hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৭৪
কুরায়শ তথা বনু নযর ইবন কিনানা-এর বংশধারা ও শ্রেষ্ঠত্ব
ইবন ইসহাক বলেনঃ নযর-এর মা বাররা ছিলেন মুর ইবন উদ্ ইবন তাবিখার কন্যা। আর তার সমস্ত সন্তানরা তাঁর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত। এ মতের বিরোধিতা করেন ইবন হিশাম। তার মতে বাররা বিনত মুর হচ্ছেন নযর, মালিক ও মালকান-এর মা। আর আবদে মানাত-এর মা হচ্ছেন আযদ সানুআ গোত্রের হান্না বিনত সুয়াইদ ইবন গিতরীফ। ইবন হিশাম বলেনঃ নযরই হচ্ছেন কুরাইশ আর তার সন্তানরাই কুরায়শী নামে পরিচিত হন। তিনি এও বলেন যে, কারো কারো মতে ফিহর ইবন মালিক হচ্ছেন কুরায়শ, আর তার সন্তানরা কুরায়শী। যারা তার সন্তান নয়, তারা কুরায়শী একাধিক কুলজিবিশারদ যথা শায়খ আবু উমর ইবন আব্দুল বার, যুবায়র ইবন বাক্কার এবং মুছ’আব প্রমুখ এ দু’টি উক্তির উল্লেখ করেছেন। আবু উবায়দ এবং ইবন আব্দুল বার বলেনঃ আস’আদ ইবন কায়স-এর উক্তি মতে অধিকাংশ ঐতিহাসিক এ মত পোষণ করেন যে, কুরায়শ হচ্ছেন নযর ইবন কিনানা।

আমি বলবোঃ হিশাম ইবন মুহাম্মদ ইবন সাইব আল-কানবী এবং আবু উবায়দা মাযার ইবন মুসান্না এ মতের সমর্থনে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। আর তিনি শাফিঈ মাযহাবের প্রসারে অবদান রাখেন। পক্ষান্তরে আবু উমর এ মত পোষণ করেন যে, কুরায়শ হচ্ছেন ফিহর ইবন মালিক। এ মতের সমর্থনে তিনি প্রমাণ উপস্থিত করে বলেন যে, বর্তমানে এমন কেউ নেই, যে নিজেকে কুরায়শী বলে দাবী করে অথচ সে ফিহর ইবন মালিক-এর বংশধর নয়। অতঃপর তিনি এ উক্তির পক্ষে যুবায়র ইবন বাক্কার মুসআর ইবন যুবায়র। এবং আলী ইবন কায়সান-এর নাম উল্লেখ করে বলেনঃ এ ব্যাপারে ত এরাই হচ্ছেন সর্বজন স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ। আর যুবায়র ইবন বাক্কার বলেনঃ কুরায়শ ও অন্যান্য বংশধারা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা একমত যে ফিহর ইবন মালিকই হচ্ছেন কুরায়শদের আদি পুরুষ। ইবন মালিক-এর ঊর্ধ্বতন পুরুষদের কেউই কুরায়শ নামে অভিহিত হননি। অতঃপর এ বক্তব্যের সমর্থনে তিনি অনেক প্রমাণ দেন। কুলায়ব ইব্‌ন ওয়ায়েল-এর সূত্রে বুখারী বর্ণনা করেন যে, আমি নবীজীর ঘরে লালিত যয়নবকে বললাম, ‘আমাকে জানান যে, নবী করীম (সা) কি মুযার গোত্রের লোক ছিলেন?’ তিনি বললেনঃ ‘তিনি নযর ইবন কিনানা গোত্রের মুযার গোত্রেরই ছিলেন।’ আর তাবারানী জাশীশ আল- কিন্দীর বরাতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা)-এর নিকট কিন্দা থেকে একদল লোক আগমন করে বললোঃ ‘আপনি তো আমাদের বংশের লোক।’ তখন তিনি বললেন, ‘না, বরং আমরা নসর ইবন কিনানা গোত্রের লোক। আমরা আমাদের মাতৃপক্ষ সম্পর্কে কোন সন্দেহ পোষণ করি না এবং আমাদের উর্ধ্বতন পিতৃ পুরুষ আমরা অস্বীকার করি না।

আর ইমাম আবু উসমান সাইদ ইবন ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, শিন্দা গোত্র থেকে জাশীস নামক জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (সা)-এর নিকট আগমন করে বলেনঃ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা মনে করি আবদ মানাফ আমাদের বংশের লোক।’ নবী করীম (সা) মুখ ফিরায়ে নিলেন। লোকটি ফিরে এসে অনুরূপ বললে তিনি তার থেকে পুনরায় মুখ ফিরালেন। লোকটি আবারও ফিরে এসে অনুরূপ কথা বললে তিনি বললেনঃ ‘আমরা নসর ইবন কিনানার বংশধর। আমাদের মাতৃকুল সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করি না আর আমাদের ঊর্ধ্বতন পিতৃ পুরুষকে অস্বীকার করি না।’ তখন রাবী বললেনঃ আপনি প্রথম দফায়ই চুপ করে রইলেন না কেন? এইভাবে আল্লাহ্ তাঁর নবীর পবিত্র মুখে তাদের দাবী নাকচ করে দেন। এ সনদে হাদীসটি গরীব পর্যায়ের উপরন্তু কালবী হচ্ছেন একজন দুর্বল রাবী। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

ইমাম আহমদ আশআছ ইবন কায়েস সূত্রে বলেন যে, কিন্দার প্রতিনিধি দলে আমিও নবী করীম (সা)-এর নিকট আগমন করি। তখন আমি বললামঃ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের ধারণা, আপনি আমাদের বংশেরই লোক।’ তখন নবী করীম পূর্বোল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ জবাব দেন। এ বর্ণনার শেষাংশে আছে, আশআস ইবন কায়েস বলেন, ‘আল্লাহর কসম, কুরাইশরা যে নযর ইবন কিনানার বংশধর, একথা কাউকে অস্বীকার করতে শুনলে শরীয়তের দণ্ডবিধি অনুযায়ী তাকে বেত্রাঘাত করবো।’ ইবন মাজাহ্ও এ হাদীসটি উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন। এ হচ্ছে এ বিষয়ে শেষ কথা। সুতরাং যে তার বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। জারীর ইবন আতিয়া তামীমী হিশাম ইবন আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান-এর প্রশংসায় বলেনঃ

فما الام التي ولدت قريشا - بمقرفة التجار ولا عقيم

وماقرم بانجب من ابيكم - ولا خال باكرم من تميم

—যে মা কুরাইশকে জন্ম দিয়েছেন তাঁর বংশে কোন কলংক নেই এবং তিনি বন্ধ্যাও নন, কোন নেতা তোমাদের পিতৃপুরুষের চাইতে অধিকতর সম্ভ্রান্ত নয়, আর কোন মামা তামীম গোত্রের চাইতে অধিক সম্মানিত নয়।

ইবন হিশাম বলেনঃ এ উক্তিটি নযর ইবন কিনানার মা সম্পর্কে। আর তিনি হলেন তামীম ইবন মুর-এর বোন বাররা বিনত মুর। কুরায়াশ শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে কথিত আছে যে, তাকাররুশ ( تقرش ) শব্দ থেকে-এর উৎপত্তি যার অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর একত্র হওয়া। আর এটা হয়েছে কুসাই ইবন কিলাব-এর যমানায়। তারা ছিল বিচ্ছিন্ন। তিনি তাদেরকে হেরেম শরীফে একত্র করেন। পরে এর বিবরণ আসছে। হুযাফা ইবন গানিম আলআদবী বলেনঃ

ابوكم قصي كان يدعی مجمعا - به جمع الله القبائل من فهر

—তোমাদের পিতা কুসাই সমবেতকারী নামে অভিহিত হতেন। তাঁরই মাধ্যমে আল্লাহ সমবেত করেছেন ফিহরের কবীলাকে। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেনঃ কুসাইকে বলা হতো কুরাইশ, যার অর্থ একত্র করা। আর তাকাররুশ অর্থও একত্র করা। যেমন আবু খালদা আল ইয়াশকারী বলেনঃ

اخوة قرشوا الذنوب علینا - في حديث من دهرنا وقديم

—ভাইয়েরা আমাদের বিরুদ্ধে জড়ো করেছে অপরাধের অভিযোগ, আমাদের যুগের এবং প্রাচীন যুগের কাহিনীতে।

আবার কেউ কেউ বলেন, কুরাইশ নামকরণ করা হয়েছে ‘‘তাকাররুশ” ( تقرش ) থেকেঃ যার অর্থ উপার্জন করা, ব্যবসা করা। ইবন হিশাম এটি উল্লেখ করেন। অভিধানবেত্তা জাওহারী বলেনঃ কুরাইশ( قريش ) অর্থ উপার্জন করা, জড়ো করা আর ব্যাকরণবিদ ফাররা বলেন এ নামেই কুরাইশ কবীলার নামকরণ করা হয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষ হচ্ছেন নযর ইবন কিনানা। তাঁর সন্তানগণই কুরায়শী-উর্ধতনরা নন। আবার কারো কারো মতে, কুরাইশ নামকরণ হয়েছে তাকতীশ শব্দ থেকে। হিশাম ইব্‌ন কালবী বলেন, নযর ইবন কিনানার নাম রাখা হয় কুরাইশ। কারণ, তিনি মানুষের অভাব-অনটনের খোঁজ খবর নিতেন এবং নিজের অর্থ দ্বারা তাদের অভাব পূরণ করতেন। আর ‘তাকরীশ’ ( تقريش ) অর্থ হচ্ছে ‘তাফতীশ’ ( تفتيش ) তথ্য অনুসন্ধান। আর তাঁর সন্তানরা মওসুমের সময়ে লোকজনের অভাব-অনটনের খোঁজ নিতেন। যাতে লোকেরা দেশে ফিরে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা তারা করতেন। একারণে তাদের নামকরণ করা হয় কুরাইশ। এ নাম তাদের এ কাজের জন্য। তাকরীশ’ অর্থ যে তাফতীশ তথা অনুসন্ধান, এ অর্থে কবি হারিস ইবন হিল্লিযা বলেনঃ

ايها الناطق المقرش عنا - عند عمرو فهل له ابقاء

—হে আমাদের সম্পর্কে অনুসন্ধানী বক্তা! আমর-এর নিকট, তার কি কোন স্থিতি আছে? এটি যুবায়র ইবন বাকারের বর্ণনা। আবার কেউ কেউ বলেন, কুরায়শ শব্দটা ‘‘কিরশ’’ ( قرش ) শব্দের তাসগীর তথা ক্ষুদ্রতা জ্ঞাপক শব্দ। আর قرش অর্থ সমুদ্রে বিচরণকারী প্রাণী। কোন কবি বলেনঃ

وقريش هي التي تسكن البح - ربها سميت قريش قريشا

—আর কুরায়শ হচ্ছে সমুদ্রে বসবাস করা প্রাণী, যে কারণে কুরায়শকে কুরায়শ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আবু রুকানা আল-আমিরী সূত্রে বলেন যে, মু’আবিয়া (রা) ইবন আব্বাস (রা)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, কুরায়শের এরূপ নামকরণের কারণ কী? তিনি বললেনঃ একটি সামুদ্রিক প্রাণীর কারণে, যা কিনা সমুদ্রের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তাকে বলা হয় কিরশ। ক্ষুদ্র বৃহৎ যার নিকট দিয়ে এ প্রাণী অতিক্রম করে, তাকেই গ্রাস করে। তিনি বললেন, এ প্রসঙ্গে আমাকে কোন কবিতা আবৃত্তি করে শুনান। তিনি আমাকে কবি জুমাহীর কবিতা শুনালেন, যাতে তিনি বলেনঃ

وقريش هي التي تسكن البح - ربها سميت قريش قريشا

—আর কুরায়শ সে প্রাণী, যে বাস করে সমুদ্রে, এ কারণে কুরায়শের নাম করণ করা হয় কুরায়শ।

تاكل الغث والسمين ولا - تتركن لذي الجناحين ريشا

—সে ক্ষুদ্র-বৃহৎ সবই গ্রাস করে নেয়, ছাড়ে না কোন পাখা ওয়ালার পাখনা।

هكذا في البلاد حى قريش - ياكلون البلاد اكلا كميشا

—এভাবেই জনপদে কুরায়শ গোত্র, গ্রাস করে জনপদকে প্রচণ্ড ভাবে।

ولهم اخر الزمان نبی - يكثر القتل فيهم و الخموشا

—আখেরী যমানায় কুরায়শদের একজন নবী হবেন, যিনি তাদের অনেকের হত্যার ও যখমের কারণ হবেন।

আবার কেউ কেউ বলেন, কুরায়শ ইবনুল হারিছ ইবন ইয়াখলাদ ইবন কিনানার নামানুসারে কুরায়শ নামকরণ করা হয়েছে। আর তিনি ছিলেন বনূ নযর-এর নেতা এবং তাদের সঞ্চিত সম্পদের রক্ষক। আরবরা বলতো, কুরায়শের দল এসেছে। ঐতিহাসিকরা বলেন, ইবন বদর ইবন কুরায়শ ছিলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি ঐতিহাসিক বদর কূপ খনন করান, কুরআন মজীদে এ যুদ্ধকে ইয়াওমুল ফুরকান তথা পার্থক্যের দিন এবং দুটি দলের মুখোমুখি হওয়ার দিন বলে উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহই ভালো জানেন। কুরাইশের দিকে সম্পৃক্ত করে কারশী এবং কুরায়শী বলা হয়। জাওহারী বলেন, এটাই যুক্তি সঙ্গত। কবি বলেনঃ

لكل قریشی علیه مهابة - سريع الى داعی الندى والتكرم

—সকল কুরায়শী চেহারায় রয়েছে গাম্ভীর্যের ছাপ। দ্রুত ছুটে যায় সে বদান্যতা ও সম্মানের দিকে।

অভিধানবেত্তা জাওহারী বলেন, কুরায়শ শব্দটি যদি শাখাগোত্র অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে তা হবে ( منصرف ) আর যদি গোত্র অর্থে ব্যবহৃত হয় তবে তা হবে ( غير منصرف ) এ প্রসঙ্গে জনৈক কবি বলেন।

وكفى قريش المعضلات وسادها

—সমস্যার মুকাবিলার কুরায়শরা যথেষ্ট তাতে তারা নেতৃত্ব দেয় [এটি আদী ইবন রুফা-এর কবিতার অংশ বিশেষ। এতে তিনি ওলীদ ইবন আব্দুল মালিক-এর প্রশংসা করেন। কবিতার প্রথমাংশ এইঃ غلب المسا ميح الو ليد سماحة ]

আর মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে ওয়াছিলা ইবনুল আসকা’ সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইসমাঈলের বংশধরদের মধ্য থেকে ফিনানাকে মনোনীত করেছেন, আর কুরায়শকে মনোনীত করেছেন ফিনানার সন্তানদের মধ্য থেকে এবং হাশিমকে মনোনীত করেছেন কুরায়শ থেকে এবং আমাকে মনোনীত করেছেন বনূ হাশিম থেকে। আবূ উমর ইবন আব্দুল বার বলেনঃ বনু আব্দুল মুত্তালিবকে বলা হয় রাসূলুল্লাহর পরিজন ( فصبله ) বনু হাশিম শাখা গোত্র ( فخذ ) বনূ আব্দ মানাফ তার উপগোত্র ( بطن ) এবং কুরায়শ তার গোত্র ( عمارة ) এবং বনূ কিনানা তাঁর কবীলা ( قبيله ) এবং মুযার তাঁর কওম ( شعب ) কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাঁর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। ইবন ইসহাক বলেনঃ নযর ইবন কিনানার সন্তান হচ্ছেন মালিক এবং মুখাল্লাদ। ইবন হিশাম সালত নামের তাঁর আরেক সন্তানের কথা উল্লেখ করেছেন। এবং তাদের সকলের মা হচ্ছেন সা’দ ইব্‌ন যারব আল উদওয়ানী। কাছীর ইবন আব্দুর রহমান, যিনি খুযাআ গোত্রের অন্যতম সম্মানীত ব্যক্তি এবং বনূ মুলাইহ ইবন আমর- এর অন্তর্ভুক্ত। ইবন হিশাম বলেনঃ বনূ মুলায়হ্ ইবন আমর সালত্ ইবন নযর- এর পুত্র হচ্ছেন ফিহর। এই ফিহরের মা ছিলেন জন্দলা বিনতু হারিছ ইবন মুযায আল আসগর। আর ফিহর -এর সন্তানরা হচ্ছেন গালিব, মুহারিব, হারিছ এবং আসাদ আর এদের মা লায়লা বিনত সা’আছ ইবন হুযাইল ইবন মুদরিকা।

ইবন হিশাম বলেনঃ জন্দলা বিনত ফিহর তাদের বৈমাত্রেয় বোন। ইবন ইসহাক বলেনঃ গালিব ইবন ফিহর এর সন্তান হচ্ছেন লুয়াই এবং তায়ম। এদেরকে বলা হয় বনুল আদরাম আর তাদের মা হচ্ছেন সালমা বিন্‌তে ‘আমর আল-খুযায়ী। আর ইবন হিশাম বলেন ও কায়স ছিলেন গালিবের অন্য এক সন্তান আর তার মা ছিলেন সালমা বিন্‌তে কা’ব ইবন আর আল- খুযায়ী আর ইনি হলেন লুয়াই-এর মা। ইবন ইসহাক বলেনঃ লুয়াই ইবন গালিব-এর চার পুত্র কা’ব, আমির, সামা এবং আওফ।

ইবন হিশাম বলেনঃ এমনও বলা হয় যে, তিনি জন্ম দেন হারিসকে, আর তারা হচ্ছে জসম ইবনুল হারিস রবীআর হুয়ান গোত্রে এবং সায়াদ ইবন লুয়াইকে। আর তারা হচ্ছে শাইবান ইব্‌ন সালাবার বিনানা গোত্র আর এরা হচ্ছে তাদের প্রতিপালনকারী। আর খুযাইমা ইবন লুয়াই, যারা শারবাম ইবন সা’লাবা গোত্রে আশ্রয় গ্রহণকারী।

অতপর ইবন ইসহাক সামা ইবন লুয়াই এর বর্ণনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন যে, সামা ওমানে চলে যান এবং সেখানেই বসবাস করেন। আর তিনি এটা করেন তাঁর ভাই ‘আমির-এর সঙ্গে শত্রুতা আর বিদ্বেষের কারণে। ভাই আমির তাঁকে ভয় দেখালে তিনি তাতে ভীত হয়ে ওমানে পলায়ন করেন এবং সেখানেই নির্জন নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান। আর তার কারণ এই হয়েছিল যে, তিনি আপন উটনী ছেড়ে দিলে একটা সাপ এসে উটনীটির ঠোঁট জড়িয়ে ধরে। তখন উটনীটি কাত হয়ে পড়ে যায় এবং সাপটি সামাকে দংশন করে। ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। কথিত আছে যে, মৃত্যুর পূর্বে তিনি অঙ্গুলি দ্বারা মাটির উপর কয়েকটি পংক্তি লিখে যানঃ

عين فابکی لسامة بن لؤي - علقت ما بسامة العلاقة

—চক্ষু! রোদন কর সামা ইবন লুয়াইর তরে, ঝুলে রয়েছিল তার সাথে যে ঝুলন্ত বস্তু (সাপ).....

رمت دفع الخوف ياابن لؤي - مالمن دام راك بالحتف طاقة

—হে ইব্‌ন লুয়াই, তুমি চেয়েছিলে মৃত্যু ঠেকাতে, মৃত্যু যাকে গ্রাস করতে চায়, তার তো ঠেকাবার ক্ষমতা নেই।....

ইবন হিশাম বলেনঃ আমি জানতে পেরেছি যে, তার কোন এক সন্তান রাসূলুল্লাহ (সা)- এর নিকট আগমন করে সামা ইবন লুয়াইর সঙ্গে নিজের বংশের সম্পৃক্ততা ব্যক্ত করলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে বলেনঃ ‘কবি সামা?’ তখন জনৈক সাহাবী তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি যেন তার পংক্তিটির দিকে ইঙ্গিত করছেনঃ

دب كأس هرقت باابن لؤي - حذر الموت لم تكن مهراقة

—কতো পানপাত্র প্রবাহিত করেছ হে ইবন লুয়াই, মৃত্যু ভয়ে তুমি তো ছিলে না তা প্রবাহিত করার।

তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ ‘হ্যাঁ। আর সুহায়লী বলেনঃ কারো কারো মতে, সামা কোন সন্তান রেখে যাননি। [মূল আরবী গ্রন্থে সামা স্থলে উসামা মুদ্রিত হয়েছে।]

যুবায়র বলেন, সামা ইবন লুয়াইর গালিব, নাকীত এবং হারিছ নামের তিন পুত্র ছিল। ঐতিহাসিকরা বলেন যে, সামা ইবন লুয়াইর সন্তানরা ছিল ইরাকে, যারা হযরত আলী (রা)-এর সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করতো। তাদের মধ্যে একজন ছিল আলী ইবনল জাদ, যে তার আলী নামকরণের জন্য আপন পিতাকে গালিগালাজ করতো। বনু সামা ইবন লুয়াই’র অন্যতম অধস্তন পুরুষ আর’আরা ইবনুল ইয়াযীদ ছিলেন ইমাম বুখারীর অন্যতম উস্তাদ।

ইবন ইসহাক বলেনঃ আওফ ইবন লুয়াই সম্পর্কে কথিত আছে যে, তিনি কুরায়শের একদল অশ্বারোহী সঙ্গে বহির্গত হন। গাতফান ইবন সা’দ ইব্‌ন কায়স ইবন আয়লান-এর জনপদে পৌঁছলে তিনি সেখানে রয়ে যান এবং তাঁর সঙ্গীরা চলে যায়। তখন তাঁর নিকট আগমন করেন ছা’লাবা ইবন সা’দ। তিনি বনু লুবইয়ানের জ্ঞাতি ভাই ছিলেন। ছালাবা তাঁকে এবং তার স্ত্রীকে সেখানে রেখেছেন এবং তার সঙ্গে ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন করার ফলে বনূ লুবইয়ান এবং ছা’লাবা গোত্রের মধ্যে তাঁর বংশ বিস্তার ঘটে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন।

ইবন ইসহাক বলেনঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেছেনঃ আমি যদি আরবের কোন গোত্রের দাবীদার হতাম, অথবা তিনি বলেন যে, আমি যদি তাদেরকে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতাম তাহলে আমি বনু মুররা ইব্‌ন আওফের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবী করতাম। আমরা তাদের মত লোকদেরকে চিনি, অথচ আমরা সে ব্যক্তির অবস্থান স্থল সম্পর্কে জানি না, এই বলে তিনি আওফ ইবন লুয়াইর দিকে ইঙ্গিত করেন। ইবন ইসহাক বলেনঃ আমি অভিযুক্ত করতে পারি না-এমন ব্যক্তি আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, উমর ইবন খাত্তাব (রা) কতিপয় ব্যক্তিকে বলেন, তাদের মধ্যে বনু মুররার লোকও ছিল। তোমরা যদি নিজেদের বংশের দিকে ফিরে যেতে চাও তবে সে দিকে ফিরে যাও। ইবন ইসহাক বলেনঃ আর এরা ছিলেন গাতফান বংশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তারা ছিলেন গাতফান কায়েস বংশে সকলের মধ্যে সেরা। তারা তাদের সেই পরিচয় নিয়ে সেখানেই রয়ে যান। ঐতিহাসিকরা বলেনঃ ওরা বলতো, যখন তাদের নিকট বংশের কথা বলা হতো, আমরা তা অস্বীকার করছি না, আমরা তার বিরোধিতাও করছি না। আর তা-ই হচ্ছে আমাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয় বংশধারা। অতঃপর লুয়াই’র সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি তাদের কবিতার উল্লেখ করেছেন।

ইবন ইসহাক বলেনঃ এবং তাদের মধ্যে বুসল (নিষিদ্ধ) নামে একটা প্রথা চালু ছিল। আর সে প্রথাটা হচ্ছে আরবদের মধ্যে বছরের আট মাসকে হারাম বা নিষিদ্ধ জ্ঞান করা। আর আরবরা তাদের এ প্রথা সম্পর্কে অবগত ছিল এবং ঐ সময়ে তারা তাদেরকে নিরাপত্তা দান করতো আর নিজেরাও নিরাপদ বোধ করতো। আমি বলি, রবীআ এবং মুযার গোত্রও বছরে চারটি মাসকে নিষিদ্ধ জ্ঞান করতো। সে মাসগুলো হলো যুলকা’দা, যুলহিজ্জা, মুহররম। চতুর্থ মাস সম্পর্কে রবীআ আর মুযার এর মধ্যে মতভেদ রয়েছে মুযার গোত্র বলেঃ সে মাসটি হচ্ছে জুমাদা ও শা’বানের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রজব। পক্ষান্তরে রবী’আ গোত্রের মতে সে মাসটি হচ্ছে শা’বান ও শাওয়ালের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রমযান মাস। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু বকর থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেনঃ আসমান-যমীন সৃষ্টির দিন আল্লাহ তা যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, সে অবস্থায় তা ফিরে এসেছে। বছর হচ্ছে ১২ মাসে। সেগুলোর মধ্যে চারটি হচ্ছে হারাম মাস- তিনটি মাস পরপরঃ যুলকদা, যিলহজ্জ ও মুহররম এবং মুযার-এর রজব, যা হচ্ছে জুমাদা ও শা’বান মাসের মধ্যবর্তী মাস। এ থেকে রবীআ নয়, বরং মুযার-এর উক্তির বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( إِنَّ عِدَّةَ ٱلشُّهُورِ عِندَ ٱللَّهِ ٱثۡنَا عَشَرَ شَهۡر ا فِی كِتَـٰبِ ٱللَّهِ یَوۡمَ خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَ  ٰ⁠ تِ وَٱلۡأَرۡضَ مِنۡهَاۤ أَرۡبَعَةٌ حُرُم ࣱ)

[Surah At-Tawbah 36]

—আল্লাহর নিকট মাসের গণনা তার কিতাবে ১২ মাস, যেদিন তিনি আসমান যমীন সুষ্টি করেছেন; তার মধ্যে চারটি হচ্ছে হারাম মাস। (৯ তাওবাঃ ৩৬)

বনু আওফ ইবন লুয়াই যে, আটটি মাসকে হারাম গণ্য করে, উক্ত আয়াত দ্বারা তা খণ্ডিত হয়ে যায়। আর তারা আল্লাহর বিধানে অতিরিক্ত সংযোজন করেছে এবং যা হারাম নয়, তাকে হারামের অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর হাদীসে যে বলা হয়েছে তিনটি মাস পরপরঃ এটা নাসী পন্থীদের মতের খণ্ডন; যারা মুহররমের হুরমতকে সফর মাস পর্যন্ত পিছিয়ে দিত। মহানবীর বাণী মুযার এর রজব মাস-এ কথায় খণ্ডিত হয়েছে রবী’আ গোত্রের মত। ##

ইবন ইসহাক বলেনঃ কা’ব ইবনু লুয়াইর তিনজন পুত্র ছিলেন মুররা, আদী ও হাসীস। এবং মুররারও তিন সন্তান ছিলেনঃ কিলাব তায়ম এবং ইযাকযা। এদের প্রত্যেকের মা ভিন্ন ভিন্ন। তিনি বলেনঃ কিলাবেরও দু’জন পুত্র ছিলেন? কুসাই এবং সহরা। এ দু’জনের মা হলেন ফাতিমা বিনাত সদি ইবনু সায়ল। ইয়ামানের ‘জা’সা আমাদের গোত্রের অন্যতম জুদারা। এঁরা ছিলেন বনু সায়ল ইবন বকর (ইবন আরফ সালাত ইবনু কিনানা)-এর মিত্র। এই ফাতিমার পিতৃপুরুষ সম্পর্কে কবি বলেনঃ

مانري في الناس شخصا واحدا - من علمناه كسعد بن سيل

—মানুষের মধ্যে আমরা দেখি না একজন মানুষকেও যাদেরকে আমরা জানি। সা’দ ইবন সায়ল-এর মতো।

সুহায়লী বলেনঃ সায়ল এর নাম হচ্ছে কামর ইবনু জামালা। আর তিনি হলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যার তরবারীকে স্বর্ণ ও রৌপ্য খচিত করা হয়।

ইবনু ইসহাক বলেনঃ তাদেরকে জুদারা বলা হতো এ জন্য যে, আমির ইবন আমর ইবন খুযায়মা ইবন জা’সামা হারিছ ইবন মুসাম আল-জুরহুমীর কন্যাকে বিবাহ করেন। তখন জুরহুম গোত্র ছিল বায়তুল্লাহর সেবায়েত। তিনি কাবার জন্য প্রাচীর নির্মাণ করান। এ কারণে আমর এর নামকরণ হয় জাদীর তথা প্রাচীর নির্মাতা। এ কারণে তার সন্তানদেরকে জুদারা বলা হয়ে যাকে।

কুসাই ইবন কিলাবের বৃত্তান্ত বায়তুল্লাহর সেবায়েতের দায়িত্ব কুরাইশের হাতে ফেরত আনা এবং খুযাআর নিকট থেকে তা ছিনিয়ে নেয়া

কুসাইয়ের পিতা কিলাবের মৃত্যুর পর তাঁর মাতা আযরা গোত্রের রবী’আ ইবন হারাযকে বিবাহ করেন। কুসাই তার মা এবং সৎ পিতাকে নিয়ে নিজ দেশে রওয়ানা হন। অতঃপর কুসাই যৌবনে মক্কায় ফিরে এসে খুযাআ গোত্রের সর্দার হুলায়ল ইবন হুবশিয়ার কন্যা হুরায়কে বিবাহ করেন। খুযায়ীদের ধারণা এই যে, পুত্র পক্ষে বংশ ধারা বৃদ্ধি দেখে হুলায়ল কুসাইকে বায়তুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ওসিয়ত করেন। তিনি একথাও বলেন যে, এ দায়িত্ব পালনের জন্য তুমি আমার চেয়ে বেশী যোগ্য। ইবন ইসহাক বলেনঃ এ কথা তাদের কাছে ছাড়া অন্য কারো কাছে আমরা শুনিনি। আর অন্যদের ধারণা এই যে, কুসাই তার বৈমাত্রেয় ভাইদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। মক্কার আশ-পাশের কুয়াইশ প্রমুখ, বনু কিনানা, বনু কুযা’আ এবং তার ভাইদের দলপতি ছিলেন রাযাহ ইবন রবীআ। তিনি বনূ খুযাআকে নির্বাসিত করে নিজে এককভাবে বায়তুল্লাহর কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। কারণ হাজীদের অনুমতি দানের কর্তৃত্ব ছিল সুফা’দের হাতে। আর সুফা বলা হতো গাওস ইবন মুর (ইবন উদ্দ ইবন তাবিখা ইবন ইলিয়াস ইবন মুযার)-এর বংশধরদেরকে। তারা কংকর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত অন্যরা নিক্ষেপ করতো না এবং মিনা থেকে তারা যাত্রা না করা পর্যন্ত অন্যরা যাত্রা করতো না। তাদের বংশ নিঃশোষিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ ভাবেই চলে আসছিল। অতঃপর বনূ সা’দ ইবন যায়দ মানাত ইবন তামীম তাদের উত্তরাধীকারী হন। তাঁদের প্রথম ব্যক্তি ছিলেন সাফওয়ান ইবনুল হারিস ইবন শিজনা ইবন উতারিদ ইবন আওফ ইবন কা’ব ইবন সা’দ ইবন যায়দ মানাত ইবন তামীম। আর এ দায়িত্ব তারই বংশে রয়ে যায় এবং তাদের শেষ ব্যক্তি কুরব ইবন সাফওয়ানের আমলে ইসলামের অভ্যুদয় ঘটে। আর মুযদালিফা থেকে যাত্রার অনুমতি দানের কর্তৃত্ব ছিল আদওয়ান গোত্রের হাতে এবং তাদের শেষ ব্যক্তি আবু সাইয়্যারা আমীলা মতান্তরে আম ইবনুল আযালের আমলে ইসলাম কায়েম না হওয়া পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত ছিল। কারো কারো মতে, আযাল-এর নাম ছিল খালিদ এবং তিনি তার কানা গাধীর পৃষ্ঠে সওয়ার হয়ে লোকদেরকে অনুমতি দিতেন। এভাবে চল্লিশ বছর অতিবাহিত হয়। তিনি হলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি রক্তপণ একশ উট সাব্যস্ত করেন, আর তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বলেনঃ ( اشرق ثبير كانعير )

এটি সুহায়লীর বর্ণনা, অর্থাৎ ছবীর পর্বত দেখা যাচ্ছে উট হাঁকাও!

আর ‘আমির ইবনুল যারব আদওয়ালী এমন এক অবস্থানে ছিলেন যে আরবদের মধ্যে কোন চরম বিরোধ দেখা দিলে সকলে ফয়সালার জন্য তাঁর শরণাপন্ন হতো এবং তিনি যে সিদ্ধান্ত দিতেন, তাতে সকলেই সন্তুষ্টি হতো। একবার এক হিজড়ার উত্তরাধিকার নিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে চিন্তা করতে করতে তিনি বিনিদ্র রজনী যাপন করেন। তাঁর এক দাসী তাঁকে এ অবস্থায় দেখতে পায়। এ দাসী তাঁর মেষপাল চড়াতো। তার নাম ছিল সাথীলা। সে বললো, কি হল আপনার? বিনিদ্র রজনী যাপন করতে দেখছি যে আপনাকে? কি বিষয়ে চিন্তা করছেন, তাকে তিনি তা জানালেন। তিনি মনে মনে একথাও বললেন যে, হয়তো এ ব্যাপারে তার কাছে কোন সমাধান থাকতেও পারে। দাসীটি তাকে বললোঃ তার প্রস্রাবের রাস্তা দেখে ফয়সালা করুন! তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম সাখীলা, তুমি তো সমস্যাটির সমাধান করে দিলে। এবং তিনি সে অনুযায়ী ফয়সালা দিলেন! সুহায়ালী বলেনঃ এটা ছিল লক্ষণ বিচারে ফয়সালা দানের একটি দৃষ্টান্ত। শরীয়তে এর ভিত্তি রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( وَجَاۤءُو عَلَىٰ قَمِیصِهِۦ بِدَم كَذِب ࣲ)

[Surah Yusuf 18]

“তারা তার জামা নিয়ে আসে মিথ্যা রক্তসহ" (ইউসুফঃ ১৮)।

অথচ, তাতে বাঘের নখের কোন লক্ষণ ছিল না। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ

( قَالَ هِیَ رَ  ٰ⁠ وَدَتۡنِی عَن نَّفۡسِیۚ وَشَهِدَ شَاهِد مِّنۡ أَهۡلِهَاۤ إِن كَانَ قَمِیصُهُۥ قُدَّ مِن قُبُل فَصَدَقَتۡ وَهُوَ مِنَ ٱلۡكَـٰذِبِینَ )

[Surah Yusuf 26]

“তার জামা যদি সামনে থেকে ছোড়া হয় তবে সে নারী সত্য বলেছে আর সে (ইউসুফ) মিথ্যাবাদী, আর যদি তার জামা পিছন থেকে হেঁড়া হয়, তবে সে নারী মিথ্যা বলেছে এবং সে পুরুষ সত্যবাদী (১২ ইউসুফঃ ২৬)। আর হাদীসে আছেঃ তোমরা নারীটির দিকে লক্ষ্য করবে। সে যদি ধূসর বর্ণের কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে তা হলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য।

ইবন ইসহাক বলেনঃ বনূ ফকীম ইবন আদী (ইবন আমির ইবন ছা’লাবা ইবন হারিস ইবন মালিক ইবন কিনানা ইবন খুযায়মা ইবন মুদরিয়া ইবন ইলিয়াস) ইবন মুযার গোত্রে ‘নাসী’ প্রথায় প্রচলন ছিল। ইবন ইসহাক বলেনঃ সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি আরবদের মধ্যে নাসী প্রথার প্রচলন ঘটান তিনি ছিলেন আল- কালাম্মাস’ আর তিনিই ছিলেন হুযাফা ইবন আবদ ইবনু ফাকীম ইবনু ‘আদী। তার পর তাঁর পুত্র আব্বাদ তার পর তাঁর পুত্র কালা তারপর উমাইয়া ইবন কালা তারপর আওফ ইবন উমাইয়া। এরপর ছিল তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি আবু সামামা জানাদা ইবন আওফ ইবন কালা ইবন আব্বাদ ইবন হুযায়ফা। আর তিনিই হচ্ছে আল-কালাম্মাস। এই আবু সামামার কালেই ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। আর আরবরা হজ্জ শেষে তাঁর কাছে এসে একত্র হতো। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন। এ ভাষণে তিনি হারাম মাসের ঘোষণা জারী করতেন। সেসব হারাম মাসগুলোর মধ্যে কোন মাসকে হালাল করতে চাইলে মুহররমকে হালাল করতেন এবং তদস্থলে রাখতেন সফর মাসকে, যাতে আল্লাহ যেগুলো হারাম করেছেন, সেগুলোর সংখ্যা পূর্ণ করতে পারে। তখন তারা বলতোঃ হে আল্লাহ! আমি দু’টি সফর মাসের একটিকে হালাল করেছি আর অপরটি পিছিয়ে রেখেছি আগামী বছরের জন্য। আর এ ক্ষেত্রে আরবরা তাঁরই অনুসরণ করতো। এ ব্যাপারে উমায়র ইবন কায়স, যিনি ছিলেন বনূ ফিরাস। ইবুন গনম ইবন মালিক ইবন কিনানা’র অন্তর্ভুক্ত আর এই উমায়র ইবন কায়স জাদলুত তা’অ্যান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বলেনঃ

لقد علمت معد أن قومی - کرام الناس ان لهم كراما

—মা’আদ গোত্র নিশ্চিত জানে যে, আমার সম্প্রদায় সকল মানুষের মধ্যে সম্মানিত। সম্মান রয়েছে তাদের তরে।

فای الناس فاتونا بوتر - وای الناس لم نعلك لجاما

—তবে কোন্ মানুষ, নিয়ে এসো আমাদের কাছে, তাদের কোন একজনকে, আর এমন কোন্ লোক আছে, যার লাগাম আমরা কষে বাঁধিনি?

السنا الناسئين على معد - شهور الحل نجعلها حراما

—আমরা কি নই মায়দ গোত্রের উপর ‘নাসী’ কারী? হালাল মাসকে আমরা করি হারাম।

আর কুসাই ছিলেন তার জাতির নেতা। সকলে তাঁর নেতৃত্ব মেনে চলতে এবং তাঁকে সম্মান করতো। মোদ্দাকথা, তিনি জাযিরাতুল আরবের নানা স্থান থেকে এনে কুরায়শদেরকে এক জায়গায় একত্র করেন এবং আরবের গোত্রসমূহের মধ্যে যারা তার আনুগত্য করে, তাদের সাহায্য নেন খুযাআর যুদ্ধে এবং তাদেরকে বায়তুল্লাহ থেকে নির্বাসিত করেন। ফলে সকলে বায়তুল্লাহর দায়িত্ব তার হাতে অর্পণ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক যুদ্ধ হয়। অনেক তাজা রক্ত ঝরে। অতঃপর সকলেই আপোষ রফার দাবী জানায়। সকলে ফয়সালার ভার অর্পণ করে ইয়ামার ইব্‌ন আওফ ইবন কা’ব ইবন ‘আমির’ ইবন লায়ছ ইবন বকর ইবন আবদ মানাত ইবন কিনানা’র উপর। তিনি ফয়সলা করেন যে, বায়তুল্লাহর তত্ত্বাবধানে খুযাআর চেয়ে কুসাই আধিকতর যোগ্য ব্যক্তি। তাতে এ সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় যে, কুসাই খুযাআ এবং বনূ বকর-এর যে রক্তপাত করেছেন, তা রহিত এবং পদতলে নিষ্পেষিত কিন্তু খুযাআ ও বনূ বকর কুয়ায়শ কিনানা এবং কুযা’আ গোত্রের যে রক্তপাত ঘটিয়েছে, সে জন্য তাদেরকে রক্তপণ আদায় করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, মক্কা ও কা’বার কর্তৃত্বের ব্যাপারে কেউ বাধ সাধতে পারবে না। তখন থেকে ইয়ামা’র এর নাম করা করা হয় হা শাদাখ।

ইবন ইসহাক বলেনঃ ফলে কুসাই বায়তুল্লাহ এবং মক্কার কর্তৃত্বের অধিকারী হন এবং তার সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিজেদের মনযিল থেকে মক্কায় এনে একত্র করেন এবং তার সম্প্রদায় আর মক্কাবাসীরা তাঁর কর্তৃত্ব মেনে নিলে তারা সকলে তাকে বাদশাহ বলে স্বীকার করে নেয়। তিনি আরবদের ব্যাপারে একটা বিষয় মেনে নেন যে, তারা যা মেনে চলতো, তা মেনে চলবে। কারণ তিনি এটাকেই নিজের দীন মনে করতেন। যার পরিবর্তন অনুচিত। ফলে সাফওয়ান আদওয়ান, নাসয়া এবং মুররা ইবন আওফের লোকজন এটা মেনে নেয় যে, তারা পূর্বে যে রীতি মেনে চলতো , তা-ই মেনে চলবে। এ অবস্থায় ইসলামের আগমন ঘটলে আল্লাহ ইসলাম দ্বারা সেসব রীতি-নীতির মূলোৎপাটন ঘটান সম্পূর্ণ রূপে! কুসাই ছিলেন বনূ কাবের প্রথম ব্যক্তি, যিনি বাদশাহ হন এবং তাঁর জাতির লোকেরা তা মেনে নেয়। ফলে বায়তুল্লাহর সেবা-যত্ন, হাজীদের পানি পান করানো, তাদের আপ্যায়ন করা, পরামর্শ সভার ব্যবস্থাপনা এবং পতাকা ধারণ করা তার দায়িত্বে ন্যস্ত হয়। ফলে মক্কার মর্যাদা রক্ষা করার পূর্ণ কর্তৃত্ব তিনি লাভ করেন। এবং তিনি মক্কাকে তাঁর লোকজনের মধ্যে কয়েক ভাগে বিভক্ত করলে কুরায়শের সকলে নিজ নিজ মনযিলে এসে বসবাস শুরু করেন।

আমি বলিঃ ফলে সত্য তার স্ব-স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সুবিচার লোপ পাওয়ার পর পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং কুরায়শরা তাদের নিজেদের আবাসভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। খুযাআ গোত্রেকে বিতাড়নের ব্যাপারে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়। প্রাচীন পবিত্র গৃহ (বায়তুল্লাহ) তাদের হাতে ফেরৎ আসে। কিন্তু খুযাআ গোত্রের উদ্ভাবিত মূর্তি পূজা, কা’বার চতুষ্পর্শ্বে মূর্তি স্থাপন, মূর্তির উদ্দেশ্যে কুরবানী, মূর্তির নিকট আবেদন নিবেদন আর কাতর প্রার্থনা ও সাহায্য কামনা মূর্তির নিকট জীবিকা ভিক্ষা করার কুপ্রথা সমূহ অব্যাহত থাকে। কুসাই কুরাইশের কতক গোত্রকে মক্কার কেন্দ্রস্থলে অন্যকতক গোত্রকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করে মক্কার উপকণ্ঠে। আবাদ করায় কুরাইশের কিছু গোত্রকে আর এ কারণে কুরাইশকে কুরায়শে বিতাহ এবং কুরায়শে যাওযাহর নামে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। ফলে কুসাই ইবন কিলাব বায়তুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণ, সেবা-যত্ন এবং পতাকা বহনের পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করেন। আবিচার দূর করা আর বিরোধ নিস্পত্তির নিমিত্ত তিনি একটা ভবন নির্মাণ করে তার নাম দেন দারুন নাদওয়া তথা মন্ত্রণালয়। কোন তীব্র সংকট দেখা দিলে সমস্ত গোত্র প্রধানরা একত্র হয়ে পরামর্শ করতেন এবং সমস্যার সমাধান করতেন। দারূন নাদওয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়া পতাকা উত্তোলন করা হতো না। এবং কোন বিয়ে শাদীও সংঘটিত হতো না। দারুন নাদওয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন দাসী কামিজ পরিধান করতে পারতো না। দারুন নাদওয়ার দরজা ছিল মসজিদে হারামের দিকে। বনূ আবদুদ্দার এরপর দারুন নাদওয়ার দায়িত্ব পান হাকীম ইবন হিযাম। তিনি মুয়াবিয়া (রা)-এর শাসনামলে তা এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করলে মুয়াবিয়া (রা) সে জন্য তাকে তিরস্কার করেন। তিনি বলেন-‘এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে তুমি নিজ জাতির মর্যাদা বিক্রয় করে দিলে?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনতো মর্যাদা কেবল তাকওয়ার সঙ্গে যুক্ত। আল্লাহর কসম, জাহিলী যুগে আমি তা ক্রয় করেছিলন এক মশক মদের বিনিময়ে; আর এখন তা বিক্রয় করছি এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে। আমি তোমাদেরকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, তার মূল্য আমি আল্লাহর রাস্তায় সাদাকা করে দিলাম। তাহলে আমাদের মধ্যে কে ক্ষতিগ্রস্ত হলো?’ দারা কুতনী মুয়াত্তার আসমাউর রিজাল প্রসঙ্গে এ ঘটনা উল্লেখ করেছেন। হাজীদেরকে পানি পান করানোর দায়িত্বও ছিল তার। ফলে তাঁর কূয়োর পানি ছাড়া তারা পানি করতে পারতো না। জুরহুমের যমানা থেকে তখন পর্যন্ত যমযম কূপ নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছিল। ফলে দীর্ঘ কাল থেকে লোকেরা যমযম কূপের কথা ভুলেই বসেছিল। তা কোথায় ছিল সে কথাও তাদের জানা ছিল না। ওয়াকিদী বলেনঃ কুসাই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি মুযদালিফায় অগ্নিপ্রজ্বলিত করেন। যাতে আরাফাত থেকে আগত ব্যক্তি মুযদালিফার সন্ধান পেতে পারে। আর ‘রিফাদা’ হচ্ছে নিজগৃহে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত হাজীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা।

ইবন ইসহাক বলেনঃ এটা এ জন্য যে, কুসাই হাজীদের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা কুরাইশদের উপর অবশ্য পালনীয় করে দেন। তিনি কুরাইশদের উদ্দেশ করে বলেনঃ তোমরা আল্লাহর প্রতিবেশী মক্কা আর হেরেমের বাসিন্দা। আর হাজীরা আল্লাহর মেহমান এবং তার ঘর যিয়ারতকারী। তারাই মেহমানদারীর অধিকতর হকদার। সুতরাং হজ্জের সময় তোমরা তাদের জন্যে পানাহারের আয়োজন করবে, যতক্ষণ না তারা ফিরে যায়। কুরাইশের লোকেরা তাঁর কথা মতো কাজ করে। এজন্য তারা প্রতি বছর নিজেদের সম্পদ থেকে একটা অংশ বের করতো এবং তা তাঁর নিকট অর্পণ করতো। তিনি হাজীদের মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে তা দ্বারা খাবারের আয়োজন করতেন। ইসলামের প্রতিষ্ঠা লাভের পূর্ব পর্যন্ত এ ধারা চালু ছিল এবং পরেও সে ধারা চালু থাকে। হজ্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুলতান এখনো প্রতি বছর মিনায় ভোজর আয়োজন করেন।

আমি বলিঃ ইবন ইসহাকের পর সুলতানের আপ্যায়নের এধারার অবসান ঘটে। তারপর পর বায়তুলমাল থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে গমনকারী পথচারীদের জন্য পাথেয় এবং পানীয় সরবরাহের ব্যবস্থা চালু হয়। অনেক দিক থেকে এটা উত্তম কাজ। তবে নির্ভেজাল বায়তুল মালের সবচেয়ে হালাল অর্থ এতে ব্যয় করা উচিত। আর সর্বোত্তম যাদের যিম্মায় হজ্জ ফরয হয়েছে, তাদের থেকে পর্যায়ক্রমে হজ্জ করিয়ে নেওয়া। কারণ সাধারণত তারা কা’বা গৃহের হজ্জ করেনা। সে চাই ইহুদী বা খৃষ্টান হিসাবে মৃত্যুবরণ করুক। তাতে কিছু আসে যায় না।

কুসাইয়ের প্রশংসা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে তার মর্যাদার বর্ণনায় কবি বলেনঃ

قصي لعمري كان يدعی مجمعا - به جمع الله القبائل بن فهر

—আমার জীবনের শপথ, কুসাইকে বলতে হয় সমবেতকারী, আল্লাহ তার মাধ্যমে ফিহরের অনেক গোত্রকে একত্র করেছেন।

هموا ملو والبطحاء مجدا وسؤددا - وهم طردوا عنا غواة بني بكر

—তারা ভরে তোলে বাতহাকে মর্যাদা আর নেতৃত্বে, আর তারা তাড়িয়ে দেয় আমাদের পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট বনু বকর গোত্রকে।

ইবন ইসহাক বলেনঃ যুদ্ধ শেষে কুসাইর ভাই রেযাহ ইবন রবী’আ সদলবলে স্বদেশে ফিরে যায় এবং সঙ্গে নিয়ে যায় তার তিন বৈমাত্রেয় ভাইকে, তারা হলোঃ হান, মাহমূদ এবং জালহামা। রেযাহ্ কুসাইয়ের আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে বলেন।

ولما اتي من قصی رسول - فقال الرسول اجيبوا الخليلا

—যখন আসে কুসাইর পক্ষ থেকে দূত, দূত এসে বললো, বন্ধুর ডাকে সাড়া দাও।

نهفنا اليه نقود الجياد - ونطرح عنا الملول الثقيلا

—আমরা ছুটে যাই তার পানে, পরিচালিত করি উত্তম অশ্বদল। আর ঝেড়ে ফেলি আমাদের থেকে অবসাদ ও ক্লান্তি।......

খুযাআকে আমরা বধ করেছি তাদের গৃহে, বধ করেছি বনূ বকরকে, অতঃপর প্রজন্মের পর প্রজন্মকে।

نقبناهم من بلاد المليك - لا يحلون ارثاسمولا

—বিতাড়িত করেছি আমরা তাদেরকে মালিকের দেশ থেকে, সমভূমিতে তারা আর পদচারণা করতে পারবে না।

فاصبح سبيلهم في الحديد - كل حي شفينا الغليلا

—তাদের বন্দীরা হয় লোহার শেকলে আবদ্ধ আমরা সকল গোত্রের মনোকষ্ট দূর করি।

ইবন ইসহাক বলেনঃ রেযাহ স্বদেশে ফিরে গেলে আল্লাহ তার ভাই হানার বংশ বৃদ্ধি করেন। তারাই আজ পর্যন্ত আষরা গোত্রদ্বয় রূপে পরিচিত।

ইবন ইসহাক বলেন, এ প্রসঙ্গে কুসাই ইবন কিলাব বলেন,

انا ابن العاصمين بنی لؤي بمكة منزلی و بهاربیت

—আমি হলাম বনূ লুয়াই বংশের রক্ষাকারীদের পুত্র। মক্কায় আমার অবস্থান স্থল, সেখানেই আমি প্রতিপালিত হই।

الى البطحاء قد علمت معد - ومر ونها رضيت بها رحنيت

—বাতহা পর্যন্ত। মা’আদ গোত্র তো নিশ্চিত জানে। তাদের বীরত্বে আমি মুগ্ধ।

فلست لغالب ان لم تاثل - بها او لاد قیدر والنسیت

—আমি গালিবের কেউ নই যদি না কীদার আর নাবীত এর সন্তানদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারি।

زراح ناصری وب أسامي - فلست اخاف ضيماما حييت

—রেযাহ আমার সহায়ক তাকে নিয়ে আমি মর্যাদার আসনে উন্নীত হই। সুতরাং ভয় করিনা আমি জুলুমকে, যতো দিন আমি বেঁচে থাকবো।

উমবী উল্লেখ করেছেনঃ কুসাই খুযাআ গোত্রকে নির্বাসিত করার পরই রেযাহর আগমন ঘটেছিল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন