hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

হাদীস শব্দের অর্থ কুরআনে হাদীস শব্দের ব্যবহার এবং হাদীসের কুরআনী ভিত্তি
‘হাদীস’ শব্দের বিশ্লেষণ করিয়া ইমাম রাগব ইসফাহানী লিখিয়াছেনঃ

اًلحَدِيثُ : وَاَلْحدِيْثُ كَوْنُ اَلشَّئِ بَعَدَ اَنْ لَّمْ تَكُنْ عِرضَاً كَاَنَ تَوْ اَوْجَدْ هَرَّا وكٌلُّ كَلاَمٍ يَبْلُعُ الْانْسَانَ مِنْ جَهَةِ الْسَّمْعِ اَوِ الْوَحِىْ فِىْ يَقْظَتِهِ اَوْ مَنَامِهِ حَدِيْثٌ -

‘হাদীস’ আর ‘হুদুস’ বলিতে বুঝায় কোন একটি অস্তিত্বহীন জিনিসের অস্তিত্ব লাভ করা, তাহা কোন মৌলিক জিনিস হোক কি অমৌলিক। আর মানুষের নিকট শ্রবণেন্দ্রিয় বা ওহীর সূত্রে নিদ্রায় কিংবা জাগরণে যে কোন কথা পৌঁছায়, তাহাকেই হাদীস বলা হয়।

অন্যত্র লিখিয়াছেনঃ

شَىَّ ىُلْقَى فِىْ رَوْعٍ اَحَدٍ مِنْ جِهَةِ الْملأَ

উচ্চতর জগত হইতে একজনের অন্তর্লোকে যাহা কিছু উদ্রিক্ত হয় তাহাই হাদীস।

[ مفردات راغب اصفهانى صفحه ]

স্বপ্নকালীন কথাবার্তাকে কুরআন মজীদে ‘হাদীস’ বলা হইয়াছে। কুরআনে হযরত ইউসুফের জবানীতে বলা হইয়াছেঃ

وَعَلَّمْتَنِي مِن تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ

স্বপ্নের কথার ব্যাখ্যা তুমি আমাকে শিক্ষা দিয়াছ। (সুরা, ইউসূফ, আয়াত-১০১)

ইমাম রাগেব এই আয়াতের অর্থ প্রসঙ্গে লিখিয়াছেনঃ

اَىْ مَا يحَدِّثُ بِهِ الأِنسَانَ فِىْ نَوْمِهِ -

অর্থাৎ লোককে স্বপ্নযোগে যে সব কথা বলা হয়।

[ مفردات راغب صفع ]

আল্লাহ্ তা’য়ালা কুরআন মজীদকে ‘হাদীস’ নামে অভিহিত করিয়াছেন। কুরআনে বলা হইয়াছেঃ

فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَىٰ آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَٰذَا الْحَدِيثِ أَسَفً ا

[ الكهف :٦]

তাহারা এই ‘কথা’র (কিতাব) প্রতি বিশ্বাস না করিলে, হে নবী, তুমি হয়ত নিজেকে চিন্তাক্লিষ্ট করিয়া তুলিবে।

অন্যত্র বলা হইয়াছেঃ

فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِّثْلِهِ إِن كَانُوا صَادِقِينَ

[ الطُّور : ٣٤ ]

(তাহারা কুরআনকে আল্লাহর কিতাব না মানিলে) এইরূপ একখানি কিতাব আনিয়া পেশ করা তাহাদের কর্তব্য, যদি তাহারা সত্যবাদী হইয়া থাকে।

সূরা আয্-যুমার-এ বলা হইয়াছেঃ

اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا

আল্লাহ তা’য়ালা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ কিতাবরূপে অতীব উত্তম কালাম নাযিল করিয়াছেন।

এখানে হাদীসকে কিতাব বা কালাম অর্থে ব্যবহার করা হইয়াছে।

‘হাদীস’ শব্দের অর্থ কথা বা বাণী। কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতসমূহ ইহা কথা বা বাণী অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছেঃ

অতঃপর তাহারা কোন কথাকে বিশ্বাস করিবে?

এবং যখন নবী তাঁহার এক স্ত্রীর নিকট গোটন একটি কথা বলিলেন।

এই কথায় তোমরা কি আশ্চর্যান্বিত হইতেছ?

এই কয়টি আয়াতেই ‘হাদীস’ حديث শব্দটি ‘কথা’ বা ‘বাণী’ অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। কুরআন মজীদে নতুন সংবাদ, খবর ও নূতন কথা প্রভৃতি অর্থেও এই শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। যথাঃ

ইবরাহীমের (নিকট আগত) সম্মানিত অতিথিদের খবর তোমার নিকট পৌঁছাইয়াছে কি?

মূসার খবর জানিতে পারিয়াছ কি?

সেই সৈনিকদের কথা জানিতে পারিয়াছ কি?

সব কিছু আচ্ছন্নকারী কিয়ামাতের সংবাদ তোমার নিকট আসিয়াছে কি?

এখন এই কথার প্রতি তোমরা উপেক্ষা প্রদর্শন করিতেছ?

এই ‘হাদীস’ শব্দ হইতে নির্গত হইয়াছে ‘তাহদীস’ تحديث আর কুরআনে ইহা ব্যবহৃত হইয়াছে বর্ণনা করা, প্রকাশ করা ও কথা বলার অর্থে। যথা–

তুমি আল্লাহর নিয়ামতের কথা বর্ণনা করঃ

আল্লামা আবুল বাকা বলিয়াছেনঃ

‘হাদীস’ নাম হইল কথা বলার, সংবাদ দানের।

[৪]

মোটকথা আরবী অভিধান ও কুরআনের ব্যবহারের দৃষ্টিতে ‘হাদীস’ শব্দের অর্থ কথা, বাণী, সংবাদ, খবর ও ব্যাপার, বিষয়। নবী করীম (ﷺ) আল্লাহর পয়গাম পৌঁছাইবার উদ্দেশ্যে লোকাদের সাথে কথা বলিতেন, নিজের কথার সাহায্যে ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কথা, তথ্য ও তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিতেন, নিগূঢ় তত্থ্ব বুঝাইয়া দিতেন, বক্তৃতা ও ভাষণের মাধ্যমে আল্লাহর কিতাবের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করিতেন, এইজন্য তাহা ‘হাদীস’ নামে অভিহিত হইয়াছে।

নবী করীম (ﷺ) নিজে ইসলামের যাবতীয় হুকুম আহকাম পাণ করিয়াছেন, আল্লাহর বিধান মোতাবেক কাজ করিয়েছেন এবং নিজের আমলের সাহায্যে আল্লাহর বিধানকে বাস্তবায়িত করিয়াছেন। এই কারণে তাঁহার বিভিন্ন আমলের বিবরণকেও ‘হাদীস’ নামে অভিহিত করা হইয়াছে।

নবী করীম (ﷺ) বিশেষ যত্ন ও চেষ্টার সাহায্যে সাহাবায়ে কিরাম (রা)- কে ইসলামের উন্নত আদর্শের ভিত্তিতে তৈয়ার করিয়াছেন, তাঁহাদের চরিত্র, চিন্তা, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের উন্নত মানে গঠন করিয়াছেন। এই কারণে সাহাবায়ে কিরামের যেসব কথা ও কাজাকে নবী করীম (ﷺ) অনুমোদন করিয়াছেন, সমর্থন করিয়াছেন, অন্তত তিনি যে সবের প্রতিবাদ করেন নাই, তাহারও নাম দেওয়া হইয়াছে ‘হাদীস’।

এক কথায় রাসূলের কথা, কাজের বিবরণ ও সমর্থন-অনুমোদনকেই হাদীস বলা হয়। একটি হাদীস হইতে প্রমাণিত হয়, নবী করীম (ﷺ) নিজেই ইহাকে ‘হাদীস’ নামে অভিহিত করিয়াছেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) তাঁহার নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কে, যে লোক কিয়ামতের দিন রাসূলের শাফা’আত লাভে ধন্য হইবে? ‘তখন নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেনঃ

আমি মনে করি, এই হাদীস সম্পর্কে তোমার পূর্বে আর কেহই আমাকে জিজ্ঞাসা করে নাই। বিশেষত এই কারণে যে, হাদীস শোনার জন্য তোমাকে সর্বাধিক চেষ্টিত ও আগ্রহান্বিত দেখিতে পাইতেছি।

[৫ ]

কুরআন মজীদ দ্বীন-ইসলামের সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ গ্রন্হ। ইহা সর্বশেষ নবীর প্রতি নাযিল হইয়াছে। রাসূলে করীম (ﷺ)-কে আল্লাহ তা’য়ালা ইসলামের নবী, ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রচারক ও প্রতষ্ঠাতা এবং মানবতার পথ-প্রদর্শক ও শিক্ষকরূপে প্রেরণ করিয়াছেন। রাসূল এই মহান পবিত্র গ্রন্হ ‘কুরআন মজীদ’ আদ্যোপান্ত পাঠ করিয়া লোকদেরকে শুনাইয়াছেন, বহু সংখ্যক সাহাবী তাহা সঙ্গে সঙ্গে মুখস্থ করিয়াছেন। সর্বোপরি রাসূল নিজের জীবনধারা, চিন্তা-বিশ্বাস, ও কর্ম আচরণ ও বাস্তব অনুসরণের মাধ্যমে ইসলামের মূল বিধান শিক্ষা, উপদেশ ও আদেশ-নিষেধকে বাস্তবায়িক করিয়া দেখাইয়া দিয়াছেন; অর্থাৎ একটি জাতিকে তিনি এই আদর্শের ভিত্তিতে পুরোপুরি গঠন করিয়াছেন। বস্তুত নবী করীমের মহান যিন্দেগী ছিল কুরআন মজীদের তথা ইসলামের বাস্তব রূপ, কুরআনী আদর্শের কর্মরূপ। অতএব, দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে রাসূলে করীমের যাবতীয় কথা, কাজ অনুমোদন ও সমর্থনকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় ‘হাদীস’।

‘হাদীস’ একটি আভিধানিক শব্দমাত্র নয়। মূলত ইহা ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। সে অনুযায়ী রাসূলে করীমের যে কথা, যে কাজের বিবরণ কিংবা কথা ও কাজের সমর্থন ও অনুমোদন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত, ইসলামী পরিভাষায় তাহাই ‘হাদীস’ নামে অভিহিত হয়।

‘হাদীস’কে আরবী ভাষায় ‘খবর’ ও বলা হয়। কিন্তু পার্থক্য এই যে, ‘খবর’ শব্দটি হাদীস অপেক্ষা ব্যাপক অর্থবোধক। ‘খবর’ যুগপৎভাবে হাদীস ও ইতিহাস উভয়কেই বুঝায়।

[৬]

নবী করীমের কথা, কাজ, সমর্থন-অনুমোদন এবং তাঁহার অবস্থার বিবরণকে ‘হাদীস’ নামে অভিহিত করা কোন মনগড়া ব্যাপার নয়। কুরআন মজীদে ইহার অকাট্য প্রমাণ বিদ্যমাণ। আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন যে নিখিল মানুষের জন্য এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত, তাহাতে সন্দেহ নাই। কুরআন মজী এই ‘দ্বীন’কে আল্লাহর নিয়ামতরূপে ঘোষণা করা হইয়াছে এবং নিয়ামতের প্রচার ও প্রকাশ করাকে ‘তাহদীস’ (বর্ণনা করা, প্রচার ও প্রকাশ করা) বলা হইয়াছে।

আল্লাহর নিয়ামতসমূহ সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করিয়াছেনঃ

তোমাদের প্রতি আল্লাহর দেয়া নিয়ামত স্মরণ কর এবং তোমাদিগকে নসীহত করার উদ্দেশ্যে যে কিতাব ও যে বুদ্ধি-বিচক্ষণতা অবতীর্ণ করা হইয়াছে, তাহাও স্মরণ কর।

দ্বীন-ইসলামকে পূর্ণ ও পরিণত করার প্রসঙ্গেও আল্লাহ তা’আলা উহাকে একটি নিয়ামত বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। ইরশাদ করা হইয়াছেঃ

(সূরা-আল মায়েদা-৩)

আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ পরিণত করিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমর (দেয়া) নিয়ামত সম্পূর্ণ ও সমাপ্ত করিয়া দিলাম।

পূর্বোক্ত আয়াতদ্বয়ে দ্বীন-ইসলাম তথা কুরআন মজীদকে সুস্পষ্ট ভাষায় ‘আল্লাহর নিয়ামত’ বলিয়া ঘোষলা করা হইয়াছে। এই নিয়ামতের বর্ণনা ও প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতেঃ

(সূরা- আল ফাজর-১১)

তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের বিবরণ দাও- প্রচার ও বর্ণনা কর।

[আল্লামা বায়জীদ এই আয়াতের তাফসীরে লিখিয়াছেনঃ

‘এখানে নিয়মিত বলিতে নবুয়্যাতে বুঝানো হইয়াছে এবং তাহদীস করা অর্থ উহার প্রচার করা।

আল্লামা আ-লুসী লিখিয়াছেনঃ

‘নিয়ামত অর্থ কুরআন’ এ কথা অনেকেই বর্ণনা করিয়াছেন।]

এই দৃষ্টিতেই হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) নবী ও রাসূল হিসাবে যে সকল কথা বলিয়াছেন ও যে সব কাজ করিয়াছেন, তাহার ভাষাগত বিবরণকে ইসলামী পরিবাষায় বলা হইয়াছে ‘হাদীস’। শুধু তাহাই নয়, তাঁহার সম্মুখে কোন সাহাবী কোন কথা বলিলে বা কোন কাজ করিলে তাহা যদি তিনি সমর্থন অনুমোদন করিয়া থাকেন অথবা উহার কোন প্রতিবাদ না করিয়া থাকেন, তাবে উহার বিবরণও ‘হাদীস’ নামেই অভিহিত হইবে। কেনন্ নবী করীম (ﷺ) সত্য ও ন্যায়ের প্রচার, প্রতিষ্ঠা এবং সকল অন্যায় ও মিথ্যার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার দায়িত্ব লইয়াই দুনিয়ায় আগমন করিয়াছিলেন। তাঁহার সম্মুখে কোন মিথ্যা ইসলাম বিরোধী-ইসলামী ভাবধারার বিপরীত-উক্তি বা কাজ করা হইবে আর তিনি উহার প্রতিবাদ করিবেন না- তাহা হইতে সাহাবীদের বিরত রাখিবেন না; বরং নির্বাক ও নিস্তব্ধ হইয়া থাকিবেন, এ কথা ধারণা পর্যন্ত করা যায় না। আর বস্তুতই তাহা সম্ভবও নয়।

দ্বিতীয়ত অন্যায় ও পাপ অনুষ্ঠিত হইতে দেখিয়া চুপ ও নিষ্ত্রিুয় হইয়া থাকিলে রাসূলের মূল কর্তব্যই অসম্পাদিত থাকিয়া যায়। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করিয়াছেনঃ

(সূরা আল-মায়েদা: আয়াতঃ ৬৭)

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ

হে রাসূল, তোমার আল্লাহর নিকট হইতে তোমর প্রতি যাহা নযিল হইয়াছে, তাহা যথাযথরূপে পৌঁছাইয়া দাও, যদি তাহা না কর তবে তুমি আল্লাহর রিসালত পৌঁছাবার দায়িত্বই পালন করিলে না।

ইবনে জরীর তাবারী এই পর্যায়ে ইবনে জায়েদের একটি গুরত্বপূর্ণ কথা উদ্ধৃত করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেনঃ

এই কথা বলা হইত যে, নবী করীম (ﷺ) যদি ওহীর মাধ্যমে নাযিল হওয়া কোন জিনিস গোপন করিতে চাহিতেন, তবে তিনি তাঁহার নিজের ‘ক্রটি’ সম্পর্কে অবতীর্ণ সূরা ‘আবাসা ওয়া-তাওয়াল্লা’কে অবশ্যই গোপন করিতেন।

[৮ ]

বস্তুত নবী করীমের সুরক্ষীত জীবন কাহিনী অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি জীবনের সংকটপূর্ণ মুহূর্তেও নবুয়্যতের দায়িত্ব পালন করিতে এবং অহীর মাধ্যমে অবতীর্ণ আল্লাহর কালামকে যথাযথরূপে লোক-সমক্ষে প্রচার করিতে বিন্দুমাত্রও ক্রটি করেন নাই। এই ব্যাপারে তিনি কখনো উপেক্ষা বা দুর্বলতাও প্রদর্শন করেন নাই। ইসলামী দাওয়াতের সূচনায় ইসলাম প্রচারের অভিযান পরিত্যাগ করিলে সেরা সুন্দরী নারী, বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ ও আরবের নিরংকুশ রাজত্ব লাভের প্রলোভনকেও তিনি অম্লান বদনে ও তীব্র ঘৃণা সহকারে প্রত্যাখ্যান করেন।

[৯]

অতএব তিনি কোন মুহূর্তেই যে দ্বীন প্রচার বন্ধ করিতে পারেন নাই, অন্যায়ের প্রতিবাদ হইতে বিরত থাকেন নাই এবং কোন ভূল ও ক্রটি কাহারো মধ্যে দেখিতে পাইলে উহার সংশোধন না করিয়া নিরস্ত হন নাই, তাহাতে একবিন্দু সন্দেহ থাকিতে পারে না। এই কারণে তাঁহার নিজের কথা, কাজ এবং তিনি যে কথা বা কাঝ সমর্থন করিয়াছেন- প্রতিবাদ করেন নাই, তাহার বিবরণ ‘হাদীস’ নাম অভিহিত হইয়াছে।

রাসূলের সম্মুখে সাহাবী কোন কাজ করিলে বা কোন কথা বলিলে তিনি যদি উহার প্রতিবাদ না করিয়া থাকেন, তবে উহার শরীয়াত সম্মত হওয়া সম্পর্কে সাহাবীগণ সম্পূর্ণ একমত ছিলেন এবং হযরতের এই সমর্তন অনুমোদন ও মৌনতাবলম্বনও কোন বিষয়ে শরীয়াতের নির্দেষ জানিবার জন্য অন্যতম সূত্ররূপে গণ্য হইত। এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যাইতে পারে। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) আল্লাহর নামে ‘হলফ’ করিয়া কোন কথা বলিলে মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদের আপত্তি জানাইলেন। বলিলেনঃ

আপনি আল্লাহর নাম করিয়া হলফ করিতেছেন?

উত্তরে তিনি বলিলেনঃ

আমি হযরত উমরকে নবী করীম (ﷺ)- এর সম্মখে আল্লাহর নামে হলফ করিতে শুনিয়াছি, কিন্তু নবী করীম (ﷺ) তাহা অপছন্দ করেন নাই, উহার প্রতিবাদ করেন নাই।

[১০]

হাদীসের সংজ্ঞাদান প্রসঙ্গে প্রামাণ্য গ্রন্হাবলী হইতে কতকগুলি উক্তি এখানে উদ্ধৃত করা যাইতেছে। ইহা হইতে বিষয়টি অধিকতর স্পষ্ট হইবে।

ইমাম সাখাভী বলিয়াছেনঃ

অভিধানে ‘হাদীস’ (নূতন) ‘কাদীম’ (পুরাতন)-এর বিপরীত অর্থবোধক। আর মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় (হাদীস বলিতে বুঝায়) রাসূলের কথা, কাজ, সমর্থন-অনুমোদন এবং তাঁহার গুণ; এমন কি জাগরণ ও নিদ্রাবস্থায় তাহার গতিবিধিও ইহার অন্তর্ভুক্ত।

[১১ ]

বুখারী শরীফের ভূমিকায় বলা হইয়াছেঃ

হাদীস এমন জ্ঞান, যাহার সাহায্যে নবী করীম (ﷺ)-এর কথা, কাজ এবং তাঁহার অবস্থা জানা যায়।

[১২]

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী ও নওয়াব সিদ্দীক হাসান লিখিয়াছেনঃ

ইলমে হাদীস এমন বিশেষ জ্ঞান, যাহার সাহায্যে নবী করীম (ﷺ)- এর কথা কাজ ও অবস্থা জানিতে পারা যায়।

[১৩ রাসূলের কথা বলিতে বুঝায় তাঁহার আরবী ভাষায় উচ্চারিত কথা। ইহা বিভিন্ন প্রকারের হইতে পারে। তাঁহার কাজ বলিতে বুঝায়ঃ]

মিশাকাতুল মাসাবীহ গ্রন্হের ভূমিকায় শাহ আবদূল আজীজ (র) লিখিয়াছেনঃ

পূর্বকালের মনীষিগণ সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনের মুখের কথা ও কাজের বিবরণ এবং তাঁহাদের ফতোয়াসমূহের উপর ‘হাদীস নাম ব্যবহার করিতেন। আর দুইটি স্বতন্ত্র সূত্রে বর্ণিত একটি বিবরণকে তারা দুইটি হাদীস গণনা করিতেন।

[১৪ ]

নওয়াব সিদ্দীক হাসান (র)- ও এই কথাই বলিয়াছেন। তিনি হাদীসের সংজ্ঞাদান প্রসঙ্গে লিখিয়াছেনঃ

অনুরূপভাবে সাহাবীর কথা, কাজ ও সমর্থন এবং তাবেয়ীর কথা, কাজ ও সমর্থনকেও হাদীস নামে অভিহিত করা হয়।

[১৫ ]

তবে পার্থক্য এই যে, তিনি ইহাতে তাবে-তাবেয়ীগণের কথা ও কাজের বিবরণকে ‘হাদীস’ বলেন নাই। কিন্তু সাহাবা ও তাবেয়ীগণের ন্যায় তাবে-তাবেয়ীনের কথা, কাজ ও সমর্থনের বিবরণও যে কুরআন হাদীসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং বাস্তব রূপায়ণের দৃষ্টিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় জিনিস, তাহাতে সন্দেহ নাই। হাদীস ও তাফসীরের কিতাবসমূহে এই ধরনের প্রামাণ্য যে সব কথা সাহাবী, তাবেয়ী এ তাবে-তাবেয়ীন হইতে বর্ণিত হইয়িাছে, তাহাকেও এক সঙ্গে হাদীসের পর্যায়ে গণ্য করা হইয়াছে। যদিও ঐসবের পারিভাষিক নাম বিভিন্ন। প্রসিদ্ধ হাদীসবিদ হাফেয সাখাভী লিখিয়াছেনঃ

‘অনুরূপভাবে সাহাবা তাবেয়ীন ও অন্যান্য (তাবে-তাবেয়ী) – এর আছার ও ফতোয়াসমূহের প্রত্যেকটিকে পূর্ববর্তী মনীষিগণ ‘হাদীস’ নামে অভিহিত করিতেন’।

[১৬]

অন্যকথায়, নবী করীম (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ী এ তাবে-তাবেয়ীনের কথা, কাজ ও সমর্থনের বিবরণ যদিও মোটামুটিভাবে ‘হাদীস’ নামে অভিহিত হইয়া থাকে- কেননা এই সকলের কথা-কাজ সমর্থন একই মূল বিষয়কে কেন্দ্র করিয়াই চলিত; কিন্তু তবুও শরীয়াতী মর্যাদার দৃষ্টিতে এই সবের মধ্যে পার্থক্য থাকায় প্রত্যেকটির জন্য স্বতন্ত্র পরিভাষা নির্ধারণ করা হইয়াছে। যথা নবী করীমের কথা, কাজ ও সমর্থনকে বলা হয় ‘হাদীস’। সাহাবীদের কথা, কাজ ও সমর্থনকে বলা হয় আছার এবং তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের কথা, কাজ ও সমর্থনের বিবরণকে বলা হয় ‘ফতোয়া’। কারণ কুরআন ও হাদীসের মূলকে ভিত্তি করিয়াই তাঁহাদের এই সব কাজ সম্পন্ন হইত।

[এই তিন প্রকারের হাদীসের আরও তিনটি স্বতন্ত্র পারিভাষিক নাম রহিয়াছে; যথাঃ রাসূলের কথা, কাঝ ও সমর্থনের বিবরণকে বলা হয় মারফূ; সাহাবীদের কথা, কাজ ও সমর্থনের বিবরণকে বলা হয় মওকুফ এবং তাবেয়ীদের কথা, কাজ ও সমর্থনকে বলা হয় মকতু।

مقد مة صحيح بخارى ص -13]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন