মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
‘ওহী’ সম্পর্কে ব্যাপক ও প্রমাণ্য আলোচনা আবশ্যক। প্রামাণ্য গ্রন্হাবলী হইতে ‘ওহী’ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এখানে পেশ করা যাইতেছে।
‘ওহী’ শব্দের আভিধানিক অর্থ নিম্নরূপঃ
‘ওহী’ অর্থ ইশারা করা, কিছু লিখিয়া পাঠানো, কোন কথাসহ লোক প্রেরণ, গোপনে অপরের সহিত কথা বলা, অপরের অজ্ঞাতসারে কাহাকেও কিছু জানাইয়া দেওয়া।
[৫৬]
আবূ ইসহাক লুগভী বলেনঃ
সকল অভিধানেই ‘ওহী’ অর্থ গোপনে কিছু জানাইয়া দেওয়া’।
ইমাম রাগেব ইসফাহানী লিখিয়াছেনঃ
‘ওহী’ অর্থ দ্রুত গতিশীল ইশারা, ইঙ্গিত; ইহা ইশার-ইঙ্গিতে কথা বলা দ্বারাও সম্পন্ন হইতে পারে। ইহা এমন শব্দেও হইতে পারে যাহার কোন সঠিক রূপ নাই। আবার ইহা অঙ্গের ইশারা বা লিখনীর সাহায্যেও হইতে পারে।
[৫৭]
কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
তখন আল্লাহ তাহাদিগকে ইংগিত বলিলেন যে, সকাল ও সন্ধ্যায় তসবীহ কর।
[সূরা মরিয়ম, ১১ আয়াত]
আল্লাহর যে বাণী নবীগণের মানসপটে নিক্ষেপ করা হয় তাহাকেও ‘ওহী’ বলা হয়।
শায়খ আবদুল্লাহ সারকাভী লিখিয়াছেনঃ
‘ওহী’ অর্থ ‘জানাইয়া দেওয়া’। আর শরীয়াতের পরিভাষায় ওহী হইল- আল্লাহ তাঁহার নবীগনকে কোন বিষয়ে কথা বলিয়া বা ফেরেশতা পাঠাইয়া কিংবা স্বপ্নযোগে অথবা ইলহামের সাহায্যে জানাইয়া দেওয়া। এই শব্দটি ‘আদেশ দান’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
[৫৯]
বস্তুত ওহীর নিগূঢ় তত্ত্ব ও প্রকৃত রহস্য কি, তাহা আল্লাহ ছাড়া আর কেহই সঠিকরূপে জানেন না। আভিধানিক, ধর্ম বিজ্ঞান বিশারদ ও দার্শনিকগণ ইহার সংজ্ঞা দিতে ও ইহার তাৎপর্য ও পরিচয় বর্ণনা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। তাহা হইতে ‘ওহী’ সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ও মোটামুটি ধারণা সহজেই জন্মে। শায়খ বু’আলী সীনা এই প্রসংগে যাহা বলিয়াছেন, তাহা আল্লামা আবুল বাকা’র ভাষায় নিম্নে উদ্ধৃত হইলঃ
আমরা ইন্দ্রিয় শক্তির সাহায্যে দ্রব্যাদি দেখিয়া থাকি, নবী অভ্যন্তরীণ ও অন্তর্নিহিত শক্তির সাহায্যে দেখেন। আমরা প্রথমে দেখি, তাহার পর সে সম্পর্কে জানিতে পারি। আর নবী প্রথনেই জানিতে পারেন, তাহার পর দেখেন।
[৬০]
নবী করীমের প্রতি নিম্নলিখিত উপায়ে ওহী নাযিল হইতঃ
১। সত্য স্বপ্নঃ নবুয়্যাত লাভের প্রথম পর্যায়ে নবী করীম (ﷺ) স্বপ্ন দেখিতে পাইতেন এবং তাঁহার এই স্বপ্ন অত্যন্ত ভাল হইত। প্রত্যেকটি স্বপ্নই নির্ভূল, সত্য ও বাস্তব প্রমাণিত হইত। হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ
রাসূলের প্রতি ওহী নাযিল হওয়া শুরু হয় সর্বপ্রথম নিদ্রাোযোগে ভাল ভাল স্বপ্নের মাধ্যমে। এই সময় তিনি যে স্বপ্নই দেখিতেন, তাহাই প্রভাত-আলোর মত বাস্তবে প্রতিফলিত হইত।
[৬১]
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় ‘ভাল স্বপ্ন’-এর পরিবর্তে ‘সত্য স্বপ্ন’ উল্লিখিত হইয়াছে।
[৬২]
২। দিলের পটে উদ্রেক হওয়াঃ একটি হাদীসে নবী করীম (ﷺ)-এর এই কথাটি উদ্ধৃত হইয়াছেঃ
জিব্রাঈল ফেরেশতা আমার মনের পটে এই কথা ফুকিয়া দিলেন যে, নির্দিষ্ট রিযিক পূর্ণরূপে গ্রহণ করা ও নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল পূর্ণ হওয়ার আগে কোন প্রাণীই মরিতে পারে না।
[৬৩]
এই হাদীসে ‘আমার মনের পটে ফুকিয়া দিলেন’ কথাটি ওহী নাযিল করার এক বিশেষ পন্হার নির্দেশ করে। আল্লামা ইবনে কাসীর লিখিয়াছেনঃ
এই আয়াত হইতে ওহী নাযিল হওয়ার বিভিন্ন পন্হার অস্তিত্ব জানা যায়। ‘আল্লাহ তা’য়ালা কখনো কখনো নবী করীমের অন্তর্লোকে কোন কথা জাগ্রত করিয়াদিতেন যাহা আল্লাহর নিকট হইতে আসা সম্পর্কে কোন সন্দেহ করা যাইতে পারে না।
[৬৪]
৩। ঘন্টার ধ্বনির মত শব্দে ওহী নাযিল হওয়াঃ হযরত আয়েশা (রা) হযরত হারিস ইবনে হিশাম (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি নবী করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
আপনার নিকট ওহী কিভাবে নাযিল হয়?
ইহার জওয়াবে নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ
কখনো ওহী আমার নিকট প্রচণ্ড ঘন্টার ধ্বনির মত আসে। ইহা আমার উপর বড় কঠিন ও দুঃসহ হইয়া থাকে। পরে ওহীর তীব্রতা ও প্রচণ্ডতা আমার উপর হইতে কাটিয়া যায়। এই অবসের যাহা বলা হইল তাহা সবই আমি আয়ত্ত ও মুখস্থ করিয়ালই।
[৬৫]
এই কথা হইতে স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, সর্বপ্রকারের ওহীই অত্যন্ত দুঃসহ ব্যাপার হইলেও তন্মধ্যে এই প্রকারের ওহী রাসূলের উপর সর্বাধিক মাত্রায় দুঃসহ হইয়া পড়িত। এই প্রকারের ওহী সম্পর্কে রাসূলে করীম (ﷺ) নিজেই বলিয়াছেনঃ
আমি লৌহ ঘন্টার ধ্বনি শুনিতে পাই, তখন আমি চুপচাপ বসিয়া থাকি। এইরূপ ওহী যখনই নাযিল হয়, তখনই আমার মনে হয় যেন আমার জান কবজ হইয়া যাইবে।
এইরূপ অবস্থায় রাসূলৈর দেহ হইতে অজস্র ধারায় ঘর্মস্রোত প্রবাহিত হইত। কঠিন শীত ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময়ও ইহার ব্যতিক্রম হইত না। তখন কোন শক্তিশালী উষ্ট্রের পৃষ্ঠে আরোহী থাকিলেও উহা প্রচণ্ড চাপ অনুভব করিয়া বসিয়া পড়িত।
আল্লামা কিরমানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখিয়াছেনঃ
ইহা হইতে জানা গেল যে, রাসূলের প্রতি যখন ওহী নাযিল হইত, তখন তিনি খুব বেশী কষ্ট ও তীব্র চাপ অনুভব করিতেন এবং তাঁহার প্রতি যাহা নাযিল হইত, উহার দুর্বহ ভাবে এক দুঃসহ যন্ত্রণা তাঁহাকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিত। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁহার নিম্নোক্ত বানীতে ইহাই বলিয়াছেনঃ শীঘ্রই আমি তোমার উপর এক ভারি কথা নাযিল করিব।
[৬৬]
৪। ফেরেশতা কোন এক ব্যক্তির বেশে রাসূলের নিকট উপস্থিত হইতেন এবং আল্লাহর নিকট হইতে প্রেরিত বাণী পৌঁছাইয়া কিংবা নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করিয়া চলিয়াযাইতেন। নবী করীম (ﷺ) নিজেই বলিয়াছেনঃ
কখনো ফেরেশতা কোন ব্যক্তির রূপ ধারণ করিয়া আমার নিকট আসেন, তিনি আমার সহিত কথা বলেন এবং যাহ বলেন তাহা আমি ঠিকভাবে আয়ত্ত করিয়া লই।
[বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ১ম পৃষ্ঠা]
প্রসংগত উল্লেখযোগ্য যে, ফেরেশতা বিশেষভাবে হযরত দাহিয়া কালবী নামক সাহাবীর রূপ ধারণ করিয়া আগমন করিতেন। ইহার কারণ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখিয়াছেনঃ
অন্যান্য সাহাবীদের পরিবর্তে বিশেষভাবে দাহিয়া কালবীর রূপ ধারণ করিয়া ফেরেশতা আগমন করার কারণ এই যে, তিনিই সে সময়ের লোকদের মধ্যে সর্বাধক সুশ্রী সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট ছিলেন।
[৬৮]
নিতান্ত অপরিচিত ব্যক্তির বেশে ফেরেশতার আগমন এবং জরুরী কথা পৌঁছাইয়া দেওয়ার বিবরণও হাদীসে উল্লিখিত হইয়াছে। হযরত আবূ হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিক এক দীর্ঘ বিবরণের শেষে রাসূল (ﷺ) বলিয়াছেনঃ
এই ব্যক্তি জিব্রাঈল, জনগণকে তাহাদের দ্বীন শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে আসিয়াছেন।
[মুসলিম শরীফ, ১ম খণ্ড, ২৯ পৃষ্ঠা ববীসহ।]
৫। জিব্রাঈল (আ)-এর নিজের ছবি-সুরত ও আকার-আকৃতি সহকারে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর সম্মুখে উপস্থিত হওয়া ও ওহী পৌঁছাইয়া দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হইয়াছে। বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত প্রথম ওহী নাযিল হওয়া সম্পর্কিত হাদীসে বলা হইয়াছেঃ
অতঃপর তাঁহার নিকট ফেরেশতা আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং বলিলেনঃ পড়।
[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, ১ম পৃষ্ঠা।]
দ্বিতীয়বারে ফেরেশতা দর্শনের বিবরণ রাসূলে করীম (ﷺ)- এর নিজস্ব ভাষায় নিম্নরূপঃ
আমি পথ চলিতেছিলাম, হাঠাৎ ঊর্ধ্বদিক হইতে একটি আওয়াজ শুনিতে পাইলাম। আকাশের দিকে চোখ তুলিয়া তাকাইতেই দেখিতে পাইলাম সেই ফেরেশতা, যিনি ইতিপূর্বে হেরা গুহায় আমর নিকট আসিয়াছিলেন, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে একটি আসনে উপবিষ্ট। অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা সূরা মুদ্দাসসির নাযিল করেন।
[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, ৭৩৩ পৃষ্ঠা]
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, কুরআন মজীদ সম্পূর্ণ এই প্রকারের ওহীর মাধ্যমে নাযিল হইয়াছে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
এই কুরআন নিঃসন্দেহে রাব্বুল আলামীন আল্লাহরই নাযিল করা, ইহা লইয়া জিব্রাঈল আমীন নাযিল হইয়াছে এবং ইহা (হে নবী) তোমার হৃদয়ের উপর অবতীর্ণ হইয়াছে, যেন তুমি লোকদের ভয় প্রদর্শন কারী হও।
নবী করীম (ﷺ) হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও নিরবিচ্ছিন্ন বর্ণনা ধারা উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করিতেছে যে, আমাদের নবী করীমের প্রতি কুরআন লইয়া যিনি আসিতেন, তিনি হইলেন হযরত জিব্রাঈল (আ) যে সবসময়ই শুধু কুরআন লইয়া আসিতেন, তিনি হইলেন হযরত জিব্রাঈল (আ)। এই ব্যাপারে কোন অস্বীকৃতি বা প্রতবাদ কেহই জানায় নাই, কেহ একবিন্দু দ্বিমতও পোষণ করে নাই।
[৭৩]
বস্তুত জিব্রাঈল (আ) ফেরেশেতার মাধ্যমেই কুরআন মজীদ নাযিল হইয়াছে, ইহা সর্ববাদীসম্মত ও অকাট্য। কিন্তু জিব্রাঈল (আ) যে সবসময়ই শুধু কুরআন লইয়া আসিতেন, কুরআন ছাড়া দ্বীন-ইসলামের অপর কোন কথা লইয়া আসিতেন না, তাহাও কিছুমাত্র ঠিক নহে। কেননা হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায় স্পষ্ট দেখা যায়, তিনি স্বরূপে আল্লাহর নিকট হইতে রাসূলে করীমের নিকট উপস্থিত হইয়াছেন; কিন্তু কুরআনের কোন আয়াত বা সূরা লইয়া আসেন নাই, আসিয়াছেন দ্বীন-ইসলাম সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি পেশ করার উদ্দেশ্যে। দৃষ্টান্তস্বরূপ এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করা যাইতেছে।
হযরর উমর ফারূক (রা) বলেনঃ
নবী করীম (ﷺ) যখন ‘আকীকা’ নামক উপত্যকায় অবস্থান করিতেছিলেন, তখন তাঁহাকে এই কথা বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিতেছিলেনঃ আমার নিকট বিগত রাত্রে আল্লাহর নিকট হইতে একন আগমনকারী আসিয়াছেলেন এবং আমাকে বলিয়াছেনঃ এই বরকতপূর্ণ উপত্যকায় নামায পড় এবং বল যে, ইহা ‘হজ্জ’ কালীন ‘উমরা’।
[৭৪]
এই হাদীসে ‘আগমনকারী’ বলিয়া নবী করীম (ﷺ) যে হযরত জিব্রাঈলকেই বুঝাইয়াছেন, তাহা সুস্পষ্ট। কিন্তু তিনি কুরআনের কোন আয়াত লইয়াআসেন নাই এবং নবী করীম (ﷺ)- কে কুরআনের কোন আয়াতও শোনাইয়া যান নাই। বরং তিনি আসিয়া ‘কেরান’ ধরনের ‘হজ্জ’ জায়েয হওয়া সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ জানাইয়া গিয়াছেন। কিন্তু এই কথা কুরআনে সন্নিবেশিত হয় নাই। কুরআনে ‘হজ্জে কেরা’- এর কোন উল্লেখও নাই। তাহা হইলে কুরআন নাযিল করা ছাড়াও যে হযরত জিব্রাঈল (আ) কোন দ্বীনী কথা লইয়া রাসূলের নিকট আগমন করিতেন, তাহা প্রমাণিত হইত।
পাচঁখানি প্রধান সহীহ হাদীসের কিতাবের নিম্নোক্ত হাদীসটি উল্লেখ করা হইয়াছে, এই পর্যায়ে তাহাও উল্লেখ্য। হাদীসটি এইঃ
রাসূলৈ করীম (ﷺ) বলিয়াছেনঃ আমার নিকট জিব্রাঈল আসিলেন এবং আমার সাহাবিগণকৈ উচ্চস্বরে তাকরীর ও তাহলীল বলিতে আদেশ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন।
[৭৫]
ইমাম আহমদ ইবনে হা’ল (রা) তাঁহার মুসনাদে এই হাদীসটিকে উল্লেখ করিয়াছেন এই বলিয়াঃ
নবী করীমের নিকট জিব্রাঈল আসিলেন এবং বলিলেন।
[৭৬]
৬। পর্দার অন্তারাল হইতে রাসূলে করীমের সাথে স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালার কথা বলা এবং ওহী নাযিল করা। ইহাতে ফেরেশতার মধ্যস্থতার কোন অবকাশ থাকে না। আল্লাহ তা’য়ালা সরাসরিভাবে রাসূলে করীমের অন্তর্লোকে ওহী নাযিল করিয়া দেন। এই পর্যায়ে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
আল্লাহ কোন লোকের সহিত কথা বলেন না, তবে তিনি ওহী নাযিল করেন কিংবা পর্দার অন্তরাল হইতে কথা বলেন।
[সূরা আশশুরা, ৫১ আয়াত।]
এই আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর লিখিয়াছেনঃ
পর্দার অন্তরাল হইতে কথা কথা বলার দৃষ্টান্ত, যেমন মূসা (আ) আল্লাহর সহিত কথাবার্তা বলার পর তিনি তাঁহাকে দেখিতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু আল্লাহ দর্শন না দিয়া পর্দা ফেলিয়া দিলেন।
[৭৮]
মি’রাজের রাত্রে আল্লাহ তা’আলা রাসূলে করীমের সহিত এইরূপ অন্তরালে থাকিয়াই কথা বলিয়াছিলেন। ইহা রাসূলের সম্পূর্ণ জাগ্রত ও সচেতন অবস্থায় সম্পন্ন হইয়াছিল। রাসূলে করীম (ﷺ) নিজেই বলিয়াছেনঃ
আমাকে যখন মি’রাজে ঊর্ধ্বলোকে লইয়া যাওয়া হইল, তখন আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে তাঁহার অতি নিকটবর্তী করিয়া লইলেন। এমন কি শেষ পর্যন্ত তাঁহার ও আমার মাঝে ধনুক ও তীরের মধ্যবর্তী দূরত্বটুকু অবশিষ্ট থাকে কিংবা তাহা হইতেও কম। তখন তিনি বলিলেনঃ ‘হে মুহাম্মদ !’ আমি বলিলামঃ ‘হে পরোয়ারদিগার, আমি আপনার অতি নিকটেই অবস্থিত’।
[৭৯]
নিদ্রিতাবস্থায়ও এইরূপ ‘ওহী’ নাযিল হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হইয়াছে। নবী করীমের নিজের একটি বাণী হইতেই ইহা প্রমাণিত। তিনি ইরশাদ করেনঃ
আল্লাহ আমার নিকট এক উত্তম অনুপমরূপে আগমন করিলেন এবং বলিলেনঃ উচ্চতর জগত (ফেরেশতাকুল) কি বিষয় লইয়া বিতর্ক করিতেছে?
[৮০]
মোটকথা, অদৃশ্য জগত হইতে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য জ্ঞান লাভের যে সূত্র, কুরআনের পরিভাষায় তাহাকেই বলা হইয়াছে ‘ওহী’। এই সূত্রে নবী রাসূলগণ যে জ্ঞান, তথ্য ও তত্ত্ব লাভ করেন, তাহার প্রতি তারা নিশ্চিত বিশ্বাসী হইয়া থাকেন। উহার সত্যতা সম্পর্কে তাঁহাদের মনে একবিন্দু উদ্রেক হয় না। এই বিশ্বাস ও সন্দেহহীনতা বস্তুজগত হইতে অর্জিন জ্ঞান অপেক্ষা শত-সহস্র গুণ অধিকতর নিশ্চিত ও দৃঢ় বিশ্বাসযোগ্য। এ উৎসলব্ধ জ্ঞান সম্পর্কেই কুরআন মজীদে উদাত্ত কন্ঠে বলা হইয়াছেঃ
নবী নিেজর ইচ্ছা ও খাহেশমত কোন কথা বলে না, যাহা বলে তাহা অবতীর্ণ ওহী ভিন্ন আর কিছু নহে।
[সূরা আন- নাজম, আয়াত ৩-৪।]
কুরআন মজীদ এই ওহী সূত্রে প্রাপ্ত আল্লাহর কালাম। কিন্তু কেবল কুরআন মজীদই এই সূত্রে পাওয়া একমাত্র জ্ঞান সম্পদ নহে; এতদ্ব্যতীত আরো বহু জ্ঞান ও তথ্য সরাসরি কিংবা ফেরেশতার মাধ্যমে নবী লাভ করেন। অবশ্য এ দুই শ্রেণীর জ্ঞানের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রহিয়াছে। কুরআন মজীদ পুরাপুরি আল্লাহর কালাম, অন্যান্য জ্ঞান ও তথ্য আল্লাহর নিকট হইতে ওহীর মাধ্যমে পাওায়া গেলেও তাহা আল্লাহর কালাম নহে। এই দ্বিতীয় পর্যায়ের জ্ঞান ও তথ্যের উদ্দেশ্য হইতেছে আল্লাহর নিজস্ব কালামা-কুরআন মজীদের নির্ভুল ও সঠিক ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ দান। এ কারণে এই উভয় প্রকারের সবকিছুই; আল্লাহর নিকট হইতেই প্রাপ্ত। এজন্য উহার প্রতিটি অক্ষর, শব্দ ও ভাষা সর্বতোভাবে সুরক্ষিত। উহাতে কোন প্রকার রদবদল বা পরিবর্তন-পরিবর্ধনের কোন অবকাশ থাকিতে পারে না।
পক্ষান্তরে হাদীসের শব্দ ও ভাষা নহে, কেবলমাত্র ভাব এবং মূল কথাটাই আল্লাহর নিকট হইতে প্রাপ্ত। এ কারণে কুরআন মজীদের সর্বাঙ্গীন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তা’য়ালা নিজেই গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেনঃ
নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করিয়াছি এবং আমিই উহার সংরক্ষণকারী।
[সূরা আল-হিজর, আয়াত ৯।]
কিন্তু কুরআন ব্যতীত ওহী সূত্রে প্রাপ্ত অন্যান্য জ্ঞানের ভাষা ও শব্দ আল্লাহ কর্তৃক সুরক্ষিত নহে, উহার শব্দ ও ভাষা রাসূলের নিজস্ব, উহাকে কুরআনের ন্যায় সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেন নাই। তাহার উপর বেশি গুরুত্বও আরোপ করা হয় নাই। উহাকে কখানো ‘আল্লাহর বাণী’ ও বলা হয় নাই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/363/17
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।