hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৬৭
হাযর অধিপতি সাতিরূন-এর বিবরণ
আব্দুল মালিক ইবন হিশাম এ পর্যায়ে সাতিরুন-এর আলোচনার অবতারণা করেছেন। কারণ ইয়ামান রাজ্য পুনরুদ্ধারে সায়ক ইবন যী ইয়াযানের নুমান ইব্‌ন মুনযিরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা প্রসংগে যে নু’মানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে কোন কোন কুলজী বিশারদ বলেছেন যে, সেই নু’মান হাযর অধিপতি ‘সাতিরুন’- এর অধঃস্তন বংশধর। ইতিপূর্বে ইবন ইসহাক সূত্রে আমরা উল্লেখ করেছি যে, নুমান ইবন মুনযির হচ্ছেন রাবীআ ইবন নাসর এর বংশধর। উপরন্ত জুবায়র ইবন মুতইম সূত্রে ইবন ইসহাক উল্লেখ করেছেন যে, নু’মান হল কায়সার ইবন মদি ইবন আদনানের বংশধর। বস্তুত নুমান ইবন মুনযিরের বংশ তালিকা সম্পর্কে এ তিন প্রকারের বক্তব্য এসেছে। এই সূত্রে ইবন হিশাম (র) হাযর অধিপতি ‘সাতিরুন’- এর আলোচনার অবতারণা করেছেন। হাযর হল একটি বিশাল দূর্গ। বাদশা সাতিরুন ফোরাত নদীর তীরে এটি নির্মাণ করেন। প্রাসাদটি গগনচুম্বী, সুউচ্চ, সুপ্রশস্ত ও বিশালায়তন। এটির চৌহদ্দী একটি বিরাট শহরের সমান। দৃঢ়তা, সৌন্দর্য ও চমৎকারিত্বে এটি তুলনাহীন। চতুর্দিক থেকে সড়ক ও জনপথ সমূহ এখানে এসে থেমেছে। সাতিরুনের নাম দীবান ইবন মু’আবিয়া ইবন উবায়দ ইবন আজরম। আজরম হল সাতিহ ইবন হুলওয়ান ইবন ইলহাফ ইবন কুযা’আ-এর বংশধর। ইবন কুযাআ তার এ বংশ তালিকা উল্লেখ করেছেন।

অন্যান্য কুলজী বিশারদগণ বলেন, সে ছিল জারমুক বংশের অন্তর্ভুক্ত এবং একজন আঞ্চলিক রাজা। তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হলে সাতিরুনকে সকলের সম্মুখে এগিয়ে দেয়া হতো। তার দূর্গ ছিল দিজলা ও ফোরাত নদীর মধ্যবর্তী স্থানে।

ইবন হিশাম বলেন, পারস্য সম্রাট সাপুর যুল আকতাফ আলোচ্য হাযর অধিপতি সাতিরুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ইবন হিশাম ব্যতীত অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেন, হাযর অধিপতি সাতিরুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল সাপুর ইবন আবদশীর ইবন বাবক, সে সাসান গোত্রের প্রথম রাজা। সে আঞ্চলিক রাজাদেরকে পদানত করে পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনে ফিরিয়ে এনেছিল। পক্ষান্তরে সাপুর যুল আকতাফ ইবন হরমুয সে পূর্বোক্ত সাপুর ইবন আরদশীরের বহুকাল পরের লোক। আল্লাহই ভাল জানেন। এটি সুহায়লীর বর্ণনা। ইবন হিশাম বলেন, পারস্য সম্রাট সাপুর সাতিরুনকে দীর্ঘ দুই বছর পর্যন্ত দুর্গের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে। অন্যরা বলেন, এই অবরোধের মেয়াদ ছিল চার বছর, আক্রমণের কারণ এই ছিল যে, সম্রাট সাপুর ইরাক সফরে থাকার কারণে অনুপস্থিতির প্রাক্কালে সাতিরুন গিয়ে সাপুরে রাজ্য আক্রমণ করে এবং সেখানে লুটপাট চালায়। প্রতিশোধ স্বরূপ সাপুর তার উপর আক্রমণ করে এবং অবরোধ সৃষ্টি করে। অবরোধকালীন সময়ে একদিন সাতিরুনের কন্যা দুর্গের ছাদে আরোহণ করে। তার নাম নাযীরা। সম্রাট সাপুরকে দেখে মেয়েটি আসক্ত হয়। সাপুরের পরনে ছিল রেশমী কাপড় আর মাথায় ছিল মনি মুক্তা ও ইয়াকুত পাথর খচিত স্বর্ণ মুকুট। সে ছিল সুদর্শন ও রূপবান যুবক। নাযীরা গোপনে সাপুরের নিকট বার্তা পাঠায় যে, পিতার দুর্গের ফটক খুলে দিলে তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? সাপুর ইতিবাচক উত্তর দেয়।

সন্ধ্যা বেলা সাতিরুন প্রচুর মদপান করে সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নেশাগ্রস্ত না হয়ে সে ঘুমাতো না ইত্যবসরে নাযীরা সাতিরুনের মাথার নীচ থেকে দুর্গের চাবি নিয়ে আসে এবং তার এক ক্রীতদাসের মাধ্যমে তা সাপুরের নিকট পাঠিয়ে দেয়। সাপুর প্রাসাদের ফটক খুলে ফেলে। কেউ কেউ বলেন, নাযীরা ওদেরকে একটি প্রশস্ত ঝর্নার কথা জানিয়ে দেয়। সেটির মধ্য দিয়ে প্রাসাদের ভেতরে পানি প্রবেশ করত। অতঃপর ঐ ঝর্নার ভেতর দিয়ে তারা “হাযর” দুর্গে প্রবেশ করে। আবার কেউ কেউ বলেন, “হাযর” প্রাসাদে অবস্থানরত একটি গুপ্তরহস্য সে তাদেরকে জানিয়ে দেয়। তাদের জানা ছিল যে, একটি নীল কবুতর ধরে তার পা দু’টি যতক্ষণ না কুমারী বালিকার রজঃস্রাবের রক্তে রঞ্জিত না করা হবে এবং সেটিকে ছেড়ে না দেয়া হবে ততক্ষণ ঐ ফটক খুলবে না। ঐ কবুতর গিয়ে দুর্গের প্রাচীরে পতিত হলে ঐ যাদুকরী প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং ফটক খুলে যাবে। সাপুর তাই করল এবং দরজা খুলে গেল। সে তখন ভিতরে ঢুকে সাতিরুনকে হত্যা করে হাযর প্রাসাদকে লুটতরাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় এবং ধ্বংস করে ফেলে। তারপর নাযীরাকে নিয়ে বিয়ে করে। একরাতে নাযীরা বিছানায় ঘুমুতে গিয়ে অনিদ্রায় ছটফট করতে থাকে। সাপুর একটি প্রদীপ আনিয়ে তার বিছানা পরীক্ষা করে বিছানায় একটি ফুলের পাতা খুঁজে পায়। সে নাযীরাকে বলে, ‘এটাই কি তোমার অদ্রিার কারণ?’ উত্তরে সে বলে, ‘হ্যাঁ, সাপুর বলে তোমার পিতা তোমাকে নিয়ে কি করত?’ সে বলল, ‘তিনি আমার জন্যে মখমলের বিছানা বিছাতেন। আমাকে রেশমী কাপড় পড়াতেন। হাড়ের মগজ খাওয়াতেন। এবং মদ পান করাতেন।’ সাপুর বলে, ‘তুমি তোমার পিতার সাথে যে আচরণ করেছ এটি কি তার উচিত প্রতিদান? আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসঘাতকতা তা হলে আরো দ্রুততর হবে।’ অতঃপর তার চুলের বেনীকে ঘোড়ার লেজের সাথে বেঁধে ঘোড়াটিকে ছুটিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে তার মৃত্যু হয়। এ প্রসঙ্গে কবি আশা ইব্‌ন কায়েছ ইবন ছালাবা বলেনঃ

الم تر للحضر اذا اهله بنعمي وهل خالد من نعم

—তুমি কি দেখনি হাযর দুর্গের অধিবাসীদেরকে যখন তারা ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল? কোন নিয়ামত ও শান্তি কি চিরস্থায়ী?

اقام به شاهبرو لجنود حولين تضرب فيه القدم

—বাদশাহ সাপুর দু’বছর দুর্গের চারিদিকে তার সৈনিক দ্বারা অবরোধ করে রেখেছিল। তাতে তারা কুঠারাঘাত করত।

فلما دعا ربه دعوة - أناب اليه فلم ينتقم

—যখন তার প্রতিপালক ডাক দিল। তখন সে তার দিকে ফিরে গেল। প্রতিশোধ গ্রহণ করল।

فهل زاده ربه قوة - ومبثل مجاوره لم يقم

—তার প্রতিপালক কি তার কোন শক্তি বৃদ্ধি করেছে? ঐরূপ আশ্রয়দাতা কোন সাহায্য করতে পারে না।

وكان دعا قومه دعوه -هلموا الى أمركم قد صرم

—সে তার সম্প্রদায়কে ডাক দিয়েছিল। এই বলে যে, তোমরা এগিয়ে আস এমন এক কর্মের প্রতি যা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।

فموتوا كراما بأسيافكم - ارى الموت بجشمه من جشم

—তোমরা তরবারী ধারণ করে মর্যাদার সাথে মৃত্যুবরণ কর। আমি মনি করি, যে ব্যক্তি কষ্ট সহিষ্ণু মৃত্যু সহজে তার নিকট আসে না।

এ প্রসঙ্গে আদী ইবন যায়দেরও দীর্ঘ কবিতা রয়েছে যার শেষ কয়টি পংক্তি এরূপঃ

وتذكر رب الخورنق اذ- اشرف يوما وللهدى تفكير

—তুমি স্মরণ কর খাওরানাক প্রাসাদের [প্রথম নুমান কর্তৃক নির্মিত রাজপ্রাসাদ] মালিকের কথা। একদিন সে প্রাসাদের ছাদে উঠেছিল। তার জীবনে হেদায়াত প্রার্থীদের জন্যে চিন্তার খোরাক রয়েছে।

سره ماله وكثرة ما يملك والبحر معرضا والسكير

—তার ধন-সম্পদ ও মালিকানাধীন বস্তুসমূহ, তাকে আনন্দ দান করেছিল।

فارعوى قلبه وقال وما غبتطة حي الى الممات يصير

—অবশেষে তার অন্তর সুপথ প্রাপ্ত হল এবং সে বলল, কোন জীবিত ব্যক্তির ঈর্ষণীয় কীই বা আছে? সে তো মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

ثم أفحوا كانهم ورقجف فالوت به الصبا والدبور

—অবশেষে তারা হয়ে গেল শুকনো পাতার ন্যায়। পূবাল ও পশ্চিমী বায়ু সেটিকে ওলট-পালট করে দেয়।

আমি বলি কবিতায় উল্লেখিত খাওরানাক প্রসাদের মালিক হলো প্রাচীন যুগের অন্যতম খ্যাতিমান রাজা। তার অপচয়, সত্যদ্রোহিতা সীমালংঘন, গোঁড়ামী, কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং আপন প্রতিপালকের অবাধ্যতার জন্যে সে যুগের জনৈক আলেম তাকে উপদেশ দেন। তার পূর্ববর্তী রাজা বাদশাহ ও রাজ্য রাজত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি তাকে উপদেশ দেন যে, কেমন করে ওরা সবাই ধ্বংস হয়ে গেল এবং তাদের কেউই অবশিষ্ট থাকল না। তিনি আরো বললেন, অন্যের নিকট থেকে যে রাজত্ব হস্তান্তরিত হয়ে আপনার নিকট এল আপনার মৃত্যুর পর সেটি হস্তান্তরিত হয়ে অন্যের নিকট চলে যাবে। উক্ত আলেমের উপদেশ তার মনে গভীর রেখাপাত করে এবং চূড়ান্ত ভাবাবেগের জন্ম দেয়। ফলে তার অন্তর হিদায়াতের দিকে ফিরে আসে। সে একদিন একরাত চিন্তা করে। সংকীর্ণ কবরের ভয় তার অন্তরে জাগে। অতঃপর সে তাওবা করে এবং ইতিপূর্বেকার সকল অপকর্ম থেকে নিবৃত হয়। সে রাজত্ব ত্যাগ করে। ফকীর বেশে মাঠে প্রান্তরে ঘোরা ফেরা করে এবং নির্জনতাপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রবৃত্তির অনুসরণ ও বিশ্ব প্রতিপালকের অবাধ্যতা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখে।

শায়খ ইমাম মুওয়াফিক ইবন কুদাসা মুকাদ্দিসী (র) তাঁর ‘আত তাউয়াবীন’ কিতাবে এই ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। মজবুত সনদে সুহাইলী তাঁর সুবিন্যস্ত কিতাব ‘আররাওযুল উনুফ’ কিতাবে এটি উল্লেখ করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন