hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

৯৫
জামে সুফিয়ান সওরী (র)
ঠিক এই সময়ই ইমাম সুফিয়ান সওরী (র) তাঁহার সংকলিত হাদীস গ্রন্হ ‘আল-জামে’ নামে প্রণয়ন করেন। সুফিয়ান সওরী (র) ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর অনুষ্ঠিত দারসের মজলিসে রীতিমত হাযির থাকিতেন এবং তাঁহার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিতেন। কিন্তু ফিকাহ তিনি গ্রহণ করিয়াছেন ইমাম আবূ হানীফার বিশিষ্ট ছাত্র আলী ইবনে মসহর-এর নিকট হইতে। আলী ইবনে মসহর ছিলেন ফিকাহ ও হাদীস উভয়েরই বিশিষ্ট সুদক্ষ আলিম। তাঁহার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণ লিখিয়াছেনঃ

তিনি হাদীস ও ফিকাহ- উভয়েরই পরদর্শী ছিলেন।

ইমাম সাওরী তাঁহারই সাহায্য ও সহযোগীতা লইয়া তাঁহার জামে গ্রন্হ প্রণয়ন করিয়াছেন। ইমাম ইয়াযীদ ইবনে হারূন বলিয়াছেনঃ

সুফিয়ান সওরী ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর ফিকাহ গ্রহণ করিতেন আলী ইবনে মসহর-এর নিকট হইতে এবং তাঁহারই সাহায্য এবং তাঁহার সহিত আলাপ-আলোচনা করিয়াই তিনি তাঁহার ‘জামে’ নামক হাদীস গ্রন্হ প্রণয়ন করেন।

এককালে সুফিয়ান সওরীর এই ‘আল-জামে’ কিতাখানি হাদীসবিদদের নিকট বড়ই প্রিয় ও বহুল পঠিত হওয়ার মর্যাদা লাভ করিয়াছিল। ইমাম বুখারী (র) সর্বপ্রথম যেসব হাদীস-গ্রন্হ অধ্যয়ন করিয়াছেন, তন্মধ্যে এই ‘আল-জামে’ গ্রন্হ অন্যতম।

ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়ায় (র)-এর নিকট প্রশ্ন করা হইয়াছিলঃ

গ্রন্হদ্বয়ের মদ্যে কোনখানি অধিকতর উত্তম, ইমাম মালিকের ‘মুয়াত্তা’ না সুফিয়ান সওরীর ‘আল-জামে’?

তিনি অবশ্য জওয়াবে ‘মুয়াত্তা ইমাম মালিক’কে উত্তম কিতাব বলিয়াছিলেন।

কিন্তু ইমাম আবূ দাউদ সিজিস্তানী (সুনান প্রণেতা) ইহা হইতে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলিয়াছেনঃ

এই পর্যায়ে লোকেরা যত গ্রন্হই প্রণয়ন করিয়াছেন, সুফিয়ান সওরীর ‘আল-জামে’ তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম গ্রন্হ।

উপরে এই সময় পর্যন্ত সংকলিত হাদীস গ্রন্হসমূহের মধ্যে কেবলমাত্র উল্লেখযোগ্য কয়েকখানির সংক্ষিপ্ত পরিচয় পেশ কর হইয়াছে, কিন্তু এই শতকের বিস্তারিত ইতিহাস প্রমাণ যে, এই সময়ে কেবলমাত্র এই কয়েকখানি গ্রন্হই সংকলিত হয় নাই। বরং এতদ্ব্যতীত আরো কয়েকখানি হাদীস-গ্রন্হ সংকলিত হইয়াছে। কিন্তু সেই গ্রন্হসমূহ উপরোল্লিখিত গ্রন্হ কয়খানি হইতে সরাসরি ও বিশেষ সাহায্য গ্রহণের মারফতেই সংকলিত হইয়াছে বলিয়া উহাদের সবিশেষ উল্লেখ করা হয় না।

এই সময় দুইজন গভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ মুহাদ্দিসের আবির্ভব ঘটে। উল্লেখযোগ্য যে, তাঁহাদের দুইজনেরই নাম আবূ হাফস এবং তারা হইতেছেন পিতা ও পুত্র। পিতা-পুত্রের একই নাম হওয়ার কারণে তাঁহাদের পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য করার উদ্দেশ্যে পিতাকে আবূ হাফস কবীর (বড়) এবং পুত্রকে আবূ হাফস সগীর (ছোট) বলিয়া সম্ভোধন করা হয়। এইযুগে ইলমে হাদীসের প্রচার ও প্রসারকার্যে এই দুইজনের অবদান অবিস্মরণীয়। তারা বুখারার প্রদান মুহাদ্দিসদের মধ্যে গন্য এবং তাঁহাদের প্রচেষ্টায়ই বুখারার সমস্ত এলাকায় ইলমে হাদীস ব্যাপক প্রচার লাভ করে, ঘরে ঘরে উহার চর্চা, শিক্ষা ও আলোচনা শুরু হয়। হাফেজ সাময়নী আূ হাফস কবীর সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ

তাঁহার নিকট হইতে এত লোক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন যে, তাহার সংখ্যা নিরূপণ সম্ভব নয়।

বস্তুত বুখারার প্রতিটি গ্রামে তাঁহার ছাত্রগণ ছড়াইয়াছিল। খাইজাখীজ নামক গ্রামেও তাঁহার অসংখ্য ছাত্র ইলমে হাদীসের চর্চায় নিযুক্ত ছিল।

ইমাম আবূ হাফস ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের নিকট হইতে ইলমে হাদীস ও ফিকাহ শিক্ষা করেন। হাফেজ যাহবী লিখিয়াছেনঃ

ইমাম আবূ হাফস কবীর ইমাম মুহাম্মদের প্রধান ছাত্রদের মধ্যে গণ্য ছিলেন এবং বুখারার হানাফী আলিমদের নের্তৃত্বের তিনিই ছিলেন শেষ স্তম্ভ।

ইসলামের ইতিহাসে ইহা এমন এক পর্যায়ে, যখন তাফসীর, হাদীস, ফিকাহ ও ইতিহাস-ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যাপকভাবে গ্রন্হ-প্রণয়নের কাজ সম্পাদিত হয়। ঐতিহাসিক সুয়ূতী লিখিয়াছেনঃ এই সময় ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মালিকের নিকট শিক্ষাপ্রাপ্ত ও দীক্ষিত অসংখ্য লোক ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল সম্ভার বক্ষে ধারণ করিয়া মুসলিম জাহানের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র স্থাপন করিয়া উহার ব্যাপাক শিক্ষাদান ও প্রচারকার্যে আত্মনিয়োগ করেন। ইমাম আবূ হানীফার ছাত্রদের প্রকৃত সংখ্যা কত হাফেয আবদুল কাদের কুরায়শীর নিম্নোদ্ধৃত বর্ণনা হইতে এই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। তিনি লিখিয়াছেনঃ

ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর নিকট হইতে প্রায় চার সহস্র ব্যক্তি হাদীস ও ফিকাহ সম্পর্কীয় তাঁহার মত বর্ণনা ওপ্রচার করিয়াছেন।

ইমাম হাজেজুদ্দীন ইবনুল বাযযায কুরদারী ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর বিপুল সংখ্যক ও মুসলিম জাহানের সর্বত্র বিক্ষিপ্ত ছাত্রদের এক দীর্ঘ তালিকা পেশ করিয়াছেন। উহার শিরোনামায় নিম্নোদ্ধৃত কথা লিখিত হইয়াছেঃ

পূর্ব ও পশ্চিম এলাকার শহরে-শহরে বিক্ষিপ্ত ঐসব লোক, যাঁহারা ইমাম আবূ হানীফার নিকট হইতে হাদীস ও ফিকাহ বর্ণনা করিয়াছেন।

অতঃপর তিনি তদানীন্তন মুসলিম জাহানের প্রায় সব কয়টি উল্লেখযোগ্য প্রদেশ, শহর, নগর, ও গ্রামের নাম লিখিয়া তথায় ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর কোন কোন ছাত্র হাদীস ও ফিকাহ প্রচারে নিযুক্ত ছিলেন, তাহার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করিয়াছেন।

ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর নিকট হইতে হাদীস ও ফিকাহর শিক্ষা লাভের পর যেসব মনীষী স্বাধীন ও নিজস্বভাবে গ্রন্হ প্রণয়ন করিয়াছেন, তাঁহদের সম্পর্কে ইমাম তাহাভী লিখিয়াছেনঃ

ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর যেসব ছাত্র গ্রন্হ প্রণয়নের কাজ করিয়াছেন, তারা হইতেছেন, চল্লিশজন। তাঁহাদের প্রথম পর্যায়ের দশজনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেনঃ ইমাম আবূ ইউসুফ, ইযুফার, ইমাম দাউদ-আত্তায়ী, ইমাম আসাদ ইবনে আমর, ইমাম ইউসুফ ইবন খালিদ সিমতী, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া ইবেন আবূ যায়েদা। আর এই শেষোক্ত ব্যক্তি তো ত্রিশ বৎসর পর্যন্ত প্রথমোক্ত ব্যক্তিদের লেখক হইয়া কাজ করিয়াছেন।

তারা সকলেই খ্যাতনামা মুহাদ্দিস ছিলেন। ইমাম হাসান ইবেন যিয়াদও এই পর্যায়েরই একজন শ্রেষ্ঠ হাদীসবিদ। তিনি ইবনে জুরাইজ-এর নিকট হইতে হাদীস সংগ্রহ করিয়াছেন। তিনি নিজেই বলিয়াছেনঃ

আমি ইবনে জুরইজের নিকট হইতে বারো হাজার হাদীস লিখিয়া লইয়াছিলাম। এই হাদীসসমূহ ফিকাহবিদদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

মোটকথা, ইমাম যুহরীর অব্যবহিত পর হইতেই হাদীস সংকলন ও হাদীস গ্রন্হ প্রণয়নের এক দুই কূলপ্লাবী সয়লাব প্রবাহিত হয়। মুসলিম জাহানের প্রায় প্রত্যেকটি শহরেই এই কাজ আরম্ভ হইয়া যায়। এই সময়কার অন্যান্য গ্রন্হ প্রণেতা হইতেছেনঃ

মক্কায় এবনে জুরইজ (১৫০ হিঃ); ইবনে ইসহাক (১৫২ হিঃ); মদীনায় সায়ীদ ইবনে আবূ আরুজা (১৫৬ হিঃ); রুবাই ইবনে দুবাই (১৬০ হিঃ) ও মালিক ইবনে আনাস (‌১৭৯ হিঃ) বসরায় হাম্মাদ ইবনে সালামাহ (১৭৬ হিঃ) ও ইবনে আরূবা; কুফায় সুফিয়ান সওরী (১৬১ হিঃ) সিরিয়ায় আবূ আমর আওযায়ী (১৫৬ হিঃ) ওয়াসতে হুশাইম (১৮৮ হিঃ); লাইস ও ইবনে লাহইয়া’ খুরাসানে আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (১৮১ হিঃ) ইয়ামেনে মা’মর (১৫৩ হিঃ) রায় শহরে জরীর ইবনে আবদুল হামিদ (১৮৮ হিঃ) তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

তারা সকলেই প্রায় একই যুগের লোক এবং সমমাময়িক; দ্বিতীয় হিজরী শতকের তারা শ্রেষ্ঠ হাদীসবিদ।

আর তাঁহাদেরই অবিশ্রান্ত সাধনা ও আন্তরিক গভীর নিষ্ঠাপূর্ণ গবেষণা ও যাচাই পরীক্ষা চালনার ফলেই হানাফী মাযহাবের দৃষ্টিতে ইলমে ফিকাহদের বিরাট প্রাসাদ রচিত হয়।

অনুরূপভাবে ইমাম মালিক (র)-এর ছাত্রগণও মুসলিত জাহানের প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে ছড়াইয়া পড়েন। তাঁহার নিকট হাদীস শিক্ষা লাভ করিয়াছেন ও উহার প্রচার এবং শিক্ষাদানে নিযুক্ত হইয়াছেন এমন লোকের সংখ্যা কত? খতীব বাগদাদী বর্ণনাকারীদের সংখ্যা বলিয়াছেন ৯৩; কিন্তু হাফেয কাযী ইয়ায লিখিয়াছেনঃ এক হাজার তিন শতেরও অধিক।

ইমাম মালিক (র)-এর ছাত্রদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে ওহাব (মৃঃ ১৯৫ হিঃ); আবদুর রহমান ইবনুল কাসেম (মৃঃ ১৯১ হিঃ) ও আশহুব (মৃঃ ২০৪ হিঃ) সুদক্ষ ওউচ্চমানের গ্রন্হ রচয়িতা ছিলেন। হাফেজ যাহবী বলিয়াছেন, ইবনে ওহাব এক লক্ষ হাদীস মুখস্থ বর্ণনা করিতেন। আর তাঁহার সংকলিত গ্রন্হাবলীতে এক লক্ষ বিশ হাজার হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে।

ইবনুল কাসেমও হাদীসের হাফেজ ছিলেন এবং ইমাম মালিক (র)-এর ‘ফিকহ’ যাঁহারা বর্ণনা ও প্রচার করিয়াছেন, তাঁহাদের মধ্যে তিনি প্রধান ব্যক্তিরূপে গণ্য হইতেন।

উপরের এই দীর্ঘ আলোচনা হইতে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই হাদীসের অসংখ্য সংকলন তৈয়ার হইয়া সর্বত্র প্রচারিত হইয়াছিল। সেই সঙ্গে ইমাম আবূ হানীফা (র) ও ইমাম মালিক (র)-এর ছাত্রগণ হাদীসের বিপুল জ্ঞান-সম্ভার বক্ষে ধারণ করিয়া গোটা মুসলিম জাহানের কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছড়াইয়া পড়িয়াছিলেন। উহার প্রচার ও শিক্ষাদানের ব্রতে আত্মনিয়েঅগ করিয়াছিলেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন