hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈমানের স্বচ্ছ ধারণা

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

৫৯
ইবাদত সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণার অবসান
মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য : আল্লাহ আল কুরআনে বলেছেন :

وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون

“আমি জিন ও মানব জাতিকে কেবল আমারই ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।” (সূরা আয যারিয়াত ৫১ : ৫৬) এ থেকে নিঃসন্দেহে বুঝা গেল যে, মানুষের জন্ম, জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আল্লাহর ইবাদত এবং বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, ইবাদত' শব্দটির প্রকৃত অর্থ জেনে নেয়া আমাদের পক্ষে কতখানি জরুরী। এ শব্দটির অর্থ না জানলে যে মহান উদ্দেশ্যে আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা আমি কখনই লাভ করতে পারবো না। আর যে তার উদ্দেশ্য লাভ করতে পারে না তা ব্যর্থ ও নিষ্ফল হয়ে থাকে। চিকিৎসক রোগীকে সুস্থ করতে না পারলে বলা হয় যে, সে চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছে, কৃষক ভাল ফসল জন্মাতে না পারলে কৃষিকার্যে তার ব্যর্থতা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। তেমনি আমরা যদি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য লাভ অর্থাৎ আল্লাহ যেভাবে চায় সেভাবে ইবাদত করতে না পারি তবে বলতে হবে যে, আমাদের জীবন ব্যর্থ হয়েছে। এজন্যই আমাদের এই 'ইবাদত' শব্দটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য জানার জন্য বিশেষ মনোযোগী হওয়া উচিত এবং তা আমাদের হৃদয়ে ও ব্রেইনে বদ্ধমূল করে নেয়া উচিত। কারণ মানব জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা এরই উপর একান্তভাবে নির্ভর করে। ইবাদত বলতে কী বুঝায়? ইবাদত শব্দটি আরবী 'আবদ হতে উদ্ভূত হয়েছে। 'আবদ' অর্থ দাস ও গোলাম। অতএব 'ইবাদত' শব্দের অর্থ হবে বন্দেগী ও গোলামী করা। যে ব্যক্তি অন্যের দাস সে যদি তার বাস্তবিকই মনিবের সমীপে একান্ত অনুগত হয়ে থাকে এবং তার সাথে ঠিক চাকরের ন্যায় ব্যবহার করে, তবে একে বলা হয় বন্দেগী ও ইবাদত। পক্ষান্তরে কেউ যদি কারো চাকর হয়। এবং মনিবের কাছ থেকে পুরোপুরি বেতন আদায় করে, কিন্তু তবুও সে যদি ঠিক চাকরের ন্যায় কাজ না করে তবে বলতে হবে যে, সে নাফরমানী ও বিদ্রোহ করেছে। আসলে একে অকৃতজ্ঞতাই বলা বাঞ্ছনীয়। তাই সর্বপ্রথম জানতে হবে, মনিবের সামনে 'চাকরের' নয় কাজ করা এবং তার সমীপে আনুগত্য প্রকাশ করার উপায় কী হতে পারে। বান্দা বা চাকরকে প্রথমত মনিবকে 'প্রভু বলে স্বীকার করতে হবে এবং মনে করতে হবে যে, যিনি আমার মালিক, যিনি আমাকে দৈনন্দিন রুজী দান করেন এবং যিনি আমার মালিক, যিনি আমার হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন তাঁরই অনুগত হওয়া আমার কর্তব্য। তিনি ছাড়া অন্য কেউই আমার আনুগত্য লাভের অধিকারী নয়। সকল সময় মনিবের আনুগত্য করা, তাঁর হুকুম পালন করা, তাঁর আদেশ মূহুর্তের জন্যও পরিত্যাগ না করা, মনিবের বিরুদ্ধে মনে কোন কথার স্থান না দেয়া এবং অন্য কারো কথা পালন না করাই বান্দার দ্বিতীয় কর্তব্য। গোলাম সবসময়ই গোলাম; তার একথা বলার কোন অধিকার নেই যে, আমি মনিবের এ আদেশ মানবো আর অমুক আদেশ মানবো না। কিংবা আমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনিবের গোলাম আর অন্যান্য সময় আমি তার গোলামী হতে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও মুক্ত। মনিবের প্রতি সম্মান ও সম্রম প্রদর্শন এবং তাঁর সমীপে আদব রক্ষা করে চলা বান্দার তৃতীয় কাজ। আদব ও সম্মান প্রকাশের যে পন্থা মনিব নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সেই সময়ে নিশ্চিতরূপে উপস্থিত হওয়া এবং মনিবের আনুগত্য ও দাসত্ব স্বীকার করে নিজেকে প্রতিজ্ঞা ও আন্তরিক নিষ্ঠা প্রমাণ করা একান্তু আবশ্যক।

এ তিনটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে যে কার্যটি সম্পন্ন হয় আরবী পরিভায়ায় তাকেই বলে ইবাদত'। প্রথমত, মনিবের দাসত্ব স্বীকার, দ্বিতীয়ত, মনিবের আনুগত্য এবং তৃতীয়ত, মনিবের সম্মান ও সম্রম রক্ষা করা।

ইবাদতের উদ্দেশ্য :

আমরা জানি যে আল্লাহ জিন ও মানব জাতিকে একমাত্র এ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন যে, তারা কেবল আল্লাহরই দাসত্ব করবে অন্য কারো নয়, কেবল আল্লাহর হুকুম পালন করবে, এছাড়া অন্য কারো হুকুম অনুসরণ করবে না এবং কেবল তাঁরই সামনে সম্মান সম্রম প্রকাশের জন্য মাথা নত করবে, অন্য কারো সামনে নয়। এ তিনটি জিনিসকে আল্লাহ বুঝিয়েছেন এ ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ 'ইবাদত' দ্বারা। যেসব আয়াতে আল্লাহ ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন তার অর্থ এটাই। আমাদের শেষ নবী এবং তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের যাবতীয় শিক্ষার সারকথা হচ্ছে।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না। অর্থাৎ দাসত্ব ও আনুগত্য লাভের যোগ্য সারা জাহানে একজনই মাত্র বাদশাহ আছেন -- তিনি হচ্ছেন আল্লাহ; অনুসরণযোগ্য মাত্র একটি বিধান বা আইন আছে -- তা হলো আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা এবং একটি মাত্র সত্ত্বাই আছে, যার পূজা-উপাসনা, আরাধনা করা যেতে পারে। আর সেই সত্তাই হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ।

উদাহরণ ১:

একটি চাকর যদি মনিবের নির্ধারিত কর্তব্য পালন না করে বরং তাঁর সামনে কেবল হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, লক্ষ বার কেবল তার নাম জপে, তবে এ চাকরিটি সম্পর্কে আমরা কী বলবো? মনিব তাকে অন্যান্য মানুষের প্রাপ্য আদায় করতে বলেন। কিন্তু সে কেবল সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে মনিবের সামনে মাথা নত করে দশবার সালাম করে এবং আবার হাত বেঁধে দাঁড়ায়। মনিব তাকে অনিষ্টকর কাজগুলো বন্ধ করতে আদেশ করে কিন্তু সে সেখান থেকে একটুও নড়ে না। বরং কেবল সিজদাহ করে থাকে। মনিব তাকে চোরের হাত কাটতে বলেন। কিন্তু সে দাঁড়িয়ে থেকে সুললিত কণ্ঠে বিশবার পড়তে বা উচ্চরণ করতে থাকে --'চোরের হাত কাটা কিন্তু সে একবারও এরকম শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে না যার অধীনে চোরের হাত কাঁটা সম্ভব।

এমন চাকর সম্পর্কে কী মন্তব্য করবো? আমরা কি বলতে পারি যে, সে প্রকৃতপক্ষে মনিবের বন্দেগী ও ইবাদত করছে? আমার কোন চাকর এরূপ করলে আমি তাকে কী বলবো? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আল্লাহর যে চাকর এরূপ আচরণ করে তাকে আমরা অনেকেই পরহেজগার, বুযুর্গ ইত্যাদি নামে অভিহিত করি। এরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুরআন শরীফে আল্লাহর কত শত হুকুম তিলাওয়াত করে, কিন্তু সেগুলো পালন করার এবং কাজে পরিণত করার জন্য একটু চেষ্টাও করে না। বরং কেবল নফলের পর নফল পড়তে থাকে, আল্লাহর নামে হাজার দানা তাসবীহ জপতে থাকে এবং মধুর কন্ঠে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করতে থাকে।

উদাহরণ ২:

আর একজন চাকরের কথা ধরি। সে রাত-দিন কেবল পরের কাজ করে, অন্যের আদেশ শুনে এবং পালন করে, অন্যের আইন মেনে চলে। এবং তার প্রকৃত মনিবের যত আদেশই হোক না কেন, তার বিরোধিতা করে। কিন্তু সালাম' দেয়ার সময় সে তার প্রকৃত মনিবের সামনে উপস্থিত হয় এবং মুখে কেবল তার নাম জপতে থাকে। আমাদের কারো কোন চাকর এরূপ করলে আমরা কী করবো? মুখে মুখে সে যখন আমাকে মনিব বলে ডাকবে তখন অমি কি তাকে একথা বলবোনা যে, তুমি মিথ্যাবাদী; তুমি আমার বেতন খেয়ে অন্যের তাবেদারী করছো, মুখে আমাকে মনিব বলে ডাকছো, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেবল অন্যেরই কাজ করে বেড়াচ্ছ? এটা যে নিতান্ত সাধারণ বুদ্ধির কথা এটা বারো বুঝতে কষ্ট হয় না। কিন্তু কী আশ্চর্যের কথা! যারা রাত-দিন আল্লাহর আইন ভঙ্গ করবে, কাফির ও মুশরিকদের আদেশ অনুযায়ী কাজ করে এবং নিজেদের বাস্তব কর্মজীবনে আল্লাহর বিধানের কোন পরোয়া করে না, তাদের সলাত-সিয়াম, তাসবীহ পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত, হাজ্জ, যাকাত ইত্যাদিকে ইবাদত বলে মনে করা। এ ভুল ধারণারও মূল কারণ ইবাদত শব্দের প্রকৃত অর্থ না জানা।

উদাহরণ ৩ :

আর এটি চাকরের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মনিব তার চাকরদের জন্য যে ধরনের পোশাক নির্দিষ্ট করেছে, মাপ-জোখ ঠিক রেখে সে ঠিক সেই ধরনের পোশাক পরিধান করে, বড় আদব ও যত্ন সহকারে সে মনিবের সামনে হাজির হয়, প্রত্যেকটি হুকুম শুনা মাত্রই মাথা নত করে শিরোধার্য করে নেয় যেন তার তুলনায় বেশী অনুগত চাকর আর কেউই নয়। 'সালাম দেয়ার সময় সে একেবারে সকলের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং মনিবের নাম জপবার ব্যাপারে সমস্ত চাকরের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও নিষ্ঠা প্রমাণ করে; কিন্তু অন্যদিকে এ ব্যক্তি মনিবের শত্র এবং বিদ্রোহীদের খেদমত করে, মনিবের বিরুদ্ধে তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করে এবং মনিবের নাম পর্যন্ত দুনিয়া হতে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে তারা যে চেষ্টাই করে, এ হতভাগা তার সহযোগীতা করে; রাতের অন্ধকারে সে মনিবের নিষিদ্ধ কাজ করে এবং ভোর হলে বড় অনুগত চাকরটির ন্যায় হাত বেঁধে মনিবের সামনে হাজির হয়, এ চাকরটি সম্পর্কে আমরা কী বলবো? নিশ্চয়ই তাকে মুনাফিক, বিদ্রোহী প্রভৃতি নামে অভিহিত করতে একটুও কুণ্ঠিত হবো না। কিন্তু আল্লাহর কোন চাকর যখন এ ধরনের হাস্যকর আচরণ করতে থাকে তখন তাকে আমরা কী বলতে থাকি? তখন আমরা কাউকে পীর সাহেব' কাউকে 'হযরত মাওলানা কাউকে বড় 'কামেল', 'পরহেজগার' প্রভৃতি নামে ভূষিত করি। এর কারণ এই যে, আমরা তাদের মুখে মাপ মত লম্বা দাড়ি দেখে, তাদের পায়জামা পায়ের গিরার দু ইঞ্চি ওপরে দেখে, তাদের কপালে সলাতের কালো দাগ দেখে, এবং তাদের লম্বা লম্বা সলাত ও মোটা মোটা দানার তাসবীহ দেখে, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি; এদেরকে বড় দ্বীনদার ও ইবাদতকারী বলে মনে করি। এ ভুল শুধু এজন্য যে, 'ইবাদত' ও দ্বীনদারীর ভুল অর্থই আমাদের মনে বদ্ধমূল। হয়ে রয়েছে।

ইবাদতের প্রকৃত অর্থ :

আমি হয়তো মনে করি হাত বেঁধে কিবলামুখি হয়ে দাঁড়ানো, হাঁটুর উপর হাত রেখে রুকু করা, মাটিতে মাথা রেখে সিজদা করা এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট শব্দ উচ্চারণ করা- শুধু এ কয়টি কাজই প্রকৃত ইবাদত। হয়ত আমি মনে করি, রমাদানের প্রথম দিন হতে শাওয়ালের চাঁদ উঠা পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রাখার নাম ইবাদত। আমি হয়তো এটাও মনে করি যে, কুরআন শরীফ সুন্দর করে তিলাওয়াত করার নামই ইবাদত, আমি বুঝে থাকি মক্কা শরীফে গিয়ে কা'বা ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করার নামই ইবাদত।

মোটকথা, এ ধরনের বাহ্যিক রূপকে আমরা 'ইবাদত মনে করে নিয়েছি এবং এধরনের বাহ্যিক রূপ বজায় রেখে উপরোক্ত কাজগুলো থেকেই সমাধা করলেই আমরা মনে করি যে, 'ইবাদত' সুসম্পন্ন হয়েছে এবং (ওমা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়াবুদুন) এর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে। তাই জীবনের অন্যান্য ব্যাপারে আমি একেবারে স্বাধীন- নিজের খেয়াল খুশি অনুযায়ী কাজ করে যেতে পারি। কিন্তু প্রকৃত ব্যপার এই যে, আল্লাহ যে ইবাদাতের জন্য আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যে ইবাদত করার আদেশ আমাকে দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। সেই ইবাদত এই যে, আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তেই আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে চলবো এবং আল্লাহর আইনের বিরোধী এ দুনিয়ায় যা কিছু প্রচলিত আছে তা অনুসরণ করতে আমি একেবারে অস্বীকার করবো।

আমার প্রত্যেকটি কাজ, প্রত্যেকটি গতিবিধি আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে হতে হবে। এ পন্থায় যে জীবনযাপন করবো তার সবটুকুই ইবাদত বলে গণ্য হবে। এ ধরনের জীবনে আমার শয়ন-জাগরণ, পানাহার, চলাফেরা, কথা বলা, অলোচনা করাও ইবাদত বিবেচিত হবে। এমন কি নিজ স্ত্রীর কাছে যাওয়া এবং নিজের সন্তানদেরকে স্নেহ করাও ইবাদাতের শামিল হবে। যে সকল কাজকে আমরা 'দুনিয়াদারী বলে থাকি তাও 'ইবাদত এবং 'দ্বীনদারী' হতে পারে -- যদি সকল বিষয় আমি আল্লাহ নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে সমাধা করি; আর পদে পদে এদিকে লক্ষ্য রাখি যে, আল্লাহর কাছে কোন্টা জায়েয আর কোনটা নাজায়েয, কী হালাল আর কী হারাম, কী ফরয আর কী নিষেধ, কোন কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন আর কোন কাজে হন অসন্তুষ্ট।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি রুজি ও অর্থোপার্জনের জন্য বের হই। এ পথে হারাম উপার্জনের অসংখ্য সহজ উপায় আমার সামনে আসবে। এখন আমি যদি আল্লাহকে ভয় করে সেই সুযোগ গ্রহণ না করি এবং কেবল হালাল রুজি ও অর্থ উপার্জন করি এ কাজে যে সময় লেগেছে তা সবই ইবাদত এবং এ হালাল উপায়ে অর্জিত অর্থ ঘরে এনে আমি নিজে খাই আর পরিবার-পরিজনের খাদ্যের ব্যবস্থা করি, সেই সাথে যদি আল্লাহর নির্ধারিত অন্যান্য হকদারের হকও আদায় করি, তাহলে এসব কাজেও আমি অসীম সওয়াব পাবো। পথ চলার সময় আমি পথের কাঁটা দূর করি এ ধারণায় যে, এটা দ্বারা আল্লাহর কোন বান্দা কষ্ট পেতে পারে তবে এটাও আমার ইবাদত বলে গণ্য হবে। আমি কোন রুগ্নব্যক্তিকে শুশ্রুষা করলে, কোন ব্যক্তিকে পথচলতে সাহায্য করলে, কিংবা বিপন্ন ব্যক্তিকে চলতে সাহায্য করলে তবে এটাও ইবাদত হবে। কথাবার্তা বলতে আমি মিথ্যা, গীবত, কুৎসা রটনা, অশ্লীল কথা বলে পরের মনে আঘাত দেয়া ইত্যাদি পরিহার করি এবং আল্লাহর ভয়ে কেবল সত্য কথাই বলি তবে যতক্ষণ সময় আমার এ কাজে ব্যয় হবে, তা সবই ইবাদতে অতিবাহিত হবে। অতএব চেতনা লাভের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলা এবং তাঁরই নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করার নামই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত। এ ইবাদতের জন্য কোন সময় নেই। এ ইবাদত সবসময়ই হওয়া চাই, এ ইবাদতের জন্য কোন নির্দিষ্ট প্রকাশ্য রূপ নেই, কেবল প্রতিটি রূপের প্রত্যেকটি কাজই আল্লাহর ইবাদত হতে হবে। আমি একথা বলতে পারি না যে, আমি অমুক সময় আল্লাহর বান্দা আর অমুক সময় আল্লাহর বান্দা নই। আমি একথাও বলতে পারি না যে, অমুক সময় আল্লাহর ইবাদতের জন্য, আর অমুক সময় আল্লাহর কোন ইবাদত করতে হয় না। সকল অবস্থায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার নামই ইবাদত এ আলোচনা দ্বারা আমরা ইবাদত শব্দের অর্থ ভালরূপে জানলাম এবং একথা বুঝতে পারলাম যে, প্রত্যেক মুহূর্তে সকল অবস্থায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার নামই ইবাদত। এখানে একটি সাধারণ প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে এ সলাত, সিয়াম, হাজ্জ ও যাকাত ইত্যাদিকে কি বলা যায়? উত্তরে বলা যায় যে, এসব অবশ্যই ইবাদত, এ ইবাদতগুলোকে আমার উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে শুধু এজন্য যে, আমার জীবনে প্রধান ও বৃহত্তম উদ্দেশ্য যে, প্রতি মূহুর্তে ও প্রত্যেক অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করা, সেই বিরাট উদ্দেশ্য আমি এসবের মাধ্যমে লাভ করবো। সলাত আমাকে দৈনিক পাঁচবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমি আল্লাহর দাস – তাঁরই বন্দেগী করা আমার কর্তব্য; সিয়াম বছরে একবার পূর্ণ একটি মাস আমাকে এ বন্দেগী করার জন্য প্রস্তুত করে, যাকাত আমাকে বার বার মনে করিয়ে দেয় যে, আমি যে অর্থ উপার্জন করেছি তা আল্লাহর দান, তা কেবল আমার খেয়াল-খুশী মত ব্যয় করতে পারি না। বরং তা দ্বারা আমার মালিকের হক আদায় করতে হবে। হাজ্জ মানব মনে আল্লাহ প্রেম ও ভালোবাসা এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের অনুভুতির এমন চিত্র অঙ্কিত করে যে, একবার তা মুদ্রিত হলে সমগ্র জীবনেও মন হতে তা মুছে যেতে পারে না। এসব বিভিন্ন ইবাদত আদায় করার পর আমার সমগ্র জীবন যদি আল্লাহর ইবাদতে পরিণত হওয়ার উপযুক্ত হয় তবেই আমার সলাত প্রকৃত সলাত হবে, সিয়াম খাঁটি সিয়াম হবে, যাকাত সত্যিকার যাকাত এবং হাজ্জ আসল হাজ্জ হবে। এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ উদ্দেশ্য সফল না হলে কেবল রুকু-সিজদাহ, অনাহার-উপবাস, হাজ্জের অনুষ্ঠান পালনকরা এবং যাকাতের নামে টাকা ব্যয় করলে কিছুই লাভ হবে না। বাহ্যিক ও আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলোকে মানুষের একটি দেহের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এতে প্রাণ থাকলে এবং চলাফিরা বা কাজকর্ম করতে পারলে নিঃসন্দেহে তা জীবিত মানুষের দেহ, অন্যথায় তা একটি প্রাণহীন দেহ মাত্র। লাশের চোখ, কান, হাত, পা সব কিছুই বর্তমান থাকে; কিন্তু প্রাণ থাকে না বলেই তাকে আমরা মাটির গর্তে কবর দিয়ে রাখি। তদ্রপ সলাতের আরকান-আহকাম যদি ঠিকভাবে আদায় করা হয় কিংবা সিয়ামের শর্তাবলীও যদি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয়, কিন্তু হৃদয় মনে আল্লাহর ভয়, আল্লাহর প্রেম-ভালোবাসা এবং তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্য করার ভাবধারা বর্তমান না থাকে -- ঠিক যেজন্য এসব আমার উপর ফরয করা হয়েছিল, হবে তা একটি প্রাণহীন ও অর্থহীন জিনিস, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন