মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক হাতিওয়ালাদের প্রতি কী করেছিলেন? তিনি কি ওদের কৌশল ব্যর্থ করে দেননি? ওদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেন। সেগুলো ওদের উপর পাথুরে কংকর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি ওদেরকে ভক্ষিত খড়ের মত করেন।”
কথিত আছে যে, যাহহাকের হত্যাকারী আফরীদূন ইবন আছফিয়ান সর্বপ্রথম হাতিকে পোষ মানিয়েছিলেন। তাবারী (র) এরূপ বলেছেন। ঘোড়ার পিঠে জীনও তিনিই প্রবর্তন করেন। অবশ্য সর্বপ্রথম সে ব্যক্তি ঘোড়াকে পোষ মানায় এবং ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয় সে হল ফাতহা মূরছ। তিনি গোটা পৃথিবীতে রাজত্বকারী তৃতীয় সম্রাট। কারো কারো মতে, যে সর্বপ্রথম ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আ)। এর ব্যাখ্যা এমনও হতে পারে যে, আরবদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঘোড়ার পিঠে আরোহণকারী ছিলেন। হযরত ইসমাঈল (আ)। আল্লাহই ভাল জানেন।
কথিত আছে যে, হাতি বিশাল দেহী জন্তু হওয়া সত্ত্বেও বিড়াল দেখে ভড়কে যায়। ভারতীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে কতক সেনাপতি যুদ্ধের ময়দানে বিড়াল উপস্থিত করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের সময় বিড়াল দেয়া হলে সেগুলোর ভয়ে হাতি বাহিনী ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ইবন ইসহাক (র) বলেন, অতঃপর আবরাহা সানআ নগরীতে কুলায়স নামে একটি গীর্জা নির্মাণ করে। ঐ যুগে এমন উন্নতমানের প্রাসাদ দ্বিতীয়টি ছিল না। সে নাজ্জাশীর নিকট এ মর্মে পত্র লিখে যে, আপনার জন্যে আমি একটি গীর্জা নির্মাণ করেছি। আপনার পূর্বে কোন রাজার জন্যে এমন প্রাসাদ নির্মিত হয়নি। আরবদের হজ্জ এখানে স্থানান্তরিত না করা পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হব না।
সুহায়লী বলেন, এই ঘৃণ্য উপাসনালয় নির্মাণ করতে গিয়ে আবরাহা ইয়ামানের অধিবাসীদেরকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করেছে। কেউ সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে কাজ শুরু না করলে সে তার হাত কেটে ফেলত। বিলকীসের শাহী প্রাসাদ থেকে শ্বেত পাথর, মর্মর ও অন্যান্য অমূল্য রত্নাবলী খুলে এনে ঐ গীর্জায় সংযোজন করে। তার মিম্বার ছিল গজদণ্ড ও আবলুস কাঠে তৈরী। এর ছাদ ছিল অনেক উঁচু আয়তন, বিশাল বিস্তৃত।
আবরাহা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর হাবশীগণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর কোন ব্যক্তি ঐ গীর্জার আসবাব পত্র কিংবা ঘর দরজা খুলে নিতে চাইলে সে জিনদের আক্রমণের শিকার হত। কারণ ঐ গীর্জা নির্মিত হয়েছিল দু’টো প্রতিমার নামে। প্রতিমা দুটি ছিল আয়ব ও তার স্ত্রীর। এ দুটো প্রতিমার প্রত্যেকটির উচ্চতা ছিল ৬০ গজ করে। অতঃপর ইয়ামানবাসিগণ গীর্জাটিকে ঐ অবস্থায় রেখে দেয়। প্রথম আব্বাসী খলীফা সাফফাহর- এর সময় পর্যন্ত সেটি ঐ অবস্থায়ই ছিল। সাফফাহ একদল সাহসী, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী গুণী লোক পাঠালেন। তারা একে একে সকল পাথর খুলে নিয়ে সেটি ভেঙ্গে ফেলেন। অতঃপর তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
ইবন ইসহাক (র) বলেন, নাজাশীর প্রতি প্রেরিত আবরাহার পুত্র সম্পর্কে আরবদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কিনানা গোত্রের জনৈক লোক একথা শুনে ভীষণভাবে ক্ষেপে যায়। যারা যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাসগুলোকে যুদ্ধ সিদ্ধ মাসের দিকে ঠেলে দিতে এসেছিল, সে ঐ দলভুক্ত।
( إِنَّمَا ٱلنَّسِیۤءُ زِیَادَة ࣱ فِی ٱلۡكُفۡرِ )
[Surah At-Tawbah 37]
এই যে, মাসকে পিছিয়ে দেয়া কেবল কুফরীই বৃদ্ধি করে। (৯ তওবাঃ ৩৭) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। ইবন ইসহাক (র) বলেন, অতঃপর কিনান বংশীয় লোকটি পথে বের হয়। সে এসে পৌঁছে উপরোক্ত কুলায়স গীর্জায়। যে সকলের আগোচরে গীর্জার ভেতরে মলত্যাগ করে। এরপর বের হয়ে সে নিজ দেশে ফিরে আসে। এ সংবাদ আবরাহার কানে পৌঁছে। কে এই অঘটন ঘটিয়েছে সে জানতে চায়। তাকে জানানো হয় যে, মক্কায় অবস্থিত কা’বা গৃহের যারা হজ্জ করে তাদের একজন এ কর্মটি করেছে। আপনি আরবদের হজ্জকে ঐ ঘর থেকে ফিরিয়ে এ ঘরের দিকে আনবেন শুনে সে রেগে এমনটি করেছে। সে বুঝতে পেরেছে যে, এ ঘরটি হজ্জ করার উপযুক্ত নয়। এ কথা শুনে আবরাহা ক্রোধে ফেটে পড়ে। সে শপথ করে, মক্কা গিয়ে কা’বা গৃহ ধ্বংস করবেই। সে হাবশীদেরকে মক্কা গমনে প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়। হাতি বাহিনীসহ সে সদল বলে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা করে। আরবগণ তার অগ্রাভিযান সম্পর্কে অবগত হয়। তারা এটিকে ভয়ানক বিপদ মনে করে এবং তাতে বিচলিত হয়ে পড়ে। আল্লাহর সম্মানিত ঘর কা’বা শরীফ ধ্বংসের কথা শুনে তারা আবরাহার বিরুদ্ধে জিহাদ করা অনিবার্য জ্ঞান করে।
ইতিমধ্যে ইয়ামানবাসী রাজবংশীয় ও সম্ভ্রান্ত একলোক মক্কায় আগমন করে। তার নাম ছিল যুনফর। সে তার সম্প্রদায় ও আরবদেরকে আবরাহার বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ গ্রহণের আহবান জানায়। কারণ সে আল্লাহর ঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। যারা সাড়া দেবার তারা তার তাকে সাড়া দেয়। তারা আবরাহায় সম্মুখে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যূ-নফর ও তার সাথীগণ পরাজিত হয়। বন্দী অবস্থায় যু-নফরকে নেয়া হয় আবরাহার নিকট। আবরাহা যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয় তখন সে বলে, “মহারাজ! আমাকে হত্যা করবেন না। আমাকে হত্যা করার চেয়ে আমাকে জীবিত রাখা হযরত আপনার জন্যে অধিক কল্যাণকর হবে। ফলে সে হত্যা থেকে রেহাই পায় এবং কারারুদ্ধ থাকে। আবরাহা ছিল অত্যন্ত ধৈর্যশীল লোক। অতঃপর সে তার উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে সম্মুখে অগ্রসর হয়। খাছ‘আম এলাকায় পৌঁছে সে বাধাপ্রাপ্ত হয়। শাহরান ও নাহিস গোত্রদ্বয় এবং অনুগামী আরবদেরকে নিয়ে তার নুফারল ইবন হাবীব খাছ‘আমী তার গতিরোধ করে। সেখানে যুদ্ধ হয়। আবরাহা তাকে পরাজিত করে। বন্দী অবস্থায় তাকে আবরাহার নিকট নিয়ে আসা হয়। আবরাহা যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয় তখন সে বলে, “মহারাজ! আমাকে হত্যা করবেন না। আমি আপনাকে আরবের পথগুলো চিনিয়ে দিব। আপনার প্রতি আমার খাছ‘আমী শাহরান ও নাহিস গোত্রদ্বয়-এর আনুগত্যের প্রতীকরূপে এই আমি আমার দু’হাত আপনার সমীপে নিবেদন করছি। রাজা তাকে মুক্তি দেয় এবং সে রাজাকে আরবের পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। তায়েফ পৌঁছলে ছাকীফ গোত্রের একদল লোক নিয়ে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়, মাসউদ ইবন মুতাব (ইবন মালিক কবি ইবন আমর ইবন সাদ ইবন আওফ ইবন ছাকীফ) তারা বলে, ‘মহারাজ! আমরা আপনার গোলাম। আপনার নির্দেশ পালনকারী ও আনুগত্য প্রদর্শনকারী আমরা আপনার বিরোধিতা করব না।
আপনি যে উপাসনালয় ধ্বংসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন সেটি আমাদের উপাসনালয় নয়। অর্থাৎ সেটি লাত দেবীর উপাসনালয় নয়। আপনি যাচ্ছেন মক্কায় অবস্থিত উপাসনালয় ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। আপনাকে ঐ উপাসনালয়ের পথ দেখাবার লোক আমরা আপনার সাথে দিচ্ছি। অতঃপর সে তাদেরকে অতিক্রম করে এগিয়ে যায়। ইবন ইসহাক বলেন, লাত হল তায়েফে অবস্থিত তাদের একটি উপাসনালয়। তারা সেটিকে কাবাকে সম্মান করার ন্যায়ই সম্মান করত। ইব্ন ইসহাক বলেন, অতঃপর তারা কা’বার পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্যে আবু রেগালকে তার সাথে প্রেরণ করে। আবু রেগালসহ আবরাহা বাহিনী সম্মুখের দিকে অগ্রসর হয়ে মাগমাস নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করে। সেখানে আবু রেগালের মৃত্যু হয়।
আরবগণ আবু রেগালের কবরে পাথর ছুঁড়ে। মাগমাসে যে কবরে পাথর নিক্ষেপ করা হয় সেটি এই আবু রেগালের কবর। ইতিপূর্বে ছামুদ সম্প্রদায়ের আলোচনায় এসেছে যে, আবু রেগাল তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। সে হারাম শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করে, নিজেকে রক্ষা করত। একদিন সে হারাম শরীফ এলাকা ছেড়ে বের হয়। তখনই একটি পাথর তাকে আঘাত করে এবং তাতে তার মৃত্যু হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, “তার নিদর্শন হল তার সাথে স্বর্ণের দু’টো কাঠি- দাফন করা হয়েছে।” সাহাবীগণ ঐ কবর খনন করেন এবং সেখানে স্বর্ণের দুটো কাঠি পান। তিনি বলেন, আবু রেগাল ছাকীফ গোত্রের আদি পুরুষ।
আমি বলি, এই বর্ণনা ও ইবন ইসহাকের বর্ণনার মধ্যে এভাবে সমন্বয় করা যায় যে, আবরাহার সাথী আবু রেগাল ছামুদ সম্প্রদায়ের আবু রেগালের অধঃস্তন পুরুষ। আলোচ্য আবু রেগাল ও তার পূর্বপুরুষ আবু রেগালের নাম অভিন্ন। উভয় আবু রেগালের কবরেই লোজন পাথর ছুঁড়ে মারতো। আল্লাহই ভাল জানেন।
কবি জায়ীর বলেনঃ
اذا مات الفرزدق فارجموه کرجمكم لقبر ابي رغال
—ফরযদকের মৃত্যু পরে তার কবরে পাথর ছুঁড়ে মারবে।
যেমনটি পাথর মেরেছিল আবু রেগালের কবরে।
ইবন ইসহাক বলেন, আবরাহা মাগমাসে এসে আসওয়াদ ইবন মাকসুদ নামের জনৈক হাবশী লোককে একদল অশ্বারোহীসহ মক্কায় প্রেরণ করে। তারা মক্কায় আসে এবং কুরায়শদের তেহামা অঞ্চলে লুটপাট চালায়। তারা সেখানকার কুরায়শ ও অন্যান্য গোত্রের সমস্ত ধন সম্পদ নিয়ে আবরাহার নিকট পেশ করে। লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিমের ২০০ উট ছিল। তিনি ছিলেন কুরায়শদের দলপতি। এতে কুরায়শ, কিনানা হুযায়ল এবং হারাম শরীফে অবস্থানকারী অন্যান্য গোত্রের লোকজন আবরাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ায় সংকল্প করে। পরে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভে সক্ষম হবে না বুঝতে পেরে তারা এ পরিকল্পনা ত্যাগ করে।
এদিকে আবরাহা হিনাতা হিমায়ারী নামের এক লোককে মক্কায় প্রেরণ করে। সে তাকে বলে যে, ‘তুমি মক্কায় গিয়ে উক্ত নগরীর নগরপতিকে খুঁজে বের করবে এবং তাকে বলবে যে, আমরা আপনাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমরা এসেছি ঐ উপাসনালয়টি ধ্বংস করার জন্যে। ঐ উপাসনালয় রক্ষাকল্পে আপনারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করেন, তবে আপনাদের রক্তপাত আমাদের প্রয়োজন নেই। তাদের সর্দার আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করতে সম্মত হলে তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবে।’ হিনাতা মক্কায় এসে সেখানকার নগরপতিকে তা জিজ্ঞেস করে। তাকে জানানো হয় যে, আব্দুল মুত্তালিব এ নগরপতি। সে আব্দুল মুত্তালিবের সাথে সাক্ষাত করে এবং আবরাহা যা বলতে নির্দেশ দিয়েছিল তা বলে। তখন আব্দুল মুত্তালিব বলেন, ‘আল্লাহর কসম আমরা আবরাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাই না। আমাদের সেই শক্তি নেই। এটি আল্লাহর সম্মানিত গৃহ এবং আল্লাহর খলীল ইবরাহীম (আ)-এর গৃহ।’ আব্দুল মুত্তালিব এটা বা এ মর্মের কোন কথা তিনি বলেছিলেন। আরও বলেন, ‘আল্লাহ যদি আবরাহার হাত থেকে এ গৃহকে রক্ষা করেন, তবে তা তারই সম্মানিত স্থান ও গৃহ আর তিনি যদি আবরাহাকে তা করতে দেন, তবে আল্লাহর কসম, তাকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।’
হিনাতা বলল, ‘ঠিক আছে, আপনি আমার সাথে তাঁর নিকট চলুন। তিনি আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছেন।’ হিনাতার সাথে আব্দুল মুত্তালিব রওয়ানা হলেন। তার কয়েকজন ছেলেও তার সাথে যায়। তিনি আবরাহার সৈন্যবাহিনীর নিকট এসে ওদের কাছে যুনফর আছে কি-না জানতে চান। যুনফর ছিল আবদুল মুত্তালিবের বন্ধু। অনুমতি নিয়ে আবদুল মুত্তালিব গিয়ে যুনফরের বন্দীখানায় পৌঁছেন। তিনি বললেন, ‘যুনফর! আমাদের উপর যে বিপদ এসেছে, তা থেকে মুক্তি লাভের কোন পথ তোমার জানা আছে কি?’ সে বলল, ‘রাজার হাতে বন্দী সকাল-সন্ধ্যায় মৃত্যুর প্রতীক্ষারত একজন মানুষের কী-ই বা করার থাকতে পারে?
আপনাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। তবে আনিস নামে জনৈক ব্যক্তি আছে, সে হস্তি বাহিনীর পরিচালক এবং আমার বন্ধুও বটে। আমি তার নিকট সংবাদ পাঠাব এবং আপনাকে সাহায্য করার অনুরোধ জানাব। তার নিকট আপনার গুরুত্ব তুলে ধরব। আমি তাকে অনুরোধ করব, সে যেন আপনাকে রাজার নিকট নিয়ে যায়। অতঃপর আপনি সরাসরি রাজার সাথে কথা বলবেন। সক্ষম হলে সে রাজার নিকট আপনার জন্যে সুপারিশ করবে।‘ এটা শুনে আবদুল মুত্তালিব বলেন, ‘এতটুকুই আমার জন্যে যথেষ্ট।‘ যুনফর আনীসের নিকট এ বার্তা নিয়ে লোক পাঠায় যে, আবদুল মুত্তালিব কুরায়শ বংশের নেতা এবং মক্কার যমযম কূপের তত্ত্বাবধানকারী। তিনি সমতলের লোকজন এবং পাহাড়ের পশুদেরকে আহার্য দিয়ে থাকেন। রাজা তার ২০০টি উট ছিনিয়ে এনেছেন। রাজার সাথে দেখা করার জন্যে তুমি তাঁকে অনুমতি নিয়ে দাও এবং যথাসম্ভব তার উপকার করো।’ আনীস বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তা-ই করব।’
আনীস তখন আবরাহার সাথে আলাপ করে। সে বলে, ‘মহারাজ! এই কুরায়শ প্রধান আপনার দ্বারে উপস্থিত। আপনার সাথে দেখা করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি মক্কার যমযম কূপের তত্ত্বাবধায়ক। তিনি সমতলে লোকজনের এবং পাহাড়ে পশুদের আহার্যের ব্যবস্থা করে থাকেন। তাকে আপনার নিকট আসার অনুমতি দিন। যাতে তিনি তাঁর সমস্যার কথা আপনাকে জানাতে পারেন।’ আবরাহা অনুমতি দিল। আবদুল মুত্তালিব ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন ও সুপুরুষ।
আবরাহা তাঁকে দেখে তাঁর অবস্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে আঁচ করতে পারলো এবং তাঁকে মেঝেতে বসতে দিতে কুণ্ঠাবোধ করল। অন্যদিকে আবদুল মুত্তালিবকে রাজ সিংহাসনে বসিয়েছে হাবশীগণ এটা দেখুক তাও তার মনপূত ছিল না। ফলে আবরাহা তার সিংহাসন থেকে নেমে বিছানায় বসে এবং আবদুল মুত্তালিবকে পাশে বসায়। তারপর তার দোভাষীকে বলে, ‘তার সমস্যার কথা পেশ করতে বল।’ দোভাষী আবদুল মুত্তালিবকে তাঁর কথা পেশ করতে বললে তিনি বলেন, ‘আমার যে দু’শটি উট রাজার নিকট নিয়ে আসা হয়েছে সেগুলো ফেরত দেয়া হোক।’
আবরাহা তার দোভাষীকে বলল, ‘আমার এ বক্তব্য তাকে বল যে, আপনাকে দেখে আমি খুব খুশী হয়েছিলাম কিন্তু আপনার কথা শুনে আমি হতাশ হয়েছি। হায়! আপনি আমার হাতে আসা এই সামান্য দু’শোটি উটের কথা বলছেন অথচ আপনার নিজের ধর্মের প্রতীক এবং আপনার পূর্ব-পুরুষের ধর্মের প্রতীক উপাসনালয়টি সম্পর্কে কিছুই বললেন না। আমরা তো সেটি ধ্বংস করতে এসেছি। সেটি সম্পর্কে আপনি কি আমাকে কিছুই বলবেন না?’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘আমি তো কেবল উটেরই মালিক! ঐ গৃহের একজন মালিক আছেন। তিনিই সেটি রক্ষা করবেন।’ আবরাহা বলে, “তিনি তো আমার হাত থেকে সেটি রক্ষা করতে পারবেন না।” আবদুল মুত্তালিব বলেন, ‘সেটি আপনার ও তার ব্যাপার।’ তখন আবরাহা আবদুল মুত্তালিবের উটগুলো ফেরত দিয়ে দেয়।
ইবন ইসহাক বলেন, বর্ণিত আছে যে, আবদুল মুত্তালিবের সাথে বনী বকর গোত্রের প্রধান ইয়ামার ইবন নাকাহু (ইবন আদী ইবন দায়ল ইবন বকর ইব্ন আবদ মানাত ইবন কিনানাহ) এবং হুযায়ল গোত্রের প্রধান কুওয়ালিদ ইবন ওয়াছিলা আবরাহার নিকট গিয়েছিলেন। তাঁরা প্রস্তাব করেছিলেন যে, আবরাহা যদি তাদের এখান থেকে চলে যায় এবং আল্লাহর ঘর ধ্বংস না করে তবে তারা তাকে তিহামাহ্ অঞ্চলের সমগ্ৰ ধন সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দিয়ে দিবেন। আবরাহা তাঁদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। মূলত তা কতটুকু সত্য তা আল্লাহই ভাল জানেন।
আবরাহার দরবার থেকে তাদের প্রত্যাবর্তনের পর আবদুল মুত্তালিব কুরায়শদের নিকট উপস্থিত হন এবং সকল বিষয় তাদেরকে অবহিত করেন। তিনি তাদেরকে মক্কা ছেড়ে পাহাড়ের উপর নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর আবদুল মুত্তালিব নিজে কুরায়শদের একটি জামাতকে সাথে নিয়ে কাবা শরীফের দরজার কড়া ধরে দাঁড়ান এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করতে থাকেন। তারা আবরাহা ও তার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন।
কাবা শরীফের দরজা ধরে আবদুল মুত্তালিব বলেনঃ
لأهم أن العبد يمنع رحله فانع رحالك
“হে আল্লাহ! বান্দা তার নিজের ঘরের হেফাজত করে সুতরাং আপনি আপনার ঘর রক্ষা করুন।’
لا يغلبن صليبهم - ومحالهم غدوا محالك
—আগামী সকালে যেন তাদের ক্রুশ চিহ্ন কোনক্রমেই বিজয়ী না হয়। আর আপনার গৃহের উপর তাদের গৃহ প্রাধান্য না পায়।
ان گنت تاركهم وقبل - تنا فأمر ما بدالك
—আর আপনি যদি আমাদের কেবলাকে তাদের হাতে ছেড়েই দেন তবে আপনার যা ইচ্ছা তাই করুন।” ইবন হিশাম বলেন, আবদুল মুত্তালিব এ কবিতাগুলো বলেছিলেন বলে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
ইবন ইসহাক বলেন, এরপর আবদুল মুত্তালিব কা’বা শরীফের দরজার কড়া ছেড়ে দিয়ে কুরায়শদেরকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং আবরাহা ও তার সৈন্যরা কী করে, তা অবলোকন করতে থাকেন।
পরদিন সকালে আবরাহা মক্কা প্রবেশের প্রস্তুতি নেয়। তার হাতি বাহিনীকে সজ্জিত করে এবং সৈন্যদেরকে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করে। তার হাতির নাম ছিল মাহমুদ। হাতিটিকে মক্কা অভিমুখী করলে মুহূর্তে নুফায়ল ইবন হাবীব সেখানে উপস্থিত হয়। সে হাতিটির পাশে এসে দাঁড়ায়। হাতির কান ধরে সে বলে, ‘হে মাহমূদ! তুমি মাটিতে বসে যাও এবং যেদিক থেকে এসেছে সোজা সে দিকে ফিরে যাও। কারণ, তুমি আল্লাহর সম্মানিত শহরে এসেছো।’ এই বলে সে হাতিটির কান ছেড়ে দেয়। হাতিটি হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। সুহায়লী বলেন, হাতি মাটিতে পড়ে যায়। কারণ, হাতি হাঁটু গেড়ে বসতে পারে না। অবশ্য, কেউ কেউ বলেন যে, এক প্রজাতির হাতি উটের ন্যায় হাঁটু গেড়ে বসতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে নুফায়ল ইবন হাবীব দৌঁড়ে গিয়ে পাহাড়ে ওঠে। আবরাহার সৈন্যরা হাতিটিকে দাঁড় করানো জন্যে প্রহার করতে থাকে। হাতি কোন মতেই উঠলো না, তারা তার মাথায় কুঠারাঘাত করে। তবুও সে উঠলো না। এরপর তারা তার চামড়ায় বাঁকা আঁকশি ঢুকিয়ে দেয় এবং চামড়া ছিড়ে ফেলে তারপরও সে উঠলো না। তারা এবার ইয়ামানের দিকে তার মুখ ফিরিয়ে দেয়। কালবিলম্ব না করে হাতিটি দাঁড়িয়ে যায় এবং দ্রুত হাঁটতে শুরু করে। এরপর তারা তাকে সিরিয়ার দিকে মুখ করে দেয়। সে ঐ দিকে দ্রুত হাঁটতে থাকে। এরপর তারা তাকে পূর্বমূখী করে দেয়। সে একইভাবে দ্রুত সেদিকে হাঁটতে থাকে। এবার তারা পুনরায় তাকে মক্কা অভিমুখী করে দেয়। সে পুনরায় মাটিতে বসে পড়ে। আল্লাহ তাআলা সমুদ্ৰাঞ্চল থেকে তাদের প্রতি এক ঝাঁক পাখী প্রেরণ করেন। এগুলো ছিল এক প্রকার ছোট পাখী। প্রতিটি পাখী তিনটি করে কঙ্কর নিয়ে এসেছিল। একটি ঠোঁটে আর দু’টো দু পায়ে। কঙ্করগুলো ছিল ছোলা ও মশুর ডালের ন্যায়। যার উপর কঙ্কর পড়লো সে-ই ধ্বংস হয়ে গেল।
অবশ্য আবরাহার সকল সৈন্যের গায়ে কঙ্কর লাগেনি। যাদের গায়ে তা পড়েনি তারা পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। যে পথে এসেছিল তারা সে পথেই ফিরে যেতে থাকে। ইয়ামানের পথ চিনিয়ে দেয়ার জন্যে তারা নুফায়ল ইবন হাবীবকে তালাশ করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে নুফায়ল বলেনঃ
ألا حييت عنا یاردينا - نعمناكم مع الاصباح عيا
—তুমি কি আমাদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন পাওনি হে রুদায়না? আমরাতো তোমাদেরকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছি।
ردينة لو رأيت فلا تريه - لدى جنب المحصب ما رأينا
—হে রাদীনা! মুহাসসাব অঞ্চলে আমরা যা দেখেছি তুমি যদি তা দেখতে তবে তুমি সে দিকে ফিরে তাকাতে না।
اذا لعذراتني وحمدت امری - ولم تاسي على ما فات بينا
—তখন তুমি আমার ওযর গ্রহণ করতে এবং আমার কাজের প্রশংসা করতে। যা হারিয়ে গেছে তার জন্যে তুমি আক্ষেপ করতে না।
حمدت الله اذا أبصرت طيرا - وخفت حجارة تلقى علينا
—যখন আমি পক্ষীকুল দেখেছি তখন আমি আল্লাহর প্রশংসা করেছি। আবার আমাদের উপর পাথর বর্ষিত হয় নাকি তার ভয়ও করেছি।
وكل القوم يسأل عن نفيل - كان على الحبشان دینا
—সবাই নুফায়লকে খোঁজ করছে যেন আমার নিকট সকল হাবশী লোকের পাওনা রয়েছে।
ইবন ইসহাক বলেন, অতঃপর আবরাহার সৈন্যরা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে লাগল। পক্ষীকুলের নিক্ষিপ্ত কঙ্কর আবরাহার দেহেও বিদ্ধ হয়। তারা নিজেদের সাথে আবরাহাকেও টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু কঙ্কর বিদ্ধ হওয়ার পর থেকে তার দেহ থেকে ক্রমে ক্রমে এক আঙ্গুল এক আঙ্গুল করে খসে পড়তে শুরু করে। একটি আঙ্গুলের পর আরেকটি আঙ্গুল ঝরে পড়ছিল। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়। এভাবে তার রক্ত ও পুঁজ নিঃশেষিত হয়ে যায়। তারা তাকে সানা’আতে নিয়ে আসে। তখন সে যেন একটি পাখির ছানা।
কথিত আছে যে, তার মৃত্যুর সময় তার বুক ফেটে হৃৎপিণ্ড বের হয়ে পড়ে। ইবন ইসহাক বলেন, ইয়াকুব ইবন উতবা আমাকে বলেছেন যে, জনশ্রুতি ছিল যে, আরব দেশে সর্বপ্রথম হাম এবং বসন্তরোগ দেখা যায় সেই বছরই। সেখানে তিক্ত বৃক্ষ হারমাল, হানযাল ও আশার দেখা যায় সেই একই বছরে।
ইবন ইসহাক বলেন, হযরত মুহাম্মদ (স)-কে রাসূলরূপে প্রেরণ করার পর আল্লাহ তা’আলা কুরায়শদের প্রতি তার যে সকল নেয়ামত ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলোর অন্যতম হল তাদের অবস্থান ও অস্তিত্বের লক্ষ্যে তাদের থেকে হাবশীদের আক্রমণ প্রতিহত করা।
—তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক হাতিওয়ালাদের প্রতি কী করেছিলেন? তিনি কি ওদের কৌশল ব্যর্থ করে দেননি? ওদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী প্রেরণ করেন। সেগুলো ওদের উপর পাথুরে কঙ্কর নিক্ষেপ করে। তারপর তিনি ওদেরকে ভক্ষিত খড়ের মত করেন। (১০৫ ফীলঃ ১-৫)।
ইবন ইসহাক ও ইবন হিশাম অতঃপর এই সূরা ও তৎপরবর্তী সূরাগুলোর তাফসীর শুরু করেন। আমার তাফসীর গ্রন্থে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্যে তাই যথেষ্ট হবে। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার।
ইবন হিশাম বলেন, ( ابابيل ) শব্দের অর্থ ঋক বা দল। আমার জানা মতে আরবরা এ শব্দের একবচন ব্যবহার করে না। তিনি বলেন ( سجيل ) শব্দ সম্পর্কে ব্যাকরণবিদ ইউনুস ও আবু উবায়দা বলেছেন যে, এটি দ্বারা আরবগণ সুকঠিন অর্থ বুঝায়। কোন কোন তাফসীরকার বলেছেন যে, ( سجيل ) শব্দটি মূলত দুটো ফারসী শব্দের সমষ্টি। আরবরা এটিকে এক শব্দরূপে ব্যবহার করে। ফারসী শব্দ দুটো হল ( سنك ) এবং ( سكل ) অর্থ পাথর ( كل ) অর্থ কাদা। তারা বলেন যে, পাথর ও কাদার তৈরী কঙ্কর-ই ওদের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
ইবন হিশাম আরও বলেন যে, ( عصف ) অর্থ উদ্ভিদ ও তৃণলতার পাতা।
কুসাই বলেন জনৈক ব্যাকরণবিদকে আমি বলতে শুনেছি যে, ( اباببال ) এর একবচন ( ابيل ) প্রাচীনকালের অনেক ভাষাবিদ বলেন, আবাবীল হলো পাখি শাবকের ঝাঁক, যেগুলো এখানে সেখানে একদল অন্য দলের পেছন পেছন ছুটে।
হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আবরাহা বাহিনীর উপর কঙ্কর নিক্ষেপকারী পাখীগুলোর চঞ্চু ছিল সাধারণ পাখির মত। পাগুলো ছিল কুকুরের থাবার মত। ইকরামা (রা) বলেন, সে গুলোর মাথা ছিল হিংস্র প্রাণীর মাথার মত। এগুলো সমুদ্র থেকে উড়ে এসেছিল এবং এগুলোর রঙ ছিল সবুজ। উবায়দ ইবন উমায়র বলেন, সেগুলো ছিল সামুদ্রিক কাল পাখি। সেগুলোর চঞ্চু ও পায়ে করে কঙ্কর নিয়ে এসেছিল।
হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, পাখিগুলোর আকৃতি ছিল কল্পনার আনকা পাখির মত। তিনি আরও বলেন যে, তাদের আনীত কঙ্করগুলোর ক্ষুদ্রতম কঙ্কর ছিল মানুষের মাথার সমান। কতক ছিল উটের সমান। ইবন ইসহাক থেকে ইউনুস ইবন বুকায়র এরূপ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, ঐ কক্করগুলো ছিল ক্ষুদ্রাকৃতির। আল্লাহই ভাল জানেন বিবরণগুলোর কোনটি যথার্থ।
ইবন আবী হাতিম উবায়দ ইবন উমায়র সূত্রে বলেন, হাতি বাহিনীকে যখন আল্লাহ তাআলা ধ্বংস করার ইচ্ছা করলেন তখন ওগুলোর প্রতি পাখির ঝাঁক প্রেরণ করলে সেগুলো এসেছিল সমুদ্র থেকে। আকৃতি ছিল বাজ পাখির মত। প্রতিটি পাখি তিনটি করে কঙ্কর নিয়ে এসেছিল। দু’টো দু’পায়ে একটি চঞ্চুতে। সেগুলো এসে আবরাহা বাহিনীর মাথার উপর সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেয়। তারপর বিকট আওয়াজ করে এবং পায়ের ও চঞ্চুর কঙ্করগুলো নিক্ষেপ করে। যারই মাথায় কঙ্কর পড়েছে তা তার মলদ্বার ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে। যার দেহের একদিকে পড়েছে তার অন্য দিক দিয়ে তা বেরিয়ে গিয়েছে। আল্লাহ তাআলা তখন প্রচণ্ড বায়ু প্রেরণ করেছিলেন। সেটি কঙ্করগুলোকে আঘাত করে। এতে কঙ্করগুলো আরও প্রচণ্ডভাবে তাদের উপর নিক্ষিপ্ত হয়। ফলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যায়।
ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, ইবন ইসহাক বলেছেন, আবরাহা বাহিনীর সকলের গায়ে পাথর লাগেনি। বরং তাদের কতক লোক ইয়ামেনে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। তারা সেখানে গিয়ে তাদের সাথীদের ধ্বংস ও বিপদের কথা ওখানকার লোকদেরকে জানায়। কতক ঐতিহাসিক বলেন যে, আবরাহাও ফিরে এসেছিল। তবে তার দেহ থেকে এক আঙ্গুল এক আঙ্গুল করে ঝরে পড়ছিল। ইয়ামানে পৌঁছার পর তার বুক ফেটে যায় এবং তার মৃত্যু হয়। তার প্রতি আল্লাহর লানত।
ইবন ইসহাক হযরত আয়েশা (রা) সূত্রে বলেনঃ
لقد رءیت قائدا الفيل وسانسه بمكة أعميين مقعدين يستطعمان
“দু’জনকেই আমি মক্কায় দেখেছি। দু’জনই তখন অন্ধ এবং চলৎশক্তিহীন। মানুষের নিকট খাবার ভিক্ষা করছে। উপরে বর্ণিত হয়েছে যে, হাতিব সহিসের নাম আনীস। বাহিনীর পরিচালকের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায় না। আল্লাহই ভাল জানেন।
তাফসীরকার নাককাশ তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, প্লাবন এসে তাদের মৃত দেহগুলো ভাসিয়ে নিয়ে সাগরে নিক্ষেপ করে। সুহায়লী বলেন, হাতি বাহিনীর এ ঘটনা ঘটেছিল যুল-কারনাইবন বাদশাহের যুগ থেকে ৮৮৬ বছর পর, মুহাররম মাসের পয়লা তারিখে
আমি বলি, ঐ বছরই রাসূল্লাহ (সা)-এর জন্ম হয়। এটিই প্রসিদ্ধ অভিমত। কেউ কেউ বলেন যে, এটি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনা। এ বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ।
এই ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা উপলক্ষে আরবদের রচিত কবিতাগুলো ইবন ইসহাক উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনায় আল্লাহ তা’আলা তার সেই সম্মানিত গৃহকে রক্ষা করেছেন হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে প্রেরণের মাধ্যমে। তিনি যে গৃহকে মর্যাদাময় ও পবিত্র করতে ইচ্ছে করেছিলেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর জন্যে প্রথম এক সুদৃঢ় দীন ও ধর্ম নির্ধারণ করেছেন যার অন্যতম রুকন হল সালাত। বরং এই ধর্মের মূল স্তম্ভই হচ্ছে সালাত। এই ধর্মের কিবলা হিসেবে তিনি কা’বা শরীককে নির্ধারণ করার ব্যবস্থা করেছেন। হাতি বাহিনীকে ধ্বংস করার পেছনে মূলত কুরায়শদের সাহায্য অভীষ্ট ছিল না। কারণ, ধ্বংস ও আযাব আপতিত হয়েছিল খৃষ্ট ধর্মাবলম্বী হাবশীদের উপর। কুরায়শীয় মুশরিকদের তুলনায় হাবশীগণ তার অধিকতর হকদার ছিল। এই সাহায্য ছিল সম্মানিত গৃহের সাহায্যার্থে এবং হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে প্রেরণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে, এ প্রসংগে আবদুল্লাহ ইবন যাব’আরী সাহসী বলেনঃ
تنگلوا عن بطن مكة اها - كانت قديما لا يرام حريمها
—তারা ফিরে গিয়েছে মক্কা ভূমি থেকে শাস্তি পেয়ে শঙ্কিত মনে। প্রাচীনকাল থেকেই এর অধিবাসীদেরকে লাঞ্ছিত করার কথা কেউ ভাবতে পারতো না।
لم تخلق الشعري ليالي حرمت - اذ لا عزيز من الأنام يومها
—যে সময়ে উক্ত এলাকাকে হারাম শরীফ তথা সম্মানিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে সে সময়ে শিরা নক্ষত্র সৃষ্টি করা হয়নি। কোন প্রতাপশালী ব্যক্তিই উক্ত স্থানের মর্যাদা বিনষ্টের অপপ্রয়াস চালাতে পারে না। কারণ কোন প্রতাপশালী ব্যক্তিই এটির মানহানির চেষ্টা করত না।
سائل أمير الجيش عنها مارای - فلسؤف يبني الجاملين علمها
—সেনাধ্যক্ষাকে জিজ্ঞেস করুন সে কী দেখেছে এ ঘটনা সম্পর্কে। ওদের মধ্যে যার অবগতি আছে সে অবগতিহীন ব্যক্তিদেরকে জানিয়ে দিবে।
ستون ألفا لهم لم يؤووا أرضهم - بل لم يعش بعد الاياب سقيمها
—তাদের ষাট হাজার লোক পুনরায় নিজেদের বাস ভূমিতে ফিরে যেতে পারেনি। অসুস্থ দু একজন ফিরে গেলেও অতঃপর তারা জীবিত থাকেনি।
كانت بها عاد وجرهم قبلهم - والله من فوق العباد يقيمها
—তাদের পূর্বে সেখানে বসবাস করেছিল আদ ও জুরহুম গোত্র, সকল বান্দার উপরে খোদ আল্লাহ তা’আলা সেটিকে কায়েম রাখেন।
এ প্রসংগে আবু কায়স ইবন আসলত আনসারী আল মাদানী বলেনঃ
ومن صنعه يوم فيل الحبوش - اذ كلما بعثوه رزم
—তাঁর (আল্লাহ তা’আলার) কুদরতের একটি নিদর্শন হল হাবশীদের হাতি বাহিনী প্রেরণের দিবসের ঘটনা, যখনই তারা হাতি পাঠানোর চেষ্টা করেছিল তখনই সে আর্ত-চীৎকার করেছিল।
مجاجهم تحت أقرابه - وقد شرموا أنفه فانخرم
—তাদের লোহার আকলী তার পেটের চামড়ার নীচে তার ঢুকিয়ে দিয়েছিল তারা তার নাকটি চিরে দিয়েছিল ফলে তা বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
وقد جعلوا سؤطه مغولا - اذا يفموه قفاه كلم
—তাদের চাবুকের মাথায় তারা লোহার পেরেক জুড়ে দিয়েছিল হাতির ঘাড়ে আঘাতের সাথে সাথে তা ক্ষত সৃষ্টি করে দিয়েছিল।
فولى وادبر أدراجه - وقد باء بالظلم من كان ثم
—অবশেষে তারা পিছু হটে গিয়েছিল সে পথে, যে পথে তারা এসেছিল এবং সেখানে যারা ছিল তারা অন্যায় ও অপরাধের শাস্তি পেয়েছিল।
فارسل من فوقهم حاصبا - فلفهم مثل لف القزم
—তাদের উপরওয়ালা আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি কঙ্কর প্রেরণ করেছিলেন এবং তাদের লাশগুলোকে থরে থরে ফেলে রেখেছিলেন ভীরু লোকদের লাশের স্তুপের ন্যায়।
نحضر على الصبر أحبارهم - وقد ثااجوا كثواج الغنم
—তাদের ধর্মযাজকগণ তাদেরকে ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করছিল। অথচ তারা ভীত সন্ত্রস্ত বকরী পালের ন্যায় ভ্যা ভ্যা করছিল।
এ প্রসংগে আবু সালত রাবীআ ইবন আবী রাবী’আ ওয়াহব ইবন ইলাজ ছাকাকীর কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। ইবন হিশাম বলেন, এ কবিতাগুলো উমাইয়া ইবন আবী সালত এর বলেও কেউ কেউ বলেছেন। সেগুলো ছিল এরূপঃ
ان آیات ربنا ثاقبات - ما يتمادى فيهن الآ الكفور
—আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাদি সুস্পষ্ট ও সমুজ্জ্বল। কাফির ব্যতীত অন্য কেউ এগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে না।
خلق الليل والنهار فكل- مستبين حسابه مقدور
—তিনি সৃজন করেছেন দিবস ও রাত্রিকে। এর প্রত্যকটি সুস্পষ্ট এগুলোর হিসাব সুনির্দিষ্ট।
ثم يجلو النهار رب رحيم - بمهاة شعاعها منثور
—এরপর দয়াময় প্রভু দিবসকে আলোকময় করেন বিশাল বিস্তৃত পৃথিবী জুড়ে। সেটির আলো ও কিরণ ছড়িয়ে পড়ে।
حبس الفيل بالمغمس حتى -صار يحلوا كأنه معقور
—তিনি রুখে দিয়েছেন হাতিকে মুগাম্মাস নামক স্থানে। এরপর সেটি খোঁড়া ও আহত পশুর ন্যায় হাত পা গুটিয়ে ওখানে বসে পড়ে।
الأزما حلقة الجران كما -قد من صخر کبكب محدور
—যেন হাতিটি তার গর্দানের অগ্রভাগ গুটিয়ে রেখেছিল। যেন সেটি পর্বতচূড়ার প্রস্তররাশি থেকে বিচ্ছিন্ন নীচের দিকে গড়িয়ে পড়া একখণ্ড পাথর।
حوله من ملوك كندة أبطال -ملا ويث في الحروب صقور
—তার চতুষ্পর্শ্বে রয়েছে কিন্দা গোত্রের উৎসাহ দানকারী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, যুদ্ধে যারা বাজ পাখির ন্যায় দুর্ধর্ষ আক্রমণকারী।
خلفه ثم ابدعوا جميعا لهم عظم ساقه مكسور
—তারা সকলে হাতিকে পেছনে ছেড়ে এসেছে। তারপর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সবাই পলায়ন করেছে। পালিয়েছে খোঁড়াতে খোঁড়াতে যেন প্রত্যেকের পায়ের নলা ভাঙ্গা।
گل دين يوم القيامة عند الله - الأ دين الحنيفة بور
—কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন হানীফ তথা দীন-ই ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল দীন বিলুপ্ত হবে। এ প্রসংগে আবু কায়স ইবন আসলাত বলেনঃ
فقوموا فصلوا ربكم وتمسحوا- بأركان هذا البيت بين الأخاشب
—উঠো, তোমাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং পর্বত সমূহের মাঝে অবস্থিত এই ঘরের বরকতময় রুকন সমূহ স্পর্শ কর।
فعندكم منه بلاء مصدق غداة أبي يكسوم هان الكتائب
—কারণ তার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্যিই একটি পরীক্ষা এসেছিল। সেটি ছিল সেনাপতি আবু ইয়াকসুমের (আবরাহার) অভিযান পরিচালনা দিবসে।
كتيبته بالسهل تمشي ورجلة على القاذفات في رءوس المناقب
—তার ঘোড় সওয়ারগণ সমতল পথে হেঁটে চলেছে আর তার পদাতিক বাহিনী অবস্থান নিয়েছে পর্বত শৃঙ্গে।
فما أتاگم نصرذى العرش ردهم - جنود المليك بين ساف وحاصب
—তোমাদের প্রতি যা এসেছে তা হল আরশ অধিপতির সাহায্য। পরম পরাক্রমশীল মহান মালিকের (আল্লাহ তা’আলা) সেনাবাহিনী প্রচণ্ড বায়ু ও কঙ্কর নিয়ে এসে ওদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
قولوا سراعا هاربين ولم يؤب الى أهله من الجيش غير عصائب
—অতঃপর তারা দ্রুত পলায়ন করল। হাবশীদের মাত্র কয়েকদল লোক ছাড়া অন্য কেউ নিজ নিজ পরিবারের নিকট ফিরে যেতে পারেনি।
কাবা শরীফ ধ্বংসের অপচেষ্টার হাত থেকে সেটিকে রক্ষা করা এবং কাবা শরীফের মান মর্যাদা সম্পর্কে উবায়দুল্লাহ ইবন কায়স যে কবিতা রচনা করেছে তাও এ প্রসংগে উল্লেখ করা যায়ঃ
کادة الأشرم الذي جاء بالفيل فولی وجيشه مهزوم .
—হাতি বাহিনী নিয়ে আসা ব্যক্তির আশরাম এই পবিত্র গৃহ সম্পর্কে ষড়যন্ত্র করেছিল। অতঃপর যে পেছনের দিকে পালিয়ে গেল, তার সৈন্যরাও হল পরাজিত।
واستهلت عليهم الطير بالجندل حتی گانه مرجوم
—বড় বড় পাথর নিয়ে পাখি বাহিনী তাদের উপর জমায়েত হল। অবশেষে সেই আশরাম হল পাথর নিক্ষেপে জর্জরিত ও ক্ষত-বিক্ষত।
ذلك من يغزه من الناس -يرجم وهو فل من الجيوش ميم
—এটি এজন্যে হল যে, যে ব্যক্তিই এ গৃহের বিরুদ্ধে লড়তে যাবে সে নিশ্চিতভাবে ফিরে যাবে এমতাবস্থায় যে, সে পরাজিত সৈনিক এবং নিন্দিত।
ইবন ইসহাক ও অন্যরা বলেন যে, আবরাহার মৃত্যুর পর তার পুত্র ইয়াকসুম রাজা হয়। তারপর আসে তার ভাই মাসরূক ইবন আবরাহা। সে ছিল তাদের বংশের শেষ রাজা। পারস্য সম্রাট নওশেরাওয়া-এর প্রেরিত সৈন্যবাহিনী নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে সায়ক ইবন ইয়াযনে হিময়ারী মাসরূকের হাত থেকেই রাজত্ব ছিনিয়ে নেয়। এ বিষয়ে পরে আলোচনা হবে।
হাতি বাহিনীর এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রোমান ইতিহাস খ্যাত সম্রাট দ্বিতীয় ইসকান্দার ইবন ফিলিপস মাকদুনী ওরফে সম্রাট যুলকারনাইনের যুগ থেকে ৮৮৬ তম বছরের মুহাররাম মাসে।
আবরাহা ও তার দু’পুত্রের মৃত্যু এবং হাবশা থেকে রাজত্ব ইয়ামানে স্থানান্তরিত হওয়ার পর আবরাহার নির্মিত উপাসনালয় কুলায়স পরিত্যক্ত গৃহে পরিণত হয়। অতঃপর তার আর কোন উক্ত অনুরক্ত থাকল না। অথচ নির্বুদ্ধিতা ও মূর্খতার কারণে আবরাহা সেটিকে তৈরী করেছিল আরবদের হজ্জকে কাবা শরীফ থেকে ঐ কুলায়সে সরিয়ে আনার জন্যে।
আবরাহা সেটি তৈরী করেছিল দু’টো মূর্তির উপর! মুর্তি দু’টো হল কু’আয়ব ও তার স্ত্রীর। এ দু’টো ছিল কাঠের তৈরী। প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য উচ্চতায় ৬০ গজ। এগুলো মূলত দু’টো নিজের প্রতিকৃতি। এ জন্যেই কেউ কুলায়স গীর্জায় কোন সম্পদ খুলে নিতে চেষ্টা করলে জিনেরা তাকে আক্রমণ করত। অতঃপর এটি প্রথম আব্বাসী খলীফা সাফফাহ-এ খিলোফতকাল পর্যন্ত এভাবেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। তাকে কুলায়স তার মধ্যে রক্ষিত ধনসম্পদ ও বহুমূল্য শ্বেতপাথর সম্পর্কে জানানো হয়। এগুলো আবরাহা রাণী বিলকীসের প্রাসাদ থেকে এনে কুলায়সে স্থাপন করেছিল।
অতঃপর খলীফা সাফফাহ এটি ভাঙ্গার জন্যে লোক প্রেরণ করলেন। তারা একটি একটি করে সকল পাথর খুলে নেয় এবং তার সকল ধনসম্পদ নিয়ে আসে। সুহায়লী এরূপই উল্লেখ করেছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/64
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।