hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৮৭
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের রাতে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী
রাসূলুল্লাহ (সা) যে রাতে তুমিষ্ঠ হন, সে রাতে অসংখ্য মূর্তির উপুড় হয়ে পড়া ও স্থানচ্যুত হওয়া, হাবশা অধিপতি নাজাশীর দেখা ঘটনার বিবরণ, জন্মের সময় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে নূর বের হয়ে তাতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়ে যাওয়া; রাসূল (সা)-এর মাতৃগর্ভ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে আকাশপানে মাথা তুলে বের হয়ে আসা, ডেগ ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়া, রাসূলুল্লাহ (সা) যে ঘরে জন্মলাভ করেন, সে ঘরটি আলোকিত হয়ে যাওয়া এবং নক্ষত্ররাজি মানুষের নিকটবর্তী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনার বিবরণ আমরা ইতিপূর্বে ‘অজ্ঞাত স্থান থেকে জিনের কথা বলা’ অধ্যায়ে উল্লেখ করে এসেছি।

সুহায়লী বর্ণনা করেন যে, ইবলীস জীবনে চারবার বিলাপ করেঃ ১. অভিশপ্ত হওয়ার সময়। ২. জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময়। ৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের সময় এবং ৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হওয়ার সময়।

মুহাম্মদ ইবন ইসহাক হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এক ইহুদী মক্কায় বাস করত। সে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করতো। রাসূলুল্লাহ (সা) যে রাতে ভূমিষ্ঠ হন সে রাতে কুরাইশ এর এক মজলিসে সে বলল, ‘আজ রাতে কি তোমাদের মধ্যে কারও কোনও সন্তানের জন্ম হয়েছে?’ জবাবে তারা বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমরা এ রকম কিছুই জানি না।’ ইহুদীটি বলল, ‘আল্লাহু আকবার! তোমাদের অজান্তে ঘটে থাকলে তো কোনও অসুবিধা নেই। তবে তোমর খোঁজ করে দেখ এবং যা বলছি স্মরণ রাখ। এ রাতে আখেরী নবী ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। তার দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে একটি চিহ্ন আছে। তাতে ঘোড়ার কেশরের মত একগুচ্ছ চুল আছে। দু’রাত তিনি দুধ পান করবেন না। কারণ একটি দুষ্ট জিন তার মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে তাঁকে দুধ পান থেকে নিবৃত্ত রাখা হয়েছে।’

শুনে লোকজন মজলিস ছেড়ে উঠে চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে। ইহুদীর কথায় তারা হতভম্ভ স্তম্ভিত! ঘরে গিয়ে প্রত্যেকে তারা ঘরের লোকদেরকে এ খবরটি শুনায়। শুনে তারা বলে উঠে, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ! আব্দুল্লাহ ইবন আবদুল মুত্তালিবের একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারা তার নাম রেখেছে মুহাম্মদ।’ এবার তারা ইহুদীর কথা ও এই নবজাতক সম্পর্কে কানাঘুষা করতে করতে ইহুদীর নিকট যায় এবং তাকে এ খবরটি জানায়। ইহুদীটি বলল, ‘তোমরা আমাকে নিয়ে চল, আমি তাকে একটু দেখব।’ লোকেরা ইহুদীকে নিয়ে আমেনার ঘরে গিয়ে তাকে বলল, ‘তোমার পুত্রটিকে একটু আমাদের কাছে দাও।’ আমেনা পুত্রকে তাদের কাছে দিলে তারা তার পিঠের কাপড় সরিয়ে ইহুদীর বর্ণিত নিদর্শনটি দেখতে পায়। সাথে সাথে ইহুদী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার জ্ঞান ফিরলে লোকেরা তাকে বলল, ‘কী ব্যাপার, আপনার হয়েছে কি?’ ইহুদীটি বলল, ‘আল্লাহর শপথ, নবুওত বনী ইসরাঈল থেকে বিদায় নিল! তোমরা এতে আনন্দিত হও, হে কুরাইশের দল! আল্লাহর শপথ, তোমাদের সহায়তায় তিনি এমন বিজয় লাভ করবেন যে, প্রাচ্যে-প্রতীচ্যে তার সুসমাচার ছড়িয়ে পড়বে।’ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বর্ণনা করেন যে, হাসসান ইবন সাবিত (রা) বলেছেন, আমি তখন সাত কি আট বছরের বালক। যা শুনি বা দেখি, তা বুঝবার বয়স তখন আমার হয়েছে। হঠাৎ একদিন সকাল বেলা ইয়াসরিবে জনৈক ইহুদীকে চীৎকার করে বলতে শুনলাম, ‘হে ইহুদী সমাজ!’ চীৎকার শুনে লোকজন তার নিকট এসে ভীড় জমায় এবং বলে, ‘বল, কি হয়েছে তোমার?’ সে বলল, ‘আহমদ নামের যে লোকটির জন্ম হওয়ার কথা, এই রাতে তার তারকা উদিত হয়েছে।’

হাফিজ আবু নুয়ায়ম ‘দালায়িলুন্নবুওয়াহ’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, আবু মালিক ইবন সিনান বলেন, একদা আমি গল্পগুজব করার জন্য আবদুল আশহাল গোত্রে যাই। তখন আমরা তাদের সঙ্গে সন্ধিবদ্ধ। সে সময়ে আমি শুনতে পেলাম যে, ইউশা নামক এক ইহুদী বলছে, ‘আহমদ নবীর আগমনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তিনি হেরেম থেকে বেরিয়ে আসবেন। এ কথা শুনে খলীফা ইবন ছালাবা আল-আশহালী উপহাস করে জিজ্ঞাসা করল, ‘তার পরিচয় কী হে?’ ইহুদী বলল, ‘তিনি হবেন এমন এক ব্যক্তি যিনি না হবেন বেঁটে, না লম্বা। দু’চোখে তার লালিমা থাকবে। তিনি হবেন কমলীওয়ালা। তিনিও গাধায় সওয়ার হবেন। তার কাঁধে তরবারী ঝুলানো থাকবে। এই নগরী হবে তার হিজরত স্থল।’ আবু মালিক ইবন সিনান বলেন, ইহুদীর কথায় অভিভূত হয়ে আমি আমার স্বগোত্র বনু খাদরায় চলে এলাম। আমার নিকট থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘এ কথা কি ইউশা একাই বলছে, নাকি ইয়াসরিবের সব ইহুদীর একই কথা!’ আবূ মালিক বলেন, ‘এই ঘটনার পর আমি বনূ কুরায়যার নিকট যাই। সেখান গিয়ে দেখতে পেলাম, একদল মানুষ আখেরী নবী সম্পর্কেই আলাপ-আলোচনা করছে।’ কথা প্রসঙ্গে যুবায়র ইবন বাতা বললেন, ‘সেই লাল নক্ষত্রটি উদিত হয়ে গেছে, যা কখনও কোনও নবীর আগমন বা আবির্ভাবের উপলক্ষ ছাড়া কোনদিন উদিত হয় না। এখন তো আহমদ ছাড়া আর কোন নবীর আগমনের বাকী নেই। আর এই ইয়াসরিবই হবে তার হিজরত স্থল।’

আবু সাঈদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনা আগমন করার পর আমার আব্বা তাঁকে এই ঘটনাটি শুনান। শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ ‘যুবায়র যদি মুসলমান হত, তাহলে নেতৃস্থানীয় অনেক ইহুদীও মুসলমান হয়ে যেত। কারণ ওরা এর অনুগত।’

আবু নুয়ায়ম (র) বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবন সাবিত (রা) বলেন, বনু কুরায়যা ও বনু নযীর এর ইহুদী পণ্ডিতগণ নবী করীম (সা)-এর পরিচিতি সম্পর্কে আলোচনা করতেন। অবশেষে লাল নক্ষত্র উদিত হয়ে গেলে তারা ঘোষণা করে যে, ইনিই আখেরী নবী; এর পরে আর কোনও নবী আসবেন না। নাম তার আহমদ এবং তার হিজরত স্থল হবে ইয়াসরিব। কিন্তু যখন নবী করীম (সা) হিজরত করে মদীনায় আসলেন আর তারা তাঁকে অগ্রাহ্য করে, হিংসা করে ও কুফরী করে। আবু নুয়াইম তার কিতাবেও এই ঘটনাটি উল্লেখ করেন। আবু নুয়াইম ও মুহাম্মদ ইবন হিব্বান বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়েল বলেছেন, সিরিয়ার বিশিষ্ট ইহুদী পন্ডিত মুবিয়ান বলেছেন, তোমার নগরীতে একজন নবী আবির্ভাব ঘটবে। ইতিমধ্যে তার নক্ষত্র উদিত হয়ে গেছে। তুমি দেশে ফিরে গিয়ে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তার অনুসরণ কর।

কিসরার সিংহাসন প্রকম্পিত হওয়া, অগ্নিকুণ্ড নির্বাপিত হওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা

হাফিজ আবু বকর মুহাম্মদ ইবন জাফর ইবন সাহল আল-খারায়েতী ‘হাওয়াতিফুল জান্ন’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, হানী আল-মাখয়ুমী যিনি দেড়শ বছর আয়ু পেয়েছিলেন-বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যে রাতে জন্মগ্রহণ করেন, সে রাতে কিসরার রাজপ্রাসাদ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে, তার চৌদ্দটি গম্বুজ ভেঙ্গে যায়, পারস্যের অগ্নিকুণ্ড নিভে যায়। অথচ আর আগে এক হাজার বছরের মাঝে কখনও তা নির্বাপিত হয় নি। সাওয়া হ্রদ শুকিয়ে যায় এবং সিরীয় ধর্মযাজক মুবিযান স্বপ্নে দেখেন যে, কতগুলো উট কতগুলো ঘোড়াকে হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাড়া খেয়ে ঘোরাগুলো দজলা নদী (টাইগ্রীস) অতিক্রম করে তাদের জনপদসমূহে ছড়িয়ে পড়েছে।

উপরোক্ত ঘটনায় কিসরা ভীত-সম্ভস্ত হয়ে উঠেন। ধৈর্যধারন করার চেষ্টা করেও তিনি স্থির থাকতে পারলেন না। অবশেষে তিনি পারিষদবর্গকে ডেকে পাঠান। মাথায় মুকুট পরে সিংহাসনে বসে উপস্থিত পারিষদবর্গের উদ্দেশে তিনি বলেনঃ ‘তোমরা কি জান, তোমাদেরকে কেন সমবেত করা হয়েছে?’ সকলে বলল, ‘না, আমরা কিছুই জানি না। আপনি অবহিত করলেই তবে আমরা জানতে পারব।’ ঠিক এই সময় আগুন নির্বাপিত হওয়া সংক্রান্ত পত্র তাদের কাছে এসে পৌঁছে। এতে কিসরার দুশ্চিন্তার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এরপর মুবিযান যা দেখছিলেন তার কথা এবং তার ভয়াবহতার কথা ব্যক্ত করেন।

মুবিযান বলেন, আল্লাহ বাদশাহর রাজত্ব অটুট রাখুন।আজ রাতে আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি।এই বলে তিনি পারিষদবর্গকে তার উট সংক্রান্ত স্বপ্নের কথা বিবৃত করে শুনান।কিসরা জিজ্ঞেস করেন, বল তো মুবিযান! এ সবের অর্থ কি হতে পারে? মুবিযান বললেন, ‘আরবের কোন এক উপকণ্ঠে বিশেষ কোনও একটি ঘটনা ঘটে থাকবে!’ তৎক্ষণাৎ কিসরা নুমান ইবন মুনযির এর নিকট এ মর্মে পত্র লিখেনঃ

রাজাধিরাজ কিসরার পক্ষ থেকে নুমান ইবন মুনযির এর প্রতিঃ পত্র পাওয়া মাত্র আমার নিকট একজন পন্ডিত ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিবে, যার নিকট আমি উদ্ভুত প্রশ্নের যথাযথ জবাব পাব।

পত্র পেয়ে নুমান ইবন মুনযির আবদুল মাসীহ ইবন আমর ইবন হায়্যান ইবন নুফায়লা আল-গাসসানীকে রাজদরবারে পাঠিয়ে দেন। তিনি এসে পৌঁছলে কিসরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি যা প্রশ্ন করব তুমি তার জবাব দিতে পারবে কি?’ জবাবে আবদুল মাসীহ বলেনঃ ‘মহারাজ যা ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমার জানা থাকলে আমি তার জবাব দিব; অন্যথায় এমন ব্যক্তির সন্ধান দেব, যিনি এর জবাব দিতে সক্ষম হবেন।’ কিসরা তাঁকে ঘটনাটি খুলে বলেন। জবাবে আবদুল মাসীহ বলেন, ‘আমার এক মামা এর জবাব দিতে পারবেন। তিনি সিরিয়ার সাতীহ নামক স্থানের উপকণ্ঠে বাস করেন।’ কিসরা বললেন, ‘ঠিক আছে। তুমি তার কাছে গিয়ে দেখ, সে এর জবাব দিতে পারে কিনা। আমি যা জানতে চাই তাকে তা জিজ্ঞেস করে তার ব্যাখ্যা জেনে এসো।’ আবদুল মাসীহ সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়ায় রওয়ানা হয়ে মুমূর্ষ সাতীহ এর নিকট পৌঁছেন। তিনি তাকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু সাতীহ সালামের কোন জবাবও দিলেন না বা কোন কথাও বললেন না। তখন আবদুল মাসীহ কবিতার কয়েকটি পংক্তি আবৃত্তি করেন। তা শুনে এবার সাতীহ মাথা তুলে বলেন, ‘আবদুল মাসীহ! উটের পিঠে চড়ে তুমি সাতীহ এর নিকট এসেছ। অথচ সে তখন মৃত্যুপথযাত্রী। আমি জানি, তোমাকে সাসান বংশের বাদশাহ প্রেরণ করেছেন। রাজপ্রাসাদ প্রকম্পিত হওয়ায়, অগ্নিকুণ্ড নিভে যাওয়ায় এবং মুবিযানের স্বপ্ন; যাতে তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, উটগুলো ঘোড়াগুলোকে তাড়া করছে এবং দজলা অতিক্রম করে জনপদসমূহে ছড়িয়ে পড়েছে। শোন হে আবদুল মাসীহ! যখন তিলাওয়াত বৃদ্ধি পাবে, মোটা ছড়িওয়ালা আত্মপ্রকাশ করবেন, সামাওয়া উপত্যকা প্লাবিত হবে, সাওয়া হ্রদ শুকিয়ে যাবে এবং পারস্যের অগ্নিকুণ্ড নিভে যাবে, তখন শাম আর সাতীহ এর জন্য শাম থাকবে না। গম্বুজের সমসংখ্যক রাজা-রাণী তার কর্তৃত্ব কেড়ে নেবে, আর সেই সময়টি এসে পড়েছে।’ একথাটি উচ্চারণ করেই সাতীহ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

আবদুল মাসীহ তখনই বাহনে চড়ে কবিতা আবৃত্তি করতে করতে রওয়ানা হয়ে পড়েন। কিসরার নিকট এসে তিনি তাকে শুনান। সাতীহ যা বলেছেন, তার বিবরণ দেন। শুনে কিসরা বলে উঠেন, ‘তার মানে দাঁড়াল, আমার পর চৌদ্দজন রাজা রাজত্ব করবে।’

বাস্তবিক পরবর্তী চার বছরে দশজন রাজা পারস্যের সিংহাসনে বসেন। অবশিষ্টগণ রাজত্ব করেন হযরত উসমান (রা)-এর খিলাফত পর্যন্ত। বায়যাবীও অনুরূপ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। আমার মতে, পারস্যের সর্বশেষ রাজা যার নিকট থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নেয়া হয় তিনি হলেন, ইয়াযদাগির্দ ইবন শাহরিয়ার ইবন পারভেজ ইবন হুরমুয় ইবন নওশিরওয়া। এই রাজার আমলেই রাজপ্রাসাদে ফাটল ধরে। তার আগে তার পূর্বসূরীরা তিন হাজার একশ’ চৌষট্টি বছর রাজত্ব করেছিলেন। এদের সর্বপ্রথম রাজা ছিলেন খিওমারত ইবন উমাইম ইবন লাওয ইবন সাম ইবন নূহ।

আলোচ্য সাতীহ এর পরিচয় প্রসঙ্গে ইবন আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন যে, এই লোকটির নাম রবী ইবন রবীয়া ইবন মাসউদ ইবন মাযিন ইবন যিব ইবন আদী ইবন মাযিন ইবন আল-আযদ। কেউ কেউ তাঁকে রবী ইবন মাসউদও বলেছেন। তাঁর মা রিদআ বিনতে সাদ ইবনুল হারিছ আল-হাজুরী। তার বংশ লতিকা ভিন্নভাবেও বর্ণিত হয়েছে। ইবনে আসাকির-এর মতে তিনি জাবিয়ায় বাস করতেন। তিনি আবূ হাতিম সাজিসতানী থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর কয়েকজন শায়খ বলেছেন, সাতীহ হচ্ছেন লোকমান বিন আদ-এর পরবর্তী যুগের মানুষ। মহাপ্লাবনের আমলে তার জন্ম। বাদশাহ যীনাওয়াসের আমল পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন। অর্থাৎ প্রায় ত্রিশ প্রজন্মের আয়ু তিনি লাভ করেন। তাঁর আবাস ছিল বাহরাইবন।

আবদুল কায়স গোত্র দাবি করে যে, সাতীহ তাদের বংশের লোক, অপরদিকে আযদ গোত্রীয়দের দাবি হচ্ছে যে, তিনি তাদের বংশের। অধিকাংশ মুহাদ্দিস সাতীহকে আযদ বংশীয় বলে অভিমত প্রকাশ করেন। তবে আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে, তাঁর প্রকৃত পরিচয় কী? তবে তার বংশধররা নিজেদেরকে আদবংশীয় বলে দাবি করেন।

ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, সাতীহ-এর সঙ্গে আদম সন্তানের কারো কোনও মিল ছিল না। তার দেহ ছিল গোশতের একটি টুকরা, যার মাথায় দু’চোখে ও দু’হাতে ছাড়া আর কোথাও অস্থি অথবা শিরা ছিল না। কাপড় যেভাবে ভাজ করা যায় তেমনি তাকেও দু’পা থেকে ঘাড় পর্যন্ত ভাঁজ করা যেত। জিহবা ছাড়া আর দেহে নাড়বার মত কিছুই ছিল না। কেউ কেউ বলেন, সাতীহ রেগে গেলে তার দেহ ফুলে যেত এবং তিনি বসে পড়তেন।

ইবন আব্বাস (রা) আরও বলেন, সাতীহ একবার মক্কায় এসেছিলেন। কুসাই এর দুই পুত্র আবদে শামস ও আবদে মানাফ সহ মক্কার নেতৃস্থানীয় অনেকে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসেন। তারা তাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সব প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব তিনি দেন। শেষ যুগে কী ঘটবে, সে বিষয়েও তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে যা ইলহাম করেছেন, তার আলোকে বলছি যে, হে আরব জাতি! তোমরা এখন চরম বার্ধক্যের যুগে উপনীত। তোমাদের আর অনারবদের বুদ্ধি-বিচক্ষণতা সমান। তোমাদের নিকট না আছে বিদ্যা, না আছে বুদ্ধি। তবে তোমাদের পরবর্তীদের মধ্যে এমন কিছু বিবেকবান লোকের আবির্ভাব ঘটবে যে, তারা নানা প্রকার বিদ্যা অন্বেষণ করবে। সেই বিদ্যার আলোকে তারা মূর্তি ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলবে, যোগ্য লোকের অনুসরণ করবে, অনারবদের হত্যা করবে এবং বকরীর পাল তালাশ করে বেড়াবে। অতঃপর এই নগরবাসীদের মধ্যে হতে এমন একজন সুপথপ্রাপ্ত নবীর আবির্ভাব ঘটবে, যিনি সত্য ও সঠিক পথের দিক-নির্দেশনা করবেন এবং বহু দেবতার উপাসনা পরিহার করে এক ‘রব’ এর ইবাদত করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁকে প্রশংসিত এক স্থানে তুলে নেবেন। তখন তিনি ইহজগত থেকে আড়ালে থাকবেন; কিন্তু আকাশে থাকবেন প্রকাশমান। তারপর এমন এক সিদ্দিক তথা মহাসত্যবাদী তার স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি বিচার করবেন সঠিক এবং অধিকার প্রদানে হবেন অকুণ্ঠচিত্ত।

এরপর সরল-সঠিক পথের অনুসারী, অভিজ্ঞ ও সম্ভ্রান্ত এক ব্যক্তি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। আতিথেয়তা ও ন্যায় বিচারে তিনি হবেন সর্বজনবিদিত। অতঃপর সাতীহ হযরত উছমান (রা), তার হত্যা এবং তৎপরবর্তী বনু উমাইয়া ও বনু আব্বাসের যুগে যা কিছু ঘটবে, সব উল্লেখ করেন। এরপর যত ফেতনা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত হবে, তাও তার বক্তব্য থেকে বাদ পড়েনি। ইবন আসাকির ইবন আব্বাস (রা) থেকে এই বর্ণনাটি বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।

উপরে আমরা উল্লেখ করে এসেছি যে, এক স্বপ্নের ব্যাখ্যায় সাতীহ ইয়ামানের বাদশাহ রবীয়া ইবন নাসরকে ইয়ামানে কী কী অরাজকতা দেখা দিবে এবং কিভাবে ক্ষমতার হাত বদল হবে, সবকিছুর ভবিষ্যবাণী করেছিলেন। এমনকি একথাও বলেছিলেন যে, এক পর্যায়ে ইয়ামানের শাসন ক্ষমতা সায়ফ ইবন যীইযাযান এর হাতে ফিরে আসবে। তখন রবীয়া ইবন নাসর তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ‘সায়ফ ইবন যী-ইয়াযানের হাতে ক্ষমতা আসার পর থেকে তা অব্যাহত থাকবে, নাকি তাতে ছেদ পড়বে?’ জবাবে সাতীহ বলেছিলেন, ‘বরং ছেদ পড়বে।’ রবীয়া জিজ্ঞাসা করেন, ‘কার দ্বারা এতে ছেদ পড়বে?’ সাতীহ বলেছিলেন, ‘এমন একজন পবিত্রাত্মা নবী, যার নিকট উর্ধজগত থেকে ওহী আসাবে।’ রবীয়া জিজ্ঞাসা করেন, ‘এই নবী কার বংশ থেকে আসবেন?’ জবাবে সাতীহ বলেন, ‘গালিব ইবন ফিহর ইবন মালিক ইবন নাযর এর বংশ থেকে। শেষ যুগ পর্যন্ত রাজত্ব তারই বংশে বিদ্যমান থাকবে।’ রবীয়া পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, ‘যুগের আবার শেষ আছে নাকি?’ জবাবে সাতীহ বলেন, ‘হ্যাঁ, আছে বৈকি? যুগের শেষ হলো সেই দিন, যেদিন পূর্ববর্তী পরবর্তী সব মানুষ একত্রিত হবে। সৎকর্মশীলরা হবে সেদিন ভাগ্যবান, অসৎ লোকেরা হবে দুর্ভাগা। রবীয়া আবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি আমাকে যা কিছু বললে, তা কি সত্য?’ সাতীহ বলেন, ‘জী হ্যাঁ, সত্য। অস্তমান সূর্যের লালিমা, নিশীথের অন্ধকার এবং পূর্ণচন্দ্রের জ্যোৎস্নার শপথ করে বলছি, আমি আপনাকে যেসব বিষয়ের সংবাদ দিয়েছি, তার সবই সত্য। শিক এর অনুরুপ একটি বিবরণ ভিন্ন শব্দাবলীতে ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।

সাতীহ এর কবিতার দুটি পংক্তি নিম্নরূপঃ

عليكم بتقوى الله في السر والجهر - ولا تلبسوا صدق الأمانة بالقدر

وكونوا لجار الجنب حصنا وجنت - إذا ما عرته الناانبات من الدهر

—গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় তোমাদের আল্লাহর ছায়া অবলম্বন করা উচিত। আর তোমরা সত্যকে বিশ্বাস ভঙ্গের সাথে মিশ্রিত কর না। প্রতিবেশীর বিপদে-আপদে তাদের রক্ষাকবচ ও ঢালের ভূমিকা পালন কর।

হাফিজ ইবন আসাকির উপরিউক্ত বর্ণনা উদ্ধৃত করেন। মু’আয ইবন যাকারিয়া আল-জারীরীও অনুরূপ বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেছেন, সাতীহ সম্পর্কে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে। অনেকে তা সংকলন করেছেন। তবে প্রসিদ্ধ অভিমত হলো এই যে, সাতীহ ছিলেন একজন ভবিষ্যদ্বক্তা। তিনি নবী করীম (সা)-এর আবির্ভাব, তার পরিচয় ও নবুওত লাভের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাছাড়া আমরা এমন বর্ণনা পেয়েছি যে, নবী করীম (সা)-কে সাতীহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, “সাতীহ এমন একজন নবী, যাকে তার স্বজাতি কদর করেনি। তবে বর্ণনাটির সনদের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে জানা যায় না।

আমার মতে, নির্ভরযোগ্য কোন ইসলামী কিতাবে এই বর্ণনার কোন ভিত্তি নেই। সনদ সহ এমন হাদীস আমি আদৌ কোথাও পাইনি। খালিদ ইবন সিনান আল-আবাসীর বর্ণনায় এরুপ বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু তাও বিশুদ্ধ নয়।

আলোচ্য বক্তব্যের বাহ্যিক মর্ম প্রমাণ করে যে, সাতীহ এর যথেষ্ট বিদ্যা ছিল এবং তাতে সত্যতার সুগন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি ইসলামের যুগ পাননি। যেমন জারিরী বলেছেন।

কেননা, উপরিউক্ত বর্ণনায় আমরা বলেছি যে, সাতীহ তার ভাগিনাকে বলেছিলেন, ‘হে আবদুল মাসীহ! যখন তিলাওয়াত বৃদ্ধি পাবে, শক্ত ছড়িওয়ালা আত্মপ্রকাশ করবেন, সামাওয়ার উপত্যকা ফুসে উঠবে, সাওয়া হ্রদ শুকিয়ে যাবে ও পারস্যের অগ্নিকুণ্ড নিভে যাবে, সাতীহ-এর জন্য শাম আর শাম থাকবে না, গম্বুজের সংখ্যার সমান সংখ্যক রাজা-রাণী শামের রাজত্ব করবে। আর যা আসবার, তা আসবেই।’

এরপর সাতীহর মৃত্যু হয়। ঘটনাটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের একমাস কিংবা তার চাইতে কিছু কম পরে। তাঁর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ইরাকের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কোন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

ইবন তাররার আল হারীরি বলেন, সাতীহ সাতশ’ বছরের আয়ু পেয়েছিলেন। আবার কেউ বলেন, পাঁচশ’ বছর, কেউ বলেন, তিনশ’ বছর। ইবন আসাকির বর্ণনা করেন যে, এক বাদশাহ সাতীহকে একটি শিশুর বংশ পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, যার পিতৃপরিচয় সম্পর্কে মতভেদ ছিল। জবাবে সাতীহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তার সমাধান দেন। এমনি এক জটিল সমস্যার সমাধান পেয়ে বাদশাহ তাঁকে বললেন, ‘সাতীহ! তোমার এই বিদ্যার উৎস সম্পর্কে তুমি আমাকে বলবে কি?’ জবাবে সাতীহ বললেন, ‘এই বিদ্যা আমার নিজস্ব নয়। আমি এই বিদ্যা লাভ করেছি, আমার সেই ভাইয়ের নিকট থেকে, যিনি সিনাই পর্বতে ওহী শ্রবণ করেছিলেন।’ বাদশাহ বললেন, ‘এমন নয় তো যে, তোমার সেই জিন ভাইটি সর্বক্ষণ তোমার সঙ্গে থাকে-কখনো তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না?’ ‘না, এমন নয় বরং আমি যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি, সেও আলাদা হয়ে যায়। তবে সে যা বলে, আমি তা ছাড়া অন্যকিছু বলি না।’

উপরে বর্ণিত হয়েছে যে, সাতীহ এবং আরেকজন ভবিষ্যদ্বক্তা (ইবন মসআব ইবন ইযাশকুর ইবন রাহম ইবন বুসর ইবন উকবা) একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন্মের পর তাদেরকে তারীফা বিনতে হুসাইবন আল হামীদিয়াহ নাম্নী এক গণক ঠাকুরণীর নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। সে তাদের মুখে থুথু দেয়। ফলে তার থেকে তারা জ্যোতিষবিদ্যা লাভ করে। আর সেই গণক ঠাকুরণী সেদিনই মারা যায়। সাতীহ ছিলেন আধা মানুষ। কথিত আছে যে, খালিদ ইবন আবদুল্লাহ আল-কাসরী তারই বংশের লোক। উল্লেখ্য যে, শিক সাতীহ-এর বেশ কিছুকাল আগে মারা যান।

অপরদিকে আবদুল মাসীহ ইবন আমর ইবন কায়স ইবন হায়্যান ইবন নুফায়লা আল-গাসসানী আন-নাসরানী ছিলেন একজন প্রবীণ ব্যক্তি। হাফিজ ইবন আসাকির তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে তার জীবন-চরিত আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, এই আবদুল মাসীহ-ই খালিদ ইবন ওলীদ (রা)-এর সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে ইবন আসাকির দীর্ঘ একটি কাহিনীও উল্লেখ করেছেন এবং এও লিখেছেন যে, খালিদ ইবন ওলীদ (রা) এক সময় তার হাত থেকে বিষ খেয়েছিলেন। কিন্তু তা তার বিন্দুমাত্র অনিষ্ট করেনি। কেননা বিষের পাত্র হাতে নিয়ে তিনি বলেছিলেনঃ

بسم الله وبالله رب الأرض والسماء الذي لا يضر مع اسمه أذى

এই বলে তিনি পাত্রস্থ পদার্থগুলো খেয়ে ফেলেন। খালিদ ইবনে ওলীদের জ্ঞান হারাবার উপক্রম হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দু’হাতে নিজের দু’হাতে চাপড় মারেন এবং ঘর্মাক্ত হন। তিনি জ্ঞান ফিরে পান। তখন আবদুল মাসীহকে তিনি কয়েকটি পংক্তি আবৃত্তি করে শুনান।

আবু নুআয়ম শুআয়ব এর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, মাররুয যাহরান নামক স্থানে একজন ধর্মযাজক বাস করতেন। তার নাম ছিল ‘ঈস। তিনি সিরিয়ার অধিবাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন ‘আস ইবন ওয়ায়েল এর আশ্রিত। আল্লাহ তাঁকে প্রচুর জ্ঞান দান করেছিলেন এবং তাতে মক্কাবাসীদের জন্য বহু উপকার করেছিলেন। তাঁর একটি উপাসনালয় ছিল, তাতেই তিনি সর্বদা থাকতেন। বছরে কেবল একবার মক্কায় আসতেন এবং মক্কাবাসীদের সাথে দেখা সাক্ষাত করতেন। তিনি তাদেরকে বলতেন, ‘হে মক্কাবাসী! অচিরেই তোমাদের মাঝে এমন এক নবজাতকের আবির্ভাব হবে, সমগ্র আরব যার ধর্ম অবলম্বন করবে এবং আজম তথা আরবের বাইরেও তার রাজত্ব ছড়িয়ে পড়বে। এই সেই সময়, যে ব্যক্তি তাকে পাবে এবং তাঁর আনুগত্য করবে, সে কৃতকার্য হবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পেয়েও তার বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে ব্যর্থকাম হবে। আল্লাহর শপথ! তাঁর অনুসন্ধান ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে মদ-রুটি ও শান্তির দেশ ত্যাগ করে আমি এই অভাব-অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার দেশে আসিনি।’ মক্কায় কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হলেই তিনি তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতেন এবং শুনে বলতেন, ‘না, এখন তার আগমন ঘটেনি।’ তখন তাকে বলা হতো, ‘তাহলে বলুন না, সেই শিশুটি কেমন হবে?’ তিনি বলতেন, ‘না, বলা যাবে না।’ প্রতীক্ষিত সেই মহান শিশুটির পরিচয় তিনি তার নিরাপত্তার খাতিরেই গোপন রাখতেন। কারণ তিনি জানতেন যে, সেই শিশুটির স্বজাতি তার অনিষ্ট করার চেষ্টা করবে।

রাসূলুল্লাহ (সা) যে রাতে ভূমিষ্ঠ হন। সেদিন প্রত্যুষে আবদুল মুত্তালিব এসে ঈসের উপাসনালয়ের প্রধান ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে তাকে ডাক দেন। ডাক শুনে তিনি আওয়াজ করে জিজ্ঞেস করেন, ‘কে?’ তিনি বললেন, ‘আমি আবদুল মুত্তালিব।’ যাজক তার নিকটে এসে বললেন, ‘তুমি তার পিতামহ হও। আমি সেই শিশুটির কথা তোমাদের বলতাম যে, তিনি সোমবার দিনে ভূমিষ্ঠ হবেন, সোমবারে নবুওত লাভ করবেন এবং সোমবারেই তাঁর ইন্তিকাল হবে। সেই প্রতীক্ষিত শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়ে গেছেন।’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘আজ প্রত্যুষে আমার একটি সন্তান জন্মেছে।’ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাঁর কি নাম রেখেছেন?’ আব্দুল মুত্তালিব বললেন, ‘নাম রেখেছি, মুহাম্মদ।’ পাদ্রী বললেন, ‘হে কাবার সেবায়েতগণ! আমারও কামনা এই ছিল যে, সেই শিশুটি যেন আপনাদের মধ্য থেকেই আগমন করেন। তিনটি লক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি যে, আপনার পুত্রই সেই প্রতীক্ষিত শিশু। এক, গত রাতে তার নক্ষত্র উদিত হয়েছে। দুই, আজ তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছেন এবং তিন, তাঁর নাম মুহাম্মদ। আপনি যান। আমি আপনাদেরকে যে শিশুটির কথা বলতাম, আপনার নাতী তিনিই।’ আবদুল মুত্তালিব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি করে বুঝলেন যে, আমার নাতী তিনি? আজকে তো অন্য শিশুর জন্ম হয়ে থাকতে পারে?’ পাদ্রী বললেন, আপনার নাতীর সঙ্গে তাঁর নাম মিলে গেছে। আর আল্লাহ আলিমদের জন্য তাঁর ইলমকে সন্দেহজনক করেন না। কারণ, তা হলো অকাট্য প্রমাণ স্বরূপ। তাছাড়া এর আরও একটি প্রমাণ হলো, আপনার নাতী এখন ব্যাথাগ্রস্ত। তাঁর এই ব্যথা তিনদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এতে তাঁর ক্ষুধা প্রকাশ পাবে। অতঃপর তিনি সুস্থতা লাভ করবেন। আপনি আপনার জিহ্বাকে সংযত করে চলবেন। কেননা, তার প্রতি এত বেশি বিদ্বেষ পোষণ করা হবে, যা কখনো অন্য কারও বেলায় হয়নি এবং তার উপর এত বেশি অত্যাচার হবে, যা অন্য কারও উপর কোনদিন হয়নি। তাঁর কথা বলার বয়স পর্যন্ত যদি আপনি বেঁচে থাকেন এবং তিনি তার দাওয়াতের কাজ শুরু করেন, তাহলে আপনার স্বজাতির পক্ষ থেকে আপনি এমন আচরণ দেখতে পাবেন, যা আপনি সহ্য করতে পারবেন না। তখন ধৈর্যধারণ আর লাঞ্ছনা ভোগ করা ব্যতীত কোন গতি থাকবে না। অতএব আপনি আপনার জিহবাকে সংযত রাখবেন এবং তাকে চোখে চোখে রাখবেন।’ আবদুল মুত্তালিব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘শিশুটির আয়ু কত হবে?’ পাদ্রী বললেন, ‘আয়ু তার বেশি হোক আর কম হোক সত্তরে পৌঁছবে না। সত্তরের নিচে ষাটের ওপরে যে কোন বেজোড় সংখ্যার বয়সে তাঁর মৃত্যু হবে। আর এই হবে তাঁর উম্মতের অধিকাংশের গড় আয়ু।’

বর্ণনাকারী বলেন, মুহাররমের দশ তারিখে রাসূলুল্লাহ (সা) মায়ের গর্ভে আসেন এবং হস্তিবাহিনীর যুদ্ধের তেইশ দিন আগে রমযান মাসের বার তারিখে সোমবার ভূমিষ্ঠ হন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন