hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

২৪
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ঈসা (আ) বায়তুল মুকাদ্দাসের সন্নিকটে ‘বায়তে লাহমে’ জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু ওহাব ইবন মুনাববিহ্ (র)-এর ধারণা, হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম হয় মিসরে এবং মারয়াম ও ইউসুফ ইবন ইয়াকুব আল-নাজ্জার একই গাধার পিঠে আরোহণ করে ভ্রমণ করেন এবং গাধার পিঠের গদি ব্যতীত তাঁদের মধ্যে অন্য কোন আড়াল ছিল না। কিন্তু এ বর্ণনা সঠিক নয়। কেননা, ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, ঈসা (আ)-এর জন্মস্থান হচ্ছে বায়তে লাহাম। সুতরাং এ হাদীসের মুকাবিলায় অন্য যে কোন বর্ণনা অগ্রহণযোগ্য।

ওহাব ইবন মুনাববিহ উল্লেখ করেছেন যে, হযরত ঈসা (আ) যখন ভূমিষ্ঠ হন তখন পূর্ব ও পশ্চিমের সমস্ত মূর্তি ভেঙ্গে পড়ে যায়। ফলে শয়তানরা অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে। এর কোন কারণ তারা খুঁজে পাচ্ছিল না। অবশেষে বড় ইবলীস তাদেরকে জানাল যে, ঈসা (আ)-এর জন্ম হয়েছে। শয়তানরা শিশু ঈসাকে তার মায়ের কোলে আর চারদিকে ফেরেশতাগণ দাঁড়িয়ে তাকে ঘিরে রেখেছেন দেখতে পেল। তারা আকাশে উদিত একটি বিরাট নক্ষত্রও দেখতে পেল। পারস্য সম্রাট এই নক্ষত্র দেখে শংকিত হয়ে পড়েন এবং জ্যোতিষীদের নিকট এর উদিত হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। জ্যোতিষীরা জানাল, পৃথিবীতে এক মহান ব্যক্তির জন্ম হয়েছে। এজন্য এই নক্ষত্র উদিত হয়েছে। তখন পারস্য সম্রাট উপঢৌকন হিসেবে স্বর্ণ, চান্দি ও কিছু লুবান দিয়ে নবজাতকের সন্ধানে কতিপয় দূত প্রেরণ করেন। দূতগণ সিরিয়ায় এসে পৌঁছে। সিরিয়ার বাদশাহ তাদের আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তারা উক্ত নক্ষত্র ও জ্যোতিষীদের মন্তব্যের কথা তাকে জানায়। বাদশাহ দূতদের নিকট নক্ষত্রটির উদয়কাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তর শুনে তিনি বুঝলেন, ঐ শিশুটি বায়তুল মুকাদ্দাসে জন্ম গ্রহণকারী মারয়াম পুত্র ঈসা। ইতিমধ্যেই ব্যাপক প্রচার হয়ে গিয়েছিল যে, নবজাত শিশুটি দোলনায় থেকেই মানুষের সাথে কথা বলেছেন। এরপর বাদশাহ দূতদেরকে তাদের সাথে আনীত উপঢৌকনসহ শিশু ঈসার নিকট পাঠিয়ে দেন এবং এদেরকে চিনিয়ে দেয়ার জন্যে সাথে একজন লোকও দেন। বাদশাহর উদ্দেশ্য ছিল, দূতগণ যখন উপঢৌকন প্রদান করে চলে আসবে, তখন এ লোক ঈসাকে হত্যা করে ফেলবে। পারস্যের দূতগণ মারয়ামের নিকট গিয়ে উপঢৌকনগুলো প্রদান করে চলে আসার সময় বলে আসলো যে, সিরিয়ার বাদশাহ আপনার নবজাত শিশুকে হত্যা করার জন্যে চর পাঠিয়েছে। এ সংবাদ শুনে মারয়াম শিশুপুত্র ঈসাকে নিয়ে মিসরে চলে আসেন এবং একটানা বার বছর সেখানে অবস্থান করেন। এ সময়ের মধ্যে ঈসা (আ)-এর বিভিন্ন রকম কারামত ও মু’জিযা প্রকাশ হতে থাকে। ওহাব ইবন মুনাবিহ কতিপয় মু’জিযার কথা উল্লেখ করেছেন। যথাঃ

(এক) বিবি মারয়াম মিসরের যে সর্দারের বাড়িতে অবস্থান করেন, একদা ঐ বাড়ি থেকে একটি বস্তু হারিয়ে যায়। ভিক্ষুক, দরিদ্র ও অসহায় লোকজন সে বাড়িতে বসবাস করত। কে বা কারা বস্তুটি চুরি করেছে, তা অনুসন্ধান করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। বিষয়টি মারয়ামকে ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিল। বাড়ির মালিক ও অন্যান্য লোকজনও বিব্রত অবস্থায় পড়ে গেল। অবশেষে শিশু ঈসা সেখানে অবস্থানকারী এক অন্ধ ও এক পঙ্গু ব্যক্তির নিকট গেলেন। অন্ধকে বললেন, ‘তুমি এ পঙ্গুকে ধরে উঠাও এবং তাকে সাথে নিয়ে চুরি করা বস্তু নিয়ে এস।’ অন্ধ বলল, ‘আমি তো তাকে উঠাতে সক্ষম নই।’ ঈসা বললেন, ‘কেন, তোমরা উভয়ে যেভাবে ঘরের জানালা দিয়ে বস্তুটি নিয়ে এসেছিলে, সেভাবেই গিয়ে নিয়ে এস।’ এ কথা শোনার পর তারা এর সত্যতা স্বীকার করল এবং চুরি করা বস্তুটি নিয়ে আসলো। এ ঘটনার পর ঈসার মর্যাদা মানুষের নিকট অত্যধিক বেড়ে যায়। যদিও তিনি তখন শিশু মাত্র।

(দুই) উক্ত সর্দারের পুত্র আপন সন্তানদের পবিত্রতা অর্জনের উৎসবের দিনে এক ভোজ সভার আয়োজন করে। লোকজন সমবেত হল। খাওয়া-দাওয়া শেষ হল। সে যুগের নিয়মানুযায়ী এখন মদ পরিবেশনের পালা। কিন্তু মদ ঢালতে গিয়ে দেখা গেল কোন কলসীতেই মদ নেই। সর্দার পুত্র ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেল। হযরত ঈসা (আ) এ অবস্থা দেখে প্রতিটি কলসীর মুখে হাত ঘুরিয়ে আসলেন। ফলে সেগুলো সাথে সাথে উৎকৃষ্ট মদে পূর্ণ হয়ে গেল। লোকজন এ ঘটনা দেখে বিস্মিত হলো। ফলে, তাদের নিকট আরও মর্যাদা বৃদ্ধি পেল। মানুষ বিভিন্ন রকম উপটোকন এনে ঈসা ও তার মার কাছে পেশ করলো কিন্তু তারা এর কিছুই গ্রহণ করলেন না। তারপর তারা বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়লেন।

ইসহাক ইবন বিশর....... আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত ঈসা ইবন মারয়ামই প্রথম মানুষ, যিনি শিশুকালে কথা বলেছেন। আল্লাহ তাঁর রসনা খুলে দেন এবং তিনি আল্লাহর প্রশংসায় এমন অনেক কথা বলেন, যা ইতিপূর্বে কোন কান কখনও শোনেনি। এ প্রশংসায় তিনি চাঁদ, সুরুজ, পর্বত, নদী, ঝর্ণা কোন কিছুকেই উল্লেখ করতে বাদ দেননি।

তিনি বলেনঃ ‘হে আল্লাহ! সু-উচ্চ মর্যাদায় থেকেও আপনি বান্দার নিকটবর্তী। বান্দার নিকটবর্তী থেকেও আপনি সু-মহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। সমস্ত সৃষ্টিকুলের উপরে আপনার শক্তি ও ক্ষমতা। আপনি এমন ক্ষমতাবান সত্তা, যিনি আপন বাণী দ্বারা মহাশূন্যে সাতটি স্তরে আকাশকে সৃষ্টি ও বিন্যস্ত করেছেন। এগুলো প্রথম দিকে ধোঁয়ার আকারে ছিল। পরে আপনার নির্দেশ মতে ওগুলো আপনার অনুগত হয়। এসব আকাশে ফিরিশতাকুল আপনার মহিমা বর্ণনায় তাসবীহ পাঠে রত। এগুলোতে আপনি রাতের অন্ধকারে আলোর ব্যবস্থা করেছেন এবং সূর্যের আলো দ্বারা দিনকে আলোকিত করেছেন। আকাশে বজ্র ধ্বনিকে আপনার স্তুতি পাঠে নিয়োজিত রেখেছেন। আপনার সম্ভ্রমের সম্মানে সেগুলোর অন্ধকার বিদূরিত হয়ে আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। আসমান রাজিতে আপনার স্থাপিত নক্ষত্রপুঞ্জরূপী প্রদীপমালার সাহায্যে দিশাহারা পথিকগণ পথের দিশা পায়। অতএব হে আল্লাহ, আসমানরাজিকে বিন্যস্ত করে এবং যমীনকে বিস্তৃত করে আপনি মহা কল্যাণ সাধন করেছেন। যমীনকে আপনি পানির উপরে বিছিয়েছেন। তারপর পানির বিশাল ঢেউয়ের উপরে উঁচু করে রেখেছেন এবং ঢেউগুলোকে নমনীয় হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। আপনার আদেশ পালনার্থে ঢেউগুলো অবনত মস্তকে নমনীয় হয়। এরপর আপনি প্রথমে সমুদ্র ও সমুদ্র থেকে নদী সৃষ্টি করেছেন। তারপর ছোট ছোট নালা ও ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন। এরপর আপনি এ থেকে সৃষ্টি করেছেন খাল, বিল, গাছপালা ও ফল ফলাদি। তারপর যমীনের উপরে স্থাপন করেছেন পাহাড়, পাহাড়গুলো পানির উপরে পেরেকের ন্যায় যমীনকে স্থির করে রেখেছে। এসব কাজে পর্বতমালা ও পাথরসমূহ আপনার পূর্ণ আনুগত্য করে। অতএব, হে আল্লাহ! আপনি অত্যন্ত বরকতময়। এমন কে আছে, যে আপনার মত করে আপনার প্রশংসা করতে পারে? কে আছে এমন, যে আপনার মত করে আপনার গুণাবলী বর্ণনা করতে সক্ষম? আপনি মেঘপুঞ্জকে ছড়িয়ে দেন। বাধা-বন্ধনকে মুক্ত করেন, সঠিক ফয়সালা করেন, এবং আপনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী। আপনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। আপনি মহা পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যাবতীয় পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করার হুকুম করেছেন। আপনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আপনি মহা পবিত্র। আকাশমণ্ডলীকে আপনি মানুষের ধরা ছোঁয়া থেকে দূরে রেখে দিয়েছেন। আপনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। আপনি মহা পবিত্র। জ্ঞানী লোকই কেবল আপনাকে উপলব্ধি করতে পারে। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আমাদের নিজেদের উদ্ভাবিত উপাস্য নন। আপনি এমন পালনকর্তা নন, যার আলোচনা শেষ হতে পারে। আপনার কোন অংশীদার নেই যে, আপনাকে ডাকার সাথে তাদেরকেও আমরা ডাকবো। আমাদের সৃষ্টি কাজে আপনাকে কেউ সাহায্য করেনি যে, আপনার ব্যাপারে আমাদের কোন সন্দেহ হতে পারে। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি – আপনি একক, মুখাপেক্ষীহীন, আপনি কাউকে জন্ম দেননি, আপনাকেও কেউ জন্ম দেয়নি, কোন দিক দিয়েই আপনার সমকক্ষ কেউ নেই।’

ইসহাক ইবন বিশর ...... ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। ঈসা ইবন মারয়াম (আ) শিশু অবস্থায় একবার কথা বলেন। এরপর তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য শিশুরা যখন স্বাভাবিক বয়সে কথা বলে থাকে, তিনিও সে বয়সে পুনরায় কথা বলতে শুরু করেন। আল্লাহ তখন তাঁকে যুক্তিপূর্ণ কথা ও বাগি্মতা শিক্ষা দেন। ইয়াহুদীরা ঈসা (আ) ও তার মা সম্পর্কে জঘন্য উক্তি করে। তাঁকে তারা জারজ সন্তান বলত। আল্লাহর বাণীঃ

( وَبِكُفۡرِهِمۡ وَقَوۡلِهِمۡ عَلَىٰ مَرۡیَمَ بُهۡتَـٰنًا عَظِیم ࣰا)

[Surah An-Nisa' 156]

—এবং তারা লা’নগ্রস্ত হয়েছিল তাদের কুফরীর জন্যে ও মারয়ামের বিরুদ্ধে গুরুতর অপবাদের জন্যে। (৪ নিসাঃ ১৫৬)। ঈসা (আ)-এর বয়স যখন সাত বছর, তখন তাঁরা তাঁকে লেখাপড়া শিখাবার জন্যে বিদ্যালয়ে পাঠান। কিন্তু ঘটনা এমন হল যে, শিক্ষক তাঁকে যে বিষয়টিই শিখাতে চাইতেন, তিনি আগেই সে বিষয় সম্পর্কে বলে দিতেন। এমতাবস্থায় এক শিক্ষক তাকে ‘আবু জাদ’ শিখালেন। ঈসা জিজ্ঞেস করলেন, “আবু জাদ’ কি?’ শিক্ষক বললেন, ‘আবু জাদ কি তা আমি বলতে পারি না।’ ঈসা বললেন, ‘যে বিষয়ে আপনি জানেন না, সে বিষয়ে আমাকে কেমন করে শিখাবেন?’ শিক্ষক বললেন, ‘তা হলে তুমিই আমাকে শিখাও।’ ঈসা বললেন, ‘তবে আপনি ঐ আসন থেকে নেমে আসুন!’ শিক্ষক নেমে আসলেন। তারপর ঈসা (আ) সে আসনে গিয়ে বসলেন এবং বললেন, ‘আমার নিকট জিজ্ঞেস করুন!’ শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন, ‘আবু জাদ কি?’ উত্তরে ঈসা বললেন, ( الف ) দ্বারা ( الاءالله ) (আল্লাহর নিয়ামতরাশি) با দ্বারা ( بهاء الله ) (আল্লাহর দীপ্তি) جيم দ্বারা بهجة الله وجماله (আল্লাহর অনুপম সৌন্দর্য)।

এ উত্তর শুনে শিক্ষক বিস্মিত হয়ে গেলেন। হযরত ঈসা-ই সর্ব প্রথম আবু জাদ ( ابوجاد ) শব্দের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

অতঃপর ইসহাক ইব্‌ন বিশর এক দীর্ঘ হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন যে, হযরত উছমান রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর প্রতিটি শব্দের উত্তর দিয়েছিলেন। কিন্তু, এ হাদীস মাওযু -জাল। অনুরূপ ইবন আদীও ....... আবু সাঈদ থেকে এক মারফু হাদীসের মাধ্যমে ঈসার মক্তবে প্রবেশ, শিক্ষক কর্তৃক ‘আবু জাদ’ এর অক্ষর সমূহের অর্থ শিক্ষা দান ইত্যাদির উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ হাদীসও গ্রহণযোগ্য নয়। ইবন আদী বলেছেন, এ হাদীস মিথ্যা। ইসমাঈল ব্যতীত আর কেউ এ হাদীস বর্ণনা করেন নি। ইবন লুহায়আ আব্দুল্লাহ ইবন হুবায়রা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা) বলেছেনঃ ঈসা ইবন মারয়াম (আ) কিশোর বয়সে অন্যান্য বালকদের সাথে মাঠে খেলাধুলা করতেন। মাঝে মধ্যে তিনি তাদের কাউকে ডেকে বলতেন, ‘তুমি কি চাও যে, তোমার মা কি কি খাদ্য তোমাকে না দিয়ে গোপন করে রেখেছে, আমি তা বলে দেই?’ সে বলত, ‘বলে দিন।’ ঈসা বলতেন, ‘অমুক অমুক জিনিস গোপন করে রেখেছে।’ বালকটি তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়ে মাকে বলত, ‘আপনি যে সব খাদ্য আমাকে না দিয়ে গোপন করে রেখে দিয়েছেন, তা আমাকে খেতে দিন।’ মা বলতেন, ‘কি জিনিস আমি গোপন করে রেখেছি?’ বালক বলত, ‘অমুক অমুক জিনিস।’ মা বলতেন, ‘এ কথা তোমাকে কে বলেছে?’ ছেলে বলত, ‘ঈসা ইবন মারয়াম বলেছে।’ এ কথা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর লোকজন পরামর্শ করল, আমরা যদি ছেলেদেরকে ঈসার সাথে এ ভাবে মেলামেশার সুযোগ দিই তাহলে ঈসা তাদেরকে নষ্ট করে ছাড়বে। সুতরাং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন তারা সকল ছেলেদেরকে একটা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখল। ঈসা বালকদেরকে সন্ধান করে ফিরলেন; কিন্তু কাউকেও খুঁজে পেলেন না। অবশেষে একটি ঘর থেকে তাদের কান্নাজড়িত চিৎকার শুনতে পেয়ে লোকজনের নিকট জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঐ ঘরটির ভিতর শব্দ কিসের?’ তারা ঈসাকে জানাল, ‘ঘরের ওগুলো হচ্ছে বানর ও শূকর।’ তখন ঈসা বললেন, ‘হে আল্লাহ! ঐ রকমই করে দিন।’ ফলে বালকগুলো বানর ও শূকরে পরিণত হয়ে গেল। (ইবন আসাকির)।

ইসহাক ইবন বিশর .......ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত ঈসা আল্লাহর ইঙ্গিত (ইলহাম) অনুযায়ী বাল্যকালে বিস্ময়কর কাজকর্ম দেখাতেন। ইয়াহূদীদের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে পড়ে। ঈসা (আ) বয়োবৃদ্ধি লাভ করেন। বনী ইসরাঈলরা তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে থাকে। তার মা এ জন্যে শংকিত হয়ে পড়েন। তখন আল্লাহ তাকে ওহীর মাধ্যমে ছেলেসহ মিসরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কুরআন পাকে আল্লাহ বলেনঃ

( وَجَعَلۡنَا ٱبۡنَ مَرۡیَمَ وَأُمَّهُۥۤ ءَایَة وَءَاوَیۡنَـٰهُمَاۤ إِلَىٰ رَبۡوَة ذَاتِ قَرَار وَمَعِین ࣲ)

[Surah Al-Mu'minun 50]

—এবং আমি মারয়াম তনয় ও তার মাকে করেছিলাম এক নিদর্শন, তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণ বিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে। (২৩ মু’মিনুনঃ ৫০)

আয়াতে উল্লেখিত নিরাপদ ও প্রস্রবণ বিশিষ্ট উচ্চ ভূমি দ্বারা কোন স্থানকে বুঝানো হয়েছে, তা নির্ণয়ে প্রথম যুগের উলামা ও মুফাসসিরগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেননা এ ধরনের বৈশিষ্ট্যময় স্থান খুবই বিরল। যেহেতু সমতল থেকে উচ্চ ভূমি, যার উপরিভাগ হবে প্রশস্ত ও সমতল এবং যেখানে রয়েছে পানির প্রস্রবণ। ( معين ) বলা হয় এমন ঝর্ণাকে, যার পানি যমীনের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। উচ্চ ভূমিতে এ ধরনের প্রস্রবণ সাধারণত হয় না। এজন্যে এর অর্থ নির্ণয়ে বিভিন্ন মতামতের সৃষ্টি হয়েছে যথাঃ

(১) সেই স্থান, যেখানে মাসীহ্ জন্মগ্রহণ করেছিলেন অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী একটি খেজুর বাগান। আল্লাহর বাণী।

( فَنَادَىٰهَا مِن تَحۡتِهَاۤ أَلَّا تَحۡزَنِی قَدۡ جَعَلَ رَبُّكِ تَحۡتَكِ سَرِیّ ࣰا)

[Surah Maryam 24]

—ফেরেশতা তার নিম্নপার্শ্ব হতে আহবান করে তাকে বলল, তুমি দুঃখ কর না তোমার পাদদেশে তোমার প্রতিপালক এক নহর সৃষ্টি করেছেন। (১৯ মারয়ামঃ ২৪)। অধিকাংশ প্রাচীন আলিমদের মতে এটি একটি ছোট নহর। ইবন আব্বাস (রা) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত —নহর দ্বারা এখানে দাশিমকের একাধিক নহরকে বুঝানো হয়েছে। সম্ভবত তিনি দামিশকের নহর সমূহের সাথে ঐ স্থানের সাদৃশ্যের কথা ব্যক্ত করেছেন।

(২) কারও কারও মতে উচ্চ ভূমি দ্বারা মিসরকে বুঝানো হয়েছে। যেমন আহলে কিতাবদের একটি অংশ এবং তাদের অনুসারীগণ ধারণা পোষণ করেন।

(৩) কেউ বলেছেন উচ্চ ভূমি অর্থ এখানে রসুল্লাকে বুঝানো হয়েছে।

ইসহাক ইবন বিশর........ ওহাব ইবন মুনাববিহ থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত ঈসার বয়স যখন তের বছর, তখন আল্লাহ তাকে মিসর ত্যাগ করে ঈলিয়া যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন ঈসার মায়ের মামাত ভাই ইউসুফ এসে ঈসা ও মারয়ামকে একটি গাধার পিঠে উঠিয়ে ঈলিয়া নিয়ে যান এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। আল্লাহ এখানেই তার উপর ইনজীল অবতীর্ণ করেন, তাওরাত শিক্ষা দেন, মৃতকে জীবিত করা, রোগীকে আরোগ্য করা, বাড়িতে প্রস্ততকৃত খাদ্য সম্পর্কে না দেখেই জানিয়ে দেওয়ার জ্ঞান দান করেন। ঈলিয়ার লোকদের মধ্যে তাঁর আগমন বার্তা পৌঁছে যায়। তার দ্বারা বিস্ময়কর ঘটনাবলী প্রকাশিত হতে দেখে তারা ঘাঁবড়িয়ে যায় এবং আশ্চর্যবোধ করতে থাকে। ঈসা (আ) তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান জানান। এভাবে তাঁর নবুওতী প্রচার কার্য জনগণের মধ্যে বিকাশ লাভ করে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন