মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
শামুয়েল (আ)-এর বংশপঞ্জী নিম্নরূপঃ শামুয়েল বা ইশমুঈল ( اشمويل ) ইবন বালী ইবন আলকামা ইবন ইয়ারখাম ( يرخام ) ইবন আল ইয়াহু ( اليهو ) ইবন তাহূ ইবন সূফ ইবন ‘আলকামা ইবন মাহিছ ইবন ‘আমূসা ইবন ‘আযরুবা। মুকাতিল বলেছেন যে, তিনি ছিলেন হারূন (আ)-এর বংশধর। মুজাহিদ বলেছেন যে, তাঁর নাম ছিল ইশমুঈল ইবন হালফাকা। তাঁর পূর্ববর্তী বংশ তালিকা তিনি উল্লেখ করেননি। সুদ্দি ইবন আব্বাস ইবন মাসউদ প্রমুখ কতিপয় সাহাবী থেকে এবং ছালাবী ও অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, গাজা ও ‘আসকালান এলাকার অধিবাসী আমালিকা সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলের উপর বিজয় লাভ করে। এরা তাদের অসংখ্য লোককে হত্যা করে এবং বিপুল সংখ্যক লোককে বন্দী করে নিয়ে যায়। তারপর লাবী বংশের মধ্যে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত নবী প্রেরণ বন্ধ থাকে। এ সময়ে তাদের মধ্যে মাত্র একজন মহিলা গর্ভবতী ছিল। সে আল্লাহর নিকট একজন পুত্র সন্তানের প্রার্থনা করে। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন এবং একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। মহিলা তার নাম রাখেন ইশমুঈল। ইবরানী বা হিব্রু ভাষায় ইশমুঈল ইসমাঈল শব্দের সমার্থক। যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করেছেন। পুত্রটি বড় হলে তিনি তাকে মসজিদে (বায়তুল মুকাদ্দাসে) অবস্থানকারী একজন পুণ্যবান বান্দার দায়িত্বে অর্পণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল যাতে তার পুত্র ঐ পুণ্যবান বান্দার সাহচর্যে থেকে তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী ও ইবাদত-বন্দেগী থেকে সুশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। ছেলেটি মসজিদেই অবস্থান করতে থাকেন। যখন তিনি পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হন তখনকার একটি ঘটনা হচ্ছে এই যে, একদিন রাত্রিবেলা তিনি মসজিদের এক কোণে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ মসজিদের পার্শ্ব থেকে একটি শব্দ তার কানে আসে। তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি জেগে উঠন। তার ধারণা হয়, তার শায়খই তাঁকে ডেকেছেন। তাই তিনি শায়খকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি আমাকে ডেকেছেন?’ তিনি ভয় পেতে পারেন এই আশঙ্কায় শায়খ তাকে সরাসরি কোন উত্তর দিলেন না। তিনি শুধু বললেন, ‘হ্যাঁ, ঘুমিয়ে পড়।’ তখন তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। দ্বিতীয়বার অনুরূপ ঘটনা ঘটল। তারপর তৃতীয়বারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। তিনি দেখতে পেলেন, স্বয়ং জিব্রাঈল (আ)-ই তাঁকে ডাকছেন। জিব্রাঈল (আ) তাঁকে জানালেন যে, আল্লাহ আপনাকে আপনার সম্প্রদায়ের প্রতি নবীরূপে প্রেরণ করছেন। এরপর সম্প্রদায়ের সাথে তার যে ঘটনা ঘটে, কুরআন মজীদে আল্লাহ তার বিবরণ দিয়েছেন। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ তুমি কি মূসার পরবর্তী বনী ইসরাঈলের প্রধানদেরকে দেখনি? তারা যখন তাদের নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্যে এক রাজা নিযুক্ত কর, যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি;সে বলল, এমন তো হবে না যে, তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়া হলে তখন আর তোমরা যুদ্ধ করবে না? তারা বলল, আমরা যখন নিজেদের আবাসভূমি ও সন্তান-সন্ততি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছি, তখন আল্লাহর পথে কেন যুদ্ধ করব না? তারপর যখন তাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়া হল, তখন তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলেই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল এবং আল্লাহ জালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। এবং তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, আল্লাহ তালূতকে তোমাদের রাজা করেছেন; তারা বলল, “আমাদের উপর তার রাজত্ব কিরূপে হবে, যখন আমরা তার অপেক্ষা কর্তৃত্বের অধিক হকদার এবং তাকে প্রচুর ঐশ্বর্য দেয়া হয়নি!” নবী বলল, “আল্লাহ্ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে তাঁর রাজত্ব দান করেন আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।” আর তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, তাঁর রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট সেই তাবৃত আসবে, যাতে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে চিত্ত প্রশান্তি এবং মূসা ও হারূন বংশীয়গণ যা রেখে গিয়েছে, তার অবশিষ্টাংশ থাকবে; ফেরেশতাগণ তা বহন করে আনবেন। তোমরা যদি মুমিন হও তবে অবশ্যই তোমাদের জন্যে এতে নিদর্শন আছে। তারপর তালূত যখন সৈন্যবাহিনীসহ বের হল সে তখন বলল, ‘আল্লাহ এক নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। যে কেউ তা থেকে স্বাদ গ্রহণ করবে সে আমার দলভুক্ত নয়; আর যে কেউ তার স্বাদ গ্রহণ করবে না, সে আমার দলভুক্ত; এছাড়া যে কেউ তার হাতে এক কোষ পানি গ্রহণ করবে, সে-ও। তার পর অল্প সংখ্যাক ব্যতীত তারা তা থেকে পান করল। সে এবং তার সংগী ঈমানদারগণ যখন তা অতিক্রম করল তখন তারা বলল,জালুত ও তাঁর সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত শক্তি আজ আমাদের নেই; কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে! আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। তারা যখন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে জালুত ও তার সৈন্য বাহিনীর সম্মুখীন হল তখন তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ধৈর্য দান কর, আমাদের অবিচলিত রাখ এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দান কর।’ সুতরাং তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে পরাভূত করল। আল্লাহ তাকে রাজত্ব এবং হিকমত দান করলেন; এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ যদি মানব জাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল। (২ সূরা বাকারাঃ ২৪৬-২৫১)
অধিকাংশ মুফাসিরের মতে উপরোক্ত আয়াতে যাদের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যিনি তাদের নবী ছিলেন, তাঁর নাম শামুয়েল। কারো কারো মতে শামউন ২৪: ২৫ ( شمعون ) কেউ বলেছেন, শামুয়েল ও শামউন অভিন্ন ব্যক্তি। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সেই নবীর নাম ইউশা ( يوشع )। তবে এর সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা ইবন জারীর তাবারী লিখেছেন যে, ইউশা (আ)-এর ইন্তিকাল এবং শামুয়েল (আ)-এর নবুওত প্রাপ্তির মধ্যে চারশ' ষাট বছরের ব্যবধান ছিল।
আয়াতের দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, বনী ইসরাঈলরা যখন একের পর এক যুদ্ধে পর্যদস্ত হতে থাকল এবং শত্রুদের নিপীড়নে জর্জরিত হয়ে গেল, তখন তারা সে যুগের নবীর কাছে গিয়ে তাদের জন্যে একজন বাদশাহ নিয়োগের আবেদন জানাল। যাতে তার নেতৃত্বে তারা শত্রুর মুকাবিলায় লড়াই করতে পারে। আর নবী তাদেরকে বললেনঃ
অর্থাৎ, যুদ্ধ করতে আমাদেরকে কিসে বাধা দিবে? বিশেষত আমাদেরকে যখন আমাদের ঘর বাড়ি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে আর আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আমরা নির্যাতিত। আমাদের সন্তান-সন্ততি শত্রুর হাতে বন্দী। তাই এদেরকে উদ্ধার করার জন্যে আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহ বলেনঃ
(কিন্তু যখন তাদেরকে লড়াই করার নির্দেশ দেয়া হল, তখন অতি অল্প সংখ্যক লোক ছাড়া তারা সকলেই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল। আল্লাহ তা'আলা জালিমদেরকে ভাল করেই জানেন।) যেমন ঘটনার শেষ দিকে বলা হয়েছে যে, অল্প সংখ্যক লোকই বাদশাহর সাথে নদী অতিক্রম করে। তারা ছাড়া অবশিষ্ট সবাই যুদ্ধের ভয়ে ভীত হয়ে প্রত্যাবর্তন করে।
ইকরামা ও সুদ্দী (র) বলেন, তালুত পেশায় একজন ভিসতি ছিলেন। ওহাব ইবন মুনাব্বিহ বলেন, তিনি চামড়া পাকা করার কাজ করতেন। এ সম্পর্কে আরও বিভিন্ন মত রয়েছে। এ জন্যে বনী ইসরাঈলের লোকজন নবীকে বললঃ
অর্থাৎ, তারা বলল, এ কেমন করে হয়, আমাদের উপর বাদশাহ হওয়ার তার কি অধিকার আছে? রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশী। সে তো কোন বড় ধনী ব্যক্তিও নয়।) ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, দীর্ঘ দিন যাবত বনী ইসরাঈলের লাও ( لاو ) শাখা থেকে নবী এবং য়াহুয়া ( يهوذا ) শাখা থেকে রাজা-বাদশাহ্ হওয়ার প্রচলন চলে আসছিল। এবার তালুত যখন বিনয়ামীমের বংশধরদের থেকে রাজা মনোনীত হলেন, তখন তারা অপছন্দ করল এবং তার নেতৃত্ব সম্পর্কে কটাক্ষ করতে আরম্ভ করল। তারা দাবী করল তালুতের তুলনায় রাজা হওয়ার অধিকার আমাদের বেশী। দাবীর সপক্ষে তারা বলল, তালুত তো একজন দরিদ্র ব্যক্তি; তার তো যথেষ্ট অর্থ সম্পদ নেই। এমন লোক কিভাবে রাজা হতে পারে? নবী বললেন,
(আল্লাহ তোমাদের উপর তাকেই মনোনীত করেছেন এবং স্বাস্থ্য ও জ্ঞান উভয় দিকের যোগ্যতা তাকে প্রচুর দান করেছেন।) কথিত আছে, আল্লাহ শামুয়েল নবীকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে, বনী ইসরাঈলের মধ্যে যে ব্যক্তি (তোমার হাতের) এ লাঠির সমান দীর্ঘকায় হবে এবং যার আগমনে (তোমার কাছে রক্ষিত) শিং এর মধ্যে রাখা পবিত্র তেল ( دهن القدس ) উথলে উঠবে, সে ব্যক্তিই হবে তাদের রাজা।
এরপর বনী ইসরাঈলের লোকজন এসে উক্ত লাঠির সাথে নিজেদেরকে মাপতে থাকে। কিন্তু তালুত ব্যতীত অন্য কেউ-ই লাঠির মাপে টিকেনি। তিনি নবীর নিকট উপস্থিত হতেই শিং এর তেল উথলে উঠল। নবী তাকে সেই তেল মাখিয়ে দিলেন এবং বনী ইসরাঈলের রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ
(আল্লাহ তাকে তোমাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন।) জ্ঞানের ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির বিষয়ে কেউ কেউ বলেছেন, তাঁর এ সমৃদ্ধি কেবল যুদ্ধের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ। কিন্তু কারও কারও মতে এ সমৃদ্ধি সার্বিকভাবে এবং সকল ক্ষেত্রে। অনুরূপ দেহের সমৃদ্ধির ব্যাপারে কেউ বলেছেন, তিনি সবার চেয়ে দীর্ঘ ছিলেন। আবার কারো কারো মতে, তিনি সবার চেয়ে সুদর্শন ছিলেন। তবে স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া যায় যে, নবীর পরে তালুতই ছিলেন বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ও সুদর্শন ব্যক্তি।
وَٱللَّهُ یُؤۡتِی مُلۡكَهُۥ مَن یَشَاۤءُۚ
(বস্তুত আল্লাহ যাকে চান তাকেই তাঁর রাজ্য দান করেন।) কেননা তিনিই মহাজ্ঞানী এবং সৃষ্টির উপর হুকুম চালাবার ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই আছে।
وَٱللَّهُ وَ ٰ سِعٌ عَلِیم ࣱ
(আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।)
অর্থাৎ, আর তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের কাছে সেই তাবুত আসবে, যাতে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে চিত্ত প্রশান্তি এবং মূসা ও হারূন বংশীয়গণ যা রেখে গিয়েছেন তার অবশিষ্টাংশ থাকবে। সিন্দুকটিকে ফিরিশতারা বয়ে আনবে। তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক তবে এতে অবশ্যই তোমাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (২ সূরা বাকারাঃ ২৪৮)। তালুতের রাজত্ব পাওয়ার এটা ছিল আর একটা বরকত। বনী ইসরাঈলের নিকট বংশ পরম্পরায় যে ঐতিহাসিক সিন্দুকটি ছিল, যার ওসীলায় তারা যুদ্ধে শত্রুদের উপর জয়ী হত—বনী ইসরাঈলের বিপর্যয়কালে ঐ সিন্দুকটি শক্ররা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ অনুগ্রহ করে সেই সিন্দুকটি তালুতের মাধ্যমে বনী ইসরাঈলকে ফিরিয়ে দেন। “সেই সিন্দুকে আছে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে চিত্ত প্রশান্তি।” কারও কারও মতে, তা' ছিল স্বর্ণের তস্তরী, যাতে নবীদের বক্ষ ধৌত করা হত। কেউ বলেছেন, তা হয়েছে শান্তিদায়ক প্রবহমান বায়ু। কেউ বলেছেন, সেই বস্তুটি ছিল বিড়ালের আকৃতির। যুদ্ধের সময় যখন তা' শব্দ করত তখন বনী ইসরাঈলরা বিশ্বাস করত যে, তাদের সাহায্য প্রাপ্তি সুনিশ্চিত এবং মূসা ও হারূন বংশীয়গণ যা কিছু রেখে গিয়েছে অর্থাৎ যে ফলকের উপর তাওরাত লিপিবদ্ধ ছিল, তার কিছু খণ্ড অংশ এবং তীহ্ ময়দানে তাদের উপর যে মান্না’ নাযিল হত, তার কিছু অংশ বয়ে আনবে ফেরেশতারা। অর্থাৎ তোমাদের কাছে তাদের তা’ বয়ে নিয়ে আসা তোমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে। আমি তোমাদেরকে যা কিছু বলছি তার সত্যতা এবং তালুত যে নেতৃত্ব দানের অধিকারী তার সুস্পষ্ট প্রমাণ, তোমরা এ থেকে লাভ করবে। তাই আল্লাহ বলেছেনঃ (এতে তোমাদের জন্যে নিদর্শন আছে যদি তোমরা মু'মিন হয়ে থাক।)
কথিত আছে যে, আমালিকা জাতি বনী ইসরাঈলকে এক যুদ্ধে পরাজিত করে তাদের নিকট থেকে এ সিন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সিন্দুকটিতে ছিল তাদের চিত্ত প্রশান্তি ও পূর্ব পুরুষদের বরকতময় কিছু স্মারক। কেউ কেউ বলেছেন, এতে তাওরাত কিতাবও ছিল। আমালিকারা এ সিন্দুকটি ছিনিয়ে নিয়ে তাদের শহরের একটি মূর্তির নীচে রেখে দেয়। পরদিন সকালে তারা দেখতে পায় যে, সিন্দুকটি ঐ মূর্তির মাথার উপর বয়েছে। তারা সিন্দুকটি নামিয়ে পুনরায় মূর্তির নীচে রেখে দেয়। দ্বিতীয় দিন এসে পূর্বের দিনের ন্যায় তারা সিন্দুকটিকে মূর্তির মাথার উপরে দেখতে পায়। বারবার এ অবস্থা সংঘটিত হতে দেখে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে, আল্লাহর হুকুমেই এ রকম হচ্ছে। অবশেষে তারা সিন্দুকটিকে শহর থেকে এনে একটি পল্লীতে রেখে দেয়। কিন্তু এবার হল আর এক বিপদ। গ্রামবাসীদের ঘাড়ে এক প্রকার রোগ দেখা দেয়। এ অবস্থা কিছুদিন চলতে থাকলে তারা সিন্দুকটিকে দু’টি গাভীর উপর বেঁধে বনী ইসরাঈলের বসতি এলাকার দিকে হাঁকিয়ে দেয়। গাভী দুটি সিন্দুকটিকে বয়ে নিয়ে চলতে থাকে। কথিত আছে, ফিরিশতারা গাভীকে পেছন দিক থেকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এভাবে সিন্দুকসহ গাভী দু’টি হাঁটতে হাঁটতে বনী ইসরাঈলের নেতাদের এলাকায় প্রবেশ করে। বনী ইসরাঈলকে তাদের নবী যেসব কথা বলেছিলেন, তারা সেভাবেই ঐসব কথা বাস্তবে পরিণত হতে দেখতে পায়। ফেরেশতারা সিন্দুকটি কিভাবে এনেছিলেন, তা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে, আয়াতের শব্দ থেকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনুমিত হয় যে, ফিরিশতারা সরাসরি নিজেরাই সিন্দুক বহন করে এনে ছিলেন। অবশ্য অধিকাংশ মুফাসসির প্রথম ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর বাণীঃ
(অতঃপর তালুত যখন সৈন্য বাহিনীসহ বের হল, তখন সে বলল ও একটি নদীর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। যে কেউ তা থেকে পান করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। আর যে কেউ এর স্বাদ গ্রহণ করবে না, সে আমরা দলভুক্ত; তাছাড়া যে কেউ তার হাতে এক কোষ পানি গ্রহণ করবে সেও। (২ বাকারাঃ ২৪৯)
ইব্ন আব্বাসসহ বহু মুফাসসির বলেছেন, সেই নদীটি হল জর্দান নদী। একে ‘শারীয়া নামে অভিহিত করা হয়। আল্লাহর নির্দেশক্রমে ও নবীর হুকুম অনুযায়ী সৈন্য বাহিনীকে পরীক্ষা করার জন্যে তালুত এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন যে, যে লোক এ নদী থেকে পানি পান করবে সে আমার সাথে এই যুদ্ধে যেতে পারবে না। আমার সাথে কেবল সেই যেতে পারবে, যে আদৌ তা পান করবে না কিংবা মাত্র এক কোষ পানি পান করবে। এরপর আল্লাহ বলেন, কিন্তু একটি ক্ষুদ্র দল ব্যতীত আর সকলেই তা থেকে পান করে। সুদ্দী বলেন, তালুতের সৈন্য বাহিনীর সংখ্যা ছিল আশি হাজার। তাদের মধ্য থেকে পানি পান করেছিল ছিয়াত্তর হাজার। অবশিষ্ট চার হাজার সৈন্য তার সাথে ছিল। ইমাম বুখারী তাঁর ‘সহীহ' গ্রন্থে বারা ইবন আযিব (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী কয়েকজন বসে আলাপ করছিলাম যে, বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা তালুত বাহিনীর যারা নদী পার হয়েছিল তাদের সমান। তালুতের সাথে যারা নদী পার হয়েছিল, তাদের সংখ্যা ছিল তিনশ’ দশের কিছু বেশী। সুদ্দী যে তালুত বাহিনীর সংখ্যা আশি হাজার বলেছেন, তা সন্দেহমুক্ত নয়। কেননা বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকাটিতে আশি হাজার লোকের যুদ্ধ করার মত অবস্থা ছিল না। আল্লাহর বাণীঃ
(এরপর তালুত এবং তার সহযাত্রী মুমিনগণ যখন তা অতিক্রম করল তখন তারা বললঃ জালুত ও তার সৈন্য বাহিনীর সহিত মুকাবিলা করার কোন শক্তিই আজ আমাদের নেই।) অর্থাৎ শত্রু সংখ্যা অধিক হওয়ায় এবং সে তুলনায় নিজেদের সংখ্যা কম থাকায় তারা মুকাবিলা করতে অক্ষমতা প্রকাশ করছিল। কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বললঃ বারবার দেখা গেছে যে, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। এই দলের মধ্যে একটি অংশ ছিল অশ্বারোহী বাহিনী এবং তারাই ছিল ঈমানদার ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে অসীম ধৈর্যশীল।
অর্থাৎ, তারা যখন যুদ্ধের উদ্দেশ্য জালুত ও তার সৈন্য বাহিনীর সম্মুখীন হল, তখন তারা বললঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন, আমাদের সুদৃঢ় করে দিন এবং এই কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দান করুন। তারা আল্লাহর নিকট প্রর্থনা করে যেন তিনি তাদের ধৈর্য দান করেন। (২ বাকারাঃ ২৫০) অর্থাৎ ধৈর্য যেন তাদেরকে এমনভাবে বেষ্টন করে রাখে, যাতে অন্তরের মধ্যে দৃঢ়তা আসে, কোন প্রকার সংশয় মনে না জাগে। তারা আল্লাহর নিকট দু'আ করে যেন তারা যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়পদে শত্রুর মুকাবিলা করে বাতিল শক্তিকে পর্যুদস্ত করতে পারে এবং বিজয় লাভে ধন্য হতে পারে। এভাবে তারা বাহ্যিক দিক থেকে এবং অভ্যন্তরীণভাবে মজবুত হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকারকারী কাফির দুশমনদের মুকাবিলায় তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করে। ফলে সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, মহাজ্ঞানী ও নিগুঢ় তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেন ও তাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় দান করেন। এজন্য আল্লাহ বলেনঃ
فَهَزَمُوهُم بِإِذۡنِ ٱللَّهِ
(শেষ পর্যন্ত ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে পরাজিত করে দিল)। অর্থাৎ শত্রু বাহিনী সংখ্যায় অধিক হওয়া সত্ত্বেও তালুত বাহিনী বিজয় লাভে সমর্থ হল। কেবলমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহে এবং তারই প্রদত্ত শক্তি ও সাহায্য বলে তাদের নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য দ্বারা নয়। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন।
অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদেরকে বদরের যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা হীনবল ছিলে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (৩ আল ইমরানঃ ১২৩)।
এবং দাউদ জালুতকে হত্যা করল। আল্লাহ দাঊদকে রাজ্য ও হিকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। (২ বাকারাঃ ২৫১)
এ ঘটনা থেকে হযরত দাউদ (আ)-এর বীরত্ব প্রমাণিত হয়। এ যুদ্ধে তিনি এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেন যার নিহত হওয়ার কারণে শত্রু বাহিনী পরাজিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বস্তুত যে যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর রাজাই নিহত হয়, বিপুল পরিমাণ গনীমত সম্ভার হস্তগত হয়, এবং সাহসী যোদ্ধারা বন্দী হয়ে যায়, ইসলামের বিজয় কেতন দেব মূর্তিদের উপরে বুলন্দ হয়, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সবাই তার শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পালা আসে এবং বাতিল দীন ও বাতিল পন্থীদের উপর সত্য দীন বিজয় লাভ করে তার চাইতে গৌরবের বিষয় আর কি হতে পারে? সুদ্দী বলেনঃ হযরত দাউদ (আ) ছিলেন পিতার তেরজন পুত্রের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। তিনি শুনতে পান যে, বনী ইসরাঈলের রাজা তালুত, জালুত ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বনী ইসরাঈলকে সংগঠিত করছেন এবং তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি জালুতকে হত্যা করতে পারবে তার সাথে তার কন্যাকে বিবাহ দিবেন এবং রাজ্য পরিচালনায় তাকে শ করবেন। দাউদ (আ) ছিলেন একজন তীরান্দাজ। তিনি নিক্ষেপক যন্ত্রে পাথর রেখেও নিক্ষেপ করতেন। বনী ইসরাঈলরা যখন জালূতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গমন করে তখন দাঊদ (আ) ও তাদের অভিযানে শরীক হন। গমন পথে একটি পাথর তাকে ডেকে বলল, আমাকে তুলে নিন। আমার দ্বারা আপনি জালূতকে হত্যা করতে পারবেন। দাউদ (আ) পাথরটি তুলে নেন। কিছুদূর গেলে দ্বিতীয় আর একটি পাথর এবং আরও কিছু দূর অগ্রসর হলে তৃতীয় আরও একটি পাথর একইভাবে দাউদ (আ)-কে ডেকে তুলে নিতে বলে। দাউদ (আ) তিনটি পাথরই উঠিয়ে নেন এবং থলের মধ্যে রেখে দেন। যুদ্ধের ময়দানে দুই বাহিনী যখন ব্যুহ রচনা করে পরস্পর মুখখামুখী হয় তখন জালুত সৈন্যব্যুহ থেকে বেরিয়ে এসে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানায়। আহ্বানে সাড়া দিয়ে হযরত দাউদ (আ) সম্মুখে অগ্রসর হন। কিন্তু তাঁকে দেখে জালূত বলল, ‘তুমি ফিরে যাও। কেননা, তোমার মত লোককে হত্যা করতে আমি ঘৃণবোধ করি।’ দাউদ (আ) বললেন, ‘তবে তোমাকে আমি বধ করতে খুবই আগ্রহী।’ এ কথা বলে তিনি পাথর তিনটিকে থলের মধ্যে রেখে ঘুরাতে আরম্ভ করলেন। ঘুরাবার ফলে তিনটি পাথর পরস্পর মিলিত হয়ে একটি পাথরে পরিণত হয়। এবার এ পাথরটিকে তিনি জালূতের দিকে সজোরে নিক্ষেপ করেন। পাথরটি জালূতের মাথায় গিয়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখে জালূতের সৈন্য বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়। তালূত তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁর কন্যাকে দাউদ (আ)-এর সাথে বিবাহ দেন এবং রাজ্যে তার শাসন চালু করেন।
অতি অল্প দিনের মধ্যেই বনী ইসরাঈলের নিকট দাউদ (আ)-এর উচ্চ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। তালূতের চেয়ে তারা দাঊদ (আ)-কেই অগ্রাধিকার দিতে থাকে। কথিত আছে যে, এতে তালূতের অন্তরে হিংসার আগুন প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে এবং তিনি দাউদকে হত্যার প্রয়াস পান এবং তার সুযোগ খুঁজতে থাকেন; কিন্তু তিনি তাতে সফল হননি। দাউদ (আ)-কে হত্যা করার উদ্যোগ নিলে সমাজের আলিমগণ তালূতকে এ থেকে নিবৃত্ত হওয়ার পরামর্শ দেন এবং তাকে বাধা প্রদান করতে থাকেন। এতে তালুত ক্রুদ্ধ হয়ে আলিমদের উপর অত্যাচার চালান এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যতীত সবাইকে হত্যা করেন। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর এই কৃতকর্মের জন্যে তিনি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করেন। অধিকাংশ সময় তিনি কান্নাকাটি করে কাটাতেন। রাত্রিকালে গোরস্তানে গিয়েও কান্নাকাটি করতে থাকেন। কোন কোন সময় তাঁর চোখের পানিতে মাটি পর্যন্ত ভিজে যেত। এ সময়ে এক রাত্রে একটি ঘটনা ঘটে। তাত গোরস্তানে বসে কাঁদছেন। হঠাৎ কবর থেকে একটি শব্দ ভেসে এল। “হে তালুত! তুমি আমাদেরকে হত্যা করেছিলে, কিন্তু আমরা জীবিত। তুমি আমাদেরকে যাতনা দিয়েছিলে। কিন্তু আমরা এখন মৃত।” এতে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন এবং আরও বেশী করে কাঁদতে লাগলেন। তিনি লোকজনের কাছে এমন একজন আলিমের সন্ধানে ঘুরতে থাকেন, যার নিকট তিনি তার অবস্থা এবং তাঁর তওবা কবুল হবে কিনা জিজ্ঞেস করবেন। লোকেরা জবাব দিল, আপনি কি কোন আলিমকে অবশিষ্ট রেখেছেন? বহু চেষ্টার পর একজন পুণ্যবতী মহিলার সন্ধান মিলল। মহিলাটি তালুতকে হযরত ইউশা নবীর কবরের কাছে নিয়ে গেলেন এবং ইউশাকে জীবিত করে দেয়ার জন্যে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানালেন। আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা কবূল করলেন।
হযরত ইউশা কবর থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং কিয়ামত হয়ে গেছে কি না জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে মহিলাটি বললেন, ‘কিয়ামত হয়নি। তবে ইনি হচ্ছেন তালূত। তিনি আপনার কাছে জানতে চান যে, তাঁর তওবা কবূল হবে কিনা?’ ইউশা (আ) বললেন,‘হ্যাঁ, তওবা কবুল হবে। তবে শর্ত হল, তাঁকে বাদশাহী ত্যাগ করে শাহাদত লাভের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর পথে যুদ্ধে রত থাকতে হবে।’ এ কথাগুলো বলার সাথে সাথেই ইউশা (আ) পুনরায় ইন্তিকাল করেন। অতঃপর তালুত হযরত দাউদ (আ)-এর নিকট রাজ্য হস্তান্তর করে চলে যান। সাথে ছিল তাঁর তেরজন পুত্র। সকলেই আল্লাহর পথে জিহাদ করতে থাকেন এবং জিহাদের ময়দানেই শাহাদত বরণ করেন। মুফাসসিরগণ লিখেন, এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ হযরত দাউদ (আ) প্রসংগে বলেছেনঃ
(আল্লাহ তাকে কর্তৃত্ব ও হিকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছে করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন)। ইবন জারীর তার ইতিহাস গ্রন্থে সুদ্দীর সূত্রে উপরোক্ত তথ্য লিখেছেন। কিন্তু এ বিবরণের কয়েকটি দিক আপত্তিকর এবং আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়।
মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক লিখেছেন, যেই নবী কবর থেকে জীবিত উঠে তালূতকে তওবার পদ্ধতি বলে দিয়েছিলেন, সেই নবীর নাম আল-য়াসায়া ইবন আখতূব। ইবন জারীরও তার গ্রন্থে এ কথা উদ্ধৃত করেছেন। ছালাবী বলেছেন, উল্লেখিত মহিলা তালুতকে শামুয়েল নবীর কবরের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তালুত যে সব অপকর্ম করেছিলেন, সে জন্যে তিনি তাকে তিরস্কার করেন। ছালাবীর এ ব্যাখ্যাই অধিকতর সঙ্গত। তাছাড়া তালুতের সাথে নবীর সাক্ষাৎ ও কথোপকথনের ব্যাপারটি সম্ভবত স্বপ্নের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, কবর থেকে পুনর্জীবিত হয়ে নয়। কেননা এ জাতীয় কাজের প্রকাশ পাওয়া নবীদের মু'জিযা বিশেষ। কিন্তু ঐ মহিলা তো আর নবী ছিলেন না। তাওরাতের অনুসারীদের ধারণা মতে, তালূতের রাজত্ব প্রাপ্তি থেকে জিহাদের ময়দানে পুত্রদের সাথে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত মোট সময় ছিল চল্লিশ বছর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/8
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।