মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আবু বকর ইবন আবিদ দুনিয়া.......বকর ইবন আবদিল্লাহ মুযানী থেকে বর্ণনা করেনঃ একদা হাওয়ারীগণ হযরত ঈসা (আ)-কে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। জনৈক ব্যক্তি তাদেরকে বলল, তিনি সমুদ্রের দিকে গিয়েছেন। তারা সন্ধান করতে করতে সমুদ্রের দিকে গেল। সমুদ্রের তীরে গিয়ে দেখেন, তিনি পানির উপর দিয়ে হাঁটছেন। সমুদ্রের তরঙ্গ একবার তাঁকে উপরে উঠাচ্ছে আরেকবার নীচে নামাচ্ছে। একটি চাদরের অর্ধেক গায়ের উপর দিয়ে রেখেছেন আর বাকী অর্ধেক তার পরিধানে আছে। পানির উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি তাদের নিকটে আসেন। তাঁদের মধ্যকার শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিটি বললেন, “হে আল্লাহর নবী! আমি কি আপনার নিকট আসব?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, এস, যখন তিনি এক পা পানিতে রেখে অন্য পা তুলেছেন, অমনি চিৎকার করে। উঠেন উহঃ হে আল্লাহর নবী! আমি তো ডুবে গেলাম।’ ঈসা (আ) বললেন, ‘ওহে দুর্বল ঈমানদার! তোমার হাত আমার দিকে বাঁড়াও! কোন আদম সন্তানের যদি একটা যব পরিমাণও ঈমান থাকে তাহলে সে পানির উপর দিয়ে হাঁটতে পারে।’
আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী.... বকর থেকে অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইবন আবিদ দুনিয়া.... ফুযায়ল ইবন ইয়ায থেকে বর্ণনা করেনঃ জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘হে ঈসা! আপনি কিসের সাহায্যে পানির উপর দিয়ে হাঁটেন?’ তিনি বললেন, ঈমান ও ইয়াকীনের বলে। উপস্থিত লোকেরা বলল, ‘আপনি যেমন ইয়াকীন রাখেন, আমরাও তেমনি ইয়াকীন রাখি।’ ঈসা বললেন, ‘তাই যদি হয় তা হলে তোমরাও পানির উপর দিয়ে হেঁটে চল।’ তখন তারা নবী ঈসার সাথে পানির উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করল। কিন্তু ঢেউ আসা মাত্রই তারা সকলেই ডুবে গেল। নবী বললেন, ‘তোমাদের কী হল হে?’ তারা বলল, ‘আমরা ঢেউ দেখে ভীত হয়ে গিয়েছিলাম।’ নবী বললেন, ‘কত ভাল হত যদি ঢেউ এর মালিককে তোমরা ভয় করতে।’ অতঃপর তিনি তাদেরকে বের করে আনলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি মাটিতে হাত মেরে এক মুষ্টি মাটি নিলেন। পরে হাত খুললে দেখা গেল এক হাতে স্বর্ণ এবং অন্য হাতে মাটির ঢেলা কিংবা কঙ্কর। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দু'হাতের কোনটির বস্তু তোমাদের কাছে প্রিয়তর?’ তারা বলল, ‘স্বর্ণ।’ নবী বললেন, ‘আমার নিকট স্বর্ণ ও মাটি উভয়ই সমান।’ ইতিপূর্বে ইয়াহইয়া ইবন যাকারিয়া (আ)-এর ঘটনায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, হযরত ঈসা (আ) পশমী বস্ত্র পরিধান করতেন, গাছের পাতা আহার করতেন। তাঁর বসবাসের কোন ঘরবাড়ী ছিল না। পরিবার ছিল না, অর্থ সম্পদ ছিল না এবং আগামী দিনের জন্যে কিছু সঞ্চয় করেও তিনি রাখতেন না। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি তাঁর মায়ের সূতা কাটার চরকার আয় থেকে আহার করতেন।
ইবন আসাকির শা’বী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ঈসা (আ)-এর সম্মুখে কিয়ামতের আলোচনা করা হলে তিনি চিৎকার করে উঠতেন এবং বলতেন, ‘ইব্ন মারয়ামের নিকট কিয়ামতের আলাচনা করা হবে আর তিনি চুপচাপ থাকবেন তা হয় না।’ আবদুল মালিক ইবন সাঈদ ইবন বাহর থেকে বর্ণিতঃ হযরত ঈসা (আ) যখন উপদেশ বাণী শুনাতেন তখন তিনি সন্তান হারা মায়ের ন্যায় কান্নাকাটি করতেন। আবদুর রাযযাক জাফর ইবন বালকাম থেকে বর্ণনা করেন যে, ঈসা (আ) সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে এরূপ দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ! আমার যা অপছন্দ তা থেকে আত্মরক্ষা করতে আমি সক্ষম নই; যে কল্যাণ আমি পেতে চাই তা আমার অধিকারে নেই, সব বিষয় রয়েছে অন্যের হাতে, আমি আমার কাজের মধ্যে বন্দী; সুতরাং আমার চেয়ে অসহায় আর কেউ নেই। হে আল্লাহ! আমার শত্রুকে হাসিয়ো না এবং আমার কারণে আমার বন্ধুকে কষ্ট দিও না। আমার দীনের মধ্যে সংকট সৃষ্টি করিও না এবং আমার প্রতি সদয় হবে না এমন লোককে আমার উপর চাপিয়ে দিও না।”
ফুযায়ল ইবন ইয়ায, ইউনুস ইব্ন উবায়দ সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত ঈসা (আ) বলতেন, যতক্ষণ আমরা দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে বিমুখ হতে না পারবো, ততক্ষণ প্রকৃত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারব না। ফুযায়ল আরও বলেছেন, ঈসা (আ) বলতেন, আমি সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেছি। তাতে আমি দেখেছি যে, যাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তার তুলনায় যাকে সৃষ্টি করা হয়নি সে-ই আমার কাছে বেশী ঈর্ষণীয়। ইসহাক ইবন বিশর..... হাসান (র) সূত্রে বর্ণনা করেন, কিয়ামতের দিন হযরত ঈসা (আ) হবেন সংসার-বিমুখদের নেতা। তিনি আরও বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন পাপ থেকে পলায়নকারী লোকদের হাশর হবে ঈসা (আ)-এর সাথে।
রাবী আরও বলেনঃ একদিন হযরত ঈসা (আ) একটি পাথরের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েন। তিনি গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এমন সময় ঐ স্থান দিয়ে ইবলিস যাচ্ছিল। সে বলল, “ওহে ঈসা! তুমি কি বলে থাক না যে, দুনিয়ার কোন বস্তুর প্রতি তোমার আগ্রহ নেই? কিন্তু এই পাথরটি তো দুনিয়ার বস্তু।" তখন হযরত ঈসা (আ) পাথরটি ধরে তার দিকে ছুঁড়ে মারলেন এবং বললেন, ‘দুনিয়ার সাথে এটিও তুই নিয়ে যা।’ মু'তামির ইবন সুলায়মান বলেন, একদা হযরত ঈসা (আ) তাঁর শিষ্যদের সাথে নিয়ে বের হন। তাঁর পরিধানে ছিল পশমের জুব্বা, চাদর ও অন্তর্বাস। তাঁর পায়ে কোন জুতা ছিল না। তিনি ছিলেন ক্রন্দনরত। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। ক্ষুধার তীব্রতায় চেহারা ছিল ফ্যাকাশে। পিপাসায় ঠোঁট দু'টি শুষ্ক। এ অবস্থায় তিনি বনী ইসরাঈলের লোকদেরকে সালাম দিয়ে বললেনঃ ‘আল্লাহর মেহেরবানীতে আমি দুনিয়াকে তারা সঠিক অবস্থানে রেখেছি। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই এবং এর জন্যে আমার গৌরবেরও কিছু নেই। তোমরা কি জান, আমার ঘর কোথায়?’ তারা বলল, ‘হে রুহুল্লাহ্! কোথায় আপনার ঘর?’ তিনি বললেন, ‘আমার ঘর হল মসজিদ, পানি দিয়েই আমার অঙ্গসজ্জা। ক্ষুধাই আমার ব্যঞ্জন। রাতের চাঁদ আমার বাতি, শীতকালে আমার সালাত পূর্বাচল, শাক-সজিই আমার জীবিকা, মোটা পশমই আমার পোষাক। আল্লাহর ভয়ই আমার পরিচিতি, পঙ্গু ও নিঃস্বরা আমার সঙ্গী-সাথী। আমি যখন সকালে উঠি তখন আমার হাত শূন্য, যখন সন্ধ্যা হয় তখনও আমার হাতে কিছু থাকে না। এতে আমি সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত এবং নিরুদ্বিগ্ন। সুতরাং আমার চাইতে ধনী ও সচ্ছল আর কে আছে?’ বর্ণনাটি ইবন আসাকিরের।
আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে তিনি বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ হযরত ঈসার নিকট এই মর্মে ওহী পাঠান যে, তোমাকে শত্রুরা যাতে চিনতে ও কষ্ট দিতে না পারে সে জন্যে তুমি সর্বদা স্থান পরিবর্তন করতে থাকবে। আমার সম্ভ্রম ও প্রতিপত্তির কসম, আমি তোমাকে এক হাজার হুরের সাথে বিবাহ দিব এবং চারশ' বছর যাবত ওলীমা খাওয়াব। এ হাদীসটি গরীব পর্যায়ের। এটা একটি ইসরাঈলী বর্ণনা। আবদুল্লাহ ইবন মুবারক, খালফ ইবন হাওশব থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ঈসা (আ) হাওয়ারীদেরকে বলেছিলেন, রাজা-বাদশাহরা যেমন দীন ও হিকমত তোমাদের জন্যে ছেড়ে দিয়েছে, তোমরাও তেমন তাদের জন্যে দুনিয়া ছেড়ে দাও। কাতাদা বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) বলেছিলেনঃ তোমরা আমার নিকট প্রশ্ন কর। কেননা, আমার অন্তর কোমল, নিজের কাছে আমি ক্ষুদ্র। ইসমাঈল ইবন আইয়্যাশ... ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) হাওয়ারীদেরকে বলেছিলেনঃ যবের রুটি আহার কর, খালিস পানি পান কর এবং দুনিয়া থেকে শান্তি ও নিরাপদের সাথে বের হয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে নিগুঢ় তত্ত্বকথা জানাচ্ছি যে, দুনিয়ায় যা সুস্বাদু, আখিরাতে তা বিস্বাদ আর দুনিয়ায় যা বিস্বাদ আখিরাতে তা-ই সুস্বাদু। আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা দুনিয়ায় ভোগ বিলাসের জীবন যাপন করতে পারে না। তোমাদেরকে আমি সঠিক বলছি যে, তোমাদের মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হচ্ছে সেই লোক, যে জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং চায় যে, সকলেই যেন তার মত হয়।
আবু হুরায়রা (রা) থেকেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু মুসআব মালিক থেকে বর্ণনা করেন ঈসা (আ) বনী ইসরাঈলদেরকে বলতেনঃ খালিস পানি পান কর, তাজা সব্জি খাও এবং যবের রুটি আহার কর। গমের রুটি খেয়ো না যেন। কেননা তোমরা এর শোকর আদায় করতে পারবে না। ইবন ওহাব ……... ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) বলতেনঃ- তোমরা দুনিয়া অতিক্রম করে যাও। একে আবাদ করো না। তিনি বলতেন ও দুনিয়ার মহব্বত সকল গুনাহের মূল এবং কুদৃষ্টি অন্তরের মধ্যে কাম-ভাব উৎপন্ন করে। উহায়ব ইবন ওয়ারদও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তার বর্ণনায় এইটুকু বেশী আছে যে, কামনা-বাসনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী দুঃখে ফেলে। ঈসা (আ) বলতেন, “হে দুর্বল আদম-সন্তান! যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর, দুনিয়ায় মেহমান হিসেবে জীবন যাপন কর। মসজিদকে নিজের ঘর বানাও। চক্ষুদ্বয়কে কাঁদতে শিখাও, দেহকে ধৈর্য ধারণ করতে ও অন্তরকে চিন্তা করতে অভ্যস্ত কর। আগামী দিনের খাদ্যের জন্যে দুশ্চিন্তা করো না। এটা পাপ। তিনি বলতেন, সমুদ্রের তরঙ্গের উপরে ঘর বানান যেমন সম্ভব নয় তেমনি দুনিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকাও সম্ভব নয়।’ কবি সাবিকুল বরবরী এ প্রসংগে সুন্দর কথা বলেছেন যথাঃ
الكم بيوت بمستن السيوف وهل - يبنى على الماء بيت اسه مدر
অর্থাৎ তলোয়ারের পথেই তোমাদের ঘর শোভা পায়। যে ঘরের ভিত্তি মাটির উপরে, তা কি পানির উপরে বানানো সম্ভব?
সুফিয়ান ছাওরী বলেন, ঈসা (আ) বলেছেনঃ মুমিনের অন্তরে দুনিয়ার মহব্বত ও আখিরাতের মহব্বত একত্রে থাকতে পারে না- যেভাবে একত্রে থাকতে পারে না একই পাত্রে আগুন ও পানি। ইবরাহীম হারবী.... আবু আবদুল্লাহ সূফী সূত্রে বলেন, ঈসা (আ) বলেছেনঃ দুনিয়া অন্বেষণকারী লোক সমুদ্রের পানি পানকারীর সাথে তুলনীয়। সমুদ্রের পানি যত বেশী পান করবে তত বেশী পিপাসা বৃদ্ধি পাবে এবং তা তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেবে। ঈসা (আ) বলেছেনঃ শয়তান দুনিয়া অন্বেষণ ও কামনাকে আকর্ষণীয় করে এবং প্রবৃত্তির লালসার সময় শক্তি যোগায়।
আ’মাশ খায়ছামা থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) সংগী-সাথীদের সামনে আহার্য রেখে নিজে আহার থেকে বিরত থাকতেন এবং বলতেন, মেহমানদের সাথে তোমরাও এইরূপ আচরণ করবে। জনৈক মহিলা ঈসা (আ)-কে বলেছিল, ‘ধন্য সেই লোক, যে আপনাকে ধারণ করেছিল এবং ধন্য সেই স্থান যে আপনাকে দুধ পান করিয়েছিল।’ উত্তরে ঈসা (আ) বলেছিলেন, ‘ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে ও তাঁর বিধান মেনে চলে।’ ঈসা (আ) আরও বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তিই সৌভাগ্যের অধিকারী যে নিজের গুনাহ স্মরণ করে কান্নাকাটি করে, জিহ্বাকে সংযত রাখে এবং যার ঘরই তার জন্য যথেষ্ট হয়।’ তিনি বলেছেন, ‘ঐ চক্ষুর জন্যে সুসংবাদ, যে গুনাহ থেকে চিন্তামুক্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে যায় এবং জেগে উঠে গুনাহ বিহীন কাজে মনোনিবেশ করে।’ মালিক ইবন দীনার থেকে বর্ণিত। ঈসা (আ) আপন শিষ্যবর্গের সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথে একটি মৃত দেহ দেখতে পেলেন। শিষ্যরা বলল, ‘মৃত দেহ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।’ ঈসা (আ) বললেন, ‘তার দাঁতগুলো কত সাদা।’ এ কথা বলে তিনি শিষ্যদেরকে গীবত করা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিচ্ছিলেন। আবু বকর ইবন আবিদ দুনিয়া.... যাকারিয়া ইবন আদী সূত্রে বর্ণনা করেনঃ একদা ঈসা (আ) ইবন মারয়াম বললেন, ‘হে হওয়ারীগণ! দীন নিরাপদ থাকলে দুনিয়ার নিম্নমান নিয়েই সন্তুষ্ট থাক; যেমন দুনিয়াদার ব্যক্তিরা দুনিয়ার জীবন নিরাপদ থাকলে দীনের নিম্নমান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।’ এ প্রসংগে কবি বলেনঃ-
اری رجالا بادني الدين قد قنعوا -ولا أراهم رضوا في العيش بالدون فاستغن بالدين عن دنيا الملوك كما-استغنى الملوك بدنياهم عن الدين
অর্থাৎ আমি লক্ষ্য করেছি, এক শ্রেণীর লোক আছে যাদের মধ্যে দীন কম থাকলেও তাতেই তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু দুনিয়ার সংকীর্ণতায় তারা রাজী নয়। সুতরাং রাজা বাদশাহদের দুনিয়া থেকে বিমুখ হয়ে দীন নিয়েই তুমি সন্তুষ্ট থাক, যেমন রাজা বাদশাহরা দীন থেকে বিমুখ হয়ে দুনিয়া পেয়ে সন্তুষ্ট থাকে।
আবু মাসআব মালিক থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা ইবন মারয়াম বলেছেনঃ- আল্লাহর যিকির ব্যতীত কথাবার্তা বেশী বল না; অন্যথায় তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে যাবে। আর কঠিন অন্তর আল্লাহ্ থেকে দূরে থাকে, কিন্তু তোমরা সে বিষয়ে অবগত নও। মানুষের গুনাহের প্রতি এমনভাবে দৃষ্টি দিও না, যেন তুমিই প্রভু বরং নিজেকে দাসের ভুমিকায় রেখে সে দিকে লক্ষ্য কর। কেননা, মানুষ দুই শ্রেণীর হয়ে থাকে। কেউ বিপদ থেকে মুক্ত, কেউ বিপদগ্রস্ত। বিপদগ্রস্তের প্রতি সদয় হও এবং বিপদমুক্তের জন্যে আল্লাহর প্রশংসা কর। ছাওরী, ইবরাহীম তায়মী সূত্রে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) তাঁর সাথীদেরকে বলেছেন, আমি তোমাদেরকে যথার্থ বলছি, যে ব্যক্তি ফিরদাউস আশা করেন তার উচিত যবের রুটি আহার করা এবং আবর্জনা স্তুপের মধ্যে কুকুরদের সাথে বেশী বেশী ঘুমান। মালিক ইবন দীনার বলেন, ঈসা (আ) বলেছেন, ‘ছাইযুক্ত যব আহার করা এবং আবর্জনার উপরে কুকুরের সাথে ঘুমানোর অভ্যাস ফিরদাউস প্রত্যাশীদের মধ্যে খুব কমই দেখা যাচ্ছে।’
আবদুল্লাহ ইবন মুবারক...... সালিম ইবন আবিল জা’দ সূত্রে বর্ণনা করেন। হযরত ঈসা (আ) বলেছেনঃ- তোমরা কাজ কর আল্লাহর জন্যে, পেটের জন্যে নয়। পাখীদের প্রতি লক্ষ্য কর, তারা সকালে বের হয়। সন্ধ্যায় ফিরে তারা চাষাবাদও করে না, ফসলও ফলায় না; আল্লাহ-ই তাদেরকে খাওয়ান। যদি বল যে, পাখীদের চেয়ে আমাদের পেট বড়। তা হলে গরু ও গাধার দিকে তাকাও। সকালে যায়, সন্ধ্যায় ফিরে আসে। এরাও না ক্ষেত করে, না ফসল ফলায়; আল্লাহ্-ই এদেরকে রিযিক দান করেন। সাফওয়ান ইবন আমর ...… ইয়াযীদ ইবন মায়সারা থেকে বর্ণনা করেন, একদা হাওয়ারীগণ ঈসা (আ)-কে বললেন, ‘হে মাসীহুল্লাহ! দেখুন, আল্লাহর মসজিদ কতই না সুন্দর।’ মাসীহ বললেন, ‘ঠিক ঠিক; তবে আমি তোমাদেরকে যথার্থ জানাচ্ছি, আল্লাহ এ মসজিদের পাথরগুলোকে স্থায়ীভাবে দণ্ডায়মান রাখবেন না। বরং তার সাথে সংশ্লিষ্টদের গুনাহের কারণে ধ্বংস করে দিবেন। তোমাদের স্বর্ণ-রৌপ্য ও পছন্দনীয় ধন-সম্পদ দিয়ে আল্লাহর কোন কাজ নেই। এই দুনিয়ায় আল্লাহর নিকট প্রিয় বস্তু হচ্ছে সৎ অন্তর। এর সাহায্যেই আল্লাহ দুনিয়াকে আবাদ রেখেছেন এবং এর জন্য তিনি দুনিয়া ধ্বংস করে দিবেন, যখন তা পরিবর্তিত হয়ে যাবে।’
ইবন আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে মুজাহিদের সূত্রে ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, নবী আকরম (সা) বলেছেনঃ- একদা হযরত ঈসা (আ) একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। শহরের বিধ্বস্ত প্রাসাদরাজি দেখে তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। কিছু সময় পর তিনি আল্লাহর নিকট আবেদন করেন, ‘হে আল্লাহ! এই শহরকে আমার কতিপয় প্রশ্নের উত্তর দেয়ার অনুমতি দিন।’ আল্লাহ তা'আলা বিধ্বস্ত শহরটিকে ঈসার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। তখন শহরটি ঈসা (আ)-কে ডেকে বলল, ‘হে প্রিয় নবী ঈসা (আ)! আপনি আমার নিকট কী জানতে চান?’ ঈসা (আ) বললেন, ‘তোমার বৃক্ষরাজি কোথায় গেল? তোমার নদী-নালার কী হলো? তোমার প্রাসাদ-রাজির কী অবস্থা? তোমার বাসিন্দারা কোথায় গেল?’ উত্তরে শহর বলল, ‘হে প্রিয় নবী! আল্লাহর ওয়াদা কার্যকরী হয়েছে। তাই আমার বৃক্ষরাজি শুকিয়ে গিয়েছে, নদী-নালা পানিশূন্য হয়ে গিয়েছে, প্রাসাদরাজি ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে এবং আমার বাসিন্দারা সবাই মারা গিয়েছে।’ ঈসা (আ) বললেন, ‘তবে তাদের ধন-সম্পদ কোথায়?’ শহরটি উত্তর দিল, ‘তারা হালাল ও হারাম পন্থায় নির্বিচারে সম্পদ সঞ্চয় করেছিল, সে সবই আমার অভ্যন্তরে রক্ষিত আছে। আসমান ও যমীনের সব কিছুর সত্ত্বাধিকারী তো আল্লাহ্ই।’
অতঃপর ঈসা (আ) বললেনঃ তিন ব্যক্তির ব্যাপারে আমার অবাক লাগে। তারা হলঃ
(১) যে ব্যক্তি দুনিয়ার সন্ধানে মত্ত। অথচ মৃত্যু তার পশ্চাতে লেগে আছে
(২) যে ব্যক্তি প্রাসাদ নির্মাণ করছে, অথচ কবর তার ঠিকানা;
(৩) যে ব্যক্তি অট্টহাসিতে মজে থাকে, অথচ তার সম্মুখে আগুন। আদম-সন্তানের অবস্থা এই যে, অধিক পেয়েও সে তৃপ্ত হয় না; আর কম পেলেও তুষ্ট থাকে না। হে আদম সন্তান! তুমি তোমার ধন-সম্পদ এমন লোকদের জন্যে সঞ্চয় করে রেখে যাচ্ছ, যারা তোমার প্রশংসা করবে না। তুমি এমন প্রভুর পানে এগিয়ে চলছ, যিনি তোমার কোন ওযর শুনবেন না। তুমি তো তোমার পেট ও প্রবৃত্তির গোলাম হয়ে রয়েছে। কিন্তু তোমার পেট সেই দিন পূর্ণ হবে, যে দিন তুমি কবরে প্রবেশ করবে। হে আদম-সন্তান! অচিরেই তুমি কবরে প্রবশ করবে। হে আদম সন্তান! অচিরেই তুমি দেখতে পাবে, তোমার সঞ্চিত ধন-রত্ন অন্যের পাল্লাকে ভারী করছে।’ এ হাদীসটি সনদের বিচারে খুবই গরীব পর্যায়ের। কিন্তু উত্তম উপদেশপূর্ণ হওয়ায় উল্লেখিত হলো।
সুফিয়ান ছাওরী ইবরাহীম তায়মী সূত্রে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) বলেনঃ- ‘হে হাওয়ারীগণ! তোমরা তোমাদের মূল্যবান সম্পদ আসমানে রাখ। কেননা, মানুষের অন্তর সেই দিকেই আকৃষ্ট থাকে, যেখানে তার মূল্যবান সম্পদ সঞ্চিত থাকে। ছাওর ইবন ইয়াযীদ আবদুল আযীয ইবন যুবয়ান থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা ইবন মারয়াম থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা ইবন মারয়াম বলেছেনঃ- যে ব্যক্তি ইলম শিখে অন্যকে শিখায় এবং সে মতে আমল করে, উর্ধজগতে তাকে বিরাট সম্মানে ভূষিত করা হয়।’ আবু কুরায়ব বলেন, বর্ণিত আছে, হযরত ঈসা (আ) বলেছেনঃ- ‘যেই ইলম তোমাকে কাজের ময়দানে নিয়ে যায় না, কেবল মজলিস মাহফিলে নিয়ে যায়, তাতে কোন কল্যাণ নেই।’ ইবন আসাকির এক গরীব সনদে ইবন আব্বাস থেকে মারফু হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, ঈসা (আ) বনী ইসরাঈলদের মাঝে গিয়ে এক ভাষণে বলেনঃ- ‘হে হাওয়ারীগণ! অযোগ্য লোকদের নিকট হিকমতের কথা বলিও না। এরূপ করলে হিকমত ও প্রজ্ঞাকে হেয় করা হবে। কিন্তু যোগ্য লোকদের নিকট তা বলতে কৃপণতা কর না। তা হলে তাদের উপর অবিচার করা হবে। যে কোন বিষয়ের তিনটি অবস্থা হতে পারে (১) যার উত্তম হওয়া স্পষ্ট; এগুলোর অনুসরণ কর। (২) যার মন্দ হওয়া স্পষ্ট; এর থেকে দূরে থাক। (৩) যার ভাল বা মন্দ হওয়া সন্দেহযুক্ত; তার ফয়সালা আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও। আবদুর রাযযাক .....ইকরিমা থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) বলেছেন শূকরের কাছে মুক্তা ছড়ায়ো না। কেননা মুক্তা দিয়ে সে কিছুই করতে পারে না, আর জ্ঞানপূর্ণ কথা ঐ ব্যক্তিকে বলো না, যে তা শুনতে চায় না। কেননা জ্ঞানপূর্ণ কথা মুক্তার চাইতেও মূল্যবান আর যে তা চায় না, সে শূকরের চাইতেও অধম। ওহাব প্রমুখ রাবী ইকরিমা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
ইকরিমা আরও বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) হাওয়ারীদেরকে বলেছেনঃ তোমরা হচ্ছ পৃথিবীতে লবণ তুল্য। যদি নষ্ট হয়ে যাও তবে তোমাদের জন্য কোন ঔষধ নেই। তোমাদের মধ্যে মূর্খতার দু’টি অভ্যাস আছে (১) বিনা কারণে হাসা এবং (২) রাত্রি জাগরণ না করে সকালে উঠা। ইকরিমা থেকে বর্ণিত, ঈসা (আ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন ব্যক্তির ফিতনা সবচাইতে মারাত্মক? তিনি বললেনঃ আলিমের পদস্খলন। কেননা আলিমের পদস্খলনে আরও বহু লোক বিপথগামী হয়ে যায়। রাবী আরও বলেন, হযরত ঈসা (আ) বলেছেনঃ- ‘হে জ্ঞান পাপীরা! দুনিয়াকে তোমরা মাথার উপরে রেখেছ, আর আখিরাতকে রেখেছ পায়ের নীচে। তোমাদের কথাবার্তা যেন সর্বরোগের নিরাময় হয়। কিন্তু তোমাদের কার্যকলাপ হচ্ছে মহাব্যাধি। তোমাদের উপমা হচ্ছে সেই মাকাল গাছ যা দেখলে মানুষ আকৃষ্ট হয় কিন্তু তার ফল খেলে মারা যায়।’ ওহাব থেকে বর্ণিত, ঈসা (আ) বলেছেনঃ ‘হে নিকৃষ্ট জ্ঞান পাপীরা! তোমরা জান্নাতের দরজায় বসে আছ, কিন্তু তাতে প্রবেশ করছো না আর নিঃস্বদেরকে তাতে প্রবেশ করার জন্যে আহবানও করছ না। আল্লাহর নিকট সর্বাধিক নিকৃষ্ট মানুষ সেই জ্ঞানী ব্যক্তি, যে তার জ্ঞানের বিনিময়ে দুনিয়া অর্জন করে।’ মাকহুল বর্ণনা করেন, একবার ঈসার সাথে ইয়াইয়া (আ)-এর সাক্ষাত হয়। ঈসা (আ) হাসিমুখে তার সাথে মুসাফাহা করেন। ইয়াহইয়া (আ) বললেন, ‘কি খালাত ভাই! হাসছেন যে, মনে হচ্ছে আপনি নিরাপদ হয়ে গেছেন?’ ঈসা (আ) বললেন, ‘তোমাকে বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন, নৈরাশ্যে ভুগছ না কি?’ তখন আল্লাহ উভয়ের নিকট ওহী প্রেরণ করে জানালেন, তোমাদের দুজনের মধ্যে সে-ই আমার নিকট প্রিয়তর, যে তার সঙ্গীর সাথে অধিকতর হাসিমুখে মিলিত হয়।
ওহাব ইবন মুনাবিহ বর্ণনা করেছেন, একদা হযরত ঈসা ও তাঁর সংগীরা একটি কবরের পাশে থামলেন। ঐ কবরবাসী সংকটপূর্ণ অবস্থায় ছিল। তখন সংগীরা কবরের সংকীর্ণতা নিয়ে আলাপ করতে লাগলেন। তাদের কথা শুনে ঈসা (আ) বললেনঃ ‘তোমরা মায়ের পেটে এর চেয়ে সংকীর্ণ স্থানে ছিলে। তারপরে আল্লাহ যখন চাইলেন প্রশস্ত জায়গায় নিয়ে আসলেন।’ আবু উমর বলেন, ঈসা (আ) যখন মৃত্যুর কথা আলোচনা করতেন, তখন তার চামড়া ভেদ করে রক্ত ঝরে পড়ত। হযরত ঈসা (আ)-এর থেকে এ জাতীয় অনেক উক্তি বর্ণিত আছে। হাফিজ ইবন আসাকির তাঁর গ্রন্থে বহু উক্তি উদ্ধত করেছেন। আমরা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু উল্লেখ করলাম।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/28
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।