hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৩০
ঈসা (আ)-এর গুণাবলী স্বভাব-চরিত্র ও মাহাত্ম্য
আল্লাহর বাণীঃ

( مَّا ٱلۡمَسِیحُ ٱبۡنُ مَرۡیَمَ إِلَّا رَسُول قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِ ٱلرُّسُلُ وَأُمُّهُۥ صِدِّیقَة ࣱۖ)

[Surah Al-Ma'idah 75]

—মারয়াম-তনয় মসীহ্ তো কেবল একজন রাসূল, তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়েছে এবং তার মা সত্যনিষ্ঠ ছিল। (৫ মায়িদাঃ ৭৫)।

মাসীহ্ অর্থ অত্যধিক ভ্রমণকারী। ঈসা (আ)-এর প্রতি ইয়াহুদীদের কঠোর শত্রুতা, মিথ্যা আরোপ এবং তাঁর উপর ও তাঁর মায়ের উপর অপবাদ দেওয়ার কারণে সৃষ্ট ফিৎনা ফ্যাসাদ থেকে দীনকে রক্ষার জন্যে তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় সফরে কাটান। এই কারণে তাঁকে মাসীহ্ বলে আখ্যায়িত করা হয়। কেউ কেউ বলেন, তার পায়ের তলা সমতল থাকার কারণে হযরত ঈসা (আ)-কে মাসীহ্ বলা হয়। আল্লাহর বাণীঃ

( ثُمَّ قَفَّیۡنَا عَلَىٰۤ ءَاثَـٰرِهِم بِرُسُلِنَا وَقَفَّیۡنَا بِعِیسَى ٱبۡنِ مَرۡیَمَ وَءَاتَیۡنَـٰهُ ٱلۡإِنجِیلَ )

[Surah Al-Hadid 27]

—অতঃপর আমি তাদের অনুগামী করেছিলাম আমার রাসূলগণকে এবং অনুগামী করেছিলাম মারয়াম তনয় ঈসাকে আর তাকে দিয়েছিলাম ইনজীল। (৫৭ হাদীদঃ ২৭)

আল্লাহর বাণীঃ

( وَءَاتَیۡنَا عِیسَى ٱبۡنَ مَرۡیَمَ ٱلۡبَیِّنَـٰتِ وَأَیَّدۡنَـٰهُ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِ )

[Surah Al-Baqarah 87]

—এবং মারয়াম-তনয় ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা তাকে শক্তিশালী করেছি। (২ বাকারাঃ ৮৭)

এ সম্পর্কে কুরআনে প্রচুর আয়াত বিদ্যমান। ইতিপূর্বে বুখারী ও মুসলিমে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, এমন কোন শিশু সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান পেটের পার্শ্বদেশে খোঁচা না দেয়। জন্মের সময় শয়তানের খোঁচার কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারয়াম ও তাঁর পুত্র ঈসা (আ)-এর ব্যতিক্রম। শয়তান তাঁকে খোঁচা মরতে গিয়েছিল। কিন্তু তা না পেরে ঘরের পর্দায় খোঁচা মেরে চলে যায়। উবাদা থেকে উমায়র ইবন হানীর বর্ণিত হাদীস ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুলাহ্ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি একক তার কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মদ (সা) তাঁর বান্দা ও রাসূল। আর ঈসা আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসুল এবং তার কলেমা যা তিনি মারয়াম-এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন এবং তার পক্ষ থেকে প্রেরিত রূহ। (আরও সাক্ষ্য দিবে যে,) জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তার অন্য আমল যা-ই হোক না কেন। বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তবে এ পাঠটি বুখারী ও মুসলিমে শাবী আবু বুরদা, আবু মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ যদি কোন লোক তার দাসীকে আদব-কায়দা শেখায় এবং তা ভালভাবে শেখায় এবং তাকে ইলম শেখায় আর তা উত্তমভাবে শেখায় তারপর তাকে আযাদ করে দেয় এবং পরে তাকে বিয়ে করে নেয় তবে সে দুটি প্রতিদান পাবে। আর যদি কেউ ঈসা (অ)-এর প্রতি ঈমান রাখে অতঃপর আমার প্রতিও ঈমান আনে, তার জন্যেও দু’টি পুরস্কার। আর গোলাম যদি তার প্রতিপালককে ভয় করে এবং দুনিয়ার মুনিবদেরকেও মেনে চলে তবে সেও পাবে দু’টি পুরস্কার। এ পাঠ বুখারীর।

ইমাম বুখারী (র) ইবরাহীম ইবন মূসার সূত্রে....... আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) বলেছেনঃ যে রাতে আমার মিরাজ হয়েছিল, সে রাতে মূসার সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন দীর্ঘ দেহী ব্যক্তি, তাঁর চুল কোঁকড়ান ছিল। মনে হচ্ছিল, তিনি যেন ইয়ামান দেশীয় শানুয়া গোত্রের লোক। তিনি বলেন ঈসার সাথেও আমার সাক্ষাত হয়েছিল। অতঃপর তিনি তার বর্ণনা দিয়ে বলেনঃ তিনি ছিলেন মধ্যম দেহী ও গৌরবর্ণের। যেন তিনি এই মাত্র হাম্মামখানা থেকে বের হয়েছেন। ঐ রাতে আমি ইবরাহীমকেও দেখতে পেয়েছি। আর তাঁর বংশধরদের মধ্যে তাঁর সাথে আমার চেহারার মিল সবচাইতে বেশী। ইবরাহীম ও মূসা (আ)-এর বর্ণনায় আমরা এ হাদীসখানা উল্লেখ করেছি। ইমাম বুখারী মুহাম্মদ ইবন কাছীর সূত্রে....... ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমি ঈসা, মূসা ও ইবরাহীমকে দেখতে পেয়েছি। ঈসা গৌর বর্ণ, কোঁকড়ানো চুল এবং প্রশস্ত বক্ষ বিশিষ্ট লোক, মূসা বাদামী রং বিশিষ্ট, তার দেহ সুঠাম এবং মাথার চুল কোঁকড়ান, যেন জাঠ গোত্রের লোক। এ হাদীসটি কেবল বুখারীতেই আছে।

ইমাম বুখারী (র) ইবরাহীম ইবন মুনযিরের সূত্রে....... আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন, একদা নবী করীম (সা) লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্ একচক্ষু বিশিষ্ট নন। শুনে রেখো, মাসীহ দাজ্জালের ডান চোখ কানা। তার চোখ যেন ফুলে যাওয়া আংগুরের মত ভাসাভাসা। আমি এক রাতে স্বপ্নে আমাকে কা’বার কাছে দেখলাম। হঠাৎ সেখানে বাদামী রং-এর এক ব্যক্তিকে দেখলাম। তোমরা যেমন সুন্দর বাদামী রঙের লোক দেখে থাক তার চাইতেও বেশী সুন্দর ছিলেন তিনি। তাঁর মাথার সোজা চুলগুলো তাঁর দু’কাঁধ পর্যন্ত ঝুলছিল। তার মাথা থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরে পড়ছিল। তিনি দু’জন লোকের কাঁধে হাত রেখে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইনি কে?’ তারা জবাব দিল, ‘ইনি হলেন মাসীহ্ ইবন মারয়াম।’ তারপর তাঁর পেছনে আর একজন লোক দেখলাম। তার মাথার চুল ছিল বেশী কোঁকড়ান, ডান চোখ কানা। আকৃতিতে সে আমার দেখা লোকদের মধ্যে ইবন কাতানের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। সে একজন লোকের দু’কাঁধে ভর করে কা’বার চারদিকে ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই লোকটি কে?’ তারা বলল, ‘এ হল মাসীহ দাজ্জাল।’ ইমাম মুসলিম এ হাদীসখানা মূসা ইবন উকবার সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম বুখারী বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবন নাফিও এ হাদীস অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি যুহরী থেকে বর্ণনা করেন, ইবন কাতান খুজা’আ গোত্রের লোক, জাহিলী যুগে তার মৃত্যু হয়। এ হাদীসে রাসূল (সা) হিদায়েতকারী মাসীহ ও গোমরাহকারী মাসীহর মধ্যে পার্থক্য বলে দিয়েছেন। যাতে ঈসা মাসীহ পুনরায় আগমন করলে মুমিনগণ তাঁর উপর ঈমান আনতে ও মাসীহ্ দাজ্জাল থেকে সতর্ক হতে পারেন। ইমাম বুখারী আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদের সূত্রে...... আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ ঈসা (আ) এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি চুরি করেছ?’ সে বলল, ‘কখনও নয়। সেই সত্তার কসম, যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই।’ তখন ঈসা (আ) বললেন, ‘আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম ও আমার দু’চোখকে অবিশ্বাস করলাম।’ আবদুর রাজ্জাক (র) থেকেও অনুরূপ হাদীস মুহাম্মাদ ইবন রাফি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ আফফানের সূত্রে....... আবূ হুরায়রা (রা) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

এ হাদীস থেকে হযরত ঈসা (আ)-এর পবিত্র ও বলিষ্ঠ চরিত্র ফুটে উঠেছে। যখন লোকটি আল্লাহর কসম বলল, তখন তিনি মনে করলেন যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম খেতে পারে না, বরং নিজের চোখে দেখা বিষয়কে অগ্রাহ্য করে তার ওযরই গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনছি। অর্থাৎ তোমার কসমের জন্যে তোমার কথা সত্য বলে মেনে নিচ্ছি এবং আমার চোখকে অবিশ্বাস করছি। ইমাম বুখারী (র) ....... ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা হাশরের মাঠে খালি পা, নগ্ন দেহ এবং খাতনা বিহীন অবস্থায় সমবেত হবে। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছি, ঠিক তেমনিভাবে দ্বিতীয় বারও করবো। এটা আমার ওয়াদা। আমি তা অবশ্যই পূর্ণ করবো। (২১ আম্বিয়াঃ ১০৪)

হাশরের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে, তিনি হলেন ইবরাহীম (আ)। তারপর আমার অনুসারীদের কিছু সংখ্যককে ডান দিকে জান্নাতে এবং কিছু সংখ্যককে বাম দিকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার লোক। তখন বলা হবে, আপনি তাদের থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকেই তারা পিছটান দিয়েছে। যেমন বলেছিলেন, পূণ্যবান বান্দা ঈসা ইবন মারয়াম। তাঁর উক্তিটি হলো এ আয়াতঃ “আর আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। এরপর আপনি যখন আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনিই তাদের হেফাজতকারী ছিলেন। আর আপনি তো সব কিছুর উপর সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে আযাব দিতে চান তবে এরা যে আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তবে আপনি নিশ্চয়ই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।” এ হাদীসটি বর্ণিত সূত্রে কেবল ইমাম বুখারীই বর্ণনা করেছেন, ইমাম মুসলিম এ সূত্রে বর্ণনা করেন নি। এ ছাড়াও ইমাম বুখারী হুমায়দী সূত্রে....... ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত উমর (রা)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, তিনি বলছেন, আমি নবী (সা)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে অতিশয়োক্তি করো না, যেমন ঈসা ইবন মারয়াম সম্পর্কে নাসারারা করেছিল। আমি তো আল্লাহর বান্দা মাত্র। সুতরাং তোমরা আমার সম্পর্কে বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’

ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) বলেছেন, তিন জন শিশু ব্যতীত আর কেউ দোলনায় কথা বলেন নি। (১) হযরত ঈসা (২) বনী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যাকে জুরাইজ বলে ডাকা হত। একদা সে নামাযরত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল, আমি কি ডাকে সাড়া দিব, না নামাযে নিমগ্ন থাকব। জবাব না পেয়ে তার মা বলল, ‘ইয়া আল্লাহ! ব্যভিচারীণীর চেহারা না দেখা পর্যন্ত তুমি একে মৃত্যু দিও না।’ জুরাইজ তার ইবাদত খানায় থাকতেন। একবার তার কাছে এক মহিলা আসল। সে অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁর সাথে কথা বলল। কিন্তু জুরাইজ তাতে রাজী হলেন না। অতঃপর মহিলাটি একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূরণ করল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘এটি কার সন্তান?’ স্ত্রীলোকটি বলল, ‘জুরাইজের।’ লোকেরা তাঁর কাছে আসল এবং তাঁর ইবাদত খানাটি ভেঙ্গে দিল। আর তাঁকে নিচে নামিয়ে আনল ও গালিগালাজ করল। তখন জুরাইজ উযু করে সালাত আদায় করলেন। এরপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল, অমুক রাখাল আমার পিতা।’ তখন বনী ইসরাঈলের লোকেরা জুরাইজকে বলল, ‘আমরা আপনার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি।’ জুরাইজ বললেন, ‘না, তবে কাদা মাটি দিয়ে তৈরি করে দিতে পার।’ (৩) বনী ইসরাঈলের একজন মহিলা তার শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। মহিলাটি দোয়া করল, ‘ইয়া আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে তার মত বানাও।’ শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল। এবং আরোহীর দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, ‘ইয়া আল্লাহ! আমাকে তার মত করো না।’ এরপর মুখ ফিরিয়ে মায়ের দুধ পান করতে লাগল। আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আমি যেন নবী করীম (সা)-কে দেখতে পাচ্ছি, তিনি নিজের আংগুল চুষে দেখাচ্ছেন। এরপর সেই মহিলাটির পাশ দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। মহিলাটি বলল, ‘ইয়া আল্লাহ! আমার শিশুটিকে এর মত করো।’ শিশুটি তৎক্ষণাৎ মায়ের স্তন ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘ইয়া আল্লাহ! আমাকে তার মত কর।’ মা জিজ্ঞেস করল, ‘তা কেন?’ শিশুটি জবাব দিল, ‘সেই আরোহী লোকটি ছিল বড় জালিম, আর এ দাসীটিকে লোকে বলছে তুমি চুরি করেছ, যেনা করেছ। অথচ সে এসবের কিছুই করেনি।’

ইমাম বুখারী (র) আবু হুয়ায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমি মারয়ামের পূত্র ঈসার বেশী নিকটতম। আর নবীগণ যেন পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই, অর্থাৎ বাপ এক, মা ভিন্ন ভিন্ন। আমার ও ঈসার মাঝখানে কোন নবী নেই। এই সূত্রে ইমাম বুখারীই-এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইবন হিব্বান এবং ইমাম আহমদ হাদীসটি ঈষৎ শাব্দিক পরিবর্তনসহ বর্ণনা করেন। তবে ইমাম আহমদের বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে, কিয়ামতের পূর্বে ঈসা পুনরায় দুনিয়ায় অবতরণ করবেন। যখন তাকে দেখবে তখন তোমরা চিনতে পারবে। কারণ তিনি হবেন মাঝারি গড়নের। গায়ের রং লালচে সাদা। মাথার চুল সোজা। মনে হবে যেন মাথার চুল থেকে পানি টপকে পড়ছে। যদিও তিনি পানি স্পর্শ করেন নি। তিনি এসে ক্রুশ ভাঙ্গবেন, শূকর হত্যা করবেন। জিযিয়া কর রহিত করবেন। একমাত্র ইসলাম ছাড়া সে যুগের সকল ধর্ম ও মতবাদ খতম করবেন। আল্লাহ্ তাঁর হাতে মিথুক মাসীহ দাজ্জালকে ধ্বংস করবেন। সমস্ত পৃথিবী শান্তি ও নিরাপত্তায় ভরে যাবে। এমনকি উট ও সিংহ, বাঘ ও গরু এবং নেকড়ে ও বকরী একই সাথে একই মাঠে বিচরণ করবে। কিশোর বালকগণ সাপের সাথে খেলা করবে। কিন্তু কেউ কারও ক্ষতি করবে না। যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা ততদিন তিনি পৃথিবীতে থাকবেন। তারপর তিনি স্বাভাবিকভাবে ইনতিকাল করবেন এবং মুসলমানরা তার জানাযা পড়বে। আবু দাউদ ....... হাম্মাম ইবন ইয়াহয়া থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হিশাম ইবন উরওয়া আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ ঈসা (আ) পৃথিবীতে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। এই কিতাবের মালাহিম (যুদ্ধ বিগ্রহ) অধ্যায়ে ঈসা (আ)-এর অবতরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাফসীর গ্রন্থেও আমরা সূরা নিসার এই আয়াতঃ “কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি ঈমান আনবেই এবং কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে (৪ নিসাঃ ১৫৯)-এর তাফসীর প্রসঙ্গে এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন ঈসা (আ)-এর পুনরায় দুনিয়ায় আগমন কিয়ামতের অন্যতম লক্ষণ। দামিশকের শুভ্র মিনারায় উপর তিনি অবতরণ করবেন। তিনি যখন অবতরণ করবেন তখন ফজরের নামাযের ইকামত হতে থাকবে। তাকে দেখে মুসলমানদের ইমাম বলবেন, ‘হে রুহুল্লাহ! সম্মুখে আসুন ও নামাযের ইমামতি করুন!’ ঈসা (আ) বলবেন, “না, আপনারা একে অন্যের উপর নেতা, এ সম্মান আল্লাহ এ উম্মতকেই দান করেছেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঈসা (আ) ইমাম ছাহেবকে বলবেন, ‘আপনিই ইমামতি করুন। কেননা, আপনার জন্যে ইকামত দেয়া হয়েছে। অতঃপর ঐ ইমামের পেছনে তিনি সালাত আদায় করবেন। নামায শেষে তিনি বাহনে আরোহণ করে মাসীহ দাজ্জালের সন্ধানে বের হবেন এবং মুসলমানরা তাঁর সাথে থাকবেন। দাজ্জালকে লুদ তোরণের নিকট পেয়ে সেখানেই তিনি নিজ হাতে তাকে হত্যা করবেন। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দামিশকের পূর্ব পার্শ্বে এই মিনার যখন শুভ্র পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয় তখনই দৃঢ় আশা করা হয়েছিল যে, এখানেই তিনি অবতরণ করবেন। এই স্থানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর নাসারাদের অর্থ দ্বারাই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ঈসা (আ) এখানে অবতরণ করে শূকর নিধন করবেন। ক্রুশ ভেংগে চুরমার করবেন এবং ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন তিনি গ্রাহ্য করবেন না।

ঈসা (আ) রাওহা থেকে হজ্জ কিংবা উমরা অথবা উভয়টির নিয়ত করে বের হবেন এবং তা’ সম্পন্ন করবেন। চল্লিশ বছর জীবিত থাকার পর তিনি ইনতিকাল করবেন। তাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হুজরায় রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও তাঁর প্রথম দুই খলীফার নিকট দাফন করা হবে। এ সম্পর্কে ইবন আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে ঈসা (আ)-এর বর্ণনা প্রসংগে হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত মারফু হাদীসে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত ঈসা (আ)-কে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হুজরা শরীফের মধ্যে রাসূলুল্লাহ, আবু বকর ও উমরের সাথে দাফন করা হবে। কিন্তু এই হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ নয়। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী আব্দুল্লাহ ইবন সালাম (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাওরাত কিতাবে মুহাম্মদ (সা) ও ঈসা ইবন মারয়ামের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে আছে যে, হযরত ঈসাকে মুহাম্মাদ-(স) এর সাথে দাফন করা হবে। এ হাদিসের অন্যতম রাবী আবু মওদূদ মাদানী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হুজরায় একটি কবর পরিমাণ স্থান খালি আছে। ইমান তিরমিযী (র) এ হাদীসকে হাসান বলেছেন। ইমাম বুখারী (র) বলেন, আমার মতে এ হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়। ইমাম বুখারী সুলায়মান থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত ঈসা ও মুহাম্মদ (সা)-এর মধ্যে নবুওতের বিরতিকাল ছয় শ’ বছর। কাতাদার মতে, পাঁচ শ’ ষাট বছর। কারও মতে পাঁচ শ’ চল্লিশ বছর। যাহহাকের মতে, চার শ’ ত্রিশ বছরের কিছু বেশী কিন্তু প্রসিদ্ধ মত ছয়শ’ বছর। তবে কেউ কেউ বলেছেন, চান্দ্র বছরের হিসেবে ছয়শ’ বিশ বছর এবং সৌর বছর হিসেবে ছয় শ’ বছর।

ইবন হিব্বান তার সহীহ গ্রন্থে ঈসা (আ)-এর উম্মতগণ কত দিন সঠিক দীনের উপরে ও নবীর আদর্শের উপরে টিকেছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ দাউদ নবীকে তাঁর অনুসারীদের মধ্যে মৃত্যু দেন। কিন্তু এতে তাঁর অনুসারীরা বিপথগামীও হয়নি, দীনও পরিবর্তন করেনি। আর ঈসা মাসীহর অনুসারীরা তাঁর বিদায়ের পরে দু’শ বছর তাঁর নীতি ও আদর্শের উপরে টিকে ছিল। ইবন হিব্বান এ হাদীসকে সহীত’ বললেও মূলত এর সনদ গরীব পর্যায়ের। ইবন জারীর মুহাম্মদ ইবন ইসহাকের বরাত দিয়ে লিখেছেন যে, ঈসা (আ)-কে আসমানে তুলে নেয়ার পর্বে তিনি হাওয়ারীগণকে উপদেশ দিয়েছেলেন, তারা যেন মানুষকে এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকতে থাকে। তিনি তাদের প্রত্যেককে সিরিয়া ও প্রাচ্য-প্রতীচ্যের জনগোষ্ঠির এক এক এলাকা দাওয়াতী কাজের জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন।

বর্ণনাকারীগণ বলেছেন যে, সে এলাকায় যে হাওয়ারীকে নিয়োগ করা হয়েছিল, তিনি সেই এলাকার অধিবাসীদের সাথে তাদের নিজ ভাষায় কথা বলতেন। অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন, হযরত ঈসা (আ)-এর নিকট থেকে চার জন লোক ইনজীল উদ্ধৃত করেছেন। তারা হলেন, লুক, মথি, মার্কস ( মার্ক) ও ইউহান্না (যোহন)। কিন্তু এই ইনজীল চতুষ্টয়ের মধ্যে একটির সাথে আর একটির যথেষ্ট গরমিল বিদ্যমান। একটির মধ্যে বেশী তো আর একটিতে কম। উক্ত চার জনের মধ্যে মথি ও ইউহান্না হযরত ঈসার যুগের এবং তারা তাকে দেখেছিলেন। মার্কস ও লুক তাঁর সমসাময়িক ছিলেন না, বরং তাঁরা ছিলেন ঈসার শিষ্যদের শিষ্য। তবে তাঁরা মাসীহর উপর যথার্থ ঈমান আনেন ও তাকে সত্য নবী বলে স্বীকার করেন। দামিশকের এক ব্যক্তি ঈসা মাসীহর উপর ঈমান আনেন, তার নাম যায়ন ( ضينا )। তবে তিনি পোল নামক জনৈক ইহুদীর ভয়ে দামিশকের পূর্ব গেটে গীর্জার নিকটে একটি গুহায় আত্মগোপন করে থাকেন। উক্ত ইহুদী ছিল অত্যাচারী ও ঈসা (আ)-এর প্রতি এবং তার আদর্শের প্রতি চরম বিদ্বেষী। এই ব্যক্তির এক ভাইপো ঈসা (আ)-এর উপর ঈমান আনার কারণে সে তার মাথার চুল মুড়িয়ে দেয়। শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরায় এবং পাথর মেরে তাকে হত্যা করে। একদিন সে শুনতে পেল ঈসা (আ) দামিশক অভিমুখে রওনা হয়েছেন। তখন সে তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে খচ্চরে আরোহণ করে সেদিকে বেরিয়ে পড়ল।

কাওকাব নামক স্থানে পৌঁছে সে ঈসা (আ)-কে দেখতে পেল। ঈসা (আ)-এর শিষ্যদের দিকে অগ্রসর হতেই এক ফেরেশতা এসে পাখা দিয়ে আঘাত করে তার চোখ কানা করে দিলেন। এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে তার অন্তরে ঈসা (আ)-এর প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। তখন সে ঈসা (আ)-এর নিকট গিয়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে ঈমান আনে ঈসা (আ) তার ঈমান গ্রহণ করলেন। অতঃপর সে ঈসা (আ)-কে তার চক্ষুদ্বয়ের উপর হাত বুলিয়ে দিতে অনুরোধ করল, যাতে আল্লাহ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। ঈসা (আ) বললেন,, ‘তুমি যায়ন-এর কাছে ফিরে যাও। দামিশকের পূর্ব প্রান্তে লম্বা বাজারের পার্শ্বে তাকে পাবে। সে তোমার জন্যে দোয়া করবে।’ ঈসা (আ)-এর কথামত সে সেখানে এসে যায়নকে পেল। যায়ন তার জন্যে দোয়া করলে সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। পোল আন্তরিকভাবে ঈসার প্রতি ঈমান এনেছিলেন তিনি তাকে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করতেন। তার নামে দামিশকে একটি গীর্জা তৈরি করা হয়। পোলের গীর্জা নামে খ্যাত এই গীর্জাটি সাহাবাদের যুগে দামিশক বিজয়কালেও বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীকালে এটা ধ্বংস হয়ে যায়। সে ইতিহাস আমরা পরে বলব।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন