hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৫৫
অন্য একটি হাদীস
আব্দুল্লাহ্ ইবন আহমদ..... আবুল ওয়াদ্দাক সূত্রে বলেন, আবু সাঈদ বলেছিলেন, ‘আপনি কি খারিজীদেরকে দাজ্জাল বলে স্বীকার করেন?’ তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘না।’ আবু সাঈদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি এক হাজার কিংবা ততোধিক নবীর শেষ নবী। আল্লাহ্ তা’আলা অনুসরণযোগ্য যত নবী প্রেরণ করেছেন, সকলেই নিজ নিজ উম্মতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। দাজ্জালের পরিচিতি ও চিহ্ন সম্পর্কে আমাকে যত বেশী স্পষ্ট জানানো হয়েছে অন্য কাউকে ততটুকু জানানো হয়নি। দাজ্জাল হবে এক চোখ বিশিষ্ট। তোমাদের প্রতিপালক একচোখ বিশিষ্ট নয়। তার ডান চোখ কানা এবং কোটর থেকে বের হয়ে থাকবে। এটি গোপন রাখা যায় না। এ যেন আস্তর করা প্রাচীরের উঁচিয়ে থাকা অংশ। তার বাম চোখ যেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার নিকট থাকবে সকল ভাষার জ্ঞান সম্ভার। আরও থাকবে সবুজ রং এর কৃত্রিম বেহেশত। তাতে পানি প্রবহমান থাকবে। আরও থাকবে ধুমায়িত কালো কৃত্রিম দোযখ।’ এটি গরীব পর্যায়ের বর্ণনা। হাকিম আবু বকর রাজ্জাক...... জাবির (রা) সূত্রে অনূরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তবে তাঁর বর্ণিত হাদীসের সনদ হাসান পর্যায়ের। উক্ত হাদীসটিতে দাজ্জাল সম্পর্কে সর্তককারী নবীগণের সংখ্যাই কেবল উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য রিওয়াতে প্রত্যেক নবীই এ ব্যাপারে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন বলে উল্লেখিত হয়েছে।

ইমাম বুখারী (র)..... হযরত আবু হুরায়রা (রা) সূত্র বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা)। বলেছেন, ‘নবীগণই বনী ইসরাঈলীদের শাসন পরিচালনা করতেন। এক নবীর ইনতিকালের পর অপর নবী তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। তবে আমার পরে কোন নবী আসবে না। অবশ্য আমার খলীফাগণ আসবেন। খলীফা হবেন বহু সংখ্যক।’ সাহাবা-ই কিরাম বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! সে পরিস্থিতিতে আপনি আমাদেরকে কী করার নির্দেশ দেন?’ রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘তখন তোমরা প্রথমে প্রথম খলীফার বায়আতে অটল থাকবে। তারপর পর্যায়ক্রমে যারা খলীফা হবেন তাদেরকে তাদের হক (আনুগত্য) আদায় করবে। কারণ, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।’

ইমাম বুখারী (র) ....... হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) সূত্রে বলেন, ‘আমি যেন এখনও দেখছি, রাসূলুল্লাহ (সা) একজন নবীর ঘটনা বর্ণনা করছেন। নিজের সম্প্রদায়ের লোকেরা ঐ নবীকে প্রহারে প্রহারে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল। নবী তার মুখমণ্ডল থেকে রক্ত মুছে ফেলছিলেন। তখনও নবী বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ্! আমার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ক্ষমা করে দিন, কারণ তারা সত্য উপলব্ধি করতে পারছে না।’ ইমাম মুসলিমও আনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ..... আবু সাঈদ খুদরী (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একজন ব্যক্তি তার ডান হাত রেখেছিল রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উপর। সে বলল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার দেহ মুবারকের যে প্রচণ্ড উত্তাপ, তাতে আমি আমার হাত আপনার দেহে রাখতে পারছি না।’ নবী করীম (সা) বললেন, ‘আমরা নবীগণ, আমাদেরকে বহুগুণ বেশী বিপদ-আপদ দ্বারা পরীক্ষা করা হয়, যেমন আমাদের ছওয়াবও বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়।’ একজন নবীকে উকুনের যন্ত্রণা দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে তাঁর মৃত্যু ঘটে। একজন নবীকে দারিদ্র্যের কষ্ট দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি জামা সেলাইয়ের পেশা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা অবশ্য স্বচ্ছলতা ও নিরাপত্তার সময় যেমন খুশী থাকতেন, বালা মুসিবতের সময়ও তেমনি খুশী থাকতেন। ইবন মাজাহ (র) ..... আবু সাঈদ (রা) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

ইমাম আহমদ ...... সা’দ (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! কোন প্রকারের মানুষ কঠোরতম বিপদে পতিত হয়?’ রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেনঃ

الانبياء ثم الصالحون ثم الأمثل من الناس يبتلى الرجل على حسب دينه فان كان في دينه صلابة زيد في بلاءه وان كان في دينه رقة خقف عليه ولا يزال البلاء بالعبد حتى يمشي على الأرض وما عليه خطيئة

“সর্বাধিক কঠোর বিপদে পতিত হন নবীগণ (আ)! তারপর নেককারগণ। এরপর পর্যায়ক্রমে অপেক্ষাকৃত উত্তম লোকগণ। মানুষকে বিপদাপদ দ্বারা পরীক্ষা করা হয় তার দীন বা ধর্মের প্রতি দৃঢ়তা ও নিষ্ঠা অনুপাতে। যদি ধর্মের প্রতি তার দৃঢ়তা ও অবিচলতা থাকে, তাহলে তার বিপদ আরো কঠিন করা হয়। আর যদি ধর্মের প্রতি তার শৈথিল্য থাকে, তবে তার বিপদ হালকা করে দেয়া হয়। কোন কোন ব্যক্তির উপর বিপদ আসতে থাকে অনবরত। অবশেষে সে পৃথিবীতে বিচরণ করে এমনভাবে যে, তার কোন পাপ থাকে না।

ইমাম তিরমিযী (র) নাসাঈ ও ইবন মাজাহ্ (র) উক্ত হাদীসটি ভিন্ন সনদে উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী (র) বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং হাসান। ইতিপূর্বে একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন,

نحن معاشر الانبياء اولاد علات ديننا وامهاتنا شئى

আমরা নবীগণ বৈমাত্রেয় ভাইদের মত। আমাদের দ্বীন ধর্ম এক। আমাদের মায়েরা হচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন। অর্থাৎ নবীগণের শরীয়ত সমূহে শাখাগত মাসআলায় যদিও বা ভিন্নতা ও পার্থক্য রয়েছে এবং এদের একটি অপরটিকে মানসূখ বা রহিত করতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে সবগুলো শরীয়ত হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর শরীয়তে এসে মিলে গিয়েছে; তবু এটা ধ্রুব সত্য যে, যত নবীকেই আল্লাহ্ তা’আলা প্রেরণ করেছেন, তাদের সকলের দ্বীন ছিল ইসলাম ধর্ম। ইসলাম ধর্মের মূল কথা তাওহীদ তথা একক লা শরীক আল্লহর ইবাদত করা। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ-

( وَمَاۤ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِیۤ إِلَیۡهِ أَنَّهُۥ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّاۤ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ )

[Surah Al-Anbiya' 25]

আমি আপনার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত কর। (২১ আম্বিয়াঃ ২৫)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-

( وَسۡـَٔلۡ مَنۡ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رُّسُلِنَاۤ أَجَعَلۡنَا مِن دُونِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ءَالِهَة یُعۡبَدُونَ )

[Surah Az-Zukhruf 45]

তোমার পূর্বে আমি যে সব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস কর, আমি কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোন দেবতা স্থির করেছিলাম যার ইবাদত করা যায়? (৪৩ যুখরুফঃ ৪৫)

আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ

( وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِی كُلِّ أُمَّة رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُوا۟ ٱلطَّـٰغُوتَۖ فَمِنۡهُم مَّنۡ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنۡهُم مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَیۡهِ ٱلضَّلَـٰلَةُۚ )

[Surah An-Nahl 36]

“আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্যে আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। অতঃপর তাদের কতককে আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তাদের কতকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল।” (১৬ নাহলঃ ৩৬)।

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা যায় যে, বৈমাত্রের ভাই বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদের পিতা একজন আর মা ভিন্ন ভিন্ন। নবী (আ)-দেরকে পরস্পর বৈমাত্রের ভাই বলার তাৎপর্য এই যে, তাদের সকলের দ্বীন একটি। এটি হল তাওহীদ ও একত্ববাদ। এটিকে পিতারূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তাঁদের প্রত্যেকের শরীয়তগুলো বিধি বিধান ও রীতি নীতির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। এগুলোকে মা-রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( لِكُلّ جَعَلۡنَا مِنكُمۡ شِرۡعَة وَمِنۡهَاج ࣰا)

[Surah Al-Ma'idah 48]

“তোমাদের প্রত্যেকের জন্যে আইন ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি। (৫ মায়িদাঃ ৪৮)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ

( لِّكُلِّ أُمَّة جَعَلۡنَا مَنسَكًا هُمۡ نَاسِكُوهُ )

[Surah Al-Hajj 67]

-আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছি, ইবাদত পদ্ধতি, যা তারা অনুসরণ করে। (২২ হজ্জঃ ৪৮)

আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র বলেনঃ

( وَلِكُلّ وِجۡهَةٌ هُوَ مُوَلِّیهَا )

[Surah Al-Baqarah 148]

প্রত্যেকের একটি দিক রয়েছে, যে দিকে সে মুখ করে। উক্ত আয়াতের একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী এ আয়াত আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

মোদ্দাকথা, শরীয়ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার হয়েছে বটে কিন্তু; এর সবগুলোই একক লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশক। আর তা হলো ইসলাম। সকল নবীর জন্যে আল্লাহ তা’আলা-এর বিধান দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন এ দীন ব্যতীত অন্য কিছু আল্লাহ্ গ্রহণ করবেন না। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( وَمَن یَبۡتَغِ غَیۡرَ ٱلۡإِسۡلَـٰمِ دِین ا فَلَن یُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِی ٱلۡـَٔاخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَـٰسِرِینَ )

[Surah Aal-E-Imran 85]

—কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না এবং সে হবে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (৩ আলে ইমরানঃ ৮৫)

আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ

( وَمَن یَرۡغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبۡرَ  ٰ⁠ هِـۧمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفۡسَهُۥۚ وَلَقَدِ ٱصۡطَفَیۡنَـٰهُ فِی ٱلدُّنۡیَاۖ وَإِنَّهُۥ فِی ٱلۡـَٔاخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّـٰلِحِینَ ۝ إِذۡ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥۤ أَسۡلِمۡۖ قَالَ أَسۡلَمۡتُ لِرَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ۝ وَوَصَّىٰ بِهَاۤ إِبۡرَ  ٰ⁠ هِـۧمُ بَنِیهِ وَیَعۡقُوبُ یَـٰبَنِیَّ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰ لَكُمُ ٱلدِّینَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ )

[Surah Al-Baqarah 130 - 132]

“যে নিজেকে নির্বোধ করেছে, সে ব্যতীত ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ হতে আর কে বিমুখ হবে? পৃথিবীতে তাকে আমি মনোনীত করেছি, পরকালেও সে সৎকর্ম পরায়ণদের অন্যতম। তার প্রতিপালক যখন তাকে বলেছিলেন, আত্মসমর্পণ কর। সে বলেছিল, জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। এবং ইবরাহীম ও ইয়াকূব এ সম্বন্ধে তাদের পুত্রগণকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিল- হে পুত্রগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্যে এই দীনকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা কখনো মৃত্যু বরণ করো না। (২ বাকারাঃ ১৩০-১৩২)

আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

( إِنَّاۤ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِیهَا هُد ى وَنُور ۚ یَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِیُّونَ ٱلَّذِینَ أَسۡلَمُوا۟ لِلَّذِینَ هَادُوا۟ )

[Surah Al-Ma'idah 44]

“আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম, তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো, নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইহুদীদেরকে সে অনুযায়ী বিধান দিত। (৫ মায়িদাঃ ৪৪)।

সুতরাং দ্বীন ইসলাম হল একক লা-শরীক আল্লাহর ইবাদত করা এবং এটি হল একনিষ্ঠভাবে একক আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত নিবেদন করা। অন্য কারো উদ্দেশ্যে নয়। আর ইহসান হল নির্দেশিত সময়সীমার মধ্যে শরীয়ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে ইবাদত করা। তাই মুহাম্মদ (সা)-কে তাঁর জন্যে নির্ধারিত শরীয়ত প্রেরণ করার পর অন্য শরীয়তের কোন ইবাদত আল্লাহ্ ত’আলা কবুল করবেন না। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( قُلۡ یَـٰۤأَیُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّی رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَیۡكُمۡ جَمِیعًا )

[Surah Al-A'raf 158]

“বল, হে লোকসকল! আমি তোমাদের সকলের জন্যে আল্লাহর রাসূল।” (৭ আ’রাফঃ ১৫৮)।

আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল (সা)-কে বলেন, হে রাসূল! আপনি বলুনঃ

( وَأُوحِیَ إِلَیَّ هَـٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ لِأُنذِرَكُم بِهِۦ وَمَنۢ بَلَغَ )

[Surah Al-An’am 19]

“এবং এই কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে, যেন আমি তোমাদেরকে এবং যাদের নিকট এটি পৌঁছবে তাদেরকে এটি দ্বারা সতর্ক করি।” আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ

( وَمَن یَكۡفُرۡ بِهِۦ مِنَ ٱلۡأَحۡزَابِ فَٱلنَّارُ مَوۡعِدُهُۥ )

[Surah Hud 17]

“অন্যান্য দলের যারা এটিকে অস্বীকার করে অগ্নিই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান।” রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেনঃ

بعتت الى الاحمر والاسور

আমি সাদা-কালো সকল মানুষের প্রতি রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি। এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন যে, এতদ্বারা আরব, অনারব বুঝানো হয়েছে। আর কেউ কেউ বলেন যে, জিন-ইনসান বুঝান হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলেনঃ

والذي نفسي بيده لو أصبح فيكم موسى ثم لتبعتموه وتركتمونی لضللتم

“যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম, যদি মূসা (আ) তোমাদের মধ্যে থাকতেন এবং তোমরা তাঁর অনুসরণ করতে আর আমাকে বর্জন করতে তবে নিশ্চয়ই তোমরা পথভ্রষ্ট হতে।” এ বিষয়ে প্রচুর হাদীস রয়েছে।

অপর একটি হাদীস এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেনঃ

نحن معاشر الانبياء لانورث ماترجنا فهم صدقة

“আমরা নবীর দল। আমরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী রেখে যাই না। আমরা যে সম্পদ রেখে যাই, তা সাদকা স্বরূপ।’ এটি সম্মনিত নবীগণের বৈশিষ্ট্য। কেননা, দুনিয়া ও পার্থিব ধন-সম্পদ তাদের নিকট নিতান্ত তুচ্ছ বিষয়। নিজের ইনতিকালের পর কাউকে এর উত্তরাধিকারী করে যাওয়ার ব্যাপারটিকে তারা কোন গুরুত্বই দেন না। উপরন্তু তাদের অবর্তমানে তাদের সন্তানাদির সুব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা আল্লাহর উপরই নির্ভর করে থাকেন। তাঁদের অনুসৃত এ তাওয়াক্কুল ও আস্থা খুবই দৃঢ় ও গভীর। যেখানে আল্লাহ তা’আলা রয়েছেন, সেখানে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের জন্যে কিছু সহায়-সম্পত্তি রেখে গিয়ে এগুলো দ্বারা তাঁরা নিজেদের ছেলে-মেয়েদেরকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের উপর প্রাধান্য দিবেন, এমন অবস্থান থেকে তারা বহু ঊর্ধ্বে। বরং তাঁরা যা- ই রেখে যান, তার সবই দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত ও অসহায় লোকদের জন্যে সাদকা বলে গণ্য হয়।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর বৈশিষ্ট্যাবলীসহ সকল নবী (আ)-এর বৈশিষ্ট্যাবলী ‘আল আহকামুল কাবীর’ কিতাবে ‘বিবাহ’ অধ্যায়ের শুরুতে আমি উল্লেখ করব। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ্ শাফিঈ (র)-এর অনুসরণে অনেক নেতৃস্থানীয় লেখক নবীদের (আ) বৈশিষ্ট্যাবলী উক্ত অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। আমিও তাই করব।

ইমাম আহমদ (র) .... আবদে রাব্বিল কা’বা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদিন আমি আব্দুল্লাহ্ ইবন আমর (রা)-এর নিকট উপস্থিত হই। তিনি তখন কা’বা শরীফের ছায়ায় বসা ছিলেন। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তিনি বলছিলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। তিনি এক জায়গায় থামলেন। তখন আমাদের মধ্যে কেউ তাঁবু খাটানোর কাজে লেগে গেল, কেউ বেরিয়ে পড়ল পশুগুলো নিয়ে চারণ ক্ষেত্রের দিকে। কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প-গুজব ও কথাবার্তায় মেতে উঠল।

এমন সময় মুয়াযিন ঘোষণা করলেনঃ

الصلاة جامعة

“নামাযের জামাত প্রস্তুত। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমরা সবাই একত্রিত হলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) দাঁড়িয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, প্রত্যেক নবী নিজ নিজ উম্মতকে নিজের অবগতি মুতাবিক কল্যাণের পথ দেখিয়েছেন এবং যেটিকেই তিনি অকল্যাণকর ও ক্ষতিকর বলে জেনেছেন তা থেকে উম্মতকে সাবধান করে দিয়েছেন। আর তোমরা এই উম্মত! এই উম্মতের নিরাপত্তা ও শান্তি তাদের প্রথম যুগের লোকদের অনুসরণের মধ্যে নিহিত! এদের শেষ জামানার লোকদের উপর আসবে বিপদাপদ এবং তার সম্মুখীন হবে এমন সব পরিস্থিতির, যা তাদের জন্যে হবে অস্বস্তিকর। তাদের উপর একের পর এক ফিতনা ও নানারূপ বিপর্যয় নেমে আসবে। এমন মারাত্মক মারাত্মক অশান্তি ও বিশৃংখলা নেমে আসবে যে, ঈমানদার ব্যক্তি বলবে, এটিতেই আমার ধ্বংস অনিবার্য। তারপর ঐ বিপর্যয় কেটে যাবে। আবার নতুন ফিতনা আসবে। ঈমানদার লোক বলবে, এটিতেই আমি ধ্বংস হব। তারপর বিপর্যয় কেটে যাবে। তোমাদের মধ্যে যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাতে প্রবেশের আশা রাখে, তার মৃত্যু যেন এ অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী থাকে এবং সে যেন মানুষের সাথে তেমন ব্যবহার করে, যে আচরণ সে নিজের জন্য পছন্দ করে।

যে ব্যক্তি নিজের হাত ও অন্তর দিয়ে কোন ইমামের আনুগত্যের শপথ করে, সে যেন সাধ্যানুযায়ী তার আনুগত্য করে। অন্য কেউ যদি নেতৃত্বে দাবী করে, তোমরা তার গর্দান উড়িয়ে দেবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তখন লোকজনের ভিড়ের মধ্যে আমার মাথা ঢুকিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমি আপনাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি কি নিজে এই হাদীস রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর মুখে শুনেছেন? তখন আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা) তাঁর কান দু’টোর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমার এ কান দুটো হাদীসটি শুনেছে এবং আমার অন্তরে তা সংরক্ষিত রেখেছে।

বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি বললাম, ইনি আপনার চাচাত ভাই অর্থাৎ মুয়াবিয়া (রা) তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন আমরা যেন অসৎ পথে একে অন্যের ধন-সম্পদ ভোগ করি এবং আমরা যেন নিজেরা নিজেদেরকে খুন করি।

অথচ আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ

( یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ لَا تَأۡكُلُوۤا۟ أَمۡوَ  ⁠ لَكُم بَیۡنَكُم بِٱلۡبَـٰطِلِ )

[Surah An-Nisa' 29]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করোনা।” (৪ নিসাঃ ২৯)

এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ্ ইবন আমর (রা) দু’হাত একত্রিত করে তার কপালে রাখলেন। কিছুক্ষণ মাথা নিচু রেখে তারপর তিনি মাথা তুললেন এবং বললেন, তার আনুগতে আল্লাহর আনুগত্য হলে আপনি তখন তার আনুগত্য করুন আর অন্যথায় আপনি তার নির্দেশ পালন করবেন না।

ইমাম আহমদ (র) ভিন্ন সূত্রে কিছুটা শাব্দিক পরিবর্তনসহ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইমাম মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইব্‌ন মাজাহ (র) প্রমুখ রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন