hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৯৪
রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর যৌবন প্রাপ্তি ও আল্লাহর আশ্রয়
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) যৌবনে পদার্পণ করলেন। আল্লাহ তাআলা তার নিরাপত্তা দান করেন এবং জাহিলিয়াতের পংকিলতা থেকে তাকে রক্ষা করেন। এভাবে যখন তিনি বয়ঃপ্রাপ্ত হলেন, তখন তিনি ব্যক্তিত্বে সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষ, চরিত্রে সর্বাপেক্ষা সুন্দর, বংশ মর্যাদায় সবচাইতে কুলীন, প্রতিবেশী হিসেবে সর্বোত্তম, সহনশীলতায় সর্বশ্রেষ্ঠ, কথা-বার্তায় সর্বাধিক সত্যবাদী, বিশ্বস্ততায় সকলের সেরা এবং অশ্লীলতা ও মন্দ স্বভাব থেকে সর্বাধিক পবিত্র ও মুক্ত। সমাজের মানুষ এখন তাঁকে একমাত্র “আল-আমীন’ বা বিশ্বাসভাজন বলে সম্বোধন করে।

মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, মহানবী (সা)-কে আল্লাহ তা’আলা যে শৈশবে রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং জাহিলিয়াতের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখেন, সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ একদিন আমি কুরায়শ-এর কয়েকটি কিশোরের সঙ্গে অবস্থান করছিলাম। খেলার ছলে আমরা পাথর কুড়িয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিচ্ছিলাম। আমরা প্রত্যেকে পরনের লুঙ্গি খুলে তা’ ঘাড়ে রেখে এর ওপর পাথর বহন করছিলাম। আমি ওদের সঙ্গে একবার সামনে যাচ্ছিলাম আবার কখনো পেছনে পড়ছিলাম। এমন সময় অদৃশ্য থেকে কে একজন আমাকে প্রচণ্ড একটি ঘুষি মারলো এবং আমাকে বললো, লুঙ্গিটা পরে নাও। সঙ্গে সঙ্গে আমি লুঙ্গিটি কাঁধ থেকে নিয়ে পরে নিলাম। তারপর পুনরায় খালি কাঁধে পাথর বহন করতে শুরু করলাম। তখন আমার সাথীদের মধ্যে একমাত্র আমিই ছিলাম লুঙ্গি পরিহিত।

এই ঘটনাটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত কাবা নির্মাণের সময়কার ঘটনার অনুরূপ। সে সময়ে তিনি এবং তাঁর চাচা আব্বাস পাথর বহন করছিলেন। ঘটনাটি যদি সে ঘটনা না হয়ে থাকে তবে এটা ছিল তার পূর্বাভাস স্বরূপ। আল্লাহই ভালো জানেন।

আব্দুর রাযযাক বর্ণনা করেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রা) বলেছেন, কা’বা নির্মাণের সময় রাসূলুল্লাহ (সা) পাথর বহনের কাজে যোগ দেন। দেখে আব্বাস বললেন, ‘লুঙ্গি কাঁধে রেখে পাথর বহন কর।’ রাসূলুল্লাহ (সা) তা-ই করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং তার চক্ষুদ্বয় আকাশের দিকে নিবদ্ধ হয়। কিছুক্ষণ পর তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমার লুঙ্গি!’ তখন আব্বাস তাঁকে লুঙ্গি পরিয়ে দেন। এটি বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা।

বায়হাকী ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, কুরায়শ যখন বায়তুল্লাহ নির্মাণ করে, তখন আব্বাস বায়তুল্লাহর দিকে পাথর বয়ে নিয়ে আসছিলেন। ইবনে আব্বাস বলেন, কুরায়শরা দু’জন দু’জন করে লোককে জুড়ি বেঁধে দেয়। পুরুষরা পাথর স্থানান্তর করতো আর মহিলারা মশলা বহন করতো। আব্বাস বলেন, আমি এবং আমার ভাতিজাও সেই কাজে শরীক ছিলাম। আমরা লুঙ্গি কাঁধে রেখে তার উপরে করে পাথর বহন করতাম। কোন লোক আসতে দেখলে লুঙ্গিটা পরে নিতাম। এক পর্যায়ে আমি হাঁটছি আর মুহাম্মদ আমার সম্মুখে। হঠাৎ তিনি উপুড় হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আমি আমার পাথরগুলো ফেলে দৌড়ে আসলাম। দেখতে পেলাম, মুহাম্মদ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার কী হয়েছে?’ তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং লুঙ্গিটা হাতে নিয়ে বললেন, ‘আমাকে উলংগ চলতে নিষেধ করা হয়েছে।” আব্বাস বলেন, মানুষ তাঁকে পাগল বলবে, এই ভয়ে আমি ঘটনাটা গোপন করে রাখতাম।

বায়হাকী বর্ণনা করেন যে, হযরত আলী (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, “জাহিলী যুগের মানুষ যে সব রীতি-নীতি পালন করত আমার মনে কখনো তার কোনটি পালন করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়নি। তবে দুই রাতে তেমন কিছু করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু আল্লাহ উভয় ঘটনায় আমাকে রক্ষা করেছেন। এক রাতে আমি ছাগলের পালের সঙ্গে ছিলাম। আমি আমার সঙ্গী যুবককে বললাম, তুমি আমার ছাগলগুলো দেখ, মক্কায় প্রবেশ করে আমি অন্য যুবকদের মত গল্প-গুজবে অংশগ্রহণ করে আসি।’ সঙ্গীটি বলল, ‘ঠিক আছে, যাও।’ নবীজি (সা) বলেন, আমি মক্কা প্রবেশ করে প্রথম বাড়িতে পৌঁছেই বাজনার শব্দ শুনতে পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এসব কী হচ্ছে?’ লোকেরা বলল, ‘অমুক অমুককে বিয়ে করেছে।’ আমি বসে দেখতে শুরু করলাম। আল্লাহ আমাকে নিদ্রায় অচেতন করে দিলেন। আল্লাহর কসম, রৌদ্রের স্পর্শ ছাড়া অন্য কিছু আমাকে সজাগ করতে পারেনি। জাগ্রত হয়ে আমি সঙ্গীর কাছে ফিরে এলাম। সঙ্গীটি জিজ্ঞেস করলো, ‘কী করেছো?’ আমি বললাম, ‘কিছুই করিনি।’ তারপর তাকে ঘটনার ইতিবৃত্ত শোনালাম।

এরপর আরেক রাতে আমি সঙ্গীকে বললাম, ‘তুমি আমার ছাগলগুলো দেখ, আমি একটু গল্প করে আসি।’ সঙ্গী তাতে সম্মত হলে আমি মক্কা প্রবেশ করে আগের রাতের ন্যায় এ রাতেও অনুরূপ বাজনার আওয়াজ শুনতে পেলাম। জিজ্ঞেস করলে বলা হলো যে, অমুক অমুককে বিয়ে করেছে। আমি বসে দেখতে শুরু করলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন করে দিলেন। আল্লাহর কসম! রোদ্রের স্পর্শ ছাড়া অন্য কিছু আমাকে জাগ্রত করতে পারেনি। জাগ্রত হয়ে আমি সঙ্গীর নিকট ফিরে গেলাম। সঙ্গী বলল, ‘কী করেছো?’ আমি বললাম, ‘কিছুই নয়।’ তারপর আমি তাকে ঘটনার ইতিবৃত্ত শোনালাম। আল্লাহর কসম, এরপর আর কখনো আমি এ ধরনের কাজের ইচ্ছে করিনি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত করেন। হাদীসটি অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের।

হাফিজ বায়হাকী বর্ণনা করেন যে, হযরত যায়েদ ইবনে হারিছা (রা) বলেছেন, তামার তৈরি একটি দেব মূর্তি ছিল। নাম ছিল তার আসাফ ও নায়েলা। বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করার সময় মুশরিকরা তাকে স্পর্শ করত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করেন। আমিও তাঁর সঙ্গে তাওয়াফ করি। উক্ত দেব মূর্তিটি অতিক্রমকালে আমি তাকে স্পর্শ করি। দেখে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “ওটা স্পর্শ করো না।” যায়েদ ইবনে হারিছা বলেন, তাওয়াফের মধ্যেই আমি মনে মনে বলি, আবারও আমি মূর্তিটি স্পর্শ করব; দেখি কী হয়। আমি পুনরায় ওটা স্পর্শ করলে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “তোমাকে নিষেধ করা হয়েছিল না?” বায়হাকী বলেন, অপর এক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, যায়েদ বলেছেন, যে সত্তা তাকে সম্মানিত করেছেন এবং তার ওপর কিতাব অবতারণ করেছেন, আমি তার শপথ করে বলছি, তিনি কখনো কোন মূর্তি স্পর্শ করেননি। এ অবস্থায়ই মহান আল্লাহ্ তাকে তার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন এবং তাঁর ওপর কিতাব নাযিল করেন।

তা ছাড়া উপরে বর্ণিত হয়েছে যে, বাহীরা যখন রাসূলুল্লাহ (সা)-কে লাত ও উযযার নামে শপথ করে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “এদের দোহাই দিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আল্লাহর শপথ! আমার নিকট এদের চাইতে ঘৃণার পাত্র দ্বিতীয়টি আর নেই।”

হাফিজ আবু বকর বায়হাকী অপর এক সূত্রে বর্ণনা করেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) মুশরিকদের সঙ্গে তাদের আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। একদিন তিনি শুনতে পেলেন যে, তার পিছনে দুই ফেরেশতা। তাদের একজন অপরজনকে বলছেন, ‘চল, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পিছনে গিয়ে দাঁড়াই।’ সঙ্গীটি বললেন, ‘আমরা তাঁর পিছনে দাঁড়াই কী করে; তিনি যে মূর্তি চুম্বনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।’ রাবী জাবির বলেন, এরপর কখনো নবীজী (সা) মুশরিকদের সঙ্গে তাদের আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।

বলা বাহুল্য যে, আলোচ্য হাদীসটি বিতর্কিত। উক্ত হাদীসের একজন রাবী উসমান ইবনে আবু শায়বার ব্যাপারে একাধিক ইমাম আপত্তি উত্থাপন করেছেন। এমনকি ইমাম আহমদ বলেছেন, তাঁর ভাই এ হাদীসের একটি বর্ণও উচ্চারণ করতেন না।

ইমাম বায়হাকী কারো কারো থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এ হাদীসের মর্ম হলো যারা দেব মূর্তি চুম্বন করত, নবী করীম (সা) তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। আর এ ঘটনাটি নবী করীম (সা)-এর প্রতি ওহী অবতরণের পূর্বের। আল্লাহই ভালো জানেন। যায়েদ ইবনে হারিছার হাদীসে তো বলা হয়েছে যে, নবুওতের মর্যাদায় ভূষিত হওয়ার আগে কখনো নবীজী (সা) মুশরিকদের আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এক হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) আরাফার রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করতেন না। বরং লোকদের সঙ্গে আরাফাতেই অবস্থান করতেন। যেমন ইউনুস ইবনে বুকায়র বর্ণিত এক হাদীসে আছে, হযরত জুবায়র ইবনে মুতইম (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্য থেকে কেবল তাঁকেই আরাফাতে উটের ওপর অবস্থানরত দেখেছি। তিনি তখনো নিজ সম্প্রদায়ের দীনের অনুসারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে তাওফীক দিয়েছিলেন বলেই এমনটি হয়েছে।

বায়হাকী বলেন, নিজ সম্প্রদায়ের দীন কথাটার অর্থ হলো ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ)-এর দীনের অবশিষ্টাংশ। অন্যথায় নবী করীম (সা) জীবনে কখনো শিরক করেননি।

আমার মতে উপরের বর্ণনায় একথাও বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর প্রতি ওহী অবতারণের পূর্বেও আরাফায় অবস্থান করতেন। আল্লাহ্ তাওফীক দিয়েছিলেন বলেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। ইমাম আহমদ ও ইয়াকুব মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার ভাষা হয়েও আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে তাঁর প্রতি ওহী অবতারণের পূর্বে লোকদের সঙ্গে আরাফায় উটের পিঠে অবস্থানরত দেখেছি। শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের সাথেই ফিরতেন। আল্লাহ তাঁকে এর তওফীক দিয়েছিলেন।

হযরত জুবায়র ইবনে মুতইম সূত্রে ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, একদিন আরাফায় আমার উট হারিয়ে ফেলি। আমি তার খোঁজে বের হলাম। হঠাৎ দেখি, নবী করীম (সা) দাঁড়িয়ে আছেন। মনে মনে বললাম, ইনি তো হুমস [হুমস বলতে কুরায়শ গোত্র বোঝানো হতো। হুমস মানে দৃঢ়তা। তারা দীনের ব্যাপারে অনঢ়-অবিচল থাকতো বলে তাদেরকে হুমস বলা হতো] গোত্রের মানুষ। এখানে কেন ইনি?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন