HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ওমর (রাঃ) সম্পর্কে ১৫০টি শিক্ষণীয় ঘটনা

লেখকঃ আহমাদ আবদুল আলী তাহতাভী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ওমর (রাঃ) সম্পর্কে১৫০টি শিক্ষণীয় ঘটনা

মূল

আহমাদ আবদুল আলী তাহতাভী

অনুবাদ

শাইখ আবদুর রহমান বিন মোবারক আলী

প্রকাশক :

মোঃ রফিকুল ইসলাম

পিস পাবলিকেশন

গ্রন্থকারের ভূমিকা
সকল প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি। হে আল্লাহ! তুমি সকল সাহাবাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবনী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা তাঁদের অনুসরণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। হাদীসে এরশাদ হয়েছে- নবী (সাঃ) বলেছেন: তোমরা আমার এবং আমার পরে খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আকঁড়িয়ে ধরবে।

ইসলামের ইতিহাসে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর জীবনী এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মানব জাতির ইতিহাস ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মর্যাদা, সম্মান, একনিষ্ঠতা, জিহাদ এবং দাওয়াত এসব বিষয় কখনো ভুলতে পারবে না। এজন্য আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর জীবনী তার জিহাদ ও চরিত্র এসব বিষয় সংগ্রহ করেছি। এর মাধ্যমে দায়ী, খতীব, উলামায়ে কেরাম, ইসলামী যেন চিন্তাবিদ ও দ্বীনি ইলম অর্জনকারী ছাত্ররা উপকৃত হয়। এ সকল বিষয় যেন তাদের জীবনে বাস্তবায়িত করে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা দান করবেন।

সম্মানিত পাঠকগণ! আমি আপনাদের জন্য সম্মানিত ব্যক্তি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর জীবনী থেকে ১৫০টি কাহিনী দলীল-প্রমাণ সহকারে এখানে উল্লেখ করছি। যেগুলো জিহাদ চরিত্র ও বন্ধুত্ব এসব ক্ষেত্রে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। আমি আল্লাহর নিকট আশা করছি, এসব গুণাবলির অধিকারীকে আমি কিয়ামতের দিন জান্নাতে দেখতে পাব।

আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী

আহমাদ আবদুল আল আত তাহতাভী

অনুবাদকের কথা
সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি তার বান্দাদের মধ্যে এমন লোক সৃষ্টি করেছেন যারা ছিলেন তার দ্বীনের উপর অনড়। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সে নবী (সাঃ)-এর প্রতি যার পদাংক অনুসরণ করে অনেকেই উচ্চমর্যাদা অর্জন করেছিলেন। আর সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর যারা সর্বক্ষেত্রে দ্বীনকে অগ্রাধিকার দিয়ে গেছেন, যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন।

বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন আহমাদ আব্দুল আল আত তাহতাভী উল্লেখযোগ্য সাহাবীদের জীবনী নিয়ে আরবী ভাষায় চমৎকার কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। বাংলা ভাষায় সাহাবীদের জীবন সম্পর্কে অনেক বই প্রকাশিত হলেও অন্যতম খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে এ গ্রন্থটি আমরা অনুবাদ করে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেছি। কারণ লেখক এ গ্রন্থে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর জীবনী থেকে বাছাই করে ১৫০টি শিক্ষণীয় ঘটনা দলিল প্রমাণসহ উল্লেখ করেছেন যা মানুষের চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

আমরা মুসলিম হিসেবে যাদেরকে আদর্শ বা মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারি তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন নবী-রাসূলগণ। তারপর যাদের অনুসরণ করতে হবে তারা হলেন সম্মানিত সাহাবায়ে কেরামগণ। নবী (সাঃ) বলেন: “তোমরা আমার এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকঁড়ে ধর।” আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শে উজ্জীবিত ও আদর্শবান হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!

শাইখ আবদুর রহমান বিন মোবারক আলী

আরবী প্রভাষক

হাজী মোঃ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদ্রাসা,

সুরিটোলা, ঢাকা

১. উমারের হৃদয়ে ঈমানের বীজ
সর্বপ্রথম যেদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর অন্তরে ঈমান প্রবেশ করে তা হলো, তিনি দেখলেন যে, কুরাইশ বংশে মহিলারা তাদের দেশ ছেড়ে দূরবর্তী অন্য এক দেশে হিজরত করে চলে যাচ্ছে তার কারণ হলো, তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মতো লোকদের থেকে অত্যন্ত কষ্ট এবং যন্ত্রণা পাচ্ছিলেন। এ ঘটনা থেকে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মনটা বিগলিত হয়ে গেল। ঐ মহিলাদের জন্য তিনি আফসুস করতে লাগলেন এবং তাদেরকে কিছু উত্তম কথা শোনালেন যেসব কথা তারা ওমরের কাছ থেকে শুনবে বলে আশা করেনি।

উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে হানতামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমরা যখন হাবশার দিকে হিজরত করতে যাচ্ছিলাম, তখন ওমর এসে আমার সামনে দাঁড়ালেন। তিনি আমাকে বললেন, হে উম্মে আবদুল্লাহ! তুমি কি কোথাও চলে যাচ্ছ? আমি বললাম, হাঁ। আল্লাহর কসম আমরা আল্লাহর যমীনের দিকে বেরিয়ে পড়ছি। কারণ, তোমরা আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছ এবং আমাদেরকে দুর্বল করে রেখেছ। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য বের হওয়ার পথ বের করে দিয়েছেন। উম্মে আবদুল্লাহ বলেন, তখন আমি ওমরের অন্তরে তা দেখতে পেলাম, যা আর কখনো দেখিনি। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ১/২১৬)

২. নবী (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে ওমর (রাঃ)
ওমর চরম কঠোরতা অবলম্বন করেও কোন মুসলমানকেই দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিতে পারেননি। অবশেষে তিনি রাসূলে করীম (সাঃ) কে নিজের হাতে হত্যা করার (নাউজুবিল্লাহ) সিদ্ধান্ত নেন। কোমরে তরবারি ঝুলিয়ে সোজা রাসূল (সাঃ)-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ঘটনাচক্রে নুয়াইম বিন আবদুল্লাহর সঙ্গে পথে দেখা হয়। তার ভাব-ভঙ্গিমা দেখে তিনি জিজ্ঞেস করেন, কি ব্যাপার? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জবাবে বললেন, মুহাম্মাদ সম্পর্কে একটা চুড়ান্ত মীমাংসা করতে যাচ্ছি। তিনি বললেন, আগে নিজের ঘরের খবর নাও। তোমার বোন ও ভগ্নিপতি মুসলমান হয়ে গেছে। (আত-তাবাকার লি ইবনে সা’দ, ৩/২৬৭)

৩. বোনের বাড়ির দিকে ওমর (রাঃ)
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছুটলেন তার বোন-ভগ্নিপতির বাড়ির দিকে। ঘরের দরজায় ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর করাঘাত পড়ল, তারা দু’জন ঐ সময় খাব্বাব ইবনে আরাত এর কাছে কুরআন শিখছিলেন। ওমরের আভাস পেয়ে খাব্বাব আত্মগোপন করলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বোন-ভগ্নিপতিকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের এখানে গুণগুণ আওয়াজ শুনছিলাম, তা কিসের? তারা তখন কুরআনের সূরা ত্বাহা পাঠ করছিলেন।

তারা উত্তর দিলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সম্ববতঃ তোমরা দু’জন ধর্মত্যাগী হয়েছ। ভগ্নিপতি বললেন, তোমার ধর্ম ছাড়া অন্য কোথাও যদি সত্য থাকে তুমি কি করবে ওমর? ওমর তাঁর ভগ্নিপতির উপর ঝাপিয়ে পড়লেন এবং দু’পায়ে ভীষণভাবে তাঁকে মাড়তে লাগলেন। বোন তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে এলে ওমর তাকে ধরেও এমন মার দিলেন যে, তাঁর মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেল। বোন রাগে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, সত্য যদি তোমার দ্বীনের বাইরে অন্য কোথাও থেকে থাকে, তাহলে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল।

এরপর ওমর বললেন, তোমরা কী পড়তে ছিলে আমাকে দেখাও, বোন বললেন, তুমি অপবিত্র তাই গোসল অথবা অযু করে আস। এরপর উমর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন পরে ঘরে আসলেন। তখন বোন সহীফাটি দিলেন সেখানে লেখা ছিল–

طٰہٰ ۚ ﴿۱﴾ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکَ الۡقُرۡاٰنَ لِتَشۡقٰۤی ۙ ﴿۲﴾ اِلَّا تَذۡکِرَۃً لِّمَنۡ یَّخۡشٰی ۙ ﴿۳﴾ تَنۡزِیۡلًا مِّمَّنۡ خَلَقَ الۡاَرۡضَ وَ السَّمٰوٰتِ الۡعُلٰی ؕ ﴿۴﴾ اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی ﴿۵﴾ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَہُمَا وَ مَا تَحۡتَ الثَّرٰی ﴿۶﴾ وَ اِنۡ تَجۡہَرۡ بِالۡقَوۡلِ فَاِنَّہٗ یَعۡلَمُ السِّرَّ وَ اَخۡفٰی ﴿۷﴾ اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ؕ لَہُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ﴿۸﴾

১. ত্বা-হা-,

২. তুমি কষ্ট পাবে এজন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি,

৩. বরং যে ভয় করে কেবল তার উপদেশ লাভের জন্য,

৪. যিনি পৃথিবী ও সমুচ্চ আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট হতে এটা অবতীর্ণ,

৫. দয়াময় আরশে সমাসীন।

৬. যা আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে, এ দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে তা তারই।

৭. যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বলো, তবে তিনি তো যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সকলই জানেন।

৮. আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, সুন্দর সুন্দর নাম তারই।

এরপর নিচের আয়াতগুলো দেখলেন–

اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِذِکۡرِیۡ ﴿۱۴﴾ اِنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ اَکَادُ اُخۡفِیۡہَا لِتُجۡزٰی کُلُّ نَفۡسٍۭ بِمَا تَسۡعٰی ﴿۱۵﴾ فَلَا یَصُدَّنَّکَ عَنۡہَا مَنۡ لَّا یُؤۡمِنُ بِہَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ فَتَرۡدٰی ﴿۱۶﴾

১৪. ‘আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো।

১৫. কিয়ামাত অবশ্যম্ভাবী, আমি এটা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে।

১৬. সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামত বিশ্বাস করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তাতে বিশ্বাস স্থাপনে নিবৃত্ত না করে, নিবৃত্ত হলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।

এ আয়াতগুলো দেখে বললেন, যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলো পড়বে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করা সমিচীন নয়। তোমরা আমাকে নিয়ে মুহাম্মাদের কাছে চল। (তারীখুল খুলাফা, ৪৩-৪৪)

৪. যে কারণে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলেন
ওমরের কথা শুনে খাব্বাব ঘরের গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, সুসংবাদ ওমর! বৃহস্পতিবার রাতে রাসূল (সাঃ) তোমার জন্য দু’আ করেছিলেন। আমি আশা করি তা কবুল হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাব অথবা আবু জাহেল আমর ইবনে হিশামের দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করো। খাব্বাব আরো বললেন, রাসূল (সাঃ) এখন সাফার পাদদেশে দারুল আরকামে আছেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু চললেন, দারুল আরকামের দিকে। হামযা এবং তালহার সাথে আরো কিছু সাহাবী তখন আরকামের বাড়ির দরজায় পাহারারত।

ওমরকে দেখে তারা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। তবে হামযা সান্তনা দিয়ে বললেন, আল্লাহ ওমরের কল্যাণ চাইলে সে ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলের অনুসারী হবে। অন্যথায় তাকে হত্যা করা আমাদের জন্য খুবই সহজ হবে। রাসূল (সাঃ) বাড়ির ভেতরে। তাঁর ওপর তখন ওহী নাযিল হচ্ছে। একটু পরে তিনি বেরিয়ে ওমরের কাছে এলেন। ওমরের কাপড় ও তরবারির হাতল মুট করে ধরে বললেন, ওমর, তুমি কি বিরত হবে না? তারপর দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! ওমর আমার সামনে, হে আল্লাহ! ওমরের দ্বারা দ্বীনকে শক্তিশালী করো। ওমর বলে উঠলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। ইসলাম গ্রহণ করেই তিনি আহ্বান জানালেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঘর থেকে বের হয়ে পড়ুন। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ১/৩১৯)

৫. ফারুক উপাধী লাভ
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের পর অকস্মাৎ ইসলামের অবস্থা পরিবর্তিত হয়। তিনি প্রকাশ্যে নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা ব্যক্ত করলেন। এতটুকুতেই তিনি ক্ষান্ত হননি বরং মুশরিকদেরকে একত্র করে সরবে নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। মুশরিকরা ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মামা আস ইবনে ওয়ায়েল তাকে নিজের আশ্রয়ে নিয়ে নেন।

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের পূর্বে স্বচক্ষে মুসলমানদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন প্রত্যক্ষ করতেন। তাই ইসলাম গ্রহণের পর একজন সাধারণ মুসলমানের যে দশা হয় তিনি তা থেকে নিজেকে আলাদা রাখা পছন্দ করলেন না। এজন্য তিনি আস ইবনে ওয়ায়েলের আশ্রয় গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং দৃঢ়তা ও অবিচলতা সহকারে মুশরিকদের মোকাবিলা করতে থাকলেন। অবশেষে মুসলমানদের নিয়ে কাবার মধ্যে গিয়ে নামায পড়লেন। এই প্রথমবার বাতিলের মুকাবিলায় হক মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। এরই পুরস্কারস্বরূপ ওমর ফারুক উপাধি লাভ করেন (সিফাতুস সাফওয়াহ, ১/১০৩, ১০৪)

৬. কুরাইশদের সামনে ইসলাম প্রকাশ
ওমরের ইসলাম গ্রহণ ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। যদিও তখন পর্যন্ত ৪০/৫০ জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে হযরত হামযাও ছিলেন, তথাপি মুসলমানদের পক্ষে কা’বায় গিয়ে নামায পড়া তো দূরের কথা নিজেদেরকে মুসলমান বলে প্রকাশ করাও নিরাপদ ছিল না। হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে এ অবস্থার পরিবর্তন হলো। তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিলেন এবং অন্যদের সাথে নিয়ে কা’বা ঘরে নামায আদায় করলেন।

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের পর সেই রাতেই চিন্তা করলাম, মক্কাবাসীদের মধ্যে রাসূল (সাঃ)-এর সবচেয়ে কট্টর দুশমন কে আছে। আমি নিজে গিয়ে তাকে আমার ইসলাম গ্রহণের কথা জানাব। আমি মনে করলাম, আবু জাহেলই সবচেয়ে বড় দুশমন। সকাল হতেই আমি তার দরজায় করাঘাত করলাম। আবু জাহেল বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কি মনে করে? আমি বললাম, আপনাকে একথা জানাতে এসেছি যে, আমি আল্লাহ ও তার রাসূল মুহাম্মাদ এর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তার আনীত বিধান ও বাণীকে মেনে নিয়েছি। একথা শোনামাত্র সে আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল এবং বলল, আল্লাহ তোকে কলংকিত করুক এবং যে খবর নিয়ে তুই এসেছিস তাকেও কলংকিত করুক (ফাযায়েলুস সাহাবা লি ইমাম আহমদ, ১৩৪৬)

১০
৭. হিজরতের সময় ওমর (রাঃ) ও তার দুই সাথী
যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হিজরতের ইচ্ছা পোষণ করলেন, তখন আইয়াশ ইবনে আবি রাবিয়া ও হিশাম ইবনে আসকে খবর দিলেন। তারা সবাই এক সাথে হিজরত করার জন্য একমত হলেন। অতঃপর ওমর এবং আইয়াশ একত্র হলেন, কিন্তু হিশামকে মক্কায় আটকিয়ে রাখা হলো এবং তাকে পরীক্ষায় ফেলা হলো। ওমর এবং আইয়াশ তারা দু’জন ভ্রমণ শুরু করলেন। যখন তারা কুবায় আসলেন তখন রেফা’আ ইবনে আবুল মুনযিরের নিকট অবস্থান করলেন। এ সময় আবু জাহেল এবং তার ভাই হারিসের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হল। তারা দুজন আইয়াশকে বললেন, এই! নিশ্চয় তোমার মা মান্নত করেছেন যে, তারা ছায়া গ্রহণ করবে না এবং মাথায় তেল ব্যবহার করবেন না যতক্ষণ না তোমাকে দেখবে।

তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম, তারা দুজন তোমাকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। সুতরাং তুমি তাদের সাথে যাবে না। আল্লাহর কসম, যখন তোমার মা উকুন দ্বারা কষ্ট পাবে তখন সে তেল মালিশ করবে এবং মাথায় চিরনী লাগাবে। আর যখন সে প্রচণ্ড গরম অনুভব করবে তখন সে ছায়া গ্রহণ করবে। আইয়াশ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, মক্কায় আমার কিছু সম্পদ রয়েছে। আমি গিয়ে এগুলো নিয়ে আসি তাহলে তা মুসলমানদের শক্তিশালী করবে। আর আমি আমার মায়ের শপথকে ভঙ্গ করে ফেলব। একথা শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, শুন, নিশ্চয় তুমি জান যে, কুরাইশদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী। সুতরাং আমার সম্পদের অর্ধেক তুমি নিয়ে যাও। তারপরেও তুমি মক্কায় যাওয়া থেকে বিরত থাক। কিন্তু তারপরেও আইয়াশ থামেননি। তিনি তাদের সাথে চলে গেলেন। (আখবারু ওমর লি আলী আন তানতাবী, পৃঃ ২৪, ২৫)

১১
৮. প্রকাশ্যে হিজরত করলেন ওমর (রাঃ)
ওমরের হিজরত ও অন্যদের হিজরতের মধ্যে একটা পার্থক্য ছিল। অন্যদের হিজরাত ছিল চুপে চুপে। সকলের অগোচরে। আর ওমরের হিজরত ছিল প্রকাশ্যে। তার মধ্যে ছিল কুরাইশদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ও বিদ্রোহের সুর। মক্কা থেকে মদীনায় যাত্রার পূর্বে তিনি প্রথমে কাবা তাওয়াফ করলেন। তারপর কুরাইশদের আড্ডায় গিয়ে ঘোষণা করলেন, আমি মদীনায় চলছি। কেউ যদি তার মাকে পুত্রশোক দিতে চায়, সে যেন এ উপত্যাকার অপর প্রান্তে আমার মুখখামুখি হয়। এমন একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি সোজা মদীনার পথ ধরলেন। কিন্তু কেউ এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের দুঃসাহস করলো না। (সহীহ আত তাওসীক ফী সীরাতিল ফারুক, পৃঃ ৩০)

১২
৯. মদীনাবাসী ও ওমর (রাঃ)-এর আগমন
বারা ইবনে আযীব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সাহাবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে আগমন করেন মাসআব ইবনে উমায়ের ও ইবনে উম্মে মাকতুম। তারা দু’জন কুরআন তেলাওয়াত করতে লাগলেন। এরপর আম্মার, বিলাল এবং সা’য়াদ আগমন করলেন। এরপর আসলেন ওমর। এরপর আগমন করলেন রাসূল (সাঃ)। আমি মদীনাবাসীদেরকে দেখলাম যে, তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর আগমনের ফলে অত্যধিক আনন্দিত হয়েছে। যখন তিনি আগমন করলেন তখন আমি পাঠ করলাম–

سَبِّحِ اسۡمَ رَبِّکَ الۡاَعۡلَی ۙ ﴿۱﴾

“তুমি তোমার সর্বোচ্চ প্রতিপালকের নামের ঘোষণা করো।” (সূরা আ’লা : আয়াত- ১)

১৩
১০. এক মাস অসুস্থ ছিলেন
মুসলিম জাহানের খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন রাত্রে লোকজনের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেন। এক পর্যায়ে তিনি মুসলমানদের এমন একটি বাড়ির নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন যে, সেখানে এক ব্যক্তি নামাযের মধ্যে নিচের আয়াতগুলো তেলাওয়াত করতেছিলেন–

وَ الطُّوۡرِ ۙ ﴿۱﴾ وَ کِتٰبٍ مَّسۡطُوۡرٍ ۙ ﴿۲﴾ فِیۡ رَقٍّ مَّنۡشُوۡرٍ ۙ ﴿۳﴾ وَّ الۡبَیۡتِ الۡمَعۡمُوۡرِ ۙ ﴿۴﴾ وَ السَّقۡفِ الۡمَرۡفُوۡعِ ۙ ﴿۵﴾ وَ الۡبَحۡرِ الۡمَسۡجُوۡرِ ۙ ﴿۶﴾ اِنَّ عَذَابَ رَبِّکَ لَوَاقِعٌ ۙ ﴿۷﴾

১. শপথ তূর পর্বতের।

২. শপথ কিতাবের, যা লিখিত আছে,

৩. খোলা পত্রে;

৪. শপথ বায়তুল মা’মূরের,

৫. শপথ সমুন্নত আকাশের,

৬. এবং শপথ উদ্বেলিত সমুদ্রের

৭. তোমার প্রতিপালকের আযাব অবশ্যম্ভবী। (সূরা তুর : আয়াত-১-৬)

এ আয়াতগুলোর তিলাওয়াত শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কাবার রবের কসম! নিশ্চয় এটা (আল্লাহর আযাব) সত্য। এরপর তিনি তার গাধা থেকে নেমে পড়লেন এবং একটি দেয়ালের সাথে ভর দিয়ে ক্ষণিকক্ষণ অবস্থান করলেন। পরে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রায় এক মাস অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু কেউ তার রোগ ধরতে পারেন নি। (আর রিতু ওয়াল বুকাউ-১৬৬)

১৪
১১. কুরআনের সাথে ওমর (রাঃ) এর ঐক্যমত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তিনটি বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত মহান আল্লাহর ওহীর সিদ্ধান্তের অনুরূপ হয়েছে। অথবা তিনি বলেছেন (রাবীর সন্দেহ), আমার রব আমার তিনটি সিদ্ধান্তের (সাথে মতৈক্য পোষণ করে) ওহী নাযিল করেছেন। যথা:

১. আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আপনি যদি মাকামে ইবরাহীমে [যেখানে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নামায পড়েছিলেন] নামায পড়তেন (তাহলে কতই না ভালো হতো)! অতঃপর মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে আয়াত অবতীর্ণ করেন–

وَ اِذۡ جَعَلۡنَا الۡبَیۡتَ مَثَابَۃً لِّلنَّاسِ وَ اَمۡنًا ؕ وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰہٖمَ مُصَلًّی ؕ وَ عَہِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰہٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَہِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ ﴿۱۲۵﴾

“মাকামে ইবরাহীমকে তোমরা নামাযেরস্থায়ী জায়গা করে লও।” (সূরা বাকারা : আয়াত-১২৫)

২. আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে (উম্মুল মু’মিনীনের ঘরে) নেককার বদ্‌কার সব রকমের লোকই আসা যাওয়া করে। তাই আপনি যদি উম্মুল মু’মিনীনকে পর্দা করার আদেশ করতেন (তাহলে কতই না উত্তম হতো)! এর পরই আল্লাহ তাআলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।

৩. তিনি বলেন, এক সময় আমি জানতে পারলাম, নবী (সাঃ) তাঁর কোন স্ত্রীকে তিরষ্কার করেছেন এবং তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই আমি উম্মুল মু’মিনীনের কাছে গিয়ে বললাম, আপনারা নবীকে নারাজ করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় আল্লাহ তাঁর রাসূলকে আপনাদের পরিবর্তে আরো অতি উত্তম বিবি প্রদান করতে পারেন। এরপরই মহান আল্লাহ ওহী নাযিল করেন–

عَسٰی رَبُّہٗۤ اِنۡ طَلَّقَکُنَّ اَنۡ یُّبۡدِلَہٗۤ اَزۡوَاجًا خَیۡرًا مِّنۡکُنَّ مُسۡلِمٰتٍ مُّؤۡمِنٰتٍ قٰنِتٰتٍ تٰٓئِبٰتٍ عٰبِدٰتٍ سٰٓئِحٰتٍ ثَیِّبٰتٍ وَّ اَبۡکَارًا ﴿۵﴾

“এ কোন বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে, তিনি [নবী (সাঃ)] যদি তোমাদেরকে তালাক দিয়ে দেন, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে আরো অতি উত্তম মুসলিমা মু’মিনা, অনুগত ও ধৈর্য ধারণকারিণী, তাওবাহ্ কারিণী, ইবাদাতকারিণী, রোযাদার, সাইয়্যিবা (যুবতী) ও কুমারী দান করবেন।” (সূরা আত তাহরীম- ৫; বুখারী, ৪৪৮৩)

১৫
১২. মদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে ওমর (রাঃ) এর ঐক্যমত
আবি মায়সারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! মদের ব্যাপারে আপনি আমাদেরকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিন। কারণ, তা সম্পদ এবং জ্ঞান বিবেককে নষ্ট করে দিচ্ছে। তখন সূরা বাকারার ২১৯ নং আয়াত নাযিল হয়।

یَسۡئَلُوۡنَکَ عَنِ الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِؕ قُلۡ فِیۡہِمَاۤ اِثۡمٌ کَبِیۡرٌ وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ ۫ وَ اِثۡمُہُمَاۤ اَکۡبَرُ مِنۡ نَّفۡعِہِمَا ؕ وَ یَسۡئَلُوۡنَکَ مَا ذَا یُنۡفِقُوۡنَ ۬ؕ قُلِ الۡعَفۡوَؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ تَتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱۹﴾ۙ

লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে; আপনি বলে দিন, এ দুটির মধ্যে বড় গুনাহ রয়েছে। আর মানুষের মধ্যে কিছুটা উপকারী। তবে এ দুটোর অপরাধ উপকারের চেয়ে অনেক বড়।

এরপর রাসূল (সাঃ) ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে ডেকে এ আয়াতটি পড়ে শুনালেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহ! মদের ব্যাপারে আপনি আমাদেরকে আরো স্পষ্ট নির্দেশনা দান করুন। তখন সূরা নিসার ৪৩ নং আয়াত নাযিল হয়।

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡرَبُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنۡتُمۡ سُکٰرٰی حَتّٰی تَعۡلَمُوۡا مَا تَقُوۡلُوۡنَ وَ لَا جُنُبًا اِلَّا عَابِرِیۡ سَبِیۡلٍ حَتّٰی تَغۡتَسِلُوۡا ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَفُوًّا غَفُوۡرًا ﴿۴۳﴾

হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার।

এরপর রাসূল (সাঃ) ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে ডেকে এ আয়াতটি পড়ে শুনালেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহ! মদের ব্যাপারে আপনি আমাদেরকে আরো স্পষ্ট নির্দেশনা দান করুন। তখন সূরা মায়েদার ৯০ নং আয়াত নাযিল হয়।

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۹۰﴾

হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে ডেকে রাসূল (সাঃ) এ আয়াত শুনালেন। যখন তিনি শেষ পর্যন্ত পৌঁছলেন তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহ! এবার যথেষ্ট হয়েছে। (সুনানে নাসাঈ, ২/৩২৩)

১৬
১৩. অনুমতির ব্যাপারে ঐক্যমত
দুপুরের সময় রাসূল (সাঃ) এক গোলামকে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট প্রেরণ করলেন। গোলাম এসে তাকে ডাকতে লাগল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। আর তার শরীরের কিছু কিছু অঙ্গ খোলা ছিল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহ! ঘুমের সময় অন্যের প্রবেশকে হারাম করে দিন। অন্য বর্ণনায় আছে যে, তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মন চায় যে, বিশেষ সময়ে ঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়ার বিধান যদি আল্লাহ নাযিল করতেন। তখন নিচের আয়াতটি নাযিল হয়।

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لِیَسۡتَاۡذِنۡکُمُ الَّذِیۡنَ مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ وَ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَبۡلُغُوا الۡحُلُمَ مِنۡکُمۡ ثَلٰثَ مَرّٰتٍ ؕ مِنۡ قَبۡلِ صَلٰوۃِ الۡفَجۡرِ وَ حِیۡنَ تَضَعُوۡنَ ثِیَابَکُمۡ مِّنَ الظَّہِیۡرَۃِ وَ مِنۡۢ بَعۡدِ صَلٰوۃِ الۡعِشَآءِ ؕ ثَلٰثُ عَوۡرٰتٍ لَّکُمۡ ؕ لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ وَ لَا عَلَیۡہِمۡ جُنَاحٌۢ بَعۡدَہُنَّ ؕ طَوّٰفُوۡنَ عَلَیۡکُمۡ بَعۡضُکُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۵۸﴾

হে মুমিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসিগণ এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিন সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের সালাতের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখো তখন এবং ইশার সালাতের পর; এ তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়। এ তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের এককে অপরের নিকট তো যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তার নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর- ৫৮; আখবা ওমর লি আলী আত তানতাবী, পৃঃ ৩৮১)

১৭
১৪. মুনাফিকদের জানাযা না পড়া
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর মৃত্যুর পর তার সন্তান আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আসলেন এবং তাঁর পিতার কাফনের জন্য রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জামাটি চাইলেন। তিনি তাঁকে জামাটি দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি রসূলুল্লাহ কে তাঁর পিতার সালাতে জানাযা আদায়ের জন্যে অনুরোধ করলেন। রসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জানাযার সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ালেন। এমতাবস্থায় ‘ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাপড় টেনে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার জানাযা কি আপনি আদায় করবেন? আর আল্লাহ তা’আলা তার সালাতে জানাযা আদায় করতে আপনাকে বারণ করেছেন।

এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, এ ব্যাপারে তো আল্লাহ তা’আলা আমাকে এ কথা বলে স্বাধীনতা দিয়েছেন যে, “আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা না করুন- উভয়ই সমান, আপনি সত্তরবারও যদি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন- সবই সমান। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : আমি সত্তরের উপরে বাড়িয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রসূল! সে তো কপট ছিল। এরপরও রসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সালাতে জানাযা আদায় করলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করলেন–

وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤی اَحَدٍ مِّنۡہُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمۡ عَلٰی قَبۡرِہٖ ؕ اِنَّہُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ مَا تُوۡا وَ ہُمۡ فٰسِقُوۡنَ ﴿۸۴﴾

“তাদের মাঝে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনো তার জন্যে জানাযার সলাত আদায় করবেন না এবং তার কবরের পাশেও দণ্ডায়মান হবেন না।” (সূরাহ আত্ তাওবাহ্ - ৮৪; মুসলিম-৬৯২০)

১৮
১৫. এটা উপঢৌকন যা আল্লাহ তোমাদের প্রতি দান করেছেন
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কোন কোন আয়াতের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করতেন। আবার কোন কোন সময় যে সকল সাহাবী আয়াতের তাফসীর জানতেন। তাদেরকেও প্রশ্ন করতেন এবং সেই তাফসীর মুখস্ত করতেন এবং অন্যদেরকেও শিক্ষা দিতেন। ইয়া’আলা ইবনে উমাইয়া বলেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে প্রশ্ন করলাম যে, এ আয়াত সম্পর্কে–

وَ اِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِی الۡاَرۡضِ فَلَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَقۡصُرُوۡا مِنَ الصَّلٰوۃِ ٭ۖ اِنۡ خِفۡتُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنَکُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ؕ اِنَّ الۡکٰفِرِیۡنَ کَانُوۡا لَکُمۡ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا ﴿۱۰۱﴾

তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে তখন যদি তোমাদের আশঙ্কা হয়, কাফিররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তবে সালাত সংক্ষিপ্ত করলে তোমাদের কোন দোষ নেই। নিশ্চয়ই কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা নিসা : আয়াত-১০১)

অথচ এখন তো মানুষ নিরাপদ হয়ে গেছে। শত্রুর ভয় নেই। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, একথা শুনে আমি অবাক হলাম। পরে রাসূল (সাঃ) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটা একটা উপঢৌকন যা আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে দান করেছেন। সুতরাং তোমরা তা গ্রহণ করো। (আহমদ)

১৯
১৬. নিজের মামাকে হত্যা করেন
সাঈদ ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি দেখতে পারছি যে, মনে হয় তুমি যেন কোন ব্যাপারে সন্দেহ করছ। হয়তোবা তুমি মনে করছে যে, বদরের যুদ্ধে আমি তোমার পিতাকে হত্যা করেছি। যদি আমি তাকে হত্যা করে থাকতাম, তবে আমি তোমার কাছে কোন ওজর পেশ করতাম না। তবে জেনে রাখ, সেদিন আমি আমার মামা আস ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরাকে হত্যা করেছি। (ইবনে হিশাম, ২/৭২)

২০
১৭. তুমি কি এমন লোকদের সাথে কথা বলছ যারা একেবারে পঁচে গেছে?
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী এক স্থানে ছিলাম। তখন আমরা চাঁদ দেখতে পেলাম। আর আমি খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী। তাই চাঁদ দেখতে পেলাম। পরে আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বললাম, আপনি কি চাঁদ দেখতে পাচ্ছেন? তিনি বললেন, অচিরেই আমি দেখতে পাব। এরপর তিনি বদরের লোকদের সম্পর্কে আলোচনা করতে শুরু করলেন এবং বললেন, রাসূল (সাঃ) গতকালকে বদরে নিহতদের অবস্থা আমাদেরকে দেখিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, এটা ইনশাল্লাহ আগামীকাল অমুকের জায়গা। এটা ইনশাল্লাহ আগামীকাল অমুকের জায়গা। এরপর বদরে নিহতদেরকে ঐ জায়গায় এনে একটি কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করা হলো। পরে রাসূল (সাঃ) যখন তাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বললেন, হে অমুক! হে অমুক! তোমাদের রব যে ওয়াদা দিয়েছেন তা কি তোমরা পেয়েছ। আমি তো আমার রব যা ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পেয়েছি। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এমন লোকদের সাথে কথা বলছেন? যারা পচে গলে যাচ্ছে। তিনি উত্তর দিলেন, আমার কথা তারা তোমাদের চেয়ে আরো ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু তারা কোন উত্তর দিতে সক্ষম নয়। (মুসনাদে আহমদ)

২১
১৮. ওমর (রাঃ) এবং উমায়ের ইবনে ওয়াহাব (রাঃ)
মদীনার দিকে রওয়ানা হয়ে এক সময় সে মদীনায় পৌঁছালো। মসজিদে নববীর সামনে সে তার উট বসাচ্ছিল, এমন সময় ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দৃষ্টি তার ওপর পড়লো। তিনি মুসলমানদের সমাবেশে বদরের যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত সম্মান সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। উমায়েরকে দেখা মাত্র তিনি বললেন, এই নরাধম আল্লাহর দুশমন, নিশ্চয়ই তুমি কোন খারাপ উদ্দেশ্যে এসেছ। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এরপর আল্লাহর রাসূলের সামনে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর দুশমন উমায়ের তরবারি ঝুলিয়ে এসেছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, ওকে আমার কাছে নিয়ে এসো। উমায়ের এলে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার তলোয়ার তারই গলার কাছে চেপে ধরলেন।

কয়েকজন আনসারকে বললেন, তোমরা আল্লাহর রাসূলের কাছে ভেতরে যাও, সেখানে বসে থাক। প্রিয়নবী (সাঃ) এর বিরুদ্ধে এই খবিসের তৎপরতা সম্পর্কে সজাগ থাকবে। কেননা একে বিশ্বাস করা যায় না। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উমায়েরকে মসজিদের ভেতরে নিয়ে যান। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উমায়েরকে যেভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন সেদিকে লক্ষ্য করে রাসূল (সাঃ) বললেন, ওকে বলো, আপনাদের সকাল শুভ হোক। রাসূল (সাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমন এক সম্বোধন শিক্ষা দিয়েছে, যা তোমাদের কথা থেকে উত্তম। এটি হচ্ছে আসসালামু আলাইকুম। এটি বেহেশতীদের সম্বোধন। এরপর রাসূল (সাঃ) বললেন, তাহলে তোমার গলায় তরবারি কেন? সে বলল, আপনাদের কাছে যে বন্দী রয়েছে সে ব্যাপারে এসেছি। আপনারা আমার বন্দীর ব্যাপারে অনুগ্রহ করুন। রাসূল (সাঃ) বললেন, তাহলে তোমার গলায় তরবারি কেন? সে বলল, আল্লাহ এই তরবারির নিপাত করুন। এটি কি আর আমাদের কোন কাজে আসবে?

রাসূল (সাঃ) বললেন, সত্যি করে বলো কেন এসেছ? সে বলল, বললাম তো, যুদ্ধবন্দী সম্পর্কে আলোচনার জন্যে এসেছি। রাসূল (সাঃ) বললেন, না তা নয়। তুমি এবং সফওয়ান কাবার হাতীমে বসেছিলে এবং নিহত কোরাইশদের লাশ কুয়ায় ফেলার প্রসঙ্গে আফসোস করছিলে। এরপর তুমি বলেছিলে, আমি যদি ঋণগ্রস্ত না হতাম এবং আমার যদি পরিবার পরিজন না থাকতো, তবে আমি এখান থেকে যেতাম এবং মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করতাম। একথা শোনার পর সফওয়ান তোমার ঋণ এবং পরিবার পরিজনের দায়িত্ব নিয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে যে, তুমি মুহাম্মদকে হত্যা করবে।

কিন্তু মনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা আমার এবং তোমাদের মধ্যে অন্তরায় হয়ে আছেন। উমায়ের বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের কাছে আকাশের যে খবর নিয়ে আসতেন এবং আপনার উপর যে ওহী নাযিল হতো, সেসব আমরা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু এটাতো এমন ব্যাপার যে, আমি এবং সফওয়ান ছাড়া সেখানে অন্য কেউ উপস্থিত ছিল না। কাজেই আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলেছি যে, এই খবর আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ আপনাকে জানাননি। সেই আল্লাহর জন্যে সকল প্রশংসা যিনি আমাকে ইসলামের হেদায়াত দিলেন। রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের ভাইকে দ্বীন শেখাও, কুরআন পড়াও এবং তার বন্দীকে মুক্ত করে দাও। (আস সীরাতুন নাবুবীয়্যাহ, পৃঃ ২৬০)।

২২
১৯. আমাদের নিহতরা জান্নাতে এবং তোমাদের নিহতরা জাহান্নামে
কুরাইশ সেনাধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান গিরিপথের সন্নিকটে পৌঁছে জিজ্ঞেস করলেন, মুহাম্মদ (সাঃ) কি ঐ দলে আছেন? রাসূল (সাঃ)-এর ইঙ্গিতে কেউ জবাব দিলেন না। অতঃপর আবু সুফিয়ান হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নাম উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করলেন, এরা দুজনও কি ওখানে আছেন? এবার ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আর নীরব থাকতে পারলেন না। চিৎকার করে বললেন, হে আল্লাহর দুশমন! আমরা সবাই বেঁচে আছি। আবু সুফিয়ান বলল, “ধাআল হুবুল”- হোবল দেবতা বুলন্দ হোক। রাসূল (সাঃ) ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন, জবাব দাও: আল্লাহ তায়ালা ওয়া আজাল” - আল্লাহ বুলন্দ, উন্নত ও শ্রেষ্ঠ।

আবু সুফিয়ান বলল, আমাদের উজ্জা আছে; কিন্তু তোমাদের কোন উজ্জা নেই। তখন নবী (সাঃ) বললেন, তার উত্তর দাও। তিনি বললেন, আমি কি বলব? রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমরা বল যে, আল্লাহ আমাদের অভিভাবক; কিন্তু তোমাদের কোন অভিভাবক নেই। আবু সুফিয়ান বলল, যুদ্ধ হচ্ছে রশ্মি। বদরের যুদ্ধের বদলা একদিন নেয়া হবে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, আমাদের মৃতরা জান্নাতে এবং তোমাদের মৃতরা যাবে জাহান্নামে। তখন আবু সুফিয়ান এসে বলল, আমরা কি মুহাম্মাদকে হত্যা করেছি? ওমর বললেন, না। তিনি এখনও তোমার কথা শুনতে পাচ্ছেন। তখন আবু সুফিয়ান বলল, ইবনে কামি’আ থেকে তুমি আমার নিকট অধিক সত্যবাদী। কারণ সে বলেছে, আমি মুহাম্মাদকে হত্যা করেছি। (আত তাওছিকু ফি সীরাতিন ওয়া হায়াতিল ফারুক, পৃঃ ১৮৯)

২৩
২০. নামাযের প্রতি আগ্রহ
জাবির ইবনে আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধের দিন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু সূর্য ডুবার পর রাসূল (সাঃ)-এর কাছে হাযির হলেন এবং কুরাইশ কাফিরদেরকে গালিগালাজ করতে লাগলেন। তারপর বললেন: আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমি আজ আসরের নামায আদায় করতে পারিনি। এমনকি এখন সূর্য অস্ত যায় যায় অবস্থা। নবী (সাঃ) বললেন: আল্লাহর শপথ! আমিও তো আসরের নামায আদায় করিনি। অতঃপর আমরা “বুত্‌হান” নামক ময়দানে চলে গেলাম। নবী তথায় সালাতের জন্য উযূ করেন। আমরাও সালাতের জন্য উযূ করলাম। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর নবী (সাঃ) (আমাদেরকে নিয়ে জামা’আতে) আসরের সালাত, তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। (বুখারী হাদীস-৫৯৬)

২৪
২১. আমাকে কুরাইশদের নিকট পাঠাবেন না
হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন রাসূল (সাঃ) মক্কায় প্রেরণ করার জন্য ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে ডেকে পাঠালেন। তিনি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নিজের থেকে কুরাইশদেরকে ভয় পাচ্ছি। আর বনী আদি ইবনে কাব এর পরিবারের কেউই মক্কায় নেই যে, আমাকে সাহায্য করবে। আর আপনি অবশ্যই জানেন যে, আমার সাথে কুরাইশদের শত্রুতা কেমন। তাই আমি আপনাকে এমন ব্যক্তির কথা বলছি, যিনি এ ব্যাপারে আমার চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবেন। তিনি হচ্ছেন, উসমান ইবনে আফফান। এরপর রাসূল উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে ডাকলেন। তখন রাসূল (সাঃ) উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কে আবু সুফিয়ান এবং অন্যান্য কুরাইশদের নিকট এ মর্মে সংবাদ দিয়ে পাঠালেন যে, তুমি তাদেরকে বলবে যে, আমরা যুদ্ধ করতে আসিনি। আমরা কেবল আল্লাহর ঘর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করেছি। (সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম, ২২৮)

২৫
২২. রাসূল আমাকে এ নির্দেশ দেননি
সপ্তম হিজরীর শাবান মাসে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে রাসূল (সাঃ) ত্বোবার দিকে পাঠালেন। এটা ছিল ছারিয়া তুরবা। এ ছারিয়া তিরিশ জন সাহাবা। তারা রাতের বেলা সফর এবং দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকতেন। বনু হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা এ খবর পাওয়ার পর পালিয়ে যায়। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং তার সঙ্গীরা তখন মদীনায় ফিরে আসেন। এ সময় দালাল হেলালী ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বললেন, তুমি কি এখন খাশআমের দিকে অভিযান পরিচালনা করবে? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমাকে রাসূল (সাঃ) এ নির্দেশ দেননি। তিনি কেবল আমাকে হাওয়াযিনকে হত্যা করার জন্য তোরবার দিকে পাঠিয়েছেন। (ওমর ইবনুল খাত্তাব লিস সালাবী, পৃঃ ৫২)

২৬
২৩. আমাকে ছাড়ুন; এই মুনাফিককে আমি হত্যা করব
হুনাইনের যুদ্ধ থেকে মুসলমানরা যখন মদীনায় ফিরে আসলেন, তখন তারা যিররানা নামক স্থান দিয়ে গমন করছিলেন। তখন রাসূল (সাঃ) বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাপড় থেকে রৌপ্য নিচ্ছিলেন এবং তা মানুষদের নিকট বিতরণ করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে রাসূল (সাঃ) কে বলল, হে মুহাম্মদ! তুমি ইনসাফ করো। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার ধ্বংস হোক; আমি যদি ইনসাফ না করি তবে কে করবে? আমি যদি ইনসাফ না করি তবে আমিই তো ক্ষতিগ্রস্ত হব। এ কথা শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি এই মুনাফিককে হত্যা করব না? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, না, এ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। কারণ, তখন মানুষ এ কথা বলাবলি করবে যে, আমি আমার সাথীদেরকে হত্যা করি। এই লোক এবং তার সাথীরা কুরআন পাঠ করে অথচ কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিচে পৌঁছায় না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যায় যেভাবে তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। (মুসলিম হাদীস-১০৬৩)

২৭
২৪. ওমর এবং সুহাইল ইবনে আমর
বদরের যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে সোহায়েল ইবনে আমরও ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান বক্তা। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহ রাসূল! সোহায়েল ইবনে আমরের সামনে দুটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা করুন, এতে তার কথা মুখে জড়িয়ে যাবে। এতে সে সুবক্তা হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে সুবিধা করতে পারবে না। রাসূল (সাঃ) এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। কেননা মানুষের অঙ্গহানি করা ইসলামী পরিভাষায় মোছলা করার শামিল। আমি নবী হয়েও যদি এ কাজ করি তবে আল্লাহ আমাকেও এ শাস্তি দেবেন, তবে আমি আশা করি সে এমন স্তরে পৌঁছাবে তখন তুমি তার নিন্দা করবে না। পরে যখন রাসূল (সাঃ)-এর ইন্তিকাল হলো তখন কিছু মক্কাবাসী ইসলাম থেকে ফিরে যেতে চাচ্ছিল তখন সোহায়েল দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করে বললেন, নবীর মৃত্যু ইসলামকে আরো শক্তিশালী করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি দ্বীন ত্যাগ করবে আমরা তাকে হত্যা করব। এরপর লোকজন ইসলাম ত্যাগ করার চিন্তা থেকে সরে আসল। (ইবনে হিশাম, ২/৩৩৭)

২৮
২৫. কেন আমরা নত হব?
হুদায়বিয়াতে যখন উভয় পক্ষ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হলো। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর প্রকৃতিগত আত্মমর্যাদা চুক্তির এই শর্তে আহত ও বিক্ষুব্ধ হলো। তিনি নিজে রাসূল (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যেখানে ন্যায় পথে রয়েছি সেখানে অন্যায়ের সাথে এভাবে নত হয়ে চুক্তি করছেন কেন? রাসূল (সাঃ) জবাব দিলেন, আমি আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে আমি চুক্তি করতে পারি না। অতঃপর ওমর হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে একথা আলোচনা করেন। তিনিও একই জবাব দেন। পরে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের আলোচনায় সজ্জিত হলেন এবং কাফফারা স্বরূপ তিনি কিছু খয়রাত দান করলেন। রোযা রাখলেন, নামায পড়লেন এবং গোলাম আযাদ করলেন (আবারু ওমর লিত তানতাবী, ৩৪৫)

২৯
২৬. আবু সুফিয়ান আল্লাহর দুশমন
মাররুজ জাহরানে অবতরণের পর হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল (সাঃ) এর সাদা খচ্চরের পিঠে আরোহণ করে ঘোরাফেরা করতে বের হলেন। তিনি চাচ্ছিলেন যে, কাউকে পেলে মক্কায় খবর পাঠাবেন, যাতে করে রাসূল (সাঃ)-এর মক্কায় প্রবেশের আগেই কোরাইশরা তাঁর কাছে এসে নিজেদের নিরাপত্তার আবেদন জানায়। এদিকে আল্লাহ তায়ালা, কোরাইশদের কাছে কোন প্রকার খবর পৌঁছা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ কারণে মক্কাবাসীরা কিছুই জানতে পারেনি। তবে তারা ভীতি-বিহ্বলতার মধ্যে এবং আশঙ্কার মধ্যে দিন যাপন করছিল। আবু সুফিয়ান বাইরে এসে কোন নতুন খবর জানা যায় কিনা সে চেষ্টা করছিল। সে সময় তিনি হাকিম বিন হাজাম এবং বুদাইল বিন ওরাকাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন খবর সংগ্রহের চেষ্টায় বের হয়ে পড়লেন।

হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি হযরত রাসূল (সাঃ)-এর খচ্চরের পিঠে সওয়ার হয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আবু সুফিয়ান এবং বুদাইল ইবনে ওরাকার কথা শুনতে পেলাম। আবু সুফিয়ান বলছিলেন, আল্লাহ শপথ! আমি আজকের মতো আগুন এবং সৈন্যবাহিনী অতীতে আর কখনো দেখিনি। বুদাইল ইবনে ওরাকা বলল, আল্লাহ শপথ! ওরা হচ্ছে বনু খোযাআ। যুদ্ধ ওদের লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। আবু সুফিয়ান বললেন, এতো আগুন এবং এতো বিরাট বাহিনী বনু খোয়াআর থাকতেই পারে না। হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আবু সুফিয়ানের কণ্ঠস্বর শুনে বললাম, আবু হানজালা নাকি? আবু সুফিয়ান আমার কণ্ঠস্বর চিনে বললেন, আবুল ফযল নাকি? আমি বললাম, হ্যাঁ।

আবু সুফিয়ান বললেন, কি ব্যাপার? আমার পিতামাতা তোমার জন্যে কোরবান হোক। আমি বললাম, রাসূল (সাঃ) সদলবলে এসেছেন। হায়রে কোরাইশদের সর্বনাশা অবস্থা। সুফিয়ান বললেন, এখন কি উপায়? আমার পিতামাতা তোমার জন্যে কোরবান হোক। আমি বললাম, ওরা তোমাকে পেলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবে। তুমি এই খচ্চরের পিছনে উঠে বস। আমি তোমাকে রাসূল (সাঃ)-এর কাছে নিয়ে যাব। তোমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেব। আবু সুফিয়ান তখন খচ্চরে উঠে আমার পিছনে বসলেন। তার অন্য দুজন সাথী ফিরে গেল। হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি আবু সুফিয়ানকে নিয়ে চললাম, কোন জটলার কাছে গেলে লোকেরা বলতো, কে যায়? কিন্তু রাসূল (সাঃ)-এর খচ্চরের পিঠে আমাকে দেখে বলত, ইনি রাসূল (সাঃ)-এর চাচা, তারই খচ্চরের পিঠে রয়েছেন। ওমর ইবনে খাত্তাবের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তিনি বললেন, কে? একথা বলেই আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার পিছনে আবু সুফিয়ানকে দেখে বললেন, আবু সুফিয়ান? আল্লাহর দুশমন? আল্লাহ প্রশংসা করি, কোন প্রকার সংঘাত ছাড়াই আবু সুফিয়ান আমাদের কব্জায় এসে গেছে। একথা বলেই ওমর রাসূল (সাঃ)-এর কাছে ছুটে গেলেন।

আমিও খচ্চরকে জোরে তাড়িয়ে নিলাম। খচ্চর থেকে নেমে রাসূল (সাঃ) এর কাছে গেলাম। ইতিমধ্যে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এলেন। তিনি এসেই বললেন, হে রাসূল (সাঃ) ওই দেখুন আবু সুফিয়ান। আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে রাসূল (সাঃ) আমি সুফিয়ানকে নিরাপত্তা দিয়েছি। পরে আমি রাসূল (সাঃ)-এর মাথা স্পর্শ করে বললাম, আল্লাহ শপথ! আজ রাতে আমি ছাড়া আপনার সাথে কেউ গোপন কথা বলতে পারবে না। আবু সুফিয়ানকে হত্যা করার অনুমতির জন্যে ওমর বারবার আবেদন জানালে আমি বললাম, থামো ওমর। আবু সুফিয়ান যদি বনি আদী ইবনে কা’ব এর লোক হতো, তবে এমন কথা বলতে না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আব্বাস থাম। আল্লাহর শপথ! তোমার ইসলাম গ্রহণ আমার কাছে আমার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় এবং এর একমাত্র কারণ এই যে, রাসূল (সাঃ)-এর কাছে তোমার ইসলাম গ্রহণ আমার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়। (আস সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ লি আবি ফারিস, পৃঃ ৫১৯-৫২০)

৩০
মদীনা মুনাওয়ারায় ওমর (রাঃ)
২৭. তোমরা উঠে পর্দা কর

সা’দ ইবনু আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, “ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল (সাঃ) এর কাছে আগমন করার অনুমতি চাইলেন। তখন কয়েকজন কুরাইশ মহিলা তার সঙ্গে আলাপ করছিল। তারা খুব উচ্চৈঃস্বরে বেশি পরিমাণ (অর্থ) দাবি করছিল। যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু অনুমতি চাইলেন, তখন তারা উঠল, এবং ত্বরিত পর্দার আড়ালে চলে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্মিতহাস্যে অনুমতি দিলে ‘ওমর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আল্লাহ আপনাকে স্মিতহাস্য রাখুন। তিনি বললেন, আমার নিকট যেসব মহিলা ছিল, তাদের বিষয়ে আমি খুবই আশ্চর্যান্বিত হয়েছি।

যখনই তারা তোমার আওয়াজ শুনেছে তখনই পর্দার আড়ালে চলে গেছে। ওমর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমার তুলনায় আপনাকে তাদের ভয় করাই অধিক কর্তব্য ছিল। অতঃপর ওমর মহিলাদের সম্বোধন করে বললেন, হে নিজেদের দুশমনেরা! তোমরা আমাকে ভয় কর, অথচ রাসূলুল্লাহকে ভয় কর না? তারা উত্তর দিল, হ্যাঁ! তুমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর তুলনায় বেশি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয় সম্পন্ন ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, সে সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ! শাইত্বান কখনো কোন পথে তোমাকে চলতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সে পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরে। (বুখারী, হাদীস-৩৬৮৩)

৩১
২৮. এত বড় শক্তিশালী যুবক আমি আর দেখিনি
আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেন, এক দিন আমি স্বপ্নে দেখি একটি কূপের নিকট দাঁড়িয়ে উটকে পানি পান করাবার বালতি দিয়ে আমি ঐ কূপ থেকে পানি টেনে তুলছি। এ সময় আবু বক্‌র রাদিয়াল্লাহু আনহু এলেন এবং কিছুটা দুর্বলতার সঙ্গে এক কি দু’বালতি পানি টেনে তুললেন। আর এ দুর্বলতার জন্য আল্লাহ তাকে মাফ করবেন। তারপর ‘ওমর ইবনুল খাত্তাব এলেন। তখন ঐ বালতিটা আয়তনে বেড়ে গেল। তিনি এতটা শক্তির সাথে পানি তুলতে লাগলেন যে, কোন বাহাদুর লোককে আমি তার মতো শক্তি সহকারে আশ্চর্যজনক কাজ করতে দেখিনি। তিনি এত পানি তুললেন যার ফলে লোকেরা অত্যন্ত তৃপ্তির সঙ্গে পানি পান করল এবং উটকে পরিতৃপ্ত করে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল। ইবনে জুবাইর বলেন, العبقري অর্থ- মূল্যবান সুন্দর বিছানা। ইয়াহইয়া বলেন, الززابى হলো চিকন সূতার তৈরি মখমলের বিছানা। مبثوثة অর্থাৎ, প্রসারিত। (বুখারী, হাদীস-৩৬৮২)

৩২
২৯. ওমর (রাঃ)-এর মর্যাদা
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, আমি নিদ্রার মধ্যে স্বপ্নে দেখলাম, আমি যেন বেহেশতে প্রবেশ করেছি। হঠাৎ সেখানে আমার দৃষ্টি পড়ল একজন নারী একটি দালানের পাশে বসে অযূ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ দালানটি কার? ফেরেশতারা বললেন, “ওমরের। তখন দালানে প্রবেশের সখ হলেও ‘ওমরের মর্যাদাবোধের কথা আমার মনে পড়ে গেল। তাই আমি ফিরে চলে এলাম। এ কথা শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কেঁদে ফেললেন এবং বললেন : হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আপনার কাছেও মর্যাদাবোধ দেখাতে পারি? (বুখারী, হাদীস-৩৬৮০)

৩৩
৩০. রাসূল (সাঃ)-এর ওফাতের সময়
আবদুল্লাহ ইবনে যামা’আ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন রাসূল অন্তিম শয্যায় শায়িত তখন আমি মুসলমানদের সাথে তার কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু কে নামাযের জন্য ডাকলেন এবং বললেন, মানুষদেরকে বল, কেউ যেন ইমামতি করে নামায আদায় করে নেয়। আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে পেলাম। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু অনুপস্থিত ছিলেন। আমি বললাম, হে ওমর! আপনি মানুষদের নামায পড়ান। পরে তিনি অগ্রসর হলেন এবং তাকবীর দিলেন, যখন রাসূল তার আওয়াজ শুনলেন, আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর আওয়াজ অনেকটা বড় ছিল।

তখন বললেন, আবু বকর কোথায়? আল্লাহ এবং মুসলমানরা এটা অপছন্দ করেন, আল্লাহ এবং মুসলমানরা এটা অপছন্দ করেন। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট লোক পাঠালেন। এরপর সালাত পড়াতে আসলেন এবং পুনরায় সালাত পড়ালেন। আব্দুল্লাহ ইবনে যামা’আ বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, আফসোস তোমার জন্য! হে আবু যাম’আ! তুমি আমার সাথে কি আচরণ করেছ? আল্লাহর কসম! তুমি যখন আমাকে বলেছ তখন আমি মনে করেছিলাম যে, রাসূল আমাকে নামায পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তা না হলে আমি ইমামতি করতাম না। তখন আবদুল্লাহ বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূল আমাকে এ নির্দেশ দেননি। তবে আমি যখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে পেলাম না। তখন উপস্থিত লোকদের মধ্যে আমি তোমাকেই উপযুক্ত মনে করেছি। (আবু দাউদ- ৪৬৬০)

৩৪
৩১. আবু বকর (রাঃ)-এর সমপর্যায়ে পৌঁছিনি
তাবুকের যুদ্ধের দিন নবী (সাঃ) ও সাহাবাদেরকে দান করার জন্য উৎসাহ দিলেন। সাহাবীরা দানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় লাগলেন। এমনকি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ সম্পর্কে বলেন, আমি আবু বকরের চেয়ে আগে থাকব। তাই আমি আমার মালের অর্ধেক নিয়ে গেলাম। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? আমি বললাম, এ মাল পরিমাণ সম্পদ রেখে এসেছি। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সমুদয় মাল নিয়ে উপস্থিত হলেন। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? তিনি বললেন, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) কে রেখে এসেছি। ওমর বললেন, আমি কোন ব্যাপারেই আবু বকরকে ছাড়িয়ে যেতে পারিনি। (সীরাতুল ওমর ইবনুল খাত্তাব লি আহমদ আত তাজী, পৃঃ ২৫)

৩৫
৩২. আবু বকর (রাঃ) এবং ওমর (রাঃ) এর মধ্যকার বিষয়
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা আমি নবী (সাঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম। হঠাৎ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর লুঙ্গির একপাশ এমনভাবে ধরে হাজির হলেন যে, তার হাঁটু পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। তখন নবী (সাঃ) বললেন, তোমাদের এ সঙ্গীটি ক্ষেপে গেছেন। অতঃপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাম করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ও খাত্তাব তনয়ের মাঝে কিছু বাকবিতণ্ডা হয় এবং আমিই তাকে প্রথমে কিছু বিদ্রুপ কথা বলে ফেলি। পরে আমি নিজের ভুল বুঝে তার নিকট মাফ চাই। কিন্তু তিনি আমাকে মাফ করতে রাজী হলেন না। তাই আপনার কাছে হাজির হয়েছি। তখন তিনি তিনবার এ কথাটি বললেন, হে আবু বকর! আল্লাহ তোমাকে মাফ করবেন।

ওদিকে ‘ওমর তাঁর নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আবু বাকরের বাড়ি যান এবং জিজ্ঞেস করেন, এখানে কি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আছেন? লোকেরা বলল, ‘না, নেই। অতঃপর ‘ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী (সাঃ)-এর কাছে গিয়ে হাজির হলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে দেখে নবী (সাঃ) এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হতে লাগল। এতে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ভীত হয়ে গেলেন এবং নতজানু হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমিই অধিকতর অন্যায় আচরণকারী ছিলাম। এ কথাটি তিনি দু’বার বললেন।

তখন নবী (সাঃ) বললেন, এটা তো নিশ্চিত যে, আল্লাহ যখন আমাকে নবী মনোনীত করে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন তখন তোমরা সবাই বলেছিলে, আপনি মিথ্যা বলছেন। কিন্তু আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিল, তিনি মুহাম্মাদ সত্য বলেছেন। তারপর সে নিজের সত্তা ও সমস্ত ধন সম্পদ দিয়ে আমার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে। এমতাবস্থায় তোমরা কি আমার সৌজন্যে আমার এ সাথীর দোষ-ক্রটি ত্যাগ করতে পার না। শেষ কথাটি তিনি দু’বার বললেন। এ ঘটনার পর আবু বক্‌রকে আর কখনো দুঃখ দেয়া হয়নি। অর্থাৎ কেউ তার প্রতি কঠোর ব্যবহার করেননি। (বুখারী, হাদীস-৩৬৬১)

৩৬
৩৩. রাসূল (সাঃ) ইন্তেকাল করেননি
যখন রাসূল (সাঃ) ইন্তেকাল করলেন তখন লোকজন কান্না করতে শুরু করল। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আমি যেন কাউকে একথা বলতে না শুনি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা কেবল তার কাছে মৃত্যুর ফেরেশতা পাঠিয়েছিলেন, যেভাবে মৃত্যুর ফেরেশতা পাঠিয়েছিলেন মূসার কাছে। এরপরও মূসা চল্লিশ দিন বা বছর জীবিত ছিলেন। আল্লাহর কসম যে ব্যক্তি ধারণা করবে যে, মুহাম্মদ ইন্তেকাল করেছেন, আমি তাদের হাত ও পা কেটে ফেলব। এমতাবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আসলেন তখন লোকেরা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কথা শুনছিল। তিনি বললেন, হে ওমর! বসুন। অতঃপর বললেন, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের ইবাদাত করত, সে যেন জেনে নেয় যে, নিশ্চয় তিনি মারা গেছেন। আর যে আল্লাহর ইবাদাত করত, সে আল্লাহ তো চিরঞ্জীব। কখনো তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না। অতঃপর তিনি একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন।

وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوۡلٌ ۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انۡقَلَبۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّنۡقَلِبۡ عَلٰی عَقِبَیۡہِ فَلَنۡ یَّضُرَّ اللّٰہَ شَیۡئًا ؕ وَ سَیَجۡزِی اللّٰہُ الشّٰکِرِیۡنَ ﴿۱۴۴﴾

আয়াতের মর্ম হলো- মুহাম্মাদ একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নন। তার পূর্বে অনেক রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। সুতরাং তিনি যদি মারা যান কিংবা নিহত হন, তাহলে কি তোমরা পশ্চাতে ফিরে যাবে? আর যে পশ্চাতে ফিরে যাবে, সে আল্লাহর কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞদের অচিরেই বিনিময় প্রদান করবেন। (সূরা আলে ইমরান-১৪৪)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর তিলাওয়াত করার আগে মনে হচ্ছিল যেন এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে তা কেউ জানতো না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম আমি আবু বকর থেকে এ আয়াতের তেলাওয়াত শুনে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনি তার মতামত প্রত্যাহার করলেন এবং রাসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন। (আল খুলাফাউর রাশিদুন লি ড. মুস্তফা মুরাদ, পৃঃ ২১০-২১১)

৩৭
৩৪. ওমর (রাঃ) আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসূল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন তখন মুসলমানদের মাঝে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তখন তিনি বললেন, আমার ধারণা ছিল যে, রাসূল আরো জীবিত থাকবেন। এখন যেহেতু তিনি যদিও ইন্তেকাল করেছেন, তবুও আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে এমন হেদায়াতের নূর রেখেছেন যে, যে নূর দ্বারা তিনি মুহাম্মদকে তিনি হেদায়াত দিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন হিজরতের সময় রাসূল (সাঃ)-এর সফর সঙ্গী এবং মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি। সুতরাং তোমরা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করো। এরপর তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, আপনি মিম্বারে উঠুন।

শেষ পর্যন্ত তিনি মিম্বারে উঠলেন এবং সবাই তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করল। কিন্তু আনসারদের একটি দল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকল। তারা বলল, আমাদের মধ্যে একজন আমীর হবে এবং তোমাদের মধ্যে একজন আমীর হবে। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের নিকট গেলেন এবং বললেন, হে আনসারের দল! তোমরা কি জান না যে, রাসূল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সুতরাং এমন কে আছে যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর চেয়ে অগ্রগামী হতে পারে? তখন আনসারগণ বললেন, আমরা এর থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনার হাত প্রসারিত করুন। এরপর তিনি হাত প্রসারিত করলেন তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বাইয়াত গ্রহণ করলেন। তারপর পর্যায়ক্রমে মুহাজির ও আনসারগণ বাইয়াত গ্রহণ করলেন। (খুলাফাউর রাশেদুন, ড, মুস্তফা মুরাদ, পৃঃ ২১০)

৩৮
৩৫. ওমর (রাঃ) এবং উসামার বাহিনী
আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাইয়াত নির্ধারিত হওয়ার পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বাহিনীর সাথে বের হলেন। আর উসামা ইবনে যায়েদ ছিলেন। তাদের আমীর। তাদের শেষ ব্যক্তি খন্দক অতিক্রম করার পূর্বেই রাসূল ইন্তেকাল করেন। এ খবর পেয়ে উসামা মানুষকে থামালেন। অতপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বললেন, আপনি রাসূলের খলিফার কাছে ফিরে যান এবং আমি লোকজনকে যাতে ফেরত পাঠিয়ে দেই, সেই অনুমতি প্রার্থনা করুন। উসামার নির্দেশে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বের হলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট গিয়ে উসামা যা বলেছিলেন তা বললেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কথা শুনে বললেন, যদি কুকুর ও শৃগাল আমাকে টুকরো টুকরো করে খায় তবুও আমি এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারব না। যে সিদ্ধান্তু স্বয়ং নবী (সাঃ) নিয়েছিলেন। (ইবনু আসাকির)।

৩৯
৩৬. আমি জানতে পারলাম যে, এটাই সত্য
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী (সাঃ) ওফাত লাভ করলেন এবং আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খলিফা হলেন, তখন কতিপয় আরব মুরতাদ হয়ে কুফ্‌রীর দিকে ফিরে গেল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আবূ বকর! আপনি কি করে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেন অথচ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন: আমি ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নির্দেশ পেয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বলবে, লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই) এবং যে কেউ (কালিমা) ‘লাইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’ বলবে, সে তার জান-মাল আমার হাত থেকে রক্ষা করল, যদি না সে (শারী’আতে শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়) কোন বৈধ কারণে (হত্যাযোগ্য হয়)। এবং তার হিসাব হবে আল্লাহর দরবারে?

আবূ বক্‌র বললেন, আল্লাহর কসম! যে সালাত (নামায) ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই করব, কেননা যাকাত হচ্ছে ঐ হাক্ব যা (আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশের বলে) সম্পদ থেকে আদায় করতে হবে। আল্লাহর নামের কসম! যদি তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে যে যাকাত দিত তা থেকে একটি বকরীর বাচ্চাও দিতে অস্বীকার করে, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব যতক্ষণ পর্যন্ত না তা পুনর্বহাল করতে পারি। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! এটা আর কিছুই নয়, বরং আমি লক্ষ্য করলাম যে, আল্লাহ তা’আলা আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিক নির্দেশ দিয়েছেন সুতরাং আমি উপলব্ধি করলাম যে, তার সিদ্ধান্ত সঠিক। (বুখারী, হাদীস-৬৯২৫)

৪০
৩৭. ওমর (রাঃ)-এর বিচক্ষণতা
ইয়ামেনের আল-আসওয়াদ উনাসি নবুয়াতী দাবি করল। আর সে তা পেশ করল আবু মুসলিম আল-খাওয়ানীর কাছে। সে তার কাছে আসল আগুন নিয়ে এবং এতে আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে নিক্ষেপ করল তবে তাতে তার কোন ক্ষতি হয়নি। তখন আসওয়াদ উনাসিকে বলা হলো, যদি তুমি তা হতে নিজকে বিরত না রাখ। তাহলে তোমার অনুসারীরা গোলযোগ সৃষ্টি করবে। তাকে বাহনে উঠতে নির্দেশ দেয়া হল এবং সে মদীনায় আগমন করল। সে বাহন থামাল এবং মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে দেখলেন এবং তার কাছে গেলেন এবং বললেন, লোকটি কোথা হতে এসেছে। সে বলল, ইয়ামান থেকে। তখন তিনি বললেন, সে এমন কি করেছে যে তাকে আগুনে পোড়াতে হবে? সে বলল, এ তো আবদুল্লাহ ইবনে সাওব। তিনি বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে বলছি তুমি কে? সে বলল, হে আল্লাহ! আমিও তাই। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে মুয়ানাকা (কোলাকুলি) করলেন এবং ক্রন্দন করলেন। (আসহাবুর রাসূল লি মাহমুদ মিশরী, ১/১৩৭)

৪১
৩৮. মুয়ায ফিরে আসলেন ওমর (রাঃ) এর সিদ্ধান্ত
রাসূল (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়ামেনে অবস্থান করছিলেন (গভর্নর হিসেবে)। আর তিনি ছিলেন ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। রাসূল (সাঃ)-এর ওফাতের পর তিনি (মুয়ায) মদীনায় আসলেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বললেন, এ লোকটির কাছে লোক পাঠান এবং তার কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে নেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাকে তো রাসূল পাঠিয়েছিলেন। সুতরাং সে যদি স্বেচ্ছায় আমাকে কিছু না দেয়, তাহলে আমি তার কাছ থেকে কিছুই গ্রহণ করব না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দেখলেন যে, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন না। আর তিনি তার সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন।

এরপর ওমর মুয়াযের কাছে গেলেন যাতে সে রাজী হয়। তখন মুয়ায বললেন, রাসূল (সাঃ) আমাকে সেখান পাঠিয়েছেন এর সংশোধনের জন্য। সুতরাং আমি তার আদেশ অমান্য করতে পারি না। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ভাইকে (মুয়াযকে) উপদেশমূলক কিছু কথা বলে খুশী মনে চলে আসলেন। এক রাত পর হযরত মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি আপনার কথা মেনে নিয়েছি। আর আমি তাই করতে চাই, যা আপনি আমাকে নির্দেশ দিবেন। কেননা, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি পানির কূপের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি আর আপনি আমাকে সেখান থেকে রক্ষা করেছেন। এরপর মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বললেন। আর সে শপথ করল যে, সে কোন কিছুই গোপন করবে না। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি কিছুই গ্রহণ করব না। তা তোমার জন্য হিবা করে দিলাম। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এটা বৈধ ও উত্তম। (উমুনুল আখবার, ১১২৫)

৪২
৩৯. ওমর, আব্বাস (রাঃ) এবং বন্দী
আনসারদের এক ব্যক্তি বদরের যুদ্ধের দিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বন্দী করে নিয়ে যায়। তখন নবী (সাঃ) বললেন, আমার চাচা আব্বাসের কারণে আমি রাত্রে ঘুমাইনি। আমার ধারণা হচ্ছে আনসাররা তাকে হত্যা করেছে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি এখনি তাদের কাছে যাব। নবী (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ, যাও। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আনসারদের কাছে গেলেন। আব্বাসকে ফিরিয়ে দাও। তারা আল্লাহর কসম! করে বলল আমরা তাকে ফিরিয়ে দেব না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যদি রাসূল এতে সন্তুষ্ট হন, তাও কি তোমরা তাকে ফিরিয়ে দেবে না? তারা বলল, রাসূল যদি এতে সন্তুষ্ট হন, তবে তুমি তাকে নিয়ে যাও। যখন তিনি আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে হাতে পেলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আব্বাস! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। আল্লাহর কসম! তোমার ইসলামটা আমি ওমরের ইসলাম গ্রহণের চেয়ে আমার কাছে পছন্দনীয় হবে। আমি এটা এ জন্য বলছি যে, রাসূল (সাঃ) তোমার ইসলাম গ্রহণে অত্যধিক খুশি হবেন। (আল বেদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ, ৩/২৯৮)

৪৩
৪০. আবু বকর (রাঃ) দিতেন এবং ওমর (রাঃ) প্রত্যাখ্যান করতেন
একদিন উমাইনা ইবনে হিসাম ও আকরা ইবনে হাবেস রাদিয়াল্লাহু আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা আমাদের কাছে এমন এক খণ্ড জলাভূমি পড়ে আছে যাতে কোন খড়-ঘাস নেই এবং তা কোন উপকারে আসে না। সুতরাং আপনি যদি রায় দেন তাহলে আমরা একে চাষ করব এবং পরবর্তীতে আল্লাহ চাহেন তো তা উপকারে আসবে। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কাছের লোকদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন।

তারা বলল যে, তাদের দুজনকে জমিটা দেয়া হলে তারা এর দ্বারা উপকার লাভ করবে। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে জমি দিলেন এবং এ ব্যাপারে তাদের দুজনের জন্য একখানা শর্তনামা লিখলেন। আর বললেন, তোমরা এ ব্যাপারে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে সাক্ষী রাখ। আর তখন তিনি (ওমর) সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। যখন তারা দুজন তার কাছে গিয়ে পত্র পড়লেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু পত্রটি কেড়ে নিলেন আর তাতে থুথু দিলেন। রাসূল তোমাদের মাঝে বন্ধুত্ব তৈরি করেছেন আর ইসলাম এখন নাজুক অবস্থায়। আর আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে সম্মানিত করেছেন। আর তাদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের কাজে নিয়োজিত থাক। অতঃপর তারা দু’জন রাগান্বিত অবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এসে বললেন, খলিফা কি আপনি নাকি ওমর।

তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যদি তিনি চান তাহলে তিনিই খলিফা। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাগান্বিত অবস্থায় এসে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ কাছে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আপনি ঐ জমি সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। ঐ জমির মালিক কি আপনি একা নাকি সমস্ত মুসলমান? তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, বরং এ জমির মালিক সমস্ত মুসলমান। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাহলে আপনি কিভাবে এ জমি তাদের দুজনকেই নির্দিষ্ট করে দিলেন। আর আমার পাশে যারা ছিল তারা আমাকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে ওমর! আমি তোমাদের এ কথা বলছি তুমি এ ব্যাপারে আমার থেকে বেশি শক্তিশালী আর তুমিই আবার বিজয় লাভ করেছ। (আল-ইসাবাতু লি ইবনে হাজার, ৩/৫৫)

৪৪
৪১. খেলাফত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ চিঠি
খলিফা হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন বুঝতে পারলেন তাঁর অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে, মৃত্যুর পূর্বেই পরবর্তী খলিফা মনোনীত করে যাওয়াকে তিনি কল্যাণকর মনে করলেন। তিনি উসমান ইবনে আফফানকে ডেকে লিখতে বললেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা আবু বকর ইবনে আবী কুহাফার পক্ষ থেকে মুসলমানদের প্রতি অঙ্গীকার। আম্মা বাদ’- এতটুকু বলার পর তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তারপর উসমান ইবনে আফফান নিজেই সংযোজন করেন- ‘আমি তোমাদের জন্য ওমর ইবনে খাত্তাবকে খলিফা মনোনীত করলাম এবং এ ব্যাপারে তোমাদের কল্যাণ চেষ্টায় কোন ক্রটি করি নি। অতঃপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সংজ্ঞা ফিরে পান।

লিখিত অংশটুকু তাঁকে পড়ে শোনান হলো। সবটুকু শুনে তিনি আল্লাহু আকবার বলে ওঠেন এবং বলেন, আমার ভয় হচ্ছিল যে, আমি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মারা গেলে লোকেরা মতভেদ সৃষ্টি করবে। উসমানকে লক্ষ্য করে তিনি আরো বললেন, আল্লাহ তায়ালা ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে আপনাকে কল্যাণ দান করুন। তবারী বলেন, অতঃপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু লোকদের দিকে তাকালেন। তার স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস তখন তাকে ধরে রেখেছিলেন। সমবেত লোকদের তিনি বলেন, যে ব্যক্তিকে আমি আপনাদের জন্য মনোনীত করে যাচ্ছি তার প্রতি কি আপনারা সন্তুষ্ট? আল্লাহর কসম! মানুষের মতামত নিতে আমি চেষ্টার ত্রুটি করিনি। আমার কোন নিকট আত্মীয়কে এ পদে বহাল করিনি। আমি ওমর ইবনে খাত্তাবকে আপনাদের খলিফা মনোনীত করেছি। আপনারা তাঁর কথা শুনুন, তার আনুগত্য করুন। এভাবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খিলাফত শুরু হয়। (আখবারু ওমর লিত তানতাবী, পৃঃ ৫২-৫৩)

৪৫
৪২. খিলাফত লাভের পর ওমর (রাঃ) প্রথম খুতবা
খেলাফত লাভের পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খুতবায় দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম তিনটি দোয়া করলেন এবং লোকজনকে আমীন বলতে বললেন। তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমি দুর্বল তাই আপনি আমাকে শক্তিশালী করুন। হে আল্লাহ! আমি কঠিন, তাই আমাকে নম্রতা দান করুন। হে আল্লাহ! আমি কৃপণ তাই আমাকে দানশীলতা দান করুন। পরে বললেন, খেলাফাতের এ দায়িত্বের কারণে আল্লাহ তায়ালা আমার দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করছেন এবং তোমাদের দ্বারা আমাকে পরীক্ষা করছে। যদি লোকেরা ভালো করে তবে আমিও তাদের সাথে ভালো করব। আর যদি তারা খারাপ করে তবে আমিও তাদেরকে শাস্তি দেব। (আখাবারু ওমর, পৃঃ ৫৪)

৪৬
৪৩. ওমর (রাঃ) তাঁর প্রজাদের দেখাশুনায় প্রশান্তি লাভ করেন
সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন খলিফা নির্বাচিত হলেন তখন তিনি রাসূল (সাঃ)-এর মিম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন গাইলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে মানব মণ্ডলী! আমি জেনেছি যে। তোমরা আমার থেকে কঠোরতা কামনা করছ। আর এটা এ জন্য যে, আমি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমি তার দাস ও সেবক। যেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, (তিনি মুমিনদের ব্যাপারে দয়াশীল ও অনুগ্রহশীল)। আর আমি তার সামনে ছিলাম একটা কোষবদ্ধ তলোয়ারের ন্যায়। অথবা তিনি আমাকে কোন ব্যাপারে নিষেধ করলে, আমি তা থেকে বিরত থাকতাম। আর আমি মানুষের সামনে পেশ করেছি তার কোমল স্থান। আর এ অবস্থায় আমি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে তার মৃত্যু পর্যন্ত ছিলাম। আর তিনি আমার ওপর খুশী অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আর এ জন্য আমি অধিক পরিমাণে আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং এর দ্বারা আমি নিজকে সৌভাগ্যশীল মনে করছি। (কানযুল উম্মাল, ১৪১৮৪)

৪৭
৪৪. সর্বপ্রথম যিনি আমীরুল মু’মিনীন নামকরণ করেন
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বলা হতো খলিফাতু রাসূলিল্লাহ। অতঃপর যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফাতের দায়িত্ব নিলেন তখন তাকে বলা হল খালিফাতু খালিফাতি রাসূলিল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহর রাসূলের খলিফার খলিফা। তখন মুসলমানরা বলল যে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পর যে আসবে তাকে বলা হবে খলিফাতু খালিফাতি খালিফাতি রাসূলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাসূলের খলিফার খলিফার খলিফা। এভাবে এ নামটি দীর্ঘ হতে থাকবে, সুতরাং এমন একটি নাম দেয়া উচিত যে নামের দ্বারা সকল খলিফাকে সম্বোধন করা হবে। এরপর ইরাকের গভর্ণর লবীদ ইবনে রাবীয়া এবং আদি ইবনে হাতিমকে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট পাঠালেন। যখন তারা মদীনায় পৌঁছলেন তখন মসজিদের পাশে তার সওয়ারীকে রাখলেন। এরপর তারা মসজিদে প্রবেশ করলেন।

তখন সেখানে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে পেলেন। তারা দু’জন তাকে বললেন, আমীরুল মু’মিনীনের নিকট আমাদেরকে অনুমতি প্রার্থনা করুন। তখন আমর ইবনুল আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরা তো একটি সঠিক নাম নির্বাচন করেছ। আমরা হলাম মুমিন আর তিনি হলেন আমাদের আমীর। এরপর আমর ইবনুল আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট প্রবেশ করলেন এবং বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া আমিরুল মু’মিনীন। এটা শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ নাম তুমি কোথায় পেলে? তখন তিনি বললেন, লাবিদ ইবনে রাবিয়া ও আদি ইবনে হাতিম তারা এসেছেন এবং বলেছেন যে, আমিরুল মু’মিনীনের এর নিকট আমাদের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করুন। আল্লাহর কসম! আপনার জন্য তারা এ নামটি সঠিকভাবেই নির্বাচন করেছেন। আপনি আমাদের আমীর এবং আমরা হলাম মুমিন। এভাবেই এ নামটি চালু হয়ে যায়। (আল ইস্তি’আব লি ইবনে আবদুল বার, ২/৪৬৬)

৪৮
৪৫. সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের জন্য উপদেশ
যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে ইরাকের দিকে পাঠাচ্ছিলেন তখন তাকে বললেন, হে সাদ! তুমি আল্লাহর ব্যাপারে দোয়া পড় না। এ জন্য যে, তুমি রাসূল (সাঃ)-এর মামা এবং রাসূল (সাঃ)-এর সাথী। কেননা আল্লাহ তায়ালা গোনাহের দ্বারা গোনাহকে দূরীভূত করেন না বরং নেকীর দ্বারা গোনাহকে দূরীভূত করেন। আল্লাহ এবং তার বান্দাদের মধ্যে আনুগত্য ছাড়া অন্য কোন যোগসূত্রের মাধ্যম নেই। সুতরাং মানুষের মধ্যে নীচু এবং উঁচু আল্লাহর কাছে সমান। আল্লাহ তাদের রব এবং মানুষ তার দাস। তিনি ক্ষমাশীল এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং মানুষেরা একমাত্র আনুগত্যের মাধ্যমেই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে। সুতরাং তুমি রাসূল (সাঃ)-এর পূর্ণ নবুওয়াতি জিন্দেগীর দিকে লক্ষ্য করো এবং তার সেই আদর্শকে আঁকড়িয়ে ধরো। তোমার প্রতি এটাই আমার উপদেশ। যদি তুমি এর থেকে বিমুখ হও তাহলে তোমার আমল নষ্ট হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (তারিখুত তাবারী, ৪৮৪)

৪৯
৪৬. আমার ভয় হচ্ছে যেন আমি ধ্বংস হয়ে গেছি
আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি হারামের মধ্যে একটি কূপের নিকট যেখানে মানুষ অযু করে সেখানে কিছু নারী ও পুরুষকে প্রহার করছিল। এমনকি তিনি তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিলেন এবং বললেন, হে অমুক! আমি বললাম, উপস্থিত আছি। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এ নির্দেশ দেইনি যে, পুরুষদের জন্য একটি অযুখানা এবং নারীদের জন্য একটি পৃথক অযুখানা নির্ধারণ করবে। রাবী বলেন, এরপর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে দেখা করলেন, তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার মনে হয় আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি (আলী). বললেন, কি জিনিস তোমাকে ধ্বংস করেছে? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি হেরেমের মধ্যে কিছু নারী ও পুরুষকে প্রহার করেছি। এরপর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি হচ্ছেন তত্তাবধায়ক। আপনি যদি উপদেশ ও কল্যাণ কামনার্থে এ কাজ করে থাকেন তবে আল্লাহ আপনাকে শাস্তি দিবেন না। আর যদি তাদের প্রতি অন্যায় করেন তবে আপনি যুলুমকারী হবেন। (মুসান্নাফে আবদুর রায্‌যাক, ১/৭৫)

৫০
৪৭. ওমর (রাঃ) এর হাতে কেসরার সম্পদ
হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে কেসরার (পারস্য সম্রাট) কাবা, তলোয়ার, ফিতা, পাজামা, জামা, মুকুট ও তার মুজা এ গুলো ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে পৌঁছানোর পর তিনি সম্প্রদায়ের লোকদের দিকে তাকান আর তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থুলাকার ও লম্বা দেহের অধিকারী হলেন সুরাকাহ ইবনে খাসআম আল-মুদাল্লাজী। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সুরাকাকে বললেন, হে সুরাকা! তুমি দাঁড়াও এবং এ পোশাক পরিধান কর। অতঃপর সে (সুরাকা) দাঁড়াল এবং পরিধান করল আর এটার উপর তার লোভ তৈরি হল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, পিছনে চল। তখন সে পিছনে চলল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, থাম থাম।

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বললেন, এ এমন এক বেদুঈন যিনি বনী মুদাল্লাজ গোত্রের লোক আর তার শরীরে রয়েছে কেসরার কাবা, পাজামা, তলোয়ার, ফিতা, মোজা ও তার মুকুট। হে সুরাকা ইবনে মালেক! আজ তুমি এগুলোর মালিক। তোমার শরীরে যদি কেসরার সম্পদ থাকে তাহলে তুমি ও তোমার বংশ মর্যাদাবান হবে। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে খুলে ফেলতে বললেন, তখন সুরাকা খুলে ফেলে। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আল্লাহ! তুমি এ ব্যাপারে তোমার নবী ও রাসূলকে নিষেধ করেছ অথচ তিনি আমার থেকে তোমার কাছে অধিক প্রিয়, আমার থেকে অধিক মর্যাদাবান। আর তুমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কেও নিষেধ করেছ। অথচ তিনিও তোমার কাছে আমার থেকে অধিক প্রিয়। অধিক মর্যাদাবান। অতঃপর, তুমি আমাকে (ওমর) তা দান করেছ। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি যে, আমি যেন তা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীকে না দেই। এরপর তিনি ক্রন্দন করলেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে রহমত দান করলেন। অতঃপর তিনি আব্দুর রহমানকে ডেকে বললেন, তোমাকে আমি এটা বন্টন করে দিলাম। (তিরমিযী, হাঃ ২৩২২)

৫১
৪৮. আমি তোমাকে বসরার কাযী নির্বাচন করলাম
এক মহিলা ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট এসে বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! আমার স্বামী দিনে রোযা রাখে এবং রাতে নামায পড়ে। সে যেহেতু আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত থাকে তাই তার ব্যাপারে আমি অভিযোগ করতেও পছন্দ করি না। তখন কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আমিরুর মু’মিনীন! এ মহিলা যে অভিযোগ করছে তা হলো তার স্বামী তার থেকে দূরে থাকে। তখন ওমর বললেন, তুমি যেভাবে বিষয়টি বুঝেছ সেভাবে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দাও। তখন কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার স্বামীকে আমার নিকট উপস্থিত করতে হবে। তাই তার স্বামীকে আনা হলো। তিনি তাকে বললেন, তোমার স্ত্রী তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। স্বামী বলল, তা কি খাদ্যের ব্যাপারে নাকি পানীয় এর ব্যাপারে? তিনি বললেন না।

তখন মহিলা বলল, হে বিচারক! স্ত্রীদের ব্যাপারে আমার স্বামীর আকর্ষণ নেই। তিনি ইবাদাতের মধ্যে রাত কাটাতে চান, একথা শুনে স্বামী বলল, সূরা নাহল এবং আল্লাহর কালামের ভয় আমাকে নারী থেকে উদাসীন করে রেখেছে। একথা শুনে কা’ব বললেন, হে পুরুষ! তোমার ওপর স্ত্রীর হক রয়েছে যার জ্ঞান আছে সে যেন চার দিন পর হলেও স্ত্রীর কাছে যায়। সুতরাং তুমি তার হক আদায় করো এবং দোষমুক্ত হও। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য এক থেকে চার পর্যন্ত নারীকে বিয়ে করা হালাল করেছেন। সুতরাং তোমার উচিত তিন দিন তিন রাত তোমার রবের ইবাদাত করা (এরপর স্ত্রীকে সময় দেয়া)। এ ফয়সালা শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি বুঝতে পারছি না তোমার কোন বিষয়টি আশ্চর্যজনক। তাদের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারা নাকি তাদের মধ্যকার তোমার ফায়সালা। যাও আমি তোমাকে বসরার কাজী নির্বাচিত করলাম। (খোলাফাই রাশেদুন, পৃঃ ২১৮,২১৯)

৫২
৪৯. নিশ্চয়ই এটা মূর্খদের কাজ
ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘উয়াইনাহ্ ইবনু হিসন ইবনু হুযাইফাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ভাতিজা হুর ইবনু কাইসের নিকট আসেন। ওমর যাদেরকে তার পাশে সুযোগ দিতেন, হুর ছিলেন তাদেরই একজন। ক্বারী এবং ‘আলিমগণই’ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর দরবারে বসতেন এবং তাঁকে উপদেশ দিতেন। এ ব্যাপারে যুবক বৃদ্ধের কোন পার্থক্য ছিল না। উয়াইনাহ্ হুর ইবনু কাইসকে বলল, ভাতিজা। আমীরুল মু’মিনীন ‘ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট তোমার তো বেশ সম্মান আছে। তার সঙ্গে আমার সাক্ষাতের জন্য অনুমতি চাও। হুর ইবনু কাইস বললেন, ঠিক আছে, আমি অনুমতি চাইব। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অতঃপর হুর ইবনু কাইস ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট ‘উয়াইনার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন। অতঃপর উয়াইনাহ্ উমারের কাছে হাজির হয়ে বললেন, কি ব্যাপার? “আপনি তো আমাদেরকে কোন কিছু দান করছেন না এবং আমাদের প্রতি কোন সুবিচারও করছেন না।” এ কথা শ্রবণ করে ‘ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খুব ক্রুদ্ধ হলেন এমন কি তাঁকে মারতে উদ্ধত হন। তা দেখে হুর ইবনু কাইস বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেছেন–

خُذِ الۡعَفۡوَ وَ اۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَ اَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰہِلِیۡنَ ﴿۱۹۹﴾

অর্থাৎ ক্ষমার নীতি অবলম্বন কর এবং সৎ কাজের নির্দেশ দাও। আর জাহিলদেরকে এড়িয়ে চল। (সূরা আরাফ : আয়াত-১৯৯)

.....আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর শপথ! হুর ইবনু কাইস এ আয়াতটি উল্লেখ করলে ‘ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তা মোটেই অমান্য করলেন না। কারণ তিনি তো আল্লাহর কিতাবের সর্বাধিক আনুগত্য ছিলেন (বুখারী, হাদীস-৪৬৪২)

৫৩
৫০. ওমর (রাঃ) ও তার পরিবারের মধ্যকার বিষয়
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন তার পরিবার পরিজনকে কোন বিষয় থেকে নিষেধ করতেন তখন বলতেন যে, শোন আমি মানুষদেরকে এই এই কাজ থেকে নিষেধ করেছি। আর মানুষ তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে যেভাবে পাখি গোস্তের দিকে তাকিয়ে থাকে। যদি তোমরা সে অন্যায়ে লিপ্ত হও তবে তারাও লিপ্ত হবে। আর যদি তোমরা ভয় করো তবে তারাও ভয় করবে। যে ব্যক্তি আমার নিষিদ্ধ করা কাজে লিপ্ত হবে আল্লাহর কসম আমি তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেব। সুতরাং যে সামনে বাড়তে চায় সে সামনে বাড়বে আর যে ব্যক্তি থামতে চায় সে যেন থেমে যায়। (মাহমুস সাওয়াব, ৩/৮৯৩)

৫৪
৫১. এখন তুমি বল আমরা শুনতেছি
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে অনেক কাপড় সেট আনা হল। অতঃপর তিনি তা সকলের মাঝে বন্টন করে দিলেন। ফলে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ একটি করে কাপড় পেল। কাপড় বিতরণের পর তিনি মসজিদের মিম্বারে উঠলেন। তখন তাঁর শরীরে দুটি কাপড় ছিল। মিম্বরে উঠে তিনি বললেন, হে মানুষ সকল! তোমরা কি আমার কথা শুনতেছ? তখন হযরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন না আমরা আপনার কথা শুনতেছি না। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন হে আবু আব্দুল্লাহ কেন শুনছ না? তখন তিনি (সালমান) বললেন, আপনি (ওমর) আমাদেরকে একটি করে কাপড় দিয়েছেন অথচ আপনি এক সেট (দুটি) কাপড় পরিধান করেছেন।

তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আবু আব্দুল্লাহ! তুমি এ ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ো না অতঃপর তিনি (ওমর) তার ছেলে আব্দুল্লাহকে ডাক দিলেন। কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না। অতঃপর তিনি ডাকলেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর! তখন আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! আমি উপস্থিত। তখন ওমর তাকে বললেন, আমি যে পোশাক (অতিরিক্ত) পড়েছি সেটা কি তোমার? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ আমার পোশাক। তখন সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এখন আপনি (ওমর) কথা বলুন আমরা আপনার কথা শুনতে পাচ্ছি। (আত-তাবাকাতু লি ইবনে সাদ, ৪/২০)

৫৫
৫২. প্রজাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর
একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জারুদ আল আবদীকে সাথে নিয়ে মসজিদ হতে বের হলেন, তখন এক মহিলা রাস্তার উপর মল ত্যাগ করল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে সালাম দিলেন সে (মহিলা) সালামের জবাব দিল অথবা মহিলা ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু কে এ সালাম দিল আর তিনি তার (মহিলার) সালামের জবাব দিলেন। অতঃপর মহিলা বলল, ওহে ওমর! আমি আপনার সাথে ওয়াদা করেছি আর আপনি বাজারের ঐ স্থানকে জনবহুল বলেছেন যেখানে ছেলেরা কুস্তি লড়াই করে।

কিছুদিন যেতে না যেতেই আপনার নাম হল ওমর। আবার কিছু দিন যেতে না যেতেই আপনার নাম হল আমীরুল মু’মিনীন। সুতরাং আপনি প্রজাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। আর আপনি জেনে রাখুন নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি হারিয়ে যাওয়াকে ভয় করে যে মৃত্যুকে ভয় করে। অতঃপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্রন্দন করলেন। তখন আল জারুদ বলল মহিলা! তুমি আমিরুল মু’মিনীন এর উপর এমন স্পর্ধা দেখালে যাতে তুমি তাকে কাদালে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি তাকে ছেড়ে দাও। তুমি কি এ মহিলা সম্পর্কে জান? এ হল খাওলা বিনতে হাকিম, আর আল্লাহ তায়ালা তার আসমানের উপরে যার কথা শুনেছেন। সুতরাং আল্লাহর কসম করে বলছি ওমরও তার কথা শোনার ক্ষেত্রে অধিক যোগ্যতার/উপযুক্ত। (আল খোলাফাউর রাশিদীন, ড.মুস্তফা মুরাদ, পৃঃ ২৬০)

৫৬
৫৩. যদি তারা একথা না বলে তবে তাদের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই
এক ব্যক্তি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট আগমন করল এবং বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! আল্লাহকে ভয় করুন। তখন সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বলল, তুমি কি আমিরুল মু’মিনীনকে এমন কথা বলছ? তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাকে ছেড়ে দাও এবং এটা বলতে দাও। সে উত্তম কথাই বলেছে। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যদি এ কথা তোমরা না বল তাহলে তোমাদের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। আর যারা এ কথা গ্রহণ করবে না তাদের মধ্যেও কোন কল্যাণ নেই। (মানাকিবে ওমর, পৃঃ ১৪৭)

৫৭
৫৪. উমরের সন্তানের উপর উসামার মর্যাদা
ওমর লোকদের মাঝে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মাল বণ্টন করতেন। একদিন তিনি (ওমর) উসামা ইবনে যায়েদের জন্য চার হাজার দিরহাম নির্ধারণ করলেন, আর আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের জন্য তিন হাজার দিরহাম। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বললেন, হে আমার বাবা! আপনি উসামা ইবনে যায়েদকে দিলেন চার হাজার আর আমাকে দিলেন তিন হাজার। তার বাবার যে মর্যাদা ছিল সে মর্যাদা কি আপনার নেই? আর তার (উসামার) যে মর্যাদা সে মর্যাদা কি আমার (আব্দুল্লাহর) নেই? তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, নিশ্চয়ই তার বাবা রাসূল (সাঃ)-এর নিকট তোমার বাবার চেয়ে অধিক প্রিয় ছিলেন। আর সেও রাসূল (সাঃ)-এর কাছে তোমার থেকে প্রিয়। (ফারায়েদুল কালাম লিল খুলাফায়িল কিরাম পৃ১১৩)

৫৮
৫৫. এটি বাইতুল মালে জমা করে দাও
হযরত মুয়িকির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে যাহিরার সাথে ডেকে পাঠালেন। যখন আমি তার কাছে গেলাম। তখন তিনি তার সন্তান আসেমের কাছ থেকে সম্পদ চাচ্ছিলেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, তুমি কি জান এ কাণ্ড কি ঘটিয়েছে? সে ইরাকে গিয়ে এ কথা প্রচার করেছে যে সে আমিরুল মু’মিনীনের সন্তান। সে তাদের কাছে সম্পদ চেয়েছে আর তারা তাকে মাটির পাত্র, রৌপ্য, দ্রব্য সামগ্রী ও একটা সুন্দর তলোয়ার দিয়েছে। অতঃপর আসেম বলল, আমি এটা করিনি। আমি আমার সম্প্রদায়ের কতিপয় লোকের কাছে গিয়েছি তারাই আমাকে এগুলো দিয়েছেন। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মুয়িকিরকে বললেন, তুমি এ সম্পদ গুলো লও এবং তা বাইতুল মালে জমা করে দাও (আসরুল খিলাফাতির রাশিদা লিল ওমরী, পৃঃ ২৩৬)

৫৯
৫৬. আমার ইচ্ছা আল্লাহ যেন একজন বিশ্বাসঘাতক বাদশা পাঠান
একদিন সাহর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে আসল অতঃপর সে তার (ওমর) কাছে কামনা করল যে, সে (ওমর) যেন তাকে (সাহর) বাইতুল মাল থেকে কিছু সম্পদ দেয়। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে তিরস্কার করলেন। এর পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার ইচ্ছা জাগে আল্লাহ যেন একজন বিশ্বাসঘাতক শাসক পাঠান। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে (সাহর) তার (ওমর) নিজ সম্পদ থেকে দশ হাজার দিরহাম দিলেন। (তারিখুল ইসলাম লিয-যাহবী, ১/২৭১)

৬০
৫৭. ওমর (রাঃ) ও হযরত যয়নাব (রাঃ) এর দান
একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যায়নাব বিনতে জাহাশ এর কাছে আতার মাধ্যমে সম্পদ পাঠালেন যা তার জন্য (বাইতুল মাল থেকে) বরাদ্দ ছিল। যখন আতা তার কাছে গেলেন। তখন তিনি (যয়নাব) বললেন, আল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে ক্ষমা করুন। আমার অংশটার চেয়ে অন্যদের অংশটা অধিক বেশি। তখন সকলে বলল, এ গুলোর সবই আপনার জন্য। তিনি বললেন, আল্লাহ পুত-পবিত্র। আর তিনি সেখান থেকে একটি কাপড় সরালেন। অতঃপর তিনি বারাযা বিনতে রাফি কে বললেন, তুমি আমার কাছে আস আর এখান থেকে মাল নিয়ে অমুককে দিয়ে দাও। অর্থাৎ সেখানের আত্মীয়স্বজন ও ইয়াতিমদের জন্য। তিনি কাপড়গুলো বণ্টন করার পর কাপড়ের নিচে কিছু সম্পদ পেলেন। তার হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! এ বছরের পর যেন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দান আমাকে না পায়, অতঃপর তিনি মারা যান এবং তিনিই রাসূল (সাঃ)-এর প্রথম স্ত্রী যিনি নবী (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করেন। (আত-তাবাকাতু লি ইবনে সাদ, ৮/১০৯)

৬১
৫৮. তোমার মা তোমাকে হারাক
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক গভীর অন্ধকার রাতে বের হলেন। তখন হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ তাকে দেখলেন। অতপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক বাড়িতে প্রবেশ করলেন অতঃপর সেখান থেকে আরেক বাড়িতে প্রবেশ করলেন। অতপর যখন সকাল হল তখন তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ বাড়িতে গেলেন আর সেখানে পাইলেন এক অন্ধ বৃদ্ধ মহিলাকে যিনি বসেছিলেন। তালহা তাকে বললেন ঐ লোকটির (ওমর) কি হল যে সে তোমার কাছে এসেছেন? তখন মহিলাটি বলল, সে (ওমর) আমাকে এই এই সম্পদ দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন তিনি সেগুলো নিয়ে এসেছেন যা তিনি ওয়াদা করেছিলেন। আর তিনি আমার কষ্ট লাঘব করেছেন। এরপর তালহা (মহিলাকে) বললেন, তোমার মা তোমাকে হারাক। (আখবারু ওমর, পৃঃ ৩৪৪)

৬২
৬০. তুমি চলে যাও, কেননা তুমি তাকে চিন না
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক সাক্ষীকে প্রশ্ন করলেন, যিনি তার কাছে এক ব্যক্তির ব্যাপারে সাক্ষী দিয়েছে। তার (ওমর) ইচ্ছা হল যে, সে (সাক্ষী) তাকে চিনে কিনা এটা যাচাই করা। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি কি তার প্রতিবেশী? লোকটি বলল না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু পুনরায় বললেন, তুমি কি তার সাথে কোন লেন-দেন করেছ, যার দ্বারা তুমি তাকে চিন? লোকটি বলল, এটাও না। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি কি তার সাথে কোন দিন সফর করেছ? লোকটি বলল না। তারপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি সম্ভবত তাকে মসজিদে দাঁড়িয়ে অথবা বসে নামায পড়তে দেখেছ। তখন লোকটি বলল, হ্যাঁ আমি তাই দেখেছি। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি চলে যাও। কেননা তুমি তাকে চিন না। (ওমর ইবনে খাত্তাব, সালেহ ইবনে আব্দুর রহমান, পৃ:৬৬)

৬৩
৬১. খানসা নামক মহিলার রিযিক
খানসা নামক মহিলার চারটি সন্তান যখন কাদসিয়ার যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করল এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট এই সংবাদ পৌঁছল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমরা খানসার চার সন্তানের রিযিক দাও। অর্থাৎ তাদের মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত ভাতা নির্ধারণ কর। এজন্য তিনি প্রত্যেক সন্তানের পরিবর্তে দুই দিরহাম করে প্রতি মাসে ভাতা নিতেন। মৃত্যু পর্যন্ত এটা চালু ছিল। (আল ইদারাতুল আসকারিয়্যাহ, ২/৭৬৪)

৬৪
৬২. তুমি তাকে তালাক দিও না
এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি তাকে তালাক দিও না। স্বামী বলল আমি তাকে পছন্দ করি না। ওমর বললেন, সকল ঘর কি ভালোবাসা জন্ম দিতে পারে। তাহলে রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্ব পালনের অর্থ কী থাকল (আল বায়ানু ওয়াত তাবয়ীন, ১০১)

৬৫
৬৩. সাথীদের উপদেশে তিনি সাড়া দিতেন
আসেম থেকে বর্ণিত। তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর এক সাথীর কাছ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে ছিলাম তখন আমি এক ঘ্রান ওয়ালা ব্যক্তির কাছ থেকে বের হলাম। আর তখন নামাযের সময় হল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যার কাছে এ ঘ্রান আছে আমি নির্দেশ দিচ্ছি সে যেন অযু করে। তখন জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! আমার ধারণা এ ঘ্রান আমাদের সবার কাছে রয়েছে। সুতরাং আমরা সবাই অযু করি কেননা তা তো অদৃশ্য। তখন তিনি তাই করলেন। (ওমর ইবনুল খাত্তাব লিস সালাবী, পৃঃ ১৫৮)

৬৬
৬৪. উমরের আশা
একদা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা কামনা করো। তখন তাদের কেউ বললেন, আমার মন চায় যদি এই ঘরটি স্বর্ণে পরিপূর্ণ থাকত আর আমি তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে পারতাম। অপরজন বললেন, আমার মন চায় যদি এই ঘর ভর্তি মনিমুক্তা থাকত। তাহলে আমি তা আল্লাহর পথে খরচ করতাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু পুনরায় বললেন, তোমরা চাও, তারা বললেন, আমরা কী চাইব বুঝতে পারছি না, হে আমীরুল মু’মিনীন! এবার ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার মন চায় যদি এই ঘর ভর্তি এমন লোক থাকত যারা হত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ, মুয়াজ ইবনে জাবাল, সালিম ও হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান এদের মতো তাহলে আমি তাদেরকে আল্লাহর ইবাদাতে লাগিয়ে দিতাম। (হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান, পৃঃ ৬২)।

৬৭
৬৫. তোমরা দেরি করে ফেলেছ, দ্রুত চল
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে কুরাইশদের নেতৃত্বস্থানীয় লোকেরা উপস্থিত হল আর তাদের সামনে/নেতৃত্বে ছিল সুহাইল ইবনে আমর ইবনে হারেস এবং আবু সুফিয়ান ইবনে হারব। আর কুরাইশদের পূর্ব লোকদের পূর্বে দুঃস্থ অসহায় দাসদেরকে তার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি দিলেন। এতে নেতৃস্থানীয় লোকেরা রাগান্বিত হল। আর আবু সুফিয়ান তার কতিপয় সাথীদেরকে বলল, সে (ওমর) আমাদেরকে তার দরজার কাছে রেখে এসব দাসদের সাথে আগে দেখা করলেন। তখন সোহাইল বলল, হে আমার সম্প্রদায়ের লোক সকল! আমি তোমাদের চেহারায় যা দেখছি, যদি তা রাগ হয়ে থাকে তাহলে তোমরা নিজেদের উপর রাগ করলে। সুতরাং তোমরা দ্রুত ও ধীরে ধীরে কাজ কর। কেয়ামতে যখন তোমরা দাবি করবে তখন যদি তোমাদের ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে তখন তোমাদের অবস্থা কি হবে? (মানাকিবে ওমর, পৃঃ ১২৯)

৬৮
৬৬. ওমর (রাঃ) আলী (রাঃ) এর মাথায় চুম্বন করলেন
এক ব্যক্তি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর ব্যাপারে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে অভিযোগ পেশ করল। যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ লোকটির অভিযোগের ব্যাপারে বসলেন। তখন তিনি আলীকে বললেন হে আবুল হাসান তুমি তোমার বিপরীত পক্ষের সাথে সমতা তৈরি কর। তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার চেহারা পরিবর্তন (রাগে) করলেন। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ লোকটির দাবি অনুযায়ী ফয়সালা করে দিলেন। অতঃপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু- কে বললেন, হে আবুল হাসান! তুমি রাগ করেছ? আমি তোমার মাঝে আর তোমার বিরুদ্ধে বাদীর মাঝে সমতা করে দেইনি? তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনি (ওমর) আমার ও আমার বিরুধীর মাঝে সমতা করতে পারেন না। কেননা আপনি যখন আমাকে সম্মান করেন তখন আমাকে আমার উপনাম আবুল হাসান বলে ডাকেন অথচ আমার বিরুধীকে তার উপনামে ডাকেন না। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মাথায় চুম্বন করলেন। আর বললেন, আল্লাহ এ–

حٰمٓ ۚ ﴿۱﴾ تَنۡزِیۡلُ الۡکِتٰبِ مِنَ اللّٰہِ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ ۙ ﴿۲﴾ غَافِرِ الذَّنۡۢبِ وَ قَابِلِ التَّوۡبِ شَدِیۡدِ الۡعِقَابِ ۙ ذِی الطَّوۡلِ ؕ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ؕ اِلَیۡہِ الۡمَصِیۡرُ ﴿۳﴾

১. হা-মীম।

২. এ গ্রন্থ আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকেই নাযিল হয়েছে, (তিনি) পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ।

৩. (তিনি মানুষের) গুনাহ মাফ করেন, তাওবা কবুল করেন, (তিনি) শাস্তিদানে কঠোর, (তিনি) বিপুল প্রভাব-প্রতিপত্তির মালিক; তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, (একদিন) তাঁর দিকেই (সবাইকে) ফিরে যেতে হবে। (সূরা আল মোমেন : আয়াত-১-৩)

৬৯
৬৭ ওমর (রাঃ)-এর নির্দেশে আবু সুফিয়ানের আনুগত্য
একবার ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মক্কায় আসলেন তখন মক্কাবাসীরা তার কাছে দ্রুত আগমন করল। তারা এসে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুে-কে বললেন, আবু সুফিয়ান একটি ঘর তৈরি করে পানির ড্রেন বন্ধ করে দিয়েছে এতে আমাদের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবু সুফিয়ান কতগুলো পাথর দাড় করিয়ে রেখে দিয়েছে। ওমর তাকে বললেন, হে আবু সুফিয়ান! তুমি পাথরগুলো সরাও। আবু সুফিয়ান ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কথা মানল এবং পাথরগুলো সরিয়ে ফেলল। অতপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কাবামুখী হলেন এবং বললেন, ঐ আল্লাহর সকল প্রশংসা যিনি ওমরকে এমন বানিয়েছেন যে, মক্কায় আবু সুফিয়ান ওমরের কথা মান্য করেছে। (আখবারু ওমর, পৃঃ ৩২১)

৭০
৬৮. এক মদ্যপানকারীকে ওমরের উপদেশ
সিরিয়ার জনৈক প্রভাবশালী শক্তিধর ব্যক্তি ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট আসা-যাওয়া করত। কিছুদিন পর্যন্ত তার আগমন বন্ধ থাকায় তিনি লোকদের কাছে তার অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। লোকেরা বলল, আমিরুল মু’মীন তার কথা বলবেন না। সে তো মদ্যপানে বিভোর হয়ে থাকে। অতঃপর খলিফা তার সচিবকে ডেকে বললেন, তার কাছে এ চিঠি লিখ– ওমর ইবনে খাত্তাবের পক্ষ হতে অমুকের নামে তোমার সালাম। অতঃপর আমি তোমার জন্যে সে আল্লাহর প্রশংসা করি, যিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনি পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা এবং বড় সামর্থ্যবান। তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই।

তার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি মজলিসে উপস্থিত লোকদেরকে বললেন, সবাই মিলে তার জন্যে দোয়া কর, যেন আল্লাহ তায়ালা তার মন ফিরিয়ে দেন এবং তার তওবা কবুল হয়। তিনি দূতের হাতে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দিলেন যে, লোকটির নেশার ঘোর না কাটা পর্যন্ত তার হাতে চিঠি দিও না এবং অন্য কারো কাছে দিও না। লোকটি খলিফার চিঠি পেয়ে তা পাঠ করল এবং চিন্তা করতে লাগল, এতে আমাকে শাস্তির ভয়ই দেখানো হয়েছে এবং ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। অতঃপর সে কান্না করতে শুরু করল এবং এমন তওবা করল যে, জীবনে আর কখনো মদের কাছেও গেল না। ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এই প্রতিক্রিয়ার সংবাদ পেয়ে বললেন, এ ধরনের ব্যাপারে তোমাদের এমন করা উচিত। যখন কোন ভাই কোন ভ্রান্তিতে পতিত হয়, তখন তাকে ঠিক পথে আনার চিন্তা করো। তাকে আল্লাহর রহমতের ভরসা দাও আল্লাহর কাছে তার তওবার জন্যে দোয়া কর।

তোমরা তার বিপক্ষে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ো। অর্থাৎ তাকে গালমন্দ করে অথবা রাগান্বিত করে যদি দ্বীন থেকে আরো সরিয়ে দাও, তবে তাই হবে শয়তানের সাহায্য। (তাফসীরে কুরতুবী, ১৫/২৫৬)

৭১
৬৯. নীল দরিয়ার আনন্দ
আমর ইবনুল আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট সংবাদ পাঠালেন। কিভাবে প্রতি বছর একজন যুবতীকে নীল দরিয়াতে ফেলা হয়। তিনি বললেন, সেটা কীভাবে? তারা বলল, যখন এই মাসের বার রাত অতিবাহিত হয় তখন আমরা একটি কুমারী মেয়েকে তালাশ করি। এর পর তার পিতামাতাকে সন্তুষ্ট করি এবং তাকে উন্নতমানের অলংকারে সজ্জিত করে নীল নদে ফেলে দেই। এ বর্ণনা শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এসব কাজ ইসলাম সম্মত নয়। তবে ইসলাম গ্রহণের পর পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/১০২, ১০৩)

৭২
৭০. তুমি তো একটি পাথর মাত্র
আবিস ইবনু রবীআহ্‌ রাহিমাহুল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হাজ্‌রে আসওয়াদের নিকটে উপস্থিত হয়ে তাতে চুমা দিয়ে বললেন, আমি জানি, তুমি একটি কংকর বৈ কিছু নও। তুমি কারো ক্ষতি বা উপকার কিছুই করতে পার না। আমি যদি নবী (সাঃ) কে তোমায় চুমু দিতে না দেখতাম, তা হলে কখনো তোমায় চুমু দিতাম না। (বুখারী, হাঃ ১৫৯৭)

৭৩
৭১. তারা যেন জেনে নেয় যে আল্লাহই আসল কর্তা
যখন খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে শামের সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হল তখন পত্রের মাধ্যমে তাকে বলা হলো। কোন রাগ বা খেয়ানতের কারণে খালিদকে সরানো হয়নি বরং লোকজন তার কারণে ফেতনায় পড়েছিল। তাই এমনটি করা হয়েছে। যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন আসল বিধায়ক (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৭৮২)

৭৪
৭২. ওমর (রাঃ) এর দৃষ্টিতে তাওয়াক্কুল
ইয়ামানের কিছু লোকের সাথে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাক্ষাত হল। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা কারা? তারা বলল, আমরা আল্লাহর উপর ভরসাকারী। তিনি বললেন, না, তোমরা আল্লাহর উপর ভরসাকারী নও। প্রকৃত ভরসাকারী হল তারা যারা জমিনে বীজ বপণ করে অতপর আল্লাহর উপর ভরসা করে। (আসহাবুর রাসূল, ১/১৬৪)

৭৫
৭৩. কৌশল অবলম্বন
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সময়ে এক ব্যক্তি বিবাহ করল। সে তার চুলে খেজাব লাগিয়ে ছিল। কয়েকদিন পর তার খেজাব দূর হয়ে গেল। এতে করে তার বার্ধক্য প্রকাশ পেয়ে যায়। পরে মেয়ের পক্ষের লোকেরা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট অভিযোগ দায়ের করল এবং বলল, আমরা তো তাকে যুবক মনে করেছিলাম। পরে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বেত্রাঘাত করলেন এবং বললেন, তুমি জাতিকে নিন্দিত করেছ। (তুহফাতুল আরুস, পৃঃ ৫৮)

৭৬
৭৪. ঘুষ প্রদান
ইসহাক ইবনে রাহওয়াই বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, কুরাইশ গোত্রের এক মহিলার সাথে এক লোকের বিবাদ ছিল। ঐ লোক ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট বিচার প্রার্থী হল। পরে ঐ মহিলা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট ভেড়ার রান হাদিয়া পাঠাল। অতঃপর বিচার শুরু হল এবং রায় মহিলার বিপক্ষে গেল। তখন মহিলা বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! বিচারের এ রায়কে বিচ্ছেদ করুন, যেভাবে ভেড়ার রানকে বিচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু তারপরও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মহিলার বিপক্ষে রায় দিলেন এবং বললেন, তোমার হাদিয়া তুমি নিয়ে যাও। (উযুনুল আখবার, ১/৫২)।

৭৭
৭৫. হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত ছিলাম না
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট এক বিজয়ের সংবাদ দেয়া হল। তখন কিছু বিষয় গোপন রাখা হয়েছিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আর কোন বিষয় আছে কি? লোকেরা বলল, হ্যাঁ-এক ব্যক্তি ইসলাম ত্যাগ করেছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা তার সাথে কিরূপ আচরণ করেছ। আমরা বললাম, আমরা তাকে হত্যা করে ফেলেছি। তিনি বললেন, তোমরা কেন তাকে একটি ঘরে বন্দী করে রাখনি এবং প্রতিদিন তাকে একটি করে রুটি খাওয়াওনি। যাতে করে সে তাওবা করার সুযোগ পায়। যদি তাওবা না করে তবে তোমরা তাকে হত্যা করতে পারতে। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এই হত্যাকাণ্ডে আমি উপস্থিত ছিলাম না, আমি এর আদেশও দেইনি। যখন আমি এ বিষয়ে সংবাদ পেয়েছি তখন আমি এ বিষয়ে সন্তুষ্টও হয়নি। (মানাকীবে ওমর, পৃঃ ৬৬)

৭৮
৭৬. আল্লাহ কতৃর্ক নিহত
এক ব্যক্তি হুযাইল গোত্রের কতিপয় লোককে মেহমানদারী করাল। আর তাদের উদ্দেশ্যে একটি মেয়ে বের হল এবং ঐ লোকটি তাকে অনুসরণ করল এবং সে (লোকটি) তাকে (মহিলাকে) খারাপ কাজের দিকে প্ররোচিত করল। আর তারা দুজন বালুর মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু করল, অতঃপর মেয়েটি তার দিকে একটি পাথর ছুঁড়ে মারল। ফলে তার কলিজা ফেটে গেল এবং সে মারা গেল। এর পর এ ঘটনা যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে পৌঁছল তখন তিনি বললেন, সে আল্লাহ কর্তৃক নিহত। অতএব তার রক্তপণ আদায় হবে না। (রাওযাতুল মুহিবিন, পৃঃ ৩২৪)

৭৯
৭৭. আল্লাহ যা গোপন রেখেছেন তুমি কি তা প্রকাশ করতে চাও
শা’বী বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট এক ব্যক্তি আসল এবং বলল, আমার একটি মেয়ে ছিল। জাহিলী যুগে আমি তাকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলাম। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বেই আমরা তাকে বের করে ফেলি। পরে আমরা ইসলামের যুগ পেলাম এবং ঐ মেয়েটিও ইসলাম গ্রহণ করল। পরে সে হদ তথা আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তিযোগ্য অপরাধে লিপ্ত হল। পরে সে নিজে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। আমরা তাকে যখন দেখতে পেলাম তখন সে তার শরীরের কিছু রগ কেটে ফেলেছিল। পরে আমরা তাকে চিকিৎসা করলাম এতে সে সুস্থ হয়ে গেল। এরপর সে তাওবা করল এবং উত্তমভাবে তাওবা করল। এরপর সে একদিন তার জাতির নিকট যা ঘটেছিল তা বর্ণনা করল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহ যে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন তুমি কি তা প্রকাশ করতে চাও? এরপর বললেন, আল্লাহর কসম! সে যদি তার বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করে তবে আমি তাকে শাস্তি দেব। আমি তাকে সতি নারীর ন্যায় বিবাহ দেয়ার ব্যবস্থা করব। (মানাকিবে ওমর লি ইবনুল জাওযী, পৃঃ ১৬৯)

৮০
৭৮. চিৎকার করে ক্রন্দনকারীকে ওমর (রাঃ) প্রহার করতেন
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি ঘরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি সে ঘরে প্রবেশ করলেন তখন তার হাতে চাবুক ছিল। এরপর তিনি তাদেরকে প্রহার করতে লাগলেন, এমনকি ঐ ক্রন্দনকারী মহিলার উড়না পড়ে গেল। এরপর তিনি তার গোলামকে বললেন, চিৎকার করে ক্রন্দকারিণী মহিলাকে তুমি প্রহার কর। কেননা, তার কোন সম্মান নেই; সে শোকের জন্য ক্রন্দন করে না, সে তোমাদের টাকা-পয়সা নেয়ার জন্য ক্রন্দন করে। সে তোমাদের মৃতদেরকে কবরে কষ্ট দেয় এবং জীবিতদের কষ্ট দেয় তাদের টাকা পয়সা নেয়ার মাধ্যমে। সে সবর থেকে মানুষকে বিরত রাখে অথচ আল্লাহর তায়ালা সবর করার নির্দেশ দিয়েছেন। সে হাহুতাশ করার আদেশ করে অথচ আল্লাহ তা থেকে নিষেধ করেছেন। (শারহু ইবনে আবিল হাদীদ, ৩/১১১)

৮১
৭৯. এটা আমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে
হিশাম ইবনে উরওয়া বলেন, একদা ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু শামে আগমন করলেন। তখন তার সাথে শামের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং সেনাপ্রধানরা সাক্ষাৎ করলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার ভাই কোথায়? তারা বলল, কে? তিনি বললেন, আবু উবাইদা। তারা বলল, আমরা তাকে এখনি নিয়ে আসছি। তখন তিনি উটে সওয়ার হয়ে আসলেন এবং তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলেন। এরপর মানুষদেরকে বললেন, আপনারা এখন চলে যান। এরপর তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাড়িতে গিয়ে একটি তরবারী, একটি ঢাল ও সফরের বাহন ছাড়া আর কিছুই পেলেন না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি যদি কিছু আসবাবপত্র সংগ্রহ করতে! তখন আবু উবাইদাহ বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! এগুলোই আমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছিয়ে দেবে। (তারীখু দিমাশক লি ইবনে আসাকীর, ৭/১৬২)

৮২
৮০. এটা তোমাদের দুনিয়া
হাসান বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন ময়লা স্তুপের নিকট দিয়ে গমন করলেন। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ থামলেন। এ কারণে তার সাথীরা এর মাধ্যমে কষ্ট ভোগ করছিল। তখন তিনি বললেন, এটা তোমাদের দুনিয়া, তোমরা যার প্রতি ধাবিত হয়েছ। (মানাকীবে ওমর লি ইবনুল জাওযী, পৃঃ ১৫৫)

৮৩
৮১. আমি উপস্থিত হতে চাচ্ছি না
হুমাইদ ইবনে নুয়ায়িম বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব ও উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু কে এক অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হল। তারা দাওয়াতে সাড়া দিলেন। যখন তারা বের হলেন তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বললেন, এমন এক দাওয়াতে যাচ্ছি যেখানে উপস্থিত হতে আমার মন চাচ্ছে না। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কি হয়েছে? তিনি বললেন, আমার ভয় হচ্ছে যে, এই দাওয়াত অহংকার প্রকাশের জন্য। (আখবারু ওমর লিত তানতাবী, পৃঃ ১৯২)

৮৪
৮২. আলী (রাঃ) এর মেয়ে উম্মে কুলসুমের সাথে বিবাহ
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট তার মেয়ে উম্মে কুলসুমের বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! ও তো এখনো ছোট। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ তা আমাদের জানা আছে। এরপর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার মেয়েকে চেহারা ধৌত করার এবং উত্তম কাপড় পরিধান করার নির্দেশ দিলেন।

এরপর একটি ভাজ করা কাপড় সাথে দিয়ে তাকে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং তাকে বললেন, তুমি এই কাপড়টি নিয়ে আমিরুল মু’মিনীনের কাছে যাও এবং তাকে গিয়ে বল, আমার পিতা আপনার নিকট আমার মাধ্যমে আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, যদি আপনি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে এই কাপড়টি গ্রহণ করতে পারেন। আর যদি সন্তুষ্ট না থাকেন তাহলে ফিরিয়ে দিতে পারেন। যখন সে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট আসল তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমার এবং তোমার পিতার মধ্যে বরকত দান করুন। আমি এতে সন্তুষ্ট হয়েছি। এরপর তিনি তার পিতার নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কাপড়টি খুলে দেখেননি এবং আমার দিকে তাকাননি। পরে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার মেয়েকে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন। তার গর্ভে যায়েদ এবং রুকাইয়াহ এর জন্ম হয়েছিল। (সীরাতুল ওমর ইবনুল খাত্তাব লি আহমাদ আত তাজী, পৃঃ ২২৬)

৮৫
৮৩. বিশ্বস্ত গোলাম
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক সফরে বের হলেন। তখন তিনি এক গোলামের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যে ছাগল চড়াচ্ছিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, হে গোলাম! আমাদের নিকট একটি ছাগল বিক্রি কর। গোলাম উত্তর দিল যে, এ ছাগলগুলো আমার নয়, ওগুলো আমার মনিবের। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু পরীক্ষামূলক তাকে বললেন, তুমি তোমার মনিবকে বলবে যে, একটি ছাগল বাঘে খেয়ে ফেলেছে। তখন গোলাম বলল, আমি আমার মনিবকে একথা বলতে পারব যে, ছাগলটি বাঘে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু কিয়ামতের দিন আমি আমার রবকে কি বলব? তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কেঁদে ফেললেন এবং ঐ গোলামের মনিবের কাছে গেলেন এবং তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিলেন। আর তাকে বললেন, এই বান্দাকে এই দুনিয়ায় আযাদ করলাম। আর আশা রাখি যে, আখেরাতেও সে তোমাকে মুক্ত করে দিবে। ইনশাল্লাহ। (রামাযান শাহরুন নাফহাত, পৃঃ ২)

৮৬
৮৪. আল্লাহর ফায়সালা থেকে আল্লাহর ফায়সালার দিকে গমন
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শামের দিকে রওনা হলেন। যখন তিনি হিজাজ ও শামের মধ্যবর্তী একটি গ্রামের দিকে পৌঁছলেন তখন সেনাপ্রধান আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ এবং তার সাথীরা সাক্ষাত করল। তারা তাকে এ সংবাদ দিল যে, শামে মহামারি দেখা দিয়েছে। এ সংবাদ পেয়ে মুহাজিরগণের মধ্যে মতভেদ দেখা দিল এ ব্যাপারে যে, তারা শামে প্রবেশ করবেন নাকি ফিরে যাবেন। তাদের একদল ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, আপনি একটি উদ্দেশ্যে বেরিয়েছেন; আর ফিরে যাওয়াটাকে আমরা পছন্দ করছি না।

অপর দল বললেন, আপনার সাথে অবশিষ্ট লোকজন এবং রাসূল (সাঃ)-এর সাথীরা রয়েছেন। তাই আমরা এই মহামারির দিকে আপনার অগ্রসর হওয়াটাকে ভালো মনে করি না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমরা কোন একটি ব্যাপারে একমত হও। কিন্তু তারা একমত হতে পারেনি। তিনি বললেন, তোমরা চলে যাও। এরপর ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, আনসারদেরকে ডাক। তিনি তাদেরকে ডাকলেন এবং এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। তারাও এ ব্যপারে মুহাজিরদের মত দ্বিমত পোষণ করল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমরা চলে যাও। এরপর তিনি বললেন, কুরাইশদের কোন মুরব্বিকে এবং মুহাজিরদের কোন মুরব্বিকে ডাক। তিনি তাদেরকে ডাকলেন এবং তারা কোন দ্বিমত পোষণ না করে তাকে ফিরত যাওয়ার উপদেশ দিলেন।

এরপর আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ বললেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কি আল্লাহর ফায়সালা থেকে পলায়ন করছেন? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না আমরা আল্লাহর ফায়সালা থেকে আল্লাহর ফায়সালার দিকেই যাচ্ছি। এরপর আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু আসলেন। তিনি বললেন, এ ব্যাপারে আমার নিকট রাসূল (সাঃ)-এর হাদীস রয়েছে। আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যখন তোমরা শুনতে পাবে যে, কোন এলাকায় মহামারী দেখা দিয়েছে তাহলে তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে না। আর যখন তোমরা কোন স্থানে অবস্থান থাকাকালীন মহামারী দেখা দেয় তখন তা থেকে পলায়ন করবে না। এ হাদীস শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর প্রসংশা করলেন এবং মদীনায় ফিরে গেলেন। (সীরাতু ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ১৯০, ১৯১)

৮৭
৮৫. ওমর (রাঃ) আবু সুফিয়ানকে তার সন্তানের শিকল দ্বারা বেঁধে ছিলেন
যায়েদ ইবনে আসলাম তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন শামে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর প্রতিনিধি ছিলেন তখন তিনি তার পিতার নিকট কিছু সম্পদ, লোহার শিকল এবং একটি পত্র পাঠালেন যাতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। এরপর মুয়াবিয়ার প্রেরিত ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের নিকট আগমন করলেন। তার নিকট তিনি সম্পদ এবং শিকল দিলেন। কিন্তু আবু সুফিয়ান সম্পদগুলো তার বাড়িতে রেখে দিলেন। আর শিকল ও চিঠি নিয়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট গেলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন চিঠিটি পাঠ করলেন। তখন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সম্পদগুলো কোথায়? তখন আবু সুফিয়ান বললেন আমার কিছু ঋণ ছিল (এ সম্পদ দ্বারা আমি তা পরিশোধ করে দিয়েছি)।

আর বাইতুল মালে তো আমার পাওনা রয়েছে। তাই যখন আমাকে সেই পাওনা দিবেন তখন এই পরিমাণ সম্পদ কেটে রেখে দিবেন তাহলে ঋণ শোধ হয়ে যাবে। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথীদেরকে বললেন, এই শিকল দ্বারা তোমরা তাকে বাঁধ, যতক্ষণ না সে সম্পদ উপস্থিত না করে। লোকজন তাই করল। তারপর আবু সুফিয়ান সম্পদ আনার জন্য লোক পাঠালেন। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়া হল। পরে যখন শাম থেকে বাহক মুয়াবিয়ার কাছে আগমন করল তখন তিনি তাকে বললেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কি এই শিকল দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন? সে তাকে বলল, হ্যাঁ। আর তিনি তা দ্বারা তোমার পিতাকে বেঁধেছেন। এরপর সে পুরো ঘটনা বর্ণনা করল। তখন মুয়াবিয়া বললেন, হ্যাঁ; আল্লাহর কসম! যদি ওমর জীবিত থাকেন তবে তার সাথে সেই আচরণ করবে যা তিনি আবু সুফিয়ানের সাথে করেছেন (সীরাতুল ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ২৩৩)

৮৮
৮৬. এই দুনিয়ার নামায আমাকে সন্তুষ্ট করবে না
আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তুমুল যুদ্ধের সময় আমি এক দূর্গে উপস্থিত হলাম। কিন্তু লোকজন তখনও ফজরের নামায পড়তে পারেনি। এমনকি যখন সূর্য উদিত হয়ে গেল তখন আমরা নামায পড়লাম। আমরা ছিলাম তখন আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে। এরপর আমাদের বিজয় হল। তখন আনাস ইবনে মালিক আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, দুনিয়ার এই নামায এবং এতে যা আছে তা আমাকে আনন্দিত করবে না। (তারীখুত তাবারী, ৫/৬৩)

৮৯
৮৭. ওমর (রাঃ) এর আশা পূর্ণ হয়নি
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার বললেন যে, আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন তবে আমি এক বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াব যাতে প্রজাদের অবস্থা জানতে পারি। কারণ মানুষের অনেক প্রয়োজন আছে যেটা আমার কারণে সম্পূর্ণ হচ্ছে না। আবার তারা অনেকে আমার কাছে উপস্থিত হতে পারছে না। সুতরাং আমি শামে যাব এবং সেখানে দুই মাস অবস্থান করব। তারপর মিশর যাব এবং সেখানেও দুই মাস অবস্থান করব। তারপর বাহরাইন যাব এবং সেখানেও দুই মাস অবস্থান করব। তারপর কুফায় যাব এবং সেখানেও দুই মাস অবস্থান করব। তারপর বসরায় যাব এবং সেখানেও দুই মাস অবস্থান করব। তারপর ইয়ামান যাব এবং সেখানেও দুই মাস অবস্থান করব। কিন্তু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হায়াত দীর্ঘায়িত হয়নি বিধায় তার সেই আশা পূর্ণ হয়নি। (সীরাতু ওমর ইবনুল খাত্তাব লি আহমাদ আত তাজী, পৃঃ ৮০)

৯০
৮৮. একজন মহিলা যে ছয় মাসে সন্তান প্রসব করেছে
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট এমন একটি মহিলার কথা বলা হল, যে ছয় মাসে সন্তান প্রসব করেছে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে রজমের (পাথর মেরে হত্যা করার) নির্দেশ দিলেন। তখন ঐ মহিলার বোন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে এসে বলল, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার বোনকে রজমের শাস্তি দেয়ার চিন্তা করছেন। আমি আপনার কাছে এসেছি দেখেন তার বাঁচার কোন পথ পাওয়া যায় কিনা? তখন আলী বললেন, তার বাঁচার পথ আছে। এটা শুনে ঐ মহিলা তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করল, যা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শুনতে পেলেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট লোক পাঠিয়ে বললেন, তার বাঁচার উপায় কি? তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَ الۡوَالِدٰتُ یُرۡضِعۡنَ اَوۡلَادَہُنَّ حَوۡلَیۡنِ کَامِلَیۡنِ

আর মায়েরা তার সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে। (সূরা বাকারা : আয়াত-২৩৩)

এবং তিনি আরো বলেছেন,

وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ اِحۡسٰنًا ؕ حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ کُرۡہًا وَّ وَضَعَتۡہُ کُرۡہًا ؕ وَ حَمۡلُہٗ وَ فِصٰلُہٗ ثَلٰثُوۡنَ شَہۡرًا

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছি। তার মা কষ্ট করে তাকে পেটে রেখেছে, কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছে এবং তাকে পেটে বহন করতে ও দুধ ছাড়াতে ত্রিশ মাস লেগেছে। (সূরা আহকাফ : আয়াত-১৫)

সুতরাং গর্ভধারণ হবে ছয় মাস এবং দুধমাসের সময় হবে চব্বিশ মাস। এরপর ঐ মহিলাকে ছেড়ে দেয়া হল। (মাউসুয়াতু ফিকহে ওমর, পৃঃ ৩৭১)

৯১
৮৯. আমি আমার সাথীর সাথে থাকতে চাই
মুসলমানদের হাতে অনেক এলাকা বিজিত হল এবং তাদের কাছে অনেক সম্পদ আসল তখন উম্মুল মু’মিনীন হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার বাবাকে বললেন, এখন যদি আপনি নরম ও উন্নতমানের পোশাক পড়তেন এবং ভাল খাবার গ্রহণ করতেন! যেহেতু এখন আল্লাহ মুসলমানদের সম্পদ এবং রিযিক বৃদ্ধি করেছেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আমার মেয়ে! রাসূল (সাঃ)-এর পোশাকের মধ্যে অতিরিক্ত কি ছিল? তিনি বললেন, সুগন্ধিযুক্ত দুটি পোশাক ছিল যা তিনি মেহমানদের জন্য এটা পরিধান করতেন এবং এটা পরে জুমআর খুতবা দিতেন। এরপর বললেন, রাসূল (সাঃ)-এর সবচেয়ে উন্নত খাবার কি ছিল? হাফসা বললেন, যবের রুটি এবং ঘি। এ দুটি মিশিয়ে তিনি খেতেন।

এরপর তিনি বললেন, রাসূল (সাঃ) এর সবচেয়ে উন্নতমানের বিছানা কি ছিল? হাফসা বললেন, একটা বিছানা ছিল যা আমরা গ্রীষ্মকালে চার ভাঁজ করে নিচে বিছিয়ে দিতাম। আর যখন শীতকাল আসত তখন এর অর্ধেক নিচে বিছিয়ে দিতাম এবং অর্ধেক উপরে দেয়ার জন্য রাখতাম। এসব বর্ণনা শোনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার এবং আমার সাথীর উদাহরণ হচ্ছে এমন তিন ব্যক্তির মত যারা কোন রাস্তা দিয়ে গমন করছে তাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি পূর্ণ পাথেয় সহ রাস্তা অতিক্রম করেছে। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি তার অনুসরণ করেছে এবং সেও এভাবে রাস্তা অতিক্রম করেছে। তারপর তৃতীয় ব্যক্তিও সেই পথ অনুসরণ করেছে (এর দ্বারা তিনি নিজেকে বুঝাতে চাচ্ছিলেন) এখন সে যদি তাদের পাথেয়কে নিজের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাদের সুন্নাতকে পুরোপুরি অনুসরণ করে তাহলে সে তাদের সাথে মিলে যাবে। কিন্তু যদি সে অন্য পথ অবলম্বন করে তবে সে কখনোই তাদের সাথে মিশতে পারবে না। (সীরাতে ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ৫৮)

৯২
৯০. ওমরের কাপড়ে তালি
আবু ইসমাঈল আন নাহদী বলেন, আমি ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে দেখলাম যে, তিনি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করছেন। তখন তার পরনে ছিল একটি লুঙ্গি, যাতে ছিল বারটি তালি। এর মধ্যে একটি তালি ছিল লাল চামড়ার। অন্যরা বলেছেন, এক জুমার দিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে আসতে দেরি করলেন। যখন তিনি আসলেন, তখন মিম্বারে দাঁড়িয়ে ওজর পেশ করে বললেন, আমার এই পোশাকটির কারণে দেরি হয়েছে। এটা সিলাই করা হচ্ছিল। আর এটা ছাড়া আমার দ্বিতীয় কোন পোশাক ছিল না (সীরাতুল ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ৫৯)

৯৩
৯১. ঐ সত্ত্বার সকল প্রশংসা যিনি শয়তানকে খুশী করেননি
মহিমান্বিত সাহাবী মুগীরা ইবনে শু’বাকে যিনার অপবাদ দেয়া হয়। এতে তিন জন লোক সাক্ষী দেয় এবং চতুর্থ জন সাক্ষী দেয়া থেকে বিরত থাকেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ঐ আল্লাহর সকল প্রশংসা যিনি মুহাম্মদের সাথীদের মাধ্যমে শয়তানকে খুশী করেননি। এরপর তিনি তার উপর অপবাদের শাস্তি প্রয়োগ করলেন। কারণ সাক্ষী ছিল তিন জন। আর তিন সাক্ষীর দ্বারা যিনার শাস্তি প্রয়োগ করা যায় না। (আসল খিলাফাতের রাশিদা, পৃঃ ১৪৯)

৯৪
৯২. এক ইয়াহুদীর রক্তপাত
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সময়ে দুই সৎ বন্ধু ছিল। তাদের একজন তার ভাইকে তার পরিবার সম্পর্কে নসীহত করল। একদিন সে তার ভাইয়ের বাড়িতে গেল সেখানে গিয়ে দেখতে পেল ঘরে একটি বাতি জ্বলছে এবং তার ভাইয়ের পরিবারের সাথে এক ইয়াহুদী অবস্থান করছে। এরপর এই যুবক তার বাড়িতে ফিরে আসল এবং একটি তরবারি হাতে নিল। এরপর বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ঐ ইয়াহুদীকে হত্যা করে তার লাশ বস্তায় ফেলে রাখে।

৯৫
৯৩. ওমর এবং হিজরী সন
মায়মুন ইবনে মেহরান বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট একটি চুক্তিনামা পাঠানো হল যা শাবান মাসে খোলা হবে। তিনি বললেন, কোন শাবান? গত শাবান নাকি আগামী শাবান, নাকি বর্তমান শাবান? এরপর তিনি রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবীদেরকে একত্রিত করলেন এবং তাদেরকে বললেন, তোমরা এমন কিছু নির্ধারণ কর যার দ্বারা মানুষ তাদের তারিখ জানতে পারবে। তাদের কাউকে রুমের সন অনুযায়ী সন গণনা করতে বলা হল। তখন বলল, এটাতো অনেক লম্বা সন, যা যুলকারনাইনের সময় থেকে এটা চালু হয়ে আসছে। অন্য কেউ বলল, পারস্যের তারিখ অনুযায়ী সন গণনা করা হোক। এরপর তারা এ বিষয়ে একমত হলেন যে, রাসূল তাদের মাঝে কত দিন অবস্থান করছিলেন। এরপর দেখা গেল যে তিনি মদীনায় দশ বছর অবস্থান করছিলেন। তাই রাসূল (সাঃ)-এর হিজরতের সময়কাল থেকে হিজরতের সন গণনা শুরু হয়। (সীরাতে ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ৫০)

৯৬
৯৪. ওমর (রাঃ)-এর জন্য যা হালাল ছিল
তামীম গোত্রের সরদার আহনাফ ইবনে কায়েস বলেন, আমরা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দরজার সামনে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন দাসী ঐ দিক দিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমার সাথীরা বলল, এটা আমিরুল মু’মিনীন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মালিকানাভুক্ত দাসী। তখন ঐ দাসী বলল, সে আমিরুল মু’মিনীনের জন্য নয় এবং সে তার জন্য হালালও নয়। এটা আল্লাহর মাল। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট থেকে দূত আসল এবং আমাদেরকে ডাকল। পরে আমরা তার কাছে গেলাম।

তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদেরকে বললেন, তোমরা কি বলা বলি করছিলে? আমরা বললাম, আমরা খারাপ কিছু বলেনি। এরপর যা ঘটেছিল তাই বর্ণনা করলাম। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি তোমাদেরকে সংবাদ দিচ্ছি যে, আল্লাহর মাল থেকে আমার জন্য কি হালাল। তা হল, এই দুইটি কাপড়। একটি শীত কালের এবং একটি গরম কালের জন্য। আর এই সওয়ারী যা আমি হজ্জ ও ওমরার কাজে ব্যবহার করি। আর মধ্যম মানের কোন কুরাইশ পরিবারের মধ্যে যে মানের খাবার থাকে সেই মানের খাবার। এছাড়া আমি একজন সাধারণ মুসলমানের মতোই। তাদের যা ঘটে আমারও তাই ঘটে। (সীরাতু ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ৫৬)

৯৭
৯৫. তুমি কি চাও উম্মতে মুহাম্মদী আমার কাছে বিচার দিবে
কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, মুয়াইক্বিব ছিলেন বাইতুল মালের সংরক্ষক। একদিন তিনি বাইতুল মালে প্রবেশ করে একটি দিরহাম পেলেন। ঐ দিরহামটি তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর পরিবারের একটি শিশুকে দিয়ে দিলেন। মুয়াইব বলেন, এরপর আমি আমার বাড়িতে চলে গেলাম। তখন বাহক হিসেবে এক যুবককে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার নিকট পাঠালেন। সে আমাকে আহ্বান করল, আমি আসলাম। তখন দেখলাম যে, ঐ দিরহামটি ঐ বাহকের হাতে রয়েছে। তখন ঐ যুবকটি বলল, হে মুয়াইক্বিব! তোমার সর্বনাশ। তুমি কি আমার ব্যাপারে কিছু ভাবছ? তোমার ও আমার মধ্যে কি হয়েছে? তখন আমি বললাম, কি হয়েছে? বাহক বললেন, তুমি কি চাও এই দিরহামের কারণে কিয়ামতের দিন উম্মতে মুহাম্মদী বিচার দায়ের করবে? এ বলে তিনি দিরহামটি ফেরত দিয়ে দিলেন। (সীরাতু ওমর ইবনে খাত্তাব, পৃঃ ৬১)

৯৮
৯৬. ওমর, তার স্ত্রী ও সুগন্ধি
সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা বাহরাইন থেকে কিছু সুগন্ধি এবং আম্বর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট আসল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার ইচ্ছে হয় যে, আমি যদি এমন একজন মহিলা পেতাম, যে সঠিক পরিমাণে আমার জন্য এই সুগন্ধি লাগিয়ে দিত যাতে করে আমি অবশিষ্ট অংশ মানুষের কাছে বিলিয়ে দিতে পারি। তখন তার স্ত্রী আতিকা বললেন, আমি সঠিক পরিমাণে আপনাকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতে পারব। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না। স্ত্রী বললেন, কেন? তিনি বললেন, আমার ভয় হচ্ছে তুমি এভাবে এভাবে এটা গ্রহণ করবে এবং এভাবে এভাবে এটা রেখে দেবে। এবং তোমার শরীরে মুছবে। এতে করে অন্যান্য মুসলমানদের থেকে বেশি অংশ ব্যবহার হয়ে যাবে। (সীরাতে ওমর ইবনে খাত্তাব, পৃঃ ৬৬)

৯৯
৯৭. তুমি সত্য বলেছ, তাই আমার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর
সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক অপরাধী ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। তাই তিনি তাকে চাবুক মারলেন। তখন লোকটি বলল, হে ওমর! তুমি যদি সঠিক কাজ করে থাক তবে তুমি আমার প্রতি অন্যায় করেছ। আর তুমি যদি অন্যায় করে থাক তবে আমাকে তুমি শিক্ষা দাওনি। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি সত্য বলেছ। তাই তুমি আল্লাহর কাছে আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং আমার নিকট থেকে প্রতিশোধ নাও।

তখন লোকটি বলল, আমি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মাফ করে দিলাম এবং আপনার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (সীরাতু ওমর ইবনে খাত্তাব, পৃঃ ৮০)

১০০
৯৮. ওমর ও আংটি
আবু সেনান বলেন, আমি ওমরের নিকট প্রবেশ করলাম তখন তার নিকট মুহাজিরদের একটি দল উপস্থিত ছিল। তখন ওমরের নিকট ইরাক থেকে আগত কিছু জিনিস পেশ করা হলো। তার মধ্যে একটি আংটি ছিল। তার কিছু সন্তান তার মুখ থেকে সেটা বের করল। তখন তিনি কাঁদছিলেন। এসময় তার সাথীরা তাকে বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন। আপনি কান্না করছেন অথচ আল্লাহ আপনার হাতে অনেক বিজয় দান করেছেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কোন জাতির হাতে যখন দুনিয়ায় বিজয় আসে তখনই তাদের মধ্যে আল্লাহ শত্রুতা এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করে দেন। আর তা কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকে। আমি তো এরই ভয় করছি। (সীরাতু ওমর, পৃঃ ১৩৩)

১০১
৯৯. ওমর (রাঃ)-এর ভয়
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন তার সাথীদের কাছে বসে আছেন, তখন তিনি বললেন, যদি কোন আহ্বানকারী আকাশ থেকে এ আহ্বান করে যে, হে মানুষেরা! তোমরা সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে একজন ব্যক্তি ছাড়া। তাহলে আমার ভয় হচ্ছে যে, ঐ এক ব্যক্তি আমি হয়ে যাই কি না। আবার যদি কেউ যদি ঘোষণা দেয় যে, তোমরা সবাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে কেবলমাত্র একজন ব্যক্তি ছাড়া। তাহলে আমি আশা করি যে, সেই ব্যক্তি আমিই হতে পারব। (হিয়াতুল আউলিয়া, ১৫৩)।

১০২
১০০. ওমর (রাঃ) এর খাল খনন
শুকনো মাওসুম শেষ হওয়ার পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খেলাফতের যুগে মিশর বিজিত হয়। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট একটি চিঠি প্রেরণ করলেন। সেখানে তিনি লেখলেন যে, আল্লাহর হামদ ও প্রশংসার পর তোমার জন্য জরুরি হল যে, তুমি নীল নদ এবং লোহিত সাগরের মধ্যে একটি খাল খনন কর যাতে করে হিজাজের দিকে মালবাহী জাহাজগুলো যাতায়াত করতে পারে এবং মুসলমানদের প্রয়োজন পূর্ণ হয়। আর এ কাজের জন্য তিনি এক বছর সময় নির্ধারণ করে দেন। অথচ এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই খাল খনন শেষ হয় এবং তা দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। এই খালকে খালিজে আমীরুল মু’মিনীন বলা হয়। (সীরাতে ওমর ইবনে খাত্তাব, পৃঃ ১৪১)।

১০৩
১০১. ওমর (রাঃ) এবং একজন পাদ্রী
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন এক গীর্জার পাশ দিয়ে গমন করছিলেন। সেখানে একজন পাদ্রীও ছিল। তিনি সেখানে অবস্থান করলেন। তখন ঐ পাদ্রীকে বলা হল যে, ইনি হচ্ছেন আমীরুল মু’মিনীন ওমর। তখন ঐ পাদ্রী দ্রুত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট আসল। তখন সে ছিল খুবই দুর্বল এবং দুনিয়া ত্যাগ করার কারণে তার মধ্যে খুব কষ্ট অনুভব হচ্ছিল। তার অবস্থা দেখে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তখন তাকে বলা হল যে, ও তো খ্রিস্টান। তিনি বললেন, আমি তা জানি। কিন্তু আমার মনে পড়ল আল্লাহর সেই কথা সেদিন অনেক মানুষ হবে কঠোর পরিশ্রমী, তারপরেও তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা গাশিয়াহ-৩৪)

তখন তার প্রতি আমার দয়া হল যে, সে অনেক কষ্ট করতেছে তারপরও সে জাহান্নামে যাবে। (মুস্তখাব কানযুল উম্মাল, ২/৫৫)

১০৪
১০২. ওমর হাতিয়ার কণ্ঠস্বর কিনেছিলেন
ওমরকে বলা হলো আপনি কবি হাতিয়া থেকে মানুষকে বাঁচান না কেন? কারণ সে মানুষের নিন্দা করে এবং ইজ্জত নষ্ট করে। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তিন হাজার দিরহামের বিনিময়ে তার কাছ থেকে মানুষের সম্মানকে কিনে ফেলেন। এরপর থেকে সে কবিতার মাধ্যমে কাউকে ভয় দেখাতে পারত না। (সীরাতে ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ১৪৫)

১০৫
১০৩. আমি ইনসাফ কায়েম করেছি, তাই আমি নিরাপদে ঘুমিয়ে আছি
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাজ-কর্ম দেখাশুনা করার জন্য বাদশাহ কায়সার তার নিকট একজন বাহক পাঠালেন। যখন সে মদীনায় প্রবেশ করল তখন জিজ্ঞেস করল, তোমাদের বাদশাহ কোথায়? তারা উত্তর দিল যে, আমাদের কোন বাদশাহ নেই। বরং আমাদের আছেন আমীর। তিনি এখন শহরের বাইরে আছেন। তখন ঐ বাহক তার তালাশে বের হল। এক পর্যায় তাকে খোলা আকাশের নিচে গরম বালুর উপর সূর্যের তাপের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার চাবুকটি বালিশের মতো বানিয়েছিলেন। আর তার শরীর থেকে ঘাম ঝরতেছিল এমনকি যমীন প্রায় ভিজে গেল।

ঐ বাহক যখন তাকে এ অবস্থায় দেখতে পেল তখন বলল, অনেক রাজা বাদশাহ আছে যারা ভয়ের কারণে খোলা জায়গায় অবস্থান করতে পারে না, আর আপনি ন্যায় বিচার কায়েম করেছেন এবং নিরাপদে শুয়ে আছেন, অথচ আমাদের রাজা-বাদশাহরা নিরাপত্তার ভয়ে নির্ঘুম দিন কাটায়। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনার দ্বীন সত্য। আমি যদি বাহক হিসেবে আপনার নিকট না আসতাম তবে আমি এখনি মুসলমান হতাম। তবে আমি পরবর্তীতে এসে ইসলাম গ্রহণ করব। (আখবারু ওমর, পৃঃ ৩২৮)

১০৬
১০৪. ওমর (রাঃ) ও ব্যবসা
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি কোনকিছুতে ৩ বার ব্যবসা করেও লাভবান হতে পারেনি তার উচিত ঐ ব্যবসা পরিবর্তন করা। নিম্নমানের কোন ব্যবসাও মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে অনেক উত্তম। আর আমি যদি কোন ব্যবসা করতাম তবে আতরের ব্যবসাই করতাম। কারণ, আতরের ব্যবসা করে আমি আর্থিকভাবে লাভবান না হলে এর সুঘ্রান আমাকে লাভবান করত। তিনি আরো বলেন, তোমরা সবাই মেহনত করতে শিখ, কারণ এক সময় তোমাদের কেউ না কেউ অবশ্যই পরিশ্রমের মুখাপেক্ষী হবে। (সীরাতে ওমর ইবনে খাত্তাব লি আহমাদ আত তাজী, পৃঃ ২১২)

১০৭
১০৫. যাকাতের ছাগল
কাসেম ইবনে মুহাম্মদ বলেন, ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার যাকাতের ছাগলের পাশ দিয়ে গমন করছিলেন। সেখানে একটি ছাগল ছিল অনেক বড় স্তন বিশিষ্ট। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এটা কি? তারা বলল, এটা যাকাতের ছাগল। একথা শুনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এই ছাগল তার মালিক স্বেচ্ছায় দেয়নি। সুতরাং তোমরা ছিনতাই করবে না এবং মানুষের উত্তম মালগুলো নিয়ে আসবে না। (আল খারাজ, পৃঃ ৯৮)

১০৮
১০৬. সাহাবীরা তাকে ভয় করতেন
একদিন ওমর রাস্তা দিয়ে চলাচল করছিলেন। আর তার পিছনে ছিলেন কয়েকজন সাহাবী। যখনই তিনি সাহাবীদের দিকে তাকালেন, তখন সাহাবীদের মধ্যে এমন কেউ ছিলেন না যার হাটুর রশ্মি পড়ে যায়নি। তিনি বলেন, এরপর তিনি তার চোখ ফিরিয়ে নিলেন এবং কান্না করলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি জান তারা আমাকে যতটুকু ভয় করছে, তোমার ক্ষেত্রে আমি তার চেয়ে বেশি ভীত। (মানাকীবে ওমর, পৃঃ১১৭)

১০৯
১০৭. ওমর (রাঃ) আলেমদেরকে সম্মান করতেন
যায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। আর তিনি ছিলেন আনসারদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এসে যায়েদের বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন যায়েদের মাথা ছিল তার কামরার ভিতরে। তখন তার দাসী মাথা চিরুনী করছিল। তখন যায়েদ দাসী থেকে তার মাথা সরিয়ে নিলেন এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহ এর দিকে অগ্রসর হলেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ওকে মাথা আঁচড়াতে দাও। একথা শুনে যায়েদ বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি যদি আমার নিকট খবর পাঠাতেন তবে আমিই তো আপনার নিকট যেতাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, প্রয়োজন তো আমার। তাই আমি তোমার নিকট এসেছি। (সীরাতুল ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ২১৯)

১১০
১০৮. মুয়াইক্বিব এর চিকিৎসায় ওমর (রাঃ)
মুয়াইক্বিব রাদিয়াল্লাহু আনহু (একবার) অসুস্থ হলেন, আর তিনি ছিলেন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সময় বাইতুল মালের কোষাধ্যক্ষ। তার সম্পর্কে যারা শুনেছে, ওমর তাদের কাছ থেকে তার রোগের চিকিৎসা কামনা করলেন। তখন তার কাছে ইয়ামেনের অধিবাসীদের থেকে দু’জন লোক আগমন করলেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমাদের কাছে এই ন্যায়পরায়ন ব্যক্তির জন্য কোন চিকিৎসা আছে কি? কেননা এ ব্যাথা তার মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তখন তারা দু’জন বললেন যে, আমরা তার রোগকে নিরাময় করতে সক্ষম নই।

তবে আমরা এমন একটি চিকিৎসা করতে পারি, যার দ্বারা তার রোগ স্থির থাকবে, বৃদ্ধি পাবে না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমরা যত্ন সহকারে তার চিকিৎসা কর যাতে তার রোগ স্থির থাকে এবং বৃদ্ধি না পায়। তখন তাদের দু’জনের একজন বললেন, আপনাদের ক্ষেতে কি হানজালা (টক জাতীয় ফল) ফলে? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হ্যাঁ ফলে। তারা দু’জন বললেন, এটা থেকে আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসুন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তা আনতে নির্দেশ দিলেন এবং তা আনা হল। তখন তারা প্রতিটি হানজালাকে দু’ভাগ করলেন। এরপর তারা মুয়াইকাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে জমিনে শোয়াইয়া দিলেন এবং তারা তার একটি পা ধরলেন এবং হানজালা তার পায়ের পাতায় ঘষলেন যখন একটি পা শেষ হল তখন অপর পায়েও অনুরূপ করলেন। এরপর তাকে ছেড়ে দিলেন এবং তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বললেন, এরপর থেকে আর কখনও তার ব্যাথা বৃদ্ধি পাবে না। রাবি বলেন, আল্লাহর শপথ! মুয়াইক্বিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এ ব্যথা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কখনও বৃদ্ধি পায়নি। (রিয়াযুন নাযাহ)

১১১
১০৯. ওমর (রাঃ)-এর চিন্তিত রাত্রি
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর আযাদকৃত দাস আসলাম বলেন, আমরা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট রাত্রিযাপন করতাম। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কাপড় রিফু বা তালি দিতেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতের একটি সময় সালাত আদায় করতেন। আর যখন তিনি রাত্রে ঘুম হতে জাগতেন তখন এই আয়াত পাঠ করতেন–

وامراحلك بالصالاة واصطبر عليحا لا نسالك رزقا نحن نرزكك والعاقبة للتقوى ·

এমনি এক রাতে তিনি উঠলেন এবং সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, তোমরা উঠে সালাত আদায় করো। আল্লাহর শপথ! আমি সালাত আদায় করতেও সক্ষম নই। উঠতেও সক্ষম নই। আমি সূরা আরম্ভ করি, কিন্তু বুঝতে পারি না যে প্রথমে আছি নাকি শেষে আছি। রাবি বলেন, আমরা বললাম, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনার এমন হল কেন? তখন তিনি বললেন, যখন আমার কাছে খিলাফতের দায়িত্ব পৌঁছাল তখন থেকে আমি চিন্তাগ্রস্ত। (সীরাতুল ওমর ইবনুল খাত্তাব লি আহমাদ আত-তাজী, পৃঃ ১২৫)

১১২
১১০. আপনার পরে আমি কষ্টে পতিত হয়েছি
একদা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে দেখলেন যে, তিনি মদীনার রাস্তা দিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছেন। তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বললেন, হে মুমিনদের নেতা! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু না দাঁড়িয়ে চলন্ত অবস্থায় বললেন, যাকাতের উট হারিয়ে গেছে। তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সামনে আসল এই কথা বলতে বলতে যে, আপনার পরে আমি কষ্টে পতিত হয়েছি। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ঐ সত্তার শপথ! যিনি মুহাম্মাদ কে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, যদি একটি মাদী ছাগল ফুরাত নদীর তীরে যেত তাহলে অবশ্যই ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু অবশ্যই তা তালাশ করে বের করত। (মানাকীবু আমীরুল মু’মিনীন, পৃঃ ১৪০)

১১৩
১১১. ওমর (রাঃ) আমর (রাঃ) এবং মিশরের এক ব্যক্তির ঘটনা
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে ছিলাম এমন সময় মিশরের এক ব্যক্তি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে এসে বলল, হে মুমিনদের নেতা! এ স্থানটি আপনার জন্য নিরাপদ। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার জন্য কি? সে বলল, আমার পারিশ্রমিক হল মিশরী ঘোড়া। সুতরাং আমার ঘোড়া আমাকে দিন। যখন লোকেরা একে দেখল তখন মুহাম্মাদ ইবনে আমর দাঁড়িয়ে বললেন, কাবার মালিকের শপথ! এটি আমার। এরপর যখন তা আমার নিকটবর্তী হল তখন একে আমি চিনতে পারলাম এবং বললাম, কাবার মালিকের শপথ! এটি ইতিপূর্বে আমারই ছিল।

তখন মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার কাছে দাঁড়িয়ে আমাকে চাবুক মারলেন এবং বললেন, তুমি একে (পারলে) ধর। আর আমি তো সম্মানিত ব্যক্তিদের সন্তান। রাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কোন কথা না বাড়িয়ে তাকে বসতে বললেন এবং মুহাম্মাদের পিতা আমর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে এই বলে একটি চিঠি লিখলেন যে, যখন তোমার কাছে আমার এ চিঠি পৌঁছবে তখন তুমি তোমার সন্তান মুহাম্মাদসহ আমার কাছে আসবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ছেলেকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি কি এরূপ ঘটনা ঘটিয়েছ? সে বলল যে, না আমি এরূপ করিনি। তার পিতা তাকে বললেন, তাহলে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কি হয়েছে যে, তিনি তোমার সম্পর্কে আমার কাছে পত্র লিখলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন তারা আসলেন আর আমি তার কাছে অবস্থান করছিলাম।

আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু লুঙ্গি ও চাদর পরিহিত অবস্থায় আসলেন এবং তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তার ছেলের মতামত কি? তখন তিনি মুহাম্মাদ তার পিতার (আমর) পিছনে অবস্থান করছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, মিশরের লোকটি কোথায়? লোকটি বলল, এই তো আমি এখানেই আছি। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সম্মানিত ব্যক্তিদের সন্তানরা তাকে প্রহার কর। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাকে এমন মার দেয়া হল যাতে সে মারাত্মক ভাবে আহত হল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তা আমরের ভাগে রেখে দাও। আল্লাহর কসম! তোমাকে (মিসরী) তো ন্যায়পরায়ন সুলতানই শাস্তি দিয়েছে। তখন মিশরী ব্যক্তি বললেন, হে মুমিনদের নেতা! যে আমাকে প্রহার করেছে আমি তাকে অবশ্যই প্রহার করব।

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আল্লাহর শপথ! যদি তুমি এমন কর তবে আমি তোমার এবং তার সাথে নেই। আর তুমিই সে ব্যক্তি যে একে ডেকেছ। অতপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আমর! তোমরা কখন লোকদেরকে দাস বানালে? অথচ এদের মায়েরা তো এদেরকে স্বাধীনভাবে জন্ম দিয়েছে। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মিশরী ব্যক্তির দিকে তাকালেন এবং তাকে বললেন, সঠিক ভাবে ফিরে যাও এবং তোমার যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে তা আমার কাছে লিখ। (সীরাতুল ওমর, পৃঃ ৯২, ৯৩)

১১৪
১১২. ওমর এবং নতুন চাদর
একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি নতুন চাদর পরিধান করে বের হয়েছিলেন। অতঃপর লোকজন তার দিকে বিশেষ ভাবে তাকাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেন, অনেক লোকের ধনভাণ্ডার একদিনের জন্যও তার কোন কাজে আসেনি। আর তারা (ধনাট্য লোকেরা) কখনো চিরস্থায়ী হতে পারেনি।

আজ সেই বাদশা কোথায় যারা এগুলো কুড়িয়েছে। সেখানে একটি কূপ রয়েছে কোন সন্দেহ সবাইকে তাতে অবতরণ করতে হবে। (আল আদাব ফিল ইসলাম, ১৭০)

১১৫
১১৩. ওমর (রাঃ) ও বাদশার আংটি
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সময়ে একটি অভিনব ঘটনা ঘটেছিল যা এর আগে কখনো ঘটেনি। তা হলো মায়ান ইবনে যায়িদ বাদশার আংটির নকশার ন্যায় নকশা খচিত আংটি কুড়াতে সক্ষম হয় এবং এর দ্বারা সে মুসলমানদের সম্পদ ভোগ করে। বিষয়টি ওমরের কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি তাকে একশত বেত্রাঘাত করেন এবং বন্দী করে রাখেন। পরে তার ব্যাপারে কথা হলে তাকে পুনরায় একশত বেত মারেন। আবার কথা হলে পুনরায় একশত বেত মারেন। (উলায়াতুল ফারুক, পৃঃ ৪৩৫)

১১৬
১১৪. এক যিনাকারিণী পাগল (মহিলা)
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এক পাগলী মহিলাকে আনা হল, যে যিনা করেছে যা লোকেরা বুঝতে পারল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। সেখান থেকে আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু যাচ্ছিলেন এবং তা দেখে তিনি বললেন, তাকে ফিরিয়ে দাও। কেননা, তার উপর থেকে শরীয়াতের বিধান উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তখন তিনি এ সম্পর্কে হাদীসটির শেষ অংশ পর্যন্ত উল্লেখ করলেন,

বি: দ্র: রাসূল (সাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির উপর থেকে শরীয়াতের বিধান উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তারা হল, পাগল, ঘুমন্ত ব্যক্তি এবং না বালেগ ব্যক্তি।

এরপর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমাদের কি হল যে, এ মহিলাকে রজম করবে? তখন ঐ মহিলাকে ছেড়ে দেয়া হল। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকবীর পাঠ করলেন অর্থাৎ আল্লাহু আকবার পাঠ করলেন। (ওমর ইবনে খাত্তাব লিস সালাবী, পৃঃ ৩২৩)

১১৭
১১৫. ওমর (রাঃ) এবং রাত্রি বেলায় কুরআন তেলাওয়াতকারী
হযরত জাফর ইবনে যায়েদ আল আবাদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একরাতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রজা সাধারণের অবস্থা দেখার জন্য মদীনার রাস্তায় বের হলেন। তখন এক আনসারী ব্যক্তির বাড়ির নিকট দিয়ে তিনি গমন করলেন। তখন সে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে তার কিরাত শুনছিলেন। যখন সে এ আয়াতগুলোতে পৌঁছল,

وَ الطُّوۡرِ ۙ ﴿۱﴾ وَ کِتٰبٍ مَّسۡطُوۡرٍ ۙ ﴿۲﴾ فِیۡ رَقٍّ مَّنۡشُوۡرٍ ۙ ﴿۳﴾ وَّ الۡبَیۡتِ الۡمَعۡمُوۡرِ ۙ ﴿۴﴾ وَ السَّقۡفِ الۡمَرۡفُوۡعِ ۙ ﴿۵﴾ وَ الۡبَحۡرِ الۡمَسۡجُوۡرِ ۙ ﴿۶﴾ اِنَّ عَذَابَ رَبِّکَ لَوَاقِعٌ ۙ ﴿۷﴾ مَّا لَہٗ مِنۡ دَافِعٍ ۙ ﴿۸﴾

১.শপথ তূর পর্বতের।

২.শপথ কিতাবের, যা লিখিত আছে।

৩. খোলা পত্রে;

৪.শপথ বায়তুল মা’মূরের,

৫.শপথ সমুন্নত আকাশের,

৬.এবং শপথ উদ্বেলিত সমুদ্রের

৭. তোমার প্রতিপালকের আযাব অবশ্যম্ভবী,

৮.এর প্রতিহতকারী কেউ নেই।

তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি কাবা ঘরের কসম খেয়ে বলছি- আল্লাহর এ আয়াত সত্য। এরপর তিনি তার সওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন এবং দেয়ালে ভর দিয়ে বসলেন। এরপর তিনি বাড়িতে ফিরে আসলেন এবং প্রায় একমাস অসুস্থ থাকলেন। লোকজন তাকে দেখা শোনা করার জন্য আসত কিন্তু তার রোগ কি ছিল তা কেউ জানতে পারত না। (সীরাতুল ওমর ইবনে খাত্তাব, পৃঃ ১১৯)

১১৮
১১৬. শাসক থেকে ছাগলের রাখাল
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আইয়াজ ইবনে খানামকে শাম দেশের গভর্ণর নিযুক্ত করলেন। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট সংবাদ আসল যে, আইয়াজ একটি গোসল খানা বানালেন এবং নিজের জন্য কিছু লোককে বিশেষভাবে সাক্ষাতের সুযোগ দিলেন। পরে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে দেখা করার জন্য আইয়াজকে চিঠি দিলেন। পরে তিনি আসলে তাকে তিন বার পর্দার বাহিরে রাখলেন। পরে তাকে অনুমতি দিলেন। তারপর একটি চামড়ার জুব্বা আনতে বললেন, এটা আনা হলে বললেন যে, তুমি এটা পরিধান কর। পরে তাকে রাখাল নিযুক্ত করেন এবং তিনশত ছাগল তার দায়িত্বে দেন। (আল ওয়ালাইয়াতু আলাল-বুলদান, ২১৩০)

১১৯
১১৭. দুধ বিক্রিকারিণী মেয়ের ঘটনা
ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর গোলাম আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, এক রাতে আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি মদীনাবাসীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ঘোরাফেরা করতেছিলেন। মাঝরাতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এমন একটি ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন যে ঘরে মা তার মেয়েকে ডেকে বলছে, হে আমার মেয়ে! তুমি উঠে দুধের সাথে পানি মিশ্রণ কর। তখন মেয়ে বলল, হে আমার মা! আপনি কি জানেন যে এ ব্যাপারে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সিদ্ধান্ত কি? তখন মা বললেন, তার সিদ্ধান্ত কি? মেয়ে বলল, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একজন ঘোষকের মাধ্যমে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা দুধের সাথে পানি মিশ্রণ করিও না। এরপরও মা তার মেয়েকে বললেন, তুমি উঠে দুধে পানি মিশাও। কেননা, তুমি যে স্থানে আছ এখানে ওমর এবং তার ঘোষক তোমাকে দেখবেন না। মেয়ে বলল, আমি তা পূর্ণ করব না এবং তাকে আমি অস্বীকার করছি। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সব কথা শুনলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার গোলাম আসলামকে বললেন, তুমি এ দরজা এবং এ স্থানকে চিনে নাও।

এরপর যখন রাত শেষ হয়ে ভোর হল তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আসলামকে বললেন, তুমি সেখানে যাও এবং মা-মেয়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ কর। তাদের স্বামী আছে কি? আসলাম বলেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে আসলাম এবং তাকে সংবাদ দিলাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সন্তানদের একত্রিত করে মা-মেয়ের ঘটনা বর্ণনা করলেন এবং বললেন যে, তোমাদের কারো কোন মহিলা বিবাহ করার প্রয়োজন আছে কি? তোমাদের পিতার যদি কোন নারীর প্রয়োজন হতো তবে এ মেয়ের ক্ষেত্রে কেউ তার অগ্রগামী হতে পারত না। তখন আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান বললেন, আমাদের তো স্ত্রী আছে। আর আসেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আমার পিতা! আমাকে বিবাহ করিয়ে দেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আসেমকে ঐ মেয়ের কাছে পাঠালেন। আর আসেম তাকে বিবাহ করেন। আর এ মেয়ের গর্ভে একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। আর তার থেকে ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ জন্ম গ্রহণ করে। যাকে দ্বিতীয় ওমর বলা হয়। (মানাকিবে ওমর লি ইবনে জাওযী, পৃঃ ৮৯, ৯০)।

১২০
১১৮. ওমর (রাঃ) ও তারাবীর নামায
আবদুর রহমান ইবনু আবদুল ক্বারী হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রামাযানের এক রাতে ওমর ইবনুল খাত্তাবের সাথে মসজিদের দিকে বের হলাম। দেখলাম, বিভিন্নভাবে বহু লোক। কেউ একা একা নামায পড়ছে। কোথাও এক ব্যক্তি নামায পড়ছে আর কিছু লোক তার সঙ্গে নামায আদায় করছে। তখন ‘ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার মনে হয়, এদের সবাইকে একজন ক্বারীর সাথে জামাআতবন্দী করে দিলে সবচাইতে উত্তম হবে। এরপর এ ব্যাপারে তিনি দৃঢ় সংকল্প করলেন এবং তাদেরকে উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর পিছনে জামা’আতবন্দী করে দিলেন। আমি আরেক রাতে আবার তার সাথে বের হলাম। দেখলাম, লোকজন তাদের ইমামের সঙ্গে নামায পড়ছে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এটি উত্তম বিদ’আত বা সুন্দর ব্যবস্থা। রাতের যে অংশে নামায না পড়ে লোকেরা ঘুমায় তা যে অংশে তারা নামায পড়ে তার চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ রাতের প্রথম অংশের চাইতে শেষ অংশের নামায বেশি উত্তম-এটাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন। আর লোকেরা রাতের প্রথম অংশেই নামায পড়ত। (বুখারী, হাদীস-২০১০)

১২১
১১৯. আফসোস, তুমি একজন দুর্ভাগা মা
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর গোলাম হযরত আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মদীনায় কিছু ব্যবসায়িক মাল আসল যা দেখে মুসল্লিরা এগিয়ে আসল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, তুমি কি রাত্রে এ মাল পাহারা দিতে পারবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ পারব। তারা দু’জন (ওমর ও আব্দুর রহমান) পাহারা দিতেছিলেন এবং নামায পড়ে রাত কাটাচ্ছিলেন। এমন সময় ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি বালকের কান্না শুনতে পেলেন এবং সে দিকে ফিরে তাকালেন এবং তার মাকে বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর আর তোমার সন্তানের সাথে ভালো আচরণ কর।

এরপর তিনি তার স্থানে ফিরে গেলেন। পরের রাতেও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ বালকের কান্না শুনতে পেলেন এবং তার মায়ের কাছে গিয়ে বললেন, আফসোস! তুমি একজন নিকৃষ্ট মা। আমার কি হল যে আমি তোমার সন্তানকে প্রতি রাত্রে কাঁদতে দেখি? তখন সন্তানের মা বললেন, আমি তাকে খাবার (দুধ) থেকে দূরে রাখি। কিন্তু সে তা অস্বীকার করে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি এরূপ কেন কর? সে বলল, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তো শুধুই দুধ ছাড়ানো সন্তানের জন্য আহার্য বরাদ্দ দেন। প্রত্যেক দুধ ছাড়ানো বাচ্চার জন্য ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খাবার এবং মাল দিয়ে থাকেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মহিলাকে বললেন, তোমার এ সন্তানের বয়স কত? সে বলল, এই কয়েক মাস। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন,তোমার জন্য আফসোস! তুমি তাকে দুধ ছাড়ানোর ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না।

অতপর যখন তিনি ফজরের নামায আদায় করলেন। এরপর তিনি (ওমর) তার ঘোষককে নির্দেশ দিলেন এই কথা ঘোষণা করতে যে, তোমরা তোমাদের সন্তানদের দুধ ছাড়ানোর ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না। আর নিশ্চয়ই আমি মুসলমানের প্রত্যেক সন্তানের জন্য অংশ নির্ধারণ করে দিলাম। এমনকি এ সংবাদ তিনি সর্বত্র ছড়িয়ে দিলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

১২২
১২০. তুমি কি কেয়ামতের দিন আমার পাপের বোঝা বহন করবে?
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর গোলাম আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মরুভূমিতে বের হলেন তখন আমি তার সাথে ছিলাম। আমরা যখন আরার নামক স্থানে ছিলাম তখন হঠাৎ করে আগুন প্রজ্বলিত হল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আসলাম! আমি এখানে একদল আগন্তুক দেখছি যাদের দ্বারা রাত এবং ঠাণ্ডা দূরীভূত হবে। সে আমাদেরকে নিয়ে যাবে। অতপর আমরা নাহরুল নামক স্থানে গেলাম এবং তাদের নিকটবর্তী হলাম।

সেখানে একজন মহিলা ছিলেন যার সাথে তার সন্তানেরা ছিল। আর তারা আগুনের কাছেই ছিল। আর তার সন্তানেরা চিৎকার করতেছিল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, হে আলোর অধিবাসীরা! তিনি আগুন ওয়ালা বলতে অপছন্দ করলেন। মহিলা বলল, আরো কাছে আস। আমরা তার আরো কাছে গেলাম এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তোমাদের কি হল? এর দ্বারা আমাদের রাত ও শীত দূরীভূত হয়েছে? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাহলে এই ছেলেদের কি হল যে, এরা চিৎকার করছে? তখন মহিলা বললেন যে, ওরা ক্ষুধার কারণে চিৎকার করছে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ পাতিলের মধ্যে কি আছে? সে বলল, এর মধ্যে পানি আছে, যার দ্বারা আমি তাদেরকে চুপ করে রাখতেছি ঘুম আসা পর্যন্ত। আল্লাহর কসম, ওমরের মাঝে এবং আমাদের মাঝে অনেক দূরত্ব। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে কোন রহমত দিয়েছেন? আর ওমর কি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানেন? মহিলা বলল, তিনি এক সময় আমাদের খোঁজ খবর রাখতেন। এখন তিনি আমাদের প্রতি অযত্নবান। রাবী বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার কাছে আসলেন এবং আমরা চললাম।

এরপর আমরা নাহরুল থেকে বের হয়ে আটার গুদাম ঘরে আসলাম। সেখান থেকে তিনি এক বস্তা আটা বের করলেন এবং বললেন, আমিই এটি আমার নিজ কাধে বহন করিব। রাবি বলেন, আমি বললাম, আমাকে দিন আমি বহন করি। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি কি কেয়ামত দিবসে আমার পাপের বোঝা বহন করবে? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজে তা বহন করে চললেন। আর আমিও তার সাথে চললাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আটার বস্তা মহিলার কাছে রাখলেন এবং সেখান থেকে কিছু আটা বের করলেন এবং রুটি প্রস্তুত করলেন। রাবী বলেন, আমি দেখলাম ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দাড়ির ভেতর থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। অতপর উক্ত মহিলা আসলেন তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কাছে কিছু চাইলেন। তখন সে তাকে একটি পাত্র দিল আর ওমর রুটিগুলো ঐ পাত্রে দিলেন। মহিলা তার সন্তানদের তৃপ্তি সহকারে খাওয়ালেন এবং নিজে খেলেন। (আল কামেল ফিত তারীখ, ২/২১৪)।

১২৩
১২১. যদি তা পুনরায় আসে তবে তোমাদের বসবাস করতে দেব না
ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু- এর সময়ে একবার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল। তিনি বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমরা কোন কিছু ঘটিয়েছ। যার ফলে এমনটি হয়েছে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যদি পুনরায় ভূমিকম্প হয় তবে আমি তোমাদেরকে এখানে বসবাস করতে দেব না। (আদদাউ ওয়াদ দাওয়াউ, পৃঃ ৫৩)

১২৪
১২২. তোমার সাথীকে পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দাও
এক রাতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মদীনার ওলিগলিতে ভ্রমণ করছিলেন। হঠাৎ করে একটি ঘর থেকে মহিলার চিৎকার শুনতে পেলেন। সেখানে একজন পুরুষকেও দেখতে পেলেন। তিনি তার কাছে গিয়ে সালাম দিলেন এবং বললেন, তুমি কে? সে বলল, আমি একজন গ্রাম্য লোক আর আমি খলিফার কাছে আসছি তার সাহায্য পাবার জন্য। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ঘরের মধ্যে কিসের আওয়াজ? তিনি আরো বললেন, তোমার এ বিপদে আল্লাহর করুণা অবধারিত হোক। তখন লোকটি বলল, আমার স্ত্রী সন্তান প্রসবের ব্যথায় কাতরাচ্ছে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তার কাছে কি কেউ আছে? লোকটি বলল, না। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাড়িতে গেলেন এবং স্বীয় স্ত্রী উম্মে কুলসুম বিনতে আলীকে বললেন, তুমি কি একটি কাজ করতে পারবে যার বিনিময়ে আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন? তখন তিনি (উম্মে কুলসুম) বললেন, কি সে কাজ? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এক অসহায় মহিলা সন্তান প্রসব ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। তার কাছে কেউ নেই।

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী বললেন, আপনি যদি চান তাহলে আমি রাজি। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সন্তান প্রসব কাজে যা লাগে যেমন নেকড়া, তেল নিয়ে আমার সাথে চল। তার স্ত্রী প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে এ মহিলার বাড়িতে গেলেন। আর তাদের সাথে নিলেন একটি পাত্র, ঘী এবং কিছু খাবার। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী বললেন, চলো এবং তিনি পাত্র বহন করছিলেন। আর তার পিছনে চললেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বাহিরে বসলেন আর এ লোকটিকে বললেন, তুমি আমার জন্য আগুনের ব্যবস্থা কর। লোকটি তাই করল। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খাবার পরিবেশন পর্যন্ত আগুন জালিয়ে রাখলেন। যখন উক্ত মহিলা সন্তান প্রসব করল তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর স্ত্রী ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি আপনার সাথীকে পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিন।

যখন বেদুঈন লোকটি আমীরুল মু’মিনীনের কথাটি শুনল তখন সে ভয়ে জড়ো সরো হয়ে পড়ল এবং তার থেকে (ওমর) দূরে সরে বসল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি যেখানে আছ সেখানে থাক। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খাবারের পাত্রটি দরজার কাছে রাখলেন আর স্বীয় স্ত্রীকে বললেন, তাকে (বেদুঈনের স্ত্রীকে) খাওয়াও। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর স্ত্রী তাই করল এবং খাবারের পাত্রটি দরজার কাছে রাখলেন। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খাবারের পাত্রটি বেদুঈন লোকটির সামনে রাখলেন। আর বললেন, তুমি খাও। কেননা, তুমি রাত্রি জাগরণ করেছ। আর স্ত্রীকে (উম্মে কুলসুমকে) বললেন, তুমি বের হও। চলে আসার সময় ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বেদুঈন লোকটিকে বললেন, আগামিকাল তুমি আমার কাছে আসবে। তোমার যা কিছু প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করে দিব। পরের দিন সকালে বেদুঈন লোকটি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে আসলে তিনি তার সন্তানের জন্য বাইতুল মাল থেকে একটি অংশ ধার্য করে দিলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/১৪০)

১২৫
১২৩. এই চাল-চলন ছেড়ে দাও
এক লোক হাত-পা হেলিয়ে অহংকার প্রদর্শন করে আগমন করল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, এই চলন ছেড়ে দাও। সে বলল, আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এজন্য ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বেত্রাঘাত করলেন। এরপরও সে এভাবে অহংকার প্রদর্শন করে চলাফেরা শুরু করল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আবার তাকে বেত্রাঘাত করলেন। এরপর সে তা ছেড়ে দিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এরকম ব্যাপারে যদি আমি বেত্রাঘাত না করি তবে কিসের জন্য করব? পরবর্তীতে ঐ লোকটি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট এসে বলল, আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমার সাথে ছিল এক শয়তান। আপনার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। (আখবারু ওমর, পৃঃ ১৭৫)

১২৬
১২৪. জীবিত অবস্থায় তার অনুসরণ করব আর মৃত্যুর পর তার অবাধ্য হব এমন নয়
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সর্বদা তার প্রজা সাধারণের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতেন। আর তিনি রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের লোকদের সাথে মিশতে নিষেধ করতেন। একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সংক্রমিত নারীকে কাবা ঘর তাওয়াফ করতে দেখে বললেন, হে আল্লাহর বান্দী! তুমি যদি বাড়িতে অবস্থান করতে তাহলে লোকদের তুমি কষ্ট দিতে না। এরপর মহিলা বাড়িতে অবস্থান করল। এরপর মহিলার কাছ থেকে যাবার সময় এক লোক তাকে বলল যে, যে ব্যক্তি তোমাকে ঘর হতে বের হতে বারণ করেছেন তিনি মারা গেছেন। সুতরাং বের হও। তখন মহিলা বলল যে, আল্লাহর কসম! আমি এ রকম নই যে, আমি জীবিত অবস্থায় তাঁর অনুসরণ করব আর মৃত্যুর পর তার অবাধ্য হব। (ওমর ইবনে খাত্তাব লিস সালাবী, পৃঃ ১৬৪)

১২৭
১২৫. ওমর (রাঃ) ও এক বালক
হযরত সিনান ইবনে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা কতিপয় বালক-বালিকা খেজুরের বাগান থেকে পতিত খেজুর সংগ্রহ করতেছিলাম। এমন সময় আমিরুল মু’মিনীন ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের কাছে আসলেন। তখন সকল বালক সরে গেল আর আমি আমার স্থানে স্থির থাকলাম। যখন তিনি আমার কাছে আসলেন তখন আমি বললাম, হে আমিরুল মু’মিনীন! এগুলো বাতাস ফেলে দিয়েছে। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমাকে দেখাও আমি দেখব। কেননা, আমার কাছে তা অস্পষ্ট। অতঃপর তিনি আমার পাত্র দেখলেন এবং বললেন, তুমি সত্য বলেছ। আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! এখন কি ওগুলোও দেখবেন? আল্লাহর শপথ! আপনি যদি ওগুলোর দিকে যান তাহলে ওরা আমার উপর হামলা করবে আর আমার সাথে যা আছে তা ছিনিয়ে নেবে। রাবী বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু চলে গেলে আমার কাজে শান্তি লাগল অর্থাৎ চিন্তামুক্ত হলাম, প্রশান্তি লাভ করলাম। (আত তাবাকাতু লি ইবনে সা’য়াদ, ১৯০)।

১২৮
১২৬. আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফা (রাঃ) এর মাথায় চুম্বন
রোমান বাহিনীর হাতে সম্মানিত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা আস-সাহমী রাদিয়াল্লাহু আনহু বন্দী হন। সেনাবাহিনী তাকে তাদের রাজার কাছে নিয়ে গেল। রাজা তাকে। বলল, তুমি খ্রিস্টান হয়ে যাও। তাহলে আমি তোমাকে আমার রাজত্বের মালিক করে দেব। আর আমার কন্যাকে তোমার সাথে বিবাহ দিব। আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফা বাদশাহকে বললেন, তুমি যদি তোমার সমস্ত রাজ্য এবং গোটা আরবের সমস্ত রাজ্য দিয়ে আমাকে যদি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ধর্ম ত্যাগ করতে বল তাহলেও আমি তা করব না। বাদশাহ বলল, যদি তোমাকে হত্যা করা হয়।

তিনি বললেন, যদি আমাকে হত্যা কর তাতেও আমি মুহাম্মাদের দ্বীন থেকে বের হব না। বাদশাহ তাকে শুলে চড়ানোর নির্দেশ দিলেন এবং তার সামনে দ্বীনে নাসারা পেশ করা হল আর তিনি তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর তার সামনে একটি পাত্র পেশ করা হল। অপর বর্ণনায় আছে যে, তার সামনে গরুর হাড্ডির দ্বারা নির্মিত পাত্র যাতে তাপ দেয়া হয়েছে তা দেয়া হল। আর তিনি দেখলেন সমস্ত মুসলিম বন্দীদের নিয়ে এসেছে। আর তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর তার সামনে মদ ও শুকরের মাংস পেশ করা হল কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করলে না। পরে তাকে সহ সকল মুসলিম বন্দীকে মুক্ত করে দেয়া হল। অতঃপর তারা যখন ফিরে আসল তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সমস্ত মুসলমানদের উচিত হুযায়ফার মাথায় চুম্বন করা এবং তিনি দাঁড়িয়ে তার মাথায় চুম্বন করলেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/৬১০)।

১২৯
১২৭. এক ব্যক্তি কর্তৃক রাস্তায় কোন এক মহিলার সাথে কথা বলা
ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি দেখলেন যে, এক ব্যক্তি এক মহিলার সাথে কথা বলছে। তিনি তাকে বেত্রাঘাত করলেন। লোকটি বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! সে তো আমার স্ত্রী। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাহলে তুমি তোমার স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছ কেন? এবং মুসলমানদেরকে তোমাদের গীবত করার সুযোগ দিচ্ছ কেন? সে বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! আমরা এখন শহরে প্রবেশ করব তাই পরামর্শ করছি যে, কোথায় আমরা অবস্থান করব? তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ লোকটিকে চাবুক দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি প্রতিশোধ নাও। তখন লোকটি বলল, আল্লাহর ওয়াস্তে তা ছেড়ে দিলাম বা মাফ করে দিলাম। (আখবারু ওমর, পৃঃ ১৯০)

১৩০
১২৮. পরিবারের অভিবাবক
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজেকে পরিবার সমূহের অভিভাবক মনে করতেন। সুতরাং যে সকল পরিবারের স্বামীরা বাড়িতে অনুপস্থিত তিনি তাদের দরজার কাছে গিয়ে দাড়াতেন আর জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কোন কিছু প্রয়োজন আছে কি? তোমরা কি কোন কিছু ক্রয় করতে চাও? কেননা, তোমরা ক্রয়বিক্রয়ে ধোকা খাবে। তখন তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে তাদের সন্তানদের পাঠিয়ে দিত। আর তিনি তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে দিতেন। আর কারো কাছে যদি কিছু না থাকত তাহলে নিজের পক্ষ থেকে তার জন্য ক্রয় করতেন। (সীরাজুল মুলুক, পৃঃ ১০৯)

১৩১
১২৯. তোমার মাঝে ও আমার মাঝে একটা ফায়সালা কর
একদিন ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে দেখা করে তাকে বললেন, আমি রাসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বে তাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি মসজিদকে বৃদ্ধি করতে চান। যদি আপনার বাড়ি মসজিদের কাছে হয়ে থাকে তাহলে তা আমাদের দান করে দিন আমরা মসজিদ বৃদ্ধি করব। আর আপনাকে অন্য জমি দেয়া হবে। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না আমি তা করব না। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনার কাছ থেকে তা জোর করে নেয়া হবে। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সে অধিকার আপনার নেই।

সুতরাং আমার ও আপনার মাঝে একজন বিচারক নির্ধারণ করুন যিনি, আমার ও আপনার মাঝে ফায়সালা করে দিবেন। আমিরুল মু’মিনীন বললেন, আপনি কাকে নির্বাচন করবেন? আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে নির্বাচন করলাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে ডেকে পাঠালেন আর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সেখানেই ছিলেন। হুযায়ফা কতইনা উত্তম এখন স্বয়ং খলিফার কর্তৃত্বের/ক্ষমতার চেয়ে হুযায়ফার ক্ষমতা। সে খলিফা তথা ইসলামী রাজ্য ও একজন মুসলমানের মাঝে সঠিক ফায়সালা করে দিবেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সামনে বসে আছেন। তখন হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, শুনেছি আল্লাহর নবী হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম বাইতুল মাকদাস মসজিদ বড় করতে চাইলেন।

আর বড় করতে গিয়ে মসজিদের পাশে এমন একটি বাড়ি চাইলেন কিন্তু সে দিতে অস্বীকার করল। নবী দাউদ আলাইহিস সালাম তার থেকে জোর করে নিতে চাইলেন। তখন আল্লাহ তায়ালা ওহী নাযিল করেন, তখন দাউদ আলাইহিস সালাম সিদ্ধান্ত ত্যাগ করলেন এবং জমির মালিককে ছেড়ে দিলেন। তখন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু উমারের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার বাড়ি গ্রহণ করে মসজিদ বৃদ্ধি করার ইচ্ছা কি এখন বাকি আছে? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না নেই। তখন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এরই সাথে আমি আপনাকে আমার বাড়ি দিয়ে দিলাম আপনি এতে রাসূল (সাঃ) এর মসজিদ বৃদ্ধি করে নিন। (আল খুলাফাউর রাশেদুন, ড. মুস্তাফা মুরাদ, পৃঃ ২৫৯)

১৩২
১৩০. তুমি ভিক্ষুক নও, তুমি ব্যবসায়ী
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ভিক্ষুককে এই কথা বলতে শুনলেন যে, কে আছ এমন যে আমাকে রাতের খাবার দিবে? আল্লাহ তাকে অনুগ্রহ দান করবেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি কি তোমাদের এ ব্যাপারে নির্দেশ দেইনি যে, ভিক্ষুককে রাতের খাবার দিবে? তখন তারা বলল, আমরা তাকে খাবার দিয়েছি। পরে তার কাছে লোক পাঠালেন তখন তার থলি রুটিতে পরিপূর্ণ ছিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ভিক্ষুককে বললেন, তুমি তো ভিক্ষুক নও, তুমি একজন ব্যবসায়ী। তুমি তোমার পরিবারের জন্য খাবার জমা করেছ। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থালাটি ধরলেন এবং তাকে সাদকার উটের মধ্যে নিক্ষেপ করলেন। (মানাকীবে ওমর, পৃঃ ১৮৭)

১৩৩
১৩১. আল্লাহর শপথ। আমি তাকে ভুলব না
হযরত আয়াস ইবনে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কোথাও যাচ্ছিলেন আমি তখন বাজারের মধ্যে ছিলাম। আর তিনি তার কোন জরুরি কাজে যাচ্ছিলেন। তখন তার সাথে ছিল একটি চাবুক। আর তিনি সেই চাবুক দ্বারা আমাকে খোচা দিলেন যা আমার কাপড়ের উপর লাগল। এর পরের বছর তার সাথে আবার আমার দেখা হল বাজারের মধ্যে। তিনি আমাকে বললেন, হে সালামা! তুমি কি এ বছর হজ্ব করবে?

আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমার হাত ধরে তার গৃহে প্রবেশ করলেন। এবং একটি পাত্র বের করলেন যার মধ্যে ছিল ছয়শত দিরহাম। আর আমাকে বললেন, এগুলোর দ্বারা তুমি সাহায্য গ্রহণ কর (হজ্বের জন্য)। আর জেনে রাখ এটা গত বছরের খোচার বিনিময়-প্রতিদান। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি যা মনে করেছেন তা আমার মনে নেই। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি তার পর থেকে ওটাকে (খোচাকে) ভুলিনি। (বাইহাকী)

১৩৪
১৩২. আফসোস! তুমি আমাকে আগুন পান করাবে?
হযরত আবদুর রহমান ইবনে নাজীহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে অবস্থান করছিলাম। তার ছিল একটি উট যার থেকে তিনি দুধ দোহন করতেন। কোন একদিন তার দাস তাকে দুধ পান করালেন যা তিনি অপছন্দ করলেন এবং বললেন, তোমার জন্য আফসোস! তুমি এ দুধ কোথায় পেলে? সে বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! এটা এমন উট যা আমি গনীমত হিসেবে পেয়েছি। আর তার বাচ্চা তার দুধ পান করে ফলে আমি আল্লাহর সম্পদ থেকে উটটিকে উন্মুক্ত করলাম আপনার জন্য। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আফসোস! তুমি আমাকে আগুন (জাহান্নামের) খাওয়ালে? (তারীখুল মাদীনাতুল মুনাওয়ারা, পৃঃ ৭০২)

১৩৫
১৩৩. আমার চেয়ে অধিক ইবাদাতকারী কে আছে?
ইরাক থেকে একদল লোক ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে আগমন করল। যাদের মধ্যে ছিলেন আহনাফ ইবনে কায়েস। আর তখন ছিল প্রচণ্ড গরম। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আবা পরিহিত অবস্থায় সদকার উট খুঁজতেছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আহনাফ! তোমারটা রেখে আমার সাথে আস এবং এতে উঠ। কেননা, সাদকার উটের মধ্যে ইয়াতীম-মিসকীনের অধিকার রয়েছে। তখন দলের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল যে, হে আমিরুল মু’মিনীন! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি একজনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন এটাই কি আপনার জন্য যথেষ্ট? তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি ও আহনাফের চেয়ে অধিক ইবাদাতকারী কে আছে? আর সে তো মুসলমানদের উপদেশ ও আমানতদারী তার অভিভাবক। (আসহাবুর রাসূল, ১/১৫২)

১৩৬
১৩৪. আওফ সত্য বলেছে আর তোমরা মিথ্যা বলেছ
হযরত জুবাইর ইবনে নুফাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন একদল লোক ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বলল, আপনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক, সত্যের ব্যাপারে অধিক কথা বলা এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে আর কাউকে দেখি না। সুতরাং রাসূল (সাঃ)-এরপর আপনিই উত্তম মানুষ। তখন আওফ ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহ শপথ! রাসূল (সাঃ)-এরপর অন্য লোক (উমরের আগে) উত্তম। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কে? তখন আওফ ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি হলেন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ।

তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আওফ সত্য কথা বলেছে আর তোমরা মিথ্যা বলেছ। তিনি আরো বললেন, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও অতি উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। আর আমি তো ইসলাম গ্রহণের পূর্বে পথহারা ছিলাম। কেননা, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর ইসলাম গ্রহণের ৬ বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। (মানাকিবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু লি ইবনে জাওযী, পৃঃ ১৪)

১৩৭
১৩৫. ওমর (রাঃ) অনুপস্থিত সৈন্যদের সময় নির্ধারণ করতেন
হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মদীনায় পাহারা দেয়ার সময় এক মহিলার বাড়ির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ঐ মহিলা বলতেছিল, “রাত দীর্ঘ হয়েছে আর এর পার্শ্ব অন্ধকার হয়েছে। আর আমার কাছে রাতটি দীর্ঘায়িত হয়েছে এজন্য যে, আমার সাথে কোন সাথী নেই। যার সাথে আমি খেলব। আল্লাহর শপথ! যদি আমি আল্লাহকে ভয় না করতাম তাহলে এই খাটের পার্শ্ব কেঁপে উঠত। কিন্তু আমার রব এবং লজ্জা আমাকে এটা থেকে বিরত রেখেছে। আর আমি আমার স্বামীকে সম্মান করি।” ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ মহিলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে বলা হল যে, এ হল অমুক মহিলা যার স্বামী আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে অনুপস্থিত রয়েছে।

তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মহিলার কাছে একজনকে পাঠালেন যাতে করে সে তার সাথে আসে। আর তার স্বামীর খোঁজে একজনকে পাঠালেন। অতপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় কন্যা হাফসা -এর গৃহে প্রবেশ করলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, একজন নারী কত দিন স্বামী ছাড়া থাকতে পারে। তখন তিনি বললেন, আপনি আমার কাছে এমন বিষয় প্রশ্ন করলেন? (তাদের সম্পর্ক ছিল বাবা-মেয়ে) তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি যদি মুসলমানদের ভালমন্দ নিয়ে না ভাবতাম তাহলে তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম না। তখন হাফসা বললেন, ৫ থেকে ৬ মাস। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যোদ্ধাদের জন্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে ৬ মাস অবস্থানের সময় নির্ধারণ করলেন। এক মাস তারা সফর করে বাড়িতে আসবে। চার মাস বাড়িতে অবস্থান করবে। আর এক মাসে তারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে ফিরে যাবে। (আর খুলাফাউর রাশিদুন লি মুস্তফা মুরাদ, পৃঃ ২১৯)

১৩৮
১৩৬. আমি এই প্রাণীকে কষ্ট দিয়েছি
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মাছ খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তাই তার গোলাম সওয়ারী নিয়ে মাছের খোজে বের হল এবং দু’রাত যাওয়া ও দু’রাত আসা এভাবে চার রাত ভ্রমণ করে মাছ নিয়ে আসল। ক্লান্তির ফলে সওয়ারীর শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল বিধায় খাদিম তাকে গোসল দিলেন। এটা দেখে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ওমরের আগ্রহের কারণে এই প্রাণী কষ্ট পেয়েছে। ওমর এই মাছের স্বাদ গ্রহণ করবে না। (রিয়াযুন নাযরাহ, পৃঃ ৪০৮)

১৩৯
১৩৭. উম্মু সালীতকে এটা দাও
সালাবাহ্ ইবনু আবূ মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু মাদীনার কিছু সংখ্যক নারীদের মধ্যে কিছু রেশমী অথবা পশমী চাদর (কাপড়ের থান) ভাগ করে দিলেন। সবশেষে একখানা মূল্যবান চাদর বাকি থাকলে উপস্থিত এক লোক তাকে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নাতনী এবং আপনার স্ত্রী অর্থাৎ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মেয়ে উম্ম কুলসুমকে আপনি এ চাদরখানা দিয়ে দিন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, উম্মু সালীত রাদিয়াল্লাহু আনহা ই এর অধিক হকদার। কেননা তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট বাইআত গ্রহণকারিণী আনসার মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তিনি (উম্মু সালীত) উহুদের যুদ্ধের দিন আমাদেরকে মশক সেলাই করে দিতেন। আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহ)] বলেন, “তাযফিরু” অর্থ তিনি সেলাই করতেন। (বোখারী)

১৪০
১৩৮. ওমর (রাঃ) ও এক বৃদ্ধা খ্রিস্টান রমণী
এক নাসরা (খ্রিস্টান) বৃদ্ধা মহিলা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে আসল। তার একটি জরুরি কাজের জন্য যা ওমরের কাছে ছিল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত মহিলাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে নিরাপত্তা পাবে। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। তখন বৃদ্ধা বলল, আমি অত্যান্ত বৃদ্ধা একজন মহিলা। আর মৃত্যু তো আমার নিকটবর্তী। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সমস্যার সমাধান করে দিলেন। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আশংকা করলেন যে, তার প্রয়োজন মিটানোটা ইসলামের প্রতি তার ক্ষোভের প্রকাশের ফলাফল মাত্র। সুতরাং ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমি শুধু মাত্র দেখিয়েছি এবং আপ্রাণ চেষ্টা করিনি। (মুয়ামালাতু গাইরিল মুসলিমীন ফীল মুজতামিঈল ইসলামী, পৃঃ ৪১)

১৪১
১৩৯. হে গোলাম! আমার পোশাকটি তাকে দিয়ে দাও
একদা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট এক গ্রাম্য লোক আসল। সে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে দাঁড়িয়ে কবিতাকারে বলল, হে ওমর! কল্যাণের কাজের বিনিময় হলো জান্নাত। আপনি আমার মেয়ে এবং তাদের মায়ের জন্য জীবনোপকরণ দান করুন। আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি আপনি সেটা অবশ্যই করবেন। অতঃপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কান্না শুরু করলেন। এমনকি চোখের পানিতে তার দাড়ি ভিজে গেল। পরে তিনি তার গোলামকে বললেন, হে গোলাম। আমার এ পোশাকটি আজকের জন্য তাকে দিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, এটা ছাড়া আমার আর কোন জামা নেই। (তারীখে বাগদাদ, ৪/৩১২)

১৪২
১৪০. যেমন খুশী তেমন শব্দ কর
ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতকালে মদীনা ও তার পাশের এলাকায়, মানুষ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। আর এ বছরটির নামকরণ করা হয় দুর্ভিক্ষের বছর। তিনি এ মর্মে শপথ করেন যে, যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি লোকদেরকে এ বিপদ থেকে বাচাতে না পারবেন ততক্ষন পর্যন্ত তিনি ঘি, দুধ ও গোশতের স্বাদ গ্রহণ করবেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি মানুষকে এ বিপদ থেকে মুক্ত করলেন। এর পর ঘি এবং দুধ বাজারে আসল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর গোলাম চল্লিশ দিরহামের বিনিময়ে তা ক্রয় করলেন।

এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট নিয়ে এসে বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! আল্লাহ আপনার শপথকে পূর্ণ করেছেন। আমি বাজার থেকে ঘি ও দুধ কিনে এনেছি। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি ওগুলো দান করে দাও। আমি অতিরিক্ত খাওয়া পছন্দ করি না। কারণ আমার প্রজাদের উপর যে কষ্ট এসেছে আমার উপর তা আসেনি। এই ছিল দুর্ভিক্ষের সময় ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর অবস্থান। পরে তিনি যখন তৈল খেলেন তখন তার পেটে গড় গড় শব্দ হচ্ছিল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি যেভাবে চাও গড় গড় করতে থাক। আল্লাহর কসম! আমি ঘি খাব না। যতক্ষণ না মানুষ তা খাবে। (ওমর ইবনুল খাত্তাব লিস সালাবী)

১৪৩
১৪১. দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি নেই
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর একজন খ্রিস্টান গোলাম ছিল। তার নাম ছিল আশাক। একদা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি ওমরের একজন খ্রিস্টান দাস। আমি বলছি তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। যাতে করে মুসলমানদের বিভিন্ন কাজে তোমার সহযোগিতা আমরা নিতে পারি। কারণ মুসলমানদের কাজে অমুসলিমদের দ্বারা সহযোগিতা নেয়া উচিত নয়। তখন গোলাম ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,

অর্থাৎ দ্বীনের ব্যাপারে কোন বাড়াবাড়ি নেই।

যখন মেয়াদ পূর্ণ হল তখন তিনি আমাকে মুক্ত করে দিলেন এবং বললেন, তুমি যেখানে ইচ্ছা যেতে পার। (ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃঃ ১০৩)

১৪৪
ওমর (রাঃ) এর জীবনের শেষ দিনগুলো
১৪২. ওমর (রাঃ) ও কা’ব আল আহবারের ঘটনা

ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর দাস সাদ আল জারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর স্ত্রী উম্মে কুলসুম বিনতে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে ডাকলেন। তখন উম্মে কুলসুম কাঁদতে ছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছ কেন? তখন উম্মে কুলসুম বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এই ইহুদী লোকটি (কা’ব) বলে, আপনি নাকি জাহান্নামের দরজাসমূহের একটি দরজায় অবস্থানরত। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহ যা চান তাই হবে।

তিনি আরো বললেন, আল্লাহর শপথ! তিনি আমাকে সৌভাগ্যশীল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে (কা’ব) ডাকতে লোক পাঠালেন এবং সে আসল এবং বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! আমার ব্যাপারে (শাস্তি দান) ব্যস্ত হবেন না। যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি যে, আপনি জ্বিলহজ মাসের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (মৃত্যুবরণ করবেন) তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি এটা কোথা হতে জেনেছ? আর আমাকে একবার জান্নাতী আবার জাহান্নামী বলছ কেন? তখন কা’ব বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! আমি সত্ত্বার ঐ কসম করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, আমি আপনাকে আল্লাহর কিতাব তাওরাতে এমনভাবে পেয়েছি যে, আপনি জাহান্নামের দরজার কাছে বসে আছেন, যেন মানুষ জাহান্নামে পতিত না হয়।

অর্থাৎ আপনি মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতেছেন। আর আপনি যখন মারা যাবেন তখন কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ জাহান্নামের দিকে ধাবিত হবে (পাপ কাজ করে)। এরপর সে (কা’ব) তার কাছে (ওমর) এসে বলল, আপনি তিন দিনের মধ্যে মারা যাবেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, কোথায় পেলে? আল্লাহর কিতাব তাওরাতে। কি পেয়েছ? তখন সে (কা’ব) বলল, না- তবে আপনার অবস্থার আলোকে কথা বলছি। কেননা, আপনার হায়াত শেষ হয়ে গেছে। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্ষুধা ও কষ্ট কোনটাই অনুভব করলেন না। পরের দিন কা’ব এসে বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! তিন দিনের একদিন চলে গেছে। আর দুই দিন বাকি আছে। তারপরের দিন এসে আবারো কা’ব বলল, আপনার দুদিন (বেঁচে থাকার) চলে গেছে বাকি আছে একদিন একরাত। আপনার জন্য ভোর পর্যন্ত সময়। অতঃপর যখন ভোর (ফজর) হল তখন তিনি নামাযের জন্য বের হলেন এবং আঘাত প্রাপ্ত হন (শাহাদাতবরণ করেন)। (আখবারু ওমর, পৃঃ ৩৯৮)

১৪৫
১৪৩. ওমর (রাঃ) এবং এক গ্রাম্য লোক
হযরত জুবাইর ইবনে মুতঈম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে হজ্ব আদায় করলাম। যা ছিল ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর শেষ হজ্ব। আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে আরাফার ময়দানে পাহাড়ের উপর ছিলাম, তখন শুনতে পেলাম এক লোক বলছে, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! এরপর বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! তখন এক বেদুঈন বলল, কে আমার পিছনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে? এটা কিসের শব্দ? আল্লাহ যেন তোমার প্রয়োজন না মিটায়।

আল্লাহর শপথ, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ বছরের পর আর কখনো এ পাহাড়ে অবস্থান করবেন না। রাবি বলেন, আমি তাকে তিরস্কার (গালি) করলাম এবং ভদ্রতা শিক্ষা দিলাম। পরের দিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে পাথর (শয়তানকে উদ্দেশ্য করে) মারতে ছিলেন, তখন একটি পাথর তার মাথায় আঘাত হানে, তাতে তার একটি রগ ছিড়ে যায় এবং রক্তপাত হয়। রাবী বলেন, তখন আমি শুনতে পেলাম পাহাড় থেকে এক ব্যক্তি বলছে, বুঝতে পারছ। আল্লাহর শপথ, এই বছরের পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আর কখনো এ পাহাড়ে দাড়াবেন না। আমি তখন সেদিকে তাকালাম আর এটিই ছিল আগুন। আল্লাহর শপথ! এরপর তিনি (ওমর) আর হজ্ব করেন নি। অর্থাৎ হজ্ব আসার পূর্বে তিনি ইন্তেকাল করেন। (উসদুল গাবাহ, ৪/৭৩)

১৪৬
১৪৪. ওমর (রাঃ)-এর শাহাদাত কামনা
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মিনা থেকে এক পাল উট আবতাহ নামক স্থানে থামালেন এবং সেখান থেকে বাতহা নামক স্থানে এগুলোকে একত্র করলেন। এরপর তিনি তার চাদরের এক পাশ জমিনে বিছিয়ে দিলেন এবং তাতে শরীর এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লেন। আর তিনি দুই হাত আসমানের দিকে তুলে এই বলে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমার শক্তি দুর্বল হয়ে গেছে। আর আমার দায়িত্ব কর্তব্য বিস্তৃতি লাভ করেছে। সুতরাং আমাকে তোমার কাছে নিয়ে নাও। সর্বপ্রকার অনীহা ও অবহেলা (আমার থেকে) প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে। হে আল্লাহ! আমাকে তোমার রাস্তায় শহীদী মৃত্যু দাও। আর আমার মৃত্যু তোমার রাসূলের পুণ্যভূমিতে (মদীনায়) দাও। রাবি বলেন, জিলহজ্ব মাস শেষ হওয়ার আগেই তিনি (ওমর) আঘাত প্রাপ্ত হন অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেন। (আর রিয়াদুন নাযরা, ২/৬৭)

১৪৭
১৪৫. ওমর (রাঃ)-এর স্বপ্ন
হযরত মা’দান ইবনে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হজ্ব থেকে ফিরে এসে এক জুমায় তিনি লোকদের সামনে খুতবা দিলেন। খুতবায় তিনি নবী (সাঃ) ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কথা উল্লেখ করেন। এরপর তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়ে গেছে। (বেশিক্ষণ দুনিয়ায় থাকব না।) এরপর তিনি বললেন, আমি (স্বপ্নে) দেখলাম একটি মোরগ আমাকে দুটি ঠোকর দিল। আর সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাকে বলল, উত্তরাধিকারী (পরবর্তী খলিফা) নির্বাচন করতে। (রিয়াযুন নাযরা, ২৭৩)

১৪৮
১৪৬. অপরাধী
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ সব বন্দীদেরকে মদীনায় প্রবেশের অনুমতি দিতেন না, যারা সদ্য বালেগ হয়েছে। হযরত মুগীরা ইবনে শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন কুফা নগরীতে ছিলেন তখন তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এমন এক দাসের জন্য অনুমতি চাইলেন যাকে আবু লুলু নামে ডাকা হতো এবং তার নাম ছিল ফাইরুয। সে এমন অনেক কাজ করত যার দ্বারা লোকেরা উপকার লাভ করত। সে ছিল একাধারে কর্মকার, চিত্রকর (নকশাকার) ও কাঠমিস্ত্রী। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ব্যাপারে অনুমতি দিলেন। মুগীরা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে পাঠিয়ে দিলেন। আর সে তাকে দৈনিক মাত্র চার দেরহাম ভোগ করার সুযোগ দিত অথচ সে তার (মুগীরার) জন্য মাসে এক হাজার দিরহাম আয় করে দিত।

কেননা সে (গোলাম) বেশি করে জাতাকল ঘুরাত অর্থাৎ বেশি কাজ করত। সুতরাং গোলাম একদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে আসল এবং মুগীরা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যাপারে সে নালিশ করে বলল যে, হে আমিরুল মু’মিনীন! সে আমার উপর বেশি করে কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয় সুতরাং আপনি তাকে একটু বলে দিন তিনি যেন আমার কাজের চাপটা কমিয়ে দেন। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তোমার কাজটি কি সুন্দর? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে আরো বললেন, তোমার কাজের ফল অনেক। তুমি আল্লাহকে ভয় কর আর তোমার মনিবের উপর সদয় হও। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইচ্ছা করলেন তার ব্যাপারে তিনি মুগীরার সাথে সাক্ষাত করবেন এবং তার কাজ কমিয়ে দিতে বলবেন। অতপর গোলাম রাগান্বিত হয়ে চলে গেল। আর বলল যে, তার ন্যায়পরায়নতা আমি ব্যতীত অন্য মানুষের জন্য বৃদ্ধি পাক। আর সে ছিল অত্যন্ত খারাপ। যখন কোন ছোট বন্দী আনা হত তখন সে তাদের মাথা স্পর্শ করত এবং ক্রন্দন করত আর বলত ওমর আমার কলিজা খেয়েছে।

অতপর সে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু -কে হত্যা করার কথা মনে মনে ভাবতে লাগল। আর সে একদিন ছুরি সংগ্রহ করল এবং এতে অত্যাধিক পরিমাণে ধার দিল। অতঃপর সে হারমিযান নামক স্থানে আসল এবং বলল যে, এটার ব্যাপারে তোমাদের ধারণা কি? একজন লোক বলল যে, এটা দ্বারা তুমি যাকে আঘাত করবে সে মারা যাবে। এরপর আবু লুলু তার মনোবাসনা পূরণ করার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল। একদিন সে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিল তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তোমার জন্য একটি দ্রুতগতি সম্পন্ন চাকা তৈরি করব যা বাতাসের গতিতে চলবে। তখন ঐ গোলাম ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকাল। (তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে একদল লোক ছিল) তখন সে গোলাম বলল, আমিও আপনার জন্য একটি চাকা তৈরি করব। (আখবারু ওমর, পৃঃ ৪০২, ৪০৩)

১৪৯
১৪৭. মিহবাবের সাক্ষী
হযরত আমর ইবনে মায়মুন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একদিন সকালে ফজর নামাযের সময় ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সামনে ছিলাম। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর অভ্যাস ছিল তিনি নামাযের কাতারে ঘুরে ঘুরে দেখতেন কাতার সোজা করার জন্য। তখন তিনি প্রায়ই ফজরের সালাতের প্রথম রাকাতে সূরা ইউসূফ বা সূরা নাহল তেলাওয়াত করতেন। যাতে লোকে জামায়াতে শরীক হতে পারত। একদিন আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি (ওমর) বলতেছেন, আমাকে কুকুর হত্যা করবে বা খাবে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আঘাত প্রাপ্ত হন, তখন দেখা গেল তার বাহুতে আঘাতের চিহ্ন। বলা হয় যে, আঘাতের সংখ্যা ছিল ৬টি। ওমর শত্রু কর্তৃক হামলার শিকার হন তখন তার ডান ও বাম পাশের তের জন লোক আহত হন। তাদের মধ্যে হতে ৬ মতান্তরে সাত জন মারা যান। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আবদুর রহমান ইবনে আওফকে সামনে দিলেন। আর তিনি (আবদুর রহমান) ছোট পরিসরে লোকদের নিয়ে নামায শেষ করলেন। (রিয়াযুন নাযরা, ২/৭২)

১৫০
১৪৮. লোকেরা কি নামায আদায় করেছে?
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা কোন এক সময় অন্ধকারের মধ্যে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে ছিলাম। অতঃপর বলা হল যে, তোমরা তাকে (ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে) নামাযের মত বিষয়ের ব্যাপারে কখনও ভীত করতে পারবে না। যদি তিনি বেঁচে থাকেন। তখন তারা বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! সালাত, সালাত। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজেকে সতর্ক করলেন এবং বললেন সালাতের সময় হয়েছে, সুতরাং এখন আর অন্য কোন কাজ নেই। এরপর তিনি আমাদের দিকে তাকালেন আর বললেন, লোকেরা কি নামায আদায় করেছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ।

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ঐ ব্যক্তির ইসলাম নেই বা ঐ ব্যক্তির ইসলামে কোন অংশ নেই যে সালাত ত্যাগ করে। অতঃপর তিনি ওযু করার জন্য পানি চাইলেন। অতঃপর অযু করলেন এবং নামায পড়লেন। তখনও তার ক্ষতস্থান হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর তিনি বললেন, হে ইবনে আব্বাস! তুমি বের হও আর ঐ ব্যক্তিকে খোঁজ কর যে আমাকে আঘাত করেছে। তিনি (ইবনে আব্বাস) বললেন, আমি যখন ঘরের দরজা দিয়ে বের হলাম তখন ঐ সব লোক সেখানে একত্র হয়েছে যারা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর ব্যাপারটা জানত না।

আমি বললাম, কে আমিরুল মু’মিনীনকে আঘাত করেছে? তখন তারা বলল, আল্লাহর শত্রু মুগীরা ইবনে শুবার দাস আবু লুলু তাকে আঘাত করেছে। আর সে নিজেকে নিজ হাতে আঘাত করে আত্মহত্যা করেছে। রাবী বলেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে ফিরে গেলাম, তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দৃষ্টি বড় করলেন আর আমাকে যে জন্য প্রেরণ করেছিলেন তা শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অতঃপর আমি বললাম, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনাকে মুগীরা ইবনে শো’বার গোলাম আঘাত করেছে। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সকল প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি এমন ব্যক্তিকে আমার হত্যাকারী বানিয়েছেন যে, জীবনে আল্লাহকে একটি সিজদাও করেনি। যার মাধ্যমে সে আমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে বিতর্কে লিপ্ত হতে পারে। (উসদুল গাবাহ, ৪/৭৪)

১৫১
১৪৯. হিসাবের ভয়
মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু (আবূ লুলু কর্তৃক) জখম হলে ব্যথার কারণে তিনি কিছুটা অস্থিরতা ও কষ্ট প্রকাশ করতে থাকেন, তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ব্যথা লাঘব করার উদ্দেশে তাকে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! যদি এটা হয় (অর্থাৎ, আপনার মৃত্যু ঘটে) তবে ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা আপনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নৈকট্য লাভ করেছেন এবং তাঁর নৈকট্যের হক উত্তমরূপে পালন করেছেন। অতঃপর আপনারা পরস্পর এমতাবস্থায় বিচ্ছিন্ন হলেন যে, তিনি [নবী (সাঃ)] আপনার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। তারপর আপনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর সাহচর্যের হক উত্তমরূপে আদায় করেছেন। তার থেকে আপনি এমতাবস্থায় বিচ্ছিন্ন হয়েছেন যে, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। তারপর খালিফা থাকা অবস্থায় আপনি তাঁদের অর্থাৎ, নবী (সাঃ) ও আবু বক্‌র রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সঙ্গীদের নৈকট্য লাভ করেছেন এবং তাদের নৈকট্যের হক উত্তমরূপে পালন করেছেন।

আর এ সময় যদি আপনি তাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান অর্থাৎ, মৃত্যুবরণ করেন তবে অবশ্যই আপনি তাদের নিকট থেকে এমন অবস্থায় আলাদা হবেন যে, তারা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নৈকট্য ও তার সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করলে তা তো ছিল শুধুমাত্র আল্লাহর বিশেষ একটা রহমাত যা তিনি আমার উপর করেছেন। আর আবু বাকরের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি সম্পর্কে যা তুমি উল্লেখ করলে তাও শুধু আল্লাহর বিশেষ একটা রহমাত, যা তিনি আমার উপর করেছেন। কিন্তু আমার মধ্যে যে অস্থিরতা তুমি খেয়াল করছ তা তোমার জন্য এবং তোমার সঙ্গীদের জন্য। (অর্থাৎ, এ ভয়ে আমি অস্থির, না জানি আমার পরে তোমরা আবার কোন ফিতনায় জড়িয়ে পড় কি না।) আল্লাহর শপথ! যদি আমার নিকট পৃথিবী ভরা সোনা থাকতো তবে আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে দেখার আগেই তা থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমি ঐসব স্বর্ণ ফিদয়া হিসেবে দান করে দিতাম। (বুখারী)

১৫২
১৫০. আয়েশা (রাঃ) এর গৃহে (নবী সাঃ এর ও আবু বকর রাঃ এর পাশে) কবরের জন্য অনুমতি প্রার্থনা
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, তুমি উম্মুল মু’মিনীন এর কাছে যাও এবং তাকে বল যে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আর তুমি আমিরুল মু’মিনীন বলে আমার পরিচয় দিও না। কেননা, আজকে থেকে আমি আর মু’মীনদের নেতা নই। আর তাকে বল যে, ওমর ইবনে খাত্ত্বাব আপনার কাছে তার দু’সাথীর পাশে তাকে (ওমরকে) দাফন করার অনুমতি প্রার্থনা করছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আয়েশার কাছে গেলেন এবং তাকে সালাম দিলেন এবং গৃহে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। এরপর আবদুল্লাহ আয়েশার গৃহে প্রবেশ করলেন। আর তাকে বসাবস্থায় ক্রন্দনরত পেলেন। তিনি তাকে সালাম দিয়ে বললেন, ওমর আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন। আর তার সাথীর (মহানবী সাঃ ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর) পাশে নিজের দাফনের জন্য অনুমতি চেয়েছেন। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, এটাতো আমি আমার জন্য ইচ্ছা করেছিলাম। এরপর যখন আবদুল্লাহ ফিরে আসলেন, তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বলা হল যে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর এসেছে। তখন ওমর তাকে বললেন, তোমার কাছে কি সংবাদ আছে? তখন আবদুল্লাহ বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি যা পছন্দ করেন তাই হবে, হযরত আয়েশা অনুমতি দিয়েছেন।

এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমার কাছে ঐ শয়নের স্থানের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। হে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর! আমি যখন মারা যাব তখন আমাকে খাটের উপর বহন করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর দরজার কাছে যাবে আর তাকে বলবে ওমর আপনার কাছে দাফনের অনুমতি চাচ্ছেন। যদি তিনি অনুমতি দেন তাহলে আমাকে সেখানে দাফন করবে। আর যদি ফিরিয়ে দেন তাহলে আমাকে সাধারণ কবরস্থানে দাফন করবে। কেননা, আমার আশংকা হয় যে, এ অনুমতি (মৃত্যুর পূর্বে) হয়ত এজন্য যে আমি মুসলিম শাসক। যখন ওমর মারা যান তখন তাকে আয়েশার গৃহের দরজার কাছে আনা হল এবং অনুমতি চাওয়া হল। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অনুমতি দিলে তাকে সেভাবেই রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পাশে দাফন করা হয়। যেমনিভাবে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন। (আর রিয়াদুন নাহ, ২৬৯)

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন