hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নারীদের যে বিষয়গুলো না জানলেই নয়

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

২৮০
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ৫ জন নারীর জীবনী উম্মুল মু'মিনীন খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)।
নাম খাদিজা। কুনিয়াত ‘উম্মু হিন্দ'। লকব ‘তাহিরা’। বংশনামা হলো : খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে খুওয়াইলিদ বিন আসান বিন আব্দুল উজ্জা বিন কসাই। মাতার নাম ছিল ফাতিমা বিনত যায়িদ। তিনি আমের বিন লব্বীর বংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র পিতা খুওয়াইলিদ বিন আসাদ একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি শুধু স্বগোত্রেই মহান। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন না বরং সুন্দর আদান-প্রদান ও বিশ্বস্ততার কারণে। সমগ্র কুরাইশের মধ্যে জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।

‘হাতীর সাল’-এর ১৫ বছর পূর্বে ৫৫৫ খৃস্টাব্দে খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকাল থেকেই তিনি নেক ও শরীফ প্রকৃতির ছিলেন। বয়োপ্রাপ্ত হলে আবু হালাহ হিদ বিন নাবাশ তামিমীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আবু হালাহর ঘরে তাঁর দু’টি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। এক পুত্রের নাম ছিল হালাহ। জাহিলী যুগেই সে মৃত্যুবরণ করে। দ্বিতীয় পুত্রের নাম হলো হিন্দ। কতিপয় রাওয়ায়েত অনুযায়ী তিনি সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন।

আবু হালাহর ইন্তিকালের পর খাদিজার (রাদিআল্লাহু আনহা) দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল আতিক বিন আবেদ মাখজুমীর সঙ্গে। তার ঘরেও একটি মেয়ে জন্ম নিয়েছিল। তার নাম ছিল হিন্দ। কিছুদিন পর আতিক বিন আবেদও মারা যান। এক রাওয়ায়েত অনুযায়ী খাদিজার তৃতীয় বিয়ে হয়েছিল তাঁর চাচাত ভাই ছাইফী বিন উমাইয়ার সাথে। তার ইন্তিকালের পর রসূলে কারীমের (ﷺ) সঙ্গে খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বিয়ে সুসম্পন্ন হয়। কিন্তু অন্যান্য রাওয়ায়েত অনুযায়ী খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র তৃতীয় এবং শেষ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। রসূলে কারীম (ﷺ) -এর সঙ্গে।

প্রিয় নবী (ﷺ)-এর সাথে বিয়ের পূর্বে খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিধবা সময়ে একাকীত্বে সময় কাটাতেন। কিছু সময় তিনি কাবা শরীফে অতিবাহিত করতেন এবং কিছু সময় সমকালীন সভ্রান্ত নারী গণকদের সঙ্গে ব্যয় করতেন। সে সময় তিনি তাদের সঙ্গে তৎকালীন বিপ্লব নিয়ে প্রায়ই আলোচনা করতেন। কুরাইশের বড় বড় সরদার তাঁর নিকট বিয়ের পয়গাম প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি সেইসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কেননা একের পর এক দুঃখে তাঁর মন। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়েছিল।

এদিকে বার্ধক্যের কারণে তাঁর পিতা নিজের বিরাট বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা প্রশ্নে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। কোন পুত্র সন্তান জীবিত ছিল না। সকল কাজ-কারবার মেধা ও ব্যুৎপত্তি সম্পন্ন কন্যার হাতে সোপর্দ করে তিনি নির্জনত্বে চলে যান। কিছুদিন পর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। কতিপয় রাওয়ায়েতে আছে যে, খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র পিতা খুওয়াইলিদ বিন আসাদ ফুজ্জারের যুদ্ধে মারা যান এবং তাঁর চাচা আমর বিন আসাদ তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। যাহোক এটা সন্দেহাতীত ব্যাপার যে, প্রিয় নবী (ﷺ) -এর সঙ্গে তাঁর বিয়ের সময় খুওয়াইলিদ জীবিত ছিলেন না এবং আমর বিন আসাদই খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-এর অভিভাবক ছিলেন।

খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ব্যবসা অব্যাহত রাখলেন। সে সময় তাঁর ব্যবসা একদিকে সিরিয়া এবং অন্যদিকে সমগ্র ইয়েমেনে বিস্তৃত ছিল। এই বিরাট ব্যবসা পরিচালনার জন্য তিনি বিপুল সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করেছিলেন। এদের মধ্যে আরব, ইহুদী ও খৃস্টান কর্মচারী এবং গোলাম ছিল। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং বিশ্বস্ততার কারণে তাঁর ব্যবসা ক্রমেই উন্নতির দিকে। এগিয়ে চলছিল। এসময় তিনি একজন অসাধারণ যোগ্য, মেধাসম্পন্ন ও বিশ্বস্ত লোকের সন্ধানে ব্যাপৃত ছিলেন, যাতে তিনি নিজের নেতৃত্বে এই সময় কর্মচারীকে বাণিজ্যিক কাফেলার সঙ্গে বাইরে প্রেরণ করতে পারেন।

যুগটি ছিল সেই যুগ যখন প্রিয় নবী (ﷺ) -এর পবিত্র চরিত্র ও সুন্দর গুণাবলীর কথা প্রতিটি ঘরে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। সে সময় তিনি ছিলেন যুবক এবং সমগ্র জাতির মধ্যে আমিন উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র কানে এই পবিত্র ব্যক্তির কথা না পৌছাটা অসম্ভব। ব্যাপার ছিল। তিনি নিজের ব্যবসা তত্ত্বাবধানের জন্য এই ধরনের গুণ বিশিষ্ট ব্যক্তির সন্ধানেই ছিলেন। তিনি মুহাম্মাদ -কে বাণিজ্যিক পণ্য সিরিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে পাঠালেন এবং জানালেন যে, যদি এতে সম্মত হন তাহলে তিনি তাঁকে ভালভাবেই স্মরণ রাখবেন। প্রিয় নবী (ﷺ) সে সময় তাঁর চাচা আবু তালিবের অভিভাবকত্বে ছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যে খাদিজার (রাদিআল্লাহু আনহা) ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে অবহিত হতেন। তিনি 45 খাদিজার প্রস্তাব মঞ্জুর করলেন এবং বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে বসরা রওয়ানা হয়ে গেলেন। রওয়ানার প্রাক্কালে খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) নিজের বিশেষ গোলাম মাইছারাহকে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সঙ্গে দিলেন এবং তাকিদ দিয়ে বলে দিলেন যে, সফরকালে যেন তাঁর কোন কষ্ট না হয়।

রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর বিশ্বস্ততা এবং সুন্দর আচরণের বদৌলতে সকল পণ্য দ্বিগুণ লাভে বিক্রি হয়ে গেল। সফরকালে কাফেলা সরদার অর্থাৎ প্রিয় নবী (ﷺ) সাথী বা সতীর্থদের সাথে এমন সুন্দর আচরণ করলেন যে, সকলেই তাঁর প্রশংসাকারী হয়ে গেল। কাফেলা যখন মক্কা ফিরে এলো তখন খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) মাইছারাহর মুখে সফরের বর্ণনা ও লাভের বিস্তারিত তথ্য শুনতে পেয়ে অত্যন্ত প্রভাবান্বিত হলেন এবং নিজের দাসী নাফিসার মাধ্যমে মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর নিকট বিয়ের পয়গাম প্রেরণ করলেন। মুহাম্মাদ (ﷺ) ইঙ্গিত পেয়ে সে খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র চাচা আমর বিন আসাদকে ডেকে আনলেন। সে সময় তিনিই তাঁর অভিভাবক ছিলেন।

অন্যদিকে মুহাম্মাদ এ নিজের চাচা আবু তালিব এবং বংশের অন্যান্য। গণ্যমান্যদেরকে সঙ্গে নিয়ে খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বাড়ীতে গেলেন। আবু তালিব বিয়ের খুতবাহ পড়লেন এবং পাঁচ’শ দিরহাম মোহর নির্ধারিত হলো। সে সময় প্রিয় নবী (ﷺ) এর বয়স ছিল ২৫ বছর এবং খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) এর বয়স ছিল ৪০ বছর।

বিয়ের পর মুহাম্মাদ (ﷺ) প্রায়ই ঘরের বাইরে কাটাতে লাগলেন। একাধারে কয়েকদিন মক্কার পাহাড়ে গিয়ে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। মোটকথা এভাবেই ১০টি বছর কেটে গেল। একদিন এমনিভাবেই প্রিয় নবী (ﷺ) হেরা পর্বতের গুহায় ইবাদতে ব্যাপৃত ছিলেন। আল্লাহর নির্দেশে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তাঁর নিকট আবির্ভূত হলেন এবং বললেন, কুম ইয়া মুহাম্মাদ।' অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ! দাঁড়াও। রসূলুল্লাহ, দৃষ্টি উপরের দিকে ওঠালেন। এ সময় তিনি সামনে নুরানী চেহারার একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলেন। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন এবং বললেন, পড়। মুহাম্মাদ (ﷺ) বললেন, আমিতো লিখাপড়া জানি না। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) পুনরায় একই কথা বললেন এবং মুহাম্মাদ, একই জবাব দিলেন। তৃতীয়বার যখন জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন। “পড়ুন (হে রসূল) আপনার রবের নাম নিয়ে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। জমাট পিন্ড থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আপনি পড়ন, আপনার রব বড়ই দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন।”

জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) যা বললেন মুহাম্মাদ, এর পবিত্র মুখ দিয়েও একই কথা বেরিয়ে এলো। এই আশ্চর্যজনক ঘটনায় রসূল (ﷺ) -এর উপর সীমাহীন প্রভাব পড়লো। বাড়ী ফিরে বললেন, আমাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দাও।'

খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) নির্দেশ পালন করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথায় ছিলেন? আমিতো চিন্তিত হয়ে কয়েকজনকে আপনার সন্ধানে পাঠিয়েছি। প্রিয় নবী (ﷺ) সকল ঘটনা খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) নিকট হুবহু বর্ণনা করলেন। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, আপনি সত্যি কথা বলে থাকেন, গরীবদের সাহায্য করেন, অতিথিপরায়ণ, আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করেন, আমানতদার এবং দুঃখী মানুষের খোঁজ-খবর আপনি নেন। আল্লাহ আপনাকে একাকী ছেড়ে দেবেন। না।

অতঃপর রসূল (ﷺ) -কে সঙ্গে নিয়ে নিজের চাচাতো ভাই ওয়ারকাহ বিন নাওফলের নিকট গেলেন। জাহেলী যুগে এই ওয়ারকাহ মূর্তি পূজা পরিত্যাগ করে খৃস্টান হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন তাওরিত, যাবুর ও ইনজিলের একজন বড় আলেম। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর সাথে। সংঘটিত সকল ঘটনা তাঁর সামনে বর্ণনা করলেন। ওয়ারকাহ ঘটনা শুনতেই বলে উঠলেন : “এতো সেই জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) যিনি মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেই সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতাম, যখন আপনার কওম (জাতি) আপনাকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করবে!

রসূল (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, এইসব মানুষ কি আমাকে বহিষ্কার করবে? ওয়ারকাহ বললেন, “হাঁ, আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা কারোর উপর অবতীর্ণ হলে দুনিয়া তাঁর বিরোধী হয়ে যায়। আমি যদি সে সময় পর্যন্ত জীবিত থাকি তাহলে আপনাকে আমি পুরোপুরি সাহায্য করবো।' এই আলোচনার পর খুব শিগগিরই ওয়ারকাহ পরলোকগমন করেছিলেন। তবুও খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র পূর্ণ আস্থা জন্মেছিল যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) রিসালতের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। বস্তুত তিনি নির্দ্বিধায় মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উপর ঈমান আনলেন। সকল স্কলাররাই ঐকমত্য পোষণ করেন যে, নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারিণী হলেন খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)।

প্রিয় নবী (ﷺ) -এর সঙ্গে বিয়ের পর খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) প্রায় ২৫ বছর (অর্থাৎ ওহি নাযিলের প্রায় ৯ বছর পর পর্যন্ত) জীবিত ছিলেন। এই সময় তিনি রসূল -এর সঙ্গে প্রত্যেক ধরনের অন্তর কম্পিত করা মুসিবত হাসিমুখে সহ্য করতেন এবং প্রিয় নবী (ﷺ) -এর বন্ধুত্ব ও জীবন উৎসর্গের হক আদায় করেন। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র ইসলাম গ্রহণের পর রসূল (ﷺ) -এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও ইসলামের স্পন্দন সৃষ্টি হয়। যুবকদের মধ্যে আলী (রাদিআল্লাহু আনহা), বয়স্কদের মধ্যে আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু) সর্বপ্রথম ঈমান আনেন। তাঁদের পর অন্যান্য সুন্দর স্বভাবের লোকও আস্তে আস্তে ইসলাম গ্রহণ শুরু করেন। ইসলামের ব্যাপকতায় খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) খুবই আনন্দিত হতেন এবং তিনি অমুসলিম আত্মীয়-স্বজনের তীক্ষ্ণ বিদ্রুপ ও উপহাসকে উপেক্ষা করে নিজেকে হকের দাওয়াতে রসূল (ﷺ) -এর দক্ষিণ হস্ত হিসেবে প্রমাণ করতে লাগলেন। তিনি সমস্ত ধন-সম্পদ ইসলামের জন্য ও এতিম-বিধবাদের উন্নতি, অসহায়দের সাহায্য ও অভাবগ্রস্তদের অভাব দূরীকরণে দান (ওয়াকফ) করে দিয়েছিলেন। এদিকে কুরাইশ কাফিররা নও-মুসলিমদের উপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছিল এবং হকের দাওয়াতের পথে সব ধরনের বাধা আরোপ করছিল। তারা প্রিয় নবী (ﷺ) এবং তাঁর অনুসারীদের উপর নির্যাতন চালানোর প্রশ্নে সামান্যতম কুণ্ঠাও প্রকাশ করেনি।

কাফিরদের অর্থহীন এবং বাজে কথায় যখন রসূল (ﷺ) এর হৃদয়তন্ত্রী দুঃখ। ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতো তখন খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) আরজ করতেন : ‘ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি দুঃখিত হবেন না। এমন কোন রসূল কি আজ পর্যন্ত আগমন করেছেন, যাঁকে নিয়ে মানুষ উপহাস করেনি!' খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র এই কথায় মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুঃখ-কুষ্ট দূর হয়ে যেত। মোট কথা, সেই দুর্যোগপূর্ণ দিনে খাজিদাতুল কুবরা (রাদিআল্লাহু আনহা) শুধুমাত্র রসূল (ﷺ) -এর দুঃখের ভাগীদারই ছিলেন না। বরং প্রতিটি আপদ-বিপদে তাঁকে। সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকতেন।

প্রিয় নবী (ﷺ) বলতেনঃ আমি যখন কাফিরদের নিকট থেকে কোন কথা শুনতাম এবং আমার নিকট অসহনীয় মনে হতো তখন আমি তা খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে বলতাম। সে আমাকে এমনভাবে সাহস যোগাতো যে। আমার অন্তর শান্ত হয়ে যেত। আর এমন কোন দুঃখ ছিল না যা খাদিজা। (রাদিআল্লাহু আনহা)-র কথায় হাল্কা হতো না। আফিফ কিন্দী বর্ণনা করেছেন, জাহেলী যুগে একবার আমি কিছু দ্রব্য ক্রয়ের জন্য মক্কা এসেছিলাম এবং আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন আব্দুল মুত্তালিবের নিকট অবস্থান করেছিলেন। পরের দিন সকালে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সাথে বাজারের দিকে গেলাম। যখন কাবার নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলাম তখন এক যুবক সেখানে এলো। সে নিজের মাথা আসমানের দিকে উঁচু করে দেখলো এবং কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি কিশোর এলো এবং প্রথম যুবকের পাশে দাঁড়িয়ে গেল। এই তিনজন সলাত আদায় করলো এবং চলে গেল। আমি আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আব্বাস! মক্কায় বিপ্লব আসছে বলে অনুমিত হচ্ছে। আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, ‘হ্যা, এই তিনজন কে তা তুমি জানো? আমি বললাম, না।' আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, এই যুবক এবং কিশোর উভয়েই আমার ভ্রাতুস্পুত্র। যুবকটি হলো আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং কিশোরটি হলো আবু তালিব বিন আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)। যে নারী উভয়ের পিছনে সলাত আদায় করলো সে আমার ভ্রাতুস্পুত্র মুহাম্মাদ (ﷺ) - এর স্ত্রী এবং খুওয়াইলিদের কন্যা খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)। আমার ভ্রাতুষ্পত্রের দাবী হলো, তার দ্বীন ইসলামী দ্বীন এবং সে আল্লাহর হুকুমে প্রত্যেক কাজ করে থাকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই তিনজন ছাড়া অন্য কেউ এই দ্বীনের অনুসারী আছে বলে আমার জানা নেই।

আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু)-র এই কথা শুনে আমার অন্তরে সাধ জাগলো যে, হায়! আমি যদি চতুর্থ ব্যক্তি হতাম!

এই ঘটনায় অনুমান করা যায় যে, কি প্রতিকূল অবস্থায় খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) প্রিয় নবী (ﷺ) -কে সহযোগিতা করেছিলেন। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র এই দরদি, আন্তরিকতা ও জীবন উৎসর্গের কারণেই প্রিয় নবী (ﷺ) তাঁকে সীমাহীন ভালোবাসতেন। যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন ততদিন নবী (ﷺ) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) অত্যন্ত সুন্দরভাবে সন্তানদের লালনপালন, সুষ্ঠুভাবে সাংসারিক কাজ এবং সম্পদ ও বিত্তশালী। হওয়া সত্ত্বেও প্রিয় নবী (ﷺ) এর খিদমত স্বহস্তে করতেন। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, একবার জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট আসলেন এবং বললেন, “খাদিজা পাত্র করে কিছু নিয়ে আসছেন। আপনি তাঁকে আল্লাহ এবং আমার সালাম পৌঁছে দেবেন।”

রসূলুল্লাহ ও এর প্রতি খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র এত গভীর ভালোবাসা। ও আস্থা ছিল যে, নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে এবং পরে নবী (ﷺ) যা কিছু বলেছেন সব সময় তাই তিনি জোরের সাথে সমর্থন ও সত্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এজন্য নবী (ﷺ) তাঁকে সীমাহীন প্রশংসা করতেন।

নবুয়ত প্রাপ্তির সাত বছর পর কুরাইশ মুশরিকরা বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবসহ রসূল (ﷺ) এবং সকল নতুন মুসলিমদেরকে বয়কট করে এবং তারা প্রায় তিনটি বছর গাছের পাতা-ছাল খেয়ে পাহাড়ের ঢালে জীবনযাপন করে। এই বিপদের সময় খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে ছিলেন। অবরোধের পুরো তিনটি বছর অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট তিনি সাহসিকতার সাথে সহ্য করেন।

নবুয়ত প্রাপ্তির দশম বছরে এই নির্যাতনমূলক অবরোধ শেষ হয়। কিন্তু তারপর খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) বেশী দিন জীবিত ছিলেন না। পবিত্র রমাদানে অথবা তার কিছুদিন পূর্বে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রিয় নবী (ﷺ) তাঁর চিকিৎসা ও সেবা-শ্ৰষাতে কোনো কমতি করেননি। হায়! মৃত্যুর তো কোন চিকিৎসা নেই! নবুয়তের ১০ম বছরের ১১ই রমাদান তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তিকাল করলেন। মক্কার হাজুন নামক কবরস্তানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। সে সময় তাঁর বয়স প্রায় ৬৫ বছর ছিল।

তাঁর মৃত্যুতে রসূলুল্লাহ, সীমাহীন দুঃখ পেলেন। সাওদা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র সঙ্গে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রায় সময়েই বিষন্ন থাকতেন।

খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র ইন্তিকালের পরও তাঁর প্রতি প্রিয় নবী (ﷺ) - এর গভীর ভালোবাসা বিদ্যমান ছিল। রসূল (ﷺ) যখন কোন কুরবানী করতেন তখন প্রথম খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বান্ধবীদেরকে গোত প্রেরণ করতেন এবং পরে অন্যদেরকে দিতেন। খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র কোন আত্মীয় তাঁর নিকট এলে তিনি তাদের খুব যত্ন করতেন।

খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র মৃত্যুর পর একটি সময় পর্যন্ত রসূলুল্লাহ (ﷺ) ততক্ষণ ঘর থেকে বাইরে বেরুতেন না যতক্ষণ খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র প্রশংসা না করতেন। এমনিভাবে যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন তাঁর উল্লেখ করে অনেক প্রশংসা করতেন। আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, একবার নবী (ﷺ) যথারীতি খাদিজার প্রশংসা শুরু করলেন। আমার ঈর্ষা হলো। আমি বললাম, “ইয়া রসূলুল্লাহ! তিনি একজন বৃদ্ধা বিধবা নারী ছিলেন। আল্লাহ তার পর আপনাকে তাঁর থেকে উত্তম স্ত্রী দিয়েছেন” এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর চেহারা মুবারক ক্রোধে লাল হয়ে গেল এবং বললেন : “আল্লাহর কসম! খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে ভালো স্ত্রী আমি পাইনি। যখন সবাই কাফির ছিল তখন সে ঈমান এনেছিল সবাই যখন আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তখন সে আমাকে সত্য হিসেবে মেনে নিয়েছিল। সে নিজের সকল ধন-সম্পদ আমার জন্য কুরবানী করে দিয়েছিল। যখন অন্যরা আমাকে বঞ্চিত রেখেছিল তখন আল্লাহ তার গর্ভে আমার সন্তান দিয়েছিলেন।”

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং সেই দিনই প্রতিজ্ঞা করলাম যে, ভবিষ্যতে রসূল (ﷺ) -এর সামনে কখনো খাদিজা। (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে এমন তেমন বলবো না।

খাদিজা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র গর্ভে আল্লাহ নবী (ﷺ) -কে ৬টি পুত্র ও কন্যা সন্তান দিয়েছিলেন। সর্বপ্রথম কাসেম ভূমিষ্ঠ হন। তিনি শৈশবকালেই ইন্তিকাল করেন। অতঃপর যায়নাব (রাদিআল্লাহু আনহা), তারপর আব্দুল্লাহ। তিনিও ছোট বয়সেই মারা যান (তাঁর উপাধি ছিল তাইয়েব এবং তাহের)। অতঃপর রোকাইয়া (রাদিআল্লাহু আনহা)। এরপর উম্মে কুলসুম (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং তারপর ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) জন্মগ্রহণ করেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন