HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দৈনন্দিন সহীহ দু‘আ ও কুরআন-সুন্নার চিকিৎসা

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
দৈনন্দিন সহীহ দু‘আ ও কুরআন-সুন্নার চিকিৎসা

##

মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ

সম্পাদনা

শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

ভূমিকা
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ

কুরআন ও হাদীসের মাসনূন দু‘আগুলো সংকলন করে এ গ্রন্থটি প্রকাশ করার তাওফীক দেয়াতে আল্লাহ তা‘আলার নিকট অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। অগণিত দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর- যার পরে আর কোন নবী নেই।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কেবল তাঁর ইবাদাতের উদ্দেশ্যে। আর দু‘আ হচ্ছে একটি ইবাদাত। সূরা মুমিনের ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। মহান আল্লাহ রাববুল আলামীনের যাবতীয় বিধিবিধান অনুসরণ এবং মাসনূন দু‘আসমূহ পাঠ করার মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য লাভ করা যায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের শুরুতে ও শেষে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ যেসকল দু‘আ পাঠ করেছেন এবং কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা যেসকল দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন, সেসব দু‘আ এ বইয়ে সংকলন করা হয়েছে। আশা করি পাঠকসমাজ বইটি পড়ে খুবই উপকৃত হবেন।

এ বইটি রচনা করতে গিয়ে যেসকল কিতাবের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে সেসকল কিতাবের লিখকদেরকে আল্লাহ তা‘আলা যেন উত্তম প্রতিদান দান করেন। বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে জানাই আমত্মরিক মুবারকবাদ। আল্লাহ তা‘আলা যেন তাদেরকেও উত্তম বিনিময় দান করেন। বইটি সুন্দর ও নির্ভুল করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও বইটিকে আরো সুন্দর ও এর মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে কোন পরামর্শ সাদরে গ্রহণযোগ্য।

পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলার কাছে এ প্রার্থনাই করছি যে, তিনি যেন আমাদের এ শ্রমকে কবুল করেন এবং একে কিয়ামতের দিন আমাদের সকলের নাজাতের অসীলা বানিয়ে দেন। আমীন

আল্লাহর অনুগ্রহের একামত্ম মুখাপেক্ষী

মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

ইমাম পাবলিকেশন্স লিমিটেড

সম্পাদকীয়
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَحْمَةٍ لِّلْعٰلَمِيْنَ وَعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ

সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।

আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদের সূরা আহযাবের ৪১ নং আয়াতে বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক হারে আল্লাহর যিকির করো। সূরা বাক্বারার ১৫২ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আল্লাহ তা‘আলাকে কীভাবে স্মরণ করতে হবে রাসূলুল্লাহ ﷺ তা আমলের মাধ্যমে উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহর স্মরণ এবং তাঁর সাহায্য কামনার লক্ষ্যে যে দু‘আগুলো পড়তে হবে হাদীস গ্রন্থে তা উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসের কিতাব হতে বাছাই করে সহীহ দু‘আগুলো এ কিতাবে সংকলিত করা হয়েছে। সেই সাথে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যেসকল দু‘আ কুরআনের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন এবং পূর্ববর্তী নবীদের যেসকল দু‘আ কুরআন মাজীদে উল্লেখ করা হয়েছে সেসকল গুরুতবপূর্ণ দু‘আগুলোও এ বইয়ে সংকলন করা হয়েছে। আশা করি এ বইখানা মুসলিম সমাজের যথেষ্ট উপকারে আসবে।

বাজারে অগণিত দু‘আর বই থাকলেও এ বইটির বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। কারণ এর মধ্যে দু‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রতিটি দু‘আর সাথে কুরআন ও হাদীসের দলীলসহ এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। দু‘আ হচ্ছে আল্লাহর সাহায্য ও তাঁর রহমত লাভের এক অনন্য মাধ্যম, তাই কুরআন ও সুন্নার দু‘আগুলো শিখে বাসত্মব জীবনে আমল করা আমাদের সকলের জন্য একামত্ম কর্তব্য।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সে তাওফীক দান করুন। আমীন

বিনীত

শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

চেয়ারম্যান

ইমাম পাবলিকেশন্স লিমিটেড

১ম অধ্যায় দু‘আ দু‘আর গুরুত্ব ও ফযীলত
১. আল্লাহ তা‘আলা দু‘আ কবুল করেন :

﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْۤ أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ﴾

তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারের কারণে আমার ইবাদাত থেকে নাফরমানী করে, অচিরেই তারা অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মুমিন- ৬০)

﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ﴾

আর যখন আমার বান্দারা আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয় আমি (তার) নিকটেই রয়েছি। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে ডাকে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে, এতে করে তারা সঠিক পথে চলতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৬)

এ আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে বলেছেন যে, তোমরা আমার কাছে চাও, আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।

২. প্রতি রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন :

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْاٰخِرِ فَيَقُوْلُ مَنْ يَدْعُوْنِىْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ وَمَنْ يَسْأَلُنِىْ فَأُعْطِيَهٗ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِىْ فَأَغْفِرَ لَهٗ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের মহান রব প্রতি রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ডেকে বলেন, কে আমাকে ডাকবে- আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার কাছে চাইবে- আমি তাকে দান করব। কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে- আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; তিরমিযী, হা/৩৪৯৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬৬; মিশকাত, হা/১২২৩।]

১ সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; তিরমিযী, হা/৩৪৯৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬৬; মিশকাত, হা/১২২৩।

৩. আল্লাহকে ডাকলে বান্দারই কল্যাণ হয় :

﴿قُلْ مَا يَعْبَأُ بِكُمْ رَبِّيْ لَوْلَا دُعَآؤُكُمْ فَقَدْ كَذَّبْتُمْ فَسَوْفَ يَكُوْنُ لِزَامًا﴾

আপনি বলুন, তোমাদের ব্যাপারে আমার রব কোন পরোয়া করেন না, যদি তোমরা তাঁকে না ডাক। তোমরা তো তাঁকে অস্বীকার করেছ। কাজেই শীঘ্রই তোমাদের উপর এসে পড়বে আযাব। (সূরা ফুরকান- ৭৭)

এ আয়াতের মধ্যে বলা হয়েছে যে, আল্লাহকে না ডাকলে আল্লাহর কিছু আসে-যায় না। তাই আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে আল্লাহকে ডাকতে হবে এবং তাঁর কাছেই চাইতে হবে।

৪. দু‘আ ইবাদাতের একটি মৌলিক অংশ :

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ : اَلدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ

নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, দু‘আ হচ্ছে ইবাদাত। [আবু দাঊদ, হা/১৪৮১; তিরমিযী, হা/২৯৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮২৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৭৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮০২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৯০; মিশকাত, হা/২২৩০।]

২ আবু দাঊদ, হা/১৪৮১; তিরমিযী, হা/২৯৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮২৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৭৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮০২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৯০; মিশকাত, হা/২২৩০।

৫. দু‘আ আল্লাহর কাছে অতি সম্মানিত জিনিস :

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ  : لَيْسَ شَيْءٌ اَكْرَمَ عَلَى اللهِ مِنَ الدُّعَاءِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর কাছে দু‘আর চাইতে অধিক সম্মানজনক আর কোন জিনিস নেই। [তিরমিযী, হা/৩৩৭০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৩৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৭১২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৭০; মিশকাত, হা/২২৩২।]

৩ তিরমিযী, হা/৩৩৭০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৩৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৭১২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৭০; মিশকাত, হা/২২৩২।

৬. দু‘আর ফলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় :

عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَا يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيْدُ فِيْ الْعُمُرِاِلَّا الْبِرُّ

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দু‘আ ছাড়া অন্য কিছু তাকদীর পরিবর্তন করতে পারে না, আর নেকী ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। [তিরমিযী, হা/২১৩৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৭২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৩৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৬৪৫; মিশকাত, হা/২২৩৩।]

৪ তিরমিযী, হা/২১৩৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৭২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৩৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৬৪৫; মিশকাত, হা/২২৩৩।

৭. আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি খুশি হন :

দুনিয়াতে কোন মানুষের কাছে কিছু চাইলে সে নারাজ হয়, অথচ আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ তা‘আলা খুশি হন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ لَّمْ يَسْأَلِ اللهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার প্রতি রাগ করেন। [তিরমিযী, হা/৩৩৭৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৫৮; জামেউস সগীর, হা/৪১৮৩; মিশকাত, হা/২২৩৮।]

৫ তিরমিযী, হা/৩৩৭৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৫৮; জামেউস সগীর, হা/৪১৮৩; মিশকাত, হা/২২৩৮।

৮. আল্লাহ বান্দার হাতকে খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন :

সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِنَّ رَبَّكُمْ حَيٌّ كَرِيْمٌ يَسْتَحْيِيْ مِنْ عَبْدِه إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ أَنْ يَّرُدَّهُمَا صِفْرًا

তোমাদের রব লজ্জাশীল ও দাতা। বান্দা যখন তাঁর কাছে দু’হাত তুলে কিছু চায়, তখন তিনি তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। [তিরমিযী, হা/৩৫৫৬; আবু দাঊদ, হা/১৪৮৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৭৬; জামেউস সগীর, হা/২৬৩৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৩৫; মিশকাত, হা/২২৪৪।]

৬ তিরমিযী, হা/৩৫৫৬; আবু দাঊদ, হা/১৪৮৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৭৬; জামেউস সগীর, হা/২৬৩৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৩৫; মিশকাত, হা/২২৪৪।

৯. কোন দু‘আই বিফলে যায় না :

وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدِنِ الْخُدْرِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُوْا بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيْهَا ِإثْمٌ وَلَا قَطِيْعَةُ رِحْمٍ إِلَّا أَعْطَاهُ اللهُ بِهَا إِحْدٰى ثَلَاثٍ : إِمَّا أنْ يَّعْجَلَ لَهٗ دَعْوَتَه وَإمَّا اَنْ يَّدَّخِرَهَا لَه فِي الْاٰخِرَةِ وَإمَّا أَنْ يَّصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوْءِ مِثْلَهَا قَالُوْا إذَنْ نُكَثِّرَ قَالَ : اَللهُ أَكْثَرُ

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিমের দু‘আ যদি পাপ কাজ ও রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য না হয়, তবে তার দু‘আর কারণে নিম্নের এ তিনটির একটি ফল অবশ্যই আল্লাহ তাকে দান করবেন। সেগুলো হলো :

ক. হয় দুনিয়াতেই তার চাওয়া বসত্মু তাকে দিয়ে দেবেন,

খ. অথবা পরকালে তাকে এর প্রতিদান দেবেন,

গ. অথবা তার থেকে অনুরূপ কোন অমঙ্গল দূর করে দেবেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বক্তব্য শুনে সাহাবীগণ বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি দু‘আ করব। নবী ﷺ বললেন, আল্লাহ আরো অধিক দান করবেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১১১৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৯৭৮০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৩৩; মিশকাত, হা/২২৫৯।]

৭ মুসনাদে আহমাদ, হা/১১১৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৯৭৮০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৩৩; মিশকাত, হা/২২৫৯।

দু‘আ কবুলের দৃষ্টান্ত
১. আদম ও হাওয়া (আঃ) জান্নাতের নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করেছেন। (সূরা ত্বা-হা- ১২২)

২. নূহ (আঃ) জাতিকে দাওয়াত দিয়েছিলেন; কিমত্মু তারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি। পরে তিনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করেছেন। (সূরা আম্বিয়া- ৭৬)

৩. ইউসুফ (আঃ) পাপ থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহ তাঁর দু‘আ কবুল করেছেন। (সূরা ইউসুফ- ৩৩, ৩৪)

৪. আইয়ূব (আঃ) অসুস্থ হয়ে দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহ তাঁর দু‘আ কবুল করে তাঁকে সুস্থ করেছিলেন। (সূরা আম্বিয়া- ৮৩, ৮৪)

৫. ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহ তাঁর দু‘আ কবুল করেছেন এবং তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন। (সূরা আম্বিয়া, ৭৮-৮৮)

৬. যাকারিয়া (আঃ) সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করে তাকে সন্তান দান করেছেন।

(সূরা আম্বিয়া- ৮৯, ৯০)

৭. বদরের যুদ্ধে নবী ﷺ আল্লাহর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতা পাঠিয়ে মুসলিম বাহিনীকে সাহায্য করেছিলেন। কুরআন মাজীদে এসেছে-

﴿إِذْ تَسْتَغِيْثُوْنَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّيْ مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُرْدِفِيْنَ﴾

স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিলেন, আমি তোমাদেরকে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব যারা পর পর আসবে। (সূরা আনফাল- ৯)

কুরআনুল কারীমের এ সকল আয়াতের দৃষ্টান্ত থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, আল্লাহ অবশ্যই বান্দার দু‘আ কবুল করেন- এতে কোন সন্দেহ নেই।

যাদের দু‘আ কবুল হয়
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمُ الصَّائِمُ حَتّٰى يُفْطِرَ وَالْإِمَامُ الْعَادِلُ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ يَرْفَعُهَا اللهُ فَوْقَ الْغَمَامِ وَيَفْتَحُ لَهَا أَبْوَابَ السَّمَاءِ وَيَقُوْلُ الرَّبُّ وَعِزَّتِى لَأَنْصُرَنَّكَ وَلَوْ بَعْدَ حِيْنٍ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিন শ্রেণির লোকের দু‘আ ফেরত দেয়া হয় না : ১. সিয়াম পালনকারী যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, ৩. মযলুম ব্যক্তি।

এই তিন ব্যক্তির দু‘আ আল্লাহ তা‘আলা মেঘের উপর উঠিয়ে নেন এবং এর জন্য আকাশের দরজা খুলে দেন। আল্লাহ তা‘আলা তার ইজ্জতের কসম খেয়ে বলেন, আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব- যদিও দেরিতে হয়। [তিরমিযী, হা/৩৯৪৭; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৩০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৯০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৩৮৭।]

৮ তিরমিযী, হা/৩৯৪৭; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৩০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৯০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৩৮৭।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

ثَلَاثُ دَعْوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لَا شَكَّ فِيْهِنَّ : دَعْوَةُ الْوَالِدِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ

তিনটি দু‘আ কবুল হয়ে থাকে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সেগুলো হলো : ১. সন্তানের জন্য মাতাপিতার দু‘আ, ২. মুসাফিরের দু‘আ, ৩. মযলুম ব্যক্তির দু‘আ। [তিরমিযী, হা/১৯০৫; আবু দাঊদ, হা/১৫৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫০১; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৯৯; জামেউস সগীর, হা/৫৩৪২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৩২; মিশকাত, হা/২২৫০।]

৯ তিরমিযী, হা/১৯০৫; আবু দাঊদ, হা/১৫৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫০১; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৯৯; জামেউস সগীর, হা/৫৩৪২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৩২; মিশকাত, হা/২২৫০।

উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ে মাধ্যমে সর্বমোট পাঁচ ধরনের ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের দু‘আ আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন। সেগুলো হলো :

১. সিয়াম পালনকারী, যতক্ষণ পর্যমত্ম না সে ইফতার করে। অর্থাৎ কোন সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি ইফতার করার পূর্ব পর্যমত্ম আল্লাহর নিকট দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবুল করেন।

২. ন্যায়পরায়ণ বাদশার দু‘আ কবুল হয়। যে ইমাম বা নেতা ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবুল করেন এবং হাশরের ময়দানে যে সাত দল ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন তাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই তিনি অন্তর্ভুক্ত হবেন।

৩. মযলুম ব্যক্তি। কেননা যে নির্যাতিত-নিপীড়িত, তার ফরিয়াদ সরাসরি আল্লাহর নিকট পৌঁছে যায়।

৪. সমত্মানের জন্য পিতামাতার দু‘আ। মাতাপিতা সন্তানের সবচেয়ে বড় হিতাকাঙ্ক্ষী। পিতামাতা সন্তানের জন্য যে দু‘আ করেন, আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন।

৫. মুসাফিরের দু‘আ। কেননা সে যখন সফরে থাকে তখন সে এক ধরনের অসহায়ত্ব বোধ করে, তখন সে আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষী হয়, তাই আল্লাহ তার ডাক শোনেন।

৬. মা-বাবার ক্ষেত্রে সন্তানের দু‘আও আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

إِذَا مَاتَ الْاِنْسَانُ اِنْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُه إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِه أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَه

মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমলের দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল জারি থাকে, ১. সাদাকায়ে জারিয়া, ২. উপকারী ইলম, যা সে রেখে যায়, ৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১০; আবু দাঊদ, হা/২৮৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৩১।]

১০ সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১০; আবু দাঊদ, হা/২৮৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৩১।

দু‘আর আদব ও নিয়মাবলি
১. একমাত্র আল্লাহর কাছেই দু‘আ করতে হবে :

﴿لَه دَعْوَةُ الْحَقِّ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه لَا يَسْتَجِيْبُوْنَ لَهُمْ بِشَيْءٍ إِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَآءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِه وَمَا دُعَآءُ الْكَافِرِيْنَ إِلَّا فِيْ ضَلَالٍ﴾

সত্যের আহবান কেবল আল্লাহর জন্য। যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদের ডাকে, তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। যেমন একজন মানুষ যে পিপাসায় কাতর হয়ে নিজের উভয় হাত পানির দিকে প্রসারিত করে এ আশায় যে, পানি নিজে নিজেই তার মুখে এসে পৌঁছবে, অথচ তা কোন অবস্থায়ই তার কাছে পৌঁছবে না। কাফিরদের দু‘আ ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা রা‘দ- ১৪)

আল্লাহই একমাত্র দু‘আ কবুলকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْٓءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْاَرْضِ أَإِلٰهٌ مَّعَ اللهِ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ﴾

তিনি কে, যিনি কোন অসহায় ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন- যখন নিরুপায় হয়ে সে তাঁকেই ডাকতে থাকে। অতঃপর তিনি তার বিপদাপদ দূর করে দেন এবং তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে আর কোন উপাস্য আছে কি? আসলে তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা নামল- ৬২)

আল্লাহ ছাড়া অপরের কাছে দু‘আ করা গুমরাহী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَهٗۤ إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَآئِهِمْ غَافِلُوْنَ﴾

তার চাইতে বেশি বিভ্রান্ত ব্যক্তি আর কে হতে পারে, যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যাকে কিয়ামত পর্যন্ত ডাকলেও তার ডাকে সাড়া দিতে পারবে না? কারণ তারা তাদের অনুসারীদের ডাক সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর।

(সূরা আহকাফ- ৫)

উপরের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা বলে দিয়েছেন যে, আমি ছাড়া তোমাদের দু‘আ কবুল করার কে আছে? অর্থাৎ কেউ নেই। তাই আমাদেরকে সবসময় আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। জীবিত বা মৃত কোন মাখলুকের কাছে চাওয়া যাবে না।

২. ইখলাস ও একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহকে ডাকতে হবে :

﴿قُلْ أَمَرَ رَبِّيْ بِالْقِسْطِ وَأَقِيْمُوْا وُجُوْهَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُوْدُوْنَ﴾

বলুন, আমার প্রতিপালক ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব প্রত্যেক সালাতে তোমাদের লক্ষ্য ও মনোযোগকে আল্লাহমুখী করো এবং তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ডাকো। যেভাবে তিনি তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন (মৃত্যুর পর আবার) সেভাবেই তোমরা ফিরে আসবে। (সূরা আ‘রাফ- ২৯)

৩. কবুলের আশা নিয়ে দু‘আ করতে হবে :

﴿إِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًا وَّكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ﴾

তারা (নবীরা) সৎ কাজে ছিল দ্রুতগামী, তারা আমাকে ডাকতো আশা নিয়ে ও ভীত হয়ে, আর তারা ছিল আমার প্রতি বিনয়ী। (সূরা আম্বিয়া- ৯০)

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তারা ভয় ও আশা নিয়ে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকতেন। হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : اُدْعُوا اللهَ وَأَنْتُمْ مُوْقِنُوْنَ بِالْإِجَابَةِ وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ لَا يَسْتَجِيْبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কবুল হওয়ার আশা ও বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করো। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অমনোযোগী অমত্মরের দু‘আ কবুল করেন না। [তিরমিযী, হা/৩৪৭৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/১০০৬১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৯২; মিশকাত, হা/২২৪১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৯৪।]

১১ তিরমিযী, হা/৩৪৭৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/১০০৬১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৯২; মিশকাত, হা/২২৪১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৯৪।

৪. নীরবে বিনয়ের সাথে দু‘আ করতে হবে :

﴿اُدْعُوْا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَّخُفْيَةً إِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ﴾

তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো বিনয়ের সাথে এবং গোপনে। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৫৫)

যাকারিয়া (আঃ) নীরবে দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّكَ عَبْدَه زَكَرِيَّا إِذْ نَادٰى رَبَّه نِدَآءً خَفِيًّا﴾

এটা তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি। যখন তিনি তাঁর প্রতিপালককে গোপনে ডেকেছিলেন। (সূরা মারইয়াম- ২, ৩)

আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সব ডাকই শুনতে পান। তিনি বলেন,

﴿إِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ﴾

অবশ্যই আমার রব দু‘আ শ্রবণকারী। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯)

বান্দা যেখানেই থাকুক, সে আল্লাহকে কাছে পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ﴾

আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন এবং তোমরা যা কিছু করে থাক, আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)

উপরের আয়াতগুলোর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, আল্লাহ বান্দার সকল ডাক শুনতে পান। কারণ তিনি বান্দার অন্তরের খবর জানেন। তাই নীরবে বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা উচিত।

৫. হাতের পেট সামনের দিকে রাখা :

মালিক ইবনে ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوْهُ بِبُطُوْنِ أَكُفِّكُمْ وَلَا تَسْأَلُوْهُ بِظُهُوْرِهَا

যখন তোমরা আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে, তখন তোমরা তোমাদের হাতের পেট দিয়ে চাইবে এবং পিঠ দিয়ে চাইবে না। [আবু দাঊদ, হা/১৪৮৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৬৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০০১৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৯৫; মিশকাত, হা/২২৪২।]

১২ আবু দাঊদ, হা/১৪৮৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৬৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০০১৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৯৫; মিশকাত, হা/২২৪২।

৬. দু‘আর মাঝে আল্লাহর প্রশংসা ও নবীi cÖwZ দরূদ পাঠ করা :##

ফাযালা ইবনে উবাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে সালাতরত অবস্থায় দু‘আ করতে শুনলেন। কিমত্মু সে উক্ত দু‘আয় আল্লাহর গুণগান এবং নবী ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করল না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ লোকটি তাড়াহুড়া করছে। তারপর তিনি তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সালাত পড়লে সে যেন তার রবের হামদ ও সানা দিয়ে আরম্ভ করে, তারপর নবীর উপর দরূদ পাঠ করে, অতঃপর নিজের পছন্দমতো দু‘আ করে। [আবু দাঊদ, হা/১৪৮৩; তিরমিযী, হা/৩৪৭৭; নাসাঈ, হা/১২৮৪।]

১৩ আবু দাঊদ, হা/১৪৮৩; তিরমিযী, হা/৩৪৭৭; নাসাঈ, হা/১২৮৪।

উল্লেখ্য যে, সূরা ফাতিহা হচ্ছে উত্তম প্রশংসা ও দু‘আ।

সূরা ফাতিহা :

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। আলহামদুলিল্লা-হি রাবিবল ‘আ-লামীন। আর রাহমা-নির রাহীম। মা-লিকিইয়াউ মিদ্দীন। ইয়্যা-কা না‘বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতা‘য়ীন। ইহদিনাস সিরা-ত্বাল মুসতাক্বীম। সিরা-ত্বাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম। গাইরিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়ালায যা-ল্লীন।

অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। যিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু। যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং তাদের পথও নয়, যারা পথভ্রষ্ট।

৭. আল্লাহর সিফাতী নাম দ্বারা দু‘আ করা :

﴿وَلِلّٰهِ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا﴾

সুন্দর নামসমূহ আল্লাহর জন্যই। অতএব তোমরা সেসকল নামেই তাঁকে ডাকো। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)

﴿قُلِ ادْعُوا اللهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَ أَيًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى﴾

বলো, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে ডাক বা ‘রহমান’ নামে ডাক, যে নামেই ডাক না কেন সকল সুন্দর নামই তাঁর। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)

এছাড়াও সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতে আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম উল্লেখ রয়েছে।

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত :

﴿هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ - هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ، سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى يُسَبِّحُ لَه مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ﴾

উচ্চারণ : হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা-হু, ‘আ-লিমুল গাইবি ওয়াশ শাহা-দাতি হুওয়ার রাহমা-নুর রাহীম। হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা-হু, আল মালিকুল কুদ্দূসুস সালা-মুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আযীযুল জাববা-রুল মুতাকাবিবর। সুবহা-নাল্লাহি ‘আম্মা ইউশরিকূন। হুওয়াল্লা-হুল খা-লিকুল বা-রিউল মুছাউভিরু লাহুল আসমা-উল হুসনা। ইউসাবিবহু লাহূ মা-ফিস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল্আরযি ওয়াহুয়াল ‘আযীযুল হাকীম।

অর্থ : তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তিনি অদৃশ্য এবং দৃশ্যের সব কিছুই জানেন; তিনি দয়াময় ও পরম দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি অধিপতি, অতীব পবিত্র, পরিপূর্ণ শান্তিদাতা, নিরাপত্তা দানকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিত, তার সাথে যা শরীক করা হয় তিনি তা হতে পবিত্র ও মহান। তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে, তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।

সূরা আলে ইমরানের ২৬ ও ২৭ নং আয়াতেও আল্লাহর সুন্দর নাম উল্লেখ রয়েছে।

﴿قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ تُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾

উচ্চারণ : কুলিল্লা-হুম্মা মা-লিকাল্ মুলকি তু’তিল মুলকা মান তাশা-উ ওয়া তানযিউল মুলকা মিম্মানতাশা-উ ওয়াতু‘য়িযযু মান তাশা-উ ওয়াতুযিল্লু মান তাশা-উ বিইয়াদিকাল খাইর। ইন্নাকা ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। তূ-লিজুল লাইলা ফিন্নাহা-রি ওয়া তূ-লিজুন্নাহা-রা ফিল্লাইলি, ওয়া তুখরিজুল হাইয়া মিনাল মাইয়িতি ওয়া তুখরিজুল মাইয়িতা মিনাল হাইয়ি ওয়া তারযুকু মান তাশা-উ বিগাইরি হিসা-ব।

অর্থ : বলো, হে আল্লাহ! আপনি সমুদয় রাজ্যের মালিক, যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন আর যার থেকে ইচ্ছা রাজ্য কেড়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন, আপনার হাতে সব কল্যাণ, নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। আপনিই রাতকে দিনের ভেতর আর দিনকে রাতের ভেতর প্রবেশ করান, আপনি জীবিতকে মৃত হতে বের করেন এবং মৃতকে জীবিত হতে বের করেন আর যাকে ইচ্ছা অগণিত রিযিক দান করেন।

৮. ইসমে আ‘যম পড়ে দু‘আ করা :

আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন দেখলেন যে, এক ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং এভাবে দু‘আ করছে-

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنِّيْ أُشْهِدُكَ أَنَّكَ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْاَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্নী উশহিদুকা আন্নাকা লা-ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো কাছ থেকে জন্মলাভ করেননি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।

এ দু‘আ শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহর কসম! সে ইসমে আ‘যম নিয়ে দু‘আ করছে- যার মাধ্যমে চাইলে চাওয়া পূর্ণ করা হয় এবং দু‘আ করলে দু‘আ কবুল করা হয়। [আবু দাঊদ, হা/১৪৯৩; তিরমিযী, হা/৩৪৭৫; মিশকাত, হা/২২৮৩।]

১৪ আবু দাঊদ, হা/১৪৯৩; তিরমিযী, হা/৩৪৭৫; মিশকাত, হা/২২৮৩।

৯. নেক আমলের অসীলা নিয়ে দু‘আ করা :

﴿مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًا إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُه ﴾

যে ব্যক্তি সম্মান লাভ করতে চায় সে জেনে রাখুক যে, সকল সম্মান আল্লাহর জন্য। উত্তম বাক্যসমূহ তাঁর কাছে পৌঁছে থাকে। আর নেক কাজ তাকে উপরে তুলে দেয়। (সূরা ফাতির- ১০)

হাদীসে এসেছে, তিন ব্যক্তি একটি গর্তে আশ্রয় নিয়ে বিপদে পড়েছিল। পরে তারা পরস্পরকে বলাবলি করতে লাগল,

اُدْعُوا اللهَ بِأَفْضَلِ عَمَلٍ عَمِلْتُمُوْهُ

তোমরা জীবনে সবচেয়ে ভালো যে আমল করেছ, তার অসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করো। তারা তাই করল, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবুল করে তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২১৫; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/১১৮২৬।]

১৫ সহীহ বুখারী, হা/২২১৫; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/১১৮২৬।

১০. দু‘আয় সীমালঙ্ঘন না করা :

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, এ উম্মতের মধ্যে এমন একদল লোক বের হবে, যারা দু‘আ এবং পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করবে। [আবু দাঊদ, হা/৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৭৬৩; জামেউস সগীর, হা/৪১৬১; মিশকাত, হা/৪১৮।]

১৬ আবু দাঊদ, হা/৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৭৬৩; জামেউস সগীর, হা/৪১৬১; মিশকাত, হা/৪১৮।

১১. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ডাকা :

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি চায় যে, বিপদের সময় আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করুক, সে যেন সুখের সময়ও আল্লাহকে ডাকে। [তিরমিযী, হা/৩৩৮২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৯৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬২৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৯৩; মিশকাত, হা/২২৪০।]

১৭ তিরমিযী, হা/৩৩৮২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৯৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬২৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৯৩; মিশকাত, হা/২২৪০।

মানুষ বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকে, পরে ভুলে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذَا مَسَّ الْاِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْۢبِه ۤ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَآئِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهٗ مَرَّ كَأَنْ لَّمْ يَدْعُنَاۤ إِلٰى ضُرٍّ مَّسَّه ﴾

মহান আল্লাহ বলেন, মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন তারা শুয়ে, বসে ও দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। অতঃপর যখন আমি তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলাফেরা করে, মনে হয় যেন কোন বিপদে পড়ে সে আমাকে ডাকেনি। (সূরা ইউনুস- ১২)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

﴿وَإِذَا مَسَّ النَّاسَ ضُرٌّ دَعَوْا رَبَّهُمْ مُّنِيْبِيْنَ إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَاۤ أَذَاقَهُمْ مِّنْهُ رَحْمَةً إِذَا فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُوْنَ﴾

মানুষকে যখন বিপদাপদ স্পর্শ করে তখন তারা তাদের প্রতিপালককে ডাকে তাঁর অভিমুখী হয়ে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে তাঁর রহমতের স্বাদ আস্বাদন করান তখন তাদের একদল তাদের প্রতিপালকের সাথে শিরক করে বসে। (সূরা রূম- ৩৩)

﴿وَإِذَاۤ أَنْعَمْنَا عَلَى الْاِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَاٰى بِجَانِبِه وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُوْ دُعَآءٍ عَرِيْضٍ﴾

আর যখন আমি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং উল্টো দিকে ফিরে যায়, আবার যখন তাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে দীর্ঘ দু‘আ নিয়ে আমার সামনে হাজির হয়। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৫১)

১২. আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা :

দু‘আ কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর কাছে বিনয় সহকারে কাকুতি-মিনতি করে দু‘আ করতে হবে। যদি চোখের পানি ফেলে দিয়ে বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চায়, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তার দিকে মনোযোগ দেবেন। আমরা দেখি কোন সন্তান যখন কান্না করে, তখন মা দৌড়ে এসে তাকে কোলে নেয় এবং আদর করে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। তাই বান্দা যখন তার কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য অথবা বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, তখন আল্লাহর রহমত তার দিকে অগ্রসর হয়। নবী ﷺ এবং সাহাবীরা বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে কান্না করতেন। যেমন নিচের আয়াত ও হাদীসগুলোতে আমরা তার প্রমাণ পাই।

১. আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাবের কিছু লোকের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন,

﴿وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا﴾

আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০৯)

২. কুরআন শোনার পর কান্না করার জন্য উৎসাহ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ - وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ﴾

তোমরা কি এ বাণী সম্পর্কে আশ্চর্যবোধ করছ? হাসছ অথচ কাঁদছ না।

(সূরা নাজম- ৫৯, ৬০)

৩. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, দুটি চোখ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না : ১. যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং ২. যে চোখ জিহাদের ময়দানে পাহাড়া দেয়। [তিরমিযী, হা/১৬৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৫২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৩৪৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৪৩০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৬২০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩২২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৭৩; জামেউস সগীর, হা/৬৩৩৮; মিশকাত, হা/৩৭২৯।]

১৮ তিরমিযী, হা/১৬৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৫২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৩৪৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৪৩০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৬২০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩২২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৭৩; জামেউস সগীর, হা/৬৩৩৮; মিশকাত, হা/৩৭২৯

৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি হচ্ছে, যে নির্জনে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে এবং তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭০৯; সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/২৩৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫৮; মিশকাত, হা/৭০১।]

১৯ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭০৯; সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/২৩৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫৮; মিশকাত, হা/৭০১।

৫. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ বললেন, আমাকে কুরআন পড়ে শোনাও। আমি বললাম, আপনাকে কুরআন শোনাব? অথচ আপনার উপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, অন্যের কাছ থেকে কুরআন শুনতে আমি পছন্দ করি। অতঃপর আমি সূরা নিসা পাঠ করে তাঁকে শোনাতে থাকলাম। যখন এ আয়াতে পৌঁছলাম-

﴿فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا﴾

তখন কী অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী নিয়ে আসব। আর আপনাকে তাদের সকলের উপর সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করাব। [সূরা নিসা- ৪১।]

তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যথেষ্ট হয়েছে। আর আমি তাকিয়ে দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১৯০৩; তিরমিযী, হা/৩০২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; মিশকাত, হা/২৭৬০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭১৭;।]

২০ সূরা নিসা- ৪১।

২১ সহীহ বুখারী, হা/৫০৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১৯০৩; তিরমিযী, হা/৩০২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; মিশকাত, হা/২৭৬০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭১৭;।

৬. ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যু যন্ত্রণা বেড়ে গেল, তখন তিনি বললেন, আবু বকরকে বলো- মানুষকে নিয়ে সালাত আদায় করতে। এ কথা শুনে আয়েশা (রাঃ) বললেন, আবু বকর আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্না করার কারণে মানুষকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪১২; সহীহ বুখারী, হা/৬৭৯; তিরমিযী, হা/৩৬৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৭৪; বায়হাকী, হা/১৬৩৫৯।]

২২ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪১২; সহীহ বুখারী, হা/৬৭৯; তিরমিযী, হা/৩৬৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৭৪; বায়হাকী, হা/১৬৩৫৯।

৭. একদা আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এর নিকট খানা নিয়ে আসা হলো। তখন তিনি সিয়ামরত ছিলেন। অতঃপর বললেন, মাস‘আব ইবনে উমাইর শাহাদাত বরণ করেছিলেন, তিনি আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। তাকে কাফন পরানোর জন্য তার চাদরটি ব্যতীত অন্য কিছু পাওয়া যায়নি। মাথা ঢাকা হলে পা বেরিয়ে যেত আর পা ঢাকা হলে মাথা বেরিয়ে যেত। তারপর আমাদের জন্য দুনিয়া প্রশস্ত করে দেয়া হলো। আমি ভয় করছি আমাদের নেক আমলের সওয়াব দুনিয়াতেই পেয়ে যাচ্ছি কি না। এ কথা বলার পর খাবার রেখে তিনি কান্না শুরু করে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২৭৫; বায়হাকী, হা/৬৪৭৫।]

২৩ সহীহ বুখারী, হা/১২৭৫; বায়হাকী, হা/৬৪৭৫।

৮. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রাঃ) উমর (রাঃ) কে বললেন, চলুন আমরা উম্মে আইমানের কাছে যাই, যেভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে দেখতে যেতেন। যখন তারা তার কাছে গেলেন তখন ঐ মহিলা কান্না করছিলেন। তারা তাকে বললেন তুমি কাঁদছ কেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য আল্লাহর কাছে যা আছে তা অনেক উত্তম। তিনি বললেন, আমি এজন্য কান্না করছি না, আমি জানি আল্লাহর কাছে যা আছে তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য উত্তম; বরং আমি কান্না করছি এজন্য যে, আসমান থেকে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এ কথা শুনে তারা দু’জনও কাঁদতে লাগলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৩৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৯; বায়হাকী, হা/১৩৩১৪; মিশকাত, হা/৫৯৬৭।]

২৪ সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৩৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৯; বায়হাকী, হা/১৩৩১৪; মিশকাত, হা/৫৯৬৭।

দু‘আ কবুলের শর্তাবলি
১. হালাল উপার্জন করা :

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَّإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ ، فَقَالَ ﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ﴾ وَقَالَ ﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ﴾ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُه حَرَامٌ وَمَشْرَبُه حَرَامٌ وَمَلْبَسُه حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে লোক সকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুমিনদেরকেও সে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি’’। [সূরা মুমিন- ৫১।] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে পবিত্র জিনিস খাও। অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোয় মলিন শরীর; সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হয়েছে, সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৩৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; দারেমী, হা/২৭১৭; মুসনাদে ইবনে জা‘দ, হা/২০০৯।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

كُلُّ لَحْمٍ وَدَمٍ نَبَتَا مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلٰى بِهِمَا

যে মাংস ও রক্ত (শরীর) হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উপযুক্ত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৬৯২; মু‘জামুল আওসাত, হা/২৭৩০।]

উপরের হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম তা হলো :

১. আল্লাহ তা‘আলা নিজে পবিত্র।

২. তিনি কেবল পবিত্র জিনিসকে কবুল করে থাকেন।

৩. সকল নবী ও ঈমানদারকে হালাল খাদ্য খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

৪. ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য হালাল রিযিক খাওয়া পূর্বশর্ত।

৫. হারাম খাদ্য খেলে দু‘আ কবুল হয় না।

২৫ সূরা মুমিন- ৫১।

২৬ সহীহ মুসলিম, হা/২৩৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; দারেমী, হা/২৭১৭; মুসনাদে ইবনে জা‘দ, হা/২০০৯।

২৭ মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৬৯২; মু‘জামুল আওসাত, হা/২৭৩০।

২. মনোযোগী হয়ে দু‘আ করা :

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : اُدْعُوا اللهَ وَأَنْتُمْ مُوْقِنُوْنَ بِالْإِجَابَةِ وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ لَا يَسْتَجِيْبُ دُعَاءَ مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কবুল হওয়ার আশা ও বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করো। জেনে রেখো, অমনোযোগী অন্তরের দু‘আ আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না। [তিরমিযী, হা/৩৪৭৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/১০০৬১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৯২; মিশকাত, হা/২২৪১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৯৪।]

২৮ তিরমিযী, হা/৩৪৭৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/১০০৬১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৯২; মিশকাত, হা/২২৪১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৯৪।

৩. দু‘আ কবুলের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করা :

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يُسْتَجَابُ لِاَحَدِكُمْ مَا لَمْ يَعْجَلْ يَقُوْلُ : دَعَوْتُ فَلَمْ يُسْتَجَبْ لِيْ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ দু‘আ করলে তা কবুল করা হয় যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে এবং বলতে থাকে- আমি দু‘আ করলাম অথচ আমার দু‘আ কবুল হলো না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৭; সহীহ বুখারী, হা/৬৩৪০; সহীহ মুসলিম, হা/৭১১০; আবু দাঊদ, হা/১৪৮৬; তিরমিযী, হা/৩৩৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১৩৭।]

এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, দু‘আ যেকোন সময় আল্লাহ কবুল করতে পারেন। কখনো দ্রুত আবার কখনো বিলম্বে দু‘আ কবুল হয়। তাই দু‘আ কবুল হতে বিলম্ব হলে আফসোস করা যাবে না এবং বলা যাবে না যে, আমি দু‘আ করলাম কিমত্মু কবুল হলো না।

২৯ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৭; সহীহ বুখারী, হা/৬৩৪০; সহীহ মুসলিম, হা/৭১১০; আবু দাঊদ, হা/১৪৮৬; তিরমিযী, হা/৩৩৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১৩৭।

৪. দু‘আয় অন্যায় কিছু না চাওয়া :

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - - أَنَّه قَالَ لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيْعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا الْإِسْتِعْجَالُ قَالَ يَقُوْلُ قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يُسْتَجَابُ لِىْ فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذٰلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বান্দার দু‘আ কবুল হয়- যদি তার দু‘আ কোন গোনাহের কাজের উদ্দেশ্যে না হয় অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য না হয়, আর যদি সে তাড়াহুড়া না করে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়া কীভাবে হয়? তিনি বললেন, সে বলে, আমি দু‘আ করলাম কিমত্মু কবুল হলো না- এভাবে আফসোস করতে থাকে এবং দু‘আ করা ছেড়ে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১১২; বায়হাকী, হা/৬২২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৪৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৬৬৩।]

এ হাদীস দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, কোন পাপ কাজের জন্য দু‘আ করা যাবে না। দুনিয়া ও আখিরাতের যেসব বিষয়ে কল্যাণ রয়েছে, কেবল সেসব বিষয়ে দু‘আ করতে হবে।

৩০ সহীহ মুসলিম, হা/৭১১২; বায়হাকী, হা/৬২২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৪৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৬৬৩।

৫. সর্বক্ষেত্রে ইসলামের বিধান পালন করা :

عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى عَنِ النَّبِيِّ ثَلَاثَةٌ يَدْعُوْنَ فَلَا يُسْتَجَابُ لَهُمْ : رَجُلٌ كَانَتْ تَحْتَه اِمْرَأَةٌ سَيِّئَةُ الْخُلُقِ فَلَمْ يُطَلِّقْهَا وَرَجُلٌ كَانَ لَه عَلٰى رَجُلٍ ماَلٌ فَلَمْ يُشْهِدْ عَلَيْهِ وَرَجُلٌ اٰتٰى سَفِيْهًا مَالَه وَقَدْ قَالَ الله ُعَزَّ وَجَلَّ ﴿وَلَا تُؤْتُوْا السُّفَهَآءَ أَمْوَالَكُمْ﴾

আবু মূসা (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তিন ব্যক্তির দু‘আ কবুল হয় না- ১. যার অধীনে অসৎ স্ত্রী আছে, অথচ সে তাকে ত্যাগ করে না। ২. ঐ ব্যক্তি যে কারো কাছে সম্পদ রাখল, অথচ তার উপর সে কোন সাক্ষী রাখল না। ৩. যে ব্যক্তি তার সম্পদকে নির্বোধদের হাতে তুলে দেয়, অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের মাল তুলে দিও না’। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১০২২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩১৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৭১৪৪; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৮০৫।]

এ হাদীসটিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। আমরা অনেকেই নিজেদের আমল ভালো করার চেষ্টা করি, অথচ নিজ পরিবার সম্পর্কে উদাসীন থাকি। নিজের স্ত্রী ও সন্তানরা দ্বীনের পথে আছে কিনা সে দিকে খেয়ালই দেই না। তাই আল্লাহর দরবারে আমাদের দু‘আ কবুল হওয়ার জন্য পরিবারকেও দ্বীনের উপর চালানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তারপর বলা হচ্ছে লেনদেনের ব্যাপারটি। লেনদেনের ব্যাপারে অবশ্যই আমাদেরকে স্বচ্ছ এবং সচেতন থাকতে হবে। দেনা-পাওনার বিষয়ে যাতে কারো হক নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে যে ধনসম্পদ দান করেছেন তা হচ্ছে আমানত। যেখানে সেখানে মাল খরচ করা যাবে না এবং অন্যায়ের কাজে সম্পদ ব্যয় করা যাবে না। সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এ তিনটি বিষয়েই আমরা উদাসীনতার মধ্যে আছি। অথচ এ বিষয়গুলো দু‘আ কবুলের অন্তরায়। তাই আমাদেরকে পরিবারের ব্যাপারে, লেনদেনের ব্যাপারে এবং সম্পদ জমা-খরচ করার ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন!

৩১ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১০২২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩১৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৭১৪৪; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৮০৫।

৬. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করা :

عَنْ حُذَيْفَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِه لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ، أَوْ لَيُوْشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُوْنَهٗ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ

হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করবে। নতুবা অচিরেই তোমাদের নিকট আল্লাহ শাস্তি পাঠাবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে দু‘আ করবে কিমত্মু দু‘আ কবুল হবে না। [তিরমিযী, হা/২১৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৪০০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৩৭৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৫৪।]

এ মর্মে আয়েশা (রাঃ) হতে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত আছে, হে লোক সকল! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে বলেছেন, তোমরা সৎ কাজের আদেশ করো এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করো। নতুবা তোমরা আমার কাছে দু‘আ করবে, কিমত্মু আমি তা কবুল করব না; আমার কাছে চাইবে কিমত্মু আমি তা দেব না এবং আমার কাছে সাহায্য চাইবে, কিমত্মু আমি সাহায্য করব না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৯৪; ইবনে মাজাহ, হা/৪০০৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৯০; বায়হাকী, হা/১৯৯৮৭; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/৮৬৪।]

৩২ তিরমিযী, হা/২১৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৪০০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৩৭৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৫৪।

৩৩ মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৯৪; ইবনে মাজাহ, হা/৪০০৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৯০; বায়হাকী, হা/১৯৯৮৭; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/৮৬৪।

দু‘আ কবুলের বিশেষ স্থান
১. আরাফার মাঠ :

عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ  : كُنْتُ رَدِيْفَ النَّبِيِّ بِعَرَفَاتٍ ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ يَدْعُو ، فَمَالَتْ بِه نَاقَتُهٗ ، فَسَقَطَ خِطَامُهَا فَتَنَاوَلَ الْخِطَامَ بِإِحْدٰى يَدَيْهِ ، وَهُوَ رَافِعٌ يَدَهُ الْأُخْرٰى

উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, আমি আরাফার মাঠে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সওয়ারীর পেছনে ছিলাম, তিনি সেখানে দু’হাত তুলে দু‘আ করলেন। অতঃপর তার উটনী তাকে নিয়ে ঝুঁকে পড়ল। ফলে তার লাগাম পড়ে গেল। তারপর তিনি এক হাত দিয়ে তার লাগাম উত্তোলন করলেন; কিমত্মু তার অপর হাত উঠানোই ছিল। [নাসাঈ, হা/৩০১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৭০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৮২৪।]

৩৪ নাসাঈ, হা/৩০১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৭০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৮২৪।

২. সাফা-মারওয়া পাহাড়ের উপর :

জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সাফা পাহাড়ের উপর উঠে আল্লাহর প্রশংসা করলেন অতঃপর তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী দু‘আ করলেন। অনুরূপভাবে মারওয়া পাহাড়ে উঠে আল্লাহর প্রশংসা করলেন, অতঃপর ইচ্ছানুযায়ী দু‘আ করলেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৮৩০; নাসাঈ, হা/২৯৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫২১০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৮৪২।]

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কায় প্রবেশ করে হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) এর পাশে এসে পাথরটিকে চুম্বন করলেন। অতঃপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে হাত তুলে দু‘আ, যিকির ও প্রার্থনা করলেন। [আবু দাঊদ, হা/১৮৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৯৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৭৫৮; মিশকাত, হা/২৫৭৫।]

৩৫ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৮৩০; নাসাঈ, হা/২৯৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫২১০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৮৪২।

৩৬ আবু দাঊদ, হা/১৮৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৯৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৭৫৮; মিশকাত, হা/২৫৭৫।

১০
দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়
১. সিয়ামরত অবস্থায় দু‘আ কবুল হয় :

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিন শ্রেণির লোকের দু‘আ ফেরত দেয়া হয় না। তন্মধ্যে একজন হচ্ছে সিয়াম পালনকারী, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ইফতার করে। [তিরমিযী, হা/৩৫৯৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৮৩২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৯০১; বায়হাকী, হা/৬১৮৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৯৫।]

৩৭ তিরমিযী, হা/৩৫৯৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৮৩২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৯০১; বায়হাকী, হা/৬১৮৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৯৫।

২. জুমু‘আর দিনে দু‘আ কবুল হয় :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ذَكَرَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَالَ فِيهِ سَاعَةٌ لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهْوَ قَائِمٌ يُصَلِّي يَسْأَلُ اللَّهَ تَعَالَى شَيْئًا إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ وَأَشَارَ بِيَدِهِ يُقَلِّلُهَا .

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, সেদিন এমন একটি সময় রয়েছে, ঐ সময় যদি কোন মুসলিম বান্দা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা দান করেন। আর তিনি হাতে ইশারা করে বুঝালেন যে, এ সময়টি অতি অল্প। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬৪০; সহীহ বুখারী, হা/৯৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/২০০৬; নাসাঈ, হা/১৪৩১; তিরমিযী, হা/৪৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৭০০; জামেউস সগীর, হা/৩৮৮৩; মিশকাত, হা/১৩৫৭।]

৩৮ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬৪০; সহীহ বুখারী, হা/৯৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/২০০৬; নাসাঈ, হা/১৪৩১; তিরমিযী, হা/৪৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৭০০; জামেউস সগীর, হা/৩৮৮৩; মিশকাত, হা/১৩৫৭।

৩. লাইলাতুল ক্বদর দু‘আ কবুলের অন্যতম সময় :

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, লাইলাতুল ক্বদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। [সূরা ক্বদর- ৩।] রাসূলুল্লাহ ﷺ এ রাতে আয়েশা (রাঃ) কে বিশেষ দু‘আ শিক্ষা দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ লাইলাতুল ক্বদরকে খোঁজার নির্দেশ দিতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬৯৩; সহীহ বুখারী, হা/২০১৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৩৩; আবু দাঊদ, হা/১৩৮৭; তিরমিযী, হা/৭৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৬১৬; জামেউস সগীর, হা/৫২৩৩; মিশকাত, হা/২০৮৩।]

৩৯ সূরা ক্বদর- ৩।

৪০ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬৯৩; সহীহ বুখারী, হা/২০১৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৩৩; আবু দাঊদ, হা/১৩৮৭; তিরমিযী, হা/৭৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৬১৬; জামেউস সগীর, হা/৫২৩৩; মিশকাত, হা/২০৮৩।

৪. আরাফার দিনে দু‘আ কবুল হয় :

عَنْ عَائِشَةَ اَِنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيْهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهٗ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِىَ بِهِمُ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُوْلُ مَا أَرَادَ هٰؤُلَاءِ

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিন মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন এবং ফেরেশতাগণের সামনে গর্ব করে বলেন, (আরাফার মাঠের) এ সকল মানুষ কী চায়? অর্থাৎ যা চায় তাই দান করা হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৫৪; নাসাঈ, হা/৩০০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩০১৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৮২৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৭০৫; মিশকাত, হা/২৫৯৪।]

৫. হজ্জ পালনকালে পাথর নিক্ষেপের পর :

রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথম দু’বার পাথর নিক্ষেপের পর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং অনুনয়-বিনয়ের সাথে দু‘আ করতেন। [আবু দাঊদ, হা/১৯৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৩৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৬৪৪; দার কুতনী, হা/২৬৮০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৭৫৬; বায়হাকী, হা/৯৪৪৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৯৫৬; মিশকাত, হা/২৬৭৬।]

৬. দু‘আ কবুলের উপযুক্ত সময় রাতের শেষ ভাগ :

আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতী ব্যক্তিদের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন,

﴿اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ﴾

তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল, (আল্লাহর পথে) দানকারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮; আবু দাঊদ, হা/১৩১৭, ৪৭৩৫; তিরমিযী, হা/৩৪৯৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬৬; মিশকাত, হা/১২২৩।]

জাবির (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় রাতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময় কোন মুসলিম ইহকাল ও পরকালের কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা দিয়ে থাকেন এবং এটা প্রত্যেক রাত্রে হয়ে থাকে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩৯৪; মিশকাত, হা/১২২৪।]

৭. সালাতের শেষে দু‘আ কবুল হয় :

আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- কোন সময় সবচেয়ে বেশি দু‘আ কবুল হয়? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, শেষ রাতে এবং ফরয সালাতের পর। [তিরমিযী, হা/৩৪৯৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৪৮; মিশকাত, হা/৯৬৮।]

প্রকাশ থাকে যে, সালাতের শেষ বলতে সালামের আগের সময়কে বুঝানো হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তাশাহ্হুদের পর যা ইচ্ছা দু‘আ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৩০; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬২২; সুনানুস সগীর লিল বায়হাকী, হা/৩৩৯; শারহুল মা‘আনী, হা/১৪১৭।]

৮. আযান ও ইকামাতের মধ্যখানে :

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আযান এবং ইকামাতের মধ্যখানের দু‘আ ফেরত দেয়া হয় না। [আবু দাঊদ, হা/৫২১; তিরমিযী, হা/২১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪২৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৬৫; মিশকাত, হা/৬৭১।]

৯. যুদ্ধের মাঠে শত্রুর সাথে মোকাবেলার সময় :

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে লোক সকল! শত্রুর সাথে যখন তোমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা চাও, ধৈর্যধারণ করো এবং জেনে রেখো! নিশ্চয় জান্নাত তরবারির ছায়ার নিচে। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৪০; আবু দাঊদ, হা/২৬৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯১৩৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৬১৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৪১৩; মিশকাত, হা/৩৯৩০।]

১০. সিজদার সময় দু‘আ কবুল হয় :

ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দু‘আ করো, কেননা সিজদা হচ্ছে দু‘আ কবুলের উপযুক্ত সময়। [সহীহ মুসলিম, হা/১১০২; আবু দাঊদ, হা/৮৭৬; নাসাঈ, হা/১০৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৬; মিশকাত, হা/৮৭৩।]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَّبِّه وَهُوَ سَاجِدٌ ، فَأَكْثِرُوْا الدُّعَاءَ

বান্দা সিজদা অবস্থায় তার প্রতিপালকের সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দু‘আ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১১; আবু দাঊদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯২৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৭; মিশকাত, হা/৮৯৪।]

১১
দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দু‘আসমূহ ঘুমানোর সময় দু‘আ :
১. আয়াতুল কুরসী :

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বলেছেন, তুমি শয়নকালে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার সাথে একজন হেফাযতকারী (ফেরেশতা) থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটবর্তী হবে না। [(সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৫; মিশকাত, হা/২১২৩)]

﴿اَللهُ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ، لَا تَأْخُذُه سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ، لَه مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ إِلَّا بِإِذْنِه يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ، وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهۤ إِلَّا بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَلَا يَئُوْدُه حِفْظُهُمَا، وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾

উচ্চারণ : আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূম, লা তা’খুযুহূ সিনাতুওঁ ওয়ালা নাঊম লাহূ মা ফিস্সামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিলআর্যি, মানযাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইয্নিহ্, ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খাল্ফাহুম ওয়ালা ইউহীতূনা বিশায়ইম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা শা-আ, ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আর্যা ওয়ালা ইয়াঊদুহূ হিফযুহুমা ওয়াহুয়াল ‘আলিয়্যুল ‘আযীম।

অর্থ : আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সবার রক্ষণা-বেক্ষণকারী, তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই; এমন কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সামনের ও পেছনের সবই তিনি জানেন; তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত তাঁর অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ আয়ত্ব করতে পারে না; তাঁর কুরছী (সিংহাসন) আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না এবং তিনি সমুন্নত ও সুমহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)

২. সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত :

আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে কেউ রাতে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি সারা রাত বিপদমুক্ত থাকবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০০৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৯১৪; আবু দাঊদ, হা/১৩৯৯; তিরমিযী, হা/২৮৮১; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৮১; মিশকাত, হা/২১২৫।]

﴿اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ - لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ- وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ إِنْ نَّسِيْنَاۤ أَوْ أَخْطَأْنَا، رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَاۤ إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَه عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا، رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِه وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَاۤ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ﴾

উচ্চারণ : আ-মানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির্রাবিবহী ওয়ালমু’মিনূন, কুল্লুন আ-মানা বিল্লা-হি ওয়া মালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুসুলিহ্, লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মিররুসুলিহ্, ওয়াক্বা-লূ সামি‘না ওয়াআত্বা‘না গুফ্রা-নাকা রাববানা ওয়া ইলাইকাল মাসীর। লা ইউকাল্লিফুল্লা-হু নাফসান ইল্লা উস‘আহা, লাহা মা কাসাবাত ওয়া‘আলাইহা মাকতাসাবাত, রাববানা লা তুআ-খিযনা ইননাসীনা আও আখত্বা’না, রাববানা ওয়ালা তাহ্মিল ‘আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহূ ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা, রাববানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা ত্বা-ক্বাতালানা বিহ্, ওয়া‘ফু ‘আন্না ওয়াগ্ফির লানা ওয়ার্হামনা আনতা মাওলা-না ফানসুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কা-ফিরীন।

অর্থ : রাসূল তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে এবং মু’মিনগণও। তারা সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং রাসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, (তারা বলে), ‘আমরা রাসূলগণের মধ্যে কারো ব্যাপারে তারতম্য করি না’ এবং তারা এ কথাও বলে যে, ‘আমরা শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর প্রত্যাবর্তন আপনারই দিকে’। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেমন গুরু-দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! যে ভার বহনের ক্ষমতা আমাদের নেই, এমন ভার আমাদের উপর চাপিয়ে দেবেন না, (ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করে) আমাদেরকে রেহাই দিন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনিই আমাদের অভিভাবক, কাজেই আমাদেরকে কাফিরদের উপর বিজয় দান করুন।

৩. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস :

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমানোর জন্য নিজের বিছানায় যেতেন, তখন দু’হাত মিলিয়ে তাতে ফুঁক দিতেন এবং মাথা থেকে আরম্ভ করে যতটুকু সম্ভব নিজের শরীরে হাত বুলাতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, ও সূরা নাস পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; আবু দাঊদ, হা/৫০৫৮; তিরমিযী, হা/৩৪০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৪৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩১০৪; মিশকাত, হা/২১৩২।]

সূরা ইখলাস :

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ اَللهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লা-হুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউ-লাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লা-হূ কুফুওয়ান আহাদ।

অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আল্লাহ এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।

সূরা ফালাক্ব :

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ -‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ - وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ - وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ -‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল আ‘ঊযু বিরাবিবল ফালাক্ব। মিন শার্রি মা খালাক্ব। ওয়ামিন শার্রি গা-সিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শার্রিন্নাফ্ফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়ামিন শার্রি হা-সিদিন ইযা হাসাদ।

অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি সকাল বেলার রবের নিকট। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। অন্ধকার রাতের অনিষ্ট হতে, যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। গিরায় ফুঁৎকারকারিণীদের অনিষ্ট হতে। আর হিংসুকের অনিষ্ট হতে, যখন সে হিংসা করে।

সূরা নাস :

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ مَلِكِ النَّاسِ إِلٰهِ النَّاسِ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল আ‘ঊযু বিরাবিবন্না-স। মালিকিন্না-স। ইলা-হিন্না-স। মিন শার্©র্রল ওয়াসওয়া-সিল খান্না-স। আল্লাযী ইউওয়াসবিসু ফী সুদূরিন্না-স। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।

অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের প্রকৃত ইলাহের কাছে। তার অনিষ্ট হতে যে কুমন্ত্রণা দিয়েই গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক অথবা মানুষদের মধ্য থেকে।

ঘুমানোর সময় অন্যান্য দু‘আ :

(১) اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَ أَحْيَا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মৃত্যুবরণ করি ও আপনার নামে জাগ্রত হই। [হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১২; তিরমিযী, হা/৩৪১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৩১৯; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৫; মিশকাত, হা/২৩৮২)]

(২) اَللّٰهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু ‘ইবা-দাক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে আপনার শাস্তি থেকে রক্ষা করুন, যেদিন আপনার বান্দাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন। [হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন গালের নিচে নিজের ডান হাত রাখতেন এবং এই দু‘আ বলতেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৪৭; তিরমিযী, হা/৩৩৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫৭৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২১৫; মিশকাত, হা/২৪০০)]

(৩) بِاسْمِكَ رَبِّيْ وَضَعْتُ جَنْبِيْ وَبِكَ أَرْفَعُه ، اِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِيْ فَارْحَمْهَا،وَاِنْ أَرْسَلْتَهَا، فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِه عِبَادَكَ الصَّالِحِيْنَ

উচ্চারণ : বিসমিকা রাববী ওয়াযা‘তু জাম্বী, ওয়াবিকা আরফা‘উহূ। ইন আমসাক্তা নাফ্সী ফারহামহা, ওয়াইন আরসাল্তাহা ফাহ্ফায্হা বিমা তাহ্ফাযু বিহী ‘ইবা-দাকাস সা-লিহীন।

অর্থ : হে আমার রব! আপনার নামে আমি পিঠ রাখলাম এবং আপনার সাহায্যে তা উঠাব। যদি আপনি আমার জীবন নিয়ে নেন, তাহলে তার প্রতি রহম করুন। আর যদি ছেড়ে দেন, তাহলে তাকে হেফাযত করুন সেই বসত্মু থেকে, যা থেকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদেরকে আপনি হেফাযত করে থাকেন। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নিজের বিছানায় আসে, তখন সে যেন নিজের বিছানা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না তার অনুপস্থিতিতে তার বিছানার উপর কি এসে পড়েছে। তারপর (শুয়ে পড়ার সময়) যেন এ দু‘আ পড়ে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬৭; আবু দাঊদ, হা/৫০৫২; তিরমিযী, হা/৩৪০১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৫৪; জামেউস সগীর, হা/৪০৮)]

(৪) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَاٰوَانَا فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِىَ لَهٗ وَلَا مُئْوِىَ

উচ্চারণ : আল্হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা ওয়া সাক্বা-না ওয়া কাফা-না ওয়া আ-ওয়া-না, ফাকাম মিম্মান লা-কা-ফিয়া লাহূ ওয়ালা মু’বিয়া।

অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন, আমাদের প্রয়োজন পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের আশ্রয় প্রদান করেছেন। অথচ এমন বহুলোক রয়েছে, যাদেরকে পরিতৃপ্ত করার কেউ নেই এবং যাদেরকে আশ্রয়দানকারী কেউ নেই। [আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বিছানায় যেতেন তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬৯; আবু দাঊদ, হা/৫০৫৫; তিরমিযী, হা/৩৩৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৪০; মিশকাত, হা/২৩৮৬)]

(৫) اَللّٰهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِيْ إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِيْ إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِيْ إِلَيْكَ ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِيْ إلَيْكَ ، رَغْبَةً وَّرَهْبَةً إِلَيْكَ ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ ، اٰمَنْتُ بِكِتابِكَ الَّذِيْ أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِيْ أَرْسَلْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আসলামতু নাফ্সী ইলাইক, ওয়াওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্হী ইলাইক, ওয়াফাওওয়ায্তু আমরী ইলাইক, ওয়া আলজা’তু যাহ্রী ইলাইক, রাগ্বাতাও ওয়ারাহ্বাতান ইলাইক, লা মালজাআ ওয়ালা মানজা মিন্কা ইল্লা ইলাইক, আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা, ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমার জীবন সমর্পণ করলাম, আপনার দিকে আমার চেহারা নিবদ্ধ করলাম, আপনার উদ্দেশ্যে আমার কাজ-কর্ম নিবেদন করলাম এবং আপনার দিকে আমার পিঠ লাগালাম অর্থাৎ আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি)। আপনার প্রতি আগ্রহে ও শাস্তির ভয়ে এসব কাজ করছি। আপনার নিকট ছাড়া আর আশ্রয় পাওয়ার ও (নিজেকে) রক্ষা করার স্থান নেই। আপনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং যে নবী পাঠিয়েছেন তার উপর আমি ঈমান এনেছি। [বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, তুমি যখন বিছানায় শয়ন করার ইচ্ছা কর, তখন সালাতের অযুর মতো অযু করবে, তারপর ডান কাতে শয়ন করে এ দু‘আ পড়বে, এতে তুমি যদি ঘুমের মধ্যে মারা যাও তাহলে স্বভাব ধর্মের (ইসলামের) উপর মারা যাবে। আর এ দু‘আটি তোমার শেষ বাক্যে পরিণত করো। (সহীহ বুখারী, হা/২৪৭, ৭৪৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫৮; আবু দাঊদ, হা/৫০৪৮; তিরমিযী, হা/৩৩৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭০২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৩৬; মিশকাত, হা/২৩৮৫)]

১২
পার্শ্ব পরিবর্তনের দু‘আ :
لَا إلٰهَ إِلَّا اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল ওয়া-হিদুল ক্বাহ্হা-র, রাববুস্সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়ামা বাইনাহুমাল ‘আযীযুল গাফ্ফা-র।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক ও শক্তিশালী। আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে, সবকিছুর প্রতিপালক তিনি। তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন, তখন এই দু‘আ বলতেন। (মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৮০; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৬৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৩০; জামেউস সগীর, হা/৮৮২২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৬৬)]

১৩
নিদ্রাবস্থায় ভয় পেলে দু‘আ :
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِه وَعِقَابِه وَشَرِّ عِبَادِه وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ

উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিন গাযাবিহী ওয়া‘ইক্বা-বিহী ওয়া শার্রি ‘ইবা-দিহী ওয়া মিন হামাযা-তিশ শায়া-তবী-নি ওয়াআই ইয়াহ্যুরূন।

অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের মাধ্যমে আশ্রয় চাচ্ছি তার ক্রোধ ও শাস্তি হতে, তার বান্দার অনিষ্ট হতে এবং শয়তানের খটকা হতে, আর সে যেন আমার নিকট উপস্থিত হতে না পারে। [আমর ইবনে শু‘আইব (রাঃ) তার পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পায়, তখন সে যেন এই দু‘আ পড়ে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭০৪; আবু দাঊদ, হা/৩৮৯৫; তিরমিযী, হা/৩৫২৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬৯৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২০১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৪; মিশকাত, হা/২৪৭৭)]

১৪
নিদ্রাবস্থায় ভালো বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয় :
ঘুমের মধ্যে মন্দ স্বপ্ন দেখলে তিন বার বাম দিকে থুথু ফেলতে হবে, তারপর তিন বার নিচের দু‘আটি পাঠ করে পার্শ্ব পরিবর্তন করতে হবে,

أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্শাইত্বা-নির রাজীম।

অর্থ : বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

উল্লেখ্য যে, স্বপ্ন দেখলে কাউকে না বলাই ভালো। তবে একান্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু অথবা জ্ঞানীদের সামনে বলা যেতে পারে।

আবু ক্বাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, উত্তম স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই তোমাদের যে কেউ ভালো স্বপ্ন দেখে, সে যেন এমন ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করে যাকে সে ভালোবাসে। আর যদি কেউ মন্দ স্বপ্ন দেখে, তাহলে সে যেন এর ক্ষতি থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং তিন বার বাম দিকে থুথু ফেলে। আর স্বপ্নটি যেন কারো কাছে না বলে, তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭১৬; সহীহ বুখারী, হা/৩২৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৬১৭; দারেমী, হা/২১৪১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৯; মিশকাত, হা/৪৬১২।]

১৫
ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দু‘আ :
(১) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وإِلَيْهِ النُّشُوْرُ

উচ্চারণ : আল্ হাম্দুলিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না বা‘দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।

অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি আমাদেরকে মরণের পর জীবিত করেছেন এবং তাঁর দিকেই আবার প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১২; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬২; আবু দাঊদ, হা/৫০৫১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬২৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৫; জামেউস সগীর, হা/৮৭৭৯।]

(২) لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَسُبْحَانَ اللهِ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ- اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুলমুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর, ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। আমরা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি। প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। তাঁর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি বা উপায় নেই। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। [উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কেউ যদি শেষ রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই দু‘আটি পড়ে, তবে সে যে কোন দু‘আ করলে তার দু‘আ কবুল করা হবে। আর যদি সে অযু করে সালাত আদায় করে তবে তার সালাত কবুল করা হবে। (সহীহ বুখারী, হা/১১৫৪; আবু দাঊদ, হা/৫০৬২; তিরমিযী, হা/৩৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭২৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬১২; মিশকাত, হা/১২১৩)]

(৩) সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকূ পড়া :

﴿إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِاُولِي الْاَلْبَابِ اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّ قُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ رَبَّنَاۤ إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَه وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ رَبَّنَاۤ إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُّنَادِيْ لِلْاِيْمَانِ أَنْ اٰمِنُوْا بِرَبِّكُمْ فَاٰمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ رَبَّنَا وَاٰتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلٰى رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّيْ لَاۤ أُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثٰى بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَأُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ الْبِلَادِ مَتَاعٌ قَلِيْلٌ ثُمَّ مَأٰوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ لٰكِنِ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا نُزُلًا مِّنْ عِنْدِ اللهِ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِّلْاَبْرَارِ وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ لَا يَشْتَرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًا أُولٰٓئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ إِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾

উচ্চারণ : ইন্না ফী খালক্বিসসামা-ওয়া-তি ওয়ালআরযি ওয়াখতিলা-ফিল লাইলি ওয়াননাহা-রি লাআ-য়া-তিল লিউলিল আলবা-ব। আল্লাযীনা ইয়াযকুরূনাল্লা-হা ক্বিয়া-মাওঁ ওয়াকু‘ঊদাওঁ ওয়া‘আলা জুনূবিহিম ওয়া ইয়াতাফাক্কারূনা ফী খালকিসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রাববানা মা-খালাক্বতা হা-যা বা-ত্বিলান, সুবহা-নাকা ফাক্বিনা ‘আযা-বাননা-র। রাববানা ইন্নাকা মান তুদ্খিলিন না-রা ফাক্বাদ আখযাইতাহ্, ওয়ামা লিযযা-লিমীনা মিন আনসা-র। রাববানা ইন্নানা সামি‘না মুনা-দিয়াই ইউনা-দী লিলঈমা-নি আনআ-মিনূ বিরাব্বিকুম ফাআ-মান্না। রাববানা ফাগফিরলানা যুনূবানা ওয়াকাফ্ফির ‘আন্না সায়্যিআ-তিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মা‘আল আবরা-র। রাববানা ওয়াআ-তিনা মা ওয়া‘আত্তানা ‘আলা রুসুলিকা ওয়ালা তুখযিনা ইয়াউমাল ক্বিয়ামাহ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ। ফাস্তাজা-বা লাহুম রাববুহুম আন্নী লা-উযী‘উ ‘আমালা ‘আ-মিলিম মিনকুম মিন যাকারিন আও উনসা, বা‘যুকুম মিম বা‘য, ফাল্লাযীনা হা-জারু ওয়া উখরিজু মিন দিয়া-রিহিম ওয়াঊযূ ফী সাবীলী ওয়াক্বা-তালূ ওয়াকুতিলূ লাউকাফ্ফিরান্না ‘আনহুম সায়্যিআ-তিহিম ওয়ালা উদ্খীলান্নাহুম জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-র, সাওয়া-বাম মিন ‘ইনদিল্লা-হ, ওয়াল্লা-হু ‘ইনদাহূ হুসনুস সাওয়া-ব। লা-ইয়াগুর্রান্নাকা তাক্বাল্লুবুল্লাযীনা কাফারু ফিল বিলা-দ। মাতা‘উন ক্বালীল। সুম্মা মা’ওয়া-হুম জাহান্নাম, ওয়াবি’সাল মিহা-দ। লা-কিনিল্লাযীনাত্তাক্বাও রাববাহুম লাহুম জান্না-তুন তাজরী মিন তাহ্তিহাল আনহা-রু খা-লিদীনা ফীহা নুযুলাম মিন ‘ইনদিল্লা-হ, ওয়ামা ‘ইনদাল্লা-হি খাইরুল লিল আবরা-র। ওয়া ইন্না মিন আহলিল কিতা-বি লামাই ইউ’মিনু বিল্লা-হি ওয়ামা উনযিলা ইলাইকুম ওয়ামা উনযিলা ইলাইহিম খা-শি‘ঈনা লিল্লা-হি লা-ইয়াশ্তারূনা বিআ-য়া-তিল্লা-হি সামানান ক্বালীলা, উলা-ইকা লাহুম আজরুহুম ‘ইনদা রাবিবহিম, ইন্নাল্লা-হা সারী‘উল হিসা-ব। ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানুসবিরূ ওয়াসা-বিরূ ওয়ারা-বিতূ ওয়াত্তাকুল্লা-হা লা‘আল্লাকুম তুফলিহূন।

অর্থ : নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে। যারা দন্ডায়মান, উপবেশন ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা করে (বলে), হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা বৃথা সৃষ্টি করেননি। আপনিই পবিত্রতম; অতএব আমাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করুন। হে আমাদের প্রতিপালক! অবশ্যই আপনি যাকে জাহান্নামে দেবেন, নিশ্চয় তাকে লাঞ্চিত করবেন এবং অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের রব! নিশ্চয় আমরা এক আহবানকারীকে আহবান করতে শুনেছিলাম যে, তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, তাতেই আমরা ঈমান এনেছি; হে আমাদের রব! অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন, আর আমাদের গোনাহগুলো মুছে দিন এবং পুণ্যবানদের সাথে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন। হে আমাদের রব! আপনি স্বীয় রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদের সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলেন তা দান করুন এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে লাঞ্চিত করবেন না; নিশ্চয় আপনি ওয়াদা খিলাফ করেন না। অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন এ মর্মে যে, আমি তোমাদের পুরুষ অথবা নারীর মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। অতএব যারা হিজরত করেছে, তাদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, নিশ্চয় আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত; এটা আল্লাহর নিকট হতে প্রতিদান, আর আল্লাহর নিকটই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। শহরসমূহে কাফিরদের চালচলন যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। এসব কয়েকদিনের ভোগের সামগ্রী মাত্র; অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং তা কতইনা নিকৃষ্ট স্থান! কিমত্মু যারা স্বীয় প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত, তন্মধ্যে তারা সদা অবস্থান করবে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে মেহমানদারী। আর যেসব বসত্মু আল্লাহর নিকট রয়েছে তা পুণ্যবানদের জন্য বহুগুণে উত্তম। আর নিশ্চয় আহলে কিতাবের মধ্যে এরূপ লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহর প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে, সে বিষয়ে আল্লাহর ভয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে; যারা অল্প মূল্যে আল্লাহর নিদর্শনাবলি বিক্রি করে না, তাদের জন্যই তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে; নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং লড়াইয়ের জন্য সর্বদা প্রসত্মুত থাকো, আর আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালা মাইমুনার ঘরে থাকলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺও এ রাতে তার সাথে ছিলেন। নবী ﷺ পরিবারের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললেন। তারপর ঘুমিয়ে গেলেন। যখন রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলো, তখন তিনি উঠলেন এবং আকাশের দিকে তাকালেন। অতঃপর সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকূ তিলাওয়াত করলেন। তারপর অযু করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলেন। অন্য বর্ণনায় সূরার শেষ রুকূর প্রথম ৫ আয়াত পড়ার কথা বর্ণিত আছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫; আবু দাঊদ, হা/৫৮; নাসাঈ, হা/১৭০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮; মিশকাত, হা/১১৯৫, ১২০৯)]

১৬
প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশের দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়ালখাবা-ইস।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অপবিত্র মহিলা ও পুরুষ জিন হতে আশ্রয় চাচ্ছি। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন টয়লেটে যেতেন তখন এই দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৪২; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫৭; আবু দাঊদ, হা/৬; তিরমিযী, হা/৬; নাসাঈ, হা/১৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৬৫; মিশকাত, হা/৩৩৭)]

১৭
প্রস্রাব-পায়খানা থেকে বের হওয়ার পর দু‘আ :
غُفْرَانَكَ

উচ্চারণ : গুফরা-নাকা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ক্ষমা চাচ্ছি। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন টয়লেট থেকে বের হতেন তখন এই দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৩০; তিরমিযী, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯০; জামেউস সগীর, হা/৮৮৩৬; মিশকাত, হা/৩৫৯। উল্লেখ্য যে, এ দু‘আর সাথে কিছু অতিরিক্ত দু‘আ সমাজে প্রচলিত আছে। তবে এর সনদ সহীহ নয়)]

১৮
অযুর শুরুতে পড়ার দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি। [তিরমিযী, হা/২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৭; আবু দাঊদ, হা/১০২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১০৬০।]

১৯
অযুর শেষে পড়ার দু‘আ :
(১) أَشْهَدُ اَنْ لَّا إلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه ، وَأَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহূ ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারাসূলুহ্।

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। [উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পূর্ণ নিয়মের সাথে অযু করবে এবং এ দু‘আ পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। ফলে সে তাতে যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/৪৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২২; বায়হাকী, হা/৩৩৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪; মিশকাত, হা/২৮৯)]

(২) اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ ، وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাজ‘আল্নী মিনাত্তাওয়া-বীন, ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল্ মুতাত্বাহ্হিরীন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [তিরমিযী, হা/৫৫; বায়হাকী, হা/৩৭৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২০; জামেউস সগীর, হা/১১১১২; মিশকাত, হা/২৮৯।]

২০
আযানের জবাব :
আযান শুনলে মুয়াজ্জিন যা বলেন তাই উচ্চারণ করে আযানের জবাব দিতে হয়। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৮; সহীহ বুখারী, হা/৬১১; সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৪; আবু দাউদ, হা/৫২২; তিরমিযী, হা/২০৮; নাসাঈ, হা/৬৭৩; ইবনে মাজাহ, হা/৭২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১০৩৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১১৮৯; জামেউস সগীর, হা/৬১৪।] তবে ‘‘হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ’’ ও ‘‘হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ’’ বলার সময় বলতে হয় ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’’। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৫; আবু দাউদ, হা/৫২৮; নাসাঈ, হা/৬৭৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৮৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৫৮; মিশকাত, হা/৬৫৮।]

২১
আযান শোনার পর দু‘আ :
আযান শেষ হলে প্রথমে দরূদ পড়বে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাঊদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩২৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫০; মিশকাত, হা/৬৫৭।] তারপর দু‘আ পড়বে,

(১) اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّه

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আসহু মাক্বা-মাম্ মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের আপনিই রব। মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করুন অসীলা নামক স্থান ও মর্যাদা। আর তাকে অধিষ্ঠিত করুন সেই প্রশংসিত স্থানে, যার ওয়াদা আপনি তাকে দিয়েছেন। [জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দু‘আ বলবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য শাফা‘আত করা আমার উপর জরুরি হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬১৪; আবু দাঊদ, হা/৫২৯; তিরমিযী, হা/২১১; নাসাঈ, হা/৬৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৮৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪২০; মিশকাত, হা/৬৫৯)]

(২) أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকা লাহূ, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহ, রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসূলাও ওয়া বিল ইসলা-মি দ্বীনা।

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সমত্মুষ্ট হয়েছি। [সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনে এই দু‘আ পড়বে, তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৭; আবু দাঊদ, হা/৫২৫; তিরমিযী, হা/২১০; নাসাঈ, হা/৬৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯৩; মিশকাত, হা/৬৬১)]

২২
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দু‘আ :
(১) بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।

অর্থ : আল্লাহর নামে বের হলাম, তাঁর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপায় ও ক্ষমতা নেই। [আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দু‘আ পড়বে, তাকে বলা হয় তোমাকে পথ দেখানো হলো এবং সংরক্ষণ করা হল। ফলে শয়তান তার নিকট হতে দূর হয়ে যায় এবং অপর শয়তান এ শয়তানকে বলে, তুমি ঐ ব্যক্তির কী করবে যাকে পথ দেখানো হয়েছে, উপায় বলে দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে? (আবু দাঊদ, হা/৫০৯৭; তিরমিযী, হা/৩৪২৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬০৫; জামেউস সগীর, হা/৫০০; মিশকাত, হা/২৪৪২)]

(২) اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ اَنْ اَضِلَّ اَوْ اُضَلَّ اَوْ اَزِلَّ اَوْ اُزَلَّ اَوْ اَظْلِمَ اَوْ اُظْلَمَ اَوْ اَجْهَلَ اَوْ يُجْهَلَ عَلَىَّ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা আন্ আযিল্লা আও উযাল্লা আও আযিল্লা আও উযাল্লা আও আযলিমা আও উযলামা আও আজহালা আও ইউজ্হালা ‘আলাইয়া।

অর্থ : হে আললাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই- আমি কাউকে বিভ্রামত্ম করি বা আমাকে কেউ বিভ্রামত্ম করুক বা আমি কাউকে পদচ্যুত করি বা আমাকে কেউ পদচ্যুত করুক বা আমি কারো প্রতি অত্যাচার করি বা কেউ আমাকে অত্যাচার করুক বা আমি মূর্খতা সুলভ কোন কাজ করি বা কেউ আমার উপর অশোভনীয় কিছু করুক এর থেকে। [উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখনই ঘর থেকে বের হতেন, আসমানের দিকে তাকিয়ে এই দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৯৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৯১৯৯; মিশকাত, হা/২৪৪২)]

২৩
বাড়িতে প্রবেশ করার সময় দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبَّنَا تَوَكَّلْنَا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাল মাওলাজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি বিসমিল্লা-হি ওয়ালাজনা ওয়া ‘আলাল্লা-হি রাববানা তাওয়াক্কালনা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি প্রবেশ করার এবং বের হওয়ার কল্যাণ চাই। আল্লাহর নামেই আমরা পৌঁছি এবং আল্লাহর উপর আমরা ভরসা করি। [আবু মালিক আল আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে, তখন সে যেন এই দু‘আটি পাঠ করে। তারপর সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করবে। (আবু দাঊদ, হা/৫০৯৮; জামেউস সগীর, হা/৮৪১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৫; মিশকাত, হা/২৪৪৪)]

ঘরে প্রবেশ করেই ঘরবাসীকে সালাম দিবে। কুরআনে আল্লাহ বলেন, যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন নিজেদের উপর সালাম দাও। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অতি বরকতময় এবং পবিত্র সম্ভাষণ। (সূরা নূর- ৬১)

২৪
মসজিদে যাওয়ার সময় দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ فِىْ قَلْبِىْ نُوْرًا وَّ فِىْ بَصَرِىْ نُوْرًا وَّ فِىْ سَمْعِىْ نُوْرًا وَّ عَنْ يَّمِيْنِىْ نُورًا وَّ عَنْ يَّسَارِىْ نُوْرًا وَّ فَوْقِىْ نُوْرًا وَّ تَحْتِىْ نُوْرًا وَّ أَمَامِىْ نُوْرًا وَّ خَلْفِىْ نُوْرًا وَّ عَظِّمْ لِىْ نُوْرًا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফী ক্বালবী নূরাও ওয়াফী বাসারী নূরাও ওয়াফী সাম‘য়ী নূরাও ওয়া ‘আন ইয়ামীনী নূরাও ওয়া ‘আন ইয়াসা-রী নূরাও ওয়া ফাউক্বী নূরাও ওয়া তাহ্তী নূরাও ওয়াআমা-মী নূরাও ওয়াখালফী নূরাও ওয়া ‘আয্যিম লী নূরা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার অন্তরে, চোখে, কানে এবং আমার ডানে-বামে, উপরে-নিচে, সামনে-পেছনে নূর দান করো এবং আমাকে অধিক নূর দান করো। [ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি তখন এ দু‘আটি পাঠ করছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৯৪; মিশকাত, হা/১১৯৫)]

২৫
মসজিদে প্রবেশ করার সময় দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাফ্তাহ্লী আবওয়া-বা রাহ্মাতিক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। [আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন এই দু‘আ পাঠ করে। (সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৫; আবু দাঊদ, হা/৪৬৫; নাসাঈ, হা/৭২৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৫৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৪৭; মিশকাত, হা/৭০৩)]

(২) اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

উচ্চারণ : আ‘ঊযুবিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়া সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম, বিসমিল্লা-হি ওয়াসসালা-তু ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্। আল্লা-হুম্মাফ্তাহ্লী আব্ওয়া-বা রাহমাতিক।

অর্থ : আমি মহান আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে তাঁর সম্মানিত চেহারার মাধ্যমে এবং তাঁর চিরন্তন প্রতাপের মাধ্যমে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। [আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যখন কোন ব্যক্তি ‘‘আ‘ঊযুবিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়া সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম’’ এ দু‘আ পাঠ করে তখন শয়তান বলে, সারাদিনের জন্য সে আমার থেকে নিরাপত্তা লাভ করল। (আবু দাঊদ, হা/৪৬৬; বায়হাকী, হা/৬৭)]

উল্লেখ্য যে, হাদীসের আলোকে মসজিদে প্রবেশের সময় নিম্নের পাঁচটি আমল পাওয়া যায় :

১. ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।

২. ইতেকাফের নিয়ত করা।

৩. বিসমিল্লাহ বলা।

৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করা।

৫. মসজিদে প্রবেশের দু‘আ পড়া।

২৬
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। [আবু উসাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদ হতে বের হবে, তখন সে যেন এ দু‘আটি পাঠ করে। (সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৫; আবু দাঊদ, হা/৪৬৫; নাসাঈ, হা/৭২৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৫৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৪৭; মিশকাত, হা/৭০৩)]

(২) بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ اَللّٰهُمَّ اَعْصِمْنِىْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি ওয়াস্সালা-তু ওয়াস্সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিক, আল্লা-হুম্মা আ‘সিম্নী মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।

অর্থ : আল্লাহর নামে বের হচ্ছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করুন। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদ থেকে বের হবে, তখন নবী ﷺ এর প্রতি সালাম জানাবে এবং বলবে- ‘‘আল্লা-হুম্মা আ‘সিম্নী মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।’’ (ইবনে মাজাহ, হা/৭৭১, ৭৭৩)]

হাদীসের মধ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় পাঁচটি আমলের কথা জানা যায়। সেগুলো হলো :

১. বাম পা দিয়ে বের হওয়া।

২. হালাল রুজি উপার্জনের নিয়তে বের হওয়া।

৩. বিসমিল্লাহ বলা।

৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করা।

৫. মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ পাঠ করা।

শেষের তিনটি আদব উপরোক্ত দু‘আটি পাঠ করলেই আদায় হয়ে যাবে।

২৭
সালাত সংক্রান্ত দু‘আসমূহ তাকবীরে তাহরীমা বা সালাত শুরুর তাকবীর :
اَللهُ اَكْبَرُ

উচ্চারণ : আল্লা-হু আকবার।

অর্থ : আল্লাহ সবচেয়ে বড়। [আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সালাতের চাবি হলো পবিত্রতা, এর তাকবীর পার্থিব যাবতীয় কাজকে হারাম করে এবং সালাম যাবতীয় কর্মকে হালাল করে দেয়। (আবু দাঊদ, হা/৬১; তিরমিযী, হা/৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৫; মিশকাত, হা/৩১২)]

সানা :

(১) اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইয়ুনাক্বক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াছ্ছালজি ওয়াল বারাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার এবং আমার গোনাহগুলোর মধ্যে এমন ব্যবধান সৃষ্টি করে দিন, যেরূপ ব্যবধান সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করুন, যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দিন। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতে তাকবীরে তাহ্রীমা এবং কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যখানে অল্প কিছুক্ষণ নীরব থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি আমার মা-বাবা কুরবান হোক! তাকবীরে তাহ্রীমা এবং কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যখানে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার সময় আপনি কী পড়েন? জবাবে তিনি বলেন, তখন আমি এ দু‘আটি পড়ে থাকি। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/ ১৩৮২)]

(২) سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা, ওয়াতা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলা-হা গাইরুক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার মর্যাদা সকলের উপর। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। [আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত শুরুর পর এই দু‘আটি পাঠ করতেন। (তিরমিযী, হা/২৪২-৪৩; আবু দাঊদ, হা/৭৭৫-৭৬; নাসাঈ, হা/৯০০; দার কুতনী, হা/১১৪০; মিশকাত, হা/৮১৫, ১২১৭)]

২৮
রুকূর তাসবীহ :
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ (১)

উচ্চারণ : সুব্হা-না রাবিবয়াল ‘আযীম।

অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। [হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করেন। আর তখন তিনি রুকূতে এ দু‘আ পাঠ করেন। (আবু দাঊদ, হা/৮৭১; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫০; তিরমিযী, হা/২৬১; নাসাঈ, হা/১০০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৮৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৯২৩)] (তিন বার) [হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছেন যে, যখন তিনি সিজদায় যেতেন তখন তিনি এ দু‘আটি তিন বার পাঠ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৮)]

(২) سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ وَ بِحَمْدِه

উচ্চারণ : সুব্হা-না রাবিবয়াল ‘আযীম, ওয়াবি হামদিহী।

অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তার প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। [উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন রুকূতে যেতেন, তখন তিনি এ দু‘আটি তিন বার পাঠ করতেন। (জামেউস সগীর, হা/৮৮৬৫)]

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ (৩)

উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাঊদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫)]

(৪) سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ

উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ।

অর্থ : আল্লাহ পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত; তিনি জিবরাঈল (আঃ) সহ সকল ফেরেশতার রব। [আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাঊদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩)]

(৫) سُبْحَانَ ذِى الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ

উচ্চারণ : সুব্হা-না যিল্ জাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়া-ই ওয়াল্ ‘আয্মাতি।

অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার, যিনি প্রতাপশালী, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্বের মালিক। [আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর সাথে সালাতে দাঁড়ালাম। সে সালাতে তিনি সূরা বাক্বারা পড়ার সমপরিমাণ সময় রুকূর মধ্যে ছিলেন। এ সময় তিনি এ তাসবীহ পাঠ করেন। (আবু দাঊদ, হা/৮৭৩; নাসাঈ, হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০)]

২৯
রুকূ হতে উঠার সময় বলবে :
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ

উচ্চারণ : সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্।

অর্থ : আল্লাহ সে ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তাঁর প্রশংসা করে। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন প্রথমে তাকবীর দিতেন। তারপর যখন রুকূতে যেতেন তখনও তাকবীর দিতেন। তারপর যখন রুকূ হতে পিঠ সোজা করে দাঁড়াতেন তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯১; আবু দাঊদ, হা/৭২২)]

৩০
রুকূ হতে দাঁড়িয়ে যা বলতে হয় :
(১) رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ

উচ্চারণ : রাববানা লাকাল হামদ।

অর্থ : হে আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। [আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন রুকূ হতে মাথা উত্তোলন করতেন, তখন দুই হাত কাধ বরাবর উত্তোলন করতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৬৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৮)]

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ (২)

উচ্চারণ : রাববানা ওয়ালাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বায়্যিবাম মুবা-রাকান ফীহ্।

অর্থ : হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আর তা এত অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতপূর্ণ। [রিফাআ ইবনে রাফে (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত পড়ানো অবস্থায় এক ব্যক্তি রুকূ থেকে উঠে এ দু‘আটি পাঠ করলো। অতঃপর সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এই দু‘আটি পাঠ করেছ? লোকটি বললো, আমি! রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি দেখলাম প্রায় ৩৩ জন ফেরেশতা এই দু‘আটি আগে লেখার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৩; সহীহ বুখারী, হা/৭৯৯; আবু দাঊদ, হা/৭৭০)]

৩১
সিজদার তাসবীহ :
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى (১)

উচ্চারণ : সুবহা-না রাবিবয়াল আ‘লা ।

অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। [হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সিজদায় যেতেন তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫০; আবু দাঊদ, হা/৮৭১, ৮৮৩; তিরমিযী, হা/২৬২; নাসাঈ, হা/১০০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৮৮; মিশকাত, হা/৮৮১; আবু দাঊদ, হা/৮৭৪; তিরমিযী, হা/২৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯০)] (তিন বার) [হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছেন যে, যখন তিনি সিজদায় যেতেন, তখন তিনি এ দু‘আটি তিন বার পাঠ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৮)]

(২) سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى وَ بِحَمْدِه

উচ্চারণ : সুব্হা-না রাবিবয়াল আ‘লা ওয়াবি হামদিহী।

অর্থ : আমি আমার রবের সর্বোচ্চ পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তার প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। [উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সিজদাতে যেতেন তখন তিনি এ দু‘আটি তিন বার পাঠ করতেন। (জামেউস সগীর, হা/৮৮৬৫)] (তিন বার)

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ (৩)

উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাঊদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫)]

(৪) اَللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهٗ وَشَقَّ سَمْعَهٗ وَبَصَرَهٗ تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাত্তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজ্হীয়া লিল্লাযী খালাকাহূ ওয়া শাক্কা সাম‘আহূ ওয়া বাসারাহূ, তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লিক্বীন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার চেহারা সিজদা করছে ঐ সত্তাকে- যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। বরকতময় সেই মহান সত্তা, যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা। [আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন সিজদা দিতেন তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাঊদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১১২৬; ইবনে মাজাহ, হা/১০৫৪)]

(৫) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذَۢنْبِىْ كُلَّهٗ دِقَّهٗ وَجِلَّهٗ وَاَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ وَعَلَانِيَّتَهٗ وَسِرَّهٗ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফির্লী যাম্বী কুল্লাহূ দিক্কাহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা-নিয়্যাতাহূ ওয়া সিররাহূ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার ছোট-বড়, আগের-পরের, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার গোনাহ ক্ষমা করে দিন। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১১১২; আবু দাঊদ, হা/৮৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৭২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৩১)]

৩২
দু‘সিজদার মধ্যখানের দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَارْزُقْنِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়াজবুরনী ওয়ার যুক্বনী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। [ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ দুই সিজদার মাঝখানে এ দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৮৫০; তিরমিযী, হা/২৮৪; নাসাঈ, হা/৮৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৬৪, ১০০৪; বায়হাকী, হা/২৫৮৪; মিশকাত, হা/৯০০)]

৩৩
তাশাহ্হুদ
اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ

উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্ব ত্বায়্যিবা-ত, আসসালামু ‘আলাইকা আয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়াবারাকা-তুহ। আসসালা-মু ‘আলাইনা ওয়া‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহ।

অর্থ : (আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, সালাত ও পবিত্র বাক্যসমূহ আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপরও শান্তি অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। [আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে সালাত পড়তাম, তখন আমরা বলতাম, ‘‘আস্সালামু ‘আলা জিবরাঈলা ও মীকাঈলা, আস্সালামু ‘আলা ফুলান ওয়া ফুলান’’। এ কথা শুনে নবী ﷺ আমাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর নামই তো ‘সালাম’। অতএব যখন তোমাদের কেউ দরূদ পাঠ করবে সে যেন এ দু‘আটি পাঠ করে। (সহীহ বুখারী, হা/৮৩১, ১২০২, ৭৩৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪; আবু দাঊদ, হা/৯৬৯; তিরমিযী, হা/২৮৯; নাসাঈ, হা/১১৬৮-৬৯, ১২৭৭; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০০৬; মিশকাত, হা/৯০৯)]

৩৪
দরূদে ইবরাহীম
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ -اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের প্রতি রহমত নাযিল করুন, যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন, যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [আবদুর রহমান ইবনে আবু লাইলা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কাব ইবনে উজরা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অতঃপর বলেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদীয়া দেব না, যা আমি নবী ﷺ থেকে শুনেছি? আমি বললাম, হ্যাঁ! সে হাদীয়া আমাকে দিন। তখন তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাদের অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর আমরা কীভাবে দরূদ পাঠ করব? কেননা আপনার উপর কীভাবে সালাম করব, তা আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা এ দু‘আটি পাঠ করবে। (সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮)]

৩৫
শেষ বৈঠকের দু‘আসমূহ
(১) اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাব্র, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল মা’সামি ওয়াল মাগরাম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণ হতে। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (তাশাহ্হুদের পর) এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৮৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাঊদ, হা/৮৮০; নাসাঈ, হা/১৩০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬২২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৫২; বায়হাকী, হা/২৭০১; মিশকাত, হা/৯৩৯)]

(২) اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরাও ওয়ালা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগ্ফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপনি নিজ ক্ষমা দ্বারা আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। [আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি দু‘আ শিক্ষা দিন, যা আমি সালাতের মধ্যে পাঠ করতে পারব। তখন তিনি বললেন, তুমি এ দু‘আ পাঠ করবে। (সহীহ বুখারী, হা/৮৩৪; তিরমিযী, হা/৩৫৩১; নাসাঈ, হা/১৩০২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৪৬)]

৩৬
দু‘আ কুনূত
(১) اَللّٰهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ إنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ وَإنَّه لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ وَ صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদাইত, ওয়া ‘আফিনী ফীমান্ ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিক্লী ফীমা আ‘ত্বাইত, ওয়াক্বিনী শার্রা মা ক্বাযাইত, ইন্নাকা তাক্যী ওয়ালা ইয়ুক্যা ‘আলাইক, ওয়া ইন্নাহূ লা ইয়াযিল্লু মাও ওয়া-লাইত, ওয়ালা ইয়া‘ইয্যু মান ‘আ-দাইত, তাবা-রাকতা রাববানা ওয়া তা‘আ-লাইত, নাসতাগফিরুকা ওয়ানাতূবু ইলাইক, ওয়া সাল্লাল্লা-হু ‘আলান নাবিয়্যি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান করুন, যাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে নিরাপত্তা দিন, যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। আর আমাকে সাহায্য করুন, যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে বরকত দিন। আর আমাকে রক্ষা করুন আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে। নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, আপনার উপর কারো নির্দেশ কর্যকর হয় না। আপনি যার সহায় সে কখনো অপমানিত হয় না। আর আপনি যাকে ত্যাগ করেন সে কখনো সম্মান পায় না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি বরকতময়, আপনি মহান, আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই। আর আমরা আপনার দিকেই ফিরে আসি, আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাযিল করুন। [হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এ কয়েকটি বাক্য শিখিয়েছেন- যা আমি বিতরের কুনূতে পাঠ করি। (আবু দাঊদ, হা/১৪২৭; নাসাঈ, হা/১৭৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৭৮)]

(২) اَللّٰهُمَّ إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَانَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ- اَللّٰهُمَّ إيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَإلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْا رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ إنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস্তা‘ইনুকা, ওয়া নাস্তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা, ওয়া নাতা ওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছ্নী ‘আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাক্ফুরুকা, ওয়া নাখলাউ ওয়া নাত্রুকু মাইয়াফজুরুকা, আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়ালাকা নুসাল্লী, ওয়ানাস্জুদু ওয়া ইলাইকা নাস্‘আ, ওয়া নাহ্ফিদু ওয়া নার্জূ রাহমাতাকা ওয়া নাখ্শা ‘আযা-বাকা, ইন্না ‘আযা-বাকা বিল্কুফ্ফা-রি মুলহিক্ব।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার সাহায্য চাই, আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, আপনার উপর ভরসা করি, আর আপনার উত্তম গুণগান বর্ণনা করি, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আপনার অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করি না। যে আপনার নাফরমানী করে (গোনাহের কাজ করে) আমরা তাকে ত্যাগ করি ও বর্জন করে চলি। হে আল্লাহ! আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, আপনার জন্যই সালাত পড়ি, আপনাকেই সিজদা করি এবং আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই। আর আমরা আপনার রহমতের আশা রাখি এবং আপনার আযাবকে ভয় করি, নিশ্চয় আপনার আযাব কাফিরদের জন্য অবধারিত। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৯৭০; তাহযীবুল আছার, হা/২৬৪৯; বায়হাকী, হা/২৯৬১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৭১০০; শারহু মা‘আনিল আছার, হা/১৪৭৫; ।]

৩৭
ইস্তিখারার দু‘আ
জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন সেভাবে সকল কাজে ইস্তিখারা করার নিয়ম ও দু‘আ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোন কাজ করবে তখন সে যেন দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে এবং এ দু‘আ পড়ে।

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَاَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَاَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَاِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا اَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا اَعْلَمُ وَاَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ - اَللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِىْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ اَللّٰهُمَّ وَاِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ شَرٌّ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِيْ فَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ اَرْضِنِيْ بِه

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা ওয়াআসতাক্বদিরুকা বিকুদ্রাতিকা ওয়াআস্আলুকা মিন ফাযলিকাল ‘আযীম। ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা আক্বদিরু, ওয়া তা‘লামু ওয়ালা আ‘লামু ওয়াআনতা ‘আল্লা-মুল্ গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইনকুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা খাইরুল্লী ফীদ্বীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী ফাক্বদুরহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী সুম্মা বা-রিক লী ফীহ। আল্লা-হুম্মা ওয়া ইনকুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল্লী ফীদ্বীনী ওয়ামা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী ফাস্রিফ্নী ‘আনহু ওয়াস্রিফ্হু ‘আন্নী ওয়াক্বদুরলিয়াল খাইরা হাইছু কা-না, ছুম্মা আরযিনী বিহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনারই জ্ঞান ও কুদরতের সাহায্যে এ বিষয়ের (যে বিষয়ের ব্যাপারে ইস্তিখারা করবে উহার) ভালো দিক জ্ঞাত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার নিকট অনুগ্রহ কামনা করছি। আপনি সক্ষম, আমি সক্ষম নই। আপনি জানেন, আমি জানি না। আর আপনি অদৃশ্যের খবর জানেন। হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন এ বিষয়টি আমার দ্বীন, আমার জীবনধারণ ও পরিণামের ব্যাপারে আমার জন্য ভালো হবে, তাহলে আপনি আমার জন্য তা নির্ধারণ করুন। অতঃপর তা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দান করুন। আর যদি মনে করেন যে, বিষয়টি আমার জন্য আমার দ্বীন, আমার জীবনধারণ ও আমার পরিণামের ব্যাপারে অকল্যাণকর, তাহলে আপনি আমার হতে তা ফিরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা হতে ফিরিয়ে রাখুন। আর আমার জন্য নির্ধারণ করুন কল্যাণ তা যেখানেই হোক এবং আমাকে তাতে সন্তুষ্ট রাখুন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩৮২, ৭৩৯০; আবু দাঊদ, হা/১৫৪০; তিরমিযী, হা/৪৮০; নাসাঈ, হা/৩২৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭৪৮; মিশকাত, হা/১৩২৩।]

ইসিত্মখারা করার নিয়ম :

কোন বিষয়ে স্থির সিদ্ধামত্ম না করে এবং কোন দিকে ঝুঁক না রেখে নিরপেক্ষ ও খোলা মনে ইসিত্মখারার নিয়তে সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে। অতঃপর যেদিকে মন টানবে সেভাবেই কাজ করবে। এ সালাত দিনে বা রাতে যে কোন সময় পড়া যায়।

ইসিত্মখারার সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক শেখানো বিশেষ দু‘আটি পাঠ করতে হবে। দু‘আটি কখন পড়বে, সে বিষয়ে দুটি নিয়ম পাওয়া যায়। একটি হলো, সালাম ফিরানোর পর দু‘আ করবে। আর দ্বিতীয়টি হলো, সালাতের মধ্যেই দু‘আ করবে। আর এক্ষেত্রে সিজদায় অথবা শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদের পর সালামের পূর্বে পাঠ করবে।

সুতরাং ইসিত্মখারার দু‘আটিও শেষ বৈঠকে বসে পাঠ করা বাঞ্ছনীয়। আর যদি কেউ সালাম ফিরানোর পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতে চায়, তাহলে বেশি দেরি না করে এবং অন্য কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি দু‘আ করবে এবং শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে। যেমন- ‘‘আল হামদুলিল্লাহি রাবিবল ‘আ-লামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিহিল কারীম’’- এ অংশটি পাঠ করার পর দু‘আটি পাঠ করবে। [আবু দাঊদ, হা/১৪৮৩; তিরমিযী, হা/৩৪৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯৮২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৬০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮৪০।] উল্লেখ্য যে, ইসিত্মখারার পর যেদিকে মন ঝুঁকে, সেটাই করা উচিত।

৩৮
ফরয সালাতের পরের যিকির ও দু‘আসমূহ
اَللهُ اَكْبَرُ (১)

উচ্চারণ : আল্লা-হু আকবার।

অর্থ : আল্লাহ সবচেয়ে বড়। [ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তাকবীর শুনে বুঝতাম যে, নবী ﷺ এর সালাত শেষ হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৮৪২; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৪; আবু দাঊদ, হা/১০০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩২)]

(২) اَسْتَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : আসতাগ্ফিরুল্লা-হ।

অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। [সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত শেষ করে ৩ বার ইসতিগ্ফার করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭; তিরমিযী, হা/৩০০)] (তিন বার)

(৩) اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়। [সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত শেষ করে এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭; তিরমিযী, হা/৩০০)]

(৪) لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ

উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর। লা-হাওলা ওয়াল কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুছ্ ছানা-উলহাসান, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। [আবু যুবায়ের (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক ওয়াক্তে সালাম ফিরানোর পর এ দু‘আটি পাঠ করতেন। তিনি (ইবনে যুবায়ের) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতের পর এ কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাঊদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০)]

(৫) لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা-মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা দিতে চান তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং আপনি যা বাধা দেন তা দেয়ার কেউ নেই। আর আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই। [মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) এর কাতিব (সেক্রেটারী) ওয়ার্রাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) আমাকে দিয়ে মু‘আবিয়াকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি লেখালেন যে, নবী ﷺ প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এই দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাঊদ, হা/১৫০৭; নাসাঈ, হা/১৩৪১)]

(৬) اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করুন। [মু‘আয (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। তখন মু‘আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না। (আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬)]

(৭) আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :

আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।] (আয়াতুল কুরসী এ বইয়ের ৩৫ পৃষ্ঠায় রয়েছে)

(৮) سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ) ৩৩ বার, اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) ৩৩ বার, اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) ৩৩ বার এবং এক বার-

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। [আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এ আমল করবে তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০১)]

৩৯
ক্ষতিকর জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দু‘আসমূহ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন ক্ষতিকর জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে দু‘আ করতেন। হাদীসের কিতাবগুলোতে তা বর্ণিত আছে। সুতরাং আমাদেরও এ সকল ক্ষতিকর জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। হাদীস থেকে নিম্নে এ ধরনের কিছু দু‘আ উল্লেখ করা হলো :

৪০
জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ফিত্নাতিল মাহ্ইয়া ওয়ালমামা-ত।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। [আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে কুরআনের সূরা যেভাবে শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে এ দু‘আটিও শিক্ষা দিতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫০১; সহীহ বুখারী, হা/১৩৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাঊদ, হা/৮৮০; তিরমিযী, হা/৩৪৯৪; নাসাঈ, হা/২০৬০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৪০; মিশকাত, হা/৯৪১)]

৪১
দুনিয়ার ফিতনা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়ার ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। [সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩৭০; তিরমিযী, হা/৩৫৬৭; নাসাঈ, হা/৫৪৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬২১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৯৩৭; মিশকাত, হা/৯৬৪)]

৪২
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে কুরআনের সূরা যেভাবে শিক্ষা দিতেন ঠিক সেভাবে এ দু‘আটিও শিক্ষা দিতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫০১; সহীহ বুখারী, হা/১৩৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাঊদ, হা/৮৮০; তিরমিযী, হা/৩৪৯৪; নাসাঈ, হা/২০৬০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৪০; মিশকাত, হা/৯৪১)]

আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত স্মরণ রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৯১৯; আবু দাঊদ, হা/৪৩২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৬০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩৩৯১; বায়হাকী, হা/৫৭৯৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৮২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৭২; জামেউস সগীর, হা/১১১৪৬; মিশকাত, হা/২১২৬।]

সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত :

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ أَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّه عِوَجًا قَيِّمًا لِّيُنْذِرَ بَأْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا مَاكِثِيْنَ فِيْهِ أَبَدًا وَيُنْذِرَ الَّذِيْنَ قَالُوا اتَّخَذَ اللّٰهُ وَلَدًا مَا لَهُمْ بِه مِنْ عِلْمٍ وَّلَا لِاٰبَآئِهِمْ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ إِنْ يَّقُوْلُوْنَ إِلَّا كَذِبًا فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ إِنْ لَّمْ يُؤْمِنُوْا بِهٰذَا الْحَدِيْثِ أَسَفًا إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَإِنَّا لَجَاعِلُوْنَ مَا عَلَيْهَا صَعِيْدًا جُرُزًا أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا

অর্থ : সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি। তিনি একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত- তাঁর কঠিন শাসিত্ম সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য। আর ঐ সকল মুমিন যারা সৎকর্ম করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার, তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর সতর্ক করার জন্য তাদেরকে যারা বলে যে, আল্লাহ সমত্মান গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। তাদের মুখের কথা কী সাংঘাতিক! তারা তো কেবল মিথ্যাই বলে। (হে নবী) তারা এ বাণী বিশ্বাস না করলে সম্ভবত তুমি দুঃখে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে। পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা করেছি- মানুষকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। তার উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করব। তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে বিস্ময়কর? যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো।

৪৩
শিরক থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়াআনা আ‘লামু ওয়াআসতাগ্ফিরুকা লিমা লা- আ‘লাম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় আপনার সাথে শিরক করা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আর অজানা অবস্থায় শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে যা বলেছেন আমি তোমাদেরকে তাই বলব। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮১; আদাবুল মুফরাদ, হা/৭১৬; জামেউস সগীর, হা/৬০৪৪)]

৪৪
জানা-অজানা অমঙ্গল থেকে বেঁচে থাকার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি মা ‘আমিলতু ওয়ামিন শাররি মা লাম আ‘মাল।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি যা করেছি এবং আমি যা করি নাই, তার অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [ফারওয়া ইবনে নাওফাল আশজা‘ঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর নিকট কী কী দু‘আ করতেন? আয়েশা (রাঃ) জবাব দিলেন, তিনি এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৭০-৭৩; আবু দাঊদ, হা/১৫৫২; নাসাঈ, হা/১৩০৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭২৮; জামেউস সগীর, হা/২১৭৩; মিশকাত, হা/২৪৬২)]

৪৫
ইলম ও দু‘আ বিফলে যাওয়া থেকে বেঁচে থাকার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لَا يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لَا يُسْتَجَابُ لَهَا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘ইলমিন্ লা-ইয়ান্ফা‘উ ওয়ামিন ক্বালবিন্ লা-ইয়াখ্শা‘উ ওয়ামিন নাফ্সিন লা-তাশ্বা‘উ ওয়ামিন দা‘ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই এমন ইলম হতে, যা কোন উপকারে আসবে না ও এমন অন্তঃকরণ থেকে, যা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় না; এমন আত্মা থেকে, যা কখনো তৃপ্ত হয় না। আর এমন দু‘আ থেকে, যা কবুল হয় না। [যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮১; আবু দাঊদ, হা/১৫৫০; তিরমিযী, হা/৩৪৮২; নাসাঈ, হা/৫৪৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৪৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮৬২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০০৫; জামেউস সগীর, হা/২১৬৬; মিশকাত, হা/২৪৬০)]

৪৬
কানের ক্ষতি থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি সাম‘য়ী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার কানের ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই। [আবু আহমাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি দু‘আ শিক্ষা দিন। তখন তিনি আমাকে এ দু‘আ শিক্ষা দিলেন। (আবু দাঊদ, হা/১৫৫৩; তিরমিযী, হা/৩৪৯২; নাসাঈ, হা/৫৪৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৮০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৫৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৬৩; মিশকাত, হা/২৪৭২)]

৪৭
চোখের অপকারিতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ بَصَرِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি বাসারী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি চোখের ক্ষতি থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। [আবু দাঊদ, হা/১৫৫৩; ঐ।]

৪৮
জিহবার অপকারিতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ لِسَانِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি লিসা-নী।

অর্থ : হে আললাহ! আমি আপনার কাছে আমার জিহবার অপকারিতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। [আবু দাঊদ, হা/১৫৫৩; ঐ।]

৪৯
কাউকে হঠাৎ গালি দিয়ে ফেললে যে দু‘আ পড়তে হয় :
اَللّٰهُمَّ فَأَيَّمَا مُؤْمِنٍ سَبَبْتُه فَاجْعَلْ ذٰلِكَ لَه قُرْبَةً إِلَيْكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ফাআইয়ামা- মু’মিনিন সাবাবতুহূ ফাজ‘আল যা-লিকা লাহূ কুরবাতান ইলাইকা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ্।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি কোন ঈমানদার বান্দাকে মন্দ কথা বললে আপনি তা তার জন্য কিয়ামত দিবসে আপনার সান্নিধ্য লাভের অসীলা বানিয়ে দিন। [আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ দু‘আ পাঠ করতে শুনেছি। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৮৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৭৫৬; বায়হাকী, হা/১৩১৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৫১৫)]

৫০
কাউকে অকারণে শাসিত্ম দিয়ে ফেললে বা গালি দিলে দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ فَأَيَّمَا رَجُلٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ سَبَبْتُه أَوْ لَعَنْتُه أَوْ جَلَدْتُّه فَاجْعَلْهَا لَه زَكَاةً وَّرَحْمَةً

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নামা আনা বাশারুন, ফাআইয়্যুমা রজুলিম মিনাল মুসলিমীনা সাবাব্তুহূ আও লা‘আনতুহূ আও জালাত্তুহূ, ফাজ‘আলহা লাহূ যাকা-তাও ওয়া রাহ্মাহ্।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি একজন মানুষ। আমি যদি কোন মুসলিম ব্যক্তিকে গালি দেই অথবা অভিশাপ দেই অথবা শাসিত্ম দেই, তাহলে আপনি তা তার জন্য (তার গোনাহের) পবিত্রতা ও আপনার রহমত হিসেবে ধার্য করুন। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩৪১; দারেমী, হা/২৮০৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০১৬৭)]

৫১
অমত্মরের অপকারিতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ قَلْبِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি ক্বালবী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার মনের অপবিত্রতা থেকে বাঁচতে চাই। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৮১; ঐ।]

৫২
খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْاَخْلَاقِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন মুনকারা-তিল আখলা-ক্ব।

অর্থ : হে আল্লাহ! মন্দ চরিত্র থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই। [যিয়াদ ইবনে আলাকাহ (রহ.) তার চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী ﷺ এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (তিরমিযী, হা/৩৫৯১; জামেউস সগীর, হা/২১৭৮; মিশকাত, হা/২৪৭১)]

৫৩
খারাপ কাজ থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْاَعْمَالِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন মুনকারা-তিল আ‘মা-ল।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে মন্দ আমল থেকে মুক্তি চাই। [তিরমিযী, হা/৩৫৯১; ঐ।]

৫৪
প্রবৃত্তির মন্দ থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْاَهْوَاءِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন মুনকারা-তিল আহওয়া-ই।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে মন্দ প্রবৃত্তি থেকে মুক্তি চাই। [তিরমিযী, হা/৩৫৯১; ঐ।]

৫৫
ক্ষুধার কষ্ট থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُوْعِ فَاِنَّهٗ بِئْسَ الضَّجِيْعُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জূ‘য়ি ফাইন্নাহূ বি’সায যাজী‘।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষুধা থেকে আশ্রয় চাই, কেননা তা মারাত্মক ক্ষতিকর ধরাশয়কারী। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/১৫৪৯; নাসাঈ, হা/৫৪৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৫৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০২৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৯৬৩৬; জামেউস সগীর, হা/২১৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩০০২; মিশকাত, হা/২৪৬৯)]

৫৬
খিয়ানত থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخِيَانَةِ فَاِنَّهَا بِئْسَتِ الْبِطَانَةُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খিয়ানাতি ফাইন্নাহা বি’সাতিল বিত্বা-নাহ্।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে খিয়ানত থেকে আশ্রয় চাই, কেননা তা মারাত্মক গোপন রোগ। [আবু দাঊদ, হা/১৫৪৯; ঐ।]

৫৭
কাপুরুষতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুব্ন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় চাই। [আমর ইবনে মাইমূন আল-আওদী (রহ.) বলেন, শিক্ষক যেমন তাঁর ছাত্রদেরকে লেখা শিক্ষা দেন, তেমনি সা‘দ তাঁর সন্তানদেরকে এ কথাগুলো শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের পর এগুলো থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/২৮২২, ৬৩৭৪; তিরমিযী, হা/৩৫৬৭; মিশকাত, হা/৯৬৪)]

৫৮
দারিদ্রতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْفَقْرِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল ফাক্বর।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অভাব থেকে আশ্রয় চাই। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/১৫৪৬; নাসাঈ, হা/৫৪৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৩৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮২১৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৮৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭৮; মিশকাত, হা/২৪৬৭। জামেউস সগীর, হা/২১৬৫)]

৫৯
অসচ্ছলতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْقِلَّةِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল ক্বিল্লাহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অস্বচ্ছলতা থেকে মুক্তি চাই। [আবু দাঊদ, হা/১৫৪৬; ঐ।]

৬০
অপমান থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الذِّلَّةِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনায যিল্লাহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অপমান থেকে মুক্তি চাচ্ছি। [আবু দাঊদ, হা/১৫৪৬; ঐ।]

৬১
অত্যাচারিত হওয়া থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُظْلَمَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন আন উযলামা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অত্যাচারিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। [আবু দাঊদ, হা/১৫৪৬; ঐ।]

৬২
দুর্ভাগ্য থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ دَرَكِ الشَّقَاءِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন দারাকিশ শাক্বা-ই।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুর্ভাগ্য থেকে আশ্রয় চাই। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৬১৬; নাসাঈ, হা/৫৪৯১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৯৭১)]

৬৩
তাক্বদীরের মন্দ থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ سُوْءِ الْقَضَاءِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন সূইল ক্বাযা-ই।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে তাক্বদীরের মন্দ থেকে আশ্রয় চাই। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫২; নাসাঈ, হা/৫৪৯২; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৪১)]

৬৪
দুশমনের হাসি-ঠাট্টা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَمَاتَةِ الْاَعْدَاءِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শামা-তাতিল আ‘দা-ই।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুশমনের হাসি-ঠাট্টা থেকে আশ্রয় চাই। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৪৯; নাসাঈ, হা/৫৪৮৮; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৪১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৪৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০১৬; মিশকাত, হা/২৪৫৭)]

৬৫
যুদ্ধের ময়দানে বিজয় লাভের দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ سَرِيْعَ الْحِسَابِ اَللّٰهُمَّ اهْزِمِ الْأَحْزَابَ اَللّٰهُمَّ اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা মুন্যিলাল্ কিতা-ব, সারী‘আল হিসা-ব, আল্লা-হুম্মাহযিমিল্ আহযা-ব, আল্লা-হুম্মাহযিম্হুম্ ওয়া যাল্যিল্হুম।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, তুমি সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে পরাজিত করে দাও এবং তাদেরকে কম্পমান করে দাও। [আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে (খন্দকের যুদ্ধে) এভাবে দু‘আ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/২৯৩৩, ৪১১৫, ৬৩৯২, ৭৩৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৪১; তিরমিযী, হা/১৬৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯১৩০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৯৫১৬; মিশকাত, হা/২৪২৬)]

৬৬
শত্রুর অনিষ্ট হতে আশ্রয় চেয়ে দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না নাজ‘আলুকা ফী নুহূরিহিম ওয়া না‘ঊযুবিকা মিন শুরুরিহিম।

অর্থ : হে আল্লাহ! শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য আমরা আপনাকে তাদের সম্মুখে রাখলাম (আপনিই তাদের দমন করুন)। আর আমরা তাদের অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। [আবু বুরদা ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন গোত্রের ব্যাপারে ভীতিজনক কোন তৎপরতার সংবাদ জানতে পারতেন, তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/১৫৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৩৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৬২৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৫২৭৫; জামেউস সগীর, হা/৮৮৩৫; মিশকাত, হা/২৪৪১)]

(২) اَللّٰهُمَّ اَنْتَ عَضُدِىْ وَنَصِيْرِىْ بِكَ اَحُوْلُ وَبِكَ اَصُوْلُ وَبِكَ اُقَاتِلُ

উচ্চারণ : আললা-হুম্মা আন্তা ‘আযুদী ওয়া নাসীরী, বিকা আহূলু, ওয়াবিকা আসূলু, ওয়াবিকা উক্বা-তিলু।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার শক্তি, আপনি আমার সাহায্যকারী, আপনার সাহায্যে আমি যুদ্ধ করি। [আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে এই দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/২৬৩৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭২২৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৮৫৭৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৫২৭২; সুনানে সাদ ইবনে মানসূর, হা/২৫২২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৪১০৮; মিশকাত, হা/২৪৪০)]

৬৭
অক্ষমতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল ‘আজ্য।

অর্থ : হে আল্লাহ! অক্ষমতা থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/২৮২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৪৮; আবু দাঊদ, হা/১৫৪২; নাসাঈ, হা/৫৪৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৩৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭১; জামেউস সগীর, হা/২১৬৪; মিশকাত, হা/২৪৬০)]

৬৮
অলসতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কাসাল।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অলসতা থেকে আশ্রয় চাই। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮৪; আবু দাঊদ, হা/৫০৭৩; তিরমিযী, হা/৩৩৯০; নাসাঈ, হা/৫৪৫১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৭৩৪; মিশকাত, হা/২৪৭৯)]

৬৯
কৃপণতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখ্ল।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কৃপণতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭০৭; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫১; আবু দাঊদ, হা/৩৯৭৪)]

৭০
আল্লাহর নিয়ামত স্থায়ী হওয়ার জন্য দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি‘মাতিক।

অর্থ : হে আল্লাহ! নিয়ামত কমে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। [আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পঠিতব্য দু‘আসমূহের মধ্যে এটি হচ্ছে একটি দু‘আ। (সহীহ মুসলিম, হা/৭১২০; আবু দাঊদ, হা/১৫৪৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৪৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৮৫; জামেউস সগীর, হা/২১৭১; মিশকাত, হা/২৪৬১)]

৭১
দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ فُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ফুজা-আতি নিক্বমাতিক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে চাই। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১২০; ঐ।]

৭২
পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল গারাক্ব।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। [আবু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/১৫৫৪; নাসাঈ, হা/৫৫৩৩)]

৭৩
বার্ধক্য থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَرْذَلِ الْعُمُرِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুর।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই। [সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬৫; নাসাঈ, হা/৫৪৪৫; তিরমিযী, হা/৩৫৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৮৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৩৫; জামেউস সগীর, হা/৩১২৬; মিশকাত, হা/৯৬৪)]

৭৪
অহংকার থেকে বাঁচার দু‘আ :
رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَمِنْ سُوْءِ الْكِبْرِ

উচ্চারণ : রাববি আ‘ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়া মিন সূইল কিবরি।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার কাছে অলসতা থেকে এবং অহংকারের অনিষ্টতা থেকে পরিত্রাণ চাই। [আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সন্ধ্যার সময় এ দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৭৩; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৮৭৮; মিশকাত, হা/২৩৯২)]

৭৫
পাপ থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল মা’ছাম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি পাপ থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতে এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৮৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাঊদ, হা/৮৮০; মিশকাত, হা/৯৩৯)]

৭৬
শয়তান ও নফসের ক্ষতি থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ النَّفْسِ وَ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِه

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররিন-নাফসি ও শাররিশ শায়ত্বা-নি ওয়া শিরকিহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি নফস এবং শয়তানের অনিষ্ট ও তার শিরক থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দিন, যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করব। তখন তিনি তাকে এ দু‘আটি শিক্ষা দেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫১; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৫৩)]

৭৭
সম্পদ ও অভাবের ফিতনা থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْغِنٰى وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْفَقْرِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি ফিতনাতিল গিনা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল ফাক্বর।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রাচুর্যের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি এবং আমি আপনার কাছে অভাবের ফিতনা থেকেও আশ্রয় চাচ্ছি। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৪৬; তিরমিযী, হা/৩৪৯৫; নাসাঈ, হা/৫৪৭৭; মুসনাদে আবদুর রাযযাক, হা/১৯৬৩১; জামেউস সগীর, হা/২১৬৮; মিশকাত, হা/২৪৫৯)]

৭৮
কবরের আযাব থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাব্র।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে কুরআনের সূরা যেভাবে শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে এ দু‘আটিও শিক্ষা দিতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫০১; সহীহ বুখারী, হা/১৩৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাঊদ, হা/৮৮০; তিরমিযী, হা/৩৪৯৪; নাসাঈ, হা/২০৬০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৪০; মিশকাত, হা/৯৪১)]

৭৯
জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের আযাব থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৭৭; ঐ।]

৮০
জীব-জমত্মুর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দু‘আ :
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিনশাররি মা খালাক্ব।

অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের মাধ্যমে যাবতীয় সৃষ্ট বসত্মুর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি । [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর নিকট জনৈক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! গত রাত্রে একটি বিচ্ছু আমাকে কামড় দিয়েছে, তাতে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, তুমি সন্ধ্যার সময় যদি এ দু‘আ বলতে, তাহলে বিচ্ছু তোমাকে কোন কষ্ট দিত না। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫৩; আবু দাঊদ, হা/৩৯০০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫১৮)]

৮১
ঝড়-তুফান থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيْهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِه وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيْهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِه

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা ওয়াখাইরামা-ফীহা ওয়াখাইরামা উরসিলাত বিহী, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররিহা ওয়াশাররি মা-ফীহা ওয়াশাররি মা-উরসিলাতবিহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট বাতাসের কল্যাণ চাই, যে কল্যাণ তার মধ্যে রয়েছে এবং যে কল্যাণ তার সাথে প্রেরিত হয়েছে। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি তার অনিষ্ট হতে, যে অনিষ্ট তার মধ্যে নিহিত এবং যা তার সাথে প্রেরিত হয়েছে । [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন বাতাস প্রবলবেগে প্রবাহিত হতো তখন নবী ﷺ এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/২১২২; তিরমিযী, হা/৩৪৪৯; বায়হাকী, হা/৬২৫৫; মিশকাত, হা/১৫১৩)]

৮২
মেঘের গর্জন শোনার পর দু‘আ :
سُبْحَانَ الَّذِيْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِه وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِه

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লাযী ইউসাবিবহুর রা‘দু বিহামদিহী ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খীফাতিহ।

অর্থ : পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা, যার ভয়ে ভীত হয়ে প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করে মেঘের গর্জন এবং ফেরেশতাগণও। [আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং এই দু‘আটি পাঠ করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮০১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭০৩; সুনানে সা‘দ ইবনে মানসূর, হা/১১৬৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/৭২৩; মিশকাত, হা/১৫২২)]

৮৩
কল্যাণকর জিনিস চাওয়ার দু‘আসমূহ
রাসূলুল্লাহ ﷺ কল্যাণকর জিনিস কামনা করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন। তাই যেসকল জিনিস আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে অতি প্রয়োজনীয়, তা সবসময় আল্লাহর কাছে চাওয়া জরুরি। নিম্নে এ জাতীয় কিছু দু‘আ উল্লেখ করা হলো :

৮৪
উপকারী জ্ঞান, গ্রহণযোগ্য আমল ও পবিত্র রিযিক লাভের দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَّافِعًا وَعَمَلًا مُّتَقَبَّلًا وَ رِزْقًا طَيِّبًا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আও ওয়া ‘আমালাম মুতাক্বাববালাও ওয়া রিযক্বান ত্বায়্যিবা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, গ্রহণযোগ্য আমল এবং পবিত্র রিযিক চাই। [উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যখন সকালের সালাত আদায় করে সালাম ফিরাবে তখন এ দু‘আ পাঠ করবে। (ইবনে মাজাহ, হা/৯২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৭৩৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৫১১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৯৮৭৫; মিশকাত, হা/২৪৯৮)]

৮৫
ভালো কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ ، وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ ، وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ وَإِذَا أَرَدْتَّ فِي النَّاسِ فِتْنَةً فَاقْبِضْنِيْ إِلَيْكَ غَيْرَ مَفْتُوْنٍ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ফি‘লাল খাইরা-ত, ওয়া তারকাল মুনকারা-ত, ওয়া হুববাল মাসা-কীন। ওয়া ইযা-আরাত্তা ফিন্না-সি ফিতনাতান ফাক্ববিযনী ইলাইকা গাইরা মাফতূনিন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ভালো কাজ করার, মন্দ কাজ বর্জন করার এবং দরিদ্রদেরকে ভালোবাসার তাওফীক কামনা করছি। আর (এটাও কামনা করছি যে) যখন আপনি মানুষকে পরীক্ষায় ফেলতে চান, তখন নিরাপদে আমাকে আপনার কাছে উঠিয়ে নিন। [ইমাম মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার নিকট পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫০৮; তিরমিযী, হা/৩২৩৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৩২; মিশকাত, হা/৭৪৮)]

৮৬
ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْهُدٰى وَالتُّقٰى وَالْعَفَافَ وَالْغِنٰى

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা, ওয়াত্তুক্বা, ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়ালগিনা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট হেদায়াত, তাক্বওয়া, সচ্চরিত্রতা এবং স্বনির্ভরতার প্রার্থনা করছি। [আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৭৯; তিরমিযী, হা/৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯০৪, ৩৯৫০; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭৪; মিশকাত, হা/২৪৮৪)]

(২) اَللّٰهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا يَحُوْلُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيْكَ وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِه جَنَّتَكَ وَمِنَ الْيَقِينِ مَا تُهَوِّنُ بِه عَلَيْنَا مُصِيبَاتِ الدُّنْيَا وَمَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَا وَقُوَّتِنَا مَا أَحْيَيْتَنَا وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنَّا وَاجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلٰى مَنْ ظَلَمَنَا وَانْصُرْنَا عَلٰى مَنْ عَادَانَا وَلَا تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِى دِينِنَا وَلَا تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلَا مَبْلَغَ عِلْمِنَا وَلَا تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لَا يَرْحَمُنَا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আক্বসিম লানা মিন খাশইয়াতিকা মা ইয়াহূলু বাইনানা ওয়া বাইনা মা‘আ-সীকা ওয়া ত্বা-‘আতিকা মা-তুবাল্লিগুনা বিহী জান্নাতাকা ওয়া মিনাল ইয়াক্বীনি মা তুহাওভিনু বিহী ‘আলাইনা মুসীবা-তিদ দুনইয়া ওয়া মাত্তি‘না বি আসমা-‘ইনা ওয়া আবসা-রিনা ওয়া কুওওয়াতিনা মা আহ্ইয়াইতানা ওয়াজ‘আলহুল ওয়া-রিসা মিন্না ওয়াজ‘আল ছা’রানা ‘আলা মান যালামানা ওয়ানসুরনা ‘আলা মান ‘আ-দা-না ওয়ালা তাজ‘আল মুসীবাতানা ফী দ্বীনিনা ওয়ালা তাজ‘আলিদ দুনইয়া আকবারা হাম্মিনা ওয়ালা মাবলাগা ‘ইলমিনা ওয়ালা তুসাল্লিত্ব ‘আলাইনা মান লা ইয়ারহামুনা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার মধ্যে আপনার এমন ভয় দিয়ে দিন, যা আমার এবং আপনার অবাধ্যতার মধ্যে অমত্মরায় হয়। আমাদেরকে এমনভাবে আপনার আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন, যা জান্নাতে পৌঁছায়। যতদিন আপনি আমাদেরেকে জীবিত রাখেন, ততদিন আমাদেরকে এমন ঈমান দান করুন, যার ফলে দুনিয়ার বিপদ আমাদের কাছে তুচ্ছ মনে হয়। আমাদেরকে আমাদের কান, চক্ষু ও শক্তি দ্বারা উপকৃত করুন এবং আমাদেরকে এর উত্তরাধিকারী বানান। যারা আমাদের উপর অত্যাচার করে তাদের উপর আমাদেরকে বিজয় দান করুন। যারা আমাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে তাদের উপর আমাদেরকে সাহায্য দান করুন। দ্বীনের ব্যাপারে আমাদেরকে বিপদে ফেলা থেকে রক্ষা করুন। দুনিয়া অর্জন করা আমাদের চিমত্মা এবং জ্ঞানের বড় বিষয় যেন না হয়। আর যারা আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করে না তাদেরকে আমাদের উপর চাপিয়ে দেবেন না। [আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন মজলিস থেকে উঠার পর খুব কম সময়ই এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিতেন। (তিরমিযী, হা/৩৫০২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৯৮৯; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০১৬১; মিশকাত, হা/২৪৯২)]

৮৭
মঙ্গলজনক হায়াত ও মৃত্যু কামনার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ أَحْيِنِىْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِّىْ وَتَوَفَّنِىْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِّىْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আহ্য়িনী মা-কা-নাতিল হায়া-তু খায়রাল্লী ওয়া তাওয়াফ্ফানী ইযা কা-নাতিল ওফা-তু খাইরাল্লী।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বাঁচিয়ে রাখো, যতদিন বেঁচে থাকাটা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর, যখন মৃত্যু আমার জন্য মঙ্গলজনক হয়। [আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, কোন মুসীবতে পড়ে দুঃখ-কষ্টের কারণে তোমাদের কেউ যেন কখনো (সরাসরি) মৃত্যু কামনা না করে। আর যদি সেরকম কিছু করতেই হয়, তবে যেন এ দু‘আ করে। (সহীহ বুখারী, হা/৫৬৭১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৯০; আবু দাঊদ, হা/৩১১০; তিরমিযী, হা/৯৭০; নাসাঈ, হা/১৮২০; ইবনে মাজাহ, হা/৪২৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৯৮; মিশকাত, হা/১৬০০)]

৮৮
আত্মার পবিত্রতা ও সংযমী হওয়ার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اٰتِ نَفْسِيْ تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ-তি নাফসী তাক্বওয়া-হা, ওয়া যাক্কিহা, আনতা খাইরু মান যাককা-হা আনতা ওয়ালীয়্যুহা ওয়া মাওলা-হা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার আত্মাকে সংযমতা দান করুন এবং তাকে পাক-পবিত্র করুন। আত্মা পবিত্রকারীদের মধ্যে আপনিই উত্তম, আপনিই তার মালিক। [যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিকট তেমনই বলব যেমনটি রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন। তিনি এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮১; নাসাঈ, হা/৫৪৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩২৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০০৫; মিশকাত, হা/২৪৬০)]

৮৯
অন্তরকে স্থির রাখার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ، صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلٰى طَاعَتِكَ (১)

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা মুসার্রিফাল কুলূব! সাররিফ কুলূবানা ‘আলা ত্বা‘আতিক।

অর্থ : হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমাদের অন্তরসমূহকে আপনার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দিন। [আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ হেদায়াতের উপর অটল থাকার জন্য এই দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৯২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৬৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৪৬০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৮৯; মিশকাত, হা/৮৯)]

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰى دِيْنِكَ (২)

উচ্চারণ : ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলূব, সাবিবত ক্বালবী ‘আলা দীনিক।

অর্থ : হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনার দ্বীনের উপর আমার অন্তরকে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। [শাহ্র ইবনে হাওশাব (রাঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, হে উম্মুল মু’মিনীন! রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন আপনার নিকট থাকতেন তখন অধিকাংশ সময় তিনি কী দু‘আ করতেন? তিনি বললেন, অধিকাংশ সময় তিনি এ দু‘আ করতেন। (তিরমিযী, হা/২১৪০, ৩৫২২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১২৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯২৭; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৮৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৯১; মিশকাত, হা/১০২)]

৯০
সার্বিক কল্যাণের দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ أَصْلِحْ لِيْ دِيْنِيَ الَّذِيْ هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِيْ ، وَأَصْلِحْ لِيْ دُنْيَايَ الَّتِيْ فِيْهَا مَعَاشِيْ ، وأَصْلِحْ لِيْ اٰخِرَتِيَ الَّتِيْ فِيْهَا مَعَادِيْ ، وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِّيْ فِيْ كُلِّ خَيْرٍ ، وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِّيْ مِنْ كُلِّ شَرٍّ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আসলিহ্লী দ্বীনিয়াল্লাযী হুয়া ‘ইসমাতু আমরী, ওয়া আসলিহ্লী দুন্ইয়া-ইয়াল্লাতী ফীহা মা‘আ-শী, ওয়া আসলিহ্লী আ-খিরাতিয়াল্লাতী ফীহা মা‘আ-দী, ওয়াজ‘আলিল হায়া-তা যিয়া-দাতাল্লী ফী কুল্লি খাই-র, ওয়াজ‘আলিল মাওতা রা-হাতাল্লী মিনকুল্লি শারর্।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার দ্বীনকে সংশোধন করে দাও, যা আমার সকল কাজের সংরক্ষক। পৃথিবীকে আমার জন্য কল্যাণময় করে দাও, যার মধ্যে আমার জীবন-জীবিকা রয়েছে। আমার পরকালকে আমার জন্য কল্যাণময় করে দাও, যেখানে আমাকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। প্রত্যেক নেক আমলের জন্য আমার হায়াত বৃদ্ধি করে দাও, আর আমার মৃত্যুকে প্রত্যেক মন্দ কাজ থেকে মুক্ত করে প্রশান্তির বিষয়ে পরিণত করো। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৭৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭০৮; মিশকাত, হা/২৪৮৩)]

৯১
ঋণ পরিশোধের তাওফীক লাভের দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِيْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিক, ওয়াআগনিনী বিফায্লিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক।

অর্থ : হে আল্লাহ! হারাম থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আপনার হালালকে আমার জন্য যথেষ্ট করে দিন, আর আপনার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে ধনী করে দিন- যাতে আপনি ছাড়া অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হতে হয়। [আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি জনৈক মুকাতাব গোলামকে বললেন, আমাকে যে কথাগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ শিখিয়েছেন আমি কি তোমাকে সেগুলো বলে দেব? তোমার উপর পাহাড় সমান ঋণের বোঝা থাকলেও আল্লাহ তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। (তিরমিযী, হা/৩৫৬৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৭৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮২০; মিশকাত, হা/২৪৪৯)]

৯২
ঋণ থেকে বাঁচার দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الْعَدُوِّ وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া গালাবাতিল ‘আদুওভি ওয়া শামা-তাতিল আ‘দা-ই।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ঋণের বোঝা থেকে, শত্রুর আধিক্য ও শত্রুর গালি হতে আপনার কাছে মুক্তি চাই। [আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বাক্যগুলো দ্বারা দু‘আ করতেন। (নাসাঈ, হা/৫৪৮৭; আবু দাঊদ, হা/১৫৫৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৪৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০২৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৫৪১; মিশকাত, হা/২৪৪৮)]

(২) اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখ্লি ওয়া যালা‘ইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিমত্মা ও দুর্ভাবনা থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও কাপুরুষতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের অত্যাচার থেকে। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধ সহজ করার জন্য এ দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হা/২৮৯৩, ৬৩৬৯; আবু দাউদ, হা/১৫৪৩; তিরমিযী, হা/৭৪৮৪; নাসাঈ, হা/৫৪৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩২৮; মিশকাত, হা/২৪৫৮)]

৯৩
ঋণ পরিশোধের সময় ঋণদাতার জন্য দু‘আ :
بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْ اَهْلِكَ وَمَالِكَ

উচ্চারণ : বা-রাকাল্লা-হু লাকা ফী আহ্লিকা ওয়া মা-লিক।

অর্থ : আল্লাহ তা‘আলা আপনার সম্পদ ও পরিবারবর্গে বরকত দান করুন। [ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম (রহ.) তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার থেকে ৪০,০০০ দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। যখন তার নিকট মাল আসলো, তখন আমার পাওনা আমাকে দিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য এ দু‘আ করলেন। (নাসাঈ, হা/৪৬৮৩; মিশকাত, হা/২৯২৬)]

৯৪
বৃষ্টি প্রার্থনার দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا نَّافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلًا غَيْرَ اٰجِلٍ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বিনা গাইছাম মুগীছাম মারীআম মারী’আন্ না-ফি‘আন, গাইরা যা-র্রিন ‘আ-জিলান গাইরা আ-জিল।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দাও, যা ফসল উৎপাদনের উপযোগী, কল্যাণকর, ক্ষতিকর নয়, দ্রুত আগমনকারী, বিলম্বকারী নয়। [জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কিছু লোক বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ক্রন্দনরত অবস্থায় আগমন করে (বৃষ্টির জন্য দু‘আ করতে বলল)। তখন তিনি এ দু‘আটি করলেন। ফলে সাথে সাথে আসমান মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেল। (আবু দাঊদ, হা/১১৭১; মিশকাত, হা/১৫০৭)]

(২) اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا اَللّٰهُمَّ أَغِثْنَا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আগিছনা, আল্লা-হুম্মা আগিছনা, আল্লা-হুম্মা আগিছনা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দান করো, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দান করো, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দান করো। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ খুৎবায় দাঁড়িয়ে এ দু‘আটি পাঠ করে দু‘আ করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/১০১৪; সহীহ মুসলিম, হা/২১১৫; নাসাঈ, হা/১৫১৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৮৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১৮৩৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/১১৬৬)]

(৩) اَللّٰهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَأَحْىِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বি ‘ইবা-দাকা ওয়া বাহা-ইমাকা, ওয়ানশুর্ রাহ্মাতাকা, ওয়া আহ্য়ী বালাদাকাল্ মাইয়িত।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আপনার বান্দাদেরকে এবং চতুষ্পদ জমত্মুগুলোকে পানি পান করান, আপনার রহমত পরিচালনা করুন, আর আপনার মৃত শহরকে সজীব করুন। [আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতেন, তখন এই দু‘আটি পাঠ করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৪৯; আবু দাঊদ, হা/১১৭৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৬৭১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৯১২; জামেউস সগীর, হা/৮৭৯৫; মিশকাত, হা/১৫০৬)]

৯৫
বৃষ্টি বর্ষণের সময় দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ صَيِّبًا هَنِيْئًا نَافِعًا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাজ‘আলহু সাইয়িবান হানীআন না-ফি‘আ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বৃষ্টি দেখতে পেতেন, তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/১০৩২; আবু দাঊদ, হা/৫১০১; নাসাঈ, হা/১৫২৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৯০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১৯০; জামেউস সগীর, হা/৮৮৫৬; বায়হাকী, হা/৬২৮৫; মিশকাত, হা/১৫০০)]

৯৬
বৃষ্টি বন্ধের দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا اَللّٰهُمَّ عَلَى الْاٰكَامِ وَ الظِّرَابِ وَ بُطُوْنِ الْاَوْدِيَةِ وَ مَنَابَةِ الشَّجَرَةِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা হাওয়া-লাইনা ওয়ালা ‘আলাইনা, আল্লা-হুম্মা ‘আলাল আ-কা-মি ওয়ায্যিরা-বি ওয়াবুতূনিল আওদিয়াতি ওয়ামানা-বাতিশ শাজারাহ্।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের পাশর্ববর্তী এলাকায় বর্ষণ করুন, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! উঁচু ভূমিতে ও পাহাড়-পর্বতে, উপত্যকা অঞ্চলে এবং বনাঞ্চলে বর্ষণ করুন। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ব্যাপী বৃষ্টি হতে থাকলে জনৈক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বৃষ্টি বন্ধের জন্য দু‘আ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বৃষ্টি বন্ধের জন্য এই দু‘আ করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/১০১৩; নাসাঈ, হা/১৫১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৮৮; মিশকাত, হা/৫৯০২)]

৯৭
সালাম
সালাম অর্থ শান্তি। কাউকে সালাম দেয়া মানে হচ্ছে, তার জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা। সালাম প্রদানের অপরিসীম গুরুত্ব হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ : رَدُّ السَّلَامِ ، وَعِيَادَةُ الْمَرِيْضِ ، وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ ، وتَشْمِيْتُ الْعَاطِسِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক আছে। ১. সালামের উত্তর দেয়া, ২. রোগীর সেবা করা, ৩. জানাযায় অংশগ্রহণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা, ৫. হাঁচিদাতার উত্তর দেয়া। [সহীহ বুখারী, হা/১২৪০; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৩৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৬৭; জামেউস সগীর, হা/৫৪৬১; মিশকাত, হা/১৫২৪।]

তাই একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলেই আমরা সালাম বিনিময় করব। যে আগে সালাম দেয় সে উত্তম। সালামের উত্তরদানের সময় শব্দ বাড়িয়ে বলা সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَاۤ اَوْ رُدُّوْهَا﴾

তোমাদেরকে যখন সালাম দেয়া হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে আরো উত্তমভাবে উত্তর প্রদান করবে অথবা তারই অনুরূপ করবে। (সূরা নিসা- ৮৬)

সালাম দেয়ার সময় বলবে,

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَ رَحْمَةُ اللهِ

উচ্চারণ : আস্সালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ।

অর্থ : আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

আর সালামের উত্তর দেয়ার সময় বলবে,

وَ عَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَ رَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه

উচ্চারণ : ওয়া ‘আলাইকুমুস সালা-মু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ।

অর্থ : আর আপনার উপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত এবং বরকত বর্ষিত হোক। [আত্বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) এর নিকট ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তার নিকট এসে সালাম দিল। তখন আমি উত্তরে এ শব্দগুলো বললাম। তা শুনে ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, ফেরেশতারা যে পর্যমত্ম বলে থাকে তুমি সে পর্যমত্ম গিয়ে থামলে। অর্থাৎ ফেরেশতারাও এ শব্দগুলো দিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে থাকে। (মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৪৯)]

পরস্পর সাক্ষাৎ হলে মুসাফাহা করা উত্তম। বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, যখন কোন দু’জন মুসলিম মিলিত হয় অতঃপর মুসাফাহা করে এবং আল্লাহর প্রশংসা করে, তখন তাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। [জামেউস সগীর, হা/৪৫০৭।]

৯৮
অন্যের মাধ্যমে কেউ সালাম পাঠালে তার উত্তর :
অন্যের মাধ্যমে কেউ সালাম পাঠালে তার উত্তরে বলতে হয়,

عَلَيْكَ وَ عَلَيْهِ السَّلَامُ

উচ্চারণ : ‘আলাইকা ওয়া ‘আলাইহিস্ সালা-ম।

অর্থ : আপনার উপর এবং তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। [গালিব (রহ.) হতে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট সালাম পাঠালেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এভাবে উত্তর দিলেন। (আবু দাঊদ, হা/৫২৩৩; মুসনাদে ইবনে জা‘দ, হা/১৪৭৭; মিশকাত, হা/৪৬৫৫)]

৯৯
কোন অমুসলিম সালাম দিলে তার উত্তর :
অমুসলিম ব্যক্তি সালাম দিলে তার উত্তরে বলতে হয়, وَعَلَيْكُمْ ওয়া ‘আলাইকুম। অর্থাৎ তোমার উপরও বর্ষিত হোক। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তোমরা এটা বলবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬২৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৬৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৬৬; জামেউস সগীর, হা/৬০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৭৯৬; মিশকাত, হা/৩৬৩৭)]

১০০
কারো প্রশংসার উত্তরে দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ لَا تُؤَاخِذْنِيْ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ، وَاغْفِرْ لِيْ مَا لَا يَعْلَمُوَنَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লা তুআ-খিযনী বিমা ইয়াকূলূন, ওয়াগ ফির্লী মা লা ইয়া‘লামূন।

অর্থ : হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে পাকড়াও করো না, আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না তা থেকে। [আদী ইবনে আরত্বাত (রহ.) বলেন, একদা একজন সাহাবীর প্রশংসা করা হলে তিনি এই দু‘আ পাঠ করলেন। (আদাবুল মুফরাদ, হা/৭৬১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৬৮৫৩)]

১০১
হাঁচিদাতা ও শ্রোতার জন্য পঠিতব্য দু‘আ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ হাঁচি দিবে তখন বলবে,

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লা-হ।

অর্থ : সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

اَ لْحَمْدُ لِلّٰهِ عَلٰى كُلِّ حَالٍ

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লা-হি ‘আলা কুল্লি হা-ল।

অর্থ : সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

তারপর তার ভাই অথবা তার সাথি তথা যে এ বাক্য বলতে শুনবে সে বলবে,

يَرْحَمُكَ اللهُ

উচ্চারণ : ইয়ারহামুকাল্লা-হ।

অর্থ : আল্লাহ তোমার উপর রহম করুন।

অতঃপর হাঁচিদাতা ব্যক্তি পুনরায় বলবে,

يَهْدِيْكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ

উচ্চারণ : ইয়াহ্দীকুমুল্লা-হু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম।

অর্থ : আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা সংশোধন করুন। [সহীহ বুখারী, হা/৬২২৪; আবু দাঊদ, হা/৫০৩৫; তিরমিযী, হা/২৭৩১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭১৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৭২; আদাবুল মুফরাদ, হা/৯২৭; দারেমী, হা/২৭০১; মিশকাত, হা/৪৭৩৯।]

উল্লেখ্য যে, কোন অমুসলিম যদি হাঁচি দেয় তবে তার ক্ষেত্রে কেবল يَهْدِيْكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (ইয়াহ্দীকুমুল্লা-হু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম) বলতে হবে। [আবু বুরদা (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, এক ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকটে হাঁচি দিল এই আশায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তার জন্য রহমতের দু‘আ করবেন। কিমত্মু রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে এ উত্তর দিলেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৪০)]

১০২
কেউ দাওয়াত খাওয়ালে তার জন্য দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ঈম মান আত্ব‘আমানী ওয়াস্ক্বি মান সাক্বা-নী।

অর্থ : হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করালো তুমি তাকে আহার করাও, যে আমাকে পান করালো তুমি তাকে পান করাও। [মিকদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মজলিসে খাবার শেষ করে এ দু‘আটি পাঠ করলেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৮৬০)]

১০৩
কেউ মেহমানদারী করলে তার জন্য দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِىْ مَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম ফীমা রাযাক্বতাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছ তাতে বরকত দান করো। তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করো এবং তাদের প্রতি রহমত নাযিল করো। [বনু সুলাইম গোত্রের আবদুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার পিতার নিকট আসলেন। অতঃপর খাবার পরিবেশন করা হলো, তারপর পানি আনা হলো। তিনি পানি পান করে তার আশপাশের লোকজনদেরকে দিলেন এবং এই দু‘আটি পাঠ করলেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৪৯; আবু দাঊদ, হা/৩৭৩১; তিরমিযী, হা/৩৫৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২৯৭; দারেমী, হা/২০৬৫; মিশকাত, হা/২৪২৭)]

১০৪
খাওয়ার পূর্বের দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হ।

অর্থ : আমি আললাহর নামে শুরু করছি। [উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একজন বালক হিসেবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাবার পাত্রে এক জায়গায় আমার হাত স্থির থাকত না। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে বালক! আল্লাহর নাম নিয়ে (বিসমিল্লাহ বলে) ডান হাতে নিজের সামনে থেকে খাও। সুতরাং এরপর থেকে আমি সেভাবেই খেয়ে থাকি। (সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৭৩; জামেউস সগীর, হা/১৩৯১৮)]

১০৫
খাওয়ার পূর্বে প্রথমে বিসমিল্লাহ ভুলে গেলে যা বলতে হয় :
بِسْمِ اللهِ أَوَّلَه وَاٰخِرَه

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহ।

অর্থ : খাওয়ার শুরু ও শেষ আল্লাহর নামে। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ খাওয়া শুরু করবে তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তবে এ দু‘আ পাঠ করবে। (আবু দাঊদ, হা/৩৭৬৯; তিরমিযী, হা/১৮৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২১৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭০৮৭; মিশকাত, হা/৪২০২)]

১০৬
খাওয়ার মধ্যখানে দু‘আ :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ

উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হ।

অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর সমত্মুষ্ট হন, যে খাওয়া ও পান করার মাঝে মাঝে ‘আল-হামদু লিল্লা-হ’ বলে। (সহীহ মুসলিম, হা/৭১০৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৯৮৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬৫; মিশকাত, হা/৪২০০)]

১০৭
খাওয়ার পরের দু‘আ :
(১) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ

উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ।

অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ পানাহার করালেন এবং আমার সামর্থ্য ও উপায় না থাকা সত্ত্বেও আমাকে তা দান করেছেন। [সাহল ইবনে মু‘আয (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ খাওয়া শেষ করে এই দু‘আটি পাঠ করলে তার আগের ও পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (আবু দাঊদ, হা/৪০২৫; তিরমিযী, হা/৩৪৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৭০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৪০৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৩)]

(২) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ ، وَلَا مُوَدَّعٍ ، وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا

উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হি কাছীরান্ ত্বায়্যিবান, মুবারাকান ফীহ, গাইরা মাকফিয়্ইয়িন ওয়ালা মুওয়াদ্দা‘ইন্ ওয়ালা মুস্তাগনান ‘আনহু রাববানা।

অর্থ : পবিত্র ও বরকতময় অনেক প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এ খাদ্য হতে নির্লিপ্ত হতে পারব না, তা কখনো বিদায় দিতে পারব না, আর তা হতে অমুখাপেক্ষীও হতে পারব না। [আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দসত্মরখানা উঠাতেন, তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫৪৫৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৮৭০; বায়হাকী, হা/১৪৪৮; মিশকাত, হা/৪১৯৯)]

১০৮
দুধ পান করার পর দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া যিদ্না মিনহু।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য দুধে বরকত দান করুন এবং তা বাড়িয়ে দিন। [ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা দুধ পান করলে এ দু‘আটি পাঠ করবে। (আবু দাঊদ, হা/৩৭৩২; তিরমিযী, হা/৩৪৫৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৮)]

১০৯
নতুন ফল দেখার পর দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ ثَمَرِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِىْ مَدِيْنَتِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِىْ صَاعِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِىْ مُدِّنَا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফী সামারিনা ওয়াবা-রিক লানা ফী মাদীনাতিনা ওয়াবা-রিক লানা ফী সা-‘ইনা ওয়াবা-রিক লানা ফী মুদ্দিনা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের ফলসমূহে বরকত দাও, আমাদের শহরে বরকত দাও, আমাদের সা‘ ও মুদ্দে (মাপে) বরকত দাও। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা যখন নতুন ফল হতে দেখত, তখন তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট নিয়ে আসতো। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তা হাতে নিয়ে এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৬৭; সহীহ মুসলিম, হা/৩৪০০; তিরমিযী, হা/৩৪৫৪; মিশকাত, হা/২৭৩১)]

১১০
বিবাহিতদের জন্য দু‘আ :
بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ

উচ্চারণ : বা-রাকাল্লা-হু লাকা ওয়াবা-রাকা ‘আলাইকা ওয়া জামা‘আ বাইনাকুমা ফী খাই-র।

অর্থ : আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন, তোমার প্রতি বরকত নাযিল করুন এবং কল্যাণের সাথে তোমাদেরকে একত্রে রাখুন। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বিবাহের পর কাউকে অভিনন্দন জানাতেন, তখন তার জন্য এই দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/ ২১৩২; তিরমিযী, হা/১০৯১; ইবনে মাজাহ, হা/১৯০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯৪৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৭৪৫; মিশকাত, হা/২৪৪৫)]

১১১
নতুন স্ত্রীর জন্য পঠিতব্য দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরামা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহা ওয়া শার্রি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট তার মঙ্গল চাই এবং যার উপর আপনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, তারও মঙ্গল চাই। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই তার অনিষ্ট হতে এবং যে অনিষ্ট দিয়ে তাকে সৃষ্টি করেছেন তা হতে। [আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ বিবাহ করে, তখন তার কপালে হাত রেখে এ দু‘আটি পাঠ করবে। (আবু দাঊদ, হা/২১৬২; ইবনে মাজাহ, হা/২২৫২; আদাবুয যুফাফ, ১/২০; জামেউস সগীর, হা/৩৪২; মিশকাত, হা/২৪৪৬)]

১১২
সহবাসের সময় দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ اَللّٰهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা জান্নিব্নাশ শাইত্বা-না ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বা-না মা রাযাক্বতানা।

অর্থ : আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন, আর আমাদেরকে যা দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন। [আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন তার স্ত্রীর নিকট যায় এবং এ দু‘আটি পাঠ করে, তবে এ সহবাসের ফলে তাদের কোন সন্তান হলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী, হা/১৪১; সহীহ মুসলিম, হা/৩৬০৬; আবু দাঊদ, হা/২১৬৩; তিরমিযী, হা/১০৯২; দারেমী, হা/২২৫৮; মিশকাত, হা/২৪১৬)]

১১৩
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কেউ কাউকে ভালোবাসলে দু‘আ :
প্রথম ব্যক্তি বলবে,

إِنِّىْ أُحِبُّكَ فِى اللهِ

উচ্চারণ : ইন্নী উহিববুকা ফিল্লা-হ।

অর্থ : আমি আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসি।

উত্তরে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলবে :

أَحَبَّكَ الَّذِىْ أَحْبَبْتَنِىْ لَه

উচ্চারণ : আহাববা কাল্লাযী আহবাবতানী লাহূ।

অর্থ : যার জন্য আপনি আমাকে ভালোবাসেন, তিনিও যেন আপনাকে ভালোবাসেন। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট উপস্থিত ছিল। এমন সময় তাদের নিকট দিয়ে একজন লোক হেঁটে গেল। তখন সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই লোকটিকে ভালোবাসি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি তাকে এ কথা জানিয়েছ? সে বলল, না। তিনি বললেন, তাকে জানিয়ে দাও। লোকটি তার পেছনে পেছনে গিয়ে তাকে বলল, আমি আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসি। জবাবে সে বলল, যার জন্য আপনি আমাকে ভালোবাসেন, তিনিও যেন আপনাকে ভালোবাসেন। (আবু দাঊদ, হা/৫১২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬১২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৯৪০; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩৪৪২)]

১১৪
কারো বিদ্যা-বুদ্ধির জন্য দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ عَلِّمْهُ الحِكْمَةَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ‘আল্লিমহুল হিকমাহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তাকে জ্ঞান দান করো। [ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে তাঁর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে এ দু‘আটি পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৭৫৬; তিরমিযী, হা/৩৮২৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৪৩৬; মিশকাত, হা/৬১৩৮)]

(২) اَللّٰهُمَّ فَقِّهْهُ فِي الدِّيْنِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ফাক্কিহহু ফিদ্দীন।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তাকে দ্বীনের বুঝ দান করো। [ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ পায়খানায় প্রবেশ করলেন। আর আমি তাঁর জন্য পায়খানার কাছে অযুর পানি রাখলাম। অতঃপর তিনি পায়খানা থেকে বের হয়ে তা দেখে বললেন, কে এ পানি রেখেছে? তখন তাকে এ বিষয়ে জানানো হলো। ফলে তিনি (খুশি হয়ে আমার জন্য) এ দু‘আটি পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭০৫৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৬২৮০; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহি, হা/২০৩৮; মিশকাত, হা/৬১৩৯)]

১১৫
রাগ দমনের দু‘আ :
اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।

অর্থ : আমি অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। [সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ এর সামনে দু’জন লোক পরস্পরকে গালি দিল। কিমত্মু তাদের একজন অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে গেলো, এমনকি তার চেহারা ফুলে বিকৃত হয়ে গেল। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এমন একটি কথা জানি, যা সে বললে তার ক্রোধ দূর হয়ে যাবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি লোকটির কাছে গিয়ে নবী ﷺ এর এ উক্তিটি তাকে অবহিত করলো এবং বললো, তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। (সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৮, ৬১১৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮১২-১৩; আবু দাঊদ, হা/৪৭৮২; তিরমিযী, হা/২৪৫২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৭৫৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৩০৩; মিশকাত, হা/২৪১৮)]

১১৬
কোন বিপদগ্রসত্ম লোককে দেখে দু‘আ :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِه وَ فَضَّلَنِيْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلًا

উচ্চারণ : আল-হামদু লিল্লা-হিল্লাযী ‘আ-ফা-নী মিম্মাব্তালা-কা বিহ, ওয়া ফায্যালানী ‘আলা কাছীরিম মিম্মান খালাক্বা তাফযীলা।

অর্থ : সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে যে বিপদ দ্বারা পরীক্ষা করছেন, তা হতে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং আমাকে তাঁর সৃষ্টির অনেকের উপর অনুগ্রহ করেছেন। [উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কেউ বিপদগ্রস্ত লোক দেখে এ দু‘আ পড়লে সে ঐ বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে। (তিরমিযী, হা/৩৪৩১-৩২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৯২; মুসনাদুল বাযযার, হা/১২৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৬০২; জামেউস সগীর, হা/১১১৯৩; মিশকাত, হা/২৩২৯)]

১১৭
মজলিস ভঙ্গের দু‘আ :
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ

উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং আপনার দিকেই ফিরে আসি। [আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন বৈঠক থেকে উঠার সময় এই দু‘আ পড়লে ঐ বৈঠকের বেহুদা কথা-বার্তার কাফ্ফারা হয়ে যায়। (তিরমিযী, হা/৩৪৩৩; আবু দাঊদ, হা/৪৮৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৮৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫১৭; দারেমী, হা/২৭০০; মিশকাত, হা/২৪৩৩)]

১১৮
সফরকালে যানবাহনে আরোহণের সময় দু‘আ :
সওয়ারীতে আরোহণ করার সময় প্রথমে এক বার বিসমিল্লাহ বলবে। এরপর তিন বার আল্লাহু আকবার বলবে এবং নিচের দু‘আটি পাঠ করবে-

سُبْحَانَ الَّذِىْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ وَإِنَّا إِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ اَللّٰهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِىْ سَفَرِنَا هٰذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوٰى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضٰى اَللّٰهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هٰذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَه  ‐ اَللّٰهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِى السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِى الْاَهْلِ اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَاٰبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِى الْمَالِ وَالْاَهْلِ

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহূ মুক্বরিনীনা ওয়াইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন, আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল বির্রা ওয়াত্তাক্বওয়া, ওয়া মিনাল ‘আমালি মা তারযা, আল্লা-হুম্মা হাওভিন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা ওয়াত্বভি ‘আন্না বু‘দাহ। আল্লা-হুম্মা আনতাস সা-হিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালীফাতু ফিল আহলি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ওয়া‘সা-ইস সাফারি ওয়া কাআ-বাতিল মানযারি ওয়া সূইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহল।

অর্থ : ঐ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যিনি এ বাহনকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন; অথচ তাকে আমরা অনুগত করতে সক্ষম নই। অবশ্যই আমরা আমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। হে আল্লাহ! আমরা এই সফরে আপনার নিকট নেকী ও তাক্বওয়া চাই। আর আপনার পছন্দমতো আমল চাই। হে আল্লাহ! এ সফরকে আমাদের জন্য সহজ করে দিন এবং তার দূরত্বকে কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আপনিই আমাদের এ সফরের সাথি, আর পরিবারের রক্ষক। হে আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় চাই সফরের কষ্ট হতে, আর সফরের কষ্টদায়ক দৃশ্য হতে এবং সফর হতে প্রত্যাবর্তনকালে সম্পদ ও পরিবারের ক্ষয়-ক্ষতি ও কষ্টদায়ক দর্শন হতে। [আলী (রাঃ) সওয়ারীর উপর উঠার সময় এ রকম করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৩৯; আবু দাঊদ, হা/২৬০৪; তিরমিযী, হা/৩৪৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৩; মিশকাত, হা/২৪৩৪)]

১১৯
সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পর দু‘আ :
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সফর হতে ফিরে আসতেন তখন আবারও উপরের দু‘আটি পাঠ করতেন এবং সেই সাথে নিম্নের অংশটুকুও পাঠ করতেন,

اٰيِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ

উচ্চারণ : আ-য়িবূনা তা-ইবূনা ‘আবিদূনা লিরাবিবনা হা-মিদূন।

অর্থ : তওবা করতে করতে, ইবাদাতরত অবস্থায় এবং আমাদের রবের প্রশংসা করতে করতে আমরা প্রত্যাবর্তন করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৩৯; আবু দাঊদ, হা/২৬০১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৪৪; মিশকাত, হা/২৪২০।]

১২০
নতুন কোন স্থানে অবতরণ করার পর দু‘আ :
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিনশাররি মা খালাক্ব।

অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের মাধ্যমে যাবতীয় সৃষ্ট বসত্মুর অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। [খাওলা বিনতে হাকিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি নতুন কোন স্থানে এসে এই দু‘আ পাঠ করবে, সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার পূর্ব পর্যমত্ম কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭৬৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫৩; তিরমিযী, হা/৩৪৩৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭১৬৯)]

১২১
মুসাফিরকে বিদায় দেয়ার সময় দু‘আ :
(১) أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوٰى وَغَفَرَ ذَنْۢبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ

উচ্চারণ : আসতাউদি‘উল্লা-হা দীনাকা ওয়া আমা-নাতাকা ওয়া খাওয়া-তীমা ‘আমালিক, যাউওয়াদাকাল্লা-হুত তাক্বওয়া ওয়া গাফারা যামবাকা ওয়া ইয়াস্সারা লাকাল খাইরা হায়ছুমা কুনতা।

অর্থ : আমি তোমার দ্বীন, তোমার আমানত এবং শেষ আমল আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছি। আল্লাহ তোমাকে তাক্বওয়া দান করুন, তোমার পাপ ক্ষমা করুন, আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজসাধ্য করুন, তুমি যেখানেই থাক । [ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন লোককে বিদায় দিলে তার হাত ধরতেন। অতঃপর বিদায় হওয়া ব্যক্তি হাত না ছাড়লে রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত ছাড়তেন না। বিদায়ের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এই দু‘আ পড়তেন। (আবু দাঊদ, হা/২৬০২; তিরমিযী, হা/৩৪৪২-৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৮২৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৪৭৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৫৩২; মিশকাত, হা/২৪৩৫-৩৭)]

(২) أَسْتَوْدِعُكَ اللهَ الَّذِىْ لَا تَضِيْعُ وَدَائِعُه

উচ্চারণ : আসতাওদি‘উ কাল্লা হাল্লাযী লা-তাযী‘উ ওয়াদা-’ই‘উহূ।

অর্থ : আমি তোমাকে সেই আল্লাহর হেফাযতে রেখে যাচ্ছি, যার হেফাযতে অবস্থানকারী কেউই ক্ষতিগ্রসত্ম হয় না। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার নিকট থেকে বিদায় নিলেন এবং এই দু‘আটি পাঠ করলেন। (ইবনে মাজাহ, হা/২৮২৫; জামেউস সগীর, হা/৯৬০)]

১২২
বাজারে প্রবেশের দু‘আ :
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَ يُمِيْتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوْتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَ هُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহ্য়ী ওয়া ইউমীতু ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা-ইয়ামূতু বিয়াদিহিল খাই-র, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব ও প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্য। তিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তিনি চিরঞ্জীব, মৃত্যু তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। [উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে এ দু‘আ পড়বে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে হাজার হাজার নেকী দান করবেন, তার হাজার হাজার গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং হাজার হাজার গুণে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন। আর জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করবেন। (তিরমিযী, হা/৩৪২৮; ইবনে মাজাহ, হা/২২৩৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬১৪০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৯৭৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯৪; জামেউস সগীর, হা/১১১৭৬; মিশকাত, হা/২৪৩১।]

১২৩
উপরে উঠা এবং নিচে নামার সময় দু‘আ :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন উপরের দিকে আরোহণ করতাম, তখন اَللهُ اَكْبَرُ ‘আল্লা-হু আকবার’ বলতাম। আর যখন নিচের দিকে অবতরণ করতাম, তখন سُبْحَانَ اللهِ ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলতাম। [জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন উপরে উঠতাম, তখন ‘‘আল্লাহু আকবার’’ বলতাম এবং যখন নিচে নামতাম তখন ‘‘সুবহানাল্লাহ’’ পড়তাম। (সহীহ বুখারী, হা/২৯৯৩-৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৫৬২; দার কুতনী, হা/২৪৮৫; মু‘জামুল আওসাত, হা/৫০৪২; বায়হাকী, হা/১০১৪৬; দারেমী, হা/২৬৭৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৫০; মিশকাত, হা/২৪৫৩)]

১২৪
আশ্চর্যজনক অবস্থায় ও আনন্দের সময় যা বলতে হয় :
سُبْحَانَ اللهِ

উচ্চারণ : ‘সুবহা-নাল্লা-হ’।

অর্থ : আল্লাহ পবিত্র। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মহিলা নবী ﷺ কে হায়েয থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, প্রথমে সুগন্ধি (মিশক) মিশ্রিত তুলা অথবা পশমী কাপড়ের একটি টুকরা লও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করো। মহিলা বলল, আমি কীভাবে এর দ্বারা পবিত্রতা লাভ করব? তিনি পুনরায় বললেন, তুমি তা দিয়ে পবিত্রতা লাভ করো। তারপরও মহিলা বলল, কীভাবে আমি এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সুব্হানাল্লাহ! তুমি পবিত্রতা অর্জন করো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি ঐ মহিলাকে টেনে নিয়ে বললাম, তোমার হায়েযের রক্ত যে যে স্থানে লেগেছে তা খুঁজ করে মিশ্কযুক্ত কাপড়ের টুকরা দিয়ে সে স্থানে মালিশ করবে। (সহীহ বুখারী, হা/৩১৪; তিরমিযী, হা/২৯৭২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৩৪)]

১২৫
ভালো কিছু দেখলে যা বলতে হয় :
مَا شَاءَ اللهُ

উচ্চারণ : মা শা-আল্লা-হ।

অর্থ : আল্লাহ যা চান। [সূরা কাহফ- ৩৯।]

১২৬
পছন্দনীয় কিছু দেখে যা বলতে হয় :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ

উচ্চারণ : আল্হামদুলিল্লা-হিল্লাযী বিনি‘মাতিহী তাতিম্মুস্ সা-লিহা-ত।

অর্থ : প্রশংসা সেই আল্লাহর, যার অনুগ্রহে সকল কাজ সম্পন্ন হয়। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন পছন্দনীয় বিষয় দেখতেন, তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হা/৩৮০৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৪০; মু‘জামুল আওসাত, হা/৬৬৬৩; জামেউস সগীর, হা/৮৭৬৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৫)]

১২৭
অপছন্দনীয় কিছু দেখে যে দু‘আ পড়তে হয়:
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَلٰى كُلِّ حَالٍ

উচ্চারণ : আল্হামদুলিল্লা-হি ‘আলা কুল্লি হা-ল।

অর্থ : সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন অপছন্দনীয় বিষয় দেখতেন তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হা/৩৮০৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৪০; মু‘জামুল আওসাত, হা/৬৬৬৩; জামেউস সগীর, হা/৮৭৬৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৫)]

১২৮
কেউ কোন উপকার করলে তার জন্য দু‘আ :
جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا

উচ্চারণ : জাযা-কাল্লা-হু খাইর।

অর্থ : আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। [উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি কারো ভালো কিছু করলে সে যদি এই দু‘আ বলে, তাহলে সে তার উপযুক্ত প্রশংসা করল। (তিরমিযী, হা/২০৩৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৬০১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৬৯; জামেউস সগীর, হা/১১৩১৪; মিশকাত, হা/৩০২৪)]

১২৯
ভবিষ্যতে কোন কিছু করার আশা ব্যক্ত করার দু‘আ :
إِنْ شَاءَ اللهُ

উচ্চারণ : ইনশা-আল্লা-হ।

অর্থ : যদি আল্লাহ চান। [আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর তুমি কোন কিছুর ক্ষেত্রে এভাবে বলো না যে, আমি আগামীকাল এ কাজটি করব ‘ইনশা-আল্লা-হ’ বলা ছাড়া। (সূরা কাহফ- ২৩, ২৪)]

১৩০
পোশাক পরিধানের দু‘আ :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ كَسَانِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةَ

উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ্।

অর্থ : যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এই পোশাক পরিধান করিয়েছেন এবং আমার শক্তি-সামর্থ্য ব্যতীতই তিনি তা আমাকে দান করেছেন। [সাহল ইবনে মু‘আয (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কাপড় পরিধান করে এ দু‘আটি পাঠ করল, আল্লাহ তার আগের পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (আবু দাঊদ, হা/৪০২৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৪৯৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৭০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৮০১; দারেমী, হা/২৬৯০; জামেউস সগীর, হা/১১০৩১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০৪২; মিশকাত, হা/৪৩৪৩)]

اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِه وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَه وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّه وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَه

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকাল্ হামদু, আমত্মা কাসাওতানীহি, আস্ আলুকা মিন খাইরিহী ওয়া খাইরি মা সুনি‘আ লাহূ, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহী ওয়া শার্রি মা- সুনি‘আ লাহূ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আপনিই এ কাপড় আমাকে পরিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ এবং এটি যে জন্য তৈরি করা হয়েছে, সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আমি এর অনিষ্ট থেকে এবং যে অনিষ্টের জন্য এটি তৈরি হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন নতুন কাপড় পরিধান করতেন, তখন এই দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৪০২২; তিরমিযী, হা/১৭৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৪২০; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১০৭৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৪০৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১১১; জামেউস সগীর, হা/৮৭৯৩; মিশকাত, হা/৪৩৪২)]

১৩১
নতুন কাপড় পরিধানকারীকে দেখে দু‘আ :
تُبْلِىْ وَيُخْلِفُ اللّٰهُ تَعَالٰى

উচ্চারণ : তুব্লী ওয়া ইউখলিফুল্লা-হু তা‘আলা।

অর্থ : যথা সময়ে পুরাতন হয়ে বিনষ্ট হবে এবং আল্লাহ এর স্থলাভিষিক্ত করুক। [আবু নাযরা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীরা যখনই কাউকে নতুন কাপড় পরিধান করা অবস্থায় দেখতেন, তখনই তাকে উদ্দেশ্য করে এই দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৪০২২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৫৫৯৯)]

১৩২
ধোয়া কাপড় পরিধানকারীকে দেখে দু‘আ :
اِلْبَسْ جَدِيْدًا وَعِشْ حَمِيْدًا وَمُتْ شَهِيْدًا

উচ্চারণ : ইলবাস জাদীদান ওয়া ‘ইশ হামীদান ওয়া মুত শাহীদান।

অর্থ : তুমি নতুন পোশাক পরিধান করো এবং প্রশংসীত জীবন যাপন করো আর শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করো। [ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উমর (রাঃ) কে একটি সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখে বললেন, তোমার কাপড়টি কি ধোয়া নাকি নতুন কাপড়? উমর (রাঃ) বললেন, এটি ধোয়া কাপড়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উক্ত দু‘আটি পাঠ করলেন। (ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৬২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫২)]

১৩৩
দরজা-জানালা বন্ধ করা এবং খাদ্য ঢেকে রাখার সময় দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হ।

অর্থ : আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। [জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে তখন তোমরা তোমাদের বাচ্চাদেরকে (ঘরে) আটকে রাখো। কারণ, এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। যখন রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হবে, তখন তাদেরকে ছেড়ে দিতে পার। অতঃপর (শয়ন করার সময়) তুমি আল্লাহর নাম স্মরণ করে তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করবে, আল্লাহর নামে বাতি নিভাবে এবং আল্লাহর নাম নিয়েই পানির পাত্র বেঁধে রাখবে। আর আল্লাহর নাম স্মরণ করেই আপন বাসনপত্র ঢেকে রাখবে। (সহীহ বুখারী, হা/৫৬২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৬৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৫১৪; মিশকাত, হা/৪২৯৪)]

১৩৪
মোরগ, গাধা ও কুকুরের ডাক শুনলে দু‘আ :
রাতে বা দিনে মোরগের ডাক শুনলে আল্লাহর অনুগ্রহ চাইতে হবে। আর গাধা ও কুকুরের ডাক শুনলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে। কেননা মোরগ ফেরেশতা দেখতে পায়। আর যখন গাধার ডাক শুনবে, তখন শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে। কারণ গাধা শয়তান দেখতে পায়। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩০৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৯৬; আবু দাঊদ, হা/৫১০৪; তিরমিযী, হা/৩৪৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৫০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২৩৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৩৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩১৮৩; মিশকাত, হা/২৪১৯।]

আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ চাওয়ার সময় বলবে,

اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।

আর আশ্রয় চাওয়ার সময় বলবে,

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।

অর্থ : (হে আল্লাহ!) আমি আপনার নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

১৩৫
নতুন চাঁদ দেখে দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ أَهِلَّه عَلَيْنَا بِالْاَمْنِ وَالْاِيْمَانِ وَالْسَّلَامَةِ وَالْاِسْلَامِ رَبِّىْ وَرَبُّكَ اللهُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহূ ‘আলাইনা বিলআমনি ওয়ালঈমা-ন, ওয়াস্সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-ম, রাববী ওয়া রাববুকাল্লা-হু।

অর্থ : হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে উদয় করো। (হে চাঁদ) তোমার এবং আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। [তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন নতুন চাঁদ দেখতেন, তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন। (তিরমিযী, হা/৩৪৫১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৯৪৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৬১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৭৬৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৮১৬; জামেউস সগীর, হা/৮৮৫৭; মিশকাত, হা/২৩২৮)]

১৩৬
ইফতারের পূর্বে দু‘আ :
اَللّٰهُمّ إِنِّيْ أَسْاَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতী ওয়াসি‘আত কুল্লা শায়ইন আন তাগফিরালী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার যে রহমত সকল কিছু পরিবেষ্টন করে রেখেছে, তার দ্বারা প্রার্থনা করছি- আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। [আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির জন্য উচিত হচ্ছে, ইফতারের সময় এ দু‘আ পাঠ করা। (মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৫৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৬২১)]

১৩৭
ইফতারের শুরুতে দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হ।

অর্থ : আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৭৩; জামেউস সগীর, হা/১৩৯১৮।]

১৩৮
ইফতারের পর দু‘আ :
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْاَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ

উচ্চারণ : যাহাবায্ যামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূকু, ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লা-হু।

অর্থ : পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হলো এবং নেকী নির্ধারিত হলো যদি আল্লাহ চান। [ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ইফতার করতেন তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/২৩৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৯৫; দার কুতনী, হা/২২৭৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৩৬; বায়হাকী, হা/৭৯২২; জামেউস সগীর, হা/৮৮০৭; মিশকাত, হা/১৯৯৩)]

১৩৯
কেউ ইফতার করালে তার জন্য দু‘আ :
اَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ

উচ্চারণ : আফ্ত্বারা ‘ইন্দাকুমুস সা-’ইমূনা, ওয়া আকালা ত্বা‘আমাকুমুল আবরা-র, ওয়া সাল্লাত ‘আলাইকুমুল মালা-ইকাহ।

অর্থ : সিয়াম পালনকারীগণ তোমাদের নিকট ইফতার করুক, সৎ লোকগণ তোমাদের আহার গ্রহণ করুক এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের জন্য দু‘আ করুক। [আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (সিয়াম অবস্থায়) সা‘দ ইবনে উবাদা (রাঃ) এর নিকট গেলেন। তখন সা‘দ (রাঃ) রুটি এবং যায়তুনের তেল নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ খাবার পর এই দু‘আ করলেন। (আবু দাঊদ, হা/৩৮৫৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৪৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২৯৬; জামেউস সগীর, হা/৮৮০৬)]

১৪০
লাইলাতুল ক্বদরের দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুববুন তুহিববুল ‘আফওয়া ফা‘ফু ‘আন্নী।

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যখন লাইলাতুল ক্বদরে উপনীত হব তখন কী বলে দু‘আ পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি এ দু‘আ পাঠ করবে। (ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৫৩৪; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৬৬৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩৯১; জামেউস সগীর, হা/৭৮৭৩; মিশকাত, হা/২০৯১)]

১৪১
হজ্জ ও ওমরা পালনকারী ব্যক্তির তালবিয়া :
لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ : লাববাইক, আল্লা-হুম্মা লাববাইক, লাববাইকা লা-শারীকালাকা লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকালাক।

অর্থ : (আমি তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে) উপস্থিত হয়েছি, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত হয়েছি, আমি উপস্থিত হয়েছি (এবং ঘোষণা করছি যে), তোমার কোন শরীক নেই, আমি উপস্থিত হয়েছি, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই এবং রাজত্বও তোমার, তোমার কোন শরীক নেই। [আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তালবিয়া ছিল এটি। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৭৩০; সহীহ বুখারী, হা/১৫৪৯; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৬৮; আবু দাঊদ, হা/১৮১৩; তিরমিযী, হা/৮২৫; নাসাঈ, হা/২৭৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৯১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৪৫৭; জামেউস সগীর, হা/৯১৯০; মিশকাত, হা/২৫৪১)]

১৪২
হাজরে আসওয়াদের সামনে তাকবীর বলা :
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ উটের উপর আরোহণ করে তাওয়াফ করলেন। যখনই তিনি রুকনে ইয়ামানীতে আসতেন, তখনই তিনি তার হাতে যা থাকতো তা দ্বারা সেদিকে ইশারা করতেন এবং তাকবীর (আল্লা-হু আকবার) বলতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৬১৩; তিরমিযী, হা/৮৬৫; নাসাঈ, হা/২৯৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৭২২; মিশকাত, হা/২৫৭০।]

১৪৩
হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মধ্যখানে দু‘আ :
رَبَّنَا ۤاٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : রাববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা ‘আযা-বান্না-র।

অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন, আর আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন। [আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে উক্ত স্থানে এই দু‘আ পাঠ করতে শুনেছি। (আবু দাঊদ, হা/১৮৯৪; মিশকাত, হা/২৫৮১)] (সূরা বাক্বারা- ২০১)

১৪৪
সাফা ও মারওয়ায় দাঁড়িয়ে পাঠ করার দু‘আ :
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ হাজরে আসওয়াদের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তাতে চুমু খেলেন। তারপর তিনি সাফা পাহাড়ের দিকে বের হলেন এবং সাফার নিকটবর্তী হয়ে এ আয়াত পাঠ করলেন,

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ

উচ্চারণ : ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আ-ইরিল্লা-হ।

অর্থ : নিশ্চয়ই ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত।

(সূরা বাক্বারা- ১৫৮)

তারপর তিনি সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন এবং বায়তুল্লাহ দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে নিচের দু‘আটি পাঠ কলেন :

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه أَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَرَ عَبْدَه وَهَزَمَ الْاَحْزَابَ وَحْدَه

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ, লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ আনজাযা ওয়া‘দাহূ ওয়ানাসারা ‘আবদাহূ ওয়া হাযামাল আহ্যা-বা ওয়াহ্দাহূ।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই; তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং তিনি তাঁর শত্রুবাহিনীকে পরাভূত করেছেন।

উপরোক্ত দু‘আটি নবী ﷺ তিন বার পাঠ করলেন। অতঃপর তিনি মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন এবং অনুরূপভাবে উক্ত দু‘আ পাঠ করলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩০০৯; আবু দাঊদ, হা/১৯০৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩০৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪৮০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৭৫৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২১২৬; মিশকাত, হা/২৫৫৫।]

১৪৫
আরাফার ময়দানে পড়ার দু‘আ :
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সকল ক্ষমতার মালিক কেবল তিনিই। সকল প্রশংসার মালিক তিনিই। তিনি সব কিছুর উপর শক্তিশালী। [আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তার পিতা হতে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম দু‘আ আরাফাতের ময়দানের দু‘আ এবং সবচেয়ে উত্তম কথা হচ্ছে, আমি যা বলেছি এবং আমার পূর্বের সকল নবীগণ যা বলেছেন- তা হচ্ছে এই দু‘আ। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫০০; তিরমিযী, হা/৩৫৮৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৩৬; মিশকাত, হা/২৫৯৮)]

১৪৬
ঈদের তাকবীর :
اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ لَا اِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ وَ لِلّٰهِ الْحَمْدُ

উচ্চারণ : আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার ওয়া লিল্লা-হিল হামদ।

অর্থ : আল্লাহ বড়, আল্লাহ বড়, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। [আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) আরাফার দিন ফজর হতে কুরবানীর দিন আসর পর্যন্ত এ তাকবীর পড়তেন। (দার কুতনী, হা/১৭৩৭)]

১৪৭
কুরবানীর দু‘আ :
إِنِّيْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَمَا أَنَا مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ إِنَّ صَلَاتِيْ وَ نُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لَا شَرِيْكَ لَه وَبِذٰ لِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ بِسْمِ اللهِ اَللهُ أَكْبَرُ اَللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ

উচ্চারণ : ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্সামা-ওয়া-তি ওয়ালআরযা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া-ইয়া ও মামা-তী লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন। লা শারীকা লাহূ ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু ওয়াআনা আওওয়ালুল মুসলিমীন। বিসমিল্লা-হি আল্লা-হু আকবার আল্লা-হুম্মা মিনকা ওয়ালাক।

অর্থ : আমি মুসলিম অবস্থায় একনিষ্ঠ হয়ে ঐ সত্তার দিকে আমার মুখ ফিরালাম, যিনি আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার সালাত, আমার যাবতীয় কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ (সবকিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)। তাঁর কোন শরীক নেই, আমাকে এরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর আমিই সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণকারী। আল্লাহর নামে শুরু করলাম, আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! আপনার পক্ষ থেকে (এ পশু) এবং আপনার জন্য (তা কুরবানী করলাম)। [জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদের দিন দুটি বকরী জবেহ করলেন। যখন তিনি সেগুলোকে জবেহ করার জন্য সামনে গেলেন, তখন এ দু‘আটি পাঠ করলেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫০৬৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৮৯৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৭১৬)]

তওবা ও ইসিত্মগফার

তওবা করার জন্য কিছু শর্ত অনুসরণ করতে হবে। সেগুলো হলো :

১. বর্তমানে যে গোনাহে লিপ্ত রয়েছে, তা অবিলম্বে বর্জন করতে হবে।

২. অতীতে কৃত গোনাহের জন্য আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে অনুতপ্ত হতে হবে।

৩. ভবিষ্যতে আর কখনো উক্ত পাপকাজ না করার সুদৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে।

৪. যেসব ফরজ ও ওয়াজিবের কাযা আদায় করা ওয়াজিব সেগুলোর কাযা আদায় করতে হবে।

৫. তওবাকারীর গোনাহের সাথে যদি বান্দার হক সম্পৃক্ত থাকে, তবে তার মীমাংসা করতে হবে। প্রাপক জীবিত থাকলে তাকে তার হক ফেরত দিতে হবে অথবা মাফ চেয়ে নিতে হবে। প্রাপক জীবিত না থাকলে তার ওয়ারিসদেরকে তা ফেরত দিতে হবে।

৬. কাউকে হাত বা মুখ দিয়ে কষ্ট দিয়ে থাকলে বা গালি দিয়ে থাকলে বা কারো গীবত করে থাকলে যেভাবে সম্ভব তাকে সন্তুষ্ট করে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

৭. এসব শর্ত ছাড়াও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। আর তা হলো, শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য পাপকাজ ছেড়ে দিতে হবে এবং তাঁর জন্যই তওবা করতে হবে, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।

১৪৮
তওবা ও ইসিত্মগফারের দু‘আ
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ (১)

উচ্চারণ : রাববিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমীন।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা মু’মিনূন- ১১৮)

رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا وَاِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ (২)

উচ্চারণ : রাববানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকূনান্না মিনাল খা-সিরীন।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সূরা আ‘রাফ- ২৩)

(৩) رَبِّ اغْفِرْ لِى وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : রাবিবগফিরলী ওয়াতুব আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি তওবা কবুলকারী এবং দয়াময়। [ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক বৈঠকে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ১০০ বার এ দু‘আটি পাঠ করতে দেখলাম। (আবু দাউদ, হা/১৫১৮; তিরমিযী, হা/৩৪৩৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৯০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯২৭)]

(৪) أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাই্য়্যুল কাইয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।

অর্থ : আমি ঐ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আর আমি তার নিকট তওবা করছি। [যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি এ দু‘আটি পাঠ করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, হা/১৫১৯; তিরমিযী, হা/৩৫৭৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৫৫০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৫৩৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬২২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭২৭; মিশকাত, হা/২৩৫৩)]

১৪৯
মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশ পেলে পড়ার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَ ارْحَمْنِيْ وَأَلْحِقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الْاَعْلٰى

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াআলহিক্বনী বির্রাফীক্বিল আ‘লা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি দয়া করো এবং আমাকে মহান বন্ধুর সাথে মিলিয়ে দাও। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার গায়ে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম, তিনি এই দু‘আ পাঠ করছেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫৬৪; সহীহ বুখারী, হা/৪৪৪০; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৪৬; তিরমিযী, হা/৩৪৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৬১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯৮৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৬১৮; জামেউস সগীর, হা/২১৪৭)]

১৫০
মুমূর্ষ ব্যক্তির নিকট পঠিতব্য দু‘আ :
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ ।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। [আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এবং আবু হুরায়রা (রাঃ) যৌথভাবে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিকে এ কালিমার তালক্বীন দাও। (সহীহ মুসলিম, হা/২১৬২-৬৩; আবু দাঊদ, হা/৩১১৯; তিরমিযী, হা/৯৭৬; নাসাঈ, হা/১৮২৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১০০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০০৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১২৩৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২১৫১; জামেউস সগীর, হা/৯২৭৯; মিশকাত, হা/১৬১৬)অপর হাদীসে রয়েছে, মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার শেষ বাক্য হবে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ সে জান্নাতে যাবে। (আবু দাঊদ, হা/৩১১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০৮৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৬২৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১২৯৯; জামেউস সগীর, হা/১১৪২৫; মিশকাত, হা/১৬২১)]

১৫১
মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দু‘আ :
إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ

উচ্চারণ : ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জি‘ঊন।

অর্থ : আমরা আল্লাহর জন্যই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।

(সূরা বাক্বারা- ১৫৬)

১৫২
বিপদের সময় দু‘আ :
إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ اَللّٰهُمَّ أْجُرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِىْ وَاخْلُفْ لِىْ خَيْرًا مِّنْهَا

উচ্চারণ : ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জি‘ঊন, আল্লা-হুম্মা’জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখ্লুফ লী খায়রাম মিনহা।

অর্থ : আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর নিকটই আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আল্লাহ! আমার বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করো। [উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কোন মুসলমানের উপর কোন বিপদ আসে এবং সে এ দু‘আ পড়ে, তাহলে আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করবেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২২১৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৭৭; বায়হাকী, হা/৬৯১৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৯০; জামেউস সগীর, হা/১০৭০৩; মিশকাত, হা/১৬১৮)]

১৫৩
জানাযার সালাতের দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَ ذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا اَللّٰهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهٗ مِنَّا فَأَحْيِهٖ عَلَى الْاِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهٗ مِنَّا فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَانِ -‐ اَللّٰهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهٗ وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهٗ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়াশা-হিদিনা ওয়াগা-’ইবিনা ওয়াসাগীরিনা ওয়াকাবীরিনা ওয়াযাকারিনা ওয়াউনসা-না। আল্লা-হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহূ মিন্না ফাআহ্য়িহী ‘আলাল ইসলা-ম। ওয়ামান তাওয়াফ্ফাইতাহূ মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহূ ‘আলাল ঈমা-ন। আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহূ ওয়ালা তুযিল্লানা বা‘দাহূ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত-অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নর-নারী সকলকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যাদেরকে জীবিত রাখ, তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো, আর যাদেরকে মৃত্যু দান কর, তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করো। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার নেকী হতে বঞ্চিত করো না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন জানাযার সালাত পড়াতেন, তখন এই দু‘আটি পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৩২০৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৯৮; তিরমিযী, হা/১০২৪; মিশকাত, হা/১৬৭৫)]

(২) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ وَارْحَمْهُ وَعَافِهٖ وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهٗ وَوَسِّعْ مَدْخَلَهٗ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّهٖ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِهٖ وَأَهْلًا خَيْرًا مِّنْ أَهْلِهٖ وَزَوْجًا خَيْرًا مِّنْ زَوْجِهٖ وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَ مِنْ عَذَابِ النَّارِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলাহূ ওয়ারহামহু ওয়া‘আ-ফিহী ওয়া‘ফু ‘আনহু ওয়া আকরিম নুযুলাহূ ওয়াওয়াস্সি‘ মাদখালাহূ ওয়াগসিলহু বিলমা-ই ওয়াছ্ছালজি ওয়াল বারাদ। ওয়া নাক্কিহী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইউনাক্কাছ ছাউবুল আবইয়াযু মিনাদ্দানাস। ওয়া আবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খাইরাম মিন আহলিহী ওয়া যাওজান খাইরাম্ মিন যাওজিহী, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা ওয়া আ‘ইযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া মিন ‘আযা-বিন্না-র।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন, তার উপর রহম করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দান করুন, তাকে ক্ষমা করুন, মর্যাদার সাথে তার আপ্যায়ন করুন, তার বাসস্থান প্রশস্ত করুন। আপনি তাকে ধৌত করে দিন পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা। আপনি তাকে পাপ হতে এমনভাবে পরিষ্কার করুন, যেমনভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। তাকে দুনিয়ার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর দান করুন। তাকে দুনিয়ার পরিবারের চেয়ে উত্তম পরিবার দান করুন এবং আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর তাকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচান। [আউফ ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক বার জানাযার সালাত পড়ালেন। আমি তাঁর দু‘আর কিছু অংশ মনে রেখেছি। আমি আফসোস করলাম যে, এই মৃত ব্যক্তি যদি আমি হতাম! তখন তিনি এ দু‘আ পড়েছিলেন। (সহীহ মুসলিম, হা/২২৭৬; নাসাঈ, হা/১৯৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০২১; মিশকাত, হা/১৬৫৫)]

(৩) اَللّٰهُمَّ إِنَّه عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ كَانَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِه ‐ اَللّٰهُمَّ إِنْ كَانَ مُحْسِنًا فَزِدْهُ فِى إِحْسَانِه وَإِنْ كَانَ مُسِيْئًا فَتَجَاوَزْ عَنْ سَيِّئَاتِه ‐ اَللّٰهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَه وَلَا تَفْتِنَّا بَعْدَه

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নাহূ ‘আবদুকা ওয়াবনু ‘আবদিকা ওয়াবনু আমাতিকা, কা-না ইয়াশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুকা ওয়া রাসূলুকা ওয়া আনতা আ‘লামু বিহী। আল্লা-হুম্মা ইন কা-না মুহসিনান ফাযিদহু ফী ইহসা-নিহী ওয়া ইন কা-না মুসীআন ফাতাজা-ওয়ায ‘আন সাইয়িআ-তিহী, আল্লা-হুম্মা লা-তাহরিমনা আজরাহূ ওয়ালা তাফতিন্না বা‘দাহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! এ তো আপনার বান্দা, আপনার এক বান্দার সমত্মান এবং আপনার এক বান্দীর সমত্মান। সে সাক্ষ্য দিত যে, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আপনার বান্দা ও রাসূল। আর আপনি তার সম্পর্কে আমার চেয়ে ভালো জানেন। হে আল্লাহ! সে যদি সৎকর্মশীল হয়ে থাকে, তাহলে আপনি তার সৎকর্মে আরো সমৃদ্ধি দান করুন। আর যদি সে পাপী হয়ে থাকে তবে তার পাপকে ক্ষমা করে দিন। [সা‘দ ইবনে আবু সাঈদ (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদা আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা জানাযার সালাত কীভাবে আদায় করব? আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি অবশ্যই সে ব্যাপারে সংবাদ দেব। যখন তুমি লাশের সামনে দাঁড়াবে তখন প্রথমে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবে। তারপর আল্লাহর প্রশংসা করবে। তারপর নবী ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে। তারপর এ দু‘আটি পাঠ করবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০৭৩; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৮৫২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৫৯৮)]

১৫৪
বাচ্চার জানাযার সালাতে পড়ার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَسَلَفًا وَأَجْرًا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাজ ‘আলহু লানা ফারাত্বাও ওয়া সালাফাও ওয়া আজরা-।

অর্থ : হে আল্লাহ! তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী নেকী ও সওয়াবের অসীলা বানাও। [হাসান (রাঃ) বাচ্চাদের জানাযায় সূরা ফাতিহা ও এই দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ প্রসঙ্গের অধ্যায়ে মু‘আল্লাক সূত্রে; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৯১)]

১৫৫
কবরে লাশ রাখার দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ وَعَلٰى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ

উচ্চারণ : বিস্মিল্লা-হি ওয়া‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হ।

অর্থ : আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মিল্লাতের উপর (লাশকে কবরে রাখছি)। [ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন লাশ কবরে রাখতেন, তখন এই দু‘আ পাঠ করতেন। (তিরমিযী, হা/১০৪৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৫৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৮১২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১০৯)]

১৫৬
মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَه وَ ثَبِّتْهُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লাহূ ওয়া সাববিতহু।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তাকে অবিচল রাখুন। [উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন লাশকে দাফন করে অবসর গ্রহণ করতেন তখন বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, তোমরা তার জন্য কবরে প্রতিষ্ঠিত থাকার দু‘আ করো। অর্থাৎ সে যেন ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। কেননা এখন তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। (আবু দাঊদ, হা/৩২২৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৪৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৩৭২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৫১১; জামেউস সগীর, হা/৯৪৭; মিশকাত, হা/১৩৩)]

উল্লেখ্য যে, দাফনের পর এই দু‘আর সাথে জানাযার দু‘আগুলিও ব্যক্তিগতভাবে পড়া যায়।

১৫৭
মৃত ব্যক্তির পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য যা বলতে হয় :
إِنَّ لِلّٰهِ مَا أَخَذَ وَلَه مَا أَعْطٰى وَكُلُّ شَىْءٍ عِنْدَه بِأَجَلٍ مُّسَمًّى فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ .

উচ্চারণ : ইন্নালিল্লা-হি মা-আখাযা ওয়ালাহূ মা-আ‘ত্বা, ওয়াকুল্লু শায়ইন ‘ইনদাহূ বিআজালিম মুসাম্মা, ফালতাসবির ওয়াল তাহতাসিব।

অর্থ : নিশ্চয় আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন তা তাঁর এবং তিনি যা দান করেন তাও তাঁর। আল্লাহর কাছে প্রত্যেকটি জিনিসেরই একটি নির্ধারিত সময় থাকে। সুতরাং তুমি ধৈর্যধারণ করো এবং সওয়াবের আশা রাখো। [উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি ছেলে মারা গেলে নবী ﷺ এ দু‘আ পাঠ করে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/১২৭৪; সহীহ মুসলিম, হা/২১৭৪; নাসাঈ, হা/১৮৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৫৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৬১; আদাবুল মুফরাদ, হা/৫১২; মিশকাত, হা/১৭২৩)]

১৫৮
কবর যিয়ারতের দু‘আ :
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ .

উচ্চারণ : আসসালা-মু ‘আলাইকুম আহলাদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীন, ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিকূন, আসআলুল্লা-হা লানা ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ্।

অর্থ : হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলমান! তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব আল্লাহ যদি চান। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের জন্য ইসিত্মগফার করার আদেশ দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেখানে গিয়ে কী পাঠ করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি সেখানে গিয়ে এই দু‘আটি পাঠ করবে। (সহীহ মুসলিম, হা/২৩০১; নাসাঈ, হা/২০৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৮৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১৭৩; মিশকাত, হা/১৭৬৪)]

১৫৯
কতিপয় আয়াতের জবাব :
(১) ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন এ আয়াত পাঠ করতেন - ﴿سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلٰى﴾ সাবিবহিসমা রাবিবকাল আ‘লা। ‘‘তোমার মহান রবের নামে তাসবীহ পাঠ করো।’’ তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন-

سُبْحَانَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى

উচ্চারণ : সুবহা-না রাবিবইয়াল আ‘লা।

অর্থ : আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। [আবু দাঊদ, হা/৮৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৬৬; মিশকাত, হা/৮৫৯।]

(২) মূসা ইবনে আবু আয়েশা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি তার ঘরের ছাদের উপর সালাত আদায় করছিলেন। সে যখন এ আয়াত পাঠ করছিলেন, ﴿أَلَيْسَ ذٰلِكَ بِقَادِرٍ عَلٰۤى أَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰى﴾ (আলাইসা যা-লিকা বিক্বা-দিরিন ‘আলা আই ইউহ্য়িয়াল মাওতা) অর্থাৎ আল্লাহ কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন? তখন এ দু‘আ পাঠ করছিলেন-

سُبْحَانَكَ فَبَلٰى

উচ্চারণ : সুবহা-নাকা ফাবালা।

অর্থ : আমি তোমার পবিত্রতা সহকারে বলছি, হ্যাঁ।

পরে লোকেরা তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এটা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছি। [আবু দাঊদ, হা/৮৮৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৬২৪।]

(৩) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ (সালাত পড়ানোর জন্য) সাহাবীদের নিকট গেলেন। অতঃপর সূরা আর-রাহমান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন সাহাবীগণ নীরব ছিলেন। (সালাত শেষে) তিনি বললেন, যে রাত্রে আমার নিকট জিনের দল আসে, সে রাত্রে আমি উক্ত সূরা পাঠ করলে ওরা সুন্দর জবাব দিচ্ছিল। যখনই আমি পাঠ করছিলাম, ﴿فَبِأَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾ ‘‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে’’? তখন তারাও এর জবাবে বলছিল,

لَا بِشَئٍ مِّنْ نِّعْمَةٍ رَبَّنَا نُكَذِّبُ، فَلَكَ الْحَمْدُ

উচ্চারণ : লা বিশায়ইম মিন নি‘মাতিন রাববানা নুকাযযিবু, ফালাকাল হামদ।

অর্থ : তোমার নিয়ামতসমূহের কোন কিছুকেই আমরা অস্বীকার করি না, হে আমাদের প্রতিপালক! অতএব সমসত্ম প্রশংসা আপনারই জন্য। [তিরমিযী, হা/৩২৯১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৮৫৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২১৫০; মিশকাত, হা/৮৬১।]

১৬০
সিজদার আয়াত পাঠের পর সিজদার সময় দু‘আ :
سَجَدَ وَجْهِيْ لِلَّذِيْ خَلَقَه وَشَقَّ سَمْعَه وَبَصَرَه بِحَوْلِه وَقُوَّتِه فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ .

উচ্চারণ : সাজাদা ওয়াজহী লিল্লাযী খালাক্বাহূ ওয়াশাক্বক্বা সাম‘আহূ ওয়াবাসারাহূ, বিহাওলিহী ওয়া কুওওয়াতিহী ফাতাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লিক্বীন।

অর্থ : আমার মুখমন্ডল (সহ আমার সমস্ত দেহ) সিজদায় অবনত সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে চক্ষু ও কান তৈরি করেছেন স্বীয় ইচ্ছা ও শক্তির মাধ্যমে, মহিমান্বিত আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা। [আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের বেলায় তিলাওয়াতে সিজদায় এই দু‘আটি বার বার পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/১৪১৬; তিরমিযী, হা/৫৮০, ৩৪২৫; নাসাঈ, হা/১১২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৮৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৬৩; দার কুতনী, হা/১৫১৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮০২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৭৭০; মিশকাত, হা/১০৩৫)]

১৬১
কুরআন মাজীদে উল্লেখিত দু‘আসমূহ
নবী-রাসূলগণ বিভিন্ন সময় আল্লাহর নিকট দু‘আ করেছেন। তাদের অনেক দু‘আ কুরআন মাজীদের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআনের এসব দু‘আ পড়লে একদিকে তিলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যায়, অন্যদিকে আল্লাহর কাছে তা কবুলেরও আশা করা যায়। নিম্নে কুরআনের দু‘আসমূহ আলোচনা করা হলো :

১৬২
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর উম্মতের দু‘আ
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এবং তাঁর উম্মতকে অনেক দু‘আ শিখিয়েছেন। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো :

১৬৩
জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দু‘আ :
رَبِّ زِدْنِيْ عِلْمًا

উচ্চারণ : রাবিব যিদ্নী ‘ইলমা।

অর্থ : হে আমার রব! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন। (সূরা ত্বা-হা- ১১৪)

১৬৪
হেদায়াত লাভের দু‘আ :
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ - صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ - غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ .

উচ্চারণ : ইহ্দিনাস সিরা-ত্বাল মুসতাক্বীম। সিরা-ত্বাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম। গাইরিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়ালায যা-ল্লীন।

অর্থ : (হে আল্লাহ!) আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথ নয়- যারা গযবপ্রাপ্ত এবং যারা পথভ্রষ্ট। (সূরা ফাতিহা- ৫, ৬)

১৬৫
হেদায়াতের উপর টিকে থাকার দু‘আ :
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

উচ্চারণ : রাববানা লা তুযিগ কুলূবানা বা‘দা ইয হাদাইতানা ওয়াহাব্লানা মিল্লাদুনকা রাহমাহ, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহ্হা-ব।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! হেদায়াত দানের পর আপনি আমাদের অমত্মরগুলোকে বাঁকা করে দেবেন না, আমাদেরকে আপনার নিকট হতে রহমত দান করুন, অবশ্যই আপনি মহান দাতা। (সূরা আলে ইমরান- ৮)

১৬৬
শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে আশ্রয় চাওয়ার দু‘আ :
رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَّحْضُرُوْنِ .

উচ্চারণ : রাবিব আ‘ঊযুবিকা মিন হামাযা-তিশ শায়া-ত্বীন, ওয়া আ‘ঊযুবিকা রাবিব আই ইয়াহ্যুরূন।

অর্থ : হে আমার রব! আমি শয়তানদের কুমন্ত্রণা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তারা আমার কাছে না আসতে পারে। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)

১৬৭
ক্ষমা ও রহমত লাভের দু‘আ :
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ : রাবিবগ্ফির ওয়ার্হাম ওয়া আনতা খাইরুর রা-হিমীন।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! (আমাকে) ক্ষমা করুন ও রহম করুন। আর রহমকারীদের মধ্যে আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। (সূরা মু’মিনূন- ১১৮)

১৬৮
প্রভাবশালী শত্রুর বিরুদ্ধে দু‘আ :
(১) حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ

উচ্চারণ : হাসবুনাল্লা-হু ওয়ানি‘মাল ওয়াকীল।

অর্থ : আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক (সাহায্যকারী)! [ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ইবরাহীম (আঃ) আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ উহুদ যুদ্ধের পর যখন শুনলেন লোকেরা আবার আক্রমণের জন্য একত্রিত হচ্ছে, তখন এই দু‘আটি পাঠ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৩; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৩৬৪)] (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)

حَسْبِيَ اللهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ . (২)

উচ্চারণ : হাসবিইয়াল্লা-হু লা-ইলা-হা ইল্লা হুয়া ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুয়া রাববুল ‘আরশিল ‘আযীম।

অর্থ : আমার জন্য আল্লাহ তা‘আলাই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি, তিনি মহান আরশের মালিক। (সূরা তওবা- ১২৯)

১৬৯
আল্লাহর কোন হুকুম শোনার পর দু‘আ :
سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ .

উচ্চারণ : সামি‘না ওয়া আত্বা‘না গুফরা-নাকা রাববানা ওয়া ইলাইকাল মাসীর।

অর্থ : আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই, আর আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮৫)

১৭০
আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর লাভ করার দু‘আ :
رَبَّنَاۤ أَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْ لَنَاۤ إِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ : রাববানা আতমিমলানা নূরানা ওয়াগফিরলানা ইন্নাকা ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর।

অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদের নূরকে পরিপূর্ণ করে দিন, আর আমাদেরকে ক্ষমা করুন, নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা তাহরীম- ৮)

১৭১
দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভের দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : রাববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা ‘আযা-বান্না-র।

অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন। (সূরা বাক্বারা- ২০১)

১৭২
চোখ জুড়ানো পরিবার পাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ إِمَامًا

উচ্চারণ : রাববানা হাবলানা মিন আযওয়া-জিনা ওয়া যুররিয়্যা-তিনা কুররাতা আ‘ইউনিও ওয়াজ‘আলনা লিল মুত্তাক্বীনা ইমা-মা।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে চক্ষু শিতলকারী স্ত্রী ও সমত্মানাদি দান করুন। আর আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা ফুরক্বান- ৭৪)

১৭৩
মাতাপিতার জন্য দু‘আ :
رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا

উচ্চারণ : রাবিবর হামহুমা কামা রাববাইয়া-নী সাগীরা।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমার মাতাপিতার প্রতি দয়া করুন, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৪)

১৭৪
অতীতের মুসলমানদের জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِاِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ إِنَّكَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ

উচ্চারণ : রাববানাগফির লানা ওয়ালি ইখওয়া-নিনাল্লাযীনা সাবাকূনা বিলঈমা-ন। ওয়ালা তাজ‘আল ফী কুলূবিনা গিল্লাললিল্লাযীনা আ-মানূ রাববানা ইন্নাকা রাঊফুর রাহীম।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের সেসব ভাইদেরকে ক্ষমা করো, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর সে ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বড় করুণাময় ও অতি দয়ালু। (সূরা হাশর- ১০)

১৭৫
গোনাহ মাফের দু‘আ :
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ

উচ্চারণ : রাববানা ফাগ্ফিরলানা যুনূবানা ওয়াকাফ্ফির ‘আন্না সায়্যিআ-তিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মা‘আল আব্রা-র।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করুন, আমাদের থেকে আমাদের গোনাহগুলো মুছে দিন এবং সৎকর্মশীলদের সাথে আমাদের মৃত্যু দান করুন। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৩)

১৭৬
বিপদাপদ ও কঠিন মুহূর্তে অটল থাকার দু‘আ :
(১) رَبَّنَاۤ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

উচ্চারণ : রাববানা আফরিগ ‘আলাইনা সাবরাও ওয়াসাবিবত আক্বদা-মানা ওয়ানসুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কা-ফিরীন।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্যধারণের শক্তি দান করুন, আমাদেরকে (হকের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সূরা বাক্বারা- ২৫০)

(২) رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْۤ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

উচ্চারণ : রাববানাগফির লানা যুনূবানা ওয়া ইসরা-ফানা ফী আমরিনা ওয়াসাবিবত আক্বদা-মানা ওয়ানসুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কা-ফিরীন।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের অপরাধ এবং কাজকর্মে আমাদের সীমালঙ্ঘনকে ক্ষমা করে দিন আর আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৭)

১৭৭
মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার দু‘আ :
رَبَّنَاۤ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ

উচ্চারণ : রাববানা আফরিগ ‘আলাইনা সাবরাওঁ ওয়াতাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে সবর করার তাওফীক দান করুন এবং মুসলিম অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিন। (সূরা আ‘রাফ- ১২৬)

১৭৮
কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা থেকে বাঁচার দু‘আ :
رَبَّنَا وَاٰتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلٰى رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ

উচ্চারণ : রাববানা ওয়া আ-তিনা মা ওয়া‘আত্তানা ‘আলা রুসুলিকা ওয়ালা তুখযিনা ইয়াউমাল ক্বিয়া-মাহ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি স্বীয় রাসূলদের মাধ্যমে আমাদেরকে যা কিছুর ওয়াদা দিয়েছেন, তা আমাদেরকে দান করুন এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে লাঞ্ছিত করা থেকে হেফাযত করুন। নিশ্চয় আপনি ওয়াদা খেলাফ করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৪)

১৭৯
জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচার দু‘আ :
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا

উচ্চারণ : রাববানাসসরিফ ‘আন্না ‘আযা-বা জাহান্নাম, ইন্না ‘আযা-বাহা কা-না গারা-মা।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদেরকে দূরে রাখুন, কেননা এর শাস্তি অতি ভয়াবহ। (সূরা ফুরক্বান- ৬৫)

১৮০
কঠিন পরীক্ষা ও বিপদাপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ إِنْ نَّسِيْنَاۤ أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَاۤ إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَه عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِه وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَاۤ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

উচ্চারণ : রাববানা লা তুআ-খিয্না ইন্নাসীনা আও আখত্বা’না রাববানা ওয়ালা তাহ্মিল ‘আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহূ ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা, রাববানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা ত্বা-ক্বাতা লানা বিহ, ওয়া‘ফু ‘আন্না, ওয়াগফির লানা, ওয়ারহামনা, আনতা মাওলা-না ফানসুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কা-ফিরীন।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেমন গুরু-দায়িত্ব অর্পণ করেছ, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! যে ভার বহনের ক্ষমতা আমাদের নেই- এমন ভার আমাদের উপর চাপিয়ে দিও না। আমাদের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করো, আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি দয়া করো; তুমিই আমাদের অভিভাবক। কাজেই আমাদেরকে কাফিরদের উপর বিজয়ী করো। (সূরা বাক্বারা- ২৮৬)

১৮১
ক্ষমা চেয়ে আদম (আঃ) এর দু‘আ :
رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

উচ্চারণ : রাববানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগ্ফিরলানা ওয়াতারহামনা লানাকূনান্না মিনাল খা-সিরীন।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সূরা আ‘রাফ- ২৩)

১৮২
মাতাপিতাসহ সকলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নূহ (আঃ) এর দু‘আ :
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَّلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِيْنَ إِلَّا تَبَارًا

উচ্চারণ : রাবিবগফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মু’মিনাও ওয়া লিলমু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-ত ওয়ালা তাযিদিয্ যা-লিমীনা ইল্লা তাবা-রা।

অর্থ : হে আমার রব! তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে, আর যারা আমার গৃহে মুমিন হয়ে প্রবেশ করেছে তাদেরকে এবং সকল মুমিন পুরুষ ও নারীকে ক্ষমা করো। আর যালিমদের জন্য ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করো না। (সূরা নূহ- ২৮)

১৮৩
নৌকায় আরোহণের সময় নূহ (আঃ) এর দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ مَجْرِهَا وَمُرْسَاهَاۤ إِنَّ رَبِّيْ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি মাজরে-হা ওয়ামুরসা-হা ইন্না রাববী লাগাফূরুর রাহীম।

অর্থ : আল্লাহর নামে এর চলা এবং অবস্থান করা। নিশ্চয় আমার রব অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু। (সূরা হুদ- ৪১)

১৮৪
কাফিরদের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আ :
رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ - رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَاۤ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ .

উচ্চারণ : রাববানা ‘আলাইকা তাওয়াক্কালনা ওয়া ইলাইকা আনাবনা ওয়া ইলাইকাল মাসীর। রাববানা লা তাজ‘আলনা ফিত্নাতাললিল্লাযীনা কাফারূ ওয়াগফির লানা রাববানা ইন্নাকা আন্তাল ‘আযীযুল হাকীম।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার উপরই ভরসা করি, আপনার দিকেই ধাবিত হই এবং আমাদেরকে আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কাফিরদের পরীক্ষার বসত্মু বানাবেন না। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আপনি মহা পরাক্রমশালী ও মহা বিজ্ঞানী। (সূরা মুমতাহিনা- ৪, ৫)

১৮৫
নেক সন্তান পাওয়ার জন্য ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আ :
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ .

উচ্চারণ : রাবিব হাবলী মিনাস সা-লিহীন।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন। (সূরা সাফফাত- ১০০)

১৮৬
সন্তান লাভের জন্য যাকারিয়া (আঃ) এর দু‘আ :
رَبِّ لَا تَذَرْنِيْ فَرْدًا وَّأَنْتَ خَيْرُ الْوَارِثِيْنَ

উচ্চারণ : রাবিব লা তাযারনী ফারদাওঁ ওয়া আনতা খাইরুল ওয়া-রিসীন।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সন্তানহীন করে রেখো না, আর তুমি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। (সূরা আম্বিয়া- ৮৯)

رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ .

উচ্চারণ : রাবিব হাবলী মিল্লাদুনকা যুররিয়্যাতান ত্বাইয়িবাতান ইন্নাকা সামী‘উদ দু‘আ।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার পক্ষ হতে সুসন্তান দান করো। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৩৮)

১৮৭
ভালো কাজ করার পর দু‘আ :
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاۤ إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

উচ্চারণ : রাববানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাস সামী‘উল ‘আলীম।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে (এ কাজটি) কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ১২৭)

১৮৮
সালাত কায়েমকারী হওয়ার জন্য ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আ :
رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ .

উচ্চারণ : রাবিবজ‘আলনী মুক্বীমাস সালা-তি ওয়া মিন যুর্রিয়্যাতী রাববানা ওয়া তাক্বাববাল দু‘আ।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আর আমার সন্তানদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানান। হে আমাদের প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করুন। (সূরা ইবরাহীম- ৪০)

১৮৯
মাগফিরাত লাভের জন্য ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

উচ্চারণ : রাববানাগফিরলী ওয়ালি ওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিল মু’মিনীনা ইয়াউমা ইয়াকূমুল হিসা-ব।

অর্থ : হে আমাদের রব! আমাকে, আমার মাতাপিতাকে এবং সকল মু’মিনদেরকে ক্ষমা করে দিন- যেদিন হিসাব কায়েম হবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪১)

১৯০
জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য মূসা (আঃ) এর দু‘আ :
رَبِّ اشْرَحْ لِيْ صَدْرِيْ وَيَسِّرْ لِيْۤ أَمْرِيْ - وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِيْ - يَفْقَهُوْا قَوْلِيْ

উচ্চারণ : রাবিবশ্রাহ্লী সাদ্রী, ওয়া ইয়াসসির লী আমরী, ওয়াহ্লুল ‘উক্বদাতাম মিল্লিসা-নী, ইয়াফ্ক্বাহূ ক্বাওলী।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজকে সহজ করে দিন, আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন- যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে। (সূরা ত্বা-হা : ২৫-২৮)

১৯১
মাগফিরাতের জন্য মূসা (আঃ) এর দু‘আ :
رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ : রাবিব ইন্নী যালাম্তু নাফ্সী ফাগ্ফিরলী।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমি নিজের উপর যুলুম করেছি, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন। (সূরা ক্বাসাস- ১৬)

১৯২
জান্নাত চেয়ে ফেরাউনের স্ত্রীর দু‘আ :
رَبِّ ابْنِ لِيْ عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِه وَنَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ

উচ্চারণ : রাবিববনি লী ‘ইনদাকা বাইতান ফিল জান্নাহ। ওয়া নাজ্জিনী মিন ফির‘আউনা ও ‘আমালিহী, ওয়া নাজ্জিনী মিনাল ক্বাউমিয যা-লিমীন।

অর্থ : হে আমার রব! আমার জন্য আপনার নিকট জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দিন। আমাকে ফেরাউন ও তার কার্যকলাপ থেকে মুক্তি দিন, আর আমাকে মুক্তি দিন যালিম সম্প্রদায় থেকে। (সূরা তাহরীম- ১১)

১৯৩
রহমত লাভের জন্য আসহাবে কাহ্ফের দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا

উচ্চারণ : রাববানা আ-তিনা মিল্লাদুনকা রাহমাতাওঁ ওয়া হাইয়ি’লানা মিন আমরিনা রাশাদা।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার নিকট হতে আমাদেরকে রহমত দান করুন, আর আমাদের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করুন। (সূরা কাহ্ফ- ১০)

১৯৪
যিকিরের গুরুত্ব ও ফযীলত
যিকিরের ফযীলত সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَاذْكُرُوْنِيْۤ أَذْكُرْكُمْ﴾

তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।

(সূরা বাক্বারা- ১৫২)

﴿وَاذْكُرُوْا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾

আর তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ১০)

﴿إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِي الْاَلْبَابِ اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ﴾

নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং দিন ও রাত্রের পরিবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবানদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর যিকির করে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯০, ১৯১)

যিকিরের ফযীলত সম্পর্কে কতিপয় হাদীস :

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতেন। [হাদীসটি ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে তা‘লীক সূত্রে বর্ণনা করেন; সহীহ মুসলিম, হা/৮৫২; আবু দাঊদ, হা/১৮; তিরমিযী, হা/৩৩৮৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৫৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২০৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৬৯০; বায়হাকী, হা/৪২৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৭৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০৬; জামেউস সগীর, হা/৯০৭৪; মিশকাত, হা/৪৫৬।]

আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

يُصْبِحُ عَلٰى كُلِّ سُلَامٰى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقةٌ فَكُلُّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقةٌ وَكُلُّ تَحْمِيْدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيْرَةٍ صَدَقَةٌ وَأْمُرٌ بِالْمَعْرُوْفِ صَدَقَةٌ وَنَهْي عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذٰلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحٰى .

তোমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর সাদাকা ওয়াজিব। আর প্রত্যেকবার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল-হামদুলিল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা একটি সাদাকা, উত্তম কাজের নির্দেশ দেয়া একটি সাদাকা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা একটি সাদাকা। আর এই সবকিছুর জন্য চাশতের দুই রাক‘আত সালাতই যথেষ্ট। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫১৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/১৬৮৮; বায়হাকী, হা/৪৬৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৬৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৭৭; জামেউস সগীর, হা/১৪০৫৭; মিশকাত, হা/১৩১১।]

আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন,

مَثَلُ الَّذِيْ يَذْكُرُ رَبَّه وَالَّذِيْ لَا يَذْكُرُه مَثَلُ الْحَيِّ وَالْمَيِّتِ

যে ব্যক্তি তার রবের যিকির করে এবং যে ব্যক্তি তাঁর যিকির করে না, তাদের উদাহরণ হচ্ছে জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪০৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৯; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৭৮০৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩১৫৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১২৪৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫০০; মিশকাত, হা/২২৬৩।]

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - يَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِىْ بِىْ وَأَنَا مَعَه حِينَ يَذْكُرُنِى إِنْ ذَكَرَنِى فِى نَفْسِه ذَكَرْتُه فِى نَفْسِى وَإِنْ ذَكَرَنِى فِى مَلإٍ ذَكَرْتُه فِى مَلإٍ هُمْ خَيْرٌ مِنْهُمْ وَإِنْ تَقَرَّبَ مِنِّى شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَإِنْ أَتَانِى يَمْشِى أَتَيْتُه هَرْوَلَةً

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার সম্বন্ধে যেরকম ধারণা করে, আমি ঠিক সে রকম। সে যখন আমাকে স্মরণ করে, তখন আমি তার সাথে থাকি। সে যদি মনে মনে আমাকে স্মরণ করে, আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি। আর সে যদি কোন মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি, অর্থাৎ ফেরেশতাদের মজলিসে। আর বান্দা যদি আমার দিকে এক বিগত পরিমাণ অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। আর বান্দা যদি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই। আর বান্দা যদি আমার দিকে হেটে অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮১, ৭০০৮, ৭১২৮; তিরমিযী, হা/৩৬০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪১৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৫২; জামেউস সগীর, হা/১৪০৯৭; মিশকাত, হা/২২৬৪।]

আবদুল্লাহ ইবনে বুস্র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ইসলামের হুকুম-আহকাম অধিক হয়ে গেছে। কাজেই আপনি আমাকে এমন একটি বিষয় বলে দিন, যেটাকে আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরব। তিনি বললেন,

لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا مِّنْ ذِكْرِ اللهِ

তোমার জিহবা যেন সর্বক্ষণ আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকে। [তিরমিযী, হা/৩৩৭৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭১৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮২২; বায়হাকী, হা/৬৩১৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৯১; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৬৮; মিশকাত, হা/২২৭৯।]

১৯৫
কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ যিকির
১. আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যে রাতে আমার মি‘রাজ হয়, সে রাতে ইবরাহীম (আঃ) এর সাথে আমার দেখা হলো। তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মতকে আমার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দেবেন, আর তাদেরকে জানিয়ে দেবেন যে, জান্নাতের মাটি অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত ও পানি অত্যন্ত সুপেয় এবং তা একটি সমতল ভূমি। আর তার গাছ হচ্ছে এই তাসবীহ,

سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ ، وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ ، وَاللهُ أكْبَرُ

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার।

অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়। [তিরমিযী, হা/৩৪৬২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০২১২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৫০; মিশকাত, হা/২৩১৫।]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এ তাসবীহটি পাঠ করা আমার নিকট পৃথিবীর সকল বসত্মুর চেয়ে অধিক প্রিয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭২৪, ৭০২২; তিরমিযী, হা/৩৫৯৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮১১; মিশকাত, হা/২২৯৫।]

২. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আমি বলতে শুনেছি, সবচেয়ে উত্তম যিকির হচ্ছে,

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। [তিরমিযী, হা/৩৩৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮০০; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৫৯৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫২৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৯৭; জামেউস সগীর, হা/১৯৮৪; মিশকাত, হা/২৩০৬।]

৩. আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি নিচের কালিমা ১০ বার পাঠ করবে, সে ইসমাঈল (আঃ) এর বংশের চারজন গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে।

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه ، لَهُ الْمُلْكُ ؛ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকালাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব এবং সমসত্ম প্রশংসা তাঁরই। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০২০; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৬১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৩৪।]

৪. আবু মালিক আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ, اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ ‘‘আলহামদু লিল্লা-হ’’ বাক্যটি দাঁড়িপাল্লা ভরে দেয় এবং سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ ‘‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়ালহাম্দুলিল্লা-হ’’ এ বাক্য দু’টি বা এদের প্রত্যেকটি আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবটুকু ভরে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭৬; তিরমিযী, হা/৩৫১৭; নাসাঈ, হা/২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৫৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩৯৪; মিশকাত, হা/২৮১।]

৫. আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনের কথা জানাব না? আমি বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তা হলো-

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ

উচ্চারণ : লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি ও আশ্রয় নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪০৯; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৪৩; আবু দাঊদ, হা/১৫২৮; তিরমিযী, হা/৩৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৫৯০; মিশকাত, হা/২৩০৩।]

৬. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এমন দু’টি বাক্য রয়েছে, যা মুখে বলতে হালকা (সহজে উচ্চারণ করা যায়) কিমত্মু পাল্লায় (ওজনে) ভারী এবং আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয়। বাক্যগুলো হলো,

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম।

অর্থ : আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার প্রশংসার সাথে, তিনি পবিত্র ও মহান। [সহীহ বুখারীর সর্বশেষ হাদীস, মুসলিম হা/৭০২১; তিরমিযী, হা/৩৪৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৩৭; জামেউস সগীর, হা/৮৭০১; মিশকাত, হা/২২৯৮।]

১৯৬
সকাল-সন্ধ্যায় যিকির করার গুরুত্ব ও ফযীলত
সকালে ও সন্ধ্যায় যিকির করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغَافِلِيْنَ﴾

তোমার প্রতিপালককে মনে মনে, সবিনয়ে ও ভীতিসহকারে, অনুচ্চৈঃস্বরে, প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। (সূরা আ‘রাফ- ২০৫)

﴿فَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَاۚ وَمِنْ اٰنَآءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى﴾

হে নবী! তারা যা বলুক না কেন, সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে ও রাত্রিকালে প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। অতঃপর তুমি পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)

﴿فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْاِبْكَارِ﴾

সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা মু’মিন- ৫৫)

﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا وَسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّ أَصِيْلًا ﴾

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করো। (সূরা আহযাব- ৪১, ৪২)

﴿وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا﴾

তুমি সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো। (সূরা দাহর- ২৫)

﴿فَسُبْحَانَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ وَلَهُ الْحَمْدُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ﴾

অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান ঘোষণা করো- সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়েও; আর আসমান ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। (সূরা রূম- ১৭, ১৮)

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَاَنْ أَقْعُدَ مَعَ قَوْمٍ يَذْكُرُوْنَ اللهَ تَعَالٰى مِنْ صَلَاةِ الْغَدَاةِ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أُعْتِقَ أَرْبَعَةً مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيْلَ وَلَاَنْ أَقْعُدَ مَعَ قَوْمٍ يَذْكُرُوْنَ اللهَ مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلٰى أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أُعْتِقَ أَرْبَعَةً

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যারা ফজরের সালাতের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করে, তাদের সাথে বসা আমার জন্য ইসমাঈলী গোত্রের চারজন গোলাম আযাদ করা থেকেও বেশি পছন্দনীয়। আর যারা আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আললাহর যিকিরে মশগুল থাকে, তাদের সাথে বসা আমার জন্য চারজন গোলাম আযাদ করা থেকেও বেশি পছন্দনীয়। [আবু দাঊদ, হা/৩৬৬৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭২৪৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৬০২২।]

১৯৭
সকালের যিকিরসমূহ
১. আয়াতুল কুরসি ১ বার :

উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তার কিছু খেজুরের সত্মুপ ছিল। সেখান থেকে প্রায়ই কিছু কমে যেত। এক রাতে তিনি পাহারা দিলেন। অতঃপর তিনি বালক সাদৃশ একটি প্রাণী দেখতে পেলেন। তিনি তাকে সালাম দিলে সে তার উত্তর প্রদান করে। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জিন নাকি মানুষ? সে বলল, আমি জিন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে কেন এসেছ? সে বলল, তোমার খাদ্য থেকে কিছু নিতে এসেছি। তারপর তিনি বললেন, তোমার অনিষ্ট থেকে মুক্তির উপায় কী? সে বলল, যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করবে, সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। অতঃপর যখন সকাল হলো, তখন আমি নবী ﷺ এর কাছে আসলাম এবং ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন নবী ﷺ বললেন, খবীস সত্য কথা বলেছে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৫৪২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৭৩১।]

আয়াতুল কুরসী এ বইয়ের ৩৫ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

২. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস ৩ বার করে :

মু‘আয ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস তিন বার করে পাঠ করো, তাহলে সবকিছু থেকে তোমাকে হেফাযত করার জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে। [তিরমিযী, হা/৩৫৭৫; আবু দাঊদ, হা/৫০৮৩।]

সূরা ইখলাস ও সূরা ফালাক্ব এ বইয়ের ৩৭ পৃষ্ঠায় এবং সূরা নাস ৩৮ পৃষ্ঠায় দেয়া আছে।

৩. নিচের দু‘আটি ১ বার :

أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ أَسْأَ لُكَ خَيْرَ هٰذَا الْيَوْمِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِى النَّارِ وَعَذَابٍ فِى الْقَبْرِ

উচ্চারণ : আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ওয়ালা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকালাহ্। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরা হা-যাল ইয়াওমি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি হা-যিহিল লাইলাতি ওয়া শাররি মা বা‘দাহা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল কিবারি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিন ফিন্না-রি ওয়া ‘আযা-বিন ফিল ক্বাবর।

অর্থ : আমরা এবং সমগ্র জগৎ আল্লাহর জন্য সকালে উপনীত হলাম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ দিনের মঙ্গল কামনা করছি, আর আমি আশ্রয় চাই এ রাতের অমঙ্গল এবং এ রাতের পরবর্তী অংশে যে অমঙ্গল রয়েছে তা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা ও বার্ধক্যের অপকারিতা হতে। হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব ও কবরের শাস্তি হতে। [আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সকাল হত তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮২-৮৩; আবু দাঊদ, হা/৫০৭৩; মিশকাত, হা/২৩৭১; তিরমিযী, হা/৩৩৯০)]

৪. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا ، وَبِكَ أَمْسَيْنَا ، وَبِكَ نَحْيَا ، وَبِكَ نَمُوْتُ وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বিকা আসবাহ্না ওয়াবিকা আমসাইনা ওয়াবিকা নাহ্ইয়া ওয়াবিকা নামূতু ওয়া ইলাইকাল মাসীর।

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার কুদরতে আমরা সকাল করি এবং তোমার কুদরতে আমরা সন্ধ্যা করি, তোমার নামে আমরা জীবনধারণ করি, আর তোমার নামে আমরা মৃত্যুবরণ করি এবং তোমার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সকালে উপনীত হয়, তখন সে যেন এ দু‘আ পাঠ করে। (তিরমিযী, হা/৩৩৯১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৮; আবু দাঊদ, হা/৫০৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৪৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৬৫; মিশকাত, হা/২৩৮৯)]

৫. নিচের দু‘আটি ১ বার :

أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَ لُكَ خَيْرَ هٰذَا الْيَوْمِ فَتْحَهٗ وَنَصْرَهٗ وَنُوْرَهٗ وَبَرَكَتَهٗ وَهُدَاهُ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْهِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهٗ

উচ্চারণ : আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি রাবিবল ‘আ-লামীন। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খায়রা হা-যাল ইয়াউমি, ফাতহাহূ ওয়া নাসরাহূ ওয়া নূরাহূ ওয়া বারাকাতাহূ ওয়া হুদা-হু। ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি মা ফীহি ওয়া শাররি মা বা‘দাহু।

অর্থ : আমরা এবং সমগ্র জগৎ রাববুল আলামীন আল্লাহর জন্য সকালে উপনীত হয়েছি। হে আল্লাহ! আমি এই দিনের কল্যাণ, সফলতা, সাহায্য, নূর, বরকত এবং হেদায়াত কামনা করছি এবং আমি আশ্রয় চাচ্ছি এই দিনের মধ্যে এবং তার পরে যে অকল্যাণ রয়েছে তার অনিষ্ট থেকে। [আবু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমাদের কেউ সকালে উপনীত হয়, তখন সে যেন এ দু‘আ পাঠ করে। (আবু দাঊদ, হা/৫০৮৬; মিশকাত, হা/২৪১২)]

৬. নিচের দু‘আটি ১ বার :

أَصْبَحْنَا وأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَالْكِبْرِيَاءُ وَالْعَظَمَةُ لِلّٰهِ وَالْخَلْقُ وَالْاَمْرُ وَاللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَمَا سَكَنَ فِيْهِمَا لِلّٰهِ اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ أَوَّلَ هٰذَا النَّهَارِ صَلَاحًا وَأَوْسَطَهٗ نَجَاحًا وَاٰخِرَهٗ فَلَاحًا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ : আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়াল কিবরিয়াউ ওয়াল ‘আযামাতু লিল্লা-হি, ওয়াল খালকু ওয়াল আমরু ওয়াল লাইলু ওয়ান নাহা-রু ওয়ামা সাকানা ফী-হিমা লিল্লা-হি। আল্লাহুম্মাজ‘আল আউওয়ালা হা-যান নাহা-রি সালা-হান ওয়া আওসাতাহু নাজা-হান ওয়া আ-খিরাহু ফালা-হান ইয়া আরহামার রা-হিমীন।

অর্থ : আমরা এবং সমগ্র জগৎ রাববুল ‘আলামীন আল্লাহর জন্য সকালে উপনীত হয়েছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, বড়ত্ব আল্লাহর, মহত্ব আল্লাহর, সৃষ্টি ও আদেশও আল্লাহর। আর দিন ও রাত্রি এবং এ দুইয়ের মধ্যে যা কিছু অবস্থান করে সবকিছু আল্লাহর। হে আল্লাহ! আপনি এ দিনের প্রথমাংশকে শান্তি, মধ্যমাংশকে মুক্তি ও শেষাংশকে সফলতা দান করুন- হে সর্বোচ্চ দয়াময়। [আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সকালে উপনীত হতেন তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন। (মিশকাত, হা/২৪১৪)]

৭. নিচের দু‘আটি ১ বার :

أَصْبَحْنَا عَلٰى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ وَسُنَّةِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَمِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ

উচ্চারণ : আসবাহনা ‘আলা ফিত্বরাতিল ইসলা-মি ওয়া কালিমাতিল ইখলা-সি ওয়া সুনণাতি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন, ওয়া মিল্লাতি আবীনা ইবরা-হীমা হানীফাম মুসলিমা, ওয়ামা কানা মিনাল মুশরিকীন।

অর্থ : আমরা সকাল করলাম ইসলামের ফিতরাতের উপর, একনিষ্ঠ কালিমার উপর, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাতের উপর এবং আমাদের একনিষ্ঠ মুসলিম পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর আদর্শের উপর। আর তিনি মুশরিকদের অমত্মর্ভুক্ত ছিলেন না। [উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের সকাল ও সন্ধ্যায় এ দু’আটি পড়ার জন্য শিক্ষা দিতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/২১১৪৪; দারেমী, হা/২৭৪৪)]

৮. নিচের দু‘আটি ১ বার :

أَصْبَحْنَا وأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ لَا إِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ وَفِتْنَةٍ فِي الدُّنْيَا وَعَذَابٍ فِي النَّاِر

উচ্চারণ : আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকালাহ। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া সূইল কিবারি ওয়া ফিতনাতিন ফীদ দুনইয়া ওয়া ‘আযাবিন ফীন না-র।

অর্থ : আমরা এবং বিশ্ব জগতের সবাই সকালে উপনীত হলাম। সকল প্রশংসা আল্লাহর, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং তার কোন শরীক নেই। হে আল্লাহ! আমি কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্যের অনিষ্টতা, দুনিয়ার ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। [আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সকালে উপনীত হতেন তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন। (সুনানে নাসাঈ আল কুবরা, হা/৯৮৫১)]

৯. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা মা আসবাহা বী মিন নি‘মাতিন আও বি আহাদিম মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা ফালাকাল হামদু ওয়ালাকাশ শুকর।

অর্থ : হে আল্লাহ! এই সকালে আমার উপর যত নিয়ামত এসেছে অথবা তোমার কোন সৃষ্টির উপর এসেছে সেটা তোমার পক্ষ থেকেই এসেছে। তুমি একক, তোমার কোন শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা তোমারই। [ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আ পাঠ করবে সে যেন সারাদিনের শুকরিয়া আদায় করল। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে যেন সারা রাত্রির শুকরিয়া আদায় করল। (সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৬১; আবু দাঊদ, হা/৫০৭৩)]

১০. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ بِذَ ۢنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আললা-হুম্মা আনতা রাববী লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু। আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা-সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বিযামবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমার উপর আপনার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। [শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটা হলো (সায়্যিদুল ইস্তিগফার) শ্রেষ্ঠ ক্ষমাপ্রার্থনা, যে ব্যক্তি বিশ্বাস সহকারে সকালে এটা পড়বে, সে দিনে মারা গেলে জান্নাতবাসী হয়ে মারা যাবে। আর যদি সন্ধ্যায় পড়ে, অতঃপর রাতে মারা যায় তাহলেও সে জান্নাতবাসী হবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩০৬; তিরমিযী, হা/৩৩৯৩; আবু দাঊদ, হা/৫০৭২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭২; সুনানে নাসাঈ, হা/৫৫২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১১; মিশকাত, হা/২৩৩৫)]

১১. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِىْ وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِىْ وَمَالِىْ اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِىْ وَاٰمِنْ رَوْعَتِيْ اَللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْۢ بَيْنِ يَدَيَّ ، وَمِنْ خَلْفِيْ وَعَنْ يَمِيْنِيْ وَعَنْ شِمَالِيْ وَمِنْ فَوْقِيْ وَأَعُوْذُ بِعَظْمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওয়াদুনইয়া-ইয়া ওয়া আহলী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরাতী ওয়া আ-মিন রাও‘আতী। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া ‘আন শিমা-লী ওয়া মিন ফাওক্বী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযমাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার এবং সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার দোষ-ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন এবং আমাকে ভয়ের সময় নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ! আমার সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে এবং উপর দিক থেকে আমাকে নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ! আপনার বড়ত্বের মাধ্যমে আমি নিচ দিক থেকে ধ্বংস হওয়া থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। [ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সকাল ও সন্ধ্যায় এই বাক্যগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন না। (আবু দাঊদ, হা/৫০৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৬১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৮৫; মিশকাত, হা/২৩৯৭)]

১২. নিচের দু‘আটি ১ বার :

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সমস্ত রাজত্ব তাঁর, সকল প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের উপর শক্তিশালী। [আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আটি পাঠ করবে, সে ১০টি দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব অর্জন করবে। আর তার জন্য ১০০টি নেকী লেখা হবে এবং তার আমলনামা থেকে ১০০টি গোনাহ মুছে ফেলা হবে। আর সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সে শয়তানের (ওয়াস্ওয়াসা) থেকে মুক্ত থাকবে এবং কিয়ামতের দিন আর কেউ তার চেয়ে উত্তম আমলসহ উপস্থিত হবে না, একমাত্র সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এ দু‘আ তার চেয়ে অধিক আমল করেছে। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৮)]

১৩. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، رَبَّ كُلِّ شَىْءٍ وَمَلِيْكَهٗ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِىْ وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهٖ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ শাহা-দাতি রাববা কুল্লি শায়ইন ওয়া মালীকাহ। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি নাফসী ওয়া শাররিশ শাইত্বানি ওয়া শিরকিহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী। আপনি সবকিছুর প্রতিপালক এবং সবকিছুর মালিক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার নফসের অনিষ্ট হতে, শয়তানের অনিষ্ট হতে এবং তার কাজে অংশীদার হওয়া থেকে। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা আবু বকর (রাঃ) নবী ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু দু‘আ শিক্ষা দিন, যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করব। তখন তিনি বললেন, তুমি সকাল-বিকাল এবং যখন বিছানায় যাবে তখন এ দু‘আ পাঠ করবে। (আবু দাঊদ, হা/৫০৬৯; দারেমী, হা/২৭৪৫)]

১৪. নিচের দু‘আটি ১ বার :

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهٖ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ مَا شَاءَ اللهُ كَانَ وَمَالَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ اَعْلَمُ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا

উচ্চারণ : সুবহানাল্লা-হি ওয়া বি হামদিহী ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। মা-শা-আল্লা-হু কা-না ওয়ামা লাম ইয়াশা’ লাম ইয়াকুন। আ‘লামু আন্নাল্লা-হা ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। ওয়া আন্নাল্লা-হা ক্বাদ আহা-ত্বা বিকুল্লি শায়ইন ‘ইলমা।

অর্থ : আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নেই। আল্লাহ যা চান তা হয় এবং যা চান না তা হয় না। আমি জানি যে, আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান এবং তিনি জ্ঞানের দিক থেকে সকল কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। [আবদুল হামিদ (রহ.) তার মাতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর কন্যা আমাকে বলেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেন, তুমি যখন সকালে উপনীত হবে, তখন এ দু‘আ পাঠ করবে। তাহলে তুমি সন্ধ্যা পর্যন্ত হেফাযতে থাকবে এবং সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত হেফাযতে থাকবে। (সুনানে নাসাঈ আল কুবরা, হা/৯৮৪০)]

১৫. নিচের দু‘আটি ১ বার :

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهٗ، وَلَا تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنِ

উচ্চারণ : ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যূমু বিরাহমাতিকা আসতাগীছ, আসলিহ লী শা’নী কুল্লাহূ, ওয়ালা- তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আই-ন।

অর্থ : হে চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব! আপনার করুণার মাধ্যমে আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি। আপনি আমার সকল বিষয় সমাধা করে দিন এবং আমাকে আমার নিজের উপর এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে দিয়েন না। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ফাতেমা (রাঃ) কে বললেন, আমার উপদেশ মানতে তোমাকে কীসে বাধা দেয়? তুমি যখন সকালে উপনীত হবে, তখন এ দু‘আটি পাঠ করবে এবং যখন বিকালে উপনীত হবে তখনও এ দু‘আটি পাঠ করবে। (সুনানে নাসাঈ আল কুবরা, হা/১০৪০৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০০০)]

১৬. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا طَيِّبًا وَّعَمَلًا مُتَقَبَّلًا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আও ওয়ারিযক্বান ত্বায়্যিবাও ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাববালা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং গ্রহণযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি। [উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ যখন ফজরের সালাত শেষ করতেন তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হা/৭২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৩১)]

১৭. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهٖ، عَدَدَ خَلْقِهٖ، وَ رِضَا نَفْسِهٖ، وَ زِنَةَ عَرْشِهٖ، وَ مِدَادَ كَلِمَاتِهٖ

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবিহামদিহী ‘আদাদা খালক্বিহী ওয়ারিযা নাফসিহী ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহ।

অর্থ : আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর সৃষ্টির সংখ্যা, তাঁর সমত্মুষ্টি, তাঁর আরশের ওজন এবং তাঁর বাক্যাবলির সমান সংখ্যক। [উম্মুল মু’মিনীন জুওয়াইরিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ফজরের সালাত পড়ার পর নবী ﷺ সকালবেলা তার নিকট থেকে বেরিয়ে গেলেন, তখন তিনি মসজিদে নিজের সালাতের স্থানে বসে ছিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ পুনরায় চাশ্তের সময় ফিরে এলেন। তখনও তিনি (নিজের স্থানে) বসে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রশ্ন করলেন, তোমাকে আমি যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি কি সেই একই অবস্থায় বসে আছ? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। নবী ﷺ বললেন, তোমার এখান থেকে যাওয়ার পর আমি এমন চারটি কালিমা তিন বার করে পাঠ করেছি, তুমি আজ যা কিছু পড়েছ তার সাথে ওজন করা হলে তা ওজনে সমান হবে। অতঃপর তিনি এ বাক্যগুলো উচ্চারণ করেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮৮-৮৯; তিরমিযী, হা/৩৫৫৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৯৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮০৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৩২)]

১৮. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাক্বরি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবর, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফর ও দারিদ্র্যতা থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। [ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি সকাল ও সন্ধ্যায় এই দু‘আটি তিন বার পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৪৪৬; সহীহ আদাবুল মুফরাদ, হা/৬২৬)]

১৯. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

اَللّٰهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ بَدَنِىْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ سَمْعِىْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ بَصَرِىْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী-বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাময়ী‘ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী, লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার শরীরকে সুস্থ রাখুন, হে আল্লাহ! আপনি আমার শ্রবণশক্তিকে অটুট রাখুন, হে আল্লাহ! আপনি আমার দৃষ্টিশক্তি অটুট রাখুন। আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। [আবদুর রহমান ইবনে আবু বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি সকাল ও সন্ধ্যায় এই দু‘আটি তিন বার পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৪৪৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/৭০১; জামেউস সগীর, হা/৩১৩৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৬৬; মিশকাত, হা/২৪১৩)]

২০. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا

উচ্চারণ : রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়াবিল ইসলা-মি দ্বীনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।

অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পেয়ে সমত্মুষ্ট হয়েছি। [সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় তিন বার করে এ দু‘আ পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার উপর খুশি হয়ে যাবেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭০; তিরমিযী, হা/৩৩৮৯)]

২১. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুর্রু মা‘আসমিহী শাইউন ফিলআর্যি ওয়ালা ফিস্সামা-ই ওয়াহুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।

অর্থ : ঐ আল্লাহর নামে আমি শুরু করছি, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোন বসত্মু ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এ দু‘আটি তিন বার পাঠ করে, তাহলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৬২; আবু দাঊদ, হা/৫০৮৮; তিরমিযী, হা/৩৩৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৯। মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৯৫)]

২২. নিচের দু‘আটি ৪ বার :

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيْعَ خَلْقِكَ إِنَّكَ أَنْتَ اللهُ لَا إِلٰهَ اِلَّا أَنْتَ وَحَدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতাকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা ইন্নাকা আনতাল্লা-হ। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুকা ওয়া রাসূলুক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনাকে, আপনার আরশ বহনকারী ফেরেশতাকে, আপনার সমস্ত ফেরেশতাদেরকে এবং আপনার সকল সৃষ্টিকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, আপনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আপনি একক, আপনার কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ ﷺ আপনার বান্দা ও রাসূল। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আটি পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা ঐ দিন তাকে এক চতুর্থাংশ মুক্তি দেবেন। আর যে ব্যক্তি এ দু‘আটি চার বার পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ দিনের সম্পূর্ণ অংশেই মুক্তি দেবেন। (সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৩৭)]

২৩. নিচের দু‘আটি ১০০ বার :

سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهٖ

উচ্চারণ : সুবহানাল্লা-হিল ‘আযীমি ওয়াবি হামদিহী।

অর্থ : আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র ও মহান। আর সমস্ত প্রশংসা তারই জন্য। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় এ দু’আটি ১০০ বার পাঠ করবে, সে ঐ পরিমাণ নেকী লাভ করবে, যা আর কেউ লাভ করবে না- একমাত্র সে ব্যক্তি ব্যতীত, যে এ দু‘আ তার চেয়ে বেশি আমল করেছে। (আবু দাঊদ, হা/৫০৯৩)]

২৪. নিচের দু‘আটি ১০০ বার :

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهٖ

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি-হামদিহী।

অর্থ : আমি আপনার প্রশংসার সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করছি। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার এ দু‘আটি পাঠ করবে তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়। (সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৫৯)অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ১০০ বার এ দু‘আটি পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে বেশি ফযীলত আর কেউ নিয়ে আসতে পারবে না। তবে যে ব্যক্তি এ কালিমা তার মতো অথবা তার চেয়ে বেশি পাঠ করবে সে ব্যতীত। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৯)]

২৫. নিচের দু‘আটি ১০০ বার :

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুলমুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। [আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে লোক এ দু‘আ প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করবে, সে ১০ জন গোলাম মুক্ত করার সমান সওয়াব লাভ করবে, তার (আমলনামায়) ১০০ নেকী লেখা হবে এবং তার হতে ১০০ পাপ মিটিয়ে দেয়া হবে। আর তা ঐ দিন বিকাল পর্যন্ত শয়তান (তার কুমন্ত্রণা) হতে তার জন্য রক্ষাকারী হয়ে যাবে। সেদিন সে যা পুণ্য অর্জন করেছে তার চেয়ে বেশি পুণ্যবান আর কেউ হবে না, তবে কেউ তার চেয়ে বেশি আমল করলে তার কথা আলাদা। আর যে ব্যক্তি দিনে ১০০ বার ‘‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হাম্দিহী’’ অর্থাৎ- ‘আমি আল্লাহর সপ্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি’ পাঠ করবে, তার সমস্ত পাপ মিটিয়ে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৮; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৮৮; সহীহ বুখারী, হা/৩২৯৩, ৯৬০৩; তিরমিযী, হা/৩৪৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৯৯৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৪৯; জামেউস সগীর, হা/১১৩৮৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৫৪; মিশকাত, হা/২৩০২)]

১৯৮
সন্ধ্যার যিকির
১. আয়াতুল কুরসি ১ বার।

২. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস ৩ বার করে।

৩. নিচের দু‘আটি ১ বার :

أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلّٰهِ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ أَسْأَ لُكَ خَيْرَ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِى النَّارِ وَعَذَابٍ فِى الْقَبْرِ

উচ্চারণ : আমসাইনা ওয়া আমসাল মুলকু লিল্লা-হি, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি, ওয়ালা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকালাহ্। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরা হা-যিহিল লাইলাতি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি হা-যিহিল লাইলাতি ওয়া শাররি মা বা‘দাহা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল কিবারি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিন ফিন্না-রি ওয়া ‘আযা-বিন ফিল ক্বাবর।

অর্থ : আমরা এবং সমগ্র জগৎ আল্লাহর জন্য সন্ধ্যায় উপনীত হলাম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ রাতের মঙ্গল কামনা করছি, আর আমি আশ্রয় চাই এ রাতের অমঙ্গল এবং এ রাতের পরবর্তী অংশে যে অমঙ্গল রয়েছে তা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা ও বার্ধক্যের অপকারিতা হতে। হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব ও কবরের শাস্তি হতে। [আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সকাল হত তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আটি বলতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮২-৮৩; আবু দাঊদ, হা/৫০৭৩; মিশকাত, হা/২৩৭১; তিরমিযী, হা/৩৩৯০)]

৪. নিচের দু‘আটি ১ বার :

أَمْسَيْنَا عَلٰى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ وَسُنَّةِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَمِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ

উচ্চারণ : আমসাইনা ‘আলা ফিতরাতিল ইসলা-মি ওয়া কালিমাতিল ইখলা-সি ওয়া সুনণাতি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন, ওয়া মিল্লাতি আবীনা ইবরা-হীমা হানীফাম মুসলিমা, ওয়ামা কানা মিনাল মুশরিকীন।

অর্থ : আমরা সন্ধ্যা করলাম ইসলামের ফিতরাতের উপর, একনিষ্ঠ কালিমার উপর, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাতের উপর এবং আমাদের একনিষ্ঠ মুসলিম পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর আদর্শের উপর। আর তিনি মুশরিকদের অমত্মর্ভুক্ত ছিলেন না। [উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের সকাল ও সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দু’আটি পড়ার জন্য শিক্ষা দিতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/২১১৪৪; দারেমী, হা/২৭৪৪)]

৫. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ بِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ أَصْبَحْنَا، وبِكَ نَحْيَا ، وَبِكَ نَمُوْتُ وَإِلَيْكَ النُّشُوْرُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বিকা আমসাইনা ওয়াবিকা আস্বাহনা ওয়াবিকা নাহ্ইয়া ওয়াবিকা নামূতু ওয়া ইলাইকান নুশুর।

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার কুদরতে আমরা সন্ধ্যা করি এবং তোমার কুদরতে আমরা সকাল করি, তোমার নামে আমরা বাঁচি আর তোমার নামে আমরা মরি এবং তোমার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সকালে উপনীত হয়, তখন সে যেন এ দু‘আ পাঠ করে। (তিরমিযী, হা/৩৩৯১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৮; আবু দাঊদ, হা/৫০৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৪৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৬৫; মিশকাত হা/২৩৮৯। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ)]

৬. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ مَا أَمْسٰى بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা মা আমসা বী মিন নি‘মাতিন আও বি আহাদিম মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা ফালাকাল হামদু ওয়ালাকাশ শুকর।

অর্থ : হে আল্লাহ! এই সন্ধ্যায় আমার উপর যত নিয়ামত এসেছে অথবা আপনার কোন সৃষ্টির উপর এসেছে সেটা আপনার পক্ষ থেকেই এসেছে। আপনি একক, আপনার কোন শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা আপনারই। [ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আ পাঠ করবে সে যেন সারাদিনের শুকরিয়া আদায় করল। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে যেন সারা রাত্রির শুকরিয়া আদায় করল। (সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৬১; আবু দাঊদ, হা/৫০৭৩)]

৭. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ بِذَۢنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রাববী লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়াআনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু। আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা-সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বিযামবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমার উপর আপনার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। [শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন এটা হলো (সায়্যিদুল ইস্তিগফার) শ্রেষ্ঠ ক্ষমাপ্রার্থনা, যে ব্যক্তি বিশ্বাস সহকারে সকালে এটা পড়বে, সে দিনে মারা গেলে জান্নাতবাসী হয়ে মারা যাবে। আর যদি সন্ধ্যায় পড়ে, অতঃপর রাতে মারা যায় তাহলেও সে জান্নাতবাসী হবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩০৬; তিরমিযী, হা/৩৩৯৩; আবু দাঊদ, হা/৫০৭২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭২; নাসাঈ, হা/৫৫২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১১; মিশকাত, হা/২৩৩৫)]

৮. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِىْ وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِىْ وَمَالِىْ اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِىْ وَاٰمِنْ رَوْعَتِيْ اَللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْۢ بَيْنِ يَدَيَّ ، وَمِنْ خَلْفِيْ وَعَنْ يَمِيْنِيْ وَعَنْ شِمَالِيْ وَمِنْ فَوْقِيْ وَأَعُوْذُ بِعَظْمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওয়াদুনইয়া-ইয়া ওয়া আহলী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরাতী ওয়া আ-মিন রাও‘আতী। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া ‘আন শিমা-লী ওয়া মিন ফাওক্বী। ওয়া আঊযু বি‘আযমাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার এবং সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার দোষ-ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন এবং আমাকে ভয়ের বিষয়ে নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ! আমার সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে এবং উপর দিক থেকে আমাকে নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ! আপনার বড়ত্বের মাধ্যমে আমি নিচ দিক থেকে ধ্বংস হওয়া থেকে আপনার আশ্রয় চাই। [ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সকাল ও সন্ধ্যায় এই বাক্যগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন না। (আবু দাঊদ, হা/৫০৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৬১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৮৫; মিশকাত, হা/২৩৯৭)]

৯. নিচের দু‘আটি ১ বার :

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ : ‘আঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিনশাররি মা খালাক্ব।

অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের মাধ্যমে যাবতীয় সৃষ্ট বসত্মুর অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! একটি বিচ্ছু গত রাত্রে আমাকে কামড় দিয়েছে, তাতে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, তুমি সন্ধ্যার সময় যদি এ দু‘আ বলতে তাহলে বিচ্ছু তোমাকে কোন কষ্ট দিত না। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫৫; আবু দাঊদ, হা/৩৯০০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০২০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮২৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮৯৮)]

১০. নিচের দু‘আটি ১ বার :

اَللّٰهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، رَبَّ كُلِّ شَىْءٍ وَمَلِيْكَهٗ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِىْ وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهٖ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ শাহা-দাতি রাববা কুল্লি শায়ইন ওয়া মালীকাহ। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি নাফসী ওয়া শাররিশ শাইত্বানি ওয়া শিরকিহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী। আপনি সবকিছুর প্রতিপালক এবং সবকিছুর মালিক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি- আমার নফসের অনিষ্ট হতে, শয়তানের অনিষ্ট হতে এবং তার কাজে অংশীদার হওয়া থেকে। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা আবু বকর (রাঃ) নবী ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু দু‘আ শিক্ষা দিন, যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করব। তখন তিনি বললেন, তুমি সকাল, বিকাল এবং যখন বিছানায় যাবে তখন এ দু‘আ পাঠ করবে। (আবু দাঊদ, হা/৫০৬৯; দারেমী, হা/২৭৪৫)]

১১. নিচের দু‘আটি ১ বার :

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهٖ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ مَا شَاءَ اللهُ كَانَ وَمَالَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ اَعْلَمُ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا

উচ্চারণ : সুবহানাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। মা-শা-আল্লা-হু কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা’ লাম ইয়াকুন। আ‘লামু আন্নাল্লা-হা ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। ওয়া আন্নাল্লা-হা ক্বাদ আহা-ত্বা বিকুল্লি শায়ইন ‘ইলমা।

অর্থ : আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নেই। আল্লাহ যা চান তা হয় এবং যা চান না তা হয় না। আমি জানি যে, আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান এবং তিনি জ্ঞানের দিক থেকে সকল কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। [আবদুল হামিদ (রহ.) তার মাতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর কন্যা আমাকে বলেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেন, তুমি যখন সকালে উপনীত হবে তখন এ দু‘আ পাঠ করবে। তাহলে তুমি সন্ধ্যা পর্যন্ত হেফাযতে থাকবে এবং সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত হেফাযতে থাকবে। (সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪০)]

১২. নিচের দু‘আটি ১ বার :

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهٗ، وَلَا تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنِ

উচ্চারণ : ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যূমু বিরাহমাতিকা আসতাগীছ, আসলিহ লী শা’নী কুল্লাহূ, ওয়ালা- তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আই-ন।

অর্থ : হে চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব! আপনার করুণার মাধ্যমে আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি। আপনি আমার সকল বিষয় সমাধা করে দিন এবং আমাকে আমার নিজের উপর এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে দিয়েন না। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ফাতেমা (রাঃ) কে বললেন, আমার উপদেশ মানতে তোমাকে কীসে বাধা দেয়? তুমি যখন সকালে উপনীত হবে তখন এ দু‘আটি পাঠ করবে এবং যখন বিকালে উপনীত হবে তখনও এ দু‘আটি পাঠ করবে। (সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৪০৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০০০)]

১৩. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুর্রু মা‘আসমিহী শাইউন ফিলআর্যি ওয়ালা ফিস্সামা-ই ওয়াহুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।

অর্থ : ঐ আল্লাহর নামে আমি শুরু করছি, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোন বসত্মু ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এ দু‘আটি তিন বার পাঠ করে তাহলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৬২; আবু দাঊদ, হা/৫০৮৮; তিরমিযী, হা/৩৩৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৯৫)]

১৪. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا

উচ্চারণ : রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়াবিল ইসলা-মি দ্বীনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।

অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পেয়ে সমত্মুষ্ট হয়েছি। [সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় তিন বার করে এ দু‘আ পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার উপর খুশি হয়ে যাবেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭০; তিরমিযী, হা/৩৩৮৯)]

১৫. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

اَللّٰهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ بَدَنِىْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ سَمْعِىْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ بَصَرِىْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী-বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাময়ী‘ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী, লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার শরীরকে সুস্থ রাখুন, হে আল্লাহ! আপনি আমার শ্রবণশক্তিকে অটুট রাখুন, হে আল্লাহ! আপনি আমার দৃষ্টিশক্তি অটুট রাখুন। আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। [আবদুর রহমান ইবনে আবু বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি সকাল ও সন্ধ্যায় এই দু‘আটি তিন বার পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৮৮)]

১৬. নিচের দু‘আটি ৩ বার :

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাক্বরি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবর, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফর ও দারিদ্র্যতা থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। [ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি সকাল ও সন্ধ্যায় এই দু‘আটি তিন বার পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/৫০৮৮)]

১৭. নিচের দু‘আটি ১০০ বার :

سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهٖ

উচ্চারণ : সুবহানাল্লা-হিল ‘আযীমি ওয়াবি হামদিহী।

অর্থ : আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র ও মহান। আর সমস্ত প্রশংসা তারই জন্য। [আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় এ দু’আটি ১০০ বার পাঠ করবে সে ঐ পরিমাণ নেকী লাভ করবে, যা আর কেউ লাভ করবে না- সে ব্যক্তি ব্যতীত, যে এ দু‘আ তার চেয়ে বেশি আমল করবে। (আবু দাঊদ, হা/৫০৯৩)]

১৮. নিচের দু‘আটি ৪ বার :

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيْعَ خَلْقِكَ إِنَّكَ أَنْتَ اللهُ لَا إِلٰهَ اِلَّا أَنْتَ وَحَدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতাকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা ইন্নাকা আনতাল্লা-হ। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুকা ওয়া রাসূলুক।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনাকে, আপনার আরশ বহনকারী ফেরেশতাকে, আপনার সমস্ত ফেরেশতাদেরকে এবং আপনার সকল সৃষ্টিকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, আপনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আপনি একক, আপনার কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ ﷺ আপনার বান্দা ও রাসূল। [আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আটি পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা ঐ দিন তাকে এক চতুর্থাংশ মুক্তি দেবেন। আর যে ব্যক্তি এ দু‘আটি চার বার পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ দিনের সম্পূর্ণ অংশেই মুক্তি দেবেন। (সুনানে নাসাঈ কুবরা, হা/৯৮৩৭)]

১৯৯
নবী ﷺ এর উপর দরূদ পাঠের ফযীলত
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন সমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

﴿إنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبيِّ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا﴾

নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা রহমত বর্ষণ করেন রাসূলের প্রতি। সুতরাং হে ঈমানদারগণ! তোমরা রাসূলের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করো। (সূরা আহযাব- ৫৬)

এখানে আল্লাহ তা‘আলা, মুমিনদেরকে এমন কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, যার আরম্ভ তাঁর নিজের থেকে করেছেন, আর এ কাজ আল্লাহর ফেরেশতারাও করে থাকেন।

১ বার দরূদ পাঠ করলে ১০টি রহমত নাযিল হয় :

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন-

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا

যে ব্যক্তি আমার উপর এক বার দরূদ পাঠ করে, এর প্রতিদানে আল্লাহ তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাঊদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৬৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৭৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৬০; জামেউস সগীর, হা/৬১৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪২১; মিশকাত, হা/৬৫৭।]

অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে আমার উপর ১ বার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর ১০টি রহমত নাযিল করবেন, তার ১০টি গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তার জন্য ১০টি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। [নাসাঈ, হা/১২৯৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৫৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৩৬০; জামেউস সগীর, হা/১১৩০৫; মিশকাত, হা/৯২২।]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لَا تَجْعَلُوْا قَبْرِيْ عِيْدًا وَصَلُّوْا عَلَيَّ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِيْ حَيْثُ كُنْتُمْ

আমার কবরকে তোমরা আনন্দোৎসবের জায়গায় পরিণত করো না, বরং আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কারণ যেখানেই তোমরা অবস্থান কর না কেন, তোমাদের দরূদগুলো আমার নিকট পৌঁছে যায়। [আবু দাঊদ, হা/২০৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৯০; জামেউস সগীর, হা/১৩১৮২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১১৫৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৬৭২৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৬৯; মিশকাত, হা/৯২৬।]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوْحِيْ حَتّٰى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ

যখনই তোমাদের মধ্যে কেউ আমার উপর সালাম পাঠ করে, আল্লাহ তা’আলা তখনই আমার রূহ ফেরত দেন এবং আমি তার সালামের উত্তর দেই। [আবু দাঊদ, হা/২০৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৮২৭; বায়হাকী, হা/১০০৫০; জামেউস সগীর, হা/১০৬১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৬৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৬৬; মিশকাত, হা/৯২৫।]

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার একদল ফেরেশতা রয়েছে, যারা জমিনে চলাফেরা করে। আমার উম্মতের মধ্যে যারা দরূদ পাঠ করে, তারা এ দরূদকে আমার কাছে পৌঁছে দেয়। [নাসাঈ, হা/১২৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৬৬; দারেমী, হা/২৮১৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯১৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩৫৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৬৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৮৫৩; জামেউস সগীর, হা/৩৯৩৭; মিশকাত, হা/৯২৪।]

২০০
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ না পড়ার ক্ষতি
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

اَلْبَخِيْلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَه فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ .

যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে; অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করেনি, সে হচ্ছে কৃপণ। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৩৪২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২০১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৮৩; জামেউস সগীর, হা/৫১৮৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯০৯।]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَه فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ

ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, যার সম্মুখে আমার নাম নেয়া হয়েছে; অথচ সে আমার উপর দরূদ পাঠ করেনি। [তিরমিযী, হা/৩৫৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৪৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৪৬৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২০১৬; জামেউস সগীর, হা/৫৮২৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৮০; মিশকাত, হা/৯২৭।]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন বৈঠক বা মজলিসে যদি আল্লাহর যিকির এবং তাঁর রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করা না হয়, তবে ঐ বৈঠক বা মজলিস কিয়ামতের দিন আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১০২৪৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫১৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৯২।]

২০১
জুমু‘আর দিন বেশি বেশি দরূদ পড়ার তাকিদ
عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيْهِ خُلِقَ اٰدَمُ وَفِيْهِ قُبِضَ وَفِيْهِ النَّفْخَةُ وَفِيْهِ الصَّعْقَةُ فَأَكْثِرُوْا عَلَىَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيْهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوْضَةٌ عَلَىَّ . قَالَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ تُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ يَقُوْلُوْنَ بَلِيْتَ . فَقَالَ « إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الْاَرْضِ أَجْسَادَ الْاَنْبِيَاءِ

আওস ইবনে আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আর দিনটি হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম। কাজেই তোমরা ঐ দিন আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করো। কারণ আমার নিকট তোমাদের দরূদগুলো উপস্থাপন করা হয়। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট আমাদের দরূদ কীভাবে উপস্থাপন করা হবে, আপনিতো তখন মাটির সাথে মিশে যাবেন? জবাবে তিনি বললেন, আল্লাহ নবীদের শরীরকে জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন অর্থাৎ মাটি কখনো নবীদের শরীর খেতে পারে না। [আবু দাঊদ, হা/১০৪৯, ১৫৩৩; নাসাঈ, হা/১৩৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬২০৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৩৩; দারেমী, হা/১৬১৩; জামেউস সগীর, হা/৩৯৭৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৫২৭; মিশকাত, হা/১৩৬১।]

প্রত্যেক ইবাদাত কবুল হওয়া বা না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু দরূদ এমন একটি আমল, যা সরাসরি কবুল হয়ে যায় এবং এর সওয়াব দরূদ পাঠকারীর দিকে ফিরে আসে।

২০২
দরূদ সম্পর্কে কিছু মাসআলা
 অধিকাংশ ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, কেউ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নাম উচ্চারণ করলে বা শুনলে তাঁর উপর দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

 একই মজলিসে বার বার নবী ﷺ এর নাম উচ্চারিত হলে, এক বার দরূদ পাঠ করলেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়, তবে প্রত্যেকবার পাঠ করা মুস্তাহাব।

 মুখে উচ্চারণ করার পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নাম কলমে লেখার সময়ও দরূদ লেখা ওয়াজিব। সুতরাং সংক্ষেপে বাংলায় এভাবে ‘(সাঃ)’ লেখা যথেষ্ট নয়, বরং পূর্ণ দরূদ লেখা উচিত।

 দরূদ পড়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়, অযুবিহীন অবস্থায় এবং হায়েয ও নিফাসের সময়ও দরূদ পড়লে সওয়াব পাওয়া যাবে।

২০৩
যেসব সময় ও স্থানে দরূদ পড়া উত্তম
১. জুমু‘আর দিন।

২. আযানের পর।

৩. মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়।

৪. সকালে ও বিকালে।

৫. ইলম শিক্ষা দেয়ার সময়।

৬. হাদীস পড়ার সময়।

৭. কুরআন তিলাওয়াতের আগে ও পরে।

৮. ওয়াজ-নসীহত শুরু করার আগে।

৯. দু‘আ করার আগে ও পরে।

১০. তওবা করার সময়।

১১. ঘুমানোর সময়।

১২. ঈদ, জুমু‘আ ও বিবাহের খুৎবায়।

১৩. কিতাব, ফতওয়া ও অসীয়ত লেখার সময়।

১৪. দু‘আয়ে কুনূত পড়ার সময়।

১৫. রাসূলুল্লাহ ﷺএর রওযা যিয়ারতের সময়।

২০৪
কয়েকটি দরূদ
আবদুর রহমান ইবনে আবু লাইলা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অতঃপর বলেন, আমি কি তোমাকে এমন এক হাদীয়া দেব না, যা আমি নবী ﷺ থেকে শুনেছি? আমি বললাম, হ্যাঁ! সে হাদীয়া আমাকে দিন। তখন তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাদের অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর আমরা কীভাবে দরূদ পাঠ করব? কেননা আপনার উপর কীভাবে সালাম করব, তা আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা বলবে,

(১) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমনিভাবে আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনিভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৮৭২৪; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৭৪৫; মিশকাত, হা/৯১৯।]

এ দরূদটি আমরা সালাতের মধ্যে পাঠ করে থাকি। তাছাড়াও আরো যেসব সহীহ দরূদ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর উপরও আমল করা যাবে।

(২) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ إبْرَاهِيْمَ ، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ . اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ إبْرَاهِيْمَ ، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুমা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমনিভাবে ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর আপনি করেছিলেন; নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলেন, নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর কীভাবে সালাম পড়ব তা আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন, এখন বলুন! কীভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, তোমরা এ দু‘আটি পাঠ করো। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৯৭, ৬৩৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৫; নাসাঈ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৬৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৬১২)]

(৩) اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّأَزْوَاجِه وَذُرِّيَّتِه كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّأَزْوَاجِه وَذُرِّيَّتِه كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ .

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা-মুহাম্মাদিও ওয়া আযওয়া-জিহী ওয়া যুর্রিইয়াতিহী কামা-সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইবরাহীমা ওয়া বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আযওয়া-জিহী ওয়া যুর্রিইয়াতিহী কামা-বা-রাকতা ‘আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর, তাঁর স্ত্রীদের উপর এবং তার বংশধরের উপর শামিত্ম বর্ষণ করুন, যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের পরিবারের উপর শামিত্ম বর্ষণ করেছিলেন। আর আপনি মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর, তাঁর স্ত্রীদের উপর এবং তার বংশধরের উপর বরকত দান করুন, যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীম (আঃ) এর পরিবারের উপর করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও মর্যাদাসম্পন্ন। [আবু হুমাইদ আস সা‘ইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার প্রতি কীভাবে দরূদ পাঠ করব। তখন তিনি বললেন, তোমরা এ দু‘আ পাঠ করার মাধ্যমে দরূদ পাঠ করবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৯৫; সহীহ বুখারী, হা/৩৩৬৯, ৬৩৬০; আবু দাঊদ, হা/৯৮১; নাসাঈ, হা/১২৯৪; ইবনে মাজাহ, হা/৯০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৪৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৬৮২; বায়হাকী, হা/২৬৮৫; মিশকাত, হা/৯২০)]

(৪) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, কামা বা-রকতা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম।

অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমনটি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর আপনি করেছিলেন। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনটি আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর করেছিলেন। [আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ কে বলা হলো, আপনি আমাদেরকে আপনার উপদ দরূদ ও সালাম পেশ করতে আদেশ করেছেন। আপনার উপর সালাম কীভাবে প্রদান করতে হয় তা আমরা জানি, কিমত্মু আমরা আপনার উপর দরূদ পেশ করব কীভাবে? তখন তিনি বললেন, তোমরা এ দু‘আটি পাঠ করবে। (নাসাঈ, হা/১২৮৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪১১৭)]

(৫) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা দরূদ পাঠ করার সময় এই বাক্যগুলো উচ্চারণ করবে। (আবু দাউদ, হা/৯৮৩)]

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ ، وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ (৬)

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [যায়েদ ইবনে খারেজা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দরূদের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করো এবং দু‘আর মাধ্যমে চেষ্টা করো। আর তোমরা এ দু‘আ পাঠ করো। (নাসাঈ, হা/১২৯২)]

২০৫
২য় অধ্যায় চিকিৎসা চিকিৎসা রোগ ও বিপদাপদ আল্লাহর নির্ধারিত একটি নিয়ম
বান্দাকে পরীক্ষা করা আল্লাহ তা‘আলার একটি স্বাভাবিক রীতি। তিনি বিভিন্নভাবে বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِؕ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ اَ لَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْاۤ اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّاۤ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ﴾

নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, প্রাণ ও ফসলের অভাব দ্বারা। সুতরাং আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন। (কেননা) যখন তাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।

(সূরা বাক্বারা- ১৫৫, ১৫৬)

বিপদাপদ হচ্ছে ঈমানের পরিচয় :

عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَىُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً قَالَ : اَلْاَ نْبِيَاءُ ثُمَّ الْاَمْثَلُ فَالْاَمْثَلُ فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلٰى حَسَبِ دِيْنِه فَإِنْ كَانَ دِيْنُه صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُه وَإِنْ كَانَ فِى دِيْنِه رِقَّةٌ ابْتُلِىَ عَلٰى حَسَبِ دِيْنِه فَمَا يَبْرَحُ الْبَلَاءُ بِالْعَبْدِ حَتّٰى يَتْرُكَه يَمْشِىْ عَلَى الْاَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيْئَةٌ

মুস‘আব ইবনে সা‘দ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বিপদগ্রসত্ম কে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, নবীগণ; তারপর তাদের নিকটবর্তীগণ, তারপর তাদের নিকটবর্তীগণ। দ্বীনের দৃঢ়তা অনুযায়ী মানুষকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। দ্বীনের দিক থেকে যদি দুর্বল হয়, তাহলে তাকে সে অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। আর যদি দ্বীনের দিক থেকে শক্ত থাকে, তাহলে তাকে সে অনুযায়ী কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। এভাবে বিপদাপদ, বালা-মুসীবত তার সঙ্গে লেগেই থাকে। এক পর্যায়ে সে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ অবস্থায় জমিনে চলাচল করে। [তিরমিযী, হা/২৩৯৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪০২৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮১, ১৪৯৪, ১৫৫৫, ১৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৯০১, ২৯২০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১২০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪০২; মিশকাত, হা/১৫৬২।]

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর নিকট প্রবেশ করলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। অতঃপর আমি আমার হাত তাঁর উপর রাখলাম। ফলে আমি আমার হাতে চাদরের উপর থেকে গরম অনুভব করলাম। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এটা তো আপনার জন্য অনেক কষ্টকর। তিনি বললেন, অনুরূপভাবেই আমাদের উপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং এভাবেই তার দ্বিগুণ প্রতিদান পাওয়া যায়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হয় কারা? তিনি বললেন, নবীগণ। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তারপর কারা? তিনি বললেন, তারপর সৎ ব্যক্তিগণ। তাদের কেউ কেউ দারিদ্রতা দ্বারা পরীক্ষিত হন। এমনকি তারা একটি কাপড় ছাড়া অন্য কিছু পান না। এরপরও তারা বিপদে পড়লে এত বেশি খুশি হন, যেভাবে তোমরা আনন্দের সময় খুশি হও। [ইবনে মাজাহ, হা/৪০২৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/৫১০; তাহযীবুল আছার, হা/২৪৭৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৪।]

আল্লাহ তা‘আলা যাকে ভালোবাসেন তাকে পরীক্ষা করেন :

عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوْبَةَ فِي الدُّنْيَا ، وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِه حَتّٰى يُوَافِيَ بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ , وَبِهٰذَا الْإِسْنَادِ عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : إِنَّ عِظَمَ الجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ البَلَاءِ ، وَإِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا ، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চান, তখন দুনিয়াতে দ্রুত তার জন্য শাসিত্মর ব্যবস্থা করেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর কোন বান্দার অকল্যাণ চান, তখন গোনাহ করার পরও তাকে শাসিত্ম প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। অতঃপর সেই শাসিত্ম কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণরূপে দান করবেন।

রাবী বলেন, এই সনদে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, নিশ্চয় বড় পুরস্কার বড় বিপদের সাথে সম্পৃক্ত। আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে বিপদে আক্রামত্ম করেন। তখন যারা সমত্মুষ্ট থাকে, তাদের প্রতি আল্লাহর সমত্মুষ্টি। আর যারা অসমত্মুষ্ট হয়, তাদের প্রতি আল্লাহর অসমত্মুষ্টি অবধারিত হয়। [তিরমিযী, হা/২৩৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৩১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৩৫; জামেউস সগীর, হা/৩৮৭৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪০৭; মিশকাত, হা/১৫৬৬।]

عَنْ مَحْمُوْدِ بْنِ لَبِيْدٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : إِذَا أَحَبَّ اللهُ قَوْمًا اِبْتَلَاهُمْ ، فَمَنْ صَبَرَ فَلَهُ الصَّبْرُ ، وَمَنْ جَزِعَ فَلَهُ الْجَزَعُ

মাহমুদ ইবনে লাবীব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তখন তিনি তাদেরকে পরীক্ষা করেন। অতঃপর যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের জন্য ধৈর্যের প্রতিদান রয়েছে। আর যে হা-হুতাশ করবে তার জন্য হা-হুতাশের প্রতিদান রয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৮৩, ২৩৬৯১; জামেউস সগীর, হা/২৫৮৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪০৬।]

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ? : مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْراً يُصِبْ مِنْهُ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যার মঙ্গল চান তাকে পরীক্ষায় ফেলে দেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৭৩৫; সহীহ বুখারী, হা/৫৬৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৩৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৯০৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮২১৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪২০; জামেউস সগীর, হা/১১৫৫৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪০৫; মিশকাত, হা/১৫৩৬।]

বালা-মুসীবতের মাধ্যমে গোনাহ মাফ হয় :

عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : دَخَلْتُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ وَهُوَ يُوْعَكُ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّكَ تُوْعَكُ وَعْكًا شَدِيْدًا قَالَ أَجَلْ إِنِّيْ أُوْعَكُ كَمَا يُوْعَكُ رَجُلَانِ مِنْكُمْ قُلْتُ ذٰلِكَ أَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ قَالَ أَجَلْ ذٰلِكَ كَذٰلِكَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيْبُه أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا إِلَّاكَفَّرَ اللهُ بِهَا سَيِّئَاتِه كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا

আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট গেলাম। তিনি তখন ভীষণ জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ! তোমাদের দু’জনের সমপরিমাণ জ্বর আমার একারই হয়ে থাকে। আমি বললাম, আপনার যে দ্বিগুণ নেকী এটা এ কারণে। তিনি বললেন, হ্যাঁ! আসল কারণ তাই। যদি কোন মুসলিম কাঁটাবিদ্ধ হওয়ার ব্যথা অথবা তার চেয়ে কঠিন কোন দুঃখ পায়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা তার পাপসমূহ দূর করে দেন, যেভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে দেয়। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৪৮, ৫৬৬০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৯৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪২০৫; ৪৩৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৩২।]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ - - دَخَلَ عَلَى أُمِّ السَّائِبِ أَوْ أُمِّ الْمُسَيَّبِ فَقَالَ : مَا لَكِ يَا أُمَّ السَّائِبِ أَوْ يَا أُمَّ الْمُسَيَّبِ تُزَفْزِفِينَ . قَالَتِ الْحُمّٰى لاَ بَارَكَ اللهُ فِيهَا . فَقَالَ : لاَ تَسُبِّى الْحُمّٰى فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِى اٰدَمَ كَمَا يُذْهِبُ الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ .

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন উম্মু সায়িব কিংবা উম্মুল মুসাইয়্যাব (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললেন, তোমার কি হয়েছে হে উম্মু সায়িব অথবা উম্মুল মুসাইয়্যাব! কাঁদছ কেন? তিনি বললেন, ভীষণ জ্বর- আল্লাহ যেন এটাকে বর্ধিত না করেন। তখন তিনি বললেন, তুমি জ্বরকে গালমন্দ করো না। কেননা জ্বর আদম সন্তানের পাপরাশি মোচন করে দেয়, যেভাবে হাঁপর লোহার মরীচিকা দূরীভূত করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৯৩৮; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২০৮৩; বায়হাকী, হা/৬৩৫৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৭১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৩৭; মিশকাত, হা/১৫৪৩।]

বিপদগ্রসত্ম মুসলিম ব্যক্তি যদি নেককার হয়, তবে তার বিপদ পূর্বকৃত পাপের কাফফারা স্বরূপ হয়ে যায়। অথবা তা দ্বারা তার মর্যাদা উন্নীত হয়। কিমত্মু সে যদি গোনাহগার হয়, তবে বিপদাপদ তার পাপের কাফফারা হিসেবে গণ্য হয় এবং পাপের ভয়াবহতার কথা তাকে স্মরণ করানোর জন্য হয়। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

﴿ظَهَرَ الْفَسَادُ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِى النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ﴾

মানুষের কাজকর্মের ফলস্বরূপ স্থলভাগে ও জলভাগের সর্বত্র অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি ভোগ করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম- ৪১)

২০৬
বিভিন্ন প্রকার রোগের প্রাকৃতিক ঔষধ
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন রোগব্যাধি দিয়ে থাকেন। আবার তিনি এ সকল রোগের বিভিন্ন ধরনের ঔষধও দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে,

عَنْ جَابِرٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - - أَنَّه قَالَ : لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ فَإِذَا أُصِيْبَ دَوَاءُ الدَّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। সুতরাং যখন ঐ ঔষধ ব্যবহার করা হয়, তখন আল্লাহর অনুমতিক্রমে রোগী আরোগ্য লাভ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬৩৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬০৬৩; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৫১৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৪৩৪; মিশকাত, হা/৪৫১৫।]

অতএব আমাদের উচিত এসব ঔষধ ব্যবহার করার মাধ্যমে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা। অনেক প্রাকৃতিক উপকারী ঔষধ আছে, যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। মানুষ যদি সেগুলো এ বিশ্বাস রেখে ব্যবহার করে যে, আরোগ্য একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে, তবে ইনশা-আল্লাহ তা দ্বারা তাকে আল্লাহ উপকার করবেন। এমনিভাবে এমন কিছু ঔষধ রয়েছে, যেগুলো ঘাস ও অন্যান্য তরুলতা থেকে পরীক্ষা করে বানানো হয়েছে। অতএব সেগুলো দ্বারা উপকৃত হওয়া নিষেধ নয়।

২০৭
খেজুর দ্বারা চিকিৎসা
খেজুরের উপকারিতা :

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রিয় ফল ছিল খেজুর। তিনি মুসলমানদেরকে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতে বলতেন।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُفْطِرُ عَلٰى رُطَبَاتٍ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فَعَلٰى تَمَرَاتٍ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দিয়ে, আর যদি শুকনো খেজুরও না পেতেন তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। [আবু দাউদ, হা/২৩৫৮; তিরমিযী, হা/৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৯৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৮৭৫; দার কুতনী, হা/২২৭৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৭৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৮৪০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৭৭; জামেউস সগীর, হা/৯১২৬।]

প্রতিদিন খেজুর খাওয়ায় অনেক উপকারিতা রয়েছে। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ ، عَنْ أَبِيْهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ تَصَبَّحَ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعَ تَمَرَاتٍ عَجْوَةً لَمْ يَضُرُّه فِيْ ذٰلِكَ الْيَوْمِ سُمٌّ ، وَلَا سِحْرٌ

আমের ইবনে সা‘দ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ৭টি আজওয়া (মদিনার বিশেষ এক প্রকারের খেজুর) খাবে ঐ দিন কোন বিষ অথবা যাদু ঐ ব্যক্তির কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৪৫, ৫৭৬৯; আবু দাঊদ, হা/৩৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪২, ১৫২৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৮৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০০০।]

খেজুরের পুষ্টিগুণ :

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, সোডিয়াম, কপার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ফসফরাস, থায়ামিন, নায়াসিন রিবোফ্ল্যভিন, বিটা-ক্যারোটিনসহ নানা রকম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উপাদান।

নিম্নে খেজুরের কিছু উপকারিতা বর্ণনা করা হলো :

১. খেজুর শরীরিক দুর্বলতা দূর করে।

২. স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

৩. দেহের মধ্যে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে।

৪. হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর বেশ উপকারী।

৫. রক্ত উৎপাদন করে।

৬. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।

৭. রুচি বৃদ্ধি করে।

৮. ত্বক ভালো রাখে।

৯. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

১১. ফুসফুসের সুরক্ষায় অনেক উপকার সাধন করে।

১২. মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাতে পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।

১৩. পাতলা পায়খানা বন্ধ করে।

১৪. খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা ও কফ দূর করে।

১৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

১৬. মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগ থেকে রক্ষা করে।

১৭. কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূর করে।

১৮. শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে।

১৯. মসিত্মষ্ককে প্রাণবমত্ম রাখে।

২০. হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

২১. দেহে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।

২২. হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

২৩. শরীরের ক্ষয়রোধ করে।

একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ :

মারইয়াম (আঃ) যখন প্রসব বেদনায় ভুগছিলেন, তখন তিনি আল্লাহর হুকুমে একটি খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা তাকে নির্দেশনা দিয়ে বলেন,

﴿وَهُزِّيْۤ اِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا فَكُلِيْ وَاشْرَبِيْ وَقَرِّيْ عَيْنًا﴾

তুমি খেজুর বৃক্ষের কান্ডে তোমার দিকে নাড়া দাও, তা তোমাকে সুপরিপক্ক তাজা খেজুর দান করবে। সুতরাং (তুমি তা হতে) আহার করো, পান করো ও চক্ষু শীতল করো। (সূরা মারইয়াম– ২৫, ২৬)

ফলে মারইয়াম (আঃ) ঐ গাছ নড়া দেয়ার সাথে সাথেই খেজুর ঝড়তে লাগল। তারপর তিনি সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে খেয়েছিলেন। ফলে তার প্রসব ব্যথা সহনশীল হয়ে উঠে।

বর্তমানেও সৌদি আরবের অধিবাসীরা প্রসব-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করে থাকে। খেজুর জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন ও প্রসারণ ঘটিয়ে তাড়াতাড়ি প্রসব হতে সাহায্য করে। এছাড়া এর ফলে প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমে যায়।

বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী একটি খাবার। খেজুর মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

২০৮
মধু দ্বারা চিকিৎসা
উপকারী প্রাকৃতিক চিকিৎসার মধ্য অন্যতম একটি হলো মধু। কুরআন মাজীদে মধুর উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَاَوْحٰى رَبُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّخِذِيْ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًاؕ يَّخْرُجُ مِنْ ۢبُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ ﴾

তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষের গৃহে। তারপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো। তার উদর হতে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।

(সূরা নাহল- ৬৮, ৬৯)

মধু একটি উপকারী ও সুস্বাদু খাদ্য। তাছাড়া এর মধ্যে রোগ নিরাময় শক্তিও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। মধু কোন কোন রোগের মহৌষধ। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফুল ও ফলের রস এবং উন্নত পর্যায়ের গ্লুকোজ। তাছাড়া মধুর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা নিজে কখনো পঁচে না এবং অন্য জিনিসকেও পঁচন থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে। এজন্য ঔষধ নির্মাণ শিল্পে এলকোহলের পরিবর্তে মধুর ব্যবহার হাজার বছর থেকে চলে আসছে।

ইউনানী ডাক্তারগণ লিখেছেন, সকাল বেলায় খালি পেটে মধু পান করা বা চেঁটে খাওয়া খুবই উপকারী; এতে কফ নির্গত হয়, পেটের বদ্ধ ময়লা বা দূষিত বসত্মুগুলো দূরীভূত হয়ে যায় এবং পাকস্থলীর যথাযথ ক্রিয়া ঠিক হয়ে যায়। এ ছাড়া পেটে জমে থাকা বায়ু নির্গত করতেও সাহায্য করে।

একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে বলল, আমার ভাইয়ের উদরাময় হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাকে মধু পান করাও। ফলে তাকে মধু পান করানো হলো। কিমত্মু উদরাময় উপশম হলো না। রাসূলুল্লাহ ﷺ পুনরায় মধু পান করাতে বললেন। এভাবে পর পর তিন বার নির্দেশ দিলেন। ৪র্থ বার লোকটি এসে বলল, তাকে প্রত্যেকবারই মধু পান করানো হয়েছে, কিমত্মু তবুও কোন উপশম হয়নি। বরং উদরাময় আরো বৃদ্ধিই পেয়েছে। এটা শোনার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহর বাণী সত্য, তোমার ভাইয়ের পেটই মিথ্যা। এরপর লোকটিকে আবার মধু পান করানো হলো এবং সে সুস্থ হয়ে গেল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/৫৯০১; তিরমিযী, হা/২০৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১১৬২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৬৭২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/২০১৭৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১২৬১; মিশকাত, হা/৪৫২১।]

তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা- এ কথার অর্থ হলো- ঔষধ ঠিকই কাজ করছে, কিমত্মু তোমার ভাইয়ের পেট সে ক্রিয়া গ্রহণ করছে না। অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ পেটে জমে আছে। এগুলো নির্গত হলে ঔষধের ক্রিয়া পরিলক্ষিত হবে। অবশেষে তাই দেখা গেল এবং লোকটি সুস্থ হয়ে গেল।

বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতায় জানা গেছে যে, যদি কারো শ্বাসকষ্ট হয়, তবে তার নাকের সামনে এক পেয়ালা মধু রেখে বাতাস সঞ্চালন করে তার ঘ্রাণ নাকে প্রবেশ করালে শ্বাসকষ্টের রোগীর উপকার হবে।

প্রাচীনকালে যখন মানুষ গুড়, চিনি, মিছরি ইত্যাদি তৈরি করতে শেখেনি, তখন আল্লাহ প্রদত্ত এই মধুই মিষ্টি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মিষ্ট-স্বাদ অনুভব করার একমাত্র উপকরণ ছিল মধু। পরে ধীরে ধীরে মানুষ আখ, খেজুর, তাল ইত্যাদির রস থেকে গুড়-চিনি ও মিছরি তৈরি করতে শিখল। আর মধু দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় এবং গুড়-চিনি সহজলভ্য হওয়ায় মধুর ব্যবহার কমে যেতে লাগল। এমনকি ঔষধরূপেও এর ব্যবহার কমে গেল। অথচ গুড়-চিনি অপেক্ষা মধু বহুগুণে উৎকৃষ্ট বসত্মু।

২০৯
কালোজিরা দ্বারা চিকিৎসা
কালোজিরা সকল প্রকার রোগের ঔষধ। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِنَّ فِى الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلَّا السَّامَ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের আরোগ্যদানকারী অর্থাৎ ঔষধ। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৮৭-৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৯৬, ৫৮৯৯; তিরমিযী, হা/২০৪১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৮৫; জামেউস সগীর, হা/৭৫৩২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৮১৯; মিশকাত, হা/৪৫২০।]

কালোজিরার ভেষজগুণসমূহ :

১. বায়ু নিঃসারক।

২. হজম শক্তি বর্ধনকারী।

৩. কফজনিত যাবতীয় রোগনাশক।

৪. পিত্তদোষ নাশক।

৫. মাসিক স্রাবজনিত সমস্যা দূরকারী।

বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে কালোজিরা মিশ্রিত করে ব্যবহার করলেও এর ক্রিয়া কার্যকরী হবে। একে সিঙ্গারা, নিমকী, আচার ইত্যাদিতে মসলারূপেও ব্যবহার করা যায়।

২১০
জমজমের পানি দ্বারা চিকিৎসা
পবিত্র কাবার দ্বারপ্রামেত্ম অবস্থিত কূপকে জমজম কূপ বলে। এই কূপ আল্লাহ তা‘আলার একটি মহা নিদর্শন। পৃথিবীতে যত আশ্চর্যজনক সৃষ্টি রয়েছে, জমজম কূপ তার অন্যতম। এর পানি কখনো শেষ হয় না। এটা সকল পানির প্রধান, সর্বোৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে মূল্যবান।

জমজম কূপ থেকে পানি উত্তলন করা হচ্ছে প্রায় ৪০০০ বছর পূর্ব থেকে, যা এখনো চলমান রয়েছে। মক্কার আশপাশে অনেকগুলো কূপ রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই শুকনো। কিমত্মু জমজম কূপ কখনই শুকায়না। জমজম কূপের পানি হচ্ছে এমন পানি, যা কখনো জীবাণু দ্বারা আক্রামত্ম হয়নি। হজ্জের সময় লক্ষ লক্ষ হাজীগণ এই পানি নিজ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে এবং তা আপনজন ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদেরকে পান করতে দিচ্ছে, তাতে কোন লোকেরই কোন ক্ষতি হচ্ছে না, বরং অনেকেই তা পান করে বিভিন্ন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করছে।

জমজমের পানির মধ্যে সাধারণ পানির তুলনায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম অনেক বেশি। জমজমের পানিতে রয়েছে ফ্লোরাইড; আর ফ্লোরাইডে রয়েছে জীবাণুনাশক ক্ষমতা। এটি তৃষ্ণা এবং ক্ষুধা উভয়ই মেটাতে সামর্থ্য রাখে।

ঔষধ হিসেবে এ পানি সর্বরোগের মহৌষধ। এর দ্বারা আমাশয়, পেট-কামড় ও পেট-ব্যথা ভালো হয়। প্রস্রাবজনিত রোগ এবং মূত্রাশয় ও মূত্রথলীর রোগে (যেমন পাথর ও ব্যথা) এটা বিশেষ উপকারী। ডায়রিয়া ও কলেরা রোগেও এটা সুফল আনয়ন করে। এ ছাড়া যিনি যে নিয়তে এই পানি পান করেন, তার সেই বিষয়ে উপকার হয়ে থাকে। হাদীসে এসেছে-

عَنْ جَابِرِبْنِ عَبْدِ اللهِ ، يَقُوْلُ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَاءُ زَمْزَمَ ، لِمَا شُرِبَ لَه

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, জমজমের পানি যে রোগের জন্য পান করা হয়, তা তার জন্য চিকিৎসা। [ইবনে মাজাহ, হা/৩০৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫০৩৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৭৩৯; দার কুতনী, হা/২৭৩৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১৬৫; জামেউস সগীর, হা/১০৪৯৩।]

২১১
বৃষ্টির পানি দ্বারা চিকিৎসা
বৃষ্টির পানি আল্লাহর রহমতের পানি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً مُّبَارَكًا﴾

আর আমি আসমান থেকে বরকতময় পানি নাযিল করেছি। (সূরা ক্বাফ- ৯)

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বৃষ্টির পানিকে একটি অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ বৃষ্টির পানি শরীরে মাখতেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ أَنَسٌ أَصَابَنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ - - مَطَرٌ قَالَ فَحَسَرَ رَسُوْلُ اللهِ - - ثَوْبَه حَتّٰى أَصَابَه مِنَ الْمَطَرِ . فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ لِمَ صَنَعْتَ هٰذَا قَالَ : لِاَنَّه حَدِيْثُ عَهْدٍ بِرَبِّه تَعَالٰى

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ আমাদের গায়ে বৃষ্টির পানি পড়তে লাগল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ হাত থেকে কাপড় গুটিয়ে ফেললেন, যাতে বৃষ্টির পানি গায়ে লাগে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এই কাজটি কেন করলেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যেহেতু এটি আমার রবের কাছ থেকে সদ্য আগমন করেছে। [সহীহ মুসলিম, হা/২১২০; আবু দাঊদ, হা/৫১০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৮৮, ১৩৮৪৭, ৬১৩৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৭৬৮; মিশকাত, হা/১৫০১।]

স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে আহারের পরেই পানীয়ের স্থান গুরুত্বপূর্ণ। মানব দেহের ওজনের ৭২% পানি। ২০% হাড় এবং মাংসপেশী। বাকি ৮% নানা রকম ভিটামিন এবং মিনারেল। শরীরে পানির প্রভাব অপরিসীম। পানি যেমন রোগ বহন করতে পারে, তেমনি রোগ তাড়িয়েও দিতে পারে। তাই বলা হয় পানির আরেক নাম জীবন।

রক্তে যখন পানির পরিমাণ কম হয়ে যায়, তখন তা স্বংক্রিয়ভাবে শরীরের অন্যান্য অর্গান থেকে পানি শুষে নিয়ে তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখে। এটা যখন ঘটে তখন অন্য অর্গানগুলোতে পানি স্বল্পতা দেখা দেয় এবং সেগুলোর নিজস্ব কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। পক্ষামত্মরে বেশি বেশি পানি পান করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

দিন রাত ২৪ ঘণ্টায় শরীর থেকে ২.২৫ লিটার পানি মলমূত্র, ঘাম এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। অতএব শরীরের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিটি মানুষের বেশি বেশি পানি পান করা উচিত।

শরীরে পানির পরিমাণ স্বাভাবিক লেভেল থেকে কমে গেলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নির্ধারিত লেভেল থেকে শতকরা ৫ ভাগ পানি শরীর থেকে কমে গেলে, বেশির ভাগ মানুষই শরীরের শতকরা ৩০ ভাগ কর্মশক্তি হারায়। শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিলে কয়েকটি চিহ্নের মাধ্যমে তা বুঝা যায়। যেমন- পিপাসা লাগা, মুখ ও জিহবা শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের রং হলুদ অথবা লাল হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, চামড়া শুষ্ক ও ঢিলেঢালা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

বেশির ভাগ মানুষ প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পান করে না। ফলে পানি স্বল্পতার কারণে শরীরের আভ্যমত্মরীণ স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এই ধরনের পানি শূন্যতা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে অনেক রোগ সৃষ্টি হতে পারে।

২১২
যায়তুনের তেল দ্বারা চিকিৎসা
যায়তুন একটি বরকতময় গাছ। বাংলা ভাষায় এটি জলপাই গাছ হিসেবে পরিচিত। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

﴿مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُوْنَةٍ﴾

যায়তুন বৃক্ষ বরকতময় বৃক্ষ। (সূরা নূর- ৩৫)

যায়তুন তরকারী হিসেবে খাওয়া যায়, এর পাতা ও কাঠ জ্বালানীর কাজে লাগে; এমনকি এর ছাইও কাজে লাগে। এর তেল শরীরে মালিশ করা যায়, প্রদীপে জ্বালানো যায় এবং রংও করা যায়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : كُلُوْا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوْا بِه فَإِنَّه مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ

উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা যায়তুনের তেল খাও এবং তা দ্বারা (শরীরে) মর্দন করো। নিশ্চয় তা বরকতময় বৃক্ষ হতে (আগত)। [তিরমিযী, হা/১৮৫১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩৫০৪; দারেমী, হা/২০৫২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৭০; জামেউস সগীর, হা/৮৬২৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৭৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১২৬; মিশকাত, হা/৪২২১।]

ইংরেজীতে এর তেলকে অলিভ অয়েল বলা হয়। এ তেল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বর্তমান বিশ্বে এ তেলের উপকারিতা ও ব্যবহারযোগ্যতা সর্বজন স্বীকৃত।

২১৩
কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা চিকিৎসা
মানুষ শারীরিক ও মানসিক নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়। এ সকল রোগের চিকিৎসা হিসেবে কুরআন এবং হাদীসে অনেক নিয়মাবলি ও দু‘আ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কুরআন মাজীদ হচ্ছে মানুষের জন্য আরোগ্য লাভের বসত্মু। বিশেষ করে মানুষের অমত্মরের যাবতীয় রোগের ঔষধ হলো কুরআন। কেননা মানুষ যখন এই কুরআন ভালোভাবে পাঠ করবে এবং বুঝবে তখন তার ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আর ঈমান যখন বৃদ্ধি পাবে, তখনই মনে শামিত্ম বিরাজ করবে এবং দুশ্চিমত্মা দূর হবে। এছাড়াও কুরআন মাজীদের বিভিন্ন সূরা ও আয়াত পাঠ করে রোগীকে ঝাড়ফুঁক করলেও এর বিশেষ উপকারিতা পাওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ﴾

আমি কুরআনে যা অবতীর্ণ করেছি তা রোগের নিরাময় এবং মুমিনদের জন্য রহমতস্বরূপ। (সূরা ইসরা- ৮২)

২১৪
শয়তান থেকে ঘরবাড়ি হেফাযত করার উপায়
১. বাড়িতে প্রবেশ, পানাহার ও ঘুমানোর সময় আল্লাহকে স্মরণ করা এবং হাদীসে বর্ণিত মাসনূন দু‘আসমূহ নিয়মিত পাঠ করা।

২. বাড়িতে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা, বিশেষ করে সূরা বাক্বারা পাঠ করা।

৩. ছবি, ক্রুশ ও মূর্তি হতে বাড়িঘর পবিত্র রাখা।

৪. কুকুর থেকে বাড়িঘর পবিত্র রাখা।

৫. বাড়িঘরকে ছবি, মূর্তি, কুকুর, বাদ্যযন্ত্রের সরঞ্জামাদি থেকে পবিত্র রাখা।

২১৫
রোগব্যাধি থেকে বাঁচার উপায়
১. ঈমান ও তাওহীদ দ্বারা নিজেকে শক্তিশালী করা। সুদৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস রাখা যে, পৃথিবীর যাবতীয় কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর হাতে। সেই সাথে বেশি বেশি সৎ কাজে লিপ্ত থাকা।

২. আল্লাহ তা‘আলার স্মরণাপন্ন হওয়া, তার উপর ভরসা করা, তার প্রতি সুধারণা পোষণ করা এবং তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

৩. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যার যিকিরসমূহ যথারীতি পাঠ করা। এগুলোর মধ্যে যা বলা হয়েছে তা সত্য ও সঠিক- এ কথার প্রতি ঈমান রাখা এবং নিজের মুখে উচ্চারণ করে নিজের কানে শোনা এবং অমত্মর উপস্থিত রেখে পাঠ করা।

৪. শিরক মিশ্রিত আকীদা থেকে মুক্ত থাকা।

৫. শুধুমাত্র আল্লাহকেই ভয় করা।

৬. ধারণা ও অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা।

৭. অমত্মর পরিষ্কার রাখা, নিয়ত সঠিক করা ও মুসলিম ভাই-বোনদের প্রতি হিংসা করা থেকে বিরত থাকা।

৮. সকল সালাত যথাসময়ে জামাআতের সাথে যথোপযুক্তভাবে আদায় করার প্রতি যত্নবান হওয়া। কেননা সালাত বর্জন ও সালাতের ব্যাপারে অবহেলা করা শয়তানের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণ।

৯. নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা।

১০. তওবা করা ও বান্দা যেসকল বিপদাপদে পতিত হয়, সেসব বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেননা তা তার গোনাহের কারণেই ঘটে থাকে। অতঃপর সে যখন তওবা করে তখন তা তার নিকট হতে দূর করা হয়।

১১. পবিত্রতা অর্জন করা।

১২. দু‘আ করা ও আল্লাহর নিকট অনুনয় বিনয় করা।

১৩. বাড়ি ও অন্যান্য স্থানে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা, বিশেষ করে সূরা বাক্বারা পাঠ করা।

২১৬
বিভিন্ন ধরনের রোগের বিশেষ বিশেষ দু‘আ শ্বেতরোগ থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বারাস।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে শ্বেতরোগ থেকে আশ্রয় চাই। [আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন। (আবু দাঊদ, হা/১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০২৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২৮৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০১৭; জামেউস সগীর, হা/২১৬১; মিশকাত, হা/২৪৭০)]

২১৭
কুষ্ঠরোগ থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُذَامِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুযা-ম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কুষ্ঠরোগ থেকে আশ্রয় চাই। [আবু দাঊদ, হা/১৫৫৬; ঐ।]

২১৮
পাগলামী থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُنُوْنِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুনূন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পাগলামী থেকে আশ্রয় চাই। [আবু দাঊদ, হা/১৫৫৬; ঐ।]

২১৯
খারাপ রোগসমূহ থেকে বাঁচার দু‘আ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন সাইয়্যিইল আসক্বা-ম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে খারাপ রোগ থেকে আশ্রয় চাই। [আবু দাঊদ, হা/১৫৫৬; ঐ।]

২২০
শরীরের কোন স্থানে ব্যথা অনুভব হলে দু‘আ :
উসমান ইবনে আবুল আস-সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট একটি ব্যথার অভিযোগ করলেন, যা তিনি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তার দেহে অনুভব করছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তোমার শরীরের যে অংশ ব্যথাযুক্ত হয়, তার উপর তোমার হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লা-হ’ বলবে এবং সাতবার এই দু‘আটি পাঠ করবে-

أَعُوذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِه مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিল্লা-হি ওয়া কুদরাতিহী মিন শাররি মা-আজিদু ওয়া উহা-যিরু।

অর্থ : যে অনিষ্ট আমি অনুভব করছি এবং যার ভয় করছি তা থেকে আল্লাহর ইজ্জত ও ক্ষমতার অসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৯৬৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪১৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৫৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৩৩।]

২২১
বদনযর থেকে হেফাযতের দু‘আ :
হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কোন মানুষ যদি নিজের মধ্যে বা নিজ সম্পদের মধ্যে বা কোন মুসলিম ভাইয়ের মধ্যে আনন্দময় কিছু দেখে, তবে তার জন্য যেন বরকতের দু‘আ করে। কেননা বদনযর সত্য। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৭৩৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৫৭২।]

কোন কিছু দেখে বদনযর লাগার সম্ভাবনা থাকলে এ দু‘আ পড়বে,

مَا شَاءَ اللهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلَيْهِ

উচ্চারণ : মা-শা-আল্লা-হু লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলাইহি।

অর্থ : আল্লাহ যা চান, আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নেই, হে আল্লাহ! আপনি তাতে বরকত দান করুন।

২২২
পেরেশানী ও টেনশনের দু‘আ :
১. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ পেরেশানীর সময় এ দু‘আ পড়তেন,

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ الْعَظِيْمُ الْحَلِيْمُ ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْاَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল ‘আযীমুল হালীম। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাববুল ‘আরশিল ‘আযীম। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাববুস্সামা-ওয়া-তি ওয়ারাববুল আরযি ওয়ারাববুল ‘আরশিল কারীম।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, তিনি মহান ও সহনশীল। আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, তিনি মহান আরশের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, তিনি আকাশ ও পৃথিবী এবং সম্মানিত আরশের রব। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৯৭; তিরমিযী, হা/৩৪৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০১২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২৫৪১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮২৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৪৫; জামেউস সগীর, হা/৯০৭১; মিশকাত, হা/২৪১৭।]

২. সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে যে দু‘আ করেছিলেন, কোন মুসলিম যদি বিপদে পড়ে সে দু‘আ পড়ে, তবে তার দু‘আ কবুল করা হবে। অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী করীম ﷺ বিপদের সময় এ দু‘আ পড়তেন।

لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যা-লিমীন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ব্যতীত কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত। [তিরমিযী, হা/৩৫০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮২৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৭৪৪; জামেউস সগীর, হা/৫৬৯৫; মিশকাত, হা/২২৯২।]

৩. আবদুর রহমান ইবনে আবু বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দুঃখ ও বিপদগ্রসত্মদের দু‘আ হচ্ছে এটি-

اَللّٰهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلَا تَكِلْنِى إِلٰى نَفْسِىْ طَرْفَةَ عَيْنٍ وَأَصْلِحْ لِى شَأْنِى كُلَّه لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাহ্মাতাকা আরজূ, ফালা-তাকিল্নী ইলা-নাফ্সী ত্বারফাতা ‘আইনিন্, ওয়া আস্লিহ্লী শা’নী কুল্লাহূ, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমত প্রার্থনা করছি। এক মুহূর্তের জন্যও আমাকে আমার নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দেবেন না এবং আমার সকল অবস্থা আপনি সংশোধন করে দিন। আর আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। [আবু দাঊদ, হা/৫০৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৪৪৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৪১২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৭০; জামেউস সগীর, হা/৫৭০০; মিশকাত, হা/২৪৪৭।]

৪. আসমা বিনতে উমায়েশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি দু‘আ শিক্ষা দেব না, যা তোমরা বিপদাপদের সময় পাঠ করবে। তখন তিনি এ দু‘আ পাঠ করলেন-

اَللهُ اَللهُ رَبِّىْ لَا أُشْرِكُ بِه شَيْئًا

উচ্চারণ : আল্লা-হু আল্লা-হু রাববী লা-উশ্রিকু বিহী শাইআ।

অর্থ : আমার রব একমাত্র আল্লাহই, আমি তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করছি না। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৭।]

৫. আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তি দুশ্চিমত্মায় পড়ে এই দু‘আটি পাঠ করলে আল্লাহ তার দুশ্চিমত্মাকে আনন্দে পরিবর্তন করে দেবেন-

اَللّٰهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ أَمَتِكَ ، نَاصِيَتِي فِي يَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِه نَفْسَكَ ، أَوْ أَنْزَلْتَه فِي كِتَابِكَ ، أَوْ عَلَّمْتَه أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ، أَوْ اِسْتَأْثَرْتَ بِه فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْاٰنَ رَبِيْعَ قَلْبِي ، وَجِلَاءَ حُزْنِيْ ، وَذَهَابَ هَمِّيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী ‘আবদুকা ওয়াবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী ফী ইয়াদিকা মা-যিন ফিয়্যা হুকমুকা, ‘আদলুন ফিয়্যা ক্বাযা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন হুওয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা, আও আনযালতাহূ ফী কিতা-বিকা, আও ‘আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ‘ইলমিল গাইবি ‘ইনদাকা, আন তাজ‘আলাল কুরআ-না রাবী‘আ ক্বালবী, ওয়া জিলা-আ হুযনী, ওয়া যাহা-বা হাম্মী।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা, আপনারই বান্দার সমত্মান এবং এক বান্দীর ছেলে, আমার ভাগ্য আপনার হাতে, আমার ব্যাপারে আপনার হুকুম কার্যকর, আমার প্রতি আপনার ফায়সালা ইনসাফপূর্ণ। আমি প্রার্থনা করছি, আপনার সেসকল নামের মাধ্যমে, যা দ্বারা আপনি নিজের নাম রেখেছেন অথবা আপনার কিতাবে তা নাযিল করেছেন অথবা সৃষ্টিকুলের কাউকে আপনি তা শিখিয়েছেন অথবা আপনার অদৃশ্য জ্ঞানে উহা সঞ্চিত করে রেখেছেন। আমি প্রার্থনা করছি যে, কুরআনকে আমার অমত্মরের প্রশামিত্ম এবং আমার সকল দুশ্চিমত্মা-দুর্ভাবনা দূর হওয়া ও উদ্ধেগ-উৎকণ্ঠা অপসারণ হওয়ার মাধ্যম বানিয়ে দিন। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৭১২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮২২।]

২২৩
দুঃখ-কষ্টের দু‘আ :
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হলে এ দু‘আ পড়তেন-

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ

উচ্চারণ : ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরাহ্মাতিকা আস্তাগীস।

অর্থ : হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আমি আপনার নিকট সাহায্য চাই। [তিরমিযী, হা/৩৫২৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৭৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩১৮২; জামেউস সগীর, হা/৮৯০৮; মিশকাত, হা/২৪৫৪।]

২২৪
আকস্মিক বিপদ থেকে বাঁচার দু‘আ :
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তিন বার এই দু‘আটি সন্ধ্যায় পাঠ করবে তার উপর সকাল পর্যমত্ম কোন আকস্মিক বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি এটা সকালে তিন বার পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যমত্ম তার উপর কোন আকস্মিক বিপদ আসবে না।

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ

উচ্চারণ : বিস্মিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুর্রু মা‘আসমিহী শাইউন ফিলআর্যি ওয়ালা ফিস্সামা-ই ওয়াহুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।

অর্থ : ঐ আল্লাহর নামে আমি শুরু করছি, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোন বসত্মু ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [আবু দাঊদ, হা/৫০৯০; তিরমিযী, হা/৩৩৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৮৯৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৫৫; জামেউস সগীর, হা/১০৬৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৬২; মিশকাত, হা/২৩৯১।]

২২৫
অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ হতে মুক্তি লাভের দু‘আ :
আবু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পাঠ করতেন-

اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّى وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ يَّتَخَبَّطَنِى الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ أَمُوْتَ فِى سَبِيْلِكَ مُدْبِرًا وَّأَعُوْذُ بِكَ أَنْ أَمُوْتَ لَدِيْغًا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাদ্মি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাত তারাদ্দী, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল গারাক্বি ওয়াল হারাক্বি, ওয়াল হারামি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা আইঁ ইয়াতাখাববাত্বানীশ শাইত্বা-নু ‘ইনদাল মাওতি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা আন আমূতা ফী সাবীলিকা মুদ্বিরাওঁ ওয়া আ‘ঊযুবিকা আন আমূতা লাদীগান।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঘর চাপা পড়া থেকে, আশ্রয় প্রার্থনা করছি উপর থেকে গড়িয়ে পড়া থেকে, আশ্রয় প্রার্থনা করছি ডুবে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া এবং চরম বার্ধক্য থেকে, আশ্রয় প্রার্থনা করছি মৃত্যুর সময় শয়তানের স্পর্শ করা থেকে, আশ্রয় প্রার্থনা করছি আপনার রাসত্মায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়নরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা থেকে এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি সর্পদংশিত হয়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে । [আবু দাঊদ, হা/১৫৫৪; নাসাঈ, হা/৫৫৩১-৩৩; জামেউস সগীর, হা/২১৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৬২-৬৩; মিশকাত, হা/২৪৭৩।]

২২৬
বাচ্চাদের হেফাযতের দু‘আ :
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসান ও হুসাইন (রাঃ) কে এই বলে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন, তোমাদের পিতা (ইবরাহীম আঃ) ইসমাঈল (আঃ) ও ইসহাক (আঃ) কে এ বলে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন,

أُعِيْذُكَ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উচ্চারণ : উ‘ঈযুকা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বা-নিন ওয়া হা-ম্মাতিন ওয়ামিন কুল্লি ‘আইনিন লা-ম্মাহ্।

অর্থ : প্রত্যেক শয়তান হতে আল্লাহর পূর্ণ কালিমা দ্বারা তোমার জন্য পরিত্রাণ চাচ্ছি। আর পরিত্রাণ চাচ্ছি প্রত্যেক বিষাক্ত কীট হতে এবং প্রত্যেক ক্ষতিকর চক্ষু হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭১; আবু দাঊদ, হা/৪৭৩৯; তিরমিযী, হা/২০৬০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১১২, ২৪৩৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৪৮৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৪৭৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০১২; মিশকাত, হা/১৫৩৫।]

২২৭
যাদুর চিকিৎসা যাদুতে আক্রামত্ম হওয়া থেকে বাঁচার উপায় :
১. সকল ওয়াজিব কাজ পালন করা, হারামসমূহকে বর্জন করা ও সকল গোনাহ থেকে তওবা করা।

২. কুরআন মাজীদ প্রতিদিন নিয়মিত পাঠ করা।

৩. বিভিন্ন প্রকার তা‘আওউয অর্থাৎ যেসব দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া হয়, তা দ্বারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া।

৪. সকল সালাতের পর, নিদ্রার পূর্বে ও সকাল-সন্ধ্যায় এক বার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা এবং সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস ও সূরা ইখলাস সকল সালাতের পর এক বার করে এবং মাগরিব ও ফজরের পর তিন বার করে পাঠ করা।

৫. সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠ করার দু‘আ, সালাত শেষের দু‘আ, নিদ্রার পূর্বের ও পরের দু‘আ, বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়ার দু‘আ, যানবাহনের দু‘আ, মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দু‘আ, টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দু‘আ ও বিপদাপদে পাঠ করার দু‘আগুলো নিয়মিতভাবে পাঠ করবে।

২২৮
যাদু-টোনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য একটি বিশেষ দু‘আ :
কাব আহবার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কয়েকটি বাক্য অর্থাৎ দু‘আ আমি যদি নিয়মতি আমল না করতাম তাহলে ইয়াহুদীরা আমাকে (যাদুমন্ত্র দিয়ে) গাধা বানিয়ে ফেলত। তাকে প্রশ্ন করা হলো, সেই কালিমাগুলো কী? তিনি উত্তরে এ দু‘আটি পেশ করলেন-

أَعُوْذُ بِوَجْهِ اللهِ الْعَظِيْمِ الَّذِىْ لَيْسَ شَىْءٌ أَعْظَمَ مِنْهُ وَبِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ الَّتِى لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ وَبِأَسْمَاءِ اللهِ الْحُسْنٰى كُلِّهَا مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَبَرَأَ وَذَرَأَ

উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিওয়াজহিল্লাহিল ‘আযীমিল্লাযী লাইসা শাইউন আ‘যামা মিনহু, ওয়া বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তিল্লাতী লা-ইয়ুজা-ভিযুহুন্না বার্রুও ওয়ালা ফা-জিরুও ওয়াবি আসমা-ইল্লা-হিল হুসনা কুল্লিহা মা ‘আলিমতু মিনহা ওয়ামা-লাম আ‘লাম মিন শার্রী মা-খালাকা ওয়া বারাআ ওয়া যারাআ।

অর্থ : আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঐ আল্লাহর অসীলায়! যার থেকে বড় কিছু নেই এবং আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার অসীলায়, যার ভালো-মন্দ কেউ অতিক্রম করতে পারে না এবং আল্লাহর আসমাউল হুসনা বা সকল সুন্দর নামের অসীলায়, যার কিছু আমি জানি আর কিছু জানি না। আমি তার কাছে আশ্রয় চাই, তার সকল সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭০৭; মিশকাত, হা/২৪৭৯।]

২২৯
যাদুতে আক্রামত্ম হওয়ার পর করণীয় :
যাদুতে আক্রামত্ম হওয়ার পর আল্লাহর হুকুমে নিম্ন লিখিত যে কোন একটির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে :

১. কোথায় যাদু করা হয়েছে তা জানা গেলে সেখান থেকে যাদুকৃত বসত্মু বের করে নিয়ে আসতে হবে। অতঃপর সূরা নাস ও ফালাক্ব পাঠ করে তাতে ফুঁক দিয়ে তা খুলতে হবে। তারপর ঐ বসত্মুকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে হবে।

২. শরীয়ত সম্মত ঝাড়ফুঁক করতে হবে। অর্থাৎ কুরআনের আয়াত বিশেষ করে সূরা নাস ও ফালাক্ব, সূরা বাক্বারা, দু‘আ ইত্যাদি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করবে।

৩. যদি পেটের মধ্যে যাদুর ক্রিয়া অনুভব হয়, তবে ঔষধ অথবা এ জাতীয় কোন কিছু দিয়ে তা পায়খানার মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করবে। যদি অন্য কোন স্থানে থাকে তবে শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে তা বের করার চেষ্টা করবে। আর যদি তাতেও না হয়, তবে অপারেশনের মাধ্যমে বের করে দিতে হবে।

২৩০
ঝাড়ফুঁকের আয়াতসমূহ
১. সূরা ফাতিহা :

আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর কিছু সংখ্যক সাহাবী কোন এক সফরে যাত্রা করেন। তারা আরবদের কোন এক সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট মেহমানদারী কামনা করলেন। কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। (ঘটনাক্রমে) ঐ সম্প্রদায়ের দলপতি বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হলো। লোকেরা তার (সুস্থতার) জন্য সর্বপ্রকার চেষ্টা করল, কিন্তু ফল হলো না। তখন তাদের কেউ বলল, ঐ যে লোকগুলো এখানে এসেছে, তাদের নিকট যদি তোমরা যেতে! হয়তো তাদের কারো নিকট কিছু (ব্যবস্থা) থাকতে পারে। তখন তারা তাদের কাছে গেল এবং বলল, হে সফরকারী দল! আমাদের দলপতিকে বিচ্ছু দংশন করেছে। আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না। তোমাদের কারো কাছে কোন ব্যবস্থা আছে কি? তখন সাহাবীদের একজন বললেন, হ্যাঁ- আল্লাহর শপথ! আমি ঝাড়ফুঁক করি। তবে দেখো, আমরা তোমাদের নিকট মেহমানদারী কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। কাজেই আমি তোমাদের ঝাড়ফুঁক করব না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করবে। তখন তারা তাঁদের সাথে একপাল বকরীর শর্ত করল। এরপর ঐ সাহাবী গিয়ে তার (দংশিত স্থানের) উপর থুথু দিতে দিতে সূরা ফাতিহা পড়তে লাগলেন। ফলে সে এমনভাবে সুস্থ হলো যেন তার কোন অসুস্থতাই নেই।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তারা তাদের স্বীকৃত পারিশ্রমিক পুরোপুরি দিয়ে দিল। তখন সাহাবীদের কেউ কেউ বললেন, এটা ভাগ করো। কিন্তু ঝাড়ফুঁককারী বললেন, এটা করো না। আগে আমরা নবী ﷺ এর কাছে গিয়ে তাঁকে এ ঘটনা জানাই এবং দেখি তিনি আমাদেরকে কী নির্দেশ দেন। তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। তিনি বললেন, তুমি কীভাবে জানলে যে, ওটা (সূরা ফাতিহা) একটা দু‘আ? তারপর বললেন, তোমরা ঠিকই করেছ। (এবার) ভাগ করো এবং তোমাদের সঙ্গে আমার জন্যও একটা অংশ রাখো। এ বলে নবী ﷺ হাসলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/২১৫৬; মিশকাত, হা/২৯৮৫।]

সূরা ফাতিহা এ বইয়ের ২২ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

২. আয়াতুল কুরসী : আয়াতুল কুরসী ৩৫ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

৩. সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত : এ দু’টি আয়াত ৩৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

৪. সূরা ইখলাস : সূরা ইখলাস ৩৭ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

৫. সূরা ফালাক্ব : সূরা ফালাক্ব ৩৭ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

৬. সূরা নাস : সূরা নাস ৩৮ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

উপরোক্ত সূরাগুলো প্রতি ফরয সালাতের পর ১ বার করে, তবে ফজর ও মাগরিবের পর সূরা নাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা ইখলাস ৩ বার করে পাঠ করবে।

৭. আরো কয়েকটি আয়াত :

﴿وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَلَا يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا خَسَارًا﴾

আমি কুরআন অবতীর্ণ করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমতস্বরূপ, কিন্তু সেটা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮২)

﴿وَاِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ﴾

আর যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন।

(সূরা শু‘আরা– ৮০)

﴿وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ﴾

তিনি মুমিন সম্প্রদায়ের অন্তরকে প্রশান্ত করবেন। (সূরা তওবা- ১৪)

﴿قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ﴾

বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথপ্রদর্শক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)

২৩১
ঝাড়ফুঁকের দু‘আসমূহ
১. ইবনে আববাস (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এমন কোন রোগীর কাছে নিচের দু‘আ ৭ বার পাঠ করবে, যার মৃত্যু উপস্থিত হয়নি, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সুস্থতা দান করবেন।

أَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ أَنْ يَشْفِيَكَ

উচ্চারণ : আসআলুললা-হাল ‘আযীম, রাববাল ‘আরশিল ‘আযীমি আই ইয়াশফিয়াকা।

অর্থ : সুবিশাল আরশের প্রভু সুমহান আল্লাহর কাছে আমি প্রার্থনা করছি, তিনি আপনাকে আরোগ্য দান করুন। [আবু দাঊদ, হা/৩১০৮; তিরমিযী, হা/২০৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৩৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫১৩০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১২৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪১৯; জামেউস সগীর, হা/১১৩৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৮০; মিশকাত, হা/১৫৫২।]

২. আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে দেখার জন্য আসলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এমন বিষয় দিয়ে ঝাড়ফুঁক করব, যা দিয়ে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে ঝাড়ফুঁক করেছিলেন। আমি বললাম, আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কুরবান হোক অর্থাৎ করুন, তখন নবী ﷺ এ দু‘আ ৩ বার পাঠ করে ঝাড়ফুঁক করলেন-

بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ وَاللهُ يَشْفِيْكَ مِنْ كُلِّ دَاءٍ يُؤْذِيْكَ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা ওয়াল্লা-হু ইয়াশ্ফীকা মিনকুল্লি দা-ইন ইউ’যীকা। ওয়া মিন শাররিন্নাফ্ফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়ামিন শার্রি হা-সিদিন ইযা হাসাদ।

অর্থ : আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। আর আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করুন ঐ সকল রোগ থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়। (আর তিনি আপনাকে সুস্থতা দান করুন) গ্রন্থিতে ফুঁকদানকারীর অনিষ্ট থেকে এবং প্রত্যেক হিংসুকের হিংসা হতে, যখন সে হিংসা করে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৮২৯; তিরমিযী, হা/৯৭২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫২৩-২৪; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৭৭৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩৯৯০; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১০৬৬; মিশকাত, হা/১৫৩৪।]

৩. আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা জিবরাঈল (আঃ) নবী (সাঃ) এর নিকট আগমন করে বললেন, আপনি কি অসুস্থ? নবী (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। এরপর জিবরাঈল (আঃ) এ দু‘আ পাঠ করে নবী (সাঃ) কে ঝাড়ফুঁক করলেন-

بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيْكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اَللهُ يَشْفِيْكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা মিন কুল্লি শায়ইন ইউ’যীকা মিন কুল্লি নাফসিন আও ‘আইনিন হা-সিদিন আল্লা-হু ইয়াশফীকা বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা।

অর্থ : আমি আল্লাহর নামে আপনার ঝাড়ফুঁক করছি প্রত্যেক ঐ জিনিস হতে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়। প্রত্যেক আত্মার অনিষ্ট হতে অথবা হিংসুকের চক্ষু হতে আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করুন। আমি আল্লাহর নামে আপনার ঝাড়ফুঁক করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮২৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫২৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৪১; মিশকাত, হা/১৫৩৪।]

৪. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম ﷺ যখন কোন রোগীকে দেখতে যেতেন তখন এ দু‘আ বলতেন-

لَابَأْسَ طَهُوْرٌ إِنْ شَاءَ اللهُ

উচ্চারণ : লা বা’সা ত্বাহূরুন ইনশা-আল্লা-হ।

অর্থ : ভয় নেই, আল্লাহর মেহেরবানীতে আরোগ্য লাভ করবে, আল্লাহ যদি চান। [সহীহ বুখারী, হা/৩৬১৬; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৮১১; আদাবুল মুফরাদ, হা/৫২৬; জামেউস সগীর, হা/৮৮৪৯; মিশকাত, হা/১৫২৯।]

৫. আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তার ডান হাত রোগীর শরীরে বুলাতেন এবং এ দু‘আ বলতেন,

أَذْهِبِ الْبَاْسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَّا يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ : আযহিবিল বা’সা রাববান্না-সি ওয়াশ্ফি আনতাশ্শা-ফী লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা শিফাআল্লা ইউগা-দিরু সাক্বামা।

অর্থ : হে মানুষের প্রতিপালক! এ রোগ দূর করুন এবং আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদানকারী। আপনার আরোগ্য ব্যতীত কোন আরোগ্য নেই। আর এমন আরোগ্য (দান করুন), যা কোন রোগ বাকি রাখে না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৩৮; তিরমিযী, হা/৩৫৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৫২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২২১; জামেউস সগীর, হা/৮৭৬৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৯৭০; মিশকাত, হা/১৫৩০।]

৬. আবদুল আযীয (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি এবং সাবিত (রহ.) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর নিকট গেলাম। এসময় সাবিত (রহ.) বললেন, হে আবু হামযা! আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তখন আনাস (রাঃ) বললেন, রাসূলূল্লাহ ﷺ যা পড়ে ঝাড়ফুঁক করতেন, তা পড়ে আমি তোমার উপর ফুঁক দেব কি? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ! তখন তিনি এ দু‘আ পড়লেন-

اَللّٰهُمَّ رَبَّ النَّاسِ مُذْهِبَ الْبَاْسَ اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ لَا شَافِيَ إِلَّا أَنْتَ شِفَاءً لَّا يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববান্নাস, মুযহিবাল বা’সা, ইশফি আন্তাশ শা-ফী লা শা-ফিয়া ইল্লা আন্তা শিফা-আল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা।

অর্থ : হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, রোগব্যাধি দূর করে দিন। আরোগ্য দান করুন। আপনিই আরোগ্য দানকারী। আপনার আরোগ্য ছাড়া আর কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান করুন, যাতে কোন রোগ না থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৪২; আবু দাঊদ, হা/৩৮৯২; তিরমিযী, হা/৯৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৫৪; জামেউস সগীর, হা/২১৮৩।]

৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিয়ম করেছিলেন যে, মানুষ তার (শরীরের) কোথাও অসুস্থতা অনুভব করলে অথবা তাতে কোন ফোঁড়া বা আঘাতপ্রাপ্ত (হয়ে) থাকলে- তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা এরকম করতেন। এ সময় বর্ণনাকারী সুফইয়ান (রহ.) তার বুড়ো আঙ্গুলটি জমিনে রাখলেন- অতঃপর তা তুলে নিলেন এবং সে সময় এ দু‘আ পড়তেন-

بِاسْمِ اللهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيْقَةِ بَعْضِنَا لِيُشْفٰى بِه سَقِيْمُنَا بِإِذْنِ رَبِّنَا

উচ্চারণ : বিসমিললা-হি তুরবাতু আরযিনা- বিরীক্বাতি বা‘যিনা লিইউশফা- বিহী সাক্বীমুনা- বিইযনি রাবিবনা।

অর্থ : আল্লাহর নামে আমাদের জমিনের ধূলামাটি আমাদের কারো (মুখের) লালার সঙ্গে (মিলিয়ে) আমাদের পালনকর্তার আদেশে তা দিয়ে আমাদের অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে (মালিশ করছি)। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৪৮; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮২৬৬; মুসনাদে হুমাইদী, হা/২৬৮; মিশকাত, হা/১৫৩১।]

২৩২
ঝাড়ফুঁকের জন্য শর্তাবলি
১. ঝাড়ফুঁক হতে হবে কুরআনের আয়াত ও রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত দু‘আর মাধ্যমে।

২. ঝাড়ফুঁকের শব্দাবলি আরবি ভাষায় হতে হবে।

৩. ঝাড়ফুঁক করার সময় এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আরোগ্য শুধুমাত্র আল্লাহই দিতে পারেন।

৪. এ ক্ষেত্রে হারাম কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না। যেমন- গালিগালাজ করা অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা ইত্যাদি।

৫. কেবলমাত্র ঝাড়ফুঁকের উপরই নির্ভরশীল হওয়া যাবে না, বরং মনে করতে হবে যে, এটা সামান্য একটি মাধ্যম মাত্র।

৬. ঝাড়ফুঁকের প্রভাব বেশি পেতে চাইলে নিয়মিত কুরআন পাঠ করতে হবে। কেননা কুরআন হেদায়াত এবং আরোগ্যের জন্য নাযিল হয়েছে।

৭. আরোগ্য লাভ না করা পর্যমত্ম ঝাড়ফুঁকের দু‘আ বারবার পাঠ করতে হবে।

২৩৩
ঝাড়ফুঁককারীর জন্য কতিপয় শর্ত
১. ঝাড়ফুঁককারীকে মুসলিম হতে হবে, নেককার ও পরহেজগার হতে হবে। ঝাড়ফুঁককারী যত বেশি আল্লাহভীরু হবে, তার ঝাড়ফুঁক তত বেশি কার্যকরী হবে।

২. ঝাড়ফুঁকের সময় একনিষ্ঠ হৃদয় নিয়ে নিজেকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করতে হবে। যাতে করে মুখে যা বলবে অমত্মর যেন তা অনুধাবন করে।

৩. দলবদ্ধ হয়ে ঝাড়ফুঁকের দু‘আ পাঠ করা সুন্নাতের বিপরীত।

৪. উত্তম হলো মানুষ নিজে নিজেকে ঝাড়ফুঁক করবে। কেননা নিজের বিপদ ও প্রয়োজন সে নিজে যেভাবে অনুভব করে, অন্যজন সেভাবে অনুভব করতে পারে না।

৫. ঝাড়ফুঁককারী যাদু বা শিরকী কিছু ব্যবহার করবে না।

২৩৪
যাকে ঝাড়ফুঁক করা হবে তার জন্য কতিপয় শর্ত
১. সত্যিকারভাবে আল্লাহর স্মরণাপন্ন হতে হবে এবং দৃঢ়ভাবে ধারণা রাখতে হবে যে, তিনিই তাকে আরোগ্য দান করবেন।

২. আরোগ্য হতে দেরি হওয়ার অভিযোগ করা যাবে না। কেননা ঝাড়ফুঁক এক ধরনের দু‘আ। দু‘আ কবুল হওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা যাবে না। হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يُسْتَجَابُ لِاَحَدِكُمْ مَا لَمْ يَعْجَلْ يَقُوْلُ دَعَوْتُ فَلَمْ يُسْتَجَبْ لِيْ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের দু‘আ কবুল করা হয়, যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে আর এ কথা না বলে যে, আমি দু‘আ করলাম কিমত্মু কবুল হলো না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩৪০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৭১১০; আবু দাঊদ, হা/১৪৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১৩৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৫৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৫৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৭৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৪৯।]

২৩৫
রোগীর জন্য সতর্কতা মৃত ব্যক্তিকে অসীলা বানানো যাবে না :
রোগমুক্তির জন্য মৃতদেরকে অসীলা বানানো, তাদের কাছে কোন প্রয়োজনীয় জিনিস চাওয়া অথবা সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি কাজসমূহ শিরকের অন্তর্ভুক্ত। অসীলার অর্থ হলো আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া, যা কেবল ঈমান এবং নেক কাজের দ্বারা সম্ভব। অন্যদিকে মৃৃতদের কাছে দু‘আ করা আল্লাহ হতে মুখ ফিরানোর নামান্তর এবং তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ﴾

আর তুমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যারা তোমার কোন উপকারও করতে পারে না এবং অপকারও করতে পারে না। যদি এটা কর, তাহলে তুমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউনুস- ১০৬)

২৩৬
মাযার ও দরগায় দান করা যাবে না :
রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য মাযার ও দরগায় দান করা যাবে না। কেননা তা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি মাছির কারণে এক ব্যক্তি জান্নাতে গিয়েছে এবং একটি মাছির কারণে এক ব্যক্তি জাহান্নামে গিয়েছে। (ঘটনাটি হলো) একদা দু’ব্যক্তি একটি গোত্রের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, আর ঐ গোত্রটির একটি মূর্তি ছিল, সে মূর্তিকে কিছু না দিয়ে কেউ অতিক্রম করতে পারত না। (মূর্তির খাদেমরা) প্রথম ব্যক্তিকে বলল, তুমি কিছু দিয়ে যাও। লোকটি অস্বীকার করল যার কারণে তারা তাকে হত্যা করল, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করল। অতঃপর তারা দ্বিতীয় জনকে বলল, কিছু দিয়ে যাও। এমনকি একটি মাছি হলেও দিয়ে যাও। অতঃপর সে একটি মাছি দান করল, এর ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। সালমান (রাঃ) বলেন, এই হলো ‘‘এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জান্নাতে প্রবেশ করল এবং এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জা‎হান্নামে প্রবেশ করল’’- এ কথার ব্যাখ্যা। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৩৭০৯, বায়হাকী শু‘আবিল ঈমান, হা/৭৩৪৩।]

২৩৭
তাবিজ লটকানো, রিং বা সুতা পরিধান করা যাবে না :
তাবিজ লটকানো বা চামড়া কিংবা রিং অথবা তাবিজের মালা পরিধান করা জায়েয নয়। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ

অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকাবে, তাকে সেই বসত্মুর প্রতি সোপর্দ করা হবে। [তিরমিযী, হা/২০৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮০৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৫০৩; মিশকাত, হা/৪৫৫৬।]

গাড়ির মধ্যে ‘মা-শা-আল্লা-হ’ লেখা, তলোয়ার, চাকু, কাগজে চোখ এঁকে টাঙ্গিয়ে দেয়া, কুরআন রাখা অথবা বাড়িতে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত লিখে টাঙ্গিয়ে রাখা জায়েয নয়। এগুলো তাবিজের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারে।

আল্লাহই কল্যাণ এবং অকল্যাণের মালিক, রোগ থেকে মুক্তিদাতা। তাবিজ-কবজ ব্যবহার করে আল্লাহর পরিবর্তে এগুলোর উপর নির্ভর করা হয়, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া মুসীবত দূর করা অথবা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে রিং, তাগা (সুতা) ইত্যাদি পরিধান করাও শিরক। বিভিন্ন ফকীরের তাবিজ, দরবারের লাল কিংবা সাদা-কালো সুতা হাতে বাঁধা, দরবারী তাবিজ, ইমাম সাহেবের তাবিজ, পীরের তাবিজ, অষ্টধাতুর আংটি, বিভিন্ন পাথরের আংটি ইত্যাদি। এসব বস্তুর উপর নির্ভরশীল হওয়া এবং বিশ্বাস করা শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلْ اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ اَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهٖۤ اَوْ اَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهٖ﴾

বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি আল্লাহ আমার কোন অনিষ্ট চান, তবে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি যদি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তবে কি তারা সে অনুগ্রহকে বন্ধ করতে পারবে? (সূরা যুমার- ৩৮)

তাবিজ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত দলের নয় জনের কাছ থেকে বাই‘আত গ্রহণ করলেন এবং এক জনের কাছ থেকে বাই‘আত গ্রহণ করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয় জনকে বাই‘আত করালেন একজনকে বাদ রাখলেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তার কাছে একটি তাবিজ রয়েছে। তখন ঐ ব্যক্তি তার হাত জামার ভেতরে প্রবেশ করাল এবং সেটা ছিড়ে ফেলল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকেও বাই‘আত করালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি গলায় তাবিজ ব্যবহার করল সে শিরক করল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪২৯৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪৯২।]

আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) এর স্ত্রী জয়নব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বাহির থেকে এসে দরজার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে কাশি দিতেন এবং থুথু ফেলতেন, যাতে তিনি এসে আমাদেরকে তার অপছন্দ অবস্থায় না দেখেন। তিনি বললেন, একদিন আবদুল্লাহ (রাঃ) আসলেন এবং কাশি দিলেন। তখন আমার কাছে একজন বৃদ্ধা ছিল। সে আমাকে চর্ম রোগের জন্য ঝাড়ফুঁক করছিল। এ অবস্থায় তাকে আমি খাটের নিচে লুকিয়ে রাখলাম। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে আমার কাছে এসে বসলেন এবং আমার গলায় তাগা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এই তাগাটা কী? আমি বললাম, এই সুতার মধ্যে আমার জন্য ঝাড়ফুঁক দেওয়া হয়েছে। আমি একথা বলার পর আবদুল্লাহ তাগাটা কেটে ফেললেন এবং বললেন, আবদুল্লাহর পরিবারবর্গ শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তাবিজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬১৫; মিশকাত, হা/৪৫৫২।]

২৩৮
তাবিজ ব্যবহার করা শিরক
তাবিজ যদি কোন মূর্তির ছবি হয়, অথবা এমন শিরকী মন্ত্র তাবিজে লেখা থাকে, যেগুলোর মাধ্যেমে গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে কিংবা গাইরুল্লাহর কাছে আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে, তা হলে নিঃসন্দেহে উহা বড় শিরক। আর যদি এরকম কোন কিছু না হয়, তাহলে ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে।

বালা-মুসীবত দূর করার জন্য অথবা বিপদাপদ থেকে হেফাযতে থাকার জন্য গিড়া এবং তাগা ইত্যাদি ব্যবহার করা ছোট শিরক।

রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরআনুল কারীম দ্বারা চিকিৎসা করার স্বরূপ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আর তা হলো কুরআন তিলাওয়াত এবং সে অনুযায়ী আমল করা।

২৩৯
তাবিজ ব্যবহার করা জাহেলী যুগের বৈশিষ্ট্য
তাবিজ ব্যবহার করা জাহেলী যুগের বৈশিষ্ট্য। সে যুগে মানুষের উপর চেপে বসেছিল অজ্ঞতা, আর তারা পরিণত হয়েছিল শয়তানের দাসে। তাই বৃদ্ধি পেয়েছিল তাদের ভ্রষ্টতা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَنَّه كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنْسِ يَعُوْذُوْنَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوْهُمْ رَهَقًا﴾

আর কতিপয় মানুষ কতক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের অহংকার বাড়িয়ে দিত। ( সূরা জিন- ৬)

জাহেলী যুগের ইতিহাসে উল্লেখিত হয়েছে যে, তৎকালীন আরবরা যখন কোন মরু প্রান্তরে বন্য পশুদের এলাকায় গিয়ে পৌঁছত, তখন ভূত-প্রেত, জিন ও শয়তানের আশঙ্কা করত এবং কাফেলা মধ্যস্থিত একজন দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে এ বলে আওয়াজ দিত- আমরা এই উপত্যকার সরদারের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তখন তারা কোন বিপদের সম্মুখীন হতো না এবং উক্ত আওয়াজ তাদের জন্য নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করত। এ জন্যই জাহেলী যুগের লোকেরা বিভিন্ন পশু জবাই করে জিনদের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করত, যাতে তারা কোন প্রকার ক্ষতি সাধন না করে। তাদের কেউ ঘর নির্মাণ করলে কিংবা কূপ খনন করলে জিনদের ক্ষতি রোধের জন্য পশু জবাই করত। এভাবেই তাদের মধ্যে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেল যে, কোন কোন পাথর, গাছপালা, জীবজমত্মু এবং খনিজ পদার্থের এমন গুণাবলী রয়েছে, যেগুলো তাদেরকে জিনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। তাই সেগুলো দিয়ে তাবিজ বানিয়ে ব্যবহার করতে লাগল। মূলত এর প্রধান কারণ ছিল আল্লাহ সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা এবং তাঁর উপর পূর্ণ ভরসা ও বিশ্বাস না থাকা।

এগুলো হচ্ছে, জাহেলী যুগের তাবিজ সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস ও কিছু কুসংস্কারের চিত্র। তাবিজের আকার আকৃতি বা ধরণ পরিবর্তন হলেও আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এগুলোর অনেকটাই বর্তমান সমাজে বিদ্যমান। জাহেলী যুগে বদনযর থেকে বাঁচার জন্য ঘোড়ার গলায় খেজুরের ছিলা লটকাত। আর বর্তমানে বদনযর থেকে বাঁচার জন্য জুতা লটকায়। মূলত এতদুভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যই নেই। তাবিজ ব্যবহারের এই গোমরাহী পন্থা, কৃষক থেকে শুরু করে শহরের লোকদের মধ্যেও ছড়িয়ে আছে। এভাবে দেখা যায়, অনেক ড্রাইভার তাদের গাড়ির সামনের গ্লাসে তাগায় পুতি গেঁথে তা ঝুলিয়ে রাখে। অনুরূপভাবে, বাড়ি অথবা দোকানের সামনে বিভিন্ন জিনিস ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ সকল জিনিস লাগানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, বদনযর থেকে হেফাযতে থাকা।

আসলে এ ধারণাগুলো তাওহীদ, শিরক ও মূর্তিপূজা সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতার কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। যুগে যুগে মানব সমাজে রাসূল প্রেরণ করার যে কারণ ছিল তা হলো, সমস্ত শিরক, মূর্তিপূজা ইত্যাদি দূর করে তাওহীদকে প্রতিষ্ঠিত করা। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন