মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
প্রথম খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) নিজে পাঁচশত হাদীসের এক সংকলন তৈয়ার করিয়াছিলেন। কিন্তু জীবনের শেষভাগে তিনি নিজেই তাহা বিনষ্ট করিয়া ফেলেন। ইহার কারণস্বরূপ মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করিয়াছেন যে, হাদীসসময়হ সংকলন করার পর তিনি মোটেই স্বস্তি লাভ করিতে পারেন নাই। তাঁহার মনে কয়েক প্রকার ভয়ের সঞ্চার হয়। তিনি এজন্য বিশেষ ভাবিত হইয়া পড়েন যে, তাঁহার সংকলিত হাদীসসমূহের মধ্যে একটি কথা- একটি শব্দও যদি রাসূলে করীমের মূল বাণীর বিন্দুমাত্রও বিপরীত হইয়া পড়ে, তাহা হইলে রাসূলের কঠোর সতর্কবাণী অনুযায়ী তাঁহাকে জাহান্নামের ইন্ধন হইতে হইবে।
দ্বিতীয়ত, তাঁহার মনে এই ভয়ও জাগ্রত হইল যে, তাঁহার সংকলিত হাদীস গ্রন্হকে মুসলিম জনগণ যদি কুরআনের সমতুল্য মর্যাদা দিয়া বসে কিংবা অন্যান্য সাহাবীদের বর্ণিত ও সংকলিত হাদীস অপেক্ষা অধিক মর্যাদা দিতে শুরু করে, তাহা হইলেও মুসলমানদের পক্ষে বিশেষ ক্ষতির কারণ হইবে। তাহার ফলে হাদীস সংকলনের ক্ষেত্রে ব্যাপক কাজ ও অগ্রগতি ব্যাহত হইতে পারে। এই সব চিন্তার ফলেই তিনি তাহা নষ্ট করিয়া ফেলেন।
ব্যাপারটিকে আমরা যতই গভীর ও সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিচার করিয়া দেখি না কেন, ইহাতে একটি বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক ও মানসিক অবস্থার পরিণাম বলা ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না।
কিন্তু এতদসত্ত্বেও হযরত আবূ বকর (রা) হাদীস সংকলন করিতে নিষেধ করেন নাই। বরং তিনি নিজেও কিছু সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাঁহার বর্ণিত হাদীস হইতেছে ইমাম সয়ূতীর মতে ১৪২টি । এই হাদীসসমূহ হাদীসের কোন কোন গ্রন্হে উল্লিখিত হইয়াছে তাহাও তিনি উল্লেখ করিয়াছেন। তাঁহার এত কম সংখ্যক হাদীস বর্ণনার মূলেও যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে। ইমাম সয়ূতী এ বিষয়ে লিখিয়াছেনঃ
তাহার কম সংখ্যক হাদীস বর্ণনার কারণ এই যে, হাদীসে প্রচার ও তাবেয়ীন কর্তৃক উহা শ্রবণ করা শিক্ষা ও সংরক্ষণ করার কাজ শুরু করার পূর্বেই তাঁহার ইন্তেকাল হইয়া যায়।
হযরত আবূ বকর (রা) হইতে কম সংখ্যক হাদীস বর্ণিত হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ প্রসংগে ইমাম সয়ূতী উপরিউক্ত গ্রন্হের অন্যত্র লিখিয়াছেনঃ
হযরত আবূ বকর (রা) হইতে সনদ সম্পন্ন হাদীস খুব কম সংখ্যক বর্ণিত হইয়াছে। কেননা হযরতের ইন্তেকালের পর তাঁহার আয়ুষ্কাল খুবই অল্প ছিল ও তাঁহার মৃত্যু খুব তাড়াতাড়িই সংঘটিত হইয়াছিল। অন্যথায় তিনি যদি দীর্ঘদিন বাঁচিয়া থাকিতেন তাহা হইলে তাঁহার নিকট হইতে বহু সংখ্যক হাদীসই বর্ণিত করিতেন। তিনি যতদিন বাঁচিয়াছিলেন, ততদিন সাহাবাদের কেহই তাঁহার নিকট হইতে হাদীস বর্ণনার প্রয়োজন বোধ করেন নাই। কেননা সমস্ত ব্যাপারে তারা সমানভাবেই শরীক ছিলেন। যাহা তাঁহাদের অজ্ঞতা ছিল কেবল তাহাই তারা নিকট হইত বর্ণনা করিতেন।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবীও এই কথাই লিখিয়াছেনঃ
সাহাবাগণ হযরত আবূ বকরের সূত্রে খুব বেশী হাদীস বর্ণনা কার জন্য প্রয়োজনশীল ছিলেন না। কেননা অধিক সংখ্যক হাদীস তারা নিজেরাই রাসূলের মুখে শুনিয়াছিলেন।
এতদ্ব্যতীত হযতর আবূ বকর (রা) হযরতের অন্তর্ধানের পর মাত্র আড়াই বৎসরকাল জীবিত ছিলেন। এই আড়াইটি বৎসর তাঁহার খিলাফাতের কঠিন দায়িত্ব পালন ও ভীষণ প্রতিকূল ঝড়-ঝাপটার মধ্যে অতিবাহিত হয়। ফলে এই সময়ে অন্যন্য দীর্ঘায়ূসম্পন্ন সাহাবায়ে কিরামের মত হাদীস বর্ণনার নিরবচ্ছিন্ন অবসর ও অনুকুল পরিবেশও তিনি পান পান নাই।
উপরন্তু মুসলমাদের সহিত পরামর্শ করিয়া যাবতীয় দায়িত্ব পালন করাই ছিল তাঁহার এই সময়কার বড় কাজ। ইসলামী খিলাফতের প্রকৃত গণতন্ত্রিক ও পরামর্শভিত্তিক হওয়ার কারণে প্রত্যেকটি সামাজিক, রাষ্ট্রিয় ও সামগ্রিক ব্যাপারে বিশিষ্ট সাহাবীদের সহিত পরামর্শ করিয়া এবং কুরআন হাদীসের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মীমাংসা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াই কাজ করা হইত।
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) খিলাফতের যাবতীয় কার্য সম্পাদনের ব্যাপারে কুরআন মজীদের পরে-পরেই হাদীসের প্রতি গুরুত্ব দিতেন। খলীফা নির্বাচিত হইয়াই তিনি যে ভাষণ দিয়াছিলেন, তাহাতেই তিনি কুরআনের পরে পরেই হাদীসের গুরুত্ব ঘোষণা করিয়াছিলেন। বলিয়াছেনঃ
হে লোকগণ! আমাকে তোমাদের রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল বানানো হইয়াছে। অথচ আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি নই। কিন্তু কুরআন নাযিল হইয়াছে এবং নবী করীম (ﷺ) তাঁহার সুন্নাত ও আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করিয়া গিয়াছেন। তিনি আমাদিগকে এই উভয় জিনিসের শিক্ষা দান করিয়াছেন, আর আমরা তাহা শিখিয়া লইয়াছি।
খিলাফতের কাজের ক্ষেত্রেও বাস্তবভাবেই তিনি কুরআনের পরেই হাদীসের উৎস হইতে নির্দেশ ও বিধান লাভ করিতেন। প্রমাণ্য গ্রন্হাবলীতে তাঁহার এই নীতির কথা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখিত হইয়াছে। বলা হইয়াছেঃ
হযরত আবূ বকরের নিকট যখন মীমাংসা যোগ্য কোন ব্যাপার উপস্থিত হইত তখন তিনি প্রথমত আল্লাহর কিতাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেন। তাহাতে যদি ফায়সালা করার ভিত্তি খুঁজিয়া পাইতেন, তবে উহার ভিত্তিতে লোকদের মধ্যে ফয়সালা করিয়া দিতেন। আর কুরআনে কিছু নাই পাইলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাসূলের সুন্নাত যদি কিছু জানা যাইত, তবে উহার ভিত্তিতে মীমাংসা করিয়া দিতেন।
[সুনানে দারেমী, ২৩ পৃঃ ]
হযরতের ইন্তেকালের পর যতগুলি সামগ্রিক ব্যাপারেই মতভেদ দেখা দিয়াছে হযরত আবূ বকর (রা) তাহার প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাপারেই মীমাংসা করিয়াছেন রাসূলে করীমের হাদীস পেশ করিয়া এবং তাঁহার উপস্থাপিত হাদীস সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সকল মতভেদ খতম করিয়া দিয়াছে। হযরতের ইন্তেকালের পর সকীফায়ে বণী সায়েদায় সাহাবীদের মধ্যে প্রথম জটিল প্রশ্ন দেখা দেয়- খলীফা কে হইবে। অবস্থা এমন দাঁড়াইয়াছিল যে, এই বিষয়ে কোন মীমাংসা করাই তখন অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছিল। তখন হযরত আবূ বকর (রা) দাড়াইয়া রাসূলে করীম (ﷺ)-এর একটি হাদীস পেশ করিলেন এবং বলিলেনঃ
ইমাম ও খলীফা কুরায়েশদের মধ্য হইতে হইবে।
সেই সঙ্গে রাসূলের এই কুরায়শ বংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিবে।
এই হাদীস শ্রবণের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকল সাহাবী ইহার সত্যতা স্বীকার করিয়া লইলেন। অতঃপর খলীফা নির্বাচনের কাজ নির্বিাবাদে সম্পন্ন হয়।
নবী করীম (ﷺ)-কে কোথায় দাফন করা হইবে, তাহা লইয়া যখন মতবিরোধ দেখা দিল, তখন হযরত আবূ বকর (র) সিদ্দীক (রা) হাদীস পেশ করিলেনঃ
আমি রাসূলের নিকট একটি কথা শুনিয়াছিলাম, যাহা আমি ভুলিয়া যাই নাই। তিনি বলিয়াছিলেনঃ আল্লাহ তাঁহার নবীর জান কবজ করেন সেই স্থানে, যেখানে তাঁহাকে দাফন করা কর্তব্য হয়।
[শামায়েলে তিরমিযী, পৃষ্ঠা ৩০ মুয়াত্তা মালিক, পৃষ্ঠা ৮০।]
হযরত আয়েশা (রা) প্রথম খলীফা হযরত আবূ বকরের নিকট নবী করীমের সম্পত্তি হইতে অংশ লাভের দাবি করিলেন। তখন হযরত আবূ বকর (রা) নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ
আমি রাসূলে করীম (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমরা কাহাকেও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বানাই না। যাহা কিছু রাখিয়া যাই, তাহা সবই আল্লাহর পথে দান। কাজেই মুহাম্মদের বংশধর বায়তুলমাল হইতে জীবিকা গ্রহণ করিবে।
অতঃপর হযরত আবূ বকর (রা) বলিলেনঃ
আল্লাহর শপথ, রাসূলকে আমি যে যে কাজ করিতে দেখিয়াছি আমি তাহা প্রত্যেকটিই কার্যে পরিণত করিব, একটিও ছাড়িয়া দিব না।
এই হাদীস বর্ণনার উপস্থিত ফল এত ত্বরান্বিত দেখা দেয় যে, হাদীসের বর্ণনাকারী শেষ ভাগে বলেনঃ
অতঃপর হযরত ফাতিমা মীরাসের দাবি পরিত্যাগ করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আর এই বিষয়ে কোন কথা বলেন নাই।
[বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠ ৯৯৫-৯৬।]
পক্ষান্তরে তিনি যখন রাসূলের হাদীসের ভিত্তিতে জানিতে পরিলেন যে, দাদীর মীরাস রহিয়াছে, তখন হাদীস অনুযায়ী তাঁহার জন্য মিরাসের ফয়সালা করিয়া দিতে এতটুকুও বিলম্ব করিলেন না। প্রথমত দাদী যখন মিরাসের দাবি করেন, তখন তিনি বলিয়াছেনঃ
তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে মীরাসের কোন অংশ নির্দিষ্ট হয় নাই। রাসূলের আদর্শে (হাদীস)-ও তোমার জন্য কোন অংশ নির্দিষ্ট হইয়াছে বলিয়া আমার জানা নাই। অতএব, তুমি চলিয়া যাও। আমি লোকদের নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়া পরে তোমাকে জানাইব।
অতঃপর তিনি একদিন সাহাবীদের নিকট এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন। তখন হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা দাড়াঁইয়া বলিলেনঃ
আমি রাসূলের নিকট উপস্থিত ছিলাম, তিনি দাদীর জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন। আমি নিজ চক্ষে দেখিয়াছে।
হযরত আবূ বকর (রা)-এর আমল সম্পর্কে বর্ণিত এই হাদীস সম্পন্ধে নিঃসন্দেহে হইবার জন্য ও ইহার প্রামাণ্যতাকে বলিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
তোমার সঙ্গে এই কথার সাক্ষী আর কেহ আছে?
তখন হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুসলিম (রা) দাঁড়াইয়া সাক্ষ্য দান করিলেন ও হযরত মুগীরার কথার সমর্থন করিলেন।
তবে একথা সত্য যে, হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে হযরত আবূ বকর (রা) বিশেষ কড়াকড়ি করিতেন। বিশেষভাবে ও অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে যখন রাসূলের কোন হাদীস প্রমাণিত হইত, তখন তিনি উহার সম্মুখে মাথা নত করিয়া দিতেন। দাদীর মীরাস সংক্রান্ত এইমাত্র উল্লেখিত ঘটনা হইতেই ইহা সুস্পষ্ট হইয়া উঠে। পরন্তু কোন হাদীসের সত্যতা সম্পর্কে তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত নিঃসন্দেহ ও নিশ্চিত না হইতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাহা গ্রহণ করিতে প্রস্তুত হইতেন না।
হাফেজ যাহবী লিখিয়াছেনঃ
হাদীস গ্রহণে হযরত আবূ বকরই সর্ব প্রথম বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেন।
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) হযরত আনাস (রা)-কে যখন বাহরাইনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করিয়া পাঠাইয়াছিলেন, তখন তিনি যাকাতের হুকুম-আহকাম সংক্রান্ত এক বিস্তারিত দস্তাবেজ লিখিয়া তাঁহার সঙ্গে পাঠাইয়া দেন। এই বিস্তারিত দস্তাবেজের শুরুতে লিখিত ছিলঃ
দয়াবান করুণাময় আল্লাহর নামে।– ইহা যাকাতের ফরয হওয়া সংক্রান্ত দস্তাবেজ। রাসূলে করীম (ﷺ) মুসলমানদের জন্য ইহা ফরয করিয়াছেন এবং আল্লাহ তাঁহার রাসূলকে এই নির্দেশ দিয়াছেন।
হযরত উমর ফারূক (রা)
দ্বিতীয় খলীফা হযতর উমর ফারূক (রা) নিজে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাঁহার দৃষ্টিতে দ্বীন-ইসলামের ভিত্তি হিসাবে কুরআন মজীদের পরই ছিল সুন্নাহ বা হাদীসের রাসূলের স্থানে। তিনি বিপুল সংখ্যক হাদীস সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করিয়া ইসলামী রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের উচ্চ ও নিম্ন পর্যায়ের শাসকদের নিকট প্রেরণ করিয়াছিলেন এবং সর্বসাধারণ্যে উহার ব্যাপক প্রচার করার নির্দেশ দিয়াছিলেন।
ইলমে হাদীসের শিক্ষা ব্যাপবতর করিয়া তোলার জন্য তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে বহু সংখ্যক মাদ্রাসা কায়েম করেন। প্রখ্যাত সাহাবিগণকে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে হাদীস শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে পাঠাইয়াছিলেন। এই পর্যায়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল,হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা) ও হযরত মা’কাল ইবনে ইয়াসার (রা)-কে বসরা প্রদেশে এবং হযরত উবাদা ইবনে সামিত ও হযরত আবুদ দারদা (রা) কে সিরিয়ায় প্রেরণ করিয়াছিলেন।
আরজান ইবনে আবূ হালাকে এই উদ্দেশ্যেই মিসর পাঠাইয়াছিলেন।
হযরত আবূ মূসা আশ’আরী (রা) কুফার শাসনকর্তা নিযুক্ত হইয়া তখায় গমন করেন ও সেখানকার মুসলমানগণকে সম্বোধন করিয়া বলেনঃ
আমাকে হযরত উমর (রা) তোমাদের নিকট এই উদ্দেশ্যে প্রেরণ করিয়াছেন যে, আমি তোমাদিগকে আল্লাহর কিতাব ও তোমাদের নবীর সুন্নাত-হাদীস শিক্ষা দিব।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-কেও তিনি কূফায় হাদীস ও কুরআনের শিক্ষাদাতা করিয়া পাঠাইয়াছিলেন এবং তাঁহার নিকট হইতে হাদীস শিক্ষা করার জন কূফাবাসীদিগকে আদেশ করিয়াছিলেন।
আল্লামা খাজরী লিখিয়াছেনঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কূফায় অবস্থান করিলেন। সেখানকার লোকেরা তাঁহার নিকট রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস শিক্ষা করিতেন। তিনি ছিলেন তাঁহাদের শিক্ষক ও বিচারপতি।
হযরত উমর (রা) হাদীস গ্রহণের ব্যাপারে প্রথম খলীফার মত খুবই কঠোর নীতি অবলম্বন করিতেন। হযরত আবূ মুসা আশ’আরী (রা) বর্ণিত একটি হাদীসের সত্যতা প্রমাণের জন্য তিনি তাঁহাকে (আবূ মুসাকে) কঠোর ভাষায় নির্দেশ দিয়াছিলেন। বলিয়াছিলেনঃ
দলীল পেশ কর, নতুবা আমি তোমাকে কঠোর শাস্তি দিব।
পরে তাঁহার কথার সমর্থনে অপর এক সাহাবীকে যখন সাক্ষী হিসাবে পেশ করা হইল, তখন তিনি আশ্বস্ত হইলেন।
আল্লামা যাহবী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
হাদীস বর্ণনা করার ব্যাপারে তিনি মুহাদ্দিসদের জন্য দৃঢ় ও মজবুত নীতি অবলম্বনের নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিয়াছেন।
হযরত আবূ মুসা তাঁহার বর্ণিত হাদীসের সপক্ষে আর একজন সাহাবীকে সাক্ষী হিসাবে পেশ করিলেন। তাহার পরই হযরত উমর (রা) তাহা কবুল করিলেন। ইহিা হইতে প্রমাণিত হয়ঃ
কোন হাদীসস যখন অন্তত দুইজন বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী বর্ণনা করেন, তখন তাহা একজনের বর্ণিত হাদীস অপেক্ষা অধিক প্রামাণ্য, শক্তিশালী ও অগ্রাধিকার লাভের যোগ্য হয়। এই হাদীস বর্ণনার বহু সংখ্যক সূত্র লাভ করার জন্যও ইহা যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। ইহার ফলে হাদীস ‘সাধারণ ধারণার’ () পর্যায় হইতে নিঃসন্দেহ ইলমের (নির্ভূল ও নির্ভরযোগ্য জ্ঞান) পর্যায়ে উন্নীত হইতে পারে।
হযরত উবায় ইবনে কা’ব একটি হাদীস বর্ণনা করিলে হযরত উমর (রা) বলিলেনঃ
আপনি যে হাদীস বর্ণনা করিলেন, তাহার সত্যতা সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ পেশ করিতে হইবে।
হযরত উবায় আনসারদের মধ্য হইতে কয়েকজন সাহাবীকে সাক্ষী হিসাবে পেশ করিলে খলীফা বলিলেনঃ
আমি আপনার প্রতি কোন সন্দেহ করি নাই, হাদীসকে অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যেই আমি আপনার নিকট প্রমাণের দাবি করিয়াছিলাম।
হযরত উমর ফারূকের সময়ই সরকারী পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন হাদীস সম্পদ সংকলন ও লিপিবদ্ধ করা হয় এবং উহাকে সুসংবদ্ধ করিয়া লওয়ার প্রশ্ন সর্বপ্রথম উত্থাপিত হয়। হযতর উমর (রা) নিজেই এই বিরাট কাজ সম্পন্ন করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলেন এবং এ সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীর সহিত পরামর্শও করিয়াছিলেন। মুসলমানরা তাঁহাকে ইহার অনুকূলেই পরামর্শ দিয়াছিলেন। কিন্তু পরে তাঁহার নিজের মনেই এই সম্পর্কে দ্বিধা ও সন্দেহের উদ্রেক হয় যে, ইহা করা সমীচীন হইবে কিনা? তিনি প্রায় একমাস কাল পর্যন্ত অনেক চিন্তা-ভাবনা ও ইস্তেখারা করিতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই একদিন বলিলেনঃ
আমি তোমাদের নিকট হাদীস লিপিবদ্ধ ও সংকলিত করার কথা বলিয়াছিলাম, একথা তোমরা জান। কিন্তু পরে মনে হইল, তোমাদের পূর্বের আহলে কিতাব লোকেরাও এমনিভাবে নবীর কথা সংকলিত করিয়াছিল, ফলে তাহারা তাহাই আঁকড়িয়া ধরিল এবং আল্লাহর কিতাব পরিত্যাগ করিল। আল্লাহর শপথ, আমি আল্লাহর কিতাবের সাথে কোন কিছুই মিশ্রিত করিব না। অতঃপর তিনি হাদীস সংকলিত করার সংকল্প ত্যাগ করেন।
বস্তুত সুসংবদ্ধ ও সংকলিত হাদীস-গ্রন্হ পাইয়া লোকেরা হয়ত উহাতে এতখানি মনোনিবেশ করিয়া বসিবে যে, কুরআন শরীফকেও তাহারা ভুলিয়া যাইবে, লোকদের নিকট উহার গুরুত্ব নগণ্য হইয়া পড়িবে ও কেবলমাত্র হাদীসকে ভিত্তি করিয়াই তাহারা চলিতে চাহিবে, কেবলমাত্র এই আশংকায়ই হযরত উমর ফারূক (রা) নিজে হাদীস লিপিবদ্ধ ও সংকলিত করার কাজ করেন নাই। অন্যথায় ইহাকে তিনি কোন নাজায়েয কাজ নিশ্চয়ই মনে করিতেন না। তাঁহার এই আশংকা কতখানি যুক্তিসংগত ছিল, তাহা পরবর্তীকালের অবস্থার দৃষ্টিতে বিচার করিলেই বুঝিতে পারা যায়।
এই ধরণের সতর্কতাবম্বনের ফলেই আজ মুসলিম মিল্লাত কুরআন মজীদকে প্রথম এবং হাদীসকে উহার পরেই দ্বিতীয় গুরুত্ব দিতে শিখিয়াছে। এইরূপ সতর্কতা অবলম্বিত না হইলে মুসলমানদের নিকটই হযরত কুরআন মজীদের স্থান প্রথম ও মুখ্য না হইয়া গৌণ হইয়া পড়িত, যেমন হইয়াছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিকট তাহাদের ধর্মগ্রন্হ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/363/88
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।