hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৪৩
বনী ইসরাঈল থেকে ঘটনা বর্ণনায় অনুমতি প্রসঙ্গে
ইমাম আহমদ (র) আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত নবী করীম (সা) ইরশাদ করেছেনঃ

حدثوا عني ولا تكذبوا على ومن كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار وحدثوا عن بني اسرائيل ولا حرج

“আমার থেকে তোমরা হাদীস বর্ণনা কর। আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, সে যেন জাহান্নামে তার আবাস স্থির করে নেয়। বনী ইসরাঈল থেকে বর্ণনা কর, তাতে কোন দোষ নেই।”

আহমদ (র) আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে আরো বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, আমার থেকে তোমরা কুরআন ব্যতীত অন্যকিছু লিখবে না। আমার থেকে কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু কেউ লিখে থাকলে তা মুছে ফেলবে। তিনি আরও বলেছেন, ইসরাঈলীদের থেকে বর্ণনা করতে পার, তাতে দোষ নেই। আমার থেকে হাদীস বর্ণনা কর। আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে- (বর্ণনাকারী হাম্মাম বলেন-আমার মনে হয় রাসূলুল্লাহ (সা) ইচ্ছাকৃত শব্দটি বলেছেন)। সে যেন জাহান্নামকেই তার আবাসস্থলরূপে নির্ধারণ করে নেয়। (মুসলিম, নাসাঈ)।

আবু আওয়ানা…… যায়দ ইবন আসলাম সূত্রেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ বলেন, হাম্মাম এতে ভুল করেছেন। আসলে এ উক্তিটি আবু সাঈদের। তিরমিযী (র) সুফিয়ান…… যায়দ ইবন আসলাম সূত্রে এ হাদীসের অংশ বিশেষ মারফু রূপে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইমাম আহমদ (র) ....... আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছেনঃ

بلغوا عنى ولو اية

“তোমরা একটি আয়াত হলেও আমার থেকে প্রচার কর।” বনী ইসরাঈল থেকে বর্ণনা করতে পার, তাতে দোষ নেই। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করবে, সে তার বাসস্থান জাহান্নামে ধরে নিবে। অনুরূপভাবে ইমাম আহমদ (র) ইমাম বুখারী ও ইমাম তিরমিযী (র) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী (র) বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ পর্যায়ের।

আবূ বকর বাযযার ...... আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) প্রায়ই রাতের বেলা আমাদের নিকট ইসরাঈলীদের ঘটনাবলী বর্ণনা করতেন। এভাবে ভোর হয়ে যেত। গুরুত্বপূর্ণ নামায ব্যতীত অন্য কোন কাজে আমরা ঐ মজলিস থেকে উঠতাম না। আবু দাউদেও বর্ণনাটি রয়েছে।

বাযযার ....... ইমরান ইবন হুসায়ন (রা) সূত্রে অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে বাযযারের মতে, হাদীসটি ইমরান ইবন হুসায়ন (রা) থেকে নয় বরং আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকেই বর্ণিত।

আহমদ (র) ....... আবু হুরায়রা (রা) থেকে এ মর্মে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং তার সনদ সহীহ বলে উল্লেখ করেন।

হাকিম আবু ইয়ালা....... জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, তোমরা বনী ইসরাঈল সূত্র থেকে বর্ণনা কর, কেননা তাদেরকে উপলক্ষ করে বহু বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলতে শুরু করলেন যে, একদা বনী ইসরাইলের একদল লোক পথে বের হয়। তারা এসে একটি গোরস্থানে পৌঁছে। তারা পরস্পর বলাবলি করে যে, আমরা যদি দু’রাকআত নামায আদায় করে আল্লাহর নিকট দোয়া করি, অতঃপর এ গোরস্থান থেকে একজন মৃত ব্যক্তি বেরিয়ে আসে, তাহলে আমরা তাকে মৃত্যুর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম। তারা নামায অন্তে দোয়া করে। তখনই একজন লোক কবর থেকে মাথা তোলে। তার দু চক্ষুর মধ্যখানে সিজদার চিহ্ন। সে বলল, আপনারা আমার কাছে কি চান? একশ বছর আগে আমার মৃত্যু হয়েছে। এখনও আমার দেহ থেকে মৃত্যুর তাপ ঠাণ্ডা হয়নি। আপনারা আল্লাহর নিকট দোয়া করুন আল্লাহ যেন আমাকে আমার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেন। এটি একটি গরীব পর্যায়ে হাদীস। বস্তুত বনী ইসরাঈল থেকে ঘটনা বর্ণনা জায়েয সাব্যস্ত হলেও তাদ্বারা ঐ ঘটনাবলীর কথাই বুঝাবে, যেগুলোর যথার্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে সকল ঘটনাও বর্ণনা আমাদের নিকট সুরক্ষিত সত্যের বিপরীত ও বিরোধী হওয়ার প্রেক্ষিতে বাতিল ও অসত্য বলে প্রমাণিত। কিংবা সন্দেহমূলক হবে সেগুলো অবশ্যই পরিত্যাজ্য ও প্রত্যাখ্যাত হবে। ওগুলোর ওপর নির্ভর করা যাবে না।

উপরন্তু ইসরাঈলী কোন বর্ণনা জায়েয হলেও তার বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস স্থাপন জরুরী নয়। কেননা, এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কিতাবীরা হিব্রু ভাষায় তাওরাত পাঠ করে এবং মুসলমানদের নিকট তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ

لا تصيرقوا أهل الكتب ولا تكبوهم وقولوا أمنا بالله وما أنزل الينا وما أنزل اليگم وا لهنا والهكم واحد ونحن له مسلمون -

“তোমরা ইয়াহুদী-নাসারাদেরকে সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করবে না; বরং তোমরা বলবে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, আমাদের নিকট যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি, আমাদের ইলাহ এবং তোমাদের ইলাহ এক, অভিন্ন। আমরা তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণকারী।” ইমাম বুখারী (র) এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ (র)...... আবু নামলা আনসারীর পিতা সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। তখন সেখানে একজন ইয়াহুদী উপস্থিত হয়। সে বলে, ‘হে মুহাম্মদ (সা)! এ লাশটি কি কথা বলতে পারবে?’ রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘আল্লাহ ভাল জানেন।’ ইয়াহুদী বলল, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এ লাশটি কথা বলবে।’ রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘আহলি কিতাব তথা ইয়াহুদী- নাসারাগণ তোমাদের নিকট কোন কথা বললে তোমরা তাদেরকে সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করো না। বরং তোমরা এ কথা বলবে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, তার কিতাব সমূহের প্রতি, এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি।’ এতটুকু বলার ফলে তারা সত্যবাদী হয়ে থাকলে তোমরা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলছ না। আর তারা মিথ্যাবাদী হয়ে থাকলে তোমরা তাদেরকে সত্যবাদী বলছ না।’ হাদীসটি ইমাম আহমদ (র) এককভাবে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ .......জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, উমর ইবন খাত্তাব (রা) একদা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি কিতাব। আহলি কিতাবের জনৈক ব্যক্তি থেকে তিনি তা পেয়েছিলেন। তিনি সেটি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে পাঠ করে শুনান। রাসূলুল্লাহ (সা) ক্রুদ্ধ হলেন এবং বললেন, ‘হে খাত্তাবের পুত্র। তোমরা কি এ শরীয়ত সম্পর্কে সন্দিহান? যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, আমি তোমাদের নিকট নিয়ে এসেছি সুস্পষ্ট আলোকময় দীন। তোমরা ওদের নিকট কিছু জানতে চাইবে না। তাহলে তারা হয়ত তোমাদের কে সত্য তথ্য দিবে কিন্তু তোমরা সেটাকে মিথ্যা গণ্য করবে। আবার তারা হয়ত তোমাদের কে অসত্য তথ্য দিবে, কিন্তু তোমরা তা সত্য বলে মেনে নেবে।’

لوان موسي كان حيا ما وسعه الأ أن يتبعني

‘যে পবিত্র সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার কসম, মূসা (আ)-ও যদি এখন জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ না করে তার কোন উপায় থাকতো না।’ এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (র) এককভাবে উদ্ধৃত করেছেন। অবশ্য এর সনদ ইমাম মুসলিম (র)-এর শর্ত পূরণ করে।

এ সব হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইসরাঈলীরা তাদের প্রতি নাযিলকৃত আসমানী কিতাবকে পরিবর্তন ও বিকৃত করেছে। এসবেব ভুল ব্যাখ্যা করেছে এবং এগুলোর অপব্যবহার করেছে। বিশেষত সে সব আরবী ভাষ্যের ক্ষেত্রে যেগুলো তারা উদ্ধৃত করে থাকে, এগুলো সম্পর্কে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। ঐ কিতাবগুলো তাদেরই ভাষায় নাযিল হওয়া সত্ত্বেও তারা এর ভুল ও বিকৃত ব্যাখ্যা করে থাকে। এমতাবস্থায় অন্য ভাষায় তার সঠিক ব্যাখ্যা তারা কেমন করে করবে? এ জন্যে তাদের আরবী উদ্ধৃতিতে প্রচুর ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। তা ছাড়া তাদের অসৎ উদ্দেশ্য ও অশুভ মনোভাব তো রয়েছেই। যে ব্যক্তি তাদের বর্তমান কিতাবগুলো মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করবে এবং তাদের ভুল ব্যাখ্যা ও জঘন্য বিকৃতিগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে তাদের বিকৃতি ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন তার নিকট স্পষ্টভাবে ধরা পড়বে। আল্লাহই সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী।

তাওরাত কিতাবের কিছু অংশ তারা প্রকাশ করে। কিন্তু তারা অধিকাংশই তা গোপন রাখে। এর যতটুকু তারা প্রকাশ করে তার মধ্যে রয়েছে সত্য বিকৃতি ও ভুল ব্যাখ্যা। যারা ওদের বক্তব্য, প্রকাশিত বিবৃতি, অপ্রকাশিত তথ্য এবং শব্দ ও অর্থগত দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ ভাষ্যগুলো পর্যালোচনা করবে, তাদের নিকট তা ধরা পড়বে।

ইসরাঈলীদের থেকে যিনি সর্বাধিক ও সর্বোত্তম ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন তিনি হচ্ছেন কা’ব আল-আহবার। উমর (রা)-এর যুগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আহলি কিতাব থেকে তিনি কিছু কিছু বিষয় বর্ণনা করতেন। ইসলামের কষ্টিপাথরে সত্যের অনুকূল হওয়ার এবং তার মনকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে উমর (রা) তাঁর কতক বর্ণনা ভাল বলে গ্রহণ করতেন। এর ফলে বহু মানুষ কাব আল-আহবার থেকে তার বর্ণনাগুলো সংগ্রহ করার সুযোগ পায়। তিনিও সে সকল বিষয়াদি ব্যাপকভাবে বর্ণনা করেছেন, যেগুলোর অধিকাংশেরই কানাকড়ি মূল্য নেই। এর কতক নিশ্চিতভাবেই অসত্য আর কতক সত্য ও বিশুদ্ধ। আমাদের নিকট প্রমাণিত সত্য এ গুলোকে সমর্থন করে।

ইমাম বুখারী (র) হাযীদ ইবন আবদুর রহমান সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি মুআবিয়া (রা)-কে মদীনা শরীফে একদল কুরায়শ বংশীয় লোকের নিকট হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন। প্রসঙ্গক্রমে কাব আল আহবারের কথা উল্লেখিত হয়। মুআবিয়া (রা) বলেন, ‘আহলি কিতাব থেকে যারা বর্ণনা করেছেন, তাদের মধ্যে কা’ব আল-আহবার সর্বাধিক সঠিক ও সত্য তথ্য বর্ণনাকারী।’ এতদসত্ত্বেও আমরা তার বর্ণনায় অসত্য তথ্য দেখতে পাই। অর্থাৎ তাঁর অজ্ঞাতসারেই এরূপ ঘটেছে।

ইমাম বুখারী (র)...... হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘ইয়াহুদী নাসারাদের নিকট লোকে কোন বিষয়ে জানতে চায় কিভাবে? অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলের প্রতি যে কিতাব নাযিল করেছেন তোমাদের সেই কিতাব তো সর্বশেষ আসমানী কিতাব। তোমরা এটি তিলাওয়াত করে থাকো— যা খাঁটি ও নির্ভেজাল।’

আল্লাহ তাআলা তো তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইয়াহুদী-নাসারাগণ তাদের কিতাব বিকৃত ও পরিবর্তন করেছে এবং তাদের নিজ হাতে কিতাব লিখে তা আল্লাহর কিতাব বলে চালিয়ে দিয়েছে, স্বল্প মূল্যের পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। তোমাদের নিকট যে জ্ঞান এসেছে তা কি তোমাদের কে ওদের নিকট কিছু জিজ্ঞেস করতে বারণ করেনি? আল্লাহর কসম, আমি তো ওদের কাউকেই তোমাদের প্রতি নাযিলকৃত কিতাব সম্পর্কে কিছু জানতে চাইতে দেখি না।

ইবন জারীর (র) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) বলেছেন, ‘তোমরা ইয়াহুদী নাসারাদের নিকট কিছু জানতে চেয়ে না। কারণ তারা তোমাদের কে সত্য পথ দেখাবে না। তারা নিজেরাই তো পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাদের কথা শুনলে তোমরা হয়ত সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বলে ধারণা করবে।’ আল্লাহই ভাল জানেন।

বনী ইসরাঈলের তাপস জুরায়জের ঘটনা

ইমাম আহমদ (র)....... আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘তিনজন ছাড়া মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় আর কেউ কথা বলেনি। ১। ঈসা ইবন মরিয়ম (আ), ২। বনী ইসরাঈলের একজন ইবাদতগুজার লোক, যার নাম ছিল জুরায়জ। একটি ইবাদতখানা তৈরি করে তিনি ওখানে ইবাদত করতেন। জুরায়জের ইবাদতের কথা বনী ইসরাঈলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাদেরই একজন ব্যাভচারিণী বলে যে, তোমরা চাইলে আমি ওকে জব্দ করে দিতে পারি। লোকজন বলল, ঠিক আছে, আমরা তাই চাই। সে তখন জুরায়জের নিকট এসে নিজেকে তার কাছে পেশ করল। জুরায়জ সেদিকে তাকিয়েও দেখলেন না। জুরায়জের ইবাদতখানার পাশে একটি রাখাল তার বকরী চরাতো। সে তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। তাতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। যথাসময়ে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে। লোকজন জিজ্ঞেস করল, এটি কার সন্তান? সে বলল, জুরায়জের। তারা তখন জুরায়জের ইবাদতখানায় চড়াও হয়। তারা তাকে টেনে নামায়। এমনকি তারা গালাগালি করে, প্রহার করে তার ইবাদত খানাটি ভেঙ্গে দেয়। তখন জুরায়জ বললেন, ব্যাপার কি? তারা বলল, তুমি এ স্ত্রী লোকটির সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছ। ফলে সে একটি ছেলে প্রসব করেছে। জুরায়জ বললেন, সে ছেলেটি কোথায়? তারা বলল, এই যে। জুরায়জ তখন উঠে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেন। আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। তারপর ছেলেটির নিকট গিয়ে আঙ্গুলে খোঁচা দিয়ে বললেন, ‘হে বালক! আল্লাহর কসম, তোমার জন্মদাতা কে?’ সে বলল, ‘আমি রাখালের পুত্র।’ এটা শুনে সবাই জুরায়জের দিকে অগ্রসর হয় এবং তাকে চুমো খেতে থাকে। তারা বলে, ‘আমরা সোনা দিয়ে আপনার ইবাদতখানা তৈরি করে দেব।’ জুরায়জ বললেন, ‘না, তা আমার দরকার নেই। পূর্বে যেমন ছিল তেমন করে মাটি দিয়েই তৈরি করে দাও!’ রাসূলুল্লাহ। (সা) বললেন, ‘তৃতীয়জন হল জনৈকা মহিলা তার শিশুকে কোলে নিয়ে দুধ পান করাচ্ছিল। সেখান দিয়ে একজন সুসজ্জিত ঘোড় সওয়ার অতিক্রম করছিল। মহিলাটি বলল, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে এ লোকের ন্যায় বানিয়ে দিন!’ এটা শুনে শিশুটি তার মায়ের স্তন ছেড়ে দেয় এবং ঘোড় সওয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে ওর মত করবেন না।’ এরপর সে পুনরায় মায়ের স্তনে ফিরে আসে এবং তা চুষতে থাকে। আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আমি যেন এখনও দেখছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) শিশুর ঐ কাজটি দেখিয়ে দিচ্ছেন এবং তিনি তাঁর নিজের আঙ্গুল মুখে পুরে তা চুষছেন।

এরপর মহিলাটি একজন ক্রীতদাসীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল। লোকজন তাকে প্রহার করছিল। মহিলাটি বলল, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে ওই ক্রীতদাসীর ন্যায় করবেন না।’ রাসূলুল্লাহ (সা) বলছিলেন যে, তখনই শিশুটি তার মায়ের স্তন ছেড়ে দেয় এবং ক্রীতদাসীর প্রতি তাকিয়ে বলে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে এই ক্রীতদাসীর মত করবেন।’ তখন মা-ছেলের মধ্যে এরূপ কথোপকথন শুরু হয়।

মা-টি বলে, ‘আমার পেছন দিয়ে সুসজ্জিত অশ্বারোহী যাচ্ছিল, আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে এই এর মত বানাবেন। তখন তুমি বললে যে, হে আল্লাহ! আমাকে ওর মত বানাবেন না। তারপর আমি এই ক্রীতদাসীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে ঐ ক্রীতদাসীর মত বানাবেন না। তুমি বললে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে ওর মত বানাবেন।’ এর রহস্য কি?’ জবাবে শিশুটি বলল, ‘আম্মাজান, অশ্বারোহী সুসজ্জিত ব্যক্তিটি একজন প্রতাপশালী ও অত্যাচারী লোক। আর ওই ক্রীতদাসীটি একজন অসহায় মহিলা। তারা তাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিচ্ছে। অথচ সে তা করেনি। তারা বলছে, তুই চুরি করেছিস! অথচ সে চুরিও করেনি। সে সর্বাবস্থায় বলছিল— আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট।’

ইমাম বুখারী (র) ‘আম্বিয়া’ সংক্রান্ত অধ্যায়ে এবং জুলুম সংক্রান্ত অধ্যায়ে এবং মুসলিম (র) আদব অধ্যায়ে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ (র)........ আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘জুরায়জ একদা তার ইবাদতখানায় ইবাদত করছিলেন, এমন সময় সেখানে তার মা এসে হাজির হন। তিনি বলেন, ‘হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, আমার সঙ্গে কথা বল!’ হাদীস বর্ণনার সময় রাসূলুল্লাহ (সা) কিভাবে তাঁর ডান ভ্রু-এর ওপর হাত রেখেছিলেন আবু হুরায়রা (রা) তা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। জুরায়জের মা যখন হাজির হন তখন জুরায়জ ছিলেন নামাযের মধ্যে। মনে মনে তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি এখন কি করি, একদিকে মা অপর দিকে নামায।’ শেষ পর্যন্ত তিনি নামাযকেই প্রাধান্য দেন। তার মা তখন ফিরে চলে যায়। এরপর তার মা পুনরায় তার নিকট আসেন। ঘটনাক্রমে তখনও তিনি নামাযে রত ছিলেন। মা ডেকে বললেন, ‘হে জুরায়জ! আমি তোমার মা। আমার সাথে কথা বল।’ তিনি মনে মনে বললেন, হে আল্লাহ। একদিকে নামায, অপর দিকে আমার মা। আমি তখন কি করি? শেষ পর্যন্ত তিনি নামাযকেই প্রাধান্য দিলেন।

তখন মা বললেন, ‘হে আল্লাহ! এই জুরায়জ, আমার পুত্র। আমি তার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম সে আমার সাথে কথা বলেনি। হে আল্লাহ! কোন ব্যভিচারিণীর হাতে লাঞ্ছিত না করে তার মৃত্যু দিবেন না। কোন ব্যভিচারিণী তাকে ফাঁদে ফেলার জন্যে ডাকলে হে আল্লাহ! আপনি তাকে ফাঁদে ফেলার ব্যবস্থা করে দিবেন।’

একজন রাখাল জুরায়জের ইবাদতখানার পাশে রাত্রি যাপন করত। এক রাতে এক মহিলা বেরিয়ে আসে। রাখাল তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। ফলে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে। লোকজন বলে ‘এটি কার সন্তান?’ সে বলল, ‘এই ইবাদতখানার মালিকের সন্তান।’ লোকজন তাদের কুঠারাদি নিয়ে জুরায়জের ইবাদত খানায় উপস্থিত হয় এবং চীৎকার করে তাঁকে ডাকতে থাকে। তিনি নিরুত্তর রইলেন। এরপর তারা তাঁর ইবাদতখানাটি ভাঙ্গতে শুরু করে। তিনি বেরিয়ে তাদের নিকট আসেন। তারা বললো, এই মহিলাটির সাথে কথা বল। তিনি বললেন, আমি তো তাকে হাসতে দেখছি। তারপর তিনি শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘তোমার পিতা কে?’ জবাবে শিশুটি বলল, ‘আমার পিতা বকরীর রাখাল।’ তখন তারা বলল, “হে জুরায়জ। তোমার যে ইবাদতখানাটি আমরা নষ্ট করেছি তা আমরা সোনা-রূপা দিয়ে নির্মাণ করে দিব।’ তিনি বললেন, ‘না, বরং পূর্বে যেমন ছিল তেমন করে তৈরি করে দাও।’ তখন তারা তাই করলো। ইমাম মুসলিম (র) ‘অনুমতি প্রার্থনা’ পর্বে এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।

ইমাম আহমদ (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে এ মর্মে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে রাখাল পুরুষের স্থলে রাখাল স্ত্রী লোকের উল্লেখ রয়েছে। তাতে বর্ণিত হয়েছে যে, এক রাখাল বালিকা নিজেদের বকরী চরাত। সে এসে জুরায়জের ইবাদতখানার ছায়ায় বসত। একদিন সে কোন এক লোকের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং তাতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। সে জনতার হাতে ধরা পড়ে যায়। তখনকার বিধান ছিল ব্যভিচারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হত। লোকজন বলল, ‘এ সন্তানটি কার?’ রাখাল মহিলাটি বলল, ‘ইবাদতখানার মালিক জুরায়জের।’ লোকজন তাদের কুঠারাদি নিয়ে ইবাদতখানার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। তারা বললো, ‘হে জুরায়জ, হে ভণ্ড ইবাদতকারী! বেরিয়ে আয়।’ জুরায়জ নেমে আসতে অস্বীকৃতি জানালো এবং নামাযে রত রইলেন। লোকজন তার ইবাদতখানা ভাঙা শুরু করে। এ অবস্থা দেখে তিনি নিচে নেমে আসেন। তারা জুরায়জ এবং উক্ত মহিলার গলায় রশি বেঁধে দুজনকে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরাতে থাকে।

ইত্যবসরে জুরায়জ তাঁর আঙ্গুলী মহিলার পেটে রেখে বলেন, ‘হে শিশু তোমার পিতা কে?’ গর্ভস্থিত শিশু বলে ওঠে, ‘আমার পিতা বকরীর রাখাল ওমুক ব্যক্তি।’ লোকজন তখন জুরায়জকে চুমু খেতে শুরু করে। তারা বলে যে, ‘আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমরা সোনা-রুপা দিয়ে আপনার ইবাদতখানা তৈরি করে দেব।’ তিনি বললেন, ‘না, দরকার নেই। বরং পূর্বে যেরূপ ছিল সেইরূপেই পুনঃ নির্মাণ করে দাও।’ এটি একটি গরীব পর্যায়ের হাদীস। এর সনদ ইমাম মুসলিমের শর্ত পূরণ করে।

উল্লেখিত তিনজন ব্যক্তি মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় কথা বলেছেন। ঈসা ইবন মরিয়ম (আ) তাঁর ঘটনা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। জুরায়জের ইবাদত খানার পার্শ্ববর্তী রাখালের ঔরসে যেনাকারিণীর পুত্র। যা এইমাত্র বর্ণিত হলো। তার নাম ছিল ইয়াবূস। ইমাম বুখারী (র) স্পষ্টভাবে এটি উল্লেখ করেছেন।

তৃতীয় ব্যক্তি হল দুগ্ধদানকারিণী মহিলার কোলে থাকা পুত্র। মহিলা কামনা করেছিল তার পুত্র যেন সুসজ্জিত অশ্বারোহীর মত হয়। আর পুত্র চেয়েছিল সে যেন অপবাদ প্রাপ্তা অথচ নির্দোষ মহিলার ন্যায় হয়। দাসীটি অনবরত বলছিল—“আল্লাহই আমার জন্যে যথেষ্ট। তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক।’ ইতিপূর্বে মুহাম্মদ ইবন সীরীন আবু হুরায়রা (রা) থেকে মারফু সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম আহমদ (র) হাওয়া..... আবু হুরায়রা (রা) সনদে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে দুগ্ধপোষ্য এ শিশুর ঘটনা উদ্ধত করেছেন। এ সনদটিও হাসান পর্যায়ের।

ইমাম বুখারী (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছেন যে, একজন মহিলা তার পুত্রকে দুধ পান করাচ্ছিল। এমতাবস্থায় সেখান দিয়ে যাচ্ছিল এক অশ্বারোহী। মহিলাটি এ বলে দোয়া করে, ‘হে আল্লাহ! আমার পুত্র ঐ আশ্বরোহীর মত না হওয়া পর্যন্ত তার মৃত্যু দিবেন না।’ ছেলেটি বলে উঠল, ‘হে আল্লাহ আমাকে ঐ অশ্বারোহীর মত বানাবেন না।’ তারপর পুনরায় দুধ চুষতে থাকে।

অতঃপর তারা পথে দেখল, একজন মহিলা—তাকে টেনে টেনে নেয়া হচ্ছে। আর তাকে নিয়ে সবাই হাস্য, কৌতুক ও খেলা করছে। শিশুর মাতা বলল, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে ঐ মহিলার মত বানাবেন না।’ ছেলে বলল, ‘হে আল্লাহ! আমাকে ঐ মহিলার মত বানাবেন।’ অতঃপর ব্যাখ্যা স্বরূপ ছেলেটি বলল, ‘ওই যে অশ্বারোহী সে তো কাফির। আর ঐ ক্রীতদাসী—লোকজন বলছে, সে যেনা করেছে, আর সে বলছে, আমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। তারা বলছে, সে চুরি করেছে; সে বলছে, আমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট।’ যারা মায়ের কে থাকা অবস্থায় কথা বলেছে, তাদের মধ্যে ইউসুফ (আ)-এর পক্ষে সাক্ষ্যদাতা শিশুটিও রয়েছে যা ইতিপূর্বেই আলোচিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ফিরআওন পরিবারের চুল বিন্যাসকারিণীর শিশুটিও রয়েছে। আল্লাহ ভাল জানেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন