HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
উসমান (রাঃ) রাঃ সম্পর্কে ১৫০টি শিক্ষণীয় ঘটনা
লেখকঃ মূল আহমাদ আব্দুল আলি তাহতাভী
সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর প্রতি। হে আল্লাহ! তুমি সকল সাহাবাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও রহমত বর্ষণ কর। ইসলামের ইতিহাসে উসমান (রাঃ) -এর জীবনী এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মানবজাতির ইতিহাস উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা, সম্মান, একনিষ্ঠতা, জিহাদ এবং দাওয়াত এসব বিষয় কখনো ভুলতে পারবে না। এজন্য আমি উসমান (রাঃ)-এর জীবনী তার জিহাদ ও চরিত্র এসব বিষয় সংগ্রহ করেছি। এর মাধ্যমে দায়ী, খতীব, উলামায়ে কেরাম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও দ্বীনি ইলম অর্জনকারী ছাত্ররা যেন উপকৃত হয়। এ সকল বিষয় তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা দান করবেন। সম্মানিত পাঠক! আমি আপনাদের জন্য নবীর (ﷺ) পরে অতি সম্মানিত ব্যক্তি উসমান (রাঃ)-এর জীবনী থেকে ১৫০টি কাহিনী দলীল প্রমাণ সহকারে উল্লেখ করছি। যেগুলো জিহাদ, চরিত্র ও বন্ধুত্ব এসব ক্ষেত্রে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। আমি আল্লাহর নিকট কামনা করছি, এসব গুণাবলির অধিকারীকে কিয়ামতের দিন জান্নাতে দেখতে পাব।
আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী
আহমাদ আবদুল আত তাহতাভী
আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী
আহমাদ আবদুল আত তাহতাভী
সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহর ,ন্যে, যিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে এমন লোক সৃষ্টি করেছেন, যারা ছিলেন তার দ্বীনের উপর অটল ও অনড়। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সে প্রিয় নবীর প্রতি যার পদাংক অনুসরণ করে অনেকেই উচ্চমর্যাদা অর্জন করেছিলেন। আর সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর যারা সর্বক্ষেত্রে দ্বীনকে অগ্রাধিকার দিয়ে গেছেন। যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর ছিলেন অতি সন্তুষ্ট। বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন আহমাদ আবদুল আত তাহতাভী উল্লেখযোগ্য সাহাবীদের জীবনী নিয়ে আরবী ভাষায় চমৎকার কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। বাংলা ভাষায় সাহাবীদের জীবন সম্পর্কে অনেক বই প্রকাশিত হলেও অন্যতম খলিফা উসমান (রাঃ) সম্পর্কে এ গ্রন্থটি আমরা অনুবাদ করে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সামনে পেশ করেছি। কারণ লেখক এ গ্রন্থে উসমান (রাঃ) -এর জীবনী থেকে বাছাই করে ১৫০টি শিক্ষণীয় ঘটনা দলিল প্রমাণসহ উল্লেখ করেছেন, যা মানুষের চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আমরা মুসলিম হিসেবে যাদেরকে আদর্শ বা মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারি তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন নবী-রাসূলগণ। তার পর যাদের অনুসরণ করতে হবে তাঁরা হলেন সাহাবায়ে কেরাম। নবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা আমার এবং ভোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর।” আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শে আদর্শবান হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
শাইখ আবদুর রহমান বিন মোবারক আলী (রাঃ)
আরবী প্রভাষক, হাজী মোঃ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মদ্রাসা,
সুরিটোলা, ঢাকা।
শাইখ আবদুর রহমান বিন মোবারক আলী (রাঃ)
আরবী প্রভাষক, হাজী মোঃ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মদ্রাসা,
সুরিটোলা, ঢাকা।
জাহেলী যুগে উসমান (রাঃ) স্বীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অতি উত্তম ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি, অত্যন্ত লজ্জাশীল এবং মিষ্টভাষী। ফলে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে অত্যাধিক ভালোবাসত। জাহেলী যুগে তিনি কখনও মূর্তির সামনে সিজদা করেন নি, তিনি কখনও কোনো পাপকাজে লিপ্ত হন নি এবং ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি কখনও মদ্য পান করেন নি। আর তিনি বলতেন, এগুলো মেধাকে বিনষ্ট করে দেয়। আল্লাহ মানুষকে উত্তম উপহারস্বরূপ মেধা দান করেছেন। সুতরাং মানুষের দায়িত্ব হলো জ্ঞান-বুদ্ধির হেফাযত করা। (উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী)
উসমান (রাঃ) বলেন, আমি আমার রবের (আল্লাহর) কাছে দশটি বিষয় গোপন (গচ্ছিত) করে রেখেছি। আর তা হলো
১. আমি ইসলামে চতুর্থ ব্যক্তি অর্থাৎ যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি তাদের মধ্যে চতুর্থতম।
২. আমি সৈনিকদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি।
৩. রাসূল (ﷺ) -এর যুগে আমি কুরআন একত্রিত করেছি।
৪. আর রাসূল (ﷺ) তার মেয়ের ব্যাপারে আমাকে বিশ্বাস করতেন। একজন মারা যাবার পর অপর একজনকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।
৫. আমি কখনও গান গাই নি।
৬. আমি কখনও মিথ্যা কথা বলি নি।
৭. আমি যখন রাসূল (ﷺ) -এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি, তখন থেকে কোনো দিন আমার ডান হাতকে আমার লজ্জাস্থানের উপর রাখিনি।
৮. যেদিনই শুক্রবার আসত সেদিনই আমি একটি গোলাম আযাদ করেছি। তবে কোনো শুক্রবারে আমার হাত খালি থাকলে পরে অন্যদিন গোলাম আযাদ করেছি।
৯. আমি জাহেলী যুগে কখনও ব্যভিচারে লিপ্ত হই নি।
১০. এবং ইসলাম আগমনের পরও কখনও ব্যভিচারে লিপ্ত হই নি।
(রিয়াযুন নাযরাহ, পৃঃ ৫০)
১. আমি ইসলামে চতুর্থ ব্যক্তি অর্থাৎ যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি তাদের মধ্যে চতুর্থতম।
২. আমি সৈনিকদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি।
৩. রাসূল (ﷺ) -এর যুগে আমি কুরআন একত্রিত করেছি।
৪. আর রাসূল (ﷺ) তার মেয়ের ব্যাপারে আমাকে বিশ্বাস করতেন। একজন মারা যাবার পর অপর একজনকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।
৫. আমি কখনও গান গাই নি।
৬. আমি কখনও মিথ্যা কথা বলি নি।
৭. আমি যখন রাসূল (ﷺ) -এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি, তখন থেকে কোনো দিন আমার ডান হাতকে আমার লজ্জাস্থানের উপর রাখিনি।
৮. যেদিনই শুক্রবার আসত সেদিনই আমি একটি গোলাম আযাদ করেছি। তবে কোনো শুক্রবারে আমার হাত খালি থাকলে পরে অন্যদিন গোলাম আযাদ করেছি।
৯. আমি জাহেলী যুগে কখনও ব্যভিচারে লিপ্ত হই নি।
১০. এবং ইসলাম আগমনের পরও কখনও ব্যভিচারে লিপ্ত হই নি।
(রিয়াযুন নাযরাহ, পৃঃ ৫০)
কুরাইশরা উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) কে অত্যধিক ভালোবাসতে শুরু করল যখন তিনি ধনে-বলে প্রাচুর্যতা লাভ করেন, উত্তম চরিত্র ও দানশীল হিসেবে সর্বোচ্চ আসনে আসীন হন। এমনকি একজন মহিলা তার সন্তানের জন্য কবিতা রচনা করল, যাতে সে মানুষের ভালো গুণের দিকগুলি ফুটিয়ে তোলেন। আর তারা এ ব্যাপারে উসমান (রাঃ) কে গণ্য করত। আর ঐ মহিলা বলত, “আমি ও রহমান তোমাকে অনুরূপ ভালোবাসি, যেরূপ কুরাইশদের ভালোবাসা উসমানের প্রতি। (মাওসুআতু আত-তারিখুল ইসলামী, ১/৬১৮)
উসমান (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, আমি কখনও গান করি নি, কখনও মিথ্যা বলিনি, রাসূল (ﷺ) -এর সাথে বাইয়াত গ্রহণের পর থেকে আর কখনও ডান হাত দিয়ে আমার লজ্জাস্থান স্পর্শ করিনি, জাহেলেী যুগে এবং ইসলামী যুগে কখনও মদ পান করিনি, জাহেলী যুগে এবং ইসলাম গ্রহণের পর কখনও ব্যভিচারে লিপ্ত হইনি। (হিলোইয়াতুল আওলিয়া, ১/৬০)
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) -এর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে বহুল প্রচলিত একটি ঘটনা আছে। আর তা হলো- তিনি যখন জানতে পারলেন যে, মুহম্মদ-এর মেয়ে রুকাইয়াকে তিনি আবু লাহাবের ছেলের সঙ্গে বিবাহ দিচ্ছেন, তখন উসমান (রাঃ) খুবই লজ্জিত হলেন। কেননা নবীর মেয়ের সাথে পারিবারিক মর্যাদা ও চারিত্রিক গুণাবলির দিক থেকে ছেলেটি মোটেও তার সমকক্ষ নয়। অতঃপর তিনি চিন্তিত অবস্থায় পরিবার-পরিজনের কাছে প্রবেশ কলেন। আর সেখানে তিনি তার খালা সা'দী বিনতে কুরাইযকে পেলেন যিনি অত্যন্ত সুচতুর, জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ। তিনি তার কাছে আনন্দ প্রকাশ করলেন। আর তাকে এমন এক নবী (ﷺ) আত্মপ্রকাশের সংবাদ দিলেন, যিনি মূর্তি পূজাকে বাতিল বলেছেন। যিনি একক সত্ত্বা তথা আল্লাহর দিকে আহবান করেছেন। আর তিনি তাকে এ নবীর দ্বীনে আকৃষ্ট করলেন। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি আমার খালার কথাগুলি ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে বের হলাম। অতঃপর আমি আবু বকর (রাঃ) -এর সাথে সাক্ষাত করলাম আর আমার খালা যা কিছু বলেছেন, তা আমি তার কাছে বর্ণনা করলাম। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! হে উসমান! তোমাকে যে ব্যাপারে তিনি সংবাদ দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্য। আর হে উসমান! তুমি তো অবশ্যই একজন জ্ঞানী ও প্রত্যয়ী ব্যক্তি। তোমার কাছে কোনো সত্য বিষয় গোপন নয় আর তোমার নিকট সত্য বিষয় মিথ্যার সাথে মিশ্রিত নয়। উসমান (রাঃ) বললেন, অতঃপর আবু বকর (রাঃ) আমাকে বলেন এটা সে মূর্তি যার উপাসনা করে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা। এটা নির্জীব বোবা পাথর ছাড়া আর কিছু নয়। সে কিছুই শোনে না এবং কিছুই দেখে না। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি বললাম হ্যা।
অতঃপর আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে উসমান! তুমি এ বিষয়ে চিন্তা করে দেখ। যে বিষয়ে তোমার খালা তোমাকে সংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তার রাসূলকে মানুষের সঠিক পথের দিশা দানের জন্য সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, সে কে? আবু বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, তিনি তো মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আবু বকর! আপনি কি আমাকে তার সাথী করে দিতে পারেন? আবু বকর (রাঃ) বললেন হ্যা। উসমান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা নবী (ﷺ)-এর কাছে গেলাম। রাসূল (ﷺ) যখন দেখলেন তখন তিনি আমাকে বললেন, হে উসমান! আল্লাহর পথে আহবানকারীর আহবানে সাড়া দাও। আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি তার কথা শুনলাম এবং তার রিসালাতকে সত্য হিসেবে মেনে নিয়ে ঘোষণা দিলাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
(আল খুলাফাউর রাশিদীন লি মুস্তফা মুরাদ পৃঃ ৪১১, ৪১২)
অতঃপর আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে উসমান! তুমি এ বিষয়ে চিন্তা করে দেখ। যে বিষয়ে তোমার খালা তোমাকে সংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তার রাসূলকে মানুষের সঠিক পথের দিশা দানের জন্য সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, সে কে? আবু বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, তিনি তো মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আবু বকর! আপনি কি আমাকে তার সাথী করে দিতে পারেন? আবু বকর (রাঃ) বললেন হ্যা। উসমান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা নবী (ﷺ)-এর কাছে গেলাম। রাসূল (ﷺ) যখন দেখলেন তখন তিনি আমাকে বললেন, হে উসমান! আল্লাহর পথে আহবানকারীর আহবানে সাড়া দাও। আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি তার কথা শুনলাম এবং তার রিসালাতকে সত্য হিসেবে মেনে নিয়ে ঘোষণা দিলাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
(আল খুলাফাউর রাশিদীন লি মুস্তফা মুরাদ পৃঃ ৪১১, ৪১২)
এ বিবাহের ব্যাপারে ঘটনা হলো এই যে, রাসূল (ﷺ) রুকাইয়াকে বিবাহ দিলেন উতবা ইবনে আবু লাহাবের সাথে। আর উম্মে কুলসুমকে বিবাহ দিলেন উতাইবা ইবনে আবু লাহাবের সাথে। অত:পর যখন সূরা মাসাদ (সূরা লাহাবের অপর নাম) নাযিল হলো তখন তাদেরকে আবু লাহাব এবং তাদের মা উম্মে জামীল বিনতে হারব ইবনে উমাইয়া বললেন, তোমরা দুজন মুহাম্মাদ-এর দুই মেয়েকে তালাক দিয়ে দাও। তখন তারা তাদের দুজনকে সহবাসের পূর্বে তালাক দিয়ে দিল। আর যখন উসমান (রাঃ) রুকাইয়ার তালাকের কথা শুনল তখন অত্যন্ত খুশী হলেন। এরপর তিনি রাসূল (ﷺ) -এর কাছে রুকাইয়াকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দেন। ফলে রাসূল (ﷺ) রুকাইয়াকে উসমানের সাথে বিবাহ দিলেন। (উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃ ২২)
একদিন নবী (ﷺ) হচ্ছে তাঁর মেয়ে রুকাইয়ার বাড়িতে গেলেন, তখন রুকাইয়া উসমান (রাঃ) -এর মাথা ধৌত করছিলেন। তখন নবী (ﷺ) তার মেয়ে রুকাইয়াকে বললেন, হে আমার মেয়ে! তুমি আবু আব্দুল্লাহ এর সাথে উত্তম ব্যবহার কর। কেননা, আমার সাথীদের মধ্যে তার সাথে মিল রয়েছে। (উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লিস সালাৰী, পৃ ২২)
অত্যন্ত সম্মানী ও সৎকর্মী হওয়া সত্ত্বেও উসমান (রাঃ) খাজা যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন তিনি তার জাতির নির্যাতন থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন নি। কুরাইশের ধর্ম ত্যাগ করে গোত্রের এক যুবক উসমান (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছে এ বিষয়টি তার চাচা হাকাম এর নিকট খুবই কষ্টকর ও মারাত্মক মনে হলো। ফলে সে এবং তার অনুসারীরা উসমানের দানের পথে কঠিন বাধা হয়ে দাড়াল। তারা তাকে পাকড়াও করে বেঁধে ফেলল। চাচা বলল, তুমি কি তোমার বাপ-দাদার ধর্ম থেকে বিমুখ হয়েছ এবং নতুন ধর্মে প্রবেশ করেছ? আল্লাহর কসম! যতক্ষণ না তুমি এ নতুন ধর্ম ত্যাগ করবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে ছাড়ব না। তখন উসমান (রাঃ) ব্যবিললেন, আমি কখনই আমার এ ধর্ম ত্যাগ করব না। যতক্ষণ আমার জীবন আছে ততক্ষণ আমি আমার নবী (ﷺ) থেকে পৃথক হব না। এতে করে তার চাচা হাকাম শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে দিল। আর উসমান (রাঃ) ও তার দ্বীনের উপর আরো শক্তভাবে দৃঢ় হলেন আর তার বিশ্বাসের উপর অটল থাকলেন। ফলে তার চাচা তার থেকে নিরাশ হয়ে গেল এবং তাকে ছেড়ে দিল। (আল খুলাফাউর রাশিদীন লি মুস্তফা মুরাদ পৃ৪১৬)
যখন মক্কার ভূমিতে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেল তখন রাসূল (ﷺ) মুসলমানদেরকে হাবশায় (আবিসিনিয়ায়) হিজরতের অনুমতি দিলেন। এই উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছেন। তিনি হলেন উসমান (রাঃ)। উসমান (রাঃ)-কে স্বপরিবারে হাবশায় হিজরত করতে দেখে যে ব্যক্তি নবী (ﷺ)-কে এ সংবাদ দিয়েছিল তাকে তিনি বলেছিলেন, “তাদের দুজনের সাথী হলেন আল্লাহ তাআলা। আর উসমান (রাঃ)হলেন লুতের (আ:) পরে এমন ব্যক্তি যিনি পরিবার নিয়ে হিজরত করেছেন। (উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ২৫)
আবিসিনিয়ায় যিনি প্রথম হিজরত করেন তিনি উসমান (রাঃ)। তিনি আল্লাহর রাসূলের কন্যাকে নিয়ে বের হয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলের কাছে তাদের সংবাদ আসতে দেরি হলো। এদিকে নবী (ﷺ) এলে তাদের সংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। অতঃপর কুরাইশদের এক মহিলা আবিসিনিয়া থেকে আসলে রাসূল (ﷺ) কে তার কাছে তাদের সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তখন ঐ মহিলা বলল, আমি তাকে দেখেছি। রাসূল (ﷺ) তে বললেন, তুমি তাকে কোন অবস্থায় দেখেছ? সে বলল, আমি তাকে গাধার পিঠে আরোহী অবস্থায় দেখেছি, আর উসমান (রাঃ) তাকে হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন নবী (ﷺ) এলে বললেন, “আল্লাহ তাদের সাথে আছেন। লুত (আ:)-এর পর উসমান (রাঃ) ই প্রথম ব্যক্তি যিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হিজরত করেছেন।” (রিয়াযুন নাযরাহ, ২/৬০)
উসমান (রাঃ) -এর একজন সহোদর বোন ছিল, তার নাম আমেনা বিনতে আফফান বিলম্ব আর জাহেলী যুগে তিনি এক সম্রান্ত মহিলার গৃহ পরিচারিকার কাজ করতেন। তিনি দেরী করে মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মা এবং অন্যান্য বোনদের সাথে এবং হিনদা বিনতে উতবার সাথে রাসূল (ﷺ) -এর হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন।
(সীন ওয়া জীম ফি সীরাতিল খুলাফায়ির রাশিদীন, পৃ ৭৩)
(সীন ওয়া জীম ফি সীরাতিল খুলাফায়ির রাশিদীন, পৃ ৭৩)
যখন মুসলমানরা বদরের যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হন তখন উসমান (রাঃ) -এর স্ত্রী ও রাসূল (ﷺ) এর কন্যা রুকাইয়া অত্যন্ত অসুস্থ। উসমান (রাঃ) রুকাইয়ার শয্যার পাশে অবস্থান করছিলেন। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে মুসলিম সেনাদের সাথে একত্র হওয়ার জন্য ডাকলেন। উসমান (রাঃ) রাসূল (ﷺ) এর সাথে বের হওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তখন রাসূল (ﷺ) (তাকে রুকাইয়ার শয্যা পাশে তার সেবা যতের জন্য রেখে গেলেন। রুকাইয়া এ রোগে মৃত্যুবরণ করেন। (আল খুলাফাউর রাশিদীন লি আব্দুল ওয়াহহাব আন নাজ্জার, পৃ ২৬৯)
রুকাইয়া হল যখন মারা গেলেন তখন তাকে ঘাড়ে করে বহন করা হলো। আর তখন উসমান (রাঃ) -এর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে ছিল এবং তিনি রাসূল (ﷺ) এর মেয়ে রুকাইয়ার কবরের মাটি সমান করছিলেন। যখন তারা দাফন কাজ করে ফিরছিল তখন যায়েদ ইবনে হারেস রাসূল (ﷺ) -এর উটে আরোহন করে এসে রাসূল (ﷺ) এর নিরাপদে ফিরে আসা এবং মুশরিকদের নিহত হওয়ার সংবাদ দিলেন। যখন রাসূল (ﷺ) রুকাইয়ার ইন্তেকালের কথা জানতে পারলেন তখন তিনি জান্নাতুল বাকীতে গেলেন এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করলেন। (দিমায়ু আলা কামিসি উসমান (রাঃ) লিল মানাবী, পৃ ২০)
মিশর থেকে এক ব্যক্তি হজ্জ করার জন্য মক্কায় আগমন করল। অতঃপর বলল, হে ইবনে উমর! আমি এ ঘরের সম্মান দিয়ে আপনার নিকট একটি জিনিস জিজ্ঞাসা করছি। তুমি কি জান যে, উসমান (রাঃ) বদরের দিন অনুপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে উপস্থিত হন নি। তিনি বললেন, হ্যা। তবে তার অনুপস্থিত থাকা এ কারণে ছিল যে, তার অধীনে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) - এর কন্যা ছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, তোমার জন্য ঐ সকল লোকদের সমপরিমাণ অংশ রয়েছে যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। (বুখারী, হাদীস ৬০৪৪ আংশিক)
হুদায়বিয়ার সন্ধির পূর্বে রাসূল (ﷺ) এ কুরাইশদের কাছে শান্তির বাহক হিসেবে একজন দূত প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে উমর এ কে ডেকে বললেন, তুমি মক্কায় যাও। মক্কার নেতৃবৃন্দকে আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য অবহিত কর। উমর (রা:) বিনীতভাবে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কুরাইশদের কাছ থেকে আমার জীবনের আশংকা করছি। আপনি জানেন, তাদের সাথে আমার দুশমনি কতখানি। আমি মনে করি উসমান (রাঃ)-ই এ কাজের উপযুক্ত ব্যক্তিত্ব। রাসূল (ﷺ) উসমান (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, হে উসমান! তুমি কুরাইশদের কাছে যাও এবং তাদেরকে এ সংবাদ দাও যে, আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমরা বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করে কুরবানী সেড়ে ফিরে যাব (মাওসুয়াতুল গাযওয়াত লি মুহাম্মাদ আহমদ, ৩১৯১) ..
উসমান (রাঃ) আল্লাহর রাসূলের পয়গাম নিয়ে কুরাইশদের কাছে গেলেন। কুরাইশরা তাকে হত্যা করতে চাইল। আবান ইবনে সাঈদ ইবনে আস তাকে নিরাপত্তা দিলেন। ফলে তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি। আবান তাকে নিরাপত্তা দিয়ে ঘোষণা করল, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! উসমান (রাঃ) আমার জিম্মায়। সুতরাং তোমরা উসমান (রাঃ) থেকে বিরত থাক।
(মাওসুয়াতুল গাযওয়াত লি মুহাম্মাদ আহমদ, ৩/১৯৩, ১৯৪)
(মাওসুয়াতুল গাযওয়াত লি মুহাম্মাদ আহমদ, ৩/১৯৩, ১৯৪)
উসমান (রাঃ) — মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়ে বালদাহ নামক স্থানে পৌছলে সেখানে তিনি একদল কুরাইশকে পেলেন। তখন তারা উসমান (রাঃ) ই-কে বললেন, তুমি কি চাও? তখন উসমান (রাঃ) বললেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে তোমাদের নিকট এমন এক পত্রসহ পাঠিয়েছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে আল্লাহ ও ইসলামের দিকে আহবান করেছেন। অতএব তোমরা আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ কর। কেননা, আল্লাহ তায়ালা তার দ্বীনকে প্রকাশ করেছেন আর তিনিই তাঁর নবীকে সম্মানিত করবেন। অপর দিকে তোমরা যদি তা অস্বীকার কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে অন্যদেরকে নিয়ে আসবেন। (উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ৩৯)
উসমান (রাঃ) এই জিনিসটি ভুলে যান নি যে, আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ মক্কায় তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং রক্ষা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি রাসূল (ﷺ) -এর চিঠি তাদের কাছে পৌছে দিতে সক্ষম হন। এরপর যখন মক্কা বিজয়ের দিন আসল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ আমার থেকে আড়ালে ছিলেন। এরপর তাকে রাসূল (ﷺ) অ-এর সামনে নিয়ে আসা হলো। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আব্দুল্লাহর বাইয়াত গ্রহণ করুন। এরপর রাসূল (ﷺ) তার দিকে তিন বার তাকালেন। তিন বারই তিনি তার বাইয়াত গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর ততীয়বারের পর তিনি তার বাইয়াত গ্রহণ করলেন। এরপর তিনি সাহাবাদের সম্মুখে। আসলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কোনো ভাল লোক নেই, যে এই লোকের দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু আমি তার বাইয়াত থেকে বিরত থেকেছি। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মনে মনে কি ইচ্ছা করছিলেন তা আমরা বুঝতে পারিনি। আপনি তো আমাদের দিকে চোখের দ্বারা ইঙ্গিতও করেননি। তখন নবী (ﷺ) এই বললেন, চোখের খিয়ানত করা কোনো নবীর জন্য সমীচীন নয়। (উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ৪২)
উসমান (রাঃ) মক্কায় প্রবেশের পর তার গোত্র বনু উমাইয়া তাকে আশ্রয় দিল। মুশরিকরা কেউ তার উপর কোনো প্রকারের সাহস দেখায় নি, বরং তার প্রতি ভালোবাসা দেখাল। আর তারা তাকে বলল, তুমি যদি ইচ্ছা কর তাহলে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে পার। উসমান (রাঃ) তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন, রাসূল (ﷺ) যতক্ষণ তাওয়াফ না করবেন ততক্ষণ আমি তাওয়াফ করব না। (মাগাযিল ওয়াকৃিদি ১৬১)
হুদাইবিয়ায় অবস্থানরত সাহাবীদের কাছে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল যে, উসমান (রাঃ) বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। সাহাবীরা রাসূল (ﷺ) কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! উসমান (রাঃ) বাইতুল্লাহে পৌছে কাবা তাওয়াফ করেছেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, আমার মনে হয় না যে, আমরা বাধাগ্রস্ত আর উসমান (রাঃ) তাওয়াফ করবে। তখন সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো বাইতুল্লাহ শরীফ চলে গেছে। সুতরাং তাকে কিসে বাধা দিবে? রাসূল (ﷺ) তো বললেন, তার সম্পর্কে আমার ধারণা হলো যে, আমরা তাওয়াফ না করা পর্যন্ত সে তাওয়াফ করবে না। অতঃপর যখন উসমান (রাঃ) হুদাইবিয়ায় ফিরে আসলেন তখন সাহাবীরা তাকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ তুমি কি বাইতুল্লাহ হতে আরোগ্য লাভ করেছ? তখন উসমান (রাঃ) বললেন, তোমরা আমার ব্যাপারে যা ধারণা করছ তা কতইনা খারাপ। যদি তারা আমাকে এক বছর আটকে রাখত তার পরও তাওয়াফ করতাম না। কেননা, রাসূল (ﷺ) হুদাইবিয়ায় অবস্থানরত। কুরাইশরা আমাকে তাওয়াফ করার সুযোগ দিয়েছিল কিন্তু আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। (মাগাযিল ওয়াকৃিদি, পৃঃ ১৬২)
উসমান (রাঃ) মক্কায় অবস্থান করছিলেন দুর্বলদের কাছে রাসূল (ﷺ) -এর পত্র পৌছানোর জন্য। আর তাদেরকে এ সংবাদ দিলেন যে, অচিরেই তাদের দুঃখ-কষ্ট লাগব হবে। আর তাদের কাছে মৌখিকভাবে পত্র গ্রহণ করলেন, যাতে ছিল, হে উসমান! তুমি আমাদের পক্ষ হতে রাসূল (ﷺ) -কে সালাম জানাবে। যিনি হুদাইবিয়া পর্যন্ত তাকে এনেছেন, তিনি অবশ্যই তাকে মক্কার ভিতরে প্রবেশ করাতে সক্ষম। (গাযওয়াতুল হুদাইবিয়া লি আবি ফারেস, পৃঃ ৮৫)
মুসলমানদের কাছে এই মর্মে সংবাদ পৌছল যে, উসমান (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেছেন। তখন রাসূল (ﷺ) তাঁর সাহাবীদেরকে ডেকে মুশরিকদের হত্যা করার জন্য শপথ নিলেন। এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম যিনি শপথ নিলেন তিনি হলেন আবু সিনান আব্দুল্লাহ ইবনে ওহহাব আল-আসাদী। আর রাসূল (ﷺ) বললেন, ইহা উসমানের হাত এবং তার হাত দ্বারা নিজের হাতের উপর মৃদু আঘাত করলেন। বাবলা বৃক্ষের নিচে সকল সাহাবী বাইয়াত গ্রহণ করলেন তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজার চারশত জন। (আস-সিরাতুন নববীয়াতু ফি দাওয়িল মাসাদিলি আসলিয়্যাহ পৃঃ ৪৮২)
আব্দুর রহমান ইবনে হাব্বায — উসমান (রাঃ) -এর দানের ব্যাপারে একটি ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) -এর সাথে ছিলাম তখন রাসূল (ﷺ) লোকদেরকে গরিব সৈনিকের সাহায্যের জন্য উৎসাহিত করছিলেন। তখন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) ওঠে দাড়ালেন এবং বললেন, আমি একশত উট বোঝাই সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) -কে দেখলাম যে, তিনি মির হতে নামলেন এ কথা বলতে বলতে, এরপর সে যাই করুক না কেন তার কোনো ক্ষতি হবে না। (তিরমিযী, হাঃ ৩৭০০)
আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা প্রশ্ন হতে বর্ণিত তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) রাসূল- এর কাছে কাপড়ের মধ্যে করে এক হাজার দিরহাম নিয়ে আসলেন, তখন রাসূল (ﷺ) দরিদ্র সৈন্যদের সজ্জিত করছিলেন। অতঃপর নবী (ﷺ) তা নিজ হাতে গ্রহণ করলেন এবং বললেন, এরপর সে যাই করুক না কেন তার কোনো ক্ষতি হবে না। (তিরমিযী, হাঃ ৩৭০২)
সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব বলেন, রাসূল (ﷺ) সঃ -এর মেয়ে রুকাইয়ার ইন্তেকালের মাধ্যমে উসমান (রাঃ) স্ত্রী হারা হন। আর হাফসা কা স্বামী হারিয়ে বিধবা হন। একদিন উমর (রাঃ) উসমান (রাঃ) এর কাছে গেলেন এবং বললেন, তুমি কি হাফসা সম্পর্কে কিছু ভেবেছ (বিবাহের ব্যাপারে)। আর উসমান (রাঃ) রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেন, হাফসাকে তিনি বিবাহ করবেন। তাই উমর (রাঃ) রাসূল (ﷺ) -এর কাছে এ বিষয়টি আলোচনা করলেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমার জন্য কি এর চেয়ে উত্তম কোনো সংবাদ আছে যে, আমি হাফসাকে বিবাহ করব। আর উসমানের সাথে বিবাহ দিব তার চেয়ে উত্তম উম্মে কুলসুমকে। (মুসতাদরাকে হাকেম, ৪/৪৯)।
আয়েশা লি বলেন, যখন নবী (ﷺ) -এর মেয়ে উম্মে কুলসুমের বিবাহ হয়ে গেল তখন নবী (ﷺ) উম্মে আয়মানকে ডেকে বললেন, আমার মেয়ে উম্মে কুলসুমকে প্রস্তুত করে উসমানের কাছে দিয়ে দাও। আর তার সামনে দফ (এক প্রকার তবলা) বাজাও। উম্মে আয়মান রাসূল (ﷺ) যা বললেন, তাই করলেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) এ তিন দিন পর তার মেয়ের বাড়িতে গেলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন স্বামী পেয়েছ। উত্তরে বলল, আমি উত্তম স্বামী পেয়েছি। (আস-সিরাতুন নবাবীয়াহ ফি দাউয়িল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ লি আবি সুহবাহ, ২৩১)
লাইলা বিনতে কানিফ আস-সাকাফী হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর মেয়ে উম্মে কুলসুমের ইন্তেকালের পর যারা তাকে গোসল দিয়েছিল, আমি তাদের সাথে ছিলাম। রাসূল (ﷺ) প্রথমে আমাদেরকে দিলেন হাকওয়া (যা কোমর পর্যন্ত আবৃত করে) অতঃপর দিলেন জিরা (যা গলা পর্যন্ত আবৃত করে) অতঃপর দিলেন খিমার যা বুক ও মাথা আবৃত করে। তারপর দিলেন মিলহাফীহ যা পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে দেয়। অতঃপর নবী (ﷺ) তে আরেকটি কাপড় দিলেন যা দিয়ে তাকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়া হলো। রাবী বলেন, রাসূল (ﷺ) থেকে দরজায় দাড়িয়ে ছিলেন আর হাতে ছিল তার কাফনের কাপড় এবং তিনি একটির পর একটি কাপড় দিচ্ছিলেন। (আবু দাউদ, হাঃ ৩১৫৭)
নবম হিজরীর শাবান মাসে উম্মে কুলসুম অস্থা গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। রাসূল (ﷺ) তার সালাতে জানাযা আদায় করেন এবং তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। আনাস ইবনে মালেক হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ﷺ) -কে উম্মে কুলসুমের কবরের পার্শ্বে অবস্থান করতে দেখেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) -এর চোখকে অশ্রুসিক্ত দেখলাম। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছ যে রাত্রে স্ত্রীর সাথে সহবাস করনি? তখন আবু তালহা বললেন, আমি আছি। তারপর রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি উম্মে কুলসুমের কবরে নামমা। (বুখারী, হাঃ ১৩৪২)
উম্মে কুলসুমের বিয়োগ বেদনায় উসমান (রাঃ) এর মধ্যে প্রভাব পড়ল এবং তিনি চিন্তান্বিত হয়ে পড়লেন। রাসূল (ﷺ) প্রশ্নে দেখলেন, উসমান (রাঃ) দুঃখে কষ্টে ভেঙ্গে পড়ছে, আর তার চেহারায় চিন্তা ফুটে উঠেছে। তাই রাসূল (ﷺ) মেনু তাকে বললেন, হে উসমান! আমার যদি তৃতীয় আরেকটি মেয়ে থাকত তাহলে তাকেও আমি তোমার সাথে বিবাহ দিতাম। (মুজমাউয যাওয়াইদ লি হাইছামী, ৯৮৩)
রাসূল (ﷺ) -এর মদীনায় আগমনের পূর্বে রুমা নামক কূপ থেকে মূল্য পরিশোধ ব্যতীত কেহই পানি পান করতে পারত না। হিজরতের পর মুহাজিরগণ পানির কষ্টে পতিত হলো। আর কূপটি ছিল ইয়াহুদির। সে এটাকে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে চাইল। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন তুমি কি ইহাকে জান্নাতের একটি কূপের বিনিময়ে বিক্রি করবে? তখন সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ও আমার পরিবার পরিজনের ইহা ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই। আর এ সংবাদ যখন উসমান (রাঃ) -এর কাছে গেল তখন তিনি তাকে তিন হাজার পাঁচশত দিরহামে ক্রয় করে রাসূল (ﷺ) -এর কাছে গিয়ে বললেন, আপনি আমাকে তাই দিবেন যা তাকে দেয়ার কথা বলেছেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, হ্যা। উসমান (রাঃ) বললেন, আমি একে মুসলমানদের জন্য দান করে দিলাম। (তুহফাতুল আহওয়াজ বিশারহে সুনানুত তিরমিযী, ১০/১৯৬)
অপর বর্ণনায় আছে, রুমা কূপটির মালিক একজন ইয়াহুদি যিনি মুসলমানদের কাছে এর পানি বিক্রি করত। অতঃপর উসমান (রাঃ) তা ক্রয় করে ধনী-গরিব মুসাফির সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। (ফাতহুল বারী, ৫/৪০৮)
অপর বর্ণনায় আছে, রুমা কূপটির মালিক একজন ইয়াহুদি যিনি মুসলমানদের কাছে এর পানি বিক্রি করত। অতঃপর উসমান (রাঃ) তা ক্রয় করে ধনী-গরিব মুসাফির সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। (ফাতহুল বারী, ৫/৪০৮)
রাসূল (ﷺ) মদীনাতে মসজিদ নির্মাণ করার পর মুসলমানরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতে আদায় করার জন্য আসতে শুরু করলেন। রাসূল (ﷺ) সে যখন তাঁর খুতবার মধ্যে আদেশ-নিষেধ বিষয়ে আলোচনা করত তখন তারা উপস্থিত থাকত। আর তারা মসজিদে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করত। আর এ মসজিদ থেকেই তারা বিভিন্ন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হতো এবং যুদ্ধ শেষে এখানেই একত্র হতো। আর এসব কারণেই মসজিদটি মুসলমানদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল। তাই রাসূল (ﷺ) কতিপয় সাহাবীর কাছ থেকে মসজিদের পাশের জমি ক্রয় করতে চাইলেন। যাতে করে মসজিদের ভিতর বড় হয় এবং এর অধিবাসীদের জন্য প্রশস্ত হয়। রাসূল (ﷺ) এ বললেন, কে আছ এমন যে, অমুক পরিবারের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে দিবে যাতে মসজিদ বৃদ্ধি করা যায়, আর এর বিনিময়ে সে জান্নাতে এর চেয়ে কল্যাণকর জিনিস পাবে। এ কথা শোনার পর উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) পঁচিশ অথবা বিশ দিরহামের বিনিময়ে জমি ক্রয় করে তা মসজিদের জন্য দান করে দিলেন। (সহীহ সুনানুন নাসায়ী, ২/৭৭৬)
আবু বকর (রাঃ) সিদ্দীক এর খিলাফতকালে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। আর লোকেরা খাদ্যের অভাবে পতিত হলো। তখন আবু বকর (রাঃ) সিদ্দীক ও বললেন, যদি আল্লাহ চান তাহলে আগামীকাল তোমাদের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ মিলবে। পরের দিন দেখা গেল যে, উসমান (রাঃ) -এর খাদ্য সামগ্রী (ব্যবসায়িক) নিয়ে বিশাল এক কাফেলা আগমন করল। তখন বহু ব্যবসায়ী উসমান (রাঃ) -এর কাছে আসল তা ক্রয় করার জন্য, এতে তারা (কাফেলার লোকেরা) অধিক মুনাফা লাভের আশা করছিল। তখন যুনুরাইন তথা উসমান (রাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা আমাকে কত লাভ দেবে? এক ব্যবসায়ী বলল, বার দিরহাম। উসমান (রাঃ) বললেন, আমার মুনাফা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন এক ব্যবসায়ী বলল, পনের দিরহাম। উসমান (রাঃ) বললেন, আমার মুনাফা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন ব্যবসায়ীরা বলল, মদীনার মধ্যে এমন কোনো ব্যবসায়ী রয়েছে যে, আপনাকে আমাদের চেয়ে বেশি মুনাফা দেবে? অথচ আমরাই তো মদীনার ব্যবসায়ী। তখন উসমান (রাঃ) লি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার প্রত্যেক দিরহামকে দশ দিরহামে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। তোমরা কি এর চেয়ে বেশি বৃদ্ধি করতে পারবে?
(আল-মাওসুয়াতুয যাহাবিয়াহ লি মুহাম্মদ আহমাদ হেলালী, পৃঃ ৪২)
(আল-মাওসুয়াতুয যাহাবিয়াহ লি মুহাম্মদ আহমাদ হেলালী, পৃঃ ৪২)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু কর সিদ্দীক - এর খিলাফতকালে অনাবৃষ্টি দেখা দিল। ফলে লোকেরা আবু বকর (রাঃ) -এর কাছে একত্রিত হয়ে বলল, আকাশ থেকে কোনো বৃষ্টি বর্ষণ হচ্ছে না, জমিন হতে কোনো ফসল উৎপন্ন হচ্ছে না। আর লোকেরাও কঠিন কষ্টের মধ্যে রয়েছে। আবু বকর (রাঃ) বললেন, তোমরা ফিরে যাও এবং ধৈর্য ধারণ কর। কেননা, সন্ধ্যা আসার আগেই তোমাদের উপর থেকে আল্লাহর তায়ালা কষ্ট লাঘব করবেন। কর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকেরা উসমান (রাঃ) এর বাড়িতে গেল এবং তার দরজায় করাঘাত করল। আর উসমান (রাঃ) ও তাদের মাঝে বের হয়ে এসে বললেন, তোমরা কি চাও? তখন তারা বলল, এ সময়টি দুর্ভিক্ষ অতিক্রম করছে। আকাশ হতে বৃষ্টি পড়ছে না, যমিন ফসল উৎপন্ন করছে না। ফলে মানুষেরা কঠিন বিপদের মাঝে পতিত হয়েছে। আর আমাদের কাছে সংবাদ আছে যে, আপনার কাছে অনেক খাবার মজুদ আছে। আমরা তা ক্রয় করে গরিব মুসলমানদের মাঝে বন্টন করতে চাই। উসমান (রাঃ) মুহাব্বত ও সম্মানের সাথে বললেন, তোমরা আস এবং ক্রয় কর। তখন ব্যবসায়ীরা তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করল। এমতাবস্থায় খাদ্য সামগ্রী উসমান (রাঃ) -এর বাড়িতেই মজুদ ছিল।
তখন উসমান (রাঃ) বললেন, হে ব্যবসায়ীগণ! আমি শাম থেকে যে দরে ক্রয় করে এনেছি, তার থেকে তোমরা আমাকে কত লাভ দিবে? তারা বলল, প্রত্যেক দশে বার দিরহাম। উসমান (রাঃ) বললেন, আরো বৃদ্ধি করতে হবে। তারা বলল, প্রত্যেক দশে পনের। উসমান (রাঃ) বললেন, আরো বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলল, হে আবু আমর! মদীনায় আমাদের ছাড়া আর অন্য কোনো ব্যবসায়ী এখানে উপস্থিত হতে অবশিষ্ট নেই। সুতরাং মদীনাতে এমন কোন ব্যবসায়ী আছে যে আমাদের থেকে বৃদ্ধি করে দিবে? তখন উসমান (রাঃ) বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে প্রত্যেক দিরহামে ১০ দিরহাম করে বৃদ্ধি করে দিবেন, তোমরা কি এর চেয়ে বৃদ্ধি করতে পারবে? তারা বলল, না। উসমান (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় আমি মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি। আমার এ খাদ্য আমি গরিব মুসলমানদের মাঝে সদকা করে দিলাম। ইবনে আব্বাস বললেন, আমি রাতে রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি একটি উজ্জ্বল বাহনে আরোহিত অবস্থায় কোথাও যেন ব্যস্ততার সাথে যাচ্ছেন, আর তার শরীরে ছিল একটা নূরের চাদর। পায়ে ছিল নূরের পাদুকা, হাতে ছিল একটা নূরের লাঠি। আমি বললাম, ইয়া রাসূল্লাহ! আমার আগ্রহ বেড়ে গেছে আপনার উপর এবং আপনার কথার উপর। আপনি এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছেন? রাসূল (ﷺ) কে বললেন, হে ইবনে আব্বাস! উসমান (রাঃ) বড় ধরনের সাদকা করেছেন আর আল্লাহ তায়ালা তার থেকে তা কবুল করে নিয়েছেন। আর তাকে জান্নাতে বিবাহ করিয়েছেন। আর আমাকে সেখানে দাওয়াত দেয়া হয়েছে।
(আর-রিককাতু ওয়াল বুকাউ লি ইবনে কুদামা, পৃঃ ২৯০)
তখন উসমান (রাঃ) বললেন, হে ব্যবসায়ীগণ! আমি শাম থেকে যে দরে ক্রয় করে এনেছি, তার থেকে তোমরা আমাকে কত লাভ দিবে? তারা বলল, প্রত্যেক দশে বার দিরহাম। উসমান (রাঃ) বললেন, আরো বৃদ্ধি করতে হবে। তারা বলল, প্রত্যেক দশে পনের। উসমান (রাঃ) বললেন, আরো বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলল, হে আবু আমর! মদীনায় আমাদের ছাড়া আর অন্য কোনো ব্যবসায়ী এখানে উপস্থিত হতে অবশিষ্ট নেই। সুতরাং মদীনাতে এমন কোন ব্যবসায়ী আছে যে আমাদের থেকে বৃদ্ধি করে দিবে? তখন উসমান (রাঃ) বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে প্রত্যেক দিরহামে ১০ দিরহাম করে বৃদ্ধি করে দিবেন, তোমরা কি এর চেয়ে বৃদ্ধি করতে পারবে? তারা বলল, না। উসমান (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় আমি মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি। আমার এ খাদ্য আমি গরিব মুসলমানদের মাঝে সদকা করে দিলাম। ইবনে আব্বাস বললেন, আমি রাতে রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি একটি উজ্জ্বল বাহনে আরোহিত অবস্থায় কোথাও যেন ব্যস্ততার সাথে যাচ্ছেন, আর তার শরীরে ছিল একটা নূরের চাদর। পায়ে ছিল নূরের পাদুকা, হাতে ছিল একটা নূরের লাঠি। আমি বললাম, ইয়া রাসূল্লাহ! আমার আগ্রহ বেড়ে গেছে আপনার উপর এবং আপনার কথার উপর। আপনি এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছেন? রাসূল (ﷺ) কে বললেন, হে ইবনে আব্বাস! উসমান (রাঃ) বড় ধরনের সাদকা করেছেন আর আল্লাহ তায়ালা তার থেকে তা কবুল করে নিয়েছেন। আর তাকে জান্নাতে বিবাহ করিয়েছেন। আর আমাকে সেখানে দাওয়াত দেয়া হয়েছে।
(আর-রিককাতু ওয়াল বুকাউ লি ইবনে কুদামা, পৃঃ ২৯০)
উমর গুগল এর খিলাফতকালে বহু দেশ বিজয়ের ফলে সম্পদ বৃদ্ধি পেল তখন তিনি রাসূল-এর সাহাবীদের মধ্য হতে কতিপয় লোককে একত্র করে তাদের কাছে এ মালের ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। তখন উসমান (রাঃ) কি বললেন, আমি অনেক সম্পদ দেখেছি যা মানুষের জন্য যথেষ্ট। যদি এ সম্পদের হিসাব রাখা হয় তাহলে কে নিল আর কে নিল না তা বুঝা যাবে না। আমার ভয় হয় যে, এ বিষয়টা ব্যাপকতা লাভ করবে। অতঃপর উমর ও উসমান (রাঃ) - এর পরামর্শ গ্রহণ করলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের নিয়ে এ ব্যাপারে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করলেন।
(উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লিস সাদিক আরজুন ৬০)
(উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লিস সাদিক আরজুন ৬০)
উম্মাহাতুল মুমিনীনদের সাথে হজ্জ পালন হিজরী তেইশ সনে উমর ও রাসূল (ﷺ) যে -এর স্ত্রীগণকে হজ করার অনুমতি দিলেন। তিনি তাদেরকে হাওদার মধ্যে আরোহন করালেন। আর তাদের সাথে উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ -কে পাঠালেন। সুতরাং উসমান (রাঃ) ছিলেন তাদের সামনে বাহনে আরোহিত অবস্থায়, তিনি কাউকে তাদের কাছে আসতে দিতেন না। আর তিনি উমর (রাঃ) -এর সাথে প্রত্যেক স্থানে অবতরণ করতেন। উসমান (রাঃ) ও আব্দুর রহমান ও তাদেরকে নিয়ে প্রবাল প্রাচীরে অবতরণ করলেন। আর তারা দু'জন কাউকে তাদের নিকট হতে যেতে দেন নি।
(ত্বাবাকাতু ইবনে সা'দ, ৩/১৪)
(ত্বাবাকাতু ইবনে সা'দ, ৩/১৪)
খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব প্রশ্নে এমন এক ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিলেন যিনি পরবর্তীতে (উমরের পর) খলিফা নির্বাচিত হবেন। তিনি তার উপদেশে বললেন, আমি তোমাকে সে আল্লাহর ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করতে উপদেশ দিচ্ছি, যিনি এক ও অদ্বিতীয়, যার কোনো শরীক নেই। আমি তোমাকে প্রাথমিক পর্যায়ের মুহাজির সাহাবীদের ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি তাদেরকে তাদের মর্যাদা হিসেবে জানবে। আনসারদের কল্যাণের জন্য তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি তাদের সাথে উত্তম আচরণ করবে আর তাদের সমস্যা লাঘব করবে। আমি তোমাকে শহরবাসীর কল্যাণের জন্য উপদেশ দিচ্ছি। কেননা, তারা হলো শক্রর সাহায্যকারী। আমি তোমাকে গ্রাম্য লোকদের কল্যাণের ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছি। কেননা, তারা আরবের প্রধান অধিবাসী এবং ইসলামের মূল। আর তাদের অতিরিক্ত সম্পদ গ্রহণ করে (যাকাত হিসেবে) তাদের গরিবদের মাঝে বণ্টন করে দিবে। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি জিম্মীদের কল্যাণে কাজ করবে। যখন তারা স্বেচ্ছায় মুমিনদের প্রাপ্য আদায় করে তখন তাদের উপর অতিরিক্ত কোনো বোঝা চাপিয়ে দিবে। আমি তোমাকে আল্লাহকে ভয়ের ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছি যে, তার শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখবে।
তার অপছন্দ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকবে। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, মানুষের অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে কিন্তু আল্লাহর হকের ব্যাপারে মানুষকে ভয় করবে না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি নাগরিকদের ব্যাপারে ন্যায় পরায়ণ হবে। তুমি তাদের প্রয়োজন মিটাতে অধিক মনোযোগী হবে। আর তাদের গরীবদের উপর ধনীদের প্রাধান্য দিবে না। সব মানুষকে তোমার কাছে সমান মনে করবে এবং কারো ন্যায্য অধিকার খর্ব করবে না। আল্লাহর হকের বিষয়ে নিজেকে নিন্দুকের নিন্দার পাত্র বানাবে না। আর তুমি পক্ষপাতিত্ব করা থেকে বেঁচে থাকবে। যদি তুমি আমার এ কথাগুলো মান্য কর তাহলে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম স্থানের অধিকারী হবে। (আত-ত্বাবাকাত লি ইবনে সা'দ, ৩/৩৪০)
তার অপছন্দ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকবে। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, মানুষের অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে কিন্তু আল্লাহর হকের ব্যাপারে মানুষকে ভয় করবে না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি নাগরিকদের ব্যাপারে ন্যায় পরায়ণ হবে। তুমি তাদের প্রয়োজন মিটাতে অধিক মনোযোগী হবে। আর তাদের গরীবদের উপর ধনীদের প্রাধান্য দিবে না। সব মানুষকে তোমার কাছে সমান মনে করবে এবং কারো ন্যায্য অধিকার খর্ব করবে না। আল্লাহর হকের বিষয়ে নিজেকে নিন্দুকের নিন্দার পাত্র বানাবে না। আর তুমি পক্ষপাতিত্ব করা থেকে বেঁচে থাকবে। যদি তুমি আমার এ কথাগুলো মান্য কর তাহলে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম স্থানের অধিকারী হবে। (আত-ত্বাবাকাত লি ইবনে সা'দ, ৩/৩৪০)
আবু মূসা আশআরী হতে বর্ণিত। এক সময় নবী (ﷺ) এ এক বাগানে প্রবেশ করে আমাকে আদেশ করলেন, বাগানের দরজা পাহারা দিতে। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বাগানে প্রবেশের অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বললেন, তাকে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তখন দেখা গেল, তিনি হলেন আবু বকর (রাঃ) অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও বললেন, তাকেও প্রবেশের অনুমতি দাও এবং তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তখন দেখা গেল, তিনি হলেন উমর ইবনুল খাত্তাব। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, তাকেও প্রবেশের অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তবে তাকে বলবে, অচিরেই তার উপর একটা বিপদ আগমন করবে। দেখা গেল, তিনি হলেন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)। আসিম সূত্রে অন্য বর্ণনায় আছে, নবী (ﷺ) গো এমন এক স্থানে বসেছিলেন যেখানে পানি ছিল। আর নবী (ﷺ) এর একটি অথবা দুটি হঁটু ভোলা ছিল। যখন উসমান (রাঃ) প্রবেশ করলেন তখন তিনি হাঁটু ঢাকলেন। (বুখারী, হাঃ ৩৬৯৫)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, অচিরেই ফেতনা বা অরাজকতা ও মতবিরোধ প্রভাব বিস্তার করবে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে কি নির্দেশ দিচ্ছেন? রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা তোমাদের নেতা ও তাঁর সাথীদের অনুসরণ করবে; তিনি নেতা বলতে উসমান (রাঃ)কে ইংগিত করলেন। (আল মুসতাদরিক, ৩৯৯)
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূল (ﷺ) ইন্তেকাল করেন তখন এ ব্যাপারে তার সাহাবীদের কেউ কেউ খুবই চিন্তান্বিত হয়ে পড়ল। এমনকি কারো কারো মনে রাসূল (ﷺ) -এর ইন্তিকালের ব্যাপারে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি হলো। উসমান (রাঃ) লি বলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন, যারা তাঁর মৃত্যু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছিল। আমি মদীনায় কোনো একটি স্থানে ছিলাম তখন আবু বকর (রাঃ) খলিফা হিসেবে শপথ নিচ্ছিলেন। যখন উমর আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন তখন আমি তাকে খেয়াল করি নি। এরপর উমর শুনিকাল আবু বকর (রাঃ) সি-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আপনি কি আশ্চর্য হবেন না যে, আমি উসমান (রাঃ)কে অতিক্রম কালে তাকে সালাম দিলাম অথচ সে আমার সালামের জবাব দিল না। (উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লি মাহমুদ বাদী, পৃঃ ১২)
আয়েশা লম্বা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) রাসূল (ﷺ) -এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তখন আমি তার সাথে এক কাপড়ে ছিলাম। রাসূল (ﷺ) ল তাকে অনুমতি দিলেন। তিনি প্রয়োজন সেড়ে চলে গেলেন। আর রাসূল (ﷺ) পূর্বের অবস্থায় রইলেন। এরপর উমর গুল এসে অনুমতি চাইলেন। তাকেও অনুমতি দেয়া হলো এবং তিনি তার প্রয়োজন মিটালেন। তখনও রাসূল (ﷺ) আমার সাথে এক কাপড়ে ছিলেন। এরপর যখন উসমান (রাঃ) এসে অনুমতি চাইলেন, তখন রাসূল (ﷺ) তো নিজের কাপড় ঠিক করলেন এবং উঠে বসলেন, আর উসমান (রাঃ) এসে তার প্রয়োজন মিটিয়ে চলে গেলেন। রাবী বলেন, উসমান (রাঃ) চলে যাওয়ার পর আমি রাসূল (ﷺ) -কে বললাম, আবু বকর (রাঃ) ও উমর আসলেন তারা তাদের প্রয়োজন সেড়ে চলে গেলেন আর আপনি পূর্বাবস্থায়ই ছিলেন। কিন্তু উসমান (রাঃ) যখন আসলেন তখন আপনি আপনার কাপড় ঠিক করলেন এর কারণ কি? তখন রাসূল (ﷺ) ( বললেন, উসমান (রাঃ) অত্যন্ত লজ্জাশীল ব্যক্তি। আমার এ অবস্থায় তাকে অনুমতি দিলে হয়ত সে কাজ না সেরেই চলে যেত।
(আল মারজিয়ুস সাবিক পৃঃ ২৩, ২৪)
(আল মারজিয়ুস সাবিক পৃঃ ২৩, ২৪)
ফাতেমা বিনতে আব্দুর রহমান তার মায়ের কাছ থেকে বর্ণনা করেন। তার মা আয়েশা এর কাছে এসে বললেন, (তাকে পাঠিয়েছেন তার চাচা) এক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং আপনার কাছে উসমান (রাঃ) সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কেননা, লোকেরা তাকে গালি দিচ্ছে। তখন আয়েশা অলিজা বললেন, ঐ সকল লোকের উপর আল্লাহর লানত, যারা উসমান (রাঃ)কে লানত করে। আল্লাহর শপথ! তিনি একদিন আল্লাহর নবীর কাছে ছিলেন। আর রাসূল (ﷺ) তার পিঠ দিয়ে আমার উপর হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আর জিবরাঈল (আ) তার কাছে কুরআন প্রত্যাদেশ করছিলেন। তখন রাসূল (ﷺ) সা উসমান (রাঃ) -কে বললেন, হে উসমান! তুমি লেখ। কেননা, আল্লাহ তায়ালা এ স্থানে (ওহী লেখার) এমন কাউকে নির্বাচন করতে চান, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে অতি সম্মানিত। ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর লানত যে, উসমান (রাঃ)কে লানত করে। আমি রাসূল (ﷺ)-কে দেখেছি যে, তাঁর রান উসমানের সাথে মিলাননা, আর আমি রাসূল (ﷺ) এর কপালের ঘাম মুছতে ছিলাম। আর তার উপর ওহী নাযিল হচ্ছিল, তখন রাসূল (ﷺ) প্রশ্ন উসমান (রাঃ) -কে বলল, হে উসমান! তুমি লেখ; আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তায়ালা এ স্থানে এমন কাউকে বসাতে চান, যার উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
তারাজুমুল খুলাফাউর রাশিদীন লি মুহাম্মাদ ইবনে রেজা, ৯/৩২৭)
তারাজুমুল খুলাফাউর রাশিদীন লি মুহাম্মাদ ইবনে রেজা, ৯/৩২৭)
উসমান (রাঃ) এবং আবু উবাইদা আমের ইবনে জাররাহ এ একবার বিতর্কে লিপ্ত হলেন। আবু উবাইদা উসমান (রাঃ) -কে বললেন, হে উসমান! তুমি আমার সাথে কথা কাটাকাটি করছ অথচ আমি তিনটি কারণে তোমার থেকে উত্তম। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, সেগুলো কী কী? আবু উবাইদা বললেন, প্রথমত আমি বাইয়াতের দিন বাইয়াত গ্রহণকারীদের সাথে উপস্থিত ছিলাম আর তুমি অনুপস্থিত ছিলে। দ্বিতীয়তঃ আমি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি আর তুমি অনুপস্থিত ছিলে। তৃতীয়ত আমি ঐ সকল লোকদের একজন যারা ওহুদের দিন উপস্থিত ছিল আর তুমি সেখানে অনুপস্থিত ছিলে। অতঃপর উসমান (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি সত্য বলেছ। যাই হোক, বাইয়াতের দিন রাসূল (ﷺ) আমাকে প্রয়োজনে পাঠিয়েছিলেন। আর তিনি আমার পক্ষ থেকে হাত প্রসারিত করে বলেছিলেন, এটা উসমান ইবনে আফফানের (রাঃ) ।
আর আমার হাতের চেয়ে তার হাত উত্তম। আর বদরের কথা হলো, রাসূল (ﷺ) নিজে আমাকে মদীনায় রেখে গিয়েছিলেন। আর আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয় যে, আমি তার বিরুদ্ধাচরণ করব। আর তার মেয়ে রুকাইয়া গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। আমি তার সেবা-যত্নে নিযুক্ত ছিলাম। আর তিনি এ রোগে মারা যান আর আমি তাকে দাফন করি। আর ওহুদ যুদ্ধে যাওয়ার ব্যর্থতার গোনাহকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর আমার এ কাজকে শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। (সূরা আলে ইমরান ১৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ) উসমান (রাঃ) তার সাথে কথা কাটাকাটি করলেন এবং বিজয় লাভ করলেন। (আল-মারাজিমুস সাবিক, ৩৩৪, ৩৩৫ পৃঃ)
আর আমার হাতের চেয়ে তার হাত উত্তম। আর বদরের কথা হলো, রাসূল (ﷺ) নিজে আমাকে মদীনায় রেখে গিয়েছিলেন। আর আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয় যে, আমি তার বিরুদ্ধাচরণ করব। আর তার মেয়ে রুকাইয়া গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। আমি তার সেবা-যত্নে নিযুক্ত ছিলাম। আর তিনি এ রোগে মারা যান আর আমি তাকে দাফন করি। আর ওহুদ যুদ্ধে যাওয়ার ব্যর্থতার গোনাহকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর আমার এ কাজকে শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। (সূরা আলে ইমরান ১৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ) উসমান (রাঃ) তার সাথে কথা কাটাকাটি করলেন এবং বিজয় লাভ করলেন। (আল-মারাজিমুস সাবিক, ৩৩৪, ৩৩৫ পৃঃ)
যখন উসমান (রাঃ) খিলাফতের বাইয়াত গ্রহণ করলেন তখন তিনি মানুষের সামনে খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি দায়িত্ব পেয়েছি এবং তা গ্রহণ করে নিয়েছি। আর আমি পূর্ববর্তীদের অনুসরণকারী, নতুন কিছু তৈরিকারী নই। তোমাদের জন্য আমার উপর আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাতের পর তিনটি বিষয় রয়েছে। আর তা হলো, আমার পূর্বে যারা ছিলেন তাদের যে সব ব্যাপারে তোমরা একমত পোষণ কর তার অনুসরণ করা। আর এমন রীতি-নীতির অনুসরণ করা যা তোমরা এবং উত্তম ব্যক্তিরা মিলে প্রণয়ন করেছ। আর তোমাদের উপর শাস্তি বাধ্যতামূলক হয় এমন কাজ করা পর্যন্ত তোমাদের থেকে বিরত থাকা। জেনে রেখ, দুনিয়া হলো সবুজ শ্যামল। কিন্তু অধিকাংশ লোক দুনিয়ার দিকেই ঝুঁকে পড়েছে। সুতরাং তোমরা দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে না এবং দুনিয়াকে আকড়িয়ে ধরবে না। কারণ দুনিয়া ধরে রাখার বস্তু নয়। আর জেনে রাখ, যে ব্যক্তি দুনিয়া ছাড়তে চায় না, দুনিয়া কখনো তাকে ছাড়ে না। (তারিখে তাবারী, ৫/৪৪৩)
উসমান (রাঃ)সকল গভর্ণরদের কাছে সর্বপ্রথম যে পত্র পাঠালেন। তাতে তিনি লিখলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা নেতাদের এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন প্রজাদের সেবক হিসেবে কাজ করে এবং তারা যেন শোষণকারী
হয়। এই উম্মতের প্রথম যুগের নেতারা জনগণের সেবক ছিলেন। তারা শোষণকারী হিসেবে তৈরি হন নি। তবে অচিরেই তোমাদের শাসকগণ শোষণকারী হিসেবে পরিণত হবে। তারা সেবক থাকবে না। যখন তারা এ রকম হবে তখন লজ্জা এবং আমানত এবং প্রতিশ্রুতি পালন ছিন্ন হয়ে যাবে। জেনে রাখ, সবচেয়ে বড় ইনসাফ হচ্ছে তোমরা মুসলমানদের সকল বিষয়ে খোঁজ-খবর নিবে। তোমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায় করে দেবে এবং তাদের উপর তোমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে তা তোমরা আদায় করে নেবে।
হয়। এই উম্মতের প্রথম যুগের নেতারা জনগণের সেবক ছিলেন। তারা শোষণকারী হিসেবে তৈরি হন নি। তবে অচিরেই তোমাদের শাসকগণ শোষণকারী হিসেবে পরিণত হবে। তারা সেবক থাকবে না। যখন তারা এ রকম হবে তখন লজ্জা এবং আমানত এবং প্রতিশ্রুতি পালন ছিন্ন হয়ে যাবে। জেনে রাখ, সবচেয়ে বড় ইনসাফ হচ্ছে তোমরা মুসলমানদের সকল বিষয়ে খোঁজ-খবর নিবে। তোমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায় করে দেবে এবং তাদের উপর তোমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে তা তোমরা আদায় করে নেবে।
উসমান (রাঃ) বলেন, তোমরা মদ পান করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা, এটা সমস্ত অপবিত্র কাজের মূল। তোমাদের পূর্বে এক ব্যক্তি নিভৃতে ইবাদত-বন্দেগী করত। এক মহিলা তার প্রতি আসক্ত হয়ে তাকে বিপথগামী করল। সে তার কাছে এক দাসীকে পাঠাল। দাসী লোকটিকে বলল, অমুক আপনাকে সাক্ষী দেয়ার জন্য ডেকেছে। অতঃপর লোকটি দাসীর সাথে সেখানে গেল। সে যখনই দরজা দিয়ে প্রবেশ করল তখনই দরজা বন্ধ করে দিল। অতঃপর সে সৌন্দর্যময় নারীর কাছে পৌছাল। তার কাছে ছিল একজন বালক এবং মদের বড় একটি পাত্র। অতঃপর মহিলা তাকে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে সাক্ষাত দেয়ার জন্য ডাকি নি; বরং আমি তোমাকে ডেকেছি এজন্য যে, তুমি আমার সাথে ব্যভিচার করবে অথবা এখান থেকে এক পেয়ালা মদ পান করবে অথবা এ বালকটিকে হত্যা করবে। তখন লোকটি বলল, আমাকে এক পেয়ালা মদ পান করাও। অতঃপর মহিলা তাকে মদ পান করাল। লোকটি বলল, আমাকে আরো বাড়িয়ে দাও, তখন মহিলাটি তাই করল। অতঃপর লোকটি উক্ত মহিলার উপর উঠল অর্থাৎ তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো এবং বালকটিকে হত্যা করল। অতঃপর উসমান (রাঃ) বলেন, তোমরা মদ। পান করা থেকে বিরত থাক। আল্লাহর শপথ! মদ পান করলে ঈমান থাকে। মদে আসক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ঈমান দূরে চলে যায়।
(মাওসুয়াতু ফিকহে উসমান (রাঃ), পৃঃ ৫২)
(মাওসুয়াতু ফিকহে উসমান (রাঃ), পৃঃ ৫২)
উসমান (রাঃ) -এর খিলাফতকালে তিনি এমন এক ব্যক্তিকে প্রহার করলেন যে রাসূল (ﷺ) -এর চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে কটাক্ষ করে কথা বলেছিল। অতঃপর যখন তাকে ঐ লোকটিকে প্রহার করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তখন তিনি বললেন, হ্যা! আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর চাচাকে অনেক মর্যাদা দিয়েছেন এবং তিনি তাঁর সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন। আর রাসূল (ﷺ) ঐ ব্যক্তির বিরোধিতা করেছেন যে এটা করে অর্থাৎ যে তাকে মর্যাদা দেয় না এবং সমালোচনা করে রাসূল (ﷺ) তার বিরোধিতা করেছেন। (মাওসুয়াতে ফিকহে উসমান (রাঃ), পৃঃ ৫২)
আফ্রিকা বিজয় করে যখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) মদীনায় ফিরে আসলেন তখন উসমান (রাঃ) তাকে খুতবা দিতে নির্দেশ দিলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। যখন তিনি খুতবা শেষ করেন তখন উসমান (রাঃ) বললেন, তোমরা নারীদেরকে বিবাহ দেবে তাদের পিতা ও ভাইদের সাথে মিল রেখে। আমি আবু বকর (রাঃ) সিদ্দীক -এর সন্তানদের ক্ষেত্রে এরূপ দেখেছি। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের মা ছিলেন আবু বকর (রাঃ) সিদ্দীকের -এর কন্যা। আসমা এর দ্বারা তিনি বুঝতে চান যে, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের -এর বীরত্ব তার নানার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। (ফারায়েদুল কালাম- ২৭১)
মূসা ইবনে ত্বলহা বলেন, আমি উসমান (রাঃ) কে জুমার দিন বের হতে দেখলাম, গায়ে ছিল হলদে বর্ণের দুটি কাপড়। অতঃপর তিনি মিম্বারে বসলেন এবং মুয়াজ্জিন আযান দিলেন। অতঃপর তিনি আলোচনা শুরু করলেন এবং প্রথমেই তিনি মানুষদেরকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। (তারিখুল খুলাফা লিস সুয়ূতী)
নুমান ইবনে বশীর বলেন, মুয়াবিয়া (রাঃ) আমাকে একটি পত্রসহ আয়েশা (রাঃ) -এর কাছে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে চিঠি পেশ করলাম। অতঃপর আয়েশা খিদা বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদীস বলব যা আমি রাসূল (ﷺ) থেকে শুনেছি। আমি বললাম, হ্যা বলুন। আয়েশা অবিললেন, একদিন আমি ও হাফসা অলিজা রাসূল (ﷺ) -এর কাছে ছিলাম। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, যদি আমাদের কাছে কোনো পুরুষ থাকত তাহলে সে আমাদের কথা বর্ণনা করত। আয়েশা আনহু বললেন, আমি বললাম, আবু বকর (রাঃ)কে ডেকে পাঠাই। তিনি এসে বর্ণনা করবেন। আয়েশা বললেন, রাসূল (ﷺ) চুপ থাকলেন। তখন হাফছা বললেন, আমি উমর -কে ডেকে পাঠাই? তিনি এসে বর্ণনা করবেন। আয়েশা বললেন, রাসূল (ﷺ) চুপ থাকলেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) এক ব্যক্তিকে ডাকলেন। তিনি রাসূল (ﷺ) -এর কাছে কিছু একটা পেশ করলেন। তারপর সে চলে গেলন। অতঃপর উসমান (রাঃ) আসলেন এবং রাসূল (ﷺ) -এর সামনা সামনি বসলেন। তখন আমি রাসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, হে উসমান! আল্লাহ তায়ালা তোমাকে জামা পরিধান করিয়েছেন। (অর্থাৎ সম্ভবত তোমাকে খিলাফাতের দায়িত্ব দিয়েছেন। যদি তারা তোমার কাছ থেকে তা খুলতে চায়, তাহলে তুমি তা খুলবে না। অপর বর্ণনায় আছে, রাসূল (ﷺ) বলেন, হে উসমান! আল্লাহ তায়ালা তোমাকে এ ব্যাপারে (খিলাফাতের) দায়িত্ব দিয়েছেন। যদি মুনাফিকরা তোমার কাছ থেকে এ পোশাক খুলে নিতে চায় যা আল্লাহ তোমাকে পরিধান করিয়েছেন, তাহলে তুমি তা খুলবে না। (তিরমিযী- ৩৭৮৯)
উসমান (রাঃ) হচ্ছে এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক খণ্ড জমি ক্রয় করলেন। অতঃপর তিনি এ জমির ব্যাপারে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করলেন। অতঃপর তার সাথে উসমান (রাঃ) বুদ্ধি এর দেখা হলো। সে বলল, কিসে আপনাকে আপনার মাল হস্তগত করতে বারণ করছে? তখন উসমান (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ, যার সাথেই আমার দেখা হয়েছে সেই আমাকে তিরস্কার করেছে। তখন লোকটি বলল, এটাই কি আপনাকে বারণ করেছে? উসমান (রাঃ) এই বললেন, হ্যা। তিনি বলেন, তুমি তোমার জমিন ও মালের ক্রয়-বিক্রয়ে খিয়াল রাখবে। অতঃপর তিনি আরো বললেন, রাসূল (ﷺ) ল বলেন, আল্লাহ তায়ালা ঐসব লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যারা সহজ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করে এবং যেসব বিচারক সহজভাবে বিচার করে আর বিচার প্রার্থীরা সহজে তা মেনে নেয়।
(মুসনাদে আহমাদ- ৪০১০)
(মুসনাদে আহমাদ- ৪০১০)
উসমান (রাঃ) আল ফজরের সালাতের জন্য বের হলেন। অতঃপর তিনি সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন সাধারণত যে দরজা দিয়ে তিনি প্রবেশ করতেন। আর সে দরজায় ছিল (প্রচণ্ড) ভীর (লোকদের)। তখন উসমান (রাঃ) লোকদের বললেন, তোমরা একটু দেখ ওখানে কি হচ্ছে? তারা সেদিকে তাকাল এবং তারা এক ব্যক্তিকে দেখতে পেল, যার সাথে আছে ছোড়া অথবা তলোয়ার। উসমান (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? সে বলল, আমার ইচ্ছা হয় যে, আপনাকে হত্যা করি। উসমান (রাঃ) বললেন, এ। ও (আল্লাহ পবিত্র) তোমার জন্য আফসোেস, তুমি আমাকে হত্যা করবে? লোকটি বলল, আপনার ইয়ামেন প্রদেশের গভর্ণর আমার উপর অন্যায় করেছে।
তখন উসমান (রাঃ) বললেন, তোমার উপর যে, অন্যায় করা হয়েছে তা কি আমার কাছে পেশ করেছ? আমি যদি আমার আমলের ব্যাপারে তোমার উপর ইনসাফ না করতাম তাহলে আমার ব্যাপারে যা করতে চাও তাই কর। উসমান (রাঃ) ও পার্শ্ববর্তী লোকদের বললেন, তোমরা কি বল? তখন তারা বলল, হে আমিরুল মুমিনীন! আল্লাহ আপনাকে শত্র হতে রক্ষা করতে পরিপূর্ণ সক্ষম। অতঃপর উসমান (রাঃ) ইন বলেন, হে বান্দা! তুমি তোমার গোনাহের জন্য উদ্বিগ্ন হও। আল্লাহই তাকে আমার থেকে রক্ষা করেছেন। তুমি এমন একজনকে আমার কাছে নিয়ে আস যে তোমার জামিনদার হবে। আমি যতদিন মুসলমানদের খলিফা আছি ততদিন তুমি মদীনায় প্রবেশ করবে না। অতঃপর তার গোত্র থেকে এক ব্যক্তি উসমান (রাঃ)-এর কাছে আসল এবং তার জামিনদার হলো। অতঃপর সে উসমান (রাঃ)-এর কাছ থেকে মুক্তি পেল। (আত তারীখুল ইসলামী লি হামিদী)
তখন উসমান (রাঃ) বললেন, তোমার উপর যে, অন্যায় করা হয়েছে তা কি আমার কাছে পেশ করেছ? আমি যদি আমার আমলের ব্যাপারে তোমার উপর ইনসাফ না করতাম তাহলে আমার ব্যাপারে যা করতে চাও তাই কর। উসমান (রাঃ) ও পার্শ্ববর্তী লোকদের বললেন, তোমরা কি বল? তখন তারা বলল, হে আমিরুল মুমিনীন! আল্লাহ আপনাকে শত্র হতে রক্ষা করতে পরিপূর্ণ সক্ষম। অতঃপর উসমান (রাঃ) ইন বলেন, হে বান্দা! তুমি তোমার গোনাহের জন্য উদ্বিগ্ন হও। আল্লাহই তাকে আমার থেকে রক্ষা করেছেন। তুমি এমন একজনকে আমার কাছে নিয়ে আস যে তোমার জামিনদার হবে। আমি যতদিন মুসলমানদের খলিফা আছি ততদিন তুমি মদীনায় প্রবেশ করবে না। অতঃপর তার গোত্র থেকে এক ব্যক্তি উসমান (রাঃ)-এর কাছে আসল এবং তার জামিনদার হলো। অতঃপর সে উসমান (রাঃ)-এর কাছ থেকে মুক্তি পেল। (আত তারীখুল ইসলামী লি হামিদী)
উসমান (রাঃ)যখন কোনো কবরের পাশে দাঁড়াতেন তখন তিনি কান্নাকাটি করতেন। এতে তার দাড়ি ভিজে যেত। তাকে বলা হলো, আপনি জান্নাতজাহান্নামের কথা মনে করেন এবং এ কারণে এত কান্নাকাটি করেন? তিনি বললেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আখিরাতের প্রথম ধাপ হলো কবর, যদি এখান থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাহলে পরবর্তী সকল ধাপে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে। আর যদি এখান থেকে মুক্তি না পাওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী ধাপে মুক্তি পাওয়া কষ্টকর হবে। তিনি আরো বলেন, নবী (ﷺ) যখন কারো দাফন শেষ করে তার কবরের পাশে দাড়াতেন তখন তিনি বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর তার দৃঢ়তার জন্য প্রার্থনা কর। কেননা, এখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। (ফাযায়েলুস সাহাবা- ৭৭৩)
সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ) ও উসমান (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। আর এমতাবস্থায় তাদের মধ্যে শয়তানের পক্ষ থেকে কেনো একটি বিষয়ে বিবাদ চলছিল। আল্লাহর কসম, তারা একজন অপরজনকে যা কিছু বলেছে তুমি যদি চাও তাহলে আমি সব কিছু তোমাকে বলতে পারব। অতঃপর তারা দুজন সেখান থেকে উঠে গেলেন এবং তারা পরস্পর পরস্পরের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।
(তারিখুল মদীনা লি ইবনে শাবা, ৩/১০৪৪)
(তারিখুল মদীনা লি ইবনে শাবা, ৩/১০৪৪)
উসমান (রাঃ) সর্বপ্রথম যে বিচার করেন তা হলো- উবায়দুল্লাহ ইবনে উমরের ব্যাপারে। আর বিষয়টা ছিল এমন যে, সে সকালে উমর (রাঃ) - এর হত্যাকারী আবু লুলুর মেয়ের কাছে গেল এবং তাকে হত্যা করল। সে এক খ্রিস্টান ব্যক্তিকে প্রহার করেছিল। অতঃপর তিনি তলোয়ার উঁচু করলেন এবং তাকে হত্যা করলেন এবং তিনি হারমুনকে আঘাত করলেন এবং তাকে হত্যা করলেন। বলা হয়ে থাকে যে, এরা দুজন আবু সুলুকে উমর শুকে হত্যার ব্যাপারে সমর্থন করেছিল। উমর (রাঃ) তাদের দু’জনকে কয়েদ খানায় আটকে রাখতে নির্দেশ দিলেন, যাতে তার পরবর্তী খলিফা তাদের বিচার করতে পারে। উসমান (রাঃ) খলিফা নির্বাচন হওয়ার পর তার কাছে সর্বপ্রথম উবায়দুল্লাহর অপরাধের কথা পেশ করা হলো। আলী (রাঃ) এও বললেন, সে কতইনা আদালত ত্যাগ করেছে। তাকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হোক। কিছু কিছু মুহাজির বললেন, গতকাল তার পিতা শাহাদত বরণ করেছেন, আর আজ তাকে হত্যা করা হবে? অতঃপর আমর ইবনে আস বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এ ব্যাপারে বরকত দান করুন। আপনি আপনার পক্ষ থেকে দিয়াত আদায় করুন। উসমান (রাঃ) নিজের মাল থেকে নিহত ব্যক্তিদের ওয়ারিশদেরকে দিয়াত দিতে চাইলেন। কিন্তু তাদের কোনো ওয়ারিশ পাওয়া গেল না। ফলে তা বাইতুল মালে জমা দিলেন। আর ইমাম এভাবে সংশোধনের রায় দিলন। ফলে উবায়দুল্লাহ এভাবে মুক্তি লাভ করেন।
(আল ক্লিায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/১৫৪)
(আল ক্লিায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/১৫৪)
উসমান (রাঃ) -এর খিলাফতকালে হাফসা অ-এর এক দাসী তাকে যাদু করল। এই ব্যাপারে দাসীর সম্পৃক্ততা তিনি বুঝতে পারলেন। তাই আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন। ফলে আব্দুর রহমান দাসীকে হত্যা করল। উসমান (রাঃ) দাসীর ব্যাপারে এ বিষয়টা অস্বীকার করলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর e বললেন, যাদুকারী মহিলার ব্যাপারে আপনি কি উম্মুল মুমিনীনের কথাকে অস্বীকার করবেন? অথচ তিনি তাকে চিনেছেন। তখন উসমান (রাঃ) চুপ হয়ে গেলেন।
(উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, ১৭২)
(উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, ১৭২)
একবার আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কতিপয় মুরতাদকে পাকড়াও করলেন। আর তারা মুসায়লামাতুল কায্যাব এর ঘটনা পুনরুজ্জীবিত করছিল। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ তাদের ব্যাপারে আমিরুল মুমিনীন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) -এর কাছে পত্র লিখলেন। উসমান (রাঃ) প্রতি উত্তরে তাকে লিখলেন, তুমি প্রথমে তাদের সামনে সত্য দ্বীন পেশ করবে। আর তাদেরকে এই কথা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আহ্বান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, মুহাম্মদ ও আল্লাহর রাসূল। যে ব্যক্তি এ আহ্বান সাড়া দিবে এবং মুসায়লামা থেকে নিজেকে পবিত্র করবে, তাকে হত্যা করবে না। আর যে মুসায়লামার ধর্মে অটল থাকবে, তাকে হত্যা করবে। অতঃপর তাদের কতিপয় লোক আহ্বানে সাড়া দিল; ফলে তাদেরকে তিনি হত্যা করলেন না। আবার কতিপয় লোক মুসায়লামার ধর্মে অটল থাকল; ফলে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও তাদেরকে হত্যা করলেন। (মাওসুয়াতু ফিকহি উসমান ইবনে আফফান (রাঃ), পৃঃ ১৫০)
আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ বলেন, যখন আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের লাশ জানাযার স্থানে আনা হলো তখন লোকজন অনেক ঝামেলা করল। ফলে সবাই তাকে নিয়ে জান্নাতুল বাকীতে গেল এবং বলল আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা আজ তাকে জান্নাতুল বাকীতে জানাযা দেব। বর্ণনাকারী বলেন, তার জানাযায় এত বেশি লোক হলো যে, অন্য কারো জানাযায় আমি এত লোক দেখিনি। আর কেউ তার খাটের কাছে যেতে সক্ষম হয়নি। তাকে দেখার ক্ষেত্রে বনী হাশেম প্রাধান্য লাভ করল। যখন তার দাফনের কাজ শেষ হয়ে গেল তখন তার কবরের পাশে লোকজন ভীড় জমাল। উসমান (রাঃ) তা দেখলেন। অতঃপর তিনি সেখানে পুলিশ পাঠালেন লোকদের সরানোর জন্য, যাতে তারা বনী হাশেম থেকে সরে যায়। অতঃপর বনী হাশেমিরা সঠিকভাবে সুযোগ পেয়ে গেল। আর তারা এমন ব্যক্তি যারা তার কবরে নেমেছিল এবং তাকে সেখানে রেখেছিল।
(আত ত্বরাকতি লি ইবনে সা'দ, ৪/৩২)
(আত ত্বরাকতি লি ইবনে সা'দ, ৪/৩২)
১. উসমান (রাঃ) -এর স্ত্রী বলেন, যে রাতে তিনি শহীদ হন সে রাতে তিনি এক রাকায়াতে সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত করেন। অথবা এভাবে উসমান (রাঃ) এর স্ত্রী যিনি তার নিহত হওয়ার সময় পাশে উপস্থিত ছিলেন তিনি বলেন, যে দিন প্রত্যুষে উসমান (রাঃ) নিহত হন সে রাতে উসমান (রাঃ) পূর্ণ কুরআন এক রাকাতে তেলাওয়াত করেন।
২. আতা ইবনে রাবাহ বালিকা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) কৃতিত্ব লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি মাকামের পিছনে দাড়ালেন এবং এক রাকাতে সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত করলেন। '
(তারাজুমুল খুলাফায়ির রাশিদ্বীন, পৃঃ ৩২৮)
২. আতা ইবনে রাবাহ বালিকা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) কৃতিত্ব লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি মাকামের পিছনে দাড়ালেন এবং এক রাকাতে সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত করলেন। '
(তারাজুমুল খুলাফায়ির রাশিদ্বীন, পৃঃ ৩২৮)
রাসূল (ﷺ) আনু-এর সময় মসজিদে নববী তৈরি হয়েছিল কাঁচা ইট দ্বারা, ছাদ ছিল খেজুরের ডালের। আর তার খুঁটিও ছিল খেজুর গাছের ডালের। আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফাতকালে তিনি তাতে বিন্দুমাত্রও বৃদ্ধি করলেন না। উমর (রাঃ) মূল ভিত্তি ঠিক রেখে অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) হচ্ছে যে ভিত্তির উপর তৈরি করেছিলেন তার উপর ভিত্তি করে তাতে কিছুটা বৃদ্ধি করলেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) তাতে বড় ধরনের বৃদ্ধির কাজে হাত দিলেন। তিনি তাতে দেয়াল তৈরি করলেন কারুকার্য খচিত পাথর আর রৌপ্য দ্বারা। তাতে খুঁটি তৈরি করলেন কারুকার্য করা পাথর দ্বারা ছাদ তৈরি করলেন সেগুন গাছের তক্তা দিয়ে। আর দরজা উমর এর সময় যেমনি ছিল ঠিক তেমনিভাবে ছয়টি দরজা তৈরি করলেন। (তারাজুমুল খুলাফায়ির রাশিদিন, ৩২৮)
হেলাল আল মদীনা তার দাদীর কাছ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) -এর কাছে গেলেন। একদিন উসমান (রাঃ) তাকে হারিয়ে ফেলেন। তখন তিনি তার পরিবারকে ডেকে বললেন, আমার কি হলো যে, অমুক মহিলাকে দেখছি না। তার স্ত্রী (উসমান (রাঃ) -এর স্ত্রী) বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! সে রাতে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছে। ঐ মহিলা বললেন, তিনি আমার জন্য পঞ্চাশ দিরহাম ওই কিছু খাদ্য সামগ্রী পাঠালেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) ই বললেন, এটা তোমার সন্তানের ভাতা।
উসমান (রাঃ) সম্পর্কে অতঃপর এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাতে একশত দিরহাম উন্নীত করলেন। (তারিখ দামিশক লি ইবনে আসাকির, ২২০)
উসমান (রাঃ) সম্পর্কে অতঃপর এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাতে একশত দিরহাম উন্নীত করলেন। (তারিখ দামিশক লি ইবনে আসাকির, ২২০)
উসমান (রাঃ) যেদিন ইসলাম গ্রহণ করেন সেদিন থেকে তিনি প্রত্যেক দিন গোসল করতেন। তিনি একদিন অজান্তে অপবিত্র অবস্থায় মানুষদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর যখন ভোর হয়ে গেল তখন তিনি তার কাপড়ে স্বপ্ন দোষের চিহ্ন (বীর্য) দেখলেন। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, বড় অন্যায় হয়ে গেছে। আল্লাহর শপথ! আমি অপবিত্রতা দেখিনি এবং আমি জানিও না। অতঃপর তিনি পুনরায় সালাত আদায় করলেন। কিন্তু যারা তার পিছে সালাত আদায় করেছিল, তারা কেউ পুনরায় আদায় করলেন না। (ফাযায়েলুস সাহাবা, পৃঃ ১৯২)
উসমান (রাঃ) গুল-এর খিলাফতকালে এক ব্যক্তি তার কাছে আসল, তখন তিনি বাহনে আরোহী অবস্থায় ছিলেন। লোকটি তাকে বলল, হে আমিরুল মুমিনীন! আপনার কাছে আমার প্রয়োজন আছে। উসমান (রাঃ) বললেন, এখন আমি ব্যস্ত আছি। সুতরাং তুমি যদি চাও তাহলে আমার পিছনে আরোহন কর আর তোমার প্রয়োজন পেশ কর। তখন লোকটি তার পিছনে আরোহন করল। অতঃপর সে বলল, আমার এক প্রতিবেশী রাগের বশবর্তী হয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। আমি নিজ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, তাকে আমি আমার সম্পদ দিয়ে বিবাহ করব এবং তার সাথে সংসার করব। অতঃপর তাকে তালাক দিয়ে দিব। তারপর সে তার প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাবে। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, বিবাহে পূর্ণ আগ্রহী হয়ে বিবাহ করো না। (মাওসুতুর ফিকহে উসমান (রাঃ), পৃঃ৮১)
আনাস ইবনে মালেক এ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযাইফা ইবনে ইয়ামান লি উসসান এর কাছে এমন এক সময় আসেন, যখন সিরিয়া ও ইরাকের লোকেরা আর্মেনিয়া এবং আযারবাইজান বিজয়ের সংগ্রামে রত ছিলেন। হুযাইফা তাদের কুরআনের বিভিন্ন রকম তিলাওয়াতের কথা। বললেন। সুতরাং তিনি উসমান (রাঃ) কে বললেন, (হে আমীরুল মু'মিনীন) কিতাব (কুরআন) সম্পর্কে মতপার্থক্যে লিপ্ত হওয়ার পূর্বেই আপনি এ জাতিকে রক্ষা করুন, যেমনিভাবে এদের পূর্বে ইয়াহুদী ও নাসারাগণ মতপার্থক্যে লিপ্ত হয়েছিল।
সুতরাং উসমান (রাঃ) উম্মুল মু'মিনীন হাফসা এর কাছে জনৈক ব্যক্তিকে এ বলে পাঠালেন, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের লিপিসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সম্পূর্ণ কুরআন একসাথে একত্রিত করে একখানা পরিপূর্ণ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে পারি। অতঃপর মূল লিপি আপনাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। হাফসা ও মূল লিপি উসমান (রাঃ) -এর কাছে পাঠিয়ে দিলে তিনি যায়েদ ইবনে সাবেত, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর, সাঈদ ইবনে আস এবং আবদুর রহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম এ কে কুরআনের মূল কপি অনুসারে পুনঃ লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন (যা আবু বকরের সময় লেখা হয়েছিল)।
উসমান (রাঃ) তিনজন কুরাইশী ব্যক্তিকে বললেন, যে ক্ষেত্রে তোমরা যায়েদের সাথে কুরআনের কোনো ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করবে, সে ক্ষেত্রে কুরাইশদের ভাষায় (উচ্চারণ ও ধ্বনি অনুসারে) তা লিপিবদ্ধ করবে। কেননা, কুরআন তাদের ভাষায় (ব্যবহৃত উচ্চারণ ও ধ্বনি অনুসারে) নাযিল হয়েছে (তৎকালীন আরবে কুরাইশদের ভাষা ছিল সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল)।
সুতরাং তারা তা-ই করলেন। যখন (দ্বিতীয় সংকলন) অনেকগুলো প্রতিলিপি লেখা হয়ে গেল, তখন তারা সংকলিত প্রতিটি লিপি উসমান (রাঃ) -এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) সু ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রত্যেক প্রদেশে লিখিত কপিসমূহের এক কপি করে পাঠিয়ে দেন। সাথে সাথে এ নির্দেশও জারি করেন যে, ইতোপূর্বের কপিসমূহ যা আলাদা আলাদা বা একত্রে সন্নিবেশিত করা হয়েছিল, সবগুলো কপি যেন জ্বালিয়ে অথবা বিনষ্ট করে দেয়া হয়। যায়েদ ইবনে সাবেত ও বর্ণনা করেন, যখন আমরা কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম, তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। অথচ সে আয়াতটি আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে তিলাওয়াত করতে শুনেছি। সুতরাং আমরা এটি উদ্ধারের জন্য অনুসন্ধান চালালাম। অতঃপর আমরা খুমা আনসারী -এর কাছে তা পেলাম।
(বুখারী, হাদীস-৪৯৮৭)
সুতরাং উসমান (রাঃ) উম্মুল মু'মিনীন হাফসা এর কাছে জনৈক ব্যক্তিকে এ বলে পাঠালেন, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের লিপিসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সম্পূর্ণ কুরআন একসাথে একত্রিত করে একখানা পরিপূর্ণ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে পারি। অতঃপর মূল লিপি আপনাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। হাফসা ও মূল লিপি উসমান (রাঃ) -এর কাছে পাঠিয়ে দিলে তিনি যায়েদ ইবনে সাবেত, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর, সাঈদ ইবনে আস এবং আবদুর রহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম এ কে কুরআনের মূল কপি অনুসারে পুনঃ লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন (যা আবু বকরের সময় লেখা হয়েছিল)।
উসমান (রাঃ) তিনজন কুরাইশী ব্যক্তিকে বললেন, যে ক্ষেত্রে তোমরা যায়েদের সাথে কুরআনের কোনো ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করবে, সে ক্ষেত্রে কুরাইশদের ভাষায় (উচ্চারণ ও ধ্বনি অনুসারে) তা লিপিবদ্ধ করবে। কেননা, কুরআন তাদের ভাষায় (ব্যবহৃত উচ্চারণ ও ধ্বনি অনুসারে) নাযিল হয়েছে (তৎকালীন আরবে কুরাইশদের ভাষা ছিল সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল)।
সুতরাং তারা তা-ই করলেন। যখন (দ্বিতীয় সংকলন) অনেকগুলো প্রতিলিপি লেখা হয়ে গেল, তখন তারা সংকলিত প্রতিটি লিপি উসমান (রাঃ) -এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) সু ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রত্যেক প্রদেশে লিখিত কপিসমূহের এক কপি করে পাঠিয়ে দেন। সাথে সাথে এ নির্দেশও জারি করেন যে, ইতোপূর্বের কপিসমূহ যা আলাদা আলাদা বা একত্রে সন্নিবেশিত করা হয়েছিল, সবগুলো কপি যেন জ্বালিয়ে অথবা বিনষ্ট করে দেয়া হয়। যায়েদ ইবনে সাবেত ও বর্ণনা করেন, যখন আমরা কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম, তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। অথচ সে আয়াতটি আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে তিলাওয়াত করতে শুনেছি। সুতরাং আমরা এটি উদ্ধারের জন্য অনুসন্ধান চালালাম। অতঃপর আমরা খুমা আনসারী -এর কাছে তা পেলাম।
(বুখারী, হাদীস-৪৯৮৭)
উসমান (রাঃ) -এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি চাইতেন হজ্জ আদায়কারীদের সাথে থাকতে। তাই তিনি হজ্জ আদায়কারীদের সাথে সাক্ষাত করতেন এবং তাদের অভিযোগসমূহ শুনতেন। আর তাদের নেতাদের পক্ষ থেকে তাদের উপর কোনো অন্যায় করা হয়েছে কি না তাও তিনি শুনতেন। তিনি গভর্নরদের কাছ থেকে কামনা করতেন যে, তারা যেন সকল হজ্জের মৌসুমে হাজীদের মধ্যে যারা সমস্যায় পড়ে তাদের সমস্যা সমাধান করে দেয়। সুতরাং সে অনুযায়ী তিনি গভর্ণরদের কাছে চিঠি লিখে তা বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশ দিতেন। (আল বেলাইয়াতুন আলাল বালদান, ১/২)
উসমান (রাঃ) বিবাহ করলেন এবং তিনি হাসান ইবনে আলী (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। ফলে তিনি উসমান (রাঃ) এর কাছে আসলেন। উসমান (রাঃ) তাকে তার সাথে বিছানার উপর বসালেন। অতঃপর হাসান (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় আমি রোযাদার। আমি যদি জানতাম যে, আপনি আমাকে দাওয়াত দিবেন তাহলে আমি রোযা রাখতাম না। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, তুমি যদি চাও তাহলে আমরা তোমার সাথে সে রকম ব্যবহার করব যেমন রোযাদারের সাথে করা হয়। হাসান বললেন, রোযাদারদের সাথে কি করা হয়? উসমান (রাঃ) বললেন, চোখে সুরমা লাগানো হয় ও খুশবু লাগিয়ে দেয়া হয়। হাসান এর বলেন, অতঃপর উসমান (রাঃ)একজন সুরমা ও খুশবু ওয়ালাকে ডাকলেন, অতঃপর তিনি সুরমা ও খুশবু লাগালেন।
(তারিখুল মাদীনাহ, ৩/১০১৮) ৬৮.
(তারিখুল মাদীনাহ, ৩/১০১৮) ৬৮.
আমর ইবনে উমাইয়া আজ-জামরী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরাইশদের মধ্যে যারা বৃদ্ধ তারা খাজীর (এটা এক জাতীয় খাদ্য যা ছোট ছোট গোশতের টুকরা ও আটার মিশ্রণে তৈরি করা হয়) খেতে আসক্ত হয়ে পড়ত। একদিন আমি উসমান (রাঃ) এর সাথে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। খাজীর নামক খাবার যার পরিবেশন অত্যন্ত সুস্বাদু হয়েছিল, যা ইতোপূর্বে আমি দেখিনি। তাতে ছিল ছোট ভেড়ার পায়ের অংশ ও ঘি। তখন উসমান (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি এ খাবারকে কেমন মনে করছ? আমি বললাম, এটা উত্তম খাবার যা ইতোপূর্বে খাইনি।
অতঃপর উসমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহ উমর ইবনে খাত্তাবের উপর দয়া করুন। তুমি কি উমরের সাথে এরূপ খাবার কখনো খেয়েছ? আমি বললাম, হ্যা। আমি মুখে খাবারের লুকমা পুড়ে দিচ্ছিলাম, তখন তা হাত থেকে পড়ে গেল। আর তাতে গোশত ছিল না। তাতে ঘি ছিল কিন্তু দুধ ছিল না। তখন উসমান (রাঃ) সুম বললেন, তুমি সত্য বলেছ। এরপর উসমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তা কোনো মুসলমানদের সম্পদ থেকে ভক্ষণ করিনি; বরং আমি তা আমার সম্পদ থেকে ভক্ষণ করেছি। আর তুমি তো জান আমি কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী। আর এ সব সম্পদ ব্যবসায়লব্ধ সম্পদ। আমি খাবার খাওয়া থেকে বিরত হইনি। আমি বৃদ্ধ হয়েছি। আমি অধিক নরম খাবার পছন্দ করি। (তারাজুমুল খুলাফায়ির রাশিনি লি মুহাম্মদ রেজা- ৩৩০)
অতঃপর উসমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহ উমর ইবনে খাত্তাবের উপর দয়া করুন। তুমি কি উমরের সাথে এরূপ খাবার কখনো খেয়েছ? আমি বললাম, হ্যা। আমি মুখে খাবারের লুকমা পুড়ে দিচ্ছিলাম, তখন তা হাত থেকে পড়ে গেল। আর তাতে গোশত ছিল না। তাতে ঘি ছিল কিন্তু দুধ ছিল না। তখন উসমান (রাঃ) সুম বললেন, তুমি সত্য বলেছ। এরপর উসমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তা কোনো মুসলমানদের সম্পদ থেকে ভক্ষণ করিনি; বরং আমি তা আমার সম্পদ থেকে ভক্ষণ করেছি। আর তুমি তো জান আমি কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী। আর এ সব সম্পদ ব্যবসায়লব্ধ সম্পদ। আমি খাবার খাওয়া থেকে বিরত হইনি। আমি বৃদ্ধ হয়েছি। আমি অধিক নরম খাবার পছন্দ করি। (তারাজুমুল খুলাফায়ির রাশিনি লি মুহাম্মদ রেজা- ৩৩০)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রামযান মাসে আমি উসমান (রাঃ) এর সাথে ইফতার করছিলাম। এমন সময় আমাদের কাছে খাবার আসল যা উমর দুলি-এর খাবারের চেয়ে অধিক নরম। কর্ণনাকারী বলেন, আমি প্রত্যেক রাতে উসমান (রাঃ) -এর থালায় সাদা আটা এবং ছোট ছোট ভেড়ার গোশত দেখি। আর আমি উমর ও কে কখনো শুধনকৃত আটা খেতে দেখিনি। তিনি বয়স্ক বকরী ছাড়া খেতেন না। আমি উসমান (রাঃ) গুলকে এ সম্পর্কে বললাম, তখন উসমান (রাঃ) কাদা বললেন, আল্লাহ উমরের উপর রহম করুন। উমর এক যা করেছেন তা কে করতে পারবে? (তারাজুল খুলাফায়ির রাশিদীন, ৩১)
মক্কাবাসী ২৩ হিজরী সনে উসমান (রাঃ) -এর সাথে শায়িবা থেকে উপকূল বা বন্দর পরিবর্তনের ব্যাপারে কথা বলেন। শায়িবা হলো, জাহেলী যুগে মক্কা নগরীর পুরাতন বন্দর, যা থেকে বর্তমান বন্দরে পরিবর্তন করা হয়েছে। আর তা হলো জেদ্দা বন্দর, যা মক্কার নিকটবর্তী। অতঃপর উসমান (রাঃ) জেদ্দার উদ্দেশ্যে বের হলেন এবং সে স্থান পরিদর্শন করলেন। আর এতে বন্দর পরিবর্তনের নির্দেশ দিলেন। তিনি সমুদ্রে নামলেন এবং গোসল করলেন। অতঃপর বললেন, এটা বরকতময়। তিনি তার পার্শস্থ লোকদের বললেন, তোমরা গোসল করার জন্য সমুদ্রে প্রবেশ কর। কিন্তু একজন ব্যতীত কেউ প্রবেশ করল না। অতঃপর উসমান (রাঃ) ও জেদ্দা থেকে বের হয়ে মদীনার পথ ধরেন। উসমান (রাঃ) এর শাসনামলেই লোকেরা শায়িবা বন্দর ত্যাগ করে এবং জেদ্দা বন্দরকে গ্রহণ করে। কালক্রমে পবিত্র মক্কা নগরীর জেদ্দা বন্দরটি বর্তমান অবস্থা উন্নীত হয়। (আল মারাজিমুস সাবিক, ৩৩০)
আবু যার উসমান (রাঃ) -এর সময় শাম দেশে বসবাস করতেন। তিনি দেখলেন যে, সেখানে বসবাসরত মুসলমানরা বিলাসিতার মধ্যে জীবনযাপন করছে। আর তিনি মনে করতেন যে, মুসলমানদের জন্য স্বর্ণ-রৌপ্য গচ্ছিত রাখা জায়েয নেই। কেননা, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন যে, যারা স্বর্ণ-রৌপ্য গচ্ছিত রাখে এবং ব্যয় করে না তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। কিন্তু সাহাবারা এ আয়াত থেকে যে অর্থ বুঝেছিলেন তা হলো, মুসলমানরা যদি যাকাত আদায় করে তাহলে স্বর্ণরৌপ্য গচ্ছিত রাখলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।।
রাসূল (ﷺ) যখন অনারবদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করার জন্য পত্র লেখার ইচ্ছা করলেন, তখন এক ব্যক্তি তাকে বললেন, তারা সীল মোহর ছাড়া পত্র গ্রহণ করবে না। অতঃপর রাসূল (ﷺ) নিজের জন্য রৌপ্য দিয়ে একটি আংটি তৈরি করতে নির্দেশ দিলেন, যা তিনি সব সময় আঙ্গুলে রাখতেন। আর তাতে তিন লাইনের একটি নকশা অংকিত ছিল। প্রথম লাইনে মুহাম্মাদ, দ্বিতীয় লাইনে রাসূল (ﷺ) এবং তৃতীয় লাইনে আল্লাহ। আর লাইনগুলো নিচ থেকে উপরের দিকে পড়লে, শেষ লাইনে মুহম্মদ, মাঝের লাইনে রাসূল, আর প্রথম লাইনে আল্লাহ। এ আংটি রাসূল (ﷺ) -এর হাতে থাকত। অতঃপর যখন আবু বকর (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হন তখন তিনি এর দ্বারা সীল মোহর দিতেন। এরপর উমর এ খলিফা নির্বাচিত হলে তিনিও এর দ্বারা সীল মোহর দিতেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হয়ে এর দ্বারা ছয় বছর সীল মোহর করলেন। অতঃপর তিনি মুসলমানদের পানির জন্য একটি কূপ খনন করলেন। (যার নাম বিরে আবিস্য)। তা মদীনা থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত। আর তাতে ছিল অল্প পানি, তাই উসমান (রাঃ) একদিন সেখানে গেলেন এবং কূপের কিনারে বসলেন। অতঃপর তিনি আংটিসহ তাতে পড়ে গেলেন এবং তার হাত থেকে আংটিটি কূপে পড়ে গেল। তখন সকলে মিলে তা কূপের মধ্যে খুঁজলেন এবং কূপের সব পানি সরিয়ে ফেললেন। তবুও তার সন্ধান মিলল না। অতঃপর যে তা এনে দিতে পারবে তার জন্য তিনি বড় ধরনের পুরস্কারও ঘোষণা করলেন। কিন্তু তাতেও তিনি নিরাশ হলেন তখন তিনি অনুরূপ নকশা খচিত একটি আংটি বানালেন, যা নিহত হওয়া পর্যন্ত তার আংগুলে ছিল। অতঃপর এ আংটিটিও হারিয়ে যায়। আর তা কে নিয়েছে। তা আর জানা যায়নি। (তারাজুমুল খলিফায়ির রাশিদীন লি মুহাম্মাদ রেজা, পৃঃ ৬২)
মুয়াবিয়া (রাঃ) আলী (রাঃ) - কে কুরবুস এর যুদ্ধে যাওয়ার জন্য এবং সমুদ্রে অভিযান চালানোর জন্য পিড়াপিড়ি করেন। তাই তিনি ওমর এর কাছে এ মর্মে চিঠি লিখলেন। তিনি লিখলেন যে, অনেক লোক সেখানে অভিযান চালায়, সুতরাং আপনিও সেখানে অভিযান চালান। অত:পর যখন ওমর সঙ্গে তার চিঠি পড়লেন তখন তিনি মুয়াবিয়ার কাছে এ মর্মে জবাব পাঠালেন যে, আল্লাহর কসম! আমি কোন মুসলমানকে এ কাজে উৎসাহিত করব না।
ইবনে জারির বলেন, পরে ওমসান এর খিলাফল্পে সময় মুয়াবিয়া (রাঃ) কুরবুস এর যুদ্ধে অভিযান চালান। অত:পর এর অধিবাসিকে জিযিয়া প্রদানের ক্ষেত্রে সম্মত করেন। (তারিখুল খুলাফালিস সুয়ূতী পৃ: ১৩৯)
ইবনে জারির বলেন, পরে ওমসান এর খিলাফল্পে সময় মুয়াবিয়া (রাঃ) কুরবুস এর যুদ্ধে অভিযান চালান। অত:পর এর অধিবাসিকে জিযিয়া প্রদানের ক্ষেত্রে সম্মত করেন। (তারিখুল খুলাফালিস সুয়ূতী পৃ: ১৩৯)
উসমান (রাঃ)-এর একজন দাস ছিল। তিনি তাকে বললেন, আমি তোমার কান মুচড়িয়ে দিয়েছি। সুতরাং তুমি আমার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কর। অতঃপর সে উসমান (রাঃ) -এর কান ধরলে উসমান (রাঃ) তাকে বললেন, দুনিয়াতে চরমভাবে প্রতিশোধ লও, কিন্তু আখিরাতে প্রতিশোধ নিও না। যদি আমি জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থাকি আর আমি জানি না যে, আমাকে কোন দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে তাহলে এটা জানার পূর্বে আমি ছাই হয়ে যাওয়াকে অধিক পছন্দ করব। (আর রিয়াযুন নাযরা, পৃঃ ৫১১)
উসমান (রাঃ) সর্বশেষ ভাষণে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াকে এজন্য তোমাদেরকে দান করেছেন যাতে তোমরা আখেরাত উপার্জন করতে পার। কিন্তু এজন্য দান করেনি যে, যাতে তোমরা এর প্রতি ঝুঁকে পড়। দুনিয়া হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী আর আখেরাত হচ্ছে চিরস্থায়ী। সুতরাং ক্ষণস্থায়ী জিনিস যেন তোমাদেরকে চিরস্থায়ী জিনিস থেকে গাফিল না করে দেয়। তোমরা স্থায়ী জিনিসকে অস্থায়ী জিনিসের উপর অগ্রাধিকার দাও। কেননা, দুনিয়া থেকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে; আর শেষ গন্তব্য হবে আল্লাহর দিকে। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, আল্লাহর ভয় হচেছ বিপদ থেকে বাঁচার ঢাল। আর তোমরা অবশ্যই জামাআতকে আঁকড়িয়ে ধরবে এবং পরস্পর দলাদলিতে লিপ্ত হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন
واغتموا بحبل الله جميعا ولا تفتروا واذكروا نعمت الله علیگ و نه آغداء فألف بين قلوبة قاضبة بنعمته إخوانا
على شفا حفرة من التار قانقد که تنها گذيك يبين الله و تم آیاته لعلكم تهتدون - ولگن ونگه أنه يدعون إلى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون عن النگر وأولئك هم الفيځون
আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না; আর তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে স্মরণ কর। যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে এবং তিনি তোমাদের অন্তরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা তো ছিলে এক আগুনের গর্তে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের সেখান থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ তার নিদর্শন তোমাদের সামনে বর্ণনা করেন যাতে করে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। তোমাদের মধ্যে এমন এক উম্মত থাকা জরুরী যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১০৩, ১০৪)
واغتموا بحبل الله جميعا ولا تفتروا واذكروا نعمت الله علیگ و نه آغداء فألف بين قلوبة قاضبة بنعمته إخوانا
على شفا حفرة من التار قانقد که تنها گذيك يبين الله و تم آیاته لعلكم تهتدون - ولگن ونگه أنه يدعون إلى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون عن النگر وأولئك هم الفيځون
আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না; আর তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে স্মরণ কর। যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে এবং তিনি তোমাদের অন্তরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা তো ছিলে এক আগুনের গর্তে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের সেখান থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ তার নিদর্শন তোমাদের সামনে বর্ণনা করেন যাতে করে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। তোমাদের মধ্যে এমন এক উম্মত থাকা জরুরী যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১০৩, ১০৪)
আব্দুর রহমান আত তাইমী বলেন, আমি একটি নির্দিষ্ট স্থানে আজ রাতে এক দলের উপর বিজয় লাভ করব। অতঃপর যখন আমরা এশার নামায শেষ করলাম তখন আমি আমার ঐ নির্দিষ্ট স্থানে চলে গেলাম। যখন আমি সালাতের জন্য দাঁড়ালাম তখন এক ব্যক্তি আমার ঘারের উপর তার হাত রাখলেন। আর তিনি হলেন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উম্মুল কিতাব তথা সূরা ফাতেহা দিয়ে শুরু করতেন। অতঃপর পড়তে থাকতেন এমনকি কুরআন খতম করে ফেলতেন। অতঃপর রুকু ও সিজদা করতেন। (আর লিয়াফুন নাযরা, পৃঃ ৫১১)
উসমান (রাঃ) কুরআন থেকে পরিতৃপ্ত হতেন। তিনি তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং বলতেন, যদি আমাদের অন্তর পবিত্র হতো তাহলে আমরা আমাদের রবের বাণী পাঠ করে কখনো অতৃপ্ত হতাম না। আমি অপছন্দ করি যে, আমার কাছে কোনো একটি দিন আসবে আর আমি সেদিনে মাসহাফ দেখব না। অর্থাৎ তেলাওয়াত করব না। আর উসমান (রাঃ) এমনভাবে শাহাদাত বরণ করেন যে, তার রক্তহাত মাসহাফে পতিত হয়। এতে বুঝা যায় যে, তিনি অধিক হারে মাসহাফে নজর দিতেন অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত করতেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/২২৫)
সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদের ভিতরে উসমান (রাঃ) -এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তাকে সালাম দিলাম। তিনি আমার থেকে বিরক্তি সহকারে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। অতঃপর আমি উমর ইবনে খাত্তাব এর কাছে গেলাম এবং তাকে বললাম, হে আমিরুল মুমিনীন! ইসলামের মধ্যে এমন কি ঘটে গেল? উমর বললেন, আমি তো জানি না তা কি? তখন আমি বললাম, আমি মসজিদের ভিতরে উসমান (রাঃ) -এর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। ফলে আমি তাকে সালাম দিলাম। তিনি আমার দিকে বিরক্তির চোখে তাকালেন এবং আমার সালামের জবাব দিলেন না। অতঃপর উমর ও লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং বললেন, তোমার ভাইয়ের সালাম দিতে তোমাকে কিসে বারণ করেছে? উসমান (রাঃ) বললেন, আমি তা করিনি। সাদ বললেন, অবশ্যই আপনি করেছেন, এমনকি আমি এ ব্যাপারে শপথ করছি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর উসমান (রাঃ) -এর তা স্মরণ হলো। তখন তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি এবং তার কাছে তাওবা করেছি। তুমি যখন আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলে তখন আমি এমন কথা মনে মনে ভাবছিলাম যা আমি রাসূল (ﷺ) এ থেকে শুনেছি। আল্লাহর শপথ! যখন আমি তা মনে করি তখন আমার চোখে ও অন্তরে আবরণ পড়ে।
সা’দ বললেন, আমি তোমাকে সে ব্যাপারে অর্থাৎ চিন্তা দূর করার দোয়ার ব্যাপারে সংবাদ দিচ্ছি, যা রাসূল (ﷺ) আমাদের জন্য বলে গেছেন। অতঃপর তার কাছে এক বেদুঈন আসল আর তিনি তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) নে উঠে দাঁড়ালেন। আর আমিও রাসূল (ﷺ) - কে অনুসরণ করলাম সে কথা শোনার জন্য। অতঃপর যখন আমার এ আশংকা হলো যে, তিনি আমাকে পিছনে রেখে তার বাড়ীতে ঢুকে পড়বেন তখন আমি আমার পা দ্বারা মাটিতে আঘাত করলাম। তখন রাসূল (ﷺ) ফিরে তাকালেন এবং বললেন, কে? আবু ইসহাক? সাদ বললেন, হ্যা! হে আল্লাহর রাসূল।
রাসূল (ﷺ) ( বললেন, প্রবেশ কর। সাদ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের কাছে একটি দোয়া বলতে চেয়েছিলেন। অতঃপর এক বেদুঈন আসল এবং সে আপনাকে ব্যস্ত করে দিল। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, হ্যা! এ হলো সে দোয়া যা ইউনুস (আ) মাছের পেটে থাকাবস্থায় পাঠ করেছিলেন। আর তা হলো-
কোনো মুসলমান যখন কোনো ব্যাপারে এ দোয়া পাঠ করে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। (তিরমিযী, হাঃ ৫০৫)
সা’দ বললেন, আমি তোমাকে সে ব্যাপারে অর্থাৎ চিন্তা দূর করার দোয়ার ব্যাপারে সংবাদ দিচ্ছি, যা রাসূল (ﷺ) আমাদের জন্য বলে গেছেন। অতঃপর তার কাছে এক বেদুঈন আসল আর তিনি তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) নে উঠে দাঁড়ালেন। আর আমিও রাসূল (ﷺ) - কে অনুসরণ করলাম সে কথা শোনার জন্য। অতঃপর যখন আমার এ আশংকা হলো যে, তিনি আমাকে পিছনে রেখে তার বাড়ীতে ঢুকে পড়বেন তখন আমি আমার পা দ্বারা মাটিতে আঘাত করলাম। তখন রাসূল (ﷺ) ফিরে তাকালেন এবং বললেন, কে? আবু ইসহাক? সাদ বললেন, হ্যা! হে আল্লাহর রাসূল।
রাসূল (ﷺ) ( বললেন, প্রবেশ কর। সাদ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের কাছে একটি দোয়া বলতে চেয়েছিলেন। অতঃপর এক বেদুঈন আসল এবং সে আপনাকে ব্যস্ত করে দিল। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, হ্যা! এ হলো সে দোয়া যা ইউনুস (আ) মাছের পেটে থাকাবস্থায় পাঠ করেছিলেন। আর তা হলো-
কোনো মুসলমান যখন কোনো ব্যাপারে এ দোয়া পাঠ করে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। (তিরমিযী, হাঃ ৫০৫)
উসমান (রাঃ) আল্লাহর নূরের দ্বারা দেখতে পেতেন। বর্ণিত হয়েছে যে, এক বক্তি এক অপরিচিত নারীর দিকে তাকাল। অতঃপর উসমান (রাঃ) যখন তার দিকে তাকালেন তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে কি আমার কাছে এমন কেউ প্রবেশ করেছে যার চোখে যেনার প্রভাব রয়েছে? তখন এক ব্যক্তি বলল, রাসূল (ﷺ) -এর পরে কি কোনো ওহী নাযিল হয়েছে? তখন অপর একজন বলল, ওহী আসেনি তবে তার কথা সত্য এবং তার অন্তদৃষ্টিও সত্য। (আর রিয়াজুন নাযেরা, পৃঃ ৫০৭)
আবু কিলাবা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শাম দেশে অবস্থানকালে এক ব্যক্তির কথার আওয়াজ শুনতে পেলাম। সে বলছিল, হে ধ্বংসকারী আগুন! বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম। আর সেখানে এমন এক ব্যক্তি ছিল যার দুই হাত, দুই পা কাটা এবং তার দু চোখ অন্ধ। আমি তাকে তার এ অবস্থার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তখন সে বলল, আমি সেসব লোকদের একজন যারা উসমান (রাঃ) -এর গৃহে প্রবেশ করেছিল। আমি যখন তার নিকটবর্তী হলাম তখন তার স্ত্রী চিৎকার দিয়ে উঠল। ফলে আমি তাকে চপেটাঘাত করলাম।
অতঃপর আমি বললাম, তোমার এতে এমন কি হলো যে, আল্লাহ তোমার দুই হাত, দুই পা বিচ্ছি করে দিলেন। আর তোমার চোখ অন্ধ করে দিলেন এবং তোমাকে আগুনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। সে বলল, এরপর স্ত্রীকে চপেটাঘাত করার পর আমাকে ভয়ংকর আতংক পেয়ে বসল। আর আমি পালাতে চেষ্টা করলাম। তখন আমাকে এ বিপদ পেয়ে বসল, যা তুমি দেখতে পাচ্ছ। তার দোয়ায় আমার জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। আমি তাকে বললাম, তোমার ধ্বংস হোক এবং তুমি চুর্ণ বিচুর্ণ হয়ে যাও। (আল খুলাফামুর রাশিদীন লি মুস্তফা মুরাদ, পৃঃ ৪০৪)
অতঃপর আমি বললাম, তোমার এতে এমন কি হলো যে, আল্লাহ তোমার দুই হাত, দুই পা বিচ্ছি করে দিলেন। আর তোমার চোখ অন্ধ করে দিলেন এবং তোমাকে আগুনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। সে বলল, এরপর স্ত্রীকে চপেটাঘাত করার পর আমাকে ভয়ংকর আতংক পেয়ে বসল। আর আমি পালাতে চেষ্টা করলাম। তখন আমাকে এ বিপদ পেয়ে বসল, যা তুমি দেখতে পাচ্ছ। তার দোয়ায় আমার জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। আমি তাকে বললাম, তোমার ধ্বংস হোক এবং তুমি চুর্ণ বিচুর্ণ হয়ে যাও। (আল খুলাফামুর রাশিদীন লি মুস্তফা মুরাদ, পৃঃ ৪০৪)
আলী (রাঃ) ইবনে যায়েদ ইবনে জাদ’আন হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব আমাকে বললেন, এ লোকটির চেহারার দিকে তাকাও। তখন আমি তার দিকে তাকালাম এবং দেখলাম যে, সে একজন কালো চেহারা বিশিষ্ট লোক। আমি বললাম, আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে। সুতরাং আমি তাকে দেখতে চাই না। সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব বলেন, এ লোকটি আলী (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) অ-কে গালি দিত। আমি তাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করি কিন্তু সে বিরত থাকে নি। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ! এ লোকটি এমন দুই ব্যক্তিকে গালি দিচ্ছে যাদের ব্যাপারে যা সংঘটিত হয়ে গেছে তা তুমি জান। হে আল্লাহ! সে যা বলেছে তা যদি তোমার কাছে অপছন্দ হয় তাহলে আমি যেন তার চেহারায় একটা চিহ্ন দেখতে পাই। অতঃপর তার চেহারা কালো হয়ে গেল, যা তুমি দেখছ। (আর রিয়াযুন নাজিরা, পৃঃ ১৩)
আসমুঈ বলেন, ইবনে আমের কাতান ইবনে আউফ আল-হেলালীকে কিরমান নামক এক জায়গায় কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করলেন। তখন মুসলমানদের একটি বাহিনী আগমন করল। আর তাদের সংখ্যা ছিল ৪০,০০০। পথিমধ্যে একটি নদী পড়ল এতে তাদের পথ রুদ্ধ হয়ে গেল। এতে কাতান অভিযান ব্যর্থ হওয়ার ভয় করল। তখন কাতান বলল, যে ব্যক্তি নদী অতিক্রম করবে তাকে এক হাজার দিরহাম পুরস্কার দেয়া হবে। এরপর তারা সবাই নৌকায় আরোহন করল। যখন তাদের একজন নদী অতিক্রম করতেন তখন কাতান বলতেন, তাকে তার পুরস্কার দিয়ে দাও। এভাবে তাদের সকলেই নদী অতিক্রম করে ফেলল এবং তাদেরকে নির্ধারিত পুরস্কার দিয়ে দেয়া হলো। এ ঘটনার পর ইবনে আমের কাতানকে কর্মচারী হিসেবে রাখতে অস্বীকার করলেন। ফলে তিনি উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) -এর নিকট পত্র লিখলেন। উসমান (রাঃ) ও তার জবাবে বললেন, তুমি তাকে রেখে দাও। কেননা, সে জিহাদের ক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে সাহায্য করেছে। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৭/২২৫)
একবার উসমান (রাঃ) -কে ডাকা হলো কোনো একটি কওমকে পাকড়াও করার জন্য যারা একটি খারাপ বিষয়ের উপর ব্যস্ত ছিল। ফলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বের হলেন। অতঃপর তাদেরকে ঐ মন্দ বিষয় থেকে পৃথক অবস্থায় পেলেন এবং তিনি ঐ খারাপ বিষয়টাও দেখলেন। যখন তিনি তাদেরকে সে বিষয়টির সাথে জড়িত দেখতে না পেলেন তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং একজন দাস আযাদ করে দেন।
(আর রিয়াজুন নাযিরা, পৃঃ ৫১৩)
(আর রিয়াজুন নাযিরা, পৃঃ ৫১৩)
একদিন উসমান (রাঃ) মসজিদ হতে বের হলেন, তখন ত্বালহা ইবনে উবায়দুল্লাহর সাথে তার দেখা হলো। আর উসমান (রাঃ) ত্বাহার কাছে পঞ্চাশ হাজার দিরহাম পাইতেন। ত্বালহা উসমান (রাঃ) কে বললেন, আপনি আমার কাছে যে পঞ্চাশ হাজার দিরহাম পাওনা ছিলেন তা আমি এখন উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছি। সুতরাং আপনি তা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিন। উসমান (রাঃ) ই তাকে বললেন, আমি তোমার বদান্যতায় মুগ্ধ হয়ে তোমাকে তা দান করে দিলাম। (আল খলাফায়ুর রাশিদীন, পৃঃ ৪০৭)
হাসান বসরী এ কে মসজিদের মধ্যে কায়লুল্লাহ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। অতঃপর তিনি বললেন, আমি উসমান (রাঃ)-কে দেখেছি মসজিদে আলোচনা করতে, যখন তিনি ছিলেন খলিফা। যখন তিনি কায়লুল্লাহ শেষ করে দাঁড়াতেন তখন দেখা যেত যে, শরীরের পার্শ্বদেশে পাথরের দাগের চিহ্ন রয়েছে। (আল খুলাফার রাশিদীন, ৪০৭)
উরওয়া ইবনে যুবায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত। উবায়দুল্লাহ বলেন, উসমান (রাঃ) যখন নামাযের জন্য বের হলেন, তখন আমি তার সাথে দেখা করলাম এবং বললাম, আপনার কাছে আমার একটি প্রয়োজন রয়েছে। আর সেটা হলো, উপদেশ। অতঃপর যখন নামায শেষ হলো তখন আমি মিসওয়ার এবং ইবনে আবদে ইয়াগুস এ দুজনের সাথে ছিলাম। তখন খলিফার দূত আমার নিকট আসল এবং বলল, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে পরীক্ষা করেছেন। এরপর আমি উসমান (রাঃ) এর নিকট চলে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, তুমি একটু আগে আমাকে কোন উপদেশের কথা বলেছিলে? আমি তাকে বললাম, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ -কে সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন। আর তার প্রতি তিনি কিতাব নাযিল করেছেন। সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে হতে একজন যারা আল্লাহর এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) -এর ডাকে সাড়া দিয়েছে। এখন মূল কথা হলো, ওয়ালীদের ব্যাপারে লোকেরা অনেক কথা বলাবলি করছে। সুতরাং আপনার দায়িত্ব হলো তাদের উপর হদ কায়েম করা। এ কথা শুনে উসমান (রাঃ) আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কি রাসূলকে পেয়েছ।
আমি বললাম, না! তবে রাসূল (ﷺ) এ সম্পর্কে আমার পুরোপুরি জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস রয়েছে। অতঃপর উসমান (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ এ-কে সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন। আর আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে। তারপর আমি দুই বার হিজরত করেছি। তারপর আমি রাসূলের পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছি, রাসূলের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। সুতরাং আল্লাহর কসম, আমি তার নাফরমানি করিনি এবং কোন প্রতারণাও করিনি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর তায়ালা তাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। এরপর তার স্থানে খিলাফতের দায়িত্ব লাভ করেন আবু বকর (রাঃ)। আমি তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। আল্লাহর কসম! আমি তাঁর নাফরমানি করিনি এবং তার সাথে প্রতারণাও করিনি। শেষ পর্যন্ত তাকেও আল্লাহ তায়ালা উঠিয়ে নিয়েছেন। এরপর সেই খিলাফতে অধিষ্ঠিত হলেন উমর। আল্লাহর কসম! তার মৃত্যু পর্যন্ত আমি তার অবাধ্য হইনি এবং তার সাথে প্রতারণাও করিনি।
এরপর আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই খিলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করেছেন। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে যা পেয়েছ আমার কাছ থেকেও তা-ই পাবে। এরপর তিনি বললেন, তুমি আমার সাথে কোন বিষয়ে আলাপ করছিলে? তুমি ওয়ালিদের ব্যাপারে যে বিষয়টি বলেছ আমি ইনশাল্লাহ সে ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা নেব। অতঃপর ওয়ালিদকে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করা হলো। আর এ ক্ষেত্রে আলী (রাঃ) একে বেত্রাঘাত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। সুতরাং তিনি তা প্রয়োগ করেন। (আল খুলাফাউর রাশিদূন লি মুস্তফা মুরাদ, পৃঃ ৪১০)
আমি বললাম, না! তবে রাসূল (ﷺ) এ সম্পর্কে আমার পুরোপুরি জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস রয়েছে। অতঃপর উসমান (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ এ-কে সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন। আর আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে। তারপর আমি দুই বার হিজরত করেছি। তারপর আমি রাসূলের পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছি, রাসূলের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। সুতরাং আল্লাহর কসম, আমি তার নাফরমানি করিনি এবং কোন প্রতারণাও করিনি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর তায়ালা তাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। এরপর তার স্থানে খিলাফতের দায়িত্ব লাভ করেন আবু বকর (রাঃ)। আমি তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। আল্লাহর কসম! আমি তাঁর নাফরমানি করিনি এবং তার সাথে প্রতারণাও করিনি। শেষ পর্যন্ত তাকেও আল্লাহ তায়ালা উঠিয়ে নিয়েছেন। এরপর সেই খিলাফতে অধিষ্ঠিত হলেন উমর। আল্লাহর কসম! তার মৃত্যু পর্যন্ত আমি তার অবাধ্য হইনি এবং তার সাথে প্রতারণাও করিনি।
এরপর আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই খিলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করেছেন। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে যা পেয়েছ আমার কাছ থেকেও তা-ই পাবে। এরপর তিনি বললেন, তুমি আমার সাথে কোন বিষয়ে আলাপ করছিলে? তুমি ওয়ালিদের ব্যাপারে যে বিষয়টি বলেছ আমি ইনশাল্লাহ সে ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা নেব। অতঃপর ওয়ালিদকে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করা হলো। আর এ ক্ষেত্রে আলী (রাঃ) একে বেত্রাঘাত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। সুতরাং তিনি তা প্রয়োগ করেন। (আল খুলাফাউর রাশিদূন লি মুস্তফা মুরাদ, পৃঃ ৪১০)
মাসলামা ইবনে আব্দুল্লাহ আল জাহনী হতে বর্ণিত। তিনি তার চাচা আবু মাসজায়া হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা উসমান (রাঃ) -এর সাথে একজন রোগী দেখতে গেলাম। অতঃপর উসমান (রাঃ)তাকে বললেন, তুমি বল- as y| ab y অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তখন সে তা বলল। অতঃপর উসমান (রাঃ) হয় বললেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এর দ্বারা তার পাপসমূহ একেবারে মুছে যাবে।
আবু সাওর আল ফাহমী (র.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)-এর কাছে গমন করলাম; আর আমি তার পাশেই ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি বললেন, আমি আমার রবের নিকট দশটি বিষয় গচ্ছিত রেখেছি।
১. ইসলাম গ্রহণের দিক দিয়ে আমি চতুর্থ।
আমি কখনো অবাধ্য হইনি অর্থাৎ কখনো পাপ কাজে লিপ্ত হইনি এবং অহংকার প্রকাশ করিনি।
৩. আমি কখনো মিথ্যা বলিনি অর্থাৎ মিথ্যা ও বাতিল আচরণ আমার দ্বারা প্রকাশ পায়নি।
যখন থেকে রাসূল (ﷺ) -এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি তখন থেকে আমি আমার ডান হাত লজ্জাস্থানে রাখিনি।
৫. যখন থেকে আমি মুসলমান হয়েছি তখন থেকে প্রত্যেক জুমুআর দিন একজন করে দাস আযাদ করেছি। কোনো জুমার দিনে আমার কাছে কোনো অর্থ না থাকলে পরবর্তীতে তা করেছি।
৬. জাহেলেী যুগে ও ইসলামী যুগে কখনো আমি ব্যভিচার করিনি।
৭. আমি অসহায় সৈন্যদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি।
৮. রাসূল (ﷺ) তার এক মেয়েকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।
৯. সে মারা গেলে অপর একজনকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।
১০. আর আমি জাহেলী যুগে ও ইসলামী যুগে কখনো চুরি করিনি।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/২০৮)
১. ইসলাম গ্রহণের দিক দিয়ে আমি চতুর্থ।
আমি কখনো অবাধ্য হইনি অর্থাৎ কখনো পাপ কাজে লিপ্ত হইনি এবং অহংকার প্রকাশ করিনি।
৩. আমি কখনো মিথ্যা বলিনি অর্থাৎ মিথ্যা ও বাতিল আচরণ আমার দ্বারা প্রকাশ পায়নি।
যখন থেকে রাসূল (ﷺ) -এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি তখন থেকে আমি আমার ডান হাত লজ্জাস্থানে রাখিনি।
৫. যখন থেকে আমি মুসলমান হয়েছি তখন থেকে প্রত্যেক জুমুআর দিন একজন করে দাস আযাদ করেছি। কোনো জুমার দিনে আমার কাছে কোনো অর্থ না থাকলে পরবর্তীতে তা করেছি।
৬. জাহেলেী যুগে ও ইসলামী যুগে কখনো আমি ব্যভিচার করিনি।
৭. আমি অসহায় সৈন্যদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি।
৮. রাসূল (ﷺ) তার এক মেয়েকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।
৯. সে মারা গেলে অপর একজনকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।
১০. আর আমি জাহেলী যুগে ও ইসলামী যুগে কখনো চুরি করিনি।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/২০৮)
একদিন হাসান বসরী উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) -এর অধিক লজ্জাশীলতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তিনি তার বাড়িতে যেখানে গোসল করতেন, সেখানে একটি বন্ধ দরজা ছিল। তিনি নিজের শরীরে পানি ঢালার জন্য শরীর থেকে কাপড় সরাতেন না। লজ্জা তাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে বারণ করত। (আয়-যুহদু লি আহমদ, ১৫৭)
আবু উসমান (রাঃ) আন-নাহদী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনে শো’বার গোলাম বিবাহ করল। তখন উসমান (রাঃ)-কে দাওয়াত দেয়া হলো। তখন তিনি ছিলেন খলিফা। অতঃপর যখন তিনি সে দাওয়াতে আগমন করলেন এবং বললেন, আমি তো রোযাদার। আর আমি দাওয়াতে সাড়া দিতে পছন্দ করি। সুতরাং আমি বরকতের জন্য দোয়া করছি।
(আল মারাজিমুস সাবিক, ১৬১)
(আল মারাজিমুস সাবিক, ১৬১)
আব্দুর রহমান ইবনে সাঈদ আল-ইয়ারবুয়ী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি উসমান (রাঃ) -কে মসজিদে দেখতে পেলাম। এমতাবস্থায় তার কাছে দুজন বিচারপ্রার্থী আগমন করল। তখন উসমান (রাঃ) একজনকে : বললেন, তুমি আলী (রাঃ)কে ডাক। আর অপর জনকে বললেন, তুমি তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ, যুবায়ের এবং আব্দুর রহমানকে ডেকে আন। অতঃপর তারা আসলেন এবং বসলেন। অতঃপর তিনি ঐ দুই বিবাদীকে বললেন, তোমরা তোমাদের বিষয়টি উপস্থাপন কর এবং তাদের মুখখামুখি হও। অতঃপর তিনি আলী (রাঃ)কে ইঙ্গিত করে বললেন, তাদের কথা যদি সঠিক হয় তবে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আর যদি না হয় তাহলে বিবেচনা করা হবে। অতঃপর দুই বিচারপ্রার্থী তাদের ফায়সালা মেনে নিয়ে চলে গেলেন। (আখবারুল কুত, ১১১০,আখবারুল কুত, ১/১১০)
আনাস ইবনে মালেক প্রশ্ন হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)(রা:) উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহন করেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবু বকর (রাঃ), উমর এবং উসমান (রাঃ)। হঠাৎ পাহাড় তাঁদেরকেসহ কাঁপতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও পাহাড়কে বললেন, হে উহুদ পাহাড়! তুমি শান্ত হও। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা তখন তিনি পাহাড়ের উপর পা দ্বারা আঘাত করেছিলেন এবং বলছিলেন, তোমার উপর আল্লাহর নবী, একজন সিদ্দীক (আবু বকর (রাঃ) এবং দু'জন শহীদ অর্থাৎ উমর ও উসমান (রাঃ) ছাড়া আর কেউ নেই। (বুখারী, হাঃ ৩৬৯৭)
আনাস ইবনে মালেক হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে দয়াশীল ব্যক্তি হলেন আবু বকর (রাঃ)। আল্লাহর দ্বীন মান্য করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন হলেন উমর। আর উসমান (রাঃ) অত্যন্ত লজ্জাশীল। আর হালাল-হারাম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত মুয়াজ ইবনে জাবাল। আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত উবাই ইবনে কা'ব। ফারায়েয সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত যায়েদ ইবনে সাবেত। প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন আমিন থাকে, আর এ উম্মতের মধ্যে আমিন হলেন আবু উবাইদ ইবনে জারাহ। (ফাযায়েলুস সাহাবা লি আহমদ ইবনে হাম্বল, ১৬০৪)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় তার পাশ দিয়ে এক ব্যক্তি অতিক্রম করলেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, ঐ যুলুম-ফেতনার সময় এ পরিতুষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তার দিকে তাকালাম আর দেখতে পেলাম যে, তিনি ছিলেন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)।
(ফাযায়েলুস সাহাবা, ১/৫৫১)
(ফাযায়েলুস সাহাবা, ১/৫৫১)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, অচিরেই ফেতনা বা অরাজকতা ও মতবিরোধ প্রভাব বিস্তার করবে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে কি নির্দেশ দিচ্ছেন? রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা তোমাদের নেতা ও তার সাথীদের অনুসরণ করবে; তিনি নেতা বলতে উসমান (রাঃ)কে ইংগিত করলেন। (ফাযায়েলুস সাহাবা, ১/৫৫০)
রাবিয়া বিনতে মায়ুজ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সাথে আমার চাচাত ভাইয়ের একটি চুক্তি ছিল। আর সে ছিল তার স্বামী। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে বললাম, তুমি আমাকে তালাক দিয়ে দাও। তাহলে সব কিছু তোমার। তখন সে বলল, আমি তাই করলাম। আল্লাহর শপথ! সে সব কিছু নিয়ে গেল এমনকি আমার বিছানা পর্যন্ত। উসমান (রাঃ) যখন অবরুদ্ধ তখন আমি তার কাছে আসলাম। তখন তিনি বললেন, তার কাছ থেকে সব কিছু গ্রহণ কর। (ত্বাবাকাত, ৮/৪৪৮)
হাসান ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) -কে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি আরশের সাথে ঝুলে আছেন। অতঃপর আবু বকর (রাঃ) এ কে দেখলাম যে, তিনি রাসূল (ﷺ) -এর কোমর ধরে আছেন। অতঃপর উমর কে দেখলাম যে, তিনি আবু বকর (রাঃ) এর কোমর ধরে আছেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) -কে দেখলাম যে, তিনি উমর (রাঃ) -এর কোমর ধরে আছেন। এরপর আমি রক্ত দেখতে পেলাম, যা আকাশ থেকে যমীন পর্যন্ত বিস্তৃত। হাসান এই ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন তার কাছে শিয়াদের মধ্য থেকে কিছু লোক উপস্থিত ছিল।
তারা বলল, তুমি কি আলী (রাঃ) - কে দেখতে পাওনি? তিনি বললেন, আলী (রাঃ) রাসূল (ﷺ) -এর কোমর ধরে আছেন, এটা দেখার চেয়ে পছন্দনীয় জিনিস আমার নিকট আর কিছু নেই। তবে আমি যা দেখেছি তা তো মাত্র একটি স্বপ্ন। এরপর আবু মাসউদ উতবা ইবনে আমর বললেন, তোমরা হাসানের স্বপ্নের ব্যাপারে কিছু বলাবলি করছ। শোনে রাখ, আমি এক যুদ্ধে রাসূল (ﷺ) - -এর সাথে ছিলাম। সেই যুদ্ধে মুসলমানরা সীমাহীন কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিল। এমনকি মুসলমানদের চেহারায় কষ্ট এবং মুনাফিকদের চেহারায় আনন্দ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। রাসূল (ﷺ) তখন এই পরিস্থিতি দেখে বললেন, আল্লাহর শপথ! সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তোমাদেরকে রিযিক দান করবেন। উসমান (রাঃ) জানেন যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) সঠিক কথাই বলে থাকেন। তাই তিনি সওয়ারী নিয়ে বের হলেন। বের হয়েই তিনি ১৪ টি খাদ্য বোঝাই উট দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি খাদ্যসহ সবগুলো উটই কিনে নিলেন। তারপর তিনি সাতটি উট রাসূল (ﷺ) এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং সাতটি নিজের পরিবারের জন্য রাখলেন। মুসলমানরা যখনই উট দেখতে পেল তখন তাদের চেহারায় আনন্দ এবং মুনাফিকদের চেহারায় কষ্ট প্রকাশ পেল। রাসূল (ﷺ) ( বললেন, এগুলো কি? লোকেরা বলল, এগুলো উসমান (রাঃ) হাদিয়া স্বরূপ আপনার নিকটে পাঠিয়েছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি দেখলাম যে, রাসূল (ﷺ) এ হাত উত্তোলন করে উসমান (রাঃ) -এর জন্য এমন দোয়া করছেন যা ইতোপূর্বে অথবা পরে আমি কখনো শুনিনি। তার দোয়ার মধ্যে তিনি এতটুকু হাত উত্তোলন করেছিলেন যে, এতে তার বগলের শুভ্রতা আমি দেখেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি উসমান (রাঃ)কে দান করুন এবং উসমানের জন্য মঙ্গল করুন। (আর রিয়াযুন নাযরাহ, পৃঃ ১৯)
তারা বলল, তুমি কি আলী (রাঃ) - কে দেখতে পাওনি? তিনি বললেন, আলী (রাঃ) রাসূল (ﷺ) -এর কোমর ধরে আছেন, এটা দেখার চেয়ে পছন্দনীয় জিনিস আমার নিকট আর কিছু নেই। তবে আমি যা দেখেছি তা তো মাত্র একটি স্বপ্ন। এরপর আবু মাসউদ উতবা ইবনে আমর বললেন, তোমরা হাসানের স্বপ্নের ব্যাপারে কিছু বলাবলি করছ। শোনে রাখ, আমি এক যুদ্ধে রাসূল (ﷺ) - -এর সাথে ছিলাম। সেই যুদ্ধে মুসলমানরা সীমাহীন কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিল। এমনকি মুসলমানদের চেহারায় কষ্ট এবং মুনাফিকদের চেহারায় আনন্দ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। রাসূল (ﷺ) তখন এই পরিস্থিতি দেখে বললেন, আল্লাহর শপথ! সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তোমাদেরকে রিযিক দান করবেন। উসমান (রাঃ) জানেন যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) সঠিক কথাই বলে থাকেন। তাই তিনি সওয়ারী নিয়ে বের হলেন। বের হয়েই তিনি ১৪ টি খাদ্য বোঝাই উট দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি খাদ্যসহ সবগুলো উটই কিনে নিলেন। তারপর তিনি সাতটি উট রাসূল (ﷺ) এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং সাতটি নিজের পরিবারের জন্য রাখলেন। মুসলমানরা যখনই উট দেখতে পেল তখন তাদের চেহারায় আনন্দ এবং মুনাফিকদের চেহারায় কষ্ট প্রকাশ পেল। রাসূল (ﷺ) ( বললেন, এগুলো কি? লোকেরা বলল, এগুলো উসমান (রাঃ) হাদিয়া স্বরূপ আপনার নিকটে পাঠিয়েছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি দেখলাম যে, রাসূল (ﷺ) এ হাত উত্তোলন করে উসমান (রাঃ) -এর জন্য এমন দোয়া করছেন যা ইতোপূর্বে অথবা পরে আমি কখনো শুনিনি। তার দোয়ার মধ্যে তিনি এতটুকু হাত উত্তোলন করেছিলেন যে, এতে তার বগলের শুভ্রতা আমি দেখেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি উসমান (রাঃ)কে দান করুন এবং উসমানের জন্য মঙ্গল করুন। (আর রিয়াযুন নাযরাহ, পৃঃ ১৯)
আবহায ইবনে মাইযার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার হজ্জ করতে ছিলাম। তখন দু’জন উজ্জ্বল, সাদা বালককে দেখলাম যে, তারা কাবা ঘর তাওয়াফ করছে। আর লোকেরাও তাদের দু'জনকে নিয়ে তাওয়াফ করতেছিল। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা আলী (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) -এর সন্তান। আমি বললাম, তুমি কি দেখনি যে, তারা (আলী (রাঃ) ও উসমান (রাঃ)) পরস্পর বিবাহ বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং তারা এক সাথে হজ্জ আদায় করছে। ওয়াকি বলেন, তারা দু'জন হলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে হুসাইন -এর সন্তান। আরেকজন হলেন, মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে উসমান (রাঃ)। আর তার মা হলো ফাতেমা বিনতে হুসাইন। (আর রিয়াযুন নাযরাহ, পৃঃ ১৯)
আমর ইবনে মাইমুনা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর যখন আবু লুলু কর্তৃক যখম হন। তখন সাহাবারা তাকে বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আপনার স্থলাভিষিক্ত করার ব্যাপারে আমাদেরকে উপদেশ দিন। উমর ও বললেন, এ ব্যাপারে আমি এ দলের চেয়ে অন্য কাউকে অধিক যোগ্য হিসেবে মনে করি না। কেননা রাসূল (ﷺ) , এদের উপর সন্তুষ্ট থাকাবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। অতঃপর তিনি আলী (রাঃ), ত্বালহা, উসমান (রাঃ), যুবাইর, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ এবং সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস -এর নাম ঘোষণা করলেন। অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর সেখানে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তার ব্যাপারে কোনো কিছুই বললেন না।
তবে তাকে সান্তনা দেয়া হলো যে, যদি সা’দ নেতৃত্ব গ্রহণ করে তাহলে তিনিই খলিফা হবেন। আর যদি তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ না করেন তবে তার দ্বারা এ কাজে সাহায্য নেয়া হবে। যখন তিনি মারা গেলেন এবং তার দাফন কাফন সম্পন্ন করা হলো তখন ঐ দলটি ফিরে এসে একত্রিত হলো। অতঃপর আব্দুর রহমান ও বললেন, এ বিষয়টি তোমরা তোমাদের মধ্য হতে তিনজনের মধ্যে ন্যস্ত কর। তখন যুবাইর ও বললেন, আমার বিষয়টি আমি আলী (রাঃ) এর উপর ন্যস্ত করলাম। আর সা'দ বললেন, আমি আমার বিষয়টি আব্দুর রহমান -এর উপর অর্পণ করলাম। আর ত্বলহা (রাঃ) বললেন, আমি আমার বিষয়টি উসমান (রাঃ) -এর উপর অর্পণ করলাম। অতঃপর ঐ তিনজন আলী (রাঃ), উসমান (রাঃ) ও আব্দুর রহমান এ থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। তখন আব্দুর রহমান অপর দুজনকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতে রাসূল (ﷺ) এবং আবু বকর (রাঃ) ও উমর এর সুন্নাতের আনুগত্যের উপর শপথ নেবে? এবং কে উম্মতের সমস্যাবলীর সমাধান করতে পারবে? যে পারবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। অতঃপর আলী (রাঃ) এবং উসমান (রাঃ) উভয়ই নীরব থেকে গেলেন। তখন আব্দুর রহমান ও বললেন, তোমরা কি এ ব্যাপারে আমার উপর নির্ভর করতে পার? আল্লাহর শপথ! তোমরা আমার উপর দায়িত্ব ছেড়ে দাও। তখন উভয়েই বললেন, হ্যা। অতঃপর তিনি আলী (রাঃ) এর হাত ধরলেন।
অতঃপর বললেন, আপনি এ ব্যাপারে অধিক হকদার। কেননা, আপনি প্রথমযুগে ইসলাম গ্রহণকারী, আর আল্লাহ আপনাকে এ ব্যাপারে জ্ঞান দান করেছেন। আপনি যদি কোনো কিছু আদেশ করেন তবে অবশ্যই আপনি ন্যায়ভাবে আদেশ করবেন। আর আপনি যদি আমাদেরকে কোনো কিছু আদেশ করেন তবে আমরা তা নব এবং তার আনুগত্য করব। কিন্তু উসমান (রাঃ) বাকি রয়ে গেলেন। অতঃপর আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ও উসমান (রাঃ) --কেও এসব কথা বললেন। এমনকি তার থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। অতঃপর তিনি উসমান (রাঃ) কে বললেন, তুমি তোমার হাত উত্তোলন কর। তখন উসমান (রাঃ) হাত উত্তোলন করলেন এবং আব্দুর রহমান ইবনে আউফ তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। অতঃপর আলী (রাঃ) বাইয়াত গ্রহণ করলেন। পরে ঘরের সবাই তার নিকট প্রবেশ করল এবং তারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করল। (রিয়াযুন নাযাহ, পৃঃ ৬, ৩৭)।
তবে তাকে সান্তনা দেয়া হলো যে, যদি সা’দ নেতৃত্ব গ্রহণ করে তাহলে তিনিই খলিফা হবেন। আর যদি তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ না করেন তবে তার দ্বারা এ কাজে সাহায্য নেয়া হবে। যখন তিনি মারা গেলেন এবং তার দাফন কাফন সম্পন্ন করা হলো তখন ঐ দলটি ফিরে এসে একত্রিত হলো। অতঃপর আব্দুর রহমান ও বললেন, এ বিষয়টি তোমরা তোমাদের মধ্য হতে তিনজনের মধ্যে ন্যস্ত কর। তখন যুবাইর ও বললেন, আমার বিষয়টি আমি আলী (রাঃ) এর উপর ন্যস্ত করলাম। আর সা'দ বললেন, আমি আমার বিষয়টি আব্দুর রহমান -এর উপর অর্পণ করলাম। আর ত্বলহা (রাঃ) বললেন, আমি আমার বিষয়টি উসমান (রাঃ) -এর উপর অর্পণ করলাম। অতঃপর ঐ তিনজন আলী (রাঃ), উসমান (রাঃ) ও আব্দুর রহমান এ থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। তখন আব্দুর রহমান অপর দুজনকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতে রাসূল (ﷺ) এবং আবু বকর (রাঃ) ও উমর এর সুন্নাতের আনুগত্যের উপর শপথ নেবে? এবং কে উম্মতের সমস্যাবলীর সমাধান করতে পারবে? যে পারবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। অতঃপর আলী (রাঃ) এবং উসমান (রাঃ) উভয়ই নীরব থেকে গেলেন। তখন আব্দুর রহমান ও বললেন, তোমরা কি এ ব্যাপারে আমার উপর নির্ভর করতে পার? আল্লাহর শপথ! তোমরা আমার উপর দায়িত্ব ছেড়ে দাও। তখন উভয়েই বললেন, হ্যা। অতঃপর তিনি আলী (রাঃ) এর হাত ধরলেন।
অতঃপর বললেন, আপনি এ ব্যাপারে অধিক হকদার। কেননা, আপনি প্রথমযুগে ইসলাম গ্রহণকারী, আর আল্লাহ আপনাকে এ ব্যাপারে জ্ঞান দান করেছেন। আপনি যদি কোনো কিছু আদেশ করেন তবে অবশ্যই আপনি ন্যায়ভাবে আদেশ করবেন। আর আপনি যদি আমাদেরকে কোনো কিছু আদেশ করেন তবে আমরা তা নব এবং তার আনুগত্য করব। কিন্তু উসমান (রাঃ) বাকি রয়ে গেলেন। অতঃপর আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ও উসমান (রাঃ) --কেও এসব কথা বললেন। এমনকি তার থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। অতঃপর তিনি উসমান (রাঃ) কে বললেন, তুমি তোমার হাত উত্তোলন কর। তখন উসমান (রাঃ) হাত উত্তোলন করলেন এবং আব্দুর রহমান ইবনে আউফ তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। অতঃপর আলী (রাঃ) বাইয়াত গ্রহণ করলেন। পরে ঘরের সবাই তার নিকট প্রবেশ করল এবং তারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করল। (রিয়াযুন নাযাহ, পৃঃ ৬, ৩৭)।
উসমান (রাঃ) বলেন, লোকেরা (বিদ্রোহীরা) বলাবলী করতে লাগল যে, আমি সফর অবস্থায় সালাতকে পূর্ণভাবে আদায় করি, যা আমার পূর্বে রাসূল (ﷺ) , আবু বকর (রাঃ) ও উমর ও করেননি অর্থাৎ আমি কর আদায় করি না। আর আমি যখন মদীনা হতে মক্কায় সফর করি তখন কসর করি , কেননা, মক্কা নগরীতে তো আমার পরিবার-পরিজন রয়েছে; আর আমি আমার পরিবারের নিকট মুকিম, কিন্তু মুসাফির নই। এটা কি ঠিক নয়? তখন সাহাবীরা বললেন, আল্লাহ সাক্ষী আপনার কথা ঠিক আছে।
(উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লিস সলাবী, পৃঃ ৪৩২)
(উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লিস সলাবী, পৃঃ ৪৩২)
উসমান (রাঃ) বলেন, লোকেরা (বিদ্রোহীরা) বলে, আমি চারণ ভূমি সংরক্ষণ করেছি আর সাধারণ মুসলমানদের জন্য তা সংকীর্ণ করে দিয়েছি। আর বড় একটা জমি আমার উট লালন-পালনের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছি। অথচ এটা আমার পূর্বে সদকার উটের এবং জিহাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল, যেমনিভাবে রাসূল (ﷺ), আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) এটাকে নির্দিষ্ট করে গিয়েছিলেন। আর যখন সদকা ও জিহাদের উট বৃদ্ধি পেয়েছে তখন আমিও এর বৃদ্ধি ঘটিয়েছি। আর আমি তো সেখানে গরীব মুসলমানদের পশু চরাতে নিষেধ করিনি। (আল খুলাফাউর রাশিদীন লিল খালেদী, পৃঃ ১৫৭)
উসমান (রাঃ) বলেন, লোকেরা বলাবলী করতে লাগল, আমি কুরআনের একটি নুসখা রেখে বাকি সকল নুসখা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছি। আর সমস্ত মানুষকে এক নুসখার উপর একত্রি করেছি। সবধান! নিশ্চয় কুরআন আল্লাহর বাণী, আর তিনি একক সত্ত্বা। আমি এ কাজ করেছি যাতে সকল মানুষ কুরাআনের উপর একমত হয় এবং মতবিরোধ করা হতে বিরত থাকে। আর এ ব্যাপারে আমি সেই কাজের অনুসারী যা আবু বকর (রাঃ) করেছিলেন। নিশ্চয় আবু বকর (রাঃ)-ই প্রথম কুরআন একত্র করেছিলেন। এটা কি সঠিক নয়? তখন সাহাবীরা বলল, হ্যা। আল্লাহ সাক্ষী। (উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ৪৩১)
উসমান (রাঃ) বলেন, লোকেরা বলাবলি করে যে, আমি হাকাম ইবনে আবুল আসকে মদিনায় ফিরিয়ে দিয়েছি। অথচ রাসূল (ﷺ) তাকে তায়েফে নির্বাসন দিয়েছেন। আর হাকাম ইবনে আবুল আস সে মাদানী ছিলেন না। রাসূল (ﷺ) তাকে মক্কা হতে তায়েফে পাঠিয়েছিলেন। আর রাসূল (ﷺ) যখন তার উপর খুশী হলেন তখন তাকে মক্কায় ফিরিয়ে আনলেন এবং পুনরায় তাকে তায়েফে ফিরিয়ে দিলেন। রাসূল (ﷺ) তাকে এভাবে নির্বাসন দিলেন এবং আবার ফিরিয়ে আনলেন, এটা কি তিনি করেননি? তখন সাহাবীরা বললেন, হ্যা তাই করেছেন। (আল খুলাফাউর রাশিদীন লিল খালেদী, পৃঃ ১৫৮)
লোকেরা বলে আমি অল্প বয়সের লোকদেরকে কাজে নিযুক্ত করি এবং তাদেরকে গভর্ণর বানাই। অথচ আমার পূর্বে যারা খিলাফতের দায়িত্বে ছিলেন তারা এর চেয়ে ছোট লোকদেরকেও দায়িত্বশীল নিযুক্ত করেছিলেন। স্বয়ং রাসূল (ﷺ) - উসামা ইবনে যায়েদ কে দায়িত্বশীল করেছিলেন। এজন্য লোকেরা আমাকে যা বলছে তার চেয়ে বেশি সমালোচনা করেছিল রাসূল (ﷺ) -এর। বিষয়টি কি এমন নয়? সাহাবারা বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, বিষয়টা এ রকম। (আল খুলাফাউর রাশিদীন লিল খালেদী, পৃঃ ১৫৯)
উসমান (রাঃ) বলেন, তারা বলে থাকে যে, আমি আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজনকে বেশি ভালোবাসি এবং তাদেরকে বেশি করে সম্পদ দেই। আমার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এই যে, আমি তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেই না বরং তাদের উপর আমার হক বাস্তবায়ন করি এবং তাদের কাছ থেকে আমার হক গ্রহণ করি। আর তাদেরকে যে সম্পদ দেই, তা আমার ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে দিয়ে থাকি, যার মধ্যে মুসলামনদের কোনো সম্পদ নেই। কেননা, আমি আমার উপর মুসলমানদের সম্পদ বৈধ করে নেইনি আর অন্য কারো জন্যও নয়। আর আমি আমার সম্পদ থেকে রাসূল (ﷺ) আবু বকর (রাঃ) ও উমর এর যুগে দান করে এসেছি।
আজ আমি সামান্য সম্পদের লোভী হয়েছি। আর যখন আমি আমার পরিবারের কাছে বয়োঃবৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, আমার বয়স শেষ হয়ে গেছে। তখন আমার সম্পদ আমার পরিবার ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে দিয়েছি। আল্লাহর শপথ! আমি যখনই কোনো শহর থেকে মুসলমানদের সম্পদ গ্রহণ করেছি। তা মুসলমানদের (গরিব) শহরে বণ্টন করে দিয়েছি। তা কখনও মদীনায় আনা হয়নি। শুধু গনীমতের অংশ আনা হয়েছে, যা মুসলমানদেরকে বন্টন করে দিয়েছি। আমি তা থেকে কিছুই গ্রহণ করিনি। আমি আমার সম্পদ ছাড়া অন্য সম্পদ খাইনি আমার সম্পদ ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ কাউকে দেইনি।
(উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লিস সখী, পৃঃ ৪৩৪)
আজ আমি সামান্য সম্পদের লোভী হয়েছি। আর যখন আমি আমার পরিবারের কাছে বয়োঃবৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, আমার বয়স শেষ হয়ে গেছে। তখন আমার সম্পদ আমার পরিবার ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে দিয়েছি। আল্লাহর শপথ! আমি যখনই কোনো শহর থেকে মুসলমানদের সম্পদ গ্রহণ করেছি। তা মুসলমানদের (গরিব) শহরে বণ্টন করে দিয়েছি। তা কখনও মদীনায় আনা হয়নি। শুধু গনীমতের অংশ আনা হয়েছে, যা মুসলমানদেরকে বন্টন করে দিয়েছি। আমি তা থেকে কিছুই গ্রহণ করিনি। আমি আমার সম্পদ ছাড়া অন্য সম্পদ খাইনি আমার সম্পদ ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ কাউকে দেইনি।
(উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লিস সখী, পৃঃ ৪৩৪)
হজ্জ আদায় করার পর মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান শামে ফিরে যাবার পূর্বে উসমান (রাঃ) -এর কাছে এসে বললেন, হে আমিরুল মু'মিনীন! আপনার উপর হামলা হওয়ার পূর্বে আপনি আমার সাথে শামে চলুন। তখন উসমান (রাঃ)বললেন, আমি রাসূল (ﷺ) -এর সান্নিধ্য বিসর্জন দিব না। যদিও তাতে আমার গর্দান কেটে ফেলা হয়। তখন মুয়াবিয়া (রাঃ) উসমান (রাঃ)-কে বললেন, তাহলে আমাকে অনুমতি দিন আমি শাম দেশ থেকে আপনার নিরাপত্তার জন্য সৈন্য পাঠিয়ে দেই। যারা আপনাকে মদীনাবাসীর হামলা থেকে রক্ষা করবে। উসমান (রাঃ) বললেন, না প্রয়োজন নেই। তোমার পাঠানো সৈন্যবাহিনী দিয়ে আমি আল্লাহর রাসূলের প্রতিবেশীদের খাবার কমাতে চাই না এবং মুহাজির ও আনসারদেরকে কষ্টে ফেলতে চাই না। তখন মুয়াবিয়া (রাঃ) বললেন, হে আমিরুল মু'মিনীন! আল্লাহর শপথ! লোকেরা আপনাকে অপমানিত করবে। তখন উসমান (রাঃ)বললেন, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। আর তিনিই উত্তম সাহায্যকারী।
(তারিখুত তাবারী, ৫/৩৫৩)
(তারিখুত তাবারী, ৫/৩৫৩)
উসমান (রাঃ)-এর অবরোধের বর্ণনা পাওয়া যায় না। সম্ভবত: ঘটনা এরূপ ছিল যে, একদিন উসমান (রাঃ) ও মানুষের মাঝে বক্তৃতা করছিলেন তখন এক ব্যক্তি যাকে আ’ইউন বলা হতো, সে বলল, হে নাসাল (তিরস্কার)! তুমি তো কথা পরিবর্তন করেছ। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, এ লোকটি কে? লোকেরা বলল, সে আইউন। অতঃপর উসমান (রাঃ) বললেন, হে বান্দাহ তুমি আমাকে যা বলছ, তুমি তাই। তখন লোকেরা ঐ ব্যক্তির উপর ঝাপিয়ে পড়ল আর বনী লায়েস গোত্রের এক ব্যক্তি তাদেরকে বাধা দিল। এমনকি তাকে একটি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিল। বিদ্রোহীরা কঠিনভাবে অবরুদ্ধ করার পূর্বে উসমান (রাঃ) ফরজ সালাতের জন্য জামায়াতে যেতে পারতেন এবং যে কেউ তার কাছে প্রবেশ করতে পারত। কিন্তু পরে তাকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হলো। এমনকি ফরজ সালাতের জন্যও তাকে বের হতে দেয়া হতো না। (তারিখু দামিশক তারজামাতু উসমান (রাঃ)- ৩৪১, ৩৪২)
যখন অবরোধকারীগণ উসমান (রাঃ) -কে সালাতের জন্য বের হতে নিষেধ করে দিল তখন অবরোধকারীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করল অর্থাৎ তার ইমামতিতে লোকেরা সালাত আদায় করল। আর উবাইদ ইবনে আদি ইবনে খিয়ার নামক এক ব্যক্তি তার পিছনে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকল। উসমান (রাঃ) গুচ্ছ এ ব্যাপারে পরামর্শ দিলেন এবং তাকে তার পিছনে সালাত আদায় করতে বললেন। এবং তাকে বললেন, মানুষ যত আমল করে তার মধ্যে উত্তম হলো সালাত। সুতরাং মানুষ যখন উত্তম কাজ করে তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম আমল কর। অর্থাৎ তারা নামায পড়লে তুমিও তাদের সাথে নামায আদায় কর। আর যখন তারা খারাপ করে তখন তুমি তাদের খারাপ থেকে বেঁচে থাকবে। (বুখারী শরীফ, হাঃ ১৯২)
যখন অবরোধ পূর্ণতা লাভ করল এবং বহিরাগতরা উসমান (রাঃ) -এর বাসস্থান ঘেরাও করে ফেলল তখন তারা উসমান (রাঃ) -এর কাছ থেকে পদত্যাগ চাইল অথবা তাকে হত্যা করার কথা জানাল। উসমান (রাঃ) নিজ থেকে পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং বললেন, আল্লাহর দেয়া পোশাক (খেলাফতের দায়িত্ব) আমি ত্যাগ করব না।
(আত-তামহিন্দু লি ইবনে আব্দুল বার, পৃঃ ৪৭)
(আত-তামহিন্দু লি ইবনে আব্দুল বার, পৃঃ ৪৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর গুল উসমান (রাঃ) -এর কাছে প্রবেশ করলেন যখন তিনি অবরুদ্ধ ছিলেন। অতঃপর তিনি তাকে বললেন, এলোকেরা কি বলে তার প্রতি আপনি দৃষ্টিপাত করুন। তারা বলে, আপনি খেলাফত ত্যাগ করুন এবং নিজকে নিহত করবেন না। তিনি আরো বলেন, আপনি যখন দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন তখন কি আপনি দুনিয়ায় চিরস্থায়ীভাবে থাকতে পারবেন। উসমান (রাঃ) বললেন, না। অতঃপর ইবনে উমর বললেন, যদি আপনি খিলাফত ত্যাগ না করেন তাহলে ওরা আপনাকে হত্যা করা ছাড়া আর কিছু করতে পারবে? উসমান (রাঃ) বললেন, না। ইবনে উমর (রাঃ) বললেন, তারা কি আপনাকে জান্নাতে বা জাহান্নামে দিতে ক্ষমতা রাখে? উসমান (রাঃ) ই বললেন, না। ইবনে উমর (রা:) বললেন, তাহলে আপনার খিলাফতের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না। আল্লাহ আপনাকে তা দিয়েছেন। আপনি যদি ছেড়ে দেন তাহলে এ নিয়ম হয়ে যাবে যে, কোনো কওমের লোকেরা তাদের খলিফা বা নেতার উপর অসন্তুষ্ট হলেই তারা তাকে হত্যা করবে। (ফাযায়েলুস সাহাবা, ১/১৪৭)
উসমান (রাঃ) অবরুদ্ধ অবস্থায় তার ঘরের মধ্যে ছিলেন। আর অবরোধকারীগণ ঘরের সামনে অবস্থান করছিল তখন একদিন উসমান (রাঃ) ঘরের প্রবেশ দ্বারে প্রবেশ করলেন, অতঃপর তিনি শুনতে পেলেন যে, অবরোধকারীরা তাকে হত্যার ব্যাপারে হুমকি দিচ্ছে। অতঃপর সেখান থেকে তিনি ঘরের মধ্যে তাদের কাছে গেলেন যারা তার সাথে ছিল। আর তখন তাকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল। অতঃপর উসমান (রাঃ) বললেন, তারা আমাকে কেন হত্যা করবে? অথচ আমি রাসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি। তিনি বললেন, কোনো মুসলমানের রক্ত তথা হত্যা বৈধ নয়।
যতক্ষণ না সে এ তিনটি কাজের কোনো একটির সাথে সম্পৃক্ত না হয়। আর তা হলো, কোনো ব্যক্তি যদি মুসলমান হওয়ার পর কাফির হয়ে যায়। সতী সাধনী থাকার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয় অথবা কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। উসমান (রাঃ)বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি জাহেলী যুগে এবং ইসলামী যুগে কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হইনি। আর আল্লাহ যখন থেকে আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন তখন থেকে আমি আমার দ্বীন পরিবর্তন করিনি। আর আমি কাউকে হত্যা করিনি। সুতরাং তারা আমাকে কোন কারণে হত্যা করবে? (মুসনাদে আহমদ, ১৬৩)
যতক্ষণ না সে এ তিনটি কাজের কোনো একটির সাথে সম্পৃক্ত না হয়। আর তা হলো, কোনো ব্যক্তি যদি মুসলমান হওয়ার পর কাফির হয়ে যায়। সতী সাধনী থাকার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয় অথবা কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। উসমান (রাঃ)বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি জাহেলী যুগে এবং ইসলামী যুগে কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হইনি। আর আল্লাহ যখন থেকে আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন তখন থেকে আমি আমার দ্বীন পরিবর্তন করিনি। আর আমি কাউকে হত্যা করিনি। সুতরাং তারা আমাকে কোন কারণে হত্যা করবে? (মুসনাদে আহমদ, ১৬৩)
উসমান (রাঃ) যখন তাকে হত্যার ব্যাপারে বিদ্রোহীদের দৃঢ় মনোভাব দেখলেন তখন তিনি তাদেরকে এ ব্যাপারে এবং এর ভবিষ্যত পরিণতির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করলেন। অতঃপর উসমান (রাঃ)তাদেরকে জানালা দিয়ে এ ব্যাপারটি অবহিত করালেন এবং তাদেরকে বললেন, হে মানুষেরা! তোমরা আমাকে হত্যা কর না, তোমরা আমাকে অনুগ্রহ কর। আলাহর শপথ! যদি তোমরা আমাকে হত্যা কর তাহলে তোমাদের সকলের সাথে কখনো যুদ্ধ করতে পারব না। তোমরা তোমাদের সাথে সর্বদা জিহাদ করতে পারবে না। তোমরা অবশ্যই মতবিরোধ করবে আর এমন হয়ে যাবে এ কথা বলে, তিনি তার আঙ্গুলগুলি পরস্পর মিলিয়ে নিলেন। (তাবাকাত, ৩/৭১)
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আলী (রাঃ) উসমান (রাঃ) গুলিএর কাছে গেলেন এবং তাকে বললেন, আমার সাথে পাঁচশত বর্ম পরিহিত সৈন্য আছে। আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি সম্প্রদায়ের (বিদ্রোহী) লোেকদের থেকে আপনাকে রক্ষা করি। কেননা, আপনি এমন কোনো অন্যায় কাজ করেননি যাতে আপনার রক্ত (হত্যা) বৈধ হয়ে যাবে। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, হে আলী (রাঃ)! আল্লাহ যেন তোমাকে উত্তম প্রতিদান দেন। আমি এটা অপছন্দ করি যে, আমার কারণে রক্তপাত ঘটুক।
(তারিখ দামিশক, পৃঃ ৪০৩)
(তারিখ দামিশক, পৃঃ ৪০৩)
আবু হাবীবা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যোবায়ের গুহা আমাকে উসমান (রাঃ) - এর কাছে পাঠালেন এমতাবস্থায় যে, উসমান (রাঃ) তে ছিলেন বিদ্রোহী কর্তৃক অবরুদ্ধ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দিনের বেলা যখন তার কাছে প্রবেশ করি তখন তিনি চেয়ারে বসা ছিলেন আর তার কাছে ছিলেন, হাসান ইবনে আলী (রাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের (রাঃ) বর্ণনাকারী বলেন, আমাকে আপনার কাছে যোবাইর ইবনে আওয়াম পাঠিয়েছেন। আর তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং আপনার উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমি আপনার প্রতি আনুগত্যশীল। আমি আমার কথা পরিবর্তন করব না এবং ওয়াদা ভঙ্গ করব না।
যদি আপনি চান তবে আপনার সাথে আমি ঘরে প্রবেশ করব এর কওমের একজন হিসেবে গণ্য হব। আর যদি আপনি চান তাহলে আমি এখানেই অবস্থান করব। আর বনী আমর ইবনে আওফ আমার সাথে কথা দিয়েছে। যে, তারা সকালে আমার দরজায় অবস্থান করবে এবং আমি যে নির্দেশ দেব তারা তা পালন করবে। উসমান (রাঃ) পত্রের কথাগুলো শুনে বললেন, আল্লাহ মহান, সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমার ভাইকে সুদৃঢ় করেছেন। তুমি তাকে সালাম দিবে এবং তাকে বলবে, আমার প্রতি অধিক ভালোবাসার কারণে সম্ভবতঃ আল্লাহ তোমার দ্বারা আমার বিপদ প্রতিহত করবেন। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন পত্র পাঠ করলেন তখন উসমান (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি তোমাদের বিষয়ে সংবাদ দিব যা রাসূল (ﷺ) এর কাছ থেকে আমার দু'কান শুনেছে। সকলে বলল, হ্যাঁ বলুন। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, আমার পরে অনেক ফিতনা ও বিভিন্ন ঘটনা ঘটবে। আমরা সাহাবীরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এর দ্বারা কোনো দিকে ইংগিত করছেন? রাসূল (ﷺ) বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও তার বিরোধী পক্ষ। আর এর দ্বারা রাসূল (ﷺ) উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) এর দিকে ইংগিত করলেন। তখন লোকেরা দাঁড়াল এবং বলল, আমাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে গেছে। আপনি কি আমাদের জিহাদের অনুমতি দিবেন? তখন উসমান (রাঃ) বললেন, আমার আশংকা হচ্ছে। আমার আনুগত্য করার কথা তারা জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। সাহাবা, ১৫১১,৫১২)
যদি আপনি চান তবে আপনার সাথে আমি ঘরে প্রবেশ করব এর কওমের একজন হিসেবে গণ্য হব। আর যদি আপনি চান তাহলে আমি এখানেই অবস্থান করব। আর বনী আমর ইবনে আওফ আমার সাথে কথা দিয়েছে। যে, তারা সকালে আমার দরজায় অবস্থান করবে এবং আমি যে নির্দেশ দেব তারা তা পালন করবে। উসমান (রাঃ) পত্রের কথাগুলো শুনে বললেন, আল্লাহ মহান, সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমার ভাইকে সুদৃঢ় করেছেন। তুমি তাকে সালাম দিবে এবং তাকে বলবে, আমার প্রতি অধিক ভালোবাসার কারণে সম্ভবতঃ আল্লাহ তোমার দ্বারা আমার বিপদ প্রতিহত করবেন। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন পত্র পাঠ করলেন তখন উসমান (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি তোমাদের বিষয়ে সংবাদ দিব যা রাসূল (ﷺ) এর কাছ থেকে আমার দু'কান শুনেছে। সকলে বলল, হ্যাঁ বলুন। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, আমার পরে অনেক ফিতনা ও বিভিন্ন ঘটনা ঘটবে। আমরা সাহাবীরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এর দ্বারা কোনো দিকে ইংগিত করছেন? রাসূল (ﷺ) বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও তার বিরোধী পক্ষ। আর এর দ্বারা রাসূল (ﷺ) উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) এর দিকে ইংগিত করলেন। তখন লোকেরা দাঁড়াল এবং বলল, আমাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে গেছে। আপনি কি আমাদের জিহাদের অনুমতি দিবেন? তখন উসমান (রাঃ) বললেন, আমার আশংকা হচ্ছে। আমার আনুগত্য করার কথা তারা জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। সাহাবা, ১৫১১,৫১২)
মুগীরা ইবনে শো'বা উসমান (রাঃ) এর কাছে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, উসমান (রাঃ) ছিলেন অবরুদ্ধ। মুগীরা কি বললেন, আপনি জনগণের নেতা। আমি আপনার জন্য তিনটি প্রস্তাবনা পেশ করছি। আপনি যে কোনো একটি বেছে নিন। আর তা হলো -
১. আপনি গৃহ থেকে বের হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করুন। কেননা, আপনার সাথে অনেক সৈন্য ও শক্তি আছে। তাছাড়া আপনি সত্যের উপর সুদৃঢ় আর তারা মিথ্যার উপর দণ্ডায়মান।
২. অথবা আপনি ঐ দরজা ভেঙ্গে ফেলুন, যেখানে তারা অবস্থান করছে। এবং আপনি আপনার বাহনে আরোহন করে মক্কায় চলে যান। কেননা, সেখানে তারা আপনার অথবা আপনাকে হত্যা করার প্রতি কোনো অন্যায় বৈধ মনে করবে না।
৩. অথবা আপনি শাম দেশে চলে যান আর শাম দেশের অধিবাসীদের মধ্যে মুয়াবিয়া (রাঃ) আছেন। সব কথা শোনার পর উসমান (রাঃ) বললেন, আমি ঘর ছেড়ে বের হয়ে যুদ্ধ করব ঠিক আছে কিন্তু আমি প্রথম ব্যক্তি হতে চাইনা যে রাসূল (ﷺ)-এর পর তারা উম্মতের রক্তপাত ঘটিয়েছে। আবার আমি মক্কায় চলে যাব এবং সেখানে তারা আমাকে হত্যা করতে বৈধ মনে করবে না, কিন্তু আমি যে রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, কুরাইশ বংশের এক ব্যক্তিকে মক্কায় কবর দেয়া হবে যার উপর জগতের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে। আর আমি সেটাও হতে চাইনা। আর আমি শাম দেশে চলে যাব যেখানে মুয়াবিয়া আছে কিন্তু আমি আমার হিজরত ও রাসূল (ﷺ) -এর সান্নিধ্যের ক্ষেত্রে পার্থক্য সৃষ্টি করব না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭২১১)
১. আপনি গৃহ থেকে বের হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করুন। কেননা, আপনার সাথে অনেক সৈন্য ও শক্তি আছে। তাছাড়া আপনি সত্যের উপর সুদৃঢ় আর তারা মিথ্যার উপর দণ্ডায়মান।
২. অথবা আপনি ঐ দরজা ভেঙ্গে ফেলুন, যেখানে তারা অবস্থান করছে। এবং আপনি আপনার বাহনে আরোহন করে মক্কায় চলে যান। কেননা, সেখানে তারা আপনার অথবা আপনাকে হত্যা করার প্রতি কোনো অন্যায় বৈধ মনে করবে না।
৩. অথবা আপনি শাম দেশে চলে যান আর শাম দেশের অধিবাসীদের মধ্যে মুয়াবিয়া (রাঃ) আছেন। সব কথা শোনার পর উসমান (রাঃ) বললেন, আমি ঘর ছেড়ে বের হয়ে যুদ্ধ করব ঠিক আছে কিন্তু আমি প্রথম ব্যক্তি হতে চাইনা যে রাসূল (ﷺ)-এর পর তারা উম্মতের রক্তপাত ঘটিয়েছে। আবার আমি মক্কায় চলে যাব এবং সেখানে তারা আমাকে হত্যা করতে বৈধ মনে করবে না, কিন্তু আমি যে রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, কুরাইশ বংশের এক ব্যক্তিকে মক্কায় কবর দেয়া হবে যার উপর জগতের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে। আর আমি সেটাও হতে চাইনা। আর আমি শাম দেশে চলে যাব যেখানে মুয়াবিয়া আছে কিন্তু আমি আমার হিজরত ও রাসূল (ﷺ) -এর সান্নিধ্যের ক্ষেত্রে পার্থক্য সৃষ্টি করব না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭২১১)
কা'ব ইবনে মালেক (রাঃ) উসমান (রাঃ) -কে সাহায্যের জন্য আনসার সাহাবীদেরকে উৎসাহিত করে বলেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও। এ কথাটি তিনি দু'বার বললেন। অতঃপর আনসার সাহাবীগণ আসলেন এবং উসমান (রাঃ) -এর দরজার কাছে অবস্থান করলেন এবং যায়েদ ইবনে সাবেত হচ্ছে উসমান (রাঃ) -এর কাছে প্রবেশ করলেন আর তাকে বললেন, আনসারগণ দরজার কাছে অবস্থান করছেন আপনি যদি চান তাহলে তারা আল্লাহর সাহায্যকারী হবে। তখন উসমান (রাঃ) যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং বললেন, এর প্রয়োজন নেই; তোমরা যুদ্ধ থেকে বিরত থাক। (ফিতনাতু মাকতালি উসমান (রাঃ), ১/১৬২)
আবু হুরায়রা (রাঃ) মুল উসমান (রাঃ) -এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং তাকে বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! জিহাদের বিষয়টি কত উত্তম। উসমান (রাঃ) তাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা (রাঃ)! তুমি কি সকল লোককে এবং আমাকে হত্যা করতে চাও? আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, না। উসমান (রাঃ)বললেন, আল্লাহর শপথ! তুমি একজন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তাতে সমস্ত মানুষকে হত্যা করা হবে। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) যুদ্ধ না করে ফিরে গেলেন।
(তারিখু খলিফাতু ইবনে যিয়াত, পৃঃ ১৬৪)
(তারিখু খলিফাতু ইবনে যিয়াত, পৃঃ ১৬৪)
কেনান ইবনে আদি বলেন, আমি উসমান (রাঃ) -এর বিরোধীদেরকে প্রতিহত করার জন্য সাফিয়াকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আশতারের সাথে তার দেখা হলো। অতঃপর সাফিয়া (রাঃ) তার খচ্চরের মুখে আঘাত করলেন যাতে তা দ্রুত চলে কিন্তু পথ না পেয়ে তা ঝুঁকে পড়ল। তখন তিনি বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। এটা আমাকে অসম্মান করেনি। অতঃপর সাফিয়া ও তার বাড়ি ও উসমানের বাড়ির মাঝে কাঠ বেধে নিলেন এবং তাতে করে তিনি উসমানের কাছে খাদ্য স্থানান্তর করতেন। (সিরাতু আলামুন নুবালা, ২/২৩৭)
উসমান (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস কে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে এ হজ্জের মৌসুমের জন্য তাকে নেতৃত্ব দান করলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও উসমান (রাঃ) ও কে বললেন, আপনি আমাকে আপনার সাথে থাকার সুযোগ দিন আর তাদের মোকাবিলায় আপনার পাশে থাকার সুযোগ দিন। আল্লাহর শপথ! আমি হজ্জে যাবার চেয়ে এ সকল বিদ্রোহীদের সাথে জিহাদকে অধিক ভালোবাসি। উসমান (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, তুমি মুসলমানদের সাথে নিয়ে হজ্জ করবে। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) উসমান (রাঃ) -এর কথা মানা ছাড়া আর কিছুই সামনে পেলেন না। আর উসমান (রাঃ) ও মুসলমানদের সামনে পাঠ করার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের সাথে একখানা পত্র লিখে দিলেন যার মধ্যে বিদ্রোহীদের ঘটনার উল্লেখ ছিল। (আল খুলাফাউর রশিদীন লিল খালেদী, পৃঃ ১৬৮)
অবরোধের শেষ দিন, যে দিন তাকে হত্যা করা হয় সে দিন তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর সকাল বেলা তিনি মানুষদের বললেন, যে বিদ্রোহীরা আমাকে অবশ্যই হত্যা করবে। অতঃপর তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে রাসূল (ﷺ) -কে দেখেছি আর তার সাথে ছিলেন আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)। নবী (ﷺ) বলেন, হে উসমান! তুমি আমাদের সাথে ইফতার করবে। সুতরাং তুমি রোযাদার হিসেবে সকালে পদার্পণ কর আর আজকে তোমাকে হত্যা করা হবে।
(আত-তাবাকাত, ৩৭৫)
(আত-তাবাকাত, ৩৭৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) দ্বিতীয়বার বর্ম পড়ে উসমান (রাঃ)-এর কাছে আসলেন এবং তাকে বললেন, আমি রাসূল (ﷺ) -এর সাথী হয়েছি। আমি তার সত্য রিসালাত ও সত্য নবুয়াতকে বুঝে নিয়েছি। আমি আরো সাথী হয়েছি আবু বকর (রাঃ) -এর এবং তার খেলাফতকে সত্য বলে জেনেছি। আমি উমর বলল - এরও সাথী হয়েছি এবং তার প্রকৃত সন্তান হিসেবে আমি তার বেলায়েতকে সত্য বলে জেনেছি। আর আপনাকেও আমি অনুরূপ জেনেছি। তখন উসমান (রাঃ) যুগ তাকে বললেন, আল্লাহ তায়ালা আহলে বাইতের মধ্যে তোমাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। তুমি আমার ব্যাপারে (শাহাদাতের) তোমার কাছে কোনো সংবাদ না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা বাড়িতে অবস্থান কর। (ইবনে আসাকির, পৃঃ ৪০১)
উমরা বিনতে কায়েস আল-আদাবিয়া বলেন, যে বছর উসমান (রাঃ) শহীদ হন সে বছর আমি আয়েশা -এর সাথে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলাম। অতঃপর যখন মদীনাকে অতিক্রম করছিলাম তখন আমরা সেই মাসহাফ দেখলাম যা তিনি তেলাওয়াতরত অবস্থায় ছিলেন। আর তা তার হুজরা খানায় ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, যে আয়াতের উপর উসমান (রাঃ)-এর প্রথম রক্ত পড়ল সে আয়াত হলো
فسيكفيكهم الله وهو اليع العليم
অর্থাৎ অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাদের মোকাবিলায় আপনার জন্য যথেষ্ট হবেন। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সুপরিজ্ঞাত। (সূরা বাকারা: আয়াত-১৩৭)
বর্ণনাকারী বলেন, তাদের কেউই একসাথে ইন্তেকাল করেননি।
(আয-যাহদু লি ইমাম আহমদ, পৃঃ ১৬০)
فسيكفيكهم الله وهو اليع العليم
অর্থাৎ অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাদের মোকাবিলায় আপনার জন্য যথেষ্ট হবেন। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সুপরিজ্ঞাত। (সূরা বাকারা: আয়াত-১৩৭)
বর্ণনাকারী বলেন, তাদের কেউই একসাথে ইন্তেকাল করেননি।
(আয-যাহদু লি ইমাম আহমদ, পৃঃ ১৬০)
যখন উসমান (রাঃ) অবরুদ্ধ হলেন আর বিদ্রোহীরা তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করছিল। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বলেন, হে মানুষ সকল! তোমরা উসমান (রাঃ)-কে হত্যা কর না, তোমরা তার প্রতি দয়া কর। ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, কোনো জাতি নবীকে হত্যা করলে আল্লাহ তাদের সত্তর হাজার ব্যক্তির রক্তের বিনিময়ে তাদের সংশোধন করেন।
আর কোনো জাতি তাদের খলিফাকে হত্যা করলে আল্লাহ তায়ালা তাদের চল্লিশ হাজার ব্যক্তির রক্ত ঝরিয়ে তাদের সংশোধন করেন। কোনো জাতি ততক্ষণ ধ্বংস হয় না যতক্ষণ না তারা সুলতানের কাছ থেকে কুরআন তুলে নেয়। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর না, তার প্রতি দয়া কর। আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল বলেন, তিনি যা বললেন, তার প্রতি তারা ভ্রুক্ষেপ করল না এবং তারা তাকে হত্যা করল। (তারিখু দামিশক, পৃঃ ৩৫৬)
আর কোনো জাতি তাদের খলিফাকে হত্যা করলে আল্লাহ তায়ালা তাদের চল্লিশ হাজার ব্যক্তির রক্ত ঝরিয়ে তাদের সংশোধন করেন। কোনো জাতি ততক্ষণ ধ্বংস হয় না যতক্ষণ না তারা সুলতানের কাছ থেকে কুরআন তুলে নেয়। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর না, তার প্রতি দয়া কর। আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল বলেন, তিনি যা বললেন, তার প্রতি তারা ভ্রুক্ষেপ করল না এবং তারা তাকে হত্যা করল। (তারিখু দামিশক, পৃঃ ৩৫৬)
উসমান (রাঃ) -এর দাস মুসলিম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) বিশজন দাস আযাদ করেন। আর তিনি একটি পাজামা আনতে বললেন, যা তিনি জাহেলেী যুগে ও ইসলামী যুগে কখনো পরিধান করেননি। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি স্বপ্নে রাসূল (ﷺ) -কে দেখেছি। আর সেখানে আবু বকর (রাঃ) লু ও উমর কেও দেখেছি। তারা আমাকে বলেন, তুমি ধৈর্য ধারণ কর। কেননা, তুমি আমাদের সাথে আগামীকাল ইফতার করবে। অতঃপর উসমান (রাঃ) মাসহাফ (কুরআন)-কে তার সামনে খুললেন। অতঃপর তিনি শহীদ হন আর মাসহাফ তথা কুরআন তার সামনেই ছিল। (মুসনাদে আহমদ, ১/৩৮৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বলেন, উসমান (রাঃ) যখন ইন্তেকাল করেন, যখন আবু রুমান আল-আসবাহী তাকে আঘাত করে, সেখানে কে উপস্থিত ছিল? আর উসমান (রাঃ) তীরবিদ্ধ অবস্থায় তার কথা কি ছিল? উপস্থিত সকলে বলল, তিনি যা বলেছিলেন আমরা তা শুনেছি। তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ! তুমি উম্মতে মুহাম্মাদীকে একতাবদ্ধ করে দাও। ইবনে সালাম বলেন, সেই স্বত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তিনি যদি আল্লাহর কাছে এ অবস্থায় এ দোয়া করতেন যে, তারা যেন কখনো একতাবদ্ধ না হয়, তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত তারা একতাবদ্ধ হতো না। (তারিখু দামিশক, পৃঃ ৪০২)
হাসান ইবনে আলী (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) -এর কাছে এসে তাকে বললেন, আপনি কি আমার তলোয়ার কোষমুক্ত করেছেন? উসমান (রাঃ) তাকে বললেন, না, আল্লাহ তোমাদের রক্ত হতে আমাকে হেফাযত করুন বরং তুমি তোমার তলোয়ার কোষবদ্ধ এবং তোমার বাবার কাছে ফিরে যাও।
(আল মুসান্নিফ লি ইবনে আবি শাইবা, ১৫/২২৪)
(আল মুসান্নিফ লি ইবনে আবি শাইবা, ১৫/২২৪)
মুসলমানদের সাথে উসমান (রাঃ) -এর শেষ সাক্ষাতের বছর যা ঘটেছিল তা হলো- অবরোধের কয়েক সপ্তাহ পরে উসমান (রাঃ) ও মানুষদের ডাকলেন ফলে তারা তার জন্য একত্রিত হলো, সেখানে ছিল সাবেই গোত্রের বহিরাগত যোদ্ধা, মদীনায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে স্থায়ী বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গ। আর আগন্তুকদের সামনে ছিলেন- আলী (রাঃ), তালহা (রাঃ) এবং যোবায়ের (রাঃ)। অত:পর যখন তারা তার সামনে বসলেন তখন তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়া এ জন্য দান করেছেন যাতে এর দ্বারা তোমরা আখিরাতের কল্যাণ খুঁজতে পার।
আর তিনি দুনিয়াকে তোমাদের এ জন্য দেননি যাতে তোমরা একে মূল হিসেবে গ্রহণ কর। নিশ্চয় দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে আর আখিরাত অবশিষ্ট থাকবে। সুতরাং তোমরা বিনষ্ট বিষয় নিয়ে অহংকার প্রদর্শন কর না। আর অবশিষ্ট বিষয় থেকে তোমরা বিমুখ থেকো না। তোমরা প্রধান্য দিবে অবশিষ্ট থাকা বিষয়কে ধ্বংসশীল বিষয়ের উপর। নিশ্চয় দুনিয়া বিচ্ছিন্ন আর প্রত্যাবর্তনস্থল আল্লাহর নিকট। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তোমাদের একতাবদ্ধতার উপর গুরুত্বারোপ করবে, তোমরা নানা দলে বিভক্ত হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১০৩, ১০৪) অতঃপর উসমান (রাঃ) মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর সমীপে আমানত রাখলাম। আর আমি তার কাছে প্রার্থনা করছি যা তিনি তোমাদের জন্য খলিফা নিযুক্ত করে তোমাদের প্রতি দয়া করেন। আল্লাহর শপথ! এ দিনের পর আমি আর কারো কাছে প্রবেশ করব না।
(তারিত তাবারী, ৫/৪০১)
আর তিনি দুনিয়াকে তোমাদের এ জন্য দেননি যাতে তোমরা একে মূল হিসেবে গ্রহণ কর। নিশ্চয় দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে আর আখিরাত অবশিষ্ট থাকবে। সুতরাং তোমরা বিনষ্ট বিষয় নিয়ে অহংকার প্রদর্শন কর না। আর অবশিষ্ট বিষয় থেকে তোমরা বিমুখ থেকো না। তোমরা প্রধান্য দিবে অবশিষ্ট থাকা বিষয়কে ধ্বংসশীল বিষয়ের উপর। নিশ্চয় দুনিয়া বিচ্ছিন্ন আর প্রত্যাবর্তনস্থল আল্লাহর নিকট। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তোমাদের একতাবদ্ধতার উপর গুরুত্বারোপ করবে, তোমরা নানা দলে বিভক্ত হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১০৩, ১০৪) অতঃপর উসমান (রাঃ) মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর সমীপে আমানত রাখলাম। আর আমি তার কাছে প্রার্থনা করছি যা তিনি তোমাদের জন্য খলিফা নিযুক্ত করে তোমাদের প্রতি দয়া করেন। আল্লাহর শপথ! এ দিনের পর আমি আর কারো কাছে প্রবেশ করব না।
(তারিত তাবারী, ৫/৪০১)
বিদ্রোহীরা উসমান (রাঃ) -এর ঘরে আক্রমণ করল। তখন উসমান (রাঃ) -এর গৃহ অনেক বড় ও বিস্তৃত ছিল। গৃহের মধ্যে ও দুয়ার গোড়ায় বিপুল সংখ্যক সাহাবা ও সাধারণ মুসলমান উপস্থিত ছিলেন। যুবাইর (রাঃ) -এর অসম সাহসী ও বীর পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) ছিলেন তাদের নেতা। তিনি উসমান (রাঃ) -এর খিদমতে হাযির হয়ে বললেন, বর্তমানে গৃহমধ্যে আমরা বিপুল সংখ্যায় মজুদ রয়েছি। আপনি অনুমতি দিলে আমরা বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করতে পারি। উসমান (রাঃ) জবাব দিলেন, তোমাদের একজনও যদি লড়াইয়ের আকাক্ষা পোষণ করে থাকে তাহলে আমি তাকে দোহাই দিচ্ছি সে যেন আমার জন্য তার রক্ত প্রবাহিত না করে।
নেতৃস্থানীয় সাহাবাগণ এই সংকটকালে রাজনীতির সংশ্রব ত্যাগ করাই সঙ্গত মনে করেন। আলী (রাঃ) ও তালহা (রাঃ) ও যুবাইর (রাঃ) -এর ন্যায় তিনজন দায়িত্বশীল সাহাবা তখনো উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা নিস্তব্ধ হয়েও থাকতে পারতেন না, আবার পরিস্থিতিও তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিল। তারা তিনজন কিছু চেষ্টাও করলেন। কিন্তু তাদের কথায় কেউ কান দিল না। কাজেই এঁরা তিনজনও কার্যত আলাদা হয়ে থাকলেন। তবুও তারা নিজেদের পুত্রদেরকে খলিফাকে রক্ষা করার কাজে নিযুক্ত করলেন। যুবাইর (রাঃ) উসমান (রাঃ)-এর গৃহে প্রহরারত দেহরক্ষী বাহিনীর পরিচালক নিযুক্ত হলেন। (ফিতনাতু মাকতালু উসমান (রাঃ), ১/১৮৭)
কিনানা ইবনে বাসার নামক আর এক ব্যক্তি অগ্রসর হয়ে তার মুবারক কপালে লোহার ডাণ্ডা মারলো। এত জোরে মারলো, যার ফলে তিনি পাশের দিকে পড়ে গেলেন। তখনও তিনি বিসমিল্লাহ তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ উচ্চারণ করছিলেন। সুদান ইবনে হামরান মুরাদী দ্বিতীয় আঘাত হানলো। এ আঘাতে রক্তের নদী বয়ে গেল। আমর ইবনুল হাসান নামক আর এক নরপিশাচ তার বুকের উপর চড়ে বসল এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে বর্শা দ্বারা পরপর নয়টি আয়াত করল। আর এক নরাধম অগ্রসর হয়ে তরবারির আঘাত হানলো। প্রিয়তমা পত্নী নাইলা মহা পাশে বসেছিলেন। তিনি নিজের হাতের উপর তরবারির এই আঘাত রুখতে চাইলেন। তাঁর তিনটি অংগুলি কেটে আলাদা হয়ে গেল। তরবারীর এই আঘাতে উসমান (রাঃ) এর জীব প্রদীপ নির্বাপিত হলো। খলিফায়ে রাশেদের অসহায় মৃত্যুতে সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতি মাতম করে উঠল। মজলুমের রক্তপ্রবাহে আকাশ ও পৃথিবী অশ্রু বিসর্জন করল। ভবিষ্যৎ স্রষ্টা ঘোষণা করলেন, যে রক্তপিপাসুর তরবারি আজ উন্মুক্ত হলো তা কিয়ামত পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে এবং ফিতনা ও ফাসাদের যে দুয়ার আজ খুলে গেল তা কিয়ামত পর্যন্ত খোলা থাকবে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শাহাদাতের সময় উসমান (রাঃ) কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। কুরআন সামনে উন্মুক্ত ছিল। যে আয়াতটি তাঁর মজলুম রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল সেটি হচ্ছে।
فسيكفيكهم الله وهو الشييع العليم -
আল্লাহ তোমার জন্য যথেষ্ট, তিনি শ্রবণকারী ও জ্ঞাত। (তারিখুল তাবারী, ৫/৩৯৮)
শাহাদাতের সময় উসমান (রাঃ) কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। কুরআন সামনে উন্মুক্ত ছিল। যে আয়াতটি তাঁর মজলুম রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল সেটি হচ্ছে।
فسيكفيكهم الله وهو الشييع العليم -
আল্লাহ তোমার জন্য যথেষ্ট, তিনি শ্রবণকারী ও জ্ঞাত। (তারিখুল তাবারী, ৫/৩৯৮)
এক বর্ণনায় এসেছে, সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি উসমান (রাঃ)-কে আঘাত করেছিল তার নাম হচ্ছে রুমান আল-ইয়ামান। যখন তারা উসমান (রাঃ) সু-কে হত্যা করার জন্য প্রবেশ করল তখন তিনি বলেছিলেন, আমি দেখেছি অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে; যারা মৃত্যুর কবল থেকে রেহাই পায়নি। আর মৃত্যু কোনো সীমালঙ্ঘনকারীকেও ছাড় দেয়নি। যাতে করে সে দুনিয়ার স্বাদ উপভোগ করতে পারে। যখন শত্রুরা তাকে আক্রমণ করল তখন উসমান (রাঃ) এর স্ত্রী নাইলা বিনতে ফেরাসাহ বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর অথবা ছেড়ে দাও যাই করো না কেন তিনি ছিলেন এমন ব্যক্তি যিনি একই রাতে এক রাকাতে কুরআন খতম করে দিতেন। আর তার স্ত্রী হত্যাকারীদেরকে প্রতিহত করতেন এমনকি প্রতিহত করতে যেয়ে তার হাতের আঙ্গুল কাটা পড়ে। (উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ১৭১, ১৭২)
দুষ্কৃতিকারীরা উসমান (রাঃ) -এর ঘরে লুটপাট করতে প্রস্তুত হলো এবং তারা তাদের সহযোগীদের ডাকল এবং বলল, তোমরা বাইতুল মাল আহরণ কর। তোমাদের পূর্বে যেন কেউ তা সংগ্রহ করতে না পারে এবং সেখানে যা কিছু আছে সব কিছু তোমরা নিয়ে নাও। বাইতুল মালের পাহারাদার তাদের এই আওয়াজ শোনতে পেল। আর তখন বাইতুল মালে সামান্য খাদ্য ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
যুবাইর ইবনে আওয়াম বলেন, যখন উসমান (রাঃ)-এর হত্যার খবর জানা হলো তখন তিনি বললেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাযিউন। উসমানের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তখন তাকে বলা হলো, সম্প্রদায়ের লোকেরা তো তাকে হত্যা করে লজ্জিত হয়েছে। তিনি বললেন, ধ্বংস তাদের জন্য তাদের অবস্থা হচ্ছে আল্লাহর সেই বাণীর ন্যায়
وحيل بينه وبين ما يشتهون كما فعل بأشياعهم من
قبل انهم كانوا في شق مريب
তাদের কাঙ্ক্ষিত জিনিসের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যেমন আগে করা হয়েছিল তাদের স্বধর্মীদের সাথেও। তারা ছিল সন্দেহের মধ্যে উদ্বেগজনক অবস্থায় নিপতিত। (সূরা সাবা: আয়াত-৫৪)
وحيل بينه وبين ما يشتهون كما فعل بأشياعهم من
قبل انهم كانوا في شق مريب
তাদের কাঙ্ক্ষিত জিনিসের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যেমন আগে করা হয়েছিল তাদের স্বধর্মীদের সাথেও। তারা ছিল সন্দেহের মধ্যে উদ্বেগজনক অবস্থায় নিপতিত। (সূরা সাবা: আয়াত-৫৪)
উসমান (রাঃ) যখন শাহাদাত বরণ করলেন তখন আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) বললেন, উসমানের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তখন তাকে বলা হলো, সম্প্রদায়ের লোকেরা তো তাকে হত্যা করে লজ্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, তারা ধ্বংস হোক। এরপর তিনি আল্লাহর এই বাণী পাঠ করলেন
كل الشيطان إذ قالك للانسان اگر فلاگفرقاك اني
برئه نك ا أخا الله رب العاليين فكان عاقبتها
انها في التار خالدين فيها وذلك جراء الاليين
তাদের দৃষ্টান্ত শয়তানের মতো- যে মানুষকে বলে, কুফরী কর। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। ফলে উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটাই যালিমদের কর্মফল। (সূরা হাশর: আয়াত-১৬, ১৭)
كل الشيطان إذ قالك للانسان اگر فلاگفرقاك اني
برئه نك ا أخا الله رب العاليين فكان عاقبتها
انها في التار خالدين فيها وذلك جراء الاليين
তাদের দৃষ্টান্ত শয়তানের মতো- যে মানুষকে বলে, কুফরী কর। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। ফলে উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটাই যালিমদের কর্মফল। (সূরা হাশর: আয়াত-১৬, ১৭)
যখন সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) উসমান (রাঃ) -এর শাহাদাত লাভের খবর পেলেন তখন তিনি বলেন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন। এরপর তিনি এ আয়াতগুলো তিলাওয়াত করলেন
يه قل هل تگ بالاترین ابالا - البنين ضل في الحياة الا وهم يحسبون انه يخون صنا۔
أولية الترين كفروا بآيات ربهم وقايه قبل اغتالهم فلا تقيه له يوم القيامة وزنا - ذيك جزاؤه جهت با كفروا واخوا ایا ورلي هوا -
বল, আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব কর্মে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের? এরাই তারা, ‘পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সঙ্কৰ্মই করছে। তারাই তারা, যারা অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তার সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোনো ব্যবস্থা রাখব না। জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে গ্রহণ করেছে বিদ্রুপের বিষয়স্বরূপ। (সূরা কাহাফ: আয়াত-১০৩-১০৬)
يه قل هل تگ بالاترین ابالا - البنين ضل في الحياة الا وهم يحسبون انه يخون صنا۔
أولية الترين كفروا بآيات ربهم وقايه قبل اغتالهم فلا تقيه له يوم القيامة وزنا - ذيك جزاؤه جهت با كفروا واخوا ایا ورلي هوا -
বল, আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব কর্মে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের? এরাই তারা, ‘পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সঙ্কৰ্মই করছে। তারাই তারা, যারা অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তার সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোনো ব্যবস্থা রাখব না। জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে গ্রহণ করেছে বিদ্রুপের বিষয়স্বরূপ। (সূরা কাহাফ: আয়াত-১০৩-১০৬)
যখন তালহা জুত উসমান (রাঃ) হত্যার বিষয়টি জানতে পারলেন তখন তিনি বললেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাযিউন। উসমানের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তখন তাকে বলা হলো, সম্প্রদায়ের লোকেরা তো তাকে হত্যা করে লজ্জিত হয়েছে। তারপর তিনি কুরআনের এ আয়াতটি পাঠ করলেন,
ماينظرون الا صيحة واحدة تأهم وهه يخون -قلا يشتين تؤصية 5 إلى أهله يزجون .
তারা কেবল একটা বিকট শব্দের অপেক্ষায় রয়েছে, যা তাদেরকে পাকড়াও করবে এমন অবস্থায় যে, তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে। তখন তারা ওয়াসিয়াতও করতে সমর্থ হবে না এবং নিজ পরিবারের লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারবে না। (সূরা ইয়াসীন: আয়াত- ৫০)
ماينظرون الا صيحة واحدة تأهم وهه يخون -قلا يشتين تؤصية 5 إلى أهله يزجون .
তারা কেবল একটা বিকট শব্দের অপেক্ষায় রয়েছে, যা তাদেরকে পাকড়াও করবে এমন অবস্থায় যে, তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে। তখন তারা ওয়াসিয়াতও করতে সমর্থ হবে না এবং নিজ পরিবারের লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারবে না। (সূরা ইয়াসীন: আয়াত- ৫০)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। উসমান (রাঃ) ইবনে আফফাস এ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য আর যারা কবরে আছে আল্লাহ তাদেরকে এমন একদিন জীবিত করবেন যার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। এই বিশ্বাসের উপর তিনি জীবিত ছিলেন, এর উপরই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আর চাইলে তিনি এর উপরই পুনরুথিত হবেন।
উসমান (রাঃ)-এর দুশমনরা জানতে পারল যে, তার খেলাফাতকে প্রতিষ্ঠিত করে রাখার জন্য শহরের সেনাবাহিনী তার পক্ষে ভূমিকা রাখছে এবং হজ্জের কাফেলাও উসমান (রাঃ) -কে সহযোগিতা করতে চাচ্ছে। তখন শত্রুরা বলল, আমরা যে সমস্যায় পড়েছি তা থেকে বের হতে হলে উসমান (রাঃ)-কে হত্যা করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। তাকে হত্যা করতে পারলেই তার দিক থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেবে।
উসমান (রাঃ) ও শাহাদাত লাভের পর কতিপয় সাহাবী তার দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন হাকীম ইবনে হোম, ওয়াতিব ইবনে আব্দুল উযযা, আবুল জাহাম ইবনে হুযায়ফা, দিনার ইবনে মাকরাত আল-আসলামী, যুবায়ের ইবনে মুতইম, যুবাইর ইবনে আওয়াম, আলী (রাঃ) ইবনে আবি তালিব। তার জানাযার নামাযে ইমামতি করেন যুবাইর ইবনে আওয়াম। উসমান (রাঃ) তাকে এজন্য ওয়াসিত করেছিলেন। আর তাকে দাফন করা হয়েছে রাত্রি বেলায়।
(উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ৪৭৫)
(উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ৪৭৫)
উসমান (রাঃ) শহীদ হওয়ার পর আয়েশা (রাঃ) বললেন, তোমরা তাকে পরিষ্কার কাপড়ের ন্যায় নিস্পাপ অবস্থায় রেখে এসেছে। কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়েছে যেভাবে ছাগলকে জবাই করা হয়। তখন মাসরুক বললেন, আপনি মানুষের কাছে চিঠি লিখুন যাতে তারা এজন্য লড়াই করে। তখন আয়েশা লিঙ্গ বললেন, না ঐ সত্তার কসম যার প্রতি ঈমানদাররা ঈমান আনে, আমি কখনো এ বিষয়ে লেখব না। (ফিতনাতু কাতলে উসমান (রাঃ), ১/৩৯১)
নাযাল ইবনে সাবুরা আলী (রাঃ)-কে উসমান (রাঃ) -এর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি বললেন, উসমান (রাঃ) হলেন এমন এক ব্যক্তি যাকে উচ্চ পরিষদে যুননুরাইন উপাধী দেয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন রাসূল (ﷺ) -এর দুই মেয়ের জামাতা। রাসূল (ﷺ) তার জান্নাতের জন্য জামিন হয়েছিলেন।
(উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ৪৮৪)
(উসমান ইবনে আফফান লিস সালাবী, পৃঃ ৪৮৪)
ইমাম আহমাদ (র.) তার মুসনাদে বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ বলেন, আলী (রাঃ) -এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছল যে, আয়েশা আনহু উসমান (রাঃ) - এর হত্যাকারীদের প্রতি অভিশাপ দিচ্ছেন। তখন উসমান (রাঃ) ও তার দুই হাত উত্তোলন করলেন এমনকি তা তার চেহারা পর্যন্তও উঠালেন এবং বললেন, আমিও উসমান (রাঃ) হত্যাকারীদের প্রতি অভিশাপ দিচ্ছি, আল্লাহ তাদের প্রতি লানত করুন। (ফাযায়িলুস সাহাবা, ৮৩৩)
ইবনে আব্বাস বলেন, আবু আমরের প্রতি আল্লাহ রহমত করুন। তিনি ছিলেন তার বংশের সম্মানিত ব্যক্তি। যখন জাহান্নামের আলোচনা হতো তখন তার দু' চোখ বেয়ে পানি ঝড়ত। তিনি ছিলেন কল্যাণের কাজে অগ্রগামী, বিশ্বনবীর প্রিয় জামাতা। কিন্তু তার পিছনে এমন লোক লেগে গেল যে, কিয়ামত পর্যন্ত অভিশাপকারীরা তাদের প্রতি অভিশাপ দেবে। (মুরুজুয যহব লিল মাসউদী, ৩/৬৪)
যখন হুযায়ফা -এর নিকট উসমান (রাঃ) -এর হত্যার খবর পৌঁছল তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি জান যে, আমি উসমান (রাঃ) হত্যার দায় থেকে মুক্ত রয়েছি। আর তোমরা অচিরেই জানতে পারবে যে, যদি উসমানকে হত্যা করে তারা সঠিক কাজ করে থাকে তবে তারা দুধ দোহন করবে। আর যদি তারা ভুল করে থাকে তবে তারা রক্ত দোহন করবে। আর আসলে তারা রক্তই দোহন করেছে। সব সময় তাদের মধ্যে রক্তপাত লেগে রয়েছে। (আত তাহযীব লি ইবনে হাজার, ৭/১৪১)
ইবনে আসাকির তার সনদে সামুরা ইবনে জুনদুবের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইসলাম একটি সংরক্ষিত দূর্গ ছিল। কিন্তু উসমান (রাঃ) -কে হত্যার পর তারা ইসলামের সেই দূর্গকে কলঙ্কিত করেছে। আর তাদের এই কলঙ্গ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। খিলাফত মদীনাবাসীদের হাতে ছিল কিন্তু তারা নিজেরাই তা বের করে দিয়েছে। আর কখনো এটা তাদের কাছে ফিরে যায় নি। (তারিখ দামেশক, ৪৯৩)
সমাপ্ত
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন