মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইয়াজুজ-মাজুজরা যে হযরত আদম (আ)-এর বংশধর, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই। প্রমাণ হল সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হযরত আবু সাঈদ (রা)-এর হাদীস।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা’আলা আদেশ দিবেন, ‘হে আদম! উঠ, তোমার বংশধরদের মধ্য থেকে জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামের দিকে পাঠিয়ে দাও।’ হযরত আদম (আ) বলবেন, ‘হে প্রতিপালক! জাহান্নামীদের সংখ্যা কত?’ আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামী আর একজন মাত্র জান্নাতী।’ তখন শিশুগণ বৃদ্ধে পরিণত হবে। গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ঘটবে এবং তুমি তাদেরকে মাতালের মত দেখতে পাবে, যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি কঠিন।
সাহাবীগণ বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে সে একজন কে হবে?’ জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘সুসংবাদ গ্রহণ কর যে, তোমাদের থেকে হবে একজন আর ইয়াজুজ মাজুজের মধ্য থেকে হবে এক হাজার জন।’ অপর বর্ণনায় এসেছে যে, সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের মধ্যে দু’টো দল রয়েছে; সে দু’দল যেখানে যাবে সেখানে সংখ্যাধিক্য হবে। এটি প্রমাণ করে যে, ইয়াজুজ মাজুজের সংখ্যা অত্যধিক এবং তারা সাধারণ মানুষের চাইতে অনেকগুণ বেশি।
দ্বিতীয় কথা হল, তারা হযরত নূহ (আ)-এর বংশধর। কারণ জগতবাসীর উদ্দেশ্যে হযরত নূহ (আ)-এর দোয়াঃ
“হে আমার প্রতিপালক, পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য হতে কোন গৃহবাসীকে অব্যাহতি দিবেন না”(৭১ নূহঃ ২৬) আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন বলে জানিয়েছেন। আবার আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
( فَأَنجَیۡنَـٰهُ وَأَصۡحَـٰبَ ٱلسَّفِینَةِ )
[Surah Al-Ankabut 15]
“তারপর আমি তাকে এবং নৌকায় আরোহনকারীদেরকে রক্ষা করেছি”( ২৯ আনকাবুতঃ ১৫) তিনি অন্যত্র বলেছেনঃ
وَجَعَلۡنَـٰهَاۤ ءَایَة ࣰ لِّلۡعَـٰلَمِینَ
“তার বংশধরদেরকেই আমি বিদ্যমান রেখেছি বংশ পরম্পরায়”(৩৭ সাফফাতঃ ৭৭)
মুসনাদ ও সুনান-এর বরাতে ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, হযরত নূহ (আ)-এর তিন পুত্র ছিলেন সাম, হাম ও ইয়াফিছ। এদের মধ্যে সাম হচ্ছেন আবরদের পূর্বপুরুষ, হাম সুদানীদের পূর্বপুরুষ এবং ইয়াফিছ তুর্কীদের পূর্বপুরুষ। সুতরাং ইয়াজুজ মাজুয তুর্কীদেরই গোত্র। এরা মোঙ্গল সম্প্রদায়ভুক্ত। দুর্ধর্ষতা এবং ধ্বংস সাধনে এরা মোঙ্গলদের অন্যান্য শাখার তুলনায় অগ্রগামী। সাধারণ মানুষের তুলনায় সাধারণ মোঙ্গলদের যে অবস্থান; সাধারণ মোঙ্গলদের তুলনায় ইয়াজুজ মাজুজের অবস্থা তদ্রুপ। কথিত আছে যে, তুর্কীদের এরূপ নামকরণের কারণ হল বাদশাহ যুলকারনাইন যখন তার ঐতিহাসিক প্রাচীর তৈরি করেন, তখন ইয়াজুজ মাজুজকে ঐ প্রাচীরের পেছনে থাকতে বাধ্য করেন। ওদের একটি গোত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রাচীরের এদিকে রয়ে গিয়েছিল। এদের দুর্ধর্ষতা পূর্বোক্তদের সমপর্যায়ের ছিল না। ওদেরকে প্রাচীরের এ পাশে রেখে দেয়া হয়েছিল। তাই তাদের নাম হয়েছে তুর্ক বা পরিত্যক্ত।
কেউ কেউ বলেন যে, ইয়াজুজ মাজুজের সৃষ্টি হযরত আদম (আ)-এর স্বপ্নদোষকালীন বীর্য থেকে। ঐ বীর্য মাটির সাথে মিলিত হয় এবং তা থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারা হযরত হাওয়া (আ)-এর গর্ভজাত সন্তান নয়। শায়খ আবু যাকারিয়া নববী সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ ও অন্যান্য গ্রন্থে এ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন এবং এ বক্তব্য যথার্থভাবেই দুর্বল বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। কারণ এর পক্ষে কোন দলীল প্রমাণ নেই। বরং কুরআনের আয়াত দ্বারা আমরা যা প্রমাণ করেছি যে, এ যুগের সকল মানুষই নূহ (আ)-এর বংশধর, উপরোক্ত বক্তব্য তার বিপরীত।
যারা এ ধারণা পোষণ করেন যে, ইয়াজুজ মাজুজের অবয়ব বিভিন্ন প্রকারের এবং শারীরিক দৈর্ঘ্যে তাদের মধ্যে পরস্পরের ব্যবধান বিস্তর। কতক হল সুদীর্ঘ খেজুর গাছের মত, আর কতক একেবারে খাটো। তাদের কতক এমন যে, এক কান বিছিয়ে অপর কান দিয়ে নিজেকে ঢেকে নেয়। এ সব উক্তির কোন প্রমাণ নেই, এগুলো নেহায়েত কাল্পনিক উক্তি।
সঠিক মত হল এই যে, তারা হযরত আদম (আ)-এর বংশধর এবং তাদের আকৃতি-প্রকৃতিও সাধারণ মানুষের ন্যায়ই। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ
ان الله خلق أدم وطوله ستون ذراعا
“আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আ)-কে সৃষ্টি করেছেন। হযরত আদম (আ)-এর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। তারপর মানুষ ক্রমান্বয়ে খাটো হতে হতে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে এটিই চূড়ান্ত ফয়সালা।
কেউ কেউ যে বলেন, ওদের একজনের ঔরসে ১০০০ জন সন্তান জন্মগ্রহণ না করা পর্যন্ত তার মৃত্যু হয় না; এ বর্ণনা যদি বিশুদ্ধ প্রমাণিত হয় তবেই আমরা মানব। তা না হলেও আমরা ওটি প্রত্যাখ্যান করব না; কারণ বিবেক-বুদ্ধি এবং রেওয়ায়াতের আলোকে এমনটি হওয়াও সম্ভব। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। অবশ্য এ ব্যাপারে একটি হাদীসও রয়েছে। তবে তা প্রমাণ সাপেক্ষ।
আল্লামা তাবারানী বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ
ان يأجوج ومأجوج من ولد أدم ولو أرسلوا لأفسدوا على الناس معائشهم ولن يموت منهم رجل الأ ترت من ذر يته القا فصاعدا .
“ইয়াজুজ মাজুজ হযরত আদম (আ)-এর বংশধর। তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলে মানব জাতির জীবনোপকরণগুলো ধ্বংস করে দিত। এক হাজার কিংবা ততোধিক সন্তানের জন্ম না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কোন পুরুষের মৃত্যু হয় না। ওদের পশ্চাতে রয়েছে তিনটি দল। তাবীল, তারীগ ও মানসাক”। এটি একটি চূড়ান্ত গরীব পর্যায়ের হাদীস। এর সনদ দুর্বল এবং এতে অগ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী রয়েছে।
ইবন জারীর (র) তার ইতিহাস গ্রন্থে এ মর্মের একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, মিরাজের রাতে রাসূলুল্লাহ (সা) ওদের নিকট গিয়েছিলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর পথে আসার দাওয়াত দিয়েছিলেন। তারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি এবং তাঁর অনুসরণ করেনি। তিনি ওখানকার ঐ উম্মত ত্রয়কেও দাওয়াত দিয়েছিলেন, এরা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল। মূলত এটি একটি জাল হাদীস। এই আবু নুআয়ম আমর ইবন সুবহর গড়া জাল বর্ণনা। মিথ্যা হাদীস রচনার স্বীকারোক্তিকারীদের সে অন্যতম।
যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীস কী করে প্রমাণ করে যে, কিয়ামতের দিনে ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায় ঈমানদারদের বদলে যাবে জাহান্নামে, অথচ ইয়াজুজ-মাজুজের নিকট তো কোন রাসূল প্রেরিত হননি?
“আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না” (১৭ বনী ইসরাঈলঃ ১৫)।
তাহলে এ প্রশ্নের উত্তর হবে এই যে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাব্যস্ত না করে এবং তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না। যেমনটি উক্ত আয়াতে রয়েছে।
তারা যদি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ববর্তী সময়ের লোক হয়ে থাকে এবং তাদের প্রতি অন্যান্য রাসূল এসে থাকেন তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ তো সাব্যস্ত হয়েই গিয়েছে। আর যদি তাদের প্রতি কোন রাসূল প্রেরিত না হয়ে থাকেন, তবে তাদের বিধান হবে দুই রাসূলের অন্তবর্তী যুগের লোকদের মত এবং যাদের নিকট দাওয়াত পৌঁছেনি তাদের মত।
এ বিষয়ে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ এ পর্যায়ের লোকদের কিয়ামতের ময়দানে পরীক্ষা করা হবে। তখন যে ব্যক্তি সত্যের ডাকে সাড়া দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, যে ব্যক্তি তা প্রত্যাখ্যান করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। বিভিন্ন সনদ, শব্দ ও ইমামগণের মন্তব্য সহ আলোচ্য হাদীসটি আমরা উল্লেখ করেছি
শায়খ আবুল হাসান আশআরী এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
তাদেরকে পরীক্ষা করায় তাদের মুক্তি অনিবার্য সাব্যস্ত হয় না এবং এটি তাদের জাহান্নামী হওয়া বিষয়ক সংবাদের পরিপন্থীও নয়। কারণ, আল্লাহ তা’আলা তো রাসূলকে আপন ইচ্ছা মুতাবিক অদৃশ্য বিষয়াদি অবহিত করেন। আল্লাহ তাঁকে অবহিত করেছেন যে, ওরা পাপাচারী লোক এবং তাদের প্রকৃতিই সত্য গ্রহণে ও সত্যের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তারা সত্যের আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিবে না। এতে প্রমাণিত হয় যে, দুনিয়াতে তাদের নিকট সত্যের দাওয়াত পৌঁছলে তারা অধিকতর দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করত। কারণ দুনিয়াতে সত্য প্রত্যাখ্যানকারী অনেক মানুষই ভয়ংকর কিয়ামতের ময়দানে আনুগত্য প্রদর্শন করবে। সুতরাং ঐ সব ভয়ানক ও ভয়ংকর অবস্থা দর্শনের পর ঈমান আনা, দুনিয়ায় ঈমান আনা অপেক্ষা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
“এবং হায়, যদি তুমি দেখতে যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম, এখন তুমি আমাদেরকে পুনরায় প্রেরণ কর আমরা সৎকর্ম করব, আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী”। (৩২ সাজদাহঃ ১২)
“ওরা সে দিন আমার নিকট আসবে সেদিন কত স্পষ্ট শুনবে ও দেখবে” (১৯ মারয়ামঃ ৩৮)
ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, যুল-কারনাইন প্রাচীর নির্মাণ করেছেন লোহা এবং তামা দ্বারা। সেটিকে তিনি সুউচ্চ, সুদৃঢ় ও সুদীর্ঘ পর্বতের সমান করেছেন। পৃথিবীর বুকে এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং উপকারী নির্মাণ কাজ আর আছে বলে জানা যায় না।
ইমাম বুখারী (র) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলল, ‘আমি ঐ প্রাচীরটি দেখেছি।’ রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘কেমন দেখেছ?’ সে বলল, ‘জমকালো চাদরের ন্যায় (অর্থ কালো বক্স)। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আমিও তাই দেখেছি। ইমাম বুখারী (র) এ হাদীসটি সনদ উল্লেখ না করেই দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে উদ্ধৃত করেছেন। অবশ্য আমি অবিচ্ছিন্ন সনদে এটির বর্ণনা খুঁজে পাইনি।
তবে ইবন জারীর (র) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে মুরসাল রূপে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত কাতাদা (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট আলোচনা করা হয়েছে যে, এক ব্যক্তি বলেছিল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর দেখেছি।’ রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘তাহলে আমার নিকট সেটির বর্ণনা দাও।’ সে ব্যক্তিটি বলল, ‘সেটি ডোরাদার চাদরের ন্যায়, যার একটি ডোরা কালো এবং অপরটি লাল ছিল।’ রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘আমিও তাই দেখেছি।’ কথিত আছে যে, খলীফা ওয়াছিক বিল্লাহ যুলকারনাইনের প্রাচীর দেখার জন্য একদল প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিলেন। পথে অবস্থিত রাজ্য সমূহের রাজাদের নিকট তিনি চিঠি লিখে দিয়েছিলেন যে, তাঁরা যেন ঐ প্রতিনিধি দলকে নিজ নিজ রাজ্য অতিক্রম করে প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছার ব্যাপারে সাহায্য করেন। যাতে তারা প্রাচীর সম্পর্কে অবগতি লাভ করতে পারেন এবং যুলকারনাইন এটি কিভাবে নির্মাণ করেছেন তা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে পারে। ঐ প্রতিনিধি দলটি ফিরে এসে ঐ প্রাচীর সম্পর্কে বর্ণনা দেয় যে, তাতে একটি বিরাট দরজা রয়েছে। দরজায় রয়েছে বহু তালা। এটি সুউচ্চ, মজবুত ও সুদৃঢ়। প্রাচীর নির্মাণের পর যে লোহার ইট ও যন্ত্রপাতি অবশিষ্ট ছিল সেগুলো একটি সুদৃঢ় মহলের মধ্যে রক্ষিত আছে। তারা আরও বলেন যে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাজাদের পক্ষ থেকে নিয়োজিত প্রহরীগণ সার্বক্ষণিক ঐ প্রাচীরটি প্রহরায় নিয়োজিত রয়েছে। এটির অবস্থান ছিল পৃথিবীর উত্তর পূর্বে কোণের উত্তর পূর্ব অংশে। কথিত আছে, তাদের শহর বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ও প্রশস্ত ছিল। কৃষিকাজ ও জলে-স্থলে শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত ওদের সংখ্যা কেউ জানে না।
“(এরপর তারা সেটি অতিক্রম করতে পারল না এবং ভেদ করতেও পারল না)” (১৮ কাহফঃ ৯৭) এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিম্নোক্ত হাদীসটির মাঝে সমন্বয় সাধন করা যাবে কিভাবে? হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) এভাবে উদ্ধৃত করেছেন যে, উম্মুল মু’মিনীন যায়নাব বিনত জাহাশ (রা) বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সা) ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। তাঁর মুখমণ্ডল তখন রক্তিম বর্ণ। তিনি বলছিলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আরবদের ধ্বংস নিকটবর্তী। আজ ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর এতটুকু ছিদ্র হয়ে গেছে।’ (অতঃপর তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দ্বারা বৃত্ত বানিয়ে দেখান)। আমি আরও করলাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণ থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। যখন পাপাচার বৃদ্ধি পাবে।’ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে উহায়ব আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, আজ ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর এতটুকু খুলে গিয়েছে। তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দ্বারা বৃত্ত বানিয়ে দেখালেন।
উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর হয়ত এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা) “প্রাচীর খুলে গিয়েছে" বাক্যাংশের দ্বারা ফিতনা ও অকল্যাণের দরজাগুলো খুলে গিয়েছে বুঝিয়েছেন। এটি একটি রূপক বাক্য ও বাগধারা স্বরূপ। তাই এতে কোন অসঙ্গক্তি নেই। অথবা উত্তর এই যে, প্রাচীর খুলে গিয়েছে’ বাক্যাংশের দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা) বাস্তবে প্রাচীর খুলে গিয়েছে বুঝিয়েছেন এবং আয়াতে “তারা এটি অতিক্রম করতে পারল না এবং ভেদ করতেও পারল না” দ্বারা তখনকার সময়ের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। কারণ, আয়াতে বর্ণিত শব্দ অতীতবাচক। সুতরাং পরবর্তীতে তাতে ছিদ্র হয়ে যাওয়া আয়াতের পরিপন্থী নয়। পরবর্তীতে এমন হতে পারে যে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে এবং আল্লাহ কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে তারা অল্প অল্প করে ক্রমান্বয়ে ঐ নির্ধারিত সময়ে প্রাচীর ক্ষয় করে ফেলবে।
অবশেষে এক সময়ে নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ হবে এবং আল্লাহর নির্ধারিত উদ্দেশ্যও সফল হবে তারপর তারা বেরিয়ে পড়বে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
( وَهُم مِّن كُلِّ حَدَب ࣲ یَنسِلُونَ )
[Surah Al-Anbiya’ 96]
“এবং তারা প্রতি উচ্চ ভূমি হতে ছুটে আসবে”
অবশ্য অন্য একটি হাদীসের কারণে অধিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। হাদীসটি ইমাম আহমদ (র) তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেনঃ
ইয়াজুজ মাজুজ প্রতিদিন ঐ প্রাচীরটি খুঁড়ে চলছে। খুঁড়তে খুঁড়তে তারা যখন এতটুকু পৌঁছে সূর্যের আলো দেখতে পাওয়ার উপক্রম হয়, তখন তাদের উট ও বকরীর নাকে জন্ম নেয় এমন কীট। নেতা বলে যে, ‘আজ তোমরা ফিরে যাও; আগামী কাল অনায়াসে খোঁড়া শেষ করে দিবে।’ পরের দিন তারা এসে দেখতে পায় যে, ইতিপূর্বে যতটুকু ছিল প্রাচীরটি এখন তার চাইতে অধিকতর মজবুত হয়ে রয়েছে। এভাবে যখন তাদের অবরুদ্ধ রাখার মেয়াদ শেষ হবে এবং আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে লোকালয়ে প্রেরণের ইচ্ছা করবেন, তখন তারা খুঁড়তে খুঁড়তে সূর্যের আলো দেখার পর্যায়ে চলে এলে তাদের নেতা বলবে, এখন ফিরে যাও, আগামীকাল ইনশাআল্লাহ খোঁড়া শেষ করতে পারবে।
পরদিন তারা এসে প্রাচীরটিকে পূর্ববর্তী দিবসের রেখে যাওয়া অবস্থায় দেখতে পাবে। তখন তারা খনন কার্য শেষ করে লোকালয়ে বেরিয়ে আসবে। তারা পৃথিবীর সব পানি পান করে ফেলবে। লোকজন নিজ নিজ দুর্গে আশ্রয় নিবে। এরপর ইয়াজুজ মাজুজ আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। রক্তের চিহ্নসহ তীর ফিরে আসবে। তারা বলবে যে, আমরা পৃথিবীর অধিবাসীদেরকে পদানত করেছি এবং আকাশের অধিবাসীদের উপর বিজয় লাভ করেছি। তারপর আল্লাহ তা’আলা তাদের ঘাড়ে কীট সৃষ্টি করে দিবেন। এ কীটের দ্বারা তিনি তাদেরকে ধ্বংস করবেন।
রাসূলুল্লাহ আরও বলেছেনঃ
والذي نفس محمد بيده ان دواب الأرض لتسمن وتشكر تشكرا من لحومهم ودمائهم
“যে মহান সত্তার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ ওদের গোশত ও রক্ত খেয়ে পৃথিবীর জীবজন্তুগুলো মোটা তাজা হয়ে উঠবে এবং শুকরিয়া প্রকাশ করবে”।
ইমাম আহমদ (র) ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী (র) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (র) হাদীসটি গরীব পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন। এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওরা প্রতিদিন জিহবা দিয়ে ঐ প্রাচীরটি চাটতে থাকে। চাটতে চাটতে প্রাচীরটি এমন পাতলা হয়ে যায় যে, অপর দিকে সূর্যের কিরণ দেখা যাওয়ার উপক্রম হয়।
এ হাদীসটি যদি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উক্তি না হয়ে কা’ব আল আহবারের উক্তি হয় যেমন কেউ কেউ বলেছেন, তবে আমরা ঐ অসঙ্গতির হাত থেকে মুক্তি পাই। আর এটি যদি প্রকৃতই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বাণী হয়ে থাকে তবে বলা হবে যে, তাদের ঐ কর্মতৎপরতা চলবে আখেরী যামানায় তাদের বেরিয়ে আসার নিকটবর্তী সময়ে, যেমন কা’ব আল-আহবার থেকে বর্ণিত হয়েছে। অথবা এটি বলা যাবে যে, ( ما استطاعوا له نقبا ), অর্থঃ এদিক থেকে ওদিক পর্যন্ত ছিদ্র করে সারতে পারেনি। সুতরাং এটি তাদের জিহ্বা দিয়ে চাটা। অথচ ছিদ্র না করা এর পরিপন্থী নয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। এ সূত্রে আলোচ্য হাদীস এবং সহীহ বুখারী ও মুসলিমে উদ্ধৃত হাদীস রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বাণী “আজ ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর এই পরিমাণ ছিদ্র হয়ে গেছে” এর সমন্বয় সাধন করা যায় এভাবে যে, আজ ছিদ্র হয়ে গিয়েছে অর্থ প্রাচীরের এপার-ওপার ভেদ করে ছিদ্র হয়েছে। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/36
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।