hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

৭২
(খ) তাবেয়ীদের যুগ
সাহাবীদের যুগে হাদীস সংগ্রহ অভিযানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপরে পেশ করা ইহল। এই যুগে হাদীস সংগ্রহ পর্যায়ের যত কাজই সম্পাদিত হয়, উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা হইতে সে সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা অতি সহজেই করা যাইতে পারে। এক কথায় বলা যায় সাহাবীদের যুগে হাদীস সংগ্রহ অভিযান কেবল আরম্ভ করা হইয়াছে, তাবেয়ীদের যুগে এই কাজ অধিকতর উন্নত ও ব্যাপক ভিত্তিতে সাধিত হয়। বিশেষত, তাবেয়ী যুগের হাদীস বর্ণনাকারিগণ কেবল একজনের নিকট কিংবা নিজ শহরে অবস্থানকারী সাহাবীদের নিকট হাদীস শুনিয়াই ক্ষান্ত হইতেন না। এইজন্য তারা নিকট ও দূরে অবস্থিত বহু শহর-নগর-গ্রম সফর করিতে বাধ্য হইয়াছেণ। ইহাতে তারা একই হাদীস বহু সংখ্যক মূল বর্ণনাকারীর নিকট হইতে শুনিবার এবং বহু বর্ণনাকারীর নিকট হইতে বিপুল সংখ্যক হাদীস শুনিবার ও সংগ্রহ করিবার সুযোগ পাইয়াছেন। ইহার ফলে তাঁহাদের মনে হাদীসের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মিত।

নিম্নে প্রদত্ত বিবরণ হইতে এই যুগের কাজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইংগিত পাওয়া যাইতে পারে।

সায়ীদ ইবনে মুসাইয়্যিব বলেনঃ

কেবল একটি হাদীস লাভ করার উদ্দেশ্যে আমি একাদিক্রমে কয়েকদিন ও কয়েক রাত্রের পথ সফর করিতাম।

কূফা নগরে অবস্থানরত শ’বী তাবেয়ী একবার সন্তান ও দাস-দাসীকে ইলম শিক্ষাদান ও চরিত্রবান করিয়া তোলার সওয়াব সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন। হাদীসটির বর্ণনা শেষ করিয়া তাঁহার ছাত্রদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিলেনঃ

এই হাদীসটি ভালভাবে গ্রহণ কর, ইহার বিনিময়ে তোমাদের কিছুই দিতে হইবে না, (কোন কষ্ট স্বীকার করিতে হইল না)। যদিও এমন এক সময় ছিল, যখন এক এক ব্যক্তিকে এতদপেক্ষাও অল্প কথার জন্য (ফা হইতে) মদীনা পর্যন্ত সফর করিতে হইত।

[ মূল হাদীসটি বুখারীর ১ম খণ্ড কিতাবুল ইলম-এ উদ্ধৃত হইয়াছে।]

বুসর ইবনে আবদুল্লাহ হযরামী বলেনঃ

একটি হাদীসের জন্য বিভিন্ন শহর ঘুরিয়া বেড়াইবার প্রয়োজন হইলেও আমরা তাহাই করিতাম।

এখানে কয়েকজন প্রসিদ্ধ তাবেয়ীর হাদীস সংগ্রহ সাধনার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা যাইতেছেঃ

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী উবায়দুল্লাহ ইবনে আদী জানিতে পারিলেন যে, হযরত আলী (রা)-এর নিকট এমন একটি হাদীস রহিয়াছে, যাহা তিনি নিজে আজ পর্যন্ত খোঁজ করিয়া কোথাও কাহারো নিকট হইতে জানিতে পারেন নাই। তখন তিনি চিন্তা করিলেন যে, অনতিবিলম্বে তাহা জানিয়া না লইলে ও সাধারণ্যে প্রচার না করিলে ইহা হইতে গোটা উম্মতের বঞ্চিত হইয়া যাওয়ার আশংকা রহিয়াছে। এইজন্য তিনি অতি সত্ত্বর হযতর আলী (রা)-এর সহিত সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে ইরাক যাত্রা করিলেন।

কাসীর ইবনে কায়াস তাবেয়ী বলেনঃ আমরা হযরত আবূদদারদা (রা)-এর সহিত দামেশকের জামে মসজিদে বসিয়াছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি তাঁহার সম্মখে উপস্থিত হইয়া বলিলেনঃ হে আবূদদারদা! আমি শুনিয়াছি, আপনি রাসূলের সূত্রে বিশেষ একটি হাদীস বর্ণনা করিয়া থাকেন। আম মদীনা শরীফ হইতে কেবল সেই হাদীটি শ্রবণের উদ্দেশ্যে এই দূর পথ সফর করিয়া আসিয়াছি। হযরত আবূদদারদা (রা) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ আপনি অন্য কোন উদ্দেশ্যে, কোন ব্যবসায়-বাণিজ্যের কাজের জন্য এখানে আসেন নাই তো? বহিরাগত লোকটি বলিলেন, না অন্য কোন উদ্দেশ্যেই আমার এই আগমন হয় নাই। তখন হযরত আবূদদারদা (রা) নিম্নলিখিত হাদীসটি তাঁহার নিকট বর্ণনা করেনঃ

আমি রাসূলে করীম (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, যে ব্যক্তি ইলমের সন্ধানে কোন পথ চলিবে, আল্লাহ তাহার জন্য বেহেশতের অসংখ্য পথের কোন একটি পথ সুগম ও সহজতর করিয়া দিবেন। বস্তুত ফেরেশতাগণ জ্ঞানানুসন্ধানীর সন্তুষ্টির জন্য তাঁহাদের পক্ষ বিছাইয়া দেন এবং জ্ঞান-সন্ধানীর জন্য আসমান যমীনের সবকিছু- এমন কি পানির তলার মাছও আল্লাহর নিকট গুনাহ মাফের দোয়া করিয়া থাকে। পরন্তু আবিদ অপেক্ষা আলিমের মর্যাদা এত বেশী, যেমন চন্দ্রের প্রাধান্য সমগ্র নক্ষত্রের উপর। আলিমদের মধ্যে হইতেই নবীদের উত্তরাধিকারী হইয়া থাকেন। নবীগণ কখনো টাকা-পয়সা মিরাসী সম্পদ হিসাবে রাখিয়া যান না। তারা কেবল ইলম ও জ্ঞানই রাখিয়া যান। অতএব যে তাহা গ্রহণ করিবেন। সে তাহার অংশ লাভ করিবে কিংবা (বলিয়াছেন) সে পূর্ণ ও বিপূল অংশ পাইবে।

[হাদীসটি মুসনাদে আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ প্রভৃতি সহীহ গ্রন্হে উল্লিখিত হইয়াছে। যদিও উহাদের শব্দ ও ভাষায় পারস্পরিক পার্থক্য রহিয়াছে। এখানে সুনানে দারেমীর বর্ণিত ভাষা উদ্ধৃত করা হইয়াছে।]

বসর ইবনে উবায়দুল্লাহর একটি কথা এখানে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেনঃ ‘আমি কেবল একটি হাদীসের জন্য অসংখ্য শহর ও নগর আতিঁপাতি করিয়া খুঁজিয়া বেড়াইয়াছি।

[দারেমী পৃষ্ঠা ৭৪।]

আবূল আলীয়া তবেয়ী বলেনঃ

আমরা (বসরায় থাকিয়া) মদীনায় অবস্থিত সাহাবীদের বর্ণিত হাদীস (লোক মারফত) শুনিতে পাইতাম; কিন্তু মদীনায় অব্স্থানকারী হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর নিজ মুখে উহা শুনিয়া লওয়ার পূর্বে আমরা কিছুতেই সান্তনা পাইতাম না (এবং অপরের নিকট তাহা বর্ণনা ও করিতাম না)।

[দারেমী, পৃষ্ঠা ৭৪।]

আবূ কালাবা (আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ আল জুরামী আল বসরী) বলেনঃ

আমি মদীনায় তিন (দিন বা মাস বা বৎসর) অবস্থান করিয়াছি কেবল এই অপেক্ষায় যে, একজন লোকের নিকট একটি হাদীস রহিয়াছে। সে আসিবে ও তাহার নিকট হইতে আমি তাহা শুনিব।

তাবেয়ী মুহাদ্দিস মকহুল (আবূ আবদুল্লাহ ইবনে আবূ মুসলিম) একটি হাদীসের জন্য মিসর হইতে হিজাজ, হিজাজ হইতে ইরাক, ইরাক হইতে সিরিয়া সফর করেন এব সেখানেই তিনি প্রার্থীত হাদীসটি শুনিতে পান।

মোটকথা, তাবেয়ী যুগের হাদীস-সন্ধানীদের সাধনা, পারস্পরিক সাক্ষাত ও হাদীস সংগ্রহের জন্য অবিশ্রান্ত দেশ ভ্রমণের ফলে বিপুল সংখ্যক হাদীসের প্রচার ও প্রসার লাভ সম্ভব হয়। সাহাবাগণ মুসলিম জাহানের বিভিন্ন শহরে ও বিভিন্ন স্থানের বিক্ষিপ্ত হইয়াছিলেন, তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে থাকিয়া হাদীসের প্রচার ও শিক্ষাদান করিতেন। তাঁহাদেরই ছাত্র তাবেয়িগন হাদীস সংগ্রহর উদ্দেশ্যে শঞর হইতে শহরান্তরে, দেশ হইতে দেশান্তরে যাতায়াত করিতেন এবং বিভিন্ন সাহাবীর নিকট হইতে বিভিন্ন হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহ করিতেন; কিংবা একই হাদীস বিভিন্ন সাহাবীর নিকট হইতে শ্রবণ করিতেন। ফলে হাদীস সম্পদ সামগ্রিকভাবে বিরাট ও বিপুল আকার ধারণ করে।

দৃষ্টান্তরূপে বলা যায়, হযরত আমর ইবনুল আস (রা) মিসরে অবস্থান করিতেন এবং সেখানকার লোকদের নিকটই তিনি রাসূলের কথা, কাজও সমর্থনের বিবরণ পেশ করিতেন। রাসূলে করীম ও খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলের আদালতী বিচার ফয়সালা সমূহের বর্ণনা করিতেন। ফলে ইসলামী জ্ঞানের এই সব অমূল্য সম্পদ কেবল স্থানীয় লোকগণই লাভ করিতে পারিতেন। কিন্তু তাবেয়ী যুগে যখন মিসরের এই লোকগণই দামেখক, কূফা, বসরা, মদীনা ও অন্যান্য হাদীসকেন্দ্র ও সাহাবীদের আবাসস্থালে পৌঁছিয়া হাদীস সংগ্রহ করিতে শুরু করিলেন, তখন তাঁহাদের হাদীস-জ্ঞান অত্যন্ত ব্যাপক ও প্রশস্ত হইয়া পড়ে। যেসব তাবেয়ী পূর্বে একটি হাদীস কেবল একই সাহাবীর সূত্রে বর্ণনা করিতেন, এক্ষণে তাহাই তারা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করিতে সক্ষম হন। ইলমে হাদীসের দৃষ্টিতে তাবেয়ীদের এই দেশ-বিদেশ ভ্রমণের পর্যালোচনা করিলে ইহার গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা যায়। বস্তুত তাবেয়ীদের যুগে এই হাদীস-সংগ্রহ অভিযান সম্পাদিত না হইলে বহু হাদীসই যে বিস্মৃতির অতল গভীরে বিলুপ্ত হইয়া যাইত এবং সাধারণের জ্ঞান পরিধির বাহিরেই পড়িয়া থাকিত তাহাতে কোনই সন্দেহ নাই।

প্রসংগত উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, তাবেয়ীদের এই হাদীস সংগ্রহ অভিযানের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হইয়াছে পরবর্তীকালের হাদীসগ্রন্হ সংকলনের উপর। কেননা, যেসব হাদীস গ্রন্হ সংকলক কেবল নিজ শহরে প্রচারিত হাদীসেরই সংকলন করিয়াছেন, অন্যান্য হাদীসকেন্দ্রে গমন করিয়া- দেশ-দেশান্তর ভ্রমণ করিয়া হাদীস সংগ্রহ করেন নাই, তাঁহাদের সংকলনের কোনই মূল্য জনসমাজে স্বীকৃত হয় নাই। উপরন্তু তাঁহাদিগকে বলা হইয়াছেঃ

সে প্রকৃত হিদায়াতের পথ-ভ্রান্ত এবং হিদায়ত ও সত্যতার পথের যৌক্তিকতা প্রমাণে সে ব্যর্থ-অসমর্থ।

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইয়াইয়া ইবনে মুয়ীন বলিয়াছেনঃ

চারজন লোকের নিকট হইতে প্রকৃত হিদায়াতের আশা করা যায় না। তাহারা হইলঃ সূক্ষ্ণ শিল্প দক্ষতার পাহারাদার, বিচারকের ঘোষণাকারী, বিদয়াতীর পুত্র এবং যে ব্যক্তি হাদীসের সন্ধানে বিদেশ সফর করেন না, কেবল নিজ শহরে পাওয়া হাদীসই সংকলন করে।

অথচ ঐ যুগের যানবাহন ও যাতায়াত পথ ছিল অত্যন্ত দুষ্কর, দূরধিগম্য এবং বিপদসংকুল। অশ্ব কিংবা উষ্ট্রের পৃষ্ঠা আরোহণ করিয়া তাঁহাদিকে দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমি পর্বতসংকুল ও দূরধিগম্য অরণ্য পথ অতিক্রম করিতে হইত এবং তাঁহাদের এই ভ্রমন চলিত রাতের পর রাত, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর ধরিয়া। এই পরিশ্রম যে কতদূর কষ্টসাধ্য ছিল, তাহা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু এই কষ্ট ও দুঃখ তাঁহাদের নিকট চিল একান্তই নগণ্য। এতদূর অমানুষিক কষ্ট স্বীকার করার পর তারা যে হাদীস সম্পদ লাভ করিতেন, তাহাই তাঁহাদের হৃদয়ে নির্মল আনন্দের বন্যা প্রবাহিত করিয়া দিত, আর তাঁহাদের জীবন ইহাতেই সার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত হইত। প্রকৃতপক্ষে ইহা ছিল বিশ্ব মুসলিমের প্রতি তাঁহাদের এক অপূর্ব কল্যাণময় অবদান। বিশ্বের মুসলমান তাঁহাদের এই অবদান কোনদিনই বিস্মৃত হইতে পারে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন