তখন ঐ ব্যক্তি তার দাবি মীমাংসার জন্যে সাখরা পাথরের কাছে উপস্থিত হলে বাদী শিকলটি নাগাল পায়। বিবাদীকে তা ধরতে বলা হলে সে উক্ত মক্তা সম্বলিত লাঠিটি বাদীর কাছে দিয়ে দেয়। এরপর সে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলে, হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই অবগত আছেন যে, আমি তাকে তার মুক্তাটি প্রত্যর্পণ করেছি। প্রার্থনার পর সে শিকলটি ধরতে সক্ষম হয়। এভাবে উক্ত শিকলটির দরুন বনী-ইসরাঈলরা মুশকিলে পড়ে যায়। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই শিকলটি উঠিয়ে নেয়া হয়। অনেক মুফাসিরই এ ঘটনাটিই উল্লেখ করেছেন। ইসহাক ইবন বিশর ও ওহাব ইবন মুনাব্বিহ সূত্রে প্রায় এরূপেই বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ, তোমার নিকট বিবদমান লোকদের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? যখন তারা প্রাচীর ডিংগিয়ে ইবাদত খানায় আসল এবং দাউদের নিকট পৌঁছল, তখন সে তাদের কারণে ভীত হয়ে পড়ল। তারা বলল, ভীত হবেন না, আমরা দু’বিবদমান পক্ষ; আমাদের একে অপরের উপর জুলুম করেছে; অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করুন; অবিচার করবেন না এবং আমাদেরকে সঠিক পথ নির্দেশ করুন। এ আমার ভাই, এর আছে নিরানব্বইটা দুম্বা এবং আমার আছে মাত্র একটি দুম্বা; তবুও সে বলে, আমার যিম্মায় একটা দিয়ে দাও; এবং কথায় সে আমার প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করেছে। দাউদ বলল, তোমার দুম্বাটিকে তার দুম্বাগুলোর সংগে যুক্ত করার দাবি করে সে তোমার প্রতি জুলুম করেছে। শরীকদের অনেকে একে অন্যের উপর অবিচার করে থাকে। করে না কেবল মু'মিন ও সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ এবং তারা সংখ্যায় স্বল্প। দাউদ বুঝতে পারল, আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। আর সে তার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং নত হয়ে লুটিয়ে পড়ল ও তার অভিমুখী হল। তারপর আমি তার ত্রুটি ক্ষমা করলাম। আমার নিকট তার জন্যে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম। (৩৮ সাদঃ ২১-২৫)
উপরোক্ত আয়াতে যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রাচীন ও আধুনিক বহু সংখ্যক মুফাসসির অনেক কিস্সা-কাহিনীর অবতারণা করেছেন। কিন্তু তার অধিকাংশই ইসরাঈলী বর্ণনা এবং এর মধ্যে সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট বর্ণনাও রয়েছে। আমরা এখানে সে সবের কিছুই উল্লেখ করছি না; শুধু কুরআনে বর্ণিত ঘটনাটির উল্লেখ করাই যথেষ্ট বিবেচনা করছি। সূরা সাদ-এর সিজদার আয়াত সম্পর্কে ইমামগণের মধ্যে দু ধরনের মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেছেন, এ সিজদা অপরিহার্য; আবার অন্য কেউ কেউ বলেছেন, এটা অপরিহার্য নয়, বরং এটা শোকরানা সিজদা। এ প্রসংগে ইমাম বুখারী (র) মুজাহিদের সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি একদা ইবন আব্বাস (রা)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ সূরা সাদ তিলাওয়াতকালে আপনি কেন সিজদা দেন? তিনি বললেন, তুমি কি কুরআনে পড় না?
অর্থাৎ, দাঊদ, সুলায়মান.....আর আমি তাহাকে দান করিয়াছিলাম ইসহাক ও ইয়াকূব, ইহাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম; পূর্বে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম এবং তাহার বংশধর দাউদ, সুলায়মান ও আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকেও; আর এইভাবেই সৎকর্মপরায়ণদিগকে পুরস্কৃত করি; এবং যাকারিয়া, ইয়াহয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম। ইহারা সকলে সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত; আরও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম ইসমাঈল, আল-য়াসাআ, ইউনুস্ ও লূতকে; এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছিলাম বিশ্বজগতের উপর প্রত্যেতকে- এবং ইহাদের পিতৃ-পুরুষ, বংশধর ও ভ্রাতৃবৃন্দের কতককে। আমি তাহাদিগকে মনোনীত করিয়াছিলাম এবং সরল পথে পরিচালিত করিয়াছিলাম। ইহা আল্লাহর হিদায়াত, স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তিনি ইহা দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। তাহারা যদি শিরক করিত তবে তাহাদের কৃতকর্ম নিষ্ফল হইত। আমি উহাদিগকেই কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবুওয়াত দান করিয়াছি, অতঃপর যদি ইহারা এইগুলিকে প্রত্যাখ্যানও করে তবে আমি তো এমন এক সম্প্রদায়ের প্রতি এইগুলির ভার অর্পণ করিয়াছি যাহারা এইগুলি প্রত্যাখ্যান করিবে না। উহাদিগকেই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন, সুতরাং তুমি তাহাদের পথের অনুসরণ কর। বল, ‘আমার জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাহি না, ইহা তো শুধু বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ।' (৬ আনআমঃ ৮৪- ৯০)
এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, যে, দাউদ (আ) নবীগণের অন্যতম যাদের অনুসরণ করার জন্য আমাদের নবী (সা)-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা সাদ-এর আয়াতে দাউদ (আ)-এর সিজদার কথা উল্লেখিত হয়েছে। সে অনুযায়ী রাসূল (স)-ও সিজদা করেছেন। ইমাম আহমদ .... ইকরামার সূত্রে ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেনঃ সূরা সাদ এর সিজদা আবশ্যিক সিজদার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এ সিজদা করতে দেখেছি। ইমাম বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসাঈ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী একে হাসান ও সহীহ বলেছেন। ইমাম নাসাঈ (র)... সাঈদ ইবন জুবায়রের সূত্রে ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) সূরা সাদ এ সিজদা করেছেন তওবা স্বরূপ, আর আমরা সিজদা করব শোকরিয়া স্বরূপ। শেষের কথাটি কেবল আহমদের বর্ণনায় আছে। তবে এর রাবীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য।
আবু দাউদ... আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একবার মসজিদের মিম্বরে বসে সূরা সাদ তিলাওয়াত করেন। সিজদার আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তিনি মিম্বর থেকে নেমে সিজদা আদায় করেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সাথে সিজদা আদায় করেন। অন্য এক দিন তিনি অনুরূপ মিম্বরে বসে সূরা সাদ পাঠ করেন। যখন সিজদার আয়াত পড়েন, তখন উপস্থিত লোকেরা সিজদা করতে উদ্যত হন। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এটা হচ্ছে জনৈক নবীর তওবা বিশেষ (সিজদার সাধারণ নির্দেশ নয়), তবে দেখছি তোমরা সিজদা করতে উদ্যত হয়েছ। তারপর তিনি মিম্বর থেকে নেমে সিজদা আদায় করেন। এ হাদীছখানা কেবল আবু দাঊদই বর্ণনা করেছেন। তবে এর সনদ সহীহের শর্ত অনুযায়ী আছে। ইমাম আহমদ... আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি একদা স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি সূরা সাদ লিখছেন। সিজদার আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তিনি দোয়াত, কলম ও অন্য যা কিছু সেখানে ছিল, সবই সিজদায় লুঠিয়ে পড়েছে দেখতে পান। এ ঘটনা তিনি নবী করীম (সা)-এর নিকট ব্যক্ত করেন। তারপর থেকে তিনি সর্বদা এ সূরার সিজদা আদায় করতেন। এ হাদীসখানা কেবল ইমাম আহমদই বর্ণনা করেছেন।
তিরমিযী ও ইবন মাজাহ্ মুহাম্মদ ইবন ইয়াযীদের সূত্রে .... হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এসে বলল- ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষ যেমন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে, আমিও তেমনি সালাত আদায় করছি। সালাতে আমি সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করি এবং সিজদায় যাই। বৃক্ষটিও আমার সাথে সিজদা করে। আমি শুনলাম সে সিজদা অবস্থায় এরূপ দোয়া করছেঃ “হে আল্লাহ! এর ওসীলায় আপনার নিকট আমার জন্যে পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন, আপনার নিকট আমার জন্যে এর ছওয়াব সঞ্চিত রাখুন, এর ওসীলায় আমার দোষ-ত্রুটি দূর করে দিন এবং আমার এ সিজদা আপনি কবুল করুন, যেমন কবূল করেছিলেন আপনার নেক বান্দা দাউদ (আ) থেকে।” ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আমার এ কথা শেষ হতেই দেখলাম, রাসূল (সা) সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদায় যান এবং লোকটি বৃক্ষের যে দোয়ার উল্লেখ করেছিল, শুনলাম তিনি সিজদায় সেই দোয়াটিই পড়ছেন। ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করার পরে লিখেছেন যে, এটা গরীব পর্যায়ের হাদীস-এই একটি সূত্র ব্যতীত এর অন্য কোন সূত্র আমার জানা নেই।
কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, হযরত দাউদ (আ) তাঁর এ সিজদায় একটানা চল্লিশ দিন অতিবাহিত করেন। মুজাহিদ, হাসান প্রমুখ এ কথা উল্লেখ করেছেন। এ প্রসংগে একটি মারফূ’ হাদীছও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এর বর্ণনাকরী ইয়াযীদ রুককাশী হাদীস বর্ণনায় দুর্বল ও পরিত্যক্ত। আল্লাহর বাণীঃ
—আমি তার সে অপরাধ ক্ষমা করলাম। নিশ্চয় আমার কাছে তার জন্যে রয়েছে উচ্চ মর্তবা ও সুন্দর বাসস্থান। (৩৮ সাদঃ ২৫)। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তিনি আল্লাহর নিকট উচ্চ মর্যাদা পাবেন। ( زلفى ) অর্থ বিশেষ নৈকট্য; এবং তাহলো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে আল্লাহ দাউদ (আ)-কে এ নৈকট্য দান করবেন। এ ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
المقسطون على منابر من نور عن يمين الرحمن وكلتا يديه يمين الذي يقسطون في اهليهم وحكمهم وما ولوا
—অর্থাৎ যারা ন্যায় বিচার করে ও ন্যায়ের বিধান চালু করে, এবং তার পরিবারে ফয়সালায় এবং কর্তৃত্ব প্রয়োগে তারা মেহেরবান আল্লাহর দক্ষিণ হস্তের কাছে প্রতিষ্ঠিত নূরের মিম্বরের উপরে অধিষ্ঠিত থাকবে। আর আল্লাহর উভয় হস্তই দক্ষিণ হস্ত)। মুসনাদে ইমাম আহমদে.... আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত হল ন্যায় বিচারক শাসক; পক্ষান্তরে আল্লাহর নিকট কিয়ামতের দিন সবচেয়ে ঘৃণিত ও কঠিন শাস্তিযোগ্য ব্যক্তি হল জালিম বাদশাহ। তিরিমিযী অনুরূপ বর্ণনা করে বলেছেন, এই একটি সূত্র ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে এ হাদীছখানা সম্পূর্ণরূপে বর্ণিত হয়নি। ইবন আবী হাতিম.... জাফর ইবন সুলায়মান থেকে বর্ণনা করেন। তিনি মালিক ইব্ন দীনারকে ( وَإِنَّ لَهُۥ عِندَنَا لَزُلۡفَىٰ وَحُسۡنَ مَـَٔاب ࣲ) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলতে শুনেছেন যে, হযরত দাউদ (আ) কিয়ামতের দিন আরশে আযীমের স্তম্ভের কাছে দণ্ডায়মান থাকবেন, আল্লাহ তখন বলবেন, ‘হে দাউদ! দুনিয়ায় তুমি যে মধুর সুরে আমার প্রশংসা ও মহত্ব প্রকাশ করতে, সেইরূপ মধুর সুরে আজ আমার প্রশংসা ও মহত্ব প্রকাশ কর।’ দাউদ (আ) বলবেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি তো তা আমার থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন, এখন কিরূপে তা করব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘আজ আমি তা তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি।’ অতঃপর দাউদ (আ) এমন মধুর আওয়াজে আল্লাহর প্রশংসা গাইবেন, যার প্রতি সমস্ত জান্নাতবাসী আকৃষ্ট হয়ে পড়বে।
—হে দাঊদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, কেননা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ হতে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি, কারণ তারা বিচার দিবসকে বিস্মৃত হয়ে আছে। (৩৮ সাদঃ ২৬)।
আলোচ্য আয়াতে হযরত দাউদ (আ)-কে সম্বোধন করা হলেও এর দ্বারা শাসক ও বিচারক মণ্ডলীকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে এবং আল্লাহ তাদেরকে মানুষের মাঝে তার পক্ষ থেকে নির্দেশিত ন্যায় বিচার ও সত্যের অনুসরণ করার আদেশ করেছেন। নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। যারা সত্য পথ পরিত্যাগ করে নিজের খেয়াল-খুশীর পথ অনুসরণ করবে তাদেরকে আল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছেন। সে যুগে হযরত দাউদ (আ) ছিলেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, প্রচুর ইবাদত ও অন্যান্য নেক কাজের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় আদর্শ। কথিত আছে, রাত্র ও দিনের মধ্যে এমন একটি সময় অতিবাহিত হত না, যে সময় তাঁর পরিবারবর্গের কোন কোন সদস্য ইবাদতে মশগুল না থাকত। আল্লাহ বলেছেনঃ
—হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই কৃতজ্ঞ ( ৩৪ সাবাঃ ১৩)। আবু বকর ইবন আবিদ দুনিয়া.... আবুল জালদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি দাউদ (আ)-এর ঘটনাবলী অধ্যয়ন করেছি। তাতে এ কথা পেয়েছি যে, তিনি আরজ করলেন, “হে আমার পালনকর্তা! আমি আপনার শুকরিয়া কিভাবে আদায় করব? আপনার নিয়ামত ব্যতীত তো আপনার শোকর আদায়ে আমি সামর্থ হব না।” অতঃপর দাউদ (আ)-এর নিকট ওহী আসেঃ “হে দাঊদ! তুমি কি জান না যে, যে সব নিয়ামত তোমার কাছে রয়েছে, তা আমারই দেওয়া?” জবাবে দাউদ (আ) বললেন, “হ্যাঁ তাই, হে আমার রব!” আল্লাহ বললেন, “তোমার এ স্বীকারোক্তিতেই আমি সন্তুষ্ট।” বায়হাকী.... ইবন শিহাব থেকে বর্ণনা করেন, হযরত দাউদ (আ) বলেছিলেনঃ
الحمد لله كما ينبغي لكرم وجهه وعز جلاله
—আল্লাহর জন্যে এমন যাবতীয় প্রশংসা নির্দিষ্ট, যেমন প্রশংসা তাঁর সত্ত্বা ও মহত্বের জন্যে উপযোগী। আল্লাহ বললেন, 'হে দাউদঃ তুমি তো হেফাজতকারী ফিরিশতাদের মতই দোয়া করলে।” আবু বকর ইবন আবিদ দুনিয়া.... সুফিয়ান ছাওরী থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন মুবারক তাঁর “কিতাবুয যুহদে’..... ওহাব ইবন মুনাববিহ থেকে বর্ণনা করেনঃ দাউদের বংশধরদের হিকমতের মধ্যে ছিল (১) কোন জ্ঞানী লোকের পক্ষে চারটি বিশেষ সময়ে গাফিল থাকা উচিত নয়, (ক) একটি সময় নির্দিষ্ট করবে, যে সময়ে সে একান্তে আল্লাহর ইবাদত করবে। (খ) একটি নির্দিষ্ট সময়ে আত্ম-সমালোচনায় প্রবৃত্ত হবে। (গ) একটি সময় নির্ধারণ করবে, যে সময়ে সে ঐ সব অন্তরংগ বন্ধুদের সাথে মিলিত হবে, যারা তাকে ভালবাসে এবং তার ত্রুটিবিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়। (ঘ) আর একটি সময় বেছে নিবে হালাল ও বৈধ বিনোদনের জন্যে। এই শেষোক্ত সময়টা তার অন্যান্য সময়ের কাজের সহায়ক হবে এবং অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করবে।
(২) একজন জ্ঞানী লোকের উচিৎ সময় সম্পর্কে সচেতন থাকা, রসনাকে সংযত রাখা এবং আপন অবস্থাকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেওয়া।
(৩) একজন জ্ঞানী লোকের কর্তব্য-তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি ছাড়া যেন সে কোথাও যাত্রা না করে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে, দুনিয়ার জীবন যাপনের উপাদান অন্বেষণে কিংবা বৈধ আনন্দ বিনোদনে।
ইবন আবিদ দুনিয়া ও ইব্ন আসাকির অন্য সূত্রে ওহাব ইবন মুনাব্বিহ থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হাফিজ ইব্ন আসাকির হযরত দাউদ (আ)-এর কতগুলো শিক্ষামূলক উপদেশ বাণী তাঁর জীবনী আলোচনায় উল্লেখ করেছেন। তার কয়েকটি হলঃ
(১) ইয়াতীমের সাথে দয়ালু পিতার মত আচরণ কর ( كن لليتيم كالاب الرحيم )
(২) স্মরণ রেখ, যেমন বীজ বুনবে, তেমন ফলন পাবে। ( واعلم أنك كما تزرع كذلك تحصد )
(৩) একটি ‘গরীব পর্যায়ের মারফু হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত দাউদ (আ) বলেছিলেনঃ হে পাপের চাষকারী! ফসলরূপে তুমি কেবল কাটা আর খোসাই পাবে। ( يازارع السيئات انت تحصد شوكها وحسكها )
(৪) কোন মজলিসের নির্বোধ বক্তা হচ্ছে মৃতের শিয়রে গায়কের তুল্য।
مثل الخطيب الأحمق في نادي القوم كمثل المغنی عند رأس الميت
(৫) ধনী থাকার পরে দরিদ্র হওয়ার মত দুর্ভাগ্য আর নেই। কিন্তু তার চেয়ে অধিক দুর্ভাগ্য হল হিদায়াত লাভের পরে পথভ্রষ্ট হওয়া
( ما اقبحم الغقو بعد الغنى واقبح من ذالك الضلا لة بعد المعدى )
(৬) প্রকাশ্য সভায় তোমার সমালোচনা না হোক-এ যদি তোমার কাম্য হয় তবে ঐ কাজটি তুমি নির্জনেও করবে না। ( انظر ماتكمه ان يذكر عنك نادى القوم فلاتفعله اذا خلوت )
(৭) তুমি কাউকে এমন কিছুর প্রতিশ্রুতি দিও না, যা তুমি পূর্ণ করতে পারবে না। কেননা এতে তোমার ও তার মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হবে। ( لا تعدن اخاكم بما لا تنجزه له فان ذالك عداوة ما بينك وبينه )
মুহাম্মাদ ইবন সা'দ ..... আফরার মওলা উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন, ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর একাধিক সহধর্মিণী দেখে লোকজনকে বলল, “তোমরা এ লোকটির প্রতি লক্ষ্য কর, সে আহারে পরিতৃপ্ত হয় না; আল্লাহর কসম সে নারী ছাড়া কিছু বুঝে না।” সমাজে তার একাধিক সহধর্মিণী থাকায় তারা তার প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে এবং তার প্রতি দোষারোপ করে। তাদের মন্তব্য হলো, যদি ইনি নবী হতেন, তাহলে নারীদের প্রতি এতো লিপ্সা থাকতো না। এ কুৎসা রটনায় সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে হুয়াই ইবন আখতাব। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেন এবং নবী করীম (সা)-এর প্রতি তাঁর দান ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেন।
—তাহলে ইবরাহীমের বংশধরকেও তো আমি কিতাবও হিকমত প্রদান করেছিলাম এবং তাদেরকে বিশাল রাজ্য দান করেছিলাম। (৪ নিসাঃ ৫৪)। ইবরাহীমের বংশধর বলতে এখানে হযরত সুলায়মান (আ)-কে বুঝানো হয়েছে। তাঁর ছিলেন এক হাজার স্ত্রী, তাদের মধ্যে সাত শ স্বাধীন এবং তিন শ’ বাদী। আর হযরত দাউদ (আ)-এর ছিলেন একশ জন স্ত্রী, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত সুলায়মান (আ)-এর মা-যিনি ইতিপূর্বে উরিয়ার স্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁকে বিবাহ করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর স্ত্রী সংখ্যার তুলনায় তাদের সংখ্যা অনেকগুণ বেশী। কালবীও ঠিক এইরূপ বর্ণনা করেছেন।
হাফিজ ইবন আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেনঃ এক ব্যক্তি ইবন আব্বাস (রা)-কে (নফল) রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার নিকট সংরক্ষিত একটি হাদীস আছে। আপনি যদি শুনতে চান তবে আমি আপনাকে দাউদ (আ)-এর রোযা সম্পর্কে বলতে পারি। কেননা তিনি অত্যন্ত বেশী রোযা রাখতেন এবং নামায আদায় করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বীর পুরুষ; দুশমনের বিরুদ্ধে মুকাবিলা কালে তিনি কখনও পলায়ন করতেন না। তিনি একদিন অন্তর অন্তর রোযা রাখতেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম রোযা হল দাউদ (আ)-এর রোযা। তিনি সত্তরটি সুরে যাবুর তিলাওয়াত করতেন। এগুলো তার নিজেরই উদ্ভাবিত স্বর। রাত্রে যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন নিজেও কাঁদতেন এবং তাতে অন্য সবকিছুও কাঁদতো। তার মধুর সূরে সকল দুশ্চিন্তা ও ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। তুমি আরও শুনতে চাইলে আমি তার পুত্র হযরত সুলায়মান (আ)-এর রোযা সম্পর্কে জানাতে পারি। কেননা, তিনি প্রতি মাসের প্রথম তিন দিন, মাঝের তিন দিন ও শেষের তিন দিন রোযা রাখতেন। এভাবে তার মাস শুরু হত রোযার মাধ্যমে। মধ্য-মাস অতিবাহিত হত রোযা রাখা অবস্থায় এবং মাস শেষ হত রোযা পালনের মাধ্যমে। তুমি যদি আরও শুনতে চাও তবে আমি তোমাকে মহিয়ষী কুমারী মাতা মরিয়ম (আ)-এর পুত্র হযরত ঈসা (আ)-এর রোযা সম্পর্কেও জানাতে পারি। তিনি সারা বছর ধরে রোযা রাখতেন, যবের ছাতু খেতেন, পশমী কাপড় পরতেন, যা পেতেন তাই খেতেন, যা পেতেন না, তা চাইতেন না। তার কোন পুত্র ছিল না যে, মারা যাবার আশংকা থাকবে কিংবা কোন ঘরবাড়ি ছিল না যে, নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকবে। যেখানেই রাত হত সেখানেই নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ভোর পর্যন্ত নামাযে রত থাকতেন। তিনি একজন ভাল তীরান্দায় ছিলেন। কোন শিকারকে লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়লে কখনও তা ব্যর্থ হত না। বনী ইসরাঈলের কোন সমাবেশ অতিক্রম করার সময় তাদের অভিযোগ শুনতেন ও প্রয়োজন পূরণ করে দিতেন। যদি তুমি আগ্রহী হও তবে আমি তোমাকে হযরত ঈসা (আ)-এর মা মারয়াম বিনতে ইমরানের রোযা সম্পর্কেও জানাতে পারি। কেননা তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং দুই দিন বাদ দিতেন। তুমি যদি জানতে চাও তবে আমি তোমাকে নবী উম্মী আরাবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর রোযা সম্পর্কেও জানাতে পারি। তিনি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন এবং বলতেন, এটাই গোটা বছর রোযা রাখার শামিল। ইমাম আহমদ... আব্বাস (রা) থেকে হযরত দাউদ (আ)-এর রোযার বৃত্তান্ত মারফুরূপে বর্ণনা করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/9
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।