hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈমানের স্বচ্ছ ধারণা

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

৮১
দ্বীন ও শরীয়াত
ধর্ম সম্বন্ধে কথাবার্তা বলার সময় আমরা দুটি শব্দ প্রায়ই শুনে থাকি এবং আমরা নিজেরাও প্রায়ই বলে থাকি। সেই দু’টি শব্দের একটি হচ্ছে দ্বীন; দ্বিতীয়টি হচ্ছে শরীয়াত। কিন্তু অনেক কম লোকই এ শব্দ দুটির অর্থ ও তাৎপর্য ভালো করে জানে। যারা লেখাপড়া জানে না, তারা এর অর্থ না জানলে তা কোনো অপরাধের কথা নয়; কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, ভালো ভালো শিক্ষিত লোকেরা- এমন কি বহু মৌলভী সাহেব পর্যন্ত শব্দ দুটির সঠিক অর্থ এবং এ দু’টির পারস্পরিক পার্থক্য সম্পর্কে আদৌ পরিষ্কার নন। এ দুটির অর্থ ভালো করে না জানায় অনেক সময় দ্বীনকে শরীয়াতের সাথে এবং শরীয়াতকে দ্বীনের সাথে একেবারে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দেয়া হয়। এতে অনেক প্রকার ভুল বুঝাবুঝি হয়ে থাকে।

দ্বীন শব্দের অর্থ :

দ্বীন শব্দের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। প্রথম ও শক্তি, কর্তৃত্ব হুকুমাত, রাজত্ব-আধিপত্য এবং শাসন ক্ষমতা। দ্বিতীয় ও এর সম্পূর্ণ বিপরীত যথ- নীচতা, আনুগত্য, গোলামি, অধীনতা এবং দাসত্ব। তৃতীয়, হিসেব করা, ফায়সালা করা ও যাবতীয় কাজের প্রতিফল দেয়া। আল কুরআনে “দ্বীন’ শব্দটি এ তিন প্রকারের অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।

আল্লাহর কাছে তাই হচ্ছে একমাত্র দ্বীন’ যাতে মানুষ শুধু আল্লাহকেই শক্তিমান মনে করে এবং তাকে ছাড়া আর কারো সামনে নিজেকে নত মনে করে না। কেবল আল্লাহকেই মনিব, মালিক, বাদশাহ ও রাজাধিরাজ বলে মানবে এবং তিনি ছাড়া আর কারো দাস, গোলাম, হুকুম, অধীন ও তাবেদার হবে না। শুধু আল্লাহকেই হিসাব গ্রহণকারী ও সকল কাজের উপযুক্ত প্রতিফলদাতা মনে করবে এবং তিনি ছাড়া আর কারো কাছে হিসেব দেয়ার পরোয়া করবে না; অন্য কারো কাছে প্রতিফল পাবার আশা করবে না এবং কারো শাস্তির ভয় করবে না। এ দ্বীনেরই নাম হচ্ছে 'ইসলাম'।

কোনো মানুষ যদি এ আকীদা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আসল শক্তিমান, আইন রচয়িতা, আসল বাদশাহ ও মালিক, প্রকৃত প্রতিফলদাতা মনে করে এবং তার সামনে বিনয়ের সাথে মাথা নত করে, যদি তাঁর বন্দেগী ও গোলামি করে, তাঁর আদেশ মতো কাজ করে এবং প্রতিফলের আশা ও তার শাস্তির ভয় করে, তাহলে তাকে মিথ্যা, দ্বীন মনে করতে হবে। আল্লাহ এমন “দ্বীন’ কখনও কবুল করবেন না। কারণ এটা প্রকৃত সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।

এই পৃথিবীতে আসল শক্তিমান ও সম্মানিত সত্তা আল্লাহ ছাড়া কেউ নয়। এখানে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো আধিপত্য নেই, বাদশাহী নেই। আর মানুষকে আল্লাহ ছাড়া আর কারো বন্দেগী ও গোলামি করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। সেই আসল মালিক ছাড়া কাজের প্রতিফল দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। অর্থাৎ আল্লাহর আধিপত্য ও প্রভুত্ব ছেড়ে যে ব্যক্তি অন্য কাউকে নিজের মালিক এবং আইন রচয়িতা বলে স্বীকার করে, তার বন্দেগী ও গোলামি কবুল করে এবং তাকে কাজের প্রতিফলদাতা মনে করে, তার এ দ্বীনকে আল্লাহ কখনই। কবুল করবেন না। কারণ:

وما أمروا إلا ليعبدوا الله مخلصين له الي تفاء ويقيموا القلاة و ثوا الان ولك برين القيمة

“মানুষকে আল্লাহ তাঁর নিজের বান্দা করে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী করার আদেশ মানুষকে দেয়া হয়নি। তাদের একমাত্র অবশ্য কর্তব্য ফরয এই যে, সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে শুধু আল্লাহর জন্যই নিজের দ্বীন-অর্থাৎ আনুগত্য ও গোলামিকে নিযুক্ত করবে, একমুখী হয়ে তাঁরই বন্দেগী করবে এবং শুধু তাঁরই হিসেব করার ক্ষমতাকে ভয় করবে।” (সূরা আল বাইয়্যেনা ৯৮ : ৫)

أنمي وين ال بون وله أشلم من في السموات و الأرض طوعا وگرها و إلي يرجعون

“মানুষ কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো গোলামি ও হুকুম পালন করতে চায়? অথচ প্রকৃতপক্ষে আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসই কেবলমাত্র আল্লাহরই একান্ত গোলাম ও হুকুম পালনকারী এবং এসব জিনিসকে তাদের নিজেদের হিসাব কিতাবের জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে যেতে হবে না। তবুও মানুষ কি আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের বিরুদ্ধে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া আর অন্য কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়?” (সূরা আলে ইমরান ৩: ৮৩)

“আল্লাহ তাঁর নবীকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও সত্যের আনুগত্যের ব্যবস্থা সহকারে এ জন্য পাঠিয়েছেন যে, তিনি দুনিয়ার সকল মিথ্যা খোদার' খোদায়ী ও প্রভুত্ব ধ্বংস করে দিবেন এবং মানুষকে এমনভাবে স্বাধীন করবেন যে, তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা হবে না, কাফির আর মুশরিকগণ নিজেদের মুখতার দরুন যতই চীৎকার করুক না কেন এবং তাকে ঘৃণা করক না কেন।” (সূরা আস সফ ৬১ : ৯)

وقاتلوهم حتى لا تكون في ويكون البين ممه لي فإن انتهوا إن الله بما يعملون بيه

“তোমরা যুদ্ধ কর যেন দুনিয়া হতে গায়রুল্লাহর প্রভুত্ব চিরতরে দূর হয় এবং দুনিয়ায় যেন শুধু আল্লাহরই আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর বাদশাহী যেন সকলেই স্বীকার করে এবং মানুষ যেন শুধু আল্লাহরই বন্দেগী করে।” (সূরা আল আনফাল ৮ : ৩৯)

উপরের এ ব্যাখ্যা দ্বারা দ্বীন’ শব্দের অর্থ পাঠকের কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে আশা করা যায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে তা এই-আল্লাহকে মালিক, মনিব এবং আইন রচনাকারী স্বীকার করা- আল্লাহরই গোলামী, বন্দেগী ও তাবেদারী করা, আল্লাহর হিসাব গ্রহণের ও তাঁর শাস্তি বিধানের ভয় করা এবং একমাত্র তাঁরই কাছে প্রতিফল লাভের আশা করা। তারপরই যেহেতু আল্লাহর হুকুম তাঁর কিতাব ও রসূলের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছিয়ে থাকে, এজন্য রসূলকে আল্লাহর রসূল এবং কিতাবকে আল্লাহর কিতাব বলে মান্য করা আর কার্যক্ষেত্রে তার অনুসরণ করাও দ্বীন'-এর মধ্যে গণ্য। যেমন আল্লাহ বলেছেন :

يا بني أ إما يأ ينكة شل منگنه يقطون مملگة آياتي في القى وأضح فلا خوف عليهم ولا هم يحزنون

“হে আদম সন্তান! আমার নবী যখন তোমাদের কাছে বিধান নিয়ে আসবে তখন যারা সেই বিধানকে মেনে আদর্শবাদী জীবনযাপন করবে এবং সেই অনুসারে নিজেদের কাজকর্ম সমাপন করবে, তাদের কোনো ভয়ের কারণ নেই।” (সূরা আল আ'রাফ ৭ : ৩৫)

এর দ্বারা জানা গেল যে, আল্লাহ সোজাসুজি প্রত্যেক মানুষের কাছে তাঁর বিধান পাঠান না, বরং তার নারীদের মাধ্যমেই পাঠিয়ে থাকেন। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহকে আইন রচনাকারী বলে স্বীকার করবে সেই ব্যক্তি কেবল নারীদের হুকুম পালন করে এবং তাঁদের প্রচারিত বিধানের আনুগত্য করেন। শরীয়াত শব্দের অর্থ ও পথ ও নিয়ম। একজন মানুষ যখন আল্লাহকে আইন রচনাকারী বলে তার বন্দেগী স্বীকার করে এবং একথাও স্বীকার করে নেয় যে, রসূল ! আল্লাহর কাছ থেকেই অনুমতিপ্রাপ্ত আইনদাতা হিসেবে এসেছেন এবং কিতাব তাঁরই কাছ থেকে নাযিল হয়েছে, ঠিক তখনই সে দ্বীনের মধ্যে দাখিল হয়। এরপরে যে নিয়ম অনুযায়ী তাকে আল্লাহর বন্দেগী করতে হয় এবং তাঁর আনুগত্য করার জন্য যে পথে চলতে হয় তারই নাম হচ্ছে শরীয়াত। এ পথ ও কর্মপদ্ধতি আল্লাহ তাঁর রসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। মালিকের ইবাদত কোন্ নিয়মে করতে হবে, পাক-পবিত্র হওয়ার নিয়ম কী, নেকী ও তাকওয়ার পথ কোন্টি, অন্য মানুষের হক কিভাবে আদায় করতে হবে, কাজ-কারবার কিভাবে করতে হবে, জীবনযাপন কিভাবে করতে হবে, এসব কথা নবী (ﷺ) বলেছেন। দ্বীন ও শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য : দ্বীন ও শরীয়াতের মধ্যে পার্থক্য এই যে, দ্বীন চিরকালই এক ছিল এক আছে এবং চিরকাল একই থাকবে; কিন্তু শরীয়াত দুনিয়ায় অনেক এসেছে, অনেক বদলিয়ে গেছে। অবশ্য শরীয়াতের এ পরিবর্তনের কারণে দ্বীনের কোনোই পরিবর্তন হয়নি। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীন যা ছিল নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল, মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল। শোয়াইব (আলাইহিস সালাম), সালেহ (আলাইহিস সালাম) এবং হুদ (আলাইহিস সালাম)-এর দ্বীনও তাই ছিল এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দ্বীনও ঠিক তাই। কিন্তু এ নবীগণের প্রত্যেকেরই শরীয়াতে কিছু না কিছু পার্থক্য বর্তমান ছিল। সলাত এবং সিয়ামের নিয়ম এক এক শরীয়াতে এক এক রকমের ছিল। হারাম ও হালালের হুকুম, পাক-পবিত্রতার নিয়ম, বিয়ে ও তালাক এবং সম্পত্তি বন্টনের আইন এক এক শরীয়াতের এক এক রকম ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা সকলেই মুসলিম ছিলেন। নূহ (আলাইহিস সালাম), ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উম্মতগণও মুসলিম ছিলেন, আর আমরাও মুসলিম কেননা সকলের দ্বীন এক। এর দ্বারা জানা গেল যে, শরীয়াতের হুকুম বিভিন্ন হলেও দ্বীন এক থাকে, তাতে কোনো পার্থক্য হয় না- দ্বীন অনুসারে কাজ করার নিয়ম-পন্থা যতই বিভিন্ন হোক না কেন।

এ পার্থক্য বুঝার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যাচ্ছে। মনে করি, একজন মনিবের কাছে কয়েকজন চাকর আছে। যে ব্যক্তি সেই মনিবকে মনিব বলে স্বীকার করে না এবং তার হুকুম মান্য করার দরকার বলে মনেই করে না, সে তো পরিষ্কার নাফরমান এবং সে চাকরের মধ্যে গণ্যই নয়। আর যারা তাকে মনিব বলে স্বীকার করে, তার হুকুম পালন করা কর্তব্য বলে বিশ্বাস করে এবং তার হুকুমের অবাধ্য হতে ভয় করে, তারা সকলেই চাকরের মধ্যে গণ্য। চাকুরী করা এবং খেদমত করার নিয়ম বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু মূলতঃ তারা সকলেই সমানভাবে সেই একই মনিবের চাকর, তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না। মালিক বা মনিব যদি একজন চাকরকে চাকুরীর এক নিয়ম বলে দেয় আর অন্যজনকে বলে আর এক নিয়ম তবে এদের কেউই একথা বলতে পারে না যে, আমি মনিবের চাকর কিন্তু ঐ ব্যক্তি চাকর নয়। এ উদাহরণ হতে আমরা দ্বীন ও শরীয়াতের পারস্পরিক পার্থক্য খুব ভাল করে বুঝতে পারি। নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পূর্বে আল্লাহ বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে বিভিন্ন শরীয়াত পাঠিয়েছিলেন। এদের একজনকে চাকরীর এক রকমের নিয়ম বলেছেন, আর অন্যজনকে বলেছেন অন্যবিধ নিয়ম। এ সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করে আল্লাহর হুকুম মতো যারা কাজ করেছেন, তাঁরা সকলেই মুসলিম ছিলেন যদিও তাদের চাকুরির নিয়ম ছিল বিভিন্ন রকমের। তারপর যখন নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) দুনিয়ায় আসলেন, তখন সকলের মনিব আল্লাহ হুকুম করলেন যে, এখন পূর্বের সমস্ত নিয়মকে আমি বাতিল করে দিলাম। ভবিষ্যতে যে আমার চাকুরি করতে চায়, তাকে ঠিক সেই নিয়ম অনুসারেই কাজ করতে হবে, যে নিয়ম আমার শেষ নবীর মাধ্যমে আমি প্রচার করবো। এরপর পূর্বের কোনো নিয়ম অনুসারে চাকুরি করার কারো অধিকার নেই। কারণ যদি কেউ এ নুতন নিয়মকে স্বীকার না করে এবং এখনও সেই পুরাতন নিয়ম মতো চলতে থাকে, তবে বলতে হবে যে, সে আসলে মনিবের হুকুম মানছে না, সে তার নিজের মনের কথাই মানছে। কাজেই এখন সে চাকুরি হতে বরখাস্ত হয়েছে-অর্থাৎ ধর্মের পরিভাষায় সে কাফির হয়ে গেছে। প্রাচীন নবীগণকে যারা এখনও মেনে চলতে চায় তাদের সম্বন্ধে একথা প্রযোজ্য। কিন্তু মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর অনুগামী যারা তাদের সম্পর্কে উল্লেখিত উদাহরণের দ্বিতীয় অংশ বেশ খেটে যায়। আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর মাধ্যমে আমাদের কাছে যে শরীয়াত পাঠিয়েছেন, তাকে যারা আল্লাহর শরীয়াত বলে স্বীকার করে এবং তা পালন করা কর্তব্য বলে মনে করে, তারা সকলেই মুসলিম। দ্বীন ও শরীয়াতের পার্থক্য আমরা ভাল করে বুঝতে পেরেছি আশা করি। সেই সাথে একথাও আমরা জানতে পেরেছি যে, বন্দেগীর বাহ্যিক নিয়মের পার্থক্য হলেও আসল দ্বীনে কোনো পার্থক্য হয় না। অবশ্য তার জন্য শর্ত এই যে, মানুষ যে পন্থায়ই কাজ করুক না কেন, নেক নিয়্যতের সাথে করা কর্তব্য এবং একথা মনে রেখে করতে হবে যে, যে নিয়মে সে কাজ করছে, তা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলেরই নিয়মকেই সরাসরি অনুসরণ করতে হবে। মুসলিমদের একদল-এক উম্মত হওয়া উচিত : মুসলিমদের মধ্যে আমরা এই যে হানাফী, শাফেয়ী, সালাফী ইত্যাদি নানা দলের নাম শুনতে পাই এরা সকলে কুরআন ও হাদীসকে সর্বশেষ কিতাব বলে বিশ্বাস করে এবং নিজের বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী তা থেকে আইন ও বিধান জেনে নেয়। হতে পারে একজনের সিদ্ধান্ত ঠিক ও বিশুদ্ধ, আর অন্যজনের সিদ্ধান্ত ভুল। দশজন মুসলিম যদি দশটি বিভিন্ন নিয়মে কাজ করে, তবু যতক্ষণ তাঁরা শরীয়াত মানবে ততক্ষণ তারা সকলেই মুসলিম, একই উম্মতের মধ্যে গণ্য; তাদের ভিন্ন ভিন্ন দল-গোষ্ঠী গঠন করার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু এ নিগূঢ় কথা যারা বুঝতে পারে না, তারা অতি ছোট ছোট ও সামান্য সামান্য কারণে দলাদলি করে। একদল অন্যদলের সাথে ঝগড়া বাঁধায়, সলাত ও মসজিদ আলাদা করে, একদল অন্যদলের সাথে বিয়ে-শাদী, মিলামিশা এবং সম্পর্ক স্থাপন চিরতরে বন্ধ করে দেয় আর নিজ মতের লোকদেরকে নিয়ে একটা আলাদা দল গঠন করে। মনে হয় তারা আলাদা নবীর উম্মত। এরূপ দলাদলির ফলে মুসলিমদের কী বিরাট ক্ষতি হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। কথায় বলা হয় যে, মুসলিম একদল-এক উম্মত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ দলাদলির কারণেই এ উম্মাতটি বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের একজনের মন অন্য জনের প্রতি বিষাক্ত ও শ্রদ্ধাহীন। বড় বড় বিপদের সময়ও তারা একত্রিত হয়ে বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না। একদলের মুসলিম অন্যদলের মুসলিমকে ঠিক ততখানিই শত্র বলে মনে করে, যতখানিই এক ইহুদী একজন খৃষ্টানকে শত্রু বলে মনে করে, বরং তা থেকেও অধিক।

এমনও দেখা গেছে যে, একদল মুসলিমকে পরাজিত করার জন্য আর একদল মুসলিম কাফিরদের সাথে যোগ দিয়ে যড়যন্ত্র করে। এমতাবস্থায় দুনিয়ার মুসলিম যদি দুর্বল হয়ে থাকে, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। এটা তাদের নিজেদেরই কর্মফল। তাদের উপর সেই আযাবই নাযিল হয়েছে যাকে আল্লাহ কুরআন মজিদে বলেছেন :

“মানুষের প্রতি আল্লাহর এমন আযাবও আসতে পারে, যার ফলে তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়া হবে, তোমরা পরস্পর কাটাকাটি করে মরবে।” (সূরা আনআম ৬ : ৬৫)।

উপরে যে আযাবের কথা বলা হলো, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ও বাংলাদেশে তা খুব বেশী পরিমাণেই দেখা যায়। এখানে মুসলিমদের নানা দল; এমনকি আলেমদের দলেরও কোনো হিসাব নেই। এজন্যই এখানকার মুসলিম এবং আলেমদের কোনো শক্তি নেই। আমরা যদি বাস্তবিকই মঙ্গল চাই, তবে আমাদের ও আলেমদের এ বিভিন্ন দল ভেংগে দিয়ে এক হতে হবে। আমরা পরস্পর পরস্পরের ভাই হিসেবে এক উম্মতরূপে গঠিত হবো ইনশাআল্লাহ। বিভিন্ন রকম ক্ষতির হাত থেকে আমরা নিজকে, সন্তান-সন্ততি, বাড়ি-গাড়ি, জায়গা-জমি, টাকা পয়সা, স্বর্ণ-অলংকার, ঘরের আসবাব-পত্র, ইলেক্ট্রনিক্স, শরীরের সৌন্দর্য ইত্যাদি রক্ষার ব্যাপারে যতটা সময় ব্যয় ও পরিশ্রম করি, এর দশ ভাগের এক ভাগও কি নিজেদের ঈমান রক্ষার কাজে ব্যয় করি?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন