hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৫২
ইয়াহুদী-নাসারাদের দীন বিকৃতির বিবরণ
ইয়াহুদী জাতি। আল্লাহ্ তা’আলা হযরত মূসা ইবন ইমরানের প্রতি তাদের জন্যে তাওরাত নাযিল করেন। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

( ثُمَّ ءَاتَیۡنَا مُوسَى ٱلۡكِتَـٰبَ تَمَامًا عَلَى ٱلَّذِیۤ أَحۡسَنَ وَتَفۡصِیل ا لِّكُلِّ شَیۡء ࣲ)

[Surah Al-An’am 154]

“এবং মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, যা সৎকর্ম পরায়ণদের জন্যে সম্পূর্ণ, যা সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ।

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ

( قُلۡ مَنۡ أَنزَلَ ٱلۡكِتَـٰبَ ٱلَّذِی جَاۤءَ بِهِۦ مُوسَىٰ نُور ا وَهُد ى لِّلنَّاسِۖ تَجۡعَلُونَهُۥ قَرَاطِیسَ تُبۡدُونَهَا وَتُخۡفُونَ كَثِیر ࣰا)

[Surah Al-An'am 91]

“বল, তবে মুসার আনীত কিতাব যা মানুষের জন্যে আলো ও পথনির্দেশ ছিল, তা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর ও যার অনেকাংশ গোপন রাখ।

আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ

( وَلَقَدۡ ءَاتَیۡنَا مُوسَىٰ وَهَـٰرُونَ ٱلۡفُرۡقَانَ وَضِیَاۤء وَذِكۡر ا لِّلۡمُتَّقِینَ )

[Surah Al-Anbiya’ 48]

“আমি তো মূসাও হারুনকে দিয়েছিলাম কুরআন, জ্যোতি ও উপদেশ মুত্তাকীদের জন্যে।’

আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র বলেছেনঃ

( وَءَاتَیۡنَـٰهُمَا ٱلۡكِتَـٰبَ ٱلۡمُسۡتَبِینَ ۝ وَهَدَیۡنَـٰهُمَا ٱلصِّرَ  ٰ⁠ طَ ٱلۡمُسۡتَقِیمَ )

[Surah As-Saaffat 117 – 118]

“আমি উভয়কে দিয়েছিলাম বিশদ কিতাব। আমি উভয়কে পরিচালিত করেছিলাম সৎপথে। (৩৭ সাফফাতঃ ১১৭-১১৮)

আল্লাহ্ তা’আলা অন্য এক আয়াতে বলেনঃ

( إِنَّاۤ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِیهَا هُد ى وَنُور ۚ یَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِیُّونَ ٱلَّذِینَ أَسۡلَمُوا۟ لِلَّذِینَ هَادُوا۟ وَٱلرَّبَّـٰنِیُّونَ وَٱلۡأَحۡبَارُ بِمَا ٱسۡتُحۡفِظُوا۟ مِن كِتَـٰبِ ٱللَّهِ وَكَانُوا۟ عَلَیۡهِ شُهَدَاۤءَۚ فَلَا تَخۡشَوُا۟ ٱلنَّاسَ وَٱخۡشَوۡنِ وَلَا تَشۡتَرُوا۟ بِـَٔایَـٰتِی ثَمَن ا قَلِیل اۚ وَمَن لَّمۡ یَحۡكُم بِمَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡكَـٰفِرُونَ )

[Surah Al-Ma'idah 44]

“আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম, তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো, নবীগণ যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইয়াহুদীদেরকে তদনুসারে বিধান দিত আরও বিধান দিত রাব্বানীগণ এবং বিদ্বানগণ কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল সেটির সাক্ষী। সুতরাং মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াত তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করো না আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন। সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারী। (৫ মায়িদাঃ ৪৪)

দীর্ঘকাল পর্যন্ত ইয়াহুদীরা তাওরাত কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করেছিল এবং সুদৃঢ়ভাবে সেটিকে গ্রহণ করেছিল। তারপর তারা সেটিকে পরিবর্তন করতে, বিকৃত করতে ভুল ব্যাখ্যা দিতে ও যা তার মধ্যে নেই তা প্রচার করতে শুরু করল। এ প্রসংগে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

( وَإِنَّ مِنۡهُمۡ لَفَرِیق ا یَلۡوُۥنَ أَلۡسِنَتَهُم بِٱلۡكِتَـٰبِ لِتَحۡسَبُوهُ مِنَ ٱلۡكِتَـٰبِ وَمَا هُوَ مِنَ ٱلۡكِتَـٰبِ وَیَقُولُونَ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ وَمَا هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ وَیَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ وَهُمۡ یَعۡلَمُونَ )

[Surah Aal-E-Imran 78]

“তাদের মধ্যে এক দল লোক আছেই, যারা কিতাবকে জিহ্বা দ্বারা বিকৃত করে, যাতে তোমরা সেটিকে আল্লাহর কিতাবের অংশ মনে কর; কিন্তু সেটি কিতাবের অংশ নয়, এবং তারা বলে; এটি আল্লাহর পক্ষ হতে,কিন্তু সেটি মুলত আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত নয়। তারা জেনে-শুনে আল্লাহ্ সম্পর্কে মিথ্যা বলে।” (৩ আল ইমরানঃ ৭৮)

আলোচ্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ তা’আলা জানিয়ে দিলেন যে, তারা তাওরাতের অসত্য, মিথ্যা ও অপ্রাসংগিক ব্যাখ্যা করে। তারা যে এরূপ অপকর্মে জড়িত, তাতে আলিমগণের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। তারা এ ব্যাপারে একমত যে, তারা তাওরাতের বিকৃত অর্থ প্রকাশ করে এবং মূল মর্মের সাথে সম্পর্কহীন ভিন্ন অর্থ বুঝানোর জন্যে সংশ্লিষ্ট বাণী ব্যবহার করে। যেমন উক্ত কিতাবে রজম বা প্রস্তর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তারা উক্ত বিধানকে বেত্রাঘাত ও মুখে চুনকালি মেখে দেয়ার বিধান দ্বারা পরিবর্তন করেছে। অনুরূপভাবে চুরির শাস্তি কার্যকর এবং আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সকল চোরের হাত কাটার জন্যে তারা আদিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোন সভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তাকে তারা ছেড়ে দিত। আর নিম্নশ্রেণী ও দুর্বল কেউ চুরি করলে তার উপর দণ্ড কার্যকর করত।

অবশ্য তারা তাওরাত কিতাবের মূল শব্দ পরিবর্তন করেছে কি-না, এ বিষয়ে একদল বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন যে, তারা পুরো তাওরাতের সকল শব্দই পরিবর্তন করে ফেলেছে। অপর একদল বলেন যে, তাওরাতের মূল শব্দ পরিবর্তন করা হয়নি। প্রমাণ স্বরূপ তারা এই আয়াত পেশ করেনঃ

( وَكَیۡفَ یُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ ٱلتَّوۡرَىٰةُ فِیهَا حُكۡمُ ٱللَّهِ )

[Surah Al-Ma’idah 43]

“তারা আপনার উপর কিভাবে বিচার ভার ন্যস্ত করবে যখন তাদের নিকট রয়েছে তাওরাত’ যাতে আল্লাহর আদেশ আছে। (৫ মায়িদাঃ ৪৩)

এবং আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ

( ٱلَّذِینَ یَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِیَّ ٱلۡأُمِّیَّ ٱلَّذِی یَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِی ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِیلِ یَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَیَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَیُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّیِّبَـٰتِ )

[Surah Al-A'raf 157]

“যে উম্মী নবীর উল্লেখ তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইনজীলে রয়েছে। তাতে তারা লিপিবদ্ধ পায় যে তাদেরকে সৎকার্যের নির্দেশ দেয় ও অসৎকার্যে বাধা দেয়, যে তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু বৈধ করে। (৭ আরাফঃ ১৫৭) নীচের আয়াতও তাদের প্রমাণ

( قُلۡ فَأۡتُوا۟ بِٱلتَّوۡرَىٰةِ فَٱتۡلُوهَاۤ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ )

[Surah Aal-E-Imran 93]

—বল, তোমরা তাওরাত নিয়ে আস, সেটি পাঠ কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (৩ আল ইমরানঃ ৯৩)

রজম (প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড) সম্পর্কিত ঘটনাটিও তাদের প্রমাণ। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবন উমর (রা) থেকে, সহীহ মুসলিমে বারা ইবন আযিব ও জাবির ইবন আব্দুল্লাহ থেকে এবং সুনান গ্রন্থসমূহে আবু হুরায়রা (রা) প্রমুখ থেকে বর্ণিত যে, এক ইহুদী পুরুষ ও ইহুদী মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তাদের বিচারের জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘রজম কার্যকর করা সম্পর্কে তোমাদের তাওরাতে কী নির্দেশ পাও?’ তারা বলল, ‘এ জাতীয় লোকদেরকে আমরা অপমান ও বেইজ্জত করে দেই এবং বেত্রাঘাত করি।’ রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে তাওরাত উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন। তাওরাত নিয়ে এসে তারা যখন পাঠ শুরু করল তখন রজমের আয়াত তারা গোপন করছিল। আব্দুল্লাহ ইবন সূরিয়া তার হাত দিয়ে রজমের আয়াত ঢেকে রেখেছিল এবং ঐ আয়াতের পূর্বের ও পরের অংশ পাঠ করছিল।

রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘হে কানা! তোমার হাত উঠাও।’ সে তার হাত তুলল, তখন দেখা গেল সেখানে রজমের আয়াত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (স) ওদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। রাসূলুল্লাহ (স) তখন বললেনঃ

اللهم اني أول من أحيا أمرك اذ آماتوه

“হে আল্লাহ! আমিই তো প্রথম ব্যক্তি, তারা অকার্যকর করার পর যে আপনার নির্দেশকে পুনর্জীবিত করল।”

আবু দাউদ (র)-এর বর্ণনায় আছে, তারা যখন তাওরাত নিয়ে আসলো তখন তিনি তাঁর নীচ থেকে বালিশ টেনে এনে তাওরাতের নীচে রাখলেন এবং বললেন- “আমি তোমার প্রতি ঈমান এনেছি এবং যিনি তোমাকে নাযিল করেছেন তার প্রতি ঈমান এনেছি।" কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাওরাতের সম্মানার্থে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। এই সনদ সম্পর্কে আমি অবগত নই। আল্লাহই ভাল জানেন।

অনেক কালাম শাস্ত্রবিদ যারা বলেন যে, রাজা বুখত নসরের সময়ে তাওরাত কিতাবের তাওয়াতুর বা সন্দেহাতীত প্রসিদ্ধি বিলুপ্ত হয়ে যায়, উপরোক্ত দলীল-প্রমাণ তাদের বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে। তারা বলেন যে, সে সময়ে একমাত্র উযায়র (আ) ব্যতীত অন্য কারো নিকট তাওরাত সংরক্ষিত ছিল না। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যদি তা-ও হয় এবং উক্ত “উযায়র’ নবী হয়ে থাকেন তবে তাতে তাওয়াতুর বা সন্দেহাতীত প্রসিদ্ধি বিনষ্ট হবে না। কারণ নবী নিষ্পাপ। নিষ্পাপ ব্যক্তি পর্যন্ত যথাযথভাবে পৌঁছাই যথেষ্ট। অবশ্য, যদি কেউ বলেন যে, তাঁর নিকট থেকে তাওয়াতুর বা সন্দেহাতীত প্রসিদ্ধি সূত্রে পৌঁছেনি, তাহলে সমস্যা থেকে যাবে। এই সমস্যা নিরসনে এ-ও বলা যায় যে, বুখত নসরের শাসনামলের পর যাকারিয়্যা, ইয়াহয়া ও ঈসা (আ) প্রমুখ নবীগণ এসেছেন। তাঁরা সবাই তাওরাতের অনুসরণ করেছেন তাওরাত যদি বিশুদ্ধরূপে বিদ্যমান ও আমলযোগ্য না থাকত তবে তারা সেটির উপর নির্ভর করতেন না। তারা তো নিষ্পাপ নবী।

ইহুদীগণ যা সত্য বলে বিশ্বাস করতো কুমতলব হাসিলের উদেশ্যে তা থেকে তারা সরে যেত। বিচার মীমাংসার জন্যে তাদেরকে অনিবার্যভাবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট যেতে আদেশ দেয়া সত্ত্বেও তারা রাসূলের আনীত বিধানকে প্রত্যাখ্যান করত। অবশ্য তাদের বানোয়াট ও স্বরচিত কিছু কিছু বিষয়কে তারা সত্য বলে বিশ্বাস করত। যা মূলত আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। যেমন ব্যভিচারের শাস্তি স্বরূপ বেত্রাঘাত ও মুখে চুনকালি মেখে দেয়া। এটি অবশ্যই আল্লাহর নির্দেশের সরাসরি বিরোধী। তারা বলেছিল, তোমাদের জন্যে বিধান হল বেত্রাঘাত ও মুখে কালি মেখে দেয়া, তোমরা এটি গ্রহণ কর, কিয়ামতের দিনে আল্লাহর নিকট এ বলে তোমরা ওযর পেশ করতে পারবে যে, তোমরা একজন নবীর হুকুম পালন করেছ। আর যদি এই নবী তোমাদের জন্যে বেত্রাঘাত ও মুখে কালি মাখা শাস্তির নির্দেশ না দিয়ে রজম (প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ডের) নির্দেশ দেন, তবে তোমরা তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। সত্য দীনের বিপরীতে তাদের দুষ্ট মনের প্ররোচণা ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণের এই অসৎ উদ্দেশ্য প্রত্যাখ্যান করে।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( وَكَیۡفَ یُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ ٱلتَّوۡرَىٰةُ فِیهَا حُكۡمُ ٱللَّهِ ثُمَّ یَتَوَلَّوۡنَ مِنۢ بَعۡدِ ذَ  ٰ⁠ لِكَۚ وَمَاۤ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ بِٱلۡمُؤۡمِنِینَ ۝ إِنَّاۤ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِیهَا هُد ى وَنُور ۚ یَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِیُّونَ ٱلَّذِینَ أَسۡلَمُوا۟ لِلَّذِینَ هَادُوا۟ وَٱلرَّبَّـٰنِیُّونَ وَٱلۡأَحۡبَارُ بِمَا ٱسۡتُحۡفِظُوا۟ مِن كِتَـٰبِ ٱللَّهِ )

[Surah Al-Ma'idah 43 - 44]

“তারা তোমার উপর কীভাবে বিচারভার ন্যস্ত করবে অথচ তাদের নিকট রয়েছে তাওরাত যাতে আল্লাহর আদেশ আছে, এরপরও তারা মুখ ফিরিয়ে লয় এবং তারা মু’মিন নয়। নিশ্চয় আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো। নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল তারা ইহুদীদেরকে সে অনুযায়ী বিধান দিত রব্বানীগণ এবং বিদ্বানগণ— কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল।” (৫ মায়িদাঃ ৪৩-৪৪)

এ প্রেক্ষিতেই রাসূলুল্লাহ (সা) ঐ ব্যভিচারীদের জন্যে রজম-এর রায় দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে আপনার নির্দেশ পুনরুজ্জীবিত করেছে, যখন তারা তা মৃত করে ফেলেছিল।’

পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কেন তারা এরূপ আল্লাহর নির্দেশ বর্জন করেছিল? উত্তরে তারা বলেছিল আমাদের সম্ভ্রান্ত লোকদের মধ্যে ব্যভিচার ব্যাপকভাবে সংঘটিত হচ্ছে। তাদের উপর দণ্ড প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। দুর্বল ও নিম্ন শ্রেণীর যারা ব্যভিচার করে, শুধু তাদের উপরই আমরা রজম দণ্ড প্রয়োগ করে থাকি। তারপর আমরা পরামর্শ করে বললাম যে, ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে আমরা এমন একটি মাঝামাঝি দণ্ড নির্ধারণ করি, যা আশরাফ-আতরাফ সকলের উপর কার্যকর করা চলে। ফলে আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে বেত্রাঘাত ও মুখে কালি মেখে দেয়ার দণ্ড নির্ধারণ করি। এটি তাদের তাওরাত বিকৃতি, পরিবর্তন ও ভুল ব্যাখ্যার একটি উদাহরণ। কিতাবে রজমের শব্দ অক্ষুন্ন রেখে তারা তার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। উপরোক্ত হাদীস তা প্রমাণ করে।

এ জন্যে কতক লোক বলেন যে, তারা শুধু অর্থের বিকৃতি ও ভুল ব্যাখা প্রদান করেছে শব্দগুলো সব কিতাবে যথাযথ বিদ্যমান রয়েছে। এই প্রকারের লোকদের বিরুদ্ধে এই যুক্তি দেয়া যায় যে, তারা যদি তাদের কিতাবের সকল কিছু পালন করতো তাহলে তা অবশ্যই তাদেরকে সত্যের অনুসরণ ও রাসূল মুহাম্মদ (সা)-এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের দিকে পরিচালিত করত।

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

( ٱلَّذِینَ یَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِیَّ ٱلۡأُمِّیَّ ٱلَّذِی یَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِی ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِیلِ یَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَیَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَیُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّیِّبَـٰتِ وَیُحَرِّمُ عَلَیۡهِمُ ٱلۡخَبَـٰۤىِٕثَ وَیَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَـٰلَ ٱلَّتِی كَانَتۡ عَلَیۡهِمۡ )

[Surah Al-A'raf 157]

“যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মী নবীর, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইঞ্জীল যা তাদের নিকট আছে তাতে লিপিবদ্ধ পায়। যে তাদেরকে সৎ কার্যের নির্দেশ দেয় ও অসৎকার্যে দেয়, যে তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু বৈধ করে ও অপবিত্র বস্তু অবৈধ করে এবং যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার হতে ও শৃংখল হতে যা তাদের উপর ছিল।” (৮ আনফালঃ ১৫৭)

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ

( وَلَوۡ أَنَّهُمۡ أَقَامُوا۟ ٱلتَّوۡرَىٰةَ وَٱلۡإِنجِیلَ وَمَاۤ أُنزِلَ إِلَیۡهِم مِّن رَّبِّهِمۡ لَأَكَلُوا۟ مِن فَوۡقِهِمۡ وَمِن تَحۡتِ أَرۡجُلِهِمۚ مِّنۡهُمۡ أُمَّة مُّقۡتَصِدَة ࣱ)

[Surah Al-Ma'idah 66]

“তারা যদি তাওরাত, ইঞ্জীল ও তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তারা তাদের উপর ও পদতল হতে আহার্য লাভ করত। তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা মধ্যপন্থী। (৫ মায়িদাঃ ৬৬)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ

( قُلۡ یَـٰۤأَهۡلَ ٱلۡكِتَـٰبِ لَسۡتُمۡ عَلَىٰ شَیۡءٍ حَتَّىٰ تُقِیمُوا۟ ٱلتَّوۡرَىٰةَ وَٱلۡإِنجِیلَ وَمَاۤ أُنزِلَ إِلَیۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ )

[Surah Al-Ma'idah 68]

—বল, হে কিতাবীরা! তাওরাত, ইনজীল ও যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তোমরা তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তি নেই। (৫ মায়িদাঃ ৬৮)

তাওরাতের শব্দে বিকৃতি ঘটেনি বরং অর্থেই বিকৃতি ঘটানো হয়েছে এই অভিমত হযরত ইবন আব্বাস (রা)-ও পোষণ করতেন বলে ইমাম বুখারী (র) তাঁর সহীহ গ্রন্থের শেষ দিকে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী (র) নিজেও এই অভিমত সমর্থন করেছেন। আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, অধিকাংশ কালাম শাস্ত্রবিদ এই অভিমত পোষণ করতেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন