HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ঈমানের স্বচ্ছ ধারণা
লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান
ঈমানের স্বচ্ছ ধারণা
[দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জনের জন্য ঈমানেৱ স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন]
Family Development Package - Book 2
আমির জামান
নাজমা জামান
সম্পাদনা পরিষদ
ড. কায়সার মামুন
শিক্ষামূলক গবেষক
সিগাপুর।
আলী আকবর
শিক্ষামুলক গবেষক
আমেরিকা।
জাবেদ মুহাম্মাদ
পি.এইচ.ডি গবেষক
ইউনিভার্সিটি অব রেজাইনা, ক্যানাডা।
Published by
Institute of Family Development, Canada
www.themessagecanada.com
[দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জনের জন্য ঈমানেৱ স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন]
Family Development Package - Book 2
আমির জামান
নাজমা জামান
সম্পাদনা পরিষদ
ড. কায়সার মামুন
শিক্ষামূলক গবেষক
সিগাপুর।
আলী আকবর
শিক্ষামুলক গবেষক
আমেরিকা।
জাবেদ মুহাম্মাদ
পি.এইচ.ডি গবেষক
ইউনিভার্সিটি অব রেজাইনা, ক্যানাডা।
Published by
Institute of Family Development, Canada
www.themessagecanada.com
আসসালামু আলাইকুম
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রবুল আলামীনের। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে ঈমানের উপর সঠিক জ্ঞানের অভাব। ঈমানের উপর আমরা হয় আংশিক জ্ঞান অথবা ভুল জ্ঞান নিয়ে জীবন পরিচালনা করে যাচ্ছি এবং ইবাদত করে যাচ্ছি। ঈমানের পূর্ণতার উপর নির্ভর করে মু'মিন, মুসলিম এবং সকল ইবাদত প্রসঙ্গ। তাই ঈমানের স্বচ্ছ ধারণার উপর আমাদের সর্বপ্রথমে জোর দেয়া উচিত। কারণ এর উপরই নির্ভর করছে আমাদের মুক্তির উপায়।
জ্ঞানের অভাবে আমাদের ধারণা এমন যে মুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি, মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন করছি আর মুসলিম হয়েই মৃত্যুবরণ করবো এতেই নিশ্চিত, চিন্তার কোন কারণ নেই। কিন্তু মুসলিম হয়ে জন্ম নিয়ে শেষ পর্যন্ত আদৌ মুসলিম আছি কিনা তার নিশ্চয়তা কি? আমাদের ঈমান তো সারাক্ষণ উঠানামা করছে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক আছে যাদের। ঈমান যে কখন চলে গেছে তা নিজেরই জানা নেই। ঈমান এমন কোন বিষয় যে সবসময় আমার সাথে লেগে থাকবে। ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমান বিরোধী কোন কাজ করলেই ঈমান চলে যাওয়ার কথা।
ঈমানের বিষয়টা আমরা অনেকেই পরিষ্কার না। এই বইটি গতানুগতিক আর আট-দশটা বইয়ের মতো নয়। এখানে ঈমানের বাস্তব বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেন ঈমান সম্পর্কে আমাদের একটি স্বচ্ছ ধারণা জন্মে। আমরা যেন সেই অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে পারি। আমাদের ঈমানকে ধরে রাখতে পারি এবং ঈমানকে আরো মযবুত করতে পারি।
সম্মানিত পাঠকের মতামত, ভুল সংশোধন ও দৃষ্টি আকর্ষণ ই-মেইল অথবা টেলিফোনে জানালে আগামী সংস্করণে তা প্রতিফলিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
জাযাকআল্লাহু খাইরন,
আমির জামান
নাজমা জামান
টরন্টো, কানাডা।
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রবুল আলামীনের। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে ঈমানের উপর সঠিক জ্ঞানের অভাব। ঈমানের উপর আমরা হয় আংশিক জ্ঞান অথবা ভুল জ্ঞান নিয়ে জীবন পরিচালনা করে যাচ্ছি এবং ইবাদত করে যাচ্ছি। ঈমানের পূর্ণতার উপর নির্ভর করে মু'মিন, মুসলিম এবং সকল ইবাদত প্রসঙ্গ। তাই ঈমানের স্বচ্ছ ধারণার উপর আমাদের সর্বপ্রথমে জোর দেয়া উচিত। কারণ এর উপরই নির্ভর করছে আমাদের মুক্তির উপায়।
জ্ঞানের অভাবে আমাদের ধারণা এমন যে মুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি, মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন করছি আর মুসলিম হয়েই মৃত্যুবরণ করবো এতেই নিশ্চিত, চিন্তার কোন কারণ নেই। কিন্তু মুসলিম হয়ে জন্ম নিয়ে শেষ পর্যন্ত আদৌ মুসলিম আছি কিনা তার নিশ্চয়তা কি? আমাদের ঈমান তো সারাক্ষণ উঠানামা করছে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক আছে যাদের। ঈমান যে কখন চলে গেছে তা নিজেরই জানা নেই। ঈমান এমন কোন বিষয় যে সবসময় আমার সাথে লেগে থাকবে। ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমান বিরোধী কোন কাজ করলেই ঈমান চলে যাওয়ার কথা।
ঈমানের বিষয়টা আমরা অনেকেই পরিষ্কার না। এই বইটি গতানুগতিক আর আট-দশটা বইয়ের মতো নয়। এখানে ঈমানের বাস্তব বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেন ঈমান সম্পর্কে আমাদের একটি স্বচ্ছ ধারণা জন্মে। আমরা যেন সেই অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে পারি। আমাদের ঈমানকে ধরে রাখতে পারি এবং ঈমানকে আরো মযবুত করতে পারি।
সম্মানিত পাঠকের মতামত, ভুল সংশোধন ও দৃষ্টি আকর্ষণ ই-মেইল অথবা টেলিফোনে জানালে আগামী সংস্করণে তা প্রতিফলিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
জাযাকআল্লাহু খাইরন,
আমির জামান
নাজমা জামান
টরন্টো, কানাডা।
ঈমানের ভিত্তি (5 Pillars of Islam)
১) ঈমান
২) সলাহ (নামায)
৩) যাকাত
৪) সিয়াম (রোযা)
৫) হজ্জ
“তোমাদের আমল সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই জিঞ্জাসাবাদ করা হবে।” (সূরা আন নাহল ১৬ : ৯৩)
ঈমান (Imaan) (Shahadah - Declaration of Faith in Islam)
প্রচলিত অর্থ ও বিশ্বাস, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস ও তার জনসমক্ষে মৌখিক বাচনিক স্বীকৃতি যার ফলে সেই ব্যক্তি একজন মুসলিম বলে পরিচিত হয়। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের (ঈমান, সলাত, যাকাত, সিয়াম ও হাজ্জ) প্রধান স্তম্ভটি হচেছ অন্তরে ঈমান, যার বাহ্যিক প্রকাশ ও প্রমাণ হচ্ছে বাকি চারটি স্তম্ভের বাস্তবায়ন সেই ঈমানদারের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে - হোক সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাতে কিছু আসে যায় না। আল্লাহর প্রতি, তাঁর এককতার প্রতি, তাঁর অংশীদারিতৃবিহীন অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার প্রতি, তিনি জন্ম-মৃত্যুর মালিক, তিনি সকলের সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, একমাত্র উপাস্য, তিনি শেষবিচার দিনের মালিক, মানুষের সৎকর্মের পুরস্কার ও অসৎকর্মের শাস্তিদাতা, তিনি অসীম ক্ষমতাবান, অতি দয়ালু ইত্যাদিতে দৃঢ় বিশ্বাসের নামই ঈমান।
একজন অমুসলিম কিভাবে ইসলাম গ্রহণ করে?
اشهد ان لا إله إلا الله و أشهد أن محمد ا عبده ورسوله
আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহ।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, এবং আমি আরো সাক্ষ্য প্রদান করছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর দাস (slave) এবং তাঁর রসূল (Messenger)।
Translation:
I bear witness that there is no Allah but Allah, and I further bear witness that Muhammad is Allah's slave and His Messenger.
এই সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে একজন অমুসলিম ইসলাম ধর্মে ঈমান এনে মুসলিম হয় এবং আল্লাহকে ও তাঁর রসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে সর্ববিষয়ে সর্বদা বিনা দ্বিধায় বিনা প্রতিবাদে মানার ও তাঁদের আদেশ-নির্দেশ প্রতিপালন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। এবং তাঁর ঈমান, আকীদা ও প্রতিজ্ঞা পালনের প্রকাশ/ প্রতিফলন ঘটাতে হয় পাঁচটি বাহ্যিক কাজ বা action-এর মাধ্যমে। সেই action-গুলোই হচ্ছে প্রমাণ যে অন্তরে, মুখে ও দেহের অংগ-প্রত্যংগের মাধ্যমেও সে আল্লাহর কাছে সন্তোষের সংগে আত্মসমর্পণ করেছে, প্রকৃতভাবে মুসলিম হয়েছে। সেই action-গুলো হচ্ছে : আজীবন নিষ্ঠার সাথে,
১. দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সলাত সময় মত আদায় করা;
২. উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর নির্দিষ্ট হারে প্রতি বছর যাকাত দেয়া;
৩. প্রতি রমাদান মাসে পূর্ণ মাস সিয়াম (রোযা) পালন করা;
৪. শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সামর্থ থাকলে জীবনে অন্ততঃ একবার হাজ্জ পালন করা।
৫. আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করা।
এসব হচ্ছে ফরয ইবাদত ও এর যে কোন ক্ষেত্রেই অবহেলা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দৃষ্টিতে বড় ধরনের অপরাধ বা গুনাহের কাজ এবং তাতে অবহেলার জন্য আল্লাহ অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দেবেন কুরআন ও হাদীসে একথার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
বিশেষ নোট :
সহীহ আকীদার ভিত্তিতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এবং মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ' এই দুটি আলাদা বাক্য বা লাইন। আমরা বলার সময় যদিও এই দুটি বাক্য একই সাথে বলে থাকি আসলে এখানে দুটি ভিন্ন ভিন্ন আলাদা বাক্য।
১) ঈমান
২) সলাহ (নামায)
৩) যাকাত
৪) সিয়াম (রোযা)
৫) হজ্জ
“তোমাদের আমল সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই জিঞ্জাসাবাদ করা হবে।” (সূরা আন নাহল ১৬ : ৯৩)
ঈমান (Imaan) (Shahadah - Declaration of Faith in Islam)
প্রচলিত অর্থ ও বিশ্বাস, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস ও তার জনসমক্ষে মৌখিক বাচনিক স্বীকৃতি যার ফলে সেই ব্যক্তি একজন মুসলিম বলে পরিচিত হয়। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের (ঈমান, সলাত, যাকাত, সিয়াম ও হাজ্জ) প্রধান স্তম্ভটি হচেছ অন্তরে ঈমান, যার বাহ্যিক প্রকাশ ও প্রমাণ হচ্ছে বাকি চারটি স্তম্ভের বাস্তবায়ন সেই ঈমানদারের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে - হোক সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাতে কিছু আসে যায় না। আল্লাহর প্রতি, তাঁর এককতার প্রতি, তাঁর অংশীদারিতৃবিহীন অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার প্রতি, তিনি জন্ম-মৃত্যুর মালিক, তিনি সকলের সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, একমাত্র উপাস্য, তিনি শেষবিচার দিনের মালিক, মানুষের সৎকর্মের পুরস্কার ও অসৎকর্মের শাস্তিদাতা, তিনি অসীম ক্ষমতাবান, অতি দয়ালু ইত্যাদিতে দৃঢ় বিশ্বাসের নামই ঈমান।
একজন অমুসলিম কিভাবে ইসলাম গ্রহণ করে?
اشهد ان لا إله إلا الله و أشهد أن محمد ا عبده ورسوله
আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহ।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, এবং আমি আরো সাক্ষ্য প্রদান করছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর দাস (slave) এবং তাঁর রসূল (Messenger)।
Translation:
I bear witness that there is no Allah but Allah, and I further bear witness that Muhammad is Allah's slave and His Messenger.
এই সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে একজন অমুসলিম ইসলাম ধর্মে ঈমান এনে মুসলিম হয় এবং আল্লাহকে ও তাঁর রসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে সর্ববিষয়ে সর্বদা বিনা দ্বিধায় বিনা প্রতিবাদে মানার ও তাঁদের আদেশ-নির্দেশ প্রতিপালন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। এবং তাঁর ঈমান, আকীদা ও প্রতিজ্ঞা পালনের প্রকাশ/ প্রতিফলন ঘটাতে হয় পাঁচটি বাহ্যিক কাজ বা action-এর মাধ্যমে। সেই action-গুলোই হচ্ছে প্রমাণ যে অন্তরে, মুখে ও দেহের অংগ-প্রত্যংগের মাধ্যমেও সে আল্লাহর কাছে সন্তোষের সংগে আত্মসমর্পণ করেছে, প্রকৃতভাবে মুসলিম হয়েছে। সেই action-গুলো হচ্ছে : আজীবন নিষ্ঠার সাথে,
১. দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সলাত সময় মত আদায় করা;
২. উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর নির্দিষ্ট হারে প্রতি বছর যাকাত দেয়া;
৩. প্রতি রমাদান মাসে পূর্ণ মাস সিয়াম (রোযা) পালন করা;
৪. শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সামর্থ থাকলে জীবনে অন্ততঃ একবার হাজ্জ পালন করা।
৫. আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করা।
এসব হচ্ছে ফরয ইবাদত ও এর যে কোন ক্ষেত্রেই অবহেলা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দৃষ্টিতে বড় ধরনের অপরাধ বা গুনাহের কাজ এবং তাতে অবহেলার জন্য আল্লাহ অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দেবেন কুরআন ও হাদীসে একথার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
বিশেষ নোট :
সহীহ আকীদার ভিত্তিতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এবং মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ' এই দুটি আলাদা বাক্য বা লাইন। আমরা বলার সময় যদিও এই দুটি বাক্য একই সাথে বলে থাকি আসলে এখানে দুটি ভিন্ন ভিন্ন আলাদা বাক্য।
ঈমান
১) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস
২) ফিরিশতাদের প্রতি বিশ্বাস
৩) আল্লাহর কিতাবে বিশ্বাস
৪) রসূলদের প্রতি বিশ্বাস
৫) আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
৬) তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস
ঈমানের ছয়টি স্তম্ভ (Six Pillars of Imaan) এদের অন্য পরিচয় হচ্ছে Six Tenets of Islam, or Six Articles of Islam, or Six Creed of Islam. অন্যদিকে এগুলোকে ইসলামী আকীদাও বলা হয়ে থাকে। আকীদা অর্থ অন্তরে গভীর বিশ্বাস। আরবী ভাষায় আরকানুল ঈমান সিত্তাহ।
১) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস
২) ফিরিশতাদের প্রতি বিশ্বাস
৩) আল্লাহর কিতাবে বিশ্বাস
৪) রসূলদের প্রতি বিশ্বাস
৫) আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
৬) তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস
ঈমানের ছয়টি স্তম্ভ (Six Pillars of Imaan) এদের অন্য পরিচয় হচ্ছে Six Tenets of Islam, or Six Articles of Islam, or Six Creed of Islam. অন্যদিকে এগুলোকে ইসলামী আকীদাও বলা হয়ে থাকে। আকীদা অর্থ অন্তরে গভীর বিশ্বাস। আরবী ভাষায় আরকানুল ঈমান সিত্তাহ।
এর মানে আল্লাহ তা'আলার একত্ববাদের তিনটি অংশের প্রতিই বিশ্বাস স্থাপন করা। যথা :
আল্লাহ তা'আলার কাজের ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ। একজন মুসলিম বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা হলেন সকল কিছুর মালিক, পরিচালনাকারী, সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা।
বান্দাদের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ। একজন মুসলিম বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা হলেন একচ্ছত্র মা'বুদ তথা ইবাদতের উপযুক্ত এবং সে সকল প্রকার ইবাদত তাঁকে উদ্দেশ্য করে করবে। তাই সে সলাত আদায় করবে আল্লাহর জন্য, পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা অর্জন করবে আল্লাহর জন্য; সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে; আর সে আল্লাহর কারণেই পিতা-মাতার আনুগত্য করবে; আল্লাহর জন্যই পর্দা করবে, আল্লাহর জন্যই হালাল-হারাম বেছে চলবে।
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون
আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এইজন্য যে, তারা শুধু আমারই ইবাদত করবে।” (সূরা আয-যারিয়াত, ৫১ : ৫৬)
আর এটাই হল ইলাহ হিসেবে তাঁর একত্ববাদ (তাওহীদ আল-উলুহিয়াহ), অথবা ইবাদতের ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ (তাওহীদ আল-ইবাদাহ)
তাঁর নামসমূহ ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ। মুসলিম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার জন্য সাব্যস্ত করবে সকল সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুণাবলী। আর তা করতে হবে যে কোনো প্রকার অপব্যাখ্যা, তার ধরণ-প্রকৃতি খোজা, সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে সেগুলোর সাদৃশ্য স্থাপন অথবা এগুলোকে অর্থশূন্য করা ছাড়াই। আল্লাহ তা'আলা বলেন :
ير شيء وهو السميع البصير گ ليس
কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা আশ-শুরা, ৪২ : ১১)
মুসলিম এসব সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত করবে। সে স্বীকৃতি দেবে যে, আল্লাহ হলেন দয়াময়, পরম দয়ালু; তাই সে তাঁর নিকট রহমত কামনা করবে। তিনি হলেন রিযিকদাতা, পরম শক্তির অধিকারী; তাই সে তাঁর নিকট রিযিকের জন্য আবেদন করবে। তিনি হলেন রোগ নিরাময়কারী, সুতরাং সে তাঁর নিকট রোগ থেকে মুক্তির জন্য আবেদন করবে। আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, পরম ক্ষমাপরায়ণ; তাই সে তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তিনি হলেন মার্জনাকারী ও দানশীল; তাই সে তাঁর নিকটই মাফ চাইবে। ইত্যাদি।
আল্লাহ তা'আলার কাজের ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ। একজন মুসলিম বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা হলেন সকল কিছুর মালিক, পরিচালনাকারী, সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা।
বান্দাদের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ। একজন মুসলিম বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা হলেন একচ্ছত্র মা'বুদ তথা ইবাদতের উপযুক্ত এবং সে সকল প্রকার ইবাদত তাঁকে উদ্দেশ্য করে করবে। তাই সে সলাত আদায় করবে আল্লাহর জন্য, পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা অর্জন করবে আল্লাহর জন্য; সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে; আর সে আল্লাহর কারণেই পিতা-মাতার আনুগত্য করবে; আল্লাহর জন্যই পর্দা করবে, আল্লাহর জন্যই হালাল-হারাম বেছে চলবে।
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون
আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এইজন্য যে, তারা শুধু আমারই ইবাদত করবে।” (সূরা আয-যারিয়াত, ৫১ : ৫৬)
আর এটাই হল ইলাহ হিসেবে তাঁর একত্ববাদ (তাওহীদ আল-উলুহিয়াহ), অথবা ইবাদতের ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ (তাওহীদ আল-ইবাদাহ)
তাঁর নামসমূহ ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ। মুসলিম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার জন্য সাব্যস্ত করবে সকল সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুণাবলী। আর তা করতে হবে যে কোনো প্রকার অপব্যাখ্যা, তার ধরণ-প্রকৃতি খোজা, সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে সেগুলোর সাদৃশ্য স্থাপন অথবা এগুলোকে অর্থশূন্য করা ছাড়াই। আল্লাহ তা'আলা বলেন :
ير شيء وهو السميع البصير گ ليس
কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা আশ-শুরা, ৪২ : ১১)
মুসলিম এসব সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত করবে। সে স্বীকৃতি দেবে যে, আল্লাহ হলেন দয়াময়, পরম দয়ালু; তাই সে তাঁর নিকট রহমত কামনা করবে। তিনি হলেন রিযিকদাতা, পরম শক্তির অধিকারী; তাই সে তাঁর নিকট রিযিকের জন্য আবেদন করবে। তিনি হলেন রোগ নিরাময়কারী, সুতরাং সে তাঁর নিকট রোগ থেকে মুক্তির জন্য আবেদন করবে। আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, পরম ক্ষমাপরায়ণ; তাই সে তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তিনি হলেন মার্জনাকারী ও দানশীল; তাই সে তাঁর নিকটই মাফ চাইবে। ইত্যাদি।
মুসলিম বিশ্বাস স্থাপন করবে যে, আল্লাহ তা'আলার অনেক ফিরিশতা রয়েছে, যারা রাতদিন অক্লান্তভাবে তাঁর দাসত্ব করে; আর তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক আছে যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে কয়েকজন ফিরিশতার নাম ও তাদের দায়িত্ব :
ফিরিশতাদের আল্লাহ যে দায়িত্ব দিয়েছেন:
জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর বাণী নবী ও রসূলদের কাজে পৌঁছে দেন।
মিকাঈল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর আদেশে প্রকৃতিকে কন্ট্রোল করেন।
মালাকুল-মাউত (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর আদেশে সমস্ত প্রাণীর মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন।
ঈসরাফিল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর আদেশে একদিন সিংগায় ফু দিবেন তখন বিয়ামত সংঘটিত হবে।
মুনকার এবং নাকির (আলাইহিস সালাম) এই দু’জন ফিরিশতা মানুষের মৃত্যুর পর প্রশ্ন করবেন।
ফিরিশতাদের আল্লাহ যে দায়িত্ব দিয়েছেন:
জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর বাণী নবী ও রসূলদের কাজে পৌঁছে দেন।
মিকাঈল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর আদেশে প্রকৃতিকে কন্ট্রোল করেন।
মালাকুল-মাউত (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর আদেশে সমস্ত প্রাণীর মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন।
ঈসরাফিল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর আদেশে একদিন সিংগায় ফু দিবেন তখন বিয়ামত সংঘটিত হবে।
মুনকার এবং নাকির (আলাইহিস সালাম) এই দু’জন ফিরিশতা মানুষের মৃত্যুর পর প্রশ্ন করবেন।
রসূলদের উপর নাযিলকৃত আল্লাহ তা'আলার কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। যেমন, তাওরাত যা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপর; ইঞ্জিল যা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপর; যাবুর যা দাউদ (আলাইহিস সালাম)-এর উপর এবং আল কুরআন, যা মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। আর আল কুরআনুল কারীম হল সর্বশেষ কিতাব, যার মাধ্যমে কিতাব অবতীর্ণের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে এবং যা বাকি সকল কিতাবের বিধানকে রহিত করে দিয়েছে; আর তার (কুরআনের) মধ্যে যা এসেছে, তা ব্যতীত অন্য কোন কিতাবের বিধান অনুযায়ী আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা বৈধ নয়।
আল-কুরআনে বর্ণিত চার জন রসুলের নাম যাদের উপর কিতাব নাযিল হয়েছে।
কিতাবের নাম : যাদের উপর নাযিল হয়েছে : ইংলিশ নাম
১. যাবুর : দাউদ (আলাইহিস সালাম) : David
২. তাওরাত : মূসা (আলাইহিস সালাম) : Moses
৩. ইঞ্জিল : ঈসা (আলাইহিস সালাম) : Jesus
৪. কুরআন : মুহাম্মাদ (ﷺ) : Muhammad
আল-কুরআনে বর্ণিত চার জন রসুলের নাম যাদের উপর কিতাব নাযিল হয়েছে।
কিতাবের নাম : যাদের উপর নাযিল হয়েছে : ইংলিশ নাম
১. যাবুর : দাউদ (আলাইহিস সালাম) : David
২. তাওরাত : মূসা (আলাইহিস সালাম) : Moses
৩. ইঞ্জিল : ঈসা (আলাইহিস সালাম) : Jesus
৪. কুরআন : মুহাম্মাদ (ﷺ) : Muhammad
তারা মানুষকে সুসংবাদ দেয়, সতর্ক করে এবং তাদের প্রতিপালকের ইবাদত করার আবশ্যকতার কথা মানুষের নিকট প্রচার করে। সর্বশেষ হলেন মুহাম্মাদ (ﷺ), যার মাধ্যমে নবুওয়ত ও রিসালাতের ধারার সমাপ্তি ঘটে এবং তিনি তাদের মধ্যে সর্বশেষ, তাঁর পরে আর কোন নারী আসবেন না; তাঁকে সকল মানুষ ও জিনের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে; আর রসূল (ﷺ) যে শরী'আত প্রবর্তন করেছেন, সে অনুযায়ী আল্লাহ তা'আলার ইবাদত না হলে তা বৈধ হবে না।
আল-কুৱআনে বর্ণিত ২৫ জুন নবী ও রসূলদের নাম :
আরবী নাম : ইংলিশ নাম
১ আদম Adam
২. ইদ্রিস Enoch
৩. নূহ Noah
৪. হূদ Heber
৫. সালিহ Methusela
৬. লূত Lot
৭. ইব্রাহীম Abraham
৮. ইসমাঈল Ishmael
৯. ইসহাক Isaac
১০. ইয়াকুব Jacob
১১. ইউসুফ Joseph
১২. শু'আইব Jethro
১৩. আইয়ুব lob
১৪. যুল্ কিফল Ezekiel
১৫. মূসা Moses
১৬. হারুন Aaron
১৭. দাউদ David
১৮. সোলাইমান Solomon
১৯. ইলিয়াস Elias
২০. আল-ইয়াসা Elisha
২১. ইউনুস Jonah
২২. জাকারিয়া Zachariah
২৩. ইয়াহিয়া John the Baptist
২৪. ঈসা Jesus
২৫. মুহাম্মাদ Muhammad
আল-কুৱআনে বর্ণিত ২৫ জুন নবী ও রসূলদের নাম :
আরবী নাম : ইংলিশ নাম
১ আদম Adam
২. ইদ্রিস Enoch
৩. নূহ Noah
৪. হূদ Heber
৫. সালিহ Methusela
৬. লূত Lot
৭. ইব্রাহীম Abraham
৮. ইসমাঈল Ishmael
৯. ইসহাক Isaac
১০. ইয়াকুব Jacob
১১. ইউসুফ Joseph
১২. শু'আইব Jethro
১৩. আইয়ুব lob
১৪. যুল্ কিফল Ezekiel
১৫. মূসা Moses
১৬. হারুন Aaron
১৭. দাউদ David
১৮. সোলাইমান Solomon
১৯. ইলিয়াস Elias
২০. আল-ইয়াসা Elisha
২১. ইউনুস Jonah
২২. জাকারিয়া Zachariah
২৩. ইয়াহিয়া John the Baptist
২৪. ঈসা Jesus
২৫. মুহাম্মাদ Muhammad
মানুষের এই জীবনের পরিসমাপ্তির সূচনা হয় কতগুলো ভূমিকা বা উপাদানের মাধ্যমে; আর তা হল তার মৃত্যু ও পরবর্তী জীবনে স্থানান্তরের মাধ্যমে; আর কবরের পরীক্ষা, তার নিয়ামত ও শাস্তির মাধ্যমে; আর কিয়ামতের ছোট ও বড় শর্ত বা নিদর্শনের মাধ্যমে; অতঃপর পুনরুত্থান বা পুনরায় জীবিত করা, হাশর (সমাবেশ), হিসাব, প্রতিদান ও পুলসিরাত এবং সব শেষে জান্নাত ও জাহান্নাম এর মাধ্যমে।
তাকদীর হচ্ছে আল্লাহর পূর্বজ্ঞান ও হিকমতের দাবি অনুযায়ী সমগ্র বিশ্বের ভাগ্যলিপি। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ সবকিছু নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং এভাবেই সবকিছু চলছে। তাই মানুষের কোন ইচ্ছাশক্তি নেই এবং তাদেরকে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কর্মগুলিই সম্পাদন করতে হবে। এর গূঢ়ার্থ এই যে, মানুষকে আল্লাহ ইচ্ছাশক্তি ও এখতিয়ার দিয়েছেন। সে ইহা অনুসারে কাজ করবে। কিন্তু তারা তাদের এখতিয়ার অনুসারে কী করবে তা আল্লাহ পূর্ব হতেই জানেন। কারণ তিনি সর্বজ্ঞাতা। আর সে জ্ঞাত বিষয়গুলি পূর্বেই তিনি লিখে রেখেছেন। এর উপর ঈমান আনতে হবে। আর এটাই তাকদীরের উপর বিশ্বাসের সারকথা যা কয়েকটি পর্যায়ে আলোচনা করা যায়।
তাকদীরের প্রথম পর্যায় : আল্লাহর ইলম বা জ্ঞান :
আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞাতা। এই সৃষ্টিজগত কি ছিল, তাতে কি হবে, কিভাবে হবে এসব তিনি তাঁর ইলমে আলী ও ইলমে আবাদী অর্থাৎ স্থায়ী ও চিরন্তন অপরিসীম জ্ঞান শক্তির মাধ্যমে জেনে নিয়েছেন। তাই অজানার পর নূতন করে জানা এবং জানার পর ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটি আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত” (সূরা আনকাবুত ২৯: ৯২)।
দ্বিতীয় পর্যায় : বিধিলিপি :
এই বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ যা কিছু নির্ধারণ করেছেন এর সবকিছুই লিখিত রয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ “আমি তো জানি মৃত্তিকা উহাদের ক্ষয় করে কতটুকু এবং আমার নিকট রয়েছে একটি সংরক্ষিত কিতাব” (সূরা কাফ ৫০: ৫৪)।
তৃতীয় পর্যায় : ইচ্ছা:
এ বিশ্বাস রাখা যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর ইচ্ছায় সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোন কিছু হয়নি। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা হয়, যা ইচ্ছা করেন না তা হয় না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : “আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন” (সূরা হাজ্জ ২২ : ২৮)।
“আর তোমাদের চাওয়ার কিছু হয় না যতক্ষণ না আল্লাহ রব্বুল আলামীন চান” (সূরা আত তাকভীর ৮১ : ২৯)।
চতুর্থ পর্যায় : সৃষ্টি :
এ বিশ্বাস রাখা যে, সমগ্র বস্তুজগত আল্লাহর সৃষ্টি। তিনি ব্যতীত কোন স্রষ্টা নেই, নেই কোন প্রভু-প্রতিপালক। আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন : “আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর কর্মবিধায়ক। আসমানসমূহ ও যমীনের চাবি তাঁরই নিকট” (সূরা আয যুমার ৩৯ : ৬২)।
“হে মানুষ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি যে তোমাদিগকে আসমান ও যমীন হতে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা কোথায় বিপথে চলে যাচ্ছো? (সূরা ফাতির ৩৫:৩)
যেহেতু তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা সেহেতু মানুষের কর্মগুলির সৃষ্টিকর্তাও তিনি। আল্লাহ বলেন: “প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা তৈরী কর তাও” (সূরা সাফফাত ৩৭ : ৯৬)।
তবে এখানে সন্দেহ হতে পারে, যেহেতু আল্লাহ বান্দাগণের কাজ সৃষ্টি করেছেন, তা হলে বান্দাগণ মন্দ কাজ করলে তাদের দোষ কোথায়? এর উত্তরে বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ বান্দাদিগকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : “যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক এবং যার ইচ্ছা কুফরী করক” (সূরা কাহফ ১৮ : ২৯)। সুতরাং বান্দা তার সে ইচ্ছাশক্তি দ্বারা যখন কোন কাজ করতে সংকল্পবদ্ধ হয়, তখন আল্লাহ তার সে কাজ করার শক্তি তার মধ্যে সৃষ্টি করে দেন। তাকদীরে বিশ্বাসের উপকারিতা ও তাকদীরে বিশ্বাস করার মধ্যেও নিহিত আছে অশেষ কল্যাণ।
এক : কোন কাজের আনুসঙ্গিক বিষয়াদি সম্পন্ন করার সময় আল্লাহর উপর ভরসা করার প্রেরণা আসে।
দুই : মনের সুখ ও অন্তরের প্রশান্তি লাভ। কেননা নিজ দায়িত্ব হিসেবে আনুসঙ্গিক বিষয়াদি সম্পন্ন করার পর অন্তর যখন এ কথা জানতে পারবে যে, সবই আল্লাহর ফায়সালা, তা অনাকাঙ্ক্ষিত যা ঘটার তা ঘটবেই, তখন মন নিশ্চিত থাকবে, অন্তর লাভ করবে প্রশান্তি, আল্লাহর ফায়সালায় থাকবে সন্তুষ্ট। অতএব তাকদীরে বিশ্বাসী একজন লোক সুন্দর জীবন, শক্তিশালী মন ও প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী হয়।
তিন : উদ্দেশ্য হাসিল না হলে, কিংবা অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে অন্তরের অশান্তি ও অস্থিরতা দূর করা। কেননা বান্দার ভাগ্যে যা ঘটে তা আল্লাহরই ফায়সালা, যিনি যমীন ও আসমানের সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তাঁর যা ফয়সালা তা হবেই। ফলে নেককার লোকেরাই ধৈর্যধারণ করে এবং পরকালে এর পুরস্কার কামনা করে। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ ইরশাদ করেন :
“পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই উহা লিখে রেখেছি। আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। এ জন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদিগকে দিয়েছেন তার জন্য হর্ষোৎফুলু না হও। আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীদিগকে পছন্দ করেন না” (সূরা হাদীদ ৫৭ : ২২-২৩)।
তাকদীর নিয়ে তর্ক করা যাবে না :
প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব হল, সে এই আকীদা পোষণ করবে যে, ভাল ও মন্দ সমস্ত কিছুই আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও নির্ধারিত। আর উহা তাঁর এলেমে ও ইচ্ছাতে আছে। কিন্তু ভাল ও মন্দ করার সামর্থ বান্দার ইচ্ছা অনুসারেই হয়। আর তার উপর ওয়াজিব হল আদেশ ও নিষেধ পালনে তৎপর হওয়া। তার জন্য এটা জায়েয হবে না কোন পাপ কর্ম করে এ কথা বলা যে, আল্লাহ আমার জন্য এই পাপকে নির্দিষ্ট করেছিলেন তাই করেছি।
নাউযুবিল্লাহ! আল্লাহ তাআলা রসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। আর তাদের উপর কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। যাতে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সুখের রাস্তা ও দুঃখ কষ্টের রাস্তা। আর মানুষকে সম্মানীত করেছেন বুদ্ধি, জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি দ্বারা। আর সাথে সাথে তাকে গোমরাহী ও হিদায়াতের রাস্তা শিখিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন:
“আমি অবশ্যই তাকে পথ দেখিয়েছি। হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ হবে।” (সূরা দাহর ৭৬ ৩) মানুষ যদি সলাত ত্যাগ করে বা কোন কবিরা গুনাহ করে তবে সে অবশ্যই শাস্তি পাবে আল্লাহর হুকুম ও নিষেধ অমান্যের কারণে। তখন তার কর্তব্য হল তওবা করা এবং অনুতপ্ত হওয়া। তখন কৃদরে লেখা আছে বলে রেহাই পেতে পারে না।
আরকানুল ঈমান এর Arabic versionটা হচ্ছে এরকম : আল্ ঈমানু বিল্লাহি, ওয়া মালায়িকাতিহি, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রসূলিহি, ওয়াল ইয়াউমিল আ-খিরি, ওয়াল ঈমানু বিল জ্বলরি খইরিহি, ওয়া শাররিহি (অর্থ : ঈমান আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবগুলোর উপর, তাঁর রসূলগণের উপর, শেষ দিনের (আ-খিরাতের) উপর, এবং ঈমান কদরের অর্থাৎ ভাগ্যের ভালো ও মন্দের উপর।) [সহীহ মুসলিমের হাদীস, উমার বিন আল-খাত্তাব (রা.) বর্ণিত]
Reference:
AL-AQIDAH AL-WASITIYYAH by Muhammad bin Salih Al Uthaimin (Volume 1, Page 71). Published by DARUSSALAM, Riyadh, Saudi Arabia.
Additional references for Six Articles of Faith:
1. AL-QUR'AN (English Translations of the Meanings of) by Muhammed Farooq-i-Azam Malik, The Institute of Islamic Knowledge, 3110 Eastside Drive, Houston, Texas, USA.
2. The NOBLE QUR'AN (Interpretation of the Meanings of - in the English Language) by Dr. Muhammad Taqi-ud-Din Al Hilali and Dr. Muhammad Muhsin Khan (One Volume, Page 975)
বাংলাদেশে আমরা ঈমানে মুফাস্সাল শিখেছি ও আমান্তু বিল্লাহি, ওয়া মালায়িকাতিহি, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রুসূলিহি, ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়াল কুদরি খইরিহি ওয়া শাররিহি মিনাল্লাহি তা'য়ালা, ওয়ালবাসি বা'দাল মাউত। এখানে ইয়াওমিল আখিরি (আখিরাতের দিন) এবং ওয়ালবাসি বা'দাল মাউত (মৃত্যুর পর পুনর্জীবন লাভ) আলাদা আলাদা দেখানো হয়েছে বলেই কারো কারো মতে ঈমানের আরকান ছ'টি নয়, সাতটি। এ নিয়ে বিতর্কে যাওয়া বৃথা কারণ বিষয় দু'টি মূলতঃ এক, শুধু প্রকাশভংগীর ভিন্নতা মাত্র। পুনর্জীবন লাভ আখিরাতেই ঘটবে, সেটা আখিরাতের অংগ। যার যা বিশ্বাস সেটা নিয়ে চলতে দেয়াই উত্তম পন্থা কারণ এতে কারো ঈমানের কোন ক্ষতি বা ঘাটতি হচ্ছে না।
তাকদীরের প্রথম পর্যায় : আল্লাহর ইলম বা জ্ঞান :
আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞাতা। এই সৃষ্টিজগত কি ছিল, তাতে কি হবে, কিভাবে হবে এসব তিনি তাঁর ইলমে আলী ও ইলমে আবাদী অর্থাৎ স্থায়ী ও চিরন্তন অপরিসীম জ্ঞান শক্তির মাধ্যমে জেনে নিয়েছেন। তাই অজানার পর নূতন করে জানা এবং জানার পর ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটি আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত” (সূরা আনকাবুত ২৯: ৯২)।
দ্বিতীয় পর্যায় : বিধিলিপি :
এই বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ যা কিছু নির্ধারণ করেছেন এর সবকিছুই লিখিত রয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ “আমি তো জানি মৃত্তিকা উহাদের ক্ষয় করে কতটুকু এবং আমার নিকট রয়েছে একটি সংরক্ষিত কিতাব” (সূরা কাফ ৫০: ৫৪)।
তৃতীয় পর্যায় : ইচ্ছা:
এ বিশ্বাস রাখা যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর ইচ্ছায় সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোন কিছু হয়নি। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা হয়, যা ইচ্ছা করেন না তা হয় না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : “আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন” (সূরা হাজ্জ ২২ : ২৮)।
“আর তোমাদের চাওয়ার কিছু হয় না যতক্ষণ না আল্লাহ রব্বুল আলামীন চান” (সূরা আত তাকভীর ৮১ : ২৯)।
চতুর্থ পর্যায় : সৃষ্টি :
এ বিশ্বাস রাখা যে, সমগ্র বস্তুজগত আল্লাহর সৃষ্টি। তিনি ব্যতীত কোন স্রষ্টা নেই, নেই কোন প্রভু-প্রতিপালক। আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন : “আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর কর্মবিধায়ক। আসমানসমূহ ও যমীনের চাবি তাঁরই নিকট” (সূরা আয যুমার ৩৯ : ৬২)।
“হে মানুষ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি যে তোমাদিগকে আসমান ও যমীন হতে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা কোথায় বিপথে চলে যাচ্ছো? (সূরা ফাতির ৩৫:৩)
যেহেতু তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা সেহেতু মানুষের কর্মগুলির সৃষ্টিকর্তাও তিনি। আল্লাহ বলেন: “প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা তৈরী কর তাও” (সূরা সাফফাত ৩৭ : ৯৬)।
তবে এখানে সন্দেহ হতে পারে, যেহেতু আল্লাহ বান্দাগণের কাজ সৃষ্টি করেছেন, তা হলে বান্দাগণ মন্দ কাজ করলে তাদের দোষ কোথায়? এর উত্তরে বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ বান্দাদিগকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : “যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক এবং যার ইচ্ছা কুফরী করক” (সূরা কাহফ ১৮ : ২৯)। সুতরাং বান্দা তার সে ইচ্ছাশক্তি দ্বারা যখন কোন কাজ করতে সংকল্পবদ্ধ হয়, তখন আল্লাহ তার সে কাজ করার শক্তি তার মধ্যে সৃষ্টি করে দেন। তাকদীরে বিশ্বাসের উপকারিতা ও তাকদীরে বিশ্বাস করার মধ্যেও নিহিত আছে অশেষ কল্যাণ।
এক : কোন কাজের আনুসঙ্গিক বিষয়াদি সম্পন্ন করার সময় আল্লাহর উপর ভরসা করার প্রেরণা আসে।
দুই : মনের সুখ ও অন্তরের প্রশান্তি লাভ। কেননা নিজ দায়িত্ব হিসেবে আনুসঙ্গিক বিষয়াদি সম্পন্ন করার পর অন্তর যখন এ কথা জানতে পারবে যে, সবই আল্লাহর ফায়সালা, তা অনাকাঙ্ক্ষিত যা ঘটার তা ঘটবেই, তখন মন নিশ্চিত থাকবে, অন্তর লাভ করবে প্রশান্তি, আল্লাহর ফায়সালায় থাকবে সন্তুষ্ট। অতএব তাকদীরে বিশ্বাসী একজন লোক সুন্দর জীবন, শক্তিশালী মন ও প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী হয়।
তিন : উদ্দেশ্য হাসিল না হলে, কিংবা অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে অন্তরের অশান্তি ও অস্থিরতা দূর করা। কেননা বান্দার ভাগ্যে যা ঘটে তা আল্লাহরই ফায়সালা, যিনি যমীন ও আসমানের সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তাঁর যা ফয়সালা তা হবেই। ফলে নেককার লোকেরাই ধৈর্যধারণ করে এবং পরকালে এর পুরস্কার কামনা করে। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ ইরশাদ করেন :
“পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই উহা লিখে রেখেছি। আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। এ জন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদিগকে দিয়েছেন তার জন্য হর্ষোৎফুলু না হও। আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীদিগকে পছন্দ করেন না” (সূরা হাদীদ ৫৭ : ২২-২৩)।
তাকদীর নিয়ে তর্ক করা যাবে না :
প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব হল, সে এই আকীদা পোষণ করবে যে, ভাল ও মন্দ সমস্ত কিছুই আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও নির্ধারিত। আর উহা তাঁর এলেমে ও ইচ্ছাতে আছে। কিন্তু ভাল ও মন্দ করার সামর্থ বান্দার ইচ্ছা অনুসারেই হয়। আর তার উপর ওয়াজিব হল আদেশ ও নিষেধ পালনে তৎপর হওয়া। তার জন্য এটা জায়েয হবে না কোন পাপ কর্ম করে এ কথা বলা যে, আল্লাহ আমার জন্য এই পাপকে নির্দিষ্ট করেছিলেন তাই করেছি।
নাউযুবিল্লাহ! আল্লাহ তাআলা রসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। আর তাদের উপর কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। যাতে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সুখের রাস্তা ও দুঃখ কষ্টের রাস্তা। আর মানুষকে সম্মানীত করেছেন বুদ্ধি, জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি দ্বারা। আর সাথে সাথে তাকে গোমরাহী ও হিদায়াতের রাস্তা শিখিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন:
“আমি অবশ্যই তাকে পথ দেখিয়েছি। হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ হবে।” (সূরা দাহর ৭৬ ৩) মানুষ যদি সলাত ত্যাগ করে বা কোন কবিরা গুনাহ করে তবে সে অবশ্যই শাস্তি পাবে আল্লাহর হুকুম ও নিষেধ অমান্যের কারণে। তখন তার কর্তব্য হল তওবা করা এবং অনুতপ্ত হওয়া। তখন কৃদরে লেখা আছে বলে রেহাই পেতে পারে না।
আরকানুল ঈমান এর Arabic versionটা হচ্ছে এরকম : আল্ ঈমানু বিল্লাহি, ওয়া মালায়িকাতিহি, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রসূলিহি, ওয়াল ইয়াউমিল আ-খিরি, ওয়াল ঈমানু বিল জ্বলরি খইরিহি, ওয়া শাররিহি (অর্থ : ঈমান আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবগুলোর উপর, তাঁর রসূলগণের উপর, শেষ দিনের (আ-খিরাতের) উপর, এবং ঈমান কদরের অর্থাৎ ভাগ্যের ভালো ও মন্দের উপর।) [সহীহ মুসলিমের হাদীস, উমার বিন আল-খাত্তাব (রা.) বর্ণিত]
Reference:
AL-AQIDAH AL-WASITIYYAH by Muhammad bin Salih Al Uthaimin (Volume 1, Page 71). Published by DARUSSALAM, Riyadh, Saudi Arabia.
Additional references for Six Articles of Faith:
1. AL-QUR'AN (English Translations of the Meanings of) by Muhammed Farooq-i-Azam Malik, The Institute of Islamic Knowledge, 3110 Eastside Drive, Houston, Texas, USA.
2. The NOBLE QUR'AN (Interpretation of the Meanings of - in the English Language) by Dr. Muhammad Taqi-ud-Din Al Hilali and Dr. Muhammad Muhsin Khan (One Volume, Page 975)
বাংলাদেশে আমরা ঈমানে মুফাস্সাল শিখেছি ও আমান্তু বিল্লাহি, ওয়া মালায়িকাতিহি, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রুসূলিহি, ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়াল কুদরি খইরিহি ওয়া শাররিহি মিনাল্লাহি তা'য়ালা, ওয়ালবাসি বা'দাল মাউত। এখানে ইয়াওমিল আখিরি (আখিরাতের দিন) এবং ওয়ালবাসি বা'দাল মাউত (মৃত্যুর পর পুনর্জীবন লাভ) আলাদা আলাদা দেখানো হয়েছে বলেই কারো কারো মতে ঈমানের আরকান ছ'টি নয়, সাতটি। এ নিয়ে বিতর্কে যাওয়া বৃথা কারণ বিষয় দু'টি মূলতঃ এক, শুধু প্রকাশভংগীর ভিন্নতা মাত্র। পুনর্জীবন লাভ আখিরাতেই ঘটবে, সেটা আখিরাতের অংগ। যার যা বিশ্বাস সেটা নিয়ে চলতে দেয়াই উত্তম পন্থা কারণ এতে কারো ঈমানের কোন ক্ষতি বা ঘাটতি হচ্ছে না।
আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নবী কারীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, ঈমান ষাট কিংবা সত্তরের চেয়ে কিছু বেশী শাখায় বিভক্ত। তার মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই)। ইমাম বাইহাকী এই সূত্র ধরে একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ লিখেছেন যার নাম শুআবুল ঈমান (ঈমানের শাখাসমূহ) যাতে তিনি ঈমানের ৭৭টি শাখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। নিম্নে ঈমানের ৭৭টি শাখা কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্সসহ তুলে ধরা হলো।
ঈমানের ৭৭টি শাখা
১. আল্লাহর প্রতি ঈমান (সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা নিসাঃ ১৩৬)
২. রসূলের প্রতি ঈমান (সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা নিসা : ১৩৬)
৩. ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান (সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা নিসাঃ ১৩৬)
৪. আল কুরআনের প্রতি ঈমান (সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা নিসা :১৩৬)
৫. তাকদীরের প্রতি ঈমান (সূরা নিসাঃ ৭৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬. আখিরাতের প্রতি ঈমান (সূরা তাওবা : ২৯)
৭. পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান (সূরা আত তাগাবুন : ৮, সূরা জাসিয়া : ২৬)
৮. হাশরের ময়দানের প্রতি ঈমান (সূরা মুতাফফিফীন : ৪, ৫, ৬)
৯. মু'মিনের আবাসস্থল জান্নাত আর কাফিরদের আবাসস্থল জাহান্নাম (সূরা বাকারা : ৮১, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১০. আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা (সূরা বাকারা : ১৬৫, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১১. মনে সদা আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকা (সূরা আলে ইমরান : ১৮২, সূরা মায়িদা ৪ সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১২. আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা রাখা (সূরা ইসরা : ৫৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৩. আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা (সূরা আলে ইমরান : ১২২, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৪. নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে ভালোবাসা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
১৫. নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা করা (সূরা ফাতহ :৯, সূরা নূর:৬৩)
১৬. ইসলামের উপর অটল থাকা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৭. জ্ঞান অর্জন করা (সূরা ফাতির : ২৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৮. শিক্ষার প্রসার (সূরা আলে ইমরান : ১৮৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৯. কুরআন মাজীদের সম্মান করা (সূরা হাশর : ২১, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২০. পবিত্রতা (সূরা মায়িদা : ৬, সহীহ মুসলিম)
২১. সলাত (নামায) (সূরা বাকারা : ১৪৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২২. যাকাত (সূরা বাইয়্যিনাহ : ৫, সহীহ মুসলিম)
২৩. সিয়াম (রোযা) (সূরা বাকারাঃ ১৮৩, সহীহ মুসলিম)
২৪. ই'তিকাফ (সূরা বাকারা : ১২৫, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২৫. হাজ্জ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২৬. জিহাদ (প্রচেষ্ঠা/Struggle) (সূরা মায়িদা : ৫৪, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২৭. আল্লাহর পথে পাহারা (সূরা আলে ইমরান : ২০০)
২৮. শত্রর মুকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকা (সূৱা আনফাল : ৪৫, সহীহ বুখারী)
২৯. গানিমাতের এক পঞ্চমাংশ প্রদান করা (সূরা আনফাল : ৪১, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩০. দাসত্ব মোচন (সূরা বালাদ : ১১-১৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩১. কাফফারা দেয়া
৩২. চুক্তি লংঘন না করা (সূরা মায়িদা : ১, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
৩৩. আল্লাহর নি’আমাতের কৃতজ্ঞতা (সূরা ইবরাহীম : ৩৪, সহীহ মুসলিম)
৩৪. অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা (সূরা আহযাবঃ ২৫, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৫. আমানত [গচ্ছিত বস্তু] (সূরা নিসাঃ ৫৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৬. মানুষ হত্যা না করা (সূরা নিসা : ৯৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৭. লজ্জাস্থানের হিফাযত করা (সূরা নূর : ৩০, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৮. অন্যায়ভাবে সম্পদ ভোগ দখল না করা (সূরা বাকারা : ১৮৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৯. হারাম খাদ্য ও পানীয় বর্জন করা (সূরা মায়িদা : ৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৪০. পোশাক ও সাজসজ্জা বিষয়ে সতর্কতা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৪১. নিষিদ্ধ খেলাধুলা বর্জন করা (সূরা জুম'আ : ১১, সহীহ মুসলিম)
৪২. আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় করা (সূরা বানী ইসরাঈল : ২৯, সহীহ মুসলিম)
৪৩. হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার (সূরা ফালাক : ৫, সহীহ মুসলিম)
৪৪. কাউকে অপবাদ দেয়া বা হেয় না করা (সূরা নূর : ১৯, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
৪৫. ইখলাস (একনিষ্ঠতা/আন্তরিকতা) (সূরা আশ শূরা: ২০, বাইহাকী)
৪৬. সৎ কাজে আনন্দ ও অসৎ কাজে মর্মপীড়া অনুভব করা (আবু দাউদ)
৪৭. গুনাহর চিকিৎসা বা তাওবা (সূরা নূর : ৩১, সহীহ মুসলিম)।
৪৮. আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানী ও আত্মত্যাগ (সূরা কাউছার : ২, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৪৯. নেতার আনুগত্য (সূরা নিসা : ৫৯, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫০. জামা'আতবদ্ধ জীবনযাপন (সূরা আলে ইমরান : ১০৩, সহীহ মুসলিম)
৫১. আদল ইনসাফের সাথে বিচার ফায়সালা করা (সূরা নিসাঃ ৫৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫২. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৩. সৎ কাজে পরস্পর সহযোগিতা করা (সূরা মায়িদা : ২, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৪. লজ্জাশীলতা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৫. মা-বাবার সাথে সদাচরণ (সূরা বাকারা : ৮৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা (সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৭. সচ্চরিত্র (সূরা কলম : ৪, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৮. অধীনস্থদের সাথে সদাচরণ (সূরা নিসাঃ ৩৬, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৯. ক্রীতদাসের উপর মনিবের অধিকার (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬০. সন্তান ও অধীনস্থদের অধিকার (সূরা তাহরীম : ৬, সহীহ মুসলিম)
৬১. দ্বীনি কারণে পরস্পর সম্পর্ক (সূরা নূর : ২৭, সহীহ মুসলিম)
৬২. সালামের জবাব দেয়া (সূরা নিসাঃ ৮৬, বাইহাকী)
৬৩. অসুস্থ ভাইয়ের খোজখবর নেয়া (সহীহ বুখারী, সহীহমুসলিম)
৬৪. জানাযা ও দাফন কাফনে অংশগ্রহণ করা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬৫. হাঁচিদাতার হাঁচির জবাব দেয়া (সহীহ মুসলিম)
৬৬. কাফির মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখা (সূরা আলে ইমরান : ২৮, সহীহ মুসলিম)
৬৭. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ (সূরা নিসাঃ ৩৬, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬৮. অতিথি আপ্যায়ন/মেহমানদারী (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬৯. দোষ গোপন রাখা (সূরা নূর : ১৯, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭০. বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করা (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭১. দুনিয়ার মোহমুক্তি ও পরিমিত আশা (সূরা মুহাম্মাদ : ১৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
৭২. আত্মসম্মানবোধ (সূরা তাহরীম : ৬, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
৭৩. অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করা (সূরা মু'মিনূন : ১-৩, তিরমিযী)
৭৪. বদান্যতা ও দানশীলতা (সূরা নিসাঃ ৩৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭৫. ছোটদের স্নেহ ও বড়োদের সম্মান করা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭৬. পরস্পর সংশোধন (সূরা নিসাঃ ১১৪, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭৭. নিজের যা পছন্দ অপরের জন্য তাই পছন্দ করা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
ঈমানের ৭৭টি শাখা
১. আল্লাহর প্রতি ঈমান (সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা নিসাঃ ১৩৬)
২. রসূলের প্রতি ঈমান (সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা নিসা : ১৩৬)
৩. ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান (সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা নিসাঃ ১৩৬)
৪. আল কুরআনের প্রতি ঈমান (সূরা বাকারা : ২৮৫, সূরা নিসা :১৩৬)
৫. তাকদীরের প্রতি ঈমান (সূরা নিসাঃ ৭৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬. আখিরাতের প্রতি ঈমান (সূরা তাওবা : ২৯)
৭. পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান (সূরা আত তাগাবুন : ৮, সূরা জাসিয়া : ২৬)
৮. হাশরের ময়দানের প্রতি ঈমান (সূরা মুতাফফিফীন : ৪, ৫, ৬)
৯. মু'মিনের আবাসস্থল জান্নাত আর কাফিরদের আবাসস্থল জাহান্নাম (সূরা বাকারা : ৮১, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১০. আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা (সূরা বাকারা : ১৬৫, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১১. মনে সদা আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকা (সূরা আলে ইমরান : ১৮২, সূরা মায়িদা ৪ সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১২. আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা রাখা (সূরা ইসরা : ৫৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৩. আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা (সূরা আলে ইমরান : ১২২, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৪. নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে ভালোবাসা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
১৫. নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা করা (সূরা ফাতহ :৯, সূরা নূর:৬৩)
১৬. ইসলামের উপর অটল থাকা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৭. জ্ঞান অর্জন করা (সূরা ফাতির : ২৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৮. শিক্ষার প্রসার (সূরা আলে ইমরান : ১৮৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১৯. কুরআন মাজীদের সম্মান করা (সূরা হাশর : ২১, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২০. পবিত্রতা (সূরা মায়িদা : ৬, সহীহ মুসলিম)
২১. সলাত (নামায) (সূরা বাকারা : ১৪৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২২. যাকাত (সূরা বাইয়্যিনাহ : ৫, সহীহ মুসলিম)
২৩. সিয়াম (রোযা) (সূরা বাকারাঃ ১৮৩, সহীহ মুসলিম)
২৪. ই'তিকাফ (সূরা বাকারা : ১২৫, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২৫. হাজ্জ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২৬. জিহাদ (প্রচেষ্ঠা/Struggle) (সূরা মায়িদা : ৫৪, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
২৭. আল্লাহর পথে পাহারা (সূরা আলে ইমরান : ২০০)
২৮. শত্রর মুকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকা (সূৱা আনফাল : ৪৫, সহীহ বুখারী)
২৯. গানিমাতের এক পঞ্চমাংশ প্রদান করা (সূরা আনফাল : ৪১, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩০. দাসত্ব মোচন (সূরা বালাদ : ১১-১৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩১. কাফফারা দেয়া
৩২. চুক্তি লংঘন না করা (সূরা মায়িদা : ১, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
৩৩. আল্লাহর নি’আমাতের কৃতজ্ঞতা (সূরা ইবরাহীম : ৩৪, সহীহ মুসলিম)
৩৪. অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা (সূরা আহযাবঃ ২৫, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৫. আমানত [গচ্ছিত বস্তু] (সূরা নিসাঃ ৫৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৬. মানুষ হত্যা না করা (সূরা নিসা : ৯৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৭. লজ্জাস্থানের হিফাযত করা (সূরা নূর : ৩০, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৮. অন্যায়ভাবে সম্পদ ভোগ দখল না করা (সূরা বাকারা : ১৮৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৩৯. হারাম খাদ্য ও পানীয় বর্জন করা (সূরা মায়িদা : ৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৪০. পোশাক ও সাজসজ্জা বিষয়ে সতর্কতা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৪১. নিষিদ্ধ খেলাধুলা বর্জন করা (সূরা জুম'আ : ১১, সহীহ মুসলিম)
৪২. আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় করা (সূরা বানী ইসরাঈল : ২৯, সহীহ মুসলিম)
৪৩. হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার (সূরা ফালাক : ৫, সহীহ মুসলিম)
৪৪. কাউকে অপবাদ দেয়া বা হেয় না করা (সূরা নূর : ১৯, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
৪৫. ইখলাস (একনিষ্ঠতা/আন্তরিকতা) (সূরা আশ শূরা: ২০, বাইহাকী)
৪৬. সৎ কাজে আনন্দ ও অসৎ কাজে মর্মপীড়া অনুভব করা (আবু দাউদ)
৪৭. গুনাহর চিকিৎসা বা তাওবা (সূরা নূর : ৩১, সহীহ মুসলিম)।
৪৮. আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানী ও আত্মত্যাগ (সূরা কাউছার : ২, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৪৯. নেতার আনুগত্য (সূরা নিসা : ৫৯, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫০. জামা'আতবদ্ধ জীবনযাপন (সূরা আলে ইমরান : ১০৩, সহীহ মুসলিম)
৫১. আদল ইনসাফের সাথে বিচার ফায়সালা করা (সূরা নিসাঃ ৫৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫২. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৩. সৎ কাজে পরস্পর সহযোগিতা করা (সূরা মায়িদা : ২, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৪. লজ্জাশীলতা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৫. মা-বাবার সাথে সদাচরণ (সূরা বাকারা : ৮৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা (সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৭. সচ্চরিত্র (সূরা কলম : ৪, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৮. অধীনস্থদের সাথে সদাচরণ (সূরা নিসাঃ ৩৬, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৫৯. ক্রীতদাসের উপর মনিবের অধিকার (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬০. সন্তান ও অধীনস্থদের অধিকার (সূরা তাহরীম : ৬, সহীহ মুসলিম)
৬১. দ্বীনি কারণে পরস্পর সম্পর্ক (সূরা নূর : ২৭, সহীহ মুসলিম)
৬২. সালামের জবাব দেয়া (সূরা নিসাঃ ৮৬, বাইহাকী)
৬৩. অসুস্থ ভাইয়ের খোজখবর নেয়া (সহীহ বুখারী, সহীহমুসলিম)
৬৪. জানাযা ও দাফন কাফনে অংশগ্রহণ করা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬৫. হাঁচিদাতার হাঁচির জবাব দেয়া (সহীহ মুসলিম)
৬৬. কাফির মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখা (সূরা আলে ইমরান : ২৮, সহীহ মুসলিম)
৬৭. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ (সূরা নিসাঃ ৩৬, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬৮. অতিথি আপ্যায়ন/মেহমানদারী (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৬৯. দোষ গোপন রাখা (সূরা নূর : ১৯, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭০. বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করা (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭১. দুনিয়ার মোহমুক্তি ও পরিমিত আশা (সূরা মুহাম্মাদ : ১৮, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
৭২. আত্মসম্মানবোধ (সূরা তাহরীম : ৬, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
৭৩. অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করা (সূরা মু'মিনূন : ১-৩, তিরমিযী)
৭৪. বদান্যতা ও দানশীলতা (সূরা নিসাঃ ৩৭, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭৫. ছোটদের স্নেহ ও বড়োদের সম্মান করা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭৬. পরস্পর সংশোধন (সূরা নিসাঃ ১১৪, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
৭৭. নিজের যা পছন্দ অপরের জন্য তাই পছন্দ করা (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
এই হল একজন মুসলিমের আকীদা বা বিশ্বাস, যার উপর ভিত্তি করে তার নিজের জীবনকে গড়ে তোলা এবং সে ব্যাপারে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকা আবশ্যক। অতঃপর এই ঈমান বা বিশ্বাস আরও কতগুলো আবশ্যকীয় বিষয়কে অনুসরণ করে;
যেমন : আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা, তাঁর প্রতি একনিষ্ঠতা; তাঁর নিকট প্রত্যাশা করা, তাঁকে ভয় কা; আর এগুলো জেনে রাখবো এবং তার উপর ধৈর্যধারণ করবো; আর আকীদা-বিশ্বাস পরিপন্থী কর্মকান্ডসমূহ এবং ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাকবো; আর এগুলোর শীর্ষে রয়েছে আল্লাহ তাআলার সাথে শরীক করা, কুফরী করা, মুনাফিকী করা এবং আল্লাহ তাআলা, তাঁর রসূল, তাঁর দ্বীন ও তিনি যে শরীআত প্রবর্তন করেছেন, তার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা;
অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদত আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত অন্য কারও উদ্দেশ্যে করা; অথবা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের বিধান আল্লাহ তা'আলার বিধানের সমান বা তার চেয়ে উত্তম বলে বিশ্বাস করা এবং এই বিশ্বাস করা যে, মানবতা এমনিতেই সৌভাগ্যবান হবে, যেমনিভাবে সে আল্লাহ তাআলার বিধানের মধ্যে সৌভাগ্যবান হয়; অথবা এই বিশ্বাস করা যে, যুগ-যামানা আল্লাহ তা'আলার বিধান নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এবং তা পবিত্র উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ হিসেবে অবশিষ্ট রয়েছে; এই জীবনে তার উপর আমল করার প্রয়োজন নেই; অথবা মাজার-পীর-ফকির ও জ্যেতিষীর কর্মকাণ্ডে বিশ্বাস স্থাপন করা।
সুতরাং আমাদের (মু'মিনের) আবশ্যকীয় কর্তব্য হল, এই ধরনের ভয়াবহ শিরকে নিপতিত হওয়া থেকে সতর্ক থাকবো; অতএব ঈমান গ্রহণের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং আরও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঈমান বিনষ্ট করে, এমন বিষয় থেকে সতর্ক থাকার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবো।
যেমন : আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা, তাঁর প্রতি একনিষ্ঠতা; তাঁর নিকট প্রত্যাশা করা, তাঁকে ভয় কা; আর এগুলো জেনে রাখবো এবং তার উপর ধৈর্যধারণ করবো; আর আকীদা-বিশ্বাস পরিপন্থী কর্মকান্ডসমূহ এবং ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাকবো; আর এগুলোর শীর্ষে রয়েছে আল্লাহ তাআলার সাথে শরীক করা, কুফরী করা, মুনাফিকী করা এবং আল্লাহ তাআলা, তাঁর রসূল, তাঁর দ্বীন ও তিনি যে শরীআত প্রবর্তন করেছেন, তার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা;
অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদত আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত অন্য কারও উদ্দেশ্যে করা; অথবা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের বিধান আল্লাহ তা'আলার বিধানের সমান বা তার চেয়ে উত্তম বলে বিশ্বাস করা এবং এই বিশ্বাস করা যে, মানবতা এমনিতেই সৌভাগ্যবান হবে, যেমনিভাবে সে আল্লাহ তাআলার বিধানের মধ্যে সৌভাগ্যবান হয়; অথবা এই বিশ্বাস করা যে, যুগ-যামানা আল্লাহ তা'আলার বিধান নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এবং তা পবিত্র উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ হিসেবে অবশিষ্ট রয়েছে; এই জীবনে তার উপর আমল করার প্রয়োজন নেই; অথবা মাজার-পীর-ফকির ও জ্যেতিষীর কর্মকাণ্ডে বিশ্বাস স্থাপন করা।
সুতরাং আমাদের (মু'মিনের) আবশ্যকীয় কর্তব্য হল, এই ধরনের ভয়াবহ শিরকে নিপতিত হওয়া থেকে সতর্ক থাকবো; অতএব ঈমান গ্রহণের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং আরও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঈমান বিনষ্ট করে, এমন বিষয় থেকে সতর্ক থাকার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবো।
বিশ্বাস-১ :
শীতকালে যখন খুব ঠাণ্ডা পরে যেমন বাইরে -২০“ (ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)। এটা আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি এবং যখন বাড়ির বাইরে যাই তখন উপযুক্ত শীতের কাপড় পরে বাইরে যাই, অবশ্যই একটি টি-শার্ট পরে বাইরে যাই না। কারণ এই ক্ষেত্রে বিশ্বাসটা খুবই মজবুত তাই বিশ্বাসের সাথে কাজের মিল রয়েছে, সেজন্য উপযুক্ত গরম কাপড় পরে বাইরে যাচ্ছি।
বিশ্বাস-২ :
আমরা আখিরাতকে বিশ্বাস করি, যেমন মৃত্যু হবে, কিয়ামত হবে, আবার আমাদেরকে উঠানো হবে এবং এই পৃথিবীতে ভাল-মন্দ যা করেছি তার বিচার অনুযায়ী পুরষ্কার ও শাস্তি হিসেবে জান্নাত-জাহান্নাম দেয়া হবে। বিচারে ভাল ফল পেতে হলে এই পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া কুরআনের নির্দেশ মেনে চলতে হবে এবং রসূল (ﷺ) যেভাবে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন ঠিক সেভাবে চলতে হবে। দু’জন ফিরিশতা ২৪ ঘন্টা আমাদের সকল কাজকর্ম লিপিবদ্ধ করছেন। এসবই আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি কিন্তু বাস্তবে তার জন্য আমল করি না। আমরা জানি এই পৃথিবীতে খারাপ কাজ করলে আখিরাতে শাস্তি পেতে হবে তারপরও খারাপ কাজ করি।
বিশ্বাস-১ ও বিশ্বাস-২ এর মধ্যে পার্থক্য কী? বাইরে খুব ঠান্ডা এতটুকু জেনেই গরম কাপড় পরে বের হচ্ছি আর আখিরাতের বিষয়ে এতো দলিল থাকা সত্ত্বেও, এতো জানা সত্ত্বেও আমল করছি না। এই বিষয়ে জরিপ করে দেখা গেছে যে:
• কেউ কেউ মনে করছি যে, পরকালে কী হবে না হবে সেটা তখন দেখা যাবে।
• কেউ কেউ মনে করছি যে, পরকালে কিছু একটা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
• কেউ কেউ মনে করছি যে, পরকালে এসব কিছু হবে না।
• কেউ কেউ মনে করছি জান্নাতে অবশ্যই যাবো।
• কেউ কেউ মনে করছি যাই করি না কেন ঈমান যখন এনেছি তখন এক সময় না এক সময় জান্নাতে যাবেই।
• কেউ কেউ পরকালে কী হবে তা নিয়ে এখন চিন্তা করতে রাজি নই।
• কেউ কেউ পরকাল এবং এই জীবন নিয়ে confused।
বিশ্বাস-৩ :
আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে মহান আল্লাহই একমাত্র রিযিক দাতা। কিন্তু বাস্তবে সেটা মানছি না। কথা প্রসঙ্গে বলছি চাকুরী গেলে খাবো কী? অনেক সময় মনে করি বসকে খুশি না রাখলে চাকরী চলে যেতে পারে!
বিশ্বাস-৪:
অনেক সময় আমাদের কোন অসুখ-বিসুখ হলে আমাদের প্রথমেই মনে পরে ডাক্তারের কথা। কিন্তু একজন প্রকৃত ঈমানদারের সর্বপ্রথমে মনে পড়ার কথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কথা তারপর ডাক্তার বা ক্লিনিকের কথা। কারণ কোন অসুখ দেয়ার মালিক মহান আল্লাহ এবং তা থেকে মুক্ত করার মালিকও তিনি। তবে প্রথমে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তারপর ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
বিশ্বাস-৫:
একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা। লঞ্চে করে একটি টুরিষ্ট দল সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে ফিরছে। সবাই মিলে ভ্রমণে খুব হৈ-হুল্লা করছে এবং তাস খেলছে। হঠাৎ সমুদ্রের মাঝে এসে ঝড় উঠেছে এবং লঞ্চ প্রায় ডুবে যায় যায় এমন অবস্থা। সকলেই আল্লাহকে ডাকাডাকি শুরু করলো। কেউ কেউ বলতে লাগলো হে আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও, আর আজেবাজে কাজ করবো না, তাস খেলবো না ইত্যাদি। এভাবে চলল বেশ কিছুক্ষণ। যখন ঝড় থেমে গেল এবং সমুদ্রের পারও দেখা যাচ্ছে তখন সবারই সুর পাল্টে গেল, আল্লাহকে আবার তারা ভুলে গেল।
শুধু মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই মুসলিম হওয়া যায়। বাবা মুসলিম, মা মুসলিম, তাই বলে আমিও মুসলিম বিষয়টা তা নয়। প্রত্যেক শিশু মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ঠিকই এবং নাবালক বয়স পর্যন্ত মুসলিম থাকে কিন্তু পরবর্তীতে তার মা বাবা-ই তাকে অমুসলিম বানায়।
শীতকালে যখন খুব ঠাণ্ডা পরে যেমন বাইরে -২০“ (ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)। এটা আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি এবং যখন বাড়ির বাইরে যাই তখন উপযুক্ত শীতের কাপড় পরে বাইরে যাই, অবশ্যই একটি টি-শার্ট পরে বাইরে যাই না। কারণ এই ক্ষেত্রে বিশ্বাসটা খুবই মজবুত তাই বিশ্বাসের সাথে কাজের মিল রয়েছে, সেজন্য উপযুক্ত গরম কাপড় পরে বাইরে যাচ্ছি।
বিশ্বাস-২ :
আমরা আখিরাতকে বিশ্বাস করি, যেমন মৃত্যু হবে, কিয়ামত হবে, আবার আমাদেরকে উঠানো হবে এবং এই পৃথিবীতে ভাল-মন্দ যা করেছি তার বিচার অনুযায়ী পুরষ্কার ও শাস্তি হিসেবে জান্নাত-জাহান্নাম দেয়া হবে। বিচারে ভাল ফল পেতে হলে এই পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া কুরআনের নির্দেশ মেনে চলতে হবে এবং রসূল (ﷺ) যেভাবে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন ঠিক সেভাবে চলতে হবে। দু’জন ফিরিশতা ২৪ ঘন্টা আমাদের সকল কাজকর্ম লিপিবদ্ধ করছেন। এসবই আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি কিন্তু বাস্তবে তার জন্য আমল করি না। আমরা জানি এই পৃথিবীতে খারাপ কাজ করলে আখিরাতে শাস্তি পেতে হবে তারপরও খারাপ কাজ করি।
বিশ্বাস-১ ও বিশ্বাস-২ এর মধ্যে পার্থক্য কী? বাইরে খুব ঠান্ডা এতটুকু জেনেই গরম কাপড় পরে বের হচ্ছি আর আখিরাতের বিষয়ে এতো দলিল থাকা সত্ত্বেও, এতো জানা সত্ত্বেও আমল করছি না। এই বিষয়ে জরিপ করে দেখা গেছে যে:
• কেউ কেউ মনে করছি যে, পরকালে কী হবে না হবে সেটা তখন দেখা যাবে।
• কেউ কেউ মনে করছি যে, পরকালে কিছু একটা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
• কেউ কেউ মনে করছি যে, পরকালে এসব কিছু হবে না।
• কেউ কেউ মনে করছি জান্নাতে অবশ্যই যাবো।
• কেউ কেউ মনে করছি যাই করি না কেন ঈমান যখন এনেছি তখন এক সময় না এক সময় জান্নাতে যাবেই।
• কেউ কেউ পরকালে কী হবে তা নিয়ে এখন চিন্তা করতে রাজি নই।
• কেউ কেউ পরকাল এবং এই জীবন নিয়ে confused।
বিশ্বাস-৩ :
আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে মহান আল্লাহই একমাত্র রিযিক দাতা। কিন্তু বাস্তবে সেটা মানছি না। কথা প্রসঙ্গে বলছি চাকুরী গেলে খাবো কী? অনেক সময় মনে করি বসকে খুশি না রাখলে চাকরী চলে যেতে পারে!
বিশ্বাস-৪:
অনেক সময় আমাদের কোন অসুখ-বিসুখ হলে আমাদের প্রথমেই মনে পরে ডাক্তারের কথা। কিন্তু একজন প্রকৃত ঈমানদারের সর্বপ্রথমে মনে পড়ার কথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কথা তারপর ডাক্তার বা ক্লিনিকের কথা। কারণ কোন অসুখ দেয়ার মালিক মহান আল্লাহ এবং তা থেকে মুক্ত করার মালিকও তিনি। তবে প্রথমে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তারপর ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
বিশ্বাস-৫:
একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা। লঞ্চে করে একটি টুরিষ্ট দল সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে ফিরছে। সবাই মিলে ভ্রমণে খুব হৈ-হুল্লা করছে এবং তাস খেলছে। হঠাৎ সমুদ্রের মাঝে এসে ঝড় উঠেছে এবং লঞ্চ প্রায় ডুবে যায় যায় এমন অবস্থা। সকলেই আল্লাহকে ডাকাডাকি শুরু করলো। কেউ কেউ বলতে লাগলো হে আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও, আর আজেবাজে কাজ করবো না, তাস খেলবো না ইত্যাদি। এভাবে চলল বেশ কিছুক্ষণ। যখন ঝড় থেমে গেল এবং সমুদ্রের পারও দেখা যাচ্ছে তখন সবারই সুর পাল্টে গেল, আল্লাহকে আবার তারা ভুলে গেল।
শুধু মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই মুসলিম হওয়া যায়। বাবা মুসলিম, মা মুসলিম, তাই বলে আমিও মুসলিম বিষয়টা তা নয়। প্রত্যেক শিশু মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ঠিকই এবং নাবালক বয়স পর্যন্ত মুসলিম থাকে কিন্তু পরবর্তীতে তার মা বাবা-ই তাকে অমুসলিম বানায়।
আমাদের দেশে যে কোন মুসলিম ব্যক্তিকে অযু ভঙ্গের কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে দিতে পারবে, সবগুলো বলতে না পারলেও বেশীরভাগ কারণগুলো বলতে পারবে। আবার নামায ভঙ্গের কারণগুলো জিজ্ঞেস করলে তাও বলে দিতে পারবে, সবগুলো বলতে না পারলেও বেশীরভাগ কারণগুলোই বলতে পারবে। কিন্তু যদি কোন মুসলিম ব্যক্তিকে ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে কিছুই বলতে পারবে না। অথবা ইসলাম ভঙ্গের কারণসমূহ জিজ্ঞেস করা হয় তাহলেও কিছুই বলতে পারবে না।
এর কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজে আকীদা শিক্ষার উপর তেমন গুরুত্ব নেই, শিক্ষার ব্যবস্থাও নেই এবং যাদের কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়ার কথা তাদের কাছ থেকেও বেশী কিছু আশা করা যায় না। এছাড়া আমাদের দেশে মাদ্রাসায় মাসলা-মাসায়েল শিখানো হয় কিন্তু আকীদা বিষয়ে তেমন কিছু শিখানো হয় না। মাদ্রাসার সিলেবাসে মাসলা-মাসায়েলের উপর মোটা মোটা বই রয়েছে কিন্তু আকীদা বিষয়ে তেমন কোন বই নেই। যার কারণে আমাদের দেশের মানুষ আকীদা বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখে না। ঈমান ও ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ হচ্ছে আকীদা নির্ভর বিষয়। যে জ্ঞান না থাকলে ঈমান ও ইসলাম রক্ষা করা কঠিন। যে জ্ঞান না থাকলে মুসলিম হওয়া যায় না সেই জ্ঞানের খুব অভাব।
যে শিক্ষা না থাকলে মুসলিম হওয়া যায় না, সে শিক্ষা হচ্ছে আকীদার শিক্ষা, বিশ্বাসের শিক্ষা, ঈমানের শিক্ষা, ঈমানের পরিপন্থি বিষয়ের শিক্ষা, শিরকের শিক্ষা, কুফরীর শিক্ষা। শিরকের শিক্ষাগ্রহণ এজন্য করতে হবে যে, শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ যে শিরক করে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়, আর আল্লাহ কোন দিন শিরকের গুনাহ মাপ করবেন না। আমাদের মুসলিম সমাজের ভিতরে অজ্ঞতার কারণে কোটি কোটি লোক শিরকে লিপ্ত। তাই এই শিরককে চিহ্নিত করতে হবে। বিদ'আতের জ্ঞান এজন্য অর্জন করতে হবে যে বিদ’আত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
আল্লাহ সকল বান্দার উপর ইসলামে প্রবেশ করা, উহা আঁকড়ে ধরা এবং উহার পরিপন্থী বিষয় থেকে সতর্ক থাকা ফরয করেছেন। আর নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) - কে সে দিকে আহবান করার জন্যই প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্ এই মর্মে ঘোষণা দিয়ে বলেন, “যে ব্যক্তি নবী (ﷺ)-র অনুসরণ করবে সে হিদায়াত প্রাপ্ত হবে পক্ষান্তরে যে তাঁর থেকে বিমুখ হবে সে পথভ্রষ্ট হবে।” (সূরা নূর ২৪ : ৫৪)।
আমাদেরকে জানতে হবে যে শুধু মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই মুসলিম হওয়া যায় না। বাবা মুসলিম, মা মুসলিম, তাই বলে আমিও মুসলিম বিষয়টা এতো সহজ নয়। প্রত্যেক শিশু মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ঠিকই এবং নাবালক বয়স পর্যন্ত মুসলিম থাকে কিন্তু পরবর্তীতে তার মা-বাবা তাকে অমুসলিম বানায়। বড় হয়ে কেউ নাস্তিক হয়, কেউ সেকুলার হয়, কেউ কমিউনিস্ট হয়, কেউ জাতীয়তাবাদী হয়, কেউ মুনাফিক হয়, কেউ যালিম হয়, কেউ কাফির হয়, কেউ পীর পূজারী হয়, কেউ মাজার পূজারী হয়, আবার কেউ মানব রচিত দল করে।
স্বাবালক-বালিকা হওয়ার পর যে নিজেকে ইসলাম ভঙ্গের একটি কারণের মধ্যেও আসতে দেয় না সেই শুধু মুসলিম থাকে; এছাড়া কেউ যদি ইসলাম ভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে একটি কারণ ও করে তা হলেই সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। ইসলাম থেকে একবার বেরিয়ে গেলে তাকে আবার মুসলিম হতে হবে। আকীদায় (বিশ্বাস) মুসলিম হতে হবে, কাজেকর্মে, চলাফেরায় মুসলিম হতে হবে। মুসলিম কোন সম্প্রদায় বা জাতির নাম নয়, মুসলিম কোন গোষ্ঠির নাম নয়। মুসলিম নাম হচ্ছে আকীদা (বিশ্বাস) ও কর্মের। যার মধ্যে ইসলামী ঐ আকীদাগুলো থাকবে, আমলগুলো থাকবে যেগুলো মুসলিম হওয়ার জন্য আবশ্যক। সেই সত্যিকার মুসলিম।
এর কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজে আকীদা শিক্ষার উপর তেমন গুরুত্ব নেই, শিক্ষার ব্যবস্থাও নেই এবং যাদের কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়ার কথা তাদের কাছ থেকেও বেশী কিছু আশা করা যায় না। এছাড়া আমাদের দেশে মাদ্রাসায় মাসলা-মাসায়েল শিখানো হয় কিন্তু আকীদা বিষয়ে তেমন কিছু শিখানো হয় না। মাদ্রাসার সিলেবাসে মাসলা-মাসায়েলের উপর মোটা মোটা বই রয়েছে কিন্তু আকীদা বিষয়ে তেমন কোন বই নেই। যার কারণে আমাদের দেশের মানুষ আকীদা বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখে না। ঈমান ও ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ হচ্ছে আকীদা নির্ভর বিষয়। যে জ্ঞান না থাকলে ঈমান ও ইসলাম রক্ষা করা কঠিন। যে জ্ঞান না থাকলে মুসলিম হওয়া যায় না সেই জ্ঞানের খুব অভাব।
যে শিক্ষা না থাকলে মুসলিম হওয়া যায় না, সে শিক্ষা হচ্ছে আকীদার শিক্ষা, বিশ্বাসের শিক্ষা, ঈমানের শিক্ষা, ঈমানের পরিপন্থি বিষয়ের শিক্ষা, শিরকের শিক্ষা, কুফরীর শিক্ষা। শিরকের শিক্ষাগ্রহণ এজন্য করতে হবে যে, শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ যে শিরক করে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়, আর আল্লাহ কোন দিন শিরকের গুনাহ মাপ করবেন না। আমাদের মুসলিম সমাজের ভিতরে অজ্ঞতার কারণে কোটি কোটি লোক শিরকে লিপ্ত। তাই এই শিরককে চিহ্নিত করতে হবে। বিদ'আতের জ্ঞান এজন্য অর্জন করতে হবে যে বিদ’আত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
আল্লাহ সকল বান্দার উপর ইসলামে প্রবেশ করা, উহা আঁকড়ে ধরা এবং উহার পরিপন্থী বিষয় থেকে সতর্ক থাকা ফরয করেছেন। আর নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) - কে সে দিকে আহবান করার জন্যই প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্ এই মর্মে ঘোষণা দিয়ে বলেন, “যে ব্যক্তি নবী (ﷺ)-র অনুসরণ করবে সে হিদায়াত প্রাপ্ত হবে পক্ষান্তরে যে তাঁর থেকে বিমুখ হবে সে পথভ্রষ্ট হবে।” (সূরা নূর ২৪ : ৫৪)।
আমাদেরকে জানতে হবে যে শুধু মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই মুসলিম হওয়া যায় না। বাবা মুসলিম, মা মুসলিম, তাই বলে আমিও মুসলিম বিষয়টা এতো সহজ নয়। প্রত্যেক শিশু মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ঠিকই এবং নাবালক বয়স পর্যন্ত মুসলিম থাকে কিন্তু পরবর্তীতে তার মা-বাবা তাকে অমুসলিম বানায়। বড় হয়ে কেউ নাস্তিক হয়, কেউ সেকুলার হয়, কেউ কমিউনিস্ট হয়, কেউ জাতীয়তাবাদী হয়, কেউ মুনাফিক হয়, কেউ যালিম হয়, কেউ কাফির হয়, কেউ পীর পূজারী হয়, কেউ মাজার পূজারী হয়, আবার কেউ মানব রচিত দল করে।
স্বাবালক-বালিকা হওয়ার পর যে নিজেকে ইসলাম ভঙ্গের একটি কারণের মধ্যেও আসতে দেয় না সেই শুধু মুসলিম থাকে; এছাড়া কেউ যদি ইসলাম ভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে একটি কারণ ও করে তা হলেই সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। ইসলাম থেকে একবার বেরিয়ে গেলে তাকে আবার মুসলিম হতে হবে। আকীদায় (বিশ্বাস) মুসলিম হতে হবে, কাজেকর্মে, চলাফেরায় মুসলিম হতে হবে। মুসলিম কোন সম্প্রদায় বা জাতির নাম নয়, মুসলিম কোন গোষ্ঠির নাম নয়। মুসলিম নাম হচ্ছে আকীদা (বিশ্বাস) ও কর্মের। যার মধ্যে ইসলামী ঐ আকীদাগুলো থাকবে, আমলগুলো থাকবে যেগুলো মুসলিম হওয়ার জন্য আবশ্যক। সেই সত্যিকার মুসলিম।
এমন কোন ভ্রান্ত বিশ্বাস, এমন কোন ভ্রান্ত কথা, এমন কোন কাজকর্ম যা সরাসরি কুরআন এবং সুন্নাহ বিরোধী, এবং যে সকল বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (ﷺ) ঈমান বা ইসলাম ভঙ্গকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন, সেগুলোকে কুফরী, শিরকী কাজ বলে, ইসলাম থেকে বহিস্কৃত কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন সেগুলো হচ্ছে ঈমান বা ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়। আর যার মধ্যে ইসলামের সেই আকীদা (বিশ্বাস) নেই, বিশ্বাসের সাথে কাজের মিল নেই সে মুসলিম নয়।
অথবা তার মধ্যে বিশ্বাস আছে কিন্তু কর্মে উল্টো করছে, ইসলামী বিষয় নাকচ করে দিচ্ছে, উল্টো যুক্তি দেখাচ্ছে সেজন্য তার ঈমান থাকবে না। তাই ঈমান বা ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়ে আমাদের জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী। কারণ আজকাল মুসলিম দেশে মুসলিমরাই বেশী ইসলাম বিরোধী কথা-বার্তা বলছে। ইসলামের শত্রুরা মুসলিম দেশের মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কলম ধরিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা-ফেইসবুকে লেখালেখি করাচ্ছে, বিভিন্ন টকশোতে ইসলামের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়াচ্ছে।
ইসলাম ধবংসকারী বিষয় দুই রকম আছে। কতক আকীদা ও কতক আমলী বিষয়। যেমন কিছু আছে ধর্ম মনে করে করা হয় না বরং ধর্মের বিরোধিতার উদ্দেশ্যে করা হয়। যেমন ইসলামের বিরুদ্ধে এই বক্তব্য ঐ বক্তব্য ইত্যাদি :
কেউ যদি বলে ইসলামে নারীদের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে, নারীদের সাথে বৈরী আচরণ করা হয়েছে, তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
মানব রচিত দলই উত্তম এটা মনে করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করলে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি বলে যে আমি সব মানি কিন্তু কুরবানী মানি না, বা সব মানি কিন্তু হাজ্জ মানি না বা সব মানি কিন্তু রোযা মানি না বা সব মানি কিন্তু পর্দা মানি না। তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি বলে আমি ধর্ম-টর্ম মানি না তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি মনে করে যে কুরআনের আইনের চেয়ে মানব রচিত আইন ভাল তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি বলে কুরআন চৌদ্দশত বছর আগের পুরানো, এ দিয়ে কি আর আজকাল চলে! তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি মনে করে বা বলে যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে দেশ চৌদ্দশত বছর পিছিয়ে যাবে তাহলে যে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি মনে করে বা বলে যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে দেশ জাহিলিয়াতের যুগে চলে যাবে তাহলে যে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি শরীয়াতের কোন একটি বা একাধিক বিষয়কে ঘৃণা করে তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
যে যে কারণে মুসলিম ব্যক্তির ঈমান এবং ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যায় বা মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় তা নিমে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
অথবা তার মধ্যে বিশ্বাস আছে কিন্তু কর্মে উল্টো করছে, ইসলামী বিষয় নাকচ করে দিচ্ছে, উল্টো যুক্তি দেখাচ্ছে সেজন্য তার ঈমান থাকবে না। তাই ঈমান বা ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়ে আমাদের জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী। কারণ আজকাল মুসলিম দেশে মুসলিমরাই বেশী ইসলাম বিরোধী কথা-বার্তা বলছে। ইসলামের শত্রুরা মুসলিম দেশের মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কলম ধরিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা-ফেইসবুকে লেখালেখি করাচ্ছে, বিভিন্ন টকশোতে ইসলামের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়াচ্ছে।
ইসলাম ধবংসকারী বিষয় দুই রকম আছে। কতক আকীদা ও কতক আমলী বিষয়। যেমন কিছু আছে ধর্ম মনে করে করা হয় না বরং ধর্মের বিরোধিতার উদ্দেশ্যে করা হয়। যেমন ইসলামের বিরুদ্ধে এই বক্তব্য ঐ বক্তব্য ইত্যাদি :
কেউ যদি বলে ইসলামে নারীদের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে, নারীদের সাথে বৈরী আচরণ করা হয়েছে, তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
মানব রচিত দলই উত্তম এটা মনে করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করলে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি বলে যে আমি সব মানি কিন্তু কুরবানী মানি না, বা সব মানি কিন্তু হাজ্জ মানি না বা সব মানি কিন্তু রোযা মানি না বা সব মানি কিন্তু পর্দা মানি না। তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি বলে আমি ধর্ম-টর্ম মানি না তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি মনে করে যে কুরআনের আইনের চেয়ে মানব রচিত আইন ভাল তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি বলে কুরআন চৌদ্দশত বছর আগের পুরানো, এ দিয়ে কি আর আজকাল চলে! তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি মনে করে বা বলে যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে দেশ চৌদ্দশত বছর পিছিয়ে যাবে তাহলে যে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি মনে করে বা বলে যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে দেশ জাহিলিয়াতের যুগে চলে যাবে তাহলে যে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
কেউ যদি শরীয়াতের কোন একটি বা একাধিক বিষয়কে ঘৃণা করে তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
যে যে কারণে মুসলিম ব্যক্তির ঈমান এবং ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যায় বা মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় তা নিমে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
ঈমান ভঙ্গকারী বিষয়
প্রথম কারণ : এতে সামিল আছে। আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা বা তাতে কোন সন্দেহ করা।
দ্বিতীয় কারণ : আল্লাহ তাআলা যে সত্যিকার মা'বুদ তা অস্বীকার করা অথবা তাঁর সাথে কোন শিরক করা।
তৃতীয় কারণ : আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ অস্বীকার করা/তাঁর সিফাতসমূহ অস্বীকার করা বা তাতে কোন সন্দেহ প্রকাশ করা।
চতুর্থ কারণ : রসূল (ﷺ) এর রিসালাতকে অস্বীকার করা অথবা তাঁর রিসালাতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা।
প্রথম কারণ : এতে সামিল আছে। আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা বা তাতে কোন সন্দেহ করা।
দ্বিতীয় কারণ : আল্লাহ তাআলা যে সত্যিকার মা'বুদ তা অস্বীকার করা অথবা তাঁর সাথে কোন শিরক করা।
তৃতীয় কারণ : আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ অস্বীকার করা/তাঁর সিফাতসমূহ অস্বীকার করা বা তাতে কোন সন্দেহ প্রকাশ করা।
চতুর্থ কারণ : রসূল (ﷺ) এর রিসালাতকে অস্বীকার করা অথবা তাঁর রিসালাতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা।
১) আল্লাহর ইজ্জতের অস্তিত্ব অস্বীকার করা।
যেমন নাস্তিকরা করে থাকে এই বলে যে, স্রষ্টা বলে কোন জিনিসের অস্তিত্ব নেই। আর তারা বলে : কোন উপাস্য নেই। বরং জীবন হচ্ছে পদার্থ হতে। তারা প্রমাণ দেখায় যে, সৃষ্টি হওয়া এই সমস্ত কাজকর্ম হঠাৎ হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক কারণেই এগুলো ঘটে থাকে। তারা প্রকৃতি ও হঠাৎ হওয়ার যিনি মালিক তার কথা ভুলে গেছে। কারণ আল্লাহ তা'আলা বলেন। “আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা, আর তিনি এই সমস্ত জিনিসের অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক।” (সূরা যুমার ৩৯ : ৬২)।
এই দল ইসলামের পূর্বের যামানার কাফিরদের হতেও কট্টর। কারণ, তারা উভয়েই তাদের স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করত। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বলেন :
لقول الله ولئن سألتهم من خلق
“যদি তাদেরকে প্রশ্ন করি কে তাদের সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ।” (সূরা যুখরুফ ৪৩ : ৮৭) শয়তান সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছে :
قال أنا خير منه خلقتني من نار وخلقته من طين
“সে জবাবে বলল, আমি তাঁর (আদম) চেয়ে ভালো। আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে মাটি দিয়ে।” (সূরা সদ ৩৮: ৭৬)
তাই এ জাতীয় কুফরির মধ্যে পড়বে যদি কোন মুসলিম বলে যে, একে প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে অথবা বলে এর অস্তিত্ব নিজ থেকেই হয়েছে, যেমনভাবে নাস্তিক বা অন্যরা বলে থাকে।
২) যদি কেউ নিজেকে ফিরআউনের মত দাবী করে।
যেমন সে বলেছিল :
أنا ربة الأغلى
“আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রভূ।” (সূরা নাযিয়াত ৭৯ : ২৪)
৩) এই দাবী করা যে, দুনিয়াতে অলীদের মধ্যে কিছু কুতুব আছেন যারা দুনিয়ার কার্যসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে, যদিও তারা আল্লাহর ইজ্জতের অস্তিত্ব স্বীকার করে।
তারা এই আকীদার ক্ষেত্রে ইসলামের পূর্বের কাফিরদের হতেও অধম। কারণ, কাফিররা সর্বদাই স্বীকার করত যে, দুনিয়ার সমস্ত কর্ম পরিচালনাকারী একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলেন :
" من تركة من الماء و الأرض أمن يملك الشمع والأبصات ومن يخرج الحي من الميت ويخرج الميت من الحين ومن يدي الأمر فيقولون الله تقل أفلا تتقون
“হে নবী! তাদের প্রশ্ন করুন, কে তোমাদের রিযিক সরবরাহ করে দুনিয়া ও আসমান হতে? আর কে শ্রবণের ও দর্শনের ক্ষমতার মালিক? আর কে জীবিতকে মুত হতে বের করে? আর মৃতকে জীবিত হতে নির্গত করে? আর কে সমস্ত কার্য নিয়ন্ত্রণ করে? তারা সাথে সাথে উত্তর দেবে, আল্লাহ বলেন:
হে নবী! আপনি তাদের বলুন : তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না। (সূরা ইউনুস ১০ : ৩১)
৪) কিছু কিছু সূফী পীরেরা বলে : আল্লাহ কোন কোন সৃষ্টির মধ্যে আছেন।
যেমন, ইবনে আরাবী বলে এক সুফী, যাকে দামেস্কে কবর দেয়া হয়েছে, সে বলত : ‘রবও বান্দা, আর বান্দাও রব। হাল্লাজ বলত : ‘আমিই সে (আল্লাহ) আর তিনিই আমি। ওলামারা তাকে মুরতাদ বলে ঘোষণা দিয়ে তার কতলের রায় দিয়েছিলেন। ফলে তাকে হত্যা করা হয়। তারা যে এই ধরনের সাংঘাতিক কথাসমূহ বলে আল্লাহ তা হতে সম্পূর্ণ পাক ও পবিত্র।
যেমন নাস্তিকরা করে থাকে এই বলে যে, স্রষ্টা বলে কোন জিনিসের অস্তিত্ব নেই। আর তারা বলে : কোন উপাস্য নেই। বরং জীবন হচ্ছে পদার্থ হতে। তারা প্রমাণ দেখায় যে, সৃষ্টি হওয়া এই সমস্ত কাজকর্ম হঠাৎ হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক কারণেই এগুলো ঘটে থাকে। তারা প্রকৃতি ও হঠাৎ হওয়ার যিনি মালিক তার কথা ভুলে গেছে। কারণ আল্লাহ তা'আলা বলেন। “আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা, আর তিনি এই সমস্ত জিনিসের অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক।” (সূরা যুমার ৩৯ : ৬২)।
এই দল ইসলামের পূর্বের যামানার কাফিরদের হতেও কট্টর। কারণ, তারা উভয়েই তাদের স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করত। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বলেন :
لقول الله ولئن سألتهم من خلق
“যদি তাদেরকে প্রশ্ন করি কে তাদের সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ।” (সূরা যুখরুফ ৪৩ : ৮৭) শয়তান সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছে :
قال أنا خير منه خلقتني من نار وخلقته من طين
“সে জবাবে বলল, আমি তাঁর (আদম) চেয়ে ভালো। আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে মাটি দিয়ে।” (সূরা সদ ৩৮: ৭৬)
তাই এ জাতীয় কুফরির মধ্যে পড়বে যদি কোন মুসলিম বলে যে, একে প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে অথবা বলে এর অস্তিত্ব নিজ থেকেই হয়েছে, যেমনভাবে নাস্তিক বা অন্যরা বলে থাকে।
২) যদি কেউ নিজেকে ফিরআউনের মত দাবী করে।
যেমন সে বলেছিল :
أنا ربة الأغلى
“আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রভূ।” (সূরা নাযিয়াত ৭৯ : ২৪)
৩) এই দাবী করা যে, দুনিয়াতে অলীদের মধ্যে কিছু কুতুব আছেন যারা দুনিয়ার কার্যসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে, যদিও তারা আল্লাহর ইজ্জতের অস্তিত্ব স্বীকার করে।
তারা এই আকীদার ক্ষেত্রে ইসলামের পূর্বের কাফিরদের হতেও অধম। কারণ, কাফিররা সর্বদাই স্বীকার করত যে, দুনিয়ার সমস্ত কর্ম পরিচালনাকারী একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলেন :
" من تركة من الماء و الأرض أمن يملك الشمع والأبصات ومن يخرج الحي من الميت ويخرج الميت من الحين ومن يدي الأمر فيقولون الله تقل أفلا تتقون
“হে নবী! তাদের প্রশ্ন করুন, কে তোমাদের রিযিক সরবরাহ করে দুনিয়া ও আসমান হতে? আর কে শ্রবণের ও দর্শনের ক্ষমতার মালিক? আর কে জীবিতকে মুত হতে বের করে? আর মৃতকে জীবিত হতে নির্গত করে? আর কে সমস্ত কার্য নিয়ন্ত্রণ করে? তারা সাথে সাথে উত্তর দেবে, আল্লাহ বলেন:
হে নবী! আপনি তাদের বলুন : তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না। (সূরা ইউনুস ১০ : ৩১)
৪) কিছু কিছু সূফী পীরেরা বলে : আল্লাহ কোন কোন সৃষ্টির মধ্যে আছেন।
যেমন, ইবনে আরাবী বলে এক সুফী, যাকে দামেস্কে কবর দেয়া হয়েছে, সে বলত : ‘রবও বান্দা, আর বান্দাও রব। হাল্লাজ বলত : ‘আমিই সে (আল্লাহ) আর তিনিই আমি। ওলামারা তাকে মুরতাদ বলে ঘোষণা দিয়ে তার কতলের রায় দিয়েছিলেন। ফলে তাকে হত্যা করা হয়। তারা যে এই ধরনের সাংঘাতিক কথাসমূহ বলে আল্লাহ তা হতে সম্পূর্ণ পাক ও পবিত্র।
১) এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলো : তারা, যারা সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, গাছগাছালি, শয়তান ও অন্যান্য মাখলুকের ইবাদতকারী। আর তারা, যে আল্লাহ এই সমস্ত জিনিসের স্রষ্টা, তাঁর ইবাদত হতে বিরত থাকে। আর এই সমস্ত জিনিস না কারো ভাল করতে পারে আর না পারে ক্ষতি করতে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
ومن آيات الليل و البناء والشمس والقمر لا تجدوا للشمس ولا ة إياه تعبدون القمر وانشجو ا يلبي الذي خلقه إن
“আর তার নিদর্শনের মধ্যে আছে রাত্র, দিবস, সূর্য, চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা কর না, চন্দ্রকেও নয়, বরং ঐ আল্লাহর সিজদা কর যিনি এদের সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা সত্যিকারভাবে তারই ইবাদত করতে চাও।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১ : ৩৭)।
২) ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা এক আল্লাহর ইবাদত করে এবং তার ইবাদত করার সাথে সাথে অন্য মাখলুকের ও ইবাদত করে থাকে - যেমন আউলিয়াদের ইবাদত করে তাদের ছবি বা কবরকে সামনে রেখে তারা ইসলামের পূর্বের মুশরিকদের সমতুল্য। কারণ তারাও আল্লাহর ইবাদত করত এবং যখনই প্রচন্ড বিপদে পড়ত একমাত্র তাঁকেই ডাকত। আর সুখের সময় অথবা বিপদ কেটে গেলে অন্যদের ডাকত। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ আল কুরআনে বলেন :
فإذا سكبوا في الفلبي دعوا الله مخلصين له الين قلقا نجاهم إلى البير إذا هم يشر گون
“আর যখন তারা কোন নৌকায় আরোহণ করত তখন ইখলাসের সাথে তাঁকে ডাকত। আর যখন তিনি তাদের রক্ষা করে তীরে পৌছিয়ে দিতেন, তখনই তারা তাঁর সাথে শিরক করত।” (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৬৫)
আল্লাহ এদেরকে মুশরিক বলে বর্ণনা করেছেন যদিও তারা যখন নৌকাতে ডুবে যাওয়ার ভয় পেত তখন এক আল্লাহকে মনে-প্রাণে ডাকত। কিন্তু তারা এ নীতির উপর সর্বদা চলত না। বরং যখন তিনি তাদের উদ্ধার করতেন তখন তারা অন্যকেও তাঁর সাথে ডাকত।
৩) আল্লাহ ইসলামের পূর্বের আরবদের অবস্থা সম্পর্কে রাজী খুশী ছিলেন না, আর বিপদের সময়ে তাঁকে যে তারা ডাকত ঐ ইখলাসকেও গ্রহণ করতে রাজী ছিলেন না। ফলে তাদেরকে তিনি মুশরিক বলে সম্বোধন করেছিলেন। তাহলে বর্তমান যামানার কিছু সংখ্যক মুসলিম নামধারী লোক আজকাল সুখের ও দুঃখের উভয় সময় আউলিয়া বলে কথিত লোকদের কবরে আশ্রয় ও বিপদমুক্তি চায় তাদের সম্বন্ধে আমাদের কী ধারণা? আর তাদের কাছে এমন সব জিনিস চায় যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো দেবার ক্ষমতা নেই।
যেমন রোগ মুক্তি, চাকুরী, ব্যবসা, সন্তান চাওয়া, হিদায়াত চাওয়া ও এই জাতীয় অন্যান্য জিনিস। আর তারা এই সমস্ত অলী-আউলিয়াদের যিনি স্রষ্টা, তাকে তারা ভুলে থাকে। যিনি হচ্ছেন রোগে সুস্থতা দানকারী, রিযিকদাতা, হিদায়াত দানকারী। ঐ সমস্ত মৃত ব্যক্তিদের বা মাজারের হাতে কোন ক্ষমতাই নেই। তারা অন্যদের কান্নাকাটি শুনতেই পায় না। যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
“আর তোমরা তাকে ছেড়ে অন্যদের যে ডাকছ তারা তো সামান্যতম জিনিসেরও অধিকারী নয়। যদি তাদের কাছে দু’আ করো তারা তো তোমার দু'আ শুনতেই পায় না। আর যদি শুনত, কণই তোমাদের উত্তর দিত না। আর তোমরা যে শিরক করছ তাকে কিয়ামতের দিন তারা পুরাপুরি অস্বীকার করে বসবে। আর আমার মত এইরকম খবরদার ছাড়া অন্য কেহ তোমাকে এইরকম সাবধানও করবে না। (সুরা ফাতির ৩৫ : ১৩-১৪)
৪) এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে বুঝিয়েছেন যে, মৃত ব্যক্তিদের যে ডাকা হয় তা তারা শুনতে পায় না। আর এটাও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তাদের নিকট দুআ করা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। হয়ত কেউ কেউ বলতে পারে, আমরা তো এই ধারণা পোষণ করি না যে, এই সমস্ত আউলিয়া ও নেককারগণ কোন ভাল বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখে। বরং তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী বা শাফায়াতকারী হিসাবে গ্রহণ করছি যাদের অসিলায় আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। তাদের উত্তরে বলা যায়, ইসলামের পূর্বের মুশরিকরাও এই ধারণাই পোষণ করতো। তাদের সম্বন্ধে আল কুরআন বলেছে :
ويعبدون من دون اللي ما لا ي هم ولا ينفعه ويقولون هؤلاء شفعاؤنا عبيد اللو ل أتون الله بما لا يعلم في السموات ولا في الأرض شبحانه وتعالی عمائر گون
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের যে ইবাদত করত তাদের না কোন ক্ষতি করতে পারত, আর না ভাল করতে পারত। তারা বলত, এরা হচ্ছে আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট শাফায়াতকারী। হে নবী আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহকে এমন কোন কথা বলতে চাও যা আসমান ও জমিনের কেউ জানে না? সমস্ত পবিত্রতা তো আল্লাহর। আর এরা যে শিরক করেছে তিনি তার অনেক উর্ধ্বে।” (সূরা ইউনুস ১০ : ১৮)
এই আয়াত হতে এটা স্পষ্টই প্রতিয়মান হচ্ছে যে, যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের ইবাদত করে ও দুআ করে তারা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। যদিও তাদের অন্তরে এটা থাকে যে, তারা ভাল বা মন্দ কিছুই করতে পারে না, বরং তারা শুধুমাত্র শাফায়াত করার অধিকারী। আল্লাহ মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন :
والبنين اخدها من دون أولياء ما نعبدهة إليقونا إلى اللي لقى إث الك يگه يبية في ما هم فيه يتلقون إن الله لا يهيي من هو اب
“আর যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে আমরা তো শুধু এ উদ্দেশ্যে তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে দেবে। তারা যেসব বিষয়ে মতভেদ করছে সেসব বিষয়ের ফায়সালা আল্লাহ অবশ্যই করে দেবেন। আল্লাহ এমন লোককে হিদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও সত্য অস্বীকারকারী।” (সূরা যুমার ৩৯: ৩)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে এটাই বলা হয়েছে যে, যারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য গাইরুল্লাহর নিকট দু’আ করবে তারা কাফির। কারণ, রসূল (ﷺ) বলেনঃ “নিশ্চয়ই দু'আ হচেছ ইবাদত।” (তিরমিযী)
ঈমান ভঙ্গকারী আমলের মধ্যে আছে, যদি এই ধারণা পোষণ করা হয় যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দ্বারা বিচার করা বর্তমান যামানায় সম্ভব নয়। অথবা অন্যান্য যে মানুষের বানানো নিয়ম কানুন আছে তাকে যদি সহীহ মনে করা হয় তাহলেও সে কাফির। কারণ এই হুকুম দেয়াটা হচ্ছে ইবাদত। আল্লাহ বলেন :
إن الكه إلا يلبي أمر ألا تعبدوا إلا إياه ليك الين اليه ولكن أكثر الاس لا يعلمون
“শাসনক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য নয়। তিনি হুকুম দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া তোমরা আর কারো দাসত্ব করবে না। এটাই সঠিক, মযবুত দীন। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই তা জানে না।” (সূরা ইউসূফ ১২ : ৪০)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন :
گه بما أنزل الله فأولئك هم التعاون ومن له
“আর যারা আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত আয়াত দ্বারা বিচার করবে না তারাই হচ্ছে কাফির।” (সূরা মায়িদা ৫: ৪৪)
আর যদি কেউ আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত আইন ছাড়া অন্য আইন দ্বারা বিচার করে এই ধারণা করে যে, আল্লাহ প্রদত্ত আইনই সঠিক, কিন্তু মানুষের আইনে বিচার করে নিজের নফসানিয়াত অনুযায়ী অথবা কারো অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য, তবে সে যালিম ও ফাসিক। ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাওল অনুযায়ী সে কাফির নয়। তিনি বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ কোন হুকুমকে অস্বীকার করে সে কাফির। আর যে উহাকে স্বীকার করে অথচ সেই অনুযায়ী বিচার করে না সে যালিম ও ফাসিক। এটাকে ইবনে জারীর তবারী (রহ.) গ্রহণ করেছেন।
আর আতা (রহ.) বলেন : কুফর এর ছোট কুফরিও আছে। কিন্তু যদি কেহ আল্লাহর শরীয়তকে বাতিল করে ঐ স্থানে মানুষের বানানো কোন আইন কানুনের প্রচলন করে এই বিশ্বাসে যে, এটা এই যামানার জন্য উৎকৃষ্ট, তাবে সে কাফির হয়ে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এতে কোন দ্বিমত নেই।
বিশেষ নোট : উপরের এই আয়াতকে ভুল ব্যাখ্যা করে কোন দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কে কাফির আর কে কাফির নয় তা জনগণ সিদ্ধান্ত দিবেন না। এই সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। আর কোর্টের বিচারক নিয়োগের দায়িত্বও সরকারের, কোন দেশের বিচার কার্য বিচারকের ব্যক্তিগতও কোন সিদ্ধান্তে হয় না। বিচারক বিচার করেন সে দেশের কন্সিটিটিউশন অনুযায়ী। এছাড়া কাউকে ব্যক্তিগতভাবেও কাফির বলা যাবে না।
৬) ঈমান নষ্টকারী আমলের মধ্যে আছে : আল্লাহ প্রদত্ত বিচারে খুশী না থাকা অথবা এতটুকুও ধারণা করা যে, ঐ বিচার বড়ই সংকীর্ণ ও কষ্টদায়ক। কারণ আল্লাহ বলেনঃ
لا يجدوا في قلا وبك لا يمون كي يحموك فيما شجر بينهم أنفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما
“না, কখনো নয়, তোমার রবের কসম! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মধ্যে যে বিরোধ দেখা দেয় তাতে তোমাকে বিচারক না করে। তারপর তুমি যে বিচার করবে তাতে তাদের অন্তরে কোন কষ্ট অনুভব করবে না বরং তাকে পূর্ণভাবে গ্রহণ করে নেবে।” (সূরা নিসা ৪ : ৬৫)
অথবা আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ বিচারকে অপছন্দ করা। কারণ আল্লাহ বলেন :
والذين كفروا فتالفة أضل أعمالقة ذلك بانه گرمموا ما أنزل الله فأحبط أعمالقة
“আর যারা কুফুরি করে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তাদের আমলসমূহ গোমরাহীতে পরিণত হবে। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করেছে। ফলে তাদের আমলসমূহকে তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭: ৮-৯)
ঈমান নষ্টকারী আমলের মধ্যে আল্লাহর সিফাতসমূহে শিরক করা।
ومن آيات الليل و البناء والشمس والقمر لا تجدوا للشمس ولا ة إياه تعبدون القمر وانشجو ا يلبي الذي خلقه إن
“আর তার নিদর্শনের মধ্যে আছে রাত্র, দিবস, সূর্য, চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা কর না, চন্দ্রকেও নয়, বরং ঐ আল্লাহর সিজদা কর যিনি এদের সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা সত্যিকারভাবে তারই ইবাদত করতে চাও।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১ : ৩৭)।
২) ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা এক আল্লাহর ইবাদত করে এবং তার ইবাদত করার সাথে সাথে অন্য মাখলুকের ও ইবাদত করে থাকে - যেমন আউলিয়াদের ইবাদত করে তাদের ছবি বা কবরকে সামনে রেখে তারা ইসলামের পূর্বের মুশরিকদের সমতুল্য। কারণ তারাও আল্লাহর ইবাদত করত এবং যখনই প্রচন্ড বিপদে পড়ত একমাত্র তাঁকেই ডাকত। আর সুখের সময় অথবা বিপদ কেটে গেলে অন্যদের ডাকত। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ আল কুরআনে বলেন :
فإذا سكبوا في الفلبي دعوا الله مخلصين له الين قلقا نجاهم إلى البير إذا هم يشر گون
“আর যখন তারা কোন নৌকায় আরোহণ করত তখন ইখলাসের সাথে তাঁকে ডাকত। আর যখন তিনি তাদের রক্ষা করে তীরে পৌছিয়ে দিতেন, তখনই তারা তাঁর সাথে শিরক করত।” (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৬৫)
আল্লাহ এদেরকে মুশরিক বলে বর্ণনা করেছেন যদিও তারা যখন নৌকাতে ডুবে যাওয়ার ভয় পেত তখন এক আল্লাহকে মনে-প্রাণে ডাকত। কিন্তু তারা এ নীতির উপর সর্বদা চলত না। বরং যখন তিনি তাদের উদ্ধার করতেন তখন তারা অন্যকেও তাঁর সাথে ডাকত।
৩) আল্লাহ ইসলামের পূর্বের আরবদের অবস্থা সম্পর্কে রাজী খুশী ছিলেন না, আর বিপদের সময়ে তাঁকে যে তারা ডাকত ঐ ইখলাসকেও গ্রহণ করতে রাজী ছিলেন না। ফলে তাদেরকে তিনি মুশরিক বলে সম্বোধন করেছিলেন। তাহলে বর্তমান যামানার কিছু সংখ্যক মুসলিম নামধারী লোক আজকাল সুখের ও দুঃখের উভয় সময় আউলিয়া বলে কথিত লোকদের কবরে আশ্রয় ও বিপদমুক্তি চায় তাদের সম্বন্ধে আমাদের কী ধারণা? আর তাদের কাছে এমন সব জিনিস চায় যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো দেবার ক্ষমতা নেই।
যেমন রোগ মুক্তি, চাকুরী, ব্যবসা, সন্তান চাওয়া, হিদায়াত চাওয়া ও এই জাতীয় অন্যান্য জিনিস। আর তারা এই সমস্ত অলী-আউলিয়াদের যিনি স্রষ্টা, তাকে তারা ভুলে থাকে। যিনি হচ্ছেন রোগে সুস্থতা দানকারী, রিযিকদাতা, হিদায়াত দানকারী। ঐ সমস্ত মৃত ব্যক্তিদের বা মাজারের হাতে কোন ক্ষমতাই নেই। তারা অন্যদের কান্নাকাটি শুনতেই পায় না। যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
“আর তোমরা তাকে ছেড়ে অন্যদের যে ডাকছ তারা তো সামান্যতম জিনিসেরও অধিকারী নয়। যদি তাদের কাছে দু’আ করো তারা তো তোমার দু'আ শুনতেই পায় না। আর যদি শুনত, কণই তোমাদের উত্তর দিত না। আর তোমরা যে শিরক করছ তাকে কিয়ামতের দিন তারা পুরাপুরি অস্বীকার করে বসবে। আর আমার মত এইরকম খবরদার ছাড়া অন্য কেহ তোমাকে এইরকম সাবধানও করবে না। (সুরা ফাতির ৩৫ : ১৩-১৪)
৪) এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে বুঝিয়েছেন যে, মৃত ব্যক্তিদের যে ডাকা হয় তা তারা শুনতে পায় না। আর এটাও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তাদের নিকট দুআ করা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। হয়ত কেউ কেউ বলতে পারে, আমরা তো এই ধারণা পোষণ করি না যে, এই সমস্ত আউলিয়া ও নেককারগণ কোন ভাল বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখে। বরং তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী বা শাফায়াতকারী হিসাবে গ্রহণ করছি যাদের অসিলায় আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। তাদের উত্তরে বলা যায়, ইসলামের পূর্বের মুশরিকরাও এই ধারণাই পোষণ করতো। তাদের সম্বন্ধে আল কুরআন বলেছে :
ويعبدون من دون اللي ما لا ي هم ولا ينفعه ويقولون هؤلاء شفعاؤنا عبيد اللو ل أتون الله بما لا يعلم في السموات ولا في الأرض شبحانه وتعالی عمائر گون
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের যে ইবাদত করত তাদের না কোন ক্ষতি করতে পারত, আর না ভাল করতে পারত। তারা বলত, এরা হচ্ছে আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট শাফায়াতকারী। হে নবী আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহকে এমন কোন কথা বলতে চাও যা আসমান ও জমিনের কেউ জানে না? সমস্ত পবিত্রতা তো আল্লাহর। আর এরা যে শিরক করেছে তিনি তার অনেক উর্ধ্বে।” (সূরা ইউনুস ১০ : ১৮)
এই আয়াত হতে এটা স্পষ্টই প্রতিয়মান হচ্ছে যে, যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের ইবাদত করে ও দুআ করে তারা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। যদিও তাদের অন্তরে এটা থাকে যে, তারা ভাল বা মন্দ কিছুই করতে পারে না, বরং তারা শুধুমাত্র শাফায়াত করার অধিকারী। আল্লাহ মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন :
والبنين اخدها من دون أولياء ما نعبدهة إليقونا إلى اللي لقى إث الك يگه يبية في ما هم فيه يتلقون إن الله لا يهيي من هو اب
“আর যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে আমরা তো শুধু এ উদ্দেশ্যে তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে দেবে। তারা যেসব বিষয়ে মতভেদ করছে সেসব বিষয়ের ফায়সালা আল্লাহ অবশ্যই করে দেবেন। আল্লাহ এমন লোককে হিদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও সত্য অস্বীকারকারী।” (সূরা যুমার ৩৯: ৩)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে এটাই বলা হয়েছে যে, যারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য গাইরুল্লাহর নিকট দু’আ করবে তারা কাফির। কারণ, রসূল (ﷺ) বলেনঃ “নিশ্চয়ই দু'আ হচেছ ইবাদত।” (তিরমিযী)
ঈমান ভঙ্গকারী আমলের মধ্যে আছে, যদি এই ধারণা পোষণ করা হয় যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দ্বারা বিচার করা বর্তমান যামানায় সম্ভব নয়। অথবা অন্যান্য যে মানুষের বানানো নিয়ম কানুন আছে তাকে যদি সহীহ মনে করা হয় তাহলেও সে কাফির। কারণ এই হুকুম দেয়াটা হচ্ছে ইবাদত। আল্লাহ বলেন :
إن الكه إلا يلبي أمر ألا تعبدوا إلا إياه ليك الين اليه ولكن أكثر الاس لا يعلمون
“শাসনক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য নয়। তিনি হুকুম দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া তোমরা আর কারো দাসত্ব করবে না। এটাই সঠিক, মযবুত দীন। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই তা জানে না।” (সূরা ইউসূফ ১২ : ৪০)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন :
گه بما أنزل الله فأولئك هم التعاون ومن له
“আর যারা আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত আয়াত দ্বারা বিচার করবে না তারাই হচ্ছে কাফির।” (সূরা মায়িদা ৫: ৪৪)
আর যদি কেউ আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত আইন ছাড়া অন্য আইন দ্বারা বিচার করে এই ধারণা করে যে, আল্লাহ প্রদত্ত আইনই সঠিক, কিন্তু মানুষের আইনে বিচার করে নিজের নফসানিয়াত অনুযায়ী অথবা কারো অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য, তবে সে যালিম ও ফাসিক। ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাওল অনুযায়ী সে কাফির নয়। তিনি বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ কোন হুকুমকে অস্বীকার করে সে কাফির। আর যে উহাকে স্বীকার করে অথচ সেই অনুযায়ী বিচার করে না সে যালিম ও ফাসিক। এটাকে ইবনে জারীর তবারী (রহ.) গ্রহণ করেছেন।
আর আতা (রহ.) বলেন : কুফর এর ছোট কুফরিও আছে। কিন্তু যদি কেহ আল্লাহর শরীয়তকে বাতিল করে ঐ স্থানে মানুষের বানানো কোন আইন কানুনের প্রচলন করে এই বিশ্বাসে যে, এটা এই যামানার জন্য উৎকৃষ্ট, তাবে সে কাফির হয়ে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এতে কোন দ্বিমত নেই।
বিশেষ নোট : উপরের এই আয়াতকে ভুল ব্যাখ্যা করে কোন দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কে কাফির আর কে কাফির নয় তা জনগণ সিদ্ধান্ত দিবেন না। এই সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। আর কোর্টের বিচারক নিয়োগের দায়িত্বও সরকারের, কোন দেশের বিচার কার্য বিচারকের ব্যক্তিগতও কোন সিদ্ধান্তে হয় না। বিচারক বিচার করেন সে দেশের কন্সিটিটিউশন অনুযায়ী। এছাড়া কাউকে ব্যক্তিগতভাবেও কাফির বলা যাবে না।
৬) ঈমান নষ্টকারী আমলের মধ্যে আছে : আল্লাহ প্রদত্ত বিচারে খুশী না থাকা অথবা এতটুকুও ধারণা করা যে, ঐ বিচার বড়ই সংকীর্ণ ও কষ্টদায়ক। কারণ আল্লাহ বলেনঃ
لا يجدوا في قلا وبك لا يمون كي يحموك فيما شجر بينهم أنفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما
“না, কখনো নয়, তোমার রবের কসম! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মধ্যে যে বিরোধ দেখা দেয় তাতে তোমাকে বিচারক না করে। তারপর তুমি যে বিচার করবে তাতে তাদের অন্তরে কোন কষ্ট অনুভব করবে না বরং তাকে পূর্ণভাবে গ্রহণ করে নেবে।” (সূরা নিসা ৪ : ৬৫)
অথবা আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ বিচারকে অপছন্দ করা। কারণ আল্লাহ বলেন :
والذين كفروا فتالفة أضل أعمالقة ذلك بانه گرمموا ما أنزل الله فأحبط أعمالقة
“আর যারা কুফুরি করে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তাদের আমলসমূহ গোমরাহীতে পরিণত হবে। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করেছে। ফলে তাদের আমলসমূহকে তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭: ৮-৯)
ঈমান নষ্টকারী আমলের মধ্যে আল্লাহর সিফাতসমূহে শিরক করা।
১) ঈমান নষ্টকারী আমলের মধ্যে আছে, কোন মুমিন কর্তৃক আল্লাহর সুন্দর নাম বা সিফাতসমূহকে অস্বীকার করা যা কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- আল্লাহ যে সর্বজ্ঞাত তা অস্বীকার করা, অথবা তার। কুদরতকে বা তার জীবনকে বা শোনা বা দেখাকে বা তার রহমতকে অথবা তিনি যে আরশের উপর আছেন তাকে অথবা তিনি যে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন তাকে অথবা তার হাতকে অথবা চক্ষুদ্বয়কে অথবা অন্যান্য যে সিফাতসমূহ আছে তা কোনটি অস্বীকার করা। আবার তা স্বীকার করতে যেয়ে তার কোন বিষয়কে কোন মাখলুকের সাথে তুলনা করা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেনঃ “তার মত কিছু নেই, কিন্তু তিনি শুনেন ও দেখেন।” (সূরা শূরা ৪২: ১১)
আল্লাহ স্পষ্টভাবে এই আয়াতে বলেছেন যে, তার সাথে কোন সৃষ্টির কোন মিল নেই। কিন্তু তার যে শোনার ও দেখার ক্ষমতা আছে তা তিনি বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য সিফাতও একই রকম। আল্লাহ তার নিজের জন্য বিশেষ করে এমন কিছু সিফাত রেখেছেন যা তার মাখলুকের কারো মধ্যেই নেই। যেমন গায়েবের এলেম। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
وعده مفاتح الغيب لا يعلمها إلاهو
“আর তার নিকট আছে সমস্ত গায়েবের চাবি কাঠি যা অন্য কেউ জানে না।” (সূরা আন'আম ৬ : ৫৯)
আর আল্লাহ তার রসূলদের মাঝে মাঝে কিছু গায়েবের কথা জানিয়েছেন ওহীর মাধ্যমে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
عالية الغيب فلا يظهر على عبير أحدا إمي اتى من سشول
“তিনি গায়েবের ইলম রাখেন। আর গায়েবী কথা তিনি কারো কাছে প্রকাশ করেন না। (অবশ্য) ঐ রসূল ছাড়া, যাকে (গায়েবী ইলম দেয়ার জন্য) তিনি পছন্দ করে নিয়েছেন।” (সূরা জিন ৭২ : ২৬-২৭)
কেউ কেউ রসূল (ﷺ) সম্পর্কে বলেন : “নিশ্চয়ই আমার দয়াতেই দুনিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং চলমান। আর আমার ইলম হতেই ওহে মাহফুজ ও কলমের ইলম। এই ধরনের কথা সম্পূর্ণরূপে ভুল এবং শিরক, সত্যিকারভাবে দুনিয়া ও আখিরাতের সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহ কর্তৃক ও তারই দয়ায়। তা রসূল (ﷺ) - এর দয়ায় বা তার সৃষ্টির কারণে অবশ্যই হয়নি। নিশ্চয়ই রসূল (ﷺ) লওহে মাহফুজে কী আছে তা জানেন না, আর কলম দ্বারা কী লেখা হয়েছে তাও তিনি জানেন না। কারণ এগুলো হচ্ছে এমন গায়েব যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
এই সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
ل لا يعله من في السموات و الأرض الغيب إلا الله
“হে নবী! আপনি বলুন, আসমান ও জমিনের গায়েব কেউ জানে না আল্লাহ ব্যতীত।” (সূরা নামল ২৭ : ৬৫)।
আর অলী-আউলিয়াদের তো প্রশ্নই উঠে না যে, তারা গায়েব জানবে। আর ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ রসূলদের যে গায়েবের খবর দিতেন তাও তারা জানতে পারে না। কারণ, ওই কখনও আউলিয়াদের উপর অবতীর্ণ হয় না। ওহী শুধু নবী-রসূলদের উপর অবতীর্ণ হত। তাই, যে ব্যক্তিই দাবী করবে যে, সে এলমে গায়েব জানে আর যারা তাদের বিশ্বাস করবে, উভয় দলেরই ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
এ সম্পর্কে রসূল (ﷺ) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি কোন গায়েব জানার দাবীদার ব্যক্তি বা গণকের (যারা হাত দেখে) নিকট যাবে এবং তারা যা বলে তা বিশ্বাস করবে তবে সে যেন মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে অস্বীকার করে কুফুরি করল।” (আহমদ)। এই জাতীয় এলমে গায়েব জানার দাবীদার ও চরম মিথ্যাবাদী লোকেরা যা বলে তা হচ্ছে তাদের ধারণা, এবং শয়তানের ধোকাবাজী। যদি তারা সত্যিই সত্যবাদী হত তবে ইহুদীদের গোপন কথাগুলো আমাদের জানিয়ে দিত। আর জমিনের গুপ্তধনসমূহ বের করে দিত। আর এভাবেই তারা মানুষদের উপর বোঝা হয়ে পড়েছে আর ভন্ডামীর মাধ্যমে তাদের পয়সা গ্রহণ করছে।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ব্যাপারে কোন খারাপ ধারণা ঈমান নষ্ট করে।
আল্লাহ স্পষ্টভাবে এই আয়াতে বলেছেন যে, তার সাথে কোন সৃষ্টির কোন মিল নেই। কিন্তু তার যে শোনার ও দেখার ক্ষমতা আছে তা তিনি বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য সিফাতও একই রকম। আল্লাহ তার নিজের জন্য বিশেষ করে এমন কিছু সিফাত রেখেছেন যা তার মাখলুকের কারো মধ্যেই নেই। যেমন গায়েবের এলেম। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
وعده مفاتح الغيب لا يعلمها إلاهو
“আর তার নিকট আছে সমস্ত গায়েবের চাবি কাঠি যা অন্য কেউ জানে না।” (সূরা আন'আম ৬ : ৫৯)
আর আল্লাহ তার রসূলদের মাঝে মাঝে কিছু গায়েবের কথা জানিয়েছেন ওহীর মাধ্যমে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
عالية الغيب فلا يظهر على عبير أحدا إمي اتى من سشول
“তিনি গায়েবের ইলম রাখেন। আর গায়েবী কথা তিনি কারো কাছে প্রকাশ করেন না। (অবশ্য) ঐ রসূল ছাড়া, যাকে (গায়েবী ইলম দেয়ার জন্য) তিনি পছন্দ করে নিয়েছেন।” (সূরা জিন ৭২ : ২৬-২৭)
কেউ কেউ রসূল (ﷺ) সম্পর্কে বলেন : “নিশ্চয়ই আমার দয়াতেই দুনিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং চলমান। আর আমার ইলম হতেই ওহে মাহফুজ ও কলমের ইলম। এই ধরনের কথা সম্পূর্ণরূপে ভুল এবং শিরক, সত্যিকারভাবে দুনিয়া ও আখিরাতের সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহ কর্তৃক ও তারই দয়ায়। তা রসূল (ﷺ) - এর দয়ায় বা তার সৃষ্টির কারণে অবশ্যই হয়নি। নিশ্চয়ই রসূল (ﷺ) লওহে মাহফুজে কী আছে তা জানেন না, আর কলম দ্বারা কী লেখা হয়েছে তাও তিনি জানেন না। কারণ এগুলো হচ্ছে এমন গায়েব যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
এই সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
ل لا يعله من في السموات و الأرض الغيب إلا الله
“হে নবী! আপনি বলুন, আসমান ও জমিনের গায়েব কেউ জানে না আল্লাহ ব্যতীত।” (সূরা নামল ২৭ : ৬৫)।
আর অলী-আউলিয়াদের তো প্রশ্নই উঠে না যে, তারা গায়েব জানবে। আর ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ রসূলদের যে গায়েবের খবর দিতেন তাও তারা জানতে পারে না। কারণ, ওই কখনও আউলিয়াদের উপর অবতীর্ণ হয় না। ওহী শুধু নবী-রসূলদের উপর অবতীর্ণ হত। তাই, যে ব্যক্তিই দাবী করবে যে, সে এলমে গায়েব জানে আর যারা তাদের বিশ্বাস করবে, উভয় দলেরই ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
এ সম্পর্কে রসূল (ﷺ) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি কোন গায়েব জানার দাবীদার ব্যক্তি বা গণকের (যারা হাত দেখে) নিকট যাবে এবং তারা যা বলে তা বিশ্বাস করবে তবে সে যেন মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে অস্বীকার করে কুফুরি করল।” (আহমদ)। এই জাতীয় এলমে গায়েব জানার দাবীদার ও চরম মিথ্যাবাদী লোকেরা যা বলে তা হচ্ছে তাদের ধারণা, এবং শয়তানের ধোকাবাজী। যদি তারা সত্যিই সত্যবাদী হত তবে ইহুদীদের গোপন কথাগুলো আমাদের জানিয়ে দিত। আর জমিনের গুপ্তধনসমূহ বের করে দিত। আর এভাবেই তারা মানুষদের উপর বোঝা হয়ে পড়েছে আর ভন্ডামীর মাধ্যমে তাদের পয়সা গ্রহণ করছে।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ব্যাপারে কোন খারাপ ধারণা ঈমান নষ্ট করে।
১) আমাদের রসূল (ﷺ) -এর রিসালাতকে অস্বীকার করা। কারণ, মুহাম্মাদ (ﷺ) যে আল্লাহর রসূল এই সাক্ষ্য দেয়া ইসলামের রোকনের এক রোকন।
২) রসূল (ﷺ) সম্পর্কে কোন খারাপ ধারণা পোষণ করা বা সত্যবাদিতা সম্পর্কে বা আমানত বা পবিত্রতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা। রসূল (ﷺ) -কে গালি দেয়া, অথবা কোন ঠাট্টা বিদ্রুপ কর, অথবা তার অবমূল্যায়ন করা অথবা তার কার্যসমূহ সম্পর্কে কোন আজেবাজে কথা বলা।
৩) রসূল (ﷺ) -এর কোন সহীহ হাদীস সম্পর্কে খারাপ কথা বলা বা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা অথবা তিনি যদি কোন সত্য খবর দিয়ে থাকেন তাকে অস্বীকার করা। যেমন : দাজ্জালের প্রকাশ পাওয়া অথবা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে আসমান হতে অবতীর্ণ হয়ে তার শরীয়ত মত বিচার করবে একথা অস্বীকার করা। এ জাতীয় আরো অনেক কথা যা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত তা অস্বীকার করা।
৪) অথবা কোন একজন রসূলকে অস্বীকার করা যাদের আল্লাহ প্রেরণ করেছিলেন আমাদের রসূল (ﷺ) -এর পূর্বে অথবা তাদের সময়ে তাদের সমপ্রদায়ের সাথে যে ঘটনা ঘটেছিল যা আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেছেন বা রসূল (ﷺ) সহীহ হাদীসে বর্ণনা করেছেন তা অস্বীকার করা। ৫) যারা রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর পরে মিথ্যা নবুয়তের দাবী করে। যেমন - মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী করেছে।
৬) যারা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এমন সব গুণে বিভূষিত করে যা আল্লাহ করেন নি। যেমন : রসূলুল্লাহ আল্লাহর নূরে সৃষ্টি।
৭) যারা রসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে এমন জিনিস পেতে ইচ্ছা করে যা দেবার মালিক আল্লাহ ছাড়া অন্য কেহ নয়। যেমন : সাহায্য চাওয়া, বিজয়ের সাহায্য চাওয়া, রোগমুক্তি অথবা এই জাতীয় কার্যসমূহ, যা আজ মুসলিমদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আল কুরআনের দৃষ্টিতে এই জাতীয় কথাগুলো শিরক দ্বারা পূর্ণ। কারণ আল্লাহ বলেন : “সাহায্য কখনো আসতে পারে না আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ হতে।” (সূরা আনফাল ৮ : ১০)
আর রসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও এর বিরোধিতা করে বলেন,
“যদি কিছু চাও আল্লাহর নিকট চাও। আর যদি সাহায্য চাও তার নিকটেই চাও।” (তিরমিযী)
৮) তবে আমরা রসূলগণের কোন মোজেযাকে অস্বীকার করি না। তবে যেটা আমরা অস্বীকার করি তা হল তাদেরকে আল্লাহর শরীক স্থির করা। আল্লাহর নিকট যেভাবে দু’আ করি তাদের নিকট ও একইভাবে দু'আ করা কিংবা তাদের জন্য ওরস করা অথবা তাদের জন্য নজর নেয়াজ মানত পেশ করা। এমনকি তাদের কারো কারো মাজারে টাকা পয়সা দেয়া।
৯) যেমন অনেকে বলেন যে, আল্লাহ রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কারণে দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন। তারা দলীল হিসাবে এই বানোয়াট মিথ্যা হাদীসে কুদসী পেশ করে। তা হল : “যদি না তুমি হতে তবে দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না।' ইবনে জাওযী (রহ.) বলেন এটা মাউজু বা বানোয়াট হাদীস। উপরোক্ত আকীদা-বিশ্বাস আল্লাহর নিম্মোক্ত কথার খেলাফ। আল্লাহ বলেন :
“নিশ্চয় আমি জ্বীন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।” (সূরা যারিয়াত ৫১ : ৫৬)। এমনকি নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে পর্যন্ত তিনি তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কারণ তার প্রতিপালক তাকে বলেন :
واغب نيك كى يأتيك اليقين
“আপনি আপনার রবের ইবাদত করতে থাকুন যতক্ষণ না মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়।” (সূরা হিজর ১৫: ৯৯)।
আর আল্লাহ সমস্ত রসূলদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদতের দিকে। দাওয়াত দেয়ার জন্য। আল্লাহ বলেন : “আর নিশ্চয় আমি প্রত্যেক উম্মতদের নিকট এই বলে রসূল প্রেরণ করেছিলাম যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতদের হতে দূরে থাক। (সূরা নাহল ১৬ : ৩৬)
“তাগুত হচ্ছে তারা, যাদের ইবাদত করা হয় আল্লাহকে বাদ দিয়ে, আর তারা তাতে রাজী খুশী থাকে।
এই কথা বলা যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম রসূল (ﷺ) -এর নূরকে সৃষ্টি করেন। আর তার নূর হতেই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা হয়। এই আকীদাও বাতিল আকীদা। এর স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। সত্যিকার অর্থে মুহাম্মাদ (ﷺ) বাবা ও মা হতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার আব্বা ছিলেন আব্দুল্লাহ আর ছিলেন আমিনা বিনতে ওহাব। অন্যরা যেভাবে জন্মগ্রহণ করেন তিনিও সেভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার দাদার নাম আব্দুল মুত্তালিব।
কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলিল হতে এটা প্রমাণিত হয় যে, মানুষদের মধ্যে প্রথম সৃষ্টি হলেন আদম (আলাইহিস সালাম) আর পদার্থের মধ্যে কলম। এগুলো ঐ কথার বিরোধিতা করে যে, আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি হল মুহাম্মাদ (ﷺ)। কারণ, এই কথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিরোধী।
আরও বাতিল আকীদার মধ্যে হচ্ছে আল্লাহ সমস্ত জিনিস তার (নবীর) নূর হতে সৃষ্টি করেছেন, যা বহু সুফীই বলে থাকে। এই কথার প্রমাণে কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোন দলীল নেই।
২) রসূল (ﷺ) সম্পর্কে কোন খারাপ ধারণা পোষণ করা বা সত্যবাদিতা সম্পর্কে বা আমানত বা পবিত্রতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা। রসূল (ﷺ) -কে গালি দেয়া, অথবা কোন ঠাট্টা বিদ্রুপ কর, অথবা তার অবমূল্যায়ন করা অথবা তার কার্যসমূহ সম্পর্কে কোন আজেবাজে কথা বলা।
৩) রসূল (ﷺ) -এর কোন সহীহ হাদীস সম্পর্কে খারাপ কথা বলা বা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা অথবা তিনি যদি কোন সত্য খবর দিয়ে থাকেন তাকে অস্বীকার করা। যেমন : দাজ্জালের প্রকাশ পাওয়া অথবা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে আসমান হতে অবতীর্ণ হয়ে তার শরীয়ত মত বিচার করবে একথা অস্বীকার করা। এ জাতীয় আরো অনেক কথা যা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত তা অস্বীকার করা।
৪) অথবা কোন একজন রসূলকে অস্বীকার করা যাদের আল্লাহ প্রেরণ করেছিলেন আমাদের রসূল (ﷺ) -এর পূর্বে অথবা তাদের সময়ে তাদের সমপ্রদায়ের সাথে যে ঘটনা ঘটেছিল যা আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেছেন বা রসূল (ﷺ) সহীহ হাদীসে বর্ণনা করেছেন তা অস্বীকার করা। ৫) যারা রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর পরে মিথ্যা নবুয়তের দাবী করে। যেমন - মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী করেছে।
৬) যারা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এমন সব গুণে বিভূষিত করে যা আল্লাহ করেন নি। যেমন : রসূলুল্লাহ আল্লাহর নূরে সৃষ্টি।
৭) যারা রসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে এমন জিনিস পেতে ইচ্ছা করে যা দেবার মালিক আল্লাহ ছাড়া অন্য কেহ নয়। যেমন : সাহায্য চাওয়া, বিজয়ের সাহায্য চাওয়া, রোগমুক্তি অথবা এই জাতীয় কার্যসমূহ, যা আজ মুসলিমদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আল কুরআনের দৃষ্টিতে এই জাতীয় কথাগুলো শিরক দ্বারা পূর্ণ। কারণ আল্লাহ বলেন : “সাহায্য কখনো আসতে পারে না আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ হতে।” (সূরা আনফাল ৮ : ১০)
আর রসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও এর বিরোধিতা করে বলেন,
“যদি কিছু চাও আল্লাহর নিকট চাও। আর যদি সাহায্য চাও তার নিকটেই চাও।” (তিরমিযী)
৮) তবে আমরা রসূলগণের কোন মোজেযাকে অস্বীকার করি না। তবে যেটা আমরা অস্বীকার করি তা হল তাদেরকে আল্লাহর শরীক স্থির করা। আল্লাহর নিকট যেভাবে দু’আ করি তাদের নিকট ও একইভাবে দু'আ করা কিংবা তাদের জন্য ওরস করা অথবা তাদের জন্য নজর নেয়াজ মানত পেশ করা। এমনকি তাদের কারো কারো মাজারে টাকা পয়সা দেয়া।
৯) যেমন অনেকে বলেন যে, আল্লাহ রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কারণে দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন। তারা দলীল হিসাবে এই বানোয়াট মিথ্যা হাদীসে কুদসী পেশ করে। তা হল : “যদি না তুমি হতে তবে দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না।' ইবনে জাওযী (রহ.) বলেন এটা মাউজু বা বানোয়াট হাদীস। উপরোক্ত আকীদা-বিশ্বাস আল্লাহর নিম্মোক্ত কথার খেলাফ। আল্লাহ বলেন :
“নিশ্চয় আমি জ্বীন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।” (সূরা যারিয়াত ৫১ : ৫৬)। এমনকি নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে পর্যন্ত তিনি তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কারণ তার প্রতিপালক তাকে বলেন :
واغب نيك كى يأتيك اليقين
“আপনি আপনার রবের ইবাদত করতে থাকুন যতক্ষণ না মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়।” (সূরা হিজর ১৫: ৯৯)।
আর আল্লাহ সমস্ত রসূলদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদতের দিকে। দাওয়াত দেয়ার জন্য। আল্লাহ বলেন : “আর নিশ্চয় আমি প্রত্যেক উম্মতদের নিকট এই বলে রসূল প্রেরণ করেছিলাম যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতদের হতে দূরে থাক। (সূরা নাহল ১৬ : ৩৬)
“তাগুত হচ্ছে তারা, যাদের ইবাদত করা হয় আল্লাহকে বাদ দিয়ে, আর তারা তাতে রাজী খুশী থাকে।
এই কথা বলা যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম রসূল (ﷺ) -এর নূরকে সৃষ্টি করেন। আর তার নূর হতেই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা হয়। এই আকীদাও বাতিল আকীদা। এর স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। সত্যিকার অর্থে মুহাম্মাদ (ﷺ) বাবা ও মা হতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার আব্বা ছিলেন আব্দুল্লাহ আর ছিলেন আমিনা বিনতে ওহাব। অন্যরা যেভাবে জন্মগ্রহণ করেন তিনিও সেভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার দাদার নাম আব্দুল মুত্তালিব।
কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলিল হতে এটা প্রমাণিত হয় যে, মানুষদের মধ্যে প্রথম সৃষ্টি হলেন আদম (আলাইহিস সালাম) আর পদার্থের মধ্যে কলম। এগুলো ঐ কথার বিরোধিতা করে যে, আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি হল মুহাম্মাদ (ﷺ)। কারণ, এই কথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিরোধী।
আরও বাতিল আকীদার মধ্যে হচ্ছে আল্লাহ সমস্ত জিনিস তার (নবীর) নূর হতে সৃষ্টি করেছেন, যা বহু সুফীই বলে থাকে। এই কথার প্রমাণে কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোন দলীল নেই।
১. তাওহীদ হচ্ছে শিরকের বিপরীত। উহা হচ্ছে দ্বীনের ভিত্তিসমূহের মধ্যে বিশেষ ভিত্তি যার উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। আর তা কালিমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর স্বাক্ষীর মধ্যে প্রকাশ পায়।
২. তাওহীদ হচ্ছে ঐ জিনিস যা উচ্চারণের কারণে একজন কাফির ইসলামে দাখিল হয়। আর যদি কোন মুসলিম উহা (তাওহীদ) অস্বীকার করে অথবা ঠাট্টা তামাশা করে তখন সে দ্বীন হতে বের হয়ে যায়।
৩. তাওহীদ হচ্ছে সমস্ত রসূলদের দাওয়াতের মূল কথা যার দিকে তাঁরা তাদের উম্মতদের দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন : “এবং নিশ্চয় আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট এই বার্তা নিয়ে রসূলদের প্রেরণ করেছি যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতদের হতে দূরে থাক।” (সূরা নাহল ১৬ : ৩৬)
৪. এই তাওহীদের কারণেই আল্লাহ সমস্ত জগতকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন : “নিশ্চয়ই আমি জ্বীন এবং ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত ৫১ : ৫৬)
এই আয়াতে ইবাদত অর্থ আল্লাহর একত্ববাদ ও অদ্বিতীয়তা প্রকাশ করাকে বুঝানো হয়েছে।
৫. তাওহীদ এমন এক ব্যাপক অর্থ সম্বলিত শব্দ যার মধ্যে সামিল আছে রবুবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত, হুকুম আহকাম, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ এবং পরিপূর্ণ সিফাত, আর সমস্ত ধরনের ইবাদত।
৬. তার গুণবিশিষ্ট নাম ও গুণাবলী সম্পর্কীয় তাওহীদের গুরুত্ব অনেক বেশী।
৭. তাওহীদের উপরই নির্ভর করছে মানুরে ইহজগত ও পরজগতের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য।
৮. তাওহীদের কারণেই আরবের লোকেরা শিরক, যুলুম, মূর্খতা ও দলাদলি হতে বের হয়ে ন্যায়পরায়ণতা, সম্মান, জ্ঞান-গরিমা, ঐক্য ও সাম্য অর্জন করেছিল।
৯. তাওহীদের মাধ্যমেই মুসলিমগণ রাজ্যসমূহ জয় করেছিল। যারা ছিল অত্যাচারী, শয়তানের দাস ও তাগুতদের ইবাদতকারী তার হয়েছিল এক আল্লাহর ইবাদতকারী। সাথে সাথে তারা বিকৃত দ্বীন ধর্মের যুলুম হতে বের হয়ে প্রবেশ করেছিল ইসলামের ন্যায়পরায়ণতার স্বর্ণযুগে।
১০. তাওহীদের মাধ্যমেই মুসলিমগণ জিহাদ, আত্মোৎসর্গ এবং জানমাল কুরবানি করায় উদ্বুদ্ধ হতে পেরেছিল।
১১. তাওহীদ আরব ও অনারবকে একসূত্রে গ্রথিত করে একই কাতারে সামিল করে।
১২. তাওহীদ মানুষের শেষ অবস্থান কোথায় হবে তা নির্ধারণ করে। যদি সে একত্ববাদী হয় তবে তার ঠিকানা হবে জান্নাত। আর যদি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে সে হবে জাহান্নামী।
১৩. তাওহীদের জিহাদ ঘটে। ঐ রাস্তাতেই মুসলিমরা শাহাদাৎ বরণ করেন। উহার কারণেই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হয়। তাদের কোন ইজ্জত লাভ হবে না অথবা সাহায্য আসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাওহীদকে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামের উষালগ্নে এই তাওহীদই মুসলিমদের একত্রিত করেছিল এবং বিশাল ইসলামীরাই প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল। বর্তমানেও মুসলিমগণ তাদের পূর্ব গৌরব-সম্মান এবং রাষ্ট্রকে ফিরে পেতে পারে যদি তারা তাওহীদের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। আল্লাহ বলেনঃ
ر كه ويثبت أقدامگه يا أيها البنين آمنوا إن تنصروا الله ي
“হে ঈমানদারগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে (আল্লাহর দ্বীনকে) সাহায্য কর তবে তিনি তোমাদের অবশ্যই সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা-কে দৃঢ় রাখবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৭)
২. তাওহীদ হচ্ছে ঐ জিনিস যা উচ্চারণের কারণে একজন কাফির ইসলামে দাখিল হয়। আর যদি কোন মুসলিম উহা (তাওহীদ) অস্বীকার করে অথবা ঠাট্টা তামাশা করে তখন সে দ্বীন হতে বের হয়ে যায়।
৩. তাওহীদ হচ্ছে সমস্ত রসূলদের দাওয়াতের মূল কথা যার দিকে তাঁরা তাদের উম্মতদের দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন : “এবং নিশ্চয় আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট এই বার্তা নিয়ে রসূলদের প্রেরণ করেছি যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতদের হতে দূরে থাক।” (সূরা নাহল ১৬ : ৩৬)
৪. এই তাওহীদের কারণেই আল্লাহ সমস্ত জগতকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন : “নিশ্চয়ই আমি জ্বীন এবং ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত ৫১ : ৫৬)
এই আয়াতে ইবাদত অর্থ আল্লাহর একত্ববাদ ও অদ্বিতীয়তা প্রকাশ করাকে বুঝানো হয়েছে।
৫. তাওহীদ এমন এক ব্যাপক অর্থ সম্বলিত শব্দ যার মধ্যে সামিল আছে রবুবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত, হুকুম আহকাম, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ এবং পরিপূর্ণ সিফাত, আর সমস্ত ধরনের ইবাদত।
৬. তার গুণবিশিষ্ট নাম ও গুণাবলী সম্পর্কীয় তাওহীদের গুরুত্ব অনেক বেশী।
৭. তাওহীদের উপরই নির্ভর করছে মানুরে ইহজগত ও পরজগতের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য।
৮. তাওহীদের কারণেই আরবের লোকেরা শিরক, যুলুম, মূর্খতা ও দলাদলি হতে বের হয়ে ন্যায়পরায়ণতা, সম্মান, জ্ঞান-গরিমা, ঐক্য ও সাম্য অর্জন করেছিল।
৯. তাওহীদের মাধ্যমেই মুসলিমগণ রাজ্যসমূহ জয় করেছিল। যারা ছিল অত্যাচারী, শয়তানের দাস ও তাগুতদের ইবাদতকারী তার হয়েছিল এক আল্লাহর ইবাদতকারী। সাথে সাথে তারা বিকৃত দ্বীন ধর্মের যুলুম হতে বের হয়ে প্রবেশ করেছিল ইসলামের ন্যায়পরায়ণতার স্বর্ণযুগে।
১০. তাওহীদের মাধ্যমেই মুসলিমগণ জিহাদ, আত্মোৎসর্গ এবং জানমাল কুরবানি করায় উদ্বুদ্ধ হতে পেরেছিল।
১১. তাওহীদ আরব ও অনারবকে একসূত্রে গ্রথিত করে একই কাতারে সামিল করে।
১২. তাওহীদ মানুষের শেষ অবস্থান কোথায় হবে তা নির্ধারণ করে। যদি সে একত্ববাদী হয় তবে তার ঠিকানা হবে জান্নাত। আর যদি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে সে হবে জাহান্নামী।
১৩. তাওহীদের জিহাদ ঘটে। ঐ রাস্তাতেই মুসলিমরা শাহাদাৎ বরণ করেন। উহার কারণেই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হয়। তাদের কোন ইজ্জত লাভ হবে না অথবা সাহায্য আসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাওহীদকে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামের উষালগ্নে এই তাওহীদই মুসলিমদের একত্রিত করেছিল এবং বিশাল ইসলামীরাই প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল। বর্তমানেও মুসলিমগণ তাদের পূর্ব গৌরব-সম্মান এবং রাষ্ট্রকে ফিরে পেতে পারে যদি তারা তাওহীদের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। আল্লাহ বলেনঃ
ر كه ويثبت أقدامگه يا أيها البنين آمنوا إن تنصروا الله ي
“হে ঈমানদারগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে (আল্লাহর দ্বীনকে) সাহায্য কর তবে তিনি তোমাদের অবশ্যই সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা-কে দৃঢ় রাখবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৭)
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এবং কিছু গোত্র মূর্তি পূজা না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। (আবু দাউদ)।
“অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সূপন করেও তারা মুশরিক।” (সূরা ইউসূফ : ১০৬)
বিশেষ নোট : কোন মুসলিম ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে কাফির বা মুশরিক বলা যাবে না। কে কাফির এবং কে মুশরিক তা সিদ্ধান্ত দেবার একমাত্র অধিকার মহান আল্লাহর। তবে ইসলামী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ধরণের ঘোষণা দিতে পারে। এছাড়া কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী তাও নির্ধারণ করার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক (সুরা ইউসুফ ১২ : ১০৬)
মুমিন লোক এমন যে, যখন আল্লাহর নাম ঘোষণা করা হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর কালাম (আয়াত) পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি হয়ে যায় এবং তারা তাদের প্রভুর উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। (সূরা আল-আনফাল ৮ : ২)
১) (হে নবী) আপনি যদি অধিকাংশ লোকের কথা মানেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করে দিবে। কেননা তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধারণার অনুকরণ করে এবং অনুমান করে কথা বলে। নিশ্চয়ই আপনার প্রভু সবচাইতে বেশী জানেন, কারা আল্লাহর পথ হতে গোমরাহ হয়েছে এবং তিনিই অধিক জানেন কারা হিদায়াতপ্রাপ্ত বা সঠিক পথে আছে। (সূরা আল-আনআম ৬ : ১১৬-১১৭)
২) (হে নবী) আপনি যতই আকাঙ্খ করেন না কেন (আপনার কথার প্রতি) অধিকাংশ লোকই ঈমান আনবে না। (সূরা ইউসূফ ১২ : ১০৩)
৩) অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেও তারা মুশরিক। (সূরা ইউসূফ ১২ : ১০৬)
৪) আলিফ-লাম-মীম-র; এগুলো কিতাবের আয়াত। যা কিছু আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না। (সুরা আর-রাদ ১৩ : ১)
৫) বরং অধিকাংশ লোক জ্ঞানহীন (অজ্ঞ)। (সূরা আন নামল ২৭ : ৬১; সূরা ইউনুস ১০ : ৫৫; সূরা আল আ'রাফ ৭: ১৩১; সূরা আত-তূর ৫২ : ৪৭, সূরা আয যুমার ৩৯ : ২৯, ৪৯; সূরা লুকমান ৩১ : ২৫, সূরা আন'আম ৬ : ৩৭; সূরা কাসাস ২৮ : ১৩, ৫৭)।
৬) আপনার পালনকর্তা মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা নামল ২৭: ৭৩; সূরা ইউনুস ১০: ৬০)
৭) নিশ্চয় এতে নিদর্শন আছে এবং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়। (সূরা আশ শুয়ারা ২৬ : ৮, ৬৭, ১০৩, ১২১, ১৩৯, ১৫৮, ১৭৪, ১৯০)
৮) তাদের পূর্বে অগ্রবর্তীদের অধিকাংশ পথভ্রষ্ট ছিল। (সূরা সাফফাত ৩৭ ৭১)
৯) বরং তাদের অধিকাংশ লোকই সত্যকে জানে না; অতএব তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া ২১ : ২৪)
১০) বরং তিনি তাদের নিকট সত্য নিয়ে আগমন করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ লোক সত্যকে অপছন্দ করে। (সূরা মু'মিনূন ২৩ : ৭০)
১১) এটা একটি কিতাব। এর আয়াতসমূহ আরবী কুরআনরূপে জ্ঞানী লোকদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। অতঃপর তাদের অধিকাংশ লোক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে তারা শুনেও। (সূরা হা-মীম আস সাজদাহ ৪১ : ৩-৪)
১২) আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ লোক শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত। (সূরা ফুরকান ২৫ : ৪৪)
১৩) আর আমি তা তাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিতরণকারী যাতে তারা স্মরণ করে। কিন্তু অধিকাংশ লোক অকৃতজ্ঞতা ছাড়া কিছুই করে না। (সূরা ফুরকান ২৫ : ৫০)
১৪) তারা শত কথা এনে দেয় এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। (সূরা আশ শুয়ারা ২৬ : ২২৩)
১৫) কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা ইউসুফ ১২ : ৩৮)।
১৬) কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জ্ঞানহীন। (সূরা আনফাল : ৩৪; সূরা দুখান : ৩৯; সূরা জাসিয়াহ : ২৬; সূরা নাহল : ৩৮, ৭৫, ১০১; সূরা রূম : ৬, ৩০; সূরা ইউসুফ ও ২১, ৪০, ৬৮; সূরা সাবা ও ২৮, ৩৬; সূরা মু'মিন ও ৫৭)
১৭) তারা আল্লাহর নিয়ামাত বা অনুগ্রহ চিনে, এরপর তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির। (সূরা আন নাহল ১৬ : ৮৩)
১৮) কিন্তু অধিকাংশ লোকই ঈমানদার না। (সূরা হুদ ১১ ১৭; সূরা আরাফ ৭: ১৮৭)।
১৯) আর তাদের অধিকাংশই শুধু আন্দাজ-অনুমানের উপর চলে, অথচ আন্দাজ-অনুমান সত্যের বেলায় কোন কাজেই আসে না। (সূরা ইউনুস ১০: ৩৬)।
২০) আপনি তাদের অধিকাংশ লোককে কৃতও পাবেন না। (সূরা আরাফ : ১৭)।
২১) তাদের অধিকাংশই বিবেক বুদ্ধি নেই। (সূরা মায়িদা ৫: ১০৩; সূরা আনকাবুত ২৯ : ৬৩)
২২) আর তোমাদের অধিকাংশই ফাসিক। (সূরা মায়িদা ৫: ৫৯; সূরা আলে ইমরান ৩: ১১০; সূরা তাওবা ৯: ৮)
২৩)নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না। (সূরা বাকারা ২: ২৪৩; সূরা মু'মিন ৪০ : ৬১; সূরা ইউনুস ১০ : ৬০)।
২৪) যে দিন তিনি তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং ফিরিশতাদেরকে বলবেন ? এরা কি তোমাদেরই ইবাদত বা পূজা করত? ফিরিশতারা বলবে, আপনি পবিত্র আমরা আপনার পক্ষে, তাদের পক্ষে নই, বরং তারা জিনদের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই শাইতানে বিশ্বাসী। (সূরা সাবা ৩৪ : ৪০ - ৪১)
২৫) তাদের অধিকাংশের জন্য শাস্তির বিষয় অবধারিত হয়েছে। সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না। (সূরা ইয়াসিন ৩৬ : ৭)
২৬) আমি তোমাদের কাছে সত্য ধর্ম পৌছিয়েছি, কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই হাকে অপছন্দ করে। (সূরা আয যুখরুফ ৪৩ : ৭৮)
২৭) আমি এই কুরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সবরকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ লোকই অস্বীকার না করে থাকেনি। (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৮৯)।
২৮) আমি আপনার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি। অবাধ্যরা ব্যতীত কেউ এগুলো অস্বীকার করে না। কি আশ্চর্য! যখন তারা কোন অঙ্গীকার-চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তখন তাদের একদল চুক্তিপত্র ছুড়ে খুঁড়ে ফেলে। বরং তাদের অধিকাংশ লোকই ঈমানদার নয়। (সূরা বাকারা ২৪ : ৯৯-১০০)
২৯) কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই মূখ। (সূরা আন'আম ৬ : ১১১)
৩০) আর তাদের অধিকাংশ লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারী রূপে পাইনি, বরং তাদের অধিকাংশ লোককে ফাসিক বা হুকুম অমান্যকারী পেয়েছি। (সূরা আ'রাফ ৭: ১০২)
৩১) তাদের অধিকাংশ লোকই মুশরিক ছিল। (সূরা আর রূম ৩০: ৪২)
৩২)মানুষের মধ্যে অনেক লোকই ফাসিক। (সূরা মায়িদা ৫ : ৪৯)
“অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সূপন করেও তারা মুশরিক।” (সূরা ইউসূফ : ১০৬)
বিশেষ নোট : কোন মুসলিম ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে কাফির বা মুশরিক বলা যাবে না। কে কাফির এবং কে মুশরিক তা সিদ্ধান্ত দেবার একমাত্র অধিকার মহান আল্লাহর। তবে ইসলামী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ধরণের ঘোষণা দিতে পারে। এছাড়া কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী তাও নির্ধারণ করার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক (সুরা ইউসুফ ১২ : ১০৬)
মুমিন লোক এমন যে, যখন আল্লাহর নাম ঘোষণা করা হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর কালাম (আয়াত) পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি হয়ে যায় এবং তারা তাদের প্রভুর উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। (সূরা আল-আনফাল ৮ : ২)
১) (হে নবী) আপনি যদি অধিকাংশ লোকের কথা মানেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করে দিবে। কেননা তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধারণার অনুকরণ করে এবং অনুমান করে কথা বলে। নিশ্চয়ই আপনার প্রভু সবচাইতে বেশী জানেন, কারা আল্লাহর পথ হতে গোমরাহ হয়েছে এবং তিনিই অধিক জানেন কারা হিদায়াতপ্রাপ্ত বা সঠিক পথে আছে। (সূরা আল-আনআম ৬ : ১১৬-১১৭)
২) (হে নবী) আপনি যতই আকাঙ্খ করেন না কেন (আপনার কথার প্রতি) অধিকাংশ লোকই ঈমান আনবে না। (সূরা ইউসূফ ১২ : ১০৩)
৩) অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেও তারা মুশরিক। (সূরা ইউসূফ ১২ : ১০৬)
৪) আলিফ-লাম-মীম-র; এগুলো কিতাবের আয়াত। যা কিছু আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না। (সুরা আর-রাদ ১৩ : ১)
৫) বরং অধিকাংশ লোক জ্ঞানহীন (অজ্ঞ)। (সূরা আন নামল ২৭ : ৬১; সূরা ইউনুস ১০ : ৫৫; সূরা আল আ'রাফ ৭: ১৩১; সূরা আত-তূর ৫২ : ৪৭, সূরা আয যুমার ৩৯ : ২৯, ৪৯; সূরা লুকমান ৩১ : ২৫, সূরা আন'আম ৬ : ৩৭; সূরা কাসাস ২৮ : ১৩, ৫৭)।
৬) আপনার পালনকর্তা মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা নামল ২৭: ৭৩; সূরা ইউনুস ১০: ৬০)
৭) নিশ্চয় এতে নিদর্শন আছে এবং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়। (সূরা আশ শুয়ারা ২৬ : ৮, ৬৭, ১০৩, ১২১, ১৩৯, ১৫৮, ১৭৪, ১৯০)
৮) তাদের পূর্বে অগ্রবর্তীদের অধিকাংশ পথভ্রষ্ট ছিল। (সূরা সাফফাত ৩৭ ৭১)
৯) বরং তাদের অধিকাংশ লোকই সত্যকে জানে না; অতএব তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া ২১ : ২৪)
১০) বরং তিনি তাদের নিকট সত্য নিয়ে আগমন করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ লোক সত্যকে অপছন্দ করে। (সূরা মু'মিনূন ২৩ : ৭০)
১১) এটা একটি কিতাব। এর আয়াতসমূহ আরবী কুরআনরূপে জ্ঞানী লোকদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। অতঃপর তাদের অধিকাংশ লোক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে তারা শুনেও। (সূরা হা-মীম আস সাজদাহ ৪১ : ৩-৪)
১২) আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ লোক শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত। (সূরা ফুরকান ২৫ : ৪৪)
১৩) আর আমি তা তাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিতরণকারী যাতে তারা স্মরণ করে। কিন্তু অধিকাংশ লোক অকৃতজ্ঞতা ছাড়া কিছুই করে না। (সূরা ফুরকান ২৫ : ৫০)
১৪) তারা শত কথা এনে দেয় এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। (সূরা আশ শুয়ারা ২৬ : ২২৩)
১৫) কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা ইউসুফ ১২ : ৩৮)।
১৬) কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জ্ঞানহীন। (সূরা আনফাল : ৩৪; সূরা দুখান : ৩৯; সূরা জাসিয়াহ : ২৬; সূরা নাহল : ৩৮, ৭৫, ১০১; সূরা রূম : ৬, ৩০; সূরা ইউসুফ ও ২১, ৪০, ৬৮; সূরা সাবা ও ২৮, ৩৬; সূরা মু'মিন ও ৫৭)
১৭) তারা আল্লাহর নিয়ামাত বা অনুগ্রহ চিনে, এরপর তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির। (সূরা আন নাহল ১৬ : ৮৩)
১৮) কিন্তু অধিকাংশ লোকই ঈমানদার না। (সূরা হুদ ১১ ১৭; সূরা আরাফ ৭: ১৮৭)।
১৯) আর তাদের অধিকাংশই শুধু আন্দাজ-অনুমানের উপর চলে, অথচ আন্দাজ-অনুমান সত্যের বেলায় কোন কাজেই আসে না। (সূরা ইউনুস ১০: ৩৬)।
২০) আপনি তাদের অধিকাংশ লোককে কৃতও পাবেন না। (সূরা আরাফ : ১৭)।
২১) তাদের অধিকাংশই বিবেক বুদ্ধি নেই। (সূরা মায়িদা ৫: ১০৩; সূরা আনকাবুত ২৯ : ৬৩)
২২) আর তোমাদের অধিকাংশই ফাসিক। (সূরা মায়িদা ৫: ৫৯; সূরা আলে ইমরান ৩: ১১০; সূরা তাওবা ৯: ৮)
২৩)নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না। (সূরা বাকারা ২: ২৪৩; সূরা মু'মিন ৪০ : ৬১; সূরা ইউনুস ১০ : ৬০)।
২৪) যে দিন তিনি তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং ফিরিশতাদেরকে বলবেন ? এরা কি তোমাদেরই ইবাদত বা পূজা করত? ফিরিশতারা বলবে, আপনি পবিত্র আমরা আপনার পক্ষে, তাদের পক্ষে নই, বরং তারা জিনদের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই শাইতানে বিশ্বাসী। (সূরা সাবা ৩৪ : ৪০ - ৪১)
২৫) তাদের অধিকাংশের জন্য শাস্তির বিষয় অবধারিত হয়েছে। সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না। (সূরা ইয়াসিন ৩৬ : ৭)
২৬) আমি তোমাদের কাছে সত্য ধর্ম পৌছিয়েছি, কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই হাকে অপছন্দ করে। (সূরা আয যুখরুফ ৪৩ : ৭৮)
২৭) আমি এই কুরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সবরকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ লোকই অস্বীকার না করে থাকেনি। (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৮৯)।
২৮) আমি আপনার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি। অবাধ্যরা ব্যতীত কেউ এগুলো অস্বীকার করে না। কি আশ্চর্য! যখন তারা কোন অঙ্গীকার-চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তখন তাদের একদল চুক্তিপত্র ছুড়ে খুঁড়ে ফেলে। বরং তাদের অধিকাংশ লোকই ঈমানদার নয়। (সূরা বাকারা ২৪ : ৯৯-১০০)
২৯) কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই মূখ। (সূরা আন'আম ৬ : ১১১)
৩০) আর তাদের অধিকাংশ লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারী রূপে পাইনি, বরং তাদের অধিকাংশ লোককে ফাসিক বা হুকুম অমান্যকারী পেয়েছি। (সূরা আ'রাফ ৭: ১০২)
৩১) তাদের অধিকাংশ লোকই মুশরিক ছিল। (সূরা আর রূম ৩০: ৪২)
৩২)মানুষের মধ্যে অনেক লোকই ফাসিক। (সূরা মায়িদা ৫ : ৪৯)
১) তোমরা সলাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত প্রদান করবে, অতঃপর অল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী। (সূরা বাকারা ২ : ৮৩)
২) তারা বলে, আমাদের অন্তর অর্ধবৃত বরং তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। অতএব তারা অল্পলোকই ঈমান আনে। (সূরা বাকারা ২ : ৮৮)।
৩) অতঃপর যখন তাদের উপর কিতাল বা সংগ্রামকে ফরয করা হল তখন তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে অধিক অবগত আছেন। (সূরা বাকারা ২ : ২৪৬)।
৪) অতএব অল্পসংখ্যক ব্যতীত তারা ঈমান আনবে না। (সূরা আন নিসা ৪ : ৪৬, ১৫৫)
৫) আপনি তাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত তাদের পক্ষ থেকে কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন। (সূরা মায়িদা ৫: ১৩)
৬) তাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত আল্লাহর নির্দের্শকে বাস্তবায়ন করতো না। (সূরা আন নিসা ৪ : ৬৬)।
৭) বলাবাহুল্য অল্প সংখ্যক লোকই তাঁর ঈমান এনেছিল। (সূরা হুদ ১১ : ৪০)
৮) তবে অল্প সংখ্যক লোক যাদেরকে আমি তাদের মধ্য থেকে রক্ষা করেছি। (সূরা হূদ ১১ : ১১৬)।
৯) (শাইতান বলল) যদি আপনি আমাকে কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দেন, তাহলে আমি অল্প সংখ্যক ব্যতীত আদমের বংশধরদেরকে সমুলে নষ্ট করে দিব। (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৬২)
১০) তবে তারা করে না যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, অবশ্য এমন লোকদের সংখ্যা খুবই অল্প। (সূরা সোয়াদ ৩৮ : ২৪)
১১) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক লোকই কৃতজ্ঞ। (সূরা সাবা ৩৪ : ১৩)
২) তারা বলে, আমাদের অন্তর অর্ধবৃত বরং তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। অতএব তারা অল্পলোকই ঈমান আনে। (সূরা বাকারা ২ : ৮৮)।
৩) অতঃপর যখন তাদের উপর কিতাল বা সংগ্রামকে ফরয করা হল তখন তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে অধিক অবগত আছেন। (সূরা বাকারা ২ : ২৪৬)।
৪) অতএব অল্পসংখ্যক ব্যতীত তারা ঈমান আনবে না। (সূরা আন নিসা ৪ : ৪৬, ১৫৫)
৫) আপনি তাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত তাদের পক্ষ থেকে কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন। (সূরা মায়িদা ৫: ১৩)
৬) তাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত আল্লাহর নির্দের্শকে বাস্তবায়ন করতো না। (সূরা আন নিসা ৪ : ৬৬)।
৭) বলাবাহুল্য অল্প সংখ্যক লোকই তাঁর ঈমান এনেছিল। (সূরা হুদ ১১ : ৪০)
৮) তবে অল্প সংখ্যক লোক যাদেরকে আমি তাদের মধ্য থেকে রক্ষা করেছি। (সূরা হূদ ১১ : ১১৬)।
৯) (শাইতান বলল) যদি আপনি আমাকে কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দেন, তাহলে আমি অল্প সংখ্যক ব্যতীত আদমের বংশধরদেরকে সমুলে নষ্ট করে দিব। (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৬২)
১০) তবে তারা করে না যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, অবশ্য এমন লোকদের সংখ্যা খুবই অল্প। (সূরা সোয়াদ ৩৮ : ২৪)
১১) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক লোকই কৃতজ্ঞ। (সূরা সাবা ৩৪ : ১৩)
মহান আল্লাহ মুশরিকদের ক্ষমা করবেন না।
১) নিশ্চয়ই আল্লাহ যে তার সাথে শরীক করবে তাকে ক্ষমা করবেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর পথভ্রষ্টে পতিত হয়। (সূরা আন-নিসা ৪ : ১১৬)
২) নিঃসন্দেহে আল্লাহ যে তার সাথে শরীক করে তাকে ক্ষমা করবেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল সে যেন বড় অপবাদ আরোপ করল। (সূরা আন-নিসা ৪ : ৪৮)
৩) নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা আল-মায়িদা ৫:৭২)
৪) জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুর শিরক করার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে জাহান্নামে যাবে। (সহীহ মুসলিম)
১) নিশ্চয়ই আল্লাহ যে তার সাথে শরীক করবে তাকে ক্ষমা করবেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর পথভ্রষ্টে পতিত হয়। (সূরা আন-নিসা ৪ : ১১৬)
২) নিঃসন্দেহে আল্লাহ যে তার সাথে শরীক করে তাকে ক্ষমা করবেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল সে যেন বড় অপবাদ আরোপ করল। (সূরা আন-নিসা ৪ : ৪৮)
৩) নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা আল-মায়িদা ৫:৭২)
৪) জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুর শিরক করার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে জাহান্নামে যাবে। (সহীহ মুসলিম)
শিরক এমন এক মহামারী পাপ যা সকল নবীর উম্মতের মধ্যে ছিল। তা শেষ নবী (ﷺ) -এর উম্মতদেরকেও ছাড়েনি। যার বাস্তবতা অহরহ দেখা যাচ্ছে।
অধিকাংশ লোক ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক
সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মাতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এবং কিছু গোত্র মূর্তি পূজা না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। (আবু দাউদ)।
পীর-দরবেশ, অলী-আউলিয়া এবং কবরে শায়িত ব্যক্তির নিকট দু'আ করার মাধ্যমে মুশরিক
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যে তোমার উপকার করতে পারবে না ও অপকারও করতে পারবে না। যদি তুমি অন্যকে ডাক তাহলে তখন তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সুরা ইউনুস ১০ : ১০৬)
ইলমে গায়িৰ দাবী করার মাধ্যমে মুশরিক
হে নবী বলে দিন, আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে সে গায়েবের খবর কেউ-ই জানে না। (সূরা আন-নামল ২৭ : ৬৫)
মাজার বা কবরের নিকট সমাবেশ, ওরস, মেলা, আগরবাতি, মোমবাতি ইত্যাদি জ্বালানোর মাধ্যমে মুশরিক
ইবনে মাসুদ বর্ণনা করেছেন যে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারা যারা শেষ দিনে (কিয়ামতের আগে) জীবিত থাকবে এবং যারা কবরকে ইবাদতের স্থান করে নেবে। (আহমদ, আত-তাইয়ালাসী)।
দলে দলে মাযহাবে-মাযহাবে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মুশরিক
তোমরা সবাই আল্লাহ মুখী হয়ে যাও এবং তাঁকে ভয় করো, সলাত কায়িম করো এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। আর মুশরিক তারাই যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লাসিত। (সূরা আর-রূম ৩০ : ৩১-৩২)
পীর-দরবেশ, অলী-আউলিয়ার কথা মানার মাধ্যমে মুশরিক
তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অলী-আউলিয়াদের অনুসরণ করো না। তোমরা অল্পসংখ্যক লোকই তা স্মরণ রাখো। (সূরা আল-আ'রাফ ৭ : ৩)
জাদু করার মাধ্যমে মুশরিক
তারা ভাল করেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন করে তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। (সূরা আল-বাকারা ২: ১০২)
অসুখ, বালা-মুসীবতে তাবীজ-কবজ, বালা-চুরী ইত্যাদি ব্যবহার করার মাধ্যমে মুশরিক
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি ঝাড়-ফুঁক, তাবীজ এবং যাদুটোনা করা কি। (আবু দাউদ)।
কবর পাকা করা বা বাধানো, কবরে লিখা, গম্বুজ তৈরী করা এবং বাতি জ্বালানো হারাম
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসূল (ﷺ) কবর চুনকাম অর্থাৎ - পাকা করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম)
এছাড়া কবর, মাযার, দরগা, খানকা ইত্যাদিতে দান বা ভোগ দেয়ার মাধ্যমে মুশরিক (মুসনাদে আহমাদ) গাছে সুতা বাঁধা বা কোন কিছুর মাধ্যমে কিছু পাওয়ার আশায় মুশরিক (তিরমিযী)।
তাগুতের অনুকরণ করা শিরক ও কুফরী
আমি প্রত্যেক উম্মাতের (জাতির) মধ্যেই রসূল পাঠিয়েছি। যেন তাঁরা আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাকে। (সূরা আন-নাহল ১৬ : ৩৬)
কোন অলী বা পীরের অসীলা অন্বেষণ করা এবং পীর ধরা নাযায়েজ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো; তার নিকট অসীলা অন্বেষণ করো এবং তার পথে জিহাদ করো। যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়িদা ৫: ৩৫)
তাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণ, পূর্ববর্তীদের দোহাই বাপ-দাদার দোহাই দেয়া মুশরিকের নীতি
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তাঁর অনুকরণ করো। তখন তারা বলে। বরং আমরা তো সে বিষয়েরই অনুকরণ করব যে বিষয়ে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জ্ঞান রাখে না এবং তারা সঠিক পথপ্রাপ্তও নয়। (সূরা বাকারা ২:১৭০)
আল্লাহ ব্যতীত গাইরুল্লাহ তথা পীর, আওলিয়া ও দরগায় যাবাহ করা শির্ক
হে নবী! আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছুই কেবলমাত্র সমগ্রবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি (কোন রূপ শরীক না করার জন্যই) আদিষ্ট হয়েছি এবং মুসলিমদের মধ্যে আমিই প্রথম। (সূরা আনআম ৬ : ১৬৪)
কবরবাসী জীবিতদের ডাকে সাড়া দিতে অক্ষম। আপনি কবরে শায়িত ব্যক্তিদেরকে শোনাতে পারবেন না।(সূরা নামল ২৭: ২২)
গণকের নিকট যাওয়া, গণকের কথা বিশ্বাস করা শির্ক
সাফিয়্যাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) নবী (ﷺ) -এর স্ত্রীদের কোন স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গণকের নিকট আসে এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে এবং তা বিশ্বাস করে তার চল্লিশ রাত্রের ইবাদত কবুল হয় না। (সহীহ মুসলিম)।
স্বেচ্ছায় অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা শির্ক
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু'মিনকে হত্যা করে তার বিনিময় হচ্ছে জাহান্নাম, তাতে সে সর্বদা অবস্থান করবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হয়েছেন এবং লা'নাত করেছেন। আর তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন বিরাট শাস্তি। (সূরা নিসা ৪:৯৩)
বংশের বড়াই ও মৃত ব্যক্তির প্রতি বিলাপ করা হারাম
আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : দু’টি বিষয়ে মানুষ কুফরী করে, আর তা হলো : ১) বংশের দোষারোপ করা; ২) মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা। (সহীহ মুসলিম)।
আল্লাহ ব্যতীত বাপ-দাদা, মাতা-নানী, পীর-দরবেশ কিংবা শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গের নামে শপথ করার মাধ্যমে মুশরিক
আব্দুর রহমান বিন সামুরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তাগুতের নামে এবং বাপ-দাদার নামে কসম বা শপথ করো না। (সহীহ মুসলিম)
রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমাল করা শির্ক
মাহমূদ বিন লাবীদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : তোমাদের জন্য আমি সবচেয়ে অধিক ভয় করি শির্কে আসগার বা ছোট শির্কের। বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল সেটা কি? তিনি বললেন, রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমাল। (বায়হাকী, আহমাদ)।
যুগ বা সময়কে গালি দেয়া শির্ক
আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : নবী (ﷺ) বলেছেন : মহান আল্লাহ বলেন : “আদম সন্তান দাহার বা সময়কে গালী দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। অথচ আমি নিজেই দাহার বা সময়। আমার হাতেই সকল কর্ম। রাত ও দিনকে আমিই পরিবর্তন করি। (সহীহ বুখারী)
যেমন অনেক সময় আমরা বলে থাকি। এ বছরটি-ই খারাপ বা আজকের দিনটি-ই মন্দ বা আজকের আবহাওয়াটা খুবই খারাপ ইত্যাদি বলা যাবে না।
ছবি ও মূর্তি বানানো মুশরিকী কাজ
আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : মহান আল্লাহ বলেন : “ঐ ব্যক্তির থেকে কে বড় যালিম হতে পারে, যে আমার মত মাখলুক সৃষ্টি করতে চায়? (এতই যদি পারে) তাহলে তারা যেন অণু সৃষ্টি করে অথবা একটি শস্য তৈরী করে অথবা যেন একটি যব তৈরী করে।” (সহীহ বুখারী)।
সলাত পরিত্যাগ করা শির্ক
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, মুসলিম ব্যক্তি এবং মুশরিক ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হল সলাত পরিত্যাগ করা। অর্থাৎ সলাত পরিত্যাগকারী মুশরিক ও কাফির। (সহীহ মুসলিম)।
নিজের মত বা প্রবৃত্তি অনুসরণ করা শির্ক
আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে? তবুও কি তার যিম্মাদার হবেন? (সূরা ফুরকান ২৫ : ৪৩)।
পিতা না হওয়া সত্ত্বেও পিতা দাবী করা কুফরী ও হারাম
সায়াদ ও আবূ বাকরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) হতে বর্ণিত; উভয়ে বলেন আমার দু'কান শুনেছে এবং আমার অন্তর সংরক্ষণ করেছে, মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অপরকে স্বীয় পিতা বলে দাবি করে অথচ সে ভালোভাবেই জানে যে সে তার পিতা নয় তার জন্য জান্নাত হারাম। (সহীহ মুসলিম)
পিতা-মাতাকে গালি দেয়া এবং তাদের নাফরমানী করা সবচেয়ে বড় অপরাধ
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : কোন ব্যক্তি পিতা-মাতাকে গালি দিলে তা কবীরা বা বড় গুনাহের অন্তর্ভূক্ত হবে। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল কোন ব্যক্তি কি তার পিতা-মাতাকে গালী দেয়? রসূল (ﷺ) বললেন, হ্যা, লোক কোন ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয় আর সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং তার মাতাকে গালি দেয়, সেও তার মাতাকে গালি দেয়। (সহীহ মুসলিম)
কারও সম্মানে দাঁড়ানো
আবু উমামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) লাঠির উপর ভর করে বের হলেন। আমরা তার জন্য দাঁড়ালাম। তিনি বললেন, অনারবগণ একে অপরকে সম্মান করার জন্য যেভাবে দাঁড়ায় তোমরা সেভাবে দাঁড়িও না। (আবু দাউদ)
গানের মাধ্যমে শির্ক
এক শ্রেণীর মানুষ গানের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে শরীক করে থাকে, তারা গানের মাধ্যমে নবী (ﷺ) -কে স্রষ্টার আসনে বসিয়ে দেয়। তারা গানের মাধ্যমে বলে:
নবী মোর পরশমণি নবী মোর শোনার খনি
নবী নাম জপে যে জন, সেই তো দোজাহানের ধনী
প্রিয় পাঠক! জপ বা যিকর শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আর এই জপ নবীগণের জন্য নয়। কেউ যদি আল্লাহর নামের ন্যায় নবীগণের নাম ধরে জপ বা যিকর করে তবে সে অবশ্যই আল্লাহর সাথে শির্ক বা অংশীদার স্থাপন করল এবং সে মুশরিক বলে পরিগণিত হল।
তেমনিভাবে কেউ যদি বলে:
আহমাদেরই মীমের পর্দা তুলে দেরে মন
দেখবি সেথা বিরাজ করে আহাদ নিরাঞ্জন
অর্থাৎ তারা বলতে চায় আহমাদ শব্দের থেকে মীম অক্ষরটি বাদ দিলে আহাদ শব্দ থাকে। আর আহাদ হল আল্লাহর নাম। তারা বলতে চায় আহমাদ ও আহাদ একজনই। এভাবে তারা সৃষ্টিকে মুহাম্মাদ -কে] স্রষ্টার আসনে বসিয়ে স্পষ্ট শির্ক করে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ নবী (ﷺ) -কে লক্ষ্য করে বলেছেন : বল! আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি ওয়াহী প্রেরিত হয় যে, তোমাদের রব তো একই রব। সুতরাং যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে সে যেন নেক কাজ করে এবং তার রবের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ : ১১০)
নবী (ﷺ) -কে নূরের তৈরী মনে করা শির্ক
এক শ্রেণীর মানুষ বলে, নবী -কে তৈরী না করলে আল্লাহ কিছুই তৈরী করতেন না। আল্লাহ নবী (ﷺ) -কে তাঁর নিজের নূর দিয়ে তৈরী করেছেন, নবী (ﷺ) নূরের তৈরী। আর নবী (ﷺ) -এর নূরে সমস্ত জগত তৈরী। সর্বপ্রথম আল্লাহ নবী (ﷺ) -কে তাঁর নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, এভাবে তারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে থাকে। সহীহ হাদীসে রয়েছে আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে লিখতে বলেন।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম ও মাছ সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর কলমকে বলেছেন: লিখ, কলম বলল কি লিখব? আল্লাহ বললেন, কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে সব লিখ। (আহমাদ, তিরমিযী)।
আর নবী (ﷺ)-কে আল্লাহ মাটির তৈরী আদমের থেকে স্বাভাবিক মানুষটির যে নিয়ম আল্লাহ করেছেন সে পদ্ধতিতেই মা আমিনার গর্ভে আব্দুল্লাহর ঔরষের মাধ্যমে পৃথিবীতে আগমন ঘটিয়েছেন। তিনি মাটির তৈরী বলেই অন্যান্য মানুষের মতই ভূমিষ্ট হয়েছেন। তবে আল্লাহ তাঁকে চল্লিশ বৎসর বয়সে শেষ নবী ও রসূল বানিয়েছেন, রিসালাতের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁর নিকট আল্লাহর ওয়াহী আসত, কুরআন মাজীদ তাঁর প্রতি নাযিল হয়েছে। তাঁর পরও তিনি মানুষ ছিলেন এবং আল্লাহর একজন বান্দা ছিলেন। যার স্বীকৃতি আমরা সর্বদা দিয়ে থাকিতিনি আল্লাহর বান্দা ও রসূল। মহান আল্লাহ বলেনঃ
বল! আমি তোমাদের মতই একজন মাটির মানুষ। আমার নিকট ওয়াহী আসে, তোমাদের রবই একমাত্র রব। (সূরা কাহফ ১৮ : ১১০)
মিলাদে শির্ক:
একদল মানুষ নবী (ﷺ) -এর নামে মিলাদ নামক বিদ’আত অনুষ্ঠানের মধ্যে চেয়ার খালি রাখে এবং ধারণা রাখে যে, নবী (ﷺ) এসে চেয়ারে বসেন। আবার তারা হঠাৎ করে মিলাদের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়েন এবং ধারণা রাখে যে, নবী (ﷺ) -এর রুহ মোবারক মিলাদ মাহফিলে হাযির হয়ে থাকে। তাই দাঁড়াতে হয়। একই দিনে একই সাথে হাজার স্থানে মিলাদ হয়ে থাকে সকল স্থানে যাওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই, তিনি ব্যতীত এ ক্ষমতা আর কারও নেই। মহান আল্লাহ বলেন :
নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে ক্ষমতা রাখেন। (সূরা বাকারা ২ : ১০৯)
আর রসূল (ﷺ) তো মৃত্যুবরণ করেছেন, যার মৃত্যুকে প্রথমে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)ও অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে মানতে পারেননি। অতঃপর আবু বাকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এসে নবী (ﷺ)-এ মৃত্যুর স্বপক্ষে এ আয়াত পাঠ করেন।
মুহাম্মাদ একজন রসূল ছাড়া কিছু নয়, তাঁর পূর্বে বহু রসুল গত হয়েছেন, যদি তিনি মারা যান কিংবা নিহত হন তবে কি তোমরা পশ্চাদবরণ করবে? এবং কেউ পিছুটান হলে কখনো সে আল্লাহর ক্ষতি করতে সামান্যও সক্ষম হবে না; আল্লাহ কৃতজ্ঞদের সত্ত্বর পুরস্কার দিবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩: ১৪৪)
অতএব যারা নবী (ﷺ) -কে মিলাদে উপস্থিত মনে করবে তারা অত্র আয়াতকে অস্বীকার করবে। রসূলকে আল্লাহর মত সকল স্থানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষমতা মেনে নেয়া শির্ক হবে। আর নবী (ﷺ) তো জানেন না যে, কোথায় কোথায়। মিলাদ হচ্ছে। কেননা তিনি গায়েবের খবর জানেন না। মহান আল্লাহর কুরআন মাজীদে রসূল (ﷺ) -এর দ্বারা ঘোষণা করান :
আমি যদি ইলমে গায়েব জানতাম, তাহলে আমি অধিক কল্যাণ অর্জন করে নিতাম এবং অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করত না। (সূরা আ'রাফ ৭ : ১৮৮)
হে নবী বল! আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে যা আছে আল্লাহ ব্যতীত তাদের গায়েব কেউ জানে না। (সূরা আন নামল ২৭ : ৬৫)।
হে রসূল! এদেরকে বল, ভবিষ্যতে আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে আমি তা জানি না। (সূরা আহকাফ ৪৬ : ৯)।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : আল্লাহর শপথ! আমি জানি না, আমি আল্লাহর রসূল। হওয়া সত্ত্বেও আমার সাথে কি করা হবে। মুসনাদে আহমাদ, বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে- আমি আল্লাহর রসূল হওয়া সত্ত্বেও কি করা হবে তা আমি জানি না। অতএব গায়েবের ইলম বা জ্ঞান একমাত্র আল্লাহই জানেন। এ ইলম নবী (ﷺ) -এর সাথে সম্পৃক্ত করলে আল্লাহর সাথে শরীক হবে এবং শির্ক করা হবে।
এমনিভাবে মিলাদে কিয়াম করলে উক্ত আয়াতের অস্বীকারের দরুন কাফির হতে হবে এবং রসূলকে সবস্থানে হাযির জানার মাধ্যমে শির্ক হবে এবং কিয়ামের মধ্যে এ ধরনের কিয়াম তথা শের বা কবিতা বলা শির্ক। যেমন বলা হয়ে থাকে তিনি তো আরশে এসে খোদারূপে ছিলেন, মদীনায় নেমে মোস্তফা হয়ে গেলেন। (নাউযুবিল্লাহ) অর্থাৎ যিনি আল্লাহ ছিলেন, তিনি মদিনায় এসে মুস্তফা হয়ে গেলেন। (নাউযুবিল্লাহ)। এ ধরনের কবিতা গান ইত্যাদি মিলাদের মধ্যে শির্ক সংঘটিত হয়ে থাকে। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমীন।
অধিকাংশ লোক ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক
সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মাতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এবং কিছু গোত্র মূর্তি পূজা না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। (আবু দাউদ)।
পীর-দরবেশ, অলী-আউলিয়া এবং কবরে শায়িত ব্যক্তির নিকট দু'আ করার মাধ্যমে মুশরিক
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যে তোমার উপকার করতে পারবে না ও অপকারও করতে পারবে না। যদি তুমি অন্যকে ডাক তাহলে তখন তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সুরা ইউনুস ১০ : ১০৬)
ইলমে গায়িৰ দাবী করার মাধ্যমে মুশরিক
হে নবী বলে দিন, আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে সে গায়েবের খবর কেউ-ই জানে না। (সূরা আন-নামল ২৭ : ৬৫)
মাজার বা কবরের নিকট সমাবেশ, ওরস, মেলা, আগরবাতি, মোমবাতি ইত্যাদি জ্বালানোর মাধ্যমে মুশরিক
ইবনে মাসুদ বর্ণনা করেছেন যে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারা যারা শেষ দিনে (কিয়ামতের আগে) জীবিত থাকবে এবং যারা কবরকে ইবাদতের স্থান করে নেবে। (আহমদ, আত-তাইয়ালাসী)।
দলে দলে মাযহাবে-মাযহাবে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মুশরিক
তোমরা সবাই আল্লাহ মুখী হয়ে যাও এবং তাঁকে ভয় করো, সলাত কায়িম করো এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। আর মুশরিক তারাই যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লাসিত। (সূরা আর-রূম ৩০ : ৩১-৩২)
পীর-দরবেশ, অলী-আউলিয়ার কথা মানার মাধ্যমে মুশরিক
তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অলী-আউলিয়াদের অনুসরণ করো না। তোমরা অল্পসংখ্যক লোকই তা স্মরণ রাখো। (সূরা আল-আ'রাফ ৭ : ৩)
জাদু করার মাধ্যমে মুশরিক
তারা ভাল করেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন করে তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। (সূরা আল-বাকারা ২: ১০২)
অসুখ, বালা-মুসীবতে তাবীজ-কবজ, বালা-চুরী ইত্যাদি ব্যবহার করার মাধ্যমে মুশরিক
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি ঝাড়-ফুঁক, তাবীজ এবং যাদুটোনা করা কি। (আবু দাউদ)।
কবর পাকা করা বা বাধানো, কবরে লিখা, গম্বুজ তৈরী করা এবং বাতি জ্বালানো হারাম
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসূল (ﷺ) কবর চুনকাম অর্থাৎ - পাকা করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম)
এছাড়া কবর, মাযার, দরগা, খানকা ইত্যাদিতে দান বা ভোগ দেয়ার মাধ্যমে মুশরিক (মুসনাদে আহমাদ) গাছে সুতা বাঁধা বা কোন কিছুর মাধ্যমে কিছু পাওয়ার আশায় মুশরিক (তিরমিযী)।
তাগুতের অনুকরণ করা শিরক ও কুফরী
আমি প্রত্যেক উম্মাতের (জাতির) মধ্যেই রসূল পাঠিয়েছি। যেন তাঁরা আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাকে। (সূরা আন-নাহল ১৬ : ৩৬)
কোন অলী বা পীরের অসীলা অন্বেষণ করা এবং পীর ধরা নাযায়েজ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো; তার নিকট অসীলা অন্বেষণ করো এবং তার পথে জিহাদ করো। যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়িদা ৫: ৩৫)
তাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণ, পূর্ববর্তীদের দোহাই বাপ-দাদার দোহাই দেয়া মুশরিকের নীতি
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তাঁর অনুকরণ করো। তখন তারা বলে। বরং আমরা তো সে বিষয়েরই অনুকরণ করব যে বিষয়ে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জ্ঞান রাখে না এবং তারা সঠিক পথপ্রাপ্তও নয়। (সূরা বাকারা ২:১৭০)
আল্লাহ ব্যতীত গাইরুল্লাহ তথা পীর, আওলিয়া ও দরগায় যাবাহ করা শির্ক
হে নবী! আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছুই কেবলমাত্র সমগ্রবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি (কোন রূপ শরীক না করার জন্যই) আদিষ্ট হয়েছি এবং মুসলিমদের মধ্যে আমিই প্রথম। (সূরা আনআম ৬ : ১৬৪)
কবরবাসী জীবিতদের ডাকে সাড়া দিতে অক্ষম। আপনি কবরে শায়িত ব্যক্তিদেরকে শোনাতে পারবেন না।(সূরা নামল ২৭: ২২)
গণকের নিকট যাওয়া, গণকের কথা বিশ্বাস করা শির্ক
সাফিয়্যাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) নবী (ﷺ) -এর স্ত্রীদের কোন স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গণকের নিকট আসে এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে এবং তা বিশ্বাস করে তার চল্লিশ রাত্রের ইবাদত কবুল হয় না। (সহীহ মুসলিম)।
স্বেচ্ছায় অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা শির্ক
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু'মিনকে হত্যা করে তার বিনিময় হচ্ছে জাহান্নাম, তাতে সে সর্বদা অবস্থান করবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হয়েছেন এবং লা'নাত করেছেন। আর তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন বিরাট শাস্তি। (সূরা নিসা ৪:৯৩)
বংশের বড়াই ও মৃত ব্যক্তির প্রতি বিলাপ করা হারাম
আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : দু’টি বিষয়ে মানুষ কুফরী করে, আর তা হলো : ১) বংশের দোষারোপ করা; ২) মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা। (সহীহ মুসলিম)।
আল্লাহ ব্যতীত বাপ-দাদা, মাতা-নানী, পীর-দরবেশ কিংবা শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গের নামে শপথ করার মাধ্যমে মুশরিক
আব্দুর রহমান বিন সামুরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তাগুতের নামে এবং বাপ-দাদার নামে কসম বা শপথ করো না। (সহীহ মুসলিম)
রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমাল করা শির্ক
মাহমূদ বিন লাবীদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : তোমাদের জন্য আমি সবচেয়ে অধিক ভয় করি শির্কে আসগার বা ছোট শির্কের। বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল সেটা কি? তিনি বললেন, রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমাল। (বায়হাকী, আহমাদ)।
যুগ বা সময়কে গালি দেয়া শির্ক
আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : নবী (ﷺ) বলেছেন : মহান আল্লাহ বলেন : “আদম সন্তান দাহার বা সময়কে গালী দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। অথচ আমি নিজেই দাহার বা সময়। আমার হাতেই সকল কর্ম। রাত ও দিনকে আমিই পরিবর্তন করি। (সহীহ বুখারী)
যেমন অনেক সময় আমরা বলে থাকি। এ বছরটি-ই খারাপ বা আজকের দিনটি-ই মন্দ বা আজকের আবহাওয়াটা খুবই খারাপ ইত্যাদি বলা যাবে না।
ছবি ও মূর্তি বানানো মুশরিকী কাজ
আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : মহান আল্লাহ বলেন : “ঐ ব্যক্তির থেকে কে বড় যালিম হতে পারে, যে আমার মত মাখলুক সৃষ্টি করতে চায়? (এতই যদি পারে) তাহলে তারা যেন অণু সৃষ্টি করে অথবা একটি শস্য তৈরী করে অথবা যেন একটি যব তৈরী করে।” (সহীহ বুখারী)।
সলাত পরিত্যাগ করা শির্ক
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, মুসলিম ব্যক্তি এবং মুশরিক ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হল সলাত পরিত্যাগ করা। অর্থাৎ সলাত পরিত্যাগকারী মুশরিক ও কাফির। (সহীহ মুসলিম)।
নিজের মত বা প্রবৃত্তি অনুসরণ করা শির্ক
আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে? তবুও কি তার যিম্মাদার হবেন? (সূরা ফুরকান ২৫ : ৪৩)।
পিতা না হওয়া সত্ত্বেও পিতা দাবী করা কুফরী ও হারাম
সায়াদ ও আবূ বাকরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) হতে বর্ণিত; উভয়ে বলেন আমার দু'কান শুনেছে এবং আমার অন্তর সংরক্ষণ করেছে, মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অপরকে স্বীয় পিতা বলে দাবি করে অথচ সে ভালোভাবেই জানে যে সে তার পিতা নয় তার জন্য জান্নাত হারাম। (সহীহ মুসলিম)
পিতা-মাতাকে গালি দেয়া এবং তাদের নাফরমানী করা সবচেয়ে বড় অপরাধ
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : কোন ব্যক্তি পিতা-মাতাকে গালি দিলে তা কবীরা বা বড় গুনাহের অন্তর্ভূক্ত হবে। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল কোন ব্যক্তি কি তার পিতা-মাতাকে গালী দেয়? রসূল (ﷺ) বললেন, হ্যা, লোক কোন ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয় আর সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং তার মাতাকে গালি দেয়, সেও তার মাতাকে গালি দেয়। (সহীহ মুসলিম)
কারও সম্মানে দাঁড়ানো
আবু উমামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) লাঠির উপর ভর করে বের হলেন। আমরা তার জন্য দাঁড়ালাম। তিনি বললেন, অনারবগণ একে অপরকে সম্মান করার জন্য যেভাবে দাঁড়ায় তোমরা সেভাবে দাঁড়িও না। (আবু দাউদ)
গানের মাধ্যমে শির্ক
এক শ্রেণীর মানুষ গানের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে শরীক করে থাকে, তারা গানের মাধ্যমে নবী (ﷺ) -কে স্রষ্টার আসনে বসিয়ে দেয়। তারা গানের মাধ্যমে বলে:
নবী মোর পরশমণি নবী মোর শোনার খনি
নবী নাম জপে যে জন, সেই তো দোজাহানের ধনী
প্রিয় পাঠক! জপ বা যিকর শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আর এই জপ নবীগণের জন্য নয়। কেউ যদি আল্লাহর নামের ন্যায় নবীগণের নাম ধরে জপ বা যিকর করে তবে সে অবশ্যই আল্লাহর সাথে শির্ক বা অংশীদার স্থাপন করল এবং সে মুশরিক বলে পরিগণিত হল।
তেমনিভাবে কেউ যদি বলে:
আহমাদেরই মীমের পর্দা তুলে দেরে মন
দেখবি সেথা বিরাজ করে আহাদ নিরাঞ্জন
অর্থাৎ তারা বলতে চায় আহমাদ শব্দের থেকে মীম অক্ষরটি বাদ দিলে আহাদ শব্দ থাকে। আর আহাদ হল আল্লাহর নাম। তারা বলতে চায় আহমাদ ও আহাদ একজনই। এভাবে তারা সৃষ্টিকে মুহাম্মাদ -কে] স্রষ্টার আসনে বসিয়ে স্পষ্ট শির্ক করে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ নবী (ﷺ) -কে লক্ষ্য করে বলেছেন : বল! আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি ওয়াহী প্রেরিত হয় যে, তোমাদের রব তো একই রব। সুতরাং যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে সে যেন নেক কাজ করে এবং তার রবের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ : ১১০)
নবী (ﷺ) -কে নূরের তৈরী মনে করা শির্ক
এক শ্রেণীর মানুষ বলে, নবী -কে তৈরী না করলে আল্লাহ কিছুই তৈরী করতেন না। আল্লাহ নবী (ﷺ) -কে তাঁর নিজের নূর দিয়ে তৈরী করেছেন, নবী (ﷺ) নূরের তৈরী। আর নবী (ﷺ) -এর নূরে সমস্ত জগত তৈরী। সর্বপ্রথম আল্লাহ নবী (ﷺ) -কে তাঁর নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, এভাবে তারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে থাকে। সহীহ হাদীসে রয়েছে আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে লিখতে বলেন।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম ও মাছ সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর কলমকে বলেছেন: লিখ, কলম বলল কি লিখব? আল্লাহ বললেন, কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে সব লিখ। (আহমাদ, তিরমিযী)।
আর নবী (ﷺ)-কে আল্লাহ মাটির তৈরী আদমের থেকে স্বাভাবিক মানুষটির যে নিয়ম আল্লাহ করেছেন সে পদ্ধতিতেই মা আমিনার গর্ভে আব্দুল্লাহর ঔরষের মাধ্যমে পৃথিবীতে আগমন ঘটিয়েছেন। তিনি মাটির তৈরী বলেই অন্যান্য মানুষের মতই ভূমিষ্ট হয়েছেন। তবে আল্লাহ তাঁকে চল্লিশ বৎসর বয়সে শেষ নবী ও রসূল বানিয়েছেন, রিসালাতের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁর নিকট আল্লাহর ওয়াহী আসত, কুরআন মাজীদ তাঁর প্রতি নাযিল হয়েছে। তাঁর পরও তিনি মানুষ ছিলেন এবং আল্লাহর একজন বান্দা ছিলেন। যার স্বীকৃতি আমরা সর্বদা দিয়ে থাকিতিনি আল্লাহর বান্দা ও রসূল। মহান আল্লাহ বলেনঃ
বল! আমি তোমাদের মতই একজন মাটির মানুষ। আমার নিকট ওয়াহী আসে, তোমাদের রবই একমাত্র রব। (সূরা কাহফ ১৮ : ১১০)
মিলাদে শির্ক:
একদল মানুষ নবী (ﷺ) -এর নামে মিলাদ নামক বিদ’আত অনুষ্ঠানের মধ্যে চেয়ার খালি রাখে এবং ধারণা রাখে যে, নবী (ﷺ) এসে চেয়ারে বসেন। আবার তারা হঠাৎ করে মিলাদের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়েন এবং ধারণা রাখে যে, নবী (ﷺ) -এর রুহ মোবারক মিলাদ মাহফিলে হাযির হয়ে থাকে। তাই দাঁড়াতে হয়। একই দিনে একই সাথে হাজার স্থানে মিলাদ হয়ে থাকে সকল স্থানে যাওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই, তিনি ব্যতীত এ ক্ষমতা আর কারও নেই। মহান আল্লাহ বলেন :
নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে ক্ষমতা রাখেন। (সূরা বাকারা ২ : ১০৯)
আর রসূল (ﷺ) তো মৃত্যুবরণ করেছেন, যার মৃত্যুকে প্রথমে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)ও অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে মানতে পারেননি। অতঃপর আবু বাকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এসে নবী (ﷺ)-এ মৃত্যুর স্বপক্ষে এ আয়াত পাঠ করেন।
মুহাম্মাদ একজন রসূল ছাড়া কিছু নয়, তাঁর পূর্বে বহু রসুল গত হয়েছেন, যদি তিনি মারা যান কিংবা নিহত হন তবে কি তোমরা পশ্চাদবরণ করবে? এবং কেউ পিছুটান হলে কখনো সে আল্লাহর ক্ষতি করতে সামান্যও সক্ষম হবে না; আল্লাহ কৃতজ্ঞদের সত্ত্বর পুরস্কার দিবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩: ১৪৪)
অতএব যারা নবী (ﷺ) -কে মিলাদে উপস্থিত মনে করবে তারা অত্র আয়াতকে অস্বীকার করবে। রসূলকে আল্লাহর মত সকল স্থানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষমতা মেনে নেয়া শির্ক হবে। আর নবী (ﷺ) তো জানেন না যে, কোথায় কোথায়। মিলাদ হচ্ছে। কেননা তিনি গায়েবের খবর জানেন না। মহান আল্লাহর কুরআন মাজীদে রসূল (ﷺ) -এর দ্বারা ঘোষণা করান :
আমি যদি ইলমে গায়েব জানতাম, তাহলে আমি অধিক কল্যাণ অর্জন করে নিতাম এবং অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করত না। (সূরা আ'রাফ ৭ : ১৮৮)
হে নবী বল! আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে যা আছে আল্লাহ ব্যতীত তাদের গায়েব কেউ জানে না। (সূরা আন নামল ২৭ : ৬৫)।
হে রসূল! এদেরকে বল, ভবিষ্যতে আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে আমি তা জানি না। (সূরা আহকাফ ৪৬ : ৯)।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : আল্লাহর শপথ! আমি জানি না, আমি আল্লাহর রসূল। হওয়া সত্ত্বেও আমার সাথে কি করা হবে। মুসনাদে আহমাদ, বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে- আমি আল্লাহর রসূল হওয়া সত্ত্বেও কি করা হবে তা আমি জানি না। অতএব গায়েবের ইলম বা জ্ঞান একমাত্র আল্লাহই জানেন। এ ইলম নবী (ﷺ) -এর সাথে সম্পৃক্ত করলে আল্লাহর সাথে শরীক হবে এবং শির্ক করা হবে।
এমনিভাবে মিলাদে কিয়াম করলে উক্ত আয়াতের অস্বীকারের দরুন কাফির হতে হবে এবং রসূলকে সবস্থানে হাযির জানার মাধ্যমে শির্ক হবে এবং কিয়ামের মধ্যে এ ধরনের কিয়াম তথা শের বা কবিতা বলা শির্ক। যেমন বলা হয়ে থাকে তিনি তো আরশে এসে খোদারূপে ছিলেন, মদীনায় নেমে মোস্তফা হয়ে গেলেন। (নাউযুবিল্লাহ) অর্থাৎ যিনি আল্লাহ ছিলেন, তিনি মদিনায় এসে মুস্তফা হয়ে গেলেন। (নাউযুবিল্লাহ)। এ ধরনের কবিতা গান ইত্যাদি মিলাদের মধ্যে শির্ক সংঘটিত হয়ে থাকে। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমীন।
আমার তৃষ্ণা পেয়েছে। এখন যদি আমি সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি পানি' করে চিৎকার করতে থাকি, তবে তাতে কি পিপাসা মিটবে? কিন্তু এক গ্লাস পানি নিয়ে যদি পান করি, তবেই মিটবে। অনুরূপভাবে শুধু মুখে মুখে কালিমা উচ্চারণ করলাম আর সে অনুযায়ী কাজ করলাম না তাহলেও প্রকৃত মুসলিম হওয়া যাবে না।
“আল্লাহ তাআলা ঈমানদার ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল খরিদ করেছেন এবং তার বিনিময়ে তাদের জন্য জান্নাত নিদিষ্ট করে রেখেছেন।” (সূরা আত তাওবা, ৯ : ১১১)।
“আল্লাহ তাআলা ঈমানদার ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল খরিদ করেছেন এবং তার বিনিময়ে তাদের জন্য জান্নাত নিদিষ্ট করে রেখেছেন।” (সূরা আত তাওবা, ৯ : ১১১)।
আমরা যেভাবে কালিমা পড়ি আর সাপুড়েরা যেভাবে সাপের মন্ত্র পড়ে এই দুই পড়ার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। সাপুড়েদের যেমন সাপের মত্রের কোন অর্থ জানার দরকার হয় না শুধু মন্ত্র পড়ে ঝাড়-ফুক করলেই বিষ নেমে যায়, আমাদের যেন তেমনই কালিমার অর্থ জানার কোন দরকার হয় না। আমরা মনে করি, বিষ নামানো মন্ত্র পড়ে ঝাড়-ফুক করলে যেমন সাপের বিষ নামতে বাধ্য ঠিক তেমনই কালিমা পড়লে জাহান্নামের আগুন নিভে যেতে বাধ্য। আসলে এটা আমাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যেমন কোন বাংলাভাষীকে যদি আরবীতে খবর দেয়া হয় যে, “মাতাত উম্মুক”। তবে তার মধ্যে কোনই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না, কিন্তু যদি ঐ খবরটাকেই বাংলায় বলা হয় যে, তোমার মা মারা গেছেন তাহলে সে যে অস্থির হয়ে কান্না শুরু করবে তা কোন শব্দের কারণে নয়, তা বোধগম্য অর্থবোধক শব্দের মাধ্যমে পাওয়া খবরের কারণে।
তাহলে এর থেকে বুঝা গেল অর্থ না বুঝে মা মরা সংবাদ শুনলে যেমন সে মায়ের সন্তানের মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না তেমন অর্থ না বুঝে কালিমা পড়লেও সে কালিমা পড়া মুসলিমের মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না। মুসলিম হওয়া ও মুসলিম থাকার জন্য কালিমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন যে কত প্রয়োজন তা অর্থ না জানলে কিছুতেই বুঝে আসতে পারে না এবং সে অর্থ হালকাভাবে জানলেও চলবে না, জানতে হবে স্পষ্টভাবে ও পূর্ণ ব্যাখ্যা সহকারে।
তাহলে এর থেকে বুঝা গেল অর্থ না বুঝে মা মরা সংবাদ শুনলে যেমন সে মায়ের সন্তানের মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না তেমন অর্থ না বুঝে কালিমা পড়লেও সে কালিমা পড়া মুসলিমের মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না। মুসলিম হওয়া ও মুসলিম থাকার জন্য কালিমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন যে কত প্রয়োজন তা অর্থ না জানলে কিছুতেই বুঝে আসতে পারে না এবং সে অর্থ হালকাভাবে জানলেও চলবে না, জানতে হবে স্পষ্টভাবে ও পূর্ণ ব্যাখ্যা সহকারে।
রসূল যখন কালিমা প্রচার শুরু করলেন তখন তিনি দেখলেন তৎকালিন মানুষের মধ্যে ধর্ম সম্পৰ্কীয় কিছু আকীদা বিশ্বাস রয়েছে। তিনি দেখলেন মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর যারা উম্মত বলে দাবী করত সে ইহুদীরা বিশ্বাস করতো যে আল্লাহ তাদের জন্যই জান্নাত তৈরী করেছেন, আর জাহান্নাম তৈরী করেছেন ইহুদীদের যারা শত্র তাদের জন্য। তারা মনে করে, যেহেতু তাদের বংশে অনেক নবী রসূল সৃষ্টি হয়েছেন তাই জান্নাত তাদের বংশের লোকদের জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন। প্রকালে তাদের ভয়ের কোন কারণই নেই তারা কর্মফল সম্পর্কে বিশ্বাস করে যে কর্মফল পরকালে নয়, পৃথিবীতে।
পরকালে তাদের জন্য ভয়ের কোন কারণ নেই এই বিশ্বাসই তাদেরকে বেপরোয়া করে গড়ে তুলল। আর পরকালের ভয় দূর হয়ে গেলে তারা হয়ে পড়ে শক্ত যালিম। কাজেই তারা যালিমও হয়ে পড়ল স্বাভাবিক নিয়মেই। আর এ জন্যই তাদের উপর নেমে এলো আল্লাহর গজব।
খৃষ্টানরা বিশ্বাস করত, যারাই ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে আল্লাহর ছেলে ও শেষ রসূল হিসেবে মেনে নেবে তাদের জন্য পরকালে আর কোন ভয় নেই। কারণ - তাদের বিশ্বাস যে ঈসা (আলাইহিস সালাম) নিজে শলে বিদ্ধ হয়ে তাঁর সমস্ত উম্মতের গুনাহের শাস্তি নিজেই ভোগ করেছেন। কাজেই তাঁর উম্মতের আর কোন ভয় থাকার কথা নয়। এই বিশ্বাস তাদেরকেও নির্ভীক করে গড়ে তুলল। আর তাদের ২য় বিশ্বাস ছিল যে, মানুষের জীবনের দু’টি অংশ।
১ম) দ্বীনদারী বা ধর্মীয় অংশ
২য়) দুনিয়াদারী অংশ।
তাদের এ বিশ্বাস এখনও রয়েছে যে মানুষ দুই মহাপ্রভুর অধীন, যথা ১) ধর্মীয় প্রধান ও ২) রাষ্ট্রীয় প্রধান। রাষ্ট্রপ্রধান শুধু রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলবেন, তিনি ধর্ম ব্যবস্থার উপরে কোন কথা বলতে পারবেন না। আর যিনি ধর্মপ্রধান তিনি ধর্মীয় ব্যাপারেই কথা বলতে পারবেন তিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। এই আকীদার কারণে তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা হলো ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
তারা মনে করে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলার জন্যে এটাই উত্তম পথ এবং এ পথেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে। তাদের বিশ্বাস যে, রাষ্ট্রের কোন আইন কানুনের ক্ষেত্রে ধর্মপ্রধান যদি বাধার সৃষ্টি করে তা যদি রাষ্ট্রপ্রধান মেনে নিতে না পারে তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান ও ধর্মপ্রধানের মধ্যে সৃষ্টি হবে দ্বন্দ্ব। আর সে দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়বে গোটা জাতির মধ্যে, ফলে শান্তি ব্যহত হবে চরমভাবে। কাজেই তারা তাদের আকীদা বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনের দুই অংশের জন্যে দুই মহা প্রভু ঠিক করে নিয়েছে এবং তাদের কাজের বা অধিকারের একটা সীমানা তাদের কোন প্রভুই অতিক্রম করতে পারবে না।
কিন্তু ইসলাম এই দুই জাতির কোন ধারণার সঙ্গেই একমত নয়। না ইহুদীদের সঙ্গে আর না খৃষ্টানদের সঙ্গে। মুসলিমদের ধারণা কর্মের জন্য এ দুনিয়া আর কর্মফল পরকালে। মুসলিমদের বিশ্বাস একজনের পাপের শাস্তি অপরে ভোগ করবে না। প্রভু আমাদের একাধিক নয়, তিনি একাই একমাত্র প্রভু। এই কথারই জোরাল স্বীকারোক্তি হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবায়।
মুসলিমদের বিশ্বাস যে, মানুষ যদি দুই প্রভুকে প্রভু হিসেবে মেনে নেয় তাহলে জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে দুই প্রভুর নির্দেশ যদি দুই প্রকার হয়ে যায় তাহলে একই সঙ্গে দুই প্রকার নির্দেশ মেনে চলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। যেমন এক প্রভু যদি বলেন রাস্তার ডান পাশ দিয়ে চলতে আর অন্য প্রভু যদি বলেন রাস্তার বাম পাশ দিয়ে চলতে তাহলে চলব কোন পাশ দিয়ে? যে পাশ দিয়েই চলি না কেন তাতে এক প্রভুর নির্দেশ অমান্য করা হবেই। এজন্যে মুসলিম কখনও দুই প্রভু মানে না। এটারই স্বীকারোক্তি রয়েছে কালিমা তাইয়্যিবার মধ্যে।
তাছাড়া যুক্তি হচ্ছে এই যে একই চাকর যেমন দুই মুনিবের চাকুরী একই সঙ্গে করতে পারে না এবং একজন স্ত্রী যেমন একই সঙ্গে দুজন স্বামীর স্ত্রী হতে পারে না। কারণ এখানে আনুগত্যের প্রশ্ন রয়েছে। ঠিক তেমনই কোন মানুষ একই সঙ্গে দুই মহাপ্রভুর বান্দা হতে পারে না। এই কথাগুলোই অত্যন্ত সহজ ভাষায় আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় মাত্র ২৪টি অক্ষরের তৈরী ৭টি শব্দ দ্বারা গঠিত কালিমা তাইয়্যিবার মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে।
পরকালে তাদের জন্য ভয়ের কোন কারণ নেই এই বিশ্বাসই তাদেরকে বেপরোয়া করে গড়ে তুলল। আর পরকালের ভয় দূর হয়ে গেলে তারা হয়ে পড়ে শক্ত যালিম। কাজেই তারা যালিমও হয়ে পড়ল স্বাভাবিক নিয়মেই। আর এ জন্যই তাদের উপর নেমে এলো আল্লাহর গজব।
খৃষ্টানরা বিশ্বাস করত, যারাই ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে আল্লাহর ছেলে ও শেষ রসূল হিসেবে মেনে নেবে তাদের জন্য পরকালে আর কোন ভয় নেই। কারণ - তাদের বিশ্বাস যে ঈসা (আলাইহিস সালাম) নিজে শলে বিদ্ধ হয়ে তাঁর সমস্ত উম্মতের গুনাহের শাস্তি নিজেই ভোগ করেছেন। কাজেই তাঁর উম্মতের আর কোন ভয় থাকার কথা নয়। এই বিশ্বাস তাদেরকেও নির্ভীক করে গড়ে তুলল। আর তাদের ২য় বিশ্বাস ছিল যে, মানুষের জীবনের দু’টি অংশ।
১ম) দ্বীনদারী বা ধর্মীয় অংশ
২য়) দুনিয়াদারী অংশ।
তাদের এ বিশ্বাস এখনও রয়েছে যে মানুষ দুই মহাপ্রভুর অধীন, যথা ১) ধর্মীয় প্রধান ও ২) রাষ্ট্রীয় প্রধান। রাষ্ট্রপ্রধান শুধু রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলবেন, তিনি ধর্ম ব্যবস্থার উপরে কোন কথা বলতে পারবেন না। আর যিনি ধর্মপ্রধান তিনি ধর্মীয় ব্যাপারেই কথা বলতে পারবেন তিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। এই আকীদার কারণে তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা হলো ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
তারা মনে করে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলার জন্যে এটাই উত্তম পথ এবং এ পথেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে। তাদের বিশ্বাস যে, রাষ্ট্রের কোন আইন কানুনের ক্ষেত্রে ধর্মপ্রধান যদি বাধার সৃষ্টি করে তা যদি রাষ্ট্রপ্রধান মেনে নিতে না পারে তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান ও ধর্মপ্রধানের মধ্যে সৃষ্টি হবে দ্বন্দ্ব। আর সে দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়বে গোটা জাতির মধ্যে, ফলে শান্তি ব্যহত হবে চরমভাবে। কাজেই তারা তাদের আকীদা বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনের দুই অংশের জন্যে দুই মহা প্রভু ঠিক করে নিয়েছে এবং তাদের কাজের বা অধিকারের একটা সীমানা তাদের কোন প্রভুই অতিক্রম করতে পারবে না।
কিন্তু ইসলাম এই দুই জাতির কোন ধারণার সঙ্গেই একমত নয়। না ইহুদীদের সঙ্গে আর না খৃষ্টানদের সঙ্গে। মুসলিমদের ধারণা কর্মের জন্য এ দুনিয়া আর কর্মফল পরকালে। মুসলিমদের বিশ্বাস একজনের পাপের শাস্তি অপরে ভোগ করবে না। প্রভু আমাদের একাধিক নয়, তিনি একাই একমাত্র প্রভু। এই কথারই জোরাল স্বীকারোক্তি হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবায়।
মুসলিমদের বিশ্বাস যে, মানুষ যদি দুই প্রভুকে প্রভু হিসেবে মেনে নেয় তাহলে জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে দুই প্রভুর নির্দেশ যদি দুই প্রকার হয়ে যায় তাহলে একই সঙ্গে দুই প্রকার নির্দেশ মেনে চলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। যেমন এক প্রভু যদি বলেন রাস্তার ডান পাশ দিয়ে চলতে আর অন্য প্রভু যদি বলেন রাস্তার বাম পাশ দিয়ে চলতে তাহলে চলব কোন পাশ দিয়ে? যে পাশ দিয়েই চলি না কেন তাতে এক প্রভুর নির্দেশ অমান্য করা হবেই। এজন্যে মুসলিম কখনও দুই প্রভু মানে না। এটারই স্বীকারোক্তি রয়েছে কালিমা তাইয়্যিবার মধ্যে।
তাছাড়া যুক্তি হচ্ছে এই যে একই চাকর যেমন দুই মুনিবের চাকুরী একই সঙ্গে করতে পারে না এবং একজন স্ত্রী যেমন একই সঙ্গে দুজন স্বামীর স্ত্রী হতে পারে না। কারণ এখানে আনুগত্যের প্রশ্ন রয়েছে। ঠিক তেমনই কোন মানুষ একই সঙ্গে দুই মহাপ্রভুর বান্দা হতে পারে না। এই কথাগুলোই অত্যন্ত সহজ ভাষায় আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় মাত্র ২৪টি অক্ষরের তৈরী ৭টি শব্দ দ্বারা গঠিত কালিমা তাইয়্যিবার মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে।
মানুষ একটি কালিমা পাঠ করে ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশ করে থাকে। সেই কালিমাটি খুব লম্বা-চওড়া কিছু নয় কয়েকটি শব্দ মাত্র। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ” এ কয়টি শব্দ মুখে উচ্চারণ করলেই মানুষ একেবারে বদলে যায়। ফলে পূর্বে সে নাপাক ছিল, এখন সে পাক হয়ে গেল। পূর্বে তার উপর আল্লাহর আযাব আসতে পারতো; কিন্তু এখন সে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে গেল। প্রথমে সে জাহান্নামে যাবার যোগ্য ছিল, এখন জান্নাতের দরজা তার জন্য খুলে গেল।
শুধু এটুকুই নয়, এ ‘কালিমা’র দরুন মানুষে মানুষের বড় পার্থক্য হয়ে পড়ে। এ ‘কালিমা’ যারা পড়ে তারা এক উম্মাত আর যারা এটা অস্বীকার করে তারা হয় আলাদা এক জাতি। পিতা যদি কালিমা’ পড়ে আর পুত্র যদি তা অস্বীকার করে তবে পিতা আর পিতা থাকবে না, পুত্র আর পুত্র বলে গণ্য হবে। পিতার সম্পত্তি হতে সেই পুত্র কোনো অংশই পাবে না, তার নিজের মা ও বোন পর্যন্ত তাকে দেখা দিতে ঘৃণা করবে। পক্ষান্তরে একজন বিধর্মী যদি কালিমা পড়ে, আর ঐ ঘরের মেয়ে বিয়ে করে, তবে সে এবং তার সন্তান ঐ ঘর হতে সম্পত্তি পাবে।
কিন্তু নিজ ঔরসজাত সন্তান শুধু এ ‘কালিমা’কে অস্বীকার করার কারণেই একেবারে পর হয়ে যাবে। এটা দ্বারা বুঝতে পারা যায় যে, এ ‘কালিমা এমন জিনিস যা পর লোককে আপন করে একত্রে মিলিয়ে দেয়। আর আপন লোককে পর করে পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন করে।
একটু ভেবে দেখি
একটু ভেবে দেখি মানুষে মানুষে এতবড় পার্থক্য হওয়ার প্রকৃত কারণ কী? ‘কালিমা’তে কয়েকটা অক্ষর ছাড়া আর কী-ই বা রয়েছে? কাফ, লাম, মীম, আলিফ, সীন আর এ রকমেরই কয়েকটা অক্ষর ছাড়া আর তো কিছুই নয়। এ অক্ষরগুলো যুক্ত করে মুখে উচ্চারণ করলেই কোন যাদুর স্পর্শে মানুষ এতখানি বদলে যায়! শুধু এতটুকু কথা দ্বারা কি মানুষের পরস্পরের মধ্যে এত আকাশ পাতাল পার্থক্য হতে পারে? একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারবো আমাদের বিবেক-বুদ্ধি বলে উঠবে যে, কয়েকটা অক্ষর মিলিয়ে মুখে উচ্চারণ করলেই এতবড় ক্রিয়া কিছুতেই হতে পারে না।
মূর্তিপূজক মুশরিকগণ অবশ্য মনে করে যে, একটা মন্ত্র পড়লেই পাহাড় টলে যাবে। যমীন ফেটে যাবে এবং তা হতে পানি উথলে ওঠবে! মন্ত্রের কোনো অর্থ কেউ অবগত হোক বা না-ই হোক, তাতে কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি নেই। কারণ অক্ষরের মধ্যেই যাবতীয় শক্তি নিহিত আছে বলে তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে।
কাজেই তা মুখে উচ্চারিত হলেই সকল রহস্যের দুয়ার খুলে যাবে। কিন্তু ইসলামে এরূপ ধারণার কোনোই মূল্য নেই। এখানে আসল জিনিস হচ্ছে অর্থ; শব্দের মধ্যে যা কিছু ক্রিয়া আছে, তা অর্থের দরুনই হয়ে থাকে। শব্দের কোনো অর্থ না হলে, তা মনের মূলের সাথে গেঁথে না গেলে এবং তার ফলে মানুষের চিন্তাধারা, বিশ্বাস, চরিত্র ও তার কাজ-কর্মে পরিবর্তন না ঘটলে, শুধু শব্দের উচ্চারণ করলেই কোনো লাভ নেই।
একটি উদাহরণ
একথাটি সহজ উদাহরণ দ্বারা বুঝানো যাক। মনে করি, আমার ভয়ানক শীত লাগছে। এখন আমি যদি মুখে লেপ-তোষক' লেপ-তোষক’ করে চিৎকার করতে শুরু করি, তবে শীত লাগা বিছুমাত্র কমবে না। সারা রাত বসে লেপ তোষক’ বলে হাজার তাসবীহ পড়লেও কোনো ফল ফলবে না। অবশ্য আমি লেপ-তোষক যোগাড় করে যদি গায়ে দিতে পারি তবে শীত লাগা নিশ্চয় বন্ধ হয়ে যাবে। এরূপে মনে করি, আমার তৃষা লেগেছে। এখন যদি আমি সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি পানি করে চিৎকার করতে থাকি, তবে তাতে পিপাসা মিটবে না। কিন্তু এক গ্লাস পানি নিয়ে যদি পান করি, তবে আমার পিপাসা মিটবে।
মনে করি, আমার অসুখ হয়েছে; এখন যদি আমি ‘ঔষধ’ ‘ঔষধ’ করে তাসবীহ পাঠ শুরু করি, আমার রোগ তাতে দূর হবে না। হাঁ যদি ঠিক ঔষধ কিনে তা সেবন করি, আমার রোগ সেরে যাবে। কালিমার অবস্থাও ঠিক এটাই। শুধু ছয়-সাতটি শব্দ মুখে বলে দিলেই এত বড় পার্থক্য হতে পারে না, যে মানুষ কাফির ছিল সে এর দরুন একেবারে মুসলিম হয়ে যাবে, নাপাক হতে পাক হবে, শত্ৰ একেবারে বন্ধু হয়ে যাবে, জাহান্নামী ব্যক্তি একেবারে জান্নাতী হয়ে যাবে। মানুষে মানুষে এরূপ পার্থক্য হয়ে যাওয়ার একটি মাত্র উপায় আছে। তা এই যে, প্রথমে এ শব্দগুলোর অর্থ বুঝে নিতে হবে, সেই অর্থ যাতে মানুষের মনের মূলে শিকড় গাড়তে পারে, সেজন্য চেষ্টা করতে হবে।
এভাবে অর্থ জেনে ও বুঝে যখন এটা মুখে উচ্চারণ করবো, তখনই আমরা বুঝতে পারবো যে, এ ‘কালিমা পড়ে আমরা আমাদের আল্লাহর সামনে কত বড় কথা স্বীকার করেছি, আর এর দরুন আমাদের উপর কত বড় দায়িত্ব এসে পড়েছে। এসব কথা বুঝে শুনে যখন আমরা ‘কালিমা পড়বো, তখন আমাদের চিন্তা এবং আমার সমস্ত জীবনের উপর এ ‘কালিমা’র পূর্ণ আধিপত্য স্থাপিত হবে। এর উপর এ ‘কালিমা’র বিরোধী কোনো কথা আমাদের মন ও মগজে একটুও স্থান পেতে পারে না। চিরকালের তরে আমাদের একথাই মনে করতে হবে যে, এ ‘কালিমার বিপরীত যা তা মিথ্যা- এ ‘কালিমাই একমাত্র সত্য। আমাদের জীবনের সমস্ত কাজ-কারবারে এ 'কালিমা’ই হবে একমাত্র হুকুমদাতা। এ ‘কালিমা পড়ার পরে কাফিরদের মতো স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো না।
এখন এ ‘কালিমা’রই হুকুম পালন করে চলতে হবে, এটা যে কাজ করতে বলবে তাই করতে হবে এবং যে কাজের নিষেধ করবে তা হতে ফিরে থাকতে হবে। এভাবে ‘কালিমা পড়লেই মানুষে মানুষে পূৰ্বোল্লিখিতরূপে পার্থক্য হতে পারে।
শুধু এটুকুই নয়, এ ‘কালিমা’র দরুন মানুষে মানুষের বড় পার্থক্য হয়ে পড়ে। এ ‘কালিমা’ যারা পড়ে তারা এক উম্মাত আর যারা এটা অস্বীকার করে তারা হয় আলাদা এক জাতি। পিতা যদি কালিমা’ পড়ে আর পুত্র যদি তা অস্বীকার করে তবে পিতা আর পিতা থাকবে না, পুত্র আর পুত্র বলে গণ্য হবে। পিতার সম্পত্তি হতে সেই পুত্র কোনো অংশই পাবে না, তার নিজের মা ও বোন পর্যন্ত তাকে দেখা দিতে ঘৃণা করবে। পক্ষান্তরে একজন বিধর্মী যদি কালিমা পড়ে, আর ঐ ঘরের মেয়ে বিয়ে করে, তবে সে এবং তার সন্তান ঐ ঘর হতে সম্পত্তি পাবে।
কিন্তু নিজ ঔরসজাত সন্তান শুধু এ ‘কালিমা’কে অস্বীকার করার কারণেই একেবারে পর হয়ে যাবে। এটা দ্বারা বুঝতে পারা যায় যে, এ ‘কালিমা এমন জিনিস যা পর লোককে আপন করে একত্রে মিলিয়ে দেয়। আর আপন লোককে পর করে পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন করে।
একটু ভেবে দেখি
একটু ভেবে দেখি মানুষে মানুষে এতবড় পার্থক্য হওয়ার প্রকৃত কারণ কী? ‘কালিমা’তে কয়েকটা অক্ষর ছাড়া আর কী-ই বা রয়েছে? কাফ, লাম, মীম, আলিফ, সীন আর এ রকমেরই কয়েকটা অক্ষর ছাড়া আর তো কিছুই নয়। এ অক্ষরগুলো যুক্ত করে মুখে উচ্চারণ করলেই কোন যাদুর স্পর্শে মানুষ এতখানি বদলে যায়! শুধু এতটুকু কথা দ্বারা কি মানুষের পরস্পরের মধ্যে এত আকাশ পাতাল পার্থক্য হতে পারে? একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারবো আমাদের বিবেক-বুদ্ধি বলে উঠবে যে, কয়েকটা অক্ষর মিলিয়ে মুখে উচ্চারণ করলেই এতবড় ক্রিয়া কিছুতেই হতে পারে না।
মূর্তিপূজক মুশরিকগণ অবশ্য মনে করে যে, একটা মন্ত্র পড়লেই পাহাড় টলে যাবে। যমীন ফেটে যাবে এবং তা হতে পানি উথলে ওঠবে! মন্ত্রের কোনো অর্থ কেউ অবগত হোক বা না-ই হোক, তাতে কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি নেই। কারণ অক্ষরের মধ্যেই যাবতীয় শক্তি নিহিত আছে বলে তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে।
কাজেই তা মুখে উচ্চারিত হলেই সকল রহস্যের দুয়ার খুলে যাবে। কিন্তু ইসলামে এরূপ ধারণার কোনোই মূল্য নেই। এখানে আসল জিনিস হচ্ছে অর্থ; শব্দের মধ্যে যা কিছু ক্রিয়া আছে, তা অর্থের দরুনই হয়ে থাকে। শব্দের কোনো অর্থ না হলে, তা মনের মূলের সাথে গেঁথে না গেলে এবং তার ফলে মানুষের চিন্তাধারা, বিশ্বাস, চরিত্র ও তার কাজ-কর্মে পরিবর্তন না ঘটলে, শুধু শব্দের উচ্চারণ করলেই কোনো লাভ নেই।
একটি উদাহরণ
একথাটি সহজ উদাহরণ দ্বারা বুঝানো যাক। মনে করি, আমার ভয়ানক শীত লাগছে। এখন আমি যদি মুখে লেপ-তোষক' লেপ-তোষক’ করে চিৎকার করতে শুরু করি, তবে শীত লাগা বিছুমাত্র কমবে না। সারা রাত বসে লেপ তোষক’ বলে হাজার তাসবীহ পড়লেও কোনো ফল ফলবে না। অবশ্য আমি লেপ-তোষক যোগাড় করে যদি গায়ে দিতে পারি তবে শীত লাগা নিশ্চয় বন্ধ হয়ে যাবে। এরূপে মনে করি, আমার তৃষা লেগেছে। এখন যদি আমি সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি পানি করে চিৎকার করতে থাকি, তবে তাতে পিপাসা মিটবে না। কিন্তু এক গ্লাস পানি নিয়ে যদি পান করি, তবে আমার পিপাসা মিটবে।
মনে করি, আমার অসুখ হয়েছে; এখন যদি আমি ‘ঔষধ’ ‘ঔষধ’ করে তাসবীহ পাঠ শুরু করি, আমার রোগ তাতে দূর হবে না। হাঁ যদি ঠিক ঔষধ কিনে তা সেবন করি, আমার রোগ সেরে যাবে। কালিমার অবস্থাও ঠিক এটাই। শুধু ছয়-সাতটি শব্দ মুখে বলে দিলেই এত বড় পার্থক্য হতে পারে না, যে মানুষ কাফির ছিল সে এর দরুন একেবারে মুসলিম হয়ে যাবে, নাপাক হতে পাক হবে, শত্ৰ একেবারে বন্ধু হয়ে যাবে, জাহান্নামী ব্যক্তি একেবারে জান্নাতী হয়ে যাবে। মানুষে মানুষে এরূপ পার্থক্য হয়ে যাওয়ার একটি মাত্র উপায় আছে। তা এই যে, প্রথমে এ শব্দগুলোর অর্থ বুঝে নিতে হবে, সেই অর্থ যাতে মানুষের মনের মূলে শিকড় গাড়তে পারে, সেজন্য চেষ্টা করতে হবে।
এভাবে অর্থ জেনে ও বুঝে যখন এটা মুখে উচ্চারণ করবো, তখনই আমরা বুঝতে পারবো যে, এ ‘কালিমা পড়ে আমরা আমাদের আল্লাহর সামনে কত বড় কথা স্বীকার করেছি, আর এর দরুন আমাদের উপর কত বড় দায়িত্ব এসে পড়েছে। এসব কথা বুঝে শুনে যখন আমরা ‘কালিমা পড়বো, তখন আমাদের চিন্তা এবং আমার সমস্ত জীবনের উপর এ ‘কালিমা’র পূর্ণ আধিপত্য স্থাপিত হবে। এর উপর এ ‘কালিমা’র বিরোধী কোনো কথা আমাদের মন ও মগজে একটুও স্থান পেতে পারে না। চিরকালের তরে আমাদের একথাই মনে করতে হবে যে, এ ‘কালিমার বিপরীত যা তা মিথ্যা- এ ‘কালিমাই একমাত্র সত্য। আমাদের জীবনের সমস্ত কাজ-কারবারে এ 'কালিমা’ই হবে একমাত্র হুকুমদাতা। এ ‘কালিমা পড়ার পরে কাফিরদের মতো স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো না।
এখন এ ‘কালিমা’রই হুকুম পালন করে চলতে হবে, এটা যে কাজ করতে বলবে তাই করতে হবে এবং যে কাজের নিষেধ করবে তা হতে ফিরে থাকতে হবে। এভাবে ‘কালিমা পড়লেই মানুষে মানুষে পূৰ্বোল্লিখিতরূপে পার্থক্য হতে পারে।
এখন ‘কালিমা’র অর্থ কি, তা পড়ে মানুষ কী কথা স্বীকার করে, আর তা স্বীকার করলেই মানুষ কোন বিধান মত চলতে বাধ্য হয় প্রভৃতি বিষয় আলোচনা করা যাক। “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রসূল বা প্রেরিত পুরুষ।” কালিমার মধ্যে যে ইলাহ' শব্দটি রয়েছে, এর অর্থ হচ্ছে মালিক, সৃষ্টিকর্তা, মানুষের জন্য বিধান রচনাকারী, মানুষের দু'আ যিনি শোনেন এবং গ্রহণ করেন। তিনিই উপাসনা পাবার একমাত্র উপযুক্ত। এখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়লে তার অর্থ হবে যে, আমি প্রথম স্বীকার করলাম। এ দুনিয়া আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টি হতে পারেনি, এর সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই বর্তমান আছেন, আর সেই সৃষ্টিকর্তা একাধিক নন- মাত্র একজন। তিনি ছাড়া আর কারোও প্রভুত্ব কোথাও নেই;
দ্বিতীয়ত ‘কালিমা পড়ে আমি স্বীকার করলাম যে, সেই এক আল্লাহ-ই মানুষের ও সারা জাহানের মালিক। আমি ও আমার প্রত্যেকটি জিনিস এবং দুনিয়ার প্রত্যেকটি বস্তুই তাঁর। সৃষ্টিকর্তা তিনি, রিযিকদাতা তিনি, জীবন ও মৃত্যু তাঁরই হুকুম মত হয়ে থাকে। সুখ ও বিপদ তাঁরই কাছ হতে আসে। মানুষ যা কিছু পায়, তাঁরই কাছ হতে পায়- সকল কিছুর দাতা প্রকৃতপক্ষে তিনি। আর মানুষ যা হারায়, তা প্রকৃতপক্ষে তিনিই কেড়ে নেন। শুধু তাঁকেই ভয় করা উচিত, শুধু তাঁরই কাছে প্রার্থনা করা উচিত, তাঁরই সামনে মাথা নত করা উচিত। কেবলমাত্র তারই ইবাদত ও বন্দেগী করা কর্তব্য। তিনি ছাড়া আমাদের মনিব, মালিক ও আইন রচনাকারী আর কেউই নেই। একমাত্র তাঁরই হুকুম মেনে চলা এবং কেবল তাঁরই আইন অনুসারে কাজ করা আমাদের আসল ও একমাত্র কর্তব্য।
‘কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে আমি আল্লাহর কাছে এ ওয়াদাই করে থাকি, আর সারা দুনিয়া এ মৌলিক অঙ্গীকারের সাক্ষী হয়ে থাকে। এর বিপরীত কাজ করলে আমার জিহ্বা, আমার হাত-পা, আমার প্রতিটি লোম এবং আকাশ ও পৃথিবীর এক একটি অনু-পরমাণু যাদের সামনে আমি এ ওয়াদা করেছিলাম আমার বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেবে। আমি সেখানে একেবারে অসহায় হয়ে পড়বো। আমার যুক্তি প্রমাণ করার জন্য একটি সাক্ষী কোথাও পাবো না। তখন কেউ আমার পক্ষ সমর্থন করার জন্য সেখানে থাকবে না। বরং স্বয়ং উকিল সাহেব কিংবা ব্যারিষ্টার সাহেব দুনিয়ার আদালতে যারা আইনের মারপ্যাচ খেলে থাকে, তারা সকলেই সেখানে আমারই মতো নিতান্ত অসহায় অবস্থায় পড়ে যাবে। সেই আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে, জাল দলীল দেখিয়ে এবং উকিলের দ্বারা মিথ্যা ওকালতী করিয়ে আমরা রক্ষা পেতে পারবো না।
দুনিয়ার পুলিশের চোখ হতে আমরা নিজেদের অপরাধ লুকাতে পারবো, কিন্তু আল্লাহর পুলিশের চোখ হতে তা গোপন করা সম্ভব নয়। দুনিয়ার পুলিশ ঘুষ খেতে পারে, আল্লাহর পুলিশ কখনও ঘুষ খায় না। দুনিয়ার সাক্ষী মিথ্যা বলতে পারে, আল্লাহর সাক্ষী সকলেই সত্যবাদী- তারা মিথ্যা বলে না। দুনিয়ার বিচারকরা অবিচার করতে পারে, কিন্তু আল্লাহ অবিচারক নন। তারপর আল্লাহ যে জেলখানায় পাপীদেরকে বন্দী করবেন, সেখান হতে পলায়ন করা কোনো মতেই সম্ভব নয়। কাজেই আল্লাহর সাথে মিথ্যা ওয়াদা করা বড় বোকামী সন্দেহ নেই। যখন আল্লাহর সামনে ওয়াদা করছি, তখন খুব ভালো করে বুঝে শুনে করতে হবে এবং তা পালন করার চেষ্টা করতে হবে, নতুবা শুধু মুখে ওয়াদা করতে আমাকে কেউ জোর করছে না। কারণ মুখে শুধু স্বীকার করার কোনো মূল্যই নেই।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলার পর বলতে হয় মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’। এর অর্থ এই যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর মধ্যস্থতায়ই আল্লাহ তাঁর আইন মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন- একথা আমরা স্বীকার করেছি।
আল্লাহকে নিজেদের মনিব, মালিক ও বাদশাহ স্বীকার করার পর একথা অবগত হওয়ার একান্ত দরকার ছিল যে,
সেই বাদশাহর আইন ও হুকুম কী?
আমরা কোন্ কাজ করলে তিনি খুশী হবেন, আর কোন্ কাজ করলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন?
কোন্ আইন অনুসরণ করলে তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন, আর কোন্ আইনের বিরোধিতা করলে তিনি আমাদেরকে শাস্তি দেবেন?
এসব জানার জন্য আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে তাঁর দূত নির্দিষ্ট করেছেন। তাঁর মধ্যস্থতায় তিনি আমাদের প্রতি তাঁর কিতাব পাঠিয়েছেন এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর আল্লাহর হুকুম মতো কিরূপে জীবনযাপন করতে হয়, তা বাস্তব ক্ষেত্রে দেখিয়ে গেছেন।
কাজেই আমরা যখন বলি, মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ তখন এর দ্বারা আমরা একথাই স্বীকার করে থাকি যে, যে আইন এবং যে নিয়ম মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, আমরা তা অনুসরণ করে চলবো। আর যে আইন এর বিপরীত হবে তাকে পদদলিত করবো। এ ওয়াদা করার পর যদি আমরা মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রচার আইনকেই ছেড়ে দেই, আর দুনিয়ার আইন অনুসরণ করে চলি তবে আমাদের চেয়ে বড় মিথ্যাবাদী ও বেঈমান আর কেউ নেই। কারণ মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রচারিত আইনকে একমাত্র সত্য আইন মেনে এবং তার অনুসরণ করে চলার অঙ্গীকার করে আমরা ইসলামের সীমার মধ্যে এসেছি। একথা স্বীকার করে আমরা মুসলিমদের ভাই হয়েছি, এরই দরুন আমরা মুসলিম পিতার উত্তরাধিকারী হতে পেরেছি। এরই বদৌলতে আমরা মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছি। এরই কারণে আমাদের সন্তান ন্যায় সন্তান হতে পেরেছে। এরই দরুন মুসলিমগণ আমাদেরকে সাহায্য করেছে, আমাদেরকে যাকাত দিয়েছে, আমাদের জান-মাল। ও মান-সম্মানের হিফাযত করার দায়িত্ব নিয়েছে।
এতসব হওয়া সত্ত্বেও যদি আমরা নিজেদের ওয়াদা ভঙ্গ করি, তবে এটা অপেক্ষা বড় বেঈমানী দুনিয়ায় আর কি হতে পারে? আমরা যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’-এর অর্থ জানি এবং জেনে-বুঝেই এটা স্বীকার করি, তাহলে সকল অবস্থাতেই আল্লাহর আইন মেনে চলা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহর আইন জারি হয়ে না থাকলেও আমাদের এটা জারি করা উচিত।
যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহর পুলিশ, সৈন্য, আদালত এবং জেলখানা কোথাও মওজুদ নেই, কাজেই তাঁর আইন লংঘন করা সহজ, আর গভর্মেন্টের পুলিশ, ফৌজ, আদালত এবং জেলখানা চারদিকে বর্তমান আছে, কাজেই তার আইন ভঙ্গ করা বড়ই মুশকিল। তবে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ভাষায়ই বলা যায় যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ কালিমা সে বুঝেনি। সে এটা দ্বারা তার আল্লাহকে, সমগ্র বিশ্বকে, সমস্ত মুসলিমকে এবং স্বয়ং নিজের মনকে ধোঁকা দিচ্ছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
দ্বিতীয়ত ‘কালিমা পড়ে আমি স্বীকার করলাম যে, সেই এক আল্লাহ-ই মানুষের ও সারা জাহানের মালিক। আমি ও আমার প্রত্যেকটি জিনিস এবং দুনিয়ার প্রত্যেকটি বস্তুই তাঁর। সৃষ্টিকর্তা তিনি, রিযিকদাতা তিনি, জীবন ও মৃত্যু তাঁরই হুকুম মত হয়ে থাকে। সুখ ও বিপদ তাঁরই কাছ হতে আসে। মানুষ যা কিছু পায়, তাঁরই কাছ হতে পায়- সকল কিছুর দাতা প্রকৃতপক্ষে তিনি। আর মানুষ যা হারায়, তা প্রকৃতপক্ষে তিনিই কেড়ে নেন। শুধু তাঁকেই ভয় করা উচিত, শুধু তাঁরই কাছে প্রার্থনা করা উচিত, তাঁরই সামনে মাথা নত করা উচিত। কেবলমাত্র তারই ইবাদত ও বন্দেগী করা কর্তব্য। তিনি ছাড়া আমাদের মনিব, মালিক ও আইন রচনাকারী আর কেউই নেই। একমাত্র তাঁরই হুকুম মেনে চলা এবং কেবল তাঁরই আইন অনুসারে কাজ করা আমাদের আসল ও একমাত্র কর্তব্য।
‘কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে আমি আল্লাহর কাছে এ ওয়াদাই করে থাকি, আর সারা দুনিয়া এ মৌলিক অঙ্গীকারের সাক্ষী হয়ে থাকে। এর বিপরীত কাজ করলে আমার জিহ্বা, আমার হাত-পা, আমার প্রতিটি লোম এবং আকাশ ও পৃথিবীর এক একটি অনু-পরমাণু যাদের সামনে আমি এ ওয়াদা করেছিলাম আমার বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেবে। আমি সেখানে একেবারে অসহায় হয়ে পড়বো। আমার যুক্তি প্রমাণ করার জন্য একটি সাক্ষী কোথাও পাবো না। তখন কেউ আমার পক্ষ সমর্থন করার জন্য সেখানে থাকবে না। বরং স্বয়ং উকিল সাহেব কিংবা ব্যারিষ্টার সাহেব দুনিয়ার আদালতে যারা আইনের মারপ্যাচ খেলে থাকে, তারা সকলেই সেখানে আমারই মতো নিতান্ত অসহায় অবস্থায় পড়ে যাবে। সেই আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে, জাল দলীল দেখিয়ে এবং উকিলের দ্বারা মিথ্যা ওকালতী করিয়ে আমরা রক্ষা পেতে পারবো না।
দুনিয়ার পুলিশের চোখ হতে আমরা নিজেদের অপরাধ লুকাতে পারবো, কিন্তু আল্লাহর পুলিশের চোখ হতে তা গোপন করা সম্ভব নয়। দুনিয়ার পুলিশ ঘুষ খেতে পারে, আল্লাহর পুলিশ কখনও ঘুষ খায় না। দুনিয়ার সাক্ষী মিথ্যা বলতে পারে, আল্লাহর সাক্ষী সকলেই সত্যবাদী- তারা মিথ্যা বলে না। দুনিয়ার বিচারকরা অবিচার করতে পারে, কিন্তু আল্লাহ অবিচারক নন। তারপর আল্লাহ যে জেলখানায় পাপীদেরকে বন্দী করবেন, সেখান হতে পলায়ন করা কোনো মতেই সম্ভব নয়। কাজেই আল্লাহর সাথে মিথ্যা ওয়াদা করা বড় বোকামী সন্দেহ নেই। যখন আল্লাহর সামনে ওয়াদা করছি, তখন খুব ভালো করে বুঝে শুনে করতে হবে এবং তা পালন করার চেষ্টা করতে হবে, নতুবা শুধু মুখে ওয়াদা করতে আমাকে কেউ জোর করছে না। কারণ মুখে শুধু স্বীকার করার কোনো মূল্যই নেই।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলার পর বলতে হয় মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’। এর অর্থ এই যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর মধ্যস্থতায়ই আল্লাহ তাঁর আইন মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন- একথা আমরা স্বীকার করেছি।
আল্লাহকে নিজেদের মনিব, মালিক ও বাদশাহ স্বীকার করার পর একথা অবগত হওয়ার একান্ত দরকার ছিল যে,
সেই বাদশাহর আইন ও হুকুম কী?
আমরা কোন্ কাজ করলে তিনি খুশী হবেন, আর কোন্ কাজ করলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন?
কোন্ আইন অনুসরণ করলে তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন, আর কোন্ আইনের বিরোধিতা করলে তিনি আমাদেরকে শাস্তি দেবেন?
এসব জানার জন্য আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে তাঁর দূত নির্দিষ্ট করেছেন। তাঁর মধ্যস্থতায় তিনি আমাদের প্রতি তাঁর কিতাব পাঠিয়েছেন এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর আল্লাহর হুকুম মতো কিরূপে জীবনযাপন করতে হয়, তা বাস্তব ক্ষেত্রে দেখিয়ে গেছেন।
কাজেই আমরা যখন বলি, মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ তখন এর দ্বারা আমরা একথাই স্বীকার করে থাকি যে, যে আইন এবং যে নিয়ম মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, আমরা তা অনুসরণ করে চলবো। আর যে আইন এর বিপরীত হবে তাকে পদদলিত করবো। এ ওয়াদা করার পর যদি আমরা মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রচার আইনকেই ছেড়ে দেই, আর দুনিয়ার আইন অনুসরণ করে চলি তবে আমাদের চেয়ে বড় মিথ্যাবাদী ও বেঈমান আর কেউ নেই। কারণ মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রচারিত আইনকে একমাত্র সত্য আইন মেনে এবং তার অনুসরণ করে চলার অঙ্গীকার করে আমরা ইসলামের সীমার মধ্যে এসেছি। একথা স্বীকার করে আমরা মুসলিমদের ভাই হয়েছি, এরই দরুন আমরা মুসলিম পিতার উত্তরাধিকারী হতে পেরেছি। এরই বদৌলতে আমরা মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছি। এরই কারণে আমাদের সন্তান ন্যায় সন্তান হতে পেরেছে। এরই দরুন মুসলিমগণ আমাদেরকে সাহায্য করেছে, আমাদেরকে যাকাত দিয়েছে, আমাদের জান-মাল। ও মান-সম্মানের হিফাযত করার দায়িত্ব নিয়েছে।
এতসব হওয়া সত্ত্বেও যদি আমরা নিজেদের ওয়াদা ভঙ্গ করি, তবে এটা অপেক্ষা বড় বেঈমানী দুনিয়ায় আর কি হতে পারে? আমরা যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’-এর অর্থ জানি এবং জেনে-বুঝেই এটা স্বীকার করি, তাহলে সকল অবস্থাতেই আল্লাহর আইন মেনে চলা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহর আইন জারি হয়ে না থাকলেও আমাদের এটা জারি করা উচিত।
যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহর পুলিশ, সৈন্য, আদালত এবং জেলখানা কোথাও মওজুদ নেই, কাজেই তাঁর আইন লংঘন করা সহজ, আর গভর্মেন্টের পুলিশ, ফৌজ, আদালত এবং জেলখানা চারদিকে বর্তমান আছে, কাজেই তার আইন ভঙ্গ করা বড়ই মুশকিল। তবে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ভাষায়ই বলা যায় যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ কালিমা সে বুঝেনি। সে এটা দ্বারা তার আল্লাহকে, সমগ্র বিশ্বকে, সমস্ত মুসলিমকে এবং স্বয়ং নিজের মনকে ধোঁকা দিচ্ছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আল্লাহ আমাদের এবং প্রত্যেক জিনিসেরই মালিক একথা আমরা স্বীকার করেছি। কিন্তু এর অর্থ কী? এর অর্থ এই যে, আমাদের জান-মাল আমাদের নিজ দেহ আল্লাহর। আমাদের হাত, কান এবং আমাদের দেহের কোনো একটা অঙ্গও আমাদের নিজের নয়। যে জমি আমরা চাষাবাদ করি, যে গাড়ি আমরা চালাই, যে বাড়িতে আমরা বসবাস করি, যেসব জিনিস-পত্র আমরা সবসময় ব্যবহার করি, এদের কোনোটাই আমাদের নিজের নয়। সবকিছুই আল্লাহর মালিকানা এবং আল্লাহর দান হিসেবেই এগুলো আমরা পেয়েছি। একথা স্বীকার করার পর আমাদের একথা বলার কি অধিকার থাকতে পারে যে, জান-প্রাণ আমার, শরীর আমার, মাল আমার, অমুক জিনিস আমার। অন্য একজনকে কোনো জিনিসের মালিক বলে ঘোষণা করার পর তার জিনিসকে আবার নিজের বলে দাবী করা সম্পূর্ণ অর্থহীন। যদি বাস্তবিকই আল্লাহকে দুনিয়ার সমস্ত জিনিসের মালিক মনে করি, তবে তা হতে আপনা আপনি দুটি জিনিস আমাদের উপর এসে পড়ে।
প্রথম এই যে, আল্লাহ-ই যখন মালিক আর তিনি তাঁর মালিকানার জিনিস আমানত স্বরূপ আমাদেরকে দিয়েছেন, তখন সেই মালিকের হুকুম মতোই আমাদের সে জিনিসগুলো ব্যবহার করতে হবে। তাঁর ইচ্ছার বিপরীত কাজ যদি এর দ্বারা করি, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা আমানতের খিয়ানত করছি। আমাদের হাত-পা পর্যন্ত সেই মালিকের ইচ্ছার বিপরীত কাজে ব্যবহার করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আমাদের চোখ দ্বারাও কোন নিষিদ্ধ জিনিস দেখতে পারি না, যা তাঁর ইচ্ছার বিপরীত। আমাদের এ জমি-জায়গাকে মালিকের বিধানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার আমাদের কোনোই অধিকার নেই। আমাদের যে স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানকে নিজেদের বলে দাবী করি, তাদেরকে আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন বলেই তারা আমাদের আপন হয়েছে।
কাজেই তাদের সাথে আমাদের ইচ্ছামত নয়- মালিকেরই আদেশ মত ব্যবহার করা কর্তব্য। তার মতের উলটা যদি ব্যবহার করি, তবে আমরা অবাধ্য বলে অভিহিত হবার যোগ্য। পরের জিনিস হরণ করলে পরের জায়গা শক্তির বলে দখল করলে আমরা তাকে বলি, যালিম; সেরূপ আল্লাহর দেয়া জিনিসকে নিজের মনে করে নিজের ইচ্ছা কিংবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোও ইচ্ছামত যদি ব্যবহার করি, তবে সেই যুলুমের অপরাধে আমরাও অপরাধী হবো। মালিকের ইচ্ছা অনুসারে কাজ করলেও যদিও আমাদের কোনো ক্ষতি হয় হোক, জান চলে যায় যাক, হাত-পা ভেংগে যায় যাক, সন্তানের ক্ষতি হয় হোক, টাকা-পয়সা ও জায়গা-জমি লস হয়ে যায় যাক, আমরা সেই জন্য কোনো দুশ্চিন্তা করবো না। জিনিসের মালিকই যদি এর ক্ষয় বা ক্ষতি পছন্দ করেন, তবে তা কার তাঁর অধিকার আছে, তবে হাঁ, মালিকের ইচ্ছার বিপরীত যদি আমরা করি, আর তাতে যদি কোনো জিনিসের ক্ষতি হয়ে পড়ে, তবে সে জন্য আমরাই অপরাধী হবো, সন্দেহ নেই। কারণ পরের জিনিস আমরা নষ্ট করেছি। আমরা আমাদের জানকে পর্যন্ত নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারি না। মালিকের ইচ্ছা অনুসারে জান কুরবানী করলে মালিকেরই হক আদায় হবে, তাঁর মতের উলটা কাজে প্রাণ দিলে মস্তবড় যুলুম করা হবে।
দ্বিতীয় কথা এই যে, মালিক যে জিনিসই আমাকে দান করেছে, তা যদি সেই মালিকের কাজেই ব্যবহার করি, তবে তার দ্বারা কারোও প্রতি কোনো অনুগ্রহ হতে পারে না- মালিকের প্রতিও নয়। এ পথে যদি আমরা কিছু দান করলাম, কোনো খেদমত করলাম, কিংবা আমাদের প্রিয়বস্তু কুরবানী করলাম, তবে তা কারোও প্রতি আমাদের একবিন্দু অনুগ্রহ নয়। আমাদের প্রতি মালিকের যে ‘হক’ ছিল এর দ্বারা শুধু তাই আদায় করলাম মাত্র। এতে গৌরব বা অহংকার করার মত কিংবা তারীফ বা প্রশংসা পাবার মতো কিছু নেই। মনে রাখতে হবে, মুসলিম ব্যক্তি মালিকের পথে কিছু খরচ করে কিংবা তার কিছু কাজ করে কিছুমাত্র গৌরব বোধ করে না, বরং সে বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে; গৌরব বা অহংকার ভাল কাজকে নষ্ট করে দেয়। যে ব্যক্তি প্রশংসা পাবার আশা করে এবং শুধু সে উদ্দেশ্যেই ভাল কাজ করে কারণ সে তার কাজের প্রতিফল এ দুনিয়াতেই পেতে চাচ্ছে, আর তাই সে পেয়েছে। নিখিল দুনিয়ার মালিক আল্লাহর অনুগ্রহ দেখি, তিনি তাঁর নিজের জিনিস আমাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেন, আর বলেন যে, এ জিনিস তোমাদের কাছ থেকে আমি ক্রয় করলাম এবং তার মূল্যও তোমাদেরকে দেব। আল্লাহু আকবার। আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের কি কোনো সীমা-পরিসীমা আছে। কুরআনে বলা হয়েছে :
إن الله اشي من المؤمنيين أنفسهم وأموالهم بأن لهة الجنة
“আল্লাহ ঈমানদার ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল খরিদ করেছেন এবং তার বিনিময়ে তাদের জন্য জান্নাত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।” (সূরা আত তাওবা ৯ : ১১১)
আমাদের সাথে মালিকের এরূপ ব্যবহার! কিন্তু আমি তার সাথে কিরূপ ব্যবহার করছি? তা একবার বিচার করে দেখি। মালিক যে বস্তু আমাদেরকে দিয়েছেন, তারপর সেই মালিক সে জিনিস মূল্য দিয়ে আমাদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন,
সে জিনিসকে আমরা অন্যের কাছে বিক্রি করছি, আর খুবই সামান্য মূল্যের। বিনিময়ে বিক্রি করছি। যার কাছে বিক্রি করছি সে মালিকের ইচ্ছার উলটা কাজে আমাদের সেসব জিনিসকে ব্যবহার করে, আর আমরা তাদেরকে আমাদের রিযিকদাতা মনে করে তাদের কাজ করে থাকি। মূলতঃ আমাদের দেহের শক্তিগুলো এমনভাবে বিক্রি করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আল্লাহদ্রোহী শক্তি যা কিছু কিনতে চায়, আমরা তাই তাদের কাছে বিক্রি করি, তা অপেক্ষা বড় দুনীর্তি আর কী হতে পারে? একবার বিক্রি করা জিনিসকে পুনরায় অন্যের কাছে বিক্রি করা আইনত এবং নীতিগতভাবে অপরাধ। দুনিয়ায় এজন্য আমার বিরুদ্ধে প্রবঞ্চনার মামলা চলতে পারে। আমরা কি মনে করি আল্লাহর আদালতে এ বিষয়ে মামলা চলবে না?
প্রথম এই যে, আল্লাহ-ই যখন মালিক আর তিনি তাঁর মালিকানার জিনিস আমানত স্বরূপ আমাদেরকে দিয়েছেন, তখন সেই মালিকের হুকুম মতোই আমাদের সে জিনিসগুলো ব্যবহার করতে হবে। তাঁর ইচ্ছার বিপরীত কাজ যদি এর দ্বারা করি, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা আমানতের খিয়ানত করছি। আমাদের হাত-পা পর্যন্ত সেই মালিকের ইচ্ছার বিপরীত কাজে ব্যবহার করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আমাদের চোখ দ্বারাও কোন নিষিদ্ধ জিনিস দেখতে পারি না, যা তাঁর ইচ্ছার বিপরীত। আমাদের এ জমি-জায়গাকে মালিকের বিধানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার আমাদের কোনোই অধিকার নেই। আমাদের যে স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানকে নিজেদের বলে দাবী করি, তাদেরকে আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন বলেই তারা আমাদের আপন হয়েছে।
কাজেই তাদের সাথে আমাদের ইচ্ছামত নয়- মালিকেরই আদেশ মত ব্যবহার করা কর্তব্য। তার মতের উলটা যদি ব্যবহার করি, তবে আমরা অবাধ্য বলে অভিহিত হবার যোগ্য। পরের জিনিস হরণ করলে পরের জায়গা শক্তির বলে দখল করলে আমরা তাকে বলি, যালিম; সেরূপ আল্লাহর দেয়া জিনিসকে নিজের মনে করে নিজের ইচ্ছা কিংবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোও ইচ্ছামত যদি ব্যবহার করি, তবে সেই যুলুমের অপরাধে আমরাও অপরাধী হবো। মালিকের ইচ্ছা অনুসারে কাজ করলেও যদিও আমাদের কোনো ক্ষতি হয় হোক, জান চলে যায় যাক, হাত-পা ভেংগে যায় যাক, সন্তানের ক্ষতি হয় হোক, টাকা-পয়সা ও জায়গা-জমি লস হয়ে যায় যাক, আমরা সেই জন্য কোনো দুশ্চিন্তা করবো না। জিনিসের মালিকই যদি এর ক্ষয় বা ক্ষতি পছন্দ করেন, তবে তা কার তাঁর অধিকার আছে, তবে হাঁ, মালিকের ইচ্ছার বিপরীত যদি আমরা করি, আর তাতে যদি কোনো জিনিসের ক্ষতি হয়ে পড়ে, তবে সে জন্য আমরাই অপরাধী হবো, সন্দেহ নেই। কারণ পরের জিনিস আমরা নষ্ট করেছি। আমরা আমাদের জানকে পর্যন্ত নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারি না। মালিকের ইচ্ছা অনুসারে জান কুরবানী করলে মালিকেরই হক আদায় হবে, তাঁর মতের উলটা কাজে প্রাণ দিলে মস্তবড় যুলুম করা হবে।
দ্বিতীয় কথা এই যে, মালিক যে জিনিসই আমাকে দান করেছে, তা যদি সেই মালিকের কাজেই ব্যবহার করি, তবে তার দ্বারা কারোও প্রতি কোনো অনুগ্রহ হতে পারে না- মালিকের প্রতিও নয়। এ পথে যদি আমরা কিছু দান করলাম, কোনো খেদমত করলাম, কিংবা আমাদের প্রিয়বস্তু কুরবানী করলাম, তবে তা কারোও প্রতি আমাদের একবিন্দু অনুগ্রহ নয়। আমাদের প্রতি মালিকের যে ‘হক’ ছিল এর দ্বারা শুধু তাই আদায় করলাম মাত্র। এতে গৌরব বা অহংকার করার মত কিংবা তারীফ বা প্রশংসা পাবার মতো কিছু নেই। মনে রাখতে হবে, মুসলিম ব্যক্তি মালিকের পথে কিছু খরচ করে কিংবা তার কিছু কাজ করে কিছুমাত্র গৌরব বোধ করে না, বরং সে বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে; গৌরব বা অহংকার ভাল কাজকে নষ্ট করে দেয়। যে ব্যক্তি প্রশংসা পাবার আশা করে এবং শুধু সে উদ্দেশ্যেই ভাল কাজ করে কারণ সে তার কাজের প্রতিফল এ দুনিয়াতেই পেতে চাচ্ছে, আর তাই সে পেয়েছে। নিখিল দুনিয়ার মালিক আল্লাহর অনুগ্রহ দেখি, তিনি তাঁর নিজের জিনিস আমাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেন, আর বলেন যে, এ জিনিস তোমাদের কাছ থেকে আমি ক্রয় করলাম এবং তার মূল্যও তোমাদেরকে দেব। আল্লাহু আকবার। আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের কি কোনো সীমা-পরিসীমা আছে। কুরআনে বলা হয়েছে :
إن الله اشي من المؤمنيين أنفسهم وأموالهم بأن لهة الجنة
“আল্লাহ ঈমানদার ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল খরিদ করেছেন এবং তার বিনিময়ে তাদের জন্য জান্নাত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।” (সূরা আত তাওবা ৯ : ১১১)
আমাদের সাথে মালিকের এরূপ ব্যবহার! কিন্তু আমি তার সাথে কিরূপ ব্যবহার করছি? তা একবার বিচার করে দেখি। মালিক যে বস্তু আমাদেরকে দিয়েছেন, তারপর সেই মালিক সে জিনিস মূল্য দিয়ে আমাদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন,
সে জিনিসকে আমরা অন্যের কাছে বিক্রি করছি, আর খুবই সামান্য মূল্যের। বিনিময়ে বিক্রি করছি। যার কাছে বিক্রি করছি সে মালিকের ইচ্ছার উলটা কাজে আমাদের সেসব জিনিসকে ব্যবহার করে, আর আমরা তাদেরকে আমাদের রিযিকদাতা মনে করে তাদের কাজ করে থাকি। মূলতঃ আমাদের দেহের শক্তিগুলো এমনভাবে বিক্রি করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আল্লাহদ্রোহী শক্তি যা কিছু কিনতে চায়, আমরা তাই তাদের কাছে বিক্রি করি, তা অপেক্ষা বড় দুনীর্তি আর কী হতে পারে? একবার বিক্রি করা জিনিসকে পুনরায় অন্যের কাছে বিক্রি করা আইনত এবং নীতিগতভাবে অপরাধ। দুনিয়ায় এজন্য আমার বিরুদ্ধে প্রবঞ্চনার মামলা চলতে পারে। আমরা কি মনে করি আল্লাহর আদালতে এ বিষয়ে মামলা চলবে না?
একটা সত্য কথা; এমন সত্য কথা যে, এ দুনিয়ায় তা অপেক্ষা অধিক সত্য কথা আর একটিও নেই। এক আল্লাহই সারাজাহানের ইলাহ, আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিসই একথার সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। মানুষ, পশু, গাছ, পাথর, বালুকণা, প্রবাহমান ঝর্ণা, উজ্জ্বল সূর্য চারদিকে বিস্তৃত এ সমস্ত জিনিসের কোনটাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেনি? আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কি এগুলোকে সৃষ্টি করেছে? তাঁর দয়া ও মেহেরবানী ছাড়া অন্য কারোও অনুগ্রহে কি এগুলো বেঁচে আছে? এদের মধ্যে কোনো একটিকেও কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জীবন বা মৃত্যু দান করতে পারে? এ সারজাহান যখন আল্লাহরই সৃষ্টি তাঁরই দয়ায় যখন এসব কিছু বর্তমান আছে এবং তিনিই যখন এসবের একমাত্র মালিক ও হুকুমদাতা, তখন যে সময়েই আমি বলবো এ পৃথিবীতে সে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোও প্রভুত্ব নেই, তৎক্ষণাৎই আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটা জিনিসই বলে ওঠবে : তুমি সত্য কথাই বলেছো, আমরা সকলেই তোমার কথার সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি।
সেই আল্লাহর সামনে যখন আমি মাথা নত করবো, বিশ্বভুবনের প্রত্যেকটি জিনিসই আমার সাথে তারই সামনে ঝুঁকে পড়বে। কারণ, ...এ সমস্ত জিনিসও একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে। আমি যখন তাঁরই হুকুম পালন করে চলবো, তখন আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিসই আমার সাথী হবে, কারণ এসবই যে একমাত্র তাঁরই অনুগত। আমি যখন তাঁর পথে চলতে শুরু করবো, তখন আমি একাকী হবো না, এ নিখিল জাহানের অগণিত ‘সৈন্য আমার সাথে চলতে আরম্ভ করবে। কারণ, আকাশের সূর্য হতে শুরু করে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বস্তুকণা পর্যন্ত সর্বদা তাঁরই নির্ধারিত পথে চলছে। আমি যখন সেই এক আল্লাহর উপর নির্ভর করবো, তখন সামান্য শক্তির উপর নির্ভর করা হবে না- আমার ভরসা করা হবে এমন এক বিরাট শক্তির উপর, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত শক্তি ও ধন-সম্পদের একমাত্র মালিক।
মোটকথা, এ নিগুঢ় তত্ত্ব যদিও আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে চলি, তবে আমি ভালো করে জানতে পারবো যে, কালিমায়ে তাইয়্যিবার প্রতি ঈমান এনে যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে সেই আদর্শ অনুসারে গঠন করে নেবে, আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় শক্তিই তার সাহায্য কাজে নিযুক্ত হবে। দুনিয়ার জীবন হতে পরকাল পর্যন্ত সে কেবল উন্নতিই করতে থাকবে। তার কোনো চেষ্টাই ব্যর্থ হবে না, কোনো উদ্দেশ্যই অপূর্ণ থাকতে পারবে না।
কালিমার সম্পূর্ণ বিপরীত মতবাদও রয়েছে যেমন, এ দুনিয়ার ইলাহ বা সৃষ্টিকর্তা কেউ নেই, কিংবা এ দুনিয়ায় একাধিক ইলাহ (প্রভু) রয়েছে। একটু চিন্তা করে দেখলেই বুঝতে পারবো যে, তা অপেক্ষা বড় মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন কথা আর কিছুই হতে পারে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ আছেন। আমাদেরকে সেই আল্লাহই তো সৃষ্টি করেছেন। আর সে আল্লাহই আমাকে ঐ জিহ্বা দিয়েছেন যার দ্বারা আমি এতবড় একটা মিথ্যা কথা বলছি। মুশরিক বলে যে, আল্লাহ এক নয়, তাঁর সাথে আরও অনেক দেবদেবী রয়েছে। তারাও রিযিক দেয়, তারাও আমাদের মালিক, তারাও আমাদের ভাগ্য গড়তে ও ভাংগতে পারে। উপকার করা কিংবা ক্ষতি করার ক্ষমতা তাদেরও আছে। তোমাদের দু’আ তারাও শুনতে পারে। তারাও তোমাদের ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারে, তাদেরকে ভয় করে চলা উচিত। তাদের উপর ভরসা করা যেতে পারে। দুনিয়া পরিচালনার ব্যাপারে তাদেরও হুকুম চলে। আল্লাহ ছাড়া তাদেরও হুকুম পালন করে চলা কর্তব্য (নাউযুবিল্লাহ)। এসবই কালিমার বিপরীত।
এখন ভেবে দেখি, এ কালিমা যে ব্যক্তি কবুল করবে এবং সে অনুসারে নিজের জীবনকে গঠন করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে সে কেমন করে উন্নতি লাভ করতে পারে? আল্লাহ অনুগ্রহ করে এসব লোককে অবসর ও অবকাশ দিয়ে রেখেছেন। এবং রিযিক দেবারও ওয়াদা করেছেন। কাজেই আকাশ ও পৃথিবীর শক্তিগুলো কিছু না কিছু পরিমাণে তাদেরকে প্রতিপালন করবে- যেমন বন-জঙ্গলে আগাছা পরগাছগুলোকে করছে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো একটা জিনিসও আগ্রহ করে তাদেরকে সাহায্য করবে না এবং পূর্ণশক্তি দিয়ে তাদের সহায়তা করবে না। তারা ঠিক জঙ্গলের আগাছার মতই কিছুদিন মাত্র বেঁচে থাকতে পারবে তার বেশী নয়।
‘কালিমায়ে তাইয়্যিবা যখন ফল দান করবে, তখন তা খুবই মিষ্ট ও সুস্বাদুই হবে। দুনিয়ার বুকে তা দ্বারা শান্তি স্থাপিত হবে। চারদিকে সত্য ও পূর্ণ সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। নিখিল দুনিয়ার মানুষ তা দ্বারা অসাধারণ উপকার লাভ করতে পারবে। কিন্তু কালিমার বিপরীত শক্তি ও মতোবাদ যতই বৃদ্ধি পাবে, কেবল কাঁটায় ভরা-ডাল-পালাই তা হতে বের হবে। তিক্ত ও বিষাক্ত ফল তাতে ফলবে। এর শিরায় শিরায় বিষ ভরা থাকবে। নিজেদের চোখ দিয়েই আমরা তা দেখে নিতে পারবো। দুনিয়ার যেখানেই কুফরি, শিরক এবং নাস্তিকতার জোর বেশী, সেখানে কী হচ্ছে? সেখানে মানুষ মানুষের রক্ত ঝড়াচ্ছে। দেশের পর দেশ ধবংস করার আয়োজন খুব জোরের সাথেই চলছে। বিষাক্ত গ্যাস তৈরী হচ্ছে। এক জাতি অন্য জাতিকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে। শক্তিমান দুর্বল ব্যক্তিগণকে নিজের গোলাম বানিয়ে রেখেছে তার ভাগের আহার কেড়ে নেবার জন্য শুধু দুর্বল মানুষকে সেখানে সৈন্য, পুলিশ, জেল ও ফাঁসির ভয় দেখিয়ে অবদমিত করে রাখার এবং শক্তিশালী জাতির যুলুম নীরবে সহ্য করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে।
এছাড়া এসব জাতির ভিতরের অবস্থা আরও ভয়ানক খারাপ। তাদের নৈতিক চরিত্র এতই কদর্য যে, স্বয়ং শয়তানও তা দেখে লজ্জা পায়। মানুষ সেখানে। জন্তু-জানোয়ার অপেক্ষাও হীনতর কাজ করছে। মায়েরা সেখানে নিজেদের হাতেই নিজেদের সন্তানকে হত্যা করছে- যেন এ সন্তান তাদের সুখ-সম্ভোগের পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে না পারে। স্বামীরা সেখানে নিজেদের স্ত্রীদেরকে অন্যের কোলে ঠেলে দিচ্ছে শুধু পরের স্ত্রীকে নিজের কাছে পাবার উদ্দেশ্যে। নুড ক্লাব তৈরী করা হয়েছে, সেখানে নারী-পুরুষ পশুর মতো উলংগ হয়ে আনন্দ করছে। ধনী ব্যক্তি সুদ গ্রহণ করে গরীবদের প্রতি কেনা গোলামের ন্যায় ব্যবহার করছে। মনে হয়, কেবল তাদেরই খেদমত করার জন্য দুনিয়ায় এদের জন্ম হয়েছে।
এই বিশ্লেষণ থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, ‘কালিমায়ে তাইয়্যিবা’র প্রতি যারা ঈমান আনবে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে একটি মজবুত বাণীর সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন। তারা অটল ও অক্ষয় হবে। আর তার মোকাবিলায় কালিমার বিপরীত যারা কাজ করবে, আল্লাহ তাদের সকল আয়োজন ও চেষ্টাকেই ব্যর্থ করে দেবেন। তারা কখনই কোনো সহজ কাজ করতে পারবে না। তা দ্বারা দুনিয়া কিংবা আখিরাতে তাদের কিছুমাত্র কল্যাণও সাধিত হতে পারে না।
এখন প্রশ্নঃ আমরা ‘কালিমায়ে তাইয়্যিবা’কে মানি; কিন্তু কোন কারণে আমাদের উন্নতি হয় না? আর যে কাফিরগণ কালিমার বিপরীত বিশ্বাস করে তারাই বা কোন কারণে এত শক্তিমান ও উন্নত হচ্ছে?
উত্তরঃ এ প্রশ্নের অবশ্যই সুন্দর উত্তর রয়েছে। তবে খুবই গভীরভাবে এবং ধৈর্যসহকারে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
আমরা কালিমায়ে তাইয়্যিবার প্রতি ঈমান এনেছি বলে দাবী করি এবং তবুও আমাদের উন্নতি হচ্ছে না, প্রথমত একথাটাই ঠিক নয়। কারণ কেবল মুখে মুখে। কালিমায়ে তাইয়্যিবা পড়লেই কোনো কাজ হয় না, তা মন দিয়ে পড়তে হবে। মন দিয়ে পড়ার অর্থ বিশ্বাস ও মতবাদের পরিবর্তন করা। এর বিরোধী কোনো মতবাদ যেন কালিমা বিশ্বাসী ব্যক্তির মনে স্থান না পায় এবং কালিমার নির্দেশের বিপরীত কোনো কাজও যেন সে কখনও না করে। কিন্তু আমাদের প্রকৃত অবস্থা কি এরূপ? আমাদের মধ্যে কি কালিমায়ে তাইয়্যিবার বিপরীত হাজারও কুফরি ও মুশরিকী ধারণা বর্তমান নেই? মুসলিমের মাথা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোও সামনে নত হয় না? মুসলিম আল্লাহ ছাড়া অন্য লোককে কি ভয় করে না? অন্যের সাহায্যের উপর কি ভরসা করে না? আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও কি তারা রিযিকদাতা বলে বিশ্বাস করে না? আল্লাহর আইনকে ছেড়ে দিয়ে তারা খুশী হয়েই কি অন্যের আইন অনুসরণ করে চলে না? মুসলিম হবার দাবীদার লোকেরা আদালতে গিয়ে পরিষ্কারভাবে বলে না যে, আমরা শরীয়াতের বিচার চাই না? আমরা দেশের প্রচলিত প্রথামত বিচার চাই?
আমাদের মধ্যে এমন কোনো লোক কি নেই, যারা দুনিয়ার সামান্য স্বার্থ লাভের জন্য আল্লাহর আইন লংঘন করতে একটুও পরোয়া করে না? আমাদের মধ্যে এমন লোক কি নেই, যারা কাফিরদের ক্রোধের ভয়ে ভীত; কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ দৃষ্টি লাভ করার জন্য কিছুই করতে রাজী নয়? এমন লোকও কি নেই, যারা কাফিরদের রাজত্বকে ‘রাজত্ব বলে মনে করে, কিন্তু আল্লাহর রাজত্ব যে কোথাও বর্তমান আছে, সেই কথা তাদের একেবারেই মনে পড়ে না? এসব কথা কি সত্য নয়? যদি বাস্তবিকই সত্য হয়ে থাকে, তবে আমরা কালিমায়ে তাইয়্যিবাকে স্বীকার করি এবং তা সত্ত্বেও আমাদের উন্নতি হয় না একথা কোন মুখে বলতে পারি?
প্রথমে খাটি মনে ঈমান আনতে হবে এবং কালিমায়ে তাইয়্যিবা অনুসারে জীবনকে গঠন করতে হবে। তারপর যদি গভীর মাটির তলে মজবুত শিকড় ও শূন্য আকাশে বিস্তৃত শাখার সেই মহান গাছের জন্ম না হয়, তখন বলতে পারবো যে, আল্লাহ মিথ্যা ওয়াদা করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। পরন্তু কালিমায়ে অবিশ্বাসী লোক দুনিয়ায় খুবই উন্নতি লাভ করছে বলে মনে করাও সম্পূর্ণরূপে ভুল। কারণ কালিমায়ে অবিশ্বাসী যারা তারা প্রকৃত উন্নতি লাভ করতে পারে না; অতীতে কখনও পারেনি আর এখনও পারছে না। তাদের ধন-দৌলত, সুখ-শান্তি ও ফুর্তির জীবন, বিলাসিতা ও আনন্দের সাজ-সরঞ্জাম এবং বাহ্যিক শান শওকত দেখে আমরা হয়ত মনে করেছি যে, তারা আসলে বুঝি খুবই উন্নতি করছে। কিন্তু আমরা তাদের মনের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখি, তাদের মধ্যে কতজন লোক বাস্তবিকই শান্তিতে আছে? বিলাসিতা ও সুখের সরঞ্জাম তাদের প্রচুর আছে; কিন্তু মনের মধ্যে আগুনের উলকাপিণ্ড সবসময় দাউ দাউ করে জ্বলছে। এজন্যই তারা এক আল্লাহকে পেতে পারে না। আল্লাহর আইন অমান্য করার কারণে তাদের প্রত্যেকটি পরিবারে অশান্তি।
প্রতিনিয়ত নিউজ মিডিয়াতে দেখছি, ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপানে আত্মহত্যার হাড় দিন দিন বাড়ছে। কত অসংখ্য তালাক দিন-রাত সংঘটিত হচ্ছে। দেশের সন্তান কিভাবে নষ্ট করা হচ্ছে এবং ওষুধ ব্যবহার করে জন্মের হার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। নানা প্রকার নতুন নতুন রোগে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কিভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে খাদ্য নিয়ে কিভাবে টানাটানি ও কাড়াকাড়ি চলছে। হিংসা-দ্বেষ এবং শত্রুতা এক জাতীয় মানুষের মধ্যে কিভাবে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছে। বিলাসিতার লোভ মানুষের মধ্যে কিভাবে দিন দিন বাড়ছে। দুনিয়ার এসব বড় বড় চাকচিক্যময় শহরে দূর হতে দেখে যাকে আমরা স্বর্গের রাজ্য মনে করি- লক্ষ লক্ষ লোক কি দুঃখের জীবনযাপন করছে, তা ভাবলেও শরীর শিউরে ওঠে।... এটাকে কি কখনও উন্নতি বলে মনে করা যায়? এ ‘স্বর্গ’ পাবার জন্যই কি আমরা লালায়িত?
মনে রাখতে হবে, আল্লাহর বাণী কখনও মিথ্যা হতে পারে না। বাস্তবিকই কালিমায়ে তাইয়্যিবা ছাড়া আর কোনো ‘কালিমা’ এমন নেই, যা অনুসরণ করে মানুষ দুনিয়ায় সুখ এবং পরকালে মহাশান্তি লাভ করতে পারে। যে দিকে ইচ্ছে আমরা চোখ খুলে চেয়ে যদি দেখি, এ সত্যের বিপরীত আমরা কোথাও দেখতে পাবে না।
সেই আল্লাহর সামনে যখন আমি মাথা নত করবো, বিশ্বভুবনের প্রত্যেকটি জিনিসই আমার সাথে তারই সামনে ঝুঁকে পড়বে। কারণ, ...এ সমস্ত জিনিসও একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে। আমি যখন তাঁরই হুকুম পালন করে চলবো, তখন আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিসই আমার সাথী হবে, কারণ এসবই যে একমাত্র তাঁরই অনুগত। আমি যখন তাঁর পথে চলতে শুরু করবো, তখন আমি একাকী হবো না, এ নিখিল জাহানের অগণিত ‘সৈন্য আমার সাথে চলতে আরম্ভ করবে। কারণ, আকাশের সূর্য হতে শুরু করে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বস্তুকণা পর্যন্ত সর্বদা তাঁরই নির্ধারিত পথে চলছে। আমি যখন সেই এক আল্লাহর উপর নির্ভর করবো, তখন সামান্য শক্তির উপর নির্ভর করা হবে না- আমার ভরসা করা হবে এমন এক বিরাট শক্তির উপর, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত শক্তি ও ধন-সম্পদের একমাত্র মালিক।
মোটকথা, এ নিগুঢ় তত্ত্ব যদিও আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে চলি, তবে আমি ভালো করে জানতে পারবো যে, কালিমায়ে তাইয়্যিবার প্রতি ঈমান এনে যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে সেই আদর্শ অনুসারে গঠন করে নেবে, আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় শক্তিই তার সাহায্য কাজে নিযুক্ত হবে। দুনিয়ার জীবন হতে পরকাল পর্যন্ত সে কেবল উন্নতিই করতে থাকবে। তার কোনো চেষ্টাই ব্যর্থ হবে না, কোনো উদ্দেশ্যই অপূর্ণ থাকতে পারবে না।
কালিমার সম্পূর্ণ বিপরীত মতবাদও রয়েছে যেমন, এ দুনিয়ার ইলাহ বা সৃষ্টিকর্তা কেউ নেই, কিংবা এ দুনিয়ায় একাধিক ইলাহ (প্রভু) রয়েছে। একটু চিন্তা করে দেখলেই বুঝতে পারবো যে, তা অপেক্ষা বড় মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন কথা আর কিছুই হতে পারে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ আছেন। আমাদেরকে সেই আল্লাহই তো সৃষ্টি করেছেন। আর সে আল্লাহই আমাকে ঐ জিহ্বা দিয়েছেন যার দ্বারা আমি এতবড় একটা মিথ্যা কথা বলছি। মুশরিক বলে যে, আল্লাহ এক নয়, তাঁর সাথে আরও অনেক দেবদেবী রয়েছে। তারাও রিযিক দেয়, তারাও আমাদের মালিক, তারাও আমাদের ভাগ্য গড়তে ও ভাংগতে পারে। উপকার করা কিংবা ক্ষতি করার ক্ষমতা তাদেরও আছে। তোমাদের দু’আ তারাও শুনতে পারে। তারাও তোমাদের ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারে, তাদেরকে ভয় করে চলা উচিত। তাদের উপর ভরসা করা যেতে পারে। দুনিয়া পরিচালনার ব্যাপারে তাদেরও হুকুম চলে। আল্লাহ ছাড়া তাদেরও হুকুম পালন করে চলা কর্তব্য (নাউযুবিল্লাহ)। এসবই কালিমার বিপরীত।
এখন ভেবে দেখি, এ কালিমা যে ব্যক্তি কবুল করবে এবং সে অনুসারে নিজের জীবনকে গঠন করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে সে কেমন করে উন্নতি লাভ করতে পারে? আল্লাহ অনুগ্রহ করে এসব লোককে অবসর ও অবকাশ দিয়ে রেখেছেন। এবং রিযিক দেবারও ওয়াদা করেছেন। কাজেই আকাশ ও পৃথিবীর শক্তিগুলো কিছু না কিছু পরিমাণে তাদেরকে প্রতিপালন করবে- যেমন বন-জঙ্গলে আগাছা পরগাছগুলোকে করছে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো একটা জিনিসও আগ্রহ করে তাদেরকে সাহায্য করবে না এবং পূর্ণশক্তি দিয়ে তাদের সহায়তা করবে না। তারা ঠিক জঙ্গলের আগাছার মতই কিছুদিন মাত্র বেঁচে থাকতে পারবে তার বেশী নয়।
‘কালিমায়ে তাইয়্যিবা যখন ফল দান করবে, তখন তা খুবই মিষ্ট ও সুস্বাদুই হবে। দুনিয়ার বুকে তা দ্বারা শান্তি স্থাপিত হবে। চারদিকে সত্য ও পূর্ণ সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। নিখিল দুনিয়ার মানুষ তা দ্বারা অসাধারণ উপকার লাভ করতে পারবে। কিন্তু কালিমার বিপরীত শক্তি ও মতোবাদ যতই বৃদ্ধি পাবে, কেবল কাঁটায় ভরা-ডাল-পালাই তা হতে বের হবে। তিক্ত ও বিষাক্ত ফল তাতে ফলবে। এর শিরায় শিরায় বিষ ভরা থাকবে। নিজেদের চোখ দিয়েই আমরা তা দেখে নিতে পারবো। দুনিয়ার যেখানেই কুফরি, শিরক এবং নাস্তিকতার জোর বেশী, সেখানে কী হচ্ছে? সেখানে মানুষ মানুষের রক্ত ঝড়াচ্ছে। দেশের পর দেশ ধবংস করার আয়োজন খুব জোরের সাথেই চলছে। বিষাক্ত গ্যাস তৈরী হচ্ছে। এক জাতি অন্য জাতিকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে। শক্তিমান দুর্বল ব্যক্তিগণকে নিজের গোলাম বানিয়ে রেখেছে তার ভাগের আহার কেড়ে নেবার জন্য শুধু দুর্বল মানুষকে সেখানে সৈন্য, পুলিশ, জেল ও ফাঁসির ভয় দেখিয়ে অবদমিত করে রাখার এবং শক্তিশালী জাতির যুলুম নীরবে সহ্য করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে।
এছাড়া এসব জাতির ভিতরের অবস্থা আরও ভয়ানক খারাপ। তাদের নৈতিক চরিত্র এতই কদর্য যে, স্বয়ং শয়তানও তা দেখে লজ্জা পায়। মানুষ সেখানে। জন্তু-জানোয়ার অপেক্ষাও হীনতর কাজ করছে। মায়েরা সেখানে নিজেদের হাতেই নিজেদের সন্তানকে হত্যা করছে- যেন এ সন্তান তাদের সুখ-সম্ভোগের পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে না পারে। স্বামীরা সেখানে নিজেদের স্ত্রীদেরকে অন্যের কোলে ঠেলে দিচ্ছে শুধু পরের স্ত্রীকে নিজের কাছে পাবার উদ্দেশ্যে। নুড ক্লাব তৈরী করা হয়েছে, সেখানে নারী-পুরুষ পশুর মতো উলংগ হয়ে আনন্দ করছে। ধনী ব্যক্তি সুদ গ্রহণ করে গরীবদের প্রতি কেনা গোলামের ন্যায় ব্যবহার করছে। মনে হয়, কেবল তাদেরই খেদমত করার জন্য দুনিয়ায় এদের জন্ম হয়েছে।
এই বিশ্লেষণ থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, ‘কালিমায়ে তাইয়্যিবা’র প্রতি যারা ঈমান আনবে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে একটি মজবুত বাণীর সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন। তারা অটল ও অক্ষয় হবে। আর তার মোকাবিলায় কালিমার বিপরীত যারা কাজ করবে, আল্লাহ তাদের সকল আয়োজন ও চেষ্টাকেই ব্যর্থ করে দেবেন। তারা কখনই কোনো সহজ কাজ করতে পারবে না। তা দ্বারা দুনিয়া কিংবা আখিরাতে তাদের কিছুমাত্র কল্যাণও সাধিত হতে পারে না।
এখন প্রশ্নঃ আমরা ‘কালিমায়ে তাইয়্যিবা’কে মানি; কিন্তু কোন কারণে আমাদের উন্নতি হয় না? আর যে কাফিরগণ কালিমার বিপরীত বিশ্বাস করে তারাই বা কোন কারণে এত শক্তিমান ও উন্নত হচ্ছে?
উত্তরঃ এ প্রশ্নের অবশ্যই সুন্দর উত্তর রয়েছে। তবে খুবই গভীরভাবে এবং ধৈর্যসহকারে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
আমরা কালিমায়ে তাইয়্যিবার প্রতি ঈমান এনেছি বলে দাবী করি এবং তবুও আমাদের উন্নতি হচ্ছে না, প্রথমত একথাটাই ঠিক নয়। কারণ কেবল মুখে মুখে। কালিমায়ে তাইয়্যিবা পড়লেই কোনো কাজ হয় না, তা মন দিয়ে পড়তে হবে। মন দিয়ে পড়ার অর্থ বিশ্বাস ও মতবাদের পরিবর্তন করা। এর বিরোধী কোনো মতবাদ যেন কালিমা বিশ্বাসী ব্যক্তির মনে স্থান না পায় এবং কালিমার নির্দেশের বিপরীত কোনো কাজও যেন সে কখনও না করে। কিন্তু আমাদের প্রকৃত অবস্থা কি এরূপ? আমাদের মধ্যে কি কালিমায়ে তাইয়্যিবার বিপরীত হাজারও কুফরি ও মুশরিকী ধারণা বর্তমান নেই? মুসলিমের মাথা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোও সামনে নত হয় না? মুসলিম আল্লাহ ছাড়া অন্য লোককে কি ভয় করে না? অন্যের সাহায্যের উপর কি ভরসা করে না? আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও কি তারা রিযিকদাতা বলে বিশ্বাস করে না? আল্লাহর আইনকে ছেড়ে দিয়ে তারা খুশী হয়েই কি অন্যের আইন অনুসরণ করে চলে না? মুসলিম হবার দাবীদার লোকেরা আদালতে গিয়ে পরিষ্কারভাবে বলে না যে, আমরা শরীয়াতের বিচার চাই না? আমরা দেশের প্রচলিত প্রথামত বিচার চাই?
আমাদের মধ্যে এমন কোনো লোক কি নেই, যারা দুনিয়ার সামান্য স্বার্থ লাভের জন্য আল্লাহর আইন লংঘন করতে একটুও পরোয়া করে না? আমাদের মধ্যে এমন লোক কি নেই, যারা কাফিরদের ক্রোধের ভয়ে ভীত; কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ দৃষ্টি লাভ করার জন্য কিছুই করতে রাজী নয়? এমন লোকও কি নেই, যারা কাফিরদের রাজত্বকে ‘রাজত্ব বলে মনে করে, কিন্তু আল্লাহর রাজত্ব যে কোথাও বর্তমান আছে, সেই কথা তাদের একেবারেই মনে পড়ে না? এসব কথা কি সত্য নয়? যদি বাস্তবিকই সত্য হয়ে থাকে, তবে আমরা কালিমায়ে তাইয়্যিবাকে স্বীকার করি এবং তা সত্ত্বেও আমাদের উন্নতি হয় না একথা কোন মুখে বলতে পারি?
প্রথমে খাটি মনে ঈমান আনতে হবে এবং কালিমায়ে তাইয়্যিবা অনুসারে জীবনকে গঠন করতে হবে। তারপর যদি গভীর মাটির তলে মজবুত শিকড় ও শূন্য আকাশে বিস্তৃত শাখার সেই মহান গাছের জন্ম না হয়, তখন বলতে পারবো যে, আল্লাহ মিথ্যা ওয়াদা করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। পরন্তু কালিমায়ে অবিশ্বাসী লোক দুনিয়ায় খুবই উন্নতি লাভ করছে বলে মনে করাও সম্পূর্ণরূপে ভুল। কারণ কালিমায়ে অবিশ্বাসী যারা তারা প্রকৃত উন্নতি লাভ করতে পারে না; অতীতে কখনও পারেনি আর এখনও পারছে না। তাদের ধন-দৌলত, সুখ-শান্তি ও ফুর্তির জীবন, বিলাসিতা ও আনন্দের সাজ-সরঞ্জাম এবং বাহ্যিক শান শওকত দেখে আমরা হয়ত মনে করেছি যে, তারা আসলে বুঝি খুবই উন্নতি করছে। কিন্তু আমরা তাদের মনের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখি, তাদের মধ্যে কতজন লোক বাস্তবিকই শান্তিতে আছে? বিলাসিতা ও সুখের সরঞ্জাম তাদের প্রচুর আছে; কিন্তু মনের মধ্যে আগুনের উলকাপিণ্ড সবসময় দাউ দাউ করে জ্বলছে। এজন্যই তারা এক আল্লাহকে পেতে পারে না। আল্লাহর আইন অমান্য করার কারণে তাদের প্রত্যেকটি পরিবারে অশান্তি।
প্রতিনিয়ত নিউজ মিডিয়াতে দেখছি, ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপানে আত্মহত্যার হাড় দিন দিন বাড়ছে। কত অসংখ্য তালাক দিন-রাত সংঘটিত হচ্ছে। দেশের সন্তান কিভাবে নষ্ট করা হচ্ছে এবং ওষুধ ব্যবহার করে জন্মের হার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। নানা প্রকার নতুন নতুন রোগে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কিভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে খাদ্য নিয়ে কিভাবে টানাটানি ও কাড়াকাড়ি চলছে। হিংসা-দ্বেষ এবং শত্রুতা এক জাতীয় মানুষের মধ্যে কিভাবে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছে। বিলাসিতার লোভ মানুষের মধ্যে কিভাবে দিন দিন বাড়ছে। দুনিয়ার এসব বড় বড় চাকচিক্যময় শহরে দূর হতে দেখে যাকে আমরা স্বর্গের রাজ্য মনে করি- লক্ষ লক্ষ লোক কি দুঃখের জীবনযাপন করছে, তা ভাবলেও শরীর শিউরে ওঠে।... এটাকে কি কখনও উন্নতি বলে মনে করা যায়? এ ‘স্বর্গ’ পাবার জন্যই কি আমরা লালায়িত?
মনে রাখতে হবে, আল্লাহর বাণী কখনও মিথ্যা হতে পারে না। বাস্তবিকই কালিমায়ে তাইয়্যিবা ছাড়া আর কোনো ‘কালিমা’ এমন নেই, যা অনুসরণ করে মানুষ দুনিয়ায় সুখ এবং পরকালে মহাশান্তি লাভ করতে পারে। যে দিকে ইচ্ছে আমরা চোখ খুলে চেয়ে যদি দেখি, এ সত্যের বিপরীত আমরা কোথাও দেখতে পাবে না।
আমরা সকলে জানি যে, মানুষ দুনিয়ায় যে কাজই করুক না কেন, তার মূলে একটা উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই বর্তমান থাকে এবং কিছু না কিছু উপকার পাবার জন্যই মানুষ সে কাজ করে থাকে। বিনা উদ্দেশ্যে, বিনা গরজে এবং বিনা উপকারিতায় কোনো কাজ কেউই করে না। আমরা পানি পান করি কেন? পান করি এ জন্য যে, তাতে আমাদের পিপাসা নিবারণ হয়। কিন্তু পানি পান করার পরও যদি আমাদের পিপাসা না মিটতো তবে আমরা কিছুতেই পানি পান করতাম না। কারণ, এ পানি পান করার কোনো ফল নেই। আমরা খাদ্যদ্রব্য কেন খাই? এ উদ্দেশ্যে যে, তাতে আমাদের ক্ষুধার নিবৃত্তি হবে এবং আমাদের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আহার ও অনাহার উভয়েরই ফল যদি একরূপ হয়, তবে খাদ্য ভক্ষণের কাজটাকে আমরা একটা বাজে কাজ বলে মনে করতাম। রোগ হলে আমরা ওষুধ সেবন করি এ জন্য যে, তাতে রোগ দূর হয়ে যাবে এবং আমরা সুস্থ হবো; কিন্তু ওষুধ সেবন করার পরও যদি রোগ দূর না হয়, বরং পূর্বের মতোই অবস্থা বর্তমান থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই বলবো, এ ওষুধ সেবন করা সম্পূর্ণ নিস্ফল। কৃষি কাজে আমরা এত পরিশ্রম করি কেন? করি এ জন্য যে, আমরা এর দ্বারা শস্য, ফল ও নানারকমের তরিতরকারী পেতে পারবো। কিন্তু বীজ বপন করার পরও যদি জমিতে কোনো শস্য না হয় তবে আমরা হাল চাষ, বীজ বোনা এবং তাতে পানি দেয়ার জন্য এতদূর কষ্ট কিছুতেই স্বীকার করতাম না। মোটকথা দুনিয়ায় আমরা যে কাজই করি না কেন, তাতে উদ্দেশ্য সফল হলে কাজ ঠিকমত হয়েছে বলে মনে করা হয়। আর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হলে আমরা বলি যে, কাজ ঠিকমত করা হয়নি।
প্রথম প্রশ্ন এই যে, কালিমা পড়া হয় কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে এককথায় বলতে পারি যে, কালিমা পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এর দ্বারা কাফির ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কাফির ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করার অর্থ কী? এর অর্থ কি এই যে, কাফিরের দুটি চোখ, কাজেই মুসলিম কালিমা পড়লে তার চারটি চোখ হবে? অথবা কাফিরের মাথা একটি কাজেই মুসলিমের মাথা দুটি হবে? ... আমরা নিশ্চয়ই বলবো যে, না এখানে দৈহিক পার্থক্যের কথা বলা হচ্ছে না। পার্থক্য হওয়ার আসল অর্থ এই যে, কাফিরের পরিণাম ও মুসলিমের পরিণাম পার্থক্য হবে। কাফিরের পরিণাম এই যে, পরকালে সে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হবে এবং তার জীবনের উদ্দেশ্য বিফল হয়ে যাবে। আর মুসলিমের পরিণাম এই যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে এবং পরকালে সে সফল হবে- মহাসুখে জীবনযাপন করবে।
এখন আবার প্রশ্ন : পরকাল কাকে বলে? পরকাল বিফল ও সার্থক হওয়ার অর্থ কী? আর সেখানে সফলতা লাভের তাৎপর্য-ই বা কী?
একথাগুলো ভাল করে বুঝে নিতে হবে। এ প্রশ্নের উত্তর আমরা পূর্বেই পেয়েছি যে : “ইহকাল পরকালের কৃষি ক্ষেত।” দুনিয়া ও আখিরাত দু'টি ভিন্ন জিনিস নয়। উভয়ই মানুষের একই রাস্তার দু'টি স্টেশন। দুনিয়া এই রাস্তার প্রথম স্টেশন, আর আখিরাত সর্বশেষ স্টেশন।
জমি চাষ করা এবং তা হতে ফসল পাওয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক এ দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে ঠিক সে সম্পর্কই বিদ্যমান। আমরা জমিতে হাল-চাষ করি, তার পরে বীজ বপন করি, দরকার হলে তাতে পানি দেই, তারপরে আমরা ফসল পেতে থাকি। সেই ফসল ঘরে এনে তা আমরা সারা বছর নিশ্চিত হয়ে খেতে থাকি। আমি জমিতে যে জিনিসেরই চাষ করবো, ফলও তারই পাবো। ধান বপন করলে ধান পাবো, পাট বপন করলে পাট পাবো, গম বপন করলে গমেরই ফসল পাবো, কাটার গাছ যদি বপন করি, তবে কাটার গাছই আমার ক্ষেতে জন্মাবে। আর যদি কিছুই বপন না করি, তবে আমার ক্ষেতে কিছুই জন্মাবে না। তারপর হাল-চাষ করতে, বীজ বপন করতে, তাতে দরকার মত পানি দিতে এবং ক্ষেতের দেখাশুনা করতে যে ভুল-ত্রুটি আমার দ্বারা হয় তার মন্দ ফল আমার ফসল কাটার সময়ই জানতে পারি। আর এসব কাজ যদি আমি খুব ভালভাবে করে থাকি, তবে ফসল কাটার সময়ই আমি এর বাস্তব ফল দেখতে পাবো।
দুনিয়া ও আখিরাতের অবস্থাও ঠিক এরূপ। দুনিয়াকে মনে করি একটা শষ্য ক্ষেত। এখানে নিজের পরিশ্রম ও চেষ্টার দ্বারা নিজের জন্য ফসল উৎপন্ন করার উদ্দেশ্যে মানুষকে পাঠান হয়েছে। জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে এ কাজের জন্য সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মানুষ যে ফসলেরই চাষ করে, সেই ফসলই সে মৃত্যুর পর পরকালের জীবনে পেতে পারবে, আর যে ফসলই সেখানে পাবে তার পরকালীন জীবন একমাত্র তারই উপর নির্ভর করবে। যদি কেউ দুনিয়ায় জীবনভর ভাল ফসলের চাষ করে, তাতে দরকার মত পানি দেয় এবং তার দেখাশুনাও যদি খুব ভালভাবে করে, তবে পরকালের জীবনে সে যখনই পা রাখবে, তখনই তার পরিশ্রমের ফল স্বরূপ একটি ফলেফুলে ভরা শ্যামল বাগিচা দেখতে পাবে। তাকে এ পরকালের জীবনে আর কোনো পরিশ্রম করতে হবে না, বরং দুনিয়ায় জীবন ভর পরিশ্রম করে যে বাগান সে তৈরী করেছে, সেই বাগানের অফুরন্ত ফলেই তার জীবন সুখে ও স্বাচ্ছন্দ্যে অতিবাহিত হবে। এ জিনিসেরই নাম হচ্ছে জান্নাত। এটা লাভ করতে পারলেই বুঝতে হবে যে, পরকালে সে সফল হয়েছে।
কিন্তু যে ব্যক্তি তার দুনিয়ার জীবনে কেবল কাঁটা, তিক্ত ও বিষাক্ত ফলের বীজ বপন করে, পরকালের জীবনে শুধু তারই ফসল পাবে। সেখানে খারাপ ফসল নষ্ট করে দিয়ে ভাল ফসল তৈরী করার এবং নিজের এ নির্বুদ্ধিতার পরিবর্তে বুদ্ধিমানের মত কাজ করার কোনো সুযোগ বা সময় সে আর পাবে না। সেই খারাপ ফসলের দ্বারাই পরকালের সমস্ত জীবন কাটাতে হবে, কারণ দুনিয়ায় সে শুধু এরই চাষ করেছে। যে কাঁটা সে রোপণ করেছিল, পরকালে তাকে সেই কাটার শষ্যায়ই শায়িত করা হবে। আর যে তিক্ত ও বিষাক্ত ফলের চাষ করেছিল, সেখানে তাঁকে তাই ভোগ করতে হবে। পরকালে ব্যর্থ ও বিফল হওয়ার অর্থ এটাই।
আখিরাতের ব্যাখ্যা কুরআন ও হাদীস হতেও এটাই প্রমাণিত হয়। এ ব্যাখ্যা হতে নিঃসন্দেহে জানা গেল যে, পরকালের জীবনে মানুষের বিফল কিংবা সফল হওয়া এবং তার পরিণাম ভাল কিংবা মন্দ হওয়া প্রকৃতপক্ষে তার এ দুনিয়ার জীবনের ইলম ও আমল, জ্ঞান ও কাজের ভাল কিংবা মন্দ হওয়ারই একমাত্র ফল এতে কোনো সন্দেহ নেই। একথাটি বুঝে নেয়ার সাথে সাথে একথাটিও অতি সহজেই বুঝতে পারবো যে, মুসলিম ও কাফিরের পরিণাম ফলের পার্থক্য বিনা কারণে হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে পরিণামের পার্থক্য প্রথম সূচনার পার্থক্যের ফলমাত্র। দুনিয়ায় যদি মুসলিম এবং কাফিরের জ্ঞান ও কাজের পার্থক্য না হয়, তবে পরকালেও তাদের পরিণামের দিক দিয়ে কোনোই পার্থক্য হতে পারে না। দুনিয়ায় এক ব্যক্তির জ্ঞান ও কাজ ঠিক একজন কাফিরের জ্ঞান ও কাজের মতই হবে অথচ পরকালে কাফিরের দুঃখময় পরিণাম হতে সে বেঁচে যাবে, এটা কিছুতেই হতে পারে না।
এখন আবার সেই গোড়ার প্রশ্ন জেগে ওঠে যে, কালিমা পড়ার উদ্দেশ্য কী? প্রথমে এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, কাফিরের পরিণাম ও মুসলিমের পরিণামে পার্থক্য হওয়াই কালিমা পড়ার একমাত্র উদ্দেশ্য। তারপরে পরিণাম ও পরকালের যে ব্যাখ্যা দেখলাম সেই অনুসারে আবার একটু ভেবে দেখতে হবে এবং এখন একথাই বলতে হবে যে, কালিমা পড়ার উদ্দেশ্য দুনিয়ার মানুষের ইলম বা জ্ঞান ও কাজকে ঠিক এমনভাবে করা- যেন পরকালে তার পরিণাম ভালো হয়। পরকাল মানুষকে এ দুনিয়ায় সেই ফলের বাগান তৈরীর কাজ শিক্ষা দেয়। মানুষ যদি এ কালিমাকেই স্বীকার না করে তবে সেই বাগান করার নিয়ম সে মোটেই জানতে পারবে না। তাহলে সে বাগানই বা তৈরী করবে কী করে, আর পরকালে সে কিসের ফল ভোগ করবে? মানুষ যদি কেবল মুখে মুখেই এ কালিমা পড়ে, কিন্তু তার জ্ঞান যদি কালিমা না পড়া ব্যক্তির মতো হয় এবং তার কাজকর্ম যদি একজন কাফিরের মতো হয়, তাহলে তার বিবেক বলে উঠবে যে, এভাবে কালিমা পড়ায় কোনোই লাভ নেই। এমন ব্যক্তির পরিণাম একজন কাফিরের পরিণামের চেয়ে ভাল হবার কোনো কারণ থাকতে পারে না। শুধু মুখ দিয়ে কালিমা পড়ে আল্লাহর উপর সে কোনো অনুগ্রহ করেনি। কাজেই বাগান বানাবার নিয়ম না শিখে, বাগান তৈরী না করে এবং সারা জীবন কেবল কাঁটার চাষ করে কোনো মানুষই পরকালের সবুজ শ্যামল ও ফুলে-ফলে ভরা বাগান লাভ করতে পারে না। সেরূপ ধারণা করাও আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
পূর্বে কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে, যে কাজ করা এবং না করা উভয়েরই ফল এক রকম, সেই কাজের কোনো দাম নেই, তা একেবারেই অর্থহীন। যে ঔষুধ সেবন করার পরও রুগীর অবস্থা ঠিক সেই রকম থাকে যেমন ছিল ঔষুধ পান করার পূর্বে। ঠিক এ রকমই কালিমা পড়া মানুষের জ্ঞান এবং কাজ যদি ঠিক কালিমা না পড়া লোকদের মতোই থাকে তবে এমন কালিমা পড়া একেবারেই অর্থহীন। দুনিয়ায়ই যখন কাফির ও মুসলিমের বাস্তব জীবনধারায় কোনোরূপ পার্থক্য হলো না তখন পরকালে তাদের পরিণাম ফল ভিন্ন ভিন্ন হবে কেন? এখন কালিমায়ে তাইয়্যিবা মানুষকে কোন ধরনের শিক্ষা দেয় এবং সেই জ্ঞান শেখার পর মুসলিম ও কাফিরের দৈনন্দিন কাজে কোন ধরনের পার্থক্য হওয়া বাঞ্ছনীয় তারই আলোচনা করা যাক।
এ কালিমা হতে আমি সর্বপ্রথম জানতে পারি যে, আমি আল্লাহর বান্দা, আর কারো বান্দা আমি নই। একথা যখন আমি জানতে পারলাম তখন একথাও আমার জানা হয়ে গেল যে, আমি যার বান্দা দুনিয়ায় তাঁরই ইচ্ছামত আমাকে কাজ করতে হবে। কারণ তাঁর ইচ্ছার বাইরে যদি আমি চলি বা কাজ করি, তবে আমার মালিকের বিরুদ্ধে আমার বিদ্রোহ করা হবে।
অতএব এ কালিমা আমাকে শিক্ষা দেয় যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রসূল। একথা জেনে নেয়ার সাথে সাথে একথাও আমি জানতে পারলাম যে, আল্লাহর রসূল দুনিয়ার ক্ষেতে কাঁটা ও বিষাক্ত ফলের চাষ করার পরিবর্তে ফুল ও মিষ্টি ফলের বাগান রচনা করার যে নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছেন, আমাকেও ঠিক সেই নিয়মেই কাজ করতে হবে। আমি যদি সেই নিয়ম অনুসরণ করি, তাহলেই পরকালে আমি ভাল ফসল পেতে পারবো। আর যদি তার বিপরীত পন্থায় কাজ করি, তবে দুনিয়ায় আমার কাঁটার চাষ করা হবে এবং পরকালে ঠিক কাঁটাই আমি ফসলরূপে পাবো, অন্য কিছু নয়।
এ জ্ঞান লাভের পর আমার দৈনন্দিন জীবনধারাকেও সেই অনুসারে গঠন করতে হবে। আমি যদি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাকে একদিন মরতে হবে, মরার পরে এক ভিন্ন রকমের জীবনযাপন করতে হবে এবং সেই জীবনেও আমাকে এ দুনিয়ায় অর্জিত ফসলের উপর নির্ভর করে চলতে হবে, তাহলে মুহাম্মাদ (ﷺ)- এর উপস্থাপিত নিয়ম ও বিধান অনুসরণ না করে অন্য কোনো পন্থা অনুযায়ী চলা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। দুনিয়ায় আমি চাষাবাদ করি কেন? করি এ জন্য যে, চাষ না করলে ফসল পাওয়া যাবে না। আর ফসল না হলে না খেয়ে কষ্ট পেতে হবে- একথার প্রতি আমার খুবই বিশ্বাস আছে। আমি যদি একথা বিশ্বাস না করতাম এবং যদি মনে করতাম যে, চাষ না করলেও ফসল ফলবে। কিংবা ফসল ছাড়াও আমি বেঁচে থাকতে পারবো, তাহলে আমি চাষাবাদের জন্য এত পরিশ্রম কিছুতেই করতাম না।
এখন নিজের সম্বন্ধে নিজে চিন্তা করি। যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিজের প্রভু ও মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে আল্লাহর রসূল মুখে মুখে স্বীকার করে এবং আখিরাতের উপর বিশ্বাস আছে বলে দাবী করে কিন্তু তার দৈনন্দিন জীবনে কাজকর্ম আল্লাহর কুরআন ও রসূল (ﷺ) -এর হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায় চলে, তার সম্বন্ধে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, তার ঈমান প্রকৃতপক্ষে অতিশয় দুর্বল। সে নিজের ক্ষেতের কাজ না করার মন্দ পরিণাম যেরূপ নিশ্চয়তার সাথে বিশ্বাস করে, যদি ততটুকু নিশ্চয়তার সাথে আখিরাতের জন্য ফসল তৈরী না করার দুঃখময় পরিণাম বিশ্বাস করতো, তবে কখনই সে পরকালের কাজে এরূপ অবহেলা প্রদর্শন করতে পারতো না। কেউ জেনে শুনে নিজের ভবিষ্যতের জন্য কাঁটা বীজের চাষ করে না। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে না যে, কাঁটা রোপন করলে তা হতে কাটাই জন্মাবে, আর সেই বাঁটাই তাকে কষ্ট দেবে একমাত্র সেই ব্যক্তিই কাঁটা চাষ করতে পারে অন্য কেউ নয়। আমি জেনে শুনে আমার হাতে জ্বলন্ত অংগার কখনই নিতে পারি না। কারণ আমি নিশ্চিত জানি যে, এতে হাত পুড়ে যাবে। কিন্তু একটি অবুঝ শিশু আগুনে হাত দেয়, কেননা তার পরিণাম যে কত কষ্টদায়ক তা সে আদৌ জানে না।
প্রথম প্রশ্ন এই যে, কালিমা পড়া হয় কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে এককথায় বলতে পারি যে, কালিমা পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এর দ্বারা কাফির ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কাফির ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করার অর্থ কী? এর অর্থ কি এই যে, কাফিরের দুটি চোখ, কাজেই মুসলিম কালিমা পড়লে তার চারটি চোখ হবে? অথবা কাফিরের মাথা একটি কাজেই মুসলিমের মাথা দুটি হবে? ... আমরা নিশ্চয়ই বলবো যে, না এখানে দৈহিক পার্থক্যের কথা বলা হচ্ছে না। পার্থক্য হওয়ার আসল অর্থ এই যে, কাফিরের পরিণাম ও মুসলিমের পরিণাম পার্থক্য হবে। কাফিরের পরিণাম এই যে, পরকালে সে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হবে এবং তার জীবনের উদ্দেশ্য বিফল হয়ে যাবে। আর মুসলিমের পরিণাম এই যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে এবং পরকালে সে সফল হবে- মহাসুখে জীবনযাপন করবে।
এখন আবার প্রশ্ন : পরকাল কাকে বলে? পরকাল বিফল ও সার্থক হওয়ার অর্থ কী? আর সেখানে সফলতা লাভের তাৎপর্য-ই বা কী?
একথাগুলো ভাল করে বুঝে নিতে হবে। এ প্রশ্নের উত্তর আমরা পূর্বেই পেয়েছি যে : “ইহকাল পরকালের কৃষি ক্ষেত।” দুনিয়া ও আখিরাত দু'টি ভিন্ন জিনিস নয়। উভয়ই মানুষের একই রাস্তার দু'টি স্টেশন। দুনিয়া এই রাস্তার প্রথম স্টেশন, আর আখিরাত সর্বশেষ স্টেশন।
জমি চাষ করা এবং তা হতে ফসল পাওয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক এ দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে ঠিক সে সম্পর্কই বিদ্যমান। আমরা জমিতে হাল-চাষ করি, তার পরে বীজ বপন করি, দরকার হলে তাতে পানি দেই, তারপরে আমরা ফসল পেতে থাকি। সেই ফসল ঘরে এনে তা আমরা সারা বছর নিশ্চিত হয়ে খেতে থাকি। আমি জমিতে যে জিনিসেরই চাষ করবো, ফলও তারই পাবো। ধান বপন করলে ধান পাবো, পাট বপন করলে পাট পাবো, গম বপন করলে গমেরই ফসল পাবো, কাটার গাছ যদি বপন করি, তবে কাটার গাছই আমার ক্ষেতে জন্মাবে। আর যদি কিছুই বপন না করি, তবে আমার ক্ষেতে কিছুই জন্মাবে না। তারপর হাল-চাষ করতে, বীজ বপন করতে, তাতে দরকার মত পানি দিতে এবং ক্ষেতের দেখাশুনা করতে যে ভুল-ত্রুটি আমার দ্বারা হয় তার মন্দ ফল আমার ফসল কাটার সময়ই জানতে পারি। আর এসব কাজ যদি আমি খুব ভালভাবে করে থাকি, তবে ফসল কাটার সময়ই আমি এর বাস্তব ফল দেখতে পাবো।
দুনিয়া ও আখিরাতের অবস্থাও ঠিক এরূপ। দুনিয়াকে মনে করি একটা শষ্য ক্ষেত। এখানে নিজের পরিশ্রম ও চেষ্টার দ্বারা নিজের জন্য ফসল উৎপন্ন করার উদ্দেশ্যে মানুষকে পাঠান হয়েছে। জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে এ কাজের জন্য সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মানুষ যে ফসলেরই চাষ করে, সেই ফসলই সে মৃত্যুর পর পরকালের জীবনে পেতে পারবে, আর যে ফসলই সেখানে পাবে তার পরকালীন জীবন একমাত্র তারই উপর নির্ভর করবে। যদি কেউ দুনিয়ায় জীবনভর ভাল ফসলের চাষ করে, তাতে দরকার মত পানি দেয় এবং তার দেখাশুনাও যদি খুব ভালভাবে করে, তবে পরকালের জীবনে সে যখনই পা রাখবে, তখনই তার পরিশ্রমের ফল স্বরূপ একটি ফলেফুলে ভরা শ্যামল বাগিচা দেখতে পাবে। তাকে এ পরকালের জীবনে আর কোনো পরিশ্রম করতে হবে না, বরং দুনিয়ায় জীবন ভর পরিশ্রম করে যে বাগান সে তৈরী করেছে, সেই বাগানের অফুরন্ত ফলেই তার জীবন সুখে ও স্বাচ্ছন্দ্যে অতিবাহিত হবে। এ জিনিসেরই নাম হচ্ছে জান্নাত। এটা লাভ করতে পারলেই বুঝতে হবে যে, পরকালে সে সফল হয়েছে।
কিন্তু যে ব্যক্তি তার দুনিয়ার জীবনে কেবল কাঁটা, তিক্ত ও বিষাক্ত ফলের বীজ বপন করে, পরকালের জীবনে শুধু তারই ফসল পাবে। সেখানে খারাপ ফসল নষ্ট করে দিয়ে ভাল ফসল তৈরী করার এবং নিজের এ নির্বুদ্ধিতার পরিবর্তে বুদ্ধিমানের মত কাজ করার কোনো সুযোগ বা সময় সে আর পাবে না। সেই খারাপ ফসলের দ্বারাই পরকালের সমস্ত জীবন কাটাতে হবে, কারণ দুনিয়ায় সে শুধু এরই চাষ করেছে। যে কাঁটা সে রোপণ করেছিল, পরকালে তাকে সেই কাটার শষ্যায়ই শায়িত করা হবে। আর যে তিক্ত ও বিষাক্ত ফলের চাষ করেছিল, সেখানে তাঁকে তাই ভোগ করতে হবে। পরকালে ব্যর্থ ও বিফল হওয়ার অর্থ এটাই।
আখিরাতের ব্যাখ্যা কুরআন ও হাদীস হতেও এটাই প্রমাণিত হয়। এ ব্যাখ্যা হতে নিঃসন্দেহে জানা গেল যে, পরকালের জীবনে মানুষের বিফল কিংবা সফল হওয়া এবং তার পরিণাম ভাল কিংবা মন্দ হওয়া প্রকৃতপক্ষে তার এ দুনিয়ার জীবনের ইলম ও আমল, জ্ঞান ও কাজের ভাল কিংবা মন্দ হওয়ারই একমাত্র ফল এতে কোনো সন্দেহ নেই। একথাটি বুঝে নেয়ার সাথে সাথে একথাটিও অতি সহজেই বুঝতে পারবো যে, মুসলিম ও কাফিরের পরিণাম ফলের পার্থক্য বিনা কারণে হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে পরিণামের পার্থক্য প্রথম সূচনার পার্থক্যের ফলমাত্র। দুনিয়ায় যদি মুসলিম এবং কাফিরের জ্ঞান ও কাজের পার্থক্য না হয়, তবে পরকালেও তাদের পরিণামের দিক দিয়ে কোনোই পার্থক্য হতে পারে না। দুনিয়ায় এক ব্যক্তির জ্ঞান ও কাজ ঠিক একজন কাফিরের জ্ঞান ও কাজের মতই হবে অথচ পরকালে কাফিরের দুঃখময় পরিণাম হতে সে বেঁচে যাবে, এটা কিছুতেই হতে পারে না।
এখন আবার সেই গোড়ার প্রশ্ন জেগে ওঠে যে, কালিমা পড়ার উদ্দেশ্য কী? প্রথমে এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, কাফিরের পরিণাম ও মুসলিমের পরিণামে পার্থক্য হওয়াই কালিমা পড়ার একমাত্র উদ্দেশ্য। তারপরে পরিণাম ও পরকালের যে ব্যাখ্যা দেখলাম সেই অনুসারে আবার একটু ভেবে দেখতে হবে এবং এখন একথাই বলতে হবে যে, কালিমা পড়ার উদ্দেশ্য দুনিয়ার মানুষের ইলম বা জ্ঞান ও কাজকে ঠিক এমনভাবে করা- যেন পরকালে তার পরিণাম ভালো হয়। পরকাল মানুষকে এ দুনিয়ায় সেই ফলের বাগান তৈরীর কাজ শিক্ষা দেয়। মানুষ যদি এ কালিমাকেই স্বীকার না করে তবে সেই বাগান করার নিয়ম সে মোটেই জানতে পারবে না। তাহলে সে বাগানই বা তৈরী করবে কী করে, আর পরকালে সে কিসের ফল ভোগ করবে? মানুষ যদি কেবল মুখে মুখেই এ কালিমা পড়ে, কিন্তু তার জ্ঞান যদি কালিমা না পড়া ব্যক্তির মতো হয় এবং তার কাজকর্ম যদি একজন কাফিরের মতো হয়, তাহলে তার বিবেক বলে উঠবে যে, এভাবে কালিমা পড়ায় কোনোই লাভ নেই। এমন ব্যক্তির পরিণাম একজন কাফিরের পরিণামের চেয়ে ভাল হবার কোনো কারণ থাকতে পারে না। শুধু মুখ দিয়ে কালিমা পড়ে আল্লাহর উপর সে কোনো অনুগ্রহ করেনি। কাজেই বাগান বানাবার নিয়ম না শিখে, বাগান তৈরী না করে এবং সারা জীবন কেবল কাঁটার চাষ করে কোনো মানুষই পরকালের সবুজ শ্যামল ও ফুলে-ফলে ভরা বাগান লাভ করতে পারে না। সেরূপ ধারণা করাও আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
পূর্বে কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে, যে কাজ করা এবং না করা উভয়েরই ফল এক রকম, সেই কাজের কোনো দাম নেই, তা একেবারেই অর্থহীন। যে ঔষুধ সেবন করার পরও রুগীর অবস্থা ঠিক সেই রকম থাকে যেমন ছিল ঔষুধ পান করার পূর্বে। ঠিক এ রকমই কালিমা পড়া মানুষের জ্ঞান এবং কাজ যদি ঠিক কালিমা না পড়া লোকদের মতোই থাকে তবে এমন কালিমা পড়া একেবারেই অর্থহীন। দুনিয়ায়ই যখন কাফির ও মুসলিমের বাস্তব জীবনধারায় কোনোরূপ পার্থক্য হলো না তখন পরকালে তাদের পরিণাম ফল ভিন্ন ভিন্ন হবে কেন? এখন কালিমায়ে তাইয়্যিবা মানুষকে কোন ধরনের শিক্ষা দেয় এবং সেই জ্ঞান শেখার পর মুসলিম ও কাফিরের দৈনন্দিন কাজে কোন ধরনের পার্থক্য হওয়া বাঞ্ছনীয় তারই আলোচনা করা যাক।
এ কালিমা হতে আমি সর্বপ্রথম জানতে পারি যে, আমি আল্লাহর বান্দা, আর কারো বান্দা আমি নই। একথা যখন আমি জানতে পারলাম তখন একথাও আমার জানা হয়ে গেল যে, আমি যার বান্দা দুনিয়ায় তাঁরই ইচ্ছামত আমাকে কাজ করতে হবে। কারণ তাঁর ইচ্ছার বাইরে যদি আমি চলি বা কাজ করি, তবে আমার মালিকের বিরুদ্ধে আমার বিদ্রোহ করা হবে।
অতএব এ কালিমা আমাকে শিক্ষা দেয় যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রসূল। একথা জেনে নেয়ার সাথে সাথে একথাও আমি জানতে পারলাম যে, আল্লাহর রসূল দুনিয়ার ক্ষেতে কাঁটা ও বিষাক্ত ফলের চাষ করার পরিবর্তে ফুল ও মিষ্টি ফলের বাগান রচনা করার যে নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছেন, আমাকেও ঠিক সেই নিয়মেই কাজ করতে হবে। আমি যদি সেই নিয়ম অনুসরণ করি, তাহলেই পরকালে আমি ভাল ফসল পেতে পারবো। আর যদি তার বিপরীত পন্থায় কাজ করি, তবে দুনিয়ায় আমার কাঁটার চাষ করা হবে এবং পরকালে ঠিক কাঁটাই আমি ফসলরূপে পাবো, অন্য কিছু নয়।
এ জ্ঞান লাভের পর আমার দৈনন্দিন জীবনধারাকেও সেই অনুসারে গঠন করতে হবে। আমি যদি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাকে একদিন মরতে হবে, মরার পরে এক ভিন্ন রকমের জীবনযাপন করতে হবে এবং সেই জীবনেও আমাকে এ দুনিয়ায় অর্জিত ফসলের উপর নির্ভর করে চলতে হবে, তাহলে মুহাম্মাদ (ﷺ)- এর উপস্থাপিত নিয়ম ও বিধান অনুসরণ না করে অন্য কোনো পন্থা অনুযায়ী চলা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। দুনিয়ায় আমি চাষাবাদ করি কেন? করি এ জন্য যে, চাষ না করলে ফসল পাওয়া যাবে না। আর ফসল না হলে না খেয়ে কষ্ট পেতে হবে- একথার প্রতি আমার খুবই বিশ্বাস আছে। আমি যদি একথা বিশ্বাস না করতাম এবং যদি মনে করতাম যে, চাষ না করলেও ফসল ফলবে। কিংবা ফসল ছাড়াও আমি বেঁচে থাকতে পারবো, তাহলে আমি চাষাবাদের জন্য এত পরিশ্রম কিছুতেই করতাম না।
এখন নিজের সম্বন্ধে নিজে চিন্তা করি। যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিজের প্রভু ও মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে আল্লাহর রসূল মুখে মুখে স্বীকার করে এবং আখিরাতের উপর বিশ্বাস আছে বলে দাবী করে কিন্তু তার দৈনন্দিন জীবনে কাজকর্ম আল্লাহর কুরআন ও রসূল (ﷺ) -এর হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায় চলে, তার সম্বন্ধে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, তার ঈমান প্রকৃতপক্ষে অতিশয় দুর্বল। সে নিজের ক্ষেতের কাজ না করার মন্দ পরিণাম যেরূপ নিশ্চয়তার সাথে বিশ্বাস করে, যদি ততটুকু নিশ্চয়তার সাথে আখিরাতের জন্য ফসল তৈরী না করার দুঃখময় পরিণাম বিশ্বাস করতো, তবে কখনই সে পরকালের কাজে এরূপ অবহেলা প্রদর্শন করতে পারতো না। কেউ জেনে শুনে নিজের ভবিষ্যতের জন্য কাঁটা বীজের চাষ করে না। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে না যে, কাঁটা রোপন করলে তা হতে কাটাই জন্মাবে, আর সেই বাঁটাই তাকে কষ্ট দেবে একমাত্র সেই ব্যক্তিই কাঁটা চাষ করতে পারে অন্য কেউ নয়। আমি জেনে শুনে আমার হাতে জ্বলন্ত অংগার কখনই নিতে পারি না। কারণ আমি নিশ্চিত জানি যে, এতে হাত পুড়ে যাবে। কিন্তু একটি অবুঝ শিশু আগুনে হাত দেয়, কেননা তার পরিণাম যে কত কষ্টদায়ক তা সে আদৌ জানে না।
এ কালিমার দু'টি অংশ অর্থাৎ দুটি আলাদা আলাদা বাক্য। একাংশে বলা হয়েছে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এই অংশে অন্যের নয়, শুধু মাত্র আল্লাহরই সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয় এবং অপর অংশে বলা হয়েছে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ এই অংশে স্বীকার করা হয় এবং যে মুহাম্মাদই ও তাঁর পাঠানো Appointed Authority. যেসব ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর রসূল (ﷺ) -কে ক্ষমতা প্রদান করেছেন সে সব ক্ষেত্রে অন্যের কিছুই বলার অধিকার নেই।
যেমন কোর্টের জাজ- যাকে সরকার বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন একমাত্র তারই অধিকার রয়েছে কোন মামলার বিচার করার আর কারও সে অধিকার নেই, ঠিক তেমনই রসূল (ﷺ) -কে আল্লাহ যেহেতু হাকিম নিযুক্ত করেছেন, কাজেই কোন ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (ﷺ) -ই সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, অন্যরা নয়।
আমি যদি কোন আসামীর জামীনের জন্যে কোর্টের কোন জাজের নিকট দরখাস্ত পেশ করি তাহলে সেই দরখাস্তে জামিন মঞ্জুরের ক্ষমতা যেমন জাজ বা সরকারের নিয়োজিত Authority ভিন্ন অন্য কারও নেই, ঠিক তেমনই মানুষের জীবনযাপন কোন্ নিয়মে চলবে, মানুষের কোন্ অপরাধের কী শাস্তি হবে ইত্যাদির ব্যাপারে ব্যবস্থা প্রনয়ণকারী ও হাকিম হিসেবে যিনি আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছেন, একমাত্র তিনিই দিতে পারেন জীবন ব্যবস্থা, অন্যেরা নয়। এটাই স্বীকারোক্তি রয়েছে এ কালিমার শেষাংশে।
এখন মানুষ যদি আল্লাহকে বাদ দিয়ে আর কাউকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে মানে তাহলে যেমন আল্লাহর উলুহিয়াতে (প্রভুত্বে) শরীক করা হয় তেমন কেউ যদি জীবন ব্যবস্থা রচয়িতা হিসেবে কাউকে মানে তা সে মাওসেতুং হোক, কার্ল মার্কস হোক বা X Y Z যেই হোক না, অন্য কাউকে জীবন ব্যবস্থার রচয়িতা হিসেবে মানলেই রসূলের রিসালাতিতে তাদেরকে শরীক করা হয়।
আল্লাহ বলেন : “তুমি কি লক্ষ্য করনি আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে দিয়ে বুঝিয়েছেন? কালিমা তাইয়্যিবা একটি পবিত্র বলিষ্ঠ উত্তম বৃক্ষ যেন এর মূল (মাটির গভীরে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত এবং এর শাখা-প্রশাখা মহাশূন্যে (বিস্তীর্ণ)। এটা সব সময় তার মালিকের অনুমতিক্রমে স্বীয় ফল প্রদান করতে থাকে।” (সূরা ইবরাহীম ১৪ : ২৪-২৫)
কালিমা তাইয়্যিবা ইসলামের মূল ঘোষণা। এটা না পড়ে কোন মানুষই ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। এ জন্যই কোন কাফির অথবা মুশরিক ব্যক্তি যখন ইসলাম কবুল করতে চায়, তখন সর্বপ্রথমই তাকে এ কালিমা পড়তে হয়। মুসলিমদের ঘরে কোন সন্তানের জন্ম হলেও এ কারণে তাকে সর্বপ্রথম এ কালিমার আওয়াজ শুনানো হয়। মুসলিমদের এলাকায় এলাকায় দিন-রাতের মধ্যে পাঁচ বার মুয়াজ্জিন এ কালিমা উচ্চস্বরে ঘোষণা করে সকলকে সলাতের দিকে আহ্বান জানায়। সলাতের মধ্যে এ কালিমা বারবার পড়তে হয়। কুরআন শরীফের পাতায় পাতায় এ কালিমার কথা নানাভাবে লিখা আছে। ইসলামে এ কালিমার গুরুত্ব যে কতখানি, এর দ্বারাই তা বুঝা যায়। অতএব প্রত্যেকটি মুসলিমের পক্ষেই এ কালিমার অর্থ খুব ভাল করে জেনে নেয়া অত্যন্ত আবশ্যক।
বীজ বপন না করলে যেমন গাছ হতে পারে না, তেমনি এ কালিমা মানুষের হৃদয়-মনে ভাল করে শিকড় গাড়তে না পারলে মানুষের জীবন ক্ষেত্রে ইসলামের গাছ কিছুতেই জন্মাতে পারে না। বীজ বপন করলেই গাছ হয় এবং সে গাছের যেমন কাণ্ড, ডাল-পালা এবং ফুল ও ফল হয়ে থাকে, তেমনি মুসলিমগণ এ কালিমার অর্থ খুব ভাল করে বুঝে-শুনে তা মনে-প্রাণে গ্রহণ না করলে ইসলামের এ সলাত, যাকাত, সিয়াম ও হাজ্জ আদায় করা, হারাম হালাল বেছে চলা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাপারে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লক্ষ্য করে কাজ করা প্রভৃতি গুণাবলী মুসলিমদের জীবনে কিছুতেই পরিপূর্ণরূপে ফুটে উঠতে পারে না।
আমি যদি কারো সাথে কোন ব্যবসা করি- তা যে কোন ব্যবসাই হোক না কেন- তবে প্রথমেই আমাকে তার সাথে পাকাপাকিভাবে একটি agreement করে নিতে হয়; নতুবা ব্যবসায় ঝামেলা হতে পারে। আমি যদি কাউকে কোন টাকা-পয়সা ধার দেই, তবে প্রথমে আমি তার দ্বারা এ কথা স্বীকার করিয়ে নেই যে, টাকা নিয়ে সে ঠিক সময়মত পরিশোধ করবে এবং একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে পরিশোধ করে দিবে। সর্বোপরি, টাকা নিয়ে তা সে কখনও অস্বীকার করবে না ইত্যাদি। এ সব কথা সে যদি স্বীকার করে তবেই আমি তাকে টাকা ধার দেবো; নতুবা আমি কিছুতেই টাকা ধার দেবো না।
আমি যদি আমার জমি কাউকেও চাষ করতে দেই, তবে তার সাথেও আমার প্রয়োজনীয় এগ্রিমেন্ট আগেই করে নিতে হয়। আমি নিজে যদি কারও জমি চাষাবাদ বা ভোগ-ব্যবহার করতে চাই, তবে আমাকে জমির মালিকের শর্ত স্বীকার করে deed of agreement-এ সাইন করতে হয়। ঠিক এরূপই, মুসলিমকে সমস্ত জীবনব্যাপী যে আল্লাহর সঙ্গে কারবার করতে হয়, এ কালিমা পড়ে সেই আল্লাহর সঙ্গেই জীবনের সমস্ত কাজের বিষয়ে কথাবার্তা পাকা করে নিতে হয়। দলিলে কী লেখা হয়েছে, তা না জেনেই যদি আমি তাতে সাক্ষর করে দেই, তবে সে দলিলের কোন কোন শর্ত স্বীকার করে আমি সাক্ষর করেছি, তা আমি জানি না। ফলে আমার কাজকর্ম সে দলিলের শর্তের বিরুদ্ধে যেতে পারে।
এরূপেই, আমি কালিমা তাইয়্যিবা পড়ে ইসলামের সীমার মধ্যে আসলাম, নিজেকে মুসলিম ও আল্লাহর দাস’ বলে মনে করলাম; কিন্তু আমি জানলাম না যে, কালিমা পড়ে আমি কোন কোন কাজ করবো বলে স্বীকার করেছি আর কোন কোন কাজ করবো না বলে ওয়াদা করেছি। এরূপ অবস্থা হলে আমার কালিমা পাঠ করার কোনই মূল্য থাকে না। আমার এ কালিমা পড়া আল্লাহর নিকট কবুল না-ই হওয়ার কথা। এভাবে আমি প্রকৃত মুসলিম ও ‘আল্লাহর বান্দা হতে পারি না। আমার জীবনের কোন কাজই সে কালিমা অনুসারে সমাধা হতে পারে না।
যেমন কোর্টের জাজ- যাকে সরকার বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন একমাত্র তারই অধিকার রয়েছে কোন মামলার বিচার করার আর কারও সে অধিকার নেই, ঠিক তেমনই রসূল (ﷺ) -কে আল্লাহ যেহেতু হাকিম নিযুক্ত করেছেন, কাজেই কোন ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (ﷺ) -ই সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, অন্যরা নয়।
আমি যদি কোন আসামীর জামীনের জন্যে কোর্টের কোন জাজের নিকট দরখাস্ত পেশ করি তাহলে সেই দরখাস্তে জামিন মঞ্জুরের ক্ষমতা যেমন জাজ বা সরকারের নিয়োজিত Authority ভিন্ন অন্য কারও নেই, ঠিক তেমনই মানুষের জীবনযাপন কোন্ নিয়মে চলবে, মানুষের কোন্ অপরাধের কী শাস্তি হবে ইত্যাদির ব্যাপারে ব্যবস্থা প্রনয়ণকারী ও হাকিম হিসেবে যিনি আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছেন, একমাত্র তিনিই দিতে পারেন জীবন ব্যবস্থা, অন্যেরা নয়। এটাই স্বীকারোক্তি রয়েছে এ কালিমার শেষাংশে।
এখন মানুষ যদি আল্লাহকে বাদ দিয়ে আর কাউকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে মানে তাহলে যেমন আল্লাহর উলুহিয়াতে (প্রভুত্বে) শরীক করা হয় তেমন কেউ যদি জীবন ব্যবস্থা রচয়িতা হিসেবে কাউকে মানে তা সে মাওসেতুং হোক, কার্ল মার্কস হোক বা X Y Z যেই হোক না, অন্য কাউকে জীবন ব্যবস্থার রচয়িতা হিসেবে মানলেই রসূলের রিসালাতিতে তাদেরকে শরীক করা হয়।
আল্লাহ বলেন : “তুমি কি লক্ষ্য করনি আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে দিয়ে বুঝিয়েছেন? কালিমা তাইয়্যিবা একটি পবিত্র বলিষ্ঠ উত্তম বৃক্ষ যেন এর মূল (মাটির গভীরে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত এবং এর শাখা-প্রশাখা মহাশূন্যে (বিস্তীর্ণ)। এটা সব সময় তার মালিকের অনুমতিক্রমে স্বীয় ফল প্রদান করতে থাকে।” (সূরা ইবরাহীম ১৪ : ২৪-২৫)
কালিমা তাইয়্যিবা ইসলামের মূল ঘোষণা। এটা না পড়ে কোন মানুষই ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। এ জন্যই কোন কাফির অথবা মুশরিক ব্যক্তি যখন ইসলাম কবুল করতে চায়, তখন সর্বপ্রথমই তাকে এ কালিমা পড়তে হয়। মুসলিমদের ঘরে কোন সন্তানের জন্ম হলেও এ কারণে তাকে সর্বপ্রথম এ কালিমার আওয়াজ শুনানো হয়। মুসলিমদের এলাকায় এলাকায় দিন-রাতের মধ্যে পাঁচ বার মুয়াজ্জিন এ কালিমা উচ্চস্বরে ঘোষণা করে সকলকে সলাতের দিকে আহ্বান জানায়। সলাতের মধ্যে এ কালিমা বারবার পড়তে হয়। কুরআন শরীফের পাতায় পাতায় এ কালিমার কথা নানাভাবে লিখা আছে। ইসলামে এ কালিমার গুরুত্ব যে কতখানি, এর দ্বারাই তা বুঝা যায়। অতএব প্রত্যেকটি মুসলিমের পক্ষেই এ কালিমার অর্থ খুব ভাল করে জেনে নেয়া অত্যন্ত আবশ্যক।
বীজ বপন না করলে যেমন গাছ হতে পারে না, তেমনি এ কালিমা মানুষের হৃদয়-মনে ভাল করে শিকড় গাড়তে না পারলে মানুষের জীবন ক্ষেত্রে ইসলামের গাছ কিছুতেই জন্মাতে পারে না। বীজ বপন করলেই গাছ হয় এবং সে গাছের যেমন কাণ্ড, ডাল-পালা এবং ফুল ও ফল হয়ে থাকে, তেমনি মুসলিমগণ এ কালিমার অর্থ খুব ভাল করে বুঝে-শুনে তা মনে-প্রাণে গ্রহণ না করলে ইসলামের এ সলাত, যাকাত, সিয়াম ও হাজ্জ আদায় করা, হারাম হালাল বেছে চলা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাপারে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লক্ষ্য করে কাজ করা প্রভৃতি গুণাবলী মুসলিমদের জীবনে কিছুতেই পরিপূর্ণরূপে ফুটে উঠতে পারে না।
আমি যদি কারো সাথে কোন ব্যবসা করি- তা যে কোন ব্যবসাই হোক না কেন- তবে প্রথমেই আমাকে তার সাথে পাকাপাকিভাবে একটি agreement করে নিতে হয়; নতুবা ব্যবসায় ঝামেলা হতে পারে। আমি যদি কাউকে কোন টাকা-পয়সা ধার দেই, তবে প্রথমে আমি তার দ্বারা এ কথা স্বীকার করিয়ে নেই যে, টাকা নিয়ে সে ঠিক সময়মত পরিশোধ করবে এবং একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে পরিশোধ করে দিবে। সর্বোপরি, টাকা নিয়ে তা সে কখনও অস্বীকার করবে না ইত্যাদি। এ সব কথা সে যদি স্বীকার করে তবেই আমি তাকে টাকা ধার দেবো; নতুবা আমি কিছুতেই টাকা ধার দেবো না।
আমি যদি আমার জমি কাউকেও চাষ করতে দেই, তবে তার সাথেও আমার প্রয়োজনীয় এগ্রিমেন্ট আগেই করে নিতে হয়। আমি নিজে যদি কারও জমি চাষাবাদ বা ভোগ-ব্যবহার করতে চাই, তবে আমাকে জমির মালিকের শর্ত স্বীকার করে deed of agreement-এ সাইন করতে হয়। ঠিক এরূপই, মুসলিমকে সমস্ত জীবনব্যাপী যে আল্লাহর সঙ্গে কারবার করতে হয়, এ কালিমা পড়ে সেই আল্লাহর সঙ্গেই জীবনের সমস্ত কাজের বিষয়ে কথাবার্তা পাকা করে নিতে হয়। দলিলে কী লেখা হয়েছে, তা না জেনেই যদি আমি তাতে সাক্ষর করে দেই, তবে সে দলিলের কোন কোন শর্ত স্বীকার করে আমি সাক্ষর করেছি, তা আমি জানি না। ফলে আমার কাজকর্ম সে দলিলের শর্তের বিরুদ্ধে যেতে পারে।
এরূপেই, আমি কালিমা তাইয়্যিবা পড়ে ইসলামের সীমার মধ্যে আসলাম, নিজেকে মুসলিম ও আল্লাহর দাস’ বলে মনে করলাম; কিন্তু আমি জানলাম না যে, কালিমা পড়ে আমি কোন কোন কাজ করবো বলে স্বীকার করেছি আর কোন কোন কাজ করবো না বলে ওয়াদা করেছি। এরূপ অবস্থা হলে আমার কালিমা পাঠ করার কোনই মূল্য থাকে না। আমার এ কালিমা পড়া আল্লাহর নিকট কবুল না-ই হওয়ার কথা। এভাবে আমি প্রকৃত মুসলিম ও ‘আল্লাহর বান্দা হতে পারি না। আমার জীবনের কোন কাজই সে কালিমা অনুসারে সমাধা হতে পারে না।
১. জ্ঞান- এর দ্বারা কী অস্বীকার করা হলো এবং কী স্বীকার করা হলো তা জানা।
২. যা জানা গেল তা মনে-প্রাণে দৃঢ়ভাবে সত্য বলে বিশ্বাস করা; তাতে একবিন্দু সন্দেহ পোষণ না করা।
৩. এর প্রতি পরম নিষ্ঠা বোধ করা- শিরকের বিরুদ্ধে কঠোর ও অনমনীয় মনোভাব রাখা।
৪. এমন সত্যতা সহকারে এর ঘোষণা দেয়া যেন এতে মুনাফিকীর লেশমাত্র না থাকে।
৫. এ কালিমা’র প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা ও মনের দরদ পোষণ করা সেজন্য অন্তরে আনন্দ অনুভব করা।
৬. এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করা। এর দাবি পূরণে প্রস্তুত হওয়া, যে সব কাজ দ্বারা আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা প্রমাণিত হয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় তা করতে রাজী হওয়া এবং
৭. এর বিপরীত সব কিছুকেই অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করতে মনে-প্রাণে প্রস্তুত হওয়া।
কালিমা তাইয়িবা না পড়ে যেমন কেউ ইসলামের সীমার মধ্যে আসতে পারে না, ঠিক তেমনি এর অর্থ না জেনে, শুধু মুখে মুখে উচ্চারণ করে কেউ খাটি মুসলিম হতে এবং মুসলিমের মত কাজ করতে পারে না। বর্তমান দুনিয়ার অধিকাংশ মুসলিম যে ইসলামের হুকুম-আহকাম পালন করে না- ‘মুসলিম হয়েও যে তারা অমুসলিমের মত কাজকর্ম ও আচরণ করে এর একমাত্র কারণ এই যে, তারা কালিমা পড়ে এবং বিশ্বাসও করে বটে, কিন্তু জানে না যে, তারা কী পড়ে আর কী বিশ্বাস করে। এর ফলে কোটি কোটি মুসলিম দুনিয়ায় বাস করে অথচ ইসলাম পালন করে প্রকৃত মুসলিমের মত অধিকাংশই জীবনযাপন করে না; বরং দেখা যাচ্ছে যে, তারা প্রত্যেক পদে পদে ইসলামের বিপরীত কাজ করে। এটা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে?
কালিমা পড়ে এর অর্থ বুঝি না বলে যেমন আমরা খাঁটি মুসলিমের ন্যায় কাজ করতে পারি না, ঠিক তেমনি এ কারণেই আমরা আল্লাহর রহমতও লাভ করতে পারছি না। ফলে আমরা নানা প্রকার দুঃখ ও মুসীবতে পড়ে আছি অধঃপতনের শেষ সীমায় গিয়ে পৌছাচ্ছি।
২. যা জানা গেল তা মনে-প্রাণে দৃঢ়ভাবে সত্য বলে বিশ্বাস করা; তাতে একবিন্দু সন্দেহ পোষণ না করা।
৩. এর প্রতি পরম নিষ্ঠা বোধ করা- শিরকের বিরুদ্ধে কঠোর ও অনমনীয় মনোভাব রাখা।
৪. এমন সত্যতা সহকারে এর ঘোষণা দেয়া যেন এতে মুনাফিকীর লেশমাত্র না থাকে।
৫. এ কালিমা’র প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা ও মনের দরদ পোষণ করা সেজন্য অন্তরে আনন্দ অনুভব করা।
৬. এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করা। এর দাবি পূরণে প্রস্তুত হওয়া, যে সব কাজ দ্বারা আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা প্রমাণিত হয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় তা করতে রাজী হওয়া এবং
৭. এর বিপরীত সব কিছুকেই অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করতে মনে-প্রাণে প্রস্তুত হওয়া।
কালিমা তাইয়িবা না পড়ে যেমন কেউ ইসলামের সীমার মধ্যে আসতে পারে না, ঠিক তেমনি এর অর্থ না জেনে, শুধু মুখে মুখে উচ্চারণ করে কেউ খাটি মুসলিম হতে এবং মুসলিমের মত কাজ করতে পারে না। বর্তমান দুনিয়ার অধিকাংশ মুসলিম যে ইসলামের হুকুম-আহকাম পালন করে না- ‘মুসলিম হয়েও যে তারা অমুসলিমের মত কাজকর্ম ও আচরণ করে এর একমাত্র কারণ এই যে, তারা কালিমা পড়ে এবং বিশ্বাসও করে বটে, কিন্তু জানে না যে, তারা কী পড়ে আর কী বিশ্বাস করে। এর ফলে কোটি কোটি মুসলিম দুনিয়ায় বাস করে অথচ ইসলাম পালন করে প্রকৃত মুসলিমের মত অধিকাংশই জীবনযাপন করে না; বরং দেখা যাচ্ছে যে, তারা প্রত্যেক পদে পদে ইসলামের বিপরীত কাজ করে। এটা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে?
কালিমা পড়ে এর অর্থ বুঝি না বলে যেমন আমরা খাঁটি মুসলিমের ন্যায় কাজ করতে পারি না, ঠিক তেমনি এ কারণেই আমরা আল্লাহর রহমতও লাভ করতে পারছি না। ফলে আমরা নানা প্রকার দুঃখ ও মুসীবতে পড়ে আছি অধঃপতনের শেষ সীমায় গিয়ে পৌছাচ্ছি।
এ কালিমার প্রথম অংশকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগ হচ্ছে নেতিবাচক, অর্থাৎ কোন মাবুদ নেই- প্রভু বা সৃষ্টিকর্তাও কেউ নেই। আমি কাউকে ভয় করি না, কারও নিকট নতি স্বীকার করি না, কারও আইন মানি, কারও দয়া-অনুগ্রহ বা সাহায্য আমি চাই না, কাউকেও উচ্চতর ক্ষমতার অধিকারী স্বীকার করি না। কারও ইবাদত-বন্দেগী করি না। এসব দিক দিয়ে যে কেউ আমার উপর কত ও প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে, আমি তাকেই অস্বীকার করি। সকলের প্রতিই আমি বিদ্রোহী। কারও সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আর দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে ইতিবাচক; অর্থাৎ এসব দিক দিয়ে একমাত্র আল্লাহকেই আমি স্বীকার করি ও মানি।
لگه الله منگنه لا إله إلا هو خالق كل شي فابور وهو على كل شي وكيل
“তিনিই তোমাদের আল্লাহ (যাঁর মধ্যে উল্লিখিতরূপ গুণাবলী বর্তমান) তিনি ছাড়া আর কোন মা'বুদ নেই। তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা; অতএব কেবল তাঁরই দাসত্ব কর বন্দেগী কর। তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের ব্যাপারেই দায়িত্বশীল।” (সূরা আনআম ৬ : ১০২)
কুরআনের এ আয়াত দুটিতে কালিমা তাইয়্যিবার অর্থ অত্যন্ত পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। এ আয়াত দু’টির সারাংশকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রথমত:
আল্লাহর একত্ব। এক আল্লাহকে স্বীকার করায় মানুষের ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেরই সুখ-শান্তি লাভ হওয়া সম্ভব। একাধিক প্রভু স্বীকার করায় মানুষের জীবন নানাবিধ দুঃখ ও অশান্তিতে ধবংস হয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
দ্বিতীয়ত :
মুশরিকগণ আল্লাহকে ছেড়ে যে সব দেব-দেবী ও মানুষ-প্রভুর পূজা, উপাসনা ও দাসত্ব করে, তা সর্বতোভাবে অমূলক ও ভিত্তিহীন; তা কতকগুলি নামের সমষ্টি মাত্র। আসলে এদের কোনই অস্তিত্ব নেই আর সেসব নামও আল্লাহ রাখেননি- মুশরিকগণ নিজেরাই তা রেখেছে। মানুষের ক্ষতি বা উপকার করার একবিন্দু ক্ষমতা এদের নেই। আর সেই ক্ষমতা না থাকলে কাকেও ইবাদত বা বন্দেগীর যোগ্য বলে মেনে নেয়া যায় না।
তৃতীয়ত :
মানুষের কর্মজীবনের জন্য আইন-বিধান রচনা করা কোন কিছুর আদেশ করা ও নিষেধ করার ক্ষমতা এবং অধিকার এক আল্লাহ ছাড়া আর কারও নেই। যারা এ আল্লাহকে স্বীকার করবে, তারা সেই এক আল্লাহর দেয়া আইন ও বিধান ছাড়া আর কিছুই মানতে পারবে না। তারা নিজেদের ব্যক্তি জীবনে, সমাজে ও রাষ্ট্রে এবং তাদের ধন-সম্পদে ভোগ-ব্যবহার ও ব্যয়-বন্টনে কেবলমাত্র আল্লাহর দেয়া বিধি-বিধানই মেনে চলতে বাধ্য হবে। কেননা আল্লাহই সার্বভৌমত্ব তথা সর্বোচ্চ ক্ষমতার নিরংকুশ মালিক। এটা অন্য কাকেও দেয়া যেতে পারে না।
চতুর্থত:
আল্লাহই সকলেরই মা'বুদ; মানুষ কেবল তাঁরই বান্দা। মানুষ এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও অধীনতা ও আনুগত্য স্বীকার করতে পারে না। অন্য কারও পূজা-উপাসনাও (ইবাদত-বন্দেগী) করতে পারে না।
পঞ্চমত:
এবং শেষ কথা এই যে, উল্লিখিত চারটি বুনিয়াদী আকীদার সমন্বয়ে মানুষের জন্য আল্লাহর নিকট হতে যে জীবন বিধান রচনা করে দেয়া হয়েছে। তাই একমাত্র অক্ষয় ও মজবুত ব্যবস্থা। এটা ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বা নীতি কিংবা আদর্শ অথবা জীবন বিধান মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য ও চিরস্থায়ী হতে পারে না - তা শান্তি ও সুখেরও ধর্ম হতে পারে না। এর কোন একটি কথাও যদি কেউ বদলাতে চেষ্টা করে, তবে সে এ ধর্মের প্রকাশ্য শত্র। বলা বাহুল্য, সেই শক্তিশালি ধর্ম হচ্ছে একমাত্র ইসলাম।
وما أرسلنا من قبلك من رسول إلا نوحي إليه أنه لا إله إلا أنا فاعبدون
“হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে যত নবীই আমি পাঠিয়েছি, তাঁদের সকলেরই প্রতি ওহী যোগে আমি এ আদেশ করেছি যে, আমি ছাড়া আর কেউই ‘ইলাহ' বা মাবুদ ও প্রভু নেই। অতএব তোমরা সকলে কেবল আমারই দাসত্ব ও বন্দেগী কবুল কর।” (সূরা আম্বিয়া ২১ : ২৫)
لگه الله منگنه لا إله إلا هو خالق كل شي فابور وهو على كل شي وكيل
“তিনিই তোমাদের আল্লাহ (যাঁর মধ্যে উল্লিখিতরূপ গুণাবলী বর্তমান) তিনি ছাড়া আর কোন মা'বুদ নেই। তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা; অতএব কেবল তাঁরই দাসত্ব কর বন্দেগী কর। তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের ব্যাপারেই দায়িত্বশীল।” (সূরা আনআম ৬ : ১০২)
কুরআনের এ আয়াত দুটিতে কালিমা তাইয়্যিবার অর্থ অত্যন্ত পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। এ আয়াত দু’টির সারাংশকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রথমত:
আল্লাহর একত্ব। এক আল্লাহকে স্বীকার করায় মানুষের ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেরই সুখ-শান্তি লাভ হওয়া সম্ভব। একাধিক প্রভু স্বীকার করায় মানুষের জীবন নানাবিধ দুঃখ ও অশান্তিতে ধবংস হয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
দ্বিতীয়ত :
মুশরিকগণ আল্লাহকে ছেড়ে যে সব দেব-দেবী ও মানুষ-প্রভুর পূজা, উপাসনা ও দাসত্ব করে, তা সর্বতোভাবে অমূলক ও ভিত্তিহীন; তা কতকগুলি নামের সমষ্টি মাত্র। আসলে এদের কোনই অস্তিত্ব নেই আর সেসব নামও আল্লাহ রাখেননি- মুশরিকগণ নিজেরাই তা রেখেছে। মানুষের ক্ষতি বা উপকার করার একবিন্দু ক্ষমতা এদের নেই। আর সেই ক্ষমতা না থাকলে কাকেও ইবাদত বা বন্দেগীর যোগ্য বলে মেনে নেয়া যায় না।
তৃতীয়ত :
মানুষের কর্মজীবনের জন্য আইন-বিধান রচনা করা কোন কিছুর আদেশ করা ও নিষেধ করার ক্ষমতা এবং অধিকার এক আল্লাহ ছাড়া আর কারও নেই। যারা এ আল্লাহকে স্বীকার করবে, তারা সেই এক আল্লাহর দেয়া আইন ও বিধান ছাড়া আর কিছুই মানতে পারবে না। তারা নিজেদের ব্যক্তি জীবনে, সমাজে ও রাষ্ট্রে এবং তাদের ধন-সম্পদে ভোগ-ব্যবহার ও ব্যয়-বন্টনে কেবলমাত্র আল্লাহর দেয়া বিধি-বিধানই মেনে চলতে বাধ্য হবে। কেননা আল্লাহই সার্বভৌমত্ব তথা সর্বোচ্চ ক্ষমতার নিরংকুশ মালিক। এটা অন্য কাকেও দেয়া যেতে পারে না।
চতুর্থত:
আল্লাহই সকলেরই মা'বুদ; মানুষ কেবল তাঁরই বান্দা। মানুষ এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও অধীনতা ও আনুগত্য স্বীকার করতে পারে না। অন্য কারও পূজা-উপাসনাও (ইবাদত-বন্দেগী) করতে পারে না।
পঞ্চমত:
এবং শেষ কথা এই যে, উল্লিখিত চারটি বুনিয়াদী আকীদার সমন্বয়ে মানুষের জন্য আল্লাহর নিকট হতে যে জীবন বিধান রচনা করে দেয়া হয়েছে। তাই একমাত্র অক্ষয় ও মজবুত ব্যবস্থা। এটা ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বা নীতি কিংবা আদর্শ অথবা জীবন বিধান মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য ও চিরস্থায়ী হতে পারে না - তা শান্তি ও সুখেরও ধর্ম হতে পারে না। এর কোন একটি কথাও যদি কেউ বদলাতে চেষ্টা করে, তবে সে এ ধর্মের প্রকাশ্য শত্র। বলা বাহুল্য, সেই শক্তিশালি ধর্ম হচ্ছে একমাত্র ইসলাম।
وما أرسلنا من قبلك من رسول إلا نوحي إليه أنه لا إله إلا أنا فاعبدون
“হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে যত নবীই আমি পাঠিয়েছি, তাঁদের সকলেরই প্রতি ওহী যোগে আমি এ আদেশ করেছি যে, আমি ছাড়া আর কেউই ‘ইলাহ' বা মাবুদ ও প্রভু নেই। অতএব তোমরা সকলে কেবল আমারই দাসত্ব ও বন্দেগী কবুল কর।” (সূরা আম্বিয়া ২১ : ২৫)
কিন্তু এ কালিমা ও তাওহীদের এ বাণী দুনিয়ায় যেমন নূতন নয়, ঠিক তেমনি এ কালিমার বিরুদ্ধতা ও শত্রতাও দুনিয়ার ইতিহাসে কিছুমাত্র নূতন বা বিস্ময়কর নয়; বরং যখনই, যে দেশেই এবং যার মুখেই এই ‘চির-পুরাতন’ কথাটি নূতন করে ঘোষিত ও ধবনিত হয়েছে, তখনই চারিদিক হতে এর বিরুদ্ধতা ও শত্রুতার পাহাড় মাথা জেগে উঠেছে। এ আওয়াজকে চিরতরে স্তব্ধ করার জন্য স্থানীয় সকল অপশক্তি প্রাণপণে চেষ্টা করেছে।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এ ছোট্ট কালিমাটির মধ্যে এমন কী কথা বা বস্তু নিহিত রয়েছে, যে জন্য এটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চারিদিকে এত শত্রুর উদ্ভব হয়? এটা বিশেষভাবে চিন্তা করার বিষয় যে, আল্লাহর নবীগণ যখনই, যে দেশে এবং যে সমাজেই এই ছোট্ট 'কালিমার দাওয়াত পেশ করেছে, তখনই সে সমাজের অধিকাংশ লোক তাঁদের ভয়ানক শত্রু হয়ে গেছে। অথচ এ দাওয়াত পেশ করার পূর্বে প্রত্যেক নারীই নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে সেই সময়ের সমস্ত মানুষের নিকট খুবই শ্রদ্ধাভাজন ও প্রিয়পাত্র বলে বিবেচিত হয়েছেন।
মূসা (আলাইহিস সালাম) তৎকালীন বাদশাহ ফিরাউনের ঘরেই লালিত-পালিত এবং বড় হয়েছেন। কিন্তু তিনি যখনই এ ‘কালিমা উচ্চারণ করলেন, অমনি তাঁর পালক পিতা ফিরাউন হয়ে গেল তাঁর বড় শত্ৰ।
ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) একজন রাজপুরোহিতের পুত্র, পিতার আদরের সন্তান এবং সে কারণে অন্যান্য সব লোকের বিশেষ স্নেহের পাত্র ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন এ তাওহীদের আওয়াজ উচ্চারণ করলেন তখনই তাঁর পিতা-মাতা হতে শুরু করে তৎকালীন বাদশাহ পর্যন্ত সকলেই তাঁর ঘোরতর শত্রু হয়ে গেল। এমন কি, তারা তাঁকে চিরতরে শেষ করে দেবার জন্য জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল।
ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর জন্মই ছিল সকল মানুষের নিকট একটা মস্তবড় মুজিযা- যা মানুষ সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারে না। এ জন্য সকল মানুষ তাঁকে ‘অসাধারণ কিছু বলে মনে করত। কিন্তু তিনিও যখন একজন নারী হিসেবে আল্লাহর পবিত্রতা ও একত্বের কথা ঘোষণা করলেন, তখন তাঁর নিজ বংশের লোক ও আত্মীয়-স্বজনরাই তাঁর শত্রতায় উঠে পড়ে লেগেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তখনকার ইয়াহুদী সরকার তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল।
শেষ নবী মুহাম্মাদ এই তাওহীদের কথা ঘোষণা করার পূর্বে দীর্ঘ চল্লিশটি বৎসর পর্যন্ত তাঁর আপন বংশের এবং তখনকার অন্যান্য লোকদের মধ্যে জীবনযাপন করেছেন। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সকলেরই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি তিনি পেয়েছেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তিনি তাওহীদের এ বাণী প্রথম যেদিন নিজের পরিচিত লোকদের মধ্যে প্রচার করলেন সেদিন হতেই তাঁর আপন বংশের লোকেরা প্রকাশ্যভাবে তাঁর শত্র তা করতে শুরু করেছিল। অতঃপর তাঁর নবুয়তের দীর্ঘ তেরটি বৎসর কালের মক্কী জীবনে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিষ্পেষণ এবং গালিগালাজের আকাশছোঁয়া তুফানের সঙ্গে মুকাবিলা করতে- এমন কি, শেষ পর্যন্ত তিনি মদীনায় হিজরত করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু কেন এমন হয়? নবী-রসূলরা (আলাইহিস সালাম) এমন কী বড় কথা বলেছেন, যার ফলে তাদেরকে এরূপ দুঃখ ও নিষ্পেষণ, নির্যাতন ও নির্বাসন ভোগ করতে হয়েছিল।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এ ছোট্ট কালিমাটির মধ্যে এমন কী কথা বা বস্তু নিহিত রয়েছে, যে জন্য এটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চারিদিকে এত শত্রুর উদ্ভব হয়? এটা বিশেষভাবে চিন্তা করার বিষয় যে, আল্লাহর নবীগণ যখনই, যে দেশে এবং যে সমাজেই এই ছোট্ট 'কালিমার দাওয়াত পেশ করেছে, তখনই সে সমাজের অধিকাংশ লোক তাঁদের ভয়ানক শত্রু হয়ে গেছে। অথচ এ দাওয়াত পেশ করার পূর্বে প্রত্যেক নারীই নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে সেই সময়ের সমস্ত মানুষের নিকট খুবই শ্রদ্ধাভাজন ও প্রিয়পাত্র বলে বিবেচিত হয়েছেন।
মূসা (আলাইহিস সালাম) তৎকালীন বাদশাহ ফিরাউনের ঘরেই লালিত-পালিত এবং বড় হয়েছেন। কিন্তু তিনি যখনই এ ‘কালিমা উচ্চারণ করলেন, অমনি তাঁর পালক পিতা ফিরাউন হয়ে গেল তাঁর বড় শত্ৰ।
ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) একজন রাজপুরোহিতের পুত্র, পিতার আদরের সন্তান এবং সে কারণে অন্যান্য সব লোকের বিশেষ স্নেহের পাত্র ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন এ তাওহীদের আওয়াজ উচ্চারণ করলেন তখনই তাঁর পিতা-মাতা হতে শুরু করে তৎকালীন বাদশাহ পর্যন্ত সকলেই তাঁর ঘোরতর শত্রু হয়ে গেল। এমন কি, তারা তাঁকে চিরতরে শেষ করে দেবার জন্য জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল।
ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর জন্মই ছিল সকল মানুষের নিকট একটা মস্তবড় মুজিযা- যা মানুষ সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারে না। এ জন্য সকল মানুষ তাঁকে ‘অসাধারণ কিছু বলে মনে করত। কিন্তু তিনিও যখন একজন নারী হিসেবে আল্লাহর পবিত্রতা ও একত্বের কথা ঘোষণা করলেন, তখন তাঁর নিজ বংশের লোক ও আত্মীয়-স্বজনরাই তাঁর শত্রতায় উঠে পড়ে লেগেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তখনকার ইয়াহুদী সরকার তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল।
শেষ নবী মুহাম্মাদ এই তাওহীদের কথা ঘোষণা করার পূর্বে দীর্ঘ চল্লিশটি বৎসর পর্যন্ত তাঁর আপন বংশের এবং তখনকার অন্যান্য লোকদের মধ্যে জীবনযাপন করেছেন। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সকলেরই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি তিনি পেয়েছেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তিনি তাওহীদের এ বাণী প্রথম যেদিন নিজের পরিচিত লোকদের মধ্যে প্রচার করলেন সেদিন হতেই তাঁর আপন বংশের লোকেরা প্রকাশ্যভাবে তাঁর শত্র তা করতে শুরু করেছিল। অতঃপর তাঁর নবুয়তের দীর্ঘ তেরটি বৎসর কালের মক্কী জীবনে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিষ্পেষণ এবং গালিগালাজের আকাশছোঁয়া তুফানের সঙ্গে মুকাবিলা করতে- এমন কি, শেষ পর্যন্ত তিনি মদীনায় হিজরত করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু কেন এমন হয়? নবী-রসূলরা (আলাইহিস সালাম) এমন কী বড় কথা বলেছেন, যার ফলে তাদেরকে এরূপ দুঃখ ও নিষ্পেষণ, নির্যাতন ও নির্বাসন ভোগ করতে হয়েছিল।
আসল ব্যাপার এই যে, এই কালিমার আওয়াজ যখনই যে দেশে (নূতন করে) উচ্চারিত হয়েছে, সে দেশের লোকেরা অমনি তা শুনে পরিস্কার বুঝতে পেরেছে, এর অর্থ এবং এর অন্তর্নিহিত ভাবধারা কী। তারা বুঝেছে, এ কালিমাকে সত্য বলে বিশ্বাস ও কবুল করলে এবং এ কালিমা অনুসারে নিজেদের জীবন ঢেলে তৈরী করলে কিংবা এ কালিমার শিক্ষা প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে কোথায় কোথায় আঘাত লাগে। কোন্ কোন্ স্বার্থ, বিশ্বাস বা নিয়ম-পদ্ধতিকে অসংকোচে পরিত্যাগ করে নূতন শিক্ষা নূতন বিশ্বাস ও নূতন নিয়ম-পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। এ জন্যই আমরা দেখতে পাই যে, কোন সমাজে এ কালিমা উচ্চারিত ও প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে সমাজের লোকেরা নীতির দিক দিয়ে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদল এ কালিমাকে বুঝেছে, অন্তর দিয়ে বিশ্বাস ও কবুল করেছে, মুখে উচ্চারণ ও প্রচার করেছে এবং সমগ্র জীবন দিয়ে জীবনের প্রত্যেকটি কর্মের ভিতর দিয়ে এ কালিমার আদর্শ বাস্তবায়ন করেছে, এর সত্যতা প্রমাণ করেছে।
আর একদল লোক কালিমার অর্থ বুঝেছে এবং বুঝে তাকে অংকুরেই বিনষ্ট করার জন্য, এর আওয়াজ অন্য কোন মানুষের কানে যেন না পৌছতে পারে সে জন্য নিজেদের সর্বশক্তি লাগিয়ে ও যথাসর্বস্ব ব্যয় করে চেষ্টা করেছে। এ দু'দলের মধ্যে যে লড়াই, তা নীতি ও আদর্শের লড়াই এবং এ লড়াইয়ের ইতিহাসই হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবার ইতিহাস। ইসলামের পরিভাষায় এই সংগ্রামকে বলা হয় “জিহাদ’ বা প্রচেষ্টা (Struggle)।
আর একদল লোক কালিমার অর্থ বুঝেছে এবং বুঝে তাকে অংকুরেই বিনষ্ট করার জন্য, এর আওয়াজ অন্য কোন মানুষের কানে যেন না পৌছতে পারে সে জন্য নিজেদের সর্বশক্তি লাগিয়ে ও যথাসর্বস্ব ব্যয় করে চেষ্টা করেছে। এ দু'দলের মধ্যে যে লড়াই, তা নীতি ও আদর্শের লড়াই এবং এ লড়াইয়ের ইতিহাসই হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবার ইতিহাস। ইসলামের পরিভাষায় এই সংগ্রামকে বলা হয় “জিহাদ’ বা প্রচেষ্টা (Struggle)।
‘কালিমা তাইয়্যিবা' একটি বিরাট বিপ্লবী ঘোষণা। যারা এটা গ্রহণ করে, তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত, বন্দেগী বা উপাসনা করতে পারে না। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য কিংবা তাঁর নিকট সুপারিশ করানোর আশায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত ও দাসত্ব করতে পারে না। আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং তাঁর আযাব হতে মুক্তি পাবার জন্য তারা আল্লাহরই হুকুম-আহকাম পালন করা ছাড়া কোন মানুষকে রাষ্ট্রপতি, নেতা-নেত্রী বা পীর-বুযুর্গকে এবং ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন পন্থা ও পদ্ধতি কিছুতেই গ্রহণ করতে পারে না। তারা মনে করে অন্তরের সাথে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি এবং তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য অন্তরের অন্তস্থল দিয়ে তাঁকে বিশ্বাস করে একমাত্র মা'বুদরূপে তাঁকেই মেনে নিয়ে তাঁরই নির্দেশমত জীবনযাপন করা এবং তাঁরই বিধানকে দুনিয়ার বুকে পুরাপুরি প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা করাই হচ্ছে একমাত্র উপায়।
এ উপায় ও পন্থা ভিন্ন অন্য কোন পন্থা যারা প্রচার করে, যারা বলে বেড়ায় যে, “আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হলে অমুক দরবেশ, অমুক পীর-বুযুর্গের নিকট মুরিদ হয়ে বা তার মাযারে হাযির হয়ে ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাসিল করতে হবে, নতুবা তাঁর বদ দু’আয় জ্বলে পুড়ে মরতে হবে অথবা যারা “শুধু কুরআন হাদীস অনুযায়ী আমল করাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যথেষ্ট নয়” বলে প্রচার করে, তারা প্রকারান্তরে শিরকেরই প্রচার করে। কারণ পীর সাহেবান ও বুযুর্গানে দ্বীনের রূহানী শক্তির নিকট কোন কিছুর আশা করা বা তাকে ভয় করা পরিষ্কার শিরক।
কালিমা তাইয়্যিবার প্রতি যারা ঈমান এনেছে, তারা কখনই সে দাওয়াত শুনতে প্রস্তুত নয়। তারা সুস্পষ্ট কণ্ঠে বলে উঠবে যে, আল্লাহর রহমত লাভের জন্য তাঁকেই ডাকব, কেবল তাঁরই গোলামী করব, তাঁর নিষিদ্ধ কাজ ও পথ ত্যাগ করব এবং তা দুনিয়া হতে মুছে ফেলার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করব। কেননা শাফা'আত করার ক্ষমতা এবং সারা জাহানের উপর কর্তৃত্ব কেবল এক আল্লাহর। তারা বলবে, মানুষের ক্ষতি বা উপকার করবার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া কারও আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। কোন জীবিত বা কবরে শায়িত ব্যক্তির এ ক্ষমতা আছে বলে আমরা মানি না। বস্তুত এটাই হচ্ছে প্রকৃত তাওহীদবাদী মানুষের কথা এবং এ পথই হচ্ছে তাওহীদবাদী মানুষের জন্য একমাত্র জীবন-পথ।
সার্বভৌমত্বের অধিকারী কেবলমাত্র আল্লাহই, তিনি ছাড়া আর কেউ নয়। অতএব আইন ও বিধানদাতাও কেবলমাত্র তিনিই। অতএব যে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা আল্লাহর প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না, কালিমা বিশ্বাসী কোন মানুষই তার আনুগত্য করতে পারে না; এমন রাষ্ট্রের জারি করা কোন আইন কানুনও সে মেনে নিতে রাজী হতে পারে না।
বস্তুত কালিমার প্রতি যারা বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারা দৃঢ়ভাবে ইসলামী আইন ভিন্ন অন্য কোন আইনের আনুগত্য স্বীকার করতে পারে না, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে এবং তা সমর্থন করতে পারে না। মানুষের রচিত কোন আইন-কানুনও তারা মানতে পারে না। যে আদালতে মানুষের রচিত আইনের ভিত্তিতে বিচার হয়, সে আদালতের নিকট তারা কোন বিচারও চাইতে পারে না এবং মানুষের রচিত কোন আইন নিয়ে তারা ওকালতিও করতে পারে না; কারণ, এর প্রত্যেকটি কাজই শিরক এবং এটা করতে গেলে মুখে আল্লাহর স্বীকৃতি থাকলেও কার্যতঃ তাঁকে অস্বীকার করা হয়।
অর্থাৎ এক আল্লাহর প্রভুত ও সার্বভৌমত্ব ছাড়া আর কারও প্রভুতুকে স্বীকার করা, আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে মানুষের রচিত আইন অনুসারে বিচার ফায়সালা করা বা চাওয়া এবং সে আইন নিয়ে ওকালতি করা পরিষ্কার শিরক। তাই যখন ইসলাম-বিরোধী কোন নেতা বা শক্তি মানুষের নিকট আনুগত্য পাওয়ার দাবি করে, তখন তওহীদে বিশ্বাসী মানুষ সুস্পষ্ট কণ্ঠে বলে উঠে ও আল্লাহ, তাঁর রসূল ও ইসলামী আইনের ভিত্তিতে গড়া রাষ্ট্র এবং আল্লাহর আনুগত্য স্বীকারকারী ও তাঁর আইন অনুসরণকারী রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া আমরা অন্য কারও আনুগত্য স্বীকার করতে পারি না। যখন তাদের উপর মানুষের রচিত আইন জারি করা হবে এবং সে অনুসারে বিচার ফায়সালা করা হবে, তখন তারা উদাত্ত কণ্ঠে জানিয়ে দিবে, আমরা মানুষের রচিত আইন মানি না এবং সে অনুযায়ী কোন বিচারও আমরা চাই না। যখন দুনিয়ার ধন-সম্পত্তি, পুঁজি ও উৎপাদন-উপায়কে মানুষের নিজেদের ইচ্ছামত কিংবা মনগড়া কোন মতাদর্শ বা ব্যবস্থা অনুযায়ী ভোগ-ব্যবহার ও ব্যয়-বন্টনের চেষ্টা করা হবে, তখন তারা স্পষ্ট ভাষায় বলবে যে, সারা জাহানের নিরংকুশ মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। যাবতীয় ধন-সম্পদ ও উপায়-উৎপাদনেরও প্রকৃত মালিক তিনিই। অতএব একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাই ও তাঁরই দেয়া ব্যবস্থা অনুযায়ী তা ভোগ-দখল ও ব্যবহার করতে হবে।
এ উপায় ও পন্থা ভিন্ন অন্য কোন পন্থা যারা প্রচার করে, যারা বলে বেড়ায় যে, “আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হলে অমুক দরবেশ, অমুক পীর-বুযুর্গের নিকট মুরিদ হয়ে বা তার মাযারে হাযির হয়ে ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাসিল করতে হবে, নতুবা তাঁর বদ দু’আয় জ্বলে পুড়ে মরতে হবে অথবা যারা “শুধু কুরআন হাদীস অনুযায়ী আমল করাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যথেষ্ট নয়” বলে প্রচার করে, তারা প্রকারান্তরে শিরকেরই প্রচার করে। কারণ পীর সাহেবান ও বুযুর্গানে দ্বীনের রূহানী শক্তির নিকট কোন কিছুর আশা করা বা তাকে ভয় করা পরিষ্কার শিরক।
কালিমা তাইয়্যিবার প্রতি যারা ঈমান এনেছে, তারা কখনই সে দাওয়াত শুনতে প্রস্তুত নয়। তারা সুস্পষ্ট কণ্ঠে বলে উঠবে যে, আল্লাহর রহমত লাভের জন্য তাঁকেই ডাকব, কেবল তাঁরই গোলামী করব, তাঁর নিষিদ্ধ কাজ ও পথ ত্যাগ করব এবং তা দুনিয়া হতে মুছে ফেলার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করব। কেননা শাফা'আত করার ক্ষমতা এবং সারা জাহানের উপর কর্তৃত্ব কেবল এক আল্লাহর। তারা বলবে, মানুষের ক্ষতি বা উপকার করবার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া কারও আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। কোন জীবিত বা কবরে শায়িত ব্যক্তির এ ক্ষমতা আছে বলে আমরা মানি না। বস্তুত এটাই হচ্ছে প্রকৃত তাওহীদবাদী মানুষের কথা এবং এ পথই হচ্ছে তাওহীদবাদী মানুষের জন্য একমাত্র জীবন-পথ।
সার্বভৌমত্বের অধিকারী কেবলমাত্র আল্লাহই, তিনি ছাড়া আর কেউ নয়। অতএব আইন ও বিধানদাতাও কেবলমাত্র তিনিই। অতএব যে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা আল্লাহর প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না, কালিমা বিশ্বাসী কোন মানুষই তার আনুগত্য করতে পারে না; এমন রাষ্ট্রের জারি করা কোন আইন কানুনও সে মেনে নিতে রাজী হতে পারে না।
বস্তুত কালিমার প্রতি যারা বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারা দৃঢ়ভাবে ইসলামী আইন ভিন্ন অন্য কোন আইনের আনুগত্য স্বীকার করতে পারে না, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে এবং তা সমর্থন করতে পারে না। মানুষের রচিত কোন আইন-কানুনও তারা মানতে পারে না। যে আদালতে মানুষের রচিত আইনের ভিত্তিতে বিচার হয়, সে আদালতের নিকট তারা কোন বিচারও চাইতে পারে না এবং মানুষের রচিত কোন আইন নিয়ে তারা ওকালতিও করতে পারে না; কারণ, এর প্রত্যেকটি কাজই শিরক এবং এটা করতে গেলে মুখে আল্লাহর স্বীকৃতি থাকলেও কার্যতঃ তাঁকে অস্বীকার করা হয়।
অর্থাৎ এক আল্লাহর প্রভুত ও সার্বভৌমত্ব ছাড়া আর কারও প্রভুতুকে স্বীকার করা, আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে মানুষের রচিত আইন অনুসারে বিচার ফায়সালা করা বা চাওয়া এবং সে আইন নিয়ে ওকালতি করা পরিষ্কার শিরক। তাই যখন ইসলাম-বিরোধী কোন নেতা বা শক্তি মানুষের নিকট আনুগত্য পাওয়ার দাবি করে, তখন তওহীদে বিশ্বাসী মানুষ সুস্পষ্ট কণ্ঠে বলে উঠে ও আল্লাহ, তাঁর রসূল ও ইসলামী আইনের ভিত্তিতে গড়া রাষ্ট্র এবং আল্লাহর আনুগত্য স্বীকারকারী ও তাঁর আইন অনুসরণকারী রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া আমরা অন্য কারও আনুগত্য স্বীকার করতে পারি না। যখন তাদের উপর মানুষের রচিত আইন জারি করা হবে এবং সে অনুসারে বিচার ফায়সালা করা হবে, তখন তারা উদাত্ত কণ্ঠে জানিয়ে দিবে, আমরা মানুষের রচিত আইন মানি না এবং সে অনুযায়ী কোন বিচারও আমরা চাই না। যখন দুনিয়ার ধন-সম্পত্তি, পুঁজি ও উৎপাদন-উপায়কে মানুষের নিজেদের ইচ্ছামত কিংবা মনগড়া কোন মতাদর্শ বা ব্যবস্থা অনুযায়ী ভোগ-ব্যবহার ও ব্যয়-বন্টনের চেষ্টা করা হবে, তখন তারা স্পষ্ট ভাষায় বলবে যে, সারা জাহানের নিরংকুশ মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। যাবতীয় ধন-সম্পদ ও উপায়-উৎপাদনেরও প্রকৃত মালিক তিনিই। অতএব একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাই ও তাঁরই দেয়া ব্যবস্থা অনুযায়ী তা ভোগ-দখল ও ব্যবহার করতে হবে।
কালিমা তাইয়্যিবার দ্বিতীয় বাক্য অর্থাৎ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’। এ অংশের সহজ অর্থ হচ্ছে : মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রসূল'। তাওহীদের যে ব্যাখ্যা আমরা উপরে পড়েছি, তা স্বীকার করে নিলে জীবনে প্রত্যেকটি কাজ এবং প্রত্যেকটি পদে পদে আল্লাহর হিদায়াত ও আইন অনুযায়ী চলা আমাদের একান্ত কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। শুধু এটাই নয়, আল্লাহর আইন ছাড়া আমরা আর কিছুই মানতে ও অনুসরণ করতে পারি না এবং কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই আমাদের সারা জীবন কাজ করে যেতে হয়।
ইবাদত-বন্দেগী, রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনা, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব, শিক্ষা-দীক্ষা, লেনদেন ও বেচাকেনা, ব্যবসায়-বাণিজ্যে, যুদ্ধ-সন্ধি, বন্ধু-শত্রতা- মোটকথা ব্যক্তি জীবন ও সামাজিক জীবনের প্রত্যেকটি কাজই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আইন অনুযায়ী সমাধা করা একান্তই আবশ্যক হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন মুশকিল এটা দাঁড়ায় যে, আমরা আল্লাহর আইন কোথায় পাব এবং কেমন করে জানব যে, আল্লাহ কোন কাজে সন্তুষ্ট হন আর কোন কাজে অসন্তুষ্ট হন? জীবনযাপনের কোন পন্থা এবং ব্যবস্থা আল্লাহ পছন্দ করেন আর কোনটি করেন অপছন্দ, তাই বা আমরা বুঝতে পারব কিরূপে? আর এটা যতক্ষণ পর্যন্ত জানতে ও বুঝতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যতই তওহীদ বিশ্বাসী হই না কেন, সে তওহীদ অনুযায়ী কাজ করতে আমরা কোনদিনই পারব না।
এইখানে আরও একটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ। বড় বড় ও মহামূল্য নীতিকথা বলার লোক দুনিয়ায় কোন দিনই কম পাওয়া যায় না। কিন্তু সে নীতি নিজে অনুসরণ করে তা বাস্তবায়িত করার পন্থা দেখিয়ে দেয়ার লোক খুব বেশী কোনদিনই পাওয়া যায়নি। তাই কালিমার প্রথম অংশের প্রতি বিশ্বাসী লোকদের জন্য নেতা বা পথ-প্রদর্শক হিসেবে একান্ত প্রয়োজন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি নিজে পুতঃপবিত্র চরিত্রের অধিকারী হয়ে এবং আল্লাহর বিধান নিজে পালন করে লোকদেরকে তা অনুসরণ করার বাস্তব পন্থা দেখিয়ে দিবেন। এরূপ নেতৃত্ব না পেলে মানুষের পক্ষে আল্লাহর বিধান পালন করা সম্ভব নয় আর তা না পেলে কোনদিনই আমরা শান্তি ও কল্যাণ লাভ করতে সমর্থ হবো না। কালিমা তাইয়্যিবার প্রতি আমাদের ঈমানও আমাদের জীবনে বাস্তবায়িত হতে পারবে। ফলে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে আসবে। এটা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।
ইবাদত-বন্দেগী, রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনা, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব, শিক্ষা-দীক্ষা, লেনদেন ও বেচাকেনা, ব্যবসায়-বাণিজ্যে, যুদ্ধ-সন্ধি, বন্ধু-শত্রতা- মোটকথা ব্যক্তি জীবন ও সামাজিক জীবনের প্রত্যেকটি কাজই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আইন অনুযায়ী সমাধা করা একান্তই আবশ্যক হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন মুশকিল এটা দাঁড়ায় যে, আমরা আল্লাহর আইন কোথায় পাব এবং কেমন করে জানব যে, আল্লাহ কোন কাজে সন্তুষ্ট হন আর কোন কাজে অসন্তুষ্ট হন? জীবনযাপনের কোন পন্থা এবং ব্যবস্থা আল্লাহ পছন্দ করেন আর কোনটি করেন অপছন্দ, তাই বা আমরা বুঝতে পারব কিরূপে? আর এটা যতক্ষণ পর্যন্ত জানতে ও বুঝতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যতই তওহীদ বিশ্বাসী হই না কেন, সে তওহীদ অনুযায়ী কাজ করতে আমরা কোনদিনই পারব না।
এইখানে আরও একটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ। বড় বড় ও মহামূল্য নীতিকথা বলার লোক দুনিয়ায় কোন দিনই কম পাওয়া যায় না। কিন্তু সে নীতি নিজে অনুসরণ করে তা বাস্তবায়িত করার পন্থা দেখিয়ে দেয়ার লোক খুব বেশী কোনদিনই পাওয়া যায়নি। তাই কালিমার প্রথম অংশের প্রতি বিশ্বাসী লোকদের জন্য নেতা বা পথ-প্রদর্শক হিসেবে একান্ত প্রয়োজন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি নিজে পুতঃপবিত্র চরিত্রের অধিকারী হয়ে এবং আল্লাহর বিধান নিজে পালন করে লোকদেরকে তা অনুসরণ করার বাস্তব পন্থা দেখিয়ে দিবেন। এরূপ নেতৃত্ব না পেলে মানুষের পক্ষে আল্লাহর বিধান পালন করা সম্ভব নয় আর তা না পেলে কোনদিনই আমরা শান্তি ও কল্যাণ লাভ করতে সমর্থ হবো না। কালিমা তাইয়্যিবার প্রতি আমাদের ঈমানও আমাদের জীবনে বাস্তবায়িত হতে পারবে। ফলে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে আসবে। এটা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।
নবীগণ দুনিয়ায় আসেন আল্লাহর বিধান নিয়ে। তাঁদের আসার একমাত্র উদ্দেশ্য এ যে, যারা কালিমা তাইয়্যিবার প্রথম অংশ- “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বিশ্বাস করে আল্লাহর একচ্ছত্র প্রভুত্ব স্বীকার করবে, তারা যেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীদের প্রদর্শিত নিয়মে এ পন্থায় কাজ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারে। নবীগণ নিজেরাই আল্লাহর বিধান মত কাজ করে মানুষকে দেখিয়ে দেন। তাঁরাই ভাল করে জানেন আল্লাহর বিধান কী এবং কোন নিয়মে জীবনযাপন করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। নবীগণ ছাড়া মানুষের মধ্যে কেউই তা জানতে পারে। কাজেই সর্বসাধারণ মানুষের কর্তব্য ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বিশ্বাস করার পর নবীদের প্রতি ঈমান আনা, পরিপূর্ণরূপে নবীদের আনুগত্য স্বীকার করা এবং আরও একটু অগ্রসর হয়ে ঘোষণা করা- ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ'- মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। ঠিক এই কারণে প্রত্যেক নারীই যেমন দুনিয়ায় আল্লাহর প্রভুত্ব ও তাওহীদের বাণী প্রচার করেছেন এবং তেমনি লোকদের নিকট তাঁদের নিজেদের আনুগত্যের দাবি করেছেন।
“আমি তোমাদের প্রতি (আল্লাহর) বিশ্বস্ত নবী, অতএব আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে মানো ও অনুসরণ কর।” (সূরা শু'আরা ২৬ : ১০৭ ও ১০৮)
‘বিশ্বস্ত নবী” অর্থ দুনিয়ার মানুষের জন্য আল্লাহ যে বিধান তাঁর নিকট পাঠিয়েছেন, তা তিনি যথাযথভাবে লোকদের নিকট পৌঁছিয়েছেন এবং বাস্তবে তা অনুসরণ ও পালন করে দেখিয়েছেন। এই আমানতদারীতে তিনি একবিন্দু খিয়ানত বা বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করেন নাই। আল্লাহ নিজেও প্রত্যেক নারীর পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করার সুস্পষ্ট আদেশ ও অনুমতি দিয়েছেন :
من يطع الرسول فق أطاع الله ومن تولى ما أ نا عليهم حفيظا
“আল্লাহর আনুগত্য কর ও রসূলের আনুগত্য কর। এবং যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করে সে ঠিক আল্লাহরই আনুগত্য করে।” (সূরা নিসা ৪ : ৮০)।
কারণ নবীগণ (আলাইহিস সালাম) নিজেদের ইচ্ছেমত বা অন্য কারও আদেশ মত কিছুই করেন না। আল্লাহর নিকট হতে যখন যে আদেশ নাযিল হয়, সর্বপ্রথম নবী তাই নিজের কাজের ভিতর দিয়ে বাস্তবায়িত করেন।
إن أثبع إلا ما يوحي إلي
“আমার প্রতি যে ওহী নাযিল করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, সেটা ভিন্ন আর কিছুই আমি করি না।” (সূরা আন'আম ৬ : ৫০)
এই কারণেই আল্লাহ সর্বশেষ নবী ও রসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে সর্বোত্তম আদর্শ ও অনুসরণীয় নেতা করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। বলেছেন :
“নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের ব্যক্তিত্ব সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকালের আশা করে এবং খুব বেশী করে আল্লাহর স্মরণ করে।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ২১)
এসব আয়াত হতে একথা পরিষ্কাররূপে বুঝতে পারা যায় যে, সত্যিকারভাবে। আল্লাহর ইবাদত এবং একান্তভাবে তাঁর আনুগত্য করার পথ হচ্ছে জীবনের প্রতিটি কাজে কেবল নবীগণের অনুসরণ করা এবং দুনিয়ার আল্লাহদ্রোহী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করা। বস্তুত নবীর আনুগত্যই হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যের বাস্তব রূপ।
শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বিধান আল কুরআন অনুযায়ী জীবনযাপন করেছেন এবং দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী একজন মুসলিমকে কিভাবে জীবনযাপন করতে হয়। এই কুরআনের ব্যাখ্যা তিনিই দিয়ে গিয়েছেন মুখের কথা ও বাস্তব কাজ দ্বারা। এর পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত বর্ণনা সুসংরক্ষিত রয়েছে দুনিয়ার মুসলিমদের নিকট হাদীস বা সুন্নাতের মাধ্যমে। এই কুরআনের বিধান অনুযায়ী গঠিত লোকদের এক আদর্শ সমাজও তিনি রেখে গিয়েছেন। এই আদর্শ সমাজও দুনিয়ার মানুষের জন্য রসূলের উপস্থাপিত আদর্শের বাস্তব প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে পূর্ণ শুভ্রতা সহকারে। তাই মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর নবুয়াত ও রিসালাত শাশ্বত ও চিরন্তন।
তাই কালিমার প্রথম অংশের সাথে শেষ অংশ মিলিয়ে যখন আমরা পড়ি- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ”, তখন আমরা যেমন বলি যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কাকেও প্রভু ও আইনদাতা বলে মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কাকেও প্রভুত্ব, নিরংকুশ কর্তৃত্বের অধিকারী ও আইনদাতা স্বীকার করি না, সে সঙ্গে আমরা একথাও ঘোষণা করি যে, আল্লাহর যে আইন-বিধান, জীবনযাপন প্রণালী এবং আল্লাহকে পাওয়ার যে পন্থা ও পদ্ধতি শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) প্রচার করেছেন আমরা কেবল তাই মানি, তাই অনুসরণ করি; তা ছাড়া অন্য কিছু মানতে আমরা মাত্রই প্রস্তুত নই, কেননা তিনিই আমাদের চিরকালীন অনুসরণীয় নেতা।
এখানে পরিষ্কার করে জেনে নেয়া দরকার যে, যে ব্যক্তি জীবনের সমস্ত ব্যাপারে কেবল আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হেদায়েত মেনে কাজ করে, প্রকৃতপক্ষে সে-ই খাঁটি ও আসল মুসলিম বলে বিবেচিত হতে পারে অন্য কেউ নয়। প্রকৃতপক্ষে কালিমা তাইয়্যিবা -
প্রথমত একটি বিপ্লবী আকীদা ও বিশ্বাস, চিন্তা ও মতবাদ মাত্র।
দ্বিতীয় স্তরে এটি বাস্তব কর্ম জীবনের আদর্শ ও চরিত্র গঠনের মৌলিক মানদণ্ড।
তৃতীয় স্তরে এটি আন্দোলনের মূল দাওয়াত এবং জন-সংগঠন ও সমাজ-সংশোধনের হাতিয়ার।
চতুর্থ স্তরে এটি একটি বিপ্লব, একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজের ভিত্তি, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ও সরকারী নীতি নির্ধারণের মূলনীতি, ভিন্নতর জাতি ও রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের স্থায়ী মাপকাঠি।
শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর জীবনাদর্শ ও কর্মধারা হতে এ কথার সত্যতা অনস্বীকার্যরূপে প্রমাণিত হয়। তাই কালিমার এ মর্যাদা ও ধারণাকে যথার্থরূপে বজায় রাখা ও এরূপ ক্রমিক ধারার ভিত্তিতে একে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া এবং সে জন্য চেষ্টা করাই কালিমা বিশ্বাসী লোকদের কর্তব্য।
“আমি তোমাদের প্রতি (আল্লাহর) বিশ্বস্ত নবী, অতএব আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে মানো ও অনুসরণ কর।” (সূরা শু'আরা ২৬ : ১০৭ ও ১০৮)
‘বিশ্বস্ত নবী” অর্থ দুনিয়ার মানুষের জন্য আল্লাহ যে বিধান তাঁর নিকট পাঠিয়েছেন, তা তিনি যথাযথভাবে লোকদের নিকট পৌঁছিয়েছেন এবং বাস্তবে তা অনুসরণ ও পালন করে দেখিয়েছেন। এই আমানতদারীতে তিনি একবিন্দু খিয়ানত বা বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করেন নাই। আল্লাহ নিজেও প্রত্যেক নারীর পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করার সুস্পষ্ট আদেশ ও অনুমতি দিয়েছেন :
من يطع الرسول فق أطاع الله ومن تولى ما أ نا عليهم حفيظا
“আল্লাহর আনুগত্য কর ও রসূলের আনুগত্য কর। এবং যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করে সে ঠিক আল্লাহরই আনুগত্য করে।” (সূরা নিসা ৪ : ৮০)।
কারণ নবীগণ (আলাইহিস সালাম) নিজেদের ইচ্ছেমত বা অন্য কারও আদেশ মত কিছুই করেন না। আল্লাহর নিকট হতে যখন যে আদেশ নাযিল হয়, সর্বপ্রথম নবী তাই নিজের কাজের ভিতর দিয়ে বাস্তবায়িত করেন।
إن أثبع إلا ما يوحي إلي
“আমার প্রতি যে ওহী নাযিল করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, সেটা ভিন্ন আর কিছুই আমি করি না।” (সূরা আন'আম ৬ : ৫০)
এই কারণেই আল্লাহ সর্বশেষ নবী ও রসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে সর্বোত্তম আদর্শ ও অনুসরণীয় নেতা করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। বলেছেন :
“নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের ব্যক্তিত্ব সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকালের আশা করে এবং খুব বেশী করে আল্লাহর স্মরণ করে।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ২১)
এসব আয়াত হতে একথা পরিষ্কাররূপে বুঝতে পারা যায় যে, সত্যিকারভাবে। আল্লাহর ইবাদত এবং একান্তভাবে তাঁর আনুগত্য করার পথ হচ্ছে জীবনের প্রতিটি কাজে কেবল নবীগণের অনুসরণ করা এবং দুনিয়ার আল্লাহদ্রোহী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করা। বস্তুত নবীর আনুগত্যই হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যের বাস্তব রূপ।
শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বিধান আল কুরআন অনুযায়ী জীবনযাপন করেছেন এবং দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী একজন মুসলিমকে কিভাবে জীবনযাপন করতে হয়। এই কুরআনের ব্যাখ্যা তিনিই দিয়ে গিয়েছেন মুখের কথা ও বাস্তব কাজ দ্বারা। এর পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত বর্ণনা সুসংরক্ষিত রয়েছে দুনিয়ার মুসলিমদের নিকট হাদীস বা সুন্নাতের মাধ্যমে। এই কুরআনের বিধান অনুযায়ী গঠিত লোকদের এক আদর্শ সমাজও তিনি রেখে গিয়েছেন। এই আদর্শ সমাজও দুনিয়ার মানুষের জন্য রসূলের উপস্থাপিত আদর্শের বাস্তব প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে পূর্ণ শুভ্রতা সহকারে। তাই মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর নবুয়াত ও রিসালাত শাশ্বত ও চিরন্তন।
তাই কালিমার প্রথম অংশের সাথে শেষ অংশ মিলিয়ে যখন আমরা পড়ি- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ”, তখন আমরা যেমন বলি যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কাকেও প্রভু ও আইনদাতা বলে মানি না, আল্লাহ ছাড়া আর কাকেও প্রভুত্ব, নিরংকুশ কর্তৃত্বের অধিকারী ও আইনদাতা স্বীকার করি না, সে সঙ্গে আমরা একথাও ঘোষণা করি যে, আল্লাহর যে আইন-বিধান, জীবনযাপন প্রণালী এবং আল্লাহকে পাওয়ার যে পন্থা ও পদ্ধতি শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) প্রচার করেছেন আমরা কেবল তাই মানি, তাই অনুসরণ করি; তা ছাড়া অন্য কিছু মানতে আমরা মাত্রই প্রস্তুত নই, কেননা তিনিই আমাদের চিরকালীন অনুসরণীয় নেতা।
এখানে পরিষ্কার করে জেনে নেয়া দরকার যে, যে ব্যক্তি জীবনের সমস্ত ব্যাপারে কেবল আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হেদায়েত মেনে কাজ করে, প্রকৃতপক্ষে সে-ই খাঁটি ও আসল মুসলিম বলে বিবেচিত হতে পারে অন্য কেউ নয়। প্রকৃতপক্ষে কালিমা তাইয়্যিবা -
প্রথমত একটি বিপ্লবী আকীদা ও বিশ্বাস, চিন্তা ও মতবাদ মাত্র।
দ্বিতীয় স্তরে এটি বাস্তব কর্ম জীবনের আদর্শ ও চরিত্র গঠনের মৌলিক মানদণ্ড।
তৃতীয় স্তরে এটি আন্দোলনের মূল দাওয়াত এবং জন-সংগঠন ও সমাজ-সংশোধনের হাতিয়ার।
চতুর্থ স্তরে এটি একটি বিপ্লব, একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজের ভিত্তি, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ও সরকারী নীতি নির্ধারণের মূলনীতি, ভিন্নতর জাতি ও রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের স্থায়ী মাপকাঠি।
শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর জীবনাদর্শ ও কর্মধারা হতে এ কথার সত্যতা অনস্বীকার্যরূপে প্রমাণিত হয়। তাই কালিমার এ মর্যাদা ও ধারণাকে যথার্থরূপে বজায় রাখা ও এরূপ ক্রমিক ধারার ভিত্তিতে একে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া এবং সে জন্য চেষ্টা করাই কালিমা বিশ্বাসী লোকদের কর্তব্য।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- কালিমার এ অংশের অর্থ জেনে একে মানলে নিম্নলিখিত কাজগুলো অবশ্য কর্তব্য হয়।
১. আল্লাহ ছাড়া আর কাকেও সাহায্যকারী, বিপদ হতে উদ্ধারকারী ও মুক্তিদাতা বলে স্বীকার ও বিশ্বাস করব না।
২. আল্লাহ ছাড়া কেউ ক্ষতি-উপকার করতে পারে বলে মনে করতে পারব, সকল ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করব।
৩. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট দু’আ করতে এবং সাহায্যের প্রার্থনা করতে পারব না।
৪. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত বা বন্দেগী করব না এবং কারও নামে মানত করব না।
৫. আল্লাহ ছাড়া অন্য কাকেও প্রভু, আইনদাতা ও বিধানদাতা এবং বাদশাহ বা সার্বভৌম বলে স্বীকার করব না- অন্য কারও আইন মানব না (এমন আইন মানব না যা মূলতঃ আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে ও উহার সীমার মধ্যে রচিত হয়নি)।
৬. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও বান্দা বা দাস হয়ে থাকব না এবং নিজের প্রবৃত্তির কামনা ও দেশ-চলতি প্রথাসমূহ অন্ধভাবে অনুসরণ করব না।
৭. জীবনের প্রত্যেক ব্যাপারে আল্লাহর বিধানকে একমাত্র ভিত্তি বলে মানব ও সে অনুযায়ী প্রত্যেকটি কাজ করতে হবে।
৮. জীবনের প্রত্যেক কাজের জবাবদিহি কেবল আল্লাহর নিকট করতে হবে- এ বিশ্বাস হৃদয়-মনে সদা জাগ্রত রাখব, এবং যে-কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন সে কাজ করতে ও যে-কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন তা হতে বিরত থাকতে সর্বদা চেষ্টা করব।
‘মুহাম্মাদুর রসূলুন্নাহ’- কালিমার এ দ্বিতীয় বাক্যে উচ্চারণ এবং স্বীকার করলে মানতে হবে :
১. মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রসূল।
২. তাঁর মাধ্যমে যে জীবন বিধান ও হিদায়াত আল্লাহর নিকট হতে এসেছে তাই সত্য এবং শাশ্বত।
৩. তাঁর উপস্থাপিত আদর্শ ও তাঁর প্রদত্ত শিক্ষার বিরোধী যা তা সবই ভুল ও ভ্রষ্টতা এবং অবশ্য পরিত্যাজ্য।
৪. তিনি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিই মানুষের স্বাধীন নেতা হতে পারে না। তিনিই কালিমা বিশ্বাসীদের একমাত্র চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ নেতা।
৫. অতএব মানব জীবনের প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহর কিতাব ও রসূলের হাদীস তথা সুন্নাহ অনুসারে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৬. এমন একটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালাতে হবে যা এ কালিমা অনুযায়ী আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং আইন-বিধান রচনার মৌলিক অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই স্বীকৃত ও ঘোষিত।
প্রত্যেকটি মুসলিমের এটাই মূল বিশ্বাস। প্রত্যেকটি মুসলিমের জন্য এটাই কর্ম বিধান।
প্রথম:
এখন আমাকে প্রথমে বিবেচনা করতে হবে, কালিমার এ ব্যাখ্যাসহ এর প্রতি আমি পূর্ণ ও দৃঢ়ভাবে ঈমান আনতে পেরেছি কিনা। যদি পারি তা হলে এর প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান আনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। আমার চিন্তা, বিশ্বাস ও মূল্যমান এ অনুযায়ী ঢেলে গঠন করতে হবে।
দ্বিতীয় :
এ কালিমার বিস্তারিত ব্যাখ্যার আলোকে আমি আমার নিজের কর্মজীবন যাচাই করে দেখি। তাতে এর বিপরীত কিছু দেখতে পেলে তা দূর করি। নিজেকে কালিমা অনুযায়ী পুরাপুরি সংশোধন করে নিতে হবে।
তৃতীয় :
আমার গোটা পরিবার ও ঘর-সংসারে এ কালিমার বিপরীত কিছু থাকলে তা সংশোধন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ :
আমার পরিবেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক লেনদেন, বিচার-আচার সব কিছুই এ কালিমার মানদণ্ডে যাচাই করব এবং সব কিছুকে এ কালিমা অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করব। সে চেষ্টা আমি একা করতে পারবো না, দলবদ্ধভাবে তা করতে হবে। অতএব এই চিন্তার লোক জোগাড় করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে কালিমা’কে সমগ্র জীবনের উপর বিজয়ী শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করে দিতে হবে।
১. আল্লাহ ছাড়া আর কাকেও সাহায্যকারী, বিপদ হতে উদ্ধারকারী ও মুক্তিদাতা বলে স্বীকার ও বিশ্বাস করব না।
২. আল্লাহ ছাড়া কেউ ক্ষতি-উপকার করতে পারে বলে মনে করতে পারব, সকল ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করব।
৩. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট দু’আ করতে এবং সাহায্যের প্রার্থনা করতে পারব না।
৪. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত বা বন্দেগী করব না এবং কারও নামে মানত করব না।
৫. আল্লাহ ছাড়া অন্য কাকেও প্রভু, আইনদাতা ও বিধানদাতা এবং বাদশাহ বা সার্বভৌম বলে স্বীকার করব না- অন্য কারও আইন মানব না (এমন আইন মানব না যা মূলতঃ আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে ও উহার সীমার মধ্যে রচিত হয়নি)।
৬. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও বান্দা বা দাস হয়ে থাকব না এবং নিজের প্রবৃত্তির কামনা ও দেশ-চলতি প্রথাসমূহ অন্ধভাবে অনুসরণ করব না।
৭. জীবনের প্রত্যেক ব্যাপারে আল্লাহর বিধানকে একমাত্র ভিত্তি বলে মানব ও সে অনুযায়ী প্রত্যেকটি কাজ করতে হবে।
৮. জীবনের প্রত্যেক কাজের জবাবদিহি কেবল আল্লাহর নিকট করতে হবে- এ বিশ্বাস হৃদয়-মনে সদা জাগ্রত রাখব, এবং যে-কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন সে কাজ করতে ও যে-কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন তা হতে বিরত থাকতে সর্বদা চেষ্টা করব।
‘মুহাম্মাদুর রসূলুন্নাহ’- কালিমার এ দ্বিতীয় বাক্যে উচ্চারণ এবং স্বীকার করলে মানতে হবে :
১. মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রসূল।
২. তাঁর মাধ্যমে যে জীবন বিধান ও হিদায়াত আল্লাহর নিকট হতে এসেছে তাই সত্য এবং শাশ্বত।
৩. তাঁর উপস্থাপিত আদর্শ ও তাঁর প্রদত্ত শিক্ষার বিরোধী যা তা সবই ভুল ও ভ্রষ্টতা এবং অবশ্য পরিত্যাজ্য।
৪. তিনি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিই মানুষের স্বাধীন নেতা হতে পারে না। তিনিই কালিমা বিশ্বাসীদের একমাত্র চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ নেতা।
৫. অতএব মানব জীবনের প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহর কিতাব ও রসূলের হাদীস তথা সুন্নাহ অনুসারে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৬. এমন একটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালাতে হবে যা এ কালিমা অনুযায়ী আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং আইন-বিধান রচনার মৌলিক অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই স্বীকৃত ও ঘোষিত।
প্রত্যেকটি মুসলিমের এটাই মূল বিশ্বাস। প্রত্যেকটি মুসলিমের জন্য এটাই কর্ম বিধান।
প্রথম:
এখন আমাকে প্রথমে বিবেচনা করতে হবে, কালিমার এ ব্যাখ্যাসহ এর প্রতি আমি পূর্ণ ও দৃঢ়ভাবে ঈমান আনতে পেরেছি কিনা। যদি পারি তা হলে এর প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান আনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। আমার চিন্তা, বিশ্বাস ও মূল্যমান এ অনুযায়ী ঢেলে গঠন করতে হবে।
দ্বিতীয় :
এ কালিমার বিস্তারিত ব্যাখ্যার আলোকে আমি আমার নিজের কর্মজীবন যাচাই করে দেখি। তাতে এর বিপরীত কিছু দেখতে পেলে তা দূর করি। নিজেকে কালিমা অনুযায়ী পুরাপুরি সংশোধন করে নিতে হবে।
তৃতীয় :
আমার গোটা পরিবার ও ঘর-সংসারে এ কালিমার বিপরীত কিছু থাকলে তা সংশোধন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ :
আমার পরিবেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক লেনদেন, বিচার-আচার সব কিছুই এ কালিমার মানদণ্ডে যাচাই করব এবং সব কিছুকে এ কালিমা অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করব। সে চেষ্টা আমি একা করতে পারবো না, দলবদ্ধভাবে তা করতে হবে। অতএব এই চিন্তার লোক জোগাড় করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে কালিমা’কে সমগ্র জীবনের উপর বিজয়ী শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করে দিতে হবে।
মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে ইলম ও আমল অর্থাৎ জ্ঞান ও তা বাস্তবায়ন ছাড়া আর কোনোই প্রভেদ নেই। কারো। ইলম ও আমল যদি অমুসলিমের ইলম ও আমলের মত। হয়, আর তবুও সে নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়। তাহলে বুঝতে হবে যে, সে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কাফির কুরআন পড়ে না এবং তাতে কী লিখা আছে তা সে জানে না। কিন্তু মুসলিমের অবস্থা যদি এ রকমই হয়। তাহলে সে নিজেকে মুসলিম বলবে কোন অধিকারে?
“আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে। না তারা কি সমান হতে পারে ? বুদ্ধিমান। লোকেরাই তো উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।” (সূরা যুমার ৩৯: ৯)
“আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে। না তারা কি সমান হতে পারে ? বুদ্ধিমান। লোকেরাই তো উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।” (সূরা যুমার ৩৯: ৯)
আমরা সবাই জানি যে, দুনিয়ায় ইসলাম আল্লাহর একটি সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আল্লাহ তাকে মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উম্মত করে সৃষ্টি করেছেন এবং ইসলামের ন্যায় এত বড় একটা নিয়ামত তাকে দান করেছেন বলে প্রত্যেক মুসলিম আল্লাহর শোকর আদায় করে থাকে। এমন কি, স্বয়ং আল্লাহও ইসলামকে মানুষের প্রতি সবচেয়ে বড় ও উৎকৃষ্ট নিয়ামত বলে ঘোষণা করেছেন।
اليوم أكملت لكم بريئگم وأتممت علیکم نعمتي ورضيت لكم الإسلام بريئا
“আজ আমি তোমাদের আনুগত্যের বিধান (জীবন বিধান) পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়িদা ৫: ৩)
আল্লাহ মুসলিমদের প্রতি এই যে, অনুগ্রহ করেছেন, এর হক আদায় করা তাদের পক্ষে একান্ত কর্তব্য। কারণ যে ব্যক্তি অপরের অনুগ্রহের হক আদায় করে না, সে বড়ই অকৃতজ্ঞ। আর সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা হচ্ছে মানুষের প্রতি আল্লাহর এ বিরাট অনুগ্রহের কথা ভুলে যাওয়া।
اليوم أكملت لكم بريئگم وأتممت علیکم نعمتي ورضيت لكم الإسلام بريئا
“আজ আমি তোমাদের আনুগত্যের বিধান (জীবন বিধান) পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়িদা ৫: ৩)
আল্লাহ মুসলিমদের প্রতি এই যে, অনুগ্রহ করেছেন, এর হক আদায় করা তাদের পক্ষে একান্ত কর্তব্য। কারণ যে ব্যক্তি অপরের অনুগ্রহের হক আদায় করে না, সে বড়ই অকৃতজ্ঞ। আর সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা হচ্ছে মানুষের প্রতি আল্লাহর এ বিরাট অনুগ্রহের কথা ভুলে যাওয়া।
আল্লাহ যখন আমাকে মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উম্মত করেছেন, তখন পূর্ণরূপে ও খাটিভাবে তার অনুগামী হতে পারলেই আল্লাহর এ অনুগ্রহের হক আদায় হবে। আমাকে যখন আল্লাহ মুসলিম জাতির অন্তর্ভুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন, তখন তাঁর এ অনুগ্রহ ও দয়ার হক আদায় করতে হলে আমাকে খাটি মুসলিম হতে হবে। এছাড়া আমি অন্য কোনো প্রকারেই এবং কোনো উপায়েই তাঁর এ মহান উপকারের হক আদায় করতে পারবো না। আর আমি যদি এই ‘হক আদায় করতে না পারি বা না করি, তাহলে আমি এ অকৃতজ্ঞতার জন্য মহা অপরাধী হবো। আল্লাহ আমাদের সকলকেই এ মহাপাপ হতে রক্ষা করুন।
মুসলিম হতে হলে যার প্রয়োজন সকলের আগে এবং যাকে বলা যায় মুসলিম হওয়ার পথের প্রথম ধাপ। একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখি যে, আমরা সদাসর্বদা যে 'মুসলিম' শব্দটি ব্যবহার করে থাকি, এর অর্থ কী? মানুষ কি মায়ের গর্ভ হতেই ইসলাম ধর্ম সাথে করে নিয়ে আসে? মুসলিম ব্যক্তির পুত্র অথবা মুসলিম ব্যক্তির পৌত্র হলেই কি মুসলিম হওয়া যায়? ব্রাক্ষ্মণের পুত্র হলেই যেমন ব্রাহ্মণ, চৌধুরীর পুত্র হলেই যেমন চৌধুরী এবং শুদ্রের পুত্র হলেই যেমন শুদ্র হওয়া যায়, তেমনিরূপে মুসলিম নামধারী ব্যক্তির পুত্র হলেই কি মুসলিম হতে পারে? ‘মুসলিম’ কি কোন বংশ বা কোনো শ্রেণীর নাম? ইংরেজ জাতির মধ্যে জন্ম হলেই ইংরেজ, চৌধুরী বংশে জন্মিলেই চৌধুরী হয়, তেমনি মুসলিমরাও কি ‘মুসলিম' নামে অভিহিত হবে?
এসব প্রশ্নের উত্তরে আমরা কি এটাই বলবো না যে, ‘না’, ‘মুসলিম তাকে বলে না। মায়ের গর্ভ হতেই মুসলিম হয়ে কেউ জন্মে না, বরং ইসলাম গ্রহণ করলেই মুসলিম হওয়া যায় এবং ইসলাম ত্যাগ করলেই মানুষ আর মুসলিম থাকে না - মুসলিম সমাজ হতে একেবারে বের হয়ে যায়। যে কোনো লোক - সে ব্রাক্ষ্মণ হোক কিংবা পাঠান হোক, ইংরেজ হোক অথবা আমেরিকান, বাংগালী হোক অথবা নিগ্রো হোক - সে যখন ইসলাম গ্রহণ করবে তখনই সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি মুসলিম সমাজে জন্মগ্রহণ করেও ইসলামের নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধান পালন করে চলে না, সে মুসলিম রূপে গণ্য হতে পারে না; সে সৈয়দের পুত্রই হোক আর চৌধুরীর পুত্রই হোক তাতে কিছু আসে যায় না।
পূর্বোক্ত প্রশ্নগুলোর এ উত্তর হতেই জানা গেল যে, আল্লাহর বড় নিয়ামত -- মুসলিম হওয়ার নিয়ামত -- যা আমি লাভ করেছি, ওটা জন্মগত জিনিস নয়, তাকে আমি মায়ের গর্ভ হতে জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই লাভ করতে পারি না এবং আজীবন এর প্রতি লক্ষ্য করি আর নাই করি তা আমার সাথে নিজে নিজেই সর্বদা লেগে থাকবে এমন জিনিসও তা নয়। এটা একটি চেষ্টালভ্য নিয়ামত; তা লাভ করতে হলে আমাকে রীতিমত চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা-সাধনা করে যদি আমি তা লাভ করি, তবেই তাকে আমি পেতে পারি। আর এর প্রতি যদি মোটেই খেয়াল না করি, তবে এর সৌন্দর্য হতে বঞ্চিত হবো (নাউযুবিল্লাহ)। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ইসলাম গ্রহণ করলেই মানুষ মুসলিম হয়। কালিমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করলে মানুষ ঈমানদার হয় এবং আল কুরআন ও সুন্নাহর প্রত্যেকটা বিধান মেনে চললে মুসলিম হয়।
এসব প্রশ্নের উত্তরে আমরা কি এটাই বলবো না যে, ‘না’, ‘মুসলিম তাকে বলে না। মায়ের গর্ভ হতেই মুসলিম হয়ে কেউ জন্মে না, বরং ইসলাম গ্রহণ করলেই মুসলিম হওয়া যায় এবং ইসলাম ত্যাগ করলেই মানুষ আর মুসলিম থাকে না - মুসলিম সমাজ হতে একেবারে বের হয়ে যায়। যে কোনো লোক - সে ব্রাক্ষ্মণ হোক কিংবা পাঠান হোক, ইংরেজ হোক অথবা আমেরিকান, বাংগালী হোক অথবা নিগ্রো হোক - সে যখন ইসলাম গ্রহণ করবে তখনই সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি মুসলিম সমাজে জন্মগ্রহণ করেও ইসলামের নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধান পালন করে চলে না, সে মুসলিম রূপে গণ্য হতে পারে না; সে সৈয়দের পুত্রই হোক আর চৌধুরীর পুত্রই হোক তাতে কিছু আসে যায় না।
পূর্বোক্ত প্রশ্নগুলোর এ উত্তর হতেই জানা গেল যে, আল্লাহর বড় নিয়ামত -- মুসলিম হওয়ার নিয়ামত -- যা আমি লাভ করেছি, ওটা জন্মগত জিনিস নয়, তাকে আমি মায়ের গর্ভ হতে জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই লাভ করতে পারি না এবং আজীবন এর প্রতি লক্ষ্য করি আর নাই করি তা আমার সাথে নিজে নিজেই সর্বদা লেগে থাকবে এমন জিনিসও তা নয়। এটা একটি চেষ্টালভ্য নিয়ামত; তা লাভ করতে হলে আমাকে রীতিমত চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা-সাধনা করে যদি আমি তা লাভ করি, তবেই তাকে আমি পেতে পারি। আর এর প্রতি যদি মোটেই খেয়াল না করি, তবে এর সৌন্দর্য হতে বঞ্চিত হবো (নাউযুবিল্লাহ)। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ইসলাম গ্রহণ করলেই মানুষ মুসলিম হয়। কালিমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করলে মানুষ ঈমানদার হয় এবং আল কুরআন ও সুন্নাহর প্রত্যেকটা বিধান মেনে চললে মুসলিম হয়।
মুখে মুখে যে ব্যক্তি ‘আমি মুসলিম’ বা ‘আমি মুসলিম হয়েছি বলে চীৎকার করবে, তাকেই কি মুসলিম মনে করতে হবে? অথবা পূজারী ব্রাক্ষ্মণেরা যেমন না বুঝে কতকগুলো সংস্কৃত মন্ত্র পাঠ করে, তেমনিভাবে আরবী ভাষায় কয়েকটি শব্দ না বুঝে মুখে উচ্চারণ করলেই কি মুসলিম হওয়া যাবে? ইসলাম গ্রহণ করার তাৎপর্য কি এটাই? উক্ত প্রশ্নের জবাবে আমরা কি এটাই বলবো না যে, ইসলাম গ্রহণের অর্থ এটা নয়। ইসলাম গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে মুহাম্মাদ (ﷺ) - এর শিক্ষা-দীক্ষা ও ব্যবস্থাকে বুঝে আন্তরিকতার সাথে সত্য বলে বিশ্বাস করা, জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ও আদর্শ হিসেবেই এটাকে গ্রহণ করা এবং তদনুযায়ী কাজ করা; ইসলাম গ্রহণ করার তাৎপর্য এটাই। কাজেই যিনি এরূপ না করবে তিনি মুসলিম হতে পারার কথা নয়। আমাদের এ উত্তর হতে এটাই প্রকাশ পেল যে, প্রথমত ইসলাম জেনে ও বুঝে নেয়া এবং বুঝে নেয়ার পর তাকে কাজে পরিণত করার নাম ইসলাম গ্রহণ।
কেউ কিছু না জেনেও ব্রাক্ষ্মণ হতে পারে, কারণ সে ব্রাক্ষ্মণের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে, অতএব সে ব্রাক্ষ্মণ থাকবে, কেউ কিছু না জেনেও চৌধুরী হতে পারে, যেহেতু সে চৌধুরীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে - চৌধুরীই সে থাকবে। কিন্তু ইসলামকে না জেনে কেউ মুসলিম হতে পারে না, ইসলামকে জেনে বুঝে বিশ্বাস করে কাজ করলেই তবে মুসলিম হওয়া যায়। চিন্তা করে দেখি মুহাম্মাদ (ﷺ) - এর শিক্ষা ও জীবনব্যবস্থা না জেনে তাকে বিশ্বাস করা ও তদনুযায়ী কাজ করা কিরূপে সম্ভব হতে পারে? আর না জেনে, না বুঝে এবং বিশ্বাস না করে বা মানুষ মুসলিম হতে পারে কিরূপে? অতএব, বুঝা যাচ্ছে যে, মুগ্ধতা নিয়ে মুসলিম হওয়া ও মুসলিম থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। যারা মুসলিমের ঘরে জন্মলাভ করেছে, মুসলিম নামে যারা নিজেদের পরিচয় দেয় ও মুসলিম বলে দাবী করে তারা সকলেই প্রকৃতপক্ষে মুসলিম কিনা তা চিন্তার বিষয়! যিনি ইসলাম কী তা জানেন এবং বুঝে শুনে তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেন, এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন প্রকৃতপক্ষে তিনিই মুসলিম।
কেউ কিছু না জেনেও ব্রাক্ষ্মণ হতে পারে, কারণ সে ব্রাক্ষ্মণের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে, অতএব সে ব্রাক্ষ্মণ থাকবে, কেউ কিছু না জেনেও চৌধুরী হতে পারে, যেহেতু সে চৌধুরীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে - চৌধুরীই সে থাকবে। কিন্তু ইসলামকে না জেনে কেউ মুসলিম হতে পারে না, ইসলামকে জেনে বুঝে বিশ্বাস করে কাজ করলেই তবে মুসলিম হওয়া যায়। চিন্তা করে দেখি মুহাম্মাদ (ﷺ) - এর শিক্ষা ও জীবনব্যবস্থা না জেনে তাকে বিশ্বাস করা ও তদনুযায়ী কাজ করা কিরূপে সম্ভব হতে পারে? আর না জেনে, না বুঝে এবং বিশ্বাস না করে বা মানুষ মুসলিম হতে পারে কিরূপে? অতএব, বুঝা যাচ্ছে যে, মুগ্ধতা নিয়ে মুসলিম হওয়া ও মুসলিম থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। যারা মুসলিমের ঘরে জন্মলাভ করেছে, মুসলিম নামে যারা নিজেদের পরিচয় দেয় ও মুসলিম বলে দাবী করে তারা সকলেই প্রকৃতপক্ষে মুসলিম কিনা তা চিন্তার বিষয়! যিনি ইসলাম কী তা জানেন এবং বুঝে শুনে তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেন, এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন প্রকৃতপক্ষে তিনিই মুসলিম।
একজনের নাম রামপ্রসাদ, এজন্য সে হিন্দু এবং আর একজনের নাম আবদুল্লাহ, অতএব সে মুসলিম তা কি হতে পারে? পরন্তু কাফির ও মুসলিমের মধ্যে শুধু পোশাকের পার্থক্যই আসল পার্থক্য নয়। কাজেই একজন ধুতি পরে বলে সে হিন্দু এবং অন্যজন পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে বলে সে মুসলিম বিবেচিত হতে পারে না। বরং মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে আসল পার্থক্য হচেছ উভয়ের ইলম বা জ্ঞানের পার্থক্য। এক ব্যক্তি কাফির এই জন্য যে, সে জানে না তার সৃষ্টিকর্তার সাথে তার কী সম্পর্ক এবং তার বিধান অনুসারে জীবনযাপনের প্রকৃত পথ কোনটি? কিন্তু একটি মুসলিম সন্তানের অবস্থাও যদি এরূপ হয়, তবে তার ও কাফির ব্যক্তির মধ্যে কোন্ দিক দিয়ে পার্থক্য করা যাবে? এবং এ দু’জনের মধ্যে পার্থক্য করে আমি একজনকে কাফির ও অপরজনকে মুসলিম বলবো কেমন করে? কথাগুলো বিশেষ মনোযোগ সহকারে এবং ধীরভাবে ভেবে দেখা আবশ্যক।
আল্লাহর যে মহান নিয়ামতের জন্য আমরা শোকর আদায় করছি, একে লাভ করা এবং রক্ষা করা এ দু’টি কাজই সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ইলম বা জ্ঞানের উপর। ইলম বা জ্ঞান না থাকলে মানুষ তা পেতে পারে না -- সামান্য পেলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখা বড়ই কঠিন ব্যাপার। সবসময়ই তাকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা ও খুঁতখুঁতে ভাব মনের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে থাকে। মুসলিম না হয়েও এক শ্রেণীর লোক নিজেদের মুসলিম মনে করে, এর একমাত্র কারণ তাদের অজ্ঞতা। যে ব্যক্তি একেবারেই জানে না যে, ইসলাম ও কুফরের মধ্যে এবং ইসলাম ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য কী? সে তো অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের পথিকের মত; সরল রেখার উপর দিয়ে চলতে চলতে আপনা আপনি তার পা দুখানা কখন যে পিছলিয়ে যাবে বা অন্য পথে ঘুরে যাবে, তা সে জানতেই পারবে না। জীবনের পথে চলতে চলতে সে সরল পথ হতে কখন যে সরে গিয়েছে, তা সে টেরও পাবে না। এমনও হতে পারে যে, পথিমধ্যে কোনো ধোঁকাবাজ শয়তান এসে তাকে বলবে -- “মিঞা তুমি তো অন্ধকারে পথ ভুলে গিয়েছ, আমার সাথে চল, আমি তোমাকে তোমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছিয়ে দেব।” বেচারা অন্ধকারের যাত্রী নিজের হাত কোনো শয়তানের হাতে সঁপে দিয়ে তার অনুসরণ করতে আরম্ভ করবে এবং সে তাকে পথভ্রষ্ট করে কোথা হতে কোথা নিয়ে যাবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা থাকবে না। তার নিজের হাতে আলো নেই এবং সে নিজে পথের রেখা দেখতে ও চিনে চলতে পারে না বলেই তো সে এতবড় বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু তাঁর কাছে যদি আলো থাকে, তবে সে পথও ভুলবে না, আর অন্য কেউও তাকে গোমরাহ করে বিপদে নিয়ে যেতে পারবে না।
এ কারণেই বলা যেতে পারে যে, ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ হওয়া এবং কুরআনের উপস্থাপিত বিধান ও মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রদত্ত শিক্ষা ভাল করে না জানা মুসলিম ব্যক্তির পক্ষে কতবড় বিপদের কথা! এ অজ্ঞতার কারণে সে নিজেও পথভ্রষ্ট হতে পারে এবং শয়তানও তাঁকে বিপদগামী করতে পারে। কিন্তু যদি তার কাছে জ্ঞানের আলো থাকে, তবে সে জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে এবং প্রতি ধাপে ইসলামের সরল পথ দেখতে পাবে। প্রতি পদেই কুফরি, গোমরাহী, পাপ, জ্বিনা, হারামী প্রভৃতি যেসব বাঁকা পথ ও হারাম কাজ সামনে আসবে, তা সে চিনতে এবং তা হতে বেঁচে থাকতে পারবে। আর যদি কোনো পথভ্রষ্টকারী তার কাছে আসে তবে তার দু-চারটি কথা শুনেই তাকে চিনতে পারবে। এবং এ লোকটি যে পথভ্রষ্টকারী ও এর অনুসরণ করা যে কিছুতেই উচিত নয়, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে।
আল্লাহর যে মহান নিয়ামতের জন্য আমরা শোকর আদায় করছি, একে লাভ করা এবং রক্ষা করা এ দু’টি কাজই সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ইলম বা জ্ঞানের উপর। ইলম বা জ্ঞান না থাকলে মানুষ তা পেতে পারে না -- সামান্য পেলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখা বড়ই কঠিন ব্যাপার। সবসময়ই তাকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা ও খুঁতখুঁতে ভাব মনের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে থাকে। মুসলিম না হয়েও এক শ্রেণীর লোক নিজেদের মুসলিম মনে করে, এর একমাত্র কারণ তাদের অজ্ঞতা। যে ব্যক্তি একেবারেই জানে না যে, ইসলাম ও কুফরের মধ্যে এবং ইসলাম ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য কী? সে তো অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের পথিকের মত; সরল রেখার উপর দিয়ে চলতে চলতে আপনা আপনি তার পা দুখানা কখন যে পিছলিয়ে যাবে বা অন্য পথে ঘুরে যাবে, তা সে জানতেই পারবে না। জীবনের পথে চলতে চলতে সে সরল পথ হতে কখন যে সরে গিয়েছে, তা সে টেরও পাবে না। এমনও হতে পারে যে, পথিমধ্যে কোনো ধোঁকাবাজ শয়তান এসে তাকে বলবে -- “মিঞা তুমি তো অন্ধকারে পথ ভুলে গিয়েছ, আমার সাথে চল, আমি তোমাকে তোমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছিয়ে দেব।” বেচারা অন্ধকারের যাত্রী নিজের হাত কোনো শয়তানের হাতে সঁপে দিয়ে তার অনুসরণ করতে আরম্ভ করবে এবং সে তাকে পথভ্রষ্ট করে কোথা হতে কোথা নিয়ে যাবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা থাকবে না। তার নিজের হাতে আলো নেই এবং সে নিজে পথের রেখা দেখতে ও চিনে চলতে পারে না বলেই তো সে এতবড় বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু তাঁর কাছে যদি আলো থাকে, তবে সে পথও ভুলবে না, আর অন্য কেউও তাকে গোমরাহ করে বিপদে নিয়ে যেতে পারবে না।
এ কারণেই বলা যেতে পারে যে, ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ হওয়া এবং কুরআনের উপস্থাপিত বিধান ও মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রদত্ত শিক্ষা ভাল করে না জানা মুসলিম ব্যক্তির পক্ষে কতবড় বিপদের কথা! এ অজ্ঞতার কারণে সে নিজেও পথভ্রষ্ট হতে পারে এবং শয়তানও তাঁকে বিপদগামী করতে পারে। কিন্তু যদি তার কাছে জ্ঞানের আলো থাকে, তবে সে জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে এবং প্রতি ধাপে ইসলামের সরল পথ দেখতে পাবে। প্রতি পদেই কুফরি, গোমরাহী, পাপ, জ্বিনা, হারামী প্রভৃতি যেসব বাঁকা পথ ও হারাম কাজ সামনে আসবে, তা সে চিনতে এবং তা হতে বেঁচে থাকতে পারবে। আর যদি কোনো পথভ্রষ্টকারী তার কাছে আসে তবে তার দু-চারটি কথা শুনেই তাকে চিনতে পারবে। এবং এ লোকটি যে পথভ্রষ্টকারী ও এর অনুসরণ করা যে কিছুতেই উচিত নয়, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে।
ইলম বা জ্ঞানের উপরই আমাদের ও আমাদের সন্তান-সন্ততির মুসলিম হওয়া ও মুসলিম থাকা একান্তভাবে নির্ভর করে। এটা সাধারণ বস্তু নয়, একে অবহেলাও করা যায় না। কৃষক তার ক্ষেত-খামারের কাজে অলসতা করে না, ক্ষেতে পানি দিতে এবং ফসলের হিফাযত করতে গাফলতি করে না, গরু-বাছুরগুলোকে ঘাস-কুটা দিতে অবহেলা করে না। কারণ এসব ব্যাপারে অলসতা করলে তার বৈষয়িক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু মুসলিম হওয়া ও মুসলিম থাকা যে জ্ঞানের উপর নির্ভর করছে, তা লাভ করতে মানুষ কেন এত অবহেলা করছে? এতে কি ঈমানের মত অতি প্রিয় ও মূল্যবান নিয়ামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় নেই? ঈমান কি প্রাণ অপেক্ষাও প্রিয় নয়? মুসলিমগণ প্রাণ রক্ষার ব্যাপারে যতটা সময় ব্যয় ও পরিশ্রম করে, এর দশ ভাগের এক ভাগও কি ঈমান রক্ষার কাজে ব্যয় করতে পারে না?
আমরা প্রত্যেকে এক একজন স্কলার হবো, বড় বড় বই পড়ে এবং জীবনের দশ বারোটি বছর কেবল পড়াশুনার কাজে ব্যয় করে মস্তবড় একজন পন্ডিত হবো, এমন কথা বলা হচ্ছে না। মুসলিম হওয়ার জন্য স্কলার হওয়া বা মাদ্রাসায় যাওয়া বা বড় কোনো ডিগ্রী লাভ করার কোনো আবশ্যকতা নেই। আমরা রাত দিন চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে মাত্র এক ঘন্টা সময় authentic source থেকে দ্বীনি জ্ঞান (ইসলামী বিদ্যা) শিখার কাজে ব্যয় করি। অন্ততপক্ষে প্রত্যেক মুসলিম বালক, যুবক, বৃদ্ধ সকলেরই এতটুকু ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা দরকার, যা হতে তারা কুরআন নাযিল হওয়ার উদ্দেশ্য জানতে পারবে, তা ভালরূপে বুঝতে পারবে, তা ভালরূপে বুঝতে ও হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। আর মুহাম্মাদ (ﷺ) যেসব অন্যায় কুসংস্কার দূর করতে এবং সেই স্থানে যা স্থাপন করতে এসেছিলেন, তাও উত্তমরূপে জানতে পারবে এবং আল্লাহ মানুষের জীবনযাপনের জন্য যে বিশেষ নিয়ম-বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তার সাথে তারা ভাল করে পরিচিত হতে পারবে। এটুকু জ্ঞান অর্জন করার জন্য খুববেশী সময়ের দরকার পরে না, আর ঈমান যদি বাস্তবিকই কারো প্রিয় বস্তু হয়, তবে এ কাজে একটা ঘন্টা ব্যয় করা তার পক্ষে এতটুকুও কঠিন কাজ নয়।
আমরা প্রত্যেকে এক একজন স্কলার হবো, বড় বড় বই পড়ে এবং জীবনের দশ বারোটি বছর কেবল পড়াশুনার কাজে ব্যয় করে মস্তবড় একজন পন্ডিত হবো, এমন কথা বলা হচ্ছে না। মুসলিম হওয়ার জন্য স্কলার হওয়া বা মাদ্রাসায় যাওয়া বা বড় কোনো ডিগ্রী লাভ করার কোনো আবশ্যকতা নেই। আমরা রাত দিন চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে মাত্র এক ঘন্টা সময় authentic source থেকে দ্বীনি জ্ঞান (ইসলামী বিদ্যা) শিখার কাজে ব্যয় করি। অন্ততপক্ষে প্রত্যেক মুসলিম বালক, যুবক, বৃদ্ধ সকলেরই এতটুকু ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা দরকার, যা হতে তারা কুরআন নাযিল হওয়ার উদ্দেশ্য জানতে পারবে, তা ভালরূপে বুঝতে পারবে, তা ভালরূপে বুঝতে ও হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। আর মুহাম্মাদ (ﷺ) যেসব অন্যায় কুসংস্কার দূর করতে এবং সেই স্থানে যা স্থাপন করতে এসেছিলেন, তাও উত্তমরূপে জানতে পারবে এবং আল্লাহ মানুষের জীবনযাপনের জন্য যে বিশেষ নিয়ম-বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তার সাথে তারা ভাল করে পরিচিত হতে পারবে। এটুকু জ্ঞান অর্জন করার জন্য খুববেশী সময়ের দরকার পরে না, আর ঈমান যদি বাস্তবিকই কারো প্রিয় বস্তু হয়, তবে এ কাজে একটা ঘন্টা ব্যয় করা তার পক্ষে এতটুকুও কঠিন কাজ নয়।
প্রত্যেক মুসলিম নিশ্চয়ই একথা জানে যে, মুসলিম ব্যক্তির মর্যাদা ও সম্মান কাফির ব্যক্তিদের অপেক্ষা অনেক উচ্চে। আল্লাহ মুসলিমকে পছন্দ করেন এবং কাফিরকে অপছন্দ করেন। মুসলিমের গুনাহ ক্ষমা করা হবে কাফিরের অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু মুসলিম এবং কাফিরের মধ্যে এতখানি পার্থক্য কেন হলো, সেই সম্বন্ধে একটু গভীরভাবে চিন্তা করা আবশ্যক।
কাফির ব্যক্তিরা যেমন আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সন্তান, মুসলিমরাও তেমনি তাঁর সন্তান। মুসলিম যেমন মানুষ, কাফিররাও তেমনি মানুষ। মুসলিমদের মত তাদেরও হাত-পা, চোখ-কান সবই আছে। তারাও এ পৃথিবীর বায়ুতেই শ্বাস গ্রহণ করে, এ যমীনের উপর বাস করে এবং খাদ্য খায়। তাদের জন্ম এবং মৃত্যু মুসলিমদের মতোই হয়। যে আল্লাহ মুসলিমদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকেও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তাহলে মুসলিমদের স্থান উচ্চ এবং তাদের স্থান নীচে হবে কেন? প্রকৃত মুসলিম কেন জান্নাতে যাবে আর তারা কেন জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে? একথাটি বিশেষভাবে চিন্তা করে দেখা আবশ্যক। মুসলিমদের এক একজনের নাম রাখা হয়েছে আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান বা তদনুরূপ অন্য কোনো নাম, অতএব তারা মুসলিম। আর কিছু লোকের নাম রাখা হয়েছে দীননাথ, লী-কুয়ান, রবার্টসন প্রভূতি, কাজেই তারা কাফির; কিংবা মুসলিমগণ খাতনা করায়, আর তারা তা করায় না, মুসলিম গরুর গোশত খায়, তারা তা খায় না -- শুধু এটুকু কথার জন্যই মানুষে মানুষে এতবড় পার্থক্য হতে পারে না! আল্লাহই যখন সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং সকলকেই তিনি লালন-পালন করেন -- তিনি এতবড় discrimination কখনও করতে পারেন। কাজেই তিনি এ রকম সামান্য বিষয়ের কারণে মানুষে মানুষে এতবড় পার্থক্য করবেন এবং তাঁরই সৃষ্ট এক শ্রেণীর মানুষকে অকারণে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন -- তা কিছুতেই হতে পারে না।
বাস্তবিকই যদি তা না হয়, তবে উভয়ের মধ্যে আসল পার্থক্য কোথায় তা চিন্তা করে দেখতে হবে। বস্তুত উভয়ের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য কেবল মাত্র কুফরি ও ইসলামের। ইসলামের অর্থ -- আল্লাহর আনুগত্য করা এবং কুফরীর অর্থ আল্লাহকে অস্বীকার করা, অমান্য করা ও আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। মুসলিম ও কাফির উভয়ই মানুষ, উভয়ই আল্লাহর সৃষ্ট জীব, তাঁরই আজ্ঞাবহ দাস। কিন্তু তাদের একজন অন্যজন অপেক্ষা এজন্য শ্রেষ্ঠ যে, একজন নিজের প্রকৃত মনিবকে চিনতে পারে, তাঁর আদেশ পালন করে এবং তাঁর অবাধ্য হওয়ার দুঃখময় পরিণামকে ভয় করে। কিন্তু অন্য জন নিজ মনিবকে চিনে না এবং তাঁর অবাধ্য হওয়ার দুঃখময় পরিণামকে ভয় করে না এবং তাঁর আদেশ পালন করে, এজন্যই সে অধঃপাতে চলে যায়। এ কারণেই মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং কাফিরদের প্রতি অসন্তুষ্ট, প্রকৃত মুসলিমকে জান্নাতে দেয়ার ওয়াদা করেছেন এবং কাফিরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার ভয় দেখিয়েছেন।
কাফির ব্যক্তিরা যেমন আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সন্তান, মুসলিমরাও তেমনি তাঁর সন্তান। মুসলিম যেমন মানুষ, কাফিররাও তেমনি মানুষ। মুসলিমদের মত তাদেরও হাত-পা, চোখ-কান সবই আছে। তারাও এ পৃথিবীর বায়ুতেই শ্বাস গ্রহণ করে, এ যমীনের উপর বাস করে এবং খাদ্য খায়। তাদের জন্ম এবং মৃত্যু মুসলিমদের মতোই হয়। যে আল্লাহ মুসলিমদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকেও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তাহলে মুসলিমদের স্থান উচ্চ এবং তাদের স্থান নীচে হবে কেন? প্রকৃত মুসলিম কেন জান্নাতে যাবে আর তারা কেন জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে? একথাটি বিশেষভাবে চিন্তা করে দেখা আবশ্যক। মুসলিমদের এক একজনের নাম রাখা হয়েছে আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান বা তদনুরূপ অন্য কোনো নাম, অতএব তারা মুসলিম। আর কিছু লোকের নাম রাখা হয়েছে দীননাথ, লী-কুয়ান, রবার্টসন প্রভূতি, কাজেই তারা কাফির; কিংবা মুসলিমগণ খাতনা করায়, আর তারা তা করায় না, মুসলিম গরুর গোশত খায়, তারা তা খায় না -- শুধু এটুকু কথার জন্যই মানুষে মানুষে এতবড় পার্থক্য হতে পারে না! আল্লাহই যখন সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং সকলকেই তিনি লালন-পালন করেন -- তিনি এতবড় discrimination কখনও করতে পারেন। কাজেই তিনি এ রকম সামান্য বিষয়ের কারণে মানুষে মানুষে এতবড় পার্থক্য করবেন এবং তাঁরই সৃষ্ট এক শ্রেণীর মানুষকে অকারণে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন -- তা কিছুতেই হতে পারে না।
বাস্তবিকই যদি তা না হয়, তবে উভয়ের মধ্যে আসল পার্থক্য কোথায় তা চিন্তা করে দেখতে হবে। বস্তুত উভয়ের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য কেবল মাত্র কুফরি ও ইসলামের। ইসলামের অর্থ -- আল্লাহর আনুগত্য করা এবং কুফরীর অর্থ আল্লাহকে অস্বীকার করা, অমান্য করা ও আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। মুসলিম ও কাফির উভয়ই মানুষ, উভয়ই আল্লাহর সৃষ্ট জীব, তাঁরই আজ্ঞাবহ দাস। কিন্তু তাদের একজন অন্যজন অপেক্ষা এজন্য শ্রেষ্ঠ যে, একজন নিজের প্রকৃত মনিবকে চিনতে পারে, তাঁর আদেশ পালন করে এবং তাঁর অবাধ্য হওয়ার দুঃখময় পরিণামকে ভয় করে। কিন্তু অন্য জন নিজ মনিবকে চিনে না এবং তাঁর অবাধ্য হওয়ার দুঃখময় পরিণামকে ভয় করে না এবং তাঁর আদেশ পালন করে, এজন্যই সে অধঃপাতে চলে যায়। এ কারণেই মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং কাফিরদের প্রতি অসন্তুষ্ট, প্রকৃত মুসলিমকে জান্নাতে দেয়ার ওয়াদা করেছেন এবং কাফিরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার ভয় দেখিয়েছেন।
মুসলিমকে কাফির হতে পৃথক করা যায় মাত্র দুটি জিনিসের ভিত্তিতে : প্রথম, ইলম বা জ্ঞান; দ্বিতীয়, আমল বা কাজ। অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলিমকে প্রথমেই জানতে হবে যে, তার প্রকৃত মালিক কে? কী তাঁর আদেশ ও নিষেধ? তাঁর ইচ্ছেমতো চলার উপায় কী? কিসে তিনি সন্তুষ্ট হন আর কিসে তিনি অসন্তুষ্ট হন। এসব বিস্তৃতভাবে জেনে নেয়ার পর নিজেকে প্রকৃত মালিকের একান্ত অনুগত বানিয়ে দেবে, তাঁর ইচ্ছামত চলবে, নিজের স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা ত্যাগ করবে। তার মন যদি ‘মালিকের ইচ্ছার বিপরীত কোনো বস্তুর কামনা করে তবে সে নিজের মনের কথা না শুনে মালিকের কথা শুনবে। কোনো কাজ যদি নিজের কাছে ভালো মনে হয়, কিন্তু মালিক সে কাজটিকে ভালো না বলেন, তবে তাকে মন্দই মনে করবে। আবার কোনো কাজ যদি নিজের মনে খুব মন্দ বলে ধারণা হয়, কিন্তু মালিক সে কাজটিকে ভালো মনে করে এবং কোনো কাজ যদি নিজের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে হয় অথচ, মালিক যদি তা করার আদেশ দেন, তবে তার ও মালের যতই ক্ষতি হোক না কেন, তা সে অবশ্যই করবে। আবার কোন কাজকে যদি নিজের জন্য লাভজনক মনে করে, আর ‘মালিক’ তা করতে নিষেধ করেন তবে তাতে দুনিয়ার সমস্ত ধন-সম্পত্তি লাভ করতে পারলেও তা সে কখনই করবে না। ঠিক এ ইলম ও এরূপ আমলের জন্যই মুসলিম আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং আল্লাহ তাকে সম্মান দান করেন। কিন্তু উল্লিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে কাফির কিছুই জানে না এবং এ জ্ঞান না থাকার দরুনই তার কার্যকলাপও তদনুরূপ হয় না এ জন্য যে, সে আল্লাহ সম্বন্ধে একেবারে অজ্ঞ এবং তাঁর অবাধ্য বান্দা। ফলতঃ সে আল্লাহর অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হয়।
যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, অথচ কাফিরের মতোই জাহিল বা অজ্ঞ এবং আল্লাহর অবাধ্য এমতাবস্থায় কেবল না, পোশাক ও খাবার-দাবারের পার্থক্যের কারণে সে কাফির অপেক্ষা কোনোভাবেই শ্রেষ্ঠ হতে পারে না, আর কোনো কারণেই সে ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর রহমতের হকদার হতে পারে।
যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, অথচ কাফিরের মতোই জাহিল বা অজ্ঞ এবং আল্লাহর অবাধ্য এমতাবস্থায় কেবল না, পোশাক ও খাবার-দাবারের পার্থক্যের কারণে সে কাফির অপেক্ষা কোনোভাবেই শ্রেষ্ঠ হতে পারে না, আর কোনো কারণেই সে ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর রহমতের হকদার হতে পারে।
ইসলাম কোনো জাতি, বংশ বা সম্প্রদায়ের নাম নয়। কাজেই বাবা হতে পুত্র এবং পুত্র হতে পৌত্র আপনা-আপনিই তা লাভ করতে পারে না। ব্রাক্ষ্মণের পুত্র মূর্খ এবং চরিত্রহীন হলেও কেবলমাত্র ব্রাক্ষ্মণের পুত্র বলেই সে ব্রাক্ষ্মণের মর্যাদা পেয়ে থাকে এবং উচ্চ বংশ বলে পরিগণিত হয়। আর চামারের পুত্র জ্ঞানী ও গুণী হয়েও নীচ ও হীন থেকে যায়। কারণ সে চামারের মত নীচ জাতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু ইসলামে এসব বংশের মর্যাদার বিন্দুমাত্র স্থান নেই।
ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) একজন মূর্তি-পূজারীর ঘরে জন্ম লাভ করেছিলেন; কিন্তু তিনি আল্লাহকে চিনতে পেরে তাঁর আদেশ পালন করলেন; এ জন্য আল্লাহ তাঁকে সমস্ত জগতের নেতা বা ইমাম করে দিয়েছিলেন। নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর পুত্র একজন নবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিল; কিন্তু সে আলাহকে চিনতে পারল না বলে তার অবাধ্য হয়ে গেল। এজন্য তার। বংশমর্যাদার প্রতি ক্ৰক্ষেপ করা হলো না। উপরন্তু যে শাস্তি দেয়া হলো, সমস্ত দুনিয়া তা হতে শিক্ষা লাভ করতে পারে। অতএব বুঝে গেল, আল্লাহর কাছে। মানুষে মানুষে যা কিছু পার্থক্য হয়ে থাকে, তা কেবল ইলম ও আমলের জন্য মাত্র। দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর অনুগ্রহ কেবল তারাই পেতে পারে, যারা তাঁকে তাঁর প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী চিনে এবং তাঁর অনুসরণ করে। কিন্তু যাদের মধ্যে এ গুণ নেই, তাদের নাম আবদুল্লাহই হোক, আর আবদুর রহমান হোক, দীননাথই হোক, আর ডেভিড জনই হোক, আল্লাহর কাছে এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই -- এরা কেউই আল্লাহর অনুগ্রহ পাবার অধিকার পেতে পারে না।
মুসলিমগণ নিজেদের মুসলিম বলে মনে করে এবং মুসলিমের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু একটু চোখ খুলে চেয়ে দেখি, আল্লাহর অনুগ্রহ কি তাদের উপর সত্যই নাযিল হচ্ছে? পরকালের কথা পরের জন্যই রইল, এই দুনিয়ায় মুসলিমদের যে দুরাবস্থা হচ্ছে তা একবার খেয়াল করে দেখা আবশ্যক।
ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) একজন মূর্তি-পূজারীর ঘরে জন্ম লাভ করেছিলেন; কিন্তু তিনি আল্লাহকে চিনতে পেরে তাঁর আদেশ পালন করলেন; এ জন্য আল্লাহ তাঁকে সমস্ত জগতের নেতা বা ইমাম করে দিয়েছিলেন। নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর পুত্র একজন নবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিল; কিন্তু সে আলাহকে চিনতে পারল না বলে তার অবাধ্য হয়ে গেল। এজন্য তার। বংশমর্যাদার প্রতি ক্ৰক্ষেপ করা হলো না। উপরন্তু যে শাস্তি দেয়া হলো, সমস্ত দুনিয়া তা হতে শিক্ষা লাভ করতে পারে। অতএব বুঝে গেল, আল্লাহর কাছে। মানুষে মানুষে যা কিছু পার্থক্য হয়ে থাকে, তা কেবল ইলম ও আমলের জন্য মাত্র। দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর অনুগ্রহ কেবল তারাই পেতে পারে, যারা তাঁকে তাঁর প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী চিনে এবং তাঁর অনুসরণ করে। কিন্তু যাদের মধ্যে এ গুণ নেই, তাদের নাম আবদুল্লাহই হোক, আর আবদুর রহমান হোক, দীননাথই হোক, আর ডেভিড জনই হোক, আল্লাহর কাছে এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই -- এরা কেউই আল্লাহর অনুগ্রহ পাবার অধিকার পেতে পারে না।
মুসলিমগণ নিজেদের মুসলিম বলে মনে করে এবং মুসলিমের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু একটু চোখ খুলে চেয়ে দেখি, আল্লাহর অনুগ্রহ কি তাদের উপর সত্যই নাযিল হচ্ছে? পরকালের কথা পরের জন্যই রইল, এই দুনিয়ায় মুসলিমদের যে দুরাবস্থা হচ্ছে তা একবার খেয়াল করে দেখা আবশ্যক।
মুসলিম বাস্তবিকই যদি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতো তাহলে আল্লাহর সেই প্রিয়জনেরা দুনিয়ায় নানাভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে কেন? আল্লাহ কি যালেম (নাউযুবিল্লাহ)? মুসলিম যদি আল্লাহর ‘হক’ জানতো, তাঁর আদেশ পালন করতো, তাহলে তিনি তাঁর অবাধ্য বান্দাদেরকে শাস্তি দেবেন কেন? আর তাদেরকে তার আনুগত্যের বিনিময়ে শাস্তিইবা দেবেন কোন কারণে? আল্লাহ নিশ্চয়ই অবিচারক নন এবং তাঁর আনুগত্য করার বিনিময় অপমান ও শাস্তি নয়। একথা যদি একান্তভাবে বিশ্বাস করা হয় তবে স্বীকার করতেই হবে যে, মুসলিমদের মুসলিম হওয়ার দাবীতে কিছুটা গলদ আছে। তাদের নাম সরকারী পরিসংখ্যানে নিশ্চয়ই মুসলিম হিসেবে লিখিত আছে; কিন্তু সেই সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে আল্লাহর দরবারে বিচার হবে না। আল্লাহর নিজস্ব পরিসংখ্যান রয়েছে এবং তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই তাঁর পরিসংখ্যানে মুসলিমদের নাম তাঁর অনুগত লোকদের তালিকায় লিখিত আছে, না অবাধ্য লোকদের তালিকায় লিখিত হয়েছে তা খোঁজ করে দেখা আবশ্যক।
আল্লাহ মুসলিমদের কাছে কিতাব পাঠিয়েছেন, তা পড়ে মুসলিমগণ প্রকৃত ‘মালিক কে চিনতে পারে; কিন্তু ঐ কিতাবে যা লিখিত আছে, তা জানার জন্য মুসলিমগণ একটুও চেষ্টা করেছে কি? আল্লাহ তাদের প্রতি নবী পাঠিয়েছেন, তিনি মুসলিম হওয়ার উপায় ও নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর নবী দুনিয়ায় এসে কী শিক্ষা দিয়েছেন, তা জানার জন্য তারা কখনও যত্নবান হয়েছে কি? আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান লাভ করার পথের সন্ধান বলে দিয়েছেন, কিন্তু তারা সেই পথে চলছে কি? যেসব কাজ মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে, আল্লাহ তা এক এক করে বলে দিয়েছেন, কিন্তু মুসলিম কি সেসব কাজ ত্যাগ করেছে? এ প্রশ্নগুলোর কী উত্তর হতে পারে? যদি স্বীকার করা হয় যে, আল্লাহর কিতাব হতে মুসলিমগণ যেমন কোনো জ্ঞান লাভ করতে চেষ্টা করেনি, তেমনি তাঁর প্রদর্শিত পথেও তারা একটুও চলেনি, তাহলে তারা মুসলিম হলো কিরূপে এবং তারা পুরস্কারই বা কিরূপে চাচ্ছে। তারা যে ধরনের মুসলিম দাবী করছে, ফলও তেমনি পাচ্ছে, আর তেমনি পুরষ্কার তারা পরকালেও পাবে।
মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে ইলম ও আমল, জ্ঞান ও কাজ ছাড়া আর কোনোই প্রভেদ নেই। কারো ইলম ও আমল যদি কাফিরের ইলম ও আমলের মত হয়, আর তবুও সে নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয় তাহলে বুঝতে হবে যে, সে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কাফির কুরআন পড়ে না এবং তাতে কী লিখিত আছে। তা সে জানে না। কিন্তু মুসলিমের অবস্থা যদি এ রকমই হয় তাহলে সে নিজেকে মুসলিম বলবে কোন অধিকারে? নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) দুনিয়ার মানুষকে যে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য যে সরল পথ দেখিয়েছেন, কাফিরগণ তা কিছুই জানে না। এখন মুসলিমও যদি সেই রকমই অজ্ঞ হয় তাহলে তাকে মুসলিম কেমন করে বলা যায়? কাফির আল্লাহর ইচ্ছে মতো চলে না, চলে নিজ ইচ্ছেমত; মুসলিমও যদি সেরূপ স্বেচ্ছাচারী ও স্বাধীন হয়, সেরূপ নিজের খামখেয়ালী ও স্বেচ্ছাচারিতার বশবর্তী হয়, সেরূপই আল্লাহর প্রতি উদাসীন ও বেপরোয়া হয় এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুগত দাস হয়, তবে তার নিজেকে মুসলিম অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ পালনকারী’ বলার কী অধিকার আছে? কাফির হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করে না। যে কাজে সে লাভ ও আনন্দ দেখতে পায় -- তা আল্লাহর কাছে হালাল হোক কি হারাম হোক -- অসংকোচে সে তাই করে যায়। মুসলিমও যদি এ নীতি গ্রহণ করে তবে তার ও কাফির ব্যক্তির পার্থক্য রইল কোথায়?
মোটকথা, কাফিরের ন্যায় মুসলিমও যদি ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ হয় এবং কাফিরের পরিবর্তে কেবল মুসলিমরাই সম্মান লাভ করবে কেন? কাফিরের ন্যায় মুসলিমরাও পরকালে শাস্তি ভোগ করবে না কিসের জন্য? এটা এমন একটি গুরুতর বিষয় যে, এ সম্বন্ধে আমাদের বীরভাবে চিন্তা করা আবশ্যক।
আল্লাহ মুসলিমদের কাছে কিতাব পাঠিয়েছেন, তা পড়ে মুসলিমগণ প্রকৃত ‘মালিক কে চিনতে পারে; কিন্তু ঐ কিতাবে যা লিখিত আছে, তা জানার জন্য মুসলিমগণ একটুও চেষ্টা করেছে কি? আল্লাহ তাদের প্রতি নবী পাঠিয়েছেন, তিনি মুসলিম হওয়ার উপায় ও নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর নবী দুনিয়ায় এসে কী শিক্ষা দিয়েছেন, তা জানার জন্য তারা কখনও যত্নবান হয়েছে কি? আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান লাভ করার পথের সন্ধান বলে দিয়েছেন, কিন্তু তারা সেই পথে চলছে কি? যেসব কাজ মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে, আল্লাহ তা এক এক করে বলে দিয়েছেন, কিন্তু মুসলিম কি সেসব কাজ ত্যাগ করেছে? এ প্রশ্নগুলোর কী উত্তর হতে পারে? যদি স্বীকার করা হয় যে, আল্লাহর কিতাব হতে মুসলিমগণ যেমন কোনো জ্ঞান লাভ করতে চেষ্টা করেনি, তেমনি তাঁর প্রদর্শিত পথেও তারা একটুও চলেনি, তাহলে তারা মুসলিম হলো কিরূপে এবং তারা পুরস্কারই বা কিরূপে চাচ্ছে। তারা যে ধরনের মুসলিম দাবী করছে, ফলও তেমনি পাচ্ছে, আর তেমনি পুরষ্কার তারা পরকালেও পাবে।
মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে ইলম ও আমল, জ্ঞান ও কাজ ছাড়া আর কোনোই প্রভেদ নেই। কারো ইলম ও আমল যদি কাফিরের ইলম ও আমলের মত হয়, আর তবুও সে নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয় তাহলে বুঝতে হবে যে, সে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কাফির কুরআন পড়ে না এবং তাতে কী লিখিত আছে। তা সে জানে না। কিন্তু মুসলিমের অবস্থা যদি এ রকমই হয় তাহলে সে নিজেকে মুসলিম বলবে কোন অধিকারে? নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) দুনিয়ার মানুষকে যে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য যে সরল পথ দেখিয়েছেন, কাফিরগণ তা কিছুই জানে না। এখন মুসলিমও যদি সেই রকমই অজ্ঞ হয় তাহলে তাকে মুসলিম কেমন করে বলা যায়? কাফির আল্লাহর ইচ্ছে মতো চলে না, চলে নিজ ইচ্ছেমত; মুসলিমও যদি সেরূপ স্বেচ্ছাচারী ও স্বাধীন হয়, সেরূপ নিজের খামখেয়ালী ও স্বেচ্ছাচারিতার বশবর্তী হয়, সেরূপই আল্লাহর প্রতি উদাসীন ও বেপরোয়া হয় এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুগত দাস হয়, তবে তার নিজেকে মুসলিম অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ পালনকারী’ বলার কী অধিকার আছে? কাফির হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করে না। যে কাজে সে লাভ ও আনন্দ দেখতে পায় -- তা আল্লাহর কাছে হালাল হোক কি হারাম হোক -- অসংকোচে সে তাই করে যায়। মুসলিমও যদি এ নীতি গ্রহণ করে তবে তার ও কাফির ব্যক্তির পার্থক্য রইল কোথায়?
মোটকথা, কাফিরের ন্যায় মুসলিমও যদি ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ হয় এবং কাফিরের পরিবর্তে কেবল মুসলিমরাই সম্মান লাভ করবে কেন? কাফিরের ন্যায় মুসলিমরাও পরকালে শাস্তি ভোগ করবে না কিসের জন্য? এটা এমন একটি গুরুতর বিষয় যে, এ সম্বন্ধে আমাদের বীরভাবে চিন্তা করা আবশ্যক।
একথা মনে করার কোন কারণ নেই যে, এই আলোচনায় মুসলিমকে কাফির বলা হচ্ছে, কারণ তা কখনও উচিত নয়। আমরা চাই যে, আমাদের সমাজের প্রত্যেকেই এ সম্বন্ধে চিন্তা করুক। আমরা আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হচ্ছি। কেন, চারিদিক হতে আমাদের উপর কেন এ বিপদরাশি এসে পড়ছে? যাদেরকে আমরা কাফির’ অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্য বান্দা মনে করি, তারা আমাদের উপর সকল ক্ষেত্রে বিজয়ী কেন? আর আমরা যারা আল্লাহর আদেশ পালনকারী বলে দাবী করি, তারাই বা সব জায়গায় পরাজিত কেন? এর কারণ সম্বন্ধে আমরা যতই চিন্তা করি, ততই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, আমাদের ও কাফিরদের প্রতি বর্তমানে শুধু নামেই পার্থক্য রয়ে গিয়েছে। কার্যত আমরা আল্লাহর প্রতি অবহেলা, ভয়হীনতা এবং অবাধ্যতা দেখাতে কাফিরদের অপেক্ষা কিছুমাত্র পিছনে নেই। তাদের ও আমাদের মধ্যে সামান্য কিছু প্রভেদ অবশ্যই আছে, কিন্তু তার জন্য আমরা কোনোরূপ প্রতিদান বা পুরষ্কারের আশা করতে পারি না, বরং সে জন্য আমরা অধিক শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।
কেননা আমরা জানি যে, কুরআন আল্লাহর কিতাব, অথচ আমরা এর সাথে কাফিরের ন্যায়ই ব্যবহার করছি। আমরা জানি, মুহাম্মাদ প্ৰকৃত, শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী, অথচ তাঁর অনুসরণ করা আমরা কাফিরদের মতই ত্যাগ করেছি। আমরা জানি যে, মিথ্যাবাদীর প্রতি আল্লাহ লানত করেছেন এবং ঘুষখোরদের ও ঘুষদাতা উভয়ই নিশ্চিতরূপে কবিরাহ গুনাহ করছে বলে ঘোষণা করেছেন, সুদখোর ও সুদদাতাকে জঘন্য পাপী বলে অভিহিত করেছেন। চোগলখুরী ও গীবতকারীকে আপন ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন, অশ্লীলতা ও লজ্জাহীনতার জন্য কঠিন শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু এ সমস্ত কথা জানার পরও আমরা কাফিরদের মতোই বেপরোয়াভাবে এসব কাজ করে যাচ্ছি। মনে হয়, যেন আমাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় মাত্রই নেই। এজন্য কাফিরদের তুলনায় আমরা কিছুটা মুসলিম হয়ে থাকলেও আমাদের জীবনে তার কোনো প্রতিফলন আমরা পাচ্ছি না; বরং কেবল শাস্তিই পাচ্ছি -- নানাভাবে এবং নানাদিক দিয়ে। আমাদের উপর কাফিরদের জয়লাভ এবং সর্বত্র আমাদের পরাজয় এ অপরাধেরই শাস্তি। ইসলাম নামক এক মহা নিয়ামত আমাদেরকে দেয়া হয়েছে, অথচ আমরা তার বিন্দুমাত্র কদর করছি না, এটা অপেক্ষা বড় অপরাধ আর কী হতে পারে?
কেননা আমরা জানি যে, কুরআন আল্লাহর কিতাব, অথচ আমরা এর সাথে কাফিরের ন্যায়ই ব্যবহার করছি। আমরা জানি, মুহাম্মাদ প্ৰকৃত, শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী, অথচ তাঁর অনুসরণ করা আমরা কাফিরদের মতই ত্যাগ করেছি। আমরা জানি যে, মিথ্যাবাদীর প্রতি আল্লাহ লানত করেছেন এবং ঘুষখোরদের ও ঘুষদাতা উভয়ই নিশ্চিতরূপে কবিরাহ গুনাহ করছে বলে ঘোষণা করেছেন, সুদখোর ও সুদদাতাকে জঘন্য পাপী বলে অভিহিত করেছেন। চোগলখুরী ও গীবতকারীকে আপন ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন, অশ্লীলতা ও লজ্জাহীনতার জন্য কঠিন শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু এ সমস্ত কথা জানার পরও আমরা কাফিরদের মতোই বেপরোয়াভাবে এসব কাজ করে যাচ্ছি। মনে হয়, যেন আমাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় মাত্রই নেই। এজন্য কাফিরদের তুলনায় আমরা কিছুটা মুসলিম হয়ে থাকলেও আমাদের জীবনে তার কোনো প্রতিফলন আমরা পাচ্ছি না; বরং কেবল শাস্তিই পাচ্ছি -- নানাভাবে এবং নানাদিক দিয়ে। আমাদের উপর কাফিরদের জয়লাভ এবং সর্বত্র আমাদের পরাজয় এ অপরাধেরই শাস্তি। ইসলাম নামক এক মহা নিয়ামত আমাদেরকে দেয়া হয়েছে, অথচ আমরা তার বিন্দুমাত্র কদর করছি না, এটা অপেক্ষা বড় অপরাধ আর কী হতে পারে?
মুসলিদের প্রকৃত মুসলিম হবার জন্য সর্বপ্রথম একান্ত দরকার হচ্ছে খাটি ইসলামী শিক্ষা ও ইসলাম সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞান। আল কুরআনের শিক্ষা কী? রসূল (ﷺ) -এর প্রদর্শিত পথ কী? ইসলাম কাকে বলে? কুফর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য কোন বিষয়ে? কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা সেই জ্ঞান অর্জন করতে কোনোই চেষ্টা করি না। এটা হতে বুঝা যায় যে, আমরা যে কত বড় নিয়ামত ও রহমত হতে বঞ্চিত, সে কথা এখন পর্যন্ত আমরা বুঝতে পারিনি। শিশু কেঁদে না ওঠলে মা-ও তাকে দুধ দেয় না, পিপাসু ব্যক্তি পিপাসা বোধ করলেই নিজেই পানির সন্ধান করে, আল্লাহ-ও তাকে পানি মিলিয়ে দেন। মুসলিমদের নিজেদেরই যদি পিপাসা না থাকে, তবে পানি ভরা কূপ তাদের মুখের কাছে। আসলেও তাতে কোনো লাভ নেই। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা কত বড় এবং কত ভীষণ ক্ষতি তা আমাদের নিজেদেরই অনুধাবন করা উচিত।
আল্লাহর কিতাব আমাদেরই কাছে আছে, অথচ সলাতে আমরা আল্লাহর কাছে কী প্রার্থনা করি, তা আমরা জানি না, এটা অপেক্ষা দুর্ভাগ্যের কথা আর কী হতে পারে? যে ‘কালিমা পাঠ করে আমরা ইসলামে প্রবেশ করি, এর অর্থ পর্যন্ত আমরা জানি না। এ কালিমা পাঠ করার সাথে সাথে আমাদের উপর কী কী দায়িত্ব এসে পড়ে তাও জানি না। বস্তুত একজন মুসলিমের পক্ষে এতদপেক্ষা ক্ষতি ও দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হলে পরিণাম যে কী, তা সকলেই জানে। চাকুরী হারালে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তাতে কারো সন্দেহ নেই। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার পরিণাম যে কত ভীষণ ও ভয়াবহ, সেই কথা আমরা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু এ ক্ষতির কথা যখন আমরা অনুভব করতে পারবো, তখন আমরা নিজেরাই এ ভীষণ ক্ষতির কবল হতে বাঁচতে সচেষ্ট হবো, তখন ইনশাআল্লাহ আমাদেরকে এ ক্ষতি হতে বাঁচাবার ব্যবস্থাও করা হবে।
আল্লাহর কিতাব আমাদেরই কাছে আছে, অথচ সলাতে আমরা আল্লাহর কাছে কী প্রার্থনা করি, তা আমরা জানি না, এটা অপেক্ষা দুর্ভাগ্যের কথা আর কী হতে পারে? যে ‘কালিমা পাঠ করে আমরা ইসলামে প্রবেশ করি, এর অর্থ পর্যন্ত আমরা জানি না। এ কালিমা পাঠ করার সাথে সাথে আমাদের উপর কী কী দায়িত্ব এসে পড়ে তাও জানি না। বস্তুত একজন মুসলিমের পক্ষে এতদপেক্ষা ক্ষতি ও দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হলে পরিণাম যে কী, তা সকলেই জানে। চাকুরী হারালে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তাতে কারো সন্দেহ নেই। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার পরিণাম যে কত ভীষণ ও ভয়াবহ, সেই কথা আমরা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু এ ক্ষতির কথা যখন আমরা অনুভব করতে পারবো, তখন আমরা নিজেরাই এ ভীষণ ক্ষতির কবল হতে বাঁচতে সচেষ্ট হবো, তখন ইনশাআল্লাহ আমাদেরকে এ ক্ষতি হতে বাঁচাবার ব্যবস্থাও করা হবে।
উপরে যা কিছু বলা হয়েছে তা কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে নয়। আসলে উদ্দেশ্য এই যে, আমরা যা কিছু হারিয়ে ফেলেছি, তা ফিরে পাবার জন্য চেষ্টা করা উচিত। হারানো জিনিস পুনরায় পাওয়ার চিন্তা মানুষের ঠিক তখনই হয়, যখন সে নিশ্চিতরূপে জানতে ও বুঝতে পারে যে, তারা কী জিনিস এবং কত মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে। এজন্যই মুসলিমদেরকে সতর্ক করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যদি তাদের জ্ঞান ফিরে আসে এবং তারা যে প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলেছে তা যদি বুঝতে পারে, তবে তা পুনরায় ফিরে পেতে চেষ্টা করবে।
শুধু ঈমান আনলেই কি জান্নাতে যাওয়া যাবে?
আমাদের সমাজে একটা কথার প্রচলন আছে যে, যে একবার কালিমা পড়েছে সে একদিন না একদিন জান্নাতে যাবেই অথবা সমস্ত মুসলিমরা জান্নাতে যাবে আর অমুসলিমরা জাহান্নামে যাবে। একটা সেমিনারে একজন অমুসলিম অডিয়েন্স থেকে ড. জাকির নায়েককে এই প্রশ্নটাই করেছিলেন যে, “সমস্ত মুসলিমই জান্নাতে যাবে আর সমস্ত অমুসলিম জাহান্নামে যাবে এটা কি ঠিক?” উত্তরে ড. জাকির নায়েক একটা কুরআনের কপি হাতে নিয়ে বলেন, এই বইয়ের কোথাও এই ধরনের কথা লিখা নেই। তবে লিখা আছে যে, যারা এই বইটা অনুসরণ করবে তারাই জান্নাতে যাবে আর যারা অনুসরণ করবে না তারা জাহান্নামে যাবে।
কুরআন-হাদীসের আলোকে এই বিষয়টা আমাদের পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। যেমন একটা হাদীস আছে যে, কেউ যদি প্রতিদিন ভালভাবে ওযু করে বাড়ি থেকে হেটে এসে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত করে তাহলে তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত। এখন কেউ যদি শুধু এই হাদীসের লিটারাল মিনিং নিয়ে মনে করে যে এই কাজটুকু করলেই তো জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট তাহলে তো সে বিভ্রান্ত হবে। আসলে জান্নাতে যাওয়ার কোন সর্টকাট রাস্তা নেই। নিম্মের তিনটি হাদীসের শুধু লিটারাল মিনিং নেয়ার কারণে জান্নাতে যাওয়া খুব সহজ মনে হচ্ছে। যদি কেউ মনে করে যে শুধু কালিমা পড়লেই সে জান্নাতে চলে যাবে। বিষয়টা তেমন নয়। এই কালিমার অন্তর্নিহিত বিস্তারিত অর্থ জানতে হবে যা আমরা আগের অধ্যায়গুলোতে পড়েছি।
হাদীস ১ : উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, ....... আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনছি, যে ঘোষণা করবে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রসূল, তার জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন। (সাহীহ মুসলিম)।
হাদীস ২ : উসমান বিন আফফান (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এটি জেনে (বিশ্বাস করে) মৃত্যুবরণ করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, সে জান্নাতে যাবে। (সহীহ মুসলিম)
হাদীস ৩ : মুআজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হচ্ছে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (মুসনাদে আহমদ)
এবার আমরা যদি নিমের কুরআনের আয়াতগুলো দেখি সেখানে স্পষ্ট সতর্ক করে বলা হচ্ছে যে জান্নাতে যাওয়া এতো সহজ নয়, পদে পদে আমাদেরকে পরীক্ষা দিতে হবে।
আয়াত : মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এতোটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে না? (সূরা আনকাবুত ২৯ : ২)।
আয়াত : তোমরা কি ভেবে নিয়েছ যে এমনিতেই জান্নাতে পৌঁছে যাবে? (সূরা ইমরান ৩ : ১০২)।
আয়াত : আর আল্লাহকে তো যাচাই করে দেখতেই হবে, কে ঈমানদার, আর কে মুনাফিক। (সূরা আনকাবুত ২৯ : ১১)
আয়াত : তোমরা কি মনে করে নিয়েছে যে, তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? (সূরা বাকারা ২: ২১৪)
আয়াত : তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই জিঞ্জাসাবাদ করা হবে। (সূরা আন নহল ১৬ : ৯৩)
ব্যাখ্যা:
নিম্নের আয়াতগুলোতে বলা হচ্ছে যে ঈমান আনার সাথে সাথে সেই অনু্যাই আমলও করতে হবে। শুধু মুখে বললেই হবে না যে আমি ঈমান এনেছি। আমল দিয়ে ঈমান প্রমাণ করতে হবে। আল কুরআনে যতো যায়গায় ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে ততো যায়গায় তার সাথে আমলের কথা বলা হয়েছে।
আয়াত : কালের কসম। নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। কিন্তু তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ আমল করেছে। (সূরা আল আসর ১০৩: ১-৩)।
আয়াত : যারা ঈমান আনে ও সৎ আমল করে তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপুরষ্কারের ওয়াদা করেছে। (সূরা মায়িদা ৫: ৯)।
আয়াত : আর যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে নিশ্চয় আমি তাদের মন্দকাজগুলো মিটিয়ে দেব এবং তারা যে উত্তম কাজ করত আমি অবশ্যই তার উত্তম প্রতিদান দেব। (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৭)।
আয়াত : মানুষ নিজের কাজ অনুযায়ী (উভয়কালেই) তার অংশ লাভ করবে; বস্তুত হিসাব সম্পন্ন করতে আল্লাহর বিন্দুমাত্র বিলম্ব হয়না। (সূরা আল-বাকারা ২ : ২০২)।
ব্যাখ্যা:
আমল হচ্ছে অন্তরে ঈমান থাকার নিদর্শন বা প্রমাণ। ঈমান (বিশ্বাস) আমলকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। ঈমানের জন্য পুরস্কার পেতে হলে যেমন আমল থাকতে হবে তেমনি আমলের জন্য পুরস্কার পেতে হলেও ঈমান থাকতে হবে। মুসলিম সেই ব্যক্তি যার ঈমান আছে এবং সে ঈমানের দাবী অনুযায়ী আমল করে। তাই পরকালে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে ঈমান ও আমল উভয়টি থাকতে হবে। ঈমান হলো আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত।
আয়াত : যারা ছোট-খাট গুনাহ ছাড়া বড় পাপ (কবীরা গুনাহ) ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকে, (তাদের ব্যাপারে) নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের ক্ষমার পরিধি ব্যাপক। (সূরা নাজম ৫৩ : ৩২)।
ব্যাখ্যা : এখানে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, যে সকল ঈমানদার কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত তাদের ছোটখাট গুনাহ আল্লাহ তাআলা কোন না কোনভাবে ক্ষমা করে দিবেন।
আয়াত : অবশ্যই আল্লাহ সেসব লোকদের তওবা কবুল করেন যারা জাহালাত (ভুল, লোভ, লালসা ইত্যাদি) বশত মন্দ কাজ করে এবং অনতিবিলম্বে তওবা করে, এদের তওবাই আল্লাহ কবুল করেন; আর আল্লাহ মহাপ্রজ্ঞাবান। (সূরা (নিসা ৪: ১৭)
ব্যাখ্যা : এখানে মহান আল্লাহ প্রত্যক্ষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, যারা অজ্ঞতা, ভুল বা ধোঁকায় পড়ে (ছোট বা বড়) পাপ কাজ করে ফেলার সাথে সাথে খালিস নিয়াতে তওবা করবে, (মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ ব্যতীত) তাদের গুনাহ তিনি মাফ করে দিবেন।
শুধু ঈমান আনলেই কি জান্নাতে যাওয়া যাবে?
আমাদের সমাজে একটা কথার প্রচলন আছে যে, যে একবার কালিমা পড়েছে সে একদিন না একদিন জান্নাতে যাবেই অথবা সমস্ত মুসলিমরা জান্নাতে যাবে আর অমুসলিমরা জাহান্নামে যাবে। একটা সেমিনারে একজন অমুসলিম অডিয়েন্স থেকে ড. জাকির নায়েককে এই প্রশ্নটাই করেছিলেন যে, “সমস্ত মুসলিমই জান্নাতে যাবে আর সমস্ত অমুসলিম জাহান্নামে যাবে এটা কি ঠিক?” উত্তরে ড. জাকির নায়েক একটা কুরআনের কপি হাতে নিয়ে বলেন, এই বইয়ের কোথাও এই ধরনের কথা লিখা নেই। তবে লিখা আছে যে, যারা এই বইটা অনুসরণ করবে তারাই জান্নাতে যাবে আর যারা অনুসরণ করবে না তারা জাহান্নামে যাবে।
কুরআন-হাদীসের আলোকে এই বিষয়টা আমাদের পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। যেমন একটা হাদীস আছে যে, কেউ যদি প্রতিদিন ভালভাবে ওযু করে বাড়ি থেকে হেটে এসে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত করে তাহলে তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত। এখন কেউ যদি শুধু এই হাদীসের লিটারাল মিনিং নিয়ে মনে করে যে এই কাজটুকু করলেই তো জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট তাহলে তো সে বিভ্রান্ত হবে। আসলে জান্নাতে যাওয়ার কোন সর্টকাট রাস্তা নেই। নিম্মের তিনটি হাদীসের শুধু লিটারাল মিনিং নেয়ার কারণে জান্নাতে যাওয়া খুব সহজ মনে হচ্ছে। যদি কেউ মনে করে যে শুধু কালিমা পড়লেই সে জান্নাতে চলে যাবে। বিষয়টা তেমন নয়। এই কালিমার অন্তর্নিহিত বিস্তারিত অর্থ জানতে হবে যা আমরা আগের অধ্যায়গুলোতে পড়েছি।
হাদীস ১ : উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, ....... আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনছি, যে ঘোষণা করবে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রসূল, তার জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন। (সাহীহ মুসলিম)।
হাদীস ২ : উসমান বিন আফফান (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এটি জেনে (বিশ্বাস করে) মৃত্যুবরণ করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, সে জান্নাতে যাবে। (সহীহ মুসলিম)
হাদীস ৩ : মুআজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হচ্ছে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (মুসনাদে আহমদ)
এবার আমরা যদি নিমের কুরআনের আয়াতগুলো দেখি সেখানে স্পষ্ট সতর্ক করে বলা হচ্ছে যে জান্নাতে যাওয়া এতো সহজ নয়, পদে পদে আমাদেরকে পরীক্ষা দিতে হবে।
আয়াত : মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এতোটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে না? (সূরা আনকাবুত ২৯ : ২)।
আয়াত : তোমরা কি ভেবে নিয়েছ যে এমনিতেই জান্নাতে পৌঁছে যাবে? (সূরা ইমরান ৩ : ১০২)।
আয়াত : আর আল্লাহকে তো যাচাই করে দেখতেই হবে, কে ঈমানদার, আর কে মুনাফিক। (সূরা আনকাবুত ২৯ : ১১)
আয়াত : তোমরা কি মনে করে নিয়েছে যে, তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? (সূরা বাকারা ২: ২১৪)
আয়াত : তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই জিঞ্জাসাবাদ করা হবে। (সূরা আন নহল ১৬ : ৯৩)
ব্যাখ্যা:
নিম্নের আয়াতগুলোতে বলা হচ্ছে যে ঈমান আনার সাথে সাথে সেই অনু্যাই আমলও করতে হবে। শুধু মুখে বললেই হবে না যে আমি ঈমান এনেছি। আমল দিয়ে ঈমান প্রমাণ করতে হবে। আল কুরআনে যতো যায়গায় ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে ততো যায়গায় তার সাথে আমলের কথা বলা হয়েছে।
আয়াত : কালের কসম। নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। কিন্তু তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ আমল করেছে। (সূরা আল আসর ১০৩: ১-৩)।
আয়াত : যারা ঈমান আনে ও সৎ আমল করে তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপুরষ্কারের ওয়াদা করেছে। (সূরা মায়িদা ৫: ৯)।
আয়াত : আর যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে নিশ্চয় আমি তাদের মন্দকাজগুলো মিটিয়ে দেব এবং তারা যে উত্তম কাজ করত আমি অবশ্যই তার উত্তম প্রতিদান দেব। (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৭)।
আয়াত : মানুষ নিজের কাজ অনুযায়ী (উভয়কালেই) তার অংশ লাভ করবে; বস্তুত হিসাব সম্পন্ন করতে আল্লাহর বিন্দুমাত্র বিলম্ব হয়না। (সূরা আল-বাকারা ২ : ২০২)।
ব্যাখ্যা:
আমল হচ্ছে অন্তরে ঈমান থাকার নিদর্শন বা প্রমাণ। ঈমান (বিশ্বাস) আমলকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। ঈমানের জন্য পুরস্কার পেতে হলে যেমন আমল থাকতে হবে তেমনি আমলের জন্য পুরস্কার পেতে হলেও ঈমান থাকতে হবে। মুসলিম সেই ব্যক্তি যার ঈমান আছে এবং সে ঈমানের দাবী অনুযায়ী আমল করে। তাই পরকালে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে ঈমান ও আমল উভয়টি থাকতে হবে। ঈমান হলো আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত।
আয়াত : যারা ছোট-খাট গুনাহ ছাড়া বড় পাপ (কবীরা গুনাহ) ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকে, (তাদের ব্যাপারে) নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের ক্ষমার পরিধি ব্যাপক। (সূরা নাজম ৫৩ : ৩২)।
ব্যাখ্যা : এখানে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, যে সকল ঈমানদার কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত তাদের ছোটখাট গুনাহ আল্লাহ তাআলা কোন না কোনভাবে ক্ষমা করে দিবেন।
আয়াত : অবশ্যই আল্লাহ সেসব লোকদের তওবা কবুল করেন যারা জাহালাত (ভুল, লোভ, লালসা ইত্যাদি) বশত মন্দ কাজ করে এবং অনতিবিলম্বে তওবা করে, এদের তওবাই আল্লাহ কবুল করেন; আর আল্লাহ মহাপ্রজ্ঞাবান। (সূরা (নিসা ৪: ১৭)
ব্যাখ্যা : এখানে মহান আল্লাহ প্রত্যক্ষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, যারা অজ্ঞতা, ভুল বা ধোঁকায় পড়ে (ছোট বা বড়) পাপ কাজ করে ফেলার সাথে সাথে খালিস নিয়াতে তওবা করবে, (মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ ব্যতীত) তাদের গুনাহ তিনি মাফ করে দিবেন।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই আমরা যে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানি না এইটাই আমরা জানি না। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই দ্বীন ইসলামের পূণ্যের কাজ মনে করে খুব বেশী বেশী ইসলাম বিরোধি কাজ নিয়মিত করে যাচ্ছি। আমরা কুরআন থেকে নিজেদেরকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখে নিজেদের ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করছি।
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির [অ] পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেরা নিজেদেরকে পরিবর্তন করে।” (সূরা রা'দ ১৩ : ১১)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির [অ] পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেরা নিজেদেরকে পরিবর্তন করে।” (সূরা রা'দ ১৩ : ১১)
মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য : আল্লাহ আল কুরআনে বলেছেন :
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون
“আমি জিন ও মানব জাতিকে কেবল আমারই ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।” (সূরা আয যারিয়াত ৫১ : ৫৬) এ থেকে নিঃসন্দেহে বুঝা গেল যে, মানুষের জন্ম, জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আল্লাহর ইবাদত এবং বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, ইবাদত' শব্দটির প্রকৃত অর্থ জেনে নেয়া আমাদের পক্ষে কতখানি জরুরী। এ শব্দটির অর্থ না জানলে যে মহান উদ্দেশ্যে আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা আমি কখনই লাভ করতে পারবো না। আর যে তার উদ্দেশ্য লাভ করতে পারে না তা ব্যর্থ ও নিষ্ফল হয়ে থাকে। চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করতে না পারলে বলা হয় যে, সে চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছে, কৃষক ভাল ফসল জন্মাতে না পারলে কৃষিকার্যে তার ব্যর্থতা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। তেমনি আমরা যদি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য লাভ অর্থাৎ আল্লাহ যেভাবে চায় সেভাবে ইবাদত করতে না পারি তবে বলতে হবে যে, আমাদের জীবন ব্যর্থ হয়েছে। এজন্যই আমাদের এই 'ইবাদত' শব্দটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য জানার জন্য বিশেষ মনোযোগী হওয়া উচিত এবং তা আমাদের হৃদয়ে ও ব্রেইনে বদ্ধমূল করে নেয়া উচিত। কারণ মানব জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা এরই উপর একান্তভাবে নির্ভর করে। ইবাদত বলতে কী বুঝায়? ইবাদত শব্দটি আরবী 'আবদ হতে উদ্ভূত হয়েছে। 'আবদ' অর্থ দাস ও গোলাম। অতএব 'ইবাদত' শব্দের অর্থ হবে বন্দেগী ও গোলামী করা। যে ব্যক্তি অন্যের দাস সে যদি তার বাস্তবিকই মনিবের সমীপে একান্ত অনুগত হয়ে থাকে এবং তার সাথে ঠিক চাকরের ন্যায় ব্যবহার করে, তবে একে বলা হয় বন্দেগী ও ইবাদত। পক্ষান্তরে কেউ যদি কারো চাকর হয়। এবং মনিবের কাছ থেকে পুরোপুরি বেতন আদায় করে, কিন্তু তবুও সে যদি ঠিক চাকরের ন্যায় কাজ না করে তবে বলতে হবে যে, সে নাফরমানী ও বিদ্রোহ করেছে। আসলে একে অকৃতজ্ঞতাই বলা বাঞ্ছনীয়। তাই সর্বপ্রথম জানতে হবে, মনিবের সামনে 'চাকরের' নয় কাজ করা এবং তার সমীপে আনুগত্য প্রকাশ করার উপায় কী হতে পারে। বান্দা বা চাকরকে প্রথমত মনিবকে 'প্রভু বলে স্বীকার করতে হবে এবং মনে করতে হবে যে, যিনি আমার মালিক, যিনি আমাকে দৈনন্দিন রুজী দান করেন এবং যিনি আমার মালিক, যিনি আমার হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন তাঁরই অনুগত হওয়া আমার কর্তব্য। তিনি ছাড়া অন্য কেউই আমার আনুগত্য লাভের অধিকারী নয়। সকল সময় মনিবের আনুগত্য করা, তাঁর হুকুম পালন করা, তাঁর আদেশ মূহুর্তের জন্যও পরিত্যাগ না করা, মনিবের বিরুদ্ধে মনে কোন কথার স্থান না দেয়া এবং অন্য কারো কথা পালন না করাই বান্দার দ্বিতীয় কর্তব্য। গোলাম সবসময়ই গোলাম; তার একথা বলার কোন অধিকার নেই যে, আমি মনিবের এ আদেশ মানবো আর অমুক আদেশ মানবো না। কিংবা আমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনিবের গোলাম আর অন্যান্য সময় আমি তার গোলামী হতে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও মুক্ত। মনিবের প্রতি সম্মান ও সম্রম প্রদর্শন এবং তাঁর সমীপে আদব রক্ষা করে চলা বান্দার তৃতীয় কাজ। আদব ও সম্মান প্রকাশের যে পন্থা মনিব নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সেই সময়ে নিশ্চিতরূপে উপস্থিত হওয়া এবং মনিবের আনুগত্য ও দাসত্ব স্বীকার করে নিজেকে প্রতিজ্ঞা ও আন্তরিক নিষ্ঠা প্রমাণ করা একান্তু আবশ্যক।
এ তিনটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে যে কার্যটি সম্পন্ন হয় আরবী পরিভায়ায় তাকেই বলে ইবাদত'। প্রথমত, মনিবের দাসত্ব স্বীকার, দ্বিতীয়ত, মনিবের আনুগত্য এবং তৃতীয়ত, মনিবের সম্মান ও সম্রম রক্ষা করা।
ইবাদতের উদ্দেশ্য :
আমরা জানি যে আল্লাহ জিন ও মানব জাতিকে একমাত্র এ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন যে, তারা কেবল আল্লাহরই দাসত্ব করবে অন্য কারো নয়, কেবল আল্লাহর হুকুম পালন করবে, এছাড়া অন্য কারো হুকুম অনুসরণ করবে না এবং কেবল তাঁরই সামনে সম্মান সম্রম প্রকাশের জন্য মাথা নত করবে, অন্য কারো সামনে নয়। এ তিনটি জিনিসকে আল্লাহ বুঝিয়েছেন এ ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ 'ইবাদত' দ্বারা। যেসব আয়াতে আল্লাহ ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন তার অর্থ এটাই। আমাদের শেষ নবী এবং তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের যাবতীয় শিক্ষার সারকথা হচ্ছে।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না। অর্থাৎ দাসত্ব ও আনুগত্য লাভের যোগ্য সারা জাহানে একজনই মাত্র বাদশাহ আছেন -- তিনি হচ্ছেন আল্লাহ; অনুসরণযোগ্য মাত্র একটি বিধান বা আইন আছে -- তা হলো আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা এবং একটি মাত্র সত্ত্বাই আছে, যার পূজা-উপাসনা, আরাধনা করা যেতে পারে। আর সেই সত্তাই হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ।
উদাহরণ ১:
একটি চাকর যদি মনিবের নির্ধারিত কর্তব্য পালন না করে বরং তাঁর সামনে কেবল হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, লক্ষ বার কেবল তার নাম জপে, তবে এ চাকরিটি সম্পর্কে আমরা কী বলবো? মনিব তাকে অন্যান্য মানুষের প্রাপ্য আদায় করতে বলেন। কিন্তু সে কেবল সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে মনিবের সামনে মাথা নত করে দশবার সালাম করে এবং আবার হাত বেঁধে দাঁড়ায়। মনিব তাকে অনিষ্টকর কাজগুলো বন্ধ করতে আদেশ করে কিন্তু সে সেখান থেকে একটুও নড়ে না। বরং কেবল সিজদাহ করে থাকে। মনিব তাকে চোরের হাত কাটতে বলেন। কিন্তু সে দাঁড়িয়ে থেকে সুললিত কণ্ঠে বিশবার পড়তে বা উচ্চরণ করতে থাকে --'চোরের হাত কাটা কিন্তু সে একবারও এরকম শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে না যার অধীনে চোরের হাত কাঁটা সম্ভব।
এমন চাকর সম্পর্কে কী মন্তব্য করবো? আমরা কি বলতে পারি যে, সে প্রকৃতপক্ষে মনিবের বন্দেগী ও ইবাদত করছে? আমার কোন চাকর এরূপ করলে আমি তাকে কী বলবো? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আল্লাহর যে চাকর এরূপ আচরণ করে তাকে আমরা অনেকেই পরহেজগার, বুযুর্গ ইত্যাদি নামে অভিহিত করি। এরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুরআন শরীফে আল্লাহর কত শত হুকুম তিলাওয়াত করে, কিন্তু সেগুলো পালন করার এবং কাজে পরিণত করার জন্য একটু চেষ্টাও করে না। বরং কেবল নফলের পর নফল পড়তে থাকে, আল্লাহর নামে হাজার দানা তাসবীহ জপতে থাকে এবং মধুর কন্ঠে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করতে থাকে।
উদাহরণ ২:
আর একজন চাকরের কথা ধরি। সে রাত-দিন কেবল পরের কাজ করে, অন্যের আদেশ শুনে এবং পালন করে, অন্যের আইন মেনে চলে। এবং তার প্রকৃত মনিবের যত আদেশই হোক না কেন, তার বিরোধিতা করে। কিন্তু সালাম' দেয়ার সময় সে তার প্রকৃত মনিবের সামনে উপস্থিত হয় এবং মুখে কেবল তার নাম জপতে থাকে। আমাদের কারো কোন চাকর এরূপ করলে আমরা কী করবো? মুখে মুখে সে যখন আমাকে মনিব বলে ডাকবে তখন অমি কি তাকে একথা বলবোনা যে, তুমি মিথ্যাবাদী; তুমি আমার বেতন খেয়ে অন্যের তাবেদারী করছো, মুখে আমাকে মনিব বলে ডাকছো, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেবল অন্যেরই কাজ করে বেড়াচ্ছ? এটা যে নিতান্ত সাধারণ বুদ্ধির কথা এটা বারো বুঝতে কষ্ট হয় না। কিন্তু কী আশ্চর্যের কথা! যারা রাত-দিন আল্লাহর আইন ভঙ্গ করবে, কাফির ও মুশরিকদের আদেশ অনুযায়ী কাজ করে এবং নিজেদের বাস্তব কর্মজীবনে আল্লাহর বিধানের কোন পরোয়া করে না, তাদের সলাত-সিয়াম, তাসবীহ পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত, হাজ্জ, যাকাত ইত্যাদিকে ইবাদত বলে মনে করা। এ ভুল ধারণারও মূল কারণ ইবাদত শব্দের প্রকৃত অর্থ না জানা।
উদাহরণ ৩ :
আর এটি চাকরের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মনিব তার চাকরদের জন্য যে ধরনের পোশাক নির্দিষ্ট করেছে, মাপ-জোখ ঠিক রেখে সে ঠিক সেই ধরনের পোশাক পরিধান করে, বড় আদব ও যত্ন সহকারে সে মনিবের সামনে হাজির হয়, প্রত্যেকটি হুকুম শুনা মাত্রই মাথা নত করে শিরোধার্য করে নেয় যেন তার তুলনায় বেশী অনুগত চাকর আর কেউই নয়। 'সালাম দেয়ার সময় সে একেবারে সকলের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং মনিবের নাম জপবার ব্যাপারে সমস্ত চাকরের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও নিষ্ঠা প্রমাণ করে; কিন্তু অন্যদিকে এ ব্যক্তি মনিবের শত্র এবং বিদ্রোহীদের খেদমত করে, মনিবের বিরুদ্ধে তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করে এবং মনিবের নাম পর্যন্ত দুনিয়া হতে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে তারা যে চেষ্টাই করে, এ হতভাগা তার সহযোগীতা করে; রাতের অন্ধকারে সে মনিবের নিষিদ্ধ কাজ করে এবং ভোর হলে বড় অনুগত চাকরটির ন্যায় হাত বেঁধে মনিবের সামনে হাজির হয়, এ চাকরটি সম্পর্কে আমরা কী বলবো? নিশ্চয়ই তাকে মুনাফিক, বিদ্রোহী প্রভৃতি নামে অভিহিত করতে একটুও কুণ্ঠিত হবো না। কিন্তু আল্লাহর কোন চাকর যখন এ ধরনের হাস্যকর আচরণ করতে থাকে তখন তাকে আমরা কী বলতে থাকি? তখন আমরা কাউকে পীর সাহেব' কাউকে 'হযরত মাওলানা কাউকে বড় 'কামেল', 'পরহেজগার' প্রভৃতি নামে ভূষিত করি। এর কারণ এই যে, আমরা তাদের মুখে মাপ মত লম্বা দাড়ি দেখে, তাদের পায়জামা পায়ের গিরার দু ইঞ্চি ওপরে দেখে, তাদের কপালে সলাতের কালো দাগ দেখে, এবং তাদের লম্বা লম্বা সলাত ও মোটা মোটা দানার তাসবীহ দেখে, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি; এদেরকে বড় দ্বীনদার ও ইবাদতকারী বলে মনে করি। এ ভুল শুধু এজন্য যে, 'ইবাদত' ও দ্বীনদারীর ভুল অর্থই আমাদের মনে বদ্ধমূল। হয়ে রয়েছে।
ইবাদতের প্রকৃত অর্থ :
আমি হয়তো মনে করি হাত বেঁধে কিবলামুখি হয়ে দাঁড়ানো, হাঁটুর উপর হাত রেখে রুকু করা, মাটিতে মাথা রেখে সিজদা করা এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট শব্দ উচ্চারণ করা- শুধু এ কয়টি কাজই প্রকৃত ইবাদত। হয়ত আমি মনে করি, রমাদানের প্রথম দিন হতে শাওয়ালের চাঁদ উঠা পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রাখার নাম ইবাদত। আমি হয়তো এটাও মনে করি যে, কুরআন শরীফ সুন্দর করে তিলাওয়াত করার নামই ইবাদত, আমি বুঝে থাকি মক্কা শরীফে গিয়ে কা'বা ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করার নামই ইবাদত।
মোটকথা, এ ধরনের বাহ্যিক রূপকে আমরা 'ইবাদত মনে করে নিয়েছি এবং এধরনের বাহ্যিক রূপ বজায় রেখে উপরোক্ত কাজগুলো থেকেই সমাধা করলেই আমরা মনে করি যে, 'ইবাদত' সুসম্পন্ন হয়েছে এবং (ওমা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়াবুদুন) এর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে। তাই জীবনের অন্যান্য ব্যাপারে আমি একেবারে স্বাধীন- নিজের খেয়াল খুশি অনুযায়ী কাজ করে যেতে পারি। কিন্তু প্রকৃত ব্যপার এই যে, আল্লাহ যে ইবাদাতের জন্য আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যে ইবাদত করার আদেশ আমাকে দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। সেই ইবাদত এই যে, আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তেই আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে চলবো এবং আল্লাহর আইনের বিরোধী এ দুনিয়ায় যা কিছু প্রচলিত আছে তা অনুসরণ করতে আমি একেবারে অস্বীকার করবো।
আমার প্রত্যেকটি কাজ, প্রত্যেকটি গতিবিধি আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে হতে হবে। এ পন্থায় যে জীবনযাপন করবো তার সবটুকুই ইবাদত বলে গণ্য হবে। এ ধরনের জীবনে আমার শয়ন-জাগরণ, পানাহার, চলাফেরা, কথা বলা, অলোচনা করাও ইবাদত বিবেচিত হবে। এমন কি নিজ স্ত্রীর কাছে যাওয়া এবং নিজের সন্তানদেরকে স্নেহ করাও ইবাদাতের শামিল হবে। যে সকল কাজকে আমরা 'দুনিয়াদারী বলে থাকি তাও 'ইবাদত এবং 'দ্বীনদারী' হতে পারে -- যদি সকল বিষয় আমি আল্লাহ নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে সমাধা করি; আর পদে পদে এদিকে লক্ষ্য রাখি যে, আল্লাহর কাছে কোন্টা জায়েয আর কোনটা নাজায়েয, কী হালাল আর কী হারাম, কী ফরয আর কী নিষেধ, কোন কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন আর কোন কাজে হন অসন্তুষ্ট।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি রুজি ও অর্থোপার্জনের জন্য বের হই। এ পথে হারাম উপার্জনের অসংখ্য সহজ উপায় আমার সামনে আসবে। এখন আমি যদি আল্লাহকে ভয় করে সেই সুযোগ গ্রহণ না করি এবং কেবল হালাল রুজি ও অর্থ উপার্জন করি এ কাজে যে সময় লেগেছে তা সবই ইবাদত এবং এ হালাল উপায়ে অর্জিত অর্থ ঘরে এনে আমি নিজে খাই আর পরিবার-পরিজনের খাদ্যের ব্যবস্থা করি, সেই সাথে যদি আল্লাহর নির্ধারিত অন্যান্য হকদারের হকও আদায় করি, তাহলে এসব কাজেও আমি অসীম সওয়াব পাবো। পথ চলার সময় আমি পথের কাঁটা দূর করি এ ধারণায় যে, এটা দ্বারা আল্লাহর কোন বান্দা কষ্ট পেতে পারে তবে এটাও আমার ইবাদত বলে গণ্য হবে। আমি কোন রুগ্নব্যক্তিকে শুশ্রুষা করলে, কোন ব্যক্তিকে পথচলতে সাহায্য করলে, কিংবা বিপন্ন ব্যক্তিকে চলতে সাহায্য করলে তবে এটাও ইবাদত হবে। কথাবার্তা বলতে আমি মিথ্যা, গীবত, কুৎসা রটনা, অশ্লীল কথা বলে পরের মনে আঘাত দেয়া ইত্যাদি পরিহার করি এবং আল্লাহর ভয়ে কেবল সত্য কথাই বলি তবে যতক্ষণ সময় আমার এ কাজে ব্যয় হবে, তা সবই ইবাদতে অতিবাহিত হবে। অতএব চেতনা লাভের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলা এবং তাঁরই নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করার নামই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত। এ ইবাদতের জন্য কোন সময় নেই। এ ইবাদত সবসময়ই হওয়া চাই, এ ইবাদতের জন্য কোন নির্দিষ্ট প্রকাশ্য রূপ নেই, কেবল প্রতিটি রূপের প্রত্যেকটি কাজই আল্লাহর ইবাদত হতে হবে। আমি একথা বলতে পারি না যে, আমি অমুক সময় আল্লাহর বান্দা আর অমুক সময় আল্লাহর বান্দা নই। আমি একথাও বলতে পারি না যে, অমুক সময় আল্লাহর ইবাদতের জন্য, আর অমুক সময় আল্লাহর কোন ইবাদত করতে হয় না। সকল অবস্থায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার নামই ইবাদত এ আলোচনা দ্বারা আমরা ইবাদত শব্দের অর্থ ভালরূপে জানলাম এবং একথা বুঝতে পারলাম যে, প্রত্যেক মুহূর্তে সকল অবস্থায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার নামই ইবাদত। এখানে একটি সাধারণ প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে এ সলাত, সিয়াম, হাজ্জ ও যাকাত ইত্যাদিকে কি বলা যায়? উত্তরে বলা যায় যে, এসব অবশ্যই ইবাদত, এ ইবাদতগুলোকে আমার উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে শুধু এজন্য যে, আমার জীবনে প্রধান ও বৃহত্তম উদ্দেশ্য যে, প্রতি মূহুর্তে ও প্রত্যেক অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করা, সেই বিরাট উদ্দেশ্য আমি এসবের মাধ্যমে লাভ করবো। সলাত আমাকে দৈনিক পাঁচবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমি আল্লাহর দাস – তাঁরই বন্দেগী করা আমার কর্তব্য; সিয়াম বছরে একবার পূর্ণ একটি মাস আমাকে এ বন্দেগী করার জন্য প্রস্তুত করে, যাকাত আমাকে বার বার মনে করিয়ে দেয় যে, আমি যে অর্থ উপার্জন করেছি তা আল্লাহর দান, তা কেবল আমার খেয়াল-খুশী মত ব্যয় করতে পারি না। বরং তা দ্বারা আমার মালিকের হক আদায় করতে হবে। হাজ্জ মানব মনে আল্লাহ প্রেম ও ভালোবাসা এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের অনুভুতির এমন চিত্র অঙ্কিত করে যে, একবার তা মুদ্রিত হলে সমগ্র জীবনেও মন হতে তা মুছে যেতে পারে না। এসব বিভিন্ন ইবাদত আদায় করার পর আমার সমগ্র জীবন যদি আল্লাহর ইবাদতে পরিণত হওয়ার উপযুক্ত হয় তবেই আমার সলাত প্রকৃত সলাত হবে, সিয়াম খাঁটি সিয়াম হবে, যাকাত সত্যিকার যাকাত এবং হাজ্জ আসল হাজ্জ হবে। এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ উদ্দেশ্য সফল না হলে কেবল রুকু-সিজদাহ, অনাহার-উপবাস, হাজ্জের অনুষ্ঠান পালনকরা এবং যাকাতের নামে টাকা ব্যয় করলে কিছুই লাভ হবে না। বাহ্যিক ও আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলোকে মানুষের একটি দেহের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এতে প্রাণ থাকলে এবং চলাফিরা বা কাজকর্ম করতে পারলে নিঃসন্দেহে তা জীবিত মানুষের দেহ, অন্যথায় তা একটি প্রাণহীন দেহ মাত্র। লাশের চোখ, কান, হাত, পা সব কিছুই বর্তমান থাকে; কিন্তু প্রাণ থাকে না বলেই তাকে আমরা মাটির গর্তে কবর দিয়ে রাখি। তদ্রপ সলাতের আরকান-আহকাম যদি ঠিকভাবে আদায় করা হয় কিংবা সিয়ামের শর্তাবলীও যদি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয়, কিন্তু হৃদয় মনে আল্লাহর ভয়, আল্লাহর প্রেম-ভালোবাসা এবং তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্য করার ভাবধারা বর্তমান না থাকে -- ঠিক যেজন্য এসব আমার উপর ফরয করা হয়েছিল, হবে তা একটি প্রাণহীন ও অর্থহীন জিনিস, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون
“আমি জিন ও মানব জাতিকে কেবল আমারই ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।” (সূরা আয যারিয়াত ৫১ : ৫৬) এ থেকে নিঃসন্দেহে বুঝা গেল যে, মানুষের জন্ম, জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আল্লাহর ইবাদত এবং বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, ইবাদত' শব্দটির প্রকৃত অর্থ জেনে নেয়া আমাদের পক্ষে কতখানি জরুরী। এ শব্দটির অর্থ না জানলে যে মহান উদ্দেশ্যে আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা আমি কখনই লাভ করতে পারবো না। আর যে তার উদ্দেশ্য লাভ করতে পারে না তা ব্যর্থ ও নিষ্ফল হয়ে থাকে। চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করতে না পারলে বলা হয় যে, সে চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছে, কৃষক ভাল ফসল জন্মাতে না পারলে কৃষিকার্যে তার ব্যর্থতা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। তেমনি আমরা যদি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য লাভ অর্থাৎ আল্লাহ যেভাবে চায় সেভাবে ইবাদত করতে না পারি তবে বলতে হবে যে, আমাদের জীবন ব্যর্থ হয়েছে। এজন্যই আমাদের এই 'ইবাদত' শব্দটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য জানার জন্য বিশেষ মনোযোগী হওয়া উচিত এবং তা আমাদের হৃদয়ে ও ব্রেইনে বদ্ধমূল করে নেয়া উচিত। কারণ মানব জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা এরই উপর একান্তভাবে নির্ভর করে। ইবাদত বলতে কী বুঝায়? ইবাদত শব্দটি আরবী 'আবদ হতে উদ্ভূত হয়েছে। 'আবদ' অর্থ দাস ও গোলাম। অতএব 'ইবাদত' শব্দের অর্থ হবে বন্দেগী ও গোলামী করা। যে ব্যক্তি অন্যের দাস সে যদি তার বাস্তবিকই মনিবের সমীপে একান্ত অনুগত হয়ে থাকে এবং তার সাথে ঠিক চাকরের ন্যায় ব্যবহার করে, তবে একে বলা হয় বন্দেগী ও ইবাদত। পক্ষান্তরে কেউ যদি কারো চাকর হয়। এবং মনিবের কাছ থেকে পুরোপুরি বেতন আদায় করে, কিন্তু তবুও সে যদি ঠিক চাকরের ন্যায় কাজ না করে তবে বলতে হবে যে, সে নাফরমানী ও বিদ্রোহ করেছে। আসলে একে অকৃতজ্ঞতাই বলা বাঞ্ছনীয়। তাই সর্বপ্রথম জানতে হবে, মনিবের সামনে 'চাকরের' নয় কাজ করা এবং তার সমীপে আনুগত্য প্রকাশ করার উপায় কী হতে পারে। বান্দা বা চাকরকে প্রথমত মনিবকে 'প্রভু বলে স্বীকার করতে হবে এবং মনে করতে হবে যে, যিনি আমার মালিক, যিনি আমাকে দৈনন্দিন রুজী দান করেন এবং যিনি আমার মালিক, যিনি আমার হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন তাঁরই অনুগত হওয়া আমার কর্তব্য। তিনি ছাড়া অন্য কেউই আমার আনুগত্য লাভের অধিকারী নয়। সকল সময় মনিবের আনুগত্য করা, তাঁর হুকুম পালন করা, তাঁর আদেশ মূহুর্তের জন্যও পরিত্যাগ না করা, মনিবের বিরুদ্ধে মনে কোন কথার স্থান না দেয়া এবং অন্য কারো কথা পালন না করাই বান্দার দ্বিতীয় কর্তব্য। গোলাম সবসময়ই গোলাম; তার একথা বলার কোন অধিকার নেই যে, আমি মনিবের এ আদেশ মানবো আর অমুক আদেশ মানবো না। কিংবা আমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনিবের গোলাম আর অন্যান্য সময় আমি তার গোলামী হতে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও মুক্ত। মনিবের প্রতি সম্মান ও সম্রম প্রদর্শন এবং তাঁর সমীপে আদব রক্ষা করে চলা বান্দার তৃতীয় কাজ। আদব ও সম্মান প্রকাশের যে পন্থা মনিব নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সেই সময়ে নিশ্চিতরূপে উপস্থিত হওয়া এবং মনিবের আনুগত্য ও দাসত্ব স্বীকার করে নিজেকে প্রতিজ্ঞা ও আন্তরিক নিষ্ঠা প্রমাণ করা একান্তু আবশ্যক।
এ তিনটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে যে কার্যটি সম্পন্ন হয় আরবী পরিভায়ায় তাকেই বলে ইবাদত'। প্রথমত, মনিবের দাসত্ব স্বীকার, দ্বিতীয়ত, মনিবের আনুগত্য এবং তৃতীয়ত, মনিবের সম্মান ও সম্রম রক্ষা করা।
ইবাদতের উদ্দেশ্য :
আমরা জানি যে আল্লাহ জিন ও মানব জাতিকে একমাত্র এ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন যে, তারা কেবল আল্লাহরই দাসত্ব করবে অন্য কারো নয়, কেবল আল্লাহর হুকুম পালন করবে, এছাড়া অন্য কারো হুকুম অনুসরণ করবে না এবং কেবল তাঁরই সামনে সম্মান সম্রম প্রকাশের জন্য মাথা নত করবে, অন্য কারো সামনে নয়। এ তিনটি জিনিসকে আল্লাহ বুঝিয়েছেন এ ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ 'ইবাদত' দ্বারা। যেসব আয়াতে আল্লাহ ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন তার অর্থ এটাই। আমাদের শেষ নবী এবং তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের যাবতীয় শিক্ষার সারকথা হচ্ছে।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না। অর্থাৎ দাসত্ব ও আনুগত্য লাভের যোগ্য সারা জাহানে একজনই মাত্র বাদশাহ আছেন -- তিনি হচ্ছেন আল্লাহ; অনুসরণযোগ্য মাত্র একটি বিধান বা আইন আছে -- তা হলো আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা এবং একটি মাত্র সত্ত্বাই আছে, যার পূজা-উপাসনা, আরাধনা করা যেতে পারে। আর সেই সত্তাই হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ।
উদাহরণ ১:
একটি চাকর যদি মনিবের নির্ধারিত কর্তব্য পালন না করে বরং তাঁর সামনে কেবল হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, লক্ষ বার কেবল তার নাম জপে, তবে এ চাকরিটি সম্পর্কে আমরা কী বলবো? মনিব তাকে অন্যান্য মানুষের প্রাপ্য আদায় করতে বলেন। কিন্তু সে কেবল সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে মনিবের সামনে মাথা নত করে দশবার সালাম করে এবং আবার হাত বেঁধে দাঁড়ায়। মনিব তাকে অনিষ্টকর কাজগুলো বন্ধ করতে আদেশ করে কিন্তু সে সেখান থেকে একটুও নড়ে না। বরং কেবল সিজদাহ করে থাকে। মনিব তাকে চোরের হাত কাটতে বলেন। কিন্তু সে দাঁড়িয়ে থেকে সুললিত কণ্ঠে বিশবার পড়তে বা উচ্চরণ করতে থাকে --'চোরের হাত কাটা কিন্তু সে একবারও এরকম শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে না যার অধীনে চোরের হাত কাঁটা সম্ভব।
এমন চাকর সম্পর্কে কী মন্তব্য করবো? আমরা কি বলতে পারি যে, সে প্রকৃতপক্ষে মনিবের বন্দেগী ও ইবাদত করছে? আমার কোন চাকর এরূপ করলে আমি তাকে কী বলবো? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আল্লাহর যে চাকর এরূপ আচরণ করে তাকে আমরা অনেকেই পরহেজগার, বুযুর্গ ইত্যাদি নামে অভিহিত করি। এরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুরআন শরীফে আল্লাহর কত শত হুকুম তিলাওয়াত করে, কিন্তু সেগুলো পালন করার এবং কাজে পরিণত করার জন্য একটু চেষ্টাও করে না। বরং কেবল নফলের পর নফল পড়তে থাকে, আল্লাহর নামে হাজার দানা তাসবীহ জপতে থাকে এবং মধুর কন্ঠে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করতে থাকে।
উদাহরণ ২:
আর একজন চাকরের কথা ধরি। সে রাত-দিন কেবল পরের কাজ করে, অন্যের আদেশ শুনে এবং পালন করে, অন্যের আইন মেনে চলে। এবং তার প্রকৃত মনিবের যত আদেশই হোক না কেন, তার বিরোধিতা করে। কিন্তু সালাম' দেয়ার সময় সে তার প্রকৃত মনিবের সামনে উপস্থিত হয় এবং মুখে কেবল তার নাম জপতে থাকে। আমাদের কারো কোন চাকর এরূপ করলে আমরা কী করবো? মুখে মুখে সে যখন আমাকে মনিব বলে ডাকবে তখন অমি কি তাকে একথা বলবোনা যে, তুমি মিথ্যাবাদী; তুমি আমার বেতন খেয়ে অন্যের তাবেদারী করছো, মুখে আমাকে মনিব বলে ডাকছো, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেবল অন্যেরই কাজ করে বেড়াচ্ছ? এটা যে নিতান্ত সাধারণ বুদ্ধির কথা এটা বারো বুঝতে কষ্ট হয় না। কিন্তু কী আশ্চর্যের কথা! যারা রাত-দিন আল্লাহর আইন ভঙ্গ করবে, কাফির ও মুশরিকদের আদেশ অনুযায়ী কাজ করে এবং নিজেদের বাস্তব কর্মজীবনে আল্লাহর বিধানের কোন পরোয়া করে না, তাদের সলাত-সিয়াম, তাসবীহ পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত, হাজ্জ, যাকাত ইত্যাদিকে ইবাদত বলে মনে করা। এ ভুল ধারণারও মূল কারণ ইবাদত শব্দের প্রকৃত অর্থ না জানা।
উদাহরণ ৩ :
আর এটি চাকরের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মনিব তার চাকরদের জন্য যে ধরনের পোশাক নির্দিষ্ট করেছে, মাপ-জোখ ঠিক রেখে সে ঠিক সেই ধরনের পোশাক পরিধান করে, বড় আদব ও যত্ন সহকারে সে মনিবের সামনে হাজির হয়, প্রত্যেকটি হুকুম শুনা মাত্রই মাথা নত করে শিরোধার্য করে নেয় যেন তার তুলনায় বেশী অনুগত চাকর আর কেউই নয়। 'সালাম দেয়ার সময় সে একেবারে সকলের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং মনিবের নাম জপবার ব্যাপারে সমস্ত চাকরের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও নিষ্ঠা প্রমাণ করে; কিন্তু অন্যদিকে এ ব্যক্তি মনিবের শত্র এবং বিদ্রোহীদের খেদমত করে, মনিবের বিরুদ্ধে তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করে এবং মনিবের নাম পর্যন্ত দুনিয়া হতে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে তারা যে চেষ্টাই করে, এ হতভাগা তার সহযোগীতা করে; রাতের অন্ধকারে সে মনিবের নিষিদ্ধ কাজ করে এবং ভোর হলে বড় অনুগত চাকরটির ন্যায় হাত বেঁধে মনিবের সামনে হাজির হয়, এ চাকরটি সম্পর্কে আমরা কী বলবো? নিশ্চয়ই তাকে মুনাফিক, বিদ্রোহী প্রভৃতি নামে অভিহিত করতে একটুও কুণ্ঠিত হবো না। কিন্তু আল্লাহর কোন চাকর যখন এ ধরনের হাস্যকর আচরণ করতে থাকে তখন তাকে আমরা কী বলতে থাকি? তখন আমরা কাউকে পীর সাহেব' কাউকে 'হযরত মাওলানা কাউকে বড় 'কামেল', 'পরহেজগার' প্রভৃতি নামে ভূষিত করি। এর কারণ এই যে, আমরা তাদের মুখে মাপ মত লম্বা দাড়ি দেখে, তাদের পায়জামা পায়ের গিরার দু ইঞ্চি ওপরে দেখে, তাদের কপালে সলাতের কালো দাগ দেখে, এবং তাদের লম্বা লম্বা সলাত ও মোটা মোটা দানার তাসবীহ দেখে, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি; এদেরকে বড় দ্বীনদার ও ইবাদতকারী বলে মনে করি। এ ভুল শুধু এজন্য যে, 'ইবাদত' ও দ্বীনদারীর ভুল অর্থই আমাদের মনে বদ্ধমূল। হয়ে রয়েছে।
ইবাদতের প্রকৃত অর্থ :
আমি হয়তো মনে করি হাত বেঁধে কিবলামুখি হয়ে দাঁড়ানো, হাঁটুর উপর হাত রেখে রুকু করা, মাটিতে মাথা রেখে সিজদা করা এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট শব্দ উচ্চারণ করা- শুধু এ কয়টি কাজই প্রকৃত ইবাদত। হয়ত আমি মনে করি, রমাদানের প্রথম দিন হতে শাওয়ালের চাঁদ উঠা পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রাখার নাম ইবাদত। আমি হয়তো এটাও মনে করি যে, কুরআন শরীফ সুন্দর করে তিলাওয়াত করার নামই ইবাদত, আমি বুঝে থাকি মক্কা শরীফে গিয়ে কা'বা ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করার নামই ইবাদত।
মোটকথা, এ ধরনের বাহ্যিক রূপকে আমরা 'ইবাদত মনে করে নিয়েছি এবং এধরনের বাহ্যিক রূপ বজায় রেখে উপরোক্ত কাজগুলো থেকেই সমাধা করলেই আমরা মনে করি যে, 'ইবাদত' সুসম্পন্ন হয়েছে এবং (ওমা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়াবুদুন) এর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে। তাই জীবনের অন্যান্য ব্যাপারে আমি একেবারে স্বাধীন- নিজের খেয়াল খুশি অনুযায়ী কাজ করে যেতে পারি। কিন্তু প্রকৃত ব্যপার এই যে, আল্লাহ যে ইবাদাতের জন্য আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যে ইবাদত করার আদেশ আমাকে দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। সেই ইবাদত এই যে, আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তেই আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে চলবো এবং আল্লাহর আইনের বিরোধী এ দুনিয়ায় যা কিছু প্রচলিত আছে তা অনুসরণ করতে আমি একেবারে অস্বীকার করবো।
আমার প্রত্যেকটি কাজ, প্রত্যেকটি গতিবিধি আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে হতে হবে। এ পন্থায় যে জীবনযাপন করবো তার সবটুকুই ইবাদত বলে গণ্য হবে। এ ধরনের জীবনে আমার শয়ন-জাগরণ, পানাহার, চলাফেরা, কথা বলা, অলোচনা করাও ইবাদত বিবেচিত হবে। এমন কি নিজ স্ত্রীর কাছে যাওয়া এবং নিজের সন্তানদেরকে স্নেহ করাও ইবাদাতের শামিল হবে। যে সকল কাজকে আমরা 'দুনিয়াদারী বলে থাকি তাও 'ইবাদত এবং 'দ্বীনদারী' হতে পারে -- যদি সকল বিষয় আমি আল্লাহ নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে সমাধা করি; আর পদে পদে এদিকে লক্ষ্য রাখি যে, আল্লাহর কাছে কোন্টা জায়েয আর কোনটা নাজায়েয, কী হালাল আর কী হারাম, কী ফরয আর কী নিষেধ, কোন কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন আর কোন কাজে হন অসন্তুষ্ট।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি রুজি ও অর্থোপার্জনের জন্য বের হই। এ পথে হারাম উপার্জনের অসংখ্য সহজ উপায় আমার সামনে আসবে। এখন আমি যদি আল্লাহকে ভয় করে সেই সুযোগ গ্রহণ না করি এবং কেবল হালাল রুজি ও অর্থ উপার্জন করি এ কাজে যে সময় লেগেছে তা সবই ইবাদত এবং এ হালাল উপায়ে অর্জিত অর্থ ঘরে এনে আমি নিজে খাই আর পরিবার-পরিজনের খাদ্যের ব্যবস্থা করি, সেই সাথে যদি আল্লাহর নির্ধারিত অন্যান্য হকদারের হকও আদায় করি, তাহলে এসব কাজেও আমি অসীম সওয়াব পাবো। পথ চলার সময় আমি পথের কাঁটা দূর করি এ ধারণায় যে, এটা দ্বারা আল্লাহর কোন বান্দা কষ্ট পেতে পারে তবে এটাও আমার ইবাদত বলে গণ্য হবে। আমি কোন রুগ্নব্যক্তিকে শুশ্রুষা করলে, কোন ব্যক্তিকে পথচলতে সাহায্য করলে, কিংবা বিপন্ন ব্যক্তিকে চলতে সাহায্য করলে তবে এটাও ইবাদত হবে। কথাবার্তা বলতে আমি মিথ্যা, গীবত, কুৎসা রটনা, অশ্লীল কথা বলে পরের মনে আঘাত দেয়া ইত্যাদি পরিহার করি এবং আল্লাহর ভয়ে কেবল সত্য কথাই বলি তবে যতক্ষণ সময় আমার এ কাজে ব্যয় হবে, তা সবই ইবাদতে অতিবাহিত হবে। অতএব চেতনা লাভের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলা এবং তাঁরই নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করার নামই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত। এ ইবাদতের জন্য কোন সময় নেই। এ ইবাদত সবসময়ই হওয়া চাই, এ ইবাদতের জন্য কোন নির্দিষ্ট প্রকাশ্য রূপ নেই, কেবল প্রতিটি রূপের প্রত্যেকটি কাজই আল্লাহর ইবাদত হতে হবে। আমি একথা বলতে পারি না যে, আমি অমুক সময় আল্লাহর বান্দা আর অমুক সময় আল্লাহর বান্দা নই। আমি একথাও বলতে পারি না যে, অমুক সময় আল্লাহর ইবাদতের জন্য, আর অমুক সময় আল্লাহর কোন ইবাদত করতে হয় না। সকল অবস্থায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার নামই ইবাদত এ আলোচনা দ্বারা আমরা ইবাদত শব্দের অর্থ ভালরূপে জানলাম এবং একথা বুঝতে পারলাম যে, প্রত্যেক মুহূর্তে সকল অবস্থায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার নামই ইবাদত। এখানে একটি সাধারণ প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে এ সলাত, সিয়াম, হাজ্জ ও যাকাত ইত্যাদিকে কি বলা যায়? উত্তরে বলা যায় যে, এসব অবশ্যই ইবাদত, এ ইবাদতগুলোকে আমার উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে শুধু এজন্য যে, আমার জীবনে প্রধান ও বৃহত্তম উদ্দেশ্য যে, প্রতি মূহুর্তে ও প্রত্যেক অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করা, সেই বিরাট উদ্দেশ্য আমি এসবের মাধ্যমে লাভ করবো। সলাত আমাকে দৈনিক পাঁচবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমি আল্লাহর দাস – তাঁরই বন্দেগী করা আমার কর্তব্য; সিয়াম বছরে একবার পূর্ণ একটি মাস আমাকে এ বন্দেগী করার জন্য প্রস্তুত করে, যাকাত আমাকে বার বার মনে করিয়ে দেয় যে, আমি যে অর্থ উপার্জন করেছি তা আল্লাহর দান, তা কেবল আমার খেয়াল-খুশী মত ব্যয় করতে পারি না। বরং তা দ্বারা আমার মালিকের হক আদায় করতে হবে। হাজ্জ মানব মনে আল্লাহ প্রেম ও ভালোবাসা এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের অনুভুতির এমন চিত্র অঙ্কিত করে যে, একবার তা মুদ্রিত হলে সমগ্র জীবনেও মন হতে তা মুছে যেতে পারে না। এসব বিভিন্ন ইবাদত আদায় করার পর আমার সমগ্র জীবন যদি আল্লাহর ইবাদতে পরিণত হওয়ার উপযুক্ত হয় তবেই আমার সলাত প্রকৃত সলাত হবে, সিয়াম খাঁটি সিয়াম হবে, যাকাত সত্যিকার যাকাত এবং হাজ্জ আসল হাজ্জ হবে। এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ উদ্দেশ্য সফল না হলে কেবল রুকু-সিজদাহ, অনাহার-উপবাস, হাজ্জের অনুষ্ঠান পালনকরা এবং যাকাতের নামে টাকা ব্যয় করলে কিছুই লাভ হবে না। বাহ্যিক ও আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলোকে মানুষের একটি দেহের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এতে প্রাণ থাকলে এবং চলাফিরা বা কাজকর্ম করতে পারলে নিঃসন্দেহে তা জীবিত মানুষের দেহ, অন্যথায় তা একটি প্রাণহীন দেহ মাত্র। লাশের চোখ, কান, হাত, পা সব কিছুই বর্তমান থাকে; কিন্তু প্রাণ থাকে না বলেই তাকে আমরা মাটির গর্তে কবর দিয়ে রাখি। তদ্রপ সলাতের আরকান-আহকাম যদি ঠিকভাবে আদায় করা হয় কিংবা সিয়ামের শর্তাবলীও যদি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয়, কিন্তু হৃদয় মনে আল্লাহর ভয়, আল্লাহর প্রেম-ভালোবাসা এবং তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্য করার ভাবধারা বর্তমান না থাকে -- ঠিক যেজন্য এসব আমার উপর ফরয করা হয়েছিল, হবে তা একটি প্রাণহীন ও অর্থহীন জিনিস, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা'আলার যিনি ক্যানাডার মতো একটি অমুসলিম দেশে এনে আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দিয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম প্রধান দেশে থেকেও আমরা দ্বীনের সঠিক বুঝ পাইনি অথচ এটা আমরা পেয়েছি অমুসলিম দেশ কানাডাতে এসে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই আমরা যে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানি না এইটাই আমরা জানি না। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই দ্বীন ইসলামের পূণ্যের কাজ মনে করে খুব বেশী বেশী ইসলাম বিরোধি কাজ নিয়মিত করে যাচ্ছি। আমরা কুরআন থেকে নিজেদেরকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখে নিজেদের ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করছি। কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়। ইসলাম অর্থ আল্লাহর আনুগত্য করা ও হুকুম পালন করে চলা। নিজেকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্থন করে দেয়ার নাম হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহর সম্মুখে নিজের স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করার নাম ইসলাম। আল্লাহর বাদশাহী এবং আনুগতকে মাথানত করে স্বীকার করে নেয়ার নাম ইসলাম। যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত কাজকর্মকে আল্লাহর হাতে সঁপে দেয়, সেই ব্যক্তি মুসলিম। আর যে ব্যক্তি নিজের সব ব্যাপারে নিজের ইচ্ছেমত সম্পন্ন করে কিংবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর হাতে তা আত্মসমর্থন করে সে মুসলিম নয়। আল্লাহর হাতে সঁপে দেয়ার তাৎপর্য এই যে, তিনি তাঁর কিতাব এবং তাঁর নবীর দ্বারা যে হিদায়াত ও সৎপথের বিধান পাঠিয়েছেন, মানুষ তাকে পুরোপুরি কবুল করবে এবং তাতে বিন্দুমাত্র আপত্তি করতে পারবে না। জীবনের প্রত্যেকটি ব্যাপারে এবং কাজে শুধু কুরআন ও সুন্নাহর নিয়ম অনুসরণ করে চলবে। যে ব্যক্তি নিজের বুদ্ধি, দুনিয়ার প্রথা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সকলকেই কিছু পেছনে ফেলে রেখে এবং প্রত্যেক ব্যাপারেই কেবল আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাহর কাছে পথের সন্ধান জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করে যে, আমার কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়, আর সেখান হতে যে নিয়মই পাওয়া যাক না কেন বিনা আপত্তিতে তা মেনে নেয়, তার বিপরীত যা তা সবই সে অস্বীকার করে শুধু সেই ব্যক্তি মুসলিম। কারণ সে তা নিজেকে আল্লাহর কাছে একেবারে সঁপে দিয়েছে। আর এভাবে আল্লাহর হাতে নিজেকে সঁপে দিলেই মানুষ মুসলিম হতে পারে। এর বিপরীত--যে ব্যক্তি কুরআন ও সুন্নাহর উপর মোটেই নির্ভর করে না, বরং নিজের মন যা বলে তাই করে, কিংবা বাপ-দাদা হতে চলে আসা নিয়ম-কানুনের অনুসরণ করে চলে, কিংবা দুনিয়ায় যা কিছু হচ্ছে সে-ও তাই করে, নিজের কোনো ব্যাপারেই সে কুরআন ও হাদীসের কাছে জিজ্ঞেস করে না যে, তার কী করা উচিত, কুরআন ও সুন্নাহর বিধান জেনে সে বলে ওঠে যে, আমার বুদ্ধি তা গ্রহণ করতে চায় না, তাই আমি তা মানি না, অথবা বাপ-দাদার কাল হতে তার উল্টা নিয়ম চলে আসছে কাজেই তার অনুসরণ করব না; কিংবা দুনিয়ার নিয়ম তার বিপরীত, তাই আমি সেই নিয়ম অনুসারেই চলবো, তবে সেই ব্যক্তি কিছুতেই মুসলিম হতে পারে না। আল্লাহর আইন আমার জন্য একমাত্র আইন : আমি যখন কালিমা 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ পড়ি এবং মুসলিম হওয়ার কথা স্বীকার করি, তখন আমি তার মধ্য দিয়ে একথাও স্বীকার করে থাকি যে, আমার আল্লাহর আইন আমার জন্য একমাত্র আইন; আল্লাহই আমার প্রভু ও আদেশ কর্তা। তখন আমার শুধু আল্লাহরই আনুগত্য করতে হবে। আমার কাছে শুধু সেই বিধানই সত্য বিধানরূপে স্বীকৃতি পাবে যা আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রসূলের সাহায্যে পাওয়া যায়। এর অর্থ এই যে, আমি মুসলিম হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর সামনে নিজের ইচেছ বিসর্জন দিয়েছি। অতঃপর আমার নিজের স্বতন্ত্র মত বলতে কিছুই থাকতে পারে না, দুনিয়ার বিভিন্ন প্রথা বা পারিবারিক নিয়ম-রীতিরও কোনোই গুরুত্ব থাকতে পারে না ।
অথবা অমুক এবং অমুক বুযুর্গ সাহেব কী বলেছেন, আল্লাহর কালাম এবং তাঁর রসূলের সুন্নাতের মোকাবিলায় এ ধরনের কোনো কথাই আমি এখন পেশ করতে পারি না। আমার প্রত্যেকটি বিষয়ই কুরআন ও সুন্নাহর সামনে পেশ করাই এখন আমার একমাত্র কাজ। যা তার অনুরূপ হবে না আমি তা উঠিয়ে দূরে নিক্ষেপ করবো তা যারই প্রথা হোক না কেন। নিজেকে মুসলিম বলা এবং তারপর কুরআন ও হাদীসকে বাদ দিয়ে নিজের মত, দুনিয়ার প্রথা কিংবা মানুষের কোনো কথা বা কাজের অনুসরণ করা সম্পূর্ণরূপে পরস্পর বিরোধী।
কোনো অন্ধ ব্যক্তি যেমন নিজেকে চোখওয়ালা বলতে পারে না, কোনো নাকহীন ব্যক্তি যেমন নিজেকে নাকওয়ালা বলতে পারে না, ঠিক তেমনি যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত কাজকর্ম কুরআন হাদীস অনুসারে সমাধা করে না, বরং তা পরিত্যাগ করে নিজের বুদ্ধি বা দুনিয়ার প্রথা অথবা কোনো ব্যক্তি বিশেষের কথা বা কাজের অনুসরণ করে চলে--সে কিছুতেই নিজেকে মুসলিম বলতে পারে না।
ইসলামের সীমা :
কেউ যদি নিজে মুসলিম থাকতে না চায়, তবে তার মুসলিম থাকার জন্য তার উপর জোর-জবরদস্তি করতে পারে না। যে কোনো ধর্ম গ্রহণ করা এবং যে কোনো নাম ধারণ করার স্বাধীনতা প্রত্যেকটি মানুষেরই রয়েছে। কিন্তু কোনো মানুষ যখন নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, তখন তার একথা খুব ভালো করে বুঝে নেয়া উচিত যে, সে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম থাকতে পারে, যতক্ষণ সে ইসলামের সীমার মধ্যে থাকবে। আল্লাহর কালাম এবং তাঁর রসূলের হাদীসকে সত্য ও মঙ্গলের একমাত্র মাপকাঠিরূপে গ্রহণ করা এবং এর বিরোধী প্রত্যেকটি জিনিসকে বাতিল ও মিথ্যা মনে করাই হচ্ছে ইসলামের সীমা। এ সীমার মধ্যে যে থাকবে সে মুসলিম; এটা যে লংঘন করবে সে ইসলাম হতে বিচ্যুত-বহির্ভূত হয়ে পড়বে। তারপরও সে যদি নিজেকে মুসলিম মনে করে এবং মুসলিম বলে দাবী করে, তবে সে নিজেকেও ধোঁকা দিচ্ছে, আর দুনিয়াকেও ধোঁকা দিচ্ছে সন্দেহ নেই।
আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা :
আমরা ক্যানাডা আসার আগে বাংলাদেশে নিজেদের মতো ইসলাম পালন করতাম যেভাবে অন্যেরা পালন করে থাকে। ইসলামের উপর তেমন একটা পড়াশোনা ছিল না চার-পাঁচটা বই ছাড়া তাও আবার সহীহ নয়। যা হোক, অন্যান্যদের মতো আমরাও মনে করতাম যে জান্নাত পাওয়া তো খুবই সহজ এবং জান্নাতে তো অবশ্যই যাচ্ছি। কানাডা আসার পর যখন সঠিক ইসলামের দেখা পেলাম তখন অথেন্টিক সোর্স থেকে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করলাম। যতো পড়ি দেখি তো জানি না। আগে পড়াশোনা ছিল না তখন মনে হতো ইসলাম সম্পর্কে জানি। কিন্তু এখন দেখছি আসলে কিছু জানি না। যতো পড়ি দেখি তো জানি না। তখন বুঝতে পারলাম যে, আমরা যে জানি না তা বুঝার জন্য একটি লেভেল অফ নলেজ প্রয়োজন। আমরা আসলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জানি না যে আমরা ইসলাম সম্পর্কে জানি না।
অথবা অমুক এবং অমুক বুযুর্গ সাহেব কী বলেছেন, আল্লাহর কালাম এবং তাঁর রসূলের সুন্নাতের মোকাবিলায় এ ধরনের কোনো কথাই আমি এখন পেশ করতে পারি না। আমার প্রত্যেকটি বিষয়ই কুরআন ও সুন্নাহর সামনে পেশ করাই এখন আমার একমাত্র কাজ। যা তার অনুরূপ হবে না আমি তা উঠিয়ে দূরে নিক্ষেপ করবো তা যারই প্রথা হোক না কেন। নিজেকে মুসলিম বলা এবং তারপর কুরআন ও হাদীসকে বাদ দিয়ে নিজের মত, দুনিয়ার প্রথা কিংবা মানুষের কোনো কথা বা কাজের অনুসরণ করা সম্পূর্ণরূপে পরস্পর বিরোধী।
কোনো অন্ধ ব্যক্তি যেমন নিজেকে চোখওয়ালা বলতে পারে না, কোনো নাকহীন ব্যক্তি যেমন নিজেকে নাকওয়ালা বলতে পারে না, ঠিক তেমনি যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত কাজকর্ম কুরআন হাদীস অনুসারে সমাধা করে না, বরং তা পরিত্যাগ করে নিজের বুদ্ধি বা দুনিয়ার প্রথা অথবা কোনো ব্যক্তি বিশেষের কথা বা কাজের অনুসরণ করে চলে--সে কিছুতেই নিজেকে মুসলিম বলতে পারে না।
ইসলামের সীমা :
কেউ যদি নিজে মুসলিম থাকতে না চায়, তবে তার মুসলিম থাকার জন্য তার উপর জোর-জবরদস্তি করতে পারে না। যে কোনো ধর্ম গ্রহণ করা এবং যে কোনো নাম ধারণ করার স্বাধীনতা প্রত্যেকটি মানুষেরই রয়েছে। কিন্তু কোনো মানুষ যখন নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, তখন তার একথা খুব ভালো করে বুঝে নেয়া উচিত যে, সে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম থাকতে পারে, যতক্ষণ সে ইসলামের সীমার মধ্যে থাকবে। আল্লাহর কালাম এবং তাঁর রসূলের হাদীসকে সত্য ও মঙ্গলের একমাত্র মাপকাঠিরূপে গ্রহণ করা এবং এর বিরোধী প্রত্যেকটি জিনিসকে বাতিল ও মিথ্যা মনে করাই হচ্ছে ইসলামের সীমা। এ সীমার মধ্যে যে থাকবে সে মুসলিম; এটা যে লংঘন করবে সে ইসলাম হতে বিচ্যুত-বহির্ভূত হয়ে পড়বে। তারপরও সে যদি নিজেকে মুসলিম মনে করে এবং মুসলিম বলে দাবী করে, তবে সে নিজেকেও ধোঁকা দিচ্ছে, আর দুনিয়াকেও ধোঁকা দিচ্ছে সন্দেহ নেই।
আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা :
আমরা ক্যানাডা আসার আগে বাংলাদেশে নিজেদের মতো ইসলাম পালন করতাম যেভাবে অন্যেরা পালন করে থাকে। ইসলামের উপর তেমন একটা পড়াশোনা ছিল না চার-পাঁচটা বই ছাড়া তাও আবার সহীহ নয়। যা হোক, অন্যান্যদের মতো আমরাও মনে করতাম যে জান্নাত পাওয়া তো খুবই সহজ এবং জান্নাতে তো অবশ্যই যাচ্ছি। কানাডা আসার পর যখন সঠিক ইসলামের দেখা পেলাম তখন অথেন্টিক সোর্স থেকে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করলাম। যতো পড়ি দেখি তো জানি না। আগে পড়াশোনা ছিল না তখন মনে হতো ইসলাম সম্পর্কে জানি। কিন্তু এখন দেখছি আসলে কিছু জানি না। যতো পড়ি দেখি তো জানি না। তখন বুঝতে পারলাম যে, আমরা যে জানি না তা বুঝার জন্য একটি লেভেল অফ নলেজ প্রয়োজন। আমরা আসলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জানি না যে আমরা ইসলাম সম্পর্কে জানি না।
ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হলে পরিণাম যে কী তা আমরা সকলেই জানি। চাকুরী হারালে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তাতেও কারো সন্দেহ নেই। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার পরিণাম যে কত ভীষণ ও ভয়াবহ, সেই কথা আমরা অনুভব করতে পারি না। সেই বিষয়ে আমরা বেশীরভাগ মুসলিমরা মোটেও চিন্তিত নই।
“যারা সত্যসহ আগমণ করে এবং (যারা) সত্যকে সত্য বলে সমর্থন করে তারাই আল্লাহভীরু (মুত্তাকী)।” (সূরা আয যুমার ৩৯: ৩৩)
“যারা সত্যসহ আগমণ করে এবং (যারা) সত্যকে সত্য বলে সমর্থন করে তারাই আল্লাহভীরু (মুত্তাকী)।” (সূরা আয যুমার ৩৯: ৩৩)
মুসলিম হওয়ার জন্য শর্ত ও মুসলিম হওয়ার জন্য কমপক্ষে শর্ত কী আর মানুষের মধ্যে কমপক্ষে কী কী গুণ বর্তমান থাকলে তাকে মুসলিম বলা যেতে পারে, সে বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করা যাক। একথাটি ভালো করে বুঝার জন্য সর্বপ্রথম আমাদেরকে কুফর ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে হবে।
এ সম্পর্কে মোটামুটি আমরা জেনে রাখি যে, আল্লাহর আদেশ পালন করতে অস্বীকার করাকেই ‘কুফর' বলা হয়; আর কেবলমাত্র আল্লাহর আদেশ পালন করে চলা এবং আল্লাহর দেয়া কুরআনের বিপরীত যে নিয়ম, যে আইন এবং যে আদেশই হোক না কেন তা অমান্য করাকেই বলা হয় ইসলাম। ইসলাম এবং কুফরে’র এ পার্থক্য কুরআনের নিম্নোল্লিখিত আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে :
ومن ك يخة بما أنزل الله فأوليك هة الكافرون
“যে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না সে কাফির।” (সূরা আল মায়িদা ৫ : ৪৪)।
আদালত ও ফৌজদারীতে যেসব মামলা উপস্থিত হয় কেবল সেই সবের বিচার ফায়সালাই কুরআন-হাদীস অনুসারে করার কথা শুধুমাত্র এখানে বলা হয়নি। বরং প্রত্যেকটি মানুষ তার জীবনের প্রত্যেকটি কাজের সময় যে ফায়সালা বা সিদ্ধান্ত নেয় সেই ফায়সালার কথাই এখানে বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যাপারেই আমাদের সামনে এ প্রশ্ন ওঠে যে, এ কাজ করা উচিত কি উচিত নয়, অমুক কাজ এ নিয়মে করবো কি আর কোন নিয়মে করবো?
এ সময় আমাদের কাছে সাধারণত দু প্রকারের নিয়ম এসে উপস্থিত হয়। এক প্রকারের নিয়ম আমাদেরকে দেখায় আল্লাহর কুরআন এবং রসূলের হাদীস। আর এক প্রকারের নিয়ম উপস্থিত করে আমাদের নফস, বাপ-দাদা হতে চলে আসা নিয়ম-প্রথা অথবা মানব রচিত নিয়ম।
এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া নিয়ম বাদ দিয়ে অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, প্রকৃতপক্ষে সে কুফরীর পথই অবলম্বন করে। যদি সে তার সমস্ত জীবন সম্বন্ধেই এ সিদ্ধান্ত করে নেয় এবং কোনো কাজেই যদি আল্লাহর দেয়া নিয়ম অনুসরণ না করে তবে সে পুরোপুরিভাবে কাফির। যদি সে কতক কাজে আল্লাহর হিদায়াত মেনে চলে। আর কতকগুলো নিজের নফসের হুকুম মতো কিংবা বাপ-দাদার প্রথা মতো অথবা মানুষের রচিত আইন অনুযায়ী করে তবে যতখানি আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে ঠিক ততখানি কুফরীর মধ্যে লিপ্ত হবে।
এ হিসেবে কেউ অর্ধেক কাফির, কেউ চার ভাগের এক ভাগ কাফির। কারো মধ্যে আছে দশ ভাগের এক ভাগ কুফরী আবার কারো মধ্যে আছে বিশ ভাগের এক ভাগ। মোটকথা, আল্লাহর আইনের যতখানি বিরোধিতা করা হবে ততখানি কুফরি করা হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
বস্তুত কেবলমাত্র আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকা এবং নফস, বাপ-দাদা, বংশ-গোত্র, মৌলভী সাহেব, পীর সাহেব, মাজার, দরগা, মুরুব্বী, বুজুর্গ, জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট প্রভৃতি কারো আনুগত্য না করারই নাম হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাস হবে না। আর কারো দাসত্ব কবুল করবে না-এটাই হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তির কাজ। আল কুরআনে বলা হয়েছে।
“(হে নবী)! আহলে কিতাবদের বল ও আস, আমরা ও তোমরা এমন একটা কথায় একত্রিত হই, যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য (অর্থাৎ তোমাদের নবীরা যা বলেছে, আমিও আল্লাহর নবী হওয়ার কারণে তাই বলছি।) তা এই যে,
(১) আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারোও বান্দা হবে না
(২) আল্লাহর উলুহিয়াতের সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবো না এবং
(৩) আমাদের মধ্যে কেউ আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকেও নিজের অভিভাবক ও মালিক বলে মান্য করবো না। এ তিনটি কথা যদি তারা স্বীকার না করে তবে তোমরা তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাও তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম-অর্থাৎ আমরা এ তিনটি কথাই পুরোপুরি কবুল করে নিচ্ছি।” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৬৪)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
“তোমরা কি আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করতে চাও? অথচ আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিস ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তাঁরই আনুগত্য করে যাচ্ছে। আর সকলেই তাঁর কাছে ফিরে যাবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৮৩)
এ সম্পর্কে মোটামুটি আমরা জেনে রাখি যে, আল্লাহর আদেশ পালন করতে অস্বীকার করাকেই ‘কুফর' বলা হয়; আর কেবলমাত্র আল্লাহর আদেশ পালন করে চলা এবং আল্লাহর দেয়া কুরআনের বিপরীত যে নিয়ম, যে আইন এবং যে আদেশই হোক না কেন তা অমান্য করাকেই বলা হয় ইসলাম। ইসলাম এবং কুফরে’র এ পার্থক্য কুরআনের নিম্নোল্লিখিত আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে :
ومن ك يخة بما أنزل الله فأوليك هة الكافرون
“যে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না সে কাফির।” (সূরা আল মায়িদা ৫ : ৪৪)।
আদালত ও ফৌজদারীতে যেসব মামলা উপস্থিত হয় কেবল সেই সবের বিচার ফায়সালাই কুরআন-হাদীস অনুসারে করার কথা শুধুমাত্র এখানে বলা হয়নি। বরং প্রত্যেকটি মানুষ তার জীবনের প্রত্যেকটি কাজের সময় যে ফায়সালা বা সিদ্ধান্ত নেয় সেই ফায়সালার কথাই এখানে বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যাপারেই আমাদের সামনে এ প্রশ্ন ওঠে যে, এ কাজ করা উচিত কি উচিত নয়, অমুক কাজ এ নিয়মে করবো কি আর কোন নিয়মে করবো?
এ সময় আমাদের কাছে সাধারণত দু প্রকারের নিয়ম এসে উপস্থিত হয়। এক প্রকারের নিয়ম আমাদেরকে দেখায় আল্লাহর কুরআন এবং রসূলের হাদীস। আর এক প্রকারের নিয়ম উপস্থিত করে আমাদের নফস, বাপ-দাদা হতে চলে আসা নিয়ম-প্রথা অথবা মানব রচিত নিয়ম।
এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া নিয়ম বাদ দিয়ে অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, প্রকৃতপক্ষে সে কুফরীর পথই অবলম্বন করে। যদি সে তার সমস্ত জীবন সম্বন্ধেই এ সিদ্ধান্ত করে নেয় এবং কোনো কাজেই যদি আল্লাহর দেয়া নিয়ম অনুসরণ না করে তবে সে পুরোপুরিভাবে কাফির। যদি সে কতক কাজে আল্লাহর হিদায়াত মেনে চলে। আর কতকগুলো নিজের নফসের হুকুম মতো কিংবা বাপ-দাদার প্রথা মতো অথবা মানুষের রচিত আইন অনুযায়ী করে তবে যতখানি আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে ঠিক ততখানি কুফরীর মধ্যে লিপ্ত হবে।
এ হিসেবে কেউ অর্ধেক কাফির, কেউ চার ভাগের এক ভাগ কাফির। কারো মধ্যে আছে দশ ভাগের এক ভাগ কুফরী আবার কারো মধ্যে আছে বিশ ভাগের এক ভাগ। মোটকথা, আল্লাহর আইনের যতখানি বিরোধিতা করা হবে ততখানি কুফরি করা হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
বস্তুত কেবলমাত্র আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকা এবং নফস, বাপ-দাদা, বংশ-গোত্র, মৌলভী সাহেব, পীর সাহেব, মাজার, দরগা, মুরুব্বী, বুজুর্গ, জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট প্রভৃতি কারো আনুগত্য না করারই নাম হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাস হবে না। আর কারো দাসত্ব কবুল করবে না-এটাই হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তির কাজ। আল কুরআনে বলা হয়েছে।
“(হে নবী)! আহলে কিতাবদের বল ও আস, আমরা ও তোমরা এমন একটা কথায় একত্রিত হই, যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য (অর্থাৎ তোমাদের নবীরা যা বলেছে, আমিও আল্লাহর নবী হওয়ার কারণে তাই বলছি।) তা এই যে,
(১) আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারোও বান্দা হবে না
(২) আল্লাহর উলুহিয়াতের সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবো না এবং
(৩) আমাদের মধ্যে কেউ আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকেও নিজের অভিভাবক ও মালিক বলে মান্য করবো না। এ তিনটি কথা যদি তারা স্বীকার না করে তবে তোমরা তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাও তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম-অর্থাৎ আমরা এ তিনটি কথাই পুরোপুরি কবুল করে নিচ্ছি।” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৬৪)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
“তোমরা কি আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করতে চাও? অথচ আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিস ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তাঁরই আনুগত্য করে যাচ্ছে। আর সকলেই তাঁর কাছে ফিরে যাবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৮৩)
এ দু'টি আয়াতে একই কথা বলা হয়েছে। তা এই যে, আসল দ্বীন হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা, তাঁর আদেশ পালন করা। আল্লাহর ইবাদতের অর্থ কেবল এটাই নয় যে, দিন-রাত পাঁচবার তাঁর সামনে সিজদা করলেই ইবাদতের যাবতীয় দায়িত্ব প্রতিপালিত হয়ে যাবে। বরং দিন রাত সর্বক্ষণ একমাত্র আল্লাহর হুকুম পালন করে চলাকেই প্রকৃতপক্ষে ইবাদত বলে। যে কাজ করতে তিনি নিষেধ করেছেন, তা হতে ফিরে থাকা এবং তিনি যা করতে আদেশ করেছেন তা পূর্ণরূপে পালন করাই হচ্ছে ইবাদত।
এজন্য প্রত্যেকটি কাজে এবং প্রত্যেকটি হুকুমের ব্যাপারেই কেবলমাত্র আল্লাহর খোজ নিতে হবে। নিজের মন ও বিবেক-বুদ্ধি কী বলে, বাপ-দাদারা কী বলে বা করে গেছেন, পরিবার, বংশ ও আত্মীয়গণের মত কী, জনাব মৌলভী সাহেব আর জনাব পীর সাহেব কেবলা কী বলছেন, অমুক সাহেবের হুকুম কী, কিংবা অমুক সাহেবের মত কী - এসব মাত্রই দেখা যাবে না এবং সেই দিকে মাত্রই ভক্ষেপ করা যাবে না।
আল্লাহর হুকুম ত্যাগ করে এদের কারোও হুকুম পালন করলে আল্লাহর সাথে শিরক করা হবে এবং যার হুকুম মান্য করা হবে তাকে আল্লাহর মতো সম্মান দান করা হবে। কারণ হুকুম দেয়ার ক্ষমতা তো কেবলমাত্র আল্লাহর : “আল্লাহর হুকুম ছাড়া মানুষ অন্য কারো হুকুম মানতে পারে না। মানুষের ইবাদত বন্দেগী তো কেবল তিনিই পেতে পারেন, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার অনুগ্রহে মানুষ বেঁচে আছে। আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিসই তাঁর হুকুম পালন করে চলছে। একটি পাথর অন্য পাথরের হুকুম মতো কাজ করে না, একটি গাছ আর একটি গাছের আনুগত্য করে না, কোনো পশু অন্য পশুর হুকুমদারী করে চলে না।
কিন্তু মানুষ কি পশু, গাছ ও পাথর অপেক্ষাও নিকৃষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা তো শুধু আল্লাহর আনুগত্য করবে, আর মানুষ আল্লাহকে ছেড়ে অন্য মানুষের নির্দেশ মতো চলতে শুরু করবে? একথাই কুরআনের উল্লেখিত তিনটি আয়াতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।
এ কুফর ও গোমরাহী কোথা হতে আসে এবং মানুষের মধ্যে এটা কিরূপে প্রবেশ করে, অতঃপর এ সম্পর্কেই আলোচনা করবো। আল কুরআনে এ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, মানুষের মধ্যে আল্লাহকে অমান্য করার ভাব তিনটি পথে প্রবেশ করে।
এজন্য প্রত্যেকটি কাজে এবং প্রত্যেকটি হুকুমের ব্যাপারেই কেবলমাত্র আল্লাহর খোজ নিতে হবে। নিজের মন ও বিবেক-বুদ্ধি কী বলে, বাপ-দাদারা কী বলে বা করে গেছেন, পরিবার, বংশ ও আত্মীয়গণের মত কী, জনাব মৌলভী সাহেব আর জনাব পীর সাহেব কেবলা কী বলছেন, অমুক সাহেবের হুকুম কী, কিংবা অমুক সাহেবের মত কী - এসব মাত্রই দেখা যাবে না এবং সেই দিকে মাত্রই ভক্ষেপ করা যাবে না।
আল্লাহর হুকুম ত্যাগ করে এদের কারোও হুকুম পালন করলে আল্লাহর সাথে শিরক করা হবে এবং যার হুকুম মান্য করা হবে তাকে আল্লাহর মতো সম্মান দান করা হবে। কারণ হুকুম দেয়ার ক্ষমতা তো কেবলমাত্র আল্লাহর : “আল্লাহর হুকুম ছাড়া মানুষ অন্য কারো হুকুম মানতে পারে না। মানুষের ইবাদত বন্দেগী তো কেবল তিনিই পেতে পারেন, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার অনুগ্রহে মানুষ বেঁচে আছে। আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিসই তাঁর হুকুম পালন করে চলছে। একটি পাথর অন্য পাথরের হুকুম মতো কাজ করে না, একটি গাছ আর একটি গাছের আনুগত্য করে না, কোনো পশু অন্য পশুর হুকুমদারী করে চলে না।
কিন্তু মানুষ কি পশু, গাছ ও পাথর অপেক্ষাও নিকৃষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা তো শুধু আল্লাহর আনুগত্য করবে, আর মানুষ আল্লাহকে ছেড়ে অন্য মানুষের নির্দেশ মতো চলতে শুরু করবে? একথাই কুরআনের উল্লেখিত তিনটি আয়াতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।
এ কুফর ও গোমরাহী কোথা হতে আসে এবং মানুষের মধ্যে এটা কিরূপে প্রবেশ করে, অতঃপর এ সম্পর্কেই আলোচনা করবো। আল কুরআনে এ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, মানুষের মধ্যে আল্লাহকে অমান্য করার ভাব তিনটি পথে প্রবেশ করে।
মানুষকে পথভ্রষ্ট করার প্রথম পথ হচ্ছে মানুষের নিজের নফসের ইচ্ছা। আল্লাহর দেয়া বিধান পরিত্যাগ করে যে ব্যক্তি নিজের নফসের ইচ্ছামত চলে। তার অপেক্ষা অধিক গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? এ ধরনের যালিম লোকদেরকে আল্লাহ কখনই সৎপথের সন্ধান দেন না।
এর অর্থ এই যে, মানুষকে গোমরাহ করার মতো যত জিনিস আছে তার মধ্যে মানুষের নফসই হচ্ছে তার সর্বপ্রধান পথভ্রষ্টকারী শক্তি। যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছার দাসত্ব করবে, আল্লাহর বান্দা হওয়া তার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। কারণ যে কাজে টাকা পাওয়া যাবে, যে কাজ করলে সুনাম ও সম্মান হবে, যে জিনিসে অধিক স্বাদ ও আনন্দ লাভ করা যাবে, আরাম ও সুখ যে কাজে অধিক মিলবে সে কেবল সেসব কাজের সন্ধান করবে এবং যেসব কাজে তা দেখতে পাবে, কেবল সে কাজই করতে সে প্রাণপণ চেষ্টা করবে। সেসব কাজ করতে যদি আল্লাহ নিষেধও করে থাকেন, তবুও সে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না। আর এসব জিনিস যেসব কাজে পাওয়া যাবে না সেসব কাজ করতে সে কখনও প্রস্তুত হবে না। আল্লাহ যদি সেই কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবুও সে তার কিছুমাত্র পরোয়া করবে না।
এমতাবস্থায় একথা পরিষ্কার করে বলা যেতে পারে যে, সে আল্লাহকে তার রব হিসেবে স্বীকার করেনি বরং তার নফসকেই সে তার একমাত্র রবের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। কাজেই এমন ব্যক্তি কোনো প্রকারে আল্লাহর হিদায়াত লাভ করতে পারে না। কুরআনে একথা অন্যত্র এভাবে বলা
أن أيت من احد إلهه هوا انك تكون علي وكيلا أم تحسب أ أره يشمعون أو يقولون إن هة إلا انعام بل هة أقل سبيلا
“(হে নবী!) যে ব্যক্তি নিজের নফসের ইচ্ছাকে নিজের আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে, তুমি কি তার সম্পর্কে ভেবে দেখেছ? তুমি কি এ ধরনের মানুষের পাহারাদারী করতে পার? তুমি কি মনে কর যে, এদের মধ্যে অনেক লোকই (তোমার দাওয়াত) শোনে এবং বুঝে? কখনও নয়। এরা তো একেবারে জন্তু জানোয়ারের মত বরং তা অপেক্ষাও এরা নিকৃষ্ট।” (সূরা ফুরকান ২৫ : ৪৩ , ৪৪)
যে ব্যক্তি নিজের নফসের দাস, সে যে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ থাকতে পারে না। কোনো পশুকে আমরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমালংঘন করতে দেখবো না। প্রত্যেক পশু সেই জিনিসই আহার করে যা আল্লাহ তার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য খায় যে পরিমাণ তার। জন্য নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। আর যে পশুর জন্য যত কাজ নির্দিষ্ট করা হয়েছে প্রত্যেক পশু সে কাজই করে যায়। কিন্তু এ মানুষ এমনই এক শ্রেণীর জীব যে, সে যখন নফসের দাস হয়ে যায়, তখন সে এমন সব কাজ করে যা দেখে শয়তানও ভয় পেয়ে যায়।
এর অর্থ এই যে, মানুষকে গোমরাহ করার মতো যত জিনিস আছে তার মধ্যে মানুষের নফসই হচ্ছে তার সর্বপ্রধান পথভ্রষ্টকারী শক্তি। যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছার দাসত্ব করবে, আল্লাহর বান্দা হওয়া তার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। কারণ যে কাজে টাকা পাওয়া যাবে, যে কাজ করলে সুনাম ও সম্মান হবে, যে জিনিসে অধিক স্বাদ ও আনন্দ লাভ করা যাবে, আরাম ও সুখ যে কাজে অধিক মিলবে সে কেবল সেসব কাজের সন্ধান করবে এবং যেসব কাজে তা দেখতে পাবে, কেবল সে কাজই করতে সে প্রাণপণ চেষ্টা করবে। সেসব কাজ করতে যদি আল্লাহ নিষেধও করে থাকেন, তবুও সে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না। আর এসব জিনিস যেসব কাজে পাওয়া যাবে না সেসব কাজ করতে সে কখনও প্রস্তুত হবে না। আল্লাহ যদি সেই কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবুও সে তার কিছুমাত্র পরোয়া করবে না।
এমতাবস্থায় একথা পরিষ্কার করে বলা যেতে পারে যে, সে আল্লাহকে তার রব হিসেবে স্বীকার করেনি বরং তার নফসকেই সে তার একমাত্র রবের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। কাজেই এমন ব্যক্তি কোনো প্রকারে আল্লাহর হিদায়াত লাভ করতে পারে না। কুরআনে একথা অন্যত্র এভাবে বলা
أن أيت من احد إلهه هوا انك تكون علي وكيلا أم تحسب أ أره يشمعون أو يقولون إن هة إلا انعام بل هة أقل سبيلا
“(হে নবী!) যে ব্যক্তি নিজের নফসের ইচ্ছাকে নিজের আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে, তুমি কি তার সম্পর্কে ভেবে দেখেছ? তুমি কি এ ধরনের মানুষের পাহারাদারী করতে পার? তুমি কি মনে কর যে, এদের মধ্যে অনেক লোকই (তোমার দাওয়াত) শোনে এবং বুঝে? কখনও নয়। এরা তো একেবারে জন্তু জানোয়ারের মত বরং তা অপেক্ষাও এরা নিকৃষ্ট।” (সূরা ফুরকান ২৫ : ৪৩ , ৪৪)
যে ব্যক্তি নিজের নফসের দাস, সে যে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ থাকতে পারে না। কোনো পশুকে আমরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমালংঘন করতে দেখবো না। প্রত্যেক পশু সেই জিনিসই আহার করে যা আল্লাহ তার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য খায় যে পরিমাণ তার। জন্য নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। আর যে পশুর জন্য যত কাজ নির্দিষ্ট করা হয়েছে প্রত্যেক পশু সে কাজই করে যায়। কিন্তু এ মানুষ এমনই এক শ্রেণীর জীব যে, সে যখন নফসের দাস হয়ে যায়, তখন সে এমন সব কাজ করে যা দেখে শয়তানও ভয় পেয়ে যায়।
মানুষের পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রথম কারণ গেল, এবার দ্বিতীয় কারণ। দ্বিতীয় পথ হচ্ছে এই যে, বাপ-দাদা হতে যে আকীদা-বিশ্বাস ও মত এবং যে চাল-চলন ও রীতিনীতি চলে এসেছে তার একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকার দরুন মানুষ তার গোলাম হয়ে যায়। আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষাও তাকে বেশী সম্মানের যোগ্য বলে মনে করে। সেই নিয়ম-কানুনের বিপরীত আল্লাহর কোনো কোনো হুকুম যদি তার সামনে পেশ করা হয়, তবে সে অমনি বলে ওঠে বাপ-দাদারা যা করে গেছে, আমার বংশের যে নিয়ম বহুদিন হতে চলে এসেছে, আমি কি তার বিপরীত কাজ করতে পারি? পূর্ব-পুরুষের ভুল নিয়মের ইবাদত করার রোগ যার। মধ্যে এতখানি, আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হওয়া তার পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। বাস্তব ক্ষেত্রে তার বাপ-দাদা এবং তার বংশের লোকেরাই তার রব হয়ে বসে। সে নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করলে তা যে মিথ্যা দাবী হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কুরআন মজীদে এ সম্পর্কে বড় কড়াকড়িভাবে সাবধান করে দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে :
وإذا قيل له اتبعوا ما أنزل الله قالوا بل نتبع ما ألفينا عليه آباءنا أولو كان آباؤهم لا يعقلون شيئا ولا يهتدون
“যখনই তাদেরকে বলা হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর হুকুম পালন করে চল, তখন তারা শুধু একথাই বলে উঠেছে যে, আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলেছে, আমরা কেবল সে পথেই চলবো। কিন্তু তাদের বাপ-দাদারা যদি কোনো কথা বুঝতে না পেরে থাকে এবং তারা যদি সৎপথে না চলে থাকে, তবুও কি তারা তাদের অনুসরণ করবে?”(সূরা বাকারা ২: ১৭০)
“যখনই তাদেরকে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ যে বিধান পাঠিয়েছেন তার দিকে আস এবং রসূলের দিকে আস, তখনই তারা বলেছে যে, আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলে গেছে, আমাদের পক্ষে তাই যথেষ্ট। কিন্তু তাদের বাপ-দাদারা যদি আসল কথা জানতে না পেরে থাকে এবং তারা যদি সঠিক পথে চলে থাকে। তবুও কি তারা (অন্ধভাবে) তাদেরই অনুসরণ করে চলবে? হে ঈমানদারগণ! তোমাদের চিন্তা করা উচিত। তোমরা যদি সঠিক পথে চলতে পার, অন্য লোকের গোমরাহীতে তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তোমাদের সকলকেই শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন আল্লাহ তোমাদের কাজের ভাল-মন্দ তোমাদেরকে দেখিয়ে দেবেন।” (সূরা আল মায়িদা ৫: ১০৪-১০৫)।
সাধারণভাবে প্রত্যেক যুগের অজ্ঞ লোকেরা এ ধরনের গোমরাহীতে ডুবে থাকে এবং আল্লাহর নবীর দাওয়াত কবুল করতে এ জিনিস তাদেরকে বাধা দেয়। মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন সেই যুগের লোকদেরকে আল্লাহর শরীয়াতের। প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন তখনও তারা একথাই বলেছেন :
“আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলেছে তুমি কি সেই পথ হতে আমাদেরকে ভুলিয়ে নিতে এসেছো?” (সূরা ইউনুস ১০: ৭৮)
আল কুরআনে বলা হয়েছে :
“এ রকম ঘটনা সবসময়ই ঘটে থাকে যে, যখনই কোনো দেশে আমি নবী পাঠিয়েছি, সেই দেশের অর্থশালী ও সচ্ছল অবস্থার লোকেরা তখনই একথা বলেছে যে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এক নিয়মে চলতে দেখেছি এবং আমরা ঠিক সেই নিয়মে চলছি। নবী তাদেরকে বললেন, তোমাদের বাপ দাদার নিয়ম-প্রথা অপেক্ষা অধিক ভাল কথা যদি আমি তোমাদেরকে বলি, তবুও কি তোমরা তাদের নিয়ম অনুসারে চলতে থাকবে? তারা উত্তরে বললো, আমরা তোমার কথা একেবারেই মানি না। তারা যখন এ জবাব দিল তখন আমিও তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করলাম। আর এখন তোমরা দেখে নাও যে, আমার বিধান অমান্যকারীদের পরিণাম কতখানি মারাত্মক হয়েছে।” (সূরা যুখরুফ ৪৩ : ২৩-২৫)
এসব কথা প্রকাশ করার পর আল্লাহ বলেন, তোমরা হয় বাপ-দাদারই নিয়ম প্রথার অনুসরণ কর, না হয় খাটিভাবে কেবল আমারই হুকুম মেনে চল; কিন্তু এ দু’টি জিনিস একত্রে ও একসাথে কখনও পালন করতে পারবে না। দু’টি পথের মধ্যে মাত্র একটি পথ ধরতে পারবে। মুসলিম হতে চাইলে সবকিছু পরিত্যাগ করে কেবল আমার হুকুম পালন করে চলতে থাক।
“তাদেরকে যখন বলা হলো যে, তোমরা আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসরণ কর; তখন তারা বলল যে, আমরা তো শুধু সেই পথেই অনুসরণ করে চলবো, যে পথে আমাদের বাপ-দাদাকে চলতে দেখেছি। কিন্তু শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের দিকে ডাকে, তবুও কি? যে ব্যক্তি নিজেকে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দিয়েছে এবং নেককার হয়েছে সে তো মযবুত রশি ধারণ করেছে। কারণ সকল কাজের শেষ আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অস্বীকার করবে-হে নবী, তার অস্বীকারের জন্য তোমার দুঃখিত হবার কোনো কারণ নেই। তারা কলেই আমার কাছে ফিরে আসবে। তখন আমি তাদের সকল কাজের পরিণাম ফল দেখিয়ে দেব।” (সূরা লুকমান ৩১ : ২১-২৩)
وإذا قيل له اتبعوا ما أنزل الله قالوا بل نتبع ما ألفينا عليه آباءنا أولو كان آباؤهم لا يعقلون شيئا ولا يهتدون
“যখনই তাদেরকে বলা হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর হুকুম পালন করে চল, তখন তারা শুধু একথাই বলে উঠেছে যে, আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলেছে, আমরা কেবল সে পথেই চলবো। কিন্তু তাদের বাপ-দাদারা যদি কোনো কথা বুঝতে না পেরে থাকে এবং তারা যদি সৎপথে না চলে থাকে, তবুও কি তারা তাদের অনুসরণ করবে?”(সূরা বাকারা ২: ১৭০)
“যখনই তাদেরকে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ যে বিধান পাঠিয়েছেন তার দিকে আস এবং রসূলের দিকে আস, তখনই তারা বলেছে যে, আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলে গেছে, আমাদের পক্ষে তাই যথেষ্ট। কিন্তু তাদের বাপ-দাদারা যদি আসল কথা জানতে না পেরে থাকে এবং তারা যদি সঠিক পথে চলে থাকে। তবুও কি তারা (অন্ধভাবে) তাদেরই অনুসরণ করে চলবে? হে ঈমানদারগণ! তোমাদের চিন্তা করা উচিত। তোমরা যদি সঠিক পথে চলতে পার, অন্য লোকের গোমরাহীতে তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তোমাদের সকলকেই শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন আল্লাহ তোমাদের কাজের ভাল-মন্দ তোমাদেরকে দেখিয়ে দেবেন।” (সূরা আল মায়িদা ৫: ১০৪-১০৫)।
সাধারণভাবে প্রত্যেক যুগের অজ্ঞ লোকেরা এ ধরনের গোমরাহীতে ডুবে থাকে এবং আল্লাহর নবীর দাওয়াত কবুল করতে এ জিনিস তাদেরকে বাধা দেয়। মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন সেই যুগের লোকদেরকে আল্লাহর শরীয়াতের। প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন তখনও তারা একথাই বলেছেন :
“আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলেছে তুমি কি সেই পথ হতে আমাদেরকে ভুলিয়ে নিতে এসেছো?” (সূরা ইউনুস ১০: ৭৮)
আল কুরআনে বলা হয়েছে :
“এ রকম ঘটনা সবসময়ই ঘটে থাকে যে, যখনই কোনো দেশে আমি নবী পাঠিয়েছি, সেই দেশের অর্থশালী ও সচ্ছল অবস্থার লোকেরা তখনই একথা বলেছে যে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এক নিয়মে চলতে দেখেছি এবং আমরা ঠিক সেই নিয়মে চলছি। নবী তাদেরকে বললেন, তোমাদের বাপ দাদার নিয়ম-প্রথা অপেক্ষা অধিক ভাল কথা যদি আমি তোমাদেরকে বলি, তবুও কি তোমরা তাদের নিয়ম অনুসারে চলতে থাকবে? তারা উত্তরে বললো, আমরা তোমার কথা একেবারেই মানি না। তারা যখন এ জবাব দিল তখন আমিও তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করলাম। আর এখন তোমরা দেখে নাও যে, আমার বিধান অমান্যকারীদের পরিণাম কতখানি মারাত্মক হয়েছে।” (সূরা যুখরুফ ৪৩ : ২৩-২৫)
এসব কথা প্রকাশ করার পর আল্লাহ বলেন, তোমরা হয় বাপ-দাদারই নিয়ম প্রথার অনুসরণ কর, না হয় খাটিভাবে কেবল আমারই হুকুম মেনে চল; কিন্তু এ দু’টি জিনিস একত্রে ও একসাথে কখনও পালন করতে পারবে না। দু’টি পথের মধ্যে মাত্র একটি পথ ধরতে পারবে। মুসলিম হতে চাইলে সবকিছু পরিত্যাগ করে কেবল আমার হুকুম পালন করে চলতে থাক।
“তাদেরকে যখন বলা হলো যে, তোমরা আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসরণ কর; তখন তারা বলল যে, আমরা তো শুধু সেই পথেই অনুসরণ করে চলবো, যে পথে আমাদের বাপ-দাদাকে চলতে দেখেছি। কিন্তু শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের দিকে ডাকে, তবুও কি? যে ব্যক্তি নিজেকে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দিয়েছে এবং নেককার হয়েছে সে তো মযবুত রশি ধারণ করেছে। কারণ সকল কাজের শেষ আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অস্বীকার করবে-হে নবী, তার অস্বীকারের জন্য তোমার দুঃখিত হবার কোনো কারণ নেই। তারা কলেই আমার কাছে ফিরে আসবে। তখন আমি তাদের সকল কাজের পরিণাম ফল দেখিয়ে দেব।” (সূরা লুকমান ৩১ : ২১-২৩)
মানুষকে গোমরাহ করার এটি গেল দ্বিতীয় কারণ।
এরপর তৃতীয় পথ সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছে যে, মানুষ যখন আল্লাহর হুকুম ছেড়ে দিয়ে মানুষের হুকুম পালন করতে শুরু করে এবং ধারণ করে যে, অমুক ব্যক্তি খুব বড়লোক তার কথা নিশ্চয়ই সত্য হবে, কিংবা অমুক ব্যক্তির হাতে আমার রিযক, কাজেই তার হুকুম অবশ্যই পালন করা উচিত অথবা অমুক ব্যক্তির শক্তি ও ক্ষমতা অনেক বেশী, এজন্য তার কথা অনুসরণ করা আবশ্যক; কিংবা অমুক ব্যক্তি বদ দু’আ করে আমাকে ধ্বংস করে দিবে অথবা অমুক ব্যক্তি আমাকে সাথে নিয়ে জান্নাতে যাবে, কাজেই সে যা বলে তা নির্ভুল মনে করা কর্তব্য অথবা অমুক জাতি আজকাল খুব উন্নতি করছে, কাজেই তাদের নিয়ম অনুসরণ করা উচিত, তখন সে কিছুতেই আল্লাহর হিদায়াত অনুযায়ী কাজ করতে পারে না।
মানুষ সোজা পথে ঠিক তখনই থাকতে পারে যখন তার প্রভু কেবলমাত্র একজনই হবে। যে ব্যক্তি শত শত এবং হাজার হাজার লোককে প্রভু' বলে স্বীকার করবে এবং যে ব্যক্তি কখনও এক আল্লাহর কথা মতো আবার কখনও অন্য কারো কথা মতো চলবে সে সোজা পথ কখনই পেতে পারে না।
উপরের আলোচনায় একথা আমরা ভাল করি জানতে পেরেছি যে, মানুষের গোমরাহ হবার তিনটি বড় বড় কারণ বর্তমান।
১. প্রথম- নফসের দাসত্ব।
২. দ্বিতীয় বাপ-দাদা, পরিবার ও বংশের রসম-রিওয়াজের দাসত্ব।
৩. তৃতীয়- সাধারণভাবে দুনিয়ার মানুষের দাসত্ব, ধনী, শাসনকর্তা, ভণ্ড নেতা, পীর, এবং দুনিয়ার পথভ্রষ্ট জাতিগুলোর দাসত্ব এর মধ্যে গণ্য।
এরপর তৃতীয় পথ সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছে যে, মানুষ যখন আল্লাহর হুকুম ছেড়ে দিয়ে মানুষের হুকুম পালন করতে শুরু করে এবং ধারণ করে যে, অমুক ব্যক্তি খুব বড়লোক তার কথা নিশ্চয়ই সত্য হবে, কিংবা অমুক ব্যক্তির হাতে আমার রিযক, কাজেই তার হুকুম অবশ্যই পালন করা উচিত অথবা অমুক ব্যক্তির শক্তি ও ক্ষমতা অনেক বেশী, এজন্য তার কথা অনুসরণ করা আবশ্যক; কিংবা অমুক ব্যক্তি বদ দু’আ করে আমাকে ধ্বংস করে দিবে অথবা অমুক ব্যক্তি আমাকে সাথে নিয়ে জান্নাতে যাবে, কাজেই সে যা বলে তা নির্ভুল মনে করা কর্তব্য অথবা অমুক জাতি আজকাল খুব উন্নতি করছে, কাজেই তাদের নিয়ম অনুসরণ করা উচিত, তখন সে কিছুতেই আল্লাহর হিদায়াত অনুযায়ী কাজ করতে পারে না।
মানুষ সোজা পথে ঠিক তখনই থাকতে পারে যখন তার প্রভু কেবলমাত্র একজনই হবে। যে ব্যক্তি শত শত এবং হাজার হাজার লোককে প্রভু' বলে স্বীকার করবে এবং যে ব্যক্তি কখনও এক আল্লাহর কথা মতো আবার কখনও অন্য কারো কথা মতো চলবে সে সোজা পথ কখনই পেতে পারে না।
উপরের আলোচনায় একথা আমরা ভাল করি জানতে পেরেছি যে, মানুষের গোমরাহ হবার তিনটি বড় বড় কারণ বর্তমান।
১. প্রথম- নফসের দাসত্ব।
২. দ্বিতীয় বাপ-দাদা, পরিবার ও বংশের রসম-রিওয়াজের দাসত্ব।
৩. তৃতীয়- সাধারণভাবে দুনিয়ার মানুষের দাসত্ব, ধনী, শাসনকর্তা, ভণ্ড নেতা, পীর, এবং দুনিয়ার পথভ্রষ্ট জাতিগুলোর দাসত্ব এর মধ্যে গণ্য।
এ তিনটি বড় বড় ‘দেবতা” মানুষের রব হবার দাবী করে বসে আছে। যে ব্যক্তি মুসলিম হতে চায় তাকে সর্বপ্রথম এ তিনটি “দেবতাকেই অস্বীকার করতে হবে এবং যখনই সে তা করবে তখনই সে প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এ তিন প্রকারের দেবতাকে, নিজের মনের মধ্যে বসিয়ে রাখবে এবং এদের হুকুম মতো কাজ করবে, আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হওয়া তার পক্ষে বড়ই কঠিন। সে দিনের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাত পড়ে, সারাদিন লোক দেখানো সিয়াম রেখে এবং মুসলিমের মতো বেশ ধারণ করে লোককে শুধু ধোঁকাই দিতে পারবে। সে নিজেকেও ধোঁকা দিতে পারবে যে, সে খাটি মুসলিম হয়েছে। কিন্তু এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, এরূপ কৌশল করে আল্লাহকে কখনও ধোঁকা দিতে পারবে না।
উপরে যে তিনটি ‘দেবতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এদের দাসত্ব করাই হচ্ছে আসল শিরক। পাথরের তৈরী দেবতা ভাংগা হয়েছে, ইট ও সিমেন্টের সমন্বয়ে গড়া মূর্তি ধবংস করা হয়েছে; কিন্তু আমাদের বুকের মধ্যে যে মূর্তির বর্তমান রয়েছে, সেই দিকে আমরা মোটেই খেয়াল করিনি। অথচ মুসলিম হওয়ার জন্য এ মূর্তিগুলোকে একেবারে চূর্ণ করে দেয়াই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা জরুরী কাজ ও সর্বপ্রথম শর্ত। যদিও দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমদের দিকে লক্ষ্য করা হয় যে, দুনিয়ার মুসলিম যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে, এ তিন প্রকারের দেবতার পূজা করাই হচ্ছে তার একমাত্র কারণ। আমাদের অধঃপতন আমাদের নানা প্রকারের অভাব-অভিযোগ ও বিপদের মূল হচ্ছে। উপরোক্ত তিনটি জিনিস।
উপরে যে তিনটি ‘দেবতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এদের দাসত্ব করাই হচ্ছে আসল শিরক। পাথরের তৈরী দেবতা ভাংগা হয়েছে, ইট ও সিমেন্টের সমন্বয়ে গড়া মূর্তি ধবংস করা হয়েছে; কিন্তু আমাদের বুকের মধ্যে যে মূর্তির বর্তমান রয়েছে, সেই দিকে আমরা মোটেই খেয়াল করিনি। অথচ মুসলিম হওয়ার জন্য এ মূর্তিগুলোকে একেবারে চূর্ণ করে দেয়াই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা জরুরী কাজ ও সর্বপ্রথম শর্ত। যদিও দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমদের দিকে লক্ষ্য করা হয় যে, দুনিয়ার মুসলিম যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে, এ তিন প্রকারের দেবতার পূজা করাই হচ্ছে তার একমাত্র কারণ। আমাদের অধঃপতন আমাদের নানা প্রকারের অভাব-অভিযোগ ও বিপদের মূল হচ্ছে। উপরোক্ত তিনটি জিনিস।
নফসের দাসত্ব, বংশগত প্রথার দাসত্ব এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য মানুষের দাসত্ব আমাদের মধ্যে এখনও খুব বেশী পরিমাণেই আছে। আর এটাই ভিতর থেকে আমাদের শক্তি এবং দ্বীন ও ঈমানকে একেবারে নষ্ট করে দিচ্ছে। আমাদের মধ্যে ছোট লোক বড় লোকের পার্থক্য আছে। আর এরূপে আমাদের সমাজের লোকদেরকে নানা শ্রেণীতে ভাগ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু ইসলাম এ সমস্ত শ্রেণী ও সম্প্রদায়কে এক জাতি ও পরস্পরের ভাই করে একটি মযবুত দেয়ালের মত করতে চেয়েছিল। সেই দেয়ালের প্রত্যেকখানা ইট অন্য ইটের সাথে ম্যবুত হয়ে গেঁথে থাকবে, এটাই ছিল আল্লাহর ইচ্ছা।
অথচ আমরা এখনও সেই পুরাতন হিন্দুয়ানী জাতিভেদের ধারণা নিয়ে রয়েছি। হিন্দুদের এক গোত্র যেমন অন্য গোত্র হতে পৃথক থাকে আর এক জাতি অন্য জাতিকে ঘৃণা করে আমরাও ঠিক তাই করছি। বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে আমরা পরস্পর কোনো কাজ করতে পারি না। সকল মুসলিমকে আমরা সমানভাবে ভাই বলে গ্রহণ করতে পারি না। মুখে মুখে ভাই বলে থাকি, কিন্তু কাজের বেলায় আমাদের মধ্যে ঠিক সেরূপ পার্থক্য থেকে যায় যেমন ছিল আরব দেশে ইসলামের পূর্বে। এসব কারণে আমরা পরস্পর মিলে একটা মযবুত দেয়াল হতে পারছি না। ভাংগা দেয়ালের নানা দিকে ছড়ানো ইটের মতো আমরা এক একজন মানুষ পৃথক হয়ে পড়ে রয়েছি। এ জন্যই না আমরা এক ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত হতে পারছি, না কোনো বিপদ-আপদের মুকাবিলা করতে পারছি।
ইসলামের সুস্পষ্ট শিক্ষা অনুযায়ী আমাদেরকে যদি বলা যায় যে, এ সমস্ত ভেদাভেদ ও পার্থক্য চূর্ণ করে দিয়ে ও পরস্পর মিলেমিশে এক হয়ে যাও তাহলে আমরা তখন ঐ এক কথাই বলবো যে, আমাদের বাপ-দাদার কাল হতে যে প্রথা চলে এসেছে তা আমরা ভেংগে দিতে পারি না। কিন্তু আল্লাহ এর উত্তরে কী বলবেন তা কি আমরা জানি?
আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ করেছেন, তোমাদের ছেলেমেয়েরা সকলেই তোমাদের সম্পত্তির অংশ পাবে। কিন্তু আমরা বাস্তবে কী করছি? আমরা বলছি যে, আমাদের বাপ-দাদার আইনে মেয়েরা সম্পত্তির অংশ পেতে পারে না পেতে পারে একমাত্র ছেলেরাই। কাজেই আমরা বাপ-দাদার আইন মানি আল্লাহর আইন মানতে পারি না। একটু চিন্তা করে দেখি, এর নাম কি ইসলাম? আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, বংশগত ও দেশ প্রচলিত আইন পরিত্যাগ কর, উত্তরে আমরা প্রত্যেকেই বলে ওঠবো-সকলে যখন ত্যাগ করবে তখন আমিও করবো।
কেননা অন্য লোক যদি তাদের মেয়েকে সম্পত্তির অংশ না দেয়, তাহলে আমার সম্পত্তি তো অন্যের ঘরে চলে যাবে, কিন্তু অন্যের ঘর হতে আমার ঘরে কিছুই আসবে না। ভেবে দেখি এ উত্তরের অর্থ কী? অপরে যদি আল্লাহর আইন মানে তবে আমি মানবে, এরূপ শর্ত করে কি আমি আল্লাহর আইনের প্রতি ঈমান। এনেছি? তাহলে কাল আমি এটাও বলতে পারি যে, অপরে ব্যভিচার করলে আমিও ব্যভিচার করবো, অপরে চুরি করলে আমিও চুরি করবো।
মোটকথা অপরে যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত গোনাহ না ছাড়বে আমিও ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত গোনাহ করতে থাকবো। আসল কথা এই যে, এ ব্যাপারে আমাদের দ্বারা উল্লেখিত তিনটি দেবতারই পূজা করানো হচ্ছে। নফসের বন্দেগী করছি, বাপ দাদার প্রথারও বন্দেগী করছি, আর দুনিয়ার মুশরিক জাতিগুলোর দাসতুও আমরা করছি। অথচ এ তিনটি দেবতার পূজার সাথে সাথে ইসলামের দাবীও আমরা করছি।
এখানে মাত্র দু’টি উদাহরণ উল্লেখ করা হলো। নতুবা একটু চোখ খুলে তাকালে এত প্রকারের বড় বড় রোগ আমাদের মধ্যে দেখা যাবে যে, তা গুণেও শেষ করা যাবে না এবং লক্ষ্য করলে দেখবো যে, কোথাও একটি দেবতার পূজা চলছে, কোথাও দু'টি দেবতার পূজা চলছে। অপর কোথাও তিনটি দেবতারই পূজা চলছে। তিনটি দেবতার পূজা করার সাথে সাথে ইসলামেরও দাবী করা একটা হাস্যকর ব্যাপার এবং এমতাবস্থায় আল্লাহ খাটি মুসলিমদের উপর যে অফুরন্ত রহমত নাযিল করার ওয়াদা করেছেন, ঠিক তাই আমাদের উপর নাযিল হবে এরূপ আশা করাও কম হাস্যকর ব্যাপার নয়।
অথচ আমরা এখনও সেই পুরাতন হিন্দুয়ানী জাতিভেদের ধারণা নিয়ে রয়েছি। হিন্দুদের এক গোত্র যেমন অন্য গোত্র হতে পৃথক থাকে আর এক জাতি অন্য জাতিকে ঘৃণা করে আমরাও ঠিক তাই করছি। বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে আমরা পরস্পর কোনো কাজ করতে পারি না। সকল মুসলিমকে আমরা সমানভাবে ভাই বলে গ্রহণ করতে পারি না। মুখে মুখে ভাই বলে থাকি, কিন্তু কাজের বেলায় আমাদের মধ্যে ঠিক সেরূপ পার্থক্য থেকে যায় যেমন ছিল আরব দেশে ইসলামের পূর্বে। এসব কারণে আমরা পরস্পর মিলে একটা মযবুত দেয়াল হতে পারছি না। ভাংগা দেয়ালের নানা দিকে ছড়ানো ইটের মতো আমরা এক একজন মানুষ পৃথক হয়ে পড়ে রয়েছি। এ জন্যই না আমরা এক ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত হতে পারছি, না কোনো বিপদ-আপদের মুকাবিলা করতে পারছি।
ইসলামের সুস্পষ্ট শিক্ষা অনুযায়ী আমাদেরকে যদি বলা যায় যে, এ সমস্ত ভেদাভেদ ও পার্থক্য চূর্ণ করে দিয়ে ও পরস্পর মিলেমিশে এক হয়ে যাও তাহলে আমরা তখন ঐ এক কথাই বলবো যে, আমাদের বাপ-দাদার কাল হতে যে প্রথা চলে এসেছে তা আমরা ভেংগে দিতে পারি না। কিন্তু আল্লাহ এর উত্তরে কী বলবেন তা কি আমরা জানি?
আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ করেছেন, তোমাদের ছেলেমেয়েরা সকলেই তোমাদের সম্পত্তির অংশ পাবে। কিন্তু আমরা বাস্তবে কী করছি? আমরা বলছি যে, আমাদের বাপ-দাদার আইনে মেয়েরা সম্পত্তির অংশ পেতে পারে না পেতে পারে একমাত্র ছেলেরাই। কাজেই আমরা বাপ-দাদার আইন মানি আল্লাহর আইন মানতে পারি না। একটু চিন্তা করে দেখি, এর নাম কি ইসলাম? আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, বংশগত ও দেশ প্রচলিত আইন পরিত্যাগ কর, উত্তরে আমরা প্রত্যেকেই বলে ওঠবো-সকলে যখন ত্যাগ করবে তখন আমিও করবো।
কেননা অন্য লোক যদি তাদের মেয়েকে সম্পত্তির অংশ না দেয়, তাহলে আমার সম্পত্তি তো অন্যের ঘরে চলে যাবে, কিন্তু অন্যের ঘর হতে আমার ঘরে কিছুই আসবে না। ভেবে দেখি এ উত্তরের অর্থ কী? অপরে যদি আল্লাহর আইন মানে তবে আমি মানবে, এরূপ শর্ত করে কি আমি আল্লাহর আইনের প্রতি ঈমান। এনেছি? তাহলে কাল আমি এটাও বলতে পারি যে, অপরে ব্যভিচার করলে আমিও ব্যভিচার করবো, অপরে চুরি করলে আমিও চুরি করবো।
মোটকথা অপরে যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত গোনাহ না ছাড়বে আমিও ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত গোনাহ করতে থাকবো। আসল কথা এই যে, এ ব্যাপারে আমাদের দ্বারা উল্লেখিত তিনটি দেবতারই পূজা করানো হচ্ছে। নফসের বন্দেগী করছি, বাপ দাদার প্রথারও বন্দেগী করছি, আর দুনিয়ার মুশরিক জাতিগুলোর দাসতুও আমরা করছি। অথচ এ তিনটি দেবতার পূজার সাথে সাথে ইসলামের দাবীও আমরা করছি।
এখানে মাত্র দু’টি উদাহরণ উল্লেখ করা হলো। নতুবা একটু চোখ খুলে তাকালে এত প্রকারের বড় বড় রোগ আমাদের মধ্যে দেখা যাবে যে, তা গুণেও শেষ করা যাবে না এবং লক্ষ্য করলে দেখবো যে, কোথাও একটি দেবতার পূজা চলছে, কোথাও দু'টি দেবতার পূজা চলছে। অপর কোথাও তিনটি দেবতারই পূজা চলছে। তিনটি দেবতার পূজা করার সাথে সাথে ইসলামেরও দাবী করা একটা হাস্যকর ব্যাপার এবং এমতাবস্থায় আল্লাহ খাটি মুসলিমদের উপর যে অফুরন্ত রহমত নাযিল করার ওয়াদা করেছেন, ঠিক তাই আমাদের উপর নাযিল হবে এরূপ আশা করাও কম হাস্যকর ব্যাপার নয়।
কুরআনে আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন : “আমি হক ও বাতিলের (সত্য ও মিথ্যার) মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী আয়াতসমূহ নাযিল করে দিয়েছি। আল্লাহ যাকে চান এ আয়াতের সাহায্যে তাকে সোজা পথ দেখিয়ে দেন। লোকেরা বলে আমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা (তাঁদের) আনুগত্য স্বীকার করছি; কিন্তু পরে তাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক আনুগত্য স্বীকার করেছে, কিন্তু পরে তাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক আনুগত্য করা ছেড়ে দেয়। এ শ্রেণীর লোকেরা ঈমানদার নয়। তাদের কাজকর্মের ব্যাপারে আল্লাহর আইন অনুসারে ফায়সালা করার জন্য-কর্মের ব্যাপারে আল্লাহর আইন অনুসারে ফায়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে ডাকা হয় তখন কিছু লোক অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। কিন্তু আল্লাহর আইনের ফায়সালা যদি তাদের মনের মত হয় তবে অবশ্য তা স্বীকার করে নেয়। তাদের মনের মধ্যে কি রোগ আছে? না তারা শুধু অকারণ সন্দেহের মধ্যে ডুবে রয়েছে? অথবা তাদের এ ভয় আছে যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসূল তাদের হক নষ্ট করবে? কারণ যাই হোক, তারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করছে। প্রত্যেক ঈমানদার লোকের নিয়ম এই যে, আল্লাহর আইন অনুসারে বিচার করার জন্য যখন তাদেরকে ডাকা হয় তখন তারা আমরা শুনেছি এবং তা অনুসরণ করি’ বলে মাথা নত করে দেয়। বাস্তবিক পক্ষে এ শ্রেণীর লোকেরাই মুক্তি ও উন্নতি লাভ করতে পারে। আর যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম পালন করবে, আল্লাহকে ভয় করবে এবং তাঁর নাফরমানী হতে ফিরে থাকবে কেবল তারাই সফলকাম হবে এবং মুক্তি পাবে।” (সূরা আন নূর ২৪ : ৪৬-৫২)
এ আয়াতসমূহে ঈমানের যে পরিচয় দেয়া হয়েছে আমরা তা একটু বিশেষভাবে বুঝতে চেষ্টা করি। বস্তুত নিজেকে আল্লাহর কিতাব ও রসূলের হিদায়াতের সামনে সোপর্দ করে দেয়ার নামই হচ্ছে ঈমান। সেখান হতে যে হুকুম আসে তার সামনে মাথা নত করে দাও। এর বিরোধী কোনো কথা শুনবে না, না নিজের মনের কথা, না বংশ ও পরিবারের কথা আর না দুনিয়ার লোকদের কথা। যে ব্যক্তির মনের মধ্যে এ গুণ বর্তমান থাকবে প্রকৃতপক্ষে সেই হবে। মুমিন ও মুসলিম। আর যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না তাকে মুনাফিক ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
এ আয়াতসমূহে ঈমানের যে পরিচয় দেয়া হয়েছে আমরা তা একটু বিশেষভাবে বুঝতে চেষ্টা করি। বস্তুত নিজেকে আল্লাহর কিতাব ও রসূলের হিদায়াতের সামনে সোপর্দ করে দেয়ার নামই হচ্ছে ঈমান। সেখান হতে যে হুকুম আসে তার সামনে মাথা নত করে দাও। এর বিরোধী কোনো কথা শুনবে না, না নিজের মনের কথা, না বংশ ও পরিবারের কথা আর না দুনিয়ার লোকদের কথা। যে ব্যক্তির মনের মধ্যে এ গুণ বর্তমান থাকবে প্রকৃতপক্ষে সেই হবে। মুমিন ও মুসলিম। আর যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না তাকে মুনাফিক ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
আমরা শুনেছি যে, আরব দেশে মদ পান করার প্রথা খুব বেশী প্রচলিত ছিল। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই মদের জন্য একেবারে পাগল প্রায় ছিল। আসলে মদের প্রতি তাদের অন্তরে গভীর আকর্ষণ বিদ্যমান ছিল। এর প্রশংসা করে কত যে গযল-গান তারা রচনা করেছিল, তার হিসাব নেই। মদের জন্য প্রাণ দিতেও তারা প্রস্তুত হতো। একথাও আমরা জানি যে, একবার মদের নেশা লাগলে তা দূর হওয়া বড়ই মুশকিল। মদখোর ব্যক্তিরা মদের জন্য প্রাণ দিতে পারে, কিন্তু মত ত্যাগ করতে পারে না। কোনো মদখোর যদি মদ না পায় তবে তার অবস্থা কঠিন রোগীর অপেক্ষাও খারাপ হয়ে যায়।
কিন্তু যখন মদ নিষিদ্ধ হওয়ার আয়াত নাযিল হয়েছিল তখন কি অবস্থা হয়েছিল তা কি আমরা কখনও শুনেছি? মদের জন্য পাগল জান দিতে প্রস্তুত সেই আরবরাই এ হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে নিজেদের হাতেই মদের বড় বড় পাত্র ভেংগে ফেলেছিল। মদীনার অলিতে গলিতে বৃষ্টির পানির মত মদ বয়ে গিয়েছিল। একটি মজলিসে কয়েকজন লোক একত্রে বসে মদ পান করছিল। ঘোষণাকারী যখন তাদের কাছাকাছি গিয়ে বললো যে, মদ নিষিদ্ধ হয়েছে, তখন যার হাত যেখানে ছিল তা সেখানেই থেমে গেল আর একটুও কেউ অগ্রসর হলো না। যার হাতের পেয়ালা মুখের সাথে লেগেছিল, সে তখনই তা সরিয়ে নিলো। তারপর আর এক বিন্দু মদ তার উদরে প্রবেশ করতে পারেনি। এটাই হচ্ছে সত্যিকার ঈমানের পরিচয়। আর এটাকেই বলা হয় আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য।
ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি কত কঠিন তা তো আমাদের অজানা নয়। তা হচ্ছে পিঠে একশত চাবুক। বস্তুত এর কল্পনা করলেও মানুষের শরীর শিউরে ওঠে। আর ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তো তাকে একেবারে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। এ কঠিন শাস্তির নাম শুনলেই মানুষ ভয়ে কেঁপে ওঠে। কিন্তু যেসব লোকের খাঁটি ঈমান ছিল, অথচ ভুলবশত তাদের দ্বারা কোনো ব্যভিচারের কাজ হয়ে গিয়েছিল, তাদের অবস্থা কিরূপ ছিল, তা কি আমরা জানি? একজন লোক শয়তানের প্রতারণায় পড়ে ব্যভিচার করে বসলো। তার সাক্ষী কেউ ছিল না, আদালতে ধরে নিয়ে যাবারও কেউ ছিল না, পুলিশকে খবর দেয়ার মতো লোকও কেউ ছিল না। কিন্তু তার মনের মধ্যে ছিল খাঁটি ঈমান। আর সেই ঈমান তাকে বললো-আল্লাহর আইনকে ভয় না করে যখন তুমি নফসের ইচ্ছা পূর্ণ করেছ তখন তাঁর নির্দিষ্ট আইন মতে শাস্তি নিবার জন্য প্রস্তুত হও।
কাজেই সে নিজেই মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর সামনে এসে হাযির হলো এবং নিবেদন করলো : “হে আল্লাহর রসূল! আমি ব্যভিচার করেছি, আমাকে এর শাস্তি দিন। মুহাম্মদ, তখন অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সেই ব্যক্তি আবার সেই দিকে গিয়ে শাস্তি দেয়ার জন্য অনুরোধ করলো এবং বললো, আমি যে পাপ করেছি আমাকে তার উপযুক্ত শাস্তি দিন। এটাকেই বলে ঈমান। এ ঈমান যার মধ্যে বর্তমান থাকবে, খোলা পিঠে একশত চাবুকের ঘা নেয়া এমন কি পাথরের আঘাত খেয়ে মরে যাওয়াও তার পক্ষে সহজ; কিন্তু আল্লাহর নাফরমানী করে আল্লাহর সামনে হাযির হওয়া তার পক্ষে বড়ই কঠিন ব্যাপার।
আমরা এটাও জানি যে, দুনিয়ার মানুষের কাছে তার আত্মীয়-স্বজনই অতিশয় প্রিয়পাত্র হয়ে থাকে। বিশেষ করে পিতা-পুত্র-ভাই মানুষের এত প্রিয় যে, তাদের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতেও মানুষ প্রস্তুত হয়। কিন্তু একবার বদর ও ওহুদের যুদ্ধের কথা চিন্তা করে দেখি যে, তাতে কে কার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। পিতা মুসলিমদের দলে, ছেলে কাফিরদের দলে, ছেলে একদিকে, পিতা অন্যদিকে, এক ভাই ইসলামের পক্ষে অন্য ভাই শত্রর পক্ষে যুদ্ধ করেছে। আর এমনভাবে যুদ্ধ করেছে, যেন তারা কেউ কাউকে চিনেই না। কোনো টাকা পয়সা কিংবা জায়গা জমি অথবা কোনো ব্যক্তিগত শত্রতার জন্য তারা যুদ্ধ করেনি। তারা নিজেদের রক্ত দান করে আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে শুধু আল্লাহ ও রসূলের খাতিরেই যুদ্ধ করেছে। আর আল্লাহ ও রসূলের জন্য বাপ-ভাই-ছেলে। এবং বংশের সকলকেই অকাতরে কুরবানী করার মতো প্রচণ্ড মনোবল তাদের মধ্যে বর্তমান ছিল।
আমাদের একথাও জানা আছে যে, ইসলাম আরব দেশের প্রায় প্রাচীন রীতি নীতি একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিল। তখনকার যুগে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান ছিল মূর্তি পূজা। এ প্রথা শত শত বছর ধরে চলে আসছিল। কিন্তু ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করলো, এ মূর্তিগুলো পরিত্যাগ কর। মদ পান, ব্যভিচার, জুয়া, চুরি, ডাকাতি আরব দেশের নিত্যকার ঘটনা ছিল। ইসলাম বললো, এসব ছাড়তে হবে। আরব দেশের নারীরা একেবারে খোলাখুলিভাবে চলাফেরা করতো। ইসলাম আদেশ করলো, এরূপ চলতে পারবে না পর্দার ব্যবস্থা কর। মেয়েদেরকে সেখানে সম্পত্তির অংশ দেয়া হতো না। ইসলাম ঘোষণা করলো, পুরুষদের মতো মেয়েরাও সম্পত্তির অংশ পাবে। পালিত পুত্রকে সেখানে ঠিক আপন ঔরষজাত পুত্রের মতো মনে করা হতো। ইসলাম বললো, এটা হতে পারে না। পরের ছেলে পালন করলেই একেবারে নিজের ঔরষজাত সন্তানের মতো হয়ে যায় না। এমনকি পালিত পুত্র তার স্ত্রীকে তালাক দিলে তাকে বিয়েও করা যেতে পারে। মোটকথা, এ সমস্ত পুরাতন নিয়মকে সেখানে একটি একটি করে চুরমার করে দেয়া হয়েছিল।
যারা আল্লাহ ও রসূল (ﷺ) -এর প্রতি ঈমান এনেছিল, তখন তারা কিভাবে কাজ করেছিল তা কি আমরা জানি? শত শত বছর ধরে যেসব মূর্তিকে তারা এবং তাদের বাপ-দাদার পূজা করেছে, যেসবের সামনে নানা প্রকারের ভেট ও ভোগ হাযির করেছে এবং যেগুলোর সামনে মাথা ঠেকিয়ে সিজদা করেছে, ঈমানদার। ব্যক্তিগণ তা নিজেদেরই হাতে এক একটা করে চূর্ণ করে ফেলেছে। শত শত বছর ধরে যেসব বংশীয় রীতিনীতি ও রসম-রেওয়ায চলে আসছিল তা সবই তারা পরিত্যাগ করেছিল; যেসব জিনিসকে তারা মহান ও পবিত্র বলে ধারণা করতো, আল্লাহর হুকুম পেয়েই তারা তাকে পায়ের তলে দলিত করলো। যেসব জিনিস তারা ঘৃণা করতো আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তাকে ভাল মনে করে গ্রহণ করতে লাগলো।
চিরকাল যেসব জিনিসকে পাক ও পবিত্র মনে করা হতো, আল্লাহর বিধান মতো সেই সবকে অপবিত্র মনে করতে শুরু করলো। যেসব জিনিস তারা ঘৃণা করতো আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তাকে ভাল মনে করে গ্রহণ করতে লাগলো। চিরকাল যেসব জিনিসকে পাক ও পবিত্র মনে করা হতো, আল্লাহর বিধান মতো সেই সবকে অপবিত্র মনে করতে শুরু করলো। আর যেসব জিনিসকে অপবিত্র মনে করতো, সহসা তা পবিত্র হয়ে গেল। যেসব কাফিরী চালচলনে তারা আরাম ও সুখ মনে করতো, আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তা সবই ছেড়ে দিয়েছিল এবং ইসলামের যেসব হুকুম পালন করা মানুষের পক্ষে কষ্টকর বলে মনে হতো তারা সে সবকে সানন্দে কবুল করে নিলো। এরই নাম ঈমান এবং একেই বলা হয় ইসলাম।
কিন্তু ভেবে দেখি, আরব দেশের লোকেরা যদি তখন তাদের বাপ-দাদাদের মতো বলতো, অমুক কাজ আমরা মানব না, কারণ এতে আমাদের ক্ষতি হবে অমুক কাজ আমরা নিশ্চয় করবো কারণ বাপ-দাদার কাল হতেই এটা চলে এসেছে এবং রোম দেশের লোকদের কিংবা ইরান দেশের লোকদের অমুক কাজ আমাদের খুব ভালো লাগে বলে তা আমরা ছাড়তে পারবো না। এরূপে ইসলামের এক একটা হুকুম বাতিল করে দিতো তাহলে দুনিয়ায় এখন একজন মুসলিমও থাকতো কি? আল কুরআনে বলা হয়েছে :
لن تنالوا الي حتى تفقوا مما تحبون
“তোমাদের প্রিয় জিনিসগুলোকে যদি তোমরা আল্লাহর জন্য কুরবানী না কর তাহলে তোমরা প্রকৃত কল্যাণ কিছুতেই লাভ করতে পারবে না।” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৯২)
কিন্তু যখন মদ নিষিদ্ধ হওয়ার আয়াত নাযিল হয়েছিল তখন কি অবস্থা হয়েছিল তা কি আমরা কখনও শুনেছি? মদের জন্য পাগল জান দিতে প্রস্তুত সেই আরবরাই এ হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে নিজেদের হাতেই মদের বড় বড় পাত্র ভেংগে ফেলেছিল। মদীনার অলিতে গলিতে বৃষ্টির পানির মত মদ বয়ে গিয়েছিল। একটি মজলিসে কয়েকজন লোক একত্রে বসে মদ পান করছিল। ঘোষণাকারী যখন তাদের কাছাকাছি গিয়ে বললো যে, মদ নিষিদ্ধ হয়েছে, তখন যার হাত যেখানে ছিল তা সেখানেই থেমে গেল আর একটুও কেউ অগ্রসর হলো না। যার হাতের পেয়ালা মুখের সাথে লেগেছিল, সে তখনই তা সরিয়ে নিলো। তারপর আর এক বিন্দু মদ তার উদরে প্রবেশ করতে পারেনি। এটাই হচ্ছে সত্যিকার ঈমানের পরিচয়। আর এটাকেই বলা হয় আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য।
ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি কত কঠিন তা তো আমাদের অজানা নয়। তা হচ্ছে পিঠে একশত চাবুক। বস্তুত এর কল্পনা করলেও মানুষের শরীর শিউরে ওঠে। আর ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তো তাকে একেবারে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। এ কঠিন শাস্তির নাম শুনলেই মানুষ ভয়ে কেঁপে ওঠে। কিন্তু যেসব লোকের খাঁটি ঈমান ছিল, অথচ ভুলবশত তাদের দ্বারা কোনো ব্যভিচারের কাজ হয়ে গিয়েছিল, তাদের অবস্থা কিরূপ ছিল, তা কি আমরা জানি? একজন লোক শয়তানের প্রতারণায় পড়ে ব্যভিচার করে বসলো। তার সাক্ষী কেউ ছিল না, আদালতে ধরে নিয়ে যাবারও কেউ ছিল না, পুলিশকে খবর দেয়ার মতো লোকও কেউ ছিল না। কিন্তু তার মনের মধ্যে ছিল খাঁটি ঈমান। আর সেই ঈমান তাকে বললো-আল্লাহর আইনকে ভয় না করে যখন তুমি নফসের ইচ্ছা পূর্ণ করেছ তখন তাঁর নির্দিষ্ট আইন মতে শাস্তি নিবার জন্য প্রস্তুত হও।
কাজেই সে নিজেই মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর সামনে এসে হাযির হলো এবং নিবেদন করলো : “হে আল্লাহর রসূল! আমি ব্যভিচার করেছি, আমাকে এর শাস্তি দিন। মুহাম্মদ, তখন অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সেই ব্যক্তি আবার সেই দিকে গিয়ে শাস্তি দেয়ার জন্য অনুরোধ করলো এবং বললো, আমি যে পাপ করেছি আমাকে তার উপযুক্ত শাস্তি দিন। এটাকেই বলে ঈমান। এ ঈমান যার মধ্যে বর্তমান থাকবে, খোলা পিঠে একশত চাবুকের ঘা নেয়া এমন কি পাথরের আঘাত খেয়ে মরে যাওয়াও তার পক্ষে সহজ; কিন্তু আল্লাহর নাফরমানী করে আল্লাহর সামনে হাযির হওয়া তার পক্ষে বড়ই কঠিন ব্যাপার।
আমরা এটাও জানি যে, দুনিয়ার মানুষের কাছে তার আত্মীয়-স্বজনই অতিশয় প্রিয়পাত্র হয়ে থাকে। বিশেষ করে পিতা-পুত্র-ভাই মানুষের এত প্রিয় যে, তাদের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতেও মানুষ প্রস্তুত হয়। কিন্তু একবার বদর ও ওহুদের যুদ্ধের কথা চিন্তা করে দেখি যে, তাতে কে কার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। পিতা মুসলিমদের দলে, ছেলে কাফিরদের দলে, ছেলে একদিকে, পিতা অন্যদিকে, এক ভাই ইসলামের পক্ষে অন্য ভাই শত্রর পক্ষে যুদ্ধ করেছে। আর এমনভাবে যুদ্ধ করেছে, যেন তারা কেউ কাউকে চিনেই না। কোনো টাকা পয়সা কিংবা জায়গা জমি অথবা কোনো ব্যক্তিগত শত্রতার জন্য তারা যুদ্ধ করেনি। তারা নিজেদের রক্ত দান করে আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে শুধু আল্লাহ ও রসূলের খাতিরেই যুদ্ধ করেছে। আর আল্লাহ ও রসূলের জন্য বাপ-ভাই-ছেলে। এবং বংশের সকলকেই অকাতরে কুরবানী করার মতো প্রচণ্ড মনোবল তাদের মধ্যে বর্তমান ছিল।
আমাদের একথাও জানা আছে যে, ইসলাম আরব দেশের প্রায় প্রাচীন রীতি নীতি একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিল। তখনকার যুগে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান ছিল মূর্তি পূজা। এ প্রথা শত শত বছর ধরে চলে আসছিল। কিন্তু ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করলো, এ মূর্তিগুলো পরিত্যাগ কর। মদ পান, ব্যভিচার, জুয়া, চুরি, ডাকাতি আরব দেশের নিত্যকার ঘটনা ছিল। ইসলাম বললো, এসব ছাড়তে হবে। আরব দেশের নারীরা একেবারে খোলাখুলিভাবে চলাফেরা করতো। ইসলাম আদেশ করলো, এরূপ চলতে পারবে না পর্দার ব্যবস্থা কর। মেয়েদেরকে সেখানে সম্পত্তির অংশ দেয়া হতো না। ইসলাম ঘোষণা করলো, পুরুষদের মতো মেয়েরাও সম্পত্তির অংশ পাবে। পালিত পুত্রকে সেখানে ঠিক আপন ঔরষজাত পুত্রের মতো মনে করা হতো। ইসলাম বললো, এটা হতে পারে না। পরের ছেলে পালন করলেই একেবারে নিজের ঔরষজাত সন্তানের মতো হয়ে যায় না। এমনকি পালিত পুত্র তার স্ত্রীকে তালাক দিলে তাকে বিয়েও করা যেতে পারে। মোটকথা, এ সমস্ত পুরাতন নিয়মকে সেখানে একটি একটি করে চুরমার করে দেয়া হয়েছিল।
যারা আল্লাহ ও রসূল (ﷺ) -এর প্রতি ঈমান এনেছিল, তখন তারা কিভাবে কাজ করেছিল তা কি আমরা জানি? শত শত বছর ধরে যেসব মূর্তিকে তারা এবং তাদের বাপ-দাদার পূজা করেছে, যেসবের সামনে নানা প্রকারের ভেট ও ভোগ হাযির করেছে এবং যেগুলোর সামনে মাথা ঠেকিয়ে সিজদা করেছে, ঈমানদার। ব্যক্তিগণ তা নিজেদেরই হাতে এক একটা করে চূর্ণ করে ফেলেছে। শত শত বছর ধরে যেসব বংশীয় রীতিনীতি ও রসম-রেওয়ায চলে আসছিল তা সবই তারা পরিত্যাগ করেছিল; যেসব জিনিসকে তারা মহান ও পবিত্র বলে ধারণা করতো, আল্লাহর হুকুম পেয়েই তারা তাকে পায়ের তলে দলিত করলো। যেসব জিনিস তারা ঘৃণা করতো আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তাকে ভাল মনে করে গ্রহণ করতে লাগলো।
চিরকাল যেসব জিনিসকে পাক ও পবিত্র মনে করা হতো, আল্লাহর বিধান মতো সেই সবকে অপবিত্র মনে করতে শুরু করলো। যেসব জিনিস তারা ঘৃণা করতো আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তাকে ভাল মনে করে গ্রহণ করতে লাগলো। চিরকাল যেসব জিনিসকে পাক ও পবিত্র মনে করা হতো, আল্লাহর বিধান মতো সেই সবকে অপবিত্র মনে করতে শুরু করলো। আর যেসব জিনিসকে অপবিত্র মনে করতো, সহসা তা পবিত্র হয়ে গেল। যেসব কাফিরী চালচলনে তারা আরাম ও সুখ মনে করতো, আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তা সবই ছেড়ে দিয়েছিল এবং ইসলামের যেসব হুকুম পালন করা মানুষের পক্ষে কষ্টকর বলে মনে হতো তারা সে সবকে সানন্দে কবুল করে নিলো। এরই নাম ঈমান এবং একেই বলা হয় ইসলাম।
কিন্তু ভেবে দেখি, আরব দেশের লোকেরা যদি তখন তাদের বাপ-দাদাদের মতো বলতো, অমুক কাজ আমরা মানব না, কারণ এতে আমাদের ক্ষতি হবে অমুক কাজ আমরা নিশ্চয় করবো কারণ বাপ-দাদার কাল হতেই এটা চলে এসেছে এবং রোম দেশের লোকদের কিংবা ইরান দেশের লোকদের অমুক কাজ আমাদের খুব ভালো লাগে বলে তা আমরা ছাড়তে পারবো না। এরূপে ইসলামের এক একটা হুকুম বাতিল করে দিতো তাহলে দুনিয়ায় এখন একজন মুসলিমও থাকতো কি? আল কুরআনে বলা হয়েছে :
لن تنالوا الي حتى تفقوا مما تحبون
“তোমাদের প্রিয় জিনিসগুলোকে যদি তোমরা আল্লাহর জন্য কুরবানী না কর তাহলে তোমরা প্রকৃত কল্যাণ কিছুতেই লাভ করতে পারবে না।” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৯২)
এ আয়াতটিই ইসলাম ও ঈমানের মূল কথা। ইসলামের আসল দাবী হচ্ছে, তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দাও। জীবনের সব রকমের কাজকর্মকেই আমরা দেখতে পাবো যে, আল্লাহর হুকুম একদিকে আমাকে ডাকে, আর আমাদের নফস ডাকে এর সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। আল্লাহ এক কাজের হুকুম করেন অথচ আমার নফস সে কাজে আমার ভয়ানক কষ্ট কিংবা ক্ষতি হবে বলে প্ররোচনা দেয়। আল্লাহ এক কাজ করতে নিষেধ করেন, কিন্তু আমার নফস তাকে অত্যন্ত মজাদার উপকারী জিনিস মনে করে তা ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয় না। প্রত্যেক কাজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে একদিকে আর সারা দুনিয়ার সুখ-সুবিধার আকর্ষণ আমাকে ডাকতে থাকে সম্পূর্ণ অন্যদিকে।
মোটকথা জীবনের প্রত্যেক পদেই মানুষের সামনে দু'টি পথ এসে পড়ে; একটি ইসলামের পথ, অপরটি কুফর ও মুনাফিকীর পথ। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রত্যেক জিনিসকে পদাঘাত করে একমাত্র আল্লাহর হুকুমের সামনে মাথা নত করে দেবে, মনে করতে হবে যে, কেবল সেই ব্যক্তিই ইসলামের পথ ধরেছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমের উপর পদাঘাত করে নিজের মনের বা দুনিয়ার খুশী চরিতার্থ করবে, বুঝতে হবে যে, সে কাফিরী এবং মুনাফিকীর পথ গ্রহণ করেছে।
মোটকথা জীবনের প্রত্যেক পদেই মানুষের সামনে দু'টি পথ এসে পড়ে; একটি ইসলামের পথ, অপরটি কুফর ও মুনাফিকীর পথ। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রত্যেক জিনিসকে পদাঘাত করে একমাত্র আল্লাহর হুকুমের সামনে মাথা নত করে দেবে, মনে করতে হবে যে, কেবল সেই ব্যক্তিই ইসলামের পথ ধরেছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমের উপর পদাঘাত করে নিজের মনের বা দুনিয়ার খুশী চরিতার্থ করবে, বুঝতে হবে যে, সে কাফিরী এবং মুনাফিকীর পথ গ্রহণ করেছে।
বর্তমান কালের মানুষ সম্পূর্ণ সুবিধাবাদী নীতি গ্রহণ করেছে। তারা ইসলামের সরল নিয়মগুলো তো অত্যন্ত আনন্দের সাথে স্বীকার করে, কিন্তু কুফর ও ইসলামের প্রকৃত মোকাবিলার সময় নিজেদের গতি পরিবর্তন করে ফেলে। ইসলামের বড় বড় দাবীদার লোকদের মধ্যেও এ রকম দুর্বলতা রয়েছে। ইসলাম! ইসলাম! করে তারা চীৎকার তো খুবই করে, ইসলামের প্রশংসা করতে গিয়েও তাদের মুখে খৈ ফোটে আর সে জন্য লোক দেখানো কাজও তারা যথেষ্ট করে, কিন্তু যে ইসলামের তারা এত প্রশংসা করে থাকে, সকলে মিলিত হয়ে সেই ইসলামের পরিপূর্ণ বিধানকে নিজেদের উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদেরকে আহবান জানালে তারা অমনি বলে ওঠে। ঐ কাজ সহজ নয়, এতে নানা প্রকারের কষ্ট আছে কিংবা এখন তা হতে পারে না।
এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, ইসলাম একটা সুন্দর খেলনা মাত্র। তাকে তাকের উপর উঠিয়ে রেখে দিলে এর সৌন্দর্য দেখা যায়। মুখে এর খুবই তারীফ করা যেতে পারে, কিন্তু নিজের ও পরিবারের লোকজনের উপর, আত্মীয়-স্বজনের উপর, নিজেদের কাজকর্মের উপর তাকে একটা পরিপূর্ণ আইন হিসেবে মেনে নেয়া তাদের মতে একটা অপরাধ। আমাদের আজকালকার এক শ্রেণীর ধার্মিক বলে পরিচিত ব্যক্তিদের অবস্থা হয়েছে এই - তারপর দুনিয়ার অন্য লোকদের কথা আর কি বলা যায়? মনে রাখা উচিত, ঠিক এ কারণেই আজ আমাদের সলাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত ও শরীয়াতের প্রকাশ্য অনুসরণের মধ্যে পূর্বের সেই প্রভাব আর বর্তমান নেই এবং সে জন্যই তাতে আমরা বাস্তব জীবনে কোনো ফলই লাভ করতে পারছি না। কারণ প্রাণটাই যখন না থাকে, তখন প্রাণহীন দেহটা আর কি সুফল দেখাতে পারে?
এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, ইসলাম একটা সুন্দর খেলনা মাত্র। তাকে তাকের উপর উঠিয়ে রেখে দিলে এর সৌন্দর্য দেখা যায়। মুখে এর খুবই তারীফ করা যেতে পারে, কিন্তু নিজের ও পরিবারের লোকজনের উপর, আত্মীয়-স্বজনের উপর, নিজেদের কাজকর্মের উপর তাকে একটা পরিপূর্ণ আইন হিসেবে মেনে নেয়া তাদের মতে একটা অপরাধ। আমাদের আজকালকার এক শ্রেণীর ধার্মিক বলে পরিচিত ব্যক্তিদের অবস্থা হয়েছে এই - তারপর দুনিয়ার অন্য লোকদের কথা আর কি বলা যায়? মনে রাখা উচিত, ঠিক এ কারণেই আজ আমাদের সলাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত ও শরীয়াতের প্রকাশ্য অনুসরণের মধ্যে পূর্বের সেই প্রভাব আর বর্তমান নেই এবং সে জন্যই তাতে আমরা বাস্তব জীবনে কোনো ফলই লাভ করতে পারছি না। কারণ প্রাণটাই যখন না থাকে, তখন প্রাণহীন দেহটা আর কি সুফল দেখাতে পারে?
আল্লাহ তাঁর আল কুরআনে বলেছেন :
قل إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي للير سير العالمين لا شريك له وبذلك أمر وأنا أول المسلمين
“(হে মুহাম্মাদ!) বল, আমার সলাত, আমার যাবতীয় ইবাদত অনুষ্ঠান এবং আমার জীবন ও মৃত্যু-সবকিছুই আল্লাহর জন্য; যিনি সারা-জাহানের মালিক ও প্রভু। তাঁর কেউ শরীক নেই। এরূপ বলার জন্যই আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর সর্বপ্রথম আমি তাঁরই সামনে আনুগত্যের মস্তক নত করে দিচ্ছি।” (সূরা আল আন'আম ৬ : ১৬২-১৬৩)
এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নবী কারীম (ﷺ) বলেছেনঃ
“আল্লাহর জন্য যে ভালোবাসলো, আল্লাহরই জন্য যে শত্রতা করলো, আল্লাহরই জন্য যে দান করলো এবং আল্লাহরই জন্য দেয়া বন্ধ করলো, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করলো। অর্থাৎ সে খাটি ঈমানদার হলো।” প্রথম আয়াত হতে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম মানুষকে তার সমস্ত দাসত্ব আনুগত্যের এবং নিজের জীবন ও মৃত্যুকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠা সহকারে উৎসর্গ করার এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিচ্ছে। অন্য কথায় মানুষ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব ও আনুগত্য করবে না। তার জীবন-মৃত্যুও আল্লাহ ছাড়া আর কারো উদ্দেশ্যে উৎসর্গক্তি হবে না।
قل إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي للير سير العالمين لا شريك له وبذلك أمر وأنا أول المسلمين
“(হে মুহাম্মাদ!) বল, আমার সলাত, আমার যাবতীয় ইবাদত অনুষ্ঠান এবং আমার জীবন ও মৃত্যু-সবকিছুই আল্লাহর জন্য; যিনি সারা-জাহানের মালিক ও প্রভু। তাঁর কেউ শরীক নেই। এরূপ বলার জন্যই আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর সর্বপ্রথম আমি তাঁরই সামনে আনুগত্যের মস্তক নত করে দিচ্ছি।” (সূরা আল আন'আম ৬ : ১৬২-১৬৩)
এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নবী কারীম (ﷺ) বলেছেনঃ
“আল্লাহর জন্য যে ভালোবাসলো, আল্লাহরই জন্য যে শত্রতা করলো, আল্লাহরই জন্য যে দান করলো এবং আল্লাহরই জন্য দেয়া বন্ধ করলো, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করলো। অর্থাৎ সে খাটি ঈমানদার হলো।” প্রথম আয়াত হতে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম মানুষকে তার সমস্ত দাসত্ব আনুগত্যের এবং নিজের জীবন ও মৃত্যুকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠা সহকারে উৎসর্গ করার এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিচ্ছে। অন্য কথায় মানুষ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব ও আনুগত্য করবে না। তার জীবন-মৃত্যুও আল্লাহ ছাড়া আর কারো উদ্দেশ্যে উৎসর্গক্তি হবে না।
ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নবী কারীম (ﷺ) -এর ভাষায় যা পেশ করা হয়েছে তাতে জানতে পারা যে, মানুষের ভালোবাসা, শত্রুতা এবং নিজের বৈষয়িক জীবনের সমস্ত কাজকর্ম ও লেনদেন একান্তভাবে আল্লাহরই জন্য উৎসর্গকৃত হওয়া মূল ঈমানের ঐকান্তিক দাবী। তা না হলে উচ্চমর্যাদা লাভ তো দূরের কথা ঈমানই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। এ ব্যাপারে যতটুকু অপূর্ণতা থাকবে মানুষের ঈমানের ঠিক ততটুকুই অপূর্ণতা থেকে যাবে। পক্ষান্তরে এদিক দিয়ে মানুষ যত পূর্ণতা সহকারে আল্লাহর কাছে সমর্পিত চিত্ত হতে পারবে তার ঈমানও ততটুকুই পূর্ণ হবে।
অধিকাংশ লোকের ধারণা এই যে, নিজেকে সর্বোতভাবে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দেয়া শুধু উচ্চ মর্যাদা লাভের জন্যই প্রয়োজন, শুধু ঈমান ও ইসলামের জন্য কারোও মধ্যে এতদূর উন্নতভাবের সৃষ্টি হওয়া কোনো জরুরী শর্ত নয়। অন্য কথায় তাদের ধারণা এই যে, উক্ত রূপ ভাবধারার সৃষ্টি না হলেও মানুষ ঈমানদার মুসলিম হতে পারে। কিন্তু এরূপ ধারণা মূলের দিক দিয়েই ভুল আর সাধারণ মানুষ আইনগত ইসলাম ও আল্লাহর কাছে গণ্য প্রকৃত ইসলামের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না বলেই এরূপ ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
ফিকাহ সম্মত ও আইনগত ইসলামে মানুষের মনের প্রকৃত অবস্থা দেখা হয় না আর তা দেখা সম্ভবও নয়। বরং মানুষের মৌখিক স্বীকৃতির বাস্তব প্রমাণ স্বরূপ কয়েকটি জরুরী বাহ্যিক নিদর্শন বর্তমান থাকার উপরই লক্ষ্য আরোপ করা হয়। কেউ যদি মুখে আল্লাহ, রসূল, কুরআন, পরকাল ও অন্যান্য জরুরী বিষয়ে ঈমান রয়েছে বলে স্বীকার করে অতঃপর এ মৌখিক স্বীকারোক্তির বাস্তব প্রমাণের জরুরী শর্তগুলো পূরণ করে তবে তাকে ইসলামের সীমার মধ্যে গণ করা হবে। তাকে মুসলিম মনে করে তার সাথে সকল কাজকর্ম করা হবে।
কিন্তু মূলতঃ এসব বিষয়ই শুধু এ দুনিয়ার জন্য সীমাবদ্ধ এবং এটাতে শুধু বৈষয়িক দৃষ্টিতে মুসলিম সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ও কালচার ভিত্তিই লাভ হয়ে থাকে। এরূপ স্বীকারোক্তির সাহায্যে যারা মুসলিম সমাজে প্রবেশ করবে তারা সকলেই মুসলিম বলে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে কাউকে কাফির বলা যাবে না। তারা পরস্পরের কাছ হতে শরীয়ত সম্মত নৈতিক ও সামাজিক অধিকার লাভ করবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারবে, সম্পদ বন্টন হবে এবং অন্যান্য সামাজিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
কিন্তু পরকালে মানুষের মুক্তি লাভ, তার মুসলিম ও মু'মিন রূপে গণ্য হওয়া এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে শামিল হওয়া কেবলমাত্র উক্ত রূপ আইনগত ও মৌখিক স্বীকৃতি দ্বারা সম্ভব নয়, বরং মানুষের মনে স্বীকৃতি আল্লাহর দিকে অন্ত রকে সমাহিত করা এবং ঐকান্তিক আগ্রহ ও উৎসাহ সহকারে নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পন করে দেয়াই এর জন্য অপরিহার্য শর্ত। পৃথিবীতে মৌখিক স্বীকৃতির মূল্য হয় শুধু বিয়ের কাজীর সামনে ও সাধারণ মানুষ বা মুসলিমদের মধ্যে; কেননা তারা কেবল বাহিরকেই দেখতে পারে। কিন্তু আল্লাহ দেখেন মানুষের মন বা অন্তরকে- তার ভিতরকার আসল অবস্থা ও ভাবধারাকে। আল্লাহ মানুষের ঈমানের পরিমাপ করেন।
মানুষ তার জীবন ও মৃত্যুকে তার যাবতীয় কৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্ব, আনুগত্য, দাসত্ব ও গোটা জীবনের কর্মধারাকে আল্লাহরই উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করেছে, না অপর কারোও জন্য, আল্লাহর দরবারে ঠিক এ মাপকাঠিতেই মানুষকে যাচাই করা হবে। এ যাচাইয়ের ফলে যদি প্রমাণিত হয় যে, সে এসব কিছু একমাত্র আল্লাহরই জন্য উৎসর্গ করেছিল তবে সে মুসলিম এবং মু'মিন বলে গণ্য হবে, আর অন্য কারোও জন্য উৎসর্গ করে থাকলে সে না মুসলিমরূপে গণ্য হবে, না মু'মিনরূপে। এ দৃষ্টিতে যে যতদুর কাঁচা ও অপরিপক্ক প্রমাণিত হবে তার ঈমান এবং ইসলামও ঠিক ততদূরই অপরিপক্ক হবে। দুনিয়ায় সে অতিবড় মুসলিমরূপে গণ্য হলেও এবং সেখানে তাকে অতুল্য মর্যাদা দান করা হলেও আল্লাহর দরবারে তার কোনোই গুরুত্ব হবে না।
আল্লাহ যা কিছু আমাকে দিয়েছেন, আমি তার সবকিছুই আল্লাহর জন্য আল্লাহরই নির্দেশিত পথে প্রয়োগ করলাম কি না শুধু এ দিক দিয়েই আল্লাহর কাছে মানুষের মূল্য স্থির হবে। আমি এরূপ করে থাকলে আমাকে ঠিক অনুগত ও বন্ধুত্বের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়া হবে। আর কোনো জিনিস যদি আমি আল্লাহর বন্দেগী হতে দূরে রাখি, আল্লাহর নির্দেশিত পথে প্রয়োগ না করি তবে আমার মুসলিম দাবী করার-অর্থাৎ নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত করার মৌখিক উক্তি একেবারেই মিথ্যা প্রমাণিত হবে এবং এ মিথ্যা উক্তি দ্বারা দুনিয়ার লোকদেরকে ধোঁকা দেয়া সম্ভব হলেও হতে পারে; তারা আমার এ মৌখিক উক্তি দ্বারা প্রতারিত হয়ে মুসলিম সমাজের মধ্যে আমাকে স্থান দিতে এবং মুসলিম হিসেবে সকল সুযোগ-সুবিধা দান করতেও পারে। কিন্তু আল্লাহ কখনও তাতে প্রতারিত হবেন না এবং আমাকে তাঁর বিশ্বস্ত ও অনুগত বন্ধুদের মধ্যে গণ্য করবেন না।
আইনগত ইসলাম ও প্রকৃত ইসলামের এ পার্থক্যের যে ব্যাখ্যা দান করা হলো, তা গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায় যে, এর ফলাফল কেবল পরকালেই ভিন্ন ভিন্ন হবে না; বরং দুনিয়ায়ও এ পার্থক্যের বাস্তব ফল ভিন্ন ভিন্ন। হতে বাধ্য। এজন্য দুনিয়ায় যত মুসলিম এসেছে এবং যত মুসলিম এখন দুনিয়ায় রয়েছে তাদের সকলকে উপরোক্ত দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
অধিকাংশ লোকের ধারণা এই যে, নিজেকে সর্বোতভাবে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দেয়া শুধু উচ্চ মর্যাদা লাভের জন্যই প্রয়োজন, শুধু ঈমান ও ইসলামের জন্য কারোও মধ্যে এতদূর উন্নতভাবের সৃষ্টি হওয়া কোনো জরুরী শর্ত নয়। অন্য কথায় তাদের ধারণা এই যে, উক্ত রূপ ভাবধারার সৃষ্টি না হলেও মানুষ ঈমানদার মুসলিম হতে পারে। কিন্তু এরূপ ধারণা মূলের দিক দিয়েই ভুল আর সাধারণ মানুষ আইনগত ইসলাম ও আল্লাহর কাছে গণ্য প্রকৃত ইসলামের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না বলেই এরূপ ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
ফিকাহ সম্মত ও আইনগত ইসলামে মানুষের মনের প্রকৃত অবস্থা দেখা হয় না আর তা দেখা সম্ভবও নয়। বরং মানুষের মৌখিক স্বীকৃতির বাস্তব প্রমাণ স্বরূপ কয়েকটি জরুরী বাহ্যিক নিদর্শন বর্তমান থাকার উপরই লক্ষ্য আরোপ করা হয়। কেউ যদি মুখে আল্লাহ, রসূল, কুরআন, পরকাল ও অন্যান্য জরুরী বিষয়ে ঈমান রয়েছে বলে স্বীকার করে অতঃপর এ মৌখিক স্বীকারোক্তির বাস্তব প্রমাণের জরুরী শর্তগুলো পূরণ করে তবে তাকে ইসলামের সীমার মধ্যে গণ করা হবে। তাকে মুসলিম মনে করে তার সাথে সকল কাজকর্ম করা হবে।
কিন্তু মূলতঃ এসব বিষয়ই শুধু এ দুনিয়ার জন্য সীমাবদ্ধ এবং এটাতে শুধু বৈষয়িক দৃষ্টিতে মুসলিম সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ও কালচার ভিত্তিই লাভ হয়ে থাকে। এরূপ স্বীকারোক্তির সাহায্যে যারা মুসলিম সমাজে প্রবেশ করবে তারা সকলেই মুসলিম বলে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে কাউকে কাফির বলা যাবে না। তারা পরস্পরের কাছ হতে শরীয়ত সম্মত নৈতিক ও সামাজিক অধিকার লাভ করবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারবে, সম্পদ বন্টন হবে এবং অন্যান্য সামাজিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
কিন্তু পরকালে মানুষের মুক্তি লাভ, তার মুসলিম ও মু'মিন রূপে গণ্য হওয়া এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে শামিল হওয়া কেবলমাত্র উক্ত রূপ আইনগত ও মৌখিক স্বীকৃতি দ্বারা সম্ভব নয়, বরং মানুষের মনে স্বীকৃতি আল্লাহর দিকে অন্ত রকে সমাহিত করা এবং ঐকান্তিক আগ্রহ ও উৎসাহ সহকারে নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পন করে দেয়াই এর জন্য অপরিহার্য শর্ত। পৃথিবীতে মৌখিক স্বীকৃতির মূল্য হয় শুধু বিয়ের কাজীর সামনে ও সাধারণ মানুষ বা মুসলিমদের মধ্যে; কেননা তারা কেবল বাহিরকেই দেখতে পারে। কিন্তু আল্লাহ দেখেন মানুষের মন বা অন্তরকে- তার ভিতরকার আসল অবস্থা ও ভাবধারাকে। আল্লাহ মানুষের ঈমানের পরিমাপ করেন।
মানুষ তার জীবন ও মৃত্যুকে তার যাবতীয় কৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্ব, আনুগত্য, দাসত্ব ও গোটা জীবনের কর্মধারাকে আল্লাহরই উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করেছে, না অপর কারোও জন্য, আল্লাহর দরবারে ঠিক এ মাপকাঠিতেই মানুষকে যাচাই করা হবে। এ যাচাইয়ের ফলে যদি প্রমাণিত হয় যে, সে এসব কিছু একমাত্র আল্লাহরই জন্য উৎসর্গ করেছিল তবে সে মুসলিম এবং মু'মিন বলে গণ্য হবে, আর অন্য কারোও জন্য উৎসর্গ করে থাকলে সে না মুসলিমরূপে গণ্য হবে, না মু'মিনরূপে। এ দৃষ্টিতে যে যতদুর কাঁচা ও অপরিপক্ক প্রমাণিত হবে তার ঈমান এবং ইসলামও ঠিক ততদূরই অপরিপক্ক হবে। দুনিয়ায় সে অতিবড় মুসলিমরূপে গণ্য হলেও এবং সেখানে তাকে অতুল্য মর্যাদা দান করা হলেও আল্লাহর দরবারে তার কোনোই গুরুত্ব হবে না।
আল্লাহ যা কিছু আমাকে দিয়েছেন, আমি তার সবকিছুই আল্লাহর জন্য আল্লাহরই নির্দেশিত পথে প্রয়োগ করলাম কি না শুধু এ দিক দিয়েই আল্লাহর কাছে মানুষের মূল্য স্থির হবে। আমি এরূপ করে থাকলে আমাকে ঠিক অনুগত ও বন্ধুত্বের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়া হবে। আর কোনো জিনিস যদি আমি আল্লাহর বন্দেগী হতে দূরে রাখি, আল্লাহর নির্দেশিত পথে প্রয়োগ না করি তবে আমার মুসলিম দাবী করার-অর্থাৎ নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত করার মৌখিক উক্তি একেবারেই মিথ্যা প্রমাণিত হবে এবং এ মিথ্যা উক্তি দ্বারা দুনিয়ার লোকদেরকে ধোঁকা দেয়া সম্ভব হলেও হতে পারে; তারা আমার এ মৌখিক উক্তি দ্বারা প্রতারিত হয়ে মুসলিম সমাজের মধ্যে আমাকে স্থান দিতে এবং মুসলিম হিসেবে সকল সুযোগ-সুবিধা দান করতেও পারে। কিন্তু আল্লাহ কখনও তাতে প্রতারিত হবেন না এবং আমাকে তাঁর বিশ্বস্ত ও অনুগত বন্ধুদের মধ্যে গণ্য করবেন না।
আইনগত ইসলাম ও প্রকৃত ইসলামের এ পার্থক্যের যে ব্যাখ্যা দান করা হলো, তা গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায় যে, এর ফলাফল কেবল পরকালেই ভিন্ন ভিন্ন হবে না; বরং দুনিয়ায়ও এ পার্থক্যের বাস্তব ফল ভিন্ন ভিন্ন। হতে বাধ্য। এজন্য দুনিয়ায় যত মুসলিম এসেছে এবং যত মুসলিম এখন দুনিয়ায় রয়েছে তাদের সকলকে উপরোক্ত দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক ধরনের মুসলিম দেখা যায় যারা আল্লাহ ও রসূল (ﷺ) -কে স্বীকার করে ইসলামকে শুধু একটি ধর্ম হিসেবে মেনে নেয়; কিন্তু এ ধর্ম নিজেদের সামগ্রিক জীবনের শুধু একটি অংশ বা একটি বিভাগের মর্যাদাই দেয়, তার অধিক নয়। ফলে এ বিশেষ অংশ ও বিভাগে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস পূর্ণ মাত্রায় স্থাপন করা হয়। ইবাদত-বন্দেগীর অনুষ্ঠানসমূহ যথারীতি পালন করা হয়। তাসবীহ পাঠ ও যিকির-আযকার করা হয়। পানাহার ও কোনো কোনো সামাজিক ব্যাপারে পরহেযগারীও অবলম্বন করা হয়; গতানুগতিক ধর্ম পালন বলতে যা করণীয় তা প্রায় সবই করা হয়।
কিন্তু এ অংশ ও বিভাগ ছাড়া জীবনের অন্যান্য দিকে ও বিভাগে মুসলিমদের কাজসমূহ করার কোনো সুযোগই দেয়া হয় না; সেখানে ভালোবাসা হলে তা হয় নিজের প্রতি, নিজ স্বার্থের প্রতি, দেশ ও জাতি কিংবা অন্য কোনো জিনিসের প্রতি আর শত্রুতা বা যুদ্ধ করলেও তা করা হয় অনুরূপ কোনো বৈষয়িক স্বার্থের জন্য। তাদের লেনদেন, তাদের কাজকর্ম, সম্পর্ক-সম্বন্ধ, তাদের সন্তান-সন্ততি, বংশ-পরিবার, দেশ ও সমাজ এবং অন্যান্য লোকের সাথে ব্যবহার ইত্যাদি সবই হয়ে থাকে দ্বীন ইসলামকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে নিছক বৈষয়িক দৃষ্টিতে। ব্যবসায়ী, শাসনকর্তা, সৈনিক যে যাই হোক না কেন, প্রত্যেকেই একজন স্বাধীন পেশাদার হিসেবে কাজ করে, মুসলিম হিসেবে নয়। এ দিক দিয়ে মুসলিমদেরকে বিন্দুমাত্র স্থান দেয় না। তারা মিলিত ও সমষ্টিগতভাবে যে কালচার, শিক্ষামূলক ও রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় অংশগ্রহণ করে তার উপর তাদের মুসলিমদের আংশিক প্রভাব পড়লেও তার সাথে ইসলামের কোনোই সম্পর্ক স্থাপিত হয় না।
কিন্তু এ অংশ ও বিভাগ ছাড়া জীবনের অন্যান্য দিকে ও বিভাগে মুসলিমদের কাজসমূহ করার কোনো সুযোগই দেয়া হয় না; সেখানে ভালোবাসা হলে তা হয় নিজের প্রতি, নিজ স্বার্থের প্রতি, দেশ ও জাতি কিংবা অন্য কোনো জিনিসের প্রতি আর শত্রুতা বা যুদ্ধ করলেও তা করা হয় অনুরূপ কোনো বৈষয়িক স্বার্থের জন্য। তাদের লেনদেন, তাদের কাজকর্ম, সম্পর্ক-সম্বন্ধ, তাদের সন্তান-সন্ততি, বংশ-পরিবার, দেশ ও সমাজ এবং অন্যান্য লোকের সাথে ব্যবহার ইত্যাদি সবই হয়ে থাকে দ্বীন ইসলামকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে নিছক বৈষয়িক দৃষ্টিতে। ব্যবসায়ী, শাসনকর্তা, সৈনিক যে যাই হোক না কেন, প্রত্যেকেই একজন স্বাধীন পেশাদার হিসেবে কাজ করে, মুসলিম হিসেবে নয়। এ দিক দিয়ে মুসলিমদেরকে বিন্দুমাত্র স্থান দেয় না। তারা মিলিত ও সমষ্টিগতভাবে যে কালচার, শিক্ষামূলক ও রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় অংশগ্রহণ করে তার উপর তাদের মুসলিমদের আংশিক প্রভাব পড়লেও তার সাথে ইসলামের কোনোই সম্পর্ক স্থাপিত হয় না।
দ্বিতীয় প্রকার মুসলিম দেখা যায়, যারা নিজেদের পূর্ণ ব্যক্তিত্বকে, নিজেদের সমগ্র সত্ত্বাকে ইসলামের কাছে সোপর্দ করে দেয়। তারা হয় মুসলিম পিতা, মুসলিম সন্তান, মুসলিম স্ত্রী, ব্যবসায়ী, জমির মালিক, মজুর, চাকর-যাই হোক না কেন, সর্বত্র মুসলিম হিসেবেই তাদের জীবন চালিত হয়, তাদের মনের ভাবধারা, আশা-আকাংখা, চিন্তা ও মতবাদ, তাদের রায় ও সিদ্ধান্ত, তাদের ঘৃণা ও ভালোবাসা তাদের পছন্দ অপছন্দ সবকিছুই ইসলামী আদর্শের অনুসারেই হবে। তাদের মন ও মগযের উপর তাদের চোখ ও কানের উপর, তাদের লজ্জাস্থানের উপর, তাদের হাত-পা ও দেহের যাবতীয় অংগ প্রত্যংগের উপর সম্পূর্ণরূপে ইসলামের আধিপত্য বিরাজ করবে। তাদের স্নেহ ভালোবাসা বা শত্রতা ইসলামের সীমালংঘন করবে না। কারো সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলে ইসলামের জন্যই করবে, কারো সাথে যুদ্ধ করলে ইসলামের জন্যই করবে, কাউকে কিছু দান করলে শুধু এ জন্যই দান করবে যে, এরূপ দান করা ইসলামের নির্দেশ। পক্ষান্তরে কাউকে কিছু দেয়া বন্ধ করলে তা ঠিক ইসলামের নির্দেশ অনুসারে বন্ধ করবে। তাদের এরূপ কর্মনীতি ব্যক্তিগত জীবনেই কার্যকর হবে না, তাদের সামগ্রিক জীবনেও সর্বতোভাবে ও সম্পূর্ণরূপে ইসলামেরই ভিত্তিতে স্থাপিত হবে। সমষ্টিগতভাবে তাদের সম্পূর্ণ সত্ত্বাই হবে ইসলামের জন্য নিয়োজিত-ইসলামের জন্য উৎসর্গীকৃত। তাদের গোটা জাতীয় চরিত্র ও ভূমিকা ও তাদের কর্মতৎপরতা ইসলামের মূলনীতির বুনিয়াদে স্থাপিত ও পরিচালিত হবে।
এ দু’প্রকারের মুসলিম মূলতঃ সম্পূর্ণরূপে পরস্পর বিরোধী। আইনের দৃষ্টিতে উভয় শ্রেণী একই উম্মত তথা একই জাতির মধ্যে গণ্য হলেও এবং মুসলিম শব্দটি উভয়ের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হলেও প্রকৃত ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। প্রথম প্রকারের মুসলিমের কোনো কীর্তিই ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য বা গৌরবের বস্তুরূপে পরিগণিত হয়নি। তারা এমন কোনো কাজই করেনি, যা পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামের কোনো গৌরবময় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। পৃথিবী এ ধরনের মুসলিমের কোনো গুরুত্বই কোনো দিন অনুভব করেনি। বরং প্রকৃত ব্যাপার এই যে, ইসলামের পশ্চাদমুখী গতি এ ধরনের মুসলিমের দ্বারা এবং এদের কারণেই সম্ভব হয়েছে। মুসলিম সমাজে এ ধরনের মুসলিমের সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণেই মানব জীবনের উপর কুফরির কর্তৃত্ব স্থাপিত হওয়া এবং তার অধিক সীমাবদ্ধ ধর্মীয় জীবন্যাপনের সুযোগ লাভ করে মুসলিমদের তুষ্ট হওয়া সম্ভব হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ কখনই এ ধরনের মুসলিম চাননি। এ ধরনের মুসলিম তৈরি করার জন্য তিনি নবীগণকে পৃথিবীতে পাঠাননি, এ ধরনের মুসলিম বানাবার জন্য তিনি কিতাব নাযিল করেননি। বস্তুত এ ধরনের মুসলিম দুনিয়ায় না থাকলেও বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ অভাব অনুভূত হতো না। আর তা পূরণের জন্য অহী নাযিল করার এ দীর্ঘস্থায়ী ধারা পরিচালনারও প্রয়োজন দেখা দিত না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যে ধরনের মুসলিম তৈরি করার জন্য নবী পাঠিয়েছেন ও কিতাব নাযিল করেছেন, আর যারা ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো মূল্যবান ও উল্লেখযোগ্য কার্যসম্পাদন করেছেন এবং এখনও করতে সমর্থ তারা হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় শ্রেণীর মুসলিম।
কেবল ইসলামের ব্যাপারেই একথা সত্য নয়। যারা নিজেদের নীতি ও আদর্শকে শুধু মৌখিক স্বীকৃতি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখে ও তাকে জীবনের একটি পরিশিষ্টরূপে গণ্য করে এবং নিজেদের জীবন ও মৃত্যু অন্য কোনো জিনিসের জন্য উৎসর্গ করে তাদের দ্বারা দুনিয়ার কোনো আদর্শেরই পতাকা উন্নীত হতে পারে না। বর্তমান সময়েও একথার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। একটি আদর্শের প্রকৃত নিষ্ঠাবান অনুসারী কেবল তারাই হতে পারে যারা মন ও প্রাণ দিয়ে তার অনুসরণ ও তার খেদমতের কাজে আত্মসমর্পণ করে, যারা নিজেদের পূর্ণ ব্যক্তিসত্ত্বাকে এরই জন্য উৎসর্গ করে এবং যারা নিজেদের অধিকারভুক্ত কোনো জিনিসকে-নিজের প্রাণ ও সন্তানকে পর্যন্ত তা অপেক্ষা বেশী ভালো না বাসে। বস্তুত দুনিয়ায় এ ধরনের লোকদের দ্বারাই কোনো বিশেষ আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও প্রসার লাভ করতে পারে। এজন্যই প্রত্যেকটি আদর্শ এ ধরনের লোকের প্রতীক্ষা করে।
এ দু’প্রকারের মুসলিম মূলতঃ সম্পূর্ণরূপে পরস্পর বিরোধী। আইনের দৃষ্টিতে উভয় শ্রেণী একই উম্মত তথা একই জাতির মধ্যে গণ্য হলেও এবং মুসলিম শব্দটি উভয়ের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হলেও প্রকৃত ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। প্রথম প্রকারের মুসলিমের কোনো কীর্তিই ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য বা গৌরবের বস্তুরূপে পরিগণিত হয়নি। তারা এমন কোনো কাজই করেনি, যা পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামের কোনো গৌরবময় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। পৃথিবী এ ধরনের মুসলিমের কোনো গুরুত্বই কোনো দিন অনুভব করেনি। বরং প্রকৃত ব্যাপার এই যে, ইসলামের পশ্চাদমুখী গতি এ ধরনের মুসলিমের দ্বারা এবং এদের কারণেই সম্ভব হয়েছে। মুসলিম সমাজে এ ধরনের মুসলিমের সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণেই মানব জীবনের উপর কুফরির কর্তৃত্ব স্থাপিত হওয়া এবং তার অধিক সীমাবদ্ধ ধর্মীয় জীবন্যাপনের সুযোগ লাভ করে মুসলিমদের তুষ্ট হওয়া সম্ভব হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ কখনই এ ধরনের মুসলিম চাননি। এ ধরনের মুসলিম তৈরি করার জন্য তিনি নবীগণকে পৃথিবীতে পাঠাননি, এ ধরনের মুসলিম বানাবার জন্য তিনি কিতাব নাযিল করেননি। বস্তুত এ ধরনের মুসলিম দুনিয়ায় না থাকলেও বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ অভাব অনুভূত হতো না। আর তা পূরণের জন্য অহী নাযিল করার এ দীর্ঘস্থায়ী ধারা পরিচালনারও প্রয়োজন দেখা দিত না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যে ধরনের মুসলিম তৈরি করার জন্য নবী পাঠিয়েছেন ও কিতাব নাযিল করেছেন, আর যারা ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো মূল্যবান ও উল্লেখযোগ্য কার্যসম্পাদন করেছেন এবং এখনও করতে সমর্থ তারা হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় শ্রেণীর মুসলিম।
কেবল ইসলামের ব্যাপারেই একথা সত্য নয়। যারা নিজেদের নীতি ও আদর্শকে শুধু মৌখিক স্বীকৃতি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখে ও তাকে জীবনের একটি পরিশিষ্টরূপে গণ্য করে এবং নিজেদের জীবন ও মৃত্যু অন্য কোনো জিনিসের জন্য উৎসর্গ করে তাদের দ্বারা দুনিয়ার কোনো আদর্শেরই পতাকা উন্নীত হতে পারে না। বর্তমান সময়েও একথার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। একটি আদর্শের প্রকৃত নিষ্ঠাবান অনুসারী কেবল তারাই হতে পারে যারা মন ও প্রাণ দিয়ে তার অনুসরণ ও তার খেদমতের কাজে আত্মসমর্পণ করে, যারা নিজেদের পূর্ণ ব্যক্তিসত্ত্বাকে এরই জন্য উৎসর্গ করে এবং যারা নিজেদের অধিকারভুক্ত কোনো জিনিসকে-নিজের প্রাণ ও সন্তানকে পর্যন্ত তা অপেক্ষা বেশী ভালো না বাসে। বস্তুত দুনিয়ায় এ ধরনের লোকদের দ্বারাই কোনো বিশেষ আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও প্রসার লাভ করতে পারে। এজন্যই প্রত্যেকটি আদর্শ এ ধরনের লোকের প্রতীক্ষা করে।
অবশ্য একটি ব্যাপারে ইসলাম ও অন্যান্য আদর্শের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য আদর্শও মানুষের কাছে উল্লেখিত রূপ আত্মসমর্পণ, ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও আনুগত্যের দাবী করে বটে, কিন্তু মূলতঃ দাবী করার তাদের কোনোই অধিকার নেই। এটা বরং মানুষের উপর তাদের একটি অন্যায় আবদার মাত্র। পক্ষান্তরে মানুষের প্রতি ইসলামের দাবী অত্যন্ত শাশ্বত ও স্বাভাবিক। একটি আদর্শ যেসব কারণে অন্যান্য মানুষের কাছে তার নিজের সমগ্র জীবন পূর্ণ ব্যক্তি সত্ত্বাকে উৎসর্গ করার দাবী জানায়, মূলতঃ সেসবের মধ্যে একটি জিনিসের জন্য মানুষ তার নিজের কোনো জিনিসকে স্যাক্রিফাইস করতে পারে না।
কিন্তু ইসলাম যে আল্লাহর জন্য মানুষের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও ঐকান্তিক নিষ্ঠার দাবী করে প্রকৃতপক্ষে সে জন্যই মানুষের উৎসর্গিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা সবই আল্লাহর। মানুষ নিজেই আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষের কাছে এবং মানুষের মধ্যে যা আছে, সবকিছুই আল্লাহর মালিকানা। মানুষ এ দুনিয়ায় যেসব জিনিস দ্বারা কাজ করে তাও আল্লাহর। কাজেই জ্ঞান-বুদ্ধি ও সুবিচারের দৃষ্টিতে এটাই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে যে, যা আল্লাহর তা আল্লাহরই পথে উৎসর্গ করতে হবে। অপরের জন্য কিংবা নিজ স্বার্থের জন্য মানুষ যে সেকরিফাইস করে তা মূলতঃ খিয়ানত-অন্যায় ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়। অবশ্য আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কিছু করলে তা নিশ্চয়ই খিয়ানত হবে না। কেননা আল্লাহর জন্য যা কিছুই উৎসর্গ করা হয়, তা দ্বারা মূলতঃ আল্লাহরই হক আদায় করা হয়।
কিন্তু যারা বাতিল মতবাদ ও আদর্শ এবং নিজেদের মনগড়া ইলাহ ও প্রভুদের জন্য নিজেদের সবকিছু সেকরিফাইস করে এবং সে জন্য অবিচল ও দৃঢ়তা সহকারে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তাদের কর্মতৎপরতা হতে মুসলিমদের শিক্ষাগ্রহণ করা আবশ্যক। বাতিলের জন্য যখন মানুষ এত নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা প্রদর্শন করতে পারে তখন সত্যের জন্য যদি তার এক সহস্রাংশ ত্যাগ স্বীকার করা না হয় তবে তা কত পরিতাপের বিষয়। আত্মপরীক্ষা : উল্লেখিত আলোচনা হতে ঈমান ও ইসলামের যে সঠিক মাপকাঠির সন্ধান পাওয়া যায়, তদনুযায়ী আমাদের প্রত্যেককেই আত্মপরীক্ষা করা কর্তব্য। আমি যদি ইসলাম কবুল করার ও ঈমান আনার দাবী করি তবে আমার জীবন ও মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর জন্য উৎসর্গীকৃত কিনা, তা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যাচাই করে দেখা বাঞ্ছনীয়। আমি একমাত্র আল্লাহরই জন্য জীবিত কিনা, আমার মন ও মস্তিষ্কের সমগ্র যোগ্যতা-ক্ষমতা, আমার দেহ ও প্রাণের শক্তি, আমার সময় ও শ্রম একমাত্র আল্লাহর মজী পূরণের জন্য এবং মুসলিম উম্মাতের দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত কিনা তা বিশেষভাবে যাচাই করে দেখা কর্তব্য। আমার ইবাদত ও আনুগত্য আল্লাহরই জন্য কিনা, অন্যদিকে নফসের দাসত্ব এবং পরিবার, গোত্র, বন্ধু-বান্ধব ও সমাজ তথা সরকারের বন্দেগী হতে আমার জীবন সম্পূর্ণরূপে মুক্ত কিনা, তাও সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। আমার পছন্দ-অপছন্দ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারিত কিনা তাও বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয়।
আরও বিচার করে দেখি, আমি যাকে ভালোবাসি, স্নেহ করি, তা কি একমাত্র আল্লাহর জন্য করি? যার প্রতি ঘৃণা পোষণ করি, তাও কি আল্লাহর জন্য করি? এ ঘৃণা ও ভালোবাসায় আমার নিজের কোনো স্বার্থ কাজ করে না তো? দেয়া না দেয়াও কি আল্লাহরই জন্য হচ্ছে? নিজের মন সহ দুনিয়ায় যাকে যা কিছু আমি দেই, তা দিয়ে কি আমি একমাত্র আল্লাহরই সন্তোষ পেতে চাই? পক্ষান্তরে আমার না দেয়াও কি ঠিব আল্লাহরই জন্য হচ্ছে? আমি কি এজন্য দিচ্ছি না যে, আল্লাহ দিতে নিষেধ করেছেন? এবং না দিয়ে কি আমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করছি? এরূপে সবকিছুই আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার ভাবধারা যদি আমি আমার নিজের মধ্যে বর্তমান দেখতে পাই তবে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করি। কেননা আল্লাহ সত্যই আমার ঈমানকে পূর্ণতা দান করেছেন। কিন্তু এদিক দিয়ে যদি আমি আমার মধ্যে কোনো প্রকার অভাব অনুভব করি, তবে তা দূর করার জন্য এখনই যত্নবান হওয়া উচিত, সবল চেষ্টা ও তৎপরতা এদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। কেননা এ অভাব পূরণের উপরই আমার ইহকালীন সাফল্য ও পরকালীন মুক্তি নির্ভর করে। দুনিয়ায় আমি কোনো মহাসম্পদ লাভ করলেও তা দ্বারা এ অভাব পূরণ হতে পারে না। কিন্তু এ অভাব যদি আমি পূরণ করে নিতে পারি, তবে দুনিয়ায় আমি কিছু না পেলেও প্রকৃতপক্ষে আমি কোনোরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হবো না।
স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরআন হাদীসের এ মাপমাঠিতে অপরকে যাচাই করার জন্য এবং তাকে মু'মিন কিংবা মুনাফিক অথবা মুসলিম কিংবা কাফির বলে ঘোষণা করার জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে নিজেকে বাঁচাবার জন্য এবং পরকালের বিচারালয়ের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার পূর্বে এ দুনিয়ায় নিজের ক্রটি জেনে তা সংশোধন করার জন্যই এ মাপকাঠি নির্ধারিত হয়েছে। দুনিয়ার মানুষ আমাকে কী মনে করেছে সেই চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই, মহাবিচারক-গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুর একমাত্র জ্ঞাতা-আল্লাহ আমাকে কী স্থান দেন তাই আমাকে চিন্তা করতে হবে। দুনিয়ার আদমশুমারীর খাতায় আমি মুসলিম রূপে গণ্য হয়েছি দেখেই আমার নিশ্চিত হয়ে বসে থাকা উচিত নয়। আল্লাহর কাছে আমার কী মর্যাদা দেয়া হচ্ছে সেই সম্পর্কে সতর্ক হওয়া আমার কর্তব্য। সমগ্র পৃথিবী আমাকে ঈমান ও ইসলামের সার্টিফিকেট দিলেও প্রকৃতপক্ষে আমার কোনো লাভ নেই। মূল বিচার যে আল্লাহর হাতে তাঁরই কাছে মুনাফিকের পরিবর্তে মু'মিন; অবাধ্যের পরিবর্তে অনুগত বান্দা রূপে গণ্য হওয়াই আমাদের জীবনের প্রকৃত সাফল্য।
কিন্তু ইসলাম যে আল্লাহর জন্য মানুষের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও ঐকান্তিক নিষ্ঠার দাবী করে প্রকৃতপক্ষে সে জন্যই মানুষের উৎসর্গিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা সবই আল্লাহর। মানুষ নিজেই আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষের কাছে এবং মানুষের মধ্যে যা আছে, সবকিছুই আল্লাহর মালিকানা। মানুষ এ দুনিয়ায় যেসব জিনিস দ্বারা কাজ করে তাও আল্লাহর। কাজেই জ্ঞান-বুদ্ধি ও সুবিচারের দৃষ্টিতে এটাই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে যে, যা আল্লাহর তা আল্লাহরই পথে উৎসর্গ করতে হবে। অপরের জন্য কিংবা নিজ স্বার্থের জন্য মানুষ যে সেকরিফাইস করে তা মূলতঃ খিয়ানত-অন্যায় ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়। অবশ্য আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কিছু করলে তা নিশ্চয়ই খিয়ানত হবে না। কেননা আল্লাহর জন্য যা কিছুই উৎসর্গ করা হয়, তা দ্বারা মূলতঃ আল্লাহরই হক আদায় করা হয়।
কিন্তু যারা বাতিল মতবাদ ও আদর্শ এবং নিজেদের মনগড়া ইলাহ ও প্রভুদের জন্য নিজেদের সবকিছু সেকরিফাইস করে এবং সে জন্য অবিচল ও দৃঢ়তা সহকারে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তাদের কর্মতৎপরতা হতে মুসলিমদের শিক্ষাগ্রহণ করা আবশ্যক। বাতিলের জন্য যখন মানুষ এত নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা প্রদর্শন করতে পারে তখন সত্যের জন্য যদি তার এক সহস্রাংশ ত্যাগ স্বীকার করা না হয় তবে তা কত পরিতাপের বিষয়। আত্মপরীক্ষা : উল্লেখিত আলোচনা হতে ঈমান ও ইসলামের যে সঠিক মাপকাঠির সন্ধান পাওয়া যায়, তদনুযায়ী আমাদের প্রত্যেককেই আত্মপরীক্ষা করা কর্তব্য। আমি যদি ইসলাম কবুল করার ও ঈমান আনার দাবী করি তবে আমার জীবন ও মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর জন্য উৎসর্গীকৃত কিনা, তা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যাচাই করে দেখা বাঞ্ছনীয়। আমি একমাত্র আল্লাহরই জন্য জীবিত কিনা, আমার মন ও মস্তিষ্কের সমগ্র যোগ্যতা-ক্ষমতা, আমার দেহ ও প্রাণের শক্তি, আমার সময় ও শ্রম একমাত্র আল্লাহর মজী পূরণের জন্য এবং মুসলিম উম্মাতের দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত কিনা তা বিশেষভাবে যাচাই করে দেখা কর্তব্য। আমার ইবাদত ও আনুগত্য আল্লাহরই জন্য কিনা, অন্যদিকে নফসের দাসত্ব এবং পরিবার, গোত্র, বন্ধু-বান্ধব ও সমাজ তথা সরকারের বন্দেগী হতে আমার জীবন সম্পূর্ণরূপে মুক্ত কিনা, তাও সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। আমার পছন্দ-অপছন্দ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারিত কিনা তাও বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয়।
আরও বিচার করে দেখি, আমি যাকে ভালোবাসি, স্নেহ করি, তা কি একমাত্র আল্লাহর জন্য করি? যার প্রতি ঘৃণা পোষণ করি, তাও কি আল্লাহর জন্য করি? এ ঘৃণা ও ভালোবাসায় আমার নিজের কোনো স্বার্থ কাজ করে না তো? দেয়া না দেয়াও কি আল্লাহরই জন্য হচ্ছে? নিজের মন সহ দুনিয়ায় যাকে যা কিছু আমি দেই, তা দিয়ে কি আমি একমাত্র আল্লাহরই সন্তোষ পেতে চাই? পক্ষান্তরে আমার না দেয়াও কি ঠিব আল্লাহরই জন্য হচ্ছে? আমি কি এজন্য দিচ্ছি না যে, আল্লাহ দিতে নিষেধ করেছেন? এবং না দিয়ে কি আমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করছি? এরূপে সবকিছুই আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার ভাবধারা যদি আমি আমার নিজের মধ্যে বর্তমান দেখতে পাই তবে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করি। কেননা আল্লাহ সত্যই আমার ঈমানকে পূর্ণতা দান করেছেন। কিন্তু এদিক দিয়ে যদি আমি আমার মধ্যে কোনো প্রকার অভাব অনুভব করি, তবে তা দূর করার জন্য এখনই যত্নবান হওয়া উচিত, সবল চেষ্টা ও তৎপরতা এদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। কেননা এ অভাব পূরণের উপরই আমার ইহকালীন সাফল্য ও পরকালীন মুক্তি নির্ভর করে। দুনিয়ায় আমি কোনো মহাসম্পদ লাভ করলেও তা দ্বারা এ অভাব পূরণ হতে পারে না। কিন্তু এ অভাব যদি আমি পূরণ করে নিতে পারি, তবে দুনিয়ায় আমি কিছু না পেলেও প্রকৃতপক্ষে আমি কোনোরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হবো না।
স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরআন হাদীসের এ মাপমাঠিতে অপরকে যাচাই করার জন্য এবং তাকে মু'মিন কিংবা মুনাফিক অথবা মুসলিম কিংবা কাফির বলে ঘোষণা করার জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে নিজেকে বাঁচাবার জন্য এবং পরকালের বিচারালয়ের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার পূর্বে এ দুনিয়ায় নিজের ক্রটি জেনে তা সংশোধন করার জন্যই এ মাপকাঠি নির্ধারিত হয়েছে। দুনিয়ার মানুষ আমাকে কী মনে করেছে সেই চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই, মহাবিচারক-গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুর একমাত্র জ্ঞাতা-আল্লাহ আমাকে কী স্থান দেন তাই আমাকে চিন্তা করতে হবে। দুনিয়ার আদমশুমারীর খাতায় আমি মুসলিম রূপে গণ্য হয়েছি দেখেই আমার নিশ্চিত হয়ে বসে থাকা উচিত নয়। আল্লাহর কাছে আমার কী মর্যাদা দেয়া হচ্ছে সেই সম্পর্কে সতর্ক হওয়া আমার কর্তব্য। সমগ্র পৃথিবী আমাকে ঈমান ও ইসলামের সার্টিফিকেট দিলেও প্রকৃতপক্ষে আমার কোনো লাভ নেই। মূল বিচার যে আল্লাহর হাতে তাঁরই কাছে মুনাফিকের পরিবর্তে মু'মিন; অবাধ্যের পরিবর্তে অনুগত বান্দা রূপে গণ্য হওয়াই আমাদের জীবনের প্রকৃত সাফল্য।
পূর্বেই আমরা জেনেছি যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ মেনে চলার নামই ইসলাম এবং মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ইচ্ছা, বাপ-দাদার কুসংস্কার, দুনিয়ার রাজা-বাদশাহ ও লোকদের আদেশ অনুযায়ী চলা ছেড়ে দিয়ে কেবলমাত্র আল্লাহ ও রসূল (ﷺ) -এর আনুগত্য করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে না।
আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য কেন এতো জোর দেয়া হয়?
কিন্তু আল্লাহ ও রসূলের হুকুম পালন করার উপর এত জোর কেন দেয়া হয়, এখানে সেই কথারই বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। একজন মানুষ জিজ্ঞেস করতে পারে যে, আল্লাহর আনুগত্য করার দরকারটা কি, তিনি কি আমাদের আনুগত্য পাবার মুখাপেক্ষী? আর সে জন্যই কি আল্লাহ আমাদের কাছে তাঁর নিজের এবং তাঁর রসূলের হুকুম পালন করে চলার দাবী করছেন? দুনিয়ার রাজা-বাদশাহরা যে রকম নিজেদের কর্তৃত্ব চালাবার জন্য লালায়িত, আল্লাহ কি তেমন লালায়িত? দুনিয়ার জনগণ যেমন বলে যে, আমার প্রভুত্ব স্বীকার করো আল্লাহও কি তেমনি বলেন?
আসল কথা এই যে, আল্লাহ মানুষের কাছে তার আনুগত্য দাবী করেন তাঁর নিজের স্বার্থের জন্য নয়। বরং এ মানুষেরই কল্যাণের জন্য তিনি তা চাচ্ছেন। আল্লাহ দুনিয়ার রাজা-বাদশাহর মত নন, দুনিয়ার রাজা ও রাজ-কর্মচারীগণ তো শুধু নিজেদেরই স্বার্থের জন্য লোকদের উপর তাদের আদেশ চালায় লোকদেরকে নিজেদের ইচ্ছার গোলাম বানাতে চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহর কোনো স্বার্থ নেই, তিনি সকল রকম স্বার্থের নীচতা হতে পবিত্র। আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করার কোনো দরকার আল্লাহর নেই। বাড়ি তৈরি করা, গাড়ী ক্রয় করা কিংবা আমাদের টাকা-পয়সা, বিলাস-সামগ্রি বা আরাম আয়েশের সামগ্রী সংগ্রহ করার কোনো প্রয়োজনই তার নেই। তিনি পাক-পবিত্র, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। দুনিয়ার সবকিছুই তাঁর, সমস্ত ধন-সম্পদের তিনিই একমাত্র মালিক। তিনি আমাদেরকে তাঁর হুকুম মেনে চলতে এবং তাঁর আনুগত্য করতে বলেন, শুধু আমাদেরই মংগলের জন্য-আমাদেরই কল্যাণ করতে চান তিনি।
তিনি মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত করে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর এ শ্রেষ্ঠ মাখলুক বা বিরাট সৃষ্টি মানুষেরা শয়তানের গোলামী করুক, কিংবা অন্য মানুষের দাস হোক অথবা দুনিয়ার সামান্য ও হীন জিনিসের সামনে মাথা নত করুক এটা তিনি মাত্রই পছন্দ করেন না। তিনি যে মানুষকে দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি বানিয়েছেন, তারা মুখতার অন্ধকারে ঘুরে মরুক এবং পশুর মতো নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী চলে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট প্রাণীতে পরিণত হোক-এটাও তাঁর মনপুত নয়।
“দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে কোনো জোর-যবরদস্তি নেই। হিদায়াতের সোজা পথ গোমরাহীর বাঁকা পথ হতে ভিন্ন করে একেবারে পরিষ্কার করে দেখানো হয়েছে। এখন তোমাদের মধ্যে যারাই মিথ্যা প্রভু এবং ভ্রান্ত পথে চালনাকারীদেরকে ত্যাগ করে কেবল এক আল্লাহর প্রতিই ঈমান আনবে, তারা এত মযবুত রঞ্জু ধারণ করতে পারবে, যা কখনই ছিড়ে যাবার নয়। আল্লাহ সবকিছুই শুনতে পান এবং সবকিছুই তিনি অবগত আছেন। যারা ঈমান আনলো তাদের রক্ষাকারী হচ্ছেন আল্লাহ, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে মুক্তি দান করে আলোকের উজ্জলতম পথে নিয়ে যান। আর যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদেরকে রক্ষা করার ভার তাদের মিথ্যা প্রভু ও গোমরাহকারী নেতাদের উপর অর্পিত হয়। তারা তাদেরকে আলো হতে পথভ্রষ্ট অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। তারা জাহান্নামে যাবে ও সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।” (সূরা বাকারা ২: ২৫৬-২৫৭)
আল্লাহকে ছেড়ে অন্যান্য মিথ্যা প্রভুর হুকুম মানলে ও তাদের আনুগত্য করলে মানুষ কেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, আর কেবল আল্লাহর আনুগত্য করলেই কেন আলোকোজ্জল পথ লাভ করা যাবে তা আমাদের বিচার করে দেখা আবশ্যক।
আমরা দেখেছি, দুনিয়ায় আমাদের জীবন অসংখ্য রকম সম্পর্কের সাথে জড়িত। আমাদের প্রথম সম্পর্ক আমাদের দেহের সাথে। হাত, পা, কান, চোখ, জিহ্বা, মন, মগ এবং পেট সমস্তই আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন আমাদের নিজেদের খেদমত করার জন্য। কিন্তু এগুলো দ্বারা আমরা কিভাবে খেদমত নিবো, তা আমাদেরই বিচার করতে হবে। পেটকে কী খেতে দেবো এবং কী খেতে দিবো না; হাত দ্বারা কী করবো, কী করবো না; পা দু'খানিকে কোন্ পথে চালাবো কোন্ পথে চালাবো না; চোখ ও কান দ্বারা কী কাজ করাবো আর কী কাজ করাবো না; মনে কোন্ কথার খেয়াল রাখবো আর কোন কথার রাখবো না; মন-মগ দিয়ে কোন কথার চিন্তা করবো আর কোন্ কথার চিন্তা করবো না-এসবই আমাকে সবদিক চিন্তা করে ঠিক করতে হবে। এরা সবাই আমার অধীন এদের দ্বারা আমি ভালো কাজও করাতে পারি, আর পাপের কাজও করাতে পারি। এরা আমার কাজ করে আমাকে উচ্চতম মর্যাদার মানুষেও পরিণত করতে পারে আবার এরা আমাকে জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট ও নীচ জীবও বানিয়ে দিতে পারে।
অতঃপর আমার নিকটতম সম্বন্ধ আমার ঘরের লোকদের সাথে বাবা-মা, ভাই বোন, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন সকলের সাথে আমাকে রাত দিন সকল সময়ের জন্য সম্পর্ক রেখে চলতে হয়। কিন্তু এদের সাথে আমি কিরূপ ব্যবহার করবো, তা আমাকে বিশেষভাবে চিন্তা করে ঠিক করতে হবে। এদের উপর আমার কী ‘হক (অধিকার) আছে এবং আমার উপরই বা এদের কী অধিকার আছে, তা আমার ভালো করে জেনে নেয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, এদের সাথে আমার ব্যবহার সুষ্ঠু হওয়ার উপরই আমার দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ-শান্তি ও সফলতা নির্ভর করে। যদি এদের সাথে আমি ভুল ব্যবহার করি তবে দুনিয়াকেই আমি নিজের জন্য জাহান্নামে পরিণত করবো। আর শুধু দুনিয়াই নয়, পরকালেও আমাকে আল্লাহর কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।
এরপর আসে দুনিয়ার অন্যান্য অগণিত লোকের সাথে আমার সম্পর্কের কথা। অনেক লোক আমার পাড়া-প্রতিবেশী, অনেক লোক আমার বন্ধু, কতগুলো লোক আমার শত্ৰত। বহু লোক আমার খেদমত করে এবং আমি বহু লোকের খেদমত করি। আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করি এবং কাউকে আমি কিছু দেই। কেউ আমার উপর ভরসা করে তার কাজের ভার আমাকে দেয়, আবার আমি কারো উপর ভরসা করে আমার কাজের ভার তার উপর অর্পণ করি। কেউ আমার বিচারক আর আমি অন্য কারো বিচারক। আমি কাউকে হুকুম দেই আবার আমাকে কেউ হুকুম দেয়। ফলকথা, কত সংখ্যক লোকের সাথে আমার রাত-দিন কোনো না কোনো সম্পর্ক রেখেই চলতে হয়, যার হিসাব করে আমি শেষ করতে পারবো না। এ সম্পর্কগুলো আমাকে খুব ভালোভাবেই রক্ষা করতে হয়। দুনিয়ায় আমার সুখ-শান্তি, পছন্দ-অপছন্দ, আনন্দ, সফলতা, মান-সম্মান ও সুনাম অর্জন একান্তভাবে এরই উপর নির্ভর করে। সেগুলোকে খুব ভালোভাবে রক্ষা করতে পারলে আমি দুনিয়ায় সুখ-শান্তি এবং আনন্দ ও গৌরব লাভ করতে পারি, নতুবা পারি না।
অনুরূপভাবে যদি পরকালে আমি আল্লাহর কাছে কারোও অধিকার হরণকারী সাব্যস্ত না হয়ে হাজির হতে পারি, তাহলে আমি তার কাছে সম্মান লাভ করতে পারি এবং সেজন্য আমাকে এমনভাবে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হতে হবে যেন আমি কারো হক নষ্ট করিনি, কারো উপর যুলুম করিনি, কেউ আমার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ করেনি, কারো জীবন নষ্ট করার দায়িত্ব আমার উপর নেই এবং কারো জান-মাল ও সম্মান আমি অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করিনি। কাজেই এখন আমাকে এই ফায়সালা করতে হবে যে, এই অগণিত লোকের সাথে সঠিকভাবে সম্পর্ক কিভাবে রাখা যাবে এবং যেসব কারণে এসব সম্পর্ক ছিন্ন, নষ্ট বা তিক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে তা জেনে নিয়ে তা থেকে আমাকে ফিরে থাকতে হবে।
আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য কেন এতো জোর দেয়া হয়?
কিন্তু আল্লাহ ও রসূলের হুকুম পালন করার উপর এত জোর কেন দেয়া হয়, এখানে সেই কথারই বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। একজন মানুষ জিজ্ঞেস করতে পারে যে, আল্লাহর আনুগত্য করার দরকারটা কি, তিনি কি আমাদের আনুগত্য পাবার মুখাপেক্ষী? আর সে জন্যই কি আল্লাহ আমাদের কাছে তাঁর নিজের এবং তাঁর রসূলের হুকুম পালন করে চলার দাবী করছেন? দুনিয়ার রাজা-বাদশাহরা যে রকম নিজেদের কর্তৃত্ব চালাবার জন্য লালায়িত, আল্লাহ কি তেমন লালায়িত? দুনিয়ার জনগণ যেমন বলে যে, আমার প্রভুত্ব স্বীকার করো আল্লাহও কি তেমনি বলেন?
আসল কথা এই যে, আল্লাহ মানুষের কাছে তার আনুগত্য দাবী করেন তাঁর নিজের স্বার্থের জন্য নয়। বরং এ মানুষেরই কল্যাণের জন্য তিনি তা চাচ্ছেন। আল্লাহ দুনিয়ার রাজা-বাদশাহর মত নন, দুনিয়ার রাজা ও রাজ-কর্মচারীগণ তো শুধু নিজেদেরই স্বার্থের জন্য লোকদের উপর তাদের আদেশ চালায় লোকদেরকে নিজেদের ইচ্ছার গোলাম বানাতে চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহর কোনো স্বার্থ নেই, তিনি সকল রকম স্বার্থের নীচতা হতে পবিত্র। আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করার কোনো দরকার আল্লাহর নেই। বাড়ি তৈরি করা, গাড়ী ক্রয় করা কিংবা আমাদের টাকা-পয়সা, বিলাস-সামগ্রি বা আরাম আয়েশের সামগ্রী সংগ্রহ করার কোনো প্রয়োজনই তার নেই। তিনি পাক-পবিত্র, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। দুনিয়ার সবকিছুই তাঁর, সমস্ত ধন-সম্পদের তিনিই একমাত্র মালিক। তিনি আমাদেরকে তাঁর হুকুম মেনে চলতে এবং তাঁর আনুগত্য করতে বলেন, শুধু আমাদেরই মংগলের জন্য-আমাদেরই কল্যাণ করতে চান তিনি।
তিনি মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত করে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর এ শ্রেষ্ঠ মাখলুক বা বিরাট সৃষ্টি মানুষেরা শয়তানের গোলামী করুক, কিংবা অন্য মানুষের দাস হোক অথবা দুনিয়ার সামান্য ও হীন জিনিসের সামনে মাথা নত করুক এটা তিনি মাত্রই পছন্দ করেন না। তিনি যে মানুষকে দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি বানিয়েছেন, তারা মুখতার অন্ধকারে ঘুরে মরুক এবং পশুর মতো নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী চলে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট প্রাণীতে পরিণত হোক-এটাও তাঁর মনপুত নয়।
“দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে কোনো জোর-যবরদস্তি নেই। হিদায়াতের সোজা পথ গোমরাহীর বাঁকা পথ হতে ভিন্ন করে একেবারে পরিষ্কার করে দেখানো হয়েছে। এখন তোমাদের মধ্যে যারাই মিথ্যা প্রভু এবং ভ্রান্ত পথে চালনাকারীদেরকে ত্যাগ করে কেবল এক আল্লাহর প্রতিই ঈমান আনবে, তারা এত মযবুত রঞ্জু ধারণ করতে পারবে, যা কখনই ছিড়ে যাবার নয়। আল্লাহ সবকিছুই শুনতে পান এবং সবকিছুই তিনি অবগত আছেন। যারা ঈমান আনলো তাদের রক্ষাকারী হচ্ছেন আল্লাহ, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে মুক্তি দান করে আলোকের উজ্জলতম পথে নিয়ে যান। আর যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদেরকে রক্ষা করার ভার তাদের মিথ্যা প্রভু ও গোমরাহকারী নেতাদের উপর অর্পিত হয়। তারা তাদেরকে আলো হতে পথভ্রষ্ট অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। তারা জাহান্নামে যাবে ও সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।” (সূরা বাকারা ২: ২৫৬-২৫৭)
আল্লাহকে ছেড়ে অন্যান্য মিথ্যা প্রভুর হুকুম মানলে ও তাদের আনুগত্য করলে মানুষ কেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, আর কেবল আল্লাহর আনুগত্য করলেই কেন আলোকোজ্জল পথ লাভ করা যাবে তা আমাদের বিচার করে দেখা আবশ্যক।
আমরা দেখেছি, দুনিয়ায় আমাদের জীবন অসংখ্য রকম সম্পর্কের সাথে জড়িত। আমাদের প্রথম সম্পর্ক আমাদের দেহের সাথে। হাত, পা, কান, চোখ, জিহ্বা, মন, মগ এবং পেট সমস্তই আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন আমাদের নিজেদের খেদমত করার জন্য। কিন্তু এগুলো দ্বারা আমরা কিভাবে খেদমত নিবো, তা আমাদেরই বিচার করতে হবে। পেটকে কী খেতে দেবো এবং কী খেতে দিবো না; হাত দ্বারা কী করবো, কী করবো না; পা দু'খানিকে কোন্ পথে চালাবো কোন্ পথে চালাবো না; চোখ ও কান দ্বারা কী কাজ করাবো আর কী কাজ করাবো না; মনে কোন্ কথার খেয়াল রাখবো আর কোন কথার রাখবো না; মন-মগ দিয়ে কোন কথার চিন্তা করবো আর কোন্ কথার চিন্তা করবো না-এসবই আমাকে সবদিক চিন্তা করে ঠিক করতে হবে। এরা সবাই আমার অধীন এদের দ্বারা আমি ভালো কাজও করাতে পারি, আর পাপের কাজও করাতে পারি। এরা আমার কাজ করে আমাকে উচ্চতম মর্যাদার মানুষেও পরিণত করতে পারে আবার এরা আমাকে জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট ও নীচ জীবও বানিয়ে দিতে পারে।
অতঃপর আমার নিকটতম সম্বন্ধ আমার ঘরের লোকদের সাথে বাবা-মা, ভাই বোন, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন সকলের সাথে আমাকে রাত দিন সকল সময়ের জন্য সম্পর্ক রেখে চলতে হয়। কিন্তু এদের সাথে আমি কিরূপ ব্যবহার করবো, তা আমাকে বিশেষভাবে চিন্তা করে ঠিক করতে হবে। এদের উপর আমার কী ‘হক (অধিকার) আছে এবং আমার উপরই বা এদের কী অধিকার আছে, তা আমার ভালো করে জেনে নেয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, এদের সাথে আমার ব্যবহার সুষ্ঠু হওয়ার উপরই আমার দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ-শান্তি ও সফলতা নির্ভর করে। যদি এদের সাথে আমি ভুল ব্যবহার করি তবে দুনিয়াকেই আমি নিজের জন্য জাহান্নামে পরিণত করবো। আর শুধু দুনিয়াই নয়, পরকালেও আমাকে আল্লাহর কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।
এরপর আসে দুনিয়ার অন্যান্য অগণিত লোকের সাথে আমার সম্পর্কের কথা। অনেক লোক আমার পাড়া-প্রতিবেশী, অনেক লোক আমার বন্ধু, কতগুলো লোক আমার শত্ৰত। বহু লোক আমার খেদমত করে এবং আমি বহু লোকের খেদমত করি। আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করি এবং কাউকে আমি কিছু দেই। কেউ আমার উপর ভরসা করে তার কাজের ভার আমাকে দেয়, আবার আমি কারো উপর ভরসা করে আমার কাজের ভার তার উপর অর্পণ করি। কেউ আমার বিচারক আর আমি অন্য কারো বিচারক। আমি কাউকে হুকুম দেই আবার আমাকে কেউ হুকুম দেয়। ফলকথা, কত সংখ্যক লোকের সাথে আমার রাত-দিন কোনো না কোনো সম্পর্ক রেখেই চলতে হয়, যার হিসাব করে আমি শেষ করতে পারবো না। এ সম্পর্কগুলো আমাকে খুব ভালোভাবেই রক্ষা করতে হয়। দুনিয়ায় আমার সুখ-শান্তি, পছন্দ-অপছন্দ, আনন্দ, সফলতা, মান-সম্মান ও সুনাম অর্জন একান্তভাবে এরই উপর নির্ভর করে। সেগুলোকে খুব ভালোভাবে রক্ষা করতে পারলে আমি দুনিয়ায় সুখ-শান্তি এবং আনন্দ ও গৌরব লাভ করতে পারি, নতুবা পারি না।
অনুরূপভাবে যদি পরকালে আমি আল্লাহর কাছে কারোও অধিকার হরণকারী সাব্যস্ত না হয়ে হাজির হতে পারি, তাহলে আমি তার কাছে সম্মান লাভ করতে পারি এবং সেজন্য আমাকে এমনভাবে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হতে হবে যেন আমি কারো হক নষ্ট করিনি, কারো উপর যুলুম করিনি, কেউ আমার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ করেনি, কারো জীবন নষ্ট করার দায়িত্ব আমার উপর নেই এবং কারো জান-মাল ও সম্মান আমি অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করিনি। কাজেই এখন আমাকে এই ফায়সালা করতে হবে যে, এই অগণিত লোকের সাথে সঠিকভাবে সম্পর্ক কিভাবে রাখা যাবে এবং যেসব কারণে এসব সম্পর্ক ছিন্ন, নষ্ট বা তিক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে তা জেনে নিয়ে তা থেকে আমাকে ফিরে থাকতে হবে।
এখন আমরা চিন্তা করি যে, আমাদের দেহের সাথে, আমাদের পরিবারের লোকদের সাথে এবং দুনিয়ার অন্যান্য সমস্ত লোকের সাথে সঠিক সম্পর্ক রাখার জন্য জীবনের প্রতি ধাপে জ্ঞানের উজ্জল আলো লাভ করা আমাদের কতখানি আবশ্যক। প্রতি ধাপে আমার জানা চাই যে, কোটা মিথ্যা? সুবিচার কী এবং যুলুম কী? আমার উপর কার কী পরিমাণ অধিকার আছে এবং আমারই বা কার উপর কী পরিমাণ অধিকার আছে? জীবনের কোন্ কাজে প্রকৃত উপকার পাওয়া যাবে আর কিসে আসল ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে? কিন্তু এসব কিছুর জ্ঞান আমি কোথায় পেতে পারি? এটা যদি আমি আমার মনের কাছে জানতে চাই, তবে সেখানে তা পাবো না। কারণ আমার মন নিজেই অজ্ঞ ও মূখ, নিজের স্বার্থ ও অসৎ কামনা ছাড়া আর তেমন কিছুই তার জানা নেই। সে তো বলবে ও মিথ্যা কথা বল, গীবত কর, যিনা কর, সুদ খাও, হারাম উপায়ে টাকা রোযগার কর। কারণ এসব কাজে খুবই আনন্দ আছে। সে বলবে, সকলেরই হক মেরে খাও, কাউকে হক দিও না। কারণ তাতে লাভও আছে, আরামও আছে। এমন একটা অজ্ঞ-মূখের হাতে যদি আমি আমার জীবনের রজু ছেড়ে দেই-মন যা চায়, যদি কেবল তাই করি, তবে এটা আমাকে একেবারে অধঃপতনের চরম সীমায় নিয়ে যাবে। এমনকি, পরিণামে আমি একজন নিকৃষ্ট স্বার্থপর, হীনচেতা ও পাপিষ্ঠে পরিণত হবে। এতে আমার দ্বীন-দুনিয়া সবকিছুই নষ্ট হবে।
দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে এই যে, আমি আমার মনের ইচ্ছার কথা না শুনে আমারই মতো অন্য মানুষের উপর একান্তভাবে নির্ভর করবো এবং প্রত্যেক কাজেই আমি সেই লোকদের কথামত কাজ করবো। তারা যেদিকে চালায়, আমি অন্ধভাবে সেদিকেই চলবো। এ পথ যদি অবলম্বন করি, তবে কোনো স্বার্থপর লোক এসে আমাকে তার নিজের ইচ্ছামত পরিচালিত এবং নিজের স্বার্থোদ্ধারের জন্য ব্যবহার করতে পারে, এর খুবই আশংকা আছে। কিংবা কোনো মূখ ও পথভ্রষ্ট লোক এসে আমাকেও বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। অথবা কোনো যালিম ব্যক্তি আমাকে হাতিয়ার স্বরূপ গ্রহণ করে আমার দ্বারা অন্যের উপর যুলুম করাতে পারে।
মোটকথা, অন্য লোকের অনুসরণ করলেও আমি জ্ঞানের সেই জরুরী আলো লাভ করতে পারি না, যা আমাকে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝাতে, ন্যায় ও অন্যায় বলে দিতে পারে এবং আমার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে এই যে, আমি আমার মনের ইচ্ছার কথা না শুনে আমারই মতো অন্য মানুষের উপর একান্তভাবে নির্ভর করবো এবং প্রত্যেক কাজেই আমি সেই লোকদের কথামত কাজ করবো। তারা যেদিকে চালায়, আমি অন্ধভাবে সেদিকেই চলবো। এ পথ যদি অবলম্বন করি, তবে কোনো স্বার্থপর লোক এসে আমাকে তার নিজের ইচ্ছামত পরিচালিত এবং নিজের স্বার্থোদ্ধারের জন্য ব্যবহার করতে পারে, এর খুবই আশংকা আছে। কিংবা কোনো মূখ ও পথভ্রষ্ট লোক এসে আমাকেও বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। অথবা কোনো যালিম ব্যক্তি আমাকে হাতিয়ার স্বরূপ গ্রহণ করে আমার দ্বারা অন্যের উপর যুলুম করাতে পারে।
মোটকথা, অন্য লোকের অনুসরণ করলেও আমি জ্ঞানের সেই জরুরী আলো লাভ করতে পারি না, যা আমাকে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝাতে, ন্যায় ও অন্যায় বলে দিতে পারে এবং আমার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
এরপর একটি মাত্র উৎসই থাকে যার থেকে আমি আমার এ অত্যাবশ্যক জ্ঞানের আলো লাভ করতে পারি। সেই উপায়টি হচ্ছে আমার ও নিখিল জাহানের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ সবকিছুই অবগত আছেন, সবকিছুই দেখতে পান, প্রত্যেকটি জিনিসের প্রকৃতি তিনি ভাল করে জানেন ও বুঝেন। একমাত্র তিনিই বলে দিতে পারেন যে, কোন্ জিনিসে আমার প্রকৃত উপকার, আর কোন্ জিনিসে আমার আসল ক্ষতি হতে পারে, কোন্ কাজ আমার করা উচিত, কোন কাজ করা উচিত নয়- তা একমাত্র তিনিই বলে দিতে পারেন। আল্লাহর কোনো কিছুর অভাব নেই, তাঁর কোনো স্বার্থ নেই, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোনো জিনিসের প্রয়োজন নেই। তিনি ধোঁকা দিয়ে (নাউযুবিল্লাহ) আমার কাছ থেকে তাঁর নিজের কোনো স্বার্থ আদায় করবেন না। কারণ তিনি পাক-পবিত্র, তিনি সবকিছুরই মালিক, তিনি যা কিছু পরামর্শ দিবেন তার মধ্যে তাঁর নিজের স্বার্থের কোনো গন্ধ নেই এবং তা কেবল আমারই উপকারের জন্য। এছাড়া আল্লাহ ন্যায় বিচারক, তিনি কখনই কারো উপর অবিচার করেন না। কাজেই তাঁর সকল পরামর্শ নিশ্চিয়ই নিরপেক্ষ, ন্যায় ও ফলপ্রসু হবে। তাঁর আদেশ অনুযায়ী চললে আমার নিজের উপর বা অন্য কারো উপর কোনো যুলুম হবার আশংকা নেই।
আল্লাহর কাছ থেকে যে আলো পাওয়া যায়, তা থেকে কল্যাণ লাভ করা দুটি জিনিসের উপর একান্তভাবে নির্ভর করে।
প্রথম জিনিস এই যে, আল্লাহ এবং তিনি যে নবীর সাহায্যে এ আলো পাঠিয়েছেন সেই নারীর প্রতি আমাকে প্রকৃত ঈমান আনতে হবে, আমাকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহর কাছ থেকে তার রসূল (ﷺ) যে বিধান ও উপদেশ নিয়ে এসেছেন, তা সম্পূর্ণ সত্য; তার সত্যিকার উপকারিতা যদি আমি অনুভব করতে না-ও পারি তবুও আমাকে একথা বিশ্বাস করতে হবে।
দ্বিতীয়, ঈমান আনার পর আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটি কাজেই আল্লাহর সেই বিধান অনুসরণ করে চলবো। কারণ তার প্রতি ঈমান আনার পর কার্যত তাঁর অনুসরণ না করলে সেই আলো হতে কিছুমাত্র ফল পাওয়া যেতে পারে না। মনে করি, কোনো ব্যক্তি আমাকে বললো, অমুক জিনিসটি বিষ, তা প্রাণীর প্রাণ নাশ করে; কাজেই তা খেও না। আমি বললাম, হ্যা ভাই, তুমি যা বলছ তা খুবই সত্য, তা যে বিষ এবং তা প্রাণ ধবংস করে, তাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু এ সত্য জেনেশুনে বিশ্বাস করে এবং মুখে স্বীকার করেও আমি তা খেলাম। এখন বিষের যা আসল ক্রিয়া তা তো হবেই। জেনে খেলেও হবে, না জেনে খেলেও হবে। আমি তা না জেনে খেলেও জেনে খাওয়ার মত একই ফল হতো। এরূপ জানা ও না জানার মধ্যে কার্যত কোনো পার্থক্য নেই। আর এরূপ জানা এবং স্বীকার করার প্রকৃত ফল। ও উপকারিতা আমি ঠিক তখনই পেতে পারি যখন আমি কোনো সত্য জানার ও স্বীকার করার সাথে সাথে সেই অনুসারে কাজ করবো। আমাকে যে কাজের হুকুম দেয়া হয়েছে, কেবল মুখে মুখে তাকে সত্য বলে স্বীকার করে বসে থাকবো না বরং তাকে কাজে পরিণত করবো। আর যে কাজ করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, শুধু মুখে মুখে তা থেকে ফিরে থাকার কথা মেনে নিলে চলবে না, বরং আমার জীবনের সমস্ত কাজকর্মেই সেই নিষিদ্ধ কাজ হতে ফিরে থাকতে হবে।
এজন্য আল্লাহ বার বার বলেছেন : “আল্লাহ ও রসূলের হুকুম মেনে চল।” (সূরা আন নিসা ৪: ৫৯)
“যদি তোমরা রসূলের অনুসরণ কর, তবেই তোমরা সৎপথের সন্ধান পাবে।” (সূরা আন নূর ২৪ : ৫৪)
“যারা আমার রসূলের হুকুমের বিরোধিতা করছে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর বিপদ আসতে পারে।” (সূরা আন নূর ২৪ : ৬৩)
অন্ধভাবে কাউকে মানা যাবে না:
আমাদের কেবল আল্লাহ এবং তাঁর রসূলেরই আনুগত্য করা উচিত; এর অর্থ এই নয় যে, কোনো মানুষের হুকুম আদৌ মানতে হবে না। আসলে এর অর্থ এই যে, আমরা অন্ধ হয়ে কারো পিছনে চলবো না। সবসময়ই আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কেবল এটাই দেখবো যে, যে ব্যক্তি আমাকে কোনো কাজ করতে বলে, তা আল্লাহ ও রসূলের হুকুমের অনুরূপ, না তার বিপরীত। যদি তার অনুরূপ হয়, তবে তা মেনে নেয়া অবশ্যই কর্তব্য। কারণ, সেই হুকুম মতো কাজ করলে তাতে আসলে সেই ব্যক্তির নিজের হুকুম পালন করা হয় না, তা করলে আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলেরই আনুগত্য করা হবে। আর সে যদি আল্লাহ ও রসূলের হুকুমের বিপরীত হুকুম দেয়, তবে তা গ্রহণ না করা, সে যে ব্যক্তিই হোক না কেন। কারণ, আল্লাহ ও রসূলের হুকুম ছাড়া অন্য কারো হুকুম পালন করা একেবারেই জায়েয নাই।
আমরা একথা সহজেই বুঝতে পারি যে, আল্লাহ নিজে মানুষের সামনে এসে হুকুম দেন না, তাঁর যা কিছু হুকুম-আহকাম দেয়ার ছিল, তা সবই তাঁর রসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। আমাদের সেই প্রিয় নবীও প্রায় চৌদ্দশত বছর পূর্বে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। তাঁর কাছে আল্লাহ যা কিছু হুকুম-আহকাম দিয়েছিলেন, তা সবই এখন কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নিহিত আছে। কিন্তু এ কুরআনুল কারীম এমন কোনো জিনিস নয়, যা নিজেই আমাদের সামনে এসে আমাদেরকে আল্লাহর কথা বলতে ও হুকুম দান করতে পারে এবং আমাদেরকে আল্লাহর নিষিদ্ধ পথ হতে বিরত রাখতে পারে। মানুষই আমাদেরকে কুরআন ও হাদীস অনুসারে পরিচালিত করবে। কাজেই মানুষের অনুসরণ না করে তো কোনো উপায় নেই। অবশ্য অপরিহার্য কর্তব্য এই যে, আমরা কোনো মানুষের পিছনে অন্ধভাবে চলবো না। আমরা সতর্কভাবে শুধু এতটুকুই দেখবো যে, সেই লোকেরা আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসারে পরিচালিত করে কিনা। যদি কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসারে চালায় তবে তাদের অনুসরণ করা আমাদের কর্তব্য এবং তার বিপরীত পথে চালালে তাদের অনুসরণ করা পরিষ্কার হারাম।
আল্লাহর কাছ থেকে যে আলো পাওয়া যায়, তা থেকে কল্যাণ লাভ করা দুটি জিনিসের উপর একান্তভাবে নির্ভর করে।
প্রথম জিনিস এই যে, আল্লাহ এবং তিনি যে নবীর সাহায্যে এ আলো পাঠিয়েছেন সেই নারীর প্রতি আমাকে প্রকৃত ঈমান আনতে হবে, আমাকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহর কাছ থেকে তার রসূল (ﷺ) যে বিধান ও উপদেশ নিয়ে এসেছেন, তা সম্পূর্ণ সত্য; তার সত্যিকার উপকারিতা যদি আমি অনুভব করতে না-ও পারি তবুও আমাকে একথা বিশ্বাস করতে হবে।
দ্বিতীয়, ঈমান আনার পর আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটি কাজেই আল্লাহর সেই বিধান অনুসরণ করে চলবো। কারণ তার প্রতি ঈমান আনার পর কার্যত তাঁর অনুসরণ না করলে সেই আলো হতে কিছুমাত্র ফল পাওয়া যেতে পারে না। মনে করি, কোনো ব্যক্তি আমাকে বললো, অমুক জিনিসটি বিষ, তা প্রাণীর প্রাণ নাশ করে; কাজেই তা খেও না। আমি বললাম, হ্যা ভাই, তুমি যা বলছ তা খুবই সত্য, তা যে বিষ এবং তা প্রাণ ধবংস করে, তাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু এ সত্য জেনেশুনে বিশ্বাস করে এবং মুখে স্বীকার করেও আমি তা খেলাম। এখন বিষের যা আসল ক্রিয়া তা তো হবেই। জেনে খেলেও হবে, না জেনে খেলেও হবে। আমি তা না জেনে খেলেও জেনে খাওয়ার মত একই ফল হতো। এরূপ জানা ও না জানার মধ্যে কার্যত কোনো পার্থক্য নেই। আর এরূপ জানা এবং স্বীকার করার প্রকৃত ফল। ও উপকারিতা আমি ঠিক তখনই পেতে পারি যখন আমি কোনো সত্য জানার ও স্বীকার করার সাথে সাথে সেই অনুসারে কাজ করবো। আমাকে যে কাজের হুকুম দেয়া হয়েছে, কেবল মুখে মুখে তাকে সত্য বলে স্বীকার করে বসে থাকবো না বরং তাকে কাজে পরিণত করবো। আর যে কাজ করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, শুধু মুখে মুখে তা থেকে ফিরে থাকার কথা মেনে নিলে চলবে না, বরং আমার জীবনের সমস্ত কাজকর্মেই সেই নিষিদ্ধ কাজ হতে ফিরে থাকতে হবে।
এজন্য আল্লাহ বার বার বলেছেন : “আল্লাহ ও রসূলের হুকুম মেনে চল।” (সূরা আন নিসা ৪: ৫৯)
“যদি তোমরা রসূলের অনুসরণ কর, তবেই তোমরা সৎপথের সন্ধান পাবে।” (সূরা আন নূর ২৪ : ৫৪)
“যারা আমার রসূলের হুকুমের বিরোধিতা করছে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর বিপদ আসতে পারে।” (সূরা আন নূর ২৪ : ৬৩)
অন্ধভাবে কাউকে মানা যাবে না:
আমাদের কেবল আল্লাহ এবং তাঁর রসূলেরই আনুগত্য করা উচিত; এর অর্থ এই নয় যে, কোনো মানুষের হুকুম আদৌ মানতে হবে না। আসলে এর অর্থ এই যে, আমরা অন্ধ হয়ে কারো পিছনে চলবো না। সবসময়ই আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কেবল এটাই দেখবো যে, যে ব্যক্তি আমাকে কোনো কাজ করতে বলে, তা আল্লাহ ও রসূলের হুকুমের অনুরূপ, না তার বিপরীত। যদি তার অনুরূপ হয়, তবে তা মেনে নেয়া অবশ্যই কর্তব্য। কারণ, সেই হুকুম মতো কাজ করলে তাতে আসলে সেই ব্যক্তির নিজের হুকুম পালন করা হয় না, তা করলে আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলেরই আনুগত্য করা হবে। আর সে যদি আল্লাহ ও রসূলের হুকুমের বিপরীত হুকুম দেয়, তবে তা গ্রহণ না করা, সে যে ব্যক্তিই হোক না কেন। কারণ, আল্লাহ ও রসূলের হুকুম ছাড়া অন্য কারো হুকুম পালন করা একেবারেই জায়েয নাই।
আমরা একথা সহজেই বুঝতে পারি যে, আল্লাহ নিজে মানুষের সামনে এসে হুকুম দেন না, তাঁর যা কিছু হুকুম-আহকাম দেয়ার ছিল, তা সবই তাঁর রসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। আমাদের সেই প্রিয় নবীও প্রায় চৌদ্দশত বছর পূর্বে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। তাঁর কাছে আল্লাহ যা কিছু হুকুম-আহকাম দিয়েছিলেন, তা সবই এখন কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নিহিত আছে। কিন্তু এ কুরআনুল কারীম এমন কোনো জিনিস নয়, যা নিজেই আমাদের সামনে এসে আমাদেরকে আল্লাহর কথা বলতে ও হুকুম দান করতে পারে এবং আমাদেরকে আল্লাহর নিষিদ্ধ পথ হতে বিরত রাখতে পারে। মানুষই আমাদেরকে কুরআন ও হাদীস অনুসারে পরিচালিত করবে। কাজেই মানুষের অনুসরণ না করে তো কোনো উপায় নেই। অবশ্য অপরিহার্য কর্তব্য এই যে, আমরা কোনো মানুষের পিছনে অন্ধভাবে চলবো না। আমরা সতর্কভাবে শুধু এতটুকুই দেখবো যে, সেই লোকেরা আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসারে পরিচালিত করে কিনা। যদি কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসারে চালায় তবে তাদের অনুসরণ করা আমাদের কর্তব্য এবং তার বিপরীত পথে চালালে তাদের অনুসরণ করা পরিষ্কার হারাম।
ধর্ম সম্বন্ধে কথাবার্তা বলার সময় আমরা দুটি শব্দ প্রায়ই শুনে থাকি এবং আমরা নিজেরাও প্রায়ই বলে থাকি। সেই দু’টি শব্দের একটি হচ্ছে দ্বীন; দ্বিতীয়টি হচ্ছে শরীয়াত। কিন্তু অনেক কম লোকই এ শব্দ দুটির অর্থ ও তাৎপর্য ভালো করে জানে। যারা লেখাপড়া জানে না, তারা এর অর্থ না জানলে তা কোনো অপরাধের কথা নয়; কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, ভালো ভালো শিক্ষিত লোকেরা- এমন কি বহু মৌলভী সাহেব পর্যন্ত শব্দ দুটির সঠিক অর্থ এবং এ দু’টির পারস্পরিক পার্থক্য সম্পর্কে আদৌ পরিষ্কার নন। এ দুটির অর্থ ভালো করে না জানায় অনেক সময় দ্বীনকে শরীয়াতের সাথে এবং শরীয়াতকে দ্বীনের সাথে একেবারে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দেয়া হয়। এতে অনেক প্রকার ভুল বুঝাবুঝি হয়ে থাকে।
দ্বীন শব্দের অর্থ :
দ্বীন শব্দের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। প্রথম ও শক্তি, কর্তৃত্ব হুকুমাত, রাজত্ব-আধিপত্য এবং শাসন ক্ষমতা। দ্বিতীয় ও এর সম্পূর্ণ বিপরীত যথ- নীচতা, আনুগত্য, গোলামি, অধীনতা এবং দাসত্ব। তৃতীয়, হিসেব করা, ফায়সালা করা ও যাবতীয় কাজের প্রতিফল দেয়া। আল কুরআনে “দ্বীন’ শব্দটি এ তিন প্রকারের অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
আল্লাহর কাছে তাই হচ্ছে একমাত্র দ্বীন’ যাতে মানুষ শুধু আল্লাহকেই শক্তিমান মনে করে এবং তাকে ছাড়া আর কারো সামনে নিজেকে নত মনে করে না। কেবল আল্লাহকেই মনিব, মালিক, বাদশাহ ও রাজাধিরাজ বলে মানবে এবং তিনি ছাড়া আর কারো দাস, গোলাম, হুকুম, অধীন ও তাবেদার হবে না। শুধু আল্লাহকেই হিসাব গ্রহণকারী ও সকল কাজের উপযুক্ত প্রতিফলদাতা মনে করবে এবং তিনি ছাড়া আর কারো কাছে হিসেব দেয়ার পরোয়া করবে না; অন্য কারো কাছে প্রতিফল পাবার আশা করবে না এবং কারো শাস্তির ভয় করবে না। এ দ্বীনেরই নাম হচ্ছে 'ইসলাম'।
কোনো মানুষ যদি এ আকীদা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আসল শক্তিমান, আইন রচয়িতা, আসল বাদশাহ ও মালিক, প্রকৃত প্রতিফলদাতা মনে করে এবং তার সামনে বিনয়ের সাথে মাথা নত করে, যদি তাঁর বন্দেগী ও গোলামি করে, তাঁর আদেশ মতো কাজ করে এবং প্রতিফলের আশা ও তার শাস্তির ভয় করে, তাহলে তাকে মিথ্যা, দ্বীন মনে করতে হবে। আল্লাহ এমন “দ্বীন’ কখনও কবুল করবেন না। কারণ এটা প্রকৃত সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।
এই পৃথিবীতে আসল শক্তিমান ও সম্মানিত সত্তা আল্লাহ ছাড়া কেউ নয়। এখানে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো আধিপত্য নেই, বাদশাহী নেই। আর মানুষকে আল্লাহ ছাড়া আর কারো বন্দেগী ও গোলামি করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। সেই আসল মালিক ছাড়া কাজের প্রতিফল দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। অর্থাৎ আল্লাহর আধিপত্য ও প্রভুত্ব ছেড়ে যে ব্যক্তি অন্য কাউকে নিজের মালিক এবং আইন রচয়িতা বলে স্বীকার করে, তার বন্দেগী ও গোলামি কবুল করে এবং তাকে কাজের প্রতিফলদাতা মনে করে, তার এ দ্বীনকে আল্লাহ কখনই। কবুল করবেন না। কারণ:
وما أمروا إلا ليعبدوا الله مخلصين له الي تفاء ويقيموا القلاة و ثوا الان ولك برين القيمة
“মানুষকে আল্লাহ তাঁর নিজের বান্দা করে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী করার আদেশ মানুষকে দেয়া হয়নি। তাদের একমাত্র অবশ্য কর্তব্য ফরয এই যে, সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে শুধু আল্লাহর জন্যই নিজের দ্বীন-অর্থাৎ আনুগত্য ও গোলামিকে নিযুক্ত করবে, একমুখী হয়ে তাঁরই বন্দেগী করবে এবং শুধু তাঁরই হিসেব করার ক্ষমতাকে ভয় করবে।” (সূরা আল বাইয়্যেনা ৯৮ : ৫)
أنمي وين ال بون وله أشلم من في السموات و الأرض طوعا وگرها و إلي يرجعون
“মানুষ কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো গোলামি ও হুকুম পালন করতে চায়? অথচ প্রকৃতপক্ষে আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসই কেবলমাত্র আল্লাহরই একান্ত গোলাম ও হুকুম পালনকারী এবং এসব জিনিসকে তাদের নিজেদের হিসাব কিতাবের জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে যেতে হবে না। তবুও মানুষ কি আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের বিরুদ্ধে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া আর অন্য কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়?” (সূরা আলে ইমরান ৩: ৮৩)
“আল্লাহ তাঁর নবীকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও সত্যের আনুগত্যের ব্যবস্থা সহকারে এ জন্য পাঠিয়েছেন যে, তিনি দুনিয়ার সকল মিথ্যা খোদার' খোদায়ী ও প্রভুত্ব ধ্বংস করে দিবেন এবং মানুষকে এমনভাবে স্বাধীন করবেন যে, তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা হবে না, কাফির আর মুশরিকগণ নিজেদের মুখতার দরুন যতই চীৎকার করুক না কেন এবং তাকে ঘৃণা করক না কেন।” (সূরা আস সফ ৬১ : ৯)
وقاتلوهم حتى لا تكون في ويكون البين ممه لي فإن انتهوا إن الله بما يعملون بيه
“তোমরা যুদ্ধ কর যেন দুনিয়া হতে গায়রুল্লাহর প্রভুত্ব চিরতরে দূর হয় এবং দুনিয়ায় যেন শুধু আল্লাহরই আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর বাদশাহী যেন সকলেই স্বীকার করে এবং মানুষ যেন শুধু আল্লাহরই বন্দেগী করে।” (সূরা আল আনফাল ৮ : ৩৯)
উপরের এ ব্যাখ্যা দ্বারা দ্বীন’ শব্দের অর্থ পাঠকের কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে আশা করা যায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে তা এই-আল্লাহকে মালিক, মনিব এবং আইন রচনাকারী স্বীকার করা- আল্লাহরই গোলামী, বন্দেগী ও তাবেদারী করা, আল্লাহর হিসাব গ্রহণের ও তাঁর শাস্তি বিধানের ভয় করা এবং একমাত্র তাঁরই কাছে প্রতিফল লাভের আশা করা। তারপরই যেহেতু আল্লাহর হুকুম তাঁর কিতাব ও রসূলের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছিয়ে থাকে, এজন্য রসূলকে আল্লাহর রসূল এবং কিতাবকে আল্লাহর কিতাব বলে মান্য করা আর কার্যক্ষেত্রে তার অনুসরণ করাও দ্বীন'-এর মধ্যে গণ্য। যেমন আল্লাহ বলেছেন :
يا بني أ إما يأ ينكة شل منگنه يقطون مملگة آياتي في القى وأضح فلا خوف عليهم ولا هم يحزنون
“হে আদম সন্তান! আমার নবী যখন তোমাদের কাছে বিধান নিয়ে আসবে তখন যারা সেই বিধানকে মেনে আদর্শবাদী জীবনযাপন করবে এবং সেই অনুসারে নিজেদের কাজকর্ম সমাপন করবে, তাদের কোনো ভয়ের কারণ নেই।” (সূরা আল আ'রাফ ৭ : ৩৫)
এর দ্বারা জানা গেল যে, আল্লাহ সোজাসুজি প্রত্যেক মানুষের কাছে তাঁর বিধান পাঠান না, বরং তার নারীদের মাধ্যমেই পাঠিয়ে থাকেন। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহকে আইন রচনাকারী বলে স্বীকার করবে সেই ব্যক্তি কেবল নারীদের হুকুম পালন করে এবং তাঁদের প্রচারিত বিধানের আনুগত্য করেন। শরীয়াত শব্দের অর্থ ও পথ ও নিয়ম। একজন মানুষ যখন আল্লাহকে আইন রচনাকারী বলে তার বন্দেগী স্বীকার করে এবং একথাও স্বীকার করে নেয় যে, রসূল ! আল্লাহর কাছ থেকেই অনুমতিপ্রাপ্ত আইনদাতা হিসেবে এসেছেন এবং কিতাব তাঁরই কাছ থেকে নাযিল হয়েছে, ঠিক তখনই সে দ্বীনের মধ্যে দাখিল হয়। এরপরে যে নিয়ম অনুযায়ী তাকে আল্লাহর বন্দেগী করতে হয় এবং তাঁর আনুগত্য করার জন্য যে পথে চলতে হয় তারই নাম হচ্ছে শরীয়াত। এ পথ ও কর্মপদ্ধতি আল্লাহ তাঁর রসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। মালিকের ইবাদত কোন্ নিয়মে করতে হবে, পাক-পবিত্র হওয়ার নিয়ম কী, নেকী ও তাকওয়ার পথ কোন্টি, অন্য মানুষের হক কিভাবে আদায় করতে হবে, কাজ-কারবার কিভাবে করতে হবে, জীবনযাপন কিভাবে করতে হবে, এসব কথা নবী (ﷺ) বলেছেন। দ্বীন ও শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য : দ্বীন ও শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য এই যে, দ্বীন চিরকালই এক ছিল এক আছে এবং চিরকাল একই থাকবে; কিন্তু শরীয়াত দুনিয়ায় অনেক এসেছে, অনেক বদলিয়ে গেছে। অবশ্য শরীয়াতের এ পরিবর্তনের কারণে দ্বীনের কোনোই পরিবর্তন হয়নি। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীন যা ছিল নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল, মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল। শোয়াইব (আলাইহিস সালাম), সালেহ (আলাইহিস সালাম) এবং হুদ (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দ্বীনও ঠিক তাই। কিন্তু এ নবীগণের প্রত্যেকেরই শরীয়াতে কিছু না কিছু পার্থক্য বর্তমান ছিল। সলাত এবং সিয়ামের নিয়ম এক এক শরীয়াতে এক এক রকমের ছিল। হারাম ও হালালের হুকুম, পাক-পবিত্রতার নিয়ম, বিয়ে ও তালাক এবং সম্পত্তি বন্টনের আইন এক এক শরীয়াতের এক এক রকম ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা সকলেই মুসলিম ছিলেন। নূহ (আলাইহিস সালাম), ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উম্মতগণও মুসলিম ছিলেন, আর আমরাও মুসলিম কেননা সকলের দ্বীন এক। এর দ্বারা জানা গেল যে, শরীয়াতের হুকুম বিভিন্ন হলেও দ্বীন এক থাকে, তাতে কোনো পার্থক্য হয় না- দ্বীন অনুসারে কাজ করার নিয়ম-পন্থা যতই বিভিন্ন হোক না কেন।
এ পার্থক্য বুঝার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যাচ্ছে। মনে করি, একজন মনিবের কাছে কয়েকজন চাকর আছে। যে ব্যক্তি সেই মনিবকে মনিব বলে স্বীকার করে না এবং তার হুকুম মান্য করার দরকার বলে মনেই করে না, সে তো পরিষ্কার নাফরমান এবং সে চাকরের মধ্যে গণ্যই নয়। আর যারা তাকে মনিব বলে স্বীকার করে, তার হুকুম পালন করা কর্তব্য বলে বিশ্বাস করে এবং তার হুকুমের অবাধ্য হতে ভয় করে, তারা সকলেই চাকরের মধ্যে গণ্য। চাকুরী করা এবং খেদমত করার নিয়ম বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু মূলতঃ তারা সকলেই সমানভাবে সেই একই মনিবের চাকর, তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না। মালিক বা মনিব যদি একজন চাকরকে চাকুরীর এক নিয়ম বলে দেয় আর অন্যজনকে বলে আর এক নিয়ম তবে এদের কেউই একথা বলতে পারে না যে, আমি মনিবের চাকর কিন্তু ঐ ব্যক্তি চাকর নয়। এ উদাহরণ হতে আমরা দ্বীন ও শরীয়াতের পারস্পরিক পার্থক্য খুব ভাল করে বুঝতে পারি। নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পূর্বে আল্লাহ বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে বিভিন্ন শরীয়াত পাঠিয়েছিলেন। এদের একজনকে চাকরীর এক রকমের নিয়ম বলেছেন, আর অন্যজনকে বলেছেন অন্যবিধ নিয়ম। এ সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করে আল্লাহর হুকুম মতো যারা কাজ করেছেন, তাঁরা সকলেই মুসলিম ছিলেন যদিও তাদের চাকুরির নিয়ম ছিল বিভিন্ন রকমের। তারপর যখন নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) দুনিয়ায় আসলেন, তখন সকলের মনিব আল্লাহ হুকুম করলেন যে, এখন পূর্বের সমস্ত নিয়মকে আমি বাতিল করে দিলাম। ভবিষ্যতে যে আমার চাকুরি করতে চায়, তাকে ঠিক সেই নিয়ম অনুসারেই কাজ করতে হবে, যে নিয়ম আমার শেষ নবীর মাধ্যমে আমি প্রচার করবো। এরপর পূর্বের কোনো নিয়ম অনুসারে চাকুরি করার কারো অধিকার নেই। কারণ যদি কেউ এ নুতন নিয়মকে স্বীকার না করে এবং এখনও সেই পুরাতন নিয়ম মতো চলতে থাকে, তবে বলতে হবে যে, সে আসলে মনিবের হুকুম মানছে না, সে তার নিজের মনের কথাই মানছে। কাজেই এখন সে চাকুরি হতে বরখাস্ত হয়েছে-অর্থাৎ ধর্মের পরিভাষায় সে কাফির হয়ে গেছে। প্রাচীন নবীগণকে যারা এখনও মেনে চলতে চায় তাদের সম্বন্ধে একথা প্রযোজ্য। কিন্তু মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর অনুগামী যারা তাদের সম্পর্কে উল্লেখিত উদাহরণের দ্বিতীয় অংশ বেশ খেটে যায়। আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর মাধ্যমে আমাদের কাছে যে শরীয়াত পাঠিয়েছেন, তাকে যারা আল্লাহর শরীয়াত বলে স্বীকার করে এবং তা পালন করা কর্তব্য বলে মনে করে, তারা সকলেই মুসলিম। দ্বীন ও শরীয়াতের পার্থক্য আমরা ভাল করে বুঝতে পেরেছি আশা করি। সেই সাথে একথাও আমরা জানতে পেরেছি যে, বন্দেগীর বাহ্যিক নিয়মের পার্থক্য হলেও আসল দ্বীনে কোনো পার্থক্য হয় না। অবশ্য তার জন্য শর্ত এই যে, মানুষ যে পন্থায়ই কাজ করুক না কেন, নেক নিয়্যতের সাথে করা কর্তব্য এবং একথা মনে রেখে করতে হবে যে, যে নিয়মে সে কাজ করছে, তা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলেরই নিয়মকেই সরাসরি অনুসরণ করতে হবে। মুসলিমদের একদল-এক উম্মত হওয়া উচিত : মুসলিমদের মধ্যে আমরা এই যে হানাফী, শাফেয়ী, সালাফী ইত্যাদি নানা দলের নাম শুনতে পাই এরা সকলে কুরআন ও হাদীসকে সর্বশেষ কিতাব বলে বিশ্বাস করে এবং নিজের বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী তা থেকে আইন ও বিধান জেনে নেয়। হতে পারে একজনের সিদ্ধান্ত ঠিক ও বিশুদ্ধ, আর অন্যজনের সিদ্ধান্ত ভুল। দশজন মুসলিম যদি দশটি বিভিন্ন নিয়মে কাজ করে, তবু যতক্ষণ তাঁরা শরীয়াত মানবে ততক্ষণ তারা সকলেই মুসলিম, একই উম্মতের মধ্যে গণ্য; তাদের ভিন্ন ভিন্ন দল-গোষ্ঠী গঠন করার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু এ নিগূঢ় কথা যারা বুঝতে পারে না, তারা অতি ছোট ছোট ও সামান্য সামান্য কারণে দলাদলি করে। একদল অন্যদলের সাথে ঝগড়া বাঁধায়, সলাত ও মসজিদ আলাদা করে, একদল অন্যদলের সাথে বিয়ে-শাদী, মিলামিশা এবং সম্পর্ক স্থাপন চিরতরে বন্ধ করে দেয় আর নিজ মতের লোকদেরকে নিয়ে একটা আলাদা দল গঠন করে। মনে হয় তারা আলাদা নবীর উম্মত। এরূপ দলাদলির ফলে মুসলিমদের কী বিরাট ক্ষতি হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। কথায় বলা হয় যে, মুসলিম একদল-এক উম্মত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ দলাদলির কারণেই এ উম্মাতটি বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের একজনের মন অন্য জনের প্রতি বিষাক্ত ও শ্রদ্ধাহীন। বড় বড় বিপদের সময়ও তারা একত্রিত হয়ে বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না। একদলের মুসলিম অন্যদলের মুসলিমকে ঠিক ততখানিই শত্র বলে মনে করে, যতখানিই এক ইহুদী একজন খৃষ্টানকে শত্রু বলে মনে করে, বরং তা থেকেও অধিক।
এমনও দেখা গেছে যে, একদল মুসলিমকে পরাজিত করার জন্য আর একদল মুসলিম কাফিরদের সাথে যোগ দিয়ে যড়যন্ত্র করে। এমতাবস্থায় দুনিয়ার মুসলিম যদি দুর্বল হয়ে থাকে, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। এটা তাদের নিজেদেরই কর্মফল। তাদের উপর সেই আযাবই নাযিল হয়েছে যাকে আল্লাহ কুরআন মজিদে বলেছেন :
“মানুষের প্রতি আল্লাহর এমন আযাবও আসতে পারে, যার ফলে তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়া হবে, তোমরা পরস্পর কাটাকাটি করে মরবে।” (সূরা আনআম ৬ : ৬৫)।
উপরে যে আযাবের কথা বলা হলো, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ও বাংলাদেশে তা খুব বেশী পরিমাণেই দেখা যায়। এখানে মুসলিমদের নানা দল; এমনকি আলেমদের দলেরও কোনো হিসাব নেই। এজন্যই এখানকার মুসলিম এবং আলেমদের কোনো শক্তি নেই। আমরা যদি বাস্তবিকই মঙ্গল চাই, তবে আমাদের ও আলেমদের এ বিভিন্ন দল ভেংগে দিয়ে এক হতে হবে। আমরা পরস্পর পরস্পরের ভাই হিসেবে এক উম্মতরূপে গঠিত হবো ইনশাআল্লাহ। বিভিন্ন রকম ক্ষতির হাত থেকে আমরা নিজকে, সন্তান-সন্ততি, বাড়ি-গাড়ি, জায়গা-জমি, টাকা পয়সা, স্বর্ণ-অলংকার, ঘরের আসবাব-পত্র, ইলেক্ট্রনিক্স, শরীরের সৌন্দর্য ইত্যাদি রক্ষার ব্যাপারে যতটা সময় ব্যয় ও পরিশ্রম করি, এর দশ ভাগের এক ভাগও কি নিজেদের ঈমান রক্ষার কাজে ব্যয় করি?
দ্বীন শব্দের অর্থ :
দ্বীন শব্দের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। প্রথম ও শক্তি, কর্তৃত্ব হুকুমাত, রাজত্ব-আধিপত্য এবং শাসন ক্ষমতা। দ্বিতীয় ও এর সম্পূর্ণ বিপরীত যথ- নীচতা, আনুগত্য, গোলামি, অধীনতা এবং দাসত্ব। তৃতীয়, হিসেব করা, ফায়সালা করা ও যাবতীয় কাজের প্রতিফল দেয়া। আল কুরআনে “দ্বীন’ শব্দটি এ তিন প্রকারের অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
আল্লাহর কাছে তাই হচ্ছে একমাত্র দ্বীন’ যাতে মানুষ শুধু আল্লাহকেই শক্তিমান মনে করে এবং তাকে ছাড়া আর কারো সামনে নিজেকে নত মনে করে না। কেবল আল্লাহকেই মনিব, মালিক, বাদশাহ ও রাজাধিরাজ বলে মানবে এবং তিনি ছাড়া আর কারো দাস, গোলাম, হুকুম, অধীন ও তাবেদার হবে না। শুধু আল্লাহকেই হিসাব গ্রহণকারী ও সকল কাজের উপযুক্ত প্রতিফলদাতা মনে করবে এবং তিনি ছাড়া আর কারো কাছে হিসেব দেয়ার পরোয়া করবে না; অন্য কারো কাছে প্রতিফল পাবার আশা করবে না এবং কারো শাস্তির ভয় করবে না। এ দ্বীনেরই নাম হচ্ছে 'ইসলাম'।
কোনো মানুষ যদি এ আকীদা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আসল শক্তিমান, আইন রচয়িতা, আসল বাদশাহ ও মালিক, প্রকৃত প্রতিফলদাতা মনে করে এবং তার সামনে বিনয়ের সাথে মাথা নত করে, যদি তাঁর বন্দেগী ও গোলামি করে, তাঁর আদেশ মতো কাজ করে এবং প্রতিফলের আশা ও তার শাস্তির ভয় করে, তাহলে তাকে মিথ্যা, দ্বীন মনে করতে হবে। আল্লাহ এমন “দ্বীন’ কখনও কবুল করবেন না। কারণ এটা প্রকৃত সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।
এই পৃথিবীতে আসল শক্তিমান ও সম্মানিত সত্তা আল্লাহ ছাড়া কেউ নয়। এখানে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো আধিপত্য নেই, বাদশাহী নেই। আর মানুষকে আল্লাহ ছাড়া আর কারো বন্দেগী ও গোলামি করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। সেই আসল মালিক ছাড়া কাজের প্রতিফল দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। অর্থাৎ আল্লাহর আধিপত্য ও প্রভুত্ব ছেড়ে যে ব্যক্তি অন্য কাউকে নিজের মালিক এবং আইন রচয়িতা বলে স্বীকার করে, তার বন্দেগী ও গোলামি কবুল করে এবং তাকে কাজের প্রতিফলদাতা মনে করে, তার এ দ্বীনকে আল্লাহ কখনই। কবুল করবেন না। কারণ:
وما أمروا إلا ليعبدوا الله مخلصين له الي تفاء ويقيموا القلاة و ثوا الان ولك برين القيمة
“মানুষকে আল্লাহ তাঁর নিজের বান্দা করে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী করার আদেশ মানুষকে দেয়া হয়নি। তাদের একমাত্র অবশ্য কর্তব্য ফরয এই যে, সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে শুধু আল্লাহর জন্যই নিজের দ্বীন-অর্থাৎ আনুগত্য ও গোলামিকে নিযুক্ত করবে, একমুখী হয়ে তাঁরই বন্দেগী করবে এবং শুধু তাঁরই হিসেব করার ক্ষমতাকে ভয় করবে।” (সূরা আল বাইয়্যেনা ৯৮ : ৫)
أنمي وين ال بون وله أشلم من في السموات و الأرض طوعا وگرها و إلي يرجعون
“মানুষ কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো গোলামি ও হুকুম পালন করতে চায়? অথচ প্রকৃতপক্ষে আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসই কেবলমাত্র আল্লাহরই একান্ত গোলাম ও হুকুম পালনকারী এবং এসব জিনিসকে তাদের নিজেদের হিসাব কিতাবের জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে যেতে হবে না। তবুও মানুষ কি আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের বিরুদ্ধে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া আর অন্য কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়?” (সূরা আলে ইমরান ৩: ৮৩)
“আল্লাহ তাঁর নবীকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও সত্যের আনুগত্যের ব্যবস্থা সহকারে এ জন্য পাঠিয়েছেন যে, তিনি দুনিয়ার সকল মিথ্যা খোদার' খোদায়ী ও প্রভুত্ব ধ্বংস করে দিবেন এবং মানুষকে এমনভাবে স্বাধীন করবেন যে, তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা হবে না, কাফির আর মুশরিকগণ নিজেদের মুখতার দরুন যতই চীৎকার করুক না কেন এবং তাকে ঘৃণা করক না কেন।” (সূরা আস সফ ৬১ : ৯)
وقاتلوهم حتى لا تكون في ويكون البين ممه لي فإن انتهوا إن الله بما يعملون بيه
“তোমরা যুদ্ধ কর যেন দুনিয়া হতে গায়রুল্লাহর প্রভুত্ব চিরতরে দূর হয় এবং দুনিয়ায় যেন শুধু আল্লাহরই আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর বাদশাহী যেন সকলেই স্বীকার করে এবং মানুষ যেন শুধু আল্লাহরই বন্দেগী করে।” (সূরা আল আনফাল ৮ : ৩৯)
উপরের এ ব্যাখ্যা দ্বারা দ্বীন’ শব্দের অর্থ পাঠকের কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে আশা করা যায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে তা এই-আল্লাহকে মালিক, মনিব এবং আইন রচনাকারী স্বীকার করা- আল্লাহরই গোলামী, বন্দেগী ও তাবেদারী করা, আল্লাহর হিসাব গ্রহণের ও তাঁর শাস্তি বিধানের ভয় করা এবং একমাত্র তাঁরই কাছে প্রতিফল লাভের আশা করা। তারপরই যেহেতু আল্লাহর হুকুম তাঁর কিতাব ও রসূলের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছিয়ে থাকে, এজন্য রসূলকে আল্লাহর রসূল এবং কিতাবকে আল্লাহর কিতাব বলে মান্য করা আর কার্যক্ষেত্রে তার অনুসরণ করাও দ্বীন'-এর মধ্যে গণ্য। যেমন আল্লাহ বলেছেন :
يا بني أ إما يأ ينكة شل منگنه يقطون مملگة آياتي في القى وأضح فلا خوف عليهم ولا هم يحزنون
“হে আদম সন্তান! আমার নবী যখন তোমাদের কাছে বিধান নিয়ে আসবে তখন যারা সেই বিধানকে মেনে আদর্শবাদী জীবনযাপন করবে এবং সেই অনুসারে নিজেদের কাজকর্ম সমাপন করবে, তাদের কোনো ভয়ের কারণ নেই।” (সূরা আল আ'রাফ ৭ : ৩৫)
এর দ্বারা জানা গেল যে, আল্লাহ সোজাসুজি প্রত্যেক মানুষের কাছে তাঁর বিধান পাঠান না, বরং তার নারীদের মাধ্যমেই পাঠিয়ে থাকেন। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহকে আইন রচনাকারী বলে স্বীকার করবে সেই ব্যক্তি কেবল নারীদের হুকুম পালন করে এবং তাঁদের প্রচারিত বিধানের আনুগত্য করেন। শরীয়াত শব্দের অর্থ ও পথ ও নিয়ম। একজন মানুষ যখন আল্লাহকে আইন রচনাকারী বলে তার বন্দেগী স্বীকার করে এবং একথাও স্বীকার করে নেয় যে, রসূল ! আল্লাহর কাছ থেকেই অনুমতিপ্রাপ্ত আইনদাতা হিসেবে এসেছেন এবং কিতাব তাঁরই কাছ থেকে নাযিল হয়েছে, ঠিক তখনই সে দ্বীনের মধ্যে দাখিল হয়। এরপরে যে নিয়ম অনুযায়ী তাকে আল্লাহর বন্দেগী করতে হয় এবং তাঁর আনুগত্য করার জন্য যে পথে চলতে হয় তারই নাম হচ্ছে শরীয়াত। এ পথ ও কর্মপদ্ধতি আল্লাহ তাঁর রসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। মালিকের ইবাদত কোন্ নিয়মে করতে হবে, পাক-পবিত্র হওয়ার নিয়ম কী, নেকী ও তাকওয়ার পথ কোন্টি, অন্য মানুষের হক কিভাবে আদায় করতে হবে, কাজ-কারবার কিভাবে করতে হবে, জীবনযাপন কিভাবে করতে হবে, এসব কথা নবী (ﷺ) বলেছেন। দ্বীন ও শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য : দ্বীন ও শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য এই যে, দ্বীন চিরকালই এক ছিল এক আছে এবং চিরকাল একই থাকবে; কিন্তু শরীয়াত দুনিয়ায় অনেক এসেছে, অনেক বদলিয়ে গেছে। অবশ্য শরীয়াতের এ পরিবর্তনের কারণে দ্বীনের কোনোই পরিবর্তন হয়নি। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীন যা ছিল নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল, মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল। শোয়াইব (আলাইহিস সালাম), সালেহ (আলাইহিস সালাম) এবং হুদ (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দ্বীনও ঠিক তাই। কিন্তু এ নবীগণের প্রত্যেকেরই শরীয়াতে কিছু না কিছু পার্থক্য বর্তমান ছিল। সলাত এবং সিয়ামের নিয়ম এক এক শরীয়াতে এক এক রকমের ছিল। হারাম ও হালালের হুকুম, পাক-পবিত্রতার নিয়ম, বিয়ে ও তালাক এবং সম্পত্তি বন্টনের আইন এক এক শরীয়াতের এক এক রকম ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা সকলেই মুসলিম ছিলেন। নূহ (আলাইহিস সালাম), ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উম্মতগণও মুসলিম ছিলেন, আর আমরাও মুসলিম কেননা সকলের দ্বীন এক। এর দ্বারা জানা গেল যে, শরীয়াতের হুকুম বিভিন্ন হলেও দ্বীন এক থাকে, তাতে কোনো পার্থক্য হয় না- দ্বীন অনুসারে কাজ করার নিয়ম-পন্থা যতই বিভিন্ন হোক না কেন।
এ পার্থক্য বুঝার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যাচ্ছে। মনে করি, একজন মনিবের কাছে কয়েকজন চাকর আছে। যে ব্যক্তি সেই মনিবকে মনিব বলে স্বীকার করে না এবং তার হুকুম মান্য করার দরকার বলে মনেই করে না, সে তো পরিষ্কার নাফরমান এবং সে চাকরের মধ্যে গণ্যই নয়। আর যারা তাকে মনিব বলে স্বীকার করে, তার হুকুম পালন করা কর্তব্য বলে বিশ্বাস করে এবং তার হুকুমের অবাধ্য হতে ভয় করে, তারা সকলেই চাকরের মধ্যে গণ্য। চাকুরী করা এবং খেদমত করার নিয়ম বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু মূলতঃ তারা সকলেই সমানভাবে সেই একই মনিবের চাকর, তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না। মালিক বা মনিব যদি একজন চাকরকে চাকুরীর এক নিয়ম বলে দেয় আর অন্যজনকে বলে আর এক নিয়ম তবে এদের কেউই একথা বলতে পারে না যে, আমি মনিবের চাকর কিন্তু ঐ ব্যক্তি চাকর নয়। এ উদাহরণ হতে আমরা দ্বীন ও শরীয়াতের পারস্পরিক পার্থক্য খুব ভাল করে বুঝতে পারি। নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পূর্বে আল্লাহ বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে বিভিন্ন শরীয়াত পাঠিয়েছিলেন। এদের একজনকে চাকরীর এক রকমের নিয়ম বলেছেন, আর অন্যজনকে বলেছেন অন্যবিধ নিয়ম। এ সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করে আল্লাহর হুকুম মতো যারা কাজ করেছেন, তাঁরা সকলেই মুসলিম ছিলেন যদিও তাদের চাকুরির নিয়ম ছিল বিভিন্ন রকমের। তারপর যখন নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) দুনিয়ায় আসলেন, তখন সকলের মনিব আল্লাহ হুকুম করলেন যে, এখন পূর্বের সমস্ত নিয়মকে আমি বাতিল করে দিলাম। ভবিষ্যতে যে আমার চাকুরি করতে চায়, তাকে ঠিক সেই নিয়ম অনুসারেই কাজ করতে হবে, যে নিয়ম আমার শেষ নবীর মাধ্যমে আমি প্রচার করবো। এরপর পূর্বের কোনো নিয়ম অনুসারে চাকুরি করার কারো অধিকার নেই। কারণ যদি কেউ এ নুতন নিয়মকে স্বীকার না করে এবং এখনও সেই পুরাতন নিয়ম মতো চলতে থাকে, তবে বলতে হবে যে, সে আসলে মনিবের হুকুম মানছে না, সে তার নিজের মনের কথাই মানছে। কাজেই এখন সে চাকুরি হতে বরখাস্ত হয়েছে-অর্থাৎ ধর্মের পরিভাষায় সে কাফির হয়ে গেছে। প্রাচীন নবীগণকে যারা এখনও মেনে চলতে চায় তাদের সম্বন্ধে একথা প্রযোজ্য। কিন্তু মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর অনুগামী যারা তাদের সম্পর্কে উল্লেখিত উদাহরণের দ্বিতীয় অংশ বেশ খেটে যায়। আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর মাধ্যমে আমাদের কাছে যে শরীয়াত পাঠিয়েছেন, তাকে যারা আল্লাহর শরীয়াত বলে স্বীকার করে এবং তা পালন করা কর্তব্য বলে মনে করে, তারা সকলেই মুসলিম। দ্বীন ও শরীয়াতের পার্থক্য আমরা ভাল করে বুঝতে পেরেছি আশা করি। সেই সাথে একথাও আমরা জানতে পেরেছি যে, বন্দেগীর বাহ্যিক নিয়মের পার্থক্য হলেও আসল দ্বীনে কোনো পার্থক্য হয় না। অবশ্য তার জন্য শর্ত এই যে, মানুষ যে পন্থায়ই কাজ করুক না কেন, নেক নিয়্যতের সাথে করা কর্তব্য এবং একথা মনে রেখে করতে হবে যে, যে নিয়মে সে কাজ করছে, তা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলেরই নিয়মকেই সরাসরি অনুসরণ করতে হবে। মুসলিমদের একদল-এক উম্মত হওয়া উচিত : মুসলিমদের মধ্যে আমরা এই যে হানাফী, শাফেয়ী, সালাফী ইত্যাদি নানা দলের নাম শুনতে পাই এরা সকলে কুরআন ও হাদীসকে সর্বশেষ কিতাব বলে বিশ্বাস করে এবং নিজের বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী তা থেকে আইন ও বিধান জেনে নেয়। হতে পারে একজনের সিদ্ধান্ত ঠিক ও বিশুদ্ধ, আর অন্যজনের সিদ্ধান্ত ভুল। দশজন মুসলিম যদি দশটি বিভিন্ন নিয়মে কাজ করে, তবু যতক্ষণ তাঁরা শরীয়াত মানবে ততক্ষণ তারা সকলেই মুসলিম, একই উম্মতের মধ্যে গণ্য; তাদের ভিন্ন ভিন্ন দল-গোষ্ঠী গঠন করার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু এ নিগূঢ় কথা যারা বুঝতে পারে না, তারা অতি ছোট ছোট ও সামান্য সামান্য কারণে দলাদলি করে। একদল অন্যদলের সাথে ঝগড়া বাঁধায়, সলাত ও মসজিদ আলাদা করে, একদল অন্যদলের সাথে বিয়ে-শাদী, মিলামিশা এবং সম্পর্ক স্থাপন চিরতরে বন্ধ করে দেয় আর নিজ মতের লোকদেরকে নিয়ে একটা আলাদা দল গঠন করে। মনে হয় তারা আলাদা নবীর উম্মত। এরূপ দলাদলির ফলে মুসলিমদের কী বিরাট ক্ষতি হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। কথায় বলা হয় যে, মুসলিম একদল-এক উম্মত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ দলাদলির কারণেই এ উম্মাতটি বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের একজনের মন অন্য জনের প্রতি বিষাক্ত ও শ্রদ্ধাহীন। বড় বড় বিপদের সময়ও তারা একত্রিত হয়ে বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না। একদলের মুসলিম অন্যদলের মুসলিমকে ঠিক ততখানিই শত্র বলে মনে করে, যতখানিই এক ইহুদী একজন খৃষ্টানকে শত্রু বলে মনে করে, বরং তা থেকেও অধিক।
এমনও দেখা গেছে যে, একদল মুসলিমকে পরাজিত করার জন্য আর একদল মুসলিম কাফিরদের সাথে যোগ দিয়ে যড়যন্ত্র করে। এমতাবস্থায় দুনিয়ার মুসলিম যদি দুর্বল হয়ে থাকে, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। এটা তাদের নিজেদেরই কর্মফল। তাদের উপর সেই আযাবই নাযিল হয়েছে যাকে আল্লাহ কুরআন মজিদে বলেছেন :
“মানুষের প্রতি আল্লাহর এমন আযাবও আসতে পারে, যার ফলে তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়া হবে, তোমরা পরস্পর কাটাকাটি করে মরবে।” (সূরা আনআম ৬ : ৬৫)।
উপরে যে আযাবের কথা বলা হলো, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ও বাংলাদেশে তা খুব বেশী পরিমাণেই দেখা যায়। এখানে মুসলিমদের নানা দল; এমনকি আলেমদের দলেরও কোনো হিসাব নেই। এজন্যই এখানকার মুসলিম এবং আলেমদের কোনো শক্তি নেই। আমরা যদি বাস্তবিকই মঙ্গল চাই, তবে আমাদের ও আলেমদের এ বিভিন্ন দল ভেংগে দিয়ে এক হতে হবে। আমরা পরস্পর পরস্পরের ভাই হিসেবে এক উম্মতরূপে গঠিত হবো ইনশাআল্লাহ। বিভিন্ন রকম ক্ষতির হাত থেকে আমরা নিজকে, সন্তান-সন্ততি, বাড়ি-গাড়ি, জায়গা-জমি, টাকা পয়সা, স্বর্ণ-অলংকার, ঘরের আসবাব-পত্র, ইলেক্ট্রনিক্স, শরীরের সৌন্দর্য ইত্যাদি রক্ষার ব্যাপারে যতটা সময় ব্যয় ও পরিশ্রম করি, এর দশ ভাগের এক ভাগও কি নিজেদের ঈমান রক্ষার কাজে ব্যয় করি?
“মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে আমরা ঈমান এনেছি এতটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে - তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে না?” (সূরা আনকাবুত ২৯: ২)।
ঈমান এমন একটি বিষয় যার কোয়ালিটি আমাদের জীবনে সারাক্ষণ উঠা-নামা করে। ঈমানকে মজবুত করার জন্য বুঝার সুবিধার্থে ছয়টি পয়েন্টে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে।
১. ঈমান মানে কী? বিশ্বাস বলতে কী বুঝায়? বিশ্বাসের সংজ্ঞা কী? বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কী? বিশ্বাস কত রকম হতে পারে?
২. বিশ্বাস ও কর্মের সম্পর্ক কী?
৩. মানব জীবনে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কী?
৪. আল্লাহর উপর ঈমান আনলে আল্লাহর সাথে কেমন সম্পর্ক স্থাপন হয়?
৫. ঈমান কী কারণে দুর্বল হয়? কোন্ পথে ঈমানে দুর্বলতা আসে?
৬. ম্যবুত ঈমানের শর্ত কী কী? কোন্ কোন্ শর্ত পূরণ হলে ঈমান মযবুত হয়?
ঈমান এমন একটি বিষয় যার কোয়ালিটি আমাদের জীবনে সারাক্ষণ উঠা-নামা করে। ঈমানকে মজবুত করার জন্য বুঝার সুবিধার্থে ছয়টি পয়েন্টে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে।
১. ঈমান মানে কী? বিশ্বাস বলতে কী বুঝায়? বিশ্বাসের সংজ্ঞা কী? বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কী? বিশ্বাস কত রকম হতে পারে?
২. বিশ্বাস ও কর্মের সম্পর্ক কী?
৩. মানব জীবনে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কী?
৪. আল্লাহর উপর ঈমান আনলে আল্লাহর সাথে কেমন সম্পর্ক স্থাপন হয়?
৫. ঈমান কী কারণে দুর্বল হয়? কোন্ পথে ঈমানে দুর্বলতা আসে?
৬. ম্যবুত ঈমানের শর্ত কী কী? কোন্ কোন্ শর্ত পূরণ হলে ঈমান মযবুত হয়?
ঈমান আরবী শব্দ। এর সহজ অর্থ হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস বলতে কী বুঝায়? এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
একটি সহজ উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। ধরি এক পরিচিত লোক এসে আমাকে বললেন, ‘ভাই, আমাকে এক হাজার টাকা ধার দিন। আমি এক মাস পরই ফেরত দিয়ে যাব। এক মাস পর টাকাটা ফেরত দেবে কি না সে বিষয়ে আমার সরাসরি জানা নেই। আমি তাকে কী বলবো? তাকে তো আর একথা বলা যায় না যে, এক মাস পর ফেরত দেন কি না আগে দেখে নেই। তাহলে তাকে কী বলব? আমার কাছে লোকটি ধার চেয়েছে, হয় তাকে ধার দেব, আর না হয় ধার দিতে অস্বীকার করব। ধার দেব কি দেব না এ বিষয়ে কিভাবে আমি সিদ্ধান্ত নেব? টাকা সত্যি ফেরত দেবে কি না সে বিষয়ে ডাইরেক্ট নলেজ বা প্রত্যক্ষ জ্ঞান তো নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি তাকে যতটুকু জানি তাতে আমার মনে এ বিশ্বাস হয় কি না যে, লোকটি ওয়াদা পালন করবে। যদি তার উপর আমার বিশ্বাস হয় যে, এ লোক টাকা ফেরত দেবে তাহলে আমি তাকে ধার দেব। মোটকথা, ধার দেয়ার এই সিদ্ধান্তটার ভিত্তিই হলো বিশ্বাস।
যদি তার অতীত আচরণ থেকে তার উপর আমার এ বিশ্বাস না হয় যে, টাকাটা ফেরত নেবে, তাহলে আমি ধার দেব না। আমি যে তাকে অবিশ্বাস করলাম, তাও পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে। তাকে ধার দিতে অস্বীকার করলে সে নিশ্চয়ই বলবে, আমাকে বিশ্বাস করেন না? আমি যে তাকে অবিশ্বাস করলাম, এটাও কিন্তু বিশ্বাস। অর্থাৎ আমার বিশ্বাস যে, সে টাকা ফেরত দেবে না। তাকে আমি টাকা দিলামই না। কী করে জানলাম যে, সে টাকা ফেরত দেবে না? পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমেই আমি এ বিশ্বাসে পোঁছেছি।
তাহলে বিশ্বাসের সংজ্ঞা কী দাঁড়াল? যে বিষয়ে সরাসরি জ্ঞান নেই, অথচ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে; তখন পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া উপায় নেই; এভাবে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তারই নাম বিশ্বাস।
একটি বড় উদাহরণ
মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতে হবে কি না এ বিষয়ে সরাসরি জ্ঞান নেই। কিন্তু এ বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকারও উপায় নেই। যদি মৃত্যুর পর আরও একটি জীবন থাকে তাহলে আমাকে সে হিসেব মনে রেখেই দুনিয়ায় চলতে হবে। যদি না থাকে তাহলে বেপরোয়া চলা সহজ মনে হতে পারে। তাই এ বিষয়ে চুপ থাকার উপায় নেই। হয় আছে মনে করতে হবে আর না হয় নেই বলে ধারণা করতে হবে এবং স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।
বিশ্বাসের তিন অবস্থা
যে দুটো উদাহরণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এর ভিত্তিতে বিশ্বাসের তিনটি অবস্থা হলো :
এক) ইতিবাচক বিশ্বাস:
ক. আমার বিশ্বাস হয় যে, লোকটিকে ধার দিলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে।
খ. আমার বিশ্বাস হয় যে, মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতে হবে।
দুই) নেতিবাচক বিশ্বাস:
ক. আমার বিশ্বাস যে, লোকটি ধার দিলে টাকা ফেরত দেবে না।
খ. আমার বিশ্বাস যে, মৃত্যুর পর আর কোনো জীবন নেই।
তিন) সন্দেহ:
ক. লোকটি টাকা ফেরত দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।
খ. মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতেও পারে, নাও হতে পারে।
সন্দেহ মানে কোনো রকম বিশ্বাস এখনো জন্মেনি। ইতিবাচক নেতিবাচক কোনো বিশ্বাস না হওয়াই সন্দেহ।
একটি সহজ উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। ধরি এক পরিচিত লোক এসে আমাকে বললেন, ‘ভাই, আমাকে এক হাজার টাকা ধার দিন। আমি এক মাস পরই ফেরত দিয়ে যাব। এক মাস পর টাকাটা ফেরত দেবে কি না সে বিষয়ে আমার সরাসরি জানা নেই। আমি তাকে কী বলবো? তাকে তো আর একথা বলা যায় না যে, এক মাস পর ফেরত দেন কি না আগে দেখে নেই। তাহলে তাকে কী বলব? আমার কাছে লোকটি ধার চেয়েছে, হয় তাকে ধার দেব, আর না হয় ধার দিতে অস্বীকার করব। ধার দেব কি দেব না এ বিষয়ে কিভাবে আমি সিদ্ধান্ত নেব? টাকা সত্যি ফেরত দেবে কি না সে বিষয়ে ডাইরেক্ট নলেজ বা প্রত্যক্ষ জ্ঞান তো নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি তাকে যতটুকু জানি তাতে আমার মনে এ বিশ্বাস হয় কি না যে, লোকটি ওয়াদা পালন করবে। যদি তার উপর আমার বিশ্বাস হয় যে, এ লোক টাকা ফেরত দেবে তাহলে আমি তাকে ধার দেব। মোটকথা, ধার দেয়ার এই সিদ্ধান্তটার ভিত্তিই হলো বিশ্বাস।
যদি তার অতীত আচরণ থেকে তার উপর আমার এ বিশ্বাস না হয় যে, টাকাটা ফেরত নেবে, তাহলে আমি ধার দেব না। আমি যে তাকে অবিশ্বাস করলাম, তাও পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে। তাকে ধার দিতে অস্বীকার করলে সে নিশ্চয়ই বলবে, আমাকে বিশ্বাস করেন না? আমি যে তাকে অবিশ্বাস করলাম, এটাও কিন্তু বিশ্বাস। অর্থাৎ আমার বিশ্বাস যে, সে টাকা ফেরত দেবে না। তাকে আমি টাকা দিলামই না। কী করে জানলাম যে, সে টাকা ফেরত দেবে না? পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমেই আমি এ বিশ্বাসে পোঁছেছি।
তাহলে বিশ্বাসের সংজ্ঞা কী দাঁড়াল? যে বিষয়ে সরাসরি জ্ঞান নেই, অথচ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে; তখন পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া উপায় নেই; এভাবে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তারই নাম বিশ্বাস।
একটি বড় উদাহরণ
মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতে হবে কি না এ বিষয়ে সরাসরি জ্ঞান নেই। কিন্তু এ বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকারও উপায় নেই। যদি মৃত্যুর পর আরও একটি জীবন থাকে তাহলে আমাকে সে হিসেব মনে রেখেই দুনিয়ায় চলতে হবে। যদি না থাকে তাহলে বেপরোয়া চলা সহজ মনে হতে পারে। তাই এ বিষয়ে চুপ থাকার উপায় নেই। হয় আছে মনে করতে হবে আর না হয় নেই বলে ধারণা করতে হবে এবং স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।
বিশ্বাসের তিন অবস্থা
যে দুটো উদাহরণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এর ভিত্তিতে বিশ্বাসের তিনটি অবস্থা হলো :
এক) ইতিবাচক বিশ্বাস:
ক. আমার বিশ্বাস হয় যে, লোকটিকে ধার দিলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে।
খ. আমার বিশ্বাস হয় যে, মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতে হবে।
দুই) নেতিবাচক বিশ্বাস:
ক. আমার বিশ্বাস যে, লোকটি ধার দিলে টাকা ফেরত দেবে না।
খ. আমার বিশ্বাস যে, মৃত্যুর পর আর কোনো জীবন নেই।
তিন) সন্দেহ:
ক. লোকটি টাকা ফেরত দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।
খ. মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতেও পারে, নাও হতে পারে।
সন্দেহ মানে কোনো রকম বিশ্বাস এখনো জন্মেনি। ইতিবাচক নেতিবাচক কোনো বিশ্বাস না হওয়াই সন্দেহ।
বিশ্বাসের সাথে কর্মের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। যে ধরনের বিশ্বাস হয়, সে অনুযায়ীই কর্ম হয়ে থাকে। বিশ্বাসের বিপরীত কর্ম হয় না। বিশ্বাস তিন রকম হলেও কর্ম তিন রকম হয় না। ইতিবাচক বিশ্বাসের কর্ম এক রকম। আর নেতিবাচক বিশ্বাস ও সন্দেহের ভিত্তিতে কর্ম একই রকম হয়। যেমন : যদি আমার বিশ্বাস হয় যে, লোকটি টাকা ফেরত দেবে তাহলে আমি তাকে টাকা ধার দেব।
যদি বিশ্বাস হয় যে, ফেরত দেবে না তাহলে আমি তাকে ধার দেব না। সন্দেহ হলেও ধার দেব না। যে রকম বিশ্বাস হয় সে অনুযায়ীই কর্ম হয়। কর্মের পেছনে অবশ্যই বিশ্বাস রয়েছে। বিশ্বাস ছাড়া কর্ম হতে পারে না। বিশ্বাসের বিপরীতও কর্ম হয় না। বিশ্বাস ও কর্ম একেবারেই ঘনিষ্ঠ।।
যদি বিশ্বাস হয় যে, ফেরত দেবে না তাহলে আমি তাকে ধার দেব না। সন্দেহ হলেও ধার দেব না। যে রকম বিশ্বাস হয় সে অনুযায়ীই কর্ম হয়। কর্মের পেছনে অবশ্যই বিশ্বাস রয়েছে। বিশ্বাস ছাড়া কর্ম হতে পারে না। বিশ্বাসের বিপরীতও কর্ম হয় না। বিশ্বাস ও কর্ম একেবারেই ঘনিষ্ঠ।।
সরাসরি জ্ঞানের উৎস হলো পাঁচটি ইন্দ্রিয়। এ দ্বারা অতি সামান্য জ্ঞানই অর্জন করা যায়। শুধু এটুকু জ্ঞানের দ্বারা মানুষের জীবন চলে না। সামান্য কিছু ক্ষেত্র ছাড়া মানুষকে বিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই চলতে হয়।
১. শৈশবে মা বলে দিয়েছেন যে, অমুক আমার বাবা। বিশ্বাস করেছি। এ বিষয়ে সরাসরি জ্ঞানের কোনো সুযোগ নেই।
২. বাংলা ভাষা শিখার জন্য অ, আ, ক, খ’তে বিশ্বাস করেই এ ভাষা শিখতে হয়েছে।
৩. অসুখ হলে ডাক্তারের উপর বিশ্বাস না করলে চিকিৎসা পাওয়া অসম্ভব।
৪. ফসল হবে- এ কথা বিশ্বাস না হলে কৃষক চাষাবাদই করতে পারবে না।
৫. বিচারকের মনে সাক্ষী-প্রমাণ নিয়ে আসামি দোষী বলে বিশ্বাস সৃষ্টি হলেই শাস্তি দেয়, বিশ্বাস না হলে বা সন্দেহ হলে শাস্তি দেয় না।
৬. যে কোনো সময় মৃত্যু আসতে পারে। তবু মানুষ আরও কিছুদিন হয়ত বেঁচে থাকবে বিশ্বাস করে বলেই জীবন সচল আছে।
৭. মানুষে মানুষে সম্পর্ক বিশ্বাসের উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, ভাই-ভাইয়ে সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, ব্যবসায়-বাণিজ্যের সম্পর্ক সবই বিশ্বাসনির্ভর। হিসাব করলে দেখা যাবে যে, বিশ্বাস ছাড়া একদিনও মানুষ চলতে পারে না। বিশ্বাসই গোটা জীবনকে ঘিরে রেখেছে। জ্ঞান চর্চা বিশ্বাস দিয়েই শুরু হয় সকল জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই নিকট রয়েছে। প্রত্যেক বিষয়ে জ্ঞানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু আল্লাহই জানেন। তিনিই শুরু, তিনিই শেষ।
যে কোনো জ্ঞান চর্চা করতে হলে প্রথমেই কতক বিষয়কে বিশ্বাস করতে হয়। A, B, C, D যেভাবে লেখা আছে এগুলোকে বিনা যুক্তিতে মেনে নিয়েই ভাষা শেখা শুরু করতে হয়। কেউ যদি তর্ক করে যে, এভাবে কেন, অন্য ভাবে লিখলে দোষ কী? তাহলে তার ভাষা শেখা শুরু করাই সম্ভব হবে না। জ্যামিতি পড়তে হলে প্রথমেই কতক Axiom বা স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ে বিশ্বাস করতে হয়। যেমন বিশ্বাস করতে হয় যে, বিন্দুর (Point) দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কোনোটাই নেই; তবু বিন্দুর অস্তিত্ব আছে। যদিও পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী এটা একেবারেই অযৌক্তিক। তথাপি এটা বিশ্বাস না করলে জ্যামিতি শেখ শুরুই করা যায় না।
বিজ্ঞান চর্চা প্রথমে হাইপোথেসিস (কল্পনা, অনুমান) দিয়েই শুরু হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারক নিউটন সম্পর্কে জানা যায় যে, ফলের বাগানে বসা অবস্থায় তাঁর সামনে গাছ থেকে একটা আপেল নিচে পড়লো। এর আগেতো অনেকবার তিনি আপেল পড়তে দেখেছেন; কিন্তু সেদিন তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলো যে, উপরেও শূন্য নিচেও শূন্য। তাহলে ফলটি উপরের দিকে না গিয়ে নিচের দিকে নামল কেন? তাঁর মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, পৃথিবীর মধ্যে এমন কোনো শক্তি আছে, যা বস্তুকে আকর্ষণ করে। এভাবে বিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সূচনা হয়।
জ্ঞানের ময়দানে কোনো বিষয়েই জ্ঞানের শুরু বা শেষ মানুষের আয়ত্তে নেই। প্রথমে বিশ্বাস দিয়ে জ্ঞান চর্চা শুরু হয় এবং একটি পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে চর্চা থেমে যায়। জ্ঞানের শেষ পর্যন্ত পৌছার সাধ্য মানুষের নেই।
১. শৈশবে মা বলে দিয়েছেন যে, অমুক আমার বাবা। বিশ্বাস করেছি। এ বিষয়ে সরাসরি জ্ঞানের কোনো সুযোগ নেই।
২. বাংলা ভাষা শিখার জন্য অ, আ, ক, খ’তে বিশ্বাস করেই এ ভাষা শিখতে হয়েছে।
৩. অসুখ হলে ডাক্তারের উপর বিশ্বাস না করলে চিকিৎসা পাওয়া অসম্ভব।
৪. ফসল হবে- এ কথা বিশ্বাস না হলে কৃষক চাষাবাদই করতে পারবে না।
৫. বিচারকের মনে সাক্ষী-প্রমাণ নিয়ে আসামি দোষী বলে বিশ্বাস সৃষ্টি হলেই শাস্তি দেয়, বিশ্বাস না হলে বা সন্দেহ হলে শাস্তি দেয় না।
৬. যে কোনো সময় মৃত্যু আসতে পারে। তবু মানুষ আরও কিছুদিন হয়ত বেঁচে থাকবে বিশ্বাস করে বলেই জীবন সচল আছে।
৭. মানুষে মানুষে সম্পর্ক বিশ্বাসের উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, ভাই-ভাইয়ে সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, ব্যবসায়-বাণিজ্যের সম্পর্ক সবই বিশ্বাসনির্ভর। হিসাব করলে দেখা যাবে যে, বিশ্বাস ছাড়া একদিনও মানুষ চলতে পারে না। বিশ্বাসই গোটা জীবনকে ঘিরে রেখেছে। জ্ঞান চর্চা বিশ্বাস দিয়েই শুরু হয় সকল জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই নিকট রয়েছে। প্রত্যেক বিষয়ে জ্ঞানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু আল্লাহই জানেন। তিনিই শুরু, তিনিই শেষ।
যে কোনো জ্ঞান চর্চা করতে হলে প্রথমেই কতক বিষয়কে বিশ্বাস করতে হয়। A, B, C, D যেভাবে লেখা আছে এগুলোকে বিনা যুক্তিতে মেনে নিয়েই ভাষা শেখা শুরু করতে হয়। কেউ যদি তর্ক করে যে, এভাবে কেন, অন্য ভাবে লিখলে দোষ কী? তাহলে তার ভাষা শেখা শুরু করাই সম্ভব হবে না। জ্যামিতি পড়তে হলে প্রথমেই কতক Axiom বা স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ে বিশ্বাস করতে হয়। যেমন বিশ্বাস করতে হয় যে, বিন্দুর (Point) দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কোনোটাই নেই; তবু বিন্দুর অস্তিত্ব আছে। যদিও পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী এটা একেবারেই অযৌক্তিক। তথাপি এটা বিশ্বাস না করলে জ্যামিতি শেখ শুরুই করা যায় না।
বিজ্ঞান চর্চা প্রথমে হাইপোথেসিস (কল্পনা, অনুমান) দিয়েই শুরু হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারক নিউটন সম্পর্কে জানা যায় যে, ফলের বাগানে বসা অবস্থায় তাঁর সামনে গাছ থেকে একটা আপেল নিচে পড়লো। এর আগেতো অনেকবার তিনি আপেল পড়তে দেখেছেন; কিন্তু সেদিন তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলো যে, উপরেও শূন্য নিচেও শূন্য। তাহলে ফলটি উপরের দিকে না গিয়ে নিচের দিকে নামল কেন? তাঁর মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, পৃথিবীর মধ্যে এমন কোনো শক্তি আছে, যা বস্তুকে আকর্ষণ করে। এভাবে বিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সূচনা হয়।
জ্ঞানের ময়দানে কোনো বিষয়েই জ্ঞানের শুরু বা শেষ মানুষের আয়ত্তে নেই। প্রথমে বিশ্বাস দিয়ে জ্ঞান চর্চা শুরু হয় এবং একটি পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে চর্চা থেমে যায়। জ্ঞানের শেষ পর্যন্ত পৌছার সাধ্য মানুষের নেই।
আল্লাহর উপর ঈমান আনলে আল্লাহর সাথে বান্দার বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আল্লাহ এ সম্পর্ককে সূরা নাস-এ তিনভাবে প্রকাশ করেছেন।
১. “মানুষের রব বা প্রতিপালক।” যাবতীয় প্রয়োজন পূরণকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ইত্যাদি। আর মানুষ তাঁর দয়ার ভিখারি, তাঁর একান্ত অনুগৃহীত ও প্রতিপালিত।
২. মানুষের বাদশাহ। তিনি রাজা, আর মানুষ তাঁর প্রজা। কোনো অবস্থায়ই কারো পক্ষে তাঁর রাজত্বের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তাঁর রাজ্যের নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধানে মানুষ আবদ্ধ। ভালো বা মন্দ কিছু করার ইচ্ছা ও চেষ্টার স্বাধীনতাটুকু শুধু মানুষকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ সমাধা করার কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। কর্ম সমাধা করা আল্লাহর ইচ্ছার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। শুধু ইচ্ছা ও চেষ্টা করা হলেই মানুষ কর্মের পুরস্কার বা শাস্তি পাবে। কর্ম সম্পন্ন না হলেও এর বদলা পাবে। ইচ্ছা ও চেষ্টার সামান্য স্বাধীনতাটুকু ছাড়া আল্লাহ তাঁর প্রজাকে আর কোনো ক্ষমতাই দেননি।
৩. ‘আল্লাহই মানুষের একমাত্র ইলাহ, রব, হুকুমকর্তা, প্রভু ও মুনিব। তাঁর হুকুমের বিরোধী কোনো হুকুম মানার অধিকার মানুষের নেই।
এসব সম্পর্কের স্বাভাবিক দাবি
যে আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর উপর ঈমান আনে তার ঈমানের দাবি সে পূরণ করতে সক্ষম হয়।
১. সে আল্লাহকে একমাত্র রব হিসেবে মেনে নেয়। যা কিছু সে দুনিয়ায় ভোগ করে এর জন্য সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর প্রতিই জ্ঞাপন করে। তার দেহে যত নিয়ামত আছে, তার অন্তরে যত সুকামনা আসে, তার মনে যত সুচিন্তা আসে, নেক কাজের যত ইচ্ছা মনে জাগে, সৎকাজের জন্য চেষ্টা করার যতটুকু তাওফীক হয়, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের যা কিছু ব্যবহার করা ও ভোগ করার সুযোগ সে পায়-এ সকল বিষয়েই সে একমাত্র আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানায়। একমাত্র তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করে। এবং মনে তাঁরই অনুগ্রহের তৃপ্তি বোধ করে। প্রতিটি নিঃশ্বাসই তাঁর দয়া বলে অনুভব করে। প্রতিটি আপদ-বিপদকে তাঁর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করে। সে আল্লাহকেই একমাত্র রিযুকদাতা ও প্রয়োজন পূরণকারী মনে করে। কঠিন মুসীবতেও সে পেরেশান হয় না। কোনো অবস্থায়ই তাঁর রব। থেকে নিরাশ হয় না। সব কিছুর মধ্যে আল্লাহ তার জন্য মঙ্গল ও কল্যাণ রেখেছেন বলে বিশ্বাস করে। একমাত্র তাঁরই উপর নির্ভর করে মনে সান্তনা বোধ করে।
২. সে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু মনে করে এবং আর কোনো শক্তির পরওয়া সে করে না। কোনো বড় শক্তিই তার নিকট বড় নয়। যিনি সকল বাদশাহর বাদশাহ, সে নিজেকে তাঁরই স্নেহভাজন প্ৰজা মনে করে। কারো দাপটে সে ভীত হয় না। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো শক্তিকে ভয় করার সামান্য প্রয়োজনও সে বোধ করে না। কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে বলে সে মনে করে না। সে পরম সাহসী ও চরম নির্ভীক। দুনিয়া ও আখিরাতে সে আল্লাহকেই একমাত্র অলী বা স্নেহপরায়ণ অভিভাবক মনে করে। সর্বাবস্থায় সে অন্তরে প্রশান্তি বোধ করে। কোনো অবস্থায়ই বিচলিত হওয়া প্রয়োজন মনে করে না। নিজেকে সে আল্লাহর সৈনিক মনে করে এবং তাঁর বাদশাহর রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা ও প্রতিষ্ঠা রাখা সবচেয়ে বড় কর্তব্য মনে করে। আল্লাহর অপছন্দনীয় সবকিছু দূর করার জন্য প্রচেষ্টা করে। সে আল্লাহকেই আর সব কিছু থেকে বেশি ভালোবাসে, তাঁর সন্তুষ্টি লাভের চেয়ে বড় কোনো আকাঙ্খা তার থাকে না। মালিকের সন্তুষ্টির জন্য জান কুরবানী করার মধ্যেই সে গৌরব বোধ করে। শয়তানের রাজত্ব উৎখাত করে আল্লাহর রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জান ও মাল কুরবানী করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করাই জান্নাত লাভের সোপান মনে করে।
৩. আল্লাহই একমাত্র ইলাহ বলে বিশ্বাস করে। তাঁর হুকুমের বিরোধী কারো হুকুম পালন করতে সে এক বিন্দুও প্রস্তুত নয়। তাঁর আদেশ পালন করা ও তাঁর নিষেধ থেকে নিজেকে বিরত রাখাই তার দুনিয়ার ক্ষণ স্থায়ী জীবন ও আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের সাফল্যের একমাত্র উপায় বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। এটাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের একমাত্র পথ বলে সে মনে করে। দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য আর কোনো বিকল্প উপায় আছে বলে সে বিশ্বাস করে না।
১. “মানুষের রব বা প্রতিপালক।” যাবতীয় প্রয়োজন পূরণকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ইত্যাদি। আর মানুষ তাঁর দয়ার ভিখারি, তাঁর একান্ত অনুগৃহীত ও প্রতিপালিত।
২. মানুষের বাদশাহ। তিনি রাজা, আর মানুষ তাঁর প্রজা। কোনো অবস্থায়ই কারো পক্ষে তাঁর রাজত্বের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তাঁর রাজ্যের নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধানে মানুষ আবদ্ধ। ভালো বা মন্দ কিছু করার ইচ্ছা ও চেষ্টার স্বাধীনতাটুকু শুধু মানুষকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ সমাধা করার কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। কর্ম সমাধা করা আল্লাহর ইচ্ছার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। শুধু ইচ্ছা ও চেষ্টা করা হলেই মানুষ কর্মের পুরস্কার বা শাস্তি পাবে। কর্ম সম্পন্ন না হলেও এর বদলা পাবে। ইচ্ছা ও চেষ্টার সামান্য স্বাধীনতাটুকু ছাড়া আল্লাহ তাঁর প্রজাকে আর কোনো ক্ষমতাই দেননি।
৩. ‘আল্লাহই মানুষের একমাত্র ইলাহ, রব, হুকুমকর্তা, প্রভু ও মুনিব। তাঁর হুকুমের বিরোধী কোনো হুকুম মানার অধিকার মানুষের নেই।
এসব সম্পর্কের স্বাভাবিক দাবি
যে আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর উপর ঈমান আনে তার ঈমানের দাবি সে পূরণ করতে সক্ষম হয়।
১. সে আল্লাহকে একমাত্র রব হিসেবে মেনে নেয়। যা কিছু সে দুনিয়ায় ভোগ করে এর জন্য সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর প্রতিই জ্ঞাপন করে। তার দেহে যত নিয়ামত আছে, তার অন্তরে যত সুকামনা আসে, তার মনে যত সুচিন্তা আসে, নেক কাজের যত ইচ্ছা মনে জাগে, সৎকাজের জন্য চেষ্টা করার যতটুকু তাওফীক হয়, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের যা কিছু ব্যবহার করা ও ভোগ করার সুযোগ সে পায়-এ সকল বিষয়েই সে একমাত্র আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানায়। একমাত্র তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করে। এবং মনে তাঁরই অনুগ্রহের তৃপ্তি বোধ করে। প্রতিটি নিঃশ্বাসই তাঁর দয়া বলে অনুভব করে। প্রতিটি আপদ-বিপদকে তাঁর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করে। সে আল্লাহকেই একমাত্র রিযুকদাতা ও প্রয়োজন পূরণকারী মনে করে। কঠিন মুসীবতেও সে পেরেশান হয় না। কোনো অবস্থায়ই তাঁর রব। থেকে নিরাশ হয় না। সব কিছুর মধ্যে আল্লাহ তার জন্য মঙ্গল ও কল্যাণ রেখেছেন বলে বিশ্বাস করে। একমাত্র তাঁরই উপর নির্ভর করে মনে সান্তনা বোধ করে।
২. সে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু মনে করে এবং আর কোনো শক্তির পরওয়া সে করে না। কোনো বড় শক্তিই তার নিকট বড় নয়। যিনি সকল বাদশাহর বাদশাহ, সে নিজেকে তাঁরই স্নেহভাজন প্ৰজা মনে করে। কারো দাপটে সে ভীত হয় না। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো শক্তিকে ভয় করার সামান্য প্রয়োজনও সে বোধ করে না। কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে বলে সে মনে করে না। সে পরম সাহসী ও চরম নির্ভীক। দুনিয়া ও আখিরাতে সে আল্লাহকেই একমাত্র অলী বা স্নেহপরায়ণ অভিভাবক মনে করে। সর্বাবস্থায় সে অন্তরে প্রশান্তি বোধ করে। কোনো অবস্থায়ই বিচলিত হওয়া প্রয়োজন মনে করে না। নিজেকে সে আল্লাহর সৈনিক মনে করে এবং তাঁর বাদশাহর রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা ও প্রতিষ্ঠা রাখা সবচেয়ে বড় কর্তব্য মনে করে। আল্লাহর অপছন্দনীয় সবকিছু দূর করার জন্য প্রচেষ্টা করে। সে আল্লাহকেই আর সব কিছু থেকে বেশি ভালোবাসে, তাঁর সন্তুষ্টি লাভের চেয়ে বড় কোনো আকাঙ্খা তার থাকে না। মালিকের সন্তুষ্টির জন্য জান কুরবানী করার মধ্যেই সে গৌরব বোধ করে। শয়তানের রাজত্ব উৎখাত করে আল্লাহর রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জান ও মাল কুরবানী করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করাই জান্নাত লাভের সোপান মনে করে।
৩. আল্লাহই একমাত্র ইলাহ বলে বিশ্বাস করে। তাঁর হুকুমের বিরোধী কারো হুকুম পালন করতে সে এক বিন্দুও প্রস্তুত নয়। তাঁর আদেশ পালন করা ও তাঁর নিষেধ থেকে নিজেকে বিরত রাখাই তার দুনিয়ার ক্ষণ স্থায়ী জীবন ও আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের সাফল্যের একমাত্র উপায় বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। এটাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের একমাত্র পথ বলে সে মনে করে। দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য আর কোনো বিকল্প উপায় আছে বলে সে বিশ্বাস করে না।
আল্লাহর প্রতি সত্যিকার ঈমান থাকলে আল্লাহর সাথে যে সব সম্পর্ক গড়ে উঠে এ সম্পর্কের দাবি পূরণ করাই মুমিনের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু ঈমানের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও ঈমানের দাবি পূরণে সে-ই ব্যর্থ হয় যার ঈমান দুর্বল। তাই প্রত্যেক মু'মিনেরই এ-বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন যে, কোন্ পথে ঈমানে দুর্বলতা আসে। যখনই ঈমানে দুর্বলতা দেখা দেবে তখনই আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। আল্লাহ তাঁর কুরআনে নির্দেশ করেছেন।
قل إن كان آباؤكم وأبناؤكم وإخوانه وأزواجه وعشيرة وأموال اقترموها وتجار تشون گشادها ومساكن ترؤها أحب إليه من ال وشولو چهار في سبيل تبوا حتى يأتي الله بأمري و الله لا يهيي القوة القايقين
(হে রসূল! আপনি তাদেরকে) বলুন, তোমাদের পিতা, সন্তানাদি, ভাই-বোন, স্ত্রীগণ, আত্মীয়-স্বজন, ঐ সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, তোমাদের ঐ ব্যবসা-বাণিজ্য তোমরা যার মন্দার ভয় কর এবং তোমাদের ঐ সম্পদ যা তোমরা পছন্দ কর - (এস) যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর পথে জিহাদের চেয়ে বেশি প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আল্লাহ ফাসিকদেরকে হিদায়াত করেন না। (সূরা তাওবা ৯ : ২৪)
এক দিকে ৮টির প্রতি ভালোবাসা
১) পিতা
২) সন্তানাদি
৩) ভাই-বোন
৪) স্ত্রীগণ
৫) আত্মীয়-স্বজন
৬) জমানো সম্পদ
৭) ব্যবসা-বাণিজ্য
৮) বাড়ি
অন্য দিকে ৩টির প্রতি ভালোবাসা
১) আল্লাহ
২) রসূল
৩) আল্লাহর পথে জিহাদ বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা
এ আয়াতে মহান স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা স্পষ্ট ভাষায় দুনিয়ার ভালোবাসার জিনিসগুলোকে কী পরিমাণ ভালোবাসা যাবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং বক্তব্য স্পষ্ট :
১. আল্লাহ
২. রসূল (ﷺ)
৩. আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে সম্পদ ও স্বজনকে বেশি ভালোবাসলেই ঈমান দুর্বল বলে প্রমাণিত হবে। যখন ঐ আটটি জিনিসের ভালোবাসা এ তিনটির চেয়ে বেশি হবে তখন-ই ঈমানের বিপদ।
একটি উদাহরণ:
পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া জীবন বাঁচে না বলেই এ কথাটি বলা হয়। কিন্তু মানুষ কি পানিতে ডুবে মরে না? তাহলে পানিকে জীবন বলা যায় কী করে? আসল কথা হলো, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি অবশ্যই জীবন। এ পরিমাণের বেশি হলে পানিই মরণ। আল্লাহ, রসূল ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রতি দায়িত্ব পালনের পথে যখন ঐ আটটি ভালোবাসার বস্তু প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় তখন ঐ দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি হয়। এ বাধা দূর করতে পারলে, অর্থাৎ তিনটির ভালোবাসার খাতিরে যদি আটটির ভালোবাসা কুরবানী দেয়া যায়, তাহলে প্রমাণিত হবে যে ঈমান দুর্বল। নয়। ঈমান দুর্বল হলে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কারণ তখন আর ঈমানের দাবি পূরণ করার শক্তি থাকে না। সম্পদ ও সন্তানকে আল্লাহ শোভাও বলেছেন, ফিতনাও বলেছেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে আল্লাহর বক্তব্য পরিষ্কার:
المال والبنون زينة الحياة الدنيا
“সম্পদ ও সন্তানাদি দুনিয়ার জীবনের শোভা।” (সূরা আল কাহাফ ১৮ : ৪৬)
إنما أم الگه وأولاده نه والله عنده أجر عليه
“নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদ ও সন্তান তোমাদের জন্য ফিতনাহ।” (সূরা আত তাগাবুন ৬৪ : ১৫)
ঐ আটটি ও তিনটির ভালোবাসায় যদি ভারসাম্য রক্ষা করা হয় তাহলে সম্পদ ও সন্তান জীবনের শোভা। আর যদি আটটির ভালোবাসা বেশি হয় তাহলে সম্পদ ও সন্তান ফিতনাহ। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর হুকুম পালনে বাধাকেই ফিতনা বলা হয়। এর শাব্দিক অর্থ- পরীক্ষা, বিপদ, গোলযোগ, আকর্ষণ, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন :
“হে ঐ সব লোক যারা ঈমান এনেছ, শুন! তোমাদের সম্পদ ও সন্তান যেন তোমাদেরকে আল্লাহর কথা ভুলিয়ে না দেয়।” (সূরা মুনাফিকূন ৬৩ : ৯)
“তোমাদের প্রিয় জিনিসগুলিকে যদি তোমরা আল্লাহর জন্য কুরবানী না কর তা হলে তোমরা প্রকৃত কল্যাণ কিছুতেই লাভ করতে পারবে না।” (সূরা আলে-ইমরান ৩ : ৯২ )
“আল্লাহ ঈমানদার ব্যক্তিদের নিকট হতে তাদের জান ও মাল কিনে নিয়েছেন এবং তার বিনিময়ে, তাদের জন্য জান্নাত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।” (সূরা তাওবা ৯ : ১১১)
তাই পার্থিব ভালোবাসায় এমন মগ্ন হওয়া যাবে না যার কারণে ঈমানের দাবি পূরণে অবহেলা হয়ে যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক ঈমানের বুঝ দিন এবং প্রতিমুহূর্তে এই ঈমানকে ধরে রাখার তৌফিক দিন। আমীন। আসুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে নিজেকে নিজে পরীক্ষা করি। আমরা জানি রসূল (ﷺ) এবং আরো অনেক সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দ্বীন ইসলামের জন্য নিজ জন্মভূমি ত্যাগ করেছিলেন। ত্যাগ করার সময় ধন-সম্পদ-পরিবার-পরিজন কিছুই সাথে নিতে পারেননি, সব ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন, যেখানে যাচ্ছেন সেখানে থাকা-খাওয়ারও কোন নিশ্চয়তা ছিল না। এটা ছিল তাদের ত্যাগ। এবার আমাকে যদি বলা হয় দ্বীন ইসলাম প্রচারের জন্য টরন্টো শহর ছেড়ে অন্য প্রভিন্স নিউ ফাউন্ডল্যাণ্ড গিয়ে থাকতে হবে, সাথে পরিবারসহ সব কিছু নিতে পারবো, গিয়েই থাকার বাসা পাবো, চাকুরীতে যোগদান করতে পারবো। তারপরও কী আমরা যেতে রাজী হবো? হয়তো না।
قل إن كان آباؤكم وأبناؤكم وإخوانه وأزواجه وعشيرة وأموال اقترموها وتجار تشون گشادها ومساكن ترؤها أحب إليه من ال وشولو چهار في سبيل تبوا حتى يأتي الله بأمري و الله لا يهيي القوة القايقين
(হে রসূল! আপনি তাদেরকে) বলুন, তোমাদের পিতা, সন্তানাদি, ভাই-বোন, স্ত্রীগণ, আত্মীয়-স্বজন, ঐ সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, তোমাদের ঐ ব্যবসা-বাণিজ্য তোমরা যার মন্দার ভয় কর এবং তোমাদের ঐ সম্পদ যা তোমরা পছন্দ কর - (এস) যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর পথে জিহাদের চেয়ে বেশি প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আল্লাহ ফাসিকদেরকে হিদায়াত করেন না। (সূরা তাওবা ৯ : ২৪)
এক দিকে ৮টির প্রতি ভালোবাসা
১) পিতা
২) সন্তানাদি
৩) ভাই-বোন
৪) স্ত্রীগণ
৫) আত্মীয়-স্বজন
৬) জমানো সম্পদ
৭) ব্যবসা-বাণিজ্য
৮) বাড়ি
অন্য দিকে ৩টির প্রতি ভালোবাসা
১) আল্লাহ
২) রসূল
৩) আল্লাহর পথে জিহাদ বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা
এ আয়াতে মহান স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা স্পষ্ট ভাষায় দুনিয়ার ভালোবাসার জিনিসগুলোকে কী পরিমাণ ভালোবাসা যাবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং বক্তব্য স্পষ্ট :
১. আল্লাহ
২. রসূল (ﷺ)
৩. আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে সম্পদ ও স্বজনকে বেশি ভালোবাসলেই ঈমান দুর্বল বলে প্রমাণিত হবে। যখন ঐ আটটি জিনিসের ভালোবাসা এ তিনটির চেয়ে বেশি হবে তখন-ই ঈমানের বিপদ।
একটি উদাহরণ:
পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া জীবন বাঁচে না বলেই এ কথাটি বলা হয়। কিন্তু মানুষ কি পানিতে ডুবে মরে না? তাহলে পানিকে জীবন বলা যায় কী করে? আসল কথা হলো, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি অবশ্যই জীবন। এ পরিমাণের বেশি হলে পানিই মরণ। আল্লাহ, রসূল ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রতি দায়িত্ব পালনের পথে যখন ঐ আটটি ভালোবাসার বস্তু প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় তখন ঐ দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি হয়। এ বাধা দূর করতে পারলে, অর্থাৎ তিনটির ভালোবাসার খাতিরে যদি আটটির ভালোবাসা কুরবানী দেয়া যায়, তাহলে প্রমাণিত হবে যে ঈমান দুর্বল। নয়। ঈমান দুর্বল হলে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কারণ তখন আর ঈমানের দাবি পূরণ করার শক্তি থাকে না। সম্পদ ও সন্তানকে আল্লাহ শোভাও বলেছেন, ফিতনাও বলেছেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে আল্লাহর বক্তব্য পরিষ্কার:
المال والبنون زينة الحياة الدنيا
“সম্পদ ও সন্তানাদি দুনিয়ার জীবনের শোভা।” (সূরা আল কাহাফ ১৮ : ৪৬)
إنما أم الگه وأولاده نه والله عنده أجر عليه
“নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদ ও সন্তান তোমাদের জন্য ফিতনাহ।” (সূরা আত তাগাবুন ৬৪ : ১৫)
ঐ আটটি ও তিনটির ভালোবাসায় যদি ভারসাম্য রক্ষা করা হয় তাহলে সম্পদ ও সন্তান জীবনের শোভা। আর যদি আটটির ভালোবাসা বেশি হয় তাহলে সম্পদ ও সন্তান ফিতনাহ। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর হুকুম পালনে বাধাকেই ফিতনা বলা হয়। এর শাব্দিক অর্থ- পরীক্ষা, বিপদ, গোলযোগ, আকর্ষণ, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন :
“হে ঐ সব লোক যারা ঈমান এনেছ, শুন! তোমাদের সম্পদ ও সন্তান যেন তোমাদেরকে আল্লাহর কথা ভুলিয়ে না দেয়।” (সূরা মুনাফিকূন ৬৩ : ৯)
“তোমাদের প্রিয় জিনিসগুলিকে যদি তোমরা আল্লাহর জন্য কুরবানী না কর তা হলে তোমরা প্রকৃত কল্যাণ কিছুতেই লাভ করতে পারবে না।” (সূরা আলে-ইমরান ৩ : ৯২ )
“আল্লাহ ঈমানদার ব্যক্তিদের নিকট হতে তাদের জান ও মাল কিনে নিয়েছেন এবং তার বিনিময়ে, তাদের জন্য জান্নাত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।” (সূরা তাওবা ৯ : ১১১)
তাই পার্থিব ভালোবাসায় এমন মগ্ন হওয়া যাবে না যার কারণে ঈমানের দাবি পূরণে অবহেলা হয়ে যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক ঈমানের বুঝ দিন এবং প্রতিমুহূর্তে এই ঈমানকে ধরে রাখার তৌফিক দিন। আমীন। আসুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে নিজেকে নিজে পরীক্ষা করি। আমরা জানি রসূল (ﷺ) এবং আরো অনেক সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দ্বীন ইসলামের জন্য নিজ জন্মভূমি ত্যাগ করেছিলেন। ত্যাগ করার সময় ধন-সম্পদ-পরিবার-পরিজন কিছুই সাথে নিতে পারেননি, সব ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন, যেখানে যাচ্ছেন সেখানে থাকা-খাওয়ারও কোন নিশ্চয়তা ছিল না। এটা ছিল তাদের ত্যাগ। এবার আমাকে যদি বলা হয় দ্বীন ইসলাম প্রচারের জন্য টরন্টো শহর ছেড়ে অন্য প্রভিন্স নিউ ফাউন্ডল্যাণ্ড গিয়ে থাকতে হবে, সাথে পরিবারসহ সব কিছু নিতে পারবো, গিয়েই থাকার বাসা পাবো, চাকুরীতে যোগদান করতে পারবো। তারপরও কী আমরা যেতে রাজী হবো? হয়তো না।
মযবুত ঈমানের প্রধান শর্ত দুটো
১. শিরুকমুক্ত ঈমান বা নির্ভেজাল তাওহীদ।
২. ঈমানের দাবিদারকে তাগূতের অস্বীকার করতে হবে। সুতরাং মযবুত ঈমানের অধিকারীকে তাওহীদ, শিরুক ও তাগুত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে হবে।
প্রচলিত শিরকের উদাহরণ
১. আমাদের দেশে মানুষের মনগড়া আইন চালু আছে। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করলে বুঝা গেল যে, মানুষের তৈরি চালু আইনকে মন থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এসব আইন বৈধ মনে করা যে শিরুক তা অনেকেই বুঝেন না। যারা এসব অবৈধ আইন পরিবর্তন করে আল্লাহর আইন চালু করার চেষ্টা করে, তারা শিরুক থেকে বেঁচে গেল।
২. রিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। যে পেশাই গ্রহণ করা হোক, ঐ পেশা নিজে রিযিকদাতা নয় বা কোম্পানির মালিক রিযকদাতা নয়। ঐ পেশা নষ্ট হলেও আল্লাহ অন্য উপায়ে রিম্ দিতে সক্ষম। যেমন আমি যে চাকুরী নিয়েছি সেই চাকুরী করতে গিয়ে যদি আমি দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ কমিয়ে দেই বা বন্ধ করে দেই তাহলে বুঝা গেল যে, আমি আল্লাহকে একমাত্র রিযকদাতা মনে করি না। তার মানে আমি সে চাকরিকেও রিযকদাতা হিসেবে আল্লাহর সাথে শরীক মনি করি। এভাবেই শিরুক ঈমানকে দুর্বল করে। ঈমান শিরুকমুক্ত না হলে মযবুত হতে পারে না। যে চাকরি বাঁচানোর জন্য আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা বন্ধ করল, আল্লাহর সাথে তার ঈমানের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল।
৩. আমাদের দেশে অনেক লোক আজমীরে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) এবং বাগদাদে আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর মাযারে গিয়ে তাঁদের নিকট সন্তানের জন্য, বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য, রোগ দূর করে দেয়ার জন্য এবং আরও বিভিন্ন রকম মকসূদ হাসিলের উদ্দেশ্যে দু'আ করে। এসব দু’আ শুধু আল্লাহর দরবারেই করা। প্রয়োজন। বুজুর্গদের মাযারে গিয়ে দু’আ করা সুস্পষ্ট শিরুক। ওখানে গিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ করাও সঠিক নয়। আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য সেখানে যাওয়া অর্থহীন। মাযার ও কবরের সাথে সম্পর্কিত অনেক রকমের শিরুক ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে চালু রয়েছে।
১. শিরুকমুক্ত ঈমান বা নির্ভেজাল তাওহীদ।
২. ঈমানের দাবিদারকে তাগূতের অস্বীকার করতে হবে। সুতরাং মযবুত ঈমানের অধিকারীকে তাওহীদ, শিরুক ও তাগুত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে হবে।
প্রচলিত শিরকের উদাহরণ
১. আমাদের দেশে মানুষের মনগড়া আইন চালু আছে। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করলে বুঝা গেল যে, মানুষের তৈরি চালু আইনকে মন থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এসব আইন বৈধ মনে করা যে শিরুক তা অনেকেই বুঝেন না। যারা এসব অবৈধ আইন পরিবর্তন করে আল্লাহর আইন চালু করার চেষ্টা করে, তারা শিরুক থেকে বেঁচে গেল।
২. রিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। যে পেশাই গ্রহণ করা হোক, ঐ পেশা নিজে রিযিকদাতা নয় বা কোম্পানির মালিক রিযকদাতা নয়। ঐ পেশা নষ্ট হলেও আল্লাহ অন্য উপায়ে রিম্ দিতে সক্ষম। যেমন আমি যে চাকুরী নিয়েছি সেই চাকুরী করতে গিয়ে যদি আমি দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ কমিয়ে দেই বা বন্ধ করে দেই তাহলে বুঝা গেল যে, আমি আল্লাহকে একমাত্র রিযকদাতা মনে করি না। তার মানে আমি সে চাকরিকেও রিযকদাতা হিসেবে আল্লাহর সাথে শরীক মনি করি। এভাবেই শিরুক ঈমানকে দুর্বল করে। ঈমান শিরুকমুক্ত না হলে মযবুত হতে পারে না। যে চাকরি বাঁচানোর জন্য আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা বন্ধ করল, আল্লাহর সাথে তার ঈমানের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল।
৩. আমাদের দেশে অনেক লোক আজমীরে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) এবং বাগদাদে আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর মাযারে গিয়ে তাঁদের নিকট সন্তানের জন্য, বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য, রোগ দূর করে দেয়ার জন্য এবং আরও বিভিন্ন রকম মকসূদ হাসিলের উদ্দেশ্যে দু'আ করে। এসব দু’আ শুধু আল্লাহর দরবারেই করা। প্রয়োজন। বুজুর্গদের মাযারে গিয়ে দু’আ করা সুস্পষ্ট শিরুক। ওখানে গিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ করাও সঠিক নয়। আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য সেখানে যাওয়া অর্থহীন। মাযার ও কবরের সাথে সম্পর্কিত অনেক রকমের শিরুক ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে চালু রয়েছে।
তাগুত শব্দের অর্থ সীমালঙ্ঘনকারী। আল্লাহ আয়াতুল কুরসীতে তাঁর সার্বভৌম গুণাবলী উল্লেখ করে তারপর বলেন:
قم يكفر بالطاغوت ویمن پال قي اشتمسك بالثروة الوثقى لا انفصام لها والله سميع عليه
“অতএব যে কেউ তাগূতকে অস্বীকার করে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, সে এমন মযবুত রশি ধরেছে যা কখনও ছিড়বে না। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।” (সূরা বাকারা ২ : ২৫৬)।
আল্লাহর গুণাবলী উল্লেখ করে এ আয়াতে যা বলা হয়েছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বলা হয়েছে, কেউ যদি উপযুক্ত গুণাবলীসম্পন্ন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে চায় তাহলে প্রথমে তাকে তাগূতের বিপরীত হতে হবে। তাগুতের বিপরীত না হয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে তাগুতের চাপে ও দাপটে সে ঈমানের দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হবে। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে আল্লাহর সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তাগুতের চাপে এ সম্পর্ক বহাল থাকে না। তাগুতকে মানতে অস্বীকার করলে অর্থাৎ তাগুতের চাপকে অগ্রাহ্য করার সাহস করলে আল্লাহর সাথে ঈমানের সম্পর্ক এমন মযবুত হয় যে, তা আর ছিন্ন হয় না। আয়াতে ঈমানের এ সম্পর্কটিকে রশি বা রজ্জ্বর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এ কারণেই মযবুত ঈমানের শর্ত হিসেবে তাগূতকে মানতে অস্বীকার করতে হবে। তাই তাগূত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন বা তাগুতকে ঠিকমত চিনে নেয়া দরকার।
‘আল্লাহ তাঁর হুকুম মেনে চলার জন্য যেমন বাধ্য করেননি, অমান্য করতেও বাধ্য করেননি। মানা ও না মানার স্বাধীনতা মানুষকে দিয়েছেন। আল্লাহর নাফরমানীর দুটো সীমা রয়েছে। প্রাথমিক সীমা হলো (ফিসক) আর চূড়ান্ত ও শেষ সীমা হচ্ছে (কুফর)। যে আল্লাহর হুকুম স্বীকার করে বটে, কিন্তু পালন করে না, সে ফাসিক। আর যে হুকুমকে স্বীকারই করে না, সে কাফির। যে নাফরমানীর এ দুটো সীমালঙ্ঘন করে সেই তাগুত।
ব্যক্তিগতভাবে কেউ ফাসিক বা কেউ কাফির হতে পারে। এটা যার যার স্বাধীন ইচ্ছা। আল্লাহর নাফরমানীর এ দুটো সীমা রয়েছে। যে এই সীমালঙ্ঘনও করে সে হলো তাগূত। এ দুটো সীমালঙ্ঘন করার মানে কী? কেমন করে এ সীমালঙ্ঘন করা হয়? এটা বুঝলেই তাগূতকে চেনা সহজ হবে।
যে নিজে ফাসিক এবং অন্য মানুষকেও ফাসিক বানানোর চেষ্টা করে সেই তাগুত। সে নাফরমানীর প্রাথমিক সীমালঙ্ঘন করলো। যে নিজে কাফির এবং অন্যকেও কাফির বানানোর চেষ্টা করে সেই তাগূত। সে আল্লাহর নাফরমানীর শেষ সীমালঙ্ঘনও করলো।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে বোঝার আছে। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে নিজস্ব সত্ত্বা দিয়ে আলাদাভাবে সৃষ্টি করেন। সে দুনিয়ায় আসার সময় যেমন একা এসেছে, যাওয়ার সময়ও একাই যায়। আখিরাতে তাকে তার কৃতকর্মের ফল আলাদাভাবেই দেয়া হবে।
তার শাস্তি সে একাই ভোগ করবে। তার পুরস্কারও সে একাই পাবে। তার কর্মের জন্য সে-ই দায়ী হবে। তাই তাকে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার স্বাধীনতা এককভাবেই দেয়া হয়েছে। অন্য মানুষকে আল্লাহর নাফরমান বানানোর কোনো ইচ্ছা কাউকে দেয়া হয়নি। যারা নিজে নাফরমান এবং অন্যকেও নাফরমান বানাতে চেষ্টা করে, তারাই আল্লাহর দেয়া নাফরমানীর সীমালঙ্ঘন করে-এরাই তাগুত।
قم يكفر بالطاغوت ویمن پال قي اشتمسك بالثروة الوثقى لا انفصام لها والله سميع عليه
“অতএব যে কেউ তাগূতকে অস্বীকার করে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, সে এমন মযবুত রশি ধরেছে যা কখনও ছিড়বে না। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।” (সূরা বাকারা ২ : ২৫৬)।
আল্লাহর গুণাবলী উল্লেখ করে এ আয়াতে যা বলা হয়েছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বলা হয়েছে, কেউ যদি উপযুক্ত গুণাবলীসম্পন্ন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে চায় তাহলে প্রথমে তাকে তাগূতের বিপরীত হতে হবে। তাগুতের বিপরীত না হয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে তাগুতের চাপে ও দাপটে সে ঈমানের দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হবে। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে আল্লাহর সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তাগুতের চাপে এ সম্পর্ক বহাল থাকে না। তাগুতকে মানতে অস্বীকার করলে অর্থাৎ তাগুতের চাপকে অগ্রাহ্য করার সাহস করলে আল্লাহর সাথে ঈমানের সম্পর্ক এমন মযবুত হয় যে, তা আর ছিন্ন হয় না। আয়াতে ঈমানের এ সম্পর্কটিকে রশি বা রজ্জ্বর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এ কারণেই মযবুত ঈমানের শর্ত হিসেবে তাগূতকে মানতে অস্বীকার করতে হবে। তাই তাগূত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন বা তাগুতকে ঠিকমত চিনে নেয়া দরকার।
‘আল্লাহ তাঁর হুকুম মেনে চলার জন্য যেমন বাধ্য করেননি, অমান্য করতেও বাধ্য করেননি। মানা ও না মানার স্বাধীনতা মানুষকে দিয়েছেন। আল্লাহর নাফরমানীর দুটো সীমা রয়েছে। প্রাথমিক সীমা হলো (ফিসক) আর চূড়ান্ত ও শেষ সীমা হচ্ছে (কুফর)। যে আল্লাহর হুকুম স্বীকার করে বটে, কিন্তু পালন করে না, সে ফাসিক। আর যে হুকুমকে স্বীকারই করে না, সে কাফির। যে নাফরমানীর এ দুটো সীমালঙ্ঘন করে সেই তাগুত।
ব্যক্তিগতভাবে কেউ ফাসিক বা কেউ কাফির হতে পারে। এটা যার যার স্বাধীন ইচ্ছা। আল্লাহর নাফরমানীর এ দুটো সীমা রয়েছে। যে এই সীমালঙ্ঘনও করে সে হলো তাগূত। এ দুটো সীমালঙ্ঘন করার মানে কী? কেমন করে এ সীমালঙ্ঘন করা হয়? এটা বুঝলেই তাগূতকে চেনা সহজ হবে।
যে নিজে ফাসিক এবং অন্য মানুষকেও ফাসিক বানানোর চেষ্টা করে সেই তাগুত। সে নাফরমানীর প্রাথমিক সীমালঙ্ঘন করলো। যে নিজে কাফির এবং অন্যকেও কাফির বানানোর চেষ্টা করে সেই তাগূত। সে আল্লাহর নাফরমানীর শেষ সীমালঙ্ঘনও করলো।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে বোঝার আছে। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে নিজস্ব সত্ত্বা দিয়ে আলাদাভাবে সৃষ্টি করেন। সে দুনিয়ায় আসার সময় যেমন একা এসেছে, যাওয়ার সময়ও একাই যায়। আখিরাতে তাকে তার কৃতকর্মের ফল আলাদাভাবেই দেয়া হবে।
তার শাস্তি সে একাই ভোগ করবে। তার পুরস্কারও সে একাই পাবে। তার কর্মের জন্য সে-ই দায়ী হবে। তাই তাকে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার স্বাধীনতা এককভাবেই দেয়া হয়েছে। অন্য মানুষকে আল্লাহর নাফরমান বানানোর কোনো ইচ্ছা কাউকে দেয়া হয়নি। যারা নিজে নাফরমান এবং অন্যকেও নাফরমান বানাতে চেষ্টা করে, তারাই আল্লাহর দেয়া নাফরমানীর সীমালঙ্ঘন করে-এরাই তাগুত।
তাগুতকে মানতে অস্বীকার করতে হলে কে কে তাগূত তা জানতে হবে। কুরআনে সন্ধান করলে ৫ প্রকার তাগূত পাওয়া যায়।
১. নাফস ও হাওয়া:
নাফস মানে প্রবৃত্তি, আর হাওয়া মানে কুপ্রবৃত্তি। দেহের যাবতীয় দাবিকে একসাথে নাফস বলা হয়। যে দাবি মন্দ তাকেই হাওয়া বলে। দেহের ভালো ও মন্দের কোনো ধারণা নেই। এ ধারণা আছে বিবেকের। রূহের সিদ্ধান্তই বিবেক। নাফস বা দেহের দাবি মন্দ বলেই ধরে নিতে হবে। বিবেক যাচাই করে বলে দেয় কোন দাবিটা ভালো বা মন্দ। সূরা ইউসূফের ৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই নাফস মন্দেরই হুকুম দেয়। আল্লাহর নাফরমানীর জন্য তাগিদ দেয় বলেই নাফস তাগুত।। যদি কেউ সত্যিই আল্লাহর অনুগত বান্দা হতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই নাফসের বিরোধী হতে হবে। কেউ যদি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে চায় তাহলে প্রথমেই তাকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমি নাফসের কথা মেনে চলব না-না-না। অর্থাৎ আমি বিবেকের বিরুদ্ধে চলব না-না-না।
এ সিদ্ধান্ত না নিলে সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও নাফসের গোলামই থেকে যাবে। সে আল্লাহকে ইলাহ বা হুকুমকর্তা স্বীকার করা সত্ত্বেও নাফস বা হাওয়াকে ইলাহ হিসেবেই মেনে চলবে। সূরা জাছিয়া (৪৫)-র ২৩ নং আয়াতে আছে : “তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার কুপ্রবৃত্তিকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে?” কুরআনের অনুবাদে অনেকেই তাগুত অর্থ লিখেছেন শয়তান। শয়তান আল্লাহর নাফরমানী করার জন্য উসকে দেয় বলে শয়তান অবশ্যই তাগূত। কিন্তু তাগূত অর্থ শয়তান নয়। যারা তাগুতের অর্থ শয়তান লিখেছেন, তারা তাগুতের সঠিক পরিচয় জানেন না। কারণ শয়তান মানুষের নাফসকে বিভ্রান্ত করেই নাফরমানীর জন্য প্ররোচনা দেয়। তাই প্রথম নম্বর তাগুতের মধ্যেই শয়তান অন্তর্ভূক্ত। সে হিসেবে নাফস ও শয়তানকে একই সাথে তালিকার ১ নম্বরে রাখা যায়।
২. শরীয়াতবিরোধী প্রচলিত কুপ্রথা ও সামাজিক কুসংস্কারও তাগূত (Customs and traditions)
সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেন :
وإذا قيل لهم اتبعوا ما أنزل الله قالوا بل نتبع ما ألقيتا عليه آباءنا
“যখন তাদেরকে বলা হলো যে, আল্লাহ যা (ওহীযোগে) নাযিল করেছেন তা মেনে চল, তখন তারা বলল, আমাদের বাপ-দাদাকে যা মেনে চলতে দেখেছি, আমরা তাই মেনে চলব।” (সূরা বাকারা ২: ১৭০)।
সমাজে অনেক কুপ্রথা প্রচলিত আছে যা শরীয়াতবিরোধী। ধর্মের নামেও অনেক শরীয়াতবিরোধী প্রথা চালু আছে। বিয়ে-শাদিতে তো কুপ্রথার ব্যাপক প্রচলন আছে। কুপ্রথাগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। এসবকে অমান্য করতে গেলে বিরাট বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কুপ্রথাগুলো আইনের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। আইন চালু করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার (Law Enforcing Agency) প্রয়োজন হয়। কুপ্রথা নিজের শক্তি বলেই চালু থাকে। আইন করেও তা দূর করা সহজ নয়। এ কারণেই সামাজিক কুসংস্কারগুলোও তাগুত। এসবকে মানতে অস্বীকার না করলে ঈমানের দাবি পূরণ করা যায় না। এগুলো আল্লাহর হুকুমের বিরোধী। এসবকে মেনে চললে আল্লাহকে অমান্য করা হয়।
৩. শাসন-শক্তিও তাগুত
শাসন-শক্তি বললে শুধু গভর্নমেন্টই বোঝায় না। স্বামী-স্ত্রীর সংসারে স্বামীও শাসন-শক্তি। পরিবারে পিতা শাসন-শক্তি। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধানও শাসন-শক্তি। কিছু লোকের উপর কর্তৃত্ব করার সুযোগ যার আছে, সেই শাসন-শক্তি। একটি দেশে সরকার হলো সবচেয়ে শক্তিশালী শাসন-শক্তি। কুরআনে ফিরাউন ও নমরূদকে শাসন-শক্তি হিসেবেই তাগুত বলা হয়েছে।
আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে ফিরাউনের নিকট যাওয়ার আদেশ যে ভাষায় দিলেন, সেখানেও ফিরাউনকে সীমালঙ্ঘনকারী বলেই উল্লেখ করেছেন :
“হে মুসা! ফিরাউনের নিকট যাও। নিশ্চয়ই সে সীমালঙ্ঘন করেছে।” (সূরা ত্ব-হা ২০: ২৪)
শাসন-শক্তি প্রয়োগ করে অধীনস্থদের উপর আল্লাহর আইনের বিরোধী নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা আল্লাহর নাফরমানী করায় বাধ্য করতে পারে। তাই এসবও তাগূত। আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবি হলো, আল্লাহর নাফরমানী করতে অস্বীকার করা। তা না করলে ঈমানে দুর্বলতাই প্রকাশ পায়।
৪. রিযক বন্ধ করার ভয় দেখানোর শক্তিও তাগূত
এ তাগূতটি শাসন-শক্তিরই অন্তর্ভূক্ত। চাকরি থেকে সরিয়ে দিয়ে রিযক বন্ধ করার ক্ষমতা যাদের আছে, তারা শাসন-শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দিতে পারে ও বিভিন্নভাবে ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু চাকরি থেকে বরখাস্ত করার শাস্তিটি চরম যুলম বলেই রিযক বন্ধ করার ভয় দেখানোর শক্তিকে শাসন শক্তি থেকে আলাদাভাবে গণ্য করা হলো। এ শক্তি প্রয়োগ করে অধীনস্থদেরকে আল্লাহর নাফরমানী করতে বাধ্য করা যায় বলেই এটাও তাগূত।
৫. অন্ধ ভাবে মেনে চলার দাবিদার শক্তিও তাগূত
সমাজে এমন কতক লোক আছে, যারা তাদেরকে অন্ধভাবে মেনে চলার জন্য নৈতিক প্রভাব প্রয়োগ করতে সক্ষম। তাদের দাবি হলো, বিনা যুক্তিতে তাদের কথা মেনে চলতে হবে। বিনা প্রশ্নে তাদের আনুগত্য করতে হবে। বিনা বাক্য ব্যয়ে তাদের হুকুম পালনের অধিকার তারা দাবি করে।
অথচ আল্লাহ ও রসূল (ﷺ) ছাড়া এ দাবি করার আর অধিকার নেই। যেহেতু আল্লাহ নির্ভূল এবং রসূল (ﷺ) আল্লাহর ওহী দ্বারা পরিচালিত বলে তিনিও নির্ভূল, সেহেতু এ দু’সত্ত্বাকে বিনা দ্বিধায় শর্তহীনভাবে মেনে চলতে হবে। এছাড়া আর কারো এ জাতীয় আনুগত্যের দাবিদার হওয়ার অধিকার নেই। তাই যারা এ দাবি করে তারাও তাগূত। সূরা তাওবার ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:
ادوا أحباسهم ذهبانهم أربابا من دون الله
‘তারা তাদের ওলামা ও পীরদেরকে আল্লাহর বদলে তাদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।'
হাদীসে এর অর্থ বলা হয়েছে যে, তাদেরকে অন্ধভাবে মেনে নিয়েছে। তারা হালাল ও হারামের ব্যাপারে যে ফায়সালাই দেয় তা অন্ধভাবে স্বীকার করে। নেয়। অন্ধভাবে মেনে নেয়ার দাবিদার শক্তি ধর্মীয় ক্ষেত্রে যেমন আছে, রাজনৈতিক ময়দানেও রয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত, নেতা বা নেত্রীর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক মনে হলেও অন্ধভাবে তা মানতে হয়, না মানলে দল থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে, এ ভয়ে মেনে নিতে বাধ্য হয়। তাই এ জাতীয় শক্তিও তাগূত।
তাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের কারণে দ্বীনের পথে বাঁধার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন এক পীর সাহেব মুরীদদেরকে বললেন যে, তোমরা আল কুরআনের তাফসীর পড়বে না। পীরের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের কারণে যারা আল কুরআনের তাফসীর পড়লো না, তারা ইকামাতে দ্বীনের পথ চিনতে ব্যর্থ হলো। আবার অনেকে বলেন কুরআনের ব্যাখ্যা বুঝা আমাদের কাজ নয়, এসব বই পড়তে মুরুব্বীরা মানা করেছেন। আবার বলেন যে, এসব বই পড়লে আমরা ‘গুমরাহ’ হয়ে যেতে পারি তাই মুরুব্বিরা তাফসীর পড়তে নিষেধ করেছেন। দুঃখ করে বলতে হয় যে যদি কোনো বই পড়লেই ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এমন দুর্বল ঈমান কী করে রক্ষা করবো?
৬) অর্থনৈতিক তাগুতঃ যে শক্তি মানুষকে অর্থের পুজারী বানাতে সাহায্য করে। অথচ মানুষের হওয়ার কথা ছিল একমাত্র সৃষ্টিকর্তার পূজারী।
৭) সাংস্কৃতিক তাগুতঃ যে সংস্কৃতি মানুষকে ইসলামী সংস্কৃতি থেকে দূরে নিয়ে আল্লাহ বিরুধী কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করে এবং মানুষকে নাস্তিকতার পথে ঠেলে দেয়।
এ দীর্ঘ আলোচনায় সাত রকমের তাগুত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। মযবুত ঈমানের জন্য তাগূতকে অস্বীকার করা এ কারণেই অত্যন্ত জরুরি। তাগুতের কাজই হলো, আল্লাহর দাসত্ব থেকে ফিরিয়ে রেখে তার দাসত্ব করতে বাধ্য করা। তাই যারা আল্লাহ দাসত্ব করতে আগ্রহী তাদেরকে সচেতনভাবে। সবরকম তাগূতী শক্তিকে পরিহার করে তাদের থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
১. নাফস ও হাওয়া:
নাফস মানে প্রবৃত্তি, আর হাওয়া মানে কুপ্রবৃত্তি। দেহের যাবতীয় দাবিকে একসাথে নাফস বলা হয়। যে দাবি মন্দ তাকেই হাওয়া বলে। দেহের ভালো ও মন্দের কোনো ধারণা নেই। এ ধারণা আছে বিবেকের। রূহের সিদ্ধান্তই বিবেক। নাফস বা দেহের দাবি মন্দ বলেই ধরে নিতে হবে। বিবেক যাচাই করে বলে দেয় কোন দাবিটা ভালো বা মন্দ। সূরা ইউসূফের ৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই নাফস মন্দেরই হুকুম দেয়। আল্লাহর নাফরমানীর জন্য তাগিদ দেয় বলেই নাফস তাগুত।। যদি কেউ সত্যিই আল্লাহর অনুগত বান্দা হতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই নাফসের বিরোধী হতে হবে। কেউ যদি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে চায় তাহলে প্রথমেই তাকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমি নাফসের কথা মেনে চলব না-না-না। অর্থাৎ আমি বিবেকের বিরুদ্ধে চলব না-না-না।
এ সিদ্ধান্ত না নিলে সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও নাফসের গোলামই থেকে যাবে। সে আল্লাহকে ইলাহ বা হুকুমকর্তা স্বীকার করা সত্ত্বেও নাফস বা হাওয়াকে ইলাহ হিসেবেই মেনে চলবে। সূরা জাছিয়া (৪৫)-র ২৩ নং আয়াতে আছে : “তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার কুপ্রবৃত্তিকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে?” কুরআনের অনুবাদে অনেকেই তাগুত অর্থ লিখেছেন শয়তান। শয়তান আল্লাহর নাফরমানী করার জন্য উসকে দেয় বলে শয়তান অবশ্যই তাগূত। কিন্তু তাগূত অর্থ শয়তান নয়। যারা তাগুতের অর্থ শয়তান লিখেছেন, তারা তাগুতের সঠিক পরিচয় জানেন না। কারণ শয়তান মানুষের নাফসকে বিভ্রান্ত করেই নাফরমানীর জন্য প্ররোচনা দেয়। তাই প্রথম নম্বর তাগুতের মধ্যেই শয়তান অন্তর্ভূক্ত। সে হিসেবে নাফস ও শয়তানকে একই সাথে তালিকার ১ নম্বরে রাখা যায়।
২. শরীয়াতবিরোধী প্রচলিত কুপ্রথা ও সামাজিক কুসংস্কারও তাগূত (Customs and traditions)
সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেন :
وإذا قيل لهم اتبعوا ما أنزل الله قالوا بل نتبع ما ألقيتا عليه آباءنا
“যখন তাদেরকে বলা হলো যে, আল্লাহ যা (ওহীযোগে) নাযিল করেছেন তা মেনে চল, তখন তারা বলল, আমাদের বাপ-দাদাকে যা মেনে চলতে দেখেছি, আমরা তাই মেনে চলব।” (সূরা বাকারা ২: ১৭০)।
সমাজে অনেক কুপ্রথা প্রচলিত আছে যা শরীয়াতবিরোধী। ধর্মের নামেও অনেক শরীয়াতবিরোধী প্রথা চালু আছে। বিয়ে-শাদিতে তো কুপ্রথার ব্যাপক প্রচলন আছে। কুপ্রথাগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। এসবকে অমান্য করতে গেলে বিরাট বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কুপ্রথাগুলো আইনের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। আইন চালু করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার (Law Enforcing Agency) প্রয়োজন হয়। কুপ্রথা নিজের শক্তি বলেই চালু থাকে। আইন করেও তা দূর করা সহজ নয়। এ কারণেই সামাজিক কুসংস্কারগুলোও তাগুত। এসবকে মানতে অস্বীকার না করলে ঈমানের দাবি পূরণ করা যায় না। এগুলো আল্লাহর হুকুমের বিরোধী। এসবকে মেনে চললে আল্লাহকে অমান্য করা হয়।
৩. শাসন-শক্তিও তাগুত
শাসন-শক্তি বললে শুধু গভর্নমেন্টই বোঝায় না। স্বামী-স্ত্রীর সংসারে স্বামীও শাসন-শক্তি। পরিবারে পিতা শাসন-শক্তি। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধানও শাসন-শক্তি। কিছু লোকের উপর কর্তৃত্ব করার সুযোগ যার আছে, সেই শাসন-শক্তি। একটি দেশে সরকার হলো সবচেয়ে শক্তিশালী শাসন-শক্তি। কুরআনে ফিরাউন ও নমরূদকে শাসন-শক্তি হিসেবেই তাগুত বলা হয়েছে।
আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে ফিরাউনের নিকট যাওয়ার আদেশ যে ভাষায় দিলেন, সেখানেও ফিরাউনকে সীমালঙ্ঘনকারী বলেই উল্লেখ করেছেন :
“হে মুসা! ফিরাউনের নিকট যাও। নিশ্চয়ই সে সীমালঙ্ঘন করেছে।” (সূরা ত্ব-হা ২০: ২৪)
শাসন-শক্তি প্রয়োগ করে অধীনস্থদের উপর আল্লাহর আইনের বিরোধী নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা আল্লাহর নাফরমানী করায় বাধ্য করতে পারে। তাই এসবও তাগূত। আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবি হলো, আল্লাহর নাফরমানী করতে অস্বীকার করা। তা না করলে ঈমানে দুর্বলতাই প্রকাশ পায়।
৪. রিযক বন্ধ করার ভয় দেখানোর শক্তিও তাগূত
এ তাগূতটি শাসন-শক্তিরই অন্তর্ভূক্ত। চাকরি থেকে সরিয়ে দিয়ে রিযক বন্ধ করার ক্ষমতা যাদের আছে, তারা শাসন-শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দিতে পারে ও বিভিন্নভাবে ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু চাকরি থেকে বরখাস্ত করার শাস্তিটি চরম যুলম বলেই রিযক বন্ধ করার ভয় দেখানোর শক্তিকে শাসন শক্তি থেকে আলাদাভাবে গণ্য করা হলো। এ শক্তি প্রয়োগ করে অধীনস্থদেরকে আল্লাহর নাফরমানী করতে বাধ্য করা যায় বলেই এটাও তাগূত।
৫. অন্ধ ভাবে মেনে চলার দাবিদার শক্তিও তাগূত
সমাজে এমন কতক লোক আছে, যারা তাদেরকে অন্ধভাবে মেনে চলার জন্য নৈতিক প্রভাব প্রয়োগ করতে সক্ষম। তাদের দাবি হলো, বিনা যুক্তিতে তাদের কথা মেনে চলতে হবে। বিনা প্রশ্নে তাদের আনুগত্য করতে হবে। বিনা বাক্য ব্যয়ে তাদের হুকুম পালনের অধিকার তারা দাবি করে।
অথচ আল্লাহ ও রসূল (ﷺ) ছাড়া এ দাবি করার আর অধিকার নেই। যেহেতু আল্লাহ নির্ভূল এবং রসূল (ﷺ) আল্লাহর ওহী দ্বারা পরিচালিত বলে তিনিও নির্ভূল, সেহেতু এ দু’সত্ত্বাকে বিনা দ্বিধায় শর্তহীনভাবে মেনে চলতে হবে। এছাড়া আর কারো এ জাতীয় আনুগত্যের দাবিদার হওয়ার অধিকার নেই। তাই যারা এ দাবি করে তারাও তাগূত। সূরা তাওবার ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:
ادوا أحباسهم ذهبانهم أربابا من دون الله
‘তারা তাদের ওলামা ও পীরদেরকে আল্লাহর বদলে তাদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।'
হাদীসে এর অর্থ বলা হয়েছে যে, তাদেরকে অন্ধভাবে মেনে নিয়েছে। তারা হালাল ও হারামের ব্যাপারে যে ফায়সালাই দেয় তা অন্ধভাবে স্বীকার করে। নেয়। অন্ধভাবে মেনে নেয়ার দাবিদার শক্তি ধর্মীয় ক্ষেত্রে যেমন আছে, রাজনৈতিক ময়দানেও রয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত, নেতা বা নেত্রীর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক মনে হলেও অন্ধভাবে তা মানতে হয়, না মানলে দল থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে, এ ভয়ে মেনে নিতে বাধ্য হয়। তাই এ জাতীয় শক্তিও তাগূত।
তাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের কারণে দ্বীনের পথে বাঁধার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন এক পীর সাহেব মুরীদদেরকে বললেন যে, তোমরা আল কুরআনের তাফসীর পড়বে না। পীরের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের কারণে যারা আল কুরআনের তাফসীর পড়লো না, তারা ইকামাতে দ্বীনের পথ চিনতে ব্যর্থ হলো। আবার অনেকে বলেন কুরআনের ব্যাখ্যা বুঝা আমাদের কাজ নয়, এসব বই পড়তে মুরুব্বীরা মানা করেছেন। আবার বলেন যে, এসব বই পড়লে আমরা ‘গুমরাহ’ হয়ে যেতে পারি তাই মুরুব্বিরা তাফসীর পড়তে নিষেধ করেছেন। দুঃখ করে বলতে হয় যে যদি কোনো বই পড়লেই ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এমন দুর্বল ঈমান কী করে রক্ষা করবো?
৬) অর্থনৈতিক তাগুতঃ যে শক্তি মানুষকে অর্থের পুজারী বানাতে সাহায্য করে। অথচ মানুষের হওয়ার কথা ছিল একমাত্র সৃষ্টিকর্তার পূজারী।
৭) সাংস্কৃতিক তাগুতঃ যে সংস্কৃতি মানুষকে ইসলামী সংস্কৃতি থেকে দূরে নিয়ে আল্লাহ বিরুধী কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করে এবং মানুষকে নাস্তিকতার পথে ঠেলে দেয়।
এ দীর্ঘ আলোচনায় সাত রকমের তাগুত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। মযবুত ঈমানের জন্য তাগূতকে অস্বীকার করা এ কারণেই অত্যন্ত জরুরি। তাগুতের কাজই হলো, আল্লাহর দাসত্ব থেকে ফিরিয়ে রেখে তার দাসত্ব করতে বাধ্য করা। তাই যারা আল্লাহ দাসত্ব করতে আগ্রহী তাদেরকে সচেতনভাবে। সবরকম তাগূতী শক্তিকে পরিহার করে তাদের থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
কালিমায়ে তাইয়্যিবা এর মূল কথা হলো, আল্লাহই একমাত্র ইলাহ, আর কোনো ইলাহ নেই। এ বক্তব্য প্রকাশ করার জন্য বললেই তো চলত। তা না করে দিয়ে কেন শুরু করা হলো? মানে “নেই”। “নেই” দিয়ে কেন শুরু করা হলো? মানব সমাজে অনেক হুকুমকর্তা রয়েছে। মানব মনের উপর এরা রাজত্ব করে। মানুষ এদের হুকুম মেনে চলে; হয় বাধ্য হয়ে, না হয় লোভে পড়ে। এসব হুকুমকর্তা (ইলাহ) হলো আসলে তাগুত।
তাই যারাই কালিমায়ে তাইয়্যিবা কবুল করতে চায় তাদেরকে মহান আল্লাহর উপর ঈমান আনার আগেই তাগুতকে অস্বীকার করতে হবে। এতে প্রমাণিত হলো যে, সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে যে ফরমে বলা হয়েছে সে ফরমেই প্রথমে অস্বীকার তাগুতের কুফরী করতে বলা হয়েছে। যারা তাগুতের পরিচয় জানে না, তারা 'লা ইলাহা দ্বারা কাদেরকে অস্বীকার করা হচ্ছে তা বুঝতেই পারে না। তারা না বুঝে তোতাপাখির মত কালিমা উচ্চারণ করে থাকে এবং তাগুতের দাসত্ব করতে থাকে।
একটি সহজ উদাহরণ:
জমিতে ধানের বীজ বপন করতে হলে প্রথমেই জমিকে আগাছামুক্ত করতে হবে। আগাছা দূর না করে ধন ফেললে ফসল তো দূরের কথা, বীজ ধানও ফিরে পাওয়া যাবে না। কৃষিজমি যেমন খালি থাকে না, মানুষের মনের জমিও খালি থাকে না। ঐ সাত রকম তাগুত মানব মন দখল করে থাকে। মনে ঈমানের বীজ ফেলতে হলে মন থেকে প্রথমে সব তাগুতকে তাড়াতে হবে। তা না হলে মনের যমীনে ঈমানের বীজ বপনের জায়গাই হবে না।
তাই যারাই কালিমায়ে তাইয়্যিবা কবুল করতে চায় তাদেরকে মহান আল্লাহর উপর ঈমান আনার আগেই তাগুতকে অস্বীকার করতে হবে। এতে প্রমাণিত হলো যে, সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে যে ফরমে বলা হয়েছে সে ফরমেই প্রথমে অস্বীকার তাগুতের কুফরী করতে বলা হয়েছে। যারা তাগুতের পরিচয় জানে না, তারা 'লা ইলাহা দ্বারা কাদেরকে অস্বীকার করা হচ্ছে তা বুঝতেই পারে না। তারা না বুঝে তোতাপাখির মত কালিমা উচ্চারণ করে থাকে এবং তাগুতের দাসত্ব করতে থাকে।
একটি সহজ উদাহরণ:
জমিতে ধানের বীজ বপন করতে হলে প্রথমেই জমিকে আগাছামুক্ত করতে হবে। আগাছা দূর না করে ধন ফেললে ফসল তো দূরের কথা, বীজ ধানও ফিরে পাওয়া যাবে না। কৃষিজমি যেমন খালি থাকে না, মানুষের মনের জমিও খালি থাকে না। ঐ সাত রকম তাগুত মানব মন দখল করে থাকে। মনে ঈমানের বীজ ফেলতে হলে মন থেকে প্রথমে সব তাগুতকে তাড়াতে হবে। তা না হলে মনের যমীনে ঈমানের বীজ বপনের জায়গাই হবে না।
আল্লাহ মানুষ ও জিনকে আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ সূরা আয যারিয়াত (৫১)-এর ৫৬ নং আয়াতে ঘোষণা করেন,
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون
“আমি জিন ও ইনসানকে আমার দাসত্ব করা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।”
এ কথার একটি মর্ম হলো, আল্লাহ শুধু তাঁরই দাসত্ব করার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আর কারো দাসত্ব করার জন্য নয়। তাই যারা আল্লাহর দাসত্বের বদলে কোনো সৃষ্টির দাসত্ব করে, তারা নিজেদেরকেই হেয় করে এবং মানুষ হিসেবে মর্যাদা হারায়-তারা পশুর পর্যায়ে গণ্য হয়।
ঐ কথাটির অপর মর্ম হলো, যারা আল্লাহর দাসত্ব করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রভুত্ব করার অপচেষ্টা চালায় তারাই তাগুতে পরিণত হয়। তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে তাদের বান্দা বানায়। শাসন-শক্তি, রিক বন্ধ করে দেয়ার ভয় দেখানোর শক্তি ও অন্ধ আনুগত্যের দাবিদার শক্তি হিসেবে তারা আল্লাহর বান্দাদের উপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে চরম সীমালঙ্ঘনকারীতে পরিণত হয়।
এসব শক্তি আল্লাহর দাসত্ব করা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং তাদের দাসত্ব করতে বাধ্য করে। তাই আল্লাহর দাসত্ব করতে হলে এসব শক্তিকে মানতে অস্বীকার করার সাহস থাকতে হবে। এ সাহস যাদের নেই তারা আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবিদার হলেও পদে পদে তাগুতের নিকট পরাজিত হতে থাকবে। সূরা আনকাবূত (২৯)-এর প্রথম আয়াতেই আল্লাহ বলেনঃ “মানুষ কি মনে করে যে, আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি বললেই তাদেরকে বিনা পরীক্ষায় ছেড়ে দেয়া হবে?”
ঈমানের পরীক্ষা আসে তাগুতের মাধ্যমে। তাগুতকে অমান্য করার সিদ্ধান্ত না থাকলে পরীক্ষায় অবশ্যই ফেল করবো।
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون
“আমি জিন ও ইনসানকে আমার দাসত্ব করা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।”
এ কথার একটি মর্ম হলো, আল্লাহ শুধু তাঁরই দাসত্ব করার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আর কারো দাসত্ব করার জন্য নয়। তাই যারা আল্লাহর দাসত্বের বদলে কোনো সৃষ্টির দাসত্ব করে, তারা নিজেদেরকেই হেয় করে এবং মানুষ হিসেবে মর্যাদা হারায়-তারা পশুর পর্যায়ে গণ্য হয়।
ঐ কথাটির অপর মর্ম হলো, যারা আল্লাহর দাসত্ব করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রভুত্ব করার অপচেষ্টা চালায় তারাই তাগুতে পরিণত হয়। তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে তাদের বান্দা বানায়। শাসন-শক্তি, রিক বন্ধ করে দেয়ার ভয় দেখানোর শক্তি ও অন্ধ আনুগত্যের দাবিদার শক্তি হিসেবে তারা আল্লাহর বান্দাদের উপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে চরম সীমালঙ্ঘনকারীতে পরিণত হয়।
এসব শক্তি আল্লাহর দাসত্ব করা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং তাদের দাসত্ব করতে বাধ্য করে। তাই আল্লাহর দাসত্ব করতে হলে এসব শক্তিকে মানতে অস্বীকার করার সাহস থাকতে হবে। এ সাহস যাদের নেই তারা আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবিদার হলেও পদে পদে তাগুতের নিকট পরাজিত হতে থাকবে। সূরা আনকাবূত (২৯)-এর প্রথম আয়াতেই আল্লাহ বলেনঃ “মানুষ কি মনে করে যে, আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি বললেই তাদেরকে বিনা পরীক্ষায় ছেড়ে দেয়া হবে?”
ঈমানের পরীক্ষা আসে তাগুতের মাধ্যমে। তাগুতকে অমান্য করার সিদ্ধান্ত না থাকলে পরীক্ষায় অবশ্যই ফেল করবো।
আগেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আল্লাহকে রব, বাদশাহ ও ইলাহ হিসেবে মেনে চলার সিদ্ধান্তই ঈমান। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হলে ঈমানের দাবি পূরণ করতে হবে। ঈমানের দাবি পূরণ করতে হলে ঈমানকে দুর্বল হতে দেয়া চলবে না। ঈমানের শুধু দুর্বলতামুক্ত রাখাই যথেষ্ট নয়, ঈমানকে অত্যন্ত মযবুত করার জন্য ঐ দুটো শর্তই পূরণ করতে হবে।
যে মযবুত ঈমানের অধিকারী সে
১. দ্বীনের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ বা দ্বিধায় ভোগে না। সব অবস্থায় মনে প্রশান্তি ভোগ করে এবং তৃপ্তি বোধ করে। এ প্রশান্তি ও তৃপ্তি এমন জান্নাতী নিয়ামত, যার কোনো তুলনা নেই।
২. আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের সাফল্যের তীব্র কামনা এমনভাবে অন্তর দখল করে রাখে যে, দুনিয়ার কোনো বড় স্বার্থের লোভেও বিভ্রান্ত হয় না।
৩. আল্লাহ সবসময় সাথে আছেন-এ চেতনার ফলে দুঃখ-কষ্ট, আপদ বিপদ ও রোগ-শোকে বিচলিত ও পেরেশান হয় না এবং তাওয়াক্কুল আল্লাহ ও সবরের নিয়ামত লাভ করে।
৪. একমাত্র আল্লাহর ভয় ছাড়া মৃত্যু ভয়সহ সকল ভয় থেকে মুক্ত থাকে। মৃত্যুকে আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার মহাসুযোগ মনে করে এবং শহীদী মৃত্যুই কামনা করে।
৫. দুনিয়ার যেসব জিনিসের ভালোবাসার দায়িত্ব আল্লাহ দিয়েছেন, এসবের আকর্ষণ সত্ত্বেও আল্লাহ, রসূল (ﷺ) ও জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহকে প্রাধান্য দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
৬. সকল প্রকার শিক থেকে ঈমানকে মুক্ত রেখে তাওহীদের দাবি পূরণ করতে সক্ষম হয়।
৭. সকল প্রকার তাগূতকে অস্বীকার করার সাহস রাখে এবং ঈমানের দাবি পূরণ করে তৃপ্তিবোধ করে।
দ্বীন ইসলামকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান অর্থাৎ Complete Code of Life। দ্বীন ইসলাম মানব জীবনের কোনো বিশেষ দিকে সীমাবদ্ধ নয় বরং গোটা দিক ও বিভাগের জন্য সামগ্রিক ও সার্বিক সমাধান। যেমন ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, অর্থনৈতিক জীবন এবং আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবন প্ৰভূতি। আল্লাহর রসূল (ﷺ) রান্না ঘর থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সমস্ত কিছু এই দ্বীনের মধ্যে বাস্ত বায়ন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
যে মযবুত ঈমানের অধিকারী সে
১. দ্বীনের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ বা দ্বিধায় ভোগে না। সব অবস্থায় মনে প্রশান্তি ভোগ করে এবং তৃপ্তি বোধ করে। এ প্রশান্তি ও তৃপ্তি এমন জান্নাতী নিয়ামত, যার কোনো তুলনা নেই।
২. আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের সাফল্যের তীব্র কামনা এমনভাবে অন্তর দখল করে রাখে যে, দুনিয়ার কোনো বড় স্বার্থের লোভেও বিভ্রান্ত হয় না।
৩. আল্লাহ সবসময় সাথে আছেন-এ চেতনার ফলে দুঃখ-কষ্ট, আপদ বিপদ ও রোগ-শোকে বিচলিত ও পেরেশান হয় না এবং তাওয়াক্কুল আল্লাহ ও সবরের নিয়ামত লাভ করে।
৪. একমাত্র আল্লাহর ভয় ছাড়া মৃত্যু ভয়সহ সকল ভয় থেকে মুক্ত থাকে। মৃত্যুকে আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার মহাসুযোগ মনে করে এবং শহীদী মৃত্যুই কামনা করে।
৫. দুনিয়ার যেসব জিনিসের ভালোবাসার দায়িত্ব আল্লাহ দিয়েছেন, এসবের আকর্ষণ সত্ত্বেও আল্লাহ, রসূল (ﷺ) ও জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহকে প্রাধান্য দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
৬. সকল প্রকার শিক থেকে ঈমানকে মুক্ত রেখে তাওহীদের দাবি পূরণ করতে সক্ষম হয়।
৭. সকল প্রকার তাগূতকে অস্বীকার করার সাহস রাখে এবং ঈমানের দাবি পূরণ করে তৃপ্তিবোধ করে।
দ্বীন ইসলামকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান অর্থাৎ Complete Code of Life। দ্বীন ইসলাম মানব জীবনের কোনো বিশেষ দিকে সীমাবদ্ধ নয় বরং গোটা দিক ও বিভাগের জন্য সামগ্রিক ও সার্বিক সমাধান। যেমন ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, অর্থনৈতিক জীবন এবং আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবন প্ৰভূতি। আল্লাহর রসূল (ﷺ) রান্না ঘর থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সমস্ত কিছু এই দ্বীনের মধ্যে বাস্ত বায়ন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাকে জানতে হবে আল কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় কী? কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য কী? রসূল (ﷺ) -এর আগমনের উদ্দেশ্য কী? আমরা যদি রসূল (ﷺ) -এর বিস্তারিত জীবনী অধ্যায়ন করি তাহলে দেখতে পাই যে, নবুয়াত পাওয়ার ৪০ বছর বয়স থেকে তাঁর মক্কী জীবনের ১৩টি বছর কেটেছে মানুষের আকীদা পরিষ্কার করার কাজে। আল কুরআনের মক্কী সূরাগুলো নাযিল হয়েছে আকীদা সংক্রান্ত বিষয়ে।
আর রসূল (ﷺ) তার মাদানী জীবনের ১০টি বছর কেটেছে ইকামাতুদ দ্বীনের কাজ করে। আল কুরআনের মাদানী সূরাগুলো ইকামাতুদ দ্বীন বিষয়ে নাযিল হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে। রসূল (ﷺ) -এর ২৩ বছর নবুয়ত জীবনে উপরের এই দুটি বিষয়ে কাজ করেছেন। এবং আল কুরআনও নাযিল হয়েছে মূলতঃ এই দুটি বিষয়ের জন্য।
আল কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষ। আমরা যদি আল কুরআনের বিস্তারিত তাফসীর পড়ি তাহলে দেখতে পাই যে আল কুরআনের আগাগোড়া যতো বিষয় রয়েছে তা জীবিত মানুষদের নিয়ে। কী করলে দেশবাসী ভাল থাকবে, শান্তিতে থাকবে। আর কী করলে দেশবাসী খারাপ থাকবে, অশান্তিতে থাকবে।
আল কুরআনে দেয়া আছে মানবজাতির সকল সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান। এ জন্য একে বলা হয় “Complete Code of Life” অর্থাৎ পূণাঙ্গ জীবন বিধান। রান্না ঘর থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা অর্থাৎ পার্লামেন্ট পর্যন্ত সকল বিধান রয়েছে এতে। তাই এটি হচ্ছে মুসলিম দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার Constitution। আমরা জানি আল কুরআনে সলাত প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে ৮০ বারের মতো অথচ ইকামাতুদ দ্বীনের কথা বলা হয়েছে ২০০ বারেরও অধিক। এই বইয়ের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আল কুরআনের objective ইকামাতুদ দ্বীন বা আকিমুদ্দীন (দ্বীন প্রতিষ্ঠা)।
আর রসূল (ﷺ) তার মাদানী জীবনের ১০টি বছর কেটেছে ইকামাতুদ দ্বীনের কাজ করে। আল কুরআনের মাদানী সূরাগুলো ইকামাতুদ দ্বীন বিষয়ে নাযিল হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে। রসূল (ﷺ) -এর ২৩ বছর নবুয়ত জীবনে উপরের এই দুটি বিষয়ে কাজ করেছেন। এবং আল কুরআনও নাযিল হয়েছে মূলতঃ এই দুটি বিষয়ের জন্য।
আল কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষ। আমরা যদি আল কুরআনের বিস্তারিত তাফসীর পড়ি তাহলে দেখতে পাই যে আল কুরআনের আগাগোড়া যতো বিষয় রয়েছে তা জীবিত মানুষদের নিয়ে। কী করলে দেশবাসী ভাল থাকবে, শান্তিতে থাকবে। আর কী করলে দেশবাসী খারাপ থাকবে, অশান্তিতে থাকবে।
আল কুরআনে দেয়া আছে মানবজাতির সকল সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান। এ জন্য একে বলা হয় “Complete Code of Life” অর্থাৎ পূণাঙ্গ জীবন বিধান। রান্না ঘর থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা অর্থাৎ পার্লামেন্ট পর্যন্ত সকল বিধান রয়েছে এতে। তাই এটি হচ্ছে মুসলিম দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার Constitution। আমরা জানি আল কুরআনে সলাত প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে ৮০ বারের মতো অথচ ইকামাতুদ দ্বীনের কথা বলা হয়েছে ২০০ বারেরও অধিক। এই বইয়ের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আল কুরআনের objective ইকামাতুদ দ্বীন বা আকিমুদ্দীন (দ্বীন প্রতিষ্ঠা)।
ইকামাতে দ্বীন সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে কুরআনের আলোকে দ্বীন’ শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা জানা প্রয়োজন। দ্বীন শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। আল কুরআনে বিভিন্ন অর্থেই এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কোন শব্দের একাধিক অর্থ থাকলে সব অর্থ প্রত্যেক স্থানেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং সবখানেও গ্রহণ করা চলে না। কোন স্থানে কী অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা পূর্ণ বাক্য থেকেই বুঝা যায়। যে বাক্যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ঐ শব্দের অর্থ সঠিকভাবে বুঝবার উপায় নেই। দ্বীন শব্দের কয়েকটি অর্থ আল কুরআনে সুস্পষ্ট :
এক : প্রতিদান, প্রতিফল, বদলা ইত্যাদি।
দুই: আনুগত বা হুকুম মেনে চলা।
তিন: আনুগত্য করার বিধান বা আনুগত্যের নিয়ম।
চার: আইন বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে আইনে চলে, সমাজ ব্যবস্থাও বুঝায়।
এক : প্রতিদান, প্রতিফল, বদলা ইত্যাদি।
দুই: আনুগত বা হুকুম মেনে চলা।
তিন: আনুগত্য করার বিধান বা আনুগত্যের নিয়ম।
চার: আইন বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে আইনে চলে, সমাজ ব্যবস্থাও বুঝায়।
এক:
দ্বীন ইসলাম যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত এবং রসূল (ﷺ) প্রদর্শিত দ্বীন, তাই এতে কোনো প্রকারের সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই, থাকতে পারে না। এ দ্বীন যার কাছ থেকে এসেছে তার পরিচয় হলো
“তিনি অতীত ও ভবিষ্যত সম্পর্কে জ্ঞাত।” তার জ্ঞানের ক্ষেত্রে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহর দ্বীনের সর্বশেষ রূপ আমরা পেয়েছি শেষ নবীর উপর নাযিলকৃত কিতাব আল-কুরআনের মাধ্যমে। আর সেই কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার ঘোষণা হলো- “এতে কোনো প্রকারের সন্দেহের অবকাশ নেই।”
পক্ষান্তরে, মানুষের মনগড়া দ্বীন, মতবাদ বা আদর্শ কখনও সন্দেহ-সংশয়মুক্ত হতে পারে না। মানব রচিত কোনো দ্বীনের প্রবক্তা এটা দাবিও করতে পারে না যে, কেবল তার উপস্থাপিত দ্বীনই সত্য ও সঠিক, অন্যটা মিথ্যা বা অবাস্তব। কারণ, মানুষ কোনো আদর্শ বা মতবাদ রচনা করতে গিয়ে যে ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানের আশ্রয় নেয় এটা একান্তই সীমাবদ্ধ। এর মাধ্যমে তারা মানুষের অতীত ইতিহাসের সামান্যতম তথ্যেরও সঠিক বিশ্লেষণ করতে সক্ষম নয়।
বর্তমান অবস্থাকে যা চোখের সামনে ঘটেছে তারও যথার্থ মূল্যায়ন করার জন্য মানুষের জ্ঞান ও বিবেক বুদ্ধি যথেষ্ট নয়। আর ভবিষ্যত তো মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সুতরাং কোনো অবস্থায়ই মানুষের রচিত মতবাদ নির্ভুল ও সংশয়মুক্ত হবার দাবি করতে পারে না।
দুই :
দ্বীন ইসলাম মানব জীবনের কোনো বিশেষ দিকে সীমাবদ্ধ নয় বরং গোটা দিক ও বিভাগের জন্য সামগ্রিক ও সার্বিক বিধান দিয়েছে। ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, অর্থনৈতিক জীবন এবং আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবন প্রভৃতির সমন্বয়েই মানুষের সামগ্রিক জীবন গড়ে উঠে এবং পরিচালিত হয়। একযোগে এ সবগুলো দিক ও বিভাগের জন্য যে আদর্শ বা দ্বীন পরিপূর্ণ ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান দেয় কেবল তাকেই পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলা যায়।
এ মাপকাঠিতে বিচার করলে ইসলাম ছাড়া আর যত মতবাদ বা আদর্শ আছে তার কোনো একটিকেও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা বলা যায় না বরং সেগুলো একমুখি। জীবনের কোনো এক বা দু’টি দিকে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য দিক সেখানে উপেক্ষিত অথবা একদিকের সাথে অপরদিক সাংঘর্ষিক বা স্ববিরোধী। যেমন পাশ্চাত্যের ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের প্রাধান্য স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সর্বসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তি ও নিরাপত্তার দিকটি উপেক্ষিত।
অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক মুক্তি ও নিরাপত্তার শ্লোগানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত কিন্তু রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ চরমভাবে উপেক্ষিত। আর উভয় ব্যবস্থায় মানুষের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দিকটি চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
এছাড়া কোনো কোনো মহল থেকে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র, চীন-রাশিয়ার সমাজতন্ত্রকে ধর্মের সাথে একটা গোজামিল দেয়ার অপপ্রয়াস চালানো হয়। এদের এ প্রয়াস পরস্পর বিরোধী মতাদর্শের সংঘাতে মানবতাকে আরও বিপর্যস্তই করবে। এরা রাজনীতিতে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র, অর্থনীতিতে সমাজতন্ত্র এবং ব্যক্তি জীবনে ধর্মের কথা বলে। এতে করে রাজনৈতিক জীবনের সাথে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আবার অর্থ ব্যবস্থার সাথে ধর্মীয় জীবন স্বাভাবিকভাবেই সংঘর্ষমুখর হয়ে উঠে।
সুতরাং মানুষের মগজপ্রসূত কোনো ব্যবস্থাই মানুষের জীবনের সকল দিক ও বিভাগের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান দিতে অক্ষম। এ বিশ্লেষণের আলোকে বলতে হয়, ‘ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান’। এ কথাটা যথার্থ নয় এবং যথার্থ কথা হলো ‘ইসলামই মানুষের জন্য একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ও কল্যাণকর জীবন ব্যবস্থা।
তিন :
দ্বীন ইসলামের অপর বৈশিষ্ট্য হলো, এ দ্বীন কোনো ক্ষণস্থায়ী ও ক্ষণভঙ্গুর জীবন ব্যবস্থা নয়। আসমান-যমীনের স্রষ্টা, গোটা বিশ্বজাহানের একক মালিকের কাছ থেকে যে দ্বীন এসেছে তা চিরন্তন, শ্বাশত এবং সর্বকালের ও সর্বযুগের মানুষের জন্য আধুনিকতম ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভে সক্ষম।
পক্ষান্তরে, মানুষের মনগড়া মতাদর্শ কোনো বিশেষ দেশের বিশেষ অবস্থার জন্য তৈরি হয়ে থাকে তা সেই দেশেও বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। কোনো কোনো সমাজ বিজ্ঞানী এক একটা সভ্যতার আয়ুষ্কাল এক শতাব্দীর বেশি নয় বলে নিজেরাই মনে করে থাকেন। বাস্তবে কোনো আদর্শ তার আদর্শ রূপে দুনিয়ার কোথাও একদিনের জন্যও প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। তা কেবল মুখরোচক শ্লোগান এবং আবেগ সৃষ্টির হাতিয়ার রূপেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ইসলাম সর্বযুগের ও সর্বকালের জন্য আধুনিক এবং যুগোপযোগী বাস্তবমুখী জীবন ব্যবস্থা হিসেবে টিকে থাকতে পারার রহস্য এর প্রথম ও প্রধানতম উৎস কুরআন আল্লাহর শাশ্বত বাণী। আলিমূল হাকিমের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এ কিতাবে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে আর মানব সমাজের যত সমস্যার জন্ম নেবে সবকিছুর সমাধান করার মত মৌলিক উপাদান রয়েছে পূর্ণরূপেই। এর মৌল উপাদান থেকে সমাধান বের করার প্রধানতম ও একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম রসূলের সুন্নাহ। এ সুন্নাহ অহিলব্ধ জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ পদ্ধতির সংকলন বৈ আর কিছুই নয়।
চার :
দ্বীন ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো, এ দ্বীন মানুষের স্বভাব প্রকৃতির সাথে পরিপূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই একে ‘দ্বীন ফিতরাত' বা স্বভাবধর্মও বলা হয়ে থাকে। মানুষের স্রষ্টা জন্মগতভাবে মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতির মধ্যে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতির মধ্যে বাছ-বিচার করার যে শক্তি ও যোগ্যতা দিয়েছেন, সেটা ইসলাম মেনে চলার জন্য সহায়ক। ইসলামের বিধি-নিষেধগুলোও মানুষের স্বভাব প্রকৃতির অনুকূলে-প্রতিকূলে না। যুগ যুগ ধরে মানুষের সহজাত প্রকৃতি যেসব ভাল কাজকে ভাল বলে স্বীকার করে আসছে সেই কাজগুলোকেই ইসলাম সৎ কাজ বলে ঘোষণা করেছে। সেই সব সৎ গুণাবলীর বিকাশ ইসলামের কাম্য।
পক্ষান্তরে সর্বযুগে সর্বকালেই মানুষের বিবেক-বুদ্ধি কিছু কার্যকলাপকেই অসৎকাজ নামে আখ্যায়িত করে মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে তা দূর করার আহবান রেখেছে। তাই তো ইসলামে ভাল কাজকে বলা হয়েছে ‘মারূফ’ অর্থাৎ যা মানুষের বিবেক-বুদ্ধির কাছেও ভাল বলে পরিচিত। আর খারাপ কাজকে ভলা হয়েছে মুনকার'। অর্থাৎ যা মানুষের বিবেক-বুদ্ধির কাছে গ্রহণযোগ্য নয় বরং অস্বীকৃত।
এমনিভাবে ইসলামে যেসব জিনিসকে হালাল বলা হয়েছে কুরআন তাকে তাইয়েবাত' নামে অভিহিত করেছে যার অর্থ সুরুচিপূর্ণ। আর যেসব জিনিসকে হারাম বলা হয়েছে কুরআন তাকে ‘খাবিছাত’ নামে অভিহিত করেছে। যার অর্থ “কুরুচিসম্পন্ন বা রুচি গর্হিত।
পাঁচ :
দ্বীন ইসলামের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ দ্বীন যেহেতু সন্দেহ মুক্ত, পূর্ণাঙ্গ, শ্বাশত এবং মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সুতরাং এ দ্বীন কোনো মিথ্যা দ্বীনের অধীনতা স্বীকার করা তো দূরের কথা তার সাথে আপোষ করতেও প্রস্তুত নয়। এ দ্বীন এসেছে তার বিপরীতমুখী যাবতীয় মতবাদ-মতাদর্শের উপর বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্যেই। আল্লাহ তা'আলার ঘোষণা :
“আল্লাহ সেই মহান সত্তা যিনি রসূল পাঠিয়েছেন হিদায়াত ও দ্বীনে হক (সত্য দ্বীন) সহকারে অন্যান্য দ্বীন বা মতবাদসমূহের উপর এ দ্বীনকে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।” (সূরা আস সফ : ৯)
দ্বীন ইসলামের ঘোষণা :
“ইসলামই সত্য আর কুফর অসত্য। সুতরাং ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর কুরআন ঘোষণা দেয়। “সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত, মিথ্যার অবলুপ্তি অনিবার্য।” (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭ : ৮১)
‘ইসলাম হলো আলো আর কুফরী হলো অন্ধকার। আলো-আঁধারের প্রাধান্য স্বীকার করাতো দূরে থাক, এ দুইয়ের সহাবস্থানও সম্ভব নয়। ইসলামের এ আলোকে নিভিয়ে দেবার জন্য ইসলাম বিরোধী শক্তি সদা তৎপর। ইসলামের এ আলোকে নির্বাপিত করে মানবতাকে চির অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখার জন্য শয়তানী শক্তিসমূহ বদ্ধপরিকর। কুরআনের ভাষায় :
“এরা ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। অথচ আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করেই ছাড়বেন কাফিরদের তা যতই অসহনীয় হোক না কেন।” (সূরা সফ ৬১ : ৮)
ইসলামের মৌখিক ঘোষণা যা কালিমায়ে তাইয়েবার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি, তাতেও অন্যের প্রভুত্ব বর্জন করে আল্লাহর প্রভুত্ব বা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার এক আপোষহীন ও বলিষ্ঠ ঘোষণাই বিবৃত হয়। কালিমার বাস্তবায়নের ঘোষণা কুরআনের ভাষায় :
“যারা তাগুত বা আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, তারা যেন এক মজবুত রজু আঁকড়ে ধরে, যা কখনও ছিন্ন হবার নয়।” (সূরা আল বাকারা ২: ২৫৬)
দ্বীন ইসলামের এ সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরো একটু গভীরভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে যে কেউ বুঝতে সক্ষম হবে যে, ইসলাম স্বয়ং একটি বিপ্লবী আন্দোলন। এ আন্দোলনই হলো ইসলামের প্রাণ সত্ত্বা। এ প্রাণসত্ত্বাকে বাদ দিয়ে ইসলামের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না। এজন্যেই ইসলামকে বিজয়ী করার, বিজয়ী হিসেবে টিকিয়ে রাখার আন্দোলন কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত গতিতে চলতে থাকবে।
দ্বীন ইসলাম যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত এবং রসূল (ﷺ) প্রদর্শিত দ্বীন, তাই এতে কোনো প্রকারের সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই, থাকতে পারে না। এ দ্বীন যার কাছ থেকে এসেছে তার পরিচয় হলো
“তিনি অতীত ও ভবিষ্যত সম্পর্কে জ্ঞাত।” তার জ্ঞানের ক্ষেত্রে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহর দ্বীনের সর্বশেষ রূপ আমরা পেয়েছি শেষ নবীর উপর নাযিলকৃত কিতাব আল-কুরআনের মাধ্যমে। আর সেই কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার ঘোষণা হলো- “এতে কোনো প্রকারের সন্দেহের অবকাশ নেই।”
পক্ষান্তরে, মানুষের মনগড়া দ্বীন, মতবাদ বা আদর্শ কখনও সন্দেহ-সংশয়মুক্ত হতে পারে না। মানব রচিত কোনো দ্বীনের প্রবক্তা এটা দাবিও করতে পারে না যে, কেবল তার উপস্থাপিত দ্বীনই সত্য ও সঠিক, অন্যটা মিথ্যা বা অবাস্তব। কারণ, মানুষ কোনো আদর্শ বা মতবাদ রচনা করতে গিয়ে যে ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানের আশ্রয় নেয় এটা একান্তই সীমাবদ্ধ। এর মাধ্যমে তারা মানুষের অতীত ইতিহাসের সামান্যতম তথ্যেরও সঠিক বিশ্লেষণ করতে সক্ষম নয়।
বর্তমান অবস্থাকে যা চোখের সামনে ঘটেছে তারও যথার্থ মূল্যায়ন করার জন্য মানুষের জ্ঞান ও বিবেক বুদ্ধি যথেষ্ট নয়। আর ভবিষ্যত তো মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সুতরাং কোনো অবস্থায়ই মানুষের রচিত মতবাদ নির্ভুল ও সংশয়মুক্ত হবার দাবি করতে পারে না।
দুই :
দ্বীন ইসলাম মানব জীবনের কোনো বিশেষ দিকে সীমাবদ্ধ নয় বরং গোটা দিক ও বিভাগের জন্য সামগ্রিক ও সার্বিক বিধান দিয়েছে। ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, অর্থনৈতিক জীবন এবং আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবন প্রভৃতির সমন্বয়েই মানুষের সামগ্রিক জীবন গড়ে উঠে এবং পরিচালিত হয়। একযোগে এ সবগুলো দিক ও বিভাগের জন্য যে আদর্শ বা দ্বীন পরিপূর্ণ ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান দেয় কেবল তাকেই পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলা যায়।
এ মাপকাঠিতে বিচার করলে ইসলাম ছাড়া আর যত মতবাদ বা আদর্শ আছে তার কোনো একটিকেও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা বলা যায় না বরং সেগুলো একমুখি। জীবনের কোনো এক বা দু’টি দিকে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য দিক সেখানে উপেক্ষিত অথবা একদিকের সাথে অপরদিক সাংঘর্ষিক বা স্ববিরোধী। যেমন পাশ্চাত্যের ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের প্রাধান্য স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সর্বসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তি ও নিরাপত্তার দিকটি উপেক্ষিত।
অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক মুক্তি ও নিরাপত্তার শ্লোগানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত কিন্তু রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ চরমভাবে উপেক্ষিত। আর উভয় ব্যবস্থায় মানুষের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দিকটি চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
এছাড়া কোনো কোনো মহল থেকে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র, চীন-রাশিয়ার সমাজতন্ত্রকে ধর্মের সাথে একটা গোজামিল দেয়ার অপপ্রয়াস চালানো হয়। এদের এ প্রয়াস পরস্পর বিরোধী মতাদর্শের সংঘাতে মানবতাকে আরও বিপর্যস্তই করবে। এরা রাজনীতিতে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র, অর্থনীতিতে সমাজতন্ত্র এবং ব্যক্তি জীবনে ধর্মের কথা বলে। এতে করে রাজনৈতিক জীবনের সাথে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আবার অর্থ ব্যবস্থার সাথে ধর্মীয় জীবন স্বাভাবিকভাবেই সংঘর্ষমুখর হয়ে উঠে।
সুতরাং মানুষের মগজপ্রসূত কোনো ব্যবস্থাই মানুষের জীবনের সকল দিক ও বিভাগের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান দিতে অক্ষম। এ বিশ্লেষণের আলোকে বলতে হয়, ‘ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান’। এ কথাটা যথার্থ নয় এবং যথার্থ কথা হলো ‘ইসলামই মানুষের জন্য একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ও কল্যাণকর জীবন ব্যবস্থা।
তিন :
দ্বীন ইসলামের অপর বৈশিষ্ট্য হলো, এ দ্বীন কোনো ক্ষণস্থায়ী ও ক্ষণভঙ্গুর জীবন ব্যবস্থা নয়। আসমান-যমীনের স্রষ্টা, গোটা বিশ্বজাহানের একক মালিকের কাছ থেকে যে দ্বীন এসেছে তা চিরন্তন, শ্বাশত এবং সর্বকালের ও সর্বযুগের মানুষের জন্য আধুনিকতম ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভে সক্ষম।
পক্ষান্তরে, মানুষের মনগড়া মতাদর্শ কোনো বিশেষ দেশের বিশেষ অবস্থার জন্য তৈরি হয়ে থাকে তা সেই দেশেও বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। কোনো কোনো সমাজ বিজ্ঞানী এক একটা সভ্যতার আয়ুষ্কাল এক শতাব্দীর বেশি নয় বলে নিজেরাই মনে করে থাকেন। বাস্তবে কোনো আদর্শ তার আদর্শ রূপে দুনিয়ার কোথাও একদিনের জন্যও প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। তা কেবল মুখরোচক শ্লোগান এবং আবেগ সৃষ্টির হাতিয়ার রূপেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ইসলাম সর্বযুগের ও সর্বকালের জন্য আধুনিক এবং যুগোপযোগী বাস্তবমুখী জীবন ব্যবস্থা হিসেবে টিকে থাকতে পারার রহস্য এর প্রথম ও প্রধানতম উৎস কুরআন আল্লাহর শাশ্বত বাণী। আলিমূল হাকিমের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এ কিতাবে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে আর মানব সমাজের যত সমস্যার জন্ম নেবে সবকিছুর সমাধান করার মত মৌলিক উপাদান রয়েছে পূর্ণরূপেই। এর মৌল উপাদান থেকে সমাধান বের করার প্রধানতম ও একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম রসূলের সুন্নাহ। এ সুন্নাহ অহিলব্ধ জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ পদ্ধতির সংকলন বৈ আর কিছুই নয়।
চার :
দ্বীন ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো, এ দ্বীন মানুষের স্বভাব প্রকৃতির সাথে পরিপূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই একে ‘দ্বীন ফিতরাত' বা স্বভাবধর্মও বলা হয়ে থাকে। মানুষের স্রষ্টা জন্মগতভাবে মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতির মধ্যে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতির মধ্যে বাছ-বিচার করার যে শক্তি ও যোগ্যতা দিয়েছেন, সেটা ইসলাম মেনে চলার জন্য সহায়ক। ইসলামের বিধি-নিষেধগুলোও মানুষের স্বভাব প্রকৃতির অনুকূলে-প্রতিকূলে না। যুগ যুগ ধরে মানুষের সহজাত প্রকৃতি যেসব ভাল কাজকে ভাল বলে স্বীকার করে আসছে সেই কাজগুলোকেই ইসলাম সৎ কাজ বলে ঘোষণা করেছে। সেই সব সৎ গুণাবলীর বিকাশ ইসলামের কাম্য।
পক্ষান্তরে সর্বযুগে সর্বকালেই মানুষের বিবেক-বুদ্ধি কিছু কার্যকলাপকেই অসৎকাজ নামে আখ্যায়িত করে মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে তা দূর করার আহবান রেখেছে। তাই তো ইসলামে ভাল কাজকে বলা হয়েছে ‘মারূফ’ অর্থাৎ যা মানুষের বিবেক-বুদ্ধির কাছেও ভাল বলে পরিচিত। আর খারাপ কাজকে ভলা হয়েছে মুনকার'। অর্থাৎ যা মানুষের বিবেক-বুদ্ধির কাছে গ্রহণযোগ্য নয় বরং অস্বীকৃত।
এমনিভাবে ইসলামে যেসব জিনিসকে হালাল বলা হয়েছে কুরআন তাকে তাইয়েবাত' নামে অভিহিত করেছে যার অর্থ সুরুচিপূর্ণ। আর যেসব জিনিসকে হারাম বলা হয়েছে কুরআন তাকে ‘খাবিছাত’ নামে অভিহিত করেছে। যার অর্থ “কুরুচিসম্পন্ন বা রুচি গর্হিত।
পাঁচ :
দ্বীন ইসলামের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ দ্বীন যেহেতু সন্দেহ মুক্ত, পূর্ণাঙ্গ, শ্বাশত এবং মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সুতরাং এ দ্বীন কোনো মিথ্যা দ্বীনের অধীনতা স্বীকার করা তো দূরের কথা তার সাথে আপোষ করতেও প্রস্তুত নয়। এ দ্বীন এসেছে তার বিপরীতমুখী যাবতীয় মতবাদ-মতাদর্শের উপর বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্যেই। আল্লাহ তা'আলার ঘোষণা :
“আল্লাহ সেই মহান সত্তা যিনি রসূল পাঠিয়েছেন হিদায়াত ও দ্বীনে হক (সত্য দ্বীন) সহকারে অন্যান্য দ্বীন বা মতবাদসমূহের উপর এ দ্বীনকে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।” (সূরা আস সফ : ৯)
দ্বীন ইসলামের ঘোষণা :
“ইসলামই সত্য আর কুফর অসত্য। সুতরাং ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর কুরআন ঘোষণা দেয়। “সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত, মিথ্যার অবলুপ্তি অনিবার্য।” (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭ : ৮১)
‘ইসলাম হলো আলো আর কুফরী হলো অন্ধকার। আলো-আঁধারের প্রাধান্য স্বীকার করাতো দূরে থাক, এ দুইয়ের সহাবস্থানও সম্ভব নয়। ইসলামের এ আলোকে নিভিয়ে দেবার জন্য ইসলাম বিরোধী শক্তি সদা তৎপর। ইসলামের এ আলোকে নির্বাপিত করে মানবতাকে চির অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখার জন্য শয়তানী শক্তিসমূহ বদ্ধপরিকর। কুরআনের ভাষায় :
“এরা ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। অথচ আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করেই ছাড়বেন কাফিরদের তা যতই অসহনীয় হোক না কেন।” (সূরা সফ ৬১ : ৮)
ইসলামের মৌখিক ঘোষণা যা কালিমায়ে তাইয়েবার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি, তাতেও অন্যের প্রভুত্ব বর্জন করে আল্লাহর প্রভুত্ব বা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার এক আপোষহীন ও বলিষ্ঠ ঘোষণাই বিবৃত হয়। কালিমার বাস্তবায়নের ঘোষণা কুরআনের ভাষায় :
“যারা তাগুত বা আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, তারা যেন এক মজবুত রজু আঁকড়ে ধরে, যা কখনও ছিন্ন হবার নয়।” (সূরা আল বাকারা ২: ২৫৬)
দ্বীন ইসলামের এ সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরো একটু গভীরভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে যে কেউ বুঝতে সক্ষম হবে যে, ইসলাম স্বয়ং একটি বিপ্লবী আন্দোলন। এ আন্দোলনই হলো ইসলামের প্রাণ সত্ত্বা। এ প্রাণসত্ত্বাকে বাদ দিয়ে ইসলামের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না। এজন্যেই ইসলামকে বিজয়ী করার, বিজয়ী হিসেবে টিকিয়ে রাখার আন্দোলন কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত গতিতে চলতে থাকবে।
উপরে আমরা দ্বীন ইসলামের যে বৈশিষ্ট্য দেখলাম, তার আলোকে একথা পরিস্কার হয়েছে যে, দ্বীন মানুষের জীবনের সকল দিক ও বিভাগে আল্লাহ প্রদত্ত রসূল (ﷺ) প্রদর্শিত আদর্শকে পুরোপুরি অনুসরণের নাম, আর এ পুরোপুরি অনুসরণ তখন সম্ভব যখন কোনো দেশে এ দ্বীন বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এ দেশের প্রায় ষোল কোটি মানুষের শতকরা পঁচাশি ভাগ মুসলিম। এ দেশে লক্ষ লক্ষ মসজিদ, হাজার হাজার মাদরাসা এবং আল্লাহ তাআলার ফজলে লাখ লাখ আলেম-ওলামাও আছেন। দেশের বড় বড় কর্তাব্যক্তি বক্তৃতার পূর্বে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলেন।
সর্বোপরি দেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর প্রতি ঈমানের সংযোজনও হয়েছিল, আবার বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।
এতদসত্ত্বেও এখানে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত নেই। যে দেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠা হয় সে দেশের শাসক মৌলিকভাবে চারটি কাজে রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে থাকেন :
(১) সলাত প্রতিষ্ঠা করা
(২) যাকাত আদায় ও বণ্টন করা
(৩) ভাল ও সৎকাজের আদেশ দান করা
(৪) অসৎ ও আল্লাহবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করা।
এ চারটি কাজ করতে গেলে তিনটি অবস্থার উপস্থিতি অপরিহার্য।
১. কুরআন ও সুন্নাহর আইন রাষ্ট্রীয়রূপে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া।
২. উক্ত কুরআন সুন্নাহর আলোকে দেশ পরিচালনায় উপযুক্ত প্রশাসন কাঠামো এবং সৎ, আল্লাহভীরু ও যোগ্য প্রশাসক মন্ডলী।
৩. জনগণকে আল্লাহর আইন মেনে চলার উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রচার ব্যবস্থা।
আমাদের দেশে পূর্বোল্লেখিত দ্বীনের চারটি মৌলিক কাজে রাষ্ট্রশক্তির ভূমিকাতো দূরের কথা, পরোক্ষ সমর্থনও নেই বরং আরো তিক্ত সত্য হলো, রাষ্ট্রশক্তি কোথাও পরোক্ষ, কোথাও প্রত্যক্ষভাবে ঐ চারটি কাজে মুসলিমদেরকে নিরুৎসাহিত এমনকি বাঁধাগ্রস্তও করে থাকে। দেশের আইন, প্রশাসন, বিচার পদ্ধতি তথা যাবতীয় কার্যক্রম চলবে আল্লাহ ছাড়া অন্যের বিধানমতে আর সেখানে এই মানুষের বিধান দ্বীন ইসলামের কাজ করার যতটুকু সুযোগ দেয় কেবল এতটুকু ইসলাম থাকাকে দ্বীন প্রতিষ্ঠা থাকা বলে না। ইসলাম এমন অবস্থা ও পরিস্থিতিকে মেনে নেয়ার জন্য কখনও প্রস্তুত নয়। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে এর স্বপক্ষে কোনো অনুমোদন বা সমর্থন নেই।
আল্লাহর নির্দেশঃ
“মিথ্যা দ্বীনের ধারক-বাহকদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখ যতক্ষণ না ফিতনাসমূহ উৎখাত হয় এবং সামগ্রিক ব্যবস্থা আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।” (সূরা আল বাকারা ২: ১৯৩)
আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এ দেশের প্রায় ষোল কোটি মানুষের শতকরা পঁচাশি ভাগ মুসলিম। এ দেশে লক্ষ লক্ষ মসজিদ, হাজার হাজার মাদরাসা এবং আল্লাহ তাআলার ফজলে লাখ লাখ আলেম-ওলামাও আছেন। দেশের বড় বড় কর্তাব্যক্তি বক্তৃতার পূর্বে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলেন।
সর্বোপরি দেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর প্রতি ঈমানের সংযোজনও হয়েছিল, আবার বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।
এতদসত্ত্বেও এখানে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত নেই। যে দেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠা হয় সে দেশের শাসক মৌলিকভাবে চারটি কাজে রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে থাকেন :
(১) সলাত প্রতিষ্ঠা করা
(২) যাকাত আদায় ও বণ্টন করা
(৩) ভাল ও সৎকাজের আদেশ দান করা
(৪) অসৎ ও আল্লাহবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করা।
এ চারটি কাজ করতে গেলে তিনটি অবস্থার উপস্থিতি অপরিহার্য।
১. কুরআন ও সুন্নাহর আইন রাষ্ট্রীয়রূপে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া।
২. উক্ত কুরআন সুন্নাহর আলোকে দেশ পরিচালনায় উপযুক্ত প্রশাসন কাঠামো এবং সৎ, আল্লাহভীরু ও যোগ্য প্রশাসক মন্ডলী।
৩. জনগণকে আল্লাহর আইন মেনে চলার উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রচার ব্যবস্থা।
আমাদের দেশে পূর্বোল্লেখিত দ্বীনের চারটি মৌলিক কাজে রাষ্ট্রশক্তির ভূমিকাতো দূরের কথা, পরোক্ষ সমর্থনও নেই বরং আরো তিক্ত সত্য হলো, রাষ্ট্রশক্তি কোথাও পরোক্ষ, কোথাও প্রত্যক্ষভাবে ঐ চারটি কাজে মুসলিমদেরকে নিরুৎসাহিত এমনকি বাঁধাগ্রস্তও করে থাকে। দেশের আইন, প্রশাসন, বিচার পদ্ধতি তথা যাবতীয় কার্যক্রম চলবে আল্লাহ ছাড়া অন্যের বিধানমতে আর সেখানে এই মানুষের বিধান দ্বীন ইসলামের কাজ করার যতটুকু সুযোগ দেয় কেবল এতটুকু ইসলাম থাকাকে দ্বীন প্রতিষ্ঠা থাকা বলে না। ইসলাম এমন অবস্থা ও পরিস্থিতিকে মেনে নেয়ার জন্য কখনও প্রস্তুত নয়। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে এর স্বপক্ষে কোনো অনুমোদন বা সমর্থন নেই।
আল্লাহর নির্দেশঃ
“মিথ্যা দ্বীনের ধারক-বাহকদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখ যতক্ষণ না ফিতনাসমূহ উৎখাত হয় এবং সামগ্রিক ব্যবস্থা আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।” (সূরা আল বাকারা ২: ১৯৩)
ইকামাতে দ্বীন অর্থ আল্লাহর প্রেরিত বিধানকে সমাজে-রাষ্ট্রে বাস্তবায়িত করা বা প্রতিষ্ঠিত করা। আল কুরআনে কথাটি অনেক বার ব্যবহার করা হয়েছে। আকিমুস সলাত’ (ইকামাতুস সলাত) অর্থাৎ ‘সলাত প্রতিষ্ঠা কর’ অর্থাৎ সলাত চালু কর। ফরয সলাতের পূর্বে মুয়াযযিন ইকামাত দেয় বা তাকবীর বলে। এর শেষ দিকে বলা হয় সলাত দাঁড়িয়ে গেছে বা সলাত শুরু হয়েছে।
সলাতের মাসয়ালা শেখা, সলাত জানা বা সলাতের ওয়ায করাকে ইকামাতে সলাত বলে না। বাস্তবে সলাত চালু হয়ে যাওয়াকেই ইকামাতে সলাত বলে। কোন ব্যক্তির জীবনে সলাত প্রতিষ্ঠা হওয়ার অর্থ হলো যে, সে নিয়মিত, সময় মত, জামায়াতে সঠিক নিয়মে সলাত আদায় করে। কোন মহল্লায় সলাত প্রতিষ্ঠা হওয়ার অর্থ মহল্লায় মসজিদ প্রতিষ্ঠা হওয়া, পাঁচ ওয়াক্ত সেখানে জামায়াত চালু হওয়া এবং মহল্লার অধিকাংশ লোকের জামায়াতে শরীক হওয়া। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়া অর্থ হলো বাস্তবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র স্থাপিত হওয়া। একটা কারখানা প্রতিষ্ঠা হওয়া অর্থ কারখানা চালু হওয়া। ঠিক তেমনি দেশে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়া অর্থ হলো সরকার ও জনগণের যাবতীয় কাজকর্ম কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী চলা।
আকিমুস্ সলার মতোই আকিমুদ্দিন থেকে ‘ইকামাতে দ্বীন’। এটি এমন একটি পরিভাষা যার অর্থ বাংলায় বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা যায়। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা’ বা ‘দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা’ বললে এর সহজ অনুবাদ হতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী হুকুমাত, ইসলামী সমাজ ইত্যাদির যে কোন একটা কথার সাথে প্রতিষ্ঠা করা কথাটি যোগ করলে ‘ইকামাতে দ্বীন পরিভাষাটিরই অর্থ বুঝায়।
ইকামাতে দ্বীনের মর্ম সঠিকভাবে বুঝবার জন্য বাস্তব উদাহরণ দরকার। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের উদাহরণ দিলেই বিষয়টা সহজ হবে। সবাই একথা স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, বাংলাদেশে কুরআনের আইন ও রসূলের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত নেই। এ দেশটি ইসলামী রাষ্ট্র নয় যদিও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট। সরকারও ইসলামী নয়। দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্য, ব্যাংক ও বীমা, আদালত ও কোর্ট, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি, দেশীয় ও বৈদেশিক নীতি ইত্যাদির কোনটাই ইসলামী বিধান দ্বারা পরিচালিত নয়। কিন্তু এসবই তো চলছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যে, কোন আদর্শ, নীতি বা বিধান অনুযায়ী দেশের রাষ্ট্র, সরকার ও অন্যান্য সবকিছু চলছে? আল্লাহর আনুগত্য করাই একমাত্র সত্য পথ। সমাজে একজন অন্যজনের আনুগত্য না করলে কোন সমাজই চলতে পারে না। ইসলামের দাবী হলো যে,
‘জেনে রাখ, আল্লাহ-ই সৃষ্টি করেছেন এবং হুকুম করার অধিকারও তাঁরই। (সূরা আল আ'রাফ ৭: ৫৪)
অর্থাৎ সবার কর্তব্য একমাত্র আল্লাহরই আনুগত্য করা। মানব সমাজে শান্তি ও সুশৃঙ্খলা একমাত্র একজন মনিবের পূর্ণ আনুগত্যের উপরই নির্ভর করে। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ হতে পারে না। আর কেউ নির্ভুলও নয়। সকলের মঙ্গলের সত্য ও সঠিক বিধান শুধু তিনিই দিতে পারেন। তার রচিত বিধান দ্বীন ইসলামই একমাত্র সত্য। সত্য দ্বীনের বিপরীত যা কিছু সবই অসত্য, ভুল ও ক্ষতিকর। আল্লাহর আনুগত্যের বিরুদ্ধে আর যত প্রকার আনুগত্য রয়েছে। তা সবই ‘দ্বীনে বাতিল বা মিথ্যা আনুগত্য। হকের (সত্যের) বিপরীত পরিভাষাই হলো বাতিল (মিথ্যা)।
উপরোক্ত ব্যাখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশে যে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু রয়েছে তা দ্বীনে বাতিল। দ্বীনে হক যেখানে প্রতিষ্ঠিত নেই সেখানে যেটাই চালু আছে সেটা। অবশ্যই বাতিল। সে হিসেবে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও সরকার, সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিষ্ট ব্যবস্থা ইত্যাদি সবই “দ্বীনে বাতিল”। আল্লাহ বলেন : তোমরা পূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে না।' (সূরা আল বাকারা ২: ২০৮)
আল্লাহ বলতে চান যে, ইসলাম গ্রহণ করলে এর সবটুকুই গ্রহণ করতে হবে। তোমাদের ইসলাম গ্রহণে আমার কোন লাভ নেই। তোমাদের পছন্দমত ইসলামের একাংশ গ্রহণ করে অন্য অংশ ত্যাগ করলে ইসলাম গ্রহণ করা হলো না। আমার আনুগত্য করতে হলে সব ক্ষেত্রেই আমাকে মনিব হিসেবে মেনে নাও। যেখানেই তোমরা ইসলামকে বাদ দিবে সেখানেই তোমরা শয়তানের অনুসারী হবে।
এজন্যই কোন ব্যক্তি যদি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ইসলামকে মানে কিন্তু দেশ পরিচালনায় ধর্মনিরপেক্ষ হয় এবং অর্থনীতি ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রী বা পুঁজিবাদী হয় তাহলে সে ইসলামকে পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি বলেই বুঝা যাবে। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ মুসলিম থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র নয়। কারণ ‘দ্বীনে হক’ অর্থাৎ সঠিক দ্বীন ইসলাম এ দেশে চালু নেই যা আল্লাহ পাঠিয়েছেন। যেটা চালু আছে সেটা সাধারণ যুক্তিতেই দ্বীনে বাতিল (মানুষের তৈরী দ্বীন), এ বাতিল ব্যবস্থা ইংরেজ আমল থেকেই রয়েছে। দ্বীনে বাতিলই এখানে দু’শ বছর থেকে বিজয়ী হয়ে আছে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।
সলাতের মাসয়ালা শেখা, সলাত জানা বা সলাতের ওয়ায করাকে ইকামাতে সলাত বলে না। বাস্তবে সলাত চালু হয়ে যাওয়াকেই ইকামাতে সলাত বলে। কোন ব্যক্তির জীবনে সলাত প্রতিষ্ঠা হওয়ার অর্থ হলো যে, সে নিয়মিত, সময় মত, জামায়াতে সঠিক নিয়মে সলাত আদায় করে। কোন মহল্লায় সলাত প্রতিষ্ঠা হওয়ার অর্থ মহল্লায় মসজিদ প্রতিষ্ঠা হওয়া, পাঁচ ওয়াক্ত সেখানে জামায়াত চালু হওয়া এবং মহল্লার অধিকাংশ লোকের জামায়াতে শরীক হওয়া। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়া অর্থ হলো বাস্তবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র স্থাপিত হওয়া। একটা কারখানা প্রতিষ্ঠা হওয়া অর্থ কারখানা চালু হওয়া। ঠিক তেমনি দেশে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়া অর্থ হলো সরকার ও জনগণের যাবতীয় কাজকর্ম কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী চলা।
আকিমুস্ সলার মতোই আকিমুদ্দিন থেকে ‘ইকামাতে দ্বীন’। এটি এমন একটি পরিভাষা যার অর্থ বাংলায় বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা যায়। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা’ বা ‘দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা’ বললে এর সহজ অনুবাদ হতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী হুকুমাত, ইসলামী সমাজ ইত্যাদির যে কোন একটা কথার সাথে প্রতিষ্ঠা করা কথাটি যোগ করলে ‘ইকামাতে দ্বীন পরিভাষাটিরই অর্থ বুঝায়।
ইকামাতে দ্বীনের মর্ম সঠিকভাবে বুঝবার জন্য বাস্তব উদাহরণ দরকার। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের উদাহরণ দিলেই বিষয়টা সহজ হবে। সবাই একথা স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, বাংলাদেশে কুরআনের আইন ও রসূলের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত নেই। এ দেশটি ইসলামী রাষ্ট্র নয় যদিও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট। সরকারও ইসলামী নয়। দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্য, ব্যাংক ও বীমা, আদালত ও কোর্ট, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি, দেশীয় ও বৈদেশিক নীতি ইত্যাদির কোনটাই ইসলামী বিধান দ্বারা পরিচালিত নয়। কিন্তু এসবই তো চলছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যে, কোন আদর্শ, নীতি বা বিধান অনুযায়ী দেশের রাষ্ট্র, সরকার ও অন্যান্য সবকিছু চলছে? আল্লাহর আনুগত্য করাই একমাত্র সত্য পথ। সমাজে একজন অন্যজনের আনুগত্য না করলে কোন সমাজই চলতে পারে না। ইসলামের দাবী হলো যে,
‘জেনে রাখ, আল্লাহ-ই সৃষ্টি করেছেন এবং হুকুম করার অধিকারও তাঁরই। (সূরা আল আ'রাফ ৭: ৫৪)
অর্থাৎ সবার কর্তব্য একমাত্র আল্লাহরই আনুগত্য করা। মানব সমাজে শান্তি ও সুশৃঙ্খলা একমাত্র একজন মনিবের পূর্ণ আনুগত্যের উপরই নির্ভর করে। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ হতে পারে না। আর কেউ নির্ভুলও নয়। সকলের মঙ্গলের সত্য ও সঠিক বিধান শুধু তিনিই দিতে পারেন। তার রচিত বিধান দ্বীন ইসলামই একমাত্র সত্য। সত্য দ্বীনের বিপরীত যা কিছু সবই অসত্য, ভুল ও ক্ষতিকর। আল্লাহর আনুগত্যের বিরুদ্ধে আর যত প্রকার আনুগত্য রয়েছে। তা সবই ‘দ্বীনে বাতিল বা মিথ্যা আনুগত্য। হকের (সত্যের) বিপরীত পরিভাষাই হলো বাতিল (মিথ্যা)।
উপরোক্ত ব্যাখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশে যে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু রয়েছে তা দ্বীনে বাতিল। দ্বীনে হক যেখানে প্রতিষ্ঠিত নেই সেখানে যেটাই চালু আছে সেটা। অবশ্যই বাতিল। সে হিসেবে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও সরকার, সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিষ্ট ব্যবস্থা ইত্যাদি সবই “দ্বীনে বাতিল”। আল্লাহ বলেন : তোমরা পূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে না।' (সূরা আল বাকারা ২: ২০৮)
আল্লাহ বলতে চান যে, ইসলাম গ্রহণ করলে এর সবটুকুই গ্রহণ করতে হবে। তোমাদের ইসলাম গ্রহণে আমার কোন লাভ নেই। তোমাদের পছন্দমত ইসলামের একাংশ গ্রহণ করে অন্য অংশ ত্যাগ করলে ইসলাম গ্রহণ করা হলো না। আমার আনুগত্য করতে হলে সব ক্ষেত্রেই আমাকে মনিব হিসেবে মেনে নাও। যেখানেই তোমরা ইসলামকে বাদ দিবে সেখানেই তোমরা শয়তানের অনুসারী হবে।
এজন্যই কোন ব্যক্তি যদি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ইসলামকে মানে কিন্তু দেশ পরিচালনায় ধর্মনিরপেক্ষ হয় এবং অর্থনীতি ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রী বা পুঁজিবাদী হয় তাহলে সে ইসলামকে পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি বলেই বুঝা যাবে। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ মুসলিম থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র নয়। কারণ ‘দ্বীনে হক’ অর্থাৎ সঠিক দ্বীন ইসলাম এ দেশে চালু নেই যা আল্লাহ পাঠিয়েছেন। যেটা চালু আছে সেটা সাধারণ যুক্তিতেই দ্বীনে বাতিল (মানুষের তৈরী দ্বীন), এ বাতিল ব্যবস্থা ইংরেজ আমল থেকেই রয়েছে। দ্বীনে বাতিলই এখানে দু’শ বছর থেকে বিজয়ী হয়ে আছে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।
দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব কার? আল্লাহপাক এ দায়িত্ব দিয়েই রসূল (ﷺ)-কে পাঠিয়েছেন। যেমন কুরআনুল কারীমের তিনটি সূরায় এ বিষয়ে পরিস্কার ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে।
“তিনিই সে সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও একমাত্র দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন (সে দ্বীনকে) আর সব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন।”(সূরা আত তাওবা ৯: ৩৩, সূরা ফাতহ ৪৮ : ২৮, সূরা আস সফ ৬১ : ৯)।
কিন্তু এ দায়িত্ব কি শুধু রসূলেরই! রসূলের প্রতি যারা ঈমান এনেছিলেন তারা কি শুধু সলাত, সিয়াম, হাজ্জ ও অন্যান্য কতক ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করাই নাজাতের জন্য যথেষ্ট মনে করতেন?
কুরআন ও হাদীস একথার সাক্ষী যে, প্রত্যেক ঈমানদারকেই রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ‘ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনে জান ও মাল দ্বারা পূর্ণরূপে শরীক হতে হতো। রসূল (ﷺ) -এর ইমামতিতে মদীনার মসজিদে জামায়াতে সলাত আদায়কারী এক হাজার লোক নিয়ে আল্লাহর রসূল (ﷺ) ওহুদের যুদ্ধে রওয়ানা হলেন। কিছুদূর যেয়ে আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর নেতৃতে তিন শ' লোক যুদ্ধে শরীক না হয়ে ফিরে এলো। আল্লাহ তা'আলা এদেরকে মুনাফিক বলে ঘোষণা করলেন। তাবুকের যুদ্ধে তিনজন সাহাবী যথাসময়ে রওয়ানা না হওয়ায় এবং পরে রওয়ানা হবার নিয়ত তাদের থাকা সত্ত্বেও রসূলের নির্দেশে তাদেরকে মুসলিম জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন ঘোষণা করা হলো। এমনকি তাদের স্ত্রী সন্তানকে পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হলো। এ অবস্থায় দীর্ঘ পঞ্চাশ দিন তাওবা করার পর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ক্ষমা করলেন।
এ থেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, রসূলের দায়িত্ব পালনে পূর্ণভাবে শরীক হওয়া ঈমানের অপরিহার্য দাবী। তাহলে বুঝা গেল যে, ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলিমেরই। রসূলের এ মহান দায়িত্ব শরীক না হলে ঈমান আনার প্রয়োজনই কি ছিল? কুরআনে রসূলের মুখ দিয়েই বলান হয়েছে যে :
“আল্লাহকে ভয় করে চল এবং আমার আনুগত্য কর।” (সূরা আশ শূয়ারা : ১৫০)
অর্থাৎ রসূলের পূর্ণ আনুগত্য করার মাধ্যমেই আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব। আল্লাহ তা'আলা যত হুকুম করেছেন তা বাস্তবে মানব সমাজে তখনই চালু হতে পারে যখন আল্লাহর দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়। কোন ফরযই আনইসলামী শক্তির অধীনে ফরযের মর্যাদা পায় না। ইকামাতে দ্বীন ছাড়া কোন হারামই সমাজ থেকে উৎখাত হতে পারে না। তাই আল্লাহর রসূল (ﷺ) যত ফরয প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন তা ইকামাতে দ্বীনের ফলেই সম্ভব হয়েছিল। দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে কোন ফরযই সমাজে চালু করতে পারতেন না।
সুতরাং ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বটিই সব ফরযের বড় ফরয। ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বকে অগ্রাহ্য করে সলাত, যাকাত, সিয়াম, হাজ্জ, ইত্যাদি কোন ফরযকেই ঠিকভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তেমনি দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া সমাজ থেকে খারাবী ও অন্যায়কে উৎখাত করা যায় না। তাহলে এ কথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে, ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব (ফরিয়ে ইকামাতে দ্বীন) প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। অর্থাৎ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা বা বিজয়ী করার চেষ্টা করা ফরযে আইন”।
অবশ্য দ্বীন বিজয়ী হয়ে গেলে ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালক সরকারের উপরই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত রাখার দায়িত্ব থাকে। তখন এটা সাধারণ মুসলিমদের জন্য ফরযে কিফায়া হয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যা দ্বীনকে পরাজিত করে সঠিক দ্বীনকে বিজয়ী করার দায়িত্বটি অবশ্যই “ফরযে আইন”। আল্লাহর রসূল (ﷺ) -কে (উৎকৃষ্টতম আদর্শ) ও সাহাবাদের অনুকরণ যোগ্য মনে করলে একথা স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই। সব ফরযের বড় ফরয হিসেবে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বকে বুঝবার পর কারো পক্ষেই ইসলামের কতক মূল্যবান খেদমত করেই সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব নয়।
অবশ্য এ দায়িত্বের অনুভূতিই যাদের নেই তাদের কথাই আলাদা। নাযাত দেয়ার মালিক যে মহান আল্লাহ তিনিই তাদের হাল জানেন এবং তিনি কারো উপর অবিচার করবেন না- একথা নিশ্চিত। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব (ফরি) বুঝবার যোগ্যতা দিয়েছেন তাদের পক্ষে এ বিষয় অবহেলা করা স্বাভাবিক নয়। মাদ্রাসা, খানকাহ ও তাবলীগের মাধ্যমে দ্বীনের যতটুকু খেদমত হচ্ছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা তাদের পক্ষে অসম্ভব।
একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, মাদ্রাসা, ওয়ায, খানকাহ ও তাবলীগ দ্বারা দ্বীনের বড় বড় খেদমত হচ্ছে। এসব খেদমতই ইকামতে দ্বীনের জন্য বিশেষ সহায়ক। কিন্তু খেদমতগুলো দ্বারা আপনা আপনিই দ্বীন প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। দ্বীন কায়েমের কর্মনীতি ও কর্মসূচী শুধু খেদমত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না। ইকামাতে দ্বীনের প্রচেষ্টা স্বাভাবিকভাবেই একটি বিপ্লবী মুভমেন্টে রূপ লাভ করে। এ প্রচেষ্টাকেই তাই ইসলামিক মুভমেন্ট বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বলা হয়।
“তিনিই সে সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও একমাত্র দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন (সে দ্বীনকে) আর সব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন।”(সূরা আত তাওবা ৯: ৩৩, সূরা ফাতহ ৪৮ : ২৮, সূরা আস সফ ৬১ : ৯)।
কিন্তু এ দায়িত্ব কি শুধু রসূলেরই! রসূলের প্রতি যারা ঈমান এনেছিলেন তারা কি শুধু সলাত, সিয়াম, হাজ্জ ও অন্যান্য কতক ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করাই নাজাতের জন্য যথেষ্ট মনে করতেন?
কুরআন ও হাদীস একথার সাক্ষী যে, প্রত্যেক ঈমানদারকেই রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ‘ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনে জান ও মাল দ্বারা পূর্ণরূপে শরীক হতে হতো। রসূল (ﷺ) -এর ইমামতিতে মদীনার মসজিদে জামায়াতে সলাত আদায়কারী এক হাজার লোক নিয়ে আল্লাহর রসূল (ﷺ) ওহুদের যুদ্ধে রওয়ানা হলেন। কিছুদূর যেয়ে আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর নেতৃতে তিন শ' লোক যুদ্ধে শরীক না হয়ে ফিরে এলো। আল্লাহ তা'আলা এদেরকে মুনাফিক বলে ঘোষণা করলেন। তাবুকের যুদ্ধে তিনজন সাহাবী যথাসময়ে রওয়ানা না হওয়ায় এবং পরে রওয়ানা হবার নিয়ত তাদের থাকা সত্ত্বেও রসূলের নির্দেশে তাদেরকে মুসলিম জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন ঘোষণা করা হলো। এমনকি তাদের স্ত্রী সন্তানকে পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হলো। এ অবস্থায় দীর্ঘ পঞ্চাশ দিন তাওবা করার পর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ক্ষমা করলেন।
এ থেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, রসূলের দায়িত্ব পালনে পূর্ণভাবে শরীক হওয়া ঈমানের অপরিহার্য দাবী। তাহলে বুঝা গেল যে, ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলিমেরই। রসূলের এ মহান দায়িত্ব শরীক না হলে ঈমান আনার প্রয়োজনই কি ছিল? কুরআনে রসূলের মুখ দিয়েই বলান হয়েছে যে :
“আল্লাহকে ভয় করে চল এবং আমার আনুগত্য কর।” (সূরা আশ শূয়ারা : ১৫০)
অর্থাৎ রসূলের পূর্ণ আনুগত্য করার মাধ্যমেই আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব। আল্লাহ তা'আলা যত হুকুম করেছেন তা বাস্তবে মানব সমাজে তখনই চালু হতে পারে যখন আল্লাহর দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়। কোন ফরযই আনইসলামী শক্তির অধীনে ফরযের মর্যাদা পায় না। ইকামাতে দ্বীন ছাড়া কোন হারামই সমাজ থেকে উৎখাত হতে পারে না। তাই আল্লাহর রসূল (ﷺ) যত ফরয প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন তা ইকামাতে দ্বীনের ফলেই সম্ভব হয়েছিল। দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে কোন ফরযই সমাজে চালু করতে পারতেন না।
সুতরাং ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বটিই সব ফরযের বড় ফরয। ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বকে অগ্রাহ্য করে সলাত, যাকাত, সিয়াম, হাজ্জ, ইত্যাদি কোন ফরযকেই ঠিকভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তেমনি দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া সমাজ থেকে খারাবী ও অন্যায়কে উৎখাত করা যায় না। তাহলে এ কথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে, ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব (ফরিয়ে ইকামাতে দ্বীন) প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। অর্থাৎ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা বা বিজয়ী করার চেষ্টা করা ফরযে আইন”।
অবশ্য দ্বীন বিজয়ী হয়ে গেলে ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালক সরকারের উপরই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত রাখার দায়িত্ব থাকে। তখন এটা সাধারণ মুসলিমদের জন্য ফরযে কিফায়া হয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যা দ্বীনকে পরাজিত করে সঠিক দ্বীনকে বিজয়ী করার দায়িত্বটি অবশ্যই “ফরযে আইন”। আল্লাহর রসূল (ﷺ) -কে (উৎকৃষ্টতম আদর্শ) ও সাহাবাদের অনুকরণ যোগ্য মনে করলে একথা স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই। সব ফরযের বড় ফরয হিসেবে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বকে বুঝবার পর কারো পক্ষেই ইসলামের কতক মূল্যবান খেদমত করেই সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব নয়।
অবশ্য এ দায়িত্বের অনুভূতিই যাদের নেই তাদের কথাই আলাদা। নাযাত দেয়ার মালিক যে মহান আল্লাহ তিনিই তাদের হাল জানেন এবং তিনি কারো উপর অবিচার করবেন না- একথা নিশ্চিত। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব (ফরি) বুঝবার যোগ্যতা দিয়েছেন তাদের পক্ষে এ বিষয় অবহেলা করা স্বাভাবিক নয়। মাদ্রাসা, খানকাহ ও তাবলীগের মাধ্যমে দ্বীনের যতটুকু খেদমত হচ্ছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা তাদের পক্ষে অসম্ভব।
একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, মাদ্রাসা, ওয়ায, খানকাহ ও তাবলীগ দ্বারা দ্বীনের বড় বড় খেদমত হচ্ছে। এসব খেদমতই ইকামতে দ্বীনের জন্য বিশেষ সহায়ক। কিন্তু খেদমতগুলো দ্বারা আপনা আপনিই দ্বীন প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। দ্বীন কায়েমের কর্মনীতি ও কর্মসূচী শুধু খেদমত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না। ইকামাতে দ্বীনের প্রচেষ্টা স্বাভাবিকভাবেই একটি বিপ্লবী মুভমেন্টে রূপ লাভ করে। এ প্রচেষ্টাকেই তাই ইসলামিক মুভমেন্ট বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বলা হয়।
ইকামাতে দ্বীনের কাজ কারো পক্ষে একা করা কিছুতেই সম্ভব নয়। এমন কি শত যোগ্যতা সত্ত্বেও কোন নবীও একা দ্বীনকে বিজয়ী করতে পারেননি। অবশ্য প্রথমে নবীকে একাই শুরু করতে হয়েছে। যে নবীর ডাকে মানুষ সাড়া দেয়নি এবং জামায়াতবদ্ধভাবে কাজ করার সুযোগ যে নবী পাননি তিনি দ্বীনকে বিজয়ী করতে পারেননি।
একটা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলিয়ে নতুন করে সে সমাজকে গড়ে তুলবার কাজটি এমন কঠিন ও জটিল যে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক একদল লোকের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া এ বিরাট উদ্দেশ্য কিছুতেই সফল হতে পারে না। তাই প্রত্যেক নারীই মানুষকে আল্লাহর দাসত্ব কবুলের দাওয়াত দেয়ার সাথে সাথে তার আনুগত্য করে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনে তাঁর সাথী হবার জন্য তাদেরকে আহবান জানিয়েছেন।
“আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” প্রত্যেক নবীই এ দাওয়াত দিয়েছেন। কারণ একদল লোকের আনুগত্য না পেলে দ্বীনকে বিজয়ী করা সম্ভব নয়। এ কারণেই ইসলামে অর্গানাইজেশনের গুরুত্ব এতবেশী। রোজ পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের সাথে সলাতে আদায়ের নির্দেশ দিয়ে জামায়াতবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব গভীরভাবে অনুভব করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন কি জামাতবদ্ধ জীবনযাপনকে ইসলামের আনুগত্যের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে অর্গানাইজেশন থেকে বিচ্ছিন্ন তাকে হাদীসে এ বলে সাবধান করা হয়েছে যে, মেষের পাল থেকে বিচ্ছিন্ন মেষকে যেমন নেকড়ে বাঘ ধরে নিয়ে যায় তেমনি শয়তান অর্গানাইজেশন (জামায়াত) থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে নিজের খপ্পরে নিয়ে নেয়।
এমন কি সফরের সময় দু’জন এক সাথে সফর করলেও একজনকে আমীর মেনে অর্গানাইজেশনের শৃংখলা মতো চলার জন্য রসূল (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন। অর্গানাইজেশন (সংঘবদ্ধ) ছাড়া ইসলামী জীবন সম্ভব নয় এবং আমীর ছাড়াও অর্গানাইজেশন হতে পারে না। এ দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসলিম হয় আমীর (হুকুমকর্তা) হবে, না হয় মামুর (হুকুম পালনকারী) হবে।
যেমন জামায়াতে সলাত আদায় করা অবস্থায় তাকে হয় ইমাম হতে হবে, না হয়। মুক্তাদী হতে হবে। কেউ যদি ইমাম বা মুক্তাদির কোনটাই না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, সে সলাতের জামায়াতে শামিল হয়নি। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন দ্বীনি অর্গানাইজেশনে শামিল হয়নি সে সঠিক ইসলামী জীবন্যাপনের কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় সে নাফস ও শয়তাদের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে পারবে না। নবী কারীম (ﷺ) -এর সময়ে শুধু তারাই মুসলিম বলে গণ্য হতেন যারা নবীর জামায়াতে শরীক হয়ে নবীর নিকট বা তাঁর প্রতিনিধির নিকট বাইয়াত হতেন। ঐ জামাতের বাইরে থাকলে মুসলিম বলে গণ্যই হতো না। ততকালীন সময়ে ঐ জামায়াতই দ্বীনের একমাত্র জামায়াত বা আল-জামায়াত ছিল।
বর্তমানে কোন এক জামায়াতই আল-জামায়াতের মর্যাদা পেতে পারে না। রসূলের আদর্শের ভিত্তিতে যত অর্গানাইজেশন গঠিত হতে পারে সব অর্গানাইজেশন মিলে আল জামায়াত বলে গণ্য। কিন্তু যে কোন দ্বীনি অর্গানাইজেশনে শামিল-ই হয়নি সে ঈমানের দিক দিয়ে মোটেই নিরাপদ অবস্থায় নেই।
ইসলামে অর্গানাইজেশনের এ গুরুত্বকে কোন আলেমই অস্বীকার করতে পারবেন না। আল্লাহর দ্বীনের খিদমতের জন্য হলেও কোন অর্গানাইজেশন ভুক্ত হওয়া হাদীসের দৃষ্টিতে কমপক্ষে ওয়াজিব বলে স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই।
সুতরাং প্রত্যেক সচেতন মুসলিমকেই কোন না কোন একটি অর্গানাইজেশনে শামিল হতে হবে। প্রচলিত অর্গানাইজেশনগুলোর কোনটাই যদি পছন্দ না হয় তাহলে এমন ব্যক্তিকে একটা নতুন অর্গানাইজেশন গঠন করার চেষ্টা করা উচিত। সব অর্গানাইজেশনকে প্রথমে ভাল করে জানার চেষ্টা করা কর্তব্য। এরপরও যে ব্যক্তি সব কটা অর্গানাইজেশনকে ক্রটিপূর্ণ বলে বুঝবার যোগ্যতা রাখেন তার ঐসব ক্রটি থেকে মুক্ত একটা অর্গানাইজেশন গঠন করার যোগ্য হওয়া উচিত।
অবশ্য একটা কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেক দ্বীনি অর্গানাইজেশনকে ভালভাবে জানবার চেষ্টা করা সবারই দায়িত্ব। প্রত্যেক অর্গানাইজেশনকে কাছে এসেই জানতে হবে এবং সে অর্গানাইজেশনের দায়িত্বশীল লোকদের কাছ থেকে জানতে চেষ্টা করতে হবে। উড়ো কথায় কান দিয়ে বা কোন অর্গানাইজেশনের বিরোধীদের প্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া একেবারেই অযৌক্তিক। যে বিচারক বাদীর অভিযোগ শুনেই আসামীর যবানবন্দী না নিয়ে রায় দেয় সে বিচারক হবারই যোগ্য নয়।
তাই কোন অর্গানাইজেশন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সে অর্গানাইজেশনকে কাছে এসে দেখা দরকার। সব কটা দ্বীনি অর্গানাইজেশন সম্পর্কে সচেতন মুসলিমদের ভালভাবে জানার চেষ্টা করা উচিত। তুলনামূলকভাবে বিচার করে যে যেটাকে বেশী পছন্দ করবেন সেখানে কাজ করে তিনি বেশী তৃপ্তি পাবেন। আর তুলনা করলে সব অর্গানাইজেশনেরই দ্বীনি খেদমতটুকুকে স্বীকার করতে সক্ষম হবেন। এক অর্গানাইজেশনকে বেশী পছন্দ করার অর্থ এ নয় যে, অন্যান্য অর্গানাইজেশনকে মন্দ মনে করতে হবে। একটা “বেশী ভাল” বলে স্বীকার করেও অন্যটাকে অন্ততঃ “শুধু ভাল” মনে করা উচিত। একটাকে বেশী পছন্দ করলেই অন্য সবগুলোকে মন্দ মনে করা কোন অবস্থায় যরূরী নয়।
একটা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলিয়ে নতুন করে সে সমাজকে গড়ে তুলবার কাজটি এমন কঠিন ও জটিল যে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক একদল লোকের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া এ বিরাট উদ্দেশ্য কিছুতেই সফল হতে পারে না। তাই প্রত্যেক নারীই মানুষকে আল্লাহর দাসত্ব কবুলের দাওয়াত দেয়ার সাথে সাথে তার আনুগত্য করে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনে তাঁর সাথী হবার জন্য তাদেরকে আহবান জানিয়েছেন।
“আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” প্রত্যেক নবীই এ দাওয়াত দিয়েছেন। কারণ একদল লোকের আনুগত্য না পেলে দ্বীনকে বিজয়ী করা সম্ভব নয়। এ কারণেই ইসলামে অর্গানাইজেশনের গুরুত্ব এতবেশী। রোজ পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের সাথে সলাতে আদায়ের নির্দেশ দিয়ে জামায়াতবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব গভীরভাবে অনুভব করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন কি জামাতবদ্ধ জীবনযাপনকে ইসলামের আনুগত্যের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে অর্গানাইজেশন থেকে বিচ্ছিন্ন তাকে হাদীসে এ বলে সাবধান করা হয়েছে যে, মেষের পাল থেকে বিচ্ছিন্ন মেষকে যেমন নেকড়ে বাঘ ধরে নিয়ে যায় তেমনি শয়তান অর্গানাইজেশন (জামায়াত) থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে নিজের খপ্পরে নিয়ে নেয়।
এমন কি সফরের সময় দু’জন এক সাথে সফর করলেও একজনকে আমীর মেনে অর্গানাইজেশনের শৃংখলা মতো চলার জন্য রসূল (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন। অর্গানাইজেশন (সংঘবদ্ধ) ছাড়া ইসলামী জীবন সম্ভব নয় এবং আমীর ছাড়াও অর্গানাইজেশন হতে পারে না। এ দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসলিম হয় আমীর (হুকুমকর্তা) হবে, না হয় মামুর (হুকুম পালনকারী) হবে।
যেমন জামায়াতে সলাত আদায় করা অবস্থায় তাকে হয় ইমাম হতে হবে, না হয়। মুক্তাদী হতে হবে। কেউ যদি ইমাম বা মুক্তাদির কোনটাই না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, সে সলাতের জামায়াতে শামিল হয়নি। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন দ্বীনি অর্গানাইজেশনে শামিল হয়নি সে সঠিক ইসলামী জীবন্যাপনের কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় সে নাফস ও শয়তাদের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে পারবে না। নবী কারীম (ﷺ) -এর সময়ে শুধু তারাই মুসলিম বলে গণ্য হতেন যারা নবীর জামায়াতে শরীক হয়ে নবীর নিকট বা তাঁর প্রতিনিধির নিকট বাইয়াত হতেন। ঐ জামাতের বাইরে থাকলে মুসলিম বলে গণ্যই হতো না। ততকালীন সময়ে ঐ জামায়াতই দ্বীনের একমাত্র জামায়াত বা আল-জামায়াত ছিল।
বর্তমানে কোন এক জামায়াতই আল-জামায়াতের মর্যাদা পেতে পারে না। রসূলের আদর্শের ভিত্তিতে যত অর্গানাইজেশন গঠিত হতে পারে সব অর্গানাইজেশন মিলে আল জামায়াত বলে গণ্য। কিন্তু যে কোন দ্বীনি অর্গানাইজেশনে শামিল-ই হয়নি সে ঈমানের দিক দিয়ে মোটেই নিরাপদ অবস্থায় নেই।
ইসলামে অর্গানাইজেশনের এ গুরুত্বকে কোন আলেমই অস্বীকার করতে পারবেন না। আল্লাহর দ্বীনের খিদমতের জন্য হলেও কোন অর্গানাইজেশন ভুক্ত হওয়া হাদীসের দৃষ্টিতে কমপক্ষে ওয়াজিব বলে স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই।
সুতরাং প্রত্যেক সচেতন মুসলিমকেই কোন না কোন একটি অর্গানাইজেশনে শামিল হতে হবে। প্রচলিত অর্গানাইজেশনগুলোর কোনটাই যদি পছন্দ না হয় তাহলে এমন ব্যক্তিকে একটা নতুন অর্গানাইজেশন গঠন করার চেষ্টা করা উচিত। সব অর্গানাইজেশনকে প্রথমে ভাল করে জানার চেষ্টা করা কর্তব্য। এরপরও যে ব্যক্তি সব কটা অর্গানাইজেশনকে ক্রটিপূর্ণ বলে বুঝবার যোগ্যতা রাখেন তার ঐসব ক্রটি থেকে মুক্ত একটা অর্গানাইজেশন গঠন করার যোগ্য হওয়া উচিত।
অবশ্য একটা কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেক দ্বীনি অর্গানাইজেশনকে ভালভাবে জানবার চেষ্টা করা সবারই দায়িত্ব। প্রত্যেক অর্গানাইজেশনকে কাছে এসেই জানতে হবে এবং সে অর্গানাইজেশনের দায়িত্বশীল লোকদের কাছ থেকে জানতে চেষ্টা করতে হবে। উড়ো কথায় কান দিয়ে বা কোন অর্গানাইজেশনের বিরোধীদের প্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া একেবারেই অযৌক্তিক। যে বিচারক বাদীর অভিযোগ শুনেই আসামীর যবানবন্দী না নিয়ে রায় দেয় সে বিচারক হবারই যোগ্য নয়।
তাই কোন অর্গানাইজেশন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সে অর্গানাইজেশনকে কাছে এসে দেখা দরকার। সব কটা দ্বীনি অর্গানাইজেশন সম্পর্কে সচেতন মুসলিমদের ভালভাবে জানার চেষ্টা করা উচিত। তুলনামূলকভাবে বিচার করে যে যেটাকে বেশী পছন্দ করবেন সেখানে কাজ করে তিনি বেশী তৃপ্তি পাবেন। আর তুলনা করলে সব অর্গানাইজেশনেরই দ্বীনি খেদমতটুকুকে স্বীকার করতে সক্ষম হবেন। এক অর্গানাইজেশনকে বেশী পছন্দ করার অর্থ এ নয় যে, অন্যান্য অর্গানাইজেশনকে মন্দ মনে করতে হবে। একটা “বেশী ভাল” বলে স্বীকার করেও অন্যটাকে অন্ততঃ “শুধু ভাল” মনে করা উচিত। একটাকে বেশী পছন্দ করলেই অন্য সবগুলোকে মন্দ মনে করা কোন অবস্থায় যরূরী নয়।
আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য হচ্ছে না:
দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকার কারণে আজ আমাদের সমাজে আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করাটা হয়ে পড়েছে সবচেয়ে কঠিন কাজ, আর নাফরমানি করা হয়েছে সহজবোধ্য। অথচ দ্বীন প্রতিষ্ঠিত থাকলে ইসলাম জীবন বিধান হবার কারণে আল্লাহ রসূলের আদেশ-নিষেধ অনুসারে জীবনযাপন হতো সহজবোধ্য আর এর বিপরীতটা হতো কষ্টকর। দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকার কারণে আল্লাহ তা'আলা আমাদের জন্য যেসব কাজকে ফরয করেছেন আমরা ঠিকমত সেগুলো করার সুযোগ পাচ্ছি না। পক্ষান্তরে যেসব কাজকে আল্লাহ তা'আলা হারাম করেছেন সেগুলো বর্জন করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
সলাত প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না :
গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এ অবস্থায় আমাদের সলাতও প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। যা হচ্ছে তাকে প্রতিষ্ঠা নয়, আদায় বলা হয়। সলাত তো প্রতিষ্ঠা হবে সেদিন, যেদিন রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীকে সলাতের ফরয আদায়ের জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। সে নির্দেশ লংঘিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সলাতে রাজধানী শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদে ইমামতি করবেন রাষ্ট্রপ্রধান স্বয়ং অথবা তাঁর প্রতিনিধি। অন্যান্য মসজিদের ইমামগণ হবেন তাঁর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদায় স্বীকৃত।
যাকাত বাস্তবায়ন হচ্ছে না:
অনুরূপভাবে যাকাতের ব্যাপারটাও তেমনি। যেভাবে রসূল (ﷺ) -এর যামানায়, খোলাফায়ে রাশেদীনের যামানায় যাকাত গ্রহণ ও বণ্টন হতো সেভাবে গ্রহণ ও বন্টন এ সমাজ ব্যবস্থায় সম্ভব নয়। অথচ যাকাতের ক্ষেত্রে রসূল (ﷺ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতই একমাত্র বৈধ ও বিজ্ঞানসম্মত। যাকাত ধনী-গরীবের পার্থক্য দূর করে যে, একটা সামাজিক বিপ্লব ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টির যোগ্যতা রাখে, ব্যক্তিগতভাবে যাকাত বন্টন ও গ্রহণের মাধ্যমে সেটা কোনদিনই অর্জিত হতে পারে না। যাকাত আদায় করবেন সরকার এবং তা দিয়ে দেশের ও জনগণের উন্নয়ন কার্যক্রম চালাবে।
প্রকৃত সিয়ামের বাস্তবায়ন হচ্ছে না:
এমনিভাবে সিয়াম যে পরিবেশ দাবি করে, বর্তমান অবস্থায় সেই পরিবেশ আমরা কিছুতেই আশা করতে পারি না।
হাজ্জের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত :
হাজ্জ আল্লাহ ফরয করলেও দেশের সরকারের অনুমোদন না পেলে আমাদের পক্ষে এ ফরযের উপর আমল বা সম্ভব হচ্ছে।
সুদভিঠিক অর্থনীতি :
অনুরূপভাবে আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। অথচ আমাদের গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে সুদের ভিত্তিতে। তাই এ হারামকে বর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রস্টিটিউশনের লাইসেন্স:
আল্লাহ জিনাকে হারাম করেছেন। অথচ রাষ্ট্রীয় আইনে কিছু লোকদের জিনার ব্যবসা করার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। উক্ত জিনার ব্যবসায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জানমালের হিফাযতের জন্য অন্য কথায় স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা চালাতে সাহায্য করার জন্য সরকারি তহবিল থেকে যে পুলিশ বাহিনীকে ভরণ-পোষণ করা হয়, তাদের এক অংশ নিয়োজিত থাকছে যাতে করে দেশের সবাই প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে এতে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য
মদের লাইসেন্স :
আল্লাহ মদকে হারাম করেছেন। অথচ রাষ্ট্রীয় আইনে কিছু লোকদের এবং হোটেলকে মদের ব্যবসা করার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। এতে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচেছ।
নারীর সম্মান রক্ষা হচ্ছে না:
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা পর্দাকে ফরয ও উলঙ্গপনা, বেহায়াপনা হারাম করেছেন। আর দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যদি পর্দা প্রথাকে নির্দিষ্ট ড্রেস কোডের মধ্যে নিয়ে আসতো তাহলে তারা তাদের সঠিক সম্মান ও নিরাপত্তা পেত। ইসলাম নারী সমাজকে আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার দিয়ে সম্মানজনক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে।
নিরাপত্তার অভাব :
ইসলাম যেখানে মানুষের জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর হিফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করে, সেখানে বর্তমান অবস্থায় আমাদের দেশে মানুষের জানের নিরাপত্তা নেই, মালের নিরাপত্তা নেই, ইজ্জত-আবরুর কোনো নিরাপত্তা নেই।
মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত:
ইসলাম জনগণের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও ন্যায়বিচারের গ্যারান্টি দান করে। আমাদের সমাজে সেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা না থাকার ফলেই দেশের অগণিত মানুষ ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সর্বত্রই ফিতনা :
ইসলাম চায় ফিতনা ফাসাদের অবলুপ্তি, আর আজ আমাদের সমাজটাই ফিতনা-ফাসাদের সর্বগ্রাসী সয়লাবে নিমজ্জিত। নারী সমাজ বঞ্চিত মানুষের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত তারা সত্যিকারের নারীর সম্মান ও অধিকার থেকে। এমনিভাবে ধর্মীয় ও মানবীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকায় অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আল কুরআনের ভাষায় :
“জলে স্থলে ফিতনা-ফাসাদের যে তান্ডবলীলা বয়ে চলছে, এটা মানুষের কৃতকর্মের ফল।” (সূরা রূম ৩০ : ৪১)
দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করার পরিণাম
নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন : আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখবে। নতুবা তোমাদের উপর শীঘ্রই আল্লাহর আযাব নাযিল হবে। অতঃপর তোমরা (তা হতে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্যে) দুআ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দু'আ কবুল হবে না। (জামে আত তিরমিযী)
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে শরীক হল না, কিংবা দ্বীন প্রতিষ্ঠা নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনাও করল না আর এই অবস্থায়-ই মারা গেল, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করল। (সহীহ মুসলিম)।
সতর্কতাঃ
উপরের দুটি হাদীসেই আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ না করার পরিণাম কী ভয়াবহ। দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ না করার কারণে আমাদের উপর শীঘ্রই আযাব নাযিল হবে কিন্তু তা থেকে আমরা দু'আ করেও রেহাই পাব না। আরা দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা নিয়ে যারা একটু চিন্তা ভাবনাও করবে না তাদের মৃত্যু হবে মুনাফিকের মৃত্যুর মতো।
দ্বীন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা
“দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকার পরিণাম’ এ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করার প্রয়াস পেয়েছি যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকার কারণে যুগপৎভাবে আমরা ফরয, ওয়াজিব প্রভৃতি কাজ করতে যেমন ব্যর্থ হচ্ছি তেমনি হারাম কাজসমূহও বর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এ পরিণাম থেকে বাঁচতে হলে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা সবচেয়ে বেশি জরুরী কাজ হিসেবে প্রমাণিত হয়, এটাতো স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধির দাবি।
ইসলামী শরীয়তেও আল্লাহর যমীনে এবং মানুষের জীবনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এ কাজকে ফরয কাজ হিসেবে ফরযে আইন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বাস্তবতার দাবী অনুসারে এ কাজটা কেবল ফর্য কাজই নয়, সবচেয়ে ফরযের বড় ফরয। কারণ অন্যান্য ফরযের উপর যথার্থ আমল এ ফরটার উপর নির্ভরশীল।
শরীয়াতের দৃষ্টিতে যেখানে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা আছে সেখানে সেটাকে প্রতিষ্ঠা রাখার জন্য চেষ্টা করা ফরয। এ ফরযটা যেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হয় সেই কারণে ফরযে কেফায়া। আজ যেখানে দ্বীন বিজয়ী করার চেষ্টা করা ফরয। এ ফরয প্রতিষ্ঠার জন্য যেহেতু জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো সংস্থা (রাষ্ট্র ব্যবস্থার অভাব) থাকে না, কাজেই এ অবস্থায় দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা ফরযে আইন।
দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকার কারণে আজ আমাদের সমাজে আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করাটা হয়ে পড়েছে সবচেয়ে কঠিন কাজ, আর নাফরমানি করা হয়েছে সহজবোধ্য। অথচ দ্বীন প্রতিষ্ঠিত থাকলে ইসলাম জীবন বিধান হবার কারণে আল্লাহ রসূলের আদেশ-নিষেধ অনুসারে জীবনযাপন হতো সহজবোধ্য আর এর বিপরীতটা হতো কষ্টকর। দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকার কারণে আল্লাহ তা'আলা আমাদের জন্য যেসব কাজকে ফরয করেছেন আমরা ঠিকমত সেগুলো করার সুযোগ পাচ্ছি না। পক্ষান্তরে যেসব কাজকে আল্লাহ তা'আলা হারাম করেছেন সেগুলো বর্জন করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
সলাত প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না :
গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এ অবস্থায় আমাদের সলাতও প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। যা হচ্ছে তাকে প্রতিষ্ঠা নয়, আদায় বলা হয়। সলাত তো প্রতিষ্ঠা হবে সেদিন, যেদিন রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীকে সলাতের ফরয আদায়ের জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। সে নির্দেশ লংঘিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সলাতে রাজধানী শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদে ইমামতি করবেন রাষ্ট্রপ্রধান স্বয়ং অথবা তাঁর প্রতিনিধি। অন্যান্য মসজিদের ইমামগণ হবেন তাঁর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদায় স্বীকৃত।
যাকাত বাস্তবায়ন হচ্ছে না:
অনুরূপভাবে যাকাতের ব্যাপারটাও তেমনি। যেভাবে রসূল (ﷺ) -এর যামানায়, খোলাফায়ে রাশেদীনের যামানায় যাকাত গ্রহণ ও বণ্টন হতো সেভাবে গ্রহণ ও বন্টন এ সমাজ ব্যবস্থায় সম্ভব নয়। অথচ যাকাতের ক্ষেত্রে রসূল (ﷺ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতই একমাত্র বৈধ ও বিজ্ঞানসম্মত। যাকাত ধনী-গরীবের পার্থক্য দূর করে যে, একটা সামাজিক বিপ্লব ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টির যোগ্যতা রাখে, ব্যক্তিগতভাবে যাকাত বন্টন ও গ্রহণের মাধ্যমে সেটা কোনদিনই অর্জিত হতে পারে না। যাকাত আদায় করবেন সরকার এবং তা দিয়ে দেশের ও জনগণের উন্নয়ন কার্যক্রম চালাবে।
প্রকৃত সিয়ামের বাস্তবায়ন হচ্ছে না:
এমনিভাবে সিয়াম যে পরিবেশ দাবি করে, বর্তমান অবস্থায় সেই পরিবেশ আমরা কিছুতেই আশা করতে পারি না।
হাজ্জের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত :
হাজ্জ আল্লাহ ফরয করলেও দেশের সরকারের অনুমোদন না পেলে আমাদের পক্ষে এ ফরযের উপর আমল বা সম্ভব হচ্ছে।
সুদভিঠিক অর্থনীতি :
অনুরূপভাবে আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। অথচ আমাদের গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে সুদের ভিত্তিতে। তাই এ হারামকে বর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রস্টিটিউশনের লাইসেন্স:
আল্লাহ জিনাকে হারাম করেছেন। অথচ রাষ্ট্রীয় আইনে কিছু লোকদের জিনার ব্যবসা করার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। উক্ত জিনার ব্যবসায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জানমালের হিফাযতের জন্য অন্য কথায় স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা চালাতে সাহায্য করার জন্য সরকারি তহবিল থেকে যে পুলিশ বাহিনীকে ভরণ-পোষণ করা হয়, তাদের এক অংশ নিয়োজিত থাকছে যাতে করে দেশের সবাই প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে এতে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য
মদের লাইসেন্স :
আল্লাহ মদকে হারাম করেছেন। অথচ রাষ্ট্রীয় আইনে কিছু লোকদের এবং হোটেলকে মদের ব্যবসা করার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। এতে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচেছ।
নারীর সম্মান রক্ষা হচ্ছে না:
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা পর্দাকে ফরয ও উলঙ্গপনা, বেহায়াপনা হারাম করেছেন। আর দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যদি পর্দা প্রথাকে নির্দিষ্ট ড্রেস কোডের মধ্যে নিয়ে আসতো তাহলে তারা তাদের সঠিক সম্মান ও নিরাপত্তা পেত। ইসলাম নারী সমাজকে আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার দিয়ে সম্মানজনক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে।
নিরাপত্তার অভাব :
ইসলাম যেখানে মানুষের জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর হিফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করে, সেখানে বর্তমান অবস্থায় আমাদের দেশে মানুষের জানের নিরাপত্তা নেই, মালের নিরাপত্তা নেই, ইজ্জত-আবরুর কোনো নিরাপত্তা নেই।
মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত:
ইসলাম জনগণের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও ন্যায়বিচারের গ্যারান্টি দান করে। আমাদের সমাজে সেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা না থাকার ফলেই দেশের অগণিত মানুষ ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সর্বত্রই ফিতনা :
ইসলাম চায় ফিতনা ফাসাদের অবলুপ্তি, আর আজ আমাদের সমাজটাই ফিতনা-ফাসাদের সর্বগ্রাসী সয়লাবে নিমজ্জিত। নারী সমাজ বঞ্চিত মানুষের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত তারা সত্যিকারের নারীর সম্মান ও অধিকার থেকে। এমনিভাবে ধর্মীয় ও মানবীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকায় অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আল কুরআনের ভাষায় :
“জলে স্থলে ফিতনা-ফাসাদের যে তান্ডবলীলা বয়ে চলছে, এটা মানুষের কৃতকর্মের ফল।” (সূরা রূম ৩০ : ৪১)
দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করার পরিণাম
নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন : আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখবে। নতুবা তোমাদের উপর শীঘ্রই আল্লাহর আযাব নাযিল হবে। অতঃপর তোমরা (তা হতে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্যে) দুআ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দু'আ কবুল হবে না। (জামে আত তিরমিযী)
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে শরীক হল না, কিংবা দ্বীন প্রতিষ্ঠা নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনাও করল না আর এই অবস্থায়-ই মারা গেল, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করল। (সহীহ মুসলিম)।
সতর্কতাঃ
উপরের দুটি হাদীসেই আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ না করার পরিণাম কী ভয়াবহ। দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ না করার কারণে আমাদের উপর শীঘ্রই আযাব নাযিল হবে কিন্তু তা থেকে আমরা দু'আ করেও রেহাই পাব না। আরা দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা নিয়ে যারা একটু চিন্তা ভাবনাও করবে না তাদের মৃত্যু হবে মুনাফিকের মৃত্যুর মতো।
দ্বীন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা
“দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকার পরিণাম’ এ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করার প্রয়াস পেয়েছি যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা না থাকার কারণে যুগপৎভাবে আমরা ফরয, ওয়াজিব প্রভৃতি কাজ করতে যেমন ব্যর্থ হচ্ছি তেমনি হারাম কাজসমূহও বর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এ পরিণাম থেকে বাঁচতে হলে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা সবচেয়ে বেশি জরুরী কাজ হিসেবে প্রমাণিত হয়, এটাতো স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধির দাবি।
ইসলামী শরীয়তেও আল্লাহর যমীনে এবং মানুষের জীবনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এ কাজকে ফরয কাজ হিসেবে ফরযে আইন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বাস্তবতার দাবী অনুসারে এ কাজটা কেবল ফর্য কাজই নয়, সবচেয়ে ফরযের বড় ফরয। কারণ অন্যান্য ফরযের উপর যথার্থ আমল এ ফরটার উপর নির্ভরশীল।
শরীয়াতের দৃষ্টিতে যেখানে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা আছে সেখানে সেটাকে প্রতিষ্ঠা রাখার জন্য চেষ্টা করা ফরয। এ ফরযটা যেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হয় সেই কারণে ফরযে কেফায়া। আজ যেখানে দ্বীন বিজয়ী করার চেষ্টা করা ফরয। এ ফরয প্রতিষ্ঠার জন্য যেহেতু জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো সংস্থা (রাষ্ট্র ব্যবস্থার অভাব) থাকে না, কাজেই এ অবস্থায় দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা ফরযে আইন।
যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা রচনা করে, অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তাকে অঙ্গীকার করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? জাহান্নামই কি এইসব কাফিরর আবাস নয়? (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৬৮)
জ্ঞানের অভাবে আমাদের ধারণা যে মুসলিম হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছি আর মুসলিম হয়েই মৃত্যুবরণ করবো এটা নিশ্চিত। কিন্তু মুসলিম হয়ে জন্ম নিয়ে শেষ পর্যন্ত আদৌ মুসলিম আছি কিনা তার নিশ্চয়তা কি? আমাদের ঈমান তো সারাক্ষণ উঠানামা করছে। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাদের ঈমান যে কখন চলে গেছে তা নিজেরই জানা নেই। ঈমান এমন কোন বিষয় না যে সবসময় আমার সাথে লেগে থাকবে। ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমান বিরোধী কোন কাজ করলেই ঈমান চলে যাওয়ার কথা।
জ্ঞানের অভাবে আমাদের ধারণা যে মুসলিম হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছি আর মুসলিম হয়েই মৃত্যুবরণ করবো এটা নিশ্চিত। কিন্তু মুসলিম হয়ে জন্ম নিয়ে শেষ পর্যন্ত আদৌ মুসলিম আছি কিনা তার নিশ্চয়তা কি? আমাদের ঈমান তো সারাক্ষণ উঠানামা করছে। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাদের ঈমান যে কখন চলে গেছে তা নিজেরই জানা নেই। ঈমান এমন কোন বিষয় না যে সবসময় আমার সাথে লেগে থাকবে। ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমান বিরোধী কোন কাজ করলেই ঈমান চলে যাওয়ার কথা।
কুফরীর সংজ্ঞা :
কুফরীর আভিধানিক অর্থ আবৃত করা ও গোপন করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের বিপরীত অবস্থানকে কুফরী বলা হয়। কুফরী হচ্ছে আল্লাহ ও রসূলের এক প্রতি ঈমান না রাখা (তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক কিংবা না হোক)। আল্লাহ ও তার রসূল (ﷺ) সম্পর্কে কোন সংশয়, সন্দেহ, উপেক্ষা, ঈর্ষা করা কুফরী। আবার যে ৬টি বিষয়ের উপর আমাদেরকে ঈমান আনতে (বিশ্বাস করতে) বলা হয়েছে অর্থাৎ ঈমানের ৬টি রুকনের (আল্লাহ, ফিরিশতা, নবী, কিতাব, কিয়ামত দিবস ও আখিরাত, পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য) কোন একটিকে অস্বীকার করাও কুফরী। কুফরী দুই প্রকার,
প্রথম প্রকার : বড় কুফরী
এ প্রকারের কুফরী মুসলিম ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। এটি আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত :
১. ঈমানের রুকনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কুফরী : এর দলীল আল্লাহর বাণী:
যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা রচনা করে, অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তাকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? জাহান্নামই কি এইসব কাফিরের আবাস নয়? (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৬৮)
২. ঈমানের রুকনসমূহ সম্পর্কে মনে বিশ্বাস রেখেও অহংকারবশতঃ মুখে অস্বীকার করা কুফরী: এর দলীল আল্লাহর বাণীঃ
যখন আমি ফিরিশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল, সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারা ২ : ৩৪)
৩. ঈমানের রুকনসমূহ সম্পর্কে সংশয়জনিত কুফরী: একে ধারণাজনিত কুফরীও বলা হয়। এর দলীল আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ
নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার তার বাগানে প্রবেশ করল। .......। (সূরা কাহফ ১৮ : ৩৫-৩৮)
৪. ঈমানের রুকনসমূহের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন ও মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কুফরী। এর দলীল আল্লাহর বাণী :
আর কাফিররা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আহকাফ ৪৬ : ০৩)
৫. মুনাফিকী ও কপটতার কুফরী। এর দলীল হল আল্লাহর বাণী :
এটা এজন্যে যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে। ফলে তাদের অন্ত রে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন ৬৩ : ০৩)
দ্বিতীয় প্রকার: ছোট কুফরী
এ প্রকারের কুফরী মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিস্কৃত করে না। একে ‘আমলী কুফরীও বলা হয়। ছোট কুফরী দ্বারা সে সব গুনাহের কাজকেই বুঝানো হয়েছে, কুরআন ও সুন্নায় যাকে কুফরী নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ ধরনের কুফরী বড় কুফরীর সমপর্যায়ের নয়।
যেমন আল্লাহর নিয়ামতের কুফরী করা যা নিমোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে:
আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এমন এক জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। তথায় প্রত্যেক স্থান হতে আসত প্রচুর রিযিক ও জীবিকা। অতঃপর সে জনপদের লোকেরা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ প্রকাশ করল। (সূরা নাহল ১৬ : ১১২)
এক মুসলিম অপর মুসলিমের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াও এ ধরনের কুফরীর অন্তর্গত। রসূল (ﷺ) বলেন : কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী কাজ আর তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন: আমার পর তোমরা পুনরায় কাফির হয়ে যেও না, যাতে তোমরা একে অপরকে হত্যা করবে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
অন্যের নামে কসমও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। রসূল (ﷺ) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করল সে কুফরী কিংবা শিরক করল। (তিরমিযী, হাকিম)
মূল কথা
১. বড় কুফরী মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় (ফাসিক) এবং তার অতীতের অামলসমূহ নষ্ট করে দেয়। পক্ষান্তরে ছোট কুফরী ইসলাম থেকে বের করে না এবং অতীতের আমলও নষ্ট করে না। তবে তা আমলে এটি সৃষ্টি করে এবং ছোট কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তিকে শাস্তির মুখোমুখি করে।
২. বড় কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তি চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। কিন্তু ছোট কুফরীর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে না। বরং কখনো আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
৩. বড় কুফরীতে লিপ্ত হলে সে ব্যক্তির জান-মাল মুসলিমদের জন্য বৈধ হয়ে যায়। অথচ ছোট কুফরীতে লিপ্ত হলে জান-মাল বৈধ হয় না।
৪. বড় কুফরীর ফলে মু'মিন ও অত্র কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রকৃত শতা সৃষ্টি হওয়া অপরিহার্য হয়ে যায়। তাই সে ব্যক্তি যত নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন, তাকে ভালবাসা ও তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা মু'মিনদের জন্য কখনোই বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ছোট কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে কোন বাধা নেই। বরং তার মধ্যে যতটুকু ঈমান রয়েছে সে পরিমাণ তাকে ভালবাসা ও তার সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত এবং যতটুকু নাফরমানী তার মধ্যে আছে, তার প্রতি ততটুকু পরিমাণ ঘৃণা ও বিদ্বেষ ভাব পোষণ করা যেতে পারে।
কুফরীর আভিধানিক অর্থ আবৃত করা ও গোপন করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের বিপরীত অবস্থানকে কুফরী বলা হয়। কুফরী হচ্ছে আল্লাহ ও রসূলের এক প্রতি ঈমান না রাখা (তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক কিংবা না হোক)। আল্লাহ ও তার রসূল (ﷺ) সম্পর্কে কোন সংশয়, সন্দেহ, উপেক্ষা, ঈর্ষা করা কুফরী। আবার যে ৬টি বিষয়ের উপর আমাদেরকে ঈমান আনতে (বিশ্বাস করতে) বলা হয়েছে অর্থাৎ ঈমানের ৬টি রুকনের (আল্লাহ, ফিরিশতা, নবী, কিতাব, কিয়ামত দিবস ও আখিরাত, পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য) কোন একটিকে অস্বীকার করাও কুফরী। কুফরী দুই প্রকার,
প্রথম প্রকার : বড় কুফরী
এ প্রকারের কুফরী মুসলিম ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। এটি আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত :
১. ঈমানের রুকনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কুফরী : এর দলীল আল্লাহর বাণী:
যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা রচনা করে, অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তাকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? জাহান্নামই কি এইসব কাফিরের আবাস নয়? (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৬৮)
২. ঈমানের রুকনসমূহ সম্পর্কে মনে বিশ্বাস রেখেও অহংকারবশতঃ মুখে অস্বীকার করা কুফরী: এর দলীল আল্লাহর বাণীঃ
যখন আমি ফিরিশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল, সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারা ২ : ৩৪)
৩. ঈমানের রুকনসমূহ সম্পর্কে সংশয়জনিত কুফরী: একে ধারণাজনিত কুফরীও বলা হয়। এর দলীল আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ
নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার তার বাগানে প্রবেশ করল। .......। (সূরা কাহফ ১৮ : ৩৫-৩৮)
৪. ঈমানের রুকনসমূহের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন ও মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কুফরী। এর দলীল আল্লাহর বাণী :
আর কাফিররা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আহকাফ ৪৬ : ০৩)
৫. মুনাফিকী ও কপটতার কুফরী। এর দলীল হল আল্লাহর বাণী :
এটা এজন্যে যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে। ফলে তাদের অন্ত রে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন ৬৩ : ০৩)
দ্বিতীয় প্রকার: ছোট কুফরী
এ প্রকারের কুফরী মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিস্কৃত করে না। একে ‘আমলী কুফরীও বলা হয়। ছোট কুফরী দ্বারা সে সব গুনাহের কাজকেই বুঝানো হয়েছে, কুরআন ও সুন্নায় যাকে কুফরী নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ ধরনের কুফরী বড় কুফরীর সমপর্যায়ের নয়।
যেমন আল্লাহর নিয়ামতের কুফরী করা যা নিমোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে:
আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এমন এক জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। তথায় প্রত্যেক স্থান হতে আসত প্রচুর রিযিক ও জীবিকা। অতঃপর সে জনপদের লোকেরা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ প্রকাশ করল। (সূরা নাহল ১৬ : ১১২)
এক মুসলিম অপর মুসলিমের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াও এ ধরনের কুফরীর অন্তর্গত। রসূল (ﷺ) বলেন : কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী কাজ আর তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন: আমার পর তোমরা পুনরায় কাফির হয়ে যেও না, যাতে তোমরা একে অপরকে হত্যা করবে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
অন্যের নামে কসমও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। রসূল (ﷺ) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করল সে কুফরী কিংবা শিরক করল। (তিরমিযী, হাকিম)
মূল কথা
১. বড় কুফরী মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় (ফাসিক) এবং তার অতীতের অামলসমূহ নষ্ট করে দেয়। পক্ষান্তরে ছোট কুফরী ইসলাম থেকে বের করে না এবং অতীতের আমলও নষ্ট করে না। তবে তা আমলে এটি সৃষ্টি করে এবং ছোট কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তিকে শাস্তির মুখোমুখি করে।
২. বড় কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তি চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। কিন্তু ছোট কুফরীর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে না। বরং কখনো আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
৩. বড় কুফরীতে লিপ্ত হলে সে ব্যক্তির জান-মাল মুসলিমদের জন্য বৈধ হয়ে যায়। অথচ ছোট কুফরীতে লিপ্ত হলে জান-মাল বৈধ হয় না।
৪. বড় কুফরীর ফলে মু'মিন ও অত্র কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রকৃত শতা সৃষ্টি হওয়া অপরিহার্য হয়ে যায়। তাই সে ব্যক্তি যত নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন, তাকে ভালবাসা ও তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা মু'মিনদের জন্য কখনোই বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ছোট কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে কোন বাধা নেই। বরং তার মধ্যে যতটুকু ঈমান রয়েছে সে পরিমাণ তাকে ভালবাসা ও তার সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত এবং যতটুকু নাফরমানী তার মধ্যে আছে, তার প্রতি ততটুকু পরিমাণ ঘৃণা ও বিদ্বেষ ভাব পোষণ করা যেতে পারে।
নিফাকের সংজ্ঞা
শরীয়তের পরিভাষায় নিফাক অর্থ হল- অন্তরে কুফরী ও অবিশ্বাস লুকিয়ে রেখে বাহিরে ইসলাম জাহির করা। যারা নিফাক করে তারাই মুনাফিক। একে নিফাক নামকরণের কারণ হলো সে এক দরজা দিয়ে শরীয়তে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। এ জন্যই এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
“নিশ্চয়ই মুনাফিকরাই ফাসিক-পাপাচারী। (সূরা তাওবা ৯ : ৬৭)
এখানে ফাসিক মানে হল- শরীয়তের সীমানা থেকে যারা বের হয়ে যায়। আল্লাহ মুনাফিকদেরকে কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে গণ্য করেছেন।
‘নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। (সূরা নিসা ৪: ১৪৫)
তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে প্রতারিত করতে চায় অথচ তারা যে। নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রতারিত করে না, তা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি কারণ তারা মিথ্যাচারী। (সূরা বাকারা ২ : ৯-১০)
নিফাকীর প্রকারভেদ:
নিফাকী দুই প্রকার
প্রথম প্রকার:
বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নিফাক একে বড় নিফাক বলা হয়। এতে মুনাফিক ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে ইসলামকে জাহির করে এবং কুফরীকে গোপন রাখে। এ প্রকারের নিফাকী ব্যক্তিকে পুরোপুবিভাবে দ্বীন থেকে বের করে দেয়। উপরন্তু সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে পৌছে যায়। আল্লাহ এ প্রকারের মুনাফিকদেরকে যাবতীয় নিকৃষ্ট বিশেষণে অভিহিত করেছেন। কখনো কাফির বলেছেন, কখনো বেঈমান বলেছেন, কখনো দ্বীন ও দ্বীনদার লোকদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী হিসেবে তাদেরকে বর্ণনা করেছেন এবং এও বলেছেন যে, তারা দ্বীন ইসলামের শত্রুদের প্রতি পুরোপুরিভাবে আসক্ত, কেননা তারা ইসলামের শত্রতায় কাফিরদের সাথে অংশগ্রহণ করে থাকে। এরা সবযুগেই বিদ্যমান, বিশেষ করে যখন ইসলামের শক্তি প্রবলভাবে প্রকাশ পায়। মুসলিমরা শক্তিশালী হলে মুনাফিকরা যেহেতু প্রকাশ্যে ইসলামের মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়, তাই তারা বলে বেড়ায় যে তারা ইসলামের মধ্যে আছে। ফলে তারা নিজেদের জান মালের পূর্ণ নিরাপত্তা ভোগ করে, এবং যারা তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে সেই মুসলিমদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করে।
অতএব মুনাফিক প্রকাশ্যে আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, কিতাবসমূহ, রসূলগণ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনার ঘোষণা দিলেও অন্তরে এসব কিছুই সে বিশ্বাস করে না, বরং এগুলোকে সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহর প্রতি তার। ঈমান নেই, এবং এ বিশ্বাস ও নেই যে, তিনি তাঁর এক বান্দার উপর কুরআন নাযিল করেছেন, তাকে মানুষের প্রতি রসূল করে পাঠিয়েছেন, আল্লাহর হুকুমে তিনি তাদেরকে হিদায়াত করবেন, তাঁর প্রতাপ সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করবেন এবং তাঁর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করবেন। কুরআনে আল্লাহ তাআলা এসব মুনাফিকদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন, তাদের রহস্য উদঘাটন করে দিয়েছেন, যাতে তারা এসব মুনাফিকদের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। আল্লাহ তাআলা সূরা বাক্বারার শুরুতে তিন শ্রেণীর লোকদের কথা বর্ণনা করেছেন :
মু'মিন, কাফির এবং মুনাফিক। মুমিনদের সম্পর্কে চারটি আয়াত, কাফিরদের সম্পর্কে দুটি আয়াত এবং মুনাফিকদের সম্পর্কে তেরটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। (সূরা বাকারা ২ : ২-২০)
সংখ্যায় মুনাফিকদের আধিক্য, মানুষের মধ্যে তাদের নিফাকীর ব্যাপক সম্প্রসারণ এবং ইসলাম ও মুসলিমদের উপর তাদের ভীষণ ফিতনা সৃষ্টির কারণেই তাদের ব্যাপারে এত বেশী আলোচনা করা হয়েছে। কাফিরদের চাইতে মুনাফিকদের গোপন শত্রুতার কারণে ইসলামের উপর অনেক বেশী বালা-মুসীবত নেমে আসে। কেননা ইসলামের প্রকৃত দুশমন হওয়া সত্ত্বেও তারা মুসলিম হিসাবে পরিচিত এবং তাদেরকে ইসলামের সাহায্যকারী ও বন্ধু ভাবা হয়। তারা নানা উপায়ে ইসলামের শত্রতা করে থাকে। ফলে অজ্ঞ লোকেরা ভাবে যে, এ হল তাদের দ্বীনী ইলম ও সংস্কার মূলক কাজের বহিঃপ্রকাশ। অথচ প্রকারান্তরে এটা তাদের মূর্খতা এবং ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টিরই নামান্তর।
এ প্রকারের নিফাকী আবার ছয় ভাগে বিভক্ত:
১. রসূল (ﷺ) -কে (মনে মনে) মিথ্যা সাব্যস্ত করা।
২. রসূল (ﷺ) -এর আনীত শরীয়তের কোন অংশকে (মনে মনে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
৩. রসূল (ﷺ) -এর প্রতি (অন্তরে) বিদ্বেষ পোষণ করা।
৪. তাঁর আনীত দ্বীনের কিয়দংশের প্রতি (অন্তরে) বিদ্বেষ রাখা।
৫. তাঁর আনীত দ্বীনের পতনে (মনে মনে) খুশী হওয়া।
৬. তাঁর আনীত দ্বীনের বিজয়ে অখুশী হওয়া এবং মনে কষ্ট অনুভব করা।
দ্বিতীয় প্রকার : আমলের নিফাক
এ প্রকারের নিফাকী হল- অন্তরে ঈমান থাকা সত্ত্বেও মুনাফিকদের সাথে কোন কাজে লিপ্ত হওয়া। এ নিফাকীর ফলে ব্যক্তি ইসলামী মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের হয় না, তবে বের হবার রাস্তা সুগম হয়ে যায়। এ ধরনের লোকদের মধ্যে ঈমান ও নিফাকী উভয়ের অস্তিত্বই রয়েছে। নিফাকীর পাল্লা ভারী হলে সে পূর্ণ মুনাফিকে পরিণত হয়।
একথার দলীল হলো নবী (ﷺ) -এর বাণী: চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে খাটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ চারটি স্বভাবের কোন একটি থাকবে তার মধ্যে নিফাকের একটি স্বভাব থাকবে যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করে। যখন তাকে আমানতদার করা হয়, সে খিয়ানত করে। যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে। যখন চুক্তি করে, বিশ্বাস ঘাতকতা করে, আর যখন ঝগড়া-বিবাদ করে, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
অতএব যার মধ্যে এ চারটি স্বভাব একত্রিত হয় তার মধ্যে সকল প্রকার অসততার সম্মিলন ঘটে এবং মুনাফিকদের সব দোষগুলোই তার মধ্যে প্রকৃষ্টভাবে পাওয়া যায়। আর যার মধ্যে সেগুলোর যে কোন একটি পাওয়া যার তার মধ্যে নিফাকীর এ কটি স্বভাব বিদ্যমান। কেন না বান্দার মধ্যে কখনো কখনো একইসাথে ভালো ও মন্দ স্বভাবসমূহ এবং ঈমান ও কুফুরী-নিফাকীর স্বভাবসমূহের সমাহার ঘটে থাকে। এর ফলশ্রুতিতে তার ভাল ও মন্দ কাজের পরিমাণ অনুযায়ী সে সওয়াব ও শাস্তির উপযুক্ত হয়।
আমলী নিফাকের মধ্যে রয়েছে জামায়াতের সাথে সলাত আদায়ে অলসতা করা। কেননা এটি মুনাফিকদেরই একটি গুণ। মোট কথা নিফাকী অতীব খারাপ ও বিপজ্জনক একটি স্বভাব, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এতে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে শংকিত থাকতেন। ইবনে আবি মুলাইকা বলেন : আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ত্রিশজন সাহাবীর দেখা পেয়েছি যারা প্রত্যেকেই নিজের ব্যাপারে নিফাকে পতিত হবার ভয় করতেন।
বড় নিফাক ও ছোট নিফাকের মধ্যে পার্থক্য
১. বড় নিফাক বান্দাকে ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দেয়। পক্ষান্তরে ছোট নিফাক (আমলী নিফাক) ইসলাম থেকে বের করে না।
২. বড় নিফাকের মধ্যে আকীদার ক্ষেত্রে অন্তরে ও বাহিরে (বাতেন ও জাহের) দু'রকম থাকে। আর ছোট নিফাকীর মধ্যে আকীদাহ নয়, বরং শুধু আমলের ক্ষেত্রে অন্তরও-বাহিরে দু'রকম থাকে।
৩. বড় নিফাক কোন মুমিন থেকে প্রকাশ পায় না। কিন্তু ছোট নিফাক কখনো মু'মিন থেকে প্রকাশ পেতে পারে।
৪. বড় নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তি সাধারণতঃ তওবা করে না। আর তওবা করলেও তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অথচ ছোট নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তি অনেক সময়ই তওবা করে থাকে এবং আল্লাহও তার তওবা কবুল করেন।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন :
অনেক সময় মুমিন বান্দা নিফাকীর কোন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করে নেন। কখনো তার অন্তরে এমন বিষয়ের উদয় হয় যা নিফাকীর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আল্লাহ ঐ বিষয়কে তার অন্তর থেকে দূর করে দেন। মুমিন বান্দা কখনো শয়তানের প্ররোচনায় এবং কখনো কুফরীর কুমন্ত্রণায় পড়ে যায়। এতে তার হৃদয়ে সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়। যেমন সাহাবায়ে কেরাম রাদি আল্লাহু আনহুম বলেছিলেন : হে রসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তার অন্তরে এমন কিছু অনুভর করে, যা ব্যক্ত করার চেয়ে আসমান থেকে জমীনের উপর পড়ে যাওয়াই সে অধিক ভাল মনে করে। একথা শুনে তিনি বললেন : এটা ঈমানেরই স্পষ্ট আলামত। (আহমদ, সহীহ মুসলিম)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে :
“অন্তরের কথাটি মুখে ব্যক্ত করাকে সে খুবই গুরুতর ও বিপজ্জনক মনে করে। তখন নবী (ﷺ) বললেন : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি এক ষড়যন্ত্রকে কুমন্ত্রণায় পরিণত করেছেন।” একথার অর্থ হল প্রবল অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হওয়া এবং হৃদয় থেকে তা দূরীভূত হওয়া ঈমানের স্পষ্ট নিদর্শন। (কিতাবুল ঈমান, ২৩৮)
আর বড় নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন : ‘তারা বধির, মূক, অন্ধ, সুতরাং তারা ফিরে আসবে না। (সূরা বাকারা ২:১৮)
অর্থাৎ তারা অন্তরের দিক দিয়ে ইসলামে ফিরে আসবে না। এদের সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন : ‘তারা কি দেখে না যে, প্রতি বছর তারা একবার কি দুইবার বিপর্যস্ত হচ্ছে? এর পরও তারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।' (সূরা তাওবা : ১২৬)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন : প্রকাশ্যেভাবে তাদের তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে উলামাদের মতানৈক্য রয়েছে। কেননা তাদের অন্তরের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া সম্ভব হয় না। কারণ তারা তো সব সময়ই প্রকাশ্যে ইসলামের দাবিদার।
শরীয়তের পরিভাষায় নিফাক অর্থ হল- অন্তরে কুফরী ও অবিশ্বাস লুকিয়ে রেখে বাহিরে ইসলাম জাহির করা। যারা নিফাক করে তারাই মুনাফিক। একে নিফাক নামকরণের কারণ হলো সে এক দরজা দিয়ে শরীয়তে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। এ জন্যই এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
“নিশ্চয়ই মুনাফিকরাই ফাসিক-পাপাচারী। (সূরা তাওবা ৯ : ৬৭)
এখানে ফাসিক মানে হল- শরীয়তের সীমানা থেকে যারা বের হয়ে যায়। আল্লাহ মুনাফিকদেরকে কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে গণ্য করেছেন।
‘নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। (সূরা নিসা ৪: ১৪৫)
তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে প্রতারিত করতে চায় অথচ তারা যে। নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রতারিত করে না, তা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি কারণ তারা মিথ্যাচারী। (সূরা বাকারা ২ : ৯-১০)
নিফাকীর প্রকারভেদ:
নিফাকী দুই প্রকার
প্রথম প্রকার:
বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নিফাক একে বড় নিফাক বলা হয়। এতে মুনাফিক ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে ইসলামকে জাহির করে এবং কুফরীকে গোপন রাখে। এ প্রকারের নিফাকী ব্যক্তিকে পুরোপুবিভাবে দ্বীন থেকে বের করে দেয়। উপরন্তু সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে পৌছে যায়। আল্লাহ এ প্রকারের মুনাফিকদেরকে যাবতীয় নিকৃষ্ট বিশেষণে অভিহিত করেছেন। কখনো কাফির বলেছেন, কখনো বেঈমান বলেছেন, কখনো দ্বীন ও দ্বীনদার লোকদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী হিসেবে তাদেরকে বর্ণনা করেছেন এবং এও বলেছেন যে, তারা দ্বীন ইসলামের শত্রুদের প্রতি পুরোপুরিভাবে আসক্ত, কেননা তারা ইসলামের শত্রতায় কাফিরদের সাথে অংশগ্রহণ করে থাকে। এরা সবযুগেই বিদ্যমান, বিশেষ করে যখন ইসলামের শক্তি প্রবলভাবে প্রকাশ পায়। মুসলিমরা শক্তিশালী হলে মুনাফিকরা যেহেতু প্রকাশ্যে ইসলামের মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়, তাই তারা বলে বেড়ায় যে তারা ইসলামের মধ্যে আছে। ফলে তারা নিজেদের জান মালের পূর্ণ নিরাপত্তা ভোগ করে, এবং যারা তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে সেই মুসলিমদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করে।
অতএব মুনাফিক প্রকাশ্যে আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, কিতাবসমূহ, রসূলগণ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনার ঘোষণা দিলেও অন্তরে এসব কিছুই সে বিশ্বাস করে না, বরং এগুলোকে সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহর প্রতি তার। ঈমান নেই, এবং এ বিশ্বাস ও নেই যে, তিনি তাঁর এক বান্দার উপর কুরআন নাযিল করেছেন, তাকে মানুষের প্রতি রসূল করে পাঠিয়েছেন, আল্লাহর হুকুমে তিনি তাদেরকে হিদায়াত করবেন, তাঁর প্রতাপ সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করবেন এবং তাঁর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করবেন। কুরআনে আল্লাহ তাআলা এসব মুনাফিকদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন, তাদের রহস্য উদঘাটন করে দিয়েছেন, যাতে তারা এসব মুনাফিকদের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। আল্লাহ তাআলা সূরা বাক্বারার শুরুতে তিন শ্রেণীর লোকদের কথা বর্ণনা করেছেন :
মু'মিন, কাফির এবং মুনাফিক। মুমিনদের সম্পর্কে চারটি আয়াত, কাফিরদের সম্পর্কে দুটি আয়াত এবং মুনাফিকদের সম্পর্কে তেরটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। (সূরা বাকারা ২ : ২-২০)
সংখ্যায় মুনাফিকদের আধিক্য, মানুষের মধ্যে তাদের নিফাকীর ব্যাপক সম্প্রসারণ এবং ইসলাম ও মুসলিমদের উপর তাদের ভীষণ ফিতনা সৃষ্টির কারণেই তাদের ব্যাপারে এত বেশী আলোচনা করা হয়েছে। কাফিরদের চাইতে মুনাফিকদের গোপন শত্রুতার কারণে ইসলামের উপর অনেক বেশী বালা-মুসীবত নেমে আসে। কেননা ইসলামের প্রকৃত দুশমন হওয়া সত্ত্বেও তারা মুসলিম হিসাবে পরিচিত এবং তাদেরকে ইসলামের সাহায্যকারী ও বন্ধু ভাবা হয়। তারা নানা উপায়ে ইসলামের শত্রতা করে থাকে। ফলে অজ্ঞ লোকেরা ভাবে যে, এ হল তাদের দ্বীনী ইলম ও সংস্কার মূলক কাজের বহিঃপ্রকাশ। অথচ প্রকারান্তরে এটা তাদের মূর্খতা এবং ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টিরই নামান্তর।
এ প্রকারের নিফাকী আবার ছয় ভাগে বিভক্ত:
১. রসূল (ﷺ) -কে (মনে মনে) মিথ্যা সাব্যস্ত করা।
২. রসূল (ﷺ) -এর আনীত শরীয়তের কোন অংশকে (মনে মনে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
৩. রসূল (ﷺ) -এর প্রতি (অন্তরে) বিদ্বেষ পোষণ করা।
৪. তাঁর আনীত দ্বীনের কিয়দংশের প্রতি (অন্তরে) বিদ্বেষ রাখা।
৫. তাঁর আনীত দ্বীনের পতনে (মনে মনে) খুশী হওয়া।
৬. তাঁর আনীত দ্বীনের বিজয়ে অখুশী হওয়া এবং মনে কষ্ট অনুভব করা।
দ্বিতীয় প্রকার : আমলের নিফাক
এ প্রকারের নিফাকী হল- অন্তরে ঈমান থাকা সত্ত্বেও মুনাফিকদের সাথে কোন কাজে লিপ্ত হওয়া। এ নিফাকীর ফলে ব্যক্তি ইসলামী মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের হয় না, তবে বের হবার রাস্তা সুগম হয়ে যায়। এ ধরনের লোকদের মধ্যে ঈমান ও নিফাকী উভয়ের অস্তিত্বই রয়েছে। নিফাকীর পাল্লা ভারী হলে সে পূর্ণ মুনাফিকে পরিণত হয়।
একথার দলীল হলো নবী (ﷺ) -এর বাণী: চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে খাটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ চারটি স্বভাবের কোন একটি থাকবে তার মধ্যে নিফাকের একটি স্বভাব থাকবে যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করে। যখন তাকে আমানতদার করা হয়, সে খিয়ানত করে। যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে। যখন চুক্তি করে, বিশ্বাস ঘাতকতা করে, আর যখন ঝগড়া-বিবাদ করে, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
অতএব যার মধ্যে এ চারটি স্বভাব একত্রিত হয় তার মধ্যে সকল প্রকার অসততার সম্মিলন ঘটে এবং মুনাফিকদের সব দোষগুলোই তার মধ্যে প্রকৃষ্টভাবে পাওয়া যায়। আর যার মধ্যে সেগুলোর যে কোন একটি পাওয়া যার তার মধ্যে নিফাকীর এ কটি স্বভাব বিদ্যমান। কেন না বান্দার মধ্যে কখনো কখনো একইসাথে ভালো ও মন্দ স্বভাবসমূহ এবং ঈমান ও কুফুরী-নিফাকীর স্বভাবসমূহের সমাহার ঘটে থাকে। এর ফলশ্রুতিতে তার ভাল ও মন্দ কাজের পরিমাণ অনুযায়ী সে সওয়াব ও শাস্তির উপযুক্ত হয়।
আমলী নিফাকের মধ্যে রয়েছে জামায়াতের সাথে সলাত আদায়ে অলসতা করা। কেননা এটি মুনাফিকদেরই একটি গুণ। মোট কথা নিফাকী অতীব খারাপ ও বিপজ্জনক একটি স্বভাব, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এতে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে শংকিত থাকতেন। ইবনে আবি মুলাইকা বলেন : আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ত্রিশজন সাহাবীর দেখা পেয়েছি যারা প্রত্যেকেই নিজের ব্যাপারে নিফাকে পতিত হবার ভয় করতেন।
বড় নিফাক ও ছোট নিফাকের মধ্যে পার্থক্য
১. বড় নিফাক বান্দাকে ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দেয়। পক্ষান্তরে ছোট নিফাক (আমলী নিফাক) ইসলাম থেকে বের করে না।
২. বড় নিফাকের মধ্যে আকীদার ক্ষেত্রে অন্তরে ও বাহিরে (বাতেন ও জাহের) দু'রকম থাকে। আর ছোট নিফাকীর মধ্যে আকীদাহ নয়, বরং শুধু আমলের ক্ষেত্রে অন্তরও-বাহিরে দু'রকম থাকে।
৩. বড় নিফাক কোন মুমিন থেকে প্রকাশ পায় না। কিন্তু ছোট নিফাক কখনো মু'মিন থেকে প্রকাশ পেতে পারে।
৪. বড় নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তি সাধারণতঃ তওবা করে না। আর তওবা করলেও তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অথচ ছোট নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তি অনেক সময়ই তওবা করে থাকে এবং আল্লাহও তার তওবা কবুল করেন।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন :
অনেক সময় মুমিন বান্দা নিফাকীর কোন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করে নেন। কখনো তার অন্তরে এমন বিষয়ের উদয় হয় যা নিফাকীর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আল্লাহ ঐ বিষয়কে তার অন্তর থেকে দূর করে দেন। মুমিন বান্দা কখনো শয়তানের প্ররোচনায় এবং কখনো কুফরীর কুমন্ত্রণায় পড়ে যায়। এতে তার হৃদয়ে সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়। যেমন সাহাবায়ে কেরাম রাদি আল্লাহু আনহুম বলেছিলেন : হে রসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তার অন্তরে এমন কিছু অনুভর করে, যা ব্যক্ত করার চেয়ে আসমান থেকে জমীনের উপর পড়ে যাওয়াই সে অধিক ভাল মনে করে। একথা শুনে তিনি বললেন : এটা ঈমানেরই স্পষ্ট আলামত। (আহমদ, সহীহ মুসলিম)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে :
“অন্তরের কথাটি মুখে ব্যক্ত করাকে সে খুবই গুরুতর ও বিপজ্জনক মনে করে। তখন নবী (ﷺ) বললেন : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি এক ষড়যন্ত্রকে কুমন্ত্রণায় পরিণত করেছেন।” একথার অর্থ হল প্রবল অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হওয়া এবং হৃদয় থেকে তা দূরীভূত হওয়া ঈমানের স্পষ্ট নিদর্শন। (কিতাবুল ঈমান, ২৩৮)
আর বড় নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন : ‘তারা বধির, মূক, অন্ধ, সুতরাং তারা ফিরে আসবে না। (সূরা বাকারা ২:১৮)
অর্থাৎ তারা অন্তরের দিক দিয়ে ইসলামে ফিরে আসবে না। এদের সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন : ‘তারা কি দেখে না যে, প্রতি বছর তারা একবার কি দুইবার বিপর্যস্ত হচ্ছে? এর পরও তারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।' (সূরা তাওবা : ১২৬)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন : প্রকাশ্যেভাবে তাদের তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে উলামাদের মতানৈক্য রয়েছে। কেননা তাদের অন্তরের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া সম্ভব হয় না। কারণ তারা তো সব সময়ই প্রকাশ্যে ইসলামের দাবিদার।
হ্যা, আমরা মুসলিমরা তা করতে বাধ্য। কারণ আল্লাহ বলেন :
“আল্লাহর রসূল নিজের প্রবৃত্তি থেকে কিছুই বলেন না, তাঁর কথা হল ওহী”
“আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক।” (সূরা হাশর ৫৯:৪৭)
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ প্রদান করে তখন কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর ঐ নির্দেশের ব্যতিক্রম করার কোন অধিকার থাকে না; আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা অমান্য করল, সে স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ৩৬)।
“আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন যাতে তারা সর্বদা-চিরকাল অবস্থান করবে।” (সূরা আল জিন ৭২ : ২৩)।
“কিন্তু না, তোমার রবের কসম! তারা প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যে পর্যন্ত তারা তাদের যাবতীয় বিরোধপূর্ণ ব্যাপারে তোমাকে বিচারক সাব্যস্ত করে এবং তুমি যে ফায়সালা প্রদান কর তা দ্বিধাহীন চিত্তে পরিপূর্ণ আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করে না নেয়।” (সূরা আন নিসা ৪ : ৬৫)
“সুতরাং যারা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, তাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে কিংবা তাদের উপর কোন যন্ত্রণাময় আযাব নাযিল হয়ে পড়ে।” (সূরা আন নূর ২৪ : ৬৩)
“আল্লাহর রসূল নিজের প্রবৃত্তি থেকে কিছুই বলেন না, তাঁর কথা হল ওহী”
“আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক।” (সূরা হাশর ৫৯:৪৭)
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ প্রদান করে তখন কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর ঐ নির্দেশের ব্যতিক্রম করার কোন অধিকার থাকে না; আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা অমান্য করল, সে স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ৩৬)।
“আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন যাতে তারা সর্বদা-চিরকাল অবস্থান করবে।” (সূরা আল জিন ৭২ : ২৩)।
“কিন্তু না, তোমার রবের কসম! তারা প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যে পর্যন্ত তারা তাদের যাবতীয় বিরোধপূর্ণ ব্যাপারে তোমাকে বিচারক সাব্যস্ত করে এবং তুমি যে ফায়সালা প্রদান কর তা দ্বিধাহীন চিত্তে পরিপূর্ণ আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করে না নেয়।” (সূরা আন নিসা ৪ : ৬৫)
“সুতরাং যারা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, তাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে কিংবা তাদের উপর কোন যন্ত্রণাময় আযাব নাযিল হয়ে পড়ে।” (সূরা আন নূর ২৪ : ৬৩)
মানব জাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন। নবীগণ ছিলেন মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠ মানুষ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, প্রত্যেক নারীই তাঁর স্বজাতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের বাধা বিপত্তি, অবমাননার শিকার হয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
“আর এমনিভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে সৃষ্টি করেছি, তাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জিনদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে, এরা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর, ধোকাপূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে। আর আপনার রবের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারত না, সুতরাং আপনি মুহাম্মাদ তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চলুন। (সূরা আল-আনআম ৬ : ১১২ )
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর এভাবেই আমরা প্রত্যেক নারীর জন্য অপরাধীদের থেকে শুক্র করে দিয়েছি। আর আপনার রবই তো হিদায়াতকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে যথেষ্ট”। (সূরা আল-ফুরকান ২৫ : ৩১)
আর এই ধারাবাহিকতা থেকে আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) ও মুক্ত ছিলেন না। তাঁর উপরও নবুওয়তী জীবনের শুরু থেকে বিভিন্ন রকমের কটুক্তি, অবমাননা এমনকি তাঁর পরিবারের উপরও অপবাদ দেয়া হয়েছে। মূলতঃ ইসলাম এবং নবীর প্রতি হিংসার কারণেই অমুসলিমরা একাজ করে থাকে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়। (সুরা গাফির:৫৬ )
বাস্তবে হিংসা তাদেরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে, ইসলাম এবং নবীর কোনো ক্ষতিই তারা করতে পারে নি। নবী (ﷺ) বলেন : তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, কীভাবে আল্লাহ আমাকে কুরাইশদের অবমাননাকর গালি, অভিসম্পাত থেকে পবিত্র রাখেন, তারা আমাকে মুহাম্মামকে (নিন্দিতকে) গালি দেয়, মুম্মামকে অভিসম্পাত করে, আর আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসিত)। তারা নবীকে নিয়ে যতই কটুক্তি এবং অৰ্মাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
আল্লাহ্ বলেন, “আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি। (সূরা ইনশিরাহ ৯৪:৪)
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়াযিন বলছেন, (আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল।” তাঁর অবমাননাকারীদের অবমাননা থেকে তাঁকে রক্ষার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ বলেন, “অবমাননাকারীদের জন্য আমরাই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” (সূরা আল হিজর ১৫ : ৯৫)
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা ঘোষণা করেন, “আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?” (সূরা আয-যুমার ৩৯ : ৩৬)
এই আয়াতের তাফসীরে সুদ্দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন : যে কেউই রসূল (ﷺ) এবং তাঁর আনিত বিধান নিয়ে বিদ্রুপ বা অবমাননা করেছে আল্লাহ তাকে ধবংস করেছেন এবং নির্মম শাস্তি দিয়েছেন। যুগে যুগে যারা নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে অবমাননা করেছে তাদের কেউ রক্ষা পায়নি, আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “নিশ্চয়ই যারা রসূল (ﷺ) -কে কষ্ট দেয়, তাঁকে অবমাননা করে, আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিবেন, তিনি তাঁর দ্বীনকে বিজয় করবেন, আর মিথকদের মিথ্যা রটনাকে মিথ্যায় পরিণত করবেন, যদিও মুসলিমরা তাদেরকে শাস্তি দিতে না পারে।”
রসূল (ﷺ) -কে অবমাননার ভয়াবহ পরিণতি:
রসূল (ﷺ) -কে অবমাননা করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কখনও কখনও সেটা দুনিয়ার জীবনেও অবমাননাকারীর উপর নেমে আসে, আবার কখনও কখনও সেটা আখিরাতের জন্য বরাদ্দ থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরা আল-আহযাব ৩৩ : ৫৭)
আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : এক ব্যক্তি নাসারা ছিল সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা আল-বাকারা ও আলে ইমরান শিখল। সে নবী (ﷺ) -এর নিকট কেরাণীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মুহাম্মাদ আমি যা লিখি তাই বলে এর বাইরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেল, তখন তার সাথীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন নাসারারা বলতে লাগল। মুহাম্মাদের সাথীরা এই কাজ করেছে কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল এটা মুহাম্মাদ এবং তার সাথীদের কাজ; কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল। আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছে, তখন তারা বুঝল এটা কোনো মানুষের কাজ নয়, তখন তারা তার লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
“আর এমনিভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে সৃষ্টি করেছি, তাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জিনদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে, এরা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর, ধোকাপূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে। আর আপনার রবের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারত না, সুতরাং আপনি মুহাম্মাদ তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চলুন। (সূরা আল-আনআম ৬ : ১১২ )
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর এভাবেই আমরা প্রত্যেক নারীর জন্য অপরাধীদের থেকে শুক্র করে দিয়েছি। আর আপনার রবই তো হিদায়াতকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে যথেষ্ট”। (সূরা আল-ফুরকান ২৫ : ৩১)
আর এই ধারাবাহিকতা থেকে আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) ও মুক্ত ছিলেন না। তাঁর উপরও নবুওয়তী জীবনের শুরু থেকে বিভিন্ন রকমের কটুক্তি, অবমাননা এমনকি তাঁর পরিবারের উপরও অপবাদ দেয়া হয়েছে। মূলতঃ ইসলাম এবং নবীর প্রতি হিংসার কারণেই অমুসলিমরা একাজ করে থাকে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়। (সুরা গাফির:৫৬ )
বাস্তবে হিংসা তাদেরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে, ইসলাম এবং নবীর কোনো ক্ষতিই তারা করতে পারে নি। নবী (ﷺ) বলেন : তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, কীভাবে আল্লাহ আমাকে কুরাইশদের অবমাননাকর গালি, অভিসম্পাত থেকে পবিত্র রাখেন, তারা আমাকে মুহাম্মামকে (নিন্দিতকে) গালি দেয়, মুম্মামকে অভিসম্পাত করে, আর আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসিত)। তারা নবীকে নিয়ে যতই কটুক্তি এবং অৰ্মাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
আল্লাহ্ বলেন, “আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি। (সূরা ইনশিরাহ ৯৪:৪)
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়াযিন বলছেন, (আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল।” তাঁর অবমাননাকারীদের অবমাননা থেকে তাঁকে রক্ষার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ বলেন, “অবমাননাকারীদের জন্য আমরাই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” (সূরা আল হিজর ১৫ : ৯৫)
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা ঘোষণা করেন, “আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?” (সূরা আয-যুমার ৩৯ : ৩৬)
এই আয়াতের তাফসীরে সুদ্দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন : যে কেউই রসূল (ﷺ) এবং তাঁর আনিত বিধান নিয়ে বিদ্রুপ বা অবমাননা করেছে আল্লাহ তাকে ধবংস করেছেন এবং নির্মম শাস্তি দিয়েছেন। যুগে যুগে যারা নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে অবমাননা করেছে তাদের কেউ রক্ষা পায়নি, আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “নিশ্চয়ই যারা রসূল (ﷺ) -কে কষ্ট দেয়, তাঁকে অবমাননা করে, আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিবেন, তিনি তাঁর দ্বীনকে বিজয় করবেন, আর মিথকদের মিথ্যা রটনাকে মিথ্যায় পরিণত করবেন, যদিও মুসলিমরা তাদেরকে শাস্তি দিতে না পারে।”
রসূল (ﷺ) -কে অবমাননার ভয়াবহ পরিণতি:
রসূল (ﷺ) -কে অবমাননা করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কখনও কখনও সেটা দুনিয়ার জীবনেও অবমাননাকারীর উপর নেমে আসে, আবার কখনও কখনও সেটা আখিরাতের জন্য বরাদ্দ থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরা আল-আহযাব ৩৩ : ৫৭)
আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : এক ব্যক্তি নাসারা ছিল সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা আল-বাকারা ও আলে ইমরান শিখল। সে নবী (ﷺ) -এর নিকট কেরাণীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মুহাম্মাদ আমি যা লিখি তাই বলে এর বাইরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেল, তখন তার সাথীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন নাসারারা বলতে লাগল। মুহাম্মাদের সাথীরা এই কাজ করেছে কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল এটা মুহাম্মাদ এবং তার সাথীদের কাজ; কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল। আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছে, তখন তারা বুঝল এটা কোনো মানুষের কাজ নয়, তখন তারা তার লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
(ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত সলাত ছেড়ে দিলেও)
মু'মিন এবং কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সলাত (নামায)
রসূল (ﷺ) বলেছেন, “মু'মিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সলাত পরিত্যাগ করা।” [সহীহ মুসলিম]
সলাত (নামায) ত্যাগকারী ইসলাম হতে বের হয়ে যায়
কেউ যখন ইচ্ছা করে এক ওয়াক্ত সলাত ত্যাগ করে তখন সে বস্তুত আল্লাহ ও তাঁর রসূল (ﷺ) -এর সলাত আদায় করার আদেশকে অমান্য করছে। যখন কোন মুসলিম আল্লাহ ও তাঁর রসূলের এ আদেশ অমান্য করে, তখন সে আর মুসলিম থাকতে পারে না। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে সলাত (নামায) ত্যাগকারী ইসলাম হতে বের হয়ে যায় অর্থাৎ ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) ও কাফির হয়ে যায়। রসূল (ﷺ) বলেছেন, “আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মাঝে চুক্তি হচ্ছে সলাতের। অতএব যে ব্যক্তি সলাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল।” [আবু দাউদ, আহমাদ, তিরমিজি, নাসাঈ]
এরকম লোকের ইসলামে ফিরে আসার একমাত্র পথ হলো অনুতাপের সাথে তাওবা করা এবং দৃঢ় অংগীকার করা যে সে এ কাজ আর কখনও করবে না।
“তবে এখন যদি তারা তাওবা করে সলাত আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।” (সূরা আত তাওবা ৯ : ১১)
বেনামাযির জানাযা পড়া নিষেধ
আল্লাহ তাঁর রসূল (ﷺ) -কে নির্দেশ দিচ্ছেন:
আর তাদের কেউ মরে গেলে তার জানাযা তুমি কখনই পড়বে না তার কবরের পাশে কখনই দাঁড়াবে না কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফরী করেছে এবং ফাসিক (পাপাচারী) অবস্থায় ওদের মৃত্যু হয়েছে। (সূরা আত তাওবা ৯ : ৮)
বেনামাযির জন্য জাহান্নাম
(ডান পার্শ্বস্থ লোকেরা) অপরাধীদের সম্পর্কে বলবে, তোমাদের কিসে জাহান্নামে পাঠিয়েছে? তারা বলবে আমরা সলাত আদায় করতাম না, অভাবগ্রস্তদের আহার দিতাম না। (সূরা মুদ্দাসৃসির ৭৪ : ৪১-৪৪)
যারা সলাত (নামায) বিনিষ্ট করল তাদের জন্যে আযাব অনিবার্য
অতঃপর তাদের পর সেই অযোগ্য অবাঞ্ছিত লোকেরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হল যারা সলাতকে বিনষ্ট করল, আর কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৫৯)
যারা তাদের সলাত সম্বন্ধে উদাসীন তাদের জন্য দুর্ভোগ। সূরা মাউন : ৪, ৫)
মু'মিন এবং কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সলাত (নামায)
রসূল (ﷺ) বলেছেন, “মু'মিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সলাত পরিত্যাগ করা।” [সহীহ মুসলিম]
সলাত (নামায) ত্যাগকারী ইসলাম হতে বের হয়ে যায়
কেউ যখন ইচ্ছা করে এক ওয়াক্ত সলাত ত্যাগ করে তখন সে বস্তুত আল্লাহ ও তাঁর রসূল (ﷺ) -এর সলাত আদায় করার আদেশকে অমান্য করছে। যখন কোন মুসলিম আল্লাহ ও তাঁর রসূলের এ আদেশ অমান্য করে, তখন সে আর মুসলিম থাকতে পারে না। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে সলাত (নামায) ত্যাগকারী ইসলাম হতে বের হয়ে যায় অর্থাৎ ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) ও কাফির হয়ে যায়। রসূল (ﷺ) বলেছেন, “আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মাঝে চুক্তি হচ্ছে সলাতের। অতএব যে ব্যক্তি সলাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল।” [আবু দাউদ, আহমাদ, তিরমিজি, নাসাঈ]
এরকম লোকের ইসলামে ফিরে আসার একমাত্র পথ হলো অনুতাপের সাথে তাওবা করা এবং দৃঢ় অংগীকার করা যে সে এ কাজ আর কখনও করবে না।
“তবে এখন যদি তারা তাওবা করে সলাত আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।” (সূরা আত তাওবা ৯ : ১১)
বেনামাযির জানাযা পড়া নিষেধ
আল্লাহ তাঁর রসূল (ﷺ) -কে নির্দেশ দিচ্ছেন:
আর তাদের কেউ মরে গেলে তার জানাযা তুমি কখনই পড়বে না তার কবরের পাশে কখনই দাঁড়াবে না কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফরী করেছে এবং ফাসিক (পাপাচারী) অবস্থায় ওদের মৃত্যু হয়েছে। (সূরা আত তাওবা ৯ : ৮)
বেনামাযির জন্য জাহান্নাম
(ডান পার্শ্বস্থ লোকেরা) অপরাধীদের সম্পর্কে বলবে, তোমাদের কিসে জাহান্নামে পাঠিয়েছে? তারা বলবে আমরা সলাত আদায় করতাম না, অভাবগ্রস্তদের আহার দিতাম না। (সূরা মুদ্দাসৃসির ৭৪ : ৪১-৪৪)
যারা সলাত (নামায) বিনিষ্ট করল তাদের জন্যে আযাব অনিবার্য
অতঃপর তাদের পর সেই অযোগ্য অবাঞ্ছিত লোকেরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হল যারা সলাতকে বিনষ্ট করল, আর কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৫৯)
যারা তাদের সলাত সম্বন্ধে উদাসীন তাদের জন্য দুর্ভোগ। সূরা মাউন : ৪, ৫)
মুসলিম হলো সেই ব্যক্তি যে ইসলামের সকল বিধি-বিধানের প্রতি নিজেকে বিনাদ্বিধায় সম্পূর্ণরূপে সমর্পন করেছে। মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও যে লোক চিন্তা ভাবনায়, কথায় বা কাজে ইসলামের বিরোধিতা করে সে নিজেকে আর মুসলিম দাবী করতে পারে না। এই লোকের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়ংকর পরিণতি অপেক্ষা করছে।
‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। জাহান্নামই তার ঠিকানা। এমন যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা আল-মায়িদা ৫:৭২)
জাবির (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুর শিরক করার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে জাহান্নামে যাবে। (সহীহ মুসলিম)
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে শরীক হল না কিংবা দ্বীন প্রতিষ্ঠা নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনাও করল না আর এই অবস্থায়-ই মারা গেল, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করল। (সহীহ মুসলিম)।
নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন : আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখবে। নতুবা তোমাদের উপর শীঘ্রই আল্লাহর আযাব নাযিল হবে। অতঃপর তোমরা (তা হতে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্যে) দু'আ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দু’আ কবুল হবে না। (জামে আত তিরমিযী)
‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। জাহান্নামই তার ঠিকানা। এমন যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা আল-মায়িদা ৫:৭২)
জাবির (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুর শিরক করার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে জাহান্নামে যাবে। (সহীহ মুসলিম)
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে শরীক হল না কিংবা দ্বীন প্রতিষ্ঠা নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনাও করল না আর এই অবস্থায়-ই মারা গেল, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করল। (সহীহ মুসলিম)।
নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন : আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখবে। নতুবা তোমাদের উপর শীঘ্রই আল্লাহর আযাব নাযিল হবে। অতঃপর তোমরা (তা হতে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্যে) দু'আ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দু’আ কবুল হবে না। (জামে আত তিরমিযী)
ইসলামকে বিদ্রুপ করা, ব্যঙ্গ বা কটাক্ষ করা সরাসরি কুফরের নামান্তর। যে দশটি কাজের মাধ্যমে মানুষ ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায় তার অন্যতম এই বিদ্রুপ। তাছাড়া এটি মুনাফিকদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। এ ব্যাপারে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন : আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রসূলের সাথে তোমরা বিদ্রুপ করছিলে ? (সূরা আত-তাওবা ৯: ৬৫)
বিদ্রুপকারীর তাওবা :
বিদ্রুপকারীর তাওবা সম্পর্কে শায়খ ইবন উসাইমীন রহ. তাঁর ‘আল-কাওলুল মুফীদ ফী শারহি কিতাবি আত-তাওহীদ’ গ্রন্থে বলেন :
“অতঃপর জেনে রাখুন, আল্লাহ, রসূল ও কুরআনকে কটাক্ষকারীর তাওবা গ্রহণযোগ্য কি-না এ সম্পর্কে আলেমগণের দুই রকম মত ব্যক্ত হয়েছে। প্রথম, তার তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। হাম্বলীদের মাঝে এ মতটি অধিক প্রসিদ্ধ। আদালত তাকে কাফির হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করবে। তার জানাযা পড়া হবে না আর তার জন্য দু'আও করা হবে না। মুসলিমদের কবরস্থান থেকে দূরে কোথাও তাকে কবর দেয়া হবে। যদিও বলা হয় সে তাওবা করেছে অথবা ভুল করেছে। কারণ, তাঁরা বলেন, এই ধর্মত্যাগ বা আল্লাহদ্রোহিতার ব্যাপারটি বড় ভয়াবহ। এর তাওবাও কার্যকর হয় না।
দ্বিতীয়, তবে অপর একদল আলিমের মতে, তার তাওবা কবুল করা হবে যখন আমরা জানব যে সে আন্তরিকভাবে তাওবা করেছে, হৃদয় থেকে ভুল স্বীকার করেছে এবং আল্লাহকে তাঁর যথাযোগ্য বিশেষণে বিশেষিত করেছে। আর তাঁরা তা বলেছেন তাওবা কবুলের ঘোষণা সম্বলিত আয়াতটি ব্যাপক হবার যুক্তিতে। ইদানীং ইসলামকে বিদ্রুপ ও কটাক্ষের যেসব রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি তার মধ্যে রয়েছে ওই সব কটুক্তি ও ব্যঙ্গচিত্র যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ফেইসবুক ও ব্লগে দেখা যায়। তথাকথিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এসব প্রকাশ করা হলেও এসবের পশ্চাতে থাকে দ্বীন ইসলাম বিমুখতা ও ইসলাম থেকে বিদ্রোহের মানসিকতা।
একজন এঁকেছে একটি মোরগ আর তার অনুসরণ করছে চারটি মুরগী। এর মাধ্যমে সে একাধিক বিয়েকে ব্যঙ্গ করেছে। আরেকজন একটি প্রবন্ধ লিখেছে, যাতে হিজাব ও পর্দা বিধানের উপর ন্যাক্কার হামলা চালানো হয়েছে। সে বলছে এটি হলো পশ্চাৎপদতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রকাশ। আরেক জনকে দেখা গেছে সে কুরআনকে কবিতা বানিয়ে গানের মতো বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সুর দিয়ে পড়ছে। আল্লাহ আমাদেরকে হিফাযত করুন।
আমাদের জেনে রাখা দরকার যারা এসব ব্যঙ্গচিত্র ও কটুক্তির সাথে যারা জড়িত তীব্রভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। এ কাজের ভয়াবহ অশুভ পরিণতি সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
“আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।' (সূরা নিসা : ১৪০)
শায়খ আবদুল আযীয ইবন বায রহ. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যেসব পত্রিকা ও ব্লগ বা বই-পুস্তক নাস্তিক্যবাদী প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও ব্যঙ্গচিত্র ছাপে এবং কাফির, ফাসেক ও বিশৃঙ্খলাকারীদের ইন্ধন যোগায়, সেসব কেনা-বেচা এবং তার প্রচার করা কি জায়েয আছে?
তিনি উত্তর দেন ও যেসব পত্রিকা এ কাজ করে ওয়াজিব হলো তাদের বয়কট করা এবং সেগুলো ক্রয় না করা। আর রাষ্ট্র যদি ইসলামী হয় তাহলে কর্তব্য হবে তা নিষিদ্ধ করা। কারণ এসব বই ও পত্রপত্রিকা সমাজ ও মুসলিমদের জন্য এসব বডড ক্ষতিকর। তাই মুসলিমদের দায়িত্ব হবে এসবের কেনা ও বেচা এবং এসবের যে কোনো ধরনের প্রচার বর্জন করা আর মানুষকে এসব বর্জনের প্রতি আহ্বান জানানো। এদিকে দায়িত্বশীলদের কর্তব্য হবে এসবকে একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। [আল-মাওসু আল-বাযিয়া ফিল মাসাইলিন নিসাইয়্যা ১২৭৪/২]
বিদ্রুপকারীর তাওবা :
বিদ্রুপকারীর তাওবা সম্পর্কে শায়খ ইবন উসাইমীন রহ. তাঁর ‘আল-কাওলুল মুফীদ ফী শারহি কিতাবি আত-তাওহীদ’ গ্রন্থে বলেন :
“অতঃপর জেনে রাখুন, আল্লাহ, রসূল ও কুরআনকে কটাক্ষকারীর তাওবা গ্রহণযোগ্য কি-না এ সম্পর্কে আলেমগণের দুই রকম মত ব্যক্ত হয়েছে। প্রথম, তার তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। হাম্বলীদের মাঝে এ মতটি অধিক প্রসিদ্ধ। আদালত তাকে কাফির হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করবে। তার জানাযা পড়া হবে না আর তার জন্য দু'আও করা হবে না। মুসলিমদের কবরস্থান থেকে দূরে কোথাও তাকে কবর দেয়া হবে। যদিও বলা হয় সে তাওবা করেছে অথবা ভুল করেছে। কারণ, তাঁরা বলেন, এই ধর্মত্যাগ বা আল্লাহদ্রোহিতার ব্যাপারটি বড় ভয়াবহ। এর তাওবাও কার্যকর হয় না।
দ্বিতীয়, তবে অপর একদল আলিমের মতে, তার তাওবা কবুল করা হবে যখন আমরা জানব যে সে আন্তরিকভাবে তাওবা করেছে, হৃদয় থেকে ভুল স্বীকার করেছে এবং আল্লাহকে তাঁর যথাযোগ্য বিশেষণে বিশেষিত করেছে। আর তাঁরা তা বলেছেন তাওবা কবুলের ঘোষণা সম্বলিত আয়াতটি ব্যাপক হবার যুক্তিতে। ইদানীং ইসলামকে বিদ্রুপ ও কটাক্ষের যেসব রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি তার মধ্যে রয়েছে ওই সব কটুক্তি ও ব্যঙ্গচিত্র যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ফেইসবুক ও ব্লগে দেখা যায়। তথাকথিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এসব প্রকাশ করা হলেও এসবের পশ্চাতে থাকে দ্বীন ইসলাম বিমুখতা ও ইসলাম থেকে বিদ্রোহের মানসিকতা।
একজন এঁকেছে একটি মোরগ আর তার অনুসরণ করছে চারটি মুরগী। এর মাধ্যমে সে একাধিক বিয়েকে ব্যঙ্গ করেছে। আরেকজন একটি প্রবন্ধ লিখেছে, যাতে হিজাব ও পর্দা বিধানের উপর ন্যাক্কার হামলা চালানো হয়েছে। সে বলছে এটি হলো পশ্চাৎপদতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রকাশ। আরেক জনকে দেখা গেছে সে কুরআনকে কবিতা বানিয়ে গানের মতো বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সুর দিয়ে পড়ছে। আল্লাহ আমাদেরকে হিফাযত করুন।
আমাদের জেনে রাখা দরকার যারা এসব ব্যঙ্গচিত্র ও কটুক্তির সাথে যারা জড়িত তীব্রভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। এ কাজের ভয়াবহ অশুভ পরিণতি সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
“আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।' (সূরা নিসা : ১৪০)
শায়খ আবদুল আযীয ইবন বায রহ. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যেসব পত্রিকা ও ব্লগ বা বই-পুস্তক নাস্তিক্যবাদী প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও ব্যঙ্গচিত্র ছাপে এবং কাফির, ফাসেক ও বিশৃঙ্খলাকারীদের ইন্ধন যোগায়, সেসব কেনা-বেচা এবং তার প্রচার করা কি জায়েয আছে?
তিনি উত্তর দেন ও যেসব পত্রিকা এ কাজ করে ওয়াজিব হলো তাদের বয়কট করা এবং সেগুলো ক্রয় না করা। আর রাষ্ট্র যদি ইসলামী হয় তাহলে কর্তব্য হবে তা নিষিদ্ধ করা। কারণ এসব বই ও পত্রপত্রিকা সমাজ ও মুসলিমদের জন্য এসব বডড ক্ষতিকর। তাই মুসলিমদের দায়িত্ব হবে এসবের কেনা ও বেচা এবং এসবের যে কোনো ধরনের প্রচার বর্জন করা আর মানুষকে এসব বর্জনের প্রতি আহ্বান জানানো। এদিকে দায়িত্বশীলদের কর্তব্য হবে এসবকে একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। [আল-মাওসু আল-বাযিয়া ফিল মাসাইলিন নিসাইয়্যা ১২৭৪/২]
Secularism (সেকিউলারিজম) শব্দের সঠিক অনুবাদ হচ্ছে- ধর্মহীনতা। তবে বাংলা ভাষায় শব্দটির অনুবাদ তা না করে করা হয়ে থাকে ধর্মনিরপেক্ষতা। বস্তুত এ মতবাদটি ধর্মকে এড়িয়ে নিছক বস্তুবাদী স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে মানববিদ্যা ও বুদ্ধির ভিত্তিতে মানবজীবন প্রতিষ্ঠার প্রতি আহ্বান করে। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি বলতে বুঝানো হয় - ধর্মের প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা। এ মতবাদটি ১৭শত শতাব্দীতে ইউরোপে আত্মপ্রকাশ করে এবং উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এটি প্রাচ্যে প্রসারিত হয়। প্রথমদিকে মিসর, তুরস্ক, ইরান, লেবানন, সিরিয়াতে প্রসার লাভ করে। ধীরে ধীরে তিউনিশিয়াতে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ইরাকে প্রসারিত হয়। এছাড়া বিংশ শতাব্দীতে এসে অন্যান্য আরব দেশগুলোতেও বিস্তার লাভ করে।
আরব বিশ্বে এই মতবাদকে বুঝাতে ‘লা-দ্বীনিয়্যাহ্ বা ধর্মহীনতা বলার কথা থাকলেও এ মতবাদের প্রবর্তকরা সে শব্দটির পরিবর্তে “ইলমানিয়্যাহ্ বা 'বিজ্ঞানময়’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। প্রথম দৃষ্টিতে কারও কারও মতে হতে পারে যে শব্দটি বোধ হয় “ইলম” তথা ‘জ্ঞান থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। বস্তুত বিষয়টি এ রকম নয়। এ মতবাদের সাথে বিজ্ঞান বা Science-এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তারা এ শব্দটি ব্যবহারে বেশি সাচছন্দ্য বোধ করে; কারণ শব্দটিকে জ্ঞানের দিকে সম্পর্কযুক্ত করতে পারলে আরব সমাজে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। তাই এ বিভ্রান্তির নিরসনার্থে শব্দটিকে আরবীতে ‘ইলমানিয়্যাহ' উচ্চারণ না করে ‘আলামানিয়্যাহ বলা উচিত।
আগেই বলা হয়েছে যে, এ মতবাদের শুরুতে এর জন্য Secularism শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার অর্থ হচ্ছে ধর্মহীনতা বা ধর্মের সাথে সম্পর্কহীনতা। কিন্তু বাংলাভাষাভাষি মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এর একটি ভুল অনুবাদ করা হয়ে থাকে, আর বলা হয় যে, এর অর্থ, ধর্মনিরপেক্ষতা। এ প্রবন্ধে এটাকে এ প্রচলিত অর্থেই বর্ণনা করা হচ্ছে যাতে পাঠকগণ সেটাকে তার আসল অর্থে বুঝে নিতে পারেন।
Secularism, যাকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হয়ে থাকে, তার সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবন থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, বাদ দেয়া। ধর্ম ব্যক্তির অন্তরের খাঁচায় বন্দী থাকবে। ধর্মের পরিধি ব্যক্তি ও তার উপাস্যের সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ধর্মকে প্রকাশ করার কোনো সুযোগ থাকলে সেটা শুধুমাত্র উপাসনাতে এবং বিবাহ ও মৃত্যু সংক্রান্ত রসম-রেওয়াজে থাকবে।
রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা রাখার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে খ্রিস্টান ধর্মের মিল রয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা থাকবে সীজার (Caesar) বা কায়সার (খ্রিস্টান সরকার প্রধানের উপাধি)-এর হাতে, আর গির্জার ক্ষমতা থাকবে আল্লাহর হাতে। যীশুর নামে প্রচারিত বাণী “সীজারের অধিকার সীজারকে দাও এবং আল্লাহর অধিকার আল্লাহকে দাও” থেকেও এ বিষয়টি সুস্পষ্ট।
কিন্তু ইসলাম এ ধরনের দ্বিমুখী নীতির অনুমোদন করে না। মুসলিম নিজেও আল্লাহর মালিকানাধীন এবং তার গোটা জীবনও আল্লাহর জন্য। কুরআনে এসেছে, “হে রসূল! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য।” [সূরা আন'আম ৬ : ১৬২]
আরব বিশ্বে এই মতবাদকে বুঝাতে ‘লা-দ্বীনিয়্যাহ্ বা ধর্মহীনতা বলার কথা থাকলেও এ মতবাদের প্রবর্তকরা সে শব্দটির পরিবর্তে “ইলমানিয়্যাহ্ বা 'বিজ্ঞানময়’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। প্রথম দৃষ্টিতে কারও কারও মতে হতে পারে যে শব্দটি বোধ হয় “ইলম” তথা ‘জ্ঞান থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। বস্তুত বিষয়টি এ রকম নয়। এ মতবাদের সাথে বিজ্ঞান বা Science-এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তারা এ শব্দটি ব্যবহারে বেশি সাচছন্দ্য বোধ করে; কারণ শব্দটিকে জ্ঞানের দিকে সম্পর্কযুক্ত করতে পারলে আরব সমাজে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। তাই এ বিভ্রান্তির নিরসনার্থে শব্দটিকে আরবীতে ‘ইলমানিয়্যাহ' উচ্চারণ না করে ‘আলামানিয়্যাহ বলা উচিত।
আগেই বলা হয়েছে যে, এ মতবাদের শুরুতে এর জন্য Secularism শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার অর্থ হচ্ছে ধর্মহীনতা বা ধর্মের সাথে সম্পর্কহীনতা। কিন্তু বাংলাভাষাভাষি মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এর একটি ভুল অনুবাদ করা হয়ে থাকে, আর বলা হয় যে, এর অর্থ, ধর্মনিরপেক্ষতা। এ প্রবন্ধে এটাকে এ প্রচলিত অর্থেই বর্ণনা করা হচ্ছে যাতে পাঠকগণ সেটাকে তার আসল অর্থে বুঝে নিতে পারেন।
Secularism, যাকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হয়ে থাকে, তার সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবন থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, বাদ দেয়া। ধর্ম ব্যক্তির অন্তরের খাঁচায় বন্দী থাকবে। ধর্মের পরিধি ব্যক্তি ও তার উপাস্যের সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ধর্মকে প্রকাশ করার কোনো সুযোগ থাকলে সেটা শুধুমাত্র উপাসনাতে এবং বিবাহ ও মৃত্যু সংক্রান্ত রসম-রেওয়াজে থাকবে।
রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা রাখার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে খ্রিস্টান ধর্মের মিল রয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা থাকবে সীজার (Caesar) বা কায়সার (খ্রিস্টান সরকার প্রধানের উপাধি)-এর হাতে, আর গির্জার ক্ষমতা থাকবে আল্লাহর হাতে। যীশুর নামে প্রচারিত বাণী “সীজারের অধিকার সীজারকে দাও এবং আল্লাহর অধিকার আল্লাহকে দাও” থেকেও এ বিষয়টি সুস্পষ্ট।
কিন্তু ইসলাম এ ধরনের দ্বিমুখী নীতির অনুমোদন করে না। মুসলিম নিজেও আল্লাহর মালিকানাধীন এবং তার গোটা জীবনও আল্লাহর জন্য। কুরআনে এসেছে, “হে রসূল! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য।” [সূরা আন'আম ৬ : ১৬২]
এই মতবাদটি প্রথমে ইউরোপে প্রসার লাভ করে। তারপর পাশ্চাত্যের উপনিবেশিক শাসন ও কমিউনিজমের প্রভাব-প্রতিপত্তির সুবাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিস্তার লাভ করে। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে শিল্প বিপ্লবের আগে ও পরের বেশকিছু পরিস্থিতি ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপক প্রসার ঘটায় এবং ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ও চিন্তাধারার বিকাশ ঘটায়। নীচে ক্রমানুসারে ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হচ্ছে :
এক্লিরোস, বৈরাগ্যবাদ, ঐশ্বরিক নৈশভোজ (Holy Communion), ক্ষমাপত্র (Indulgence) বিক্রি ইত্যাদির আড়ালে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগণ তাগুতী শক্তি, পেশাদার রাজনীতিবিদ ও স্বৈরাচারীতে পরিণত হয়েছিল।
গির্জাগুলোর বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অবস্থান, মানুষের চিন্তাধারার উপর গির্জার একচ্ছত্র আধিপত্য, গির্জা কর্তৃক Inquisition কোর্ট গঠন করা এবং বিজ্ঞানীদেরকে ধর্মদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্তকরণ।
বিবেকবুদ্ধি ও প্রকৃতি নীতির উদ্ভব : ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গ বিবেকের মুক্তির দাবী তোলেন এবং প্রকৃতিকে উপাস্যের বিশেষণে বিশেষিত করার দাবী জানান।
ফরাসি বিপ্লব : গীর্জা ও নতুন এ আন্দোলনের মাঝে দ্বন্দের ফলে ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে একটি সরকার গঠিত হয়। জনগণের শাসনের নামে এটাই ছিল প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। কেউ কেউ মনে করেন যে, ফ্রিমেসন (Freemasons)-এর সদস্যরা গির্জা ও ফরাসি সরকারের এটিগুলোকে পুঁজি করে বিদ্রোহ ঘটায় এবং যতদূর সম্ভব তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্ত বায়ন করার প্রয়াস চালায়।
ধর্মবিমুখ বিভিন্ন মতবাদের উদ্ভবঃ সেকুলারিজমের উদ্ভবের পেছনে বেশ কিছু ধর্মবিমুখ- ধর্মবিদ্বেষী মতবাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। যেমন ডারউইনের মতোবাদ।
এক্লিরোস, বৈরাগ্যবাদ, ঐশ্বরিক নৈশভোজ (Holy Communion), ক্ষমাপত্র (Indulgence) বিক্রি ইত্যাদির আড়ালে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগণ তাগুতী শক্তি, পেশাদার রাজনীতিবিদ ও স্বৈরাচারীতে পরিণত হয়েছিল।
গির্জাগুলোর বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অবস্থান, মানুষের চিন্তাধারার উপর গির্জার একচ্ছত্র আধিপত্য, গির্জা কর্তৃক Inquisition কোর্ট গঠন করা এবং বিজ্ঞানীদেরকে ধর্মদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্তকরণ।
বিবেকবুদ্ধি ও প্রকৃতি নীতির উদ্ভব : ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গ বিবেকের মুক্তির দাবী তোলেন এবং প্রকৃতিকে উপাস্যের বিশেষণে বিশেষিত করার দাবী জানান।
ফরাসি বিপ্লব : গীর্জা ও নতুন এ আন্দোলনের মাঝে দ্বন্দের ফলে ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে একটি সরকার গঠিত হয়। জনগণের শাসনের নামে এটাই ছিল প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। কেউ কেউ মনে করেন যে, ফ্রিমেসন (Freemasons)-এর সদস্যরা গির্জা ও ফরাসি সরকারের এটিগুলোকে পুঁজি করে বিদ্রোহ ঘটায় এবং যতদূর সম্ভব তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্ত বায়ন করার প্রয়াস চালায়।
ধর্মবিমুখ বিভিন্ন মতবাদের উদ্ভবঃ সেকুলারিজমের উদ্ভবের পেছনে বেশ কিছু ধর্মবিমুখ- ধর্মবিদ্বেষী মতবাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। যেমন ডারউইনের মতোবাদ।
মিসর : নেপোলিয়ন বোনাপার্টের আক্রমণের সাথে মিসরে ধর্মনিরপেক্ষতার অনুপ্রবেশ ঘটে। আল-জিবরিতি তাঁর ইতিহাসগ্রন্থে (মিসরের উপর ফরাসি হামলা ও সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ শীর্ষক অংশে) এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ভারত : ১৭৯১ সাল পর্যন্ত ভারতে ইসলামী আইন (শরিয়া) মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালিত হয়েছে। এরপর ইংরেজদের প্ররোচনায় ক্রমান্বয়ে ইসলামী আইন বিলুপ্ত করা শুরু হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সম্পূর্ণভাবে ইসলামী আইন বিলুপ্ত করা হয়।
আলজিরিয়া : ১৮৩০ সালে ফ্রান্স কর্তৃক উপনিবেশ শাসনের স্বীকার হওয়ার পর ইসলামী আইন বিলুপ্ত করা হয়।
তিউনিসিয়া : ১৯০৬ সালে তিউনিসিয়াতে ফ্রান্সের আইন স্থান করে নেয়।
মরক্কো : ১৯১৩ সালে মরক্কোতে ফ্রান্সের আইন অনুপ্রবেশ করে।
তুরস্ক : ইসলামী খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর এবং মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক কর্তৃক সর্বক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের পর তুরস্ক সেকুলারিজমের চাদর পরিধান করে। যদিও তারও আগ থেকেই কিছু কিছু লক্ষণ ও কর্মকাণ্ড দেখা দিয়েছিল।
ইরাক ও সিরিয়া : উসমানী খিলাফত আমলে ইরাক ও সিরিয়া থেকে ইসলামী আইন বিলুপ্ত করা হয় এবং সেখানে ইংরেজ ও ফরাসিদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চল ও দখলদার উপনিবেশী শক্তির পতনের পর। আফ্রিকার অনেক দেশে খ্রিস্টান রাষ্ট্রপ্রধানেরা ক্ষমতা দখল করে নেয়।
ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ সেকিউলার রাষ্ট্র।
ভারত : ১৭৯১ সাল পর্যন্ত ভারতে ইসলামী আইন (শরিয়া) মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালিত হয়েছে। এরপর ইংরেজদের প্ররোচনায় ক্রমান্বয়ে ইসলামী আইন বিলুপ্ত করা শুরু হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সম্পূর্ণভাবে ইসলামী আইন বিলুপ্ত করা হয়।
আলজিরিয়া : ১৮৩০ সালে ফ্রান্স কর্তৃক উপনিবেশ শাসনের স্বীকার হওয়ার পর ইসলামী আইন বিলুপ্ত করা হয়।
তিউনিসিয়া : ১৯০৬ সালে তিউনিসিয়াতে ফ্রান্সের আইন স্থান করে নেয়।
মরক্কো : ১৯১৩ সালে মরক্কোতে ফ্রান্সের আইন অনুপ্রবেশ করে।
তুরস্ক : ইসলামী খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর এবং মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক কর্তৃক সর্বক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের পর তুরস্ক সেকুলারিজমের চাদর পরিধান করে। যদিও তারও আগ থেকেই কিছু কিছু লক্ষণ ও কর্মকাণ্ড দেখা দিয়েছিল।
ইরাক ও সিরিয়া : উসমানী খিলাফত আমলে ইরাক ও সিরিয়া থেকে ইসলামী আইন বিলুপ্ত করা হয় এবং সেখানে ইংরেজ ও ফরাসিদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চল ও দখলদার উপনিবেশী শক্তির পতনের পর। আফ্রিকার অনেক দেশে খ্রিস্টান রাষ্ট্রপ্রধানেরা ক্ষমতা দখল করে নেয়।
ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ সেকিউলার রাষ্ট্র।
কিছু ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি প্রকাশ্যে আল্লাহকে অস্বীকার করে (নাস্তিক)। বাকিরা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখলেও আল্লাহর অস্তিত্বের সাথে মানুষের জীবনের কোনরূপ সম্পর্ক আছে বলে তাঁরা বিশ্বাস করে না (মুনাফিক)।
নিছক বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এবং বিবেক ও অভিজ্ঞতার শাসনাধীনে মানবজীবন প্রতিষ্ঠিত হবে।
আধ্যাত্মিক জগৎ ও বস্তুজগতের মধ্যে দুর্ভেদ্য ব্যবধান তৈরী করা। তাদের দৃষ্টিতে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ নেতিবাচক মূল্যবোধ।
ধর্মকে রাজনীতি থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন রাখা এবং নিরেট বস্তুবাদী ভিত্তির উপর জীবন প্রতিষ্ঠিত করা।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে pragmatism (সুবিধাবাদ) প্রতিষ্ঠা করা।
শাসন, রাজনীতি ও নীতি নৈতিকতার ক্ষেত্রে ম্যাকিয়াভেলীর সূত্র অনুসরণ করা।
অশ্লীলতা ও চারিত্রিক অবক্ষয় ছড়িয়ে দেয়া এবং পারিবারিক ভিত ভেঙ্গে দেয়া। কারণ পরিবার হচ্ছে সামাজিক বন্ধনের প্রথম বীজ।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও মিশনারী সংস্থাগুলোর অপচেষ্টায় আরব ও মুসলিম বিশ্বে প্রচারিত ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাসগুলোর প্রধান কাজ হচ্ছে -
ইসলাম, কুরআন ও নবুয়তের মূলে আঘাত করা।
এ দাবী করা যে, ইসলামের আবেদন নিঃশেষ হয়ে গেছে। ইসলাম কিছু আধ্যাত্মিক পূজা-অর্চনা ছাড়া কিছু নয়।
এ দাবী করা যে, ইসলামী ফিকহ বা ইসলামী আইন শাস্ত্র রোমান আইন থেকে উদ্ভূত।
এই দাবী তোলা যে, ইসলাম বর্তমান সভ্যতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলাম মানুষকে পশ্চাৎমুখী হওয়ার আহবান জানায়।
পাশ্চাত্য চিন্তাধারার আলোকে নারীমুক্তির আহবান জানানো।
ইসলামী সভ্যতাকে বিকৃতভাবে পেশ করা।
ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত ধ্বংসাত্মক আন্দোলনগুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করা এবং এ আন্দোলনগুলোকে সংস্কারমূলক আন্দোলন দাবী করা।
প্রাচীন সভ্যতাগুলোকে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা করা।
পাশ্চাত্যের ধর্মহীন আইনকানুন ও ধর্মহীন শিক্ষার কারিকুলাম আমদানী করা এবং নিজেদের কর্মকাণ্ডে পাশ্চাত্যের ধারা চালু করা।
নতুন প্রজন্মকে ধর্মহীন প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলা।
নিছক বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এবং বিবেক ও অভিজ্ঞতার শাসনাধীনে মানবজীবন প্রতিষ্ঠিত হবে।
আধ্যাত্মিক জগৎ ও বস্তুজগতের মধ্যে দুর্ভেদ্য ব্যবধান তৈরী করা। তাদের দৃষ্টিতে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ নেতিবাচক মূল্যবোধ।
ধর্মকে রাজনীতি থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন রাখা এবং নিরেট বস্তুবাদী ভিত্তির উপর জীবন প্রতিষ্ঠিত করা।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে pragmatism (সুবিধাবাদ) প্রতিষ্ঠা করা।
শাসন, রাজনীতি ও নীতি নৈতিকতার ক্ষেত্রে ম্যাকিয়াভেলীর সূত্র অনুসরণ করা।
অশ্লীলতা ও চারিত্রিক অবক্ষয় ছড়িয়ে দেয়া এবং পারিবারিক ভিত ভেঙ্গে দেয়া। কারণ পরিবার হচ্ছে সামাজিক বন্ধনের প্রথম বীজ।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও মিশনারী সংস্থাগুলোর অপচেষ্টায় আরব ও মুসলিম বিশ্বে প্রচারিত ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাসগুলোর প্রধান কাজ হচ্ছে -
ইসলাম, কুরআন ও নবুয়তের মূলে আঘাত করা।
এ দাবী করা যে, ইসলামের আবেদন নিঃশেষ হয়ে গেছে। ইসলাম কিছু আধ্যাত্মিক পূজা-অর্চনা ছাড়া কিছু নয়।
এ দাবী করা যে, ইসলামী ফিকহ বা ইসলামী আইন শাস্ত্র রোমান আইন থেকে উদ্ভূত।
এই দাবী তোলা যে, ইসলাম বর্তমান সভ্যতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলাম মানুষকে পশ্চাৎমুখী হওয়ার আহবান জানায়।
পাশ্চাত্য চিন্তাধারার আলোকে নারীমুক্তির আহবান জানানো।
ইসলামী সভ্যতাকে বিকৃতভাবে পেশ করা।
ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত ধ্বংসাত্মক আন্দোলনগুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করা এবং এ আন্দোলনগুলোকে সংস্কারমূলক আন্দোলন দাবী করা।
প্রাচীন সভ্যতাগুলোকে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা করা।
পাশ্চাত্যের ধর্মহীন আইনকানুন ও ধর্মহীন শিক্ষার কারিকুলাম আমদানী করা এবং নিজেদের কর্মকাণ্ডে পাশ্চাত্যের ধারা চালু করা।
নতুন প্রজন্মকে ধর্মহীন প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলা।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে সেকুলারিজম ধর্মহীনতা বিকাশের কোনো কারণ যদি থেকেও থাকে, কোনো মুসলিম দেশে তা বিকাশের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কেননা কোনো খ্রিস্টানকে যখন মানবরচিত সিভিল ল' দিয়ে শাসন করা হয় তখন সে বিরক্ত হয় না। কারণ এতে করে সে এমন কোনো কিছুকে অকেজো করছে না যা মান্য করা তার ধর্ম তার উপর আবশ্যক করে দিয়েছেঃ কেননা তাঁর ধর্মে জীবনবিধান হিসেবে কিছু অবশিষ্ট নেই। কিন্তু মুসলিমের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। মুসলিমের ঈমানই তাঁকে আল্লাহর আইনের শাসন গ্রহণে বাধ্য করে।
তাছাড়া - যেমন ড. ইউসুফ আল-কারাদাভী বলেন- ধর্ম থেকে রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন রাখা হলেও খ্রিস্টান ধর্ম তার প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতাতে অটুট থাকবে এবং খ্রিস্টান ধর্মরক্ষী পোপ, ফাদার, মাদার ও ধর্মপ্রচারকগণ বিনা প্রতিবন্ধকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। পক্ষান্তরে মুসলিম দেশে যদি এ মতবাদ চালু করা হয় তাহলে ইসলাম শক্তিহীন ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে। কারণ ইসলাম কোনো ব্যক্তির জন্য পোপ, যাজক, এক্লিউরিস-এর মত আধিপত্য অনুমোদন করে না। ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান (রাদিআল্লাহু আনহু) ঠিকই বলেছেন- “আল্লাহ শাসককে দিয়ে যা বাস্তবায়ন করান, কুরআন দিয়ে তা বাস্তবায়ন করান না।”
তাছাড়া - যেমন ড. ইউসুফ আল-কারাদাভী বলেন- ধর্ম থেকে রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন রাখা হলেও খ্রিস্টান ধর্ম তার প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতাতে অটুট থাকবে এবং খ্রিস্টান ধর্মরক্ষী পোপ, ফাদার, মাদার ও ধর্মপ্রচারকগণ বিনা প্রতিবন্ধকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। পক্ষান্তরে মুসলিম দেশে যদি এ মতবাদ চালু করা হয় তাহলে ইসলাম শক্তিহীন ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে। কারণ ইসলাম কোনো ব্যক্তির জন্য পোপ, যাজক, এক্লিউরিস-এর মত আধিপত্য অনুমোদন করে না। ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান (রাদিআল্লাহু আনহু) ঠিকই বলেছেন- “আল্লাহ শাসককে দিয়ে যা বাস্তবায়ন করান, কুরআন দিয়ে তা বাস্তবায়ন করান না।”
প্রথমতঃ গির্জার সাথে শত্রুতা। দ্বিতীয়ত ধর্মের সাথে শত্রতা, চাই সে ধর্ম বিজ্ঞানের পক্ষে অবস্থান নিক অথবা বিজ্ঞানের বিপক্ষে অবস্থান নিক।
আলফ্রেড ওয়াইট হু বলেন : “যে ইস্যুতেই ধর্ম বিজ্ঞানের বিরোধিতা করেছে সেখানে বিজ্ঞানের অভিমতই সঠিক পাওয়া গেছে এবং ভুল সবর্দা ধর্মের মিত্র।” যদি এ উক্তিটি ইউরোপে প্রচলিত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে সঠিক হয়েও থাকে, ইসলামের ব্যাপারে এ বক্তব্য সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যাত এবং কোনো বিবেচনায় সঠিক নয়। কারণ ইসলাম ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণিত তত্ত্বগুলোর মাঝে কোনো সংঘর্ষ নেই। ইসলাম ও বাস্তব বিজ্ঞানের মাঝে কখনো কোনো বিরোধ বাঁধেনি, খ্রিস্টান ধর্মের সাথে যেরূপ বিরোধ বেঁধেছিল।
“বিজ্ঞান ও ধর্মের মাঝে শত্রুতা” এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাপকতা প্রদান, যাতে এর আওতায় ইসলামও এসে যায়। অথচ ইসলাম গির্জার ন্যায় জীবন ও বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। বরং অভিজ্ঞতাবাদ পদ্ধতি (empirical method) প্রয়োগে ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে ইসলামই ছিল অগ্রণী।
আখিরাতকে অস্বীকার করা এবং আখিরাতের জন্য আমল না করা এবং এ বিশ্বাস রাখা যে, ভোগ ও উপভোগের জন্য দুনিয়ার জীবনই একক ক্ষেত্র।
আলফ্রেড ওয়াইট হু বলেন : “যে ইস্যুতেই ধর্ম বিজ্ঞানের বিরোধিতা করেছে সেখানে বিজ্ঞানের অভিমতই সঠিক পাওয়া গেছে এবং ভুল সবর্দা ধর্মের মিত্র।” যদি এ উক্তিটি ইউরোপে প্রচলিত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে সঠিক হয়েও থাকে, ইসলামের ব্যাপারে এ বক্তব্য সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যাত এবং কোনো বিবেচনায় সঠিক নয়। কারণ ইসলাম ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণিত তত্ত্বগুলোর মাঝে কোনো সংঘর্ষ নেই। ইসলাম ও বাস্তব বিজ্ঞানের মাঝে কখনো কোনো বিরোধ বাঁধেনি, খ্রিস্টান ধর্মের সাথে যেরূপ বিরোধ বেঁধেছিল।
“বিজ্ঞান ও ধর্মের মাঝে শত্রুতা” এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাপকতা প্রদান, যাতে এর আওতায় ইসলামও এসে যায়। অথচ ইসলাম গির্জার ন্যায় জীবন ও বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। বরং অভিজ্ঞতাবাদ পদ্ধতি (empirical method) প্রয়োগে ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে ইসলামই ছিল অগ্রণী।
আখিরাতকে অস্বীকার করা এবং আখিরাতের জন্য আমল না করা এবং এ বিশ্বাস রাখা যে, ভোগ ও উপভোগের জন্য দুনিয়ার জীবনই একক ক্ষেত্র।
সেকুলারিজম (ধর্মহীনতা) মানব প্রকৃতির একটি বিশেষ দিককে উপেক্ষা করে। দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে মানুষের সৃষ্টি। ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষের দেহের চাহিদা পূরণের উপর গুরুত্বারোপ করে। কিন্তু আত্মার চাহিদার প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করে না।
পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ মতবাদটির উৎপত্তি হয়েছে। আমরা প্রাচ্যবাসীদের নিকট এটি একটি সম্পূর্ণ অপরিচিত অজানা-অচেনা চিন্তাধারা বৈ কিছু নয়।
ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলে। যার ফলে ব্যক্তিতন্ত্র, জাতিভেদ তথা উঁচুনীচু বৈষম্য, বর্ণবৈষম্য, মতবাদভিত্তিক বিভেদ, গোত্রীয় বিভেদ, জাতীয়তাভিত্তিক বিভেদ, দলাদলি, শ্রেণী বৈষম্য ইত্যাদির উন্মেষ ঘটে।
এই মতবাদ নাস্তিকতা, পাশবিকতা, বিচ্ছিন্নতা, দুর্নীতি, প্রজন্মের বিনাশ ইত্যাদির প্রসার ঘটায়।
ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদেরকে পাশ্চাত্যের বিবেক দিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করে। যার ফলে আমরা নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশাকে নিন্দা করব না। আমরা মুসলিম সমাজের স্বভাব-চরিত্রকে ভূলুণ্ঠিত করব এবং অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য সমাজের রুদ্ধদারকে খুলে দেব। ধর্মনিরপেক্ষতা সুদী কারবারের বৈধতা দেয় এবং সিনেমা, নাটক, ইত্যাদিকে শিল্প হিসেবে অতি মর্যাদা দেয়। ধর্মনিরপেক্ষতার ছায়াতলে প্রত্যেক মানুষ অন্যের ক্ষতি করে হলেও নিজের স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াস চালায়।
ধর্মনিরপেক্ষতা পাশ্চাত্য সমাজের সমস্যাগুলো আমাদের সমাজে টেনে আনে। যেমন পরকালের হিসাবনিকাশকে অস্বীকার করা। যার ফলশ্রুতিতে মানুষ ধর্মীয় ভাবধারার বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত হয়ে জাগতিক রিপু যেমন লোভলালসা, ব্যক্তিস্বার্থ, অস্তিত্বের লড়াই ইত্যাদি দ্বারা তাড়িত হয়ে জীবনযাপন করে; সেখানে আত্মার বিবেচনা একেবারে শূন্য।
ধর্মনিরপেক্ষতা বিকাশ ঘটলে জাগতিক জ্ঞানের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়; যে জ্ঞান অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ নির্ভর। গায়েবী বিষয়াবলীকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন আল্লাহর উপর ঈমান, পুনরুত্থান, পূণ্য ও পাপ। এর ফলে এমন এক সমাজের উদ্ভব ঘটে যে সমাজের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে- দুনিয়ার ভোগ ও সস্তা সব খেল-তামাশা।
শেষ কথা:
পূর্বের আলোচনা থেকে এ কথা পরিস্কার যে - রাষ্ট্রীয় জীবন ও সামাজিক জীবন থেকে ধর্মকে বহিষ্কার করে জাগতিক জ্ঞান ও বিবেকবুদ্ধির ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার আহবানই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মতে, ধর্ম মানুষের মনের খাঁচায় বন্দি থাকবে, খুবই সীমাবদ্ধ পরিসরে ধর্মকে প্রকাশ করা যাবে। অথচ যে মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তকে আইন হিসেবে গ্রহণ করে না এবং আল্লাহ যা কিছু হারাম করেছেন সেগুলোকে সে নিষিদ্ধ মনে করে না- ইসলামের দৃষ্টিতে সে মুরতাদ। দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে তার যুক্তি খণ্ডন করা ও তাকে তাওবা করার আহ্বান জানানো ওয়াজিব- যেন সে ইসলামে ফিরে আসার সুযোগ পায়।
তবে এই বিষয়ে সমাজে কোন প্রকার অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না, কাউকে ব্যক্তিগতভাবে কোন ফাতওয়া দেয়া যাবে না, এসব বিষয়ে ফাতওয়া দেবার যোগ্যতা ও অধিকার আছে শুধুমাত্র শরীয়া বোর্ডের। এই বিষয়ে আইন প্রয়োগের দায়িত্বও সরকারের। ব্যক্তিগতভাবে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।
পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ মতবাদটির উৎপত্তি হয়েছে। আমরা প্রাচ্যবাসীদের নিকট এটি একটি সম্পূর্ণ অপরিচিত অজানা-অচেনা চিন্তাধারা বৈ কিছু নয়।
ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলে। যার ফলে ব্যক্তিতন্ত্র, জাতিভেদ তথা উঁচুনীচু বৈষম্য, বর্ণবৈষম্য, মতবাদভিত্তিক বিভেদ, গোত্রীয় বিভেদ, জাতীয়তাভিত্তিক বিভেদ, দলাদলি, শ্রেণী বৈষম্য ইত্যাদির উন্মেষ ঘটে।
এই মতবাদ নাস্তিকতা, পাশবিকতা, বিচ্ছিন্নতা, দুর্নীতি, প্রজন্মের বিনাশ ইত্যাদির প্রসার ঘটায়।
ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদেরকে পাশ্চাত্যের বিবেক দিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করে। যার ফলে আমরা নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশাকে নিন্দা করব না। আমরা মুসলিম সমাজের স্বভাব-চরিত্রকে ভূলুণ্ঠিত করব এবং অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য সমাজের রুদ্ধদারকে খুলে দেব। ধর্মনিরপেক্ষতা সুদী কারবারের বৈধতা দেয় এবং সিনেমা, নাটক, ইত্যাদিকে শিল্প হিসেবে অতি মর্যাদা দেয়। ধর্মনিরপেক্ষতার ছায়াতলে প্রত্যেক মানুষ অন্যের ক্ষতি করে হলেও নিজের স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াস চালায়।
ধর্মনিরপেক্ষতা পাশ্চাত্য সমাজের সমস্যাগুলো আমাদের সমাজে টেনে আনে। যেমন পরকালের হিসাবনিকাশকে অস্বীকার করা। যার ফলশ্রুতিতে মানুষ ধর্মীয় ভাবধারার বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত হয়ে জাগতিক রিপু যেমন লোভলালসা, ব্যক্তিস্বার্থ, অস্তিত্বের লড়াই ইত্যাদি দ্বারা তাড়িত হয়ে জীবনযাপন করে; সেখানে আত্মার বিবেচনা একেবারে শূন্য।
ধর্মনিরপেক্ষতা বিকাশ ঘটলে জাগতিক জ্ঞানের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়; যে জ্ঞান অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ নির্ভর। গায়েবী বিষয়াবলীকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন আল্লাহর উপর ঈমান, পুনরুত্থান, পূণ্য ও পাপ। এর ফলে এমন এক সমাজের উদ্ভব ঘটে যে সমাজের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে- দুনিয়ার ভোগ ও সস্তা সব খেল-তামাশা।
শেষ কথা:
পূর্বের আলোচনা থেকে এ কথা পরিস্কার যে - রাষ্ট্রীয় জীবন ও সামাজিক জীবন থেকে ধর্মকে বহিষ্কার করে জাগতিক জ্ঞান ও বিবেকবুদ্ধির ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার আহবানই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মতে, ধর্ম মানুষের মনের খাঁচায় বন্দি থাকবে, খুবই সীমাবদ্ধ পরিসরে ধর্মকে প্রকাশ করা যাবে। অথচ যে মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তকে আইন হিসেবে গ্রহণ করে না এবং আল্লাহ যা কিছু হারাম করেছেন সেগুলোকে সে নিষিদ্ধ মনে করে না- ইসলামের দৃষ্টিতে সে মুরতাদ। দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে তার যুক্তি খণ্ডন করা ও তাকে তাওবা করার আহ্বান জানানো ওয়াজিব- যেন সে ইসলামে ফিরে আসার সুযোগ পায়।
তবে এই বিষয়ে সমাজে কোন প্রকার অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না, কাউকে ব্যক্তিগতভাবে কোন ফাতওয়া দেয়া যাবে না, এসব বিষয়ে ফাতওয়া দেবার যোগ্যতা ও অধিকার আছে শুধুমাত্র শরীয়া বোর্ডের। এই বিষয়ে আইন প্রয়োগের দায়িত্বও সরকারের। ব্যক্তিগতভাবে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।
“তোমরা কি মনে করে নিয়েছে যে তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করবে?” (সূরা আল বাকারা ২ : ২১৪)
“রব্বিশরহ লী সদরী ওয়া ইয়াসিরলি আমরী ওয়াহলুল ওদাতাম মিললিসা-নী ইয়াফহু ত্বওলী”।
হে আমার রব্ব! আমার বক্ষ (হৃদয়) খুলে দাও। আমার কাজকে সহজ করে দাও। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও। যাতে ওরা (লোকেরা) আমার কথা বুঝতে পারে। (সূরা ত্ব-হা ২০ : ২৫-২৮)
“রব্বিশরহ লী সদরী ওয়া ইয়াসিরলি আমরী ওয়াহলুল ওদাতাম মিললিসা-নী ইয়াফহু ত্বওলী”।
হে আমার রব্ব! আমার বক্ষ (হৃদয়) খুলে দাও। আমার কাজকে সহজ করে দাও। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও। যাতে ওরা (লোকেরা) আমার কথা বুঝতে পারে। (সূরা ত্ব-হা ২০ : ২৫-২৮)
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, কবীরা গুনাহ হল ও যে সব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যে সব গুনাহের কারণে কুরআন ও হাদীসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে তাকেও কবীরা গুনাহ বলে।
“যে সকল বড় গুনাহ সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সে সব বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের এটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।” (সূরা নিসা ৪: ৩১)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ যারা কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে তাদেরকে দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, কারণ ছগীরা গুনাহ বিভিন্ন নেক আমল যেমন- সলাত, সিয়াম, জুমু'আ, রমাদান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে।
রসুল (ﷺ) বলেন : “পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমুআ হতে অন্য জুমু'আ এবং এক রমাদান হতে অন্য রমাদান-এর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করিয়ে দেয়, যদি বড় গুনাহ হতে বেঁচে থাকা যায়।” (সহীহ মুসলিম)
উল্লেখিত হাদীসের দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকা অতীব জরুরী। যদিও বিশেষভাবে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোন কোন কবীরা গুনাহ মাপ করানো যেতে পারে। আর একই গুনাহ বার বার করলে তা ছগীরা থাকে না, কবীরা গুনাহ হয়ে যায়। অতএব কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকতে হলে তা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামন (রা.) বলেন - লোকেরা রসূল (ﷺ) -কে ভাল ভাল বিষয়গুলি জিজ্ঞাসা করত এবং আমি খারাপ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এজন্য যে, যাতে আমাকে খারাপ বিষয়গুলো স্পর্শ করতে না পারে। এসব কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানা থাকলে হয়ত এ গুনাহ হতে বেঁচে থাকাও সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
“যে সকল বড় গুনাহ সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সে সব বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের এটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।” (সূরা নিসা ৪: ৩১)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ যারা কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে তাদেরকে দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, কারণ ছগীরা গুনাহ বিভিন্ন নেক আমল যেমন- সলাত, সিয়াম, জুমু'আ, রমাদান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে।
রসুল (ﷺ) বলেন : “পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমুআ হতে অন্য জুমু'আ এবং এক রমাদান হতে অন্য রমাদান-এর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করিয়ে দেয়, যদি বড় গুনাহ হতে বেঁচে থাকা যায়।” (সহীহ মুসলিম)
উল্লেখিত হাদীসের দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকা অতীব জরুরী। যদিও বিশেষভাবে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোন কোন কবীরা গুনাহ মাপ করানো যেতে পারে। আর একই গুনাহ বার বার করলে তা ছগীরা থাকে না, কবীরা গুনাহ হয়ে যায়। অতএব কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকতে হলে তা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামন (রা.) বলেন - লোকেরা রসূল (ﷺ) -কে ভাল ভাল বিষয়গুলি জিজ্ঞাসা করত এবং আমি খারাপ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এজন্য যে, যাতে আমাকে খারাপ বিষয়গুলো স্পর্শ করতে না পারে। এসব কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানা থাকলে হয়ত এ গুনাহ হতে বেঁচে থাকাও সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
কাবীরা গুনাহ ১ - আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা
শিরক দুই প্রকার :
১. শিরকে আকবার, আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করা ইত্যাদি। যদি কোন ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শিরক।
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তার সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” (সুরা নিসা ৪ : ৪৮)।
২. শিরকে আসগার বা ছোট শিরক : রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন :
“অতএব দুভোর্গ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সলাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।” (সূরা মাউন ১০৭ : ৪-৬)
রসূল (ﷺ) বলেন, আল্লাহ বলেন : “আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর এ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শিরকে ছেড়ে দেই।” (সহীহ মুসলিম)
কাবীরা গুনাহ ২ - সলাত ত্যাগ করা
আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন : “তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সলাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হল, সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।” (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৫৯-৬০)
হাদীসে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন : “কোন মু'মিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সলাত ত্যাগ করা।” (সহীহ মুসলিম)।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন : “আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল সলাত, যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফির হয়ে গেল।” (আহমাদ)
কাবীরা গুনাহ ৩ - যাকাত আদায় না করা
আল্লাহ বলেন :
“আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে। এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করবে সে সকল ধন-সম্পদ কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩: ১৮০)
কবীরা গুনাহ ৪ - সঙ্গত কারণ ছাড়া রমাদানের সওম ভঙ্গ করা বা না রাখা
রসূল (ﷺ) বলেন : “ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রসূল।
(২) সলাত প্রতিষ্ঠা করা
(৩) যাকাত দেয়া
(৪) হাজ্জ করা
(৫) রমাদান মাসের সওম রাখা।”
(সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৫ - সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হাজ্জ না করা
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন :
“আর এ ঘরের হাজ্জ করা সে সকল মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য যারা সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নয়।” (সূরা আলে-ইমরান ৩: ৯৭)।
কবীরা গুনাহ ৬ - মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তা বলে দিব না? আর তা হল আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।” (সহীহ বুখারী)
কবীৱা গুনাহ ৭ - ব্যভিচার করা
আল্লাহ বলেন : “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও অতি মন্দ পথ।” (সূরা ইসরা ১৭ : ৩২)।
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেন : “যখন কোন মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করে। যখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।” (তিরমিযী)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেন : আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চক্ষুর ব্যভিচার হল দৃষ্টি এবং তার দুই কানের ব্যভিচার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হল কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হল স্পর্শ করা ও পায়ের ব্যভিচার হল পদক্ষেপ আর অন্তরে ব্যভিচারের আশা ও ইচ্ছার সঞ্চার হয়, অবশেষে লজ্জাস্থান একে সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৮ - মানুষ হত্যা করা
আল্লাহ বলেন :
“এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং লাঞ্চিত অবস্থায় সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সঙ্কর্ম করে।” (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৬৮-৭০)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন।
কবীরা গুনাহ ৯ - পেশাব থেকে বেঁচে না থাকা
ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : “নবী কারীম (ﷺ) দু'টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন এবং বলেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন বড় ধরনের কাজের জন্যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজনের অভ্যাস ছিল সে প্রসাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অন্য জন মানুষের একজনের দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়াত।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
আল্লাহ বলেন : “এবং তোমার কাপড়কে তুমি পবিত্র কর।” (সূরা আল মুদ্দাসসির ৭৪ : ৪)।
নোট : কাপড়ে ও শরীরে যেন পেশাব না লাগে। যদি কোন কারণে লেগে যায় তাহলে তা সাথে সাথে পবিত্র করে নেয়া উচিত।
কবীরা গুনাহ ১০ - সমকাম
এক স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করা আল্লাহ বলেন :
“এবং লুতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী বাদ দিয়ে পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।” (সূরা আ'রাফ ৭ : ৮০-৮১)
রসূল (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যে কোন পুরুষের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।” (তিরমিযী)
কবীরা গুনাহ ১১ - সুদ
আল্লাহ বলেন :
“যারা সুদ খায় তারা দাঁড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়।” (সূরা বাকারা ২: ২৭৫)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেছেন : “সুদের গুনাহের ৭৩টি স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হল নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্ন স্তর হলো কোন মুসলিমের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা।” (হাকেম, আল জামে)।
কবীরা গুনাহ ১২ - আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নিকট আত্মীয়দের পরিত্যাগ করা
আল্লাহ বলেন :
“ক্ষমতা লাভের পর সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন করেছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ২২-২৩)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেন : “আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ১৩ - এতিমের সম্পদ আত্মসাত করা
আল্লাহ বলেন :
যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।” (সূরা নিসা ৪:১০)
কীৱাগুনাহ ১৪ - যাদু
আল্লাহ বলেন :
“কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।” (সূরা বাকারা ২ : ১০২)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেছেন : “তোমরা সাতটি ধবংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রসূলুল্লাহ (ﷺ) ধবংসাত্মক বিষয়গুলি কী? তিনি জবাবে বলেন :
১. আল্লাহর সাথে শরিক করা
২. যাদু করা
৩. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন
৪. সুদ খাওয়া
৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা
৬. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা
৭. সতী সাধবী মু'মিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া।”
(সহীহ বুখারী : ২৫৬)
কবীরা গুনাহ ১৫ - দুনিয়ার লক্ষ্যে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা এবং সত্যেকে গোপন করা
আল্লাহ বলেন :
“আমি যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয়। কিন্তু যারা তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। তাদেরই প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা বাকারা ২: ১৫৯-১৬০)
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি জ্ঞানীদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে অথবা মূর্থের সাথে বিতর্কের উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।” (ইবনে মাজাহ)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি দ্বীনি এলেম শিক্ষা করল ধন সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (আবু দাউদ)
কবীরা গুনাহ ১৬ - আল্লাহ এবং তার রসূলের উপর মিথ্যা আরোপ করা
আল্লাহ বলেন :
“যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কিয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেন।” (সূরা যুমার ৩৯ : ৬০)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন তার অবস্থান জাহান্নাম করে নেয়।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ১৭ - শাসক কর্তৃক জনগণকে ধোকা দেয়া ও অত্যাচার করা
আল্লাহ বলেন :
“শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আশ-শূরা ৪২ : ৪২)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে আমাদেরকে ধোকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সহীহ মুসলিম) “অত্যাচার কিয়ামতের দিন চরম অন্ধকার হবে।” (সহীহ বুখারী) “যে শাসক তার অধীনস্থদের ধোকা দেয়, তার ঠিকানা জাহান্নাম।” (ইবনে আসাকির, আল জামে)
যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান, অতঃপর সে তাদের অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের সময় নিজেকে গোপন করে রাখে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার অভাব দূরকরণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন না।” (আবু দাউদ)
কবীরা গুনাহ ১৮ - যুলুম-অত্যাচার করা
আল্লাহ বলেনঃ
“অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্য স্থল কোথায়।” (সূরা আশ শুআরা ২৬ : ২২৭)
নবী (ﷺ) বলেন : “তোমরা যুলুম করা থেকে বেঁচে থাক, কারণ যুলুম কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকারে পরিণত হবে” (সহীহ মুসলিম)।
নোট : যুলুম বিভিন্নভাবে হতে পারে। মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা, অন্যায়ভাবে প্রহার করা, গালি দেয়া, তাদের উপর বাড়াবাড়ি করা, দুর্বলদের উপর চড়াও হওয়া ও অন্যান্য যে সকল কাজে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সবই যুলুম।
কবীরা গুনাহ ১৯ - চাদাবাজী ও অন্যায় টোল আদায়
নোট : বাস্তবিক পক্ষে এটি এক ধরনের ডাকাতি, কারণ এতে মানুষের উপর এক ধরনের জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। চাঁদা উসূলকারী, লেখক এবং গ্রহণকারী গুনাহের মধ্যে সমানভাবে শামিল। এরা সবাই হারাম ভক্ষণকারী। চাঁদাবাজ মূলতঃ যুলুমের বড় সহযোগি শুধু তাই নয় বরং সে যুলুমকারী ও অত্যাচারী।
আল্লাহ বলেন :
“ব্যবস্থা নেয়া হবে শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আশ-শুরা ৪২ : ৪২)
নবী কারীম (ﷺ) বলেন : “তোমরা কি জান প্রকৃত দরিদ্র কে আমার উম্মতের মধ্যে? প্রকৃত দরিদ্র ঐ ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক সলাত, সওম, যাকাত, নিয়ে উপস্থিত হবে। তবে সে দুনিয়াতে কাউকে হত্যা করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কাউকে গাল-মন্দ করেছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে মেরেছে অথবা কাউকে প্রহার করেছে। কিয়ামতের দিন এ ব্যক্তির নেক আমল বা সওয়াব তাদের (তার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে) দেয়া হবে। যদি তার নেক আমলের সওয়াব পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায় তখন তাদের গুনাহগুলোকে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহীহ মুসলিম)।
কবীরা গুনাহ ২০ - আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারে সুযোগ দেয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন, (১) যে মদ তৈরী করে (২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে (৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারে করতে সুযোগ দেয়।” (আহমাদ)।
নোট : দাইয়ুস ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে।
কবীরা গুনাহ ২১ - গর্ব, অহংকার, আত্মম্ভরিতা, হটকারীতা
আল্লাহ বলেন :
“নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা নাহল ১৬ : ২৩)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যার অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক ব্যক্তি বললেন, কোন ব্যক্তি চায় তার জামা কাপড়, জুতা-সেন্ডেল সুন্দর হোক তাহলে এটাও কি অহংকার? রসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। (অথাৎ এগুলি অহংকারের অন্তর্ভুক্ত নয়) অহংকার হলো সত্যকে গোপন করা আর মানুষকে অবজ্ঞা করা।” (সহীহ মুসলিম)
আল্লাহ বলেন :
“অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে অহংকারের সাথে পদচারণা করো না। কখনো আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান ৩১ : ১৮)
রসূল বলেন : “আল্লাহ বলেন মহত্ব আমার পরিচয় আর অহংকার আমার চাদর, যে ব্যক্তি এ দুটি নিয়ে টানা হেচড়া করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ২২ - হারাম খাওয়া, তা যে কোন উপায়ে হোক না কেন
আল্লাহ বলেনঃ
“তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।” (সূরা আল বাকারা ২ : ১৮৮)
রসূল (ﷺ) বলেনঃ “কোন ব্যক্তি দীর্ঘপথ অতিক্রম করলো, বিক্ষিপ্ত চুল, ধূলা বালিযুক্ত শরীর, দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দু'আ করতে থাকে আর বলতে থাকে। হে প্রভু! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম এবং হারাম দ্বারা শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে তার দু’আ কবুল করা হবে?” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ২৩ - আত্মহত্যা করা
আল্লাহ বলেন :
“তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন কিংবা যুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে তাকে খুব শীঘ্র আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।” (সূরা আন-নিসা ৪ : ২৯-৩০)
রসূল (ﷺ) বলেন : “হত্যা করে সে উক্ত অস্ত্র দ্বারা দোযখের আগুনে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। সে চিরদিন এই জাহান্নামে অবস্থান করবে। যে বিষ পান করে নিজেকে হত্যা করল সে চিরদিন জাহান্নামে অবস্থানকালে হত্যা করতে থাকবে। আর যে নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে সেও চিরদিন জাহান্নামে অবস্থান করবে এবং পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ২৪ - অধিকাংশ সময় মিথ্যা বলা
নবী (ﷺ) বলেন : “মিথ্যা পাপাচারের দিকে পথ দেখায়। আর পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে আল্লাহর নিকট মিথুক হিসাবে তার নাম লেখা হয়।” (সহীহ বুখারী)
আল্লাহ বলেনঃ
“এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী।” (সূরা আলে-ইমরান ৩: ৬১)
কবীরা গুনাহ ২৫ - মানব রচিত বিধানে দেশ পরিচালনা ও বিচার করা
আল্লাহ বলেন : “এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা কাফির। এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা যালিম। যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা ফাসিক।” (সূরা আল-মায়িদা ৫: ৪৪-৪৭)
কবীরা গুনাহ ২৬ - বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করা
আল্লাহ বলেন :
“তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের কাছে পেশ করো না।” (সূরা বাকারা ২: ১৮৮)
রসূল (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন।” (আহমাদ)
“যদি কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কোন বিষয় সুপারিশ করে, পরে তার জন্য হাদিয়া বা উপঢৌকন প্রেরণ করা হয়, সে তা গ্রহণ করে। তা হলে উক্ত ব্যক্তি এক মারাত্মক ধরনের সুদের দ্বারে প্রবেশ করল।” (আহমদ)
কবীরা গুনাহ ২৭ - মহিলা পুরুষের বেশ এবং পুরুষ মহিলার বেশ ধারণ করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন এবং মহিলাদের বেশ ধারণকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন।” (আবুদাউদ)
কবীরা গুনাহ ২৮ - মিথ্যা সাক্ষী দেয়া
আল্লাহ বলেন :
“তারা মিথ্যা ও বাতিল কাজে যোগদান করে না।” (সূরা ফুরকান ২৫ : ৭২)
রসূল (ﷺ) বলেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব না? তা হল আল্লাহর সাথে শিরক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ২৯ - মাদক দ্রব্য সেবন করা
আল্লাহ বলেন :
“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।” (সূরা আল-মায়িদা ৫ : ৯০)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হল মদ আর সকল প্রকার মদ হারাম।” (সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ মদ পানকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, প্রস্তুতকারী, বহনকারী এবং যার জন্য বহন করা হয় সকলকে অভিসম্পাত দিয়েছেন।” (আবু দাউদ)
কবীরা গুনাহ ৩০ - জুয়া খেলা
আল্লাহ বলেন :
“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব তোমরা এগুলো থেকে বেঁচে থাক- যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।” (সূরা মায়িদা ৫:৯০)
কবীরা গুনাহ ৩১ - সতী সাধ্বীনারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া
আল্লাহ বলেন : “যারা সতী সাধ্বী ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সূরা আন নূর ২৪ ও ২৩)
কবীরা গুনাহ ৩২ - গনীমতের মাল আত্নসাৎ করা
আল্লাহ বলেন :
“আর যে ব্যক্তি গনীমতের মালে খিয়ানত করল সে কিয়ামতের দিবসে সেই খিয়ানতকৃত বস্তু বহন করে উপস্থিত হবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৬১)
নোটঃ শুধু যুদ্ধলব্ধ সম্পদে নয় এমন সকল সম্পদ যাতে অন্যের অধিকার আছে তা আত্নসাৎ বা তাতে খিয়ানত এ শাস্তির অন্তর্ভুক্ত।
কবীরা গুনাহ ৩৩ – চুরি করা
আল্লাহ বলেন :
“যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও এটা তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর নির্ধারিত আদর্শ দন্ড, আল্লাহ পরাক্রান্ত জ্ঞানময়।” (সূরা মায়িদা ৫: ৩৮)
বিশেষ নোটঃ এই শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের। কেউ এই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।
কবীরা গুনাহ ৩৪ - ডাকাতি করা
আল্লাহ বলেন :
“আর যারা আল্লাহ, তার রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হবে, অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে। কিংবা দেশান্তর করা হবে। এটা হল তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালের তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সূরা আল-মায়িদা ৫: ৩৩)
নোট : অর্থাৎ মানুষের সম্পদ ছিনতাই এবং চুরি করা অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের থেকে নিয়ে নেয়া। বা তাদের পিছু নিয়ে তাদের ইজ্জত সম্রম। বিনষ্ট করা। এই শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের। কেউ এই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।
কবীরা গুনাহ ৩৫ - মিথ্যা শপথ
নবী কারীম (ﷺ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে এবং তা দ্বারা কোন মুসলিমের সম্পদকে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত।” (সহীহ বুখারী)
“কবীরা গুনাহ হল আল্লাহর সাথে শরীক করা। মাতা-পিতার নাফরমানী করা, হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা”। (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৩৬ - হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ে গুনাহগার
রসূল (ﷺ) বলেন : “হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।” (আহমাদ)
নোট : কেউ কারো তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিবাহ করে যে, সে সহবাস করে আবার তালাক দিয়ে দিবে, যাতে প্রথম স্বামী পুণরায় বিবাহ করতে পারে, এই ব্যক্তিকে মুহাল্লিল বা হালালকারী বলে। এবং শুধু মাত্র কাগজ পত্রে বিয়ে দেখালে হবে না, সত্যি সত্যি বিয়ে হতে হবে।
কবীরা গুনাহ ৩৭ - আমানত খিয়ানত করা
আল্লাহ বলেন :
“ঈমানদারগণ আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে খিয়ানত করো না এবং জেনেশুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খিয়ানত করো না। (সূরা আনফাল ৮: ২৭)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যার আমানতদারী নাই, তার ঈমান নাই, আর যার প্রতিজ্ঞা পূরণ নাই তার ধর্ম নাই।” (আহমদ)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে হবে প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে নিফাকের একটি দোষ পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে ঐ দোষ বর্জন করবে (১) যখন তার নিকট আমানত রাখা হয় সে, খিয়ানত করে।” (সহীহ বুখারী)।
কবীরা গুনাহ ৩৮ - খোটা দেয়া
আল্লাহ বলেন :
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদাকাকে ধ্বংস করো না।” (সূরা বাকারা ২ : ২৬৪)
রসূল (ﷺ) বলেন : “তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কোন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে গুনাহ হতে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (১) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর (গিরার) নীচে ঝুলিয়ে দেয়, (২) খোটা দানকারী, যে কোন কিছু দান করে খোটা দেয় (৩) যে মিথ্যা শপথ করে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৩৯ - তাকদীরকে অস্বীকার করা
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : “যদি আল্লাহ আসমান ও যমীনের সকল অধিবাসীকে আযাব দেন তাহলে তার আযাব দেয়াটা কোন প্রকার অন্যায় হবে না। আর যদি দয়া করেন তবে তা তাদের আমলের তুলনায় অনেক বেশী হবে। যদি কোন ব্যক্তির নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আল্লাহ তার এ দান বিন্দু পরিমাণ ও গ্রহণ করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে আর এ কথা বিশ্বাস করবে যে, কোন ব্যক্তি সঠিক কাজ করল সে তা তাকদীর অনুযায়ী করেছে এটা ভুল করা তার জন্য নির্ধারিত ছিল না। আর যে ভুল করল এটা সঠিকভাবে করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদি তুমি এ বিশ্বাসের বাইরে মৃত্যুবরণ কর তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (কিতাবুস সুন্নাহ : ইবনে আবী আসিম আশ-শায়বানী)
কবীরা গুনাহ ৪০ - মানুষের নিকট অন্যের গোপন তথ্য ফাস করা
আল্লাহ বলেন :
“তোমরা মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বেড়াবে না।” (সূরা হুজুরাত ৪৯ : ১২)
রসুল (ﷺ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের লোকের কথা শ্রবণ করার চেষ্টা করে তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও, তাহলে কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত সীসা ঢালা হবে, আর যে ব্যক্তি কোন জীবজন্তুর ছবি অংকন করে তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাকে বলা হবে তুমি এ ছবিতে প্রাণ সঞ্চার কর, কিন্তু সে পারবে। আর যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন বর্ণনা করল যা সে দেখেনি তাকে শাস্তি হিসেবে দু'টি যবের দানাকে একত্রে জোড়া লাগাতে বলা হবে। কিন্তু তা সে মোটেই পারবে না।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৪১ - পরনিন্দা করা
আল্লাহ বলেন :
“আপনি এমন লোকের কথা মেনে নেবেন না, যে কসম খেয়ে বেড়ায় (এবং যে) অধম; যে নিন্দুক ও চোগলখোরি করে বেড়ায়।” (সূরা আল কলম ৬৮ : ১০-১১)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) দু'টি কবরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বললেন, এ কবরবাসীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে কোন বড় ব্যাপারে নয়, তাদের একজন এমন ব্যক্তি যে একের কথা অন্যের নিকট লাগাতো। (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৪২ - অভিশাপ করা
রসূল বলেন : “মুসলিমদের অভিশাপ করা অন্যায় এবং তাকে হত্যা করা কুফর।” (সহীহ বুখারী)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “কোন লোক যখন অন্য কাউকে অভিশাপ করে তখন অভিশাপটি আকাশে উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার জন্য আকাশের দরজাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর যমীনের দিকে অবতরণ করে। কিন্তু জমিনের দরজাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর অভিশাপটি ডানে বামে ঘুরতে থাকে। কোথাও যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে যার উপর করা হল তার নিকট যায়, যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর উপর প্রত্যাবর্তন করে।” (আবু দাউদ)
নোটঃ যে কারণেই হোক কোন মুসলিম ভাইয়ের উপর অভিশাপ করা সম্পূর্ণ হারাম। খারাপ দোষে দুষ্ট ব্যক্তিদের উপর তাদের দোষ উল্লেখ করে অভিশাপ করা যায়। যেমন অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, কাফিরদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, প্রাণীর ছবি অংকনকারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ ইত্যাদি।
কবীরা গুনাহ ৪৩ - গাদ্দারী করা, ওয়াদা পালন না করা
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : “চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে খাঁটি মুনাফিক হবে। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যতক্ষণ পর্যন্ত যে উক্ত অভ্যাস ত্যাগ না করে। যখন আমানত রাখার হয় সে খিয়ানত করে আর যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিজ্ঞা করে তখন গাদ্দারী করে আর যখন ঝগড়া করে তখন গালি দেয়।” (সহীহ বুখারী)
রসূল (ﷺ) বলেন : “প্রত্যেক ওয়াদা ভঙ্গকারীর জন্যে কিয়ামতের দিন একটি নিদর্শন থাকবে তার গাদ্দারীর পরিমাণ অনুযায়ী তাকে উচ্চ করা হবে। তবে জনগণের সাথে প্রতারণাকারী শাসকের চেয়ে বড় গাদ্দার আর কেউ হবে না।” (সহীহ মুসলিম)।
কবীরা গুনাহ ৪৪ - গণক ও জ্যোতির্বিদদের বিশ্বাস করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর নিকট আসলো এবং তারা যা বললো তা সত্য বলে গ্রহণ করলো সে মূলতঃ মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তাকেই অস্বীকার করলো।” (আহমাদ)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট আসলো তারপর তাকে ভাগ্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করল চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সলাত কবুল হবে। না।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৪৫ - কোন সাহাবীকে গালি দেয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিও না। যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তবুও তাদের কারো একটি মুঠি বা আধা মুঠি পরিমান দানের সমান হবে না।” (সহীহ বুখারী)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে গালি দেয় তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ।” (তাবারানী, আল জামে)
কবীরা গুনাহ ৪৬ - অন্যায় বিচার
রসূল (ﷺ) বলেন : “দু’জন বিচারক জাহান্নামে যাবে এবং একজন বিচারক জান্নাতে যাবে। যে বিচারক মূল সত্যকে উদঘাটন করে এবং তদনুসারে বিচার করে সে জান্নাতে যাবে। আর একজন বিচারকার্যে সত্যকে উদঘাটন করার পর জেনেশুনে অন্যায়ভাবে বিচার করছে সে জাহান্নামে যাবে। অথবা যে না। জেনেশুনে বিচার করে সে জাহান্নামে যাবে।” (জামে আত তিরমিযী)
কবীরা গুনাহ ৪৭ - স্বামীর অবাধ্য হওয়া
আল্লাহ বলেন :
“আর তাদের স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা অনুগত হয়ে যায় তবে তাদের জন্যে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপরে শ্রেষ্ঠ।” (সূরা নিসা ৪ : ৩৪)
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে আর স্ত্রী অস্বীকার করার ফলে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে তখন ঐ স্ত্রীর উপর ফিরিশতারা অভিশাপ করতে থাকে।” (সহীহ বুখারী)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যদি তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সিজদা করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পৃষ্ঠে থেকেও আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।” (আহমাদ)
সুতরাং তাদেরকে আল্লাহর ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সিজদা করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পিঠেও তাকে আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।” (আহমাদ, সহীহ আল জামে)
নোট : সুতরাং নারীদের কর্তব্য, তারা সর্বাবস্থায় স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হবে এবং তার অসন্তুষ্টি হতে বেঁচে থাকবে, কখনো স্বামীকে জৈবিক চাহিদা পূরণে বাধা দেবে না। তবে যদি শরয়ী কোন আপত্তি থাকে তবে যেমন - হায়েয। নেফাস অথবা ফরয সওম ইত্যাদি অবস্থায় শুধু সহবাস হতে নিষেধ করতে পারে। মহিলাদের জন্য কর্তব্য হল সর্বদা স্বামীর নিকট লজ্জাবতী হওয়া, তার আদেশের আনুগত্য করা, তার সকল প্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতে বিরত থাকা।
রসূল (ﷺ) বলেন : “আমি জান্নাতে উকি মেরে দেখি, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র এবং জাহান্নামে উকি মেরে দেখি, তার অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।” (সহীহ বুখারী)
নোট : অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম হাফিয শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, মহিলাদের আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি আনুগত্যের অভাব। স্বামীর অবাধ্যতা এবং পর্দাহীনতাই এর মূল কারণ। মহিলারা যখন ঘর থেকে বের হয় তখন সর্বোচ্চ সুন্দর পোশাক পরে বিশেষ সাজ-সজ্জা অবলম্বন করে, যা মানুষকে ফিনায় পড়তে বাধ্য করে। সে নিজে নিরাপদে থাকলেও মানুষ তার থেকে নিরাপদ থাকে না। রসূল কারীম (ﷺ) বলেনঃ “তোমরা মেয়েদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাদেরকে বাম পাজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাজরের হাড় সবচেয়ে বাকা হয়, যদি তুমি সোজা করতে চেষ্টা কর ভেঙ্গে যাবে, আর যদি ছেড়ে তাও তাহলে সর্বদা বাকা থাকবে। সুতরাং তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতে থাক।” (সহীহ বুখারী)।
নোট : তাদের সাথে সৎ ব্যবহার হল, আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া এবং নিষেধ কাজ হতে বিরত থাকতে আদেশ করা। এগুলি। তাদেরকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়। রসূল (ﷺ) বলেন : “মহিলারা হল আবরণীয়, তারা যখন ঘর হতে বের হয় তখন শয়তান তাদেরকে মাথা উচু করে দেখে। তারা যত বেশী ঘরের কোণে অবস্থান করবে ততই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।” (তিরমিযী, আল জামে)
রসূল (ﷺ) বলেন : “আমার পরে পুরুষদের উপর মহিলাদের মত ক্ষতিকর আর। কোন ফিত্না আমি রেখে যাইনি।” (সহীহ মুসলিম)।
নোট : মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ তার ঘরে অবস্থান করা। আল্লাহর ইবাদত, স্বামীর আনুগত্য, তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা, স্বামীর উপর কোন প্রকার বাড়াবাড়ি না করা এবং আপন চরিত্রে কোন প্রকার কলংক না জড়ানো। উল্লেখিত প্রতিটি হাদীসে স্ত্রীর কাছে স্বামীর অধিকার যে কত বড় তা বুঝানো হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করার কারণ, বর্তমানে এটি মহিলাদের জন্যে মহা প্রলয়ংকারী বিপদে পরিণত হয়েছে।
কবীরা গুনাহ ৪৮ - কাপড়, দেয়াল ও পাথর ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি আঁকা
নবী কারীম (ﷺ) বলেন : “যারা চিত্রাংকন করে তাদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্ম ও জীবন দান কর।” (সহীহ বুখারী)
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ “একদিন রসূল কারীম (ﷺ) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন ঘরের দরজায় এমন একটি পদা টানানো ছিল যার মধ্যে প্রাণীর ছবি আঁকা ছিল। তিনি দেখা মাত্র পদাটি ছিড়ে ফেললেন ও তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়িশা! কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী শাস্তি দেয়া হবে ঐ সব লোকদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃর্শ অবলম্বন করে কিছু তৈরী করে। আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি উক্ত পর্দা কেটে একটি অথবা দুটি বালিশ তৈরী করি।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৪৯ - শোক প্রকাশার্থে চেহারায আঘাত করা, মাতম করা, কাপড় ছেড়া, মাথা মুখনো বা চুল উঠানো, বিপদের সময় ধ্বংসের জন্য দুআ করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “শোক প্রকাশ করতে যেয়ে যে চেহারার উপর প্রহার করে এবং কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়্যাতের অভ্যাসের অনুসরণ করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৫০ - অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করা
আল্লাহ বলেন :
“ব্যবস্থা নেয়া হবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা আশ-শুরা ৪২: ৪২)
রসূল (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ আমার নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, কেউ যেন কারো উপর গর্ব না করে আর কেউ যেন কারো উপর অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ না করে।” (আবু দাউদ)
“আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করা এমন দুটি মারাত্বক অপরাধ যার শাস্তি আখিরাতে নির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও দুনিয়াতে দেয়া হবে।” (আহমাদ)।
কবীরা গুনাহ ৫১ - দুর্বল, কাজের লোক ও স্ত্রীর উপর অত্যাচার করা
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি তার গোলামকে শাস্তি দিল এমন কোন অভিযোগে যা সে করে নাই, তার প্রতিকার হলো তাকে মুক্ত করে দেয়া।” (সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ ঐ সব লোকদের শাস্তি দিবেন যারা দুনিয়াতে মানুষদের কষ্ট দিত।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৫২ - প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়া
রসূল বলেন : “ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদ থাকে না।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৫৩ - মুসলিমদের কষ্ট দেয়া ও গালি দেয়া
আল্লাহ বলেন :
“যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মু'মিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৮)
রসূল (ﷺ) বলেন : “কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে ঐ ব্যক্তি সর্ব নিকৃষ্ট, যাকে মানুষ তার অনিষ্টতা হতে বাঁচার লক্ষ্যে এড়িয়ে চলে।” (সহীহ বুখারী)।
কবীরা গুনাহ ৫৪ - অহংকার করে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “গোড়ালির নীচে যে কাপড় পরা হবে, তা জাহান্নামে যাবে।” (সহীহ বুখারী) “কিয়ামতের দিন আল্লাহ ঐ ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন না যে অহংকার করে কাপড় পরিধান করে।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৫৫ - স্বর্ণ রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রূপার প্লেটে খায় বা পান করে সে মূলতঃ তার পেটে জাহান্নামের আগুনকেই স্থান দেয়।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৫৬ - পুরুষের স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় পরিধান করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “দুনিয়াতে যে ব্যক্তি রেশমী কাপড় পরে তার জন্যে আখিরাতে কোন অংশই নেই। (সহীহ বুখারী)।
কবীরা গুনাহ ৫৭ - আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ।” (সহীহ মুসলিম)।
গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করার দৃষ্টান্ত যেমন - কেউ জবেহ করার সময় বলে, আমি মাযারের নামে জবেহ করছি, অথবা দেব-দেবীর নামে অথবা পীর সাহেবদের নামে জবেহ করছি ইত্যাদি।
কবীরা গুনাহ ৫৮ - ওযনে ও মাপে কম দেয়া
আল্লাহ বলেন :
“যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ।” (সূরা মুতাফফিফীন ৮৩ : ১)
কবীরা গুনাহ ৫৯ - মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক ও উচ্চ শব্দে কান্নাকাটি করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “দু'টি দোষ মানুষের মধ্যে কুফর সমতুল্য:
(১) বংশের কুৎসা রটানো।
(২) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি করা।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৬০ - আল্লাহর পাকড়াও হতে নিশ্চিত হওয়া
রসূল কারীম (ﷺ) এ কথাটি বেশী বলতেন : “হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আপনি আমাদের অন্তরকে আমাদের দ্বীনের উপর অটল রাখুন। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ আমি কি আমাদের ঈমানের ব্যাপারে আশংকা করি? রসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, মানুষের অন্তর দয়াময় আল্লাহরই দুই আঙ্গুলের মাঝে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে পরিবর্তন সুতরাং হে মুসলিম ভাইয়েরা! আমাদের ঈমান, আমল, সলাত, ও সকল প্রকার নেক আমল যতই বেশী ও সুন্দর হোক না কেন অহংকার করবো না। কারণ এগুলো আল্লাহর দয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যদি কোন না কোন সময় তিনি এগুলি আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তখন আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আমি আমার আমলের কারণে গর্ব করা হতে বিরত থাকব এবং এমন কথা বলবো না যা অজ্ঞ ও মূখরা বলে, যেমন আমরা অমুকের চেয়ে ভাল। আমার আল্লাহ তো মানুষের অন্তরের গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত। আমরা দুর্বলতা, গুনাহের আধিক্য, আমল কম হওয়ার অনুভুতি অন্তরে স্থান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকব এবং এমন একটি অবস্থায় থাকব যে অবস্থার বর্ণনা রসূল (ﷺ) হাদীসে দিয়েছেন, “তোমার সংসারে ব্যস্ততা সত্ত্বেও তুমি জিহবাকে সংযত রাখবে, গুনাহের কাজের উপর কান্নাকাটি করবে।” (তিরমিযী)
ঐসব লোকদের মতো হয়ো না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : “তারা কি? আল্লাহর পাকড়ায়ের ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ব্যতীত কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিভয় হয় না।” (সূরা আ'রাফ ৭: ৯৯)
কবীরা গুনাহ ৬১ - মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোস্ত খাওয়া
আল্লাহ বলেন :
“আপনি বলে দিন, যে বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন ভক্ষণকারীর জন্যে কোন হারাম খাদ্য পাইনি। মৃত ও প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোস্ত ব্যতীত। এটা অপবিত্র।” (সূরা আল আন'আম ৬ : ১৪৫)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি চওসর (দাবা জাতীয়) খেলায় প্রবৃত হয়, সে যেন তার হাতকে শুকরের রক্তে রঞ্জিত করার মত অন্যায় করে।” (সহীহ মুসলিম)
নোট : রসূল ও শুকরের রক্ত-গোস্ত হাতে নেয়াকে গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন শুধু, তাই নয় বরং বড় গুনাহ বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং শুকরের গোস্ত খাওয়া যে কত বড় গুনাহ তা সহজেই অনুমান করা যায়।
কীর গুনাহ ৬২ - জুমুআ ছেড়ে দিয়ে বিনা কারণে একা একা সলাত আদায় করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যদি মানুষ জুমু’আর সলাত পরিত্যাগ করা থেকে বিরত না থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন যার ফলে তারা অলস ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (দারমীঃ ১৫২৪)
“যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ কোন প্রকার ওজর ছাড়া সলাতের জামাতে উপস্থিত হল না তার সলাত আল্লাহর নিকট কবুল হয় না।” (ইবনে মাজাহ)।
কবীরা গুনাহ ৬৩ - জেনে শুনে অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যকে পিতা বলে ঘোষণা দেয় তার উপর জান্নাত হারাম করা হয়েছে।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৬৪ - তর্ক-বির্তক, ঝগড়া একশত্রুতা পোষণ করা
রসূল (ﷺ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি অনর্থক কোন বিষয়ে জেনে শুনে বিতর্ক করে সে ঐ পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি জীবনযাপন করে যতক্ষণ না সে বিতর্ক থেকে ফিরে আসে।” (আবু দাউদ)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “কোন জাতি সঠিক পথের উপর থাকার পর পথভ্রষ্ট হয় নাই, কিন্তু যখনই তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই পথভ্রষ্ট হয়েছে।” (তিরমিযী)
নোট : অর্থাৎ সত্য অন্বেষণ বা উদঘাটনের জন্য নয়, বিতর্ক করার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হয়।
কবীরা গুনাহ ৬৫ - আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া
আল্লাহ বলেন :
“তোমরা আল্লার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ রহমত হতে একমাত্র কাফির সম্প্রদায়ই নিরাশ হয়।” (সূরা ইউসুফ ১২:৮৭)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেন : “তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা পোষণ ছাড়া মৃত্যুবরণ না করে।” (সহীহ মুসলিম)।
কবীরা গুনাহ ৬৬ - মুসলিমকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইকে বলে, হে কাফির! এর পরিণাম তাদের কোন না কোন একজনের উপর বর্তাবেই।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৬৭ - ষড়যন্ত্র করা এক ধোকা দেয়া
আল্লাহ বলেন : “কুচক্রের শাস্তি কারও উপর পতিত হয় না, কুচক্রীর উপরই পতিত হয়।” (সূরা ফাতির ৩৫:৪৩)
রসূল (ﷺ) বলেন : “কুচক্রী এবং ধোকাবাজীর স্থান জাহান্নাম।” (বায়হাকী)
কবীরা গুনাহ ৬৮ - জমিনের সীমানা উঠিয়ে ফেলা বা পরিবর্তন করা
রসূল (ﷺ) বলেনঃ “আল্লাহর অভিশাপ করেছেন ঐ ব্যক্তির উপর যে জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে।” (সহীহ মুসলিম : ৩৬৫৭)
কবীরা গুনাহ ৬৯ - অপসংস্কৃতি ও কু-প্রথারপ্রচলন করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন কুপ্রথা বা বিদ’আত চালু করল সে নিজেতো গুনাহগার হবেই এবং তারপরে যে ব্যক্তি ঐ কুপ্রথার উপর আমল করবে তার গুনাহ ও তার উপর বর্তাবে, তবে এ কারণে ঐ ব্যক্তির গুনাহের অংশ বিন্দু পরিমাণ ও কমানো হবে না।” (সহীহ মুসলিম)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি কোন গোমরাহীর প্রতি মানুষকে আহবান করে ঐ ব্যক্তি গুনাহের মধ্যে ঐ পরিমাণ অংশীদার হবে যে পরিমান গুনাহ ঐ গোমরাহীর অনুসারীদের হবে। তবে এ কারণে তাদের গুনাহের পরিমাণ একটুও কমানো হবে না।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৭০ - নারী পরচুলা ব্যবহারকরা,শরীরে উলকি আকা, উপড়ানো, দাঁত ফাক করা
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ অভিশাপ করেছেন এমন সব নারীদের যারা অন্যের অঙ্গ খোদাই করে নিজের শরীরে তা করতে চায়, যারা ভ্রু উঠিয়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত সরু ও উহার ফাক বড় করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলে নেয়।” (সহীহ মুসলিম)
তিনি আরো বলেনঃ “সে নারীর উপর আল্লাহর অভিশাপ যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল স্থাপন করে কিংবা নিজ মাথায় মেকী চুল স্থাপন করে এবং যে অন্যের গাত্রে উল্কি করে অথবা নিজের গাত্রে উল্কি করায়।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৭১ - ধারালো অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের দিকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে ফিরিশতাগণ তার উপর অভিশাপ করতে থাকে, যদিও সে তার আপন ভাই হয়।” (সহীহ মুসলিম)।
অন্য একটি হাদীসের কঠোর ধমকির কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রসূল (ﷺ) বলেন, “হতে পারে শয়তান তার হাতে থেকে অস্ত্র নিয়ে ব্যবহার করবে। ফলে সে জাহান্নামের গুহায় নিপতিত হবে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৭২ - হারাম শরীফে ধর্মদ্রোহী কাজ করা
আল্লাহ বলেন :
“এবং মসজিদে হারাম যা আমি করেছি স্থায়ী ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান। আর তাতে যে অন্যায়ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবো।” (সূরা হাজ্জ ২২ : ৭৫)
“তোমরা কি জান আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র কে? মনে রাখবে আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র হল ঐ লোক যে কিয়ামতের দিন অনেক সলাত, সিয়াম, ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ সে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ ভক্ষণ করেছে আবার কাউকে রক্তাক্ত বা প্রহার করেছে, অতঃপর আল্লাহ তার পুণ্য হতে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, অত্যাচারিত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করে দিবেন। যখন পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূবেই তরা পুণ্য শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের পাপগুলি তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৭৩ - মুসলিমদের ত্রুটি - বিচ্যুতির সন্ধান করা এবং তাদের গোপন তথ্য প্রকাশ করা
আল্লাহ বলেনঃ
“আপনি আনুগত্য করবেন না ঐ ব্যক্তির যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে অন্যকে দোষারোপ করে ও পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায়।” (সূরা আল-কলম ৬৮ : ১০-১১)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি কোন মু'মিন সম্পর্কে এমন দোষ বর্ণনা করে যা তার মধ্যে আদৌ নেই, আল্লাহ জাহান্নামীদের নির্গত পচা গলা পুজের মধ্যে তার স্থান নির্ধারণ করে দিবেন। সে যা বলেছে তা বের করে দিতে চাবে, কিন্তু পারবে না” (আবু দাউদ)
কবীরা গুনাহ ৭৪ - ঝগড়া করার সময় অতিরিক্ত গালি দেয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সেই প্রকৃত মুনাফিক। যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার নিকট মুনাফিকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যখন আমানত রাখা হয় সে খিয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে আর যখন ঝগড়া করে গাল মন্দ করে।” (সহীহ বুখারী)।
কবীরা গুনাহ ৭৫ - কোন কংশ বা তার লোকদের খারাপ গুলে অভিহিত করা
রসূল (ﷺ) বলেন, “দু'টি দোষ মানুষের মধ্যে কুফর সমতুল্য। (১) বংশের কুৎসা রটানো। (২) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি করা।” (সহীহ মুসলিম)
শিরক দুই প্রকার :
১. শিরকে আকবার, আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করা ইত্যাদি। যদি কোন ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শিরক।
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তার সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” (সুরা নিসা ৪ : ৪৮)।
২. শিরকে আসগার বা ছোট শিরক : রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন :
“অতএব দুভোর্গ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সলাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।” (সূরা মাউন ১০৭ : ৪-৬)
রসূল (ﷺ) বলেন, আল্লাহ বলেন : “আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর এ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শিরকে ছেড়ে দেই।” (সহীহ মুসলিম)
কাবীরা গুনাহ ২ - সলাত ত্যাগ করা
আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন : “তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সলাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হল, সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।” (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৫৯-৬০)
হাদীসে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন : “কোন মু'মিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সলাত ত্যাগ করা।” (সহীহ মুসলিম)।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন : “আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল সলাত, যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফির হয়ে গেল।” (আহমাদ)
কাবীরা গুনাহ ৩ - যাকাত আদায় না করা
আল্লাহ বলেন :
“আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে। এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করবে সে সকল ধন-সম্পদ কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩: ১৮০)
কবীরা গুনাহ ৪ - সঙ্গত কারণ ছাড়া রমাদানের সওম ভঙ্গ করা বা না রাখা
রসূল (ﷺ) বলেন : “ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রসূল।
(২) সলাত প্রতিষ্ঠা করা
(৩) যাকাত দেয়া
(৪) হাজ্জ করা
(৫) রমাদান মাসের সওম রাখা।”
(সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৫ - সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হাজ্জ না করা
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন :
“আর এ ঘরের হাজ্জ করা সে সকল মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য যারা সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নয়।” (সূরা আলে-ইমরান ৩: ৯৭)।
কবীরা গুনাহ ৬ - মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তা বলে দিব না? আর তা হল আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।” (সহীহ বুখারী)
কবীৱা গুনাহ ৭ - ব্যভিচার করা
আল্লাহ বলেন : “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও অতি মন্দ পথ।” (সূরা ইসরা ১৭ : ৩২)।
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেন : “যখন কোন মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করে। যখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।” (তিরমিযী)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেন : আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চক্ষুর ব্যভিচার হল দৃষ্টি এবং তার দুই কানের ব্যভিচার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হল কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হল স্পর্শ করা ও পায়ের ব্যভিচার হল পদক্ষেপ আর অন্তরে ব্যভিচারের আশা ও ইচ্ছার সঞ্চার হয়, অবশেষে লজ্জাস্থান একে সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৮ - মানুষ হত্যা করা
আল্লাহ বলেন :
“এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং লাঞ্চিত অবস্থায় সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সঙ্কর্ম করে।” (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৬৮-৭০)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন।
কবীরা গুনাহ ৯ - পেশাব থেকে বেঁচে না থাকা
ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : “নবী কারীম (ﷺ) দু'টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন এবং বলেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন বড় ধরনের কাজের জন্যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজনের অভ্যাস ছিল সে প্রসাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অন্য জন মানুষের একজনের দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়াত।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
আল্লাহ বলেন : “এবং তোমার কাপড়কে তুমি পবিত্র কর।” (সূরা আল মুদ্দাসসির ৭৪ : ৪)।
নোট : কাপড়ে ও শরীরে যেন পেশাব না লাগে। যদি কোন কারণে লেগে যায় তাহলে তা সাথে সাথে পবিত্র করে নেয়া উচিত।
কবীরা গুনাহ ১০ - সমকাম
এক স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করা আল্লাহ বলেন :
“এবং লুতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী বাদ দিয়ে পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।” (সূরা আ'রাফ ৭ : ৮০-৮১)
রসূল (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যে কোন পুরুষের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।” (তিরমিযী)
কবীরা গুনাহ ১১ - সুদ
আল্লাহ বলেন :
“যারা সুদ খায় তারা দাঁড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়।” (সূরা বাকারা ২: ২৭৫)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেছেন : “সুদের গুনাহের ৭৩টি স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হল নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্ন স্তর হলো কোন মুসলিমের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা।” (হাকেম, আল জামে)।
কবীরা গুনাহ ১২ - আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নিকট আত্মীয়দের পরিত্যাগ করা
আল্লাহ বলেন :
“ক্ষমতা লাভের পর সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন করেছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ২২-২৩)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেন : “আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ১৩ - এতিমের সম্পদ আত্মসাত করা
আল্লাহ বলেন :
যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।” (সূরা নিসা ৪:১০)
কীৱাগুনাহ ১৪ - যাদু
আল্লাহ বলেন :
“কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।” (সূরা বাকারা ২ : ১০২)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেছেন : “তোমরা সাতটি ধবংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রসূলুল্লাহ (ﷺ) ধবংসাত্মক বিষয়গুলি কী? তিনি জবাবে বলেন :
১. আল্লাহর সাথে শরিক করা
২. যাদু করা
৩. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন
৪. সুদ খাওয়া
৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা
৬. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা
৭. সতী সাধবী মু'মিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া।”
(সহীহ বুখারী : ২৫৬)
কবীরা গুনাহ ১৫ - দুনিয়ার লক্ষ্যে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা এবং সত্যেকে গোপন করা
আল্লাহ বলেন :
“আমি যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয়। কিন্তু যারা তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। তাদেরই প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা বাকারা ২: ১৫৯-১৬০)
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি জ্ঞানীদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে অথবা মূর্থের সাথে বিতর্কের উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।” (ইবনে মাজাহ)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি দ্বীনি এলেম শিক্ষা করল ধন সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (আবু দাউদ)
কবীরা গুনাহ ১৬ - আল্লাহ এবং তার রসূলের উপর মিথ্যা আরোপ করা
আল্লাহ বলেন :
“যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কিয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেন।” (সূরা যুমার ৩৯ : ৬০)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন তার অবস্থান জাহান্নাম করে নেয়।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ১৭ - শাসক কর্তৃক জনগণকে ধোকা দেয়া ও অত্যাচার করা
আল্লাহ বলেন :
“শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আশ-শূরা ৪২ : ৪২)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে আমাদেরকে ধোকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সহীহ মুসলিম) “অত্যাচার কিয়ামতের দিন চরম অন্ধকার হবে।” (সহীহ বুখারী) “যে শাসক তার অধীনস্থদের ধোকা দেয়, তার ঠিকানা জাহান্নাম।” (ইবনে আসাকির, আল জামে)
যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান, অতঃপর সে তাদের অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের সময় নিজেকে গোপন করে রাখে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার অভাব দূরকরণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন না।” (আবু দাউদ)
কবীরা গুনাহ ১৮ - যুলুম-অত্যাচার করা
আল্লাহ বলেনঃ
“অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্য স্থল কোথায়।” (সূরা আশ শুআরা ২৬ : ২২৭)
নবী (ﷺ) বলেন : “তোমরা যুলুম করা থেকে বেঁচে থাক, কারণ যুলুম কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকারে পরিণত হবে” (সহীহ মুসলিম)।
নোট : যুলুম বিভিন্নভাবে হতে পারে। মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা, অন্যায়ভাবে প্রহার করা, গালি দেয়া, তাদের উপর বাড়াবাড়ি করা, দুর্বলদের উপর চড়াও হওয়া ও অন্যান্য যে সকল কাজে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সবই যুলুম।
কবীরা গুনাহ ১৯ - চাদাবাজী ও অন্যায় টোল আদায়
নোট : বাস্তবিক পক্ষে এটি এক ধরনের ডাকাতি, কারণ এতে মানুষের উপর এক ধরনের জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। চাঁদা উসূলকারী, লেখক এবং গ্রহণকারী গুনাহের মধ্যে সমানভাবে শামিল। এরা সবাই হারাম ভক্ষণকারী। চাঁদাবাজ মূলতঃ যুলুমের বড় সহযোগি শুধু তাই নয় বরং সে যুলুমকারী ও অত্যাচারী।
আল্লাহ বলেন :
“ব্যবস্থা নেয়া হবে শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আশ-শুরা ৪২ : ৪২)
নবী কারীম (ﷺ) বলেন : “তোমরা কি জান প্রকৃত দরিদ্র কে আমার উম্মতের মধ্যে? প্রকৃত দরিদ্র ঐ ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক সলাত, সওম, যাকাত, নিয়ে উপস্থিত হবে। তবে সে দুনিয়াতে কাউকে হত্যা করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কাউকে গাল-মন্দ করেছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে মেরেছে অথবা কাউকে প্রহার করেছে। কিয়ামতের দিন এ ব্যক্তির নেক আমল বা সওয়াব তাদের (তার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে) দেয়া হবে। যদি তার নেক আমলের সওয়াব পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায় তখন তাদের গুনাহগুলোকে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহীহ মুসলিম)।
কবীরা গুনাহ ২০ - আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারে সুযোগ দেয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন, (১) যে মদ তৈরী করে (২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে (৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারে করতে সুযোগ দেয়।” (আহমাদ)।
নোট : দাইয়ুস ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে।
কবীরা গুনাহ ২১ - গর্ব, অহংকার, আত্মম্ভরিতা, হটকারীতা
আল্লাহ বলেন :
“নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা নাহল ১৬ : ২৩)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যার অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক ব্যক্তি বললেন, কোন ব্যক্তি চায় তার জামা কাপড়, জুতা-সেন্ডেল সুন্দর হোক তাহলে এটাও কি অহংকার? রসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। (অথাৎ এগুলি অহংকারের অন্তর্ভুক্ত নয়) অহংকার হলো সত্যকে গোপন করা আর মানুষকে অবজ্ঞা করা।” (সহীহ মুসলিম)
আল্লাহ বলেন :
“অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে অহংকারের সাথে পদচারণা করো না। কখনো আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান ৩১ : ১৮)
রসূল বলেন : “আল্লাহ বলেন মহত্ব আমার পরিচয় আর অহংকার আমার চাদর, যে ব্যক্তি এ দুটি নিয়ে টানা হেচড়া করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ২২ - হারাম খাওয়া, তা যে কোন উপায়ে হোক না কেন
আল্লাহ বলেনঃ
“তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।” (সূরা আল বাকারা ২ : ১৮৮)
রসূল (ﷺ) বলেনঃ “কোন ব্যক্তি দীর্ঘপথ অতিক্রম করলো, বিক্ষিপ্ত চুল, ধূলা বালিযুক্ত শরীর, দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দু'আ করতে থাকে আর বলতে থাকে। হে প্রভু! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম এবং হারাম দ্বারা শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে তার দু’আ কবুল করা হবে?” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ২৩ - আত্মহত্যা করা
আল্লাহ বলেন :
“তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন কিংবা যুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে তাকে খুব শীঘ্র আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।” (সূরা আন-নিসা ৪ : ২৯-৩০)
রসূল (ﷺ) বলেন : “হত্যা করে সে উক্ত অস্ত্র দ্বারা দোযখের আগুনে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। সে চিরদিন এই জাহান্নামে অবস্থান করবে। যে বিষ পান করে নিজেকে হত্যা করল সে চিরদিন জাহান্নামে অবস্থানকালে হত্যা করতে থাকবে। আর যে নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে সেও চিরদিন জাহান্নামে অবস্থান করবে এবং পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ২৪ - অধিকাংশ সময় মিথ্যা বলা
নবী (ﷺ) বলেন : “মিথ্যা পাপাচারের দিকে পথ দেখায়। আর পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে আল্লাহর নিকট মিথুক হিসাবে তার নাম লেখা হয়।” (সহীহ বুখারী)
আল্লাহ বলেনঃ
“এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী।” (সূরা আলে-ইমরান ৩: ৬১)
কবীরা গুনাহ ২৫ - মানব রচিত বিধানে দেশ পরিচালনা ও বিচার করা
আল্লাহ বলেন : “এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা কাফির। এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা যালিম। যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা ফাসিক।” (সূরা আল-মায়িদা ৫: ৪৪-৪৭)
কবীরা গুনাহ ২৬ - বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করা
আল্লাহ বলেন :
“তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের কাছে পেশ করো না।” (সূরা বাকারা ২: ১৮৮)
রসূল (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন।” (আহমাদ)
“যদি কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কোন বিষয় সুপারিশ করে, পরে তার জন্য হাদিয়া বা উপঢৌকন প্রেরণ করা হয়, সে তা গ্রহণ করে। তা হলে উক্ত ব্যক্তি এক মারাত্মক ধরনের সুদের দ্বারে প্রবেশ করল।” (আহমদ)
কবীরা গুনাহ ২৭ - মহিলা পুরুষের বেশ এবং পুরুষ মহিলার বেশ ধারণ করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন এবং মহিলাদের বেশ ধারণকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন।” (আবুদাউদ)
কবীরা গুনাহ ২৮ - মিথ্যা সাক্ষী দেয়া
আল্লাহ বলেন :
“তারা মিথ্যা ও বাতিল কাজে যোগদান করে না।” (সূরা ফুরকান ২৫ : ৭২)
রসূল (ﷺ) বলেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব না? তা হল আল্লাহর সাথে শিরক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ২৯ - মাদক দ্রব্য সেবন করা
আল্লাহ বলেন :
“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।” (সূরা আল-মায়িদা ৫ : ৯০)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হল মদ আর সকল প্রকার মদ হারাম।” (সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ মদ পানকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, প্রস্তুতকারী, বহনকারী এবং যার জন্য বহন করা হয় সকলকে অভিসম্পাত দিয়েছেন।” (আবু দাউদ)
কবীরা গুনাহ ৩০ - জুয়া খেলা
আল্লাহ বলেন :
“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব তোমরা এগুলো থেকে বেঁচে থাক- যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।” (সূরা মায়িদা ৫:৯০)
কবীরা গুনাহ ৩১ - সতী সাধ্বীনারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া
আল্লাহ বলেন : “যারা সতী সাধ্বী ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সূরা আন নূর ২৪ ও ২৩)
কবীরা গুনাহ ৩২ - গনীমতের মাল আত্নসাৎ করা
আল্লাহ বলেন :
“আর যে ব্যক্তি গনীমতের মালে খিয়ানত করল সে কিয়ামতের দিবসে সেই খিয়ানতকৃত বস্তু বহন করে উপস্থিত হবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৬১)
নোটঃ শুধু যুদ্ধলব্ধ সম্পদে নয় এমন সকল সম্পদ যাতে অন্যের অধিকার আছে তা আত্নসাৎ বা তাতে খিয়ানত এ শাস্তির অন্তর্ভুক্ত।
কবীরা গুনাহ ৩৩ – চুরি করা
আল্লাহ বলেন :
“যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও এটা তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর নির্ধারিত আদর্শ দন্ড, আল্লাহ পরাক্রান্ত জ্ঞানময়।” (সূরা মায়িদা ৫: ৩৮)
বিশেষ নোটঃ এই শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের। কেউ এই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।
কবীরা গুনাহ ৩৪ - ডাকাতি করা
আল্লাহ বলেন :
“আর যারা আল্লাহ, তার রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হবে, অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে। কিংবা দেশান্তর করা হবে। এটা হল তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালের তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সূরা আল-মায়িদা ৫: ৩৩)
নোট : অর্থাৎ মানুষের সম্পদ ছিনতাই এবং চুরি করা অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের থেকে নিয়ে নেয়া। বা তাদের পিছু নিয়ে তাদের ইজ্জত সম্রম। বিনষ্ট করা। এই শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের। কেউ এই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।
কবীরা গুনাহ ৩৫ - মিথ্যা শপথ
নবী কারীম (ﷺ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে এবং তা দ্বারা কোন মুসলিমের সম্পদকে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত।” (সহীহ বুখারী)
“কবীরা গুনাহ হল আল্লাহর সাথে শরীক করা। মাতা-পিতার নাফরমানী করা, হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা”। (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৩৬ - হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ে গুনাহগার
রসূল (ﷺ) বলেন : “হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।” (আহমাদ)
নোট : কেউ কারো তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিবাহ করে যে, সে সহবাস করে আবার তালাক দিয়ে দিবে, যাতে প্রথম স্বামী পুণরায় বিবাহ করতে পারে, এই ব্যক্তিকে মুহাল্লিল বা হালালকারী বলে। এবং শুধু মাত্র কাগজ পত্রে বিয়ে দেখালে হবে না, সত্যি সত্যি বিয়ে হতে হবে।
কবীরা গুনাহ ৩৭ - আমানত খিয়ানত করা
আল্লাহ বলেন :
“ঈমানদারগণ আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে খিয়ানত করো না এবং জেনেশুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খিয়ানত করো না। (সূরা আনফাল ৮: ২৭)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যার আমানতদারী নাই, তার ঈমান নাই, আর যার প্রতিজ্ঞা পূরণ নাই তার ধর্ম নাই।” (আহমদ)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে হবে প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে নিফাকের একটি দোষ পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে ঐ দোষ বর্জন করবে (১) যখন তার নিকট আমানত রাখা হয় সে, খিয়ানত করে।” (সহীহ বুখারী)।
কবীরা গুনাহ ৩৮ - খোটা দেয়া
আল্লাহ বলেন :
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদাকাকে ধ্বংস করো না।” (সূরা বাকারা ২ : ২৬৪)
রসূল (ﷺ) বলেন : “তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কোন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে গুনাহ হতে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (১) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর (গিরার) নীচে ঝুলিয়ে দেয়, (২) খোটা দানকারী, যে কোন কিছু দান করে খোটা দেয় (৩) যে মিথ্যা শপথ করে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৩৯ - তাকদীরকে অস্বীকার করা
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : “যদি আল্লাহ আসমান ও যমীনের সকল অধিবাসীকে আযাব দেন তাহলে তার আযাব দেয়াটা কোন প্রকার অন্যায় হবে না। আর যদি দয়া করেন তবে তা তাদের আমলের তুলনায় অনেক বেশী হবে। যদি কোন ব্যক্তির নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আল্লাহ তার এ দান বিন্দু পরিমাণ ও গ্রহণ করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে আর এ কথা বিশ্বাস করবে যে, কোন ব্যক্তি সঠিক কাজ করল সে তা তাকদীর অনুযায়ী করেছে এটা ভুল করা তার জন্য নির্ধারিত ছিল না। আর যে ভুল করল এটা সঠিকভাবে করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদি তুমি এ বিশ্বাসের বাইরে মৃত্যুবরণ কর তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (কিতাবুস সুন্নাহ : ইবনে আবী আসিম আশ-শায়বানী)
কবীরা গুনাহ ৪০ - মানুষের নিকট অন্যের গোপন তথ্য ফাস করা
আল্লাহ বলেন :
“তোমরা মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বেড়াবে না।” (সূরা হুজুরাত ৪৯ : ১২)
রসুল (ﷺ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের লোকের কথা শ্রবণ করার চেষ্টা করে তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও, তাহলে কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত সীসা ঢালা হবে, আর যে ব্যক্তি কোন জীবজন্তুর ছবি অংকন করে তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাকে বলা হবে তুমি এ ছবিতে প্রাণ সঞ্চার কর, কিন্তু সে পারবে। আর যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন বর্ণনা করল যা সে দেখেনি তাকে শাস্তি হিসেবে দু'টি যবের দানাকে একত্রে জোড়া লাগাতে বলা হবে। কিন্তু তা সে মোটেই পারবে না।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৪১ - পরনিন্দা করা
আল্লাহ বলেন :
“আপনি এমন লোকের কথা মেনে নেবেন না, যে কসম খেয়ে বেড়ায় (এবং যে) অধম; যে নিন্দুক ও চোগলখোরি করে বেড়ায়।” (সূরা আল কলম ৬৮ : ১০-১১)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) দু'টি কবরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বললেন, এ কবরবাসীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে কোন বড় ব্যাপারে নয়, তাদের একজন এমন ব্যক্তি যে একের কথা অন্যের নিকট লাগাতো। (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৪২ - অভিশাপ করা
রসূল বলেন : “মুসলিমদের অভিশাপ করা অন্যায় এবং তাকে হত্যা করা কুফর।” (সহীহ বুখারী)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “কোন লোক যখন অন্য কাউকে অভিশাপ করে তখন অভিশাপটি আকাশে উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার জন্য আকাশের দরজাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর যমীনের দিকে অবতরণ করে। কিন্তু জমিনের দরজাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর অভিশাপটি ডানে বামে ঘুরতে থাকে। কোথাও যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে যার উপর করা হল তার নিকট যায়, যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর উপর প্রত্যাবর্তন করে।” (আবু দাউদ)
নোটঃ যে কারণেই হোক কোন মুসলিম ভাইয়ের উপর অভিশাপ করা সম্পূর্ণ হারাম। খারাপ দোষে দুষ্ট ব্যক্তিদের উপর তাদের দোষ উল্লেখ করে অভিশাপ করা যায়। যেমন অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, কাফিরদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, প্রাণীর ছবি অংকনকারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ ইত্যাদি।
কবীরা গুনাহ ৪৩ - গাদ্দারী করা, ওয়াদা পালন না করা
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : “চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে খাঁটি মুনাফিক হবে। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যতক্ষণ পর্যন্ত যে উক্ত অভ্যাস ত্যাগ না করে। যখন আমানত রাখার হয় সে খিয়ানত করে আর যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিজ্ঞা করে তখন গাদ্দারী করে আর যখন ঝগড়া করে তখন গালি দেয়।” (সহীহ বুখারী)
রসূল (ﷺ) বলেন : “প্রত্যেক ওয়াদা ভঙ্গকারীর জন্যে কিয়ামতের দিন একটি নিদর্শন থাকবে তার গাদ্দারীর পরিমাণ অনুযায়ী তাকে উচ্চ করা হবে। তবে জনগণের সাথে প্রতারণাকারী শাসকের চেয়ে বড় গাদ্দার আর কেউ হবে না।” (সহীহ মুসলিম)।
কবীরা গুনাহ ৪৪ - গণক ও জ্যোতির্বিদদের বিশ্বাস করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর নিকট আসলো এবং তারা যা বললো তা সত্য বলে গ্রহণ করলো সে মূলতঃ মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তাকেই অস্বীকার করলো।” (আহমাদ)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট আসলো তারপর তাকে ভাগ্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করল চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সলাত কবুল হবে। না।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৪৫ - কোন সাহাবীকে গালি দেয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিও না। যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তবুও তাদের কারো একটি মুঠি বা আধা মুঠি পরিমান দানের সমান হবে না।” (সহীহ বুখারী)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে গালি দেয় তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ।” (তাবারানী, আল জামে)
কবীরা গুনাহ ৪৬ - অন্যায় বিচার
রসূল (ﷺ) বলেন : “দু’জন বিচারক জাহান্নামে যাবে এবং একজন বিচারক জান্নাতে যাবে। যে বিচারক মূল সত্যকে উদঘাটন করে এবং তদনুসারে বিচার করে সে জান্নাতে যাবে। আর একজন বিচারকার্যে সত্যকে উদঘাটন করার পর জেনেশুনে অন্যায়ভাবে বিচার করছে সে জাহান্নামে যাবে। অথবা যে না। জেনেশুনে বিচার করে সে জাহান্নামে যাবে।” (জামে আত তিরমিযী)
কবীরা গুনাহ ৪৭ - স্বামীর অবাধ্য হওয়া
আল্লাহ বলেন :
“আর তাদের স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা অনুগত হয়ে যায় তবে তাদের জন্যে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপরে শ্রেষ্ঠ।” (সূরা নিসা ৪ : ৩৪)
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে আর স্ত্রী অস্বীকার করার ফলে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে তখন ঐ স্ত্রীর উপর ফিরিশতারা অভিশাপ করতে থাকে।” (সহীহ বুখারী)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যদি তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সিজদা করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পৃষ্ঠে থেকেও আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।” (আহমাদ)
সুতরাং তাদেরকে আল্লাহর ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সিজদা করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পিঠেও তাকে আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।” (আহমাদ, সহীহ আল জামে)
নোট : সুতরাং নারীদের কর্তব্য, তারা সর্বাবস্থায় স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হবে এবং তার অসন্তুষ্টি হতে বেঁচে থাকবে, কখনো স্বামীকে জৈবিক চাহিদা পূরণে বাধা দেবে না। তবে যদি শরয়ী কোন আপত্তি থাকে তবে যেমন - হায়েয। নেফাস অথবা ফরয সওম ইত্যাদি অবস্থায় শুধু সহবাস হতে নিষেধ করতে পারে। মহিলাদের জন্য কর্তব্য হল সর্বদা স্বামীর নিকট লজ্জাবতী হওয়া, তার আদেশের আনুগত্য করা, তার সকল প্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতে বিরত থাকা।
রসূল (ﷺ) বলেন : “আমি জান্নাতে উকি মেরে দেখি, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র এবং জাহান্নামে উকি মেরে দেখি, তার অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।” (সহীহ বুখারী)
নোট : অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম হাফিয শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, মহিলাদের আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি আনুগত্যের অভাব। স্বামীর অবাধ্যতা এবং পর্দাহীনতাই এর মূল কারণ। মহিলারা যখন ঘর থেকে বের হয় তখন সর্বোচ্চ সুন্দর পোশাক পরে বিশেষ সাজ-সজ্জা অবলম্বন করে, যা মানুষকে ফিনায় পড়তে বাধ্য করে। সে নিজে নিরাপদে থাকলেও মানুষ তার থেকে নিরাপদ থাকে না। রসূল কারীম (ﷺ) বলেনঃ “তোমরা মেয়েদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাদেরকে বাম পাজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাজরের হাড় সবচেয়ে বাকা হয়, যদি তুমি সোজা করতে চেষ্টা কর ভেঙ্গে যাবে, আর যদি ছেড়ে তাও তাহলে সর্বদা বাকা থাকবে। সুতরাং তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতে থাক।” (সহীহ বুখারী)।
নোট : তাদের সাথে সৎ ব্যবহার হল, আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া এবং নিষেধ কাজ হতে বিরত থাকতে আদেশ করা। এগুলি। তাদেরকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়। রসূল (ﷺ) বলেন : “মহিলারা হল আবরণীয়, তারা যখন ঘর হতে বের হয় তখন শয়তান তাদেরকে মাথা উচু করে দেখে। তারা যত বেশী ঘরের কোণে অবস্থান করবে ততই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।” (তিরমিযী, আল জামে)
রসূল (ﷺ) বলেন : “আমার পরে পুরুষদের উপর মহিলাদের মত ক্ষতিকর আর। কোন ফিত্না আমি রেখে যাইনি।” (সহীহ মুসলিম)।
নোট : মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ তার ঘরে অবস্থান করা। আল্লাহর ইবাদত, স্বামীর আনুগত্য, তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা, স্বামীর উপর কোন প্রকার বাড়াবাড়ি না করা এবং আপন চরিত্রে কোন প্রকার কলংক না জড়ানো। উল্লেখিত প্রতিটি হাদীসে স্ত্রীর কাছে স্বামীর অধিকার যে কত বড় তা বুঝানো হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করার কারণ, বর্তমানে এটি মহিলাদের জন্যে মহা প্রলয়ংকারী বিপদে পরিণত হয়েছে।
কবীরা গুনাহ ৪৮ - কাপড়, দেয়াল ও পাথর ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি আঁকা
নবী কারীম (ﷺ) বলেন : “যারা চিত্রাংকন করে তাদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্ম ও জীবন দান কর।” (সহীহ বুখারী)
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ “একদিন রসূল কারীম (ﷺ) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন ঘরের দরজায় এমন একটি পদা টানানো ছিল যার মধ্যে প্রাণীর ছবি আঁকা ছিল। তিনি দেখা মাত্র পদাটি ছিড়ে ফেললেন ও তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়িশা! কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী শাস্তি দেয়া হবে ঐ সব লোকদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃর্শ অবলম্বন করে কিছু তৈরী করে। আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি উক্ত পর্দা কেটে একটি অথবা দুটি বালিশ তৈরী করি।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৪৯ - শোক প্রকাশার্থে চেহারায আঘাত করা, মাতম করা, কাপড় ছেড়া, মাথা মুখনো বা চুল উঠানো, বিপদের সময় ধ্বংসের জন্য দুআ করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “শোক প্রকাশ করতে যেয়ে যে চেহারার উপর প্রহার করে এবং কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়্যাতের অভ্যাসের অনুসরণ করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৫০ - অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করা
আল্লাহ বলেন :
“ব্যবস্থা নেয়া হবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা আশ-শুরা ৪২: ৪২)
রসূল (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ আমার নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, কেউ যেন কারো উপর গর্ব না করে আর কেউ যেন কারো উপর অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ না করে।” (আবু দাউদ)
“আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করা এমন দুটি মারাত্বক অপরাধ যার শাস্তি আখিরাতে নির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও দুনিয়াতে দেয়া হবে।” (আহমাদ)।
কবীরা গুনাহ ৫১ - দুর্বল, কাজের লোক ও স্ত্রীর উপর অত্যাচার করা
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি তার গোলামকে শাস্তি দিল এমন কোন অভিযোগে যা সে করে নাই, তার প্রতিকার হলো তাকে মুক্ত করে দেয়া।” (সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ ঐ সব লোকদের শাস্তি দিবেন যারা দুনিয়াতে মানুষদের কষ্ট দিত।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৫২ - প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়া
রসূল বলেন : “ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদ থাকে না।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৫৩ - মুসলিমদের কষ্ট দেয়া ও গালি দেয়া
আল্লাহ বলেন :
“যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মু'মিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৮)
রসূল (ﷺ) বলেন : “কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে ঐ ব্যক্তি সর্ব নিকৃষ্ট, যাকে মানুষ তার অনিষ্টতা হতে বাঁচার লক্ষ্যে এড়িয়ে চলে।” (সহীহ বুখারী)।
কবীরা গুনাহ ৫৪ - অহংকার করে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “গোড়ালির নীচে যে কাপড় পরা হবে, তা জাহান্নামে যাবে।” (সহীহ বুখারী) “কিয়ামতের দিন আল্লাহ ঐ ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন না যে অহংকার করে কাপড় পরিধান করে।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৫৫ - স্বর্ণ রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রূপার প্লেটে খায় বা পান করে সে মূলতঃ তার পেটে জাহান্নামের আগুনকেই স্থান দেয়।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৫৬ - পুরুষের স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় পরিধান করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “দুনিয়াতে যে ব্যক্তি রেশমী কাপড় পরে তার জন্যে আখিরাতে কোন অংশই নেই। (সহীহ বুখারী)।
কবীরা গুনাহ ৫৭ - আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ।” (সহীহ মুসলিম)।
গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করার দৃষ্টান্ত যেমন - কেউ জবেহ করার সময় বলে, আমি মাযারের নামে জবেহ করছি, অথবা দেব-দেবীর নামে অথবা পীর সাহেবদের নামে জবেহ করছি ইত্যাদি।
কবীরা গুনাহ ৫৮ - ওযনে ও মাপে কম দেয়া
আল্লাহ বলেন :
“যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ।” (সূরা মুতাফফিফীন ৮৩ : ১)
কবীরা গুনাহ ৫৯ - মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক ও উচ্চ শব্দে কান্নাকাটি করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “দু'টি দোষ মানুষের মধ্যে কুফর সমতুল্য:
(১) বংশের কুৎসা রটানো।
(২) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি করা।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৬০ - আল্লাহর পাকড়াও হতে নিশ্চিত হওয়া
রসূল কারীম (ﷺ) এ কথাটি বেশী বলতেন : “হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আপনি আমাদের অন্তরকে আমাদের দ্বীনের উপর অটল রাখুন। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ আমি কি আমাদের ঈমানের ব্যাপারে আশংকা করি? রসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, মানুষের অন্তর দয়াময় আল্লাহরই দুই আঙ্গুলের মাঝে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে পরিবর্তন সুতরাং হে মুসলিম ভাইয়েরা! আমাদের ঈমান, আমল, সলাত, ও সকল প্রকার নেক আমল যতই বেশী ও সুন্দর হোক না কেন অহংকার করবো না। কারণ এগুলো আল্লাহর দয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যদি কোন না কোন সময় তিনি এগুলি আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তখন আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আমি আমার আমলের কারণে গর্ব করা হতে বিরত থাকব এবং এমন কথা বলবো না যা অজ্ঞ ও মূখরা বলে, যেমন আমরা অমুকের চেয়ে ভাল। আমার আল্লাহ তো মানুষের অন্তরের গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত। আমরা দুর্বলতা, গুনাহের আধিক্য, আমল কম হওয়ার অনুভুতি অন্তরে স্থান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকব এবং এমন একটি অবস্থায় থাকব যে অবস্থার বর্ণনা রসূল (ﷺ) হাদীসে দিয়েছেন, “তোমার সংসারে ব্যস্ততা সত্ত্বেও তুমি জিহবাকে সংযত রাখবে, গুনাহের কাজের উপর কান্নাকাটি করবে।” (তিরমিযী)
ঐসব লোকদের মতো হয়ো না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : “তারা কি? আল্লাহর পাকড়ায়ের ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ব্যতীত কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিভয় হয় না।” (সূরা আ'রাফ ৭: ৯৯)
কবীরা গুনাহ ৬১ - মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোস্ত খাওয়া
আল্লাহ বলেন :
“আপনি বলে দিন, যে বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন ভক্ষণকারীর জন্যে কোন হারাম খাদ্য পাইনি। মৃত ও প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোস্ত ব্যতীত। এটা অপবিত্র।” (সূরা আল আন'আম ৬ : ১৪৫)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি চওসর (দাবা জাতীয়) খেলায় প্রবৃত হয়, সে যেন তার হাতকে শুকরের রক্তে রঞ্জিত করার মত অন্যায় করে।” (সহীহ মুসলিম)
নোট : রসূল ও শুকরের রক্ত-গোস্ত হাতে নেয়াকে গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন শুধু, তাই নয় বরং বড় গুনাহ বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং শুকরের গোস্ত খাওয়া যে কত বড় গুনাহ তা সহজেই অনুমান করা যায়।
কীর গুনাহ ৬২ - জুমুআ ছেড়ে দিয়ে বিনা কারণে একা একা সলাত আদায় করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যদি মানুষ জুমু’আর সলাত পরিত্যাগ করা থেকে বিরত না থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন যার ফলে তারা অলস ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (দারমীঃ ১৫২৪)
“যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ কোন প্রকার ওজর ছাড়া সলাতের জামাতে উপস্থিত হল না তার সলাত আল্লাহর নিকট কবুল হয় না।” (ইবনে মাজাহ)।
কবীরা গুনাহ ৬৩ - জেনে শুনে অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যকে পিতা বলে ঘোষণা দেয় তার উপর জান্নাত হারাম করা হয়েছে।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৬৪ - তর্ক-বির্তক, ঝগড়া একশত্রুতা পোষণ করা
রসূল (ﷺ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি অনর্থক কোন বিষয়ে জেনে শুনে বিতর্ক করে সে ঐ পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি জীবনযাপন করে যতক্ষণ না সে বিতর্ক থেকে ফিরে আসে।” (আবু দাউদ)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “কোন জাতি সঠিক পথের উপর থাকার পর পথভ্রষ্ট হয় নাই, কিন্তু যখনই তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই পথভ্রষ্ট হয়েছে।” (তিরমিযী)
নোট : অর্থাৎ সত্য অন্বেষণ বা উদঘাটনের জন্য নয়, বিতর্ক করার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হয়।
কবীরা গুনাহ ৬৫ - আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া
আল্লাহ বলেন :
“তোমরা আল্লার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ রহমত হতে একমাত্র কাফির সম্প্রদায়ই নিরাশ হয়।” (সূরা ইউসুফ ১২:৮৭)
রসূলে কারীম (ﷺ) বলেন : “তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা পোষণ ছাড়া মৃত্যুবরণ না করে।” (সহীহ মুসলিম)।
কবীরা গুনাহ ৬৬ - মুসলিমকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইকে বলে, হে কাফির! এর পরিণাম তাদের কোন না কোন একজনের উপর বর্তাবেই।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৬৭ - ষড়যন্ত্র করা এক ধোকা দেয়া
আল্লাহ বলেন : “কুচক্রের শাস্তি কারও উপর পতিত হয় না, কুচক্রীর উপরই পতিত হয়।” (সূরা ফাতির ৩৫:৪৩)
রসূল (ﷺ) বলেন : “কুচক্রী এবং ধোকাবাজীর স্থান জাহান্নাম।” (বায়হাকী)
কবীরা গুনাহ ৬৮ - জমিনের সীমানা উঠিয়ে ফেলা বা পরিবর্তন করা
রসূল (ﷺ) বলেনঃ “আল্লাহর অভিশাপ করেছেন ঐ ব্যক্তির উপর যে জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে।” (সহীহ মুসলিম : ৩৬৫৭)
কবীরা গুনাহ ৬৯ - অপসংস্কৃতি ও কু-প্রথারপ্রচলন করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন কুপ্রথা বা বিদ’আত চালু করল সে নিজেতো গুনাহগার হবেই এবং তারপরে যে ব্যক্তি ঐ কুপ্রথার উপর আমল করবে তার গুনাহ ও তার উপর বর্তাবে, তবে এ কারণে ঐ ব্যক্তির গুনাহের অংশ বিন্দু পরিমাণ ও কমানো হবে না।” (সহীহ মুসলিম)।
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি কোন গোমরাহীর প্রতি মানুষকে আহবান করে ঐ ব্যক্তি গুনাহের মধ্যে ঐ পরিমাণ অংশীদার হবে যে পরিমান গুনাহ ঐ গোমরাহীর অনুসারীদের হবে। তবে এ কারণে তাদের গুনাহের পরিমাণ একটুও কমানো হবে না।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৭০ - নারী পরচুলা ব্যবহারকরা,শরীরে উলকি আকা, উপড়ানো, দাঁত ফাক করা
রসূল কারীম (ﷺ) বলেন : “আল্লাহ অভিশাপ করেছেন এমন সব নারীদের যারা অন্যের অঙ্গ খোদাই করে নিজের শরীরে তা করতে চায়, যারা ভ্রু উঠিয়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত সরু ও উহার ফাক বড় করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলে নেয়।” (সহীহ মুসলিম)
তিনি আরো বলেনঃ “সে নারীর উপর আল্লাহর অভিশাপ যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল স্থাপন করে কিংবা নিজ মাথায় মেকী চুল স্থাপন করে এবং যে অন্যের গাত্রে উল্কি করে অথবা নিজের গাত্রে উল্কি করায়।” (সহীহ বুখারী)
কবীরা গুনাহ ৭১ - ধারালো অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের দিকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে ফিরিশতাগণ তার উপর অভিশাপ করতে থাকে, যদিও সে তার আপন ভাই হয়।” (সহীহ মুসলিম)।
অন্য একটি হাদীসের কঠোর ধমকির কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রসূল (ﷺ) বলেন, “হতে পারে শয়তান তার হাতে থেকে অস্ত্র নিয়ে ব্যবহার করবে। ফলে সে জাহান্নামের গুহায় নিপতিত হবে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৭২ - হারাম শরীফে ধর্মদ্রোহী কাজ করা
আল্লাহ বলেন :
“এবং মসজিদে হারাম যা আমি করেছি স্থায়ী ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান। আর তাতে যে অন্যায়ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবো।” (সূরা হাজ্জ ২২ : ৭৫)
“তোমরা কি জান আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র কে? মনে রাখবে আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র হল ঐ লোক যে কিয়ামতের দিন অনেক সলাত, সিয়াম, ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ সে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ ভক্ষণ করেছে আবার কাউকে রক্তাক্ত বা প্রহার করেছে, অতঃপর আল্লাহ তার পুণ্য হতে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, অত্যাচারিত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করে দিবেন। যখন পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূবেই তরা পুণ্য শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের পাপগুলি তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহীহ মুসলিম)
কবীরা গুনাহ ৭৩ - মুসলিমদের ত্রুটি - বিচ্যুতির সন্ধান করা এবং তাদের গোপন তথ্য প্রকাশ করা
আল্লাহ বলেনঃ
“আপনি আনুগত্য করবেন না ঐ ব্যক্তির যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে অন্যকে দোষারোপ করে ও পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায়।” (সূরা আল-কলম ৬৮ : ১০-১১)
রসূল (ﷺ) বলেন : “যে ব্যক্তি কোন মু'মিন সম্পর্কে এমন দোষ বর্ণনা করে যা তার মধ্যে আদৌ নেই, আল্লাহ জাহান্নামীদের নির্গত পচা গলা পুজের মধ্যে তার স্থান নির্ধারণ করে দিবেন। সে যা বলেছে তা বের করে দিতে চাবে, কিন্তু পারবে না” (আবু দাউদ)
কবীরা গুনাহ ৭৪ - ঝগড়া করার সময় অতিরিক্ত গালি দেয়া
রসূল (ﷺ) বলেন : “চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সেই প্রকৃত মুনাফিক। যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার নিকট মুনাফিকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যখন আমানত রাখা হয় সে খিয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে আর যখন ঝগড়া করে গাল মন্দ করে।” (সহীহ বুখারী)।
কবীরা গুনাহ ৭৫ - কোন কংশ বা তার লোকদের খারাপ গুলে অভিহিত করা
রসূল (ﷺ) বলেন, “দু'টি দোষ মানুষের মধ্যে কুফর সমতুল্য। (১) বংশের কুৎসা রটানো। (২) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি করা।” (সহীহ মুসলিম)
ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজের যে বইগুলো আমি পড়ছি তার নোট রাখার জন্য একটি ডাইরী সবসময় সাথে রাখি। যখন যা মনে পড়ে তা লিখে রাখি। এই প্রশ্নগুলোর উত্তরও সেই ডাইরিতে এক এক করে লিখার চেষ্টা করি।
১. ঈমান বলতে কী বুঝায়? এর অর্থ ও পরিচয় কী?
২. গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ে ঈমান আনার তাৎপর্য কী এবং পন্থা কী?
৩. মুসলিম জীবনে ঈমানের গুরুত্ব কতটুকু?
৪. কুরআন ও হাদীসে কোন কোন বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে?
৫. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার তাৎপর্য কী?
৬. কোন্ কোন্ দিক থেকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে?
৭. রব, মালিক ও ইলাহ হিসেবে আল্লাহর পরিচয় কী?
৮. কী কী কারণে ঈমান ও ইসলাম নষ্ট হয়ে যায়?
৯. ঈমান ভঙ্গকারী বিষয়গুলো কী কী?
১০. তকদীরের প্রতি ঈমান আনার অর্থ কী?
১১. ঈমান আকীদা ও প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য ২টি একশন পালন করতে হবে। তা কী কী?
১২. আকীদা কী? ইসলামী পরিভাষায় আকীদার অপর নাম কী?
১৩. আকীদার গুরুত্ব কী?
১৪. মহান আল্লাহকে একক সত্তা হিসেবে বিশ্বাস কাকে কী বলে?
১৫. মানব জীবনে আকীদার কী কী প্রভাব রয়েছে?
১৬. তাওহীদ বলতে কী বুঝায়? আল্লাহ তাআলা তাওহীদের পক্ষে কী কী যুক্তি প্রদর্শন করেছেন?
১৭. ইসলামী আকীদার উৎস কয়টি ও কী কী?
১৮. আল্লাহ তাআলা কী কী গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী?
১৯. প্রকৃত তাওহীদের আলোকে বর্তমান মুসলিম সমাজের অবস্থান কোথায়?
২০. শিরক বলতে কী বুঝায়? শিরকের অশুভ পরিণতি কী?
২১. শিরক বর্জন করে প্রকৃত তাওহীদের দিকে ফিরে আসার জন্য আল্লাহ তা'আলা কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন?
২২. অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও কেন মুশরিক?
২৩. মুশরিকদের পরিণতি কী হবে? উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে কী ধরণের মুশরিক রয়েছে?
২৪. সলাত-সিয়াম-হাজ্জ-যাকাতই কি শুধু ইবাদত?
২৫. সলাত-সিয়াম-হাজ্জ-যাকাত বাদে আর কী কী ফরয ইবাদত রয়েছে?
২৬. কালিমা থেকে পুরাপুরি উপকার পেতে হলে ৭টি শর্ত পূরণ করতে হবে সেগুলো কী কী?
২৭. কালিমার প্রকৃত প্রচারে কেন বাধা আসে?
২৮. কালিমা তাইয়্যিবার বিরোধিতা করার মূল কারণ কী?
২৯. কালিমা তাইয়্যিবার আসল শিক্ষা কী?
৩০. আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত কী?
৩১. আল্লাহর অনুগ্রহের হক কিভাবে আদায় করা যেতে পারে?
৩২. পূর্ণ মুসলিম কিভাবে হওয়া যায়?
৩৩. ইসলাম গ্রহণ করার অর্থ কী?
৩৪. মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য কী?
৩৫. মুসলিম এবং কাফিরের মধ্যে এতখানি পার্থক্য কেন হলো?
৩৬. মুসলিম হওয়া ও মুসলিম থাকার অর্থ কী?
৩৭. প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম শর্ত কী?
৩৮. ইসলামে জ্ঞান ও কাজের গুরুত্ব এতো বেশী কেন?
৩৯. প্রকৃত মুসলিম কাকে বলে?
৪০. আল্লাহর হুকুম পালন করা দরকার কেন?
৪১. দ্বীন ও শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য কী?
৪২. বিশ্বাস ও কর্মের মধ্যে সম্পর্ক কী?
৪৩. মানব জীবনে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কী?
৪৪. আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বাস্তব রূপ কী?
৪৫. কীভাবে ঈমানে দুর্বলতা দেখা দেয়?
৪৬. মযবুত ঈমানের শর্ত কী কী?
৪৭. তাগূতের পরিচয় কী?
৪৮. সহীহ জ্ঞানের উৎস কী কী?
৪৯. ইলম কতটুকু ফরয? এবং কোন্ ইন্ম সন্ধান করা ফরয?
৫০. পার্থিব অন্যান্য জ্ঞানের কোনো শরয়ী মর্যাদা আছে কী?
৫১. নেক বলতে কী বুঝায়?
৫২. সহীহ নিয়ত ছাড়া পুরস্কার পাওয়া যাবে কী?
৫৩. চেষ্টা না করা পর্যন্ত শুধু ইচ্ছা করার কোনো ফল আছে কি?
৫৪. মৃত্যুর পরও কি আমল জারী থাকে?
৫৫. মানুষের কেন আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়?
৫৬. এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ফলে মানুষ কী কী গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে?
৫৭. ফিরিশতা কারা? তাদের সঠিক মর্যাদা কী? ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনার গুরুত্ব কী?
৫৮. আখিরাত কী? এবং কিয়ামত কিভাবে সংঘটিত হবে?
৫৯. হাশরের ময়দানে আল্লাহর বিচার ও আদালতের স্বরূপ কী হবে?
৬০. সে আদালত থেকে কারা নাজাত পাবে আর কারা পাবে না?
৬১. জান্নাত ও জাহান্নামের স্বরূপ কী?
৬২. ঈমান বিল আখিরাতের গুরুত্ব কী?
৬৩. আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার গুরুত্ব কী?
৬৪. পূর্বেকার কিতাবসমূহ কেন এখন অনুসরণ করা যাবে না? কেনইবা
৬৫. কেবলমাত্র কুরআনকে অনুসরণ করতে হবে?
৬৫. কুরআনের প্রতি ঈমান আনার তাৎপর্য কী?
৬৬. বর্তমান মুসলিম উম্মাহ কুরআনের প্রতি কিরূপ আচরণ করছে?
৬৭. কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য কী?
৬৮. আল-কুরআনের মূল বিষয় বস্তু কী?
৬৯. কুরআন কি বুঝে পড়তে হবে? নাকি শুধু তিলাওয়াত করলেই চলবে?
৭০. কিতাব ও রিসালতের মধ্যে সম্পর্ক কী?
৭১. নবুয়ত ও রিসালতের তাৎপর্য কী?
৭২. কোন্ ধরনের লোকদের নবী মনোনীত করা হয়েছে?
৭৩. দুনিয়ার প্রতিটি জাতির নিকটই কি নবী এসেছিলেন?
৭৪. দুনিয়ার সকল নবী কি একই দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন?
৭৫. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর রিসালতের ব্যাপকতা কতটুকু?
৭৬. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পর কি আর কোন নবী আসবেন? নবুয়্যতের ধারা শেষ হয়ে যাবার কারণ কী?
৭৭. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পূর্ববর্তী নবীগণকে অনুসরণ করা এখন কি জরুরী?
৭৮. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রতি ঈমান ও তাঁর আনুগত্যের গুরুত্ব কী?
৭৯. মুহাম্মাদ (ﷺ) সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করলে কী পরিনতি হবে?
৮০. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উম্মতের বর্তমান অবস্থা কী?
৮১. প্রকৃত ঈমানদার লোকদের বৈশিষ্ট্য কী?
৮২. নবীর কাজ কী? মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে এই পৃথিবীতে কেন পাঠানো হয়েছে?
৮৩. নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) মক্কায় সর্বপ্রথম কী সংশোধনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন?
৮৪. ঈমান কি শুধু অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করার নাম? নাকি মৌখিক ঘোষণা এবং কর্মেও ঈমানের প্রতিফলন অপরিহার্য?
৮৫. ঈমান ও ইসলামের মধ্যে কী সম্পর্ক ও কতটুকু সম্পর্ক?
৮৬. মু'মিনরা পরকালে কিরূপ সৌভাগ্যের অধিকারী হবে?
৮৭. আর দুনিয়াতেই বা ঈমানদার লোকেরা কী কল্যাণ লাভ করবে?
৮৮. ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহকে কতভাগে ভাগ করা হয়েছে ও কী কী?
৮৯. মৃত ব্যক্তির নিকট দু’আ করা কী? কোন কিছু চাইতে হলে কার কাছে চাইতে হবে এ সমন্ধে রসূল (ﷺ) কী বলেছেন?
৯০. আল্লাহ যে রব তাকে অস্বীকার করা বা তাঁর ইবাদতে কোন কি করা কী?
৯১. আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
৯২. কালিমা মানে কী? শাহাদাত মানে কী?
৯৩. কালিমা শাহাদাতের উপর ঈমান, আকীদা ও প্রতিজ্ঞা পালনের উপর যে পাঁচটি বাহ্যিক কাজ নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হয় তা কী কী?
৯৪. কালিমা তাইয়িবা একটি বিরাট বিপ্লবী ঘোষণা। এর ব্যাখ্যা কী?
৯৫. ফরয বলতে কী বুঝায় এবং তা অবহেলা করলে কী হবে?
৯৬. কালিমা হতে পুরোপুরি উপকার পেতে হলে কয়টি শর্ত পূরণ করতে হবে এবং তা কী কী?
৯৭. আল্লাহ কি নিরাকার? নাকি আল্লাহর আকার আছে?
৯৮. আল্লাহ কি সর্বত্র বিরাজমান? নাকি তিনি আরশে আজিমে রয়েছেন?
৯৯. কবীরা গুনাহ কী? ছগীরা গুনাহ কী?
১০০. কবীরা গুনাহ থেকে আমরা কিভাবে বেঁচে থাকতে পারি?
১. ঈমান বলতে কী বুঝায়? এর অর্থ ও পরিচয় কী?
২. গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ে ঈমান আনার তাৎপর্য কী এবং পন্থা কী?
৩. মুসলিম জীবনে ঈমানের গুরুত্ব কতটুকু?
৪. কুরআন ও হাদীসে কোন কোন বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে?
৫. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার তাৎপর্য কী?
৬. কোন্ কোন্ দিক থেকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে?
৭. রব, মালিক ও ইলাহ হিসেবে আল্লাহর পরিচয় কী?
৮. কী কী কারণে ঈমান ও ইসলাম নষ্ট হয়ে যায়?
৯. ঈমান ভঙ্গকারী বিষয়গুলো কী কী?
১০. তকদীরের প্রতি ঈমান আনার অর্থ কী?
১১. ঈমান আকীদা ও প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য ২টি একশন পালন করতে হবে। তা কী কী?
১২. আকীদা কী? ইসলামী পরিভাষায় আকীদার অপর নাম কী?
১৩. আকীদার গুরুত্ব কী?
১৪. মহান আল্লাহকে একক সত্তা হিসেবে বিশ্বাস কাকে কী বলে?
১৫. মানব জীবনে আকীদার কী কী প্রভাব রয়েছে?
১৬. তাওহীদ বলতে কী বুঝায়? আল্লাহ তাআলা তাওহীদের পক্ষে কী কী যুক্তি প্রদর্শন করেছেন?
১৭. ইসলামী আকীদার উৎস কয়টি ও কী কী?
১৮. আল্লাহ তাআলা কী কী গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী?
১৯. প্রকৃত তাওহীদের আলোকে বর্তমান মুসলিম সমাজের অবস্থান কোথায়?
২০. শিরক বলতে কী বুঝায়? শিরকের অশুভ পরিণতি কী?
২১. শিরক বর্জন করে প্রকৃত তাওহীদের দিকে ফিরে আসার জন্য আল্লাহ তা'আলা কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন?
২২. অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও কেন মুশরিক?
২৩. মুশরিকদের পরিণতি কী হবে? উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে কী ধরণের মুশরিক রয়েছে?
২৪. সলাত-সিয়াম-হাজ্জ-যাকাতই কি শুধু ইবাদত?
২৫. সলাত-সিয়াম-হাজ্জ-যাকাত বাদে আর কী কী ফরয ইবাদত রয়েছে?
২৬. কালিমা থেকে পুরাপুরি উপকার পেতে হলে ৭টি শর্ত পূরণ করতে হবে সেগুলো কী কী?
২৭. কালিমার প্রকৃত প্রচারে কেন বাধা আসে?
২৮. কালিমা তাইয়্যিবার বিরোধিতা করার মূল কারণ কী?
২৯. কালিমা তাইয়্যিবার আসল শিক্ষা কী?
৩০. আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত কী?
৩১. আল্লাহর অনুগ্রহের হক কিভাবে আদায় করা যেতে পারে?
৩২. পূর্ণ মুসলিম কিভাবে হওয়া যায়?
৩৩. ইসলাম গ্রহণ করার অর্থ কী?
৩৪. মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য কী?
৩৫. মুসলিম এবং কাফিরের মধ্যে এতখানি পার্থক্য কেন হলো?
৩৬. মুসলিম হওয়া ও মুসলিম থাকার অর্থ কী?
৩৭. প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম শর্ত কী?
৩৮. ইসলামে জ্ঞান ও কাজের গুরুত্ব এতো বেশী কেন?
৩৯. প্রকৃত মুসলিম কাকে বলে?
৪০. আল্লাহর হুকুম পালন করা দরকার কেন?
৪১. দ্বীন ও শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য কী?
৪২. বিশ্বাস ও কর্মের মধ্যে সম্পর্ক কী?
৪৩. মানব জীবনে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কী?
৪৪. আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বাস্তব রূপ কী?
৪৫. কীভাবে ঈমানে দুর্বলতা দেখা দেয়?
৪৬. মযবুত ঈমানের শর্ত কী কী?
৪৭. তাগূতের পরিচয় কী?
৪৮. সহীহ জ্ঞানের উৎস কী কী?
৪৯. ইলম কতটুকু ফরয? এবং কোন্ ইন্ম সন্ধান করা ফরয?
৫০. পার্থিব অন্যান্য জ্ঞানের কোনো শরয়ী মর্যাদা আছে কী?
৫১. নেক বলতে কী বুঝায়?
৫২. সহীহ নিয়ত ছাড়া পুরস্কার পাওয়া যাবে কী?
৫৩. চেষ্টা না করা পর্যন্ত শুধু ইচ্ছা করার কোনো ফল আছে কি?
৫৪. মৃত্যুর পরও কি আমল জারী থাকে?
৫৫. মানুষের কেন আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়?
৫৬. এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ফলে মানুষ কী কী গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে?
৫৭. ফিরিশতা কারা? তাদের সঠিক মর্যাদা কী? ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনার গুরুত্ব কী?
৫৮. আখিরাত কী? এবং কিয়ামত কিভাবে সংঘটিত হবে?
৫৯. হাশরের ময়দানে আল্লাহর বিচার ও আদালতের স্বরূপ কী হবে?
৬০. সে আদালত থেকে কারা নাজাত পাবে আর কারা পাবে না?
৬১. জান্নাত ও জাহান্নামের স্বরূপ কী?
৬২. ঈমান বিল আখিরাতের গুরুত্ব কী?
৬৩. আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার গুরুত্ব কী?
৬৪. পূর্বেকার কিতাবসমূহ কেন এখন অনুসরণ করা যাবে না? কেনইবা
৬৫. কেবলমাত্র কুরআনকে অনুসরণ করতে হবে?
৬৫. কুরআনের প্রতি ঈমান আনার তাৎপর্য কী?
৬৬. বর্তমান মুসলিম উম্মাহ কুরআনের প্রতি কিরূপ আচরণ করছে?
৬৭. কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য কী?
৬৮. আল-কুরআনের মূল বিষয় বস্তু কী?
৬৯. কুরআন কি বুঝে পড়তে হবে? নাকি শুধু তিলাওয়াত করলেই চলবে?
৭০. কিতাব ও রিসালতের মধ্যে সম্পর্ক কী?
৭১. নবুয়ত ও রিসালতের তাৎপর্য কী?
৭২. কোন্ ধরনের লোকদের নবী মনোনীত করা হয়েছে?
৭৩. দুনিয়ার প্রতিটি জাতির নিকটই কি নবী এসেছিলেন?
৭৪. দুনিয়ার সকল নবী কি একই দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন?
৭৫. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর রিসালতের ব্যাপকতা কতটুকু?
৭৬. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পর কি আর কোন নবী আসবেন? নবুয়্যতের ধারা শেষ হয়ে যাবার কারণ কী?
৭৭. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পূর্ববর্তী নবীগণকে অনুসরণ করা এখন কি জরুরী?
৭৮. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রতি ঈমান ও তাঁর আনুগত্যের গুরুত্ব কী?
৭৯. মুহাম্মাদ (ﷺ) সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করলে কী পরিনতি হবে?
৮০. মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উম্মতের বর্তমান অবস্থা কী?
৮১. প্রকৃত ঈমানদার লোকদের বৈশিষ্ট্য কী?
৮২. নবীর কাজ কী? মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে এই পৃথিবীতে কেন পাঠানো হয়েছে?
৮৩. নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) মক্কায় সর্বপ্রথম কী সংশোধনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন?
৮৪. ঈমান কি শুধু অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করার নাম? নাকি মৌখিক ঘোষণা এবং কর্মেও ঈমানের প্রতিফলন অপরিহার্য?
৮৫. ঈমান ও ইসলামের মধ্যে কী সম্পর্ক ও কতটুকু সম্পর্ক?
৮৬. মু'মিনরা পরকালে কিরূপ সৌভাগ্যের অধিকারী হবে?
৮৭. আর দুনিয়াতেই বা ঈমানদার লোকেরা কী কল্যাণ লাভ করবে?
৮৮. ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহকে কতভাগে ভাগ করা হয়েছে ও কী কী?
৮৯. মৃত ব্যক্তির নিকট দু’আ করা কী? কোন কিছু চাইতে হলে কার কাছে চাইতে হবে এ সমন্ধে রসূল (ﷺ) কী বলেছেন?
৯০. আল্লাহ যে রব তাকে অস্বীকার করা বা তাঁর ইবাদতে কোন কি করা কী?
৯১. আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
৯২. কালিমা মানে কী? শাহাদাত মানে কী?
৯৩. কালিমা শাহাদাতের উপর ঈমান, আকীদা ও প্রতিজ্ঞা পালনের উপর যে পাঁচটি বাহ্যিক কাজ নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হয় তা কী কী?
৯৪. কালিমা তাইয়িবা একটি বিরাট বিপ্লবী ঘোষণা। এর ব্যাখ্যা কী?
৯৫. ফরয বলতে কী বুঝায় এবং তা অবহেলা করলে কী হবে?
৯৬. কালিমা হতে পুরোপুরি উপকার পেতে হলে কয়টি শর্ত পূরণ করতে হবে এবং তা কী কী?
৯৭. আল্লাহ কি নিরাকার? নাকি আল্লাহর আকার আছে?
৯৮. আল্লাহ কি সর্বত্র বিরাজমান? নাকি তিনি আরশে আজিমে রয়েছেন?
৯৯. কবীরা গুনাহ কী? ছগীরা গুনাহ কী?
১০০. কবীরা গুনাহ থেকে আমরা কিভাবে বেঁচে থাকতে পারি?
তাফসীরে ইবনে কাসীর – ইবনে কাসীর
তাফসীরে ফযিলালিল কুরআন - সাইয়েদ কুতুব
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম - তাওহীদ প্রকাশনী
ইসলামী আকীদা - ড. মনজুর ই ইলাহী
কিতাবুত তাওহীদ - দারুস্সালাম পাবলিকেশনস, রিয়াদ
মজবুত ঈমান - আবু আযমী
শুআবুল ঈমান (ঈমানের শাখাসমূহ) - ইমাম বাইহাকী
কুফরীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ - সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ইসলাম - ড. মানে' ইবন হাম্মাদ আল-জুহানী
নিফাকের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ - সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান
ইকামতে দ্বীন - আবু আযমী
ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব - মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব আত-তামীমী (রহ.)
ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা – আধুনিক প্রকাশনি
আল্লাহর হক ও বান্দার হক - খন্দকার আবুল খায়ের
কালেমা তাইয়েবা - মাওলানা আব্দুর রহীম
কালেমার হাকিকত - খন্দকার আবুল খায়ের
ঈমান-ইসলামের মূলভিত্তি ও ইসলামী আকীদা বিশ্বাস - মুহাম্মাদ বিন জামীল যাই
কবীরা গুনাহ - ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী (রহ.)
তাফসীরে ফযিলালিল কুরআন - সাইয়েদ কুতুব
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম - তাওহীদ প্রকাশনী
ইসলামী আকীদা - ড. মনজুর ই ইলাহী
কিতাবুত তাওহীদ - দারুস্সালাম পাবলিকেশনস, রিয়াদ
মজবুত ঈমান - আবু আযমী
শুআবুল ঈমান (ঈমানের শাখাসমূহ) - ইমাম বাইহাকী
কুফরীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ - সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ইসলাম - ড. মানে' ইবন হাম্মাদ আল-জুহানী
নিফাকের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ - সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান
ইকামতে দ্বীন - আবু আযমী
ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব - মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব আত-তামীমী (রহ.)
ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা – আধুনিক প্রকাশনি
আল্লাহর হক ও বান্দার হক - খন্দকার আবুল খায়ের
কালেমা তাইয়েবা - মাওলানা আব্দুর রহীম
কালেমার হাকিকত - খন্দকার আবুল খায়ের
ঈমান-ইসলামের মূলভিত্তি ও ইসলামী আকীদা বিশ্বাস - মুহাম্মাদ বিন জামীল যাই
কবীরা গুনাহ - ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী (রহ.)
এই বইটি গ্রন্থনা ও উপস্থাপনার ব্যাপারে সরাসরি কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ করা হয়েছে, বিশেষ করে আকিদাগত দিকগুলোতে খুব বেশী মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় পৃথিবীর বিখ্যাত ইসলামিক স্কলারগণ ও আলেমগণের সহীহ আকীদাগত গবেষণা তুলে ধরা হয়েছে। সে জন্য আমরা তাঁদের নিকট ঋণী ও কৃতজ্ঞ এবং তাঁদের আখিরাতে মুক্তির জন্য আমরা দু’আ করি। তাঁদের জ্ঞানগর্ভ গবেষণার সুফল সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত তারা পেতে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রকাশনায় যে সকল স্কলারগণের বইয়ের সহায়তা নেয়া হয়েছে তাঁদের রেফারেন্স বইয়ের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে।
সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহর। আমরা মূলতঃ ‘প্যারেন্টিং এবং ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করি। আমাদের প্রকাশিত বইগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে পারিবারিক উন্নয়ন। আমরা সকলেই চাই এই দুনিয়া এবং আখিরাত দুই দিকেই সফলতা। প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান এবং সেই সুনযায়ী জীবন পরিচালনা ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব না। আমাদের মতো যারা ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া জেনারেল এডুকেশনে এডুকেটেড তাদের ইসলামের উপর তেমন কোন একাডেমিক এবং সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনা নেই। আমরা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে যতোটুকুই জানি তা শুনে শুনে বা দুই একটা বই পড়ে যার বিস্তৃতি বা গভীরতা নগণ্য। আমরা যারা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও আমলযোগ্য জ্ঞান অর্জন করতে চাই তাদের সামনে এক মহাসমুদ্র, কোথা থেকে শুরু করবো আর কোথায় গিয়ে শেষ করবো বুঝে উঠা মুশকিল! এছাড়া আমাদের সামনে ইসলামিক স্টাডিজের উপর বাস্তব জীবনধর্মী কোন পরিপূর্ণ সিলেবাসও নেই। বরং রয়েছে বাজার ভরা আনঅথেন্টিক বইপত্রের সমারোহ। আমরা যারা ব্যস্ত জীবনযাপন করি তাদের সময়-সুযোগ করে সব দিক মিলিয়ে ইসলামকে জানার জন্য প্রচুর পড়াশোনার সময়ও হয়ে উঠে না।
এই বিষয়ে আমরা নিজেরা (স্বামী-স্ত্রী) যেহেতু ভুক্তভুগি ছিলাম তাই অন্যদের কথা চিন্তা করে দ্বীন ইসলামের উপর আমাদের ১২ বছরের অধ্যয়ন, বিভিন্ন কোর্স এবং গবেষণার ফল ১২টি বইতে বিষয়ভিত্তিকভাবে উপস্থাপন করেছি। কোন পরিবার যদি ১২টি বইয়ের এই সিলেবাস অধ্যয়ন করেন তাহলে তাদের সঠিক ইসলামের উপর ওভারঅল একটা নলেজ হবে। আমরা ১২ বছরে যা শিখেছি আশা করি এই ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজের ১২টি বই অধ্যয়ন করলে তা এক বছরেই পাওয়া সম্ভব, ইনশাআল্লাহ। একই কথা চিন্তা করে বড়দের ডেভেলপমেন্টর পাশাপাশি আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে বাংলা মিডিয়ামের জন্য ১২টি বই বাংলায় এবং ইংরেজী মিডিয়ামের জন্য ১২টি বই ইংরেজীতে প্রকাশ করেছি। এই বইগুলো পড়লে বড়রাও সমভাবে উপকৃত হবেন।
আমরা স্বামী-স্ত্রী দু'জনই মূলতঃ IT Professionals, আমাদের মেধা ও একাডেমিক কোয়ালিফিকেশনকে আমরা সঠিক দ্বীন বুঝার কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি, তাই প্রকৃত পক্ষে আমরা হলাম Students of Knowledge। আমাদের বইগুলো প্রকাশনার সমস্তু ব্যয় IFD Trust-কে সদাকা করে দেয়া হয়েছে। এই বইয়ের বাজারজাতকরণ এবং বিক্রি সবই Non-commercial। এই বইয়ের বিক্রয় মূল্য সমাজের কল্যাণে পরবর্তী ভার্শন প্রিন্টিংয়ে ব্যবহৃত হবে, ইনশাআল্লাহ।
এই বিষয়ে আমরা নিজেরা (স্বামী-স্ত্রী) যেহেতু ভুক্তভুগি ছিলাম তাই অন্যদের কথা চিন্তা করে দ্বীন ইসলামের উপর আমাদের ১২ বছরের অধ্যয়ন, বিভিন্ন কোর্স এবং গবেষণার ফল ১২টি বইতে বিষয়ভিত্তিকভাবে উপস্থাপন করেছি। কোন পরিবার যদি ১২টি বইয়ের এই সিলেবাস অধ্যয়ন করেন তাহলে তাদের সঠিক ইসলামের উপর ওভারঅল একটা নলেজ হবে। আমরা ১২ বছরে যা শিখেছি আশা করি এই ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজের ১২টি বই অধ্যয়ন করলে তা এক বছরেই পাওয়া সম্ভব, ইনশাআল্লাহ। একই কথা চিন্তা করে বড়দের ডেভেলপমেন্টর পাশাপাশি আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে বাংলা মিডিয়ামের জন্য ১২টি বই বাংলায় এবং ইংরেজী মিডিয়ামের জন্য ১২টি বই ইংরেজীতে প্রকাশ করেছি। এই বইগুলো পড়লে বড়রাও সমভাবে উপকৃত হবেন।
আমরা স্বামী-স্ত্রী দু'জনই মূলতঃ IT Professionals, আমাদের মেধা ও একাডেমিক কোয়ালিফিকেশনকে আমরা সঠিক দ্বীন বুঝার কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি, তাই প্রকৃত পক্ষে আমরা হলাম Students of Knowledge। আমাদের বইগুলো প্রকাশনার সমস্তু ব্যয় IFD Trust-কে সদাকা করে দেয়া হয়েছে। এই বইয়ের বাজারজাতকরণ এবং বিক্রি সবই Non-commercial। এই বইয়ের বিক্রয় মূল্য সমাজের কল্যাণে পরবর্তী ভার্শন প্রিন্টিংয়ে ব্যবহৃত হবে, ইনশাআল্লাহ।
আমরা যখন কোথাও দাওয়াত খেতে যাই সেখানে সাধারণত দই-মিষ্টি, ক্রোকারিজ, শোপিস বা অন্য কোন গিফ্ট সামগ্রী নিয়ে যাই উপহার হিসেবে। যা একটি পরিবারের পারিবারিক ডেভেলপমেন্টে কোন ভূমিকা রাখে না। আমরা কি কখনো গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি যে এই উপহারের ধরণ একটু পরিবর্তন করলে আমরা উভয় পক্ষই অসীম উপকৃত হতে পারি? তাই আমরা যখন কোন পারিবারিক দাওয়াতে যাই তখন এই ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজের ১২টি বই সুন্দর র্যাপিং করে একটি সুন্দর গিফট ব্যাগে গিফট হিসেবে উপহার দিতে পারি। এতে দাওয়াত খাওয়াও হলো এবং ঐ পরিবারটিকে দ্বীন ইসলামের দাওয়াতও দেয়া হলো। এতে আল্লাহর রহমত নিহিত থাকবে দু’পক্ষের জন্যেই।
আমাদের দেশে আমরা কিছু কিছু আরবী শব্দের ভুল উচ্চারণ শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যার কারণে হয়তো এখন সঠিক উচ্চারণ শুনতে বা পড়তে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। আমাদের বইগুলোতে আমরা আরবী শব্দগুলোর সঠিক উচ্চারণ লেখার চেষ্টা করেছি যেমন : নবী, কারীম, রসূল, হাজ্জ, দু’আ, কুরআন, সদাকা।
আবার দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে কুরআন ও হাদীসের আরবী মূল শব্দ পরিবর্তন হয়ে ফার্সি বা উর্দু শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই সকল শব্দ দ্বারা মূল শব্দের অর্থ সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না। তাই আমরা আমাদের বইগুলোতে এরকম কিছু শব্দের মূল আরবী (কুরআন ও হাদীসের) শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। যেমনঃ নামায = সলাত, রোযা = সিয়াম, রমযান = রমাদান ইত্যাদি।
আমাদের দেশে আমরা কিছু কিছু আরবী শব্দের ভুল উচ্চারণ শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যার কারণে হয়তো এখন সঠিক উচ্চারণ শুনতে বা পড়তে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। আমাদের বইগুলোতে আমরা আরবী শব্দগুলোর সঠিক উচ্চারণ লেখার চেষ্টা করেছি যেমন : নবী, কারীম, রসূল, হাজ্জ, দু’আ, কুরআন, সদাকা।
আবার দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে কুরআন ও হাদীসের আরবী মূল শব্দ পরিবর্তন হয়ে ফার্সি বা উর্দু শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই সকল শব্দ দ্বারা মূল শব্দের অর্থ সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না। তাই আমরা আমাদের বইগুলোতে এরকম কিছু শব্দের মূল আরবী (কুরআন ও হাদীসের) শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। যেমনঃ নামায = সলাত, রোযা = সিয়াম, রমযান = রমাদান ইত্যাদি।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন