hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সিয়াম ও যাকাত

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১২৯
যাকাত বণ্টনের খাত
যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ﴾

যাকাত তাদের জন্য যারা- নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারী, যাদের অন্তঃকরণ আকৃষ্ট করা প্রয়োজন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, যারা আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফির। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(সূরা তওবা- ৬০)

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যাকাত প্রদানের জন্য ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। নিম্নে এ ব্যাপারে বিসত্মারিত আলোচনা করা হল :

১. ফকীর :

ফকীর শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, মুখাপেক্ষী। পারিভাষিক অর্থে ফকীর ঐসব ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কিছুই নেই এবং যে ব্যক্তি অভাবের তাড়নায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকায় আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম এদের কথাই উল্লেখ করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে- ইয়াতীম, পরিত্যক্ত শিশুদের নিয়ে গঠিত শিশুসদন, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা মহিলা, বৃদ্ধ , অসুস্থ ও পঙ্গু ব্যক্তি, খুব কম আয়ের লোক, ছাত্র, বেকার, জেলবন্দী ও যুদ্ধবন্দীদের পরিবার- এসব ব্যক্তিবর্গ।

২. মিসকীন :

মিসকীন শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, নিঃস্ব, অসহায় ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে মিসকীন ঐ অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে বলা হয়, যার বাসস্থান, ব্যবহারী আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ সবই রয়েছে; কিন্তু সে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়। সে সংসারে নানা রকম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে, জীবিকা সংগ্রহের কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না এবং নিজ আত্মমর্যাদাবোধের জন্য মানুষের নিকট চাইতেও পারছে না।

এরা লজ্জার কারণে বা আত্মমর্যাদার কারণে চাইতে পারে না। তাই বলে তাদেরকে যাকাত হতে বঞ্চিত করা যাবে না; বরং তাদেরকেও যাকাত দিতে হবে। এদের পরিচয় দিতে গিয়ে হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَيْسَ الْمِسْكِيْنُ الَّذِيْ يَطُوْفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ وَلٰكِنِ الْمِسْكِيْنُ الَّذِيْ لَا يَجِدُ غِنًى يُغْنِيْهِ ، وَلَا يُفْطَنُ بِه فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ ، وَلَا يَقُوْمُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এমন ব্যক্তি মিসকীন নয়, যে এক মুঠো বা দুই মুঠো খাবারের জন্য কিংবা একটি বা দুটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় এবং তাকে তা দেয়া হলে ফিরে আসে। বরং প্রকৃত মিসকীন হল সেই ব্যক্তি, যার প্রয়োজন পূরণ করার মত যথেষ্ট সঙ্গতী নেই। অথচ তাকে চেনাও যায় না, যাতে লোকে তাকে সাদাকা করতে পারে এবং সে নিজেও মানুষের নিকট কিছু চায় না। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৭৯; জামেউস সগীর, হা/৯৫১৫; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৪৫; নাসাঈ, হা/২৫৭২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৩৫২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮২৮; মিশকাত, হা/১৮২৮।]

৩. আমেলীন :

‘আমেলীন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে কর্মচারী। অর্থাৎ যারা যাকাত সংগ্রহ করা, যাকাতের সম্পদ সংরক্ষণ করা, পাহারা দেয়া এবং বিতরণ করাসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজে নিয়োজিত থাকে, তাদেরকে আমেলীন বলা হয়। যাকাত আদায়ের কাজে নিযুক্ত এসব কর্মচারীকে যাকাতের তহবিল থেকে তাদের পারিশ্রমিক প্রদান করা যাবে। হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ السَّاعِدِىِّ الْمَالِكِىِّ أَنَّه قَالَ اسْتَعْمَلَنِىْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ - - عَلَى الصَّدَقَةِ فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنْهَا وَأَدَّيْتُهَا إِلَيْهِ أَمَرَ لِىْ بِعُمَالَةٍ فَقُلْتُ إِنَّمَا عَمِلْتُ لِلّٰهِ وَأَجْرِىْ عَلَى اللهِ . فَقَالَ خُذْ مَا أُعْطِيْتَ فَإِنِّىْ عَمِلْتُ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ - - فَعَمَّلَنِىْ فَقُلْتُ مِثْلَ قَوْلِكَ فَقَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ - : إِذَا أُعْطِيْتَ شَيْئًا مِنْ غَيْرِ أَنْ تَسْأَلَ فَكُلْ وَتَصَدَّقْ

ইবনে সায়েদী আল-মালেকী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়কারী হিসেবে নিযুক্ত করলেন। যখন আমি কাজ শেষ করলাম এবং তাঁর কাছে পৌঁছে দিলাম তখন তিনি আমাকে পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আমি তো এটা আল্লাহর সমত্মুষ্টি অর্জনের জন্যই করেছি। সুতরাং আমি আল্লাহর নিকট থেকেই এর প্রতিদান নেব। তখন তিনি বললেন, আমি যা দিচ্ছি তা নিয়ে নাও। কেননা আমিও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় যাকাত আদায়কারীর কাজ করেছি। তখন তিনিও আমাকে পারিশ্রমিক প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন আমিও তোমার মত এরূপ কথা বলেছিলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছিলেন, যখন তুমি না চাওয়া সত্ত্বেও তোমাকে কিছু দেয়া হয়, তখন তুমি তা গ্রহণ কর। তুমি তা নিজে খাও অথবা সাদাকা কর। [সহীহ মুসলিম, হা/২৪৫৫; আবু দাউদ, হা/১৬৪৯; নাসাঈ, হা/২৬০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৭১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৩৬৪; মিশকাত, হা/১৮৫৪।]

অপর হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : لَا تَحِلُّ الصَّدَقَةُ لِغَنِىٍّ اِلَّا لِخَمْسَةٍ لِغَازٍ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ لِعَامِلٍ عَلَيْهَا أَوْ لِغَارِمٍ أَوْ لِرَجُلٍ اشْتَرَاهَا بِمَالِه أَوْ لِرَجُلٍ كَانَ لَه جَارٌ مِسْكِيْنٌ فَتُصُدِّقَ عَلَى الْمِسْكِيْنِ فَأَهْدَاهَا الْمِسْكِيْنُ لِلْغَنِىِّ

আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা বৈধ নয়। তবে পাঁচ শ্রেণির ধনীর জন্য তা জায়েয। (১) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি। (২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী। (৩) ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তি। (৪) যে ব্যক্তি যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছেন এবং (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে। [আবু দাউদ, হা/১৬৩৭; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬০৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৫৪৪; মিশকাত, হা/১৮৩৩।]

৪. মুআল্লাফাতুল কুলুব :

মন জয় করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা ইসলামের বিরোধিতায় ব্যাপকভাবে তৎপর এবং অর্থ দিয়ে যাদের শত্রুদের তীব্রতা ও উগ্রতা হ্রাস করা যেতে পারে কিংবা যারা সবেমাত্র ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং তাদের পূর্বেকার শত্রুতা বা দুর্বলতাগুলো দেখে আশঙ্কা জাগে যে, অর্থ দিয়ে তাদের বশীভূত না করলে তারা আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাবে, এ ধরনের লোকদেরকে স্থায়ীভাবে বৃত্তি দিয়ে বা সাময়িকভাবে এককালীন দানের মাধ্যমে ইসলামের সমর্থক ও সাহায্যকারী অথবা অনুগত করা যায়। এ খাতে গনীমতের মাল ও অন্যান্য উপায়ে অর্জিত অর্থ থেকেও ব্যয় করা যেতে পারে। এ ধরনের লোকদের জন্য ফকীর, মিসকীন বা মুসাফির হওয়ার শর্ত নেই। বরং ধনী ও বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে যাকাত দেয়া যেতে পারে। হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ قَالَ : بَعَثَ عَلِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ بِذُهَيْبَةٍ فَقَسَمَهَا بَيْنَ الْأَرْبَعَةِ الْأَقْرَعِ بْنِ حَابِسٍ الْحَنْظَلِيِّ ثُمَّ الْمُجَاشِعِيِّ، وَعُيَيْنَةَ بْنِ بَدْرٍ الْفَزَارِيِّ، وَزَيْدٍ الطَّائِيِّ ثُمَّ أَحَدِ بَنِيْ نَبْهَانَ، وَعَلْقَمَةَ بْنِ عُلَاثَةَ الْعَامِرِيِّ ثُمَّ أَحَدِ بَنِيْ كِلَابٍ، فَغَضِبَتْ قُرَيْشٌ وَالْأَنْصَارُ، قَالُوْا يُعْطِيْ صَنَادِيدَ أَهْلِ نَجْدٍ وَيَدَعُنَا؟‏ قَالَ : إِنَّمَا أَتَأَلَّفُهُمْ . فَأَقْبَلَ رَجُلٌ غَائِرُ الْعَيْنَيْنِ مُشْرِفُ الْوَجْنَتَيْنِ، نَاتِئُ الْجَبِيْنِ، كَثُّ اللِّحْيَةِ، مَحْلُوْقٌ فَقَالَ : اتَّقِ اللهَ يَا مُحَمَّدُ . ‏ فَقَالَ : مَنْ يُطِعِ اللهَ إِذَا عَصَيْتُ؟ أَيَأْمَنُنِي اللهُ عَلٰى أَهْلِ الْأَرْضِ فَلَا تَأْمَنُوْنِيْ؟ . ‏ فَسَأَلَه رَجُلٌ قَتْلَه أَحْسِبُه خَالِدَ بْنَ الْوَلِيْدِ فَمَنَعَه ، فَلَمَّا وَلّٰى قَالَ ‏ : إِنَّ مِنْ ضِئْضِئِ هٰذَا أَوْ فِيْ عَقِبِ هٰذَا قَوْمٌ يَقْرَءُوْنَ الْقُرْاٰنَ، لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُوْنَ مِنَ الدِّيْنِ مُرُوْقَ السَّهْمِ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يَقْتُلُوْنَ أَهْلَ الْإِسْلَامِ، وَيَدَعُوْنَ أَهْلَ الْأَوْثَانِ، لَئِنْ أَنَا أَدْرَكْتُهُمْ لَأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ عَادٍ

আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আলী (রাঃ) নবী ﷺ এর কাছে কিছু স্বর্ণের খন্ড পাঠালেন। তখন তিনি তা চার লোকের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। (এরা হলেন) আকরা ইবনে হাবিস আল-হানযালী, যিনি মুজাশি‘ঈ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, উওয়াইনা ইবনে বাদ্র আল-ফারাযী, যাইদ আত্ তায়ী- যিনি বানু নাবহান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং আলকামা ইবনে উলাসা আল-আমিরী- যিনি বনু কিলাবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ রাগান্বিত হলেন এবং বলতে লাগলেন, তিনি নাজ্দবাসীদের নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন এবং আমাদেরকে উপেক্ষা করছেন। নবী ﷺ বললেন, আমি তো তাদেরকে (ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য) মনোরঞ্জন করছি। তখন এক লোক সামনে (এগিয়ে) আসল, যার চক্ষুদ্বয় দেবে যাওয়া, গন্ডদ্বয় ঝুলে পড়া, কপাল উঁচু, দাড়ি ঘন এবং মাথা মুড়ানো ছিল। সে বলল : হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় কর। তিনি উত্তর দিলেন, আমিই যদি নাফরমানী করি, তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ তা‘আলা আমাকে বিশ্ববাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন। আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করো না? তখন তাঁর নিকট জনৈক লোক একে হত্যা করার অনুমতি চাইল। (আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন) আমার ধারণা, এ লোক খালিদ ইবনে ওয়ালীদ ছিলেন। কিমত্মু নবী তাঁকে বারণ করেন। অতঃপর (অভিযোগকারী) লোকটি যখন ফিরে চলে গেল, তখন নবী বললেন, এ লোকের গোত্রে অথবা এ লোকের বংশে এমন একদল লোকের আগমন হবে, যারা কুরআন পড়বে, কিমত্মু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। দ্বীন থেকে তারা এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা হত্যা করবে ইসলামের অনুসারীদেরকে, আর মুক্তি ও অব্যাহতি দেবে মূর্তিপূজারীদেরকে। যদি আমি ততদিন বেঁচে থাকি তাহলে আদ জাতির মতো অবশ্যই তাদেরকে হত্যা করব। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৪৯৯; নাসাঈ, হা/২৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬৬৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৫৬১; মিশকাত, হা/৫৮৯৪।]

৫. দাসমুক্তি :

যুদ্ধবন্দী হোক অথবা যেকোন শ্রেণির দাস হোক যাকাতের অর্থ দিয়ে তাদেরকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা যায়।

দাস প্রথা বর্তমানে চালু নেই। কাজেই দাসমুক্তির জন্য নির্ধারিত যাকাতের অংশ অন্যান্য খাতে বিতরণ করা উচিত। অবশ্য কোন কোন আলেম মনে করেন যে, যাকাতের এ অংশ মুসলিম যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করা উচিত। যারা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করতে গিয়ে বন্দী হয়ে আছে।

৬. ঋণগ্রস্ত :

যে ব্যক্তি এরূপ ঋণগ্রস্ত যে, তার ঋণ হতে মুক্তি লাভ করার উপায় নেই। তাকে যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত প্রযোজ্য হবে। তা হলো :

১. ঋণটি এমন হতে হবে যে, যা পাপ বা অপরাধমূলক কাজ করার জন্য গ্রহণ করা হয়নি; বরং সৎকাজ ও স্বাভাবিক জীবন ধারণের লক্ষ্যেই গ্রহণ করা হয়েছিল।

২. ঋণগ্রহীতাকে এমন হতে হবে যে, তার নিকট যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তা দ্বারা ঋণ পরিশোধ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

عَنْ قَبِيْصَةَ بْنِ مُخَارِقٍ الْهِلَالِيِّ قَالَ تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ أَسْأَلُه فِيْهَا فَقَالَ أَقِمْ حَتّٰى تَأْتِيَنَا الصَّدَقَةُ فَنَأْمُرَ لَكَ بِهَا قَالَ ثُمَّ قَالَ يَا قَبِيْصَةُ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَحِلُّ إِلَّا لِأَحَدِ ثَلَاثَةٍ رَجُلٍ تَحَمَّلَ حَمَالَةً فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتّٰى يُصِيْبَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ وَرَجُلٌ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَه فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتّٰى يُصِيْبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قَالَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ وَرَجُلٌ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتّٰى يَقُوْمَ ثَلَاثَةٌ مِنْ ذَوِي الْحِجَا مِنْ قَوْمِه لَقَدْ أَصَابَتْ فُلَانًا فَاقَةٌ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتّٰى يُصِيْبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قَالَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ فَمَا سِوَاهُنَّ مِنْ الْمَسْأَلَةِ يَا قَبِيْصَةُ سُحْتًا يَأْكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتًا

কাবীসা ইবনে মুখারিক্ব আল-হিলালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি (ঋণের জামিন হয়ে) বিরাট অংকের ঋণী হয়ে পড়লাম। কাজেই আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে এজন্য তাঁর নিকট চাইলাম। তিনি বললেন, যাকাত বা সাদাকার মাল আসা পর্যন্ত আমার কাছে অপেক্ষা কর। তা আসলে আমি তোমাকে তা থেকে দিতে নির্দেশ দেব। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি বললেন : হে কাবীসা! মনে রেখো, তিন ব্যক্তি ছাড়া কারো জন্য হাত পাতা বা সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ নয়। (১) যে ব্যক্তি (কোন ভালো কাজ করতে গিয়ে বা ঋণের জামিন হয়ে) ঋণী হয়ে পড়েছে। ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সাহায্য প্রার্থনা করা তার জন্য বৈধ। যখন ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে, তখন সে এ থেকে বিরত থাকবে। (২) যে ব্যক্তি প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হয়েছে এবং এতে তার যাবতীয় সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে। তার জন্যও সাহায্য চাওয়া হালাল- যতক্ষণ না সে তা দ্বারা নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়। বর্ণনাকারীর সন্দেহ- তিনি কি ‘ক্বিওয়াম’ শব্দ বলেছেন না ‘সিদাদ’ শব্দ বলেছেন? (উভয় শব্দের অর্থ একই)। (৩) যে ব্যক্তি এমন অভাবগ্রস্ত হয়েছে যে, তার গোত্রের তিনজন জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোক সাক্ষ্য দেয় যে, ‘‘সত্যিই অমুক ব্যক্তি অভাবে পড়েছে’’ তার জন্য জীবিকা নির্বাহের পরিমাণ সম্পদ লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ। হে কাবীসা! এ তিন প্রকার লোক ছাড়া অন্যান্য সকলের জন্য সাহায্য চাওয়া হারাম। অতএব এ তিন প্রকার লোক ছাড়া যেসব লোক সাহায্য চেয়ে বেড়ায়, তারা হারাম খায়। [সহীহ মুসলিম, হা/২৪৫১; আবু দাউদ, হা/১৬৪২; নাসাঈ, হা/২৫৮০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৩৬১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮১৭; মিশকাত, হা/১৮৩৭।]

৭. ফী সাবীলিল্লাহ :

আল্লাহর পথে মুজাহিদদেরকে জিহাদের জন্য অস্ত্র ও উপকরণ কিনতে যাকাতের তহবিল হতে সাহায্য করা যাবে। এখানে আল্লাহর পথে বলতে আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যেসব যুদ্ধ ও সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য কুফরী ব্যবস্থাকে উৎখাত করে ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। যেসব লোক যুদ্ধ ও সংগ্রামে রত থাকে, তারা নিজেরা স্বচ্ছল ও অবস্থাসম্পন্ন হলেও এবং নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য তাদেরকে সাহায্য করার প্রয়োজন না থাকলেও তাদের সফর খরচ বাবদ এবং বাহন, অস্ত্রশস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদি সংগ্রহ করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে যারা স্বেচ্ছায় নিজেদের সমসত্ম সময় ও শ্রম সাময়িক বা স্থায়ীভাবে এ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করে তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্যও যাকাতের অর্থ এককালীন বা নিয়মিত ব্যয় করা যেতে পারে।

কুফরীর কালিমাকে নীচু এবং আল্লাহর বাণীকে উঁচু ও বিজয়ী করা আর আল্লাহর দ্বীনকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে কায়েম করার জন্য দাওয়াত ও প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে অথবা যুদ্ধ-বিগ্রহের চরম পর্যায়ে যেসব প্রচেষ্টা ও কাজ করা হয়, তা সবই এ খাতের আওতাভুক্ত।

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : لَا تَحِلُّ الصَّدَقَةُ لِغَنِىٍّ إِلَّا لِخَمْسَةٍ لِغَازٍ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ لِعَامِلٍ عَلَيْهَا أَوْ لِغَارِمٍ أَوْ لِرَجُلٍ اشْتَرَاهَا بِمَالِه أَوْ لِرَجُلٍ كَانَ لَه جَارٌ مِسْكِيْنٌ فَتُصُدِّقَ عَلَى الْمِسْكِيْنِ فَأَهْدَاهَا الْمِسْكِيْنُ لِلْغَنِىِّ

আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা বৈধ নয়। তবে পাঁচ শ্রেণির ধনীর জন্য তা জায়েয।

(১) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি।

(২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী।

(৩) ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তি ।

(৪) যে ব্যক্তি যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছেন এবং

(৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে। [আবু দাউদ, হা/১৬৩৭; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬০৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৫৪৪; মিশকাত, হা/১৮৩৩।]

৮. ইবনুস সাবীল :

যারা সফরে বের হয়ে নিঃসম্বল হয়ে পড়েছে এবং স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারছে না তাদেরকে যাকাতের তহবিল হতে সাহায্য করা যাবে।

অসহায় পথচারী বলতে এমন একজন ভ্রমণকারীকে বুঝায়, যার হাতে বাড়িতে ফিরে আসার মত পর্যাপ্ত অর্থ নেই। নিম্নোক্ত শর্ত সাপেক্ষে তার যাকাত পাওয়ার অধিকার আছে,

(ক) সে অবশ্যই তার নিজ এলাকার বাইরে অন্য কোন এলাকায় অবস্থান করবে।

(খ) কোন আইনসঙ্গত বা বৈধ উদ্দেশ্যে এলাকা ত্যাগ করতে হবে।

(গ) নিজ এলাকায় ধনী বলে গণ্য হলেও ভ্রমণকালে তার অর্থাভাব থাকতে হবে।

উল্লেখ্য যে, যাকাতের মাল বণ্টনের ক্ষেত্রে কেবল উপরোক্ত ৮টি খাতই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এর বাহিরে অন্য কাউকে যাকাত প্রদান করা বৈধ হবে না। তবে যাকাতকে সমান হারে ৮ ভাগে ভাগ করে সকল খাতেই যাকাত প্রদান করা আবশ্যক নয়। বরং সেসব খাতগুলোর প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে কমবেশি করেও বণ্টন করা যাবে। এমনকি প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে কোন একটি খাতে সম্পূর্ণ যাকাত প্রদান করলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন