hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৩৮
একজন ঈমানদার একজন কাফিরের বিবরণ
সূরা কাহফ-এ গুহাবাসীদের ঘটনা বর্ণনার পর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ

وَاضْرِبْ لَهُمْ مَثَلًا رَجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا (32) كِلْتَا الْجَنَّتَيْنِ آَتَتْ أُكُلَهَا وَلَمْ تَظْلِمْ مِنْهُ شَيْئًا وَفَجَّرْنَا خِلَالَهُمَا نَهَرًا (33) وَكَانَ لَهُ ثَمَرٌ فَقَالَ لِصَاحِبِهِ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَنَا أَكْثَرُ مِنْكَ مَالًا وَأَعَزُّ نَفَرًا (34) وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَنْ تَبِيدَ هَذِهِ أَبَدًا (35) وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِنْ رُدِدْتُ إِلَى رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِنْهَا مُنْقَلَبًا (36) قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا (37) لَكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا (38) وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ إِنْ تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنْكَ مَالًا وَوَلَدًا (39) فَعَسَى رَبِّي أَنْ يُؤْتِيَنِ خَيْرًا مِنْ جَنَّتِكَ وَيُرْسِلَ عَلَيْهَا حُسْبَانًا مِنَ السَّمَاءِ فَتُصْبِحَ صَعِيدًا زَلَقًا (40) أَوْ يُصْبِحَ مَاؤُهَا غَوْرًا فَلَنْ تَسْتَطِيعَ لَهُ طَلَبًا (41) وَأُحِيطَ بِثَمَرِهِ فَأَصْبَحَ يُقَلِّبُ كَفَّيْهِ عَلَى مَا أَنْفَقَ فِيهَا وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوشِهَا وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا (42) وَلَمْ تَكُنْ لَهُ فِئَةٌ يَنْصُرُونَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مُنْتَصِرًا (43) هُنَالِكَ الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ هُوَ خَيْرٌ ثَوَابًا وَخَيْرٌ عُقْبًا

“তুমি ওদের নিকট পেশ কর দুই ব্যক্তির উপমা।” তাদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দুটি আঙ্গুরের বাগান এবং এ দুটোকে আমি খেজুর গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছিলাম এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানকে করেছিলাম শস্যক্ষেত্র। উভয় উদ্যানই ফল দান করত এবং তাতে কোন ত্রুটি করত না। এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম নহর এবং তার প্রচুর ধন সম্পদ ছিল।

তারপর কথা প্রসঙ্গে সে তার বন্ধুকে বলল, ধন সম্পদে আমি তোমা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং জনবলে তোমা অপেক্ষা শক্তিশালী। এভাবে নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল, আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি মনে করি না যে, কিয়ামত হবে, আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হইই, তবে আমি তো নিশ্চয়ই এটি অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব। উত্তরে তার বন্ধু তাকে বলল, তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি ও পরে শুক্র থেকে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মানব আকৃতিতে? কিন্তু আল্লাহই আমার প্রতিপালক এবং আমি কাউকে আমার প্রতিপালকের শরীক করি না। তুমি যখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করলে তখন কেন বললে না, আল্লাহ যা চান তা-ই হয়, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই?

তুমি যদি ধনে ও সন্তানে আমাকে তোমা অপেক্ষা নিকৃষ্টতর মনে কর, তবে হয়তো আমার প্রতিপালক আমাকে তোমার উদ্যান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন। এবং তোমার উদ্যানে আকাশ থেকে নির্ধারিত বিপর্যয় প্রেরণ করবেন, যার ফলে সেটি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত হবে। অথবা সেটির পানি ভূগর্ভে অন্তর্হিত হবে এবং তুমি কখনও সেটির সন্ধান লাভে সক্ষম হবে না। তার ফল সম্পদ বিপর্যয়ের বেষ্টিত হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্যে আক্ষেপ করতে লাগল, যখন সেটি মাচানসহ ভূমিসাৎ হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, হায়, আমি যদি কাউকে আমার প্রতিপালকের শরীক না করতাম। আর আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোকজন ছিলনা এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হল না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব আল্লাহরই, যিনি সত্য। পুরস্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ। (১৮ কাহফঃ ৩২-৪৪)

কতক তাফসীরকার বলেন, এটি একটি উদাহরণ মাত্র। বাস্তবে এমনটা ঘটেই ছিল তা নাও হতে পারে। তবে জমহুর তাফসীরকারের অভিমত এই যে, এটি একটি বাস্তব ঘটনা। আল্লাহ তাআলার বাণী

وَ اضۡرِبۡ لَہُمۡ مَّثَلًا

“তাদের নিকট পেশ কর একটি উপমা।” অর্থাৎ কুরায়শ বংশীয় কাফিরগণ যে দুর্বল ও দরিদ্র মুসলমানদের সাথে মিলিত হয় না বরং তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এবং ঈমানদারদের ওপর অহংকার করে তার প্রেক্ষিতে ঐ কাফিরদের নিকট এই উদাহরণ বর্ণনা করুন। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

اضۡرِبۡ لَہُمۡ مَّثَلًا اَصۡحٰبَ الۡقَرۡیَۃِ ۘ اِذۡ جَآءَہَا الۡمُرۡسَلُوۡنَ

“ওদের নিকট পেশ কর এক জনপদ অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত তাদের নিকট তো এসেছিল রাসূলগণ।” (৩৬ ইয়াসীনঃ ১৩)

মূসা (আ)-এর ঘটনা বর্ণনার পূর্বে আমরা জনপদ বাসীদের ঘটনা উল্লেখ করেছি।

প্রসিদ্ধ অভিমত এই যে, আলোচ্য ব্যক্তিদ্বয় পরস্পর বন্ধু ছিল, একজন ঈমানদার, অপরজন কাফির। কথিত আছে যে, তাদের উভয়ের ধনসম্পদ ছিল। ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তার ধনসম্পদ আল্লাহর আনুগত্যে ও তাঁর পছন্দনীয় খাতে ব্যয় করে দেয়। পক্ষান্তরে কাফির ব্যক্তি তার সম্পদ ব্যয় করে দুটো বাগান তৈরী করে। আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বাগান দ্বারা তার বাগানদ্বয়কে বুঝানো হয়েছে। সেই দুটোতে ছিল আঙ্গুর, খেজুর এবং শস্য ক্ষেত্র। পানি সিঞ্চনের জন্য ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে তার স্থানে স্থানে নহর প্রবাহিত ছিল। বাগানে ফল এসেছিল প্রচুর, নদীগুলোতে নয়নাভিরাম ঢেউ খেলত এবং ফল-ফসল ছিল মনোমুগ্ধকর। এগুলো নিয়ে বাগানের মালিক তার ঈমানদার দরিদ্র বন্ধুর মুকাবিলায় গর্ব প্রকাশ করে বলে

اَنَا اَکۡثَرُ مِنۡکَ مَالًا وَّ اَعَزُّ نَفَرًا

“ধন সম্পদে আমি তোমার চাইতে শ্রেষ্ঠ এবং জনবলে তোমার চাইতে শক্তিশালী।”(১৯ মারইয়ামঃ ৭৮) অর্থাৎ বিশাল বাগানের মালিক। এ কথা দ্বারা সে বুঝিয়েছে যে, সে ঈমানদার অপেক্ষা উত্তম। তার উদ্দেশ্য হল, বন্ধু! তোমার যে ধন সম্পদ ছিল তা তুমি যে পথে ব্যয় করেছ তাতে তোমার কী লাভ হল? তোমার বরং উচিত ছিল তা-ই করা যা আমি করেছি। তাহলে তুমি আমার সমান হয়ে যেতে পারতে। এসব বলে সে ঈমানদার বন্ধুটির মুকাবিলায় অহংকার করতে থাকে।

وَ دَخَلَ جَنَّتَہٗ وَ ہُوَ ظَالِمٌ لِّنَفۡسِہٖ

“এভাবে নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। অর্থাৎ অশোভন পন্থায় সে বাগানে প্রবেশ করে এবং বলেঃ

مَاۤ اَظُنُّ اَنۡ تَبِیۡدَ ہٰذِہٖۤ اَبَدًا

“আমি মনে করি না যে, এটি কখনও ধ্বংস হবে।”(কাসাসঃ ৭৮) প্রশস্ত বাগান, পর্যাপ্ত পানি এবং সুদৃশ্য লতাপাতা ও বৃক্ষরাজি দেখে তার এ ধারনা জন্মে। সে ভেবেছিল যে, এই বৃক্ষরাজির কোনটি নষ্ট হলে তার স্থলে তার চাইতে সুন্দর নতুন বৃক্ষ জন্ম নিবে এবং পর্যাপ্ত পানি বিদ্যমান থাকায় শস্য ও ফসলাদি সর্বদা উৎপাদিত হতে থাকবে।

এরপর সে বলল,

وَّ مَاۤ اَظُنُّ السَّاعَۃَ قَآئِمَۃً

“এবং আমি এও মনে করি না যে, কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।(কাসাসঃ ৭৮) পার্থিব জীবনের ধ্বংসশীল বিলাস বৈভবের প্রতি সে আস্থাশীল হয়ে পড়ে। এবং চিরস্থায়ী আখিরাতকে সে অস্বীকার করে। তারপর সে বলল,

وَّ لَئِنۡ رُّدِدۡتُّ اِلٰی رَبِّیۡ لَاَجِدَنَّ خَیۡرًا مِّنۡہَا مُنۡقَلَبًا

“আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই-ই তবে আমি তো নিশ্চয়ই এটি অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব।” “অর্থাৎ আখিরাত ও পুনরুত্থান যদি একান্তই ঘটে তাহলে সেখানে আমি এখানকার চাইতে উৎকৃষ্ট স্থান পাব। এটি সে এ কারণে বলেছে যে দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে সে ধোঁকায় পড়েছে এবং সে বিশ্বাস করেছে যে, তার প্রতি আল্লাহর ভালবাসা ও আল্লাহর নিকট তার প্রাপ্য অংশ হিসেবে আল্লাহ তা'আলা তাকে এসব দিয়েছেন। আস ইবন ওয়াইল কাফিরও এরূপ বলেছিল।

اَفَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ کَفَرَ بِاٰیٰتِنَا وَ قَالَ لَاُوۡتَیَنَّ مَالًا وَّ وَلَدًاْ اَطَّلَعَ الۡغَیۡبَ اَمِ اتَّخَذَ عِنۡدَ الرَّحۡمٰنِ عَہۡدًا

—তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে আমাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দেয়া হবেই। সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি লাভ করে।”(৩৪ সাবাহঃ ৩৭) এ আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা ‘আশ ইবন ওয়াইল ও খাব্বাব ইবন আয়িত (রা)-এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে নিয়ামত প্রাপ্তির পর কতক মানুষের পরিণাম কি হয় তার বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

لَیَقُوۡلَنَّ ہٰذَا لِیۡ ۙ وَ مَاۤ اَظُنُّ السَّاعَۃَ قَآئِمَۃً ۙ وَّ لَئِنۡ رُّجِعۡتُ اِلٰی رَبِّیۡۤ اِنَّ لِیۡ عِنۡدَہٗ لَلۡحُسۡنٰی

“সে অবশ্যই বলে যে, এটি আমার প্রাপ্য এবং আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর যদি আমার প্রতিপালকের নিকট একান্তই প্রত্যাবর্তিত হই তাঁর নিকট তা আমার জন্যে কল্যাণই থাকবে।”(২৩ মুমিনুনঃ ৫৫) এ জাতীয় লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন।

فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِمَا عَمِلُوۡا ۫ وَ لَنُذِیۡقَنَّہُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ غَلِیۡظٍ

“কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবশ্যই অবগত করব এবং ওদেরকে আস্বাদন করাব কঠোর শাস্তি।”(৪১ হামিম সাজদাঃ ৫০)

কারূন বলেছিল,

اِنَّمَاۤ اُوۡتِیۡتُہٗ عَلٰی عِلۡمٍ عِنۡدِیۡ

“এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞান বলে প্রাপ্ত হয়েছি।(২৮ কাসাস-৭৮) অর্থাৎ আল্লাহ জানেন যে, আমি ঐ ধন সম্পদ পাওয়ার হকদার। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

اَوَ لَمۡ یَعۡلَمۡ اَنَّ اللّٰہَ قَدۡ اَہۡلَکَ مِنۡ قَبۡلِہٖ مِنَ الۡقُرُوۡنِ مَنۡ ہُوَ اَشَدُّ مِنۡہُ قُوَّۃً وَّ اَکۡثَرُ جَمۡعًا ؕ وَ لَا یُسۡـَٔلُ عَنۡ ذُنُوۡبِہِمُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ

—সে কি জানত না আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছেন যারা তার অপেক্ষা শক্তিতে ছিল প্রবল, সংখ্যায় ছিল অধিক? অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না? (২৮ কাসাস-৭৮) ইতিপূর্বে হযরত মূসা (আ)-এর ঘটনা বর্ণনাকালে আমরা কারূনের ঘটনা আলোচনা করেছি।

আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

وَ مَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ بِالَّتِیۡ تُقَرِّبُکُمۡ عِنۡدَنَا زُلۡفٰۤی اِلَّا مَنۡ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ۫ فَاُولٰٓئِکَ لَہُمۡ جَزَآءُ الضِّعۡفِ بِمَا عَمِلُوۡا وَ ہُمۡ فِی الۡغُرُفٰتِ اٰمِنُوۡنَ

—তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন কিছু নয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দিবে। তবে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারাই তাদের কর্মের জন্যে পাবে বহুগুণ পুরস্কার। আর তারা প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।” (৩৪ সাবাহঃ ৩৭)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

اَیَحۡسَبُوۡنَ اَنَّمَا نُمِدُّہُمۡ بِہٖ مِنۡ مَّالٍ وَّ بَنِیۡنَْنُسَارِعُ لَہُمۡ فِی الۡخَیۡرٰتِ ؕ بَلۡ لَّا یَشۡعُرُوۡنَ

“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্য স্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করেছি তার দ্বারা তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না।”(২৩ মুমিনুনঃ ৫৫,৫৬)

আয়াতে উক্ত মূর্খ ব্যক্তিটি পার্থিব ধনৈশ্বর্য পেয়ে ধোকায় পতিত হয়। তাই সে অস্বীকার করে আখিরাতকে এবং সে যখন দাবি করে যে, আখিরাত যদি সংঘটিত হয়ই তবে সেখানে প্রভুর নিকট সে এখানকার তুলনায় উৎকৃষ্ট স্থান পাবে আর তার সাথী ঈমানদার ব্যক্তি যখন এসব কথা শুনল তখন ঈমানদার ব্যক্তিটি তাকে বলল, وهويهاوره , অর্থাৎ যুক্তি পেশ করলো

اَکَفَرۡتَ بِالَّذِیۡ خَلَقَکَ مِنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ سَوّٰىکَ رَجُلًا

তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে ও পরে শুক্র থেকে এবং তারপর পূর্ণাংগ করেছেন মানুষের আকৃতিতে? অর্থাৎ তুমি কি পুনরুত্থান অস্বীকার করছ অথচ তুমি জান যে, আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর শুক্র থেকে। তারপর পর্যায়ক্রমে তোমাকে আকৃতি দিয়েছেন। অবশেষে তুমি পরিণত হয়েছ শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন পরিপূর্ণ পুরুষে। ফলে তুমি জ্ঞান লাভ করতে পারছ, হাতে ধারণ করতে পারছ এবং হৃদয়ে উপলব্ধি করতে পারছ। তাহলে কি করে তুমি পুনরুত্থান অস্বীকার করছ? অথচ নতুন করে সৃষ্টি করতেও আল্লাহ তাআলা ক্ষমতাবান। لٰکِنَّا۠ ہُوَ اللّٰہُ رَبِّیۡ “কিন্তু আল্লাহই আমার প্রতিপালক” অর্থাৎ আমি কিন্তু বলি তোমার বলার বিপরীত এবং বিশ্বাস করি তোমার বিশ্বাসের বিপরীত যে,

ہُوَ اللّٰہُ رَبِّیۡ وَ لَاۤ اُشۡرِکُ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا

“আল্লাহই আমার প্রতিপালক এবং আমি কাউকে আমার প্রতিপালকের শরীক করিনা।” অর্থাৎ তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করি না। আমি বিশ্বাস করি যে, দেহগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তিনি সেগুলোকে পুনরুত্থান করবেন এবং মৃতদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। চূর্ণ বিচুর্ণ হাতগুলোকে একত্রিত করবেন। আমি এও জানি যে, আল্লাহর সৃষ্টি জগতে এবং তাঁর রাজত্বে তার কোন শরীক নেই এবং তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।

এরপর ঈমানদার ব্যক্তিটি তার সাথীকে সে আচরণ শিখিয়ে দিচ্ছে বাগানে প্রবেশের সময় তার যা করা উচিত ছিল। এ সূত্রে সে বলল,

وَ لَوۡ لَاۤ اِذۡ دَخَلۡتَ جَنَّتَکَ قُلۡتَ مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہِ

“তুমি যখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করলে তখন কেন বললেন, আল্লাহ যা চান তাই হয় আল্লাহর সাহায্য-ব্যতীত কোন শক্তি নেই?”(১৮ কাহাফ- ৩৯) এ জন্যে কারো নিকট তার ধন-সম্পদ কিংবা পরিবার-পরিজন কিংবা ব্যক্তিগত কোন অবস্থা পছন্দসই ও আনন্দদায়ক মনে হলে তার জন্যে

مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہِ

বলা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি মরফু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য হাদীসটির বিশুদ্ধতা প্রশ্নাতীত নয়।

আবু ইয়ালা মুসিলী বর্ণনা করেন যে, হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেনঃ

ما أنعم الله على عبد نعمة من أهل أو مال أو ولد فيقول ماء شا الله لا قوة الا بالله فيرى فيه أنه دون الموت .

“আল্লাহ কোন বান্দাকে পরিবারে, ধন-সম্পদে কিংবা সন্তান-সন্তনিতে কোন নিয়ামত দান। করলে সে যদি

مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہ

বলে, তবে সে মৃত্যু ব্যতীত নিয়ামতের ধ্বংস প্রত্যক্ষ করবে না। তিনি ঐ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি এ কথাটি বলেন। হাফিজ আবুল ফাতহ আবদী এই সনদ বিশুদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন। এরপর ঈমানদার লোকটি তার কাফির সাথীকে বললঃ

فَعَسٰی رَبِّیۡۤ اَنۡ یُّؤۡتِیَنِ خَیۡرًا مِّنۡ جَنَّتِکَ

“আমি আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে তোমার উদ্যান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দিবেন।” অর্থাৎ আখিরাতে।

وَ یُرۡسِلَ عَلَیۡہَا حُسۡبَانًا مِّنَ السَّمَآءِ

“আর তোমার উদ্যানে আকাশ থেকে নির্ধারিত বিপর্যয় প্রেরণ করবেন।” হযরত ইবন আব্বাস (রা) যাহ্হাক ও কাতাদা (র) বলেন, অর্থাৎ আকাশ থেকে আযাব প্রেরণ করবেন। এখানে বুঝান হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা প্রচণ্ড বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যা সকল ক্ষেত ও বৃক্ষকে উৎপাটিত করে দিবে। “ফলে সেটি উদ্ভিদ শূন্য ময়দানে পরিণত হবে”।

فَتُصۡبِحَ صَعِیۡدًا زَلَقًا

“অথবা উহার পানি ভূগর্ভে অন্তর্হিত হবে।" এটি প্রবহমান প্রবনের বিপরীত

اَوۡ یُصۡبِحَ مَآؤُہَا غَوۡرًا

“অতঃপর তুমি কখনও সেটির সন্ধান লাভে সক্ষম হবে না।” অর্থাৎ ঐ পানি পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে না।

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَ اُحِیۡطَ بِثَمَرِہٖ

“তার সকল সম্পদ বিপর্যয়ে বেষ্টিত হয়ে গেল।” অর্থাৎ এমন এক বিপর্যয় নেমে এল যে, যা তার সকল ফল ফসল পরিবেষ্টন করে ফেলল এবং তার উদ্যান ধ্বংস ও বিনষ্ট করে দিল।

فَاَصۡبَحَ یُقَلِّبُ کَفَّیۡہِ عَلٰی مَاۤ اَنۡفَقَ فِیۡہَا وَ ہِیَ خَاوِیَۃٌ عَلٰی عُرُوۡشِہَا

“এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্য আক্ষেপ করতে লাগল, যখন সেটি মাচানসহ ভূমিস্যাৎ হয়ে গেল।” অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেল, যার পুনঃ আবাদের কোন অবকাশই থাকল না। এটি হল তার প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীত। যখন সে বলেছিল,

قَالَ مَاۤ اَظُنُّ اَنۡ تَبِیۡدَ ہٰذِہٖۤ اَبَدًا

“আমি মনে করি না যে, এটি কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে।” অবশেষে সে মহান আল্লাহর সম্পর্কে তার ইতিপূর্বেকার কুফরী মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হল এবং বলতে লাগল,

یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُشۡرِکۡ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا

“হায়! আমি যদি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরীক না করতাম!”

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَ لَمۡ تَکُنۡ لَّہٗ فِئَۃٌ یَّنۡصُرُوۡنَہٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ مَا کَانَ مُنۡتَصِرًاْہُنَالِکَ

“এবং আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কেউ ছিল না। এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হল না সেখানে” অর্থাৎ যে দোষ সে করেছে তার ক্ষতিপূরণ করে দেয়ার মত কেউ ছিল না আর তার নিজেরও তা করার ক্ষমতা ছিল না। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন,

فَمَا لَہٗ مِنۡ قُوَّۃٍ وَّ لَا نَاصِرٍ

‘কোন শক্তিও নেই, সাহায্যকারীও নেই।”

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

الۡوَلَایَۃُ لِلّٰہِ الۡحَقِّ

“সাহায্য করার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই।” কতক তাফসীরকার

ہُنَالِکَ الۡوَلَایَۃُ لِلّٰہِ الۡحَقِّ

থেকে নতুন বাক্য শুরু করেন। এরূপ পাঠ করাও উত্তম বটে যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,

اَلۡمُلۡکُ یَوۡمَئِذِۣ الۡحَقُّ لِلرَّحۡمٰنِ ؕ وَ کَانَ یَوۡمًا عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ عَسِیۡرًا

“সেদিন প্রকৃত কর্তৃত্ব হবে দয়াময়ের এবং কাফিরদের জন্য সেদিন হবে কঠিন।” তখন কোন অবস্থাতেই তার নির্দেশ রদ করা যাবে না, বাধা দেয়া যাবে না। এবং কেউ তা লংঘন করতে পারবে না আর সর্বাবস্থায়ই যথার্থ কর্তৃত্ব আল্লাহরই। অবশ্য কতক তাফসীরকার الحق শব্দকে الولاية শব্দের বিশেষণরূপে পেশ যুক্তভাবে পাঠ করেছেন। এ দুটো পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ

ہُوَ خَیۡرٌ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ عُقۡبًا

“পুরস্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ।”(১৮ কাহফঃ ৪৪) অর্থাৎ ছওয়াব তথা প্রতিদানের দিক থেকে এবং পরিণাম তথা দুনিয়া ও আখিরাতে শেষ ফল রূপে তাঁর আচরণ উদ্যান মালিকের জন্যে উত্তম ও কল্যাণকর। এ ঘটনার অন্তর্নিহিত শিক্ষা এই যে, দুনিয়ার জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং এর ধোকায় পড়া এবং এর প্রতি ভরসা করা কারো জন্যে উচিত নয়। বরং সর্বাবস্থায় আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা রাখাকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য রূপে নির্ধারণ করবে। নিজের হাতে যা আছে তার প্রতি নয় বরং আল্লাহর নিকট যা আছে তার প্রতিই অধিকতর আস্থাশীল থাকা উচিত। উক্ত ঘটনায় এ শিক্ষাও রয়েছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য ও তার পথে ব্যয় করার বিপরীতে অন্য কিছুকে অগ্রাধিকার দিলে তার জন্যে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। কখনো কখনো তার আশা আকাঙ্খার বিপরীতে তার ওই ধন-সম্পদ উঠিয়ে নেয়া হবে।

আলোচ্য ঘটনায় এ শিক্ষাও রয়েছে যে, সহানুভূতিশীল ও কল্যাণকামী ভাইয়ের উপদেশ মেনে চলা কর্তব্য। তার বিরোধিতা ঐ নসীহত প্রত্যাখ্যানকারীর জন্যে দুঃখ ও ধ্বংস ডেকে আনে। এতে এ ইঙ্গিতও রয়েছে যে, নির্ধারিত শেষ সময় যখন এসে যাবে এবং নির্দেশ যখন কার্যকর হয়ে যাবে তখন অনুতপ্ত হলেও কোন লাভ হবে না। আল্লাহই সাহায্যকারী তার উপরই ভরসা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন