hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৩৭
আসহাবে কাহাফ-এর ঘটনা
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( أَمۡ حَسِبۡتَ أَنَّ أَصۡحَـٰبَ ٱلۡكَهۡفِ وَٱلرَّقِیمِ كَانُوا۟ مِنۡ ءَایَـٰتِنَا عَجَبًا ۝ إِذۡ أَوَى ٱلۡفِتۡیَةُ إِلَى ٱلۡكَهۡفِ فَقَالُوا۟ رَبَّنَاۤ ءَاتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحۡمَة وَهَیِّئۡ لَنَا مِنۡ أَمۡرِنَا رَشَد ا ۝ فَضَرَبۡنَا عَلَىٰۤ ءَاذَانِهِمۡ فِی ٱلۡكَهۡفِ سِنِینَ عَدَد ا ۝ ثُمَّ بَعَثۡنَـٰهُمۡ لِنَعۡلَمَ أَیُّ ٱلۡحِزۡبَیۡنِ أَحۡصَىٰ لِمَا لَبِثُوۤا۟ أَمَد ا ۝ نَّحۡنُ نَقُصُّ عَلَیۡكَ نَبَأَهُم بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّهُمۡ فِتۡیَةٌ ءَامَنُوا۟ بِرَبِّهِمۡ وَزِدۡنَـٰهُمۡ هُد ى ۝ وَرَبَطۡنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ إِذۡ قَامُوا۟ فَقَالُوا۟ رَبُّنَا رَبُّ ٱلسَّمَـٰوَ  ٰ⁠ تِ وَٱلۡأَرۡضِ لَن نَّدۡعُوَا۟ مِن دُونِهِۦۤ إِلَـٰه اۖ لَّقَدۡ قُلۡنَاۤ إِذ ا شَطَطًا ۝ هَـٰۤؤُلَاۤءِ قَوۡمُنَا ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦۤ ءَالِهَة ۖ لَّوۡلَا یَأۡتُونَ عَلَیۡهِم بِسُلۡطَـٰنِۭ بَیِّن ۖ فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِب ا ۝ وَإِذِ ٱعۡتَزَلۡتُمُوهُمۡ وَمَا یَعۡبُدُونَ إِلَّا ٱللَّهَ فَأۡوُۥۤا۟ إِلَى ٱلۡكَهۡفِ یَنشُرۡ لَكُمۡ رَبُّكُم مِّن رَّحۡمَتِهِۦ وَیُهَیِّئۡ لَكُم مِّنۡ أَمۡرِكُم مِّرۡفَق ا ۝ ۞ وَتَرَى ٱلشَّمۡسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَ  ٰ⁠ وَرُ عَن كَهۡفِهِمۡ ذَاتَ ٱلۡیَمِینِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقۡرِضُهُمۡ ذَاتَ ٱلشِّمَالِ وَهُمۡ فِی فَجۡوَة مِّنۡهُۚ ذَ  ٰ⁠ لِكَ مِنۡ ءَایَـٰتِ ٱللَّهِۗ مَن یَهۡدِ ٱللَّهُ فَهُوَ ٱلۡمُهۡتَدِۖ وَمَن یُضۡلِلۡ فَلَن تَجِدَ لَهُۥ وَلِیّ ا مُّرۡشِد ا ۝ وَتَحۡسَبُهُمۡ أَیۡقَاظ ا وَهُمۡ رُقُود ۚ وَنُقَلِّبُهُمۡ ذَاتَ ٱلۡیَمِینِ وَذَاتَ ٱلشِّمَالِۖ وَكَلۡبُهُم بَـٰسِط ذِرَاعَیۡهِ بِٱلۡوَصِیدِۚ لَوِ ٱطَّلَعۡتَ عَلَیۡهِمۡ لَوَلَّیۡتَ مِنۡهُمۡ فِرَار ا وَلَمُلِئۡتَ مِنۡهُمۡ رُعۡب ا ۝ وَكَذَ  ٰ⁠ لِكَ بَعَثۡنَـٰهُمۡ لِیَتَسَاۤءَلُوا۟ بَیۡنَهُمۡۚ قَالَ قَاۤىِٕل مِّنۡهُمۡ كَمۡ لَبِثۡتُمۡۖ قَالُوا۟ لَبِثۡنَا یَوۡمًا أَوۡ بَعۡضَ یَوۡم ۚ قَالُوا۟ رَبُّكُمۡ أَعۡلَمُ بِمَا لَبِثۡتُمۡ فَٱبۡعَثُوۤا۟ أَحَدَكُم بِوَرِقِكُمۡ هَـٰذِهِۦۤ إِلَى ٱلۡمَدِینَةِ فَلۡیَنظُرۡ أَیُّهَاۤ أَزۡكَىٰ طَعَام ا فَلۡیَأۡتِكُم بِرِزۡق مِّنۡهُ وَلۡیَتَلَطَّفۡ وَلَا یُشۡعِرَنَّ بِكُمۡ أَحَدًا ۝ إِنَّهُمۡ إِن یَظۡهَرُوا۟ عَلَیۡكُمۡ یَرۡجُمُوكُمۡ أَوۡ یُعِیدُوكُمۡ فِی مِلَّتِهِمۡ وَلَن تُفۡلِحُوۤا۟ إِذًا أَبَد ا ۝ وَكَذَ  ٰ⁠ لِكَ أَعۡثَرۡنَا عَلَیۡهِمۡ لِیَعۡلَمُوۤا۟ أَنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقّ وَأَنَّ ٱلسَّاعَةَ لَا رَیۡبَ فِیهَاۤ إِذۡ یَتَنَـٰزَعُونَ بَیۡنَهُمۡ أَمۡرَهُمۡۖ فَقَالُوا۟ ٱبۡنُوا۟ عَلَیۡهِم بُنۡیَـٰن اۖ رَّبُّهُمۡ أَعۡلَمُ بِهِمۡۚ قَالَ ٱلَّذِینَ غَلَبُوا۟ عَلَىٰۤ أَمۡرِهِمۡ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَیۡهِم مَّسۡجِد ا ۝ سَیَقُولُونَ ثَلَـٰثَة رَّابِعُهُمۡ كَلۡبُهُمۡ وَیَقُولُونَ خَمۡسَة سَادِسُهُمۡ كَلۡبُهُمۡ رَجۡمَۢا بِٱلۡغَیۡبِۖ وَیَقُولُونَ سَبۡعَة وَثَامِنُهُمۡ كَلۡبُهُمۡۚ قُل رَّبِّیۤ أَعۡلَمُ بِعِدَّتِهِم مَّا یَعۡلَمُهُمۡ إِلَّا قَلِیل ۗ فَلَا تُمَارِ فِیهِمۡ إِلَّا مِرَاۤء ظَـٰهِر ا وَلَا تَسۡتَفۡتِ فِیهِم مِّنۡهُمۡ أَحَد ا ۝ وَلَا تَقُولَنَّ لِشَا۟یۡءٍ إِنِّی فَاعِل ذَ  ٰ⁠ لِكَ غَدًا ۝ إِلَّاۤ أَن یَشَاۤءَ ٱللَّهُۚ وَٱذۡكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِیتَ وَقُلۡ عَسَىٰۤ أَن یَهۡدِیَنِ رَبِّی لِأَقۡرَبَ مِنۡ هَـٰذَا رَشَد ا ۝ وَلَبِثُوا۟ فِی كَهۡفِهِمۡ ثَلَـٰثَ مِا۟ئَة سِنِینَ وَٱزۡدَادُوا۟ تِسۡع ا ۝ قُلِ ٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِمَا لَبِثُوا۟ۖ لَهُۥ غَیۡبُ ٱلسَّمَـٰوَ  ٰ⁠ تِ وَٱلۡأَرۡضِۖ أَبۡصِرۡ بِهِۦ وَأَسۡمِعۡۚ مَا لَهُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِیّ وَلَا یُشۡرِكُ فِی حُكۡمِهِۦۤ أَحَد ࣰا)

[Surah Al-Kahf 9 - 26]

অর্থাৎ, তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীম (পর্বত বা ফলক)-এর অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাদির মধ্যে বিস্ময়কর? যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি নিজ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজকর্ম সঠিক ভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন।’ অতঃপর আমি ওদেরকে গুহায় কয়েক বছর ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলাম। পরে আমি ওদেরকে জাগরিত করলাম জানার জন্যে যে, দু’দলের মধ্যে কোনটি ওদের অবস্থিতি কাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। আমি তোমার নিকট ওদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। ওরা ছিল কয়েকজন যুবক। ওরা ওদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি ওদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম।

এবং আমি ওদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম। ওরা যখন উঠে দাঁড়াল তখন বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক আকাশরাজি ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহ্বান করব না। যদি করে বসি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত হবে। আমাদেরই এই স্বজাতিরা তাঁর পরিবর্তে অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে। তারা এ সকল ইলাহ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার চাইতে অধিক জালিম আর কে?’

তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হলে ওদের থেকে এবং ওরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের উপাসনা করে তাদের থেকে তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করবেন।

তুমি দেখতে পেতে-ওরা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত, সূর্য উদয়কালে ওদের গুহার দক্ষিণ পার্শ্বে হেলে যায় এবং অস্তকালে ওদেরকে অতিক্রম করে বামপার্শ্ব দিয়ে। এ সমস্ত আল্লাহর নিদর্শন আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনই তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। তুমি মনে করতে ওরা জাগ্রত, কিন্তু ওরা ছিল নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডান দিকে ও বামে এবং ওদের কুকুর ছিল সম্মুখের পা দুটো গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। তাকিয়ে ওদেরকে দেখলে পিছনে ফিরে পলায়ন করতে ও ওদের ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়তে। এবং এভাবেই আমি ওদেরকে জাগরিত করলাম যাতে ওরা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওদের একজন বলল, ‘তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ?’ কেউ কেউ বলল, ‘একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ।’ কেউ কেউ বলল, ‘তোমরা কতদিন অবস্থান করেছ তা তোমাদের প্রতিপালকই ভাল জানেন।’

এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ নগরে প্রেরণ কর সে যেন দেখে কোন খাদ্য উত্তম এবং তা হতে যেন কিছু তোমাদের জন্যে নিয়ে আসে। সে যেন বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে ও কিছুতেই যেন তোমাদের সম্বন্ধে কাউকেও কিছু জানতে না দেয়। ওরা যদি তোমাদের বিষয় জানতে পারে তবে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে ওদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সে ক্ষেত্রে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না। এবং এভাবে আমি মানুষকে তাদের বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোন সন্দেহ নেই।

যখন তারা তাদের কর্তব্য বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল তখন অনেকে বলল, ওদের ওপর সৌধ নির্মাণ কর। ওদের প্রতিপালক ওদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল তারা বলল, আমরা তো নিশ্চয়ই ওদের পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণ করব। কেউ কেউ বলবে, ওরা ছিল তিনজন, ওদের চতুর্থটি ছিল ওদের কুকুর এবং কেউ কেউ বলবে ওরা ছিল পাঁচজন, ওদের ষষ্ঠটি ছিল ওদের কুকুর। অজানা বিষয়ে অনুমানের ওপর নির্ভর করে। আবার কেউ কেউ বলবে, ওরা ছিল সাত জন, ওদের অষ্টমটি ছিল ওদের কুকুর। বল, আমার প্রতিপালকই ওদের সংখ্যা ভাল জানেন, ওদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে। সাধারণ আলোচনা ব্যতীত আপনি ওদের বিষয়ে বিতর্ক করবেন না এবং ওদের কাউকে ওদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না। কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলবে না ‘আমি এটি আগামীকাল করব’। ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ একথা না বলে। যদি ভুলে যাও তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করবে এবং বলবে, সম্ভবত আমার প্রতিপালক আমাকে ওটি অপেক্ষা সত্যের নিকটতর পথনির্দেশ করবেন। ওরা ওদের গুহায় ছিল তিনশ’ বছর আরও নয় বছর। তুমি বল, তারা কতকাল ছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন, আকাশরাজি ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ব্যতীত ওদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। তিনি কাউকে তাঁর কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (১৭, কাহাফঃ ৯-২৬)

আসহাবে কাহাফ ও যুল-কারনাইন সম্পর্কে আয়াত নাযিল হওয়ার পটভূমি সম্বন্ধে মুহাম্মদ ইবন ইসহাক ও অন্যরা সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, কুরায়শগণ মদীনার ইয়াহুদীদের নিকট একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছিল। উদ্দেশ্য এই যে, ইয়াহুদীগণ তাদেরকে কতক প্রশ্ন শিখিয়ে দিবে। কুরায়শগণ সেগুলো রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞেস করবে এবং এরদ্বারা তারা তাকে পরীক্ষা করবে। ইয়াহুদীগণ বলেছিল যে, ‘তোমরা তাকে এমন এক সম্প্রদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, যারা অতীতেই বিলীন হয়ে গিয়েছে। যার ফলে ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে জানা যায় না। আর প্রশ্ন করবে পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী একজন লোক সম্পর্কে এবং জিজ্ঞেস করবে রূহ সম্পর্কে।

এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন

وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الرُّوۡحِ -

তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে।

وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ

তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে আর এখানে বললেনঃ

اَمۡ حَسِبۡتَ اَنَّ اَصۡحٰبَ الۡکَہۡفِ وَ الرَّقِیۡمِ ۙ کَانُوۡا مِنۡ اٰیٰتِنَا عَجَبًا ﴿۹﴾

—তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাদির মধ্যে বিস্ময়কর?

অর্থাৎ আমি আপনাকে যেসব অভূতপূর্ব আশ্চর্যজনক বিষয়াদি, উজ্জ্বল নিদর্শনাদি ও বিস্ময়কর ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করেছি, সে সবের তুলনায় গুহা ও রাকীমের অধিবাসীদের সংবাদ ও ঘটনা মোটেই আশ্চর্যজনক নয়।

এখানে কাহফ অর্থ পর্বত গুহা। শুআয়ব আল জুবাঈ বলেন, গুহাটির নাম হায়যুম। রাকীম শব্দ সম্পর্কে হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলেন, ‘রাকীম দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

কেউ কেউ বলেন, রাকীম অর্থ লিখিত ফলক-যাতে সেখানে আশ্রয় গ্রহণকারীদের নাম এবং তাদের ঘটনাবলী লিখিত রয়েছে। পরবর্তী যুগের লোকজন এটি লিখে রেখেছিল। ইবন জারীর ও অন্যান্যগণ এ অভিমত সমর্থন করেন। কেউ কেউ বলেন, রাকীম হল সেই পর্বতের নাম, যে পর্বতের গুহায় তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ইবন আব্বাস (রা) ও শু’আয়ব আল জুবাই বলেন, ঐ পর্বতের নাম বিনাজলুস। কারো কারো মতে, রাকীম হচ্ছে ঐ গুহার পাশে অবস্থিত একটি উপত্যকার নাম। অন্য কারো কারো মতে, এটি ঐ এলাকার একটি জনপদের নাম।

শু’আয়ব আল জুবাঈ বলেন, তাদের কুকুরের নাম ছিল হামরান। কতক তাফসীরকার বলেছেন যে, তাঁরা ছিলেন হযরত ঈসা (আ)-এর পরবর্তী যুগের লোক এবং তারা খৃষ্টান ছিলেন। কিন্তু তাদের সম্পর্কে ইয়াহুদীদের গুরুত্ব আরোপ এবং তাদের সম্পর্কে সংবাদ সংগ্রহের আগ্রহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তারা হযরত ঈসা (আ)-এর পূর্ববর্তী যুগের লোক। আয়াতের বাচনভঙ্গি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের সম্প্রদায়ের লোকজন ছিল মুশরিক। তারা মূর্তিপূজা করত। বহু তাফসীরকার ও ইতিহাসবিদ অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, তারা বাদশাহ দাকরানূমের সময়ের অভিজাত বংশীয় লোক ছিলেন। কারো কারো অভিমত যে, তারা রাজপুত্র ছিলেন।

ঘটনাচক্রে তারা সম্প্রদায়ের উৎসবের দিনে একত্রিত হয়। তাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা সেখানে যে মূর্তিদেরকে সিজদা করছে এবং প্রতিমাগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করছে, তা তারা প্রত্যক্ষ করে। তখন তারা গভীর মনোযোগের সাথে তা পর্যালোচনা করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরের উদাসীনতার পর্দা ছিন্ন করে দেন এবং তাদের মনে সত্য ও হিদায়াতের উন্মেষ ঘটান। ফলে তারা উপলব্ধি করেন যে, তাদের সম্প্রদায়ের এসব কাজকর্ম সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যুবকগণ তাদের ওই ধর্ম পরিত্যাগ করেন এবং এক আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করেন।

কেউ কেউ বলেন যে, যুবকদের প্রত্যেকের মনে আল্লাহ তা'আলা তাওহীদ ও হিদায়াতের অনুভূতি সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। তারপর তারা সকলেই লোকজনের সংসর্গ ত্যাগ করে এক নির্জন এলাকায় এসে উপস্থিত হন। সহীহ বুখারীতে এ বিষয়ে একটি বিশুদ্ধ হাদীছ উদ্ধৃত হয়েছে। সেটি এইঃ

الْأَرْوَاحُ جُنُودٌ مُجَنَّدَةٌ فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ وَمَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَفَ

রুহগুলো সুবিন্যস্ত বাহিনী স্বরূপ। তাদের মধ্যে যেগুলো পূর্ব-পরিচিত, সেগুলো বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর যারা পরস্পর অপরিচিত তাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। তখন তারা একে অপরের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান বর্ণনা করে। তখন জানা যায় যে, তারা সবাই নিজ নিজ গোত্র ছেড়ে এসেছে এবং ওদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আপন দীন রক্ষার্থে পালিয়ে এসেছে। ফিতনা, বিশৃংখলা ও পাপাচারের বিস্তৃতিকালে এভাবে সমাজ ত্যাগ করা শরীয়ত সম্মত।

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

نَحۡنُ نَقُصُّ عَلَیۡکَ نَبَاَہُمۡ بِالۡحَقِّ ؕ اِنَّہُمۡ فِتۡیَۃٌ اٰمَنُوۡا بِرَبِّہِمۡ وَ زِدۡنٰہُمۡ ہُدًی وَّ رَبَطۡنَا عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ اِذۡ قَامُوۡا فَقَالُوۡا رَبُّنَا رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ لَنۡ نَّدۡعُوَا۠ مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اِلٰـہًا لَّقَدۡ قُلۡنَاۤ اِذًا شَطَطًا ﴿۱۴﴾ ہٰۤؤُلَآءِ قَوۡمُنَا اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اٰلِہَۃً ؕ لَوۡ لَا یَاۡتُوۡنَ عَلَیۡہِمۡ بِسُلۡطٰنٍۭ بَیِّنٍ

আমি তোমার নিকট ওদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। ওরা ছিল কয়েকজন যুবক। ওরা ওদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি ওদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম। এবং আমি ওদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম, ওরা যখন ওঠে দাঁড়াল তখন বলল, আমাদের প্রতিপালক আকাশরাজি ও পৃথিবীর প্রতিপালক! আমরা কখনই তার পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহ্বান করব না, যদি করে বসি তবে তা অত্যন্ত গর্হিত হবে। আমাদের এই স্বজাতিগণ, তার পরিবর্তে অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে। এরা এ সকল ইলাহ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? অর্থাৎ তারা যে পথ অবলম্বন করেছে এবং যে অভিমত অনুসরণ করেছে তার যথার্থতা সম্পর্কে প্রকাশ্য দলিল উপস্থাপন করে না কেন?

فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا

যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার চাইতে অধিক জালিম আর কে? তোমরা যখন তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হলে এবং ওরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করে তাদের থেকে অর্থাৎ দীনের প্রশ্নে তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হয়ে গেলে এবং তারা আল্লাহ ব্যত যেগুলোর উপাসনা করে সেগুলোকে ত্যাগ করলে। কারণ তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করত। যেমন হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ বলেছিলেনঃ

اِنَّنِیۡ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعۡبُدُوۡنَ۝اِلَّا الَّذِیۡ فَطَرَنِیۡ فَاِنَّہٗ سَیَہۡدِیۡنِ

—তোমরা যেগুলোর পূজা কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে শুধু তারই সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাকে সৎপথ দেখাবেন। এ যুবকরাও অনুরূপ বলেছিলেন। (৪৩ যুখরুফঃ ২৬-২৭) আয়াতের ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন যে, দীনের প্রশ্নে তোমরা যেমন তোমাদের সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছ, দৈহিকভাবেও তোমরা তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও, যাতে ওদের অনিষ্ট থেকে তোমরা নিরাপদ থাকতে পার।

فَاۡ وٗۤا اِلَی الۡکَہۡفِ یَنۡشُرۡ لَکُمۡ رَبُّکُمۡ مِّنۡ رَّحۡمَتِہٖ وَیُہَیِّیٴۡ لَکُمۡ مِّنۡ اَمۡرِکُمۡ مِّرۡفَقًا

—তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে তার দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করবেন। অর্থাৎ তার রহমতের পর্দা দ্বারা তোমাদেরকে ঢেকে দিবেন। তোমরা তার নিরাপত্তা ও আশ্রয়ে থাকবে। এবং তিনি তোমাদের পরিণাম কল্যাণময় করে দিবেন। যেমন হাদীছ শরীফে এসেছে।

اللَّهُمَّ أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا فِي الأُمُورِ كُلِّهَا وَأَجِرْنَا مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الآخِرَةِ

—হে আল্লাহ! সকল কর্মে আমাদেরকে কল্যাণময় পরিণতি দান করুন এবং দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখিরাতের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন।

এরপর তাঁরা যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সে সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, গুহাটি উত্তরমুখী ছিল। তার পশ্চিম দিকে ঢালু ছিল। কিবলার দিকে ঢালু উত্তরমুখী স্থান অধিক কল্যাণকর স্থান রূপে বিবেচিত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَ تَرَی الشَّمۡسَ اِذَا طَلَعَتۡ تَّزٰوَرُ عَنۡ کَہۡفِہِمۡ ذَاتَ الۡیَمِیۡنِ وَ اِذَا غَرَبَتۡ تَّقۡرِضُہُمۡ ذَاتَ الشِّمَالِ

—তুমি দেখতে পেতে, ওরা গুহার চত্বরে অবস্থিত। সূর্য উদয়কালে ওদের গুহার ডান দিকে হেলে যায় এবং অস্তকালে ওদেরকে অতিক্রম করে বাম পার্শ্ব দিয়ে। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে সূর্য উদিত হওয়ার সময় তাদের গুহার পশ্চিম দিকে আলো ছড়ায়, তারপর সূর্য যতই উপরে উঠতে থাকে, ক্রমান্বয়ে ততই ঐ আলো গুহা থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। এটি হল সূর্যের ডান দিক দিয়ে অতিক্রম করা। অতঃপর সূর্য মধ্য আকাশে উত্থিত হয় এবং গুহা থেকে ঐ আলো বেরিয়ে যায়। তারপর যখন অস্ত যেতে শুরু করে তখন পূর্ব পাশ দিয়ে অল্প অল্প করে আলো প্রবেশ করতে থাকে। অবশেষে সূর্য অস্ত যায়। এ ধরনের স্থানে এরূপই দেখা যায়। তাদের গুহায় মাঝে মধ্যে সূর্যের আলো প্রবেশের এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল যাতে ঐ গুহার আবহাওয়া দূষিত না হয়।

وَ ہُمۡ فِیۡ فَجۡوَۃٍ مِّنۡہُ ؕ ذٰلِکَ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ

—ওরা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এ সব আল্লাহর নিদর্শন। অর্থাৎ তাদের পানাহার না করে, খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ না করে শতশত বৎসর এ অবস্থায় বিদ্যমান থাকাটা আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাদির অন্যতম এবং তাঁর মহা শক্তির প্রমাণ স্বরূপ।

مَنۡ یَّہۡدِ اللّٰہُ فَہُوَ الۡمُہۡتَدِ ۚ وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَلَنۡ تَجِدَ لَہٗ وَلِیًّا مُّرۡشِدًا وَ تَحۡسَبُہُمۡ اَیۡقَاظًا وَّ ہُمۡ رُقُوۡدٌ

—আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন সে সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনই তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। তুমি মনে করতে তারা ঘুমন্ত অথচ তারা জাগ্রত। এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, তা এ জন্যে যে, তাদের চোখ খোলা ছিল, যাতে সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকার ফলে চক্ষু নষ্ট হয়ে না যায়।

وَّ نُقَلِّبُہُمۡ ذَاتَ الۡیَمِیۡنِ وَ ذَاتَ الشِّمَالِ

—আমি ওদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডানে, বামে–এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, বৎসরে একবার করে তাদের পার্শ্ব পরিবর্তন করানো হত। এ পাশ থেকে ও পাশে ফেরানো হত। হতে পারে বৎসরে একাধিকবারও তা ঘটতো। আল্লাহই সম্যক অবগত।

وَ کَلۡبُہُمۡ بَاسِطٌ ذِرَاعَیۡہِ بِالۡوَصِیۡدِ

—তাদের কুকুর ছিল সম্মুখের পা দুটো গুহার মুখের দিকে প্রসারিত করে। শুআয়ব আল জুবাই বলেন, তাদের কুকুরের নাম ছিল হামরান। অন্য এক তাফসীরকার বলেন, وَصِیۡدِ অর্থ দরজার চৌকাঠ। অর্থাৎ যুবকগণ যখন নিজ নিজ গোত্র থেকে একাকী বেরিয়ে এসেছিলেন, তখন যে কুকুরটি তাদের সাথে এসেছিল সেটি শেষ পর্যন্ত তাদের সাথে থেকে যায়। এটি গুহার মধ্যে প্রবেশ করেনি। বরং দু’হাত গুহামুখে রেখে গুহার প্রবেশ পথে বসেছিল। এটি ঐ কুকুরের অনুপম শিষ্টাচার এবং যুবকদের প্রতি সন্ত্রমবোধের নিদর্শন। কারণ সাধারণত যে ঘরে কুকুর থাকে সে ঘরে রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করেন না। সাহচর্য ও আনুগত্যের স্বভাবতই একটা প্রভাব থাকে। তাই যুবকদের অনুসরণ করতে গিয়ে কুকুরটিও তাদের সাথে অমর হয়ে থাকে। কারণ যে যাকে ভালবাসে সে তার সৌভাগ্যের অংশীদার হয়। একটি কুকুরের ব্যাপারে যখন এমন হল তখন সম্মানের পাত্র কোন পূণ্যবানের অনুসরণকারীর ক্ষেত্রে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

বহু ধর্মীয় বক্তা ও তাফসীরকার উক্ত কুকুর সম্পর্কে অনেক লম্বা চওড়া কাহিনীর উল্লেখ করেছেন। এগুলোর অধিকাংশই ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে নেয়া এবং এর অধিকাংশ নির্জলা মিথ্যা। এতে কোন ফায়দাও নেই। যেমন কুকুরটির নাম ও রঙ বিষয়ে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা।

এ গুহাটি কোথায় অবস্থিত, এ নিয়ে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাঁদের অনেকে বলেন, এটি আয়লা অঞ্চলে অবস্থিত। কেউ বলেন, এটির অবস্থান নিনোভা এলাকায়। কারো মতে, কলকা অঞ্চলে এবং কারো মতে রোমকদের এলাকায়। শেষ অভিমতটিই অধিক যুক্তিসংগত।

আল্লাহ তা'আলা তাদের কাহিনীর অধিক কল্যাণকর অংশটি এমন প্রাঞ্জলভাষায় বর্ণনা করলেন এবং যেন শ্রবণকারী তা প্রত্যক্ষ করছে এবং নিজের চোখে তাদের গুহার অবস্থা, গুহার মধ্যে তাদের অবস্থান, ওদের পার্শ্ব পরিবর্তন এবং তাদের গুহা মুখে হাত প্রসারিত করে উপবিষ্ট কুকুর স্বচক্ষে দেখছে। এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

لَوِ اطَّلَعۡتَ عَلَیۡہِمۡ لَوَلَّیۡتَ مِنۡہُمۡ فِرَارًا وَّ لَمُلِئۡتَ مِنۡہُمۡ رُعۡبًا

—তুমি যদি ওদেরকে তাকিয়ে দেখতে তবে পিছনে ফিরে পালাতে এবং ওদের ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়তে অর্থাৎ তারা যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে এবং যে গুরুগম্ভীর ও ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্য। সম্ভবত এ সম্বোধনটি সকল মানুষের জন্যে, শুধুমাত্র প্রিয় নবী (সা)-এর জন্যে নয়। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী

فَمَا یُکَذِّبُکَ بَعۡدُ بِالدِّیۡنِ

সুতরাং এর পরে কিসে তোমাকে কর্মফল সম্বন্ধে অবিশ্বাসী করে? এ আয়াতে তোমাকে বলতে সাধারণভাবে অবিশ্বাসী মানবদেরকে বুঝানো হয়েছে। নবী করীম (সা)-কে নয়। কারণ, মানুষ সাধারণত ভীতিকর দৃশ্য দেখলে পালিয়ে যায়। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ

َوِ اطَّلَعۡتَ عَلَیۡہِمۡ لَوَلَّیۡتَ مِنۡہُمۡ فِرَارًا وَّ لَمُلِئۡتَ مِنۡہُمۡ رُعۡبًا

এতে বুঝা যায় যে, শোনা আর দেখা এক কথা নয়। যেমন হাদীসেও এ বিষয়ে সমর্থন রয়েছে। কারণ, আলোচ্য ঘটনায় গুহাবাসীর ভীতিকর সংবাদ শুনে কেউ পালায়নি বা ভীতও হয়নি।

তারপর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তিনি তাদেরকে জাগ্রত করলেন তাদের ৩০৯ বছর নিদ্রামগ্ন থাকার পর। জাগ্রত হওয়ার পর তাদের একে অন্যকে বললঃ

کَمۡ لَبِثۡتُمۡ ؕ قَالُوۡا لَبِثۡنَا یَوۡمًا اَوۡ بَعۡضَ یَوۡمٍ ؕ قَالُوۡا رَبُّکُمۡ اَعۡلَمُ بِمَا لَبِثۡتُمۡ ؕ فَابۡعَثُوۡۤا اَحَدَکُمۡ بِوَرِقِکُمۡ ہٰذِہٖۤ اِلَی الۡمَدِیۡنَۃِ

—তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? কেউ কেউ বলল, একদিন অথবা এক দিনের কিছু অংশ। অপর কেউ বলল, তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ তা তোমাদের প্রতিপালকই ভাল জানেন। তখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ নগরে প্রেরণ কর। অর্থাৎ তাদের সাথে থাকা রৌপ্য মুদ্রার দিকে ইঙ্গিত করে তা নিয়ে নগরে যেতে বলেছিল।

কথিত আছে যে, ওই নগরীর নাম ছিল দাফমূম।

فَلۡیَنۡظُرۡ اَیُّہَاۤ اَزۡکٰی طَعَامًا

সে গিয়ে দেখুক কোন্ খাদ্য উত্তম। অর্থাৎ কোন্‌টি উৎকৃষ্টমানের।

فَلۡیَاۡتِکُمۡ بِرِزۡقٍ مِّنۡہُ

অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্যে। অর্থাৎ যা তোমরা খেতে পারবে। এটি ছিল তাদের সংযম ও নির্লোভ মনোভাবের পরিচায়ক। وَ لۡـیَؔ‍‍‍تَلَطَّفۡ সে যেন বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে। নগরে প্রবেশ করার সময়

وَ لَا یُشۡعِرَنَّ بِکُمۡ اَحَدًاـ اِنَّہُمۡ اِنۡ یَّظۡہَرُوۡا عَلَیۡکُمۡ یَرۡجُمُوۡکُمۡ اَوۡ یُعِیۡدُوۡکُمۡ فِیۡ مِلَّتِہِمۡ وَ لَنۡ تُفۡلِحُوۡۤا اِذًا اَبَدًا

—এবং কিছুতেই যেন তোমাদের সম্বন্ধে কাউকে কিছু টের পেতে না দেয়। ওরা যদি তোমাদের বিষয় জানতে পারে তবে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে ওদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।

অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে ওদের বাতিল ধর্ম থেকে উদ্ধার করার পর তোমরা যদি পুনরায় ওদের মধ্যে ফিরে যাও তবে আর তোমাদের সাফল্য নেই। তারা এ জাতীয় কথাবার্তা এ জন্য বলেছিল যে, তারা মনে করেছিল তারা একদিন, একদিনের কতকাংশ কিংবা তার চাইতে কিঞ্চিতাধিক সময় নিদ্রামগ্ন ছিল। তারা যে ৩০০ বছরের অধিককাল ধরে নিদ্রামগ্ন ছিল এবং ইতিমধ্যে যে রাষ্ট্রক্ষমতার বহুবার হাত বদল হয়েছে, নগর ও নগরবাসীর পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তাদের প্রজন্মের লোকদের যে মৃত্যু হয়েছে, অন্য প্রজন্ম এসেছে এবং তারাও চলে গিয়েছে, অতঃপর অন্য আরেক প্রজন্মের আবির্ভাব হয়েছে; তার কিছুই তারা তখনও আঁচ করে উঠতে পারেনি। এজন্যে তাদের একজন অর্থাৎ তীযূসীস যখন নিজের পরিচয় গোপন রাখার উদ্দেশ্যে ছদ্মবেশে গুহা থেকে বের হন এবং নগরে প্রবেশ করেন তখন তা তাঁর নিকট অপরিচিত ঠেকে। নগরবাসীরা যেই তাকে দেখে অপরিচিত বোধ করে। তার আকার-আকৃতি কথাবার্তা এবং তার মুদ্রা সবই নগরবাসীর নিকট অপরিচিত ও আশ্চর্যজনক ঠেকে।

কথিত আছে যে, তারা তাকে তাদের রাজার নিকট নিয়ে যায় এবং তারা তাকে গুপ্তচর বলে সন্দেহ করে। কেউ কেউ তাকে শক্তিশালী শত্রু মনে করে তার ক্ষতিকর আক্রমণেরও আশংকা করেছে। কতক ঐতিহাসিকের মতে, তিনি তখন তাদের নিকট থেকে পালিয়ে যান। আর কতক ঐতিহাসিকের মতে, তিনি নগরবাসীকে তাঁর নিজের ও সাথীদের অবস্থার বিবরণ দেন। অতঃপর তারা তার সাথে তাদের অবস্থান ক্ষেত্রের দিকে রওয়ানা হয়, যাতে তিনি তাদেরকে নিজেদের অবস্থানস্থল দেখিয়ে দেন। নগরবাসী গুহার নিকট এসে পৌঁছার পর তীযুসীস সর্বাগ্রে তার সাথীদের নিকট প্রবেশ করেন। তিনি নিজেদের প্রকৃত অবস্থা এবং নিদ্রার মেয়াদ সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেন। তখন তারা উপলব্ধি করে নেয় যে, মূলত এটি মহান আল্লাহর নির্ধারিত একটি বিষয়। কথিত আছে যে, এরপর তাঁরা আবার নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়েন। মতান্তরে এরপর তাদের ইন্তিকাল হয়ে যায়।

ঐ নগরবাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ঐ গুহাটি খুঁজে পায়নি। গুহাবাসীদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে অনবহিত রেখে দেন। কেউ কেউ বলেন যে, গুহাবাসীদের ব্যাপারে তাদের মনে ভীতির সৃষ্টি হওয়ার দরুণ গুহায় প্রবেশ করতে পারেনি। গুহাবাসীদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে বিষয়ে নগরবাসীদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। তাদের একদল বলল,

ابۡنُوۡا عَلَیۡہِمۡ بُنۡیَانًا

তাদের উপর সৌধ নির্মাণ করে দাও। অর্থাৎ গুহামুখ বন্ধ করে দাও, যাতে তারা সেখান থেকে বের হতে না পারে। বা কেউ তাদেরকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের নিকট যেতে না পারে।

অপর দল বলল, আর এদের মতই প্রবল ছিল।

لَنَتَّخِذَنَّ عَلَیۡہِمۡ مَّسۡجِدًا

আমরা অবশ্যই ওদের উপর মসজিদ নির্মাণ করব। অর্থাৎ ইবাদতখানা তৈরি করব। এ সকল পূণ্যবান লোকদের পাশাপাশি থাকার কারণে তা বরকতময় হয়ে থাকবে। পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে এরূপ মসজিদ নির্মাণের রেওয়াজ প্রচলিত ছিল। আমাদের শরীয়তে এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা হল, ঐ হাদীস যা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেনঃ

لَعَنَ اللَّهُ قَوْمًا اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‏ "‏

‘আল্লাহ তা'আলার লানত ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের ওপর, তারা তাদের নবীদের কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করেছে। ওরা যা করেছে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর উম্মতদেরকে তা না করার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ کَذٰلِکَ اَعۡثَرۡنَا عَلَیۡہِمۡ لِیَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ وَّ اَنَّ السَّاعَۃَ لَا رَیۡبَ فِیۡہَا

—এবং আমি মানুষকে এভাবে তাদের বিষয় জানিয়ে দিলাম—যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। (১৫ঃ ২১)

বহু তাফসীরকার বলেছেন যে, এর অর্থ হল যাতে লোকজন জানতে পারে যে, পুনরুত্থান সত্য এবং কিয়ামত অনুষ্ঠানে কোন সন্দেহ নেই। মানুষ যখন অবগত হবে যে, গুহাবাসিগণ তিনশ' বছরেরও অধিককাল ধরে নিদ্রামগ্ন ছিল তারপর কোন প্রকারের বিকৃতি ছাড়া যে অবস্থায় ছিলেন ঠিক সে অবস্থায়ই জাগ্রত হয়ে উঠেন। তখন তারা উপলব্ধি করতে পারবে যে, মহান সত্তা তাদেরকে কোন পরিবর্তন ছাড়া অক্ষুন্ন রাখার ক্ষমতা রাখেন, তিনি নিশ্চয়ই কীটদষ্ট ও বিচূর্ণ অস্থি বিশিষ্ট মানবদেহকে মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত করার ক্ষমতা রাখেন। এটি এমন একটি বিষয় যাতে ঈমানদারগণ কোনই সন্দেহ পোষণ করে না।

اِنَّمَاۤ اَمۡرُہٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَیۡئًا اَنۡ یَّقُوۡلَ لَہٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ

‘তার ব্যাপার শুধু এই, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তিনি সেটিকে বলেন হও, ফলে তা হয়ে যায়।' (৩৬ ইয়াসীনঃ ৮২)

অবশ্য আয়াতের ব্যাখ্যা এমনও হতে পারে যে, ‘যাতে তারা জানতে পারে’ বলতে গুহা বাসীগণকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তাদের নিজেদের সম্পর্কে তাদের অবগত হওয়াটা তাদের সম্পর্কে অন্যের অবগত হওয়া অপেক্ষা অধিকতর প্রভাব বিস্তারকারী। আবার এমনও হতে পারে যে, আয়াতে তারা জানতে পারে বলতে সকলকেই বুঝানো হয়েছে। এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

سَیَقُوۡلُوۡنَ ثَلٰثَۃٌ رَّابِعُہُمۡ کَلۡبُہُمۡ ۚ وَ یَقُوۡلُوۡنَ خَمۡسَۃٌ سَادِسُہُمۡ کَلۡبُہُمۡ رَجۡمًۢا بِالۡغَیۡبِ ۚ وَ یَقُوۡلُوۡنَ سَبۡعَۃٌ وَّ ثَامِنُہُمۡ کَلۡبُہُمۡ

‘কেউ বলবে ওরা ছিল তিনজন, ওদের চতুর্থটি ছিল ওদের কুকুর এবং কেউ বলে ওরা ছিল পাঁচজন, ওদের ষষ্ঠটি ছিল ওদের কুকুর। অজানা বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে। আবার কেউ কেউ বলবে, ওরা ছিল সাতজন, ওদের অষ্টমটি ছিল ওদের কুকুর।’ (সুরা কাহফঃ ২২) তাদের সংখ্যা সম্পর্কে মানুষের তিনটি অভিমতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম দুটো অভিমত দুর্বল সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তৃতীয়টিকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এতে বুঝা যায় তৃতীয় অভিমতটিই যথার্থ। এছাড়া অন্য কোন মত থাকলে তাও উল্লেখিত হতো। এ তৃতীয় মতটি যথার্থ না হলে তাও দুর্বল বলে চিহ্নিত করা হতো। তাই তৃতীয় মতটিই সঠিক। এ জাতীয় বিষয়ে বিতর্কে যেহেতু কোন উপকারিতা নেই সেহেতু আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল (স)-কে এই আদব শিক্ষা দিয়েছেন যে, মানুষ যখন এ জাতীয় বিষয়ে মতভেদ করবে তখন তিনি যেন বলেন, ‘আল্লাহই ভাল জানেন।’ এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেন,

قُلۡ رَّبِّیۡۤ اَعۡلَمُ بِعِدَّتِہِمۡ مَّا یَعۡلَمُہُمۡ اِلَّا قَلِیۡلٌ

“বল আমার প্রতিপালকই ওদের সংখ্যা ভাল জানেন। ওদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে।”

فَلَا تُمَارِ فِیۡہِمۡ اِلَّا مِرَآءً ظَاہِرًا

“সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি ওদের বিষয়ে বিতর্ক করবে না।” অর্থাৎ সহজ ও স্বাভাবিক আলোচনা করুন। এ জাতীয় বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হবেন না। আর তাদের সম্বন্ধে কোন মানুষকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। এ কারণে শুরুতে আল্লাহ তা'আলা তাদের সংখ্যা অস্পষ্ট রেখেছেন।

আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ

اِنَّہُمۡ فِتۡیَۃٌ اٰمَنُوۡا بِرَبِّہِمۡ

“ওরা ছিল কয়েকজন যুবক, ওরা ওদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল।” তাদের সংখ্যা বর্ণনা যদি সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হত তবে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল বিষয়ে অবগত মহান আল্লাহ তাআলা সূরার প্রারম্ভেই ওদের সংখ্যার বিবরণ দিতেন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَ لَا تَقُوۡلَنَّ لِشَایۡءٍ اِنِّیۡ فَاعِلٌ ذٰلِکَ غَدًاـ اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰہُ

“কখনও তুমি কোন বিষয়ে বলবে না, আমি এটি আগামীকাল করব” ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ কথাটি না বলে। এটি একটি উচ্চস্তরের শিষ্টাচার যা আল্লাহ এ আয়াতে শিক্ষা দিয়েছেন এবং আপন সৃষ্টিকুলকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। অর্থাৎ কেউ যদি বলতে চায় যে, অবিলম্বে আমি এ কাজটি করব তবে তার জন্যে শরীয়তের বিধান এই যে, সে ‘ইনশাআল্লাহ' বলবে। যাতে এতে তার সুদৃঢ় সংকল্প প্রকাশ পায়। কারণ আগামীকাল কি হবে তা তো বান্দা জানে না। সে এটাও জানে না যে, সে যে কাজটি করার সংকল্প করেছে তা তার তাকদীরে আছে কিনা। এই ইনশাআল্লাহ শব্দটি শর্ত বলে গণ্য হবে না, বরং এটি তার দৃঢ় সংকল্প বলেই গণ্য হবে। এ জন্য হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলেন, বাক্যে ইনশাআল্লাহ শব্দটি এক বছর মেয়াদের মধ্যে যুক্ত করা চলে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এটি শীঘ্রতা জ্ঞাপক অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন ইতিপূর্বে হযরত সুলায়মান (আ)-এর ঘটনায় আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আজ রাতে আমি ৭০ জন স্ত্রীর সাথে মিলিত হবো। তারা প্রত্যেকে একটি করে ছেলে সন্তান প্রসব করবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। তখন নেপথ্যে তাঁকে বলা হয়েছিল, “ইনশাআল্লাহ’ বলুন! তিনি তা বলেননি। অতঃপর তিনি সহবাস করলেন। তাতে মাত্র একজন স্ত্রী একটি অসম্পূর্ণদেহী ছেলে প্রসব করেন।

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ

والذي بيده نفسي لَوْ قَالَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ، لَمْ يَحْنَثْ وَكَانَ دَرَكًا فِي حَاجَتِهِ

—সে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, হযরত সুলায়মান (আ) যদি ইনশাআল্লাহ বলতেন, তবে তাঁর শপথ ভঙ্গ হত না এবং তাঁর মনোবাঞ্ছাও পূর্ণ হত।

আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ

وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ اِذَا نَسِیۡتَ

“যদি ভুলে যাও তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর!” কারণ ভুলে যাওয়াটা কোন কোন সময় শয়তানের প্রভাবে হয়ে থাকে। তখন আল্লাহর স্মরণ অন্তর থেকে প্রভাব বিদূরিত করে দেয়। ফলে যা ভুলে গিয়েছিল তা স্মরণে আসে।

আল্লাহর বাণীঃ

وَ قُلۡ عَسٰۤی اَنۡ یَّہۡدِیَنِ رَبِّیۡ لِاَقۡرَبَ مِنۡ ہٰذَا رَشَدًا

—এবং বল সম্ভবত আমার প্রতিপালক আমাকে এটি অপেক্ষা সত্যের নিকটতর পথ নির্দেশ করবেন।”

অর্থাৎ যখন কোন বিষয়ে অস্পষ্টতা এসে যায় এবং লোকজনের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয় তবে আপনি আল্লাহ অভিমুখী হোন, তিনি বিষয়টিকে আপনার জন্যে সহজ ও স্বাভাবিক করে দিবেন। এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ لَبِثُوۡا فِیۡ کَہۡفِہِمۡ ثَلٰثَ مِائَۃٍ سِنِیۡنَ وَ ازۡدَادُوۡا تِسۡعًا

“তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশ’ বছর, আরও নয় বছর।” তাদের সুদীর্ঘ কাল গুহায় অবস্থানের কথা উল্লেখ তাৎপর্যবহ। তাই আল্লাহ তাআলা এর উল্লেখ করেছেন। এখানে অতিরিক্ত নয় বছর হল চান্দ্র মাসের হিসাবে। সৌর বছরের ৩০০ বছর পূর্ণ করতে চান্দ্র মাসের হিসেবে অতিরিক্ত নয় বছরের প্রয়োজন হয়। কারণ প্রতি ১০০ সৌর বছর থেকে ১০০ চান্দ্র বছরের সময়কাল তিন বছর কম হয়ে থাকে।

قُلِ اللّٰہُ اَعۡلَمُ بِمَا لَبِثُوۡا

“বল তারা কতকাল ছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন।” অর্থাৎ এ জাতীয় কোন বিষয়ে যদি আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করে আর আপনার নিকট সে বিষয়ে কোন লিখিত প্রমাণ না থাকে তবে বিষয়টি মহান আল্লাহর প্রতি সোপর্দ করে দিন।

لَہٗ غَیۡبُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ

“আকাশরাজি ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই।” অর্থাৎ অদৃশ্য বিষয়ে অবগত তিনিই, তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে তা অবগত করান, অন্য কাউকে নয়।

اَبۡصِرۡ بِہٖ وَ اَسۡمِعۡ .

“তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।” অর্থাৎ তিনি সবকিছুকে যথাস্থানে স্থাপন করেন। কারণ তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে এবং সেগুলোর চাহিদা ও প্রয়োজন সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত।

তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন,

مَا لَہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہٖ مِنۡ وَّلِیٍّ ۫ وَّ لَا یُشۡرِکُ فِیۡ حُکۡمِہٖۤ اَحَدًا

“তিনি ব্যতীত ওদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।" অর্থাৎ রাজত্বে, ক্ষমতায় ও কর্তৃত্বে আপনার প্রতিপালক একক, অনন্য। তাঁর কোন শরীক ও অংশীদার নেই।”

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন