hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের রুকনসমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

লেখকঃ কতিপয় ছাত্র

৪৩
সালাতের সুন্নতসমূহ:
সালাতে কিছু সুন্নত কাজ রয়েছে, যা মুসল্লীকে পরিপূর্ণ সাওয়াব প্রাপ্তির জন্য আদায় করতে হয়। নিম্নে এসব সুন্নত উল্লেখ করা হলো:

১- নিম্নোক্ত অবস্থায় কাঁধ বরাবর বা কান বরাবর হাত উঠানো সুন্নত।

ক- তাকবীরে তাহরীমার সময়।

খ- রুকুতে যাওয়ার সময়।

গ- রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়।

ঘ- দু রাকা‘আত শেষে তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য দাঁড়ানোর সময় হাত উঠানো। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস থেকে এটি প্রমাণিত,

«أن النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كان إِذَا قَامَ فِي الصَّلاَةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يَكُونَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ [ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ হলো কাঁধ বরাবর।] ، ثم يكبر، فإذا أراد أن يركع رفعهما مثل ذلك، وإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رفعهما كذلك»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন কাঁধ বরারব দু হাত উঠাতেন। রুকুর তাকবীর বলার সময়ও তিনি কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন। রুকু হতে মাথা উঠালে তখনও কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯০।]

তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য দাঁড়ালে তখনও কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে। কেননা ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«كان إِذَا قَامَ من الركعتين رفع يديه»

“ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দু রাকা‘আত শেষে তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য দাঁড়ালে দু’হাত উঠাতেন”। [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি।] তিনি এ হাদীসকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

২- বুকের উপর বা বুকের নিচে ও নাভীর উপরে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা। সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُونَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ اليَدَ اليُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ اليُسْرَى فِي الصَّلاَةِ»

“লোকদের নির্দেশ দেওয়া হতো যে, সালাতে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪০। ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, এ হাদীসটি মারফু‘ হাদীসের হুকুম।]

ওয়ায়েল ইবন হুজর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ»

“আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুকের উপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন”। [সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ৪৭৯।আলবানী রহ. হাদীসটির সনদকে দ‘য়ীফ বলেছেন; তবে হাদীসটি অন্যান্য বর্ণনায় তিনি সহীহ বলেছেন।]

৩- সালাতের শুরুতে নিম্নোক্ত দো‘আ পড়া,

«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»

‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আপনার নাম বরকতপূর্ণ, আপনার মাহাত্ম্য সুউচ্চ এবং আপনি ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৯। হাদীসের শব্দাবলী ইবন মাজাহ থেকে নেওয়া, হাদীস নং ৮০৪।আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

৪- প্রথম রাকা‘আতে চুপে চুপে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া ও বাকী সব রাকা‘আতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ فَإِذَا قَرَأۡتَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٩٨ ﴾ [ النحل : ٩٨ ]

“সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাও”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৮]

৫- সূরা ফাতিহা শেষে ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী সালাত আদায়কারী সব মুসল্লি কর্তৃক ‘আমীন’ বলা। কেননা হাদীসে এসেছে,

«إِذَا قَالَ الإِمَامُ : { غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ } [ الفاتحة : 7] فَقُولُوا : آمِينَ، فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ المَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

“ইমাম ‘ওয়ালাদ দওয়াল্লীন..’ পড়লে তোমরা ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার এ (আমীন) বলা ফিরিশতাদের (আমীন) বলার সাথে একই সময় হয়, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮২।]

» كان النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذا قَرَأَ : { وَلَا الضَّالِّينَ } [ الفاتحة : 7] فَقَالَ : " آمِينَ " يَمُدُّ بِهَا صَوْتَهُ» .

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘ওয়ালাদ-দওয়াল্লীন’ পড়তেন তখন তিনি ‘আমীন’ বলেছেন এবং এতে স্বর দীর্ঘ করেছেন”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৮৮৪২। শু‘আইব আরনাউত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন।]

৬- সূরা ফাতিহার পরে অন্য কোনো কিরাত পড়া। আর তা হলো সূরা ফাতিহার পরে একটি সূরা বা এক বা দু আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করা। ফজরের দু রাকা‘আত ফরয, যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার প্রথম দু রাকা‘আত ফরয সালাত সূরা ফাতিহার পরে উক্ত পরিমাণ এক বা দু আয়াত বা একটি সূরা মিলানো। কেননা আব্দুল্লাহ ইবন আবু কাতাদা তার পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقْرَأُ بِأُمِّ الكِتَابِ وَسُورَةٍ مَعَهَا فِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ مِنْ صَلاَةِ الظُّهْرِ وَصَلاَةِ العَصْرِ، وَيُسْمِعُنَا الآيَةَ أَحْيَانًا»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর ও আসরের সালাতের প্রথম দু রাকা‘আতে সূরা ফাতিহার সাথে আরেকটি সূরা পড়তেন। কখনো কখনো তিনি কোনো কোনো আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭৮।]

৭- জাহরী সালাত তথা যে সব সালাতে স্বশব্দে কিরাত পড়তে হয় তাতে কিরাত উচ্চস্বরে পড়া। আর সিররী সালাত তথা যে সব সালাতে নিম্নস্বরে কিরাত পড়তে হয় তাতে কিরাত নিম্নস্বরে পড়া। অর্থাৎ ফজর, মাগরিবের প্রথম দু রাকা‘আত ও ‘ইশার প্রথম দু’ রাকা‘আত সালাতে কিরাত উচ্চস্বরে পড়া, তাছাড়া বাকী সালাতে প্রত্যেক রাকা‘আতে কিরাত নিম্নস্বরে পড়া। এভাবে উচ্চস্বরে ও নিম্নস্বরে কিরাত পড়া শুধু ফরয সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দিনের বেলায় নফল সালাতে কিরাত নিম্নস্বরে পড়া আর রাতের বেলার নফল সালাতে মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটলে কিরাত কিছুটা উচ্চস্বরে পড়া মুস্তাহাব। তবে অন্যের ঘুম বা কষ্টের কারণ হলে নিম্নস্বরে কিরাত পড়া মুস্তাহাব।

৮- ফজরের সালাতে দীর্ঘ কিরাত পড়া। যোহর, আসর ও ইশার সালাত মধ্যম কিরাত পড়া। আর মাগরিবের সালাত কিরাত ছোট পড়া। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ أَحَدٍ أَشْبَهَ صَلَاةً بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ فُلَانٍ قَالَ سُلَيْمَانَ - كَانَ يُطِيلُ الرَّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ مِنَ الظُّهْرِ، وَيُخَفِّفُ الْأُخْرَيَيْنِ، وَيُخَفِّفُ الْعَصْرَ، وَيَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصَّلِ، وَيَقْرَأُ فِي الْعِشَاء بِوَسَطِ الْمُفَصَّلِ، وَيَقْرَأُ فِي الصُّبْحِ بِطُوَلِ الْمُفَصَّلِ»

“আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের সাথে অমুকের চেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ সালাত আর কারও পেছনে আদায় করি নি। বর্ণনাকারী সুলাইমান রহ. বলেন, তিনি যোহরের প্রথম দু রাকা‘আত লম্বা করতেন, শেষের দু রাকা‘আত সংক্ষিপ্ত করতেন। আর আসরের সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন। আর মাগরিবের সালাত কিসারে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন। আর ইশার সালাত আওসাতে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন। আর ভোরের সালাত অর্থাৎ ফজর তিওয়ালে মুফাসসাল দ্বারা আদায় করতেন”। [সুনান নাসায়ী, হাদীস নং ৮৯২।আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

৯- সালাতে বসার পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত আছে। তিনি শেষ বৈঠকের তাশাহহুদ ব্যতীত অন্যান্য বৈঠক ও বসাসমূহ ‘ইফতিরাশ’ সুরতে বসতেন (প্রথম বৈঠকে বা পায়ের উপর বসা এবং ডান পা বিছিয়ে দেওয়া)। আর শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের সময় ‘তাওয়াররুক’ করে বসতেন (শেষ রাকা‘আতে বা পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসা)। আবু হুমাইদ সা‘সা‘য়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাহাবীগণের উপস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করছিলেন। এতে তিনি বলেছেন,

«فَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ جَلَسَ عَلَى رِجْلِهِ اليُسْرَى، وَنَصَبَ اليُمْنَى، وَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَةِ الآخِرَةِ قَدَّمَ رِجْلَهُ اليُسْرَى، وَنَصَبَ الأُخْرَى وَقَعَدَ عَلَى مَقْعَدَتِهِ»

“প্রথম বৈঠকে বাম পায়ের ওপর বসতেন এবং ডান পা বিছিয়ে দিতেন। আর যখন শেষ রাকা‘আতে বসতেন তখন বাম পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৮।]

অতএব, ‘ইফতিরাশ’ হলো প্রথম বৈঠকে বাম পায়ের উপর বসা এবং ডান পা বিছিয়ে দেওয়া।

আর ‘তাওয়াররুক’ হলো শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের সময় বাম পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসা।

ফায়েদা: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহহুদের সময় বাম হাত বাম হাঁটুর উপর আর ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন এবং শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন।

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَعَدَ فِي الصَّلَاةِ، جَعَلَ قَدَمَهُ الْيُسْرَى تَحْتَ فَخْذِهِ الْيُمْنَى وَسَاقِهِ، وَفَرَشَ قَدَمَهُ الْيُمْنَى، وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى، وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخْذِهِ الْيُمْنَى، وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতের মধ্যে বসতেন, তখন তিনি তাঁর বাম পা ও এর নলাকে ডান রানের নীচে রাখতেন, ডান পা বিছিয়ে দিতেন, বাম হাত বাম পায়ের রানের উপর রাখতেন, ডান হাত ডান পায়ের রানের উপর স্থাপন করতেন এবং শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৮৮।আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

«كان لَا يُجَاوِزُ بَصَرُهُ إِشَارَتَهُ»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ ইশারা থেকে অগ্রসর হত না”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৯০।আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]

১০- সাজদাহ্‌তে দো‘আ পড়া। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَلَا وَإِنِّي نُهِيتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا، فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ، وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ»

“সাবধান! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে আমি যেন রুকু বা সাজদাহরত অবস্থায় কুরআন পাঠ না করি। তোমরা রুকু অবস্থায় মহান প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব বর্ণনা করবে এবং সাজদাহ রত অবস্থায় অধিক দো‘আ পড়ার চেষ্টা করবে; কেননা সে অবস্থা তোমাদের দো‘আ কবুল হওয়ার অধিক উপযোগী”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৯।]

১১- শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরূদ দুরূদ পাঠ করা।

«اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ»

“হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধরদের ওপর সালাত পেশ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং তাঁর বংশধরদের ওপর সালাত পেশ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতিপ্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।

হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধরদের ওপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই আপনি অতিপ্রশংসিত, অতি মর্যাদায় অধিকারী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭০। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৬।]

১২- তাশাহহুদ ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ শেষে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দো‘আ পাঠ করা। যেমন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنْ صَلَاتِهِ فَلْيَدْعُ بِأَرْبَعٍ، ثُمَّ لِيَدْعُ بَعْدُ بِمَا شَاءَ : اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ، وَفِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَفِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ» “তোমাদের কেউ সালাত শেষ করলে (তাশাহহুদ ও দুরূদ পাঠ শেষ হলে) সে যেন চারটি দো‘আ পড়ে, এরপরে ইচ্ছামত অন্য দো‘আ পড়বে। দো‘আগুলো হলো, হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জাহান্নাম ও কবরের ‘আযাব থেকে পানাহ চাই, জীবিতকাল ও মৃত্যুকালীন ফিতনা ও মাসীহ আদ-দাজ্জালের ফিতনা থেকে পানাহ চাই”। [সুনান আল-কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং ২৮৮৩। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৮।মুসলিমে হাদীসটি এভাবে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُّدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ "রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যখন শেষ তাশাহহুদ পাঠ করা শেষ করবে তখন যেন সে চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৮।]

১৩- মুসল্লির বাম দিকে দ্বিতীয় সালাম ফিরানো। হাদীসে এসেছে,

«أن رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كان يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ، وَعَنْ يَسَارِهِ، حَتَّى يرَى بَيَاضَ خَدِّهِ»

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডানে এবং বামে সালাম ফিরাতেন। এমনকি তিনি এমনভাবে মুখ ঘুরাতেন যে তার গালের শুভ্র আভা দেখা যেতো”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮২।]

১৪- সালাম শেষে কিছু যিকির ও দো‘আ পাঠ করা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সালাম ফিরানোর পরে কিছু যিকির ও দো‘আ এসেছে, সেগুলোর নির্বাচিত অংশ এখানে উল্লেখ করা হলো:

ক- সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে তিনবার أستغفر الله পড়তেন।

অতঃপর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়া:

«اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ»

“হে আল্লাহ, তুমিই শান্তি, কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী।" [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯১।]

খ- মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তার হাত ধরে বললেন,

«يَا مُعَاذُ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ»، فَقَالَ : «أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُولُ : اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ»

“আল্লাহর কসম! হে মু‘আয, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ‘আল্লাহর কসম! হে মু‘আয, আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বলেন, ‘আমি তোমাকে কিছু উপদেশ দিচ্ছি তা প্রত্যেক (ফরয) সালাতের পড়ে পড়তে ভুলবে না। তুমি বলবে, হে আল্লাহ আপনি আমাকে আপনার যিকির, শুকর ও সুন্দরভাবে ইবাদাত করার তাওফীক দিন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫২২।আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

গ- মুগীরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয সালাতের পর বলতেন:

«لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ، وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ»

“এক আল্লাহ ব্যতীত (সত্য) কোনো ইলাহ নাই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর ওপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই। আর আপনি কাউকে না দিলে তাকে কেউ দিতে পারবে না। আপনার কাছে (সৎকাজ ভিন্ন) কোনো সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৪। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৮।]

ঘ-আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَحَمِدَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، فَتْلِكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ، وَقَالَ : تَمَامَ الْمِائَةِ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ»

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের শেষে তেত্রিশ বার আল্লাহর তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করবে, তেত্রিশ বার আল্লাহর তাহমীদ বা প্রশংসা করবে এবং তেত্রিশ বার তাকবীর বা আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা করবে আর এইভাবে নিরানব্বই বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর” অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক ও তাঁর কোনো শরীক নেই। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনিই। সব প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম; তার গোনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও মাফ করে দেওয়া হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৭।]

ঙ- আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنَّةِ إِلَّا أَنْ يَمُوتَ»

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাকে মৃত্যু ব্যতীত কোনো কিছু জান্নাতে প্রবেশে বাধা দিবে না”। [সুনান আল-কুবরা লিন-নাসায়ী, হাদীস নং ৯৮৪৮; আল-‘মুজাম আল-কাবীর, হাদীস নং ৭৫৩২। ইমাম হাইসামী রহ. মাজমাউয যাওয়ায়েদে (২/১৪৮) বলেন, হাদীসের সনদটি হাসান।]

চ- আমর ইবন মায়মুন আউদী রহ. থেকে বর্ণিত, শিক্ষক যেমন ছাত্রদের লেখা শিক্ষা দেন, সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তেমনি তাঁর সন্তানদের এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন: “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর এগুলো থেকে পানাহ চাইতেন, তিনি বলতেন,

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ العُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ»

“হে আল্লাহ! আমি ভীরুতা, অতিবার্ধক্য, দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের ‘আযাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮২২।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন