hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের রুকনসমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

লেখকঃ কতিপয় ছাত্র

চতুর্থত: কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এর শর্তাবলী:
কালেমা শাহাদাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এর কতিপয় শর্ত রয়েছে, যা জানা ও সে অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেকটি মুসলিমের ওপর ফরয। কুরআন ও সুন্নাহ পরিসংখ্যান ও গবেষণা করে এসব শর্ত বের করা হয়েছে।

১- ইলম বা জ্ঞান:

কালেমা শাহাদার প্রথম শর্ত হলো, ইলম বা জ্ঞান। এর দলীল আল্লাহ তা‘আলার বাণী,

﴿فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ ﴾ [ محمد : ١٩ ]

“অতএব জেনে রাখো, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯]

সহীহ মুসলিমে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ»

“যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর নিশ্চিত জ্ঞান নিয়ে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬।]

এখানে ‘ইলম’ বা জ্ঞান দ্বারা কালেমা শাহাদার দু’টি অংশ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর প্রকৃত ইলমকে বুঝানো হয়েছে। এ ইলম অনুযায়ী আমল করার জন্য যা কিছু অত্যাবশ্যকীয় করে সব কিছুই এখানে উদ্দেশ্য। আর ইলমের বিপরীত হলো জাহল বা অজ্ঞতা, অজানা ও নির্বুদ্ধিতা। এ উম্মতের মুশরিকরা (ইসলাম গ্রহণের পরেও যারা শির্কে লিপ্ত) ইলমের প্রকৃত অর্থ না জানার কারণেই তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর বিপরীত কাজ করে। তারা ‘ইলাহ’ শব্দের হাকীকী অর্থ, ‘ইসবাত’ ও ‘নফি’ এর মর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর প্রকৃত অর্থ না খুঁজে এর শাব্দিক অর্থকে বুঝিয়ে ইচ্ছাকৃত এ কালেমার অপব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। অথচ মুশরিকরাও এর প্রকৃত অর্থ জানত। যেমন তারা বলত:

﴿أَجَعَلَ ٱلۡأٓلِهَةَ إِلَٰهٗا وَٰحِدًاۖ ﴾ [ص : ٥ ]

“সে কি সকল উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে”? [সূরা সদ, আয়াত: ৫]

তারা আরো বলতো,

﴿أَنِ ٱمۡشُواْ وَٱصۡبِرُواْ عَلَىٰٓ ءَالِهَتِكُمۡۖ ﴾ [ص : ٦ ]

“যাও এবং তোমাদের উপাস্যগুলোর ওপর অবিচল থাক”। [সূরা সাদ, আয়াত: ৬]

২- ইয়াকীন:

ইয়াকীন হলো সন্দেহ, সংশয়, দ্বিধা ও দোদুল্যমান কোনো একটাকে গ্রহণ না করে মাঝামাঝি স্থানে বিরত থাকা বা নিছক সন্দেহ-সংশয় ইত্যাদির বিপরীত। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর প্রকৃত অর্থ হলো, নিঃসন্দেহে দৃঢ়তার সাথে মনে প্রাণে এ কালেমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনা করা এবং একমাত্র আল্লাহকে প্রকৃত ইলাহ হিসেবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য নবী হিসেবে মেনে নেওয়া, আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য সব ইলাহকে অস্বীকার করা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর যারা নবী দাবী করে তাদের দাবীকে প্রত্যাখ্যান করা। কোনো ব্যক্তি যদি কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’ এর অর্থ ও চাহিদার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে বা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদতকে প্রত্যাখ্যান করতে অস্বীকার করে বা অন্যের ইবাদত থেকে বিরত না থাকে; তবে এ দু’টি কালেমা তার কোনো উপকারে আসবে না। এ শর্তের দলীল হলো, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাহাদাতাইন সম্পর্কে বলেছেন,

«لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ»

“যে কোনো বান্দা এ দু’টি বিষয়ের প্রতি সন্দেহাতীত দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ، فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ»

“এ দেওয়ালের পেছনে যার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হয়, যে আন্তরিক দৃঢ় বিশ্বাসে এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দাও”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১।]

তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের প্রশংসা করে বলেছেন,

﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ﴾ [ الحجرات : ١٥ ]

“মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করে নি।”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫]

পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের নিন্দা করে বলেছেন,

﴿ وَٱرۡتَابَتۡ قُلُوبُهُمۡ فَهُمۡ فِي رَيۡبِهِمۡ يَتَرَدَّدُونَ ٤٥﴾ [ التوبة : ٤٥ ]

“আর তাদের অন্তরসমূহ সংশয়গ্রস্ত হয়ে গেছে। সুতরাং তারা তাদের সংশয়েই ঘুরপাক খেতে থাকে”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৪৫]

আব্দুল্লাহ ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«الصَّبْرُ نِصْفُ الْإِيمَانِ : وَالْيَقِينُ الْإِيمَانُ»

“সবর (ধৈর্য) হলো ঈমানের অর্ধেক আর ইয়াকীন হলো পূর্ণাঙ্গ ঈমান”। [মু‘জাম আল-কাবীর, লিত-ত্ববরানী, হাদীস নং ৮৫৪৪, ৯/১০৪; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৩৬৬৬, ২/৪৮৪। হাকিম রহ. হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী রহ.-ও সহীহ বলেছেন, তালখীস (৩৬৬৬)।]

তাই সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, যে ব্যক্তি শাহাদাতাইনের প্রকৃত অর্থে দৃঢ় বিশ্বাস করবে, তার সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে একমাত্র রাব্বুল আলামীনের ইবাদত ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যই প্রকাশ পাবে।

৩- কবুল করা (গ্রহণ করা) যা প্রত্যাখানের বিপরীত

অর্থাৎ অনেক মানুষ কালেমা শাহাদাতের অর্থ জানে ও বুঝে এবং এর চাহিদাও ইয়াকীনের সাথে বিশ্বাস করে; কিন্তু অহংকার ও হিংসার কারণে তা প্রত্যাখ্যান করে। এটি ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান আলেমদের অবস্থা। কেননা তারা এক আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে সাক্ষী দেন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে জানেন, যেমনিভাবে তারা নিজেদের সন্তানদেরকে চিনে, তা সত্বেও তারা এ সত্যকে গ্রহণ করে না। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ حَسَدٗا مِّنۡ عِندِ أَنفُسِهِم مِّنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلۡحَقُّۖ ﴾ [ البقرة : ١٠٩ ]

“সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে হিংসাবশতঃ (তারা এরূপ করে থাকে)”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১০৯]

এমনিভাবে মুশরিকরাও কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ জানত এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য নবী হিসেবে স্বীকার করত; কিন্তু তারা অহংকারের বশবর্তী হয়ে তা প্রত্যাখান করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা সম্পর্কে বলেছেন,

﴿إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥﴾ [ الصافات : ٣٥ ]

“তাদেরকে যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড় কোনো (সত্য) ইলাহ নেই’, তখন নিশ্চয় তারা অহঙ্কার করত”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৩৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿فَإِنَّهُمۡ لَا يُكَذِّبُونَكَ وَلَٰكِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ يَجۡحَدُونَ ٣٣﴾ [ الانعام : ٣٣ ]

“কিন্তু তারা তো তোমাকে অস্বীকার করে না; বরং যালিমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩৩]

৪- আল-ইনকিয়াদ তথা বশ্যতা স্বীকার বা মেনে নেওয়া:

কবুল (গ্রহণ করা) ও ইনকিয়াদ (বশ্যতা স্বীকার করা) এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো, ইনকিয়াদ মানে কর্মের মাধ্যমে কোনো কিছুর মেনে নেওয়া প্রকাশ করা। আর কবুল হলো, কথা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে কোনো কিছুকে সঠিক বলে গ্রহণ করা এবং তা প্রকাশ করা। উভয়টিই অত্যাবশকীয়। তন্মধ্যে ইনকিয়াদ হলো কায়মনোবাক্যে মেনে নেওয়া, বশ্যতা স্বীকার করা, আনুগত্য করা এবং আল্লাহর বিধানের অমান্য না করা ও যেভাবে বিধান এসেছে ঠিক সেভাবে অনুসরণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُ﴾ [ الزمر : ٥٣ ]

“আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তাঁর কাছে নিজকে সমর্পণ কর।”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ دِينٗا مِّمَّنۡ أَسۡلَمَ وَجۡهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ﴾ [ النساء : ١٢٥ ]

“আর দীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজকে পূর্ণ সমর্পণ করল”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৫]

﴿وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ﴾ [ لقمان : ٢٢ ]

“আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে।” [সূরা লোকমান, আয়াত: ২২]

একমাত্র মহান আল্লাহর ইবাদতই হলো ইনকিয়াদের প্রকৃত অর্থ। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনকিয়াদ হলো, তাঁর সুন্নতের অনুসরণ করা, তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা কবুল করা, অনুসরণ করা এবং তাঁর বিচারে সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেছেন,

﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]

“অতএব, তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]

এ আয়াতে তাদের ঈমানের সঠিকতার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফয়সালাকে পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেওয়া শর্ত করা হয়েছে। অতএব, তিনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব বিধান নিয়ে এসেছেন সেগুলোতে নিজেকে পূর্ণ সমর্পণ করা ও পূর্ণ সম্মতিতে সেগুলোর অনুসরণ করা অপরিহার্য।

৫- সত্যবাদিতা

এর বিপরীত হলো মিথ্যাবাদিতা। ঈমানের এ শর্ত সম্পর্কে সহীহ হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَادِقًا مِنْ قَلْبِهِ، دَخَلَ الْجَنَّةَ»

“যে ব্যক্তি অন্তরের সত্যবাদিতার সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল সাক্ষ্য দিবে, এ অবস্থায় মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২২০০৩, শু‘আইব আরনাউত বলেছেন, হাদীসের সনদটি শাইখাইনের শর্তে সহীহ।]

পক্ষান্তরে কেউ যদি মুখে এ সাক্ষ্য দিল; কিন্তু অন্তরে এর মর্ম অস্বীকার করল তাহলে তার এ সাক্ষ্য কোনো কাজে আসবে না এবং সে নাজাতপ্রাপ্তও হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের মৌখিক সাক্ষ্যের ব্যাপারে বলেছেন,

﴿نَشۡهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُۥ وَٱللَّهُ يَشۡهَدُ إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ لَكَٰذِبُونَ ١﴾ [ المنافقون : ١ ]

“আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তুমি তাঁর রাসূল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী”। [সূরা আল-মুনাফিকূন, আয়াত: ১]

মুনাফিক ও কাফিরদের মিথ্যা সাক্ষ্যের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ ٨﴾ [ البقرة : ٨ ]

“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’; অথচ তারা মুমিন নয়”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮]

৬- ইখলাস বা একনিষ্ঠতা

এর বিপরীত হলো শির্ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ﴾ [ الزمر : ٢، ٣ ]

“অতএব, আল্লাহর ‘ইবাদাত কর তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২-৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿قُلۡ إِنِّيٓ أُمِرۡتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ١١﴾ [ الزمر : ١١ ]

“বলুন, ‘নিশ্চয় আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আমি যেন আল্লাহর ইবাদাত করি তাঁর-ই জন্য আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿قُلِ ٱللَّهَ أَعۡبُدُ مُخۡلِصٗا لَّهُۥ دِينِي ١٤﴾ [ الزمر : ١٤ ]

“বলুন, ‘আমি আল্লাহর-ই ইবাদাত করি, তাঁরই জন্য আমার আনুগত্য একনিষ্ঠ করে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১৪]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ، مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ، أَوْ نَفْسِهِ»

“কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত লাভে সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি যে খালিস অন্তরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (পূর্ণ কালেমা তাইয়্যিবাহ) বলে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯।]

আর এটি ‘ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে অর্থের পরিপূরক, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ : لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ»

“আল্লাহ তা‘আলা তো এমন ব্যক্তিকে জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই) বলে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩।]

অতএব, ইখলাস হলো সমস্ত ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই করা। এতে অন্য কাউকে শরীক না করা। এমনকি আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফিরিশতা বা আল্লাহর প্রেরিত কোনো নবীকেও অংশিদার না করা । এমনিভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের ওপর অনুসরণ ও অনুকরণেও ইখলাস থাকা। বিদ‘আত ও সুন্নতের বিপরীত সব ধরণের কাজ বর্জন করা। এছাড়া শাসকগোষ্ঠী শরী‘আত বিরোধী যেসব আইন-কানুন তৈরি করে সেগুলো বর্জন ও বিরোধিতা করা। কেননা কেউ এসব আইনের ওপর সন্তুষ্ট থাকলে বা সেটা অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করার পর তা মেনে নিলে সে মুখলিস ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

৭- ভালোবাসা

এর বিপরীত হলো অপছন্দ করা, শত্রুতা পোষণ করা। অতএব, বান্দার ওপর ফরয হলো সে তার সকল কাজ-কর্মে, কথা-বার্তায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসবে। আল্লাহর অলী ও তাঁর অনুগত বান্দাদেরকেও সে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসবে। এ সব ভালোবাসা যখন সত্যিকার অর্থে হবে, তখন সেটার প্রভাব তার বাহ্যিক দেহে পরিলক্ষিত হবে। তখন দেখা যাবে বান্দা সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত্য করে, যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহর অনুগত্যের মাঝে সে স্বাদ আস্বাদন করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব কথা ও কাজ পছন্দ করে সেগুলো পালনের জন্য দ্রুত ঝাপিয়ে পড়ে, অন্যায় ও গুনাহের কাজের ব্যাপারে সতর্ক থাকে, সে নিজেকে ও পরিবারকে তা থেকে বিরত রাখে, এসব কাজকে ঘৃণা করে; যদিও এসব কাজ অন্তরের কাছে প্রিয় ও আনন্দদায়ক। কেননা সে জানে জাহান্নাম প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী বস্তু দিয়ে পরিবেষ্টিত আর জান্নাত কষ্ট ও মনের অপছন্দ জিনিস দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যখনই বান্দা এগুলো সত্যিকারভাবে পালন করতে পারবে তখনই তার প্রকৃত ভালোবাসা প্রমাণিত হবে। এ কারণেই যুন্নুন আল-মিসরি রহ. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কখন বুঝব যে, আমি আল্লাহকে ভালোবাসি? তিনি বললেন, ‘যখন তুমি দেখবে যে, মনের অসন্তুষ্ট ও কষ্টকর আদেশ ধৈর্যের মাধ্যমে পালন করছ’। [আবু নু‘আইম ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’-তে উল্লেখ করেছেন, ৯/৩৬৩।]

কেউ কেউ বলেছেন, যে ব্যক্তি দাবী করে যে, সে আল্লাহকে ভালোবাসে অথচ তার কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা সে দাবী অনুযায়ী হয় না তাহলে তার দাবী মিথ্যা। আল্লাহর ভালোবাসার জন্য তিনি তাঁর রাসূলের ভালোবাসাকে শর্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١﴾ [ ال عمران : ٣١ ]

“বলুন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১

৮- আল্লাহ ব্যতীত অন্য সবকিছুর ইবাদত অস্বীকার করা

এ শর্তটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীসে পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مَنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ، وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ»

“যে ব্যক্তি ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই’, এ কথা বলবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য উপাস্যকে অস্বীকার করবে, তবে তার জানমাল নিরাপদ হবে। আর তার হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩।] [‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর শর্তাবলী সামান্য পরিমার্জন করে শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান ইবন জিবরীন রহ.-এর ‘শাহাদাতানে, মা‘আনাহুমা ওয়ামা তাসতালযিমুহু কুল্লুম মিনহুমা’ শিরোনাম থেকে নেওয়া হয়েছে।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন