hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

৭১
(ক) সাহাবীদের যুগ
নবী করীম (ﷺ)-এর জীবদ্দশাইতেই আরব দেশের বিভিন্ন গোত্র দূর-দূরান্ত হইতে তাঁহার দরবারে আসিয়া জমায়েত হইত ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান-তথ্য সংগ্রহ করিয়া নিজ নিজ দেশে চলিয়া যাইত। ব্যক্তিগতভাবে নিকট দূরের সাহাবীদের সম্পর্কেও এই কথাই সত্য।

হযরত আকাবা ইবনুল হারেস (রা) তাঁহার নিজের বিাবহ সম্পর্কীয় একটি মাসলার রায় জানিবার উদ্দেশ্যে দূরবর্তী কোন স্থান হইতে মদীনায় আগমন করেন। আসিয়া হযরতের নিকট হইতে শরীয়াতের ফয়সালা জানিয়া লইয়া নিজের বাড়ির দিকে চলিয়া যান এবং সেই ফয়সালা অনুযায়ী স্ত্রীরূপে গৃহীত স্বীয় দুধমাকে পরিত্যাগ করেন।

[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯।] ইসলামের প্রথম যুগের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনার কোন সীমা সংখ্যা নাই। কেননা তখন ইসলামকে জানিবার জন্য দূরবর্তী মুসলিমদের পক্ষে আর কোন উপায়ই ছিল না।

অবশ্য সুফফার অধিবাসিগণ স্থায়ীভাবে প্রায় চব্বিশ ঘন্টা সময়ই রাসূলের সন্নিকটে অবস্থান করিতেন এবং রাসূল (ﷺ)-এর নিকট হইতে জ্ঞানলাভ করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট ও উন্মুখ হইয়া থকিতেন। নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকালের পর তাঁহার সাহাবিগণের অনেকেই মুসলিম জাহানের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়েন। এই কারণে হাদীস-সম্পদ সংগ্রহের জন্য বিদেশ সফর ও দেশ-দেশান্তরে আঁতিপাতি করিয়া খুঁজিয়া বেড়াইবার প্রয়োজন দেখা দেয়। সাহাবীদের যুগ হইতে পরবর্তীকালের মুসলিমগণকে এক-একটি হাদীসের জন্য বিদেশ সফরের অপরিসীম কষ্ট ভোগ করিতে হইয়াছে। এই স্থান হাদীস শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।

বুখারী শরীফে উল্লেখ করা হইয়াছে, হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইসের নিকট হইতে একটি হাদীস শ্রবণের উদ্দেশ্যে একামাস দূরত্বের পথ অতিক্রম করিয়া গিয়াছিলেন। তিনি সংবাদ জানিতে পারিয়াছিলেন যে, সুদূর সিরিয়ায় অবস্থানকারী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস (রা) রাসূলে করীমের একটি হাদীস জানেন, যাহা অপর কাহারো নিকট রক্ষিত নাই। সংবাদ পাওয়া মাত্রই তিনি উষ্ট্র ক্রয় করিয়া সিরিয়ার পথে রওয়ানা হইয়া যান। একমাস কালের পথ অতিক্রম করিয়া সিরিয়ার গ্রামাঞ্চলের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিয়া তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইসের সাক্ষাত লাভ করেন। তাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ

তোমার নিকট হইতে আমার কাছে একটি হাদীস পৌঁছিয়াছে, যাহা তুমি রাসূলের নিকট হইতে শুনিয়াছ। আমার ভয় হইল যে, তোমার নিজের নিকট হইতে উহা নিজ কর্ণে শ্রবণ করার পূর্বেই হয়ত আমি মরিয়া যাইব (এই ভয়ে আমি অনতিবিলম্বে তোমার নিকট হাযির হইয়াছি)।

অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস (রা) জিজ্ঞাসিত হাদীসটি মুখস্থ পাঠ করিয়া শোনাইলেন। হাদীসটি নিম্নরূপঃ

আমি রাসূলে করীম (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহ তা’আলা বান্দাদিগকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করিবেন এবং তাহাদিগকে এমন এক আওয়াচে সম্বোধন করিবেন, যাহা নিকট ও দূরে অবস্থিত লোকেরা সমানভাবে শুনিতে পাইবে। আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করিবেনঃ আমিই মালিক, আমিই বাদশাহ, আমিই অনুগ্রহকারী।

[বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড- পৃষ্ঠা ১১১৪। তাযকিরাতুল হুফফায গ্রন্হে এই পর্যায়ে কিসাস সম্পর্কিত একটি হাদীসের উল্লেখ করা হইয়াছে, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৩।]

হযরত মুসলিমা ইবনে মাখলাধ (রা) যখন মিসরে অবস্থান করিতেছিলেন, তখন ‘কিসাস’ সম্পর্কিত একটি হাদীস জানিবার জন্য হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বহু কষ্ট স্বীকারপূর্বক তাঁহার নিকট উপস্থিত হন এবং বলেনঃ ‘এই একটি হাদীস শিখিবার ঐকান্তিক আগ্রহ লইয়াই আমি আপনার নিকট আসিয়াছি এবং আমাদের একজনের মৃত্যুর পূর্বে আমি হাদীসটি জানিয়া লইতে চাহি।

হযরত ফুজলা ইবনে উবাইদ (রা)-এর নিকট মিসরে একজন সাহাবী দূরবর্তী স্থান হইতে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন। ফুজালা তাঁহাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাইলেন। তিনি বলিলেনঃ আমি আপনার নিকট কেবল সাক্ষাত লাভের উদ্দেশ্যে আসি নাই। আসিয়াছি বিশেষ একটি উদ্দেশ্য লইয়া। আমি ও আপনি একত্রে রাসূলে করীমের নিকট হইতে একটি হাদীস শ্রবণ করিয়াছিলাম, সম্ভবত আপনার তাহা খুব ভালরূপে স্মরণ থাকিবে, আপনার নিকট হইতে তাহা নূতন করিয়া শুনিবার জন্যেই আমি এখানে উপস্থিত হইয়াছি।

অতঃপর ফুজালা প্রার্থিত হাদীসটি পেশ করেন এবং হাদীসটি জানিয়া লইয়া উক্ত সাহাবী নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

[দারেমী, আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২।]

হযরত মুয়াবিয়ার শাসন আমলে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী (রা) শুধুমাত্র একটি হাদীস শ্রবণের উদ্দেশ্যে মদীনা হইতে মিসরের নিভৃত পল্লীতে অবস্থানকারী হযরত আকাবা ইবনে আমের জুহানী (রা)-র নিকট উপস্থিত হন। আকাবা সংবাদ পাইয়া বাহিরে আসিলেন ও হযরত আইয়ূব (রা)-কে বক্ষে জড়াইয়া ধরিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেনঃ

আবূ আইয়ূব! আপনি কি কারণে এত দূরে (আমার নিকট) আসিয়াছেন? তখন হযরত আবূ আইয়ূব (রা) বলিলেনঃ

মু’মিন ব্যক্তির ‘সতর’ (বিশেষ জিনিস গোপন রাখা) সম্পর্কে একটি হাদীস আম রাসূলের নিকট শুনিয়াছিলাম, কিন্তু এখন তোমার ও আমার ছাড়া উহার শ্রবণকারী আর কেহ দুনিয়ায় বাঁচিয়া নাই। (তাহাই তোমার নিকট হইতে নূতন করিয়া শ্রবণের বাসনা লইয়া আমি এত দূর আসিয়াছি)।

তখন হযরত আকাবা নিম্নলিখিত ভাষায় হাদীসটি বলিলেনঃ

যে ব্যক্তি এই দুনিয়ায় কোন মু’মিন লোকের কোন লজ্জাকর, অপমানকর কাজ গোপন রাখিবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাহার গুনাহকে গোপন (মাফ) করিয়া দিবেন।

হযরত আবূ আইয়ূব বাঞ্চিত হাদীসটি শ্রবণ করিয়া বলিলেনঃ তুমি ‘ঠিকই বলিয়াছ, সত্যই বলিয়াছ’। অতঃপর তিনি উষ্ট্রযানে সওয়ার হইয়া মদীনার দিকে এমন দ্রুততা সহকারে রওয়ানা হইয়া গেলেন যে, মিসরের তদানীন্তন শাসনকর্তা মুসলিমা ইবনে মাখলাদ তাঁহাকে প্রচুর পরিমাণে উপঢৌকন দেওয়ার আয়োজন করিয়াও তাহা তাঁহাকে দিতে পারিলেন না, সেজন্য তিনি একটু সময়ও বিলম্ব করিতে প্রস্তুত হইলেন না।

[বায়হাকী, ইবনে মাজাহ, জামে বায়ানুল ইলম, মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা আল- হাদীস আল মুহাদ্দীসুন, পৃষ্ঠা ১১০।]

একদা নবী করীম (ﷺ) একটি হাদীস বর্ণনা করেন। তখন দরবারে উপস্থিত হযরত সায়েব ইবনে খাল্লাদ এবং হযরত আকাবা ইবনে আমেরও উহা শ্রবণ করেন। উত্তরকালে হাদীসটি সম্পর্কে হযরত সায়েবের মনে কিছুটা বিস্মৃতি ঘটে, উহার ভাষা সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু হাদীস সম্পর্কে একবিন্দু সন্দেহ মনের মধ্যে পোষণ করা কিছুতেই উচিত নয় মনে করিয়া তিনি মিসরে অবস্থানকারী হযরত আকাবার নিকট উপস্থিত হইয়া হাদীসটি শ্রবণ ও স্বীয় ভ্রম ও সন্দেহের অপনোদন করার জন্য উদ্যোগী হইলেন। প্রথমে তিনি মিসরের শাসনকর্তা মুসলিম ইবনে মাখলাদের নিকট উপস্থিত হইলেন। ইবনে মাখলাদ তাঁহাকে অতিথি হিসাবে পাইয়া বিশেষে সন্তুষ্টি সহকারে অভ্যর্থনা জানাইলেন। কিন্তু হযরত সায়েচ বলিলেনঃ আমি কোথাও বিলম্ব ‘করিতে প্রস্তত নহি, অনতিবিলম্বে আকাবার সহিত সাক্ষাত করা আবশ্যক। পরে তিনি আকাবার নিকট উপস্থিত হন এবং রক্ষিত হাদীসের সাহিত উহার তুলনা করিয়া লইলেন। অতঃপর উহার সঠিক সত্যতা ও ও যথার্থতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হইয়া সান্ত্বনা লাভ করিলেন।

কুরআন মজীদের কোন আয়াতের ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য সম্পর্কে সাহাবীদের মধ্যে মতভেদ হইলে বিশেষজ্ঞের নিকট হইতে উহার মীমাংসা লাভ করিবার উদ্দেশ্যেও দূরদেশে সফর করিতেন। হযরত সায়ীদ ইবনে যুবাইর (রা) বলেনঃ

কুরআনের আয়াতঃ ‘যে লোক কোন মু’মিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করিবে, জাহান্নামই তাহার পরিণতি হইবে’- সম্পর্কে কূফাবাসীদের মতভেদ হয়। তাই আমি ইবনে আব্বাসের নিকট চলিয়া গেলাম ও তাঁহাকে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেনঃ ইহা সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত । কোন জিনিসই ইহাকে রদ বা বাতিল করিতে পারে নাই।

হযরত আবুদ-দরদ (রা) বলেনঃ

কুরআনের কোন আয়াত আমার নিকট দুর্বোধ্য হইলে ইহার ব্যাখ্যার জন্য যদি মক্কা হইতে পাঁচ রাত্রি পথ দূরে অবস্থিত এক ব্যক্তির নিকট যাইতে হইতে তবুও আমি তথায় যাইতাম।

সাহাবায়ে কিরামের একজন দূরবর্তী স্থানে অবস্থানকারী অপর এক সাহাবীর নিকট হইতে পত্রালাপের মাধ্যমেও রাসূলের হাদীস জানিতে ও সংগ্রহ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন।

হযরত মুয়াবিয়া দামেশক হইতে হযরত মুগীরার নিকট কূফা নগরে এক পত্র প্রেরণ করিয়াছিলেন। তাহাতে লিখিয়াছিলেনঃ

আপনি রাসূলের নিকট যাহা কিছু শুনিতে পাইয়াছেন, তাহা আমাকে লিখিয়া পাঠান।

তখন হযরত মুগীরা লিখিয়া পাঠাইলেনঃ নবী করীম (ﷺ) নিম্নোক্ত দোয়া প্রত্যেক নামাযান্তে পড়িতেনঃ

আল্লাহ ছাড়া কেহ মা’বুদ নাই, তিনি এক ও একক। মালিকানা ও বাদশাহী কেবল তাঁহারই, তাঁহারই জন্য সমগ্র প্রশংসা, তিনি সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ ! তুমি যাহা দাও, তাহা কেহ দিতে পারে না। নিছক চেষ্টা করিয়া ইহার বিপরীত কিছু করা সম্ভব নয়। এই সঙ্গে তিনি ইহাও লিখিয়া পাঠাইলেনঃ

নবী করীম (ﷺ) অপ্রয়োজনীয় ও অর্থনীন তর্কবিতর্ক করিতে বারবার ও বেশী বেশী প্রশ্ন করিতে ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট করিতে নিষেধ করিতেন। তিনি মায়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ বা খারাপ ব্যবহার করা এবং কন্যা সন্তানদের গোপনে হত্যা করা হইতেও নিষেধ করিতেন।

[এই সমস্ত বিবরণ বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, ১০৮৩ ও ৭ম খণ্ড, ৯৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত হইয়াছে।]

খুলাফায়ে রাশেদুন নিজ নিজ খিলাফত আমলে খিলাফতের দায়িত্ব পালন হিসাবে বিভিন্ন স্থানের দায়িত্বশীল লোকদের নিকট প্রয়োজনীয় হাদীস লিখিয়া পাঠাইতেন।

আবূ উসমান বলেনঃ

আমরা উৎবা ইবনে ফারকাদ সেনাপতির সাথে (আজারবাইজান) অবস্থান করিতেছিলাম। তখন হযরত উমর ফারুকের চিঠি আমাদের নিকট (উৎবার নামে) আসিয়া পৌঁছিল। তাহাতে লিখিত ছিলঃ নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন যে, রেশমী কাপড় সেই পুরুষই পড়িতে পারে, যাহার ভাগে পরকালে কিছু নাই।

[বুখারী শরীফ, ২ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৬৭। ]

সাহাবায়ে কিরাম প্রয়োজনের সময় একজন অপরজনকে নিজ হইতেই রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস লিখিয়া পাঠাইয়া দিতেন। উমর ইবনে উবায়দুল্লাহ যখন হারুরীয়া গমন করেন, তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা (রা) তাঁহাকে লিখিয়া পাঠানঃ

রাসূলে করীম (ﷺ) তাঁহার জীবনে কোন একদিন শক্রদলের সহিত মুকাবিলা হওয়ার অপেক্ষায় উদগ্রীব হইয়া বসিয়াছিলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য যখন ঢলিয়া পড়িল, তখন তিনি সংগের লোকদের সম্মুখে দণ্ডয়মান হইলেন। বলিলেনঃ হে লোকগণ ! তোমরা শক্রর সাথে মুকাবিলা ও সাক্ষাতের কামনা করিও না, বরং আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া কর। তাহার পরও শক্রর সহিত সাক্ষাত ঘটিলে অপরিসীম ধৈর্য সহকারে সংগ্রাম চালাইয়া যাও। জানিয়া রাখিও, ‘বেহেশত তলোয়ারের ছায়ার তলে অবস্থিত। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) দাঁড়াইয়া নিম্নোক্ত দোয়া করিলেনঃ

হে আল্লাহ ! কিতাব নাযিলকারী, মেঘ পরিচালনাকারী, শক্র বাহিনীকে পরাজয়দানকারী! তুমি তাহাদিগকে পরাজিত ও পর্যুদস্ত কর এবং আমাদিগকে তাহাদের উপর জয়ী করিয়া দাও।

[মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৪।]

সাহাবায়ে কিরাম (রা) একজন অপরজনের নিকট হইতে হাদীস জিজ্ঞাসা করিয়া উহার সত্যতা যাচাই করিয়া লইতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) একবার হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় আগমন করেন। তখন তাঁহার নিকট হইতে আয়েশা (রা)-র নিকট পৌঁছায়। পরের বারে হযরত আবদুল্লাহ আবার যখন হজ্জ করিতে আসেন, তখন হযরত আয়েশা (রা) তাঁহার বোন-পুত্র উরওয়াকে বলিলেনঃ

হে বোন-পুত্র! তুমি আবদুল্লাহর নিকট চলিয়া যাও এবং আমার নিকট তুমি তাঁহার নিকট হইতে যে বর্ণনা করিয়াছিলে, আমার জন্য উহা সত্যতা যাচাই করিয়া আস।

উরওয়া বলেন, আমি হযরত আবদুল্লাহর নিকট উপস্থিত হইয়া সেই হাদীসটি পুনরায় শুনিবার ইচ্ছা প্রকাশ করি। তিনি উক্ত হাদীসটি বিগত বৎসর যেইভাবে বর্ণনা করিয়াছিলেন, এইবারও ঠিক সেইরূপেই বর্ণনা করিলেন। আমি হযরত আয়েশার নিকট আসিয়া উহা প্রকাশ করিলে তিনি খুবই আশ্চর্যান্বিত হইয়া যান এবং বলেনঃ

আল্লাহর কসম আবদুল্লাহ ইবনে আমর সঠিকরূপে স্মরণ করিয়া রাখিয়াছেন।

[বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৮৬।]

সাহাবায়ে কিরাম যে হাদীসের জন্য বিদেশ সফর করিতনে এবং উহা শিক্ষালাভ করার জন্য বহু কষ্ট স্বীকার ও তিতিক্ষা অবলম্বন করিতেন, তাহা হযরত ইবনে আব্বাসের নিম্নোক্ত উত্তি হইতেও সুস্পষ্টরূপে জানা যায়। তিনি বলেনঃ

আমাদের নিকট যখন অপর কোন ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস পৌঁছিত, তখন যদি তাহার নিকট লোক পাঠাইয়া তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইতে চাহিতাম যে সে আসিয়া আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করিবে, তবে তাহা আমি অনায়াসেই করিতে পারিতাম। কিন্তু তাহা না করিয়া আমি নিজেই তাঁহার নিকট যাইতাম ও তাঁহার ঘরের সম্মুখে শুইয়া পড়িতাম। সে যখন ঘর হইতে বাহির হইত, তখন সে আমার নিকট উক্ত হাদীস বর্ণনা করিত।

ইহা হইতে জানা যায় যে, সাহাবায়ে কিরাম (রা) অপর কোন সাহাবীর বর্ণিত হাদীস লোকমুখে শুনিয়াই সন্তুষ্ট হইতেন না ও সঙ্গে সঙ্গেই উহা নিঃসন্দেহে গ্রহণ করিয়া লইতেন না। বরং উহা সরাসরি মূল হাদীস বর্ণনাকারীর নিকট হইতেই শ্রবণ করিবার জন্য চেষ্টা করিতেন। এইজন্য তারা বর্ণনাকারীর ঘরের সম্মুখে গিয়া উপস্থিত হইতেন। কিন্তু তাঁহাকে ঘর হইতে ডাকিয়া বাহিরে আনা পছন্দ করিতেন না, বরং তিনি কখন নিজে ঘর হইতে বাহির হইবেন, সেইজন্য অপেক্ষা করিতেন। এই প্রতীক্ষা কত দীর্ঘ হইত তাহার অনুমান ইহা হইতে করা যায় যে, অপেক্ষমান লোকেরা প্রতীক্ষায় থাকিয়া থাকিয়া ক্লান্ত হইয়া পড়িতেন ও ঘরের সম্মুখে ক্লান্ত-শ্রান্ত হইয়া শুইয়া পড়িতেন। হাদীস সঠিকরূপে লাভ করার উদ্দেশ্যে সাহাবায়ে কিরামরে এই তিতিক্ষা সত্যই বিস্ময়কর।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন