hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

১২৬
সহীহুল বুখারী
এই ছয়খানি বিশুদ্ধতম হাদীস গ্রন্হের মধ্যে সর্ব প্রথম উল্লেখযোগ্য, সর্বাধিক খ্যাতিসম্পন্ন ও সর্বাপেক্ষা অধিক বিশুদ্ধ হাদীসপূর্ণ গ্রন্হ হইতেছে ইমাম বুখারী সংকলিত ‘সহীহুল বুখারী’। ইমাম বুখারী এই গ্রন্হ প্রণয়নের প্রেরণা তাঁহার বিশিষ্ট উস্তাদ ইসহাক ইবনে রাহওয়াইর মজলিস হইতে লাভ করিয়াছিলেন।

তিনি নিজেই বলিয়াছেনঃ

আমি ইসহাক ইবনে রাহওয়াইর নিকট উপস্থিত ছিলাম। মজলিসে উপস্থিত তাঁহার লোকজনের মধ্য হইতে কেহ বলিলেনঃ কেহ যদি রাসূল (ﷺ) হইতে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীস ও সুন্নাতসমূহের সমন্বয়ে এমন একখানি গ্রন্হ প্রণয়ন করিতেন, যাহা সংক্ষিপ্ত হইবে এবং বিশুদ্ধাতর দিক দিয়া চরম পর্যায়ে উন্নীত হইবে, তাহা হইলে খুবই উত্তম হইত এবং আমলকারীদের পক্ষেও শরীয়াত পালন করা সহজ হইত। সেইজন্য তাহাদিগকে মুজতাদিদের প্রতি মুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে হইত না।

এই কথা শ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গে ইমাম বুখারী (র) –এর মনে এইরূপ একখানি হাদীস গ্রন্হ প্রণয়নের বাসনা জাগ্রত হইল। উপরিউক্ত কথাটি যদিও ছিল এক সাধারণ পর্যায়ের, সম্বোধনও ছিল মজলিসে উপস্থিত সকল লোকদের প্রতি নির্বিশেষে; কিন্তু উহার বাস্তবায়ন সম্পর্কে ইচ্ছা জাগ্রত হইল এমন ব্যক্তির হৃদয়ে, বুখারী শরীফের ন্যায় এক অতুলনীয় হাদীসগ্রন্হ প্রণয়নের মর্যাদা লাভ আল্লাহ তা’আলা যাহার ভাগ্যলিপি করিয়া দিয়াছিলেন।

ইমাম বুখারী (র) বলেনঃ

এই কথাটি আমার হৃদয়পটে মুদ্রিত হইয়া গেল এবং অনুতিবিলম্বে আমি এই কিতাব প্রণয়নের কাজ শুরু করিয়া দিলাম।

বুখারী গ্রন্হ প্রণয়নে উদ্যেগী হওয়ার মূল ইমাম বুখারী হইতে অন্য একটি কারণেরও উল্লেখ করা হইয়াছে। তিনি বলিয়াছেনঃ

আমি রাসূলে করীম (ﷺ)-কে স্বপ্নে দেখিলাম। দেখিলাম আমি যেন তাঁহার সম্মুখে দণ্ডায়মান, আমার হাতে একটি পাখা যাহার দ্বারা আমি রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি বাতাস করিতেছি ও মাছির আক্রমণ প্রতিরোধ করিতেছি। অতঃপর স্বপ্নের ব্যাখ্যাদানকারী কাহারো নিকট ইহার ব্যাখ্যা জানিতে চাহিলাম। ব্যাখ্যাদানকারী বলিলেন যে, তুমি রাসূলের প্রতি আরোপিত সমস্ত মিথ্যার প্রতিরোধ করিবে। বস্তুত এই স্বপ্ন ও ইহার এই ব্যাখ্যাদানকারী কাহারো নিকট ইহার ব্যাখ্যা জানিতে চাহিলাম। ব্যাখ্যাদানকারী বলিলেন যে, তুমি রাসূলের প্রতি আরোপিত সমস্ত মিথ্যার প্রতিরোধ করিবে। বস্তুত এই স্বপ্ন ও ইহার এই ব্যাখ্যাই আমাকে এই সহীহ হাদীস সম্বলিত বিরাট গ্রন্হ প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করেন।

গ্রন্হ প্রণয়নে উদ্বদ্ধ হওয়ার মূলে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনায় দুই প্রকারে কারণের উল্লেখ হইলেও এই কারদ্বয়ের মধ্যে কোন মৌলিক বিরোধ নাই। ইহা খুবই সম্ভব যে, ইমাম বুখারী ইসহাক ইবন রাহওয়াইর মজলিস হইতে হাদীস গ্রন্হ প্রণয়ণের প্রেরণা ও বাসনা লইয়া চলিয়া আছার পর তিনি উহারই অনুকূল ও উহারই সমর্থনে এই শুব স্বপ্নটিও দেখিয়াছিলেন। এই স্বপ্নও এই কথাই তাঁহাকে জানাইয়া দিল যে, তিনি যে, বিশুদ্ধ হাদীসের সমন্বয়ে একখানি গ্রন্হ প্রণয়নের সংকল্প করিয়াছেন, তাহা রাসূলের দরবারেও মঞ্জুরীপ্রাপ্ত হইয়াছে এবং তাঁহার এই কাজ প্রকৃতপক্ষে রাসূলে করীম (ﷺ)-কে উহার তীব্র শরাঘত হইতে প্রতিরক্ষার কাজ হইবে।

ইতিপূর্বে বিভিন্ন অধ্যায় ও পর্যায়ে হাদীসের যেসব বিরাট বিরাট গ্রন্হ প্রণয়ন করা হইয়াছে, ইমাম বুখারী এই অভিনব গ্রন্হ প্রণয়নের ব্যাপারে সেইসব গ্রন্হ হইতে যথেষ্ট ফায়দা গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাঁহার নিজের সংগৃহীত হাদীসসমূহ হইতে তাঁহার স্থাপিত কঠিন শর্তের মানদণ্ডে ওজন করিয়া হাদীসের এক বিরাট ও অমুল্য গ্রন্হ প্রণয়ন করিলেন।

পূর্ববর্তী হাদীস গ্রন্হসমূহে সহীহ, হাসান ও যয়ীফ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার গুণের হাদীস সন্নিবেশিত হইয়াছিল। একজন সাধারণ পাঠকের পক্ষে উহা হইতে কেবলমাত্র সহীহ হাদীস বাছাই করিয়া লওয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার ছিল; বং ইহা সম্ভব হইত কেবলমাত্র বিশিষ্ট পারদর্শী ও হাদীস-শাস্ত্রজ্ঞানে ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের পক্ষে। অনুরূপভাবে বিশেষ একটি বিষয়ে শরীয়াতের বিশেষ নির্দেশ সম্পর্কে সমস্ত হাদীস একত্র করা বড় দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। কেননা পূর্ববর্তী গ্রন্হাবলীর উদ্দেশ্যেই ছিল শুধুমাত্র রাসূলে করীম (ﷺ)-এর হাদীসসমূহ সংগ্রহ করা ও ধ্বংসের করাল গ্রাস হইতে তাহা রক্ষা করা। কাজেই তাহাতে একই বিষয়ের হাদীস একস্থানে সাজাইয়া দেওয়ার কাজ বড় একটা হয় নাই। ফলে উহা পাঠ করিয়া শরীয়াত সম্পর্কে রাসূলের বিস্তারিত কথা জানিবার কোন উপায় ছিল না। এই সমস্ত কারণই একত্র হইয়া ইমাম বুখারীকে নূতন প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীসের এক নবতর সকংলন প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল।

ইমাম বুখারী এই হাদীস গ্রন্হ প্রণয়ণের কাজ শুরু করেন ‘বায়তুল হারাম’- আল্লাহর ঘরের অভ্যন্তরে বসিয়া। পরে উহার বিভিন্ন অধ্যায় ও ‘তারজুমাতুল বার’ সংযোজনের কাজ সম্পন্ন করেন মদীনায় মসজিদে নববীর অভ্যন্তরে মিম্বর ও রাসূলের রওযা মুবারকের মধ্যবর্তী স্থানে বসিয়া।

হাদীসসমূহ লিখিবার সময় ইমাম বুখারী (র) এক অভূতপূর্ব ও বিস্ময়কর পদ্ধতি অবলম্বন করিয়াছেন। তিনি নিজেই বলিয়াছেনঃ

আমি এই সহীহ গ্রন্হে এক একটি হাদীস লিখিবার পূর্বে গোসল করিয়াছি ও দুই রাক’আত নফল নামায পড়িয়া লইয়াছি- ইহা ব্যতীত আমি একটি হাদীসও লিখি নাই।

প্রত্যেকটি হাদীস লিখিবার পূর্বে গোসল করা ও দুই রাক’আত নফল নামায পড়ার পদ্ধতি মক্কা ও মদীনা উভয় স্থানেই তিনি রক্ষা করিয়াছিলেন। এক একটি হাদীস লিখিবার পূর্বে তিনি সে সম্পর্কে সর্বতোভাবে সতর্কতাত অবলম্বন করিয়াছেন। হাদীসটি প্রকৃত রাসূলের হাদীস কি না এই সম্পর্কে দৃঢ়নিশ্চত না হইয়া তিনি একটি হাদীসও ইহাতে উদ্ধৃত করেন নাই। তিনি নিজেই এই সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ

আমি প্রত্যেকটি হাদীস সম্পর্কে আল্লাহর নিকট হইতে ইস্তেখারার মারফত না জানিয়া লইয়া, নফল নামায না পড়িয়া ও উহার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে দৃঢ়নিশ্চিত ও অকাট্যভাবে বিশ্বাসী না হইয়া উহাতে আমি একটি হাদীসও সংযোজিত করি নাই।

বস্তুত ইমাম বুখারীর এই হাদীস গ্রন্হ প্রণয়ন পরিক্রমা যে কত কঠিন ও কঠোর সাধনার ব্যাপার ছিল, তাহা উপরিউক্ত সমূহ হইতে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হইতেছে। একট চিন্তা করিলেই ইহার অন্তর্নিহিত বিরাট সত্য উপলদ্ধি করা যায়। এইরূপ অনন্যসাধারণ পরিশ্রম ও অক্নান্ত সাধনা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলিতে থাকে দীর্ঘ ষোলটি বৎসর পর্যন্ত। এ বিষয়ে ইমাম বুখারীর নিজের উক্তি হইলঃ

আমি এই গ্রন্হ প্রণয়ন কাজটি পূর্ণ ষোল বৎসরে সম্পূর্ণ করিয়াছি।

ইমাম বুখারী (র) বুখারী শরীফ প্রণয়নের কাজ শুরু করেন মোট ছয় লক্ষ হাদীস সম্মুখে রাখিয়া। তিনি বলিয়াছেনঃ

প্রায় ছয় লক্ষ হাদীস হইতে আমি এই বুখারী গ্রন্হ প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করি।

এই ছয় লক্ষ হাদীসের মধ্যে ইমাম বুখারীর নিজের সম্পূর্ণ মুখস্ত ছিল এক লক্ষ সহীহ হাদীস। ইমাম বুখারী (র) বলিয়াছেনঃ

আমি এক লক্ষ হাদীস মুখস্থ বলিতে পারিতাম।

বলা বাহুল্য ইহ সমগ্র সহীহ হাদীসের মোট সংখ্যা নহে এবং ইমাম বুখারী কেবল এই এক লক্ষ হাদীসই মাত্র মুখস্থ ছিল না, ইহা অপেক্ষা আরো অনেক হাদীসও তাঁহার মুখস্থ ছিল। তবে তাঁহার মুখস্থ হাদীসসমূহের মধ্যে কেবলমাত্র সহীহ হাদীসের সংখ্যাই হইতেছে এক লক্ষ। প্রায় দুই লক্ষ গায়ের সহীহ হাদীসও তাঁহার মুখস্থ ছিল।

ইমাম বুখারীর নিকট এই হাদীস প্রণয়নের সময়ে কতকগুলি হাদীস সঞ্চিত ছিল এবং সমস্ত সহীহ হাদীসই তিনি বুখারী গ্রন্হে সন্নিবেশিত করিয়াছেন কিনা, এই সম্পর্কে তাঁহার নিম্নোক্ত কথা হইতে সুস্পষ্ট ধারণা করা যায়। তিনি বলিয়াছেনঃ

আমি আমার এই হাদীস গ্রন্হে কেবল সহীহ ও বিশুদ্ধ হাদীসই সংযোজিত করিয়াছি। এতদ্ব্যতীত আরো বহু সহীহ হাদীস আমি ছাড়িয়া দিয়াছি। গ্রন্হের আকার দীর্ঘ ও বিরাট হওয়ার আশঙ্কায় তাহা এই গ্রন্হে শামিল করি নাই।

এই সম্পর্কে ইমাম বুখারীর আর একটি উক্তি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলিয়াছেনঃ

আমি এই গ্রন্হে কেবলমাত্র সহীহ হাদীস সংযোজিত করিয়াছি। আর আমি যাহা রাখিয়া দিয়াছি, তাহার সংখ্যা সংযোজিত হাদীসের তুলনায় অনেক বেশী। আর ইহা করিয়াছি গ্রন্হের বৃহদায়তন হইয়া যাওয়ার আশঙ্কায় মাত্র।

এইভাবে ইমাম বুখারী যে গ্রন্হখানি সুসংবদ্ধ করিয়া বিশ্ববাসীর সম্মুখে উপস্থাপিত করিলেন, উহার নামকরণ হইয়াছেঃ

রাসূলে করীম (ﷺ)-এর যাবতীয় ব্যাপার- কাজকর্ম, সুন্নাত ও সমকালীন অবস্থা সম্পর্কে নির্ভূল সনদযুক্ত হাদীসসমুহের সংক্ষিপ্ত পূর্ণাঙ্গ সংকলন।

ইমাম এই গ্রন্হখানিকে আমার ও আল্লাহার মধ্যবর্তী ব্যাপারের জন্য একটি অকাট্য দলিলরূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।

ইমাম বুখারী (র)-এর এই উক্তি যে কত সত্য এবং হাদীসের এই গ্রন্হ যে দ্বীন-ইসলামের এক অক্ষয় স্তম্ভ, বুখারী শরীফ পাঠ করিয়াছেন এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই তাহা অনুধাবন করিতে পারেন।

বুখারী শরীফে একাধিকবার উদ্ধৃত হাদীসসমূহ সর্বমোট হাদীস হইতেছে নয় হাজার বিরাশী (৯০৮২)-টি। উহার মুয়াল্লিক মুতাবি’আত বাদ দিলে হাদীসের সংখ্যা দাঁড়ায় সাত হাজার তিনশথ সাতানব্বই (৭৩৯৭)-টি। আর একাধিকবার উল্লেখিত হাদীস বাদ দিয়া হিসাব করিলে মোট হাদীস হয় দুই হাজার ছয়শত দুই (২৬০২)-টি। অপর এক হিসাব মতে, এই পর্যায়ে হাদীসের সংখ্যা হয় দুই হাজার সাতশত একষট্টি (২৭৬১)-টি।

কিন্তু আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (র) বুখারী শরীফের হাদীস সংখ্যা সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ

বুখারী শরীফে সন্নিবেশিত সনদযুক্ত মোট হাদীস হইতেছে সাত হাজার দুইশত পঁচাত্তত (৭২৭৫)-টি। ইহাতে পুনরুল্লিখিত হাদীসসমূহ গণ্য। আর উহা বাদ দিয়া হিসাব করিলে হয় প্রায় চার হাজার হাদীস।

সংখ্যা গণনায় এই পার্থক্যের মূলে একটি প্রধান কারণ রহিয়াছেনঃ ইমাম বুখারীর এই মহামূল্য গ্রন্হের প্রণয়নকার্য যদিও ষোল বৎসরের মধ্যে সমাপ্ত হইয়াছিল, তথাপি ইহাতে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন, পরিবর্জনের কাজ ইহার পরও দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলিতে থাকে। এই কারণে ইমাম বুখারীর নিকট হইতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছাত্র ইহা শ্রবণ করিয়াছেন বলিয়া তাঁহাদের নিকট রক্ষিত গ্রন্হের হাদীসের সংখ্যায় পার্থক্য সূচিত হইয়াছে। প্রথম পর্যায়ে ছাত্রদের নিকট সেই হাদীসসমূহই লিখিত রহিয়াছে, যাহা তখন পর্যন্ত ইহাতে সংযোজিত হইয়াছিল। পরে উহাতে পরিবর্তন করা হইয়াছে, গ্রন্তকার প্রাথমিক সংকলন হইতে কোন কোন হাদীস বাদ দিয়া অনেক নূতন হাদীস ইহাতে শামিল করিয়াছেন। ফলে এই পর্যায়ে যাঁহারা উহা শ্রবণ করিয়াছেন, তাঁহাদের নিকট পূর্বের তুলনায় বেশী সংখ্যক ও নবসংযোজিত হাদীসও পৌছিঁয়াছে।

কথাটি নিম্নোক্ত আলোচনায় আরো সুস্পষ্টরূপে পরিস্ফূট হইবে। ইমাম বুখারীর নিকট হইতে তাঁহার এই হাদীসগ্রন্হ শ্রবণ করিয়াছেন শত সহস্র লোক। কিন্তু ইমাম বুখারীর যে কয়জন ছাত্রের সূত্রে ইহার বর্ণনার মূল ধারা চলিয়াছে, তারা হইতেছেন প্রধানতঃ চারজন।

১. ইবরাহীম ইবনে মা’কাল ইবনুল হাজ্জাজ আন-নাসাফী (মৃঃ ২৯৪ হিঃ)

২.‌ হাম্মাদ ইবনে শাকের আন-নাসাফী (মৃঃ ৩১১ হিঃ)

৩. মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ আল-ফারবারী (মৃঃ ৩২০)

৪. আবূ তালহা মনসূর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে কারীমা আল বজদুভী (মৃঃ ৩২৯ হিঃ)

ফারবারী সহীহুল বুখারী গ্রন্হ ইমাম বুখারীর নিকট হইতে দুইবার শ্রবণ করিয়াছেন। একবার ফারবার নামক স্থানে ২৪৮ হিজরী সনে; যখন ইমাম বুখারী এখানে আগমন করিয়াছিলেন। আর দ্বিতীয়বার ২৫২ হিজরী সনে তিনি নিজে বুখারায় উপস্থিত হইয়া।

হাম্মাদ ইবনে শাকের বুখারী শরীফের যে সংস্করণ বর্ণনা করিয়াছেন, তাহা অপেক্ষা ফারবারী বর্ণিত সংস্করণে দুইশত হাদীস অধিক রহিয়াছে। আর ইবরাহীম ইবনে মা’কাল বর্ণিত সংস্করণ অপেক্ষা উহাতে তিনশত হাদীস বেশি। ইহা হইতে সুস্পষ্টরূপৈ প্রমাণিত হয় যে, বুখারী গ্রন্হে ইমাম বুখারী ক্রমশ হাদীসের সংখ্যা বৃদ্ধি করিয়াছেন এবং প্রথম পর্যায়ের ছাত্রদের নিকট হইতে বর্ণিত সংস্করণে পরবর্তীকালের ছাত্রদের বর্ণিত সংস্করণের তুলনায় কম হাদীস ছিল।

ইমাম বুখারী তাঁহার গ্রন্হ প্রণয়ন সমাপ্ত করার পর উহা তদানীন্তন অপরাপর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসের সম্মুখে পেশ করেন। তাঁহাদের মধ্যে প্রধান হইতেছেন আলী ইবনে মাদানী, আহম্মদ ইবনে হাম্বল ও ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীন (র)। তারা প্রত্যেকেই গ্রন্হখানি দেখিয়া

ইহাকে খুবই পছন্দ করিলেন, অতি উত্তম গ্রন্হ বলিয়া ঘোষণা করিলেন এবং উহা একখানি বিশুদ্ধ গ্রন্হ বলিয়া স্পষ্ট ভাষায় সাক্ষ্য দিলেন।

বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈশিষ্ট্য ঘোষণা করিয়া প্রত্যেক যুগের আলিম ও মুহাদ্দিসগণ অনেক উক্তি করিয়াছেন। মওলানা আহমদ আলী উদ্ধৃত করিয়াছেনঃ

হাদীসের সমস্ত আলিম এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ একমত যে, গ্রন্হবদ্ধ হাদীসের কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বাধিক সহীহ হইতেছে বুখারী ও মুসলিম গ্রন্হ। আর অধিকাংশের মতে এই দুইখানির মধ্যে অধিক সহীহ এবং জনগনকে অধিক ফায়দা দানকারী হইতেছে বুখারী শরীফ।

এই পর্যায়ে নিম্নোদ্ধৃত উক্তিটিও সর্বজনপ্রিয় ও সকলের মুখে ধ্বনিতঃ

আল্লাহর কিতাবের পর আসমানের নীচে সর্বাধিক সহীহ গ্রন্হ হইতেছে সহীহুল বুখারী।

ইমাম নাসায়ী বলিয়াছেনঃ

হাদীসের এই সমস্ত কিতাবের মধ্যে বুখারী গ্রন্হ অপেক্ষা অধিক উত্তম আর কোন গ্রন্হ নাই।

মুসলিম জাতি এই গ্রন্হখানির প্রতি অপূর্ব ও অতুলনীয় গুরুত্ব দান করিয়াছেন। মুসলিম মনীষিগণ ইহার অসংখ্য ও বিরাট শরাহ গ্রন্হ প্রণয়ন করিয়াছেন। কাশফুজ্জুনূন প্রণেতা বলিয়াছেন, ইহার শরাহ গ্রন্হের সংখ্যা বিরাশিখানি। তন্মধ্যে ফতহুল বারী, কস্তালানী ও উমদাতুলকারীই উত্তম।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন