hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

৩২
ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব পালন
সাহাবায়ে কিরাম (রা) ইসলাম সম্পর্কে রাসূলের নিকট হইতে যাহা কিছু শিক্ষালাভ করিতেন, কুরআন ও হাদীসের যে জ্ঞান সম্পদই তারা আহরণ করিতেন, তাহা তারা কেবল নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ও কুক্ষিগত করিয়ারাখিতেন না; বরং একটি মৌলিক ও নৈতিক দায়িত্ব হিসাবেই তাহা জনগণের মধ্যে রাসূলের দরবার ও তাঁহার নিত্য সাহচর্য হইতে দূরে অবস্থিত মুসলিমদের মধ্যে প্রচার করিতে নিরন্তর ব্যস্থ হইয়া থাকিতেন। ইহা তাঁহাদের একটি প্রধান ধর্মীয় কর্তব্য ছিল। আর প্রকৃতপক্ষে ই দায়িত্ব পালনের জন্যই আল্লাহ তা’আলা নবী করীম (ﷺ)-এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মতকে গঠন করিয়াছিলেন। মুসলিম জাতির ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বর্ণনা করিয়াকুরআন মজীদ উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করিয়াছেনঃ

এইভাবেই আমি তোমাদিগকে মধ্যম পন্হানুসারী উম্মত বানাইয়াছি, যেন তোমরা জনগনের পথপ্রদর্শক হও এবং রাসূল হইবে তোমাদের পথ প্রদর্শনকারী।

[সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৪৩।]

কুরআনের এই ঘোষণা অনুযায়ী সাহাবায়ে কিরাম (রা) সত্যের বাস্তব প্রতীকরূপে নিজেদের জীবন ও চরিত্র গড়িয়া তোলার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণকেও সত্য পথ প্রদর্শন এবং সত্যের দিকে আহবান জানাইবার দায়িত্ব ও কর্তব্য মর্মে অনুভব করিতেন। এই ব্যাপারে তারা কোন প্রকার বাধ্য বা কষ্ট ও ক্লান্তিকে বিন্দুমাত্র পরোয়া করিতেন না।কোন আঘাতই তাঁহাদিগকে এই পথ হইতে বিরত রাখিতে পারিত না। উপরন্তু দ্বীনের কোন কথা জানিতে পারিলে তাহা গোপন রাখিয়া অপর লোকদের নিকট তাহা প্রকাশ না করিয়া দুনিয়া হইতে চলিয়া যাওয়াকে তারা মারাত্মক অপরাধ বলিয়া মনে করিতেন। কেননা তারা কুরআনের নিম্নোক্ত ঘোষনার কারণে এই দিক দিয়া অন্যন্ত ভীত, শংকিত ও সন্ত্রস্ত হইয়া থাকিতেন। আল্লাহ তা’আলা বলিয়াছেনঃ

আমি যে সুস্পষ্ট বিধান নাযিল করিয়াছি, জনগনের জন্য হিদায়াতের যে বাণী প্রেরণ করিয়াছে এবং আমি যাহার ব্যাখ্যাও কিতাবের মধ্যে করিয়া দিয়াছি, তাহার পর উহা যাহারা গোপন করিয়া রাখিবে, তাঁহাদের উপর আল্লাহ এবং সমস্ত অভিশাপ বর্ষণকারীরা অভিশাপ বর্ষণ করেন।

[সূরা-আল- বাকারা, আয়াত ১৫৯]

এই কঠোর সতর্কবাণী শ্রবণের পর কোন সাহাবীই দ্বীন সম্পর্কিত একটি ছোট্র কথাও গোপন করিয়া রাখার মত দুঃসাহস করিতে পারেন না। কোন সাহাবীকে ইসলামের কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে তাঁহার জ্ঞানমত তাহার জওয়াব দেওয়া কর্তব্য মনে করিতেন। কেননা নবী করীমের নিম্নোক্ত বাণী তাঁহাদের স্মরণ ছিলঃ

কেহ কোন জ্ঞানে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইলেও তাহা সে গোপন করিলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাহাকে আগুনের লাগাম পরাইয়া দিবেন।

[মুস্তাদরাক হাকেম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০১।]

সেই কারণে একথা জোর করিয়াই বলা যাইতে পারে যে, নবী করীম (ﷺ) যে ইসলামী সমাজ গঠন করিয়াছিলেন, তাহা সামগ্রিকভাবে কুরআন হাদীস প্রচারের একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মত কাজ করিতেছিল। হৃৎপিণ্ড হইতে রক্ত উৎসারিত হইয়া সমগ্র দেহে-দেহের প্রতিটি ক্ষুদ্র-বৃহৎঅঙ্গে যেমন স্থায়ী ও স্বয়ংক্রিয় ধমনীর মাধ্যমে সঞ্চালিত ও প্রবাহিত হয়, ইসলামে হাদীস সম্পদও নবী করীমের নিকট হইতে উৎসারিত হইয়া প্রতিটি মুসলিমের অক্লান্ত চেষ্টা ও তৎপরতার ফলে মানব সমাজের দূরবর্তী কেন্দ্রসমূহে পৌঁছিয়াছে।

ইসলাম প্রচারের এই ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন ছাড়াও নবী করীম (ﷺ)- এর জীবদ্দশায় সরকারী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেও হাদীস প্রচারিত হইয়াছে। কেননা নবী করীম (ﷺ) বিভিন্ন স্থানে ও দেশে ইসলাম প্রচারকার্যে ব্যক্তি ও দল প্রেরণ করিয়াছেন। এ পর্যায়ে আমরা কয়েকটি প্রসিদ্ধ ঘটনার উল্লেখ করিতেছি।

হযরত আবূ ইমাম বাহেলী (রা) বলিয়াছেনঃ

রাসূলে করীম (ﷺ) আমাকে আমার নিজ কবীলা ও এলাকার লোকদের প্রতি তাহাদিগকে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দান ও তাহাদের সম্মুখে ইসলামী শরীয়াতের বিধান পেশ করার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করিয়াছেন।

[মুস্তাদরাক হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৪১।]

নবী করীম (ﷺ)-এর খিদমতে একদল আনসার অবস্থান করিতেন। তারা দিনের বেলা পানি বহন করিতেন, কাষ্ঠ সংগ্রহ করিতেন এবং তাহা বিক্রয় করিয়া সুফফার অধিবাসীদের জন্য খাদ্য ক্রয় করিতেন। আর রাত্রিবেলা কুরআন ও হাদীস অধ্যয়ন করিতেন। একবার কয়েজন মুনাফিক একত্র হইয়া রাসূলের নিকট বলিলঃ

আমাদিগকে কুরআন ও হাদীস শিক্ষাদান করিবে এমন কিছু লোক আমাদের সহিত পাঠাইয়া দিন।

নবী করীম (ﷺ) এই উদ্দেশ্যে উপরিউক্ত লোকদের মধ্য হইতে সত্তর জন লোককে তাহাদের সহিত প্রেরণ করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, পথের মাঝখানেই মুনাফিকরা তাঁহাদের উপর আকস্মিক আক্রমন চালায় ও তাঁহাদিগকে শহীদ করিয়া দেয়।

[সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৯। ]

হিজরতের প্রাক্কালে হযরত আবূ যর গিফারী (রা) নবী করীম (ﷺ)- এর নিকট মক্কা শরীফে ইসলাম কবুল করেন। নবী করীম (ﷺ) তাঁহাকে বলিলেনঃ

আমাকে খেজুরের দেশে চলিয়া যাইবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। আমি মনে করি উহা ‘ইয়াসরিব’ বা মদীনা ছাড়া অন্য কোন দেশ হইবে না। এখন তুমি কি আমার পক্ষ হইতে তোমার নিজ গোত্র ও এলাকার লোকদিগকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কাজ করিতে পারিবে?

আবূ যর গিফারী (রা) সানন্দে এই দায়িত্ব কবুল করিলেন ও নিজ দেশে পৌঁছিয়া লোকদিগকে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। তিনি রাসূলে করীম (ﷺ)- এর নিকট হইতে ইসলামের যেসব কথা জানিয়া লইয়াছিলেন, তাহা তাঁহার কবীলা ও দেশের লোকদের নিকট প্রকাশ করিয়া বলিলেন। ফলে বহু লোক ইসলাম কবুল করেন।

[সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ২৭৬।]

অনুরূপভাবে কায়স ইবনে নাশিয়া আসলামী (রা) ইসলাম কবুল করার পর নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি নিজ গোত্র ও এলাকার লোকদিগকে বলিয়াছিলেনঃ

হে বনু সুলাইমের লোকেরা ! আমি রোমান ও পারসিক জাতির সাহিত্য আরব কবিদের কবিতা, কুহানদের কাহিনী এবং হেমইয়ারের কাব্য শুনিয়াছি। কিন্তু মুহাম্মদের কালামের সহিত উহার কোনই তুলনা হইতে পারে না- উহা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ভাবধারার জিনিস। অতএব, তোমরা মুহাম্মদের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারে আমার অনুসরণ কর।

হযরত আমর ইবনে হাজম (রা) কে নবী করীম (ﷺ) নাজরান গোত্রের প্রতি প্রেরণ করিয়াছিলেন এই উদ্দেশ্যে যে-

তিনি তাহাদিগকে দ্বীন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানদান করিবেন ও কুরআন শিক্ষা দিবেন।

হযরত মু’আয ইবন জাবাল (রা) কে নবী করীম (ﷺ) ইয়ামেনে পাঠাইয়াছিলেনঃ

ইয়ামেন ও হাজরা মাউতের অধিবাসীদের শিক্ষক হিসাবে।

‘কারবা’ ও ‘আদল’ নামরে দুইটি গোত্র হিজরতের তৃতীয় বৎসরে ইসলাম কবুল করিলে নবী করীম (ﷺ) তাহাদের জন্য ছয়জন শিক্ষক প্রেরণ করিলেনঃ

‘নবী করীম (ﷺ) আদল ও কাররা’ নামক গোত্রদ্বয়ের প্রতি দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান দান, কুরআন ও ইসলামী শরীয়াতের বিধান শিক্ষাদানের জন্য ছয়জন শিক্ষক প্রেরণ করেন। তারা হইলেনঃ মারসাদ ইবন আবী মারসাদ, আসেম ইবন সাবেত, হাবীব ইবন আদী, খালেদ ইবনুল বুকায়ার, যায়দ ইবন দাসনা এবং আবদুল্লাহ ইবন তারেক (রা)।

মক্কা বিজয়ের পর সমগ্র আরব জাহান ইসলাম কবুল করার জন্য প্রস্তুত হইয়া উঠে। তখন লোকেরা নিজ নিজ কবীলা সর্দারদেরকে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট পাঠাইতে শুরু করে। তাহারা ইসলাম কবুল করিয়া নিজ নিজ কবীলা ও এলাকার লোকদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে এবং তাহাদিগকে ইসলামের দাওয়াত দেয় ও ইসলামী জ্ঞান-কুরআন হাদীস প্রচার করে।

[

এতদ্ব্যতীত বহু সংখ্যক সাহাবীকে নবী করীম (ﷺ) ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করেন।

তখন ইহাদের মাধ্যমে যেমন কুরআন মজীদ ও উহার ভাষ্য হিসাবে রাসূলের হাদীসও বিপুলভাবে প্রচার লাভ করিয়াছে।

নবী করীম (ﷺ) যেসব সাহাবীকে ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে গভর্নর নিযুক্ত করিয়া পাঠাইয়াছেন, তারা শাসনকার্য সম্পাদনের জন্য কুরআনের সঙ্গে সঙ্গে হাদীসকেও অন্যতম ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করিয়াছেন। এই প্রসংগে হযরত মু’আয ইবন জাবাল (রা)- এর সাথে তাঁহাকে ইয়ামেনের গভর্নর নিযুক্ত করিয়া পাঠাইবার সময়ে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর যে কথোপকথন হইয়াছিল, তাহা বিশেষভাবে স্মরণীয়। নবী করীম (ﷺ) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তুমি কিসের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনা করিবে? মু’আয বলিলেন, কুরআনের ভিত্তিতে। জিজ্ঞাসা করিলেনঃ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সম্পর্কে কুরআনে যদি কিছু না পাওয়া যায়, তখন? মু’আয বলিলেনঃ

রাসূলের সুন্নাতের ভিত্তিতে কার্য সম্পাদন করিব।

এই আলোচনার শেষভাগে রাসূলে করীম (ﷺ) অতিশয় সন্তোষ সহকারে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করিলেন এবং হযরত মু’আযের বক্ষস্থলে হাত রাখিয়া বলিলেনঃ

যে আল্লাহ তাঁহার রাসূলের প্রেরিত ব্যক্তিকে আল্লাহর রাসূলের সন্তোষমূলক কাজ ও নীতি নির্ধারণ করার তওফীক দিয়াছেন, তাঁহারই প্রশংসা।

এই প্রসঙ্গে শেষ কথা এই যে, ইসলামী রাষ্ট্রের প্রায় সর্বত্রই রাসূলের প্রেরিত লোকদের চেষ্টা ও যত্নে রাসূলের জীবদ্দশায়ই হাদীস পৌছিয়াছে। সর্বত্র উহার চর্চা শুরু হইয়া গিয়াছে।ইহার ফলে দূর-দূরান্তরে অবস্থিত মুসলিমগণ কুরআনের সঙ্গে সঙ্গে রাসূলের হাদীসের সহিত সম্যক পরিচয় লাভ করিতে সমর্থ হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন