hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)

২৯
হাদীস সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য রাসূলের নির্দেশ
হযরত রাসূলে করীম (ﷺ)-এর জীবনব্যাপী কথা ও কাজের মাধ্যমেই ইসলামী জীবন ব্যবস্থার রূপায়িত হইয়া উঠিয়াছে। এই কারণে তাঁহার যাবতীয় কথা ও কাজ মুসলিম সমাজের নিকট মহামূল্য সম্পদ। সাহাবায়ে কিরাম রাসূলে করীম (ﷺ)-এর প্রত্যেকটি কথা মনোনিবেশ সহকারে শ্রবণ করিতেন এবং তাঁহার প্রত্যেকটি কাজ ও গতিবিধি সূক্ষ্ণ ও সন্ধানী দৃষ্টিতে লক্ষ্য করিতেন। ফলে রাসূলে করীমের কথা ও কাজ সাহাবাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সঞ্চিত ও সঞ্জীবিত হয়।

কিন্তু এই ব্যাপারে কেবল স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক সংরক্ষণের উপরই সম্পূণূ নির্ভর করা হয় নাই। নবী করীম (ﷺ) নিজেও এই জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছিলেন।

নবী করীম (ﷺ) সাহাবায়ে কিরামকে ইসলাম সম্পর্কিত যাবতীয় কথা, আদেশ-নিষেধ ও উপদেশাবলী মনোনিবেশ সহকারে শ্রবণ করিতে যেমন বলিয়াছেন, উহাকে স্মরণ রাখিতে ও অন্য লোকদের পর্যন্ত উহাকে যথাযথভাবে পৌঁছাইয়া দিতেও তেমনি আদেশ করিয়াছেন। তিনি সাহাবাদের সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেনঃ 

আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে চিরসবুজ চিরতাজা করিয়া রাখিবেন, যে আমার নিকট হইতে কোন কিছু শুনিতে পাইল ও তাহা অন্য লোকের নিকট যথাযথভাবে পৌঁছাইয়া দিল। কেননা পরে যাহার নিকট উহা পৌঁছিয়াছে সে প্রয়াশই প্রথম শ্রোতার তুলনায় উহাকে অধিক হিফাযত করিয়া রাখিতে সক্ষম হইয়াছে।

[তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯০ (১৯৪০ সনের দিল্লী সংস্করণ) ইবন মাজা, দারেমী, আবুদ্দারদা হইতে বর্ণিত মুস্তাদরাক, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৭।]

হযরত আবুদল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) এ হাদীসটি অন্যভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাঁহার বর্ণিত হাদীসটির ভাষা এইরূপঃ

আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে আলোকোদ্ভাসিত করিয়া দিবেন, যে আমার কথা শুনিয়া তাহা স্মরণ করিয়া লইল, উহাকে পূর্ণ হিফাযত করিল এবং অপরের নিকট উহা পৌঁছাইয়া দিল। অনেক জ্ঞান বহনকারী লোকই এমন ব্যক্তির নিকট উহা পৌঁছাইয়া দেয়, যে তাহার অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী ও বিজ্ঞ।

[শাফেয়ী ও বায়হাকী।]

এই সঙ্গে হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রা) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসটির ভাষাও লক্ষণীয়। তিনি বলেনঃ নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেনঃ

আল্লাহ তাহার জীবন উজ্জ্বল করিবেন, যে আমার কথা শুনিয়া উহাকে মুখস্থ করিল ও উহাকে সঠিকরূপে স্মরণ রাখিল এবং উহা এমন ব্যক্তির নিকট পৌঁছাইল যে তাহা শুনিতে পায় নাই।……………।

[ তিরমিযী।]

আবদুল কায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল রাসূল করীম (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হইলে তিনি তাহাদিগকে ইসলামের মূল বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিত শিক্ষাদান করেন এবং তাহাদিগকে বলেনঃ

এই কথাগুলি তোমরা পুরাপুরি স্মরণ করিয়া রাখ, উহাকে পূর্ণরূপে সংরক্ষণ কর এবং তোমাদের পশ্চাতে যাহারা রহিয়াছে তাহাদিগকে এই বিষয়ে অবহিত কর।

[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, কিতাবুল ইলম, ১৯ পৃষ্ঠা।]

সাহাবায়ে কিরামের ভবিষ্যতের দায়িত্ব ও সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলে করীম (ﷺ) বলিয়াছেনঃ

আজ তোমরা (আমার নিকট দ্বীনের কথা) শুনিতেছ, তোমাদের নিকট হইতেও তাহা শোনা হইবে (অন্য লোকেরা শুনিবে), আর তোমাদের নিকট হইতে যাহারা শুনিবে তাহাদের নিকট হইতেও (এই কথা) শোনা হইবে।

[মুস্তাদরাক হাকেম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৫, হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণিত।]

অপর একটি হাদীসে নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেনঃ

‘মুসলিম উম্মতের দ্বীন’ সম্পর্কে চল্লিশটি হাদীস যে ব্যক্তি মুখস্থ করিবে, সংরক্ষণ করিবে, আল্লাহ তা’আলা তাহাকে একজন ফিকাহবিদ বানাইয়া দিবেন এবং আমি কিয়ামতেন দিন তাহার জন্য শাফাআতাকরী ও সাক্ষী হইব।

[মিশকাতুল মাসাবীহ, পৃষ্ঠা ৩৬, হযরত আবুদ্দারদা বর্ণিত।]

নবী করীম (ﷺ)-এর হাদীস সংরক্ষণ সম্পর্কিত এই নির্দেশাবলী ও উপদেশ বাণীর ফলে তদানীন্তন মুসলিম সমাজের প্রায় এক লক্ষ ব্যক্তিই রাসূলের মুখের বাণী ও কাজের বিবরণ সংরক্ষণ করিয়াছেন, মুখস্থ রাখিয়াছেন ও স্মৃতিপটে এমনভাবে জাগরূপ করিয়া রাখিয়াছেন যে, সাধারণত তারা কখন তাহা ভুলিয়া যান নাই। এই ব্যাপারে তাঁহাদের স্বভাবজাত স্মরণশক্তি তাঁহাদের যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছেন। তদুপরি রাসূলের এই আদেশাবলী উহাকে অধিকতর জোরদার করিয়া তুলিয়াছে। রাসূল (ﷺ) যখনই একটি কথা বলিতেন, উপস্থিত সাহাবিগণ তাহা কণ্ঠস্থ করিতে শুরু করিতেন, যেন ভুলিয়া না যান। হযরত সামুরা ইবেন জুবদুব (রা) বলিয়াছেনঃ

রাসূলের যামানায় আমি বালক ছিলাম এবং তখনই আমি রাসূলের কথা মুখস্থ করিতাম।

[মুসলিম শরীফ, ১ম খণ্ড, মুকাদ্দমা, পৃষ্ঠা ১০ নববীসহ।]

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়াছেনঃ

আমরা রাসূলের হাদীস মুখস্থ করিতাম, রাসূলের নিকট হইতে এইভাবে হাদীস মুখস্থ করা হইত।

[মুসলিম শরীফ, প্রথম খণ্ড, মুকাদ্দমা, পৃষ্ঠা ১০ নববীসহ।]

মক্কা বিজয়ের পরের দিন নবী করীম (ﷺ) মুজাহিদীনের সামনে যে ভাষণ প্রদান করেন, তাহার শেষভাগে তিনি বলেনঃ

উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিত লোকদের নিকট এই কথাগুলি পৌঁছাইয়া দেয়। বিদায় হজ্জ্বের ঐতিহাসিক ভাষণের শেষভাগে রাসূলে করীম (ﷺ) উদাত্ত কণ্ঠে বলিয়াছেনঃ

এখানে উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিত লোকদের পর্যন্ত আমার এই কথাগুলি পৌঁছাইয়া দেয়। কেননা যাহাদের নিকট ইহা পৌঁছানো হইবে, তাহাদের অনেকেই আজিকার শ্রোতাদের অপেক্ষা অধিক হাদীস হিফাযতকারী হইতে পার।

[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১।]

বুখারী শরীফে কথাটি এই ভাষায় উদ্ধৃত হইয়াছেঃ

উপস্থিত লোকেরা অনুপস্থিত লোকদের পর্যন্ত এ কথাগুলি পৌঁছাইয়া দেয়। কেননা উপস্থিত লোক হয়ত ইহা এমন এক ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দিবে, যে উহা তাহার অপেক্ষা বেশী হিফাজাত করিয়া রাখিতে সক্ষম হইবে।

[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬।]

ইবন আউনের সূত্রে বর্ণিত হাদীসটির শেষাংশ নিম্নরূপঃ

এমন হইতে পারে যে,আমার কথা স্মরণ করিয়া রাখার ব্যাপারে অনুপস্থিত ব্যক্তি উপস্থিত ব্যক্তি উপস্থিত ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক সক্ষম হইবে।

নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেনঃ

আমার নিকট হইতে একটি আয়াত হইলেও তাহা অবশ্য বর্ণনা কর।

[বুখারী শরীফ, মিশকাত, কিতাবুল ইলম……।]

মাযহারী ও মুল্লা আলী আল-কারী ইহার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করিয়া বলিয়াছেনঃ

আমার হাদীসসমূহ খুব অল্প পরিমাণ হইলেও প্রচার কর।

নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেনঃ

আমার পরে লোকেরা তোমাদের নিকট হাদীস শুনিতে চাহিবে। যখন তাহারা তোমাদের নিকট এই উদ্দেশ্যে আসিবে, তখন তোমরা যেন তাহাদের প্রতি অনুগ্রহশীল হও এবং তাহাদের নিকট আমার হাদীস বর্ণনা কর।

[মুসনাদে আহমাদ, মালিক ইবনে আনাস বর্ণিত। ]

তিনি বলিয়াছেনঃ

তোমরা ইলম শিক্ষা কর ও উহা লোকদিগকে শিক্ষা দাও। তোমরা ফারায়েয বা মিরাসী আইন শিক্ষা কর ও অন্যান্য লোকদিগকেও তাহা শিক্ষা দাও। তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং উহা লোকদিগকে শিক্ষা দাও। কেননা আমাকে একদিন চলিয়া যাইতে হইবে।

[দারেমী শরীফ, পৃষ্ঠা ৪০]

একবার নবী করীম (ﷺ) দোয়া করিয়া বলিতেছিলেনঃ

হে আল্লাহ আমার খলীফাগণকে রহমত কর।

সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করিলেন।

হে রাসূল, আপনার খলীফা কাহারা?

উত্তরে নবী করীম (ﷺ) বলিলেনঃ

যাহারা আমার হাদীসসমূহ বর্ণনা করে ও তাহা লোকদিগকে শিক্ষা দেয় )তাহারাই আমার খলীফা)।

[মুকাদ্দামায়ে দারেমী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫।]

নবী করীম (ﷺ) আরে বলিয়াছেনঃ

দ্বীন সম্পর্কিত কোন বিষয়ে কাহাকেও যদি কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় এবং সে তাহা গোপন রাখে-প্রকাশ না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাহাকে জাহান্নমের আগুনের লাগাম পরাইয়া দেওয়া হইবে।

[মুসনাদে আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজা-]

এইসব নীতিগত কথা ছাড়াও নবী করীম (ﷺ) তাঁহার বিশেষ বিশেষ কাজ সম্পর্কে অপরাপর লোকগিদকে ওয়াকিফহাল করিবার জন্য উপস্থিত সাহাবিগণকে জোরালোভাবে তাগিদ করিতেন।

নিম্নোক্ত হাদীস হইতে এই কথার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়। ইয়াসার বলেনঃ একদিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) আমাকে ফজর ‘উদয়’ হইয়া যাওয়ার পর নামায পড়িতে দেখিতে পান। তখন ইবনে উমর আমাকে বলিলেনঃ

আমরা এইভাবে একদিন নামায পড়িতেছিলাম। এমন সময় নবী করীম (ﷺ) আমাদের নিকট আসিলেন। তখন বলিলেনঃ তোমাদের যাহারা এইখানে উপস্থিত আছ তাহারা যেন অনুপস্থিত লোকদের নিকট আমার এই কথা পৌঁছাইয়া দেয় যে, ফজর হওয়ার পর দুই সিজদা ব্যতীত অন্য কোন নামায পড়া জায়েয নয়।

[মুসনাদে আহমদ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৪।]

মালিক ইবনুল হুয়ায়রিস (রা) বলেনঃ আমরা কিছু সংখ্যক যুবক ও সমবয়স্ক লোক রাসূলে করীম (ﷺ)-এর দরবারে বিশ দিন ও রাত্র অবস্থান করার পর বাড়ি প্রত্যাবর্তন করার ইচ্ছা প্রকাল করিলাম। তখন তিনি বলিলেনঃ

তোমরা তোমদের ঘরের লোকদের নিকট ফিরিয়া যাও, তাহাদের সহিতই বসবাস করিত থাক, তাহাদিগকে (দ্বীন ইসলাম) শিক্ষা দাও এবং তাহা যথাযথ পালন করার জন্য আদেশ কর।

[এই সময় রাসূল (ﷺ) কতকগুলি কাজের উল্লেখ করেন, যাহা আমি স্মরণ করিয়া লইলাম] এবংআমাকে তোমরা যেইভবে নামায পড়িতে দেখিয়াছ, ঠিক সেইভাবেই নামায পড়িও।

[বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৭৬]

এই হাদীস হইতে জানা যায় যে, দূর-দূরান্তর হইতে নও-মুসলিমগণ রাসূল (ﷺ)- এর দরবারে ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে আগমন করিতেন। রাসূল (ﷺ) তাঁহাদিগকে ইসলামী আদর্শ ও শরীয়াত শিক্ষা দিতেন। তাহারা যাহা কিছু শুনিতে ও জানিতে পাইত তাহা স্মরণ রাখার জন্য এবং ফিরিয়া গিয়া নিজ নিজ এলাকার লোকদিগকে তাহা শিক্ষাদান ও প্রচার করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ করিতেন।

এভাবে রাসূল (ﷺ)- এর স্পষ্ট ও নীতিগত আদেশ-নির্দেশের ফলে দূর দূর অঞ্চলে অবস্থিত মুসলিমদের নিকট রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস তীব্র গতিতে পৌঁছিয়া যায় এবং তৎকালীন প্রায় সকল মুসলমানই নির্ভরযোগ্য সূত্রে রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস জানিতে পারে। হাদীস সংরক্ষণ ও প্রচার লাভের ইহাই ছিল প্রাথমিক ও স্বাভাবিক পন্হা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন