hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

৫২
হাদীস লিখন
সাহাবায়ে কিরাম যেমন হাদীস সংরক্ষণের জন্য উহা কেবর মুখস্থ করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, অনেক সাহাবী উহা লিখিয়া রাখার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করিয়াছেন। অনুরূপভাবে তাবেয়িগণও হাদীস কেবল মুখস্ত করাকেই হাদীস সংরক্ষণের দায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট মনে করেন নাই, সেই সঙ্গে তাঁহাদের মধ্যে এমন লোকও ছিলেন, যাঁহারা উহাকে লিখিয়া রাখার গুরুত্ব পূর্ণমাত্রায় অনুভব করিয়াছিলেন। এক কথায় বলা যায়, সাহাবা ও তাবেয়ী- এই উভয় যুগে হাদীস কেবলমাত্র মুখস্থ করাই যদি যথেষ্ট মনে করা হইত এবং কেহই উহা লিপিবদ্ধ করার দিকে মনোযোগ না দিতেন, তাহা হইল রাসূলের হাদীসের বিরাট অংশের বিলুপ্ত হইয়া যাওয়ার আশংকা ছিল। এইজন্য মুখস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে হাদীস লিখিয়া লওয়ার দিকেও যে এই উভয় যুগের বিশেষ বিশেষ লোকের দৃষ্টি নিবদ্ধ হইয়াছিল, ইহাকে মুসলিম জাতির প্রতি আল্লাহর এক অপরিসীম অনুগ্রহই বলিতে হইবে।

বস্তুত তাবেয়ীদের মধ্যে বহু লোক সাহাবীদের নিকট হইতে হাদীস শ্রবণ ও শিক্ষা লাভ করিয়া তাহা যথাযথ সতর্কতা, লক্ষ্য ও মনোযোগ সহকারে লিপিবদ্ধ ও সংকলিত করিয়াছেন। নিম্নোক্ত বর্ণনা হইতে তাহার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যাইবে।

১। বশীর ইবনে নুহাইক তাবেয়ী হযরত আবূ হুরায়রার হাদীসের ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেনঃ আমি হযরত আবূ হুরায়রার নিকট যত হাদীস শুনিতাম, তাহা সবই লিপিবদ্ধ করিয়া লইতাম। শেষকালে তাঁহার নিকট হইতে বিদায় লওয়ার সময় তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া লিখিত হাদীস-সমষ্টি তাঁহার নিকট পেশ করিলাম এবং তাহা সবই আদ্যোপান্ত পড়িয়া তাঁহাকে শোনাইলাম। বলিলামঃ- ‘ইহা সেই সমস্ত হাদীসের সমষ্টি, যাহা আমি আপনার নিকট হইতে শুনিয়াছি’। জওয়াবে হযরত আবূ হুরায়রা (রা বলিলেনঃ হ্যাঁ, ‘ঠিক আছে’।

[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৬৮।]

২। হযরত আবূ হুরায়রার অপর একজন ছাত্র হইতেছেন হাম্মাম ইবনে মুনাববাহ ইয়ামানী। তিনিও শ্রুত হাদীসসমূহ লিখিত আকারে সুসংবদ্ধ করেন। এই সংকলন ‘সহীফায়ে হাম্মাম ইবনে মুনাব্বাহ’ নামে খ্যাত। ইহাতে প্রায় একশত চল্লিশটি হাদীস সন্নিবেশিত রহিয়াছে। এই গ্রন্হের পাণ্ডুলিপি আজিও দামেশক ও বালিনের লাইব্রেরীতে সুরক্ষিত রহিয়াছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত গবেষক ও অনুসন্ধান-বিশারদ ডক্টর হামীদুল্লাহ ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে প্রথম ইহার সন্ধান লাভ করেন। উহার ঠিক বিশ বৎসর পর ১৯৫৩ সনে দামেশকের আবরী পত্রিকা তে উহাকে চার কিস্তিতে প্রকাশ করেন। ডক্টর হামীদুল্লাহর ঘোষণা হইতে ইহাও জানা গিয়াছে যে, তুরস্কের আনকারা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে হাম্মাম ইবনে মুনাববাহর ছাত্র মা’মর ইবনে রাশেদ সংকলিত অপর একখানি হাদীস গ্রন্হের পাণ্ডুলিপিও বর্তমান রহিয়াছে।

মা’মর ইবনে রাশেদের ছাত্র এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের উস্তাদ আবদুর রাজ্জাক ইবনে হাম্মাম আস-সানয়ানী আল-ইয়ামনী (১২৫-২১১ হিঃ} সংকলিত এক হাদীস গ্রন্হও পাওয়া গিয়াছে। ইহা ‘মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক’ নামে খ্যাত।

এই হাদীস সংকলনসমূহ একদিকে যেমন নবী করীম (ﷺ)-এর জীবনকাল ও খিলাফতে রাশেদার আমলের হাদীস সংকলিত হওয়ার জীবন্ত নিদর্শন এবং প্রাচীনতম গ্রন্হসমূহের মূল উৎস।

[এই সমস্ত বিবরণ ডঃ হামীদুল্লাহ সম্পাদিত ‘সহীফায়ে হাম্মাম ইবনে মুনাব্বাহ’র ভূমিকা হইতে গৃহীত।]

৩। সায়ীদ ইবনে জুবাইর তাবেয়ী বলেনঃ

আমি ইবনে উমর ও ইবনে আব্বাসের নিকট রাত্রিবেলা হাদীস শুনিতাম ও সওয়ারীর উপর বসিয়া তাহা লিখিয়া রাখিতাম।

[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৬৮।]

তাঁহার অপর এক উক্তি হইতে জানা যায়, তিনি হযরত ইবনে আব্বাসের সাথে কোন এক রাত্রিবেলা মক্কার পথে চলিতেছিলেন। এই সময় ইবনে আব্বাস (রা) হাদীস বর্ণনা করিতনে এবং তিনি উহা লিখিয়া রাখিতেন। এইভাবে সকাল বেলা পর্যন্ত চলিতে থাকিত।

[ঐ]

৪। তাবেয়ী সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা সম্পর্কে মুবারক ইবনে সায়ীদ বলেনঃ

সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাত্রিবেলা হাদীস শ্রবণ করিয়া প্রাচীরগাত্রে লিখিয়া রাখিতেন, সকাল বেলা উহার অনুলিপি তৈয়ার করিয়া উহা মুছিয়া ফেলিতেন।

[সুনানে দারেমী।]

৫। হুজর ইবনে আদী’র সম্মুখে একদিন পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা করা সম্পর্কে একটি প্রশ্ন পেশ করা হয়। তিনি বলিলনঃ আমার সহীফাখানা লইয়া আস।

উহা আনা হইলে তিনি বিসমিল্লাহ বলিয়া পড়িতে লাগিলেন এবং বলিলেনঃ ইহা আমি হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব হইতে শুনিয়াছি, তিনি বলিতেছিলেন যে, ‘পবিত্রতা হইতেছে অর্ধেক ঈমান’।

[তাবাকাতে ইবনে সায়াদ ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৪।]

ইহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আলীর নিকট হইতে হাদীসসমূহের কোন লিখিত সংকলন হুজর ইবনে আদীর নিকট বর্তমান ছিল এবং কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হইলেই তিনি উহা খুলিয়া হাদীস পাঠ করিয়া তাহা হইতে জওয়াব শোনাইতেন।

৬। আবদুল আ’লা ইবনে আমরের নিকটও একখানি লিখিত হাদীস সংকলন রক্ষিত ছিল। তাঁহার সম্পর্কে বলা হইয়াছেঃ

আবদুল আ’লা যত হাদীস ইবনুল হানাফীয়া হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, আসলে তাহা সবই লিখিত পুস্তক আকারে পাওয়া একটি সমষ্টি ছিল। তিনি উহা তাঁহার নিকট হইতে পাইয়াছিলেন; কিন্তু হাদীসসমূহ তাঁহার জবানীতে শ্রবণ করেন নাই।

[তাবাকাতে ইবনে সায়াদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৪।]

৭। ইমাম বাকের –এর নিকটও হাদীসের এক সংকলন গ্রন্হ বর্তমান ছিল। হযরত জা’ফর সাদেক বলেনঃ আমি আমার পিতার নামে যত হাদীস বর্ণনা করিঃ তাহা সবই তাঁহার সংকলিত গ্রন্হে লিপিবদ্ধ পাইয়াছি ও তাহা হইতেই গ্রহণ করিয়াছি’।

[তাহযীবুত তাহযীব, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৪।] 

৮। হযরত মুয়াবিয়ার শাসন আমলে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণিত হাদীসসমূহের কয়েকটি সংকলন তৈয়ার করা হয। মারওয়ান ইবনে হাকাম হযরত যায়দ ইবনে সাবিত বর্ণিত হাদীস সমূহের সংকলন করেন।

[সুনানে দারেমী।]

বস্তুত তাবেয়িগণ সাহাবীদের নিকট হইতে নানাভাবে হাদীস সংগ্রহ করিতেন। দূরবর্তী কোন সাহাবীর নিকট হইতে হাদীস জানিবার উদ্দেশ্যে তারা পত্রালাপও করিতেন এবং পত্রের মারফতে তারা রাসূলের হাদীস জানিয়া লইতেন। হযরত সায়াদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রা) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসে উহার সুস্পষ্ট প্রমাণ রহিয়াছে। আমের জুহরী আল-করশী (মৃত্যুঃ ১০৪ হিঃ) বলেনঃ

আমি হযরত জাবির (রা)- এর নিকট আমার গোলাম নাফে’র হস্তে এক পত্র প্রেরণ করিয়াছিলাম। তাহাতে লিখিয়াছিলাম যে, আপনি রাসূলের নিকট হইতে শুনিয়াছেন এমন কোন জিনিস আমাকে লিখিয়া পাঠান। উত্তরে তিনি (জাবির) আমাকে লিখিলেন যে আসলামীকে যে শুক্রবার ‘সংগেসার’ করা হয় সেই দিনের বৈকালে আমি রাসূলে করীমকে বলিতে শুনিয়াছিঃ দ্বীন-ইসলাম কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম থাকিবে; কিংবা বলিয়াছেনঃ যতদিন তোমাদের উপর কুরায়শ বংশের বারোজন খলীফা নিযুক্ত না হইবে (ততদিন পর্যন্ত দ্বীন ইসলাম কায়েম থাকিবে)।

[সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, কিতাবূল ইমারাত, পৃষ্ঠা ১১৯।]

১০। রাজা ইবনে হায়াত বলেন যে, খলীফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিক আমার নিকট একটি হাদীস জিজ্ঞাসা করিয়া তাঁহাকে লিখিয়া পাঠাইবার জন্য তাঁহার এক কর্মচারীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু-

উক্ত হাদীস আমার নিকট লিখিত না থাকিলে আমি উহা ভুলিয়া যাইতাম।

[সুনানে দরেমী, পৃষ্ঠা ৬৯।]

১১। তাবেয়ী হাদীসবিদগণ পারস্পরিক পত্রালাপের মারফতে একজন অপরজনকে হাদীসের কথা জানাইতেন। ইয়াযিদ ইবনে আবূ হাবীব বলেনঃ

তাবেয়ী আতা আমাকে লিখিয়াছিলেন যে, তিনি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা)- কে বলিতে শুনিয়াছেন যে, রাসূলে করীম (ﷺ)-কে মক্কা বিজয়ের দিন (মক্কায় থাকিয়া) বলিতে শুনিয়াছি যে, নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূল মদ্য, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি ক্রয়-বিক্রয় হারাম করিয়া দিয়াছেন।

এই হাদীস লিখনে তাবেয়িগণও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করিতেন, যাহার তাহার নিকট হইতে তারাও হাদীস লিখিয়া লইতেন না। ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীন তাবেয়ী বলেনঃ

আমাকে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবদুর রাজ্জাক বলিলেনঃ আমার নিকট হইতে কোন কিতাব ছাড়া অন্ততঃ একটি হাদীস হইলেও তাহা লিখিয়া লও।

তিনি হাদীসের বড় হাফেজ ছিলেন বটে। কিন্তু এই সময় (শেষ জীবনে) তিনি অন্ধ হইয়া গিয়াছিলেন। এইজন্য আমি তাঁহার নিকট হইতে কোন হাদীস লিখিয়া লইতে রাযী হইলাম না, কেননা তাঁহার হাদীস ভূলিয়া যাওয়ার আশংকা ছিল ও কি বলিতে কি বলেন তাহারও ভয় ছিল। এইজন্য আমি তাঁহাকে স্পষ্ট ভাষায় বলিলামঃ ‘না, একটি অক্ষরও আপনার নিকট হইতে শুনিয়া লিখিয়া লইব না’।

[মুসনাদে ইমাম আহমদ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৪।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন