HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
সূরা আলে ইমরান
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
নাওয়াস ইবনে সাম‘আন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআন অনুযায়ী যারা আমল করত তাদেরকে আনা হবে। সূরা আল বাক্বারা ও সূরা আলে ইমরান অগ্রভাগে থাকবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ সূরা দুটি সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন, যা আমি কখনো ভুলিনি। তিনি বলেছিলেন, এ সূরা দুটি দু’খন্ড ছায়াদানকারী মেঘের আকারে অথবা দুটি কালো চাদরের মতো ছায়াদানকারী হিসেবে আসবে, যার মধ্যখানে থাকবে আলোর ঝলকানি অথবা এ সূরা দুটি সারিবদ্ধ দু’ঝাঁক পাখির আকারে আসবে এবং পাঠকারীর পক্ষ নিয়ে যুক্তি দিতে থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৮০৫)
ইবনে আবী হাতেম রবী‘ থেকে বর্ণনা করেন। একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায় নবী ﷺ এর নিকট এসে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে ঝগড়া শুরু করল। তখন অত্র সূরার প্রথম থেকে ৮৩ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, নাজরানের অধিবাসীরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে এ সূরার প্রথম থেকে ৮০ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবিন নুযূল)
অন্য বর্ণনায় আছে যে, নাজরানের অধিবাসীরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে এ সূরার প্রথম থেকে ৮০ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবিন নুযূল)
الٓمَّٓ (১) اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ (২) نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَاَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ (৩) مِنْ قَبْلُ هُدًى وَاَنْزَلَ الْفُرْقَانَؕ اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌؕ وَّاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ (৪)
শাব্দিক অনুবাদ
১. الٓمَّٓ আলিফ-লাম-মীম।
২. اَللهُ আল্লাহ (ঐ সত্ত্বা), لَاۤ اِلٰهَ কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই اِلَّا هُوَ তিনি ব্যতীত; اَلْحَيُّ (তিনি) চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ চিরস্থায়ী।
৩. نَزَّلَ তিনি অবতীর্ণ করেছেন عَلَيْكَ তোমার উপর اَلْكِتَابَ কিতাব بِالْحَقِّ সত্য সহকারে, مُصَدِّقًا সত্যায়নকারী لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ এর সামনে যা আছে তার وَاَنْزَلَ আর তিনি অবতীর্ণ করেছেন اَلتَّوْرَاةَ তাওরাত وَالْاِنْجِيْلَ এবং ইঞ্জীল ।
৪. مِنْ قَبْلُ ইতিপূর্বে هُدًى পথনির্দেশিকাস্বরূপ لِلنَّاسِ মানুষের জন্য। وَاَنْزَلَ আর তিনি অবতীর্ণ করেছেন اَلْفُرْقَانَ ফুরকান। اِنَّ الَّذِيْنَ নিশ্চয় যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে لَهُمْ তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ شَدِيْدٌ কঠিন শাস্তি। وَاللهُ আর আল্লাহ عَزِيْزٌ মহাপ্রতাপশালী ذُو انْتِقَامٍ উচিত শাস্তিদানকারী।
সরল অনুবাদ
১. আলিফ-লাম-মীম। [‘আলিফ-লাম-মীম’ এ অক্ষরগুলো আল-কুরআনের ‘হরূফুল মুক্বাত্ত্বাআত’ বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ অক্ষরগুলো মুতাশাবিহাতের অন্তর্ভুক্ত- যার প্রকৃত অর্থ আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।]
২. মহান আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই, (তিনি) চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।
৩. তিনি সত্য (দ্বীন) সহ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা (কুরআন) সত্যায়নকারী পূর্ববর্তী (আসমানী কিতাবসমূহের) এবং তিনি তাওরাত ও ইঞ্জীল অবতীর্ণ করেছিলেন-
৪. পূর্বের (ঐ আসমানী কিতাবসমূহ ছিল) মানুষের জন্য পথনির্দেশিকা। আর তিনিই (শেষ কিতাব) ফুরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আর আল্লাহ্ মহাপ্রতাপশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব সত্তা।
২. কুরআন, তাওরাত ও ইঞ্জীলসহ সকল আসমানী কিতাব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই অবতীর্ণ করেছেন।
৩. কুরআন সর্বশেষ অবতীর্ণ গ্রন্থ এবং পূর্ববর্তী সকল কিতাবের সত্যায়নকারী।
৪. কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবই ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের জন্য পথনির্দেশিকা।
৫. কুরআনের অপর নাম হচ্ছে ফুরকান।
৬. কুরআন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী।
৭. সমস্ত আসমানী কিতাব আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।
৮. আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে কোন একটিকে অস্বীকার করার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন।
শাব্দিক অনুবাদ
১. الٓمَّٓ আলিফ-লাম-মীম।
২. اَللهُ আল্লাহ (ঐ সত্ত্বা), لَاۤ اِلٰهَ কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই اِلَّا هُوَ তিনি ব্যতীত; اَلْحَيُّ (তিনি) চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ চিরস্থায়ী।
৩. نَزَّلَ তিনি অবতীর্ণ করেছেন عَلَيْكَ তোমার উপর اَلْكِتَابَ কিতাব بِالْحَقِّ সত্য সহকারে, مُصَدِّقًا সত্যায়নকারী لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ এর সামনে যা আছে তার وَاَنْزَلَ আর তিনি অবতীর্ণ করেছেন اَلتَّوْرَاةَ তাওরাত وَالْاِنْجِيْلَ এবং ইঞ্জীল ।
৪. مِنْ قَبْلُ ইতিপূর্বে هُدًى পথনির্দেশিকাস্বরূপ لِلنَّاسِ মানুষের জন্য। وَاَنْزَلَ আর তিনি অবতীর্ণ করেছেন اَلْفُرْقَانَ ফুরকান। اِنَّ الَّذِيْنَ নিশ্চয় যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে لَهُمْ তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ شَدِيْدٌ কঠিন শাস্তি। وَاللهُ আর আল্লাহ عَزِيْزٌ মহাপ্রতাপশালী ذُو انْتِقَامٍ উচিত শাস্তিদানকারী।
সরল অনুবাদ
১. আলিফ-লাম-মীম। [‘আলিফ-লাম-মীম’ এ অক্ষরগুলো আল-কুরআনের ‘হরূফুল মুক্বাত্ত্বাআত’ বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ অক্ষরগুলো মুতাশাবিহাতের অন্তর্ভুক্ত- যার প্রকৃত অর্থ আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।]
২. মহান আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই, (তিনি) চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।
৩. তিনি সত্য (দ্বীন) সহ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা (কুরআন) সত্যায়নকারী পূর্ববর্তী (আসমানী কিতাবসমূহের) এবং তিনি তাওরাত ও ইঞ্জীল অবতীর্ণ করেছিলেন-
৪. পূর্বের (ঐ আসমানী কিতাবসমূহ ছিল) মানুষের জন্য পথনির্দেশিকা। আর তিনিই (শেষ কিতাব) ফুরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আর আল্লাহ্ মহাপ্রতাপশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব সত্তা।
২. কুরআন, তাওরাত ও ইঞ্জীলসহ সকল আসমানী কিতাব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই অবতীর্ণ করেছেন।
৩. কুরআন সর্বশেষ অবতীর্ণ গ্রন্থ এবং পূর্ববর্তী সকল কিতাবের সত্যায়নকারী।
৪. কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবই ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের জন্য পথনির্দেশিকা।
৫. কুরআনের অপর নাম হচ্ছে ফুরকান।
৬. কুরআন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী।
৭. সমস্ত আসমানী কিতাব আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।
৮. আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে কোন একটিকে অস্বীকার করার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন।
اِنَّ اللهَ لَا يَخْفٰى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَآءِ (৫) هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِي الْاَرْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ (৬)
শাব্দিক অনুবাদ
৫. اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ لَا يَخْفٰى গোপন থাকে না عَلَيْهِ তাঁর কাছে شَيْءٌ কোন কিছুই فِي الْاَرْضِ পৃথিবীতে وَلَا فِي السَّمَآءِ এবং আকাশেও না।
৬. هُوَ الَّذِيْ তিনি (ঐ সত্তা) যিনি , يُصَوِّرُكُمْ তোমাদের আকৃতি গঠন করেন فِي الْاَرْحَامِ মাতৃগর্ভে كَيْفَ যেভাবে يَشَآءُ তিনি ইচ্ছা করেন। لَاۤ اِلٰهَ কোন ইলাহ নেই اِلَّا هُوَ তিনি ব্যতীত; هُوَ তিনি اَلْعَزِيْزُ মহাপরাক্রমশালী اَلْحَكِيْمُ মহাপ্রজ্ঞাবান।
সরল অনুবাদ
৫. নিশ্চয় আল্লাহ্র নিকট আসমান ও জমিনের কোন কিছুই গোপন নেই। [আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিনের মালিক এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে অতি সূক্ষ্মভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। সুতরাং সৃষ্টির কোন বিষয় চাই ছোট বা বড়, কম অথবা বেশি, প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য- কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন থাকে না। তিনি মহাবিশে^র উপর তাঁর রাজত্ব কায়েম করে আছেন এবং তিনি সৃষ্টির সকল বিষয়ে জানেন।]
৬. তিনি (মহান আল্লাহ্) যিনি নিজ ইচ্ছানুযায়ী জরায়ুর মধ্যে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। [এখানে মাতৃগর্ভে মানুষের আকৃতি গঠনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর এটি হচ্ছে একটি কাজ, যা কেবল আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছানুযায়ীই সংঘটিত হয়।] তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহাপ্রজ্ঞাবান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আকাশ ও জমিনের কোন কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয়।
২. মাতৃগর্ভেই মানুষের আকৃতি তৈরি হয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাকে বিভিন্ন ধরনের আকৃতিতে বিন্যস্ত করেন।
শাব্দিক অনুবাদ
৫. اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ لَا يَخْفٰى গোপন থাকে না عَلَيْهِ তাঁর কাছে شَيْءٌ কোন কিছুই فِي الْاَرْضِ পৃথিবীতে وَلَا فِي السَّمَآءِ এবং আকাশেও না।
৬. هُوَ الَّذِيْ তিনি (ঐ সত্তা) যিনি , يُصَوِّرُكُمْ তোমাদের আকৃতি গঠন করেন فِي الْاَرْحَامِ মাতৃগর্ভে كَيْفَ যেভাবে يَشَآءُ তিনি ইচ্ছা করেন। لَاۤ اِلٰهَ কোন ইলাহ নেই اِلَّا هُوَ তিনি ব্যতীত; هُوَ তিনি اَلْعَزِيْزُ মহাপরাক্রমশালী اَلْحَكِيْمُ মহাপ্রজ্ঞাবান।
সরল অনুবাদ
৫. নিশ্চয় আল্লাহ্র নিকট আসমান ও জমিনের কোন কিছুই গোপন নেই। [আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিনের মালিক এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে অতি সূক্ষ্মভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। সুতরাং সৃষ্টির কোন বিষয় চাই ছোট বা বড়, কম অথবা বেশি, প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য- কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন থাকে না। তিনি মহাবিশে^র উপর তাঁর রাজত্ব কায়েম করে আছেন এবং তিনি সৃষ্টির সকল বিষয়ে জানেন।]
৬. তিনি (মহান আল্লাহ্) যিনি নিজ ইচ্ছানুযায়ী জরায়ুর মধ্যে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। [এখানে মাতৃগর্ভে মানুষের আকৃতি গঠনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর এটি হচ্ছে একটি কাজ, যা কেবল আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছানুযায়ীই সংঘটিত হয়।] তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহাপ্রজ্ঞাবান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আকাশ ও জমিনের কোন কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয়।
২. মাতৃগর্ভেই মানুষের আকৃতি তৈরি হয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাকে বিভিন্ন ধরনের আকৃতিতে বিন্যস্ত করেন।
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ اٰيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتَابِ وَاُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌؕ فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَأْوِيْلِه ۚ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيْلَه اِلَّا اللهُۚ وَالرَّاسِخُوْنَ فِي الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِه كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ رَبِّنَاۚ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَلْبَابِ (৭)
শাব্দিক অনুবাদ
৭. هُوَ الَّذِيْ তিনি (ঐ সত্তা) যিনি, اَنْزَلَ অবতীর্ণ করেছেন عَلَيْكَ তোমার উপর اَلْكِتَابَ কিতাব; مِنْهُ এর মধ্যে রয়েছে اٰيَاتٌ কিছু আয়াত مُحْكَمَاتٌ সুস্পষ্ট, هُنَّ এগুলোই اُمُّ الْكِتَابِ কিতাবের মূল وَاُخَرُ আর অন্যগুলো مُتَشَابِهَاتٌ অস্পষ্ট। فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ অতএব যাদের অন্তরে রয়েছে زَيْغٌ বক্রতা فَيَتَّبِعُوْنَ তারা অনুসরণ করে مَا تَشَابَهَ مِنْهُ এর মধ্যে থেকে যেগুলো অস্পষ্ট اِبْتِغَآءَ অনুসন্ধান করে اَلْفِتْنَةِ ফিতনা وَاِبْتِغَآءَ এবং অনুসন্ধান করে تَأْوِيْلِه এগুলোর ব্যাখ্যা। وَمَا يَعْلَمُ আর জানে না تَأٓوِيْلَه এগুলোর ব্যাখ্যা اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত। وَالرَّاسِخُوْنَ আর যারা গভীর فِي الْعِلْمِ জ্ঞানে يَقُوْلُوْنَ তারা বলে اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি بِه এগুলোর উপর, كُلٌّ সবই مِنْ عِنْدِ পক্ষ থেকে رَبِّنَا আমাদের প্রতিপালকের। وَمَا يَذَّكَّرُ আর কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না اِلَّا ব্যতীত اُولُو الْاَلْبَابِ বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ।
সরল অনুবাদ
৭. তিনিই (ঐ সত্তা), যিনি তোমার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন; এর মধ্যে কিছু আয়াত রয়েছে মুহকাম [মুহকামাত বলা হয় ঐ সমস্ত আয়াতকে, যার ভাষ্য স্পষ্ট এবং সহজেই বোধগম্য। যেগুলোর অর্থ নির্ধারণ করার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকে না।], এগুলোই কিতাবের মূল (মৌলিক অংশ) [মূলত মুহকাম আয়াতগুলোই হচ্ছে কুরআন মাজীদের আসল বুনিয়াদ। কেননা যে উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে এ আয়াতগুলো তা পূর্ণ করে। এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে ইসলামের দিকে আহবান জানানো হয়েছে। এগুলোতেই শিক্ষা ও উপদেশের কথা বলা হয়েছে। ভ্রষ্টতা তুলে ধরে সত্য ও সঠিক পথ সুস্পষ্ট করা হয়েছে। দ্বীনের মূলনীতি এবং আক্বীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত, চরিত্র, দায়িত্ব-কর্তব্য এবং আদেশ-নিষেধের বিধান ও মূলনীতি এ আয়াতগুলোতেই বর্ণিত হয়েছে। কাজেই কোন সত্যসন্ধানী ব্যক্তি কোন্ পথে চলবে এবং কোন্ পথে চলবে না, এ কথা জানার জন্য যখন কুরআনের শরণাপন্ন হয়, তখন এ মুহকাম আয়াতগুলোই তাকে পথপ্রদর্শন করে। স্বাভাবিকভাবে এগুলোর প্রতি তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় এবং এগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য সে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।]; আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ [মুতাশাবিহাত বলা হয় ঐ সমস্ত আয়াতকে, যার ভাষ্য অস্পষ্ট। এগুলোর প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সুতরাং এগুলোর মাধ্যমে মানুষ সন্দেহ-সংশয়ের মধ্যে পতিত হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মুতাশাবিহ হচ্ছে রহিত আয়াতসমূহ, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত এবং যেগুলোর দ্বারা শপথ করা হয়েছে। এসব আয়াতের উপর কেবল বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আমল করার জন্য এগুলো থেকে হুকুম গ্রহণ করা যাবে না। (ইবনে কাসীর)]। অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারাই ফিতনার (বিশৃঙ্খলার) উদ্দেশ্যে এবং অপব্যাখ্যা অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহ এর অনুসরণ করে থাকে। অথচ এগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। (এ কারণেই) যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এগুলোতে ঈমান এনেছি, প্রত্যেকটিই আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে (এসেছে)। (প্রকৃতপক্ষে) বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউই (আল্লাহর নিদর্শনাবলি থেকে) উপদেশ গ্রহণ (শিক্ষা লাভ) করে না। [এখানে হেদায়াতপ্রাপ্ত জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের এবং পথভ্রষ্ট ব্যক্তিবর্গের একটি সাধারণ পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। আর সেটি হলো- হেদায়াতপ্রাপ্ত ও জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সবসময় মুহকাম আয়াতসমূহ হতে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে এবং তারা মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ এড়িয়ে চলে। পক্ষান্তরে পথভ্রষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের ভ্রষ্টতার কারণে মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ হতেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খোঁজার চেষ্টা করে। ফলে তারা এর সঠিক অর্থ অনুধাবন করতে না পেরে আরো বড় ধরনের ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়। অপরদিকে ইসলামের শত্রুরাও এসব আয়াত নিয়ে অধিক ঘাটাঘাটি করে এবং এর বক্র দিকগুলো খুঁজে বের করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সুতরাং যারা মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ হতে কোন কিছু অনুসন্ধান করার জোর প্রয়াস চালায়, তাদের থেকে সাবধান থাকাটা প্রকৃত ঈমানদারদের জন্য খুবই জরুরি। হাদীসে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ আয়াতটি পাঠ করে বললেন, যখন তুমি কাউকে মুতাশাবিহ আয়াতের পেছনে ছুটতে দেখবে, তখন তুমি মনে করবে যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে (এ আয়াতে) এদের কথাই বর্ণনা করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের থেকে সাবধান থাকবে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৪৭; তিরমিযী, হা/২৯৯৪)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল-কুরআনের আয়াতসমূহ দুই প্রকার- (১) মুহকাম (স্পষ্ট) এবং (২) মুতাশাবিহ (অস্পষ্ট)।
২. কেবলমাত্র মুহকাম আয়াতসমূহই কুরআন মাজীদের মৌলিক অংশ, যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৩. মুহকাম আয়াতসমূহের ভাষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট এবং অতি সহজেই বোধগম্য।
৪. মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ।
৫. ফিতনা সৃষ্টিকারীরা মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ দ্বারাই ফিতনা সৃষ্টি করে থাকে।
৬. মুতাশাবিহ আয়াতসমূহের প্রকৃত অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
৭. প্রকৃত মুমিনগণ মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ হতে কোন হুকুম গ্রহণ করে না; বরং কেবল এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে যে, এগুলো আল্লাহর বাণী।
৮. যারা মুতাশাবিহ আয়াত অন্বেষণের চেষ্টা চালায় তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব; কারণ কুপ্রবৃত্তির অনুসারী।
৯. আল্লাহর নিদর্শনসমূহ হতে একমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিরাই অধিক উপকৃত হয়ে থাকে।
শাব্দিক অনুবাদ
৭. هُوَ الَّذِيْ তিনি (ঐ সত্তা) যিনি, اَنْزَلَ অবতীর্ণ করেছেন عَلَيْكَ তোমার উপর اَلْكِتَابَ কিতাব; مِنْهُ এর মধ্যে রয়েছে اٰيَاتٌ কিছু আয়াত مُحْكَمَاتٌ সুস্পষ্ট, هُنَّ এগুলোই اُمُّ الْكِتَابِ কিতাবের মূল وَاُخَرُ আর অন্যগুলো مُتَشَابِهَاتٌ অস্পষ্ট। فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ অতএব যাদের অন্তরে রয়েছে زَيْغٌ বক্রতা فَيَتَّبِعُوْنَ তারা অনুসরণ করে مَا تَشَابَهَ مِنْهُ এর মধ্যে থেকে যেগুলো অস্পষ্ট اِبْتِغَآءَ অনুসন্ধান করে اَلْفِتْنَةِ ফিতনা وَاِبْتِغَآءَ এবং অনুসন্ধান করে تَأْوِيْلِه এগুলোর ব্যাখ্যা। وَمَا يَعْلَمُ আর জানে না تَأٓوِيْلَه এগুলোর ব্যাখ্যা اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত। وَالرَّاسِخُوْنَ আর যারা গভীর فِي الْعِلْمِ জ্ঞানে يَقُوْلُوْنَ তারা বলে اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি بِه এগুলোর উপর, كُلٌّ সবই مِنْ عِنْدِ পক্ষ থেকে رَبِّنَا আমাদের প্রতিপালকের। وَمَا يَذَّكَّرُ আর কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না اِلَّا ব্যতীত اُولُو الْاَلْبَابِ বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ।
সরল অনুবাদ
৭. তিনিই (ঐ সত্তা), যিনি তোমার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন; এর মধ্যে কিছু আয়াত রয়েছে মুহকাম [মুহকামাত বলা হয় ঐ সমস্ত আয়াতকে, যার ভাষ্য স্পষ্ট এবং সহজেই বোধগম্য। যেগুলোর অর্থ নির্ধারণ করার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকে না।], এগুলোই কিতাবের মূল (মৌলিক অংশ) [মূলত মুহকাম আয়াতগুলোই হচ্ছে কুরআন মাজীদের আসল বুনিয়াদ। কেননা যে উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে এ আয়াতগুলো তা পূর্ণ করে। এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে ইসলামের দিকে আহবান জানানো হয়েছে। এগুলোতেই শিক্ষা ও উপদেশের কথা বলা হয়েছে। ভ্রষ্টতা তুলে ধরে সত্য ও সঠিক পথ সুস্পষ্ট করা হয়েছে। দ্বীনের মূলনীতি এবং আক্বীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত, চরিত্র, দায়িত্ব-কর্তব্য এবং আদেশ-নিষেধের বিধান ও মূলনীতি এ আয়াতগুলোতেই বর্ণিত হয়েছে। কাজেই কোন সত্যসন্ধানী ব্যক্তি কোন্ পথে চলবে এবং কোন্ পথে চলবে না, এ কথা জানার জন্য যখন কুরআনের শরণাপন্ন হয়, তখন এ মুহকাম আয়াতগুলোই তাকে পথপ্রদর্শন করে। স্বাভাবিকভাবে এগুলোর প্রতি তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় এবং এগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য সে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।]; আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ [মুতাশাবিহাত বলা হয় ঐ সমস্ত আয়াতকে, যার ভাষ্য অস্পষ্ট। এগুলোর প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সুতরাং এগুলোর মাধ্যমে মানুষ সন্দেহ-সংশয়ের মধ্যে পতিত হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মুতাশাবিহ হচ্ছে রহিত আয়াতসমূহ, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত এবং যেগুলোর দ্বারা শপথ করা হয়েছে। এসব আয়াতের উপর কেবল বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আমল করার জন্য এগুলো থেকে হুকুম গ্রহণ করা যাবে না। (ইবনে কাসীর)]। অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারাই ফিতনার (বিশৃঙ্খলার) উদ্দেশ্যে এবং অপব্যাখ্যা অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহ এর অনুসরণ করে থাকে। অথচ এগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। (এ কারণেই) যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এগুলোতে ঈমান এনেছি, প্রত্যেকটিই আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে (এসেছে)। (প্রকৃতপক্ষে) বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউই (আল্লাহর নিদর্শনাবলি থেকে) উপদেশ গ্রহণ (শিক্ষা লাভ) করে না। [এখানে হেদায়াতপ্রাপ্ত জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের এবং পথভ্রষ্ট ব্যক্তিবর্গের একটি সাধারণ পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। আর সেটি হলো- হেদায়াতপ্রাপ্ত ও জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সবসময় মুহকাম আয়াতসমূহ হতে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে এবং তারা মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ এড়িয়ে চলে। পক্ষান্তরে পথভ্রষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের ভ্রষ্টতার কারণে মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ হতেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খোঁজার চেষ্টা করে। ফলে তারা এর সঠিক অর্থ অনুধাবন করতে না পেরে আরো বড় ধরনের ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়। অপরদিকে ইসলামের শত্রুরাও এসব আয়াত নিয়ে অধিক ঘাটাঘাটি করে এবং এর বক্র দিকগুলো খুঁজে বের করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সুতরাং যারা মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ হতে কোন কিছু অনুসন্ধান করার জোর প্রয়াস চালায়, তাদের থেকে সাবধান থাকাটা প্রকৃত ঈমানদারদের জন্য খুবই জরুরি। হাদীসে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ আয়াতটি পাঠ করে বললেন, যখন তুমি কাউকে মুতাশাবিহ আয়াতের পেছনে ছুটতে দেখবে, তখন তুমি মনে করবে যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে (এ আয়াতে) এদের কথাই বর্ণনা করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের থেকে সাবধান থাকবে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৪৭; তিরমিযী, হা/২৯৯৪)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল-কুরআনের আয়াতসমূহ দুই প্রকার- (১) মুহকাম (স্পষ্ট) এবং (২) মুতাশাবিহ (অস্পষ্ট)।
২. কেবলমাত্র মুহকাম আয়াতসমূহই কুরআন মাজীদের মৌলিক অংশ, যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৩. মুহকাম আয়াতসমূহের ভাষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট এবং অতি সহজেই বোধগম্য।
৪. মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ।
৫. ফিতনা সৃষ্টিকারীরা মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ দ্বারাই ফিতনা সৃষ্টি করে থাকে।
৬. মুতাশাবিহ আয়াতসমূহের প্রকৃত অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
৭. প্রকৃত মুমিনগণ মুতাশাবিহ আয়াতসমূহ হতে কোন হুকুম গ্রহণ করে না; বরং কেবল এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে যে, এগুলো আল্লাহর বাণী।
৮. যারা মুতাশাবিহ আয়াত অন্বেষণের চেষ্টা চালায় তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব; কারণ কুপ্রবৃত্তির অনুসারী।
৯. আল্লাহর নিদর্শনসমূহ হতে একমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিরাই অধিক উপকৃত হয়ে থাকে।
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ (৮) رَبَّنَاۤ اِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيْهِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ (৯)
শাব্দিক অনুবাদ
৮. رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! لَا تُزِغْ আপনি বক্র করে দেবেন না قُلُوْبَنَا আমাদের অন্তরসমূহকে بَعْدَ পর اِذْ যখন هَدَيْتَنَا আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন وَهَبْ এবং দান করুন لَنَا আমাদের জন্য مِنْ لَّدُنْكَ আপনার পক্ষ থেকে رَحْمَةً দয়া اِنَّكَ اَنْتَ নিশ্চয় আপনিই اَلْوَهَّابُ মহান দাতা।
৯. رَبَّنَاۤ হে আমাদের প্রতিপালক! اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি جَامِعُ একত্রিতকারী اَلنَّاسِ মানবজাতিকে لِيَوْمٍ এমন একদিনে لَا رَيْبَ فِيْهِ যাতে কোন সন্দেহ নেই। اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ لَا يُخْلِفُ ব্যতিক্রম করেন না اَلْمِيْعَادَ প্রতিশ্রুতির।
সরল অনুবাদ
৮. (তারা আরো বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! সঠিক পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র (বিপথগামী) করে দেবেন না এবং আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত্রদান করুন, নিশ্চয় আপনিই মহান দাতা। [এখানে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে, যার মধ্যে ঈমানের দাবীদার অনেক মানুষই নিমজ্জিত। আর তা হলো- ঈমান আনার পরও পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া অর্থাৎ নিয়ামত হাতে পাওয়ার পরও তা হারিয়ে ফেলা। প্রকৃতপক্ষে এরূপ ব্যক্তিগণ বড়ই দুর্ভাগা। একমাত্র আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া পুনরায় ঈমানের দিকে ফিরে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা হলেন অন্তরসমূহ পরিবর্তনের মালিক। সুতরাং ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য উপরোক্ত দু‘আটি নিয়মিত পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি।]
৯. হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি মানবজাতিকে (হিসাব-নিকাশের জন্য) এমন একদিন (কিয়ামতের দিন) একত্র করবেন, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. অন্তরের বক্রতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
২. আল্লাহর রহমত ব্যতীত পথভ্রষ্টতা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
৩. কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে।
৪. কিয়ামতের দিন আগমনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করা বৈধ নয়।
শাব্দিক অনুবাদ
৮. رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! لَا تُزِغْ আপনি বক্র করে দেবেন না قُلُوْبَنَا আমাদের অন্তরসমূহকে بَعْدَ পর اِذْ যখন هَدَيْتَنَا আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন وَهَبْ এবং দান করুন لَنَا আমাদের জন্য مِنْ لَّدُنْكَ আপনার পক্ষ থেকে رَحْمَةً দয়া اِنَّكَ اَنْتَ নিশ্চয় আপনিই اَلْوَهَّابُ মহান দাতা।
৯. رَبَّنَاۤ হে আমাদের প্রতিপালক! اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি جَامِعُ একত্রিতকারী اَلنَّاسِ মানবজাতিকে لِيَوْمٍ এমন একদিনে لَا رَيْبَ فِيْهِ যাতে কোন সন্দেহ নেই। اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ لَا يُخْلِفُ ব্যতিক্রম করেন না اَلْمِيْعَادَ প্রতিশ্রুতির।
সরল অনুবাদ
৮. (তারা আরো বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! সঠিক পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র (বিপথগামী) করে দেবেন না এবং আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত্রদান করুন, নিশ্চয় আপনিই মহান দাতা। [এখানে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে, যার মধ্যে ঈমানের দাবীদার অনেক মানুষই নিমজ্জিত। আর তা হলো- ঈমান আনার পরও পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া অর্থাৎ নিয়ামত হাতে পাওয়ার পরও তা হারিয়ে ফেলা। প্রকৃতপক্ষে এরূপ ব্যক্তিগণ বড়ই দুর্ভাগা। একমাত্র আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া পুনরায় ঈমানের দিকে ফিরে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা হলেন অন্তরসমূহ পরিবর্তনের মালিক। সুতরাং ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য উপরোক্ত দু‘আটি নিয়মিত পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি।]
৯. হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি মানবজাতিকে (হিসাব-নিকাশের জন্য) এমন একদিন (কিয়ামতের দিন) একত্র করবেন, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. অন্তরের বক্রতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
২. আল্লাহর রহমত ব্যতীত পথভ্রষ্টতা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
৩. কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে।
৪. কিয়ামতের দিন আগমনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করা বৈধ নয়।
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ وَّاُولٰٓئِكَ هُمْ وَقُوْدُ النَّارِ (১০) كَدَأْبِ اٰلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْۚ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ (১১)
শাব্দিক অনুবাদ
১০. اِنَّ الَّذِيْنَ নিশ্চয় যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে لَنْ تُغْنِيَ কখনো কোন কাজে আসবে না عَنْهُمْ তাদের জন্য اَمْوَالُهُمْ তাদের ধন-সম্পদ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ এবং সন্তান-সন্ততি مِنَ اللهِ আল্লাহর থেকে شَيْئًا কিছুমাত্র। وَاُولٰٓئِكَ هُمْ আর তারাই হবে وَقُوْدُ ইন্ধন اَلنَّارِ জাহান্নামের।
১১. كَدَأْبِ আচরণের ন্যায় اٰلِ فِرْعَوْنَ ফেরাউনের বংশধর وَالَّذِيْنَ এবং যারা مِنْ قَبْلِهِمْ তাদের পূর্বে ছিল كَذَّبُوْا তারা অস্বীকার করেছিল بِاٰيَاتِنَا আমার নিদর্শনসমূহকে, فَاَخَذَهُمْ ফলে তাদেরকে পাকড়াও করেছিলেন اَللهُ আল্লাহ بِذُنُوْبِهِمْ তাদের পাপের কারণে । وَاللهُ আর আল্লাহ شَدِيْدُ কঠোর اَلْعِقَابِ শাস্তি দানে।
সরল অনুবাদ
১০. নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি আল্লাহর (আযাব) থেকে (তাদেরকে বাঁচানোর ব্যাপারে) কখনো কোন কাজে আসবে না। [এখানে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কেননা কিয়ামতের দিন তো মানুষের হাতে কোন সম্পদই থাকবে না; সুতরাং সেদিন তারা কী করে এগুলোকে বিনিময় হিসেবে দেয়ার চেষ্টা করবে! আর সেদিন সকলেই থাকবে নিজ নিজ চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত। সুতরাং সন্তান-সন্ততি কীভাবে তাদের পিতামাতার উপকারে আসবে! পক্ষান্তরে দুনিয়াতে মানুষের জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিই হচ্ছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। তারা সকল পরিশ্রম এগুলোর জন্যই ব্যয় করে থাকে। বিপদাপদে এগুলোই তার জন্য কাজে আসে। এগুলোর মাধ্যমেই সে তার পরকালের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করে থাকে। অথচ কিয়ামতের দিন এগুলোর কোন মূল্যই থাকবে না। বরং দুনিয়াতে এগুলোর মাধ্যমে পরকালের জন্য যে পাথেয় সংগ্রহ করেছে কিয়ামতের দিন সেগুলোই তার জন্য কাজে আসবে।] আর তারাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন (জ্বালানী)। [ وَقُوْدُ অর্থ ইন্ধন বা জ্বালানী অর্থাৎ যা দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। কিয়ামতের দিন কাফিররাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন।]
১১. (তাদের আচরণ) ফেরাউনের বংশধর এবং তাদের পূর্ববর্তীদের আচরণের ন্যায়। তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল, ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পাপের (অপরাধের) কারণে পাকড়াও করেছিলেন। আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [অত্র আয়াত দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, ইসলামের বিরুদ্ধে প্রত্যেক যুগের কাফিরদের আচরণ তথা কর্মপদ্ধতি প্রায় একই। তাদের প্রধান আচরণ হচ্ছে, আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে শয়তানের হুকুম বাস্তবায়ন করা এবং আল্লাহর সাথে শত্রুতা পোষণ করা। ফলে বর্তমানেও অনেক কাফির নেতৃবৃন্দ ও ইসলাম বিদ্বেষীর কাছে ইসলামের কথা উপস্থাপন করা হলেই দেখা যায় যে, তারা সাথে সাথেই এর প্রতিবাদ করে থাকে এবং এমন ভাব ধারণ করে থাকে, যেন তারা সরাসরি মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু তাদের এসব আচরণ আল্লাহর কাছে মূল্যায়ন যোগ্য নয়; বরং তাদের এসব অপরাধের কারণে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতেই তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন, যেরকমভাবে শাস্তি প্রদান করেছিলেন ফিরাউন ও তার অনুচরদেরকে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিয়ামতের দিন কাফিরদের মুক্তি অসম্ভব।
২. কুফরী একটি মারাত্মক গুনাহ।
৩. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা কোন বিনিময় গ্রহণ করবেন না।
৪. আল্লাহর আযাব অত্যন্ত ভয়াবহ।
৫. কাফিররাই জাহান্নামের ইন্ধন।
৬. আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করলে তিনি তাদেরকে অনেক সময় দুনিয়াতেই পাকড়াও করে থাকেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১০. اِنَّ الَّذِيْنَ নিশ্চয় যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে لَنْ تُغْنِيَ কখনো কোন কাজে আসবে না عَنْهُمْ তাদের জন্য اَمْوَالُهُمْ তাদের ধন-সম্পদ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ এবং সন্তান-সন্ততি مِنَ اللهِ আল্লাহর থেকে شَيْئًا কিছুমাত্র। وَاُولٰٓئِكَ هُمْ আর তারাই হবে وَقُوْدُ ইন্ধন اَلنَّارِ জাহান্নামের।
১১. كَدَأْبِ আচরণের ন্যায় اٰلِ فِرْعَوْنَ ফেরাউনের বংশধর وَالَّذِيْنَ এবং যারা مِنْ قَبْلِهِمْ তাদের পূর্বে ছিল كَذَّبُوْا তারা অস্বীকার করেছিল بِاٰيَاتِنَا আমার নিদর্শনসমূহকে, فَاَخَذَهُمْ ফলে তাদেরকে পাকড়াও করেছিলেন اَللهُ আল্লাহ بِذُنُوْبِهِمْ তাদের পাপের কারণে । وَاللهُ আর আল্লাহ شَدِيْدُ কঠোর اَلْعِقَابِ শাস্তি দানে।
সরল অনুবাদ
১০. নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি আল্লাহর (আযাব) থেকে (তাদেরকে বাঁচানোর ব্যাপারে) কখনো কোন কাজে আসবে না। [এখানে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কেননা কিয়ামতের দিন তো মানুষের হাতে কোন সম্পদই থাকবে না; সুতরাং সেদিন তারা কী করে এগুলোকে বিনিময় হিসেবে দেয়ার চেষ্টা করবে! আর সেদিন সকলেই থাকবে নিজ নিজ চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত। সুতরাং সন্তান-সন্ততি কীভাবে তাদের পিতামাতার উপকারে আসবে! পক্ষান্তরে দুনিয়াতে মানুষের জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিই হচ্ছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। তারা সকল পরিশ্রম এগুলোর জন্যই ব্যয় করে থাকে। বিপদাপদে এগুলোই তার জন্য কাজে আসে। এগুলোর মাধ্যমেই সে তার পরকালের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করে থাকে। অথচ কিয়ামতের দিন এগুলোর কোন মূল্যই থাকবে না। বরং দুনিয়াতে এগুলোর মাধ্যমে পরকালের জন্য যে পাথেয় সংগ্রহ করেছে কিয়ামতের দিন সেগুলোই তার জন্য কাজে আসবে।] আর তারাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন (জ্বালানী)। [ وَقُوْدُ অর্থ ইন্ধন বা জ্বালানী অর্থাৎ যা দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। কিয়ামতের দিন কাফিররাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন।]
১১. (তাদের আচরণ) ফেরাউনের বংশধর এবং তাদের পূর্ববর্তীদের আচরণের ন্যায়। তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল, ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পাপের (অপরাধের) কারণে পাকড়াও করেছিলেন। আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [অত্র আয়াত দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, ইসলামের বিরুদ্ধে প্রত্যেক যুগের কাফিরদের আচরণ তথা কর্মপদ্ধতি প্রায় একই। তাদের প্রধান আচরণ হচ্ছে, আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে শয়তানের হুকুম বাস্তবায়ন করা এবং আল্লাহর সাথে শত্রুতা পোষণ করা। ফলে বর্তমানেও অনেক কাফির নেতৃবৃন্দ ও ইসলাম বিদ্বেষীর কাছে ইসলামের কথা উপস্থাপন করা হলেই দেখা যায় যে, তারা সাথে সাথেই এর প্রতিবাদ করে থাকে এবং এমন ভাব ধারণ করে থাকে, যেন তারা সরাসরি মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু তাদের এসব আচরণ আল্লাহর কাছে মূল্যায়ন যোগ্য নয়; বরং তাদের এসব অপরাধের কারণে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতেই তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন, যেরকমভাবে শাস্তি প্রদান করেছিলেন ফিরাউন ও তার অনুচরদেরকে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিয়ামতের দিন কাফিরদের মুক্তি অসম্ভব।
২. কুফরী একটি মারাত্মক গুনাহ।
৩. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা কোন বিনিময় গ্রহণ করবেন না।
৪. আল্লাহর আযাব অত্যন্ত ভয়াবহ।
৫. কাফিররাই জাহান্নামের ইন্ধন।
৬. আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করলে তিনি তাদেরকে অনেক সময় দুনিয়াতেই পাকড়াও করে থাকেন।
قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا سَتُغْلَبُوْنَ وَتُحْشَرُوْنَ اِلٰى جَهَنَّمَؕ وَبِئْسَ الْمِهَادُ (১২) قَدْ كَانَ لَكُمْ اٰيَةٌ فِيْ فِئَتَيْنِ الْتَقَتَاؕ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاُخْرٰى كَافِرَةٌ يَّرَوْنَهُمْ مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِؕ وَاللهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِه مَنْ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِي الْاَبْصَارِ (১৩)
শাব্দিক অনুবাদ
১২. قُلْ তুমি বলো لِلَّذِيْنَ তাদেরকে যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে, سَتُغْلَبُوْنَ অচিরেই তোমরা পরাজিত হবে وَتُحْشَرُوْنَ এবং তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে اِلٰى جَهَنَّمَ জাহান্নামের দিকে । وَبِئْسَ আর তা কতই না নিকৃষ্ট اَلْمِهَادُ বিশ্রামস্থল!
১৩. قَدْ كَانَ لَكُمْ অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে اٰيَةٌ নিদর্শন, فِيْ فِئَتَيْنِ দুটি দলের মধ্যে اِلْتَقَتَا যারা পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল। فِئَةٌ একটি দল تُقَاتِلُ যুদ্ধ করছিল فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে; وَاُخْرٰى আর অপর দলটি كَافِرَةٌ কাফির। يَرَوْنَهُمْ তারা তাদেরকে দেখছিল مِثْلَيْهِمْ তাদের দ্বিগুণ رَأْيَ الْعَيْنِ বাহ্যিক দৃষ্টিতে। وَاللهُ আর আল্লাহ يُؤَيِّدُ সাহায্য করেন بِنَصْرِه তার সাহায্যের দ্বারা مَنْ يَّشَآءُ যাকে চান তাকে। اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ নিশ্চয় এর মধ্যে রয়েছে لَعِبْرَةً শিক্ষা لِاُولِي الْاَبْصَارِ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ।
সরল অনুবাদ
১২. (হে নবী!) যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বলে দাও, অচিরেই তোমরা (এ দুনিয়াতে) পরাজিত হবে এবং (পরকালে) তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে একত্রিত করা হবে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!
১৩. অবশ্যই তোমাদের জন্য নিদর্শন (শিক্ষণীয়) রয়েছে, দুটি দল পরস্পর মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে (বদরের যুদ্ধে)। [বদর যুদ্ধে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে কয়েকটি হলো- (১) কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য, (২) যুদ্ধে ফেরেশতাদের সরাসরি অংশগ্রহণ, (৩) যুদ্ধের মধ্যে মুসলিম বাহিনীতে প্রশান্তিদায়ক তন্দ্রার আগমন, (৪) কাফিরদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো, (৫) যুদ্ধের ময়দানে একমুষ্ঠি বালুর কণার দ্বারা কাফিরদের দৃষ্টিশক্তি হনন ইত্যাদি।] (তাদের মধ্যে) একটি দল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছিল; আর অপর দলটি ছিল কাফির। তারা (কাফিররা) তাদেরকে (মুমিনদেরকে) চোখের (বাহ্যিক) দৃষ্টিতে দ্বিগুণ দেখছিল। [বদর যুদ্ধের দিন কাফিরদের সংখ্যা ছিল মুসলিমদের থেকে তিন গুণের চেয়েও কিছু বেশি। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের চোখের এমন বিভ্রাট ঘটিয়েছিলেন যে, তারা মুসলিম বাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে মুসলিমদেরকেই তাদের থেকে সংখ্যার দ্বিগুণ বেশি মনে করেছিল। এটি ছিল মুসলিমদের জন্য আল্লাহর আরো একটি বিরাট সাহায্য। এর কারণে কাফিররা ভীত হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের মনোবল কিছুটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ফলে যুদ্ধ শুরু হলে তারা আর মুসলিমদের বিরুদ্ধে টিকতে পারেনি।] কিন্তু আল্লাহ যাকে চান তাকে স্বীয় সাহায্যের দ্বারা সাহায্য করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের (জ্ঞানীদের) জন্য শিক্ষা রয়েছে। [বদর যুদ্ধে জ্ঞানবান লোকদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। তবে তার মধ্যে তিনটি শিক্ষা খুবই উল্লেখযোগ্য। (১) মুসলিম ও কাফিররা যেভাবে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল তাতে উভয় দলের নৈতিক ও চারিত্রিক পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। একদিকে কাফিরদের বাহিনীতে মদপানের হিড়িক চলছিল। তাদের সঙ্গে গায়িকা ও নর্তকী বাঁদীরা এসেছিল। ফলে সেনা শিবিরে যেন এক উৎসব বয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে মুসলিমদের সেনাদলে আল্লাহভীতি ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের স্নিগ্ধ পরিবেশ বিরাজমান ছিল। তাদের মধ্যে ছিল চরম নৈতিক সংযম। তাদের মুখে বার বার আল্লাহর নাম উচ্চারিত হচ্ছিল এবং আল্লাহর কাছে দু‘আ ও করুণা ভিক্ষার মহড়া চলছিল। দুটি সৈন্য দল দেখে যে কোন ব্যক্তি অতি সহজেই জানতে পারতো যে, কোন দলটি আল্লাহর পথে লড়াই করছে এবং কোনটি শয়তানের অনুচর। (২) মুসলিমরা তাদের সংখ্যাস্বল্পতা ও সমরাস্ত্রের অভাব সত্ত্বেও যেভাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ও উন্নত অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিত সেনাদলের উপর বিজয় লাভ করলো তাতে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তারা আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত ছিল। (৩) আল্লাহর প্রবল ক্ষমতা সম্পর্কে গাফেল হয়ে যারা নিজেদের সাজ-সরঞ্জাম ও সমর্থকদের সংখ্যাধিক্যের কারণে অহংকারে মেতে উঠেছিল, তাদের জন্য এ ঘটনাটি ছিল যথার্থই একটি চাবুকের আঘাত। আল্লাহ কিভাবে মাত্র কয়েকজন অভাবী ও প্রবাসী মুহাজির এবং মদীনার কৃষক সমাজের মুষ্টিমেয় জনগোষ্ঠীর দ্বারা কুরাইশদের মতো অভিজাত, শক্তিশালী ও সমগ্র আরবীয় সমাজের মধ্যমণি গোত্রকে পরাজিত করতে পারেন, তা তারা স্বচক্ষেই দেখে নিল।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দুনিয়াতে কাফিরদের পরাজয় অতি নিশ্চিত।
২. কাফিরদের শেষ পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।
৩. জাহান্নাম অত্যন্ত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল।
৪. বদর যুদ্ধের মধ্যে মুসলিমদের জন্য অনেক শিক্ষা বিদ্যমান রয়েছে।
৫. বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাফিররা ছিল মুসলিমদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক বেশি।
৬. আল্লাহ তা‘আলা সর্বদা মুমিনদেরকে সাহায্য করে থাকেন।
৭. কাফিররা দুনিয়াতে সংখ্যায় ও অস্ত্রে অধিক হলেও মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
৮. ঈমান ও আমল সঠিক থাকলে মুমিনরাই বিজয় লাভ করবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১২. قُلْ তুমি বলো لِلَّذِيْنَ তাদেরকে যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে, سَتُغْلَبُوْنَ অচিরেই তোমরা পরাজিত হবে وَتُحْشَرُوْنَ এবং তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে اِلٰى جَهَنَّمَ জাহান্নামের দিকে । وَبِئْسَ আর তা কতই না নিকৃষ্ট اَلْمِهَادُ বিশ্রামস্থল!
১৩. قَدْ كَانَ لَكُمْ অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে اٰيَةٌ নিদর্শন, فِيْ فِئَتَيْنِ দুটি দলের মধ্যে اِلْتَقَتَا যারা পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল। فِئَةٌ একটি দল تُقَاتِلُ যুদ্ধ করছিল فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে; وَاُخْرٰى আর অপর দলটি كَافِرَةٌ কাফির। يَرَوْنَهُمْ তারা তাদেরকে দেখছিল مِثْلَيْهِمْ তাদের দ্বিগুণ رَأْيَ الْعَيْنِ বাহ্যিক দৃষ্টিতে। وَاللهُ আর আল্লাহ يُؤَيِّدُ সাহায্য করেন بِنَصْرِه তার সাহায্যের দ্বারা مَنْ يَّشَآءُ যাকে চান তাকে। اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ নিশ্চয় এর মধ্যে রয়েছে لَعِبْرَةً শিক্ষা لِاُولِي الْاَبْصَارِ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ।
সরল অনুবাদ
১২. (হে নবী!) যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বলে দাও, অচিরেই তোমরা (এ দুনিয়াতে) পরাজিত হবে এবং (পরকালে) তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে একত্রিত করা হবে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!
১৩. অবশ্যই তোমাদের জন্য নিদর্শন (শিক্ষণীয়) রয়েছে, দুটি দল পরস্পর মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে (বদরের যুদ্ধে)। [বদর যুদ্ধে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে কয়েকটি হলো- (১) কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য, (২) যুদ্ধে ফেরেশতাদের সরাসরি অংশগ্রহণ, (৩) যুদ্ধের মধ্যে মুসলিম বাহিনীতে প্রশান্তিদায়ক তন্দ্রার আগমন, (৪) কাফিরদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো, (৫) যুদ্ধের ময়দানে একমুষ্ঠি বালুর কণার দ্বারা কাফিরদের দৃষ্টিশক্তি হনন ইত্যাদি।] (তাদের মধ্যে) একটি দল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছিল; আর অপর দলটি ছিল কাফির। তারা (কাফিররা) তাদেরকে (মুমিনদেরকে) চোখের (বাহ্যিক) দৃষ্টিতে দ্বিগুণ দেখছিল। [বদর যুদ্ধের দিন কাফিরদের সংখ্যা ছিল মুসলিমদের থেকে তিন গুণের চেয়েও কিছু বেশি। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের চোখের এমন বিভ্রাট ঘটিয়েছিলেন যে, তারা মুসলিম বাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে মুসলিমদেরকেই তাদের থেকে সংখ্যার দ্বিগুণ বেশি মনে করেছিল। এটি ছিল মুসলিমদের জন্য আল্লাহর আরো একটি বিরাট সাহায্য। এর কারণে কাফিররা ভীত হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের মনোবল কিছুটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ফলে যুদ্ধ শুরু হলে তারা আর মুসলিমদের বিরুদ্ধে টিকতে পারেনি।] কিন্তু আল্লাহ যাকে চান তাকে স্বীয় সাহায্যের দ্বারা সাহায্য করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের (জ্ঞানীদের) জন্য শিক্ষা রয়েছে। [বদর যুদ্ধে জ্ঞানবান লোকদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। তবে তার মধ্যে তিনটি শিক্ষা খুবই উল্লেখযোগ্য। (১) মুসলিম ও কাফিররা যেভাবে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল তাতে উভয় দলের নৈতিক ও চারিত্রিক পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। একদিকে কাফিরদের বাহিনীতে মদপানের হিড়িক চলছিল। তাদের সঙ্গে গায়িকা ও নর্তকী বাঁদীরা এসেছিল। ফলে সেনা শিবিরে যেন এক উৎসব বয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে মুসলিমদের সেনাদলে আল্লাহভীতি ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের স্নিগ্ধ পরিবেশ বিরাজমান ছিল। তাদের মধ্যে ছিল চরম নৈতিক সংযম। তাদের মুখে বার বার আল্লাহর নাম উচ্চারিত হচ্ছিল এবং আল্লাহর কাছে দু‘আ ও করুণা ভিক্ষার মহড়া চলছিল। দুটি সৈন্য দল দেখে যে কোন ব্যক্তি অতি সহজেই জানতে পারতো যে, কোন দলটি আল্লাহর পথে লড়াই করছে এবং কোনটি শয়তানের অনুচর। (২) মুসলিমরা তাদের সংখ্যাস্বল্পতা ও সমরাস্ত্রের অভাব সত্ত্বেও যেভাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ও উন্নত অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিত সেনাদলের উপর বিজয় লাভ করলো তাতে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তারা আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত ছিল। (৩) আল্লাহর প্রবল ক্ষমতা সম্পর্কে গাফেল হয়ে যারা নিজেদের সাজ-সরঞ্জাম ও সমর্থকদের সংখ্যাধিক্যের কারণে অহংকারে মেতে উঠেছিল, তাদের জন্য এ ঘটনাটি ছিল যথার্থই একটি চাবুকের আঘাত। আল্লাহ কিভাবে মাত্র কয়েকজন অভাবী ও প্রবাসী মুহাজির এবং মদীনার কৃষক সমাজের মুষ্টিমেয় জনগোষ্ঠীর দ্বারা কুরাইশদের মতো অভিজাত, শক্তিশালী ও সমগ্র আরবীয় সমাজের মধ্যমণি গোত্রকে পরাজিত করতে পারেন, তা তারা স্বচক্ষেই দেখে নিল।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দুনিয়াতে কাফিরদের পরাজয় অতি নিশ্চিত।
২. কাফিরদের শেষ পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।
৩. জাহান্নাম অত্যন্ত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল।
৪. বদর যুদ্ধের মধ্যে মুসলিমদের জন্য অনেক শিক্ষা বিদ্যমান রয়েছে।
৫. বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাফিররা ছিল মুসলিমদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক বেশি।
৬. আল্লাহ তা‘আলা সর্বদা মুমিনদেরকে সাহায্য করে থাকেন।
৭. কাফিররা দুনিয়াতে সংখ্যায় ও অস্ত্রে অধিক হলেও মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
৮. ঈমান ও আমল সঠিক থাকলে মুমিনরাই বিজয় লাভ করবে।
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَآءِ وَالْبَنِيْنَ وَالْقَنَاطِيْرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْاَنْعَامِ وَالْحَرْثِؕ ذٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَاللهُ عِنْدَه حُسْنُ الْمَاٰبِ (১৪) قُلْ اَؤُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرٍ مِّنْ ذٰلِكُمْؕ لِلَّذِيْنَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَاَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌۢ بِالْعِبَادِ (১৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১৪. زُيِّنَ শোভনীয় করা হয়েছে لِلنَّاسِ মানুষের জন্য حُبُّ ভালোবাসা اَلشَّهَوَاتِ আকাঙ্ক্ষার সামগ্রী مِنْ থেকে اَلنِّسَآءِ নারী, وَالْبَنِيْنَ সন্তান-সন্ততি, وَالْقَنَاطِيْرِ الْمُقَنْطَرَةِ অঢেল সম্পদ مِنْ থেকে اَلذَّهَبِ স্বর্ণ وَالْفِضَّةِ এবং রৌপ্য, وَالْخَيْلِ এবং ঘোড়া اَلْمُسَوَّمَةِ চি হ্নত, وَالْاَنْعَامِ এবং গবাদি পশু وَالْحَرْثِ এবং ক্ষেত-খামার। ذٰلِكَ এগুলো مَتَاعُ ভোগসামগ্রী اَلْحَيَاةِ الدُّنْيَا দুনিয়ার জীবনের। وَاللهُ আর আল্লাহ عِنْدَه তাঁর কাছেই রয়েছে حُسْنُ উত্তম اَلْمَاٰبِ প্রত্যাবর্তনস্থল।
১৫. قُلْ তুমি বলো, اَؤُنَبِّئُكُمْ আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব بِخَيْرٍ উত্তম কিছুর مِنْ ذٰلِكُمْ এসবের চেয়ে? لِلَّذِيْنَ তাদের জন্য, যারা اِتَّقَوْا ভয় করে عِنْدَ رَبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের নিকট جَنَّاتٌ জান্নাত تَجْرِيْ প্রবাহিত হবে مِنْ تَحْتِهَا তার তলদেশ দিয়ে اَلْاَنْهَارُ নদীসমূহ; خَالِدِيْنَ তারা চিরস্থায়ী হবে فِيْهَا সেখানে। وَاَزْوَاجٌ আর স্ত্রীগণ مُطَهَّرَةٌ পবিত্র وَرِضْوَانٌ এবং সন্তুষ্টি مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে। وَاللهُ আর আল্লাহ بَصِيْرٌۢ পূর্ণ দৃষ্টিবান بِالْعِبَادِ বান্দাদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
১৪. মানুষের কাছে শোভনীয় করা হয়েছে (তাদের) আকাঙ্ক্ষার সামগ্রী- (যেমন) নারী, সন্তান-সন্ততি, স্তুপকৃত (জমাকৃত) স্বর্ণ ও রৌপ্য, চি হ্নত (প্রশিক্ষিত) ঘোড়া, গবাদি পশু ও ক্ষেত-খামার- এসবের প্রতি ভালোবাসা (আসক্তি)। (প্রকৃতপক্ষে) এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী মাত্র। [এখানে আকাঙ্ক্ষার বস্তু হিসেবে বর্ণিত জিনিসগুলো মূলত দুনিয়ার জীবনে মানুষের জন্য পরীক্ষার সামগ্রী মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা এগুলো দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। মানুষ যাতে এগুলোর ব্যাপারে কোনভাবেই বিভ্রান্তে পতিত না হয়, সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটির মাধ্যমে সাবধান করে দিয়েছেন।] আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।
১৫. (হে নবী! তাদেরকে) বলো, আমি কি তোমাদেরকে এসবের চেয়ে উত্তম কিছুর সংবাদ দেব? (আর তা হলো) যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে জান্নাত- যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত আছে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর সেখানে (তাদের জন্য) রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিবান। [আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের মতো এত বড় নিয়ামত কোনো বান্দাকে এমনিতেই দিয়ে দিবেন না। আল্লাহ তা‘আলা সকল বান্দার কর্মসমূহ অতি সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারপর তিনি যাকে এই নিয়ামত পাওয়ার উপযুক্ত মনে করবেন, কেবল তাকেই এই নিয়ামতের অধিকারী বানাবেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
৩. সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে, অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
৪. একমাত্র মুত্তাক্বীরাই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
৫. জান্নাত অসংখ্য নিয়ামতে ভরপুর।
শাব্দিক অনুবাদ
১৪. زُيِّنَ শোভনীয় করা হয়েছে لِلنَّاسِ মানুষের জন্য حُبُّ ভালোবাসা اَلشَّهَوَاتِ আকাঙ্ক্ষার সামগ্রী مِنْ থেকে اَلنِّسَآءِ নারী, وَالْبَنِيْنَ সন্তান-সন্ততি, وَالْقَنَاطِيْرِ الْمُقَنْطَرَةِ অঢেল সম্পদ مِنْ থেকে اَلذَّهَبِ স্বর্ণ وَالْفِضَّةِ এবং রৌপ্য, وَالْخَيْلِ এবং ঘোড়া اَلْمُسَوَّمَةِ চি হ্নত, وَالْاَنْعَامِ এবং গবাদি পশু وَالْحَرْثِ এবং ক্ষেত-খামার। ذٰلِكَ এগুলো مَتَاعُ ভোগসামগ্রী اَلْحَيَاةِ الدُّنْيَا দুনিয়ার জীবনের। وَاللهُ আর আল্লাহ عِنْدَه তাঁর কাছেই রয়েছে حُسْنُ উত্তম اَلْمَاٰبِ প্রত্যাবর্তনস্থল।
১৫. قُلْ তুমি বলো, اَؤُنَبِّئُكُمْ আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব بِخَيْرٍ উত্তম কিছুর مِنْ ذٰلِكُمْ এসবের চেয়ে? لِلَّذِيْنَ তাদের জন্য, যারা اِتَّقَوْا ভয় করে عِنْدَ رَبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের নিকট جَنَّاتٌ জান্নাত تَجْرِيْ প্রবাহিত হবে مِنْ تَحْتِهَا তার তলদেশ দিয়ে اَلْاَنْهَارُ নদীসমূহ; خَالِدِيْنَ তারা চিরস্থায়ী হবে فِيْهَا সেখানে। وَاَزْوَاجٌ আর স্ত্রীগণ مُطَهَّرَةٌ পবিত্র وَرِضْوَانٌ এবং সন্তুষ্টি مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে। وَاللهُ আর আল্লাহ بَصِيْرٌۢ পূর্ণ দৃষ্টিবান بِالْعِبَادِ বান্দাদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
১৪. মানুষের কাছে শোভনীয় করা হয়েছে (তাদের) আকাঙ্ক্ষার সামগ্রী- (যেমন) নারী, সন্তান-সন্ততি, স্তুপকৃত (জমাকৃত) স্বর্ণ ও রৌপ্য, চি হ্নত (প্রশিক্ষিত) ঘোড়া, গবাদি পশু ও ক্ষেত-খামার- এসবের প্রতি ভালোবাসা (আসক্তি)। (প্রকৃতপক্ষে) এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী মাত্র। [এখানে আকাঙ্ক্ষার বস্তু হিসেবে বর্ণিত জিনিসগুলো মূলত দুনিয়ার জীবনে মানুষের জন্য পরীক্ষার সামগ্রী মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা এগুলো দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। মানুষ যাতে এগুলোর ব্যাপারে কোনভাবেই বিভ্রান্তে পতিত না হয়, সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটির মাধ্যমে সাবধান করে দিয়েছেন।] আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।
১৫. (হে নবী! তাদেরকে) বলো, আমি কি তোমাদেরকে এসবের চেয়ে উত্তম কিছুর সংবাদ দেব? (আর তা হলো) যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে জান্নাত- যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত আছে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর সেখানে (তাদের জন্য) রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিবান। [আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের মতো এত বড় নিয়ামত কোনো বান্দাকে এমনিতেই দিয়ে দিবেন না। আল্লাহ তা‘আলা সকল বান্দার কর্মসমূহ অতি সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারপর তিনি যাকে এই নিয়ামত পাওয়ার উপযুক্ত মনে করবেন, কেবল তাকেই এই নিয়ামতের অধিকারী বানাবেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
৩. সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে, অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
৪. একমাত্র মুত্তাক্বীরাই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
৫. জান্নাত অসংখ্য নিয়ামতে ভরপুর।
اَلَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ (১৬) اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ (১৭)
শাব্দিক অনুবাদ
১৬. اَلَّذِيْنَ যারা يَقُوْلُوْنَ বলে, رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! اِنَّنَا নিশ্চয় আমরা اٰمَنَّا ঈমান এনেছি। فَاغْفِرْ لَنَا সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন ذُنُوْبَنَا আমাদের পাপসমূহ وَقِنَا এবং আমাদেরকে রক্ষা করুন النَّارِ عَذَابَ আগুনের শাস্তি হতে ।
১৭. اَلصَّابِرِيْنَ যারা ধৈর্যশীল, وَالصَّادِقِيْنَ এবং সত্যবাদী, وَالْقَانِتِيْنَ এবং বিনয়ী, وَالْمُنْفِقِيْنَ এবং দানকারী وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারী بِالْاَسْحَارِ শেষ রাত্রে।
সরল অনুবাদ
১৬. (জান্নাতীদের গুণাবলি হচ্ছে) যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা ঈমান এনেছি। [এখানে বুঝানো হয়েছে যে, জান্নাতে যাওয়ার জন্য প্রধান শর্তই হচ্ছে ঈমান আনয়ন করা। ঈমানদার ব্যক্তি ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।] সুতরাং আপনি আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। [যখন কোন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই ঈমান আনয়ন করে, তখন সে পূর্বে কৃত পাপসমূহের জন্য খুবই অনুতপ্ত হয় এবং এর জন্য বার বার আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। তারপর সে উক্ত পাপকর্ম থেকে সর্বদা বিরত থাকার চেষ্টা করে। কেননা সে জানে যে, এসব গুনাহের ক্ষমা অর্জন করতে না পারলে তাকে সর্বনিকৃষ্ট স্থান জাহান্নামে যেতে হবে। ফলে সে আল্লাহর কাছে জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য প্রার্থনা করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে। মূলত আল্লাহ তা‘আলা এরূপ ব্যক্তিকেই কিয়ামতের দিন জান্নাত প্রদান করবেন।]
১৭. (তারা) ধৈর্যশীল [জান্নাতী ব্যক্তিগণ দুনিয়াতে এতই ধৈর্য অবলম্বন করে যে, তারা দ্বীনের পথে দৃঢ়তার সাথে প্রতিষ্ঠিত থাকে। কোন ক্ষতি বা বিপদের মুখে তারা কখনো সাহসহারা হয় না। ব্যর্থতা তাদেরকে দুবর্ল করে না। লোভ-লালসায় তাদের পা পিছলে যায় না। যখন আপাতদৃষ্টিতে সাফল্যের কোন সম্ভাবনাই দেখা যায় না তখনো এরা মজবুতভাবে সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকে।], সত্যবাদী [জান্নাতী ব্যক্তিগণ এতটাই সত্যবাদী হয় যে, ইসলামের স্বার্থে যদি কখনো উক্ত সত্য কথাটি নিজের জীবন বিপন্নের কারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবুও তারা সেটি বলতে দ্বিধাবোধ করে না।], বিনয়ী, দানশীল [জান্নাতী ব্যক্তিগণ অতি দানশীল হয়ে থাকে। তারা স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল সকল অবস্থায় দান করতে সদা প্রস্তুত থাকে। এ কর্মের দ্বারা মূলত নিজেদের সওয়াবের পাল্লাকে ভারি থেকে আরো ভারি করে থাকে।] এবং শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী [জান্নাতী ব্যক্তিগণ দুনিয়ার জীবনে শেষ রাত্রে অধিক হারে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকে। সে সময় তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। তারা ভালো করে জানে যে, এ সময় আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য আহবান করেন। সুতরাং এ সময় যদি প্রার্থনা করা হয়, তাহলে অবশ্যই তিনি তা কবুল করবেন।]।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কৃত গুনাহের জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
২. সর্বদা জাহান্নামের শাস্তি হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
৩. ধৈর্যশীলতা, সত্যবাদিতা, বিনয়ী হওয়া, দানকারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী ইত্যাদি জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য।
শাব্দিক অনুবাদ
১৬. اَلَّذِيْنَ যারা يَقُوْلُوْنَ বলে, رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! اِنَّنَا নিশ্চয় আমরা اٰمَنَّا ঈমান এনেছি। فَاغْفِرْ لَنَا সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন ذُنُوْبَنَا আমাদের পাপসমূহ وَقِنَا এবং আমাদেরকে রক্ষা করুন النَّارِ عَذَابَ আগুনের শাস্তি হতে ।
১৭. اَلصَّابِرِيْنَ যারা ধৈর্যশীল, وَالصَّادِقِيْنَ এবং সত্যবাদী, وَالْقَانِتِيْنَ এবং বিনয়ী, وَالْمُنْفِقِيْنَ এবং দানকারী وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারী بِالْاَسْحَارِ শেষ রাত্রে।
সরল অনুবাদ
১৬. (জান্নাতীদের গুণাবলি হচ্ছে) যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা ঈমান এনেছি। [এখানে বুঝানো হয়েছে যে, জান্নাতে যাওয়ার জন্য প্রধান শর্তই হচ্ছে ঈমান আনয়ন করা। ঈমানদার ব্যক্তি ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।] সুতরাং আপনি আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। [যখন কোন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই ঈমান আনয়ন করে, তখন সে পূর্বে কৃত পাপসমূহের জন্য খুবই অনুতপ্ত হয় এবং এর জন্য বার বার আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। তারপর সে উক্ত পাপকর্ম থেকে সর্বদা বিরত থাকার চেষ্টা করে। কেননা সে জানে যে, এসব গুনাহের ক্ষমা অর্জন করতে না পারলে তাকে সর্বনিকৃষ্ট স্থান জাহান্নামে যেতে হবে। ফলে সে আল্লাহর কাছে জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য প্রার্থনা করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে। মূলত আল্লাহ তা‘আলা এরূপ ব্যক্তিকেই কিয়ামতের দিন জান্নাত প্রদান করবেন।]
১৭. (তারা) ধৈর্যশীল [জান্নাতী ব্যক্তিগণ দুনিয়াতে এতই ধৈর্য অবলম্বন করে যে, তারা দ্বীনের পথে দৃঢ়তার সাথে প্রতিষ্ঠিত থাকে। কোন ক্ষতি বা বিপদের মুখে তারা কখনো সাহসহারা হয় না। ব্যর্থতা তাদেরকে দুবর্ল করে না। লোভ-লালসায় তাদের পা পিছলে যায় না। যখন আপাতদৃষ্টিতে সাফল্যের কোন সম্ভাবনাই দেখা যায় না তখনো এরা মজবুতভাবে সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকে।], সত্যবাদী [জান্নাতী ব্যক্তিগণ এতটাই সত্যবাদী হয় যে, ইসলামের স্বার্থে যদি কখনো উক্ত সত্য কথাটি নিজের জীবন বিপন্নের কারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবুও তারা সেটি বলতে দ্বিধাবোধ করে না।], বিনয়ী, দানশীল [জান্নাতী ব্যক্তিগণ অতি দানশীল হয়ে থাকে। তারা স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল সকল অবস্থায় দান করতে সদা প্রস্তুত থাকে। এ কর্মের দ্বারা মূলত নিজেদের সওয়াবের পাল্লাকে ভারি থেকে আরো ভারি করে থাকে।] এবং শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী [জান্নাতী ব্যক্তিগণ দুনিয়ার জীবনে শেষ রাত্রে অধিক হারে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকে। সে সময় তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। তারা ভালো করে জানে যে, এ সময় আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য আহবান করেন। সুতরাং এ সময় যদি প্রার্থনা করা হয়, তাহলে অবশ্যই তিনি তা কবুল করবেন।]।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কৃত গুনাহের জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
২. সর্বদা জাহান্নামের শাস্তি হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
৩. ধৈর্যশীলতা, সত্যবাদিতা, বিনয়ী হওয়া, দানকারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী ইত্যাদি জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য।
شَهِدَ اللهُ اَنَّه لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ (১৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১৮. شَهِدَ সাক্ষ্য দেন اَللهُ আল্লাহ اَنَّه নিশ্চয় তিনি لَاۤ اِلٰهَ কোন ইলাহ নেই اِلَّا ব্যতীত هُوَ তিনি। وَالْمَلَآئِكَةُ আর ফেরেশতাগণ وَاُولُو الْعِلْمِ এবং জ্ঞানীগণ قَآئِمًا যারা প্রতিষ্ঠিত بِالْقِسْطِ ন্যায়ের উপর لَاۤ اِلٰهَ কোন ইলাহ নেই اِلَّا ব্যতীত هُوَ তিনি। اَلْعَزِيْزُ মহাপরাক্রমশালী اَلْحَكِيْمُ মহাপ্রজ্ঞাবান।
সরল অনুবাদ
১৮. আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই। [আল্লাহর একত্ববাদের ব্যাপারে আল্লাহর সাক্ষ্যই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য। কেননা একমাত্র তিনিই হচ্ছেন এমন সত্তা, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তিনি সৃষ্টির সকল বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। সমস্ত সৃষ্টিকে সূক্ষ্মভাবে তিনিই পরিচালনা করে থাকেন। আর এরূপ সত্তার সাক্ষ্য দানের পরও একত্ববাদের বিষয়ে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।] ফেরেশতাগণ [সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহর পর ফেরেশতাদের সাক্ষ্যই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। কেননা তারা হচ্ছেন এমন সত্তা, যারা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করে থাকেন এবং তারা সর্বদা আল্লাহর হুকুম পালনে ব্যস্ত থাকেন। আর তারা হচ্ছেন মহাবিশে^র ব্যবস্থাপনা কার্যনির্বাহী ও কর্মচারী। সুতরাং সৃষ্টির মধ্যে তারাই সবচেয়ে ভালো করে অবগত আছেন যে, এ মহাবিশ^ কার নির্দেশনায় পরিচালিত হয় এবং কে ইলাহ হওয়ার উপযুক্ত। যখন এরূপ সত্তাগণও আল্লাহর একত্ববাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তখন এ সত্যটি আরো দৃঢ়তা লাভ করেছে।] এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও [ফেরেশতাদের পর সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাক্ষ্য। কেননা তারা হচ্ছেন এমন ব্যক্তিত্ব, যারা সৃষ্টির অনেক বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। ফলে তারা এ সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হন যে, একমাত্র আল্লাহই সমগ্র বিশে^র ইলাহ। তিনিই সবকিছুর মালিক ও পরিচালক। তাঁকে ছাড়া অন্য কেউই ইলাহ হওয়ার যোগ্য নয়।] (সাক্ষ্য দেন যে) তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই। তিনিই মহাপরাক্রমশালী ও মহাপ্রজ্ঞাবান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ প্রমাণের জন্য তার কথাই যথেষ্ট।
২. নিরপেক্ষভাবে আল্লাহর নিদর্শনের কথা চিন্তা করলে তাওহীদের কথা স্বীকার করা আবশ্যক।
শাব্দিক অনুবাদ
১৮. شَهِدَ সাক্ষ্য দেন اَللهُ আল্লাহ اَنَّه নিশ্চয় তিনি لَاۤ اِلٰهَ কোন ইলাহ নেই اِلَّا ব্যতীত هُوَ তিনি। وَالْمَلَآئِكَةُ আর ফেরেশতাগণ وَاُولُو الْعِلْمِ এবং জ্ঞানীগণ قَآئِمًا যারা প্রতিষ্ঠিত بِالْقِسْطِ ন্যায়ের উপর لَاۤ اِلٰهَ কোন ইলাহ নেই اِلَّا ব্যতীত هُوَ তিনি। اَلْعَزِيْزُ মহাপরাক্রমশালী اَلْحَكِيْمُ মহাপ্রজ্ঞাবান।
সরল অনুবাদ
১৮. আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই। [আল্লাহর একত্ববাদের ব্যাপারে আল্লাহর সাক্ষ্যই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য। কেননা একমাত্র তিনিই হচ্ছেন এমন সত্তা, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তিনি সৃষ্টির সকল বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। সমস্ত সৃষ্টিকে সূক্ষ্মভাবে তিনিই পরিচালনা করে থাকেন। আর এরূপ সত্তার সাক্ষ্য দানের পরও একত্ববাদের বিষয়ে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।] ফেরেশতাগণ [সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহর পর ফেরেশতাদের সাক্ষ্যই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। কেননা তারা হচ্ছেন এমন সত্তা, যারা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করে থাকেন এবং তারা সর্বদা আল্লাহর হুকুম পালনে ব্যস্ত থাকেন। আর তারা হচ্ছেন মহাবিশে^র ব্যবস্থাপনা কার্যনির্বাহী ও কর্মচারী। সুতরাং সৃষ্টির মধ্যে তারাই সবচেয়ে ভালো করে অবগত আছেন যে, এ মহাবিশ^ কার নির্দেশনায় পরিচালিত হয় এবং কে ইলাহ হওয়ার উপযুক্ত। যখন এরূপ সত্তাগণও আল্লাহর একত্ববাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তখন এ সত্যটি আরো দৃঢ়তা লাভ করেছে।] এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও [ফেরেশতাদের পর সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাক্ষ্য। কেননা তারা হচ্ছেন এমন ব্যক্তিত্ব, যারা সৃষ্টির অনেক বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। ফলে তারা এ সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হন যে, একমাত্র আল্লাহই সমগ্র বিশে^র ইলাহ। তিনিই সবকিছুর মালিক ও পরিচালক। তাঁকে ছাড়া অন্য কেউই ইলাহ হওয়ার যোগ্য নয়।] (সাক্ষ্য দেন যে) তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্যিকারের) ইলাহ নেই। তিনিই মহাপরাক্রমশালী ও মহাপ্রজ্ঞাবান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ প্রমাণের জন্য তার কথাই যথেষ্ট।
২. নিরপেক্ষভাবে আল্লাহর নিদর্শনের কথা চিন্তা করলে তাওহীদের কথা স্বীকার করা আবশ্যক।
اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ۫ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْؕ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ (১৯)
শাব্দিক অনুবাদ
১৯. اِنَّ الدِّيْنَ নিশ্চয় জীবন-বিধান عِنْدَ اللهِ আল্লাহর নিকট اَلْاِسْلَامُ ইসলাম। وَمَا اخْتَلَفَ মতভেদে লিপ্ত হয়নি اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছিল اَلْكِتَابَ কিতাব اِلَّا তবে مِنْ ۢبَعْدِ তার পরও مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ যে জ্ঞান তাদের নিকট এসেছিল بَغْيًا বিদ্বেষবশত بَيْنَهُمْ পারস্পরিক। وَمَنْ يَّكْفُرْ আর অস্বীকার করবে بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে فَاِنَّ اللهَ তবে নিশ্চয় আল্লাহ سَرِيْعُ দ্রুত اَلْحِسَابِ হিসাবগ্রহণকারী।
সরল অনুবাদ
১৯. নিশ্চয় আল্লাহর কাছে (একমাত্র গ্রহণীয়) জীবন-বিধান হচ্ছে ইসলাম। [এখানে ইসলামকে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এটি ছাড়া আল্লাহর কাছে অন্য কোন জীবনব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে গ্রহণ না করে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করে, তাঁর হুকুম ব্যতীত অন্য কারো হুকুম বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকে অথবা তাঁর বিধানসমূহের মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন ঘটায় এবং নিজেই বিধানদাতার আসনে বসতে চায়, তাহলে তাঁর সমস্ত আমল পরিত্যাজ্য হিসেবে গণ্য হবে। এরূপ কর্ম আল্লাহর দৃষ্টিতে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য হবে।] কিন্তু যাদেরকে (ইতিপূর্বে) কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরও তারা কেবল পারস্পরিক বিদ্বেষের কারণে মতভেদ করেছিল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত যে) নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাবগ্রহণকারী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন-বিধান হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন-বিধান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
২. ইসলামে মতভেদ সৃষ্টি করা বৈধ নয়।
৩. ইসলামে হিংসা-বিদ্বেষ করাও বৈধ নয়।
৪. আহলে কিতাবের লোকেরা ধর্মের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করেছিল।
৫. হিংসা মতভেদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৬. আর মতভেদ সৃষ্টি করা অধপতনের অন্যতম কারণ।
৭. হিংসা মানুষের সঠিক পথ গ্রহণে অন্যতম অন্তরায়।
৮. আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১৯. اِنَّ الدِّيْنَ নিশ্চয় জীবন-বিধান عِنْدَ اللهِ আল্লাহর নিকট اَلْاِسْلَامُ ইসলাম। وَمَا اخْتَلَفَ মতভেদে লিপ্ত হয়নি اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছিল اَلْكِتَابَ কিতাব اِلَّا তবে مِنْ ۢبَعْدِ তার পরও مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ যে জ্ঞান তাদের নিকট এসেছিল بَغْيًا বিদ্বেষবশত بَيْنَهُمْ পারস্পরিক। وَمَنْ يَّكْفُرْ আর অস্বীকার করবে بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে فَاِنَّ اللهَ তবে নিশ্চয় আল্লাহ سَرِيْعُ দ্রুত اَلْحِسَابِ হিসাবগ্রহণকারী।
সরল অনুবাদ
১৯. নিশ্চয় আল্লাহর কাছে (একমাত্র গ্রহণীয়) জীবন-বিধান হচ্ছে ইসলাম। [এখানে ইসলামকে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এটি ছাড়া আল্লাহর কাছে অন্য কোন জীবনব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে গ্রহণ না করে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করে, তাঁর হুকুম ব্যতীত অন্য কারো হুকুম বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকে অথবা তাঁর বিধানসমূহের মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন ঘটায় এবং নিজেই বিধানদাতার আসনে বসতে চায়, তাহলে তাঁর সমস্ত আমল পরিত্যাজ্য হিসেবে গণ্য হবে। এরূপ কর্ম আল্লাহর দৃষ্টিতে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য হবে।] কিন্তু যাদেরকে (ইতিপূর্বে) কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরও তারা কেবল পারস্পরিক বিদ্বেষের কারণে মতভেদ করেছিল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত যে) নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাবগ্রহণকারী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন-বিধান হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন-বিধান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
২. ইসলামে মতভেদ সৃষ্টি করা বৈধ নয়।
৩. ইসলামে হিংসা-বিদ্বেষ করাও বৈধ নয়।
৪. আহলে কিতাবের লোকেরা ধর্মের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করেছিল।
৫. হিংসা মতভেদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৬. আর মতভেদ সৃষ্টি করা অধপতনের অন্যতম কারণ।
৭. হিংসা মানুষের সঠিক পথ গ্রহণে অন্যতম অন্তরায়।
৮. আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন।
فَاِنْ حَآجُّوْكَ فَقُلْ اَسْلَمْتُ وَجْهِيَ لِلّٰهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِؕ وَقُلْ لِّلَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ وَالْاُمِّيِّيْنَ اَاَسْلَمْتُمْؕ فَاِنْ اَسْلَمُوْا فَقَدِ اهْتَدَوْاۚ وَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِالْعِبَادِ (২০)
শাব্দিক অনুবাদ
২০. فَاِنْ সুতরাং যদি حَآجُّوْكَ তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় فَقُلْ তাহলে তুমি বলে দাও اَسْلَمْتُ আমি সমর্পণ করেছি وَجْهِيَ আমার চেহারাকে لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য وَمَنِ اتَّبَعَنِ এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে। وَقُلْ আর বলো, لِلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছিল اَلْكِتَابَ কিতাব وَالْاُمِّيِّيْنَ এবং নিরক্ষরদেরকে اَاَسْلَمْتُمْ তোমরা কি আত্মসমর্পণ করেছ? فَاِنْ অতঃপর যদি اَسْلَمُوْا তারা আত্মসমর্পণ করে فَقَدِ اهْتَدَوْا তাহলে তারা হেদায়াত পাবে। وَاِنْ আর যদি تَوَلَّوْا তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় فَاِنَّمَا عَلَيْكَ তবে তোমার দায়িত্ব হচ্ছে اَلْبَلَاغُ পৌঁছে দেয়া। وَاللهُ আর আল্লাহ بَصِيْرٌ পূর্ণ দৃষ্টিবান بِالْعِبَادِ বান্দাদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
২০. সুতরাং যদি তারা তোমার সাথে (ইসলাম সম্পর্কে কোনরূপ) বিতর্কে লিপ্ত হয় তাহলে তুমি (তাদেরকে) বলে দাও, আমি আমার চেহারাকে (অর্থাৎ নিজেকে) আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও (তাদের চেহারাকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছে)। [এখানে ইসলাম বিরুধীদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো- যদি কখনো তোমরা এমন কারো সাথে বিতর্কে লিপ্ত হও, যে ব্যক্তি বিতর্কে হারলেও ইসলাম গ্রহণ করার মতো নয় অথবা যে ব্যক্তি বিতর্কের যোগ্য নয় অথবা যে ব্যক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে এমন এমন যুক্তি প্রদান করে, যার উত্তর প্রদানের সক্ষমতা তোমার কাছে নেই, তাহলে তোমার উচিত হবে চুপ থাকা এবং তাকে এড়িয়ে চলা।] আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে বলো, তোমরা কি (নিজেদেরকে) সমর্পণ করেছ? অতঃপর যদি তারা সমর্পণ করে, তাহলে তারা হেদায়াত পাবে। [অর্থাৎ আমি ও আমার অনুসারীরা তো সেই নির্ভেজাল ইসলামের স্বীকৃতি দিয়েছি, যেটি আল্লাহর আসল দ্বীন ও জীবনবিধান। এখন তোমরা বলো, তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা দ্বীনের মধ্যে যে পরিবর্তন সাধন করেছ তা বাদ দিয়ে এই আসল ও প্রকৃত দ্বীনের দিকে কি তোমরা ফিরে আসবে?] আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার দায়িত্ব হচ্ছে (আল্লাহর বাণীসমূহ) কেবল পৌঁছে দেয়া। [এখানে রাসূল ও তার উত্তরসূরী তথা দাঈদের প্রধান দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর তা হলো- আল্লাহর দ্বীনকে নিজেদের সাধ্যমতো মানুষের মধ্যে প্রচার করা। এ কাজ করতে গিয়ে কখনো বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। সুতরাং কেউ যদি এই দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এখনো হেদায়াত প্রদান করেননি।] আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিবান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সত্যের পথে দাওয়াত দেয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রত্যেক অনুসারীর ওপর আবশ্যক।
২. সর্বদা বিতর্ক সৃষ্টিকারী লোকদেরকে এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. নিজেদেরকে আল্লাহর দিকে আত্মসমর্পণ করলে হেদায়াত পাওয়া যাবে।
৪. কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা বৈধ নয়।
৫. রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার অনুসারী তথা দাঈদের দায়িত্ব হচ্ছে কেবল পৌঁছে দেয়া।
শাব্দিক অনুবাদ
২০. فَاِنْ সুতরাং যদি حَآجُّوْكَ তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় فَقُلْ তাহলে তুমি বলে দাও اَسْلَمْتُ আমি সমর্পণ করেছি وَجْهِيَ আমার চেহারাকে لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য وَمَنِ اتَّبَعَنِ এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে। وَقُلْ আর বলো, لِلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছিল اَلْكِتَابَ কিতাব وَالْاُمِّيِّيْنَ এবং নিরক্ষরদেরকে اَاَسْلَمْتُمْ তোমরা কি আত্মসমর্পণ করেছ? فَاِنْ অতঃপর যদি اَسْلَمُوْا তারা আত্মসমর্পণ করে فَقَدِ اهْتَدَوْا তাহলে তারা হেদায়াত পাবে। وَاِنْ আর যদি تَوَلَّوْا তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় فَاِنَّمَا عَلَيْكَ তবে তোমার দায়িত্ব হচ্ছে اَلْبَلَاغُ পৌঁছে দেয়া। وَاللهُ আর আল্লাহ بَصِيْرٌ পূর্ণ দৃষ্টিবান بِالْعِبَادِ বান্দাদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
২০. সুতরাং যদি তারা তোমার সাথে (ইসলাম সম্পর্কে কোনরূপ) বিতর্কে লিপ্ত হয় তাহলে তুমি (তাদেরকে) বলে দাও, আমি আমার চেহারাকে (অর্থাৎ নিজেকে) আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও (তাদের চেহারাকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছে)। [এখানে ইসলাম বিরুধীদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো- যদি কখনো তোমরা এমন কারো সাথে বিতর্কে লিপ্ত হও, যে ব্যক্তি বিতর্কে হারলেও ইসলাম গ্রহণ করার মতো নয় অথবা যে ব্যক্তি বিতর্কের যোগ্য নয় অথবা যে ব্যক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে এমন এমন যুক্তি প্রদান করে, যার উত্তর প্রদানের সক্ষমতা তোমার কাছে নেই, তাহলে তোমার উচিত হবে চুপ থাকা এবং তাকে এড়িয়ে চলা।] আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে বলো, তোমরা কি (নিজেদেরকে) সমর্পণ করেছ? অতঃপর যদি তারা সমর্পণ করে, তাহলে তারা হেদায়াত পাবে। [অর্থাৎ আমি ও আমার অনুসারীরা তো সেই নির্ভেজাল ইসলামের স্বীকৃতি দিয়েছি, যেটি আল্লাহর আসল দ্বীন ও জীবনবিধান। এখন তোমরা বলো, তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা দ্বীনের মধ্যে যে পরিবর্তন সাধন করেছ তা বাদ দিয়ে এই আসল ও প্রকৃত দ্বীনের দিকে কি তোমরা ফিরে আসবে?] আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার দায়িত্ব হচ্ছে (আল্লাহর বাণীসমূহ) কেবল পৌঁছে দেয়া। [এখানে রাসূল ও তার উত্তরসূরী তথা দাঈদের প্রধান দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর তা হলো- আল্লাহর দ্বীনকে নিজেদের সাধ্যমতো মানুষের মধ্যে প্রচার করা। এ কাজ করতে গিয়ে কখনো বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। সুতরাং কেউ যদি এই দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এখনো হেদায়াত প্রদান করেননি।] আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিবান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সত্যের পথে দাওয়াত দেয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রত্যেক অনুসারীর ওপর আবশ্যক।
২. সর্বদা বিতর্ক সৃষ্টিকারী লোকদেরকে এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. নিজেদেরকে আল্লাহর দিকে আত্মসমর্পণ করলে হেদায়াত পাওয়া যাবে।
৪. কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা বৈধ নয়।
৫. রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার অনুসারী তথা দাঈদের দায়িত্ব হচ্ছে কেবল পৌঁছে দেয়া।
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ (২১) اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِؗ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ (২২)
শাব্দিক অনুবাদ
২১. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা يَكْفُرُوْنَ অস্বীকার করে بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে, وَيَقْتُلُوْنَ আর তারা হত্যা করে اَلنَّبِيِّيْنَ নবীদেরকে بِغَيْرِ حَقٍّ অন্যায়ভাবে وَيَقْتُلُوْنَ এবং হত্যা করে (তাদেরকে) اَلَّذِيْنَ যারা يَأْمُرُوْنَ নির্দেশ দেয় بِالْقِسْطِ ন্যায়ের مِنَ النَّاسِ মানুষের মধ্য হতে فَبَشِّرْهُمْ অতএব তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও بِعَذَابٍ শাস্তির اَلِيْمٍ যন্ত্রণাদায়ক।
২২. اُولٰٓئِكَ তারা ঐসব লোক اَلَّذِيْنَ যাদের حَبِطَتْ নষ্ট হয়ে গেছে اَعْمَالُهُمْ তাদের আমলসমূহ فِي الدُّنْيَا দুনিয়ায় وَالْاٰخِرَةِ ও আখিরাতে। وَمَا لَهُمْ আর তাদের জন্য থাকবে না مِنْ نَّاصِرِيْنَ কোন সাহায্যকারী।
সরল অনুবাদ
২১. নিশ্চয় যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার (অবিশ্বাস) করে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানুষের মধ্য হতে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করে, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। [এখানে মূলত এসব কর্ম সম্পাদনকারীদেরকে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা এসব কর্ম করে বেড়ায়, তারা মনে করে যে, তারা খুব ভালো কাজ করছে এবং এজন্য তারা বিশেষ পুরস্কারের আশাবাদী। অতঃপর তারা এসব কর্মের কারণে খুবই আনন্দিত হয়। অথচ প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে তার উল্টো। কেননা এসব কর্ম মারাত্মক অপরাধ- যা তাদের জন্য জাহান্নামের মধ্যে অপেক্ষা করছে।]
২২. এরাই তো ঐসব লোক, যাদের সকল আমল (সৎকর্ম) দুনিয়া ও আখিরাতে বরবাদ হয়ে গেছে। (পক্ষান্তরে) তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। [যারা এসব অপকর্ম করে বেড়ায় তারা মূলত কোন ধরনের পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নয়। তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে যেমনিভাবে সমস্ত মানুষের কাছে অপরাধী, অনুরূপভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণে পরকালে আল্লাহর আদালতেও আরো মারাত্মক অপরাধী। আর তাদের এসব কর্ম এতটাই বড় অপরাধ যে, তাদের দ্বারা সংঘটিত ভালো কর্মগুলো কোন কাজে আসে না। ফলে তাদের সমস্ত আমলই বরবাদ হয়ে যায়।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা মারাত্মক অন্যায়।
২. ন্যায়পরায়ণ লোকদেরকে হত্যা করাও বড় ধরনের অন্যায়।
৩. আল্লাহর নিদর্শনসমূহেকে অস্বীকার করাটাও গুরুতর অপরাধ।
৪. এসব অপরাধের কারণে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল আমল বরবাদ হয়ে যায়।
৫. পরকালে এদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না।
শাব্দিক অনুবাদ
২১. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা يَكْفُرُوْنَ অস্বীকার করে بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে, وَيَقْتُلُوْنَ আর তারা হত্যা করে اَلنَّبِيِّيْنَ নবীদেরকে بِغَيْرِ حَقٍّ অন্যায়ভাবে وَيَقْتُلُوْنَ এবং হত্যা করে (তাদেরকে) اَلَّذِيْنَ যারা يَأْمُرُوْنَ নির্দেশ দেয় بِالْقِسْطِ ন্যায়ের مِنَ النَّاسِ মানুষের মধ্য হতে فَبَشِّرْهُمْ অতএব তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও بِعَذَابٍ শাস্তির اَلِيْمٍ যন্ত্রণাদায়ক।
২২. اُولٰٓئِكَ তারা ঐসব লোক اَلَّذِيْنَ যাদের حَبِطَتْ নষ্ট হয়ে গেছে اَعْمَالُهُمْ তাদের আমলসমূহ فِي الدُّنْيَا দুনিয়ায় وَالْاٰخِرَةِ ও আখিরাতে। وَمَا لَهُمْ আর তাদের জন্য থাকবে না مِنْ نَّاصِرِيْنَ কোন সাহায্যকারী।
সরল অনুবাদ
২১. নিশ্চয় যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার (অবিশ্বাস) করে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানুষের মধ্য হতে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করে, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। [এখানে মূলত এসব কর্ম সম্পাদনকারীদেরকে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা এসব কর্ম করে বেড়ায়, তারা মনে করে যে, তারা খুব ভালো কাজ করছে এবং এজন্য তারা বিশেষ পুরস্কারের আশাবাদী। অতঃপর তারা এসব কর্মের কারণে খুবই আনন্দিত হয়। অথচ প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে তার উল্টো। কেননা এসব কর্ম মারাত্মক অপরাধ- যা তাদের জন্য জাহান্নামের মধ্যে অপেক্ষা করছে।]
২২. এরাই তো ঐসব লোক, যাদের সকল আমল (সৎকর্ম) দুনিয়া ও আখিরাতে বরবাদ হয়ে গেছে। (পক্ষান্তরে) তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। [যারা এসব অপকর্ম করে বেড়ায় তারা মূলত কোন ধরনের পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নয়। তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে যেমনিভাবে সমস্ত মানুষের কাছে অপরাধী, অনুরূপভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণে পরকালে আল্লাহর আদালতেও আরো মারাত্মক অপরাধী। আর তাদের এসব কর্ম এতটাই বড় অপরাধ যে, তাদের দ্বারা সংঘটিত ভালো কর্মগুলো কোন কাজে আসে না। ফলে তাদের সমস্ত আমলই বরবাদ হয়ে যায়।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা মারাত্মক অন্যায়।
২. ন্যায়পরায়ণ লোকদেরকে হত্যা করাও বড় ধরনের অন্যায়।
৩. আল্লাহর নিদর্শনসমূহেকে অস্বীকার করাটাও গুরুতর অপরাধ।
৪. এসব অপরাধের কারণে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল আমল বরবাদ হয়ে যায়।
৫. পরকালে এদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না।
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ اِلٰى كِتَابِ اللهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلّٰى فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ وَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ (২৩) ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَاتٍ وَّغَرَّهُمْ فِيْ دِيْنِهِمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ (২৪)
শাব্দিক অনুবাদ
২৩. اَلَمْ تَرَ তুমি কি লক্ষ্য করনি, اِلَى দিকে اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوْا দেয়া হয়েছিল نَصِيْبًا কিছু অংশ الْكِتَابِ مِنَ কিতাবের? يُدْعَوْنَ তাদেরকে যখন আহবান করা হয় اِلٰى দিকে كِتَابِ اللهِ আল্লাহর কিতাবের لِيَحْكُمَ যাতে মীমাংসা করা যায় بَيْنَهُمْ তাদের মধ্যে, ثُمَّ তারপর يَتَوَلّٰى মুখ ফিরিয়ে নেয় فَرِيْقٌ একটি দল مِنْهُمْ তাদের মধ্যে। وَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ আর তারাই তো অমান্যকারী।
২৪. ذٰلِكَ এটা بِاَنَّهُمْ এজন্য যে, قَالُوْا তারা বলে, لَنْ تَمَسَّنَا আমাদেরকে কখনো স্পর্শ করবে না اَلنَّارُ আগুন اِلَّا তবে اَيَّامًا কয়েকটি দিন مَعْدُوْدَاتٍ নির্দিষ্ট। وَغَرَّهُمْ আর তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে فِيْ دِيْنِهِمْ তাদের দ্বীনের ব্যাপারে مَا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ তারা যা মিথ্যা রচনা করেছিল।
সরল অনুবাদ
২৩. (হে নবী!) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ (কুরআন ছাড়া অন্যান্য আসমানী কিতাবের জ্ঞান) দেয়া হয়েছিল? [এখানে ‘‘যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছিল’’ বলতে তাওরাত ও ইঞ্জীল থেকে কিছু জ্ঞান লাভকারী ইহুদী ও খ্রিস্টানদের আলেমদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা এসব আলেমদের নিকট যখন প্রকৃত ইসলামের কথা বলা হতো, তখন তাদের অধিকাংশই নিজেদের গোঁড়ামি ও অল্প জ্ঞানের কারণে মেনে নিতে অস্বীকার করত। অনুরূপভাবে অত্র আয়াতটি বর্তমান যুগের বিদআতীদের ক্ষেত্রেও একটি উত্তম উদাহরণ। কেননা দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রে তারাও অনুরূপ আচরণ করে থাকে, যা তাদের নিজেদের জন্য এবং সমস্ত মুসলিম বিশে^র জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।] তাদেরকে যখন আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এর দিকে আহবান করা হলো, যাতে তাদের মধ্যে (বিদ্যমান বিবাদ) মীমাংসা করা যায়, তখন তাদের মধ্যে একটি দল মুখ ফিরিয়ে নিল। [প্রত্যেক যুগেই সত্যের বিরুদ্ধে এরূপ একটি দল বিদ্যমান থাকে। তাদের সামনে যখনই কোন সত্য উপস্থাপন করা হয়, তখনই তারা এর বিরুধিতা করে থাকে। অথচ তারা সমাজে সম্মানিত ও গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত থাকে। তারা নিজেদের সম্মান ও সুখ্যাতি হারানোর ভয়ে নিজেদের মতের বিরুধী সত্যকে কখনো মেনে নিতে রাজি নয়।] আর তারাই তো অমান্যকারী।
২৪. এটা এজন্য যে, তারা বলে, নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন ছাড়া আগুন (জাহান্নাম) আমাদেরকে কখনো স্পর্শ করবে না। (মূলত) তারা যা মিথ্যা রচনা করেছিল তা তাদের দ্বীনের ব্যাপারে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে। [এটি হচ্ছে ইহুদী সম্প্রদায়ের একটি চরম মিথ্যাচার। তারা দাবী করে যে, জান্নাত কেবল তাদের জন্যই নির্দিষ্ট। দুনিয়াতে তারা যা কিছুই করে বেড়াক না কেন পরকালে তারা জান্নাত পাবেই। তাদের সকল অপরাধ আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেবেন। তাদের বংশধরকে আগুন কখনো স্পর্শ করতে পারবে না। কেননা তারা তারা অমুকের সন্তান, অমুকের উম্মত এবং তারা অমুকের অমুকের হাতে হাত রেখেছে। যদি কখনো তাদের কোন পাপের কারণে জাহান্নামে যেতেও হয়, তখন মাত্র কয়েক দিন শাস্তি ভোগ করবে। শরীর থেকে পাপের দাগ শেষ হয়ে গেলেই তাদেরকে জাহান্নাম থেকে উঠিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তাদের এরূপ ধারণার কারণেই তারা পৃথিবীতে নির্ভীকভাবে কঠিন থেকে কঠিনতর অপরাধ করে বেড়ায়; অথচ কোন অবস্থাতেই তাদের মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয় না। সুতরাং তাদের এ ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত। এর কারণে তারা প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হচ্ছে এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিচ্ছে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সর্বদা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিবাদ মীমাংসা করতে হবে।
২. আল্লাহর দিকে আহবান করলে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না।
৩. সর্বদা একটি দল সত্যের বিরোধিতা করেই থাকে।
৪. সত্যের বিরোধীরা কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।
৫. দ্বীনের মধ্যে কোন কিছু বিকৃত ঘটানো যাবে না।
৬. দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি ঘটানো নিজেদের ধোঁকা দেয়ার শামিল।
শাব্দিক অনুবাদ
২৩. اَلَمْ تَرَ তুমি কি লক্ষ্য করনি, اِلَى দিকে اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوْا দেয়া হয়েছিল نَصِيْبًا কিছু অংশ الْكِتَابِ مِنَ কিতাবের? يُدْعَوْنَ তাদেরকে যখন আহবান করা হয় اِلٰى দিকে كِتَابِ اللهِ আল্লাহর কিতাবের لِيَحْكُمَ যাতে মীমাংসা করা যায় بَيْنَهُمْ তাদের মধ্যে, ثُمَّ তারপর يَتَوَلّٰى মুখ ফিরিয়ে নেয় فَرِيْقٌ একটি দল مِنْهُمْ তাদের মধ্যে। وَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ আর তারাই তো অমান্যকারী।
২৪. ذٰلِكَ এটা بِاَنَّهُمْ এজন্য যে, قَالُوْا তারা বলে, لَنْ تَمَسَّنَا আমাদেরকে কখনো স্পর্শ করবে না اَلنَّارُ আগুন اِلَّا তবে اَيَّامًا কয়েকটি দিন مَعْدُوْدَاتٍ নির্দিষ্ট। وَغَرَّهُمْ আর তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে فِيْ دِيْنِهِمْ তাদের দ্বীনের ব্যাপারে مَا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ তারা যা মিথ্যা রচনা করেছিল।
সরল অনুবাদ
২৩. (হে নবী!) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ (কুরআন ছাড়া অন্যান্য আসমানী কিতাবের জ্ঞান) দেয়া হয়েছিল? [এখানে ‘‘যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছিল’’ বলতে তাওরাত ও ইঞ্জীল থেকে কিছু জ্ঞান লাভকারী ইহুদী ও খ্রিস্টানদের আলেমদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা এসব আলেমদের নিকট যখন প্রকৃত ইসলামের কথা বলা হতো, তখন তাদের অধিকাংশই নিজেদের গোঁড়ামি ও অল্প জ্ঞানের কারণে মেনে নিতে অস্বীকার করত। অনুরূপভাবে অত্র আয়াতটি বর্তমান যুগের বিদআতীদের ক্ষেত্রেও একটি উত্তম উদাহরণ। কেননা দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রে তারাও অনুরূপ আচরণ করে থাকে, যা তাদের নিজেদের জন্য এবং সমস্ত মুসলিম বিশে^র জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।] তাদেরকে যখন আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এর দিকে আহবান করা হলো, যাতে তাদের মধ্যে (বিদ্যমান বিবাদ) মীমাংসা করা যায়, তখন তাদের মধ্যে একটি দল মুখ ফিরিয়ে নিল। [প্রত্যেক যুগেই সত্যের বিরুদ্ধে এরূপ একটি দল বিদ্যমান থাকে। তাদের সামনে যখনই কোন সত্য উপস্থাপন করা হয়, তখনই তারা এর বিরুধিতা করে থাকে। অথচ তারা সমাজে সম্মানিত ও গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত থাকে। তারা নিজেদের সম্মান ও সুখ্যাতি হারানোর ভয়ে নিজেদের মতের বিরুধী সত্যকে কখনো মেনে নিতে রাজি নয়।] আর তারাই তো অমান্যকারী।
২৪. এটা এজন্য যে, তারা বলে, নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন ছাড়া আগুন (জাহান্নাম) আমাদেরকে কখনো স্পর্শ করবে না। (মূলত) তারা যা মিথ্যা রচনা করেছিল তা তাদের দ্বীনের ব্যাপারে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে। [এটি হচ্ছে ইহুদী সম্প্রদায়ের একটি চরম মিথ্যাচার। তারা দাবী করে যে, জান্নাত কেবল তাদের জন্যই নির্দিষ্ট। দুনিয়াতে তারা যা কিছুই করে বেড়াক না কেন পরকালে তারা জান্নাত পাবেই। তাদের সকল অপরাধ আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেবেন। তাদের বংশধরকে আগুন কখনো স্পর্শ করতে পারবে না। কেননা তারা তারা অমুকের সন্তান, অমুকের উম্মত এবং তারা অমুকের অমুকের হাতে হাত রেখেছে। যদি কখনো তাদের কোন পাপের কারণে জাহান্নামে যেতেও হয়, তখন মাত্র কয়েক দিন শাস্তি ভোগ করবে। শরীর থেকে পাপের দাগ শেষ হয়ে গেলেই তাদেরকে জাহান্নাম থেকে উঠিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তাদের এরূপ ধারণার কারণেই তারা পৃথিবীতে নির্ভীকভাবে কঠিন থেকে কঠিনতর অপরাধ করে বেড়ায়; অথচ কোন অবস্থাতেই তাদের মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয় না। সুতরাং তাদের এ ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত। এর কারণে তারা প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হচ্ছে এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিচ্ছে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সর্বদা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিবাদ মীমাংসা করতে হবে।
২. আল্লাহর দিকে আহবান করলে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না।
৩. সর্বদা একটি দল সত্যের বিরোধিতা করেই থাকে।
৪. সত্যের বিরোধীরা কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।
৫. দ্বীনের মধ্যে কোন কিছু বিকৃত ঘটানো যাবে না।
৬. দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি ঘটানো নিজেদের ধোঁকা দেয়ার শামিল।
فَكَيْفَ اِذَا جَمَعْنَاهُمْ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيْهِ۫ وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ (২৫) قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (২৬) تُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِؗ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّؗ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ (২৭)
শাব্দিক অনুবাদ
২৫. فَكَيْفَ তখন কেমন অবস্থা হবে, اِذَا যখন جَمَعْنَاهُمْ আমি তাদেরকে একত্র করব لِيَوْمٍ এমন এক দিনে لَا رَيْبَ কোন সন্দেহ নেই فِيْهِ যে ব্যাপারে। وَوُفِّيَتْ আর দেয়া হবে كُلُّ প্রত্যেক نَفْسٍ ব্যক্তিকে مَا كَسَبَتْ যা সে অর্জন করেছে وَهُمْ এবং তাদের উপর لَا يُظْلَمُوْنَ কোন অন্যায় করা হবে না।
২৬. قُلْ বলো اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! مَالِكَ মালিক اَلْمُلْكِ রাজত্বের تُؤْتِي আপনি দান করেন اَلْمُلْكَ রাজত্ব مَنْ যাকে تَشَآءُ আপনি ইচ্ছা করেন وَتَنْزِعُ এবং আপনি কেড়ে নেন اَلْمُلْكَ রাজত্ব مِمَّنْ যার থেকে تَشَآءُ আপনি ইচ্ছা করেন। وَتُعِزُّ আর আপনি সম্মানিত করেন مَنْ যাকে تَشَآءُ আপনি ইচ্ছা করেন وَتُذِلُّ এবং আপনি অপদস্থ করেন مَنْ যাকে تَشَآءُ আপনি ইচ্ছা করেন। بِيَدِكَ আপনারই হাতে اَلْخَيْرُ কল্যাণ। اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ নিশ্চয় আপনিই সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২৭. تُوْلِجُ আপনিই প্রবেশ করান اَللَّيْلَ রাতকে فِي النَّهَارِ দিনের মধ্যে وَتُوْلِجُ এবং আপনিই প্রবেশ করান اَلنَّهَارَ দিনকে فِي اللَّيْلِ রাতের মধ্যে। وَتُخْرِجُ আপনি বের করেন اَلْحَيَّ জীবিতকে مِنَ الْمَيِّتِ মৃত হতে وَتُخْرِجُ এবং আপনি বের করেন اَلْمَيِّتَ মৃতকে مِنَ الْحَيِّ জীবিত হতে। وَتَرْزُقُ আর আপনি রিযিক দান করেন مَنْ تَشَآءُ যাকে আপনি ইচ্ছা করেন بِغَيْرِ حِسَابٍ হিসাব ছাড়া।
সরল অনুবাদ
২৫. অতঃপর তখন কেমন অবস্থা হবে, যখন আমি তাদেরকে একত্র করব এমন এক দিনে, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর প্রত্যেক ব্যক্তিকে (প্রতিদানস্বরূপ) পুরোপুরি তাই দেয়া হবে, যা সে অর্জন করেছে এবং তাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। [প্রতিদান প্রদানের ক্ষেত্রে কারো সাথে বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না; অর্থাৎ কারো নেকী থেকে বিন্দু পরিমাণ অংশ বিনা কারণে কেটে নেয়া হবে না। বরং কেউ যদি বিন্দু পরিমাণ ভালো প্রতিদান পাওয়ার যোগ্য হয়ে থাকে, তাহলে তাকে তা-ই প্রদান করা হবে। আবার কেউ যদি কোন বিন্দু পরিমাণ শাস্তির উপযুক্ত হয়, তাহলে তাকে তা-ই প্রদান করা হবে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যদি কোন বান্দার উপর দয়া পরবশ হয়ে তার কোন গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তাহলে সেটি ভিন্ন কথা। অনুরূপভাবে ইহুদীদের এসব মিথ্যা দাবী কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না; বরং সেদিন তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অনুযায়ীই যথাযথ প্রতিদান প্রদান করা হবে।]
২৬. (হে নবী!) বলো, রাজত্বের মালিক হে আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে রাজত্ব দান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন। আর আপনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপদস্থ করেন। (মূলত) সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয় আপনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। [অত্র আয়াতে সীমাহীন ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে এবং এটি বুঝানো হয়েছে যে, দুনিয়ার সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর ক্ষমতার কাছে একেবারেই তুচ্ছ। দুনিয়াবাসীদের মধ্যে ক্ষমতার বিন্যাস ও তাঁর পরিবর্তন তিনিই ঘটিয়ে থাকেন। অনুরূপভাবে কাউকে সম্মানিত করা অথবা অপদস্থ করার ক্ষমতাও আল্লাহর হাতে। আর তিনি সবকিছুই বান্দার কল্যাণের জন্য করে থাকেন। বান্দা যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ততদিন পর্যন্ত অনুগ্রহস্বরূপ অনেক সম্মান অথবা রাজত্ব দান করেন। কিন্তু যখনই তারা আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, তখন থেকে সম্মান ও রাজত্ব ছিনিয়ে নেন। অতঃপর তিনি উক্ত স্থানে এমন কাউকে অধিষ্ঠিত করেন, যারা তাঁর হুকুমসমূহকে যথাযথভাবে বাস্তাবয়ন করবে অথবা তাদের উপর এমন জালিম শাসককে চাপিয়ে দেবেন, যারা তাদেরকে অনেক কষ্ট দেবে- যাতে তারা আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারে।]
২৭. আপনিই রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। [এখানে ঋতু পরিবর্তনের কথা বুঝানো হয়েছে। কারণ যখন রাত লম্বা হয়, তখন দিন ছোট হয়ে যায়; অর্থাৎ দিনের কিছু অংশ রাতের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আবার যখন দিন লম্বা হয়, তখন রাত ছোট হয়ে যায়; অর্থাৎ রাতের কিছু অংশ দিনের মধ্যে ঢুকে পড়ে।] আপনি মৃত হতে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত হতে মৃতকে বের করেন। [এক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থ এবং রূপক অর্থ- উভয়টিই সমানভাবে প্রযোজ্য। যখন এটির প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা হবে তখন এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। যেমন- (১) আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃতপক্ষেই মৃত মানুষকে জীবিত করতে সক্ষম। যেমনিভাবে উযাইর (আঃ)-কে দীর্ঘ ১০০ বছর মৃত অবস্থায় রাখার পর পুনরায় জীবিত করেছিলেন। (২) আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত মানুষকেই মৃত্যু দান করেন; অতঃপর তিনিই কিয়ামতের দিন এই মৃত অবস্থা থেকে জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত করবেন।আর যদি এর রূপক অর্থ গ্রহণ করা হয়, তখন এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। যেমন- (১) মানুষ মাতৃগর্ভে যে বীর্য থেকে সৃষ্টি হয়, সেটিকে যদি মৃত হিসেবে ধরা হয়, তাহলে মানুষ সর্বপ্রথম মৃত অবস্থা থেকে জীবিত হয় এবং দুনিয়ার জীবনের হায়াত শেষ হয়ে গেলে পুনরায় মৃত অবস্থায় চলে যায়। (২) যদি মৃত বলতে ঈমানের অনুপস্থিতি তথা কাফিরদেরকে এবং জীবিত বলতে ঈমানের উপস্থিতি তথা ঈমানদারদেরকে বুঝানো হয়, তাহলে এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে কাফির হতে মুমিন এবং মুমিন হতে কাফিরে পরিবর্তন করিয়ে দেন।] আর আপনি যাকে ইচ্ছা অগণিত রিযিক দান করেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিয়ামতের দিনের পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ।
২. কিয়ামতের দিন সকলকে তাদের আমলনামা প্রদান করা হবে।
৩. কিয়ামতের দিন সকলকে তাদের প্রতিদান দেয়া হবে।
৪. কিয়ামতের দিন প্রতিদান প্রদানের ক্ষেত্রে কাউকে যুলুম করা হবে না।
৫. সমস্ত রাজত্বের একচ্ছত্র অধিকারী হলেন আল্লাহ তা‘আলা।
৬. কাউকে রাজত্ব প্রদান করা অথবা ছিনিয়ে নেয়া, সম্মানিত করা অথবা অপমানিত করা, কল্যাণ অথবা অকল্যাণ দান করা ইত্যাদি সবকিছু আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন।
৭. আল্লাহ তা‘আলাই রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রের মধ্যে অনুপ্রবেশ করান।
৮. আল্লাহ তা‘আলাই মৃত হতে জীবিতকে এবং জীবিত হতে মৃতকে বের করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।
৯. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক তথা জীবিকা দান করে থাকেন।
শাব্দিক অনুবাদ
২৫. فَكَيْفَ তখন কেমন অবস্থা হবে, اِذَا যখন جَمَعْنَاهُمْ আমি তাদেরকে একত্র করব لِيَوْمٍ এমন এক দিনে لَا رَيْبَ কোন সন্দেহ নেই فِيْهِ যে ব্যাপারে। وَوُفِّيَتْ আর দেয়া হবে كُلُّ প্রত্যেক نَفْسٍ ব্যক্তিকে مَا كَسَبَتْ যা সে অর্জন করেছে وَهُمْ এবং তাদের উপর لَا يُظْلَمُوْنَ কোন অন্যায় করা হবে না।
২৬. قُلْ বলো اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! مَالِكَ মালিক اَلْمُلْكِ রাজত্বের تُؤْتِي আপনি দান করেন اَلْمُلْكَ রাজত্ব مَنْ যাকে تَشَآءُ আপনি ইচ্ছা করেন وَتَنْزِعُ এবং আপনি কেড়ে নেন اَلْمُلْكَ রাজত্ব مِمَّنْ যার থেকে تَشَآءُ আপনি ইচ্ছা করেন। وَتُعِزُّ আর আপনি সম্মানিত করেন مَنْ যাকে تَشَآءُ আপনি ইচ্ছা করেন وَتُذِلُّ এবং আপনি অপদস্থ করেন مَنْ যাকে تَشَآءُ আপনি ইচ্ছা করেন। بِيَدِكَ আপনারই হাতে اَلْخَيْرُ কল্যাণ। اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ নিশ্চয় আপনিই সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২৭. تُوْلِجُ আপনিই প্রবেশ করান اَللَّيْلَ রাতকে فِي النَّهَارِ দিনের মধ্যে وَتُوْلِجُ এবং আপনিই প্রবেশ করান اَلنَّهَارَ দিনকে فِي اللَّيْلِ রাতের মধ্যে। وَتُخْرِجُ আপনি বের করেন اَلْحَيَّ জীবিতকে مِنَ الْمَيِّتِ মৃত হতে وَتُخْرِجُ এবং আপনি বের করেন اَلْمَيِّتَ মৃতকে مِنَ الْحَيِّ জীবিত হতে। وَتَرْزُقُ আর আপনি রিযিক দান করেন مَنْ تَشَآءُ যাকে আপনি ইচ্ছা করেন بِغَيْرِ حِسَابٍ হিসাব ছাড়া।
সরল অনুবাদ
২৫. অতঃপর তখন কেমন অবস্থা হবে, যখন আমি তাদেরকে একত্র করব এমন এক দিনে, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর প্রত্যেক ব্যক্তিকে (প্রতিদানস্বরূপ) পুরোপুরি তাই দেয়া হবে, যা সে অর্জন করেছে এবং তাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। [প্রতিদান প্রদানের ক্ষেত্রে কারো সাথে বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না; অর্থাৎ কারো নেকী থেকে বিন্দু পরিমাণ অংশ বিনা কারণে কেটে নেয়া হবে না। বরং কেউ যদি বিন্দু পরিমাণ ভালো প্রতিদান পাওয়ার যোগ্য হয়ে থাকে, তাহলে তাকে তা-ই প্রদান করা হবে। আবার কেউ যদি কোন বিন্দু পরিমাণ শাস্তির উপযুক্ত হয়, তাহলে তাকে তা-ই প্রদান করা হবে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যদি কোন বান্দার উপর দয়া পরবশ হয়ে তার কোন গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তাহলে সেটি ভিন্ন কথা। অনুরূপভাবে ইহুদীদের এসব মিথ্যা দাবী কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না; বরং সেদিন তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অনুযায়ীই যথাযথ প্রতিদান প্রদান করা হবে।]
২৬. (হে নবী!) বলো, রাজত্বের মালিক হে আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে রাজত্ব দান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন। আর আপনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপদস্থ করেন। (মূলত) সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয় আপনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। [অত্র আয়াতে সীমাহীন ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে এবং এটি বুঝানো হয়েছে যে, দুনিয়ার সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর ক্ষমতার কাছে একেবারেই তুচ্ছ। দুনিয়াবাসীদের মধ্যে ক্ষমতার বিন্যাস ও তাঁর পরিবর্তন তিনিই ঘটিয়ে থাকেন। অনুরূপভাবে কাউকে সম্মানিত করা অথবা অপদস্থ করার ক্ষমতাও আল্লাহর হাতে। আর তিনি সবকিছুই বান্দার কল্যাণের জন্য করে থাকেন। বান্দা যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ততদিন পর্যন্ত অনুগ্রহস্বরূপ অনেক সম্মান অথবা রাজত্ব দান করেন। কিন্তু যখনই তারা আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, তখন থেকে সম্মান ও রাজত্ব ছিনিয়ে নেন। অতঃপর তিনি উক্ত স্থানে এমন কাউকে অধিষ্ঠিত করেন, যারা তাঁর হুকুমসমূহকে যথাযথভাবে বাস্তাবয়ন করবে অথবা তাদের উপর এমন জালিম শাসককে চাপিয়ে দেবেন, যারা তাদেরকে অনেক কষ্ট দেবে- যাতে তারা আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারে।]
২৭. আপনিই রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। [এখানে ঋতু পরিবর্তনের কথা বুঝানো হয়েছে। কারণ যখন রাত লম্বা হয়, তখন দিন ছোট হয়ে যায়; অর্থাৎ দিনের কিছু অংশ রাতের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আবার যখন দিন লম্বা হয়, তখন রাত ছোট হয়ে যায়; অর্থাৎ রাতের কিছু অংশ দিনের মধ্যে ঢুকে পড়ে।] আপনি মৃত হতে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত হতে মৃতকে বের করেন। [এক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থ এবং রূপক অর্থ- উভয়টিই সমানভাবে প্রযোজ্য। যখন এটির প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা হবে তখন এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। যেমন- (১) আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃতপক্ষেই মৃত মানুষকে জীবিত করতে সক্ষম। যেমনিভাবে উযাইর (আঃ)-কে দীর্ঘ ১০০ বছর মৃত অবস্থায় রাখার পর পুনরায় জীবিত করেছিলেন। (২) আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত মানুষকেই মৃত্যু দান করেন; অতঃপর তিনিই কিয়ামতের দিন এই মৃত অবস্থা থেকে জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত করবেন।আর যদি এর রূপক অর্থ গ্রহণ করা হয়, তখন এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। যেমন- (১) মানুষ মাতৃগর্ভে যে বীর্য থেকে সৃষ্টি হয়, সেটিকে যদি মৃত হিসেবে ধরা হয়, তাহলে মানুষ সর্বপ্রথম মৃত অবস্থা থেকে জীবিত হয় এবং দুনিয়ার জীবনের হায়াত শেষ হয়ে গেলে পুনরায় মৃত অবস্থায় চলে যায়। (২) যদি মৃত বলতে ঈমানের অনুপস্থিতি তথা কাফিরদেরকে এবং জীবিত বলতে ঈমানের উপস্থিতি তথা ঈমানদারদেরকে বুঝানো হয়, তাহলে এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে কাফির হতে মুমিন এবং মুমিন হতে কাফিরে পরিবর্তন করিয়ে দেন।] আর আপনি যাকে ইচ্ছা অগণিত রিযিক দান করেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিয়ামতের দিনের পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ।
২. কিয়ামতের দিন সকলকে তাদের আমলনামা প্রদান করা হবে।
৩. কিয়ামতের দিন সকলকে তাদের প্রতিদান দেয়া হবে।
৪. কিয়ামতের দিন প্রতিদান প্রদানের ক্ষেত্রে কাউকে যুলুম করা হবে না।
৫. সমস্ত রাজত্বের একচ্ছত্র অধিকারী হলেন আল্লাহ তা‘আলা।
৬. কাউকে রাজত্ব প্রদান করা অথবা ছিনিয়ে নেয়া, সম্মানিত করা অথবা অপমানিত করা, কল্যাণ অথবা অকল্যাণ দান করা ইত্যাদি সবকিছু আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন।
৭. আল্লাহ তা‘আলাই রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রের মধ্যে অনুপ্রবেশ করান।
৮. আল্লাহ তা‘আলাই মৃত হতে জীবিতকে এবং জীবিত হতে মৃতকে বের করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।
৯. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক তথা জীবিকা দান করে থাকেন।
لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَۚ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِيْ شَيْءٍ اِلَّاۤ اَنْ تَتَّقُوْا مِنْهُمْ تُقَاةًؕ وَّيُحَذِّرُكُمُ اللهُ نَفْسَه ؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ (২৮) قُلْ اِنْ تُخْفُوْا مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ اَوْ تُبْدُوْهُ يَعْلَمْهُ اللهُؕ وَيَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (২৯)
শাব্দিক অনুবাদ
২৮. لَا يَتَّخِذِ গ্রহণ করে না اَلْمُؤْمِنُوْنَ মুমিনরা اَلْكَافِرِيْنَ কাফিরদেরকে اَوْلِيَآءَ বন্ধু হিসেবে مِنْ دُوْنِ বাদ দিয়ে اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদেরকে। وَمَنْ যে ব্যক্তি يَفْعَلْ করবে ذٰلِكَ এরূপ فَلَيْسَ তাহলে থাকবে না مِنَ اللهِ আল্লাহর সাথে فِيْ شَيْءٍ কোন কিছুই (সম্পৃক্ততা), اِلَّاۤ তবে اَنْ تَتَّقُوْا যদি তোমরা আশঙ্কা কর مِنْهُمْ তাদের পক্ষ থেকে تُقَاةً কোন প্রকার ক্ষতির। وَيُحَذِّرُكُمُ আর তোমাদেরকে সতর্ক করছেন اَللهُ আল্লাহ نَفْسَه তাঁর নিজের ব্যাপারে; وَاِلَى اللهِ আল্লাহরই দিকে اَلْمَصِيْرُ সকল প্রত্যাবর্তনস্থল।
২৯. قُلْ বলো اِنْ যদি تُخْفُوْا তোমরা গোপন রাখ مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ তোমাদের অন্তরে যা আছে اَوْ অথবা تُبْدُوْهُ তা প্রকাশ কর, يَعْلَمْهُ সব কিছু্ই জানেন اَللهُ আল্লাহ। وَيَعْلَمُ আর তিনি জানেন مَا যা কিছু আছে فِي السَّمَاوَاتِ আকাশসমূহে وَمَا এবং যা কিছু আছে فِي الْاَرْضِ জমিনে। وَاللهُ আর আল্লাহ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ সকল বিষয়ের উপর قَدِيْرٌ সর্বশক্তিমান।
সরল অনুবাদ
২৮. (অতএব) মুমিনরা যেন মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। [এখানে মুমিনদেরকে কাফিরদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা কাফিররা হচ্ছে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের চরম শত্রু। আর কোন শত্রুর সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করাটা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর আন্তরিক বন্ধুত্ব বলতে বুঝানো হয় ঐ বন্ধুত্বকে, যারা একে অপরের আনন্দে আনন্দিত হয় এবং একে অপরের দুঃখে দুঃখিত হয়; বিপদাপদে একে অপরকে সাহায্য করে থাকে। কিছু কিছু পথভ্রষ্ট নামধারি মুসলিম কাফিরদের সাথে এরূপ বন্ধুত্ব স্থাপন করলেও, কাফিররা কখনো কোন মুসলিমের সাথে এরূপ বন্ধুত্ব স্থাপন করতে প্রস্তুত নয়। কঠিন বিপদের সময়ই তাদের আসলরূপ প্রকাশ পেয়ে যায়।] যে ব্যক্তি এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তার কিছুই (সম্পৃক্ততা) থাকবে না [এখানে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করার শেষ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আর বুঝানো হয়েছে যে, কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে একজন মুমিন অনেক দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন- ঈমান দুর্বল হয়ে যায়, আল্লাহভীতি কমে যায়, আল্লাহর ইবাদাতে বাধাগ্রস্ত হয়, অনেক বড় বড় পাপকর্মকেও হালকা মনে হয় ইত্যাদি। আর যার মধ্যে এসব গুণ একত্রিত হবে, পরিশেষে সে আর মুসলিম থাকে না; বরং সে কাফেরে পরিণত হয়।], তবে যদি তোমরা তাদের (কাফিরদের) পক্ষ থেকে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা কর [অর্থাৎ যদি কোন মুমিন কোন কাফিরদের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় এবং সে তাদের পক্ষ হতে যুলুম-নির্যাতন অথবা জীবন নাশের আশংকা করে, তাহলে সে নিজের ঈমান লুকিয়ে রেখে কাফিরদের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে অবস্থান করতে পারবে। অনুরূপভাবে কোন মুমিন যদি কঠিন ভয়ভীতি ও আশংকাপূর্ণ অবস্থার সম্মুখীন হয়, তাহলেও সে অন্তরে ঈমান লুকিয়ে রেখে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করতে পারবে। তবে এই অনুমতিটি অবশ্যই সাময়িক পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় পতিত হবে, তাকে প্রথমে এরূপ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।] (তবে সাবধানতার সাথে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখতে পারবে)। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছেন; সকল প্রত্যাবর্তনস্থল আল্লাহরই দিকে। [এখানে সতর্ক বলতে ঐ অবস্থায় যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যখন মুমিন ঈমান ও কুফরের দ্বন্দ্বে এরূপ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, তখন সে কাফিরদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্ব স্থাপন করতে গিয়ে যাতে এমন কোন কর্ম সংঘটিত করে না বসে, যার কারণে সে ঈমান থেকে বের হয়ে যায়। যেমন- কাফিরদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করা, মুসলিমদের কোন গোপন তথ্য কাফিরদের কাছে পাচার করে দেয়া, কাফিরদেরকে আল্লাহকে ভয় করার ন্যায় অথবা তার চেয়েও বেশি ভয় করা, আল্লাহকে ভুলে যাওয়া ইত্যাদি। যদি এরূপ করা হয়, তাহলে পরকালে পুরস্কারের পরিবর্তে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।]
২৯. (হে নবী!) বলো, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন রাখ অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ সব কিছু্ই জানেন। [তোমরা মনে মনে কোন কাফিরের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছ কি না অথবা তোমরা কুফুরের সাথে কতটুকু আন্তরিকতা পোষণ করে থাক অথবা তোমরা মুনাফিকীর মধ্যে কতটুকু নিমজ্জিত আছ, সে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা পরিপূর্ণভাবে অবগত আছেন। সুতরাং কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা থেকে সাবধান।] আর তিনি জানেন আকাশসমূহে যা কিছু আছে এবং যা কিছু আছে জমিনে। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
২. মুমিনদের সাথে শত্রুতা করা যাবে না।
৩. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করলে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৪. একান্ত বাধ্য হলে দুনিয়ার স্বার্থে কাফিরদের সাথে সাময়িক বন্ধুত্ব স্থাপন করা যাবে; তবে তা পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়।
৫. পরকালীন বিষয়ে কাফিরদেরকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
৬. কাফিরদের সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৭. অন্তরের লুকায়িত সমস্ত সংবাদ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ভালোভাবে অবগত আছেন।
শাব্দিক অনুবাদ
২৮. لَا يَتَّخِذِ গ্রহণ করে না اَلْمُؤْمِنُوْنَ মুমিনরা اَلْكَافِرِيْنَ কাফিরদেরকে اَوْلِيَآءَ বন্ধু হিসেবে مِنْ دُوْنِ বাদ দিয়ে اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদেরকে। وَمَنْ যে ব্যক্তি يَفْعَلْ করবে ذٰلِكَ এরূপ فَلَيْسَ তাহলে থাকবে না مِنَ اللهِ আল্লাহর সাথে فِيْ شَيْءٍ কোন কিছুই (সম্পৃক্ততা), اِلَّاۤ তবে اَنْ تَتَّقُوْا যদি তোমরা আশঙ্কা কর مِنْهُمْ তাদের পক্ষ থেকে تُقَاةً কোন প্রকার ক্ষতির। وَيُحَذِّرُكُمُ আর তোমাদেরকে সতর্ক করছেন اَللهُ আল্লাহ نَفْسَه তাঁর নিজের ব্যাপারে; وَاِلَى اللهِ আল্লাহরই দিকে اَلْمَصِيْرُ সকল প্রত্যাবর্তনস্থল।
২৯. قُلْ বলো اِنْ যদি تُخْفُوْا তোমরা গোপন রাখ مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ তোমাদের অন্তরে যা আছে اَوْ অথবা تُبْدُوْهُ তা প্রকাশ কর, يَعْلَمْهُ সব কিছু্ই জানেন اَللهُ আল্লাহ। وَيَعْلَمُ আর তিনি জানেন مَا যা কিছু আছে فِي السَّمَاوَاتِ আকাশসমূহে وَمَا এবং যা কিছু আছে فِي الْاَرْضِ জমিনে। وَاللهُ আর আল্লাহ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ সকল বিষয়ের উপর قَدِيْرٌ সর্বশক্তিমান।
সরল অনুবাদ
২৮. (অতএব) মুমিনরা যেন মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। [এখানে মুমিনদেরকে কাফিরদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা কাফিররা হচ্ছে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের চরম শত্রু। আর কোন শত্রুর সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করাটা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর আন্তরিক বন্ধুত্ব বলতে বুঝানো হয় ঐ বন্ধুত্বকে, যারা একে অপরের আনন্দে আনন্দিত হয় এবং একে অপরের দুঃখে দুঃখিত হয়; বিপদাপদে একে অপরকে সাহায্য করে থাকে। কিছু কিছু পথভ্রষ্ট নামধারি মুসলিম কাফিরদের সাথে এরূপ বন্ধুত্ব স্থাপন করলেও, কাফিররা কখনো কোন মুসলিমের সাথে এরূপ বন্ধুত্ব স্থাপন করতে প্রস্তুত নয়। কঠিন বিপদের সময়ই তাদের আসলরূপ প্রকাশ পেয়ে যায়।] যে ব্যক্তি এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তার কিছুই (সম্পৃক্ততা) থাকবে না [এখানে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করার শেষ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আর বুঝানো হয়েছে যে, কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে একজন মুমিন অনেক দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন- ঈমান দুর্বল হয়ে যায়, আল্লাহভীতি কমে যায়, আল্লাহর ইবাদাতে বাধাগ্রস্ত হয়, অনেক বড় বড় পাপকর্মকেও হালকা মনে হয় ইত্যাদি। আর যার মধ্যে এসব গুণ একত্রিত হবে, পরিশেষে সে আর মুসলিম থাকে না; বরং সে কাফেরে পরিণত হয়।], তবে যদি তোমরা তাদের (কাফিরদের) পক্ষ থেকে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা কর [অর্থাৎ যদি কোন মুমিন কোন কাফিরদের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় এবং সে তাদের পক্ষ হতে যুলুম-নির্যাতন অথবা জীবন নাশের আশংকা করে, তাহলে সে নিজের ঈমান লুকিয়ে রেখে কাফিরদের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে অবস্থান করতে পারবে। অনুরূপভাবে কোন মুমিন যদি কঠিন ভয়ভীতি ও আশংকাপূর্ণ অবস্থার সম্মুখীন হয়, তাহলেও সে অন্তরে ঈমান লুকিয়ে রেখে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করতে পারবে। তবে এই অনুমতিটি অবশ্যই সাময়িক পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় পতিত হবে, তাকে প্রথমে এরূপ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।] (তবে সাবধানতার সাথে বাহ্যিক সম্পর্ক রাখতে পারবে)। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছেন; সকল প্রত্যাবর্তনস্থল আল্লাহরই দিকে। [এখানে সতর্ক বলতে ঐ অবস্থায় যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যখন মুমিন ঈমান ও কুফরের দ্বন্দ্বে এরূপ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, তখন সে কাফিরদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্ব স্থাপন করতে গিয়ে যাতে এমন কোন কর্ম সংঘটিত করে না বসে, যার কারণে সে ঈমান থেকে বের হয়ে যায়। যেমন- কাফিরদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্য করা, মুসলিমদের কোন গোপন তথ্য কাফিরদের কাছে পাচার করে দেয়া, কাফিরদেরকে আল্লাহকে ভয় করার ন্যায় অথবা তার চেয়েও বেশি ভয় করা, আল্লাহকে ভুলে যাওয়া ইত্যাদি। যদি এরূপ করা হয়, তাহলে পরকালে পুরস্কারের পরিবর্তে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।]
২৯. (হে নবী!) বলো, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন রাখ অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ সব কিছু্ই জানেন। [তোমরা মনে মনে কোন কাফিরের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছ কি না অথবা তোমরা কুফুরের সাথে কতটুকু আন্তরিকতা পোষণ করে থাক অথবা তোমরা মুনাফিকীর মধ্যে কতটুকু নিমজ্জিত আছ, সে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা পরিপূর্ণভাবে অবগত আছেন। সুতরাং কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা থেকে সাবধান।] আর তিনি জানেন আকাশসমূহে যা কিছু আছে এবং যা কিছু আছে জমিনে। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
২. মুমিনদের সাথে শত্রুতা করা যাবে না।
৩. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করলে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৪. একান্ত বাধ্য হলে দুনিয়ার স্বার্থে কাফিরদের সাথে সাময়িক বন্ধুত্ব স্থাপন করা যাবে; তবে তা পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়।
৫. পরকালীন বিষয়ে কাফিরদেরকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
৬. কাফিরদের সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৭. অন্তরের লুকায়িত সমস্ত সংবাদ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ভালোভাবে অবগত আছেন।
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًاۚ وَّمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوْٓءٍۚ تَوَدُّ لَوْ اَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَه اَمَدًا ۢبَعِيْدًاؕ وَّيُحَذِّرُكُمُ اللهُ نَفْسَه ؕ وَاللهُ رَءُوْفٌ ۢبِالْعِبَادِ (৩০)
শাব্দিক অনুবাদ
৩০. يَوْمَ যেদিন تَجِدُ তুমি পাবে كُلُّ প্রত্যেক نَفْسٍ ব্যক্তি مَّا عَمِلَتْ যা সে করেছে مِنْ خَيْرٍ ভালো হতে مُّحْضَرًا উপস্থিত وَمَا عَمِلَتْ এবং সে যা করেছে مِنْ سُوْٓءٍ খারাপ হতে। تَوَدُّ তখন সে কামনা করবে لَوْ যদি اَنَّ بَيْنَهَا তার মধ্যে وَبَيْنَهٗ ও তার (অন্যায় কাজের) মধ্যে থাকত اَمَدًا ব্যবধান بَعِيْدًا অনেক দূর! وَيُحَذِّرُكُمُ আর তোমাদেরকে সতর্ক করছেন اَللهُ আল্লাহ نَفْسَه তাঁর নিজের ব্যাপারে; وَاللهُ আল্লাহ رَءُوْفٌ অত্যন্ত স্নেহশীল بِالْعِبَادِ বান্দাদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
৩০. যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিই যা ভালো করেছে তা উপস্থিত পাবে এবং সে যা খারাপ করেছে (তাও উপস্থিত পাবে)। তখন সে কামনা করবে যে, যদি তার মধ্যে ও তার (অন্যায় কাজের) মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকত! আর আল্লাহ তাঁর নিজের (ক্ষমতা ও শক্তি) সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছেন; (কেননা) আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। [আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে বিভিন্ন বিষয়ে ভীতি প্রদর্শন ও সতর্ক করে থাকেন, সেগুলো মূলত তোমাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে নয়; বরং তিনি তোমাদেরকে অধিক স্নেহ করে থাকেন বিধায় আগত বিপদ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেন, যাতে করে তোমরা দুনিয়ায় উত্তম কর্মসমূহের মাধ্যমে তা থেকে বাঁচতে পার।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিয়ামতের দিন আমলনামা হাতে পেয়ে মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে যাবে।
২. আমলনামার মধ্যে ভালো-মন্দ সমস্ত কর্ম সম্পর্কেই উল্লেখ থাকবে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল।
শাব্দিক অনুবাদ
৩০. يَوْمَ যেদিন تَجِدُ তুমি পাবে كُلُّ প্রত্যেক نَفْسٍ ব্যক্তি مَّا عَمِلَتْ যা সে করেছে مِنْ خَيْرٍ ভালো হতে مُّحْضَرًا উপস্থিত وَمَا عَمِلَتْ এবং সে যা করেছে مِنْ سُوْٓءٍ খারাপ হতে। تَوَدُّ তখন সে কামনা করবে لَوْ যদি اَنَّ بَيْنَهَا তার মধ্যে وَبَيْنَهٗ ও তার (অন্যায় কাজের) মধ্যে থাকত اَمَدًا ব্যবধান بَعِيْدًا অনেক দূর! وَيُحَذِّرُكُمُ আর তোমাদেরকে সতর্ক করছেন اَللهُ আল্লাহ نَفْسَه তাঁর নিজের ব্যাপারে; وَاللهُ আল্লাহ رَءُوْفٌ অত্যন্ত স্নেহশীল بِالْعِبَادِ বান্দাদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
৩০. যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিই যা ভালো করেছে তা উপস্থিত পাবে এবং সে যা খারাপ করেছে (তাও উপস্থিত পাবে)। তখন সে কামনা করবে যে, যদি তার মধ্যে ও তার (অন্যায় কাজের) মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকত! আর আল্লাহ তাঁর নিজের (ক্ষমতা ও শক্তি) সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছেন; (কেননা) আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। [আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে বিভিন্ন বিষয়ে ভীতি প্রদর্শন ও সতর্ক করে থাকেন, সেগুলো মূলত তোমাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে নয়; বরং তিনি তোমাদেরকে অধিক স্নেহ করে থাকেন বিধায় আগত বিপদ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেন, যাতে করে তোমরা দুনিয়ায় উত্তম কর্মসমূহের মাধ্যমে তা থেকে বাঁচতে পার।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিয়ামতের দিন আমলনামা হাতে পেয়ে মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে যাবে।
২. আমলনামার মধ্যে ভালো-মন্দ সমস্ত কর্ম সম্পর্কেই উল্লেখ থাকবে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল।
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ (৩১) قُلْ اَطِيْعُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَۚ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِيْنَ (৩২)
শাব্দিক অনুবাদ
৩১. قُلْ বলো اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা تُحِبُّوْنَ ভালোবাস اَللهَ আল্লাহকে فَاتَّبِعُوْنِيْ তাহলে আমার অনুসরণ করো। يُحْبِبْكُمُ তাহলে তোমাদেরকে ভালোবাসবেন اَللهُ আল্লাহ وَيَغْفِرْ لَكُمْ এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন ذُنُوْبَكُمْ তোমাদের গুনাহসমূহ। وَاللهُ আর আল্লাহ غَفُوْرٌ অতি ক্ষমাশীল رَحِيْمٌ ও পরম দয়ালু।
৩২. قُلْ বলো اَطِيْعُوا তোমরা আনুগত্য করো اَللهَ আল্লাহর وَالرَّسُوْلَ এবং রাসূলের। فَاِنْ অতঃপর যদি تَوَلَّوْا তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় فَاِنَّ তবে নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ لَا يُحِبُّ ভালোবাসেন না اَلْكَافِرِيْنَ কাফিরদেরকে।
সরল অনুবাদ
৩১. (হে নবী!) বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো। [আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ই দাবী করে থাকে যে, তারা আল্লাহকে ভালোবাসে এবং আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসেন। আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলা কেবল তাদেরকেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর তারা এই ভালোবাসা অর্জনের নামে নানা ধরনের শিরক ও বিদআতের প্রচলন ঘটিয়েছিল। যেমন- উযাইর ও ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করা, মারইয়াম (আঃ)-কে আল্লাহর স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়া ইত্যাদি। উপরন্তু তারা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমন সম্পর্কে তাওরাত ও ইঞ্জিলে ভবিষ্যদ্বাণী থাকা সত্ত্বেও তাকে অস্বীকার করত এবং তার সাথে শত্রুতা পোষণ করত। মূলত তাদের প্রায় সকল কর্ম পদ্ধতিই ছিল তাদের দাবী তথা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের বিপরীত। কেননা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে কেবল আল্লাহর নির্দেশসমূহ ও মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরিপূর্ণ আনুগত্যের মধ্যেই নিহিত ছিল। অত্র আয়াতে কাফিরদেরকে তাদের মিথ্যা দাবী থেকে বেরিয়ে সঠিক পন্থায় আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের প্রতি আহবান করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অত্র আয়াত বর্তমান যুগের ঐসব ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রেও সতর্কবাণী হিসেবে প্রযোজ্য হবে, যারা ইসলামের নামে দ্বীনের নানা ধরনের বিদআতী আমল পালন করে থাকে। সুতরাং এসব আমল কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই বয়ে আনে। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে অনেক লোকই এ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে ব্যর্থ হন।] তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। [যখন কোন বান্দা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যথাযথভাবে ভালোবাসবে এবং কোন শিরক ও বিদআতী কর্মে লিপ্ত হবে না, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসবেন। ফলে সে ধীরে ধীরে সৎকর্মের দিকে ধাবিত হবে এবং নিজেকে জান্নাতের উপযুক্ত বানিয়ে নিতে সক্ষম হবে। আর এ অবস্থা জারি থাকলে আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার প্রতি অনুগ্রহশীল হবেন এবং তার ছোট ছোট ভুল-ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।] আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৩২. (আরো) বলো, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের (আনুগত্য করো)। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (জেনে রেখো) নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালোবাসেন না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কেউ আল্লাহকে ভালোবাসলে আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।
২. আল্লাহকে ভালোবাসলে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।
৩. আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে অবশ্যই নবী ﷺ কে ভালোবাসতে হবে।
৪. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা আবশ্যক।
৫. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হারাম।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কোন কাফিরকে ভালোবাসেন না।
৭. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে উক্ত ব্যক্তি কাফির হিসেবে গণ্য হবে।
৮. কাউকে ভালোবাসলে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের স্বার্থেই ভালোবাসা উচিত।
শাব্দিক অনুবাদ
৩১. قُلْ বলো اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা تُحِبُّوْنَ ভালোবাস اَللهَ আল্লাহকে فَاتَّبِعُوْنِيْ তাহলে আমার অনুসরণ করো। يُحْبِبْكُمُ তাহলে তোমাদেরকে ভালোবাসবেন اَللهُ আল্লাহ وَيَغْفِرْ لَكُمْ এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন ذُنُوْبَكُمْ তোমাদের গুনাহসমূহ। وَاللهُ আর আল্লাহ غَفُوْرٌ অতি ক্ষমাশীল رَحِيْمٌ ও পরম দয়ালু।
৩২. قُلْ বলো اَطِيْعُوا তোমরা আনুগত্য করো اَللهَ আল্লাহর وَالرَّسُوْلَ এবং রাসূলের। فَاِنْ অতঃপর যদি تَوَلَّوْا তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় فَاِنَّ তবে নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ لَا يُحِبُّ ভালোবাসেন না اَلْكَافِرِيْنَ কাফিরদেরকে।
সরল অনুবাদ
৩১. (হে নবী!) বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো। [আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ই দাবী করে থাকে যে, তারা আল্লাহকে ভালোবাসে এবং আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসেন। আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলা কেবল তাদেরকেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর তারা এই ভালোবাসা অর্জনের নামে নানা ধরনের শিরক ও বিদআতের প্রচলন ঘটিয়েছিল। যেমন- উযাইর ও ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করা, মারইয়াম (আঃ)-কে আল্লাহর স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়া ইত্যাদি। উপরন্তু তারা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমন সম্পর্কে তাওরাত ও ইঞ্জিলে ভবিষ্যদ্বাণী থাকা সত্ত্বেও তাকে অস্বীকার করত এবং তার সাথে শত্রুতা পোষণ করত। মূলত তাদের প্রায় সকল কর্ম পদ্ধতিই ছিল তাদের দাবী তথা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের বিপরীত। কেননা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে কেবল আল্লাহর নির্দেশসমূহ ও মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরিপূর্ণ আনুগত্যের মধ্যেই নিহিত ছিল। অত্র আয়াতে কাফিরদেরকে তাদের মিথ্যা দাবী থেকে বেরিয়ে সঠিক পন্থায় আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের প্রতি আহবান করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অত্র আয়াত বর্তমান যুগের ঐসব ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রেও সতর্কবাণী হিসেবে প্রযোজ্য হবে, যারা ইসলামের নামে দ্বীনের নানা ধরনের বিদআতী আমল পালন করে থাকে। সুতরাং এসব আমল কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই বয়ে আনে। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে অনেক লোকই এ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে ব্যর্থ হন।] তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। [যখন কোন বান্দা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যথাযথভাবে ভালোবাসবে এবং কোন শিরক ও বিদআতী কর্মে লিপ্ত হবে না, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসবেন। ফলে সে ধীরে ধীরে সৎকর্মের দিকে ধাবিত হবে এবং নিজেকে জান্নাতের উপযুক্ত বানিয়ে নিতে সক্ষম হবে। আর এ অবস্থা জারি থাকলে আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার প্রতি অনুগ্রহশীল হবেন এবং তার ছোট ছোট ভুল-ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।] আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৩২. (আরো) বলো, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের (আনুগত্য করো)। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (জেনে রেখো) নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালোবাসেন না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কেউ আল্লাহকে ভালোবাসলে আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।
২. আল্লাহকে ভালোবাসলে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।
৩. আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে অবশ্যই নবী ﷺ কে ভালোবাসতে হবে।
৪. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা আবশ্যক।
৫. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হারাম।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কোন কাফিরকে ভালোবাসেন না।
৭. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে উক্ত ব্যক্তি কাফির হিসেবে গণ্য হবে।
৮. কাউকে ভালোবাসলে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের স্বার্থেই ভালোবাসা উচিত।
اِنَّ اللهَ اصْطَفٰۤى اٰدَمَ وَنُوْحًا وَّاٰلَ اِبْرَاهِيْمَ وَاٰلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِيْنَ (৩৩) ذُرِّيَّةً ۢبَعْضُهَا مِنْ ۢبَعْضٍؕ وَّاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ (৩৪)
শাব্দিক অনুবাদ
৩৩. اِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ اِصْطَفٰۤى মনোনীত করেছেন اٰدَمَ আদমকে وَنُوْحًا ও নূহকে وَاٰلَ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইবরাহীমের বংশধরকে وَاٰلَ عِمْرَانَ ও ইমরানের বংশধরকে عَلَى الْعَالَمِيْنَ বিশ্ববাসীর উপর ।
৩৪. ذُرِّيَّةً তারা বংশধর بَعْضُهَا তাদের এক مِنْ ۢبَعْضٍ অপর থেকে। وَاللهُ আর আল্লাহ سَمِيْعٌ সর্বশ্রোতা عَلِيْمٌ ও মহাজ্ঞানী।
সরল অনুবাদ
৩৩. নিশ্চয় আল্লাহ আদম ও নূহ [বিশে^র সমস্ত মানুষই প্রথমত আদম (আঃ) এর এবং দ্বিতীয়ত নূহ (আঃ) এর বংশধর। কেননা বিশে^র প্রথম মানব ছিলেন আদম (আঃ), যার কারণে তাকে মানবজাতির পিতা বলা হয়। অতঃপর নূহ (আঃ) এর সময় সারা পৃথিবীতে মহাপ্লাবন সংঘটিত হওয়ার মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র নূহ (আঃ) এবং তার কয়েকজন অনুসারী ব্যতীত সকল মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তারপর তাদের মধ্য হতেই মানববংশের বিস্তার হয়। যার কারণে নূহ (আঃ)-কে মানবজাতির দ্বিতীয় পিতাও বলা হয়। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা যেসব বংশ বিশ^বাসীর উপর বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন তার মধ্যে আদম ও নূহ (আঃ) এর বংশের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছেন।] এবং ইবরাহীমের বংশধর [পৃথিবীতে যতগুলো বংশের আগমন ঘটেছিল এবং ঘটবে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বংশধর হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর। কারণ এই বংশে ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, মূসা, হারুন (আঃ)-সহ অসংখ্য নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছিল। বিশেষত এই বংশেই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমন ঘটেছিল। তাছাড়া ইবরাহীম (আঃ) এই বংশের জন্য বিশেষভাবে দু‘আ করেছিলেন।] ও ইমরানের বংশধরকে [নবীদের বংশে ইমরান নামে আগমন ঘটেছিল দু‘জন ব্যক্তির। তাদের মধ্যে একজন হলেন মূসা ও হারুন (আঃ) এর পিতা। আর অপরজন হলেন মারইয়াম (আঃ) এর পিতা। অধিকাংশ মুফাসসিরের বর্ণনানুযায়ী অত্র আয়াতে মারইয়াম (আঃ) এর পিতাকে বুঝানো হয়েছে। এই বংশে আল্লাহ তা‘আলা মারইয়াম (আঃ) ও ঈসা (আঃ) এর আগমন করানোর মাধ্যমে বিশ^বাসীর উপর বিরাট মর্যাদা দান করেছেন।] বিশ্ববাসীর (মানব জাতির) উপর মনোনীত করেছেন।
৩৪. তারা একে অপরের বংশধর। [অর্থাৎ প্রথমত আদম (আঃ) এর বংশে নূহ (আঃ), তারপর নূহ (আঃ) এর বংশে ইবরাহীম (আঃ), তারপর ইবরাহীম (আঃ) এর বংশে ইমরানের বংশধরের আগমন ঘটেছে।] আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা কিছু বিশেষ বান্দাকে বিশ^বাসীর উপর মনোনীত করে থাকেন।
২. আল্লাহ তা‘আলা আদম ও নূহ (আঃ) কে বিশেষভাবে মনোনীত করেছিলেন।
শাব্দিক অনুবাদ
৩৩. اِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ اِصْطَفٰۤى মনোনীত করেছেন اٰدَمَ আদমকে وَنُوْحًا ও নূহকে وَاٰلَ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইবরাহীমের বংশধরকে وَاٰلَ عِمْرَانَ ও ইমরানের বংশধরকে عَلَى الْعَالَمِيْنَ বিশ্ববাসীর উপর ।
৩৪. ذُرِّيَّةً তারা বংশধর بَعْضُهَا তাদের এক مِنْ ۢبَعْضٍ অপর থেকে। وَاللهُ আর আল্লাহ سَمِيْعٌ সর্বশ্রোতা عَلِيْمٌ ও মহাজ্ঞানী।
সরল অনুবাদ
৩৩. নিশ্চয় আল্লাহ আদম ও নূহ [বিশে^র সমস্ত মানুষই প্রথমত আদম (আঃ) এর এবং দ্বিতীয়ত নূহ (আঃ) এর বংশধর। কেননা বিশে^র প্রথম মানব ছিলেন আদম (আঃ), যার কারণে তাকে মানবজাতির পিতা বলা হয়। অতঃপর নূহ (আঃ) এর সময় সারা পৃথিবীতে মহাপ্লাবন সংঘটিত হওয়ার মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র নূহ (আঃ) এবং তার কয়েকজন অনুসারী ব্যতীত সকল মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তারপর তাদের মধ্য হতেই মানববংশের বিস্তার হয়। যার কারণে নূহ (আঃ)-কে মানবজাতির দ্বিতীয় পিতাও বলা হয়। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা যেসব বংশ বিশ^বাসীর উপর বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন তার মধ্যে আদম ও নূহ (আঃ) এর বংশের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছেন।] এবং ইবরাহীমের বংশধর [পৃথিবীতে যতগুলো বংশের আগমন ঘটেছিল এবং ঘটবে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বংশধর হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর। কারণ এই বংশে ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, মূসা, হারুন (আঃ)-সহ অসংখ্য নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছিল। বিশেষত এই বংশেই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমন ঘটেছিল। তাছাড়া ইবরাহীম (আঃ) এই বংশের জন্য বিশেষভাবে দু‘আ করেছিলেন।] ও ইমরানের বংশধরকে [নবীদের বংশে ইমরান নামে আগমন ঘটেছিল দু‘জন ব্যক্তির। তাদের মধ্যে একজন হলেন মূসা ও হারুন (আঃ) এর পিতা। আর অপরজন হলেন মারইয়াম (আঃ) এর পিতা। অধিকাংশ মুফাসসিরের বর্ণনানুযায়ী অত্র আয়াতে মারইয়াম (আঃ) এর পিতাকে বুঝানো হয়েছে। এই বংশে আল্লাহ তা‘আলা মারইয়াম (আঃ) ও ঈসা (আঃ) এর আগমন করানোর মাধ্যমে বিশ^বাসীর উপর বিরাট মর্যাদা দান করেছেন।] বিশ্ববাসীর (মানব জাতির) উপর মনোনীত করেছেন।
৩৪. তারা একে অপরের বংশধর। [অর্থাৎ প্রথমত আদম (আঃ) এর বংশে নূহ (আঃ), তারপর নূহ (আঃ) এর বংশে ইবরাহীম (আঃ), তারপর ইবরাহীম (আঃ) এর বংশে ইমরানের বংশধরের আগমন ঘটেছে।] আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা কিছু বিশেষ বান্দাকে বিশ^বাসীর উপর মনোনীত করে থাকেন।
২. আল্লাহ তা‘আলা আদম ও নূহ (আঃ) কে বিশেষভাবে মনোনীত করেছিলেন।
اِذْ قَالَتِ امْرَاَتُ عِمْرَانَ رَبِّ اِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّيْۤۚ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ (৩৫)
শাব্দিক অনুবাদ
৩৫. اِذْ যখন قَالَتِ বলেছিল اِمْرَاَتُ স্ত্রী عِمْرَانَ ইমরানের, رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি نَذَرْتُ মান্নত করলাম لَكَ আপনার জন্য مَا فِيْ بَطْنِيْ যা আছে আমার পেটে তা مُحَرَّرًا স্বাধীন। فَتَقَبَّلْ সুতরাং আপনি কবুল করুন مِنِّيْۤ আমার পক্ষ থেকে। اِنَّكَ নিশ্চয় আপনিই اَنْتَ আপনি اَلسَّمِيْعُ সর্বশ্রোতা اَلْعَلِيْمُ মহাজ্ঞানী।
সরল অনুবাদ
৩৫. (স্মরণ করো) যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমার পেটে (গর্ভে) যা আছে তা আমি আপনার জন্য মান্নত করলাম। [অর্থাৎ গর্ভে যে সন্তান রয়েছে সেটি জন্মগ্রহণ করলে তাকে আমি আপনার পথে ছেড়ে দেব, যাতে করে সে সর্বদা আপনার দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যস্ত থাকে এবং একনিষ্ঠভাবে কেবল আপনারই ইবাদাত করে। পূর্ববর্তী শরীয়তে সন্তান মান্নত করার এরূপ প্রথা চালু ছিল। উক্ত প্রথা অনুযায়ী এসব উৎসর্গিত সন্তানদেরকে পার্থিব কোন কাজকর্মে নিযুক্ত করা হত না।] সুতরাং আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনিই সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মারইয়াম (আঃ) এর পিতার নাম ছিল ইমরান।
২. মারইয়াম (আঃ) গর্ভে থাকা অবস্থাতেই তাঁর মা তাঁকে মান্নাত করেছিলেন।
৩. মান্নত করা বৈধ; তবে অবশ্যই সেটা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
৩৫. اِذْ যখন قَالَتِ বলেছিল اِمْرَاَتُ স্ত্রী عِمْرَانَ ইমরানের, رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি نَذَرْتُ মান্নত করলাম لَكَ আপনার জন্য مَا فِيْ بَطْنِيْ যা আছে আমার পেটে তা مُحَرَّرًا স্বাধীন। فَتَقَبَّلْ সুতরাং আপনি কবুল করুন مِنِّيْۤ আমার পক্ষ থেকে। اِنَّكَ নিশ্চয় আপনিই اَنْتَ আপনি اَلسَّمِيْعُ সর্বশ্রোতা اَلْعَلِيْمُ মহাজ্ঞানী।
সরল অনুবাদ
৩৫. (স্মরণ করো) যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমার পেটে (গর্ভে) যা আছে তা আমি আপনার জন্য মান্নত করলাম। [অর্থাৎ গর্ভে যে সন্তান রয়েছে সেটি জন্মগ্রহণ করলে তাকে আমি আপনার পথে ছেড়ে দেব, যাতে করে সে সর্বদা আপনার দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যস্ত থাকে এবং একনিষ্ঠভাবে কেবল আপনারই ইবাদাত করে। পূর্ববর্তী শরীয়তে সন্তান মান্নত করার এরূপ প্রথা চালু ছিল। উক্ত প্রথা অনুযায়ী এসব উৎসর্গিত সন্তানদেরকে পার্থিব কোন কাজকর্মে নিযুক্ত করা হত না।] সুতরাং আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনিই সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মারইয়াম (আঃ) এর পিতার নাম ছিল ইমরান।
২. মারইয়াম (আঃ) গর্ভে থাকা অবস্থাতেই তাঁর মা তাঁকে মান্নাত করেছিলেন।
৩. মান্নত করা বৈধ; তবে অবশ্যই সেটা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে।
فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ وَضَعْتُهَاۤ اُنْثٰىۚ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْؕ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْاُنْثٰىۚ وَاِنِّيْ سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَاِنِّيْۤ اُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (৩৬)
শাব্দিক অনুবাদ
৩৬. فَلَمَّا অতঃপর যখন وَضَعَتْهَا সে তাকে (মারইয়ামকে) প্রসব করল قَالَتْ তখন বলল, رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি وَضَعْتُهَا তাকে প্রসব করেছি اُنْثٰى নারী। وَاللهُ আর আল্লাহ اَعْلَمُ অধিক জানেন بِمَا وَضَعَتْ সে যা প্রসব করেছে। وَلَيْسَ আর নয় اَلذَّكَرُ পুরুষ كَالْاُنْثٰىۚ নারীর মতো। وَاِنِّيْ নিশ্চয় আমি سَمَّيْتُهَا তার নাম রেখেছি مَرْيَمَ ‘মারইয়াম’। وَاِنِّيْۤ নিশ্চয় আমি اُعِيْذُهَا তার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِكَ আপনার কাছে وَذُرِّيَّتَهَا ও তার বংশধরের জন্য مِنَ الشَّيْطَانِ শয়তান থেকে اَلرَّجِيْمِ বিতাড়িত।
সরল অনুবাদ
৩৬. অতঃপর যখন সে তাকে (মান্নাতকৃত সন্তানটিকে) প্রসব করল তখন বলল, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমি তো নারী (কন্যা সন্তান) প্রসব করেছি (সুতরাং আমি এটাকে কীভাবে তোমার পথে উৎসর্গ করব)। [এ বাক্যটি মারইয়াম (আঃ) এর মাতার আক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ। কেননা মারইয়াম (আঃ) এর মাতা ব্যাপক আশা পোষণ করেছিলেন যে, তাঁর গর্ভের সন্তানটি ছেলে হবে এবং তিনি তাকে আল্লাহর পথে ছেড়ে দিবেন। কিন্তু প্রসব করার পর তিনি দেখতে পেলেন যে, তিনি এতদিন যে সন্তানটির ব্যাপারে আশা পোষণ করছিলেন সেটি মেয়ে সন্তান। অথচ তখনকার সমাজব্যবস্থায় কোন মেয়ে সন্তান আল্লাহর পথে বের হওয়াটা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু।] (মূলত) সে যা প্রসব করেছে আল্লাহ সে সম্পর্কে অধিক জানেন। (আর তিনি এটাও জানেন যে, তার কাঙ্ক্ষিত) পুরুষ (ছেলে সন্তানটি) এ নারীর (কন্যা সন্তানটির) মতো নয়। [এ বাক্যটির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বুঝিয়ে দিলেন যে, কেউ পুত্র সন্তানের জন্য চরম আশাবাদী হলেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা প্রদান করেন না। বরং তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ীই যাকে ইচ্ছা তাকে পুত্র সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে কন্যা সন্তান দান করেন। আর এখানে আরো একটি কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কোন কোন কন্যা সন্তানকে আল্লাহ তা‘আলা এমন ক্ষমতা দান করেন, যা সাধারণত কোন ছেলে সন্তান অর্জন করতে সক্ষম নয়। সুতরাং কন্যা সন্তান জন্ম হলেই কারো মন খারাপ করার কোন কারণ নেই। কেননা হয়তোবা আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। কোন ছেলে সন্তান জন্ম হলে হয়তোবা সে কল্যাণটি লাভ করা যেত না।] আর (ইমরানের স্ত্রী আরো বলল যে) নিশ্চয় আমি তার নাম রেখেছি ‘মারইয়াম’। নিশ্চয় আমি তার জন্য ও তার বংশধরের জন্য বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আল্লাহ তা‘আলা মারইয়াম (আঃ) এর মাতার দু‘আ কবুল করেছিলেন। ফলে মারইয়াম (আঃ) এর জন্মের সময় শয়তান তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মানবশিশুকেই তার জন্মের সময় শয়তান আঘাত করে। এর কারণে সে চিৎকার করে কেঁদে উঠে; কিন্তু মারইয়াম (আঃ) ও তাঁর ছেলে ঈসা (আঃ) এটা হতে রক্ষা পেয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪৩১)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিছু কিছু নারী যোগ্যতা ও মর্যাদায় পুরুষদের থেকেও শ্রেষ্ঠ হতে পারে।
২. সন্তান ও তাঁর বংশধরের জন্য শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
৩. গর্ভের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কেও আল্লাহ তা‘আলা ভালোভাবে অবগত আছেন।
শাব্দিক অনুবাদ
৩৬. فَلَمَّا অতঃপর যখন وَضَعَتْهَا সে তাকে (মারইয়ামকে) প্রসব করল قَالَتْ তখন বলল, رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি وَضَعْتُهَا তাকে প্রসব করেছি اُنْثٰى নারী। وَاللهُ আর আল্লাহ اَعْلَمُ অধিক জানেন بِمَا وَضَعَتْ সে যা প্রসব করেছে। وَلَيْسَ আর নয় اَلذَّكَرُ পুরুষ كَالْاُنْثٰىۚ নারীর মতো। وَاِنِّيْ নিশ্চয় আমি سَمَّيْتُهَا তার নাম রেখেছি مَرْيَمَ ‘মারইয়াম’। وَاِنِّيْۤ নিশ্চয় আমি اُعِيْذُهَا তার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِكَ আপনার কাছে وَذُرِّيَّتَهَا ও তার বংশধরের জন্য مِنَ الشَّيْطَانِ শয়তান থেকে اَلرَّجِيْمِ বিতাড়িত।
সরল অনুবাদ
৩৬. অতঃপর যখন সে তাকে (মান্নাতকৃত সন্তানটিকে) প্রসব করল তখন বলল, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমি তো নারী (কন্যা সন্তান) প্রসব করেছি (সুতরাং আমি এটাকে কীভাবে তোমার পথে উৎসর্গ করব)। [এ বাক্যটি মারইয়াম (আঃ) এর মাতার আক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ। কেননা মারইয়াম (আঃ) এর মাতা ব্যাপক আশা পোষণ করেছিলেন যে, তাঁর গর্ভের সন্তানটি ছেলে হবে এবং তিনি তাকে আল্লাহর পথে ছেড়ে দিবেন। কিন্তু প্রসব করার পর তিনি দেখতে পেলেন যে, তিনি এতদিন যে সন্তানটির ব্যাপারে আশা পোষণ করছিলেন সেটি মেয়ে সন্তান। অথচ তখনকার সমাজব্যবস্থায় কোন মেয়ে সন্তান আল্লাহর পথে বের হওয়াটা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু।] (মূলত) সে যা প্রসব করেছে আল্লাহ সে সম্পর্কে অধিক জানেন। (আর তিনি এটাও জানেন যে, তার কাঙ্ক্ষিত) পুরুষ (ছেলে সন্তানটি) এ নারীর (কন্যা সন্তানটির) মতো নয়। [এ বাক্যটির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বুঝিয়ে দিলেন যে, কেউ পুত্র সন্তানের জন্য চরম আশাবাদী হলেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা প্রদান করেন না। বরং তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ীই যাকে ইচ্ছা তাকে পুত্র সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে কন্যা সন্তান দান করেন। আর এখানে আরো একটি কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কোন কোন কন্যা সন্তানকে আল্লাহ তা‘আলা এমন ক্ষমতা দান করেন, যা সাধারণত কোন ছেলে সন্তান অর্জন করতে সক্ষম নয়। সুতরাং কন্যা সন্তান জন্ম হলেই কারো মন খারাপ করার কোন কারণ নেই। কেননা হয়তোবা আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। কোন ছেলে সন্তান জন্ম হলে হয়তোবা সে কল্যাণটি লাভ করা যেত না।] আর (ইমরানের স্ত্রী আরো বলল যে) নিশ্চয় আমি তার নাম রেখেছি ‘মারইয়াম’। নিশ্চয় আমি তার জন্য ও তার বংশধরের জন্য বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আল্লাহ তা‘আলা মারইয়াম (আঃ) এর মাতার দু‘আ কবুল করেছিলেন। ফলে মারইয়াম (আঃ) এর জন্মের সময় শয়তান তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মানবশিশুকেই তার জন্মের সময় শয়তান আঘাত করে। এর কারণে সে চিৎকার করে কেঁদে উঠে; কিন্তু মারইয়াম (আঃ) ও তাঁর ছেলে ঈসা (আঃ) এটা হতে রক্ষা পেয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪৩১)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিছু কিছু নারী যোগ্যতা ও মর্যাদায় পুরুষদের থেকেও শ্রেষ্ঠ হতে পারে।
২. সন্তান ও তাঁর বংশধরের জন্য শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
৩. গর্ভের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কেও আল্লাহ তা‘আলা ভালোভাবে অবগত আছেন।
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ وَّاَنْۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَّكَفَّلَهَا زَكَرِيَّاؕ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًاۚ قَالَ يَا مَرْيَمُ اَنّٰى لَكِ هٰذَاؕ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ (৩৭)
শাব্দিক অনুবাদ
৩৭. فَتَقَبَّلَهَا অতঃপর তাকে কবুল করলেন رَبُّهَا তার প্রতিপালক بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ উত্তমভাবে কবুল করলেন وَاَنْۢبَتَهَا এবং তাকে লালন-পালনের ব্যবস্থা করলেন نَبَاتًا حَسَنًا উত্তম লালন-পালন। وَكَفَّلَهَا আর তাকে তত্ত্বাবধানে রাখলেন زَكَرِيَّا যাকারিয়ার। كُلَّمَا যখনই دَخَلَ প্রবেশ করত عَلَيْهَا তার কাছে زَكَرِيَّا যাকারিয়া اَلْمِحْرَابَ মেহরাবে وَجَدَ সে পেত عِنْدَهَا তার কাছে رِزْقًا রিযিক। قَالَ সে বলত يَا مَرْيَمُ হে মারইয়াম! اَنّٰى কোথা থেকে لَكِ তোমার কাছে هٰذَا এসব? قَالَتْ সে বলল, هُوَ এসব مِنْ عِنْدِ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে। اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يَرْزُقُ রিযিক দান করেন مَنْ يَّشَآءُ যাকে চান بِغَيْرِ حِسَابٍ হিসাব ছাড়া।
সরল অনুবাদ
৩৭. অতঃপর তার প্রতিপালক তাকে (মারইয়ামকে) উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে লালন-পালনের ব্যবস্থা করলেন। আর (এজন্যই) তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রাখলেন। যখনই যাকারিয়া তার কাছে মেহরাব [মেহরাব বলতে সাধারণত আমরা মসজিদের ইমামের দাঁড়ানোর জন্য যে জায়গাটি তৈরি করা হয়, সেটিকে বুঝে থাকি। কিন্তু এখানে মেহরাব বলতে তা বুঝানো হয়নি। বরং মেহরাব বলতে ঐ কক্ষকে বুঝানো হয়েছে, যা খ্রিস্টান ও ইহুদীদের গীর্জা ও উপাসনালয়গুলোত মূল উপাসনা গৃহের সাথে লাগিয়ে সমতল ভূমি থেকে যথেষ্ট উঁচুতে তৈরি করা হয়, যার মধ্যে উপাসনালয়ের খাদেম, পুরোহিত ও এতেকাফকারীরা অবস্থান করে, তাকে মেহরাব বলা হয়। এ ধরনের একটি কামরাতেই মারইয়াম (আঃ) অবস্থান করতেন।] (নির্দিষ্ট কক্ষে) প্রবেশ করত, তখনই তার কাছে রিযিক (খাদ্য-সামগ্রী) দেখতে পেত। (ফলে) সে জিজ্ঞেস করত, হে মারইয়াম! তোমার কাছে এসব কোথা থেকে (আসে)? সে বলল, এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে (আসে)। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক (খাদ্য) দান করেন। [এখানে রিযিক বলতে মারইয়াম (আঃ) এর নিকট আগত ফলমূলের কথা বোঝানো হয়েছে। যাকারিয়া (আঃ) এসব ফলমূল মারইয়াম (আঃ) এর নিকট দেখতে পেয়ে খুবই আশ্চর্য হতেন। কেননা- (১) এই ফলগুলো ছিল অসময়ের। অর্থাৎ গ্রীষ্মের ফল শীতে এবং শীতের ফল গ্রীষ্মের মৌসুমে তার ঘরে বিদ্যমান থাকত। (২) এই ফলগুলো না যাকারিয়া (আঃ) তাকে দিতেন, না অন্য কেউ। মূলত এটি ছিল আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মারইয়াম (আঃ) যাকারিয়া (আঃ) এর তত্ত্বাবধানে লালিতপালিত হয়েছিলেন।
২. মারইয়াম (আঃ) আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হতেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৎ বান্দাদেরকে অশেষ রিযিক দান করে থাকেন।
৪. নিজ সন্তান ছাড়াও অপর কারো লালন-পালনের ভার গ্রহণ করা যাবে।
শাব্দিক অনুবাদ
৩৭. فَتَقَبَّلَهَا অতঃপর তাকে কবুল করলেন رَبُّهَا তার প্রতিপালক بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ উত্তমভাবে কবুল করলেন وَاَنْۢبَتَهَا এবং তাকে লালন-পালনের ব্যবস্থা করলেন نَبَاتًا حَسَنًا উত্তম লালন-পালন। وَكَفَّلَهَا আর তাকে তত্ত্বাবধানে রাখলেন زَكَرِيَّا যাকারিয়ার। كُلَّمَا যখনই دَخَلَ প্রবেশ করত عَلَيْهَا তার কাছে زَكَرِيَّا যাকারিয়া اَلْمِحْرَابَ মেহরাবে وَجَدَ সে পেত عِنْدَهَا তার কাছে رِزْقًا রিযিক। قَالَ সে বলত يَا مَرْيَمُ হে মারইয়াম! اَنّٰى কোথা থেকে لَكِ তোমার কাছে هٰذَا এসব? قَالَتْ সে বলল, هُوَ এসব مِنْ عِنْدِ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে। اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يَرْزُقُ রিযিক দান করেন مَنْ يَّشَآءُ যাকে চান بِغَيْرِ حِسَابٍ হিসাব ছাড়া।
সরল অনুবাদ
৩৭. অতঃপর তার প্রতিপালক তাকে (মারইয়ামকে) উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে লালন-পালনের ব্যবস্থা করলেন। আর (এজন্যই) তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রাখলেন। যখনই যাকারিয়া তার কাছে মেহরাব [মেহরাব বলতে সাধারণত আমরা মসজিদের ইমামের দাঁড়ানোর জন্য যে জায়গাটি তৈরি করা হয়, সেটিকে বুঝে থাকি। কিন্তু এখানে মেহরাব বলতে তা বুঝানো হয়নি। বরং মেহরাব বলতে ঐ কক্ষকে বুঝানো হয়েছে, যা খ্রিস্টান ও ইহুদীদের গীর্জা ও উপাসনালয়গুলোত মূল উপাসনা গৃহের সাথে লাগিয়ে সমতল ভূমি থেকে যথেষ্ট উঁচুতে তৈরি করা হয়, যার মধ্যে উপাসনালয়ের খাদেম, পুরোহিত ও এতেকাফকারীরা অবস্থান করে, তাকে মেহরাব বলা হয়। এ ধরনের একটি কামরাতেই মারইয়াম (আঃ) অবস্থান করতেন।] (নির্দিষ্ট কক্ষে) প্রবেশ করত, তখনই তার কাছে রিযিক (খাদ্য-সামগ্রী) দেখতে পেত। (ফলে) সে জিজ্ঞেস করত, হে মারইয়াম! তোমার কাছে এসব কোথা থেকে (আসে)? সে বলল, এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে (আসে)। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক (খাদ্য) দান করেন। [এখানে রিযিক বলতে মারইয়াম (আঃ) এর নিকট আগত ফলমূলের কথা বোঝানো হয়েছে। যাকারিয়া (আঃ) এসব ফলমূল মারইয়াম (আঃ) এর নিকট দেখতে পেয়ে খুবই আশ্চর্য হতেন। কেননা- (১) এই ফলগুলো ছিল অসময়ের। অর্থাৎ গ্রীষ্মের ফল শীতে এবং শীতের ফল গ্রীষ্মের মৌসুমে তার ঘরে বিদ্যমান থাকত। (২) এই ফলগুলো না যাকারিয়া (আঃ) তাকে দিতেন, না অন্য কেউ। মূলত এটি ছিল আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মারইয়াম (আঃ) যাকারিয়া (আঃ) এর তত্ত্বাবধানে লালিতপালিত হয়েছিলেন।
২. মারইয়াম (আঃ) আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হতেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৎ বান্দাদেরকে অশেষ রিযিক দান করে থাকেন।
৪. নিজ সন্তান ছাড়াও অপর কারো লালন-পালনের ভার গ্রহণ করা যাবে।
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّه ۚ قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ (৩৮)
শাব্দিক অনুবাদ
৩৮. هُنَالِكَ সেখানেই دَعَا প্রার্থনা করল زَكَرِيَّا যাকারিয়া رَبَّه তার প্রতিপালকের নিকট। قَالَ সে বলল, رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! هَبْ আপনি দান করুন لِيْ আমাকে مِنْ لَّدُنْكَ আপনার পক্ষ থেকে ذُرِّيَّةً একটি সন্তান طَيِّبَةً নেক। اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি سَمِيْعُ শ্রবণকারী اَلدُّعَآءِ প্রার্থনা।
সরল অনুবাদ
৩৮. সেখানেই যাকারিয়া তার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করল। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একটি নেক সন্তান দান করুন; নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। [এ প্রার্থনাটি যাকারিয়া (আঃ) তখনই করেছিলেন, যখন তিনি মারইয়াম (আঃ) এর কাছে আগত অসময়ের ফল প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এতে তার মনে এই অভিপ্রায় জেগেছিল যে, মারইয়াম (আঃ) এর মতো যদি তারও কোন পুণ্যবান সন্তান হতো, তাহলে কতইনা ভালো হতো। আর এরই ফলশ্রুতিতে তিনি সৎ সন্তান লাভের জন্য উক্ত দু‘আটি করেছিলেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সৎ সন্তানের জন্য প্রার্থনা করা নবীদের সুন্নাত।
২. একমাত্র আল্লাহর কাছেই সন্তান কামনা করতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
৩৮. هُنَالِكَ সেখানেই دَعَا প্রার্থনা করল زَكَرِيَّا যাকারিয়া رَبَّه তার প্রতিপালকের নিকট। قَالَ সে বলল, رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! هَبْ আপনি দান করুন لِيْ আমাকে مِنْ لَّدُنْكَ আপনার পক্ষ থেকে ذُرِّيَّةً একটি সন্তান طَيِّبَةً নেক। اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি سَمِيْعُ শ্রবণকারী اَلدُّعَآءِ প্রার্থনা।
সরল অনুবাদ
৩৮. সেখানেই যাকারিয়া তার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করল। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একটি নেক সন্তান দান করুন; নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। [এ প্রার্থনাটি যাকারিয়া (আঃ) তখনই করেছিলেন, যখন তিনি মারইয়াম (আঃ) এর কাছে আগত অসময়ের ফল প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এতে তার মনে এই অভিপ্রায় জেগেছিল যে, মারইয়াম (আঃ) এর মতো যদি তারও কোন পুণ্যবান সন্তান হতো, তাহলে কতইনা ভালো হতো। আর এরই ফলশ্রুতিতে তিনি সৎ সন্তান লাভের জন্য উক্ত দু‘আটি করেছিলেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সৎ সন্তানের জন্য প্রার্থনা করা নবীদের সুন্নাত।
২. একমাত্র আল্লাহর কাছেই সন্তান কামনা করতে হবে।
فَنَادَتْهُ الْمَلَآئِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُّصَلِّيْ فِي الْمِحْرَابِ اَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيٰى مُصَدِّقًا ۢبِكَلِمَةٍ مِّنَ اللهِ وَسَيِّدًا وَّحَصُوْرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ (৩৯)
শাব্দিক অনুবাদ
৩৯. فَنَادَتْهُ অতঃপর তাকে ডাকল اَلْمَلَآئِكَةُ ফেরেশতারা وَهُوَ এমতাবস্থায় সে ছিল قَائِمٌ দন্ডায়মান يُصَلِّيْ সলাতে فِي الْمِحْرَابِ মেহরাবের মধ্যে। اَنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يُبَشِّرُكَ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন بِيَحْيٰى ইয়াহইয়ার। مُصَدِّقًا সে সত্যায়নকারী بِكَلِمَةٍ বাণীর مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে وَسَيِّدًا এবং নেতা, وَحَصُوْرًا এবং প্রবৃত্তি দমনকারী وَنَبِيًّا এবং একজন নবী مِنَ الصَّالِحِيْنَ সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে।
সরল অনুবাদ
৩৯. অতঃপর ফেরেশতারা তাকে ডাকল, এমতাবস্থায় সে মেহরাবে (নির্দিষ্ট কক্ষে) সলাতে দন্ডায়মান অবস্থায় ছিল; (তারা বলল) নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। সে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে (আসা) একটি বাণীর [এখানে আল্লাহর বাণী বলতে ঈসা (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁর জন্ম হয়েছিল মহান আল্লাহর একটি বাণীর মাধ্যমে অলৌকিক বিষয় হিসেবে।] সত্যায়নকারী [অর্থাৎ তিনি ঈসা (আঃ) ও তাঁর কর্মসমূহকে স্বীকৃতি প্রদান করবেন। যাতে করে ঈসা (আঃ) যখন মানুষকে দাওয়াত দিবেন, তখন কেউ যেন তাকে অস্বীকার না করে।], নেতা, প্রবৃত্তি দমনকারী (নারী বিমুখ) এবং সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে একজন নবী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৎ বান্দাদের প্রার্থনা কবুল করে থাকেন।
২. ইয়াহইয়া (আঃ) ছিলেন যাকারিয়া (আঃ) এর প্রার্থনারই ফসল।
৩. ফেরেশতাগণ ইয়াহইয়া (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ নিয়ে যাকারিয়া (আঃ) এর কাছে গমন করেছিলেন।
শাব্দিক অনুবাদ
৩৯. فَنَادَتْهُ অতঃপর তাকে ডাকল اَلْمَلَآئِكَةُ ফেরেশতারা وَهُوَ এমতাবস্থায় সে ছিল قَائِمٌ দন্ডায়মান يُصَلِّيْ সলাতে فِي الْمِحْرَابِ মেহরাবের মধ্যে। اَنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يُبَشِّرُكَ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন بِيَحْيٰى ইয়াহইয়ার। مُصَدِّقًا সে সত্যায়নকারী بِكَلِمَةٍ বাণীর مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে وَسَيِّدًا এবং নেতা, وَحَصُوْرًا এবং প্রবৃত্তি দমনকারী وَنَبِيًّا এবং একজন নবী مِنَ الصَّالِحِيْنَ সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে।
সরল অনুবাদ
৩৯. অতঃপর ফেরেশতারা তাকে ডাকল, এমতাবস্থায় সে মেহরাবে (নির্দিষ্ট কক্ষে) সলাতে দন্ডায়মান অবস্থায় ছিল; (তারা বলল) নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। সে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে (আসা) একটি বাণীর [এখানে আল্লাহর বাণী বলতে ঈসা (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁর জন্ম হয়েছিল মহান আল্লাহর একটি বাণীর মাধ্যমে অলৌকিক বিষয় হিসেবে।] সত্যায়নকারী [অর্থাৎ তিনি ঈসা (আঃ) ও তাঁর কর্মসমূহকে স্বীকৃতি প্রদান করবেন। যাতে করে ঈসা (আঃ) যখন মানুষকে দাওয়াত দিবেন, তখন কেউ যেন তাকে অস্বীকার না করে।], নেতা, প্রবৃত্তি দমনকারী (নারী বিমুখ) এবং সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে একজন নবী।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৎ বান্দাদের প্রার্থনা কবুল করে থাকেন।
২. ইয়াহইয়া (আঃ) ছিলেন যাকারিয়া (আঃ) এর প্রার্থনারই ফসল।
৩. ফেরেশতাগণ ইয়াহইয়া (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ নিয়ে যাকারিয়া (আঃ) এর কাছে গমন করেছিলেন।
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ (৪০) قَالَ رَبِّ اجْعَلْ لِّيْۤ اٰيَةًؕ قَالَ اٰيَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ اِلَّا رَمْزًاؕ وَّاذْكُرْ رَّبَّكَ كَثِيْرًا وَّسَبِّحْ بِالْعَشِيِّ وَالْاِبْكَارِ (৪১)
শাব্দিক অনুবাদ
৪০. قَالَ সে বলল رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اَنّٰى কীভাবে يَكُوْنُ হবে لِيْ আমার غُلَامٌ পুত্র সন্তান; وَقَدْ অথচ بَلَغَنِيَ আমার নিকট পৌঁছেছে اَلْكِبَرُ বার্ধক্য وَامْرَاَتِيْ এবং আমার স্ত্রী عَاقِرٌ বন্ধ্যা? قَالَ তিনি বললেন كَذٰلِكَ এভাবেই اَللهُ আল্লাহ يَفْعَلُ করে থাকেন مَا يَشَآءُ যা চান।
৪১. قَالَ সে বলল رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اِجْعَلْ আপনি দিন لِيْ আমার জন্য اٰيَةً কোন একটি নিদর্শন। قَالَ তিনি বললেন اٰيَتُكَ তোমার নিদর্শন এই যে اَلَّا تُكَلِّمَ তুমি কোন কথা বলবে না اَلنَّاسَ মানুষের সাথে ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ তিনদিন পর্যন্ত اِلَّا رَمْزًا ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া। وَاذْكُرْ আর তুমি স্মরণ করো رَبَّكَ তোমার প্রতিপালককে كَثِيْرًا অধিক পরিমাণে وَسَبِّحْ এবং তুমি মহিমা ঘোষণা করো بِالْعَشِيِّ সকালে وَالْاِبْكَارِ ও সন্ধ্যায়।
সরল অনুবাদ
৪০. সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! কীভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে; অথচ আমার নিকট বার্ধক্য পৌঁছেছে এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা? তিনি (আল্লাহ) বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন। [অত্র আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, যাকারিয়া (আঃ) তখন পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন। কেননা তার স্ত্রী ছিল বন্ধ্যা। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে সন্তান প্রদান করে এটা প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনি বন্ধ্যা নারীর গর্ভেও সন্তান দান করতে সক্ষম। অপরদিকে এটি ছিল ঈসা (আঃ) এর জন্মের ব্যাপারে অন্যতম একটি নিদর্শন। কেননা যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বন্ধ্যা নারীর গর্ভে সন্তান দান করতে সক্ষম, সুতরাং কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই যে কোন নারীর গর্ভে সন্তান প্রদান করতে তিনি পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।]
৪১. সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কোন একটি নিদর্শন দিন। তিনি বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি তিনদিন পর্যন্ত ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া মানুষের সাথে কোন কথা বলতে পারবে না। আর তুমি তোমার প্রতিপালককে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. যাকারিয়া (আঃ) এর স্ত্রী ছিলেন বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা।
২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা হওয়া সত্ত্বেও সন্তান দিতে সক্ষম।
৩. বন্ধ্যা নারীর গর্ভে ইয়াহইয়া (আঃ) এর জন্মটি ছিল অলৌকিক।
৪. সর্বদা আল্লাহর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করা উচিত।
৫. সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করা অনেক পুণ্যের কাজ।
শাব্দিক অনুবাদ
৪০. قَالَ সে বলল رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اَنّٰى কীভাবে يَكُوْنُ হবে لِيْ আমার غُلَامٌ পুত্র সন্তান; وَقَدْ অথচ بَلَغَنِيَ আমার নিকট পৌঁছেছে اَلْكِبَرُ বার্ধক্য وَامْرَاَتِيْ এবং আমার স্ত্রী عَاقِرٌ বন্ধ্যা? قَالَ তিনি বললেন كَذٰلِكَ এভাবেই اَللهُ আল্লাহ يَفْعَلُ করে থাকেন مَا يَشَآءُ যা চান।
৪১. قَالَ সে বলল رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اِجْعَلْ আপনি দিন لِيْ আমার জন্য اٰيَةً কোন একটি নিদর্শন। قَالَ তিনি বললেন اٰيَتُكَ তোমার নিদর্শন এই যে اَلَّا تُكَلِّمَ তুমি কোন কথা বলবে না اَلنَّاسَ মানুষের সাথে ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ তিনদিন পর্যন্ত اِلَّا رَمْزًا ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া। وَاذْكُرْ আর তুমি স্মরণ করো رَبَّكَ তোমার প্রতিপালককে كَثِيْرًا অধিক পরিমাণে وَسَبِّحْ এবং তুমি মহিমা ঘোষণা করো بِالْعَشِيِّ সকালে وَالْاِبْكَارِ ও সন্ধ্যায়।
সরল অনুবাদ
৪০. সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! কীভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে; অথচ আমার নিকট বার্ধক্য পৌঁছেছে এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা? তিনি (আল্লাহ) বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন। [অত্র আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, যাকারিয়া (আঃ) তখন পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন। কেননা তার স্ত্রী ছিল বন্ধ্যা। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে সন্তান প্রদান করে এটা প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনি বন্ধ্যা নারীর গর্ভেও সন্তান দান করতে সক্ষম। অপরদিকে এটি ছিল ঈসা (আঃ) এর জন্মের ব্যাপারে অন্যতম একটি নিদর্শন। কেননা যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বন্ধ্যা নারীর গর্ভে সন্তান দান করতে সক্ষম, সুতরাং কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই যে কোন নারীর গর্ভে সন্তান প্রদান করতে তিনি পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।]
৪১. সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কোন একটি নিদর্শন দিন। তিনি বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি তিনদিন পর্যন্ত ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া মানুষের সাথে কোন কথা বলতে পারবে না। আর তুমি তোমার প্রতিপালককে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. যাকারিয়া (আঃ) এর স্ত্রী ছিলেন বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা।
২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা হওয়া সত্ত্বেও সন্তান দিতে সক্ষম।
৩. বন্ধ্যা নারীর গর্ভে ইয়াহইয়া (আঃ) এর জন্মটি ছিল অলৌকিক।
৪. সর্বদা আল্লাহর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করা উচিত।
৫. সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করা অনেক পুণ্যের কাজ।
وَاِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلٰى نِسَآءِ الْعَالَمِيْنَ (৪২) يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ (৪৩)
শাব্দিক অনুবাদ
৪২. وَاِذْ আর যখন قَالَتْ বলল اَلْمَلَآئِكَةُ ফেরেশতারা يَا مَرْيَمُ হে মারইয়াম! اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ اِصْطَفَاكِ তোমাকে মনোনীত করেছেন وَطَهَّرَكِ এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। وَاصْطَفَاكِ আর তিনি তোমাকে নির্বাচিত করেছেন عَلٰى نِسَآءِ নারীদের উপর اَلْعَالَمِيْنَ জগতসমূহের।
৪৩. يَا مَرْيَمُ হে মারইয়াম! اُقْنُتِيْ তুমি অনুগত হও لِرَبِّكِ তোমার প্রতিপালকের, وَاسْجُدِيْ এবং তুমি সিজদা করো وَارْكَعِيْ এবং তুমি রুকূ করো مَعَ সাথে اَلرَّاكِعِيْنَ রুকূকারীদের ।
সরল অনুবাদ
৪২. আর যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে (একটি বিশেষ কাজের জন্য) মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তিনি তোমাকে জগতসমূহের (মানবজাতির) নারীদের উপর নির্বাচিত করেছেন। [আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে যে কয়জন নারীকে বিশেষভাবে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন, মারইয়াম (আঃ) তাদের মধ্যে একজন। অন্যান্যরা হলেন- ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর স্ত্রী খাদিজা ও আয়েশা (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)। হাদীসে এসেছে, ক) ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বিশ^বাসীর উপর সবচেয়ে মর্যাদাবান নারী হল- খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ, মারইয়াম বিনতে ইমরান এবং ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মাযাহিম। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৬০)অপর বর্ণনায় তাদেরকে জান্নাতের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান নারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৮৫২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৫০৮)খ) আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, পুরুষদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতা লাভ করেছেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম ব্যতীত আর কেউ পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তবে আয়েশার মর্যাদা সব মহিলার উপর এমন, যেমন সারীদের (গোশতের সুরুয়ায় ভিজা রুটির) মর্যাদা সকল প্রকার খাদ্যের উপর।(সহীহ বুখারী, হা/৩৪১১; সহীহ মুসলিম, হা/২৪৩১)]
৪৩. (অতএব) হে মারইয়াম! তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও, (তাঁকে) সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। [আল্লাহ তা‘আলা যখন তোমাকে এত বড় মর্যাদা দান করেছেন, তখন তুমি শুকরিয়া আদায়স্বরূপ আরো বেশি করে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ কর এবং বেশি বেশি তার ইবাদাতে মগ্ন থাক। মূলত এই নীতিটি প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অনুসরণীয়। কেননা যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্ত হয়ে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কাফিরদের মতো নানা ধরনের শিরকী ও বিদআতী পন্থায় আনন্দ প্রকাশ না করে ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী আরো বেশি আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে আনন্দ প্রকাশ করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা খুশি হয়ে তাকে আরো বেশি নিয়ামত প্রদান করবেন এবং জান্নাতে উচ্চস্তরের মর্যাদা প্রদানের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা তার দ্বারা সংঘটিত করিয়ে নিবেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. বিশে^র সমস্ত নারীদের মধ্যে মারইয়াম (আঃ) হলেন একজন নির্বাচিত নারী।
২. মারইয়াম (আঃ) ছিলেন একজন পবিত্র নারী।
শাব্দিক অনুবাদ
৪২. وَاِذْ আর যখন قَالَتْ বলল اَلْمَلَآئِكَةُ ফেরেশতারা يَا مَرْيَمُ হে মারইয়াম! اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ اِصْطَفَاكِ তোমাকে মনোনীত করেছেন وَطَهَّرَكِ এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। وَاصْطَفَاكِ আর তিনি তোমাকে নির্বাচিত করেছেন عَلٰى نِسَآءِ নারীদের উপর اَلْعَالَمِيْنَ জগতসমূহের।
৪৩. يَا مَرْيَمُ হে মারইয়াম! اُقْنُتِيْ তুমি অনুগত হও لِرَبِّكِ তোমার প্রতিপালকের, وَاسْجُدِيْ এবং তুমি সিজদা করো وَارْكَعِيْ এবং তুমি রুকূ করো مَعَ সাথে اَلرَّاكِعِيْنَ রুকূকারীদের ।
সরল অনুবাদ
৪২. আর যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে (একটি বিশেষ কাজের জন্য) মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তিনি তোমাকে জগতসমূহের (মানবজাতির) নারীদের উপর নির্বাচিত করেছেন। [আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে যে কয়জন নারীকে বিশেষভাবে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন, মারইয়াম (আঃ) তাদের মধ্যে একজন। অন্যান্যরা হলেন- ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর স্ত্রী খাদিজা ও আয়েশা (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)। হাদীসে এসেছে, ক) ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বিশ^বাসীর উপর সবচেয়ে মর্যাদাবান নারী হল- খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ, মারইয়াম বিনতে ইমরান এবং ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মাযাহিম। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৬০)অপর বর্ণনায় তাদেরকে জান্নাতের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান নারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৮৫২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৫০৮)খ) আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, পুরুষদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতা লাভ করেছেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম ব্যতীত আর কেউ পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তবে আয়েশার মর্যাদা সব মহিলার উপর এমন, যেমন সারীদের (গোশতের সুরুয়ায় ভিজা রুটির) মর্যাদা সকল প্রকার খাদ্যের উপর।(সহীহ বুখারী, হা/৩৪১১; সহীহ মুসলিম, হা/২৪৩১)]
৪৩. (অতএব) হে মারইয়াম! তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও, (তাঁকে) সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। [আল্লাহ তা‘আলা যখন তোমাকে এত বড় মর্যাদা দান করেছেন, তখন তুমি শুকরিয়া আদায়স্বরূপ আরো বেশি করে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ কর এবং বেশি বেশি তার ইবাদাতে মগ্ন থাক। মূলত এই নীতিটি প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অনুসরণীয়। কেননা যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্ত হয়ে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কাফিরদের মতো নানা ধরনের শিরকী ও বিদআতী পন্থায় আনন্দ প্রকাশ না করে ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী আরো বেশি আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে আনন্দ প্রকাশ করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা খুশি হয়ে তাকে আরো বেশি নিয়ামত প্রদান করবেন এবং জান্নাতে উচ্চস্তরের মর্যাদা প্রদানের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা তার দ্বারা সংঘটিত করিয়ে নিবেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. বিশে^র সমস্ত নারীদের মধ্যে মারইয়াম (আঃ) হলেন একজন নির্বাচিত নারী।
২. মারইয়াম (আঃ) ছিলেন একজন পবিত্র নারী।
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَؕ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ يُلْقُوْنَ اَقْلَامَهُمْ اَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ يَخْتَصِمُوْنَ (৪৪)
শাব্দিক অনুবাদ
৪৪. ذٰلِكَ এগুলো مِنْ اَنْۢبَآءِ সংবাদসমূহ থেকে اَلْغَيْبِ অদৃশ্যের نُوْحِيْهِ যা আমি ওহী করছি اِلَيْكَ তোমার প্রতি। وَمَا كُنْتَ আর তুমি তো ছিলে না لَدَيْهِمْ তাদের কাছে اِذْ যখন يُلْقُوْنَ তারা নিক্ষেপ করেছিল اَقْلَامَهُمْ তাদের কলমসমূহ اَيُّهُمْ তাদের মধ্যে কে يَكْفُلُ অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবে مَرْيَمَ মারইয়ামের وَمَا كُنْتَ এবং তুমি তো ছিলে না لَدَيْهِمْ তাদের কাছে اِذْ যখন يَخْتَصِمُوْنَ তারা তর্ক-বিতর্ক করছিল।
সরল অনুবাদ
৪৪. (হে নবী!) এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমি তোমার প্রতি ওহী (প্রত্যাদেশ) করছি। [এগুলোকে গায়েবের সংবাদ এজন্যই বলা হয়েছে যে, এসব ঘটনা সম্পর্কে সঠিক কোন জ্ঞান তৎকালীন আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খ্রিস্টান কারো কাছে ছিল না। বরং যা কিছু ছিল সেগুলো প্রকৃত ঘটনার বিকৃতরূপ। আল্লাহ তা‘আলা যদি ওহীর মাধ্যমে এসব ঘটনার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে অবগত না করতেন, তাহলে এ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব হতো না। আর আল্লাহ তা‘আলা কোন নবী অথবা রাসূল ব্যতীত এসব বিষয়ে কাউকে অবগত করেন না। সুতরাং ওহীর মাধ্যমে এসব গায়েবের সংবাদ প্রাপ্ত হওয়াটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রিসালাতের সত্যতার জন্য একটি বড় প্রমাণ। অপর দিকে এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর গায়েব সম্পর্কে অবগত না থাকারও প্রমাণ। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যদি গায়েব জানতেন, তাহলে ওহীর মাধ্যমে এগুলোর জানানোর কোন প্রায়োজন ছিল না।] তুমি তো তাদের কাছে ছিলে না, যখন তাদের কলমসমূহ নিক্ষেপ করা হচ্ছিল (অর্থাৎ তারা লটারী করছিল), (এজন্য যে) কে মারইয়ামের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবে এবং তুমি তো তখনও তাদের কাছে ছিলে না, যখন তারা তর্ক-বিতর্ক করছিল। [ঘটনা ছিল এই যে, মারইয়াম (আঃ) এর মাতা যখন তাঁকে আল্লাহর কাজের জন্য জন্মের পূর্বেই উৎসর্গ করে দিয়েছিল, তখন বংশের সবাই তাকে পবিত্র সন্তান হিসেবেই গ্রহণ করে নিয়েছিল। এদিকে মারইয়াম (আঃ) এর জন্মের সময় তার পিতা জীবিত না থাকায়, তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে সবাই আগ্রহী ছিল। তৎকালীন যুগে আল্লাহ তা‘আলা নামে উৎসর্গিত সন্তান পালন করাকে খুবই পুণ্যের কাজ মনে করা হতো। সে কারণে মারইয়াম (আঃ)-কে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। অবস্থা এমন পর্যায়ে ঠেকেছিল যে, শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে লটারীর প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকলেই জর্ডান নদীতে গিয়ে নিজেদের কলম নিক্ষেপ করে। নিয়ম ছিল, যার কলম নদীর স্রোতে ভেসে না গিয়ে স্থির থাকবে, সে-ই মারইয়ামের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। অতঃপর দেখা গেল যে, কেবল যাকারিয়া (আঃ) এর কলমই নদীতে স্থির ছিল। ফলে তিনিই মারইয়াম (আঃ) এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাছাড়া এ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি হকদার। কেননা তিনি ছিলেন মারইয়াম (আঃ) এর খালু।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. গায়েবের সংবাদ একমাত্র ওহী ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়।
২. মারইয়াম (আঃ) এর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য লটারী করা হয়েছিল।
শাব্দিক অনুবাদ
৪৪. ذٰلِكَ এগুলো مِنْ اَنْۢبَآءِ সংবাদসমূহ থেকে اَلْغَيْبِ অদৃশ্যের نُوْحِيْهِ যা আমি ওহী করছি اِلَيْكَ তোমার প্রতি। وَمَا كُنْتَ আর তুমি তো ছিলে না لَدَيْهِمْ তাদের কাছে اِذْ যখন يُلْقُوْنَ তারা নিক্ষেপ করেছিল اَقْلَامَهُمْ তাদের কলমসমূহ اَيُّهُمْ তাদের মধ্যে কে يَكْفُلُ অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবে مَرْيَمَ মারইয়ামের وَمَا كُنْتَ এবং তুমি তো ছিলে না لَدَيْهِمْ তাদের কাছে اِذْ যখন يَخْتَصِمُوْنَ তারা তর্ক-বিতর্ক করছিল।
সরল অনুবাদ
৪৪. (হে নবী!) এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমি তোমার প্রতি ওহী (প্রত্যাদেশ) করছি। [এগুলোকে গায়েবের সংবাদ এজন্যই বলা হয়েছে যে, এসব ঘটনা সম্পর্কে সঠিক কোন জ্ঞান তৎকালীন আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খ্রিস্টান কারো কাছে ছিল না। বরং যা কিছু ছিল সেগুলো প্রকৃত ঘটনার বিকৃতরূপ। আল্লাহ তা‘আলা যদি ওহীর মাধ্যমে এসব ঘটনার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে অবগত না করতেন, তাহলে এ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব হতো না। আর আল্লাহ তা‘আলা কোন নবী অথবা রাসূল ব্যতীত এসব বিষয়ে কাউকে অবগত করেন না। সুতরাং ওহীর মাধ্যমে এসব গায়েবের সংবাদ প্রাপ্ত হওয়াটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রিসালাতের সত্যতার জন্য একটি বড় প্রমাণ। অপর দিকে এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর গায়েব সম্পর্কে অবগত না থাকারও প্রমাণ। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যদি গায়েব জানতেন, তাহলে ওহীর মাধ্যমে এগুলোর জানানোর কোন প্রায়োজন ছিল না।] তুমি তো তাদের কাছে ছিলে না, যখন তাদের কলমসমূহ নিক্ষেপ করা হচ্ছিল (অর্থাৎ তারা লটারী করছিল), (এজন্য যে) কে মারইয়ামের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবে এবং তুমি তো তখনও তাদের কাছে ছিলে না, যখন তারা তর্ক-বিতর্ক করছিল। [ঘটনা ছিল এই যে, মারইয়াম (আঃ) এর মাতা যখন তাঁকে আল্লাহর কাজের জন্য জন্মের পূর্বেই উৎসর্গ করে দিয়েছিল, তখন বংশের সবাই তাকে পবিত্র সন্তান হিসেবেই গ্রহণ করে নিয়েছিল। এদিকে মারইয়াম (আঃ) এর জন্মের সময় তার পিতা জীবিত না থাকায়, তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে সবাই আগ্রহী ছিল। তৎকালীন যুগে আল্লাহ তা‘আলা নামে উৎসর্গিত সন্তান পালন করাকে খুবই পুণ্যের কাজ মনে করা হতো। সে কারণে মারইয়াম (আঃ)-কে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। অবস্থা এমন পর্যায়ে ঠেকেছিল যে, শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে লটারীর প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকলেই জর্ডান নদীতে গিয়ে নিজেদের কলম নিক্ষেপ করে। নিয়ম ছিল, যার কলম নদীর স্রোতে ভেসে না গিয়ে স্থির থাকবে, সে-ই মারইয়ামের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। অতঃপর দেখা গেল যে, কেবল যাকারিয়া (আঃ) এর কলমই নদীতে স্থির ছিল। ফলে তিনিই মারইয়াম (আঃ) এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাছাড়া এ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি হকদার। কেননা তিনি ছিলেন মারইয়াম (আঃ) এর খালু।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. গায়েবের সংবাদ একমাত্র ওহী ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়।
২. মারইয়াম (আঃ) এর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য লটারী করা হয়েছিল।
اِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيْهًا فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ (৪৫) وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَّمِنَ الصَّالِحِيْنَ (৪৬)
শাব্দিক অনুবাদ
৪৫. اِذْ যখন قَالَتْ বলল اَلْمَلَآئِكَةُ ফেরেশতারা, يَا مَرْيَمُ হে মারইয়াম! اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يُبَشِّرُكِ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন بِكَلِمَةٍ এক বাণীর مِنْهُ তাঁর পক্ষ থেকে । اِسْمُهُ তার নাম اَلْمَسِيْحُ মাসীহ عِيْسَى ঈসা اِبْنُ পুত্র مَرْيَمَ মারইয়ামের। وَجِيْهًا সম্মানিত فِي الدُّنْيَا দুনিয়াতে وَالْاٰخِرَةِ ও আখিরাতে وَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।
৪৬. وَيُكَلِّمُ সে কথা বলবে اَلنَّاسَ মানুষের সাথে فِي الْمَهْدِ শৈশবে وَكَهْلًا ও বার্ধক্যে وَمِنَ الصَّالِحِيْنَ এবং সে হবে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৪৫. (স্মরণ করো) যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে এক কালিমার (বাণীর) সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম (হচ্ছে) মাসীহ [মাসীহ অর্থ হচ্ছে, স্পর্শ করা বা হাত বুলিয়ে দেয়া ইত্যাদি। ঈসা (আঃ)-কে মাসীহ বলা হয় এই জন্য যে, তিনি রোগীদের উপর হাত বুলিয়ে দিলে তারা আল্লাহর নির্দেশে আরোগ্য লাভ করত।]- মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সে হবে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।
৪৬. সে শৈশবে [এটি হচ্ছে ঈসা (আঃ) এর অন্যতম মুজিযা। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহসমূহে এরূপ আরো কয়েকটি শিশুর কথা উল্লেখ পাওয়া যায়, যারা দোলনায় থাকাবস্থাতেই কথা বলেছিল। তারা হলো- (১) জুরাইজ (আঃ) এর সম্পর্কিত ঘটনায় তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারী শিশু। (২) একজন ইসরাঈলী মহিলার শিশু। (৩) আসহাবে উখদুদের ঘটনায় উল্লেখিত আগুনে ঝাপ দেয়ার পূর্বমুহূর্তে মায়ের সাথে কথোকপত্থনকারী শিশু। তবে ইউসুফ (আঃ) এর ব্যাপারে ফায়সালাকারী সাক্ষী হিসেবে যে শিশুর কথা পাওয়া যায় সেটির বর্ণনাসূত্র নির্ভরযোগ্য নয়।] (কোলে থাকাবস্থায়) ও বার্ধক্যে (পরিণত বয়সে) মানুষের সাথে কথা বলবে [এখানে ‘পরিণত বয়সে কথা বলা’ বলতে কেউ কেউ বলেন, শিশুরা স্বাভাবিকভাবে যে বয়সে কথা বলতে পারে সেটিকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময় যখন তিনি আসমান থেকে অবতরণ করবেন, তখনকার কথোপকোথনকে বুঝানো হয়েছে।]; আর সে হবে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈসা (আঃ) ছিলেন মারইয়াম (আঃ) এর পুত্র।
২. ঈসা (আঃ) দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতে খুবই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।
৩. ঈসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
৪. শৈশবে কথা বলাটা ছিল ঈসা (আঃ) এর একটি মুজিজা।
শাব্দিক অনুবাদ
৪৫. اِذْ যখন قَالَتْ বলল اَلْمَلَآئِكَةُ ফেরেশতারা, يَا مَرْيَمُ হে মারইয়াম! اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يُبَشِّرُكِ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন بِكَلِمَةٍ এক বাণীর مِنْهُ তাঁর পক্ষ থেকে । اِسْمُهُ তার নাম اَلْمَسِيْحُ মাসীহ عِيْسَى ঈসা اِبْنُ পুত্র مَرْيَمَ মারইয়ামের। وَجِيْهًا সম্মানিত فِي الدُّنْيَا দুনিয়াতে وَالْاٰخِرَةِ ও আখিরাতে وَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।
৪৬. وَيُكَلِّمُ সে কথা বলবে اَلنَّاسَ মানুষের সাথে فِي الْمَهْدِ শৈশবে وَكَهْلًا ও বার্ধক্যে وَمِنَ الصَّالِحِيْنَ এবং সে হবে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৪৫. (স্মরণ করো) যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে এক কালিমার (বাণীর) সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম (হচ্ছে) মাসীহ [মাসীহ অর্থ হচ্ছে, স্পর্শ করা বা হাত বুলিয়ে দেয়া ইত্যাদি। ঈসা (আঃ)-কে মাসীহ বলা হয় এই জন্য যে, তিনি রোগীদের উপর হাত বুলিয়ে দিলে তারা আল্লাহর নির্দেশে আরোগ্য লাভ করত।]- মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সে হবে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।
৪৬. সে শৈশবে [এটি হচ্ছে ঈসা (আঃ) এর অন্যতম মুজিযা। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহসমূহে এরূপ আরো কয়েকটি শিশুর কথা উল্লেখ পাওয়া যায়, যারা দোলনায় থাকাবস্থাতেই কথা বলেছিল। তারা হলো- (১) জুরাইজ (আঃ) এর সম্পর্কিত ঘটনায় তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারী শিশু। (২) একজন ইসরাঈলী মহিলার শিশু। (৩) আসহাবে উখদুদের ঘটনায় উল্লেখিত আগুনে ঝাপ দেয়ার পূর্বমুহূর্তে মায়ের সাথে কথোকপত্থনকারী শিশু। তবে ইউসুফ (আঃ) এর ব্যাপারে ফায়সালাকারী সাক্ষী হিসেবে যে শিশুর কথা পাওয়া যায় সেটির বর্ণনাসূত্র নির্ভরযোগ্য নয়।] (কোলে থাকাবস্থায়) ও বার্ধক্যে (পরিণত বয়সে) মানুষের সাথে কথা বলবে [এখানে ‘পরিণত বয়সে কথা বলা’ বলতে কেউ কেউ বলেন, শিশুরা স্বাভাবিকভাবে যে বয়সে কথা বলতে পারে সেটিকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময় যখন তিনি আসমান থেকে অবতরণ করবেন, তখনকার কথোপকোথনকে বুঝানো হয়েছে।]; আর সে হবে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈসা (আঃ) ছিলেন মারইয়াম (আঃ) এর পুত্র।
২. ঈসা (আঃ) দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতে খুবই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।
৩. ঈসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
৪. শৈশবে কথা বলাটা ছিল ঈসা (আঃ) এর একটি মুজিজা।
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌ ؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَاۤ قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَه كُنْ فَيَكُوْنُ (৪৭) وَيُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ (৪৮)
শাব্দিক অনুবাদ
৪৭. قَالَتْ সে বলল, رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اَنّٰى কীভাবে يَكُوْنُ হবে لِيْ আমার وَلَدٌ সন্তান وَلَمْ يَمْسَسْنِيْ অথচ আমাকে স্পর্শ করেনি بَشَرٌ কোন পুরুষ قَالَ তিনি বললেন كَذٰلِكِ اللهُ এভাবেই আল্লাহ يَخْلُقُ সৃষ্টি করেন مَا يَشَآءُ যা চান তাই। اِذَا যখন قَضٰۤى তিনি ফায়সালা করেন اَمْرًا কোন কাজের فَاِنَّمَا তখন কেবল يَقُوْلُ বলেন لَه তাকে كُنْ ‘হও’ فَيَكُوْنُ অতঃপর তা হয়ে যায়।
৪৮. وَيُعَلِّمُهُ আর তিনি তাকে শিক্ষা দেবেন اَلْكِتَابَ কিতাব وَالْحِكْمَةَ হিকমত, وَالتَّوْرَاةَ তাওরাত وَالْاِنْجِيْلَ এবং ইঞ্জীল ।
সরল অনুবাদ
৪৭. সে (মারইয়াম) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান হবে কীভাবে, অথচ আমাকে কোন মানুষ স্পর্শ করেনি? তিনি (আল্লাহ) বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। যখন তিনি কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন কেবল তাকে বলেন ‘হও’ অতঃপর তা হয়ে যায়। [এখানে ঈসা (আঃ) এর সৃষ্টির ব্যাপারে এই তথ্য প্রদান করা হয়েছে যে, ঈসা (আঃ) এর সৃষ্টি অন্যান্য মানবশিশুর মতো নয়। অন্যান্য মানব শিশু সৃষ্টির জন্য যেরকমভাবে পিতার প্রয়োজন পড়ে, ঈসা (আঃ) এর ক্ষেত্রে সেরূপ কিছুই ঘটবে না। বরং প্রথম মানব আদম (আঃ) যেরকমভাবে ‘কুন’ (হও) নির্দেশ দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিলেন, অনুরূপভাবে তিনিও ‘কুন’ (হও) নির্দেশ দ্বারাই সৃষ্টি হয়েছেন।]
৪৮. আর তিনি তাকে কিতাব, হিকমত (প্রজ্ঞা), তাওরাত এবং ইঞ্জীল শিক্ষা দেবেন [অর্থাৎ তিনি পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতকে সংস্কার করে তার বিকৃতরূপ থেকে উদ্ধার করবেন এবং তা মানুষকে শিক্ষা প্রদান করবেন। পাশাপাশি তিনি একটি নতুন আসমানী কিতাব ইঞ্জীলও শিক্ষা প্রদান করবেন, যা তার উপর অবতীর্ণ হবে।]।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই মারইয়াম (আঃ) এর সন্তান জন্ম হয়েছিল।
২. আল্লাহ তা‘আলা কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই যে কাউকে সন্তান দান করতে সক্ষম।
৩. আল্লাহ তা‘আলার উদ্ভাবন ক্ষমতা অতি দ্রুত ও নিখুঁত।
৪. ইঞ্জীল কিতাব ঈসা (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল।
শাব্দিক অনুবাদ
৪৭. قَالَتْ সে বলল, رَبِّ হে আমার প্রতিপালক! اَنّٰى কীভাবে يَكُوْنُ হবে لِيْ আমার وَلَدٌ সন্তান وَلَمْ يَمْسَسْنِيْ অথচ আমাকে স্পর্শ করেনি بَشَرٌ কোন পুরুষ قَالَ তিনি বললেন كَذٰلِكِ اللهُ এভাবেই আল্লাহ يَخْلُقُ সৃষ্টি করেন مَا يَشَآءُ যা চান তাই। اِذَا যখন قَضٰۤى তিনি ফায়সালা করেন اَمْرًا কোন কাজের فَاِنَّمَا তখন কেবল يَقُوْلُ বলেন لَه তাকে كُنْ ‘হও’ فَيَكُوْنُ অতঃপর তা হয়ে যায়।
৪৮. وَيُعَلِّمُهُ আর তিনি তাকে শিক্ষা দেবেন اَلْكِتَابَ কিতাব وَالْحِكْمَةَ হিকমত, وَالتَّوْرَاةَ তাওরাত وَالْاِنْجِيْلَ এবং ইঞ্জীল ।
সরল অনুবাদ
৪৭. সে (মারইয়াম) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান হবে কীভাবে, অথচ আমাকে কোন মানুষ স্পর্শ করেনি? তিনি (আল্লাহ) বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। যখন তিনি কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন কেবল তাকে বলেন ‘হও’ অতঃপর তা হয়ে যায়। [এখানে ঈসা (আঃ) এর সৃষ্টির ব্যাপারে এই তথ্য প্রদান করা হয়েছে যে, ঈসা (আঃ) এর সৃষ্টি অন্যান্য মানবশিশুর মতো নয়। অন্যান্য মানব শিশু সৃষ্টির জন্য যেরকমভাবে পিতার প্রয়োজন পড়ে, ঈসা (আঃ) এর ক্ষেত্রে সেরূপ কিছুই ঘটবে না। বরং প্রথম মানব আদম (আঃ) যেরকমভাবে ‘কুন’ (হও) নির্দেশ দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিলেন, অনুরূপভাবে তিনিও ‘কুন’ (হও) নির্দেশ দ্বারাই সৃষ্টি হয়েছেন।]
৪৮. আর তিনি তাকে কিতাব, হিকমত (প্রজ্ঞা), তাওরাত এবং ইঞ্জীল শিক্ষা দেবেন [অর্থাৎ তিনি পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতকে সংস্কার করে তার বিকৃতরূপ থেকে উদ্ধার করবেন এবং তা মানুষকে শিক্ষা প্রদান করবেন। পাশাপাশি তিনি একটি নতুন আসমানী কিতাব ইঞ্জীলও শিক্ষা প্রদান করবেন, যা তার উপর অবতীর্ণ হবে।]।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই মারইয়াম (আঃ) এর সন্তান জন্ম হয়েছিল।
২. আল্লাহ তা‘আলা কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই যে কাউকে সন্তান দান করতে সক্ষম।
৩. আল্লাহ তা‘আলার উদ্ভাবন ক্ষমতা অতি দ্রুত ও নিখুঁত।
৪. ইঞ্জীল কিতাব ঈসা (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল।
وَرَسُوْلًا اِلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اَنِّيْ قَدْ جِئْتُكُمْ بِاٰيَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْۚ اَنِّيْۤ اَخْلُقُ لَكُمْ مِّنَ الطِّيْنِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَاَنْفُخُ فِيْهِ فَيَكُوْنُ طَيْرًا ۢبِاِذْنِ اللهِۚ وَاُبْرِئُ الْاَكْمَهَ وَالْاَبْرَصَ وَاُحْيِي الْمَوْتٰى بِاِذْنِ اللهِؕ وَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُوْنَ وَمَا تَدَّخِرُوْنَ فِيْ بُيُوْتِكُمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ (৪৯)
শাব্দিক অনুবাদ
৪৯. وَرَسُوْلًا আর একজন রাসূল اِلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ বনী ইসরাঈলের প্রতি। اَنِّيْ নিশ্চয় আমি قَدْ جِئْتُكُمْ তোমাদের কাছে এসেছি بِاٰيَةٍ কিছু নিদর্শনসহ مِنْ رَّبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে । اَنِّيْ নিশ্চয় আমি اَخْلُقُ তৈরি করব لَكُمْ তোমাদের জন্য مِنَ الطِّيْنِ কাদামাটি হতে كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ পাখির আকৃতির ন্যায় فَاَنْفُخُ তারপর আমি ফুঁৎকার দেব فِيْهِ তাতে فَيَكُوْنُ ফলে তা পরিণত হবে طَيْرًا পাখিতে بِاِذْنِ اللهِ আল্লাহর নির্দেশে। وَاُبْرِئُ আর আমি ভালো করে দেব اَلْاَكْمَهَ জন্মান্ধ وَالْاَبْرَصَ ও শ্বেত রোগীকে وَاُحْيِي এবং আমি জীবিত করব اَلْمَوْتٰى মৃতকে بِاِذْنِ اللهِ আল্লাহর নির্দেশে। وَاُنَبِّئُكُمْ আর আমি সংবাদ দেব بِمَا تَأْكُلُوْنَ যা তোমরা খাও وَمَا تَدَّخِرُوْنَ যা তোমরা জমা করে রাখ فِيْ بُيُوْتِكُمْ তোমাদের গৃহসমূহে। اِنَّ অবশ্যই فِيْ ذٰلِكَ এসবের মধ্যে রয়েছে لَاٰيَةً নিদর্শন لَكُمْ তোমাদের জন্য اِنْ كُنْتُمْ যদি তোমরা হও مُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত ।
সরল অনুবাদ
৪৯. আর (সে হবে) বনী ইসরাঈলের একজন রাসূল। (সে তার সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলবে) নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কিছু নিদর্শন নিয়ে এসেছি। (যেমন) আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতির ন্যায় (একটি আকৃতি) তৈরি করব, তারপর তাতে ফুঁৎকার দেব, ফলে আল্লাহর নির্দেশে তা (জীবন্ত) পাখিতে পরিণত হবে। আর আমি আল্লাহর নির্দেশে জন্মান্ধ ও শ্বেত রোগীকে ভালো করে দেব এবং মৃতকে জীবিত করব। আর তোমরা তোমাদের গৃহসমূহে যা খাও এবং যা জমা রাখ- এ ব্যাপারেও সংবাদ দেব। এসবের মধ্যে অবশ্যই তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে- যদি তোমরা মুমিন হও। [অর্থাৎ যদি তোমরা হককে মেনে নিতে প্রস্তুত থাক এবং তুচ্ছজ্ঞানকারী ব্যক্তিদের মতো না হও, তাহলে এসব মুজিযা প্রত্যক্ষ করে সমগ্র বিশ^জাহানের প্রতিপালক ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। আর তাঁর অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া এবং ঈসা (আঃ)-কে তাঁর রাসূল হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য এসব নিদর্শনই যথেষ্ট।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈসা (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাঈদের একজন রাসূল।
২. কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতি তৈরি করে তাতে ফুঁক দিয়ে পাখিতে পরিণত করা, আল্লাহর নির্দেশে জন্মান্ধ ও শে^ত রোগীকে আরোগ্য দান করা, আল্লাহর নির্দেশে মৃতকে জীবিত করা এবং কোন ব্যক্তি যা কিছু ভক্ষণ করত এবং যা কিছু জমা করে রেখে দিত- সে সম্পর্কে বলে দিতে পারা এসব ছিল ঈসা (আঃ) এর মুজিযা।
৩. প্রত্যেক মুজিযাই আল্লাহ তা‘আলার একেকটি নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।
শাব্দিক অনুবাদ
৪৯. وَرَسُوْلًا আর একজন রাসূল اِلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ বনী ইসরাঈলের প্রতি। اَنِّيْ নিশ্চয় আমি قَدْ جِئْتُكُمْ তোমাদের কাছে এসেছি بِاٰيَةٍ কিছু নিদর্শনসহ مِنْ رَّبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে । اَنِّيْ নিশ্চয় আমি اَخْلُقُ তৈরি করব لَكُمْ তোমাদের জন্য مِنَ الطِّيْنِ কাদামাটি হতে كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ পাখির আকৃতির ন্যায় فَاَنْفُخُ তারপর আমি ফুঁৎকার দেব فِيْهِ তাতে فَيَكُوْنُ ফলে তা পরিণত হবে طَيْرًا পাখিতে بِاِذْنِ اللهِ আল্লাহর নির্দেশে। وَاُبْرِئُ আর আমি ভালো করে দেব اَلْاَكْمَهَ জন্মান্ধ وَالْاَبْرَصَ ও শ্বেত রোগীকে وَاُحْيِي এবং আমি জীবিত করব اَلْمَوْتٰى মৃতকে بِاِذْنِ اللهِ আল্লাহর নির্দেশে। وَاُنَبِّئُكُمْ আর আমি সংবাদ দেব بِمَا تَأْكُلُوْنَ যা তোমরা খাও وَمَا تَدَّخِرُوْنَ যা তোমরা জমা করে রাখ فِيْ بُيُوْتِكُمْ তোমাদের গৃহসমূহে। اِنَّ অবশ্যই فِيْ ذٰلِكَ এসবের মধ্যে রয়েছে لَاٰيَةً নিদর্শন لَكُمْ তোমাদের জন্য اِنْ كُنْتُمْ যদি তোমরা হও مُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত ।
সরল অনুবাদ
৪৯. আর (সে হবে) বনী ইসরাঈলের একজন রাসূল। (সে তার সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলবে) নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কিছু নিদর্শন নিয়ে এসেছি। (যেমন) আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতির ন্যায় (একটি আকৃতি) তৈরি করব, তারপর তাতে ফুঁৎকার দেব, ফলে আল্লাহর নির্দেশে তা (জীবন্ত) পাখিতে পরিণত হবে। আর আমি আল্লাহর নির্দেশে জন্মান্ধ ও শ্বেত রোগীকে ভালো করে দেব এবং মৃতকে জীবিত করব। আর তোমরা তোমাদের গৃহসমূহে যা খাও এবং যা জমা রাখ- এ ব্যাপারেও সংবাদ দেব। এসবের মধ্যে অবশ্যই তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে- যদি তোমরা মুমিন হও। [অর্থাৎ যদি তোমরা হককে মেনে নিতে প্রস্তুত থাক এবং তুচ্ছজ্ঞানকারী ব্যক্তিদের মতো না হও, তাহলে এসব মুজিযা প্রত্যক্ষ করে সমগ্র বিশ^জাহানের প্রতিপালক ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। আর তাঁর অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া এবং ঈসা (আঃ)-কে তাঁর রাসূল হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য এসব নিদর্শনই যথেষ্ট।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈসা (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাঈদের একজন রাসূল।
২. কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতি তৈরি করে তাতে ফুঁক দিয়ে পাখিতে পরিণত করা, আল্লাহর নির্দেশে জন্মান্ধ ও শে^ত রোগীকে আরোগ্য দান করা, আল্লাহর নির্দেশে মৃতকে জীবিত করা এবং কোন ব্যক্তি যা কিছু ভক্ষণ করত এবং যা কিছু জমা করে রেখে দিত- সে সম্পর্কে বলে দিতে পারা এসব ছিল ঈসা (আঃ) এর মুজিযা।
৩. প্রত্যেক মুজিযাই আল্লাহ তা‘আলার একেকটি নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।
وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَلِاُحِلَّ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِيْ حُرِّمَ عَلَيْكُمْ وَجِئْتُكُمْ بِاٰيَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ ۫ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ (৫০) اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ (৫১)
শাব্দিক অনুবাদ
৫০. وَمُصَدِّقًا আর সত্যায়নকারী হিসেবে لِمَا যা রয়েছে بَيْنَ يَدَيَّ আমার সামনে مِنَ التَّوْرَاةِ তাওরাতের وَلِاُحِلَّ এবং হালাল করার জন্য لَكُمْ তোমাদের জন্য بَعْضَ কতিপয় (জিনিস) اَلَّذِيْ যা কিছু حُرِّمَ হারাম করা হয়েছে عَلَيْكُمْ তোমাদের উপর। وَجِئْتُكُمْ আর আমি এসেছি بِاٰيَةٍ নিদর্শন সহকারে مِنْ পক্ষ হতে رَبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের। فَاتَّقُوا সুতরাং তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে وَاَطِيْعُوْنِ এবং আমার আনুগত্য করো।
৫১. اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ رَبِّيْ আমার প্রতিপালক وَرَبُّكُمْ এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। فَاعْبُدُوْهُ অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো। هٰذَا এটাই صِرَاطٌ পথ مُسْتَقِيْمٌ সরল-সঠিক।
সরল অনুবাদ
৫০. আর (আমি আগমন করেছি) আমার সামনে (পূর্ববর্তী) যে তাওরাত রয়েছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে এবং তোমাদের জন্য যেসব (জিনিস) হারাম করা হয়েছে সেসবের কতিপয়কে হালাল করার জন্য [এখানে হারামকৃত জিনিস বলতে দুই ধরনের জিনিস ধরা যেতে পারে। তা হলো- (১) আল্লাহ তা‘আলা তাদের কতিপয় কৃতকর্মের জন্য শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন সময় যেসব জিনিস তাদের উপর হারাম করে দিয়েছিলেন সেগুলো। (২) ইতিপূর্বে তাদের আলেমরা মনগড়াভাবে তাদের উপর যেসব জিনিস হারাম করে দিয়েছিল সেগুলো। প্রকৃতপক্ষে ঈসা (আঃ) এই উভয় প্রকার হারামকৃত বস্তু হতে যেসব বস্তু প্রকৃতপক্ষে হারাম নয় সেগুলোকে হালাল করতে এসেছিলেন।]। আর আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
৫১. নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো। এটাই সরল-সঠিক পথ। [অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে নতুন কোন ধর্মের দিকে আহবান করছি না। বরং বর্তমানে তোমরা যে ধর্ম পালন করে যাচ্ছ, আমি তোমাদেরকে সেই ধর্মের দিকেই আহবান করছি। তোমরা যাকে বিশ^জাহানের প্রতিপালক হিসেবে জেনে থাক, আমি তোমাদেরকে সেই প্রতিপালকের দিকেই আহবান করছি। তবে পার্থক্য এতটুকুতেই যে, বর্তমানে তোমরা যেভাবে চলাফেরা করো এবং যেসব পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদাত করে থাকো, সেগুলো সঠিক ও সহজ পদ্ধতি নয়। যেমন- বিভিন্ন সৎ লোকদের মূর্তির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে কতিপয় আলেমকে বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করা ইত্যাদি। সুতরাং এখন আমি তোমাদেরকে যে পন্থায় ইবাদাত করার জন্য আহবান করছি, সেটিই হচ্ছে সঠিক পদ্ধতি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য একমাত্র সরল-সঠিক পথ।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈসা (আঃ) ছিলেন তাওরাত কিতাবের সত্যায়নকারী।
২. আল্লাহকে ভয় করা এবং শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাতের দিকে আহবান করাটা হচ্ছে নবীদের দাওয়াতের মূল বিষয়বস্তু।
শাব্দিক অনুবাদ
৫০. وَمُصَدِّقًا আর সত্যায়নকারী হিসেবে لِمَا যা রয়েছে بَيْنَ يَدَيَّ আমার সামনে مِنَ التَّوْرَاةِ তাওরাতের وَلِاُحِلَّ এবং হালাল করার জন্য لَكُمْ তোমাদের জন্য بَعْضَ কতিপয় (জিনিস) اَلَّذِيْ যা কিছু حُرِّمَ হারাম করা হয়েছে عَلَيْكُمْ তোমাদের উপর। وَجِئْتُكُمْ আর আমি এসেছি بِاٰيَةٍ নিদর্শন সহকারে مِنْ পক্ষ হতে رَبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের। فَاتَّقُوا সুতরাং তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে وَاَطِيْعُوْنِ এবং আমার আনুগত্য করো।
৫১. اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ رَبِّيْ আমার প্রতিপালক وَرَبُّكُمْ এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। فَاعْبُدُوْهُ অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো। هٰذَا এটাই صِرَاطٌ পথ مُسْتَقِيْمٌ সরল-সঠিক।
সরল অনুবাদ
৫০. আর (আমি আগমন করেছি) আমার সামনে (পূর্ববর্তী) যে তাওরাত রয়েছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে এবং তোমাদের জন্য যেসব (জিনিস) হারাম করা হয়েছে সেসবের কতিপয়কে হালাল করার জন্য [এখানে হারামকৃত জিনিস বলতে দুই ধরনের জিনিস ধরা যেতে পারে। তা হলো- (১) আল্লাহ তা‘আলা তাদের কতিপয় কৃতকর্মের জন্য শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন সময় যেসব জিনিস তাদের উপর হারাম করে দিয়েছিলেন সেগুলো। (২) ইতিপূর্বে তাদের আলেমরা মনগড়াভাবে তাদের উপর যেসব জিনিস হারাম করে দিয়েছিল সেগুলো। প্রকৃতপক্ষে ঈসা (আঃ) এই উভয় প্রকার হারামকৃত বস্তু হতে যেসব বস্তু প্রকৃতপক্ষে হারাম নয় সেগুলোকে হালাল করতে এসেছিলেন।]। আর আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
৫১. নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো। এটাই সরল-সঠিক পথ। [অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে নতুন কোন ধর্মের দিকে আহবান করছি না। বরং বর্তমানে তোমরা যে ধর্ম পালন করে যাচ্ছ, আমি তোমাদেরকে সেই ধর্মের দিকেই আহবান করছি। তোমরা যাকে বিশ^জাহানের প্রতিপালক হিসেবে জেনে থাক, আমি তোমাদেরকে সেই প্রতিপালকের দিকেই আহবান করছি। তবে পার্থক্য এতটুকুতেই যে, বর্তমানে তোমরা যেভাবে চলাফেরা করো এবং যেসব পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদাত করে থাকো, সেগুলো সঠিক ও সহজ পদ্ধতি নয়। যেমন- বিভিন্ন সৎ লোকদের মূর্তির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে কতিপয় আলেমকে বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করা ইত্যাদি। সুতরাং এখন আমি তোমাদেরকে যে পন্থায় ইবাদাত করার জন্য আহবান করছি, সেটিই হচ্ছে সঠিক পদ্ধতি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য একমাত্র সরল-সঠিক পথ।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈসা (আঃ) ছিলেন তাওরাত কিতাবের সত্যায়নকারী।
২. আল্লাহকে ভয় করা এবং শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাতের দিকে আহবান করাটা হচ্ছে নবীদের দাওয়াতের মূল বিষয়বস্তু।
فَلَمَّاۤ اَحَسَّ عِيْسٰى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِ ؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِۚ اٰمَنَّا بِاللهِۚ وَاشْهَدْ بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ (৫২) رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا بِمَاۤ اَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُوْلَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ (৫৩) وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ (৫৪)
শাব্দিক অনুবাদ
৫২. فَلَمَّا অতঃপর যখন اَحَسَّ অনুভব করল عِيْسٰى ঈসা مِنْهُمُ তাদের থেকে اَلْكُفْرَ কুফরী قَالَ তখন সে বলল مَنْ কে হবে اَنْصَارِيْ আমার সাহায্যকারী اِلَى اللهِ আল্লাহর উদ্দেশ্যে। قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ হাওয়ারীগণ বলল نَحْنُ আমরাই হব اَنْصَارُ اللهِۚ সাহায্যকারী আল্লাহর; اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি بِاللهِ আল্লাহর উপর। وَاشْهَدْ আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, بِاَنَّا নিশ্চয় আমরা مُسْلِمُوْنَ মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
৫৩. رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি بِمَا যা اَنْزَلْتَ আপনি নাযিল করেছেন (তাতে) وَاتَّبَعْنَا এবং আমরা অনুসরণ করেছি اَلرَّسُوْلَ রাসূলের। فَاكْتُبْنَا সুতরাং আপনি আমাদেরকে তালিকাভুক্ত করুন مَعَ সাথে اَلشَّاهِدِيْنَ সাক্ষ্যদানকারীদের।
৫৪. وَمَكَرُوْا তারা ষড়যন্ত্র করল وَمَكَرَ اللهُ এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করলেন। وَاللهُ মূলত আল্লাহই خَيْرُ সর্বোত্তম اَلْمَاكِرِيْنَ কৌশলীদের মধ্যে।
সরল অনুবাদ
৫২. অতঃপর যখন ঈসা তাদের থেকে কুফরী অনুভব করল তখন বলল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে। [এখানে বনী ইসরাঈলদের গোঁড়ামির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা ঈসা (আঃ)-এর নবী হওয়ার পক্ষে এতে বেশি স্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, তাকে অস্বীকার করার মতো কোন অজুহাত অবশিষ্ট ছিল না। উপরন্তু তারা ঈসা (আঃ) এর জন্মের শুরু থেকেই জানত যে, ইনি একদিন নবী হবেন। অতঃপর নবুওয়াত আসার পূর্ব পর্যন্ত তাঁকে অনুরূপভাবেই সম্মান করে আসছিল। কিন্তু যখনই তিনি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়ে তাদেরকে দাওয়াত প্রদান করতে শুরু করলেন, যা ছিল তাদের নিজেদের পরিচিত বিকৃত ধর্মের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তখনই তারা নিজেদের পূর্ব চরিত্র অনুযায়ী তার বিরুধিতা করতে শুরু করল এবং তার বিরুদ্ধে সকলেই চড়াও হয়ে গেল। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, ঈসা (আঃ)-কে উপরোক্ত বাক্যে নিজের সঙ্গী-সাথিদেরকে আহবান করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর এই বাক্যটি তখনই উচ্চারণ করা হয়, যখন কোন ব্যক্তি চারদিক থেকে চরম বিরুধিতার সম্মুখীন হয় এবং জাতির জন্য আফসোস ব্যতীত অন্য কোন করণীয় খোঁজে না পায়।] হাওয়ারীগণ [‘হাওয়ারী’ শব্দটি আনসার শব্দের কাছাকাছি অর্থ বহন করে থাকে। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সঙ্গী-সাথিদেরকে যেরকমভাবে সাহাবী বলা হয়, অনুরূপভাবে ঈসা (আঃ) এর সঙ্গী-সাথিদেরকে এখানে হাওয়ারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।] বলল, আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী [এই বাক্যটির অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। কেননা আল্লাহর সাহায্যকারী কর্ম হিসেবে বিশেষ কোন কর্ম নির্দিষ্ট নেই। বরং দ্বীনের পথে সকল ধরনের পদক্ষেপই এই বাক্যের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- আল্লাহর প্রতি সঠিক বিশ্বাস স্থাপন করা, যতটুকু সম্ভব আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করে যাওয়া, মানুষকে দ্বীনের পথে আহবান করা, সৎ কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকর্ম হতে নিষেধ করা ইত্যাদি। যখন যেরূপ কর্মের প্রয়োজন আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে সেই কর্ম সংঘটিত করে থাকেন।]; আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম।
৫৩. (তারপর তারা দু‘আ করে বলল) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি যা নাযিল করেছেন আমরা তাতে ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের সাথে তালিকাভুক্ত (অন্তর্ভুক্ত) করুন।
৫৪. (অতঃপর) তারা [ঈসা (আঃ) এর সম্প্রদায়] ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল; আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী। [ঘটনাটি ছিল এই যে, যখন ঈসা (আঃ) মানুষকে সঠিক দ্বীনের পথে দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন একদল লোক কঠোরভাবে তার বিরুধিতায় লিপ্ত হয়েছিল। অবশেষে তারা তৎকালীন শাসকের কাছে ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে নানা ধরনের কুৎসা রটনা করে তাকে রাগান্বিত করে তোলার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল। অতঃপর উক্ত শাসক রাগান্বিত হয়ে ঈসা (আঃ)-কে শূলে চড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। তারপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যখন তারা ঈসা (আঃ)-কে আটক করার জন্য গৃহবন্দী করল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকল ধরনের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে ঈসা (আঃ)-কে সযত্নে আসমানে উঠিয়ে নেন এবং তার স্থানে চক্রান্তকারীদের থেকে কাউকে ঈসা (আঃ) এর চেহারার অনুরূপ করে দেন। ফলে তারা ঈসা (আঃ) এর পরিবর্তে তাঁর মতো দেখতে অন্য কাউকে শূলে চড়িয়ে দেয় এবং মনে করে যে, তারা ঈসা (আঃ)-কে শূলে চড়িয়েছে। আল্লাহ অত্র আয়াতে এটিকেই চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. প্রত্যেক নবীরই কিছু হাওয়ারী থাকে, যাকে দাওয়াতের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে।
২. মুজিযা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রদায়ের লোকেরা ঈসা (আঃ) এর আনুগত্য করতে অস্বীকার করেছিল।
৩. ঈসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের লোকেরা ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে মারাত্মক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল।
৪. সর্বযুগে সত্যের বিরুদ্ধে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করেই থাকে।
৫. আল্লাহর কাছে কোন ষড়যন্ত্রই সফল হতে পারে না।
শাব্দিক অনুবাদ
৫২. فَلَمَّا অতঃপর যখন اَحَسَّ অনুভব করল عِيْسٰى ঈসা مِنْهُمُ তাদের থেকে اَلْكُفْرَ কুফরী قَالَ তখন সে বলল مَنْ কে হবে اَنْصَارِيْ আমার সাহায্যকারী اِلَى اللهِ আল্লাহর উদ্দেশ্যে। قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ হাওয়ারীগণ বলল نَحْنُ আমরাই হব اَنْصَارُ اللهِۚ সাহায্যকারী আল্লাহর; اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি بِاللهِ আল্লাহর উপর। وَاشْهَدْ আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, بِاَنَّا নিশ্চয় আমরা مُسْلِمُوْنَ মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
৫৩. رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি بِمَا যা اَنْزَلْتَ আপনি নাযিল করেছেন (তাতে) وَاتَّبَعْنَا এবং আমরা অনুসরণ করেছি اَلرَّسُوْلَ রাসূলের। فَاكْتُبْنَا সুতরাং আপনি আমাদেরকে তালিকাভুক্ত করুন مَعَ সাথে اَلشَّاهِدِيْنَ সাক্ষ্যদানকারীদের।
৫৪. وَمَكَرُوْا তারা ষড়যন্ত্র করল وَمَكَرَ اللهُ এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করলেন। وَاللهُ মূলত আল্লাহই خَيْرُ সর্বোত্তম اَلْمَاكِرِيْنَ কৌশলীদের মধ্যে।
সরল অনুবাদ
৫২. অতঃপর যখন ঈসা তাদের থেকে কুফরী অনুভব করল তখন বলল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে। [এখানে বনী ইসরাঈলদের গোঁড়ামির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা ঈসা (আঃ)-এর নবী হওয়ার পক্ষে এতে বেশি স্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, তাকে অস্বীকার করার মতো কোন অজুহাত অবশিষ্ট ছিল না। উপরন্তু তারা ঈসা (আঃ) এর জন্মের শুরু থেকেই জানত যে, ইনি একদিন নবী হবেন। অতঃপর নবুওয়াত আসার পূর্ব পর্যন্ত তাঁকে অনুরূপভাবেই সম্মান করে আসছিল। কিন্তু যখনই তিনি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়ে তাদেরকে দাওয়াত প্রদান করতে শুরু করলেন, যা ছিল তাদের নিজেদের পরিচিত বিকৃত ধর্মের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তখনই তারা নিজেদের পূর্ব চরিত্র অনুযায়ী তার বিরুধিতা করতে শুরু করল এবং তার বিরুদ্ধে সকলেই চড়াও হয়ে গেল। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, ঈসা (আঃ)-কে উপরোক্ত বাক্যে নিজের সঙ্গী-সাথিদেরকে আহবান করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর এই বাক্যটি তখনই উচ্চারণ করা হয়, যখন কোন ব্যক্তি চারদিক থেকে চরম বিরুধিতার সম্মুখীন হয় এবং জাতির জন্য আফসোস ব্যতীত অন্য কোন করণীয় খোঁজে না পায়।] হাওয়ারীগণ [‘হাওয়ারী’ শব্দটি আনসার শব্দের কাছাকাছি অর্থ বহন করে থাকে। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সঙ্গী-সাথিদেরকে যেরকমভাবে সাহাবী বলা হয়, অনুরূপভাবে ঈসা (আঃ) এর সঙ্গী-সাথিদেরকে এখানে হাওয়ারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।] বলল, আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী [এই বাক্যটির অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। কেননা আল্লাহর সাহায্যকারী কর্ম হিসেবে বিশেষ কোন কর্ম নির্দিষ্ট নেই। বরং দ্বীনের পথে সকল ধরনের পদক্ষেপই এই বাক্যের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- আল্লাহর প্রতি সঠিক বিশ্বাস স্থাপন করা, যতটুকু সম্ভব আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করে যাওয়া, মানুষকে দ্বীনের পথে আহবান করা, সৎ কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকর্ম হতে নিষেধ করা ইত্যাদি। যখন যেরূপ কর্মের প্রয়োজন আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে সেই কর্ম সংঘটিত করে থাকেন।]; আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম।
৫৩. (তারপর তারা দু‘আ করে বলল) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি যা নাযিল করেছেন আমরা তাতে ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের সাথে তালিকাভুক্ত (অন্তর্ভুক্ত) করুন।
৫৪. (অতঃপর) তারা [ঈসা (আঃ) এর সম্প্রদায়] ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল; আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী। [ঘটনাটি ছিল এই যে, যখন ঈসা (আঃ) মানুষকে সঠিক দ্বীনের পথে দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন একদল লোক কঠোরভাবে তার বিরুধিতায় লিপ্ত হয়েছিল। অবশেষে তারা তৎকালীন শাসকের কাছে ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে নানা ধরনের কুৎসা রটনা করে তাকে রাগান্বিত করে তোলার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল। অতঃপর উক্ত শাসক রাগান্বিত হয়ে ঈসা (আঃ)-কে শূলে চড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। তারপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যখন তারা ঈসা (আঃ)-কে আটক করার জন্য গৃহবন্দী করল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকল ধরনের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে ঈসা (আঃ)-কে সযত্নে আসমানে উঠিয়ে নেন এবং তার স্থানে চক্রান্তকারীদের থেকে কাউকে ঈসা (আঃ) এর চেহারার অনুরূপ করে দেন। ফলে তারা ঈসা (আঃ) এর পরিবর্তে তাঁর মতো দেখতে অন্য কাউকে শূলে চড়িয়ে দেয় এবং মনে করে যে, তারা ঈসা (আঃ)-কে শূলে চড়িয়েছে। আল্লাহ অত্র আয়াতে এটিকেই চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. প্রত্যেক নবীরই কিছু হাওয়ারী থাকে, যাকে দাওয়াতের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে।
২. মুজিযা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রদায়ের লোকেরা ঈসা (আঃ) এর আনুগত্য করতে অস্বীকার করেছিল।
৩. ঈসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের লোকেরা ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে মারাত্মক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল।
৪. সর্বযুগে সত্যের বিরুদ্ধে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করেই থাকে।
৫. আল্লাহর কাছে কোন ষড়যন্ত্রই সফল হতে পারে না।
اِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسٰۤى اِنِّيْ مُتَوَفِّيْكَ وَرَافِعُكَ اِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَجَاعِلُ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْكَ فَوْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ اِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَاَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيْمَا كُنْتُمْ فِيْهِ تَخْتَلِفُوْنَ (৫৫) فَاَمَّا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَاُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًا فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِؗ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ (৫৬) وَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَيُوَفِّيْهِمْ اُجُوْرَهُمْؕ وَاللهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ (৫৭) ذٰلِكَ نَتْلُوْهُ عَلَيْكَ مِنَ الْاٰيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ (৫৮)
শাব্দিক অনুবাদ
৫৫. اِذْ আর যখন قَالَ বললেন اَللهُ আল্লাহ يَا হে عِيْسٰۤى ঈসা! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি مُتَوَفِّيْكَ তোমাকে মৃত্যু দেব وَرَافِعُكَ এবং তোমাকে উঠিয়ে নেব اِلَيَّ আমার কাছে। وَمُطَهِّرُكَ আর তোমাকে পবিত্র করব مِنَ الَّذِيْنَ তাদের থেকে যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে وَجَاعِلُ এবং স্থান দেব اَلَّذِيْنَ যারা اِتَّبَعُوْكَ তোমার অনুসরণ করেছে فَوْقَ উপর اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে اِلٰى পর্যন্ত يَوْمِ দিন اَلْقِيَامَةِ কিয়ামতের। ثُمَّ তারপর اِلَيَّ আমারই দিকে হবে مَرْجِعُكُمْ তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল; فَاَحْكُمُ অতঃপর আমি মীমাংসা করে দেব بَيْنَكُمْ সুতরাং তোমাদের মধ্যে فِيْمَا যেসব বিষয়ে كُنْتُمْ তোমরা فِيْهِ তাতে تَخْتَلِفُوْنَ মতভেদ করছিলে।
৫৬. فَاَمَّا الَّذِيْنَ সুতরাং যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে فَاُعَذِّبُهُمْ আমি তাদেরকে শাস্তি দেব عَذَابًا شَدِيْدًا কঠিন শাস্তি فِي الدُّنْيَا দুনিয়াতে وَالْاٰخِرَةِ ও আখিরাতে; وَمَا لَهُمْ আর তাদের জন্য কেউ নেই مِنْ نَّاصِرِيْنَ সাহায্যকারীদের থেকে।
৫৭. وَاَمَّا الَّذِيْنَ আর যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ا এবং সৎকর্ম করেছে فَيُوَفِّيْهِمْ তিনি তাদেরকে পুরোপুরিভাবে প্রদান করবেন اُجُوْرَهُمْ তাদের প্রতিদান। وَاللهُ আর আল্লাহ لَا يُحِبُّ ভালোবাসেন না اَلظَّالِمِيْنَ অত্যাচারীদেরকে।
৫৮. ذٰلِكَ এগুলো نَتْلُوْهُ যা আমি পাঠ করেছি عَلَيْكَ তোমার নিকট مِنَ الْاٰيَاتِ আয়াতসমূহ থেকে وَالذِّكْرِ এবং উপদেশ থেকে اَلْحَكِيْمِ প্রজ্ঞাময়।
সরল অনুবাদ
৫৫. আর যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! নিশ্চয় আমি তোমাকে মৃত্যু দেব [এখানে মৃত্যু বলতে ঈসা (আঃ)-কে আসমানে উঠিয়ে নেয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। আর এজন্য অত্র আয়াতে المتوفى শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মূলধাতু হচ্ছে توفى । এর প্রকৃত অর্থ হলো, কোন কিছু পরিপূর্ণভাবে নেয়া। যেহেতু মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের শারীরিক স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে ছিনিয়ে নেয়া হয়, তাই কেউ মারা গেলেও সেক্ষেত্রেও وفاة (অফাত) শব্দ ব্যবহার করা হয়। অনেকেই এই শব্দটির অর্থ হিসেবে মৃত্যুকেই গ্রহণ করেছেন। তবে অত্র আয়াতে বলা হয়েছে যে, আমি তোমাকে ইহুদীদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত করে পরিপূর্ণভাবে আমার কাছে আসমানে উঠিয়ে নেব। অতঃপর বাস্তবে তা-ই ঘটেছে। আবার কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এখানে শব্দের আগ-পিছ ঘটেছে। অর্থাৎ رَافِعُكَ শব্দটি আগে হবে এবং مُتَوَفِّيْكَ শব্দটি পরে হবে। তখন এর অর্থ দাঁড়াবে, আমি তোমাকে আসমানে উঠিয়ে নেব। তারপর পুনরায় যখন তুমি কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে দুনিয়াতে অবতরণ করবে, তখন তোমার মৃত্যু দান করব।] এবং তোমাকে আমার কাছে উঠিয়ে নেব। আর যারা অস্বীকার করেছে তাদের থেকে তোমাকে পবিত্র করব [অর্থাৎ আমি তোমাকে ঐসব অপবিত্র অপবাদ থেকে মুক্ত করব, যা ইহুদীরা তোমার উপর আরোপ করেছিল। অতঃপর শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে তাদের সেসব মিথ্যা অপবাদের কথা ফাঁস করে দেয়া হয়। ফলে তিনি বিশ^বাসীর কাছে পবিত্রতা লাভ করেন। তবে বর্তমানে খ্রিস্টান সম্প্রদায় কুরআনের বর্ণনার উপর বিশ্বাস না করে নিজেদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে যেসব অপবিত্র দাবী পোষণ করে থাকে, কিয়ামতের পূর্ববর্তী সময় ঈসা (আঃ) আগমন করে তাদের সেসব দাবী মিথ্যা প্রমাণ করবেন এবং নিজেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করবেন।] এবং যারা তোমার অনুসরণ করেছে তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত যারা অস্বীকার করেছে তাদের উপর স্থান দেব (বিজয়ী করে রাখব)। তারপর তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল হবে আমারই দিকে; সুতরাং তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করছিলে (সেদিন) আমি তোমাদের মধ্যে সেসব বিষয়ে মীমাংসা করে দেব। [অর্থাৎ কিয়ামতের দিন যখন তোমরা সকলেই আল্লাহর সামনে একত্রিত হবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা মানুষের ঐসব বিষয়ের মীমাংসা করে দেবেন, যা নিয়ে দুনিয়াতে মানুষ একে অপরের সাথে মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত- এমনকি পরস্পর যুদ্ধেও জড়িয়ে যেত। কিয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে এসব বিষয় মানুষের কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।]
৫৬. সুতরাং যারা কুফরী করেছে দুনিয়া ও আখিরাতে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব; (এর থেকে মুক্ত করার জন্য) তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
৫৭. (পক্ষান্তরে) যারা (আল্লাহর উপর) ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি (আল্লাহ) তাদের প্রতিদান পুরোপুরিভাবে প্রদান করবেন। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না।
৫৮. এগুলো তা-ই, যা আমি (আমার) আয়াতসমূহ এবং প্রজ্ঞাময় উপদেশ থেকে তোমার নিকট পাঠ করেছি।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ) কে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন।
২. কুফরীর শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতেই সংঘটিত হয়ে থাকে।
৩. কাফিরদের জন্য কোন প্রকৃত সাহায্যকারী নেই।
৪. আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না।
৫. মুমিনদের পুরস্কার কখনো বিফলে যায় না।
শাব্দিক অনুবাদ
৫৫. اِذْ আর যখন قَالَ বললেন اَللهُ আল্লাহ يَا হে عِيْسٰۤى ঈসা! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি مُتَوَفِّيْكَ তোমাকে মৃত্যু দেব وَرَافِعُكَ এবং তোমাকে উঠিয়ে নেব اِلَيَّ আমার কাছে। وَمُطَهِّرُكَ আর তোমাকে পবিত্র করব مِنَ الَّذِيْنَ তাদের থেকে যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে وَجَاعِلُ এবং স্থান দেব اَلَّذِيْنَ যারা اِتَّبَعُوْكَ তোমার অনুসরণ করেছে فَوْقَ উপর اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে اِلٰى পর্যন্ত يَوْمِ দিন اَلْقِيَامَةِ কিয়ামতের। ثُمَّ তারপর اِلَيَّ আমারই দিকে হবে مَرْجِعُكُمْ তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল; فَاَحْكُمُ অতঃপর আমি মীমাংসা করে দেব بَيْنَكُمْ সুতরাং তোমাদের মধ্যে فِيْمَا যেসব বিষয়ে كُنْتُمْ তোমরা فِيْهِ তাতে تَخْتَلِفُوْنَ মতভেদ করছিলে।
৫৬. فَاَمَّا الَّذِيْنَ সুতরাং যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে فَاُعَذِّبُهُمْ আমি তাদেরকে শাস্তি দেব عَذَابًا شَدِيْدًا কঠিন শাস্তি فِي الدُّنْيَا দুনিয়াতে وَالْاٰخِرَةِ ও আখিরাতে; وَمَا لَهُمْ আর তাদের জন্য কেউ নেই مِنْ نَّاصِرِيْنَ সাহায্যকারীদের থেকে।
৫৭. وَاَمَّا الَّذِيْنَ আর যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ا এবং সৎকর্ম করেছে فَيُوَفِّيْهِمْ তিনি তাদেরকে পুরোপুরিভাবে প্রদান করবেন اُجُوْرَهُمْ তাদের প্রতিদান। وَاللهُ আর আল্লাহ لَا يُحِبُّ ভালোবাসেন না اَلظَّالِمِيْنَ অত্যাচারীদেরকে।
৫৮. ذٰلِكَ এগুলো نَتْلُوْهُ যা আমি পাঠ করেছি عَلَيْكَ তোমার নিকট مِنَ الْاٰيَاتِ আয়াতসমূহ থেকে وَالذِّكْرِ এবং উপদেশ থেকে اَلْحَكِيْمِ প্রজ্ঞাময়।
সরল অনুবাদ
৫৫. আর যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! নিশ্চয় আমি তোমাকে মৃত্যু দেব [এখানে মৃত্যু বলতে ঈসা (আঃ)-কে আসমানে উঠিয়ে নেয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। আর এজন্য অত্র আয়াতে المتوفى শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মূলধাতু হচ্ছে توفى । এর প্রকৃত অর্থ হলো, কোন কিছু পরিপূর্ণভাবে নেয়া। যেহেতু মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের শারীরিক স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে ছিনিয়ে নেয়া হয়, তাই কেউ মারা গেলেও সেক্ষেত্রেও وفاة (অফাত) শব্দ ব্যবহার করা হয়। অনেকেই এই শব্দটির অর্থ হিসেবে মৃত্যুকেই গ্রহণ করেছেন। তবে অত্র আয়াতে বলা হয়েছে যে, আমি তোমাকে ইহুদীদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত করে পরিপূর্ণভাবে আমার কাছে আসমানে উঠিয়ে নেব। অতঃপর বাস্তবে তা-ই ঘটেছে। আবার কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এখানে শব্দের আগ-পিছ ঘটেছে। অর্থাৎ رَافِعُكَ শব্দটি আগে হবে এবং مُتَوَفِّيْكَ শব্দটি পরে হবে। তখন এর অর্থ দাঁড়াবে, আমি তোমাকে আসমানে উঠিয়ে নেব। তারপর পুনরায় যখন তুমি কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে দুনিয়াতে অবতরণ করবে, তখন তোমার মৃত্যু দান করব।] এবং তোমাকে আমার কাছে উঠিয়ে নেব। আর যারা অস্বীকার করেছে তাদের থেকে তোমাকে পবিত্র করব [অর্থাৎ আমি তোমাকে ঐসব অপবিত্র অপবাদ থেকে মুক্ত করব, যা ইহুদীরা তোমার উপর আরোপ করেছিল। অতঃপর শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে তাদের সেসব মিথ্যা অপবাদের কথা ফাঁস করে দেয়া হয়। ফলে তিনি বিশ^বাসীর কাছে পবিত্রতা লাভ করেন। তবে বর্তমানে খ্রিস্টান সম্প্রদায় কুরআনের বর্ণনার উপর বিশ্বাস না করে নিজেদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে যেসব অপবিত্র দাবী পোষণ করে থাকে, কিয়ামতের পূর্ববর্তী সময় ঈসা (আঃ) আগমন করে তাদের সেসব দাবী মিথ্যা প্রমাণ করবেন এবং নিজেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করবেন।] এবং যারা তোমার অনুসরণ করেছে তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত যারা অস্বীকার করেছে তাদের উপর স্থান দেব (বিজয়ী করে রাখব)। তারপর তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল হবে আমারই দিকে; সুতরাং তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করছিলে (সেদিন) আমি তোমাদের মধ্যে সেসব বিষয়ে মীমাংসা করে দেব। [অর্থাৎ কিয়ামতের দিন যখন তোমরা সকলেই আল্লাহর সামনে একত্রিত হবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা মানুষের ঐসব বিষয়ের মীমাংসা করে দেবেন, যা নিয়ে দুনিয়াতে মানুষ একে অপরের সাথে মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত- এমনকি পরস্পর যুদ্ধেও জড়িয়ে যেত। কিয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে এসব বিষয় মানুষের কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।]
৫৬. সুতরাং যারা কুফরী করেছে দুনিয়া ও আখিরাতে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব; (এর থেকে মুক্ত করার জন্য) তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
৫৭. (পক্ষান্তরে) যারা (আল্লাহর উপর) ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি (আল্লাহ) তাদের প্রতিদান পুরোপুরিভাবে প্রদান করবেন। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না।
৫৮. এগুলো তা-ই, যা আমি (আমার) আয়াতসমূহ এবং প্রজ্ঞাময় উপদেশ থেকে তোমার নিকট পাঠ করেছি।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ) কে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন।
২. কুফরীর শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতেই সংঘটিত হয়ে থাকে।
৩. কাফিরদের জন্য কোন প্রকৃত সাহায্যকারী নেই।
৪. আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না।
৫. মুমিনদের পুরস্কার কখনো বিফলে যায় না।
اِنَّ مَثَلَ عِيْسٰى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ اٰدَمَؕ خَلَقَه مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَه كُنْ فَيَكُوْنُ (৫৯) اَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ فَلَا تَكُنْ مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ (৬০)
শাব্দিক অনুবাদ
৫৯. اِنَّ নিশ্চয় مَثَلَ দৃষ্টান্ত عِيْسٰى ঈসা (আঃ) এর عِنْدَ নিকট اَللهِ আল্লাহর كَمَثَلِ দৃষ্টান্তের মতো اٰدَمَ আদমের। خَلَقَه তাকেও তিনি সৃষ্টি করেছেন مِنْ থেকে تُرَابٍ মাটি। ثُمَّ অতঃপর قَالَ বলেছিলেন, لَه তাকে كُنْ ‘হও’ এবং فَيَكُوْنُ সে হয়ে গেল।
৬০. اَلْحَقُّ সত্য مِنْ رَّبِّكَ তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। فَلَا تَكُنْ সুতরাং তুমি হয়ো না مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৫৯. নিশ্চয় আল্লাহর কাছে ঈসা এর দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্তের মতো। তাকেও তিনি (পিতা-মাতা ছাড়া সরাসরি) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাকে (আদমকে) বলেছিলেন, ‘হও’ এবং সে (মানুষে পরিণত) হয়ে গেল। [এখানেও ঈসা (আঃ) এর সৃষ্টির ব্যাপারে তথ্য প্রদান করা হয়েছে এবং সৃষ্টিগত দিক থেকে ঈসা (আঃ)-কে আদম (আঃ) এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে এই সূরার ৪৭নং আয়াতের টিকায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অত্র আয়াত দ্বারা এটা বুঝানো হয়েছে, হে খ্রিস্টান সম্প্রদায়! তোমরা যে অলৌকিক জন্মের কারণে ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে, এটি তোমাদের একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। কেননা যদি এমনটিই হতো তাহলে সর্বপ্রথম আদম (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল। কেননা ঈসা (আঃ) তো কেবল পিতা ছাড়া জন্মগ্রহণ করেছিল, কিন্তু আদম (আঃ) তো পিতা-মাতা উভয়জন ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছিলেন।]
৬০. (এগুলো) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে (আগত) সত্য (সংবাদ)। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈসা (আঃ) ও আদম (আঃ) এর জন্মের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে; কেননা তারা উভয়ই পিতা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছিলেন; আর আদম (আঃ) এর তো পিতামাতা কেউই ছিল না।
২. আদম (আঃ) ‘হও’ বলার সাথে সাথেই সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলেন।
৩. ওহীর মাধ্যমে সর্বদা সত্য সংবাদই এসে থাকে।
৪. ওহীর কোন বিষয়ে সন্দেহ করাও বৈধ নয়।
শাব্দিক অনুবাদ
৫৯. اِنَّ নিশ্চয় مَثَلَ দৃষ্টান্ত عِيْسٰى ঈসা (আঃ) এর عِنْدَ নিকট اَللهِ আল্লাহর كَمَثَلِ দৃষ্টান্তের মতো اٰدَمَ আদমের। خَلَقَه তাকেও তিনি সৃষ্টি করেছেন مِنْ থেকে تُرَابٍ মাটি। ثُمَّ অতঃপর قَالَ বলেছিলেন, لَه তাকে كُنْ ‘হও’ এবং فَيَكُوْنُ সে হয়ে গেল।
৬০. اَلْحَقُّ সত্য مِنْ رَّبِّكَ তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। فَلَا تَكُنْ সুতরাং তুমি হয়ো না مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৫৯. নিশ্চয় আল্লাহর কাছে ঈসা এর দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্তের মতো। তাকেও তিনি (পিতা-মাতা ছাড়া সরাসরি) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাকে (আদমকে) বলেছিলেন, ‘হও’ এবং সে (মানুষে পরিণত) হয়ে গেল। [এখানেও ঈসা (আঃ) এর সৃষ্টির ব্যাপারে তথ্য প্রদান করা হয়েছে এবং সৃষ্টিগত দিক থেকে ঈসা (আঃ)-কে আদম (আঃ) এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে এই সূরার ৪৭নং আয়াতের টিকায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অত্র আয়াত দ্বারা এটা বুঝানো হয়েছে, হে খ্রিস্টান সম্প্রদায়! তোমরা যে অলৌকিক জন্মের কারণে ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে, এটি তোমাদের একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। কেননা যদি এমনটিই হতো তাহলে সর্বপ্রথম আদম (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল। কেননা ঈসা (আঃ) তো কেবল পিতা ছাড়া জন্মগ্রহণ করেছিল, কিন্তু আদম (আঃ) তো পিতা-মাতা উভয়জন ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছিলেন।]
৬০. (এগুলো) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে (আগত) সত্য (সংবাদ)। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈসা (আঃ) ও আদম (আঃ) এর জন্মের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে; কেননা তারা উভয়ই পিতা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছিলেন; আর আদম (আঃ) এর তো পিতামাতা কেউই ছিল না।
২. আদম (আঃ) ‘হও’ বলার সাথে সাথেই সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলেন।
৩. ওহীর মাধ্যমে সর্বদা সত্য সংবাদই এসে থাকে।
৪. ওহীর কোন বিষয়ে সন্দেহ করাও বৈধ নয়।
فَمَنْ حَآجَّكَ فِيْهِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ اَبْنَآءَنَا وَاَبْنَآءَكُمْ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمْ وَاَنْفُسَنَا وَاَنْفُسَكُمْ۫ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَّعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ (৬১) اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْقَصَصُ الْحَقُّۚ وَمَا مِنْ اِلٰهٍ اِلَّا اللهُۚ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ (৬২) فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُفْسِدِيْنَ (৬৩)
শাব্দিক অনুবাদ
৬১. فَمَنْ সুতরাং যারা حَآجَّكَ তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় فِيْهِ এ সম্পর্কে مِنْ ۢبَعْدِ এর পরও مَا جَآءَكَ যা তোমার কাছে এসেছে مِنَ الْعِلْمِ জ্ঞান থেকে। فَقُلْ বলো, تَعَالَوْا তোমরা আসো, نَدْعُ আমরা আহবান করি اَبْنَآءَنَا আমাদের সন্তানদেরকে وَاَبْنَآءَكُمْ ও তোমাদের সন্তানদেরকে, وَنِسَآءَنَا আমাদের নারীদেরকে وَنِسَآءَكُمْ ও তোমাদের নারীদেরকে وَاَنْفُسَنَا এবং আমাদের নিজেদেরকে وَاَنْفُسَكُمْ ও তোমাদের নিজেদেরকে ثُمَّ তারপর نَبْتَهِلْ আমরা মুবাহালা করি। فَنَجْعَلْ অতঃপর আমরা প্রদান করি لَعْنَتَ اللهِ আল্লাহর অভিশাপ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ মিথ্যাবাদীদের উপর।
৬২. اِنَّ নিশ্চয় هٰذَا এটাই لَهُوَ অবশ্যই তা اَلْقَصَصُ কাহিনী اَلْحَقُّ সত্য। وَمَا আর নেই مِنْ اِلٰهٍ কোন ইলাহ اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত । وَاِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ لَهُوَ অবশ্যই তিনি اَلْعَزِيْزُ পরাক্রমশালী اَلْحَكِيْمُ ও প্রজ্ঞাময়।
৬৩. فَاِنْ এরপরও যদি تَوَلَّوْا তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, فَاِنَّ اللهَ তবে নিশ্চয় আল্লাহ عَلِيْمٌ ভালো করে জানেন بِالْمُفْسِدِيْنَ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে।
সরল অনুবাদ
৬১. সুতরাং (ঈসা সম্পর্কে) তোমার কাছে জ্ঞান আসার পরও যারা এ সম্পর্কে তোমার সাথে (অযথা) বিতর্কে লিপ্ত হয় তাদেরকে বলো, তোমরা আসো, আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানদেরকে ও তোমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে অতঃপর আমরা মুবাহালা করি। অতঃপর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ) প্রদান করি। [কারো দাবীকে সত্যতা প্রমাণের জন্য এটিই হচ্ছে চূড়ান্ত স্তর। অত্র আয়াতে এটিকে মুবাহালা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। নিয়ম হচ্ছে, যখন কোন বিষয় সত্য অথবা মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে কোন দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং এ ব্যাপারে কোন পক্ষই চূড়ান্ত মীমাংসায় পৌঁছতে না পারে; অপরদিকে উভয় পক্ষই নিজ নিজ দাবীর উপর পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে অটল থাকে, তখন উভয় পক্ষ নিজ নিজ পরিবারবর্গকে নিয়ে একটি ময়দানে উপস্থিত হবে এবং এই বলে দু‘আ করবে যে, হে আল্লাহ! আমাদের উভয়ের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী, তার উপর তোমার অভিশাপ বর্ষণ হোক। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মিথ্যাবাদী সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দেয়ার মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তবে প্রতিক্রিয়াটি সাথে সাথেই সংঘটিত হবে নাকি পরবর্তীতে কোন এক সময় সংঘটিত হবে- এ ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা নেই। বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রাক্কালে মক্কার নেতা আবু জাহিল কাবা ঘরের গিলাফ ধরে যে দু‘আটি করেছিল, সেটি প্রায় এই মুবাহালার মতোই। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের ময়দানে তাদেরকে পরাজিত করার মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণ করে দেন। অত্র আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর পরই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী, ফাতিমা ও হাসান-হুসাইন (রাঃ)-কে ডেকে এনে বলেছিলেন, হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিজন। (তিরমিযী, হা/২৯৯৯)]- [অত্র আয়াতটির শানে নুযূল হলো, ৯ম হিজরীতে যখন ইসলামের জয়ধ্বনি মদিনা ও তার আশেপাশের এলাকাসহ দূরবর্তী অনেক অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন মানুষের মনে ধীরে ধীরে এ ধারণা জন্ম নিল যে, একদিন মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার সাহাবীগণই সম্পূর্ণ আরবের কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে। তাই আরবের অনেক গোত্র দলে দলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আগমন করে কেউ ইসলাম গ্রহণ করছিল আবার কেউ চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন নাজরান এলাকা থেকে একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আগমন করে এবং নিজেদের সীমালঙ্ঘনমূলক আক্বীদার ভিত্তিতে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে পড়ে যে, উভয় পক্ষের মধ্যে মুবাহালার প্রয়োজন হয়। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে মুবাহালার আহবান জানান। অতঃপর তিনি আহলে বাইত তথা আলী, ফাতিমা এবং হাসান ও হুসাইন (রাঃ) - এদেরকে সাথে নিয়ে মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। তারপর খ্রিস্টানদেরকে আহবান করেন যে, তোমরাও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে নিয়ে এসো; তারপর মিথ্যাবাদী দলের উপর অভিশাপ বর্ষণ করো। এদিকে খ্রিস্টান প্রতিনিধি দলটি পূর্ব হতেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিশ^স্ততা, সত্যবাদিতা, চরিত্র মাধুর্যতা, শিক্ষা ও কার্যাবলি সম্পর্কে অবগত ছিল। ফলে তাদের এতদিনের বিশ্বাসের ভিত নড়ে গেল; এমনকি তাদের মধ্যে অনেকের অন্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাসের বীজ জন্ম নিয়েছিল। যার কারণে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মুবাহালার আহবানে সাড়া দিতে পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। অবশেষে তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলল যে, আপনি আমাদের কাছে যা চাইবেন, আমরা তা-ই দেব। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের উপর জিযিয়া কর ধার্য করে দেন এবং তা আদায় করার জন্য আবূ উবায়দা ইবনে জার্রাহ (রাঃ)-কে তাদের সাথে প্রেরণ করে দেন। (ইবনে কাসীর, ফাতহুল কাদীরের সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর)]
৬২. নিশ্চয় এটাই সত্য কাহিনী। আর আল্লাহ ব্যতীত (সত্যিকারের) কোন ইলাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
৬৩. এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে ভালো করে জানেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দাওয়াতের স্বার্থে প্রয়োজনে মুবাহালা করা যাবে।
২. ইসলামের উপর মিথ্যারোপকারীরা আল্লাহর অভিশাপে পতিত হয়।
৩. ইসলামের কোন বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না।
শাব্দিক অনুবাদ
৬১. فَمَنْ সুতরাং যারা حَآجَّكَ তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় فِيْهِ এ সম্পর্কে مِنْ ۢبَعْدِ এর পরও مَا جَآءَكَ যা তোমার কাছে এসেছে مِنَ الْعِلْمِ জ্ঞান থেকে। فَقُلْ বলো, تَعَالَوْا তোমরা আসো, نَدْعُ আমরা আহবান করি اَبْنَآءَنَا আমাদের সন্তানদেরকে وَاَبْنَآءَكُمْ ও তোমাদের সন্তানদেরকে, وَنِسَآءَنَا আমাদের নারীদেরকে وَنِسَآءَكُمْ ও তোমাদের নারীদেরকে وَاَنْفُسَنَا এবং আমাদের নিজেদেরকে وَاَنْفُسَكُمْ ও তোমাদের নিজেদেরকে ثُمَّ তারপর نَبْتَهِلْ আমরা মুবাহালা করি। فَنَجْعَلْ অতঃপর আমরা প্রদান করি لَعْنَتَ اللهِ আল্লাহর অভিশাপ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ মিথ্যাবাদীদের উপর।
৬২. اِنَّ নিশ্চয় هٰذَا এটাই لَهُوَ অবশ্যই তা اَلْقَصَصُ কাহিনী اَلْحَقُّ সত্য। وَمَا আর নেই مِنْ اِلٰهٍ কোন ইলাহ اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত । وَاِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ لَهُوَ অবশ্যই তিনি اَلْعَزِيْزُ পরাক্রমশালী اَلْحَكِيْمُ ও প্রজ্ঞাময়।
৬৩. فَاِنْ এরপরও যদি تَوَلَّوْا তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, فَاِنَّ اللهَ তবে নিশ্চয় আল্লাহ عَلِيْمٌ ভালো করে জানেন بِالْمُفْسِدِيْنَ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে।
সরল অনুবাদ
৬১. সুতরাং (ঈসা সম্পর্কে) তোমার কাছে জ্ঞান আসার পরও যারা এ সম্পর্কে তোমার সাথে (অযথা) বিতর্কে লিপ্ত হয় তাদেরকে বলো, তোমরা আসো, আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানদেরকে ও তোমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে অতঃপর আমরা মুবাহালা করি। অতঃপর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ) প্রদান করি। [কারো দাবীকে সত্যতা প্রমাণের জন্য এটিই হচ্ছে চূড়ান্ত স্তর। অত্র আয়াতে এটিকে মুবাহালা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। নিয়ম হচ্ছে, যখন কোন বিষয় সত্য অথবা মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে কোন দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং এ ব্যাপারে কোন পক্ষই চূড়ান্ত মীমাংসায় পৌঁছতে না পারে; অপরদিকে উভয় পক্ষই নিজ নিজ দাবীর উপর পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে অটল থাকে, তখন উভয় পক্ষ নিজ নিজ পরিবারবর্গকে নিয়ে একটি ময়দানে উপস্থিত হবে এবং এই বলে দু‘আ করবে যে, হে আল্লাহ! আমাদের উভয়ের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী, তার উপর তোমার অভিশাপ বর্ষণ হোক। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মিথ্যাবাদী সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দেয়ার মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তবে প্রতিক্রিয়াটি সাথে সাথেই সংঘটিত হবে নাকি পরবর্তীতে কোন এক সময় সংঘটিত হবে- এ ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা নেই। বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রাক্কালে মক্কার নেতা আবু জাহিল কাবা ঘরের গিলাফ ধরে যে দু‘আটি করেছিল, সেটি প্রায় এই মুবাহালার মতোই। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের ময়দানে তাদেরকে পরাজিত করার মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণ করে দেন। অত্র আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর পরই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী, ফাতিমা ও হাসান-হুসাইন (রাঃ)-কে ডেকে এনে বলেছিলেন, হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিজন। (তিরমিযী, হা/২৯৯৯)]- [অত্র আয়াতটির শানে নুযূল হলো, ৯ম হিজরীতে যখন ইসলামের জয়ধ্বনি মদিনা ও তার আশেপাশের এলাকাসহ দূরবর্তী অনেক অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন মানুষের মনে ধীরে ধীরে এ ধারণা জন্ম নিল যে, একদিন মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার সাহাবীগণই সম্পূর্ণ আরবের কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে। তাই আরবের অনেক গোত্র দলে দলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আগমন করে কেউ ইসলাম গ্রহণ করছিল আবার কেউ চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন নাজরান এলাকা থেকে একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আগমন করে এবং নিজেদের সীমালঙ্ঘনমূলক আক্বীদার ভিত্তিতে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে পড়ে যে, উভয় পক্ষের মধ্যে মুবাহালার প্রয়োজন হয়। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে মুবাহালার আহবান জানান। অতঃপর তিনি আহলে বাইত তথা আলী, ফাতিমা এবং হাসান ও হুসাইন (রাঃ) - এদেরকে সাথে নিয়ে মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। তারপর খ্রিস্টানদেরকে আহবান করেন যে, তোমরাও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে নিয়ে এসো; তারপর মিথ্যাবাদী দলের উপর অভিশাপ বর্ষণ করো। এদিকে খ্রিস্টান প্রতিনিধি দলটি পূর্ব হতেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিশ^স্ততা, সত্যবাদিতা, চরিত্র মাধুর্যতা, শিক্ষা ও কার্যাবলি সম্পর্কে অবগত ছিল। ফলে তাদের এতদিনের বিশ্বাসের ভিত নড়ে গেল; এমনকি তাদের মধ্যে অনেকের অন্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাসের বীজ জন্ম নিয়েছিল। যার কারণে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মুবাহালার আহবানে সাড়া দিতে পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। অবশেষে তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলল যে, আপনি আমাদের কাছে যা চাইবেন, আমরা তা-ই দেব। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের উপর জিযিয়া কর ধার্য করে দেন এবং তা আদায় করার জন্য আবূ উবায়দা ইবনে জার্রাহ (রাঃ)-কে তাদের সাথে প্রেরণ করে দেন। (ইবনে কাসীর, ফাতহুল কাদীরের সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর)]
৬২. নিশ্চয় এটাই সত্য কাহিনী। আর আল্লাহ ব্যতীত (সত্যিকারের) কোন ইলাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
৬৩. এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে ভালো করে জানেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দাওয়াতের স্বার্থে প্রয়োজনে মুবাহালা করা যাবে।
২. ইসলামের উপর মিথ্যারোপকারীরা আল্লাহর অভিশাপে পতিত হয়।
৩. ইসলামের কোন বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না।
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ (৬৪)
শাব্দিক অনুবাদ
৬৪. قُلْ বলো, يَا হে اَهْلَ الْكِتَابِ আহলে কিতাব! تَعَالَوْا তোমরা আসো اِلٰى দিকে كَلِمَةٍ এমন একটি কালিমার (বাণীর), سَوَآءٍ যা সমান بَيْنَنَا আমাদের মাঝে وَبَيْنَكُمْ এবং তোমাদের মাঝে। اَلَّا نَعْبُدَ আমরা ইবাদাত করব না اِلَّا اللهَ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো, وَلَا نُشْرِكَ এবং আমরা শরীক করব না بِهٖ তাঁর সাথে شَيْئًا কোন কিছুই وَلَا يَتَّخِذَ এবং আমরা গ্রহণ করব না بَعْضُنَا আমাদের কতক بَعْضًا কতককে اَرْبَابًا প্রতিপালক হিসেবে مِنْ دُوْنِ اللهِ আল্লাহকে বাদ দিয়ে । فَاِنْ এরপরও যদি تَوَلَّوْا তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় فَقُوْلُوا তবে বলো, اِشْهَدُوْا তোমরা সাক্ষী থাকো, بِاَنَّا নিশ্চয় আমরা مُسْلِمُوْنَ মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৬৪. (হে নবী!) বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার (বাণীর) দিকে আসো, যা আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না, তাঁর সাথে কোন কিছুই শরীক করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে একে অপরকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করব না। আমাদের কেউ অপর কাউকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করব না। [এখানে ইহুদী সম্প্রদায় কর্তৃক উযায়ের (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায় কর্তৃক ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র এবং মারইয়াম (আঃ)-কে আল্লাহ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। আর এ কথা বুঝানো হয়েছে, তারা তো আদম সন্তানেরই অন্তর্ভুক্ত এবং তোমাদের বংশ হতেই আগত। সুতরাং তোমরা কীভাবে তাদেরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করে নিলে। অথচ তারা নিজেরাও কখনো এরূপ কোন দাবী করেননি এবং তোমাদেরকেও এরূপ কোন দাবীর প্রতি আহবান জানায়নি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে এরূপ বিশ্বাস থেকে ফিরে আসাটাই হচ্ছে তোমাদের ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা, যা আমাদের ধর্মের সাথে হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ।] এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। [এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর পরই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দিহইয়া কালবী (রাঃ) এর মাধ্যমে তৎকালীন রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস এর নিকট এ মর্মে একটি পত্র প্রেরণ করেন যে, ‘‘আমি তোমাকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করছি। সুতরাং তুমি ইসলাম গ্রহণ করে নাও, তাহলে নিরাপত্তা পাবে। আর তুমি মুসলিম হয়ে যাও, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দ্বিগুণ নেকী দান করবেন। কিন্তু যদি তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে প্রজাদের পাপও তোমার উপর চাপানো হবে। আর হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার (বাণীর) দিকে আসো, যা আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না, তাঁর সাথে কোন কিছুই শরীক করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে একে অপরকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করব না। আমাদের কেউ অপর কাউকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করব না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম।’’ অতঃপর দিহইয়া কালবী (রাঃ) পত্রটি হিরাক্লিয়াস এর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বসরার শাসকের কাছে দেন। এরপর সে হিরাক্লিয়াস এর কাছে পৌঁছে দেয়। এ সময় আবু সুফিয়ান একটি বাণিজ্যিক দল নিয়ে সিরিয়ায় অবস্থান করছিলেন। এদিকে সম্রাট হিরাক্লিয়াস পত্র পেয়ে তার লোকদেরকে জিজ্ঞেস করল, যে লোকটি নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে তাঁর গোত্রীয় কেউ এখানে আছে কি? তারা বললো, হ্যাঁ- আছে। তখন তারা আবু সুফিয়ান ও তার দলকে তার কাছে ডেকে নিয়ে গেল এবং তাদেরকে হিরাক্লিয়াসের সামনে বসতে দেয়া হলো। তারপর হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, যে লোকটি নিজেকে নবী বলে দাবী করছে তোমাদের মধ্যে বংশের দিক থেকে তাঁর আত্মীয় কেউ আছে কি? আবু সুফিয়ান বলল, বংশগত দিক থেকে আমিই তাঁর নিকটাত্মীয়। এ কথা শোনার পর হিরাক্লিয়াসের লোকজন তাকে তার সাথীদের সামনে বসিয়ে দিল। তারপর তারা একজন দোভাষীকেও ডেকে নিয়ে আসল। তখন হিরাক্লিয়াস দোভাষীকে বলল, তাদেরকে বলো, আমি একে (আবু সুফিয়ান) নবুওয়াত দাবীকারী লোকটি সম্পর্কে প্রশ্ন করব। যদি সে মিথ্যা বলে তাহলে তোমরা তার মিথ্যা ধরিয়ে দেবে। এরপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করো যে, তোমাদের মধ্যে তাঁর (নবুওয়াতের দাবীদার লোকটির) বংশমর্যাদা কেমন? আবু সুফিয়ান বলল, তিনি আমাদের মধ্যে অভিজাত বংশের। তারপর হিরাক্লিয়াস পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ বাদশাহ ছিল কি? আবু সুফিয়ান বলল, না। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তিনি এখন যা বলছেন তার আগে কি তোমরা কখনো তাঁকে মিথ্যাচারের অপবাদ দিতে? আবু সুফিয়ান বলল, না। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, নেতৃস্থানীয় ও উচ্চ সম্ভ্রান্ত লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বল লোকেরা। আবু সুফিয়ান বলল, দুর্বল লোকেরাই বরং তার অনুসরণ করছে। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তাঁর অনুসারীদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে? আবু সুফিয়ান বলল, বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, উক্ত দ্বীনে প্রবেশ করার পর তাদের মধ্যে কেউ কি তার প্রতি অখুশি হয়ে তা ত্যাগ করে? আবু সুফিয়ান বলল, না। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি কোন সময় তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছো? আবু সুফিয়ান বলল, হ্যাঁ। হিরাক্লিয়াস আবার জিজ্ঞেস করল, তাঁর সাথে তোমাদের যুদ্ধের ফলাফল কি? আবু সুফিয়ান বলল, তাঁর ও আমাদের মাঝে যুদ্ধের ফলাফল হলো পালাক্রমে বালতি ভরে পানি উঠানোর মতো। কখনো তিনি আমাদের থেকে পান আবার কখনো আমরা তার কাছ থেকে পাই। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তিনি কি কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন? আবু সুফিয়ান বলল, না। তবে আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার সঙ্গে এক চুক্তিতে আবদ্ধ আছি। জানি না এ সময় তিনি কি করেন। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তাঁর আগে এমন কথা আর কেউ কি বলেছে? আবু সুফিয়ান বলল, না। এরপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাকে বলো, আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশমর্যাদা কেমন? তুমি বললে যে, তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশের। রাসূলদেরকে এভাবে তাঁদের কওমের সম্ভ্রান্ত বংশেই পাঠানো হয়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম যে, তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ কি রাজা বাদশাহ ছিল? তুমি বললে, না। তাহলে আমি বলতাম, সে এমন এক ব্যক্তি যে, তাঁর পিতৃপুরুষের রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে চায়। আমি তোমাকে তাঁর অনুসরণকারীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম যে, তারা সমাজের দুর্বল লোক না সম্ভ্রান্ত উচ্চবংশীয় লোক? তুমি বললে যে, সমাজের দুর্বল লোক। এসব লোকই তো রাসূলদের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, সে এখন যা কিছু বলছে তা বলার পূর্বে তোমরা কি কখনো তার উপর মিথ্যা বলার অপবাদ দিতে পেরেছো? তুমি বললে, না। তাতে আমি বুঝলাম যে, তিনি মানুষের বেলায় মিথ্যা পরিত্যাগ করেন আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলবেন এমন কখনো হতে পারে না। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, তাদের কেউ কি তাঁর দ্বীনে প্রবেশ করার পর অখুশি হয়ে তা পরিত্যাগ করে? তুমি বললে না। ঈমানের ব্যাপারটা এমনই হয়ে থাকে, যখন তার সজীবতা অন্তরে গেঁথে যায়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম যে, তাঁর দ্বীন গ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে? তুমি বললে, বাড়ছে। পূর্ণতা প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ঈমানের অবস্থা এমনই হয়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, তোমরা কি তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছ? তুমি বললে যে, তোমরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছো। কিন্তু যুদ্ধের ফলাফল হয়েছে বালতিতে করে পালাক্রমে পানি উঠানোর মতো। অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল কখনো তোমাদের পক্ষে আবার কখনো তাঁর পক্ষে। এভাবেই রাসূলদের পরীক্ষা করা হয়। তবে পরিণামে তারাই বিজয়ী হন। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, তিনি কি কখনো ওয়াদা খেলাফ বা চুক্তি ভঙ্গ করেন? তুমি বললে, না- তিনি কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেন না। রাসূলগণ কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, এমন কথা এর পূর্বে আর কেউ কি কখনো বলেছে? তুমি বললে, না। তাঁর পূর্বে এমন কথা আর কেউ বলে থাকলে আমি বলতাম, সে পূর্বের বলা কথারই অনুসরণ করছে। আবু সুফিয়ান বলেন, তারপর তিনি প্রশ্ন করলেন, তিনি তোমাদেরকে কী কী হুকুম করেন? আমি বললাম, তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করতে, যাকাত দিতে, আত্মীয়তা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে এবং পাপ কাজ ত্যাগ করে চলতে হুকুম করেন। তিনি বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি সঠিক হয় তাহলে নিশ্চয়ই তিনি নবী। আমি জানতাম তিনি আবির্ভূত হবেন। কিন্তু আমি এ ধারণা করিনি যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবেন। যদি আমি বুঝতাম যে, আমি তাঁর কাছে পৌঁছতে পারবো তাহলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম; আর যদি আমি তাঁর নিকট থাকতাম তাহলে তাঁর পা দু’খানি ধুয়ে দিতাম। তাঁর রাজত্ব আমার পায়ের নিচের জমিন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। এরপর উক্তি চিঠিটি এনে তার সামনে পাঠ করা হলো। তখন উক্ত মজলিসের চতুর্দিকে হৈ চৈ শুরু হলো এবং আবু সুফিয়ান ও তার দলবলকেও বের করে দেয়া হলো। এ পরিস্থিতি দেখে আবু সুফিয়ান বলল, আবু কাবশার সন্তানের ব্যাপারটা তো বেশ বিস্তার ঘটেছে। তাকে এখন বনী আসফারদের (রোমবাসী) বাদশাহও ভয় করছে। এরপর হিরাক্লিয়াস তার একটি কক্ষে রোমের নেতৃবৃন্দকে ডেকে একত্রিত করে বললেন, হে রোমবাসীগণ! তোমরা কি স্থায়ী সফলতা ও সৎপথ চাও? তোমরা কি তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব কামনা করো? এ কথা শোনামাত্র সবাই পলায়নপর বন্য গর্দভের মতো প্রাণপণে দরজার দিকে ছুটে চললো। কিন্তু দরজার গোড়ায় পৌঁছে দেখলো তা আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন হিরাক্লিয়াস তাঁর দরবারের লোকদের নির্দেশ দিলেন, তাদেরকে ফিরিয়ে আনো। তারপর তাদেরকে ডেকে নেয়া হলে তিনি বললেন, আমি আমার এসব কথার দ্বারা তোমাদের ধর্মের প্রতি দৃঢ়তা পরীক্ষা করলাম। তোমাদের কাছে আমি যা আশা করেছিলাম তা এইমাত্র দেখলাম। এ কথা শুনে সবাই তাকে সিজদা করলো এবং খুশি হলো। (সহীহ বুখারী, হা/৭, ৪৫৫৩)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দাওয়াতের কৌশল হিসেবে বিরুদ্ধের কাছে সর্বপ্রথম তাদের সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয় সমূহ উপস্থাপন করা উচিত।
২. আল্লাহর ইবাদাত করা এবং তার সাথে কাউকে শরীক না করার দাওয়াতটি সকল নবীর দাওয়াত।
৩. বিরুধীদের অতি বাড়াবাড়ির সময় এ বলে কেটে পড়া উচিত যে, আমি মুসলিম।
শাব্দিক অনুবাদ
৬৪. قُلْ বলো, يَا হে اَهْلَ الْكِتَابِ আহলে কিতাব! تَعَالَوْا তোমরা আসো اِلٰى দিকে كَلِمَةٍ এমন একটি কালিমার (বাণীর), سَوَآءٍ যা সমান بَيْنَنَا আমাদের মাঝে وَبَيْنَكُمْ এবং তোমাদের মাঝে। اَلَّا نَعْبُدَ আমরা ইবাদাত করব না اِلَّا اللهَ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো, وَلَا نُشْرِكَ এবং আমরা শরীক করব না بِهٖ তাঁর সাথে شَيْئًا কোন কিছুই وَلَا يَتَّخِذَ এবং আমরা গ্রহণ করব না بَعْضُنَا আমাদের কতক بَعْضًا কতককে اَرْبَابًا প্রতিপালক হিসেবে مِنْ دُوْنِ اللهِ আল্লাহকে বাদ দিয়ে । فَاِنْ এরপরও যদি تَوَلَّوْا তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় فَقُوْلُوا তবে বলো, اِشْهَدُوْا তোমরা সাক্ষী থাকো, بِاَنَّا নিশ্চয় আমরা مُسْلِمُوْنَ মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৬৪. (হে নবী!) বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার (বাণীর) দিকে আসো, যা আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না, তাঁর সাথে কোন কিছুই শরীক করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে একে অপরকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করব না। আমাদের কেউ অপর কাউকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করব না। [এখানে ইহুদী সম্প্রদায় কর্তৃক উযায়ের (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায় কর্তৃক ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র এবং মারইয়াম (আঃ)-কে আল্লাহ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। আর এ কথা বুঝানো হয়েছে, তারা তো আদম সন্তানেরই অন্তর্ভুক্ত এবং তোমাদের বংশ হতেই আগত। সুতরাং তোমরা কীভাবে তাদেরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করে নিলে। অথচ তারা নিজেরাও কখনো এরূপ কোন দাবী করেননি এবং তোমাদেরকেও এরূপ কোন দাবীর প্রতি আহবান জানায়নি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে এরূপ বিশ্বাস থেকে ফিরে আসাটাই হচ্ছে তোমাদের ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা, যা আমাদের ধর্মের সাথে হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ।] এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। [এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর পরই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দিহইয়া কালবী (রাঃ) এর মাধ্যমে তৎকালীন রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস এর নিকট এ মর্মে একটি পত্র প্রেরণ করেন যে, ‘‘আমি তোমাকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করছি। সুতরাং তুমি ইসলাম গ্রহণ করে নাও, তাহলে নিরাপত্তা পাবে। আর তুমি মুসলিম হয়ে যাও, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দ্বিগুণ নেকী দান করবেন। কিন্তু যদি তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে প্রজাদের পাপও তোমার উপর চাপানো হবে। আর হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার (বাণীর) দিকে আসো, যা আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না, তাঁর সাথে কোন কিছুই শরীক করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে একে অপরকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করব না। আমাদের কেউ অপর কাউকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করব না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম।’’ অতঃপর দিহইয়া কালবী (রাঃ) পত্রটি হিরাক্লিয়াস এর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বসরার শাসকের কাছে দেন। এরপর সে হিরাক্লিয়াস এর কাছে পৌঁছে দেয়। এ সময় আবু সুফিয়ান একটি বাণিজ্যিক দল নিয়ে সিরিয়ায় অবস্থান করছিলেন। এদিকে সম্রাট হিরাক্লিয়াস পত্র পেয়ে তার লোকদেরকে জিজ্ঞেস করল, যে লোকটি নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে তাঁর গোত্রীয় কেউ এখানে আছে কি? তারা বললো, হ্যাঁ- আছে। তখন তারা আবু সুফিয়ান ও তার দলকে তার কাছে ডেকে নিয়ে গেল এবং তাদেরকে হিরাক্লিয়াসের সামনে বসতে দেয়া হলো। তারপর হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, যে লোকটি নিজেকে নবী বলে দাবী করছে তোমাদের মধ্যে বংশের দিক থেকে তাঁর আত্মীয় কেউ আছে কি? আবু সুফিয়ান বলল, বংশগত দিক থেকে আমিই তাঁর নিকটাত্মীয়। এ কথা শোনার পর হিরাক্লিয়াসের লোকজন তাকে তার সাথীদের সামনে বসিয়ে দিল। তারপর তারা একজন দোভাষীকেও ডেকে নিয়ে আসল। তখন হিরাক্লিয়াস দোভাষীকে বলল, তাদেরকে বলো, আমি একে (আবু সুফিয়ান) নবুওয়াত দাবীকারী লোকটি সম্পর্কে প্রশ্ন করব। যদি সে মিথ্যা বলে তাহলে তোমরা তার মিথ্যা ধরিয়ে দেবে। এরপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করো যে, তোমাদের মধ্যে তাঁর (নবুওয়াতের দাবীদার লোকটির) বংশমর্যাদা কেমন? আবু সুফিয়ান বলল, তিনি আমাদের মধ্যে অভিজাত বংশের। তারপর হিরাক্লিয়াস পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ বাদশাহ ছিল কি? আবু সুফিয়ান বলল, না। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তিনি এখন যা বলছেন তার আগে কি তোমরা কখনো তাঁকে মিথ্যাচারের অপবাদ দিতে? আবু সুফিয়ান বলল, না। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, নেতৃস্থানীয় ও উচ্চ সম্ভ্রান্ত লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বল লোকেরা। আবু সুফিয়ান বলল, দুর্বল লোকেরাই বরং তার অনুসরণ করছে। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তাঁর অনুসারীদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে? আবু সুফিয়ান বলল, বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, উক্ত দ্বীনে প্রবেশ করার পর তাদের মধ্যে কেউ কি তার প্রতি অখুশি হয়ে তা ত্যাগ করে? আবু সুফিয়ান বলল, না। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি কোন সময় তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছো? আবু সুফিয়ান বলল, হ্যাঁ। হিরাক্লিয়াস আবার জিজ্ঞেস করল, তাঁর সাথে তোমাদের যুদ্ধের ফলাফল কি? আবু সুফিয়ান বলল, তাঁর ও আমাদের মাঝে যুদ্ধের ফলাফল হলো পালাক্রমে বালতি ভরে পানি উঠানোর মতো। কখনো তিনি আমাদের থেকে পান আবার কখনো আমরা তার কাছ থেকে পাই। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তিনি কি কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন? আবু সুফিয়ান বলল, না। তবে আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার সঙ্গে এক চুক্তিতে আবদ্ধ আছি। জানি না এ সময় তিনি কি করেন। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, তাঁর আগে এমন কথা আর কেউ কি বলেছে? আবু সুফিয়ান বলল, না। এরপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাকে বলো, আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশমর্যাদা কেমন? তুমি বললে যে, তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশের। রাসূলদেরকে এভাবে তাঁদের কওমের সম্ভ্রান্ত বংশেই পাঠানো হয়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম যে, তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ কি রাজা বাদশাহ ছিল? তুমি বললে, না। তাহলে আমি বলতাম, সে এমন এক ব্যক্তি যে, তাঁর পিতৃপুরুষের রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে চায়। আমি তোমাকে তাঁর অনুসরণকারীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম যে, তারা সমাজের দুর্বল লোক না সম্ভ্রান্ত উচ্চবংশীয় লোক? তুমি বললে যে, সমাজের দুর্বল লোক। এসব লোকই তো রাসূলদের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, সে এখন যা কিছু বলছে তা বলার পূর্বে তোমরা কি কখনো তার উপর মিথ্যা বলার অপবাদ দিতে পেরেছো? তুমি বললে, না। তাতে আমি বুঝলাম যে, তিনি মানুষের বেলায় মিথ্যা পরিত্যাগ করেন আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলবেন এমন কখনো হতে পারে না। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, তাদের কেউ কি তাঁর দ্বীনে প্রবেশ করার পর অখুশি হয়ে তা পরিত্যাগ করে? তুমি বললে না। ঈমানের ব্যাপারটা এমনই হয়ে থাকে, যখন তার সজীবতা অন্তরে গেঁথে যায়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম যে, তাঁর দ্বীন গ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে? তুমি বললে, বাড়ছে। পূর্ণতা প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ঈমানের অবস্থা এমনই হয়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, তোমরা কি তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছ? তুমি বললে যে, তোমরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছো। কিন্তু যুদ্ধের ফলাফল হয়েছে বালতিতে করে পালাক্রমে পানি উঠানোর মতো। অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল কখনো তোমাদের পক্ষে আবার কখনো তাঁর পক্ষে। এভাবেই রাসূলদের পরীক্ষা করা হয়। তবে পরিণামে তারাই বিজয়ী হন। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, তিনি কি কখনো ওয়াদা খেলাফ বা চুক্তি ভঙ্গ করেন? তুমি বললে, না- তিনি কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেন না। রাসূলগণ কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, এমন কথা এর পূর্বে আর কেউ কি কখনো বলেছে? তুমি বললে, না। তাঁর পূর্বে এমন কথা আর কেউ বলে থাকলে আমি বলতাম, সে পূর্বের বলা কথারই অনুসরণ করছে। আবু সুফিয়ান বলেন, তারপর তিনি প্রশ্ন করলেন, তিনি তোমাদেরকে কী কী হুকুম করেন? আমি বললাম, তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করতে, যাকাত দিতে, আত্মীয়তা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে এবং পাপ কাজ ত্যাগ করে চলতে হুকুম করেন। তিনি বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি সঠিক হয় তাহলে নিশ্চয়ই তিনি নবী। আমি জানতাম তিনি আবির্ভূত হবেন। কিন্তু আমি এ ধারণা করিনি যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবেন। যদি আমি বুঝতাম যে, আমি তাঁর কাছে পৌঁছতে পারবো তাহলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম; আর যদি আমি তাঁর নিকট থাকতাম তাহলে তাঁর পা দু’খানি ধুয়ে দিতাম। তাঁর রাজত্ব আমার পায়ের নিচের জমিন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। এরপর উক্তি চিঠিটি এনে তার সামনে পাঠ করা হলো। তখন উক্ত মজলিসের চতুর্দিকে হৈ চৈ শুরু হলো এবং আবু সুফিয়ান ও তার দলবলকেও বের করে দেয়া হলো। এ পরিস্থিতি দেখে আবু সুফিয়ান বলল, আবু কাবশার সন্তানের ব্যাপারটা তো বেশ বিস্তার ঘটেছে। তাকে এখন বনী আসফারদের (রোমবাসী) বাদশাহও ভয় করছে। এরপর হিরাক্লিয়াস তার একটি কক্ষে রোমের নেতৃবৃন্দকে ডেকে একত্রিত করে বললেন, হে রোমবাসীগণ! তোমরা কি স্থায়ী সফলতা ও সৎপথ চাও? তোমরা কি তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব কামনা করো? এ কথা শোনামাত্র সবাই পলায়নপর বন্য গর্দভের মতো প্রাণপণে দরজার দিকে ছুটে চললো। কিন্তু দরজার গোড়ায় পৌঁছে দেখলো তা আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন হিরাক্লিয়াস তাঁর দরবারের লোকদের নির্দেশ দিলেন, তাদেরকে ফিরিয়ে আনো। তারপর তাদেরকে ডেকে নেয়া হলে তিনি বললেন, আমি আমার এসব কথার দ্বারা তোমাদের ধর্মের প্রতি দৃঢ়তা পরীক্ষা করলাম। তোমাদের কাছে আমি যা আশা করেছিলাম তা এইমাত্র দেখলাম। এ কথা শুনে সবাই তাকে সিজদা করলো এবং খুশি হলো। (সহীহ বুখারী, হা/৭, ৪৫৫৩)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দাওয়াতের কৌশল হিসেবে বিরুদ্ধের কাছে সর্বপ্রথম তাদের সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয় সমূহ উপস্থাপন করা উচিত।
২. আল্লাহর ইবাদাত করা এবং তার সাথে কাউকে শরীক না করার দাওয়াতটি সকল নবীর দাওয়াত।
৩. বিরুধীদের অতি বাড়াবাড়ির সময় এ বলে কেটে পড়া উচিত যে, আমি মুসলিম।
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تُحَآجُّوْنَ فِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَمَاۤ اُنْزِلَتِ التَّوْرَاةُ وَالْاِنْجِيْلُ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِه ۤؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ (৬৫) هَاۤ اَنْتُمْ هٰؤُلَآءِ حَاجَجْتُمْ فِيْمَا لَكُمْ بِه عِلْمٌ فَلِمَ تُحَآجُّوْنَ فِيْمَا لَيْسَ لَكُمْ بِه عِلْمٌؕ وَّاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ (৬৬) مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًاؕ وَّمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ (৬৭) اِنَّ اَوْلَى النَّاسِ بِاِبْرَاهِيْمَ لَلَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُ وَهٰذَا النَّبِيُّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاؕ وَاللهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ (৬৮)
শাব্দিক অনুবাদ
৬৫. يَا হে اَهْلَ الْكِتَابِ আহলে কিতাব! لِمَ কেন تُحَآجُّوْنَ তোমরা বিতর্ক করছ فِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ ইবরাহীম সম্পর্কে? وَمَاۤ اُنْزِلَتِ অথচ অবতীর্ণ হয়নি اَلتَّوْرَاةُ তাওরাত وَالْاِنْجِيْلُ এবং ইঞ্জীল اِلَّا তবে (অবতীর্ণ হয়েছে) مِنْ ۢبَعْدِهٖ তার পরে। اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ তবে কি তোমরা বুঝ না?
৬৬. هَاۤ اَنْتُمْ হ্যাঁ- তোমরা هٰؤُلَآءِ এমন লোক, حَاجَجْتُمْ যারা (ইতিপূর্বে) বিতর্ক করতে فِيْمَا সে বিষয় নিয়ে, لَكُمْ তোমাদের জন্য بِه যে বিষয়ে রয়েছে عِلْمٌ কিছু জ্ঞান। فَلِمَ তবে কেন تُحَآجُّوْنَ তোমরা বিতর্ক করছ فِيْمَا সে বিষয়ে لَيْسَ নেই لَكُمْ তোমাদের জন্য بِه যে বিষয়ে عِلْمٌ কোন জ্ঞান? وَاللهُ আর আল্লাহ يَعْلَمُ জানেন وَاَنْتُمْ আর তোমরা لَا تَعْلَمُوْنَ জান না।
৬৭. مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ ইবরাহীম ছিল না يَهُوْدِيًّا ইহুদি وَلَا نَصْرَانِيًّا এবং খ্রিস্টানও ছিল না, وَلٰكِنْ বরং كَانَ সে ছিল حَنِيْفًا একনিষ্ঠ مُسْلِمًا মুসলিম। وَمَا كَانَ আর সে ছিল না مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও।
৬৮. اِنَّ নিশ্চয় اَوْلَى সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ اَلنَّاسِ মানুষ بِاِبْرَاهِيْمَ ইবরাহীমের কাছে, لَلَّذِيْنَ যারা اِتَّبَعُوْهُ তার অনুসরণ করেছে وَهٰذَا এবং এই اَلنَّبِيُّ নবী وَالَّذِيْنَ এবং যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে। وَاللهُ আর আললাহ وَلِيُّ বন্ধু اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের।
সরল অনুবাদ
৬৫. (আরো বলো) হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন ইবরাহীম সম্পর্কে বিতর্ক করছ? অথচ তাওরাত এবং ইঞ্জীল তার (অনেক) পরেই অবতীর্ণ হয়েছে। তবে কি তোমরা বুঝ না? [আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মের মতাদর্শ অনুযায়ীই ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ও তাদের আদর্শস্বরূপ। তবে তারা উভয় পক্ষই তাঁর ব্যাপারে অনেক বিভ্রান্তিকর দাবী পোষণ করত। ইহুদীরা দাবী করত যে, ইবরাহীম (আঃ) ইহুদীদের অন্তর্ভুক্ত। আবার খ্রিস্টানরা দাবী করত যে, তিনি খ্রিস্টানদের অন্তর্ভুক্ত। এরূপ দাবী করাটা ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং চরম মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ। একেবারে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকেই তাদের এই মিথ্যা দাবীর অসারতা প্রকাশ পেয়ে যায়। অত্র আয়াতে এ বিষয়টিই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, তোমরা যে ইবরাহীম (আঃ)-কে ইহুদী অথবা খ্রিস্টান হিসেবে দাবী করছ, তার কোনটিই সঠিক নয়। কেননা তোমাদের অনুসরণীয় কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জীল নাযিল হওয়ার বহু পূর্বেই ইবরাহীম (আঃ) এর আগমন ঘটেছিল। তোমাদের নবী ও রাসূলগণ ছিলেন তারই বংশধর। সুতরাং তিনি কীভাবে তার মৃত্যুর পর তারই বংশ হতে আগত কোন নবী অথবা রাসূলের অনুসরণ করেন অথবা তাদের কিতাবের অনুসরণ করে তাদের মতাদর্শের অনুসারী তথা ইহুদী অথবা খ্রিস্টান হতে পারেন?]
৬৬. হ্যাঁ- তোমরা তো তারাই, যারা (ইতিপূর্বে) সে বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতে, যে বিষয়ে তোমাদের কিছু জ্ঞান আছে। তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে তোমরা বিতর্ক করছ কেন? আল্লাহ জানেন, কিন্তু তোমরা জান না। [এখানে জ্ঞান বলতে দলীলের কথা বুঝানো হয়েছে। ইহুদী ও খ্রিস্টানদের একটি চরিত্র এই ছিল যে, তারা আল্লাহ, ফেরেশতা, রাসূলগণ, কিতাবসমূহসহ ঈমানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন বিভ্রান্তিকর দাবী করত যে, এর স্বপক্ষে তারা কোন গ্রহণযোগ্য দলীল অথবা যুক্তি উপস্থাপন করতে পারত না। কিন্তু এরপরও তারা নিজেদের মতাদর্শ টিকিয়ে রাখার জন্য নানা ধরনের অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত হত এবং বিভ্রান্তি থেকে আরো বিভ্রান্তিতে পতিত হত। অত্র আয়াতে তাদের এই চরিত্রটিকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবং আল্লাহর পথের দাঈদেরকে বুঝানো হয়েছে যে, যখন তোমরা কোন অমুসলিমকে দাওয়াত দিবে, তখন তারা এ দাওয়াতের বিরুদ্ধে অসংখ্য অহেতুক যুক্তি উপস্থাপনের দ্বারা তোমার সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। সুতরাং তোমাকে তাদের ঐসব দাবীর প্রত্যুত্তর অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও ধৈর্য সহকারেই প্রদান করতে হবে। আর এজন্য তোমাকে অবশ্যই অধিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে।]
৬৭. (সঠিক তথ্য হচ্ছে) ইবরাহীম ইহুদি ছিল না এবং নাসারাও (খ্রিস্টানও) ছিল না, বরং সে একনিষ্ঠ মুসলিম ছিল। [এখানে ‘একনিষ্ঠ মুসলিম’ বুঝাতে حنيفا مسلما শব্দাবলি ব্যবহার করা হয়েছে। আর حنيف বলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যে সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একটি বিশেষ পথ অনুসরণ করে চলে। যেহেতু ইবরাহীম (আঃ) তৎকালীন যুগের সকল মতাদর্শ বা ধর্মকে পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র আল্লাহর পথ অনুসরণ করেছিলেন, এজন্য তাকেও ‘একনিষ্ঠ মুসলিম’ বলা হয়।] আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না। [অর্থাৎ তোমরা যেরূপ ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসারী দাবী করা সত্ত্বেও নানা দিক থেকে শিরক করে বেড়াচ্ছ তথা উযাইর (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করছ, মারইয়াম (আঃ)-কে আল্লাহর স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করছ, হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করে তোমাদের আলেমদেরকে বিধানদাতার আসনে বসিয়ে দিয়েছ এবং এ ধরনের আরো অনেক শিরকী কর্মকান্ড করে মুশরিকে পরিণত হয়েছ, ইবরাহীম (আঃ) মোটেও সেরূপ ছিলেন না। বরং তৎকালীন যুগের সকল মানুষ শিরকে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি একাই ছিলেন শিরক থেকে মুক্ত এবং একনিষ্ঠ মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তোমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসারী হয়ে থাক, তাহলে প্রথমে নিজেদেরকে সকল প্রকার শিরক থেকে মুক্ত করো এবং একনিষ্ঠ মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত হও। তাহলে তোমাদের দাবীর যথার্থ প্রমাণিত হবে।]
৬৮. নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ইবরাহীমের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তারাই, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী ও ঈমানদারগণ। আর আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু। [এখানে মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার অনুসারীদেরকে ইবরাহীম (আঃ) এর অধিক ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য একটি মূলনীতি প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো, কারো প্রকৃত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি, যারা যথাযথভাবে তার অনুসরণ করে চলে, তার মতাদর্শকে মেনে চলে এবং তাকে সম্মান প্রদান করে। আর এই হিসেবে বর্তমান যুগের ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসারী হিসেবে দাবীকারী ইহুদী ও খ্রিস্টানরা প্রকৃতপক্ষে তার অনুসারী নয়। কেননা মৌখিকভাবে তারা ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসারী হিসেবে দাবী করলেও কার্যত এর বিপরীত করে থাকে। সুতরাং মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার অনুসারীরাই হচ্ছে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। কেননা ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দ্বীন একই। ইবরাহীম (আঃ) সারা জীবন মানুষকে যে আল্লাহর প্রতি আহবান করে গেছেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার অনুসারীরাও মানুষকে সেই পথের দিকে দাওয়াত প্রদান করে থাকে।অত্র আয়াতে রূপকভাবে মুমিনদেরকে আরো একটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে যে, তোমরা যারা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুসারী ও তাকে ভালোবাসো বলে দাবী করছ, তোমাদের এই দাবী প্রমাণের জন্য ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মতো তোমাদেরকেও কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে- অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তোমাদেরকে জীবনবিধান হিসেবে যা কিছু নির্দেশনা প্রদান করেন, তা নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হবে। তিনি যা কিছু করেছেন সেগুলো সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর তার ভালোবাসা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বিন্দু পরিমাণ সীমালঙ্ঘন তথা কোন প্রকার শিরক ও বিদআতের আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না- যেমনিভাবে ইবরাহীম (আঃ) এর প্রতি অধিক ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে ইহুদী ও খ্রিস্টানরা করেছিল।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ইবরাহীম (আঃ) এর আগমনের অনেক পরে তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল।
২. আহলে কিতাবের লোকজন ইবরাহীম (আঃ)-কে নিজে নানা ধরনের অযৌক্তিক মতভেদে লিপ্ত হত।
৩. কোন বিষয়ে অল্প জ্ঞান নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
৪. ইবরাহীম (আঃ) কে ইহুদি অথবা খ্রিস্টান দাবী করাটা একেবারেই অযৌক্তিক।
৫. শুধুমাত্র মুমিনরাই ইবরাহীম (আঃ) এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ।
শাব্দিক অনুবাদ
৬৫. يَا হে اَهْلَ الْكِتَابِ আহলে কিতাব! لِمَ কেন تُحَآجُّوْنَ তোমরা বিতর্ক করছ فِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ ইবরাহীম সম্পর্কে? وَمَاۤ اُنْزِلَتِ অথচ অবতীর্ণ হয়নি اَلتَّوْرَاةُ তাওরাত وَالْاِنْجِيْلُ এবং ইঞ্জীল اِلَّا তবে (অবতীর্ণ হয়েছে) مِنْ ۢبَعْدِهٖ তার পরে। اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ তবে কি তোমরা বুঝ না?
৬৬. هَاۤ اَنْتُمْ হ্যাঁ- তোমরা هٰؤُلَآءِ এমন লোক, حَاجَجْتُمْ যারা (ইতিপূর্বে) বিতর্ক করতে فِيْمَا সে বিষয় নিয়ে, لَكُمْ তোমাদের জন্য بِه যে বিষয়ে রয়েছে عِلْمٌ কিছু জ্ঞান। فَلِمَ তবে কেন تُحَآجُّوْنَ তোমরা বিতর্ক করছ فِيْمَا সে বিষয়ে لَيْسَ নেই لَكُمْ তোমাদের জন্য بِه যে বিষয়ে عِلْمٌ কোন জ্ঞান? وَاللهُ আর আল্লাহ يَعْلَمُ জানেন وَاَنْتُمْ আর তোমরা لَا تَعْلَمُوْنَ জান না।
৬৭. مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ ইবরাহীম ছিল না يَهُوْدِيًّا ইহুদি وَلَا نَصْرَانِيًّا এবং খ্রিস্টানও ছিল না, وَلٰكِنْ বরং كَانَ সে ছিল حَنِيْفًا একনিষ্ঠ مُسْلِمًا মুসলিম। وَمَا كَانَ আর সে ছিল না مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও।
৬৮. اِنَّ নিশ্চয় اَوْلَى সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ اَلنَّاسِ মানুষ بِاِبْرَاهِيْمَ ইবরাহীমের কাছে, لَلَّذِيْنَ যারা اِتَّبَعُوْهُ তার অনুসরণ করেছে وَهٰذَا এবং এই اَلنَّبِيُّ নবী وَالَّذِيْنَ এবং যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে। وَاللهُ আর আললাহ وَلِيُّ বন্ধু اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের।
সরল অনুবাদ
৬৫. (আরো বলো) হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন ইবরাহীম সম্পর্কে বিতর্ক করছ? অথচ তাওরাত এবং ইঞ্জীল তার (অনেক) পরেই অবতীর্ণ হয়েছে। তবে কি তোমরা বুঝ না? [আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মের মতাদর্শ অনুযায়ীই ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ও তাদের আদর্শস্বরূপ। তবে তারা উভয় পক্ষই তাঁর ব্যাপারে অনেক বিভ্রান্তিকর দাবী পোষণ করত। ইহুদীরা দাবী করত যে, ইবরাহীম (আঃ) ইহুদীদের অন্তর্ভুক্ত। আবার খ্রিস্টানরা দাবী করত যে, তিনি খ্রিস্টানদের অন্তর্ভুক্ত। এরূপ দাবী করাটা ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং চরম মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ। একেবারে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকেই তাদের এই মিথ্যা দাবীর অসারতা প্রকাশ পেয়ে যায়। অত্র আয়াতে এ বিষয়টিই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, তোমরা যে ইবরাহীম (আঃ)-কে ইহুদী অথবা খ্রিস্টান হিসেবে দাবী করছ, তার কোনটিই সঠিক নয়। কেননা তোমাদের অনুসরণীয় কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জীল নাযিল হওয়ার বহু পূর্বেই ইবরাহীম (আঃ) এর আগমন ঘটেছিল। তোমাদের নবী ও রাসূলগণ ছিলেন তারই বংশধর। সুতরাং তিনি কীভাবে তার মৃত্যুর পর তারই বংশ হতে আগত কোন নবী অথবা রাসূলের অনুসরণ করেন অথবা তাদের কিতাবের অনুসরণ করে তাদের মতাদর্শের অনুসারী তথা ইহুদী অথবা খ্রিস্টান হতে পারেন?]
৬৬. হ্যাঁ- তোমরা তো তারাই, যারা (ইতিপূর্বে) সে বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতে, যে বিষয়ে তোমাদের কিছু জ্ঞান আছে। তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে তোমরা বিতর্ক করছ কেন? আল্লাহ জানেন, কিন্তু তোমরা জান না। [এখানে জ্ঞান বলতে দলীলের কথা বুঝানো হয়েছে। ইহুদী ও খ্রিস্টানদের একটি চরিত্র এই ছিল যে, তারা আল্লাহ, ফেরেশতা, রাসূলগণ, কিতাবসমূহসহ ঈমানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন বিভ্রান্তিকর দাবী করত যে, এর স্বপক্ষে তারা কোন গ্রহণযোগ্য দলীল অথবা যুক্তি উপস্থাপন করতে পারত না। কিন্তু এরপরও তারা নিজেদের মতাদর্শ টিকিয়ে রাখার জন্য নানা ধরনের অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত হত এবং বিভ্রান্তি থেকে আরো বিভ্রান্তিতে পতিত হত। অত্র আয়াতে তাদের এই চরিত্রটিকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবং আল্লাহর পথের দাঈদেরকে বুঝানো হয়েছে যে, যখন তোমরা কোন অমুসলিমকে দাওয়াত দিবে, তখন তারা এ দাওয়াতের বিরুদ্ধে অসংখ্য অহেতুক যুক্তি উপস্থাপনের দ্বারা তোমার সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। সুতরাং তোমাকে তাদের ঐসব দাবীর প্রত্যুত্তর অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও ধৈর্য সহকারেই প্রদান করতে হবে। আর এজন্য তোমাকে অবশ্যই অধিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে।]
৬৭. (সঠিক তথ্য হচ্ছে) ইবরাহীম ইহুদি ছিল না এবং নাসারাও (খ্রিস্টানও) ছিল না, বরং সে একনিষ্ঠ মুসলিম ছিল। [এখানে ‘একনিষ্ঠ মুসলিম’ বুঝাতে حنيفا مسلما শব্দাবলি ব্যবহার করা হয়েছে। আর حنيف বলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যে সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একটি বিশেষ পথ অনুসরণ করে চলে। যেহেতু ইবরাহীম (আঃ) তৎকালীন যুগের সকল মতাদর্শ বা ধর্মকে পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র আল্লাহর পথ অনুসরণ করেছিলেন, এজন্য তাকেও ‘একনিষ্ঠ মুসলিম’ বলা হয়।] আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না। [অর্থাৎ তোমরা যেরূপ ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসারী দাবী করা সত্ত্বেও নানা দিক থেকে শিরক করে বেড়াচ্ছ তথা উযাইর (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করছ, মারইয়াম (আঃ)-কে আল্লাহর স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করছ, হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করে তোমাদের আলেমদেরকে বিধানদাতার আসনে বসিয়ে দিয়েছ এবং এ ধরনের আরো অনেক শিরকী কর্মকান্ড করে মুশরিকে পরিণত হয়েছ, ইবরাহীম (আঃ) মোটেও সেরূপ ছিলেন না। বরং তৎকালীন যুগের সকল মানুষ শিরকে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি একাই ছিলেন শিরক থেকে মুক্ত এবং একনিষ্ঠ মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তোমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসারী হয়ে থাক, তাহলে প্রথমে নিজেদেরকে সকল প্রকার শিরক থেকে মুক্ত করো এবং একনিষ্ঠ মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত হও। তাহলে তোমাদের দাবীর যথার্থ প্রমাণিত হবে।]
৬৮. নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ইবরাহীমের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তারাই, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী ও ঈমানদারগণ। আর আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু। [এখানে মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার অনুসারীদেরকে ইবরাহীম (আঃ) এর অধিক ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য একটি মূলনীতি প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো, কারো প্রকৃত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি, যারা যথাযথভাবে তার অনুসরণ করে চলে, তার মতাদর্শকে মেনে চলে এবং তাকে সম্মান প্রদান করে। আর এই হিসেবে বর্তমান যুগের ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসারী হিসেবে দাবীকারী ইহুদী ও খ্রিস্টানরা প্রকৃতপক্ষে তার অনুসারী নয়। কেননা মৌখিকভাবে তারা ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসারী হিসেবে দাবী করলেও কার্যত এর বিপরীত করে থাকে। সুতরাং মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার অনুসারীরাই হচ্ছে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। কেননা ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দ্বীন একই। ইবরাহীম (আঃ) সারা জীবন মানুষকে যে আল্লাহর প্রতি আহবান করে গেছেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার অনুসারীরাও মানুষকে সেই পথের দিকে দাওয়াত প্রদান করে থাকে।অত্র আয়াতে রূপকভাবে মুমিনদেরকে আরো একটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে যে, তোমরা যারা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুসারী ও তাকে ভালোবাসো বলে দাবী করছ, তোমাদের এই দাবী প্রমাণের জন্য ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মতো তোমাদেরকেও কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে- অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তোমাদেরকে জীবনবিধান হিসেবে যা কিছু নির্দেশনা প্রদান করেন, তা নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হবে। তিনি যা কিছু করেছেন সেগুলো সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর তার ভালোবাসা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বিন্দু পরিমাণ সীমালঙ্ঘন তথা কোন প্রকার শিরক ও বিদআতের আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না- যেমনিভাবে ইবরাহীম (আঃ) এর প্রতি অধিক ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে ইহুদী ও খ্রিস্টানরা করেছিল।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ইবরাহীম (আঃ) এর আগমনের অনেক পরে তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল।
২. আহলে কিতাবের লোকজন ইবরাহীম (আঃ)-কে নিজে নানা ধরনের অযৌক্তিক মতভেদে লিপ্ত হত।
৩. কোন বিষয়ে অল্প জ্ঞান নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
৪. ইবরাহীম (আঃ) কে ইহুদি অথবা খ্রিস্টান দাবী করাটা একেবারেই অযৌক্তিক।
৫. শুধুমাত্র মুমিনরাই ইবরাহীম (আঃ) এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ।
وَدَّتْ طَّائِفَةٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يُضِلُّوْنَكُمْؕ وَمَا يُضِلُّوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ (৬৯) يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَاَنْتُمْ تَشْهَدُوْنَ (৭০) يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُوْنَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ (৭১)
শাব্দিক অনুবাদ
৬৯. وَدَّتْ কামনা করে طَائِفَةٌ একদল مِنْ থেকে اَهْلِ الْكِتَابِ আহলে কিতাব لَوْ যদি يُضِلُّوْنَكُمْ তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারত! وَمَا يُضِلُّوْنَ কিন্তু তারা পথভ্রষ্ট করতে পারে না اِلَّا اَنْفُسَهُمْ নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেই। وَمَا يَشْعُرُوْنَ অথচ তারা তা অনুভব করে না।
৭০. يَا হে اَهْلَ الْكِتَابِ আহলে কিতাব! لِمَ কেন تَكْفُرُوْنَ তোমরা অস্বীকার করছ بِاٰيَاتِ নিদর্শনসমূহকে اَللهِ আল্লাহর, وَاَنْتُمْ অথচ তোমরাই تَشْهَدُوْنَ তার সাক্ষ্য বহন করছ?
৭১. يَا হে اَهْلَ الْكِتَابِ আহলে কিতাব! لِمَ কেন تَلْبِسُوْنَ তোমরা মিশ্রিত কর اَلْحَقَّ সত্যকে بِالْبَاطِلِ মিথ্যার সাথে وَتَكْتُمُوْنَ এবং গোপন কর اَلْحَقَّ সত্য وَاَنْتُمْ অথচ তোমরা تَعْلَمُوْنَ জান?
সরল অনুবাদ
৬৯. আহলে কিতাবের একদল কামনা করে যে, যদি তারা (বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে) তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারত! কিন্তু তারা (এসব কর্মপন্থার মাধ্যমে) নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেই পথভ্রষ্ট করতে পারে না। [অর্থাৎ ইহুদী-খ্রিস্টানসহ ইসলামের যত ধরনের শত্রু রয়েছে, তারা সকলে মিলে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুধিতায় যা কিছুই করুক না কেন, তাদের কোন কর্মই প্রকৃত মুমিনদের কোন ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। বরং এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে এবং প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এভাবে যে, দুনিয়াতে ইসলামের বিরুধিতা করতে গিয়ে তারা যে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং এর মাধ্যমে নিজেদের পাপের পরিমাণ বৃদ্ধি করে নেবে। অতঃপর পরকালে এসব অপরাধের কারণে তারা চিরদিনের জন্য জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কী হতে পারে?] অথচ তারা তা অনুভব করে না। [অর্থাৎ যেহেতু তারা আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, কিয়ামত দিবসের প্রতি, জান্নাত-জাহান্নামের প্রতি বিশ্বাসী নয়, সে কারণে তারা নিজেদের এসব ক্ষতির বিষয়গুলো দুনিয়াতে জীবিত থাকাবস্থায় অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না। এসব বিষয় তারা তখনই অনুধাবন করতে পারবে, যখন তাদের মৃত্যু ঘটবে এবং মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাসমূহ তাদের সাথে ঘটতে শুরু করবে।]
৭০. হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করছ, অথচ তোমরাই তার সাক্ষ্য বহন করছ? [এখানে আল্লাহর নিদর্শন বলতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়াত এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছু নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোকে বুঝানো হয়েছে। আর আহলে কিতাবকে উক্ত বিষয়সমূহের উপর সাক্ষী বলা হয়েছে এজন্যই যে, তাদের নিকট যেসব আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিল তথা তাওরাত ও ইঞ্জীল-এ এসব বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। সেখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আগমন ও তাঁর বিভিন্ন আলামত সহকারে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।]
৭১. হে আহলে কিতাব! [এখানে আহলে কিতাব বলতে কাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, সে ব্যাপারে মুফাস্সিরগণ মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, এখানে আহলে কিতাব বলতে আমভাবে সকল ইহুদী ও খ্রিস্টানকে বুঝানো হয়েছে। আবার কারো কারো মতে, এখানে আহলে কিতাব বলতে কেবল মদীনায় বসবাসরত ইহুদীদেরকে বুঝানো হয়েছে।] তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত কর এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন কর? [এখানে ইহুদীদের চক্রান্ত বিষয়ক দুটি কর্মকান্ডের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। তা হলো- (১) সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করণ, যাতে করে মানুষের কাছে সত্য ও মিথ্যা পরিষ্কার না হয়। (২) সত্যকে গোপন করা। অর্থাৎ তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আগমন সম্পর্কে যেসব আলামত লিপিবদ্ধ রয়েছে, তা মানুষের কাছ থেকে গোপন করা। যাতে করে মানুষ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকে এবং ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে সন্দেহে পতিত হয়। অত্র আয়াতে উপরোক্ত কর্মকান্ড সম্পর্কে সতর্ককরণ পূর্বক উম্মতে মুহাম্মাদীকেও সর্তক করা হয়েছে। যাতে করে তারা শরীয়তের কোন বিধি-বিধান গোপন না করে অথবা অস্বীকার না করে বসে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আহলে কিতাবের লোকজন মুসলিমদের থেকে কেবল ভ্রষ্টতাই কামনা করে থাকে।
২. অন্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করলে তাতে শেষপর্যন্ত নিজেকেই পতিত হতে হয়।
৩. অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য কারো বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা বৈধ নয়।
৪. সত্যকে মিথ্যার সাথে অথবা মিথ্যাকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করা যাবে না।
৫. জেনে-শুনে কোন সত্য গোপন করা যাবে না।
শাব্দিক অনুবাদ
৬৯. وَدَّتْ কামনা করে طَائِفَةٌ একদল مِنْ থেকে اَهْلِ الْكِتَابِ আহলে কিতাব لَوْ যদি يُضِلُّوْنَكُمْ তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারত! وَمَا يُضِلُّوْنَ কিন্তু তারা পথভ্রষ্ট করতে পারে না اِلَّا اَنْفُسَهُمْ নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেই। وَمَا يَشْعُرُوْنَ অথচ তারা তা অনুভব করে না।
৭০. يَا হে اَهْلَ الْكِتَابِ আহলে কিতাব! لِمَ কেন تَكْفُرُوْنَ তোমরা অস্বীকার করছ بِاٰيَاتِ নিদর্শনসমূহকে اَللهِ আল্লাহর, وَاَنْتُمْ অথচ তোমরাই تَشْهَدُوْنَ তার সাক্ষ্য বহন করছ?
৭১. يَا হে اَهْلَ الْكِتَابِ আহলে কিতাব! لِمَ কেন تَلْبِسُوْنَ তোমরা মিশ্রিত কর اَلْحَقَّ সত্যকে بِالْبَاطِلِ মিথ্যার সাথে وَتَكْتُمُوْنَ এবং গোপন কর اَلْحَقَّ সত্য وَاَنْتُمْ অথচ তোমরা تَعْلَمُوْنَ জান?
সরল অনুবাদ
৬৯. আহলে কিতাবের একদল কামনা করে যে, যদি তারা (বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে) তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারত! কিন্তু তারা (এসব কর্মপন্থার মাধ্যমে) নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেই পথভ্রষ্ট করতে পারে না। [অর্থাৎ ইহুদী-খ্রিস্টানসহ ইসলামের যত ধরনের শত্রু রয়েছে, তারা সকলে মিলে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুধিতায় যা কিছুই করুক না কেন, তাদের কোন কর্মই প্রকৃত মুমিনদের কোন ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। বরং এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে এবং প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এভাবে যে, দুনিয়াতে ইসলামের বিরুধিতা করতে গিয়ে তারা যে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং এর মাধ্যমে নিজেদের পাপের পরিমাণ বৃদ্ধি করে নেবে। অতঃপর পরকালে এসব অপরাধের কারণে তারা চিরদিনের জন্য জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কী হতে পারে?] অথচ তারা তা অনুভব করে না। [অর্থাৎ যেহেতু তারা আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, কিয়ামত দিবসের প্রতি, জান্নাত-জাহান্নামের প্রতি বিশ্বাসী নয়, সে কারণে তারা নিজেদের এসব ক্ষতির বিষয়গুলো দুনিয়াতে জীবিত থাকাবস্থায় অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না। এসব বিষয় তারা তখনই অনুধাবন করতে পারবে, যখন তাদের মৃত্যু ঘটবে এবং মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাসমূহ তাদের সাথে ঘটতে শুরু করবে।]
৭০. হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করছ, অথচ তোমরাই তার সাক্ষ্য বহন করছ? [এখানে আল্লাহর নিদর্শন বলতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়াত এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছু নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোকে বুঝানো হয়েছে। আর আহলে কিতাবকে উক্ত বিষয়সমূহের উপর সাক্ষী বলা হয়েছে এজন্যই যে, তাদের নিকট যেসব আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিল তথা তাওরাত ও ইঞ্জীল-এ এসব বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। সেখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আগমন ও তাঁর বিভিন্ন আলামত সহকারে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।]
৭১. হে আহলে কিতাব! [এখানে আহলে কিতাব বলতে কাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, সে ব্যাপারে মুফাস্সিরগণ মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, এখানে আহলে কিতাব বলতে আমভাবে সকল ইহুদী ও খ্রিস্টানকে বুঝানো হয়েছে। আবার কারো কারো মতে, এখানে আহলে কিতাব বলতে কেবল মদীনায় বসবাসরত ইহুদীদেরকে বুঝানো হয়েছে।] তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত কর এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন কর? [এখানে ইহুদীদের চক্রান্ত বিষয়ক দুটি কর্মকান্ডের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। তা হলো- (১) সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করণ, যাতে করে মানুষের কাছে সত্য ও মিথ্যা পরিষ্কার না হয়। (২) সত্যকে গোপন করা। অর্থাৎ তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আগমন সম্পর্কে যেসব আলামত লিপিবদ্ধ রয়েছে, তা মানুষের কাছ থেকে গোপন করা। যাতে করে মানুষ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকে এবং ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে সন্দেহে পতিত হয়। অত্র আয়াতে উপরোক্ত কর্মকান্ড সম্পর্কে সতর্ককরণ পূর্বক উম্মতে মুহাম্মাদীকেও সর্তক করা হয়েছে। যাতে করে তারা শরীয়তের কোন বিধি-বিধান গোপন না করে অথবা অস্বীকার না করে বসে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আহলে কিতাবের লোকজন মুসলিমদের থেকে কেবল ভ্রষ্টতাই কামনা করে থাকে।
২. অন্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করলে তাতে শেষপর্যন্ত নিজেকেই পতিত হতে হয়।
৩. অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য কারো বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা বৈধ নয়।
৪. সত্যকে মিথ্যার সাথে অথবা মিথ্যাকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করা যাবে না।
৫. জেনে-শুনে কোন সত্য গোপন করা যাবে না।
وَقَالَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اٰمِنُوْا بِالَّذِيْۤ اُنْزِلَ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوْاۤ اٰخِرَه لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ (৭২) وَلَا تُؤْمِنُوْاۤ اِلَّا لِمَنْ تَبِعَ دِيْنَكُمْ قُلْ اِنَّ الْهُدٰى هُدَى اللهِ اَنْ يُّؤْتٰۤى اَحَدٌ مِّثْلَ مَاۤ اُوْتِيْتُمْ اَوْ يُحَآجُّوْكُمْ عِنْدَ رَبِّكُمْؕ قُلْ اِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللهِۚ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ (৭৩)
শাব্দিক অনুবাদ
৭২. وَقَالَتْ আর বলল طَآئِفَةٌ একদল مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ আহলে কিতাবের, اٰمِنُوْا তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো بِالَّذِيْۤ ঐ বিষয়ের উপর যা اُنْزِلَ অবতীর্ণ হয়েছে عَلَى الَّذِيْنَ তাদের উপর যারা اٰمَنُوْا বিশ্বাস করেছে وَجْهَ একটি ভাগে اَلنَّهَارِ দিনের وَاكْفُرُوْا এবং তোমরা অস্বীকার করো اٰخِرَه তার অপর ভাগে। لَعَلَّهُمْ হয়তোবা তারা يَرْجِعُوْنَ ফিরে আসবে।
৭৩. وَلَا تُؤْمِنُوْا আর তোমরা বিশ্বাস করো না اِلَّا তবে لِمَنْ যে ব্যক্তি تَبِعَ অনুসরণ করে دِيْنَكُمْ তোমাদের মতাদর্শের। قُلْ (হে নবী!) বলো, اِنَّ নিশ্চয় اَلْهُدٰى প্রকৃত হেদায়াত হল هُدَى اللهِ আল্লাহর হেদায়াত। اَنْ يُّؤْتٰۤى যে দেয়া হবে اَحَدٌ কাউকে مِثْلَ অনুরূপ مَاۤ اُوْتِيْتُمْ তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে اَوْ অথবা يُحَآجُّوْكُمْ তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করবে عِنْدَ সামনে رَبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের? قُلْ (হে নবী!) বলো, اِنَّ নিশ্চয় اَلْفَضْلَ মর্যাদা بِيَدِ হাতে اَللهِ আল্লাহরই; يُؤْتِيْهِ তিনি তা প্রদান করেন مَنْ يَّشَآءُ যাকে ইচ্ছা তাকে। وَاللهُ আর আল্লাহ وَاسِعٌ সর্বব্যাপী عَلِيْمٌ সর্বজ্ঞানী।
৭৪. يَخْتَصُّ তিনি মনোনীত করেন بِرَحْمَتِه নিজ অনুগ্রহের জন্য مَنْ يَّشَآءُ যাকে ইচ্ছা করেন; وَاللهُ আর আল্লাহ ذُو الْفَضْلِ অনুগ্রহশীল اَلْعَظِيْمِ মহা।
সরল অনুবাদ
৭২. আহলে কিতাবের একদল (অপর দলকে) বলল, যারা বিশ্বাস করেছে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা দিনের প্রথম ভাগে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করো এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার করো। (এর ফলে) হয়তোবা তারা (ইসলাম থেকে) ফিরে আসবে। [এখানে ইসলাম বিদ্বেষীদের আরো একটি ভয়ংকর চক্রান্তের কথা ফাঁস করে দেয়া হয়েছে। আর তা হলো- যখন ইহুয়াদিরা দেখতে পেল যে, কোনক্রমেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কার্যক্রম থামানো যাচ্ছে না এবং তাঁর বিরুদ্ধে তাদের সকল পদক্ষেপই ব্যর্থ হচ্ছে, তখন তারা ফন্দি আঁটল যে, তারা কিছু লোককে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য মুসলিমদের কাছে পাঠাবে, তারপর কিছু দিন পর মুরতাদ হয়ে যাবে। তারপর তারা এর কারণ হিসেবে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে দোষ-ত্রুটির কথা বর্ণনা করে বেড়াবে। যাতে করে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয় এবং মুসলিমদের ঐক্য ভেঙ্গে যায়। সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য খুবই জরুরি।]
৭৩. (তারা আরো বলল) আর যে ব্যক্তি তোমাদের মতাদর্শের অনুসরণ করে তাকে ছাড়া তোমরা (অন্য কাউকে) বিশ্বাস করো না। (হে নবী!) বলো, আল্লাহর হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত। (ষড়যন্ত্র করছ কি এজন্য যে) তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা (অন্য) কাউকেও (কেন) দেয়া হবে [পৃথিবীতে যত নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছিল, তার অধিকাংশই ছিল বনী ইসরাঈলের বংশধর। এতে বনী ইসরাঈলের লোকেরা খুবই গর্ববোধ করত। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছিল যে, তারা ধারণা করে নিয়েছিল যে, নবী-রাসূল কেবল তাদের বংশ থেকেই আগমন করবে; অন্য কোন বংশ বা গোত্র থেকে নয়। আর এ কারণেই তারা যখন শেষ নবী আগমনের সমস্ত আলামত পর্যবেক্ষণ করল এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে পূর্বঘোষিত সেই নবী হিসেবে স্পষ্টভাবে চিনতে পারল, তখন তারা কেবল এই বাহানা ধরে তাঁকে অস্বীকার করে বসল এবং এ সম্পর্কিত তাদের কিতাবে বর্ণিত সমস্ত প্রমাণ গোপন করতে শুরু করল। কারণ তিনি ইসমাঈল (আঃ) এর বংশে জন্মেছিলেন।] অথবা তারা তোমাদের প্রতিপালকের সামনে তোমাদের সাথে বিতর্ক করবে? (হে নবী!) বলো, নিশ্চয় অনুগ্রহ আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে তা প্রদান করেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী ও সর্বজ্ঞানী।
৭৪. তিনি নিজ অনুগ্রহের জন্য (কিতাব অবতীর্ণ করে মর্যাদা দেয়ার জন্য) যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনীত করেন; আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈমান আনার পর পুনরায় কুফরী করা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ।
২. ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে কোন মানুষের অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না।
৩. আহলে কিতাবের লোকজন কখনো মুসলিমদেরকে বিশ^স্ত মনে করা না।
৪. আল্লাহর হেদায়াতই প্রকৃত হেদয়াত; সুতরাং সর্বদা এর অনুসরণ করা আবশ্যক।
৫. মর্যাদা আল্লাহর পক্ষ হতেই এসে থাকে; সুতরাং এটি অর্জন করার জন্য কোন প্রকার অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা যাবে না।
শাব্দিক অনুবাদ
৭২. وَقَالَتْ আর বলল طَآئِفَةٌ একদল مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ আহলে কিতাবের, اٰمِنُوْا তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো بِالَّذِيْۤ ঐ বিষয়ের উপর যা اُنْزِلَ অবতীর্ণ হয়েছে عَلَى الَّذِيْنَ তাদের উপর যারা اٰمَنُوْا বিশ্বাস করেছে وَجْهَ একটি ভাগে اَلنَّهَارِ দিনের وَاكْفُرُوْا এবং তোমরা অস্বীকার করো اٰخِرَه তার অপর ভাগে। لَعَلَّهُمْ হয়তোবা তারা يَرْجِعُوْنَ ফিরে আসবে।
৭৩. وَلَا تُؤْمِنُوْا আর তোমরা বিশ্বাস করো না اِلَّا তবে لِمَنْ যে ব্যক্তি تَبِعَ অনুসরণ করে دِيْنَكُمْ তোমাদের মতাদর্শের। قُلْ (হে নবী!) বলো, اِنَّ নিশ্চয় اَلْهُدٰى প্রকৃত হেদায়াত হল هُدَى اللهِ আল্লাহর হেদায়াত। اَنْ يُّؤْتٰۤى যে দেয়া হবে اَحَدٌ কাউকে مِثْلَ অনুরূপ مَاۤ اُوْتِيْتُمْ তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে اَوْ অথবা يُحَآجُّوْكُمْ তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করবে عِنْدَ সামনে رَبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের? قُلْ (হে নবী!) বলো, اِنَّ নিশ্চয় اَلْفَضْلَ মর্যাদা بِيَدِ হাতে اَللهِ আল্লাহরই; يُؤْتِيْهِ তিনি তা প্রদান করেন مَنْ يَّشَآءُ যাকে ইচ্ছা তাকে। وَاللهُ আর আল্লাহ وَاسِعٌ সর্বব্যাপী عَلِيْمٌ সর্বজ্ঞানী।
৭৪. يَخْتَصُّ তিনি মনোনীত করেন بِرَحْمَتِه নিজ অনুগ্রহের জন্য مَنْ يَّشَآءُ যাকে ইচ্ছা করেন; وَاللهُ আর আল্লাহ ذُو الْفَضْلِ অনুগ্রহশীল اَلْعَظِيْمِ মহা।
সরল অনুবাদ
৭২. আহলে কিতাবের একদল (অপর দলকে) বলল, যারা বিশ্বাস করেছে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা দিনের প্রথম ভাগে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করো এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার করো। (এর ফলে) হয়তোবা তারা (ইসলাম থেকে) ফিরে আসবে। [এখানে ইসলাম বিদ্বেষীদের আরো একটি ভয়ংকর চক্রান্তের কথা ফাঁস করে দেয়া হয়েছে। আর তা হলো- যখন ইহুয়াদিরা দেখতে পেল যে, কোনক্রমেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কার্যক্রম থামানো যাচ্ছে না এবং তাঁর বিরুদ্ধে তাদের সকল পদক্ষেপই ব্যর্থ হচ্ছে, তখন তারা ফন্দি আঁটল যে, তারা কিছু লোককে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য মুসলিমদের কাছে পাঠাবে, তারপর কিছু দিন পর মুরতাদ হয়ে যাবে। তারপর তারা এর কারণ হিসেবে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে দোষ-ত্রুটির কথা বর্ণনা করে বেড়াবে। যাতে করে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয় এবং মুসলিমদের ঐক্য ভেঙ্গে যায়। সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য খুবই জরুরি।]
৭৩. (তারা আরো বলল) আর যে ব্যক্তি তোমাদের মতাদর্শের অনুসরণ করে তাকে ছাড়া তোমরা (অন্য কাউকে) বিশ্বাস করো না। (হে নবী!) বলো, আল্লাহর হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত। (ষড়যন্ত্র করছ কি এজন্য যে) তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা (অন্য) কাউকেও (কেন) দেয়া হবে [পৃথিবীতে যত নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছিল, তার অধিকাংশই ছিল বনী ইসরাঈলের বংশধর। এতে বনী ইসরাঈলের লোকেরা খুবই গর্ববোধ করত। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছিল যে, তারা ধারণা করে নিয়েছিল যে, নবী-রাসূল কেবল তাদের বংশ থেকেই আগমন করবে; অন্য কোন বংশ বা গোত্র থেকে নয়। আর এ কারণেই তারা যখন শেষ নবী আগমনের সমস্ত আলামত পর্যবেক্ষণ করল এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে পূর্বঘোষিত সেই নবী হিসেবে স্পষ্টভাবে চিনতে পারল, তখন তারা কেবল এই বাহানা ধরে তাঁকে অস্বীকার করে বসল এবং এ সম্পর্কিত তাদের কিতাবে বর্ণিত সমস্ত প্রমাণ গোপন করতে শুরু করল। কারণ তিনি ইসমাঈল (আঃ) এর বংশে জন্মেছিলেন।] অথবা তারা তোমাদের প্রতিপালকের সামনে তোমাদের সাথে বিতর্ক করবে? (হে নবী!) বলো, নিশ্চয় অনুগ্রহ আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে তা প্রদান করেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী ও সর্বজ্ঞানী।
৭৪. তিনি নিজ অনুগ্রহের জন্য (কিতাব অবতীর্ণ করে মর্যাদা দেয়ার জন্য) যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনীত করেন; আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈমান আনার পর পুনরায় কুফরী করা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ।
২. ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে কোন মানুষের অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না।
৩. আহলে কিতাবের লোকজন কখনো মুসলিমদেরকে বিশ^স্ত মনে করা না।
৪. আল্লাহর হেদায়াতই প্রকৃত হেদয়াত; সুতরাং সর্বদা এর অনুসরণ করা আবশ্যক।
৫. মর্যাদা আল্লাহর পক্ষ হতেই এসে থাকে; সুতরাং এটি অর্জন করার জন্য কোন প্রকার অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা যাবে না।
وَمِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ اِنْ تَأْمَنْهُ بِقِنْطَارٍ يُّؤَدِّه ۤ اِلَيْكَۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اِنْ تَأْمَنْهُ بِدِيْنَارٍ لَّا يُؤَدِّه ۤ اِلَيْكَ اِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَآئِمًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْاُمِّيِّيْنَ سَبِيْلٌۚ وَّيَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ (৭৫) بَلٰى مَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِه وَاتَّقٰى فَاِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ (৭৬)
শাব্দিক অনুবাদ
৭৫. وَمِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ আর আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে مَنْ যে اِنْ যদি تَأْمَنْهُ তুমি তার কাছে আমানত রাখ بِقِنْطَارٍ বিপুল পরিমাণ (ধন-সম্পদ), يُؤَدِّه তবে সে তা ফিরিয়ে দেবে اِلَيْكَ তোমার নিকট। وَمِنْهُمْ আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে مَنْ যে اِنْ যদি تَأْمَنْهُ তুমি তার কাছে আমানত রাখ بِدِيْنَارٍ একটি দিনারও, لَا يُؤَدِّه তবে সে তা ফিরিয়ে দেবে না اِلَيْكَ তোমরা নিকট - اِلَّا مَا دُمْتَ যতক্ষণ না তুমি عَلَيْهِ তার উপর قَآئِمًا দাঁড়িয়ে থাক। ذٰلِكَ এটা এজন্য যে, بِاَنَّهُمْ কেননা তারা قَالُوْا বলে لَيْسَ নেই عَلَيْنَا আমাদের উপর فِي الْاُمِّيِّيْنَ মূর্খদের ব্যাপারে سَبِيْلٌ কোন দায়িত্ব। وَيَقُوْلُوْنَ আর তারা বলে عَلَى اللهِ আল্লাহ সম্পর্কে اَلْكَذِبَ মিথ্যা কথা وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ অথচ তারা জানে ।
৭৬. بَلٰى তবে হ্যাঁ - مَنْ যে ব্যক্তি اَوْفٰى পূর্ণ করল بِعَهْدِه তার অঙ্গীকার وَاتَّقٰى এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করল, فَاِنَّ তবে নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদেরকে।
সরল অনুবাদ
৭৫. আর আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যদি তুমি তার কাছে বিপুল পরিমাণ (ধন-সম্পদও) আমানত রাখ, তবে সে তা তোমার নিকট ফিরিয়ে দেবে। আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যদি তুমি তার কাছে একটি দিনারও আমানত রাখ, তবে সে তা ফিরিয়ে দেবে না- যতক্ষণ না তুমি তার (মাথার) উপর দাঁড়িয়ে থাক (অর্থাৎ পেছনে লেগে থাক)। এটা এজন্য যে, তারা বলে- মূর্খদের (সম্পদ ফেরত দেয়ার) ব্যাপারে আমাদের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। [এখানে ইহুদীদের একটি মূর্খতাপ্রসূত ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা তারা তাদের ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত করে ধর্মীয় শিক্ষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। যেমন- তালমুদে বলা হয়েছে, যদি কোন ইসরাঈলির বলদ কোন অ-ইসরাঈলির বলদকে আহত করে, তাহলে এজন্য কোন জরিমানা দিতে হবে না। কোন ব্যক্তি যদি কোন জিনিস কুড়িয়ে পায়, তাহলে তাকে চারপাশের জনবসতির দিকে নজর দিতে হবে। চারপাশে যদি ইসরাঈলীদের বসতি থাকে, তাহলে তাকে জিনিসটির ঘোষণা দিতে হবে। আর যদি অ-ইসরাঈলীদের বসতি থাকে, তাহলে বিনা ঘোষণায় সে জিনিসটি নিয়ে নিতে পারবে। ইসমাঈল বলেন, যদি ইসরাঈলী ও অ-ইসরাঈলীর মামলা বিচারপতি আদালতে আসে, তাহলে বিচারপতি ধর্মীয় আইনের আওতায় নিজের ভাইকে জয়ী করতে পারলে তাই করবেন এবং বললেন, এটা আমাদের আইন। আর অ-ইসরাঈলীদের আইনের আওতায় জয়ী করতে পারলে তাই করবেন এবং বলবেন, এটা তোমাদের আইন। যদি দুটো আইনের কোনোটার সাহায্যেই ইসরাঈলীকে জয়ী করানো সম্ভব না হয়, তাহলে যে কোন বাহানাবাজী ও কৌশল অবলম্বন করে ইসরাঈলীকে জয়ী করতে হবে। (TALMUDIC MISCELLANY PAUL ISAAC HERSHON, London 1880, page-37, 220, 221)] আর তারা আল্লাহ সম্পর্কে জেনে-বুঝে মিথ্যা কথা বলে।
৭৬. তবে হ্যাঁ- যে ব্যক্তি তার অঙ্গীকার পূর্ণ করল এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করল, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আমানতের জিনিস ফেরত দেয়া আবশ্যক।
২. আমানতের খিয়ানত করা মারাত্মক অপরাধ।
৩. সর্বযুগে সকল জনপদে আমানতের খিয়ানতকারী কিছু লোক বিদ্যমান থাকে; আবার কিছু লোক সর্বদা সৎপন্থা অবলম্বন করে থাকে।
৪. নিজেদের ইচ্ছামতো আইন বানিয়ে নেয়া বৈধ নয়।
৫. আল্লাহর ব্যাপারে জেনে-শুনে মিথ্যারোপ করা মহাপাপ।
৬. অঙ্গীকার পূর্ণ করা এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করা মুত্তাকীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
শাব্দিক অনুবাদ
৭৫. وَمِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ আর আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে مَنْ যে اِنْ যদি تَأْمَنْهُ তুমি তার কাছে আমানত রাখ بِقِنْطَارٍ বিপুল পরিমাণ (ধন-সম্পদ), يُؤَدِّه তবে সে তা ফিরিয়ে দেবে اِلَيْكَ তোমার নিকট। وَمِنْهُمْ আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে مَنْ যে اِنْ যদি تَأْمَنْهُ তুমি তার কাছে আমানত রাখ بِدِيْنَارٍ একটি দিনারও, لَا يُؤَدِّه তবে সে তা ফিরিয়ে দেবে না اِلَيْكَ তোমরা নিকট - اِلَّا مَا دُمْتَ যতক্ষণ না তুমি عَلَيْهِ তার উপর قَآئِمًا দাঁড়িয়ে থাক। ذٰلِكَ এটা এজন্য যে, بِاَنَّهُمْ কেননা তারা قَالُوْا বলে لَيْسَ নেই عَلَيْنَا আমাদের উপর فِي الْاُمِّيِّيْنَ মূর্খদের ব্যাপারে سَبِيْلٌ কোন দায়িত্ব। وَيَقُوْلُوْنَ আর তারা বলে عَلَى اللهِ আল্লাহ সম্পর্কে اَلْكَذِبَ মিথ্যা কথা وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ অথচ তারা জানে ।
৭৬. بَلٰى তবে হ্যাঁ - مَنْ যে ব্যক্তি اَوْفٰى পূর্ণ করল بِعَهْدِه তার অঙ্গীকার وَاتَّقٰى এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করল, فَاِنَّ তবে নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদেরকে।
সরল অনুবাদ
৭৫. আর আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যদি তুমি তার কাছে বিপুল পরিমাণ (ধন-সম্পদও) আমানত রাখ, তবে সে তা তোমার নিকট ফিরিয়ে দেবে। আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যদি তুমি তার কাছে একটি দিনারও আমানত রাখ, তবে সে তা ফিরিয়ে দেবে না- যতক্ষণ না তুমি তার (মাথার) উপর দাঁড়িয়ে থাক (অর্থাৎ পেছনে লেগে থাক)। এটা এজন্য যে, তারা বলে- মূর্খদের (সম্পদ ফেরত দেয়ার) ব্যাপারে আমাদের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। [এখানে ইহুদীদের একটি মূর্খতাপ্রসূত ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা তারা তাদের ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত করে ধর্মীয় শিক্ষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। যেমন- তালমুদে বলা হয়েছে, যদি কোন ইসরাঈলির বলদ কোন অ-ইসরাঈলির বলদকে আহত করে, তাহলে এজন্য কোন জরিমানা দিতে হবে না। কোন ব্যক্তি যদি কোন জিনিস কুড়িয়ে পায়, তাহলে তাকে চারপাশের জনবসতির দিকে নজর দিতে হবে। চারপাশে যদি ইসরাঈলীদের বসতি থাকে, তাহলে তাকে জিনিসটির ঘোষণা দিতে হবে। আর যদি অ-ইসরাঈলীদের বসতি থাকে, তাহলে বিনা ঘোষণায় সে জিনিসটি নিয়ে নিতে পারবে। ইসমাঈল বলেন, যদি ইসরাঈলী ও অ-ইসরাঈলীর মামলা বিচারপতি আদালতে আসে, তাহলে বিচারপতি ধর্মীয় আইনের আওতায় নিজের ভাইকে জয়ী করতে পারলে তাই করবেন এবং বললেন, এটা আমাদের আইন। আর অ-ইসরাঈলীদের আইনের আওতায় জয়ী করতে পারলে তাই করবেন এবং বলবেন, এটা তোমাদের আইন। যদি দুটো আইনের কোনোটার সাহায্যেই ইসরাঈলীকে জয়ী করানো সম্ভব না হয়, তাহলে যে কোন বাহানাবাজী ও কৌশল অবলম্বন করে ইসরাঈলীকে জয়ী করতে হবে। (TALMUDIC MISCELLANY PAUL ISAAC HERSHON, London 1880, page-37, 220, 221)] আর তারা আল্লাহ সম্পর্কে জেনে-বুঝে মিথ্যা কথা বলে।
৭৬. তবে হ্যাঁ- যে ব্যক্তি তার অঙ্গীকার পূর্ণ করল এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করল, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আমানতের জিনিস ফেরত দেয়া আবশ্যক।
২. আমানতের খিয়ানত করা মারাত্মক অপরাধ।
৩. সর্বযুগে সকল জনপদে আমানতের খিয়ানতকারী কিছু লোক বিদ্যমান থাকে; আবার কিছু লোক সর্বদা সৎপন্থা অবলম্বন করে থাকে।
৪. নিজেদের ইচ্ছামতো আইন বানিয়ে নেয়া বৈধ নয়।
৫. আল্লাহর ব্যাপারে জেনে-শুনে মিথ্যারোপ করা মহাপাপ।
৬. অঙ্গীকার পূর্ণ করা এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করা মুত্তাকীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
اِنَّ الَّذِيْنَ يَشْتَرُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَاَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْاٰخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ وَلَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ (৭৭)
শাব্দিক অনুবাদ
৭৭. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা يَشْتَرُوْنَ বিনিময় করে بِعَهْدِ اللهِ আল্লাহর (সাথে কৃত) অঙ্গীকার وَاَيْمَانِهِمْ এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে ثَمَنًا মূল্য قَلِيْلًا সামান্য, اُولٰٓئِكَ ঐসব লোক لَا خَلَاقَ কোন অংশ নেই لَهُمْ তাদের জন্য فِي الْاٰخِرَةِ আখিরাতে। وَلَا يُكَلِّمُهُمُ তাদের সাথে কথা বলবেন না اَللهُ আল্লাহ وَلَا يَنْظُرُ এবং তাকাবেন না اِلَيْهِمْ তাদের দিকে يَوْمَ الْقِيَامَةِ কিয়ামতের দিন وَلَا يُزَكِّيْهِمْ এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। وَلَهُمْ আর তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি اَلِيْمٌ যন্ত্রণাদায়ক।
সরল অনুবাদ
৭৭. নিশ্চয় যারা আল্লাহর (সাথে কৃত) অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করে [এখানে শপথের বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণকারী বলতে ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনের ক্ষেত্রে মিথ্যা শপথ করার কথা বুঝানো হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতাকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে এরূপ নীতি অবলম্বন করে থাকে। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে যে ঠান্ডা মাথায় মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন। তারপর এর সত্যতা প্রমাণের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সেখানে আশআস ইবনু কায়স (রাঃ) প্রবেশ করলেন এবং বললেন, আবু আবদুর রহমান তোমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করেছেন? আমরা বললাম, এ রকম এ রকম বর্ণনা করেছেন। তখন তিনি বললেন, এ আয়াত তো আমাকে উপলক্ষ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। ঘটনাটি হচ্ছে, আমার চাচাতো ভাইয়ের এলাকায় আমার একটি কূপ ছিল। সুনানে তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, আমার ও এক ইহুদীর এক খন্ড শরীকানা জমি ছিল। একদা সে আমার মালিকানা অস্বীকার করে বসে। ফলে এ বিষয়টি আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হয়তো তুমি এর পক্ষে প্রমাণ উপস্থিত করবে, অন্যথায় সে শপথ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো শপথ করে বসবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ঠান্ডা মাথায় মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহই তার উপর রাগান্বিত থাকবেন । (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৪৯-৪৫৫০; তিরমিযী, হা/২৯৯৬)], আখিরাতে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করা মারাত্মক অপরাধ।
২. মিথ্যা শপথের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম।
৩. আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করা আবশ্যক।
৪. আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গকারী এবং শপথের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণকারী জন্য আখিরাতের কোন অংশ নেই।
৫. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাথে কোন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না।
শাব্দিক অনুবাদ
৭৭. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা يَشْتَرُوْنَ বিনিময় করে بِعَهْدِ اللهِ আল্লাহর (সাথে কৃত) অঙ্গীকার وَاَيْمَانِهِمْ এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে ثَمَنًا মূল্য قَلِيْلًا সামান্য, اُولٰٓئِكَ ঐসব লোক لَا خَلَاقَ কোন অংশ নেই لَهُمْ তাদের জন্য فِي الْاٰخِرَةِ আখিরাতে। وَلَا يُكَلِّمُهُمُ তাদের সাথে কথা বলবেন না اَللهُ আল্লাহ وَلَا يَنْظُرُ এবং তাকাবেন না اِلَيْهِمْ তাদের দিকে يَوْمَ الْقِيَامَةِ কিয়ামতের দিন وَلَا يُزَكِّيْهِمْ এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। وَلَهُمْ আর তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি اَلِيْمٌ যন্ত্রণাদায়ক।
সরল অনুবাদ
৭৭. নিশ্চয় যারা আল্লাহর (সাথে কৃত) অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করে [এখানে শপথের বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণকারী বলতে ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনের ক্ষেত্রে মিথ্যা শপথ করার কথা বুঝানো হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতাকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে এরূপ নীতি অবলম্বন করে থাকে। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে যে ঠান্ডা মাথায় মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন। তারপর এর সত্যতা প্রমাণের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সেখানে আশআস ইবনু কায়স (রাঃ) প্রবেশ করলেন এবং বললেন, আবু আবদুর রহমান তোমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করেছেন? আমরা বললাম, এ রকম এ রকম বর্ণনা করেছেন। তখন তিনি বললেন, এ আয়াত তো আমাকে উপলক্ষ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। ঘটনাটি হচ্ছে, আমার চাচাতো ভাইয়ের এলাকায় আমার একটি কূপ ছিল। সুনানে তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, আমার ও এক ইহুদীর এক খন্ড শরীকানা জমি ছিল। একদা সে আমার মালিকানা অস্বীকার করে বসে। ফলে এ বিষয়টি আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হয়তো তুমি এর পক্ষে প্রমাণ উপস্থিত করবে, অন্যথায় সে শপথ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো শপথ করে বসবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ঠান্ডা মাথায় মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহই তার উপর রাগান্বিত থাকবেন । (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৪৯-৪৫৫০; তিরমিযী, হা/২৯৯৬)], আখিরাতে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করা মারাত্মক অপরাধ।
২. মিথ্যা শপথের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম।
৩. আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করা আবশ্যক।
৪. আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গকারী এবং শপথের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণকারী জন্য আখিরাতের কোন অংশ নেই।
৫. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাথে কোন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না।
وَاِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيْقًا يَّلْوُوْنَ اَلْسِنَتَهُمْ بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوْهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِۚ وَيَقُوْلُوْنَ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِۚ وَيَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ (৭৮)
শাব্দিক অনুবাদ
৭৮. وَاِنَّ এবং নিশ্চয় مِنْهُمْ তাদের মধ্যে لَفَرِيْقًا এমন একদলও রয়েছে, يَلْوُوْنَ যারা বাঁকা করে اَلْسِنَتَهُمْ তাদের জিহবা بِالْكِتَابِ কিতাব পাঠ করার ক্ষেত্রে, لِتَحْسَبُوْهُ যাতে তোমরা সেটাকে মনে কর مِنَ الْكِتَابِ কিতাবের অংশ, وَمَا هُوَ অথচ তা নয় مِنَ الْكِتَابِ কিতাবের অংশ। وَيَقُوْلُوْنَ আর তারা বলে هُوَ এটা مِنْ عِنْدِ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে, وَمَا هُوَ অথচ তা নয় مِنْ عِنْدِ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে। وَيَقُوْلُوْنَ আর তারা বলে عَلَى اللهِ আল্লাহর ব্যাপারে اَلْكَذِبَ মিথ্যা কথা وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ অথচ তারা জানে।
সরল অনুবাদ
৭৮. নিশ্চয় তাদের মধ্যে এমন একদলও রয়েছে, যারা জিহবা বাঁকা করে কিতাব (তাওরাত) পাঠ করে, যাতে তোমরা তা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ তা কিতাবের অংশ নয়। আর তারা বলে- এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা জেনে-শুনে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে। [এখানে ইহুদীদের চক্রান্তসমূহের মধ্যে আরো দুটি চক্রান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (১) কুরআনের আয়াত পাঠ করার সময় কোন কোন শব্দ জিহবা বাঁকিয়ে এমনভাবে উচ্চারণ করে, যার কারণে উক্ত আয়াতের সম্পূর্ণ ভাবার্থই পাল্টে যায়। এভাবে তারা কুরআনের মধ্যে বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা করে। (২) তারা এমন কিছু কথাকে আল্লাহর কথা হিসেবে চালিয়ে দেয়, যা মূলত আল্লাহর কথা নয়; বরং সেগুলো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে। উল্লেখ্য যে, এটি ইহুদীদের আচরণ হলেও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণী- ‘‘তোমরা পূর্ববর্তীদের তরীকার অনুসরণ করবে’’- অনুযায়ী বর্তমানেও অনেক আলেমের মধ্যেও অনুপ্রবেশ করেছে। তারা স্বার্থের কারণে কুরআনের অনেক আয়াতের মূল অর্থ গ্রহণ না করে নিজেদের ইচ্ছে মতো অর্থ গ্রহণ করে থাকে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতকে বিকৃত উচ্চারণের মাধ্যমে পাঠ করা হারাম।
২. আল্লাহর কিতাবে কোন কিছু সংযোজন অথবা বিয়োজন করাও হারাম।
শাব্দিক অনুবাদ
৭৮. وَاِنَّ এবং নিশ্চয় مِنْهُمْ তাদের মধ্যে لَفَرِيْقًا এমন একদলও রয়েছে, يَلْوُوْنَ যারা বাঁকা করে اَلْسِنَتَهُمْ তাদের জিহবা بِالْكِتَابِ কিতাব পাঠ করার ক্ষেত্রে, لِتَحْسَبُوْهُ যাতে তোমরা সেটাকে মনে কর مِنَ الْكِتَابِ কিতাবের অংশ, وَمَا هُوَ অথচ তা নয় مِنَ الْكِتَابِ কিতাবের অংশ। وَيَقُوْلُوْنَ আর তারা বলে هُوَ এটা مِنْ عِنْدِ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে, وَمَا هُوَ অথচ তা নয় مِنْ عِنْدِ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে। وَيَقُوْلُوْنَ আর তারা বলে عَلَى اللهِ আল্লাহর ব্যাপারে اَلْكَذِبَ মিথ্যা কথা وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ অথচ তারা জানে।
সরল অনুবাদ
৭৮. নিশ্চয় তাদের মধ্যে এমন একদলও রয়েছে, যারা জিহবা বাঁকা করে কিতাব (তাওরাত) পাঠ করে, যাতে তোমরা তা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ তা কিতাবের অংশ নয়। আর তারা বলে- এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা জেনে-শুনে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে। [এখানে ইহুদীদের চক্রান্তসমূহের মধ্যে আরো দুটি চক্রান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (১) কুরআনের আয়াত পাঠ করার সময় কোন কোন শব্দ জিহবা বাঁকিয়ে এমনভাবে উচ্চারণ করে, যার কারণে উক্ত আয়াতের সম্পূর্ণ ভাবার্থই পাল্টে যায়। এভাবে তারা কুরআনের মধ্যে বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা করে। (২) তারা এমন কিছু কথাকে আল্লাহর কথা হিসেবে চালিয়ে দেয়, যা মূলত আল্লাহর কথা নয়; বরং সেগুলো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে। উল্লেখ্য যে, এটি ইহুদীদের আচরণ হলেও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণী- ‘‘তোমরা পূর্ববর্তীদের তরীকার অনুসরণ করবে’’- অনুযায়ী বর্তমানেও অনেক আলেমের মধ্যেও অনুপ্রবেশ করেছে। তারা স্বার্থের কারণে কুরআনের অনেক আয়াতের মূল অর্থ গ্রহণ না করে নিজেদের ইচ্ছে মতো অর্থ গ্রহণ করে থাকে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতকে বিকৃত উচ্চারণের মাধ্যমে পাঠ করা হারাম।
২. আল্লাহর কিতাবে কোন কিছু সংযোজন অথবা বিয়োজন করাও হারাম।
مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّؤْتِيَهُ اللهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُوْلَ لِلنَّاسِ كُوْنُوْا عِبَادًا لِّيْ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ كُوْنُوْا رَبَّانِيِّيْنَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُوْنَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُوْنَ (৭৯) وَلَا يَأْمُرَكُمْ اَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَآئِكَةَ وَالنَّبِيِّيْنَ اَرْبَابًاؕ اَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ اِذْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ (৮০)
শাব্দিক অনুবাদ
৭৯. مَا كَانَ এটা সম্ভব নয় لِبَشَرٍ কোন মানুষের জন্য اَنْ যে, يُؤْتِيَهُ তাকে দান করবেন اَللهُ আল্লাহ اَلْكِتَابَ কিতাব, وَالْحُكْمَ এবং জ্ঞান وَالنُّبُوَّةَ এবং নবুওয়াত; ثُمَّ অতঃপর يَقُوْلَ সে বলবে لِلنَّاسِ মানুষদেরকে, كُوْنُوْا তোমরা হয়ে যাও عِبَادًا বান্দা لِيْ আমার مِنْ دُوْنِ اللهِ আল্লাহকে বাদ দিয়ে। وَلٰكِنْ বরং كُوْنُوْا তোমরা হয়ে যাও رَبَّانِيِّيْنَ আল্লাহ ওয়ালা। بِمَا كُنْتُمْ কারণ তোমরা تُعَلِّمُوْنَ শিক্ষা দিয়ে থাক اَلْكِتَابَ কিতাব وَبِمَا كُنْتُمْ এবং তোমরা নিজেরাও تَدْرُسُوْنَ অধ্যায়ন করে থাক।
৮০. وَلَا يَأْمُرَكُمْ আর সে তোমাদেরকে (এই) নির্দেশও দেবে না যে, اَنْ تَتَّخِذُوا তোমরা গ্রহণ করো اَلْمَلَآئِكَةَ ফেরেশতাদেরকে وَالنَّبِيِّيْنَ এবং নবীদেরকে اَرْبَابًا প্রতিপালক হিসেবে। اَيَأْمُرُكُمْ সে কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেবে بِالْكُفْرِ কুফরীর بَعْدَ পর اِذْ যখন اَنْتُمْ তোমরা مُسْلِمُوْنَ মুসলিম।
সরল অনুবাদ
৭৯. কোন মানুষের জন্য এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান ও নবুওয়াত দান করবেন; অতঃপর সে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার বান্দা (দাস) হয়ে যাও। বরং (সে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর এ কথাই বলবে যে) তোমরা আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাও। কারণ তোমরা কিতাব শিক্ষা দিয়ে থাক এবং তোমরা নিজেরাও অধ্যায়ন করে থাক। [এখানে খ্রিস্টানদের কথা বুঝানো হয়েছে। তারা ঈসা (আঃ)-কে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে; অথচ তিনি হলেন, একজন মানুষ। তাকে কেবল কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত প্রদান করে অন্যান্য মানুষের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। এমন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কোন মানুষের পক্ষে এ কথা বলা কখনো সম্ভব নয় যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার পূজা কর; তিনি তো কেবল সে কথাই বলবেন, যা আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। আর তা হলো- তোমরা আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাও।]
৮০. আর সে তোমাদেরকে (এই) নির্দেশও দেবে না যে, তোমরা ফেরেশতা এবং নবীদেরকে নিজেদের প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করো। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর সে কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দেবে। [এ আয়াতে একটি মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে শিক্ষা মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তার বন্দেগী ও পূজা-অর্চনায় লিপ্ত করে এবং তাকে আল্লাহর দাসত্বের পর্যায় থেকে উলুহিয়্যাতের পর্যায়ে উন্নীত করে, তা কখনো নবীর শিক্ষা হতে পারে না। কোন ধর্মীয় গ্রন্থে এ ধরনের বক্তব্য দেখা গেলে সেখানে বিভ্রান্ত লোকেরা বিকৃতি ঘটিয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. প্রকৃত আলিমগণের পক্ষে মানুষকে বিভ্রান্তিকর বিষয়ের দিকে আহবান করা সম্ভব নয়।
২. আল্লাহর কিতাব নিজে শিক্ষা করা এবং অপরকেও শিক্ষা দেয়ার অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
৩. কোন ফেরেশতা বা নবীকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
শাব্দিক অনুবাদ
৭৯. مَا كَانَ এটা সম্ভব নয় لِبَشَرٍ কোন মানুষের জন্য اَنْ যে, يُؤْتِيَهُ তাকে দান করবেন اَللهُ আল্লাহ اَلْكِتَابَ কিতাব, وَالْحُكْمَ এবং জ্ঞান وَالنُّبُوَّةَ এবং নবুওয়াত; ثُمَّ অতঃপর يَقُوْلَ সে বলবে لِلنَّاسِ মানুষদেরকে, كُوْنُوْا তোমরা হয়ে যাও عِبَادًا বান্দা لِيْ আমার مِنْ دُوْنِ اللهِ আল্লাহকে বাদ দিয়ে। وَلٰكِنْ বরং كُوْنُوْا তোমরা হয়ে যাও رَبَّانِيِّيْنَ আল্লাহ ওয়ালা। بِمَا كُنْتُمْ কারণ তোমরা تُعَلِّمُوْنَ শিক্ষা দিয়ে থাক اَلْكِتَابَ কিতাব وَبِمَا كُنْتُمْ এবং তোমরা নিজেরাও تَدْرُسُوْنَ অধ্যায়ন করে থাক।
৮০. وَلَا يَأْمُرَكُمْ আর সে তোমাদেরকে (এই) নির্দেশও দেবে না যে, اَنْ تَتَّخِذُوا তোমরা গ্রহণ করো اَلْمَلَآئِكَةَ ফেরেশতাদেরকে وَالنَّبِيِّيْنَ এবং নবীদেরকে اَرْبَابًا প্রতিপালক হিসেবে। اَيَأْمُرُكُمْ সে কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেবে بِالْكُفْرِ কুফরীর بَعْدَ পর اِذْ যখন اَنْتُمْ তোমরা مُسْلِمُوْنَ মুসলিম।
সরল অনুবাদ
৭৯. কোন মানুষের জন্য এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান ও নবুওয়াত দান করবেন; অতঃপর সে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার বান্দা (দাস) হয়ে যাও। বরং (সে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর এ কথাই বলবে যে) তোমরা আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাও। কারণ তোমরা কিতাব শিক্ষা দিয়ে থাক এবং তোমরা নিজেরাও অধ্যায়ন করে থাক। [এখানে খ্রিস্টানদের কথা বুঝানো হয়েছে। তারা ঈসা (আঃ)-কে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে; অথচ তিনি হলেন, একজন মানুষ। তাকে কেবল কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত প্রদান করে অন্যান্য মানুষের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। এমন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কোন মানুষের পক্ষে এ কথা বলা কখনো সম্ভব নয় যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার পূজা কর; তিনি তো কেবল সে কথাই বলবেন, যা আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। আর তা হলো- তোমরা আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাও।]
৮০. আর সে তোমাদেরকে (এই) নির্দেশও দেবে না যে, তোমরা ফেরেশতা এবং নবীদেরকে নিজেদের প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করো। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর সে কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দেবে। [এ আয়াতে একটি মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে শিক্ষা মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তার বন্দেগী ও পূজা-অর্চনায় লিপ্ত করে এবং তাকে আল্লাহর দাসত্বের পর্যায় থেকে উলুহিয়্যাতের পর্যায়ে উন্নীত করে, তা কখনো নবীর শিক্ষা হতে পারে না। কোন ধর্মীয় গ্রন্থে এ ধরনের বক্তব্য দেখা গেলে সেখানে বিভ্রান্ত লোকেরা বিকৃতি ঘটিয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. প্রকৃত আলিমগণের পক্ষে মানুষকে বিভ্রান্তিকর বিষয়ের দিকে আহবান করা সম্ভব নয়।
২. আল্লাহর কিতাব নিজে শিক্ষা করা এবং অপরকেও শিক্ষা দেয়ার অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
৩. কোন ফেরেশতা বা নবীকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَاۤ اٰتَيْتُكُمْ مِّنْ كِتَابٍ وَّحِكْمَةٍ ثُمَّ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِه وَلَتَنْصُرُنَّه ؕ قَالَ اَاَقْرَرْتُمْ وَاَخَذْتُمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِيْؕ قَالُوْاۤ اَقْرَرْنَاؕ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشَّاهِدِيْنَ (৮১)
শাব্দিক অনুবাদ
৮১. وَاِذْ আর যখন اَخَذَ গ্রহণ করলেন اَللهُ আল্লাহ مِيْثَاقَ অঙ্গীকার اَلنَّبِيِّيْنَ নবীদের কাছ থেকে لَمَا অবশ্যই যা اٰتَيْتُكُمْ আমি তোমাদেরকে দান করব مِنْ كِتَابٍ কিতাব থেকে وَحِكْمَةٍ ও হেকমত থেকে ثُمَّ অতঃপর جَآءَكُمْ তোমাদের কাছে আগমন করবে رَسُوْلٌ কোন রাসূল مُصَدِّقٌ সত্যায়নকারীরূপে لِمَا যা مَعَكُمْ তোমাদের কাছে আছে, لَتُؤْمِنُنَّ তখন অবশ্যই তোমরা ঈমান আনয়ন করবে بِه তার উপর وَلَتَنْصُرُنَّه এবং অবশ্যই তাকে সাহায্য করবে। قَالَ তিনি বললেন, اَاَقْرَرْتُمْ তোমরা কি স্বীকার করেছ وَاَخَذْتُمْ এবং গ্রহণ করেছ عَلٰى ذٰلِكُمْ এ বিষয়ে اِصْرِيْ আমার দায়িত্ব? قَالُوْا তারা বলল, اَقْرَرْنَا আমরা স্বীকার করলাম। قَالَ তিনি বললেন, فَاشْهَدُوْا তাহলে তোমরা সাক্ষী থাকো وَاَنَا আর আমিও مَعَكُمْ তোমাদের সাথে مِنَ الشَّاهِدِيْنَ সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত রইলাম।
সরল অনুবাদ
৮১. যখন আল্লাহ নবীদের কাছ থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হেকমত (প্রজ্ঞা) দান করব, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে কোন রাসূল আগমন করবে, তখন অবশ্যই তোমরা তার উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং অবশ্যই তাকে সাহায্য করবে। তিনি (আল্লাহ) বললেন, তোমরা কি স্বীকার করেছ এবং এ বিষয়ে আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করেছ? তারা (নবীরা) বলল, আমরা স্বীকার করলাম (মেনে নিলাম)। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাকো; আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত রইলাম। [এর অর্থ হচ্ছে, প্রত্যেক নবীর কাছ থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। আর যে অঙ্গীকার নবীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে তাঁর অনুসারীদের উপরও আরোপিত হয়ে যায়। অঙ্গীকারটি হচ্ছে এই যে, যে দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে তোমাদের নিযুক্ত করা হয়েছে সেই একই দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে আমার পক্ষ থেকে যে নবীকে পাঠানো হবে তাঁর সাথে তোমাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাঁর প্রতি কোন হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না। সত্যের বিরুধিতা করবে না। বরং যেখানে যে ব্যক্তিই আমার পক্ষ থেকে সত্যের পতাকা উত্তোলন করার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হবে, সেখানেই তাঁর পতাকাতলে সমবেত হয়ে যাবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন।
২. নবীগণ একে অপরের সত্যায়নকারী এবং সাহায্যকারী।
৩. একজন দাঈ অপর দাঈকে সাহায্য করা অতীব জরুরি।
৪. যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সাক্ষ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
শাব্দিক অনুবাদ
৮১. وَاِذْ আর যখন اَخَذَ গ্রহণ করলেন اَللهُ আল্লাহ مِيْثَاقَ অঙ্গীকার اَلنَّبِيِّيْنَ নবীদের কাছ থেকে لَمَا অবশ্যই যা اٰتَيْتُكُمْ আমি তোমাদেরকে দান করব مِنْ كِتَابٍ কিতাব থেকে وَحِكْمَةٍ ও হেকমত থেকে ثُمَّ অতঃপর جَآءَكُمْ তোমাদের কাছে আগমন করবে رَسُوْلٌ কোন রাসূল مُصَدِّقٌ সত্যায়নকারীরূপে لِمَا যা مَعَكُمْ তোমাদের কাছে আছে, لَتُؤْمِنُنَّ তখন অবশ্যই তোমরা ঈমান আনয়ন করবে بِه তার উপর وَلَتَنْصُرُنَّه এবং অবশ্যই তাকে সাহায্য করবে। قَالَ তিনি বললেন, اَاَقْرَرْتُمْ তোমরা কি স্বীকার করেছ وَاَخَذْتُمْ এবং গ্রহণ করেছ عَلٰى ذٰلِكُمْ এ বিষয়ে اِصْرِيْ আমার দায়িত্ব? قَالُوْا তারা বলল, اَقْرَرْنَا আমরা স্বীকার করলাম। قَالَ তিনি বললেন, فَاشْهَدُوْا তাহলে তোমরা সাক্ষী থাকো وَاَنَا আর আমিও مَعَكُمْ তোমাদের সাথে مِنَ الشَّاهِدِيْنَ সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত রইলাম।
সরল অনুবাদ
৮১. যখন আল্লাহ নবীদের কাছ থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হেকমত (প্রজ্ঞা) দান করব, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে কোন রাসূল আগমন করবে, তখন অবশ্যই তোমরা তার উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং অবশ্যই তাকে সাহায্য করবে। তিনি (আল্লাহ) বললেন, তোমরা কি স্বীকার করেছ এবং এ বিষয়ে আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করেছ? তারা (নবীরা) বলল, আমরা স্বীকার করলাম (মেনে নিলাম)। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাকো; আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত রইলাম। [এর অর্থ হচ্ছে, প্রত্যেক নবীর কাছ থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। আর যে অঙ্গীকার নবীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে তাঁর অনুসারীদের উপরও আরোপিত হয়ে যায়। অঙ্গীকারটি হচ্ছে এই যে, যে দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে তোমাদের নিযুক্ত করা হয়েছে সেই একই দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে আমার পক্ষ থেকে যে নবীকে পাঠানো হবে তাঁর সাথে তোমাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাঁর প্রতি কোন হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না। সত্যের বিরুধিতা করবে না। বরং যেখানে যে ব্যক্তিই আমার পক্ষ থেকে সত্যের পতাকা উত্তোলন করার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হবে, সেখানেই তাঁর পতাকাতলে সমবেত হয়ে যাবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন।
২. নবীগণ একে অপরের সত্যায়নকারী এবং সাহায্যকারী।
৩. একজন দাঈ অপর দাঈকে সাহায্য করা অতীব জরুরি।
৪. যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সাক্ষ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
فَمَنْ تَوَلّٰى بَعْدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ (৮২) اَفَغَيْرَ دِيْنِ اللهِ يَبْغُوْنَ وَلَه اَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّاِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ (৮৩)
শাব্দিক অনুবাদ
৮২. فَمَنْ সুতরাং যারা تَوَلّٰى মুখ ফিরিয়ে নেবে, بَعْدَ ذٰلِكَ এরপরও فَاُولٰٓئِكَ তারাই হবে هُمُ الْفَاسِقُوْنَ ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত।
৮৩. اَفَغَيْرَ তবে কি বাদ দিয়ে دِيْنِ জীবনব্যবস্থা اَللهِ আল্লাহর يَبْغُوْنَ তারা (অন্য কিছুর) সন্ধান করে? وَلَه অথচ তাঁর কাছে اَسْلَمَ আত্মসমর্পণ করেছে مَنْ যারা আছে فِي السَّمَاوَاتِ আকাশসমূহে وَالْاَرْضِ এবং পৃথিবীতে طَوْعًا ইচ্ছায় وَكَرْهًا এবং অনিচ্ছায় وَاِلَيْهِ এবং তাঁরই দিকে يُرْجَعُوْنَ তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
সরল অনুবাদ
৮২. এরপরও যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে, তারাই হবে ফাসিক (পাপাচারী)। [এখানে আহলে কিতাবসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সতর্ক করা হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে প্রেরণের পরও তাঁর উপর ঈমান না এনে স্ব স্ব দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সেই অঙ্গীকারের বিপরীত, যা আল্লাহ তা‘আলা নবীদের মাধ্যমে প্রত্যেক উম্মতের কাছ থেকে নিয়েছেন। সুতরাং এই অঙ্গীকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া কুফরী। আর এখানে ‘ফাসেক’ এর অর্থ হচ্ছে ‘কাফির’। কেননা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করাটা কেবল ফাসেকী কর্ম নয়; বরং এটি স্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।]
৮৩. তবে কি তারা আল্লাহর (দেয়া) জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে (অন্য কোন জীবনব্যবস্থার) সন্ধান করে? অথচ আকাশসমূহ এবং পৃথিবীতে যারা আছে (সবাই) ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করা যাবে না।
২. কেবল আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে।
৩. ইসলামের কোন বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না।
শাব্দিক অনুবাদ
৮২. فَمَنْ সুতরাং যারা تَوَلّٰى মুখ ফিরিয়ে নেবে, بَعْدَ ذٰلِكَ এরপরও فَاُولٰٓئِكَ তারাই হবে هُمُ الْفَاسِقُوْنَ ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত।
৮৩. اَفَغَيْرَ তবে কি বাদ দিয়ে دِيْنِ জীবনব্যবস্থা اَللهِ আল্লাহর يَبْغُوْنَ তারা (অন্য কিছুর) সন্ধান করে? وَلَه অথচ তাঁর কাছে اَسْلَمَ আত্মসমর্পণ করেছে مَنْ যারা আছে فِي السَّمَاوَاتِ আকাশসমূহে وَالْاَرْضِ এবং পৃথিবীতে طَوْعًا ইচ্ছায় وَكَرْهًا এবং অনিচ্ছায় وَاِلَيْهِ এবং তাঁরই দিকে يُرْجَعُوْنَ তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
সরল অনুবাদ
৮২. এরপরও যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে, তারাই হবে ফাসিক (পাপাচারী)। [এখানে আহলে কিতাবসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সতর্ক করা হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে প্রেরণের পরও তাঁর উপর ঈমান না এনে স্ব স্ব দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সেই অঙ্গীকারের বিপরীত, যা আল্লাহ তা‘আলা নবীদের মাধ্যমে প্রত্যেক উম্মতের কাছ থেকে নিয়েছেন। সুতরাং এই অঙ্গীকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া কুফরী। আর এখানে ‘ফাসেক’ এর অর্থ হচ্ছে ‘কাফির’। কেননা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করাটা কেবল ফাসেকী কর্ম নয়; বরং এটি স্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।]
৮৩. তবে কি তারা আল্লাহর (দেয়া) জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে (অন্য কোন জীবনব্যবস্থার) সন্ধান করে? অথচ আকাশসমূহ এবং পৃথিবীতে যারা আছে (সবাই) ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করা যাবে না।
২. কেবল আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে।
৩. ইসলামের কোন বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না।
قُلْ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَه مُسْلِمُوْنَ (৮৪) وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ (৮৫)
শাব্দিক অনুবাদ
৮৪. قُلْ (হে নবী!) বলো, اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি بِاللهِ আল্লাহর প্রতি وَمَاۤ اُنْزِلَ এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে عَلَيْنَا আমাদের উপর وَمَاۤ اُنْزِلَ আর যা নাযিল হয়েছে عَلٰۤى উপর اِبْرَاهِيْمَ ইবরাহীমের, وَاِسْمَاعِيْلَ আর ইসমাঈলের, وَاِسْحَاقَ আর ইসহাকের, وَيَعْقُوْبَ আর ইয়াকুবের وَالْاَسْبَاطِ এবং তাদের বংশধরদের। وَمَاۤ اُوْتِيَ আর যা কিছু দেয়া হয়েছিল مُوْسٰى মূসাকে, وَعِيْسٰى আর ঈসাকে وَالنَّبِيُّوْنَ এবং অন্যান্য নবীদেরকে مِنْ رَّبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। لَا نُفَرِّقُ আমরা পার্থক্য করি না بَيْنَ اَحَدٍ কারো মধ্যে مِنْهُمْ তাদের মধ্যে وَنَحْنُ আর আমরা لَه তাঁরই নিকট مُسْلِمُوْنَ আত্মসমর্পণকারী।
৮৫. وَمَنْ আর যে ব্যক্তি يَبْتَغِ অনুসন্ধান করবে غَيْرَ ব্যতীত اَلْاِسْلَامِ ইসলাম دِيْنًا অন্য কোন জীবনব্যবস্থা فَلَنْ يُّقْبَلَ তাহলে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না مِنْهُ তার কাছ থেকে। وَهُوَ আর সে فِي الْاٰخِرَةِ আখিরাতে مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সরল অনুবাদ
৮৪. (হে নবী!) বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের উপর আর যা নাযিল (অবতীর্ণ) হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাদের বংশধরদের উপর (তার প্রতি); আর মূসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীদেরকে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল (তার প্রতি)। আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না; [অর্থাৎ আমরা কোন নবীর ব্যাপারে এরূপ ধারণা করি না যে, অমুক নবী তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি অথবা অমুক নবী বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন অথবা অমুক নবী মানুষকে নিজেদের ইবাদাতের দিকে আহবান করতেন অথবা অমুক নবী ইলাহের পর্যায়ে চলে গেছেন ইত্যাদি। বরং আমরা এরূপ ধারণা করি যে, সমস্ত নবীই তাদের দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে পালন করে গেছেন। তারা সকলেই মানুষ ছিলেন। তারা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাত করতেন এবং মানুষকে এ দিকেই আহবান করতেন। বিভিন্ন যুগে আগমন হলেও তাদের মৌলিক আক্বিদা-বিশ্বাস, নিয়ম-কানুন ছিল একই সূত্রে গাঁথা।] আর আমরা তাঁরই (আল্লাহরই) নিকট আত্মসমর্পণকারী।
৮৫. আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবনব্যবস্থা অনুসন্ধান করবে (গ্রহণ করবে), তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন, সেগুলোর উপর ঈমান আনা আবশ্যক।
২. ইসলামের সমর্থন ছাড়া যে কোন আমলই পরিত্যাজ্য।
৩. ইসলাম বহির্ভূত কোন কিছুর অনুসরণে চললে পরকালে অবশ্যই তাকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
৮৪. قُلْ (হে নবী!) বলো, اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি بِاللهِ আল্লাহর প্রতি وَمَاۤ اُنْزِلَ এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে عَلَيْنَا আমাদের উপর وَمَاۤ اُنْزِلَ আর যা নাযিল হয়েছে عَلٰۤى উপর اِبْرَاهِيْمَ ইবরাহীমের, وَاِسْمَاعِيْلَ আর ইসমাঈলের, وَاِسْحَاقَ আর ইসহাকের, وَيَعْقُوْبَ আর ইয়াকুবের وَالْاَسْبَاطِ এবং তাদের বংশধরদের। وَمَاۤ اُوْتِيَ আর যা কিছু দেয়া হয়েছিল مُوْسٰى মূসাকে, وَعِيْسٰى আর ঈসাকে وَالنَّبِيُّوْنَ এবং অন্যান্য নবীদেরকে مِنْ رَّبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। لَا نُفَرِّقُ আমরা পার্থক্য করি না بَيْنَ اَحَدٍ কারো মধ্যে مِنْهُمْ তাদের মধ্যে وَنَحْنُ আর আমরা لَه তাঁরই নিকট مُسْلِمُوْنَ আত্মসমর্পণকারী।
৮৫. وَمَنْ আর যে ব্যক্তি يَبْتَغِ অনুসন্ধান করবে غَيْرَ ব্যতীত اَلْاِسْلَامِ ইসলাম دِيْنًا অন্য কোন জীবনব্যবস্থা فَلَنْ يُّقْبَلَ তাহলে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না مِنْهُ তার কাছ থেকে। وَهُوَ আর সে فِي الْاٰخِرَةِ আখিরাতে مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সরল অনুবাদ
৮৪. (হে নবী!) বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের উপর আর যা নাযিল (অবতীর্ণ) হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাদের বংশধরদের উপর (তার প্রতি); আর মূসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীদেরকে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল (তার প্রতি)। আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না; [অর্থাৎ আমরা কোন নবীর ব্যাপারে এরূপ ধারণা করি না যে, অমুক নবী তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি অথবা অমুক নবী বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন অথবা অমুক নবী মানুষকে নিজেদের ইবাদাতের দিকে আহবান করতেন অথবা অমুক নবী ইলাহের পর্যায়ে চলে গেছেন ইত্যাদি। বরং আমরা এরূপ ধারণা করি যে, সমস্ত নবীই তাদের দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে পালন করে গেছেন। তারা সকলেই মানুষ ছিলেন। তারা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাত করতেন এবং মানুষকে এ দিকেই আহবান করতেন। বিভিন্ন যুগে আগমন হলেও তাদের মৌলিক আক্বিদা-বিশ্বাস, নিয়ম-কানুন ছিল একই সূত্রে গাঁথা।] আর আমরা তাঁরই (আল্লাহরই) নিকট আত্মসমর্পণকারী।
৮৫. আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবনব্যবস্থা অনুসন্ধান করবে (গ্রহণ করবে), তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন, সেগুলোর উপর ঈমান আনা আবশ্যক।
২. ইসলামের সমর্থন ছাড়া যে কোন আমলই পরিত্যাজ্য।
৩. ইসলাম বহির্ভূত কোন কিছুর অনুসরণে চললে পরকালে অবশ্যই তাকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
كَيْفَ يَهْدِي اللهُ قَوْمًا كَفَرُوْا بَعْدَ اِيْمَانِهِمْ وَشَهِدُوْاۤ اَنَّ الرَّسُوْلَ حَقٌّ وَّجَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ (৮৬) اُولٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ اَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ (৮৭) خَالِدِيْنَ فِيْهَاۚ لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْظَرُوْنَ (৮৮)
শাব্দিক অনুবাদ
৮৬. كَيْفَ কীভাবে يَهْدِي সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন اَللهُ আল্লাহ قَوْمًا এমন জাতিকে, كَفَرُوْا যারা কুফরী করেছে بَعْدَ পর اِيْمَانِهِمْ ঈমান আনার; وَشَهِدُوْا অথচ তারা এ সাক্ষ্যও প্রদান করেছে যে, اَنَّ নিশ্চয় اَلرَّسُوْلَ রাসূল حَقٌّ সত্য وَجَآءَهُمُ এবং তাদের কাছে এসেছে اَلْبَيِّنَاتُ স্পষ্ট নিদর্শনাবলি। وَاللهُ আর আল্লাহ لَا يَهْدِي হেদায়াত করেন না اَلْقَوْمَ সম্প্রদায়কে اَلظَّالِمِيْنَ যালিম (অত্যাচারি)।
৮৭. اُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক جَزَآؤُهُمْ তাদের প্রতিফল হচ্ছে এই যে, اَنَّ নিশ্চয় عَلَيْهِمْ তাদের উপর لَعْنَةَ অভিশাপ اَللهِ আল্লাহর, وَالْمَلَآئِكَةِ এবং ফেরেশতাগণের وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ এবং সকল মানুষের ।
৮৮. خَالِدِيْنَ তারা চিরস্থায়ী হবে فِيْهَا সেখানে। لَا يُخَفَّفُ হালকা করা হবে না عَنْهُمُ তাদের থেকে اَلْعَذَابُ শাস্তি وَلَا هُمْ এবং তারা হবে না يُنْظَرُوْنَ অবকাশপ্রাপ্ত।
সরল অনুবাদ
৮৬. (বলো) এমন জাতিকে আল্লাহ কীভাবে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন, যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে; অথচ তারা এ সাক্ষ্যও প্রদান করেছে যে, রাসূল সত্য এবং তাদের কাছে এসেছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলি। আর আল্লাহ যালিম (অত্যাচারী) সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। [অর্থাৎ যারা জেনে-বুঝে সত্যকে অস্বীকার করে মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হেদায়াত প্রদান করেন না। বরং হেদায়াত কেবল তারাই পেয়ে থাকে, যারা মনে-প্রাণে হেদায়াত অনুসন্ধান করে থাকে।]
৮৭. তাদের প্রতিফল হচ্ছে এই যে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের অভিশাপ। [সকল মানুষের অভিশাপ এজন্যই যে, তারা জেনে-বুঝে সত্যকে অস্বীকার করার মাধ্যমে অন্যান্য মানুষকেও বিভ্রান্তে ফেলে রেখেছে। কিয়ামতের দিন পাপীরা যখন জানতে পারবে যে, এসব আলেম সত্যকে গোপন করেছিল এবং হেদায়াতকে তাদের থেকে আড়াল করে রেখেছিল, তখন সকল মানুষ তাদেরকে অভিশাপ দেবে এবং তাদের শাস্তি বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করবে।]
৮৮. (সে অভিশপ্ত স্থানটি হচ্ছে জাহান্নাম) সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তাদের উপর থেকে আযাব হালকা করা (সরানো) হবে না এবং তাদেরকে কোন অবকাশও দেয়া হবে না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. বারবার কুফরীতে লিপ্ত হলে হেদয়াত পাওয়া যায় না।
২. কাফিরদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হয়।
৩. কুফরীর শেষ পরিণতি হচ্ছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
শাব্দিক অনুবাদ
৮৬. كَيْفَ কীভাবে يَهْدِي সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন اَللهُ আল্লাহ قَوْمًا এমন জাতিকে, كَفَرُوْا যারা কুফরী করেছে بَعْدَ পর اِيْمَانِهِمْ ঈমান আনার; وَشَهِدُوْا অথচ তারা এ সাক্ষ্যও প্রদান করেছে যে, اَنَّ নিশ্চয় اَلرَّسُوْلَ রাসূল حَقٌّ সত্য وَجَآءَهُمُ এবং তাদের কাছে এসেছে اَلْبَيِّنَاتُ স্পষ্ট নিদর্শনাবলি। وَاللهُ আর আল্লাহ لَا يَهْدِي হেদায়াত করেন না اَلْقَوْمَ সম্প্রদায়কে اَلظَّالِمِيْنَ যালিম (অত্যাচারি)।
৮৭. اُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক جَزَآؤُهُمْ তাদের প্রতিফল হচ্ছে এই যে, اَنَّ নিশ্চয় عَلَيْهِمْ তাদের উপর لَعْنَةَ অভিশাপ اَللهِ আল্লাহর, وَالْمَلَآئِكَةِ এবং ফেরেশতাগণের وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ এবং সকল মানুষের ।
৮৮. خَالِدِيْنَ তারা চিরস্থায়ী হবে فِيْهَا সেখানে। لَا يُخَفَّفُ হালকা করা হবে না عَنْهُمُ তাদের থেকে اَلْعَذَابُ শাস্তি وَلَا هُمْ এবং তারা হবে না يُنْظَرُوْنَ অবকাশপ্রাপ্ত।
সরল অনুবাদ
৮৬. (বলো) এমন জাতিকে আল্লাহ কীভাবে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন, যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে; অথচ তারা এ সাক্ষ্যও প্রদান করেছে যে, রাসূল সত্য এবং তাদের কাছে এসেছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলি। আর আল্লাহ যালিম (অত্যাচারী) সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। [অর্থাৎ যারা জেনে-বুঝে সত্যকে অস্বীকার করে মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হেদায়াত প্রদান করেন না। বরং হেদায়াত কেবল তারাই পেয়ে থাকে, যারা মনে-প্রাণে হেদায়াত অনুসন্ধান করে থাকে।]
৮৭. তাদের প্রতিফল হচ্ছে এই যে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের অভিশাপ। [সকল মানুষের অভিশাপ এজন্যই যে, তারা জেনে-বুঝে সত্যকে অস্বীকার করার মাধ্যমে অন্যান্য মানুষকেও বিভ্রান্তে ফেলে রেখেছে। কিয়ামতের দিন পাপীরা যখন জানতে পারবে যে, এসব আলেম সত্যকে গোপন করেছিল এবং হেদায়াতকে তাদের থেকে আড়াল করে রেখেছিল, তখন সকল মানুষ তাদেরকে অভিশাপ দেবে এবং তাদের শাস্তি বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করবে।]
৮৮. (সে অভিশপ্ত স্থানটি হচ্ছে জাহান্নাম) সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তাদের উপর থেকে আযাব হালকা করা (সরানো) হবে না এবং তাদেরকে কোন অবকাশও দেয়া হবে না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. বারবার কুফরীতে লিপ্ত হলে হেদয়াত পাওয়া যায় না।
২. কাফিরদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হয়।
৩. কুফরীর শেষ পরিণতি হচ্ছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ وَاَصْلَحُوْا۫ فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ (৮৯) اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْدَ اِيْمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّنْ تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الضَّآلُّوْنَ (৯০)
শাব্দিক অনুবাদ
৮৯. اِلَّا তবে اَلَّذِيْنَ যারা تَابُوْا তাওবা করেছে مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ এসব কিছুর পরে وَاَصْلَحُوْا এবং সংশোধন করে নিয়েছে। فَاِنَّ অতঃপর নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ غَفُوْرٌ অত্যন্ত ক্ষমাশীল رَحِيْمٌ ও পরম দয়ালু।
৯০. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে بَعْدَ পর اِيْمَانِهِمْ তাদের ঈমান আনার, ثُمَّ তারপর اِزْدَادُوْا তারা আরো বৃদ্ধি করেছে كُفْرًا সেই কুফরীকে لَنْ تُقْبَلَ কিছুতেই গ্রহণ করা হবে না تَوْبَتُهُمْ তাদের তাওবা। وَاُولٰٓئِكَ আর ঐসব লোক هُمُ তারাই اَلضَّآلُّوْنَ পথভ্রষ্ট।
সরল অনুবাদ
৮৯. তবে (তাদের কথা ভিন্ন) যারা পরবর্তীতে তাওবা করেছে (ফিরে এসেছে) এবং (নিজেদেরকে) সংশোধন করে নিয়েছে। অতঃপর নিশ্চয় আল্লাহ (এরূপ ব্যক্তিদের জন্য) অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৯০. পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, তারপর সেই কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করেছে [এখানে কুফরীকে বৃদ্ধি করা বলতে কাফিরদের এমনসব কর্মকে বুঝানো হয়েছে, যা তারা ইসলামকে দমানোর জন্য করে থাকে। যেমন- মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে নানা ধরনের সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করা, বিভ্রান্ত ছড়ানো, নির্যাতন-নিপীড়নের ভয় দেখানো, দুনিয়ার প্রাচুর্যতার লোভ দেখানো, ফিতনা সৃষ্টি করা, মুসলিমদেরকে হত্যা করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্পর্কে কটুক্তি করা ইত্যাদি। এসব কর্মকে কাফিররা নিজেদের দৃষ্টিতে উত্তম কাজ হিসেবে মনে করলেও, মূলত এগুলো তাদের কুফরীকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করে থাকে। অবশেষে তাদেরকে তাওবার সুযোগ আসার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করতে হয়।]- তাদের তাওবা (অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসা) কিছুতেই গ্রহণ করা হবে না। আর তারাই পথভ্রষ্ট।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কুফরী করে ফেললে সেজন্য তাওবা করা জরুরি।
২. তাওবা করার সাথে সাথে নিজেকে সংশোধন করে নেয়া আবশ্যক।
শাব্দিক অনুবাদ
৮৯. اِلَّا তবে اَلَّذِيْنَ যারা تَابُوْا তাওবা করেছে مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ এসব কিছুর পরে وَاَصْلَحُوْا এবং সংশোধন করে নিয়েছে। فَاِنَّ অতঃপর নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ غَفُوْرٌ অত্যন্ত ক্ষমাশীল رَحِيْمٌ ও পরম দয়ালু।
৯০. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে بَعْدَ পর اِيْمَانِهِمْ তাদের ঈমান আনার, ثُمَّ তারপর اِزْدَادُوْا তারা আরো বৃদ্ধি করেছে كُفْرًا সেই কুফরীকে لَنْ تُقْبَلَ কিছুতেই গ্রহণ করা হবে না تَوْبَتُهُمْ তাদের তাওবা। وَاُولٰٓئِكَ আর ঐসব লোক هُمُ তারাই اَلضَّآلُّوْنَ পথভ্রষ্ট।
সরল অনুবাদ
৮৯. তবে (তাদের কথা ভিন্ন) যারা পরবর্তীতে তাওবা করেছে (ফিরে এসেছে) এবং (নিজেদেরকে) সংশোধন করে নিয়েছে। অতঃপর নিশ্চয় আল্লাহ (এরূপ ব্যক্তিদের জন্য) অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৯০. পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, তারপর সেই কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করেছে [এখানে কুফরীকে বৃদ্ধি করা বলতে কাফিরদের এমনসব কর্মকে বুঝানো হয়েছে, যা তারা ইসলামকে দমানোর জন্য করে থাকে। যেমন- মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে নানা ধরনের সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করা, বিভ্রান্ত ছড়ানো, নির্যাতন-নিপীড়নের ভয় দেখানো, দুনিয়ার প্রাচুর্যতার লোভ দেখানো, ফিতনা সৃষ্টি করা, মুসলিমদেরকে হত্যা করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্পর্কে কটুক্তি করা ইত্যাদি। এসব কর্মকে কাফিররা নিজেদের দৃষ্টিতে উত্তম কাজ হিসেবে মনে করলেও, মূলত এগুলো তাদের কুফরীকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করে থাকে। অবশেষে তাদেরকে তাওবার সুযোগ আসার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করতে হয়।]- তাদের তাওবা (অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসা) কিছুতেই গ্রহণ করা হবে না। আর তারাই পথভ্রষ্ট।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কুফরী করে ফেললে সেজন্য তাওবা করা জরুরি।
২. তাওবা করার সাথে সাথে নিজেকে সংশোধন করে নেয়া আবশ্যক।
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِمْ مِّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَّلَوِ افْتَدٰى بِه ۤؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ وَّمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ (৯১)
শাব্দিক অনুবাদ
৯১. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে وَمَاتُوْا এবং মৃত্যুবরণ করেছে وَهُمْ كُفَّارٌ কাফির অবস্থায়, فَلَنْ يُّقْبَلَ কখনো গ্রহণ করা হবে না مِنْ اَحَدِهِمْ তাদের কারো কাছ থেকে مِلْءُ ভর্তি اَلْاَرْضِ পৃথিবী ذَهَبًا স্বর্ণ وَلَوِ যদিও اِفْتَدٰى তারা ফিদইয়া (বিনিময় হিসেবে) দিতে চায় بِه তা দ্বারা। اُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক لَهُمْ তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি اَلِيْمٌ যন্ত্রণাদায়ক وَمَا لَهُمْ এবং তাদের জন্য নেই مِنْ نَّاصِرِيْنَ সাহায্যকারীদের কেউ ।
সরল অনুবাদ
৯১. (অনুরূপভাবে) নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের কারো কাছ থেকে পৃথিবীভর্তি স্বর্ণও গ্রহণ করা হবে না- যদিও তারা তা ফিদইয়া (বিনিময় হিসেবে) দিতে চায়। তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই। [অর্থাৎ কেউ যদি কুফর থেকে তাওবা না করেই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে কিয়ামতের দিন সে কাফির অবস্থাতেই পুনরুত্থিত হবে। আর সেদিন কাফিরদের থেকে কোন ধরনের অজুহাত অথবা বিনিময় গ্রহণ করা হবে না; বরং তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেই এবং এ সিদ্ধান্ত রহিত করার জন্য কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা একজন জাহান্নামীকে বলবেন, যদি তোমার কাছে সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ থাকে, তাহলে জাহান্নাম থেকে বাঁচার বিনিময়ে সে সমস্ত স্বর্ণ কি তুমি দিতে পছন্দ করবে? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি তো দুনিয়ায় এর থেকে সহজ জিনিস তোমার কাছে চেয়েছিলাম। তা এই যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। কিন্তু তুমি শিরক থেকে বিরত থাকনি। (মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৮৯)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে কিয়ামতের দিন তাকে শাস্তি দানের পরিবর্তে তার কাছ থেকে কোনরূপ বিনিময় গ্রহণ করা হবে না।
২. কিয়ামতের দিন কাফিররা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
৩. কিয়ামতের দিন কাফিরদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না।
শাব্দিক অনুবাদ
৯১. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে وَمَاتُوْا এবং মৃত্যুবরণ করেছে وَهُمْ كُفَّارٌ কাফির অবস্থায়, فَلَنْ يُّقْبَلَ কখনো গ্রহণ করা হবে না مِنْ اَحَدِهِمْ তাদের কারো কাছ থেকে مِلْءُ ভর্তি اَلْاَرْضِ পৃথিবী ذَهَبًا স্বর্ণ وَلَوِ যদিও اِفْتَدٰى তারা ফিদইয়া (বিনিময় হিসেবে) দিতে চায় بِه তা দ্বারা। اُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক لَهُمْ তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি اَلِيْمٌ যন্ত্রণাদায়ক وَمَا لَهُمْ এবং তাদের জন্য নেই مِنْ نَّاصِرِيْنَ সাহায্যকারীদের কেউ ।
সরল অনুবাদ
৯১. (অনুরূপভাবে) নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের কারো কাছ থেকে পৃথিবীভর্তি স্বর্ণও গ্রহণ করা হবে না- যদিও তারা তা ফিদইয়া (বিনিময় হিসেবে) দিতে চায়। তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই। [অর্থাৎ কেউ যদি কুফর থেকে তাওবা না করেই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে কিয়ামতের দিন সে কাফির অবস্থাতেই পুনরুত্থিত হবে। আর সেদিন কাফিরদের থেকে কোন ধরনের অজুহাত অথবা বিনিময় গ্রহণ করা হবে না; বরং তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেই এবং এ সিদ্ধান্ত রহিত করার জন্য কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা একজন জাহান্নামীকে বলবেন, যদি তোমার কাছে সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ থাকে, তাহলে জাহান্নাম থেকে বাঁচার বিনিময়ে সে সমস্ত স্বর্ণ কি তুমি দিতে পছন্দ করবে? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি তো দুনিয়ায় এর থেকে সহজ জিনিস তোমার কাছে চেয়েছিলাম। তা এই যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। কিন্তু তুমি শিরক থেকে বিরত থাকনি। (মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৮৯)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে কিয়ামতের দিন তাকে শাস্তি দানের পরিবর্তে তার কাছ থেকে কোনরূপ বিনিময় গ্রহণ করা হবে না।
২. কিয়ামতের দিন কাফিররা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
৩. কিয়ামতের দিন কাফিরদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না।
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فَاِنَّ اللهَ بِه عَلِيْمٌ (৯২)
শাব্দিক অনুবাদ
৯২. لَنْ تَنَالُوا তোমরা কখনো লাভ করতে পাবে না اَلْبِرَّ পুণ্য حَتّٰى যতক্ষণ পর্যন্ত تُنْفِقُوْا তোমরা খরচ কর مِمَّا তা থেকে যা تُحِبُّوْنَ তোমরা ভালোবাস। وَمَا تُنْفِقُوْا আর তোমরা যা খরচ কর مِنْ شَيْءٍ কোন কিছু থেকে, فَاِنَّ তবে নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ بِه সে সম্পর্কে عَلِيْمٌ ভালো জানেন।
সরল অনুবাদ
৯২. তোমরা কখনো পুন্য লাভ করতে পাবে না- যতক্ষণ না তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে (আল্লাহর পথে) খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই খরচ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে ভালো জানেন। [এখানে পুণ্য লাভ করা বলতে জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে এবং ভালোবাসার জিনিস দান করা বলতে উত্তম বস্তুসমূহকে বুঝানো হয়েছে। মোটকথা এখানে সর্বোত্তম বস্তুসমূহকে দান করার প্রতি তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর পরই অনেক সাহাবী অধিক সওয়াব অর্জনের জন্য নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুসমূহ দান করতে আরম্ভ করেন। যেমন- হাদীসে এসেছে, মদিনায় আবু তালহা (রাঃ) ছিলেন অধিক সংখ্যক খেজুর বাগানের মালিক । তাঁর নিকট সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ ছিল ‘বাইরুহা’ নামক একটি বাগান। এটা ছিল মসজিদের সম্মুখে অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেখানে আসতেন এবং সেখানকার (কূপের) সুমিষ্ট পানি পান করতেন। অতঃপর যখন এ আয়াতটি নাযিল হলো, তখন আবু তালহা (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ বলেছেন, তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় করবে। আর আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হচ্ছে বাইরুহা। এটা আমি আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলাম। এর বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে পুণ্য ও তার ভান্ডার চাই। আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যেভাবে নির্দেশ দেন, আপনি এটিকে সেভাবে ব্যবহার করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, বাহ! সেটি তো অস্থায়ী সম্পদ, সেটি তো অস্থায়ী সম্পদ। তুমি যা বলেছ, তা আমি শুনেছি। আমি মত দিচ্ছি যে, তুমি সেটি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে দিয়ে দাও। তখন আবু তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা-ই করব। তারপর তিনি সেটা তার চাচাতো ভাই-বোন ও আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৫৪)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হতে খরচ করা উচিত।
২. দান করার ক্ষেত্রে ইখলাস অবলম্বন করা জরুরি।
৩. আল্লাহর পথে খরচ করাতে অনেক পুণ্য রয়েছে।
শাব্দিক অনুবাদ
৯২. لَنْ تَنَالُوا তোমরা কখনো লাভ করতে পাবে না اَلْبِرَّ পুণ্য حَتّٰى যতক্ষণ পর্যন্ত تُنْفِقُوْا তোমরা খরচ কর مِمَّا তা থেকে যা تُحِبُّوْنَ তোমরা ভালোবাস। وَمَا تُنْفِقُوْا আর তোমরা যা খরচ কর مِنْ شَيْءٍ কোন কিছু থেকে, فَاِنَّ তবে নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ بِه সে সম্পর্কে عَلِيْمٌ ভালো জানেন।
সরল অনুবাদ
৯২. তোমরা কখনো পুন্য লাভ করতে পাবে না- যতক্ষণ না তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে (আল্লাহর পথে) খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই খরচ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে ভালো জানেন। [এখানে পুণ্য লাভ করা বলতে জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে এবং ভালোবাসার জিনিস দান করা বলতে উত্তম বস্তুসমূহকে বুঝানো হয়েছে। মোটকথা এখানে সর্বোত্তম বস্তুসমূহকে দান করার প্রতি তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর পরই অনেক সাহাবী অধিক সওয়াব অর্জনের জন্য নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুসমূহ দান করতে আরম্ভ করেন। যেমন- হাদীসে এসেছে, মদিনায় আবু তালহা (রাঃ) ছিলেন অধিক সংখ্যক খেজুর বাগানের মালিক । তাঁর নিকট সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ ছিল ‘বাইরুহা’ নামক একটি বাগান। এটা ছিল মসজিদের সম্মুখে অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেখানে আসতেন এবং সেখানকার (কূপের) সুমিষ্ট পানি পান করতেন। অতঃপর যখন এ আয়াতটি নাযিল হলো, তখন আবু তালহা (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ বলেছেন, তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় করবে। আর আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হচ্ছে বাইরুহা। এটা আমি আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলাম। এর বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে পুণ্য ও তার ভান্ডার চাই। আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যেভাবে নির্দেশ দেন, আপনি এটিকে সেভাবে ব্যবহার করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, বাহ! সেটি তো অস্থায়ী সম্পদ, সেটি তো অস্থায়ী সম্পদ। তুমি যা বলেছ, তা আমি শুনেছি। আমি মত দিচ্ছি যে, তুমি সেটি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে দিয়ে দাও। তখন আবু তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা-ই করব। তারপর তিনি সেটা তার চাচাতো ভাই-বোন ও আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৫৪)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হতে খরচ করা উচিত।
২. দান করার ক্ষেত্রে ইখলাস অবলম্বন করা জরুরি।
৩. আল্লাহর পথে খরচ করাতে অনেক পুণ্য রয়েছে।
كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلًّا لِّبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اِلَّا مَا حَرَّمَ اِسْرَآئِيْلُ عَلٰى نَفْسِه مِنْ قَبْلِ اَنْ تُنَزَّلَ التَّوْرَاةُؕ قُلْ فَأْتُوْا بِالتَّوْرَاةِ فَاتْلُوْهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (৯৩) فَمَنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ (৯৪)
শাব্দিক অনুবাদ
৯৩. كُلُّ সব اَلطَّعَامِ খাদ্যই كَانَ ছিল حِلًّا হালাল لِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ বনী ইসরাঈলের জন্য, اِلَّا তবে مَا حَرَّمَ যা হারাম করে নিয়েছিল اِسْرَآئِيْلُ ইসরাঈল (ইয়াকুব) عَلٰى نَفْسِه তার নিজের উপর مِنْ قَبْلِ পূর্ব থেকেই اَنْ تُنَزَّلَ অবতীর্ণ হওয়ার اَلتَّوْرَاةُ তাওরাত। قُلْ বলো, فَأْتُوْا তবে তোমরা নিয়ে আসো بِالتَّوْرَاةِ তাওরাত فَاتْلُوْهَا এবং তা পাঠ করো اِنْ كُنْتُمْ যদি তোমরা হও صَادِقِيْنَ সত্যবাদী।
৯৪. فَمَنِ অতঃপর যারা اِفْتَرٰى আরোপ করে عَلَى اللهِ আল্লাহর উপর اَلْكَذِبَ মিথ্যাচার مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ এসব কিছুর পরও فَاُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক هُمُ তারাই اَلظَّالِمُوْنَ যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৯৩. বনী ইসরাঈলের জন্য সব খাদ্যই হালাল ছিল, তবে যা তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই ইসরাঈল (ইয়াকুব) নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিল তা ছাড়া। বলো, তবে তোমরা তাওরাত নিয়ে আসো এবং তা পাঠ করো- যদি তোমরা সত্যবাদী হও। [অত্র আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট হিসেবে দুটি বর্ণনা পাওয়া যায়। উভয় বর্ণনাই গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যুক্তিযুক্ত। তা হলো- (১) আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ইহুদীরা এক ব্যভিচারী পুরুষ ও নারীকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে নিয়ে আসল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে বললেন, তোমাদের ব্যভিচারীদেরকে তোমরা শাস্তি দাও। তারা বলল, আমরা তো এর শাস্তি হিসেবে তাদের চেহারায় কালি মেখে দেই এবং তাদেরকে প্রহার করি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তোমরা তাওরাতে কি প্রস্তর নিক্ষেপের বিধান পাও না? তারা বলল, আমরা তাতে এ ব্যাপারে কিছুই পাই না। তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তাদের বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে তাওরাত নিয়ে আসো এবং তা পাঠ করো। এরপর তাওরাত পাঠ করার সময় তাদের তাওরাত-শিক্ষক প্রস্তর নিক্ষেপ সম্পর্কিত আয়াতের উপর স্বীয় হাত রেখে নিচের অংশ পড়তে লাগল। রজমের কথা লিখা আয়াতটি পড়ছিল না। এটা দেখে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তার হাতটি রজমের আয়াতের উপর হতে সরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা কী? অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। ফলে তাদেরকে মসজিদের পার্শ্বে জানাযার স্থানের নিকট রজম করা হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১৩২৯, ৪৫৫৬)(২) ইহুদী আলেমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দাওয়াতের পথে আপত্তি উত্থাপন করতে লাগলো যে, আপনি এমন কিছু খাবার হালাল হিসেবে গণ্য করেছেন, যা পূর্ববর্তী নবীদের সময় হারাম হিসেবে গণ্য হতো। যেমন- উটের গোশত ও তার দুধ খাওয়া; অথচ ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীনে এগুলো হারাম ছিল। ইহুদীদের এসব মিথ্যা অভিযোগের জবাবেই আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতটি নাযিল করেন। এতে তিনি তাদের গোমরাহী ফাঁস করে দেন এবং বলেন যে, তোমাদের এ ধরনের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। কেননা তোমরা যে দ্বীনের অনুসারী হিসেবে দাবী করছ সেটি ইবরাহীম ও ইয়াকুব (আঃ) এর অনেক পরে নাযিল হয়েছে। তাহলে তোমরা এসব নিষেধাজ্ঞা কীভাবে ইবরাহীমের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দাবী করতে পার? দ্বিতীয়ত তোমরা যেসব বস্তু হালাল হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করছ, সেগুলো তোমাদের উপর মূলত হালালই ছিল। কিন্তু তোমাদের নিজেদের যুলুম ও অবাধ্যতার কারণে তোমাদের উপর কিছু কিছু বস্তু হারাম করে দেয়া হয়েছিল। (সূরা আনআম-৪৬) অপরদিকে কিছু কিছু বস্তু ইয়াকুব (আঃ) নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন। যেমন- উটের গোশত ও তার দুধ ইত্যাদি। সুতরাং ইয়াকুব (আঃ) এর হারামকৃত বস্তুসমূহ কেবল তার সাথেই সম্পৃক্ত। তবুও তিনি তো তাওরাত নাযিল হওয়ার অনেক পূর্বে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন।]
৯৪. অতঃপর যারা এরপরও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, তারাই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. বনী ইসরাঈলের লোকেরা কিছু কিছু খাদ্য নিজেরাই নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছিল, যা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হারাম করেননি।
২. আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা সবচেয়ে বড় যুলুম।
৩. তাওরাত কিতাব ইয়াকুব (আঃ) এর পরে অবতীর্ণ হয়েছিল।
শাব্দিক অনুবাদ
৯৩. كُلُّ সব اَلطَّعَامِ খাদ্যই كَانَ ছিল حِلًّا হালাল لِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ বনী ইসরাঈলের জন্য, اِلَّا তবে مَا حَرَّمَ যা হারাম করে নিয়েছিল اِسْرَآئِيْلُ ইসরাঈল (ইয়াকুব) عَلٰى نَفْسِه তার নিজের উপর مِنْ قَبْلِ পূর্ব থেকেই اَنْ تُنَزَّلَ অবতীর্ণ হওয়ার اَلتَّوْرَاةُ তাওরাত। قُلْ বলো, فَأْتُوْا তবে তোমরা নিয়ে আসো بِالتَّوْرَاةِ তাওরাত فَاتْلُوْهَا এবং তা পাঠ করো اِنْ كُنْتُمْ যদি তোমরা হও صَادِقِيْنَ সত্যবাদী।
৯৪. فَمَنِ অতঃপর যারা اِفْتَرٰى আরোপ করে عَلَى اللهِ আল্লাহর উপর اَلْكَذِبَ মিথ্যাচার مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ এসব কিছুর পরও فَاُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক هُمُ তারাই اَلظَّالِمُوْنَ যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৯৩. বনী ইসরাঈলের জন্য সব খাদ্যই হালাল ছিল, তবে যা তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই ইসরাঈল (ইয়াকুব) নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিল তা ছাড়া। বলো, তবে তোমরা তাওরাত নিয়ে আসো এবং তা পাঠ করো- যদি তোমরা সত্যবাদী হও। [অত্র আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট হিসেবে দুটি বর্ণনা পাওয়া যায়। উভয় বর্ণনাই গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যুক্তিযুক্ত। তা হলো- (১) আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ইহুদীরা এক ব্যভিচারী পুরুষ ও নারীকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে নিয়ে আসল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে বললেন, তোমাদের ব্যভিচারীদেরকে তোমরা শাস্তি দাও। তারা বলল, আমরা তো এর শাস্তি হিসেবে তাদের চেহারায় কালি মেখে দেই এবং তাদেরকে প্রহার করি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তোমরা তাওরাতে কি প্রস্তর নিক্ষেপের বিধান পাও না? তারা বলল, আমরা তাতে এ ব্যাপারে কিছুই পাই না। তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তাদের বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে তাওরাত নিয়ে আসো এবং তা পাঠ করো। এরপর তাওরাত পাঠ করার সময় তাদের তাওরাত-শিক্ষক প্রস্তর নিক্ষেপ সম্পর্কিত আয়াতের উপর স্বীয় হাত রেখে নিচের অংশ পড়তে লাগল। রজমের কথা লিখা আয়াতটি পড়ছিল না। এটা দেখে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তার হাতটি রজমের আয়াতের উপর হতে সরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা কী? অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। ফলে তাদেরকে মসজিদের পার্শ্বে জানাযার স্থানের নিকট রজম করা হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১৩২৯, ৪৫৫৬)(২) ইহুদী আলেমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দাওয়াতের পথে আপত্তি উত্থাপন করতে লাগলো যে, আপনি এমন কিছু খাবার হালাল হিসেবে গণ্য করেছেন, যা পূর্ববর্তী নবীদের সময় হারাম হিসেবে গণ্য হতো। যেমন- উটের গোশত ও তার দুধ খাওয়া; অথচ ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীনে এগুলো হারাম ছিল। ইহুদীদের এসব মিথ্যা অভিযোগের জবাবেই আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতটি নাযিল করেন। এতে তিনি তাদের গোমরাহী ফাঁস করে দেন এবং বলেন যে, তোমাদের এ ধরনের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। কেননা তোমরা যে দ্বীনের অনুসারী হিসেবে দাবী করছ সেটি ইবরাহীম ও ইয়াকুব (আঃ) এর অনেক পরে নাযিল হয়েছে। তাহলে তোমরা এসব নিষেধাজ্ঞা কীভাবে ইবরাহীমের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দাবী করতে পার? দ্বিতীয়ত তোমরা যেসব বস্তু হালাল হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করছ, সেগুলো তোমাদের উপর মূলত হালালই ছিল। কিন্তু তোমাদের নিজেদের যুলুম ও অবাধ্যতার কারণে তোমাদের উপর কিছু কিছু বস্তু হারাম করে দেয়া হয়েছিল। (সূরা আনআম-৪৬) অপরদিকে কিছু কিছু বস্তু ইয়াকুব (আঃ) নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন। যেমন- উটের গোশত ও তার দুধ ইত্যাদি। সুতরাং ইয়াকুব (আঃ) এর হারামকৃত বস্তুসমূহ কেবল তার সাথেই সম্পৃক্ত। তবুও তিনি তো তাওরাত নাযিল হওয়ার অনেক পূর্বে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন।]
৯৪. অতঃপর যারা এরপরও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, তারাই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. বনী ইসরাঈলের লোকেরা কিছু কিছু খাদ্য নিজেরাই নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছিল, যা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হারাম করেননি।
২. আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা সবচেয়ে বড় যুলুম।
৩. তাওরাত কিতাব ইয়াকুব (আঃ) এর পরে অবতীর্ণ হয়েছিল।
قُلْ صَدَقَ اللهُ۫ فَاتَّبِعُوْا مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاؕ وَّمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ (৯৫)
শাব্দিক অনুবাদ
৯৫. قُلْ (হে নবী!) বলো, صَدَقَ সত্য বলেছেন اَللهُ আল্লাহ। فَاتَّبِعُوْا সুতরাং তোমরা অনুসরণ করো مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ ইবরাহীমের মিল্লাতের حَنِيْفًا একনিষ্ঠভাবে। وَمَا كَانَ আর সে ছিল না مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৯৫. (হে নবী!) বলো, আল্লাহ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের মিল্লাতের (আদর্শের) অনুসরণ করো। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। [অর্থাৎ তোমরা তোমাদের সকল প্রকার গোমরাহী বাদ দিয়ে একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীম (আঃ) এর প্রকৃত দ্বীন তথা দ্বীনে ইসলামের অনুসারী হয়ে যাও। জেনে রেখো! তোমরা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি ঘটিয়ে নিজেদেরকে আইনদাতার আসনে বসিয়ে যে ধরনের শিরকে লিপ্ত রয়েছে, ইবরাহীম (আঃ) কখনো সে ধরনের শিরকে লিপ্ত ছিলেন না। বরং তিনি সারা জীবন এর বিরুধিতা করে গেছেন। সুতরাং তোমাদের এসব মিথ্যা দাবী ইবরাহীম (আঃ) এর সাথে সম্পৃক্ত করাটা মানানসই নয়।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ইবরাহীম (আঃ) এর মিল্লাত ইসলামী মিল্লাতেরই অনুরূপ।
২. বনী ইসরাঈলের লোকেরা ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসরণ করার মিথ্যা দাবী করত।
৩. ইবরাহীম (আঃ) এর মিল্লাতের মধ্যে শিরকের কোন স্থান ছিল না।
শাব্দিক অনুবাদ
৯৫. قُلْ (হে নবী!) বলো, صَدَقَ সত্য বলেছেন اَللهُ আল্লাহ। فَاتَّبِعُوْا সুতরাং তোমরা অনুসরণ করো مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ ইবরাহীমের মিল্লাতের حَنِيْفًا একনিষ্ঠভাবে। وَمَا كَانَ আর সে ছিল না مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
৯৫. (হে নবী!) বলো, আল্লাহ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের মিল্লাতের (আদর্শের) অনুসরণ করো। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। [অর্থাৎ তোমরা তোমাদের সকল প্রকার গোমরাহী বাদ দিয়ে একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীম (আঃ) এর প্রকৃত দ্বীন তথা দ্বীনে ইসলামের অনুসারী হয়ে যাও। জেনে রেখো! তোমরা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি ঘটিয়ে নিজেদেরকে আইনদাতার আসনে বসিয়ে যে ধরনের শিরকে লিপ্ত রয়েছে, ইবরাহীম (আঃ) কখনো সে ধরনের শিরকে লিপ্ত ছিলেন না। বরং তিনি সারা জীবন এর বিরুধিতা করে গেছেন। সুতরাং তোমাদের এসব মিথ্যা দাবী ইবরাহীম (আঃ) এর সাথে সম্পৃক্ত করাটা মানানসই নয়।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ইবরাহীম (আঃ) এর মিল্লাত ইসলামী মিল্লাতেরই অনুরূপ।
২. বনী ইসরাঈলের লোকেরা ইবরাহীম (আঃ) এর অনুসরণ করার মিথ্যা দাবী করত।
৩. ইবরাহীম (আঃ) এর মিল্লাতের মধ্যে শিরকের কোন স্থান ছিল না।
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ (৯৬) فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَۚ وَمَنْ دَخَلَه كَانَ اٰمِنًاؕ وَّلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَّمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ (৯৭)
শাব্দিক অনুবাদ
৯৬. اِنَّ নিশ্চয় اَوَّلَ সর্বপ্রথম بَيْتٍ ঘর وُضِعَ নির্মিত لِلنَّاسِ মানুষের জন্য (সেটিই) لَلَّذِيْ যেটি بِبَكَّةَ বাক্কায় (মক্কায় অবস্থিত) مُبَارَكًا বরকতময় وَهُدًى এবং পথনির্দেশিকা لِلْعَالَمِيْنَ বিশ্ববাসীর জন্য।
৯৭. فِيْهِ সেখানে রয়েছে اٰيَاتٌ নিদর্শনসমূহ بَيِّنَاتٌ স্পষ্ট; مَقَامُ اِبْرَاهِيْمَ মাকামে ইবরাহীম। وَمَنْ আর যে ব্যক্তি دَخَلَه তাতে প্রবেশ করবে كَانَ اٰمِنًا সে নিরাপদ وَلِلّٰهِ এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে عَلَى النَّاسِ মানুষের উপর (ফরয) حِجُّ হজ্জ করা اَلْبَيْتِ সেই ঘরে; اسْتَطَاعَ مَنِ যারা সামর্থ রাখে اِلَيْهِ তার দিকে سَبِيْلًا যাতায়াতের। وَمَنْ আর যে ব্যক্তি كَفَرَ তা অমান্য করবে فَاِنَّ তাহলে নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ غَنِيٌّ অমুখাপেক্ষী عَنِ الْعَالَمِيْنَ বিশ্ববাসী থেকে।
সরল অনুবাদ
৯৬. নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর হচ্ছে সেটিই, যেটি বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত- যেটি বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর (মানবজাতির) জন্য পথনির্দেশিকা। [এখানে ইহুদীদের আরো একটি আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। মুসলিমরা যখন বাইতুল মাকদাস থেকে কিবলা পরিবর্তন করে কাবা ঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল, তখন ইহুদীরা আপত্তি জানালো যে, তোমরা বাইতুল মাকদাসকে বাদ দিয়ে কাবাকে কিবলা হিসেবে গ্রহণ করেছো কেন? অথচ পূর্ববতী নবীগণ এই বাইতুল মাকদাসকেই কিবলা হিসেবে গ্রহণ করে আসছিল। ইতিপূর্বে সূরা বাকারাতে তাদের এই আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইহুদীরা এরপরও এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে আসছিল। ফলে এখানে পুনরায় জবাব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও ইহুদীদের এই মিথ্যা দাবীর কথা প্রমাণ হয়ে যায়। কেননা বাইবেলে বাইতুল মাকদাস সম্পর্কে এসেছে যে, মূসা (আঃ) এর ৪৫০ বছর পর সুলাইমান (আঃ) এটি নির্মাণ করেছিলেন। (১-রাজাবলী, ৬ঃ১) আর সুলাইমান (আঃ) এর আমলেই এটি তাওহীদবাদীদের কিবলা হিসেবে গণ্য হয়। (১-রাজাবলী, ৮ঃ২৯-৩০) পক্ষান্তরে সমগ্র আরববাসীর ঐক্যমতে সুদীর্ঘকালীন ধারাবাহিক বর্ণনায় একথা প্রমাণিত যে, কাবা নির্মাণ করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)। তিনি মূসা (আঃ) এর ৮/৯ শ‘ বছর আগে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। কাজেই কাবার অগ্রবর্তী অবস্থান ও নির্মাণ সন্দেহাতীতভাবে সত্য।]
৯৭. সেখানে রয়েছে (আল্লাহর) স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ [কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তা‘আলার অনেক নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে। যেমন- ধূ ধূ মরুর বুকে এ ঘরটি নির্মাণ করা, কাবা ঘরের আশেপাশের অধিবাসীদের আহার্য সরবরাহের চমৎকার ব্যবস্থা করে দেয়া, জাহিলিয়াতের কারণে আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত সমগ্র আরব ভূখন্ডে চরম অশান্তি ও নিরাপত্তা হীনতা বিরাজ করা সত্ত্বেও কেবল এই অঞ্চলের অধিবাসীগণ কর্তৃক শান্তি ও নিরাপত্তা ভোগ করা, কাবা ঘরকে ধ্বংস করতে এসে আবাবিল পাখির কঙ্কর নিক্ষেপের মাধ্যমে বাদশাহ আবরাহা ও তার সেনাদল আল্লাহর গযবে পতিত হওয়া ইত্যাদি। আরবের অধিবাসীগণ এসব নিদর্শন সম্পর্কে পূর্ব হতেই অবগত ছিল; ফলে তারা কাবা ঘরকে সর্বোচ্চ সম্মানের চোখে দেখতো।]; (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম [এটি হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ) এর পায়ের ছাপ ধারণকৃত একটি পাথর। ইবরাহীম (আঃ) যখন কাবাঘর নির্মাণ করছিলেন, তখন তিনি এই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কাবাঘরের উপরের অংশের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। ফলে এতে ইবরাহীম (আঃ) এর পায়ের ছাপ লেগে যায়।]। আর যে ব্যক্তি তাতে (মক্কায়) প্রবেশ করবে সে নিরাপদ [অর্থাৎ নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটে- এ ধরনের যে কোন কর্ম কাবা ও তার আশেপাশের এলাকা তথা হেরেম এর মধ্যে সংঘটিত করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর কষ্টের কারণ হয় এরূপ কোন কর্মও নিষিদ্ধ। যেমন- শিকার করা, গাছ কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কাবা ও তার আশেপাশের এলাকার মানুষসহ সবধরনের প্রাণির জন্যই এটি একটি নিরাপদ স্থান। কিন্তু এরপরও যারা এখানে উপরোক্ত আইন ভঙ্গ করে নিরাপত্তা ভঙ্গ করতে আসবে, আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তাদেরকে থামিয়ে দেবেন, যেমনিভাবে তিনি আবরাহার বাহিনীকে থামিয়ে দিয়েছিলেন।] এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেই ঘরে হজ্জ করা মানুষের উপর ফরয; যারা তার দিকে যাতায়াতের সামর্থ রাখে। [অর্থাৎ যারা পরিবারের স্বাভাবিক ভরণ-পোষণ বাদ দিয়ে কাবা ঘর পর্যন্ত পৌঁছা এবং সেখানে নিজের খরচ বহনপূর্বক পুনরায় পরিবারের কাছে ফিরে আসার মতো আর্থিক সক্ষমতা রাখে এবং শারীরিকভাবেও এ কাজ পূর্ণ করার মতো সুস্থতার অধিকারী হয়, তাদের উপর হজ্জ করা ফরয। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই ‘‘জিলহজ্জ্ব মাসের করণীয় ও বর্জনীয়’’।] আর যে তা অমান্য করবে (তার জেনে রাখা উচিত যে), নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসী (মানবজাতি) থেকে অমুখাপেক্ষী। [এ বাক্যটির দ্বারা ঐসব ব্যক্তিদেরকে ধমক প্রদান করা হয়েছে, যারা হজ্জ পালন করার মতো সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালন করতে অস্বীকার করে অথবা হজ্জ পালন করতে চায় না অথবা যারা আর্থিক ক্ষতির অজুহাতে হজ্জ পালনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের যুক্তি উত্থাপন করে। এখানে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, হজ্জ পালনের ব্যাপারে তোমরা যে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় করছ, যার কারণে হজ্জ পালন করছ না অথবা হজ্জ পালনের ব্যাপারে বিরুধিতায় লিপ্ত হয়েছো- এগুলো তোমাদের ঈমানী দুর্বলতা এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মুখাপেক্ষী নন; বরং তোমরাই তার মুখাপেক্ষী। তোমাদের এই সামান্য অর্থ আল্লাহর কোন উপকারে আসবে না; বরং এগুলো যদি তোমরা আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী হজ্জ পালনের মতো আর্থিক ইবাদাতসমূহের জন্য খরচ কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের অন্তরের একাগ্রতা অনুযায়ী অনেক পুরস্কার প্রদান করবেন। আর যদি না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন এবং তোমরা ইসলামের একটি ফরয বিধান পালন করতে অস্বীকার করার কারণে কাফিরে পরিণত হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর হচ্ছে কাবা ঘর।
২. মক্কার অপর নাম বাক্কা।
৩. মক্কা একটি বরকতময় স্থান।
৪. মাকামে ইবরাহীম আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম।
৫. মক্কায় প্রবেশকারীরা আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা লাভ করে থাকে।
৬. কাবা ঘরে হজ্জ পালন করা ফরয।
৭. হজ্জ কেবল সামর্থবানদের উপর ফরয।
৮. আল্লাহ তা‘আলা কারো মুখাপেক্ষী নন।
৯. কেউ হজ্জ করুক আর না করুক- তাতে আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না।
শাব্দিক অনুবাদ
৯৬. اِنَّ নিশ্চয় اَوَّلَ সর্বপ্রথম بَيْتٍ ঘর وُضِعَ নির্মিত لِلنَّاسِ মানুষের জন্য (সেটিই) لَلَّذِيْ যেটি بِبَكَّةَ বাক্কায় (মক্কায় অবস্থিত) مُبَارَكًا বরকতময় وَهُدًى এবং পথনির্দেশিকা لِلْعَالَمِيْنَ বিশ্ববাসীর জন্য।
৯৭. فِيْهِ সেখানে রয়েছে اٰيَاتٌ নিদর্শনসমূহ بَيِّنَاتٌ স্পষ্ট; مَقَامُ اِبْرَاهِيْمَ মাকামে ইবরাহীম। وَمَنْ আর যে ব্যক্তি دَخَلَه তাতে প্রবেশ করবে كَانَ اٰمِنًا সে নিরাপদ وَلِلّٰهِ এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে عَلَى النَّاسِ মানুষের উপর (ফরয) حِجُّ হজ্জ করা اَلْبَيْتِ সেই ঘরে; اسْتَطَاعَ مَنِ যারা সামর্থ রাখে اِلَيْهِ তার দিকে سَبِيْلًا যাতায়াতের। وَمَنْ আর যে ব্যক্তি كَفَرَ তা অমান্য করবে فَاِنَّ তাহলে নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ غَنِيٌّ অমুখাপেক্ষী عَنِ الْعَالَمِيْنَ বিশ্ববাসী থেকে।
সরল অনুবাদ
৯৬. নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর হচ্ছে সেটিই, যেটি বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত- যেটি বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর (মানবজাতির) জন্য পথনির্দেশিকা। [এখানে ইহুদীদের আরো একটি আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। মুসলিমরা যখন বাইতুল মাকদাস থেকে কিবলা পরিবর্তন করে কাবা ঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল, তখন ইহুদীরা আপত্তি জানালো যে, তোমরা বাইতুল মাকদাসকে বাদ দিয়ে কাবাকে কিবলা হিসেবে গ্রহণ করেছো কেন? অথচ পূর্ববতী নবীগণ এই বাইতুল মাকদাসকেই কিবলা হিসেবে গ্রহণ করে আসছিল। ইতিপূর্বে সূরা বাকারাতে তাদের এই আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইহুদীরা এরপরও এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে আসছিল। ফলে এখানে পুনরায় জবাব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও ইহুদীদের এই মিথ্যা দাবীর কথা প্রমাণ হয়ে যায়। কেননা বাইবেলে বাইতুল মাকদাস সম্পর্কে এসেছে যে, মূসা (আঃ) এর ৪৫০ বছর পর সুলাইমান (আঃ) এটি নির্মাণ করেছিলেন। (১-রাজাবলী, ৬ঃ১) আর সুলাইমান (আঃ) এর আমলেই এটি তাওহীদবাদীদের কিবলা হিসেবে গণ্য হয়। (১-রাজাবলী, ৮ঃ২৯-৩০) পক্ষান্তরে সমগ্র আরববাসীর ঐক্যমতে সুদীর্ঘকালীন ধারাবাহিক বর্ণনায় একথা প্রমাণিত যে, কাবা নির্মাণ করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)। তিনি মূসা (আঃ) এর ৮/৯ শ‘ বছর আগে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। কাজেই কাবার অগ্রবর্তী অবস্থান ও নির্মাণ সন্দেহাতীতভাবে সত্য।]
৯৭. সেখানে রয়েছে (আল্লাহর) স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ [কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তা‘আলার অনেক নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে। যেমন- ধূ ধূ মরুর বুকে এ ঘরটি নির্মাণ করা, কাবা ঘরের আশেপাশের অধিবাসীদের আহার্য সরবরাহের চমৎকার ব্যবস্থা করে দেয়া, জাহিলিয়াতের কারণে আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত সমগ্র আরব ভূখন্ডে চরম অশান্তি ও নিরাপত্তা হীনতা বিরাজ করা সত্ত্বেও কেবল এই অঞ্চলের অধিবাসীগণ কর্তৃক শান্তি ও নিরাপত্তা ভোগ করা, কাবা ঘরকে ধ্বংস করতে এসে আবাবিল পাখির কঙ্কর নিক্ষেপের মাধ্যমে বাদশাহ আবরাহা ও তার সেনাদল আল্লাহর গযবে পতিত হওয়া ইত্যাদি। আরবের অধিবাসীগণ এসব নিদর্শন সম্পর্কে পূর্ব হতেই অবগত ছিল; ফলে তারা কাবা ঘরকে সর্বোচ্চ সম্মানের চোখে দেখতো।]; (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম [এটি হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ) এর পায়ের ছাপ ধারণকৃত একটি পাথর। ইবরাহীম (আঃ) যখন কাবাঘর নির্মাণ করছিলেন, তখন তিনি এই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কাবাঘরের উপরের অংশের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। ফলে এতে ইবরাহীম (আঃ) এর পায়ের ছাপ লেগে যায়।]। আর যে ব্যক্তি তাতে (মক্কায়) প্রবেশ করবে সে নিরাপদ [অর্থাৎ নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটে- এ ধরনের যে কোন কর্ম কাবা ও তার আশেপাশের এলাকা তথা হেরেম এর মধ্যে সংঘটিত করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর কষ্টের কারণ হয় এরূপ কোন কর্মও নিষিদ্ধ। যেমন- শিকার করা, গাছ কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কাবা ও তার আশেপাশের এলাকার মানুষসহ সবধরনের প্রাণির জন্যই এটি একটি নিরাপদ স্থান। কিন্তু এরপরও যারা এখানে উপরোক্ত আইন ভঙ্গ করে নিরাপত্তা ভঙ্গ করতে আসবে, আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তাদেরকে থামিয়ে দেবেন, যেমনিভাবে তিনি আবরাহার বাহিনীকে থামিয়ে দিয়েছিলেন।] এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেই ঘরে হজ্জ করা মানুষের উপর ফরয; যারা তার দিকে যাতায়াতের সামর্থ রাখে। [অর্থাৎ যারা পরিবারের স্বাভাবিক ভরণ-পোষণ বাদ দিয়ে কাবা ঘর পর্যন্ত পৌঁছা এবং সেখানে নিজের খরচ বহনপূর্বক পুনরায় পরিবারের কাছে ফিরে আসার মতো আর্থিক সক্ষমতা রাখে এবং শারীরিকভাবেও এ কাজ পূর্ণ করার মতো সুস্থতার অধিকারী হয়, তাদের উপর হজ্জ করা ফরয। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই ‘‘জিলহজ্জ্ব মাসের করণীয় ও বর্জনীয়’’।] আর যে তা অমান্য করবে (তার জেনে রাখা উচিত যে), নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসী (মানবজাতি) থেকে অমুখাপেক্ষী। [এ বাক্যটির দ্বারা ঐসব ব্যক্তিদেরকে ধমক প্রদান করা হয়েছে, যারা হজ্জ পালন করার মতো সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালন করতে অস্বীকার করে অথবা হজ্জ পালন করতে চায় না অথবা যারা আর্থিক ক্ষতির অজুহাতে হজ্জ পালনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের যুক্তি উত্থাপন করে। এখানে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, হজ্জ পালনের ব্যাপারে তোমরা যে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় করছ, যার কারণে হজ্জ পালন করছ না অথবা হজ্জ পালনের ব্যাপারে বিরুধিতায় লিপ্ত হয়েছো- এগুলো তোমাদের ঈমানী দুর্বলতা এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মুখাপেক্ষী নন; বরং তোমরাই তার মুখাপেক্ষী। তোমাদের এই সামান্য অর্থ আল্লাহর কোন উপকারে আসবে না; বরং এগুলো যদি তোমরা আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী হজ্জ পালনের মতো আর্থিক ইবাদাতসমূহের জন্য খরচ কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের অন্তরের একাগ্রতা অনুযায়ী অনেক পুরস্কার প্রদান করবেন। আর যদি না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন এবং তোমরা ইসলামের একটি ফরয বিধান পালন করতে অস্বীকার করার কারণে কাফিরে পরিণত হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর হচ্ছে কাবা ঘর।
২. মক্কার অপর নাম বাক্কা।
৩. মক্কা একটি বরকতময় স্থান।
৪. মাকামে ইবরাহীম আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম।
৫. মক্কায় প্রবেশকারীরা আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা লাভ করে থাকে।
৬. কাবা ঘরে হজ্জ পালন করা ফরয।
৭. হজ্জ কেবল সামর্থবানদের উপর ফরয।
৮. আল্লাহ তা‘আলা কারো মুখাপেক্ষী নন।
৯. কেউ হজ্জ করুক আর না করুক- তাতে আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না।
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَاللهُ شَهِيْدٌ عَلٰى مَا تَعْمَلُوْنَ (৯৮) قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ مَنْ اٰمَنَ تَبْغُوْنَهَا عِوَجًا وَّاَنْتُمْ شُهَدَآءُؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ (৯৯)
শাব্দিক অনুবাদ
৯৮. قُلْ বলো, اَهْلَ الْكِتَابِ يَا হে আহলে কিতাব! لِمَ কেন تَكْفُرُوْنَ তোমরা অস্বীকার করছ بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর আয়াতসমূহকে? وَاللهُ অথচ আল্লাহ شَهِيْدٌ সাক্ষী রয়েছেন عَلٰى (তার) উপর مَا تَعْمَلُوْنَ তোমরা যা করছ।
৯৯. قُلْ বলো, اَهْلَ الْكِتَابِ يَا হে আহলে কিতাব! لِمَ কেন تَصُدُّوْنَ তোমরা বাধা দিচ্ছ عَنْ থেকে اللهِ سَبِيْلِ আল্লাহর পথ مَنْ যে ব্যক্তি اٰمَنَ ঈমান এনেছে تَبْغُوْنَهَا তোমরা এর দ্বারা অনুসন্ধান কর عِوَجًا বক্রতা وَاَنْتُمْ অথচ তোমরাই شُهَدَآءُ এর সাক্ষী। وَمَا اللهُ আর আল্লাহ নন بِغَافِلٍ উদাসীন عَمَّا সে ব্যাপারে যা تَعْمَلُوْنَ তোমরা কর।
সরল অনুবাদ
৯৮. (হে নবী!) বলো, হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা আল্লাহর আয়াতকে (বিধিবিধানকে) অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা যা করছ তার উপর আল্লাহ সাক্ষী রয়েছেন।
৯৯. (আরো) বলো, হে আহলে কিতাব! যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে তোমরা কেন তাকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিচ্ছ এবং এর দ্বারা (তাদের মধ্যে) বক্রতা অনুসন্ধান করছ? অথচ তোমরাই এর (সত্যতার) সাক্ষী (অর্থাৎ তাদের সঠিক পথে থাকার বিষয়টি তোমাদের কিতাবেই উল্লেখ আছে)। [অর্থাৎ তোমরা যে এসব নিকৃষ্ট কর্মসমূহ করে বেড়াচ্ছ এতে তো নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছ। আর নিজেদের কর্মের মাধ্যমে নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বড় ধরনের বোকামী। সুতরাং তোমরা এসব নিকৃষ্ট কর্ম থেকে ফিরে এসো এবং তওহীদ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ যথাযথভাবে মেনে নাও। এতে তোমাদেরই কল্যাণ রয়েছে।] আর তোমরা যা কর সে ব্যাপারে আল্লাহ গাফিল (উদাসীন) নন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আহলে কিতাবের লোকেরা জেনেশুনে আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে থাকে।
২. আল্লাহ তা‘আলা বান্দার কোন কর্মের ব্যাপারে গাফিল নন।
৩. কোন ঈমানদারকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করা মারাত্মক অপরাধ।
৪. আল্লাহর পথে কাউকে বাধা প্রদান করা বড় ধরনের গুনাহ।
শাব্দিক অনুবাদ
৯৮. قُلْ বলো, اَهْلَ الْكِتَابِ يَا হে আহলে কিতাব! لِمَ কেন تَكْفُرُوْنَ তোমরা অস্বীকার করছ بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর আয়াতসমূহকে? وَاللهُ অথচ আল্লাহ شَهِيْدٌ সাক্ষী রয়েছেন عَلٰى (তার) উপর مَا تَعْمَلُوْنَ তোমরা যা করছ।
৯৯. قُلْ বলো, اَهْلَ الْكِتَابِ يَا হে আহলে কিতাব! لِمَ কেন تَصُدُّوْنَ তোমরা বাধা দিচ্ছ عَنْ থেকে اللهِ سَبِيْلِ আল্লাহর পথ مَنْ যে ব্যক্তি اٰمَنَ ঈমান এনেছে تَبْغُوْنَهَا তোমরা এর দ্বারা অনুসন্ধান কর عِوَجًا বক্রতা وَاَنْتُمْ অথচ তোমরাই شُهَدَآءُ এর সাক্ষী। وَمَا اللهُ আর আল্লাহ নন بِغَافِلٍ উদাসীন عَمَّا সে ব্যাপারে যা تَعْمَلُوْنَ তোমরা কর।
সরল অনুবাদ
৯৮. (হে নবী!) বলো, হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা আল্লাহর আয়াতকে (বিধিবিধানকে) অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা যা করছ তার উপর আল্লাহ সাক্ষী রয়েছেন।
৯৯. (আরো) বলো, হে আহলে কিতাব! যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে তোমরা কেন তাকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিচ্ছ এবং এর দ্বারা (তাদের মধ্যে) বক্রতা অনুসন্ধান করছ? অথচ তোমরাই এর (সত্যতার) সাক্ষী (অর্থাৎ তাদের সঠিক পথে থাকার বিষয়টি তোমাদের কিতাবেই উল্লেখ আছে)। [অর্থাৎ তোমরা যে এসব নিকৃষ্ট কর্মসমূহ করে বেড়াচ্ছ এতে তো নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছ। আর নিজেদের কর্মের মাধ্যমে নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বড় ধরনের বোকামী। সুতরাং তোমরা এসব নিকৃষ্ট কর্ম থেকে ফিরে এসো এবং তওহীদ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ যথাযথভাবে মেনে নাও। এতে তোমাদেরই কল্যাণ রয়েছে।] আর তোমরা যা কর সে ব্যাপারে আল্লাহ গাফিল (উদাসীন) নন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আহলে কিতাবের লোকেরা জেনেশুনে আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে থাকে।
২. আল্লাহ তা‘আলা বান্দার কোন কর্মের ব্যাপারে গাফিল নন।
৩. কোন ঈমানদারকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করা মারাত্মক অপরাধ।
৪. আল্লাহর পথে কাউকে বাধা প্রদান করা বড় ধরনের গুনাহ।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوْا فَرِيْقًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ يَرُدُّوْكُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ كَافِرِيْنَ (১০০) وَكَيْفَ تَكْفُرُوْنَ وَاَنْتُمْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ اٰيَاتُ اللهِ وَفِيْكُمْ رَسُوْلُه ؕ وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ (১০১)
শাব্দিক অনুবাদ
১০০. يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ ওহে যারা ঈমান আনয়ন করেছো! اِنْ যদি تُطِيْعُوْا তোমরা অনুসরণ কর فَرِيْقًا একটি দলের مِنَ (ঐ দলসমূহ) হতে اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছে اَلْكِتَابَ কিতাব, يَرُدُّوْكُمْ তবে তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেবে بَعْدَ পর اِيْمَانِكُمْ তোমাদের ঈমান আনার كَافِرِيْنَ কাফির অবস্থায়।
১০১. وَكَيْفَ আর কীভাবে تَكْفُرُوْنَ তোমরা কুফরী করছ? وَاَنْتُمْ অথচ তোমরা تُتْلٰى পঠিত হয় عَلَيْكُمْ তোমাদের সামনে اٰيَاتُ আয়াতসমূহ اَللهِ আল্লাহর وَفِيْكُمْ এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে رَسُوْلُه তাঁর রাসূল। وَمَنْ আর যে ব্যক্তি يَعْتَصِمْ দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে بِاللهِ আল্লাহকে فَقَدْ সে অবশ্যই هُدِيَ পরিচালিত হবে اِلٰى صِرَاطٍ পথের দিকে مُسْتَقِيْمٍ সরল-সঠিক।
সরল অনুবাদ
১০০. হে ঈমানদারগণ! যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমরা যদি তাদের একটি দলের অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনার পর (ধীরে ধীরে) কাফির অবস্থায় ফিরিয়ে নেবে। [এটি হচ্ছে কাফিরদের ব্যাপারে মুসলিমদের জন্য সাবধানবাণী। কেননা কাফিররা কখনো কোন মুসলমানের কল্যাণ সহ্য করতে পারে না। বরং তারা সর্বদা মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। অতঃপর যখনই কোন মুসলিম কোন কারণে তাদের সাথে বন্ধুত্বে জড়াতে চায়, তখনই তারা এমন কিছু কর্ম সংঘটিত করতে বাধ্য করে, যার মাধ্যমে সে কুফরীতে পতিত হয়।]
১০১. আর কীভাবে তোমরা কুফরী করছ? অথচ তোমাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাঁর রাসূল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে সে অবশ্যই সরল-সঠিক পথে পরিচালিত হবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুসরণ করা যাবে না।
২. ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুসরণ করলে ব্যক্তি ধীরে ধীরে কাফিরে পরিণত হয়।
৩. আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে সঠিক পথ পাওয়া যাবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১০০. يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ ওহে যারা ঈমান আনয়ন করেছো! اِنْ যদি تُطِيْعُوْا তোমরা অনুসরণ কর فَرِيْقًا একটি দলের مِنَ (ঐ দলসমূহ) হতে اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছে اَلْكِتَابَ কিতাব, يَرُدُّوْكُمْ তবে তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেবে بَعْدَ পর اِيْمَانِكُمْ তোমাদের ঈমান আনার كَافِرِيْنَ কাফির অবস্থায়।
১০১. وَكَيْفَ আর কীভাবে تَكْفُرُوْنَ তোমরা কুফরী করছ? وَاَنْتُمْ অথচ তোমরা تُتْلٰى পঠিত হয় عَلَيْكُمْ তোমাদের সামনে اٰيَاتُ আয়াতসমূহ اَللهِ আল্লাহর وَفِيْكُمْ এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে رَسُوْلُه তাঁর রাসূল। وَمَنْ আর যে ব্যক্তি يَعْتَصِمْ দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে بِاللهِ আল্লাহকে فَقَدْ সে অবশ্যই هُدِيَ পরিচালিত হবে اِلٰى صِرَاطٍ পথের দিকে مُسْتَقِيْمٍ সরল-সঠিক।
সরল অনুবাদ
১০০. হে ঈমানদারগণ! যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমরা যদি তাদের একটি দলের অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনার পর (ধীরে ধীরে) কাফির অবস্থায় ফিরিয়ে নেবে। [এটি হচ্ছে কাফিরদের ব্যাপারে মুসলিমদের জন্য সাবধানবাণী। কেননা কাফিররা কখনো কোন মুসলমানের কল্যাণ সহ্য করতে পারে না। বরং তারা সর্বদা মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। অতঃপর যখনই কোন মুসলিম কোন কারণে তাদের সাথে বন্ধুত্বে জড়াতে চায়, তখনই তারা এমন কিছু কর্ম সংঘটিত করতে বাধ্য করে, যার মাধ্যমে সে কুফরীতে পতিত হয়।]
১০১. আর কীভাবে তোমরা কুফরী করছ? অথচ তোমাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাঁর রাসূল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে সে অবশ্যই সরল-সঠিক পথে পরিচালিত হবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুসরণ করা যাবে না।
২. ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুসরণ করলে ব্যক্তি ধীরে ধীরে কাফিরে পরিণত হয়।
৩. আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে সঠিক পথ পাওয়া যাবে।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِه وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ (১০২) وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا وَاذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِه ۤ اِخْوَانًاۚ وَّكُنْتُمْ عَلٰى شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنْقَذَكُمْ مِّنْهَاؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ (১০৩)
শাব্দিক অনুবাদ
১০২. يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا হে ঈমানদারগণ! اِتَّقُوا তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে حَقَّ যেভাবে উচিত تُقَاتِه তাকে ভয় করা وَلَا تَمُوْتُنَّ এবং তোমরা মৃত্যুবরণ করো না اِلَّا ব্যতীত وَاَنْتُمْ তোমরা مُسْلِمُوْنَ মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত ।
১০৩. وَاعْتَصِمُوْا আর তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো بِحَبْلِ রশিকে اَللهِ আল্লাহর جَمِيْعًا সকলে মিলে وَلَا تَفَرَّقُوْا এবং তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। وَاذْكُرُوْا তোমরা স্মরণ করো نِعْمَتَ নিয়ামতকে اَللهِ আল্লাহর عَلَيْكُمْ তোমাদের উপর দেয়া اِذْ যখন كُنْتُمْ তোমরা ছিলে اَعْدَآءً একে অপরের শত্রু, فَاَلَّفَ অতঃপর তিনি বন্ধন সৃষ্টি করে দিলেন بَيْنَ মধ্যে قُلُوْبِكُمْ তোমাদের অন্তরসমূহের। فَاَصْبَحْتُمْ ফলে তোমরা পরস্পর হয়ে গেলে بِنِعْمَتِه তাঁর অনুগ্রহে اِخْوَانًا ভাই ভাই। وَكُنْتُمْ আর তোমরা তো ছিলে عَلٰى شَفَا একেবারেই ধারপ্রান্তে حُفْرَةٍ গর্তের مِنَ النَّارِ আগুনের, فَاَنْقَذَكُمْ অতঃপর তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিলেন مِنْهَا সেখান থেকে। كَذٰلِكَ এভাবেই يُبَيِّنُ বর্ণনা করেন اَللهُ আল্লাহ لَكُمْ তোমাদের জন্য اٰيَاتِه তাঁর নিদর্শনসমূহ, لَعَلَّكُمْ যাতে তোমরা تَهْتَدُوْنَ সঠিক পথ লাভ করতে পার।
সরল অনুবাদ
১০২. হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত [অর্থাৎ ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান তোমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, মন-প্রাণ দিয়ে ততটুকুই পালন কর এবং এ ব্যাপারে কোনরূপ সীমালঙ্ঘন করো না। সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকো, বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যে লিপ্ত থাকো, আল্লাহর ছোট খাট হুকুমসমূহও গুরুত্বের সাথে পালন করো ও আল্লাহর দ্বীন মানুষের জন্য একমাত্র জীবনবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করো। তবে এদিকেও খেয়াল রেখো যে, আল্লাহর প্রতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে তোমরা যেন কাফিরদের কাতারে দাঁড়িয়ে না যাও।] এবং তোমরা মুসলিম অবস্থায় না থেকে কখনো মৃত্যুবরণ করো না। [অর্থাৎ তোমরা এমনভাবে জীবনযাপন করো, যাতে করে জীবনের কোন একটি মুহূর্ত অমুসলিম অবস্থায় অতিবাহিত না হয়। কেননা কার মৃত্যু কখন সংঘটিত হবে- এ ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা নেই। হয়তোবা এমনও হতে পারে যে, যে সময়টুকু তুমি অমুসলিম অবস্থায় কাটাবে, সেই সময়ের মধ্যেই তোমার নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়ে যাবে। ফলে তুমি তাওবা করারও সুযোগ পাবে না। আর এরূপ মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি। তোমরা যদি সর্বদা তাক্বওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পার, তাহলে আশা করা যায় যে, তোমরা এমন মৃত্যু লাভ করবে, যা তোমাদেরকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে।হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক বান্দা ঐ অবস্থার উপর পুনরুত্থিত হবে, যে অবস্থার উপর সে মারা যাবে’’- (সহীহ মুসলিম, হা/৭৪১৩)। অপর হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘সর্বশেষ আমলের উপর ফলাফল নির্ভরশীল’’- (সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১১৪)।]
১০৩. আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো [এখানে গোটা বিশ্বের মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর এটা তখনই প্রদান করা হয়েছে, যখন পূর্ববর্তী আয়াতেই তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এর দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, তাক্বওয়াবান ব্যক্তিগণ বিশ্বের যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, তারা কখনো বিভক্ত হবে না। যদি তারা কখনো কোন কারণে ভুলের মধ্যে পতিত হয়েই পড়ে, তাহলে নিজেদের তাক্বওয়ার তাগিদে সত্যকে সামনে পাওয়ার সাথে সাথেই তা গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত থাকবে। অতঃপর এই আয়াতের শুরুতেই আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরতে বলা হয়েছে। আর এখানে আল্লাহর রজ্জু বলতে ঐ দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে, যার অনুসরণ উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত তাক্বওয়াবান ব্যক্তিগণ করে থাকে। এখানে দ্বীনকে রজ্জুর সাথে এজন্যই তুলনা করা হয়েছে যে, এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা একদিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদারদের সম্পর্ক জুড়ে দেয় এবং অন্যদিকে সমস্ত ঈমানদারকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে একতাবদ্ধ করে। সুতরাং এই রজ্জুকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার অর্থ হচ্ছে, মুসলিমরা তাদের কর্মজীবনে সর্বদা এই দ্বীনকেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করবে, তার ব্যাপারেই আগ্রহ পোষণ করবে, একে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে এবং এরই খেদমত করার জন্য পরস্পর সহযোগিতা করবে।] এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। [এখানে এমন একটি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, যা পূর্বোক্ত নির্দেশ পালন না করার ফল হিসেবে সংঘটিত হয়ে থাকে অর্থাৎ অনৈক্য ও পরস্পর দলাদলি। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যেখানেই মুসলিমরা দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে এবং তাদের সমগ্র দৃষ্টি ও আগ্রহ ছোটখাট ও খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে, সেখানেই অনিবার্যভাবে তাদের মধ্যে সেই একই প্রকারের দলাদলি ও মতবিরোধ দেখা দেবে, যা ইতিপূর্বে বিভিন্ন নবীর উম্মতকে তাদের জীবনের আসল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে দুনিয়া ও আখিরাতের লাঞ্ছনার আবর্তে নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কুরআন মাজীদে এত স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বর্তমান মুসলিমগণ উপরোক্ত দুটি মূলনীতি তথা আল্লাহভীতি ও আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরা থেকে চরমভাবে বিচ্যূত হয়ে গেছে। ফলে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই পরস্পর অনৈক্য ও অবিশ্বাস বিরাজ করছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোন কোন বিষয়ে এক দল মুসলিম আরেক দল মুসলিমকে শত্রু হিসেবে দেখে থাকে। অপরদিকে ইসলামের শত্রুরা মাঝে মাঝে এ বিভেদকে সামান্য উস্কে দিয়ে বেশ উপভোগ করছে। সাহাবী ও তাবেঈদের যুগে কোন মাসআলাতে মতপার্থক্যে জড়িয়ে গেলে সাথে সাথেই তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশ অনুযায়ী কুরআন ও হাদীসের দিকে ফিরে আসত এবং এ বিষয়ে কোনরূপ দলাদলিতে লিপ্ত হতো না। অতঃপর যখনই এমন যুগের আবির্ভাব ঘটল, যখন মানুষ কুরআন ও হাদীস থেকে বিভিন্ন আলেমদের চিন্তা-গবেষণাকে প্রাধান্য দিতে শুরু করল, তখনই মুসলিমদের আনুগত্য ও আক্বীদার মূল কেন্দ্র পরিবর্তন হয়ে গেল। ফলে নানা দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেল এবং একেক দল একেক নাম ধারণ করল। এসব কিছুই হলো মুসলিমদের উপরোক্ত দুটি নির্দেশ অনুসরণ না করার ফল।] তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া নিয়ামতকে স্মরণ করো- যখন তোমরা ছিলে একে অপরের শত্রু, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তরসমূহের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে দিলেন। ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা তো ছিলে এক আগুনের গর্তের প্রান্তে, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে সেখান থেকে মুক্তি দিলেন। [এখানে অনুগ্রহ বলতে ইসলাম ধর্মকে বুঝানো হয়েছে। আর পরস্পর শত্রু বলতে ইসলাম আগমনের পূর্বে আরবের গোত্রসমূহ (বিশেষ করে আউস ও খাজরাজ গোত্র) যারা শত্রুতা ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত ছিল এবং চরম অশান্তি ভোগ করছিল, সেই অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম নামক মহা অনুগ্রহ অবতরণের মাধ্যমে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন। অত্র আয়াতে এই পরিবর্তনটিকে আগুনের গর্তের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধার করার সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ সে সময়ের অশান্তিময় অবস্থাটি ছিল আগুনের গর্তের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থাকার সমতুল্য। একটি জ্বলন্ত অগ্নিকান্ডের পার্শ্বে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে যে ধরনের কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, তখনকার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সেরূপ যন্ত্রণাময়। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এই মহা অনুগ্রহের মাধ্যমে তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে পরম প্রশান্তি দান করলেন। অত্র আয়াতে উম্মতে মুহাম্মাদীর পরবর্তী লোকদের জন্য পরোক্ষভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো- দেখো! আল্লাহ তা‘আলা কীভাবে তার অনুগ্রহ দান করেছেন? এখন যতদিন পর্যন্ত তোমরা এই অনুগ্রহটিকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা অনুরূপ প্রশান্তি ভোগ করতে পারবে। কিন্তু যখন থেকেই তোমরা এর থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করবে, তখন থেকেই তোমরা অশান্তির আগুনের গর্তের দিকে দ্রুত ধাবিত হবে। অতঃপর যদি তোমরা পুনরায় উক্ত অনুগ্রহটিকে শক্তভাবে ধারণ করতে সক্ষম হও, তাহলে পুনরায় তোমরা অনুরূপ প্রশান্তি লাভ করতে পারবে।] এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ লাভ করতে পার।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহকে যথাযথ পরিমাণ ভয় করতে হবে।
২. মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে।
৩. সর্বদা আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।
৪. মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না।
৫. কোন মুসলিম অপর মুসলিম থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না।
৬. সর্বদা আল্লাহর দেয়া নিয়ামতগুলোকে স্মরণ করতে হবে।
৭. মুসলিমগণ একে অপরের ভাই।
শাব্দিক অনুবাদ
১০২. يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا হে ঈমানদারগণ! اِتَّقُوا তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে حَقَّ যেভাবে উচিত تُقَاتِه তাকে ভয় করা وَلَا تَمُوْتُنَّ এবং তোমরা মৃত্যুবরণ করো না اِلَّا ব্যতীত وَاَنْتُمْ তোমরা مُسْلِمُوْنَ মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত ।
১০৩. وَاعْتَصِمُوْا আর তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো بِحَبْلِ রশিকে اَللهِ আল্লাহর جَمِيْعًا সকলে মিলে وَلَا تَفَرَّقُوْا এবং তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। وَاذْكُرُوْا তোমরা স্মরণ করো نِعْمَتَ নিয়ামতকে اَللهِ আল্লাহর عَلَيْكُمْ তোমাদের উপর দেয়া اِذْ যখন كُنْتُمْ তোমরা ছিলে اَعْدَآءً একে অপরের শত্রু, فَاَلَّفَ অতঃপর তিনি বন্ধন সৃষ্টি করে দিলেন بَيْنَ মধ্যে قُلُوْبِكُمْ তোমাদের অন্তরসমূহের। فَاَصْبَحْتُمْ ফলে তোমরা পরস্পর হয়ে গেলে بِنِعْمَتِه তাঁর অনুগ্রহে اِخْوَانًا ভাই ভাই। وَكُنْتُمْ আর তোমরা তো ছিলে عَلٰى شَفَا একেবারেই ধারপ্রান্তে حُفْرَةٍ গর্তের مِنَ النَّارِ আগুনের, فَاَنْقَذَكُمْ অতঃপর তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিলেন مِنْهَا সেখান থেকে। كَذٰلِكَ এভাবেই يُبَيِّنُ বর্ণনা করেন اَللهُ আল্লাহ لَكُمْ তোমাদের জন্য اٰيَاتِه তাঁর নিদর্শনসমূহ, لَعَلَّكُمْ যাতে তোমরা تَهْتَدُوْنَ সঠিক পথ লাভ করতে পার।
সরল অনুবাদ
১০২. হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত [অর্থাৎ ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান তোমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, মন-প্রাণ দিয়ে ততটুকুই পালন কর এবং এ ব্যাপারে কোনরূপ সীমালঙ্ঘন করো না। সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকো, বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যে লিপ্ত থাকো, আল্লাহর ছোট খাট হুকুমসমূহও গুরুত্বের সাথে পালন করো ও আল্লাহর দ্বীন মানুষের জন্য একমাত্র জীবনবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করো। তবে এদিকেও খেয়াল রেখো যে, আল্লাহর প্রতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে তোমরা যেন কাফিরদের কাতারে দাঁড়িয়ে না যাও।] এবং তোমরা মুসলিম অবস্থায় না থেকে কখনো মৃত্যুবরণ করো না। [অর্থাৎ তোমরা এমনভাবে জীবনযাপন করো, যাতে করে জীবনের কোন একটি মুহূর্ত অমুসলিম অবস্থায় অতিবাহিত না হয়। কেননা কার মৃত্যু কখন সংঘটিত হবে- এ ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা নেই। হয়তোবা এমনও হতে পারে যে, যে সময়টুকু তুমি অমুসলিম অবস্থায় কাটাবে, সেই সময়ের মধ্যেই তোমার নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়ে যাবে। ফলে তুমি তাওবা করারও সুযোগ পাবে না। আর এরূপ মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি। তোমরা যদি সর্বদা তাক্বওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পার, তাহলে আশা করা যায় যে, তোমরা এমন মৃত্যু লাভ করবে, যা তোমাদেরকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে।হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক বান্দা ঐ অবস্থার উপর পুনরুত্থিত হবে, যে অবস্থার উপর সে মারা যাবে’’- (সহীহ মুসলিম, হা/৭৪১৩)। অপর হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘সর্বশেষ আমলের উপর ফলাফল নির্ভরশীল’’- (সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১১৪)।]
১০৩. আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো [এখানে গোটা বিশ্বের মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর এটা তখনই প্রদান করা হয়েছে, যখন পূর্ববর্তী আয়াতেই তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এর দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, তাক্বওয়াবান ব্যক্তিগণ বিশ্বের যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, তারা কখনো বিভক্ত হবে না। যদি তারা কখনো কোন কারণে ভুলের মধ্যে পতিত হয়েই পড়ে, তাহলে নিজেদের তাক্বওয়ার তাগিদে সত্যকে সামনে পাওয়ার সাথে সাথেই তা গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত থাকবে। অতঃপর এই আয়াতের শুরুতেই আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরতে বলা হয়েছে। আর এখানে আল্লাহর রজ্জু বলতে ঐ দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে, যার অনুসরণ উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত তাক্বওয়াবান ব্যক্তিগণ করে থাকে। এখানে দ্বীনকে রজ্জুর সাথে এজন্যই তুলনা করা হয়েছে যে, এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা একদিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদারদের সম্পর্ক জুড়ে দেয় এবং অন্যদিকে সমস্ত ঈমানদারকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে একতাবদ্ধ করে। সুতরাং এই রজ্জুকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার অর্থ হচ্ছে, মুসলিমরা তাদের কর্মজীবনে সর্বদা এই দ্বীনকেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করবে, তার ব্যাপারেই আগ্রহ পোষণ করবে, একে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে এবং এরই খেদমত করার জন্য পরস্পর সহযোগিতা করবে।] এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। [এখানে এমন একটি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, যা পূর্বোক্ত নির্দেশ পালন না করার ফল হিসেবে সংঘটিত হয়ে থাকে অর্থাৎ অনৈক্য ও পরস্পর দলাদলি। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যেখানেই মুসলিমরা দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে এবং তাদের সমগ্র দৃষ্টি ও আগ্রহ ছোটখাট ও খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে, সেখানেই অনিবার্যভাবে তাদের মধ্যে সেই একই প্রকারের দলাদলি ও মতবিরোধ দেখা দেবে, যা ইতিপূর্বে বিভিন্ন নবীর উম্মতকে তাদের জীবনের আসল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে দুনিয়া ও আখিরাতের লাঞ্ছনার আবর্তে নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কুরআন মাজীদে এত স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বর্তমান মুসলিমগণ উপরোক্ত দুটি মূলনীতি তথা আল্লাহভীতি ও আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরা থেকে চরমভাবে বিচ্যূত হয়ে গেছে। ফলে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই পরস্পর অনৈক্য ও অবিশ্বাস বিরাজ করছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোন কোন বিষয়ে এক দল মুসলিম আরেক দল মুসলিমকে শত্রু হিসেবে দেখে থাকে। অপরদিকে ইসলামের শত্রুরা মাঝে মাঝে এ বিভেদকে সামান্য উস্কে দিয়ে বেশ উপভোগ করছে। সাহাবী ও তাবেঈদের যুগে কোন মাসআলাতে মতপার্থক্যে জড়িয়ে গেলে সাথে সাথেই তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশ অনুযায়ী কুরআন ও হাদীসের দিকে ফিরে আসত এবং এ বিষয়ে কোনরূপ দলাদলিতে লিপ্ত হতো না। অতঃপর যখনই এমন যুগের আবির্ভাব ঘটল, যখন মানুষ কুরআন ও হাদীস থেকে বিভিন্ন আলেমদের চিন্তা-গবেষণাকে প্রাধান্য দিতে শুরু করল, তখনই মুসলিমদের আনুগত্য ও আক্বীদার মূল কেন্দ্র পরিবর্তন হয়ে গেল। ফলে নানা দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেল এবং একেক দল একেক নাম ধারণ করল। এসব কিছুই হলো মুসলিমদের উপরোক্ত দুটি নির্দেশ অনুসরণ না করার ফল।] তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া নিয়ামতকে স্মরণ করো- যখন তোমরা ছিলে একে অপরের শত্রু, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তরসমূহের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে দিলেন। ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা তো ছিলে এক আগুনের গর্তের প্রান্তে, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে সেখান থেকে মুক্তি দিলেন। [এখানে অনুগ্রহ বলতে ইসলাম ধর্মকে বুঝানো হয়েছে। আর পরস্পর শত্রু বলতে ইসলাম আগমনের পূর্বে আরবের গোত্রসমূহ (বিশেষ করে আউস ও খাজরাজ গোত্র) যারা শত্রুতা ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত ছিল এবং চরম অশান্তি ভোগ করছিল, সেই অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম নামক মহা অনুগ্রহ অবতরণের মাধ্যমে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন। অত্র আয়াতে এই পরিবর্তনটিকে আগুনের গর্তের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধার করার সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ সে সময়ের অশান্তিময় অবস্থাটি ছিল আগুনের গর্তের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থাকার সমতুল্য। একটি জ্বলন্ত অগ্নিকান্ডের পার্শ্বে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে যে ধরনের কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, তখনকার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সেরূপ যন্ত্রণাময়। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এই মহা অনুগ্রহের মাধ্যমে তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে পরম প্রশান্তি দান করলেন। অত্র আয়াতে উম্মতে মুহাম্মাদীর পরবর্তী লোকদের জন্য পরোক্ষভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো- দেখো! আল্লাহ তা‘আলা কীভাবে তার অনুগ্রহ দান করেছেন? এখন যতদিন পর্যন্ত তোমরা এই অনুগ্রহটিকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা অনুরূপ প্রশান্তি ভোগ করতে পারবে। কিন্তু যখন থেকেই তোমরা এর থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করবে, তখন থেকেই তোমরা অশান্তির আগুনের গর্তের দিকে দ্রুত ধাবিত হবে। অতঃপর যদি তোমরা পুনরায় উক্ত অনুগ্রহটিকে শক্তভাবে ধারণ করতে সক্ষম হও, তাহলে পুনরায় তোমরা অনুরূপ প্রশান্তি লাভ করতে পারবে।] এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ লাভ করতে পার।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহকে যথাযথ পরিমাণ ভয় করতে হবে।
২. মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে।
৩. সর্বদা আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।
৪. মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না।
৫. কোন মুসলিম অপর মুসলিম থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না।
৬. সর্বদা আল্লাহর দেয়া নিয়ামতগুলোকে স্মরণ করতে হবে।
৭. মুসলিমগণ একে অপরের ভাই।
وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ (১০৪) وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ (১০৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১০৪. وَلْتَكُنْ আর থাকা আবশ্যক, مِنْكُمْ তোমাদের মধ্যে اُمَّةٌ এমন এক উম্মত (দল) يَدْعُوْنَ যারা আহবান করবে اِلَى الْخَيْرِ কল্যাণের দিকে وَيَأْمُرُوْنَ এবং আদেশ দেবে بِالْمَعْرُوْفِ সৎকাজের وَيَنْهَوْنَ ও নিষেধ করবে عَنِ থেকে اَلْمُنْكَرِ অসৎকাজ। وَاُولٰٓئِكَ ঐসব লোক هُمُ তারাই হবে اَلْمُفْلِحُوْنَ সফলকামদের অন্তর্ভুক্ত।
১০৫. وَلَا تَكُوْنُوْا আর তোমরা হয়ো না, كَالَّذِيْنَ তাদের মতো যারা تَفَرَّقُوْا বিচ্ছিন্ন হয়েছে وَاخْتَلَفُوْا এবং মতভেদে লিপ্ত হয়েছে مِنْ ۢبَعْدِ পরও مَا جَآءَهُمُ তাদের কাছে যা এসেছে اَلْبَيِّنَاتُ স্পষ্ট প্রমাণাদি। وَاُولٰٓئِكَ আর ঐসব লোক لَهُمْ তাদের জন্যই রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি عَظِيْمٌ মহা।
সরল অনুবাদ
১০৪. তোমাদের মধ্য থেকে এমন এক উম্মত (দল) থাকা আবশ্যক, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। (তাহলে) তারাই হবে (প্রকৃত) সফলকাম। [এখানে ঐ দলটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা পূর্বের আয়াতে বর্ণিত নির্দেশনা দুটি যথাযথভাবে পালন করবে তথা যারা আল্লাহভীতি অর্জন করবে এবং আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে। কেননা তারা এই নির্দেশনার তাগিদেই এই আয়াতে বর্ণিত গুণে গুণান্বিত হবে অর্থাৎ তারা মানুষকে কেবল কল্যাণকর বিষয়সমূহের দিকে আহবান করবে এবং অকল্যাণকর বিষয়সমূহ হতে নিষেধ করবে। তারা যেখানেই কোন অকল্যাণকর কর্ম সংঘটিত হতে দেখবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এ ক্ষেত্রে তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করার জন্য সচেষ্ট থাকবে, যেমনিভাবে হাদীসে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোন অপছন্দনীয় (কথা বা কর্ম) দেখতে পাবে, তখন সে যেন হাত দ্বারা বাধা প্রদান করে। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে সে যেন কথার মাধ্যমে বাধা প্রদান করে। তা-ও সম্ভব না হলে সে যেন অন্তর দ্বারা তা প্রতিহত করে। আর এটিই হচ্ছে দুর্বলতম ঈমান। (সহীহ মুসলিম, হা/৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৪০১৩)সুতরাং এই দলটি সর্বদা হক্বের উপর অটল থাকবে এবং কখনো মতবাদে জড়াবে না এবং নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহেও লিপ্ত হবে না। বরং এরা বিশ্বের যে কোন জায়গাতেই অবস্থান করুক না কেন তারা প্রত্যেকেই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের ব্যাপারে একই মত পোষণ করবে এবং ছোট-খাট বিষয়সমূহ নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। তারা সর্বদা ইসলামকে শক্তভাবে ধারণ করে থাকবে এবং কুফরকে পরিত্যাগ করবে। তারা ইসলাম ও কুফরকে কখনো মিশ্রিত করার চেষ্টা করবে না এবং তাগুতের ভয়ে কখনো কোন কুফরকে প্রশ্রয় দিবে না- এমনকি তারা কুফরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। এই আয়াতের সমর্থনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও অনুরূপ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। যেমন- (ক) আবুদল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বনী ইসরাঈলরা ৭২টি দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে। আর একটি দল ছাড়া বাকি সবগুলোই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, আমি এবং আমার সাথিগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি তারা। (তিরমিযী, হা/২৬৪১; মিশকাত, হা/১৭১)(খ) মু‘আবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে থাকবে, তাদের বিরুধিরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০৩)রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দিয়ে থাকেন। আর মুসলিমদের একটি দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়াই করবে। যারা তাদের প্রতি বিরূপ ভাব পোষণ করবে তাদের উপর তারা কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৫০৬৫)]
১০৫. আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। আর তাদের জন্যই রয়েছে মহাশাস্তি। [এখানে পূর্ববর্তী নবীদের এমন সব উম্মতের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত জ্ঞান সম্পর্কে অবগত ছিল এবং তারা সেটারই অনুসরণ করত। এতদ্বসত্ত্বেও তারা নবীদের অনুপস্থিতিতে তাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল, যা তাদেরকে শেষ পর্যন্ত সত্য দ্বীন থেকেই বিচ্যুত করে দিয়েছিল। আর তারা দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে এমনভাবে মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল যে, আল্লাহ তাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তারা সেগুলোকেও ভুলে গিয়েছিল। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের এরূপ কর্মের কারণে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। সুতরাং বর্তমানেও কেউ যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) কর্তৃক প্রচারিত ও প্রসারিত দ্বীনের সাথে এরূপ করে তথা বিদআত চালু করে, তাহলে তাদেরকেও উপরোক্ত জাতির মতো অনুরূপ কর্মফল ভোগ করতে হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সর্বদা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিতে হবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে হবে।
২. মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পুণ্যের কাজ।
৩. স্পষ্ট প্রমাণাদি থাকার পরও মতভেদে লিপ্ত হওয়া এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া চরম ভ্রষ্টতার অন্তর্ভুক্ত।
শাব্দিক অনুবাদ
১০৪. وَلْتَكُنْ আর থাকা আবশ্যক, مِنْكُمْ তোমাদের মধ্যে اُمَّةٌ এমন এক উম্মত (দল) يَدْعُوْنَ যারা আহবান করবে اِلَى الْخَيْرِ কল্যাণের দিকে وَيَأْمُرُوْنَ এবং আদেশ দেবে بِالْمَعْرُوْفِ সৎকাজের وَيَنْهَوْنَ ও নিষেধ করবে عَنِ থেকে اَلْمُنْكَرِ অসৎকাজ। وَاُولٰٓئِكَ ঐসব লোক هُمُ তারাই হবে اَلْمُفْلِحُوْنَ সফলকামদের অন্তর্ভুক্ত।
১০৫. وَلَا تَكُوْنُوْا আর তোমরা হয়ো না, كَالَّذِيْنَ তাদের মতো যারা تَفَرَّقُوْا বিচ্ছিন্ন হয়েছে وَاخْتَلَفُوْا এবং মতভেদে লিপ্ত হয়েছে مِنْ ۢبَعْدِ পরও مَا جَآءَهُمُ তাদের কাছে যা এসেছে اَلْبَيِّنَاتُ স্পষ্ট প্রমাণাদি। وَاُولٰٓئِكَ আর ঐসব লোক لَهُمْ তাদের জন্যই রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি عَظِيْمٌ মহা।
সরল অনুবাদ
১০৪. তোমাদের মধ্য থেকে এমন এক উম্মত (দল) থাকা আবশ্যক, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। (তাহলে) তারাই হবে (প্রকৃত) সফলকাম। [এখানে ঐ দলটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা পূর্বের আয়াতে বর্ণিত নির্দেশনা দুটি যথাযথভাবে পালন করবে তথা যারা আল্লাহভীতি অর্জন করবে এবং আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে। কেননা তারা এই নির্দেশনার তাগিদেই এই আয়াতে বর্ণিত গুণে গুণান্বিত হবে অর্থাৎ তারা মানুষকে কেবল কল্যাণকর বিষয়সমূহের দিকে আহবান করবে এবং অকল্যাণকর বিষয়সমূহ হতে নিষেধ করবে। তারা যেখানেই কোন অকল্যাণকর কর্ম সংঘটিত হতে দেখবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এ ক্ষেত্রে তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করার জন্য সচেষ্ট থাকবে, যেমনিভাবে হাদীসে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোন অপছন্দনীয় (কথা বা কর্ম) দেখতে পাবে, তখন সে যেন হাত দ্বারা বাধা প্রদান করে। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে সে যেন কথার মাধ্যমে বাধা প্রদান করে। তা-ও সম্ভব না হলে সে যেন অন্তর দ্বারা তা প্রতিহত করে। আর এটিই হচ্ছে দুর্বলতম ঈমান। (সহীহ মুসলিম, হা/৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৪০১৩)সুতরাং এই দলটি সর্বদা হক্বের উপর অটল থাকবে এবং কখনো মতবাদে জড়াবে না এবং নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহেও লিপ্ত হবে না। বরং এরা বিশ্বের যে কোন জায়গাতেই অবস্থান করুক না কেন তারা প্রত্যেকেই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের ব্যাপারে একই মত পোষণ করবে এবং ছোট-খাট বিষয়সমূহ নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। তারা সর্বদা ইসলামকে শক্তভাবে ধারণ করে থাকবে এবং কুফরকে পরিত্যাগ করবে। তারা ইসলাম ও কুফরকে কখনো মিশ্রিত করার চেষ্টা করবে না এবং তাগুতের ভয়ে কখনো কোন কুফরকে প্রশ্রয় দিবে না- এমনকি তারা কুফরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। এই আয়াতের সমর্থনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও অনুরূপ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। যেমন- (ক) আবুদল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বনী ইসরাঈলরা ৭২টি দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে। আর একটি দল ছাড়া বাকি সবগুলোই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, আমি এবং আমার সাথিগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি তারা। (তিরমিযী, হা/২৬৪১; মিশকাত, হা/১৭১)(খ) মু‘আবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে থাকবে, তাদের বিরুধিরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০৩)রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দিয়ে থাকেন। আর মুসলিমদের একটি দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়াই করবে। যারা তাদের প্রতি বিরূপ ভাব পোষণ করবে তাদের উপর তারা কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৫০৬৫)]
১০৫. আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। আর তাদের জন্যই রয়েছে মহাশাস্তি। [এখানে পূর্ববর্তী নবীদের এমন সব উম্মতের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত জ্ঞান সম্পর্কে অবগত ছিল এবং তারা সেটারই অনুসরণ করত। এতদ্বসত্ত্বেও তারা নবীদের অনুপস্থিতিতে তাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল, যা তাদেরকে শেষ পর্যন্ত সত্য দ্বীন থেকেই বিচ্যুত করে দিয়েছিল। আর তারা দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে এমনভাবে মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল যে, আল্লাহ তাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তারা সেগুলোকেও ভুলে গিয়েছিল। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের এরূপ কর্মের কারণে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। সুতরাং বর্তমানেও কেউ যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) কর্তৃক প্রচারিত ও প্রসারিত দ্বীনের সাথে এরূপ করে তথা বিদআত চালু করে, তাহলে তাদেরকেও উপরোক্ত জাতির মতো অনুরূপ কর্মফল ভোগ করতে হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সর্বদা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিতে হবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে হবে।
২. মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পুণ্যের কাজ।
৩. স্পষ্ট প্রমাণাদি থাকার পরও মতভেদে লিপ্ত হওয়া এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া চরম ভ্রষ্টতার অন্তর্ভুক্ত।
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَّتَسْوَدُّ وُجُوْهٌۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اسْوَدَّتْ وُجُوْهُهُمْ۫ اَكَفَرْتُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ (১০৬) وَاَمَّا الَّذِيْنَ ابْيَضَّتْ وُجُوْهُهُمْ فَفِيْ رَحْمَةِ اللهِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ (১০৭) تِلْكَ اٰيَاتُ اللهِ نَتْلُوْهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّؕ وَمَا اللهُ يُرِيْدُ ظُلْمًا لِّلْعَالَمِيْنَ (১০৮) وَلِلّٰهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ وَاِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْاُمُوْرُ (১০৯)
শাব্দিক অনুবাদ
১০৬. يَوْمَ সেদিন تَبْيَضُّ উজ্জ্বল হবে وُجُوْهٌ কিছু চেহারা وَتَسْوَدُّ এবং কালো হবে وُجُوْهٌ কিছু চেহারা। فَاَمَّا অতঃপর اَلَّذِيْنَ যাদের اِسْوَدَّتْ কালো হবে وُجُوْهُهُمْ তাদের চেহারা, اَكَفَرْتُمْ তোমরা কি কুফরী করেছিলে بَعْدَ পর اِيْمَانِكُمْ তোমাদের ঈমান আনার? فَذُوْقُوْا সুতরাং তোমরা ভোগ করো اَلْعَذَابَ শাস্তি بِمَا সে কারণে যা كُنْتُمْ তোমরা تَكْفُرُوْنَ কুফরী করতে।
১০৭. وَاَمَّا আর اَلَّذِيْنَ যাদের اِبْيَضَّتْ উজ্জ্বল হবে وُجُوْهُهُمْ তাদের চেহারা فَفِيْ তারা থাকবে رَحْمَةِ রহমতে اَللهِ আল্লাহর। هُمْ তারা فِيْهَا সেখানে خَالِدُوْنَ চিরস্থায়ী হবে।
১০৮. تِلْكَ এগুলো হলো اٰيَاتُ নিদর্শনসমূহ اَللهِ আল্লাহর, نَتْلُوْهَا আমি তা পাঠ করছি عَلَيْكَ তোমার নিকট بِالْحَقِّ যথাযথভাবে। وَمَا আর না اَللهُ আল্লাহ يُرِيْدُ চান ظُلْمًا অবিচার করতে لِلْعَالَمِيْنَ বিশ্ববাসীর প্রতি ।
১০৯. وَلِلّٰهِ আল্লাহর জন্য مَا যা কিছু আছে فِي মধ্যে اَلسَّمَاوَاتِ আকাশসমূহের وَمَا এবং যা কিছু আছে فِي মধ্যে اَلْاَرْضِ জমিনের وَاِلَى এবং দিকেই اَللهِ আল্লাহর تُرْجَعُ প্রত্যাবর্তিত হবে اَلْاُمُوْرُ সকল বিষয়।
সরল অনুবাদ
১০৬. সেদিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং কিছু চেহারা হবে কালো। অতঃপর যাদের চেহারা কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি তোমাদের ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা যে কুফরী করতে তার কারণে শাস্তি ভোগ করো।
১০৭. আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে (জান্নাতে) থাকবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। [এই আয়াতদ্বয়ে দুটি দল ও তাদের পরিণাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো- উজ্জ্বল চেহারা ধারণকারী দল। আর অপরটি হচ্ছে- কালো চেহারা ধারণকারী দল। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, উজ্জ্বল চেহারা ধারণকারী দলটি হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত। আর কালো চেহারা ধারণকারী দলটি হলো আহলে বিদআত। (ফাতহুল কাদীর, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর)]
১০৮. এগুলো হলো আল্লাহর নিদর্শন, আমি তা তোমার নিকট যথাযথভাবে পাঠ করছি। আর আল্লাহ বিশ্ববাসীর (মানবজাতির) প্রতি অবিচার করতে চান না। [অর্থাৎ কোনরূপ দিক নির্দেশনা বা হেদায়াত প্রেরণ না করেই আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিতে চান না। অত্র আয়াতে এ বিষয়টিকেই যুলুম হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে যত মানুষকে প্রেরণ করেন, প্রত্যেককেই তিনি জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করার উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রেরণ করেন। আর সাধারণ বিবেকের দাবী হচ্ছে, পরীক্ষার শুরুতেই পরীক্ষার্থীকে যাবতীয় নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবহিত করা। যেমন- পরীক্ষার হলের ভেতরে কিরূপ আচরণ করা যাবে এবং কিরূপ আচরণ করা যাবে না, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেমন হবে, কীভাবে উত্তরপত্র লিখলে বেশি নাম্বার পাওয়া যাবে ইত্যাদি। সুতরাং যদি এরূপ না করেই কারো পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়, তাহলে সেটি অবশ্যই যুলুম হিসেবে গণ্য হবে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন মহাবিজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী। তার পক্ষে এরূপ বিবেক বহির্ভূত কাজ করা একেবারেই বেমানান। এ কারণে তিনি তার বান্দাদেরকে পৃথিবীতে পরীক্ষার্থী হিসেবে প্রেরণ করার সাথে সাথে অতি দয়াপরবশ হয়ে এমন সব ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করেছেন, যাতে করে তারা অতি সহজেই উত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারে। যেমন- জন্মের পূর্বে গ্রহণকৃত সকল মানুষের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া, ইসলামকে একমাত্র জীবনবিধান হিসেবে নির্ধারিত করে দেয়া, সৎকর্ম ও অসৎকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়া, দুনিয়ার কর্মফল হিসেবে আখিরাতের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়া ইত্যাদি।]
১০৯. আকাশসমূহে যা কিছু আছে এবং জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর এবং সকল বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। [অর্থাৎ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করছে সবকিছু তিনি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কিয়ামতের দিন মানুষসহ সমস্ত সৃষ্টিকেই তার সামনে উপস্থিত করা হবে। সেদিন তিনি বিচারকের আসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন এবং সমস্ত সৃষ্টি তথা নিয়ামতকে মানুষের ভালো অথবা মন্দ কাজের জন্য সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড় করাবেন। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেই বেঁচে থাকো।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিয়ামতের দিন ঈমানদারদের চেহারা হবে উজ্জ্বল বর্ণের এবং কাফিরদের চেহারা হবে কালো।
২. কিয়ামতের দিন উজ্জ্বল চেহারাধারীরা আল্লাহর রহমত লাভ করে ধন্য হবে।
৩. আকাশ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিকানা একমাত্র আল্লাহর।
৪. দুনিয়ার সবকিছু আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়।
শাব্দিক অনুবাদ
১০৬. يَوْمَ সেদিন تَبْيَضُّ উজ্জ্বল হবে وُجُوْهٌ কিছু চেহারা وَتَسْوَدُّ এবং কালো হবে وُجُوْهٌ কিছু চেহারা। فَاَمَّا অতঃপর اَلَّذِيْنَ যাদের اِسْوَدَّتْ কালো হবে وُجُوْهُهُمْ তাদের চেহারা, اَكَفَرْتُمْ তোমরা কি কুফরী করেছিলে بَعْدَ পর اِيْمَانِكُمْ তোমাদের ঈমান আনার? فَذُوْقُوْا সুতরাং তোমরা ভোগ করো اَلْعَذَابَ শাস্তি بِمَا সে কারণে যা كُنْتُمْ তোমরা تَكْفُرُوْنَ কুফরী করতে।
১০৭. وَاَمَّا আর اَلَّذِيْنَ যাদের اِبْيَضَّتْ উজ্জ্বল হবে وُجُوْهُهُمْ তাদের চেহারা فَفِيْ তারা থাকবে رَحْمَةِ রহমতে اَللهِ আল্লাহর। هُمْ তারা فِيْهَا সেখানে خَالِدُوْنَ চিরস্থায়ী হবে।
১০৮. تِلْكَ এগুলো হলো اٰيَاتُ নিদর্শনসমূহ اَللهِ আল্লাহর, نَتْلُوْهَا আমি তা পাঠ করছি عَلَيْكَ তোমার নিকট بِالْحَقِّ যথাযথভাবে। وَمَا আর না اَللهُ আল্লাহ يُرِيْدُ চান ظُلْمًا অবিচার করতে لِلْعَالَمِيْنَ বিশ্ববাসীর প্রতি ।
১০৯. وَلِلّٰهِ আল্লাহর জন্য مَا যা কিছু আছে فِي মধ্যে اَلسَّمَاوَاتِ আকাশসমূহের وَمَا এবং যা কিছু আছে فِي মধ্যে اَلْاَرْضِ জমিনের وَاِلَى এবং দিকেই اَللهِ আল্লাহর تُرْجَعُ প্রত্যাবর্তিত হবে اَلْاُمُوْرُ সকল বিষয়।
সরল অনুবাদ
১০৬. সেদিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং কিছু চেহারা হবে কালো। অতঃপর যাদের চেহারা কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি তোমাদের ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা যে কুফরী করতে তার কারণে শাস্তি ভোগ করো।
১০৭. আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে (জান্নাতে) থাকবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। [এই আয়াতদ্বয়ে দুটি দল ও তাদের পরিণাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো- উজ্জ্বল চেহারা ধারণকারী দল। আর অপরটি হচ্ছে- কালো চেহারা ধারণকারী দল। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, উজ্জ্বল চেহারা ধারণকারী দলটি হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত। আর কালো চেহারা ধারণকারী দলটি হলো আহলে বিদআত। (ফাতহুল কাদীর, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর)]
১০৮. এগুলো হলো আল্লাহর নিদর্শন, আমি তা তোমার নিকট যথাযথভাবে পাঠ করছি। আর আল্লাহ বিশ্ববাসীর (মানবজাতির) প্রতি অবিচার করতে চান না। [অর্থাৎ কোনরূপ দিক নির্দেশনা বা হেদায়াত প্রেরণ না করেই আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিতে চান না। অত্র আয়াতে এ বিষয়টিকেই যুলুম হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে যত মানুষকে প্রেরণ করেন, প্রত্যেককেই তিনি জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করার উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রেরণ করেন। আর সাধারণ বিবেকের দাবী হচ্ছে, পরীক্ষার শুরুতেই পরীক্ষার্থীকে যাবতীয় নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবহিত করা। যেমন- পরীক্ষার হলের ভেতরে কিরূপ আচরণ করা যাবে এবং কিরূপ আচরণ করা যাবে না, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেমন হবে, কীভাবে উত্তরপত্র লিখলে বেশি নাম্বার পাওয়া যাবে ইত্যাদি। সুতরাং যদি এরূপ না করেই কারো পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়, তাহলে সেটি অবশ্যই যুলুম হিসেবে গণ্য হবে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন মহাবিজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী। তার পক্ষে এরূপ বিবেক বহির্ভূত কাজ করা একেবারেই বেমানান। এ কারণে তিনি তার বান্দাদেরকে পৃথিবীতে পরীক্ষার্থী হিসেবে প্রেরণ করার সাথে সাথে অতি দয়াপরবশ হয়ে এমন সব ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করেছেন, যাতে করে তারা অতি সহজেই উত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারে। যেমন- জন্মের পূর্বে গ্রহণকৃত সকল মানুষের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া, ইসলামকে একমাত্র জীবনবিধান হিসেবে নির্ধারিত করে দেয়া, সৎকর্ম ও অসৎকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়া, দুনিয়ার কর্মফল হিসেবে আখিরাতের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়া ইত্যাদি।]
১০৯. আকাশসমূহে যা কিছু আছে এবং জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর এবং সকল বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। [অর্থাৎ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করছে সবকিছু তিনি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কিয়ামতের দিন মানুষসহ সমস্ত সৃষ্টিকেই তার সামনে উপস্থিত করা হবে। সেদিন তিনি বিচারকের আসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন এবং সমস্ত সৃষ্টি তথা নিয়ামতকে মানুষের ভালো অথবা মন্দ কাজের জন্য সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড় করাবেন। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেই বেঁচে থাকো।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কিয়ামতের দিন ঈমানদারদের চেহারা হবে উজ্জ্বল বর্ণের এবং কাফিরদের চেহারা হবে কালো।
২. কিয়ামতের দিন উজ্জ্বল চেহারাধারীরা আল্লাহর রহমত লাভ করে ধন্য হবে।
৩. আকাশ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিকানা একমাত্র আল্লাহর।
৪. দুনিয়ার সবকিছু আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়।
كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِؕ وَلَوْ اٰمَنَ اَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْؕ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَاَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُوْنَ (১১০)
শাব্দিক অনুবাদ
১১০. كُنْتُمْ তোমরাই خَيْرَ اُمَّةٍ শ্রেষ্ঠ উম্মত, اُخْرِجَتْ বের করা হয়েছে لِلنَّاسِ মানুষের (কল্যাণের) জন্য। تَأْمُرُوْنَ তোমরা আদেশ করবে بِالْمَعْرُوْفِ সৎকাজের وَتَنْهَوْنَ এবং নিষেধ করবে عَنِ থেকে اَلْمُنْكَرِ অসৎ কাজ وَتُؤْمِنُوْنَ আর তোমরা ঈমান আনবে بِاللهِ আল্লাহর উপর। وَلَوْ আর যদি اٰمَنَ ঈমান আনত اَهْلُ الْكِتَابِ আহলে কিতাবরা, لَكَانَ তাহলে তা হতো خَيْرًا কল্যাণকর لَهُمْ তাদের জন্য। مِنْهُمُ (তবে) তাদের মধ্যে اَلْمُؤْمِنُوْنَ কত ঈমানদার রয়েছে; وَاَكْثَرُهُمُ কিন্তু তাদের অধিকাংশই اَلْفَاسِقُوْنَ ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
১১০. তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, যাদেরকে মানুষের (কল্যাণের) জন্য বের করা (সৃষ্টি করা) হয়েছে। [অর্থাৎ তোমাদেরকে এমন একটি আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে, যেখানে ইতিপূর্বে বনী ইসরাঈল অধিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু তারা সেটি ধরে রাখতে পারেনি; বরং তারা নিজেদের অযোগ্যতার কারণে সেখান থেকে বিচ্যূত হয়ে গেছে। ফলে এখন তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। কেননা যোগ্যতার দিক থেকে বর্তমানে তোমরাই তাদের থেকে অধিক অগ্রগামী। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, মানুষের জন্য মানুষ কল্যাণকর তখনই হয়, যখন তাদের গ্রীবাদেশে (আল্লাহর আনুগত্যের) শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসে। অতঃপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৫৭) অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ আয়াতটির ব্যাপারে বলেন, অবশ্যই তোমরাই দুনিয়াতে ৭০ সংখ্যা পূর্ণকারী দল। তোমরাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট সর্বোত্তম ও মর্যাদাসম্পন্ন। (তিরমিযী, হা/৩০০১)] তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে এবং তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে (বিশ্বাস স্থাপন করবে)। [এগুলো হচ্ছে শ্রেষ্ঠ উম্মতের আসনে অধিষ্ঠিত থাকার মৌলিক গুণাবলি। যেহেতু এসব বিষয়ে বনী ইসরাঈলকে আদেশ দেয়ার পরও তারা তা অমান্য করেছিল, সুতরাং তাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মতের আসন থেকে অপসারণ করে তোমাদেরকে সেই মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সুতরাং এখন তোমরা যতদিন পর্যন্ত এই গুণাবলি যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা এই আসনেই অধিষ্ঠিত থাকবে। আর যখনই তোমরা এই গুণাবলি থেকে বিচ্যুত হবে, তখনই তোমাদের উপর অপমান ও লাঞ্ছনার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে।] আর আহলে কিতাবরা যদি ঈমান আনত, তাহলে তাদের জন্য কল্যাণকর হতো। [অর্থাৎ এখনও যদি তারা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ঈমান আনয়ন করে, তাহলে তারা তোমাদের সাথে মিলিত হয়ে পুনরায় শ্রেষ্ঠ উম্মতের আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে।] (তবে) তাদের মধ্যে কতক ঈমানদার (বিশ্বাসী) রয়েছে [অর্থাৎ তাদের মধ্যে অল্পকিছু লোক এমন রয়েছে যে, তারা সত্যকে অনুধাবন করতে পারে এবং সত্যকে গ্রহণের প্রতি আগ্রহী থাকে। ফলে যখনই তাদেরকে দ্বীনের পথে দাওয়াত প্রদান করা হয়, তখন তারা সহজেই বুঝে নেয় যে, এটিই সত্য দ্বীন। অতঃপর ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় গ্রহণ করে পরম প্রশান্তি অনুভব করে।]; কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসিক (পাপাচারী)। [অর্থাৎ তাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করে বেড়ায়। তারা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ঈমান আনয়ন করে না। বরং তারা তাঁর সাথে অনেক সৃষ্টিকে শরীক করে থাকে। তারা নিজেদের অনেক মতবাদকে দ্বীনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। অতঃপর তারা তাদের বিকৃত দ্বীনকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছে যে, সত্য দ্বীনের শীতল হাওয়া তাদের গায়ে সহ্য হয় না। ফলে এই দ্বীনের প্রচার ও প্রসার দেখে তারা আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এর বিরুধিতায় লিপ্ত হয়। তারা সর্বদা এই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে যে, কখন ইসলাম ও তার অনুসারীদের সামান্যতম ক্ষতি করা যাবে। তাদের এরূপ আচরণে সত্য দ্বীনের অনুসারী তথা মুসলিমগণ যাতে কোনরূপ বিভ্রান্তে পতিত না হয়, সেজন্যই পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করেছেন এবং একটি স্থায়ী সুসংবাদ প্রদান করেছেন।]
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈমানদার ও সৎকর্মশীল লোকেরাই দুনিয়ার মধ্যে আগত সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত।
২. ঈমানদারগণ সর্বদা মানুষের জন্য কল্যাণকার ব্যক্তিত্ব।
৩. সৎকাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৪. আহলে কিতাবের অধিকাংশই ফাসিক তথা পাপাচারী।
৫. আহলে কিতাবের মধ্যেও কিছু কিছু লোক ঈমান আনয়ন করে থাকে।
শাব্দিক অনুবাদ
১১০. كُنْتُمْ তোমরাই خَيْرَ اُمَّةٍ শ্রেষ্ঠ উম্মত, اُخْرِجَتْ বের করা হয়েছে لِلنَّاسِ মানুষের (কল্যাণের) জন্য। تَأْمُرُوْنَ তোমরা আদেশ করবে بِالْمَعْرُوْفِ সৎকাজের وَتَنْهَوْنَ এবং নিষেধ করবে عَنِ থেকে اَلْمُنْكَرِ অসৎ কাজ وَتُؤْمِنُوْنَ আর তোমরা ঈমান আনবে بِاللهِ আল্লাহর উপর। وَلَوْ আর যদি اٰمَنَ ঈমান আনত اَهْلُ الْكِتَابِ আহলে কিতাবরা, لَكَانَ তাহলে তা হতো خَيْرًا কল্যাণকর لَهُمْ তাদের জন্য। مِنْهُمُ (তবে) তাদের মধ্যে اَلْمُؤْمِنُوْنَ কত ঈমানদার রয়েছে; وَاَكْثَرُهُمُ কিন্তু তাদের অধিকাংশই اَلْفَاسِقُوْنَ ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
১১০. তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, যাদেরকে মানুষের (কল্যাণের) জন্য বের করা (সৃষ্টি করা) হয়েছে। [অর্থাৎ তোমাদেরকে এমন একটি আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে, যেখানে ইতিপূর্বে বনী ইসরাঈল অধিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু তারা সেটি ধরে রাখতে পারেনি; বরং তারা নিজেদের অযোগ্যতার কারণে সেখান থেকে বিচ্যূত হয়ে গেছে। ফলে এখন তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। কেননা যোগ্যতার দিক থেকে বর্তমানে তোমরাই তাদের থেকে অধিক অগ্রগামী। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, মানুষের জন্য মানুষ কল্যাণকর তখনই হয়, যখন তাদের গ্রীবাদেশে (আল্লাহর আনুগত্যের) শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসে। অতঃপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৫৭) অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ আয়াতটির ব্যাপারে বলেন, অবশ্যই তোমরাই দুনিয়াতে ৭০ সংখ্যা পূর্ণকারী দল। তোমরাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট সর্বোত্তম ও মর্যাদাসম্পন্ন। (তিরমিযী, হা/৩০০১)] তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে এবং তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে (বিশ্বাস স্থাপন করবে)। [এগুলো হচ্ছে শ্রেষ্ঠ উম্মতের আসনে অধিষ্ঠিত থাকার মৌলিক গুণাবলি। যেহেতু এসব বিষয়ে বনী ইসরাঈলকে আদেশ দেয়ার পরও তারা তা অমান্য করেছিল, সুতরাং তাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মতের আসন থেকে অপসারণ করে তোমাদেরকে সেই মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সুতরাং এখন তোমরা যতদিন পর্যন্ত এই গুণাবলি যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা এই আসনেই অধিষ্ঠিত থাকবে। আর যখনই তোমরা এই গুণাবলি থেকে বিচ্যুত হবে, তখনই তোমাদের উপর অপমান ও লাঞ্ছনার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে।] আর আহলে কিতাবরা যদি ঈমান আনত, তাহলে তাদের জন্য কল্যাণকর হতো। [অর্থাৎ এখনও যদি তারা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ঈমান আনয়ন করে, তাহলে তারা তোমাদের সাথে মিলিত হয়ে পুনরায় শ্রেষ্ঠ উম্মতের আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে।] (তবে) তাদের মধ্যে কতক ঈমানদার (বিশ্বাসী) রয়েছে [অর্থাৎ তাদের মধ্যে অল্পকিছু লোক এমন রয়েছে যে, তারা সত্যকে অনুধাবন করতে পারে এবং সত্যকে গ্রহণের প্রতি আগ্রহী থাকে। ফলে যখনই তাদেরকে দ্বীনের পথে দাওয়াত প্রদান করা হয়, তখন তারা সহজেই বুঝে নেয় যে, এটিই সত্য দ্বীন। অতঃপর ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় গ্রহণ করে পরম প্রশান্তি অনুভব করে।]; কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসিক (পাপাচারী)। [অর্থাৎ তাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করে বেড়ায়। তারা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ঈমান আনয়ন করে না। বরং তারা তাঁর সাথে অনেক সৃষ্টিকে শরীক করে থাকে। তারা নিজেদের অনেক মতবাদকে দ্বীনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। অতঃপর তারা তাদের বিকৃত দ্বীনকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছে যে, সত্য দ্বীনের শীতল হাওয়া তাদের গায়ে সহ্য হয় না। ফলে এই দ্বীনের প্রচার ও প্রসার দেখে তারা আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এর বিরুধিতায় লিপ্ত হয়। তারা সর্বদা এই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে যে, কখন ইসলাম ও তার অনুসারীদের সামান্যতম ক্ষতি করা যাবে। তাদের এরূপ আচরণে সত্য দ্বীনের অনুসারী তথা মুসলিমগণ যাতে কোনরূপ বিভ্রান্তে পতিত না হয়, সেজন্যই পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করেছেন এবং একটি স্থায়ী সুসংবাদ প্রদান করেছেন।]
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. ঈমানদার ও সৎকর্মশীল লোকেরাই দুনিয়ার মধ্যে আগত সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত।
২. ঈমানদারগণ সর্বদা মানুষের জন্য কল্যাণকার ব্যক্তিত্ব।
৩. সৎকাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৪. আহলে কিতাবের অধিকাংশই ফাসিক তথা পাপাচারী।
৫. আহলে কিতাবের মধ্যেও কিছু কিছু লোক ঈমান আনয়ন করে থাকে।
لَنْ يَّضُرُّوْكُمْ اِلَّاۤ اَذًىؕ وَّاِنْ يُّقَاتِلُوْكُمْ يُوَلُّوْكُمُ الْاَدْبَارَ۫ ثُمَّ لَا يُنْصَرُوْنَ (১১১) ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ اَيْنَ مَا ثُقِفُوْاۤ اِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللهِ وَحَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَبَآءُوْا بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّؕ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ (১১২)
শাব্দিক অনুবাদ
১১১. لَنْ يَّضُرُّوْكُمْ কখনো তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না اِلَّا ছাড়া اَذًى কষ্ট দেয়া। وَاِنْ আর যদি يُقَاتِلُوْكُمْ তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, يُوَلُّوْكُمُ তাহলে তারা তোমাদেরকে প্রদর্শন করবে الْاَدْبَارَ পৃষ্ঠ; ثُمَّ অতঃপর لَا يُنْصَرُوْنَ তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।
১১২. ضُرِبَتْ পতিত হবে عَلَيْهِمُ তাদের উপর اَلذِّلَّةُ লাঞ্ছনা اَيْنَ مَا যেখানেই ثُقِفُوْا তাদেরকে পাওয়া যাবে اِلَّا ছাড়া بِحَبْلٍ রশি (নিরাপত্তা ব্যবস্থা) مِنَ থেকে اَللهِ আল্লাহর وَحَبْلٍ এবং রশি (ছাড়া) مِنَ থেকে اَلنَّاسِ মানুষের। وَبَآءُوْا তারা নিয়ে এসেছে بِغَضَبٍ ক্রোধকে مِنَ থেকে اَللهِ আল্লাহর وَضُرِبَتْ এবং আপতিত করা হয়েছে عَلَيْهِمُ তাদের উপর اَلْمَسْكَنَةُ দারিদ্রকে। ذٰلِكَ এসব এজন্য যে, بِاَنَّهُمْ নিশ্চয় তারা كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ তারা অস্বীকার করত بِاٰيَاتِ নিদর্শনসমূহকে اَللهِ আল্লাহর وَيَقْتُلُوْنَ এবং তারা হত্যা করত اَلْاَنْۢبِيَآءَ নবীদেরকে بِغَيْرِ حَقٍّ অন্যায়ভাবে। ذٰلِكَ بِمَا আর এটা এ কারণে যে, عَصَوْا তারা অবাধ্য হয়েছিল وَكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ এবং তারা সীমালঙ্ঘন করেছিল।
সরল অনুবাদ
১১১. (সামান্য) কষ্ট দেয়া ছাড়া কখনো তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [এখানে ক্ষতি বলতে দুনিয়ার ক্ষতি তথা আর্থিক অবরোধ, মৌখিক ভয়ভীতি, কটুক্তি ও অপবাদ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদি। অথচ প্রকৃতপক্ষে এগুলো মুমিনের জন্য কোন ক্ষতি নয়; বরং বড় ধরনের পুরস্কারের পূর্বাভাষ। কেননা দুনিয়াতে মুমিনগণ যতধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হোক না কেন, সেগুলো তাদের গুনাসমূহের কাফফারা হিসেবে গণ্য হয় অথবা সেগুলোর মাধ্যমে তাদের আখিরাতের জীবনে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়- এমনকি সে শহীদদের কাতারে উন্নীত হয়। আর একজন মুমিনের দুনিয়ার জীবনে এটাই হলো মূল লক্ষ্য। এখানে মুমিনদের জন্য আরো একটি সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে, কাফিররা তোমাদেরকে যত বড় ধরনের ভয়ভীতিই প্রদান করুক না কেন, তাদের এই শক্তি নেই যে, তারা তোমাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেবে অথবা তারা অনুরূপ বড় ধরনের কোন ক্ষতি করতে পারবে। বরং তারা তোমাদেরকে ততটুকুই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে, যতটুকু ক্ষতি আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ব্যাপারে চাইবেন।] আর যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তারা তোমাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে (পালাবে) [এখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে উদাহরণ পেশ করা হয়েছে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তারা যদি মুসলিমদেরকে এই চূড়ান্ত ক্ষেত্রেই পরাজিত করতে না পারে, তাহলে ছোটখাট ভয়ভীতি প্রদর্শন, অপবাদ রটানো, আর্থিক অবরোধ আরোপ ইত্যাদি কষ্ট দিয়ে কী আর ক্ষতি করতে পারবে।]; অতঃপর তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না। [এখানে সাহায্য করার প্রসঙ্গ এজন্যই আনা হয়েছে যে, যখন কোন দল পরাজিত হওয়ার উপক্রম হয়, তখন তারা অপর কোন পক্ষ হতে সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়ার জোর আশা পোষণ করে থাকে। আর প্রকৃত সাহায্য এসে থাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে। কিন্তু কাফিররা যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে অনুরূপ বিপদে পতিত হবে, তখন তারা সেটি পাবে না। কেননা তারা এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, যারা সুযোগ্য দল হিসেবে আল্লাহরই সাহায্যপ্রাপ্ত। আর যাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য থাকে দুনিয়ার সমস্ত দল মিলেও তাদেরকে পরাজিত করতে পারে না। সুতরাং হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা করো এবং তাঁরই পথে এগিয়ে যাও; তোমাদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।]
১১২. আল্লাহর পক্ষ থেকে রশি (নিরাপত্তা ব্যবস্থা) ছাড়া ও মানুষের পক্ষ থেকে রশি ছাড়া তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে তাদের উপর লাঞ্ছনা লেপন করা হবে। [এই আয়াতটি ইহুদীদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তারা আর কখনো নিজেদের ক্ষমতাবলে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না অথবা অনুরূপ সম্মান ও মর্যাদা লাভ করতে পারবে না, যেভাবে তারা ইতিপূর্বে বিশ্ববাসীর উপর মর্যাদা লাভ করেছিল। বরং তারা এখন থেকে যেখানেই বসবাস করুক না কেন, সেখানেই তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে লাঞ্ছনা ও অপমান নেমে আসবে। তারা যদি এই লাঞ্ছনা থেকে বাঁচতে চায়, তাহলে এই আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী হয় তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে যেতে হবে; অন্যথায় ইসলামী দেশে বসবাস করার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর দিতে হবে।] তারা আল্লাহর ক্রোধকে (ডেকে) নিয়ে এসেছে এবং তাদের উপর দারিদ্রকে আপতিত করা হয়েছে। এসব এজন্য যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। আর এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং তারা সীমালঙ্ঘন করেছিল। [এ অপরাধগুলো ইহুদীদের উপর অপমান ও লাঞ্ছনা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, এতে বর্তমান বিশ্ববাসীর জন্য একটি বড় ধরনের শিক্ষা রয়েছে। আর তা হলো- এখনও যদি কেউ ইহুদীদের অনুসরণ করে তথা নাস্তিকদের মতো বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে বেড়ায়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশনা অমান্য করে, নবীদের অনুপস্থিতিতে তাদের ওয়ারিশ তথা আলেমদেরকে অপমান করে, তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, সত্য বলার কারণে তাদের উপর নির্যাতন চালায়, দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে, তাহলে তাদের উপরও অনুরূপ আযাব নেমে আসতে পারে। সুতরাং হে বিশ্ববাসী! তোমরা ইহুদীদের অনুসরণ করা থেকে বিরত থাক এবং তাদেরকে সহযোগিতা প্রদান করা থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ কর।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হলে কাফিরদের পক্ষ হতে আগত কষ্ট সহ্য করতে হবে।
২. কাফিররা সর্বদা মুসলিমদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে থাকে।
৩. যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা কাফিরদের বৈশিষ্ট্য।
৪. সর্বযুগে কাফিরদের উপর লাঞ্ছনা বর্ষিত হয়।
৫. আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করা মারাত্মক অন্যায়।
শাব্দিক অনুবাদ
১১১. لَنْ يَّضُرُّوْكُمْ কখনো তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না اِلَّا ছাড়া اَذًى কষ্ট দেয়া। وَاِنْ আর যদি يُقَاتِلُوْكُمْ তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, يُوَلُّوْكُمُ তাহলে তারা তোমাদেরকে প্রদর্শন করবে الْاَدْبَارَ পৃষ্ঠ; ثُمَّ অতঃপর لَا يُنْصَرُوْنَ তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।
১১২. ضُرِبَتْ পতিত হবে عَلَيْهِمُ তাদের উপর اَلذِّلَّةُ লাঞ্ছনা اَيْنَ مَا যেখানেই ثُقِفُوْا তাদেরকে পাওয়া যাবে اِلَّا ছাড়া بِحَبْلٍ রশি (নিরাপত্তা ব্যবস্থা) مِنَ থেকে اَللهِ আল্লাহর وَحَبْلٍ এবং রশি (ছাড়া) مِنَ থেকে اَلنَّاسِ মানুষের। وَبَآءُوْا তারা নিয়ে এসেছে بِغَضَبٍ ক্রোধকে مِنَ থেকে اَللهِ আল্লাহর وَضُرِبَتْ এবং আপতিত করা হয়েছে عَلَيْهِمُ তাদের উপর اَلْمَسْكَنَةُ দারিদ্রকে। ذٰلِكَ এসব এজন্য যে, بِاَنَّهُمْ নিশ্চয় তারা كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ তারা অস্বীকার করত بِاٰيَاتِ নিদর্শনসমূহকে اَللهِ আল্লাহর وَيَقْتُلُوْنَ এবং তারা হত্যা করত اَلْاَنْۢبِيَآءَ নবীদেরকে بِغَيْرِ حَقٍّ অন্যায়ভাবে। ذٰلِكَ بِمَا আর এটা এ কারণে যে, عَصَوْا তারা অবাধ্য হয়েছিল وَكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ এবং তারা সীমালঙ্ঘন করেছিল।
সরল অনুবাদ
১১১. (সামান্য) কষ্ট দেয়া ছাড়া কখনো তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [এখানে ক্ষতি বলতে দুনিয়ার ক্ষতি তথা আর্থিক অবরোধ, মৌখিক ভয়ভীতি, কটুক্তি ও অপবাদ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদি। অথচ প্রকৃতপক্ষে এগুলো মুমিনের জন্য কোন ক্ষতি নয়; বরং বড় ধরনের পুরস্কারের পূর্বাভাষ। কেননা দুনিয়াতে মুমিনগণ যতধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হোক না কেন, সেগুলো তাদের গুনাসমূহের কাফফারা হিসেবে গণ্য হয় অথবা সেগুলোর মাধ্যমে তাদের আখিরাতের জীবনে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়- এমনকি সে শহীদদের কাতারে উন্নীত হয়। আর একজন মুমিনের দুনিয়ার জীবনে এটাই হলো মূল লক্ষ্য। এখানে মুমিনদের জন্য আরো একটি সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে, কাফিররা তোমাদেরকে যত বড় ধরনের ভয়ভীতিই প্রদান করুক না কেন, তাদের এই শক্তি নেই যে, তারা তোমাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেবে অথবা তারা অনুরূপ বড় ধরনের কোন ক্ষতি করতে পারবে। বরং তারা তোমাদেরকে ততটুকুই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে, যতটুকু ক্ষতি আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ব্যাপারে চাইবেন।] আর যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তারা তোমাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে (পালাবে) [এখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে উদাহরণ পেশ করা হয়েছে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তারা যদি মুসলিমদেরকে এই চূড়ান্ত ক্ষেত্রেই পরাজিত করতে না পারে, তাহলে ছোটখাট ভয়ভীতি প্রদর্শন, অপবাদ রটানো, আর্থিক অবরোধ আরোপ ইত্যাদি কষ্ট দিয়ে কী আর ক্ষতি করতে পারবে।]; অতঃপর তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না। [এখানে সাহায্য করার প্রসঙ্গ এজন্যই আনা হয়েছে যে, যখন কোন দল পরাজিত হওয়ার উপক্রম হয়, তখন তারা অপর কোন পক্ষ হতে সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়ার জোর আশা পোষণ করে থাকে। আর প্রকৃত সাহায্য এসে থাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে। কিন্তু কাফিররা যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে অনুরূপ বিপদে পতিত হবে, তখন তারা সেটি পাবে না। কেননা তারা এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, যারা সুযোগ্য দল হিসেবে আল্লাহরই সাহায্যপ্রাপ্ত। আর যাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য থাকে দুনিয়ার সমস্ত দল মিলেও তাদেরকে পরাজিত করতে পারে না। সুতরাং হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা করো এবং তাঁরই পথে এগিয়ে যাও; তোমাদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।]
১১২. আল্লাহর পক্ষ থেকে রশি (নিরাপত্তা ব্যবস্থা) ছাড়া ও মানুষের পক্ষ থেকে রশি ছাড়া তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে তাদের উপর লাঞ্ছনা লেপন করা হবে। [এই আয়াতটি ইহুদীদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তারা আর কখনো নিজেদের ক্ষমতাবলে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না অথবা অনুরূপ সম্মান ও মর্যাদা লাভ করতে পারবে না, যেভাবে তারা ইতিপূর্বে বিশ্ববাসীর উপর মর্যাদা লাভ করেছিল। বরং তারা এখন থেকে যেখানেই বসবাস করুক না কেন, সেখানেই তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে লাঞ্ছনা ও অপমান নেমে আসবে। তারা যদি এই লাঞ্ছনা থেকে বাঁচতে চায়, তাহলে এই আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী হয় তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে যেতে হবে; অন্যথায় ইসলামী দেশে বসবাস করার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর দিতে হবে।] তারা আল্লাহর ক্রোধকে (ডেকে) নিয়ে এসেছে এবং তাদের উপর দারিদ্রকে আপতিত করা হয়েছে। এসব এজন্য যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। আর এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং তারা সীমালঙ্ঘন করেছিল। [এ অপরাধগুলো ইহুদীদের উপর অপমান ও লাঞ্ছনা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, এতে বর্তমান বিশ্ববাসীর জন্য একটি বড় ধরনের শিক্ষা রয়েছে। আর তা হলো- এখনও যদি কেউ ইহুদীদের অনুসরণ করে তথা নাস্তিকদের মতো বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে বেড়ায়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশনা অমান্য করে, নবীদের অনুপস্থিতিতে তাদের ওয়ারিশ তথা আলেমদেরকে অপমান করে, তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, সত্য বলার কারণে তাদের উপর নির্যাতন চালায়, দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে, তাহলে তাদের উপরও অনুরূপ আযাব নেমে আসতে পারে। সুতরাং হে বিশ্ববাসী! তোমরা ইহুদীদের অনুসরণ করা থেকে বিরত থাক এবং তাদেরকে সহযোগিতা প্রদান করা থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ কর।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হলে কাফিরদের পক্ষ হতে আগত কষ্ট সহ্য করতে হবে।
২. কাফিররা সর্বদা মুসলিমদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে থাকে।
৩. যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা কাফিরদের বৈশিষ্ট্য।
৪. সর্বযুগে কাফিরদের উপর লাঞ্ছনা বর্ষিত হয়।
৫. আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করা মারাত্মক অন্যায়।
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ (১১৩) يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُسَارِعُوْنَ فِي الْخَيْرَاتِؕ وَاُولٰٓئِكَ مِنَ الصَّالِحِيْنَ (১১৪) وَمَا يَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ يُّكْفَرُوْهُؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ (১১৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১১৩. لَيْسُوْا তারা নয় سَوَآءً সমান। مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ আহলে কিতাবের মধ্যে اُمَّةٌ একটি দল রয়েছে قَآئِمَةٌ অটল, يَتْلُوْنَ তারা পাঠ করে اٰيَاتِ আয়াতসমূহ اَللهِ আল্লাহর اٰنَآءَ বেলায় اَللَّيْلِ রাতের وَهُمْ এবং তারা يَسْجُدُوْنَ সিজদা করে।
১১৪. يُؤْمِنُوْنَ তারা বিশ্বাস করে بِاللهِ আল্লাহর প্রতি وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ ও শেষ দিবসের প্রতি, وَيَأْمُرُوْنَ এবং তারা আদেশ দেয় بِالْمَعْرُوْفِ সৎকাজের, وَيَنْهَوْنَ এবং তারা নিষেধ করে عَنِ থেকে اَلْمُنْكَرِ অসৎ কাজ وَيُسَارِعُوْنَ এবং তারা দ্রুত অগ্রসর হয় فِي الْخَيْرَاتِ কল্যাণের কাজে। وَاُولٰٓئِكَ আর তারাই مِنَ الصَّالِحِيْنَ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
১১৫. وَمَا يَفْعَلُوْا আর তারা যাই করে مِنْ থেকে خَيْرٍ কল্যাণকর (কাজ) فَلَنْ يُّكْفَرُوْهُ কিছুতেই তা অস্বীকার করা হবে না। وَاللهُ আর আল্লাহ عَلِيْمٌ অধিক পরিজ্ঞাত بِالْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদের সম্পর্কে।
সরল অনুবাদ
১১৩. তারা (আহলে কিতাবরা সবাই) সমান নয়। আহলে কিতাবের মধ্যে (সত্যের উপর) অটল একটি দল রয়েছে, তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সিজদা করে।
১১৪. তারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে এবং কল্যাণের কাজে দ্রুত অগ্রসর হয়; আর তারাই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
১১৫. (সুতরাং) তারা যে কল্যাণকর কাজই করে কিছুতেই তা অস্বীকার করা হবে না। আর আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন। [অত্র আয়াতে আহলে কিতাবের ঐ দলটির কথা বলা হয়েছে, যারা আকীদা-বিশ্বাস ও আচার-ব্যবহারের দিক থেকে মুসলিমদের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। তারা অন্যদের মতো মুসলিমদের বিরুধিতায় লিপ্ত হতো না, সত্যকে পাওয়ার পর তারা তা প্রত্যাখ্যান করত না, তাদের মধ্যেও আল্লাহভীতি ছিল, তারাও যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদাত করত। যেমন- আবদুল্লাহ ইবনে সালাম, উসায়েদ ইবনে উবায়েদ, সা‘লাবা ও উসায়েদ প্রমুখ।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আহলে কিতাবের মধ্যের একটি দল রয়েছে, যারা সত্যের উপর অটল।
২. রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ তথা কুরআন পাঠ করা এবং অধিক সিজদা করা অনেক সওয়াবের কাজ।
৩. কল্যাণকর কাজে খুব দ্রুত অগ্রসর হওয়া উচিত।
৪. সর্বদা মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিতে হবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে হবে।
৫. আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।
৬. আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাবের সৎলোকদেরও সৎকর্মের প্রতিদান দান করবেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১১৩. لَيْسُوْا তারা নয় سَوَآءً সমান। مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ আহলে কিতাবের মধ্যে اُمَّةٌ একটি দল রয়েছে قَآئِمَةٌ অটল, يَتْلُوْنَ তারা পাঠ করে اٰيَاتِ আয়াতসমূহ اَللهِ আল্লাহর اٰنَآءَ বেলায় اَللَّيْلِ রাতের وَهُمْ এবং তারা يَسْجُدُوْنَ সিজদা করে।
১১৪. يُؤْمِنُوْنَ তারা বিশ্বাস করে بِاللهِ আল্লাহর প্রতি وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ ও শেষ দিবসের প্রতি, وَيَأْمُرُوْنَ এবং তারা আদেশ দেয় بِالْمَعْرُوْفِ সৎকাজের, وَيَنْهَوْنَ এবং তারা নিষেধ করে عَنِ থেকে اَلْمُنْكَرِ অসৎ কাজ وَيُسَارِعُوْنَ এবং তারা দ্রুত অগ্রসর হয় فِي الْخَيْرَاتِ কল্যাণের কাজে। وَاُولٰٓئِكَ আর তারাই مِنَ الصَّالِحِيْنَ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
১১৫. وَمَا يَفْعَلُوْا আর তারা যাই করে مِنْ থেকে خَيْرٍ কল্যাণকর (কাজ) فَلَنْ يُّكْفَرُوْهُ কিছুতেই তা অস্বীকার করা হবে না। وَاللهُ আর আল্লাহ عَلِيْمٌ অধিক পরিজ্ঞাত بِالْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদের সম্পর্কে।
সরল অনুবাদ
১১৩. তারা (আহলে কিতাবরা সবাই) সমান নয়। আহলে কিতাবের মধ্যে (সত্যের উপর) অটল একটি দল রয়েছে, তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সিজদা করে।
১১৪. তারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে এবং কল্যাণের কাজে দ্রুত অগ্রসর হয়; আর তারাই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
১১৫. (সুতরাং) তারা যে কল্যাণকর কাজই করে কিছুতেই তা অস্বীকার করা হবে না। আর আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন। [অত্র আয়াতে আহলে কিতাবের ঐ দলটির কথা বলা হয়েছে, যারা আকীদা-বিশ্বাস ও আচার-ব্যবহারের দিক থেকে মুসলিমদের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। তারা অন্যদের মতো মুসলিমদের বিরুধিতায় লিপ্ত হতো না, সত্যকে পাওয়ার পর তারা তা প্রত্যাখ্যান করত না, তাদের মধ্যেও আল্লাহভীতি ছিল, তারাও যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদাত করত। যেমন- আবদুল্লাহ ইবনে সালাম, উসায়েদ ইবনে উবায়েদ, সা‘লাবা ও উসায়েদ প্রমুখ।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আহলে কিতাবের মধ্যের একটি দল রয়েছে, যারা সত্যের উপর অটল।
২. রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ তথা কুরআন পাঠ করা এবং অধিক সিজদা করা অনেক সওয়াবের কাজ।
৩. কল্যাণকর কাজে খুব দ্রুত অগ্রসর হওয়া উচিত।
৪. সর্বদা মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিতে হবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে হবে।
৫. আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।
৬. আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাবের সৎলোকদেরও সৎকর্মের প্রতিদান দান করবেন।
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ وَّاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ (১১৬) مَثَلُ مَا يُنْفِقُوْنَ فِي هٰذِهِ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيْحٍ فِيْهَا صِرٌّ اَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍ ظَلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فَاَهْلَكَتْهُؕ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللهُ وَلٰكِنْ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ (১১৭)
শাব্দিক অনুবাদ
১১৬. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে لَنْ تُغْنِيَ কখনো আসবে না عَنْهُم তাদের (উপকারে) اَمْوَالُهُمْ তাদের ধন-সম্পদ وَلَاۤ এবং না اَوْلَادُهُمْ তাদের সন্তান-সন্ততি مِنَ اللهِ আল্লাহর নিকট شَيْئًا কোন প্রকার। وَاُولٰٓئِكَ আর তারাই হবে اَصْحَابُ অধিবাসী اَلنَّارِ আগুনের, هُمْ তারা فِيْهَا সেখানে خَالِدُوْنَ চিরস্থায়ী হবে।
১১৭. مَثَلُ উদাহরণ مَا يُنْفِقُوْنَ তারা যা খরচ করছে فِي মধ্যে هٰذِهِ এই اَلْحَيَاةِ الدُّنْيَا দুনিয়াবী জীবনে كَمَثَلِ মতো رِيْحٍ ঐ বাতাসের, فِيْهَا যাতে রয়েছে صِرٌّ অতি ঠান্ডা; اَصَابَتْ তা আঘাত করল حَرْثَ শস্যক্ষেতে قَوْمٍ এমন এক সম্প্রদায়ের, ظَلَمُوْا যারা যুলুম করেছিল اَنْفُسَهُمْ তাদের নিজেদের উপর। فَاَهْلَكَتْهُ অতঃপর তা এটাকে ধ্বংস করে দিল। وَمَا ظَلَمَهُمُ আর তাদের উপর কোন যুলুম করেননি اَللهُ আল্লাহ وَلٰكِنْ বরং اَنْفُسَهُمْ নিজেদের উপরই يَظْلِمُوْنَ তারা যুলুম করেছে।
সরল অনুবাদ
১১৬. নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে আল্লাহর (শাস্তির) মোকাবেলায় তাদের সন্তান-সন্ততি এবং ধন-সম্পদ কিছুতেই কোন প্রকার কাজে আসবে না। আর তারাই হবে আগুনের (জাহান্নামের) অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। [তারা নিজেদের ঈমানের পরিবর্তে কুফরীকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং আখিরাতের সুখ-শান্তিকে অবিশ্বাস করে দুনিয়ার সুখ-শান্তিকেই বড় করে দেখেছে- অতঃপর এই তাড়নাতেই তারা বৈধ অথবা অবৈধ উপায়ে অনেক সম্পদ জমা করেছে এবং তারা নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে অন্যতম শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে অন্যান্য মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে বেড়িয়েছে, তাদের এসব প্রতিপত্তি আখিরাতে কোন কাজে আসবে না। বরং সেদিন তার কাছ থেকে এগুলো ছিনিয়ে নেয়া হবে। দুনিয়াতে তারা যে বিষয়টিকে অস্বীকার করে আসছিল, সেটি যখন তারা সরাসরি নিজের চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং দুনিয়াতে অর্জিত প্রভাব-প্রতিপত্তিকেও অকেজো হিসেবে পাবে, তখন তারা সাথে সাথেই হতভম্ব হয়ে যাবে। অবশেষে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।]
১১৭. এ দুনিয়াবী জীবনে তারা যা খরচ করছে তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ বাতাসের সাথে, যাতে রয়েছে অতি ঠান্ডা; তা আঘাত করল এমন এক সম্প্রদায়ের শস্যক্ষেতে, যারা তাদের নিজেদের উপর যুলুম করেছিল। অতঃপর তা এটাকে ধ্বংস করে দিল। [এখানে বাতাস মানে হচ্ছে মানুষের বাহ্যিক কল্যাণাকাঙ্ক্ষা, যার ভিত্তিতে কাফিররা জনকল্যাণমূলক কাজ এবং দান খয়রাত ইত্যাদিতে অর্থ ব্যয় করে থাকে। আর তুষারকণা হচ্ছে, সঠিক ঈমান ও আল্লাহর বিধান অনুসৃতির অভাব, যার ফলে তাদের সমগ্র জীবন মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। আর শস্যক্ষেত মানে হচ্ছে মানুষের পার্থিব জীবন। এ উপমাটির সাহায্যে আল্লাহ তা‘আলা এটা বুঝিয়েছেন যে, শস্যক্ষেতের পরিচর্যার ক্ষেত্রে বাতাস যেমন উপকারী তেমনি আবার এই বাতাসের মধ্যে যদি তুষারকণা থাকে, তাহলে তা শস্যক্ষেতকে ধ্বংস করে দেয়। ঠিক তেমনি দান-খয়রাত যদিও মানুষের আখিরাতের ক্ষেতের পরিচর্যা করে; কিন্তু এর মধ্যে কুফরীর বিষ মিশ্রিত থাকলে তা লাভজনক হওয়ার পরিবর্তে মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।] আর আল্লাহ তাদের উপর কোন যুলুম করেননি বরং তারাই নিজেদের উপর যুলুম করেছে। [এখানে সৎ কাজের প্রতিদান নষ্ট হয়ে যাওয়াকে যুলুম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়ী হচ্ছে তারা নিজেরাই। কেননা তাদের নিজেদের কুফরী কর্মের কারণেই এসব হয়েছে; আল্লাহ তা‘আলা তো কেবল তাদের কর্মের প্রতিফল ঘটিয়েছেন মাত্র। তারা যদি এসব কুকর্ম না করত, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মের সর্বোত্তম পুরস্কার দিতেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর শাস্তি হতে মুক্তির জন্য কাফিরদের সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ কোন কিছুই গ্রহণ করা হবে না।
২. কাফিরদের আমলের ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল, যা সামান্য আঘাতেই নিঃশেষ হয়ে যায়।
৩. কাফিররা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করে থাকে।
শাব্দিক অনুবাদ
১১৬. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে لَنْ تُغْنِيَ কখনো আসবে না عَنْهُم তাদের (উপকারে) اَمْوَالُهُمْ তাদের ধন-সম্পদ وَلَاۤ এবং না اَوْلَادُهُمْ তাদের সন্তান-সন্ততি مِنَ اللهِ আল্লাহর নিকট شَيْئًا কোন প্রকার। وَاُولٰٓئِكَ আর তারাই হবে اَصْحَابُ অধিবাসী اَلنَّارِ আগুনের, هُمْ তারা فِيْهَا সেখানে خَالِدُوْنَ চিরস্থায়ী হবে।
১১৭. مَثَلُ উদাহরণ مَا يُنْفِقُوْنَ তারা যা খরচ করছে فِي মধ্যে هٰذِهِ এই اَلْحَيَاةِ الدُّنْيَا দুনিয়াবী জীবনে كَمَثَلِ মতো رِيْحٍ ঐ বাতাসের, فِيْهَا যাতে রয়েছে صِرٌّ অতি ঠান্ডা; اَصَابَتْ তা আঘাত করল حَرْثَ শস্যক্ষেতে قَوْمٍ এমন এক সম্প্রদায়ের, ظَلَمُوْا যারা যুলুম করেছিল اَنْفُسَهُمْ তাদের নিজেদের উপর। فَاَهْلَكَتْهُ অতঃপর তা এটাকে ধ্বংস করে দিল। وَمَا ظَلَمَهُمُ আর তাদের উপর কোন যুলুম করেননি اَللهُ আল্লাহ وَلٰكِنْ বরং اَنْفُسَهُمْ নিজেদের উপরই يَظْلِمُوْنَ তারা যুলুম করেছে।
সরল অনুবাদ
১১৬. নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে আল্লাহর (শাস্তির) মোকাবেলায় তাদের সন্তান-সন্ততি এবং ধন-সম্পদ কিছুতেই কোন প্রকার কাজে আসবে না। আর তারাই হবে আগুনের (জাহান্নামের) অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। [তারা নিজেদের ঈমানের পরিবর্তে কুফরীকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং আখিরাতের সুখ-শান্তিকে অবিশ্বাস করে দুনিয়ার সুখ-শান্তিকেই বড় করে দেখেছে- অতঃপর এই তাড়নাতেই তারা বৈধ অথবা অবৈধ উপায়ে অনেক সম্পদ জমা করেছে এবং তারা নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে অন্যতম শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে অন্যান্য মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে বেড়িয়েছে, তাদের এসব প্রতিপত্তি আখিরাতে কোন কাজে আসবে না। বরং সেদিন তার কাছ থেকে এগুলো ছিনিয়ে নেয়া হবে। দুনিয়াতে তারা যে বিষয়টিকে অস্বীকার করে আসছিল, সেটি যখন তারা সরাসরি নিজের চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং দুনিয়াতে অর্জিত প্রভাব-প্রতিপত্তিকেও অকেজো হিসেবে পাবে, তখন তারা সাথে সাথেই হতভম্ব হয়ে যাবে। অবশেষে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।]
১১৭. এ দুনিয়াবী জীবনে তারা যা খরচ করছে তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ বাতাসের সাথে, যাতে রয়েছে অতি ঠান্ডা; তা আঘাত করল এমন এক সম্প্রদায়ের শস্যক্ষেতে, যারা তাদের নিজেদের উপর যুলুম করেছিল। অতঃপর তা এটাকে ধ্বংস করে দিল। [এখানে বাতাস মানে হচ্ছে মানুষের বাহ্যিক কল্যাণাকাঙ্ক্ষা, যার ভিত্তিতে কাফিররা জনকল্যাণমূলক কাজ এবং দান খয়রাত ইত্যাদিতে অর্থ ব্যয় করে থাকে। আর তুষারকণা হচ্ছে, সঠিক ঈমান ও আল্লাহর বিধান অনুসৃতির অভাব, যার ফলে তাদের সমগ্র জীবন মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। আর শস্যক্ষেত মানে হচ্ছে মানুষের পার্থিব জীবন। এ উপমাটির সাহায্যে আল্লাহ তা‘আলা এটা বুঝিয়েছেন যে, শস্যক্ষেতের পরিচর্যার ক্ষেত্রে বাতাস যেমন উপকারী তেমনি আবার এই বাতাসের মধ্যে যদি তুষারকণা থাকে, তাহলে তা শস্যক্ষেতকে ধ্বংস করে দেয়। ঠিক তেমনি দান-খয়রাত যদিও মানুষের আখিরাতের ক্ষেতের পরিচর্যা করে; কিন্তু এর মধ্যে কুফরীর বিষ মিশ্রিত থাকলে তা লাভজনক হওয়ার পরিবর্তে মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।] আর আল্লাহ তাদের উপর কোন যুলুম করেননি বরং তারাই নিজেদের উপর যুলুম করেছে। [এখানে সৎ কাজের প্রতিদান নষ্ট হয়ে যাওয়াকে যুলুম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়ী হচ্ছে তারা নিজেরাই। কেননা তাদের নিজেদের কুফরী কর্মের কারণেই এসব হয়েছে; আল্লাহ তা‘আলা তো কেবল তাদের কর্মের প্রতিফল ঘটিয়েছেন মাত্র। তারা যদি এসব কুকর্ম না করত, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মের সর্বোত্তম পুরস্কার দিতেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর শাস্তি হতে মুক্তির জন্য কাফিরদের সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ কোন কিছুই গ্রহণ করা হবে না।
২. কাফিরদের আমলের ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল, যা সামান্য আঘাতেই নিঃশেষ হয়ে যায়।
৩. কাফিররা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করে থাকে।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَأْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَّدُّوْا مَا عَنِتُّمْۚ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ (১১৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১১৮. يَاۤ اَيُّهَا ওহে اَلَّذِيْنَ যারা اٰمَنُوْا ঈমান আনয়ন করেছো! لَا تَتَّخِذُوْا তোমরা গ্রহণ করো না بِطَانَةً অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে مِنْ دُوْنِكُمْ নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে। لَا يَأْلُوْنَكُمْ তারা তোমাদের ব্যাপারে পরোয়া করবে না خَبَالًا সর্বনাশ করতে। وَدُّوْا তারা কামনা করে, مَا عَنِتُّمْ যা তোমাদেরকে কষ্ট দেয়। قَدْ بَدَتِ প্রকাশ পেয়েছে اَلْبَغْضَآءُ বিদ্বেষ مِنْ থেকেই اَفْوَاهِهِمْ তাদের মুখ; وَمَا আর যা কিছু تُخْفِيْ লুকিয়ে রাখে صُدُوْرُهُمْ তাদের অন্তরসমূহ اَكْبَرُ তা আরো জঘন্য। قَدْ بَيَّنَّا অবশ্যই আমি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি لَكُمُ তোমাদের জন্য اَلْاٰيَاتِ নিদর্শনসমূহ اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা تَعْقِلُوْنَ অনুধাবন করতে পার।
সরল অনুবাদ
১১৮. হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (কেননা তুমি তাদের কল্যাণ কামনা করলেও) তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে পরোয়া করবে না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদেরকে কষ্ট দেয়। (তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের) বিদ্বেষটি তাদের মুখ থেকেই প্রকাশ পেয়েছে; আর তাদের অন্তরসমূহ যা লুকিয়ে রাখে তা আরো জঘন্য। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি- যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। [মদীনার আশেপাশে ইহুদী বসবাস করতো। আওস ও খাজরায গোত্রের লোকদের সাথে প্রাচীনকাল থেকে তাদের বন্ধুত্ব চলে আসছিল। সুতরাং তারা ছিল গোত্রীয়ভাবে পরস্পরের প্রতিবেশী ও সহযোগী। এই সুবাধে উভয় গোত্রের লোকেরা ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতো- এমনকি তারা ইসলাম গ্রহণ করে নেয়ার পরও ইহুদীদের সাথে তাদের সেই পুরাতন সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু নবী (সাঃ) ও তাঁর মিশনের বিরুদ্ধে ইহুদীদের মধ্যে যে শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, তার কারণে তারা এ নতুন আন্দোলনে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে প্রস্তুত ছিল না। ফলে তারা আনসারদের সাথে বাহ্যত আগের সম্পর্ক বজায় রাখলেও, মনে মনে তারা তাদের চরম শত্রু হয়ে গিয়েছিল। ইহুদীরা তাদের এ বাহ্যিক বন্ধুত্বকে ব্যবহার করে মুসলিমদের জামাআতে আভ্যন্তরীণ ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টি করার এবং তাদের জামাআতের গোপন বিষয়গুলোর খবর সংগ্রহ করে শত্রুদের হাতে পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য সর্বক্ষণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতটি নাযিল করে তাদের এই কুকর্মের ব্যাপারে মুসলিমদেরকে সাবধান করে দেন এবং তাদের এই সুযোগটি চিরতরে বন্ধ করে দেন।এই আয়াতের ভিত্তিতেই অনেক আলেম ফতোওয়া প্রদান করেন যে, অমুসলিমদেরকে মুসলিম রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা বৈধ নয়। (আহসানুল বয়ান ১২৬ পৃঃ)বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলার এই নির্দেশনাটি তারা ভুলেই গেছে। তারা রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অমুসলিদেরকে বসিয়ে রেখেছে এবং তাদের উপরই আস্থা পোষণ করছে- যারা তিলে তিলে মুসলিমদেরকে ধ্বংসের পথেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এরই সুবাধে তারা মুসলিমদের মধ্যে প্রবেশ করছে এবং তাদের আদর্শ বিধ্বংসী নানা ধরনের অস্ত্র যেমন- অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, বাদ্যযন্ত্র, নতর্কী, পর্নোগ্রাফী, অমুসলিম মিশনারী, সুদ, ঘুষ, দুনিয়া বিলাসিতা, নাস্তিকতা ইত্যাদি মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কোন কাফিরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
২. কাফিররা মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করতে কোনরূপ পরোয়া করে না।
৩. অনেক কাফিরের মুখ থেকে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়।
শাব্দিক অনুবাদ
১১৮. يَاۤ اَيُّهَا ওহে اَلَّذِيْنَ যারা اٰمَنُوْا ঈমান আনয়ন করেছো! لَا تَتَّخِذُوْا তোমরা গ্রহণ করো না بِطَانَةً অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে مِنْ دُوْنِكُمْ নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে। لَا يَأْلُوْنَكُمْ তারা তোমাদের ব্যাপারে পরোয়া করবে না خَبَالًا সর্বনাশ করতে। وَدُّوْا তারা কামনা করে, مَا عَنِتُّمْ যা তোমাদেরকে কষ্ট দেয়। قَدْ بَدَتِ প্রকাশ পেয়েছে اَلْبَغْضَآءُ বিদ্বেষ مِنْ থেকেই اَفْوَاهِهِمْ তাদের মুখ; وَمَا আর যা কিছু تُخْفِيْ লুকিয়ে রাখে صُدُوْرُهُمْ তাদের অন্তরসমূহ اَكْبَرُ তা আরো জঘন্য। قَدْ بَيَّنَّا অবশ্যই আমি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি لَكُمُ তোমাদের জন্য اَلْاٰيَاتِ নিদর্শনসমূহ اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা تَعْقِلُوْنَ অনুধাবন করতে পার।
সরল অনুবাদ
১১৮. হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (কেননা তুমি তাদের কল্যাণ কামনা করলেও) তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে পরোয়া করবে না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদেরকে কষ্ট দেয়। (তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের) বিদ্বেষটি তাদের মুখ থেকেই প্রকাশ পেয়েছে; আর তাদের অন্তরসমূহ যা লুকিয়ে রাখে তা আরো জঘন্য। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি- যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। [মদীনার আশেপাশে ইহুদী বসবাস করতো। আওস ও খাজরায গোত্রের লোকদের সাথে প্রাচীনকাল থেকে তাদের বন্ধুত্ব চলে আসছিল। সুতরাং তারা ছিল গোত্রীয়ভাবে পরস্পরের প্রতিবেশী ও সহযোগী। এই সুবাধে উভয় গোত্রের লোকেরা ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতো- এমনকি তারা ইসলাম গ্রহণ করে নেয়ার পরও ইহুদীদের সাথে তাদের সেই পুরাতন সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু নবী (সাঃ) ও তাঁর মিশনের বিরুদ্ধে ইহুদীদের মধ্যে যে শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, তার কারণে তারা এ নতুন আন্দোলনে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে প্রস্তুত ছিল না। ফলে তারা আনসারদের সাথে বাহ্যত আগের সম্পর্ক বজায় রাখলেও, মনে মনে তারা তাদের চরম শত্রু হয়ে গিয়েছিল। ইহুদীরা তাদের এ বাহ্যিক বন্ধুত্বকে ব্যবহার করে মুসলিমদের জামাআতে আভ্যন্তরীণ ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টি করার এবং তাদের জামাআতের গোপন বিষয়গুলোর খবর সংগ্রহ করে শত্রুদের হাতে পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য সর্বক্ষণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতটি নাযিল করে তাদের এই কুকর্মের ব্যাপারে মুসলিমদেরকে সাবধান করে দেন এবং তাদের এই সুযোগটি চিরতরে বন্ধ করে দেন।এই আয়াতের ভিত্তিতেই অনেক আলেম ফতোওয়া প্রদান করেন যে, অমুসলিমদেরকে মুসলিম রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা বৈধ নয়। (আহসানুল বয়ান ১২৬ পৃঃ)বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলার এই নির্দেশনাটি তারা ভুলেই গেছে। তারা রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অমুসলিদেরকে বসিয়ে রেখেছে এবং তাদের উপরই আস্থা পোষণ করছে- যারা তিলে তিলে মুসলিমদেরকে ধ্বংসের পথেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এরই সুবাধে তারা মুসলিমদের মধ্যে প্রবেশ করছে এবং তাদের আদর্শ বিধ্বংসী নানা ধরনের অস্ত্র যেমন- অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, বাদ্যযন্ত্র, নতর্কী, পর্নোগ্রাফী, অমুসলিম মিশনারী, সুদ, ঘুষ, দুনিয়া বিলাসিতা, নাস্তিকতা ইত্যাদি মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কোন কাফিরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
২. কাফিররা মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করতে কোনরূপ পরোয়া করে না।
৩. অনেক কাফিরের মুখ থেকে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়।
هَاۤ اَنْتُمْ اُولَآءِ تُحِبُّوْنَهُمْ وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ وَتُؤْمِنُوْنَ بِالْكِتَابِ كُلِّه ۚ وَاِذَا لَقُوْكُمْ قَالُوْاۤ اٰمَنَّاۚ وَاِذَا خَلَوْا عَضُّوْا عَلَيْكُمُ الْاَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِؕ قُلْ مُوْتُوْا بِغَيْظِكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ (১১৯) اِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْؗ وَاِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَّفْرَحُوْا بِهَاؕ وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًاؕ اِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ (১২০)
শাব্দিক অনুবাদ
১১৯. هَاۤاَنْتُمْ তোমরাই তো اُولَآءِ তারা تُحِبُّوْنَهُمْ তাদেরকে ভালোবাস; وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। وَتُؤْمِنُوْنَ অথচ তোমরা ঈমান রাখ بِالْكِتَابِ কিতাবের উপর كُلِّه সব। وَاِذَا আর যখন لَقُوْكُمْ তারা তোমাদের সাথে মিলিত হয় قَالُوْا তখন তারা বলে, اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি। وَاِذَا কিন্তু যখন خَلَوْا তারা পৃথক হয়ে যায় عَضُّوْا তখন দাঁত দিয়ে কামড়াতে থাকে عَلَيْكُمُ তোমাদের উপর اَلْاَنَامِلَ আঙ্গুলের অগ্রভাগ مِنَ الْغَيْظِ রাগের কারণে। قُلْ বলে দাও, بِغَيْظِكُمْ مُوْتُوْا তোমরা আক্রোশে ফেটে পড়ো। اِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ عَلِيْمٌ ভালভাবে জানেন بِذَاتِ বিষয় সম্পর্কে اَلصُّدُوْرِ অন্তরসমূহের ।
১২০. اِنْ যদি تَمْسَسْكُمْ তোমাদেরকে স্পর্শ করে حَسَنَةٌ কোন কল্যাণ, تَسُؤْهُمْ তবে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়; وَاِنْ আর যদি تُصِبْكُمْ তোমাদেরকে আঘাত করে سَيِّئَةٌ কোন অকল্যাণ, يَفْرَحُوْا তাহলে তারা উৎফুল্ল হয় بِهَا তাতে। وَاِنْ অতএব যদি تَصْبِرُوْا তোমরা ধৈর্যধারণ কর وَتَتَّقُوْا ও তাক্বওয়া অবলম্বন কর, لَا يَضُرُّكُمْ তাহলে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না كَيْدُهُمْ তাদের চক্রান্ত شَيْئًا সামান্যও اِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ بِمَا যা يَعْمَلُوْنَ তারা করে مُحِيْطٌ সবকিছু পরিবেষ্টনকারী।
সরল অনুবাদ
১১৯. লক্ষ্য করো- তোমরাই তো তারা, যারা তাদেরকে ভালোবাস; কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। অথচ তোমরা সব (আসমানী) কিতাবের উপর ঈমান রাখ (বিশ্বাস স্থাপন কর)। (পক্ষান্তরে) তারা যখন তোমাদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। কিন্তু যখন তারা (তোমাদের থেকে) পৃথক হয়ে যায় তখন তোমাদের উপর রাগের কারণে তারা (নিজেদের) আঙ্গুলের অগ্রভাগ দাঁত দিয়ে কামড়াতে থাকে। (সুতরাং তুমি তাদেরকে) বলে দাও, তোমরা তোমাদের রাগের মধ্যেই মরো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহের বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে জানেন।
১২০. (তাদের অবস্থা হচ্ছে) যদি কোন কল্যাণ তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তবে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়; আর যদি তোমাদেরকে কোন অকল্যাণ আঘাত করে, তাহলে তারা তাতে উৎফুল্ল (আনন্দিত) হয়। [এগুলো হচ্ছে ঐসব ইহুদীদের মনের প্রকৃত অবস্থা, যারা সাধারণভাবে অন্তরে মুনাফিকী লুকিয়ে রেখে নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবেই পরিচয় প্রদান করত। মুসলিমগণ যাতে ভবিষ্যতে তাদের ব্যাপারে কোন ধরনের ধোঁকায় পতিত না হয়, সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতদ্বয়ের অবতারণা করেন।] অতএব যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের সামান্যও ক্ষতি করতে পারবে না। [এখানে আল্লাহ তা‘আলা এমন দুটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে সত্যের বিপরীতে যত প্রকার চক্রান্ত ও শত্রুতা রয়েছে, সবগুলো থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যাবে। কেননা সত্যের পক্ষে যারাই এ দুটি কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করবে, তারাই আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে সাহায্য করেন, তাকে কেউই পরাজিত করতে পারে না।অপরদিকে এই আয়াতাংশটি ঐসব লোকের অন্তরের চিকিৎসাস্বরূপ, যারা ঈমানী দুর্বলতার রোগে আক্রান্ত। যারা মনে করে যে, কাফিরদের সফলতার মূল কারণ হলো, তাদের আর্থিক প্রাচুর্যতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি। পক্ষান্তরে মুসলিমদের অধঃপতনের মূল কারণ হলো তাদের আর্থিক অসচ্ছলতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবনতি। অথচ মুসলিমদের অবনতির মূল কারণ হলো, আল্লাহ তা‘আলার উপরোক্ত নির্দেশনা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়া তথা আল্লাহভীতি কমে যাওয়া এবং তাদের দ্বীনের উপর ধৈর্যের সাথে প্রতিষ্ঠিত না থাকা।] তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু বেষ্টন করে আছেন। [এ বাক্যটি আয়াতের পূর্ববর্তী বাক্যকে সমর্থন করে। সুতরাং বলা যায় যে, যেহেতু তিনিই তাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছেন এবং তাদের কোন কিছুই তার আয়ত্তের বাহিরে নয়, আবার তিনি তোমাদেরকে তাদের চক্রান্ত থেকে নিরাপত্তা লাভ করার জন্য এরূপ নির্দেশনা প্রদান করছেন, সুতরাং তোমরা তাঁর উপর আস্থা রেখে তাঁর এই নির্দেশনাটি শক্তভাবে ধারণ করো এবং কিছুতেই এর থেকে বিচ্যুত হয়ো না।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মুখে ঈমান আনয়ন করে অন্তরে কুফরী লুকিয়ে রাখা যাবে না; এটি মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
২. অনেক সময় কাফিররা কেবল মুখে মুখে ঈমান আনয়ন করে মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যে ইসলামে প্রবেশ করে থাকে।
৩. মুসলিমদের সাফল্য দেখে কাফিররা খুবই রাগান্বিত হয়ে থাকে- যদিও অনেক সময় তারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্টির ভাব দেখায়।
৪. ধৈর্য ধারণ করলে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করলে কাফিরদের কোন চক্রান্তই মুসলমানদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
৫. কাফিরদের সকল কর্মই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ।
শাব্দিক অনুবাদ
১১৯. هَاۤاَنْتُمْ তোমরাই তো اُولَآءِ তারা تُحِبُّوْنَهُمْ তাদেরকে ভালোবাস; وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। وَتُؤْمِنُوْنَ অথচ তোমরা ঈমান রাখ بِالْكِتَابِ কিতাবের উপর كُلِّه সব। وَاِذَا আর যখন لَقُوْكُمْ তারা তোমাদের সাথে মিলিত হয় قَالُوْا তখন তারা বলে, اٰمَنَّا আমরা ঈমান এনেছি। وَاِذَا কিন্তু যখন خَلَوْا তারা পৃথক হয়ে যায় عَضُّوْا তখন দাঁত দিয়ে কামড়াতে থাকে عَلَيْكُمُ তোমাদের উপর اَلْاَنَامِلَ আঙ্গুলের অগ্রভাগ مِنَ الْغَيْظِ রাগের কারণে। قُلْ বলে দাও, بِغَيْظِكُمْ مُوْتُوْا তোমরা আক্রোশে ফেটে পড়ো। اِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ عَلِيْمٌ ভালভাবে জানেন بِذَاتِ বিষয় সম্পর্কে اَلصُّدُوْرِ অন্তরসমূহের ।
১২০. اِنْ যদি تَمْسَسْكُمْ তোমাদেরকে স্পর্শ করে حَسَنَةٌ কোন কল্যাণ, تَسُؤْهُمْ তবে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়; وَاِنْ আর যদি تُصِبْكُمْ তোমাদেরকে আঘাত করে سَيِّئَةٌ কোন অকল্যাণ, يَفْرَحُوْا তাহলে তারা উৎফুল্ল হয় بِهَا তাতে। وَاِنْ অতএব যদি تَصْبِرُوْا তোমরা ধৈর্যধারণ কর وَتَتَّقُوْا ও তাক্বওয়া অবলম্বন কর, لَا يَضُرُّكُمْ তাহলে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না كَيْدُهُمْ তাদের চক্রান্ত شَيْئًا সামান্যও اِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ بِمَا যা يَعْمَلُوْنَ তারা করে مُحِيْطٌ সবকিছু পরিবেষ্টনকারী।
সরল অনুবাদ
১১৯. লক্ষ্য করো- তোমরাই তো তারা, যারা তাদেরকে ভালোবাস; কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। অথচ তোমরা সব (আসমানী) কিতাবের উপর ঈমান রাখ (বিশ্বাস স্থাপন কর)। (পক্ষান্তরে) তারা যখন তোমাদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। কিন্তু যখন তারা (তোমাদের থেকে) পৃথক হয়ে যায় তখন তোমাদের উপর রাগের কারণে তারা (নিজেদের) আঙ্গুলের অগ্রভাগ দাঁত দিয়ে কামড়াতে থাকে। (সুতরাং তুমি তাদেরকে) বলে দাও, তোমরা তোমাদের রাগের মধ্যেই মরো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহের বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে জানেন।
১২০. (তাদের অবস্থা হচ্ছে) যদি কোন কল্যাণ তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তবে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়; আর যদি তোমাদেরকে কোন অকল্যাণ আঘাত করে, তাহলে তারা তাতে উৎফুল্ল (আনন্দিত) হয়। [এগুলো হচ্ছে ঐসব ইহুদীদের মনের প্রকৃত অবস্থা, যারা সাধারণভাবে অন্তরে মুনাফিকী লুকিয়ে রেখে নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবেই পরিচয় প্রদান করত। মুসলিমগণ যাতে ভবিষ্যতে তাদের ব্যাপারে কোন ধরনের ধোঁকায় পতিত না হয়, সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতদ্বয়ের অবতারণা করেন।] অতএব যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের সামান্যও ক্ষতি করতে পারবে না। [এখানে আল্লাহ তা‘আলা এমন দুটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে সত্যের বিপরীতে যত প্রকার চক্রান্ত ও শত্রুতা রয়েছে, সবগুলো থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যাবে। কেননা সত্যের পক্ষে যারাই এ দুটি কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করবে, তারাই আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে সাহায্য করেন, তাকে কেউই পরাজিত করতে পারে না।অপরদিকে এই আয়াতাংশটি ঐসব লোকের অন্তরের চিকিৎসাস্বরূপ, যারা ঈমানী দুর্বলতার রোগে আক্রান্ত। যারা মনে করে যে, কাফিরদের সফলতার মূল কারণ হলো, তাদের আর্থিক প্রাচুর্যতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি। পক্ষান্তরে মুসলিমদের অধঃপতনের মূল কারণ হলো তাদের আর্থিক অসচ্ছলতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবনতি। অথচ মুসলিমদের অবনতির মূল কারণ হলো, আল্লাহ তা‘আলার উপরোক্ত নির্দেশনা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়া তথা আল্লাহভীতি কমে যাওয়া এবং তাদের দ্বীনের উপর ধৈর্যের সাথে প্রতিষ্ঠিত না থাকা।] তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু বেষ্টন করে আছেন। [এ বাক্যটি আয়াতের পূর্ববর্তী বাক্যকে সমর্থন করে। সুতরাং বলা যায় যে, যেহেতু তিনিই তাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছেন এবং তাদের কোন কিছুই তার আয়ত্তের বাহিরে নয়, আবার তিনি তোমাদেরকে তাদের চক্রান্ত থেকে নিরাপত্তা লাভ করার জন্য এরূপ নির্দেশনা প্রদান করছেন, সুতরাং তোমরা তাঁর উপর আস্থা রেখে তাঁর এই নির্দেশনাটি শক্তভাবে ধারণ করো এবং কিছুতেই এর থেকে বিচ্যুত হয়ো না।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মুখে ঈমান আনয়ন করে অন্তরে কুফরী লুকিয়ে রাখা যাবে না; এটি মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
২. অনেক সময় কাফিররা কেবল মুখে মুখে ঈমান আনয়ন করে মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যে ইসলামে প্রবেশ করে থাকে।
৩. মুসলিমদের সাফল্য দেখে কাফিররা খুবই রাগান্বিত হয়ে থাকে- যদিও অনেক সময় তারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্টির ভাব দেখায়।
৪. ধৈর্য ধারণ করলে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করলে কাফিরদের কোন চক্রান্তই মুসলমানদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
৫. কাফিরদের সকল কর্মই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ।
وَاِذْ غَدَوْتَ مِنْ اَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِيْنَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ (১২১) اِذْ هَمَّتْ طَّآئِفَتَانِ مِنْكُمْ اَنْ تَفْشَلَا وَاللهُ وَلِيُّهُمَاؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ (১২২)
শাব্দিক অনুবাদ
১২১. وَاِذْ আর যখন غَدَوْتَ তুমি সকালে বের হয়েছিলে مِنْ থেকে اَهْلِكَ তোমার পরিবার-পরিজন تُبَوِّئُ নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদেরকে مَقَاعِدَ বিভিন্ন ঘাঁটিতে لِلْقِتَالِ যুদ্ধের জন্য। وَاللهُ আর আল্লাহ سَمِيْعٌ সর্বশ্রোতা عَلِيْمٌ ও সর্বজ্ঞানী।
১২২. اِذْ যখন هَمَّتْ ইচ্ছা করেছিল طَآئِفَتَانِ দুটি দল مِنْكُمْ তোমাদের (আনসারদের) মধ্য হতে اَنْ যে, تَفْشَلَا তারা ভীরুতা প্রকাশ করবে, وَاللهُ অথচ (স্বয়ং) আল্লাহ ছিলেন وَلِيُّهُمَا উভয় দলের পৃষ্ঠপোষক (অভিভাবক); وَعَلَى اللهِ (অতএব) আল্লাহর উপরই فَلْيَتَوَكَّلِ যেন নির্ভর করে اَلْمُؤْمِنُوْنَ মুমিনগণ।
সরল অনুবাদ
১২১. (স্মরণ করো) যখন তুমি মুমিনদেরকে (উহুদ) যুদ্ধের [অধিকাংশ মুফাস্সিরের মতে, এটি ছিল উহুদ যুদ্ধের ঘটনা, যা সংঘটিত হয়েছিল হিজরী ৩য় সনের শাওয়াল মাসের ৬ তারিখে। সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার বাহিনী নিয়ে সকাল বেলা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন।] জন্য বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে সকালে তোমার পরিবার-পরিজন থেকে বের হয়েছিলে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
১২২. (আরো স্মরণ করো) যখন তোমাদের (আনসারদের) মধ্যে দুটি দল [অর্থাৎ বনু হারিসা এবং বনু সালাম তথা আউস ও খাযরায গোত্র। যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথ থেকে যখন মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার তিনশজন সঙ্গীকে নিয়ে মুসলিমদের শিবির থেকে সরে দাঁড়াল, তখন এরা এতই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল যে, তাদের মধ্যে অনেকে ফিরে যাওয়ার সংকল্প করে ফেলেছিল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দৃঢ়তা এবং অন্যান্য কঠোর সংকল্পবদ্ধ মুসলিম যুবকদের জোর তাগিদে তারা তাদের যাত্রা চালু রেখেছিল। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এই আয়াতটি আমাদের অর্থাৎ বানু হারিসা এবং বানু সালিমা এর ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৫৮)] ভীরুতা প্রকাশের ইচ্ছা করেছিল, অথচ (স্বয়ং) আল্লাহ ছিলেন উভয় দলের পৃষ্ঠপোষক (অভিভাবক); [অর্থাৎ যাদের অভিভাবকত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেছেন, তাদের পক্ষে পৃথিবীর অন্য কোন শক্তিকে ভয় করা উচিত নয়।] (অতএব) মুমিনগণ যেন আল্লাহর উপরই নির্ভর করে। [অর্থাৎ মুমিনগণ যেন সর্ববিষয়ে আল্লাহর উপরই নির্ভর করে এবং তার উপর অন্য কোন শক্তিকে প্রাধান্য না দেয়। অন্যথায় তারা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং পরাজিত হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সফরে সাধারণত সকালে বের হওয়া উত্তম।
২. যুদ্ধক্ষেত্রে ভীরুতা প্রদর্শন করা যাবে না।
৩. সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১২১. وَاِذْ আর যখন غَدَوْتَ তুমি সকালে বের হয়েছিলে مِنْ থেকে اَهْلِكَ তোমার পরিবার-পরিজন تُبَوِّئُ নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদেরকে مَقَاعِدَ বিভিন্ন ঘাঁটিতে لِلْقِتَالِ যুদ্ধের জন্য। وَاللهُ আর আল্লাহ سَمِيْعٌ সর্বশ্রোতা عَلِيْمٌ ও সর্বজ্ঞানী।
১২২. اِذْ যখন هَمَّتْ ইচ্ছা করেছিল طَآئِفَتَانِ দুটি দল مِنْكُمْ তোমাদের (আনসারদের) মধ্য হতে اَنْ যে, تَفْشَلَا তারা ভীরুতা প্রকাশ করবে, وَاللهُ অথচ (স্বয়ং) আল্লাহ ছিলেন وَلِيُّهُمَا উভয় দলের পৃষ্ঠপোষক (অভিভাবক); وَعَلَى اللهِ (অতএব) আল্লাহর উপরই فَلْيَتَوَكَّلِ যেন নির্ভর করে اَلْمُؤْمِنُوْنَ মুমিনগণ।
সরল অনুবাদ
১২১. (স্মরণ করো) যখন তুমি মুমিনদেরকে (উহুদ) যুদ্ধের [অধিকাংশ মুফাস্সিরের মতে, এটি ছিল উহুদ যুদ্ধের ঘটনা, যা সংঘটিত হয়েছিল হিজরী ৩য় সনের শাওয়াল মাসের ৬ তারিখে। সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার বাহিনী নিয়ে সকাল বেলা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন।] জন্য বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে সকালে তোমার পরিবার-পরিজন থেকে বের হয়েছিলে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
১২২. (আরো স্মরণ করো) যখন তোমাদের (আনসারদের) মধ্যে দুটি দল [অর্থাৎ বনু হারিসা এবং বনু সালাম তথা আউস ও খাযরায গোত্র। যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথ থেকে যখন মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার তিনশজন সঙ্গীকে নিয়ে মুসলিমদের শিবির থেকে সরে দাঁড়াল, তখন এরা এতই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল যে, তাদের মধ্যে অনেকে ফিরে যাওয়ার সংকল্প করে ফেলেছিল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দৃঢ়তা এবং অন্যান্য কঠোর সংকল্পবদ্ধ মুসলিম যুবকদের জোর তাগিদে তারা তাদের যাত্রা চালু রেখেছিল। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এই আয়াতটি আমাদের অর্থাৎ বানু হারিসা এবং বানু সালিমা এর ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৫৮)] ভীরুতা প্রকাশের ইচ্ছা করেছিল, অথচ (স্বয়ং) আল্লাহ ছিলেন উভয় দলের পৃষ্ঠপোষক (অভিভাবক); [অর্থাৎ যাদের অভিভাবকত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেছেন, তাদের পক্ষে পৃথিবীর অন্য কোন শক্তিকে ভয় করা উচিত নয়।] (অতএব) মুমিনগণ যেন আল্লাহর উপরই নির্ভর করে। [অর্থাৎ মুমিনগণ যেন সর্ববিষয়ে আল্লাহর উপরই নির্ভর করে এবং তার উপর অন্য কোন শক্তিকে প্রাধান্য না দেয়। অন্যথায় তারা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং পরাজিত হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সফরে সাধারণত সকালে বের হওয়া উত্তম।
২. যুদ্ধক্ষেত্রে ভীরুতা প্রদর্শন করা যাবে না।
৩. সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে হবে।
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ (১২৩) اِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ اَنْ يُّمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُنْزَلِيْنَ (১২৪) بَلٰۤى اِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا وَيَأْتُوْكُمْ مِّنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُسَوِّمِيْنَ (১২৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১২৩. وَلَقَدْ আর অবশ্যই نَصَرَكُمُ তোমাদেরকে সাহায্য করেছিলেন اَللهُ আল্লাহ بِبَدْرٍ বদরে وَاَنْتُمْ যখন তোমরা ছিলে اَذِلَّةٌ দুর্বল; فَاتَّقُوا অতএব তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে, لَعَلَّكُمْ যেন তোমরা تَشْكُرُوْنَ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।
১২৪. اِذْ যখন تَقُوْلُ তুমি বলছিলে لِلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদেরকে, اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ এটা কি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট নয় اَنْ যে, يُمِدَّكُمْ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন رَبُّكُمْ তোমাদের প্রতিপালক بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ তিন হাজার ফেরেশতা দ্বারা مُنْزَلِيْنَ প্রেরিত?
১২৫. بَلٰۤى হ্যাঁ اِنْ যদি تَصْبِرُوْا তোমরা ধৈর্যধারণ কর وَتَتَّقُوْا ও তাক্বওয়া অবলম্বন কর وَيَأْتُوْكُمْ আর তারা তোমাদের উপর (আক্রমণ করতে) আসে مِنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا এর চেয়ে দ্রুতবেগে, يُمْدِدْكُمْ তবে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন رَبُّكُمْ তোমাদের প্রতিপালক بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা مُسَوِّمِيْنَ চিহ্নিত।
সরল অনুবাদ
১২৩. আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন- যখন তোমরা দুর্বল ছিলে [অর্থাৎ সব দিক দিয়েই তোমরা কাফিরদের থেকে দুর্বল ছিলে। যেমন- সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে তোমরা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। আর তোমাদের বিপরীতে তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল ১০০০ জন। এ যুদ্ধে তোমাদের হাতিয়ারও ছিল তাদের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। তোমাদের দলে মাত্র হাতে গুণা কয়েকজন ছিল আরোহী এবং বাকী সকলেই ছিল পদাতিক। আর তোমাদের বিপরীতে তাদের অধিকাংশ সৈন্যই ছিল অশ্বারোহী। সুতরাং এই যুদ্ধে তোমাদের পরাজয় ছিল প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এ যুদ্ধে সরাসরি ফেরেশতা প্রেরণের মাধ্যমে সাহায্য করেছিলেন। ফলে তোমরা কাফিরদের উপর বিজয় লাভ করতে পেরেছ।]; অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। [কেননা যদি এগুলো না করো, তাহলে তোমাদের কাছে আল্লাহর সাহায্য পৌঁছবে না। তোমরা এগুলো যথাযথভাবে পালন করেছো বিধায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এই যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং এটি তোমাদের জন্য সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত।]
১২৪. যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, এটা কি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন?
১২৫. হ্যাঁ- যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও তাক্বওয়া অবলম্বন করো (সংযমী হও), আর তারা যদি (স্বেচ্ছায়) এর চেয়ে দ্রুতবেগে তোমাদের উপর (আক্রমণ করতে) আসে, তবে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার চিহ্নিত [অর্থাৎ তারা এমন কিছু বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হবে, যা দেখে সহজেই চিনতে পারা যাবে যে, এরা কাফির অথবা মুসলিমদের দলের কেউ নয়। বরং এরা তৃতীয় কোন পক্ষ থেকে তোমাদেরকে সাহায্যের জন্য প্রেরিত হয়েছে।] ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। [অত্র আয়াত দুটিতে ৩০০০ অথবা ৫০০০ দ্বারা নির্দিষ্ট সৈন্য সংখ্যাকে বুঝানো হয়নি; বরং প্রকৃতপক্ষে এগুলো দ্বারা আল্লাহর সাহায্যের আধিক্যকে বুঝানো হয়েছে। কেননা আনফালের ৯নং আয়াতে ১০০০ ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে। আর প্রকৃতপক্ষে মুসলিমগণ কতজন ফেরেশতা দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। অতএব এ ধরনের আয়াতগুলো পর্যালোচনা করে বুঝা যাচ্ছে যে, যদি মুসলিমদের প্রয়োজন হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ৩০০০ অথবা ৫০০০ কেন- আরো বেশি ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন। যেহেতু আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে মুসলিমদেরকে সাহায্য করা এবং তাদেরকেই বিজয়ী হিসেবে সাব্যস্ত করা। অত্র আয়াতটি বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হলেও হুকুমটি পরবর্তী সকল যুগের জন্যই প্রযোজ্য।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা অনেক সময় দুর্বল দলকে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দলের উপর বিজয় দান করে থাকেন।
২. বদর যুদ্ধে মুসলিমগণ আল্লাহর সহযোগিতায় বিজয় লাভ করেছিলেন।
৩. বদর যুদ্ধের বিজয়টি ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে মুসলিমদের প্রতি একটি বিশেষ অনুগ্রহ।
৪. কাফিরদের বিরুদ্ধে মুমিনদেরকে সাহায্যের জন্য আল্লাহ তা‘আলা প্রয়োজনানুসারে ফেরেশতাদেরকেও প্রেরণ করে থাকেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১২৩. وَلَقَدْ আর অবশ্যই نَصَرَكُمُ তোমাদেরকে সাহায্য করেছিলেন اَللهُ আল্লাহ بِبَدْرٍ বদরে وَاَنْتُمْ যখন তোমরা ছিলে اَذِلَّةٌ দুর্বল; فَاتَّقُوا অতএব তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে, لَعَلَّكُمْ যেন তোমরা تَشْكُرُوْنَ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।
১২৪. اِذْ যখন تَقُوْلُ তুমি বলছিলে لِلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদেরকে, اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ এটা কি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট নয় اَنْ যে, يُمِدَّكُمْ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন رَبُّكُمْ তোমাদের প্রতিপালক بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ তিন হাজার ফেরেশতা দ্বারা مُنْزَلِيْنَ প্রেরিত?
১২৫. بَلٰۤى হ্যাঁ اِنْ যদি تَصْبِرُوْا তোমরা ধৈর্যধারণ কর وَتَتَّقُوْا ও তাক্বওয়া অবলম্বন কর وَيَأْتُوْكُمْ আর তারা তোমাদের উপর (আক্রমণ করতে) আসে مِنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا এর চেয়ে দ্রুতবেগে, يُمْدِدْكُمْ তবে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন رَبُّكُمْ তোমাদের প্রতিপালক بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা مُسَوِّمِيْنَ চিহ্নিত।
সরল অনুবাদ
১২৩. আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন- যখন তোমরা দুর্বল ছিলে [অর্থাৎ সব দিক দিয়েই তোমরা কাফিরদের থেকে দুর্বল ছিলে। যেমন- সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে তোমরা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। আর তোমাদের বিপরীতে তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল ১০০০ জন। এ যুদ্ধে তোমাদের হাতিয়ারও ছিল তাদের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। তোমাদের দলে মাত্র হাতে গুণা কয়েকজন ছিল আরোহী এবং বাকী সকলেই ছিল পদাতিক। আর তোমাদের বিপরীতে তাদের অধিকাংশ সৈন্যই ছিল অশ্বারোহী। সুতরাং এই যুদ্ধে তোমাদের পরাজয় ছিল প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এ যুদ্ধে সরাসরি ফেরেশতা প্রেরণের মাধ্যমে সাহায্য করেছিলেন। ফলে তোমরা কাফিরদের উপর বিজয় লাভ করতে পেরেছ।]; অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। [কেননা যদি এগুলো না করো, তাহলে তোমাদের কাছে আল্লাহর সাহায্য পৌঁছবে না। তোমরা এগুলো যথাযথভাবে পালন করেছো বিধায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এই যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং এটি তোমাদের জন্য সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত।]
১২৪. যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, এটা কি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন?
১২৫. হ্যাঁ- যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও তাক্বওয়া অবলম্বন করো (সংযমী হও), আর তারা যদি (স্বেচ্ছায়) এর চেয়ে দ্রুতবেগে তোমাদের উপর (আক্রমণ করতে) আসে, তবে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার চিহ্নিত [অর্থাৎ তারা এমন কিছু বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হবে, যা দেখে সহজেই চিনতে পারা যাবে যে, এরা কাফির অথবা মুসলিমদের দলের কেউ নয়। বরং এরা তৃতীয় কোন পক্ষ থেকে তোমাদেরকে সাহায্যের জন্য প্রেরিত হয়েছে।] ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। [অত্র আয়াত দুটিতে ৩০০০ অথবা ৫০০০ দ্বারা নির্দিষ্ট সৈন্য সংখ্যাকে বুঝানো হয়নি; বরং প্রকৃতপক্ষে এগুলো দ্বারা আল্লাহর সাহায্যের আধিক্যকে বুঝানো হয়েছে। কেননা আনফালের ৯নং আয়াতে ১০০০ ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে। আর প্রকৃতপক্ষে মুসলিমগণ কতজন ফেরেশতা দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। অতএব এ ধরনের আয়াতগুলো পর্যালোচনা করে বুঝা যাচ্ছে যে, যদি মুসলিমদের প্রয়োজন হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ৩০০০ অথবা ৫০০০ কেন- আরো বেশি ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন। যেহেতু আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে মুসলিমদেরকে সাহায্য করা এবং তাদেরকেই বিজয়ী হিসেবে সাব্যস্ত করা। অত্র আয়াতটি বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হলেও হুকুমটি পরবর্তী সকল যুগের জন্যই প্রযোজ্য।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহ তা‘আলা অনেক সময় দুর্বল দলকে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দলের উপর বিজয় দান করে থাকেন।
২. বদর যুদ্ধে মুসলিমগণ আল্লাহর সহযোগিতায় বিজয় লাভ করেছিলেন।
৩. বদর যুদ্ধের বিজয়টি ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে মুসলিমদের প্রতি একটি বিশেষ অনুগ্রহ।
৪. কাফিরদের বিরুদ্ধে মুমিনদেরকে সাহায্যের জন্য আল্লাহ তা‘আলা প্রয়োজনানুসারে ফেরেশতাদেরকেও প্রেরণ করে থাকেন।
وَمَا جَعَلَهُ اللهُ اِلَّا بُشْرٰى لَكُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوْبُكُمْ بِه ؕ وَمَا النَّصْرُ اِلَّا مِنْ عِنْدِ اللهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ (১২৬) لِيَقْطَعَ طَرَفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْ يَكْبِتَهُمْ فَيَنْقَلِبُوْا خَآئِبِيْنَ (১২৭)
শাব্দিক অনুবাদ
১২৬. وَمَا جَعَلَهُ আর এটা করেননি اَللهُ আল্লাহ اِلَّا ছাড়া بُشْرٰى সুসংবাদস্বরূপ হয় لَكُمْ তোমাদের জন্য وَلِتَطْمَئِنَّ এবং যেন প্রশান্ত করতে পারেন قُلُوْبُكُمْ তোমাদের অন্তরসমূহকে بِه এর দ্বারা। وَمَا النَّصْرُ আর সাহায্য আসে না اِلَّا ছাড়া مِنْ عِنْدِ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে اَلْعَزِيْزِ যিনি মহা পরাক্রমশালী اَلْحَكِيْمِ ও প্রজ্ঞাময়।
১২৭. لِيَقْطَعَ যাতে তিনি কর্তিত করতে পারেন طَرَفًا একাংশকে مِنَ الَّذِيْنَ তাদের থেকে যারা كَفَرُوْا অস্বীকার হয়েছে اَوْ অথবা يَكْبِتَهُمْ তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে পারেন, فَيَنْقَلِبُوْا ফলে তারা ফিরে যাবে خَآئِبِيْنَ ব্যর্থ হয়ে।
সরল অনুবাদ
১২৬. আর আল্লাহ এটা এজন্যই করেছেন যে, যেন এটা তোমাদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ হয় এবং এর দ্বারা তোমাদের অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করতে পারেন। আর সাহায্য তো কেবল আল্লাহর পক্ষ হতেই (আসে), যিনি মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
১২৭. (আল্লাহ এটা এজন্যও করেছেন যে) যারা অস্বীকার করেছে তাদের একাংশকে যাতে তিনি কর্তিত (নিশ্চিহ্ন) করতে পারেন অথবা তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে পারেন, ফলে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. বদর যুদ্ধের বিজয়টি ছিল মুমিনদের জন্য পরবর্তী বিজয়সমূহের ব্যাপারে সুসংবাদস্বরূপ।
২. যে কোন সাহায্য কেবলমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতেই এসে থাকে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের মাধ্যমে কাফিরদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্চিত করেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১২৬. وَمَا جَعَلَهُ আর এটা করেননি اَللهُ আল্লাহ اِلَّا ছাড়া بُشْرٰى সুসংবাদস্বরূপ হয় لَكُمْ তোমাদের জন্য وَلِتَطْمَئِنَّ এবং যেন প্রশান্ত করতে পারেন قُلُوْبُكُمْ তোমাদের অন্তরসমূহকে بِه এর দ্বারা। وَمَا النَّصْرُ আর সাহায্য আসে না اِلَّا ছাড়া مِنْ عِنْدِ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে اَلْعَزِيْزِ যিনি মহা পরাক্রমশালী اَلْحَكِيْمِ ও প্রজ্ঞাময়।
১২৭. لِيَقْطَعَ যাতে তিনি কর্তিত করতে পারেন طَرَفًا একাংশকে مِنَ الَّذِيْنَ তাদের থেকে যারা كَفَرُوْا অস্বীকার হয়েছে اَوْ অথবা يَكْبِتَهُمْ তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে পারেন, فَيَنْقَلِبُوْا ফলে তারা ফিরে যাবে خَآئِبِيْنَ ব্যর্থ হয়ে।
সরল অনুবাদ
১২৬. আর আল্লাহ এটা এজন্যই করেছেন যে, যেন এটা তোমাদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ হয় এবং এর দ্বারা তোমাদের অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করতে পারেন। আর সাহায্য তো কেবল আল্লাহর পক্ষ হতেই (আসে), যিনি মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
১২৭. (আল্লাহ এটা এজন্যও করেছেন যে) যারা অস্বীকার করেছে তাদের একাংশকে যাতে তিনি কর্তিত (নিশ্চিহ্ন) করতে পারেন অথবা তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে পারেন, ফলে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. বদর যুদ্ধের বিজয়টি ছিল মুমিনদের জন্য পরবর্তী বিজয়সমূহের ব্যাপারে সুসংবাদস্বরূপ।
২. যে কোন সাহায্য কেবলমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতেই এসে থাকে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধের মাধ্যমে কাফিরদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্চিত করেন।
لَيْسَ لَكَ مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ اَوْ يَتُوْبَ عَلَيْهِمْ اَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَاِنَّهُمْ ظَالِمُوْنَ (১২৮) وَلِلّٰهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ (১২৯)
শাব্দিক অনুবাদ
১২৮. لَيْسَ لَكَ তোমার জন্য নেই مِنَ الْاَمْرِ এ বিষয়ে شَيْءٌ কোন কিছুই اَوْ অথবা يَتُوْبَ তিনি তাওবা কবুল করবেন عَلَيْهِمْ তাদের উপর اَوْ অথবা يُعَذِّبَهُمْ অথবা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন; فَاِنَّهُمْ কেননা নিশ্চয় তারা ظَالِمُوْنَ অত্যাচারী।
১২৯. وَلِلّٰهِ আর আল্লাহরই জন্য مَا যা রয়েছে فِي السَّمَاوَاتِ আকাশসমূহে وَمَا এবং যা রয়েছে فِي الْاَرْضِ পৃথিবীতে; يَغْفِرُ তিনি ক্ষমা করেন لِمَنْ يَّشَآءُ যাকে তিনি ইচ্ছা করেন وَيُعَذِّبُ এবং তিনি শাস্তি প্রদান করেন مَنْ يَّشَآءُ যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। وَاللهُ আর আল্লাহ غَفُوْرٌ অতি ক্ষমাশীল رَحِيْمٌ ও পরম দয়ালু।
সরল অনুবাদ
১২৮. (হে নবী!) এ বিষয়ে তোমার কোন কিছুই (কর্তৃত্ব) নেই (বরং তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন)। তিনি হয় তাদের তাওবা কবুল করবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন; কেননা অবশ্যই তারা অত্যাচারী। [উহুদ যুদ্ধে যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনের মাড়ির দাঁত ভেঙ্গে যায়, চেহারা আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং কপালে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মুখমন্ডলে রক্ত ঝরতে থাকে, তখন তিনি বলেছিলেন যে, ‘‘এমন জাতি কীভাবে সফল হতে পারে, যারা তাদের নবীর সাথে এরূপ আচরণ করে; অথচ তিনি তাদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করেন’’। এর দ্বারা তিনি হেদায়াত থেকে এক প্রকার নিরাশা প্রকাশ করেছিলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করেন। (তিরমিযী, হা/৩০০২-০৩) এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা নবী (সাঃ)-কে মনে করিয়ে দেন যে, হেদায়াতের বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি কাকে হেদায়াত করবেন অথবা কাকে হেদায়াত করবেন না- এটা কেবল তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। অতএব তাদের হেদায়াতের ব্যাপারে তোমার নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। সুতরাং তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। অপর হাদীসে এসেছে, সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দু‘আ করলেন যে, হে আল্লাহ! আবু সুফইয়ানের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! আল-হারিস ইবনে হিশামের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। অতঃপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করে উত্তম মুসলিম হয়ে যান।এ আয়াত থেকে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট যে, নবী (সাঃ) কখনো এরূপ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না যে, তিনি যখন যা কিছু ইচ্ছা করতেন, তা-ই সংঘটিত করতে পারতেন। এমনকি এতটুকু ক্ষমতার অধিকারীও ছিলেন না যে, তিনি কাউকে সঠিক পথের দিকে নিয়ে আসতে পারবেন। বরং তিনি কেবল মানুষকে এই পথের দিকে আহবান করার জন্যই প্ররিত হয়েছিলেন।]
১২৯. আর আসমানসমূহে যা আছে আর যা আছে জমিনে তা আল্লাহরই; তিনি যাকে ইচছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কাউকে শাস্তি দেয়া অথবা তাওবা করে কবুল করে ক্ষমা করার বিষয়টি কেবল আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন।
২. স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও কাউকে হেদায়াত দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না।
শাব্দিক অনুবাদ
১২৮. لَيْسَ لَكَ তোমার জন্য নেই مِنَ الْاَمْرِ এ বিষয়ে شَيْءٌ কোন কিছুই اَوْ অথবা يَتُوْبَ তিনি তাওবা কবুল করবেন عَلَيْهِمْ তাদের উপর اَوْ অথবা يُعَذِّبَهُمْ অথবা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন; فَاِنَّهُمْ কেননা নিশ্চয় তারা ظَالِمُوْنَ অত্যাচারী।
১২৯. وَلِلّٰهِ আর আল্লাহরই জন্য مَا যা রয়েছে فِي السَّمَاوَاتِ আকাশসমূহে وَمَا এবং যা রয়েছে فِي الْاَرْضِ পৃথিবীতে; يَغْفِرُ তিনি ক্ষমা করেন لِمَنْ يَّشَآءُ যাকে তিনি ইচ্ছা করেন وَيُعَذِّبُ এবং তিনি শাস্তি প্রদান করেন مَنْ يَّشَآءُ যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। وَاللهُ আর আল্লাহ غَفُوْرٌ অতি ক্ষমাশীল رَحِيْمٌ ও পরম দয়ালু।
সরল অনুবাদ
১২৮. (হে নবী!) এ বিষয়ে তোমার কোন কিছুই (কর্তৃত্ব) নেই (বরং তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন)। তিনি হয় তাদের তাওবা কবুল করবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন; কেননা অবশ্যই তারা অত্যাচারী। [উহুদ যুদ্ধে যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনের মাড়ির দাঁত ভেঙ্গে যায়, চেহারা আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং কপালে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মুখমন্ডলে রক্ত ঝরতে থাকে, তখন তিনি বলেছিলেন যে, ‘‘এমন জাতি কীভাবে সফল হতে পারে, যারা তাদের নবীর সাথে এরূপ আচরণ করে; অথচ তিনি তাদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করেন’’। এর দ্বারা তিনি হেদায়াত থেকে এক প্রকার নিরাশা প্রকাশ করেছিলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করেন। (তিরমিযী, হা/৩০০২-০৩) এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা নবী (সাঃ)-কে মনে করিয়ে দেন যে, হেদায়াতের বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি কাকে হেদায়াত করবেন অথবা কাকে হেদায়াত করবেন না- এটা কেবল তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। অতএব তাদের হেদায়াতের ব্যাপারে তোমার নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। সুতরাং তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। অপর হাদীসে এসেছে, সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দু‘আ করলেন যে, হে আল্লাহ! আবু সুফইয়ানের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! আল-হারিস ইবনে হিশামের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। অতঃপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করে উত্তম মুসলিম হয়ে যান।এ আয়াত থেকে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট যে, নবী (সাঃ) কখনো এরূপ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না যে, তিনি যখন যা কিছু ইচ্ছা করতেন, তা-ই সংঘটিত করতে পারতেন। এমনকি এতটুকু ক্ষমতার অধিকারীও ছিলেন না যে, তিনি কাউকে সঠিক পথের দিকে নিয়ে আসতে পারবেন। বরং তিনি কেবল মানুষকে এই পথের দিকে আহবান করার জন্যই প্ররিত হয়েছিলেন।]
১২৯. আর আসমানসমূহে যা আছে আর যা আছে জমিনে তা আল্লাহরই; তিনি যাকে ইচছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কাউকে শাস্তি দেয়া অথবা তাওবা করে কবুল করে ক্ষমা করার বিষয়টি কেবল আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন।
২. স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও কাউকে হেদায়াত দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤٓ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَّاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ (১৩০) وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِيْۤ اُعِدَّتْ لِلْكَافِرِيْنَ (১৩১) وَاَطِيْعُوا اللهَ وَالرَسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ (১৩২) وَسَارِعُوْاۤ اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ (১৩৩)
শাব্দিক অনুবাদ
১৩০. اٰمَنُوْا الَّذِيْنَ يَاۤ اَيُّهَا হে ঈমানদারগণ! لَا تَأْكُلُوا তোমরা ভক্ষণ করো না اَلرِّبَا সুদ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً চক্র বৃদ্ধি হারে وَاتَّقُوا এবং তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে, لَعَلَّكُمْ যাতে তোমরা تُفْلِحُوْنَ সফল হতে পার।
১৩১. وَاتَّقُوا আর তোমরা ভয় করো اَلنَّارَ সেই আগুনকে, اَلَّتِيْۤ যা اُعِدَّتْ প্রস্তুত করা হয়েছে لِلْكَافِرِيْنَ কাফিরদের জন্য ।
১৩২. وَاَطِيْعُوا আর তোমরা আনুগত্য করো اَللهَ আল্লাহর وَالرَّسُوْلَ ও রাসূলের, لَعَلَّكُمْ যাতে তোমরা تُرْحَمُوْنَ অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
১৩৩. وَسَارِعُوْا আর তোমরা দ্রুত ধাবিত হও اِلٰى مَغْفِرَةٍ ক্ষমার দিকে مِنْ رَّبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের وَجَنَّةٍ এবং এমন জান্নাতের দিকে, عَرْضُهَا যার প্রশস্ততা اَلسَّمَاوَاتُ আকাশসমূহ وَالْاَرْضُ ও পৃথিবী اُعِدَّتْ যা প্রস্তুত করা হয়েছে لِلْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদের জন্য।
সরল অনুবাদ
১৩০. হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ সুদ (চক্র বৃদ্ধিহারে) [এখানে সুদ বুঝাতে গিয়ে চক্রবৃদ্ধিহারে এজন্যই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তখনকার যুগে এই চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের লেনদেনটি অধিক প্রচলিত ছিল। বিষয়টি এরূপ ছিল যে, যখন তারা কাউকে কোন কিছু ঋণ দিত, তখন তারা সেটি ফেরত দেয়ার সময় নির্ধারণ করে দিত। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি উক্ত সময় অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতো, তাহলে ঋণদাতা প্রতিটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ দাবী করে বসতো। আর এটাই হচ্ছে তখনকার যুগের প্রচলিত সুদ, যা বর্তমানেও প্রচলিত রয়েছে।] ভক্ষণ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পার।
১৩১. আর তোমরা সেই আগুনকে ভয় করো, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
১৩২. আর তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও রাসূলের, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
১৩৩. আর তোমরা দ্রুত ধাবিত হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং এমন জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর (সমান), যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য । [এ আয়াতগুলো উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কিছু দিন পরেই মুসলিমদের পরাজয়ের কারণের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে তাদের ত্রুটিসমূহ সংশোধনের নির্দেশনা প্রদানের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। এখানে উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে যে বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে তা হলো, মুসলিমদের পার্থিব লোভ-লালসা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সুদ গ্রহণ করা, ভক্ষণ করা এবং সুদের কারবার করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
২. সুদের ব্যাপারে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করা উচিত।
৩. সর্বদা আল্লাহর ক্ষমার দিকে ধাবিত হতে হবে।
৪. জান্নাত কেবল মুত্তাক্বী বান্দাদের জন্য প্রস্তুতকৃত।
৫. আর জাহান্নাম কাফিরদের জন্য প্রস্তুতকৃত।
শাব্দিক অনুবাদ
১৩০. اٰمَنُوْا الَّذِيْنَ يَاۤ اَيُّهَا হে ঈমানদারগণ! لَا تَأْكُلُوا তোমরা ভক্ষণ করো না اَلرِّبَا সুদ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً চক্র বৃদ্ধি হারে وَاتَّقُوا এবং তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে, لَعَلَّكُمْ যাতে তোমরা تُفْلِحُوْنَ সফল হতে পার।
১৩১. وَاتَّقُوا আর তোমরা ভয় করো اَلنَّارَ সেই আগুনকে, اَلَّتِيْۤ যা اُعِدَّتْ প্রস্তুত করা হয়েছে لِلْكَافِرِيْنَ কাফিরদের জন্য ।
১৩২. وَاَطِيْعُوا আর তোমরা আনুগত্য করো اَللهَ আল্লাহর وَالرَّسُوْلَ ও রাসূলের, لَعَلَّكُمْ যাতে তোমরা تُرْحَمُوْنَ অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
১৩৩. وَسَارِعُوْا আর তোমরা দ্রুত ধাবিত হও اِلٰى مَغْفِرَةٍ ক্ষমার দিকে مِنْ رَّبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের وَجَنَّةٍ এবং এমন জান্নাতের দিকে, عَرْضُهَا যার প্রশস্ততা اَلسَّمَاوَاتُ আকাশসমূহ وَالْاَرْضُ ও পৃথিবী اُعِدَّتْ যা প্রস্তুত করা হয়েছে لِلْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদের জন্য।
সরল অনুবাদ
১৩০. হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ সুদ (চক্র বৃদ্ধিহারে) [এখানে সুদ বুঝাতে গিয়ে চক্রবৃদ্ধিহারে এজন্যই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তখনকার যুগে এই চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের লেনদেনটি অধিক প্রচলিত ছিল। বিষয়টি এরূপ ছিল যে, যখন তারা কাউকে কোন কিছু ঋণ দিত, তখন তারা সেটি ফেরত দেয়ার সময় নির্ধারণ করে দিত। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি উক্ত সময় অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতো, তাহলে ঋণদাতা প্রতিটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ দাবী করে বসতো। আর এটাই হচ্ছে তখনকার যুগের প্রচলিত সুদ, যা বর্তমানেও প্রচলিত রয়েছে।] ভক্ষণ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পার।
১৩১. আর তোমরা সেই আগুনকে ভয় করো, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
১৩২. আর তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও রাসূলের, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
১৩৩. আর তোমরা দ্রুত ধাবিত হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং এমন জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর (সমান), যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য । [এ আয়াতগুলো উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কিছু দিন পরেই মুসলিমদের পরাজয়ের কারণের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে তাদের ত্রুটিসমূহ সংশোধনের নির্দেশনা প্রদানের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। এখানে উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে যে বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে তা হলো, মুসলিমদের পার্থিব লোভ-লালসা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সুদ গ্রহণ করা, ভক্ষণ করা এবং সুদের কারবার করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
২. সুদের ব্যাপারে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করা উচিত।
৩. সর্বদা আল্লাহর ক্ষমার দিকে ধাবিত হতে হবে।
৪. জান্নাত কেবল মুত্তাক্বী বান্দাদের জন্য প্রস্তুতকৃত।
৫. আর জাহান্নাম কাফিরদের জন্য প্রস্তুতকৃত।
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِي السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ (১৩৪) وَالَّذِيْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ۫ وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ۫ وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلٰى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ (১৩৫) اُولٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ مَّغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ وَنِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ (১৩৬)
শাব্দিক অনুবাদ
১৩৪. اَلَّذِيْنَ যারা يُنْفِقُوْنَ ব্যয় করে فِي السَّرَّآءِ স্বচ্ছলতায় وَالضَّرَّآءِ ও অভাবগ্রস্থ অবস্থায় وَالْكَاظِمِيْنَ এবং যারা সংবরণকারী اَلْغَيْظَ ক্রোধ; وَالْعَافِيْنَ এবং ক্ষমা প্রদর্শনকারী عَنِ النَّاسِ মানুষের প্রতি। وَاللهُ আর আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلْمُحْسِنِيْنَ সৎকর্মশীলদেরকে।
১৩৫. وَالَّذِيْنَ আর যারা اِذَا যখন فَعَلُوْا করে ফেলে فَاحِشَةً কোন অশ্লীল কার্য اَوْ কিংবা ظَلَمُوْا যুলুম (অত্যাচার) করে ফেলে اَنْفُسَهُمْ নিজের জীবনের প্রতি, ذَكَرُوا তখন তারা স্মরণ করে اَللهَ আল্লাহকে فَاسْتَغْفَرُوْا অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে لِذُنُوْبِهِمْ তাদের অপরাধসমূহের জন্য। وَمَنْ আর কে يَغْفِرُ ক্ষমা করতে পারে اَلذُّنُوْبَ অপরাধসমূহ اِلَّا ব্যতীত اَللهُ আল্লাহ? وَلَمْ يُصِرُّوْا এবং তারা অটল থাকে না عَلٰى (ঐ বিষয়ের) উপর مَا فَعَلُوْا যা তারা করেছে وَهُمْ অথচ তারা يَعْلَمُوْنَ জানে।
১৩৬. اُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক جَزَآؤُهُمْ তাদের পুরস্কার হচ্ছে مَغْفِرَةٌ ক্ষমা مِنْ رَّبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে وَجَنَّاتٌ এবং এমন উদ্যানসমূহ, تَجْرِيْ প্রবাহিত থাকবে مِنْ تَحْتِهَا যেগুলোর তলদেশ দিয়ে اَلْاَنْهَارُ নদীসমূহ; خَالِدِيْنَ তারা চিরস্থায়ী হবে فِيْهَا সেখানে وَنِعْمَ আর কতই না সুন্দর اَجْرُ প্রতিদান اَلْعَامِلِيْنَ (সৎ) কর্মশীলদের!
সরল অনুবাদ
১৩৪. (তাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা স্বচ্ছল ও অভাব (উভয়) অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে [অর্থাৎ মুত্তাকীগণ সর্বাবস্থায় আল্লাহর পথে দান করার জন্য প্রস্তুত থাকে- এমনকি এজন্য যদি তাদের সমস্ত সম্পদ দান করার প্রয়োজন হয়, তাহলেও তারা এতে কোনরূপ দ্বিধাবোধ করে না। আর তারা দান করার ক্ষেত্রে দারিদ্রতাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায় না।] এবং তারা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে [অর্থাৎ তাদের ক্রোধ তাদের আল্লাহভীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তারা নিজেদের বিষয়ে কখনো কারো উপর ক্রোধান্বিত হন না, বরং তারা ঐসময় ক্রোধান্বিত হন, যখন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ বিরুধী কোন কাজ সংঘটিত হতে দেখে।] এবং তারা মানুষকে ক্ষমা করে; [এখানে ক্ষমা বলতে ঐসব ক্ষমাকে বুঝানো হয়েছে, যা একান্তই তার নিজের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ কেউ যদি তার সাথে এমন কোন অপরাধ করে, যার প্রতিশোধ গ্রহণ করা অথবা না করার বিষয়টি একান্তই তার সাথে সম্পৃক্ত, তাহলে তারা তাকে ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। কিন্তু যদি তারা কাউকে এমন কোন অপরাধ সংঘটিত হতে দেখে, যার শাস্তির ব্যাপারে শরীয়তে স্পষ্ট বিধান রয়েছে, তাহলে তারা কাউকে ক্ষমা করে না- এমনকি একান্ত আপনজনকেও না।] আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।
১৩৫. (তাদের আরো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা যখন কোন অশ্লীল কার্য করে ফেলে কিংবা নিজের জীবনের প্রতি যুলুম (অত্যাচার) করে ফেলে, তখন আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের অপরাধসমূহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। [অর্থাৎ তারা যখন বুঝতে পারে যে, তার দ্বারা অমুক পাপ সংঘটিত হয়েছে, তাহলে তারা সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং উত্তম কাজের দিকে মনোনিবেশ করে, যাতে করে উক্ত পাপ কর্মটি এই সৎকর্মের মাধ্যমে সমান সমান হয়ে যায়।] বস্তুত আল্লাহ ব্যতীত কে অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা যা (অন্যায়) করেছে, তার উপর জেনে-বুঝে অটল থাকে না। [অর্থাৎ তারা সত্যকে পাওয়ার সাথে সাথেই তা গ্রহণ করে নেয়। সুতরাং তাদের কেউ যদি বুঝতে পারে যে, সে যেসব আমল করে থাকে, তার মধ্যে অমুক আমলটি শিরক অথবা বিদআতের সাথে সম্পৃক্ত, তাহলে সে সাথে সাথেই সেটি পরিহার করে সঠিক আমলটিকে গ্রহণ করে নেয়। ফলে তারা কখনো কোন আমলের বিষয়ে মতভেদে লিপ্ত হয় না।]
১৩৬. তাদের পুরস্কার হচ্ছে তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে ক্ষমা এবং এমন উদ্যানসমূহ, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আর সৎকর্মশীলদের প্রতিদান কতই না সুন্দর!
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল সকল অবস্থায় আল্লাহর পথে ব্যয় করা উচিত।
২. সর্বদা ক্রোধ সংবরণ করে চলতে হবে।
৩. মানুষকে ক্ষমা করা একটি মহৎ গুণ।
৪. কোন অশ্লীল কাজ করা যাবে না।
৫. কোন গুনাহ করার সাথে সাথেই আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে এবং তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।
৬. জান্নাতীদের অন্যতম পুরস্কার হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের জন্য ক্ষমা।
শাব্দিক অনুবাদ
১৩৪. اَلَّذِيْنَ যারা يُنْفِقُوْنَ ব্যয় করে فِي السَّرَّآءِ স্বচ্ছলতায় وَالضَّرَّآءِ ও অভাবগ্রস্থ অবস্থায় وَالْكَاظِمِيْنَ এবং যারা সংবরণকারী اَلْغَيْظَ ক্রোধ; وَالْعَافِيْنَ এবং ক্ষমা প্রদর্শনকারী عَنِ النَّاسِ মানুষের প্রতি। وَاللهُ আর আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلْمُحْسِنِيْنَ সৎকর্মশীলদেরকে।
১৩৫. وَالَّذِيْنَ আর যারা اِذَا যখন فَعَلُوْا করে ফেলে فَاحِشَةً কোন অশ্লীল কার্য اَوْ কিংবা ظَلَمُوْا যুলুম (অত্যাচার) করে ফেলে اَنْفُسَهُمْ নিজের জীবনের প্রতি, ذَكَرُوا তখন তারা স্মরণ করে اَللهَ আল্লাহকে فَاسْتَغْفَرُوْا অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে لِذُنُوْبِهِمْ তাদের অপরাধসমূহের জন্য। وَمَنْ আর কে يَغْفِرُ ক্ষমা করতে পারে اَلذُّنُوْبَ অপরাধসমূহ اِلَّا ব্যতীত اَللهُ আল্লাহ? وَلَمْ يُصِرُّوْا এবং তারা অটল থাকে না عَلٰى (ঐ বিষয়ের) উপর مَا فَعَلُوْا যা তারা করেছে وَهُمْ অথচ তারা يَعْلَمُوْنَ জানে।
১৩৬. اُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক جَزَآؤُهُمْ তাদের পুরস্কার হচ্ছে مَغْفِرَةٌ ক্ষমা مِنْ رَّبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে وَجَنَّاتٌ এবং এমন উদ্যানসমূহ, تَجْرِيْ প্রবাহিত থাকবে مِنْ تَحْتِهَا যেগুলোর তলদেশ দিয়ে اَلْاَنْهَارُ নদীসমূহ; خَالِدِيْنَ তারা চিরস্থায়ী হবে فِيْهَا সেখানে وَنِعْمَ আর কতই না সুন্দর اَجْرُ প্রতিদান اَلْعَامِلِيْنَ (সৎ) কর্মশীলদের!
সরল অনুবাদ
১৩৪. (তাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা স্বচ্ছল ও অভাব (উভয়) অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে [অর্থাৎ মুত্তাকীগণ সর্বাবস্থায় আল্লাহর পথে দান করার জন্য প্রস্তুত থাকে- এমনকি এজন্য যদি তাদের সমস্ত সম্পদ দান করার প্রয়োজন হয়, তাহলেও তারা এতে কোনরূপ দ্বিধাবোধ করে না। আর তারা দান করার ক্ষেত্রে দারিদ্রতাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায় না।] এবং তারা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে [অর্থাৎ তাদের ক্রোধ তাদের আল্লাহভীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তারা নিজেদের বিষয়ে কখনো কারো উপর ক্রোধান্বিত হন না, বরং তারা ঐসময় ক্রোধান্বিত হন, যখন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ বিরুধী কোন কাজ সংঘটিত হতে দেখে।] এবং তারা মানুষকে ক্ষমা করে; [এখানে ক্ষমা বলতে ঐসব ক্ষমাকে বুঝানো হয়েছে, যা একান্তই তার নিজের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ কেউ যদি তার সাথে এমন কোন অপরাধ করে, যার প্রতিশোধ গ্রহণ করা অথবা না করার বিষয়টি একান্তই তার সাথে সম্পৃক্ত, তাহলে তারা তাকে ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। কিন্তু যদি তারা কাউকে এমন কোন অপরাধ সংঘটিত হতে দেখে, যার শাস্তির ব্যাপারে শরীয়তে স্পষ্ট বিধান রয়েছে, তাহলে তারা কাউকে ক্ষমা করে না- এমনকি একান্ত আপনজনকেও না।] আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।
১৩৫. (তাদের আরো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা যখন কোন অশ্লীল কার্য করে ফেলে কিংবা নিজের জীবনের প্রতি যুলুম (অত্যাচার) করে ফেলে, তখন আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের অপরাধসমূহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। [অর্থাৎ তারা যখন বুঝতে পারে যে, তার দ্বারা অমুক পাপ সংঘটিত হয়েছে, তাহলে তারা সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং উত্তম কাজের দিকে মনোনিবেশ করে, যাতে করে উক্ত পাপ কর্মটি এই সৎকর্মের মাধ্যমে সমান সমান হয়ে যায়।] বস্তুত আল্লাহ ব্যতীত কে অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা যা (অন্যায়) করেছে, তার উপর জেনে-বুঝে অটল থাকে না। [অর্থাৎ তারা সত্যকে পাওয়ার সাথে সাথেই তা গ্রহণ করে নেয়। সুতরাং তাদের কেউ যদি বুঝতে পারে যে, সে যেসব আমল করে থাকে, তার মধ্যে অমুক আমলটি শিরক অথবা বিদআতের সাথে সম্পৃক্ত, তাহলে সে সাথে সাথেই সেটি পরিহার করে সঠিক আমলটিকে গ্রহণ করে নেয়। ফলে তারা কখনো কোন আমলের বিষয়ে মতভেদে লিপ্ত হয় না।]
১৩৬. তাদের পুরস্কার হচ্ছে তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে ক্ষমা এবং এমন উদ্যানসমূহ, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আর সৎকর্মশীলদের প্রতিদান কতই না সুন্দর!
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল সকল অবস্থায় আল্লাহর পথে ব্যয় করা উচিত।
২. সর্বদা ক্রোধ সংবরণ করে চলতে হবে।
৩. মানুষকে ক্ষমা করা একটি মহৎ গুণ।
৪. কোন অশ্লীল কাজ করা যাবে না।
৫. কোন গুনাহ করার সাথে সাথেই আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে এবং তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।
৬. জান্নাতীদের অন্যতম পুরস্কার হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের জন্য ক্ষমা।
قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ سُنَنٌ فَسِيْرُوْا فِي الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِيْنَ (১৩৭) هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ (১৩৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১৩৭. قَدْ خَلَتْ নিশ্চয় অতিক্রান্ত (বাস্তবায়িত) হয়েছে مِنْ قَبْلِكُمْ তোমাদের পূর্বে سُنَنٌ বহু সুন্নত (জীবনব্যবস্থা); فَسِيْرُوْا অতএব তোমরা ভ্রমণ করো فِي الْاَرْضِ পৃথিবীতে فَانْظُرُوْا এবং লক্ষ্য করো যে, كَيْفَ كَانَ কেমন হয়েছিল عَاقِبَةُ পরিণাম اَلْمُكَذِّبِيْنَ মিথ্যাবাদীদের।
১৩৮. هٰذَا এটা (কুরআন) بَيَانٌ স্পষ্ট বিবরণ لِلنَّاسِ মানবজাতীর জন্য وَهُدًى এবং পথনির্দেশিকা وَمَوْعِظَةٌ ও উপদেশ لِلْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদের জন্য।
সরল অনুবাদ
১৩৭. অবশ্যই অতীত হয়ে গিয়েছে তোমাদের পূর্বে বহু সুন্নত (আল্লাহর নিয়ম-নীতি); অতএব তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, কেমন হয়েছিল মিথ্যাবাদীদের পরিণাম। [এখানে উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের কারণে মুসলিমদের মধ্যে যে কষ্টের অবতারণা হয়েছিল সে ব্যাপারে সান্ত্বনা প্রদান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, তোমরা এই সামান্য বিপর্যয়ের কারণেই ভেঙ্গে পড়ছ। অথচ তোমাদের পূর্বে অনেক নবী ও তার উম্মতগণ আরো বড় বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। অবশেষে তারাই বিজয়ী হয়েছে এবং শত্রুরা চরমভাবে পরাস্ত হয়েছে। এগুলোর অনেক নিদর্শন তো এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান। সুতরাং তোমরা যদি চাও, তাহলে ভ্রমণ করে সেসব জাতির নিদর্শনসমূহ দেখে নিতে পার। এতে করে তোমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হবে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তোমাদের মনোবলও বৃদ্ধি পাবে।]
১৩৮. এটা (কুরআন) মানবজাতির জন্য স্পষ্ট বিবরণ এবং মুত্তাকীদের জন্য পথনির্দেশিকা ও উপদেশ।
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. পৃথিবীতে পূর্ববর্তী অনেক সভ্যতার নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে।
২. ভ্রমণ করে এসব সভ্যতা পরিদর্শন করে আসা উচিত।
শাব্দিক অনুবাদ
১৩৭. قَدْ خَلَتْ নিশ্চয় অতিক্রান্ত (বাস্তবায়িত) হয়েছে مِنْ قَبْلِكُمْ তোমাদের পূর্বে سُنَنٌ বহু সুন্নত (জীবনব্যবস্থা); فَسِيْرُوْا অতএব তোমরা ভ্রমণ করো فِي الْاَرْضِ পৃথিবীতে فَانْظُرُوْا এবং লক্ষ্য করো যে, كَيْفَ كَانَ কেমন হয়েছিল عَاقِبَةُ পরিণাম اَلْمُكَذِّبِيْنَ মিথ্যাবাদীদের।
১৩৮. هٰذَا এটা (কুরআন) بَيَانٌ স্পষ্ট বিবরণ لِلنَّاسِ মানবজাতীর জন্য وَهُدًى এবং পথনির্দেশিকা وَمَوْعِظَةٌ ও উপদেশ لِلْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকীদের জন্য।
সরল অনুবাদ
১৩৭. অবশ্যই অতীত হয়ে গিয়েছে তোমাদের পূর্বে বহু সুন্নত (আল্লাহর নিয়ম-নীতি); অতএব তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, কেমন হয়েছিল মিথ্যাবাদীদের পরিণাম। [এখানে উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের কারণে মুসলিমদের মধ্যে যে কষ্টের অবতারণা হয়েছিল সে ব্যাপারে সান্ত্বনা প্রদান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, তোমরা এই সামান্য বিপর্যয়ের কারণেই ভেঙ্গে পড়ছ। অথচ তোমাদের পূর্বে অনেক নবী ও তার উম্মতগণ আরো বড় বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। অবশেষে তারাই বিজয়ী হয়েছে এবং শত্রুরা চরমভাবে পরাস্ত হয়েছে। এগুলোর অনেক নিদর্শন তো এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান। সুতরাং তোমরা যদি চাও, তাহলে ভ্রমণ করে সেসব জাতির নিদর্শনসমূহ দেখে নিতে পার। এতে করে তোমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হবে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তোমাদের মনোবলও বৃদ্ধি পাবে।]
১৩৮. এটা (কুরআন) মানবজাতির জন্য স্পষ্ট বিবরণ এবং মুত্তাকীদের জন্য পথনির্দেশিকা ও উপদেশ।
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. পৃথিবীতে পূর্ববর্তী অনেক সভ্যতার নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে।
২. ভ্রমণ করে এসব সভ্যতা পরিদর্শন করে আসা উচিত।
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ (১৩৯) اِنْ يَّمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُه ؕ وَتِلْكَ الْاَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِۚ وَلِيَعْلَمَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَآءَؕ وَاللهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ (১৪০) وَلِيُمَحِّصَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِيْنَ (১৪১)
শাব্দিক অনুবাদ
১৩৯. وَلَا تَهِنُوْا আর তোমরা দুর্বল হয়ো না وَلَا تَحْزَنُوْا এবং তোমরা দুশ্চিন্তা করো না, وَاَنْتُمُ তোমরাই اَلْاَعْلَوْنَ বিজয়ী হবে اِنْ كُنْتُمْ যদি তোমরা হও مُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত।
১৪০. اِنْ যদি يَمْسَسْكُمْ তোমাদেরকে স্পর্শ করে থাকে قَرْحٌ আঘাত, فَقَدْ তবে নিশ্চয় مَسَّ স্পর্শ করেছিল اَلْقَوْمَ সে সম্প্রদায়কেও قَرْحٌ আঘাত مِثْلُه অনুরূপ। وَتِلْكَ الْاَيَّامُ আর এ দিবসসমূহ نُدَاوِلُهَا আমি তা আবর্তিত করি بَيْنَ النَّاسِ মানুষের মধ্যে وَلِيَعْلَمَ যাতে করে জানতে পারেন اَللهُ আল্লাহ اَلَّذِيْنَ যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে وَيَتَّخِذَ এবং গ্রহণ করতে পারেন مِنْكُمْ তোমাদের মধ্য হতে (কিছু ব্যক্তিকে) شُهَدَآءَ শহীদরূপে। وَاللهُ আর আল্লাহ لَا يُحِبُّ ভালোবাসেন না اَلظَّالِمِيْنَ অত্যাচারীদেরকে।
১৪১. وَلِيُمَحِّصَ আর যাতে পরিশুদ্ধ করতে পারেন اَللهُ আল্লাহ اَلَّذِيْنَ যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে وَيَمْحَقَ এবং নিশ্চিহ্ন করতে পারেন اَلْكَافِرِيْنَ কাফিরদেরকে ।
সরল অনুবাদ
১৩৯. (অতএব) তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুশ্চিন্তা করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকে। [এখানে মুসলিমদেরকে বিজয়ী হওয়ার আগাম সুসংবাদ প্রদান পূর্বক আরো একটি সূক্ষ্ম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের জয়-পরাজয়ের বিষয়টি নির্ভর করবে তোমাদের ঈমানের উপর। তোমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই মুমিন হয়ে থাক, তাহলে অবশ্যই তোমরা বিজয়ী হবে।]
১৪০. যদি তোমাদেরকে (উহুদে) আঘাত স্পর্শ করে থাকে, তবে নিশ্চয় সে সম্প্রদায়কেও (বদরে) অনুরূপ আঘাতই স্পর্শ করেছিল। [এখানে আরো একটু ভিন্ন ভঙ্গিমায় সান্ত্বনা প্রদান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, তোমরা যে বিপর্যয়ের সম্মুখী হয়েছ, তাতে এত দুশ্চিন্তা করার কি আছে? ইতিপূর্বে তোমরা যখন তাদেরকে বদর যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলে, তখন তারা তো তোমাদের থেকে আরো বেশি দুশ্চিন্তায় পতিত হয়েছিল। আর এজন্যই তো তারা এখন আবার এই যুদ্ধে এতো শক্তি নিয়ে এসেছে। তবে এতে তোমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। তোমরা সেগুলো গ্রহণ করে পুনরায় উজ্জীবিত হও।] এ দিবসসমূহকে [এখানে দিবস বলতে ঐসব দিনকে বুঝানো হয়েছে, যে দিনগুলোতে মুসলিমগণ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা এরূপ দিবস যুগে যুগে বার বার আবর্তন করে থাকেন।] আমি মানুষের মধ্যে আবর্তিত করি, যাতে করে যারা ঈমান এসেছে তাদেরকে আল্লাহ জানতে (স্পষ্ট করতে) পারেন এবং তোমাদের মধ্য হতে কিছু ব্যক্তিকে শহীদরূপে [এখানে شهداء (শহীদগণ) এর দুটি অর্থ হতে পারে। তা হলো- (১) তোমাদের মধ্য হতে কিছু লোককে নিহত করার মাধ্যমে শহীদের মর্যাদা অধিষ্ঠিত করতে চান। (২) বর্তমানে তোমাদের মধ্যে ঈমানদার ও মুনাফিকদের দ্বারা মিশ্রিত যে দলটি রয়েছে, তার মধ্য হতে এমন একটি ছোট দলকে নির্বাচন করে নিতে চান, যারা প্রকৃতপক্ষেই এই মহান পদের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। কেননা এই মহান ও মর্যাদাপূর্ণ পদেই মুসলিম উম্মাহকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে।] গ্রহণ করতে পারেন। [এখানে মুসলিমদেরকে আরো একটু ভিন্ন ভঙ্গিমায় সান্ত্বনা প্রদান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, তোমরা যে ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছো, সেটা তো আমার ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়েছে। আর আমি যা ইচ্ছা তা-ই করে থাকে। সুতরাং তোমরা এতো দুঃখ প্রকাশ করছ কেন? আমার এই কর্মের পেছনে কয়েকটি বৃহত্তম স্বার্থ রয়েছে, যা তোমাদেরই জন্য সুসংবাদস্বরূপ। আর তা হলো- (১) এর মাধ্যমে আমি তোমাদের ঈমানের পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকি। কেননা যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই প্রমাণ হয়ে যায় যে, কে প্রকৃত ঈমানের অধিকারী এবং কে প্রকৃত ঈমানের অধিকারী নয় তথা মুনাফিক। (২) তোমরা যে প্রতিনিয়ত শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষাবোধ কর, আমি এই দিবসসমূহের পুনরাবর্তন ঘটিয়ে সেই সুযোগ করে দেই। (৩) এর মাধ্যমে আমি অত্যাচারী শাসকদেরকে প্রতিহত করে থাকি।] আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না।
১৪১. আর আল্লাহ পরিশুদ্ধ করবেন যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে এবং কাফিরদেরকে নিশ্চিহ্ন করবেন। [এখানে আরো দুটি স্বার্থের কথা বলা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আয়াতে বর্ণিত স্বার্থসমূহের মধ্যে অন্যতম। আর তা হলো- (৪) এর মাধ্যমে আমি ঈমানদারদের ভুল-ভ্রান্তিসমূহ পরিশুদ্ধ করে থাকি, যাতে করে তারা পরবর্তীতে এরূপ কোন ভুলের মধ্যে পতিত না হয় এবং তাদের ঈমানী শক্তিও বৃদ্ধি পায়। (৫) এর মাধ্যমে আমি কাফিরদের সকল শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে থাকি- যাতে করে তারা আর কখনো সত্যের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মুমিনদের জন্য কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়া এবং দুর্বলতাও প্রদর্শন করা উচিত নয়।
২. মুমিনদের বিজয় আবশ্যম্ভী।
৩. কখনো কখনো আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে সাময়িক কষ্টের মধ্যে ফেলে পরীক্ষা করে থাকেন।
৪. কোন পরিস্থিতিতে ঈমান হারা হওয়া যাবে না।
৫. যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা অনেক মুমিনকে শহীহ হিসেবে গ্রহণ করেন।
৬. যুদ্ধের মাধ্যমে কাফিরদের শক্তি খর্ব হয়।
৭. যুদের মাধ্যমে ঈমানদারগণ নিজেদের দুর্বলতা খুঁজে বের করে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে নিতে পারেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১৩৯. وَلَا تَهِنُوْا আর তোমরা দুর্বল হয়ো না وَلَا تَحْزَنُوْا এবং তোমরা দুশ্চিন্তা করো না, وَاَنْتُمُ তোমরাই اَلْاَعْلَوْنَ বিজয়ী হবে اِنْ كُنْتُمْ যদি তোমরা হও مُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত।
১৪০. اِنْ যদি يَمْسَسْكُمْ তোমাদেরকে স্পর্শ করে থাকে قَرْحٌ আঘাত, فَقَدْ তবে নিশ্চয় مَسَّ স্পর্শ করেছিল اَلْقَوْمَ সে সম্প্রদায়কেও قَرْحٌ আঘাত مِثْلُه অনুরূপ। وَتِلْكَ الْاَيَّامُ আর এ দিবসসমূহ نُدَاوِلُهَا আমি তা আবর্তিত করি بَيْنَ النَّاسِ মানুষের মধ্যে وَلِيَعْلَمَ যাতে করে জানতে পারেন اَللهُ আল্লাহ اَلَّذِيْنَ যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে وَيَتَّخِذَ এবং গ্রহণ করতে পারেন مِنْكُمْ তোমাদের মধ্য হতে (কিছু ব্যক্তিকে) شُهَدَآءَ শহীদরূপে। وَاللهُ আর আল্লাহ لَا يُحِبُّ ভালোবাসেন না اَلظَّالِمِيْنَ অত্যাচারীদেরকে।
১৪১. وَلِيُمَحِّصَ আর যাতে পরিশুদ্ধ করতে পারেন اَللهُ আল্লাহ اَلَّذِيْنَ যারা اٰمَنُوْا ঈমান এনেছে وَيَمْحَقَ এবং নিশ্চিহ্ন করতে পারেন اَلْكَافِرِيْنَ কাফিরদেরকে ।
সরল অনুবাদ
১৩৯. (অতএব) তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুশ্চিন্তা করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকে। [এখানে মুসলিমদেরকে বিজয়ী হওয়ার আগাম সুসংবাদ প্রদান পূর্বক আরো একটি সূক্ষ্ম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের জয়-পরাজয়ের বিষয়টি নির্ভর করবে তোমাদের ঈমানের উপর। তোমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই মুমিন হয়ে থাক, তাহলে অবশ্যই তোমরা বিজয়ী হবে।]
১৪০. যদি তোমাদেরকে (উহুদে) আঘাত স্পর্শ করে থাকে, তবে নিশ্চয় সে সম্প্রদায়কেও (বদরে) অনুরূপ আঘাতই স্পর্শ করেছিল। [এখানে আরো একটু ভিন্ন ভঙ্গিমায় সান্ত্বনা প্রদান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, তোমরা যে বিপর্যয়ের সম্মুখী হয়েছ, তাতে এত দুশ্চিন্তা করার কি আছে? ইতিপূর্বে তোমরা যখন তাদেরকে বদর যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলে, তখন তারা তো তোমাদের থেকে আরো বেশি দুশ্চিন্তায় পতিত হয়েছিল। আর এজন্যই তো তারা এখন আবার এই যুদ্ধে এতো শক্তি নিয়ে এসেছে। তবে এতে তোমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। তোমরা সেগুলো গ্রহণ করে পুনরায় উজ্জীবিত হও।] এ দিবসসমূহকে [এখানে দিবস বলতে ঐসব দিনকে বুঝানো হয়েছে, যে দিনগুলোতে মুসলিমগণ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা এরূপ দিবস যুগে যুগে বার বার আবর্তন করে থাকেন।] আমি মানুষের মধ্যে আবর্তিত করি, যাতে করে যারা ঈমান এসেছে তাদেরকে আল্লাহ জানতে (স্পষ্ট করতে) পারেন এবং তোমাদের মধ্য হতে কিছু ব্যক্তিকে শহীদরূপে [এখানে شهداء (শহীদগণ) এর দুটি অর্থ হতে পারে। তা হলো- (১) তোমাদের মধ্য হতে কিছু লোককে নিহত করার মাধ্যমে শহীদের মর্যাদা অধিষ্ঠিত করতে চান। (২) বর্তমানে তোমাদের মধ্যে ঈমানদার ও মুনাফিকদের দ্বারা মিশ্রিত যে দলটি রয়েছে, তার মধ্য হতে এমন একটি ছোট দলকে নির্বাচন করে নিতে চান, যারা প্রকৃতপক্ষেই এই মহান পদের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। কেননা এই মহান ও মর্যাদাপূর্ণ পদেই মুসলিম উম্মাহকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে।] গ্রহণ করতে পারেন। [এখানে মুসলিমদেরকে আরো একটু ভিন্ন ভঙ্গিমায় সান্ত্বনা প্রদান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, তোমরা যে ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছো, সেটা তো আমার ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়েছে। আর আমি যা ইচ্ছা তা-ই করে থাকে। সুতরাং তোমরা এতো দুঃখ প্রকাশ করছ কেন? আমার এই কর্মের পেছনে কয়েকটি বৃহত্তম স্বার্থ রয়েছে, যা তোমাদেরই জন্য সুসংবাদস্বরূপ। আর তা হলো- (১) এর মাধ্যমে আমি তোমাদের ঈমানের পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকি। কেননা যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই প্রমাণ হয়ে যায় যে, কে প্রকৃত ঈমানের অধিকারী এবং কে প্রকৃত ঈমানের অধিকারী নয় তথা মুনাফিক। (২) তোমরা যে প্রতিনিয়ত শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষাবোধ কর, আমি এই দিবসসমূহের পুনরাবর্তন ঘটিয়ে সেই সুযোগ করে দেই। (৩) এর মাধ্যমে আমি অত্যাচারী শাসকদেরকে প্রতিহত করে থাকি।] আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না।
১৪১. আর আল্লাহ পরিশুদ্ধ করবেন যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে এবং কাফিরদেরকে নিশ্চিহ্ন করবেন। [এখানে আরো দুটি স্বার্থের কথা বলা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আয়াতে বর্ণিত স্বার্থসমূহের মধ্যে অন্যতম। আর তা হলো- (৪) এর মাধ্যমে আমি ঈমানদারদের ভুল-ভ্রান্তিসমূহ পরিশুদ্ধ করে থাকি, যাতে করে তারা পরবর্তীতে এরূপ কোন ভুলের মধ্যে পতিত না হয় এবং তাদের ঈমানী শক্তিও বৃদ্ধি পায়। (৫) এর মাধ্যমে আমি কাফিরদের সকল শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে থাকি- যাতে করে তারা আর কখনো সত্যের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মুমিনদের জন্য কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়া এবং দুর্বলতাও প্রদর্শন করা উচিত নয়।
২. মুমিনদের বিজয় আবশ্যম্ভী।
৩. কখনো কখনো আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে সাময়িক কষ্টের মধ্যে ফেলে পরীক্ষা করে থাকেন।
৪. কোন পরিস্থিতিতে ঈমান হারা হওয়া যাবে না।
৫. যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা অনেক মুমিনকে শহীহ হিসেবে গ্রহণ করেন।
৬. যুদ্ধের মাধ্যমে কাফিরদের শক্তি খর্ব হয়।
৭. যুদের মাধ্যমে ঈমানদারগণ নিজেদের দুর্বলতা খুঁজে বের করে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে নিতে পারেন।
৭৭
আয়াত : ১৪২ – ১৪৩ কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত বান্দাদেরকেই আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ (১৪২) وَلَقَدْ كُنْتُمْ تَمَنَّوْنَ الْمَوْتَ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَلْقَوْهُ فَقَدْ رَاَيْتُمُوْهُ وَاَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ (১৪৩)
শাব্দিক অনুবাদ
১৪২. اَمْ কি حَسِبْتُمْ তোমরা মনে করছ اَنْ যে, تَدْخُلُوا তোমরা প্রবেশ করবে اَلْجَنَّةَ জান্নাতে, وَلَمَّا অথচ এখনও يَعْلَمِ অবগত হননি اَللهُ আল্লাহ اَلَّذِيْنَ যারা جَاهَدُوْا জিহাদ করেছে مِنْكُمْ তোমাদের মধ্য হতে وَيَعْلَمَ এবং অবগত হননি اَلصَّابِرِيْنَ ধৈর্য্যশীলদের ব্যাপারে।
১৪৩. وَلَقَدْ নিশ্চয় كُنْتُمْ তোমরা تَمَنَّوْنَ কামনা করছিলে اَلْمَوْتَ মৃত্যুর (শাহাদাতের) مِنْ قَبْلِ এর পূর্বেই اَنْ যে, تَلْقَوْهُ তার মুখোমুখী হওয়ার। فَقَدْ আর নিশ্চয় رَاَيْتُمُوْهُ তা তোমরা প্রত্যক্ষ করলে وَاَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ বাস্তব দৃষ্টিতে।
সরল অনুবাদ
১৪২. তোমরা কি মনে করছ যে, তোমরা (এমনিতেই) জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ (পরীক্ষার মাধ্যমে) জেনে নেননি যে, তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করেছে আর কারা ধৈর্য্যশীল। [এখানে ঐসব লোকদেরকে তিরস্কার ও ধমক প্রদান করা হয়েছে, যারা নিজেদেরকে মুমিন হিসেবে দাবী করে, কিন্তু দ্বীনের স্বার্থে বিন্দু পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করতে রাজি নয় অথবা যারা শরীয়তের সহজসাধ্য বিষয়সমূহ খুবই মনোযোগ সহকারে আদায় করে এবং দ্বীনের কঠিন বিষয়সমূহকে পরিহার করে চলে অথবা যারা সত্যের বিরুদ্ধে শয়তানী শক্তিকে এমনভাবে ভয় করে থাকে, যেরূপ ভয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে করা উচিত অথবা দ্বীনের নফল বিষয়সমূহ আদায় করার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং ফরয বিষয়সমূহ আদায় করার ব্যাপারে অবহেলা করে। এক কথায় যারা ঈমানী দুর্বলতার রোগে কঠিনভাবে আক্রান্ত- এ আয়াতে তাদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে- যাতে করে তারা সেই দুর্বলতা কাটিয়ে নিজেদেরকে ঈমানী শক্তিতে উজ্জীবিত করতে পারে। সূরা বাকারার ২১৪নং এবং সূরা আনকাবুতের ২নং আয়াতেও এরূপ ব্যক্তিকে আরো ভিন্ন আকারে ধমক প্রদান করা হয়েছে। তারপর এ আয়াতে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য এমন একটি বিষয়কে শর্তারোপ করে দেয়া হয়েছে, যা ইসলামের সমস্ত হুকুম-আহকামের সাথে সম্পৃক্ত। আর তা হলো- পরিপূর্ণ ধৈর্য সহকারে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করা।]
১৪৩. নিশ্চয় তোমরা কামনা করছিলে (শাহাদাতের) মৃত্যুর এর (জিহাদের) সাথে সাক্ষাতের পূর্বেই। আর এইমাত্র তা তোমরা বাস্তব দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করলে। [এখানে ঐসব সাহাবীকে সম্বোধন করা হয়েছে, যারা বদর যুদ্ধের শহীদদের মর্যাদা অনুধাবন করে অনুরূপ মর্যাদা লাভের জন্য ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। অতঃপর এদেরই জোর দাবী অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদিনার বাহিরে গিয়ে কুরাইশদের আক্রমণ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। তারপর যখন যুদ্ধ শুরু হলো এবং মুসলিমগণ বিজয়ের প্রাথমিক অবস্থা অবলোকন করল- এমতাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পুনরায় কাফিরদের আক্রমণের স্বীকার হয়ে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হলো, তখন অল্পসংখ্যক সাহাবী ব্যতীত অধিকাংশই পলায়ন করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা এদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেই এই আয়াতের অবতারণা করে এ কথা অনুধাবন করিয়ে দেন যে, তোমরা যতটা সহজে শাহাদাতবরণের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছো, আসলে তা ততোটা সহজ নয়। যুদ্ধের ময়দানে উপনীত হলেই এর প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করা যায়। আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর সমর্থনে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হওয়ার আশা করো না এবং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা কামনা কর। তবে যদি শত্রুর সাথে মুখোমুখী হওয়ার পরিস্থিতি আপনা আপনিই এসে যায় এবং তোমাদেরকে তাদের সাথে লড়তে হয়, তাহলে তখন (ময়দানে) সুদৃঢ় ও অনঢ় থাকো। জেনে রেখো! জান্নাত হলো তরবারির ছায়ার তলে। (বুখারী হা/২৮১৮)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. নির্বাচিত বান্দা ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন ধরনের কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য নির্বাচিত করে থাকেন।
৩. আল্লাহর পরীক্ষাসমূহে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হবে।
৪. কোন অবস্থাতেই মৃত্যু কামনা করা যাবে না, তবে শাহাদাতের মৃত্যু কামনা করা যাবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৪২. اَمْ কি حَسِبْتُمْ তোমরা মনে করছ اَنْ যে, تَدْخُلُوا তোমরা প্রবেশ করবে اَلْجَنَّةَ জান্নাতে, وَلَمَّا অথচ এখনও يَعْلَمِ অবগত হননি اَللهُ আল্লাহ اَلَّذِيْنَ যারা جَاهَدُوْا জিহাদ করেছে مِنْكُمْ তোমাদের মধ্য হতে وَيَعْلَمَ এবং অবগত হননি اَلصَّابِرِيْنَ ধৈর্য্যশীলদের ব্যাপারে।
১৪৩. وَلَقَدْ নিশ্চয় كُنْتُمْ তোমরা تَمَنَّوْنَ কামনা করছিলে اَلْمَوْتَ মৃত্যুর (শাহাদাতের) مِنْ قَبْلِ এর পূর্বেই اَنْ যে, تَلْقَوْهُ তার মুখোমুখী হওয়ার। فَقَدْ আর নিশ্চয় رَاَيْتُمُوْهُ তা তোমরা প্রত্যক্ষ করলে وَاَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ বাস্তব দৃষ্টিতে।
সরল অনুবাদ
১৪২. তোমরা কি মনে করছ যে, তোমরা (এমনিতেই) জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ (পরীক্ষার মাধ্যমে) জেনে নেননি যে, তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করেছে আর কারা ধৈর্য্যশীল। [এখানে ঐসব লোকদেরকে তিরস্কার ও ধমক প্রদান করা হয়েছে, যারা নিজেদেরকে মুমিন হিসেবে দাবী করে, কিন্তু দ্বীনের স্বার্থে বিন্দু পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করতে রাজি নয় অথবা যারা শরীয়তের সহজসাধ্য বিষয়সমূহ খুবই মনোযোগ সহকারে আদায় করে এবং দ্বীনের কঠিন বিষয়সমূহকে পরিহার করে চলে অথবা যারা সত্যের বিরুদ্ধে শয়তানী শক্তিকে এমনভাবে ভয় করে থাকে, যেরূপ ভয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে করা উচিত অথবা দ্বীনের নফল বিষয়সমূহ আদায় করার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং ফরয বিষয়সমূহ আদায় করার ব্যাপারে অবহেলা করে। এক কথায় যারা ঈমানী দুর্বলতার রোগে কঠিনভাবে আক্রান্ত- এ আয়াতে তাদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে- যাতে করে তারা সেই দুর্বলতা কাটিয়ে নিজেদেরকে ঈমানী শক্তিতে উজ্জীবিত করতে পারে। সূরা বাকারার ২১৪নং এবং সূরা আনকাবুতের ২নং আয়াতেও এরূপ ব্যক্তিকে আরো ভিন্ন আকারে ধমক প্রদান করা হয়েছে। তারপর এ আয়াতে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য এমন একটি বিষয়কে শর্তারোপ করে দেয়া হয়েছে, যা ইসলামের সমস্ত হুকুম-আহকামের সাথে সম্পৃক্ত। আর তা হলো- পরিপূর্ণ ধৈর্য সহকারে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করা।]
১৪৩. নিশ্চয় তোমরা কামনা করছিলে (শাহাদাতের) মৃত্যুর এর (জিহাদের) সাথে সাক্ষাতের পূর্বেই। আর এইমাত্র তা তোমরা বাস্তব দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করলে। [এখানে ঐসব সাহাবীকে সম্বোধন করা হয়েছে, যারা বদর যুদ্ধের শহীদদের মর্যাদা অনুধাবন করে অনুরূপ মর্যাদা লাভের জন্য ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। অতঃপর এদেরই জোর দাবী অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদিনার বাহিরে গিয়ে কুরাইশদের আক্রমণ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। তারপর যখন যুদ্ধ শুরু হলো এবং মুসলিমগণ বিজয়ের প্রাথমিক অবস্থা অবলোকন করল- এমতাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পুনরায় কাফিরদের আক্রমণের স্বীকার হয়ে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হলো, তখন অল্পসংখ্যক সাহাবী ব্যতীত অধিকাংশই পলায়ন করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা এদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেই এই আয়াতের অবতারণা করে এ কথা অনুধাবন করিয়ে দেন যে, তোমরা যতটা সহজে শাহাদাতবরণের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছো, আসলে তা ততোটা সহজ নয়। যুদ্ধের ময়দানে উপনীত হলেই এর প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করা যায়। আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর সমর্থনে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হওয়ার আশা করো না এবং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা কামনা কর। তবে যদি শত্রুর সাথে মুখোমুখী হওয়ার পরিস্থিতি আপনা আপনিই এসে যায় এবং তোমাদেরকে তাদের সাথে লড়তে হয়, তাহলে তখন (ময়দানে) সুদৃঢ় ও অনঢ় থাকো। জেনে রেখো! জান্নাত হলো তরবারির ছায়ার তলে। (বুখারী হা/২৮১৮)]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. নির্বাচিত বান্দা ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন ধরনের কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য নির্বাচিত করে থাকেন।
৩. আল্লাহর পরীক্ষাসমূহে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হবে।
৪. কোন অবস্থাতেই মৃত্যু কামনা করা যাবে না, তবে শাহাদাতের মৃত্যু কামনা করা যাবে।
আঁকড়ে ধরা আবশ্যক
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُؕ اَفَاِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْؕ وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًاؕ وَّسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِيْنَ (১৪৪)
শাব্দিক অনুবাদ
১৪৪. وَمَا আর নয় مُحَمَّدٌ মুহাম্মাদ اِلَّا ব্যতীত رَسُوْلٌ একজন রাসূল, قَدْ خَلَتْ গত হয়েছে مِنْ قَبْلِه তার পূর্বেও اَلرُّسُلُ রাসূলগণ। اَفَاِنْ সুতরাং যদি مَاتَ সে মারা যায় اَوْ অথবা قُتِلَ নিহত হয়, اِنْقَلَبْتُمْ তবে কি তোমরা ফিরে যাবে عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ তোমাদের পেছনে ? وَمَنْ আর যে ব্যক্তি يَنْقَلِبْ ফিরে যাবে عَلٰى عَقِبَيْهِ তার পেছনে, فَلَنْ يَّضُرَّ তবে সে অনিষ্ট করতে পারবে না اَللهَ আল্লাহর شَيْئًا কিছুতেই; وَسَيَجْزِيْ আর অতিশীঘ্রই পুরস্কার প্রদান করবেন اَللهُ আল্লাহ اَلشَّاكِرِيْنَ কৃতজ্ঞদেরকে।
সরল অনুবাদ
১৪৪. (জেনে রাখ) মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয় তার পূর্বেও রাসূলগণ বিগত হয়েছে। [অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন সেই ধরনের একজন রাসূল, যাদেরকে ইতিপূর্বে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং যাদের ব্যাপারে তোমরা পূর্ব হতেই অবগত আছো। সুতরাং পূর্ববর্তী রাসূলগণ যে দায়িত্ব নিয়ে এ পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন, এই রাসূলও সেই দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্ববর্তী রাসূলগণ মানুষকে যে পথে দাওয়াত দিয়েছেন, এই রাসূলও মানুষকে সে পথেই দাওয়াত দিচ্ছেন। পূর্ববর্তী রাসূলগণ যেমনিভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, এই রাসূলও একদিন মৃত্যুবরণ করবেন।] সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয়, তবে কি তোমরা তোমাদের পেছনে (পূর্বাবস্থায়) ফিরে যাবে? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যাবে, তবে সে কিছুতেই আল্লাহর অনিষ্ট করতে পারবে না; আর আল্লাহ অতিশীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করবেন। [এখানে ঐসব ব্যক্তিকে ধমক দেয়া হয়েছে, যারা যুদ্ধের ময়দানে কাফিরদের মাধ্যমে ছড়ানো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিহত হওয়া সম্পর্কিত মিথ্যা সংবাদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম ধর্মকে ত্যাগ করে পুনরায় তাদের বাপ-দাদাদের ধর্মে ফিরে যাওয়ার মনোবাসনা করেছিল। আর এটিও ছিল উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। ঘটনাটি ছিল এই যে, যুদ্ধ চলাকালীন হঠাৎ শত্রুবাহিনীর কেউ ঘোষণা দিল যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছেন। এতে মুসলিমগণ ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে যান। ফলে সাথে সাথেই একদল মুসলিম নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন। আর অপর একদল লোক অস্ত্র পরিত্যাগ করে যুদ্ধক্ষেত্র হতেই পলায়ন করতে শুরু করে। এদিকে মুনাফিকরা সাধারণ মুসলিমদেরকে প্ররোচনা দিতে থাকে যে, চলো! আমরা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কাছে যাই। সে আমাদের জন্য আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে নিরাপত্তা এনে দেবে। আবার কেউ কেউ এমন কথাও বলে ফেলে, যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূলই হতেন, তাহলে নিহত হলেন কেমন করে? চলো! আমাদের বাপ-দাদার ধর্মের দিকে ফিরে যাই। অত্র আয়াতে এসব সমালোচনারই জবাব দেয়া হয়েছে এবং বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, ইসলাম ধর্ম মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবন-মরণের সাথে সম্পৃক্ত নয় অর্থাৎ এরূপ নয় যে, তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত এই দ্বীন পালিত হবে এবং তিনি যখন মৃত্যুবরণ করবে, তখন এটি বিলীন হয়ে যাবে। বরং এটি একটি চিরস্থায়ী ধর্ম। এটি কিয়ামত পর্যন্ত এরূই থাকবে। এটি প্রচারের ক্ষেত্রে যদি কেউ বিশেষ কোন অবদান রেখে থাকে, তাহলে তাকে নিয়ে কোনরূপ বাড়াবাড়ির আশ্রয় গ্রহণ করাও বৈধ নয়। সুতরাং তোমরা যদি ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে অনুরূপ ধারণা পোষণ কর, যেরূপ ধারণা করে তোমরা এসব সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছিল এবং ইসলামকে ত্যাগ করার মনোবাসনা করেছিল, তাহলে আল্লাহর দ্বীনে তোমাদের কোন প্রয়োজন নেই। পরকালে তোমরা এরূপ ঈমান নিয়ে কখনো সফলতা অর্জন করতে পারবে না। তবে তোমাদের মধ্যে যারা এসব অহেতুক সমালোচনায় কান না দিয়ে ইসলামকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার রিসালাতকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে গ্রহণ করবে, পরকালে তারাই উত্তমভাবে পুরস্কৃত হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মুহাম্মাদ ﷺ ছিলেন পূর্ববর্তী রাসূলগণের মতোই একজন রাসূল।
২. মুহাম্মাদ ﷺ প্রকৃতপক্ষেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
৩. কারো মৃত্যুতে শোক পালনে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
৪. মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুপস্থিতেও তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শের অবাধ্য হওয়া যাবে না।
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُؕ اَفَاِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْؕ وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًاؕ وَّسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِيْنَ (১৪৪)
শাব্দিক অনুবাদ
১৪৪. وَمَا আর নয় مُحَمَّدٌ মুহাম্মাদ اِلَّا ব্যতীত رَسُوْلٌ একজন রাসূল, قَدْ خَلَتْ গত হয়েছে مِنْ قَبْلِه তার পূর্বেও اَلرُّسُلُ রাসূলগণ। اَفَاِنْ সুতরাং যদি مَاتَ সে মারা যায় اَوْ অথবা قُتِلَ নিহত হয়, اِنْقَلَبْتُمْ তবে কি তোমরা ফিরে যাবে عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ তোমাদের পেছনে ? وَمَنْ আর যে ব্যক্তি يَنْقَلِبْ ফিরে যাবে عَلٰى عَقِبَيْهِ তার পেছনে, فَلَنْ يَّضُرَّ তবে সে অনিষ্ট করতে পারবে না اَللهَ আল্লাহর شَيْئًا কিছুতেই; وَسَيَجْزِيْ আর অতিশীঘ্রই পুরস্কার প্রদান করবেন اَللهُ আল্লাহ اَلشَّاكِرِيْنَ কৃতজ্ঞদেরকে।
সরল অনুবাদ
১৪৪. (জেনে রাখ) মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয় তার পূর্বেও রাসূলগণ বিগত হয়েছে। [অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন সেই ধরনের একজন রাসূল, যাদেরকে ইতিপূর্বে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং যাদের ব্যাপারে তোমরা পূর্ব হতেই অবগত আছো। সুতরাং পূর্ববর্তী রাসূলগণ যে দায়িত্ব নিয়ে এ পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন, এই রাসূলও সেই দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্ববর্তী রাসূলগণ মানুষকে যে পথে দাওয়াত দিয়েছেন, এই রাসূলও মানুষকে সে পথেই দাওয়াত দিচ্ছেন। পূর্ববর্তী রাসূলগণ যেমনিভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, এই রাসূলও একদিন মৃত্যুবরণ করবেন।] সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয়, তবে কি তোমরা তোমাদের পেছনে (পূর্বাবস্থায়) ফিরে যাবে? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যাবে, তবে সে কিছুতেই আল্লাহর অনিষ্ট করতে পারবে না; আর আল্লাহ অতিশীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করবেন। [এখানে ঐসব ব্যক্তিকে ধমক দেয়া হয়েছে, যারা যুদ্ধের ময়দানে কাফিরদের মাধ্যমে ছড়ানো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিহত হওয়া সম্পর্কিত মিথ্যা সংবাদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম ধর্মকে ত্যাগ করে পুনরায় তাদের বাপ-দাদাদের ধর্মে ফিরে যাওয়ার মনোবাসনা করেছিল। আর এটিও ছিল উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। ঘটনাটি ছিল এই যে, যুদ্ধ চলাকালীন হঠাৎ শত্রুবাহিনীর কেউ ঘোষণা দিল যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছেন। এতে মুসলিমগণ ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে যান। ফলে সাথে সাথেই একদল মুসলিম নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন। আর অপর একদল লোক অস্ত্র পরিত্যাগ করে যুদ্ধক্ষেত্র হতেই পলায়ন করতে শুরু করে। এদিকে মুনাফিকরা সাধারণ মুসলিমদেরকে প্ররোচনা দিতে থাকে যে, চলো! আমরা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কাছে যাই। সে আমাদের জন্য আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে নিরাপত্তা এনে দেবে। আবার কেউ কেউ এমন কথাও বলে ফেলে, যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূলই হতেন, তাহলে নিহত হলেন কেমন করে? চলো! আমাদের বাপ-দাদার ধর্মের দিকে ফিরে যাই। অত্র আয়াতে এসব সমালোচনারই জবাব দেয়া হয়েছে এবং বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, ইসলাম ধর্ম মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবন-মরণের সাথে সম্পৃক্ত নয় অর্থাৎ এরূপ নয় যে, তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত এই দ্বীন পালিত হবে এবং তিনি যখন মৃত্যুবরণ করবে, তখন এটি বিলীন হয়ে যাবে। বরং এটি একটি চিরস্থায়ী ধর্ম। এটি কিয়ামত পর্যন্ত এরূই থাকবে। এটি প্রচারের ক্ষেত্রে যদি কেউ বিশেষ কোন অবদান রেখে থাকে, তাহলে তাকে নিয়ে কোনরূপ বাড়াবাড়ির আশ্রয় গ্রহণ করাও বৈধ নয়। সুতরাং তোমরা যদি ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে অনুরূপ ধারণা পোষণ কর, যেরূপ ধারণা করে তোমরা এসব সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছিল এবং ইসলামকে ত্যাগ করার মনোবাসনা করেছিল, তাহলে আল্লাহর দ্বীনে তোমাদের কোন প্রয়োজন নেই। পরকালে তোমরা এরূপ ঈমান নিয়ে কখনো সফলতা অর্জন করতে পারবে না। তবে তোমাদের মধ্যে যারা এসব অহেতুক সমালোচনায় কান না দিয়ে ইসলামকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার রিসালাতকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে গ্রহণ করবে, পরকালে তারাই উত্তমভাবে পুরস্কৃত হবে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. মুহাম্মাদ ﷺ ছিলেন পূর্ববর্তী রাসূলগণের মতোই একজন রাসূল।
২. মুহাম্মাদ ﷺ প্রকৃতপক্ষেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
৩. কারো মৃত্যুতে শোক পালনে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
৪. মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুপস্থিতেও তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শের অবাধ্য হওয়া যাবে না।
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًاؕ وَّمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِه مِنْهَاۚ وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِه مِنْهَاؕ وَسَنَجْزِي الشَّاكِرِيْنَ (১৪৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১৪৫. وَمَا كَانَ আর সম্ভব নয় لِنَفْسٍ কোন প্রাণীর জন্য اَنْ যে, تَمُوْتَ সে মৃত্যুবরণ করবে اِلَّا ব্যতীত بِاِذْنِ اللهِ আল্লাহর ইচ্ছা كِتَابًا লিখিত مُؤَجَّلًا মেয়াদ/সময়। وَمَنْ যে ব্যক্তি يُرِدْ কামনা করে, ثَوَابَ প্রতিদান اَلدُّنْيَا পার্থিব نُؤْتِه আমি তাকে প্রদান করি مِنْهَا তা হতেই। وَمَنْ আর যে ব্যক্তি يُرِدْ কামনা করে ثَوَابَ প্রতিদান اَلْاٰخِرَةِ আখিরাতের, نُؤْتِه আমি তাকে প্রদান করি مِنْهَا তা হতেই। وَسَنَجْزِي আর আমি অচিরেই পুরস্কার প্রদান করব اَلشَّاكِرِيْنَ কৃতজ্ঞদেরকে ।
সরল অনুবাদ
১৪৫. আর কোন প্রাণীর জন্য (সম্ভব) নয় যে, সে আল্লাহর ইচ্ছা (আদেশ) ব্যতীত মৃত্যুবরণ করবে, (তবে আল্লাহর কাছে এজন্য) সময় নির্ধারিত রয়েছে। [কোন মানুষের ক্ষমতা নেই যে, সে নিজ ইচ্ছায় মারা যাবে। এ কারণেই অনেক সময় দেখা যায় যে, একজন মুমূর্ষ রোগী হঠাৎ করে সুস্থ হয়ে উঠছে, আবার একজন সুস্থ মানুষ হঠাৎ করে মারা যাচ্ছে। অত্র আয়াত থেকে দুটি মর্মার্থ গ্রহণ করা যায়। তা হলো- (১) দেখো! তোমরা যে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া মাত্রই দিশেহারা হয়ে গেছ, সেটা একেবারেই অনর্থক। কেননা তিনি হলেন তোমাদের মতোই একজন মানুষ। পৃথিবীতে যত প্রকার প্রাণী রয়েছে, প্রত্যেকের মৃত্যুই অনিবার্য। (২) তোমরা যে মৃত্যুর ভয়ে যুদ্ধের ময়দান হতে পালিয়ে গিয়েছিলে, এর পক্ষে কি কোন যৌক্তিকতা আছে? অথচ একদিন না একদিন তোমাদেরকে তো মৃত্যুবরণ করতেই হবে। অতএব ভবিষ্যতে যাতে তোমাদের দ্বারা এরূপ ভুল আর কখনো সংঘটিত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখো এবং মৃত্যুর ভয় ত্যাগ করে মানুষকে যথাযথভাবে আল্লাহর দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিয়ে যাও।] যে ব্যক্তি পার্থিব প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতেই প্রদান করি। (পক্ষান্তরে) যে ব্যক্তি আখিরাতের প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতেই প্রদান করি। [এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের পার্থিব জীবনে কৃতকর্মের প্রতিদান প্রাপ্তির সময় সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন এবং এই বিষয়টির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন যে, দুনিয়ার জীবনটা হচ্ছে তোমাদের জন্য একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র। তোমাদের পরীক্ষার সুবিধার্থে এ জীবনে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের কর্মের ব্যাপারে অবকাশ দিয়েছেন। এখন তোমরা চাইলে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করতে পার অথবা খারাপ দিকগুলোও গ্রহণ করতে পার। অনুরূপভাবে তোমরা তোমাদের কাজের প্রতিদান এ জীবনেই গ্রহণ করতে পার অথবা আখিরাতের জীবনেও গ্রহণ করতে পার। সুতরাং তোমরা যদি তোমাদের ভালো কাজের প্রতিদানগুলো এ জীবনেই গ্রহণ করতে চাও, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাই প্রদান করবেন এবং তোমাদেরকে দুনিয়াতে সমৃদ্ধশালী ও অনেক প্রতিপত্তির অধিকারী করবেন। কিন্তু আখিরাতের জীবনে তোমাদের জন্য কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।] আর আমি অচিরেই (আমার প্রতি) কৃতজ্ঞদেরকে (যথাযথ) পুরস্কার দেব।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
সকলের মৃত্যু আল্লাহর ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়।
প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় পূর্ব হতেই নির্ধারিত রয়েছে।
দুনিয়ার জীবন মানুষের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র।
মানুষ আল্লাহর কাছে পার্থিব সুখ-শাস্তি কামনা করলে তা পাবে, আবার কেউ আখিরাত কামনা করলে তাই পাবে।
সর্বদা আল্লাহর নিয়মতসমূহের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৪৫. وَمَا كَانَ আর সম্ভব নয় لِنَفْسٍ কোন প্রাণীর জন্য اَنْ যে, تَمُوْتَ সে মৃত্যুবরণ করবে اِلَّا ব্যতীত بِاِذْنِ اللهِ আল্লাহর ইচ্ছা كِتَابًا লিখিত مُؤَجَّلًا মেয়াদ/সময়। وَمَنْ যে ব্যক্তি يُرِدْ কামনা করে, ثَوَابَ প্রতিদান اَلدُّنْيَا পার্থিব نُؤْتِه আমি তাকে প্রদান করি مِنْهَا তা হতেই। وَمَنْ আর যে ব্যক্তি يُرِدْ কামনা করে ثَوَابَ প্রতিদান اَلْاٰخِرَةِ আখিরাতের, نُؤْتِه আমি তাকে প্রদান করি مِنْهَا তা হতেই। وَسَنَجْزِي আর আমি অচিরেই পুরস্কার প্রদান করব اَلشَّاكِرِيْنَ কৃতজ্ঞদেরকে ।
সরল অনুবাদ
১৪৫. আর কোন প্রাণীর জন্য (সম্ভব) নয় যে, সে আল্লাহর ইচ্ছা (আদেশ) ব্যতীত মৃত্যুবরণ করবে, (তবে আল্লাহর কাছে এজন্য) সময় নির্ধারিত রয়েছে। [কোন মানুষের ক্ষমতা নেই যে, সে নিজ ইচ্ছায় মারা যাবে। এ কারণেই অনেক সময় দেখা যায় যে, একজন মুমূর্ষ রোগী হঠাৎ করে সুস্থ হয়ে উঠছে, আবার একজন সুস্থ মানুষ হঠাৎ করে মারা যাচ্ছে। অত্র আয়াত থেকে দুটি মর্মার্থ গ্রহণ করা যায়। তা হলো- (১) দেখো! তোমরা যে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া মাত্রই দিশেহারা হয়ে গেছ, সেটা একেবারেই অনর্থক। কেননা তিনি হলেন তোমাদের মতোই একজন মানুষ। পৃথিবীতে যত প্রকার প্রাণী রয়েছে, প্রত্যেকের মৃত্যুই অনিবার্য। (২) তোমরা যে মৃত্যুর ভয়ে যুদ্ধের ময়দান হতে পালিয়ে গিয়েছিলে, এর পক্ষে কি কোন যৌক্তিকতা আছে? অথচ একদিন না একদিন তোমাদেরকে তো মৃত্যুবরণ করতেই হবে। অতএব ভবিষ্যতে যাতে তোমাদের দ্বারা এরূপ ভুল আর কখনো সংঘটিত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখো এবং মৃত্যুর ভয় ত্যাগ করে মানুষকে যথাযথভাবে আল্লাহর দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিয়ে যাও।] যে ব্যক্তি পার্থিব প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতেই প্রদান করি। (পক্ষান্তরে) যে ব্যক্তি আখিরাতের প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতেই প্রদান করি। [এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের পার্থিব জীবনে কৃতকর্মের প্রতিদান প্রাপ্তির সময় সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন এবং এই বিষয়টির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন যে, দুনিয়ার জীবনটা হচ্ছে তোমাদের জন্য একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র। তোমাদের পরীক্ষার সুবিধার্থে এ জীবনে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের কর্মের ব্যাপারে অবকাশ দিয়েছেন। এখন তোমরা চাইলে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করতে পার অথবা খারাপ দিকগুলোও গ্রহণ করতে পার। অনুরূপভাবে তোমরা তোমাদের কাজের প্রতিদান এ জীবনেই গ্রহণ করতে পার অথবা আখিরাতের জীবনেও গ্রহণ করতে পার। সুতরাং তোমরা যদি তোমাদের ভালো কাজের প্রতিদানগুলো এ জীবনেই গ্রহণ করতে চাও, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাই প্রদান করবেন এবং তোমাদেরকে দুনিয়াতে সমৃদ্ধশালী ও অনেক প্রতিপত্তির অধিকারী করবেন। কিন্তু আখিরাতের জীবনে তোমাদের জন্য কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।] আর আমি অচিরেই (আমার প্রতি) কৃতজ্ঞদেরকে (যথাযথ) পুরস্কার দেব।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
সকলের মৃত্যু আল্লাহর ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়।
প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় পূর্ব হতেই নির্ধারিত রয়েছে।
দুনিয়ার জীবন মানুষের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র।
মানুষ আল্লাহর কাছে পার্থিব সুখ-শাস্তি কামনা করলে তা পাবে, আবার কেউ আখিরাত কামনা করলে তাই পাবে।
সর্বদা আল্লাহর নিয়মতসমূহের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে।
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَه رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ (১৪৬) وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَاِسْرَافَنَا فِيْۤ اَمْرِنَا وَثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ (১৪৭) فَاٰتَاهُمُ اللهُ ثَوَابَ الدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ الْاٰخِرَةِؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ (১৪৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১৪৬. وَكَاَيِّنْ আর এমন অনেকেই ছিল مِنْ থেকে نَبِيٍّ নবীদের, قَاتَلَ যুদ্ধ করেছে مَعَه তার সাথে رِبِّيُّوْنَ আল্লাহওয়ালা লোকেরাও كَثِيْرٌ অনেক। فَمَا وَهَنُوْا অতঃপর তারা নিরুৎসাহ হয়নি لِمَا সে জন্য اَصَابَهُمْ তাদের উপর যে বিপদাপদ আপতিত হয়েছিল فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে وَمَا ضَعُفُوْا তাতে তারা শক্তিহীন হয়নি وَمَا اسْتَكَانُوْا এবং নতিস্বীকারও করেনি। وَاللهُ আর আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلصَّابِرِيْنَ ধৈর্যশীলদেরকে।
১৪৭. وَمَا كَانَ আর ছিল না قَوْلَهُمْ তাদের কথা اِلَّا ছাড়া اَنْ যে, قَالُوْا তারা বলত رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! اِغْفِرْ আপনি ক্ষমা করুন لَنَا আমাদেরকে ذُنُوْبَنَا আমাদের অপরাধসমূহ وَاِسْرَافَنَا এবং আমাদের সীমালঙ্ঘনসমূহ فِيْۤ اَمْرِنَا আমাদের কাজে। وَثَبِّتْ আর আপনি সুদৃঢ় করুন اَقْدَامَنَا আমাদের পাসমূহ وَانْصُرْنَا এবং আমাদেরকে সাহায্য করুন عَلَى উপর اَلْقَوْمِ সম্প্রদায়ের اَلْكَافِرِيْنَ কাফির।
১৪৮. فَاٰتَاهُمُ অতঃপর তাদেরকে প্রদান করলেন اَللهُ আল্লাহ ثَوَابَ পুরস্কার اَلدُّنْيَا পার্থিব وَحُسْنَ এবং শ্রেষ্ঠতর ثَوَابِ পুরস্কার اَلْاٰخِرَةِ আখিরাতেও। وَاللهُ আর আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلْمُحْسِنِيْنَ সৎকর্মশীলদেরকে।
সরল অনুবাদ
১৪৬. আর (পৃথিবীতে) এমন অনেক নবীই (এসে) ছিল, যে (আল্লাহর পথে) যুদ্ধ করেছে এবং তার সাথে অনেক রববানী (আল্লাহওয়ালা) লোকেরাও যুদ্ধ করেছে, অতঃপর আল্লাহর পথে তাদের উপর যা (বিপদাপদ) আপতিত হয়েছিল তাতে তারা হীনবল (নিরুৎসাহ) হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং নতিস্বীকারও করেনি। [আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের উপর যেসব বিপদাপদ এসেছিল, তা তাদের ঈমানের বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করতে পারেনি; বরং সেগুলোর কারণে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার কারণে তারা কখনো আল্লাহর সাহায্যের ব্যাপারে নিরাশ হতো না, ফলে তারা মানসিক ও শারীরিকভাবেও শক্তিহীন হতো। কিন্তু এরপরও যদি তারা কখনো শত্রুদের কাছে পরাজিত হওয়া থেকে কোন পথ খুঁজে না পেত, তখনও তারা আত্মসমর্পণ করত না। বরং তারা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস গ্রহণ করা পর্যন্ত আল্লাহর পথে লড়াই করে যেত।] আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। [অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা অনুরূপ ধৈর্যশীল বান্দাদেরকেই পছন্দ করেন, যারা উপরোক্ত ব্যক্তিদের মতো জীবন-যাপন করবে। কেননা প্রকৃতপক্ষে এরাই হচ্ছে আসল ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত।]
১৪৭. আর তারা (সে সময়) অন্য কোন কথা বলেনি। শুধু বলেছিল ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আমাদের অপরাধসমূহ এবং আমাদের কাজে আমাদের সীমালঙ্ঘনসমূহ ক্ষমা করুন। আর আপনি (কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে) আমাদের পাসমূহ সুদৃঢ় রাখুন এবং আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের উপর সাহায্য করুন।’’ [অর্থাৎ তারা এতই কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল যে, তারা মনে করেছিল কোন অপরাধ করে ফেলেছে অথবা তাদের দ্বারা কোন সীমালঙ্ঘনমূলক কাজ সংঘটিত হয়ে গেছে- যার কারণে তারা এখনও আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হচ্ছে না। ফলে তারা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার শুরুতেই নিজেদের অজান্তে সংঘটিত পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নিত। উল্লেখ্য যে, এ দু‘আটি পূর্ববর্তী সৎ লোকদের মুখে উচ্চারিত হলেও সাহায্য প্রার্থনার ক্ষেত্রে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্যও একটি উত্তম আদর্শ।]
১৪৮. অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব পুরস্কার প্রদান করলেন এবং আখিরাতেও শ্রেষ্ঠতর পুরস্কার (প্রদান করবেন)। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা নবীদের সুন্নাত।
যুদ্ধের সময় আপতিত বিপদে ধৈয্যধারণ করতে হবে।
যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বদা দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে।
কোন ভাবেই কাফিরদের কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না।
যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৪৬. وَكَاَيِّنْ আর এমন অনেকেই ছিল مِنْ থেকে نَبِيٍّ নবীদের, قَاتَلَ যুদ্ধ করেছে مَعَه তার সাথে رِبِّيُّوْنَ আল্লাহওয়ালা লোকেরাও كَثِيْرٌ অনেক। فَمَا وَهَنُوْا অতঃপর তারা নিরুৎসাহ হয়নি لِمَا সে জন্য اَصَابَهُمْ তাদের উপর যে বিপদাপদ আপতিত হয়েছিল فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে وَمَا ضَعُفُوْا তাতে তারা শক্তিহীন হয়নি وَمَا اسْتَكَانُوْا এবং নতিস্বীকারও করেনি। وَاللهُ আর আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلصَّابِرِيْنَ ধৈর্যশীলদেরকে।
১৪৭. وَمَا كَانَ আর ছিল না قَوْلَهُمْ তাদের কথা اِلَّا ছাড়া اَنْ যে, قَالُوْا তারা বলত رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! اِغْفِرْ আপনি ক্ষমা করুন لَنَا আমাদেরকে ذُنُوْبَنَا আমাদের অপরাধসমূহ وَاِسْرَافَنَا এবং আমাদের সীমালঙ্ঘনসমূহ فِيْۤ اَمْرِنَا আমাদের কাজে। وَثَبِّتْ আর আপনি সুদৃঢ় করুন اَقْدَامَنَا আমাদের পাসমূহ وَانْصُرْنَا এবং আমাদেরকে সাহায্য করুন عَلَى উপর اَلْقَوْمِ সম্প্রদায়ের اَلْكَافِرِيْنَ কাফির।
১৪৮. فَاٰتَاهُمُ অতঃপর তাদেরকে প্রদান করলেন اَللهُ আল্লাহ ثَوَابَ পুরস্কার اَلدُّنْيَا পার্থিব وَحُسْنَ এবং শ্রেষ্ঠতর ثَوَابِ পুরস্কার اَلْاٰخِرَةِ আখিরাতেও। وَاللهُ আর আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلْمُحْسِنِيْنَ সৎকর্মশীলদেরকে।
সরল অনুবাদ
১৪৬. আর (পৃথিবীতে) এমন অনেক নবীই (এসে) ছিল, যে (আল্লাহর পথে) যুদ্ধ করেছে এবং তার সাথে অনেক রববানী (আল্লাহওয়ালা) লোকেরাও যুদ্ধ করেছে, অতঃপর আল্লাহর পথে তাদের উপর যা (বিপদাপদ) আপতিত হয়েছিল তাতে তারা হীনবল (নিরুৎসাহ) হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং নতিস্বীকারও করেনি। [আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের উপর যেসব বিপদাপদ এসেছিল, তা তাদের ঈমানের বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করতে পারেনি; বরং সেগুলোর কারণে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার কারণে তারা কখনো আল্লাহর সাহায্যের ব্যাপারে নিরাশ হতো না, ফলে তারা মানসিক ও শারীরিকভাবেও শক্তিহীন হতো। কিন্তু এরপরও যদি তারা কখনো শত্রুদের কাছে পরাজিত হওয়া থেকে কোন পথ খুঁজে না পেত, তখনও তারা আত্মসমর্পণ করত না। বরং তারা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস গ্রহণ করা পর্যন্ত আল্লাহর পথে লড়াই করে যেত।] আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। [অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা অনুরূপ ধৈর্যশীল বান্দাদেরকেই পছন্দ করেন, যারা উপরোক্ত ব্যক্তিদের মতো জীবন-যাপন করবে। কেননা প্রকৃতপক্ষে এরাই হচ্ছে আসল ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত।]
১৪৭. আর তারা (সে সময়) অন্য কোন কথা বলেনি। শুধু বলেছিল ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আমাদের অপরাধসমূহ এবং আমাদের কাজে আমাদের সীমালঙ্ঘনসমূহ ক্ষমা করুন। আর আপনি (কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে) আমাদের পাসমূহ সুদৃঢ় রাখুন এবং আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের উপর সাহায্য করুন।’’ [অর্থাৎ তারা এতই কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল যে, তারা মনে করেছিল কোন অপরাধ করে ফেলেছে অথবা তাদের দ্বারা কোন সীমালঙ্ঘনমূলক কাজ সংঘটিত হয়ে গেছে- যার কারণে তারা এখনও আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হচ্ছে না। ফলে তারা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার শুরুতেই নিজেদের অজান্তে সংঘটিত পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নিত। উল্লেখ্য যে, এ দু‘আটি পূর্ববর্তী সৎ লোকদের মুখে উচ্চারিত হলেও সাহায্য প্রার্থনার ক্ষেত্রে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্যও একটি উত্তম আদর্শ।]
১৪৮. অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব পুরস্কার প্রদান করলেন এবং আখিরাতেও শ্রেষ্ঠতর পুরস্কার (প্রদান করবেন)। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা নবীদের সুন্নাত।
যুদ্ধের সময় আপতিত বিপদে ধৈয্যধারণ করতে হবে।
যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বদা দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে।
কোন ভাবেই কাফিরদের কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না।
যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ (১৪৯) بَلِ اللهُ مَوْلَاكُمْۚ وَهُوَ خَيْرُ النَّاصِرِيْنَ (১৫০)
শাব্দিক অনুবাদ
১৪৯ يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا হে ঈমানদারগণ! اِنْ যদি تُطِيْعُوْا তোমরা অনুসরণ করো اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে يَرُدُّوْكُمْ তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ তোমাদের পেছনের দিকে। فَتَنْقَلِبُوْا ফলে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে خَاسِرِيْنَ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে।
১৫০. بَلِ বরং اَللهُ আল্লাহই مَوْلَاكُمْ তোমাদের অভিভাবক وَهُوَ এবং তিনিই خَيْرُ সর্বোত্তম اَلنَّاصِرِيْنَ সাহায্যকারী।
সরল অনুবাদ
১৪৯. হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা কাফিরদের অনুসরণ করো, তাহলে তারা তোমাদেরকে পেছনের দিকে (জাহিলিয়াতের অবস্থায়) ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। [এ আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার মূল প্রেক্ষাপট হলো যে, যখন মুসলিমগণ উহুদ যুদ্ধে কাফিরদের হাতে পরাজিত হয়, তখন মুনাফিকরা এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে চক্রান্তে লিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা করতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতদ্বয় নাযিল করে তাদের সমালোচনার রহস্য ফাঁস করে দেন এবং মুসলিমদেরকে আগত বিপদের অশনী সংকেত প্রদানপূর্বক তাদেরকে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধির জন্য তাগিদ প্রদান করেন।]
১৫০. বরং আল্লাহই তোমাদের অভিভাবক (রক্ষক) এবং তিনিই সর্বোত্তম সাহায্যকারী। [অর্থাৎ তোমরা কেবল আল্লাহকেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো এবং কেবল তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো। কেননা একমাত্র তাঁকে ছাড়া তোমাদেরকে আর কেউ সাহায্য করতে সক্ষম নয়। মুনাফিকরা তোমাদের ব্যাপারে যেসব সমালোচনা করে থাকে এবং তোমাদের যেসব সাহায্যের আশ্বাস দেয়, সেগুলো অসার গল্পমাত্র। তাদের এসব আশ্বাসের কোন বাস্তবতা নেই।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কাফিরদের অনুসরণ করা যাবে না; কেননা তারা তাদের অনুসারীদেরকে জাহিলী অবস্থার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
২. কাফিররা মুসলিমদের আখিরাত ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৩. মুমিনদের প্রকৃত অভিভাবক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা; আর তিনিই তাদের সর্বোত্তম সাহায্যকারী।
শাব্দিক অনুবাদ
১৪৯ يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا হে ঈমানদারগণ! اِنْ যদি تُطِيْعُوْا তোমরা অনুসরণ করো اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে يَرُدُّوْكُمْ তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ তোমাদের পেছনের দিকে। فَتَنْقَلِبُوْا ফলে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে خَاسِرِيْنَ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে।
১৫০. بَلِ বরং اَللهُ আল্লাহই مَوْلَاكُمْ তোমাদের অভিভাবক وَهُوَ এবং তিনিই خَيْرُ সর্বোত্তম اَلنَّاصِرِيْنَ সাহায্যকারী।
সরল অনুবাদ
১৪৯. হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা কাফিরদের অনুসরণ করো, তাহলে তারা তোমাদেরকে পেছনের দিকে (জাহিলিয়াতের অবস্থায়) ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। [এ আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার মূল প্রেক্ষাপট হলো যে, যখন মুসলিমগণ উহুদ যুদ্ধে কাফিরদের হাতে পরাজিত হয়, তখন মুনাফিকরা এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে চক্রান্তে লিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা করতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতদ্বয় নাযিল করে তাদের সমালোচনার রহস্য ফাঁস করে দেন এবং মুসলিমদেরকে আগত বিপদের অশনী সংকেত প্রদানপূর্বক তাদেরকে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধির জন্য তাগিদ প্রদান করেন।]
১৫০. বরং আল্লাহই তোমাদের অভিভাবক (রক্ষক) এবং তিনিই সর্বোত্তম সাহায্যকারী। [অর্থাৎ তোমরা কেবল আল্লাহকেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো এবং কেবল তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো। কেননা একমাত্র তাঁকে ছাড়া তোমাদেরকে আর কেউ সাহায্য করতে সক্ষম নয়। মুনাফিকরা তোমাদের ব্যাপারে যেসব সমালোচনা করে থাকে এবং তোমাদের যেসব সাহায্যের আশ্বাস দেয়, সেগুলো অসার গল্পমাত্র। তাদের এসব আশ্বাসের কোন বাস্তবতা নেই।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কাফিরদের অনুসরণ করা যাবে না; কেননা তারা তাদের অনুসারীদেরকে জাহিলী অবস্থার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
২. কাফিররা মুসলিমদের আখিরাত ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৩. মুমিনদের প্রকৃত অভিভাবক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা; আর তিনিই তাদের সর্বোত্তম সাহায্যকারী।
سَنُلْقِيْ فِيْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَاۤ اَشْرَكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِه سُلْطَانًاۚ وَّمَأْوَاهُمُ النَّارُؕ وَبِئْسَ مَثْوَى الظَّالِمِيْنَ (১৫১) وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللهُ وَعْدَهٗۤ اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ بِاِذْنِه ۚ حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِي الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَؕ مِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الدُّنْيَا وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الْاٰخِرَةَۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْۚ وَلَقَدْ عَفَا عَنْكُمْؕ وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ (১৫২)
শাব্দিক অনুবাদ
১৫১. سَنُلْقِيْ অচিরেই আমি সঞ্চার করব فِيْ মধ্যে قُلُوْبِ অন্তরসমূহের اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوا কুফরী করেছে اَلرُّعْبَ ভীতি بِمَا কেননা اَشْرَكُوْا তারা অংশীদার স্থাপন করেছে بِاللهِ আল্লাহর সাথে; مَا لَمْ يُنَزِّلْ অথচ তিনি অবতরণ করেননি بِه এ বিষয়ে سُلْطَانًا কোন প্রমাণ। وَمَأْوَاهُمُ অতএব তাদের অবস্থানস্থল হবে اَلنَّارُ জাহান্নামই وَبِئْسَ এবং তা কতই না নিকৃষ্ট مَثْوَى বাসস্থান اَلظَّالِمِيْنَ অত্যাচারীদের জন্য!
১৫২. وَلَقَدْ আর নিশ্চয় صَدَقَكُمُ তোমাদের প্রতি সত্যে পরিণত করেছেন اَللهُ আল্লাহ وَعْدَهٗ স্বীয় অঙ্গীকার اِذْ যখন تَحُسُّوْنَهُمْ তোমরা তাদেরকে নির্মূল করছিলে بِاِذْنِه তাঁর আদেশে; حَتّٰۤى এমনকি اِذَا যখন فَشِلْتُمْ তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলেছিলে وَتَنَازَعْتُمْ এবং তোমরা মতপার্থক্য করেছিলে فِي الْاَمْرِ একটি নির্দেশ সম্পর্কে। وَعَصَيْتُمْ আর তোমরা অবাধ্য হলে مِنْ ۢبَعْدِ পরও مَاۤ اَرَاكُمْ তোমাদেরকে দেখানো হয়েছিল مَا تُحِبُّوْنَ যা তোমরা ভালোবাস তা (বিজয়)। مِنْكُمْ তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে مَنْ যে يُرِيْدُ কামনা করেছিল اَلدُّنْيَا দুনিয়া (গনীমত) وَمِنْكُمْ এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে مَنْ যে يُرِيْدُ কামনা করেছিল اَلْاٰخِرَةَ পরকাল। ثُمَّ অতঃপর صَرَفَكُمْ তিনি তোমাদেরকে সরিয়ে দিলেন عَنْهُمْ তাদের থেকে لِيَبْتَلِيَكُمْ তোমাদেরকে পরীক্ষার জন্য وَلَقَدْ এবং নিশ্চয় তিনি عَفَا عَنْكُمْ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। وَاللهُ আর আল্লাহ ذُوْ فَضْلٍ অনুগ্রহশীল عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ ঈমানদারদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
১৫১. যারা কুফরী করেছে অচিরেই আমি তাদের অন্তরসমূহে ভীতি সঞ্চার করব। [অর্থাৎ কাফিররা বাহ্যিকভাবে ঈমানদারদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দুঃসাহসিকতা দেখালেও অন্তরের দিক থেকে কখনো শক্তিশালী হতে পারবে না। এ সমর্থনে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমাকে পাঁচটি এমন জিনিস দেয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তার মধ্যে একটি হলো, এক মাসের দূরত্বে অবস্থিত শত্রুর অন্তরে আমার ত্রাস (ভয়) ঢুকিয়ে দিয়ে আমাকে সাহায্য করা। (সহীহ বুখারী, হা/৩৩৫)] কেননা তারা আল্লাহর সাথে (অন্যদেরকে) অংশীদার (বানিয়ে তাদের অনুসরণ) করেছে; অথচ এ বিষয়ে তিনি কোন প্রমাণ অবতরণ করেননি। [এখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের ভীত হওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হলো- তারা শিরক করে বেড়ায়। আর যারা শিরক করে বেড়ায়, তারা মূলত আল্লাহকে ভয় করে না; বরং নিজেদের জীবনকেই অধিক ভালোবাসে। অপরদিকে কেবল শিরক করার কারণে ভীত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, তাদের শিরকের পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোন দলীল নেই।] অতএব জাহান্নামই হবে তাদের অবস্থানস্থল এবং তা অত্যাচারীদের জন্য কতই না নিকৃষ্টতম বাসস্থান!
১৫২. আর নিশ্চয় আল্লাহ (উহুদের ময়দানে) স্বীয় অঙ্গীকার [এখানে অঙ্গীকার বলতে ঐ অঙ্গীকারকে বুঝানো হয়েছে, কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয় ও সাহায্য করার ব্যাপারে যা আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে দিয়েছিলেন। উহুদ যুদ্ধের প্রথম দিকে সেই প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন ঘটেছিল।] সত্যে পরিণত করেছেন- যখন তোমরা তাঁর আদেশে (যুদ্ধের প্রথমদিকে) তাদেরকে নির্মূল (হত্যা) করছিলে; (আর এ অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল) যতক্ষণ না তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলেছিলে এবং (রাসূলের একটি বিশেষ) নির্দেশ (পালন করা) সম্পর্কে মতপার্থক্য করেছিলে। [এটি হচ্ছে উহুদ যুদ্ধের সেই অবস্থা, যখন খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলিমদের দুর্বলতার সুযোগে পিছন দিক থেকে আক্রমণ করে বসে এবং মুসলিমগণ এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে দিশেহারা হয়ে পড়েন। উপরন্তু এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদেরকে একত্রিত হতে বললেন, সাহাবীগণ এ নির্দেশ পালনে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। ফলে অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পলায়ন করে, আবার অনেকেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যায় এবং অনেকেই মুশরিকদের সাথে মিশে যায়। তবে কেবলমাত্র ৯ জন সাহাবী আহবান শোনার সাথে সাথেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে একত্রিত হয় এবং মুশরিকদের আক্রমণ প্রতিহত করে। পরবর্তী আয়াতেও এই পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।] তোমরা যা ভালোবাস তা (বিজয়) তোমাদেরকে দেখানোর পরও তোমরা অবাধ্য হলে। [এটি হচ্ছে উহুদ যুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থার ফলাফল, যা মুসলিমগণ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি।] (প্রকৃত বিষয় হচ্ছে) তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ দুনিয়া (গনীমত) কামনা করেছিল এবং কেউ কেউ পরকাল কামনা করেছিল। [এটি উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের মূল কারণ। এ ক্ষেত্রে মুসলিমদের বেশ কয়েকটি কৃতকর্মই চোখে পড়ার মতো। যেমন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ অমান্য করে তীরন্দাজদের একটি দল কর্তৃক গনীমতের মাল সংগ্রহের জন্য চলে যাওয়া, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আহবানে কর্ণপাত না করে পুনরায় একত্রিত না হওয়া, যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া, কাফিরদের সাথে মিশ্রিত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।] অতঃপর তোমাদেরকে পরীক্ষার জন্য তিনি তোমাদেরকে তাদের থেকে সরিয়ে দিলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। [অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা দেখতে পেলেন যে, কোন কোন মুসলিমের ঈমানে সামান্য দুর্বলতা রয়েছে, তখন তাদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য এই পরীক্ষার অবতারণা করেন। ফলে এটি পরবর্তীতে সকল মুসলিমদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয়।] আর আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহশীল। [এখানে যে অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে, সেটি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ অনুগ্রহ। এগুলো তিনি কেবল ঈমানদার বান্দাদেরকেই দান করে থাকেন। তাদেরকে ছাড়া অন্য কেউ এ অনুগ্রহ প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য নয়। এছাড়া কাফির-মুশরিকসহ সমস্ত সৃষ্টি যেসব অনুগ্রহ পেয়ে থাকে, সেটি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার সাধারণ অনুগ্রহ, যা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পৃথিবীতে বসবাসের উপকরণ হিসেবে দান করে থাকেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করে থাকেন।
শিরক করার ব্যাপারে পৃথিবীতে কোন দলীল নেই।
মুশরিকদের শেষ পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।
আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করাটাও এক ধরনের যুলুম।
উহুদে যুদ্ধে রাসূলূল্লাহ ﷺ এর আদেশ অমান্য করাটা ছিল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
দুনিয়া লাভ তথা গনীমতের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করা বৈধ নয়।
উহুদ যুদ্ধের বিপর্যয়টি ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।
শাব্দিক অনুবাদ
১৫১. سَنُلْقِيْ অচিরেই আমি সঞ্চার করব فِيْ মধ্যে قُلُوْبِ অন্তরসমূহের اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوا কুফরী করেছে اَلرُّعْبَ ভীতি بِمَا কেননা اَشْرَكُوْا তারা অংশীদার স্থাপন করেছে بِاللهِ আল্লাহর সাথে; مَا لَمْ يُنَزِّلْ অথচ তিনি অবতরণ করেননি بِه এ বিষয়ে سُلْطَانًا কোন প্রমাণ। وَمَأْوَاهُمُ অতএব তাদের অবস্থানস্থল হবে اَلنَّارُ জাহান্নামই وَبِئْسَ এবং তা কতই না নিকৃষ্ট مَثْوَى বাসস্থান اَلظَّالِمِيْنَ অত্যাচারীদের জন্য!
১৫২. وَلَقَدْ আর নিশ্চয় صَدَقَكُمُ তোমাদের প্রতি সত্যে পরিণত করেছেন اَللهُ আল্লাহ وَعْدَهٗ স্বীয় অঙ্গীকার اِذْ যখন تَحُسُّوْنَهُمْ তোমরা তাদেরকে নির্মূল করছিলে بِاِذْنِه তাঁর আদেশে; حَتّٰۤى এমনকি اِذَا যখন فَشِلْتُمْ তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলেছিলে وَتَنَازَعْتُمْ এবং তোমরা মতপার্থক্য করেছিলে فِي الْاَمْرِ একটি নির্দেশ সম্পর্কে। وَعَصَيْتُمْ আর তোমরা অবাধ্য হলে مِنْ ۢبَعْدِ পরও مَاۤ اَرَاكُمْ তোমাদেরকে দেখানো হয়েছিল مَا تُحِبُّوْنَ যা তোমরা ভালোবাস তা (বিজয়)। مِنْكُمْ তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে مَنْ যে يُرِيْدُ কামনা করেছিল اَلدُّنْيَا দুনিয়া (গনীমত) وَمِنْكُمْ এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে مَنْ যে يُرِيْدُ কামনা করেছিল اَلْاٰخِرَةَ পরকাল। ثُمَّ অতঃপর صَرَفَكُمْ তিনি তোমাদেরকে সরিয়ে দিলেন عَنْهُمْ তাদের থেকে لِيَبْتَلِيَكُمْ তোমাদেরকে পরীক্ষার জন্য وَلَقَدْ এবং নিশ্চয় তিনি عَفَا عَنْكُمْ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। وَاللهُ আর আল্লাহ ذُوْ فَضْلٍ অনুগ্রহশীল عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ ঈমানদারদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
১৫১. যারা কুফরী করেছে অচিরেই আমি তাদের অন্তরসমূহে ভীতি সঞ্চার করব। [অর্থাৎ কাফিররা বাহ্যিকভাবে ঈমানদারদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দুঃসাহসিকতা দেখালেও অন্তরের দিক থেকে কখনো শক্তিশালী হতে পারবে না। এ সমর্থনে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমাকে পাঁচটি এমন জিনিস দেয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তার মধ্যে একটি হলো, এক মাসের দূরত্বে অবস্থিত শত্রুর অন্তরে আমার ত্রাস (ভয়) ঢুকিয়ে দিয়ে আমাকে সাহায্য করা। (সহীহ বুখারী, হা/৩৩৫)] কেননা তারা আল্লাহর সাথে (অন্যদেরকে) অংশীদার (বানিয়ে তাদের অনুসরণ) করেছে; অথচ এ বিষয়ে তিনি কোন প্রমাণ অবতরণ করেননি। [এখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের ভীত হওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হলো- তারা শিরক করে বেড়ায়। আর যারা শিরক করে বেড়ায়, তারা মূলত আল্লাহকে ভয় করে না; বরং নিজেদের জীবনকেই অধিক ভালোবাসে। অপরদিকে কেবল শিরক করার কারণে ভীত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, তাদের শিরকের পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোন দলীল নেই।] অতএব জাহান্নামই হবে তাদের অবস্থানস্থল এবং তা অত্যাচারীদের জন্য কতই না নিকৃষ্টতম বাসস্থান!
১৫২. আর নিশ্চয় আল্লাহ (উহুদের ময়দানে) স্বীয় অঙ্গীকার [এখানে অঙ্গীকার বলতে ঐ অঙ্গীকারকে বুঝানো হয়েছে, কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয় ও সাহায্য করার ব্যাপারে যা আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে দিয়েছিলেন। উহুদ যুদ্ধের প্রথম দিকে সেই প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন ঘটেছিল।] সত্যে পরিণত করেছেন- যখন তোমরা তাঁর আদেশে (যুদ্ধের প্রথমদিকে) তাদেরকে নির্মূল (হত্যা) করছিলে; (আর এ অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল) যতক্ষণ না তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলেছিলে এবং (রাসূলের একটি বিশেষ) নির্দেশ (পালন করা) সম্পর্কে মতপার্থক্য করেছিলে। [এটি হচ্ছে উহুদ যুদ্ধের সেই অবস্থা, যখন খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলিমদের দুর্বলতার সুযোগে পিছন দিক থেকে আক্রমণ করে বসে এবং মুসলিমগণ এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে দিশেহারা হয়ে পড়েন। উপরন্তু এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদেরকে একত্রিত হতে বললেন, সাহাবীগণ এ নির্দেশ পালনে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। ফলে অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পলায়ন করে, আবার অনেকেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যায় এবং অনেকেই মুশরিকদের সাথে মিশে যায়। তবে কেবলমাত্র ৯ জন সাহাবী আহবান শোনার সাথে সাথেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে একত্রিত হয় এবং মুশরিকদের আক্রমণ প্রতিহত করে। পরবর্তী আয়াতেও এই পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।] তোমরা যা ভালোবাস তা (বিজয়) তোমাদেরকে দেখানোর পরও তোমরা অবাধ্য হলে। [এটি হচ্ছে উহুদ যুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থার ফলাফল, যা মুসলিমগণ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি।] (প্রকৃত বিষয় হচ্ছে) তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ দুনিয়া (গনীমত) কামনা করেছিল এবং কেউ কেউ পরকাল কামনা করেছিল। [এটি উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের মূল কারণ। এ ক্ষেত্রে মুসলিমদের বেশ কয়েকটি কৃতকর্মই চোখে পড়ার মতো। যেমন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ অমান্য করে তীরন্দাজদের একটি দল কর্তৃক গনীমতের মাল সংগ্রহের জন্য চলে যাওয়া, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আহবানে কর্ণপাত না করে পুনরায় একত্রিত না হওয়া, যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া, কাফিরদের সাথে মিশ্রিত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।] অতঃপর তোমাদেরকে পরীক্ষার জন্য তিনি তোমাদেরকে তাদের থেকে সরিয়ে দিলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। [অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা দেখতে পেলেন যে, কোন কোন মুসলিমের ঈমানে সামান্য দুর্বলতা রয়েছে, তখন তাদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য এই পরীক্ষার অবতারণা করেন। ফলে এটি পরবর্তীতে সকল মুসলিমদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয়।] আর আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহশীল। [এখানে যে অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে, সেটি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ অনুগ্রহ। এগুলো তিনি কেবল ঈমানদার বান্দাদেরকেই দান করে থাকেন। তাদেরকে ছাড়া অন্য কেউ এ অনুগ্রহ প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য নয়। এছাড়া কাফির-মুশরিকসহ সমস্ত সৃষ্টি যেসব অনুগ্রহ পেয়ে থাকে, সেটি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার সাধারণ অনুগ্রহ, যা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পৃথিবীতে বসবাসের উপকরণ হিসেবে দান করে থাকেন।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করে থাকেন।
শিরক করার ব্যাপারে পৃথিবীতে কোন দলীল নেই।
মুশরিকদের শেষ পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।
আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করাটাও এক ধরনের যুলুম।
উহুদে যুদ্ধে রাসূলূল্লাহ ﷺ এর আদেশ অমান্য করাটা ছিল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
দুনিয়া লাভ তথা গনীমতের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করা বৈধ নয়।
উহুদ যুদ্ধের বিপর্যয়টি ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।
اِذْ تُصْعِدُوْنَ وَلَا تَلْوُوْنَ عَلٰۤى اَحَدٍ وَّالرَسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ فِيْۤ اُخْرَاكُمْ فَاَثَابَكُمْ غَمًّا ۢبِغَمٍّ لِّكَيْلَا تَحْزَنُوْا عَلٰى مَا فَاتَكُمْ وَلَا مَاۤ اَصَابَكُمْؕ وَاللهُ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ (১৫৩)
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৩. اِذْ যখন تُصْعِدُوْنَ তোমরা উপরে ওঠে যাচ্ছিলে وَلَا تَلْوُوْنَ এবং ফিরেও তাকাচ্ছিলে না عَلٰۤى اَحَدٍ কারো দিকে; وَالرَّسُوْلُ অথচ রাসূল يَدْعُوْكُمْ তোমাদেরকে আহবান করছিল فِيْ اُخْرَاكُمْ তোমাদের পেছন থেকে । فَاَثَابَكُمْ তারপর তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে প্রদান করলেন غَمًّا দুঃখ بِغَمٍّ দুঃখের সাথে, لِكَيْلَا تَحْزَنُوْا যাতে করে তোমরা দুঃখ না কর عَلٰى তার জন্য مَا فَاتَكُمْ যা তোমরা হারিয়েছ وَلَا مَاۤ اَصَابَكُمْ এবং যা বিপদ তোমাদের উপর এসেছে وَاللهُ আর আল্লাহ خَبِيْرٌ খবর সংগ্রহকারী بِمَا যা تَعْمَلُوْنَ তোমরা করছ।
সরল অনুবাদ
১৫৩. (স্মরণ করো) যখন তোমরা (উহুদের যুদ্ধে নিজেদের বিপর্যয় দেখে ময়দান ছেড়ে) উপরের দিকে (পাহাড়ে) ওঠে যাচ্ছিলে এবং কারো দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিলে না; অথচ রাসূল (তখনও) তোমাদেরকে পেছন থেকে আহবান করছিল (কিন্তু তোমরা তা শুনলে না)। [অর্থাৎ তোমরা নিজেদের জীবনকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবন থেকেও বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলে। অথচ তোমাদের জন্য সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আহবানে সাড়া দেয়া; কিন্তু তোমরা তা দাওনি। বারা’ ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিছু পদাতিক সৈন্যের উপর আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) কে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। এরপর তাদের কতক পরাজিত হলে পালাতে লাগল। এটাই হলো ‘‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন তোমাদেরকে পেছন দিক থেকে ডাকছিলেন’’- এ আয়াতের ব্যাখ্যা। সেদিন মাত্র বারজন লোক ব্যতীত আর কেউ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ছিলেন না। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬১)] আর তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে দুঃখের উপর দুঃখ [দুঃখের উপর দুঃখ বলতে বেশ কয়েকটি দুঃখের দিকে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো- (১) পরাজয়ের দুঃখ, (২) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর সংবাদের দুঃখ, (৩) নিজেদের বিপুল সংখ্যক লোক নিহত হওয়ার দুঃখ (৪) মদিনার শহর বরবাদ হওয়ার আশংকার দুঃখ ইত্যাদি।] প্রদান করলেন, যাতে করে যা (নিশ্চিত বিজয়) তোমরা হারিয়েছ এবং তোমাদের উপর যা (বিপদ) উপনীত হয়েছে তার জন্য দুঃখ না কর। [অর্থাৎ এই দুঃখগুলো প্রদান করার কারণ হচ্ছে, যাতে করে তোমরা ভবিষ্যতে যুদ্ধে পরাজিত হলে অথবা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে অথবা অনুরূপ কোন বিপদের সম্মুখীন হলে কোনরূপ হাতাশায় পতিত না হও এবং দুর্বল হয়ে না পড়।] আর তোমরা যা করো আল্লাহ সে বিষয়ে অধিক অবহিত।
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা মহা অন্যায়।
রাসূলুল্লাহ (আঃ) এর আহবান শ্রবণ করা আবশ্যক।
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের কোন কোন অপরাধের জন্য দুনিয়াতেই শাস্তি প্রদান করে থাকেন।
উহুদ যুদ্ধের বিপর্যয়টি ছিল মুমিনদের জন্য সাময়িক শাস্তিস্বরূপ।
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৩. اِذْ যখন تُصْعِدُوْنَ তোমরা উপরে ওঠে যাচ্ছিলে وَلَا تَلْوُوْنَ এবং ফিরেও তাকাচ্ছিলে না عَلٰۤى اَحَدٍ কারো দিকে; وَالرَّسُوْلُ অথচ রাসূল يَدْعُوْكُمْ তোমাদেরকে আহবান করছিল فِيْ اُخْرَاكُمْ তোমাদের পেছন থেকে । فَاَثَابَكُمْ তারপর তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে প্রদান করলেন غَمًّا দুঃখ بِغَمٍّ দুঃখের সাথে, لِكَيْلَا تَحْزَنُوْا যাতে করে তোমরা দুঃখ না কর عَلٰى তার জন্য مَا فَاتَكُمْ যা তোমরা হারিয়েছ وَلَا مَاۤ اَصَابَكُمْ এবং যা বিপদ তোমাদের উপর এসেছে وَاللهُ আর আল্লাহ خَبِيْرٌ খবর সংগ্রহকারী بِمَا যা تَعْمَلُوْنَ তোমরা করছ।
সরল অনুবাদ
১৫৩. (স্মরণ করো) যখন তোমরা (উহুদের যুদ্ধে নিজেদের বিপর্যয় দেখে ময়দান ছেড়ে) উপরের দিকে (পাহাড়ে) ওঠে যাচ্ছিলে এবং কারো দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিলে না; অথচ রাসূল (তখনও) তোমাদেরকে পেছন থেকে আহবান করছিল (কিন্তু তোমরা তা শুনলে না)। [অর্থাৎ তোমরা নিজেদের জীবনকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবন থেকেও বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলে। অথচ তোমাদের জন্য সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আহবানে সাড়া দেয়া; কিন্তু তোমরা তা দাওনি। বারা’ ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিছু পদাতিক সৈন্যের উপর আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) কে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। এরপর তাদের কতক পরাজিত হলে পালাতে লাগল। এটাই হলো ‘‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন তোমাদেরকে পেছন দিক থেকে ডাকছিলেন’’- এ আয়াতের ব্যাখ্যা। সেদিন মাত্র বারজন লোক ব্যতীত আর কেউ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ছিলেন না। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬১)] আর তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে দুঃখের উপর দুঃখ [দুঃখের উপর দুঃখ বলতে বেশ কয়েকটি দুঃখের দিকে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো- (১) পরাজয়ের দুঃখ, (২) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর সংবাদের দুঃখ, (৩) নিজেদের বিপুল সংখ্যক লোক নিহত হওয়ার দুঃখ (৪) মদিনার শহর বরবাদ হওয়ার আশংকার দুঃখ ইত্যাদি।] প্রদান করলেন, যাতে করে যা (নিশ্চিত বিজয়) তোমরা হারিয়েছ এবং তোমাদের উপর যা (বিপদ) উপনীত হয়েছে তার জন্য দুঃখ না কর। [অর্থাৎ এই দুঃখগুলো প্রদান করার কারণ হচ্ছে, যাতে করে তোমরা ভবিষ্যতে যুদ্ধে পরাজিত হলে অথবা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে অথবা অনুরূপ কোন বিপদের সম্মুখীন হলে কোনরূপ হাতাশায় পতিত না হও এবং দুর্বল হয়ে না পড়।] আর তোমরা যা করো আল্লাহ সে বিষয়ে অধিক অবহিত।
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা মহা অন্যায়।
রাসূলুল্লাহ (আঃ) এর আহবান শ্রবণ করা আবশ্যক।
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের কোন কোন অপরাধের জন্য দুনিয়াতেই শাস্তি প্রদান করে থাকেন।
উহুদ যুদ্ধের বিপর্যয়টি ছিল মুমিনদের জন্য সাময়িক শাস্তিস্বরূপ।
ثُمَّ اَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ الْغَمِّ اَمَنَةً نُّعَاسًا يَّغْشٰى طَآئِفَةً مِّنْكُمْ وَطَآئِفَةٌ قَدْ اَهَمَّتْهُمْ اَنْفُسُهُمْ يَظُنُّوْنَ بِاللهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِؕ يَقُوْلُوْنَ هَلْ لَّنَا مِنَ الْاَمْرِ مِنْ شَيْءٍؕ قُلْ اِنَّ الْاَمْرَ كُلَّه لِلّٰهِؕ يُخْفُوْنَ فِيْۤ اَنْفُسِهِمْ مَّا لَا يُبْدُوْنَ لَكَؕ يَقُوْلُوْنَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ مَّا قُتِلْنَا هَاهُنَاؕ قُلْ لَّوْ كُنْتُمْ فِيْ بُيُوْتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِيْنَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ اِلٰى مَضَاجِعِهِمْۚ وَلِيَبْتَلِيَ اللهُ مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ (১৫৪) اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْاۚ وَلَقَدْ عَفَا اللهُ عَنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ (১৫৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৪. ثُمَّ অতঃপর اَنْزَلَ তিনি অবতীর্ণ করলেন عَلَيْكُمْ তোমাদের উপর مِنْ ۢبَعْدِ الْغَمِّ দুঃখের পর থেকে اَمَنَةً প্রশান্তি نُعَاسًا তন্দ্রাস্বরূপ, يَغْشٰى যা আচ্ছন্ন করেছিল طَآئِفَةً একটি দলকে مِنْكُمْ তোমাদের মধ্য হতে। وَطَآئِفَةٌ আর একদল (মুনাফিকরা) قَدْ اَهَمَّتْهُمْ তারা চিন্তান্বিত করছিল اَنْفُسُهُمْ তাদের নিজেদেরকেই, يَظُنُّوْنَ তারা ধারণা পোষণ করে بِاللهِ আল্লাহ সম্পর্কে غَيْرَ ছাড়া اَلْحَقِّ সত্য ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ জাহিলী (যুগের) ধারণার মতো। يَقُوْلُوْنَ এমনকি তারা বলতে থাকে যে, هَلْ আছে কি لَنَا আমাদের জন্য مِنَ الْاَمْرِ এ বিষয়ে مِنْ شَيْءٍ কোন কিছু? قُلْ বলো, اِنَّ নিশ্চয় اَلْاَمْرَ বিষয় كُلَّه সকল لِلّٰهِ আল্লাহরই (ইখতিয়ারে)। يُخْفُوْنَ তারা (এমন কিছু) গোপন রাখে فِيْۤ اَنْفُسِهِمْ নিজেদের অন্তরে, مَّا لَا يُبْدُوْنَ যা তারা প্রকাশ করে না لَكَ তোমার নিকট। يَقُوْلُوْنَ তারা বলে, لَوْ যদি كَانَ থাকত لَنَا আমাদের مِنَ الْاَمْرِ এ বিষয়ে شَيْءٌ কোন কিছু (ইখতিয়ার), مَا قُتِلْنَا তবে আমরা নিহত হতাম না هَاهُنَا এখানে। قُلْ বলো, لَوْ যদি كُنْتُمْ তোমরা থাকতে فِيْ بُيُوْتِكُمْ তোমাদের গৃহের মধ্যেও, لَبَرَزَ তবুও অবশ্যই বের হয়ে যেত اَلَّذِيْنَ যাদের প্রতি كُتِبَ নির্ধারিত হয়েছে عَلَيْهِمُ তাদের উপর اَلْقَتْلُ হত্যা (নিহত হওয়া) اِلٰى مَضَاجِعِهِمْ তারা স্বীয় মৃত্যুস্থানে। وَلِيَبْتَلِيَ আর যাতে পরীক্ষা করতে পারেন اَللهُ আল্লাহ مَا যা আছে فِيْ صُدُوْرِكُمْ তোমাদের অন্তরের মধ্যে وَلِيُمَحِّصَ এবং পরিশুদ্ধ করতে পারেন مَا যা আছে فِيْ قُلُوْبِكُمْ তোমাদের অন্তরে। وَاللهُ আর আল্লাহ عَلِيْمٌ ভালোভাবে অবগত بِذَاتِ বিষয় সম্পর্কে اَلصُّدُوْرِ অন্তরসমূহের।
১৫৫. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা تَوَلَّوْا পেছনে ফিরে গিয়েছিল مِنْكُمْ তোমাদের মধ্যে থেকে يَوْمَ الْتَقَى সম্মুখীন হওয়ার দিন اَلْجَمْعَانِ দু’দলের, اِنَّمَا নিশ্চয় اِسْتَزَلَّهُمُ তাদেরকে প্রতারিত করেছিল اَلشَّيْطَانُ শয়তান بِبَعْضِ কোন কোন বিষয়ে مَا كَسَبُوْا তারা যা অর্জন করেছিল; وَلَقَدْ অতঃপর عَفَا ক্ষমা করে দিলেন اَللهُ আল্লাহ عَنْهُمْ তাদেরকে। اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ غَفُوْرٌ অতি ক্ষমাশীল حَلِيْمٌ পরম সহিষ্ণু।
সরল অনুবাদ
১৫৪. অতঃপর তিনি দুঃখের পর তোমাদের উপর তন্দ্রাস্বরূপ প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা তোমাদের এক দলকে (মুমিনদেরকে) আচ্ছন্ন করেছিল। [এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে মুসলিমদের উপর ভিন্নধর্মী আরো একটি অনুগ্রহ। আবু তালহা (রাঃ) বলেন, উহুদের দিন যাদের উপর তন্দ্রার ভাব সৃষ্টি হয়েছিল, আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। সেদিন বারবার আমার তরবারি আমার হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল এবং আমি তা তুলে নিচ্ছিলাম। (তিরমিযী, হা/৩০০৮)অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, উহুদের দিন আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলাম যে, সকলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে নিজ নিজ ঢালের নিচে ঢলে পড়েছেন। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন। (তিরমিযী, হা/৩০০৭)] আর একদল (মুনাফিকরা) নিজেদের জীবনের ব্যাপারে চিন্তা করছিল; [আবু তালহা (রাঃ) বলেন, এটি ছিল মুনাফিকদের দল। তাদের নিজেদের জানের চিন্তা ছাড়া অন্য কোন চিন্তাই ছিল না। এরা ছিল সবচেয়ে কাপুরুষ ও ভীরু এবং সত্যের সাহায্য ত্যাগকারী। (তিরমিযী, হা/৩০০৮)] তারা তাদের জাহিলী ধারণা অনুযায়ী আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা করছিল। এমনকি তারা বলতে থাকে যে, এ ব্যাপারে (যুদ্ধে বের হওয়ার ব্যাপারে) আমাদের কোন (ইখতিয়ার) আছে কি? (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, সকল বিষয় আল্লাহরই (ইখতিয়ারে)। তারা নিজেদের অন্তরে (এমন কিছু) গোপন রাখে, যা তারা তোমার নিকট প্রকাশ করে না। তারা বলে, যদি এ বিষয়ে আমাদের কোন (ইখতিয়ার) থাকত, তবে এখানে আমরা নিহত হতাম না। (তাদেরকে) বলে দাও, যদি তোমরা তোমাদের গৃহের মধ্যেও থাকতে, তবুও যাদের প্রতি নিহত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে, তারা স্বীয় মৃত্যুস্থানে এসে উপস্থিত হতো। আর (এটা এজন্য) যে, যাতে তোমাদের অন্তরের মধ্যে যা আছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করতে পারেন এবং তোমাদের অন্তরে যা আছে তা পরিশুদ্ধও করতে পারেন। আর অন্তরসমূহে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ ভালোভাবে জানেন।
১৫৫. নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে যারা দু’দলের সম্মুখীন হওয়ার দিন (উহুদ যুদ্ধে) পেছনে ফিরে গিয়েছিল, তারা যা অর্জন করেছিল তার কোন কোন বিষয়ের ব্যাপারে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করেছিল [অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে ঈমানী দুর্বলতা ছিল, শয়তান সেই সুযোগটিই গ্রহণ করেছিল। অতঃপর শয়তান তোমাদেরকে পদস্খলন করে তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।]; অতঃপর (তারা অনুতপ্ত হলে) আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। [সুতরাং এসব অপরাধের জন্য তাদেরকে আর কখনো তিরস্কার করা যাবে না এবং তাদের ব্যাপারে কোনরূপ অন্যায় মন্তব্য করা যাবে না।] নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম সহিঞ্চু।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
যুদ্ধক্ষেত্রে তন্দ্রা আসাটা আল্লাহর পক্ষ হতে প্রশান্তিস্বরূপ।
মৃত্যু দেখলেও আল্লাহর পথে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
কোন ক্রমেই আল্লাহর বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা পোষণ করা যাবে না।
প্রত্যেকের মৃত্যুর স্থান পূর্ব হতেই নির্ধারিত।
যুদ্ধ ঈমানদারদের থেকে মুনাফিকদেরকে পৃথক করে দেয়।
মানুষ শয়তানের প্রতারণার কারণেই পাপকর্মে লিপ্ত হয়।
শয়তান মানুষকে প্রতারণা করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
যে কোন পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে থাকেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৪. ثُمَّ অতঃপর اَنْزَلَ তিনি অবতীর্ণ করলেন عَلَيْكُمْ তোমাদের উপর مِنْ ۢبَعْدِ الْغَمِّ দুঃখের পর থেকে اَمَنَةً প্রশান্তি نُعَاسًا তন্দ্রাস্বরূপ, يَغْشٰى যা আচ্ছন্ন করেছিল طَآئِفَةً একটি দলকে مِنْكُمْ তোমাদের মধ্য হতে। وَطَآئِفَةٌ আর একদল (মুনাফিকরা) قَدْ اَهَمَّتْهُمْ তারা চিন্তান্বিত করছিল اَنْفُسُهُمْ তাদের নিজেদেরকেই, يَظُنُّوْنَ তারা ধারণা পোষণ করে بِاللهِ আল্লাহ সম্পর্কে غَيْرَ ছাড়া اَلْحَقِّ সত্য ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ জাহিলী (যুগের) ধারণার মতো। يَقُوْلُوْنَ এমনকি তারা বলতে থাকে যে, هَلْ আছে কি لَنَا আমাদের জন্য مِنَ الْاَمْرِ এ বিষয়ে مِنْ شَيْءٍ কোন কিছু? قُلْ বলো, اِنَّ নিশ্চয় اَلْاَمْرَ বিষয় كُلَّه সকল لِلّٰهِ আল্লাহরই (ইখতিয়ারে)। يُخْفُوْنَ তারা (এমন কিছু) গোপন রাখে فِيْۤ اَنْفُسِهِمْ নিজেদের অন্তরে, مَّا لَا يُبْدُوْنَ যা তারা প্রকাশ করে না لَكَ তোমার নিকট। يَقُوْلُوْنَ তারা বলে, لَوْ যদি كَانَ থাকত لَنَا আমাদের مِنَ الْاَمْرِ এ বিষয়ে شَيْءٌ কোন কিছু (ইখতিয়ার), مَا قُتِلْنَا তবে আমরা নিহত হতাম না هَاهُنَا এখানে। قُلْ বলো, لَوْ যদি كُنْتُمْ তোমরা থাকতে فِيْ بُيُوْتِكُمْ তোমাদের গৃহের মধ্যেও, لَبَرَزَ তবুও অবশ্যই বের হয়ে যেত اَلَّذِيْنَ যাদের প্রতি كُتِبَ নির্ধারিত হয়েছে عَلَيْهِمُ তাদের উপর اَلْقَتْلُ হত্যা (নিহত হওয়া) اِلٰى مَضَاجِعِهِمْ তারা স্বীয় মৃত্যুস্থানে। وَلِيَبْتَلِيَ আর যাতে পরীক্ষা করতে পারেন اَللهُ আল্লাহ مَا যা আছে فِيْ صُدُوْرِكُمْ তোমাদের অন্তরের মধ্যে وَلِيُمَحِّصَ এবং পরিশুদ্ধ করতে পারেন مَا যা আছে فِيْ قُلُوْبِكُمْ তোমাদের অন্তরে। وَاللهُ আর আল্লাহ عَلِيْمٌ ভালোভাবে অবগত بِذَاتِ বিষয় সম্পর্কে اَلصُّدُوْرِ অন্তরসমূহের।
১৫৫. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা تَوَلَّوْا পেছনে ফিরে গিয়েছিল مِنْكُمْ তোমাদের মধ্যে থেকে يَوْمَ الْتَقَى সম্মুখীন হওয়ার দিন اَلْجَمْعَانِ দু’দলের, اِنَّمَا নিশ্চয় اِسْتَزَلَّهُمُ তাদেরকে প্রতারিত করেছিল اَلشَّيْطَانُ শয়তান بِبَعْضِ কোন কোন বিষয়ে مَا كَسَبُوْا তারা যা অর্জন করেছিল; وَلَقَدْ অতঃপর عَفَا ক্ষমা করে দিলেন اَللهُ আল্লাহ عَنْهُمْ তাদেরকে। اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ غَفُوْرٌ অতি ক্ষমাশীল حَلِيْمٌ পরম সহিষ্ণু।
সরল অনুবাদ
১৫৪. অতঃপর তিনি দুঃখের পর তোমাদের উপর তন্দ্রাস্বরূপ প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা তোমাদের এক দলকে (মুমিনদেরকে) আচ্ছন্ন করেছিল। [এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে মুসলিমদের উপর ভিন্নধর্মী আরো একটি অনুগ্রহ। আবু তালহা (রাঃ) বলেন, উহুদের দিন যাদের উপর তন্দ্রার ভাব সৃষ্টি হয়েছিল, আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। সেদিন বারবার আমার তরবারি আমার হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল এবং আমি তা তুলে নিচ্ছিলাম। (তিরমিযী, হা/৩০০৮)অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, উহুদের দিন আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলাম যে, সকলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে নিজ নিজ ঢালের নিচে ঢলে পড়েছেন। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন। (তিরমিযী, হা/৩০০৭)] আর একদল (মুনাফিকরা) নিজেদের জীবনের ব্যাপারে চিন্তা করছিল; [আবু তালহা (রাঃ) বলেন, এটি ছিল মুনাফিকদের দল। তাদের নিজেদের জানের চিন্তা ছাড়া অন্য কোন চিন্তাই ছিল না। এরা ছিল সবচেয়ে কাপুরুষ ও ভীরু এবং সত্যের সাহায্য ত্যাগকারী। (তিরমিযী, হা/৩০০৮)] তারা তাদের জাহিলী ধারণা অনুযায়ী আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা করছিল। এমনকি তারা বলতে থাকে যে, এ ব্যাপারে (যুদ্ধে বের হওয়ার ব্যাপারে) আমাদের কোন (ইখতিয়ার) আছে কি? (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, সকল বিষয় আল্লাহরই (ইখতিয়ারে)। তারা নিজেদের অন্তরে (এমন কিছু) গোপন রাখে, যা তারা তোমার নিকট প্রকাশ করে না। তারা বলে, যদি এ বিষয়ে আমাদের কোন (ইখতিয়ার) থাকত, তবে এখানে আমরা নিহত হতাম না। (তাদেরকে) বলে দাও, যদি তোমরা তোমাদের গৃহের মধ্যেও থাকতে, তবুও যাদের প্রতি নিহত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে, তারা স্বীয় মৃত্যুস্থানে এসে উপস্থিত হতো। আর (এটা এজন্য) যে, যাতে তোমাদের অন্তরের মধ্যে যা আছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করতে পারেন এবং তোমাদের অন্তরে যা আছে তা পরিশুদ্ধও করতে পারেন। আর অন্তরসমূহে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ ভালোভাবে জানেন।
১৫৫. নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে যারা দু’দলের সম্মুখীন হওয়ার দিন (উহুদ যুদ্ধে) পেছনে ফিরে গিয়েছিল, তারা যা অর্জন করেছিল তার কোন কোন বিষয়ের ব্যাপারে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করেছিল [অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে ঈমানী দুর্বলতা ছিল, শয়তান সেই সুযোগটিই গ্রহণ করেছিল। অতঃপর শয়তান তোমাদেরকে পদস্খলন করে তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।]; অতঃপর (তারা অনুতপ্ত হলে) আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। [সুতরাং এসব অপরাধের জন্য তাদেরকে আর কখনো তিরস্কার করা যাবে না এবং তাদের ব্যাপারে কোনরূপ অন্যায় মন্তব্য করা যাবে না।] নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম সহিঞ্চু।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
যুদ্ধক্ষেত্রে তন্দ্রা আসাটা আল্লাহর পক্ষ হতে প্রশান্তিস্বরূপ।
মৃত্যু দেখলেও আল্লাহর পথে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
কোন ক্রমেই আল্লাহর বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা পোষণ করা যাবে না।
প্রত্যেকের মৃত্যুর স্থান পূর্ব হতেই নির্ধারিত।
যুদ্ধ ঈমানদারদের থেকে মুনাফিকদেরকে পৃথক করে দেয়।
মানুষ শয়তানের প্রতারণার কারণেই পাপকর্মে লিপ্ত হয়।
শয়তান মানুষকে প্রতারণা করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
যে কোন পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে থাকেন।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَقَالُوْا لِاِخْوَانِهِمْ اِذَا ضَرَبُوْا فِي الْاَرْضِ اَوْ كَانُوْا غُزًّى لَّوْ كَانُوْا عِنْدَنَا مَا مَاتُوْا وَمَا قُتِلُوْاۚ لِيَجْعَلَ اللهُ ذٰلِكَ حَسْرَةً فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ (১৫৬)
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৬. يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ওহে যারা ঈমান আনয়ন করেছ! لَا تَكُوْنُوْا তোমরা হয়ো না كَالَّذِيْنَ ঐসব লোকের মতো, যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে وَقَالُوْا এবং বলেছে لِاِخْوَانِهِمْ তাদের ভাইদের ব্যাপারে اِذَا যখন ضَرَبُوْا তারা ভ্রমণ করে فِي الْاَرْضِ পৃথিবীতে اَوْ অথবা كَانُوْا তারা থাকে غُزًّى যুদ্ধরত لَوْ যদি كَانُوْا তারা থাকত عِنْدَنَا আমাদের নিকট مَا مَاتُوْا তবে তারা মৃত্যুবরণ করত না وَمَا قُتِلُوْا এবং নিহতও হতো না। لِيَجْعَلَ যাতে করতে পারেন اَللهُ আল্লাহ ذٰلِكَ এটাকে حَسْرَةً আফসোসের কারণ فِيْ قُلُوْبِهِمْ তাদের অন্তরে। وَاللهُ আর আল্লাহই يُحْيِيْ জীবন দান করেন وَيُمِيْتُ এবং মৃত্যু দান করেন। وَاللهُ আর আল্লাহ بِمَا সে বিষয়ে যা تَعْمَلُوْنَ তোমরা করছ بَصِيْرٌ পরিপূর্ণ দৃষ্টিবান।
সরল অনুবাদ
১৫৬. হে মুমিনগণ! তোমরা ঐসব লোকের মতো হয়ো না, যারা অস্বীকার করেছে এবং যখন তাদের ভাইয়েরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করে অথবা যুদ্ধরত থাকে তখন তাদের সম্পর্কে বলে- যদি তারা আমাদের নিকট থাকত তবে মৃত্যুমুখে পতিত হতো না অথবা নিহতও হতো না। [এ আয়াতটি মদিনার ঐসব ইহুদীদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা উহুদ যুদ্ধের পরাজয় সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার সাথে সাথে এরূপ মন্তব্য করে বেড়াত। সামান্য লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে, তাদের এই মন্তব্যটি প্রত্যেক যুগের মুনাফিক ও দুর্বল ঈমানের অধিকারী লোকদের মন্তব্যগুলোর সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। তারা এসব মন্তব্যের মাধ্যমে প্রকৃত ঈমানদারদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সুতরাং তাদের সমালোচনাসমূহ এড়িয়ে চলাই মুমিনদের জন্য কল্যাণকর।] এটা এ জন্য যে, যাতে করে আল্লাহ এটাকে তাদের অন্তরে আফসোসের কারণ করতে পারেন। [এখানে আফসোস বলতে ঐসব লোকের অভিব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার নয় তথা মুনাফিক অথবা যারা ঈমানের দিক থেকে একেবারেই দুর্বল। মুজাহিদদের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম না হওয়ার কারণেই তারা এ ধরনের আফসোস করে থাকে। অতঃপর তাদের এসব আফসোস ক্রমেই তীব্রতা লাভ করে।] (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহই জীবন দান করেন ও মৃত্যু দান করেন। [এটি হচ্ছে তাদের আফসোসের বিষয়ে একটি জবাব। কেননা তারা যে বিষয়টি নিয়ে আফসোস করছে এবং মুসলিমদের ক্ষতি হিসেবে দেখছে, সেটি নিয়ে তাদের এরূপ ধারণা পোষণ করাটাই সঠিক নয়। কেননা ঐ বিষয়টি কেবল আল্লাহর ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়ে থাকে। তারা যদি ময়দানে না নেমে ঘরে বসে থাকত, তাহলেও তো তাদের একই পরিণতি হতো- যেমনিভাবে অন্যান্য মানুষের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।] আর তোমরা যা করছ সে বিষয়ে আল্লাহ পরিপূর্ণ দৃষ্টিবান। [অর্থাৎ তোমরা ঘরে বসে ঈমানের বিষয়ে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছ এবং তারা ময়দানে বের হয়ে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে, সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি উভয়পক্ষকে তাদের যথাযথ পাওনা বুঝিয়ে দেবেন।]
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
মুজাহিদদের ব্যাপারে বিরোপ মন্তব্য করা মুনাফিকদের কাজ।
জীবন ও মৃত্যু কেবল আল্লাহরই ইচ্ছাধীন।
মুজাহিদদের মর্যাদা ঘরে বসে থাকা লোকদের থেকে অনেক বেশি।
আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের সকল কর্মই প্রত্যক্ষ করে থাকেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৬. يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ওহে যারা ঈমান আনয়ন করেছ! لَا تَكُوْنُوْا তোমরা হয়ো না كَالَّذِيْنَ ঐসব লোকের মতো, যারা كَفَرُوْا অস্বীকার করেছে وَقَالُوْا এবং বলেছে لِاِخْوَانِهِمْ তাদের ভাইদের ব্যাপারে اِذَا যখন ضَرَبُوْا তারা ভ্রমণ করে فِي الْاَرْضِ পৃথিবীতে اَوْ অথবা كَانُوْا তারা থাকে غُزًّى যুদ্ধরত لَوْ যদি كَانُوْا তারা থাকত عِنْدَنَا আমাদের নিকট مَا مَاتُوْا তবে তারা মৃত্যুবরণ করত না وَمَا قُتِلُوْا এবং নিহতও হতো না। لِيَجْعَلَ যাতে করতে পারেন اَللهُ আল্লাহ ذٰلِكَ এটাকে حَسْرَةً আফসোসের কারণ فِيْ قُلُوْبِهِمْ তাদের অন্তরে। وَاللهُ আর আল্লাহই يُحْيِيْ জীবন দান করেন وَيُمِيْتُ এবং মৃত্যু দান করেন। وَاللهُ আর আল্লাহ بِمَا সে বিষয়ে যা تَعْمَلُوْنَ তোমরা করছ بَصِيْرٌ পরিপূর্ণ দৃষ্টিবান।
সরল অনুবাদ
১৫৬. হে মুমিনগণ! তোমরা ঐসব লোকের মতো হয়ো না, যারা অস্বীকার করেছে এবং যখন তাদের ভাইয়েরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করে অথবা যুদ্ধরত থাকে তখন তাদের সম্পর্কে বলে- যদি তারা আমাদের নিকট থাকত তবে মৃত্যুমুখে পতিত হতো না অথবা নিহতও হতো না। [এ আয়াতটি মদিনার ঐসব ইহুদীদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা উহুদ যুদ্ধের পরাজয় সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার সাথে সাথে এরূপ মন্তব্য করে বেড়াত। সামান্য লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে, তাদের এই মন্তব্যটি প্রত্যেক যুগের মুনাফিক ও দুর্বল ঈমানের অধিকারী লোকদের মন্তব্যগুলোর সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। তারা এসব মন্তব্যের মাধ্যমে প্রকৃত ঈমানদারদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সুতরাং তাদের সমালোচনাসমূহ এড়িয়ে চলাই মুমিনদের জন্য কল্যাণকর।] এটা এ জন্য যে, যাতে করে আল্লাহ এটাকে তাদের অন্তরে আফসোসের কারণ করতে পারেন। [এখানে আফসোস বলতে ঐসব লোকের অভিব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার নয় তথা মুনাফিক অথবা যারা ঈমানের দিক থেকে একেবারেই দুর্বল। মুজাহিদদের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম না হওয়ার কারণেই তারা এ ধরনের আফসোস করে থাকে। অতঃপর তাদের এসব আফসোস ক্রমেই তীব্রতা লাভ করে।] (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহই জীবন দান করেন ও মৃত্যু দান করেন। [এটি হচ্ছে তাদের আফসোসের বিষয়ে একটি জবাব। কেননা তারা যে বিষয়টি নিয়ে আফসোস করছে এবং মুসলিমদের ক্ষতি হিসেবে দেখছে, সেটি নিয়ে তাদের এরূপ ধারণা পোষণ করাটাই সঠিক নয়। কেননা ঐ বিষয়টি কেবল আল্লাহর ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়ে থাকে। তারা যদি ময়দানে না নেমে ঘরে বসে থাকত, তাহলেও তো তাদের একই পরিণতি হতো- যেমনিভাবে অন্যান্য মানুষের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।] আর তোমরা যা করছ সে বিষয়ে আল্লাহ পরিপূর্ণ দৃষ্টিবান। [অর্থাৎ তোমরা ঘরে বসে ঈমানের বিষয়ে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছ এবং তারা ময়দানে বের হয়ে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে, সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি উভয়পক্ষকে তাদের যথাযথ পাওনা বুঝিয়ে দেবেন।]
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
মুজাহিদদের ব্যাপারে বিরোপ মন্তব্য করা মুনাফিকদের কাজ।
জীবন ও মৃত্যু কেবল আল্লাহরই ইচ্ছাধীন।
মুজাহিদদের মর্যাদা ঘরে বসে থাকা লোকদের থেকে অনেক বেশি।
আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের সকল কর্মই প্রত্যক্ষ করে থাকেন।
وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ (১৫৭) وَلَئِنْ مُّتُّمْ اَوْ قُتِلْتُمْ لَاِلَى اللهِ تُحْشَرُوْنَ (১৫৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৭. وَلَئِنْ আর যদি قُتِلْتُمْ তোমরা নিহত হও فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে اَوْ অথবা مُتُّمْ মৃত্যুবরণ কর, لَمَغْفِرَةٌ তবে অবশ্যই ক্ষমা রয়েছে مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে وَرَحْمَةٌ ও রহমত خَيْرٌ আর এটা অধিক উত্তম مِمَّا তার চেয়ে যা يَجْمَعُوْنَ তারা সঞ্চয় করছে।
১৫৮. وَلَئِنْ আর যদি مُتُّمْ তোমরা মৃত্যুবরণ কর اَوْ বা قُتِلْتُمْ নিহত হও, لَاِلَى اللهِ তবে অবশ্যই আল্লাহরই দিকে تُحْشَرُوْنَ তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।
সরল অনুবাদ
১৫৭. আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও অথবা মৃত্যুবরণ কর, তবে অবশ্যই আল্লাহর নিকট হতে (তোমাদের জন্য) রয়েছে ক্ষমা। আর তারা (কাফিররা) যা সঞ্চয় করছে এটা তার চেয়ে অধিক উত্তম।
১৫৮. আর তোমরা যদি মৃত্যুবরণ করো বা নিহত হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে আল্লাহরই দিকে একত্রিত করা হবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করার মর্যাদা অনেক বেশি।
২. আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমা লাভ করা যায়।
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৭. وَلَئِنْ আর যদি قُتِلْتُمْ তোমরা নিহত হও فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে اَوْ অথবা مُتُّمْ মৃত্যুবরণ কর, لَمَغْفِرَةٌ তবে অবশ্যই ক্ষমা রয়েছে مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে وَرَحْمَةٌ ও রহমত خَيْرٌ আর এটা অধিক উত্তম مِمَّا তার চেয়ে যা يَجْمَعُوْنَ তারা সঞ্চয় করছে।
১৫৮. وَلَئِنْ আর যদি مُتُّمْ তোমরা মৃত্যুবরণ কর اَوْ বা قُتِلْتُمْ নিহত হও, لَاِلَى اللهِ তবে অবশ্যই আল্লাহরই দিকে تُحْشَرُوْنَ তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।
সরল অনুবাদ
১৫৭. আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও অথবা মৃত্যুবরণ কর, তবে অবশ্যই আল্লাহর নিকট হতে (তোমাদের জন্য) রয়েছে ক্ষমা। আর তারা (কাফিররা) যা সঞ্চয় করছে এটা তার চেয়ে অধিক উত্তম।
১৫৮. আর তোমরা যদি মৃত্যুবরণ করো বা নিহত হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে আল্লাহরই দিকে একত্রিত করা হবে।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করার মর্যাদা অনেক বেশি।
২. আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমা লাভ করা যায়।
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْاَمْرِۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ (১৫৯)
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৯. فَبِمَا এ কারণেই رَحْمَةٍ অনুগ্রহে مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে لِنْتَ তুমি কোমল প্রকৃতির হয়েছিলে لَهُمْ তাদের জন্য। وَلَوْ আর যদি كُنْتَ তুমি হতে فَظًّا কর্কশভাষী غَلِيْظَ الْقَلْبِ কঠোর হৃদয়ের অধিকারী لَانْفَضُّوْا তবে নিশ্চয় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত مِنْ হতে حَوْلِكَ তোমার চারপাশ। فَاعْفُ সুতরাং তুমি মার্জনা করো عَنْهُمْ তাদেরকে وَاسْتَغْفِرْ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করো لَهُمْ তাদের জন্য وَشَاوِرْهُمْ এবং তাদের সাথে পরামর্শ করো فِي الْاَمْرِ কাজকর্মের ব্যাপারে; فَاِذَا অতঃপর যখন عَزَمْتَ তুমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হবে, فَتَوَكَّلْ তখন ভরসা করো عَلَى اللهِ আল্লাহর প্রতি; اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلْمُتَوَكِّلِيْنَ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে।
সরল অনুবাদ
১৫৯. অতএব আল্লাহর অনুগ্রহেই তুমি তাদের প্রতি কোমল হয়েছিলে। (এর বিপরীতে) যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার চারপাশ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। [এখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার এমন একটি অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা নবীদের ওয়ারিশ হিসেবে প্রত্যেক দাঈ অথবা নেতার মধ্যে থাকা অত্যাবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ ধরনের চরিত্রের অধিকারী হয়েছিলেন বিধায় মানুষের মনে দ্রুত গতিতে প্রবেশ করতে পারতেন। অন্যথায় তিনি যদি এরূপ চরিত্রের অধিকারী না হতেন, তাহলে সাধারণ মানুষ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত এবং তার জন্য ইসলাম প্রচার করা আরো কঠিন হয়ে যেত।] সুতরাং তুমি তাদেরকে মার্জনা করো, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং কাজকর্মের ব্যাপারে তাদের সাথে পরামর্শ করো; অতঃপর (উক্ত পরামর্শের ভিত্তিতে কোন বিষয়ে) যখন তুমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা করো; [এখানে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে এখানে যেকোন কাজে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই আয়াতের উপর ভিত্তি করেই অনেক আলেম রাষ্ট্র প্রধানদের জন্য পরামর্শ গ্রহণ করাকে ওয়াজিব হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। ইমাম শাওকানী বলেন, শাসকদের জন্য অত্যাবশ্যক হলো, তাঁরা এমন সব ব্যাপারে উলামাদের সাথে পরামর্শ করবেন, যেসব ব্যাপারে তাঁদের জ্ঞান নেই অথবা যে ব্যাপারে তারা সমস্যায় পড়েন। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সাথে সৈন্য সংক্রান্ত বিষয়ে, জনগণের দায়িত্বে নিয়োজিত নেতাদের সাথে জনসাধারণের কল্যাণ প্রসঙ্গে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে নিযুক্ত সরকারী দায়িত্বশীলদের সাথে সেই অঞ্চলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরামর্শ করবেন।] নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন।
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্বভাব ছিল কোমল প্রকৃতির।
কোমল প্রকৃতির স্বভাব পাওয়াটা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
মানুষের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলা যাবে না।
কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হওয়া যাবে না।
কঠোর হৃদয়ের অধিকারী ও কর্কশভাষীরা কখনো মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারে না।
কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী না হওয়াটা একজন আদর্শ নেতার অন্যতম গুণ।
অধিনস্ত ব্যক্তিবর্গের ছোটখাট ভুলগুলো ক্ষমা করে দেয়া উত্তম।
যে কোন কাজের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে পরামর্শ করে নেয়া অতি উত্তম কাজ।
শাব্দিক অনুবাদ
১৫৯. فَبِمَا এ কারণেই رَحْمَةٍ অনুগ্রহে مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে لِنْتَ তুমি কোমল প্রকৃতির হয়েছিলে لَهُمْ তাদের জন্য। وَلَوْ আর যদি كُنْتَ তুমি হতে فَظًّا কর্কশভাষী غَلِيْظَ الْقَلْبِ কঠোর হৃদয়ের অধিকারী لَانْفَضُّوْا তবে নিশ্চয় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত مِنْ হতে حَوْلِكَ তোমার চারপাশ। فَاعْفُ সুতরাং তুমি মার্জনা করো عَنْهُمْ তাদেরকে وَاسْتَغْفِرْ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করো لَهُمْ তাদের জন্য وَشَاوِرْهُمْ এবং তাদের সাথে পরামর্শ করো فِي الْاَمْرِ কাজকর্মের ব্যাপারে; فَاِذَا অতঃপর যখন عَزَمْتَ তুমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হবে, فَتَوَكَّلْ তখন ভরসা করো عَلَى اللهِ আল্লাহর প্রতি; اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ يُحِبُّ ভালোবাসেন اَلْمُتَوَكِّلِيْنَ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে।
সরল অনুবাদ
১৫৯. অতএব আল্লাহর অনুগ্রহেই তুমি তাদের প্রতি কোমল হয়েছিলে। (এর বিপরীতে) যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার চারপাশ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। [এখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার এমন একটি অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা নবীদের ওয়ারিশ হিসেবে প্রত্যেক দাঈ অথবা নেতার মধ্যে থাকা অত্যাবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ ধরনের চরিত্রের অধিকারী হয়েছিলেন বিধায় মানুষের মনে দ্রুত গতিতে প্রবেশ করতে পারতেন। অন্যথায় তিনি যদি এরূপ চরিত্রের অধিকারী না হতেন, তাহলে সাধারণ মানুষ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত এবং তার জন্য ইসলাম প্রচার করা আরো কঠিন হয়ে যেত।] সুতরাং তুমি তাদেরকে মার্জনা করো, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং কাজকর্মের ব্যাপারে তাদের সাথে পরামর্শ করো; অতঃপর (উক্ত পরামর্শের ভিত্তিতে কোন বিষয়ে) যখন তুমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা করো; [এখানে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে এখানে যেকোন কাজে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই আয়াতের উপর ভিত্তি করেই অনেক আলেম রাষ্ট্র প্রধানদের জন্য পরামর্শ গ্রহণ করাকে ওয়াজিব হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। ইমাম শাওকানী বলেন, শাসকদের জন্য অত্যাবশ্যক হলো, তাঁরা এমন সব ব্যাপারে উলামাদের সাথে পরামর্শ করবেন, যেসব ব্যাপারে তাঁদের জ্ঞান নেই অথবা যে ব্যাপারে তারা সমস্যায় পড়েন। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সাথে সৈন্য সংক্রান্ত বিষয়ে, জনগণের দায়িত্বে নিয়োজিত নেতাদের সাথে জনসাধারণের কল্যাণ প্রসঙ্গে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে নিযুক্ত সরকারী দায়িত্বশীলদের সাথে সেই অঞ্চলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরামর্শ করবেন।] নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন।
আয়াত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্বভাব ছিল কোমল প্রকৃতির।
কোমল প্রকৃতির স্বভাব পাওয়াটা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
মানুষের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলা যাবে না।
কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হওয়া যাবে না।
কঠোর হৃদয়ের অধিকারী ও কর্কশভাষীরা কখনো মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারে না।
কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী না হওয়াটা একজন আদর্শ নেতার অন্যতম গুণ।
অধিনস্ত ব্যক্তিবর্গের ছোটখাট ভুলগুলো ক্ষমা করে দেয়া উত্তম।
যে কোন কাজের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে পরামর্শ করে নেয়া অতি উত্তম কাজ।
اِنْ يَّنْصُرْكُمُ اللهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْۚ وَاِنْ يَّخْذُلْكُمْ فَمَنْ ذَا الَّذِيْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِه ؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ (১৬০)
শাব্দিক অনুবাদ
১৬০. اِنْ যদি يَنْصُرْكُمْ তোমাদেরকে সাহায্য করেন اَللهُ আল্লাহ, فَلَا غَالِبَ তবে কেউই জয়যুক্ত হতে পারবে না لَكُمْ তোমাদের উপর। وَاِنْ আর যদি يَخْذُلْكُمْ তিনি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন, فَمَنْ ذَا তবে এমন কে আছে اَلَّذِيْ যে يَنْصُرُكُمْ তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? مِنْ ۢبَعْدِه তাঁর পরে وَعَلَى اللهِ অতএব আল্লাহর উপরই فَلْيَتَوَكَّلِ নির্ভর করা উচিত اَلْمُؤْمِنُوْنَ মুমিনদের জন্য।
সরল অনুবাদ
১৬০. (জেনে রেখো) যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন, তবে কেউই তোমাদের উপর জয়যুক্ত হতে পারবে না। (অনুরূপভাবে) যদি তিনি তোমাদেরকে সাহায্য না করেন, তবে তাঁর পরে কে আছে যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত।
আয়াতের শিক্ষা
আল্লাহর সাহায্য বিদ্যমান থাকলে তাকে কেউই পরাজিত করতে পারে না।
আল্লাহ তা‘আলা যাকে পরিত্যাগ করেন, তাকে সাহায্য করার কেউ নেই; সুতরাং তার পরাজয় প্রায় নিশ্চিত।
আল্লাহর উপর নির্ভর করাটা মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
শাব্দিক অনুবাদ
১৬০. اِنْ যদি يَنْصُرْكُمْ তোমাদেরকে সাহায্য করেন اَللهُ আল্লাহ, فَلَا غَالِبَ তবে কেউই জয়যুক্ত হতে পারবে না لَكُمْ তোমাদের উপর। وَاِنْ আর যদি يَخْذُلْكُمْ তিনি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন, فَمَنْ ذَا তবে এমন কে আছে اَلَّذِيْ যে يَنْصُرُكُمْ তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? مِنْ ۢبَعْدِه তাঁর পরে وَعَلَى اللهِ অতএব আল্লাহর উপরই فَلْيَتَوَكَّلِ নির্ভর করা উচিত اَلْمُؤْمِنُوْنَ মুমিনদের জন্য।
সরল অনুবাদ
১৬০. (জেনে রেখো) যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন, তবে কেউই তোমাদের উপর জয়যুক্ত হতে পারবে না। (অনুরূপভাবে) যদি তিনি তোমাদেরকে সাহায্য না করেন, তবে তাঁর পরে কে আছে যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত।
আয়াতের শিক্ষা
আল্লাহর সাহায্য বিদ্যমান থাকলে তাকে কেউই পরাজিত করতে পারে না।
আল্লাহ তা‘আলা যাকে পরিত্যাগ করেন, তাকে সাহায্য করার কেউ নেই; সুতরাং তার পরাজয় প্রায় নিশ্চিত।
আল্লাহর উপর নির্ভর করাটা মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّغُلَّؕ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّۤى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ (১৬১) اَفَمَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَ اللهِ كَمَنْ ۢبَآءَ بِسَخَطٍ مِّنَ اللهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ (১৬২) هُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ اللهِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِمَا يَعْمَلُوْنَ (১৬৩)
শাব্দিক অনুবাদ
১৬১. وَمَا كَانَ আর উচিত নয় لِنَبِيٍّ কোন নবীর পক্ষে اَنْ যে يَغُلَّ সে আত্মসাৎ করবে। وَمَنْ তবে যে ব্যক্তি يَغْلُلْ আত্মসাৎ করবে, يَأْتِ তা নিয়ে আসবে بِمَا যা غَلَّ সে আত্মসাৎ করেছে يَوْمَ দিন اَلْقِيَامَةِ কিয়ামতের। ثُمَّ অতঃপর تُوَفّۤى পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেয়া হবে كُلُّ প্রত্যেক نَفْسٍ ব্যক্তিকেই مَا كَسَبَتْ যা সে অর্জন করেছে وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।
১৬২. اَفَمَنْ সে ব্যক্তি কি হতে পারে যে اِتَّبَعَ অনুসরণ করেছে رِضْوَانَ اللهِ আল্লাহর সন্তুষ্টির كَمَنْ ঐ ব্যক্তির মতো যে بَآءَ পতিত হয়েছে بِسَخَطٍ আক্রোশে مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে? وَمَأْوَاهُ আর তার বাসস্থান হবে جَهَنَّمُ জাহান্নাম; وَبِئْسَ তা কতই না নিকৃষ্ট اَلْمَصِيْرُ গন্তব্যস্থল!
১৬৩. هُمْ তারা دَرَجَاتٌ ভিন্ন ভিন্ন পদমর্যাদার অধিকারী عِنْدَ اللهِ আল্লাহর নিকট; وَاللهُ আর আল্লাহ بَصِيْرٌ পরিপূর্ণ দৃষ্টিবান بِمَا সে বিষয়ে যা يَعْمَلُوْنَ তারা করছে।
সরল অনুবাদ
১৬১. আর আত্মসাৎ করা কোন নবীর পক্ষে শোভনীয় নয়। [উহুদ যুদ্ধে পেছনের অংশকে প্রতিরক্ষার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যেসব তীরন্দাজকে পাহাড়ের গিরিপথে মোতায়েন করেছিলেন তারা যখন দেখলো যে, মুসলিম বাহিনীর অনেকেই পলায়নরত মুশরিকদের থেকে গনীমত সংগ্রহ করছে, তখন তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন ব্যতীত সকলেই সেখান থেকে নেমে এসে অন্যদের সাথে গনীমতের মাল সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। অথচ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জোরালো নির্দেশ ছিল যে, তারা যেন কিছুতেই সেখান থেকে নিচে না নামে। আর এই সুযোগে কাফিরদের বিচক্ষণ সেনানায়ক খালেদ বিন ওয়ালিদ সেদিক দিয়ে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে বসে। আর এতেই মুসলিমদের বিপর্যয় সূচনা হয়। অতঃপর যুদ্ধ শেষ হলে যেসব তীরন্দাজ সেখান থেকে নেমে গিয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে ডেকে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তারা এমন কিছু অজুহাত পেশ করলো, যার ভিত্তি ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘‘আসলে কথা হচ্ছে, আমাদের উপর তোমাদের আস্থা ছিল না। তোমরা মনে করছিলে আমরা তোমাদের সাথে খেয়ানত করব এবং তোমাদের অংশ দেবো না’’। এ আয়াতে এ বিষয়টির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর মর্মার্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহর নবী নিজেই যখন তোমাদের সেনাপতি ছিলেন এবং সমস্ত বিষয়ই ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে, তখন তোমাদের মনে এ আশংকা কেমন করে দেখা দিল যে, তোমাদের সাথে খিয়ানত করা হবে এবং তোমাদেরকে গনীমতের অংশ দেয়া হবে না? অথবা এরূপ আশংকাবোধ কর যে, নবীর তত্ত্বাবধানে যেসব সম্পদ থাকবে, তা বিশ্বস্ততা, আমানতদারী ও ইনসাফের সাথে বণ্টন না করে অন্য কোনভাবে বণ্টন করা হবে? তাহলে তোমরা কিরূপ ঈমান আনয়ন করলে?] তবে যে ব্যক্তি (কোন কিছু) আত্মসাৎ করবে, সে যা আত্মসাৎ করেছে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার অর্জিত (ভালো-মন্দের) পাওনা পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেয়া হবে; তাদের (কারো) প্রতি অবিচার করা হবে না।
১৬২. যে আল্লাহর সন্তুষ্টির (পথ) অনুসরণ করেছে সে কি তার মতো হতে পারে, যে আল্লাহর আক্রোশে পতিত হয়েছে? আর তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম; তা কতই না নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল!
১৬৩. আল্লাহর নিকট মানুষের ভিন্ন ভিন্ন পদমর্যাদা রয়েছে; আর তারা যা করে আল্লাহ তা দেখেন।
আয়াতের শিক্ষা
কোন কিছু আত্মসাৎ করা মহাপাপ।
কোন নবীই আত্মসাৎকারীদের অন্তর্ভুক্ত নন।
কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকারী ব্যক্তি আত্মসাৎকৃত বস্তুসামগ্রী নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।
আল্লাহর ক্রোধের পথ বর্জন করে চলতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৬১. وَمَا كَانَ আর উচিত নয় لِنَبِيٍّ কোন নবীর পক্ষে اَنْ যে يَغُلَّ সে আত্মসাৎ করবে। وَمَنْ তবে যে ব্যক্তি يَغْلُلْ আত্মসাৎ করবে, يَأْتِ তা নিয়ে আসবে بِمَا যা غَلَّ সে আত্মসাৎ করেছে يَوْمَ দিন اَلْقِيَامَةِ কিয়ামতের। ثُمَّ অতঃপর تُوَفّۤى পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেয়া হবে كُلُّ প্রত্যেক نَفْسٍ ব্যক্তিকেই مَا كَسَبَتْ যা সে অর্জন করেছে وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।
১৬২. اَفَمَنْ সে ব্যক্তি কি হতে পারে যে اِتَّبَعَ অনুসরণ করেছে رِضْوَانَ اللهِ আল্লাহর সন্তুষ্টির كَمَنْ ঐ ব্যক্তির মতো যে بَآءَ পতিত হয়েছে بِسَخَطٍ আক্রোশে مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে? وَمَأْوَاهُ আর তার বাসস্থান হবে جَهَنَّمُ জাহান্নাম; وَبِئْسَ তা কতই না নিকৃষ্ট اَلْمَصِيْرُ গন্তব্যস্থল!
১৬৩. هُمْ তারা دَرَجَاتٌ ভিন্ন ভিন্ন পদমর্যাদার অধিকারী عِنْدَ اللهِ আল্লাহর নিকট; وَاللهُ আর আল্লাহ بَصِيْرٌ পরিপূর্ণ দৃষ্টিবান بِمَا সে বিষয়ে যা يَعْمَلُوْنَ তারা করছে।
সরল অনুবাদ
১৬১. আর আত্মসাৎ করা কোন নবীর পক্ষে শোভনীয় নয়। [উহুদ যুদ্ধে পেছনের অংশকে প্রতিরক্ষার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যেসব তীরন্দাজকে পাহাড়ের গিরিপথে মোতায়েন করেছিলেন তারা যখন দেখলো যে, মুসলিম বাহিনীর অনেকেই পলায়নরত মুশরিকদের থেকে গনীমত সংগ্রহ করছে, তখন তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন ব্যতীত সকলেই সেখান থেকে নেমে এসে অন্যদের সাথে গনীমতের মাল সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। অথচ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জোরালো নির্দেশ ছিল যে, তারা যেন কিছুতেই সেখান থেকে নিচে না নামে। আর এই সুযোগে কাফিরদের বিচক্ষণ সেনানায়ক খালেদ বিন ওয়ালিদ সেদিক দিয়ে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে বসে। আর এতেই মুসলিমদের বিপর্যয় সূচনা হয়। অতঃপর যুদ্ধ শেষ হলে যেসব তীরন্দাজ সেখান থেকে নেমে গিয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে ডেকে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তারা এমন কিছু অজুহাত পেশ করলো, যার ভিত্তি ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘‘আসলে কথা হচ্ছে, আমাদের উপর তোমাদের আস্থা ছিল না। তোমরা মনে করছিলে আমরা তোমাদের সাথে খেয়ানত করব এবং তোমাদের অংশ দেবো না’’। এ আয়াতে এ বিষয়টির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর মর্মার্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহর নবী নিজেই যখন তোমাদের সেনাপতি ছিলেন এবং সমস্ত বিষয়ই ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে, তখন তোমাদের মনে এ আশংকা কেমন করে দেখা দিল যে, তোমাদের সাথে খিয়ানত করা হবে এবং তোমাদেরকে গনীমতের অংশ দেয়া হবে না? অথবা এরূপ আশংকাবোধ কর যে, নবীর তত্ত্বাবধানে যেসব সম্পদ থাকবে, তা বিশ্বস্ততা, আমানতদারী ও ইনসাফের সাথে বণ্টন না করে অন্য কোনভাবে বণ্টন করা হবে? তাহলে তোমরা কিরূপ ঈমান আনয়ন করলে?] তবে যে ব্যক্তি (কোন কিছু) আত্মসাৎ করবে, সে যা আত্মসাৎ করেছে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার অর্জিত (ভালো-মন্দের) পাওনা পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেয়া হবে; তাদের (কারো) প্রতি অবিচার করা হবে না।
১৬২. যে আল্লাহর সন্তুষ্টির (পথ) অনুসরণ করেছে সে কি তার মতো হতে পারে, যে আল্লাহর আক্রোশে পতিত হয়েছে? আর তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম; তা কতই না নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল!
১৬৩. আল্লাহর নিকট মানুষের ভিন্ন ভিন্ন পদমর্যাদা রয়েছে; আর তারা যা করে আল্লাহ তা দেখেন।
আয়াতের শিক্ষা
কোন কিছু আত্মসাৎ করা মহাপাপ।
কোন নবীই আত্মসাৎকারীদের অন্তর্ভুক্ত নন।
কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকারী ব্যক্তি আত্মসাৎকৃত বস্তুসামগ্রী নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।
আল্লাহর ক্রোধের পথ বর্জন করে চলতে হবে।
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ (১৬৪)
শাব্দিক অনুবাদ
১৬৪. لَقَدْ নিশ্চয় مَنَّ অনুগ্রহ করেছেন اَللهُ আল্লাহ عَلَى উপর اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের, اِذْ যখন بَعَثَ তিনি প্রেরণ করেছেন فِيْهِمْ তাদের কাছে رَسُوْلًا একজন রাসূল مِنْ اَنْفُسِهِمْ তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে, يَتْلُوْ সে পাঠ করে عَلَيْهِمْ তাদের নিকট اٰيَاتِه তাঁর আয়াতসমূহ, وَيُزَكِّيْهِمْ আর তাদেরকে পবিত্র করে وَيُعَلِّمُهُمُ এবং তাদেরকে শিক্ষা দান করে اَلْكِتَابَ কিতাব وَالْحِكْمَةَ ও বিজ্ঞান وَاِنْ আর যদিও كَانُوْا তারা ছিল مِنْ قَبْلُ ইতিপূর্বে لَفِيْ ضَلَالٍ ভ্রান্তির মধ্যে مُبِيْنٍ প্রকাশ্য।
সরল অনুবাদ
১৬৪. নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে তাদের কাছে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। [এখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মানুষ হিসেবে প্রেরণ করাটাকে অনুগ্রহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। আর প্রকৃতপক্ষেই এটি আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের জন্য- বিশেষ করে মুমিনদের জন্য একটি বিরাট অনুগ্রহ। কেননা- (১) তিনি যদি মানুষ না হয়ে অন্য কোন জাতি হতে তথা ফেরেশতা অথবা জীনদের মধ্য হতে হতেন, তাহলে তাঁর পক্ষে মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ত। কিন্তু তিনি মানুষ হওয়াতে এ কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। (২) তিনি যদি একই জাতিভুক্ত না হতেন, তাহলে মানুষ তার সাথে উঠাবসা করত না এবং তার কথা মূল্যায়ন করতো না। ফলে দাওয়াতী কাজ করাটা তার জন্য আরো জটিল হয়ে যেতো। (৩) তিনি যদি মানুষ না হয়ে অন্য কোন জাতির মধ্য হতে হতেন, তাহলে রাসূল প্রেরণের অনেক উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন হতো না এবং তার মধ্যে এমন কিছু গুণাবলির অভাব দেখা দিত, যা দাওয়াতের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে যত নবী প্রেরণ করেছেন, সকলকে মানুষ হিসেবেই প্রেরণ করেছেন। যেমন- তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে আমি যতজনকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, তারা সবাই পুরুষ ছিলেন’’। (সূরা ইউসুফ- ১০৯)।] সে তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দান করে [এগুলো হচ্ছে নবী-রাসূলদের উপর আরোপিত মূল দায়িত্ব। যুগে যুগে প্রত্যেক নবী-রাসূল এ দায়িত্বগুলোই বাস্তবায়ন করে গেছেন। সুতরাং নবীদের ওয়ারিশ হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত আগত প্রত্যেক দাঈর উপরে এই একই গুরুদায়িত্ব বর্তাবে।]- যদিও তারা ইতিপূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল।
আয়াতের শিক্ষা
মুমিন হলে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যাবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কে প্রেরণ করাটা ছিল মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে একটি বিশেষ অনুগ্রহ।
দ্বীনের দাঈদের কাজ হচ্ছে আল্লাহর আয়াতসমূহ মানুষের কাছে উপস্থাপন করা এবং তা মানুষের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করা।
কুরআন অবতীর্ণ করাটাও ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে আরো একটি অনুগ্রহ।
কুরআন মানুষকে হেদায়াতের পথ দেখায়।
শাব্দিক অনুবাদ
১৬৪. لَقَدْ নিশ্চয় مَنَّ অনুগ্রহ করেছেন اَللهُ আল্লাহ عَلَى উপর اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের, اِذْ যখন بَعَثَ তিনি প্রেরণ করেছেন فِيْهِمْ তাদের কাছে رَسُوْلًا একজন রাসূল مِنْ اَنْفُسِهِمْ তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে, يَتْلُوْ সে পাঠ করে عَلَيْهِمْ তাদের নিকট اٰيَاتِه তাঁর আয়াতসমূহ, وَيُزَكِّيْهِمْ আর তাদেরকে পবিত্র করে وَيُعَلِّمُهُمُ এবং তাদেরকে শিক্ষা দান করে اَلْكِتَابَ কিতাব وَالْحِكْمَةَ ও বিজ্ঞান وَاِنْ আর যদিও كَانُوْا তারা ছিল مِنْ قَبْلُ ইতিপূর্বে لَفِيْ ضَلَالٍ ভ্রান্তির মধ্যে مُبِيْنٍ প্রকাশ্য।
সরল অনুবাদ
১৬৪. নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে তাদের কাছে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। [এখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মানুষ হিসেবে প্রেরণ করাটাকে অনুগ্রহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। আর প্রকৃতপক্ষেই এটি আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের জন্য- বিশেষ করে মুমিনদের জন্য একটি বিরাট অনুগ্রহ। কেননা- (১) তিনি যদি মানুষ না হয়ে অন্য কোন জাতি হতে তথা ফেরেশতা অথবা জীনদের মধ্য হতে হতেন, তাহলে তাঁর পক্ষে মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ত। কিন্তু তিনি মানুষ হওয়াতে এ কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। (২) তিনি যদি একই জাতিভুক্ত না হতেন, তাহলে মানুষ তার সাথে উঠাবসা করত না এবং তার কথা মূল্যায়ন করতো না। ফলে দাওয়াতী কাজ করাটা তার জন্য আরো জটিল হয়ে যেতো। (৩) তিনি যদি মানুষ না হয়ে অন্য কোন জাতির মধ্য হতে হতেন, তাহলে রাসূল প্রেরণের অনেক উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন হতো না এবং তার মধ্যে এমন কিছু গুণাবলির অভাব দেখা দিত, যা দাওয়াতের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে যত নবী প্রেরণ করেছেন, সকলকে মানুষ হিসেবেই প্রেরণ করেছেন। যেমন- তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে আমি যতজনকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, তারা সবাই পুরুষ ছিলেন’’। (সূরা ইউসুফ- ১০৯)।] সে তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দান করে [এগুলো হচ্ছে নবী-রাসূলদের উপর আরোপিত মূল দায়িত্ব। যুগে যুগে প্রত্যেক নবী-রাসূল এ দায়িত্বগুলোই বাস্তবায়ন করে গেছেন। সুতরাং নবীদের ওয়ারিশ হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত আগত প্রত্যেক দাঈর উপরে এই একই গুরুদায়িত্ব বর্তাবে।]- যদিও তারা ইতিপূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল।
আয়াতের শিক্ষা
মুমিন হলে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যাবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কে প্রেরণ করাটা ছিল মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে একটি বিশেষ অনুগ্রহ।
দ্বীনের দাঈদের কাজ হচ্ছে আল্লাহর আয়াতসমূহ মানুষের কাছে উপস্থাপন করা এবং তা মানুষের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করা।
কুরআন অবতীর্ণ করাটাও ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে আরো একটি অনুগ্রহ।
কুরআন মানুষকে হেদায়াতের পথ দেখায়।
হওয়ার পরিণাম
اَوَلَمَّاۤ اَصَابَتْكُمْ مُّصِيْبَةٌ قَدْ اَصَبْتُمْ مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ اَنّٰى هٰذَاؕ قُلْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اَنْفُسِكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (১৬৫) وَمَاۤ اَصَابَكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِاِذْنِ اللهِ وَلِيَعْلَمَ الْمُؤْمِنِيْنَ (১৬৬)
শাব্দিক অনুবাদ
১৬৫. اَوَلَمَّا এরূপ কেন হলো যে, যখন اَصَابَتْكُمْ তোমাদের উপর আপতিত হলো مُصِيْبَةٌ বিপদ قَدْ اَصَبْتُمْ অথচ তোমরা (তাদেরকে) বিপদে ফেলেছিলে مِثْلَيْهَا তার দ্বিগুণ, قُلْتُمْ তখন তোমরা বলেছিলে, اَنّٰى কোথা হতে এল هٰذَا এটা? قُلْ বলো, هُوَ এটা مِنْ عِنْدِ নিকট হতে اَنْفُسِكُمْ তোমাদের নিজেদেরই; اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ عَلٰى উপর كُلِّ شَيْءٍ সবকিছুর قَدِيْرٌ সর্বশক্তিমান।
১৬৬. وَمَاۤ اَصَابَكُمْ তোমাদের উপর বিপর্যয় আসেনি يَوْمَ দিন اِلْتَقَى সম্মুখীন হওয়ার اَلْجَمْعَانِ এ দু’দলের فَبِاِذْنِ اللهِ তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই وَلِيَعْلَمَ যাতে তিনি জেনে নিতে পারেন اَلْمُؤْمِنِيْنَ ঈমানদারদেরকে ।
সরল অনুবাদ
১৬৫. এরূপ কেন হলো যে, যখন (উহুদে) তোমাদের উপর বিপদ আপতিত হলো- যদিও তোমরা (বদরে) তাদেরকে তার দ্বিগুণ বিপদে ফেলেছিলে [উহুদের যুদ্ধে মুশরিকরা মুসলিমদের মধ্য হতে ৭০ জনকে হত্যা করেছিল। আর ইতিপূর্বে সংঘটিত বদরের যুদ্ধে মুসলিমগণ মুশরিকদের ৭০ জনকে হত্যা করেছিল এবং সেই সাথে আরো ৭০ জনকে বন্দি করতে সক্ষম হয়েছিল। অত্র আয়াতে উভয় যুদ্ধের এই ফলাফলের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।], তখন তোমরা বলেছিলে, এটা (বিপদ) কোথা হতে এল? [এখানে উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের বিষয়ে ঐসব মুসলিমের সমালোচনা করা হয়েছে, যারা তাদের ঈমানী দুর্বলতার কারণে ব্যাপকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। যখন তাদের উপর এই বিপদ নেমে আসল, তখন তারা অবাক হয়ে পরস্পরকে জিজ্ঞেস করতে আরম্ভ করল যে, এ কি হলো? আমরা তো আল্লাহর দ্বীনের জন্য লড়তে গিয়েছিলাম। তাঁর প্রতিশ্রুতি ও সাহায্য আমাদের সাথে ছিল এবং তাঁর রাসূলও সশরীরে আমাদের সাথেই উপস্থিত ছিলেন। এরপরও কেন আমরা এমন লোকদের কাছে হেরে গেলাম, যারা আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়? ঐসব মুসলিমদের এরূপ হাতাশার উত্তরেই অত্র আয়াত অবতারণা করা হয়। আয়াতের পরবর্তী অংশেই এর জবাব উল্লেখ করা হয়েছে।] (হে নবী!) বলো, এটা তোমাদের নিজেদেরই নিকট হতে (রাসূলের অবাধ্য হওয়ার কারণে এসেছে) [অর্থাৎ এই বিপদ আল্লাহর পক্ষ হতে আসেনি, বরং এটি তোমাদেরই কর্মফল। তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত নবীর কথা মান্য করে যুদ্ধ করেছিলে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য তোমাদের কাছে এসেছিল। ফলে তোমরা বিজয়ের মুখ দেখতে পেয়েছিলে। কিন্তু যখনই তোমরা তার আদেশ মান্য করতে গাফলতি করলে, তখনই তোমাদের উপর থেকে আল্লাহর সাহায্য উঠে গেল। ফলে তোমরা বিপদের মধ্যে পতিত হলে। সুতরাং কাউকে দোষারোপ না করে, প্রথমে নিজেদের সংশোধন করে নাও; তারপর আল্লাহর পথে কাজ করো।]; নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
১৬৬. এ দু’দলের সম্মুখীন হওয়ার দিন (উহুদের যুদ্ধে) তোমাদের উপর যে বিপর্যয় এসেছিল, তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই; যাতে তিনি এর দ্বারা ঈমানদারদেরকে জেনে নিতে পারেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
যে কোন অকল্যাণ বান্দাদের কৃতকর্মের কারণেই সংঘটিত হয়ে থাকে।
বিপদ দেখে হতাশ হওয়া যাবে না।
উহুদ যুদ্ধের বিপর্যয়টি আল্লাহর ইচ্ছাতেই এসেছিল।
اَوَلَمَّاۤ اَصَابَتْكُمْ مُّصِيْبَةٌ قَدْ اَصَبْتُمْ مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ اَنّٰى هٰذَاؕ قُلْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اَنْفُسِكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (১৬৫) وَمَاۤ اَصَابَكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِاِذْنِ اللهِ وَلِيَعْلَمَ الْمُؤْمِنِيْنَ (১৬৬)
শাব্দিক অনুবাদ
১৬৫. اَوَلَمَّا এরূপ কেন হলো যে, যখন اَصَابَتْكُمْ তোমাদের উপর আপতিত হলো مُصِيْبَةٌ বিপদ قَدْ اَصَبْتُمْ অথচ তোমরা (তাদেরকে) বিপদে ফেলেছিলে مِثْلَيْهَا তার দ্বিগুণ, قُلْتُمْ তখন তোমরা বলেছিলে, اَنّٰى কোথা হতে এল هٰذَا এটা? قُلْ বলো, هُوَ এটা مِنْ عِنْدِ নিকট হতে اَنْفُسِكُمْ তোমাদের নিজেদেরই; اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ عَلٰى উপর كُلِّ شَيْءٍ সবকিছুর قَدِيْرٌ সর্বশক্তিমান।
১৬৬. وَمَاۤ اَصَابَكُمْ তোমাদের উপর বিপর্যয় আসেনি يَوْمَ দিন اِلْتَقَى সম্মুখীন হওয়ার اَلْجَمْعَانِ এ দু’দলের فَبِاِذْنِ اللهِ তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই وَلِيَعْلَمَ যাতে তিনি জেনে নিতে পারেন اَلْمُؤْمِنِيْنَ ঈমানদারদেরকে ।
সরল অনুবাদ
১৬৫. এরূপ কেন হলো যে, যখন (উহুদে) তোমাদের উপর বিপদ আপতিত হলো- যদিও তোমরা (বদরে) তাদেরকে তার দ্বিগুণ বিপদে ফেলেছিলে [উহুদের যুদ্ধে মুশরিকরা মুসলিমদের মধ্য হতে ৭০ জনকে হত্যা করেছিল। আর ইতিপূর্বে সংঘটিত বদরের যুদ্ধে মুসলিমগণ মুশরিকদের ৭০ জনকে হত্যা করেছিল এবং সেই সাথে আরো ৭০ জনকে বন্দি করতে সক্ষম হয়েছিল। অত্র আয়াতে উভয় যুদ্ধের এই ফলাফলের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।], তখন তোমরা বলেছিলে, এটা (বিপদ) কোথা হতে এল? [এখানে উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের বিষয়ে ঐসব মুসলিমের সমালোচনা করা হয়েছে, যারা তাদের ঈমানী দুর্বলতার কারণে ব্যাপকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। যখন তাদের উপর এই বিপদ নেমে আসল, তখন তারা অবাক হয়ে পরস্পরকে জিজ্ঞেস করতে আরম্ভ করল যে, এ কি হলো? আমরা তো আল্লাহর দ্বীনের জন্য লড়তে গিয়েছিলাম। তাঁর প্রতিশ্রুতি ও সাহায্য আমাদের সাথে ছিল এবং তাঁর রাসূলও সশরীরে আমাদের সাথেই উপস্থিত ছিলেন। এরপরও কেন আমরা এমন লোকদের কাছে হেরে গেলাম, যারা আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়? ঐসব মুসলিমদের এরূপ হাতাশার উত্তরেই অত্র আয়াত অবতারণা করা হয়। আয়াতের পরবর্তী অংশেই এর জবাব উল্লেখ করা হয়েছে।] (হে নবী!) বলো, এটা তোমাদের নিজেদেরই নিকট হতে (রাসূলের অবাধ্য হওয়ার কারণে এসেছে) [অর্থাৎ এই বিপদ আল্লাহর পক্ষ হতে আসেনি, বরং এটি তোমাদেরই কর্মফল। তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত নবীর কথা মান্য করে যুদ্ধ করেছিলে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য তোমাদের কাছে এসেছিল। ফলে তোমরা বিজয়ের মুখ দেখতে পেয়েছিলে। কিন্তু যখনই তোমরা তার আদেশ মান্য করতে গাফলতি করলে, তখনই তোমাদের উপর থেকে আল্লাহর সাহায্য উঠে গেল। ফলে তোমরা বিপদের মধ্যে পতিত হলে। সুতরাং কাউকে দোষারোপ না করে, প্রথমে নিজেদের সংশোধন করে নাও; তারপর আল্লাহর পথে কাজ করো।]; নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
১৬৬. এ দু’দলের সম্মুখীন হওয়ার দিন (উহুদের যুদ্ধে) তোমাদের উপর যে বিপর্যয় এসেছিল, তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই; যাতে তিনি এর দ্বারা ঈমানদারদেরকে জেনে নিতে পারেন।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
যে কোন অকল্যাণ বান্দাদের কৃতকর্মের কারণেই সংঘটিত হয়ে থাকে।
বিপদ দেখে হতাশ হওয়া যাবে না।
উহুদ যুদ্ধের বিপর্যয়টি আল্লাহর ইচ্ছাতেই এসেছিল।
وَلِيَعْلَمَ الَّذِيْنَ نَافَقُوْاۚ وَقِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوِ ادْفَعُوْاؕ قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْؕ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ (১৬৭) اَلَّذِيْنَ قَالُوْا لِاِخْوَانِهِمْ وَقَعَدُوْا لَوْ اَطَاعُوْنَا مَا قُتِلُوْاؕ قُلْ فَادْرَءُوْا عَنْ اَنْفُسِكُمُ الْمَوْتَ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (১৬৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১৬৭. وَلِيَعْلَمَ আর যাতে তিনি জেনে নিতে পারেন اَلَّذِيْنَ তাদের ব্যাপারেও, যারা نَافَقُوْا মুনাফিকী করেছে। وَقِيْلَ বলা হয়েছিল لَهُمْ তাদেরকে تَعَالَوْا তোমরা এসো قَاتِلُوْا যুদ্ধ করো فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে اَوْ অথবা اِدْفَعُوْا প্রতিরোধ করো; قَالُوْا তারা বলেছিল, لَوْ যদি نَعْلَمُ আমরা জানতাম قِتَالًا যুদ্ধের ব্যাপারটা, لَاتَّبَعْنَاكُمْ তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম। هُمْ তারা لِلْكُفْرِ কুফরীর দিকে يَوْمَئِذٍ সেদিন اَقْرَبُ অধিক নিকটবর্তী ছিল مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِ তাদের ঈমানের চেয়ে; يَقُوْلُوْنَ তারা এমন কথা বলে بِاَفْوَاهِهِمْ তাদের মুখ দ্বারা مَا যা لَيْسَ নেই فِيْ قُلُوْبِهِمْ তাদেরই অন্তরে। وَاللهُ আর আল্লাহ اَعْلَمُ ভালো জানেন بِمَا যা يَكْتُمُوْنَ তারা গোপন করে।
১৬৮. اَلَّذِيْنَ যারা قَالُوْا বলেছিল لِاِخْوَانِهِمْ তাদের ভাইদের সম্পর্কে وَقَعَدُوْا এবং তারা বসেছিল لَوْ اَطَاعُوْنَا যদি তারা আমাদের অনুসরণ করত مَا قُتِلُوْا তাহলে তারা নিহত হতো না। قُلْ বলো فَادْرَءُوْا অতএব প্রতিরোধ করো عَنْ থেকে اَنْفُسِكُمُ তোমাদের নিজেদের اَلْمَوْتَ মৃত্যুকে اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা হও صَادِقِيْنَ সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
১৬৭. আর যাতে তিনি তাদের ব্যাপারেও জেনে নিতে পারেন, যারা মুনাফিকী করেছে। তাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা এসো- আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো অথবা প্রতিরোধ করো; তারা বলেছিল, যদি আমরা যুদ্ধের ব্যাপারটা জানতাম, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম। [ঘটনাটি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মুসলিম বাহিনী নিয়ে উহুদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন, তখন তাঁর সেনাবাহিনীর মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর নেতৃত্বে ৩০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি দলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু যখন তারা শাউত্ব নামক স্থান পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার সাথীদের নিয়ে মুসলিম বাহিনী থেকে পৃথক হয়ে যায়। তখন আবদুল্লাহ ইবনে হারাম (রাঃ) তাদেরকে বুঝিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। এতে কেউ কেউ মুসলিমদের সেনাদলে ফিরে যেতে চাইলে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বলল, আমার নিশ্চিত বিশ্বাস হলো- আজ যুদ্ধ হবে না। তাই আমরা চলে যাচ্ছি। আজ যুদ্ধ হওয়ার যদি কোন সম্ভাবনা থাকত, তাহলে অবশ্যই আমরা তোমাদের সাথে থাকতাম।] সেদিন তারা তাদের ঈমানের চেয়ে কুফরীর অধিক নিকটবর্তী ছিল; তারা মুখে এমন কথা বলে, যা তাদেরই অন্তরে নেই। আর তারা যা কিছু গোপন করে, আল্লাহ তা ভালো জানেন।
১৬৮. (এরা হচ্ছে ঐসব লোক) যারা (ঘরে) বসে থেকে তাদের ভাইদের সম্পর্কে বলছিল, যদি তারা আমাদের কথা মান্য করত (ঘরে বসে থাকত) তাহলে তারা নিহত হতো না। (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে নিজেদের থেকে মৃত্যুকে প্রতিরোধ করো। [অর্থাৎ তোমাদের এসব দাবী একেবারেই ভিত্তিহীন। কেননা প্রত্যেকের মৃত্যুর নির্ধারিত সময় পূর্ব হতেই লিপিবদ্ধ আছে। সুতরাং তাদের এরূপ মৃত্যুর বিষয়টিও পূর্ব হতেই লিপিবদ্ধ ছিল- যেরকমভাবে তোমাদের মৃত্যুর বিষয়টিও লিপিবদ্ধ আছে। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যুর সময় তোমরা সেই স্থানেই উপস্থিত হবে, যেখানে মৃত্যুবরণ করার বিষয়ে পূর্ব হতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ আয়াতে মুনাফিকদের এই মিথ্যা দাবীর বিষয়ে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
যুদ্ধ শুরু হলে মুনাফিকরা পৃথক হয়ে যায়।
কারো বিরুদ্ধে অহেতুক সমালোচনা করা যাবে না।
ঈমানের কমতি থাকলে কুফরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া যায় না।
শাব্দিক অনুবাদ
১৬৭. وَلِيَعْلَمَ আর যাতে তিনি জেনে নিতে পারেন اَلَّذِيْنَ তাদের ব্যাপারেও, যারা نَافَقُوْا মুনাফিকী করেছে। وَقِيْلَ বলা হয়েছিল لَهُمْ তাদেরকে تَعَالَوْا তোমরা এসো قَاتِلُوْا যুদ্ধ করো فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে اَوْ অথবা اِدْفَعُوْا প্রতিরোধ করো; قَالُوْا তারা বলেছিল, لَوْ যদি نَعْلَمُ আমরা জানতাম قِتَالًا যুদ্ধের ব্যাপারটা, لَاتَّبَعْنَاكُمْ তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম। هُمْ তারা لِلْكُفْرِ কুফরীর দিকে يَوْمَئِذٍ সেদিন اَقْرَبُ অধিক নিকটবর্তী ছিল مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِ তাদের ঈমানের চেয়ে; يَقُوْلُوْنَ তারা এমন কথা বলে بِاَفْوَاهِهِمْ তাদের মুখ দ্বারা مَا যা لَيْسَ নেই فِيْ قُلُوْبِهِمْ তাদেরই অন্তরে। وَاللهُ আর আল্লাহ اَعْلَمُ ভালো জানেন بِمَا যা يَكْتُمُوْنَ তারা গোপন করে।
১৬৮. اَلَّذِيْنَ যারা قَالُوْا বলেছিল لِاِخْوَانِهِمْ তাদের ভাইদের সম্পর্কে وَقَعَدُوْا এবং তারা বসেছিল لَوْ اَطَاعُوْنَا যদি তারা আমাদের অনুসরণ করত مَا قُتِلُوْا তাহলে তারা নিহত হতো না। قُلْ বলো فَادْرَءُوْا অতএব প্রতিরোধ করো عَنْ থেকে اَنْفُسِكُمُ তোমাদের নিজেদের اَلْمَوْتَ মৃত্যুকে اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা হও صَادِقِيْنَ সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
সরল অনুবাদ
১৬৭. আর যাতে তিনি তাদের ব্যাপারেও জেনে নিতে পারেন, যারা মুনাফিকী করেছে। তাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা এসো- আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো অথবা প্রতিরোধ করো; তারা বলেছিল, যদি আমরা যুদ্ধের ব্যাপারটা জানতাম, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম। [ঘটনাটি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মুসলিম বাহিনী নিয়ে উহুদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন, তখন তাঁর সেনাবাহিনীর মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর নেতৃত্বে ৩০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি দলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু যখন তারা শাউত্ব নামক স্থান পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার সাথীদের নিয়ে মুসলিম বাহিনী থেকে পৃথক হয়ে যায়। তখন আবদুল্লাহ ইবনে হারাম (রাঃ) তাদেরকে বুঝিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। এতে কেউ কেউ মুসলিমদের সেনাদলে ফিরে যেতে চাইলে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বলল, আমার নিশ্চিত বিশ্বাস হলো- আজ যুদ্ধ হবে না। তাই আমরা চলে যাচ্ছি। আজ যুদ্ধ হওয়ার যদি কোন সম্ভাবনা থাকত, তাহলে অবশ্যই আমরা তোমাদের সাথে থাকতাম।] সেদিন তারা তাদের ঈমানের চেয়ে কুফরীর অধিক নিকটবর্তী ছিল; তারা মুখে এমন কথা বলে, যা তাদেরই অন্তরে নেই। আর তারা যা কিছু গোপন করে, আল্লাহ তা ভালো জানেন।
১৬৮. (এরা হচ্ছে ঐসব লোক) যারা (ঘরে) বসে থেকে তাদের ভাইদের সম্পর্কে বলছিল, যদি তারা আমাদের কথা মান্য করত (ঘরে বসে থাকত) তাহলে তারা নিহত হতো না। (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে নিজেদের থেকে মৃত্যুকে প্রতিরোধ করো। [অর্থাৎ তোমাদের এসব দাবী একেবারেই ভিত্তিহীন। কেননা প্রত্যেকের মৃত্যুর নির্ধারিত সময় পূর্ব হতেই লিপিবদ্ধ আছে। সুতরাং তাদের এরূপ মৃত্যুর বিষয়টিও পূর্ব হতেই লিপিবদ্ধ ছিল- যেরকমভাবে তোমাদের মৃত্যুর বিষয়টিও লিপিবদ্ধ আছে। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যুর সময় তোমরা সেই স্থানেই উপস্থিত হবে, যেখানে মৃত্যুবরণ করার বিষয়ে পূর্ব হতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ আয়াতে মুনাফিকদের এই মিথ্যা দাবীর বিষয়ে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
যুদ্ধ শুরু হলে মুনাফিকরা পৃথক হয়ে যায়।
কারো বিরুদ্ধে অহেতুক সমালোচনা করা যাবে না।
ঈমানের কমতি থাকলে কুফরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া যায় না।
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتًاؕ بَلْ اَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ (১৬৯) فَرِحِيْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِه وَيَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِيْنَ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ (১৭০) يَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ وَّاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ (১৭১)
শাব্দিক অনুবাদ
১৬৯. وَلَا تَحْسَبَنَّ তোমরা মনে করো না اَلَّذِيْنَ যারা قُتِلُوْا নিহত হয়েছে فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে; اَمْوَاتًا মৃত بَلْ বরং اَحْيَآءٌ তারা জীবিত عِنْدَ কাছে رَبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের, يُرْزَقُوْنَ তারা জীবিকা প্রাপ্ত হয়।
১৭০. فَرِحِيْنَ তারা পরিতুষ্ট بِمَا তাতেই যা اللهُ اٰتَاهُمُ আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন مِنْ হতে فَضْلِه তাঁর অনুগ্রহ। وَيَسْتَبْشِرُوْنَ আর তারা আনন্দ করছে بِالَّذِيْنَ তাদের জন্য যারা لَمْ يَلْحَقُوْا মিলিত হয়নি بِهِمْ তাদের সাথে مِنْ خَلْفِهِمْ তাদের পেছনে থেকে। اَلَّا خَوْفٌ তাদের কোন ভয় নেই وَلَا هُمْ এবং তারা হবে না يَحْزَنُوْنَ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্তও ।
১৭১. يَسْتَبْشِرُوْنَ তারা আনন্দিত হয় بِنِعْمَةٍ নিয়ামতের দ্বারা مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে وَفَضْلٍ ও অনুগ্রহের দ্বারা। وَاَنَّ اللهَ আর নিশ্চয় আল্লাহ لَا يُضِيْعُ বিনষ্ট করেন না اَجْرَ প্রতিদান اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের।
সরল অনুবাদ
১৬৯. যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে জীবিত, (সেখানে) তারা জীবিকা প্রাপ্ত হয়। [এখানে ‘জীবিকা প্রাপ্ত হওয়া’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলেমগণ বিভিন্ন ধরনের মত ব্যক্ত করেছেন। যেমন- (১) কেউ বলেছেন, কবরে তাঁদের আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা আল্লাহর নিয়ামত দ্বারা পরিতৃপ্ত হন। (২) কেউ বলেছেন, জান্নাতের ফলের সুগন্ধি তাঁদের কাছে আসে, যার ফলে তাঁদের প্রাণ সব সময় সুবাসে ভরে থাকে। (৩) তাঁদের আত্মাসমূহকে সবুজ রঙের পাখির পেটে অথবা বুকে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা জান্নাতে খেয়ে বেড়াতে এবং তার নিয়ামত দ্বারা তৃপ্তি লাভ করতে থাকবে। হাদীসে এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আয়াতটির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাদের রুহসমূহ সবুজ পাখীর উদরে রক্ষিত থাকে, যা ‘আর্শের সাথে ঝুলন্ত দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করে। অবশেষে সে দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। একবার তাদের প্রভু তাদের দিকে পরিপূর্ণভাবে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি কোন আকাঙ্ক্ষা আছে? জবাবে তারা বলল, আমাদের আর কি আকাঙ্খা থাকতে পারে, আমরা তো যেভাবে ইচ্ছা জান্নাতে ঘুরাফেরা করছি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে এরূপ তিন তিনবার করলেন। যখন তারা দেখলো জবাব না দিয়ে প্রশ্ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না তখন তারা বলল, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আকাঙ্ক্ষা হয় যদি আমাদের রুহ্গুলোকে আমাদের দেহসমূহে ফিরিয়ে দিতেন আর পুনরায় আমরা আপনারই পথে নিহত হতে পারতাম।’’ অতঃপর মহান আল্লাহ যখন দেখলেন, তাদের আর কোন প্রয়োজনই নেই, তখন তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলো (আর প্রশ্ন করা হলো না)। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৭; তিরমিযী, হা/৩০১১)]
১৭০. আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ হতে যা তাদেরকে দান করেছেন তাতেই তারা পরিতুষ্ট। আর যারা তাদের পেছনে থেকে (এখনো) তাদের সাথে সম্মিলিত হয়নি (শহীদ হয়নি), তারা তাদের প্রতিও সন্তুষ্ট। [অর্থাৎ আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত সেসব শহীদগণ দুনিয়ায় অবস্থিত তাদের সাথীদের ব্যাপারেও অনুরূপ আশা পোষণ করেন, যেরূপটা তাদের নিজেদের সাথে সংঘটিত হচ্ছে। সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের প্রথম খন্ডে ৩৬৫-৩৬৬ নং হাদীসে এসেছে যে, উহুদ যুদ্ধের শহীদগণ মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যে, আমাদের যেসব মুসলিম ভাইয়েরা দুনিয়াতে জীবিত আছে, তাদেরকে আমাদের অবস্থাসমূহ এবং আমাদের এই সুখময় জীবন সম্পর্কে অবহিত করানো হয়েছে কি? যাতে করে তারা যুদ্ধ ও জিহাদ থেকে কখনো বিমুখ না হয়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই পরিপ্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।] (এজন্য যে) তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।
১৭১। তারা আল্লাহর নিকট হতে নিয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। [অর্থাৎ তারা কেবল কোন ধরনের ভয় ও চিন্তা না থাকার কারণেই আনন্দিত হয় না, বরং তারা আল্লাহর অশেষ নিয়ামত প্রাপ্ত হওয়ার কারণেও আনন্দিত হয়। সুতরাং তাদের এই আনন্দিত হওয়ার বিষয়টি মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। আর পূর্বের আয়াতে বর্ণিত তাদের আনন্দের বিষয়টি দুনিয়ায় অবস্থিত তাদের ভাইদের সাথে সম্পৃক্ত।] (কেননা) নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
আল্লাহর পথে নিহত লোকেরা প্রকৃতপক্ষে মৃত নয়।
আল্লাহর পথে নিহত লোকেরা কবরেই জান্নাতের নিয়ামত পেয়ে থাকে।
সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করে চলা উচিত।
আল্লাহর নিয়ামতের ব্যাপারে সর্বদা সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
মুমিনদের প্রতিদান কখনো বিনষ্ট হয় না।
আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছুই পাওয়া যাবে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা জরুরি।
শাব্দিক অনুবাদ
১৬৯. وَلَا تَحْسَبَنَّ তোমরা মনে করো না اَلَّذِيْنَ যারা قُتِلُوْا নিহত হয়েছে فِيْ سَبِيْلِ اللهِ আল্লাহর পথে; اَمْوَاتًا মৃত بَلْ বরং اَحْيَآءٌ তারা জীবিত عِنْدَ কাছে رَبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের, يُرْزَقُوْنَ তারা জীবিকা প্রাপ্ত হয়।
১৭০. فَرِحِيْنَ তারা পরিতুষ্ট بِمَا তাতেই যা اللهُ اٰتَاهُمُ আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন مِنْ হতে فَضْلِه তাঁর অনুগ্রহ। وَيَسْتَبْشِرُوْنَ আর তারা আনন্দ করছে بِالَّذِيْنَ তাদের জন্য যারা لَمْ يَلْحَقُوْا মিলিত হয়নি بِهِمْ তাদের সাথে مِنْ خَلْفِهِمْ তাদের পেছনে থেকে। اَلَّا خَوْفٌ তাদের কোন ভয় নেই وَلَا هُمْ এবং তারা হবে না يَحْزَنُوْنَ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্তও ।
১৭১. يَسْتَبْشِرُوْنَ তারা আনন্দিত হয় بِنِعْمَةٍ নিয়ামতের দ্বারা مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে وَفَضْلٍ ও অনুগ্রহের দ্বারা। وَاَنَّ اللهَ আর নিশ্চয় আল্লাহ لَا يُضِيْعُ বিনষ্ট করেন না اَجْرَ প্রতিদান اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদের।
সরল অনুবাদ
১৬৯. যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে জীবিত, (সেখানে) তারা জীবিকা প্রাপ্ত হয়। [এখানে ‘জীবিকা প্রাপ্ত হওয়া’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলেমগণ বিভিন্ন ধরনের মত ব্যক্ত করেছেন। যেমন- (১) কেউ বলেছেন, কবরে তাঁদের আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা আল্লাহর নিয়ামত দ্বারা পরিতৃপ্ত হন। (২) কেউ বলেছেন, জান্নাতের ফলের সুগন্ধি তাঁদের কাছে আসে, যার ফলে তাঁদের প্রাণ সব সময় সুবাসে ভরে থাকে। (৩) তাঁদের আত্মাসমূহকে সবুজ রঙের পাখির পেটে অথবা বুকে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা জান্নাতে খেয়ে বেড়াতে এবং তার নিয়ামত দ্বারা তৃপ্তি লাভ করতে থাকবে। হাদীসে এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আয়াতটির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাদের রুহসমূহ সবুজ পাখীর উদরে রক্ষিত থাকে, যা ‘আর্শের সাথে ঝুলন্ত দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করে। অবশেষে সে দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। একবার তাদের প্রভু তাদের দিকে পরিপূর্ণভাবে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি কোন আকাঙ্ক্ষা আছে? জবাবে তারা বলল, আমাদের আর কি আকাঙ্খা থাকতে পারে, আমরা তো যেভাবে ইচ্ছা জান্নাতে ঘুরাফেরা করছি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে এরূপ তিন তিনবার করলেন। যখন তারা দেখলো জবাব না দিয়ে প্রশ্ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না তখন তারা বলল, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আকাঙ্ক্ষা হয় যদি আমাদের রুহ্গুলোকে আমাদের দেহসমূহে ফিরিয়ে দিতেন আর পুনরায় আমরা আপনারই পথে নিহত হতে পারতাম।’’ অতঃপর মহান আল্লাহ যখন দেখলেন, তাদের আর কোন প্রয়োজনই নেই, তখন তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলো (আর প্রশ্ন করা হলো না)। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৭; তিরমিযী, হা/৩০১১)]
১৭০. আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ হতে যা তাদেরকে দান করেছেন তাতেই তারা পরিতুষ্ট। আর যারা তাদের পেছনে থেকে (এখনো) তাদের সাথে সম্মিলিত হয়নি (শহীদ হয়নি), তারা তাদের প্রতিও সন্তুষ্ট। [অর্থাৎ আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত সেসব শহীদগণ দুনিয়ায় অবস্থিত তাদের সাথীদের ব্যাপারেও অনুরূপ আশা পোষণ করেন, যেরূপটা তাদের নিজেদের সাথে সংঘটিত হচ্ছে। সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের প্রথম খন্ডে ৩৬৫-৩৬৬ নং হাদীসে এসেছে যে, উহুদ যুদ্ধের শহীদগণ মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যে, আমাদের যেসব মুসলিম ভাইয়েরা দুনিয়াতে জীবিত আছে, তাদেরকে আমাদের অবস্থাসমূহ এবং আমাদের এই সুখময় জীবন সম্পর্কে অবহিত করানো হয়েছে কি? যাতে করে তারা যুদ্ধ ও জিহাদ থেকে কখনো বিমুখ না হয়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই পরিপ্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।] (এজন্য যে) তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।
১৭১। তারা আল্লাহর নিকট হতে নিয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। [অর্থাৎ তারা কেবল কোন ধরনের ভয় ও চিন্তা না থাকার কারণেই আনন্দিত হয় না, বরং তারা আল্লাহর অশেষ নিয়ামত প্রাপ্ত হওয়ার কারণেও আনন্দিত হয়। সুতরাং তাদের এই আনন্দিত হওয়ার বিষয়টি মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। আর পূর্বের আয়াতে বর্ণিত তাদের আনন্দের বিষয়টি দুনিয়ায় অবস্থিত তাদের ভাইদের সাথে সম্পৃক্ত।] (কেননা) নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
আল্লাহর পথে নিহত লোকেরা প্রকৃতপক্ষে মৃত নয়।
আল্লাহর পথে নিহত লোকেরা কবরেই জান্নাতের নিয়ামত পেয়ে থাকে।
সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করে চলা উচিত।
আল্লাহর নিয়ামতের ব্যাপারে সর্বদা সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
মুমিনদের প্রতিদান কখনো বিনষ্ট হয় না।
আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছুই পাওয়া যাবে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা জরুরি।
اَلَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِلّٰهِ وَالرَسُوْلِ مِنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَصَابَهُمُ الْقَرْحُؕ لِلَّذِيْنَ اَحْسَنُوْا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا اَجْرٌ عَظِيْمٌ (১৭২)
শাব্দিক অনুবাদ
১৭২। اَلَّذِيْنَ যারা اِسْتَجَابُوْا সাড়া দিয়েছিল لِلّٰهِ আল্লাহর وَالرَّسُوْلِ ও রাসূলের مِنْ ۢبَعْدِ তার পরও مَاۤ اَصَابَهُمُ যা তাদের উপর আপতিত হয়েছিল اَلْقَرْحُ আঘাত لِلَّذِيْنَ তাদের জন্য রয়েছে যারা اَحْسَنُوْا সৎকাজ করেছে مِنْهُمْ তাদের মধ্য হতে وَاتَّقَوْا এবং তাক্বওয়া অবলম্বন হয়েছে اَجْرٌ পুরস্কার عَظِيْمٌ মহা।
সরল অনুবাদ
১৭২. (উহুদ যুদ্ধের দিন) যারা আঘাত পাওয়ার পরও আল্লাহ ও রাসূলের (নির্দেশের) সাড়া দিয়েছিল [এখানে মুসলিমদের ঐ দলটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা উহুদ যুদ্ধে আহত হওয়ার পরও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আহবানে পুনরায় মুশরিকদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাটি হচ্ছে এই যে, যুদ্ধ শেষে মুশরিকরা যখন উহুদের প্রান্তর থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, তখন কিছু দূর পর্যন্ত পথ চলার পর তাদের টনক নড়ে উঠল যে, আমরা এ কি করলাম? আমরা তো মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার সাথীদেরকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলাম; কিন্তু এখন তা হারিয়ে ফেললাম। ফলে তারা একটি জায়গায় যাত্রা স্থগিত করে সকলে মিলে পরামর্শ করল যে, এখনি পুনরায় মদিনার উপর আক্রমণ চালিয়ে মুসলিমদেরকে সমূলে উচ্ছেদ করে দিতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আর আক্রমণ করার সাহস পেল না। কাজেই তারা মক্কায় ফিরে গেল। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আশংকা ছিল যে, যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তিত মুশরিকদের দলটি মুসলিমদের দুর্বলতার সুযোগে পুনরায় মদিনার উপর আক্রমণ করে বসে কি না। ফলে তিনি যুদ্ধের পর দিনই মুসলিমদেরকে একত্র করে বললেন, এখনই কাফিরদের পেছনে ধাওয়া করা উচিত। এতে সাথে সাথেই সাহাবীগণ এই নির্দেশ মান্য করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। অথচ সে সময় অনেক সাহাবীই ছিলেন মারাত্মকভাবে আহত এবং সে সময় তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে মদিনা থেকে ৮ মাইল দূরে অবস্থিত হামরাউল আসাদ পর্যন্ত ধাওয়া করলেন।], তাদের মধ্য হতে যারা সৎকাজ করেছে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কঠিন কষ্টের সময়ও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহবানে সাড়া দিতে হবে।
২. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহবানে সাড়া দিয়ে সৎকাজ করলে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করলে মহাপুরস্কার লাভ করা যাবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৭২। اَلَّذِيْنَ যারা اِسْتَجَابُوْا সাড়া দিয়েছিল لِلّٰهِ আল্লাহর وَالرَّسُوْلِ ও রাসূলের مِنْ ۢبَعْدِ তার পরও مَاۤ اَصَابَهُمُ যা তাদের উপর আপতিত হয়েছিল اَلْقَرْحُ আঘাত لِلَّذِيْنَ তাদের জন্য রয়েছে যারা اَحْسَنُوْا সৎকাজ করেছে مِنْهُمْ তাদের মধ্য হতে وَاتَّقَوْا এবং তাক্বওয়া অবলম্বন হয়েছে اَجْرٌ পুরস্কার عَظِيْمٌ মহা।
সরল অনুবাদ
১৭২. (উহুদ যুদ্ধের দিন) যারা আঘাত পাওয়ার পরও আল্লাহ ও রাসূলের (নির্দেশের) সাড়া দিয়েছিল [এখানে মুসলিমদের ঐ দলটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা উহুদ যুদ্ধে আহত হওয়ার পরও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আহবানে পুনরায় মুশরিকদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাটি হচ্ছে এই যে, যুদ্ধ শেষে মুশরিকরা যখন উহুদের প্রান্তর থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, তখন কিছু দূর পর্যন্ত পথ চলার পর তাদের টনক নড়ে উঠল যে, আমরা এ কি করলাম? আমরা তো মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তার সাথীদেরকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলাম; কিন্তু এখন তা হারিয়ে ফেললাম। ফলে তারা একটি জায়গায় যাত্রা স্থগিত করে সকলে মিলে পরামর্শ করল যে, এখনি পুনরায় মদিনার উপর আক্রমণ চালিয়ে মুসলিমদেরকে সমূলে উচ্ছেদ করে দিতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আর আক্রমণ করার সাহস পেল না। কাজেই তারা মক্কায় ফিরে গেল। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আশংকা ছিল যে, যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তিত মুশরিকদের দলটি মুসলিমদের দুর্বলতার সুযোগে পুনরায় মদিনার উপর আক্রমণ করে বসে কি না। ফলে তিনি যুদ্ধের পর দিনই মুসলিমদেরকে একত্র করে বললেন, এখনই কাফিরদের পেছনে ধাওয়া করা উচিত। এতে সাথে সাথেই সাহাবীগণ এই নির্দেশ মান্য করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। অথচ সে সময় অনেক সাহাবীই ছিলেন মারাত্মকভাবে আহত এবং সে সময় তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে মদিনা থেকে ৮ মাইল দূরে অবস্থিত হামরাউল আসাদ পর্যন্ত ধাওয়া করলেন।], তাদের মধ্য হতে যারা সৎকাজ করেছে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. কঠিন কষ্টের সময়ও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহবানে সাড়া দিতে হবে।
২. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহবানে সাড়া দিয়ে সৎকাজ করলে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করলে মহাপুরস্কার লাভ করা যাবে।
اَلَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ (১৭৩) فَانْقَلَبُوْا بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوْٓءٌ وَّاتَّبَعُوْا رِضْوَانَ اللهِؕ وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَظِيْمٍ (১৭৪) اِنَّمَا ذٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ اَوْلِيَآءَه فَلَا تَخَافُوْهُمْ وَخَافُوْنِ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ (১৭৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১৭৩. اَلَّذِيْنَ যারা قَالَ বলেছিল لَهُمُ তাদেরকে اَلنَّاسُ লোকেরা اِنَّ النَّاسَ নিশ্চয় লোকজন قَدْ جَمَعُوْا সমবেত হয়েছে لَكُمْ তোমাদের বিরুদ্ধে فَاخْشَوْهُمْ অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো; فَزَادَهُمْ কিন্তু এতে আরো বর্ধিত হয়েছিল اِيْمَانًا তাদের বিশ্বাস وَقَالُوْا এবং তারা বলেছিল, حَسْبُنَا আমাদের জন্য যথেষ্ট اَللهُ আল্লাহই وَنِعْمَ এবং তিনি কতই না মঙ্গলময় اَلْوَكِيْلُ কর্মবিধায়ক!
১৭৪. فَانْقَلَبُوْا অতঃপর তারা ফিরে আসল بِنِعْمَةٍ নিয়ামতসহ مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে وَفَضْلٍ ও সম্পদসহ; لَمْ يَمْسَسْهُمْ তাদেরকে স্পর্শ করেনি سُوْٓءٌ কোন ক্ষতিই; وَاتَّبَعُوْا আর তারা অনুসরণ করেছিল رِضْوَانَ اللهِ আল্লাহর সন্তুষ্টির (পথ); وَاللهُ আর আল্লাহ ذُوْ فَضْلٍ অনুগ্রহশীল عَظِيْمٍ মহা।
১৭৫. اِنَّمَا নিশ্চয় ذٰلِكُمُ এই হচ্ছে اَلشَّيْطَانُ শয়তান يُخَوِّفُ যে ভয় দেখায় اَوْلِيَآءَه তার বন্ধুদের। فَلَا تَخَافُوْهُمْ অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো না وَخَافُوْنِ বরং আমাকেই ভয় করো اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা হও مُؤْمِنِيْنَ ঈমানদার ।
সরল অনুবাদ
১৭৩. লোকেরা (মুনাফিকরা) যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো; কিন্তু এতে তাদের বিশ্বাস আরো বর্ধিত হয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক! [একদা আবু সুফিয়ান কিছু লোককে ভাড়া করে এ মর্মে গুজব রটায় যে, মক্কার মুশরিকরা যুদ্ধের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এ ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যাতে করে এর মাধ্যমে মুসলিমদের উৎসাহ-উদ্দীপনা হ্রাস পায় এবং তাদের অন্তরে ভয় সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাদের এই চক্রান্ত মুসলিমদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারল না। বরং এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেল। অত্র আয়াতটি এই ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতেই অবতীর্ণ হয়।]
১৭৪. অতঃপর তারা আল্লাহর নিয়ামত (অনুগ্রহ) ও সম্পদসহ (যুদ্ধ হতে) ফিরে আসল; [এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীরে এসেছে, এখানে نعمة (নিয়ামত) মানে হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তা। অর্থাৎ মুসলিমগণ বদরে সুগরা থেকে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে মদিনায় ফিরে এসেছিল। আর فضل (অনুগ্রহ) মানে হচ্ছে মুনাফা, যা বদরে সুগরায় ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বদরে সুগরা হয়ে গমনকারী এক বাণিজ্য-কাফেলার নিকট থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে অন্যত্র বিক্রি করেছিলেন, যা থেকে অনেক মুনাফা অর্জিত হয়েছিল। অতঃপর তিনি সেগুলো মুসলিমদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছিলেন।] অথচ তাদেরকে কোন ক্ষতিই স্পর্শ করেনি; (কেননা) তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির (পথ) অনুসরণ করেছিল; আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
১৭৫. এরাই হচ্ছে শয়তান, যে (তোমাদেরকে শত্রুপক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। কিন্তু যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে তাদেরকে ভয় করো না; বরং তোমরা আমাকেই ভয় করো। [ভয় করার ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর কাউকে প্রাধান্য দিও না। দুনিয়াতে ঈমানের উপর বসবাস করতে গেলে শয়তান ও তার দলের সদস্যরা তোমাদেরকে অনেক ভয়-ভীতি প্রদর্শন করবে- যেরকমভাবে সম্প্রতি প্রদর্শন করেছিল। সুতরাং তোমরা তাদের এসব অসার কথায় কান দেবে না। বরং তোমাদের কাজ হচ্ছে, কেবল আল্লাহকেই ভয় করা এবং তার উপর নির্ভর করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগ থেকে প্রতিটি যুগেই কাফিররা মুসলিমদেরকে নানা ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এমনকি এখনও কাফির শক্তিসমূহ সম্মিলিত হয়ে মুসলিমদেরকে সবসময় হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমরা যাতে কোন ভাবেই তাদের থেকে শক্তিশালী হতে না পারে, সে জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে অনেকটাই সফলকাম হিসেবে দেখা যাচ্ছে। কেননা তাদের এসব অপপ্রচারের কারণে অনেক মানুষ- বিশেষ করে দুর্বল ঈমানের অধিকারী মুসলিমগণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তারা ধর্মীয় বিধিবিধান পালনেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মুসলিম শাসকরা আজ এমনভাবে প্রভাবিত হচ্ছে যে, তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা দেখে মনে হয় যেন তারা কাফির-মুশরিকদেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। কেননা তারা ইসলামী আইনসমূহকে ভুলে গিয়ে বা অস্বীকার করে কাফির-মুশরিকদের নির্ধারিত আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। আর মুসলিম জনগণও যেন তাদের অনুসরণ করে সব ধরনের অত্যাচার সহ্য করে নিচ্ছে। যার কারণে মুসলিম দেশগুলোতে সরকার ও রাষ্ট্র উভয়ই ব্যাপক দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। আর এই সব কিছুই সংঘটিত হচ্ছে কুরআন মাজীদের এই আয়াতটি ভুলে যাওয়ার কারণে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কাফিরদের ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করুন। আমীন]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সর্বযুগে কিছু লোক সত্যের অনুসারীদেরকে নানা ধরনের ভয় দেখিয়ে থাকে।
২. আল্লাহর বিরুদ্ধে কোন শক্তিকেই ভয় করা যাবে না।
৩. বিপদ দেখলে মুমিনদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়।
৪. খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমগণ প্রচুর গনীমত লাভ করেছিল।
৫. খন্দকের যুদ্ধে অধিক সংখ্যক শত্রু মুসলিমদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল।
৬. আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণকারীদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারে না।
শাব্দিক অনুবাদ
১৭৩. اَلَّذِيْنَ যারা قَالَ বলেছিল لَهُمُ তাদেরকে اَلنَّاسُ লোকেরা اِنَّ النَّاسَ নিশ্চয় লোকজন قَدْ جَمَعُوْا সমবেত হয়েছে لَكُمْ তোমাদের বিরুদ্ধে فَاخْشَوْهُمْ অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো; فَزَادَهُمْ কিন্তু এতে আরো বর্ধিত হয়েছিল اِيْمَانًا তাদের বিশ্বাস وَقَالُوْا এবং তারা বলেছিল, حَسْبُنَا আমাদের জন্য যথেষ্ট اَللهُ আল্লাহই وَنِعْمَ এবং তিনি কতই না মঙ্গলময় اَلْوَكِيْلُ কর্মবিধায়ক!
১৭৪. فَانْقَلَبُوْا অতঃপর তারা ফিরে আসল بِنِعْمَةٍ নিয়ামতসহ مِنَ اللهِ আল্লাহর পক্ষ হতে وَفَضْلٍ ও সম্পদসহ; لَمْ يَمْسَسْهُمْ তাদেরকে স্পর্শ করেনি سُوْٓءٌ কোন ক্ষতিই; وَاتَّبَعُوْا আর তারা অনুসরণ করেছিল رِضْوَانَ اللهِ আল্লাহর সন্তুষ্টির (পথ); وَاللهُ আর আল্লাহ ذُوْ فَضْلٍ অনুগ্রহশীল عَظِيْمٍ মহা।
১৭৫. اِنَّمَا নিশ্চয় ذٰلِكُمُ এই হচ্ছে اَلشَّيْطَانُ শয়তান يُخَوِّفُ যে ভয় দেখায় اَوْلِيَآءَه তার বন্ধুদের। فَلَا تَخَافُوْهُمْ অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো না وَخَافُوْنِ বরং আমাকেই ভয় করো اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা হও مُؤْمِنِيْنَ ঈমানদার ।
সরল অনুবাদ
১৭৩. লোকেরা (মুনাফিকরা) যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো; কিন্তু এতে তাদের বিশ্বাস আরো বর্ধিত হয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক! [একদা আবু সুফিয়ান কিছু লোককে ভাড়া করে এ মর্মে গুজব রটায় যে, মক্কার মুশরিকরা যুদ্ধের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এ ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যাতে করে এর মাধ্যমে মুসলিমদের উৎসাহ-উদ্দীপনা হ্রাস পায় এবং তাদের অন্তরে ভয় সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাদের এই চক্রান্ত মুসলিমদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারল না। বরং এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেল। অত্র আয়াতটি এই ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতেই অবতীর্ণ হয়।]
১৭৪. অতঃপর তারা আল্লাহর নিয়ামত (অনুগ্রহ) ও সম্পদসহ (যুদ্ধ হতে) ফিরে আসল; [এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীরে এসেছে, এখানে نعمة (নিয়ামত) মানে হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তা। অর্থাৎ মুসলিমগণ বদরে সুগরা থেকে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে মদিনায় ফিরে এসেছিল। আর فضل (অনুগ্রহ) মানে হচ্ছে মুনাফা, যা বদরে সুগরায় ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বদরে সুগরা হয়ে গমনকারী এক বাণিজ্য-কাফেলার নিকট থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে অন্যত্র বিক্রি করেছিলেন, যা থেকে অনেক মুনাফা অর্জিত হয়েছিল। অতঃপর তিনি সেগুলো মুসলিমদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছিলেন।] অথচ তাদেরকে কোন ক্ষতিই স্পর্শ করেনি; (কেননা) তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির (পথ) অনুসরণ করেছিল; আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
১৭৫. এরাই হচ্ছে শয়তান, যে (তোমাদেরকে শত্রুপক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। কিন্তু যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে তাদেরকে ভয় করো না; বরং তোমরা আমাকেই ভয় করো। [ভয় করার ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর কাউকে প্রাধান্য দিও না। দুনিয়াতে ঈমানের উপর বসবাস করতে গেলে শয়তান ও তার দলের সদস্যরা তোমাদেরকে অনেক ভয়-ভীতি প্রদর্শন করবে- যেরকমভাবে সম্প্রতি প্রদর্শন করেছিল। সুতরাং তোমরা তাদের এসব অসার কথায় কান দেবে না। বরং তোমাদের কাজ হচ্ছে, কেবল আল্লাহকেই ভয় করা এবং তার উপর নির্ভর করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগ থেকে প্রতিটি যুগেই কাফিররা মুসলিমদেরকে নানা ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এমনকি এখনও কাফির শক্তিসমূহ সম্মিলিত হয়ে মুসলিমদেরকে সবসময় হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমরা যাতে কোন ভাবেই তাদের থেকে শক্তিশালী হতে না পারে, সে জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে অনেকটাই সফলকাম হিসেবে দেখা যাচ্ছে। কেননা তাদের এসব অপপ্রচারের কারণে অনেক মানুষ- বিশেষ করে দুর্বল ঈমানের অধিকারী মুসলিমগণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তারা ধর্মীয় বিধিবিধান পালনেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মুসলিম শাসকরা আজ এমনভাবে প্রভাবিত হচ্ছে যে, তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা দেখে মনে হয় যেন তারা কাফির-মুশরিকদেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। কেননা তারা ইসলামী আইনসমূহকে ভুলে গিয়ে বা অস্বীকার করে কাফির-মুশরিকদের নির্ধারিত আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। আর মুসলিম জনগণও যেন তাদের অনুসরণ করে সব ধরনের অত্যাচার সহ্য করে নিচ্ছে। যার কারণে মুসলিম দেশগুলোতে সরকার ও রাষ্ট্র উভয়ই ব্যাপক দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। আর এই সব কিছুই সংঘটিত হচ্ছে কুরআন মাজীদের এই আয়াতটি ভুলে যাওয়ার কারণে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কাফিরদের ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করুন। আমীন]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. সর্বযুগে কিছু লোক সত্যের অনুসারীদেরকে নানা ধরনের ভয় দেখিয়ে থাকে।
২. আল্লাহর বিরুদ্ধে কোন শক্তিকেই ভয় করা যাবে না।
৩. বিপদ দেখলে মুমিনদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়।
৪. খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমগণ প্রচুর গনীমত লাভ করেছিল।
৫. খন্দকের যুদ্ধে অধিক সংখ্যক শত্রু মুসলিমদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল।
৬. আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণকারীদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারে না।
وَلَا يَحْزُنْكَ الَّذِيْنَ يُسَارِعُوْنَ فِي الْكُفْرِۚ اِنَّهُمْ لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًاؕ يُّرِيْدُ اللهُ اَلَّا يَجْعَلَ لَهُمْ حَظًّا فِي الْاٰخِرَةِۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ (১৭৬) اِنَّ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْكُفْرَ بِالْاِيْمَانِ لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًاۚ وَّلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ (১৭৭) وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ خَيْرٌ لِّاَنْفُسِهِمْؕ اِنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ لِيَزْدَادُوْاۤ اِثْمًاۚ وَّلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ (১৭৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১৭৬. وَلَا يَحْزُنْكَ তোমাকে চিন্তিত না করে اَلَّذِيْنَ যারা يُسَارِعُوْنَ দ্রুতগতিতে ধাবিত হচ্ছে فِي الْكُفْرِ কুফরির দিকে اِنَّهُمْ নিশ্চয় তারা لَنْ يَّضُرُّوا কখনো ক্ষতি করতে পারবে না اَللهَ আল্লাহর شَيْئًا কোন কিছুতেই। يُرِيْدُ ইচ্ছা করেন اَللهُ আল্লাহ اَلَّا يَجْعَلَ যে, রাখবেন না لَهُمْ তাদের জন্য حَظًّا কোন অংশই فِي الْاٰخِرَةِۚ আখিরাতে। اِنَّهُمْ তাদের জন্যই রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি عَظِيْمٌ মহা।
১৭৭. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা اِشْتَرَوْا ক্রয় করে নিয়েছে اَلْكُفْرَ কুফরীকে بِالْاِيْمَانِ ঈমানের পরিবর্তে لَنْ يَّضُرُّوا তারা কখনো কোন ক্ষতি করতে পারবে না اَللهَ আল্লাহর شَيْئًا কোন কিছুই; وَلَهُمْ আর তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি اَلِيْمٌ যন্ত্রণাদায়ক।
১৭৮. وَلَا يَحْسَبَنَّ আর তারা যেন মনে না করে اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে اَنَّمَا نُمْلِيْ আমি যে সুযোগ দেই لَهُمْ তাদেরকে, خَيْرٌ কল্যাণকর لِاَنْفُسِهِمْ তাদের জন্য। اِنَّمَا نُمْلِيْ আমি অবকাশ প্রদান করি لَهُمْ তাদেরকে, لِيَزْدَادُوْا যাতে তারা বর্ধিত করে اِثْمًا তাদের পাপ। وَلَهُمْ আর তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি مُهِيْنٌ লাঞ্ছনাদায়ক।
সরল অনুবাদ
১৭৬. (হে নবী!) যারা দ্রুতগতিতে কুফরির দিকে ধাবিত হচ্ছে, তারা (তাদের কর্মকান্ড) যেন তোমাকে চিন্তিত না করে। তারা কিছুতেই আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [ইসলামের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কর্মনীতি দেখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাঝে মধ্যে গভীরভাবে অনুধাবন করতেন যে, আহ! যদি সমস্ত মানুষ মুসলিম হয়ে যেত এবং তারা এই উৎসাহ-উদ্দীপনাসমূহ ইসলামের পক্ষে প্রদর্শন করত, তাহলে কতই না ভালো হতো। আর এ কারণে তিনি অনেক সময় ভীষণ কষ্ট পেতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাতে কাফিরদের কর্মকান্ড দেখে কখনো এরূপ চিন্তিত না হন, সেজন্য আল্লাহ অত্র আয়াত নাযিল করে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং এই সুসংবাদ প্রদান করেন যে, তারা তোমার বিরুদ্ধে অর্থাৎ ইসলামের বিরুদ্ধে যতকিছু করার চেষ্টাই করুক না কেন, কোন ক্রমেই তারা সফলকাম হবে না। মাঝে মধ্যে তাদের কোন কোন কাজ বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে সফলকাম মনে হলেও শেষ ফলাফল ইসলামের পক্ষেই হবে।] আল্লাহ ইচ্ছা করেন যে, তাদের জন্য আখিরাতে যেন কোন অংশই না থাকে। [অর্থাৎ কাফিরদের এসব কর্মকান্ডের পেছনে আল্লাহর বৃহত্তম হেকমত রয়েছে। কেননা একদিকে তিনি তাদেরকে এসব কাজ করার জন্য অবকাশ দিচ্ছেন এ জন্য যে, যাতে করে আখিরাতে তাদের জন্য কোন অংশই না থাকে এবং তারা জাহান্নামে প্রবেশের জন্য পরিপূর্ণভাবে উপযুক্ত হয়ে উঠে। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার এই হিকমতটির কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। আর অপরদিকে তিনি তাদের কর্মের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে কষ্ট প্রদান করে তাদের গুনাহসমূহ মিটিয়ে নিচ্ছেন এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত করে নিচ্ছেন। অত্র আয়াতের মর্মার্থ হিসেবে একথাটিও অনুধাবন করা যায়। উল্লেখ্য যে, এখানে এরূপ কোন প্রশ্ন রাখার সুযোগ নেই যে, যেহেতু কাফিরদের মন্দ কর্ম সমূহ আল্লাহর ইচ্ছাতেই সংঘটিত হচ্ছে, সুতরাং এজন্য তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে শাস্তি প্রদান করাটা যুলুম নয় কি? কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভালো ও মন্দ উভয় প্রকার কর্মের জন্যই অবকাশ দিয়েছেন। সুতরাং তারা যদি মন্দ কর্ম না করে ভালো কর্মের দিকে মনোনিবেশ করে, তাহলে তারা শাস্তির বিপরীত পুরস্কার পাবে।] তাদের জন্যই রয়েছে মহাশাস্তি।
১৭৭. নিশ্চয় যারা ঈমানের পরিবর্তে কুফরীকে ক্রয় করে নিয়েছে, তারা কিছুতেই আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১৭৮. আর যারা কুফরী করে তারা যেন এটা মনে না করে যে, আমি তাদেরকে যে সুযোগ দেই, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। (প্রকৃতপক্ষে) আমি তাদেরকে অবকাশ প্রদান করি, যাতে তারা তাদের পাপ বর্ধিত করে। [অর্থাৎ কুফরী অবস্থায় তারা যা কিছু করে থাকে, সবই তাদের জন্য ক্ষতিকর। যদিও তারা কখনো কখনো সমাজকল্যাণমূলক কাজ সংঘটিত করে থাকে, তবুও তা তাদের জন্য প্রকৃত উপকার বয়ে আনে না। বরং কেননা মানুষের কর্মের প্রকৃত উপকার তখনই প্রাপ্ত হবে, যখন সে পরকালে সফলতা অর্জন করতে পারবে। কিন্তু তারা যেসব ভালো কাজ করে, তার কর্মফল দুনিয়াতেই পেয়ে থাকে।] আর তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
কাফিররা তাদের কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর কোনরূপ ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম নয়।
কাফিরদের কর্মকান্ডের কারণে বিপদের আশঙ্কায় কোনরূপ চিন্তিত হওয়া যাবে না।
কাফিররা তাদের কর্মের মাধ্যমে আখিরাতকে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করে থাকে।
ঈমানের পরিবর্তে কুফরী ক্রয় করা যাবে না।
আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে কাফিরদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১৭৬. وَلَا يَحْزُنْكَ তোমাকে চিন্তিত না করে اَلَّذِيْنَ যারা يُسَارِعُوْنَ দ্রুতগতিতে ধাবিত হচ্ছে فِي الْكُفْرِ কুফরির দিকে اِنَّهُمْ নিশ্চয় তারা لَنْ يَّضُرُّوا কখনো ক্ষতি করতে পারবে না اَللهَ আল্লাহর شَيْئًا কোন কিছুতেই। يُرِيْدُ ইচ্ছা করেন اَللهُ আল্লাহ اَلَّا يَجْعَلَ যে, রাখবেন না لَهُمْ তাদের জন্য حَظًّا কোন অংশই فِي الْاٰخِرَةِۚ আখিরাতে। اِنَّهُمْ তাদের জন্যই রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি عَظِيْمٌ মহা।
১৭৭. اِنَّ নিশ্চয় اَلَّذِيْنَ যারা اِشْتَرَوْا ক্রয় করে নিয়েছে اَلْكُفْرَ কুফরীকে بِالْاِيْمَانِ ঈমানের পরিবর্তে لَنْ يَّضُرُّوا তারা কখনো কোন ক্ষতি করতে পারবে না اَللهَ আল্লাহর شَيْئًا কোন কিছুই; وَلَهُمْ আর তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি اَلِيْمٌ যন্ত্রণাদায়ক।
১৭৮. وَلَا يَحْسَبَنَّ আর তারা যেন মনে না করে اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে اَنَّمَا نُمْلِيْ আমি যে সুযোগ দেই لَهُمْ তাদেরকে, خَيْرٌ কল্যাণকর لِاَنْفُسِهِمْ তাদের জন্য। اِنَّمَا نُمْلِيْ আমি অবকাশ প্রদান করি لَهُمْ তাদেরকে, لِيَزْدَادُوْا যাতে তারা বর্ধিত করে اِثْمًا তাদের পাপ। وَلَهُمْ আর তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি مُهِيْنٌ লাঞ্ছনাদায়ক।
সরল অনুবাদ
১৭৬. (হে নবী!) যারা দ্রুতগতিতে কুফরির দিকে ধাবিত হচ্ছে, তারা (তাদের কর্মকান্ড) যেন তোমাকে চিন্তিত না করে। তারা কিছুতেই আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [ইসলামের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কর্মনীতি দেখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাঝে মধ্যে গভীরভাবে অনুধাবন করতেন যে, আহ! যদি সমস্ত মানুষ মুসলিম হয়ে যেত এবং তারা এই উৎসাহ-উদ্দীপনাসমূহ ইসলামের পক্ষে প্রদর্শন করত, তাহলে কতই না ভালো হতো। আর এ কারণে তিনি অনেক সময় ভীষণ কষ্ট পেতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাতে কাফিরদের কর্মকান্ড দেখে কখনো এরূপ চিন্তিত না হন, সেজন্য আল্লাহ অত্র আয়াত নাযিল করে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং এই সুসংবাদ প্রদান করেন যে, তারা তোমার বিরুদ্ধে অর্থাৎ ইসলামের বিরুদ্ধে যতকিছু করার চেষ্টাই করুক না কেন, কোন ক্রমেই তারা সফলকাম হবে না। মাঝে মধ্যে তাদের কোন কোন কাজ বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে সফলকাম মনে হলেও শেষ ফলাফল ইসলামের পক্ষেই হবে।] আল্লাহ ইচ্ছা করেন যে, তাদের জন্য আখিরাতে যেন কোন অংশই না থাকে। [অর্থাৎ কাফিরদের এসব কর্মকান্ডের পেছনে আল্লাহর বৃহত্তম হেকমত রয়েছে। কেননা একদিকে তিনি তাদেরকে এসব কাজ করার জন্য অবকাশ দিচ্ছেন এ জন্য যে, যাতে করে আখিরাতে তাদের জন্য কোন অংশই না থাকে এবং তারা জাহান্নামে প্রবেশের জন্য পরিপূর্ণভাবে উপযুক্ত হয়ে উঠে। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার এই হিকমতটির কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। আর অপরদিকে তিনি তাদের কর্মের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে কষ্ট প্রদান করে তাদের গুনাহসমূহ মিটিয়ে নিচ্ছেন এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত করে নিচ্ছেন। অত্র আয়াতের মর্মার্থ হিসেবে একথাটিও অনুধাবন করা যায়। উল্লেখ্য যে, এখানে এরূপ কোন প্রশ্ন রাখার সুযোগ নেই যে, যেহেতু কাফিরদের মন্দ কর্ম সমূহ আল্লাহর ইচ্ছাতেই সংঘটিত হচ্ছে, সুতরাং এজন্য তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে শাস্তি প্রদান করাটা যুলুম নয় কি? কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভালো ও মন্দ উভয় প্রকার কর্মের জন্যই অবকাশ দিয়েছেন। সুতরাং তারা যদি মন্দ কর্ম না করে ভালো কর্মের দিকে মনোনিবেশ করে, তাহলে তারা শাস্তির বিপরীত পুরস্কার পাবে।] তাদের জন্যই রয়েছে মহাশাস্তি।
১৭৭. নিশ্চয় যারা ঈমানের পরিবর্তে কুফরীকে ক্রয় করে নিয়েছে, তারা কিছুতেই আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১৭৮. আর যারা কুফরী করে তারা যেন এটা মনে না করে যে, আমি তাদেরকে যে সুযোগ দেই, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। (প্রকৃতপক্ষে) আমি তাদেরকে অবকাশ প্রদান করি, যাতে তারা তাদের পাপ বর্ধিত করে। [অর্থাৎ কুফরী অবস্থায় তারা যা কিছু করে থাকে, সবই তাদের জন্য ক্ষতিকর। যদিও তারা কখনো কখনো সমাজকল্যাণমূলক কাজ সংঘটিত করে থাকে, তবুও তা তাদের জন্য প্রকৃত উপকার বয়ে আনে না। বরং কেননা মানুষের কর্মের প্রকৃত উপকার তখনই প্রাপ্ত হবে, যখন সে পরকালে সফলতা অর্জন করতে পারবে। কিন্তু তারা যেসব ভালো কাজ করে, তার কর্মফল দুনিয়াতেই পেয়ে থাকে।] আর তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
কাফিররা তাদের কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর কোনরূপ ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম নয়।
কাফিরদের কর্মকান্ডের কারণে বিপদের আশঙ্কায় কোনরূপ চিন্তিত হওয়া যাবে না।
কাফিররা তাদের কর্মের মাধ্যমে আখিরাতকে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করে থাকে।
ঈমানের পরিবর্তে কুফরী ক্রয় করা যাবে না।
আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে কাফিরদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।
مَا كَانَ اللهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلٰى مَاۤ اَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتّٰى يَمِيْزَ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِؕ وَمَا كَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلٰكِنَّ اللهَ يَجْتَبِيْ مِنْ رُّسُلِه مَنْ يَّشَآءُ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرُسُلِه ۚ وَاِنْ تُؤْمِنُوْا وَتَتَّقُوْا فَلَكُمْ اَجْرٌ عَظِيْمٌ (১৭৯)
শাব্দিক অনুবাদ
১৭৯. مَا كَانَ اللهُ আল্লাহ এমন নন যে, لِيَذَرَ তিনি ছেড়ে দেবেন اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদেরকে عَلٰى উপর مَا যার اَنْتُمْ তোমরা عَلَيْهِ তার উপর حَتّٰى যতক্ষণ পর্যন্ত يَمِيْزَ তিনি পৃথক করেন اَلْخَبِيْثَ অপবিত্রকে مِنْ হতে اَلطَّيِّبِ পবিত্র। وَمَا كَانَ اللهُ আবার তিনি এমনও নন যে, لِيُطْلِعَكُمْ তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন عَلَى الْغَيْبِ অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে। وَلٰكِنَّ اللهَ তবে আল্লাহ يَجْتَبِيْ মনোনীত করে থাকেন مِنْ থেকে رُسُلِه তার রাসূলগণের مَنْ যাকে يَشَآءُ তিনি ইচ্ছা করেন; فَاٰمِنُوْا অতএব তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো بِاللهِ আল্লাহ প্রতি وَرُسُلِه ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি। وَاِنْ আর যদি تُؤْمِنُوْا তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো وَتَتَّقُوْا এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করো, فَلَكُمْ তবে তোমাদের জন্য রয়েছে اَجْرٌ পুরস্কার عَظِيْمٌ মহা।
সরল অনুবাদ
১৭৯. আল্লাহ এমন নন যে, তিনি পবিত্র (মুমিন) হতে অপবিত্রকে (মুনাফিকদেরকে) পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থার উপর রয়েছ, সে অবস্থার উপরে মুমিনদেরকে ছেড়ে দেবেন। [অর্থাৎ মুসলিমরা ও মুনাফিকরা একই সাথে মিশে থাকুক- এটা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না। ফলে তিনি মুসলিমদেরকে মাঝে মধ্যে এমন কিছু পরীক্ষার সম্মুখীন করেন, যার কারণে স্বংক্রিয়ভাবে মুসলিমদের থেকে মুনাফিকরা পৃথক হয়ে যায়। কেননা একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য কঠিন বিপদসমূহ মোকাবেলার ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন, তা কোন মুনাফিকের মধ্যে থাকে না। ফলে যখনই তারা বিপদের আশংকা দেখে, তখনই তারা মুসলিমদের দল থেকে পৃথক হয়ে যায়। উহুদ যুদ্ধের সময় চূড়ান্ত বিপদ অবলোকন করে মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার দলবল সহকারে মুসলিমদের দল থেকে পৃথক হয়ে যাওয়াটাই হলো এর জলজ্যান্ত প্রমাণ। বর্তমান মুসলিমদের জন্য এই ঘটনাটি ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে থাকে।] আবার তিনি এমনও নন যে, তোমাদেরকে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন। তবে আল্লাহ (অদৃশ্যের বিষয়ে জানানোর জন্য) তার রাসূলগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করে থাকেন [এখানে অদৃশ্যের বিষয় বলতে মুনাফিকদের অন্তরে লুকায়িত বিষয়সমূহের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। কেননা তাদের অন্তরে লুকায়িত বিষয়সমূহ জানা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আল্লাহ তা‘আলা যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে এর কোন কোন সংবাদ তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলদেরকে জানিয়ে থাকেন- যেরকমভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন কোন মুনাফিকের ব্যাপারে জানতেন। আর বর্তমানে যেহেতু নবী-রাসূল আগমনের কোন সম্ভাবনা নেই, সুতরাং এ ব্যাপার জানার আর কোন রাস্তাই খোলা নেই। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাহলে বর্তমানে আমরা মুনাফিকদেরকে চিনব কীভাবে? এর উত্তর এই আয়াতের পূর্বের অংশেই দেয়া আছে অর্থাৎ যখন মুসলিমদের উপর কঠিন বিপদ আপতিত হবে, ঠিক তখনই তাদের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তবে অনেক হাদীসেও তাদেরকে চেনার অনেক উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই ‘‘মুনাফিক কারা’’।]; অতএব তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। যদি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তবে তোমাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
আয়াতের শিক্ষা
কোন বান্দাই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।
আল্লাহ তা‘আলা নির্বাচিত রাসূলদেরকে অদৃশ্য বিষয়ের কোন কোন সংবাদ জানিয়ে থাকেন।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৭৯. مَا كَانَ اللهُ আল্লাহ এমন নন যে, لِيَذَرَ তিনি ছেড়ে দেবেন اَلْمُؤْمِنِيْنَ মুমিনদেরকে عَلٰى উপর مَا যার اَنْتُمْ তোমরা عَلَيْهِ তার উপর حَتّٰى যতক্ষণ পর্যন্ত يَمِيْزَ তিনি পৃথক করেন اَلْخَبِيْثَ অপবিত্রকে مِنْ হতে اَلطَّيِّبِ পবিত্র। وَمَا كَانَ اللهُ আবার তিনি এমনও নন যে, لِيُطْلِعَكُمْ তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন عَلَى الْغَيْبِ অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে। وَلٰكِنَّ اللهَ তবে আল্লাহ يَجْتَبِيْ মনোনীত করে থাকেন مِنْ থেকে رُسُلِه তার রাসূলগণের مَنْ যাকে يَشَآءُ তিনি ইচ্ছা করেন; فَاٰمِنُوْا অতএব তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো بِاللهِ আল্লাহ প্রতি وَرُسُلِه ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি। وَاِنْ আর যদি تُؤْمِنُوْا তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো وَتَتَّقُوْا এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করো, فَلَكُمْ তবে তোমাদের জন্য রয়েছে اَجْرٌ পুরস্কার عَظِيْمٌ মহা।
সরল অনুবাদ
১৭৯. আল্লাহ এমন নন যে, তিনি পবিত্র (মুমিন) হতে অপবিত্রকে (মুনাফিকদেরকে) পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থার উপর রয়েছ, সে অবস্থার উপরে মুমিনদেরকে ছেড়ে দেবেন। [অর্থাৎ মুসলিমরা ও মুনাফিকরা একই সাথে মিশে থাকুক- এটা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না। ফলে তিনি মুসলিমদেরকে মাঝে মধ্যে এমন কিছু পরীক্ষার সম্মুখীন করেন, যার কারণে স্বংক্রিয়ভাবে মুসলিমদের থেকে মুনাফিকরা পৃথক হয়ে যায়। কেননা একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য কঠিন বিপদসমূহ মোকাবেলার ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন, তা কোন মুনাফিকের মধ্যে থাকে না। ফলে যখনই তারা বিপদের আশংকা দেখে, তখনই তারা মুসলিমদের দল থেকে পৃথক হয়ে যায়। উহুদ যুদ্ধের সময় চূড়ান্ত বিপদ অবলোকন করে মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার দলবল সহকারে মুসলিমদের দল থেকে পৃথক হয়ে যাওয়াটাই হলো এর জলজ্যান্ত প্রমাণ। বর্তমান মুসলিমদের জন্য এই ঘটনাটি ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে থাকে।] আবার তিনি এমনও নন যে, তোমাদেরকে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন। তবে আল্লাহ (অদৃশ্যের বিষয়ে জানানোর জন্য) তার রাসূলগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করে থাকেন [এখানে অদৃশ্যের বিষয় বলতে মুনাফিকদের অন্তরে লুকায়িত বিষয়সমূহের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। কেননা তাদের অন্তরে লুকায়িত বিষয়সমূহ জানা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আল্লাহ তা‘আলা যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে এর কোন কোন সংবাদ তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলদেরকে জানিয়ে থাকেন- যেরকমভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন কোন মুনাফিকের ব্যাপারে জানতেন। আর বর্তমানে যেহেতু নবী-রাসূল আগমনের কোন সম্ভাবনা নেই, সুতরাং এ ব্যাপার জানার আর কোন রাস্তাই খোলা নেই। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাহলে বর্তমানে আমরা মুনাফিকদেরকে চিনব কীভাবে? এর উত্তর এই আয়াতের পূর্বের অংশেই দেয়া আছে অর্থাৎ যখন মুসলিমদের উপর কঠিন বিপদ আপতিত হবে, ঠিক তখনই তাদের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তবে অনেক হাদীসেও তাদেরকে চেনার অনেক উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই ‘‘মুনাফিক কারা’’।]; অতএব তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। যদি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তবে তোমাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
আয়াতের শিক্ষা
কোন বান্দাই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।
আল্লাহ তা‘আলা নির্বাচিত রাসূলদেরকে অদৃশ্য বিষয়ের কোন কোন সংবাদ জানিয়ে থাকেন।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِه هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ (১৮০)
শাব্দিক অনুবাদ
১৮০. وَلَا يَحْسَبَنَّ আর যেন তারা মনে না করে اَلَّذِيْنَ যারা يَبْخَلُوْنَ কার্পণ্য করে بِمَاۤ যা اٰتَاهُمُ তাদেরকে যা কিছু দান করেছেন, اَللهُ আল্লাহ مِنْ হতে فَضْلِه নিজ অনুগ্রহ هُوَ তা خَيْرًا কল্যাণকর لَهُمْ তাদের জন্য; بَلْ বরং هُوَ তা شَرٌّ ক্ষতিকর لَهُمْ তাদের জন্য। سَيُطَوَّقُوْنَ অচিরেই (তাদের গলার) বেড়ি পড়িয়ে দেয়া হবে مَا بَخِلُوْا যে বিষয়ে তারা কৃপণতা করেছে, بِه তা দিয়ে يَوْمَ الْقِيَامَةِ কিয়ামতের দিন। وَلِلّٰهِ আল্লাহরই জন্য مِيْرَاثُ স্বত্বাধিকারী اَلسَّمَاوَاتِ আকাশসমূহ وَالْاَرْضِ ও পৃথিবীর। আর وَاللهُ আর আল্লাহ بِمَا تَعْمَلُوْنَ তোমরা যা করছ সে বিষয়ে خَبِيْرٌ পূর্ণ জ্ঞাত।
সরল অনুবাদ
১৮০. আর যারা কৃপণতা করে তারা যেন এমনটি ধারণা না করে যে, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দান করেছেন, তা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং তা তাদের জন্য ক্ষতিকর। তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করে, অচিরেই কিয়ামতের দিন তা দিয়ে তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে। [এখানে কৃপণতা বলতে ঐসব ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যারা তাদের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না- এমনকি তাদের উপর নির্ধারিত ফরয যাকাতও আদায় করে না। অথচ আকাশ ও জমিনের মধ্যে যত সম্পদ রয়েছে, সবকিছুই আল্লাহর মালিকানাধীন। আল্লাহ তা‘আলা এগুলো বান্দাদেরকে সাময়িকভাবে পৃথিবীতে জীবন-যাপন করার উপকরণ হিসেবে দিয়েছেন মাত্র। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা এটা পরীক্ষা করতে চান যে, কোন বান্দা কতটুকু কৃতজ্ঞ এবং কোন বান্দা অকৃতজ্ঞ? অতএব এসব ধন-সম্পদ নিজের কাছে পুঞ্জীভূত করে না রেখে, আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। যদি এরূপ না করা হয়, তাহলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণে এর পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ- যা এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন, সে যদি তা থেকে যাকাত আদায় না করে, কিয়ামতের দিন সেগুলোকে একটি মাথায় টাক পড়া বিষাক্ত সাপের আকৃতি প্রদান করা হবে, যার চোখের উপর দুটি কালো দাগ থাকবে। তারপর সেটিকে বেড়ির মতো তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। ফলে সে তাকে দংশন করতে করতে বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সেই সঞ্চিত ধনভান্ডার। (সহীহ বুখারী, হা/১৪০৩)] (মূলত) আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্বত্বাধিকারী একমাত্র আল্লাহ। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন।
আয়াতের শিক্ষা
কোন ক্ষেত্রেই কৃপণতা করা যাবে না।
কৃপণতা কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না; কেবল ক্ষতিই ডেকে আনে।
কৃপণতা করে আল্লাহর হক আদায় না করলে কিয়ামতের দিন জমাকৃত সম্পদ দ্বারা বেড়ি বানিয়ে তা কৃপণ ব্যক্তির গলায় পড়িয়ে দেয়া হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৮০. وَلَا يَحْسَبَنَّ আর যেন তারা মনে না করে اَلَّذِيْنَ যারা يَبْخَلُوْنَ কার্পণ্য করে بِمَاۤ যা اٰتَاهُمُ তাদেরকে যা কিছু দান করেছেন, اَللهُ আল্লাহ مِنْ হতে فَضْلِه নিজ অনুগ্রহ هُوَ তা خَيْرًا কল্যাণকর لَهُمْ তাদের জন্য; بَلْ বরং هُوَ তা شَرٌّ ক্ষতিকর لَهُمْ তাদের জন্য। سَيُطَوَّقُوْنَ অচিরেই (তাদের গলার) বেড়ি পড়িয়ে দেয়া হবে مَا بَخِلُوْا যে বিষয়ে তারা কৃপণতা করেছে, بِه তা দিয়ে يَوْمَ الْقِيَامَةِ কিয়ামতের দিন। وَلِلّٰهِ আল্লাহরই জন্য مِيْرَاثُ স্বত্বাধিকারী اَلسَّمَاوَاتِ আকাশসমূহ وَالْاَرْضِ ও পৃথিবীর। আর وَاللهُ আর আল্লাহ بِمَا تَعْمَلُوْنَ তোমরা যা করছ সে বিষয়ে خَبِيْرٌ পূর্ণ জ্ঞাত।
সরল অনুবাদ
১৮০. আর যারা কৃপণতা করে তারা যেন এমনটি ধারণা না করে যে, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দান করেছেন, তা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং তা তাদের জন্য ক্ষতিকর। তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করে, অচিরেই কিয়ামতের দিন তা দিয়ে তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে। [এখানে কৃপণতা বলতে ঐসব ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যারা তাদের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না- এমনকি তাদের উপর নির্ধারিত ফরয যাকাতও আদায় করে না। অথচ আকাশ ও জমিনের মধ্যে যত সম্পদ রয়েছে, সবকিছুই আল্লাহর মালিকানাধীন। আল্লাহ তা‘আলা এগুলো বান্দাদেরকে সাময়িকভাবে পৃথিবীতে জীবন-যাপন করার উপকরণ হিসেবে দিয়েছেন মাত্র। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা এটা পরীক্ষা করতে চান যে, কোন বান্দা কতটুকু কৃতজ্ঞ এবং কোন বান্দা অকৃতজ্ঞ? অতএব এসব ধন-সম্পদ নিজের কাছে পুঞ্জীভূত করে না রেখে, আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। যদি এরূপ না করা হয়, তাহলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণে এর পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ- যা এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন, সে যদি তা থেকে যাকাত আদায় না করে, কিয়ামতের দিন সেগুলোকে একটি মাথায় টাক পড়া বিষাক্ত সাপের আকৃতি প্রদান করা হবে, যার চোখের উপর দুটি কালো দাগ থাকবে। তারপর সেটিকে বেড়ির মতো তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। ফলে সে তাকে দংশন করতে করতে বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সেই সঞ্চিত ধনভান্ডার। (সহীহ বুখারী, হা/১৪০৩)] (মূলত) আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্বত্বাধিকারী একমাত্র আল্লাহ। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন।
আয়াতের শিক্ষা
কোন ক্ষেত্রেই কৃপণতা করা যাবে না।
কৃপণতা কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না; কেবল ক্ষতিই ডেকে আনে।
কৃপণতা করে আল্লাহর হক আদায় না করলে কিয়ামতের দিন জমাকৃত সম্পদ দ্বারা বেড়ি বানিয়ে তা কৃপণ ব্যক্তির গলায় পড়িয়ে দেয়া হবে।
لَقَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ فَقِيْرٌ وَّنَحْنُ اَغْنِيَآءُۘ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوْا وَقَتْلَهُمُ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّۚ وَّنَقُوْلُ ذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ (১৮১) ذٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ اَيْدِيْكُمْ وَاَنَّ اللهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ (১৮২)
শাব্দিক অনুবাদ
১৮১. لَقَدْ অবশ্যই سَمِعَ শ্রবণ করেছেন اَللهُ আল্লাহ قَوْلَ এমন কথা দ্বারা, اَلَّذِيْنَ যারা قَالُوْا বলেছিল যে, اِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ فَقِيْرٌ অভাবগ্রস্ত وَنَحْنُ এবং আমরা اَغْنِيَآءُ অভাবমুক্ত। سَنَكْتُبْ অতি শীঘ্রই আমি লিখে রাখব مَا যা قَالُوْا তারা বলেছে। وَقَتْلَهُمْ আর হত্যা করার বিষয়টিও (লিখে রাখব) اَلْاَنْۢبِيَآءَ নবীদেরকে بِغَيْرِ ব্যতীত حَقٍّ ন্যায়বিচার। وَنَقُوْلُ আমি বলব, ذُوْقُوْا তোমরা আস্বাদন গ্রহণ করো عَذَابَ শাস্তিকে اَلْحَرِيْقِ প্রজ্জ্বলিত আগুনের।
১৮২. ذٰلِكَ এটা, بِمَا যা قَدَّمَتْ পূর্বে প্রেরণ করেছে اَيْدِيْكُمْ তোমাদের হাতসমূহ; وَاَنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ لَيْسَ নন بِظَلَّامٍ অত্যাচারী لِلْعَبِيْدِ বান্দাদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
১৮১. অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন, যারা (বিদ্রূপ করে) বলেছিল যে, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবগ্রস্ত এবং আমরা অভাবমুক্ত। [এ আয়াতটি ইহুদীদেরকে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ণ করা হয়েছে। কেননা যখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করলেন যে, مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا অর্থাৎ কে আছে যে আল্লাহকে করযে হাসানা তথা উত্তম ঋণ দেবে?- (সূরা বাক্বারা- ২৪৫) তখন ইহুদীরা এটাকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে নিল এবং বলল যে, তোমাদের প্রতিপালক এতই গরীব হয়ে গেছেন যে, তিনি ঋণ চাচ্ছেন? অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এই প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতেই অত্র আয়াত নাযিল করে তাদের এসব কৃতকর্মের শেষ পরিণতি সম্পর্কে জানিয়ে দেন।] তারা যা বলেছে অতি শীঘ্রই তা আমি লিখে রাখব। আর আমি অন্যায়ভাবে তাদের (কর্তৃক) নবীদের হত্যা করার বিষয়টিও (লিখে রাখব)। (সেদিন) আমি (তাদেরকে) বলব, তোমরা প্রজ্জ্বলিত আগুনের শাস্তি আস্বাদন গ্রহণ করো। [অর্থাৎ ইতিপূর্বে তারা যেসব নবীকে সত্য বলার কারণে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে সেগুলো সহ তাদের সমস্ত অপরাধের বিবরণ তো যথাযথভাবে তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ রাখা হয়েছে। সুতরাং বর্তমানে তারা সেসব নবীর ওয়ারিশ অর্থাৎ আলেম ও মুজাহিদদেরকে সত্যের পথে থাকার কারণে অন্যায়ভাবে হত্যা করছে, সেগুলোও তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে। সেই সাথে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের নানা ধরনের হঠকারিতা, অন্যায় কথাবার্তা ও চক্রান্তসমূহও লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে। অবশেষে সমস্ত অন্যায় কর্মের বিনিময়ে যখন তারা শাস্তি প্রাপ্ত হওয়ার জন্য পরিপূর্ণভাবে উপযুক্ত হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে প্রজ্জ্বলিত আগুন দ্বারা পরিপূর্ণ জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে।]
১৮২. তোমাদের হাতসমূহ পূর্বে যা প্রেরণ করেছে তার জন্য এটা (শাস্তি) [ঐখানে পূর্বে প্রেরণ করা বলতে ঐসব কর্মকে বুঝানো হয়েছে, যা দুনিয়ার জীবনে মানুষ তাদের হাত-পাসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা করে থাকে। যেহেতু কোন কর্ম সংঘটিত করে ফেললেই সেটি আমলনামায় উঠে যায় এবং আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তনের পূর্বে সেগুলো তাঁর নিকট জমা হয়ে যায়, তাই এসব কর্মের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করতে গিয়ে ‘পূর্বে প্রেরণ করা’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।]; নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। [অর্থাৎ তোমরা যে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছো, এজন্য কখনো ধারণা করো না যে, এর দ্বারা তোমার উপর আল্লাহ অত্যাচার করেছেন। বরং এগুলো হচ্ছে তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ তা‘আলা কেবল তোমাদেরকে সেই ফলসমূহ প্রদান করেছেন মাত্র।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
আল্লাহর বিষয়ে কখনো বিদ্রূপ করা যাবে না।
আল্লাহর সাথে বিদ্রূপ করার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সমস্ত কৃতকর্মই লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১৮১. لَقَدْ অবশ্যই سَمِعَ শ্রবণ করেছেন اَللهُ আল্লাহ قَوْلَ এমন কথা দ্বারা, اَلَّذِيْنَ যারা قَالُوْا বলেছিল যে, اِنَّ নিশ্চয় اَللهَ আল্লাহ فَقِيْرٌ অভাবগ্রস্ত وَنَحْنُ এবং আমরা اَغْنِيَآءُ অভাবমুক্ত। سَنَكْتُبْ অতি শীঘ্রই আমি লিখে রাখব مَا যা قَالُوْا তারা বলেছে। وَقَتْلَهُمْ আর হত্যা করার বিষয়টিও (লিখে রাখব) اَلْاَنْۢبِيَآءَ নবীদেরকে بِغَيْرِ ব্যতীত حَقٍّ ন্যায়বিচার। وَنَقُوْلُ আমি বলব, ذُوْقُوْا তোমরা আস্বাদন গ্রহণ করো عَذَابَ শাস্তিকে اَلْحَرِيْقِ প্রজ্জ্বলিত আগুনের।
১৮২. ذٰلِكَ এটা, بِمَا যা قَدَّمَتْ পূর্বে প্রেরণ করেছে اَيْدِيْكُمْ তোমাদের হাতসমূহ; وَاَنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ لَيْسَ নন بِظَلَّامٍ অত্যাচারী لِلْعَبِيْدِ বান্দাদের প্রতি।
সরল অনুবাদ
১৮১. অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন, যারা (বিদ্রূপ করে) বলেছিল যে, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবগ্রস্ত এবং আমরা অভাবমুক্ত। [এ আয়াতটি ইহুদীদেরকে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ণ করা হয়েছে। কেননা যখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করলেন যে, مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا অর্থাৎ কে আছে যে আল্লাহকে করযে হাসানা তথা উত্তম ঋণ দেবে?- (সূরা বাক্বারা- ২৪৫) তখন ইহুদীরা এটাকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে নিল এবং বলল যে, তোমাদের প্রতিপালক এতই গরীব হয়ে গেছেন যে, তিনি ঋণ চাচ্ছেন? অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এই প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতেই অত্র আয়াত নাযিল করে তাদের এসব কৃতকর্মের শেষ পরিণতি সম্পর্কে জানিয়ে দেন।] তারা যা বলেছে অতি শীঘ্রই তা আমি লিখে রাখব। আর আমি অন্যায়ভাবে তাদের (কর্তৃক) নবীদের হত্যা করার বিষয়টিও (লিখে রাখব)। (সেদিন) আমি (তাদেরকে) বলব, তোমরা প্রজ্জ্বলিত আগুনের শাস্তি আস্বাদন গ্রহণ করো। [অর্থাৎ ইতিপূর্বে তারা যেসব নবীকে সত্য বলার কারণে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে সেগুলো সহ তাদের সমস্ত অপরাধের বিবরণ তো যথাযথভাবে তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ রাখা হয়েছে। সুতরাং বর্তমানে তারা সেসব নবীর ওয়ারিশ অর্থাৎ আলেম ও মুজাহিদদেরকে সত্যের পথে থাকার কারণে অন্যায়ভাবে হত্যা করছে, সেগুলোও তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে। সেই সাথে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের নানা ধরনের হঠকারিতা, অন্যায় কথাবার্তা ও চক্রান্তসমূহও লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে। অবশেষে সমস্ত অন্যায় কর্মের বিনিময়ে যখন তারা শাস্তি প্রাপ্ত হওয়ার জন্য পরিপূর্ণভাবে উপযুক্ত হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে প্রজ্জ্বলিত আগুন দ্বারা পরিপূর্ণ জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে।]
১৮২. তোমাদের হাতসমূহ পূর্বে যা প্রেরণ করেছে তার জন্য এটা (শাস্তি) [ঐখানে পূর্বে প্রেরণ করা বলতে ঐসব কর্মকে বুঝানো হয়েছে, যা দুনিয়ার জীবনে মানুষ তাদের হাত-পাসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা করে থাকে। যেহেতু কোন কর্ম সংঘটিত করে ফেললেই সেটি আমলনামায় উঠে যায় এবং আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তনের পূর্বে সেগুলো তাঁর নিকট জমা হয়ে যায়, তাই এসব কর্মের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করতে গিয়ে ‘পূর্বে প্রেরণ করা’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।]; নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। [অর্থাৎ তোমরা যে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছো, এজন্য কখনো ধারণা করো না যে, এর দ্বারা তোমার উপর আল্লাহ অত্যাচার করেছেন। বরং এগুলো হচ্ছে তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ তা‘আলা কেবল তোমাদেরকে সেই ফলসমূহ প্রদান করেছেন মাত্র।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
আল্লাহর বিষয়ে কখনো বিদ্রূপ করা যাবে না।
আল্লাহর সাথে বিদ্রূপ করার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সমস্ত কৃতকর্মই লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
اَلَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ عَهِدَ اِلَيْنَاۤ اَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُوْلٍ حَتّٰى يَأْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ تَأْكُلُهُ النَّارُؕ قُلْ قَدْ جَآءَكُمْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِيْ بِالْبَيِّنَاتِ وَبِالَّذِيْ قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوْهُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (১৮৩) فَاِنْ كَذَّبُوْكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ جَآءُوْا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيْرِ (১৮৪)
শাব্দিক অনুবাদ
১৮৩. اَلَّذِيْنَ যারা قَالُوْا বলে, اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ عَهِدَ অঙ্গীকার প্রদান করেছেন اِلَيْنَا আমাদেরকে اَلَّا যেন না করি نُؤْمِنَ বিশ্বাস স্থাপন لِرَسُوْلٍ কোন রাসূলের প্রতি حَتّٰى যতক্ষণ না يَأْتِيَنَا আমাদের নিকট আসে بِقُرْبَانٍ এমন কুরবানী تَأْكُلُهُ যা গ্রাস করে নেয় اَلنَّارُ অগ্নি। قُلْ বলে দাও, قَدْ নিশ্চয় جَآءَكُمْ তোমাদের নিকট এসেছিল رُسُلٌ অনেক রাসূল مِنْ قَبْلِيْ আমার পূর্বে بِالْبَيِّنَاتِ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে وَبِالَّذِيْ এবং তা সহকারে যা قُلْتُمْ তোমরা বলছো। فَلِمَ এরপরও কেন قَتَلْتُمُوْهُمْ তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছিলে اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা হও صَادِقِيْنَ সত্যবাদী?
১৮৪. فَاِنْ অতঃপর যদি كَذَّبُوْكَ তারা তোমাকে মিথ্যারোপ করে, فَقَدْ তবে নিশ্চয় كُذِّبَ মিথ্যারোপ করা হয়েছিল رُسُلٌ রাসূলগণকে مِنْ قَبْلِكَ তোমার পূর্বেও। جَآءُوْا তারা আগমন করেছিল بِالْبَيِّنَاتِ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলি وَالزُّبُرِ ও যাবুরসমূহ (লিখিত নির্দেশাবলি) এবং وَالْكِتَابِ গ্রন্থসহ اَلْمُنِيْرِ উজ্জ্বল।
সরল অনুবাদ
১৮৩. (এরা হচ্ছে ঐসব লোক) যারা বলে, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদেরকে অঙ্গীকার প্রদান করেছেন যে, অগ্নি যা গ্রাস করে এমন কুরবানী আমাদের জন্য আনয়ন না করা পর্যন্ত আমরা যেন কোন নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করি; (হে নবী! তাদেরকে) বলে দিন, নিশ্চয় আমার পূর্বে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে অনেক রাসূল এসেছিল এবং তোমরা (আজ) যা বলছো, তা সহকারেও এসেছিল। এরপরও কেন তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছিলে- যদি তোমরা সত্যবাদী হও? [এখানে ইহুদীদের একটি দাবীকে খন্ডন করা হয়েছে। কেননা তারা দাবী করত যে, আমাদের থেকে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে যে, আমরা যেন কেবল সেসব রাসূলকেই বিশ্বাস করি, যার দু‘আর কারণে আসমান থেকে আগুন এসে কুরবানী ও সদকাকে জ্বালিয়ে দেয়। সুতরাং হে মুহাম্মাদ! আমরা যেহেতু এখনও আপনার মধ্যে এরূপ কোন নিদর্শন দেখতে পাইনি, সুতরাং আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য আমরা বাধ্য নই। ইহুদীদের এসব দাবী ও অজুহাত ছিল একেবারেই মিথ্যা এবং নিজেদের মনগড়া। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিরুধিতা করার জন্য তারা এসব অসার গল্প তৈরি করে নিয়েছিল। কেননা বর্তমানে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়াতের ব্যাপারে যে ধরনের দাবী উত্থাপন করছে, ইতিপূর্বে তাদের পূর্বপুরুষরা একই দাবী করেছিল। অতঃপর তাদের রাসূলগণ তাদের পূর্বপুরুষদেরকে সেসব নিদর্শন সরাসরি প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। কিন্তু এরপরও তারা তাদের নবুওয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করল না; বরং তারা নবীদের বিরুধিতায় আরো কঠোর হয়ে গেলো এবং কোন কোন নবীকে তারা হত্যা করে ফেলল। মূলত এখানে তাদের অন্তরে লুকায়িত চরম হঠকারিতা কাজ করেছিল- যেরকমটি এখনও তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এখনও যদি তাদেরকে এসব নিদর্শন প্রদর্শন করানো হয়, তাহলে তারা আবারও অস্বীকার করে বসবে এবং তাদের উপর আল্লাহর সেসব আযাব অবধারিত হয়ে যাবে, যেসব আযাব অবতরণের মাধ্যমে ইতিপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছেন।]
১৮৪. অতঃপর যদি তারা তোমাকে মিথ্যারোপ করে, তবে তোমার পূর্বেও রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করা হয়েছিল। তারা প্রকাশ্য নিদর্শনাবলি ও যাবুরসমূহ (লিখিত নির্দেশাবলি) এবং উজ্জ্বল গ্রন্থসহ আগমন করেছিল। [অর্থাৎ এত স্পষ্ট নিদর্শনাবলি প্রত্যক্ষ করেও যদি তারা ঈমান আনয়ন করতে অস্বীকার করে, তাহলে এতে আশ্চর্য হওয়ার অথবা অত্যধিক চিন্তা করার কিছু নেই। কেননা এটিই তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যা তারা উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের পূর্বপুরুষদের থেকে প্রাপ্ত হয়েছে। তারা তোমার সাথে যেরূপ আচরণ করেছে, ইতিপূর্বে তারা তাদের নিকট অবতীর্ণ নবী-রাসূলদের সাথেও অনুরূপ আচরণ করত; বরং এর থেকেও জঘন্য ব্যবহার করত। অথচ তাদের কাছে তাওরাত, যাবুরসহ সকল কুরআন ব্যতীত অন্যান্য আসমানী কিতাবসমূহ উপস্থিত ছিল এবং সেখানে তাদের এসব কর্মের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞারোপও বর্ণিত ছিল। বর্তমানে তারা তোমার কাছে যেসব নিদর্শন প্রত্যক্ষ করার দাবী করছে, ইতিপূর্বে তারা এগুলো প্রত্যেকটিই দাবী করেছিল এবং তাদেরকে সেগুলো দেখানোও হয়েছিল; বরং আরো এমন কিছু নিদর্শন দেখানো হয়েছিল, যা দেখার জন্য তাদের জ্ঞান কল্পনাও করেনি। এতদ্বসত্ত্বেও তারা সেগুলো অমান্য করে নানা ধরনের কুকর্ম করে বেড়াত। অত্র আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা নবী (সাঃ)-কে এক ধরনের সান্ত্বনা প্রদান করেছেন মাত্র।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
সরাসরি অগ্নি এসে কুরবানীকৃত বস্তু গ্রাস করে নেয়াটাই ছিল পূর্ব যুগের কুরবানী কবুল হওয়ার আলামত।
নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা ছিল নবী ইসরাঈলের অন্যতম চরিত্র।
কেউ সত্যের উপর মিথ্যারোপ করলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই; কেননা পূর্ববর্তী নবী ও সৎ লোকদের ক্ষেত্রে এরূপই ঘটেছিল।
শাব্দিক অনুবাদ
১৮৩. اَلَّذِيْنَ যারা قَالُوْا বলে, اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ عَهِدَ অঙ্গীকার প্রদান করেছেন اِلَيْنَا আমাদেরকে اَلَّا যেন না করি نُؤْمِنَ বিশ্বাস স্থাপন لِرَسُوْلٍ কোন রাসূলের প্রতি حَتّٰى যতক্ষণ না يَأْتِيَنَا আমাদের নিকট আসে بِقُرْبَانٍ এমন কুরবানী تَأْكُلُهُ যা গ্রাস করে নেয় اَلنَّارُ অগ্নি। قُلْ বলে দাও, قَدْ নিশ্চয় جَآءَكُمْ তোমাদের নিকট এসেছিল رُسُلٌ অনেক রাসূল مِنْ قَبْلِيْ আমার পূর্বে بِالْبَيِّنَاتِ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে وَبِالَّذِيْ এবং তা সহকারে যা قُلْتُمْ তোমরা বলছো। فَلِمَ এরপরও কেন قَتَلْتُمُوْهُمْ তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছিলে اِنْ যদি كُنْتُمْ তোমরা হও صَادِقِيْنَ সত্যবাদী?
১৮৪. فَاِنْ অতঃপর যদি كَذَّبُوْكَ তারা তোমাকে মিথ্যারোপ করে, فَقَدْ তবে নিশ্চয় كُذِّبَ মিথ্যারোপ করা হয়েছিল رُسُلٌ রাসূলগণকে مِنْ قَبْلِكَ তোমার পূর্বেও। جَآءُوْا তারা আগমন করেছিল بِالْبَيِّنَاتِ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলি وَالزُّبُرِ ও যাবুরসমূহ (লিখিত নির্দেশাবলি) এবং وَالْكِتَابِ গ্রন্থসহ اَلْمُنِيْرِ উজ্জ্বল।
সরল অনুবাদ
১৮৩. (এরা হচ্ছে ঐসব লোক) যারা বলে, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদেরকে অঙ্গীকার প্রদান করেছেন যে, অগ্নি যা গ্রাস করে এমন কুরবানী আমাদের জন্য আনয়ন না করা পর্যন্ত আমরা যেন কোন নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করি; (হে নবী! তাদেরকে) বলে দিন, নিশ্চয় আমার পূর্বে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে অনেক রাসূল এসেছিল এবং তোমরা (আজ) যা বলছো, তা সহকারেও এসেছিল। এরপরও কেন তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছিলে- যদি তোমরা সত্যবাদী হও? [এখানে ইহুদীদের একটি দাবীকে খন্ডন করা হয়েছে। কেননা তারা দাবী করত যে, আমাদের থেকে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে যে, আমরা যেন কেবল সেসব রাসূলকেই বিশ্বাস করি, যার দু‘আর কারণে আসমান থেকে আগুন এসে কুরবানী ও সদকাকে জ্বালিয়ে দেয়। সুতরাং হে মুহাম্মাদ! আমরা যেহেতু এখনও আপনার মধ্যে এরূপ কোন নিদর্শন দেখতে পাইনি, সুতরাং আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য আমরা বাধ্য নই। ইহুদীদের এসব দাবী ও অজুহাত ছিল একেবারেই মিথ্যা এবং নিজেদের মনগড়া। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিরুধিতা করার জন্য তারা এসব অসার গল্প তৈরি করে নিয়েছিল। কেননা বর্তমানে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়াতের ব্যাপারে যে ধরনের দাবী উত্থাপন করছে, ইতিপূর্বে তাদের পূর্বপুরুষরা একই দাবী করেছিল। অতঃপর তাদের রাসূলগণ তাদের পূর্বপুরুষদেরকে সেসব নিদর্শন সরাসরি প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। কিন্তু এরপরও তারা তাদের নবুওয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করল না; বরং তারা নবীদের বিরুধিতায় আরো কঠোর হয়ে গেলো এবং কোন কোন নবীকে তারা হত্যা করে ফেলল। মূলত এখানে তাদের অন্তরে লুকায়িত চরম হঠকারিতা কাজ করেছিল- যেরকমটি এখনও তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এখনও যদি তাদেরকে এসব নিদর্শন প্রদর্শন করানো হয়, তাহলে তারা আবারও অস্বীকার করে বসবে এবং তাদের উপর আল্লাহর সেসব আযাব অবধারিত হয়ে যাবে, যেসব আযাব অবতরণের মাধ্যমে ইতিপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছেন।]
১৮৪. অতঃপর যদি তারা তোমাকে মিথ্যারোপ করে, তবে তোমার পূর্বেও রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করা হয়েছিল। তারা প্রকাশ্য নিদর্শনাবলি ও যাবুরসমূহ (লিখিত নির্দেশাবলি) এবং উজ্জ্বল গ্রন্থসহ আগমন করেছিল। [অর্থাৎ এত স্পষ্ট নিদর্শনাবলি প্রত্যক্ষ করেও যদি তারা ঈমান আনয়ন করতে অস্বীকার করে, তাহলে এতে আশ্চর্য হওয়ার অথবা অত্যধিক চিন্তা করার কিছু নেই। কেননা এটিই তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যা তারা উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের পূর্বপুরুষদের থেকে প্রাপ্ত হয়েছে। তারা তোমার সাথে যেরূপ আচরণ করেছে, ইতিপূর্বে তারা তাদের নিকট অবতীর্ণ নবী-রাসূলদের সাথেও অনুরূপ আচরণ করত; বরং এর থেকেও জঘন্য ব্যবহার করত। অথচ তাদের কাছে তাওরাত, যাবুরসহ সকল কুরআন ব্যতীত অন্যান্য আসমানী কিতাবসমূহ উপস্থিত ছিল এবং সেখানে তাদের এসব কর্মের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞারোপও বর্ণিত ছিল। বর্তমানে তারা তোমার কাছে যেসব নিদর্শন প্রত্যক্ষ করার দাবী করছে, ইতিপূর্বে তারা এগুলো প্রত্যেকটিই দাবী করেছিল এবং তাদেরকে সেগুলো দেখানোও হয়েছিল; বরং আরো এমন কিছু নিদর্শন দেখানো হয়েছিল, যা দেখার জন্য তাদের জ্ঞান কল্পনাও করেনি। এতদ্বসত্ত্বেও তারা সেগুলো অমান্য করে নানা ধরনের কুকর্ম করে বেড়াত। অত্র আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা নবী (সাঃ)-কে এক ধরনের সান্ত্বনা প্রদান করেছেন মাত্র।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
সরাসরি অগ্নি এসে কুরবানীকৃত বস্তু গ্রাস করে নেয়াটাই ছিল পূর্ব যুগের কুরবানী কবুল হওয়ার আলামত।
নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা ছিল নবী ইসরাঈলের অন্যতম চরিত্র।
কেউ সত্যের উপর মিথ্যারোপ করলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই; কেননা পূর্ববর্তী নবী ও সৎ লোকদের ক্ষেত্রে এরূপই ঘটেছিল।
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِؕ وَاِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ (১৮৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১৮৫. كُلُّ প্রত্যেক نَفْسٍ প্রাণীই ذَآئِقَةُ স্বাদ গ্রহণকারী اَلْمَوْتِ মৃত্যুর। وَاِنَّمَا আর অবশ্যই تُوَفَّوْنَ মিটিয়ে দেয় হবে اُجُوْرَكُمْ তোমাদের পূর্ণ প্রতিদানসমূহ يَوْمَ الْقِيَامَةِ কিয়ামতের দিন; فَمَنْ অতএব যে ব্যক্তিকে زُحْزِحَ দূরে রাখা হয়েছে عَنِ হতে اَلنَّارِ আগুন وَاُدْخِلَ এবং প্রবেশ করানো হয়েছে اَلْجَنَّةَ জান্নাতে, فَقَدْ প্রকৃতপক্ষে فَازَ সেই সফলকাম। وَمَا আর কিছুই নয় اَلْحَيَاةُ জীবন اَلدُّنْيَا পার্থিব اِلَّا ছাড়া مَتَاعُ সম্পদ اَلْغُرُوْرِ প্রতারণার।
সরল অনুবাদ
১৮৫. প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী। আর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে; অতএব যে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) আগুন হতে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, প্রকৃতপক্ষে সেই সফলকাম। (জেনে রেখো) পার্থিব জীবন (কেবলমাত্র) প্রতারণার সম্পদ ছাড়া আর কিছুই নয়। [এখানে দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে একটি চরম সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আর তা হলো- দুনিয়াতে জীবনটা হচ্ছে একটি প্রতারণার ফাঁদস্বরপ। এর প্রতিটি কোণায় শয়তান মানুষের জন্য এমন ফাঁদ পেতে বসে রয়েছে- যাতে করে মানুষেরা এতে আটকা পড়ে জাহান্নামের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়। আর এই ফাঁদগুলো এতই সূক্ষ্ম যে, এ ব্যাপারে জানা সাধারণভাবে যে কোন মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন। তবে যারা যথাযথভাবে ঈমান আনয়ন করেছে এবং বিশেষভাবে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়েছে, একমাত্র তারাই এই ফাঁদগুলো থেকে বেঁচে থাকতে সক্ষম। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা এগুলোকে মানুষের পরীক্ষা করার উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করে শয়তানকে অবকাশ দিয়েছেন। যার কারণ দুনিয়ার বাহ্যিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে কারো পরকালের ফলাফল নির্ণয় করা কোন মানুষের জন্য বৈধ নয়। সুতরাং দুনিয়াতে কারো ভালো অবস্থা অবলোকন করেই নিশ্চিতভাবে এ কথা বলা যাবে না যে, সে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তার কর্মসমূহ আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়েছে। কেননা প্রকৃত ঈমানদারগণ দুনিয়ার ঐশ্বর্যকে পরিহার করে চলতেই অধিক পছন্দ করে। অনুরূপভাবে দুনিয়াতে কারো খারাপ অবস্থা অবলোকন করেই নিশ্চিতভাবে এ কথা বলা যাবে না যে, সে মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তার আমলসমূহ আল্লাহর কাছে পরিত্যাজ্য। কেননা অধিকাংশ মুমিন বান্দাই দুনিয়ার জীবন খুবই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত করে। বরং প্রতিটি মানুষ তাদের কর্মফল পরকালে প্রাপ্ত হবে। দুনিয়াতে কেউ যদি ভালো কর্ম করে থাকে, তাহলে সেদিন সে উত্তম প্রতিদান হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে; পক্ষান্তরে কেউ যদি মন্দ কর্ম করে থাকে, তাহলে সেদিন সে মন্দ প্রতিদান হিসেবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই ‘‘দুনিয়ার জীবন’’)]
আয়াতের শিক্ষা
প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকেই পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।
জান্নাত লাভকারী ব্যক্তিরাই প্রকৃত সফলকাম হিসেবে বিবেচিত হবে।
পার্থিব জীবন প্রতারণার ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়।
পার্থিব জীবনের প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৮৫. كُلُّ প্রত্যেক نَفْسٍ প্রাণীই ذَآئِقَةُ স্বাদ গ্রহণকারী اَلْمَوْتِ মৃত্যুর। وَاِنَّمَا আর অবশ্যই تُوَفَّوْنَ মিটিয়ে দেয় হবে اُجُوْرَكُمْ তোমাদের পূর্ণ প্রতিদানসমূহ يَوْمَ الْقِيَامَةِ কিয়ামতের দিন; فَمَنْ অতএব যে ব্যক্তিকে زُحْزِحَ দূরে রাখা হয়েছে عَنِ হতে اَلنَّارِ আগুন وَاُدْخِلَ এবং প্রবেশ করানো হয়েছে اَلْجَنَّةَ জান্নাতে, فَقَدْ প্রকৃতপক্ষে فَازَ সেই সফলকাম। وَمَا আর কিছুই নয় اَلْحَيَاةُ জীবন اَلدُّنْيَا পার্থিব اِلَّا ছাড়া مَتَاعُ সম্পদ اَلْغُرُوْرِ প্রতারণার।
সরল অনুবাদ
১৮৫. প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী। আর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে; অতএব যে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) আগুন হতে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, প্রকৃতপক্ষে সেই সফলকাম। (জেনে রেখো) পার্থিব জীবন (কেবলমাত্র) প্রতারণার সম্পদ ছাড়া আর কিছুই নয়। [এখানে দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে একটি চরম সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আর তা হলো- দুনিয়াতে জীবনটা হচ্ছে একটি প্রতারণার ফাঁদস্বরপ। এর প্রতিটি কোণায় শয়তান মানুষের জন্য এমন ফাঁদ পেতে বসে রয়েছে- যাতে করে মানুষেরা এতে আটকা পড়ে জাহান্নামের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়। আর এই ফাঁদগুলো এতই সূক্ষ্ম যে, এ ব্যাপারে জানা সাধারণভাবে যে কোন মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন। তবে যারা যথাযথভাবে ঈমান আনয়ন করেছে এবং বিশেষভাবে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়েছে, একমাত্র তারাই এই ফাঁদগুলো থেকে বেঁচে থাকতে সক্ষম। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা এগুলোকে মানুষের পরীক্ষা করার উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করে শয়তানকে অবকাশ দিয়েছেন। যার কারণ দুনিয়ার বাহ্যিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে কারো পরকালের ফলাফল নির্ণয় করা কোন মানুষের জন্য বৈধ নয়। সুতরাং দুনিয়াতে কারো ভালো অবস্থা অবলোকন করেই নিশ্চিতভাবে এ কথা বলা যাবে না যে, সে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তার কর্মসমূহ আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়েছে। কেননা প্রকৃত ঈমানদারগণ দুনিয়ার ঐশ্বর্যকে পরিহার করে চলতেই অধিক পছন্দ করে। অনুরূপভাবে দুনিয়াতে কারো খারাপ অবস্থা অবলোকন করেই নিশ্চিতভাবে এ কথা বলা যাবে না যে, সে মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তার আমলসমূহ আল্লাহর কাছে পরিত্যাজ্য। কেননা অধিকাংশ মুমিন বান্দাই দুনিয়ার জীবন খুবই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত করে। বরং প্রতিটি মানুষ তাদের কর্মফল পরকালে প্রাপ্ত হবে। দুনিয়াতে কেউ যদি ভালো কর্ম করে থাকে, তাহলে সেদিন সে উত্তম প্রতিদান হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে; পক্ষান্তরে কেউ যদি মন্দ কর্ম করে থাকে, তাহলে সেদিন সে মন্দ প্রতিদান হিসেবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই ‘‘দুনিয়ার জীবন’’)]
আয়াতের শিক্ষা
প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকেই পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।
জান্নাত লাভকারী ব্যক্তিরাই প্রকৃত সফলকাম হিসেবে বিবেচিত হবে।
পার্থিব জীবন প্রতারণার ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়।
পার্থিব জীবনের প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
لَتُبْلَوُنَّ فِيْۤ اَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ۫ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَذًى كَثِيْرًاؕ وَّاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ (১৮৬) وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّه لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُوْنَه ۚ فَنَبَذُوْهُ وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِه ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُوْنَ (১৮৭) لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَفْرَحُوْنَ بِمَاۤ اَتَوْا وَّيُحِبُّوْنَ اَنْ يُّحْمَدُوْا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوْا فَلَا تَحْسَبَنَّهُمْ بِمَفَازَةٍ مِّنَ الْعَذَابِۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ (১৮৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১৮৬. لَتُبْلَوُنَّ অবশ্যই তোমরা পরীক্ষিত হবে فِيْۤ দ্বারা اَمْوَالِكُمْ তোমাদের ধন-সম্পদ وَاَنْفُسِكُمْ ও তোমাদের জীবনসমূহের وَلَتَسْمَعُنَّ আর অবশ্যই শুনতে হবে مِنَ (তাদের পক্ষ) হতে اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছে اَلْكِتَابَ কিতাব مِنْ قَبْلِكُمْ তোমাদের পূর্বে وَمِنَ (তাদের পক্ষ) হতে اَلَّذِيْنَ যারা اَشْرَكُوْاۤ শিরক করেছে اَذًى কষ্টকর কথা كَثِيْرًا অনেক। وَاِنْ আর যদি تَصْبِرُوْا তোমরা ধৈর্যধারণ কর وَتَتَّقُوْا ও (আল্লাহকে) ভয় কর, فَاِنَّ তবে অবশ্যই ذٰلِكَ তা হবে مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।
১৮৭. وَاِذْ আর যখন اَخَذَ গ্রহণ করলেন اَللهُ আল্লাহ مِيْثَاقَ অঙ্গীকার اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছে اَلْكِتَابَ কিতাব لَتُبَيِّنُنَّهٗ অবশ্যই তোমরা এটা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে لِلنَّاسِ মানুষের নিকট وَلَا تَكْتُمُوْنَه এবং তোমরা তা গোপন করবে না فَنَبَذُوْهُ কিন্তু তারা এটা নিক্ষেপ করল وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ তাদের পশ্চাতে وَاشْتَرَوْا এবং তারা বিক্রি করে দিল بِه তা দ্বারা ثَمَنًا মূল্যে قَلِيْلًا সামান্য। فَبِئْسَ আর কতই না নিকৃষ্টতর مَا যা يَشْتَرُوْنَ তারা বিক্রি করেছিল ।
১৮৮. لَا تَحْسَبَنَّ তুমি কখনো মনে করো না, اَلَّذِيْنَ (তাদের ব্যাপারে) যারা يَفْرَحُوْنَ আনন্দিত হয় بِمَاۤ ঐ কারণে যা اَتَوْا তারা নিজেরা করেছে وَيُحِبُّوْنَ এবং তারা ভালোবাসে اَنْ যে, يُحْمَدُوْا তারা প্রশংসিত হবে بِمَا ঐ কারণে যা لَمْ يَفْعَلُوْا তারা নিজেরা করেনি فَلَا تَحْسَبَنَّهُمْ অতএব তুমি তাদের ব্যাপারে কখনো ধারণা করো না بِمَفَازَةٍ মুক্তির ব্যাপারে مِنَ الْعَذَابِ শাস্তি থেকে। وَلَهُمْ (মূলত) তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি اَلِيْمٌ যন্ত্রণাদায়ক।
সরল অনুবাদ
১৮৬. (হে ঈমানদারগণ!) অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের জীবনসমূহের দ্বারা পরীক্ষিত হবে এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে, তাদের পক্ষ হতে তোমাদেরকে বহু কষ্টকর কথা শুনতে হবে। (এমতাবস্থায়) যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও (আল্লাহকে) ভয় করো, তবে অবশ্যই তা হবে সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। [এখানে ঈমানদারদেরকে এমন একটি বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তারা দুনিয়াতে পরিপূর্ণ ঈমানের উপর চলতে গেলে অনেক কষ্ট ও কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে। একদিকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে পরীক্ষিত হবে এবং অপরদিকে তারা শয়তান ও তার অনুচরদের পক্ষ হতে আগত কষ্টের দ্বারাও পরীক্ষিত হবে। এমনকি কখনো কখনো এমন কিছু কথা শুনতে হবে, যা মানসিকভাবে যে কোন মানুষকে ঘায়েল করে ফেলে। অতএব এই প্রতিটি পরিস্থিতিতে মুমিনদের জন্য আবশ্যক হলো- আল্লাহকে ভয় করা এবং যথাযথভাবে ধৈর্যধারণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।]
১৮৭. (স্মরণ করো) যখন আল্লাহ কিতাবধারীদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, নিশ্চয় তোমরা এটা (কিতাবের বিষয়সমূহ) মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না; কিন্তু তারা এটা তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং তা সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিল। [এখানে আহলে কিতাবদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে। কেননা ইতিপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে বনী ইসরাঈল থেকে এ ধরনের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তাঁর কিতাবে যা কিছু লিপিবদ্ধ আছে, সেগুলো যথাযথভাবে মানুষের কাছে বর্ণনা করবে এবং এর কোন কিছুই গোপন করবে না। বিশেষ করে এখানে সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে যে বর্ণনাগুলো আছে, সেগুলোও গোপন করবে না। বর্তমানে তাদের কাছে বাইবেল নামে যে কিতাব রয়েছে, তাতে এর স্বপক্ষে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। অবশেষে যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নবুওয়াত নিয়ে আগমন করলেন, তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে নবী ও রাসূল হিসেবে চেনার পরও দুনিয়ার অন্যান্য তুচ্ছ স্বার্থের কারণে নিজেদের সেই অঙ্গীকারের মধ্যে আর টিকে থাকতে পারল না। ফলে নিজেদের স্বার্থে তাওরাতের অনেক বিধান গোপন করতে শুরু করল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করে তাদেরকে সতর্ক করে দেন। সেই সাথে অত্র আয়াত দ্বারা উম্মতে মুহাম্মাদীর ঐসব আলেম সমাজকেও সতর্ক করে দেন, যারা নিজেদের সুবিধার্থে আল্লাহ তা‘আলার অনেক বিধান মানুষের কাছে বর্ণনা করতে চায় না বা করে না। বিনিময়ে তারা দ্বীনের মধ্যে এমন কিছুর প্রবেশ ঘটায়, যার দ্বারা মানুষ ক্রমেই বিভ্রান্তের মধ্যে পতিত হয়।] আর তারা যা বিক্রি করেছিল তা কতই না নিকৃষ্টতর।
১৮৮. যারা (নিজেরা) যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে তুমি কখনো মনে করো না যে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। (মূলত) তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে তিনি যখন যুদ্ধে বের হতেন, তখন কিছু সংখ্যক মুনাফিক ঘরে বসে থাকত এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বেরিয়ে যাওয়ার পর বসে থাকতে পারায় আনন্দ প্রকাশ করত। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফিরে আসলে তাঁর কাছে শপথ করে ওজর পেশ করত এবং যে কাজ করেনি, সে কাজের জন্য প্রশংসিত হতে পছন্দ করত। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করে তাদের গোমরাহী ফাঁস করে দেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৭) এখানে ঐসব লোকের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যারা কেবল লোক দেখানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ভালো আমল করে থাকে। তাদের ভালো-মন্দ সব ধরনের কাজের পেছনে মূল উদ্দেশ্য থাকে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করা। শুধু তাই নয়, এসব লোক এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতেও ভালোবাসে, যা সে করেনি অথবা তার দ্বারা সংঘটিত হয়নি। উপরন্তু তারা অন্যের কৃতিত্বকে নিজেরা জবরদখল করে নিতেও ভালোবাসে। প্রকৃতপক্ষে এগুলোই হচ্ছে মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যার পরিপূর্ণ প্রতিফলন ইহুদীদের মধ্যে ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ঘোষণা করেছেন। অতএব কারো দ্বারা অনেক বড় বড় উত্তম কাজ সংঘটিত হতে দেখে, তা নিজেদের আমলের সাথে তুলনা করে কখনো হতাশ হওয়া যাবে না এবং এটাও ধারণা করা যাবে না যে, তারা তাদের ঐসব কর্মের কারণে অধিক সওয়াব পাবে এবং আমার এই তুচ্ছ কাজের জন্য সামান্য সওয়াব লাভ করব। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মূলত মানুষের কর্ম থেকে তাদের নিয়তের দিকটি বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। যার নিয়তের মধ্যে ঘাটতি দেখা দিবে, সে সর্বক্ষেত্রেই কম পুরস্কার পাবে- যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমলের পরিমাণ অনেক বেশি দেখায়। অনুরূপভাবে যার নিয়তের মধ্যে পরিপূর্ণতা থাকবে, সে সর্বক্ষেত্রেই বেশি পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হবে- যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমলের পরিমাণ অতি সামান্য মনে হয়।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
ধন-সম্পদ ও জীবনের নানা ধরণের কষ্ট আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।
ঈমানের উপর থাকলে বিরোধীদের পক্ষ হতে অনেক সমালোচনা ও কষ্টের স্বীকার হতে হয়।
বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে।
আহলে কিতাবের লোকেরা আল্লাহর কিতাবের নির্দেশসমূহকে মান্য করত না এবং তাতে বিকৃত ঘটিয়েছিল।
আল্লাহর কিতাবের বাণীসমূহ প্রচার করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অতীব জরুরি।
আল্লাহর কোন বাণীকে বিকৃত করা যাবে না।
নিজের পাপকর্মের জন্য আনন্দিত হওয়া যাবে না।
অন্যের কর্মের দ্বারা প্রশংসা অর্জনের চিন্তা করা উচিত নয়।
দুনিয়াতে কেউ প্রশংসিত হলেই পরকালে সে মুক্তি পেয়ে যাবে- এরূপ ধারণা করা ঠিক নয়।
শাব্দিক অনুবাদ
১৮৬. لَتُبْلَوُنَّ অবশ্যই তোমরা পরীক্ষিত হবে فِيْۤ দ্বারা اَمْوَالِكُمْ তোমাদের ধন-সম্পদ وَاَنْفُسِكُمْ ও তোমাদের জীবনসমূহের وَلَتَسْمَعُنَّ আর অবশ্যই শুনতে হবে مِنَ (তাদের পক্ষ) হতে اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছে اَلْكِتَابَ কিতাব مِنْ قَبْلِكُمْ তোমাদের পূর্বে وَمِنَ (তাদের পক্ষ) হতে اَلَّذِيْنَ যারা اَشْرَكُوْاۤ শিরক করেছে اَذًى কষ্টকর কথা كَثِيْرًا অনেক। وَاِنْ আর যদি تَصْبِرُوْا তোমরা ধৈর্যধারণ কর وَتَتَّقُوْا ও (আল্লাহকে) ভয় কর, فَاِنَّ তবে অবশ্যই ذٰلِكَ তা হবে مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।
১৮৭. وَاِذْ আর যখন اَخَذَ গ্রহণ করলেন اَللهُ আল্লাহ مِيْثَاقَ অঙ্গীকার اَلَّذِيْنَ যাদেরকে اُوْتُوا দেয়া হয়েছে اَلْكِتَابَ কিতাব لَتُبَيِّنُنَّهٗ অবশ্যই তোমরা এটা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে لِلنَّاسِ মানুষের নিকট وَلَا تَكْتُمُوْنَه এবং তোমরা তা গোপন করবে না فَنَبَذُوْهُ কিন্তু তারা এটা নিক্ষেপ করল وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ তাদের পশ্চাতে وَاشْتَرَوْا এবং তারা বিক্রি করে দিল بِه তা দ্বারা ثَمَنًا মূল্যে قَلِيْلًا সামান্য। فَبِئْسَ আর কতই না নিকৃষ্টতর مَا যা يَشْتَرُوْنَ তারা বিক্রি করেছিল ।
১৮৮. لَا تَحْسَبَنَّ তুমি কখনো মনে করো না, اَلَّذِيْنَ (তাদের ব্যাপারে) যারা يَفْرَحُوْنَ আনন্দিত হয় بِمَاۤ ঐ কারণে যা اَتَوْا তারা নিজেরা করেছে وَيُحِبُّوْنَ এবং তারা ভালোবাসে اَنْ যে, يُحْمَدُوْا তারা প্রশংসিত হবে بِمَا ঐ কারণে যা لَمْ يَفْعَلُوْا তারা নিজেরা করেনি فَلَا تَحْسَبَنَّهُمْ অতএব তুমি তাদের ব্যাপারে কখনো ধারণা করো না بِمَفَازَةٍ মুক্তির ব্যাপারে مِنَ الْعَذَابِ শাস্তি থেকে। وَلَهُمْ (মূলত) তাদের জন্য রয়েছে عَذَابٌ শাস্তি اَلِيْمٌ যন্ত্রণাদায়ক।
সরল অনুবাদ
১৮৬. (হে ঈমানদারগণ!) অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের জীবনসমূহের দ্বারা পরীক্ষিত হবে এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে, তাদের পক্ষ হতে তোমাদেরকে বহু কষ্টকর কথা শুনতে হবে। (এমতাবস্থায়) যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও (আল্লাহকে) ভয় করো, তবে অবশ্যই তা হবে সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। [এখানে ঈমানদারদেরকে এমন একটি বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তারা দুনিয়াতে পরিপূর্ণ ঈমানের উপর চলতে গেলে অনেক কষ্ট ও কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে। একদিকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে পরীক্ষিত হবে এবং অপরদিকে তারা শয়তান ও তার অনুচরদের পক্ষ হতে আগত কষ্টের দ্বারাও পরীক্ষিত হবে। এমনকি কখনো কখনো এমন কিছু কথা শুনতে হবে, যা মানসিকভাবে যে কোন মানুষকে ঘায়েল করে ফেলে। অতএব এই প্রতিটি পরিস্থিতিতে মুমিনদের জন্য আবশ্যক হলো- আল্লাহকে ভয় করা এবং যথাযথভাবে ধৈর্যধারণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।]
১৮৭. (স্মরণ করো) যখন আল্লাহ কিতাবধারীদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, নিশ্চয় তোমরা এটা (কিতাবের বিষয়সমূহ) মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না; কিন্তু তারা এটা তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং তা সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিল। [এখানে আহলে কিতাবদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে। কেননা ইতিপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে বনী ইসরাঈল থেকে এ ধরনের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তাঁর কিতাবে যা কিছু লিপিবদ্ধ আছে, সেগুলো যথাযথভাবে মানুষের কাছে বর্ণনা করবে এবং এর কোন কিছুই গোপন করবে না। বিশেষ করে এখানে সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে যে বর্ণনাগুলো আছে, সেগুলোও গোপন করবে না। বর্তমানে তাদের কাছে বাইবেল নামে যে কিতাব রয়েছে, তাতে এর স্বপক্ষে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। অবশেষে যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নবুওয়াত নিয়ে আগমন করলেন, তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে নবী ও রাসূল হিসেবে চেনার পরও দুনিয়ার অন্যান্য তুচ্ছ স্বার্থের কারণে নিজেদের সেই অঙ্গীকারের মধ্যে আর টিকে থাকতে পারল না। ফলে নিজেদের স্বার্থে তাওরাতের অনেক বিধান গোপন করতে শুরু করল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করে তাদেরকে সতর্ক করে দেন। সেই সাথে অত্র আয়াত দ্বারা উম্মতে মুহাম্মাদীর ঐসব আলেম সমাজকেও সতর্ক করে দেন, যারা নিজেদের সুবিধার্থে আল্লাহ তা‘আলার অনেক বিধান মানুষের কাছে বর্ণনা করতে চায় না বা করে না। বিনিময়ে তারা দ্বীনের মধ্যে এমন কিছুর প্রবেশ ঘটায়, যার দ্বারা মানুষ ক্রমেই বিভ্রান্তের মধ্যে পতিত হয়।] আর তারা যা বিক্রি করেছিল তা কতই না নিকৃষ্টতর।
১৮৮. যারা (নিজেরা) যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে তুমি কখনো মনে করো না যে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। (মূলত) তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে তিনি যখন যুদ্ধে বের হতেন, তখন কিছু সংখ্যক মুনাফিক ঘরে বসে থাকত এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বেরিয়ে যাওয়ার পর বসে থাকতে পারায় আনন্দ প্রকাশ করত। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফিরে আসলে তাঁর কাছে শপথ করে ওজর পেশ করত এবং যে কাজ করেনি, সে কাজের জন্য প্রশংসিত হতে পছন্দ করত। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করে তাদের গোমরাহী ফাঁস করে দেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৭) এখানে ঐসব লোকের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যারা কেবল লোক দেখানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ভালো আমল করে থাকে। তাদের ভালো-মন্দ সব ধরনের কাজের পেছনে মূল উদ্দেশ্য থাকে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করা। শুধু তাই নয়, এসব লোক এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতেও ভালোবাসে, যা সে করেনি অথবা তার দ্বারা সংঘটিত হয়নি। উপরন্তু তারা অন্যের কৃতিত্বকে নিজেরা জবরদখল করে নিতেও ভালোবাসে। প্রকৃতপক্ষে এগুলোই হচ্ছে মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যার পরিপূর্ণ প্রতিফলন ইহুদীদের মধ্যে ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ঘোষণা করেছেন। অতএব কারো দ্বারা অনেক বড় বড় উত্তম কাজ সংঘটিত হতে দেখে, তা নিজেদের আমলের সাথে তুলনা করে কখনো হতাশ হওয়া যাবে না এবং এটাও ধারণা করা যাবে না যে, তারা তাদের ঐসব কর্মের কারণে অধিক সওয়াব পাবে এবং আমার এই তুচ্ছ কাজের জন্য সামান্য সওয়াব লাভ করব। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মূলত মানুষের কর্ম থেকে তাদের নিয়তের দিকটি বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। যার নিয়তের মধ্যে ঘাটতি দেখা দিবে, সে সর্বক্ষেত্রেই কম পুরস্কার পাবে- যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমলের পরিমাণ অনেক বেশি দেখায়। অনুরূপভাবে যার নিয়তের মধ্যে পরিপূর্ণতা থাকবে, সে সর্বক্ষেত্রেই বেশি পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হবে- যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমলের পরিমাণ অতি সামান্য মনে হয়।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
ধন-সম্পদ ও জীবনের নানা ধরণের কষ্ট আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।
ঈমানের উপর থাকলে বিরোধীদের পক্ষ হতে অনেক সমালোচনা ও কষ্টের স্বীকার হতে হয়।
বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে।
আহলে কিতাবের লোকেরা আল্লাহর কিতাবের নির্দেশসমূহকে মান্য করত না এবং তাতে বিকৃত ঘটিয়েছিল।
আল্লাহর কিতাবের বাণীসমূহ প্রচার করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অতীব জরুরি।
আল্লাহর কোন বাণীকে বিকৃত করা যাবে না।
নিজের পাপকর্মের জন্য আনন্দিত হওয়া যাবে না।
অন্যের কর্মের দ্বারা প্রশংসা অর্জনের চিন্তা করা উচিত নয়।
দুনিয়াতে কেউ প্রশংসিত হলেই পরকালে সে মুক্তি পেয়ে যাবে- এরূপ ধারণা করা ঠিক নয়।
وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (১৮৯) اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِي الْاَلْبَابِ (১৯০) اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًاۚ سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ (১৯১) رَبَّنَاۤ اِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ اَخْزَيْتَه ؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ (১৯২) رَبَّنَاۤ اِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُّنَادِيْ لِلْاِيْمَانِ اَنْ اٰمِنُوْا بِرَبِّكُمْ فَاٰمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ (১৯৩) رَبَّنَا وَاٰتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلٰى رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ (১৯৪) فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّيْ لَاۤ اُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰىۚ بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ ۚ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُۚ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ وَاللهُ عِنْدَه حُسْنُ الثَّوَابِ (১৯৫)
শাব্দিক অনুবাদ
১৮৯. وَلِلّٰهِ আল্লাহরই জন্য مُلْكُ আধিপত্য اَلسَّمَاوَاتِ আকাশসমূহের وَالْاَرْضِ ও পৃথিবীর। وَاللهُ আর আল্লাহ عَلٰى উপর كُلِّ প্রত্যেক شَيْءٍ বিষয়ের قَدِيْرٌ পূর্ণ ক্ষমতাবান।
১৯০. اِنَّ নিশ্চয় فِيْ মধ্যে خَلْقِ সৃষ্টির اَلسَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضِ ও জমিনের وَاخْتِلَافِ এবং পরিবর্তনে اَللَّيْلِ রাত্রির وَالنَّهَارِ ও দিবসের لَاٰيَاتٍ নিদর্শনাবলি لِاُولِي الْاَلْبَابِ জ্ঞানবানদের জন্য।
১৯১. اَلَّذِيْنَ যারা يَذْكُرُوْنَ স্মরণ করে اَللهَ আল্লাহকে قِيَامًا দাঁড়িয়ে, وَقُعُوْدًا বসে وَعَلٰى جُنُوْبِهِمْ ও শুয়ে وَيَتَفَكَّرُوْنَ এবং তারা চিন্তা-ভাবনা করে فِيْ خَلْقِ সৃষ্টির বিষয়ে اَلسَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضِ ও জমিনের رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! مَا خَلَقْتَ আপনি সৃষ্টি করেননি هٰذَا এগুলো بَاطِلًا অযথা। سُبْحَانَكَ আপনিই অতি পবিত্র, فَقِنَا অতএব আপনি আমাদেরকে রক্ষা করুন عَذَابَ আযাব হতে اَلنَّارِ জাহান্নামের।
১৯২. رَبَّنَاۤ হে আমাদের প্রতিপালক! اِنَّكَ অবশ্যই আপনি مَنْ যাকে تُدْخِلِ প্রবেশ করাবেন اَلنَّارَ জাহান্নামে, فَقَدْ অতি শীঘ্রই اَخْزَيْتَه তাকে লাঞ্ছিত করবেন। وَمَا আর নেই لِلظَّالِمِيْنَ যালিমদের জন্য مِنْ اَنْصَارٍ কোন সাহায্যকারী।
১৯৩. رَبَّنَاۤ হে আমাদের প্রতিপালক! اِنَّنَا নিশ্চয় আমরা سَمِعْنَا শুনেছি مُنَادِيًا এক আহবানকারীকে يُنَادِيْ আহবান করতে لِلْاِيْمَانِ ঈমানের দিকে اَنْ যে, اٰمِنُوْا তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো بِرَبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি, فَاٰمَنَّا ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! فَاغْفِرْ অতএব ক্ষমা করুন لَنَا আমাদেরকে ذُنُوْبَنَا আমাদের অপরাধসমূহ وَكَفِّرْ এবং মুছে দিন عَنَّا আমাদের থেকে سَيِّئَاتِنَا আমাদের গুনাহসমূহ; وَتَوَفَّنَا আর আপনি আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন مَعَ সাথে اَلْاَبْرَارِ পুণ্যবানদের।
১৯৪. رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! وَاٰتِنَا আমাদেরকে দান করুন مَا যা وَعَدْتَّنَا আপনি আমাদেরকে অঙ্গীকার প্রদান করেছিলেন عَلٰى رُسُلِكَ আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে وَلَا تُخْزِنَا আর আপনি আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না يَوْمَ الْقِيَامَةِ কিয়ামতের দিন; اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি لَا تُخْلِفُ ভঙ্গ করেন না اَلْمِيْعَادَ অঙ্গীকার।
১৯৫. فَاسْتَجَابَ অতঃপর সাড়া দিলেন لَهُمْ তাদের জন্য رَبُّهُمْ তাদের প্রতিপালক (এই বলে যে) اَنِّيْ নিশ্চয় আমি لَاۤ اُضِيْعُ নষ্ট করি না عَمَلَ আমল عَامِلٍ আমলকারীর مّنْكُمْ তোমাদের মধ্য হতে مِنْ ذَكَرٍ পুরুষদের থেকে اَوْ অথবা اُنْثٰىۚ নারীদের। بَعْضُكُمْ তোমাদের কতক তো مِنْ ۢبَعْضٍ অপর কতকেরই অংশ। فَالَّذِيْنَ অতএব যারা هَاجَرُوْا হিজরত করেছে, وَاُخْرِجُوْا এবং বিতাড়িত হয়েছে مِنْ دِيَارِهِمْ তাদের ঘর-বাড়ি হতে, وَاُوْذُوْا আর নির্যাতিত হয়েছে فِيْ سَبِيْلِيْ আমার পথে, وَقَاتَلُوْا এবং যুদ্ধ করেছে وَقُتِلُوْا এবং নিহত হয়েছে - لَاُكَفِّرَنَّ অবশ্যই আমি মোচন করব عَنْهُمْ তাদের থেকে سَيِّئَاتِهِمْ তাদের পাপসমূহ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ এবং তাদেরকে প্রবেশ করাব جَنَّاتٍ জান্নাতসমূহে, تَجْرِيْ প্রবাহিত হয়ে গেছে مِنْ تَحْتِهَا যার নিচ দিয়ে اَلْاَنْهَارُ নদীসমূহ; ثَوَابًا এটা একটি প্রতিদান مِنْ عِنْدِ নিকট হতে اَللهِ আল্লাহর। وَاللهُ عِنْدَهٗ আর আল্লাহরই নিকটে রয়েছে حُسْنُ উত্তম اَلثَّوَابِ প্রতিদান।
সরল অনুবাদ
১৮৯. আকাশসমূহ ও পৃথিবীর আধিপত্য (কেবলমাত্র) আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহই সকল বিষয়ের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
১৯০. নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবা-রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে। [অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি গাফিল না হয়ে, সারা বিশ্বের নিদর্শনসমূহের দিকে বিবেক-বুদ্ধিহীন জন্তু-জানোয়ারের দৃষ্টিতে না তাকিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে, তাহলে প্রতিটি নিদর্শনের সাহায্যে অতি সহজেই যথার্থ ও চূড়ান্ত সত্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারবে। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই আয়াতটি রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাযের পূর্বে আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯)]
১৯১. (এরা হচ্ছে ঐসব লোক) যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে। [লক্ষ্যণীয় যে, এখানে ঐসব ব্যক্তিকে জ্ঞানী হিসেবে পরিচয় প্রদান করা হয়েছে, যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে অথবা সামর্থ্যানুযায়ী সালাত আদায় করে এবং অধিকাংশ সময় আল্লাহর সৃষ্টিকুল নিয়ে- বিশেষ করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। প্রকৃতপক্ষে এসব বিজ্ঞানীর চিন্তা-গবেষণাই সঠিকতার অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে। সুতরাং যেসব বিজ্ঞানী চিন্তা-গবেষণা করে ঠিকই, কিন্তু সালাত আদায় করে না, তারা প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানী নয়। তাদের চিন্তা-গবেষণা মানুষকে কুফরির দিকেই নিয়ে যায়।] (এরা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা এগুলো অযথা সৃষ্টি করেননি। আপনিই অতি পবিত্র, অতএব আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন। [অর্থাৎ বিশ্বজগত সৃষ্টির দিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এই সত্যটি তার সমানে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এটি সম্পূর্ণরূপে একটি জ্ঞানগর্ব ব্যবস্থাপনা। এগুলোর কোনটির অবস্থান এমন নয় যে, তা সৃষ্টিকুলের জন্য কোন প্রয়োজন নেই। আর এই সবকিছুর সমন্বয়েই গঠিত হয়েছে পৃথিবীর ভারসাম্য। এজন্যই গবেষকগণ বলে উঠেন যে, হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র; সুতরাং আপনি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।]
১৯২. হে আমাদের প্রতিপালক! অবশ্যই আপনি যাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, তাকে অবশ্যই লাঞ্ছিত করবেন। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।
১৯৩. হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা এক আহবানকারীকে ঈমানের দিকে আহবান করতে শুনেছি যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, ফলে আমরা তাতে ঈমান এনেছি। [এসব চিন্তা-গবেষণা তাদেরকে এ ব্যাপারেও নিশ্চিত করে দেয় যে, নবী-রাসূলগণ এ বিশ্ব ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছেন এবং বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনাবলি সম্পর্কে যেসব ব্যাখ্যা করেছেন, অতঃপর মানুষের জীবন-ব্যবস্থা সম্পর্কে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, সবগুলো পরিপূর্ণভাবে সত্য ও যথার্থ।] হে আমাদের প্রতিপালক! অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন আর আমাদের গুনাহসমূহ মুছে দিন; আর আপনি আমাদেরকে পুণ্যবানদের সাথে মৃত্যু দান করুন।
১৯৪. হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদেরকে যে অঙ্গীকার প্রদান করেছিলেন তা দান করুন এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না; নিশ্চয় আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। [অর্থাৎ তারা আল্লাহর কাছে দু‘আ করে যে, এ প্রতিশ্রুতিগুলো তাদের ব্যাপারে কার্যকর করা হোক। এ দুনিয়ায় নবীর উপর ঈমান আনার কারণে তারা কাফিরদের ঠাট্টা-বিদ্রূপের শিকার হয়েছে আবার কিয়ামতের দিনও যেন কাফিরদের সামনে তাদের অপমান ও লাঞ্ছনা পোহাতে না হয়। কাফিররা যেন সেদিন তাদের প্রতি এ ধরনের বিদ্রূপবাণ নিক্ষেপ না করে যে, ঈমান এনেও এদের কোন লাভ হলো না। এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার যেন তাদের না হতে হয়, এ আশাই তারা পোষণ করে।]
১৯৫. অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন যে, আমি তোমাদের মধ্য হতে পুরুষ অথবা নারী যেকোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা তো একে অপরেরই অংশ। [অর্থাৎ তোমরা নেকী ও আনুগত্যের দিক দিয়ে সকলেই সমান। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ, চাকর-মনীব, সাদা-কালো, ছোট-বড় ইত্যাদি কোন ভেদাভেদ গ্রহণযোগ্য নয়। বর্ণিত আছে যে, একদা উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা হিজরতের ব্যাপারে কেবল পুরুষদের কথাই উল্লেখ করেছেন; কোন মহিলাদের নাম নেননি কেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর)] অতএব যারা হিজরত করেছে আর যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি হতে বিতাড়িত করা হয়েছে আর যারা আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে ও যুদ্ধ করেছে এবং নিহত হয়েছে- আমি অবশ্যই তাদের পাপসমূহ মোচন করব এবং তাদেরকে (এমন) জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত; এটা আল্লাহর নিকট হতে প্রতিদান (পুরস্কার)। আর আল্লাহরই নিকটে রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আসমান-জমিনের সৃষ্টি এবং রাত-দিনের পরিবর্তন আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।
২. আল্লাহ নিদর্শনসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা জ্ঞানী লোকদের অন্যতম গুণ।
৩. জ্ঞানী লোকজন আল্লাহর নিদর্শনাবলি থেকে অনেক জ্ঞান লাভ করে থাকে।
৪. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা জরুরি।
৫. আল্লাহর কোন সৃষ্টিই নিরর্থক নয়।
৬. ঈমানের দিকে আহবানকারী ডাকে সাড়া দিতে হবে।
৭. পুণ্যবানদের সাথে মৃত্যুবরণ করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
৮. কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত না হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
৯. আল্লাহ তা‘আলা নারী-পুরুষ কারো আমল বিন্দুমাত্র বিনষ্ট করেন না।
১০. আল্লাহর পথে কষ্টের স্বীকার হলে আল্লাহর এ কারণে তাকে উত্তম প্রতিদান ও জান্নাত দান করবেন।
শাব্দিক অনুবাদ
১৮৯. وَلِلّٰهِ আল্লাহরই জন্য مُلْكُ আধিপত্য اَلسَّمَاوَاتِ আকাশসমূহের وَالْاَرْضِ ও পৃথিবীর। وَاللهُ আর আল্লাহ عَلٰى উপর كُلِّ প্রত্যেক شَيْءٍ বিষয়ের قَدِيْرٌ পূর্ণ ক্ষমতাবান।
১৯০. اِنَّ নিশ্চয় فِيْ মধ্যে خَلْقِ সৃষ্টির اَلسَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضِ ও জমিনের وَاخْتِلَافِ এবং পরিবর্তনে اَللَّيْلِ রাত্রির وَالنَّهَارِ ও দিবসের لَاٰيَاتٍ নিদর্শনাবলি لِاُولِي الْاَلْبَابِ জ্ঞানবানদের জন্য।
১৯১. اَلَّذِيْنَ যারা يَذْكُرُوْنَ স্মরণ করে اَللهَ আল্লাহকে قِيَامًا দাঁড়িয়ে, وَقُعُوْدًا বসে وَعَلٰى جُنُوْبِهِمْ ও শুয়ে وَيَتَفَكَّرُوْنَ এবং তারা চিন্তা-ভাবনা করে فِيْ خَلْقِ সৃষ্টির বিষয়ে اَلسَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضِ ও জমিনের رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! مَا خَلَقْتَ আপনি সৃষ্টি করেননি هٰذَا এগুলো بَاطِلًا অযথা। سُبْحَانَكَ আপনিই অতি পবিত্র, فَقِنَا অতএব আপনি আমাদেরকে রক্ষা করুন عَذَابَ আযাব হতে اَلنَّارِ জাহান্নামের।
১৯২. رَبَّنَاۤ হে আমাদের প্রতিপালক! اِنَّكَ অবশ্যই আপনি مَنْ যাকে تُدْخِلِ প্রবেশ করাবেন اَلنَّارَ জাহান্নামে, فَقَدْ অতি শীঘ্রই اَخْزَيْتَه তাকে লাঞ্ছিত করবেন। وَمَا আর নেই لِلظَّالِمِيْنَ যালিমদের জন্য مِنْ اَنْصَارٍ কোন সাহায্যকারী।
১৯৩. رَبَّنَاۤ হে আমাদের প্রতিপালক! اِنَّنَا নিশ্চয় আমরা سَمِعْنَا শুনেছি مُنَادِيًا এক আহবানকারীকে يُنَادِيْ আহবান করতে لِلْاِيْمَانِ ঈমানের দিকে اَنْ যে, اٰمِنُوْا তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো بِرَبِّكُمْ তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি, فَاٰمَنَّا ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! فَاغْفِرْ অতএব ক্ষমা করুন لَنَا আমাদেরকে ذُنُوْبَنَا আমাদের অপরাধসমূহ وَكَفِّرْ এবং মুছে দিন عَنَّا আমাদের থেকে سَيِّئَاتِنَا আমাদের গুনাহসমূহ; وَتَوَفَّنَا আর আপনি আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন مَعَ সাথে اَلْاَبْرَارِ পুণ্যবানদের।
১৯৪. رَبَّنَا হে আমাদের প্রতিপালক! وَاٰتِنَا আমাদেরকে দান করুন مَا যা وَعَدْتَّنَا আপনি আমাদেরকে অঙ্গীকার প্রদান করেছিলেন عَلٰى رُسُلِكَ আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে وَلَا تُخْزِنَا আর আপনি আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না يَوْمَ الْقِيَامَةِ কিয়ামতের দিন; اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি لَا تُخْلِفُ ভঙ্গ করেন না اَلْمِيْعَادَ অঙ্গীকার।
১৯৫. فَاسْتَجَابَ অতঃপর সাড়া দিলেন لَهُمْ তাদের জন্য رَبُّهُمْ তাদের প্রতিপালক (এই বলে যে) اَنِّيْ নিশ্চয় আমি لَاۤ اُضِيْعُ নষ্ট করি না عَمَلَ আমল عَامِلٍ আমলকারীর مّنْكُمْ তোমাদের মধ্য হতে مِنْ ذَكَرٍ পুরুষদের থেকে اَوْ অথবা اُنْثٰىۚ নারীদের। بَعْضُكُمْ তোমাদের কতক তো مِنْ ۢبَعْضٍ অপর কতকেরই অংশ। فَالَّذِيْنَ অতএব যারা هَاجَرُوْا হিজরত করেছে, وَاُخْرِجُوْا এবং বিতাড়িত হয়েছে مِنْ دِيَارِهِمْ তাদের ঘর-বাড়ি হতে, وَاُوْذُوْا আর নির্যাতিত হয়েছে فِيْ سَبِيْلِيْ আমার পথে, وَقَاتَلُوْا এবং যুদ্ধ করেছে وَقُتِلُوْا এবং নিহত হয়েছে - لَاُكَفِّرَنَّ অবশ্যই আমি মোচন করব عَنْهُمْ তাদের থেকে سَيِّئَاتِهِمْ তাদের পাপসমূহ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ এবং তাদেরকে প্রবেশ করাব جَنَّاتٍ জান্নাতসমূহে, تَجْرِيْ প্রবাহিত হয়ে গেছে مِنْ تَحْتِهَا যার নিচ দিয়ে اَلْاَنْهَارُ নদীসমূহ; ثَوَابًا এটা একটি প্রতিদান مِنْ عِنْدِ নিকট হতে اَللهِ আল্লাহর। وَاللهُ عِنْدَهٗ আর আল্লাহরই নিকটে রয়েছে حُسْنُ উত্তম اَلثَّوَابِ প্রতিদান।
সরল অনুবাদ
১৮৯. আকাশসমূহ ও পৃথিবীর আধিপত্য (কেবলমাত্র) আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহই সকল বিষয়ের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
১৯০. নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবা-রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে। [অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি গাফিল না হয়ে, সারা বিশ্বের নিদর্শনসমূহের দিকে বিবেক-বুদ্ধিহীন জন্তু-জানোয়ারের দৃষ্টিতে না তাকিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে, তাহলে প্রতিটি নিদর্শনের সাহায্যে অতি সহজেই যথার্থ ও চূড়ান্ত সত্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারবে। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই আয়াতটি রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাযের পূর্বে আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯)]
১৯১. (এরা হচ্ছে ঐসব লোক) যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে। [লক্ষ্যণীয় যে, এখানে ঐসব ব্যক্তিকে জ্ঞানী হিসেবে পরিচয় প্রদান করা হয়েছে, যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে অথবা সামর্থ্যানুযায়ী সালাত আদায় করে এবং অধিকাংশ সময় আল্লাহর সৃষ্টিকুল নিয়ে- বিশেষ করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। প্রকৃতপক্ষে এসব বিজ্ঞানীর চিন্তা-গবেষণাই সঠিকতার অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে। সুতরাং যেসব বিজ্ঞানী চিন্তা-গবেষণা করে ঠিকই, কিন্তু সালাত আদায় করে না, তারা প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানী নয়। তাদের চিন্তা-গবেষণা মানুষকে কুফরির দিকেই নিয়ে যায়।] (এরা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা এগুলো অযথা সৃষ্টি করেননি। আপনিই অতি পবিত্র, অতএব আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন। [অর্থাৎ বিশ্বজগত সৃষ্টির দিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এই সত্যটি তার সমানে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এটি সম্পূর্ণরূপে একটি জ্ঞানগর্ব ব্যবস্থাপনা। এগুলোর কোনটির অবস্থান এমন নয় যে, তা সৃষ্টিকুলের জন্য কোন প্রয়োজন নেই। আর এই সবকিছুর সমন্বয়েই গঠিত হয়েছে পৃথিবীর ভারসাম্য। এজন্যই গবেষকগণ বলে উঠেন যে, হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র; সুতরাং আপনি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।]
১৯২. হে আমাদের প্রতিপালক! অবশ্যই আপনি যাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, তাকে অবশ্যই লাঞ্ছিত করবেন। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।
১৯৩. হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা এক আহবানকারীকে ঈমানের দিকে আহবান করতে শুনেছি যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, ফলে আমরা তাতে ঈমান এনেছি। [এসব চিন্তা-গবেষণা তাদেরকে এ ব্যাপারেও নিশ্চিত করে দেয় যে, নবী-রাসূলগণ এ বিশ্ব ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছেন এবং বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনাবলি সম্পর্কে যেসব ব্যাখ্যা করেছেন, অতঃপর মানুষের জীবন-ব্যবস্থা সম্পর্কে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, সবগুলো পরিপূর্ণভাবে সত্য ও যথার্থ।] হে আমাদের প্রতিপালক! অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন আর আমাদের গুনাহসমূহ মুছে দিন; আর আপনি আমাদেরকে পুণ্যবানদের সাথে মৃত্যু দান করুন।
১৯৪. হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদেরকে যে অঙ্গীকার প্রদান করেছিলেন তা দান করুন এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না; নিশ্চয় আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। [অর্থাৎ তারা আল্লাহর কাছে দু‘আ করে যে, এ প্রতিশ্রুতিগুলো তাদের ব্যাপারে কার্যকর করা হোক। এ দুনিয়ায় নবীর উপর ঈমান আনার কারণে তারা কাফিরদের ঠাট্টা-বিদ্রূপের শিকার হয়েছে আবার কিয়ামতের দিনও যেন কাফিরদের সামনে তাদের অপমান ও লাঞ্ছনা পোহাতে না হয়। কাফিররা যেন সেদিন তাদের প্রতি এ ধরনের বিদ্রূপবাণ নিক্ষেপ না করে যে, ঈমান এনেও এদের কোন লাভ হলো না। এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার যেন তাদের না হতে হয়, এ আশাই তারা পোষণ করে।]
১৯৫. অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন যে, আমি তোমাদের মধ্য হতে পুরুষ অথবা নারী যেকোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা তো একে অপরেরই অংশ। [অর্থাৎ তোমরা নেকী ও আনুগত্যের দিক দিয়ে সকলেই সমান। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ, চাকর-মনীব, সাদা-কালো, ছোট-বড় ইত্যাদি কোন ভেদাভেদ গ্রহণযোগ্য নয়। বর্ণিত আছে যে, একদা উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা হিজরতের ব্যাপারে কেবল পুরুষদের কথাই উল্লেখ করেছেন; কোন মহিলাদের নাম নেননি কেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর)] অতএব যারা হিজরত করেছে আর যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি হতে বিতাড়িত করা হয়েছে আর যারা আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে ও যুদ্ধ করেছে এবং নিহত হয়েছে- আমি অবশ্যই তাদের পাপসমূহ মোচন করব এবং তাদেরকে (এমন) জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত; এটা আল্লাহর নিকট হতে প্রতিদান (পুরস্কার)। আর আল্লাহরই নিকটে রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আসমান-জমিনের সৃষ্টি এবং রাত-দিনের পরিবর্তন আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।
২. আল্লাহ নিদর্শনসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা জ্ঞানী লোকদের অন্যতম গুণ।
৩. জ্ঞানী লোকজন আল্লাহর নিদর্শনাবলি থেকে অনেক জ্ঞান লাভ করে থাকে।
৪. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা জরুরি।
৫. আল্লাহর কোন সৃষ্টিই নিরর্থক নয়।
৬. ঈমানের দিকে আহবানকারী ডাকে সাড়া দিতে হবে।
৭. পুণ্যবানদের সাথে মৃত্যুবরণ করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
৮. কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত না হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
৯. আল্লাহ তা‘আলা নারী-পুরুষ কারো আমল বিন্দুমাত্র বিনষ্ট করেন না।
১০. আল্লাহর পথে কষ্টের স্বীকার হলে আল্লাহর এ কারণে তাকে উত্তম প্রতিদান ও জান্নাত দান করবেন।
لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِي الْبِلَادِ (১৯৬) مَتَاعٌ قَلِيْلٌ۫ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمِهَادُ (১৯৭) لٰكِنِ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا نُزُلًا مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِّلْاَبْرَارِ (১৯৮)
শাব্দিক অনুবাদ
১৯৬. لَا يَغُرَّنَّكَ তোমাকে যেন প্রতারিত না করে تَقَلُّبُ তাদের বিচরণ اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে فِي الْبِلَادِ শহরসমূহে।
১৯৭. مَتَاعٌ (এগুলো) সম্ভোগ মাত্র قَلِيْلٌ সামান্য; ثُمَّ অতঃপর مَأْوَاهُمْ তাদের ঠিকানা হবে جَهَنَّمُ জাহান্নাম। وَبِئْسَ আর তা কতইনা নিকৃষ্ট اَلْمِهَادُ বিশ্রামস্থল!
১৯৮. لٰكِنِ কিন্তু اَلَّذِيْنَ যারা اِتَّقَوْا ভয় করে رَبَّهُمْ নিজেদের প্রতিপালককে, لَهُمْ তাদের জন্য রয়েছে جَنَّاتٌ এমন জান্নাতসমূহ, تَجْرِيْ প্রবাহিত রয়েছে مِنْ تَحْتِهَا যার তলদেশ দিয়ে اَلْاَنْهَارُ নদীসমূহ । خَالِدِيْنَ তারা চিরস্থায়ী হবে فِيْهَا সেখানে نُزُلًا এটা অতিথেয়তা مِنْ عِنْدِ নিকট থেকে اَللهِ আল্লাহর; وَمَا আর যা কিছু রয়েছে عِنْدَ اللهِ আল্লাহর নিকট خَيْر যেগুলো উত্তম لِلْاَبْرَارِ পুণ্যবানদের জন্য।
সরল অনুবাদ
১৯৬. (হে মুহাম্মাদ!) যারা কুফরী করেছে শহরসমূহে তাদের (অবাধ) বিচরণ যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। [এখানে পৃথিবীতে কাফিরদের বিচরণ বলতে তাদের আর্থিক ও ক্ষমতার প্রাচুর্যতাকে বুঝানো হয়েছে- যার কারণে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গোটা পৃথিবীতে অবাধে চলাফেরা করতে পারে এবং সকল ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তারাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর সাধারণ লোকেরা তাদের এসব প্রাচুর্যতা দেখে ভীষণভাবে লালায়িত হয়- এমনকি তা পাওয়ার আশায় নিজের ঈমান হারানোর উপক্রম হয় অথবা ঈমান বিসর্জন দেয়। ফলে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াত দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সতর্ক করার মাধ্যমে গোটা মুসলিম উম্মাহকে এই ধ্বংসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। যাতে করে কোন মুসলিম দুনিয়ার ধন-সম্পদের প্রতারণার ফাঁদে আটকা না পড়ে এবং নিজেদের ঈমানকে আরো মজবুত করে নিতে পারে। আর তাদের এসব প্রাচুর্যতার মূল রহস্য আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াতেই বর্ণনা করে দিয়েছেন।]
১৯৭. (কেননা এসব কিছু হচ্ছে) সামান্য (কয়েকদিনের) সম্ভোগ মাত্র [অর্থাৎ কাফিরদের এসব প্রাচুর্যতা সামান্য কয়েক দিনের জন্য তথা কেবল দুনিয়ার জীবনের জন্য নির্দিষ্ট। সুতরাং পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য তাদের কিছুই নেই। অপরদিকে দুনিয়ার জীবনে এগুলো তাদের কাছে যত বেশিই সংরক্ষিত থাকুক না কেন, জান্নাতের নিয়ামতের তুলনায় এগুলো একেবারেই সামান্য। যেহেতু পরকালে তাদের জন্য কোন অংশ নেই, সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে এগুলো দান করেছেন। যাতে করে দুনিয়াটাকেই তারা জান্নাত হিসেবে উপভোগ করে নিতে পারে।]; অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!
১৯৮. কিন্তু যারা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে তারা সর্বদাই অবস্থান করবে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে (তাদের জন্য) আতিথেয়তা; আর আল্লাহর নিকট যেসব বস্তু (পুরস্কার হিসেবে) রয়েছে তা পুণ্যবানদের জন্য বহুগুণে উত্তম। [অর্থাৎ কাফিরদের প্রাচুর্যতার বিপরীতে যারা-ই অসচ্ছল জীবনযাপন করবে এবং প্রাচুর্যতা পেয়েও আল্লাহকে ভয় করে সেগুলো আল্লাহর পথেই ব্যয় করবে, তারাই জাহান্নামের বিপরীতে জান্নাত লাভ করার মাধ্যমে মহা পুরস্কারে ভূষিত হবে। সুতরাং এটি দুনিয়ার জীবনে প্রাপ্ত কাফিরদের পুরস্কারের চেয়ে অনেক উৎকৃষ্ট।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দুনিয়াতে কাফিরদের চলাফেরা দেখে প্রতারিত হওয়া যাবে না।
২. দুনিয়া কাফিরদের জন্য সম্ভোগের ক্ষেত্র মাত্র।
৩. আল্লাহকে ভয় করলে জান্নাত লাভ করা যাবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৯৬. لَا يَغُرَّنَّكَ তোমাকে যেন প্রতারিত না করে تَقَلُّبُ তাদের বিচরণ اَلَّذِيْنَ যারা كَفَرُوْا কুফরী করেছে فِي الْبِلَادِ শহরসমূহে।
১৯৭. مَتَاعٌ (এগুলো) সম্ভোগ মাত্র قَلِيْلٌ সামান্য; ثُمَّ অতঃপর مَأْوَاهُمْ তাদের ঠিকানা হবে جَهَنَّمُ জাহান্নাম। وَبِئْسَ আর তা কতইনা নিকৃষ্ট اَلْمِهَادُ বিশ্রামস্থল!
১৯৮. لٰكِنِ কিন্তু اَلَّذِيْنَ যারা اِتَّقَوْا ভয় করে رَبَّهُمْ নিজেদের প্রতিপালককে, لَهُمْ তাদের জন্য রয়েছে جَنَّاتٌ এমন জান্নাতসমূহ, تَجْرِيْ প্রবাহিত রয়েছে مِنْ تَحْتِهَا যার তলদেশ দিয়ে اَلْاَنْهَارُ নদীসমূহ । خَالِدِيْنَ তারা চিরস্থায়ী হবে فِيْهَا সেখানে نُزُلًا এটা অতিথেয়তা مِنْ عِنْدِ নিকট থেকে اَللهِ আল্লাহর; وَمَا আর যা কিছু রয়েছে عِنْدَ اللهِ আল্লাহর নিকট خَيْر যেগুলো উত্তম لِلْاَبْرَارِ পুণ্যবানদের জন্য।
সরল অনুবাদ
১৯৬. (হে মুহাম্মাদ!) যারা কুফরী করেছে শহরসমূহে তাদের (অবাধ) বিচরণ যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। [এখানে পৃথিবীতে কাফিরদের বিচরণ বলতে তাদের আর্থিক ও ক্ষমতার প্রাচুর্যতাকে বুঝানো হয়েছে- যার কারণে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গোটা পৃথিবীতে অবাধে চলাফেরা করতে পারে এবং সকল ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তারাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর সাধারণ লোকেরা তাদের এসব প্রাচুর্যতা দেখে ভীষণভাবে লালায়িত হয়- এমনকি তা পাওয়ার আশায় নিজের ঈমান হারানোর উপক্রম হয় অথবা ঈমান বিসর্জন দেয়। ফলে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াত দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সতর্ক করার মাধ্যমে গোটা মুসলিম উম্মাহকে এই ধ্বংসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। যাতে করে কোন মুসলিম দুনিয়ার ধন-সম্পদের প্রতারণার ফাঁদে আটকা না পড়ে এবং নিজেদের ঈমানকে আরো মজবুত করে নিতে পারে। আর তাদের এসব প্রাচুর্যতার মূল রহস্য আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াতেই বর্ণনা করে দিয়েছেন।]
১৯৭. (কেননা এসব কিছু হচ্ছে) সামান্য (কয়েকদিনের) সম্ভোগ মাত্র [অর্থাৎ কাফিরদের এসব প্রাচুর্যতা সামান্য কয়েক দিনের জন্য তথা কেবল দুনিয়ার জীবনের জন্য নির্দিষ্ট। সুতরাং পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য তাদের কিছুই নেই। অপরদিকে দুনিয়ার জীবনে এগুলো তাদের কাছে যত বেশিই সংরক্ষিত থাকুক না কেন, জান্নাতের নিয়ামতের তুলনায় এগুলো একেবারেই সামান্য। যেহেতু পরকালে তাদের জন্য কোন অংশ নেই, সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে এগুলো দান করেছেন। যাতে করে দুনিয়াটাকেই তারা জান্নাত হিসেবে উপভোগ করে নিতে পারে।]; অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!
১৯৮. কিন্তু যারা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে তারা সর্বদাই অবস্থান করবে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে (তাদের জন্য) আতিথেয়তা; আর আল্লাহর নিকট যেসব বস্তু (পুরস্কার হিসেবে) রয়েছে তা পুণ্যবানদের জন্য বহুগুণে উত্তম। [অর্থাৎ কাফিরদের প্রাচুর্যতার বিপরীতে যারা-ই অসচ্ছল জীবনযাপন করবে এবং প্রাচুর্যতা পেয়েও আল্লাহকে ভয় করে সেগুলো আল্লাহর পথেই ব্যয় করবে, তারাই জাহান্নামের বিপরীতে জান্নাত লাভ করার মাধ্যমে মহা পুরস্কারে ভূষিত হবে। সুতরাং এটি দুনিয়ার জীবনে প্রাপ্ত কাফিরদের পুরস্কারের চেয়ে অনেক উৎকৃষ্ট।]
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. দুনিয়াতে কাফিরদের চলাফেরা দেখে প্রতারিত হওয়া যাবে না।
২. দুনিয়া কাফিরদের জন্য সম্ভোগের ক্ষেত্র মাত্র।
৩. আল্লাহকে ভয় করলে জান্নাত লাভ করা যাবে।
وَاِنَّ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ لَا يَشْتَرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ (১৯৯) يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا۫ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ (২০০)
শাব্দিক অনুবাদ
১৯৯. وَاِنَّ নিশ্চয় مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ আহলে কিতাবের মধ্যে (এমন লোকও রয়েছে), لَمَنْ যারা يُؤْمِنُ বিশ্বাস স্থাপন করে بِاللهِ আল্লাহর প্রতি وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ ও তোমাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ এবং তাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি। خَاشِعِيْنَ তারা খুবই বিনয়ী لِلّٰهِ আল্লাহর বিষয়ে; لَا يَشْتَرُوْنَ তারা বিক্রি করে না بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর আয়াতসমূহ ثَمَنًا মূল্যে قَلِيْلًا সামান্য। اُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক لَهُمْ তাদের জন্য রয়েছে اَجْرُهُمْ তাদের প্রতিদান عِنْدَ رَبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের নিকট; اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ سَرِيْعُ দ্রুত اَلْحِسَابِ হিসাব গ্রহণকারী।
২০০. يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا হে ঈমানদারগণ! اِصْبِرُوْا তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করো وَصَابِرُوْا ও ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো وَرَابِطُوْا এবং প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকো। وَاتَّقُوا আর তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে, لَعَلَّكُمْ যাতে তোমরা تُفْلِحُوْنَ সফলকাম হতে পার।
সরল অনুবাদ
১৯৯. নিশ্চয় আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহর প্রতি ও তোমাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে (কুরআন) তার প্রতি এবং তাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। তারা আল্লাহর (আদেশ পালনের) প্রতি খুবই নিষ্ঠাবান; তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে না। তাদের জন্যই তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান; নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
২০০. হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করো আর ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং (শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য) প্রস্তুত থাকো। [রিবাত শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো, ঘোড়াকে বাঁধা। পারিভাষিক অর্থে রিবাত বলা হয়, ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত বা জিহাদের ময়দানে মুজাহিদদের ঘাঁটি পাহারা দেয়া; যাতে শত্রুবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ থেকে ইসলামী রাষ্ট্র বা মুসলিমবাহিনীকে রক্ষা করা যায়। এর অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন- হাদীসে এসেছে, সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর পথে একদিন অথবা একরাত পাহারা দেয়া একাধারে একমাস সাওম পালন করা ও সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম। সে যদি (ঐ অবস্থায়) মারা যায়, তাহলে তার আমলের নেকী জারি থাকবে, যেমনটি সে আমল করে আসছিল এবং তার রিযিক জারি রাখা হবে এবং সে ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৫০৪৭)সীমান্ত পাহারাদারদের জন্য জান্নাত অবধারিত। সাহল ইবনে হানযালিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তারা হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সফরে ছিলেন। তখন দ্রুতগতিতে উট চালিয়ে সন্ধ্যাকালে মাগরিবের সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট গিয়ে পৌঁছলেন। এমন সময় একজন অশ্বারোহী সৈনিক এসে তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাদের নিকট হতে আলাদা হয়ে ঐ সকল পাহাড়ের উপর আরোহণ করে দেখতে পেলাম যে, হাওয়াযিন গোত্রের স্ত্রী-পুরুষ সকলেই তাদের উট, বকরী সবকিছু নিয়ে হুনাইনে একত্রিত হয়েছে। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তাহলে ঐ সকল বস্তু আগামীকাল মুসলিমদের গনীমতের সামগ্রীতে পরিণত হবে। এরপর তিনি বললেন, আজ রাতে কে আমাদেরকে পাহারা দেয়ার জন্য প্রস্তুত? তখন আনাস ইবনে আবু মারসাদ আল-গানাবী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি পাহারা দেব। তিনি বললেন, তাহলে তুমি ঘোড়ায় আরোহণ করো। অতঃপর তিনি তার একটি ঘোড়ায় আরোহণ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে উদ্দেশ্য করে নির্দেশ দিলেন, যাও- এ দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকার দিকে রওয়ানা হয়ে এর চূড়ায় পৌঁছে পাহারায় রত থাকো। আমরা যেন তোমার আসার আগে আজ রাতে কোন ধোঁকায় না পড়ি। অতঃপর ভোরবেলায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সালাতের স্থানে গিয়ে ফজরের দু’রাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা তোমাদের পাহারাদার অশ্বারোহী সৈনিকের কোন সন্ধান পেয়েছ কি? সকলে উত্তর করল, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি পাহারায় রত আছেন বলে মনে হয়, কিন্তু দেখতে পাইনি। এরপর ফজরের সালাতের ইকামত দেয়া হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাত পড়তে আরম্ভ করলেন। এমতাবস্থায় তিনি উপত্যকার দিকে লক্ষ্য রাখতে রাখতে সালাত শেষ করে সালাম ফেরালেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা সকলে সুসংবাদ নাও যে, তোমাদের পাহারাদার সৈনিক তোমাদের নিকট এসে পড়েছে। তখন আমরা উপত্যকার গাছের ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলাম যে, তিনি সত্যই এসে পড়েছেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাম করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেভাবেই আমি এই উপত্যকার উপরাংশের শেষ মাথায় গিয়ে পৌঁছেছিলাম। সকাল হওয়ার পর আমি উভয় পাহাড়ের উপত্যকা দুটির উপর দৃষ্টি রাখলাম, কিন্তু কোন শত্রুকে দেখতে পেলাম না। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি সারা রাত কখনও কি ঘোড়ার পিঠ হতে নেমেছিলে? তিনি বললেন, না- সালাত পড়ার জন্য অথবা পায়খানা-প্রস্রাবের প্রয়োজন ছাড়া কখনো ঘোড়ার পিঠ হতে নামিনি। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার জন্য জান্নাত অবধারিত হলো। তোমার জীবনে আর কোন অতিরিক্ত নেক কাজ না করলেও চলবে। (অর্থাৎ সারা রাত জাগ্রত থেকে পাহারায় রত থাকার মতো বৃহৎ নেক কাজটি তোমার জান্নাতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট। অবশ্য ফরয-ওয়াজিব যথারীতি আমল করতে হবে)। (আবু দাউদ, হা/২৫০৩)পাহারা দানের রাত্রি কদরের রাত্রির চেয়েও ফযীলতপূর্ণ। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন রাত্রির সংবাদ দেব না, যে রাত্রটি কদরের রাতের চেয়েও ফযীলতপূর্ণ? (তা হলো আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ) প্রহরী কোন ভীতিকর স্থানে এমন মন-মানসিকতা নিয়ে পাহারা দেয় যে, হয়তো তার আর নিজ পরিবারের নিকট আর ফিরে আসা হবে না। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪২৪)আল্লাহর রাস্তায় জাগ্রত চোখের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম। আবু রাইহানা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় (পাহারার কাজে) নিদ্রাহীন কাটিয়েছে, সে চোখকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। (নাসাঈ, হা/৩১১৭)অপর হাদীসে এসেছে,আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, দু’প্রকার চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। একটি হচ্ছে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী চোখ; আর অপরটি হচ্ছে এমন চোখ, যা আল্লাহর পথে পাহারারত অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (তিরমিযী, হা/১৬৩৯)পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদের আমল সর্বদা জারি থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে জীবিত থাকাবস্থায় যে নেক আমল করত আল্লাহ তার উপর তা অব্যাহত রাখবেন এবং তার রিযিক জারি রাখবেন, তাকে ফিতনা থেকে দূরে রাখবেন এবং কিয়ামতের দিন তাকে সব রকমের পেরেশানী থেকে নিরাপদ অবস্থায় উঠাবেন। (ইবনে মাজাহ, হা/২৭৬৭) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‐ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ ] তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আহলে কিতাবের মধ্যে যারা ঈমান আনয়ন করবে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধসমূহ যথাযথভাবে পালন করবে, তারাও আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হবে।
২. সকল ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
৩. মুসলিম ভূখন্ডের প্রতিরক্ষা করতে হবে।
শাব্দিক অনুবাদ
১৯৯. وَاِنَّ নিশ্চয় مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ আহলে কিতাবের মধ্যে (এমন লোকও রয়েছে), لَمَنْ যারা يُؤْمِنُ বিশ্বাস স্থাপন করে بِاللهِ আল্লাহর প্রতি وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ ও তোমাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ এবং তাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি। خَاشِعِيْنَ তারা খুবই বিনয়ী لِلّٰهِ আল্লাহর বিষয়ে; لَا يَشْتَرُوْنَ তারা বিক্রি করে না بِاٰيَاتِ اللهِ আল্লাহর আয়াতসমূহ ثَمَنًا মূল্যে قَلِيْلًا সামান্য। اُولٰٓئِكَ এরাই ঐসব লোক لَهُمْ তাদের জন্য রয়েছে اَجْرُهُمْ তাদের প্রতিদান عِنْدَ رَبِّهِمْ তাদের প্রতিপালকের নিকট; اِنَّ اللهَ নিশ্চয় আল্লাহ سَرِيْعُ দ্রুত اَلْحِسَابِ হিসাব গ্রহণকারী।
২০০. يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا হে ঈমানদারগণ! اِصْبِرُوْا তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করো وَصَابِرُوْا ও ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো وَرَابِطُوْا এবং প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকো। وَاتَّقُوا আর তোমরা ভয় করো اَللهَ আল্লাহকে, لَعَلَّكُمْ যাতে তোমরা تُفْلِحُوْنَ সফলকাম হতে পার।
সরল অনুবাদ
১৯৯. নিশ্চয় আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহর প্রতি ও তোমাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে (কুরআন) তার প্রতি এবং তাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। তারা আল্লাহর (আদেশ পালনের) প্রতি খুবই নিষ্ঠাবান; তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে না। তাদের জন্যই তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান; নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
২০০. হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করো আর ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং (শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য) প্রস্তুত থাকো। [রিবাত শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো, ঘোড়াকে বাঁধা। পারিভাষিক অর্থে রিবাত বলা হয়, ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত বা জিহাদের ময়দানে মুজাহিদদের ঘাঁটি পাহারা দেয়া; যাতে শত্রুবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ থেকে ইসলামী রাষ্ট্র বা মুসলিমবাহিনীকে রক্ষা করা যায়। এর অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন- হাদীসে এসেছে, সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর পথে একদিন অথবা একরাত পাহারা দেয়া একাধারে একমাস সাওম পালন করা ও সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম। সে যদি (ঐ অবস্থায়) মারা যায়, তাহলে তার আমলের নেকী জারি থাকবে, যেমনটি সে আমল করে আসছিল এবং তার রিযিক জারি রাখা হবে এবং সে ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৫০৪৭)সীমান্ত পাহারাদারদের জন্য জান্নাত অবধারিত। সাহল ইবনে হানযালিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তারা হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সফরে ছিলেন। তখন দ্রুতগতিতে উট চালিয়ে সন্ধ্যাকালে মাগরিবের সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট গিয়ে পৌঁছলেন। এমন সময় একজন অশ্বারোহী সৈনিক এসে তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাদের নিকট হতে আলাদা হয়ে ঐ সকল পাহাড়ের উপর আরোহণ করে দেখতে পেলাম যে, হাওয়াযিন গোত্রের স্ত্রী-পুরুষ সকলেই তাদের উট, বকরী সবকিছু নিয়ে হুনাইনে একত্রিত হয়েছে। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তাহলে ঐ সকল বস্তু আগামীকাল মুসলিমদের গনীমতের সামগ্রীতে পরিণত হবে। এরপর তিনি বললেন, আজ রাতে কে আমাদেরকে পাহারা দেয়ার জন্য প্রস্তুত? তখন আনাস ইবনে আবু মারসাদ আল-গানাবী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি পাহারা দেব। তিনি বললেন, তাহলে তুমি ঘোড়ায় আরোহণ করো। অতঃপর তিনি তার একটি ঘোড়ায় আরোহণ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে উদ্দেশ্য করে নির্দেশ দিলেন, যাও- এ দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকার দিকে রওয়ানা হয়ে এর চূড়ায় পৌঁছে পাহারায় রত থাকো। আমরা যেন তোমার আসার আগে আজ রাতে কোন ধোঁকায় না পড়ি। অতঃপর ভোরবেলায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সালাতের স্থানে গিয়ে ফজরের দু’রাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা তোমাদের পাহারাদার অশ্বারোহী সৈনিকের কোন সন্ধান পেয়েছ কি? সকলে উত্তর করল, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি পাহারায় রত আছেন বলে মনে হয়, কিন্তু দেখতে পাইনি। এরপর ফজরের সালাতের ইকামত দেয়া হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাত পড়তে আরম্ভ করলেন। এমতাবস্থায় তিনি উপত্যকার দিকে লক্ষ্য রাখতে রাখতে সালাত শেষ করে সালাম ফেরালেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা সকলে সুসংবাদ নাও যে, তোমাদের পাহারাদার সৈনিক তোমাদের নিকট এসে পড়েছে। তখন আমরা উপত্যকার গাছের ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলাম যে, তিনি সত্যই এসে পড়েছেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাম করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেভাবেই আমি এই উপত্যকার উপরাংশের শেষ মাথায় গিয়ে পৌঁছেছিলাম। সকাল হওয়ার পর আমি উভয় পাহাড়ের উপত্যকা দুটির উপর দৃষ্টি রাখলাম, কিন্তু কোন শত্রুকে দেখতে পেলাম না। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি সারা রাত কখনও কি ঘোড়ার পিঠ হতে নেমেছিলে? তিনি বললেন, না- সালাত পড়ার জন্য অথবা পায়খানা-প্রস্রাবের প্রয়োজন ছাড়া কখনো ঘোড়ার পিঠ হতে নামিনি। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার জন্য জান্নাত অবধারিত হলো। তোমার জীবনে আর কোন অতিরিক্ত নেক কাজ না করলেও চলবে। (অর্থাৎ সারা রাত জাগ্রত থেকে পাহারায় রত থাকার মতো বৃহৎ নেক কাজটি তোমার জান্নাতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট। অবশ্য ফরয-ওয়াজিব যথারীতি আমল করতে হবে)। (আবু দাউদ, হা/২৫০৩)পাহারা দানের রাত্রি কদরের রাত্রির চেয়েও ফযীলতপূর্ণ। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন রাত্রির সংবাদ দেব না, যে রাত্রটি কদরের রাতের চেয়েও ফযীলতপূর্ণ? (তা হলো আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ) প্রহরী কোন ভীতিকর স্থানে এমন মন-মানসিকতা নিয়ে পাহারা দেয় যে, হয়তো তার আর নিজ পরিবারের নিকট আর ফিরে আসা হবে না। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪২৪)আল্লাহর রাস্তায় জাগ্রত চোখের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম। আবু রাইহানা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় (পাহারার কাজে) নিদ্রাহীন কাটিয়েছে, সে চোখকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। (নাসাঈ, হা/৩১১৭)অপর হাদীসে এসেছে,আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, দু’প্রকার চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। একটি হচ্ছে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী চোখ; আর অপরটি হচ্ছে এমন চোখ, যা আল্লাহর পথে পাহারারত অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (তিরমিযী, হা/১৬৩৯)পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদের আমল সর্বদা জারি থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে জীবিত থাকাবস্থায় যে নেক আমল করত আল্লাহ তার উপর তা অব্যাহত রাখবেন এবং তার রিযিক জারি রাখবেন, তাকে ফিতনা থেকে দূরে রাখবেন এবং কিয়ামতের দিন তাকে সব রকমের পেরেশানী থেকে নিরাপদ অবস্থায় উঠাবেন। (ইবনে মাজাহ, হা/২৭৬৭) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‐ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ ] তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
১. আহলে কিতাবের মধ্যে যারা ঈমান আনয়ন করবে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধসমূহ যথাযথভাবে পালন করবে, তারাও আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হবে।
২. সকল ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
৩. মুসলিম ভূখন্ডের প্রতিরক্ষা করতে হবে।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন