মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“যারা নির্বুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞানতা বশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ গণ্য করে তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা অবশ্যই বিপথগামী হয়েছে এবং তারা সৎপথ প্রাপ্তও ছিল না। (৬ আনআমঃ ১৪০)
আমরা এ আয়াতের ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছি এবং তার যে অসত্য ও বাতিল দীন চালু করেছে তাও উল্লেখ করে এসেছি। তাদের গুরু আমর ইবন লুহাই অবশ্য এটিকে পশু প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শন ও কল্যাণ সাধন বলে ধারণা করত এটা নিছক তার মিথ্যাচার। তার এ মূর্খতা ও ভ্রান্তি সত্ত্বেও আরবের নির্বোধ লোকেরা তার অনুসরণ করে। (১) (সূরা আন’আম আয়াত - ১৪০) তাতে বরং তার চাইতেও জঘন্য কাজেও তারা তার অনুসরণ করেছে। আর তা হল আল্লাহর সাথে প্রতিমাদের পূজা করা। আল্লাহ তাআলা শিরক ও অংশীবাদ হারাম করে এককভাবে তাঁরই ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে যে সরল পথও সুদৃঢ় ধর্ম সহকারে হযরত ইবরাহীম (আ)-এ প্রেরণ করেছিলেন তারা তা পরিবর্তিত করে ফেলেছিল এবং সবল-দুর্বল তো দূরের কথা, এমনকি কোন দুর্বল দলীল প্রমাণ ব্যতীত দীনের বৈশিষ্ট্যসমূহ ও হজ্জের নিদর্শনমূলক বিধানসমূহ বিকৃত করে ফেলেছিল। তারা তাদের পূর্ববর্তী অংশীবাদী উম্মতসমূহের পথ অনুসরণ করেছিল এবং নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়ের মত হয়ে গিয়েছিল। বস্তুত নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়ই সর্বপ্রথম আল্লাহর সাথে শিরকের প্রথা চালু করেছিল এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়েছিল। এ জন্যে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি হযরত নূহ (আ)-কে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সর্বপ্রথম প্রেরিত রাসূল যিনি লোকদেরকে মূর্তিপূজা থেকে নিষেধ করতেন। হযরত নূহ (আ)-এর আলোচনায় তা বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।
—এবং তাঁরা বলেছিল, তোমরা কখনও পরিত্যাগ করো না তোমাদের দেব-দেবীকে, পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াউক ও নাসরকে। তারা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে। (৭১ নূহঃ ২৩) হযরত ইব্ন আব্বাস বলেন, ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াউক এঁরা ছিলেন নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়ের সৎকর্মশীল লোক। এদের মৃত্যুর পর লোকজন এঁদের কবরে অবস্থান করতো। এভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর লোকজন এদের পূজা শুরু করে দেয়। এদের এই উপাসনার রীতি-নীতি সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করে এসেছি। এখানে তা পুনরুল্লেখের প্রয়োজন নেই।
ইবন ইসহাক (র) ও অন্যরা বলেন, আরবের লোকেরা যখন হযরত ইসমাঈল (আ)-এর দীনকে পরিবর্তিত করে ফেলল তখন উপরোল্লেখিত মূর্তিগুলো আরবদের উপাস্যতে পরিণত হল। তখন ওয়াদ প্রতিমা থাকল বনী কালব (ইবন মুররাহ ইব্ন তাগলিব ইবন হালওয়ান ইবন ইমরান ইবন ইলহাফ ইব্ন কুযাআ) গোত্রের জন্যে। এটি স্থাপিত ছিল দুমাতুল জান্দাল নামক স্থানে। সুওয়া প্রতিমা ছিল বনী হুযায়ল (ইব্ন ইলিয়াস ইবন মুদরিকাহ্ ইব্ন মুগরি) গোত্রের জন্যে। এটি অবস্থিত ছিল রাহাত নামক স্থানে ইয়াগুছ ছিল এই বংশের বনী আনউম ও মিযহাজ বংশের জন্য এটি অবস্থিত জারশ এলাকায়। ইয়াউক প্রতিমা ছিল ইয়ামানের হামদান অঞ্চলে। এটি ছিল হামদানের একটি উপগোত্র বনী খায়ওয়ান-এর তত্ত্বাবধানে। নাসর প্রতিমা স্থাপিত ছিল হিমইয়ার অঞ্চলে। মূল কিলা গোত্র ছিল এর উপাসক।
ইবন ইসহাক (র) বলেন, নিজেদের এলাকায় খাওলান গোত্রের একটি মূর্তি ছিল। সেটির নাম ছিল “আস্মে আনাস” (আনাসের চাচা)। তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী চতুস্পদ জন্তুও ফল ফসল তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে বণ্টন করত। বণ্টন আল্লাহর জন্যে নির্ধারিত কোন অংশ যদি আম্মে আনাসের’ ভাগে পড়ত, তবে তা তারা সেখানে রেখে দিত। পক্ষান্তরে ‘আম্মে আনাসের জন্যে নির্ধারিত কোন অংশ যদি আল্লাহর ভাগে পড়ে যেত, তবে তা সেখান থেকে নিয়ে ঐ প্রতিমার ভাগে দিয়ে দিত। তাদের এ অপকর্মে সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেনঃ
“আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তারা আল্লাহর জন্যে এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণানুযায়ী বলে, এটি আল্লাহর জন্যে এবং এটি আমাদের দেবতাদের জনে। (আনআমঃ ১৩৬)
ইব্ন ইসহাক বলেন, বনী মলাকান ইব্ন কিনানা ইবন খুযায়মা ইবন মুদরিকা গোত্রের একটি প্রতিমা ছিল। তার নাম ‘সাদ সাখরাহ’। এক উন্মুক্ত ও বিস্তৃত প্রান্তরে ছিল এটির অবস্থান। এক ব্যক্তি তার উটের পাল নিয়ে এসেছিল এ উদ্দেশ্যে যে, উটগুলোকে ওখানে দাঁড় করিয়ে তার ধারণা অনুযায়ী ঐ প্রতিমার আর্শীবাদ নেবে। আরোহীবিহীন ঐ উটগুলো ঘাস খেতে-খেতে রক্তমাখা প্রতিমা দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যেটি যেদিক পেরেছে ছুটে পালায়। এতে উটের মালিক ক্ষেপে যায় এবং একটি পাথর নিয়ে প্রতিমার দিকে ছুঁড়ে মারে। সে বলে, ‘আল্লাহ্ তোমাতে যেন বরকত ও আশীর্বাদ না দেন। তুমি আমার উটগুলোকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছ।’ অতঃপর সে তার উট খুঁজতে বের হয়। উটগুলো একত্রিত করার পর সে বলেঃ
أتينا الى سعد ليجمع شملنا فشتتنا سعد فلا نحن من سعد
“আমরা এসেছিলাম সা’দ এর নিকট এ মকসুদ নিয়ে যে, সে আমাদের অবস্থা সংহত করে দিবে। কিন্তু সে আমাদেরকে আরও বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। ফলে আমরা কোন কল্যাণ লাভে সমর্থ হইনি। সুতরাং আমরা তার কেউ নই।
وهل سعد الأصخرة بتنونة من الأرض لا يدعو لغي ولا رشد
—সাদ তো ধূ ধূ মরু প্রান্তরে অবস্থিত একটি পাথর বৈ অন্য কিছু নয়। সে ভাল বা মন্দ কিছুর জন্যেই প্রার্থনা জানাতে পারে না।
ইবন ইসহাক বলেন, দাওস গোত্রের আমর ইবন হামামা দাওসীর একটি প্রতিমা ছিল। কুরায়শরা কা’বা শরীফের অভ্যন্তরে একটি কূপের মধ্যে একটি প্রতিমা রেখেছিল। সেটির নাম হুবল। ইতিপূর্বে ইবন হিশাম (র)-এর বর্ণনায় এসেছে যে, এটি প্রথম প্রতিমা আমর ইবন লুহাই স্থাপিত প্রথম প্রতিমা।
ইবন ইসহাক বলেন, তারা আসাফ ও নাইলা নামের দুটো প্রতিমা যমযমের স্থানে স্থাপন করেছিল। ওগুলোর সম্মুখে তারা পশু কুরবানী দিত। এ প্রসংগে পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে। কাবা শরীফের অভ্যন্তরে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ায় আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উভয়কে পাথরে রূপান্তরিত করে দিয়েছিলেন। ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর হযরত আয়েশা (রা) সূত্রে বলেন, আমরা বরাবরই শুনে এসেছি যে, আসাফ ও নাইলা ছিল একজন পুরুষ লোক ও একজন মহিলা। তারা জুরহুম গোত্রভুক্ত। দু’জনে অশ্লীল কাজ করেছিল কা’বা শরীফের অভ্যন্তরে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের দু’জনকে পাথরে পরিণত করে দেন।
কথিত আছে যে, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ঐ অপকর্ম করার অবকাশ দেননি বরং তার পূর্বেই পাথরে পরিণত করে দেন। এরপরে লোকজন এ দু’টোকে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে নিয়ে স্থাপন করে। এরপর আমর ইবন লুহাইর সময়ে সেগুলো কে সেখান থেকে তুলে এনে যমযম কূপের স্থানে স্থাপন করে এবং লোকজন এ দু’টোর তাওয়াফ করতে শুরু করে।
এ প্রসংগে আবু তালিব বলেনঃ
وحيث ينيخ الأشعرون ركابهم - بمفضي سيل من أساف ونائل
—যেখানে আশআরী গোত্রের লোকজন তাদের সওয়ারী থামায় সেই প্লাবনের প্রবাহ পথে আসাফ ও নাইলা রয়েছে।
ওয়াকিদী বলেন, মক্কা বিজয়ের দিবসে রাসুলুল্লাহ (সা) যখন নাইলা মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন, তখন দেখা যায় যে, সেটি থেকে জনৈকা সাদা কালো চুল বিশিষ্ট কুচকুচে কালো মহিলা হায়রে দুঃখ, হায়রে ধ্বংস বলে বলে বিলাপ করতে করতে মুখে খামচি মেরে মেরে বেরিয়ে আসল।
সুহায়লী উল্লেখ করেছেন যে, আজা ও সালমা হলো হেজাযের দুটো পাহাড়। আজা নামের একজন পুরুষ এবং সালমা নামের একজন মহিলার নামে এ দু’টো পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে। আজা ইব্ন আবদুল হাই নামের পুরুষ লোকটি সালমা বিনত হাম নামের মহিলাটির সাথে পাপচারে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের দু’জনকেই এ দু’টো পাহাড়ের শূলিবিদ্ধ করা হয়েছিল। অতঃপর তাদের নামানুসারে পাহাড় দুটো পরিচিত হয়। তিনি বলেন, আজা এবং সালমা এ দু’টোর মধ্যখানে তাই গোত্রের কুলস নামক একটি প্রতিমা ছিল।
ইবন ইসহাক বলেন, তখন প্রত্যেক গোত্রের পৃথক পৃথক প্রতিমা ছিল। গোত্র ভুক্ত সকল লোক সেটির পূজা-অর্চনা করত। তাদের কেউ সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করলে সওয়ারীতে আরোহণ করার সময় ঐ প্রতিমার গায়ে হাত বুলিয়ে যেত। যাত্রা প্রস্তুতির এটি ছিল শেষ ধাপ। মূর্তি প্রতিমা ছুঁয়েই সে যাত্রা শুরু করত। সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে সে পুনরায় সেটির গায়ে হাত বুলিয়ে দিত। সফর শেষে গৃহে প্রবেশের পূর্বে প্রতিমা স্পর্শ করা হতো তার প্রথম কাজ।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে যখন তাওহীদের বাণী সহকারে প্রেরণ করলেন তখন তারা বলে উঠেছিলঃ
اجعل الالهة الها واحدا - أن هذا لشئ عجاب
“সে কি বহু ইলাহের পরিবর্তে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছ? এটিতো এক অতাশ্চর্য ব্যাপার!”
ইবন ইসহাক বলেন, আরবরা কা’বা শরীফের সমান্তরালে আরও বহু পূজামণ্ডপ ও আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ পূজামণ্ডপ হল কতগুলো গৃহ, তারা সেগুলো কে কা’বা শরীফের ন্যায় সম্মান করত। ঐ গৃহগুলোর জন্যে নির্দিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক এবং খাদিম ছিল। কা’বা শরীফের উদ্দেশ্যে যেমন কুরবানীর পশু প্রেরণ করা হত, ঐ পূজামণ্ডপগুলোর উদ্দেশ্যেও সেরূপ পশু প্রেরণ করা হত এবং কাবা শরীফের তাওয়াফের ন্যায় ঐ গুলোর চারিদিকেও তাওয়াফ করা হত এবং সেগুলোর সম্মুখে পশু যবাই করা হত। তা সত্ত্বেও ঐ গৃহগুলোর উপর কাবা শরীফের অধিকতর সম্মান ও মর্যাদা ছিল সর্বজনস্বীকৃত। কারণ সেটি ছিল হযরত ইবরাহীম (আ)-এর তৈরী এবং তাঁর মসজিদ।
কুরায়শ ও বনী কিনানা এর নির্ধারিত প্রতিমা ছিল নাখলা’তে অবস্থিত উযযা প্রতিমা। সেটির তত্ত্বাবধায়ক ও খাদিম ছিল বনী হাশিম গোত্রের মিত্র সুলায়ম গোত্রের উপগোত্র বানু শায়বান। মক্কা বিজয়ের সময় হযরত খালিদ ইবন ওলীদ (রা) ঐ প্রতিমাটি ভেঙ্গে দিলে যেমন রূপে আসছে বনূ ছাফীক গোত্রের নির্ধারিত প্রতিমা ছিল লাত। এটির অবস্থান ছিল তায়েফে। ছাকীফ গোত্রের বানূ মুতার উপগোত্র ছিল ঐ পূজামণ্ডপের তত্ত্বাবধায়ক ও খাদিম। তায়েফবাসীদের নিকট আগমনের পর আবু সুফিয়ান ও মুগীরা ইব্ন শুবা (রা) ঐ প্রতিমাটি ভেঙ্গে দিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ পরবর্তীতে আসবে।
তিনি বলেন, আওস ও খাযরাজ গোত্র এবং তাদের সাথে মতাদর্শের অনুসারী মদীনাবাসী যারা ছিল, তাদের জন্যে নির্ধারিত প্রতিমা ছিল মানাত’। কাদীদ অঞ্চলের মুশাল্লিল নামক স্থানের পাশে সমুদ্র তীরে এটি অবস্থিত। এটিও ধ্বংস করে ছিলেন হযরত আবু সুফিয়ান (রা)। মতান্তরে আলী ইবন আবী তালিব (রা)। দাওস খাছআম বুজায়লা এবং এতদঞ্চলের আরবদের মূর্তি ছিল যুলখুলাসাহ্। এটি ছিল তাবালা নামক স্থানে। এটাকে কাবা-ই-ইয়ামানিয়া বা ইয়ামানের কাবা বলা হতো আর মক্কা শরীফের কা’বাকে বলা হতো কা’বায়ে শামীয়া বা শামী কাবা। জারীর ইবন আবদুল্লাহ বাজালী (রা) কর্তৃক যুলখুলাসার উপরোক্ত মূর্তিটি ধ্বংস করেন। তাঈ গোত্র এবং তাঈ অঞ্চলের আজা ও সালমা পাহাড়ের আশে-পাশে যারা ছিল তাদের প্রতিমা ছিল কুলস্। এটির অবস্থান ছিল আজা ও সালমা পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে। এ দু’টো মশহুর পাহাড়ের কথা ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাআম ছিল হিমইয়ার গোত্র ও ইয়ামান বাসীদের উপাসনালয়। হিমইয়ারী রাজা তুব্বার আলোচনা প্রসংগে এর উল্লেখ করা হয়েছে। এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, দু’জন ইয়াহুদী ধর্মযাজক ঐ গৃহ ধ্বংস করেছে এবং সেটি থেকে বেরিয়ে আসা একটি কালো কুকুর হত্যা করেছে ‘রিয়া’ নামের উপাসনালয়টি ছিল বনী রবী’আ ইবন কাব ইবন সাদ ইবন যায়দ মানাত ইবন তামীম গোত্রের। ঐ উপাসনালয় সম্পর্কে কা’ব ইবন রাবীআ ইবন কা’ব ওরফে মুসতাওগির বলেনঃ
ولقد شددت على رضاء شدة- فتركتها قفرا بقاع أسحما
—আমি প্রচণ্ড আক্রমণ করেছি ‘রিযা’ পূজা মণ্ডপে, অতঃপর সেটিকে আমি সমতল ভূমিতে কালো ও শূন্য ভিটেরূপে রেখে এসেছি।
وأعان عبد الله في مكروهها - وبمثل عبد الله آغشى المحرما
—এটি ঘৃণিত করতে আবদুল্লাহ সাহায্য করেছেন। আবদুল্লাহর মতই আমি ঐ নিষিদ্ধ বস্তুকে আচ্ছাদিত করে দিয়েছি।
কথিত আছে যে, উপরোল্লেখিত পংক্তির রচয়িতা মুসতাওগির ৩৩০ বছর কাল জীবিত ছিলেন। তিনি মুযার গোত্রের সবচাইতে দীর্ঘজীবি লোক ছিলেন। তিনি আরও বলেছেনঃ
ولقد سئمت من الحياة وطولها - وعمرت من عدد السنين كئينا .
—আমি সুদীর্ঘ জীবন কালের কষ্ট ভোগ করেছি এবং কয়েক শতাব্দীর আয়ু পেয়েছি।
مائة حدتها مائتان لي - وازددت من عدد الشهور
—একশত বছরের পর দু’শো বছর এবং অতিরিক্ত আরো কয়েক বছর।
هل مابقى الأ كما قد فاتنا- يوم يمر وليلة تحدونا
—আমরা যে যুগ অতিক্রম করে এসেছি, যে রাত দিনের পৌণ-পৌণিক আগমন, পরবর্তী যুগ কি তদপেক্ষা ব্যতিক্রম অন্য কিছু?
ইবন হিশাম বলেন, এ পংক্তিগুলো যুহায়র ইবন জানাব ইবন হুবল-এর রচিত বলেও কেউ কেউ বলেছেন।
সুহায়লী বলেন, দুশ তিন বছরের অধিক আয়ু যারা পেয়েছিলেন, আলোচ্য যুহায়র ছিলেন তাদের অন্যতম। উবায়দ ইবন শিরবাহ, বংশ তালিকা বিশারদ দাগফাল ইবন হানযালা, রাবী ইবন দাবা কোযারী, যুল ইসবা উদওয়ানী নাসর, ইবন দাহমান ইবন আশাজা ইবন রাবাছ ইবন গাতফান প্রমুখ ব্যক্তিও এরূপ দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত লোক ছিলেন। নাসর ইবন দাহ দাহমানের এবং তার পিঠ কুঁজো হওয়ার পর পুনরায় সোজা হয়েছিল।
‘যুল কা’বাত’ ছিল বকর, তাগলিব ইবন ওয়াইল ও আইয়াদ গোত্রের উপাসনালয়। এটি ছিল সিনদান অঞ্চলে। এ সম্পর্কে কবি আশা ইবন কায়স ইবন ছালাবা বলেনঃ
بين الخورنق والسرير وبارق - والبيت ذي الشرفات من سنداد
—খাওরানাক, সাদীর, বারিক ও সিনদাদে অবস্থিত সম্মানিত গৃহের মধ্যবর্তী স্থানে। এ পংক্তিমালার আগে আরো কত পংক্তি রয়েছে।
সুহায়লী বলেন, খাওরানাক হল একটি নয়নাভিরাম প্রাসাদ। নুমান-ই- আকবর এটি সম্রাট সাবুরের জন্যে তৈরী করেছিলেন। সিন্নেমার নামক একজন প্রকৌশলী দীর্ঘ ২০ বছর পরিশ্রম করে এটি নির্মাণ করেন। এর চাইতে সুন্দর কোন প্রাসাদ তখনকার দিনে দেখা যেত না। সিন্নেমার অন্য কোন ব্যক্তির জন্যে এরূপ প্রাসাদ যেন নির্মাণ করতে না পারেন, সে জন্যে নুমান তাকে ঐ প্রাসাদের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। এ উদাহরণ উল্লেখ করে কবি বলেনঃ
جزاني جزاه الله شر جزاءه - جزاء السنمار وما كان ذا ذنب
—আল্লাহ্ তাকে নিকৃষ্টতম শাস্তি দান করুন, সে আমাকে প্রতিদান দিয়েছে সিন্নেমারের প্রতিদানের ন্যায়। মূলত সিন্নেমারের কোন দোষ ছিল না।
سوی رضفه البنيان عشرين حجة - يعد عليه بالقرامد والسكب .
—তার একটি মাত্র অপরাধ ছিল বিশ বছর ধরে সে ঐ প্রাসাদ নির্মাণ করেছে। পাথর কুচি মোজাইক ও পানি ঢেলে ঢেলে অত্যন্ত যত্ন সহকারে সে এটি তৈরী কবেছিল।
فلما انتهى البنيان يوما تمامة - واحى كمثل الطود والباذخ الصعب
—অবশেষে একদিন যখন সেটির নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছল এবং সুউচ্চ ও সুবিশাল টিলার ন্যায় সেটি সুদৃঢ় ও মজবুত হল।
رمی بسنمار على حق راسه - وذلك لعمر الله من أقبح الخطب
—তখন সে ফেলে দিল সিনেমারকে ঐ প্রাসাদের চূড়া থেকে। আল্লাহর কসম এটি জঘন্যতম কাজ।
সুহায়লী বলেন, প্রখ্যাত ভাষাবিদ জাহিয এই কবিতাটি ‘আল মাইওয়ান ওয়াস সিমার মিন আসমাইল কামার’ নামক গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন।
মূল কথা হল পূর্বোক্ত সকল প্রতিমা পূজার কেন্দ্রগুলো ধ্বংস ও বিনষ্ট করে দেয়া হয়। ইসলামের আবির্ভাবের পর রাসূলুল্লাহ (সা) উপরোল্লেখিত প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা ধ্বংস করার জন্যে লোক প্রেরণ করেন। তারা ঐ সবগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দেন। শেষ পর্যন্ত কাবা শরীফের প্রতিদ্বন্দী কোন গৃহই অবশিষ্ট থাকল না। আর তখন ইবাদত নিবেদিত হতে থাকল একক লা-শরীক আল্লাহর উদ্দেশ্যে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/71
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।