মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কেবলমাত্র সনদের দিক দিয়া হাদীসের যাচাই, ওজন ও পরীক্ষা করার নিয়ম পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাসমূহে আলোচিত হইয়াছে। ইহার দ্বিতীয় কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য পন্হা হইতেছে মূল হাদীসের ()- যথার্থতা যাচাই করা। হাদীস-বিজ্ঞানের পরিভাষায় ইহাকে বলা হয় ‘দিরায়ত’। এই প্রকিয়ার বিভিন্ন দিক রহিয়াছে। তবে ইহার সারকথা এই যে, ইহাতে হাদীস বর্ণনাকারীদের সমালোচনা ও যাচাই না করিয়া মূল হাদীসটিকে যুক্তিবাদের কষ্টিপাথরে ওজন করিয়া দেখা হয়। ‘রওয়ায়েত’ বা সনদ যাচাই করার প্রক্রিয়া কেবলমাত্র হাদীস বর্ণনাকারীদের ব্যক্তিগত গুণ-চরিত্র ও পারস্পরিক সম্পর্ক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু হাদীসের মর্মকথায় কোন ভূল, অসত্য, অবস্তবতাএবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের পরিপন্হী কিছু থাকিলে এই পন্হার যাচাই-পরীক্ষায় তাহা ধরা পড়িতে পারে না। অতএব কেবলমাত্র এই পদ্ধতিতে যাচাই করিয়া কোন হাদীস উত্তীর্ণ পাইলেই তাহা গ্রহণ করা যাইতে পারে না। এই কারণে মূল হাদীস ()- হাদীসের মর্মবাণীটুকু তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও বিবেচনার মানদন্ডে যাচাই করার উদ্দেশ্যে এই ‘দিরায়াত’ প্রক্রিয়ার প্র য়োগ করা হইয়া থাকে। হাদীস যাচাই-পরীক্ষার ব্যাপারে ‘দিরায়াত’ নীতির প্রয়োগ ‘রওয়ায়েত’ নীতির মতই কুরআন ও হাদীস সম্মত। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাই কেবলমাত্র ‘রওয়ায়েতের’ উপর নির্ভরশীল কোন ‘কথা’ গ্রহণ বা বর্জনের সিদ্ধান্ন করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
তোমরা যখন সে কথা শুনিতে পাইয়াছিলে, তখন তোমরা (শুনিয়াই) কেন বলিলে না যে, এই ধরনের কথা বলা আমাদের কিছুতেই উচিত নহে। তখন বলা উচিত ছিল যে, আল্লাহ পবিত্র মহান, ইহা এক সুস্পষ্ট মিথ্যা কথা ও বিরাট দোষারোপ ছাড়া আর কিছুই নহে। (ইহা সত্য হওয়া কিছুতেই সম্ভবপর নহে)।
অর্থাৎ মূল সংবাদটি শ্রবণমাত্রই একথা মনে করা উচিত ছিল যে, ইহা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। অতএব তখনই ইহার প্রচার ও প্রসার বন্ধ করিয়া দেওয়া কর্তব্য ছিল। এই ‘দোষারোপ’ শ্রবণের সঙ্গে সঙ্গেই উহাকে মিথ্যা বলিয়া বাতিল করার এই খোদায়ী তাগীদ ‘দিরায়াত’ প্রয়োগেরই নির্দেশ।
বস্তুত হাদীস যাচাইয়ের ব্যাপারে দিরায়াত রীতি এক সর্বোন্নত ও সর্বাধিক তীক্ষ্ণ শাণিত হাতিয়ার। এই পর্যায়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়ঃ
১. যে ঘটনা শত-সহস্র লোকের সম্মুখে সংঘটিত হইয়াছে- যে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময়ই বিপুল সংখ্যক লোকের গোচরীভূত না হইয়া পারে না, সেই ঘটনা কিংবা অনুরূপ কোন ঘটনার কথা যদি মাত্র একজন বর্ণনাকারী কর্তৃক বর্ণিত হইয়া থাকে, তবে উহার সত্যতা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের উদ্রেক হইবে। এইরূপ ঘটনা বহু সংখ্যক সাহাবী হইতে বর্ণিত না হইলে এই একজন ব্যক্তির বর্ণনাকে কিছুতেই ‘সহীহ হাদীস’ মনে করা ও নিঃশংকচিত্তে উহাকে গ্রহণ করা যাইতে পারে না।
২. যে ঘটনা এমন লোকদের হইতে বর্ণিত হইয়াছে, যাঁহাদের মূল ঘটনা বা উহার ক্ষেত্রের সহিত সাক্ষাৎ সম্পর্কে থাকার কোন কারণ নাই কিংবা তাহা অসম্ভব, এইরূপ বর্ণনার সমর্থন যদি মূল ঘটনা ও ঘটনাস্থলের সহিত নিকট-সম্পর্কশীল লোকদের বর্ণনা হইতে না পাওয়া যায় অথবা তাহাদের হইতে যদি উহার বিপরীত বর্ণনা পাওয়া যায়, তাহা ইলে প্রথমোক্ত বর্ণনাকারীদের বর্ণিত হাদীস ‘সহীহ হাদীস’ রূপে গ্রহণ করা যাইবে না। তাহাদের পরিবর্তে মূল ঘটনার সহিত নিকটতর সম্পর্কশীল লোকদের বর্ণিত হাদীসই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে। যেমন নবী করীম (ﷺ)-এর দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে যদি কোন হাদীস প্রথমত এমন লোক হইতে বর্ণিত হয়, যে লোক কোন দিক দিয়াই হযরতের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয় কিংবা কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট শ্রবণও করে নাই, তবে তাহার বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। কিন্তু এইরূপ হাদীস যদি রাসূলের এই জীবনাংশের সহিত কোন না কোন দিক দিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির- যেমন রাসূলের কোন স্ত্রী কিংবা নিকটাত্মীয়ের- তরফ হইতে বর্ণিত হয় অথবা এই ধরনের কোন ব্যক্তির নিকট হইতে শ্রবণ করিয়া বর্ণনা করা হয়, তবে তাহা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে।
৩. যে হাদীসের বর্ণনাকারী হাদীসের ব্যবহারিক মূল্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাঁহার বর্ণিত হাদীস অন্য ধরনের হাদীসের ব্যবহারিক মূল্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নহেন এমন বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসের তুলনায় অধিক গ্রহণযোগ্য। এমনকি, কাহারো কাহারো মতে ফকীহ তাবেয়ী যদি সাহাবীর নাম উল্লেখ না করিয়াই রাসূল হইতে সরাসরি হাদীস বর্ণনা করেন, তবে তাহাও উপরোক্ত নীতি অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য হইবে। সাহাবীদের যুগে হাদীস যাচাই করার এই দিরায়াত পদ্ধতির নিয়ম-কানুন বিস্তারিতরূপে রচিত হয় নাই। তবে সে যুগে এই প্রকিয়ার দৃষ্টিতে হাদীস যাচাইয়ের কয়েকটি দৃষ্টান্ত পশ করা যাইতেছেঃ
১। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) কৃর্তক বর্ণিত হাদীসঃ
আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আগুনে উত্তপ্ত জিনিস গ্রহণ করার পর (নামায পড়ার জন্য) অযু কর।
এই হাদীস শুনিয়া হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়া উঠিলেনঃ ‘তবে তো অযু থাকা-অবস্থায় গরম পানি ব্যবহার করিলেও আবার অযু করিতে হইবে?
[তিরমিযী- কিতাবুত তাহারাত] অন্য কথায় ‘দিরায়াত’ প্রক্রিয়ায় এই হাদীস সহীহ বলে প্রতিপন্ন হয় না।
২। অপর এক হাদীসে উল্লিখিত হইয়াছেঃ
জুময়ার দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোন মুসলিম যদি নামায পড়িতে থাকা অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণের প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাহাকে তাহা বিশেষভাবে দান করেন।
এই চরম মুহূর্তটি যে ঠিক কখন, তাহা নিশ্চিতরূপে জানিবার জন্য সাহাবায়ে কিরাম বিশেষ আগ্রহান্বিত হন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা) জানিতে পারিলেন যে, জুমুয়ার দিনের শেষ মুহূর্তেই এই চরম সময়টি অবস্থিত। কিন্তু হযরত আবূ হুরায়রা (রা) ইহা শুনিয়া বলিলেনঃ ‘তাহা কিরূপে হইতে পারে? রাসূল তো বলিয়াছেনঃ নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় যদি কেহ আল্লাহর নিকট দোয়া করে তবে তাহা তিনি মঞ্জুর করিবেন। কিন্তু দিনের শেষ মুহূর্তে তো কোন নামায পড়া জায়েয নহে। কাজেই এই হাদীস হইতে এইরূপ সময় নির্ধারণ যুক্তিসঙ্গত নহে।
[আবূ দাউদ-কিতাবুস সালাত]
প্রথমোক্ত হাদীসে মূল কথায় যথার্থতা ‘দিরায়াত’- এর ভিত্তিতে যাচাই করা হইয়াছে, আর দ্বিতীয় হাদীসে হাদীসের বিশেষ ব্যাখ্যার যাচাই করা হইয়াছে।
‘দিরায়াত’-এর ভিত্তিতে হাদীস যাচাই করার কাজে হযরত আয়েশার বিশেষ দক্ষতা ও প্রতিভা ছিল। তিনি ইহার ভিত্তিতে কতকগুলি হাদীস সম্পর্কে আপত্তি তুলিয়াছেন এবং তাঁহার আপত্তির ভিত্তিতে দিরায়াতের কতকগুলি মূলনীতি নির্ধারণ করা সম্ভব হইয়াছে। যেমন-
১. তাঁহার সম্মুখে যখন রাসূলের কথা বলিয়া নিম্নোক্ত বাক্য উল্লেখ করা হইলঃ
মৃত ব্যক্তির জন্য তাহার পরিবাবর্গেল কান্নাকাটির কারণে তাহাকে আযাব দেওয়া হইবে।
তখন তিনি বলিলেনঃ ইহা সত্য বলিয়া স্বীকার করা যায় না। কেননা কুরআন মজীদ সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিয়াছেঃ
কোন লোকই অপর কাহারো গুনাহর বোঝা বহন করিবে না।
ইহা হইতে দিরায়াতের দৃষ্টিতে হাদীস যাচাই করার এই মূলনীতি প্রমাণিত হইল যে, কুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণার বিপরীত কোন হাদীস গ্রহণ করা যাইতে পারে না।
২. সাহাবীদের যুগে জনসাধারণের মধ্যে এই হাদীস প্রচারিত হইয়া পড়ে যে, মি’রাজের রাত্রে নবী করীম (ﷺ) আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাক্ষাত লাভ করিয়াছেন। হযরত আয়েশা (রা) ইহা শুনিয়া বলিলেনঃ এই হাদীসের বর্ণনাকারী সুস্পষ্ট মিথ্যাবাদী। কেননা কুরআন মজীদ স্পষ্ট বলিয়াছেঃ
কোন সৃষ্টি আল্লাহকে আয়ত্ত করিতে পারে না, তিনিই সমস্ত সৃষ্টি আয়ত্ত করিয়া থাকেন।
পূর্বের বিস্তারিত আলোচনা হইতে দিরায়াত প্রক্রিয়ার যে কয়টি মূলনীতি প্রকাশিত হয়, তাহা এখানে একত্রে উল্লেখ করা যাইতেছেঃ
১। হাদীস কুরআনের সুস্পষ্ট দলীলের বিপরীত হইবে না।
২। হাদীস মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত সুন্নাতের বিপরীত হইবে না।
৩। হাদীস সাহাবায়ে কিরামের সুস্পষ্ট ও অকাট্য ইজামার বিপরীত হইবে না।
৪। হাদীস সুস্পষ্ট বিবেক-বুদ্ধির বিপরীত হইবে না।
৫। হাদীস শরীয়াতের চির সমর্থিত ও সর্ব-সম্মত নীতির বিপরীত হইবে না।
৬। কোন হাদীস বিশুদ্ধ ও নির্ভূলভাবে গৃহীত হাদীসের বিপরীত হইবে না।
৭। হাদীসের ভাষা আরবী ভাষায় রীতি-নীতির বিপরীত হইবে না। কেননা নবী করীম (ﷺ) কোন কথাই আরবী রীতি-নীতির বিপরীত ভাষায় বলেন নাই।
৮। হাদীস এমন কো অর্থ প্রকাশ করিবে না, যাহা অত্যন্ত হাস্যকর, নবীর মর্যাদা বিনষ্টকারী।
উসূলে হাদীস-এর গ্রন্হসমূহে এই পর্যায়ে আরো অনেক মূলনীতির উল্লেখ করা হইয়াছে।
হাদীস যাচাই করা এবং সহীহ কি গায়বে সহীহ পরখ করার জন্য উপরে বর্ণিত দুইটি পন্হা- ‘রেওয়ায়াত’ ও ‘দিরায়াত’- প্রয়োগ করার ব্যাপারে হাদীস-বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। এক শ্রেণীর লোক কেবলমাত্র রেওয়ায়াত- প্রক্রিয়া বা সনদ যাচাইর উপর গুরুত্ব আরোপ করিয়া থাকেন। তাঁহাদের দৃষ্টিতে সনদ ঠিক থাকিলেই এবং উহার ধারাবাহিকতা ও সুস্থাতা-বিশুদ্ধতা যথাযথভাবে রক্ষিত হইলেই হাদীস নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য হইতে পারে। আরি অপরদের মতে সনদ ঠিক হওয়ার তুলনায় মূল হাদীসটি যুক্তিসংগত হওয়া-দিরায়াত-প্রক্রিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। এই দিক দিয়া কোন হাদীস সঠিকরূপে উত্তীর্ণ না হইলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। এমনকি সনদ ঠিক হইলেও এবং সনদ বিচারে তাহা গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হইলেও তাহা গ্রহণ করা যাইতে পারে না।
কিন্তু প্রকৃত মুহাক্কিক আলিমের দৃষ্টিতে এককভাবে এই দুইটি পন্হাই ভারসাম্যহীন। উহার একটি একান্তভাবে সনদ নির্ভর, সনদ ছাড়া সেখানে আর কিছুই বিচার্য নহে। আর সনদ ঠিক ও নির্ভরযোগ্য হইলেও সে হাদীস একান্তই গ্রহণীয়। দ্বিতীয়টি নিরংকুশভাবে বুদ্ধিভিত্তিক। সাধারণ বুদ্ধি ও যুক্তির দৃষ্টিতে মূল হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হইলে উহার সনদ বিচারের কোন প্রয়োজনই মনে হয় না। অথচ প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র সনদ কোন কথাকে সত্য ও সঠিক প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট হইতে পারে না, যেমন যথেষ্ট নয় কেবলমাত্র বুদ্ধি ও যক্তি-বিচার! এই কারণে এই দুইটি প্রক্রিয়ার মাঝে পূর্ণ সামঞ্জস্য স্থাপন ও ভারাসাম্য রক্ষা করা অপরিহার্য।
হাদীস সমালোচনার সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি
হাদীস যাচাই করার সামঞ্জস্যপূর্ণ পন্হা কি হইতে পারে, তাহা বাস্তবিকই গবেষণা সাপেক্ষ। এই সম্পর্কে সুচিন্তিত অভিমত এই যে, প্রথমে সনদ যাচাই করিতে হইবে এবং তাহার হাদীমের মূল বাণী টুকু পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে। সনদ যদি ঠিক হয় এবং মূল হাদীসটুকুও ‘দিরায়াতে’র মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়, তবে সেই হাদীস সর্বতোভাবে গ্রহণযোগ্য।
তবে অনেক হাদীস এমন রহিয়াছে যাহার সনদ নির্ভূল, আর মূল হাদীসের কথাটুকু সাধারণ বুদ্ধির অগম্য, এই ক্ষেত্রে দেখিবার ও বিবেচনার বিষয় শুধু এতটুকু যে, উহা কুরআনের খেলাফ নয় তো; কুরআন যাহা হালাল করিয়াছে, হাদীস তাহা হারাম কিংবা ইহার বিপরীত কিছু প্রমাণ করিতেছে না তো। কেননা সকলেই জানেন, মি’রাজ সম্পর্কীয় হাদীস ২৫ জন সাহাবী ও তিনশত তাবেয়ী হইতে বর্ণিত হইয়াছে, অথচ ইহা সাধারণ বুদ্ধির পক্ষে দূরধিগম্য। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও ইহা অবশ্যই সত্য ও বিশুদ্ধ হাদীসরূপে গ্রহণীয়। কেননা ইহা যেমন অসম্ভব ব্যাপার কিছু নয়, তেমনি কুরআনের সহিত পূর্ণ সামঞ্জস্যসম্পন্নও। ইহা কুরআনের অস্পষ্ট বা মোটামুটিভাবে উল্লিখিত বিষয়ের ব্যাখ্যা।
অনুরূপভাবে হাদীসসমূহের শব্দ ও ভাষা যাচাই করিয়াও নিশ্চিতরূপে বুঝিতে পারা যায় যে, উহা প্রকৃতই রাসুলে করীমের কথা কিনা। কোন হাদীসে রাসূলের যুগে অব্যবহৃত কোন পরিভাষার উল্লেখ থাকিলে তাহা রাসূলের হাদীস হইতে পারে না। যথাঃ
ক) হাদীসের কিাতবে উদ্ধৃতি পাওয়া যায়ঃ
কাদরীয়া পন্হীরা এই উম্মতের অগ্নিপূজক এবং রাফেযীরা এই উম্মতের ইয়াহুদী।
ইহার ভাষা ও শব্দসমূহ স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, ইহা কিছুতেই রাসূলের কথা হইতে পারে না। দ্বিতীয়ত ‘আল-কাদারী’ ও ‘রাফেযী’ ইত্যাদি শব্দ বিশেষ পরিভাষার পরিচয় বহন করে। আর এই ভাষা রাসূলে করীমের যুগে আদৌ প্রচলিত ছিল না বলিয়া রাসূল কর্তৃক ইহার প্রয়োগ হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠিতে পারে না।
খ) নিম্নোক্ত কথাটিও ‘হাদীস’ নামে কথিতঃ
যে লোক ‘কুরআন মখলুক’ মনে করে সে কাফির।
কুরআন ‘মখলূক’ কি মখলুক নয়’- ইহা লইয়া আব্বাসীয় যুগে তদানীন্তন মনীষীদের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। রাসূলে করীমের যুগে এই ধরনের কথা ধারণা পর্যন্ত করা যায় নাই। কাজেই এই ধরনের কথা কখনো রাসূলের মুখ হইতে নিঃসৃত হইয়াছে বলিয়া বিশ্বাষ করা যাইতে পারে না।
হাদীস যাচাই পর্যায়ে ‘দিরায়াত’ রীতি প্রয়োগ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে জাওযী মুহাদ্দিসের যে নীতি ও পদ্ধতির উল্লেখ করিয়াছেন তাহা নিম্নে উদ্ধৃত হইলঃ
যেসব হাদীস সাধারণ বুদ্ধির বিপরীত পাইবে কিংবা সাধারণ মূলনীতির উল্টা দেখিবে, মনে করিবে যে, তাহা মওজু বা মনগড়া হাদীস। অতঃপর উহার বর্ণনাকারীদের যাচাই-পরখ করার কোন প্রয়োজন করে না। অনুরূপভাবে সেইসব হাদীসও মওজু যাহা সাধারণ অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে বাতিল প্রমাণিত হইয়াছে। যাহা কুরআন, মুতাওয়াতির হাদীস ও অকাট্য ইজমার খেলাফ এবং যাহার কোন ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, তাহাও মওজু অথবা যেসব হাদীসে সাধারণ ও গুরুত্বহীন কথার উপর কঠোর আযাবের ভীতি প্রদর্শন করা হয়; কিংবা সামান্য কাজের ফলে বিরাট পুরস্কার দানের ওয়াদার উল্লেখ হয়, তাহাও মওজু- এই ধরনের হাদীস সাধারণত ওয়ায়েজ ও সুফীদের বর্ণনাসনূত্রে পাওয়া যায়।
এতদ্ব্যতীত মনস্তাত্ত্বিক তুলাদণ্ডেও হাদীস যাচাই করার প্রয়োজন রহিয়াছে। যে ব্যক্তি রাসূলের হাদীস ব্যাপক ও নিরবচ্ছিন্নভাবে অধ্যায়ন করিবে, চর্চা করিবে, গভীর সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে উহা লইয়া গবেষণা করিবে, তাহার অন্তর্লোকে এক তীব্র স্বচ্ছ আলোকচ্ছটা প্রস্ফূটিতে হইয়া উঠিবে। সে সহজেই বুঝিতে পারিবে কোনটি প্রকৃতই রাসূলের হাদীস, কোনটি নয়; রাসূল কোন ধরনের কথা বলিতে পারেন, কোন ধরনের কাজ নয়, কি ধরনের কথা বা কাজ তাঁহার সমর্থিত হইতে পারে, আর কোন ধরনের নয়।…………….. তাহা উপলীব্ধি করা তাহার পক্ষে কিছুমাত্র কঠিন হইবে না।
এই পর্যায়ে চূড়ান্ত অভিমত এই যে, হাদীসের গ্রহণীয় হওয়া না হওয়া সম্পর্কে শেষ ফয়সালা সনদ ও মূল হাদীস (মতন) উভয়ের যথাযথ ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম যাচাই করার ভিত্তিতেই হওয়া আবশ্যক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/363/167
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।