মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
—তারা বলে, দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন! তোমরা তো এক বীভৎস কথার অবতারণা করেছ; (অর্থাৎ তোমাদের এ কথা অত্যন্ত ভয়াবহ, কুরুচিপূর্ণ ও নিরেট মিথ্যা।) এতে যেন আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতমণ্ডলী চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্যে শোভন নয়। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করেছেন, এবং কিয়ামত দিবসে তাদের সকলেই তাঁর নিকট আসবে একাকী অবস্থায়। (১৯ মারয়ামঃ ৮৮-৯৫)
উক্ত আয়াতসমূহে আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর জন্যে মোটেই শোভনীয় নয়। কেননা তিনি সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা ও মালিক এবং সব কিছু তাঁর মুখাপেক্ষী ও অনুগত। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলেই তাঁর দাস, তিনি এ সবের প্রতিপালক। তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই, আর কোন প্রতিপালকও নেই। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
—তারা জিনকে আল্লাহর শরীক করে, অথচ তিনিই ওদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর প্রতি পুত্র-কন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র মহিমান্বিত! এবং তারা যা বলে, তিনি তার ঊর্ধ্বে। তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, তাঁর সন্তান হবে কিরূপে? তার তো কোন স্ত্রী নেই? তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে তিনিই সবিশেষ অবহিত। তিনিই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই; তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত কর; তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক। তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নহেন কিন্তু দৃষ্টি শক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত। (৬ আনআমঃ ১০০-১০৩)
এখানে আল্লাহ স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তিনি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং কিরূপে তাঁর সন্তান হতে পারে? আমরা জানি, সম-শ্রেণীর দু’জনের মিলন ব্যতীত সন্তান হয় না। আর আল্লাহর সমকক্ষ, সদৃশ ও সমশ্রেণীর কেউ নেই। অতএব, তাঁর স্ত্রীও নেই। সুতরাং তার সন্তানও হতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
—বল, তিনিই আল্লাহ একক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নহেন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ-ই নেই। (১১২ ইখলাসঃ ১ - ৪)।
আল্লাহ একক’ অর্থ তিনি এমন এক অস্তিত্ব যার সত্তার কোন সদৃশ নেই। গুণাবলীর কোন দৃষ্টান্ত নেই এবং কর্মকাণ্ডের কোন উদাহরণ নেই। ( ٱلصَّمَدُ ) (আস-সামাদ) এমন মনিবকে বলা হয় যার মধ্যে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, করুণা ও সমস্ত গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে থাকে। ( لَمۡ یَلِدۡ ) তিনি কাউকে জন্ম দেননি। ( وَلَمۡ یُولَدۡ ) অর্থ পূর্বের কোন কিছু থেকে তিনি সৃষ্টি নন। ( وَلَمۡ یَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ) অর্থাৎ তার সমকক্ষ, সমপর্যায়ের ও সমান আর কেউ নেই। এ আয়াতগুলো থেকে জানা গেল যে, আল্লাহর নযীর, কাছাকাছি, তার চেয়ে উর্ধ্বে বা সমপর্যায়ের অন্য কেউ নেই। সুতরাং তাঁর সন্তান হওয়ার কোন পথই খোলা নেই। কেননা সন্তান জন্ম হয় সম-জাতীয় বা অন্তত সম-শ্রেণীর কাছাকাছি দু’জনের মাধ্যমে কিন্তু আল্লাহ তার অনেক উর্ধ্বে। অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ
—হে কিতাবীগণ! দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না ও আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বলো না। মারয়াম তনয় ঈসা মসীহ্ তো আল্লাহর রাসূল এবং তার বাণী, যা তিনি মারয়ামের নিকট প্রেরণ করেছিলেন ও তাঁর আদেশ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে ঈমান আন এবং বলো না তিন। নিবৃত্ত হও, এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর হবে। আল্লাহ তো একমাত্র ইলাহ; তাঁর সন্তান হবে তিনি এ থেকে পবিত্র। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই; কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট। মসীহ আল্লাহর বান্দা হওয়াকে কখনো হেয় জ্ঞান করে না, এবং ঘনিষ্ঠ ফেরেশতাগণও করে না। এবং কেউ তাঁর ইবাদতকে হেয় জ্ঞান করলে এবং অহংকার করলে তিনি অবশ্যই তাদের সকলকে তাঁর নিকট একত্র করবেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকার্য করে তিনি তাদেরকে পূর্ণ পুরস্কার দান করবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশী দিবেন; কিন্তু যারা হেয় জ্ঞান করে ও অহংকার করে তাদেরকে তিনি মর্মন্তুদ শাস্তি দান করবেন এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের জন্যে তারা কোন অভিভাবক ও সহায় পাবে না। (৪ নিসাঃ ১৭১ - ১৭৩)
আল্লাহ আহলে কিতাব ও তাদের অনুরূপ সম্প্রদায়কে ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ি ও অহংকার প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন। ধর্মে বাড়াবাড়ি অর্থ আকীদা-বিশ্বাস ও ক্রিয়া-কর্মে নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করা। নাসারা বা খৃষ্টান সম্প্রদায় মাসীহ্-এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও সীমা লঙ্ঘন করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের উচিত ছিল তাঁকে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করা এবং এই আকীদা পোষণ করা যে, তিনি আল্লাহর সতী বাঁদী কুমারী মারয়ামের সন্তান। ফিরিশতা জিবরাঈলকে আল্লাহ মারয়ামের নিকট প্রেরণ করেন। তিনি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী মারয়ামের মধ্যে ফুঁক দেন। এই প্রক্রিয়ায় হযরত ঈসা (আ) মারয়ামের গর্ভে আসেন। ফিরিশতার ফুঁকে মারয়ামের ভিতর যে জিনিসটি প্রবেশ করে, তা’হল রুহুল্লাহ বা আল্লাহর রূহ। এই রূহ্ আল্লাহর কোন অংশ নয় বরং আল্লাহর সৃষ্টি বা মাখলুক। আল্লাহর দিকে রূহকে সম্পর্কিত করা হয়েছে সম্মানার্থে ও গুরুত্ব প্রকাশের উদ্দেশ্যে। যেমন বলা হয়ে থাকে, বায়তুল্লাহ (আল্লাহর ঘর), নাকাতুল্লাহ (আল্লাহর উষ্ট্ৰী) আবদুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ইত্যাদি। অনুরূপ একই উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে রূহুল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহর রূহ। বিনা পিতায় জন্ম হওয়ায় হযরত ঈসাকে বলা হয়েছে রূহুল্লাহ্। তাঁকে কালেমাতুল্লাহ বা আল্লাহর কলেমাও (বাণী) বলা হয়। কেননা আল্লাহর এক কলেমার (বাণী) দ্বারাই তিনি অস্তিত্ব লাভ করেন। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ
—আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্ত সদৃশ। তাকে বলেছিলেন, হও, ফলে সে হয়ে গেল। (৩ আলে ইমরানঃ ৫৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেনঃ “তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি অতি পবিত্র। বরং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই। সব কিছু তারই একান্ত অনুগত। আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা। এর ফলে তিনি কোন কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন, তখন তার জন্য শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।” (২ বাকারাঃ ১১৬ - ১১৭)
এখানে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ইয়াহুদীরা বলে, উযায়র আল্লাহর পুত্র এবং খৃষ্টানরা বলে, মসীহ্ আল্লাহর পুত্র। এটা তাদের মুখের কথা। পূর্বে যারা কুফরী করেছিল এরা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুন! তারা কেমন করে সত্য বিমুখ হয়।” (৯ তাওবাঃ ৩০)। এখানে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইয়াহুদী ও খৃষ্টান অভিশপ্ত উভয় দলই আল্লাহর ব্যাপারে অন্যায় ও অযৌক্তিক দাবি করেছে এবং ধারণা করেছে যে, আল্লাহর পুত্র সন্তান আছে। অথচ তাদের এ দাবির বহু ঊর্ধ্বে আল্লাহর মর্যাদা। আল্লাহ আরও জানিয়েছেন যে, তাদের এ দাবি সম্পূর্ণ মনগড়া। এদের পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট মানুষও এ জাতীয় মনগড়া উক্তি করেছে। তাদের সাথে এদের অন্তরের মিল রয়েছে। যেমন পথভ্রষ্ট গ্রীক দার্শনিকগণ বলেছেন, ওয়াজিবুল উজুদে ঈশ্বর বা আল্লাহ তাদের পরিভাষার আদি কারণ বা প্রথম অস্তিত্ব ( علة العلل والمبدا الاول ) থেকে আকলে আউয়াল (বুদ্ধি সত্তা) প্রকাশ পায়। অতঃপর আকলে আউয়াল থেকে দ্বিতীয় আকলে (বুদ্ধিসত্তা) প্রাণ ( نفس ) আকাশ/কক্ষপথ ( فلك ) সৃষ্টি হয়। অতঃপর দ্বিতীয় আকল থেকে অনুরূপ তিনটি সৃষ্টির উদ্ভব হয়। এভাবে চলতে চলতে বুদ্ধিসত্তা ১০টি প্রাণ ( نفس ) ৯টি এবং আকাশ/কক্ষপথ ৯ টিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। এগুলোর প্রত্যেকটির যে সব নাম তারা উল্লেখ করেছে এবং তাদের শক্তি ও ক্ষমতার যে বর্ণনা দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া ও নেহাৎ ধারণা প্রসূত। তাদের বক্তব্যের অসারতা, ভ্রষ্টতা ও মুর্খতা বর্ণনা করার স্থান এটা নয়। অনুরূপ আরবের কতিপয় মুশরিক গোত্র মূর্খতাবশত বিশ্বাস করত যে, ফিরিশতাগণ আল্লাহর কন্যা। তাদের মতে, আল্লাহ মর্যাদাবান জিন সর্দারদের জামাতা। উভয়ের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে ফিরিশতা। এ সূত্রেই ফিরিশতাগণ আল্লাহর কন্যা অথচ আল্লাহ এ জাতীয় শির্ক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র।
—তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফিরিশতাদেরকে নারী গণ্য করেছে; এদের সৃষ্টি কি তারা প্রত্যক্ষ করেছিল? তাদের উক্তি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। (৪৩ যুখরুফঃ ১৯)
এ প্রসংগে অন্যত্র আল্লাহ্ বলেনঃ “এখন তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, তোমার প্রতিপালকের জন্যেই কি রয়েছে কন্যা সন্তান এবং ওদের জন্যে পুত্র সন্তান? অথবা আমি কি ফিরিশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছিলাম আর তারা তা প্রত্যক্ষ করছিল? দেখ, ওরা তো মনগড়া কথা বলে যে, আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। ওরা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। তিনি কি পুত্র সন্তানের পরিবর্তে কন্যা সন্তান পছন্দ করতেন? তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা কিরূপ বিচার কর? তবে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? তোমাদের কী সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ আছে? তোমরা সত্যবাদী হলে তোমাদের কিতাব উপস্থিত কর। ওরা আল্লাহ ও জিন জাতির মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থির করেছে, অথচ জিনেরা জানে তাদেরকেও উপস্থিত করা হবে শাস্তির জন্যে। ওরা যা বলে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র মহান। আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাগণ ব্যতীত।” ( ৩৭ আয়াতঃ ১৪৯-১৬০)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ “ওরা বলে, দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র, মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তার আগে বেড়ে কথা বলো না; ওরা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। ওদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত, তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্যে, যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট এবং তারা তার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। তাদের মধ্যে যে বলবে, “আমিই ইলাহ তিনি ব্যতীত তাকে আমি প্রতিফল দিব জাহান্নাম, এভাবেই আমি জালিমদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি।” (২১ আম্বিয়াঃ ২৬ - ২৯)।
মক্কী সূরা কাহফের শুরুতে আল্লাহ বলেনঃ “প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং এতে তিনি বক্রতা রাখেন নি। একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্যে এবং মুমিনগণ, যারা সৎকর্ম করে, তাদেরকে এই সুসংবাদ দেবার জন্যে যে, তাদের জন্যে আছে উত্তম পুরস্কার, যাতে তারা হবে চিরস্থায়ী এবং সতর্ক করার জন্যে তাদেরকে যারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে ওদের কোন জ্ঞান নেই এবং ওদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। ওদের মুখ-নিঃসৃত বাক্য কী সাংঘাতিক! ওরা তো কেবল মিথ্যাই বলে।” (১৮ কাহফঃ ১-৫)
অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ “তারা বলে, আল্লাহ সন্তান প্রহণ করেছেন। তিনি মহান, পবিত্র। তিনি অভাবমুক্ত। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা তাঁরই। এ বিষয়ে তোমাদের নিকট কোন সনদ নেই। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ, যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই? বল, যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না। পৃথিবীতে ওদের জন্যে আছে কিছু সুখ সম্ভোগ; পরে আমারই নিকট ওদের প্রত্যাবর্তন। আর কুফরীর কারণে ওদেরকে আমি কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাব।” (১০ য়ূনুসঃ ৬৮ -৭০)
কুরআন মজীদের উপরোক্ত মক্কী আয়াতগুলোতে ইহুদী খৃষ্টান, মুশরিক ও দার্শনিকদের সমস্ত দল-উপদলের মতামতের খণ্ডন করা হয়েছে যারা অজ্ঞতাবশত, বিশ্বাস করে ও দাবি করে যে, আল্লাহর সন্তান আছে। এসব জালিমদের সীমালংঘনমূলক উক্তি থেকে আল্লাহ পবিত্র মহান।
এ জঘন্য উক্তি উচ্চারণকারীদের মধ্যে সবচাইতে প্রসিদ্ধ দল হল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। এ কারণে কুরআন মজীদে তাদের খণ্ডন করা হয়েছে সবচাইতে বেশী। তাদের স্ব-বিরোধী উক্তি, অজ্ঞতা ও জ্ঞানের দৈন্যের কথা বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের এই কুফরী উক্তির মধ্যে আবার বিভিন্ন দল- উপদলের সৃষ্টি হয়েছে। আর এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা, বাতিল পন্থীরা নানা দলাদলি, মতবিরোধ ও স্ব-বিরোধিতার শিকার হয়েই থাকে। পক্ষান্তরে হক এর মধ্যে কোন স্ব-বিরোধ থাকে না। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
—এ যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও পক্ষ থেকে হত, তবে তারা তাতে অনেক অসংগতি পেত। (৪ নিসাঃ ৮২)
এ থেকে বুঝা গেল, যা হক ও সত্য, তা অভিন্ন ও অপরিবর্তিত থাকে এবং যা বাতিল ও অসত্য তা বিকৃত ও অঙ্গতিপূর্ণ হয়। এ কারণে পথভ্রষ্ট ও অভিশপ্ত খ্রিষ্টানদের একদল বলছে যে, মাসীহ্-ই আল্লাহ; অন্য দল বলছে, মসীহ আল্লাহর পুত্র; তৃতীয় আর একদল বলছে, আল্লাহ হলেন তিন জনের তৃতীয় জন। সূরা আল মায়িদায় আল্লাহর বাণীঃ “যারা বলে, মারয়াম তনয় মসীহ-ই আল্লাহ, তারা তো কুফরী করেছেই। বল, আল্লাহ মারয়াম তনয় মসীহ, তার মাতা এবং দুনিয়ার সকলকে যদি ধ্বংস করতে ইচ্ছা করেন তবে তাকে বাধা দিবার শক্তি কার আছে? আসমান ও যমীনের এবং ওগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।” (৫ মায়িদাঃ ১৭)
এ আয়াতে আল্লাহ খ্রিষ্টানদের কুফরী ও অজ্ঞতার কথা প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্ত্রণকারী, সব কিছুর উপর ইচ্ছামত ক্ষমতা প্রয়োগকারী, সব কিছুর প্রভু ও পালনকারী এবং তিনি সব কিছুর রাজাধিরাজ ও উপাস্য। উক্ত সূরার শেষ দিকে আল্লাহ বলেন, “যারা বলে, আল্লাহ্-ই মারয়াম তনয় মসীহ, তারা তো কুফরী করেছেই’ অথচ মসীহ্ বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ইবাদত কর। কেউ আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করলে আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত নিষিদ্ধ করবেন ও তার আবাস জাহান্নাম; জালিমদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।
যারা বলে, আল্লাহ তো তিনের মধ্যে একজন, তারা তো কুফরী করেছেই, যদিও এক ইলাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তারা যা বলে তা হতে নিবৃত্ত না হলে, তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের উপর অবশ্যই মর্মন্তুদ শাস্তি আপতিত হবেই। তবে কি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মারয়াম তনয় মসীহ্ তো কেবল একজন রাসূল! তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়েছে এবং তার মাতা সত্যনিষ্ঠ ছিল। তারা উভয়ে খাদ্য গ্রহণ করত। দেখ, আমি ওদের জন্যে আয়াত সমূহ কিরূপ বিশদভাবে বর্ণনা করি; আরও দেখ, ওরা কিভাবে সত্যবিমুখ হয়। (৫ মায়িদাঃ ৭২-৭৫)।
উপরোক্ত আয়াত সমূহে আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ভাবে খ্রিষ্টানদের কুফরীর কথা জানিয়ে বলে দিয়েছেন যে, তারা তাদের নবী ঈসা (আ)-কে আল্লাহর পুত্র বলে, অথচ সেই ঈসাই তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি আল্লাহর সৃষ্ট, আল্লাহ্-ই তাকে প্রতিপালন করেছেন এবং মায়ের গর্ভে তাকে আকৃতি দান করেছেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের দিকে মানুষকে আহ্বান করেছেন এবং এর বিরুদ্ধকারীদেরকে পরকালের শাস্তি, লাঞ্ছনা, ব্যর্থতা ও জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেছেন। আল্লাহর বাণীঃ “নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” এরপর বলেছেনঃ “নিশ্চয় তারা কাফির, যারা বলেঃ আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই।”
ইবন জারীর প্রমুখ বলেছেন, “আল্লাহ তিনের এক” এ কথা দ্বারা খ্রিষ্টানদের ত্রিত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। কেননা তারা তিন সত্তায় বিশ্বাসী। যথাঃ পিতার সত্তা, পুত্রের সত্তা এবং কলেমা বা বাণীর সত্তা যা পিতার থেকে পুত্রের নিকট অবতরণ করে। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়ে তিনটি উপদলের সৃষ্টি হয় যথাঃ মালিকিয়্যা, ইয়াকুবিয়্যা ও নাসতুরিয়্যা। পরবর্তীতে আমরা তাদের মতবিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। খ্রিষ্টানদের মধ্যে এই ত্রিত্ববাদের জন্ম হয় মসীহ্ এর তিন শ বছর পরে এবং শেষ নবীর আগমনের তিন শ’ বছর পূর্বে সম্রাট কনষ্টানটাইন ইবন কুসতুস এর আমলে। এ কারণে আল্লাহ বলেছেনঃ “এক উপাস্য ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই।” অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভু নেই। তিনি একক। তার কোন শরীক নেই। তার কোন সদৃশ নেই। তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। তাঁর স্ত্রী নেই, সন্তান নেই।
এরপর তাদেরকে সাবধান ও সতর্ক করে আল্লাহ বলেনঃ “তারা যদি তাদের এসব কথা হতে বিরত না হয় তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদেরকে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দান করা হবে।" অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে তার নিজ করুণাবশে এসব জঘন্য বিষয় থেকে তওবা ও ইসতিগফারের দিকে আহ্বান করে বলেছেন, “তারা কি আল্লাহর নিকট তওবা করবে না, তাঁর নিকট ক্ষমা চাইবে না? বস্তুত আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” এরপরে আল্লাহ হযরত ঈসা ও তার মায়ের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, মসীহ্ কেবল আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তার মা একজন পবিত্র ও সত্যনিষ্ঠ মহিলা, পাপাচারিণী নন। অথচ অভিশপ্ত ইয়াহুদীরা তাঁর উপর ঐরূপ অপবাদ দিয়ে থাকে। এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, মারয়াম নবী ছিলেন না। যেমনটি আমাদের একদল আলিম ধারণা করেছেন। “তারা উভয়েই খাদ্য গ্রহণ করত” এ কথা দ্বারা ইংগিত করা হয়েছে যে, অন্যদের মত তাদেরও পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন হতো। এমতাবস্থায় তাঁরা ইলাহ্ হন কীরূপে? আল্লাহ তাদের এ মূর্খতাব্যঞ্জক উক্তি থেকে মুক্ত ও পবিত্র। সুদ্দী প্রমুখ আলিমগণ বলেছেন, আল্লাহর বাণীঃ “নিশ্চয় তারা কাফির, যারা বলেঃ আল্লাহ তিন জনের একজন।” এখানে ‘ঈসা ও তার মা এর সম্পর্কে খ্রিষ্টানদের বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। তারা ‘ঈসা ও তার মাকে ইলাহ বলত-যেমন ইলাহ্ বলত আল্লাহকে। এই সূরার শেষ দিকে আল্লাহ তাদের এ বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর বাণীঃ
“আল্লাহ যখন বলবেন, হে মারয়াম তনয় ‘ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার মাকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর? সে বলবে, তুমিই মহিমান্বিত। যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়। যদি আমি তা বলতাম, তবে নিশ্চয়ই তুমি তা জানতে। আমার অন্তরে যা আছে তা তো তুমি অবগত আছ, কিন্তু তোমার অন্তরে কী আছে, আমি তা অবগত নই; তুমি তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। তুমি আমাকে যে আদেশ করেছ তা’ ব্যতীত তাদেরকে আমি কিছুই বলিনি; তা এইঃ তোমরা আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ইবাদত কর; এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী; কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমি-ই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সর্ববিষয়ে সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৫ মায়িদাঃ ১১৬-১১৮)
এখানে আল্লাহ ভবিষ্যতের সংবাদ দিয়েছেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ হযরত ঈসা (আ)-কে তার উম্মত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। তার উম্মতের মধ্যে যারা তাকে আল্লাহর পুত্র অথবা আল্লাহর শরীক কিংবা তাঁকেই আল্লাহ বলে বিশ্বাস করতো এবং ঈসাই তাদেরকে এ বিশ্বাস করতে বলেছেন বলে তার উপর মিথ্যা আরোপ করেছে তাদের ব্যাপারে এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আল্লাহ তো ভালরূপেই জানেন যে, ঈসা এরূপ কথা আদৌ বলেন নি, তবুও তাকে জিজ্ঞেস করবেন তার সত্যতা প্রকাশ ও মিথ্যা আরোপকারীদের মুখোশ উন্মোচন করার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে ঈসা ইবন মারয়াম! তুমি কি লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর? ঈসা (আ) বলবেন, “আপনি পবিত্র” অর্থাৎ আপনি সকল শরীকের ঊর্ধ্বে। “আমার জন্যে শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা’ বলার কোন অধিকার আমার নেই।” অর্থাৎ আপনি ব্যতীত এ কথা বলার অধিকার অন্য কারও নেই। “যদি আমি বলে থাকি, তবে আপনি অবশ্যই পরিজ্ঞাত; আপনি তো আমার মনে যা আছে জানেন এবং আমি জানি না যা আপনার মনে আছে। নিশ্চয় আপনিই অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত।”
হযরত ঈসা (আ) এ জবাবে আদবের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেনঃ “আমি তো তাদেরকে কিছুই বলিনি, শুধু সে কথাই বলেছি -যা আপনি বলতে আদেশ করেছিলেন।” অর্থাৎ যখন আমাকে রাসূলরূপে প্রেরণ করেন এবং আমাকে কিতাব দান করেন যা তাদেরকে আমি পড়ে শুনাই। অতঃপর তিনি তাদেরকে যা বলেছিলেন তা ব্যাখ্যা করে বলেনঃ “তোমরা আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর, যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা।” অর্থাৎ যিনি আমারও সৃষ্টিকর্তা, তোমাদেরও সৃষ্টিকর্তা এবং যিনি আমারও রিযিকদাতা, তোমাদেরও রিযিকদাতা। “আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম।” “অতঃপর যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন।” অর্থাৎ তারা যখন আমাকে হত্যার ও শূলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে, তখন দয়া পরবশ হয়ে আপনি আমাকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে আপনার নিকট তুলে নেন এবং তাদের একজনের চেহারাকে আমার চেহারায় পরিবর্তন করে দেন, ফলে তারা তার উপর আক্রমণ করে ও নিজেদের জিঘাংসা চরিতার্থ করে। এ অবস্থা হওয়ার পরে “আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ পরিজ্ঞাত।” এরপর হযরত ঈসা তার অনুসারী নাসারা বা খ্রিষ্টানদের থেকে নিজের সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের ব্যাপারটি আল্লাহর নিকট সোপর্দ করে বলেনঃ “যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা আপনার দাস।” অর্থাৎ তারা সে শাস্তির উপযুক্ত। “আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞ।” ক্ষমা করার ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছার উপর সোপর্দ করার অর্থ এই নয় যে, বাস্তবেও তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। এ জন্যেই এখানে আল্লাহর গুণাকলীর মধ্য থেকে গাফুরুর রাহীম (ক্ষমাশীল, দয়ালু) না বলে ‘আযীযুন হাকীম’ (মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়) বলা হয়েছে।
তাফসীর কিতাবে আমরা ইমাম আহমদের বর্ণিত হযরত আবু যর (রা)-এর হাদীস উল্লেখ করেছি— যাতে তিনি বলেছেন, এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) সালাতে দাঁড়িয়ে সকাল পর্যন্ত নিম্নের আয়াতটি তিলাওয়াত করতে থাকেন।
“আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই দাস; আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।” রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ আমি আল্লাহর নিকট আমার উম্মতের জন্যে শাফাআত প্রার্থনা করলে তিনি আমাকে তা দান করেন। আল্লাহ চাহে তো মুশরিক ব্যতীত অন্যান্য পাপী বান্দারা তা লাভ করবে। এরপর তিনি নিম্নলিখিত আয়াতসমূহ পাঠ করেনঃ
“আকাশ ও পৃথিবী এবং যা কিছু ওগুলোর অন্তর্বর্তী তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি যদি ক্রীড়ার উপকরণ চাইতাম তবে আমি আমার নিকট যা আছে তা নিয়েই তা করতাম; আমি তা করিনি। কিন্তু আমি সত্য দ্বারা আঘাত হানি মিথ্যার উপর, ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দুর্ভোগ তোমাদের তোমরা যা বলছ তার জন্যে! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা তাঁরই। তাঁর সান্নিধ্যে যারা আছে তারা অহংকারবশে তাঁর ইবাদত করা হতে বিমুখ হয় না এবং শ্রান্তিও বোধ করে না। তারা দিনরাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তারা শৈথিল্য করে না।” (২১ আম্বিয়াঃ ১৬-২০)
আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করতে ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করতে পারতেন। পবিত্র ও মহান তিনি। তিনি আল্লাহ, এক, প্রবল পরাক্রমশালী তিনি যথাযথভাবে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিনের দ্বারা। সূর্য ও চন্দ্রকে তিনি করেছেন নিয়মাধীন। প্রত্যেকেই পরিভ্রমণ করে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল।” (৩৯ যুমারঃ ৪-৫)। আল্লাহ বলেনঃ “বল, দয়াময় আল্লাহর কোন সন্তান থাকলে আমি হতাম তার উপাসকগণের অগ্রণী। তারা যা আরোপ করে তা হতে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অধিকারী ও আরশের অধিকারী পবিত্র ও মহান।” (৪৩ যুখরুফঃ ৮১-৮২)। আল্লাহ বলেনঃ “বল, প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদার নেই এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তার অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সসম্ভ্রমে তার মাহাত্ম্য ঘোষণা কর।" (১৭ ইসরাঃ ২১১)
আল্লাহ বলেনঃ “বল, তিনিই আল্লাহ, একক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তার মখাপেক্ষী। তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ-ই নেই।” (১১২ সূরা ইখলাস) সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আল্লাহ বলেনঃ বনী আদম আমাকে গালি দেয়; কিন্তু তার জন্যে এটা শোভা পায় না। সে বলে, আমার সন্তান আছে। অথচ আমি একক, মুখাপেক্ষাহীন। আমি কাউকে জন্ম দেইনি এবং কারও থেকে আমি জন্মগ্রহণ করিনি। আমার সমতুল্য কেউ নেই। সহীহ্ হাদীসে আরও বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, পীড়াদায়ক কথা শোনার পর তাতে ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে আল্লাহর চাইতে অধিক ধৈর্যধারণকারী আর কেউ নেই। কারণ যে সব লোক আল্লাহর জন্যে সন্তান সাব্যস্ত করে তাদেরকে তিনি রিযিক দিচ্ছেন এবং রোগ থেকে নিরাময় করছেন। তবে অন্য সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ জালিমকে কিছু দিনের জন্যে অবকাশ দিয়ে থাকেন। যখন তাকে পাকড়াও করবেন তখন আর রেহাই দিবেন না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) নিম্নের আয়াতগুলো পাঠ করেনঃ
“আমি ওদেরকে জীবনোপকরণ ভোগ করতে দিব স্বল্পকালের জন্যে। তারপর ওদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব।” (৩১ লুকমানঃ ২৪)
আল্লাহ বলেনঃ “বল, যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না। পৃথিবীতে ওদের জন্যে আছে কিছু সুখ-সম্ভোগ; পরে আমারই নিকট ওদের প্রত্যাবর্তন। তারপর কুফরী হেতু ওদেরকে আমি কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাব।” (১০ ইউনুসঃ ৬৯-৭০) আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।