hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

১১৯
ইলমে হাদীসের ছয়জন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ইমাম বুখারী (র)
ইমাম বুখারী (র)-এর পূর্ণ নাম আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম। তিনি মুসলিম অধ্যুীষত এবং ইসলাম সংস্কৃতি ও সভ্যতার লীলাকেন্দ্র বুখারা নগরে ১৯৪ হিজরীর১৩ ই শওয়াল শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকালেই তাঁহার পিতা ইহলোক ত্যাগ করেন। মায়ের স্নেহময় ক্রোড়ে তিনি শৈশব লালিত পালিত হন। তিনি যখন মকতবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভে রত ছিলেন, সেই সময়েই তাঁহার মনে হাদীস শিক্ষালাভের উদগ্র বাসনা জাগ্রত হয়। এ্ই সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) নিজেই বলিয়াছেনঃ

মতবের প্রাথমিক লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকার সময়ই হাদীস মুখস্থ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমার মনে ইলহাম হয়।

এই সময় তাঁহার বয়স কত ছিল জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলিয়াছেনঃ ‘দশ বৎসর কিংবা তাহারও কম।

একাদশ বৎসর বয়সে হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে ইমাম বুখারীর বিস্ময়কর প্রতিভার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটে। এই সময়কার একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এই সময় ( ) সুফিয়ান আবূয যুবাইর হইতে ও আবূয যুবাইর ইবরাহীম হইতে- এই বর্ণনা সূত্রে হাদীস জনসমক্ষে প্রচার করা হইতেছিল। তদানিন্তন মুহাদ্দিস দাখেলীর নিকট এই সূত্র শ্রবণের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলিয়া উঠিলেনঃ

এই সূত্র ঠিক নহে, কেননা - – ‘আবূয যুবাইর ইবরাহীমের নিকট হইতে কোন হাদীস আদৌ বর্ণনা করেন নাই।

মুহাদ্দিস দাখেলী একাদশ বৎসরের এই বালকের স্পর্ধা দেখিয়া স্তম্ভিত হইয়া গেলেন। তিনি বালককে ধমক দিলেন। তখন ইমাম বুখারী (র) বলিলেনঃ

আপনার নিকট মূল গ্রন্হ বর্তমান থাকিলে একবার তাহাই খুলিয়া দেখুন (ও আমার কথার সত্যতা যাচাই করুন)

# বুখারা নগর উজবেকিস্তান প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত। বর্তমানে এই নগরটি মধ্য এশিয়ার রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। মা- আরায়িন- নহর এলাকায় একটি প্রধান নগররূপে গণ্য- জীহুন নদীর তীরে। ইরানের সমরকন্দ হইতে ৩০০ কিলোমিটার দূরে।

ইমাম বুখারী বলিলেনঃ ‘এখানে এই সূত্রে ‘আবূয যুবাইর’ ভূল বলা হইতেছে, আসলে বর্ণনার সূত্র হইবে ‘যুবাইর ইবনে আদী ইবরাহীম হইতে- এইরূপ’।

অতঃপর মুহাদ্দিস দাখেলী মূল গ্রন্হ খুলিয়া দেখিলেন, বালক আবূ আবদুল্লাহর কথাই সত্য, মূল গ্রন্হে অনুরূপই লিখিত রহিয়াছে।

ইমাম বুখারী যখন ষোল বৎসর বয়স অতিক্রম করিয়াছিলেন তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক ও ইমাম অকী’র সংকলিত হাদীসগ্রন্হ সম্পূর্ণ মুখস্থ করিয়া লইয়াছেন।

ইহার পর ইমাম বুখারী তাঁহার মা ও ভাই সমাভিব্যাহারে হজ্জে গমন করেন। ইহার পূর্বে তিনি বুখারায় অবস্থানকারী সকল মুহাদ্দিসের নিকট হইতে হাদীস শ্রবণ সমাপ্ত করিয়াছিলেন। তাঁহার এই সফর অনুষ্ঠিত হয় ২১০ হিজরী সনে।

হজ্জে আগমন করিয়া তিনি একাধারে ছয় বৎসর পর্যন্ত হিজাযে অবস্থান করেন। তখন তিনি একদিকে যেমন ব্যাপকভাবে হাদীস শিক্ষায় মনোযোগ দিয়াছিলেন, অনুরূপভাবে ইহার সঙ্গে সঙ্গেই তিন লেখনীও পরিচালনা করিয়াছিলেন পূর্ণমাত্রায়। ইমাম বুখারী তাঁহার এই সময়কার লেখন পরিচালনা ও গ্রন্হ প্রণয়ন সম্পর্কে নিজেই বলিয়াছেনঃ 

আমি আঠারো বৎসর অতিক্রম করিতেছিলাম, তখন সাহাবী ও তাবেয়ীদের বিচার-ফয়সালা সম্পর্কে একখানি গ্রন্হ প্রণয়ন করি। অতঃপর আমি মদীনায়ী রাসূলে করীম (ﷺ)-এর কবরের নিকটে বসিয়া ‘আততারীখুল কবীর’ গ্রন্হ রচনা করি। আর চন্দ্রদীপ্ত রাত্রিতে এই লেখনীর কাজ চালাইতাম।

হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইমাম বুখারী বহু দেশ ও শহর পরিভ্রমন করিয়াছেন। এক-একটি শহরে উপস্থিত হইয়া সম্ভাব্য সকল হাদীস তিনি আয়ত্ত করেন। তাঁহার পর তিনি অন্য শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এইভাবে বিশাল ইসলাম রাজ্যের উল্লেখযোগ্য কোন শহর এমন ছিল না, যেখানে তিনি উপস্থিত হইয়া হাদীস হাদীস সংগ্রহ করেন নাই। আল্লামা যাহবী এই প্রসঙ্গে বলেন, বাগদাদ, মক্কা, বসরা, কূফা, আসকালান, হিমস, দামেশক প্রভৃতি শহরের নাম উল্লেখ করিয়াছেন এবং কোন শহরের কোন মুহাদ্দিস হইতে ইমাম বুখারী হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহ করিয়াছিলেন, তাঁহার নামও লিখিয়া দিয়াছেন।

কিন্তু এই তালিকা সম্পূর্ণ নয় বলিয়াই মনে হয়। আল্লামা খতীব বাগদাদী ইমাম বুখারীর এই দেশ সফর সম্পর্কে এক কথায় বলিয়াছেনঃ

ইলমে হাদসের সন্ধানে সমগ্র শহরের সকল মুহাদ্দিসের নিকটই তিনি উপস্থিত হইয়াছেন।

তাঁহার এই পরিভ্রমন সম্পর্কে একটি ব্যাপক ধারণা দানের উদ্দেশ্যে তিনি নিজেই বলিয়াছেনঃ

আমি সিরিয়া,মিসর ও জযীরায় দুই দইবার করিয়া উপস্থিত হইয়াছি। বসরা গিয়াছি চারবার। হিজাযে ক্রমাগত ছয় বৎসর পর্যন্ত অবস্থান করিয়াছি। আর কূফা ও বাগদাদে যে আমি কতবার গমন করিয়াছি ও মুহাদ্দিদের খিদমতে হাযির হইয়াছি, তাহা আমি গণনা করিতে পারিব না।

ইমাম বুখারী (র) একবার সমরকন্দে উপস্থিত হইলেন। তখন প্রায় চারশত মুহাদ্দিস তাঁহার সম্মুখে সমবেত হন। তারা ইমাম বুখারীর হাদীস সম্পর্কে গভীর ও ব্যাপক জ্ঞানের খ্যাতি পূর্বেই শুনিতে পাইয়াছিলেন। এই কারণে তারা ইমাম বুখারীকে পরীক্ষা করিতে ইচ্ছা করিলেন। তারা এই উদ্দেশ্যে কতকগুলি হাদীসের মূল বাক্যাংশ উহার সনদ সূত্র হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া অপর একটি হাদীসের সনদের সহিত জুড়িয়া দিলেন এবং সনদগুলিও উল্টাইয়া-পাল্টাইয়া রাখিলেন। অতঃপর ইহা ইমাম বুখারী (র)-এর সম্মুখে পাঠ করেন এবং উহার সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই করার জন্য তাঁহাকে অনুরোধ করেন। ইমাম বুখারী (র)-র নিকট এই সমস্ত হাদীসই ছিল দর্পণের মত উজ্জ্বল। কাজেই কোথায় মূলকথা ও উহার সনদে ওলট-পালট করা হইয়াছে, তাহা তাঁহার বুঝিতে এতটুকু অসুবিধা হইল না, এতটুকু সময়ও লাগিল না। তিনি এক একটি হাদীস পাঠ করিয়া উহার দোষক্রটি উল্লেখ করিতে শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি হাদীসকে তিনি উহার আসল রূপে উহার নিজস্ব সনদসহ সজ্জিত করিয়া সমাগত মুহাদ্দিসগণের সম্মুখে পেশ করিলেন। মুহাদ্দিসগণ ইমাম বুখারী (র)-এর এই জওয়াবকে একান্তু সত্য বলিয়া গ্রহণ না করিয়া পারিলেন না। ঐতিহাসিকগণ লিখিয়াছেন, বাগদাদেও ইমাম বুখারীর প্রতি অনুরূপ প্রশ্ন করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত জবাব শুনিয়া মুহাদ্দিসগণ ইমাম বুখারী (র)-এর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করিতে বাধ্য হন।

ইমাম বুখারীর তীক্ষ্ণ স্মরণশক্তির কথা উল্লেখ করিয়া বলা হইয়াছেঃ

তিনি একবার মাত্র কিতাব পড়িতেন এবং একবার দেখিয়াই সমস্ত কিতাব মুখস্থ করিয়া ফেলিতেন।

হাদীসে তাঁহার যে কি বিপুল,ব্যাপক ও গভীর জ্ঞান ছিল, তাহা দুনিয়ার মুহাদ্দিসদের অকপট স্বীকৃতি হইতেই সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। এখানে কয়েকজনের উক্তি উদ্ধৃত করা যাইতেছেঃ

ইবনে খুযায়মা (র) বলিয়াছেনঃ

আসমানের তলে রাসূলের হাদীসের বড় আলিম এবং উহার বড় হাফেজ মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈলুল বুখারী অপেক্ষা আর কাহাকেও আমি দেখি নাই।

ইমাম মুসলিম একদিন ইমাম বুখারী (র)-এর নিকট উপস্থিত হইলেন ও তাঁহার কপোলে চুম্বন করিলেন। বলিলেনঃ

আমাকে আপনার পদযুগল চুম্বন করার অনুমতি দিন হে সমস্ত উস্তাদের উস্তাদ মুহাদ্দিসদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং হাদসের ‘রোগের চিকিৎসক’।

ইমাম বুখারী অত্যন্ত ভদ্র, বীর ও পবিত্র স্বভাবসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। আত্মসম্মানবোধে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সজাগ ও নিতান্ত চেতনাসম্পন্ন। তিনি রাজা-বাদশাহর দরবারের ধারই ধারিতেন না, উহা হইতে বরং শত যোজন দূরে থাকিতেন চেষ্টা করিতেন প্রাণপণে।

এই সময় বুখারার শাসনকর্তা ছিলেন খালিদ ইবনে আহমদ আয-যাহলী। তিনি ইমাম বুখারী (র)-এর নিকট লোক মারফত নির্দেশ পাঠাইলেনঃ

আপনি আপনার সংকলিত হাদীস-গ্রন্হ ও ইতিহাস-গ্রন্হ লইয়া আমর নিকট আসুন, আমি আপনার নিকট হইতে উহার শ্রবণ করিতে চাহি।

ইমাম বুখারী (র) এই নির্দেশ মানিয়া লইতে সুস্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করিলেন এবং দূতকে বলিয়া পাঠাইলেনঃ

বাদশাহকে আমার এই কথা পৌঁছাইয়া দাও যে, আমি হাদীসকে অপমান করিতে ও উহাকে রাজা- বাদশাহদের দরবারে লাইয়া যাইতে পারিব না। তাঁহার এই জিনিসের প্রয়োজন হইলে তিনি যেন আমার নিকট মসিজিদে কিংবা আমর ঘরে উপস্থিত হন। আর আমর এই প্রস্তাব তাঁহার পছন্দ না হইলে কি করা যাইবে, তিনি তো বাদশাহ……….।

ইবনে হাজার আসকালানী বলিয়াছেনঃ

ইহাই ইমাম বুখারী ও বাদশাহর মধ্যে দূরত্ব ও মনোমালিন্য সৃষ্টির কারণ হইয়া দাঁড়ায়।

কিন্তু ইমাম হাকেম এই মনোমালিন্যের অন্য কারণ উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেনঃ

আবূ আবদুল্লাহ যে কারণে বুখারা শহর পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যান, তাহা এই যে, বাদশাহ খালিদ ইবনে আহমদ তাঁহাকে বাদশাহর প্রাসাদে উপস্থিত হইয়া তাঁহার সন্তানাদিগকেক ইতিহাস ও হাদীস-গ্রন্হ পড়াইবার আদেশ করিয়াছিলেন। কিন্তু ইমাম বুখারী এই আদেশ পালন করিতে অস্বীকার করিয়াছিলেন এবং বলিয়া পাঠাইয়াছিলেন যে, এই কিতাব আমি বিশেষভাবে কিছু লোককে শুনাইব ও কিছু লোককে শুনাইব না, তাহা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় হইতে পারে না।

অতঃপর ইমাম বুখারী (র) সমরকন্দের নিকটে অবস্থিত খরতংক নামক শহরে চলিয়া যান এবং আল্লাহর নিকট দ্বীন-ইসলামের এই কঠিন বিপদ হইতে তাঁহাকে রক্ষা করার জন্য আকুল আবেদন করেন। এই সময় রাত্রিকালে নামাযান্তে তিনি যে দোয়া করিতেন, তাহাতে তিনি বলিতেনঃ

হে আল্লাহ! এই বিশাল পৃথিবী আমার প্রতি সংকীর্ণ হইয়ায গিয়াছে অতএব এখন তুমি আমাকে তোমার নিকট লইয়া যাও।

ইমাম বুখারী এই খরতংক শহরে ২৫৬ হিজরী সনের ৩০শে রজব ৬২ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

ইমাম বুখারী (র) ইহজগত ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছেন; কিন্তু পশ্চাতে বিশ্ব-মুসলিমের জন্য রাখিয়া গিয়াছেন ইসলামী জ্ঞানের মূল উৎস হিসাবে কয়েকখানি অমূল্য ও বিরাট গ্রন্হ। তাঁহার মহামূল্য গ্রন্হাবলীর মধ্যে দুইখানি বিখ্যাত ও শ্রেষ্ঠ। একখানি ‘সহীহুল বুখারী’- হাদীস সংকলন এবং অপরখানি ‘তারীখুল কবীর’।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন