মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইবনে ইসহাক বলেন, ফিজার যুদ্ধ যখন পুরোদমে চলছে, রাসূলুল্লাহ (সা) তখন কুড়ি বছরের যুবক। উল্লেখ্য যে, কিনানা এবং আয়লানের কায়স পরস্পর রক্ত সম্পর্কীয় এই দু’টি গোত্র নিষিদ্ধ সময়ে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণে এ যুদ্ধকে ফিজার যুদ্ধ বা সীমালংঘন যুদ্ধ বলা হয়। এ যুদ্ধে কুরায়শ ও কিনানার নেতৃত্বে ছিলেন হারব ইবনে উমাইয়া ইবনে আবদে শামস। দিনের প্রথম ভাগে কায়স গোত্র কিনানার ওপর জয়লাভ করেছিল। দিনের মাঝামাঝিতে এসে বিজয় কিনানা গোত্রের হাতে চলে আসে।
ইবনে হিশাম বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন চৌদ্দ কিংবা পনের বছর বয়সে উপনীত হন, তখন সহযোগী কিনানাসহ কুরায়শ এবং আয়লানের কায়স-এর মধ্যে ফিজার যুদ্ধ শুরু হয়। ঘটনার পটভূমি নিম্নরূপঃ উরওয়া আর রিহাল (ইবন উতবা ইবন জাফর ইবন কিলাব ইবন রবীয়া ইবন আমির ছাছাআ ইবন মুআবিয়া ইবন বকর ইবন হাওয়াযিন) নুমান ইবনে মুনযিরকে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়। এ খবর শুনে বনু যামুরা (ইবন বকর ইবন আবদে মানাত ইব্ন কিনানা) গোত্রের বারায ইবনে কায়স বলে, ‘কিনানার স্বার্থ নষ্ট করে তুমি নুমানকে ব্যবসা করার অনুমতি দিলে?’ উরওয়া আর রিহাল বলল, ‘হ্যাঁ, দিয়েছি সকলের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলেও।’ এ কথার পর উরওয়া আর রিহাল চলে যায়। বারাযও প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষ্যে সুযোগের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। মক্কার উঁচু অঞ্চলের যী-তিলাল নামক স্থানের দক্ষিণে পৌঁছে উরওয়া অসতর্ক হয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে বারায তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে হত্যা করে ফেলে। ঘটনাটি ঘটে নিষিদ্ধ মাসে। এ কারণে তা ফিজার নামে আখ্যায়িত হয়। এ ব্যাপারে গর্ব প্রকাশ করে বারায কবিতার কয়েকটি পংক্তিও আওড়ায়। উরওয়ার এ হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে লবীদ ইব্ন রবীয়াও কযেকটি পংক্তি রচনা করেন।
ইবনে হিশাম বলেন, এরপর জনৈক ব্যক্তি কুরায়শের নিকট এসে সংবাদ দিল যে, বারা উরওয়াকে খুন করে ফেলেছে। তা-ও আবার নিষিদ্ধ মাসে, উকায মেলার স্থানে। অতএব তোমরা হাওয়াযিন গোত্র যাতে টের না পায় সেভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাও। কিন্তু এরমধ্যে হাওয়াযিন ঘটনাটি জেনে ফেলে। তারা কুরায়শদের ধাওয়া করে। কুরায়শরা হারামে প্রবেশ করার পূর্বেই হাওয়াযিনরা তাদেরকে নাগালে পেয়ে যায়। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। সারা দিন যুদ্ধশেষে রাতের বেলা কুরায়শরা হারামে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। ফলে হাওয়াযিনরা নিবৃত্ত হয়। পরদিন আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষ কয়েকদিন অব্যাহত থাকে। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোক তাদের নেতাদের ওপর পূর্ণ নির্ভর করে।
কুরায়শ ও কিনানার সব ক’টি গোত্রের নেতৃত্ব একজনের হাতে ছিল। আর কায়স-এর সবগুলো গোত্রের নেতৃত্ব অপর একজনের হাতে ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) এক দিন এ যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁর চাচারা তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা) নিজে বলেছেনঃ
كنت انبل على اعما مى
— আমি শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর কুড়িয়ে চাচাদের হাতে তুলে দিতাম।
ইবনে হিশাম বলেন, ফিজারের যুদ্ধ দীর্ঘকাল পর্যন্ত চলেছিল, তা’ আমার উল্লেখিত বর্ণনার চাইতেও দীর্ঘতর ছিল। সীরাত সম্পর্কিত আলোচনায় অপ্রাসঙ্গিক বলে এখানে তা উল্লেখ করা হলো না।
সুহায়লী বলেন, আরবে ফিজার সংঘটিত হয়েছিল চারটি। মাসঊদী এ যুদ্ধগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। এ যুদ্ধগুলোর সর্ব শেষটি হলো এই ফিজারুল বারায। ফিজারুল বারাযের যুদ্ধ হয়েছে চার দিন। (তখনকার দিনের নাম অনুসারে) ১. শামতা ২. আবলা। এ দু’দিনের লড়াই হয়েছে উকায-এর নিকট। ৩. আশ্ শুরব। চারদিনের মধ্যে এ দিনের যুদ্ধই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ দিনে রাসূলুল্লাহ (সা) উপস্থিত ছিলেন। এ দিনে কুরায়শ ও বনু কিনানার দুই নেতা হারব ইব্ন উমাইয়া এবং তার ভাই সুফিয়ান নিজেরা নিজেদেরকে শিকলে আটকে রাখে, যাতে বাহিনীর যোদ্ধারা পালিয়ে না যায়। এই দিনে কায়স গোত্র পালিয়ে যায়। তবে বনূ নাযর নিজেদের অবস্থায় অটল থাকে। ৪. হারীরা। এই দিনের যুদ্ধ হয়েছিল নাখলার নিকট। তারপর। বিবাদমান উভয় পক্ষ আগামী বছর উকাযের নিকট যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। নির্দিষ্ট সময়ে তারা অঙ্গীকার পালনে লিপ্ত হলে উতবা ইবনে রবীয়া উটে সওয়ার হয়ে ডাক দিয়ে বলে, ‘ওহে মুযার সম্প্রদায়! কোন্ যুক্তিতে তোমরা লড়াই করছ?’ জবাবে হাওয়াযিনরা বলল, ‘আপনি কী প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন, বলুন।’ উতবা বলল, ‘আমি সন্ধি করতে চাই।’ তারা বলল, ‘সন্ধি কি শর্তে হবে বলুন।’ উতবা ইবনে রবীয়া বললঃ ‘আমাদের হাতে তোমাদের যে সব লোক নিহত হয়েছে, আমরা তোমাদেরকে তাদের রক্তপণ পরিশোধ করব। তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সম্পদ তোমাদের কাছে বন্ধক রাখব। আর তোমাদের নিকট আমরা যে রক্তপণ পাওনা আছি, তা মাফ করে দেব।’ শুনে হাওয়াযিনরা বলল, ‘এই চুক্তির দায়িত্ব কে নেবে?’ উতবা বলল, ‘আমি।’ হাওয়াযিনরা বলল, ‘আপনি কে?’ উতবা বলল, ‘আমি উতবা ইবনে রবীয়া।’ অবশেষে উক্ত প্রস্তাব অনুযায়ী সন্ধি স্থাপিত হয় এবং যুদ্ধরত লোকদের নিকট চল্লিশ ব্যক্তিকে প্রেরণ করা হয়। হাকীম ইবনে হিযাম (রা) তাঁদের একজন ছিলেন। যখন বনূ আমির ইবনে ছা’ছা’আ দেখল যে, বন্ধক তাদের হাতে এসে গেছে, তখন তারা তাদের রক্তপণের দাবি ত্যাগ করে এবং এভাবে ফিজার যুদ্ধের অবসান ঘটে। ঐতিহাসিক উমাবী ফিজার-এর যুদ্ধসমূহ এবং তার দিন-ক্ষণ সম্পর্কে আছরাম সূত্রে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। আছরাম হলেন মুগীরা ইবনে আলী। মুগীরা আবু উবায়দা মা’মার ইবনে মুছান্না থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অধ্যায়
হাফিজ বায়হাকী বর্ণনা করেন যে, জুবায়র ইবনে মুতইম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আমি আমার চাচাদের সঙ্গে ‘হিলফুল মুতায়্যিবীনে’উপস্থিত ছিলাম। এখন আমি তা’ ভঙ্গ করা পছন্দ করি না; বিনিময়ে বহমূল্য লাল উট দিলেও নয়।”
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসে আছেঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “হিলফুল মুতায়্যিবীন ছাড়া আমি কুরায়শদের কোন চুক্তিতে উপস্থিত ছিলাম না। এখন বিনিময়ে আমাকে লাল উট দেয়া হলেও আমি তা ভঙ্গ করা পছন্দ করি না।” আবু হুরায়রা (রা) বলেন, মুতায়্যিবীন বলতে বোঝানো হয়েছে হাশিম, উমাইয়া, যুহরা ও মাখযুমকে। বায়হাকী বলেন, হাদীসের এই ব্যাখ্যাটি মুদরাজ বা রাবীর বাড়তি বর্ণনা। এ রাবীর পরিচয়ও অজ্ঞাত। কোন কোন সীরাত বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এখানে ‘হিলফুল মুতায়্যিবীন’ বলতে হিলফুল ফুযুল বোঝান হয়েছে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) হিলফুল মুতায়্যিবীন-এর সময়কাল পাননি।
আমার মতে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তার কারণ কুরায়শরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিল কুসাই-এর মৃত্যুর পর। কুসাই কর্তৃক তাঁর পুত্র আব্দুদ্দারকে সিকায়া, রিফাদা, লিওয়া, নাদওয়া ও হিজাবার দায়িত্ব প্রদানকে কেন্দ্র করে বিরোধ ছিল। এই সিদ্ধান্তে বনূ ‘আবদে মানাফের আপত্তি ছিল। কুরায়শের সকল গোত্র এ ব্যাপারে সোচ্চার হয় এবং নিজ নিজ পক্ষের সহযোগিতা করার ব্যাপারে পরস্পর অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। এ খবর শুনে আবদে মানাফের গোত্রের লোকেরা একটি পাত্রে সুগন্ধি রেখে তাতে হাত রেখে তারাও অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। বৈঠক থেকে উঠে তারা বায়তুল্লাহর খুঁটিতে হাত মুছে। এ কারণে তাঁদেরকে ‘মুতায়্যিবীন’ বা সুগন্ধিওয়ালা নাম দেয়া হয়। এ ঘটনাটি প্রাচীন আমলের। কাজেই প্রমাণিত হয় যে, আলোচ্য অঙ্গীকার দ্বারা হিলফুল ফুযুল বোঝানো হয়েছে। হিলফুল ফুযুল সম্পাদিত হয়েছিল আব্দুল্লাহ ইবন জাদ‘আনের ঘরে। যেমন হুমায়দী বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আমি আব্দুল্লাহ ইবনে জাদ’আনের ঘরে একটি অঙ্গীকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলাম। ইসলামের যুগেও যদি আমাকে তেমন অঙ্গীকারের প্রতি আহ্বান করা হতো, আমি তাতে সাড়া দিতাম।” উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ তাতে নগরবাসীর ওপর অত্যাচার ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করার শপথ নিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিকগণ বলেন, হিলফুল ফুযুল সম্পাদিত হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুয়ত লাভের কুড়ি বছর আগে যুলকা’দা মাসে, ফিজার যুদ্ধের চার মাস পরে। ফিজার সংঘটিত হয়েছিল একই বছরের শাবান মাসে।
হিলফুল ফুযুল ছিল আরবের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ শপথ। এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম যিনি মুখ খুলেন এবং যিনি এর প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তিনি হলেন যুবায়র ইবনে আব্দুল মুত্তালিব।
যে পটভূমির ওপর ভিত্তি করে এই অঙ্গীকার সম্পাদিত হয়েছিল, তা হলো এইঃ
যাবীদ গোত্রের এক ব্যক্তি কিছু ব্যবসা পণ্য নিয়ে মক্কা আসে। ‘আস ইবনে ওয়ায়িল তার থেকে কিছু সওদা ক্রয় করে। কিন্তু পরে সে তার মূল্য পরিশোধ করতে অস্বীকার করে। অগত্যা যাবীদী তার পাওনা আদায় করার জন্য আহলাফ তথা আব্দুদ্দার, মাখযুম, জামহ, সাহম ও আদী ইবনে কা‘ব-এর শরণাপন্ন হয়। কিন্তু তারা ‘আস ইবনে ওয়ায়িল-এর বিপক্ষে তাকে সাহায্য করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয় এবং তাকে শাসিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে যাবীদী ভোরে আবু কুবায়স পর্বতে আরোহণ করে উচ্চ স্বরে কাব্যাকারে তার অত্যাচারিত হওয়ার কথা প্রচার করে। কুরায়শরা তখন কা‘বা চত্বরে আলাপ-আলোচনায় রত। যুবায়র ইবনে আব্দুল মুত্তালিব বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন এবং বলেন, ঘটনাটিকে এভাবে উপেক্ষা করা যায় না। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার। এবার হাশিম, যুহরা ও তাইম ইবনে মুররা আব্দুল্লাহ ইবনে জাদ’আন-এর বাড়িতে সমবেত হন। আব্দুল্লাহ ইবনে জাদ’আন মেহমানদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। এ বৈঠকে যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাস যুলকা’দায় তাঁরা আল্লাহর নামে এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন যে, তাঁরা অত্যাচারিতের পক্ষে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে, যাতে করে জালিম মজলুমের পাওনা আদায় করতে বাধ্য হয়। যতদিন পর্যন্ত সমুদ্রে ঢেউ উত্থিত হবে, যতদিন পর্যন্ত হেরা ও ছাবীর পর্বতদ্বয় আপন স্থানে স্থির থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে। আর জীবন যাত্রায় আমরা একে অপরের সাহায্য করব। কুরায়শরা এই অঙ্গীকারকে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামে নামকরণ করে এবং বলে, এরা একটি মহত কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। তারপর এই যুবকরা আস ইবনে ওয়ায়িল-এর নিকট গিয়ে তার থেকে যাবীদীর পণ্য উদ্ধার করে তাকে ফেরত দেন। যুবায়র ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এ ব্যাপারে বলেনঃ
إن الفضول تعاقدوا وتحالفوا - ألا يقيم ببطن مكة ظالم
أمر عليه تعاقدوا وتواثقوا – فالجار والمعتر فيهم سالم
— কয়েক মহান ব্যক্তি এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে যে, মক্কার বুকে কোনো জালিম পা রাখতে পারবে না; নগরবাসী বিদেশী সকলেই এখানে নিরাপদে অবস্থান করবে।
একটি গরীব পর্যায়ের হাদীসে কাসিম ইবনে ছাবিত উল্লেখ করেন, কাছ‘আম গোত্রের এক ব্যক্তি হজ্জ কিংবা উমরাহ্ উপলক্ষে মক্কায় আগমন করে। তার একটি কন্যা তার সঙ্গে ছিল। মেয়েটি ছিল অত্যন্ত রূপসী এবং তার নাম ছিল কাতুল। নাবীহ ইবন হাজ্জাজ মেয়েটিকে পিতার নিকট হতে অপহরণ করে নিয়ে লুকিয়ে রাখে। ফলে কাছ’আমী লোকটি তার মেয়েকে উদ্ধারের ফরিয়াদ জানায়। তাকে তখন বলা হলো, তুমি ‘হিলফুল ফুযুল’ যুবসংঘের শরণাপন্ন হও। লোকটি কা‘বার নিকটে দাঁড়িয়ে হাঁক দিল, ‘হিলফুল ফুযুল-এর সদস্যগণ কে কোথায় আছেন?’ সঙ্গে সঙ্গে হিলফুল ফুযুল-এর কর্মীগণ কোষমুক্ত তরবারি হাতে চতুর্দিক হতে ছুটে আসেন এবং বলেন, ‘তোমার সাহায্যকারীরা হাজির; তোমার কী হয়েছে?’ লোকটি বলল, ‘নাবীহ আমার কন্যার ব্যাপারে আমার প্রতি জুলুম করেছে। আমার কন্যাকে সে জোর করে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।’ অভিযোগ শুনে তারা লোকটিকে নিয়ে নাবীহ-এর গৃহের দরজায় গিয়ে উপস্থিত হন। নাবীহ বেরিয়ে আসলে তারা বলেন, ‘হতভাগা কোথাকার! মেয়েটিকে নিয়ে আয়। তুই তো জানিস্ আমরা কারা, কি কাজের শপথ নিয়েছি আমরা!’ নাবীহ বলল, ‘ঠিক আছে, তা-ই করছি, তবে আমাকে একটি মাত্র রাতের অবকাশ দিন।’ তারা বললেন, ‘না, আল্লাহর শপথ! কিছুতেই তা হতে পারে না।’ অগত্যা নাবীহ মেয়েটিকে তাঁদের হাতে অর্পণ করে। তখন সে আক্ষেপের সহিত কয়েকটি পংক্তি উচ্চারণ করে।
জুরহুম গোত্র ‘জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের সহায়তা দান’ বিষয়ক একটি অঙ্গীকার নিয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, আলোচ্য অঙ্গীকারও জুরহুমের সেই অঙ্গীকারের অনুরূপ বলে একে হিলফুল ফুযুল নামে নামকরণ করা হয়েছে। যে তিন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির উদ্যোগে জুরহুমের সেই অঙ্গীকার সম্পাদিত হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকেরই নাম ফায্ল। ১. ফায্ল ইবনে ফুযালা ২. ফায্ল ইবনে ওয়াদা‘আহ ৩. ফায্ল ইবনে হারিছ। এটা ইবনে কুতায়বার বক্তব্য। অন্যদের মতে তিনজনের নাম হলো, ১. ফায্ল ইবন শুরা‘আ ২. ফায্ল ইবনে বুযা‘আ ৩. ফায্ল ইন কুযা’আ। এটি সুহায়লীর বর্ণনা।
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেনঃ কুরায়শের কয়েকটি গোত্র পরস্পর হলফ গ্রহণের আহ্বান জানায়। এ উদ্দেশ্যে তারা মক্কার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে জাদ’আনের ঘরে সমবেত হন। সেদিনকার সেই বৈঠকে বনূ হাশিম, বনূ আব্দুল মুত্তালিব, বনু আসাদ ইবনে আব্দুল উযযা, যুহরা ইবন কিলাব এবং তায়ম ইবন মুররা পরস্পর এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন যে, মক্কার বাসিন্দা হোক কিংবা ভিন দেশের লোক হোক, যখনই কেউ অন্যের হাতে নির্যাতনের শিকার হবে, তারা তার সর্বাত্মক সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। জুলুমের প্রতিকার না করা পর্যন্ত তারা ক্ষান্ত হবেন না। কুরায়শরা এই অঙ্গীকারকে হিলফুল ফুযুল নামে অভিহিত করে।
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, তালহা ইবন আব্দুল্লাহ ইবন ইসহাক বলেন, তালহা ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আউফ যুহরী বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ
لقد شهدت في دار عبد الله بن جدعان حلفا ما أحب أن لي به حمرا
النعم و لو دعي به في الإسلام لأجبت
“আমি আব্দুল্লাহ ইবন জাদ‘আনের ঘরে এক অঙ্গীকার সভায় উপস্থিত ছিলাম। সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করার বিনিময়ে যদি আমাকে লাল উটও দেয়া হয় তবু আমি তাতে সম্মত হব না। আর ইসলামের আমলেও যদি তার প্রতি আহ্বান করা হতো আমি তাতে সাড়া দিতাম।”
ইবন ইসহাক বলেনঃ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম ইবন হারিছ আত-তায়মী বর্ণনা করেন যে, হুসায়ন ইবন আলী (রা) ও ওলীদ ইবনে উতবা ইবনে আবু সুফিয়ান-এর মধ্যে যুল-মারওয়ার কিছু সম্পদ নিয়ে বিবাদ ছিল। ওলীদ তখন মদীনার গভর্নর। তাঁর চাচা মু‘আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান তাকে মদীনার গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। ক্ষমতার বলে ওলীদ পাওনা আদায়ে হুসায়ন (রা)-এর ওপর অবিচার করেন। তখন হুসায়ন (রা) বললেন, ‘আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আপনি হয় আমার প্রতি সুবিচার করবেন, অন্যথায় তরবারি হাতে নিয়ে আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মসজিদে দাঁড়িয়ে হিলফুল ফুযুল-এর কর্মীদের আহ্বান করব।’ আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র তখন ওলীদের নিকট উপস্থিত ছিলেন। হুসায়ন (রা)-এর কথা শুনে তিনি বললেন, ‘আমিও আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি। হুসায়ন যদি এরূপ আহ্বান জানান তাহলে আমিও আমার তরবারি হাতে তাঁর পাশে এসে দাঁড়াব। হয় তিনি তাঁর ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন, অন্যথায় আমরা একত্রে জীবন দেব।’
বর্ণনাকারী বলেন, এ সংবাদ মিসওয়ার ইবনে মাখরামার নিকট পৌঁছলে তিনিও একই কথা বলেন। আব্দুর রহমান ইবন উছমান ইবন উবায়েদুল্লাহ আততায়মীও অভিন্ন উক্তি করেন। ওলীদ ইবনে উতবা সব খবর পেয়ে অবশেষে হুসায়ন (রা)-কে তাঁর ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেন। তাতে হুসায়ন (রা) সন্তুষ্ট হয়ে যান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/95
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।