hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নারীদের যে বিষয়গুলো না জানলেই নয়

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

২৮২
উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)
নাম আয়িশা। লকব সিদ্দিকাহ এবং হোমায়রা। উম্মে আব্দুল্লাহ কুনিয়াত। কুরাইশের বনু তাইম খান্দানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন। বংশ পরিচয় হলো : আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন আবি কাহাফা (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন আমের বিন আমর বিন কা'বা বিন। সা’দ বিন তাইম বিন মারবাহ বিন কা'বা বিন লুব্বী।

মাতার নাম ছিল উম্মে রুমান (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে আমের এবং তিনিও ছিলেন বিখ্যাত সাহাবীয়াহ। নবী (ﷺ) -এর নবুয়ত প্রাপ্তির চার বছর পর শাওয়াল মাসে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) জন্মগ্রহণ করেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র শৈশবকাল কেটেছিল সিদ্দিকে আকবর (রাদিআল্লাহু আনহু)-র মত জালিলুল কদর সাহাবার ছায়াতলে। শৈশবকাল। থেকেই তিনি ছিলেন সীমাহীন মেধাসম্পন্ন এবং শৈশবকালের সকল কথাই তাঁর স্মরণ ছিল। বলা হয়ে থাকে যে, অন্য কোন সাহাবী অথবা সাহাবীয়ার এত স্মরণ শক্তি ছিল না।

রসূল (ﷺ) -এর পূর্বে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র সম্পর্ক জাবির বিন মাতয়ামের পুত্রের সঙ্গে স্থির হয়েছিল। কিন্তু জাবির মায়ের ইঙ্গিতে এই সম্পর্ক বাতিল করে দেয়। কেননা আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং তাঁর পরিজন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এরপর খাওলা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে হাকিমের উদ্যোগে নবী (ﷺ) আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জন্য পয়গাম প্রেরণ করলেন। আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূলে কারীম (ﷺ) এর মুখে ডাকা ভাই ছিলেন। তিনি তাজ্জব হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ভাইয়ের কন্যার সঙ্গে কি বিয়ে হয়?” খাওলা (রাদিআল্লাহু আনহা) এ কথা নবী (ﷺ) -কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, “আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু) আমার দ্বীনি ভাই। এ ধরনের ভাইদের সন্তানদের সঙ্গে বিয়ে জায়িয আছে।” সিদ্দিকে আকবর (রাদিআল্লাহু আনহু)-র পক্ষে এরচেয়ে বড় খুশী আর কি ছিল যে, তাঁর কন্যার বিয়ে হবে রসূল (ﷺ) এর সঙ্গে। তিনি তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলেন। বস্তুত হিজরতের তিন বছর আগে শাওয়াল মাসে ৬ বছর বয়সে রসূল (ﷺ) -এর সঙ্গে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) স্বয়ং বিয়ে পড়ালেন। পাঁচশ’ দিরহাম মোহর নির্ধারিত হলো।

একবার শাওয়াল মাসে আরবে প্লেগ রোগ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছিল। এই রোগে হাজার হাজার পরিবার ধবংস হয়ে গিয়েছিল। সে সময় থেকে আরববাসীর নিকট শাওয়াল মাস অপয়া মাস হিসেবে বিবেচিত হতো এবং তারা এ মাসে আনন্দ-উৎসব করতে অহীহা প্রকাশ করতো। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বিয়েও শাওয়াল মাসে সম্পন্ন হয়েছিল এবং কয়েক বছর পর কন্যা বিদায়ও শাওয়াল মাসেই হয়েছিল। সেই সময় থেকে শাওয়াল মাস অপয়া হওয়ার চিন্তা মানুষের অন্তর থেকে দূর হয়।

নবী (ﷺ) আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র সঙ্গে বিয়ের সুসংবাদ স্বপ্নে লাভ করেছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, এক ব্যক্তি রেশমে লেপ্টানো কোন বস্তু তাঁকে প্রদর্শন করছে এবং বলছে, “এই বস্তু আপনার।” তিনি তা খুলে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে পেয়েছিলেন। খুব সাধারণভাবে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বিয়ে হয়েছিল। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) জন্মগতভাবে মুসলিম ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেছেন, “যখন আমি পিতা-মাতাকে চিনতে শুরু করি তখন তাঁদেরকে মুসলিম হিসেবে পেয়েছি।” এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, জীবনের শুরু থেকেই আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র উপর কুফর ও শিরকের ছায়াও পড়েনি।

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র সঙ্গে বিয়ের তিন বছর পর রসূল (ﷺ) আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে সাথে নিয়ে হিজরত করে মদীনা যান। মদীনা পৌছে প্রিয় নবী (ﷺ) এবং আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) পরিবার-পরিজন আনার জন্য যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন হারেছা, আবু রাফে (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং আবদুল্লাহ বিন আরিকত (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে মক্কা প্রেরণ করেন। যখন তাঁরা ফিরে এলেন তখন যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন। হারেছার সঙ্গে ছিলেন ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা), উম্মে কুলছুম (রাদিআল্লাহু আনহা), সাওদা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিনতে যামাআ, উম্মে আইমান। (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং উসামা (রাদিআল্লাহু আনহা) বিন যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু)।

অন্যদিকে আবদুল্লাহ বিন আরিকত (রাদিআল্লাহু আনহু)র সঙ্গে ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু), উম্মে রুমান (রাদিআল্লাহু আনহা), আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং আসমা বিনতে আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহা)। মদীনা পৌঁছে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বনু হারেছের মহল্লায় অবস্থিত শ্রদ্ধেয় পিতার গৃহে অবতরণ করলেন। প্রথম দিকে মদীনার আবহাওয়া মুহাজিরদের সহ্য হলো না। আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তাঁর সেবা-শুশ্রুষা করলেন। যখন আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) সুস্থ হয়ে উঠলেন তখন তিনি স্বয়ং অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অসুখও এত কঠিন ছিল যে, মাথার চুল পড়ে গেল। এ সত্ত্বেও জীবনে বেঁচে গেলেন। যখন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হলো তখন সিদ্দিকে আকবর (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) এর নিকট আরজ করলেন, “ইয়া রসূলুল্লাহ! আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে আপনি উঠিয়ে নেন না কেন?” রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, “বর্তমানে আমার নিকট মোহর নেই।” সিদ্দিকে আকবর (রাদিআল্লাহু আনহা) নিজের নিকট থেকে পাঁচশ দিরহাম রসূল (ﷺ) সেবায় করজে হাসানা হিসেবে পেশ করলেন। এই অর্থ তিনি গ্রহণ করলেন এবং আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট তা প্রেরণ করে প্রথম হিজরীর শাওয়াল মাসে তাঁকে তুলে নিলেন। সে সময় আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বয়স ছিল ৯ বছর। অন্য রাওয়ায়েতে ১২ বছর বলা হয়েছে।

তৃতীয় হিজরীতে ওহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। একটি ভুলের কারণে যখন যুদ্ধের দৃশ্য পরিবর্তিত হয়ে গেল এবং রসূল (ﷺ) এর শাহাদাতের খবর ছড়িয়ে পড়লো তখন মদীনা থেকে আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) সুফিয়া (রাদিআল্লাহু আনহা), ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং অন্য মুসলিম নারীরা পাগলিনীর মত যুদ্ধের ময়দানের দিকে এগিয়ে গেলেন। সেখানে পৌছে নবী (ﷺ) -কে সুস্থ দেখে শুকরিয়া আদায় করলেন। তাঁরা সকলে মিলে রসূল (ﷺ) -এর ক্ষতস্থান। পরিষ্কার করলেন এবং মশক ধরে ক্ষতস্থানে পানি ঢাললেন। এদিক ওদিক বিশৃংখল অবস্থায় অবস্থারত সাহাবীরা যখন রসূল (ﷺ) -এর চারপাশে একত্রিত হওয়া শুরু করলেন তখন তাঁরা মদীনা ফিরে গেলেন।

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) লিখেছেন, আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) খন্দকের পরিখার যুদ্ধেও দুর্গের বাইরে বেরিয়ে যুদ্ধের চিত্র দেখতেন। রসূল (ﷺ) -এর নিকট অন্যান্য যুদ্ধেও অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সহীহ বুখারীতে আছে, তিনি রাতে ঘুম থেকে উঠে কবরস্তানে চলে যেতেন। এই সব রাওয়ায়েতে প্রমাণিত হয় যে, উম্মুল মু'মিনীন প্রকৃতিগতভাবে অত্যন্ত সাহসী এবং ভয়হীন ছিলেন।

আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)-র পবিত্র জীবনে চারটি ঘটনা অপরিসীম গুরুত্বের দাবীদার। এই চারটি ঘটনা হলো : ইফক, ইলা, তাহরিম এবং তাখাইয়্যির।

(১) ইফকের ঘটনা:

বনু মুসতালিকের যুদ্ধের সফরে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) রসূল (ﷺ) এর সফর সঙ্গী ছিলেন। রাস্তায় এক স্থানে রাতে কাফেলা অবস্থান করলো। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য তাঁবু থেকে বের হয়ে দূরে চলে গেলেন। অসাবধানতাবশতঃ গলার হার সেখানে পড়ে গেল। এ হার তিনি বোন আসমা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট থেকে চেয়ে এনেছিলেন। সেখান থেকে ফিরে যখন বুঝতে পারলেন যে, হারটি হারিয়ে গেছে তখন খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন। অতঃপর ফিরে সেদিকে গেলেন। ধারণা করেছিলেন যে, কাফেলা রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই হারটি সন্ধান করে ফিরে আসতে পারবেন। যখন হার সন্ধান করে ফিরে এলেন তখন কাফেলা রওয়ানা হয়ে গেছে। তিনি খুব ঘাবড়ে গেলেন। অনভিজ্ঞতার বয়স। চাদর উড়িয়ে সেখানেই শুয়ে রইলেন। সাফওয়ান (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন মুয়াত্তাল নামক এক সাহাবী কোন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রয়োজনে কাফেলার পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে চিনে ফেললেন। কেননা শৈশবে (অথবা পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে) তাঁকে দেখেছিলেন। তিনি তাঁকে পিছে পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। যখন ঘটনা বিস্তারিত জানতে পারলেন অতঃপর উম্মুল মু'মিনীন (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে উটে বসিয়ে দ্রুত। কাফেলার দিকে রওয়ানা হলেন এবং দ্বিপ্রহরের সময় কাফেলার সঙ্গে গিয়ে একত্রিত হলেন। নামকরা মুনাফিক আব্দুল্লাহ বিন উবাই যখন এই ঘটনার কথা জানতে পারলো তখন সে আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)-র ব্যাপারে রটিয়ে দিল যে তিনি আর এখন পবিত্র নেই। সাদাসিধে মনের কতিপয় মুসলিমরাও ভুল ধারণার শিকার হলেন। রসূলে কারীম (ﷺ) প্রাকৃতিকভাবে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন এবং আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)-র অন্যায় অপবাদের দুঃখে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। এ সময় আল্লাহর কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো এবং পবিত্রতার আয়াত নাযিল হলো :

“যখন তোমরা এই ঘটনা শুনলে তখন মুমিন পুরুষ ও নারীদের সম্পর্কে ভাল ধারণা কেন পোষণ করনি এবং কেন বলনি যে এটা নীরেট অপবাদ। (সূরা নূর : ১২)” পবিত্রতার আয়াত নাযিল হওয়ার পর শত্রুদের মুখ কালো হয়ে গেল এবং সাধারণ মুসলিম, যারা ভুল ধারণার শিকার হয়েছিলেন, তাঁরা খুব লজ্জিত হলেন। তাঁরা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর নিকট ক্ষমা চাইলেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র মাথা গৌরবে উঁচু হয়ে গেল। তিনি বললেন, আমি শুধু আমার আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ এবং অন্য কারো নিকট কৃতজ্ঞ নই।

(২) তাহরিমের ঘটনা :

প্রিয় নবী (ﷺ) এর নিয়ম ছিল আসরের সলাতের পর স্ত্রীদের (রাদিআল্লাহু আনহুমা) নিকট কিছুক্ষণের জন্য গমন করতেন। একবার যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাদিআল্লাহু আনহা)-এর নিকট বেশ দেরী হয়ে গেল। এতে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) ঈর্ষান্বিত হলেন। তিনি গোপনে খোজ নিয়ে জানতে পেলেন যে, নবী যায়নাব (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট থেকে মধু খেয়েছেন। এই মধু কেউ তাঁকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) হাফছা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে বললেন, যখন নবী (ﷺ) আমাদের এবং তোমাদের ঘরে আসবেন তখন বলতে হবে, ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি মাগাফিরের মধু খেয়েছেন [মোগাফির এক ধরনের ফুল। মৌমাছি এই ফুলে বসে মধু আহরণ করে। আর এ মধুতে সামান্য দুর্গন্ধ হয় এবং প্রিয় নবী (ﷺ) সব ধরনের দুর্গন্ধই অপছন্দ করতেন]। যখন নবী (ﷺ) বলবেন যে, যায়নাব (রাদিআল্লাহু আনহা) মধু পান করিয়েছে তখন তোমরা বলবে, সম্ভবত এই মধু আরফাতের মৌমাছির আহরিত মধু। যখন নবী (ﷺ) হাফছা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট গেলেন তখন এই আলোচনা হলো। অতঃপর সুফিয়া (রাদিআল্লাহু আনহা) ও আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-ও একই কথা বললেন। ফলে রসূল, এর মনে হলো তাঁর পবিত্র শরীরে কেমন যেন গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। বস্তুত যখন তিনি পুনরায় যায়নাব (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট গেলেন এবং তিনি নিয়মমত মধু আপ্যায়ণস্বরূপ দিলেন, তখন রসূল (ﷺ) বললেন, “তা আমার প্রয়োজন নেই। আমি ভবিষ্যতে মধু খাবো না।” এতে এই আয়াত নাযিল হলো :

“নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের সন্তুষ্টির জন্য যে বস্তু আল্লাহ হালাল করেছেন, তা নিজের উপর হারাম করছেন কেন?”

(৩) ইলার ঘটনা :

পূত পবিত্র স্ত্রীদের জন্য খাদ্য ও খেজুরের যে পরিমাণ নির্ধারিত ছিল তা তাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ছিল না এবং তাঁরা অভাবের মধ্যে সময় কাটাতেন। এদিকে গনিমতের মাল ও বার্ষিক রাজস্ব আয় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। সুতরাং পবিত্র স্ত্রীরা (রাদিআল্লাহু আনহুমা) নির্ধারিত জীবিকা বৃদ্ধির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আবুবকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু) নিজেদের কন্যাদ্বয় যথাক্রমে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) ও হাফছা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে বুঝিয়ে এই দাবী থেকে বিরত রাখলেন। কিন্তু অন্য স্ত্রীরা (রাদিআল্লাহু আনহা) ঐ দাবীর উপর অটল রইলেন। ঘটনাক্রমে সেই সময় নবী (ﷺ) ঘোড়ার উপর থেকে পড়ে যান। এবং পাজরে আঘাত পান। তিনি আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র ঘর সংলগ্ন উপর তলায় এক কক্ষে অবস্থান করলেন এবং ওয়াদা করলেন যে, এক মাস পর্যন্ত স্ত্রীদের (রাদিআল্লাহু আনহুমা) সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না। মুনাফিকরা এ ধরনের ঘটনার সন্ধানে থাকতো। তারা রটিয়ে দিল যে, নবী (ﷺ) স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। সকল সাহাবা এই খবর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) এর কাছে গেলেন। তিনি একটি চারপায়ীর উপর শুয়ে ছিলেন এবং পবিত্র শরীরে রশির দাগ পড়ে গিয়েছিল। ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) এর এই অবস্থা দেখে খুবই মনোকষ্ট পেলেন এবং বললেন, “ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি কি আপনার স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দিয়েছেন? “নবী (ﷺ) বললেন, “না”।

ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু) এই সুসংবাদ সব লোককে শুনিয়ে দিলেন। এতে সকল মুসলিম এবং পূত-পবিত্র স্ত্রী (রাদিআল্লাহু আনহুন্না) সকলের মধ্যে খুশীর ঢেউ বয়ে গেল। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, “আমি এক এক করে দিন গুণছিলাম। ২৯তম দিনে নবী (ﷺ) উপর তলার কক্ষ থেকে নেমে সর্বপ্রথম আমার নিকট আসলেন। আমি বললাম “ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি এক মাসের ওয়াদা করেছিলেন। আর আজ ২৯ দিন।” তিনি বললেন, “চাদের মাস কখনো ২৯ দিনেও হয়।”

(৪) তাখাইয়্যিরের ঘটনা:

ইলার ঘটনার পর একদিন নবী (ﷺ) আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট আসলেন এবং বললেন, “আয়িশা, আমি তোমাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করছি। তোমার মাতা-পিতার সাথে পরামর্শ করে যদি জবাব দাও তাহলে ভালো হবে।”

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রসূলুল্লাহ! কথাটি কী?” নবী (ﷺ) সূরায়ে আহযাবের এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন:

“হে নবী! আপনার স্ত্রীদেরকে বলে দিন, যদি তোমাদের পার্থিব জীবন এবং তার শোভা প্রয়োজন হয় তাহলে এসো আমি তোমাদেরকে কিছু দিয়ে সুন্দরভাবে বিদায় করে দেই এবং যদি তোমার আল্লাহ ও তাঁর রসূল (ﷺ) এবং আখিরাতের গৃহ ভালো মনে হয় তাহলে তোমাদের মধ্যে যে নেককার তার জন্য আল্লাহ বড় সওয়াব নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।”

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন : “হে আল্লাহর রসূল! এতে মাতা-পিতার সাথে পরামর্শের কি আছে! আমি তো আল্লাহ, আল্লাহর রসূল (ﷺ) এবং আখিরাতের ঘর পছন্দ করলাম। নবী (ﷺ) এই উত্তর পছন্দ করলেন। এই কথা যখন অন্য স্ত্রীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন তখন তাঁরাও একই ধরনের জবাব দিলেন।

প্রিয় নবী (ﷺ) আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে সীমাহীন ভালোবাসতেন। মুসনাদে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, নবী (ﷺ) বলতেন, “হে আল্লাহ! এমনিতেই তো আমি সকল স্ত্রী সঙ্গে সমান ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু অন্তর আমার আয়ত্তের বাইরে। অন্তর আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কেই বেশী ভালবাসে। হে আল্লাহ। তুমি অন্তরকে ক্ষমা করে দিও।” প্রিয় নবী (ﷺ) পবিত্রতার ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতেন এবং নিজের মেসওয়াক বার বার ধৌত করাতেন। এই সেবার দায়িত্ব আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র উপরই ন্যস্ত ছিল।

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) প্রিয় নবী (ﷺ) এর উপর জীবন বাজি রাখতেন। একবার নবী (ﷺ) রাতের বেলায় ঘুম থেকে উঠে কোথাও গেলেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) চক্ষু খুললেন এবং রসূল -কে না দেখে খুব চিন্তিত হলেন। পাগলিনীর মত উঠলেন এবং এদিক ওদিকে অন্ধকারের মধ্যে সন্ধান। করতে লাগলেন। অবশেষে এক স্থানে নবী (ﷺ) -কে দেখতে পেলেন। তিনি দেখলেন যে, নবী (ﷺ) সিজদারত অবস্থায় আল্লাহর স্মরণে মশগুল আছেন। এই সময় তিনি দুশ্চিন্তামুক্ত হলেন।

একবার নবী (ﷺ) কম্বল গায়ে দিয়ে মসজিদে আসলেন। একজন সাহাবী জানালেন : “ইয়া রসূলুল্লাহ! এতে দাগ দেখা যাচ্ছে বলে মনে হয়। তিনি তা একজনকে দিয়ে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট পাঠিয়ে দিলেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) পানি আনলেন। নিজের হাতে সেই দাগ ধুলেন। এরপর কম্বল শুকিয়ে রসূল (ﷺ) এর নিকট ফেরত পাঠালেন। প্রিয় নবী (ﷺ) যখন ইহরাম বাঁধতেন অথবা ইহরাম খুলতেন তখন আয়িশা সিদ্দিকা (রাদিআল্লাহু আনহা) শরীরে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতেন। একবার সফরে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র হার হারিয়ে গেল। নবী (ﷺ) তা অনুসন্ধানে কতিপয় সাহাবীকে প্রেরণ করলেন। তাঁরা হার অনুসন্ধানে বের হলেন। রাস্তায় সলাতের সময় হলো। দূর-দূরান্ত পর্যন্ত পানি ছিল না। এজন্য তাঁরা ওযু ছাড়াই সলাত আদায় করলেন। ফিরে এসে তাঁরা রসূল (ﷺ) এর নিকট ঘটনা বর্ণনা করলেন। এ সময় তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হলো। উসায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন হাজিয়া একে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)র বড় ফজিলত হিসেবে মনে করলেন এবং তাঁকে সম্বোধন করে বললেন :

“উম্মুল মু'মিনীন! আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা দিন। আপনি এমন কোন ঘটনার সম্মুখীন হননি যা থেকে আপনি পরিত্রাণ পাননি এবং মুসলিমদের জন্য তা এক বরকত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।”

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র দাম্পত্য জীবনের ন’বছর পর প্রিয় নবী (ﷺ) মৃত্যু রোগে আক্রান্ত হলেন। তের দিন যাবত তিনি মৃত্যু শয্যায় ছিলেন। এই তের দিনের মধ্যে ৫ দিন তিনি অন্য স্ত্রীদের নিকট অবস্থান করেন এবং ৮ দিন ছিলেন আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট। কঠিন রোগের দুর্বলতার কারণে নবী (ﷺ) আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট মিসওয়াক দিতেন। তিনি নিজের দাঁত দিয়ে তা চিবিয়ে নরম করে দিতেন এবং রসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যবহার করতেন। ১১ হিজরীর ৯ অথবা ১২ই রবিউল আউয়ালে আল্লাহর রসূল (ﷺ) মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় রসূল (ﷺ) এর পবিত্র মাথা আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বুকের উপর রাখা ছিল এবং তাঁর নিজ ঘরের মধ্যে তাকে দাফন করা হয়।

প্রিয় নবী (ﷺ)-এর ইন্তিকালের সময় আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বয়স ছিল ১৮ বছর। ৪৮ বছর তিনি বিধবা জীবন অতিবাহিত করেন। এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি ইসলাম বিশ্বের হিদায়াত, ইলম ও ফজিলত এবং খায়ের ও বরকতের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। তাঁর থেকে ২ হাজার ২শ’ ১০টি হাদীস বর্ণিত আছে। অনেকেই বলেছেন, শরীয়তের হুকুম আহকামের এক চতুর্থাংশ আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে বিবৃত হয়েছে। বড় বড় সাহাবী (রাদিআল্লাহু আনহুম) আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে সব ধরনের মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করতেন। আবু মুসা আশয়ারী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা এমন কোন বিষয়ের সম্মুখীন হইনি যার জ্ঞান আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট ছিল না। অর্থাৎ প্রত্যেক মাসয়ালা সম্পর্কেই তিনি রসূল (ﷺ) এর আদর্শ পরিজ্ঞাত ছিলেন। উরওয়াহ বিন যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, আমি কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, ইতিহাস এবং বংশনামা সম্পর্কে জ্ঞানের ক্ষেত্রে উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র থেকে বড় আর কাউকে দেখিনি। আহনাফ বিন কায়েস (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং মুসা বিন তালহা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেছেন, আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র থেকে সুন্দর ভাষার লোক আমরা দেখিনি। মুয়াবিয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেছেন, আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে বেশী জ্ঞানী বক্তা, শুদ্ধ ভাষা প্রয়োগকারী এবং তীক্ষ্ম মেধার নারী আর আমি। দেখিনি। চরিতগ্রন্থসমূহে প্রাপ্ত বিভিন্ন রাওয়ায়েতে প্রমাণিত হয় যে, আয়িশা সিদ্দিকা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র দ্বীনী জ্ঞান ছাড়াও চিকিৎসা, ইতিহাস এবং সাহিত্যেও বিশেষ দখল ছিল।

প্রকৃতপক্ষে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র জ্ঞান ও ফজিলত ছিল বিরাট। এই জ্ঞান ও তার বাস্তবায়ন বর্ণনার জন্য হাজার হাজার পৃষ্ঠার প্রয়োজন। সংক্ষেপে বলতে গেলে তিনি ছিলেন উম্মাহর কল্যাণকামী।

মহান আল্লাহ তা'আলার রহমতে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) সকল সাহাবী ও নারী সাহাবীর মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেন। কাসিম বিন মুহাম্মাদ (রাদিআল্লাহু আনহু)-র বর্ণনা অনুযায়ী আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) স্বয়ং বলেছেন, আমার মধ্যে ১০টি গুণ এমন রয়েছে যা রসূল (ﷺ) এর অন্য স্ত্রীর মধ্যে নেই।

(১) কুমারী অবস্থায় রসূল (ﷺ) এর সঙ্গে শুধু আমারই বিয়ে হয়।

(২) জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বলেন যে, আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে বিয়ে করুন।

(৩) আল্লাহ আমার জ্ঞান বারায়াত বা পবিত্রতার আয়াত নাযিল করেন।

(৪) আমার মাতা-পিতা উভয়েই মুহাজির।

(৫) আমি রসূল (ﷺ) সম্মুখে থাকতাম এবং তিনি সলাতে মশগুল হতেন।

(৬) আমি এবং রসূলে কারীম (ﷺ) একই পাত্রে গোসল করতাম।

(৭) ওহী নাযিলের সময় শুধু আমি তাঁর পাশে থাকতাম।

(৮) যেদিন আমার পালা ছিল সেদিনই রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ইন্তিকাল হয়।

(৯) যখন প্রিয় নবী (ﷺ) -এর রুহ আল্লাহর দিকে যাত্রা করে তখন রসূল (ﷺ) -এর মাথা আমার কোলের উপর ছিল।

(১০) আমার ঘরেই রাহমাতুললিল আলামীনকে (ﷺ) দাফন করা হয়।

ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু)-র খিলাফতকালে রসূল (ﷺ) -এর সকল স্ত্রীর (রাদিআল্লাহু আনহুমা) বার্ষিক ভাতা ছিল ১০ হাজার দিরহাম। অবশ্য আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) ১২ হাজার দিরহাম পেতেন। ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু)এর কারণ বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি রসূল (ﷺ) -এর অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন।

ইরাক বিজয়ের সময় গনিমতের মালের মধ্যে মুক্তার একটি পাত্রও ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু)-র নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। তিনি জনগণের অনুমতি নিয়ে তা আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র সেবায় পাঠিয়ে দিলেন।

উম্মুল মু'মিনীন (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন : “হে আল্লাহ! রসূল (ﷺ) -এর পর ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) আমার উপর বড় ইহসান করেছেন। ভবিষ্যতে তাঁর উপঢৌকনের জন্য আমাকে জীবিত রেখো না।

ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যুর সময় যখন উপস্থিত হলো তখন তিনি নিজের পুত্র আব্দুল্লাহ (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে উম্মুল মু'মিনীন (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট প্রেরণ করে তাঁকে রসূল (ﷺ) -এর পাশে দাফন। হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলেন।

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন : “আমার দাফনের জন্য এই স্থান রেখেছিলাম। কিন্তু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু)-র খাতিরে আমি আজ তা থেকে হাত গুটিয়ে নিলাম।”

আয়িশা সিদ্দিকা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র এই নজিরবিহীন উদারতার কারণেই ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু) আজ রসূল (ﷺ) -এর পাশে শুয়ে আছেন।

ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু)-র পর ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু) খলিফা হলেন। তাঁর শাসনকালে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভয়াবহ ফিতনা এবং ষড়যন্ত্র মাথা তুলে দাঁড়ায় যার ফলশ্রুতিতে ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)-র শাহাদাতের দুঃখজনক ঘটনা সংঘটিত হয়। তিন দিনের ক্ষুৎ পিপাসায় কাতর বার্ধক্যে পীড়িত আমিরুল মু'মিনীন (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে কুরআন মজিদ তিলাওয়াতরত অবস্থায় যালিমরা যে নির্দয়তার সাথে শহীদ করে তাতে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র অন্তর ব্যথিত হয়ে গেল। বস্তুত চতুর্থ খলিফা আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র শাসনামলে কতিপয় সাহাবী (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং মুসলিমদের একটি দল ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)-র বদলা নেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। এই দলে যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন আওয়াম এবং তালহা (রাদিআল্লাহু আনহু)-র মত বিখ্যাত সাহাবীও ছিলেন।

ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)-র শাহাদাতে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) মনে নিদারুণ দুঃখ ছিল। এজন্য তিনি নেক নিয়তের সঙ্গে এই দলকে সমর্থন করেন। এই দলের ধারণা ছিল যে, ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু) হন্তাদের কতিপয় ব্যক্তি আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র আশ্রয়ে রয়েছে। ওদিকে আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)-র বক্তব্য ছিল, পূর্ণ তদন্তের পর যতক্ষণ পর্যন্ত হত্যাকারীদের সনাক্ত না করা হবে ততক্ষণ তাদের উপর দন্ড জারি করা সম্ভব নয়। এই মতভেদের কারণে উষ্ট্রের যুদ্ধের মত দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেল। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) পরিস্থিতি শোধরানোর জন্য নিজের দলসহ বসরা গেলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে আলী (রাদিআল্লাহু আনহা)-র সঙ্গে যুদ্ধ বেধে গেল। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক জীবন হানি ঘটলো। এ সত্ত্বেও আলী বিজয়ী হলেন। তিনি অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে উম্মুল মু'মিনীন (রাদিআল্লাহু আনহা)-কে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। যখনই আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র এই যুদ্ধের কথা স্মরণ হতো তখনই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতেন এবং বলতেন : “হায়! ২০ বছর আগে যদি আমার মৃত্যু হতো।”

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র প্রায় দুশ ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন। এইসব ছাত্রছাত্রীর মধ্যে কাসিম বিন মুহাম্মদ (রাদিআল্লাহু আনহু) মাসরুক তাবেয়ী (রাদিআল্লাহু আনহু), রায়েশা বিনতে তালহা (রাদিআল্লাহু আনহা), আবুসালমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং উরওয়াহ বিন যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু)-দের নাম প্রসিদ্ধ।

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) কোন হাদীস বর্ণনা কালে তার নেপথ্য কারণও বর্ণনা করতেন। যে ব্যাখ্যা তিনি দিতেন তা আর বিশ্লেষণের প্রয়োজন হতো না। তিনি অন্ধ আনুগত্য পছন্দ করতেন না। সব সময়ই প্রিয় নবী (ﷺ) এর কথা ও কাজের প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করতেন। যেমন কিছু কিছু হাদীস তিনি সংশোধন করে দিয়েছেন:

আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন, “ঘরের লোকদের কান্নায় মৃত ব্যক্তির উপর আযাব হয়।” আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) যখন এই রাওয়ায়েত শুনলেন তখন তা মানতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন, প্রকৃত ঘটনা হলো এই যে, রসূলে কারীম (ﷺ) এক ইহুদী নারীর জানাজার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার নিকটাত্মীয় ও বন্ধু বান্ধব ক্রন্দন করছিল। নবী (ﷺ) বললেন, মানুষেরা কাঁদছে আর তার উপর আযাব হচ্ছে (অর্থাৎ সে নিজের আমলের সাজা ভুগছে)। এরপর বললেন যে, আল-কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে : “কেউ অন্যের গুনার বোঝা বহন করবে না।”

আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) একজন বিরাট মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবী ছিলেন। যখন তাঁর মৃত্যুকাল ঘনিয়ে এলো তখন তিনি নতুন কাপড় চেয়ে নিয়ে পরিবর্তন করলেন এবং বললেন : “রসূল ৩৪ ইরশাদ করেছেন, মুসলিম যে পোশাকে মৃত্যুবরণ করবে সেই পোশাকেই তাকে উঠানো হবে।” আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) একথা শুনে বললেন, “আল্লাহ আবু সাঈদ (রাদিআল্লাহু আনহু)-র উপর রহম করুন। রসূল (ﷺ) এর নিকট পোশাকের অর্থ ছিল আমল।”

নৈতিক মর্যাদার দিক থেকে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র স্থান অনেক উর্ধে ছিল। তিনি অসীম দানশীল, অতিথিপরায়ণ এবং দরিদ্র সেবী ছিলেন। একবার আব্দুল্লাহ বিন যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁকে এক লাখ দিরহাম প্রেরণ করলেন। তিনি তৎক্ষনাৎ তা গরীব-মিসকিনদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। সেদিন তিনি সিয়াম পালন করছিলেন। সন্ধ্যায় খাদেম বললো : “উম্মুল মু'মিনীন! কত ভালই না হতো, যদি আপনি ইফতারের জন্য ঐ অর্থ থেকে কিছু গোস্ত কিনতেন।” তিনি বললেন, “তুমিতো স্মরণ করিয়ে দিতে পারতে।” উরওয়াহ বিন যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একবার আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র নিকট ৭০ হাজার পরিমাণ দিরহাম এলো। তিনি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিলেন এবং দোপাট্টার আঁচল ঝেড়ে দিলেন।

ইমাম মালিক (রহ.)-র মুয়াত্তায় আছে, আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) একদিন সিয়াম পালনরত অবস্থায় ছিলেন এবং হাঁক দিল। তিনি দাসীকে সেই রুটি ভিখারিনীকে দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। দাসী বললো, সন্ধ্যায় ইফতার কী। দিয়ে করবেন? উম্মুল মু'মিনীন বললেন, তাকে রুটিতো দিয়ে দাও। সন্ধ্যা হলো। এসময় কোন এক ব্যক্তি হাদিয়া হিসেবে বকরীর গোন্ত প্রেরণ করলো। তিনি দাসীকে বললেন, দেখ, আল্লাহ রুটির চেয়ে উত্তম জিনিস প্রেরণ করেছেন।

উম্মুল মু'মিনীনের (রাদিআল্লাহু আনহা) বদান্যতার কোন সীমা-পরিসীমা ছিল। না। আব্দুল্লাহ বিন যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু) ছিলেন তাঁর ভাগিনা। প্রায়ই তিনি তাঁর সহযোগীতা করতেন। খালার বদান্যতা দেখে দেখে একবার তিনিও ভড়কে গেলেন এবং মুখ ফসকে বলে ফেললেন যে, এখন থেকে তিনি আর কিছু দেবেন না। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) এ কথা জানতে পেরে খুব অসন্তুষ্ট হলেন এবং ইবনে যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু)-র সঙ্গে আর কখনো কথা বলবেন না বলে কসম খেলেন। দীর্ঘদিন যাবত তিনি আর তাঁর সঙ্গে কথা বললেন না। তাতে আব্দুল্লাহ বিন যোবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু) খুব ঘাবড়ে গেলেন এবং অতি কষ্টে মিছওয়ার (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন মাখরামাহ ও আব্দুর রহমান (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন আছওয়াদকে মধ্যস্থতা করে অপরাধ ক্ষমা করিয়েছিলেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) কসম ভাঙ্গার কাফফারা হিসেবে ৪০টি গোলাম আযাদ করে দেন। এই ঘটনা যখন তাঁর স্মরণ হতো তখন কেঁদে কেঁদে আঁচল ভিজিয়ে ফেলতেন। ইবনে সায়াদ (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) নিজের বাসগৃহ আমীর মুয়াবিয়ার (রাদিআল্লাহু আনহু)-র নিকট বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বিক্রি বাবত যে অর্থ পেয়েছিলেন তা আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দেন।

উম্মুল মু'মিনীন (রাদিআল্লাহু আনহা) রাত-দিনের বেশীর ভাগ সময়ই ইবাদত অথবা মাসয়ালা-মাসায়েল বলে কাটাতেন। স্নেহ-ভালোবাসায় তাঁর হৃদয় ছিল পূর্ণ। শত্র এবং বিরোধীদেরকেও তিনি ক্ষমা করে দিতেন। প্রখ্যাত সাহাবী কবি হাসসান (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন ছাবিত ইফকের ঘটনায় ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র বিরোধিতা করেছিলেন। এই ঘটনায় আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র মনে খুব দুঃখ ছিল। কিন্তু এ সত্ত্বেও তিনি হাসসান (রাদিআল্লাহু আনহু) বিন ছাবিতকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা)-র কিছু আত্মীয় (রাদিআল্লাহু আনহুম) ইফকের ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে হাসসান। (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে গালি দিতে চাইতেন। আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) তাঁদেরকে অত্যন্ত কঠোরভাবে এ কাজ করতে নিষেধ করেন এবং বলেন, তাঁকে খারাপ বলো না। তিনি রসূল (ﷺ) -এর তরফ থেকে মুশরিক কবিদের জবাব দিতেন।

সহোদর মুহাম্মদ বিন আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) মাবিয়া বিন খাদিজের হাতে নিহত হয়েছিলেন। এজন্য তিনি তাঁর উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু যখন তিনি শুনলেন যে, জিহাদের ময়দানে অধীনস্তদের সঙ্গে মাবিয়া অত্যন্ত সুন্দর আচরণ করেন, কারোর পশু মরে গেলে তাঁকে নিজের পশু দিয়ে দেন, কারোর গোলাম পালিয়ে গেলে তাকে নিজের গোলাম দান করেন এবং সকলেই তাঁর উপর সন্তুষ্ট, তখন তিনি বললেন, “আসতাগফিরুল্লাহ! যে ব্যক্তির মধ্যে এই সকল গুণ আছে তার উপর তো অসন্তুষ্ট থাকতে পারি না। যদিও সে আমার ভাইয়ের হত্যাকারী। রসূলুল্লাহ আya -কে আমি এই দু’আ করতে শুনেছি, “হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে তার প্রতি তুমিও দয়া প্রদর্শন করো। যে তার প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করবে তার প্রতি তুমিও কঠোরতা প্রদর্শন করো।”

উম্মুল মু'মিনীন (রাদিআল্লাহু আনহা) গীবত বা পরনিন্দা এবং খারাপ কথা মোটেই পছন্দ করতেন না। তাঁর থেকে বর্ণিত কোন হাদীসে কোন ব্যক্তিকে হেয়প্রতিপন্ন করার অথবা অপকথার একটি শব্দও পাওয়া যায় না। তিনি এত উদার হৃদয়ের অধিকারিণী ছিলেন যে, সতীনদের গুণাবলী ও প্রশংসা হৃষ্টচিত্তে বর্ণনা করতেন।

তাঁর অন্তরে সীমাহীন আল্লাহভীতি ছিল। কোন সময় শিক্ষণীয় কোন কথা স্মরণ হলে শুধু কাঁদতেন। একবার তিনি বলেন, ক্রন্দন ছাড়া কখনো আমি পেট পুরে খাই না। তাঁর এক ছাত্র এই কথায় জিজ্ঞেস করলেন, তা কেন? তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যে অবস্থায় দুনিয়া ত্যাগ করেন তা আমার মনে পড়ে। আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ 45 কোন দিন দু'বেলা পেট পুরে রুটি ও গোশত খাননি।

আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) আল্লাহর ইবাদতের প্রতি ছিলেন গভীরভাবে অনুরক্ত। ফরয সলাত ছাড়াও বেশী বেশী সুন্নাত ও নফল সলাত আদায় করতেন। জীবনে তাহাজ্জুদ ও চাশতের সলাত বাদ দেননি। কঠোরভাবে হাজ্জ পালন করতেন। রমাদানের সিয়াম ছাড়া প্রচুর নফল সিয়াম পালন করতেন। আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)-র কোন সন্তান হয়নি। আয়িশা সিদ্দিকাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) ৫৮ হিজরীর রমাদান মাসে ৬৭ বছর। বয়সে ইন্তিকাল করেন। তাঁর ওছিয়ত অনুযায়ী রাতে বিতরের সলাতের পর মদীনার বাকী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) জানাযার সলাত পড়ান। জানাযায় এত লোকের সমাগম হয়েছিল যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তাঁর ইন্তিকালে ইসলামী বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন