hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

৭৪
ইমাম আবূ হানীফা (র)
ইমাম আবূ হানীফা (র) তাবেয়ী ছিলেন, কি তাবে-তাবেয়ী তাহা লইয়া যথেষ্ট মতভেদের সৃষ্টি হইয়াছে। ইমাম আবূ হানীফা যেহেতু কোন সাহাবী হইতেই হাদীস বর্ণনা করেন নাই- বর্ণনা করিয়াছেন বলিয়া যে সব হাদীসের কথা কোন কোন মহল হইতে প্রচার করা হইয়াছে তাহা যেহেতু অপ্রমাণিত এবং ইলমে হাদীসের কষ্টিপাথরে তাহা অনুত্তীর্ণ- এই কারণে কোন কোন ঐতিহাসিক তাঁহাকে ‘তাবেয়ী’ মানিয়া লইতেও অস্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু অকাট্য ঐতিহাসিক প্রমাণের ভিত্তিতে একথা জোর করিয়া বলা যায় যে, ইমাম আবূ হানীফা (র) সাহাবাদের দর্শন লাভ করিয়াছেন। কেননা ইমাম আবূ হানিফা ৮০ হিজরী সনে কূফা নগরে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন।

এই সময় তথায় রাসূলের সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা (রা) জীবিত ছিলেন। তিনি ৮১ হিজরী কিংবা উহার পরে ইন্তেকাল করেন। ইবনে আবদুল বার-এর বর্ণনাতে তিনি ইন্তেকাল করিয়াছেন ৮৭ হিজরী সনে।

ঐতিহাসিক ইবনে সায়াদ লিখিয়াছেনঃ ইমাম আবূ হানীফা (র) হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা)-কে দেখিয়াছেন। কেননা তিনি বসরা নগরে ৯১ হিজরী সনে, আর ইবনে আবদুল বার-এর মতে ৯৯ হিজরী সনে ইন্তেকাল করিয়াছেন।

এতদ্ব্যতীত হযরত সহল ইবনে সায়াদ সায়েদী মদীনায় এবং হযরত আবুত্তোফাইল, আমের ইবনে ওয়াসিল মক্কানগরে বসবার করিতেছিলেন। সুতরাং ইমাম আবূ হানীফার পক্ষে কোন সাহাবীর দর্শন লাভ করা অসম্ভব বলা যায় না।

মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা লেখক আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী প্রদত্ত ফতোয়ার ভিত্তিতে লিখিয়াছেনঃ

ইমাম আবূ হানীফা (র) সাহাবাদের এক জামাআতকে দেখিতে পাইয়াছেন, যাঁহারা কূফা নগরে থাকিতেন, যখন তিনি ৮০ হিজরী সনে তথায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তাহার সহযোগী সিরিয়ার আওযায়ী, বসরার হাম্মাদ ইবনে সালমা ও হাম্মাদ ইবনে যায়দ, কূফার সুফিয়ান সওরী, মদীনার মালিক এবং মিসরের লাইস ইবনে সায়াদ প্রমুখ ইমাম এই মর্যাদা লাভ করেন নাই। (তাঁহাদের কেহই তাবেয়ী নহেন)।

ইবনে হাজার মক্কী মিশকাতের ব্যাখ্যায় লিখিয়াছেনঃ

ইমাম আ’জম আবূ হানীফা আটজন সাহাবীর সাক্ষাত পাইয়াছেন। তন্মধ্যে হযরত আনাস ইবনে মালিক, আবদুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা, সহল ইবনে সায়াদ এবং আবূত্তোফাইল (রা) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আল্লামা আলাউদ্দীন ‘দূররুল মুখতার’ গ্রন্হের ভূমিকায় লিখিয়াছেনঃ

বয়সের হিসাবে তিনি প্রায় বিশজন সাহাবীকে পাইয়াছেন।

‘মুনিয়াতুল মুফতী’ গ্রন্হর উদ্ধৃতি দিয়া তিনি আরো লিখিয়াছেনঃ

ইমাম আবূ হানীফা সাতজন সাহাবীর নিকট হইতে হাদীস শ্রবণ করিয়াছেন ইহা প্রমাণিত সত্য।

এই সব উদ্ধৃতির ভিত্তিতে বলা যায়, ইমাম আবূ হানীফা (র) তাবেয়ী ছিলেন।

আল্লামা ইবনে আবেদীন লিখিয়াছেনঃ

সবদিকেরই বিচারে ইমাম আবূ হানীফা তাবেয়ী ছিলেন। মুহাদ্দিস যাহবী ও মুহাদ্দিস আসকালানী ইহা দৃঢ়তা সহকারেই ঘোষণা করিয়াছিলেন।

অবশ্য একালের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ আনওয়ার কাশ্মীরী (র) ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলিয়াছেনঃ

তিনি সাক্ষাত লাভের দিক দিয়া তাবেয়ী ছিলেন এবং তাবে-তাবেয়ীন ছিলেন হাদীস বর্ণনার দিক দিয়া।

ইমাম আবূ হানীফা যখন হাদীস শিক্ষার জন্য উদ্যোগী হন, তখন সমগ্র মুসলিম জাহান হাদীস চর্চায় মুখরিত ছিল। প্রত্যেক শহর ও জনপদে হাদীস বর্ণনার বড় বড় দরবার কায়েম হইয়াছিল। প্রায় দশ হাজার সাহাবী সর্বত্র ছড়াইয়া পড়িয়াছিলেন এবং তাঁহাদের নিকট হইতে হাদীস শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কয়েক লক্ষ পর্যন্ত পৌঁছিয়াছিল। যেসব শহরে সাহাবী কিংবা তাবেয়ী অবস্থান করিতেন, উহাকে ‘দারুল-উলুম’ (বিদ্যালয়) বলিয়া অভিহিত করা হইত।

এই সময় ইমাম আবূ হানীফা (র) প্রথমে কূফা নগরে বড় তাবেয়ী হাদীসবিদদের নিকট হইতে হাদীস শিক্ষা করেন। ইমাম শাফেয়ী লিখিয়াছেনঃ ‘ইমাম আবূ হানীফা কূফা নগরের ৯৩ জন মুহাদ্দিসের নিকট হইতে হাদীস শিখিয়াছেন। আর ইমাম যাহরীর বর্ণনা হইতে জানা যায় যে, কুফা নগরে ইমাম আবূ হানীফার হাদীসের ওস্তাদ ছিলেন ২৯ জন। তাঁহাদের অধিকাংশই ছিলেন বড় বড় তাবেয়ী। তাঁহাদের মধ্যে ইমাম শা’বী, সালমা ইবনে কুহাইল, মুহারিব ইবনে দিসার, আবূ ইসহাক সাবয়ী, আওন ইবনে আবদুল্লাহ, সামাক ইবনে হারব, আমর ইবনে মুবরা, মনসুর ইবনে মা’মর, আ’মশ ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মদ, আদী ইবনে মারসাদ প্রমুখ বড় বড় মুহাদ্দিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁহাদের নিকট হইতে ইমাম আবূ হানীফা (র) বিপুল সংখ্যক হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহ করেন।

অতঃপর তিনি আরো হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বসরা গমন করেন। এই সময় ইমাম হাসান বসরী, শু’বা, কাতাদাহ প্রমুখ বড় বড় তাবেয়ী মুহাদ্দিসের প্রচারিত হাদীসের জ্ঞানে বসরা নগরী কানায় কানায় ভরপুর ছিল।

ইহার পর তিনি মক্কা ও মদীনা গমন করেন। এখানে তখন হাদীসের শিক্ষা ব্যাপকভাবে চলিতেছিল। সাহাবীদের সংস্পর্শে ও লক্ষ্য-যত্নে লালিত ও শিক্ষাপ্রাপ্ত কয়েকজন বড় বড় তাবেয়ী স্বতন্ত্রভাবে বহু সংখ্যক হাদীস শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করিয়াছিলেন। আতা ইবনে আবূ রিবাহ ও ইকারামা প্রমুখ তাহাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মনীষী। এই পর্যায়ে মুহাদ্দিস যাহবী লিখিয়াছেনঃ

ইমাম আবূ হানীফা মক্কা শরীফে আতা ইবনে আবূ রিবাহ’র নিকট হইতে হাদীস শ্রবণ ও শিক্ষা করেন।

মদীনায় ইমাম বাকের তখন অবস্থান করিতেছিলেন। ইমাম আবূ হানীফা (র) তাঁহার দারবারেও কেবল হাদীস শিক্ষার উদ্দেশ্যেই উপস্থিত হইয়াছিলেন।

মোটকথা ইমাম আবূ হানীফা (র) তদানীন্তন বিশাল মুসলিম জাহানের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত হাদীস-কেন্দ্রসমূহের সর্বমোট প্রায় চার সহস্র মুহাদ্দিসের নিকট হইতে হাদীস শিক্ষা করিয়াছেন, আবূ হাফস কবীর এই কথা দাবি করিয়াছেন। ইলমে হাদীসের কষ্টিপাথরে তাঁহার এই দাবি উত্তীর্ণ ও সম্পূর্ণ নির্ভূল প্রমাণিত না হইলেও একথা জোর করিয়াই বলা যায় যে, তাঁহার হাদীস শিক্ষার ওস্তাদের সংখ্যা ছিল বিপুল। ‘তাযকিরাতুল হুফফায’ গ্রন্হে ইমাম যাহবী ইমাম আবূ হানীফার ওস্তাদের নাম উল্লেখ করার পর লিখিয়াছেনঃ

ত্রতদ্ব্যতীত আরো বিপুল সংখ্যক মুহাদ্দীসই তাঁহার ওস্তাদ ছিলেন।

হাফেয মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ সালেহী শাফেয়ী বলেনঃ

ইমাম আবূ হানীফা হাদীসের বড় বড় হাফেয ও গুরুদের মদ্যে গণ্য। তিনি যদি হাদীসের প্রতি খুব বেশী মনোযোগী না হইতেন ও ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন না হইতেন, তাহা হইলে ফিকাহর মাসালা মাসায়েল বাহির করা তাঁহার পক্ষে কখনই সম্ভব হইত না।

শায়খুল ইসলাম ইয়াজীদ ইবনে হারুন বলেনঃ

ইমাম আবূ হানীফা অত্যন্ত মুত্তাকী, পবিত্র-পরিচ্ছন্ন গুণসম্পন্ন সাধক, আলিম, সত্যবাদী ও সমসাময়িককালের সকলের অপেক্ষা হাদীসের বড় হাফেয ছিলেন।

[এই গ্রন্হের পাণ্ডুলিপি করাচী ‘মজলিসে ইলমী’ লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে।]

ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদুল কাতান বলিয়াছেনঃ

আল্লাহর শপথ, আবূ হানীফা বর্তমান মুসলিম উম্মতের মধ্যে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদীস ও সুন্নত সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা বেশী বিজ্ঞ ও জ্ঞানী।

মুহাদ্দিস ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীনকে যখনই ইমাম আবূ হানীফা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইত, তখনই তিনি বলিতেনঃ

তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত, ভূল-ভ্রান্তিমূক্ত। হাদীসের ব্যপারে কেহ তাঁহাকে ‘দুর্বল’ বা অগ্রহণযোগ্য বলিয়াছেন বলিয়া আমি শুনি নাই।

তিনি আরো বলিতেনঃ

আবূ হানীফা দ্বীনদার, বিশ্বস্ত , সত্যবাদী ও নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস ছিলেন। কেহ তাঁহাকে মিথ্যা বর্ণনা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন নাই। তিনি আল্লাহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং হাদীস বর্ণনায় পূর্ণ সত্যবাদী ছিলেন।

বলখের ইমাম ইবনে আইয়ূব সত্যই বলিয়াছেনঃ

প্রকৃত ইলম আল্লাহর নিকট হইতে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নিকট পৌঁছিয়াছে। তাঁহার পর তাঁহার সাহাবিগণ উহা লাভ করিয়াছেন। সাহাবীদের নিকট হইতে পাইয়াছেন তাবেয়িগণ। আর তাবেয়িগণের নিকট হইতে উহা কেন্দ্রীভূত ও পরিণত হইয়াছে ইমাম আবূ হানীফাতে।

হাফেয আবূ নয়ীম ইসফাহানী ইয়াহইয়া ইবনে নসর ইবনে হাজেব- এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেনঃ

আমি আবূ হানীফার নিকট একটা ঘরে উপস্থিত হইলাম, যাহা কিতাবে ভর্তি হইয়াছিল। জিজ্ঞাসা করিলামঃ এই কিতাবগুলি কিসের? বলিলেনঃ এই সবই হাদীসের কিতাব। ইহার সামান্য অংশই আমি বর্ণনা করিয়াছি মাত্র, যাহা হইতে লোকেরা যথেষ্ট উপকৃত হইতেছে।

ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীনের আর একটি কথাও উল্লেখযোগ্য। বলিয়াছেনঃ

আবূ হানিফা খুবই নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি নিজের মুখস্থ ও সুরক্ষিত হাদীসই বর্ণনা করিতেন। যাহা তাঁহার মুখস্থ নাই, তাহা তিনি কখনো বর্ণনা করিতেন না।

দ্বিতীয় এই যে, হাদীসের বিরাট সম্পদ বক্ষে ধারণ করার পর উহার শাব্দিক বর্ণনা তিনি কম করিয়াছেন, কেবল হাদীস শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে মজলিস অনুষ্ঠান তিনি বড় একটা করেন নাই, বরং তিনি হাদীসের নিগূঢ় অর্থ উদঘাটন ও উহা হএত মুসলমানদের ব্যবহারিক জীবনের জন্য প্রয়েজনীয় মাসলা-মাসায়েল বাহির করার কাজেই সর্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন।

কিন্তু তাই বলিয়া তিনি হাদীস সন্ধান ও সংগ্রহের কাজ বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন তাহাও নয়। বরং নিত্য নূতন হাদীসের সন্ধান লাভ করিয়া অধিকতর সমৃদ্ধ হইবার জন্য তিনি সবসময়ই চেষ্টিত ও যত্ববান হইয়াছিলেন। ইমাম নযর ইবনে মুহাম্মদ মারওয়াজী ইমাম আবূ হানীফার একজন বিশিষ্ট ও প্রখ্যাত ছাত্র। তিনি বলিয়াছেনঃ

আমি ইমাম আবূ হানীফার অধিক কাহাকেও হাদীস সন্ধানে উৎসাহী ও মনোযোগী দেখিতে পাই নাই। একবার ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদুল আনসারী, হিশাম ইবনে উরওয়া ও সায়ীদ ইবনে আবূ আরুবা আগমন করিলেন। তখন ইমাম আবূ হানীফা আমাদিগকে বলিলেনঃ যাইয়া দেখ, এই লোকদের নিকট হাদীসের এমন কোন সম্পদ আছে কিনা, যাহা আমি তাঁহাদের নিকট হইতে শুনিয়া লইতে পারি।

ইমাম আজমের অপর এক শাগরিদ হইতেছেন মুহাদ্দিস আবদুল আযীয ইবনে আবূ রাজামা। তিনিও প্রায় এই রূপ কথাই বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেনঃ

একজন মুহাদ্দিস কূফায় আগমন করিলে ইমাম আবূ হানীফা তাঁহার ছাত্র-সঙ্গীদের বলিলেনঃ তোমরা তাঁহার নিকট যাইয়া দেখ, আমাদের নিকট নাই এমন কোন হাদীস তাঁহার নিকট আছে নাকি?

আবদুল আজীজ বলেনঃ আরো একবার একজন মুহাদ্দিস আসিলে ইমাম আবূ হানীফা তাঁহার ছাত্রদিগকে এইরূপ বলিয়া পাঠাইয়া দিয়াছিলেন।

উপরিউক্ত বর্ণনা দুইটি হইতে ইমাম আবূ হানীফার হাদীস সন্ধানপ্রিয়তা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। তাই হাদীসের ব্যাপারে তিনি অমনোযোগী ছিলেন, এরূপ কথা অর্বাচীনই বলিতে পারে।

তিনি হাদীস পরিত্যাগ করিয়া কেবল কিয়াস ও বুদ্ধি প্রয়োগের সাহায্যেই মাসালার রায় দিতেন বলিয়া যে অভিযোগ করা হইয়াছে, তাহা সর্বৈব মিথ্যা। মাসালার রায় দেওয়ার ব্যাপারে তাঁহার নীতি কি ছিল, তাহা তাঁহার নিম্নোক্ত উক্তি হইতেই সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। তিনি নিজেই নিজের সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ

আমি প্রথমে আল্লাহর কিতাবকেই ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করি, যখন তাহাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফয়সালা পাই, তখন সেই অনুযায়ীই রায় দেই। তাহাতে যদি না পাই, তবে অতঃপর রাসূলের সুন্নাত ও বিশুদ্ধ কার্যবিবরণী- যাহা নির্ভরযোগ্য লোকদের মারফতে প্রচারিত হইয়াছে- গ্রহণ করি। কিন্তু আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতেও যদি তাহা না পাই, তবে তখন কাহারো কথা ছাড়িয়া দেই।

কিয়াস ও সাধারণ বুদ্ধির বিপরীত হইলেও তিনি যে হাদীসকেই গ্রহণ করিতেন এবং প্রমাণিত হাদীস অনুযায়ী আমলন করিতেন, তাহার প্রমাণ এই যে, কুরয়া দ্বারা কর্তব্য নির্ধারণ করাকে তিনি জায়েয মনে করিতেন, যদিও বাহ্যদৃষ্টিতে উহা জুয়ার সমান।

তিনি বলিয়াছেনঃ

কিয়াস অনুযায়ী কুরয়া জায়েয হওয়া উচিত নয়, কিন্তু উহার জায়েয হওয়া সম্পর্কে যে হাদীস ও সুন্নাত প্রমাণিত হইয়াছে, কিয়াস ত্যাগ করিয়া আমি তাহাই মানিয়া লইতেছি।

তিনি হাদীস গ্রহণে যে কঠোর শর্ত ও কড়াকড়ি আরোপ করিয়াছেন ইহা আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে বস্তুতই অপরিহার্য ছিল। কেননা ইমাম আবূ হানীফার যুগে বিভিন্ন প্রকারের ভ্রান্ত আকীদা ও এক শ্রেণীর মানুষের মনগড়াভাবে রচিত মিথ্যা হাদীস ব্যাপকভাবে প্রচারিত হইয়াছিল। এই সময় তিনি যদি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করিতেন, যদি হাদসি নামে কথিত ভূল-শুদ্ধ নির্বিচারে সব কথাই মানিয়া লইতেন, তাহা হইলে আল্লাহর দ্বীন নির্ভূলভাবে রক্ষিত হইতে পারিত না। প্রকৃতপক্ষে ইহা তাঁহার অপরিসীস তাকওয়া ও দ্বীনের প্রতি ঐকান্তিক অকৃত্রিম বিশ্বাস ও ভালবাসারই ফল, ইহাতে কোনই সন্দেহ থাকিতে পারে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন