hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈমানের স্বচ্ছ ধারণা

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

১০৫
নিফাক ও মুনাফিকী
নিফাকের সংজ্ঞা

শরীয়তের পরিভাষায় নিফাক অর্থ হল- অন্তরে কুফরী ও অবিশ্বাস লুকিয়ে রেখে বাহিরে ইসলাম জাহির করা। যারা নিফাক করে তারাই মুনাফিক। একে নিফাক নামকরণের কারণ হলো সে এক দরজা দিয়ে শরীয়তে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। এ জন্যই এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।

“নিশ্চয়ই মুনাফিকরাই ফাসিক-পাপাচারী। (সূরা তাওবা ৯ : ৬৭)

এখানে ফাসিক মানে হল- শরীয়তের সীমানা থেকে যারা বের হয়ে যায়। আল্লাহ মুনাফিকদেরকে কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে গণ্য করেছেন।

‘নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। (সূরা নিসা ৪: ১৪৫)

তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে প্রতারিত করতে চায় অথচ তারা যে। নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রতারিত করে না, তা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি কারণ তারা মিথ্যাচারী। (সূরা বাকারা ২ : ৯-১০)

নিফাকীর প্রকারভেদ:

নিফাকী দুই প্রকার

প্রথম প্রকার:

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নিফাক একে বড় নিফাক বলা হয়। এতে মুনাফিক ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে ইসলামকে জাহির করে এবং কুফরীকে গোপন রাখে। এ প্রকারের নিফাকী ব্যক্তিকে পুরোপুবিভাবে দ্বীন থেকে বের করে দেয়। উপরন্তু সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে পৌছে যায়। আল্লাহ এ প্রকারের মুনাফিকদেরকে যাবতীয় নিকৃষ্ট বিশেষণে অভিহিত করেছেন। কখনো কাফির বলেছেন, কখনো বেঈমান বলেছেন, কখনো দ্বীন ও দ্বীনদার লোকদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী হিসেবে তাদেরকে বর্ণনা করেছেন এবং এও বলেছেন যে, তারা দ্বীন ইসলামের শত্রুদের প্রতি পুরোপুরিভাবে আসক্ত, কেননা তারা ইসলামের শত্রতায় কাফিরদের সাথে অংশগ্রহণ করে থাকে। এরা সবযুগেই বিদ্যমান, বিশেষ করে যখন ইসলামের শক্তি প্রবলভাবে প্রকাশ পায়। মুসলিমরা শক্তিশালী হলে মুনাফিকরা যেহেতু প্রকাশ্যে ইসলামের মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়, তাই তারা বলে বেড়ায় যে তারা ইসলামের মধ্যে আছে। ফলে তারা নিজেদের জান মালের পূর্ণ নিরাপত্তা ভোগ করে, এবং যারা তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে সেই মুসলিমদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করে।

অতএব মুনাফিক প্রকাশ্যে আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, কিতাবসমূহ, রসূলগণ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনার ঘোষণা দিলেও অন্তরে এসব কিছুই সে বিশ্বাস করে না, বরং এগুলোকে সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহর প্রতি তার। ঈমান নেই, এবং এ বিশ্বাস ও নেই যে, তিনি তাঁর এক বান্দার উপর কুরআন নাযিল করেছেন, তাকে মানুষের প্রতি রসূল করে পাঠিয়েছেন, আল্লাহর হুকুমে তিনি তাদেরকে হিদায়াত করবেন, তাঁর প্রতাপ সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করবেন এবং তাঁর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করবেন। কুরআনে আল্লাহ তাআলা এসব মুনাফিকদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন, তাদের রহস্য উদঘাটন করে দিয়েছেন, যাতে তারা এসব মুনাফিকদের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। আল্লাহ তাআলা সূরা বাক্বারার শুরুতে তিন শ্রেণীর লোকদের কথা বর্ণনা করেছেন :

মু'মিন, কাফির এবং মুনাফিক। মুমিনদের সম্পর্কে চারটি আয়াত, কাফিরদের সম্পর্কে দুটি আয়াত এবং মুনাফিকদের সম্পর্কে তেরটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। (সূরা বাকারা ২ : ২-২০)

সংখ্যায় মুনাফিকদের আধিক্য, মানুষের মধ্যে তাদের নিফাকীর ব্যাপক সম্প্রসারণ এবং ইসলাম ও মুসলিমদের উপর তাদের ভীষণ ফিতনা সৃষ্টির কারণেই তাদের ব্যাপারে এত বেশী আলোচনা করা হয়েছে। কাফিরদের চাইতে মুনাফিকদের গোপন শত্রুতার কারণে ইসলামের উপর অনেক বেশী বালা-মুসীবত নেমে আসে। কেননা ইসলামের প্রকৃত দুশমন হওয়া সত্ত্বেও তারা মুসলিম হিসাবে পরিচিত এবং তাদেরকে ইসলামের সাহায্যকারী ও বন্ধু ভাবা হয়। তারা নানা উপায়ে ইসলামের শত্রতা করে থাকে। ফলে অজ্ঞ লোকেরা ভাবে যে, এ হল তাদের দ্বীনী ইলম ও সংস্কার মূলক কাজের বহিঃপ্রকাশ। অথচ প্রকারান্তরে এটা তাদের মূর্খতা এবং ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টিরই নামান্তর।

এ প্রকারের নিফাকী আবার ছয় ভাগে বিভক্ত:

১. রসূল (ﷺ) -কে (মনে মনে) মিথ্যা সাব্যস্ত করা।

২. রসূল (ﷺ) -এর আনীত শরীয়তের কোন অংশকে (মনে মনে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।

৩. রসূল (ﷺ) -এর প্রতি (অন্তরে) বিদ্বেষ পোষণ করা।

৪. তাঁর আনীত দ্বীনের কিয়দংশের প্রতি (অন্তরে) বিদ্বেষ রাখা।

৫. তাঁর আনীত দ্বীনের পতনে (মনে মনে) খুশী হওয়া।

৬. তাঁর আনীত দ্বীনের বিজয়ে অখুশী হওয়া এবং মনে কষ্ট অনুভব করা।

দ্বিতীয় প্রকার : আমলের নিফাক

এ প্রকারের নিফাকী হল- অন্তরে ঈমান থাকা সত্ত্বেও মুনাফিকদের সাথে কোন কাজে লিপ্ত হওয়া। এ নিফাকীর ফলে ব্যক্তি ইসলামী মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের হয় না, তবে বের হবার রাস্তা সুগম হয়ে যায়। এ ধরনের লোকদের মধ্যে ঈমান ও নিফাকী উভয়ের অস্তিত্বই রয়েছে। নিফাকীর পাল্লা ভারী হলে সে পূর্ণ মুনাফিকে পরিণত হয়।

একথার দলীল হলো নবী (ﷺ) -এর বাণী: চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে খাটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ চারটি স্বভাবের কোন একটি থাকবে তার মধ্যে নিফাকের একটি স্বভাব থাকবে যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করে। যখন তাকে আমানতদার করা হয়, সে খিয়ানত করে। যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে। যখন চুক্তি করে, বিশ্বাস ঘাতকতা করে, আর যখন ঝগড়া-বিবাদ করে, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।

অতএব যার মধ্যে এ চারটি স্বভাব একত্রিত হয় তার মধ্যে সকল প্রকার অসততার সম্মিলন ঘটে এবং মুনাফিকদের সব দোষগুলোই তার মধ্যে প্রকৃষ্টভাবে পাওয়া যায়। আর যার মধ্যে সেগুলোর যে কোন একটি পাওয়া যার তার মধ্যে নিফাকীর এ কটি স্বভাব বিদ্যমান। কেন না বান্দার মধ্যে কখনো কখনো একইসাথে ভালো ও মন্দ স্বভাবসমূহ এবং ঈমান ও কুফুরী-নিফাকীর স্বভাবসমূহের সমাহার ঘটে থাকে। এর ফলশ্রুতিতে তার ভাল ও মন্দ কাজের পরিমাণ অনুযায়ী সে সওয়াব ও শাস্তির উপযুক্ত হয়।

আমলী নিফাকের মধ্যে রয়েছে জামায়াতের সাথে সলাত আদায়ে অলসতা করা। কেননা এটি মুনাফিকদেরই একটি গুণ। মোট কথা নিফাকী অতীব খারাপ ও বিপজ্জনক একটি স্বভাব, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এতে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে শংকিত থাকতেন। ইবনে আবি মুলাইকা বলেন : আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ত্রিশজন সাহাবীর দেখা পেয়েছি যারা প্রত্যেকেই নিজের ব্যাপারে নিফাকে পতিত হবার ভয় করতেন।

বড় নিফাক ও ছোট নিফাকের মধ্যে পার্থক্য

১. বড় নিফাক বান্দাকে ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দেয়। পক্ষান্তরে ছোট নিফাক (আমলী নিফাক) ইসলাম থেকে বের করে না।

২. বড় নিফাকের মধ্যে আকীদার ক্ষেত্রে অন্তরে ও বাহিরে (বাতেন ও জাহের) দু'রকম থাকে। আর ছোট নিফাকীর মধ্যে আকীদাহ নয়, বরং শুধু আমলের ক্ষেত্রে অন্তরও-বাহিরে দু'রকম থাকে।

৩. বড় নিফাক কোন মুমিন থেকে প্রকাশ পায় না। কিন্তু ছোট নিফাক কখনো মু'মিন থেকে প্রকাশ পেতে পারে।

৪. বড় নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তি সাধারণতঃ তওবা করে না। আর তওবা করলেও তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অথচ ছোট নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তি অনেক সময়ই তওবা করে থাকে এবং আল্লাহও তার তওবা কবুল করেন।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন :

অনেক সময় মুমিন বান্দা নিফাকীর কোন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করে নেন। কখনো তার অন্তরে এমন বিষয়ের উদয় হয় যা নিফাকীর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আল্লাহ ঐ বিষয়কে তার অন্তর থেকে দূর করে দেন। মুমিন বান্দা কখনো শয়তানের প্ররোচনায় এবং কখনো কুফরীর কুমন্ত্রণায় পড়ে যায়। এতে তার হৃদয়ে সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়। যেমন সাহাবায়ে কেরাম রাদি আল্লাহু আনহুম বলেছিলেন : হে রসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তার অন্তরে এমন কিছু অনুভর করে, যা ব্যক্ত করার চেয়ে আসমান থেকে জমীনের উপর পড়ে যাওয়াই সে অধিক ভাল মনে করে। একথা শুনে তিনি বললেন : এটা ঈমানেরই স্পষ্ট আলামত। (আহমদ, সহীহ মুসলিম)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে :

“অন্তরের কথাটি মুখে ব্যক্ত করাকে সে খুবই গুরুতর ও বিপজ্জনক মনে করে। তখন নবী (ﷺ) বললেন : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি এক ষড়যন্ত্রকে কুমন্ত্রণায় পরিণত করেছেন।” একথার অর্থ হল প্রবল অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হওয়া এবং হৃদয় থেকে তা দূরীভূত হওয়া ঈমানের স্পষ্ট নিদর্শন। (কিতাবুল ঈমান, ২৩৮)

আর বড় নিফাকীতে লিপ্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন : ‘তারা বধির, মূক, অন্ধ, সুতরাং তারা ফিরে আসবে না। (সূরা বাকারা ২:১৮)

অর্থাৎ তারা অন্তরের দিক দিয়ে ইসলামে ফিরে আসবে না। এদের সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন : ‘তারা কি দেখে না যে, প্রতি বছর তারা একবার কি দুইবার বিপর্যস্ত হচ্ছে? এর পরও তারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।' (সূরা তাওবা : ১২৬)

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন : প্রকাশ্যেভাবে তাদের তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে উলামাদের মতানৈক্য রয়েছে। কেননা তাদের অন্তরের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া সম্ভব হয় না। কারণ তারা তো সব সময়ই প্রকাশ্যে ইসলামের দাবিদার।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন